Year-20 # Issue-21 # 7 July 2013

রমজানে নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ানোর ঘোষণার পরও মজুদ গড়ে তুলছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিজস্ব প্রতিবেদক :  পবিত্র রমজানের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। রমজানকে সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের মজুদ গড়ে তুলছে অসাধু একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। ইতোমধ্যে ওই ব্যবসায়ী চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে এখনো কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। রাজধানীর শতাধিক ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মিশনে ওই মালামাল গুদামজাত করার অভিযোগ উঠেছে। একাধিক সূত্র জানায়, এ রমজানকে পুঁজি করে ক্রেতাদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে ভোগ্যপণ্যের মজুদ গড়ে তুলছে একশ্রেণীর মুনাফালোভী ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ীরা মালামাল মজুদের পর তা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কিংবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেয়ারও পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায় এ অনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যেই বাজারে বাড়তে শুরু করেছে ভোগ্যপণ্যের দাম।
ওদিকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ ও প্রশাসন রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের মজুদ গড়ে না তোলার জন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছেন। আবার মজুদের আগাম তথ্য সংগ্রহের জন্য মাঠে নামানো হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরকেও। তারপরও অনেকেই সংশয়মুক্ত হতে পারছেন না।
প্রসঙ্গত, রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং আইন-শৃ´খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে  ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি একটি বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে রমজানে বেশকিছু সীদ্ধান্ত গ্রহণের পদক্ষেপ নেয়া হয়। যদিও মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের এসব বাস্তবায়ন নিয়ে বরাবরের মত সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
ব্যবসায়ী সূত্র জানায়, চিনি, মসুর ও মোটর ডাল, খেজুর, ছোলা ও পেঁয়াজসহ মসলাজাতীয় পণ্য ইত্যাদির দাম রমজানের আগেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।এতে করে সাধারণ ক্রেতারা পড়েছে চরম বিপাকে। মুনাফালোভীরা ইতোমধ্যে এসব পণ্যের মজুদও গড়ে তোলেছে।
এরপর বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কাজটি বর্তমানেও বাস্তবায়ন করছে ব্যবসায়ী চক্রটি। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নজরদারি তাদের কোন প্রকার বেকায়দায় ফেলতে পারে না। আবার অভিযোগ রয়েছে, মুনাফালোভী ব্যবসায়ী চক্রটি ক্ষমতাধর প্রভাবশালিসহ প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এ ধরনের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।  ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য রমজান মাসে বৃদ্ধি পাবে না। তারা আসন্ন রমজান মাসে ভোক্তাদের সুবিধার্থে ব্যবসায়ীগণ চিনি ও তেলের বিক্রয় মূল্য ঘোষণা করেছেন। ঘোষিত মূল্য মোতাবেক চিনি মিল গেটে প্রতি কেজি ৪১.৫০ টাকা, পাইকারি সর্বোচ্চ প্রতিকেজি ৪২.৫০ টাকা এবং খুচরা সর্বোচ্চ প্রতিকেজি ৪৫.৫০ টাকায় বিক্রয় করা হবে। পামঅয়েল মিল গেটে প্রতি লিটার ৬৯ টাকা, পাইকারি সর্বোচ্চ প্রতিলিটার ৭০ টাকা এবং খুচরা সর্বোচ্চ প্রতিলিটার ৭৩ থেকে ৭৫ টাকা। সয়াবিন (লুজ) মিল গেটে প্রতি লিটার ১০১ টাকা, পাইকারি সর্বোচ্চ প্রতি লিটার ১০২ টাকা এবং খুচরা প্রতি লিটার সর্বোচ্চ ১০৫ টাকা থেকে ১০৮ টাকা। এছাড়া পেট বোতল প্রতিলিটার ১২৭ টাকা, যা পূর্বে ছিল ১৩২ টাকা এবং ৫ লিটার বোতল ২৫ টাকা কম মূল্যে বিক্রয় করা হবে। বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদের সভাপতিত্বে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সাথে এ সকল নিত্য পণ্যের মূল্য, সরবরাহ ও মজুদ নিয়ে গত রোববার এক জরুরি মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় বলা হয়, আসন্ন রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য, আমদানি, মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। ভোজ্যতেল (সয়াবিন ও পাম অয়েল), চিনি, ছোলা, মশুর ডাল, খেজুরের মজুদ ও সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। বাজারে এগুলোর সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে, কোন ধরনের সমস্যা হবে না। এ সকল পণ্যের আমদানি, এলসি, পাইপ লাইনে থাকা পরিমাণ সন্তোষ জনক রয়েছে। আসন্ন রমজান মাসের চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পণ্য মজুদ আছে বলে সভায় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। আসন্ন রমজান মাসে চিনি ও তেল নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয়ের ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীরা। এফবিসিসিআই-এর নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিটি বাজারে মূল্য তালিকা টাঙ্গানো এবং নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি সরকারি মনিটরিং টিম কার্যক্রম জোরদার করবে। নির্ধারিত মূল্যে এ সকল নিত্যপণ্যের বিক্রয়, সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। মূল্য যাতে কোন কারণে অস্বাভাবিক না হয়, সেজন্য ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সকলে সতর্ক থাকবে। আশাকরা হচ্ছে এবার কোন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হবে না এবং সরবরাহ পর্যাপ্ত ও স্বাভাবিক থাকবে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করা হয়। এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, এফবিসিসিআই-এর সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, এফবিসিসিআই-এর সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মর্তজা রেজা চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব (মহাপিরচালক, ডব্লিউটিও) অমিতাভ চক্রবর্তী, অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) মনোজ কুমার রায়, টিসিবি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারওয়ার জাহান তালুকদার, সিটি গ্র“পের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, টিকে গ্র“প, এস আলম গ্র“প, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল লি. মেঘনা গ্র“প, এস এ ওয়েল রিফাইনারি লি. এবং অন্যান্য ব্যবসায়ী প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে প্রায় দুই লাখ টন। চিনির চাহিদা থাকে দেড় লাখ টন। ছোলার চাহিদা থাকে ৫০ হাজার টন। আর মসুর এবং মোটর ডালের চাহিদা থাকে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টনের মত। রমজানে বেসরকারি পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের আমদানির পাশাপাশি টিসিবি’র মাধ্যমে আমদানি করে ভর্তুকি মূল্যে তা সরাসরি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে সরকার পরিস্থিতি সামাল দিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা মূল্যের চার লাখ ৮৩ হাজার টন ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। এরমধ্যে এক লাখ ২৩ হাজার টন ভোজ্যতেল, দেড় লাখ টন অপরিশোধিত চিনি, ২৫ হাজার টন মোটর ডাল, এক লাখ ৮৫ হাজার টন গম ও মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। দেশের শীর্ষ আমদানিকারক যথাক্রমে আবুল খায়ের গ্র“প, সিটি গ্র“প, বিএসএম গ্র“প, মেঘনা গ্র“প, টিকে গ্র“প, এস আলম গ্র“প, আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য আমদানি করে।
