Year-19 # Issue-14 # 20 May 2012

আইনি সহায়তার অভাবে কর্মী হারাচ্ছে বিএনপি
মান্নান মারুফ
আইনি সহায়তার অভাব, আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও কেন্দ্রের উদাসীনতায় দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন বিএনপির অনেক পরীক্ষিত নেতা-কর্মী। এদের অনেকেই রাজনীতি থেকে সরে যার যার ব্যবসা-বাণিজ্য, পেশা বা পারিবারিক কাজে মনোযোগী হয়ে উঠছেন। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিএনপি করার কারণে গত সাড়ে তিন বছরে সারাদেশে লক্ষাধিক পরীক্ষিত নেতা-কর্মী অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে  দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তারওপর রয়েছে মামলার জুজু।’ তিনি জানান, এদের কেউ কেউ দায়সারাভাবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিলেও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া নেতা-কর্মীর সংখ্য নেহায়েত কম নয়। জেল-জুলুম আর মামলার ভয়ই তাদের দলীয় কর্মসূচি থেকে সরিয়ে রাখছে। এ কারণেই বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের সভা-সমাবেশে দিন দিন কর্মী উপস্থিতি কমছে। সর্বশেষ ছয়টি হরতালে মামলার খাঁড়ায় যেন আরো বিক্ষত হয়েছে বিএনপি। গত ২২ ,২৩, ২৪, ২৯ ও ৩০ এপ্রিল এবং ১৭ মে বিএনপিসহ ১৮ দলের ডাকা হরতালে সারা দেশে বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ছয় হরতালে পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার হয়েছেন সহস্রাধিক নেতা-কর্মী। এর মধ্যে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় ৪৫ নেতাও গ্রেপ্তার হয়েছেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় ও কাশিমপুর কারাগারের হাই সিকিউরিটি সেলে রাখা হয়েছে তাদের। এ সব কেন্দ্রীয় নেতার জামিনের জন্য উচ্চ ও নিম্ন আদালতে শত শত আইনজীবী পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু গত ৬টি হরতালে ঢাকার থানা ও ওয়ার্ডসহ সারাদেশের জেলা-থানায় আটক হওয়া নেতা-কর্মীদের পাশে কেন্দ্র বা কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা দাঁড়ায়নি বলে ঢালাও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তবে পদ খোয়ানো ও দল থেকে বহিষ্কারের ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছেন না এসব ভুক্তভোগী। কয়েকজন নিযাতিত কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে. তারা দলীয়ভাবে কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তবে এ ব্যাপারে মিডিয়ার কাছে আনুষ্ঠানিক কোন কথা বলতেও নারাজ তারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের রোষাণলে পড়ে আরো বড় কোন ক্ষতির আশঙ্কাই তাদের মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছে। এ অসহায় অবস্থা থেকে তাদের উদ্ধারের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেওয়া উদ্যোগও কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। ২০১১ সালের প্রথম দিকে নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামকে নির্দেশ দেন তিনি। একইভাবে আর্থিকভাবে অসচ্ছল নেতা-কর্মীদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করার জন্যও কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দেন বিএনপি প্রধান। দলীয় প্রধানের নির্দেশে নেতা-কর্মীদের আইনি সহযোগিতার জন্য একটি লিগ্যাল এইড কমিটিও করে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জ ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ কমিটির আহবায়ক ছিলেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। সদস্য সচিব ছিলেন ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ছানাউল্লাহ মিয়া। দলীয় সূত্র জানায়, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মধ্যে নানা গুপিং থাকায় আহবায়ক কমিটির পক্ষে কমিটিটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে ওই কমিটি আলোচনা থেকেই হারিয়ে যায়। তবে এ ব্যাপারে লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ছানাউল্লাহ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিপদগ্রস্ত নেতাদের পাশে আইনজীবীরা নেই- এ কথা ঠিক না। তবে নানা কারণে আমরা লিগ্যাল এইড কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারিনি।’
তবে জাতীয়তাবাদী ফোরামের আইনজীবীরা যাই বলুক না কেন মিডিয়ার নজর কাড়ার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিহত ও আহত কর্মীদের বাড়িতে যান নেতারা। পরে আর ওইসব পরিবারের কোন খোঁজই রাখেন না তারা। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারির গণমিছিলে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও রাজশাহীতে চার জন কর্মী নিহত হওয়ার কয়েকদিন পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিহতদের কোন কোন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে শান্ত্বনা দেন। এরপর গত সাড়ে তিন মাসে তাদের আর কোন খোঁজই রাখেননি কোন কেন্দ্রীয় নেতা। ২০১০ সালের ৭ অক্টোবর নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ছানাউল্লাহ নূর বাবু প্রতিপক্ষের হামলায় নির্মমভাবে নিহত হন। তার পরিবারকে শান্ত্বনা দিতে বড়াইগ্রাম যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া। বাবু নিহত হওয়ার তিনদিন পর বড়াইগ্রাম যাওয়ার পথে সিরাজগঞ্জে খালেদা জিয়ার জনসভা আয়োজন করা হয়। ওই জনসভায় আসার পথে সায়দাবাদ ট্রেনে কাটা পড়ে ৫ বিএনপি কর্মী নিহত হন। ওই দিন রাতেই খালেদা জিয়া নিহত উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুর পরিবারকে শান্ত্বনা দিতে বড়াইগ্রাম যান। এর পর আর সিরাজগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহতদের ও নিহত বাবুর পরিবারের কোন খোঁজই কেউ রাখেননি। খোঁজ নেননি সিরাজগঞ্জে ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আসামি হওয়া শত শত নেতা-কর্মীর। এদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কেউ কেউ। এমনকি মামলা-মোকদ্দমায় অনেকে পথেও বসেছেন। এসব ঘটনায় অনেকটা আক্ষেপ করেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানিকগঞ্জের এক যুবদল নেতা বাংলানিউজকে জানান, রাজনীতি করার কারণে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। জেল-জুলুম আর পুলিশি হয়রানির কারণে তার সুখের সংসার শেষ হয়ে গেছে। একইভাবে মামলার পর মামলায় গ্রেপ্তার ও জেল খাটতে খাটতে ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়েছেন ছাত্রদল নেতা ইয়াসিন সরকার। গত ৭ মে গুম হন পাবনার সুজানগরের বিএনপি নেতা কালাম মুন্সী। তার আগে সিলেটের ছাত্রদল নেতা দিনার। আরো আগে নিখোঁজ হন ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম। যশোরের বিএনপি নেতা নাজমুল ইসলামের লাশ উদ্ধার হয় গাজীপুর থেকে। তাদের পরিবারের খোঁজও এখন আর কেউই রাখছেন না। তাই নির্যাতিতদের দল থেকে হারিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এ ব্যাপারে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা বাংলানিউজকে বলেন, ‘দলীয়ভাবে নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ রয়েছে কেন্দ্র থেকে। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা নির্যাতিতদের সহযোগিতার চেষ্টা করছে। তবে বিএনপি একটি বড় দল। এ দলের অনেক নেতা-কর্মী। তাই যাদের আইনি সহযোগিতা দরকার তাদের আমাদের কাছে আসতে হবে। আমরা তো আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে আইনি সহযোগিতা দিতে পারবো না।’
কোন পথে হাঁটবো আমরা?
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজাবাংলাদেশে মানুষের নাকি দু’ধরনের রক্ত- ‘এ’ আর ‘বি’। এর বাইরে আর কোনো ব্লাড গ্রুপ থাকলে তারা সংখ্যালঘু। সমাজে রাজনৈতিক বিভক্তি এমন চরম আকার নিয়েছে যে, এখন আর কাউকে নিরপেক্ষ থাকা বা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যেন সবার জন্য এমন চরমপন্থী অবস্থান বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে আমাদের সমাজে। এই সংস্কৃতি এখন নেই কোথায়? সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, কৃষিবিদ, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী সবখানে, এমনকি টেলিভিশনের টক-শোতে জাতিকে জ্ঞান দিতে এসেও জাতির জ্ঞানী-গুণীরা জানিয়ে দিচ্ছেন কে কোন দল করেন বা সমর্থন করেন। কিন্তু শিক্ষক, সাংবাদিক বা আইনজীবীদের জন্য দর্শনটি কি হওয়া উচিৎ? সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা যে কেউ করতেই পারেন। তার অর্থ কি এই যে তিনি বিএনপি সমর্থক? আবার বিরোধীদলের সমালোচনা করলে কি তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন? সরকারের বা বিরোধীদলের সমালোচনার অর্থ কি একজন সমালোচক সামগ্রিকভাবে সেই সংশ্লিষ্ট  দলের সমালোচক? আত্মমর্যাদা আছে, চিন্তার জগতে মনুষ্যত্ববোধ আছে, সংস্কৃতি আছে এমন মানুষের জন্য এ এক কঠিন সময়। তারা কি করবেন? ‘এ’ আর ‘বি’ এর মাঝে অবস্থান নিয়ে মধ্যপন্থা বেছে নেবে, নাকি চরম সত্যটা বলে দু’পক্ষের রোষানলে পড়বে? আমাদের দেশে পালাক্রমে দুটি দল ক্ষমতায় আসছে। নির্বাচনে জেতার পরপরই শাসকদলের কর্মীরা মরিয়া হয়ে ওঠে সবকিছু দখলে নেওয়ার জন্য। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনও মদদ দেয় এসব কাজে। আর যে নেতা-নেত্রীরা থাকেন ওপরের সারিতে, তারা হয়ে ওঠেন দূরের কোনো মানুষ। কিংবা ক্ষমতার স্পটলাইটে তাদের চোখ এতোটাই ধাঁধিয়ে যায় যে তারা নিজেদের রঙিন জীবন ছাড়া আর কিছু দেখতে পান না। আর যারা ক্ষমতার বাইরে থাকেন, তাদের কাজ হচ্ছে,  কত তাড়াতাড়ি সরকারকে হেয় করা যায় আর টেনে হিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামানো যায়। এ জন্য জ্বালাও, পোড়াও করে মানুষের জীবনকে অস্থির করে তোলেন তারা। এ অবস্থা চলছে কয়েক দশক ধরে। মানুষ এখন ভাবছে, এই দুই চরমপন্থী অবস্থান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় কি করে? মানুষের প্রত্যাশা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা নতুন পরিপ্রেক্ষিত তৈরি হোক। কারণ মানুষ দেখছে এরা সবাই সামাজিক, প্রশাসনিক, মানবিক মূল্যবোধের ওপর স্থান দিচ্ছে দলীয় স্বার্থকে। তারা পালাক্রমে ক্ষমতায় আসেন, আর মানুষকে বুঝতে ভুল করেন। আমরা ভাবি, মানুষতো ভুল থেকেই শিক্ষা নেয়। কিন্তু তা আর হয় না। আবার ভুল। আবার অরাজকতা। কিন্তু এ কথা তো মানতেই হবে যে, দেশে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি বা প্ল্যাটফরম এখনো প্রস্তুত নয়। তাই গণমাধ্যম বা সুশীল সমাজের দায়িত্ব কি হবে? সজাগ থাকা, যাতে দেশ নৈরাজ্যের দিকে চলে না যায়। এক কঠিন সময় আজ আমাদের জন্য। যে সংঘাতময় রাজনীতি আমরা দেখছি, তা দেশকে শুন্যতার দিকে নিয়ে যায় কিনা এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এক দিকে শাসকের মঞ্চে যারা আছেন, তাদের সুশাসনের সমস্যা। অন্যদিকে যারা এর বিরোধিতা করছেন, তাদের জোটে আছে এমন শক্তি, যারা সবসময় এদেশের প্রগতির পথের অন্তরায় এবং সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার। যারা দেশ নিয়ে ভাবেন, নতুন করে ভাব‍ার সময় এসেছে তাদের। কোনো একদিকে একতরফা কথা বললে, রাজনীতির পসরা ঘরে তুলবে প্রতিক্রিয়াশীর চক্র। সমাজে যদি এই ধারণ প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তাহলে প্রশাসনকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করার প্রবণতা দূর হবে, যে স্থানে যে তৎপরতা দরকার প্রশাসন তা করবে, তবেই মানুষ কিছুটা হলেও সুশাসনের সুঘ্রাণ পাবে। হবে কি তা? আশা নিয়েই তো বাঁচে মানুষ।

এক বিদ্রোহীর গল্প
সংসারের নানা দু:খ কষ্টের মধ্যে জন্ম নেয়া সন্তানটির নামা রাখা হয় দুখু মিয়া। ছোট্ট সেই দুখু মিয়া একদিন অনেক বড় হয়েছিলেন। দেশজুড়ে তাঁর খ্যাতি। সে খ্যাতির কারণে আজও আমরা তাকে চিনি। ছোট্ট সেই দুখু মিয়াই হচ্ছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার বাবার নাম ফকির আহমদ, মায়ের নাম জাহেদা খাতুন। ফকির আহমদের ছিল তিন ছেলে আর এক মেয়ে। প্রথম সন্তানের জন্মের পর তার পরপর চারটি সন্তানের মৃত্যু হয়। এরপর নজরুলের জন্ম। মহান এই কবি ১৮৯৯ সালের ২৫ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়া গ্রামের জন্মগ্রহণ করে। নজরুল কিন্তু শুধু কবিই ছিলেন না। একই সাথে তিনি গীতিকার, সুরকার, সাংবাদিক, রাজনীতিবীদ, সৈনিক, দার্শনিকও ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে সবসময়। অস্বচ্ছল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করা নজরুলের প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করলেও সেসময় তিনি বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতেন। একটু বড় হয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতায় যোগ দেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে থাকা অবসস্থায় তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। এসময় তিনি প্রকাশ করেন তাঁর ঐতিহাসিক বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মত কবিতা। একারণে তাকে জেলেও যেতে হয়েছে। ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। তোমাদের জন্য অনেক মজার ছড়া লিখেছেন নজরুল। তার লেখা পিলে পটকা, খাঁদু-দাদু, মট্কু মাইতি, লিচুচোর আর খুকি ও কাঠবিড়ালীর মতো শিশুতোষ মজার ছড়া অন্য কোন কবি আজও লিখেতে পারেননি। বাংলা কাব্য তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। এদেশেরই তিনি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। 
দেয়াল এবং পাঠকের প্রত্যাশা

রনিতা বসু
হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে একজন জনপ্রিয় লেখক। তিনি অত্যন্ত দরদ দিয়ে প্রতিটি চরিত্র তুলে ধরেন তাঁর লেখার মাধ্যমে। অতি সম্প্রতি তাঁর আলোচিত উপন্যাস ‘দেয়াল’ এর দুটি পর্ব একটি দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকীতে ছাপা হলে সচেতন মহলে শোরগোল ওঠে । কয়েকটি স্থানে ইতিহাস বিকৃতির প্রমাণ মেলে । নানাজন নানাভাবে হুমায়ূন আহমেদের ঘণ্টি বাজাতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন । কেউ কেউ আবার তাঁর নানা পশ্চিম পাকিস্তানপন্থী ছিলেন আর হুমায়ূন আহমেদ তাঁকেই নিজের আদর্শ মানুষ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন বলে তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারীর কাতারে দাঁড় করাতে বেশ পরিশ্রম করেন । অতঃপর “ভুলে ভরা এই বইগুলো আগেই নিষিদ্ধ হওয়া উচিৎ” শিরোনামে লেখা থেকে অনুমেয় ইতিহাস বিকৃতি তাঁর ইচ্ছাকৃত নয়। যে দুটি বই থেকে তিনি উপন্যাসের চরিত্র নিয়েছেন ওখানে ভুল ইতিহাস ছিল । আর আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস হুমায়ূন আহমেদ কখনো তা করবেন না, বিশেষ করে যার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ।একজন লেখক কখনো আপামর পাঠকের জনপ্রিয়তা পান না । ভক্ত আর অভক্ত উভয়ের কাঠগড়ায় লেখকদের দাঁড়াতে হয় । ভক্তকুল নন্দিত করে আর অভক্তকুল করে নিন্দিত। হুমায়ূন আহমেদও এর ব্যতিক্রম নন । নন্দিত নরকে, শ্রাবণ মেঘের দিন, আগুনের পরশমণি ইত্যাদি বহুল জনপ্রিয় উপন্যাসের মধ্য দিয়ে ভক্ত পাঠকরা যে হুমায়ূন আহমেদকে চেনেন তারা কখনো ভিন্ন হুমায়ূন আহমেদকে দেখতে চান না । এক হুমায়ূন শুভাকাঙ্ক্ষীর লেখায় নন্দিত নরকের জনপ্রিয় চরিত্র মাস্টার চাচার সাথে দেয়াল উপন্যাসের কর্নেল ফারুকের চরিত্রের মিল খুঁজতে যখন ব্যস্ত ঠিক তখনি আমার প্রশ্ন নন্দিত নরক উপন্যাসের সাথে দেয়াল উপন্যাসের কাহিনী চিত্রায়ন আর বিষয়গত অন্তর্ধারণে কোনো পার্থক্য চোখে পড়ে কি ? ‘দেয়াল’ শুধু একটা উপন্যাসই নয়, পঁচাত্তরের নৃশংস হত্যার বিবরণ। যার প্রতি কাহিনী সত্যনির্ভর, ইতিহাসপ্রসিদ্ধ । স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং এর পূর্ববর্তী-পরবর্তী ঘটনা প্রবাহের ইতিহাস প্রতিটি বাঙালির অন্তরে গাঁথা । তা নুতন প্রজন্মই হউক আর পুরাতন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এ ইতিহাস লেখা থাকবে। সেই ইতিহাসের বিবরণ যদি হুমায়ূন আহমেদের মত কোনো জনপ্রিয় লেখক উপন্যাস আকারে লেখার ইচ্ছা পোষণ করেন সেখানে একটু বেশি সতর্ক থাকা আবশ্যক নয় কি ? হুমায়ূন আহমেদ সহজ সরলভাবে যে কোনো কাহিনীকে অসাধারণ শৈল্পিক আকারে উপস্থাপনের এক মোহনীয় ক্ষমতা রাখেন । সরকারের চাপেই হোক আর নিজের বিবেকের তাড়নায়ই হোক শেষ চমক দেখার অপেক্ষায় বাংলার পাঠককুল । হুমায়ূন আহমেদ দীর্ঘজীবী হোন ।
হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’ এবং অতঃপর
শাখাওয়া নয়নহুমায়ূন আহমেদের বহুল আলোচিত উপন্যাস ‘দেয়াল’ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পটভূমিকায় রচিত। উপন্যাসটির দুটি পর্ব ছাপা হওয়ার পরপরই ইতিহাস বিকৃতির জোর আলোচনা উঠেছে। বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়াতে শোরগোল পড়ে গেছে। এই শোরগোল খেলায় কে কত বড় চ্যাম্পিয়ন কিংবা কার আগে কে যেতে পারে তার একটা প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি সেদিনের ছেলেরাও হুমায়ূন আহমেদের মত লেখককে ‘ছবক’ দিতে শুরু করেছে। এমনকি যারা হুমায়ূন আহমেদের শুভাকাঙ্খী, যারা হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য নিয়ে লেখালেখি করেন, তাদেরকে পর্যন্ত মিডিয়াতে আক্রমন করতে ছাড়ছে না। লক্ষ্যণীয় বিষয়- একটি উপন্যাসের মাত্র কয়েক পৃষ্ঠা ছাপা হয়েছে, এখনও পুরোটাই বাকি। অথচ সেই উপন্যাস নিয়ে সকল মহলের কী তড়িৎ প্রতিক্রিয়া! আমরা হুমায়ূন আহমেদের শুভাকাঙ্খীরা দাঁতে দাঁত চেপে প্রতীক্ষায় থেকেছি। দেখা যাক, হুমায়ূন আহমেদ কী বলেন? অতঃপর তিনি বলেছেনÑ ম্যাসকারেনহাস এর ‘লিগ্যাসি অব ব্লাড’ এবং হালিমদাদ খানের ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ১৯৭২-৭৫’ বই দুটি থেকে তিনি তথ্য নিয়েছেন। বলেছেন, ‘ভুলে ভরা এই বইগুলো আগেই নিষিদ্ধ হওয়া উচিৎ ছিল।’
প্রশ্ন হচ্ছে- উক্ত বই দুটি এখনও কেন নিষিদ্ধ করা হয়নি? ওখানে কি ইতিহাস বিকৃত হয়নি? নাকি অন্য কেউ করলে অসুবিধা নেই? যারা হুমায়ূন আহমেদের লেখায় এত বড় ভুল খুঁজে পেয়েছেন, তারা কি অন্যদেরটা একটওু দেখবেন না? আমার বিশ্বাস, নিশ্চয়ই তারা দেখবেন। ইতিহাস বিকৃতির ব্যাপারে সজাগ থাকবেন। বাজারে এমন অনেক বই পাওয়া যাবে, যে গুলোতে এমন অনেক ভুল তথ্যে ভরপুর। এখন কি তাহলে বিদগ্ধ মহলের সেই গুলি খুঁজে দেখা উচিৎ নয়? বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ের পুর্বে বাংলাদেশে এমন বহু পুস্তক রচিত হয়েছে। সেই সব পুস্তক যদি থেকেই যায় তাহলে ভবিষ্যতে একই রকম ঘটনা ঘটতে পারে। কেউ হয়তো বলবেন, আদালতের সাক্ষ্য বিবরণীই এক্ষেত্রে একমাত্র নির্ভরযোগ্য তথ্য হিসাবে পরিগণিত হবে। তাহলে সরকারের উচিৎ উক্ত মামলার নথিসমুহ পুস্তক আকারে প্রকাশ করা।
যারা হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য সম্পর্কে নুন্যতম খোঁজ-খবর রাখেন, নিশ্চয়ই তারা জানেন। তিনি একজন দরদী লেখক। সকল চরিত্রের প্রতি তার অসম্ভব মায়া-মমতা। তিনি কারো প্রতি নির্দয়-নিষ্ঠুর নন। তার লেখায় সকল চরিত্রই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ‘দেয়াল’ উপন্যাসে তিনি কর্নেল ফারুক চরিত্রকে প্রথমেই অনেকখানি ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছেন। বিতর্ক সৃষ্টিতে এটাও একটা বিষয়। প্রিয় পাঠক, নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে, ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের শুরুতেই মন্টু একটা মস্তবড় চন্দ্রবোড়া সাপ মারে। মাস্টার চাচা বলেন, যে সাপটা রয়ে গেছে, সেটা পুরুষ সাপ। উপন্যাসের পুরো ভাগে মাস্টার চাচা চরিত্রটি পরিবারের সকলের কাছে ভীষণ প্রিয় একজন মানুষ। উপন্যাসের শেষে সেই মন্টুই মাস্টার চাচাকে মাছকাটা বঁটি দিয়ে কুপিয়ে ফালা ফালা করে ফেলে। প্রিয় পাঠক, একবার ভেবে দেখুন- ‘দেয়াল’ উপন্যাসে কত রকমের মোচড় থাকতে পারে? তা সহজেই অনুমেয়। আলোচ্য বিষয়টিতে, যে কোনো কারণেই হোক সরকার ভালো রকম সম্পৃক্ত হয়েছে। এতখানি দরকার ছিল কিনা ভেবে দেখার আছে। তবে এতকিছুর মধ্যেও উক্ত বিষয়ে একটি ভালো লেখা চোখে পড়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন একটি দৈনিকে ‘ইতিহাসের কাছে উপন্যাসিকের দায়’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ একজন মোহন যাদুকর। তার হাতে এখনও অনেক যাদু আছে।’
বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষা আন্দোলন
অপূর্ব শর্মা‘জান দেবো, তবু জবান দেব না।’  অহমিয়ার পাশাপাশি বাংলাকে রাজ্যভাষা করার দাবিতে কাছাড়ের বাঙালিদের স্লোগান ছিল এটি। প্রত্যয়ের ব্যত্যয় ঘটেনি। জীবন দিয়েছিল তারা, জবান দেয়নি। ১৯৬১ সালের আজকের দিনে বাংলাকে রাজ্যভাষা করার দাবিতে কাছাড়ে ১১ বাঙালি প্রাণ বিসর্জন দেন।
