Year-19 # Issue-21 # 8 July 2012

দুই দলে নির্বাচনী হোমওয়ার্ক
মিজানুর রহমান সুমন
দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল 'লীগ বিএনপির অভ্যন্তরে চলছে নির্বাচনী কার্যক্রম। ইলেকশন ওয়ার্কে যে যার নিজের মতো এগুচ্ছে। যারা যার দল গোছানোর চষ্টো লক্ষণীয়। দুই দলেরই আগে দল, এরপর জোটের বিষয়। নির্বাচনী হোমওয়ার্কে এগিয়ে আছেন ক্ষমতাসীনরা। জন্য নিজ দলের কোন্দল নিরসন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বেশ জোরেসোরে কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষেত্রে কিছুটা পেছনে হলেও খালেদা জিয়া তার দলীয় নেতাদের নির্বাচনী প্রস্তুতির নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে তা নিয়ে দুই জোটের মধ্যে বিস্তর মতবিরোধ থাকলেও প্রস্তুতি থেমে নেই। দলীয় কোন্দল নিরসন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা গত বছর শেষের দিক থেকে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শুরু করেছেন। গণভবনে তিনি দেশের বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এই সভা করছেন। চলতি বছরের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাদের আগাম নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার নির্দেশও দিয়েছেন। ছাড়াও আওয়ামী লীগের  ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য, উপদষ্টো পরিষদ, দেশের বিভিন্ন জেলা শাখার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের প্রশাসক, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, নগর শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা গণভবনের ধারাবাহিক ভাবে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। এসব মতবিনিময় সভায় শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মীদের চাওয়ার-পাওয়ার হিসাব ভুলে গিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দলীয় প্রধানের এই মতবিনিময় সভা আরো কয়েক মাস চলবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে গোয়েন্দা সংস্থা দলের নেতাদের সমন্বয়ে একটি জরিপও চালিয়েছে। এতে আগামী  নির্বাচনে প্রায় ১৩০ টি আসনে দলের অবস্থান খারাপ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। 
এই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সর্বশেষ বৈঠকে সংসদ সদস্যদের সতর্ক করে দেন। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়া আসনগুলোতে সংসদ সদস্যদের জনকল্যাণমূলক কাজ করে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য কড়া নির্দেশ দেন তিনি। বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ জানান, আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনমুখী একটি দল। তাই জাতীয় নির্বাচনের জন্য আমাদের সব সময় প্রস্তুতি আছে। দিন দিন সেই প্রস্তুতি আরো জোরালো হবে। অপরদিকে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর হুঙ্কার দিলেও আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। শানি্তপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নামানোর কেৌশলও হাতে নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি ১৮ দলের সমাবেশে খালেদা জিয়া কঠোর কর্মসূচি  ঘোষণা করেননি বলে জানা গেছে। সেৌদি আরবে চিকিত্সা শেষ করে দেশে ফিরে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি নেয়ার বিষয়ে শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্র মতে, আগামী নির্বাচনে একটি আকর্ষণীয় ইশতিহার তৈরির জন্য বিভিন্ন মহলের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন খালেদা জিয়া। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে  মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য তিনি সম্প্রতি ১৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। ছাড়া তরুণ প্রজন্মকে দলে টানতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সমাবেশে তরুণদের কর্মসংস্থান তাদের হাতে আগামীর নেতৃত্ব তুলে দেয়ার কথা বলছেন। গত ১১ জুন ঢাকায় ১৮ দলের গণসমাবেশেও খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে বিএনপি জোট ক্ষমতায় এলে কী কী করা হবে তার একটি বিবরণী তুলে ধরেছেন। ক্ষমতায় এলে প্রথমেই দেশের যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি সমাবেশে ঘোষণা দেন। এদিকে আগামী নির্বাচনের জন্য সংসদীয় আসনে জনপ্রিয়তা যাচাই করে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা তৈরি করতে খালেদা জিয়ার নির্দেশে সম্প্রতি দু'টি সংস্থা কাজ করছে বলে জানা গেছে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলাপের পর একটি নির্বাচনী সেল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির এক শীর্ষনেতা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকার শেষ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন দেবে এমনটা ভেবে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি তো সবসময়ই থাকে। এছাড়া হঠাত্ করে সরকার আমাদের দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচন দিলে যাতে আমরা অপ্রস্তুত হয়ে না পড়ি, সে লক্ষ্যে আমাদের কাজ এগিয়ে চলছে।
অনিশ্চয়তা আর সম্ভাবনার দোলাচলে পদ্মাসেতু 
ইসমাইল হোসেন
অনিশ্চয়তা আর সম্ভাবনার সূতোয় ঝুলছে পদ্মাসেতুর ভাগ্য। তবে পদ্মাসেতু নিয়ে রোববার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। সে বক্তব্য থেকে এ বিষয়ে ঘোর কাটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্প তৈরিতে শীর্ষ দাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি সরে যাওয়ায় হোচট খায় পদ্মাসেতু। কিন্তু বাকি দু’টি দাতা সংস্থার ইতিবাচক মনোভাব, নিজেদের অর্থব্যয়ে নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এবং বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে এ সেতু নির্মাণ সম্ভাবনা। তবে বিশ্লেষকদের মতে, নিজস্ব অর্থ বিনিয়োগে ব্যয় বৃদ্ধি এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটা প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রে সরকারকে ভেবে-চিন্তে এগোতে হবে। ৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ ২৯০ কোটি ডলারের পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ও এডিবি’র ৬১ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল। এছাড়া জাইকা ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আছে। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর অর্থায়নের বিষয়ে ধারণা প্রস্তাবের পর ২৮ জুন চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে খসড়া প্রস্তাব দেয় মালয়েশিয়া। গত ৩০ জুন বিশ্বব্যাংকের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। চুক্তি বাতিলের পক্ষে বিশ্বব্যাংকের যুক্তি, এ প্রকল্পে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হলেও এক্ষেত্রে সরকারের যথাযথ সাড়া না মেলায় প্রকল্পের অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে। নতুন প্রেসিডেন্টও বিদায়ী প্রেসিডেন্টের বক্তব্য সমর্থন করেছেন। বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের পর এডিবিও ঋণচুক্তি বাতিল করে। এদিকে প্রধান দুই সংস্থার অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণায় পদ্মাসেতু নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার জাতীয় সংসদে বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাংক চলে গেছে, অন্য সহযোগীরাও চলে যেতে পারে। পদ্মাসেতু তৈরিতে মালয়েশিয়া প্রস্তাব দিয়েছে। পিপিপি বা অন্য যে কোনোভাবেই সেতু হতে পারে। তবে যেই প্রস্তাব দিক, তা দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা ক্ষমতায় এসে বিশ্বমন্দার মধ্যেও অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি করতে পেরেছি, পদ্মাসেতুও করতে পারবো। পদ্মাসেতু করার জন্য ১৬ কোটি মানুষ আছে। দেশের বাইরে ৮০ লাখ প্রবাসী বাঙালি আছে।’’ প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকে রির্জাভের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘১-২ বিলিয়ন ডলার খরচ করার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে।’’ প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার দেশের বেসরকারি খাতের বীমা কোম্পানিগুলো পদ্মাসেতুতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে ১৬ হাজার ২৯৯ কোটি টাকার লাইফ ফান্ড রয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। বাকি ১১ হাজার কোটি টাকা থেকে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পদ্মাসেতুতে বিনিয়োগ করতে চাই।’’ এর আগেও অর্থমন্ত্রীকে লিখিতভাবে পদ্মাসেতুতে অর্থায়নের ব্যাপারে জানিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘বীমা কোম্পানিগুলোর অর্থায়ন করতে কোনো আইনি বাধা নেই, কোনো ঝুঁকিতেও পড়তে হবে না। সব দিক বিশ্লেষণ এবং সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চাই।’’
কিন্তু দেশীয় প্রতিষ্ঠান বা মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পদ্মাসেতুতে বিনিয়োগ করলে তারা সুদের উচ্চ হার ছাড়া টাকা ছাড় করবে না বলে মনে করেন অথর্নীতিবিদ ড. আকবর আলী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের আগ্রহ ভালো। তবে তার আগে অর্থনীতিতে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি করা হয়েছিল নিম্ন সুদে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ১০-১২ শতাংশ সুদ ছাড়া টাকা দেবে না। পদ্মাসেতুতে বিনিয়োগ করলে অন্যান্য জায়গায় বিনিয়োগ কমে যাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রায় অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হতে পারে। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে একটা প্রভাব পড়তে পারে।’’ তিনি বলেন, উচ্চ সুদে অর্থ নিলে তার আগে নতুন একটা বাজেট প্রণয়ন এবং অর্থনীতিতে সংষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি আমদানি ব্যয় কমাতে হবে। বিশ্বব্যাংক ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠান সেতু নির্মাণ করলে তা দক্ষভাবে তৈরি হচ্ছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন থাকবে। কেননা তারা মুনাফার বিষয়টিই মাথায় রাখবে।’’ তবে অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত মনে করেন, ‘‘মালয়েশিয়া বা দেশীয় প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করলে খুব একটা বাধা সৃষ্টি হবে না। অপ্রদর্শিত অর্থ, রেমিট্যান্স বা অন্যান্য উৎস থেকে অর্থসংস্থান করা যেতে পারে।’’ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গেল অর্থবছরে প্রবাসীরা ১ হাজার ২৮৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি।