সরকারি বাংলো বরাদ্দে নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারি বাংলো বরাদ্দে নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা নেই। এক্ষেত্রে বিরাজ করছে চরম নৈরাজ্য। অধিকাংশ বাংলো বরাদ্দের ক্ষেত্রেই ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স (রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম) অনুসরণ করা হয়নি। তাছাড়া কিছু সরকারি বাংলো সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই বেদখল হয়ে রয়েছে। যদিও সরকারি বাড়ি বরাদ্দ নীতিমালা ১৯৮২ অনুযায়ী সরকারের ৮ ধরনের বাড়ি রয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ এ, বি, সি, ডি, ই, এফ, সুপিরিয়র ও বাংলো। এর মধ্যে আইন মোতাবেক বাংলো টাইপের বাড়িগুলোর বরাদ্দ দিতে হয় ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্টের ভিত্তিতে। রাজধানীর অধিকাংশ সরকারি বাংলোর ক্ষেত্রেই এ নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। বরং ইচ্ছেমাফিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি বাংলো বরাদ্দে অনিয়মের কারণে ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্টের ভিত্তিতে অনেক কর্মকর্তাই বাংলো বাড়ি বরাদ্দ পায়নি। বরং এক্ষেত্রে অনেক পেছনের সারির কর্মকর্তাদের নামে বাংলো বরাদ্দ করা হয়েছে। এমনকি ওএসডি পদে কর্মরত একজন যুগ্ম-সচিবের নামেও বাংলো বরাদ্দ রয়েছে। সরকারি তালিকানুযায়ী রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় সংরক্ষিত ‘ক’ তালিকাভুক্ত পরিত্যক্ত বাংলো শ্রেণীর সর্বমোট ৪০টি বাড়ি সরকারি আবাসন পরিদফতর থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ মন্ত্রীর নামে, ৮টি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বিচারপতিদের। তাছাড়া অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের নামে ১টি এবং সচিব বা সচিবের চেয়ে নিম্ন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের নামে বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০টি। বাকি বাড়িগুলোর মধ্যে ভারতীয় দূতাবাসের দখলে রয়েছে একটি বাংলো এবং অন্য বাংলোগুলোতে বিভিন্ন সংস্থার অফিস রয়েছে। তাছাড়া মিন্টু রোড, বেইলি রোড ও সার্কিট হাউস রোডের মোট ৮৪টি বাংলো শ্রেণীর বা সমমানের বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি বাড়ি বরাদ্দ রয়েছে সচিব ও সচিবের নিম্ন পদমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নামে।
সূত্র জানায়, সরকারি বাংলো বরাদ্দের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেছেন। এ প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স অনুযায়ী বাংলো বরাদ্দের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির পাশাপাশি রাজধানীতে বাংলো শ্রেণীর বাড়ি বরাদ্দের তালিকা চেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর থেকে হাইকোর্টের ওই রুলের জবাবে রাজধানীর ১২৮টি সরকারি বাংলোর তথ্য হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। হাইকোর্টে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী ধানমন্ডি এলাকার পরিত্যক্ত বাংলো শ্রেণীর ২০টি বাড়ির মধ্যে বরাদ্দ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ডা. মোদাচ্ছের আলী, বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, বিচারপতি একেএম আবদুল হাকিম, বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মুরাজ রেকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (ওএসডি) আখতার আহম্মেদ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু বকর সিদ্দিক ও অতিরিক্ত সচিব শিরিন আখতার। বাকি বাংলোগুলোর মধ্যে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সেইফ হোম, ধানমন্ডি থানা, বেপজা অফিস, উপবিভাগীয় প্রকৌশল গণর্পূত রক্ষণাবেক্ষণ উপবিভাগ-১ এর কার্যালয়, ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ভারতীয় দূতাবাসের দখলে ১টি বাংলো, অঁলিয়স ফ্রঁসেস অফিস, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার অফিস, বস্ত্র দফতরের অফিস, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার অফিস। গুলশান এলাকার ২০টি বাংলোর মধ্যে রবাদ্দ দেয়া হয়েছে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আবুল হাছান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবউল আলম হানিফ, দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, বিচারপতি রেজাউল হাসান, বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেন, বিচারপতি আফজাল হোসেন, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও ৬তলা বিশিষ্ট ভবনে ১০ জন সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সূত্র আরো জানায়, সরকারি বাকি বাংলোগুলোর মধ্যে জার্মান দূতাবাসের অনুকূলে ১টি, সিটি কর্পোরেশন উত্তরের অফিস, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়, পাকিস্তানি দূতাবাস, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন ১টি, ভারতীয় দূতাবাস, কাতার দূতাবাস, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতর ও সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি বাড়ি রয়েছে। তাছাড়া মিন্টু রোড, হেয়ার রোড ও পার্ক রোডের ৫৪টি বাংলোর মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী (সচিব) আবদুস সোবাহান গোলাপ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, গণপূর্ত সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন, স্থানীয় সরকার সচিব মনজুর হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মেখ মো. ওয়াহিদ উজ জামান, ভারপ্রাপ্ত শিল্প সচিব মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন আবদুল্লাহ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ম. নজরুল ইসলাম খান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব সুনীল কান্তি বোস, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম রোকেয়া