সেই উৎসর্গের বদৌলতে বাংলা পেয়েছে রাজ্যের সরকারি ভাষার স্বীকৃতি। এ বছর ১৯ মে, সেই শোক আর সফলতা অর্জনের ৫১তম বছর পূর্ণ হলো।৩ মার্চ, ১৯৬০-এ রাজ্যসভায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী স্যার বিমলা প্রসাদ চালিয়া বিতর্কিত `অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাক্ট ১৯৬০` উত্থাপন করেন, যেখানে অহমিয়াকে আসাম রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়।বরাক নদীর উৎস ভারতে, সেই বরাক নদীই আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে সুরমা আর কুশিয়ারা নামে। বরাকের জলধারাই প্রবাহমান এই দুই নদী দিয়ে। তার গতি স্বাভাবিক নিয়মেই ভাটির দিকে। নদীর স্রোতধারাতো উজানে বয় না। কিন্তু আন্দোলনের ঢেউ যদি উজানে প্রবাহিত হয়? তাহলে কি এর তীব্রতা হবে কয়েকগুণ বেশি! সুরমার তীরসহ বাংলার ভাষা আন্দোলনের তীব্রতা কি প্রবাহমান জলধারাই নিয়ে গেল উজানে, বরাক উপত্যকায়; তাও আবার ৯ বছর পর! সেই তরঙ্গই কি রূপ দিলো আরেকটি ভাষা আন্দোলনের? তার ফলশ্রুতিতেই কি বরাকবাসীর স্বীকৃতি পেলো বাঙলার? হয়ত! তবে এই স্বীকৃতি অর্জনের পথে মহান একুশে ফেব্রুয়ারির মতো আরেকটি ভাষা আন্দোলনে বাংলা মায়ের বীর সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত হলো শিলচর। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যের অন্তর্গত বাংলাভাষী ভূ-খণ্ড বরাক উপত্যকার মধ্যে রয়েছে করিমগঞ্জ হইলাকান্দি, বদরপুর, শিলচর প্রভৃতি বাঙালি অধ্যুষিত শহর। দেশ বিভাগের আগে অবিভক্ত সিলেট জেলাসহ এই বরাকের অধিবাসী বাঙালিরাই পুরো আসাম প্রদেশের নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় অবশেষে তাদের পরিচয় হয় ভাষিক সংখ্যালঘু হিসেবে।
তবে এরও আগে লাইন প্রথার মতো বিভেদকামী ব্যবস্থা ছিল আসামে। এর বিরুদ্ধে বাঙালি মুসলমানরাই অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে আন্দোলন করেছেন। শুধু তাই নয় ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বঙালিরা বার বার উচ্ছেদ আন্দোলনের শিকার হয়েছে। অসমীয়দের অত্যাচারে কোনো জাতিই স্বস্তিতে ছিল না।
প্রাচীন ভারতের এ রাজ্যটি আগে থেকেই নানা জনজাতি উপজাতি বহুভাষা ও ধর্মের সমন্বয়ে গঠিত ছিল। একসময় সেটা উগ্র অসমীয় জাতীয়তাবাদে রূপ নেয়। তাদের আগ্রাসী মনোভাবে অন্যান্য জাতি সত্তার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। ফলে অন্যান্য সম্প্রদায়কে অনেকটা বাধ্য হয়েই নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নামতে হয়--বেছে নিতে হয় সংগ্রামের পথ। যার ফলে অবিভক্ত আসাম রাজ্য ভেঙে একে একে তৈরি হয় মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয় ও অরুণাচল। সংখ্যায় বাঙালিরা আসামের এক বিশাল জনগোষ্ঠী। নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার তাগিদেই তারা অহমিয়াকে সরকারি ভাষা হিসেবে মেনে নিয়ে বাংলা ভাষাকেও অন্যতম রাজ্যভাষা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলনের মতোই তাদের আন্দোলনও দানা বাঁধতে থাকে। অন্য ভাষাভাষী গোষ্ঠীও বাঙালিদের এ আন্দোলনকে সমর্থন করে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এ আন্দোলনকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন রূপে সংগঠিত করতে সহযোগিতা করে। তবে সব কিছুই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় যখন কংগ্রেস প্রদেশ সরকার ওই সর্বনাশা ভাষা বিলে সম্মতি প্রদান করে। এতে করে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না বাঙালিদের। বাধ্য হয়েই বাঙালিরা প্রতিরোধের ডাক দেয়। বরাক তীরের বাঙালিরা দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করে যে কোনো মূল্যে মায়ের ভাষাকে সমুন্নত রাখার।
আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। অসমের খাসিয়া, গারো, বোরো, মিশামী, ডিমসা, মণিপুরী, বিষ্ণুপ্রিয়াসহ সংখ্যালঘু প্রায় জনগোষ্ঠীই এতে স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন দেয়। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। প্রতিবাদ, ধর্মঘট, সভা সমিতির মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনের দাবানল।
১৯৬০ সালের ২১ এবং ২২ এপ্রিল আসাম প্রদেশ কংগ্রেস প্রস্তাব গ্রহণ করে ‘অহমিয়াকে রাজ্য ভাষা করতেই হবে।’ আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিমলাপ্রসাদ চালিহা এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘দাবিটা রাজ্যের অ-অসমীয়দের কাছ থেকে আসুক। কিন্তু মাস দু’য়েক যেতে না যেতেই বিধানসভায় তিনি ঘোষণা করেন, ‘অহমিয়াকে রাজ্যভাষা করার জন্য সরকার শিগগিরই একটি বিল আনছে।’ উগ্র জাতীয়তাবাদীদের তাণ্ডব তখন গৌহাটী গোরেশ্বরে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজ্যভাষা করার নামে সাম্প্রদায়িক আন্দোলন গড়ায় ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায়। ২ জুলাই, শিলচরে ডাকা হয় ‘নিখিল আসাম বাঙলা ও অন্যান্য অ-অসমীয় ভাষা সম্মেলন’। প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন লুসাই-খাসিয়া-গারো-মণিপুরী, বাঙালি সবাই। সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গৃহীত হয়, ‘ভাষা প্রশ্নে স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে।’ কেন্দ্রের কাছে প্রার্থনা জানানো হলো, ‘ভাষার প্রশ্নে হস্তক্ষেপ করুন।’ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় নরমেধযজ্ঞ শুরু হলো। দাঙ্গা-বিধ্বস্ত এলাকা ছেড়ে সংখ্যালঘুরা পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরবঙ্গ ও কাছাড়ে পালাল। চালিহার বিশেষ একটা দিক ছিল বিশেষ কোনো সঙ্কট মুহূর্ত এলে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তেন। সে সময়ও তাই হলো। পুলিশ পক্ষপাতমূলক আচরণ করলো। স্থানে স্থানে দাঙ্গাকারী আর পুলিশ এক হয়ে আক্রমণ চালালো। তাদের বর্বরতা পশুর হিংস্রতাকে ছাড়িয়ে গেল। ১৯৬০ সালের ১৫ আগস্ট। কলকাতা শোক দিবস পালন করলো। উগ্রজাতীয়তাবাদী বর্বরতার প্রতিবাদে সরকারি-বেসরকারি সমস্ত অনুষ্ঠান বর্জন করা হলো। পরবর্তী লোকসভা অধিবেশনে আলোড়ন উঠলে, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা উত্তেজনায় ফেটে পড়লো। প্রধানমন্ত্রী নেহেরু শান্তি দূত পাঠালেন গোবিন্দবল্লভ পন্থকে। পন্থজী ফরমূলা দিলেন। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা নির্দ্বিধায় তা নাকচ করে দিলো।
কাছাড়বাসীর প্রতিনিধিরা ছুটলেন দিল্লি। দিল্লি নির্বিকার। ১৯৬০ সালের ১০ অক্টোবর রাজ্যভাষা বিল পাস হয়ে গেল আসাম বিধানসভায়। নতুন আইনে সমগ্র আসামে সরকারি ভাষা হলো অহমিয়া। শুধু কাছাড়ের জন্য জেলান্তরে রইলো বাংলা ভাষা। সমগ্র কাছাড় থেকে প্রতিবাদ সোচ্চার হয়ে উঠলো, ‘এ রাজ্য ভাষা বিল আমরা মানি না, মানবো না। বাংলাকে অন্যতম সরকারি ভাষা করতে হবে।’ ১৯৬১ সালের ১৫ জানুয়ারি। শীলভদ্র যাজীকে সভাপতি করে করিমগঞ্জে সম্মেলন ডাকা হলো। শিলচর সম্মেলনের প্রস্তাব নতুন করে ঘোষণা করা হলো। সমগ্র কাছাড় জেলায় বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠলো। ভাষার প্রশ্নে সমগ্র কাছাড় এক মন এক প্রাণ হয়ে শপথ নিলো- ‘জান দেবো তবু জবান দেবো না। মাতৃভাষার মর্যাদা যে কোনো মূল্যের বিনিময়ে রক্ষা করবোই।’ কাছাড়ের যৌবন তরঙ্গ টগবগ করে উঠলো। তবু আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে শেষ চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি! আবার ডাকা হলো সম্মেলন। ৫ ফেব্রুয়ারি, করিমগঞ্জ রমণীমোহন ইনস্টিটিউটে কাছাড় জেলা জনসম্মেলন আহ্বান করা হলো। সম্মেলনের একমাত্র দাবী ‘বাংলাকে আসামের অন্যতম রাজ্য ভাষা রূপে মানতে হবে।’ আসাম সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ১৩ এপ্রিলের ভেতর শেষ জবাব চাওয়া হলো।
১৩ এপ্রিলের মেয়াদ শেষ হলেও আসাম কংগ্রেস সরকার রইল নিরুত্তর। অতএব সমরে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। ঘরে ঘরে সংগ্রাম পরিষদের স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী তৈরি হতে লাগলো। এক নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত হতে লাগলো গোটা কাছাড়। একটি ঐতিহাসিক তারিখ ঘোষিত হলো ১৯৬১ সালের ১৯ মে। আগের দিন ১৮ মে, নিঃসন্দেহে সেদিনটিও ছাত্র প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে স্মরণীয়। ছাত্র সমাজের ডাকে করিমগঞ্জ শহরে যে শোভাযাত্রা বের হয় তা নিঃসন্দেহে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। সর্বস্তরের মানুষ সেদিন ভুলে গিয়েছিল এ যে শুধু ছাত্র সমাজের শোভযাত্রা। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা যোগ দিয়েছিল মাতৃভাষার ডাকে সেই শোভাযাত্রায়। শাসকগোষ্ঠীও শক্তির পরিচয় দেখাতে পিছ পা হয়নি। সমগ্র জেলার ব্যাটালিয়ানের পর ব্যাটালিয়ান সৈন্য দিয়ে ছেয়ে ফেলা হলো। জারি করা হলো সমগ্র জেলায় ১৪৪ ধারা। রাস্তায় রাস্তায় নামানো হলো মিলিটারি আর টহলদার বাহিনী। সন্ত্রাস জাগিয়ে তোলার অপচেষ্টা শুরু হলো। করিমগঞ্জের সংগ্রাম পরিষদের দুই নেতা রথীন্দ্রনাথ সেন ও নলিনীকান্ত দাসসহ ছাত্রনেতা নিশীথরঞ্জন দাসকে ১৮ মে গ্রেফতার করে শিলচর নিয়ে যাওয়া হলো। প্রত্যেকটি জনপদ যেন বিক্ষোভে আরও ফোঁসে উঠলো। সহস্র বলিষ্ঠ কণ্ঠে আওয়াজ উঠলো- ``মাতৃভাষা-জিন্দাবাদ।`` মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য গোটা কাছাড় প্রস্তুত হয়ে রইলো। ১৯ মে ভোর চারটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত হরতালের ডাক দেয় কাছাড় জেলা সংগ্রাম পরিষদ। যেভাবে হোক ট্রেনের চাকা চলতে দেওয়া যাবে না। বিমানঘাঁটিতে বিমানের পাখা ঘুরবে না। অফিসের তালা খুলবে না। ভোর হতেই শত শত সত্যাগ্রহী বসে পড়লো রেল লাইনের উপর। বিমানঘাঁটিতে রানওয়ের উপর শুয়ে পড়লো সত্যাগ্রহীরা। সারি সারি দাঁড়াল অফিসের গেটের সামনে। শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি, পাথারকান্দি, বদরপুর সব ক’টি জায়গায় সত্যাগ্রহীরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্তব্য পালনে প্রস্তুত। কতটা স্বতঃস্ফুর্ত ছিল সেদিনের ধর্মঘট তা শোনা যাক লেখক অলক রায়ের জবানীতে। তিনি ‘ভাষা আন্দোলনে কাছাড়’ বইয়ে লিখেছেন- ‘করিমগঞ্জ রেল-স্টেশন। ভোরের ট্রেন আটকাতেই হয়। সত্যাগ্রহীরা রেল-লাইন আগলে বসলো। কয়েকজন আবার রেল-লাইনের উপর উপুড় হয়ে শুয়েও পড়লো। রেলের চাকা যদি চলে ওদের উপর দিয়ে পিষে বেরিয়ে যায় যাক ক্ষতি নেই। আচমকা পুলিশ ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো উদ্যত লাঠি হাতে। পেটাতে লাগলো। কিন্তু সত্যাগ্রহীদের রেল লাইন থেকে সরাতে পারলো না। সত্যাগ্রহীদের স্লোগানে চারদিক মুখর হয়ে উঠলো- মাতৃভাষা-জিন্দাবাদ। ‘জান দেবো, তবু জবান দেবো না।’
এবারে আরো নৃশংস হয়ে উঠলো কংগ্রেস সরকারের পুলিশ বাহিনী। সঙ্গীন উঁচু করে ধেয়ে এলো সত্যাগ্রহীদের দিকে। কিন্তু না, সত্যাগ্রহীরা লাইন আকড়ে ধরে পড়ে আছে। সঙ্গীন খোঁচায় সত্যাগ্রহীদের শরীর রক্তাক্ত হয়ে উঠলো। মুখে তাদের মাতৃভাষা-জিন্দাবাদ। ট্রেন আটকাতে অসংখ্য মেয়েরা এসেছে। সত্যাগ্রহী ভাইদের সঙ্গে ওরাও মাতৃভাষার যুদ্ধে সামিল। আর একটি পুলিশ বাহিনী এসে এবার মেয়েদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। মাথায় তাদের রাইফেলের আঘাত পড়তে লাগলো। জ্ঞান হারিয়ে দু’একজন লুটিয়ে পড়লো সেখানে বাকীদের রেললাইন থেকে যে কিছুতেই নড়ানো যাচ্ছে না। আঘাতে শরীর জর্জরিত তবু সরতে চায় না। কি ভয়ানক মনোবল ওদের। কংগ্রেস সরকারের পুলিশ এবার দুঃশাসনের ভূমিকায় নামলো। মেয়েদের সম্ভ্রম হরণের জন্য তাণ্ডব শুরু করলো। শাড়ি টেনে টেনে খুললো- তারপর বুটের আঘাত, রাইফেলের বাটের ঘা, টেনেহিঁচড়ে ফেলে দিলো রেললাইন থেকে দূরে। জ্ঞান হারিয়ে ওরা তখন বিবস্ত্রা। সঙ্গে সঙ্গে আর একদল সত্যাগ্রহী সে স্থান দখল করলো। সমস্ত দিন ওরা চেষ্টা করলো ট্রেনের চাকা চালাতে। কিন্তু প্রতিবারই সত্যাগ্রহীদের অটুট মনোবলের কাছে হেরে গিয়ে বর্বরোচিত অত্যাচার চালিয়েছে। আহত হয়েছে অসংখ্য সত্যাগ্রহী আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নির্বিশেষে। হাসপাতালের সিট ভর্তি হয়ে গেছে। আহতদের শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল করিডোরে রাখার ব্যবস্থা করা হলো। কত শত সত্যাগ্রহীকে বন্দী করার পর জেলে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। জেলেও জায়গার অভাব। অনেক সত্যাগ্রহীকে বন্দী করে কয়েক মাইল দূরে পুলিশ ছেড়ে দিয়ে আসে। সংগ্রাম পরিষদের গাড়িও প্রস্তুত- তৎক্ষণাৎ পেছন ছুটে সত্যাগ্রীদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়। সে এক অভূতপূর্ব গণ-সত্যাগ্রহ- গণআন্দোলন। এর ইতিহাস বিরল। শিলচর-হাইলাকান্দি-পাথারকান্দি-বদরপুরে একই পাশবিক অত্যাচার, একই পদ্ধতির উৎপীড়ন। শাসক কংগ্রেস সরকারের পুলিশবাহিনীর একই তাণ্ডবলীলা। বেলা দু’টা বেজে দুপুর গড়িয়ে গেছে। নেতারা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। মারাত্মক অঘটন বুঝি আর ঘটবে না। কংগ্রেস সরকারের সমস্ত বলপ্রয়োগ বিফলে গেছে। হরতাল সফল হতে চলেছে। পুলিশ মিলিটারি অত্যাচারের মাত্রা একটুখানি কমিয়ে দম নিচ্ছে। মাতৃভাষা- জিন্দাবাদ ধ্বনিতে রেল স্টেশন মুখর। হঠাৎ গুড়–ম্-গুড়–ম্-গুড়–ম্ আওয়াজে শিলচর রেল স্টেশন সচকিত হয়ে উঠলো। ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে এলো নরপিশাচদের রাইফেল থেকে।
রক্তস্নাত হলো শিলচর। নরমেধ-যজ্ঞের অনুষ্ঠানে একে একে লুটিয়ে পড়লো বীর সত্যাগ্রহীরা। রক্তের ফোয়ারায় শিলচর প্ল্যাটফর্ম লাল হয়ে উঠলো। লাল হয়ে গেল কঠিন পাষাণ রেললাইন। রক্তের আর্তনাদ থেকে সত্যাগ্রহীদের মুখ দিয়ে বেরুল ‘মাতৃভাষা-জিন্দাবাদ’। মাতৃভাষার ইজ্জত বাঁচাতে অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত শত শত সত্যাগ্রহীরা আহত হলেন। শহীদ হলেন- কমলা ভট্টাচার্য, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, কানাই লাল নিয়োগী, হিতেশ বিশ্বাস, সুকোমল পুরকায়স্থ, তরণী দেবনাথ, চন্ডীচরণ সূত্রাধর, সুনীল সরকার, কুমুদরঞ্জন দাস, সত্যেন্দ্র দেব ও বীরেন্দ্র সূত্রধর। হত্যা নির্যাতন চালিয়ে পুলিশ সেদিন আন্দোলনের গতিরোধ করতে পারেনি। শহীদের লাশ আন্দোলনকারীদের নতুন শক্তিতে উদীপ্ত করে। অভূতপূর্ব গণজাগরণের মুখে অবশেষে নতি স্বীকার করতে হয় সরকারকে। ১৯৬০ সালের অসম ভাষা আইনকে সংশোধন করা হয়। ১৯৬১ সালে শহীদের রক্তেভেজা বরাক উপত্যকায় বাংলাভাষা সরকারি ভাষার স্বীকৃতি লাভ করে। অধিষ্ঠিত হয় মর্যাদার আসনে। একুশে ফ্রেব্রুয়ারির মতোই ১৯ মে ওপার বাংলার বাঙালিদের চেতনাকে জাগ্রত করে। প্রতি বছরই ভাষা শহীদদের স্মরণ করা হয় যথাযোগ্য মর্যাদায়। উল্লেখ করার মতো ব্যাপার হচ্ছে, সেদিন যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের প্রায় প্রত্যেকের বাড়ি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গেও।
wrighterবন্ধুগণ, এখন শত্রু-মিত্র চেনার কাল
মাসুদা ভাট্টিকথায় বলে, বিপদে বন্ধু চেনা যায়। সত্যিই তাই। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ নানা বিপদের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অনেক চড়াই উতরাই পার হয়েছে। দেখেছে হত্যা, রক্তপাত এবং ভয়ংকর লুটপাট। অনেকেই ধারণা করেছিল, বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে, সোমালিয়া কিংবা ইথিওপিয়া কিংবা আফ্রিকার আরো কিছু দেশের মতো। কেউ কেউ এরকম ধারণাও করেছিল যে, বাংলাদেশ পরিণত হবে মৌলবাদের আখড়ায়। বিশ্বের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে এরকম নেতিবাচক সংবাদ হরহামেশাই দেখা গেছে। কিন্তু সবকিছুর পরও বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে, বৈশ্বিক মন্দার হাতে যখন অনেক বাঘা বাঘা অর্থনীতির দেশও বিপর্যস্ত, তখনও বাংলাদেশ বিশাল এক জনগোষ্ঠীর বোঝা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্থনীতির গতি ঢিমে তেতালা হলেও থেমে যায়নি, চলছে। হয়তো আগামী বছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না, কিংবা হবে, সেটা মুখ্য নয়। অর্থনীতি থেমে যায়নি, বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় নাম লেখায়নি, এই-ই সত্য, এর চেয়ে বড় কোনো সত্য নেই। এতো কিছুর পরও বাংলাদেশ আবার এসে দাঁড়িয়েছে এক চরম বিপদের মুখোমুখী। এই বিপদ আভ্যন্তরীণ এবং শত্রুরাও এদেশেরই, যাকে বলে “এনিমি উইদি”। এই ঘরের শত্রু বিভীষণদের সম্পর্কে আমরা যে অজ্ঞ, তা নয়। বরং ১৯৭১ সালেই এরা শত্রুর খাতায় নাম লিখিয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত ছিল না, এমন কথা অনেকেই বলে থাকেন। এর সত্যাসত্য বিচার গবেষকরা করুন, কিন্তু প্রস্তুতি ছাড়াই কিংবা স্বল্প প্রস্তুতি নিয়েও যে বাঙালির বিরাট একটা সংখ্যা যুদ্ধে নেমেছিল, তাও এক চরম সত্য। অনেকে এখন যুক্তি দেখাতে পারেন যে, তারা ভয়ে যুদ্ধে নামেননি, নিজের প্রাণ, আপনজনদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছেন। তাও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি, যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর পক্ষাবলম্বণ করে মুক্তিকামী বাঙালি নিধনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা নিয়েছে, যারা হাজার হাজার বাঙালি নারীকে পাক সেনাদের হাতে তুলে দিয়েছে তারা? এই শেষোক্ত পক্ষকেই আমরা চোখ বুঁজে বাঙালির শত্রু আখ্যা দিতে পারি। মজার ব্যাপার হলো, এদের সঙ্গে পরবর্তীকালে বিশেষ করে ’৭৫-এর পরে যুক্ত হয়েছে একদল মানুষ, যারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করেন, কারো কারো ক্ষেত্রে যুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রমাণও রয়েছে, তারা। এবং ক্রমশঃ এই দু’পক্ষ মিলে এক বিশাল পক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। আরও মজাদার হচ্ছে, এই সময়ে এসে এই পক্ষের ভেতর ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত থাকা অংশটিকে এতোই ক্ষীণ মনে হয় যে, টিকটিকির লেজের মতো এরা যেনো খসেই পড়েছে। ৭১-এ এরা ধর্মের দোহাই দিয়েছে, ভারত-বিরোধিতার জোয়ার তুলেছে, এখনও তারা সম্মিলিত গলাই একই গীত গেয়ে চলেছে।
বর্তমানে যে দলটি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা লিখতে গেলে মহাভারত লেখা যাবে। এই দলটি প্রগতিবাদী কিংবা প্রতিবাদী এমন অপবাদ হয়তো কেউই দেবে না। কিন্তু একটি জায়গায় এসে এই দলটির প্রশংসা করতে হয়, তাহলে এই দলটি জনতাবাদী। জনতার দাবি কি জিনিস, জনগণের প্রাণের কথা দলটি বোঝে। একাত্তরে বুঝেছিল, তাই তাদের ঘোষণা ছিল “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম”, তাই যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই শত্রুর মোকাবিলায় জনগণকে উব্দুদ্ধ করেছিল। পরবর্তী সময়েও বার বার দেখা গেছে, জনগণ যেখানে দাবি নিয়ে একত্রিত হয়েছে, এই দল সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচারের দাবি আজকের নয়। ১৯৭২ সালেই এর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ৭৫ সালের পরতো সময়টা মূলতঃ ওদেরই ছিল। ফলে মানুষ অপেক্ষা করেছিল একটা সুসময়ের। সেই সুসময় এসেছে। জনগণ আওয়ামী লীগকে ম্যান্ডেট দিয়েছে এদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার। প্রাথমিক গড়িমসি কাটিয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে হয়তো টানেল শেষের আলোকরেখা আর খুব দূরে নয়। কিন্তু তার আগেই বাংলাদেশকে নিয়ে শুরু হয়েছে দেশজ ও আন্তর্জাতিক নানা ভানুমতির খেলা। আওয়ামী লীগ যখন বার বার যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করার জন্য একটি গোষ্ঠী কাজ করছে বলে বক্তৃতা বিবৃতি দিতে শুরু করে তখন আমার মতো অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করতেন যে, আসলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য দলটি এ কাজ করছে। কিন্তু যতোই দিন গেছে, যতোই চার ধারের শত্রুরা মুখ থেকে সুশীলতার নেকাব সরিয়েছে ততোই স্পষ্ট হয়েছে, আসলে দলটি মিথ্যে বলছে না। বাঘ আসছে, বাঘ আসছে, বলে তারা অযথাই চেঁচাচ্ছে না, সত্য সত্যই বাঙালির পালে বাঘ পড়েছে।
আজকে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া চলছে, তখন দেশে ও দেশের বাইরে যে তৎপরতা চলছে, তাতে সত্যি সত্যিই ভীত বোধ করছি। বিশেষ করে আজ এই প্রশ্নে এমন সব মানুষের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যাচ্ছে, যারা এতোদিন ঘাপটি মেরে ছিলেন দেশবন্ধুদের দলে। পত্রিকায় কলাম লিখে, কেউবা টিভির টক শোতে, কেউ বা কূটনৈতিক তৎপরতা দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। কোনো কোনো পত্রিকা আবার নিরপেক্ষতার ভান ধরে সব পক্ষকে সুযোগ করে দিচ্ছে কথা বলার। এতে কোন পক্ষ বেশি লাভবান হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। সম্প্রতি গণতন্ত্র রক্ষার নামে এক সুশীল ব্যারিস্টার গিয়ে যোগ দিয়েছেন বিএনপি-জামায়াত জোটের আসরে। কিছুকাল আগেও তিনি নাগরিক মঞ্চের নাম দিয়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন কিন্তু এখন বোঝা গেলো কার দৌড় কাদের মসজিদ পর্যন্ত। যে আসরে তিনি বক্তব্য রেখেছেন, সেই আসরেই শিবিরের কর্মীরা প্ল্যাকার্ডে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি কিন্তু নিজেকে বাঁচাতে একথা বলেননি যে, বাবুরা ওদের বাঁচাতে চেও না, ওরা দেশের শত্রু। পেনশনকালে এসে তিনি যে স্রোতে ভাসলেন, সেই স্রোতে আসলে ধর্মান্ধতার জমাট পুঁজে ক্লেদাক্ত, দেশবিরোধিতার তরবারি নিয়ে তারা প্রস্তুত সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে আফগানিস্তান কিংবা সোমালিয়া বানাতে। আরেক চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে সাক্ষী হিসেবে যাদের নাম আদালতে উল্লেখ করা হয়েছে, তারাও সকলেই সমাজে চিহ্নিত শিক্ষিত, ভদ্র ও বিশিষ্ট জন হিসেবে। কেউ কেউ আবার নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলতে চাইছেন, সাকা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় কী করেছেন, তা তাদের জানা নেই-এ কী কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে। সত্যিই আমরা আজ চোখ থাকিতে অন্ধ, আর শ্রবণেন্দ্রিয় ৭৫-এর গুলির শব্দে বোধ করি অকেজোই হয়ে গেছে!!!