২০১০-১১ অর্থবছরের তুলনায় এর পরিমাণ ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। সে সময়ও পুরনো রেকর্ড ভেঙে রেমিট্যান্স ছিল ১ হাজার ১৬৫ কোটি ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১ হাজার ৯৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। এদিকে রেমিট্যান্স ও দেশীয় অন্যান্য অর্থের ব্যবহার, জাইকা ও অাইডিবি’র ইতিবাচক মনোভাব থেকে তাদের কাছে আরও বেশি অর্থ ছাড় করা এবং মালয়েশিয়ার প্রস্তাব খতিয়ে দেখার কথা ভাবছে সরকার। দেশি অর্থায়নের উৎস হিসেবে বাজেটের থোক বরাদ্দ থেকে অর্থ সংস্থানের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে মালয়েশিয়ার খসড়া চুক্তিতে সে দেশের সরকারের সম্পৃক্ততা কম থাকায় খসড়ার ওপর পুরো আস্থা রাখতে পারছে না সরকার। কারণ, মালয়েশিয়া সরকার পুরো দায়িত্ব না নিয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী তার দফতরে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জাইকা ও আইডিবি’র সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ সময় তিনি দেশীয় অর্থ দিয়ে পদ্মাসেতুর কাজ শুরুর ইচ্ছার কথা জানান। অবশ্য অর্থ মন্ত্রণালয় এখনো বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার পক্ষে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য নতুন প্রেসিডেন্টকে চিঠি দেওয়ার কথা বলেছেন। এদিকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশে পদ্মাসেতুর জন্য চার-পাঁচ অর্থবছরের একটি আর্থিক বিশ্লেষণ তৈরি করছে সেতু বিভাগ। সূত্র জানায়, পদ্মাসেতু তৈরি সরকারের আগামী নির্বাচনী চ্যালেঞ্জও বটে। সে হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, কোন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থসংস্থান করতে হবে, তা সরকারকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে এগোতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের ব্যাপারে সরকার কোনো বক্তব্য না দিলেও পদ্মাসেতু বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রোববার সংসদ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে বিস্তারিত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। সে ভাষণ থেকে সব ঘোর কেটে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করবোই: প্রধানমন্ত্রী
সংসদ প্রতিবেদক
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল হওয়ায় প্রয়োজনে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে বলে সংসদে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে বাজেট অধিবেশনে গত বুধবার তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো দুর্নীতি হয়নি। আর যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার প্রমাণ মিললে ব্যবস্থাও সরকার নেবে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গভর্নর, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবসহ সংশি্লষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু আমরা করবই। মালয়েশিয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, তা খতিয়ে দেখে দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই এই বিষয়ে সদ্ধিান্ত নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা একটা পয়সা ছাড় দেয়নি তাদের ভেতরের দুর্নীতি কে দেখে? বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে তিনি জাতীয় সংসদে প্রশ্ন তোলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী  বলেন, ওয়াল স্ট্রিট আর ফোর্বস দেখলেই বোঝা যাবে কে দুর্নীতি করে? তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে সহায়তা করতে বিশ্বব্যাংক নিজেই এগিয়ে এসেছিলো। হঠাত্ তারাই আবার দুর্নীতির অভিযোগ তুললো। যেখানে এখন পর্যন্ত একটা টাকাও ছাড় হয়নি। সেখানে কিভাবে দুর্নীতি হলো? পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে এর পেছনে কে বা কারা, কোন উদ্দেশ্যে আছে তা খতিয়ে দেখা উচিত। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পদ্মা সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ একটি কোম্পানিকে দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক তিনবার চিঠি দিয়েছিলো, চাপ দিয়েছিলো। বিদেশে একটি কোম্পানির সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানের যোগসূত্র ছিলো। তারা বলেছে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চেৌধুরীর কমিটিও ওই প্রতিষ্ঠানকে গ্রহনযোগ্য বলে মনে করেনি। সংসদে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তাহলে দুর্নীতি কোথায়? তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসাবেলা আমার কাছে এসেছিলো। দু'টি চিঠি দেখিয়েছিলো, আমি সেগুলো দেখেছি। সেগুলো বিএনপির সময়ের দুর্নীতির চিঠি। আমি তাদেরকে বলেছি ওখানে বিএনপির সময়ের যোগাযোগ মন্ত্রীর নাম ছিলো। তারিখ পর্যন্ত দেখিয়েছি। তারা বলেছে তাদের কাছে আরও তথ্য আছে। আমরা সেগুলো চেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, যদি কোনো মন্ত্রী জড়িত থাকে তবে প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে যাবে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অপবাদ দিয়েছে, এটা কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য না। বিএনপির জ্বালানি উপদষ্টো দুর্নীতি করে এখন বড় বড় কথা বলে এর আগে তিনি বলেন, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিদ্যুত্-জ্বালানি-যোগাযোগ খাতে দুর্নীতি হওয়ায় বিশ্বব্যাংক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করেছিলো। এবিষয়ে অর্থমন্ত্রী বিস্তারিত বলেছেন। কোন ৭টি প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছিলো তিনি তাও বলেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক যখনই দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে তখনই মন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েছি। সচিব প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দিয়েছি। এরচেয়ে বেশি কোন সরকার করেছে। বিএনপির আমলে জ্বালানি উপদষ্টো কে ছিলো? সেই সময় দুর্নীতি করে এখন পত্রিকা বের করে বড় বড় কথা বলে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, '৯৬ সালে ক্ষমতায় থাকার সময়ে জাপান সফরে ওই দেশের সরকার দু'টি সেতুর বিষয়ে আশ্বস্থ করে। একটি রূপসা আর একটি পদ্মা। রূপসা ছোট ব্রিজ সেটি হয়ে গেছে। পরে বিএনপি ক্ষমতায় এসে পদ্মার কাজ বন্ধ করে দিলো। বিএনপির দুর্নীতির কারণেই বিশ্বব্যাংক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এবার ক্ষমতায় আসার পরে বিশ্বব্যাংকই এগিয়ে আসে। তিনি বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের কাজে ১৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের লোকজন সেখানে গিয়েছিলো। সেখানেই যেহেতু দুর্নীতি হয়নি, তাহলে কোথায় দুর্নীতি হলো? প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক চলে গেছে, অন্যান্য সহযোগীরাও চলে যেতে পারে। মালয়েশিয়া প্রস্তাব দিয়েছে। পিপিপি বা অন্য যে কোনোভাবেই হতে পারে। তবে যেই প্রস্তাব দিক তা আমার দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে হবে। জনগণের স্বার্থে হতে হবে। পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করবোই। ক্ষমতায় এসে বিশ্বমন্দার মধ্যেও অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি করতে পেরেছি, পদ্মা সেতুও করতে পারবো। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকসহ আরো যারা আছে তারাও ঋণ দেওয়া বন্ধ করলে করতে পারে। করুক। পদ্মা সেতু করার জন্য ১৬ কোটি মানুষ আছে। দেশের বাইরে ৮০ লাখ প্রবাসী বাঙালি আছে। তিনি বলেন, গতকালও বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর, ইআরডি সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমি খোঁজ নিয়েছি, ব্যাংকে রির্জাভ আছে। / বিলিয়ন ডলার খরচ করার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আগামী জুলাই অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি বিস্তারিত বলবেন বলেও জানান। অপরদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতিতে প্রধানমন্ত্রীর পরিবার জড়িত বলে বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্য নাকচ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, তার পরিবারের মোট সাত সদস্যের কেউ দুর্নীতিতে জড়িত নয়। পরিবারের সদস্য নাম ভাঙিয়ে কেউ অবৈধ সুবিধা চাইলে তা সরাসরি জানাতে নিজের মোবাইল ফোন -মেইল ঠিকানাও সংসদে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। সংসদ অধিবেশনে পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেশ উত্তেজিত কণ্ঠেই বলেন, আমি, আমার ছোট বোন এবং আমাদের পঁাচ ছেলে-মেয়ে ছাড়া আমার আর কোনো পরিবার নেই। এর বাইরে আমার কেউ নেই। আমাদের নাম ভাঙিয়ে কেউ সুযোগ নেওয়ার চষ্টো করলে আমাকে জানাবেন, একথা বলে নিজের দু'টি মোবাইল নম্বর (+৮৮ ০১৭১১৫২০০০০ +৮৮ ০১৮১৯২৬০৩৭১) এবং -মেইল ঠিকানা sheikhhasina¦hotmail.com জানিয়েদেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসেছি কমিশন খাওয়ার জন্য নয়। আমার পরিবারের সদস্যরা কমিশন খায় না।
এসইসি’র কর্পোরেট গভর্ন্যান্স নীতিমালার নির্দেশনা প্রকাশ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
 তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য কর্পোরেট গভর্ন্যান্স পরিপালন বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা জারি করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এসইসি কোম্পানির ৭টি ইস্যুতে এ নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনাগুলো হল- পরিচালনা পর্ষদ, চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও), কোম্পানি সেক্রেটারি, অডিট কমিটি, বহিরাগত নিরীক্ষক, সাবসিডিয়ারি কোম্পানি, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং সিএফও’র দায়িত্ব ও কর্পোরেট গভর্ন্যান্স পরিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের জন্য নিদের্শনা জারি করা হয়েছে সেগুলো হলো- পরিচালনা পর্ষদের নূন্যতম সদস্য ৫ জন ও সর্বোচ্চ ২০ জন হতে পারবে। তবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) নির্দেশনা কার্যকর হবে। পরিচালনা পর্ষদে নূন্যতম ৫ ভাগের ১ ভাগ স্বাধীন পরিচালক থাকতে হবে। স্বাধীন পরিচালকরা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। এছাড়া তার পরিবারের কোনও সদস্যেরও কোম্পানিতে ১ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকতে পারবে না। পরিবারের সদস্য বলতে স্বামী-স্ত্রী, পুত্র, কন্যা বাবা, মা, ভাই, বোন, জামাতা অথবা পুত্রবধুকে বোঝানো হয়েছে। কোম্পানির সাবসিডিয়ারি অথবা অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বাধীন পরিচালকের অর্থ-সংক্রান্ত লেনদেন অথবা অন্যকোন সম্পর্ক থাকতে পারবে না। কোনও স্টক এক্সচেঞ্জ অথবা শেয়ারবাজারে মধ্যস্থতাকারী (ইন্টারমিডিয়ারিজ) প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার, সদস্য, পরিচালক ও কমকর্তারা