Year-20 # Issue-24 # 28 July 2013

তারেকের ভাবনায় বিএনপির আগামী নির্বাচনের ইশতেহার! (ভিডিও)
তারেকের ভাবনায় বিএনপির আগামী নির্বাচনের ইশতেহার
তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনেই আগামী নির্বাচন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বুধবার লন্ডনের গৌমেন হোটেল দ্য টাওয়ারসে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইফতার পূর্ব আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক নিজ ভাবনা প্রকাশের খোলসে আগামী নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য ইশতেহারই যেন তুলে ধরেছেন নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের সামনে। তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন নির্বাচন নয়, মূল ইস্যু তত্ত্বাবধায়ক সরকার সিস্টেম। ভবিষ্যতসমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্যেই এ সিস্টেম ফিরিয়ে আনতে হবে। এ সিস্টেম ফিরিয়ে আনার ওপর নির্ভর করছে একটি জনসম্পৃক্ত, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী কোনো রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়া বা না যাওয়ার বিষয়।
বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি সাইস্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ইফতারপূর্ব আলোচনা সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ।
আগামী নির্বাচনের ইশতেহার
গত ২/৩ দিন ধরে লন্ডনের কমিউনিটিতে আলোচিত ছিল বিএনপির এ ইফতার মাহফিল। তারেক রহমান কেন্দ্রীয় লন্ডনের পাঁচ তারকা এ হোটেলে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বক্তৃতা দেবেন এমন আভাসও দিচ্ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতারা।
ইফতার পূর্ব আলোচনায় তারেক বাংলাদেশ নিয়ে তার ভবিষ্যত ভাবনার কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকদের মতে, তারেক নিজ ভাবনা প্রকাশের খোলসে আগামী নির্বাচনে বিএনপির ইশতেহারই তুলে ধরেছেন নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের সামনে।
প্রতিপক্ষের সমালোচনা নেই
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তারেক কিছু বলবেন, এমন আশা নিয়ে দলের নেতাকর্মীসহ সাংবাদিকরা গিয়েছিলেন ইফতার মাহফিলে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জোটের রাজনীতি বা প্রতিপক্ষের কোনো সমালোচনাই ছিল না তারেকের বক্তৃতায়।
প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে দেওয়া তারেকের এ বক্তৃতার পুরোটাই ছিল বাংলাদেশ নিয়ে তার ভবিষ্যত ভাবনা। কেমন হতে পারে বাংলাদেশ, তার এই ভাবনা দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে তুলে ধরে তিনি জানতে চেয়েছেন, এ ভাবনা বা স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব কি না। উত্তরে নেতাকর্মীরা সমস্বরে নেতাকে দিয়েছেন সাহস, বলেছেন, সবই সম্ভব তারেকের নেতৃত্বে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, এমন একটি বাংলাদেশ আমাদের গড়ে তুলতে হবে, যে দেশ আধুনিক পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য স্থির করতে হবে, যেকোনো জায়গায় ঢিল ছুঁড়লে চলবে না। অতীতমুখিতা নয়, ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে, এমনই পরামর্শ তারেকের নেতাকর্মীদের প্রতি।
তারেক বলেন, গতানুগতিকতার মধ্যে আবদ্ধ থাকলে চূড়ান্ত লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে পারবো না। প্রতিপক্ষের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতির কৌশল নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।
কেন পারবে না বাংলাদেশ
কৃষি, শিক্ষা, পর্যটন, বিদ্যুৎ, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে নিজের ভাবনা প্রকাশ করে তারেক বলেন, পৃথিবীর অন্য দেশ যদি পারে তাহলে কেন পারবে না বাংলাদেশ?
কৃষি ক্ষেত্রে আরো ভর্তুকি বাড়িয়ে এ খাতকে রফতানিকেন্দ্রিক শিল্পে রূপান্তরের তার ভাবনার কথা প্রকাশ করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ব্রিটেনের সেইন্সবারি, আজদা, টেসকোসহ বড় বড় সুপার স্টোরগুলোতে গ্রোসারিজাত সব সামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। অন্যান্য দেশ যদি ব্রিটেনের মতো দেশের চাহিদা অনুযায়ী গ্রোসারি, পোল্ট্রিসহ অন্যান্য পণ্যের জোগান দিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন পারবে না?
