Year-19 # Issue-16 # 3 June 2012

সংসদে ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার বাজেট পেশ
আইএনবি
সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায়, সরকারি-বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে সুখী সমৃদ্ধ ও কল্যাণকামী দেশ গড়ার ল্য নিয়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এ বাজেট পেশ করেন। বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া, এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ০.৪ শতাংশ। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২.২ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য খাতে মোট ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৫৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি  ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ১৮ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ৩৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৩ হাজার কোটি এবং ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ১০ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। এর পরই রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করেন। এছাড়াও অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ২০১১-১২ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৬১ হাজার ২১৩ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেট পেশ করেন। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতাসহ সরকার গঠনের পর এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের চতুর্থ বাজেট। অর্থমন্ত্রী বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে বাজেট বক্তৃতার শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, অকুতোভয় বীরযোদ্ধা এবং  গণতন্ত্র ও মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি আজকের বাজেট পেশের দিন ৭ জুনকে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন উল্লেখ করে বলেন, ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্র“য়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাহোরে সংবাদ সম্মেলনে স্বায়ত্তশাসনের একটি রূপরেখা প্রদান করেন। তাঁর নিজের কথায় সেটা ছিল ৬ দফা কার্যক্রম-বাঙালির বাঁচার দাবি। এ কার্যক্রম ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভায় অনুমোদিত হয়। এই দাবির পে প্রচারণা চালানোর কারণে ৬ মে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ, আওয়ামী লীগ এবং ৬ দফার সমর্থকরা ৭ জুন এ দাবিকে বাংলাদেশের মহাসনদে পরিণত করে। সেদিন ঢাকায় পুলিশের গুলিতে ৪১ জন সমর্থক শহীদ ও হাজারখানেক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সাথে নিয়ে অধিবেশন কে প্রবেশ করেন। রাষ্ট্রপতি জিলুর রহমান সংসদে রাষ্ট্রপতির বক্সে বসে বাজেট বক্তৃতা শোনেন। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনসহ বিভিন্ন বিদেশী দূতাবাসের কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, বিশিষ্ট আমন্ত্রিত ব্যক্তি এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারাও বাজেট বক্তৃতা শোনেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ঘোষিত প্রথম ৩টি বাজেট দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির সনদ, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের ভিত্তিভূমি তৈরি করে সরকারের গৃহীত অঙ্গিকার বাস্তবায়নে দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে চলেছে। সাথে সাথে সরকারের নিরন্তর প্রয়াস থেকে দেশ ও জাতির প্রাপ্তির পরিমাণও কম নয়।
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা অভিঘাত সত্ত্বেও রূপকল্পের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ল্য থেকে সরকার বিচ্যুত হয়নি। মাত্র ৩ বছরের মধ্যে সরকার অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ প্রায় দ্বিগুণ করতে সম হয়েছে। একই সাথে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকারও দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী মহামন্দা সময়ে এবং সম্প্রতি এর পুনরার্ভিভাবকালেও দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিশীলতা হারায়নি। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সামাজিক-ভৌত অবকাঠামো আর তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আবশ্যকীয় বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে সরবরাহের প্রতিবন্ধকতা দূর করে দতার বিকাশ ঘটানো হয়েছে। সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ল্যাভিমুখী সম্প্রসারণ এবং সময়োপযোগী ও বিচণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ফলে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক গতি বজায় রাখা সম হয়েছে।
তিনি বলেন, একই সাথে সরকার দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পথে অনেক দূর এগিয়েছে। সামাজিক সূচকসমূহের েেত্র উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। তিনি বলেন, বিগত ৩টি বাজেটের ফলাফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে এক অমিত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। দেশ নিরবচ্ছিন্ন প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী অভিজাত সংঘের পরবর্তী সম্ভাবনাময় সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশকে ১১টি থ্রি-জি দেশের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় ২৬টি দেশের তালিকায় চীন ও ভারতের সঙ্গে একই কাতারে বাংলাদেশ স্থান পেয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা জয়ের দুর্লভ অর্জন বিশ্ব সভায় বাংলাদেশের অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করেছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার নিরিখে যে বাজেট কাঠামো আগামী অর্থবছরে বাস্তবায়ন করা হবে তা প্রবৃদ্ধি সহায়ক, মূল্য স্ফীতি সংযত রাখা সর্বোপরি জনগণের আশা-আকাক্সার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে মোট বরাদ্দের ২৪.২ শতাংশ, এর ২০.৫ শতাংশ মানবসম্পদ খাত ও ভৌত অবকাঠামো খাতে ২৭.৮ শতাংশ ধার্যকরা হয়েছে। এছাড়া সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৪.৯ শতাংশ, বৃহত্তর যোগাযোগ খাতে ৭ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ সেবা খাতে মোট বরাদ্দের ১৯ শতাংশ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব, শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ব্যয় বাবদ ৪.৯ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সুদ পরিশোধ বাবদ ১২.২ শতাংশ, নীট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ অবশিষ্ট ১১.৭ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো, শিা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এরপরই কৃষি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অবস্থান।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ৩৬৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব
 ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন মিলিয়ে মোট ৩৬৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে ৭৩ কোটি এবং উন্নয়ন খাতে ২৯৪ কোটি ১১ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরের মঞ্জুরী ও বরাদ্দ দাবিসমূহে একথা তুলে ধরা হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এগুলো হলো : (ক) ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভার্নমেন্ট (বাংলাগভনেট), (খ) বেসিক আইসিটি স্কিল ট্র্যান্সফার আপ টু উপজেলা লেভেল, (গ) অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বিসিসি শক্তিশালীকরণ, (ঘ) এমপাওয়ারিং রুরাল কমিউনিটিস-রিচিং দ্যা অনরিচড; ইউনিয়ন ইনফর্মেশন এ্যান্ড সার্ভিস সেন্টার (ইউআইএসসি), (ঙ) লিভারেজিং ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজিস (আইসটি) ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এন্ড গভর্ন্যান্স, (চ) সাপোর্ট টু হাই-টেক পার্ক অথরিটি টু এস্টাব্লিশ হাই-টেক এ্যাট কালিয়াকৈর, গাজীপুর, (ছ) এস্টাব্লিশমেন্ট অব আইটি পার্কস / এসটিপি এট যশোর, (জ) এস্টাব্লিশমেন্ট অব আইটি ভিলেজ/এসটিপি এট মহাখালী, ঢাকা; এবং (ঝ) এস্টাব্লিশমেন্ট অব সাসেক এনফরমেশন হাইওয়ে (বাংলাদেশ পার্ট)। এছাড়াও অর্থবছরের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑ (ক) সবিচালয় নেটওয়ার্ক ব্যাকবোন সহায়ক কর্মসূচি, (খ) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন সংক্রান্ত কর্মসূচি, (গ) ভারচ্যুয়াল ডেস্কটপ কম্পিউটিং নেটওয়ার্ক ল্যাব স্থাপন সংক্রান্ত কর্মসূচি, (ঘ) তৃণমূল পর্যায়ে আইসিটি সেবা মূল্যায়ন ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি, (ঙ) গভর্নমেন্ট ওয়ার্ক প্রসেস রিইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচি এবং (চ) আইসিটি প্রশিণের মাধ্যমে মানব সম্পদ উন্নয়ন। নারী উন্নয়নে গৃহীত উল্লেখযোগ্য বিশেষ কর্মসূচি হলো :
(ক) তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্রে নারীদের প্রশিণের অগ্রাধিকার দিয়ে এর কার্যক্রমে নারীদের সম্পৃক্তকরণ, (খ) তথ্য প্রযুক্তি সেবায় নারীদের জন্য পৃথক প্রশিণের ব্যবস্থাকরণ, এবং (গ) তথ্য প্রযুক্তি সেক্টরে নারীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির ল্েয কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ।
বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য ৮৯১৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব
২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য ৮ হাজার ৯শ’ ১৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ অর্থের মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে ৭ হাজার ৬শ’ ৭৫ কোটি ৪৮ লাখ এবং উন্নয়ন খাতে ১ হাজার ২শ’ ৪২ কোটি ৪ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ অর্থের ৮ হাজার ৮৭ কোটি ৭৫ লাখ ৮ হাজার টাকা রাজস্ব খাত থেকে এবং ৮শ’ ২৯ কোটি ৭৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা মূলধন খাত থেকে আয় করার ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনকালে বলেন, ‘উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে আমি ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য ৮ হাজার ৯শ’ ১৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।’ ২০১২-১৩ অর্থবছরের মধ্য মেয়াদী কৌশলগত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ল্েয জাতীয় কৃষি নীতির আলোকে প্রণীত মোট ৬৮টি অনুমোদিত প্রকল্প এবং অনুমোদিত ৮৩ কর্মসূচি রয়েছে। আগামী অর্থবছরের এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন, সারের প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ, সার সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থা মনিটরিং, সার ও অন্যান্য কৃষি কার্যক্রমের জন্য ভর্তুকি প্রদান, উন্নয়ন ও রাজস্ব খাতের আওতায় কৃষি গবেষণা কার্যক্রম, সারাদেশে কৃষকদের তালিকা প্রণয়ন এবং কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রস্তুত ও বিতরণে এ অর্থ ব্যয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া, বিগত বছরের মত সারাদেশে ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র ব্যবহারকারী ুদ্র, প্রান্তিক ও মাঝারি বোরো চাষীদের জ্বালানি বাবদ সহায়তা, সংশ্লিষ্ট কৃষকের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান, অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় এবং এন্ডাউমেন্ট ফান্ড ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা কার্যক্রম এবং দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের তি পুষিয়ে নেয়ার জন্য কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রমে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে নারী উন্নয়নে গৃহীত বিশেষ কর্মসূচিতেও এ অর্থ ব্যয় করা হবে। নতুন কৃষি নীতিতে নারীদের জন্য স্বতন্ত্র কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীদের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করা হবে।
আগামী ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প ও কর্মসূচিগুলো হলোÑ জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি প্রকল্প (এনএটিপি), সমন্বিত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প, কৃষি গবেষণা সংক্রান্ত প্রকল্প, ুদ্র সেচ প্রকল্প, দণি পশ্চিম অঞ্চলে বীজ বর্ধন খামার স্থাপন প্রকল্প ইত্যাদি।
এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১২ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব
আগামী ২০১২-১৩ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের জন্য উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে মোট ১২ হাজার ৪৩৬ কোটি ১৭ লাখ টাকার বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় এই বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১২-১৩ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন শিা, সামাজিক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মেরামত, নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ, পল্লী উন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্প, আর্সেনিক মিটিগেশন কার্যক্রম গ্রহণ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়ন এবং দেশের সকল নাগরিকের জন্মনিবন্ধন নিশ্চিতকরণ কাজে প্রস্তাবিত অর্থ ব্যয় করা হবে। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম সরকারের রূপকল্প অর্জনে অন্যতম হাতিয়ার। তাই এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত কর্মসূচি। গত ৩ বছরে সরকার অতিরিক্ত ২ হাজার ১০৭টি গ্রামকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এনেছে। অতিরিক্ত ১৩ হাজার ৮৪ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে মোট বিদ্যুতায়িত গ্রামের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৭১১ (৬৫ শতাংশ)।
তিনি বলেন, এই বিদ্যুতায়নের মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি। মোট বিতরণ লাইনের পরিমাণ ২ লাখ ২৭ হাজার ৬৬৭ কিলোমিটার। গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব নয় এমন এলাকা পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড ও ইডকল এর মাধ্যমে ১১ লাখ ২০ হাজার সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সম্প্রতি ইডকল-এর অর্থায়নে ধানের তুষ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের জন্য ১ হাজার ৮শ’ ৪৪ কোটি ৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকার বাজেট প্রস্তাব
 ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন মিলিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে মোট ১ হাজার ৮শ’ ৪৪ কোটি ৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে ১০৭ কোটি ৫ লাখ ৬৩ হাজার ও উন্নয়ন খাতে ১ হাজার ৭৩৭ কোটি ৪ লাখ টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবিত ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে মঞ্জুরী ও বরাদ্দের দাবিসমূহে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিল্প মন্ত্রণালয়ের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এগুলো হলো : (ক) চামড়াশিল্প নগরী ঢাকা থেকে সাভারে স্থানান্তর, (খ) ুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে ুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশন কর্তৃক দেশব্যাপী এসএমই জরিপ করা, (গ) এ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রেডিযেন্ট (এপিআই) শিল্প পার্ক স্থাপন, (ঘ) বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) এর কার্যক্রম দেশের উত্তরাঞ্চলে জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর ল্েয বিটাক কর্তৃক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, (ঙ) বিটাকের মাধ্যমে ৯ হাজার ৯শ’ জন দরিদ্র মহিলা ও পুরুষকে হাতে কলমে প্রশিণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান, (চ) ভেজালমুক্ত পণ্য/খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এর কার্যক্রম জোরদারকরণ, (ছ) দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানার উপযোগী বয়লার প্রস্তুতকরণ, (জ) শাহজালাল সার কারখানা স্থান, (ঝ) কুমিল্লা, মিরসরাই, সিরাজগঞ্জ এবং গোপালগঞ্জে শিল্প পার্ক স্থাপন, (ঞ) বেনারসি শিল্প এবং কুমারখালি তাঁত শিল্পের উন্নয়ন, এবং (ট) ভোজ্যতেলের সাথে ভিটামিন-এ মিশ্রণের মাধ্যমে ভিটামিন-এ ঘাটতি দূরীকরণ।
এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় প্রাক্কলন
  আগামী অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে এক লাখ ৩৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এক লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা এবং এনবিআর বহির্ভূত সুত্র থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৫ কোটি। এছাড়া কর-বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আহরিত হবে ২২ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। এনবিআর-নিয়ন্ত্রিত করের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ৪০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, আমদানি শুল্ক ৩৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং আয়কর ৩৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য আয় রয়েছে ৯৫৯ কোটি টাকা।
সংসদে অর্থ বিল ২০১২ উত্থাপন
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার বিধানের প্রস্তাব করে অর্থ বিল ২০১২ উত্থাপন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিলটি উত্থাপন করেন। বিলে আসন্ন অর্থ বছরের জন্য কতিপয় আর্থিক বিধান ও বিধানের সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ব্যাংক ঋণের ল্যমাত্রা বেশি : এফবিসিসিআই
 ঘাটতি মেটাতে আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে সরকারের ঋণের ল্যমাত্রা কমানোর অনুরোধ জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
বৃহস্পতিবার সংসদে প্রস্তাবিত ২০১২-১৩ সালের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যাংক ঋণের ল্যমাত্রা ঠিক করেছেন ২৩ হাজার কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের ঘোষিত ল্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অবশ্য বলছেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ল্যমাত্রা অঙ্কের হিসেবে গতবারের চেয়ে বেশি হলেও জিডিপির তুলনায় গতবারের চেয়ে কম। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা টেলিভিশনে দেখার পর এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ তাৎণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার ব্যাংক থেকে যদি এই বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ নেয় তাহলে বেসরকারি খাত তিগ্রস্ত হবে। তারল্য সঙ্কট বাড়বে। ব্যাংকের সুদের হারও বাড়বে।” করদাতাদের ওপর চাপ না বাড়িয়ে এর পরিধি বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি। প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে আজাদ বলেন, “কিছু কিছু েেত্র ভালো উদ্যোগ সামনে এসেছে। যেমন জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ওষুধ শিল্প, ভোজ্য তেল এবং সিরামিকে ভর্তুকি।”
অন্তঃসারশূন্য বাজেট : বিএনপি
আইএনবি
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটকে জনবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিএনপি বলেছে, এতে সাধারণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কোনো সুখবর নেই।
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাজেট বক্তৃতা বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে টেলিভিশনে দেখেন বিএনপি নেতারা। বাজেট পর্যালোচনার জন্য একটি প্যানেলও করা হয়। সংসদ বর্জন করে আসা বিরোধী দলের নেতারা তাৎণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট ‘অন্তঃসারশূন্য’। এই বাজেট বাস্তবায়নের সমতা মহাজোটের নেই। বিএনপির বাজেট পর্যালোচনা প্যানেলে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী এম কে আনোয়ার, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ওসমান ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম সাইফুল ইসলাম।
‘বাজেট বুঝি না, একটু শান্তিতে থাকতে চাই’
মহিউদ্দিন মাহমুদ
কুমিল্লার আবদুল মজিদ(৫৭)। ঢাকা পরিবহন লিমিটেডের বাসে গুলিস্তান থেকে টঙ্গী যাচ্ছেন। বাজেট নিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাই বাজেট টাজেট বুঝি না। দু’গা (অল্প) ডাল-ভাত খাইয়া মরতে পারলেই খুশি। খুন-খারাবি বন্ধ হয়ে একটু শান্তিতে থাকতে চাই। এর বেশি কিছু বুঝতে চাই না।’
পাশের সিটে বসা নোয়াখালীর রেদোয়ান হোসেন সজল (৪২)। ভ্যান চালক ঢাকার একটি বস্তিতে থাকেন। তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আঁই জানি না, বাজেট কি?’ পাশের একজনকে দেখিয়ে বলেন, ‘আমনে হেতারে জিগান (আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করুন)।’ সংসদে অর্থমন্ত্রীর বৃহস্পতিবারের বাজেট বক্তৃতা নিয়ে জন-সাধারণের প্রতিক্রিয়া জানতে বাংলানিউজের একটি টিম মাঠে নামে। তারই অংশ হিসেবে মিরপুর থেকে গুলিস্তান এবং গুলিস্তান থেকে বসুন্ধরা-বারিধারা আসার পথে বাজেট নিয়ে বাস যাত্রীদের প্রতিক্রিয়ায় তারা এসব কথা বলেন। প্রতিক্রিয়া গ্রহণকালে দেখা যায় বেশিরভাগ মানুষেরই বাজেট সর্ম্পকে কোন ধারণা নেই। তারা বাজেট ঘাটতি, কর, রাজস্ব আয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, তারল্য সংকট অনেক কিছুই বোঝেন না। তারপরও তাদের রয়েছে সুন্দর জীবন যাপন করার তীব্র আকাঙ্খা। ক্রমবর্ধমান নানা সমস্যায় জর্জরিত মানুষগুলো কখনো সরকারের উপর পুরোপুরি হতাশ। আবার কখনো সব ঠিক হয়ে হয়ে যাবে এমনই প্রত্যাশা তাদের। শিক্ষিত আর অশিক্ষিত মিলিয়ে সাধারণ মানুষের নানা মত তুলে নিচে তুলে ধরা হল। বাজেট নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাবিবুর রহমান, ‘এবারের বাজেটে যদিও ঘাটতির একটা বিষয় আছে। তারপরও ঠিক মত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে সরকারের বিগত তিন বছরের ব্যর্থতা ঢেকে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। তাই লুটপাটের সৈনিকরা নিজেদের আখের ঘোঁছাতে উঠে পড়ে লেগে যাবে। ফলে অতীতের মত মুখ থুবড়ে পড়তে পারে সব আশা, স্বপ্ন আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি।’
স্বল্প আয়ের একজন সরকারি চাকরিজীবী নুর মুহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতিবছরই মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নাগালের মধ্যে রাখার উপযোগী করে বাজেট পাশ করা হয়। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত থাকেনা।মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এখন গরীবের প্রাণের দাবি। আমাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।’
আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বাজেট আসলে একটা ডামি শো। এটা দিয়ে জনগণকে বোকা বানানো হয়। গত বছরের বাজেটের সব টাকা এখনো খরচ করতে পারে নি সরকার। তিনি বলেন, ‘যেসব টাকা খরচ হয়েছে তা আবার জনগণের কাছে পৌঁছতে পারে না। শীতের শিশিরের মত সামান্য টাকা কাজে লাগে। মন্ত্রী, আমলা, দলীয় ক্যাডারদের হাত ঘুরে যেতে যেতে হতভাগা জনগণ হতভাগাই থেকে যায়। মাঝখানে ভাগ্যের চাকা ঘুরে অনেকে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যায়। দিন যায়। বদল হয় অনেক কিছুই। কিন্তু বদলায় না আমাদের সাধারণ মানুষের ভাগ্য।’ বিকল্প অটো সার্ভিসে মিরপুর থেকে গুলিস্তান যাবার পথে কথা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা রেফায়েত উল্লাহ’র সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনমূখী ঘাটতি বাজেট সংস্কৃতি থেকে সরে আসা উচিত। ঘাটতি বাজেট এবং ব্যাংক ঋণ নির্ভর বাজেট অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এতে মূল্যস্ফিতি ঠেকানো কঠিন হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে।’ বিএনপি’র সমালোচনা করে বলেন, ‘দূরে থেকে শুধু অপরের নিন্দা করা ঠিক না। গঠনমূলক সমালোচনা করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আন্তরিক হওয়া দরকার। সব কিছুতে রাজনীতি টেনে নিয়ে আসা ঠিক না। তাছাড়া তাদের আমলে দেওয়া বাজেটের সূফল জনগণ কতটুকু পেয়েছে নিজেদের সেটা মূল্যায়ণ করে কথা বলা উচিত।’ তার ছোট ভাই এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আসলে আমাদের দূভার্গ্য দূনীর্তি আর শোষন নীতিই এখানে ক্ষমতাবানদের মূল মন্ত্র। সব সরকারই আবার তাদের কালো টাকা সাদা করার সুযোগ করে দেয়। গরীবদের নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই কারোরই। তাই রাজা আসে রাজা যায় কিন্তু এ হতভাগা প্রজাদের ভাগ্য বদলায় না।’
জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে এফবিসিসিআই’র শঙ্কা
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট


৫টি কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন ব্যাহত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার্স অব ইন্ডাস্ট্রিজ এফবিসিসিআই’র সভাপতি এ কে আজাদ। শুক্রবার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত বাজেট পরবর্তী আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ শঙ্কা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে বাজেটে অনুন্নয়নমূলক ব্যয় বৃদ্ধিতেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। এ কে আজাদ বলেন, বর্তমানে অর্থনীতির বেশ কিছু সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন চোখে পড়লেও বাংলাদেশকে বেশ কিছু অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ইউরো জোনের চলমান ঋণ সংকট, রফতানি আয়ের নেতিবাচক ধারা, বৈদেশিক সহায়তা হ্রাস, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ ও মূল্যস্ফীতি। এর ফলে প্রত্যাশিত জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিচ্ছে বলে মনে করেন আজাদ। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। একে আজাদ বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান বেসরকারি খাতের। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পিপিপি’র আওতায় পরিচালনা করতে হবে। সরকারি অপচয় হ্রাস করতে হবে।
এ কে আজাদ বলেন, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে অনুন্নয়নমূলক ব্যয় ছিল ৮২ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। যা সংশোধিত বাজেট ২০১১-২০১২ তে ১ লাখ ৯৮৫ কোটি টাকা এবং প্রস্তাবিত বাজেটে ১ লাখ ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। পূর্বতন বছরের তুলনায় বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ২১.৮৮ শতাংশ এবং ১০.৫৮ শতাংশ। করদাতাদের কষ্টার্জিত আয় যথাযথভাবে এবং প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয়িত না হলে চিন্তার বিষয়। তিনি আরো বলেন, অনুন্নয়নমূলক ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কর্মচারীদের ঋণ ও অগ্রিম প্রদান। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কর্মচারীদের ঋণ ও অগ্রিমের পরিমান ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ছিল ৭২৫৪ কোটি টাকা। ২০১১-২০১২ অর্থবছেরের সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ প্রায় দ্বিগুন হয়েছে ১৪১৯৩ কোটি টাকা। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে কর্মচারীদের ঋণ অগ্রিমের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৯৫৬৮ কোটি টাকা। এ খাতে এতো অধিক হারে ব্যয় বৃদ্ধির কারণ ও প্রয়োজনীয়তার যথেষ্ট ব্যাখ্যার প্রয়োজন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এ কে আজাদ বলেন, আপাতদৃষ্টিতে বাজেট ব্যবসা ও পুঁজিবাজারবান্ধব হয়েছে। এতে রফতানি খাতের সহায়তায় বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রফতানি খাতের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও ইটিপি যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্কহ্রাস, কারখানা ভাড়া ও টেলিফোন, ফ্যাক্স, বীমা, ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং সেবার ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার, রফতানি খাত বহুমুখীকরণ ও রফতানি বাণিজ্যে প্রণোদনা অব্যাহত রাখার উদ্যোগ ইতিবাচক। এ জন্যে সরকারকে সাধুবাদ জানান তিনি। সরকারের ব্যাংক ঋণ নেওয়া প্রসঙ্গে এ কে আজাদ বলেন, ‘এতে তারল্য সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে এবং বেসরকারি খাতের ঋণ প্রাপ্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছি।’ সরকার যদি ঘাটতি অর্থায়ন যথাযথভাবে করতে না পারে, তাহলে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলেও মনে করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। কালো টাকা সাদা করার স্থায়ী সুযোগের বিরোধিতাও করেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি একে আজাদ। পাশাপাশি কালো টাকা সাদা করার স্থায়ী সুযোগ ব্যবসায়ীদের নিয়মিত কর পরিশোধে নিরুসাহিত করবে। কর বৈষম্যের সৃষ্টি হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।সংবাদ সম্মেলনে এ কে আজাদ বলেন, অনেক সমালোচনা সত্ত্বেও আয় ঘোষণার বিধান স্থায়ী আয়কর অধ্যাদেশে সংযোজন করা হয়েছে। এতে সৎ করদাতারা সঠিকভাবে কর দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। একই সঙ্গে বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক নির্ভরশীলতা কমাতে করের আওতা বাড়ানোর সুপারিশও করে এফবিসিসিআই। এ কে আজাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কয়েক হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেয় সরকার। এতে করে ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে বেসরকারি খাতের ঋণের দুষ্প্রাপ্যতা সৃষ্টি হয়। সুদের হার বেড়ে ১৬-১৮ শতাংশে উন্নীত হয়, যা এখনও বিরাজ করছে। তাই এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের বিনিয়োগ বাঁধাপ্রপ্ত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী ২০১২-১৩ অর্থবছরেও ঘাটতি মেটানোর প্রধান খাত হিসেবে ব্যাংক ঋণকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা মনে করি, ঘাটতি মেটাতে করের আওতা বাড়ানো প্রয়োজন।’ তাহলে ব্যাংক নির্ভরশীলতা এমনিতেই কমে আসবে বলেও মন্তব্য করেন এ কে আজাদ। বাজেটের প্রশংসনীয় দিক হিসেবে তিনি বলেন, ট্রান্সফার প্রাইসিং ও কর ফাঁকি রোধে আয়কর আইনে অধ্যায় সংযোজন, কৃষি পণ্য উৎপাদন বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে ভূট্টা ও সুগারবিট উৎপাদন থেকে উদ্ভূত আয়কে ৫০ শতাংশ অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শিল্প ইউনিট ইটিপি স্থাপনসহ অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে ২০০ কোটি তহবিল গঠন করা হয়েছে, এটি সরকারের খুব ভালো পদক্ষেপ। এছাড়া, কৃষি পণ্য শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহারে উৎসাহ সৃষ্টির লক্ষ্যে রাইসব্রান তেল উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কর অবকাশ সুবিধা প্রদান, সরকারি ইপিজেড এলাকার মতো বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত ইপিজেডগুলোকে একই রকম কর অবকাশ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। যা কর সুবিধা শিল্পায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে পুঁজিবাজার বিষয়ে এ কে আজাদ বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আয়করের হার ৪২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা পুঁজিবাজার সহায়ক হবে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যাদের ১০ শতাংশ আয়কর রেয়াত দেওয়া হবে তাদের অন্তত ২৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেন তিনি। এছাড়া ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়িয়ে ন্যূনতম আয়কর দুই হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে তিনি হাজার টাকা করা যুক্তিপূর্ণ নয় বলেও মন্তব্য করেন আজাদ। বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে রফতানির ওপর উৎসে কর দশমিক .৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১.২০ শতাংশ করাকে হতাশাজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার নিম্নমুখী এবং অধিক সুদ ও বিভিন্ন খরচের কারণে রফতানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন। তাই যেখানে রফতানি বাণিজ্যে ধস ঠেকানোর লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকেই আর্থিক প্রণোদনা প্রয়োজন, সেখানে তার পরিবর্তে প্রস্তাবিত বাজেটে উৎসে কর দ্বিগুণ করার প্রস্তাব অযৌক্তিক এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। এ প্রস্তাব রহিত করা না হলে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে উল্লেখ করে তিনি এ কর প্রত্যাহারের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত রয়েছেন এফবিসিসিআই’র প্রথম সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল হক, মনোয়ারা হাকিম আলী, নাজিবুর রহমান, মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, হেলাল উদ্দিন, কে এম আক্তারুজ্জামান, কে এম জামান রোমেল প্রমুখ।
“ডিজিটাল সংসদ” প্রকল্পে টাকা দিচ্ছে না কোইকা
সাজিদুল হক

সংসদ অধিবেশন কক্ষকে ‘ডিজিটাল প্লেনারি চেম্বার’ হিসেবে তৈরির জন্য কোরিয়ান দাতা সংস্থা কোইকা অনুদান দিচ্ছে না। শুরুতে এ প্রকল্পে অনুদান দেওয়ার জন্য আগ্রহ দেখালেও এখন পিছিয়ে এসেছে এ সংস্থা। তবে পিছিয়ে আসার কারণ ব্যাখ্যা করেনি তারা। আগামী অর্থবছরের প্রকল্পের তালিকায় এ প্রকল্পটি রাখেনি তারা। ফলে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ আরো একদফা পিছিয়ে গেলো। সংসদ সচিবালয় এ বিষয়ে জানার জন্য কোইকাকে চিঠিও পাঠিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ-কোরিয়া সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের মাধ্যমেও এ বিষয়ে তদবির শুরু করেছে সংসদ সচিবালয়। উল্লেখ্য, চলতি বাজেট অধিবেশনের আগেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চেয়েছিলো সংসদ সচিবালয়। সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইপিএ) প্রণব চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, “কোইকা তাদের প্রকল্প তালিকায় এ প্রকল্প রাখেনি। যদিও শুরুতে এ বিষয়ে তারাই আগ্রহ প্রকাশ করে।” তিনি বলেন, “কোইকার সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এরইমধ্যে আমরা একদফা চিঠি পাঠিয়েছি। সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে।” শেষ পর্যন্ত কোইকা টাকা না দিলে নিজস্ব ফান্ড থেকে এ প্রকল্পের কাজ করা হবে বলেও জানান তিনি। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সংসদকে ই-পার্লামেন্টে রূপান্তরের লক্ষ্যেই পৌনে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিলো। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথমবার প্রকল্প প্রস্তাব করার সময় এর বাজেট রাখা হয় ২৭ কোটি টাকা। বিধি অনুযায়ী, ২৫ কোটি টাকার ওপরে গেলেই প্রকল্প পাসের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠাতে হয়। তবে প্রকল্প খুব শিগগিরই কার্যকর করার জন্য একেনেকে পাঠানোর যেন প্রয়োজন না হয় সে কারণে প্রকল্প বাজেট দুই বার সংশোধন করা হয়েছে। গত মার্চ মাসে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। কোইকা কবে নাগাদ অনুদান দেবে তা জানতে চেয়ে সংসদ সচিবালয়কে চিঠি দিয়েছিলো পরিকল্পনা কমিশন। সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় অর্থ ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। বাকিটা কোইকা অনুদান হিসাবে দেবে বলে জানিয়েছিলো। এ প্রকল্পের আওতায় সংসদ সচিবালয়ের প্রশাসনিক ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মকর্তারা শিক্ষা সফরে কোরিয়া যেতে পারবেন। আর কোরিয়ান বিশেষজ্ঞরা প্রকল্পের কারিগরী দিক বাস্তবায়নে পরামর্শ দেওয়ার জন্য নিযুক্ত হতে পারবেন। জানা গেছে, অধিবেশন কক্ষকে পুরোপুরি ডিজিটাল করার প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক সংসদ সদস্যদের আসনে ল্যাপটপ বসানো হবে। চালু করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ই-বিল পদ্ধতি। সব সংসদীয় বির্তক ডাটা-বেজে সংরক্ষণ এবং প্রশ্নোত্তর, নোটিশসহ দিনের কার্যসূচি সব কিছুই থাকবে ল্যাপটপে। জনসংযোগসহ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রত্যেক সংসদ সদস্যদের জন্য সংসদ ওয়েবসাইটে আলাদা ব্লগ তৈরি করা হবে। সূত্র জানায়, সংরক্ষিত নারী আসনের ৫০জন সহ মোট ৩৫০জন সংসদ সদস্যের টেবিলেই বসানো হবে ল্যাপটপ। এর জন্য টেবিলের কাঠামোয় পরিবর্তন আনা হবে। টেবিলে ল্যাপটপটি এমনভাবে স্থাপন করা হবে যাতে অন্যসময় তা টেবিলের ভেতরে একটি ছক কাটা বাক্সে থাকতে পারে। সংসদ সদস্যরা সুইচ টেপা মাত্র ল্যাপটপটি উপরে উঠে আসবে। কক্ষে ওয়াই-ফাই সংযোগ থাকবে। ফলে সংসদ সদস্যরা অধিবেশন চলাকালীন পুরো সময়টায় ইন্টারনেটে থাকতে পারবেন। এদিকে, প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিট্যাল কক্ষ বা ডিজিট্যাল প্লেনারি চেম্বার করার জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ই-বিল পদ্ধতি চালু করা হবে। সংসদের বিগত দিনের সমস্ত বির্তক একটি শক্তিশালী ডাটা-বেজে সংরক্ষণ করা হবে। যাতে কোনো সংসদ সদস্য যে কোনো সময় অধিবেশন কক্ষে বসেই পুরানো বিতর্কগুলো দেখে নিতে পারেন।
অর্থনীতিতে বিপরীতমুখী প্রবণতা: আকবর আলি খান
সিনিয়র ইকোনমিক করেসপন্ডেন্


বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপরীতমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ  ড. আকবর আলি খান। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা ‘সমুন্নয়’ আয়োজিত বাজেট প্রতিক্রিয়ার আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই অভিমত তুলে ধরেন। বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন্ন, ``সামগ্রিক বিবেচনায় অর্থনীতিতে বিপরীতমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে দেশের অর্থনীতি প্রতিশ্রুতিশীল এবং বর্ধিষ্ণু। কিন্তু ঝুঁকি এবং নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন। অনেক সূচক উদ্বেগজনক। তবে বেশ কিছু ভালো লক্ষণও রয়েছে।``
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষিব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এনামুল হক। এসময় আকবর আলি খান সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের দাবির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ``সরকারের অনেকেই বলছেন, সরকার এত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করল, তার জন্য কেউ প্রশংসা করছে না। কিন্তু সাধারণ মানুষের দুঃখ, তারা লোডশেডিং থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। এত বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে তা গেল কোথায়।`` তিনি বলেন, ``আমরা সরকারকে প্রশংসা করবো যদি সরকার বলে, কতগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানি সংকটে বন্ধ হয়ে আছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকৃত কী পরিমাণ?`` আকবর আলি খান মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বলেন, ``ইদানিং অনেকেই বলেন, মূল্যস্ফীতি নাকি খারাপ কিছু না। কিন্তু মূল্যস্ফীতি অর্থনীতিতে উদ্বেগের তৈরি করে, সুদের হার বাড়ায় এবং বিনিয়োগ কমে যায়। ৯ থেকে ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কষ্টের। এটি গরিব এবং যাদের আয় স্থির তাদের জন্য দুঃখের।`` তিনি আরও বলেন, ``গত ৩ বছরে মূল্যস্ফীতি ২৫ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর বাজেটে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। এর জন্য কী করা হবে তা বলা নেই। বিগত বছরগুলোতেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি।`` আকবর আলি খান বলেন, ``অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ নেওয়ার সময় অর্থনীতির চাপের কথা স্বীকার করেছেন। চুক্তি সাহসী সিদ্ধান্ত, কিন্তু শর্ত মেনে ঋণ ছাড় করাতে না পারলে অন্য দাতাদের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে।`` তিনি আরও বলেন, ‘আইএমএফের হিসাব মতে, আগামী তিন বছরে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার বিদেশি সহায়তা দরকার। কিন্তু আমরা দাতাদের সঙ্গে যেভাবে কথা বলছি তাতে করে এত সহায়তা পাওয়া যাবে কি?`` গত কয়েক দশকে অর্থনীতি নিয়ে রাজনীতি চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ``অর্থনীতি নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক কথা বলে অর্থনীতি চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার অর্থনীতি দিয়ে রাজনীতি চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব ঠিক হচ্ছে না। এতে হিতে বিপরীত হবে।`` তিনি বলেন, ``সাধারণ মানুষের কাছে কোনো সরকার এলো আর কোন সরকার গেল তা বড় কথা নয়। বড় কথা লোডশেডিং বন্ধ হয়েছে কি না।`` আকবর আলি খান বলেন, ``সরকারের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী আসছে অর্থবছরে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ কমে যাবে। কিন্তু এটি অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বিনিয়োগ কমলে তা উদ্বেগের কারণ হবে।`` খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ``বাজেট ঘাটতি যে খুব বেশি তা বলবো না। তবে ২৩ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক নির্ভর হলে ব্যক্তিখাত বাধাগ্রস্ত হবে। এখানে ব্যাংকগুলোর পক্ষে ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে না। চলমান তারল্য সংকট আরও বাড়বে। বাড়বে সুদের হারও।`` তাই সরকারকে বিকল্প উৎস খোঁজার পরামর্শ দেন তিনি।তার মতে, ``সরকার ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ না বাড়িয়ে, বন্ড মার্কেট থেকে এবং সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে টাকা নিতে পারে।`` মূল্যস্ফীতি নিয়ে তিনি বলেন, ``এখন যে পরিমাণ মূল্যস্ফীতি রয়েছে তা উদ্বেগজনক। আমাদের প্রধান সংগ্রাম প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা। এজন্য লাগলে প্রবৃদ্ধিতে ছাড়ও দেওয়া যেতে পারে।`` মূল্য প্রবন্ধে এনামুল হক বলেন,``অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্য যত সুন্দর, বাজেটের পেপার তত সুন্দর নয়। আশাবাদ আছে, কোনো নির্দেশনা নেই।``

“যেদিন শেখে মইরছে, হারা দুনিয়া আন্ধার অই গেছিল!
মাজেদুল নয়ন

রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর থেকে ফিরে: প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই ভোট দেন যাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা রহিমা বেগম (ছদ্মনাম)। ভোট দেন ধানের শীষে। কেন তিনি ধানের শীষে ভোট দেন? জানতে চাইলে বাংলানিউজকে বলেন, “বাবুরে অন (এখন) কি আর দেশো হানি (পানি) আছেনি? নাই। হানিও নাই, নোকাও নাই। দু’গা (অল্প) ধান অয়, ধান খাই, ধানের শীষে ভোট দি।” ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভোট দিয়েছেন ধানের শীষে। কিন্তু যখন জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের এলাকায় ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কে নির্বাচন করেছে বা যাকে ভোট দিয়েছেন তার নাম জানেন কি?” তখন অসহায়ত্ব ফুটে উঠলো অভিব্যক্তিতে। উত্তর দিলেন, “ধানের শীষ জিচ্ছে (জিতেছে)। এবার নতুন বেডা (লোক) একগা (একজন) খাড়াইছে (নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন), হেতার নাম জানি ন। তয় এবার বেলে জিয়াউল হক জিয়া ধানের শীষে খাড়ায় ন।” উল্লেখ্য, `৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপি’র জিয়াউল হক জিয়া। তবে ১/১১ এর পটপরিবর্তনের সময় তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরই মধ্যে লক্ষ্মীপুরের রাজনীতিতে মজবুত অবস্থানে চলে আসেন নাজিম উদ্দিন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ও পান বিপুল ভোটে। লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জের উত্তর ফতেপুরের বৃদ্ধা রহিমা ধানের শীষে ভোট দেয়ার আর কোনো কারণ বলতে পারেন না। আর নৌকায় ভোট না দেয়ার কারণও ওটাই। আর কোনো মার্কার নাম জানেন? “অ্যাঁ (হ্যাঁ), লাঙ্গল আর দাঁড়িহাল্লা (দাঁড়িপাল্লা)।’ জানা গেল, প্রথম ভোট দিয়েছিলেন ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। সে সময়টার স্মৃতিচারণ করে বললেন, “হেতেনে (তিনি অর্থাৎ রহিমার স্বামী) কইছিল (বলেছিল) ধানের শীষে ভোট দিতে। এয়ার হরের তাই (এরপর থেকে) এই মার্কা ছাড়া অইন্যো কোনো মার্কায় ভোট দেইনো (দেইনি)। আর আঙ্গ গেরামো বেকেএ (এবং আমাদের গ্রামের সবাই) হেই সময় ধানের শীষে ভোট দিতো। নৌকা আছিল কম।” আঙ্গুল গুনে কয়েকজনের নাম উচ্চারণ করে বললেন, “অন এনা (এখনকার দিনে এসে) হোলাহাইনে (তরুণরা) নৌকাত ভোট দেয়। আঁই (আমি) দি ন।” নৌকা ও ধানের শীষ মার্কার দল ও ‘মালিকদের’ (দলের নেতা)) চেনেন রহিমা বেগম। বললেন, “আওয়ামী লীগের নোকা আর বিএনপি’র ধানের শীষ।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার পরিচয়ও জানেন। বললেন, “হাসিনার বাপ আছিল শেখ মুজিব। আন্দা (আমরা) ছোটকালেরতাইয়ে (ছোট বেলা থেকে) হেতার নাম হুইনছি। হেতারলাইতো (উনার জন্যে) দেশ স্বাধীন অইছে। আঙ্গ হেতেনে (স্বামী) যুদ্ধের ত আই (মুক্তিযুদ্ধ থেকে এসে) কইতো শেখের কতা। হেতেনরা যুদ্ধের সময় বেলে একবার খবর রটছে শেখরে মিলিটারিরা মারি হালাইছে (খবর রটে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি মিলিটারিরা মেরে ফেলেছে)। হরে হুইনছি (পরে শুনেছি) মিছা কথা। রাজাকাররা এগিনি ছড়াইছে।” “আঁর এবো (এখনো) মনে আছে, যেদিন শেখে মইরছে (মারা গেছেন), হারা দুনিয়া আন্ধার অই গেছিল (সারা দুনিয়া অন্ধকার হয়ে এসেছিল)। আঙ্গ হেতেনে (আমাদের উনি) হদ্দা বাজারের ত (স্থানীয় পদ্মাবাজার) আই কয়, হুইনছনি? শেখ মুজিবরে কারা বলে মারি হালাইছে (কারা যেন মেরে ফেলেছে)। হেতেনের খুব মন খারাপ অইছিল।” রহিমা বেগমের মুক্তিযোদ্ধা স্বামী মারা গিয়েছেন বছর চৌদ্দ আগে। মুক্তিযোদ্ধা ভাতার মাসিক টাকা নিয়মতই পান। এ প্রসঙ্গের উল্লেখ করে বললেন, ``হেতেনের সার্টিফিকেট আছিল, হেল্লাই (এ জন্যে) কোনো ঝামিলা অয় ন।” তবে শেখ মুজিবের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও মুজিবের নৌকায় ভোট দিতেন না রহিমার স্বামী। রহিমা এ প্রতিবদেককে বলেন, “জানি না, হেতেনেয়না জানে (তিনি জানতেন), কিল্লাই ধানের শীষে ভোট দিত! তোরেতো কইছিয়ে হেকতে (তোকে তো আগেই বলেছি) আঙ্গ এমি (এদিকে) বেকেএ ধানের শীষ কইরতো।” আগের এমপি জিয়াউল হক’রে কখনো দেখেছেন? জানতে চাইলে বলেন, “না। একবার ইলিকশনের আগেদি চণ্ডুর (স্থানীয় গ্রাম্য বাজার) গেছিল এই রাস্তাদি (বাড়ির পাশের রাস্তাটি দেখালেন)। আন্দা চানের লাই (দেখার জন্যে) রাস্তাত খাড়াই আছিলাম। হেতে স্পিডে গাড়িত করি চলি গেছে। দেই ন আর (দেখি নাই আর)।`` বর্তমান এমপি নাজিম উদ্দিনের নাম জানলেন এ প্রতিবেদকের কাছ থেকে। জিজ্ঞাসা করলেন, “ইতার বাড়ি কোনাই (উনার বাড়ি কোথায়)?”
``ধানের শীষ মার্কায় ভোট দিয়ে সরকারের এমপি নির্বাচন করেছেন, এখন কেমন আছেন?`` রহিমা উত্তর দিলেন, “বালা (ভালো) নাই। হেতেনে (প্রয়াত স্বামী) মরার সময় কিছু করি যাইতো হারে ন (সহায় সম্পত্তি রেখে যেতে পারেননি)। ভিডা কদ্দুরও আঁই থাই (এক চিলতে ভিটে নিয়ে আমি থাকি) । হোলা বড্ডাগা (বড় ছেলে) সোদি (সৌদি আরব) যানের সময় সব বেচি গেছে। আগে বছরে ২/৩ বার টেয়া হাডাইতো। কিন্তু গত ৪-৫ বছর ধরি টেয়া হাডায় না (টাকা পাঠায় না)। বো (ছেলের বউ) আর ২ নাতি থায় আঁর লগে (থাকে আমার সঙ্গে)। মাইঝ্যা আর সাইজ্যাগা (মেঝো ও সেজো ছেলে) রায়পুরে মামার দোয়ানো বইয়ে (দোকানে বসেন)। ছোট্টগাতো উড়–ম উড়–ম (উড়নচণ্ডি স্বভাবের)। নিজের বো লই নিজের মতোন থায় (নিজের বউকে নিয়ে আলাদা থাকে)। মাইয়্যা তিনুগা (তিনজন) শ্বশুর বাইত (শ্বশুর বাড়িতে)।”
বললেন, ``বাউরে (বাবারে) ভোট দি কি আর কিছু অয়নি? বেক (সব) জিনিসের দাম হত্তেদিন (প্রতিদিন) বাড়ে। নোকারে ভোট দিলে কি আঁর লাই হেতারা (রাজনৈতিক দল) কিছু কইরবনি? বেড়ার ঘর এডা ভাঙ্গি যাইবো কোনদিন। আঁর ঘর কি কেউ উডাই দিবনি? ছোট্ট হোলা মেট্টিক পাশ কইরছে, আঙ্গ এমির এক নেতা শরিফ একবার কইছে চাকরি দিব। কই, আর দিছে?” জিজ্ঞাসা করলাম শরিফ কোন দল করে? বলল, “কে জানি! শরিফ হেকতে (ওই সময়ে) চেয়ারম্যানের কাছের লোক আছিল।” ২০০৮ এর নির্বাচনে অপরিচিত নাজিম উদ্দিনকে ভোট দেয়ার আগে জিয়াউল হক জিয়াকে ধানের শীষে ভোট দিতেন রহিমা। ১৯৯০ সাল থেকে জিয়াউল হক জিয়া লক্ষীপুর-১ আসনে টানা ১৬ বছর নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। জিয়াউল হক জিয়া’র অনুসারীদের মাঝে তখন একটি ধারণা প্রবল ছিল; তা হলো-- লক্ষীপুরের রামগঞ্জ-রামগতির মানুষ জিয়া ছাড়া আর কাউকে ভোট দেবে না। এবং জিয়া স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করলেও নির্বাচিত হবেন। ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখলে, ২০০৮ এর নির্বাচনী ফলাফল সেটাকে ভুল প্রমাণিত করে। জিয়াকে নয়, মানুষ ভোট দেয় ‘ধানের শীষ’কে। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষীপুরের বিএনপিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় ছিলেন নাজিম উদ্দিন। ১৯৯৬ সালের ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বিএনপি থেকে প্রার্থী মনোনয়নের জন্যে নির্বাচন করা হয়ে। এতে নাজিম উদ্দিনের কাছে জিয়াউল হক জিয়া পরাজিত হলেও কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে জিয়াকেই মনোনয়ন দেয়া হয়। জিয়া ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন। এসব বিষয় বলার ফাঁকে রহিমা বেগম ফের জানালেন, নাজিম উদ্দিন বা জিয়াকে নয়, তিনি ধানের শীষ মার্কাকেই ভোট দেন। বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে কথা বলে ও পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, লক্ষীপুর-১ আসনের ব্যাপারে স্থানীয়দের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি মতেরই প্রতিফলন ঘটেছে বারবার; এটা তো জাতীয় নির্বাচনেও দেখা গেছে। আর তা হলো এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে একটি কলাগাছকে দাঁড় করিয়ে দিলেও বিপুল ভোটে জিতে যাবে।” লক্ষীপুরের বিভিন্ন থানার বিভিন্ন বয়সী ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বেশিরভাগই শুধু হাসিনা বা খালেদা এবং নৌকা বা ধানের শীষ দেখে ভোট দেন। বয়স্কদের অনেকেই জানেন না, কোন ব্যক্তিকে তারা ভোট দিয়েছেন। রহিমা বেগম বললেন, ``ধানের শীষ আর নৌকা কিরব (কি করবে)? এই গেরামো যেগুনরে ভোট দিছি, হেগুনেইতো আর ভোটের হরে ( ভোটের পরে) খবর লয় ন (খোঁজ রাখে না)।``
টাকার বিনিময়ে নাম্বার: ফেঁসে গেছে মাইলস্টোন ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ
মাজেদুল নয়ন