কোম্পানির স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না। একই সাথে একজন ব্যক্তি ৩টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না। ব্যাংক অথবা ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপী হতে পারবেন না। স্বাধীন পরিচালক পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা নির্বাচিত ও বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডার দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। স্বাধীন পরিচালকে পদ ৯০ দিনের বেশি খালি রাখা যাবে না। স্বাধীন পরিচালকের সাথে চুক্তির মেয়াদ ৩ বছরের বেশি হতে পারবে না। তবে প্রয়োজন সাপেক্ষে তা পরবর্তীতে ১ মেয়াদ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। স্বাধীন পরিচালকের অবশ্যই আর্থিক, নীতিমালা এবং কর্পোরেট আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে ধারাণা থাকতে হবে। ব্যবসায়িক লিডার, কর্পোরেট লিডার, ব্র’ক্রেট, অর্থনীতি ব্যবসায় শিক্ষা অথবা আইন বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এছড়া চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্ট্যান্ট অথবা চার্টার্ড সেক্রেটারিরা স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন। স্বাধীন পরিচালকদের ব্যবস্থাপনা ও তার পেশাগত ক্ষেত্রে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যে কোন বিশেষ ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে এ শিথিল করা যাবে। চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) একই ব্যক্তি হতে পারবেন না। চেয়ারম্যান পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা নির্বাচিত হবে। পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান ও সিইও কাজ কি হবে তা নির্ধারণ করবেন। পরিচালনা পর্ষদরা ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ১৮৪ নম্বর ধারা অনুসারে শেয়ার হোল্ডারদের কাছে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন প্রদান করবেন। কোম্পানির প্রধান ৫ কর্মকর্তা বা নির্বাহীদের বেতন ভাতাদি প্রকাশ করতে হবে। প্রধান ৫ কর্মকর্তা যেমন- পরিচালক, সিইও, কোম্পানি সচিব, সিএফও এবং ইন্টার অডিট বিভাগের প্রধান। কোম্পানিকে অবশ্যই সিএফও, কোম্পানি সচিব ও ইন্টারনাল অডিট বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। তাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব কর্তব্য পরিচালনা পর্ষদ নির্ধারণ করে দেবে। সিএফও ও কোম্পানি সচিব কোম্পানির পরিচারনা পর্ষদের সভায় উপস্থিত থাকতে হবে। তবে সিএফও ও কোম্পানির সচিব সংক্রান্ত কোন এজেন্ডার বৈঠকে তারা উপস্থিত থাকতে পারবেন না। পরিচালনা পর্ষদের সাব-কমিটি হিসেবে কোম্পানির অবশ্যই একটি অডিট কমিটি থাকাতে হবে। কোম্পানির অর্থিক প্রতিবেদন ‘ট্র অ্যান্ড ফেয়ার ভিউ’ প্রদানের অডিট কমিটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে সহায়তা করবে। কোম্পানির ব্যবসা পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে পরিচালনা পর্ষদকে সহায়তা করবে অডিট কমিটি। অডিট কমিটি তার কাজের জন্য পরিচালনা পর্ষদের কাছে জবাবদিহিতা প্রদান করবে। অডিট কমিটিতে নূন্যতম ৩ জন সদস্য থাকতে হবে।
যার মধ্যে নূন্যতম ১ জন স্বাধীন পরিচালক থাকতে হবে। অডিট কমিটির সকল সদস্যের ‘ফিন্যান্সিয়ালি লিটারেট’ (আর্থিক প্রতিবেদন সংক্রান্ত জ্ঞান) থাকতে হবে। কমিটির অন্তত ১ জন সদস্যকে হিসাব বিজ্ঞান অথবা আর্থিক ব্যবস্থাপান সংক্রান্ত বিষয়ে ১২ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অডিট কমিটির কোরাম গঠনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১ জন স্বাধীন পরিচালক হতে হবে। কমিটির চেয়ারম্যান পরিচালনা পর্ষদ নির্ধারণ করবে। স্বাধীন পরিচালক অডিট কমিটির চেয়ারম্যান হতে পারবেন। অডিট কমিটির চেয়ারম্যান এজিএমে উপস্থিত থাকবেন। অডিট কমিটি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রণয়ন নীতিমালা, অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপানা বিভন্ন দুর্বলতা পর্যবেক্ষণ করবেন। কোম্পানি প্রাথমিক গণ প্রস্তাব (আইপিও) ও পুনঃগণ প্রস্তাব (আরপিও) অর্থ কোন কোন খাতে ব্যবহার করেছে কোম্পানি তা সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন অডিট কমিটির কাছে প্রদান করতে হবে। কোম্পনির বহিরাগত নিরীক্ষক কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা, হিসাব, ব্রোকার ও ডিলার সার্ভিস, একচুরিয়াল সেবা প্রদান করতে পারবে না। মূল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ন্যূনতম ১ জন স্বাধীন পরিচালক সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হতে হবে। সাবসিডিয়ারি কোম্পানির বৈঠকের বিষয়বস্তু মূল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে উপস্থাপন করতে হবে। সাবসিডিয়ারি কোম্পানির সিদ্ধান্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এমন বিষয় মূল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকের বিষয়বস্তুতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মূল কোম্পানির অডিট কমিটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করবেন। সিইও ও সিএফও পরিচালনা পর্ষদকে সার্টিফায়েড করবে যে- তারা কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যবেক্ষ করেছেন। এছাড়া কোম্পানি কোন প্রতারণামূলক, বেআইনি, বা নিয়য়ম বর্হিভুতভাবে কোন লেনদেন করেনি সে বিষয়ে নিশ্চিত করবেন। কোম্পানি কর্পোরেট গর্ভন্যান্স নীতিমালা যথাযথভাবে প্রয়োগ করেছে সে বিষয়টি নিশ্চত করতে হবে। এ জন্য চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্ট্যান্ট অথবা চার্টার্ড সেক্রেটারি দ্বারা সনদ নিতে হবে। নীতিমাল যথাযথ অনুসরণ করা হয়েছে- এ মর্মে পরিচালকরা একটি প্রতিবেদন প্রদান করবেন।

এ সরকার হৃদয়হীন: মির্জা ফখরুল
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
বিয়ের অনুষ্ঠান ও ঘরে মেহমান এলেও পুলিশ-র‌্যাব দিয়ে হানা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি কারাগারে আটক বিরোধী দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে বলে দাবি করে আরো অভিযোগ করেছেন, এই সরকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হৃদয়হীন। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুল বারী হেলালসহ সকল নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব অভিযোগ করেন। আজিজুল বারী হেলালের নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-১৮ আসনের বিএনপিসহ সকল অঙ্গসংগঠন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টার এ প্রতীকী অনশন কর্মসূচির আয়োজন করে। মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের নির্বাচনী এলাকা রাজধানীর উত্তরায় বিরোধী দলীয় কোনো নেতাকর্মীদের বিয়ের অনুষ্ঠান হলে বা কারো বাড়িতে মেহমান এলে র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে হানা দেওয়া হয়, তল্লাশি চালানো হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসনে (ঢাকা-১৮) রাজনৈতিক ও নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে বিএনপি নেতা আজিজুল বারী হেলালকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি হেলালসহ বিরোধী দলের সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন। হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের ক্ষমতায় আসার পর থেকে হত্যা, গুম, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা দায়ের ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দেশের জনগণের পাশাপাশি এখন সারা বিশ্ব প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠছে।
এই সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। বিএনপির অফিস র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। কোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেওয়া হলেও র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে বাধা দেওয়া হয়, এই হচ্ছে তাদের গণতন্ত্রের নমূণা- উল্লেখ করেন ফখরুল। অনশন কর্মসূচিতে আজিজুল বারী হেলালের স্ত্রী ও তার শিশু কন্যা আইমুন বারী উপস্থিত ছিলেন। তাদের দেখিয়ে মির্জা ফখরুল আরো অভিযোগ করেন, কারাগারে তাকে ওষুধ দিতে দেওয়া হচ্ছে না। এই সরকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হৃদয়হীন। শিশুকন্যাটি নির্যাতনের কথা ভুলবে না বলেও উল্লেখ করে তিনি সরকারকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এই সরকারকে পদত্যাগ করিয়ে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে বাধ্য করাতে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল সে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে বিএনপিসহ সকল জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতি আহ্বান জানান। বিএনপি নেতা হযরত আলীর সভাপতিত্বে অনশন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নিলুফার চৌধুরী মনি এমপি, ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ কাইয়ুম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহজাহান সম্রাট, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রফিক সিকদার প্রমুখ।

ডাচ-বাংলার মাধ্যমে দুদকের নাম ভাঙ্গিয়ে লাখ লাখ টাকার প্রতারণা 
আদিত্য আরাফাত 
ডাচবাংলা ব্যাংকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। ব্যাংকটির অসাধু কর্মকর্তারা প্রতারকদের এ অবৈধ সুযোগ করে দিয়েছে। দুদকের চেয়ারম্যান ছাড়াও এর কমিশনারদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারক চক্রটি এ কাজ করেছে। দুদক ও র‌্যাবের প্রাথমিক তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এরই মধ্যে অপরাধীদের পাকড়াও করেছে র‌্যাব। তাদের নিয়ে শুক্রবার বন্ধের দিন হঠাৎ দুদক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দুদক। কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে হাজির করা হয় অপরাধীদের।