তিনি কৃষি খাতকে শিল্পায়নে রূপদানের মাধ্যমে এমন একটি প্লাটফরম তৈরি করার কথা বলেন, যে প্লাটফরম দেশের কৃষক ও পোল্ট্রি মালিকদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের যোগসূত্র সৃষ্টি করে দেবে। কৃষি খাতে প্রয়োজনে আরো ভর্তুকি দিয়ে বাংলাদেশের কৃষিজাত ও পোল্টিজাত পণ্য বিদেশের বাজারে প্রবেশ করানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে তারেক বলেন, বাংলাদেশের কৃষি ও পোল্ট্রি প্র্রডাক্টের বর্তমান রফতানি বাজার ১.৫ বিলিয়ন ডলার। কৃষি খাতকে শিল্পায়নে রূপান্তরিত করা গেলে আগামী ৫ বছরে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে এ রফতানি বাজার ৫ বিলিয়ন ডলারে উত্তরণ সম্ভব।
গার্মেন্টসের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়
গার্মেন্টস সেক্টরকে বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের অন্যতম খাত উল্লেখ করে তারেক বলেন, এ খাত যেমন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা দিচ্ছে, ঠিক তেমনি বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছে। এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করে আরও আধুনিকায়ন করতে পারলে ৫ বছরে ২২ বিলিয়ন থেকে ৪৫ বিলিয়ন ডলার এ খাত থেকে আয় করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তারেক।
তিনি বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরের জন্যে আলাদা একটি মন্ত্রণালয় গঠন এখন সময়ের দাবি। গার্মেন্টস পণ্য ছাড়াও অন্যান্য পণ্যের ম্যানুফ্যাকচারিং এবং রফতানির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন দেশের প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা তারেক রহমান।
বহু ভাষায় দক্ষতা অর্জন জরুরি
শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে বিএনপির আগামী দিনের এই কর্ণধার বলেন, ইংরেজিসহ অন্যান্য প্রধান ভাষা শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে আমাদের। বিশ্ব চাকরি বাজারে আমাদের সন্তানরা যাতে নিজ যোগ্যতায় সহজেই ঢুকতে পারে, সে লক্ষ্যেই বহু ভাষায় দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন তাদের।
কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে তারেক বলেন, কারিগরি শিক্ষা বেকারত্ব ঘোচাতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত একটি জনগোষ্ঠি গড়তে পারলে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গঠন করে এ জনগোষ্ঠিকে কাজে লাগানো সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পরিকল্পিত আবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ১৫ কোটি মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থার জন্যে পরিকল্পিত আবাসনের বিকল্প নেই। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সোলার সিস্টেমকেও কাজে লাগানোর তাগিদ অনুভব করেন তারেক। দেশের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ সিস্টেম সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে বলে তার ধারণা।
পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের সোনালি সম্ভাবনা
পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের সোনালি সম্ভাবনা রয়েছে মন্তব্য করে তারেক বলেন, ব্রিটেনের সাফারি পার্কের মত আমাদের সুন্দরবনকে গড়ে তুলতে পারি আমরা। সুন্দরবনের অভ্যন্তরের খালগুলো সংষ্কার করে উন্নতমানের নৌ-যানের মাধ্যমে পর্যটকরা উপভোগ করতে পারেন মুক্ত পশু-পাখির অবাধ বিচরণ। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতকে নান্দনিক রূপে সাজিয়ে তুললে পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকতে পরিণত হবে এটি।
সমু্দ্রের সিলিকনকে মূল্যবান সম্পদ আখ্যায়িত করে তারেক বলেন, আমেরিকায় সিলিকন ভ্যালি ও ব্রিটেনে সিলিকন প্যান থাকলে বাংলাদেশের কক্সবাজারকে কেন আমরা ‘সিলিক্যান বিচ সিটি’ নামে গড়ে তুলতে পারি না?
ব্যক্তি উদ্যোগে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা
ধোলাই খাল, বগুড়া ও সৈয়দপুরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও দক্ষতায় যন্ত্রপাতি নির্মাণের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগের এই সব ছোট ছোট কারখানাকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিলে যন্ত্রপাতি নির্মাণের বিশাল শিল্প গড়ে উঠতে পারে বাংলাদেশে।
কৃষি খাত, কনস্ট্রাকশন, অটোমোবাইল ও জাহাজ নির্মাণ সামগ্রীর বিরাট শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, একমাত্র কৃষি যন্ত্রপাতির আন্তর্জাতিক বাজার রয়েছে ১২৫ বিলিয়ন ডলারের। চীন যদি ১২ মিলিয়ন ডলারের কৃষি যন্ত্রপাতি বিশ্ববাজারে রফতানি করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কি এই বাজারে নিজেদের তৈরি কৃষি যন্ত্রপাতি রফতানি করে ১২৫ বিলিয়ন ডলারের এক শতাংশও বছরে আয় করতে পারে না?
প্রয়োজন আরেকটি সাবমেরিন ক্যাবল
প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ডাটা প্রসেসিং, কল সেন্টার, সফটওয়ার ডেভেলপমেন্টে আমাদের তরুণদের যোগ্যতা অন্যান্য দেশের তরুণদের চেয়ে কম নয়। এ যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ আয় করতে পারে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
এক্ষেত্রে আরেকটি সাবমেরিন ক্যাবলের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্রুততর ইন্টারনেট সুবিধা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারলে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারি। জনগণের পানির চাহিদা পূরণে বর্ষার সময় পানি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তারেক রহমান বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা জিয়াউর রহমান অনেক আগেই পানি সংরক্ষণের কৌশল আমাদের শিখিয়ে গিয়েছিলেন। নদ-নদী, খাল-বিল খনন করে আমরা বর্ষায় যদি পানি সংরক্ষণ করতে পারি, তাহলে এই পানি দিয়ে কৃষিকাজসহ অনেক কিছুই করা সম্ভব।