আমার পরিচিত এক মুখের ওপর হক কথা বলা স্বভাবের মানুষকে প্রায়ই বলতে শুনি, বাংলাদেশে এখন তিন ধরনের মানুষ জীবিত। এরা হলেন— এক. ব্রিটিশ আমলে জন্ম, পাকিস্তান আমলে বেড়ে ওঠা এবং বাংলাদেশ আমলে প্রতিষ্ঠা পাওয়া; দুই. পাকিস্তান আমলে জন্ম ও বাংলাদেশ আমলে বেড়ে ওঠা ও প্রতিষ্ঠা পাওয়া; তিন. বাংলাদেশেই জন্ম, বাংলাদেশেই বেড়ে ওঠা, বাংলাদেশেই প্রতিষ্ঠা লাভের চেষ্টা করে যাওয়া। প্রথম পক্ষ তিনবার জাতীয় সংগীত বদলেছেন, তিন পতাকার সামনে তাদেরকে আনুগত্য দেখাতে হয়েছে; দ্বিতীয় পক্ষ দু‘বার এই কাজ করেছেন, কিন্তু তৃতীয় পক্ষ একটি মাত্র পতাকাকে চিনেছে, জেনেছে বিশ্বাস করেছে। এই হক কথার মানুষটির মতে, প্রথম দুই পক্ষের মানুষগুলোর অনেকের মাঝেই নানা কিসিমের অসংগতি আছে, দুর্বলতা আছে, মিথ্যের আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা আছে, তথ্য গোপন করার অভ্যেস আছে, সর্বোপরি দেশের প্রতি ভালোবাসায় ঘাটতি আছে। আমি এই ভদ্রলোকের সঙ্গে সর্বৈব একমত নই ঠিকই কিন্তু তার কথা পুরোপুরি ফেলতেও পারি না। আমার পাঠকের কাছে সবিনয় অনুরোধ, বিষয়টি একটু ভেবে দেখবেন। কিন্তু একথাও সত্যি যে, এই প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মই মুক্তিযুদ্ধ করেছে, স্বাধীনতা এনেছে। তাদের অবদানকেও যেনো আমরা কোনোভাবেই খাটো না করি। যা হোক, স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি কিন্তু এর সঠিক ইতিহাস থেকেও বঞ্চিত থাকবে, এরকমটি হবার কোনো কারণ ছিল না। সেরকমও হয়েছে। নতুন প্রজন্মের অনেককেই প্রশ্ন করলে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশকে নিয়ে মিশ্র ও বিভ্রান্তিকর জবাব পাওয়া যাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অবশ্য এ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নই, কারণ, যে কোনো জাতি-ইতিহাস রচিত হয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। সময় নিজেই ইতিহাসের কথক। ১৯৭১ যখন নিজেই নিজের সাক্ষ্য দিতে শুরু করবে, তখন সত্যিকার ইতিহাস বেরিয়ে আসবে এবং মানুষ জানবে সঠিক তথ্য। কিন্তু ততোদিনে হয়তো এই বিভ্রান্ত প্রজন্ম হারিয়ে যাবে। তাতে কি? অনাগত কালতো সত্যের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সত্য কথা বলবে, সেই বিশ্বাস আমি ধারণ করি, মনেপ্রাণে। কিন্তু বন্ধুগণ, এখন শত্রুমিত্র চেনার কাল। আসুন আমরা চোখকান খোলা রাখি, দেশের অগ্রগতি ঠেকানোর কোনো ষড়যন্ত্রে ওরা যাতে সফল হতে না পারে সেদিকে সচেষ্ট থাকি। লেখক: সম্পাদক, একপক্ষ। masuda.bhatti@gmail.com
 আমার লেখালেখি নিয়ে কতশত কথা!
ফজলুল বারীবিদেশের ব্যয়বহুল জীবনে টিকে থাকার সংগ্রামের মাঝে অনেক কষ্টে সময় বের করে লিখি। এ সংগ্রামটা কী রকমের, তা যারা বিদেশে আছেন, তারাই ভালো জানবেন। লেখাপড়ার স্বার্থে পর্যাপ্ত ঘুমাতেও পারি না। এ অবস্থাতেই আবার কাজের শিডিউল ধরে ছুটতে হয়। এতে চোখে গ্লুকোমাসহ শারীরিক অনেক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। এই কল্যাণরাষ্ট্রটিতে আমাদের চিকিৎসা ফ্রি, সামাজিক নিরাপত্তাসহ নানা বিষয় সরকারি দায়িত্বে থাকাতে অবশ্য এসব নিয়ে দেশের স্বজনদের মতো দুশ্চিন্তা কম। লেখালিখি করি বিবেকের তাগিদে। বিদেশে বসে লিখি বলে অনেকে অপরাধও দেখেন। সরাসরি বলেনও, পারলে দেশে আইসা লেখ! কিন্তু কী করবো! আজকাল সাহসের অভাবও তৈরি হয়েছে। দেশে বসে হয়তো অনেক কিছু এভাবে চাঁছাছোলা লিখতেও পারতাম না। মায়ের বাধার বিষয়তো আছেই। সব মায়েরা চান, তাদের ছেলে দেশে ফিরে আসুক। শুধু আমার মা ছাড়া! আমি বিদেশ থাকায় তিনি নাকি চিন্তামুক্ত আছেন! সাগর-রুনি’র মতো ক্লু লেস খুন বা ইলিয়াস আলীর মতো গুম হবার ভয়টাও যে আছে! সত্য বলতে দ্বিধা নেই, আমি আমার লেখার সমালোচকদের মতো অত সাহসী কেউ না। একেবারেই নিরীহ মধ্যবিত্ত শ্রেণির। মধ্যবিত্ত স্বভাবের মতো মাঝে মাঝে বিদ্রোহ-বিপ্লব করতে ইচ্ছাও করে! যখন পায়ে হেঁটে বাংলাদেশ ঘুরি, তখন অনেকে বলতেন, সাইকেলে ঘুরলে ভালো হতো না! আসলে তখন সাইকেল চালাতেও জানতাম না। এদেশে এসে গাড়ি চালানো শিখেছি। কিন্তু বাংলাদেশে গেলে গাড়ি চালানোর সাহস রাখি না। অ্যাডমন্ড হিলারি-শেরপা তেনজিং নোরগে’র এভারেস্ট বিজয়ের কাহিনী পড়ে শিহরিত হয়েছি। কিন্তু কোনোদিন এভারেস্ট অভিযানের কথা কল্পনায়ও ভাবিনি। এখন আমাদের দেশের ছেলেদের কাছে শুধু না, মেয়েদের কাছেও পদানত মাউন্ট এভারেস্ট!
কিন্তু নিজের সমগ্র সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দেশটাতো আমারও। দেহটা বিদেশে থাকলেও মনটাতো সারা সময় পড়ে থাকে দেশে। দেশের নানাকিছু দেখেশুনে মন যা সায় দেয়, বিবেক যা বলে তা অকপটে বলার-লিখার চেষ্টা করি। বিদেশে যে দেশটিতে এখন আছি, এখানে মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলে। লেবার পার্টি-লিবারেল পার্টির সমর্থক বলে কেউ দলের যা খুশি কাজকর্মকে চোখ বুঝে সমর্থন করে না। এটি দেখে-শুনে অনুপ্রাণিত হয়ে কিন্তু আগের চেয়ে-স্বাধীন কাঠখোট্টা যে কোন বিষয় সরাসরি লিখার চেষ্টা করি। কিন্তু সব সময় ভালো লিখতে পারি না। এটি আমার সময়-সামর্থ্য দু’টিরই সীমাবদ্ধতা। নিজের লেখা আমার নিজের কখনো বিশেষ ভালোও লাগে না। এমন একটি অতৃপ্তি নিয়ে লিখেই চলেছি। লিখি বলেই বুঝি সচল-ভালো আছি। মাঝে মাঝে মনে হয় স্বাধীনতার চল্লিশ বছর গেলেও আজ পর্যন্ত দেশের সব মানুষজন স্বাধীনভাবে কথা বলতে শিখলো না! আমাদের দেশে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের কাছে আওয়ামী লীগের কোনো দোষ নেই। বিএনপির সমর্থকদেরও একই অবস্থা। দুটি পরিবারের সদস্যরা যে কী পরিমাণ দুর্নীতি করতে পারে, সে স্বীকারোক্তি দল দুটির সমর্থকদের কাছে নেই। দেশ যে শুধু পিছাচ্ছে, সামনে হাঁটছে না, এটিও এর একটি কারণ। আবার আমাদের দেশের যারা সারাদিন আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমালোচনা করেন, তারাও আবার ভোটের সময় নৌকা-ধানের শীষ ছাড়া কিছু বোঝেন না! এর জন্যে দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে দেখে মাঝে মাঝে জেদও লাগে! গফরগাঁও’র এমপির প্রকাশ্যে গুলি করার ছবি ছাপা হয়েছে! এমন একটা লোককে তো ভোট দিয়ে এমপি বানিয়েছে তার এলাকার লোকজন! এতবড় ঘটনার পরও আজ পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা হলো না! দেশের আইন-কানুন কী সব গেছে!
বাংলানিউজ কন্ট্রিবিউটিং এডিটর পদযুক্ত করে আমার ইদানিং’এর লেখাগুলো ছাপছে। এখন এই কন্ট্রিবিউটার এডিটরের বিষয় নিয়ে একটা গল্প বলি। মীরা এডলার নামে দ্য অস্ট্রেলিয়ানের এক কন্ট্রিবিউটিং এডিটর একবার আমার ক্লাসে অতিথি বক্তা হিসাবে এসেছিলেন। তার সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে একটি প্রশ্নে তিনি বিব্রতবোধ করেন! আমি বাংলাদেশের মানুষতো, তাই তাকে এমন প্রশ্ন করেছিলাম! প্রশ্নটি ছিল লিখার সময় তিনি পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতির কথা মনে রাখেন কী না! বা তার লেখার কোন বক্তব্য সম্পাদকীয় নীতিমালার বাইরে গেলে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ তা সম্পাদনা করে কী না!
প্রশ্নটির পর আমার বিভাগীয় প্রধান মীরা’র কানে কানে কিছু বলেন। সম্ভবত আমার ব্যাকগ্রাউন্ড তাকে অবহিত করেন বিভাগীয় প্রধান। মীরা আমার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে জবাব দিয়ে বলেন, ``আমার লেখা তারা এডিট করবে কেন বা আমি তাদের সম্পাদকীয় নীতিমালা মাথায় রেখে লিখবো কেন? আমিতো তাদের স্টাফ না। লেখার বিনিময়ে আমি সেখান থেকে টাকা পাই ঠিক, কিন্তু এরজন্য তো কারও কাছে মাথা বিক্রি অথবা বন্ধক দিয়ে রাখিনি। আমাকে তো পাঠকদের কথা মাথায় রেখে লিখতে হয়। আমার দায়বদ্ধতা তাদের কাছে যারা লেখা পড়ে প্রতিক্রিয়া দেন। সে প্রতিক্রিয়াগুলো আমি মনোযোগ দিয়ে পড়ি। সেখান থেকে খোরাক নেই আমার পরবর্তী কোনো লেখার। ``
বাংলানিউজ কিন্তু তাদের এই কন্ট্রিবিউটিং এডিটরের সব লেখা প্রকাশ করে না। অথবা দেশের পরিস্থিতির কারণে পারে না। আবার এটাও ঠিক আমার অনেক লেখা যে বাংলানিউজ প্রকাশ করে, দেশে অনেকে তা ছাপতো-প্রকাশ করতো কী না সন্দেহ আছে। আজকাল আবার ফেসবুকের কারণে কোনো লেখা অপ্রকাশিত থাকেও না। এখন এই যে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর এসব লেখালেখি নিয়ে অনেক সমস্যাও হচ্ছে। লেখা যখন যার বিপক্ষে যাচ্ছে তারা আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে পক্ষেরই হোন না কেন, যা খুশি তাই বলে দিচ্ছেন! বিএনপির লোকজনের ধারণা আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক। আর আওয়ামী লীগের কিছু লোক সারা সময় অনলাইনসহ নানা জায়গায় আমার লেখালেখির বিরুদ্ধে কী কী প্রকারে ঘোঁট পাকান, তা ওয়াকিবহালরা জানেন। আওয়ামী লীগার বা বিএনপি হতে না পারায় আমাকে কখনো জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য পর্যন্ত করা হয়নি, বা সেভাবে সদস্য হবার চেষ্টাও করিনি। আমার সহকর্মী অথবা জুনিয়র বন্ধু যারা সাংবাদিকতায় আওয়ামী লীগ বা বিএনপি ফোরামের সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যতিক্রম বাদে মাশাল্লাহ মোটামুটি প্রায় সবাই প্রেস ক্লাবের সদস্য শুধু না, সরকারি প্লটেরও মালিক। আমিতো কোনোদিন কোনো সরকারি প্লটের জন্যে আবেদনও করিনি বা দেশে থাকতে সে আবেদন করতে যে টাকা দেওয়া লাগতো, সে টাকাও আমার ছিলো না। বিদেশেও থাকি ভাড়া বাসায়। পুরান গাড়ি চালাই। কিন্তু ভালো আছি। শান্তিতে আছি। কোথাও কারও সঙ্গে ঠ্যালা-ধাক্কা-গুঁতোগুঁতিতে নেই। সেখানে সাম্প্রতিক লেখালেখিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সাজানোর প্রতিযোগিতা দেখে বেশ মজাই লাগে! মনে হয় আমি ঠিক আছি। অনেকে লিখে দেন, আওয়ামী লীগ নাকি আমাকে টাকা দিয়ে লেখায়! বা আওয়ামী লীগের কাছে কিছু পাবার আশায় নাকি লিখি! এরা এত সরল যে আওয়ামী লীগ কী জিনিস তা চেনেও না জানেও না।আওয়ামী লীগের কী লোকের এতই অভাব পড়েছে যে বিদেশে থাকা নাদান একজনকে টাকা দিয়ে লেখাবে? নাকি  আওয়ামী লীগ এসব করে? বিদেশ থেকে যারা বিএনপি-জামায়াতের হয়ে লিখেন, সেগুলোও কী এভাবে টাকা দিয়ে লিখানো হয়?
আমার সাংবাদিকতার গুরু তোয়াব খানের কাছে একটা বিষয় শিখেছি, তা হলো কোন সাংবাদিকের সেলফ সেন্সরড হতে নেই। একজন রিপোর্টারের কাছে যা তথ্য আসে তা তার রিপোর্টার তার রিপোর্টে আনকাট লেখা উচিত। রিপোর্টারের সে লেখা পত্রিকার অনেক হাত ঘুরে হয়তো প্রকাশিত অথবা নিহত হয়। আমার ওপর আস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তোয়াব খান আমার এমন আনকাট অনেক রিপোর্টই ছেপেছেন। যেমন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবার পর সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম রিপোর্টটি ``কাকরাইল কারাবালাঃ ওয়াসার পানির গাড়ি মন্ত্রীর সখের মাছের খামারে!`` শিরোনামে আমার বাইলাইন ছাপা হয়। আজকের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান তখন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। এর আগে কর্নেল অলি আহমদ বিএনপির যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালে মিন্টো রোডের যে বাড়িতে থাকতেন জিল্লুর রহমান সে বাড়িতে ওঠেন। অলি আহমদ সেখানে থাকার সময় মাছ চাষের জন্য সে বাড়ি সীমায় ছোটখাটো পুকুরের মতো একটি পাকা ট্যাংক তৈরি করা হয়। জিল্লুর রহমান সে বাড়িতে ওঠার পর তারও মাছ চাষের সখ হয়! স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসাবে তিনি ওয়াসারও মন্ত্রী। কাকরাইল এলাকায় পানির আক্রা চলছে তখন। লোকজন পয়সা দিয়ে ওয়াসার কাছে পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না। আর মন্ত্রীর বাড়ির মাছের খামারের জন্য নেওয়া হয়েছে আট গাড়ি পানি!