র‌্যাবের তদন্ত দল বৃহস্পতিবার গার্মেন্টস ব্যবসায়ী পরিচয়ধারী প্রতারক জিয়াউল হককে রাজধানীর জুরাইন থেকে গ্রেফতার করে। পরে জিয়াউল হকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপর অভিযুক্ত ইসরাফিলকে রামপুরা টিভি ভবনের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান দুদকের পরিচালক (পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন) মেজর আশীষ সরকার। জরুরি এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এক বা একাধিক সংঘবন্ধ চক্র বহুদিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছিল। এই বিষয়ে ভূক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব যথারীতি পেশাদারিত্বের সঙ্গে বৃহস্পতিবার একটি চক্রকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।’’ মেজর আশীষ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মোবাইল ফোনে দুর্নীতির  অভিযোগ হতে অব্যহতি দেওয়ার নামে একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ ও অর্থ দাবির বিষয়টি কমিশনের নজরে আসলে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।’’ র‌্যাব ১০-এর পরিচালক লে. কর্ণেল আমির মজিদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘কয়েকজন সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা দুদক চেয়ারম্যান বরাবর এবং বিভিন্ন থানার জিডির মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন যে, এক ব্যক্তি নিজেকে কখনও দুদকের চেয়ারম্যান কখনও দুদকের বিভিন্ন কর্মকর্তা বা চেয়ারম্যানের এপিএস পরিচয় দিয়ে টাকা দাবি করে আসছে।’’ তিনি জানান, প্রতারক চক্রটি অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বলে। দুদক থেকে বিষয়টি র‌্যাবকে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। প্রতারক চক্রটি যেখানে অ্যাকাউন্ট করেছিল তার সূত্র ধরে প্রথমে জিয়াকে পরে ইসরাফিলকে গ্রেফতার করে। সংবাদ সম্মেলনে ইসরাফিল বলেন, ‘‘জিয়ার পরামর্শে ডাচবাংলা ব্যাংকের শান্তিনগর শাখায় দুদকের চেয়ারম্যানের নাম দিয়ে (গোলাম রহমান) একটি অ্যাকাউন্ট খুলি। চেক বইয়ের সব পাতায় স্বাক্ষর দিয়ে জিয়ার কাছে হস্তান্তর করি। এ ঘটনার পর থেকে জিয়ার সঙ্গে আর দেখা হয়নি।’’ ইসরাফিল বলেন, ``কিছুদিন পর ডাচবাংলা ব্যাংকের এ অ্যাকাউন্টটিতে দুর্নীতি হচ্ছে এমন অভিযোগ আমি জানতে পারি অ্যাকাউন্টের ইন্ট্রোডিউসার এনামুল হকের মাধ্যমে। তারপর আমি জিয়াকে ফোন করে বিষয়টি জানালে সে আমাকে এ বিষয়ে পরে কথা বলবে বলে জানায় এবং পরে আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি।`` ইসরাফিল জানায়, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বিকেলে জিয়া তাকে ফোন দিয়ে রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনে দেখা করতে বলে। দেখা করলে র‌্যাব তাকেও গ্রেফতার করে।
জিয়াউর রহমান এ পর্যন্ত পৌনে এক কোটি টাকা দুদক চেয়ারম্যান কমিশনারদের নামে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ থাকলেও সাংবাদিকদের সে জানায়, এ পর্যন্ত দুদকের কর্মকর্তাদের নামে ৭/৮ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। র‌্যাব ও দুদক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দুজনই স্বীকার করেছেন ডাচবাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে এ অপকর্ম করেছেন। যার সঙ্গে ডাচ-বাংলার অসাধু কর্মকর্তারাও জড়িত।
সোহেল তাজের পদত্যাগপত্র এবার স্পিকারের হাতে
সাজিদুল হকদীর্ঘদিন ধরে চলা পদত্যাগ নাটকের অবসান ঘটাতে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ এমপি অবশেষে তার পদত্যাগপত্রটি নিজেই স্পিকার আবদুল হামিদের কাছে জমা দিয়ে এলন।  গত এপ্রিলে স্পিকার বরাবর ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে পাঠানো পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করায় এবার স্পিকারের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন তিনি। এর পরপরই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে তিনি গণভবনে যান। শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনে গিয়ে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন সোহেল তাজ। স্পিকার সেটি গ্রহণ করেন বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন স্পিকারের একান্ত সচিব সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ শাখার পরিচালক জয়নাল আবেদীন। এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার সময় স্পিকারের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। অপর একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ গত ৫ জুলাই দেশে আসেন। উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই মাস আগে আরও একবার পদত্যাগ করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল তাজ। তবে সেবার নানা ঘটনার পরম্পরায় তা গ্রহণ করেননি স্পিকার আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট। প্রসঙ্গত, সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ ছেড়েছিলেন অনেক আগেই। এরপর গত ২৩ এপ্রিল সোমবার সকালে তার সংসদ সদস্য হিসেবে তার পদত্যাগপত্রটি সংসদ ভবনে স্পিকারের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। সেসময় তানজিম আহমদ সোহেল তাজের ব্যক্তিগত সহকারী আবু কাওসার সংসদ ভবনে স্পিকারের কার্যালয়ে কর্মরত মোহাম্মদ শামীমের হাতে পদত্যাগপত্রটি জমা দিয়ে আসেন। কিন্তু সেটি গৃহীত হয়নি।
আবু কাওসার আরও জানিয়েছিলেন, পদত্যাগের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেননি সোহেল তাজ। সংবিধানের ৬৭ (২) ধারায় সাংসদদের পদত্যাগ করার যে সুযোগ রয়েছে তার ভিত্তিতেই পদত্যাগ করেছেন তিনি। তবে একটি সূত্র জানায়, ``প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের পরেও বেতন ভাতা কেন?`` এই মর্মে সোহেল তাজ যে চিঠি মন্ত্রী পরিষদ সচিবালয়ে পাঠিয়েছিলেন তার উত্তর পাওয়ার পরই সংসদ সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।  উল্লেখ্য ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বর্তমান সরকার গঠন করা হলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তানজিম আহমদ সোহেল তাজ।  ওই বছরের জুনে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি । তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে টানা অবস্থান করছেন তিনি। কিন্তু পদত্যাগের পরেও তাকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে বহাল রাখে সরকার। মন্ত্রিপরিষদের ওয়েবসাইটেও তাকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী দেখানো হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিঠি পাঠিয়ে কেন সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এখনো বেতন ভাতা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে তা জানতে চান সোহেল তাজ।  গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সোহেল তাজ মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী চার জাতীয় নেতার একজন তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে।
তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবি বাস্তবায়নে সেল করা হবে: এইচ টি ইমাম
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি পর্যালোচনা করে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি পৃথক সেল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া কর্মচারীদের জন্যে ২০ শতাংশ জমির খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্যে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এম নিয়াজউদ্দিনকে দায়িত্ব দেন তিনি। শনিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা মিলনায়তনে বাংলাদেশ তৃতীয় শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন এইচ টি ইমাম। মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের সঙ্গে সকল অধিদফতর, পরিদফতর, প্রতিষ্ঠান, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের নিয়োগ বিধি, বেতনস্কেল, পদ-পদবীসহ বিরাজমান যাবতীয় বৈষম্য দূর করার জন্যে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে এইচটি ইমামের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশ তৃতীয় শ্রেণী সরকারি কর্মচারী সমিতি। এইচ টি ইমাম বলেন, ‘‘৭ দফা দাবির প্রত্যেকটি নিয়ে কথা বলতে আমার বাধ্য-বাধকতা রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। তবে কর্মচারীদের মধ্যে অবশ্যই বৈষম্য দূর করতে হবে।’’ ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্যে সমিতির দাবি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীনে একটি সেল গঠনের ঘোষণা দেন এইচ টি ইমাম। তিনি আরো জানান, এ জন্যে একটি টিমকে কাজে লাগানো হবে এবং তাদের সময় বেধে দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তারা মতামত জানাবেন। যে কাজগুলো এখনি করা যায়, যেগুলো মধ্যম পর্যায়ে করা যায় এবং যেগুলো ভবিষ্যতে করা যাবে সে ব্যাপারে এ সেল বিস্তারিত জানাবে। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০ শতাংশ জমির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘যতোটুকু জানি চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো হয়েছে। এখন কোথাও ঘুরপাক খাচ্ছে চিঠিটি।’’ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এম নিয়াজউদ্দিনকে এ ব্যাপারে দ্বায়িত্ব দেন তিনি। কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আপনারা দাবিগুলো গুছিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে উপস্থাপন করলে, সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনের দ্বায়িত্ব আমার।’’ সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে কর্মচারীদের আরো মনোযোগ দিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। বর্তমানে যেভাবে সরকারি কর্মচারীরা কাজ করছেন, সেভাবে দেশের আশানুরুপ উন্নয়ন হবে না বলেও মত প্রকাশ করেন এইচ টি ইমাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব এম এম নিয়াজউদ্দিন সরকারি কর্মচারীদের আরো মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে আহ্বান জানান। সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক নাছিমা বেগম। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের পক্ষে দাবি দাওয়া তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, সমিতির কার্যকরী সমিতির সভাপতি ওয়ারেছ আলী, মহাসচিব হেদায়েত হোসেন, উপদেষ্টা আব্দুর রশীদ, সহসভাপতি আবুল বাশার, জসিমউদ্দিন প্রমুখ। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের ‘কেরাণী’ উল্লেখ না করে ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ হিসেবে প্রশাসনিকভাবে পদ নির্ধারণ করার দাবি জানান সমিতির নেতারা। অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন করে সর্বমোট দশটি গ্রেডে বেতন স্কেল নির্ধারণ করার দাবি জানান তারা। বক্তারা আরো দাবি জানান, বৃদ্ধ পিতা-মাতার সুচিকিৎসা নিশ্চয়তা, দুই সন্তানের শিক্ষা সুবিধাসহ অন্তত ৫ সদস্যের পরিবারের নূন্যতম জীবনমান বজায় রাখতে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়াও ৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধিসহ কর্মচারী পোষ্যকোটা সংরক্ষণ ও পাহাড়ি ভাতার হার বৃদ্ধির দাবি জানান তারা। প্রকল্প হতে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত পদধারীদের প্রকল্পের চাকরিকাল গণনা করে টাইমস্কেল সিলেকশন গ্রেড প্রদেয় হবে না বলে জারিকৃত আদেশকে অমানবিক উল্লেখ করে হয়রানি ও নির্যাতনমূলক এ আদেশ বাতিলের দাবি জানান নেতারা। কর্মচারীদের স্থায়ী বাসস্থান সুবিধা নিশ্চিত করতে হায়ার পার্চেজে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া এবং চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের জন্যে কর্মচারী কমপ্লেক্স নির্মাণেরও দাবি জানান তারা। কর্মচারী কল্যান ট্রাস্টি বোর্ডের কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণসহ দূর্ঘটনাকবলিত বা অসহায় কর্মচারীদের তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আলাদা আপদকালীন তহবিল গঠনের দাবি জানান নেতারা। এছাড়াও কর্মচারীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি পর্যালোচনা করে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি পৃথক সেল গঠনের দাবি জানান কর্মচারী নেতারা।