যেন ছাত্রদের ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক
বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে নেতাকর্মীদের প্রশ্নও করেন তারেক। দেশ ও সাম্প্রতিক বিশ্ব সম্পর্কে কেমন ধারণা আছে নেতাকর্মীদের সে সম্পর্কে পরীক্ষাও নেন কারো কারো। যেন ছাত্রদের ক্লাস নিচ্ছেন কোনো শিক্ষক। তার কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কৌতুক করে কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার কথাও বলেন নেতাকর্মীদের। বক্তৃতার শেষের দিকে ঈদের পর আবারও নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার ঘোষণা দেন তারেক। আর বক্তৃতা শেষে ঘুরে ঘুরে প্রতিটি টেবিলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি।
আইনমন্ত্রী কথা বলবেন, এজলাস থেকে নেমে আসুন
এজলাসে আচমকা ঢুকলেন আইনপ্রণেতা মনিরুল ইসলাম মনি। তখন বিচারকাজ চলছিল একটি মামলার। এমন অবস্থায় তিনি এগিয়ে গেলেন এজলাসের দিকে। দায়িত্বরত বিচারকের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিচারককে বললেন, আইনমন্ত্রী আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। আপনি নেমে আসুন। তার এ আবদার শুনে উপস্থিত আইনজীবীরা তাজ্জব বনে যান। বিব্রত, বিচলিত আইনজীবীরা তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ শুরু করেন। হৈ চৈ হট্টগোলে এমপি মনি বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি এজলাস কক্ষে। জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সহযোগিতায় তিনি গা বাঁচান সেখান থেকে। ঘটনাটি ঘটে গতকাল বরিশালের একটি আদালতে। মনিরুল ইসলাম মনি বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি আদালতে গিয়েছিলেন একটি মামলার বিষয়ে তদবির করতে। ওই মামলাটির শুনানির তারিখ ছিল গতকাল।
প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানান, এমপি মনি এজলাস কক্ষে ঢুকে মুঠোফোন বের করে বিচারক মো. জাহিদুল কবিরকে বলেন, ‘আইনমন্ত্রী আপনার সঙ্গে কথা বলবেন।’ তার এ কথা শুনে উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। গতকাল বেলা পৌনে ১২টার সময় বরিশাল অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে। তবে বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস ওই সময় এমপি মনিকে আদালত থেকে বের করে নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন।  মনিরুল ইসলাম মনি এমপি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আইনমন্ত্রীর একটি  মেসেজ দিতে গিয়ে আদালতে গিয়েছিলেন। পরে আদালতে বিচার চলার কারণে এমপি  ইউনুসের সঙ্গে বেরিয়ে আসেন তিনি। অপর প্রত্যক্ষদর্শী এডভোকেট এমএইচ সালেক জানান,  গত ২৯শে মে  উজিরপুর উপজেলা চত্বরে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল ও সংসদ সদস্য মনির ছেলে ড. রিয়াজুল ইসলাম সুমনের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনির গাড়ি ভাঙচুর করে উপজেলা চেয়ারম্যান বাদল সমর্থকরা। ওই ঘটনায় এমপি মনির স্থানীয় প্রতিনিধি নাসিরউদ্দিন বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ নামধারী ১০ জন ও  অজ্ঞাতনামা ৪০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল জামিন নেন। পরে মামলার বাদী জামিনের বিরোধিতা করে নারাজি দেন। রোববার ওই নারাজির ওপর শুনানি চলছিল।
এদিকে এমপি মনিরুল ইসলাম মনির নানা কর্মকাণ্ডে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তার ওপর ক্ষুব্ধ। গত শনিবার বানারীপাড়ায় এমপি’র সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বের জের হিসেবে সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মিন্টুকে জাসদ নেতা কবির হত্যা মামলার আসামি করেন মনি। এছাড়াও বরিশালে ঠিকাদারি কাজ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাকে ঘেরাও করে লাঞ্ছিত করে। এছাড়া, গত মাসে উপজেলা উন্নয়ন সভায় তাকে দাওয়াত না দেয়ায় অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেয় মনি সমর্থকরা।  এ সময় মনি ও তার পুত্রকে অবরুদ্ধ করা হয়। এক পর্যায়ে মনির পুত্র রিয়াজ অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে। ওই ছবি প্রকাশের পর ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হন এমপি মনি।

দুই নেত্রীর খেয়ালে কাটছে না সংকট
প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের দুই শীর্ষ নেত্রীর চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার ইস্যুতে কয়েক দফা সম্ভাবনা জাগলেও শেষ পর্যন্ত সংলাপে বস‍া হয় নি তাদের। খুঁজে পাওয়া যায়নি চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের গ্রহণযোগ্য সমাধান। দুই শীর্ষ নেত্রীর বক্তৃতা-বিবৃতি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক পদক্ষেপ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কখনো সখনো তারা সঙ্কট নিরসনে সংলাপে বসার লোক দেখানো আগ্রহ দেখিয়েছেন বটে। কিন্তু যখনই সংলাপের সম্ভাবনা জেগেছে তখনই কোনো না কোন ছুতোয় পিঠ টান দিয়ে আলোচনা ঘুরিয়ে দিয়েছেন তাদের কেউ না কেউ। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি যখনই সংলাপ নিয়ে আলোচনায় বসার ব্যাপারে ইতিবাচক কথা বলেছেন, তখনই  হয়তো বেঁকে বসেছেন বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর বিরোধী দলীয় নেতা আগ্রহী দেখিয়েছেন তো খোদ প্রধানমন্ত্রীই হয়ে উঠেছেন অনাগ্রহী। আবার শেখ হাসিনা ইতিবাচক বক্তব্য দিলে কড়া সমালোচনায় পরিষ্কার জল ঘোল‍া করে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। মে মাসের গোড়াতে প্রধানমন্ত্রী যখন গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তখন খালেদার কণ্ঠে বেজেছে উল্টো সুর। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়ে সঙ্কট সমাধানের ইচ্ছাকে নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন তিনি।