সুরতানা, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান। তাছাড়া বাকিগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা ও সুগন্ধা, পুরিশ কমিশনারের অফিস, প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহারের জন্য ১টি, প্রধান বিচারপতির ব্যবহারের জন্য ১টি, অফিসার্স ক্লাব, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের জন্য ১টি, ঢাকার জেলা প্রশাসকের জন্য ১টি, বিরোধী দলের নেতার জন্য ১টি, ঢাকার এসপির জন্য ১টি বাংলো ছাড়া বাকিগুলো বিভিন্ন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বেইলি রোড ও সার্কিট হাউস রোডের মোট ৩০টি বাংলোর মধ্যে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অর্তিকত সচিব একেএম ইয়াহিয়া চৌধুরী, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের যুগ্ম-সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মইন উদ্দিন খন্দকারের নামে ১টি করে বাংলো বরাদ্দ দেয়া আছে। বাকিগুলো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এদিকে ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স অনুযায়ী ৯ নম্বর ক্রমিকে রয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতিরা। আর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব রয়েছেন ১২ নম্বর পদমর্যাদাক্রমে। আর পদমর্যাদাক্রমের ১৫ নম্বরে রয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। পদমর্যাদাক্রমের ১৬ নম্বরে রয়েছেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা। ১৯ নম্বরে রয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবগণ। কিন্তু বাস্তবে হাইকোর্টের অনেক বিচারপতিই এখন পর্যন্ত সরকারি বাংলো বরাদ্দ পাননি।

Year-20 # Issue-20 # 30 June 2013

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যে জিএসপি স্থগিত করলনিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কারখানার কর্ম পরিবেশের উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করেছে। গত কয়েক মাসের শুনানির পর গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ফ্রোম্যান এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। ফ্রোম্যান বলেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা স্থগিত করা হলো। প্রেসিডেন্ট ওবামার আদেশে বলা হয়, ‘আমি নিশ্চিত, বাংলাদেশের পাওয়া জিএসপি সুবিধা এখন স্থগিত করাই শ্রেয়ৃ কারণ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকারগুলো বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ বাংলাদেশ নেয়নি। পোশাক কারখানায় বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় শত শত শ্রমিকের মুত্যুর পর কারখানার পরিবেশ উন্নত করা, শ্রমিকের বেতন বাড়ানোসহ সরকারের নানা উদ্যোগের মধ্যেই ওবামার এই ঘোষণা এলো। জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেসের (জিএসপি) আওতায় বাংলাদেশ পাঁচ হাজার ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করতে পারত, যদিও এর মধ্যে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক নেই।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা গতবছর জিএসপির আওতায় তিন কোটি ৪৭ লাখ ডলারের তামাক, ক্রীড়া সরঞ্জাম, চিনামাটির তৈজসপত্র ও প্লাস্টিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করেছেন, যাতে তারা শুল্ক ছাড় পেয়েছেন ২০ লাখ ডলারের মতো। আর ৪৯০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে শুল্ক বাবদে দিয়েছেন ৭৩ কোটি ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি বাতিলের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ২০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক খাত সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা হয়তো নেই, কিন্তু এই সিদ্ধন্তে প্রভাবিত হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নও যদি একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি দামের পোশাক কেনে, যা বাংলাদেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ। ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্তি সুবিধা হারালে বিপুল অংকের ডলার বাংলাদেশকে গুণতে হবে কর বাবদে।
গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংগঠন ‘আমেরিকান অর্গানাইজেশন অব লেবার-কংগ্রেস ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও) বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিলের আবেদন করে। তাদের অভিযোগ ছিল, পোশাক ও চিংড়ি খাত এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) শ্রম অধিকার সংরক্ষিত হচ্ছে না এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়।
এর ঠিক পরের মাসেই আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন লেগে ১১০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়, যাতে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে নিরাপদ কর্মপরিবেশের অভাব এবং শ্রমিক অধিকারের বিষয়গুলো নতুন করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনায় আসে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত জানুয়ারিতে জিএসপি সুবিধার বিষয়টি পর্যালোচনার উদ্যোগ নেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটিতে এ বিষয়ে শুনানির মধ্যেই গত ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩০ জনের মৃত্যু হয়, যাদের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিক। এ ঘটনায় নতুন করে সংশয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশের জিএসপি-ভাগ্য। ঘটনার পরদিন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেছিলেন, এ ঘটনা জিএসপির ভাগ্যনির্ধারণীতে প্রভাব ফেলবে। তাজরীন ফ্যাশনস ও রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে ১২ শ’র বেশি শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ফ্রোম্যান বলেন, “জিএসপি সুবিধা স্থগিতের এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নতুন করে কাজ শুরু করা, যাতে শ্রমিক অধিকারের বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে তারা যথাযথ পদক্ষেপ নেয়।
বাংলাদেশ তাদের পণ্যে আবার শুল্কমুক্ত সুবিধা ফিরে পাক- তা আমরা চাই। কিন্তু সেজন্য আমরা কর্মক্ষেত্রের নিরাপদ ও যথাযথ পরিবেশও দেখতে চাই। তবে বাংলাদেশি পণ্য আমদানি বন্ধের কোনো পরিকল্পনা এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের নেই বলেও জানান ফ্রোমান। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংগঠন এএফএল-সিআইওর সভাপতি রিচার্ড ট্রুমকা বলেন, “যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্তি সুবিধা পাচ্ছে, তাদের সবার জন্যই এ সিদ্ধান্ত একটি স্পষ্ট সংকেত। যারা কর্মক্ষেত্রের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করে না এবং শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার মতো ন্যূনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তারা যে কোনো সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাজার সুবিধা হারাতে পারে। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে, ২০১১-১২ অর্থবছরের বাংলাদেশ মোট রপ্তানি করেছে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে মোট রপ্তানির ২১ শতাংশ (৫০০ কোটি ডলার)। ২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার পর এর আগেও দুবার এ সুবিধা বাতিলের আবেদন ওঠে। অবশ্য শুনানি শেষে রায়ে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বহাল থাকে।