গ্রামীণফোনে ছাঁটাইয়ের বিরোধিতায় কর্মীরা সংঘবদ্ধ
ইশতিয়াক হুসাইন
দেশের বৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে চলমান কর্মী ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এই প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গঠন করা হয়েছে কর্মীদের বিশেষ সংগঠন। তাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন ছাঁটাই হওয়া কর্মীরাও। প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা চলমান ছাঁটাইকে অনৈতিক আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তা বন্ধ করাসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে একটি লিফলেট প্রকাশ করে তা বিতরণ করছেন। শুধু তাই নয়, কর্মী ছাঁটাই প্রক্রিয়ার মতো বেআইনি কার্যক্রমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা। গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারাস্থ গ্রামীণ ফোন প্রধান কার্যালয়েই একটি সভার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে গ্রামীণফোন কর্মীদের সংগঠনটির। সংগঠনের উদ্যোক্তাদের একজন ই-মেইল বার্তায় বাংলানিউজকে তাদের সংগঠন তৈরির খবর জানান। তিনি লিখেছেন, আগামী ৬ জুলাই রাজধানীর মগবাজারে সংগঠনের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, নতুন সদস্য সগ্রহ, রেজিস্ট্রেশন, সংগঠনের আইনগত ভিত্তি, ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এদিকে, বৃহস্পতিবার একটি লিফলেটও বিতরণ করেন কর্মীরা। এই  লিফলেটে কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ ও বর্বর বলে উল্লেখ করে। এতে বর্তমান ইনক্রিমেন্ট পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করে ন্যায্য ও যৌক্তিকহারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা করা, ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের যথাবিহিত সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক যথাযথ সামাজিক/আর্থিক/মানসিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া, কোম্পানির কাছে ন্যায্য পাওনা বাবদ ৫ শতাংশ মুনাফা লভ্যাংশ বকেয়াসহ প্রদান করার দাবি জানানো হয়। ব্যয় সংকোচনের কথা বলে দেশের বৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ছাঁটাই শুরু করে। এর অংশ হিসেবে কর্তৃপক্ষ  কর্মীদের চাকরিচ্যুৎ করছে। এর অন্যতম টার্গেট পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মীরা। বিশেষ করে যারা অন্তঃসত্ত্বা কিংবা শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। বাংলানিউজের এক অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ‘কথিত চাকরি রক্ষার পরীক্ষা’ নামেই গ্রামীণফোন কর্মী ছাটাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গ্রামীণফোনে বর্তমানে ৪ হাজার ৮০০ লোকবল রয়েছে। এই চাকরি রক্ষার পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কর্মীরা। একাধিক কর্মী ফোনে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন তাদের ক্ষোভের কথা। চাকরিচ্যুত একজন গ্রামীণফোন কর্মী বাংলানিউজকে জানান, তিনি ২০ নম্বরের মধ্যে ১৪ নম্বর পেয়েও চাকরি হারিয়েছেন। আবার অনেকেই ১০, ১১ নম্বর পেয়েও চাকরিতে বহাল রয়েছেন। পরীক্ষাকে কর্মী ছাঁটাইয়ের হাতিয়ার বলেই উল্লেখ করেছেন তিনি। মূলতঃ টরে জনসেন ২০১১ সালের মার্চে গ্রামীণফোনের নতুন সিইও হয়ে আসার পর থেকেই কর্মী ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু হয়। টরে জনসেনের ব্যয় সংকোচনের জন্য সুখ্যাতি রয়েছে। এর আগে তিনি যখন মালয়েশিয়াতে ছিলেন তখনও এই কাজে তাকে ব্যবহার করা হয়েছিলো।  জনসেন মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠানের তার ঘনিষ্ট দু’একজনকেও গ্রামীণফোনে নিয়ে আসেন। তার মধ্যে অন্যতম মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান পাকিস্তানী বশোদ্ভূত হারুণ ভাট্টি। আর হারুণ ভাট্টিই কর্মী ছাঁটাই কাজের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। কর্মী ছাঁটাইয়ের পর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষকে এর কারণ জানতে চেয়ে চিঠি দেয়। এরপর গ্রামীণফোনের কর্মীরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে গ্রামীণফোনের সিইও টরে জনসেন কর্মীদের সান্ত্বনা দিয়ে ই-মেইল বার্তা পাঠান। তবে এরপরেও কর্মীরা শান্ত হননি। উল্টো তারা সংঘঠিত হচ্ছেন, লিফলেট বিতরণ করছেন। পাঠকদের উদ্দেশ্যে গ্রামীণফোন কর্মীদের বিতরণ করা লিফলেটের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘গ্রামীণফোনের প্রহসনমূলক নীতি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা’
১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে অদ্যবদি ৩৮ মিলিয়ন গ্রাহক ও ৫০ শতাংশের বেশি মার্কেট শেয়ার নিয়ে গ্রামীণফোন তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। প্রসঙ্গ সফলতার নয়। এই সফলতার পেছনে যাদের বিনিদ্র ও রক্তঝরা পরিশ্রম তাদের প্রতি অবিচারের কথা। অবিবেচনার অন্তরালে চাপা পড়ে আছে এই বিশাল কোম্পানির প্রতিটি বিভাগের কর্মীদের আশা আকাঙ্খা। এখানে বিবেচনা করা হচ্ছে শুধু ব্যবসা। এ যেন মনে করিয়ে দেয় ইংরেজ কোম্পানির শাসনামলে নীলকুঠির নিষ্ঠুরতার কথা। শুরুতেই আসে অমানবিক ইনক্রিমেন্ট পলিসির প্রসঙ্গ। সরকার ঘোষিত ইনফ্লেশন (মূল্যস্ফীতি) যেখানে ১১ শতাংশ সেখানে আজ আমরা শূণ্য থেকে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট নিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করছি। যা বাস্তবিকভাবে অসম্ভব। এখানেই শেষ নয়। ঘটনার ক্রম বিবর্তনে এলো এমপ্লয়ী ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া। অস্বচ্ছ ও বর্বর পন্থায় টরে (গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) ও ভাট্টি (মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান হারুণ ভাট্টি)  গং তাদের অসাধু ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু করলো ‘পি এন্ড ও’ ডিভিশন থেকে। ধীরে ধীরে তা কমার্শিয়াল বিভাগ পর্যন্ত বিস্তার করলো। শোনা যাচ্ছে তা টেকনোলজি, ফাইন্যান্স ও অন্যান্য বিভাগেও হবে। যেভাবে মিটিংয়ের নাম করে জোর করে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হলো এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ছুটিতে থাকা অবস্থায় অফিসে ডেকে এনে পদত্যাগপত্রে সই করতে বলা হলো তা একাত্তরের পাক হানাদারদের পাষণ্ডতা ও বর্বরতাকেও হার মানায়।  শুধুমাত্র মৌখিক আদেশের ভিত্তিতে এই ধরনের অমানবিক প্রক্রিয়া চালানো কর্তৃপক্ষের অসাধু মানসিকতার পরিচয় বহন করে। এমতাবস্থায় আজ আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের শত আবেদন সত্ত্বেও স্বৈরাচারী ম্যানেজমেন্ট কোনো কথায় কর্নপাত করছে না। তারা তাদের অসাধু, ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থ চরিতার্থ করার নিমিত্তে আমাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। আমরা আমাদের রক্তে গড়া এই প্রতিষ্ঠান একটি স্বার্থান্বেষী চক্রের খেয়াল খুশির কারণে নষ্ট হতে দিতে পারি না। হাজার হাজার নিষ্ঠাবান কর্মীর ভদ্রতার সুযোগ নিয়ে গ্রামীণফোন ম্যানেজমেন্ট দিনের পর দিন যেসকল অন্যায় কার্যক্রম চালিয়েছে, সময় এসেছে সবাই একত্রিত হয়ে এর প্রতিবাদ জানানোর।
আমাদের দাবিগুলো নিম্নরূপ:
অবিলম্বে অনৈতিক ছাটাই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে| বর্তমান ইনক্রিমেন্ট পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করে ন্যায্য ও যৌক্তিকহারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা করতে হবে। ছাঁটাই করা কর্মীদের যথাবিহিত সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক যথাযথ সামাজিক/আর্থিক/মানসিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কোম্পানির কাছে ন্যায্য পাওনা বাবদ ৫ শতাংশ মুনাফা লভ্যাংশ বকেয়াসহ প্রদান করতে হবে।
নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি, আর কতদিন আমরা এসব নির্যাতন মুখ বুঁজে সইবো। উপরোক্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আসুন বজ্রকন্ঠে আওয়াজ তুলি।
এসএলপিএলের সঙ্গে এক বছরের চুক্তির নির্দেশ বিসিবির!
স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
 শ্রীলঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে (এসএলপিএল) যে পাঁচজন ক্রিকেটারকে নেওয়া হয়েছে তাদের প্রত্যেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)‘র চুক্তিতে আছেন। এসএলপিএলে খেলতে হলে বিসিবি’র নির্দেশনা মেনে চুক্তি করতে হবে তাদেরকে। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, নাসির হোসেন ও ইলিয়াস সানিকে বিসিবি নির্দেশ দিয়েছে তিন বছরের পরিবর্তে এক বছরের জন্য এসএলপিএলের সঙ্গে চুক্তি করতে। কিন্তু কেন তাদেরকে এক বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে বলা হচ্ছে তা জানেন না পাঁচ ক্রিকেটারের কেউ। বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরী এক বছরের চুক্তির নির্দেশ প্রসঙ্গে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেছেন, ‘আমরা এখনও চুক্তির কাগজপত্র দেখিনি। ক্রিকেটাররা চুক্তিপত্র নিয়ে এলে আমরা বুঝতে পারবো কি করতে হবে।’ বোর্ডের নির্দেশ পেয়ে খেলোয়াড়রা তাদের এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে পাঁচ ক্রিকেটারের এজেন্ট। বিসিবি থেকেও শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। শনিবার ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ থেকে লঙ্কান বোর্ডে একটি চিঠি পাঠানোর কথা। এসএলপিএল বিদেশি ক্রিকেটার নিয়েছে এজেন্টের মাধ্যমে। ফলে এসএলসি থেকে বিসিবির সঙ্গে কোন ধরণের যোগাযোগ করা হয়নি।
বিসিবি সিইও জানিয়েছেন, তিনি কোন ধরণের ই-মেইল পাননি এসএলসি থেকে। ক্রিকেট পরিচালক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার সাব্বির খানও জানিয়েছেন, তার কাছে কোন ধরণের মেইলে আসেনি। কিন্তু ক্রিকেটাররা চুক্তি করতে চাওয়ায় এবং এনওসির বিষয়ে আলোচনা করায় বাধ্য হয়ে এসএলসিকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিসিবি। বিসিবি এসএলসির কাছে জানতে চেয়ে লিখেছে, ‘মিডিয়ার মধ্যামে জানা গেছে বাংলাদেশের পাঁচজন ক্রিকেটারের এসএলপিএলে খেলবে। এবিষয়ে এসএলসির মাধ্যমে অবগত হতে চায় বিসিবি।’ বৃহস্পতিবার কলম্বোতে এসএলপিলের সাতটি ফ্রাঞ্চাইজি ড্রাফট পদ্ধতিতে ৫৬ জন বিদেশি ক্রিকেটার নিয়েছে। তালিকায় ভারতের কোনো খেলোয়াড় নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে একসঙ্গে তিনজন- ইলিয়াস সানি, মুশফিকুর রহিম ও নাসির হোসেন খেলছেন নাগেনাহিরা দলে। সাকিব উথুরা  এবং ওয়েম্বা দলে খেলবেন তামিম। আগামী ১০ থেকে ৩১ আগস্ট শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্ব এবং পাল্লেকেল্লেতে হবে এসএলপিএল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট প্রতিযোগিতা।