এরপর আড়াই মাস পার করে সেই খালেদা জিয়াই সংলাপের ব্যাপারে নরম সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন।
রমজান শুরুর পর থেকে অংশ নেওয়া প্রায় প্রতিটি ইফতার ‍মাহফিলেই এখন তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল ইস্যু নিয়ে সংলাপে বসার আগ্রহ প্রকাশ করছেন তিনি।
যদিও সদ্য শেষ হওয়া বাজেট অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে কোনো প্রস্তাব দেন নি বিরোধী দলীয় নেতা। গত ৩ জুন শুরু হওয়া মহাজোট সরকারের সর্বশেষ এই বাজেট অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল বিষয়ক একটি মুলতবি প্রস্তাব জমা দেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে অধিবেশন শুরুর মাত্র কয়েক মিনিট আগে তা প্রত্যাহার করে নেয় বিএনপি। এরপর কয়েক দফা ওয়াকআউট করেও অধিবেশনে থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল নিয়ে বিরোধী দল শুধু গরম গরম বক্তৃতাই দিয়েছে। কোনো ফরমাল প্রস্তাবই তোলে নি। এ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে সংসদে আলোচনা না হওয়ার দায় বিরোধী দলের ওপরই চাপিয়েছে সরকার পক্ষ। কাজেই দেখা যাচ্ছে, একই ইস্যুতে যখন নরম হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, তখন বিরোধী দলীয় নেত্রী কঠোর হচ্ছেন। আর যখন বিরোধী দলীয় নেত্রী নরম হচ্ছেন, তখন কঠোর অবস্থানে চলে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল নিয়ে সংলাপ আর হচ্ছে না। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকেও ‍মুক্তি মিলছে না দেশবাসীর।
ক্ষমতায় থাকার ১২ কৌশল
ডক্টর তুহিন মালিক
ওয়ান-ইলেভেনের আগে দেশের যা পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল বর্তমানের অবস্থা তার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ। গতবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়ে একগুঁয়েমির কারণে সংঘাত হয়েছিল। অথচ এবার পুরো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল করা হলো। গতবার নির্বাচনে কারচুপি হবে এমন অভিযোগে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করলে দেশে জরুরি অবস্থা চলে আসে। অথচ এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো নিশ্চয়তা না পেলে বিএনপিও আগামী নির্বাচন বয়কট করবে নিঃসন্দেহে। তা ছাড়া দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে জামায়াত কোনো নির্বাচনে যাবে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। ঈদের পর জাতীয় রাজনীতিতে এসব ঘটনায় অচলাবস্থা সৃষ্টিকারী বিক্ষোভ-আন্দোলনের পরিমাণ বাড়বে মাত্রাতিরিক্ত। এই অচলাবস্থা রাজপথের সংঘাতকে বাড়িয়ে দেবে আরও বহুগুণে। আসলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিটি শুধু বাতিলই করা হয়নি বরং দলীয় সরকারের অধীনে দলীয় মন্ত্রী, এমপি, ডিসিদের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করিয়ে নবনির্বাচিতদের বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার বিধান রাখা হয়েছে।
সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদ মতে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বহাল থাকবেন। পঞ্চদশ সংশোধনীর পর বর্তমান সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ মতে, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন হবে এবং বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা কার্যভার গ্রহণ করতে পারবেন না। তখন একই সময়ে একই আসনে দুইজন এমপি থাকবেন। সংবিধানের ৫৬(৪) অনুচ্ছেদ মতে সংসদ ভেঙে গেলেও বর্তমান মন্ত্রীরা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। তা ছাড়া অন্য কোনো দল নির্বাচনে জয়ী হলেও প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা না ছাড়লে করার কিছু থাকবে না, যদি না তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ডিসিসির মতো একই ফর্মুলায় সীমানা নির্ধারণসহ যে কোনো আইনি জটিলতার অজুহাতে সংসদ নির্বাচনের ওপরও স্থিতাবস্থা আসতে পারে এবং জাতীয় নির্বাচনও বছরের পর বছর ঝুলে থাকতে পারে। গত সোমবার জাতীয় সংসদের একটি আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট মামলায় আদালত থেকে রুল জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের বিধানকে সামনে রেখে 'রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ আদালতের পরামর্শ নিয়ে বর্তমান সংসদকে পুনরুজ্জীবিত' তত্ত্বটি সুরঞ্জিত বাবু জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীও বলে রেখেছেন, তত্ত্বাবধায়ক চাইলে নির্বাচনই হবে না। কী হতে পারে সামনের দিনগুলোতে? সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশলগুলোই বা কী হতে পারে? বর্তমান সংশোধিত সংবিধানের সুযোগ নিয়ে মোটা দাগে ১২টি কৌশল সরকার ব্যবহার করতে পারে।
১. সংবিধানের ১২৩(৩) এবং ৫৭(৩) অনুচ্ছেদের সুযোগ নিয়ে পরবর্তী কোনো নির্বাচন না দিয়ে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা।
২. ডিসিসির নির্বাচনের মতো আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে কোনো নির্বাচন না দিয়ে সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় থাকা।