এইচএসসি‘র ব্যবহারিক পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে ৯০০ পরীক্ষার্থীকে টাকার বিনিময়ে নম্বর দিতে গিয়ে ফেঁসে গেছে রাজধানীর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও মাইলস্টোন কলেজ। মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষসহ কয়েক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষার্থী প্রতি ৩০০ টাকা করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এ ব্যাপারে বুধবার ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, টাকার বিনিময়ে পাবলিক পরীক্ষায়  নম্বর দেয়ার যে ঘটনা ঘটেছে তাতে অভিযুক্ত শিক্ষকদের কেবল বদলি করলেই পুরোপুরি শাস্তি হয়না। পরীক্ষা কেন্দ্রও বাতিল করা উচিৎ।
বোর্ড সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের বিরুদ্ধে ‘টাকার বিনিময়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ব্যবহারিক পরীক্ষায় নাম্বার দেয়ার অভিযোগ আসছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ড এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে শতর্ক করে দিলেও কোনো কোনো কলেজ গোপনে অর্থ আদায় করছিল। সূত্র জানায়, ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছিল কয়েকটি কলেজ। অনুসন্ধানে এ অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। বুধবার মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাককরা বাংলানিউজকে জানান, টাকার বিনিময়ে নম্বর দেয়ার। জানা গেছে, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা দুর্নীতিতে জড়িত দুই কলেজের অভিযুক্ত শিক্ষকদের নামসহ লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে। গত বছরের মতো এবারো মাইলস্টোন কলেজের পরীক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিকের কেন্দ্র ছিল সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। কিন্তু আগেই মাইলস্টোন কলেজ কর্তৃপক্ষ তার পরীক্ষার্থীদের সকল বিষয়ে পূর্ণ নম্বর পাইয়ে দিতে বিজ্ঞান কলেজ কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে গোপনে আলোচনা করেন। বিনিময়ে মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের বোঝাপড়া হয়। যার একটি বড় অংশ শিক্ষার্থী প্রতি ৩০০ টাকা করে আদায় করে যোগান দেয়া হয়েছে। টাকা উত্তোলন করে বিজ্ঞান কলেজের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের হাতে পৌঁছানোসহ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাইলস্টোনের হয়ে মনিটরিং করেছেন ঐ কলেজেরই শিক্ষক মাহমুদুল হক ও শাফায়েত। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন, পরীক্ষার সময়ে কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়ে মাইলস্টোনের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলেছেন বিজ্ঞান কলেজের পদার্থ ও রসায়ন বিভাগের প্রধান। কিন্তু এরপরেআর টাকার খাই মেটাতে রাজী না হওয়ায় মাইলস্টোন কলেজ ও বিজ্ঞান কলেজের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ফেল করিয়ে দেয়ার ভয় দেখায়। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো অভিযোগপত্রে অভিভাবকরা ঘটনার জন্য দুই কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষককে অভিযুক্ত করেছেন। এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। এদিকে, পরীক্ষার সময়েও কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নির্দেশে টাকা তোলার কথা শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন দুই কর্মচারী। তারা কমিটিতে লিখিত জবানবন্দীও দিয়েছেন। ওই জবানবন্দিতে একই পদ্ধতিতে গত বছরেও অনিয়ম হয়েছে বলে প্রকাশ করে দিয়েছেন কর্মচারীরা। তবে সবকিছু ফাঁস হয়ে গেলেও তদন্ত কমিটির কাছে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বলেছেন, আমরা কোনো টাকা নেইনি‘।
এ ধরনের কোনো পরিকল্পনার সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে বাংলানিউজের কাছে দাবি করেছেন মাইস্টোন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ নুরুন নবী। বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নুরজাহান বেগম বাংলানিউজকে বলেছেন, যা হয়েছে এখন তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। তার দাবি, বিজ্ঞান কলেজে টাকা দিয়ে নম্বর দেয়ার মতো ঘটনা ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই। আপনার সঙ্গে মাইস্টোন কলেজ বড় অংকের অর্থ দেয়ার জন্য যোগাযোগ করেছিল কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, আপনি তা জানলেন কিভাবে? অভিভাবকরা জানিয়েছেন বললে অধ্যক্ষ বলেন, না অভিভাবকরা কেন এটা জানাবে? ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন টাকার বিনিময়ে পাবলিক পরীক্ষার নম্বর দেয়ার ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, “যা ঘটেছে তাতে অভিযুক্ত শিক্ষকদের কেবল বদলি করলেই পুরোপুরি শাস্তি হয়না। বদলিতো করা হবেই। পরীক্ষা কেন্দ্রও বাতিল করা হবে। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।” তিনি জানান, কেলেঙ্কোরির জন্য গত বছর মাইলস্টোনের কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছিল। এবার সরকার নির্ধারিত অনলাইন ভর্তিকে পাশ কাটিয়ে গোপনে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়েছে। তদন্তেও তাও বেড়িয়ে এসেছে। এজন্য অবশ্যই শাস্তি হবে।
টাঙ্গাইলের ফুলতলায় ফলের বাগান করে জুয়েল এখন স্বাবলম্বী
আইএনবি, টাঙ্গাইল
অদম্য ইচ্ছা মানুষকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তার বাস্তব প্রমাণ টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ফুলতলা গ্রামের আমিনুল হক জুয়েল। মিশ্র ফলের বাগান করে তিনি বৃহস্পতিবার সারাদেশে মডেলে পরিণত হয়েছেন। বিভিন্ন প্রকার ফল ও ফলের চারা বিক্রি করে তিনি লাখপতি হয়েছেন অনেক আগেই। এখন তার কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। তার কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ফুলতলাসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় দেড়শ’ একক ও মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। উদ্যমী জুয়েল এখন কালিহাতীর ফুলতলা গ্রামের ফুলে পরিণত হয়েছেন। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ জানান, ১৯৯৬ সালে তিন বিঘা জমিতে ১৮টি লিচুর চারা দিয়ে বাগান শুরু করেন জুয়েল। ১৯৯৯ সালে ছয়টি আম্রপালীর চারা দিয়ে আমের অগ্রযাত্রা শুরু। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বাড়ির পাশেই এখন তার বাগানের পরিধি ১৪ বিঘা। সবই তার পৈত্রিক সম্পত্তি। এখন তার বাগানে পুরোমাত্রায় ফল দিচ্ছে এমন আম গাছ রয়েছে ৪৫০টি, লিচু গাছ শতাধিক, পিয়ারা গাছ রয়েছে দুই শতাধিক। এছাড়া ৫শ’টি লটকনের চারা তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কুল, জলপাই, কাঠাল, সুপারি ও নারিকেল গাছও রয়েছে। প্রতিবছর ২০ হাজার পিস ফলের চারা বিক্রি করেন তিনি। এর মধ্যে আম ১৬ হাজার ও লিচু চার হাজার। প্রতিটি চারা বিক্রি হয় গড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। আমের বিভিন্ন জাতের মধ্যে রয়েছে আম্রপালী, মল্লিকা, ল্যাংড়া, রাঙ্গুয়াই, ফজলি, সুরমা ফজলি, চোষা ও বারোমাসি। লিচুর বিভিন্ন জাতের মধ্যে রয়েছে চায়না-৩, এলাচি ও বোম্বাই। বাগানে বর্তমানে বিক্রিযোগ্য ২০ হাজার চারা আছে। সবই কলমের চারা। জুয়েল নিজে এসব তৈরি করেন।  তার সমস্ত কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। জুয়েল কখনো হাটে-বাজারে গিয়ে ফল বা চারা বিক্রি করেন না। যার যা প্রয়োজন তার বাগানে এসে কিনে নিয়ে যান। দামও রাখা হয় হাট-বাজারের চেয়ে অনেক কম। আর সঠিক জাতের মানসম্মত চারা তৈরি ও বিশুদ্ধ ফল উৎপাদনে জুয়েলের রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। কৃষি সম্প্রসারণের মাধ্যমে জেলার প্রতিটি উপজেলায়ই তার বাগানের চারা বিক্রি হচ্ছে। সুদূর খুলনা থেকে পাইকার এসে তার বাগান থেকে চারা কিনে নিয়ে যান। জুয়েলের সুখ্যাতি আর সাফল্যের কথা ২০০৪ সালে বিটিভি’র ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। ২০০৫ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ইব্রাহীম খলিল বাগান পরিদর্শন করে জুয়েলের ভূয়শী প্রশংসা করেন। জুয়েল তার কৃতিত্বের জন্য ২০০৬ সালে ঢাকায় জাতীয় ফল মেলা থেকে একটি বিশেষ পুরস্কার পান। এক সময় বিদেশ যাওয়ার নেশা তাকে পেয়ে বসলে আর লেখাপড়া করা হয়নি। কিন্তু তার বিদেশও যাওয়া হয়নি। এক ছেলে, এক মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে তার এখন সুখের সংসার। আমিনুল হক জুয়েল বলেন, প্রতিবছর বিভিন্ন ফল ও চারা বিক্রি করে সব খরচ বাদে আমার কমপে ১০ লাখ টাকা আয় হয়। মিশ্র ফলের বাগান করে আমার কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। কালিহাতী উপজেলার ফুলতলা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ বলেন, কৃষি সম্প্রসারণের প থেকে আমি যতটুকু সম্ভব তাকে সহযোগিতা করছি। তাছাড়া জুয়েল খুব উদ্যমী এবং কঠোর পরিশ্রমী একজন মানুষ। তার আজকের অবস্থান সেটাই প্রমাণ করে। বিভিন্ন ফলের চারার কলম তৈরিতে জুয়েলের হাত খুবই ভাল বলে জানান এই কর্মকর্তা। জুয়েলের কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হয়ে ফুলতলাসহ আশপাশের গ্রামের অনেকেই ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শ’ একক ও মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন এবং স্বাবলম্বী হয়েছেন। এমনই একজন হলেন পাশ্ববর্তী ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামের আহম্মেদ শরীফ। সাত বছর আগে তিনি ১৮০ শতাংশ জমিতে আম, জাম, কাঠাল ও লিচুর চারা দিয়ে মিশ্র ফলের বাগান করেন। আহাম্মেদ শরীফ বলেন, প্রতিবছর খরচ বাদে আমার বাগান থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ হয়। আমি এখন স্বাবলম্বী। ফুলতলা গ্রামের মঞ্জুরুল হকও বললেন একই কথা। কালিহাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গৌর গোবিন্দ দাস বলেন, ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রজেক্টের আওতায় নার্সারী বিষয়ে জুয়েলকে প্রশিণ দেয়া হয়। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে গিয়েও তাকে এ সম্পর্কে বাস্তবভিত্তিক ধারণা দেয়া হয়। বোধ করি সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই জুয়েল আজ সফল হয়েছেন। তাছাড়া কৃষি বিভাগ থেকে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। ফুলতলাসহ আশপাশের এলাকায় যারা একক ও মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন তাদেরকে কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
রাজনীতির খলনায়ক 
জাকারিয়া মন্ডল


 বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা যেন চরম অস্থিরতার সমার্থক এক নাম। কখনো দলীয় প্রধানের সমালোচনা, কখনো বিদেশি কূটনীতিককে কটাক্ষ, নয়তো দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলে বা বিচারপতিদের দরোজায় লাথি মেরে সমালোচিত হওয়া যেন তার নিত্য নিয়তি হয়ে  আছে। এসবের জন্য মাঝেমধ্যেই চরম মাশুল গুনতে হয়েছে বহু বিতর্কের এই খলনায়ককে। সর্বশেষ বুধবার বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে আরো একবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন এই অঘটন ঘটন পটিয়সী। এর আগে লাগামহীন বক্তব্যের দায়ে বিএনপি ও গ্রুপিং করে জাতীয়তাবাদী ফোরাম থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার নজির যেমন গড়েছেন, তেমনি নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ ও বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার উদাহরণও আছে তার। দুর্নীতি, অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন, ঘুষ, চাঁদাবাজি আর অস্ত্র মামলায় কারাবাসে থেকেছেন বহুদিন। আবার কারাগারে থেকেই তুলেছেন বিএনপির বিকল্প কমিটির প্রস্তাব। এমনকি সেনাপ্রধানকে রাষ্ট্রপতি করার বিধান সংবিধানে সংযোজনের বহুল আলোচিত দাবিও তিনিই তোলেন। এসব কারণে দলীয় পরিমণ্ডলে যেমন সমালোচিত হয়েছেন, তেমনি জনমনে যথেষ্ট হাসির খোরাক যুগিয়েছেন বিতর্কিত এই আইনজীবী । এমনকি ‘রঙ হেডেড’ আর ‘ওয়ার্থলেস’ বলে আদালত অনমাননার দায় থেকে তাকে মুক্তিও দিয়েছেন আদালত।  এমন সব হঠকারী কর্মকাণ্ডের জন্য ভোগান্তিটাও নেহায়েত কম হয়নি নাজমুল হুদার। তাই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে দলটির স্থায়ী কমিটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে তার রাজনৈতিক নবযাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে নানা কৃতকর্মে দলের মধ্যেই সাইড লাইনার হয়ে বসে থাকতে হয় তাকে।  ১৯৮০ দশকের গোড়াতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েও তাকে স্বাগত জানান হুদা। এ ঘটনার জেরে ‘৮৪ সালে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এসে হুদাকে স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে বাদ দেন। ভুল স্বীকার ও মার্জনা প্রার্থনার পর ’৮৭ সালে ফের দলের ভাইস-চেয়ারম্যান করা হয় তাকে। তথ্যমন্ত্রী থাকাকালে ১৯৯৫ সালে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি তত্ত্বাবধায়কের পক্ষে অবস্থান নেন। সে সময় তিনি বলেন, ‘আমরা এরশাদের বিরুদ্ধে তরুণদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলাম।’ এমন বত্বব্যের পর মন্ত্রিত্ব হারালেও দলীয় পদ টিকে যায় নাজমুল হুদার। যোগাযোগ মন্ত্রী থাকাকালে ২০০২ সালের ২৫ আগস্ট রাজধানীর যানজট নিরসন ও পরিবেশ দুষণকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুবিধার্থে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করে দলের মধ্যেই বিরাগভাজন হন হুদা। ২০০২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর চার দলীয় জোট সরকারের নেওয়া উপজেলা পরিষদ পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও প্রবল অবস্থান নিয়ে সতীর্থদের রোষাণলে পড়েন তিনি। ২০০৪ সালের ৩ জানুয়ারি জিয়াউর রহমানকে অবমূল্যায়ণ ও বিএনপির মূল ভিত্তির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য মন্ত্রিসভা থেকে নাজমুল হুদাকে অপসারণ ও দল থেকে তাকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন তার দলেরই অপর সংসদ সদস্য মাহী বি চৌধুরী। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলনে একাত্তরে পাকিস্তানের অখণ্ডতা চেয়ে জামায়াত কোন অপরাধ করেনি বক্তব্য দিয়েও বিতর্কিত হন তিনি। তার সময়েই যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় হিসেবে চিহ্নিত করে টিআইবি। তার জন্যই এশিয়ান হাউওয়ের কাজ আটকে যায় বলে অভিযোগ আছে। একদিকে ২০০৬ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসকে স্টুপিড ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আখ্যা দিয়ে কূটনৈকি শিষ্ঠাচার লংঘনের দায়ে অভিযুক্ত হন, অপরদিকে ২০০৪ সালে ‘পাকিস্তানের অখণ্ডতা চেয়ে জামায়াত কোন অপরাধ করেনি’ মন্তব্য করে দলীয় পরিমণ্ডলে তুলোধুনো হন ব্যারিস্টার হুদা। ২০০৮ সালের ১৫ এপ্রিল কেয়ারটেকার সরকারের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপির ১২ জনের বিকল্প কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি। ২০০৯ সালের ৩ মে এক জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠনের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘এ কমিটির অনেকের স্বেচ্ছায় চলে যাওয়া উচিত।’ একই বছরের ২৩ মে মহাসচিব হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে মহাসচিব নিয়োগে খালেদা জিয়ার একক ক্ষমতার সমালোচনা করেন তিনি। ওই বছরেরই ২ জুলাই তাকে রঙ হেডেড পারসন ও ওয়ার্থলেস আখ্যা দেন তৎকালীন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমদের বেঞ্চ। সে বছরেরই ১৯ ডিসেম্বর এক জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি আর নয়, এবার ডিগবাজি দেবো। ডিগবাজি দিলে বিএনপিতে মূল্যায়ণ হয় বেশি।’ ওই সময় আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগও করেন তিনি। ২০১০ সালের ২২ আগস্ট দুই নেত্রীকে একত্রে বসানোর উদ্যোগ নেন নাজমুল হুদা। এ লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে শুরু করেন ব্যাপক প্রচারণা। একই বছরের ১৯ নভেম্বর তিনি বলেন, ‘আইনজীবীদের ভুলের কারণেই খালেদাকে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। অবশ্যই হাইকোর্টের আদেশের বিরদ্ধে স্থগিতাদের চাওয়া প্রয়োজন ছিলো। ওই বছরেরই ২১ নভেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, খালেদা জিয়ার সমালোচনা ও সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাকে ভাইস-চেয়ারম্যানসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ভুল স্বীকার করে ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর বিএনপিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানান তিনি। এর প্রেক্ষিতে তাকে ফিরিয়ে নেওয়া হলেও ভাইস-চেয়ারম্যান পদ আর ফিরে পাওয়া হয়নি তার। গত ২৩ মে শেখ হাসিনাকে সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানানোর জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহবান জানান তিনি। এ আহবানে বিএনপি প্রধান সাড়া না দেওয়ায় বুধবার বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। এর আগে ২০০১ সালের ১১ জানুয়ারি দুই বিচারপতির শপথগ্রহণকালে বিচারপতিদের দরজা-জানালায় লাথি মেরে ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে আরো ১৬ জনের সঙ্গে নাজমুল হুদার বিরুদ্ধেও জননিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। একই বছরের ১৬ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। ২০০৫ সালের ১০ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাস মালিক-শ্রমিকদের এক বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েও সাংবাদিকদের বের করে দেন তিনি। সে সময় তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তথ্য বিকৃতির অভিযোগ তোলেন। প্রতিবাদে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)সহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন নাজমুল হুদার খবর বয়কটের আহবান জানান। ২০০৫ সালের ১৮ এপ্রিল ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় ভালো উদ্যোগ নিলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বাধা সৃষ্টি করা হয় বলে মন্তব্য করে ফের বিতর্কিত হন নাজমুল হুদা।  যোগাযোগ মন্ত্রী থাকাকালে ‘বর্তমান সরকারের আমলে বিচার বিভাগ পৃথক হবে না’ মন্তব্য করেও বিতর্কিত হন তিনি। এছাড়া তার বুলেট ট্রেন, পাতাল রেল ও ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস হাইওয়ের ঘোষণা পরবর্তীতে বাগাড়ম্বরে পরিণত হয়। ২০০৫ সালের ৩ আগস্ট সরকার সমর্থক আইনজীবীদের কোন্দলে যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদাকে বহিষ্কার করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। জবাবে নাজমুল হুদা ও তার সমর্থকরা ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখা কমিটি বিলুপ্ত করে পাল্টা কমিটি গঠন করেন। এর ফলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আহবায়কের পদ হারান নাজমুল হুদা। এ সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মাথায় জিয়ার মাজারে ফুল দিয়ে ফিরে এসে ২০০৬ সালের ২০ জানুয়ারি পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। এ পদত্যাগের পর সাংবাদিকদের দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘হাই কমান্ড নয়, আমি হাইয়েস্ট কমান্ডের কথায় চলি।’ এ সবের বাইরে দুর্নীতি, ঘুষ কেলেঙ্কারি, অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন, চাঁদাবাজি আর অবৈধ অস্ত্রবাজিরও এন্তার অভিযোগ রয়েছে নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে। ২০০৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তার ধানমন্ডির বাসায় অভিযান চালিয়ে ৩২ বোরের একটি পিস্তল ও ১৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১৪ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয় ধানমন্ডি থানায়। এরপর তার বিরুদ্ধে হয় দুর্নীতির মামলাও। সড়ক ও জনপথের ১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১০ জুন তার বিরুদ্ধে মামলা হয় মুন্সীগঞ্জ থানায়। ২০০৭ সালের ১১ মার্চ নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী সিগমা হুদার বিরুদ্ধে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে মামলা হয় ধানমন্ডি থানায়। এ মামলা থেকে স্ত্রীর অব্যাহতি চেয়ে আদালতে কেঁদে ফেলেন হুদা। একই বছরের ২৭ আগস্ট হুদাকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদ- ও তার স্ত্রীকে ৩ বছরের বিনাশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ঘুষের টাকা তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে জব্দ করার নির্দেশ অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ওই মামলায় কারাবাসে থাকাকালে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর নতুন ফর্মুলা দিয়ে সেনাপ্রধানকে রাষ্ট্রপতির করার বিধান সংবিধানে সংযোজন করার আহবান জানান তিনি। ৫ জুন ২০০৭ সালের ৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয় পল্টন থানায়।
২০০৭ সালের ১০ জুলাই এক মামলায় সাক্ষীদের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা প্রভাবিত করছেন অভিযোগে আদালত বর্জনের হুমকি দেন তিনি। পরদিন ১১ জুলাই হুদা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ৮ কোটি ২ লাখ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ২০০৭ সালের ১৩ জুলাই বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মহাসচিব পদ থেকে সিগমা হুদা ও জাতীয় কমিটির সদস্য পদ থেকে নাজমুল হুদাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই হুদা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চাদাবাজির মামলা করেন তারই রাজনৈতিক সতীর্থ জিএম সিরাজ। ২০০৮ সালের ৯ জানুয়ারি ৭ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় তার বিরুদ্দে চার্জ গঠন করা হয়। ২০০৭ সালের ১১ জুলাই দায়ের করা  দুদকের মামলায় অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের দায়ে ব্যারিস্টার হুদাকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদ- দেওয়া হয় ২০০৮ সালের  ৩ এপ্রিল। একই সঙ্গে তাকে ১ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরে ১ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। একই রায়ে অবৈধভাবে উপার্জিত ১ কোটি ১৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও দোহারের বাগানবাড়ি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া জোট আমলে দোহারে ৬০ কোটি টাকা অবৈধ ব্যয়ের আভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ভৈরব সেতু নিয়ে ১০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে ২০১০ সালের ৫ মে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রা রাখার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যৌথবাহিনী তাকে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী। ৬ এপ্রিল রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। নাজমুল হুদার এই হঠকারী আচরণ কেবল দলীয় পরিমণ্ডলে নয়, পারিবারিক বলয় পর্যন্তও বিস্তৃত বলে জানা যায়। ২০০১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা-১ (দোহার) থেকে আওয়ামী লীগের ব্যানারে নির্বাচনে নামা চাচা সালমান এফ রহমান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তার বিবেক বলে কিছু নেই।’
গাড়িতে ৩জন আরোহী না হলে অতিরিক্ত টোল
ইসমাইল হোসেন

গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক না বাড়ালেও যানজট নিরসনের জন্য অন্তত তিনজন আরোহী না হলে সেডান কার থেকে বিশেষ টোল আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে এ প্রস্তাব রাখেন।
তিনি জানান, ‘আমরা চেষ্টা করছি সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর  যৌথভাবে দেশের সব সড়কের ম্যাপিং করবে এবং ম্যাপিংয়ের ভিত্তিতে এই খাতের জন্য ২০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।’ ‘যানজট নিরসনে অন্তত তিনজন সদস্য না হলে সেডান কার চালানোর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টোল আদায়’সহ বিভিন্ন বিষয় এই পরিকল্পনার ভিত্তি ধরা হয়েছে। মন্ত্রী স্বীকার করেন, আন্তরিক চেষ্টার পরও ঢাকার চারপাশে বৃত্তকার সড়ক ও রেলপথ নির্মাণে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। তবে তিনি জানান, ঢাকার যানজট নিরসনে বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প আগামী অর্থবছরে শেষ করা হবে। যাত্রাবাড়ি থেকে পলাশী পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার এবং প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কুড়িল ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজও এ বছর শেষ হবে। এছাড়া মগবাজার-মৌচাক, পল্টন থেকে ঢাকা-মাওয়া সড়কে ফ্লাইওভার এবং বনানী রেলক্রসিং-এ ওভারপাস নির্মাণের কাজ চলছে। পিপিপি’র আওতায় আমিনবাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন করিডোর নির্মাণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম শহরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে আরো ৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বাজেটে সড়ক ও রেলপথ খাতে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলিয়ে ১০ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সরকারের আমলে ২ হাজার ৯১২ কিলোমিটার জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়ক পুনঃনির্মাণ, প্রশস্ত ও মজবুত করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই বাজেট বাস্তবায়নের বড় চ্যালেঞ্জ’
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই বাজেট বাস্তবায়নের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। জাতীয় ঐক্যমত নিশ্চিত করা গেলে বড় আকারের এ বাজেটও বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সে সঙ্গে আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর কড়া নজর রাখা জরুরি বলে মত দেওয়া হয়েছে। শুত্রুবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় সমন্বিত উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনা সভায় এসব মতামত তুলে ধরা হয়। সভায় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ বলেন, বাজেটে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারলে এ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব। তিনি বলেন, বাজেটের সমালোচনা করা সহজ। কিন্তু বর্তমান সময়ে এর চেয়ে ভালো বাজেট কেউ দিতে পারবে না। ঘাটতি না রেখে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে নিজস্ব সম্পদের ওপর বাজেট ঘোষণা করা সম্ভব না। রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ভালো একটি অর্থনীতির ভীত এখনই তৈরি করতে না পারলে আগামীতে যারাই ক্ষমতা আসবে, তাদের জন্য অর্থনীতিকে সামাল দেওয়া কঠিন হবে ।  রাজস্ব বোর্ডের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ১ জুলাই থেকে বাজেট বাস্তবায়ন করার যে পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়েছে, তা এবারে বাজেটের ইতিবাচক দিক। বাজেট বাস্তবায়ন করার লক্ষে অর্থবছর এপ্রিল-মার্চ করারও প্রস্তাব দেন তিনি। সব পক্ষ সমানভাবে বাজেট বাস্তবায়নে সহযোগিতা করলে প্রবৃদ্ধি ৭.২ নয় আরো বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন ড. আব্দুল মজিদ। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন বলেন, গণমুখী ও সাধারণ মানুষের একটা বাজেট অর্থমন্ত্রী উপহার দিয়েছেন। ওষুধসহ প্রয়োজনীয় কয়েকটি জিনিসের দাম কমানো হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে যাবে। বাড়ানো হয়েছে বিলাসী পন্যের দাম। অংকে বড় হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা থাকলে এ বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, বাজেটে সরকারের নিবার্চনী চেহারাই বেশি পরিস্ফূট হয়েছে। পরিবেশ, দারিদ্র্য বিমোচন, গ্রামীণ অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বাড়ানো ইত্যাদি ইতিবাচক দিক। তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে অর্থমন্ত্রীকে আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকে কড়া নজর রাখতে হবে।  রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হলে বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। নিবার্চনী বাজেট দেওয়া হয়নি দাবি করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান বলেন, অর্থমন্ত্রী একটি ভিশনারি বাজেট ঘোষণা করছেন। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এম আফজাল হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নেন রুপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ আল কবির, ঢাকা ওয়াসার বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রহমতুল্লাহ, ডেভেলপমেন্ট কনস্ট্রাকশন লিমেটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী নুরুল আমিন, গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রকৌশলী এ কে এম মুকিতুর রহমান, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ডেপুটি মেয়র খালেকুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।
ফিকার অভিযোগে বিস্মিত মোস্তফা কামাল!
স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট

বিপিএল নিয়ে বড্ড ঝামেলায় আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। খেলোয়াড়দের বকেয়া আদায়ে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার্স এসোসিয়েশন (ফিকা)। এমন কি ভবিষ্যতে বিপিএলে না খেলার জন্য ক্রিকেটারদের আহ্বান জানিয়েছেন ফিকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম মে। ফিকা সিইও’র দাবি, ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা জানতে পেরেছেন বকেয়া সম্মনী পরিশোধ করা হয়নি। কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট করে কোনো খেলোয়াড়ের অভিযোগ সম্পর্কে বলেননি। এমন কি বিসিবির কাছে এখন পর্যন্ত কোনো ক্রিকেটার অভিযোগ দেয়নি। ফলে বিসিবি গ্যারান্টার হিসেবে ক্রিকেটারদের সম্মানী দিতে চাইলেও পারছে না। বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল শনিবার ভারত থেকে মোবাইলফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফিকা কর্মকর্তা টিম মে নিয়মিত অভিযোগ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি একজন প্লেয়ারের নামও বলছেন না যাকে বকেয়া পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি। কোনো ক্রিকেটার অভিযোগ না করলে গ্যারান্টার হিসেবে বিসিবি কাকে টাকা দেবে?’ বিদেশি ক্রিকেটারদের বকেয়া পরিশোধের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বেশির ভাগ ক্রিকেটার তাদের চুক্তির পুরো টাকা পেয়েছেন। দেশের ক্রিকেটারদেরও ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পাওনা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন ফ্রেঞ্চাইজিরা। আবার অনেকে সেই প্রথম যে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ সম্মানী পেয়েছেন পরে আর এক টাকাও দেওয়া হয়নি। মোস্তফা কামালের বলছেন, ‘কোনো ক্রিকেটারের টাকা না দিয়ে কেউ পার পাবে না। প্রথম আসর হওয়ায় কিছু সীমাবদ্ধতা ছিলো। সে জন্য টাকা দিতে বিলম্ব হয়েছে। কিন্তু কোনো ফ্রেঞ্চাইজি বলেনি তারা ক্রিকেটারদের বকেয়া পরিশোধ করবে না। বিসিবি অনিয়ম করেনি। অনিয়মকে প্রশ্রয়ও দেবে না। গত এক মাসে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। যদি কোনো বিদেশি ক্রিকেটারের টাকা বাকি থাকে তাহলে তাকে অনুরোধ করবো বিসিবিকে জানাতে। আমরা তার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। আমাদের খেলোয়াড়দের বেশির ভাগ টাকা পেয়েছেন। তারাও বাকি টাকা পাবেন।’ ফিকার প্রধান নির্বাহী টিম মে ক্রিকইনফোকে বলেছেন, ‘এটা সাদা এবং কালোর মতো ব্যাপার। চুক্তি অনুযায়ী কতজন ক্রিকেটারের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। আর কোন তারিখে তারা সেটা বুঝে পেয়েছেন? যদি ফ্রাঞ্চাইজিরা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সেটা না করে থাকে তাহলে গ্যারান্টার হিসেবে ক্রিকেটারদের পাওনা আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বিসিবির।’ বিসিবিও বলে আসছে কোনো ক্রিকেটার অভিযোগ করলে তাকে বকেয়া পরিশোধ করে দেওয়া হবে। কেউ অভিযোগ না করায় শেষপর্যন্ত তা হচ্ছে না। কিন্তু টিম মে বিষয়টিকে তুলে ধরছেন অন্য ভাবে, ‘আমরা চারমাস অপেক্ষা করেছি। বেঁধে দেওয়া সময় পার হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতো দিন ধরে শুধু আশার বাণী শুনিয়েছে। আমরা এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি যেখানে সংলাপে বসার সকল পথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফিকার আবেদনে সাড়াও দিচ্ছে না বিসিবি।’
ফিকা কর্মকর্তার ক্রিকেটারদের প্রতি আবেদন, ‘ক্রিকেটারদের প্রতি আমাদের পরামর্শ হচ্ছে যদি ব্যাংক গ্যারান্টি অথবা টাকা বুঝে না পান তবে ভবিষ্যতে বিপিএলে অংশ নেবেন না।’ বিপিএলে খেলোয়াড় সম্মানীর ইস্যুতে টিম মে পরক্ষ হুমকিও দিয়েছেন বিসিবি সভাপতিকে, ‘মোস্তফা কামাল প্রতিনিয়ত আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তিনি আইসিসিতে সভপতি প্রার্থী। ক্রিকেটারদের সম্মানী না দেওয়ায় তার ইমেজ ক্ষুণœ হবে।’
প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ভিক্টোরিয়ার
স্পোর্টস ডেস্ক
ছবি: শোয়েব মিথুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের শিরোপা জিতেছে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব। তামিম ইকবাল ও সৈকত আলীর দুর্দান্ত অর্ধশতকে তারা ২ উইকেটে হারিয়েছে ওল্ডডিওএইচএসকে। এনিয়ে চারবার প্রতিযোগিতার শিরোপা সাফল্যের শোকেসে তুলেছে সাকিব আল হাসানের দল।
ওল্ডডিওএইচএস ইনিংস: ২৩৮/৯ (ওভার ৫০)
ভিক্টোরিয়া ইনিংস: ২৩৯/৮ (ওভার ৪৯.৪)
ফল: ভিক্টোরিয়া দুই উইকেটে জয়ী
ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভিক্টোরিয়ার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পঞ্চম আসরে দারুণ পারফরমেন্স করে দিনকয়েক আগে দেশে ফিরেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। ফিরেই নেমে পড়েছেন ময়দানী যুদ্ধে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে চোখধাঁধানো পারফর্ম করা সাকিব বল হাতে শিকার করেছেন এক উইকেট। ১০ ওভার বোলিং করে ৫৪ রান খরচায় এই উইকেট শিকার করেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। দুই উইকেট নিয়েছেন কলকাতায় সাকিবের ক্লাব সতীর্থ ইকবাল আব্দুল্লাহ। এছাড়া শরীফ উল্লাহ, মোশাররফ হোসেন ও সাব্বির রুম্মান নিয়েছেন একটি করে উইকেট। মূলত তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সুবিধা করতে পারেনি ওল্ড ডিওএইচএস। শেষপর্যন্ত উদয় (৬৫) ও রোলফ মারউইয়ের (৫৯) অর্ধশতকের সুবাদে নির্ধারিত ওভারে নয় উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রান করতে পারে তারা। জবাবে আট উইকেট হারিয়েই লক্ষ্য টপকে যায় ভিক্টোরিয়া। দারুণ খেলেছেন তামিম ইকবাল। এশিয়া কাপে দুর্দান্ত পারফর্ম করেও নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাননি আইপিএলের দল পুনে ওয়ারিয়র্সে। পুনের হয়ে প্রতিযোগিতার কোনো ম্যাচে খেলার সুযোগ পাননি এই বাঁহাতি ওপেনার। আইপিএলে মাঠে নামতে না পারলেও মরচে পড়েনি তার ব্যাটে। প্রতিযোগিতা থেকে ফিরে বেছে নিয়েছেন ওল্ডডিওএইচএসের বোলারদের। এনামুল হক জুনিয়ের বলে ক্যাচ আউট হওয়ার আগে ৫৭ রান করেছেন। ৭টি চার ও ১টি ছয়ের মার ছিলো তার ইনিংসে।
তামিমের বিদায়ের পর ভিক্টোরিয়ার রানের চাকা সচল রেখেছেন সৈকত আলী। তার ব্যাট থেকে আসে ৭১ রান। বল হাতে সাফল্য পেলেও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি সাকিব। ব্যক্তিগত ৪ রানে তাকে সাজঘরে ফেরান নাবিল সামাদ। তবে সাব্বির রুম্মানের ৪০ ও  সৌম্য সরকারের ২৬ রানের কল্যাণে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ভিক্টোরিয়া। এর আগে ১৯৭৫-৭৬, ২০০১-০২ ও ২০০২-০৩ মৌসুমে ঢাকা লিগের শিরোপা জিতেছে ভিক্টোরিয়া।
দণি আফ্রিকার বর্ষসেরা ক্রিকেটার হলেন ফিলানডার
আইএনবি
২০১১-১২ মৌসুমে টেস্ট ক্রিকেটে স্মরণীয় অভিষেকের পুরস্কারস্বরুপ নতুন বলের আগ্রাসী বোলার ভারনন ফিলানডার দণি আফ্রিকার বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন। বুধবার দণি আফ্রিকান ক্রিকেট এ সংক্রান্ত ঘোষনা দেয়। ফিলানডার ১৪.১৫ গড়ে সাত টেস্টে ৫১ উইকেট দখল করেছেন। ২৬ বছর বয়সী এই আক্রমনাত্মক বোলার ছয়বার পাঁচ বা তার বেশী উইকেট দখল করেছেন। এছাড়া দুইবার নিয়েছেন ১০ উইকেট। কেপ কোবরার এই বোলার বিশেষ করে গত বছর নভেম্বরে কেপ টাউনে অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ৪৭ রানে অল আউট করে দিয়ে সকলের নজড়ে আসেন। ঐ ম্যাচে ফিলানডার ১৫ রানে ৫ উইকেট দখল করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলংকা এবং নিউজিল্যান্ডের বিপওে তিনি তিনটি টেস্ট সিরিজে দণি আফ্রিকার সেরা বোলার বিবেচিত হয়েছিলেন। দণি আফ্রিকার গত মৌসুমের বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছেন ফিলানডার। বিশ্বের এক নম্বর ফাস্ট বোলার হিসেবে স্বদেশী ডেল স্টেইন যেখানে বেশ কয়েকদিন যাবত একচ্ছত্র রাজত্ব করছেন তারই যোগ্য উত্তরসূরী মানা হচ্ছে ফিলানডারকে। স্টেইনের মতই তিনি যথার্থ লাইন ও লেংথ বজায় রেখে উভয় দিক থেকেই বল ঘোরাতে পারেন। ফিলানডার ছাড়াও একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। গত বছর ১৫৮.৩৩ গড়ে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪৭৫ রান। সীমিত ওভারের ম্যাচে দণি আফ্রিকার অধিনায়ক হিসেবে প্রথম মৌসুমেই তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১১৬.১৩। টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন হার্ড হিটিং ওপেনিং ব্যাটসম্যান রিচার্ড লেভি। হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপে মাত্র ৫১ বলে ১১৭ রানের অপরাজিত ইনিংসই তাকে সেরার পুরস্কার এনে দিয়েছে। এছাড়াও মাত্র ৪৫ বলে ১৩টি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তিনি রেকর্ডও গড়েছেন।
দণি আফ্রিকান ক্রিকেটে পুরস্কার জয়ী ক্রিকেটার :
বর্ষসেরা ক্রিকেটার : ভারনন ফিলানডার
বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার : ভারনন ফিলানডার
বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটার : এবি ডি ভিলিয়ার্স
বর্ষসেরা টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটার : রিচার্ড লেভি
খেলোয়াড়দের মনোনীত সেরা খেলোয়াড় : এবি ডি ভিলিয়ার্স
বর্ষসেরা নতুন খেলোয়াড় : মার্চেন্ট ডি ল্যাঙ্গে
অসাধারণ ব্যক্তিগত পারফরমেন্স : রিচার্ড লেভি