জিএসপি পুনর্বহালে আমার ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই: ইউনূস
নিজস্ব প্রতিবেদক : গতকাল শনিবার ড.মুহাম্মদ ইউনূস জিএসপি সুবিধা স্থগিতের জন্য কার্যতঃ সরকারকেই দায়ী করেছেন। তবে নোবেলজয়ী এই বাংলাদেশি এই সুবিধা পুনর্বহালে নিজের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকারগুলো বাস্তবায়ন না করায় গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। রাজধানীতে এক সম্মেলনে ইউনূস বলেন, আমরা যেহেতু ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে পারিনি, তাই তারা জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছে।
শ্রম অধিকারগুলো বাস্তবায়ন না করা জিএসপি স্থগিতের ‘অন্যতম’ কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করলেও এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারিনি। জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালে ভূমিকা রাখবেন কি না- যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও সাবেক পরারাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ঘনিষ্ঠ ইউনূসের কাছে এই প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। আমি সরকারের কেউ না, আমার এখানে ভূমিকা রাখার কিছু নেই, উত্তর দেন তিনি।
পোশাক কারখানায় বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় সহস্রাধিক শ্রমিকের মুত্যুর পর কারখানার পরিবেশ উন্নত করা, শ্রমিকের বেতন বাড়ানোসহ সরকারসহ নানা পক্ষীয় বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যেই জিএসপি স্থগিতের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সরকারের অভিযোগ, এর পেছনে দেশের ভেতরের ও বাইরের কারো কারো হাত ছিল।
সকালে ধানমি র বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মিলনায়তনে ‘সোশাল বিজনেস ইয়ুথ কনভেনশনে’ প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূস।
গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে পদক্ষেপে নোবেলজয়ী একমাত্র বাংলাদেশির সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এর বিপরীতে বিরোধী দলের সমর্থন পাচ্ছেন তিনি।
কয়েকদিন আগে ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়ে ইউনূসের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করেন। এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ইউনূস বলেন, গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে যে কেউ সমর্থন করতে পারে। সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সবুর খান উপস্থিত ছিলেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের পাশে আছে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক :  বিএনপি গত বৃহস্পতিবার গ্রামীণ ব্যাংক ‘বিভক্তিকরণের’ প্রস্তাবকে ‘চক্রান্ত’ অভিহিত করে তা থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ পরিস্থিতিতে বিএনপি গ্রামীণ ব্যাংকের পাশে রয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা সরকারের এহেন কর্মকাে  উদ্বেগ ও নিন্দা জানাচ্ছি। সরকারকে বলব, দাম্ভিকতা পরিহার করে বাস্তবতা বুঝে চক্রান্তের পথ থেকে সরে আসুন। গ্রামীণ ব্যাংককে তার মতো করে চলতে দিন। সকালে মীরপুরের গ্রামীণ ভবনের ইউনূস সেন্টারে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ইনকোয়ারি কমিশন এই প্রতিষ্ঠানটিকে ১৯ টুকরো করার প্রস্তাব করেছে। এটা একটি ষড়যন্ত্রমূলক চক্রান্ত বলে আমরা মনে করি। বৈঠকের পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের কাছে বিষয়বস্তু তুলে ধরে বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘কংগ্রেশনাল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছেন তাকে অভিনন্দন জানাতে আমি গ্রামীণ সেন্টারে গিয়েছিলাম। আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। বিএনপি গ্রামীণ ব্যাংকের পাশে আছে, থাকবে- এই সমর্থনও জানিয়েছি। এক ঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে ইউনূসের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংক কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান ফখরুল। বৈঠকে দলের চেয়ারপারসনের সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ পাসের মধ্য দিয়ে সরকারের ৬০ শতাংশ ও গ্রামীণ ব্যাংক গ্রাহকদের ৪০ শতাংশ মালিকানা নিয়ে ব্যাংক হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। ২০০২ সালে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ পরিবর্তন করে ৭৫ ভাগ শেয়ার নারী গ্রাহকদের এবং সরকারের শেয়ার ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে আইনটি এরকমই রয়েছে। এই আইন পরিবর্তনের কোন সরকারের ইচ্ছা নেই। অর্থমন্ত্রী আরো জানান, গ্রামীণ ব্যাংক আইন অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের বয়সসীমা ৬০ বছর পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যকাল শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ১৯৯১ সালে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে নিয়মানুযায়ী এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারকে জানানো হয়নি। ২০০৯ সালে গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়ে গঠিত রিভিউ কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, ড. ইউনূস বেআইনিভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে রয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টেও একই কথা বলা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে তখন ড. ইউনূসকে পদত্যাগ করতে বলা হলেও তিনি পদত্যাগ না করে আদালতে যান। পরে আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি পদত্যাগ করেন।
তিনি বলেন, ড. ইউনূস-পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তিনি থাকাকালীন সময় ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের আকার ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপের ফলে এর কাঠামো এবং সার্বিক কার্যক্রমে ব্যাপক গতিশীলতা এসেছে। তবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেভাবে গড়ে তুলেছিলেন সেটা সেভাবেই রয়েছে। সরকার এর কাঠামোর কোন পরিবর্তন করেনি।
আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ড. ইউনূস সামাজিক বিনিয়োগ বিষয়ে ৫৪টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থায়নে পরে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্যারান্টি নিয়ে বিদেশী ঋণে তিনি এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এর মধ্যে গ্রামীণফোন অন্যতম। এ থেকে ড. ইউনূস এ পর্যন্ত কয়েক হাজার কোটি টাকা ‘ডিভিডেন্ট’ পেয়েছেন। অথচ এ টাকা গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রাহকদের পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এক টাকাও তারা পায়নি। অর্থমন্ত্রী ব্যাংকের একজন পরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, এই লভ্যাংশ যদি গ্রাহকদের দেয়া হতো তাহলে বাংলাদেশে দারিদ্র্যতা থাকতো না। তিনি বলেন, এ বিষয়গুলো তদন্ত চলছে। অর্থমন্ত্রী গ্রামীণ কমিশনের রিপোর্ট এবং এর সুপারিশ সম্পর্কে আলোচনার জন্য ঢাকা সেমিনারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যোগদান না করার বিষয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সেমিনারে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ না নিয়ে তার সংবাদ সম্মেলন করা ঠিক হয়নি। এর আগে অধিবেশনের শুরুতে বিএনপি’র ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে গ্রামীণ ব্যাংককে ১৯ ভাগে বিভক্ত না করা, ৫১ শতাংশ শেয়ার সরকারের নামে না নেয়া সর্বোপরি এ ব্যাংকের ৮৪ লাখ নারী গ্রহীতার স্বার্থসংরক্ষণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ ব্যাংকের কাঠামো পরিবর্তন, শেয়ার পরিবর্তন করলে এর অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। তিনি বলেন, তার দল যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে গ্রামীণ ব্যাংক-কে আগের অবস্থায় নিয়ে আসা হবে।

ব্রিটেন বাংলাদেশী মানি এক্সচেঞ্জ কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগে রেমিট্রে প্রবাহে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক :
যুক্তরাজ্য সেদেশে অবস্থিত প্রায় আড়াইশ’ বাংলাদেশী মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১শ’ কোটি টাকা ডলারের রেমিট্রে দেশে আসে। ব্রিটেন বাংলাদেশী মানি এক্সচেঞ্জগুলো বন্ধ করে দিলে এদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে মারাÍক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মূলত যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের উপার্জিত আয়ের প্রায় ১শ’ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে পাঠায়। এ পরিস্থিতিতে ব্রিটেন বাংলাদেশ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বন্ধ না করে সেজন্য জোর লবিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাথে সভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশাপাশি লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস নিজেও এ ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, যুক্তরাজ্য থেকে প্রতি বছরই রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়ছে। এ কারণে সেদেশে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এক্সচেঞ্জ হাউস খুলেছে। বর্তমানে সেখানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় আড়াইশ’ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সার্ভিস চার্জ কম হওয়ায় এবং কোনো ধরনের ঝামেলা না থাকায় যুক্তরাজ্য থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রবাসীরা দ্রুত দেশে টাকা পাঠাতে পারছেন। কিন্তু সম্প্রতি ব্রিটেনের বার্কলেস ব্যাংকের সিদ্ধান্তের কারণে প্রায় আড়াইশ’ বাংলাদেশী মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়। এক্ষেত্রে ব্যাংকটির এক বিবৃতে বলা হয়, প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশে গেলেও ওই সমপরিমাণ রাজস্ব দেশটি পাচ্ছে না। এসব মাধ্যমে অভিযোগ করা হয়েছে অর্থ পাচারের ঝুঁকি রয়েছে। ব্যাংকটির অভিমত, এসব মানি এক্সচেঞ্জ বন্ধ করা হলে আর্থিক অপরাধ অনেকাংশেই কমে আসবে। কারণ দেশটির কোনো ব্যাংক আর বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকও হিসেব রাখতে চাইছে না। এজন্য আগামী ১০ জুলাই থেকে বাংলাদেশী আড়াইশ’ মানি এক্সচেঞ্জ বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা বার্কলেস ব্যাংকটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিট্রেনে অবস্থিত বাংলাদেশী মানি এক্সচেঞ্জগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশী মানি ট্রান্সফার ব্যবসায় বড় ধরনের সঙ্কটে পড়বে। কারণ বার্কলেস ব্যাংকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের ১৮টি ব্যাংক এক্সচেঞ্জসহ প্রায় আড়াইশ’ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ব্রিটেনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের বছরে প্রয় ১শ’ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্রে পাঠানোর বৈধ পথও বন্ধ হয়ে আসবে। তখন হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানো ছাড়া বিকল্প থাকবে তা। এতে দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং অর্থ পাচার বাড়ার আশঙ্কা থাকে। উদ্ভুত এ পরিস্থিতির একটি সন্তোষজনক সুরাহা পেতে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ব্রিটেন যাচ্ছেন। তিনি সেদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাথে সভা করবেন। সর্বশেষ ব্যাংকার্স সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ইতোমধ্যে বার্কলেস ব্যাংকের পক্ষ থেকে যেসব বাংলাদেশী ব্যাংকগুলোর হিসাব রক্ষা করে এক্সচেঞ্জ হাউজ পরিচালিত হতো তাদের সঙ্গে আর হিসাব রাখবে না বলে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে। অথচ বর্তমানে সোনালী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংকসহ ১৮টি ব্যাংক ছাড়াও আড়াই শতাধিক মানি এক্সচেঞ্জন ব্রিটেনে ব্যবসা পরিচালনা করছে। আর ব্রিটেন এসব বাংলাদেশী মানি এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে রেমিট্রে প্রবাহে মারাÍক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমন সিদ্ধান্তে এদেশের ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন।
এদিকে ব্রিটেনে বাংলাদেশী মানি এক্সচেঞ্জ বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে খুব বেশি করার নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সেদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরাসরি অনুরোধ জানাতে পারে। তাছাড়া ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাথে এদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে তাতে খুব বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ তেমন নেই। আর থাকলেও ১৮ ব্যাংকের কার্যক্রম হয়তো রাখা যাবে না। তবে কমিয়ে কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা হয়তো টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতে পারে। তাছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। কারণ সেটি ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এবং সরকারের যথাযথ অনুমোদন নিয়েই পুরোপুরিবাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে।