৩. সুরঞ্জিত বাবুর 'রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ আদালতের পরামর্শ নিয়ে বর্তমান সংসদকে পুনরুজ্জীবিত' তত্ত্ব দিয়ে ক্ষমতায় থাকা। যদিও সংবিধানের আওতায় এটা করা প্রায় অসম্ভব।
৪. জাতীয় নির্বাচনের জন্য সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে আইনি জটিলতা তৈরি করে নির্বাচনী তফসিল স্থগিত করে ক্ষমতায় থাকা (ইতোমধ্যে ৫৩টি আসনে জটিলতা তৈরি হয়েছে এবং উচ্চ আদালতেও রিট করে রুল জারি হয়েছে)।
৫. দেশে সংঘাত সৃষ্টি করে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়কে ব্যবহার করে দেশে সংবিধানের ১৪১ক অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করিয়ে সংবিধানের মৌলিক অধিকার স্থগিত করে কোনো নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতায় থাকা।
৬. নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করে পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে কোনো নির্বাচন না দিয়ে সংশোধিত সংবিধানের সুযোগ নিয়ে ক্ষমতায় থাকা।
৭. পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলার মারাত্দক অবনতি ঘটিয়ে তৃতীয় কোনো শক্তির কাছে নিরাপদ প্রস্থানের শর্তে ক্ষমতা অর্পণ করে নিজেদের রক্ষা করা।
৮. বাছাই করা কিছু রাজনীতিবিদকে বিরোধী দল হিসেবে শ'খানেক আসন দিয়ে বিএনপিবিহীন নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকা (তবে এটা বর্তমান বাস্তবতায় বেশ দুরূহ কাজ)।
৯. বর্তমান সাংবিধানিক আইনের আওতায় ক্ষমতায় থেকেই বিএনপিকে বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা (সরকারের কাছে এটাই বোধহয় সবচেয়ে লোভনীয় কৌশল)।
১০. বর্তমান সাংবিধানিক আইনের আওতায় ক্ষমতায় থেকে বিএনপিসহ সব দলকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনের প্রয়াস এবং একটি সাজানো নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণায় জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বহাল থাকার চেষ্টা।
১১. সরকার ও বিরোধী দল থেকে সমানসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার গঠন করে সরকারপ্রধান হিসেবে নিজেদের লোকদের বসিয়ে পছন্দমতো সাজানো নির্বাচন করে ক্ষমতায় ফিরে আসা।
১২. গণআন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল হলেও নিজেদের পছন্দমতো উপদেষ্টাদের দিয়ে নির্বাচন করিয়ে 'পোলিং ক্যু' ঘটিয়ে পুনরায় ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করা (তবে এতে টিকে থাকা কঠিন হবে)।
লেখক : আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ।

পরিবহনে দিনে তিন কোটি টাকা
মোস্তফা কাজল
পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে প্রায় দেড় লাখ বাস-মিনিবাস ও কাভার্ড ভ্যান থেকে প্রতিদিন তিন কোটি টাকারও বেশি চাঁদা তোলা হচ্ছে। এটি স্বাভাবিক সময়ের চাঁদার প্রায় দ্বিগুণ। মালিক-শ্রমিকের কল্যাণ, বখশিশ ও ইফতার আয়োজনের কথা বলেই পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এসব চাঁদার টাকা তোলা হচ্ছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে চাঁদার রেট দিন দিন ততই বাড়ছে। পেশাদার চাঁদাবাজদের পাশাপাশি পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। ভুক্তভোগী পরিবহন ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ মানেই চাঁদার নামে চলে মানসিক নির্যাতন। এখন ব্যবসা করতে হলে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পেশাদার সন্ত্রাসী, পুলিশ, চাঁদাবাজসহ অনেককেই নিয়মিত টাকা দিতে হয়। পাশাপাশি পরিবহন চাঁদাবাজির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়া পুলিশদের কাছ থেকেও কোনো নিস্তার মেলে না। ট্যাঙ্কি্যাব থেকে শুরু করে হিউম্যান হলার, বাস, মিনিবাস ও ট্রাক কিছুই চলতে পারছে না ঈদ বখশিশ বা চাঁদার টাকা না দিয়ে। ঈদ এলেই সন্ত্রাসীদের অস্ত্র আর পুলিশের টোকেন বাণিজ্যের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। আর পুলিশকে টাকা না দিয়ে রাস্তায় গাড়ি নামানোর প্রশ্নই ওঠে না। বিআরটিএর তথ্যমতে, সারা দেশে বর্তমানে ৩৭ হাজার ১৭১টি বাস, ৩৫ হাজার ৫৯৭টি মিনিবাস ও ৭১ হাজার ৫০৫টি ট্রাক রয়েছে। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪৪ হাজার যানবাহন থেকে ঈদ মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় তিন কোটি টাকার বেশি চাঁদা তুলছে মালিক-শ্রমিকের সংগঠন ও পুলিশ। অবশ্য এর সঙ্গে ক্যাব, সিএনজি, হিউম্যান হলারের চাঁদা যোগ করলে সেই অঙ্কের পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে। রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সিটি বাসস্ট্যান্ড থেকেই প্রতিদিন চাঁদা উঠছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সদস্যরা এই টাকা নিজেদের তহবিলে জমা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ, আবদুল্লাহপুর ও সদরঘাট থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ চাঁদার টাকা উঠছে। এই টাকা উঠছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি ও বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নামে। অভিযোগ রয়েছে, এ তিন সংগঠনের সদস্যরা প্রতিদিন এসব টার্মিনাল এলাকা থেকে চাঁদার টাকা তোলেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার বাসস্ট্যান্ড থেকেও যথেচ্ছ হারে চাঁদার টাকা তোলা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার বাইরে চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দিচ্ছে মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি, বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। মূলত ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির নেতারাই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির নেতৃত্বে রয়েছেন। এই তিন সংগঠনের জেলা ও আঞ্চলিক শাখা কমিটির নামে উঠছে চাঁদার টাকা। জানা গেছে, রমজানের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছে নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা দাবি করে সালাম পেঁৗছে দিচ্ছে মালিক শ্রমিক সংগঠনগুলো। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে চাঁদাবাজদের দৌরাত্দ্য ততই প্রকট আকার ধারণ করছে। কোথাও কোথাও পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছে চিরকুট পাঠিয়ে ঈদের বকশিশের সালাম পেঁৗছে দিচ্ছে। চিরকুটে সন্ত্রাসীরা চাঁদা দেওয়ার নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করে দিচ্ছে। এখন সড়ক থেকে মহাসড়ক, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, বাস টার্মিনাল সর্বত্রই চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। নীরব-সরব দুই ধরনের চাঁদাবাজির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পরিবহন সেক্টর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘটছে নীরব চাঁদাবাজির ঘটনা। পরিবহন ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পুলিশের লাইনম্যান আবার কোথাও কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা চাঁদাবাজদের সোর্স হিসেবে কাজ করছে। পরিবহন মালিকদের অভিযোগ, ঈদ এলেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, রাজধানীতে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি ও পুলিশের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি শুরু হয়। এ ছাড়া চাঁদাবাজি চলছে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামেও। ইদানীং ঈদ বখশিশের নামে বিভিন্ন এলাকায় শাসক দলের কর্মীরা পরিবহন কাউন্টারে গিয়ে হানা দিচ্ছে। কোথাও কোথাও সড়ক ও মহাসড়কে বাঁশকল ফেলে চাঁদা আদায় করছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, ঈদের সময় অভিযোগ করে কোনো লাভ নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঈদের বাজার পাড়ি দিতে হচ্ছে। তাই সবাইকে 'ম্যানেজ' করেই চাঁদা দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। যেভাবে চলছে চাঁদাবাজি : ঈদ ঘনিয়ে আসায় দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস ও পণ্য পরিবহনের যানবাহনকে পুলিশ ও শ্রমিক নামধারীদের পথে পথে দিতে হচ্ছে ঈদ বখশিসের নামে টাকা। ঢাকা থেকে খুলনাগামী আনন্দ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের চালক হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এতদিন এই রুটের পাঁচ জায়গায় চাঁদা দিতে হতো। ঈদ ঘনিয়ে আসায় ১২ জায়গায় দিতে হয়। গতকাল থেকে এই রুটে চলাচলকারী প্রতিটি যাত্রীবাহী বাসকে ২০০ টাকার পরিবর্তে প্রতি ট্রিপের জন্য ৫০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা দিতে না চাইলে নানা অজুহাতে শ্রমিক ও পুলিশ নানা ধরনের হয়রানি চালায়। ঢাকা থেকে মেহেরপুরগামী মেহেরপুর এঙ্প্রেস পরিবহনের সুপারভাইজার বাবুল আহমেদ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, গতকাল থেকে এই রুটে ছয় জায়গার পরিবর্তে ১৪ জায়গায় ঈদ বকশিসের নামে চাঁদা দিতে হচ্ছে। এতদিন চাঁদার হার ছিল ২৫০ টাকা। গতকাল থেকে হয়েছে ৭০০ টাকা। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, নড়াইল ও মাগুরা জেলার প্রতিটি বাস ও মিনিবাসকে একইহারে চাঁদার টাকা গুনতে হচ্ছে। ঢাকা-রংপুর রুটের চলাচলকারী আলম পরিবহনের মালিক আবদুল আউয়াল খোকন অভিযোগ করে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি শুরু হয়ে গেছে। দুই দিন ধরে এই রুটের প্রতিটি বাসকে ২৫০ টাকার জায়গায় ৬০০ টাকা দিতে হচ্ছে। ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী অগ্রণী পরিবহনের চালক মোতালেব মিয়া বলেন, আগে সিলেট পর্যন্ত সাত জায়গায় ৪০০ টাকা দিতে হত। এখন দিতে হচ্ছে ৮৫০ টাকা। আরেক ব্যবসায়ী মিলন সর্দার বলেন, পুরান ঢাকার বাদামতলীতে কাঁচামাল বোঝাই ট্রাক নামার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ পিছু নেয়। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয় চাঁদা। চাঁদা না দিলে পণ্যবাহী ওই ট্রাক ও এর চালকের নামে মামলা দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হয়। ঈদের বাজারে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চালকেরা জানিয়েছেন, হাইওয়ে পুলিশ ও সার্জেন্টরাই তাদের সবচেয়ে বেশি হয়রানি করে। মোটা অঙ্কের টাকা না দিলে তারা কাঁচামাল ট্রাক থেকে নিচে নামিয়ে ফেলে। অবৈধ কিছু আছে কি না তা যাচাই করতে অহেতুক হয়রানি শুরু করে। আর টাকা দিলে চোরাচালানের গাড়িও ছেড়ে দেওয়া হয়। ট্রাকচালক জালাল জানান, যেখান থেকে ট্রাকে কাঁচামাল তোলা হয় সেখান থেকেই চাঁদাবাজি শুরু হয়। প্রথমে টার্মিনাল ফির নামে ১০০ থেকে ২০০ টাকা নেওয়া হয়। তারপর ট্রাক নিয়ে সড়কে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পুলিশের চাঁদাবাজি। কখনো সার্জেন্ট, কখনো হাইওয়ে পুলিশ, যার যেমন ইচ্ছা সিগন্যাল দিয়ে ট্রাক থামায়। আবার মাওয়া ঘাটে এলে সেখানে ফেরির সিরিয়াল পেতেই দিতে হয় চার-পাঁচশ টাকা। ঢাকায় প্রবেশের জন্য গুনতে হয় আলাদা মাশুল। আর যে রুটেই গাড়ি যায় তার পেছনে ছুটতে থাকে ট্রাফিক কনস্টেবল। সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে নাছোড়বান্দার মতো। তার কথা অমান্য করলে মামলার বই নিয়ে হাজির হন সার্জেন্ট। এভাবে চাঁদাবাজ চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি এনামুল হক বলেন, ঈদকে সামনে রেখে গতকাল থেকে মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও পুলিশের নামে চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ১২ জায়গায় ১২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। একইভাবে সিলেট পর্যন্ত ১০ পয়েন্টে ১০০০ হাজার টাকা চাঁদাবাজদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে। না দিলে মারধরের ঘটনাও ঘটছে। এ ছাড়া রাজশাহী পর্যন্ত ১৪ পয়েন্টে গুনতে হচ্ছে ১৪০০ টাকা। ভুক্তভোগী চালকরা জানান, দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকায় আসতে হাইওয়ে পুলিশকে আড়িয়াল খাঁ, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, হাসারা, নিমতলী, কালীগঞ্জ নতুন রাস্তা ও পদ্মার দুই পাড়ে টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া রাজধানীতে ঢোকার সময় বাবুবাজার অথবা পোস্তগোলায় পুলিশের টোকেন নিতে হয়। উত্তরবঙ্গ থেকে ট্রাক নিয়ে ঢাকায় ঢুকতে গাজীপুর চৌরাস্তা, বাইপাইল, আশুলিয়ায় হাইওয়ে পুলিশ ও সার্জেন্টরা ওঁত পেতে থাকে। ট্রাক দেখামাত্রই ঘিরে ধরে। এসব স্পটে চাঁদা না গুনলে রেহাই পাওয়া যায় না। যমুনা ব্রিজের ওপারে সিরাজগঞ্জ থেকে পুলিশের অত্যাচার শুরু হয়। তারপর ব্রিজের এ পারে এলেঙ্গা, টাঙ্গাইল, চন্দ্রা, জিরিয়া বাজার এসব এলাকায় বকশিশ দিয়ে পার হতে হয়। ঢাকা মেট্রো-ড-১২-১২২৪ নম্বরের চালক ইয়াছিন অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে গতকাল থেকে চার জায়গার পরিবর্তে ১০ জায়গায় চাঁদা দিতে হচ্ছে। এসব জায়গায় আগে দিতে হতো ৩৫০ টাকা। এখন দিতে হয় ৯০০ টাকা। ঈদকে কেন্দ্র করে দৌলতদিয়া, পাটুরিয়া ও মানিকগঞ্জে চলছে টোকেন বাণিজ্য। এটা এখন রীতিতে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় কেউ আটকালে টোকেন দেখাতে না পারলে রক্ষা নেই। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহাপুলিশ পরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পরিবহন চাঁদাবাজি ঠেকাতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তালিকাভুক্ত পরিবহন চাঁদাবাজদের ধরার জন্য জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ওসমান আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের সংগঠনের কোনো সদস্য চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নয়। সংগঠনের সুনাম নষ্ট করার জন্য প্রতিপক্ষের কেউ এ কাজ করে থাকতে পারে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমাদের সংগঠনের কোনো সদস্য কখনোই চাঁদাবাজির ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। আমাদের সংগঠন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকের কল্যাণধর্মী কাজ নিয়ে ব্যস্ত। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমান সরকার ঈদ মৌসুমে ঘরমুখো যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বদ্ধপরিকর। এ ছাড়া ঈদকে কেন্দ্র সড়ক ও মহাসড়কে কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে দায়ভার নিতে হবে। সরকার কোনো চাঁদাবাজকে ছাড় দেবে না। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচার করার চিন্তা-ভাবনা চলছে।জিরো ফিগার নিয়ে ফিরছি : অপু বিশ্বাস

জিরো ফিগার নিয়ে ফিরছি : অপু বিশ্বাস
ঢাকাইয়া চলচ্চিত্রে অপু বিশ্বাস গত কয়েক বছর ধরে একক ভাবে রাজত্ব করে যাচ্ছেন। শাকিব খানের সঙ্গে জুটি হয়ে ৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। গত ছয় মাস বিরতী নিয়েছিলেন। আবার ফিরছেন অভিনয়ে। কেন এই বিরতী? কেনই বা ফিরে আসছেন? তার ছবি কী এখন দর্শক দেখে? এরকম নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় এই অভিনেত্রীর...
শেষ পর্যন্ত আপনিও নাটকে অভিনয় করলেন?
আরে কি যে বলেন, এটা অভিনয় নাকি?  আমি আমার চলচ্চিত্রের প্রচারণার কাজে ঐ নাটকে অংশ নিয়েছিলাম। আমি এখন সিনেমার প্রচারণার জন্য আরো বেশ কিছু অনুষ্ঠানে যাবো। টেলিভিশন টক শো, সংগীতানুষ্ঠান থেকে শুরু করে নানা অনুষ্ঠানেই যাবো। এটাকে আমি অভিনয় বলবো না।
হঠাৎ প্রচারণায় এত মনোযোগী হলেন যে?
আসলে আমাদের পাশের দেশ ভারত ফিল্মের জন্য যে লেভেলের প্রচার প্রচারণা করে তার ধারে কাছেও আমরা নেই। তাই আমি এখন থেকে ফিল্মের প্রমোশনে জোর দিতে চাই।
এবার ঈদে তো আপনার একটাই ছবি মুক্তি পাচ্ছে?
হ্যাঁ। একটাই ছবি ‘মাই নেইম ইজ খান’। আর এ ছবির প্রচারণার জন্যই আমি এখন নানা অনুষ্ঠানে যাচ্ছি।
ছবিটা নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
আমি খুব আশাবাদী এ সিনেমা নিয়ে। ভালো ব্যবসায় করবে।
ঈদে হলে গিয়ে ছবিটা দেখার সময় পাবেন?
এখনো বলতে পারছি না। একটা সিনেমার কাজে দেশের বাইরে যাওয়ার কথা। ঐ কাজটি হলে ঈদের আগেই দেশের বাইরে যাবো। ফিরবো ঈদের পরে। তখন হয়তো হলে গিয়ে ছবিটা দেখবো।
আপনি দীর্ঘ ছয় মাস অভিনয় থেকে বিরতী নিয়েছিলেন। হাতে সিনেমা নেই বলেই কি এ বিরতী?
[এবার একটু হাসলেন এ নায়িকা। তারপরেই সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলা শুরু করলেন ]
আমার মনে হচ্ছিলো আমি দর্শককে ঠকাচ্ছি। আমি খুব মুটিয়ে গিয়েছিলাম যা পর্দায় দেখতে খারাপ লাগছিলো। তখন আমার মনে হল তাহলে দর্শক কেন আমার ছবি দেখবে হলে গিয়ে। আমি তো নিজেই এরকম মোটা ফিগারের কারো অভিনয় দেখতাম না। তখন আমি সিদ্বান্ত নিলাম এভাবে আর না। নিজেকে একটু তৈরি করতে হবে। সময় দিতে হবে। নতুন করে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে। তাই আমি ওজন কমানো শুরু করলাম। মূলত ফিগার ঠিক করতেই বিরতীতে ছিলাম।
তাহলে এই ছয় মাসে কয় কেজি ওজন কমালেন?