হেডস্কার্ফ ব্যবহারের অনুমতি ফিফার
স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
ফুটবলে মেয়েদের হেডস্কার্ফ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ফিফা। বৃহস্পতিবার ফুটবলে আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (ইফাব) হিজাব বা হেডস্কার্ফ ব্যবহারের ওপর ২০০৭ সালের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
হেডস্কার্ফ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে ইফাব যুক্তি দেখিয়েছিলো যে, এটি ব্যবহার মেয়েদের জন্য অনিরাপদ। বিশেষ করে এতে গলায় চোটের ঝুঁকি থাকে। অবশ্য অনুমোদন দেওয়ার আগে ইফাব নতুন ডিজাইনের ভেলক্রো হিজাব ব্যবহারের নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনায় নেয়। ভেলক্রো হিজাব (এক ধরনের মাথা বন্ধনী) ব্যবহার নিরাপদ এবং এতে চোটের তেমন ঝুঁকি নেই বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেন। এক সংবাদ সম্মেলনে ফিফার সাধারণ সম্পাদক জেরোমে ভালকে বলেন,‘হেডস্কার্ফ ব্যবহারে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি ডাক্তারি মতামতে দূর হওয়ায় খেলোয়াড়দের এটা ব্যবহারের করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’ ফিফার সহ-সভাপতি জর্ডানের প্রিন্স আলি বিন আল-হুসাইনের হেডস্কার্ফের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে কয়েক বছর ধরেই প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। ফিফার নতুন সিদ্ধান্তের সমালোচকরা দাবি করছেন এই সিদ্ধান্তে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার সর্বোচ্চ পর্যায়ে বৈষম্য তৈরী হবে। ফিফার মতে বিশ্বে ২৯ মিলিয়ন নারী বা মেয়ে ফুটবল খেলে থাকেন। ফুটবলে আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী সংস্থা ইফাব ফিফা সহ-সভাপতি প্রিন্স আল হুসেইনের এক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মার্চেই জানিয়েছিলো তারা ফিফা আয়োজিত প্রতিযোগিতায় মেয়েদের হেডস্কার্ফ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পক্ষে। ২০০৭ সালে নিরাপত্তার কারণে কানাডায় ১১ বছরের মেয়েদের হিজাব ব্যবহার করতে বাধা দেওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে মুসলিম দেশগুলোর চাপের মুখে ছিলো ফিফা। ২০১২ সালে অলিম্পিক বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বে জর্ডানের বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর কয়েক মুহুর্ত আগে ইরানি দলকে খেলার অযোগ্য ঘোষণা করা হয় হেডস্কার্ফ ব্যবহারের কারণে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। আরব দেশগুলো এবং এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন ফিফার নতুন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এএফসির সাধারণ সম্পাদক অ্যালেক্স সুসে বলেন,‘আমাদের জন্য এটা শুভ সংবাদ। এতে এএফসির দেশগুলো উপকৃত হবে। এটা মুসলিম দেশগুলোর জন্য ভাল হবে।’
এ বিষয়ে কুয়েত ফুটবল ফেডারেশনের ওম্যান স্পোর্টিং কমিটির সভাপতি শেখ নাইমা আল সাবাহ বলেন,‘ এই আমাদের খুশী করেছে। আমরা এই সিদ্ধান্তের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম। এতে মেয়েদের প্রতি সুবিচার হয়েছে। এতে ফুটবল খেলায় কুয়েতি মেয়েদের উৎসাহ বাড়বে।’ আরব দেশগুলোতে নারী ফুটবলে কাতার, বাহরাইন, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমীরাতের পাশাপাশি কুয়েতও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে।
শুরু হলো আবার ‘ক্লোজ আপ ওয়ান- তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’
বিপুল হাসান
আনুষ্ঠনিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে আবার শুরু হলো দেশ জুড়ে আলোড়ন জাগানো গানের প্রতিযোগিতা ‘ক্লোজ আপ ওয়ান- তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’। ইউনিলিভার (বাংলাদেশ) লিমিটেডের আয়োজনে এই রিয়েলিটি শোর টেলিভিশন পার্টনার হিসেবে রয়েছে এনটিভি। রাজধানীর গুলশানের স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে ৫ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিযোগিতার চতুর্থ আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
ইউনিলিভারের ব্র্যান্ড বিল্ডিং ডিরেক্টর কেএসএম মিনহাজ ‘ক্লোজ আপ ওয়ান ২০১২’-এর আনুষ্ঠনিক ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো ছিলেন টেলিভিশন পার্টনার এনটিভির চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী। আনুষ্ঠনিক ঘোষণায় কেএসএম মিনহাজ বলেন, বাংলাদেশে সঙ্গীত প্রতিভা অন্বেষণে ‘ক্লোজ আপ ওয়ান- তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ সবচেয়ে বড় ও স্বীকৃত প্লাটফর্ম। বিগত তিনটি আয়োজনে এই প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে এসেছে বেশ কিছু তরুণ সঙ্গীতপ্রতিভা। তিনবছর বিরতির পর আবারও সমগ্র বাংলাদেশকে গানে গানে মাতোয়ারা করে তুলল চতুর্থবারের মতো শুরু হচ্ছে এই প্রতিযোগিতা। তিনি সাংবাদিকদের জানান, এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য আগের তিনটি আয়োজনের মতোই আগ্রহীদের প্রথমে মোবাইলে এসএমএস ও অনলাইনের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য দেশের ১০টি শহরÑ ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, খুলনা ও বরিশালে অডিশন রাউন্ড। তিনি আরো জানান, প্রবাসী বাংলাদেশীরাও ‘ক্লোজআপ ওয়ান’-এ অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রবাসীদের অডিশন অনুষ্ঠিত হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, আরব আমিরাত ও অস্ট্রেলিয়ায়। চতুর্থ ক্লোজআপ ওয়ান বিজয়ী এবার পুরস্কার পাবেন নগদ ১০ লাখ টাকা ও একটি ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি। প্রথম রানার আপ পাবেন ৫ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় রানার আপ পাবেন ৩ লাখ টাকা। এছাড়াও সেরা দশে উঠে আসা প্রত্যেক প্রতিযোগী পাবেন একলাখ টাকা করে পুরস্কার। শিগগিরই দৈনিক পত্রিকা আর এনটিভিতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘ক্লোজ আপ ওয়ান ২০১২‘তে অংশ নেওয়ার বিস্তারিত নিয়ম ও সময় সুচি জানানো হবে বলে কেএসএম মিনহাজ উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনে এনটিভির চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী তার বক্তব্যে ‘ক্লোজ আপ ওয়ান’ সফল করে তোলার জন্য সবার সহযোগিতা চান। তিনি আশা করেন, আগের তিনটি আয়োজনের ধারাবাহিকতায় সারা দেশ জুড়ে এবারও এ প্রতিযোগিতাটি আলোড়ন তুলবে। অনেকটা আমেরিকান আইডলের আদলে দেশের সঙ্গীত প্রতিভা অন্বেষণের জন্য ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় ‘ক্লোজ আপ ওয়ান- তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’।  প্রথম আয়োজনেই এই রিয়েলিটি শো সারা দেশের মানুষের মন জয় করে নেয়। এটি এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে, এনটিভিতে ক্লোজআপ ওয়ান প্রচারের সময় এদেশের সবধরনের মানুষ টিভি সেটের সামনে বসে পড়তো। এ প্রতিযোগিতার প্রথম আসরে সেরা হন নোলক বাবু। প্রথম ও দ্বিতীয় রানার আপ হন যথাক্রমে রাজীব ও বিউটি।
পরের বছর অর্থাৎ ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত হয় এ প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় আসর। ‘গাও বাংলাদেশ গাও’ সেøাগান নিয়ে এ বছরের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন সালমা। মুহিন প্রথম রানার আপ ও নিশিতা হন দ্বিতীয় রানার আপ । ২০০৬ সালের দ্বিতীয়বারেরআয়োজন নিয়ে নানারকম অনিয়মের অভিযোগ করেন বিচারকরা। প্রথমবারের মতো সাজানো গোছানো ছিল না দ্বিতীয়বারের ক্লোজ আপ ওয়ান। বিচারকদের সাথে আয়োজকদের মতবিরোধের মতো ঘটনাও ঘটে এবছর। ‘যে দেশে ছড়িয়ে রয়েছে এত সুর, সে দেশের মানুষই তো গাইবে-  গাও বাংলাদেশ গাও’ শীর্ষক লম্বা শ্লোগান নিয়ে এ একবছর বিরতির পর ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় এই রিয়েলিটি শোর তৃতীয় ও সবর্শেষ আসর। এ আসরে চ্যাম্পিয়য় হন লিজা। প্রথম ও দ্বিতীয় রানার আপ হন যথাক্রমে অপু ও সাজু। সে সময় আরো কয়েকটি একই ধরনের সংগীত প্রতিভা খোঁজার অনুষ্ঠান চলতে থাকায় কিছুটা ভাঁটা পড়ে ক্লোজ আপ ওয়ানের সেই জনপ্রিয়তায়। তিন বছর বিরতির পর এবার চতুর্থবারের মতো ‘ক্লোজ আপ ওয়ান’-এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলো। 

চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে হলে তারিনকে মানতে হবে শর্ত !
বিনোদন প্রতিবেদক
একজন চলচ্চিত্র নায়িকার যেসব বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন তার সবই আছে তারিনের। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছেও তার অনেক দিনের। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষ তারিনের সামনে এলো বড়পর্দায় কাজ করার সূযোগ। ছবির নাম ‘পিরিত রতন পিরিত যতন’। ছবির পরিচালক মারুফ আহমেদ। চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে তারিন ভীষণ আনন্দিত। পরিচালক মারুফ আহমেদ এসময় তাকে জানান, ‘পিরিত রতন পিরিত যতন’ ছবিতে তারিনকে অভিনয় করতে হলে একটা শত মানতে হবে। শর্ত হলো, তারিন যে বিবাহিত এবং এক সন্তানের মা; এটি সম্পূর্ণ গোপন রাখতে হবে। তারিনের সামনে তৈরি হয় দ্বিধা। একদিকে খ্যাতির মোহে মিথ্যার আশ্রয়, অন্যদিকে সংসার আর মার্তৃত্বের গর্ব। এরকমই এক ব্যতিক্রমী গল্প নিয়ে নির্মিত নাটক ‘কোল’। রুম্মান রশীদ খারে রচনা ও কৌশিক শংকর দাশের পরিচালনায় এ নাটকটির প্রযোজক তারিন নিজে। তার এ নিউ ট্রি এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে আগামী ঈদের জন্য নির্মিত হয়েছে এ নাটকটি। নাটকে তারিনের স্বামীর চরিত্রে সাঈদ বাবু, পরিচালক মারুফ আহমেদের চরিত্রে অপূর্ব এবং তারিনের বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাজনীন হাসান চুমকি। এছাড়াও অভিনয় করেছেন জাশের ও শায়ান। জাশের বাস্তবে তারিনের বোন জাবিনের ছেলে। আমেরিকা থেকে এসে জাশের সম্প্রতি এই নাটকের শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। ‘কোল’ নাটকটি প্রসঙ্গে তারিন বাংলানিউজকে বলেন, খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে অনেকেই ভুলে যায় তাদের অতীত। হারিয়ে ফেলে বিবেক-বোধ। অনেকেই আবার খ্যাতির মোহে ত্যাগ করেন সংসার আর পরিবার।  এটাই এ নাটকের মূল কাহিনী। ভবিষ্যতে ‘পিরিত রতন পিরিত যতন’ নামের কোনো ছবিতে অভিনয়ের সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তারিন হাসতে হাসতে বলেন, ‘মাফ করবেন। এরকম নামের কোনো ছবিতে অভিনয় করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। তবে সুন্দর গল্পের আধুনিক নির্মাণশৈলী সমৃদ্ধ রুচিশীল চলচ্চিত্রে অভিনয় করার স্বপ্ন দেখি।’
মুক্তির আগেই ফারুকীর ছবি ‘টেলিভিশন’-এর অনন্য অর্জন
বিনোদন প্রতিবেদক
‘টেলিভিশন হলো আধুনিকতার প্রতীক। প্রতিটি মানুষের দুটি টেলিভিশন আছে। একটা টেলিভিশন আমরা দেখি চোখ খুলে, আরেকটা দেখি চোখ বন্ধ করে। আমাদের প্রত্যেকের মনের ভিতরে একটি করে টেলিভিশন আছে। সেই টেলিভিশনের আমরা নিজেদের মতো করে ছবি দেখি। নিজের কল্পনা নিজের ফ্যান্টাসি সবই মানুষ তার ভিতরের টেলিভিশনে দেখতে পারে। ইচ্ছে করলে এই টেলিভিশনে নিজেই ঐশ্বরিয়ার হাত ধরে নাচতে পারে, যদিও বাস্তবে তা পারে না। বাস্তব আর কল্পনার জগতের মধ্যে কোনটা মানুষকে বেশি প্রভাবিত করে। সবখানেই কি বাইরের টেলিভিশন অর্থাৎ বাস্তব জীবনের কাছে, কল্পনার টেলিভিশন হেরে যায়। নাকি কখনো কখনো কল্পনা হারিয়ে দেয় বাস্তবতাকে। এই প্রশ্নের উত্তর ছবিতে খোঁজা হয়েছে।’ আলোচিত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার নতুন ছবি ‘টেলিভিশন’ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে এই কথা গুলো বলেছিলেন। মুক্তির আগেই ‘টেলিভিশন’ ছবিটি এবার পেল অনন্য স্বীকৃতি। ‘এশিয়ান সিনেমা ফান্ড ফর পোস্ট প্রোডাকশন’ পুরস্কৃত করেছে ছবিটিকে। ইরানের কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার মোহসেন মাখমালবাফ ও তরুণ জাপানি পরিচালক আতসুশি ফুনহাসির সঙ্গে ২০১২ সালের এশিয়ান সিনেমা ফান্ড ফর পোস্ট-প্রোডাকশনের জন্য নির্বাচিত হয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ছবি ‘টেলিভিশন’। এশিয়ান সিনেমা ফান্ড ফর পোস্ট প্রোডাকশন পুরস্কারের মূল্যমান  ৫০-৭০ হাজার ডলারের মতো। পুরস্কারের অংশ হিসেবে ছবিগুলোকে কোরিয়ায় ডি আই, ডলবি সাউন্ড ও ফাইনাল প্রিন্টিংয়ের সুযোগ দেওয়া হয়। আর এ কাজটি করতে টেলিভিশন ছবির পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ৭ জুলাই রাতে কোরিয়ার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার এই অনন্য অর্জন প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটা একটা বড় স্বীকৃতি। এরকম স্বীকৃতি পেলে অবশ্যই আরাম লাগে। তবে এ পুরস্কার আমার আনন্দের মাত্রা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবির পরিচালকের নামের তালিকায় আছেন মোহসেন মাখমালবাফ। ছোটবেলা থেকেই যার ছবি, যার কাজ নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি। তার মতো কিংবদন্তি পরিচালকের নামের পাশে নিজের নাম দেখতে পারার মধ্যে অদ্ভুত লজ্জা মিশ্রিত আনন্দ রয়েছে।’ মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নতুন ছবি ‘টেলিভিশন’ চলতি বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হবে। ছবিটির অডিও অ্যালবাম এই ঈদে অডিও বাজারে আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা পিছিয়ে গেছে। অ্যালবামটি রিলিজ পাবে ঈদের কিছুদিন পরে। বাংলাদেশ ও জামার্নে যৌথ প্রযোজনার এ ছবিতে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, তিশা, কাজী শাহীর হুদা রুমী, শামীম শাহেদ, মুকিত মজুমদারসহ আরও অনেকে। ছবিটির মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে বাংলাভিশন। টেলিভিশন ছবিটির গল্প প্রসঙ্গে পরিচালক মোস্তাফা সরয়ার ফারুকী বাংলানিউজকে বলেন, ‘টেলিভিশন’ ছবিটি হলো একটি গ্রামের গল্প। গল্পটিতে তুলে ধরা হয়েছে বাবা-পুত্রের সম্পর্ক, প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্ক, ওস্তাদ-সাগরেদের সম্পর্ক। নতুন সময়ে পৌঁছে এই সম্পর্কগুলো বিবর্তিত হচ্ছে। আধুনিকতা আর প্রযুক্তি সম্পর্কগুলোকে পাল্টে দিচ্ছে। মোবাইল আসছে, ইন্টারনেট আসছে, টেলিভিশন আসছে। এসব প্রযুক্তি সম্পর্কগুলোর ধরণ পাল্টে দিচ্ছে। তৈরি করছে এক সম্পর্কের সঙ্গে অন্য সম্পর্কের কানামাছি খেলা। পিতার সঙ্গে পুত্রের কানামাছি খেলা, প্রেমিকের সাথে প্রেমিকার কানামাছি খেলা, বসের সঙ্গে কর্মচারীর কানামাছি খেলা, সেইসাথে নিজের সঙ্গে নিজের কানামাছি খেলা। নিজের বিশ্বাস আর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য কানামাছি খেলা খেলতে হয়। এই কানামাছির খেলার গল্পগুলোই তুলে ধরা হয়েছে ‘টেলিভিশন’ ছবিতে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত চতুর্থ ছবি ‘টেলিভিশন’। এর আগে তার নির্মিত তিনটি ছবি হলো- ‘ব্যাচেলর’, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ও ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নম্বর’।
আবার আসছে শাহরুখ-কাজল জুটি
ইশানা ইশরাত
বলিউডের অন্যতম সফল রোমান্টিক জুটি শাহরুখ-কাজল। করণ জোহরের নতুন ছবি ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’-এ তাদের আবার একসঙ্গে পারফর্ম করতে দেখা যাবে। তবে পুরো ছবিতে নয়, একটি গানেই কেবল শাহরুখ খান আর কাজল পারফর্ম করবেন।
বলিউডের একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজল এখন সংসার নিয়েই ব্যস্ত। অভিনয় থেকে তিনি নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছেন। দীর্ঘদিনের বন্ধু করণ জোহরের বিশেষ অনুরোধেই ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’ ছবির একটি গানে তিনি পারফর্ম করার সম্মতি দিয়েছেন। এদিকে একের পর এক ছবি নিয়ে শাহরুখ খান পার করছেন ব্যস্ত সময়। বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন লন্ডনে যশ চোপড়ার নতুন ছবির শুটিংয়ে। করণ জোহর তাকে ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’ ছবির একটি গানে পারফর্ম করার প্রস্তাব দিলে শুরুতে তিনি সময় দিতে অপারগতা জানান।
‘কুচকুচ হোতা হ্যায়’, ‘কাভি খুশি কাভি গম’ কিংবা ‘মাই নেম ইজ খান’খ্যাত করণ জোহর যখন শাহরুখকে জানান, গানটিতে কাজল পারফর্ম করার সম্মতি জানিয়েছেন। তখনই শাহরুখ খান এতে আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং কাজ করার সম্মতি জানান। প্রডাকশন সূত্রে জানা গেছে, লন্ডনের শেষ করেই শাহরুখ ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’-এর শুটিংয়ে অংশ নিবেন। করণ জোহরের অনবদ্য সৃষ্টি ‘শাহরুখ-কাজল’ জুটিকে আবার একসঙ্গে দেখা যাবে, এটি নিশ্চিত হওয়াও বলিউডে তৈরি হয়েছে আগ্রহ। অনেকেই দীর্ঘদিন পর এ জুটিকে একসঙ্গে দেখার অপেক্ষা করছেন।
সবাই আমার গুরু...সবাই আমার শুরু: প্রতুল মুখোপাধ্যায় 
সাজিদুল হক
‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটির কথা বললে বাঙালি মাত্রেই এক নামেই তাকে সবাই চেনে। কথা আর সুর নিয়ে পরীক্ষা করছেন প্রতিনিয়ত। তবে একবারের জন্যও মাটির কাছ থেকে দূরে সরে যাননি। মাটি থেকে সুর নিয়ে সেটি নিজের মতো করে সাজিয়ে গণমানুষের জন্য গান তৈরির অসাধারণ বিরল ক্ষমতা তার। এ ধরনের ঈর্ষণীয় ক্ষমতায় অভিষিক্ত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের বরিশালে। ১৯৫৪ সাল, তখন ১২ বছর বয়স পানুর (প্রতুলের ডাক নাম)। বড় ভাইয়ের উপহার দেওয়া বই থেকে মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমরা ধান কাটার গান গাই’ ছড়াটি সুর করে ফেললেন। সেই থেকে শুরু। `৬০ এর দশকে প্রতুল ধীরে ধীরে যুক্ত হন বাম আন্দোলনে। নিজে গান লিখতে শুরু করেন ১৯৬৯ সালে। পড়াশোনা শেষ করে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। পরে চাকরি নিয়েছেন ইউনাইটেড ব্যাংক অব ইন্ডিয়াতে। স্ট্যাটিসটিকস অ্যান্ড লং রেঞ্জ প্ল্যানিং বিভাগের প্রধান ব্যবস্থাপক ছিলেন। ১৯৮২ সালে এক বন্ধুর অনুরোধেই নিজেকে প্রকাশ করেন তিনি। এর আগে এমনও হয়েছে মঞ্চে বা রাস্তার পাশে কোথাও প্রতুলের লেখা ও সুর করা গান হচ্ছে। প্রতুল তার পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছেন। নিজের গান অন্য কেউ গাইছে শুনলেই, একটু দাঁড়াতেন। মনে হতো, গানের ওই জায়গাটা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু কিছু না বলেই চলে যেতেন। এভাবেই কেটেছে ১৯ বছর। পুরোটা সময় নিজের পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। এরপর থেকে আর থেমে থাকা নয়। চ্যাপলিনকে নিয়ে ‘সেই ছোট্ট দুটি পা’, কিংবা জ্যাক প্রেভরের ‘গিয়েছিলাম পাখির হাটে’, ‘লং মার্চ’ দিয়ে মন জয় করে নিয়েছেন শ্রোতাদের। কলকাতাবাসী অসাধারণ গুণী এ শিল্পী শনিবার বিকেলে বাংলানিউজের সঙ্গে থেকে কথা বলেছেন সেলফোনে। কথা বলেছেন বাংলা লোকগানের অবস্থা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর নিজের গান নিয়ে।
বাংলাদেশ থেকে ফোন করা হয়েছে শুনে শুরুতেই ২০১০ সালে তার বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে কথা বললেন। আপ্লুত কণ্ঠে বললেন, “বাংলাদেশে গিয়ে যে সমাদর আর সম্মান পেয়েছি তা বলে বোঝানো যাবে না! কল্পনার বাইরে। ওখানকার মানুষ বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের অনেকেই যে আমার গান শোনে তা না গেলে বুঝতাম না।” ‘বাংলায় গান গাই’ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “এই গানটাতো আপনাদের মাহমুদুজ্জামান বাবু তার নিজেরই করে ফেলেছিলেন। সেকারণে মনের কষ্টে বহুদিন আমি বাংলাদেশে যাইনি। সে অনেক কথা। পরে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর ডাকে না গিয়ে আর পারলাম না।”
protulবেঙ্গল ফাউন্ডেশন আপনার একটি অ্যালবাম বের করেছে...
“হ্যাঁ। ওটা আমি বাংলাদেশে যখন গিয়েছিলাম তখনই কাজ করেছি। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে ওই অ্যালবামটা কলকাতায় পাওয়া যায় না। এখানে আসেওনি। শুনেছি বাংলাদেশের অ্যালবাম নাকি এখানে আসতে কিছু সমস্যা রয়েছে। ওই অ্যালবামের গানগুলো ইন্টারনেটে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার বাড়িতে তো আর কম্পিউটার নেই যে, শুনবো।”
‘দুই জনাই বাঙালি ছিলাম’ গানটাতো এখানে জনপ্রিয় হয়েছে....
“ওটা আমি বাংলাদেশ যাওয়ার আগে করেছিলাম। বলতে পারেন বাংলাদেশ যাবো বলেই গানটি করা। আর বাংলাদেশতো আমার পিতৃভূমি। গানটা এখানে লোকে শুনছে। বাংলাদেশেও শুনছে বলে আমি শুনেছি। তবে কি, সিডিটা যদি এখানে পাওয়া যেতো খুব ভালো হতো।” 
এখন কোনো অ্যালবামের জন্য কাজ করছেন না?
একটু হেসে বললেন, “আসলে আমিতো কারো কাছে গিয়ে বলি না যে, ভাই আমার একটা অ্যালবাম করে দাও। বাংলাদেশে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আগ্রহ দেখিয়েছে, এখানেও যারা আগ্রহ দেখিয়েছে তারা অ্যালবাম করেছে। এখন কেউ যদি এসে বলে যে, আমার কিছু গান রেকর্ড করতে চায় তবে...। এখানে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় কিছু গান করেছিলাম, সেগুলো রেকর্ড হয়েছে। কেউ প্রস্তাব দিলে করবো। আসলে নিজের প্রচারের জন্য কিছু করি না। আমি আপন মনে চলি।”
আপনার গানে যন্ত্রের ব্যবহার কম থাকে কেন?
“আসলে আমি যখন গান করি, বিশেষ করে মঞ্চে, তখন যন্ত্র নিই না। আপনি যদি আগামীকাল সকালে কলকাতার তারা মিউজিক দেখেন তবে দেখবেন ওখানে আমার গান নিয়ে একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে। ওরা আমাকে বলেছিলো বাদ্যযন্ত্র কি কি লাগবে। আমি বলেছি আমার লাগবে না। আসলে কি জানেন, গানটাই আসল। কথাটাই মূল। সিডিতে কিছু বাদ্যযন্ত্র থাকে তবে আমি খেয়াল করি যেন তা কণ্ঠকে ছাপিয়ে না যায়।”
বর্তমান সময়ের গান নিয়ে কি ভাবেন...