একটি সূত্রে খবরটি পেয়ে ওয়াসার মিন্টো রোডের ডিপোতে গিয়ে কৌশলে তাদের খাতা থেকে টুকে আনি আট গাড়ি পানির বৃত্তান্ত। বিস্তারিত তথ্য ঠিকমতো আছে দেখে তোয়াব খান রিপোর্টটি গুরুত্ব দিয়ে ছাপার ব্যবস্থা করেন। একুশ বছর পর ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের মধুচন্দ্রিমার সময়ে সে রিপোর্টে অনেকে গোস্বা করেছিলেন! সে আমলে জয়নাল হাজারী, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আলতাফ হোসেন গোলন্দাজদের সন্ত্রাসের রিপোর্টগুলো আমার করার সুযোগ হয়েছিল। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসে। সে নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা-সন্ত্রাসের সরেজমিন রিপোর্ট করা হয়। কালিয়াকৈরের এক তছনছ মন্দিরে দেখি ভাঙ্গা মূর্তির পাশে বসে গীতা পড়ছেন ভীতসন্ত্রস্ত পুরোহিত! গীতার নিচে আবার জনকণ্ঠ ভাজ করে রাখা! পুরোহিত এক লাইন গীতা পড়েন আবার এক লাইন পড়েন জনকণ্ঠ! যে রিপোর্ট এভাবে পুরোহিত পড়ছিলেন, সেটিও আমার করা। পরে পুরো বিএনপি শাসনামলে আমাদের অনেক সমস্যা হয়েছে। আমরা যাতে বেতন না পাই, না খেয়ে মরি, সে জন্য অনেক কিছুই তখন করা হয়েছে! দৈনিক বাংলা বন্ধ হবার পর দুর্দিনে বিএনপিপন্থি অনেক সাংবাদিক জনকণ্ঠে আশ্রয় পেয়েছিলেন। বিএনপি ক্ষমতায় যাবার পর তারা আবার জায়গামতো ফেরত যান। কিন্তু সরকারি আক্রোশ থেকে জনকণ্ঠকে রক্ষার জন্য তাদের কেউ কাজ করেন নি। আমার দেশের ঘটনার পর সে কথাগুলোই মনে পড়েছে। এর আগে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নির্বাচনী সফর কভার করা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। ঢাকা থেকে মিডিয়ার গাড়ি রওয়ানা দেবার সময় এমন করা হতো, যাতে জনকণ্ঠের লোক গাড়ি ধরতে না পারে! মজার ব্যাপার এসব ক্ষেত্রে কিন্তু অনেকক্ষেত্রে বিটের রিপোর্টাররাই বেশি ভূমিকা পালন করেন! অথবা বিট করতে করতে রিপোর্টারও যেন হয়ে যান দলের সদস্য। একবার খালেদার উত্তরবঙ্গ সফরের সফরসঙ্গী হতে গিয়ে সে সমস্যায় পড়ি। সাংবাদিকদের গাড়ি আগের দিন রওয়ানা হয়ে বগুড়ার পর্যটন মোটেলে গিয়ে ওঠে। সাংবাদিকদের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন, এক সময়কার সাংবাদিক, বিএনপি নেতা আহমেদ নজির। তারা যথারীতি আমাকে না নিয়েই চলে গেছেন শুনে আবার তাদের সঙ্গে গিয়ে যোগ দিতে বিব্রতও লাগে। কিন্তু পেশাগত স্বার্থে এসব লুকিয়ে রাখতে হয়। বগুড়ায় বিএনপির নেতা হেলালুজ্জামান লালু’র সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে বলেন, আপনি যদি নিজে চলে আসতে পারেন তাহলে পর্যটন মোটেলে আমার গেস্ট হিসাবে থাকবেন, আমি বলে রাখবো। তাই করলাম। পরের সকালে সে মোটেলের নাস্তার টেবিলে চক্ষু লজ্জায় কেউ আর আমাকে এড়াতে পারেন না। গাড়িতেও ডেকে নিয়ে তোলা হয়। সরেজমিন রিপোর্টে আমি সব সময় যা দেখতাম তাই লেখার চেষ্টা করতাম। পরিবেশের গন্ধ-বর্ণনা থাকতে হয় সরেজমিন রিপোর্টে। নতুবা তা রিডারকে টানে না। আমি যেভাবে লিখতাম সেভাবেই জনকণ্ঠে ছাপা হতো। এরপর দেখি জনকণ্ঠ আসার পর গাড়িতে বসেই তা জোরে জোরে পড়ে সবাইকে শোনাতেন আহমেদ নজির ভাই। লজ্জাই লাগতো তখন। তাদের লজ্জা করতো কী না জানি না। কিন্তু গাড়ি ভর্তি বিএনপিপন্থী বা হয়ে যাওয়া সাংবাদিকরা জানতেন, আমি তাদের বিএনপির লোক না। সেটাই ভালো লাগতো। যেমন আওয়ামী লীগও জানে আমি তাদের না। এটাও ভালো। সাংবাদিকতায় আসার এক বছরের মধ্যে রিপোর্টের কারণে কী করে ৩২ নম্বরে ডেকে নেওয়া হয়েছিল তা হয়তো বাহাউদ্দিন নাছিমের মনে আছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি-জামায়াত এ দলগুলোই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের সরকারে যায় বা বিরোধীদলে থাকে। এ চারটির কোনটি না করাতে রিপোর্টার হিসাবে একটা বিষয় এনজয় করি, তাহলো এ চারটির দলের আনন্দ-বেদনা আমাকে স্পর্শ করে না। তবে জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি বাঙালি হিসাবে আমার কিছু নিজস্ব অবস্থান আছে। তাহলো মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা-লক্ষ্যগুলোকে আমি ধারণ করে চলা চেষ্টা করি। যার অনেক কিছু এখন আওয়ামী লীগও ধারণ করে না। বিএনপিতো নয়ই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমি জাতির পিতা হিসাবে মানি-সম্মান করি। মুক্তিযুদ্ধের জয়বাংলা স্লোগানটি আমারও। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি নিয়ে আমি মনে করি এ বিচার যতটা হবার তা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই হবে। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারলে এ বিচার ভণ্ডুল হবে।
এক বন্ধু আমার এ বিষয়গুলো নিয়ে সম্প্রতি একটি অনলাইনে লিখেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন,  ‘যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুতেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু দেশ এখন সে অবস্থায় নেই’। সীমান্ত হত্যাসহ দেশের নানা কারণকে তিনি সামনে নিয়ে এসেছেন। এ বিষয়টিই আরও জোরের সঙ্গে বলতে চাই আমি। তাহলো যুদ্ধাপরাধের  বিচারের সঙ্গে এসবের সম্পর্ক কী? চল্লিশ বছর এ বিচার করতে দেওয়া হয়নি। তাতে কী দেশ বেহেস্তে পৌঁছে গিয়েছিল?
না এখন এ বিচার বন্ধ করে দিলে সেখানে পৌঁছে যাবে? আজ এ বিচার বন্ধ করে দিলে কী বন্ধ হয়ে যাবে সীমান্ত হত্যা? বিদ্যুৎ সমস্যা, দ্রম্যমূল্য সব কমে যাবে? নানান ছলচাতুরিতে এ বিচার ঠেকাতে-এড়াতে স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষ নতুন প্রজন্মকে বরাবর এমন কিছু স্বার্থান্বেষী ধারণা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে আসছে, এখনও ঢোকাচ্ছে!
বাংলানিউজে সর্বশেষ ব্যারিস্টার রফিক আর মির্জা ফখরুলের মেয়ে সামারুহ মির্জাকে নিয়ে লিখার পরও বিএনপি-জামায়াতের লোকজন বেজায় ক্ষেপেছেন! এ নিয়ে বাংলানিউজে পাঠানো মেলগুলোর প্রায় সবক’টিই আমাকে ফরোয়ার্ড করে পাঠানো হয়েছে। এসব লেখার মূল সুরটি হলো আমি আওয়ামী লীগের দালাল ইত্যাদি। ব্যারিস্টার রফিকের প্রতি আমার ব্যক্তিগত দুর্বলতার কথা এদের জানা নেই। যদিও এরশাদের আইনজীবী থাকাকালে একদিন প্রশ্ন পছন্দ না হওয়াতে তিনি সাংবাদিকদের তাড়াও করেছিলেন। কিন্তু তার সবকিছুর চেয়ে আইন ব্যবসার টাকায় একটি এতিমখানা চালানোর বিষয়টি আমার কাছে বড়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শিক্ষক, সরকারি চাকুরে থাকার সময় থেকে তাকে ভদ্রলোক হিসাবে জানি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে না গিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট তাকে জোগাড় করতে হবে কেন? এটা কী কোন ভদ্রলোকের কাজ হয়েছে? একাত্তরে ঠাকুরগাঁও’তে পাকিস্তানিদের পক্ষে শান্তি কমিটি গঠনের পর এর সদস্য হন মির্জা ফখরুলের বাবা মির্জা রুহুল আমিন চোখা মিয়া। এরপর আবার মুক্তিযোদ্ধাদের দাপট বাড়ার পর ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় ভারতে আত্মীয়ের বাড়িও চলে যান। তা তিনি কী ভারতে গিয়ে অন্যদের মতো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন? না দেশে ফিরে নিয়েছেন?
প্রথমে জিয়া ও পরে এরশাদের সঙ্গে যোগ দেন মির্জা রুহুল আমিন চোখা মিয়া। এরশাদ তাকে ব্যবহার করে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে না দেওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গেই ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বাবা। মুক্তিযুদ্ধে এই পিতা-পুত্রের ভূমিকার তথ্য ঠাকুরগাঁও’র মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাওয়া। ভারতে যাওয়া চোখা মিয়া যে রাজাকার ছিলেন একজন এর প্রমাণ দিতে বলেছেন। তথাকথিত শান্তি কমিটিতো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন নিয়ে গড়া হয়নি। একাত্তরের ঠাকুরগাঁও’র রাজাকারদের সংগঠন শান্তি কমিটির তালিকায় মির্জা রুহুল আমিন চোখা মিয়ার নাম ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ছিল না।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকলে তার মতো লোকের নাম বাদ পড়তো না। পিতার কারারুদ্ধ জীবন নিয়ে মেয়ে হিসাবে বেদনায় নীল লিপিমালা লিখেছেন সামারুহ মির্জা। তার প্রতি ব্যক্তিগত সহানুভূতি জানিয়েই লিখেছি, নগরের এই আগুন একদিনে তৈরি হয়নি। হরতাল সন্ত্রাসও বন্ধ হওয়া দরকার। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রকাশ্যে পক্ষে নেয়া তার পিতার পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন না মুক্তিযোদ্ধা ড. আনোয়ার হোসেন। তার ভাই মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরকে ষড়যন্ত্রমূলক বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছেন মির্জা ফখরুলের নেতা জিয়াউর রহমান। এসব লিখলে কী আওয়ামী লীগ হয়ে যাওয়া হয়? যাক, এসব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে দেখে মনে হয় রাইট ট্র্যাকেই আছি! আমিতো সবাইকে খুশি করে চলতে পারবো না। বা চেষ্টাও করি না। এমন দলীয় স্বার্থচিন্তাকে কেন্দ্র করে খাওয়া চলে, নানা কিছু চলে, লেখা চলে না। তোমার জন্য লিখে যাবো বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের শত্রু-খুনিদের, তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে লিখে যাবো। যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ...! ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক
 নতুন তিনটি বিল উঠছে আগামী অধিবেশনে
পার্লামেন্ট করেসপন্ডেন্ট
সংসদের আসন্ন ১৩তম অধিবেশনের জন্য মঙ্গলবার পর্যন্ত নতুন তিনটি বিল এসেছে সংসদ সচিবালয়ে। এর মধ্যে দুটি সরকারি ও একটি বেসরকারি বিল। সরকারি বিল দুটি হলো- বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১২ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) বিল-২০১২। এছাড়া বিদেশি নিবন্ধন বিল- ২০১২ জমা দিয়েছেন সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, আগামী অধিবেশনে নতুন দুটিসহ মোট ১৫টি সরকারি বিল উঠবে। এর মধ্যে ১৩টি আগে বিভিন্ন সময় সংসদে উত্থাপন হয়েছে। এসব বিলগুলো হলো- ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল-২০১০, আর্থিক প্রতিষ্ঠান (সংশোধন) বিল- ২০১০, দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) বিল-২০১১, আদালত অবমাননা বিল-২০১১, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) বিল-২০১১, দ্য ফরেস্ট (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০১২, বৃক্ষ সংরক্ষণ বিল-২০১২, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিল-২০১২, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বিল-২০১২, প্রাইম মিনিস্টার (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০১২, মিনিস্টারস, মিনিস্টারস অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০১২, প্রতিযোগিতা বিল-২০১২, কোড অব সিভিল প্রসিডিউর (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০১২। এসব বিলগুলোর মধ্যে কমিটিতে বিবেচনাধীন রয়েছে ১১টি, পাসের অপেক্ষায় রয়েছে দুটি আর উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে দুটি। সূত্র জানায়, বিদেশি নিবন্ধন বিল-২০১২ অর্থবিল হওয়ায় এটিতে রাষ্ট্রপতির সুপারিশ এনে পুনরায় জমা দেওয়ার জন্য বিল জমাদানকারী সদস্যের কাছে ফেরত পাঠানো হবে। সংবিধানের ৮২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যেকোনো অর্থবিল উত্থাপনের আগে রাষ্ট্রপতির সুপারিশ প্রয়োজন হয়। এদিকে মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ৪৩৬টি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। আগামী ২৭ মে শুরু হতে যাওয়া অধিবেশনের প্রথম দিনেই ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম (ট্রাইবুনাল) (অ্যমেন্ডমেন্ট) অধ্যাদেশ-২০১২ সংসদে উত্থাপন করা হবে। গত ১১ এপ্রিল অধ্যাদেশটি জারি করেন রাষ্ট্রপতি।
আবাসন খাতেই সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয়: সুব্রত সাহারা
সিনিয়র ইকোনমিক করেসপন্ডেন্ট
বাংলাদেশে আবাসন ও পর্যটন খাতে ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বললেন সফররত শীর্ষ ভারতীয় ব্যবসায়ী গ্রুপ সাহারা ইন্ডিয়া পরিবারের প্রধান সুব্রত রায় সাহারা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আবাসন ও পর্যটন খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আবাসন খাতে অর্থায়ন প্রক্রিয়া বাংলাদেশে সহজ নয়। ভারতে আবাসন খাতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকারভিত্তিক খাত হিসেবে দেখা হয়। যার ফলে ভারতে আবাসন খাতে ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিনিয়োগ সহজ। এছাড়াও ভারতে এখাতে বিনিয়োগকারীরা সহজে ও তুলনামূলক কম সুদে ব্যাংকঋণ পাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশে সুদের হার বেশি।” বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সাথে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ করেন সুব্রত রায় সাহারা। তিনি আবাসন খাতকে অগ্রাধিকারভিত্তিক খাত হিসেবে দেখার গুরুত্ব তুলে ধরে এ খাতে অর্থায়ন সহজ করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান। সাহারা বলেন, ``আবাসন খাতের সঙ্গে ৮৫টি উপখাত জড়িত। তাই মাত্র একটি খাত উন্নতি করলে আরো ৮৫টি খাতের উন্নয়ন হবে। এতে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আমি মনে করি আবাসন খাত প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। এটি কোনো অনুৎপাদনশীল খাত নয়।`` ভারতের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এই বিশিষ্ট আবাসন ব্যবসায়ী বলেন, ``ভারতে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করার জন্য ৯ থেকে ১০ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যায়। কিন্তু অন্য শিল্প ঋণে সুদের হার  ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। এমন উদ্যোগের ফলে ভারতে এখন মানুষ ৩০ বছর বয়সে বাড়ি করতে পারছে। যেখানে একসময় ৬০ বছরের আগে কেউ বাড়ি শুরু করতে পারত না।`` এই খাতকে গুরুত্ব না দিলে নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরা বাড়ি করতে পারবে না বলেও মনে করেন এই ব্যবসায়ী।  তবে সুব্রত সাহারা বাংলাদেশে আবাসন খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহের কথা জানান। এসময় তিনি আবাসন খাতে অর্থায়ন সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান। সাহারা বলেন, ``আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। ভারতে এই সুযোগ দেওয়ার ফলে ভারতের কালো টাকা প্রায় শেষ হয়ে গেছে।``
বাংলাদেশের সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় নদীর উপরে একটি শহর গড়ে তোলা যেতে পারে উল্লেখ্ করে বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী বলেন, ``এমন একটি শহর গড়ে তোলা গেলে সেটি হবে বিশ্বের পর্যটকদের একটি গন্তব্য শহর। বিশ্ববাসীর আকর্ষণের স্থান হবে সেটি।`` সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে করার ক্ষেত্রেও ১০০ কোটি ডলারের যে বিধান রয়েছে তার আওতা বাড়ানো দরকার বলেও জানান সাহার ইন্ডিয়া পরিবারের কর্ণধার সুব্রত রায় সাহারা। এসময় তিনি বলেন, ``বাংলাদেশে ইন্টারনেটে সমস্যা আছে। তবে ভারতের সাথে একটি স্যাটেলাইট সংযোগ করে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।`` এর বাইরে তিনি তালিকাভুক্ত এবং তালিকার বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ব্যবধান কমানোর তাগিদ দেন। তিনি বাংলাদেশে আবাসন খাতে বিনিয়োগকে অবকাঠামো এবং আবাসন এর মাঝে বিনিয়োগ ধরে কর রেয়াতসহ কিছু সুবিধা দেওয়ার কথা বলেন। ড. আতিউর রহমান তার বক্তব্যে সুব্রত রায় সাহারাকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ``বাংলাদেশ নিয়ে যে যাই বলুক, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের অন্যতম গন্তব্য। নিরাপদ। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশীয় বিনিয়োগকারীদের মতো সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন।`` গভর্নর বলেন, ``এখানে বিনিয়োগ শতভাগ নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং সমতার ভিত্তিতে দেখা হয়। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দিয়ে আসছে।`` বাংলাদেশ ব্যাংক কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ডেপুটি গভর্নর এস কে শূর চৌধুরীসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারার উপস্থিত ছিলেন।
যে কোনো মুহূর্তে বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের দাম
সেরাজুল ইসলাম সিরাজ
আবারও যে কোনো মুহূর্তে বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের দাম। ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, ফার্নেস অয়েল লিটার প্রতি ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে আন্তর্জাতিক বাজার দর অনুযায়ী তেলের দাম বাড়ার কোনোই যুক্তি দেখছেন না জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
মার্চের শেষ সপ্তাহে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র দাবি করেছে। সূত্রটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানিয়েছে, ওই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং ভর্তুকি কমাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে চলছে এই কার্যক্রম। তবে সরকার সেচ মৌসুমে জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান নেয়। বর্তমান সরকার যে কয় দফায় জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে, প্রতি বারেই রাত ১১টায় ঘোষণা দিয়ে ১২টা থেকে কার্যকর করেছে। তবে জ্বালানি বিভাগের সচিব মেজবাহ উদ্দিন অতীতের মতোই এবারও বলেছেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরা এসব খবর কোথায় পান।’ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) পরিচালক (প্লানিং, অপরেশন) এসএম রেজওয়ান হোসেন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘এ ধরণের কোনো বিষয় আমার জানা নেই।’ পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, আমি যতটুকু জানি, তাতে সব প্রস্তুত রয়েছে। শুধু ঘোষণা বাকি। যে কোনো সময়ে ঘোষণা আসতে পারে। নাজমুল হক বলেন, ‘গত মার্চ মাসে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি। তবে সেচ মৌসুমের কারণে এই প্রস্তাব কার্যকর করা হয়নি।’ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতির দিকে এই অবস্থায় তেলের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা আছে কি না এমন প্রশ্নে বলেন, ‘এখন যে তেল বিক্রি হচ্ছে এগুলোতো আর এখন আনা নয়। তবে সরকার যেভাবে লোকসান দাবি করে, তার সঙ্গে আমি একমত নই।’ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) মনে করে, দাম না বাড়িয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। তারা মনে করেন, সবার আগে প্রয়োজন টাকার দরপতন ঠেকানো। এছাড়া ভর্তুকি তুলে নিতে না পারলে বিপিসির লোকসান ঠেকানো সম্ভব নয়। বিপিসি চায় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয়। তাদের প্রস্তাব রয়েছে এমন পদ্ধতি করা হোক যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে দেশের বাজারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাম বেড়ে যাবে। আর কমলে কমে যাবে। বিপিসি জানিয়েছে, বর্তমানে পরিশোধিত প্রতি ব্যারেল ডিজেল (১৫৯ লিটার) ১২২ থেকে ১২৬ ইউএস ডলারে কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া ক্রড অয়েলের বর্তমান বাজার দর ১১০ থেকে ১১২ ইউএস ডলারে ওঠানামা করছে। প্রতি ব্যারেল ডিজেল যদি ১২৫ ইউএস ডলার হয়, তাহলে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম দাঁড়ায় ৬২ টাকা (পরিবহন খরচ ও ট্যাক্স বাদে)। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কোনোই যুক্তি দেখছি না। সরকার ট্যাক্স ভ্যাট কমিয়ে দিলেই তো এত ভর্তুকি লাগার কথা নয়।’ তেলের দাম বাড়ালে অর্থনীতি বিরুপ প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে বলেন, ‘জিনিসপত্রের যে দাম তাতে নতুন করে তেলের দাম বাড়ালে সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে।’ সরকারকে তেলের দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি। উল্লেখ্য, সরকার সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায়। বর্তমানে ডিজেল ও কেরোসিন লিটার প্রতি ৬১ টাকা, অকটেন ৯৪ টাকা, পেট্রোল ৯১ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এর আগে ১০ নভেম্বর, ১৮ সেপ্টেম্বর ও ৫ মে তারিখে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর দাম বাড়ানোর সময় সরকার তথ্য বিবরণীতে বলেছিলো, বিগত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। পাশাপাশি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য চলতি অর্থবছরে অতিরিক্ত প্রায় ২০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে জ্বালানি তেল কিনতে সরকারের লোকসান অনেক বাড়ছে। তাই এই খাতে সরকারকে অনেক ভর্তুকি দিতে হবে, যা সরকারের বর্তমান আয় থেকে সংকুলান করা কষ্টসাধ্য। সরকারের দেওয়া তথ্য বিবরণীতে দাবি করা হয়, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের মূল্য ছিল ব্যারেল প্রতি (এক ব্যারেল=১৫৯ লিটার) ৫১ দশমিক ৫২ ডলার। যা ২০১০ সালের ডিসেম্বরে মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৩ দশমিক ২১ ডলারে। আর গত ২৮ ডিসেম্বর হয়েছে ১২০ দশমিক ২৪ ডলার। সরকার আরও বলেছে, দেশে বর্তমানে সংগ্রহ ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে ব্যবধানের কারণে ডিজেল, কেরোসিন ও ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে সরকারকে লিটার প্রতি যথাক্রমে ২১ দশমিক ৩৪ টাকা, ১৯ দশমিক ৮৪ টাকা ও ৯ দশমিক ৯৫ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। গত ২০১০-১১ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপিসির লোকসান হয়েছে আট হাজার ১৯৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
বিদ্যুত খাতে ৪শ’ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে জাপান
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

চলমান বিদ্যুত ঘাটতি মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছে বন্ধুপ্রতিম দেশ জাপান। এ খাতে  বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াতে ৪শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবেন জাপানি উদ্যোক্তারা। এ লক্ষ্যে শিগগিরই বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দেশটির একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। পরবর্তীতে এ বিনিয়োগ আরো ৩শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়িয়ে ৭শ’ মিলিয়ন ডলারে নেওয়া হবে। বাংলাদেশে সফররত জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের (জেবিআইসি) সিঙ্গাপুরস্থ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান প্রতিনিধি ফুমিটাকা মাসিদা মঙ্গলবার শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার সঙ্গে বৈঠকে একথা জানান। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনসুর আলী সিকদার, জেবিআইসি’র সিঙ্গাপুর অফিসের প্রতিনিধি সিন তানিমুরাসহ শিল্প মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বাংলাদেশের শিল্পখাতে জেবিআইসি’র বিনিয়োগ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। এসময় রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানার আধুনিকায়ন, জাপানি হাইটেক শিল্প কারখানা বাংলাদেশে স্থানাস্তর, কয়লা এবং গ্যাসভিত্তিক জ্বালানি ও টেলিকমিউনিকেশন খাতে বিনিয়োগসহ অন্যান্য বিষয় আলোচনায় স্থান পায়। বৈঠকে ফুমিটাকা মাসিদা বলেন, ‘বাংলাদেশের শিল্পখাতের উন্নয়নে জেবিআইসি প্রয়োজনীয় আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিতে আগ্রহী।’ এক্ষেত্রে তিনি বিদ্যুৎ খাতে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই), ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়ন, ব্যাংক ও আর্থিক নীতিমালা সংস্কার, ব্যাষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিমালার (মাইক্রো-ইকোনমিক পলিসি) উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানান। এ সময় ফুমিটাকা মাসিদা বাংলাদেশের শিল্পখাতে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা অর্জন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের পরামর্শ দেন।