স্মরণ : পপসম্রাটের সারাজীবন 
বিপুল হাসান
পপসম্রাট আজম খানের মৃত্যুর একবছর পূর্ণ হলো। লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে গতবছর ৫ জুন দূরারোগ্য ক্যান্সার কেড়ে নেয় আমাদের প্রিয় পপগুরুকে। মরণব্যাধির সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর এইদিন রাজধানী ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পপসম্রাট আজম খানের প্রথম মৃতুবার্ষিকীতে তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে বাংলানিউজ।
‘পাখি উড়ে যায়, তার পালক পড়ে রয়’, পপগুরু আজম খান নেই; কিন্তু রয়ে গেছে তার গাওয়া অসংখ্য গান। এই গানের মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকবেন তিনি। পপসম্রাট আজম খানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আসুন তার জীবন ও কর্মের প্রতি চোখ রাখি।

জন্ম ও বেড়ে ওঠা
১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুরের ১০ নম্বর সরকারি কোয়ার্টারে জন্মগ্রহণ করেন আজম খান। পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। বাবা মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন খান ও মা জোবেদা বেগম। বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী ও মা ছিলেন সংগীতশিল্পী। মায়ের মুখেই গান শুনতে শুনতে গড়ে ওঠে গানের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক । ১৯৫৬ সালে আজিমপুরের সরকারি বাসা ছেড়ে কমলাপুরের জসীমউদ্দীন রোডে নিজেদের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৬৮ সালে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। উঠতি বয়সে বড় ভাইদের গানের চর্চা দেখে তীব্রভাবে ঝুঁকে পড়েন সঙ্গীতের মায়াজালে। বিভিন্ন এলাকার বন্ধুদের বাড়ির ছাদে বসে জমে উঠতো গানের আসর। হেমন্ত, শ্যামল মিত্র, মুহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার সহ দেশ-বিদেশের নানান শিল্পীর গানে মাতিয়ে রাখতেন আসর।

মুক্তিযুদ্ধের সেকশন কমান্ডার
আজম খান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন মাত্র ২১ বছর বয়সে। একাত্তরে ঢাকা শহরে তরুণদের অবস্থান করাটা ছিল বিভীষিকার মত। পাক হানাদার বাহিনীর ও এদেশীয় দোসরদের কোপানলে তরুণদেরই বেশি পড়তে হতো। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন ঢাকায় থাকলে এমনিতেই যখন মরতে হবে তার চেয়ে যুদ্ধ করে মরাই ভালো । প্রথমে কুমিল্লা হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে আগরতলায় যান । তারপর মেঘালয়ে মুক্তিযুদ্ধের ২ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশারফ ও মেজর এটিএম হায়দারের অধীনে ২ মাস গেরিলা ট্রেনিং নেন। এরপর তিনি প্রথমে কুমিল্লা ও পরে ঢাকায় পাকিস্তানী বাহিনী বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ঢাকায় মুক্তিবাহিনীর একটি গেরিলা দলের সেকশন কমান্ডার হিসেবে তিনি বেশ কিছু দুঃসাহসী অপারেশনে অংশ নেন। তার নেতৃত্বে ঢাকার সেনানিবাস, গুলশান, ডেমরা, কালিগঞ্জ, ইসাপুর, যাত্রাবাড়িসহ আরও অনেক এলাকায় বীরত্বপূর্ণ গেরিলা অপারেশন পরিচালিত হয়।

বাংলাগানে নতুনধারার প্রবর্তন
গায়ক হিসেবে বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন আজম খান। দেশকে স্বাধীন করার জন্য একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বাধীনতার পর অস্ত্র ছেড়ে পুরোপুরি মন দেন গানের জগতে। সত্তরের দশকে তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে এদেশে পপসঙ্গীতের সূচনা করেন। ভিন্ন মাত্রার গায়কী ও পরিবেশনা দিয়ে অল্পদিনেই শ্রোতাপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। সেসময় তার সঙ্গে দেশের সঙ্গীতের এ নতুন ধারায় যুক্ত হন শিল্পী ফিরোজ সাঁই, ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ, নাজমা জামানসহ সদ্যপ্রয়াত পিলু মমতাজের মতো সময়ের একঝাঁক তরুণ প্রতিভা। পপগানে তুমুল জনপ্রিয়তা আজম খানকে এনে দেয় পপসম্রাটের খেতাব। পপগানের এই রাজাকে কেউ কেউ পপগুরু বলে সম্বোধন করতেও পছন্দ করতেন। এদেশে পপ তথা ব্যান্ড সঙ্গীতের অগ্রপথিক ও কিংবদন্তি শিল্পী আজম খান।

পপসম্রাটের ক্যারিয়ার
১৯৭২ সালে নটরডেম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে প্রথম মঞ্চে গান শোনান পপসম্রাটআজম খান। তখনও এদেশে প্রচলিত হয়নি কনসার্ট নামের সঙ্গীতানুষ্ঠান। ১৯৭৩ সালের ১ এপ্রিল প্রথম কনার্ট হয় ওয়াপদা মিলনায়তনে। সেখানে এক মঞ্চে গান গেয়েছিলেন আজম খান, ফিরোজ সাঁই, ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফকির আলমগির ও পিলু মমতাজ। ১৯৮২ সালে বের হয় তাঁর প্রথম ক্যাসেট `এক যুগ`। সব মিলিয়ে তাঁর অডিও ক্যাসেট ও সিডির সংখ্যা ১৭টি। সত্তর, আশি ও নব্বইয়ের দশকে বৈচিত্র্যময় কথার নানা পপগান গেয়ে তারুণ্যের হৃদয়ে উন্মাতাল আনন্দের ঝড় তুলেছেন। তার অগণিত জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, আলাল ও দুলাল, ওরে সালেকা ওরে মালেকা, অভিমানী, আমি যারে চাইরে, হাইকোর্টের মাজারে, এত সুন্দর দুনিয়ায়, জীবনে কিছু পাব নারে, পাঁপড়ি কেন বুঝে না, চার কলেমা সাক্ষী দিবে এবং ও চাঁদ সুন্দর রূপ তোমার ইত্যাদি।

পারিবারিক জীবন
১৯৮১ সালের ১৪জানুয়ারি সাহেদা বেগমকে বিয়ে করেন আজম খান। ঢাকার জসীমউদ্দীন রোডে নিজের বাড়িতে থাকতেন আজম খান। প্রায় ৫৫ বছর ধরে এই পৈত্রিক এই বাড়িতেই ছিলেন তিনি। তিনতলা বাড়িটির দোতলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। তিন সন্তানের জনক আজম খান। তার প্রথম সন্তান ইমা খান, দ্বিতীয় সন্তান হৃদয় খান এবং তৃতীয় সন্তান অরণী খান।

অভিনয় জীবন
খেয়ালি মানুষ ছিলেন আজম খান। গানের বাইরে বিভিন্ন জনের অনুরোধে অভিনয়ও করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে হীরামনে কালা বাউলের চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৩ সালে `গডফাদার` সিনেমায় ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এছাড়া বাংলালিংক, ক্রাউন এনার্জি ডিংঙ্সসহ বেশকিছু বিজ্ঞাপনেও কাজ করেন।

ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ের দিনলিপি
২০১০ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা নামক মুখগহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন আজম খান। প্রথমে তাকে বঙ্গুবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৪ জুলাই তিনি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে ইএনটি হেড-নেক সার্জন বিভাগের প্রধান অ্যান্ড্রু লয় হেং চেংয়ের তত্ত্বাবধানে আজম খানের মুখে সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। ৭ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় তাকে পুনরায় সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মোট ৩০টি রেডিওথেরাপি ও ৫টি কেমোথেরাপি দেয়ার কথা থাকলেও আজম খান ২১টি রেডিওথেরাপি ও ১টি কেমোথেরাপি নিয়ে ২৭ ডিসেম্বর দেশে ফিরেন আসেন। সম্পূর্ণ কোর্সটি সম্পন্ন করা সমর্থন করেনি তাঁর শরীর। ২০১১ সালের ২২ মে হঠাৎ বাম হাতে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ মে গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। এরপর স্কয়ার থেকে ১ জুন সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে। ৫ জুন রবিবার সকাল ১০.২০ মিনিটে ঢাকা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ
করেন কিংবদন্তি এ শিল্পী।

একনজরে পপসম্রাট আজম
পুরো নাম : মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান
ডাকনাম : আজম
জন্ম : ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০
জন্মস্থান : ১০ নম্বর সরকারি কোয়ার্টার, আজিমপুর কলোনি, ঢাকা
মা : মৃত জোবেদা খানম
বাবা : মৃত মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন খান
স্কুল : ১৯৫৫ সালে প্রথমে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে শিশু শ্রেণীতে এবং ১৯৫৬ সালে কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাথমিকে ভর্তি হন। তিনি ১৯৬৫ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন।
কলেজ : ১৯৭০ সালে টি অ্যান্ড টি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। মুক্তিযুদ্ধের পর পড়ালেখায় আর অগ্রসর হতে পারেননি।
পেশা : সংগীতশিল্পী
উপাধি: পপসম্রাট, গুরু, কিংবদন্তি আজম খান
বিয়ে : ১৯৮১ সালের ১৪ জানুয়ারি
স্ত্রী : সাহেদা বেগম
প্রথম সন্তান : ইমা খান
দ্বিতীয় সন্তান : হূদয় খান
তৃতীয় সন্তান  অরণী খান
মৃত্যু : ৫ জুন ২০১১
কলকাতার ‘গ্ল্যামার’ দিলরুবা রুহি!
বিপুল হাসান
 আমাদের ফ্যাশন জগতের সেলিব্রিটি র‌্যাম্প মডেল দিলরুবা রুহি। বড় বড় সব ফ্যাশন শোতে মিউজিকের উত্তাল বিটে ছন্দময় ক্যাটওয়াক করতে তার জুড়ি নেই। র‌্যাম্পের প্লাটফর্ম ছাড়িয়ে অভিনয়েও রুহি নিজেকে প্রমাণ করেছেন ছোটপর্দায়। একাধিক পণ্যের বিজ্ঞাপনেও মডেল হয়েছেন। এবার তার অভিষেক হচ্ছে বড়পর্দায়, তাও আবার কলকাতার ছবিতে। টালিগঞ্জের মূলধারার এ ছবির নাম ‘গ্ল্যামার’। কলকাতার একাধিক ফ্যাশন শোতে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ছবিতে অভিনয়ের বিষয়টি পাকা করার জন্য গত প্রায় একমাস ধরে কলকাতা অবস্থান করছেন রুহি। ফেসবুকে চ্যাটে সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তিনি কলকাতার পরিচালক মহুয়া চক্রবর্তীর নতুন ছবি ‘গ্ল্যামার’-অভিনয় করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তি সম্পাদনও হয়ে গেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। জনপ্রিয় র‌্যাম্প মডেল দিলরুবা ইয়াসমীন রুহি এর আগে বাংলানিউজকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছে আছে। এরপর দেশের একাধিক চলচ্চিত্র নির্মাতা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত ব্যাটে-বলে মিলেনি। এবার কলকাতায় এসে তিনি স্বপ্নপূরণের পথে পা বাড়ালেন। এ প্রসঙ্গে রুহি জানান, আগামী জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ বা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ছবিটির শুটিং শুরু হবে। ‘গ্ল্যামার’ ছবির গল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, গ্ল্যামার জগতের নানা ঘটনা নিয়ে ছবিটির গল্প। ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রেই আমি অভিনয় করছি। এখানে আমাকে দেখা যাবে একজন সুপার মডেল হিসেবে । আমার চরিত্রের নাম জোয়ানা মিশেল।
আপনার বিপরীতে এ ছবিতে কে অভিনয় করছেন? উত্তরে রুহি বললেন, এ ছবিতে আমার বিপরীতে অভিনয় করছেন কলকাতার এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা ইন্দ্রনীল। ছবির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করবেন নুসরাত। প্রায় একদশক ধরে র‌্যাম্পে কাজ করলেও অভিনয়ে রুহির হাতেখড়ি হয়েছে দু’বছরও পূর্ণ হয়নি। ২০১০ সালে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প অবলম্বনে আহম্মেদ সুস্ময় নির্মিত ‘অপরিচিতা’ নাটকে তাকে প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায়। এরপর অভিনয় করেন শহীদুজ্জামান সেলিমের ‘বৃত্তের বাইরে একা’ ও রিপন নবীর ‘অচেনা মানুষ’ নাটকে। তবে অলোচনায় উঠে আসেন গিয়াসউদ্দীন সেলিমের পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক ‘অবগুণ্ঠন’-এ গ্রামীণ একটি চরিত্রে অভিনয় করে। এতে র‌্যাম্পের রুহি নিজেকে মেলে ধরেন এক গ্রাম্যবধূর চরিত্রে। দারুণ প্রশংসিত হয় তার অভিনয়।ruhi অভিনয়ে আসা প্রসঙ্গে রুহি বললেন, অন্যদের চেয়ে একটু দেরিতে আমি অভিনয় শুরু করি। তবে যে কটি কাজ করেছি, তার প্রত্যেকটিতেই ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পাই। তাই স্বল্প সময়ের মধ্যেই অভিনেত্রী হিসেবে আমি দ্রুত পরিচিতি পেয়েছি। এজন্য আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। রুহি এবারই প্রথমবার চলচ্চিত্রে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন, তাও আবার দেশের বাইরে। এ মুহূর্তে তার মনের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বললেন, প্রায় দুবছর আগে টিভিনাটকে অভিনয় শুরুর প্রথম থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল চলচ্চিত্রে কাজ করার। দেশীয় মূলধারার অনেক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও গল্প বা চরিত্র পছন্দ না হওয়া কাজ করা হয় নি। কলকাতার ‘গ্ল্যামার’ ছবি দিয়েই বড়পর্দায় আমি পা রাখছি। এ মুহূর্তে আমি অনেক আনন্দিত। কারণ এমন একটি ছবির মাধ্যমে বড়পর্দা অভিনয় শুরু করছি, যার গল্পটি খুবই চমৎকার এবং আমাকে ঘিরেই এগিয়েছে ছবির গল্প। আনন্দের পাশাপাশি টেনশনও আছে। কারণ জমকালো এ ছবিতে কাজ শুরুর আগে আমাকে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে নামতে হবে। দেশে ফিরেই প্রস্তুতিতে নেমে পড়বো। কলকাতা থেকে দেশে ফিরছেন কবে ? রুহি বললেন, শিগগিরই ফিরবো। আশা করছি আগামী শনি বা রবিবার নাগাদ ঢাকায় থাকবো। ঢাকার বন্ধুদের জন্য অনেক গল্প জমা হয়ে আছে। কলকাতার এই সময়ের ছবির মান সম্পর্কে রুহি বললেন, গত কয়েক বছরে খুব দ্রুত এগিয়ে গেছে কলকাতার বাংলা ছবি। বলিউডের ছবির সমপর্যায়ে পৌছাতে না পারলেও খুব কাছাকাছি চলে গেছে তারা। পুরো ভারত জুড়েই বাড়ছে কলকাতার ছবির বাজার। সেখানে এখন বিশ্বমানেরও ছবি তৈরি হয়। আমার ধারণা পরিচালক মহুয়া চক্রবর্তীর ‘গ্ল্যামার’ হবে সেরকমই একটি মানসম্পন্ন ছবি। প্রস্তুতি যেভাবে নেওয়া হচ্ছে তাতে আমি ছবিটি নিয়ে ভীষন আশাবাদী। আমার জন্যও কাজটি হয়ে উঠেছে বেশ চ্যালেঞ্জিং।
দীর্ঘদিন পর চলচ্চিত্রে আইয়ুব বাচ্চু
বিনোদন প্রতিবেদক

বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিকের অন্যতম লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু দীর্ঘদিন পর আবার চলচ্চিত্রের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করছেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নতুন ছবি ‘টেলিভিশন’-এর একটি গানের মিউজিক করছেন তিনি। আইয়ুব বাচ্চুর সুর ও সঙ্গীতে গানটি গাইবে চিরকুট ব্যান্ড। কতোদিন পর চলচ্চিত্রের জন্য সঙ্গীত পরিচালনা করছেন? জানতে চাইলে বাংলানিউজকে আইয়ুব বাচ্চু বলেন, প্রায় আটবছর হয়ে গেল শেষবার চলচ্চিত্রের গান করেছিলাম। ছবিটির নাম হলো ‘ব্যাচেলর’। একই পরিচালক মোস্তাফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায় নতুন ছবি ‘টেলিভিশন’-এর মাধ্যমে আবার চলচ্চিত্রের গান নিয়ে কাজ করলাম। এই লম্বা বিরতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চলচ্চিত্র জগতের মানুষ না। আমার পথচলার জায়গা আলাদা। তারপরও মাঝে মাঝে বেশ কিছু ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু গানের কথা আর ছবির গল্প পছন্দ হয়নি বলে কাজ করা হয় নি। আসলে কোনো ছবিতে মিউজিক করার আগে আমি দেখে-বুঝে নিতে চাই। এরমধ্যে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী একদিন আমাকে ‘টেলিভিশন’ ছবিটির গল্প শোনালে ভালো লাগে। এরপর তিনি যখন একটি গান করে দেওয়ার কথা বললেন, আমি রাজি হয়ে যাই। ‘ব্যাচেলর’ ছবিতে আইয়ুব বাচ্চু নিজের সঙ্গীত পরিচালনায় ‘আমি তো প্রেমে পড়ি নি’ গানটি গেয়েছিলেন। এবার অবশ্য তিনি শুধু সুর আর সঙ্গীত পরিচালনার কাজটিও করছেন। গানে নিজে কণ্ঠ না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে গানের কথা আর ছবির দৃশ্যায়ন নিয়ে যে ভাবনাটা আছে তার সঙ্গে চিরকুট ব্যান্ডের গায়কীটা ভালো মানায় বলে মনে হয়েছে। তাই ওদের দিয়েই গানটি করাচ্ছি।
নিপুণ এবার বিচারক
বিনোদন প্রতিবেদক

টিভিমিডিয়ায় এখন চলছে রিয়েলিটি শোর রাজত্ব। গান-নাচ-অভিনয়-রান্না-ছবি আঁকা সব বিষয়েই আয়োজন করা হচ্ছে একটার পর একটা রিয়েলিটি শো। এসবে বিচারকের আসনে বসছেন আমাদের শোবিজের জনপ্রিয় সেলিব্রিটিরা । এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই ঢালিউডের তারকারাও। ফেরদৌস আর পূর্ণিমার পর এবার বিচারকের আসনে বসতে যাচ্ছেন নায়িকা নিপুণ। ‘মমতাজ মেহেদীর রঙে আঁকো আল্পনা’ নামে একুশে টিভির একটি রিয়েলটি শোতে বিচারক থাকছেন নিপুণ। এতে বিচারক হিসেবে আরো থাকবেন চিত্রশিল্পী কনক চাঁপা চাকমা এবং উপস্থাপিকা ও মডেল শারমিন লাকী। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন তানিয়া হোসাইন। মেহেদী রংয়ের মাধ্যমে আল্পনা আঁকিয়েদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এই প্রতিযোগিতা। ২৬ জুন থেকে সারাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে এ প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে। এর মধ্য থেকে ২১ জনকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচিত করা হবে। চূড়ান্ত পর্বে বিচারকরা ৩ জনকে বিজয়ী নির্বাচিত করবেন। ১ম পুরস্কার বিজয়ী পাবেন ১ লাখ টাকা, ২য় পুরস্কার হিসেবে থাকছে ৫০ হাজার টাকা এবং ৩য় পুরস্কার বিজয়ী পাবেন ২৫ হাজার টাকা। অনুষ্ঠানটি একুশে টেলিভিশনে প্রচারিত হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে নিপুণ বললেন,  বিচারক হওয়ার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম হচ্ছে। বিচারের কাজ করাটা ভীষণ কঠিন বলে আমার মনে হয়। কনক চাঁপা চাকমা আর শারমিন লাকীর সঙ্গে আমার উপর এই কঠিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কাজটা কঠিন হলেও বিচারক হওয়ার মাধ্যমে আমি সম্মানিত বোধ করছি। চেষ্টা থাকবে দায়িত্বটি ঠিকঠাক পালন করার। ঢালিউডে নিপুণের অভিষেক হয় ২০০৬ সালে। তার প্রথম ছবি ছিল ‘পিতার আসন’। এরই মধ্যে অভিনয়ের অর্ধযুগ পার করেছেন তিনি। পেয়েছেন স্বীকৃতি। দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী এই অভিনেত্রীকে ইদানিং জীবনধর্মী ছবিতেও নিয়মিত অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। নিপুণ অভিনীত মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবির মধ্যে রয়েছে অভিনীত ‘জান তুমি প্রাণ তুমি’, ‘কাছে এসে ভালোবাসো’, ‘তুমি আসবে বলে’ প্রভৃতি। বর্তমানে তিনি ‘এইতো ভালোবাসা’, ‘জল রঙ’, ‘শোভনের স্বাধীনতা’, ‘ঢাকার কিং’ প্রভৃতি ছবির শুটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন।

এবার স্কুল-ছাত্রী প্রভা!
রাবেয়া বসরি সুমি

আলোচিত অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভা ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিতর্ক জড়িয়ে মিডিয়া থেকে দূরে ছিলেন প্রায় দুই বছর। কিছুদিন আগে ‘প্রণয়িনী’ নামের একটি খণ্ড নাটকের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে ফেরেন। সম্প্রতি তিনি গুণী-নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় ‘কবুলিয়তনামা’ নামে একটি দীর্ঘ ধারাবাহিকের কাজ শুরু করেছেন। ধারাবাহিকটিতে প্রভাকে দেখা যাবে স্কুল ছাত্রীর ভূমিকায়। এরই মধ্যে চার দিন শুটিংয়েও অংশ  নিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে প্রভা বললেন, ‘সালাউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় এর আগে আমি এক ঘণ্টার নাটকে কাজ করেছি। এবারই প্রথম তাঁর পরিচালনায় ধারাবাহিকে কাজ করছি। ‘গ্রামের গল্প নিয়ে নির্মিত হচ্ছে কবুলিয়তনামা। নাটকটি বেশ সিরিয়াসধর্মী। এখানে আমাকে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাবে। নাটকের গল্পটা অনেক সুন্দর। যে কয়দিন শুটিং করেছি তার অভিজ্ঞতা অসাধারণ।’  প্রভা আরও বলেন, ‘ধারাবাহিকের পাশাপাশি এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি এক ঘণ্টার নাটকের শুটিংও করেছি। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন নির্মাতার সঙ্গে কাজের ব্যাপারে কথাবার্তাও চলছে।সামনে কয়েকটি ঈদের নাটকের শুটিং করব। তবে কবুলিয়তনামা ধারাবাহিক নাটকটি ছাড়া আপাতত আর নতুন ধারাবাহিকের কাজ হাতে নিচ্ছি না।’ সংসার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রভা বললেন, ‘এখনও পুরোপুরি সংসার জীবন শুরু হয় নি। আগামী জুলাইয়ে আমাদের উভয় পরিবারের পক্ষ থেকে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তারপরই সংসার শুরু করবো। আমার স্বামী শান্ত চায়, সংসার শুরুর পর আমি যেন অভিনয়ে আরো সিরিয়াস হই।’
 জয়া এবার নোবেলের সাথে
বিনোদন প্রতিবেদক
 জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান এবার অরেক জনপ্রিয় মডেল নোবেলের সাথে জুটি বেঁধেছেন। তানভীর চৌধুরীর রচনা এবং রবিউল আলম রবির পরিচালনায় তারা অভিনয় করবেন। নাটকের শিরোনাম ‘অনুপস্থিত চিহ্ন’। নাটকটি ঈদে বাংলাভিশনের প্রচারের জন্য নির্মিত হচ্ছে। শুটিং শুরু হবে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে। নাটকের গল্পে দেখা যাবে, জয়া আহসান ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর স্ত্রী। তার স্বামী ব্যবসায়ের কাজে গিয়ে নিখোঁজ হন। কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। অস্থির হয়ে ওঠেন জয়া। সবাই তাকে নানা ধরনের নেগেটিভ কথা বললেও সে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে তার স্বামী ফিরে আসবে। কিন্তু ফিরে আসে না। তখন জয়া নিজেই স্বামীকে খুঁজতে বেড়িয়ে পড়েন। পথে পরিচয় হয় নোবেলের সঙ্গে। নানা কথায় দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তখন নোবেল এবং জয়া মিলে নিখোঁজ মানুষটির খোঁজ করেন। জয়া লক্ষ করেন তার স্বামীর অনেক স্বভাব-অভ্যাস নোবেলের মধ্যে রয়েছে। প্রথম প্রথম সে অবাক হয়। কিন্তু দিন যতো যায় জয়া ততোই অবাক হন। তার স্বামীর সঙ্গে বেশিরভাগই মিল রয়েছে নোবেলের। তখন জয়া নোবেলের মুখোমুখি হয়। প্রশ্ন করে, আপনি আসলে কে? নাটক প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, ‘যত্ন নিয়ে কাজটি করতে চাচ্ছি আমি। গল্পটি বেশ নাটকীয়। দর্শকের ভালোলাগার মতো।’ 