“হয়েছে কি, এখনকার সবকিছু আমেরিকা বেইসড হয়ে গেছে। সংগীতও তাই। এখনকার ছেলে-মেয়েরা তো ওদিকেই ছুটছে। আর আমেরিকাতো সব কিছু চাপিয়ে দিতে চায়। সম্পদ লুণ্ঠনের মতো এখন সংস্কৃতিরও লুণ্ঠন চলছে। সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের আক্রমণ এখন এতো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে যে, ছেলে-মেয়েদের মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে। আমি লোকসংগীতের দিকে খুব নজর দিই। কারণ ওটাইতো আমাদের শিকড়। লোকসংগীতটাও এখন আর ঠিক রাখা যাচ্ছে না। কলকাতায় কি হয় জানেন, লোকসংগীতটাকে ওই মার্কিনি ধাঁচে ফেলে এমনভাবে গাইছে-- সে আর কি বলবো! সত্যিকারের লোক সংগীত টিকিয়ে রাখাটাই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিকৃত রূপেই ছেলে-মেয়েরা তা শুনছে আর কখনো যদি আসল গানটা শোনেও তবে বলে ওঠে- হ্যাঁ-হ্যাঁ এই গানটাতো অমুকের। আর এতে করে কি হচ্ছে জানেন, সত্যিকারের শিল্পীরা খেতে পাচ্ছে না।”
ঢাকায়ও তো একই অবস্থা...
“এই যেমন ধরুন ‘সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী’ গানটা কি অসাধারণ একটি বাউল গান। কিন্তু এখন এত কদর্যভাবে গাওয়া হচ্ছে সে আর কি বলবো! এত মসলা এসে গেছে গানটার ভেতর! আপনাদের রুনা লায়লাও এ গানটাতে মসলা মিশিয়েছেন।”
protulবর্তমান প্রজন্মের অনেকেই আপনার গান শুনছে...
“এতে আমি বিস্মিত হই। নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা আমার গান শুনছে। সেটা এখানে যেমন আপনাদের ওখানেও তেমন। আসলে আমার তো ফলোয়ার নেই। যেমন ধরুন আমাদের কবীর সুমন। তার অনেক ফলোয়ার। কিন্তু আমার কোনো শিষ্য নেই। অনেকে আমার কাছে গান শিখতে চেয়েছেন। আমি কিভাবে শেখাবো? আমিতো কোনো গুরু-মহাগুরু কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে গান শিখিনি। আমার নিজের সন্তানও নেই যে আমার পরে গান গাইবে, সংঘ তৈরি করবে। আমি একা পথিক। আমি এজন্যই বলি ‘সবাই আমার গুরু...সবাই আমার শুরু’।”
তার মানে শ্রোতার কাছেই বেঁচে থাকবে আপনার গান...
“সেটা একদিক থেকে ঠিকই। আপনারা যারা আমার গান শুনছেন তাদের কাছেই বেঁচে থাকবে। তবে কি জানেন, কেউ যদি আমার কাছে এসে বলে যে ‘অমুক গানটা’ করতে চাই। তবে আমি অবশ্যই গানটা তুলে দেবো। তাকে সুরটা ধরিয়ে দেবো।”
বাংলাদেশে আবার কবে আসবেন?
“বয়স হচ্ছে, এখনতো আর যৌবনের মতো শক্তি নেই। আমার স্ত্রীও এটা নিয়ে চিন্তিত। বাংলাদেশে গেলে যে সমাদর পাই তা সইতে তো হবে। সেবার গিয়েতো ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কত মানুষের দেখা। বাব্বা, এত সম্মান আমি ভুলতে পারবো না।”
প্যাটিনসন-ক্রিস্টেন জুটির পর্দার প্রেম এখন বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি
ইশতিয়াক হোসেন লাবিব
রবার্ট প্যাটিনসন ও ক্রিস্টেন স্টুয়াট হলিউডের এ সময়ের সফল তারকা জুটি। তাদের অভিনীত ‘টোয়ালাইট’ সিরিজের সবগুলোই পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। এই সিরিজে ভ্যাম্পায়ার রবার্ট প্যাটিনসন আর মানবী ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টটের মধ্যকার প্রেম দর্শকমন জয় করেছে অনেক আগেই। ‘টোয়ালাইট’ সিরিজের প্রতিটি ছবিতেই রবার্ট প্যাটিনসন ও ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট একজন আরেকজনকে অনেক ভালবাসেন। ছবির গল্প এখন হয়ে উঠেছে তাদের বাস্তব জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। ছবির মতই বাস্তব জীবনেও রবার্ট প্যাটিনসন ও ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট দুজন দুজনের জন্য তৈরি হচ্ছেন। তাদের মধ্যকার গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক এখন হলিউডে পুরোপুরিই ওপেন সিক্রেট।
বিভিন্ন সময় মিডিয়ার কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রবার্ট প্যাটিনসন আর ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট দুজনই তাদের সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। সম্প্রতি ২৬ বছর বয়সী রবার্ট প্যাটিনসন ব্রাজিল সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টেন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ক্রিস্টেন আমার প্রতি মুহূর্তেই আমাকে বুঝতে পারে। আমার জন্য কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ, এসব বিষয় নিয়ে সে খুব ভাবে। অভিনেত্রী হিসেবে ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট ভীষণ উচ্চাকাঙ্খী এক অভিনেত্রী। অভিনয় দক্ষতার মধ্য দিয়েই সে ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌছাতে চায়। সাক্ষাৎকারে প্যাটিনসন এবারের কান ফেস্টিভ্যালে ক্রিস্টেনের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটানো প্রসঙ্গেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘কান ফেস্টিভ্যালে ক্রিস্টেন স্টুয়ার্টে সঙ্গে সারাক্ষণ একসঙ্গে থাকার অনুভূতি ছিল অন্যরকম। সে যখন আমার সাথে গালাতে ছিল, তখন আমার ভীষণ নার্ভাস লাগছিল। ক্রিস্টেন আমার সামনে বসে ছিল, আর আমি তার মুখ ও ঘাড়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমি শুধু বুঝতে চেষ্টা করছিলাম, ছবিতে আমার অভিনয় তার পছন্দ হচ্ছে কিনা। কান ফেস্টিভ্যালে আমার ভালো লাগা সেরা মুহূর্ত ছিল, যখন সে জানালো আমার অভিনয় তার পছন্দ হয়েছে।
একে অন্যের প্রেমে গভীরভাবে ডুবে থাকা হলিউডের এই লাভ বার্ডের শেষ পরিনতি কী হয়, তাই এখন দেখার বিষয়।
বিবিসি বাংলায় শবনম
বিনোদন প্রতিবেদক
ঢালিউডের সত্তর দশকের জনপ্রিয় নায়িকা শবনম। বাংলাদেশের ছবির পাশাপাশি একসময় নিয়মিত অভিনয় করেছেন পাকিস্তানের চলচ্চিত্রে। সম্প্রতি পাকিস্তান টেলিভিশন (পিটিভি) থেকে তাকে দেওয়া হয়েছে আজীবন সম্মানন। দেশে ফিরে শবনম বিবিসি বাংলার মুখোমুখি হলেন।  গতমাসে পাকিস্তান টেলিভিশন থেকে অভিনেত্রী শবনম ও তার স্বামী বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালক রবিন ঘোষকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়। এ কারণে বিশদিন পাকিস্তান করে গত সপ্তাহে দেশে ফিরেছেন শবনম। সম্প্রতি কৃতি অভিনেত্রী শবনমের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে বিবিসি বাংলা। অভি মঈনুদ্দীনের সার্বিক সহযোগিতায় এবং আহরার হোসেনের প্রযোজনায় বিবিসি বাংলার ‘এই সপ্তাহের সাক্ষাৎকার’ অনুষ্ঠানে শবনম চলচ্চিত্রে তার অভিষেক, পাকিস্তানের চলচ্চিত্রে তার কাজ, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রসহ আরও নানান বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রযোজক আহরার হোসেন শবনমের গুলশানস্থ বারিধারার বাস ভবনে অনুষ্ঠানটির রেকর্ডিং সম্পন্ন করেন। রেডিওতে বিবিসি বাংলায় ৪ জুলাই বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টার অধিবেশন ‘প্রভাতী’ তে শবনমের এই সাক্ষাৎকার শ্রোতারা শুনতে পাবেন। অনুষ্ঠানটি পুণ:প্রচার হবে একইদিন বিবিসি বাংলার রাত সাড়ে দশটার অধিবেশন ‘পরিক্রমা’-তে। শবনমের সাক্ষাৎকার প্রচার প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলার অনুষ্ঠান প্রযোজক আহরার হোসেন বলেন, এই সপ্তাহের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানটি অনেক বছর যাবত নিয়মিতভাবে বিবিসি বাংলায় প্রচার হয়ে আসছে। এই অনুষ্ঠানে সেসব ব্যাক্তির সাক্ষাৎকার ই প্রচার করা হয় যারা  নিজ নিজ পেশা বা কর্মেেত্র  সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করেছেন। সেই দৃষ্টিকোন থেকেই মূলত খ্যাতিমান অভিনেত্রী শবনমকে নিয়ে বিশেষ এই পর্বটির আয়োজন করা হয়েছে। আশাকরি শ্রোতাদের ভালোলাগবে। বিবিসিতে সাক্ষাৎকার দেওয়া প্রসঙ্গে শবনম বলেন, বিবিসি অনেক জনপ্রিয় একটি রেডিও চ্যানেল। যতদূর মনেপড়ে এর আগে এই ধরনের অনুষ্ঠানে বিবিসির মুখোমুখি আমি কখনোই হইনি। অনেক ভালোলেগেছে বিবিসিতে কথা বলে। আশাকরি শ্রোতাদেরও ভালো লাগবে।
এক আইটেম গানে রজনীকান্তের পারিশ্রমিক ১৫ কোটি রুপি
ইশতিয়াক হোসেন লাবিবকথায় আছে, পুরান চাল নাকি ভাতে বাড়ে। ৬১ বছর বয়সী অভিনেতা রজনীকান্ত তা আরেকবার প্রমাণ করলেন। ‘তালাশ’ ছবির একটি মাত্র আইটেম গানে পারফর্ম করার জন্য তিনি ১৫ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিচ্ছেন। দেিণর এভারগ্রিন হিরো রজনীকান্তকে ইদানিং বলিউডের ছবিতে অভিনয় করতে কম দেখা গেলেও তামিল অ্যাকশন ছবিতে তিনি এখনও নিয়মিত অভিনয় করছেন। বলিউড সুপারস্টার আমির খান প্রযোজিত ‘তালাশ’ ছবির একটি ব্যয় বহুল আইটেম গানে পারফর্ম করবেন বলে জানা গেছে। আইটেম গানটিতে পারফর্মের জন্য তিনি ১৫ কোটি রুপি পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম ব্যয়বহুল এই আইটেম গানের সম্ভাব্য বাজেট ধরা হয়েছে ৫০ কোটি রুপি। আইটেম গানটির শুটিং বিশ্বের ২০০ টি দেশের ৫০ টি ভিন্ন লোকেশনে করা হবে বলে জানা গেছে। রিমা কাগতি পরিচালিত ‘তালাশ’ ছবির ব্যয়বহুল এই আইটেম গানে রজনীকান্ত ছাড়াও ভারতের কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও ক্রিকেটার পারফর্ম করবেন। মনস্তাত্বিক গল্প নিয়ে তৈরি এ ছবিতে অভিনয় করছেন আমির খান, কারিনা কাপুর, রানি মুখার্জী, শেহনাজ পাটেল প্রমুখ। ‘তালাশ’ ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে চলতি বছরের নভেম্বরে।