শিল্পমন্ত্রী বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়ে জেবিআইসি’র প্রতিনিধিকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, ‘জেবিআইসি প্রণীত বিনিয়োগ সক্ষমতার তালিকায় বাংলাদেশ বর্তমানে ১৬তম অবস্থানে রয়েছে।’ দিলীপ বড়ুয়া  বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে উৎকৃষ্ট স্থান হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশে টেকসই ও দক্ষ শিল্পখাত গড়ে তুলতে জাপানের হাইটেক শিল্প কারখানা স্থানান্তরের ওপর গুরুত্ব দেন। দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘সারসহ কৃষি উপকরণে ভর্তুকি প্রদানের ফলে বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। উন্নয়ন সহযোগীদের চাপ থাকার পরও সরকার জাতীয় স্বার্থে কৃষি উপকরণে ভর্তুকি প্রত্যাহার করেনি।’ তিনি জাপানকে বাংলাদেশের পরীক্ষিত উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশের সার কারখানার আধুনিকায়নে জাপানি বিনিয়োগ কামনা করেন।
এগিয়ে চলেছে ডিজিটাল জাদুঘর গড়ার কাজ
রহমান মাসুদ

বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানাতে আধুনিক ও জনবান্ধব ডিজিটাল জাদুঘর গড়তে ১৫০ কোটি টাকার একগুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। ২০০৯ সালে হাতে নেওয়া এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০১৫ সালে। এরই মধ্যে এসব প্রকল্পের ৫০ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ১০০ কোটি টাকার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১৮ মে ‘বাঙালি জাতির দীপ্তিময় ইতিহাসের ধারাবাহিক তথ্য’ নিয়ে সজ্জিত জাতীয় জাদুঘরের ৩৮ নম্বর গ্যালারির উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক প্রকাশ চন্দ্র দাস এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, জাদুঘরকে জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে এবং বর্তমান সরকারের ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাদুঘর ডিজিটালাইজেশন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন জাদুঘরে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়। চলতি অর্থবছরেই (২০১১-১২) উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হয়েছে ২৬ কোটি ৯৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। তিনি জানান, আগামী ২০১৫ সালে শেষ হওয়া পর্যন্ত এ প্রকল্পে ব্যয় করা হবে আরো ৭৫ কোটি ৩৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরকে বিশ্বমানের জাদুঘরে পরিণত করতে ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরতে এ প্রকল্পের মধ্যে আরও আছে প্রাক-১৯৪৭ থেকে ভাষা আন্দোলন এবং বঙ্গবন্ধু শীর্ষক দু’টি প্রামাণ্যচিত্র। এ কর্মসূচির আওতায় অডিওভিজ্যুয়াল যন্ত্রপাতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি নজরুল ইসলামসহ ১০ বিশিষ্টজনের ভাস্কর্য নির্মাণ এবং কাগজজাত নিদর্শনের ডিজিটাল ইমেজিং ও প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে তা উপস্থাপনের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ৭ বীরশ্রেষ্ঠের ভাস্কর্য তৈরি, ৪টি বিষয়ভিত্তিক পুস্তিকাসহ অন্যান্য কাজ বর্তমান অর্থবছরেই (২০১১-২০১২) সম্পন্ন করা হবে। কর্মসূচিটি সম্পন্ন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সূত্র জানায়, ‘বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের তথ্য, যোগাযোগ ও ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সংগৃহীত নিদর্শন নিবন্ধন যুগোপযোগী অবজেক্ট আইডি তৈরিকরণ, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) উন্নয়ন, শাখা জাদুঘরগুলোর ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে জাদুঘরের নেটওয়ার্কের আওতায় এনে ডিজিটাল জাদুঘর গড়ে তোলা হবে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে এরই মধ্যে কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ এবং টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম সংস্থাপন করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রায় এক লাখ নিদর্শনের ডিজিটাল ছবিসহ ডাটা লিপিবদ্ধ করে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিদর্শনের তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরার কাজ চলছে। কর্মসূচিটি ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের জুনে সমাপ্ত করা হবে। উল্লেখ্য, এ কর্মসূচির আওতায় জাদুঘরের ডায়নামিক ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর লাইব্রেরি, ইতিহাস সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতিতাত্ত্বিক, সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ক দুষ্প্রাপ্য বই-সাময়িকী আধুনিক যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে কোহা ডাটাবেইজের মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশন কাজ শুরু করেছে। লাইব্রেরি ডিজিটালাইজেশনের কাজ সম্পন্ন হলে পাঠক ও গবেষকরা অতি দ্রুত তথ্যসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। ‘বাংলাদেশ জাদুঘরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আধুনিকায়ন, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ইক্যুইপমেন্ট সংস্থাপনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতার ধারক জাদুঘরের মূল্যবান নিদর্শনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ চলছে। এ কার্যক্রমের মধ্যে ১৪০টি সিসিটিভি ক্যামেরা, আর্চওয়ে মেটাল ডিটেকটর ও হ্যান্ড ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, যোগাযোগ সরঞ্জাম, বেতার সরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম স্থাপন এবং পৃথক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ নির্মাণ করে সার্বক্ষণিক ও নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। কর্মসূচিটি ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের জুনের মধ্যে সমাপ্ত হবে।
জাদুঘর সূত্র জানায়, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের নিয়ন্ত্রণে পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের মূল্যবান সাহিত্যকর্ম সংরক্ষণের জন্য ফরিদপুরে ‘পল্লীকবি জসীম উদ্দীন সংগ্রহশালা নির্মাণ’ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের অধীনে প্রশাসনিক ভবন, লাইব্রেরি এবং রিসার্চ সেন্টার, ডরমেটরি ভবন, জাদুঘর ভবন, ওপেন এয়ার স্টেজ, ওভারহেড ট্যাংক, জেনারেটরসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পটির কাজ ১১ কোটি ২৫ লাথ ১৭ হাজার টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের জুনে সমাপ্ত হবে। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যে আরও চারটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃত সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথের স্মৃতি রক্ষার্থে তার শত বছরের পুরাতন এমএন ছাপাখানাকে ঘিরে ‘সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘর’ কুষ্টিয়ায় নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পটি ৮ কোটি ২৮ লাখ ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। সিলেট বিভাগের নিজস্ব ইতিহাস ও সংস্কৃতির ওপর গবেষণা করা এবং সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করার জন্য ‘সিলেট বিভাগীয় মিউজিয়াম’ শীর্ষক প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে ৩৭ কোটি ২৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকায় সম্পন্ন করা হবে। মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় অবস্থিত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর বাড়িটি সরকারি উদ্যোগে সংস্কার করে তার স্মৃতি রক্ষার্থে একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ভূমিসহ বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর বাড়িটি জাদুঘরের কাছে হস্তান্তরের জন্য মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে। জাদুঘরের নিজস্ব সংগ্রহে থাকা অধিক সংখ্যক নিদর্শন প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে জাতীয় জাদুঘরের গ্যালারি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পটির জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাদুঘরের সংগৃহীত নিদর্শন প্রদর্শন করা যাবে, যা জনগণকে অধিকহারে জাদুঘরমুখী করবে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের জুনে মধ্যে ২ কোটি ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের নিদর্শন স্টোর আধুনিকায়ন, সংস্কার ও উন্নয়ন’ এবং ৮৭ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বিক্রয় কেন্দ্র (স্যুভেনির সপ) আধুনিককরণ, রেপ্লিকা ও মডেল তৈরির অবকাঠামো নির্মাণ এবং লেফট লাগেজ কাউন্টার উন্নয়ন’ শীর্ষক কর্মসূচির কাজটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও আগামী ২০১২-১৩ অর্থবছরে ‘ডাইনোসর গ্যালারি নির্মাণ এবং ডাইনোসরের কঙ্কাল ও মডেল উপস্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অত্যাধুনিক ডাইনোসর গ্যালারি নির্মাণ করে ডাইনোসরের কঙ্কাল ও মডেল উপস্থাপনের মাধ্যমে ডাইনোসর সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে জ্ঞান বিস্তার করা এবং জাদুঘরকে সমৃদ্ধ করাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য, সামিট গ্রুপের আর্থিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে ডাইনোসরের কঙ্কাল স্থাপনে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। চীনের বিভিন্ন ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়াম ও ডাইনোসর মিউজিয়াম প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জন্য উপস্থাপিত ডাইনোসর গ্যালারির লে-আউট ডিজাইন এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের পিছনের প্রায় ৩ হাজার বর্গমিটার খালি জায়গার মধ্যে এক হাজার বর্গমিটার জায়গায় ডাইনোসর গ্যালারি তৈরির বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অন্যতম প্রধান কাজ হলো নিদর্শন সংগ্রহ করা। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বিভিন্ন কিউরেটোরিয়াল বিভাগে মোট ১৮৬টি নিদর্শন সংগৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কালোপাথরের বিষ্ণু।
ইলিশ গেল, পানি কি আসবে? 
ফজলুল বারী
পদ্মার ইলিশ নিয়ে দাদা’দের শহর কলকাতার এখন গদগদ অবস্থা! কারণ জামাইষষ্ঠীকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ থেকে পনের মেট্রিক টন ইলিশের প্রথম চালানটি গিয়ে পৌঁছেছে। আগামি শনিবারের মধ্যে আরও ২৫০ মেট্রিক টন গিয়ে পৌঁছবে! কলকাতার বর্তমান পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে তাদের হিমাগারগুলোতে এখন ২৫০ মেট্রিক টন ইলিশের মজুদ আছে। বাংলাদেশ থেকে ইলিশ যাওয়াতে তাদের এবার জামাইষষ্ঠী জমবে ভালো! আমার ধর্মীয় জ্ঞান-পড়াশুনা কম। নিজের ধর্মতো বটে, অন্যের ধর্মজ্ঞানের বিষয়েও তাই! জামাইষষ্ঠী সম্পর্কে জানতে শুক্রবার সিডনি প্রবাসী ছড়াকার-কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্তকে ফোন করে তার সাহায্য নিয়েছি। বাঙ্গালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ পুজার দিনটিতে সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কটা এক ধরনের আনুষ্ঠানিক নবায়ন করেন। মেয়ের জামাইও তাদের কাছে সন্তান, কিন্তু সে’তো ঔরসজাত সন্তান নয়। এমনিতে মেয়ে জামাই শশুরবাড়ি গেলে ভালো খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হয়। জামাইষষ্ঠীতে মেয়ে জামাইকে খাওয়ানোর চেষ্টা হয় পঞ্চব্যঞ্জনে! কলকাতায় যেহেতু ইলিশের আক্রা, তাই এদিন মেয়ে জামাইকে ইলিশ দিয়ে খাওয়াতে পারলে শশুর-শাশুড়িরা নিজেদের বিশেষ বনেদি ভাবেন! আবার তা যদি হয় পদ্মার ইলিশ! এদিন জামাইরা সাধারনত দই আর শাশুড়ির জন্য নতুন একটা শাড়ির প্যাকেট নিয়ে শশুরবাড়ি যান। আর শশুর-শাশুড়ি জামাইকে উপহার দেন পাঞ্জাবি। ইলিশসহ পঞ্চব্যঞ্জনে আপ্যায়ন করেন জামাইকে। এবারের জামাইষষ্ঠীকে সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে ইলিশের চালানটি আগেভাগে সময়মতো পৌঁছনোর কারনেই বুঝি এ নিয়ে গদগদ শোরগোলটি বেশি পড়েছে! পশ্চিমঙ্গের মন্ত্রীরা ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, এবার বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ইলিশ নিয়ে কোন রকম কালোবাজারি তারা বরদাশত করবেন না। জীবন থাকতে নয়। পশ্চিমবঙ্গের তিন দশকের বামদূর্গের পতন ঘটিয়ে মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতারোহণে যে সব মিডিয়ার ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, দৈনিক বর্তমান এর একটি। কিন্তু নানা কারনে এখন পত্রিকাটির সঙ্গেই মমতা ব্যানার্জী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছেনা। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি পাঠাগারগুলোতে বর্তমান রাখায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বাঙ্গালি নেতৃ্ত্বের যা স্বভাব দোষ! একবার ক্ষমতা পেয়ে গেলেই আর কোন সমলোচনা সহ্য করতে পারেন না! কিন্তু জামাইষষ্ঠীকে সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসা নিশ্চিত করাতে সেই বর্তমান’ই মমতার ভূয়সী প্রশংসা করে লিখেছে, স্বয়ং মূখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে সরাসরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন! সত্যিই কী তাই? ইলিশ নিয়ে কী ইদানিং হাসিনার সঙ্গে মমতার সরাসরি ফোনে কথা হয়েছে? কী জানি, কলকাতার পত্রিকাওয়ালা অনেকের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ভক্তি-শ্রদ্ধা কম। একবার ভারতীয় নির্বাচন কভার করতে গিয়ে কলকাতা ভিত্তিক মিডিয়ার কয়েকজন দিল্লী সংবাদদাতার সঙ্গে বেশ কিছুদিন ছিলাম। একই গাড়িতে করে আমরা কয়েকদিন চষে বেড়িয়েছি গোটা উত্তর প্রদেশ। তখন দেখেছি গল্প লিখতে কত ওস্তাদ দাদা’রা। এ ব্যাপারে অবশ্য তাদের যুক্তি ছিল রিপোর্টে একটু রং-রক্ত-মাংস না মেশালে পাঠক পড়েনা! আগে পাঠককে পড়াতে হবে। কিন্তু আবার একটি কারণে বর্তমানের রিপোর্টকে সত্য মানতে ইচ্ছাও করে! ক’দিন আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অফিস করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন অনেক কথার মধ্যে একটি কথা ছিল, প্রতিবেশিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবেশী বলতে আমাদের ভারত-নেপাল-ভূটান আর বার্মা। এরমধ্যে একলা চলো বার্মাওয়ালাদের সঙ্গে  সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার সুযোগ সীমিত। নেপাল-ভূটান মানে ‘যাহা ভারত বলিবে তাহা’! আর ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে প্রধানমন্ত্রীর বলে দেয়া লাগেনা। দাদা’রা একটু হ্যাঁ বললেই আহা! এটি আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে কথা না। বিএনপি-জাতীয় পার্টি এরা যে যখন ছিল, তাই হয়েছে!
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল সবচেয়ে কম সময়। কিন্তু সো-কল্ড ভারত বিরোধী তথা অ’আওয়ামী লীগ দলগুলোই ক্ষমতায় বেশি ছিল। কিন্তু তাদের আমলেই বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্যের বাজারে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে ভারতীয় লক্করঝক্কর গাড়ির এক চেটিয়া বাজার করে দিতে দেশে জাপানি রি-কন্ডিশন্ড গাড়ির আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। যতদূর জানি ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ঠান্ডা মাথায় বাংলাদেশে ব্যবসা করতে বিএনপির মতো একটি সো-কল্ড ভারত বিরোধী দলকেই ঢাকার ক্ষমতায় দেখতে চায়। কিন্তু গত নির্বাচনে এর হিসাবে একটু গড়বড় হয়ে গিয়েছিল! এরমাঝে দশ ট্রাক অস্ত্রের চোরাচালান ধরা পড়ে যাওয়াও ছিল একটি কারণ! ভারতীয় চরমপন্থীদের জন্য অস্ত্রগুলো আনা হয়েছিল। এখনতো কোর্টে সাক্ষী-আসামিদের কথাবার্তায় এরসঙ্গে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতি মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামিসহ অনেকের সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসছে! এমনকি তাদের সাধের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুকও বাবরকে দোষ দিয়ে কোর্টে বক্তব্য দিয়েছেন! আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে ভারতের সম্পর্ক তুলনামূলক ভালো এতে কোন সন্দেহ নেই। এটি মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নানান ঘটনায় প্রতিষ্ঠিত। সর্বশেষ ঢাকায় যে একটি সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, এর পিছনেও ভারতীয় ভূমিকা ছিল। পনের আগস্টের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার আগেও ভারতীয়রা বঙ্গবন্ধু সরকারকে সতর্ক করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা আমলে নেননি। আসলে বাঙ্গালি কেউ যে তাকে হত্যা করতে পারে, এমন ধারনা-বিশ্বাসটিও তার মধ্যে ছিলনা! সে কারনে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের মতো একটি সাদামাটা অরক্ষিত বাড়িতে থাকতেন জাতির পিতা দেশের রাষ্ট্রপতি! কিন্তু এবার শেখ হাসিনা ভারতীয় বার্তাকে আমল দিয়েছেন। অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাটিরও সে কারণে বিনাশ হয়েছে অঙ্কুরেই! কিন্তু তুলামূলক ভালো সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার কী দেশের স্বার্থ ভারতের কাছ থেকে আদায় করতে পেরেছে বা না পারছে? এর সোজা উত্তরটি হলো না। সীমান্ত হত্যা বন্ধ আর তিস্তার পানির ব্যবস্থা করতে না পারাটা এরমাঝে উল্লেখযোগ্য ব্যর্থতা। এর কারণে তিন বিঘা করিডোর যে এখন চব্বিশ ঘন্টা খোলা থাকেম দহগ্রাম-অঙ্গারপোতার মানুষেরা যে যেকোন সময়ে দেশে আসতে-যেতে পারেন, দীর্ঘদিনের ঝুলানো সমস্যাটির সুরাহা সাফল্যটিও কেমন ম্লান হয়ে আছে! সীমান্ত হত্যা নিয়ে অনেকে একতরফা কথাবার্তাও বলেন। অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, চোরাচালানি এসব কারণে আমাদের লোকজন অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাওয়া-আসার চেষ্টা করেন, এসবতো সত্যি। যশোর-সাতক্ষীরা সীমান্তের দরিদ্র একজন মানুষ কাজের জন্য ঢাকা আসতে যে টাকা লাগে, এরচেয়ে কম টাকায় সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতা-দিল্লী চলে যেতে পারে। বা এপারের চেয়ে ওপারে তুলনামূলক কাজের সুযোগটিও বেশি। আত্মীয়-স্বজনও আছেন। দেশের অবস্থার জন্য কাজের আশায় মানুষ শুধু ভারতে না অবৈধপথে নানা দেশেও যাবার চেষ্টা করে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঢুকতে গিয়ে সাগরে তলিয়ে বা নানাভাবে মারাও পড়ে। ঢাকায় একবার এক স্বপ্নবিলাসী যুবক বিমানের চাকার খোলের ভিতর ঢুকে বিদেশ যাবার চেষ্টা করেছিল। বিমানটি আকাশে হিমাঙ্কের এলাকায় চলে যাবার পর ওই অবস্থায় ওই খোলের মধ্যেই তার করুন মৃত্যু হয়। সৌদি আরবে নামার সময় চাকা নিচে নামতে গেলে খোলের ভিতর থাকা লাশটি পড়ে রানওয়েতে! ঢাকার বিমান বন্দরের নিরাপত্তাসহ নানাকিছু নিয়ে এ নিয়ে তখন হৈ চৈ হয়েছিল। মানব পাচার বা উন্নত একটি জীবনের আশায় মানষের এমন যে কোনভাবে দেশ ছাড়ার প্রবণতা-চেষ্টার বিষয়টি শুধু বাংলাদেশ না, সারা দুনিয়ারই সমস্যা। কিন্তু এই অনুপ্রবেশ রুখতে ভারতীয়রা একটি বন্ধু রাষ্ট্রের সীমান্তে গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ড চালাবে এটা কোন সভ্য দেশের কাজ হতে পারেনা। কোন আন্তর্জাতিক আইনই এটি অনুমোদন করেনা। ইন্দোনেশিয়া থেকে ছোট ছোট ইঞ্জিন নৌকায় উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে সারা বছরই লোকজন অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছার চেষ্টা করে। বোট পিপল নামের এ বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বিরোধীদল সব সময় অভিযোগ করে সরকারি দলের দূর্বলতার কারনে বোট আসা শুধু বাড়ছে। কমছেনা। মানব পাচারকারীদের হাত ধরে এসব বোটে যারা রওয়ানা দেয়, তারা লাইফ জ্যাকেট পরে থাকে। এরপরও নানা সময়ে সাগরে নৌ দূর্ঘটনায় প্রতিবছর যে কত মানুষের সলিল সমাধি হয়! তবে এমন বোট পিপলকে অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রসীমায় পেয়ে তাদের উদ্দেশে গুলি চালায় না অস্ট্রেলিয়ান নৌবাহিনী। এটা এদেশে কল্পনাও করা যায়না। এমন বোট ধরা পড়ার পর বোটে থাকা লোকজনকে নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ক্রিসমাস আইল্যান্ড নামের একটি দ্বীপের ডিটেনশন সেন্টারে। সেখানে আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদন জমা থেকে শুরু করে খুঁটিনাটি নানা কিছু লম্বা সময় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার আইনটি আবার এমন যে, কোন একজন যদি তার কাছে পৌঁছে প্রমাণ করতে পারে, দেশে ফিরলে রাজনৈতিক-গৃহযুদ্ধ বা যৌক্তিক কারণে তার বা তাদের জীবন বিপন্ন হবে, তাহলে এ মানবিক রাষ্ট্রটি তাকে আশ্রয় দিতে বাধ্য। কিন্তু এ বিষয়গুলোর সত্যতা তারা সংশ্লিষ্ট দেশে নিজেরা তদন্ত করে। যেমন বাংলাদেশের কেউ এসে এমন আশ্রয় চাইলে তা ড. কামাল, ড. জহিরের বা এ পর্যায়ের কোন প্রতিষ্ঠিত ল’ফার্মের মাধ্যমে তারা এর সত্যতা তদন্ত করায়। এসব কাজে এরা প্রতিবছর শত শত মিলিয়ন ডলার খরচ করে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের কাজ পেতে এ প্রতিষ্ঠানগুলো এসব কেস শতভাগ নিষ্ঠা-বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে করার চেষ্টা করে।
কিন্তু ভারততো গড়পড়তা আমাদের মতোই একটা দেশ। ভারতীয়রাও এভাবে অস্ট্রেলিয়া আসার-থাকার চেষ্টা করে। অস্ট্রেলিয়ানদের মানবিকতা আমরা ভারতের কাছে আশা করতে পারিনা। প্রথমে যেটা চেষ্টা করতে পারি, তাহলো আমাদের লোকজন যাতে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা না করে সে ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা। কিন্তু কে তা করবে? রাষ্ট্রতো এই মানুষজনকে কাজ দেবার গ্যারান্টি দেবেনা, বা তার সে সামর্থও নেই। যে দেশে বছরের পর বছর ধরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি সব আমলে ভারতীয় গরু চোরাচালান হয়ে আসে, গরু চোরাচালানের বখরা সীমান্ত থেকে ঢাকা পর্যন্ত রাজনৈতিক-প্রশাসনিক পর্যায় পর্যন্ত ভাগাভাগি হয়, ভারতীয় গরু না এলে আমাদের মাথা নষ্ট(!), মাংসের বাজার চড়ে, মুসলমানি্ত্ব-কুরবানি, এসব ঠিক থাকেনা, সেখানে সীমান্তে অনুপ্রবেশ-চোরাচালান বন্ধ হবে, এমন আশা করাটাই বাতুলতা মাত্র। গরু চোরাচালানির সঙ্গে শুধু বিজেবি না,  বিএসএফও জড়িত। দু’পক্ষের সমঝোতা ছাড়া কাঁটা তারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে গরুর পাল বাংলাদেশে ঢুকতে পারেনা। সর্বশেষ সীমান্তে আমাদের যে মানুষটিকে ল্যংটা করে পিটানো নিয়ে আমরা চিল্লা-চিল্লি-প্রতিবাদ করেছি সেও কিন্তু একজন গরু চোরচোলানি। বিএসএফ’এর টাকার বখরা নিয়ে কোন সমস্যাকে কেন্দ্র করে নিঃসন্দেহে তেমন ঘটনা ঘটেছে। এখন আমাদের গরুর দরকার, কিন্তু আজ পর্যন্ত এ বিষয়টি বৈধভাবে আমদানির ব্যবস্থা করছিনা কেন? এসবের দায়দায়িত্ব কার?