[এবার যেন হিসাব করতে থাকলেন। কিছুক্ষণ পর ভেবে বললেন...
এই কত আর হবে ১৭ থেকে ১৮ কেজি হবে। আমি আমার ফিগারটাকে জিরো ফিগারে নিয়ে আসছি। এর জন্য আরো মাস খানেক সময় লাগবে। জিরো ফিগার নিয়ে নতুন করে পর্দায় ফিরবো আমি।
ওজন কমানোর জন্য আপনি বিশেষ কোন চিকিৎসা নিচ্ছেন কী?
আমি কোন চিকিৎসা নিচ্ছি না। ডায়েটও করছি না। আমি যেটা করি সেটা হল নিয়মিত জীমে ব্যায়াম করছি। একজন ট্রেইনার আছেন আমার। তিনি আমাকে নিয়মিত গাইড করেন। সেদিন ফেসবুকে আমার ওজন কমানো নিয়ে স্ট্যাটাস দিলাম। দেখলাম অনেক ভক্তরাই এটাকে পজেটিভ ভাবে নিয়েছেন।
নায়িকাদের ফিগার যেমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তেমনি পোষাকও খুব গুরুত্বপূর্ণ । পোশাক নিয়ে আপনি কি ধরনের পরিকল্পনা করেন অভিনয়ের আগে?
সত্যি কথা বলতে কি আমি যে বয়সটায় অভিনয় শুরু করেছিলাম তখন অনেক কিছুই বুঝতাম না। তখন আমার বয়স ছিল ১৬। এখন আমি ২০ ক্রস করলাম। ঐ সময়টায় আমি এ বিষয়গুলোতে খুব বেশি গুরুত্ব দেইনি। তবে এখন এসব বিষয়ে আমি খুবই সিরিয়াস।
সিনেমার জন্য নাচও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি তো নৃত্যশিল্পী ছিলেন। নাচের চর্চাটা কী ছেড়ে দিয়েছেন?
নাচটা আসলে করা হয় না। তবে বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানে বা এমনি স্টেজে মাঝে মধ্যে আমি নাচ করি।
অনেকেই বলেন আপনার বাজার নেই। আপনার হাতে নাকি এখন ছবি নেই?
নিন্দুকেরা তো অনেক কথাই বলে। এটা আসলে ভুল কথা। ছবি আছে আমার হাতে। এই তো সেদিনও একটা নতুন ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তি করেছি। আর ছয়মাস যেহেতু আমি একটু নিজেকে সময় দিয়েছি তাই নতুন কাজ হাতে নেইনি। এখনও প্রচুর সিনেমার প্রস্তাব আছে কিন্তু আমি একটু সময় নিচ্ছি। দর্শকে আর ঠকাতে চাই না।
আপনাকে নিয়ে নানা ধরনের স্ক্যান্ডাল শোনা যায়। বিশেষ করে শাকিব খানকে কেন্দ্র করে। এ বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
আমি স্ক্যান্ডাল খুব এনজয় করি। যখন ছোট ছিলাম তখন ভাবতাম শাহরুখ-কাজল এরা মনে হয় জামাই বউ, আমাদের এখানকার রাজ্জাক-কবরী ও শাবনূর- সালমান শাহ জুটিকেও আমার স্বামী স্ত্রী মনে হত। এখন লোকজন আমাকে আর শাকিবকে নিয়ে নানা ধরনের কথা বলে এটা আমি খুব এনজয় করি। আমি কেন সিনেমায় পেট দেখাই না সেটা নিয়ে নানা রসালো গল্প আছে মিডিয়ায়। স্ক্যান্ডালটা নিয়ে মানুষ বেশি আলোচনা করে। এবং এতে করে কিন্তু এক ধরনের প্রচারনা হয় শিল্পীদের বা সিনেমার।
আপনার আইডল শিল্পী কারা...
[আবারও ভাবনায় চলে গেলেন অপু। ভেবে চিন্তে বললেন...
দেশের বাইরের শিল্পীদের মধ্যে আছেন অভিনেত্রী কাজল। আর দেশে আছেন কবরী ম্যাডাম ও শাবনূর আপা। আমি কবরী আপার হাসি নকল করার ট্রাই করি। আর শাবনূর আপা যে প্রেম ও আবেগময় দৃশ্যগুলো অসাধারণ অভিনয় করতেন তা ফলো করি। আমি তো শাবনূর আপার অন্ধ ভক্ত ছিলাম। সালমান শাহ’র সাথে তার একটি ছবির গান দেখে ঐ ছবিতে শাবনূর আপা যে ড্রেসটা পরেছিলেন সেই ড্রেসটা আমি বানিয়েছিলাম।
শাকিব খান হিরো হিসাবে কেমন?
[এবার এক কথায় উত্তর দিলেন]
ভালো।
নাটক প্রসঙ্গ দিয়ে কথা শুরু করেছিলাম আবার সেই প্রসঙ্গে জানতে চাই। মৌসুমী, পূর্ণিমা ও পপি এখন নিয়মিত নাটকে অভিনয় করেন। আপনাকেও এরকম রেগুলার টিভি পর্দায় পাওয়া যাবে কি কখনো?
দেখুন আমার মাত্র চলচ্চিত্রে অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু। ছয় বছর ধরে অভিনয় করছি। আপনি যাদের নাম বললেন তারা এক দেড় যুগ সিনেমায় টানা কাজ করে এখন নাটকে মাঝে মধ্যে কাজ করেন। সেটা আসলে সময় বলে দিবে আমি নাটকে কাজ করবো কী করবো না।