Year-20 # Issue-19 # 23 June 2013

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাড়ছে ধান-চালের দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে ধান-চালের দাম। কিন্তু উৎপাদক কৃষক দাম বৃদ্ধির সুফল পাচ্ছে না। বাড়তি লাভ চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী ও মজুদদারের পকেটে। অভিযোগ রয়েছে, কৃষকের গোলার ধান শেষ হওয়ার পর পরই অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটই কারসাজির মাধ্যমে ধান-চালের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বোরো ধানের দাম বেড়েছে মণপ্রতি আড়াইশ’ থেকে ৩শ’ টাকা। একইভাবে বাড়ছে চালসহ অন্যান্য খাদ্যশস্যের দামও। এেেত্র ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অজুহাত দেখাচ্ছে বাজারের ধানের সঙ্কটকে। আর ধান সঙ্কটে বাড়ছে চালের দামও। তাছাড়া সরকারিভাবে বোরো ধান সংগ্রহ শুরু হওয়ায় এবং ধান শুকিয়ে যাওয়ায়ও দাম বেড়েছে। গত ২ সপ্তাহ ধরেই ক্রমাগত বাড়তে শুরু করেছে ধান-চালের দাম। অথচ ধান-চালের দাম বাড়তে থাকলেও সরকারিভাবে কোনো তদারকির উদ্যোগ নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে ধান উৎপাদক কৃষকরা অধিকাংশই ুদ্র ও প্রান্তিক। এজন্য ধান উৎপাদনের মৌসুম শুরুতেই তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ধানচাষ করে। আর ধান ওঠার সাথে সাথেই ঋণদাতারা দেনা পরিশোধ চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। ফলে বাঁধ্য হয়েই কৃষকরা দেনা শোধের ল্েয কম দামে ধান বিক্রি করতে বাঁধ্য হয়। কিন্তু ঋণের ভারে জর্জরিত ধান উৎপাদক কৃষকরা বাজারে ধান বিক্রি করতে গিয়ে আশানুরূপ দাম পায়নি। বরং অধিকাংশ েেত্রই তাদেরকে লোকসানেই উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে হয়েছে। এদেশে এ ঘটনা নতুন নয়। প্রতি বছরই একই ঘটনা ঘটছে। ফলে ুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে একদিকে যেমন লোকসান গুনতে হচ্ছে, অন্যদিকে ধানের ন্যায্য দাম থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণ হিসেবে কৃষকরা সঠিক সময়ে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ না করাকে দায়ি করছে। তাদের অভিযোগ, ইচ্ছে করেই খাদ্য বিভাগ কৃষকদের স্বার্থে ধান কাটার পর পরই কৃষকদের কাছ থেকে এক ছটাক ধানও কেনে না। অথচ এসময়ে ধান কেনা হলে লাভবান হতো কৃষক। কিন্তু কৃষকের গোলা ধান শেষ হওয়ার পর সরকারি কর্তৃপ ধান কেনার ঘোষণা দেয়। সেসময় ঋণ পরিশোধের তাগিদে ধান বিক্রি করে কৃষকের গোলা হয়ে পড়ে শূন্য। কৃষকদের ধান চলে যায় মজুদদারের গুদামে। পরবর্তীতে ধানের দাম বাড়ায় কৃষকের ঘাম ঝরানো ও কষ্টের টাকায় উৎপাদিত ধানের মুনাফা চলে যায় ফড়িয়া ও মজুদদারের পকেটে। তখন প্রান্তিক কৃষকদেরই হাটবাজার থেকে সরকারি ধার্য করার দামের চেয়ে বেশি দামে ধান-চাল কিনতে হয়। এ অপতৎপরতার সাথে চাতাল মালিকরাও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, ধান-চালের বড় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আগে কম দামে ধান কিনে রেখে যখন কৃষকের গোলা শূন্য হয়ে পড়ে তখনই কৌশলে ধান-চালের দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা লুটে নিচ্ছে। সরকার সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে অবগত থাকলেও বাস্তবে কার্যকর কোনো পদপে গ্রহণে আগ্রহী নয়। শুধু তাই নয়, বাজারে ধান-চালের দাম বাড়ার আগে কম দামে কিনে রাখা ধান-চালের দাম বাড়িয়েও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মোটা অংকের মুনাফা লুটছেন। বর্তমানে মিলাররা বাজার ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে চালের দামও বাড়িয়ে চলেছে। সূত্র আরো জানায়, বাজার ধানের দাম বাড়ার কারণেই বাড়ছে চালের দামও। তাছাড়া বোরো ধান কাটার শুরুতে বৃষ্টি ও ভেজা ধান হওয়ায় ওই সময় চালকলের মালিকরা ধান কিনতে আগ্রহ দেখায়নি। তখন ধানের দামও কম ছিল। এখন আবহাওয়া শুষ্ক হওয়ায় চালকলের মালিকরা সরকারিভাবে খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। চুক্তির চাল সরবরাহের জন্য তারা বেশি দামে ধান কিনতেও পিছপা হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে খাদ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, বোরো মৌসুমের শুরুর দিকে কৃষকের ধান ভেজা হওয়ায় তা সরকারের পে কেনা সম্ভব হয়নি। এখন আবহাওয়া শুষ্ক হওয়ায় ধানের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি সরকারিভাবেও বোরো ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। আর সরকার ধান-চাল মূলত মিলারদের কাছ থেকেই কিনে থাকে। ফলে প্রান্তিক কৃষকরা ধান-চালের বাড়তি মুনাফার সুবিধা থেকে কিছুটা বঞ্চিত হয়। তবে যেসব কৃষক উৎপাদিত ধান ধরে রাখতে সম হয়েছেন তারা এখন বাড়তি দাম পাচ্ছে।
কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ বিশেষ অর্থনৈতিক জোন গঠনের উদ্যোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক : স্থবির দেশে অর্থনৈতিক জোন গঠনের উদ্যোগ। সরকারের এ উদ্যোগ এখনো কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। অথচ বর্তমান সরকার মতাসীন হওয়ার পর পরই দেশের ৭টি স্থানে বিশেসায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এেেত্র খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। বরং ৫টি স্থানে এলাকা চিহ্নিত করার মধ্যেই এ উদ্যোগের সীমিত হয়ে রয়েছে। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা নেই। ফলে উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। অথচ দেশে শিল্প-কারখানার কমপ্লায়েন্স ইস্যু রা করে অগ্রসরমান শিল্প প্রতিষ্ঠায় অর্থনৈতিক জোট গড়ে তোলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু ঘোষিত ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্পের বিকাশ ও রাজধানীকেন্দ্রিক শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণের ল্েয ৭টি অর্থনৈতিক জোন গঠনের প্রাথমিক উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেছিল সরকার। এজন্য ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। একই সাথে ৭টি অর্থনৈতিক জোনের মধ্যে ৫টি জোন গড়ে তোলার জন্য এলাকাও চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু তারপরই থমকে গেছে এ কার্যক্রম। কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি আগামী অর্থবছরের বাজেটেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এমনকি এজন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও (এডিপি) কোনো প্রকল্প গ্রহণ বা মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দ রাখা হয়নি। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপরে গভর্নিং বোর্ড ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে প্রথম সভায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের ল্েয ৫টি স্থান নির্বাচন করে। এগুলো হচ্ছেÑ চট্টগ্রামের মিরসরাই ও আনোয়ারা, সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু সংলগ্ন স্থান, মৌলভীবাজারের শেরপুর ও বাগেরহাটের মংলায় ২ বছরের মধ্যে এসব অঞ্চল স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময়েও এ ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ দেশের ব্যবসায়ী মহলের মতে, দেশের উন্নয়নে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা খুবই জরুরি। সেখানে শিল্পের অগ্রগতির জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহও নিশ্চিত করার পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া বিকল্প নেই। কিন্তু বাজেটে শিল্পনগরী বা বিশেসায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে বরাদ্দ না থাকায় তা এদেশের শিল্পায়নের েেত্র প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। তাছাড়া দেশে শিল্পায়নের বর্তমান অবকাঠামোগত সঙ্কটের বিবেচনায় আরো আগেই বিশেসায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং খাতভিত্তিক শিল্পপার্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিলেও আশানুরূপ হয়নি বাস্তব অগ্রগতি নেই।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশের ৮টি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) প্লট না থাকায় নতুন অর্থনেতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তাছাড়া ইপিজেডগুলোতে শতভাগ রফতানিমুখী নয় এমন স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানকে জায়গা দেয়া হয় না। একই সাথে নতুন শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠায় ভূমি সঙ্কটের কারণেও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের জোরালো দাবি রয়েছে। কিন্তু তারপরও সরকার নতুন করে ইপিজেড স্থাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যায়ক্রমে ২০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরি করা। আর এসব অঞ্চলে প্রতি বছর আড়াই বিলিয়ন ডলারের নতুন বিনিয়োগ হবে।

আজ আওয়ামী লীগের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
নিজস্ব প্রতিবেদক :
আজ ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের এদিনে প্রতিষ্ঠিত এই দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়।
পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে এই দলের আÍপ্রকাশ ঘটলেও পরে শুধু আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে বিকাশ লাভ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ দেশে পাকিস্তানি সামরিক শাসন, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এ দলটি। ১৯৪৯ সালের এদিনে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের প্রথম সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক এবং শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন, ৬৪-এর দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপসহীন সংগ্রামণ্ডলড়াই এবং ১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যখন শোষণমুক্ত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গঠনে ব্যস্ত, তখনই ঘাতকরা ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে সপরিবারে তাঁকে হত্যা করে। নির্যাতন আর নিপীড়নের মাধ্যমে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয় জনগণের সংগঠন আওয়ামী লীগকে।
এ অবস্থায় ১৯৮১ সালের ১৭ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে আবারো ঘুরে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেন।
দীর্ঘ একুশ বছর লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে ২৩ জুন আওয়ামী লীগ মতায় ফিরে আসে। ২০০১ এবং ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আর এক দফা বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় এই দলটি। কর্মসূচি : সূর্যোদয় ণে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭ টা বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতীকৃতীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, পায়রা উন্মুক্ত ও বেলুন উড়ানো। এদিকে ৬৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলে বিকেলে গণর‌্যালি করবে আওয়ামী লীগ। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনের পাদদেশ থেকে বিকেল সাড়ে ৩ টা র‌্যালিটি শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হবে।
শাসকরা গণমাধ্যমকে হাতিয়ার করছে
নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যবসার কারণে এরসঙ্গে জড়িতরা স্বাভাবিকভাবেই শাসক গোষ্ঠীর প্রতি দুর্বল থাকে। গণমাধ্যমে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে করার কারণে একে সরকারের পে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। এ অভিযোগ এনেছে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশান স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে অধিকার আয়োজিত ‘সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিযোগ করেন। তারা বলেন, ১/১১’র সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন সরকার তাদের মতা চাপিয়ে দিয়ে সংবাদ পত্রের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করেছে। বর্তমান সরকারের সময়ে আঘাত এসেছে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদূর রহমানের ওপর। তাকে দুইবার গ্রেফতার এবং পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বক্তারা বলেন, তথ্য মানুষকে সুনিশ্চিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সংগঠিত হতে সাহায্য করে। রাজনীতিতে বৃহত্তর মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরো শক্তিশালী করে গণমুখী উন্নয়ন কার্যক্রম তরানি¦ত করে। যা কোন সরকারই পছন্দ করছেন না। সংবাদ মাধ্যমই যেহেতু মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেয় তাই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ মাধ্যমই যেন সরকারের প্রথম প্রতিপ। বক্তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, শাসক গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে তথ্য জানার অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। যার প্রভাব পড়ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর।
অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়- ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের মে মাস পর্যন্ত ১২ জন সাংবাদিক তাদের পেশগত দায়িত্ব পালনকালে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ৬২৯ জন। এছাড়া লাঞ্ছিত হয়েছেন ২৩৬ জন। আক্রমণের শিকার ৮৩ ও গ্রেফতার হয়েছেন ১৩ জন। অপহরণের শিকার হয়েছেন ৩ জন। হুমকির শিকার ২৮৯ এবং ৯১ জন বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১০৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তাই সংবাদ পত্রের স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামকে জোড়দার করার বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বিএনপির উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, কলামিস্ট ও নাগরিক অধিকার রা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ফরহাদ মাজহার, আয়োজক সংগঠনের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান, ট্রেজারার রুহুল আমিন ভুঁইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পিরোজপুর জেলায় ১৫০ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিতে
পিরোজপুর প্রতিনিধি :
পিরোজপুর জেলার ৭ উপজেলায় দেড় শ’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব বিদ্যালয় ভবনের অধিকাংশের ছাদ, দেয়াল, বীম, কলামে বড় বড় ফাটল ধরেছে। পলেস্তর খসে পড়েছে প্রায় সব ভবনেরই। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি প্রতিদিন কাস করছে অন্তত ৩০ হাজার শিশু ছাত্র ও কয়েক শ’ শিক। পিরোজপুর সদরের কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলাখালী ইউনিয়নের কৈবর্ত্যখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিকদারমল্লিক ইউনিয়নের পাঁচপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাজিরপুর উপজেলার চৌঠাঁইমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় অর্ধ শতাধিক বিদ্যালয় এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
নাজিরপুর উপজেলার গিলাতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাস করছে ৩ শতাধিক ছাত্র। এ বিদ্যালয় ভবনটি এতই জরাজির্ণ যে কাস চলাকালেও এর ছাদ থেকে পলেস্তর খসে পড়ে। গত ৯ জুন কাস চলাকালে ছাদের পলেস্তর খসে পড়ে ১১ জন ছাত্র ও ২ জন শিক আহত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন যেকোন মুহূর্তে ভবনটি ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক অমূল্য কুমার হালদার জানান, অন্য কোন ভবন না থাকায় বাঁধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে কাস করাতে হচ্ছে। তিনি জানান বার বার কর্তৃপরে নিকট আবেদন করেও কোন ফল হয়নি। এ ব্যাপার উপজেলা শিা কর্মকর্তা জানান ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক। ভবনটি সংস্কারেরও উপযোগী নয়। এটি ভেঙে ফেলতে হবে। বিষয়টি জেলা কর্তৃপকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে পিরোজপুর সদর উপজেরার কৈবর্ত্যখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এতই ঝূঁকিপূর্ণ যে মাঝে মধ্যে ছাত্রদেরকে নিয়ে শিকরা খোলা আকাশের নিচে কাস করান। এ বিদ্যালয় ভবনটি ১৯৪৯ সালে নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে পাকা ভবনটির ছাদসহ পুরো অবকাঠামোই ধংশের দ্বার প্রান্তে। সামান্য বৃষ্টিতেই ছাদ থেকে পানি পড়ে। এতে বিদ্যালয়ের জরুরি কাগজপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। এ ভবনটি যেকোন সময়ে ভেঙে পড়ে জীবন হানির মত মারাÍক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক মোঃ আতিকুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের ১৪৭ জন শিার্থীকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। বিদ্যালয়ে কাস করাকালে প্রতিনিয়ত ভীতির মধ্যে থাকেন কখন কি ঘটে যায়। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিা কর্মকর্তা মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন জানান, জেলায় ১৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে নাজিরপুর ও মঠবাড়িয়া উপজেলায়। তিনি জানান ভবনগুলো মেরামত ও পুণঃ নির্মাণের জন্য কর্তৃপরে কাছে লেখা হয়েছে।
আজকের সঞ্চয়, আগামী দিনের ভবিষ্যত
কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : আজকের সঞ্চয়, আগামী দিরে ভবিষ্যত। স্কুল ব্যাংকিং একাউন্টস নামে ছাত্রছাত্রীদের জন্য সঞ্চয়ী হিসাব খোলার উদ্যোগ নিয়েছে সোনালী ব্যাংক। ৭ থেকে ১৭ বছরের যে কোন ছাত্রছাত্রী তার অভিভাবকের সাথে যৌথভাবে এ হিসাব খুলতে পারবে এবং যে কোন পরিমাণ টাকা জমা করতে পারবে। সরকার তথা ব্যাংকের নেয়া উদ্যোগ এবং ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত গড়ার ল্েয কাপ্তাই সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খুলে সঞ্চয়ী হয়ে আগামী দিনের ভবিষ্যত গড়ে তোলার ব্যাপারে আগ্রহী করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি কাপ্তাই শহীদ তিতুমির একাডিমীতে এ উপলে কাপ্তাই সোনালী ব্যাংক কর্তৃক শিা কর্মকর্তা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক-শিকিাদের নিয়ে এক আলোচনা সভা করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সোনালী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা শিা কর্মকর্তা একেএম রুহুল আমিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী শিা কর্মকর্তা মোঃ ইদ্রিছ, সোনালী ব্যাংক চন্দ্রঘোনা শাখার এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা প্রিয়ব্রত বিশ্বাস। বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক কাজী মোশাররফ হোসেন, ডা. আহমদ নবী, প্রধান শিক ইউসুপ, আশুতোষ দাশ, মোঃ হারুন। অনুষ্ঠানে কাপ্তাই ৪ নং ইউনিয়নের আওতাধীন সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক-শিকিাগণ উপস্থিত ছিলেন। ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সের ছাত্রছাত্রীদের ”স্কুল ব্যাংকিং একাউন্টস” সম্পর্কে ব্যাংক কর্মকর্তাগণ বিস্তারিত তুলে ধরেন। সহজে এ হিসাব খোলার ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন বলে তারা জানান। এমনকি বিদ্যালয়ে গিয়ে হিসাব খোলা ও সঞ্চয় সংগ্রহ করা হবে বলেও জানানো হয়। এছাড়া কাপ্তাই নতুন বাজারে ব্যাংকের আরো একটি শাখা অফিস খোলা হবে বলেও ব্যাং কর্মকর্তা নিশ্চিত করে। হিসাব খোলার ব্যাপারে ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের উৎসাহিত করার জন্য শিকদের প্রতি ব্যাংক কর্মকর্তাগণ অনুরোধ করেন। অন্যান্য বক্তাগণ বলেন শিশুদের এ সঞ্চয় তাদের আগামীদিনের লেখাপড়ার যোগান হয়ে দাড়াবে। তাই সরকারের তথা সোনালী ব্যাংকের নেয়া এ পদপেকে বাস্তবে রুপ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঞ্চয়ী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করে ােলার জন্য শিকদের প্রতি অনুরোধ জানান। চৌধুরীছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক আশুতো দাশ জানান, এরই মধ্যে তার বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী এ হিসাব খুলেছে। এমনকি ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত কোন কোন হিসাবে ইতোমধ্যে জমা হয়েছে।