আমরা কেন আজ পর্যন্ত ভারতকে বোঝাতে পারলাম না যে, একটা মানুষ সে অনুপ্রেশকারী বা সন্দেহজনক যাই হোকনা কেন, তাকে বা তাদেরকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা যায়না। ভারত যদি এটা না শুনতে চায়, এ এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে জাতিসংঘ আছে, আন্তর্জাতিক আদালত আছে। সমু্দ্রসীমা জয় করতে যদি আমরা ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারি, দেশের মানুষ হত্যাকান্ড বন্ধে একই কাজ করতে পারিনা কেন? এসব আর কাকে কী বলবো! দেশে আমরা র্যাব সহ নানা কিছুকে দিয়ে বিনাবিচারে মানুষ হত্যা করি, এসব হত্যাকাণ্ডকে দেশেরই একদল মানুষ সন্ত্রাসী মারা হয়েছে বলে বাহবা দেন, এর কারনেই কী সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধে আমাদের সরকারগুলোরও আন্তর্জাতিক আদালতে যাবার মুরোদ-নৈতিক জোর নেই? একবার ইসলামাবাদে পাকিস্তানি এক সাংবাদিকের এক প্রশ্নের তোপে থ’ বনে যেতে হয়েছিল! ডন পত্রিকার ওই সাংবাদিক আমাকে বলেন, একাত্তরে আমাদের আর্মি তোমাদের দু’লাখ নারীকে ধর্ষনের খোঁচা তোমরা সব-সময় আমাদের দাও। কিন্তু একাত্তরের পর থেকে এ পর্যন্ত তোমাদের দেশের মানব চোরাচালানিরা তোমাদের কত মেয়েকে করাচির পতিতালয়ে এনে বিক্রি করেছে, সে হিসাব কী তোমাদের কাছে আছে? জবাব দিতে পারিনি। আফগানিস্তানের সেই আব্দুর রহমানের মতো মনে মনে বলেছি, ইনহাস্ত ওয়াতাম। এইতো আমার জন্মভূমি।
এখন প্রশ্ন ইলিশ নিয়ে যদি হাসিনা-মমতার টেলিফোনে কথা থাকে, তখন কী তিস্তার পানির বিষয় উঠেছিল? ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে সরকার ঘোষণা দিয়ে যে সাফল্যটি দেখাতে চেয়েছিল, তার নাম তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি। মনমোহনের সফরের সময় এ চুক্তি হয়ে যাবে বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মূহুর্তে মমতা ব্যানার্জি বেঁকে বসাতে চুক্তিটিও আর হয়নি। আর হবে কীনা, কবে হবে, তাও কেউ জানেনা! মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী হবার পর প্রথা ভেঙ্গে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেকে এ নিয়ে বাঁকা কথা বললেও আমি সেটি ইতিবাচকভাবে দেখার চেষ্টা করেছি। আমাদের দরকার আদায় করা। জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী থাকতে গঙ্গার পানি চুক্তি সহ বাংলাদেশের অনেক কিছু আদায়ে সহায়তা করেছেন। জ্যোতি বসুদের চিন্তা ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে অনুপ্রবেশসহ নানা সমস্যা কমে আসবে। মমতার সে দূরদর্শী চিন্তা নেই বা তার তা দরকারও নেই। তার কাছে তার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বড়। তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে মমতার অবস্থানটি হলো বাংলাদেশকে পর্যাপ্ত পানি দেবার মতো পানি তিস্তায় নেই। পশ্চিমবঙ্গের পত্রপত্রিকা খেয়াল করি প্রতিদিন। নদীভরাট, নদী দুষণ, দখল, আমাদের দেশের সব সমস্যা সেখানেও সমান। এই গ্রীষ্মে তাদের নদীগুলোও সব শুকিয়ে সংকীর্ণ। এসব যেমন সত্য, তেমন সত্য হচ্ছে তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী। বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে নানা শাখা-প্রশাখায় মিশে এটি গিয়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগরে। কাজেই পানি আছে কী নেই এটা মাপার দায়িত্ব মমতার নয়। আন্তর্জাতিক নদীতে বাংলাদেশের প্রাপ্য হিস্যা বাংলাদেশকে দিতেই হবে। এটিই আন্তর্জাতিক আইন। ভারত এটি না মানলে সমুদ্র সীমার মতো এর বিরুদ্ধে যেতে হবে আন্তর্জাতিক আদালতে।
বাংলাদেশের নেতারা এসব নিয়ে ভারতের সঙ্গে শক্ত বাহাস, দর কষাকষিতেও যেতে চান না। এর একটি কারণও আছে। জিয়াউর রহমান একবার ফারাক্কা ইস্যু জাতিসংঘে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পানি আদায় করতে পারেননি। আসলে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ এমন সব জায়গাতেই ভারতীয় কর্মকর্তাদের সুস্পষ্ট দাপট। পেশাদারিত্বের অভাবে তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কথা বলা, পেপার ওয়ার্কের মতো লোকবলের অভাব আমাদের যথেষ্ট। আমাদের জাতীয় স্বার্থের বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য পর্যন্ত নেই। একদল আরেকদলের বিরুদ্ধে বিদেশিদের কাছে বদনাম-অভিযোগ করে। বিদেশিরাও এসবের সুযোগ নেয়। সে কারনে দেশের নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবার সাহসও যেন সরকারের নেই! পিঠ বুলিয়ে দাদা যদি দেন, দিদি যদি দেন, করে সব সময়! তিস্তা চুক্তি, পদ্মা সেতু, উড়াল রেল এসব কিন্তু আগামি নির্বাচনে এ সরকারকে ভোগাবে। প্রধানমন্ত্রীকে তাই বলি, দিদি’কে ইলিশ দেন, জামদানি দেন, দিদির দেশে বাড়ি বাড়ি জামাইষষ্ঠী মহাসমারোহে করতে সহায়তা করুন সমস্যা নেই, আগামি নির্বাচনে কিন্তু দিদি এসে ভোট দেবেন না। ভোট দেবে পাবলিক। ভোটের আগে যদি তিস্তায় পানি না আসে তাহলে কিন্তু নৌকা চলবেনা। জেগে ওঠা চরে ধানের আবাদ-ধানের শীষের বাহারি রং ফুটতে পারে। নদী শুকিয়ে থাকলে সে ধানও নৌকা বোঝাই আনতে পারবেন না। অতএব পানি আদায়ের যা করার তাড়াতাড়ি করুন। আপনাদের হাতে কিন্তু সময় খুব কম।

বিমানের কার্যক্রম নিয়ে গণশুনানি হবে
পার্লামেন্ট করেসপন্ডেন্ট
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা পর্ষদের কার্যক্রম বিশেষ করে চেয়ারম্যান বিষয়ে গণশুনানি করবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। একই সঙ্গে ওমানের বিমানের জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্তের জন্য পাঠাবে কমিটি। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির ৩৩তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
কমিটির সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান, মইন উদ্দিন খান বাদল, ফরিদুল হক খান, শফিকুর রহমান চৌধুরী, আসলামুল হক, শেফালী মমতাজ বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। কমিটির সভাপতিও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ওমান জিএসএ
ওমানে বাংলাদেশ বিমানের জিএসএ নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য দুদকে পাঠাবে সংসদীয় কমিটি। কমিটির বৈঠকে বিমানমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে গণশুনানি হতে পারে, অথবা বিষয়টি দুদকে পাঠানো যেতে পারে। পরে সংসদীয় কমিটি এ বিষয়টি দুদকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।’ কমিটির সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদল এ বিষয়ে বলেন, ‘সংসদীয় কমিটির তার মতো করে বিষয়টি তদন্ত করেছে। কিন্তু তদন্তের আরো গভীরে যেতে হলে দুদকই উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান।’ উল্লেখ্য, এয়ার আটলান্টার উড়োজাহাজ লিজ ও ওমানে জিএসএ নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে অভিযোগ করে সংসদীয় কমিটি। এই ঘটনা তদন্তে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি অভিযোগ করে, ৩২ বছর ধরে জিএসএ হিসেবে কাজ করতে থাকা মেসার্স ওমান ট্রাভেল ব্যুরো অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতি করেছে। ওই জিএসএর কার্যক্রম নিয়ে অডিটর জেনারেলের অফিস থেকে আপত্তি জানানো হলেও তা আমলে নেয়নি বিমান। ওমানস্থ বিমান অফিসের ২০০৮-২০০৯ ও ২০০৯-২০১০ অর্থবছরের হিসাব পরীক্ষা করে সিএজির নিরীক্ষাদল এ অভিযোগ করে। ‘বয়স্ক টিকিট ইস্যু করে শিশুর জন্য নির্ধারিত ভাড়া প্রদর্শন করায় বিমানের ক্ষতি ২৬ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫৩ টাকা’ শিরোনামে একটি অডিট আপত্তি উত্থাপন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটি একাধিকবার বিমানের বক্তব্য চাইলেও বিমান তাতে সাড়া দেয়নি।
‘বিমান পিএলসি তবে সরকারের অধীনে’
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ নাসির উদ্দিন আহমদকে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিমানের যে কোনো সমস্যার দায় প্রধান নির্বাহী হিসেবে তার। বৈঠকে বিমান মন্ত্রী ফারুক খান বলেছেন, ‘নতুন এমডিকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কিভাবে বিমানকে গতিশীল করা যায়, সেই বিষয়ে এমডিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে।’ বাদল এ বিষয়ে বলেন, ‘বিমানের সংকটের জন্য চেয়ারম্যান কোনোভাবে নিজের দায় এড়াতে পারে না। তিনি আজকের বৈঠকে কোম্পানি আইন পড়ে শুনিয়েছেন। তাতে মনে হয়েছে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন চেয়ারম্যান স্বাধীন।’ তিনি বলেন, ‘একটি কথা বুঝতে হবে। বিমান পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হলেও এটি শতভাগ সরকারের মালিকানাধীন কোম্পানি। বিমান কোনো সমস্যায় পড়লে সরকারের কাছেই টাকা চায়। উনি (চেয়ারম্যান) যদি মনে করেন স্বাধীনভাবে চলবে তাহলে ভুল করছেন। সরকারের কাছেই তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’ বাদল আরো বলেন, ‘বিমানের এমডিকে বলা হয়েছে, সংসদীয় কমিটি এ পর্যন্ত যত সুপারিশ দিয়েছে সেগুলোর যদি বাস্তবায়ন হতো তবে বিমানের সংকট তৈরি হতো না। তাছাড়া কমিটির ওভারসাইটের মধ্যে যত বিষয় পড়বে তার সবকিছুরই উত্তর দিতে হবে। বিমানের প্রত্যেক পয়সার হিসাব দিতে হবে।’ এদিকে সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের টেকনাফের নিলা টিলা অঞ্চলটির বৈচিত্রময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, সৈকত, নদী, দ্বীপ, নির্জনতা, পাহাড় ও বনভূমিকে পরিকল্পিত উপায়ে নান্দনিকভাবে সাজিয়ে হেলিপ্যাড, রোপওয়ে, বেলুন প্রভৃতির ব্যবস্থা করে পর্যটন পিপাসু বিদেশিদের জন্য এলাকাটিকে ট্যুরিস্ট জোন (Absolute Tourist Zone) হিসেবে গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়।
আগোরা থেকে সাবধান
মনোয়ারুল ইসলাম

 বিষাক্ত আম বিক্রি করছে আগোরা সুপার শপ। মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডির রাইফেলস স্কোয়ারের আগোরা সুপার শপের (রহিম আফরোজ সুপার স্টোর লিমিটেড) আমে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহারের প্রমাণ পায় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)। ভ্রাম্যমাণ আদালত আগোরার ম্যানেজার আশিফ মাহমুদকে (৩০) বাংলাদেশ বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ-২০০৫ অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এরপর উদ্ধারকৃত ১৬০ কেজি আম নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয়। তবে পেঁপে ও আপেলে কোনো রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাশেদুল কাদেরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের (বিএসটিআই) এর ভ্রাম্যমান আদালত আগোরাকে এ জরিমানা করেন। সেইসঙ্গে আদালত এ ধরনের সুপার শপে এ ধরনের বিষাক্ত ফল বিক্রির নিন্দা জানিয়ে সতর্ক করে দেন। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১ আগস্ট চট্টগ্রামে আগোরা সুপার শপে অভিযান চালিয়ে খেজুর ও আঙ্গুরে ফরমালিন পেয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিপুল পরিমাণ খেজুর ও আঙ্গুর উদ্ধার করে সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছিলো। সে সময়ের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ খবর প্রচারিত হয়েছে।  গত ৯ এপ্রিল বিএসটিআই’র আরেকটি অভিযানে আইডিয়াল এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড নারায়ণগঞ্জের একটি ভুয়া কোম্পানির পন্য নিজেদের সুপার শপে বিক্রি করায় আগোরা মগবাজার শাখাকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, কার্বাইড মেশানো এসব আম খেলে মরণব্যাধি ক্যানসারসহ মানবদেহে নানা ধরনের রোগ হতে পারে। বিষয়টি জেনেও কিছু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে এ কাজটি করে চলেছেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রচারণার অভাব ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না থাকায় প্রকাশ্যে এ কাজ চলছে। বর্তমানে পাকা আমের মূল্য বেশি। স্বাভাবিকভাবে আম পাকতে শুরু করলে বাজারে ব্যাপক হারে আসতে থাকবে। ওই সময় বর্তমানের চেয়ে আমের মূল্য অনেক কম হবে। এ কারণে অধিক মুনাফার লোভে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী জেনে-শুনে কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকিয়ে ব্রিক্রি করছেন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন আম ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, রসায়নিক ছিটালে সব আম একসঙ্গে পাকে ও রং হয় সুন্দর, যা সহজে আকৃষ্ট করে ক্রেতাদের। রসায়নিক ছিটানোর পদ্ধতি সহজ হওয়ায় কার্বাইডের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। ইভেন, রাইজার, প্রোলমং, প্রোফিট, হারভেস্ট ও রাইফেন নামের ইথেফন বাজারে পাওয়া যায়। জানা গেছে, সাধারণ আমের মুকুল স্থায়ী ও আম পুষ্ট করার জন্য এসব রসায়নিক ব্যবহারের কথা ওষুধের সঙ্গে থাকা ব্যবহারবিধিতে বলা হলেও ব্যবহার করা হচ্ছে আম, কাঁঠাল, কুল, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফল পাকানো এবং রং আকর্ষণীয় করার কাজে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, কোনো ফল গাছ থেকে পাড়ার পর ইথেফন ব্যবহার করা যাবে না। ইথেফন দিয়ে পাকানো ফল খেলে মানবদেহে নানা ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। এসব মানবদেহের জন্য খুব ক্ষতিকর। ইথেফন ও কার্বাইড ব্যবহার করে পাকানো আম খেলে আলসারসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে। এ ধরনের বিষাক্ত আম খেলে তাত্ক্ষণিক পেটের পীড়া ও ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। গর্ভবতী মা এ আম খেলে মা ও পেটের সন্তান এ সকল মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো, পেটের সন্তানটি হাবাগোবা ও বিকলাঙ্গ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। দেশে ব্যাপকহারে মরণ ব্যাধি হওয়ার এটা অন্যতম কারণ বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্বাইড মেশানোর দায়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ১০ মণ আম এবং ৪ কেজি আঙ্গুর ধ্বংস করা হয়। জনসম্মুখে কারবাইড মেশানো আম ও ফরমালিন মেশানো আঙ্গুর ধ্বংস করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাশেদুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও ধানমণ্ডি এলাকায় পরিচালিত হয়। এ এলাকার ২টি সুপার শপে সংরক্ষিত আম, আঙ্গুর, আপেল ও পেঁপেতে রাসায়নিকদ্রব্যের উপস্থিতি সনাক্তকরণের পরীক্ষা করা হয়। মোহাম্মদপুরের  প্রিন্স বাজার লিমিটেডে প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত আপেলে কোনো রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। কিন্ত আমে ক্যালসিয়াম কার্বাইডের উপস্থিতি এবং আঙ্গুরে ফরমালিন ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত বিশুদ্ধ খাদ্য অদ্যাদেশ ২০০৫ অনুযায়ী দুটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। পরে আটককৃত ৮০ কেজি আম ও ৪ কেজি আঙ্গুর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতে জনসম্মুখে ধ্বংস করা হয়। পরে সিটি করপোরেশনের সহায়তায় তা অপসারণ করা হয়। মঙ্গলবার দিনব্যাপী ঢাকা জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের (বিএসটিআই) উদ্যোগে  মোবাইল কোর্ট দু’টি পরিচালনা করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ এ অভিযানে সহযোগিতা করে। মৌসুমি ফলের সিজনে বিএসটিআই’র উদ্যোগে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চলবে বলে কর্মকর্তারা জানান। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোরারজী দেশাই বর্মণের নেতৃত্বে অপর একটি মোবাইল কোর্ট নগরীর মিরপুর-১০ ও শেওড়াপাড়া এলাকায় আমের আড়তে রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি পরীক্ষা করেন। এতে ৬টি প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত ফলে রাসায়নিকদ্রব্যের উপস্থিতি সনাক্তকরণের পরীক্ষা করা হয়। শুধুমাত্র শেওড়াপাড়া বাজারের মেসার্স বিল্লাল শস্য ভাণ্ডারে আমে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহারে প্রমাণ পাওয়া যায়। এর স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ বেলাল হোসেনকে (৪৫) বাংলাদেশ বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ-২০০৫ অনুযায়ী ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে ১০০ কেজি আম নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে জনসম্মুখে ধ্বংস করা হয়। পরে সিটি করপোরেশনের সহায়তায় তা অপসারণ করা হয়। একই আদালত মিরপুর ১০ নম্বরের ভাই ভাই স্টোর, রেজাউল ফকির ফল ভাণ্ডার ও ফারুক স্টোরে পরীক্ষা করে কার্বাইড মেশানোর প্রমাণ পাননি। শ্যাওড়াপাড়ার মহিউদ্দিন ফল ভাণ্ডারেও কারাবইড পাওয়া যায়নি। তবে আদালত এসব দোকানের পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন।
এফবিসিসিআই’র ৪৪৮ দফা সুপারিশ প্রস্তাব
সোহেল রহমান


 আসন্ন জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে বাজেটে অন্তর্ভূক্তির জন্য ৪৪৮ দফা সুপারিশ প্রস্তাব পেশ করেছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এরমধ্যে আমদানি শুল্ক সংক্রান্ত ১৯৪ দফা (সহায়ক নীতিমালা সংক্রান্ত ৭ দফাসহ), মূল্য সংযোজন কর সংক্রান্ত ১০৭ দফা ও আয়কর সম্পর্কিত ১৪৭ দফা প্রস্তাব রয়েছে। গত ১৭ মে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও-এ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও এফবিসিসিআই-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির ৩৩তম সভায় এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
আমদানি শুল্ক সংক্রান্ত প্রস্তাব  
এফবিসিসিআই’র আমদানি শুল্ক সংক্রান্ত প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, শিল্প খাতের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও মৌলিক কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার ১ শতাংশ নির্ধারণ (বর্তমানে এটা আছে ৩ শতাংশ), দেশে উৎপাদিত হয় না এমন মধ্যবর্তী কাঁচামাল/উপকরণ আমদানি শুল্কহার ৩ শতাংশ নির্ধারণ (বর্তমানে এটা আছে ৫ শতাংশ), দেশে উৎপাদিত হয় এমন মধ্যবর্তী কাঁচামাল ও অতি প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানি শুল্কহার ১২ শতাংশ (বর্তমানে অন্তবর্তী কাঁচামালের ওপর শুল্কহার রয়েছে ১২ শতাংশ), তৈরি পণ্য ও বিলাস জাতীয় ভোগ্যপণ্যে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক নির্ধারণ এবং এর সঙ্গে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ও ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (রেগুলেটরি ডিউটি) অব্যাহত রাখা (বর্তমানে তৈরি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং শুধুমাত্র ২৫ শতাংশ স্তরের আওতাভুক্ত তৈরি পণ্য ও বিলাস দ্রব্যের ওপর ৫ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ রয়েছে)। উল্লেখ্য, বর্তমানে শিল্পের অনেক কাঁচামালের শুল্ক স্তর ২৫ শতাংশ বা ১২ শতাংশ নির্ধারিত আছে। অন্যদিকে আমদানিকৃত তৈরি পণ্যের শুল্ক হারও ১২ শতাংশ। এসব পণ্য চিহ্নিত করে শুল্ক হার এবং এইচএস কোডের অসামঞ্জস্যতা দূর করা প্রয়োজন বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে। উপরোল্লিখিত আমদানি শুল্ক সংক্রান্ত এসব প্রস্তাবের সপক্ষে বলা হয়েছে, বাণিজ্য উদারিকরণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার চাপে গত কয়েক বছরে তৈরি পণ্যের আমদানি শুল্কহার ১৫০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের কথা বলে শিল্পের মৌলিক কাঁচামালের শুল্কস্তর সে অনুপাতে হ্রাস করা হয়নি। দেশের বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতার স্বার্থে শিল্পের কাঁচামালের শুল্ক স্তর শূণ্য নির্ধারণ করা উচিত। তা সত্ত্বেও দেশের উন্নয়ন ও রাজস্ব আহরণের স্বার্থে এ হার ১ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় শিল্প সংরক্ষণ ও শিল্পায়নের স্বার্থে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ও আমদানিকৃত পণ্যের শুল্ক পার্থক্য ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে রাখা, মিথ্যা ঘোষণা ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করে সঠিক শুল্কায়নের জন্য বন্দরগুলোতে স্ক্যানার স্থাপন, কাল্পনিকভাবে শুল্কায়নের মাধ্যমে বৈষম্যমূলক শুল্ককর আরোপ না করে যুক্তিসঙ্গতভাবে শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ এবং ইটিপি স্থাপনের প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ও যন্ত্রপাতি শুল্কমুক্ত আমদানির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিধিমালা সংশোধন, রাজস্ব সংক্রান্ত অনিষ্পন্ন মামলাসমূহ নিষ্পত্তির জন্য নিরপেক্ষ রিভিউ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে রিভিউ কমিটি পুনর্গঠন ও মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ‘কেন্দ্রীয় শুল্ক মূল্যায়ন কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মূল্য সংযোজন কর সংক্রান্ত প্রস্তাব  