প্রভা এবার
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রায় দুই বছর পর ‘প্রণয়িনী’ নামের একটি খণ্ড নাটকের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে ফেরেন আলোচিত মডেল ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভা। এক ঘণ্টার নাটকের পর প্রভা এবার ধারাবাহিকের কাজও শুরু করলেন। গুণী-নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় ‘কবুলিয়তনামা’ নামের একটি দীর্ঘ ধারাবাহিকে এরই মধ্যে চার দিন শুটিংও করেছেন তিনি। প্রভা বলেন, ‘লাভলু ভাইয়ের সঙ্গে এর আগে আমার এক ঘণ্টার নাটকে কাজ করা হয়। এবারই প্রথম তাঁর পরিচালনায় ধারাবাহিকের কাজ করছি। কবুলিয়তনামা নাটকটি গ্রামের গল্প নিয়ে নির্মিত হচ্ছে। তবে নাটকটি কিন্তু খুব সিরিয়াসধর্মী। এখানে আমাকে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাবে। গল্পটা অনেক সুন্দর। যে কয়েক দিন শুটিং করেছি অভিজ্ঞতা অসাধারণ।’ প্রভা আরও বলেন, ‘ধারাবাহিকের পাশাপাশি এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি এক ঘণ্টার নাটকের শুটিংও করেছি। এ ছাড়া নতুন নাটকের জন্য বেশ কয়েকজন নির্মাতার সঙ্গে আলাপও হয়েছে। সামনে তাঁদের কয়েকটি ঈদের নাটকের শুটিং করব। তবে কবুলিয়তনামা ধারাবাহিক নাটকটি ছাড়া আপাতত আর নতুন ধারাবাহিক নাটকের কাজ হাতে নিচ্ছি না। আগামী জুলাইয়ে আমাদের উভয় পরিবারের পক্ষ থেকে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ইচ্ছা আছে, তার পরই হয়তো সিরিয়াসলি অভিনয় নিয়ে ভাববার।’ প্রভা সর্বশেষ সৈয়দ জামিম পরিচালিত ধারাবাহিক নাটক ‘পথ জানা নেই’-তে অভিনয় করেছেন। এটিএন বাংলায় নাটকটি দেখানো হয়েছিল।
হলিউডের অসম ‘লাভ-বার্ড’
প্রীতি ওয়ারেছাপ্রেম মানে না নিয়ম, মানে না বাঁধন। সীমান্ত-বয়স আর সামাজিক প্রথায় আটকে রাখা যায় না একে। পৃথিবীর সর্বত্রই বাড়ছে দিন দিন অসম প্রেমের সংখ্যা। পরিসংখ্যান বলে হলিউডের সেলিব্রিটিদের মাঝে অসম প্রেম তুলনামূলক বেশি। অনেক বেশি বয়সের নামি অভিনেত্রীরা সেখানে ঝুঁকে পড়ছে কম বয়সী পুরুষদের প্রতি। আবার বলিউডের অবিবাহিত অভিনেত্রীদের দেখা যায় বিবাহিত পুরুষদের প্রতি ঝুঁকতে। কোন অজানা রসায়ন তাদের একাজে উৎসাহ দেয় তারাই জানেন। অসম বয়সের প্রেম বা বিয়ে আমাদের দেশে সহজভাবে নেওয়া হয় না। আসলে আমাদের উপমহাদেশীয় সংস্কৃতি ছেলে আর মেয়ের সম্পর্কের একটা সীমারেখা টেনে রেখেছে বলেই হয়তে অসম জুটিদের এখানে বাঁকা চোখে দেখা হয়। যদিও যুগে যুগে প্রেমের অমর ইতিহাস বলে, প্রেমিক-প্রেমিকার পারস্পরিক বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে বয়সটা কোনো বিষয়ই না। আমরা অসম প্রেম নিয়ে যতোই তর্ক-বিতর্ক করি, হলিউডে এটিই যেন সেলিব্রিটিদের স্টাইলে পরিণত হয়েছে। হলিউডের এই সময়ের সেলিব্রিটি কিছু লাভ বার্ডে প্রতি আসুন চোখ রাখি।
শ্যারন স্টোন হলিউডের অনিন্দ্য সুন্দরী প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী। ৫৪ বছর বয়সী শ্যারন তিন সন্তানের জননী। বিয়ে করেছেন দুইবার। ‘ক্যাসিনো’ ও ‘বেসিক ইন্সটিংক্ট’ ছবির প্রাণোচ্ছল এই অভিনেত্রী বর্তমানে আবার আলোচনায় উঠে এসেছে নতুন বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে রোমান্সের কারণে। আর্জেন্টাইন মডেল মার্টিন মিকা তার নতুন বয়ফ্রেন্ড। ২৭ বছর বয়সী মিকা শ্যারনের ঠিক অর্ধেক বয়সী। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শ্যারন ও মিকাকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ইদানিং দেখা যাচ্ছে। বয়সের এই অতি তারতম্যের কারণে হলিউডের অসম বয়সী প্রেমিক প্রবর পরিচিত হয়ে  উঠেছেন ‘টয়বয়’ হিসেবে। হালের আরেক টয়বয় ২৫ বছর বয়সী ক্যাসপার স্মার্ট। যিনি ৪২ বছর বয়সী অভিনেত্রী এবং কন্ঠশিল্পী জেনিফার লোপেজের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। আমেরিকান আইডলের বিচারক থাকাকালীন সময়ে এই জুটির পরিচয়।
দুজনের চলতে থাকা সম্পর্ক নিয়ে ই-নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্যাসপারের সহজ স্বীকারোক্তি, ‘একসাথে পেশাগত কাজ করতে গিয়ে একসময় দুজনেই স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রেমে পড়েছি। আমরা বিয়ে করিনি, বাগদানে আবদ্ধও না, আমরা শুধু এখনকার সময়টাকে উপভোগ করছি।’ জেনিফার লোপেজ তৃতীয় দফা বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন এবং সাফল্যের সঙ্গে  বিচ্ছেদটাও ঘটিয়েছেন। আবেদনময়ী এই অভিনেত্রীর দুটো জমজ সন্তান আছে। লোপেজ নিজেও এই নতুনপ্রেম নিয়ে মিডিয়াতে আর রাখঢাক করে চলছেন না। ক্যাসপারকে নিয়ে নতুন জীবনে রীতিমত উড়ছেন তিনি।
‘চার্লিস এঞ্জেলস’, ‘ডিসক্লোজার’ আর ‘প্যাশন অব মাইন্ড’ খ্যাত ৪৯ বছর বয়সী অসামান্য সৌন্দর্য্যরে অধিকারী অভিনেত্রী ডেমি মুর। দুই সন্তানের জননী এই অভিনেত্রী তৃতীয়দফা বিয়ে করেন তার চেয়ে ১৬ বছরের ছোট মডেল- অভিনেতা অ্যাস্টন কুচারকে।
৫৩ বছর বয়সী দুনিয়া দাপিয়ে বেড়ানো পপ সিঙ্গার ম্যাডোনা বরাবরই পছন্দ করেন হাঁটু সমান বয়সী বয়ফ্রেন্ড। দুইবার বিয়ে আর বিচ্ছেদের পর ২০১০ সাল থেকে ম্যাডোনা বাহুলগ্না হয়েছেন ২৪ বছর বয়সী ফ্রেন্স ডান্সার ব্রাহিম জায়বাতের। দুজনে বর্তমানে পরস্পরের উষ্ণ সঙ্গ উপভোগ করছেন। বছরের শুরুতে ব্রাহিম কাব্বালা সেন্টারে কাব্বালা ধর্মাবলম্বী ম্যাডোনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ম্যাডোনা এখনো তার সিদ্ধান্তের কথা না জানালেও বিশ্ব জুড়ে তার অগণিত ভক্ত-শ্রোতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের গন্তব্য জানার জন্য। হলিউডে সম্রাজ্ঞীর আসনে বসে আছেন এলিজাবেথ টেলর। লিজ টেলর হিসাবেই তিনি পরিচিত। ২৩ মার্চ ২০১১ সালে ৭৯ বছর বয়সে মারা যান এই কিংবদন্তী অভিনেত্রী। পুরো জীবনটাকে তিনি ইচ্ছে মত রঙ্গিন প্রজাপতির মত ফুরফুরে মেজাজে যাপন করেছেন। বিয়ে করেছেন আটবার, সেইসাথে ছিল তার অসংখ্য বয়ফ্রেন্ড। বয়ফ্রেন্ডদের অধিকাংশই ছিল ‘টয়বয়’ ক্যাটগরির। শেষ জীবনে টেলর হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতেন এবং সেভাবেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতেন। ২০০৭ সালে অনাড়ম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের রেড কার্পেটে উপস্থিত হন বিউটি কুইন টেলর,  হুইল চেয়ার ঠেলতে দেখা যায় জেসন উইন্টার নামের তার এক বয়ফ্রেন্ডকে। জেসন ছিলেন টেলরের থেকে ২৬ বছরের ছোট । টেলর ছিলেন খুবই স্পষ্টবাদী, কোন বয়ফ্রেন্ড নিয়েই তিনি কখনো লুকোচুরি করতেন না। অভিনেত্রী জেনিফার অ্যানিস্টোন যিনি একসময় ব্র্যাড পিটের স্ত্রী ছিলেন। পিটের সাথে বিচ্ছেদের পর ৪২ বছর বয়সী জেনিফার যুগলবন্দী হন অভিনেতা জাস্টিন থেরক্স এর সাথে। একেবারে টয়বয় গোছের না হলেও থেরক্স অ্যানিস্টোনের চেয়ে ২ বছরের ছোট। ‘ক্যাটস্ আই’, ‘ব্যাড গার্ল’, ‘নেভার বিন কিসড’্ খ্যাত ৩৭ বছর বয়সী ড্রিউ ব্যারিমোর গত ৩ জুন বিয়ে করলেন দীর্ঘদিনের বয়ফ্রেন্ড আর্ট ডিলার উইল কোপেলম্যানকে। কোপেলম্যান ব্যারিমোর থেকে ৫ বছরের ছোট। উইল এবং ড্রিউ উচ্ছ্বসিত। দুজনের নতুন জীবনে আসছে নতুন অতিথি। খুব শিগগিরি তারা তিনজন হচ্ছেন। এভাবে ক্রমাগত তালিকা দীর্ঘতর হবে। হলিউড সেলিব্রেটিদের কমবয়সী বয়ফ্রেন্ড বাছাইয়ের বিশেষ কারণ কি হতে পারে? পাঠক-পাঠিকা অনুমান করার চেষ্টা করতে পারেন!
বিয়ের ৩৯ বছরে অমিতাভ-জয়া
অনন্যা আশরাফবলিউড মেগাস্টার অভিনেতা  অমিতাভ বচ্চন ও অভিনেত্রী জয়া বচ্চন গত ৩ জুন রবিবার তাদের ৩৯ তম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করলেন। ১৯৭৩ সালের ৩ জুন অমিতাভের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন জয়া। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় জমকালো না হলেও এটি ছিল সেসময়ের আলোচিত  ঘটনা।
বিয়ে ৩৯ বছর পূর্ণ হওয়ার দিন গত ০৩ জুন রবিবার টুইটারে অমিতাভ তার অনুভূতির কথা জানিয়ে লিখেন, ‘৩৯ বছর পার করেছি। জয়ার সঙ্গে দীর্ঘ সময়টা কিভাবে কেটে গেছে টের পাইনি। পুরো পরিবার এক হয়েছিল আমাদের অভিবাদন জানাতে। সময়টাকে ভালোই উপভোগ করেছি।’
সেলিব্রেশন অনুষ্ঠানে অমিতাভ বচ্চন পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করেন। জয়ার সঙ্গে তার বিয়ের কাহিনী তুলে ধরেন সবার সামনে।
পুরোনো দিনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন,  বিয়ের স্মৃতিগুলো ছিল সত্যি অসাধারণ। আমাদের অভিনীত ছবি ‘জানজির’ তখন মুক্তির অপেক্ষায়। আমি, জয়া ও আরও কয়েকটি বন্ধু মিলে ঠিক করি ছবিটি হিট হলে লন্ডন বেড়াতে যাবো। ছবিটি মুক্তি পেল। বক্স অফিসে তুমুল ব্যবসা করলো ছবিটি। পরিকল্পনা অনুযায়ী এবার লন্ডন যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বাবা মাকে বিষয়টি জানাতেই রেগে গেলেন। আমার বাবা হরিভানশ রাই বচ্চন কঠিনভাবে আদেশ করলেন। লন্ডন যাওয়ার আগে নিশ্চয়ই তোমাদের বিয়ের কাজটা আগে সেড়ে নিতে হবে। বাবার আদেশ অমান্য করার কোন উপায় নেই। বাধ্যগত সন্তানের মতই মেনে নেই বাবার আদেশ। এরপর দিনই পরিবারের সদস্যদের ও ঘণিষ্ঠ বন্ধু বান্ধবদের উপস্থিতিতে বিয়ের কাজটা সেরে ফেলি। বিয়ে শেষ করেই গভীর রাতে রওনা হই লন্ডনের উদ্দেশ্যে। বিগ বি এটাও জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন অনেক ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন তারা। সে সূত্রে ভালো বন্ধুত্ব ছিল, কিন্তু কোন প্রেমের সর্ম্পকে তারা জড়াননি। বন্ধুত্ব থেকেই বিয়ের বন্ধনে পা রাখেন এ দম্পত্তি। ৩৯ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাদের দুইটি সন্তান হয়েছে। অভিষেক বচ্চন ও শ্বেতা। বর্তমানে পুত্রবধু ঐশ্বরিয়া ও বংশধর আরাধ্য বচ্চনকে নিয়ে পারফেক্ট পরিবার হচ্ছে বচ্চন পরিবার।
নাইট রাইডার্সের নতুন থিম সঙ গাইছেন একন
ইশতিয়াক হোসেন লাবিব

‘রিদম এন্ড ব্লুজ’ খ্যাত হলিউডের গায়ক একন। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় এই গায়ক এবারের আইপিএল বিজয়ী কলকাতা নাইট রাইডার্সের নতুন থিম সঙে কণ্ঠ দিচ্ছেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রথমবার আইপিএল শিরোপা জয়ের আনন্দে বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান নতুন করে দলটির সবকিছু ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করছেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের থিম সঙে। ‘করবো লড়বো জিতবো রে’ শীর্ষক কলকাতা নাইট রাইডার্সের থিম সঙটির নতুন মিউজিক কম্পোজিশনের জন্য কিং খান যোগাযোগ করেছেন বিশ্বখ্যাত গায়ক একনের সঙ্গে। এর আগে শাহরুখ খানের ‘রা.ওয়ান’ ছবির একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন একন। তার গাওয়া ‘ছাম্মাক ছাল্লো’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তায় পায়। সেই থেকেই একনের সঙ্গে শাহরুখের চমৎকার সম্পর্ক। এ প্রসঙ্গে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বর্তমান থিম সঙের মিউজিক ডিরেক্টর বিশাল দালানি বলেন, এটি হবে থিম সং ‘করবো লড়বো জিতবো রে’ এর নতুন ভার্সন। থিম সঙের লিরিক সম্পর্কে তিনি বলেন, শিরোপা জয়ের জন্য আমাদের দীর্ঘ পাঁচ বছর আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। বিজয়ের এই আনন্দে থিম সঙটি নতুন কম্পোজিশনে গাইবেন একন।

প্রীতি জিনতার ফেরা
বিনোদন ডেস্ক


দীর্ঘদিন ধরে বলিউডে জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রীতি জিনতার নতুন কোনো ছবি নেই। নিজস্ব ব্যবসার কাজ নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে আছেন তিনি। বেশিরভাগ সময় তাকে দেশের বাইরে অবস্থান করতে হচ্ছে। কিছুদিন আগে অবশ্য আইপিএল নিয়ে তাকে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে তার কাছে অনেক ছবির অফার এলেও তিনি তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। অনেকদিন পর নতুন একটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য সম্প্রতি তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। প্রীতি জিনতার কাছে এর আগে বেশ কিছু বড় প্রডাকশন হাউজ থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব এলেও তিনি তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন চরিত্রটি পছন্দ হয় নি। বলেছেন, কাহিনী খুব বেশি ভাল না হলে এবং তার চরিত্রটি কেন্দ্রীয় না হলে কোন ছবিতে অভিনয় করবেন না। প্রীতি জিনতার ভক্তদের জন্য সুখবর হলো, দীর্ঘদিন পর যশরাজ ফিল্মসের নাম চুড়ান্ত না হওয়া একটি ছবির মাধ্যমে তিনি অভিনয়ে ফিরছেন। বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের বিপরীতে প্রীতি জিনতা সর্বশেষ যশরাজ ফিল্মসেরই ‘ভিরজারা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এ ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন প্রীতি। দীর্ঘদিন পর আবারও অভিনয়ে ফেরা প্রসঙ্গে প্রীতি জিনতা বলেন, ইচ্ছে করলে তো প্রতি মাসেই একটি করে ছবি করতে পারি। কিন্তু আমি এখন চাই না গড়পরতা ছবিতে অভিনয় করতে। এই সময়ে এসে বেছে বেছে কেবল মনের মতো চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। যশরাজ ফিল্মসের নতুন ছবির কাহিনী ও চরিত্র আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ছবির কাহিনী গড়ে উঠেছে আমাকে নিয়েই। কিভাবে একটি সাধারণ ঘরের মেয়ে তার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যায় তা নিয়েই মূলত গড়ে উঠেছে এই ছবির কাহিনী। যশরাজ ফিল্মসের আয়োজনও সব সময় বড় আকারের হয়। তাই এ ছবির আবারও আমি অভিনয়ে ফিরছি। এতোদিন এরকম একটি চরিত্রের জন্যই বুঝি অপেক্ষা করছিলাম। আর সে কারণেই এই ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছি। আশা করছি অনেক ভালভাবে ছবিটির শুটিং সম্পন্ন করতে পারবো।
শিল্পা ছেলের নাম রাখলেন ‘ভিয়ান রাজকুন্দ্রা’
বিনোদন ডেস্কবলিউড তারকা দম্পত্তি অভিষেক ও ঐশ্বরিয়ার মত সন্তানের নাম নিয়ে কোন জটিলতায় যাননি রাজ কুন্দ্রা ও শিল্পা শেঠী। ভক্তদের অপেক্ষায় না রেখে সন্তান জন্মের ১৫ দিনের মাথায় নাম ঘোষণা করলেন রাজ ও শিল্পা। তাদের ছেলের নাম রেখেছেন ভিয়ান রাজ কুন্দ্রা। সব ধরনের গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাব ও অ্যাস্ট্রোলজারদের ভবিষ্যতবাণীকে পর্যবেক্ষন করে এ নাম ঠিক করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা। গত ২১ মে সোমবার সকালে মুম্বাইয়ের খারে অবস্থিত হিন্দুজা হেলথ কেয়ার হাসপাতালে শিল্পার কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে পুত্র সন্তান। নবজাতকের বাবা রাজ কুন্দ্রা সামাজিক ওয়েবসাইট টুইটারের মাধ্যমে এ খবরটি প্রকাশ করেন। প্রাথমিকভাবে তারা ছেলের নাম রাখেন ‘বেবী কে’। এরপর পন্ডিত ও অ্যাস্ট্রোলজারদের পরামর্শক্রমে ছেলের নাম দেন ‘ভিয়ান রাজ কুন্দ্রা’। এবারও তারা টুইটারের মাধ্যমে তাদের সন্তানের নাম ঘোষণা করেছেন। টুইটারে শিল্পা লিখেছেন, আমার ছেলে নাম রাখার অনুষ্ঠান আজ। ‘বেবী কে’-এর নাম ‘ভিয়ান রাজ কুন্দ্রা’। যার অর্থ জীবনের পরিপূর্ণতা বা জীবনের শক্তি। বাবা রাজ কুন্দ্রা তার ছেলের নামে এরইমধ্যে একটি টুইটার অ্যাকাউন্টও খুলেছেন। সে অ্যাকাউন্টে সবাইকে তিনি স্বাগত জানান। তিনি লেখেন, সবাই এতে আমন্ত্রিত। সেও হয়তবা শিগগিই আপনাদের সঙ্গে নিজের ভাবনা শেয়ার করতে পারবে। শিল্পা শেঠীর প্রথম সন্তান এটি। তবে রাজ কুন্দ্রা দ্বিতীয়বারের মত বাবা হলেন। আগের সংসারে তিনি একটি কন্যা সন্তানের বাবা বটে।