মূল্য সংযোজন কর সংক্রান্ত (মূসক) প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিক্রয় মূল্য থেকে উপকরণ মূল্য বাদ দিয়ে মূল্য সংযোজিত অংশের ওপর মূসক প্রদেয় হবে। মূসক শুধুমাত্র পণ্যের মোট বিক্রয় বাবদ প্রাপ্তির মূল্য সংযোজিত অংশের ওপর প্রযোজ্য হবে। আমদানি পর্যায় ছাড়া অন্য কোনো পর্যায়ে রেয়াত ছাড়া সর্বমোট প্রাপ্তির ওপর মূসক প্রযোজ্য হবে না। মূসক ক্রেতা কর্তৃক ক্রয় মূল্যের ওপর পরিশোধিত হবে। কোনো পণ্যের বিক্রয় মূল্য ১০০ টাকা হলে ক্রেতাকে ১০০ টাকার সঙ্গে মূসক বাবদ অতিরিক্ত অর্থ বিক্রেতাকে পরিশোধ করতে হবে।  যেসব পণ্য আমদানিতে মূসক নেই সেসব পণ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনেও মূসক মওকুফ করা, সকল উৎপাদনমুখী খাতে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার, ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানা-ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর (দোকানসহ) বার্ষিক লেনদেন ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূসক অব্যাহতি প্রদান, ৬০ লাখ টাকা থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ২ শতাংশ এবং ২ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ৩ শতাংশ হারে মূসক নির্ধারণ।  এছাড়া ইজারাদার-এর ওপর আরোপিত মূসক প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।
আয়কর সম্পর্কিত প্রস্তাব
আয়কর প্রস্তাবে ব্যক্তিগত করমুক্ত সীমা ও বিদ্যমান আয়কর হার পুনঃনির্ধারণ এবং কর্পোরেট করহার পুনঃনির্ধারণসহ আয়কর সম্পর্কিত নীতিগত ৭ দফা মৌলিক প্রস্তাব করা হয়েছে।
‘চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশেরও অধিক এবং জীবনযাত্রার ব্যয় আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ’ উল্লেখ করে এফবিসিসিআই’র প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ প্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা উচিত। একই সঙ্গে মহিলা করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত সীমা বিদ্যমান ২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা এবং বয়স্ক (৬৫ বছর) ও প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে করমুক্ত সীমা বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা উচিত।
প্রস্তাবে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়কর হার শূণ্য, পরবর্তী সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ কর নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ন্যূনতম করের পরিমাণ ২০০ টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ২শ’ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কর্পোরেট কর প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘দেশে বিদ্যমান কর্পোরেট কর হার অনেক বেশি, এটা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক আয় প্রদর্শনে করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে। এ হার সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হলে করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো অধিক কর প্রদানে এগিয়ে আসবে’। প্রস্তাবে কর্পোরেট কর হার গড়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে আনার সুপারিশ করে বলা হয়েছে, ‘উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান ও ট্রেডিং কোম্পানি উভয়ক্ষেত্রে একই হারে করারোপ করা যুক্তিযুক্ত নয়। উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানের জন্য তুলনামূলকভাবে নিম্ন হারে করারোপ করা অধিক যুক্তিসঙ্গত’। 
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে পাবলিক ইস্যুর হার অনুযায়ী বিদ্যমান তিন স্তরের কর্পোরেট কর তুলে দিয়ে পাবলিক ইস্যুর পরিমাণ ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা এবং বিদ্যমান কর হার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিদ্যমান কর্পোরেট কর অনুযায়ী মোবাইল কোম্পানিগুলো ৪৫ শতাংশ ও সিগারেট কোম্পানিগুলো ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর দিচ্ছে। ‘সিগারেট স্বাস্থ্যহানিকর ও পরিবেশ বান্ধব নয় বিধায় এর ওপর আরোপিত কর মোবাইল কোম্পানিগুলোর তুলনায় কম না হওয়াই যুক্তিযুক্ত’ বলে মনে করে এফবিসিসিআই।
অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- কোম্পানি প্রতিষ্ঠার প্রথম দুই বছর ১০০ ভাগ আয়কর মুক্ত রাখা, বিদ্যমান কর অবকাশ ও স্বল্পহারে করারোপ সুবিধার আওতা বাড়ানো এবং এর মেয়াদ জুন ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানো, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও শিল্পায়নের স্বার্থে শিল্পের মৌলিক কাঁচামালের ওপর থেকে অগ্রীম আয়কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা কিংবা বিদ্যমান ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা, টিআইএন-ধারীদের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ণ প্রদান বাধ্যতামূলক করা।
নীতিগত মৌলিক প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- ইংরেজী ভাষায় লিখিত ১৯৮৪ সালের বিদ্যমান আয়কর আইন করদাতাদের কাছে দুর্বোধ্য, জটিল ও হয়রানিমূলক। এটাকে সহজবোধ্য বাংলায় রূপান্তর করা, মূলধনী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা এবং সম্পদ ও মূলধন পাচার প্রতিরোধ করা, এনজিও খাতে সংগৃহীত মূলধন ও তাদের পরিচালিত বাণিজ্যিক কার্যক্রম করের আওতায় আনা ইত্যাদি।
বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য ফান্ড গঠন করতে হবে  : আসিফ ইব্রাহীম
তাহজিব হাসান 
বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের জন্য ফান্ড গঠনের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কামার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম।
সোমবার মতিঝিলের ডিসিসিআই কার্যালয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি জানান। এ সময় বাজেটে বিনিয়োগ খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া, শিল্প অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন তিনি।
বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ বলে মনে করে আসিফ ইব্রাহীম বাংলানিউজকে বলেন, ``দেশের শিল্প অবকাঠামো উন্নত করতে হবে। আমাদের বিনিয়োগের চমৎকার সুযোগ রয়েছে। তৈরি পোশাক খাতে চীন ১৩৯ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে থাকে। আর আমাদের রফতানি হচ্ছে ১৮ বিলিয়ন ডলার।`` তিনি বলেন, ``বিভিন্ন কারণে চীনের তৈরি পোশাকের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তাই চীন থেকে যারা তৈরি পোশাক ক্রয় করতেন তারা এখন বিকল্প জায়গা খোঁজ করছেন। এই বিকল্পের সবচেয়ে চমৎকার স্থান হতে পারে বাংলাদেশ।`` তিনি আরও বলেন, ``এই খাতের বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের রফতানি বেড়ে ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে। তাই এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে।`` এই ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানির ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ``চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দরের উন্নয়নসহ জাহাজে পণ্য ওঠানামা করার প্রক্রিয়া সহজ ও আধুনিকায়ন করতে হবে। ঢাকা-চট্টগ্রামের হাইওয়ের আট লেন তৈরির কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।``  আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ``এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশে বেকারত্ব সমস্যার সমাধান হবে।`` বিনিয়োগের নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ``আমাদের জাতীয় সঞ্চয় ২৪ শতাংশ, জাতীয় বিনিয়োগ ২০ শতাংশ। বিশ্বের খুব কম দেশই আছে যেখানে সঞ্চয়ের চেয়ে বিনিয়োগ কম। এই অবস্থাটাকে অর্থনীতির ভাষায় প্যারাডক্স অব থ্রিফট বলা হয়। আমরা প্যারাডক্স অব থ্রিফটের মধ্যে আছি। আমাদের কাছে সঞ্চিত অর্থ আছে। তবে আমরা বিনিয়োগ করছি না।`` এই প্যারাডক্স অব থ্রিফট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ``প্যারাডক্স অব থ্রিফট থেকে বের হয়ে আসার জন্য সবার প্রথমে ব্যাংকে সঞ্চিত টাকার ওপর সুদের হার কমাতে হবে। কারণ কেউ যদি বাসায় বসে ব্যাংকে স্থায়ী সঞ্চয়পত্র খুলে ১২/১৪ শতাংশ সুদ পায়। তাহলে কেন ওই ব্যক্তি বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে যাবে।``
দেশীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজেটে একটা ফান্ড বরাদ্দের দাবি জানিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘যারা বিভিন্ন শিল্প খাতে নিয়মিত উৎপাদন করছে। যাদের পূর্ববর্তী রেকর্ড ভালো অর্থাৎ ব্যাংক ঋণ নিয়ে সময়মতো পরিশোধ করছে, ঋণ খেলাপি হচ্ছে না। তাদের প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে। একই সাথে এক হাজার থেকে দুই হাজার কোটি টাকার একটা ফান্ড তৈরি করতে হবে। এই ফান্ড থেকে প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। মোট কথা হচ্ছে আমাদের অবশ্যই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ না বাড়ালে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এসব ব্যবস্থা না নিলে বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে না।’
বাজেটে কর ব্যবস্থা কেমন হলে তা বিনিয়োগবন্ধব হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কর বৃদ্ধি করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। বরং রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য করের আওতা বাড়ানো উচিৎ। প্রত্যেক টিন নম্বরধারীর জন্য একটা সর্বনিম্ন আয়কর নির্ধারণ করা উচিৎ। এটা পাঁচ হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে হতে পারে। যদি দশ হাজার টাকা হয় তাহলে টিন নম্বরধারীদের কাছ থেকেই তিন হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে। নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়ে টিন নম্বরধারীর সংখ্যাও বাড়ানো যেতে পারে।’

বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি আসছে বাজেটে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়া হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভর্তুকি দেওয়ার পর, পরবর্তী সময়ে সেই ভর্তুকি বাদ দিয়ে দেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট দ্রব্যে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তাই উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায়। একই সঙ্গে দ্রব্যটি মূল্যও বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ ভর্তুকি কমিয়ে দিলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।`` 
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ``রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে দেশের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আর আসবে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশ অন্ধকার পরিস্থির দিকে চলে যাবে। এতে দেশ দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই ক্ষতি পোষাতে অনেক সময় লেগে যাবে। অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।``
এই অস্থিরতা থেকে মুক্তির জন্য আপনার পরামর্শ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘সংলাপ ছাড়া আর কোনও সমাধান নেই। সংলাপে বসতে হবে। আলোচনা করতে হবে। প্রধান দুই নেত্রীকে একত্রে বসতে হবে।’
এর আগেও বড় দুই দলের শীর্ষস্থানীয় নেতার মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তারপরও এর কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধান হয়নি। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই সময়ের অবস্থা আর বর্তমান অবস্থা আলাদা। ওই সংলাপ থেকে আমাদের একটা শিক্ষা নিতে হবে। আর এই শিক্ষা নিয়েই আমাদের সংলাপে বসতে হবে। দেশের স্বার্থে সমস্যার বাস্তব সমাধান করতে হবে।’ বাজেট নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা সর্ম্পকে তিনি বলেন, ``এমন একটা বাজেট হওয়া উচিৎ। যে বাজেট ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি রোধ করতে পারবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্নরকম প্রণোদনা দেওয়া, ট্যাক্স হলিডের মেয়াদ বৃদ্ধি ইত্যাদি বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।``
শর্ত মানলেই কেবল নতুন দলের নিবন্ধন: জাবেদ আলী 
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী বলেছেন, ‘শর্ত মেনে আবেদন করলে যে কোনো সময় অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধনের সুযোগ পাবে। এ ক্ষেত্রে নিবন্ধনের নীতিমালা মেনে দলগুলোকে আবেদন করতে হবে।’ বিএনপি নেতৃত্বাধীন নবগঠিত ১৮ দলীয় জোটের কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয়। এ ক্ষেত্রে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কী দলগুলো নিজস্ব প্রতীকে ভোটযুদ্ধে নামার সুযোগ পাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে তিনি এ কথা বলেন। জাবেদ আলী বলেন, ‘অবশ্য এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনো আসেনি।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন মেনে চলা হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিটি জেলায় কার্যালয় থাকতে হবে। এছাড়া অন্যান্য আরও যে শর্ত রয়েছে তা মানতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাকে অবশ্যই কমিশনে নিবন্ধিত হতে হবে।’ উল্লেখ্য, গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০৮ এর বিধান অনুযায়ী বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৮টি। আইন অনুযায়ী এই দলগুলোর মনোনীত কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের আগে কমিশন গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে থাকে। তবে বর্তমান কমিশন এখনও তা করেনি। নিবন্ধীকরণের উদ্দেশ্যে কোনো রাজনৈতিক দলকে আবেদনের সঙ্গে (ক) দলের নাম ও প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা; (খ) দলের গঠনতন্ত্র; (গ) দলের নির্বাচনী ইস্তেহার, যদি থাকে; (ঘ) দলের বিধিমালা, যদি থাকে; (ঙ) দলের লোগো এবং পতাকার ছবি; (চ) দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি বা সমমানের কমিটির সব সদস্যের নাম এবং পদবী; (ছ) দলের নামে রক্ষিত ব্যাংকের নাম, একাউন্ট নম্বর ও সর্বশেষ স্থিতি; (জ) দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ; (ঝ) দলের নিবন্ধনের আবেদন করার জন্য ক্ষমতা প্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুকূলে প্রদত্ত ক্ষমতাপত্র; (ঞ) নিবন্ধন ফি বাবদ সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বরাবরে জমাকৃত অফেরতযোগ্য টাকার ট্রেজারি চালানের কপি ইত্যাদি জমা দিতে হবে। এছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ দেশের মোট জেলার অন্যুন দশ জেলায় জেলা কমিটিসহ কার্যকর জেলা দফতর এবং অন্যুন পঞ্চাশটি উপজেলা বা ক্ষেত্রমতো মেট্রোপলিটন থানায় অন্যুন দুইশ ভোটার সদস্য হিসেবে দলের তালিকাভুক্ত থাকার প্রামাণিক দলিলও জমা দিতে হবে।
নিজেদের তৈরি আইনেই ফেঁসে গেছে বিএনপি 
মবিনুল ইসলাম

২০০২ সালে নিজেদের তৈরি করা ‘আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনেই ফেঁসে গেছে বিএনপি। আইনটি তৈরি করার পর তখন আওয়ামী লীগ এটিকে কালো আইন আখ্যা দিয়ে বিরোধিতা করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এ আইনের মেয়াদ ছিল ২০০৪ সাল পর্যন্ত। এরপর বিএনপি সরকার দুই বছর করে আইনটির মেয়াদ পর্যায়ক্রমে ২০০৬, ২০০৮ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০১০ সাল পর্যন্ত বাড়ায়। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে ২ বছর ও চলতি বছরে আরও ২ বছর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ায়। এর ফলে আইনটি ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের চার্জশিট গ্রহণের শুনানিকালে আসামিদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক দাবি করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘আইনটি আমিই করেছিলাম। আমি জানি আইনটির কোথায় কি আছে। অভিযোগ আমলে নেওয়ার আগে আসামিদের আত্মপক্ষ সর্মথনের সুযোগ দিতে হবে। আসামিদের আদালতে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করতে হবে।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণের শুনানিকালে মওদুদ আহমদের এই সরল স্বীকারোক্তি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের কাছে বেশ উপভোগ্য হয়েছে। এসময় কয়েক আইনজীবী মন্তব্য করেন, ‘নিজেদের তৈরি আইনেই ফেঁসে গেছে বিএনপি।’ উল্লেখ্য, ২০০২ সালে বিএনপি সরকারের সময়ে এ আইনটি করার সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ আইনমন্ত্রী ছিলেন। এ আইনের অধীনে দেওয়া মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জোটের ৩৯ জন নেতা বর্তমানে কারাগারে আছেন।
মালয়েশিয়া থেকে বছরে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আয় করা সম্ভব
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের সুযোগ সৃষ্টি হলে মালয়েশিয়া থেকে বছরে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আসবে। বর্তমানে মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো এ রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দুই বছর আগে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৫শ’ ৯৫ মিলিয়ন মার্কিন। মালয়েশিয়ায় প্রায় পাঁচ লাখ বৈধ বাংলাদেশি শ্রমশক্তির জন্য দেশে সহজে রেমিট্যান্স পাঠাতে আসন্ন ‘শোকেজ বাংলাদেশ-২০১২’ এ ব্যাংক ও রেমিট্যান্স সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুযোগ অবারিত করা হবে। এটি মালয়েশিয়ার কয়ালালামপুরের অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) মিলনায়তনে ‘শোকেজ বাংলাদেশ-২০১২’ আয়োজন সম্পর্কিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সহায়তায় বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনা সভায় ডিসিসিআই’র সভাপতি আসিফ ইব্রাহীমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, শিল্পসমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য সরকার দক্ষ বেসরকারি খাত গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে সরকারিভাবে শিল্প কারখানা স্থাপন না করে সরকার বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় নীতি, লজিস্টিক, অবকাঠামো ও বিপণন সহায়তা প্রদানের নীতি গ্রহণ করেছে। এতে আরো বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায়, এমসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নূরুল ইসলাম, মহাসচিব আলমগীর জলিল, মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নূরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এমসিসিআই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট ও মেলা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বাংলাদেশের শিল্পখাতে বিদ্যমান সম্ভাবনা তুলে ধরে দেশের ইমেজ ব্র্যান্ডিং এর জন্য এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের আবহমানকালের কৃষ্টি, সংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও শিল্প উদ্যোগ তুলে ধরা হবে। এ মেলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে সুসংহত পর্যটন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, কৃষিভিত্তিক শিল্পখাত গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
কেরানীগঞ্জের মানুষের ভরসাস্থল
বসুন্ধরা রিভারভিউ আদ-দ্বীন হাসপাতাল
মফিজুল সাদিক 
কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ আবাসিক প্রকল্পে বসুন্ধরা আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্র রোগির সংখ্যা বেড়ে চলেছে। কারণ এখানে অল্প টাকায় পাওয়া যাচ্ছে আধুনিক ও মানসম্মত চিকিৎসা। সবচেয়ে বড় কথা এখানকার মনোরম পরিবেশে মুগ্ধ হচ্ছে রোগিরা। বুসন্ধরা আদ্দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট। এর মধ্যে ২৫টি শয্যা হতদরিদ্রদের জন্য নির্ধারিত রাখা হয়েছে। এই শয্যায় ভর্ত্তিকৃত রোগীরা বিনা খরচে থাকা-খাওয়া, ঔষধ-পরীক্ষা ও ডাক্তারি পরামর্শ সুবিধা পাবেন। প্রসঙ্গত, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান হাসপাতালটিকে মেডিকেল কলেজ হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় মেডিকেল কলেজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মাত্র ২০ টাকায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ
বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান জানান, ইতোমধ্যেই এই হাসাপাতালটি সাধারণ মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। এখানে মাত্র ১০ টাকায় রেজিস্ট্রেশন, ২০ টাকায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ, ১২৫ টাকায় পেয়িং বেডের সুবিধা, ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় কেবিন, ভর্তি ফি দিনে ৩০০ রাতে ৪০০ টাকা, ভর্তি হওয়া সকল রোগীর জন্য বিনামূল্যে খাবার, ৮০০ টাকার মধ্যে স্বাভাবিক ডেলিভারি, ৪ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে ঔষধসহ সিজারিয়ান অপরেশন, ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় সাধারণ এক্স-রে, ৫০ টাকায় ইসিজি পরীক্ষা, ২৫০ টাকায় সাদাকালো আল্ট্রাসনো পরীক্ষার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
শিশু স্বাস্থ্য সেবা
শিশু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বহির্বিভাগ ও আন্তবিভাগে সুবিধাদির মধ্যে আছে টিকাদান, শিশুরবৃদ্ধির পরিমাপ, মারাত্বক অপুষ্ট শিশুদের ওষুধ ও খাবারসহ বিনামুল্যে চিকিৎসা। নবজাতক সেবা বিশেষ করে অপরিনত শিশুর জন্য ইনকিওবেটর, রেডিয়েন্ট হিটার ও ফটোথেরাপিসহ শিশুদের সব ধরনের অপারেশনের ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল মতিন বলেন, এখানে ভর্তি হওয়া শিশুদের সবাই ডায়রিয়া এবং স্বাস কষ্টের রোগী। মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে শিশুরা বেশিমাত্রায় অসুস্থ হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা অনেক কম খরচে আধুনিক মানসম্পন্ন চিকিৎসা দিচ্ছি। এ কারণে এখানে সব শ্রেণীর লোকের ভিড় বাড়ছে। তবে দরিদ্র রোগীর সংখ্যা বেশি বলে জানান তিনি। বিভিন্ন কারণে যারা সরকারি হাসপাতালে যেতে পারছে না কিংবা অন্যান্য প্রাইভেট হাসপাতালে খরচ যোগাতে ব্যর্থ, এ ধরনের রোগিরা এখানে আসছেন সেবা নিতে। কেরানীগঞ্জের উত্তর পানগাঁও থেকে এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ফারজানা আক্তার রুনা বলেন, দুইমাস আগে আমার পাঁচমাস বয়সী শিশুকে এখানে এনেছিলাম। অল্প খরচে সুচিকিৎসা পেয়েছি। যার কারণে আমার ননদ রাজিয়া খাতুনকেও নিয়ে এসেছি। হাসপাতালের পরিবেশ এবং সেবার মান অনেক ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা
বসুন্ধরা আদ্দ্বীন মডেকিলে কলজে হাসপাতালে মহিলা ও মাতৃস্বাস্থ সংক্রান্ত বহির্বিভাগ ও আন্ত‍ঃবিভাগ চিকিৎসা, গর্ভকালীন সেবা, প্রসবোত্তর সেবা, পরিবার পরিকল্পনা, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা, টিটি টিকা দান এবং স্বাভাবিক প্রসব ও সিজারিয়ান অপারেশনসহ সব ধরনের নিরাপদ প্রসবের আধুনিক ব্যবস্থা এখানে আছে। স্ত্রীরোগ ও ধাত্রী বিদ্যা বিভাগের সিনিয়র আরএমও ডা. নাজমা বেগম বলেন, গর্ভবতীদের জন্য সার্বিক চিকিৎসার ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। এখানে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য-পুষ্টি ও বার্থ প্লানিং সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হয়। গর্ভবতী মায়েদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তারা যেন ঘরে থেকে ঝুঁকি না নিয়ে ডেলিভারির কাছিয়ে আসার সময় অন্তত হাসপাতালে যোগাযোগ করেন।
পুরুষ-মহিলা ও শিশুদের অন্যান্য চিকিৎসেবাসমূহ
মেডিসিন ,সার্জারী,আর্থপেডিক্স,ইরোলজি ,চর্ম ,নাক কান গলা ,চক্ষু ,দন্তরোগ , ও ফিজিওথেরাপির সেবার সুবিধা থাকছে বসুন্ধরা আদ-দ্বীন মডেকিলে কলজে হাসপাতাল।
ধ্বংসপ্রায় দেশি শঙ্খশিল্প
আশরাফুল ইসলাম
অবৈধ পথে ভারত থেকে আসা শাঁখায় সয়লাব দেশি শাঁখার বাজার। এতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী দেশি শঙ্খশিল্প। বেকার হয়ে পড়ছেন শাঁখা কারিগর, নকশাশিল্পীসহ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। মারাত্মক জীবিকার সংকটে এসব পরিবারগুলো। ফলে বাধ্য হয়েই বিকল্প পেশায় চলে যাচ্ছেন অনেকে। ভারত থেকে চোরাই পথে শাঁখা আনায় যেমন বিঘ্নিত দেশি এ শিল্পের উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা, তেমনি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের অর্থনীতিও । সম্প্রতি দেশের শঙ্খশিল্পের সূতিকারগার রাজধানীর বিখ্যাত শাঁখারিবাজারে ঘুরে জানা গেছে, এ শিল্পের চলমান এসব দুরবস্থা। কেবল শাঁখারিবাজারেই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় শঙ্খশিল্পের বাজারগুলোতেও খোঁজ নিয়েও জানা গেছে একই চিত্র। মোমবাতি-আগরবাতি বেঁচেন কারিগরেরা! পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারের শাঁখা কারিগর প্রাণকৃষ্ণ নন্দী। এক সময় সারাদিন কাজের চাপে খাওয়ারও সময় পেতেন না। শাঁখা বিক্রেতাদের অর্ডারের মাল সময় মতো সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হতো তাকে। এখন দিন কাটে বসে থেকে। ব্যস্ত কারিগর প্রাণকৃষ্ণ এখন শাখারিবাজারেই আগরবাতি আর মোমবাতি বেঁচে কোনো রকমে সংসার চালান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে শ্রীলঙ্কা থাইক্যা কাঁচামাল আইতো। হাতে কাটা করাত দিয়া আমরা এখানেই বানাইতাম শাঁখা ও অন্যান্য জিনিস। আর এ্যাহন মাদ্রাজের বাতিল মাল আঠা লাগাইয়া পাবলিকগো বেঁচবার লাগছে। দুই দিন পরেই ভাইঙ্গা যায় এ শাঁখা। কাস্টমারগোর লগে এ লইয়া প্রায়ই বিবাদ বাধে।’ আরেক কারিগর শম্ভুনাথ ধর। জীবনের পুরোটা সময় কাটিয়েছেন শাঁখা তৈরির কাজ করে। তিনিও এ শিল্পের বর্তমান চলমান দুরবস্থার নানা কথা তুলে ধরেন। শাঁখারিবাজারের শাঁখাশিল্প বহু প্রাচীন হলেও শঙ্খশিল্পী কারিগর সমিতির গোড়াপত্তন হয় ১৯৮৭ সালে। আগে হাতে কাটা করাত দিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে শাঁখা ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরি হলেও সমিতি গড়ে ওঠার পর শাঁখারিবাজারে পরিবর্তন আসে। কারিগরেরা সমিতির অফিসে করাত জমা দিয়ে মেশিনে শাঁখা তৈরি শুরু করেন। আগে ৭০-৮০ জন কারিগর কাজ করলেও মেশিন আসার পর এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১৫-২০ জনে। এখানকার কারিগরেরা আগে প্রতিদিন এক হাজার জোড়া শাঁখা ও পলা সারাদেশে সরবরাহ করতেন। এখন এর দ্বিগুণ শাঁখা বিক্রি হলেও প্রায় সবটাই আনা হচ্ছে ভারত থেকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেই এসব শাঁখা ও এ জাতীয় অন্যান্য সামগ্রী আনা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শঙ্খ কারিগর অভিযোগ করেন, ভারতের যেসব শাঁখা ফাটা, ভাঙ্গা ও বিক্রির অযোগ্য, সেগুলোই জোড়া লাগিয়ে বাংলাদেশে বিক্রির জন্য পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশে। যেসব ব্যবসায়ী মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত তারাই মূলত: চোরাই পথে ভারত থেকে শাঁখা এনে দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ইতিপূর্বে কুরিয়ার সার্ভিসে ভারত থেকে শাঁখার সঙ্গে মাদক আনার সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটেছে বলেও কারিগররা জানান। প্রতি মাসে কমপক্ষে কোটি টাকার শাঁখা ভারত থেকে চোরাই পথে দেশে আসছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই জনসমক্ষেই অবৈধ পথে আনা ভারতীয় শাঁখা বিক্রি করলেও  সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেউ এসব বন্ধে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ শঙ্খ কারিগরদের। এক সময়ের সদা ব্যস্ত শঙ্খ কারিগর সমিতির অফিসটিতেও বর্তমানে নেই কোনো ব্যস্ততা। কাজ না থাকলেও কয়েকজন বসেই সারাদিন পার করে দেন এখানে। সব সময় ঘুরতে থাকা শঙ্খ কাটার মেশিনটিও অব্যবহৃত থাকতে থাকতে মরচে ধরে অকেজো হওয়ার প্রতীক্ষায়। কারিগররা জানান, ব্যবসায়ী ও শঙ্খশিল্পী মিলে শঙ্খশিল্পী কারিগর সমিতির ১৭৫ জন সদস্য থাকলেও ভারত থেকে নিন্মমানের শাঁখা ‍আনা শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যবসায়ীরা আর সমিতি ও কারিগরদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রাখছেন না। ‍শঙ্খশিল্পী কারিগর সমিতির সাধারণ সম্পাদক ভোলানাথ শূর, বর্তমানে নিজেও ভারত থেকে শাঁখা এনে ব্যবসা করছেন। তাই খুব বেশি আসেন না সমিতির অফিসে। এ বিষয়ে জানতে টেলিফোনে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
শাঁখারিবাজারের শাঁখা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মা মনসা, শূর প্রোডাকশন ইত্যাদি দোকানে গিয়ে ভারতীয় শাঁখা বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে বিক্রি করা শাঁখা কোথাকার জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে চাননি এসব ব্যবসায়ীরা।
শাঁখারিবাজারের প্রায় দোকানিই সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে অন্যজনকে দেখিয়ে দেন এসব বিষয়ে কথা বলতে।
আদিকথা
সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীদের অলঙ্কার ও ধর্মীয় উপাসনার উপকরণ হিসেবে শাঁখার ব্যবহার অতি প্রাচীন। বহু ঐতিহাসিকরা বর্ণনা করেছেন শঙ্খশিল্পের আদি ইতিহাস । বাংলাপিডিয়ার সংকলক শিপ্রা সরকার উল্লেখ করেছেন, ‘দাক্ষিণাত্যে প্রায় দু’হাজার বছর আগে থেকেই এ শিল্পের প্রচলন ছিল বলে জানা গেছে। তামিলনাড়ুর প্রাচীন রাজধানী কোরকাই এবং কায়েলের ভগ্নস্তুপ থেকে শঙ্খশিল্পের প্রাচীন নির্দশন আবিষ্কৃত হয়েছে।’ তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘মাদ্রাজ সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত শঙ্খশিল্পের নিদর্শন দেখে জেমস হরনেল বলেন যে, খ্রিস্টীয় ১ম-২য় শতকেই মহীশূর, হায়দ্রাবাদ, গুজরাট, কাথিয়াবার প্রভৃতি অঞ্চলে শঙ্খশিল্পের বিকাশ লাভ করেছিল। এর পরেই শঙ্খশিল্প সবচেয়ে বেশি প্রসার লাভ করে বাংলাদেশের ঢাকা শহরে এবং ক্রমে ঢাকাই হয়ে ওঠে ভারতবর্ষে শঙ্খশিল্পের প্রধান কেন্দ্র। ঢাকায় বল্লাল সেনের (১২শ শতক) আমল থেকে শঙ্খশিল্পের প্রচলন হয় বলে অনুমাণ করা হয়। শাঁখারি সম্প্রদায় প্রথমে বিক্রমপুরে বসতি স্থাপন করে। সতেরো শতকে মুগলরা ঢাকায় এলে শাঁখারিদের এখানে আনা হয়। তারা ব্যবসায়ের উপযুক্ত একটি এলাকা নির্ধারণ করে বসতি স্থাপন করেন, যার বর্তমান নাম শাঁখারিবাজার।’
দামদর
শাঁখারিবাজারে ভিন্ন ভিন্ন দাম ও ডিজাইনের শাঁখা বিক্রি হয়। এর মধ্যে সাধারণ শাঁখা ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০-১২০০ টাকার মধ্যে। নকশা করা শাঁখা ১৫০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত। নকশা করা শাঁখার মধ্যে ময়ূরমুখ শাঁখা, হাঁসমুখ শাখা, মকরমুখ শাঁখা বেশি আকর্ষণীয় ও চাহিদা সম্পন্ন। শঙ্খশিল্পের মূল উপকরণএকাধিক প্রজাতির সামুদ্রিক শঙ্খ। এগুলোর অন্যতম উৎসস্থল শ্রীলঙ্কার জাফনা ও ভারতের মাদ্রাজ। শাঁখা ও শঙ্খজাত অলঙ্কার তৈরির জন্য ব্যবহৃত শঙ্খের মধ্যে তিতপুটি, রামেশ্বরি, মতি-ছালামত, পাটি, গারবেশি, কাচ্চাম্বর, ধলা, রায়াখাদ, খগা, সুর্কিচোনা, ঝাঁজি, দোয়ানি, জাডকি, কেলাকর, তিতকৌড়ি, গড়বাকি, সুরতি, দুয়ানাপাটি, আলাবিলা উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে তিতকৌড়ি শঙ্খ সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের এবং আলাবিলকে নিন্মমানের শঙ্খ । হাতের শাঁখার মধ্যেও বিভিন্ন নামের শাঁখা রয়েছে। এর মধ্যে সাতকানা, পাঁচদানা, তিনদানা, বাচ্চাদার, সাদাবালা, আউলাকেশী উল্লেখযোগ্য। সৌখিনদের জন্য রয়েছে সোনা বাঁধাই শাঁখা।
এসবের মধ্যে টালি, চিত্তরঞ্জন, সতীলক্ষী, জালফাঁস, লতাবালা, মোটলতা, তাঁরপেচ ইত্যাদি। বিবাহিত হিন্দু নারীরাই মূলতঃ এসব শাঁখা ব্যবহার করলেও শখের বশে অন্য ধর্মের নারীরাও কদাচিৎ শাঁখা পরে করে থাকেন। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী থেকে শাঁখারিবাজারে সস্ত্রীক শাঁখা কিনতে এসেছিলেন খিলগাঁও গভ. স্কুলের গণিত শিক্ষক মৃদুল রায়। আধুনিক যুগে বিচিত্র সব অলঙ্কারের মাঝেও কেন শাঁখা-এমন প্রশ্নের জবাবে তার স্ত্রী মানসী রায় বলেন, ‘মূলতঃ ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই হিন্দু বিবাহিত নারীরা শাঁখা ব্যবহার করেন। এটা পড়লে স্বামীর অমঙ্গল হবে না, এমনটাই আমরা বিশ্বাস করি।’
শঙ্খের বিচিত্র ব্যবহার
শঙ্খ কেবল শাঁখা তৈরির ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় না। এর রয়েছে বিচিত্র ব্যবহারও। হাতের শাঁখা ছাড়াও শঙ্খের তৈরি ব্রেসলেট, ব্রুশ, ব্যাংগেল, ঘড়ির চেন, চুলের ক্লিপ, খোঁপার  কাঁটা, শঙ্খের মালা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সাম্প্রতিক সময়ে শঙ্খের পেপারওয়েট, সেপটিপিন, আতরদানি, ফুলদানি, এসট্রের ব্যবহারও লক্ষণীয়। বড় আকৃতির এক প্রকারের শঙ্খ হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও পানির সংমিশ্রণে উজ্জ্বল করে এর বহিরাবরণে নকশা এঁকে তৈরি করা হয় জলশঙ্খ। হিন্দুদের পূজানুষ্ঠানে জলশঙ্খে গঙ্গার পবিত্রজল রাখা হয়। অন্য এক ধরনের শঙ্খ ব্যবহৃত হয় পূজা ও অন্যান্য হিন্দু আচার অনুষ্ঠানে মঙ্গলধ্বনি করার ক্ষেত্রে।
মহাশুন্যে বিশ্বের প্রথম ব্যক্তিমালিকানাধীন খেয়াযান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশ্বের প্রথম বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজস্ব বাণিজ্যিক মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করলো যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস এক্স কোম্পানি। পৃথিবীর কক্ষপথে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে(আইসএসএস) মালামালবাহী ড্রাগন ক্যাপসুল প্রেরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হলো এই যুগান্তকারী অধ্যায়। ক্যাপসুলটিকে বহন করছে একটি স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ রকেট।
স্পেসএক্স এর আগে গত ২০১০ সালের জুনে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ফ্যালকন-৯ রকেট উৎক্ষেপণ করে। একই বছর তারা তাদের নির্মিত ড্রাগন ক্যাপসুলকে পরীক্ষমূলকভাবে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠায়। এর মাধ্যমে পৃথিবীর প্রথম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা একই সঙ্গে পৃথিবীর কক্ষপথে ক্যাপসুল পাঠিয়ে পৃথিবীতে সাফল্যজনকভাবে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ড্রাগন ক্যাপসুল একই সঙ্গে মালামাল এবং সাতজন মানুষ পরিবহনে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র ব্যতীত বিশ্বে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র রাশিয়া, জাপান এবং ইউরোপের স্পেস এজেন্সি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ‘আইএসএসে’ স্পেসশাটল বা খেয়াযান পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। এই উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মালামাল পরিবহণের কাজে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানোর যুগে প্রবেশ করলো মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। ধারণা করা হচ্ছে এখন থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাতায়াতের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা স্পেস শাটলের ওপর ওপর নির্ভর করবে নাসা।
সোমবারের এই সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মহাশুন্যে ফ্লাইট পরিচালনায় তাদের সক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হলো। গত ২০১১ সালে নাসা পৃথিবীর কক্ষপথে স্পেস শাটল অভিযানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করে। এরপর থেকেই পৃথিবীর অন্যান্য মহাশুন্য শক্তিগুলো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে তাদের ক্যাপসুল পাঠিয়ে আসলেও যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিজস্ব ক্যাপসুল পাঠায়নি। তবে এই স্পেস ফ্লাইটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেসশাটল প্রেরনে নতুন ইতিহাস তৈরি হলো। ধারণা করা হচ্ছে এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোই নাসাকে তাদের কাংখিত স্পেসশাটল বা  নভোখেয়াযান সরবরাহ করবে।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী নভোখেয়াযান নির্মাণে স্পেস এক্স ইতিমধ্যেই নাসার সঙ্গে প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন নভোখেয়াযান নির্মানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসার ফলে মহাকাশ গবেষণাখাতে প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের খরচ করা বিপুল পরিমান অর্থের সাশ্রয় ঘটাবে। স্পেস শাটল ‘ড্রাগন’ এবারের যাত্রায় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ বহন করছে। সেখানে অবস্থান করা ছয় নভোচারী ড্রাগনকে মহাকাশ স্টেশনে সংযুক্ত করবেন। সেখানে মালামাল নামিয়ে আবারো পৃথিবীতে ফেরত আসবে ড্রাগন। ড্রাগনের উৎক্ষেপণ শনিবার পূর্বনির্ধারিত থাকলেও রকেটের প্রধান ইঞ্জিনভাল্বে ত্রুটির কারণে এর যাত্রা স্থগিত করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক ‘স্পেসএক্স’র  মালিক যুক্তরাষ্ট্রের কোটিপতি তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবসায়ী এলোন মাসক। আগামী ২০১৫ সালের মধ্যেই মহাকাশে বেসরকারিভাবে প্রথম মনুষ্যবাহী খেয়াযান পাঠানোর প্রতিযোগিতায় তার কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের আরো বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
মা তোমাকে অনেক ভালোবাসি
আরিফুল ইসলাম আরমান

তোমাদের সবার কাছেই মা শব্দটি অনেক প্রিয়। শুধু তাই নয়, মাকে যে তোমরা সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসো তাও জানি। কারণ এই মায়ের হাত ধরেই তুমি এ পৃথিবীর আলো দেখেছ। তুমি যেখানেই থাকো না কেন ছোট্ট এই শব্দটি তোমাকে প্রতিমুহূর্তে মনে করিয়ে দেয় মা’র গভীর ভালোবাসার কথা। তোমাদের মতো আমিও মাকে ভালোবাসি প্রতিদিন। কিন্তু এই ভালোবাসাকে আবারও একটু মনে করিয়ে দিতে প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মা দিবস। 
কিন্তু কিভাবে মা দিবসটির সূচনা হলো, তা কি তোমরা জানো?
মা দিবস উদযাপন প্রথম শুরু হয় গ্রিসে। গ্রিকরা তাদের মাতা-দেবীর পূজা করত। যার নাম হল ‘রিয়া’। এটা ছিল তাদের বসন্তকালীন উৎসবের একটি অংশ। প্রাচীন রোমেও এ রকম দিবস উদযাপন করা হতো ‘সাইবল’ দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস মতে ‘সাইবল’ হল সকল দেব-দেবীর মাতা। ইতিহাস খুঁজে দেখা যায়, খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০ সালে রোমে ধর্মীয় উৎসব হিসাবে একটি দিবস পালন করা হতো, যার নাম ছিল ‘হিলারিয়া’। এর অর্থ দেবী মাতা ‘রিয়া’র সম্মানে। এ উৎসব উদযাপনের সময় ছিল ১৫ই মার্চ থেকে ১৮ই মার্চ। গ্রিক ও রোমান পৌত্তলিক সমাজে দেব-দেবীদের মায়ের প্রতি ধর্মীয়ভাবে শ্রদ্ধা জানাতে এসব দিবস পালন করা হত- এটাই পরবর্তীকালে মা দিবস হিসাবে চালু করা হয়েছে বিভিন্ন দেশে। আমেরিকার ‘অ্যানম জারাফস’ নামের এক নারী চিন্তাবিদের কল্যাণে আধুনিককালে মা দিবস চালু হয়। তিনি নিজের মাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন, মায়ের ভালোবাসা অক্ষুণ্ন রাখতে জীবনে বিয়ে পর্যন্ত করেননি। তিনি পড়াশোনা করেছেন পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় চার্চ নিয়ন্ত্রিত একটি স্কুলে। তার মায়ের মৃত্যুর দু’বছর পর তিনি সরকারের কাছে দাবি করলেন- মায়ের স্মরণে একদিন সরকারি ছুটি দিতে হবে। তার অনুভূতি হল, মায়েরা সন্তানদের জন্য সারাজীবন যা করেন- তা সন্তানরা অনুভব করে না। অপরদিকে, মা দিবসকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৮৭২ সালে জুলিয়া ওয়ার্ড নামের এক ব্যক্তি লেখালেখি শুরু করেন। ১৮৭২ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার নিজের মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে তিনি নিজে ‘মা দিবস’ পালন করেন। এরপর ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেন। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ১৯১৩ সালের ১০ মে মা দিবসকে সরকারিভাবে পালনের অনুমোদন দেয়। সে মোতাবেক পরবর্তীতে তারা মে মাসের প্রথম রোববারকে মা দিবস হিসেবে পালনের জন্য নির্ধারণ করে নেয়। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুকরণে মেক্সিকো, কানাডা, লাতিন আমেরিকা, চীন, জাপান ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে শুরু হয় মা দিবস পালন। যদিও আমেরিকায় এটা পালিত হয় মে মাসের প্রথম রোববার, কিন্তু অন্যান্য দেশে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন, নরওয়েতে মা দিবস পালিত হয় মে মাসের দ্বিতীয় রোববার। আর্জেন্টিনায় পালিত হয় অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় রোববার। দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিত হয় মে মাসের প্রথম রোববার। ফ্রান্সে ও সুইডেনে পালিত হয় মে মাসের শেষ রোববার। জাপানে পালিত হয় মে মাসের দ্বিতীয় রোববার। বাংলাদেশেও মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসেবে উদযাপন করেন অনেকে। তোমাদের সবাইকে মা দিবসের শুভেচ্ছা।
জাতীয় দলের আয়ারল্যান্ড সফর নিয়ে নাটক!
স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট


যে জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র জরুরী সভা আদতে তার কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান হয়নি। জুলাইয়ে জাতীয় দলের আয়ারল্যান্ড সফরকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওয়ানডে না হয়ে টি-টোয়েন্টি হলে আয়ারল্যান্ড সফরে যেতে আপত্তি নেই বিসিবির। আইসিরি কাছ থেকে আর্থিক অনুদান নিয়ে আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডস পাঁচটি ওয়ানডে খেলতে রাজি হয়। আইরিশদের সঙ্গে তিনটি এবং বাকিদের সঙ্গে একটি করে ম্যাচ হতো। একটি একদিনের প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যবস্থাও রেখেছিলো আয়ারল্যান্ড। সব কিছু চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর জাতীয় দলের ইউরোপ সফর নিয়ে আপত্তি তোলেন বিসিবি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল। পরিচালকদের আপত্তির মুখে সিরিজটা বাতিল করতে পারছিলেন না। তিনি পথ খুঁজছিলেন। জরুরী বোর্ড সভায় উপস্থিত ১২ জন পরিচালকের একটা বড় অংশকে মোস্তফা কামাল পেয়ে যান সফরের বিপক্ষে। তবে ওয়ানডের পরিবর্তে টি-টোয়েন্টি হলে কোনো আপত্তি নেই পরিচালকদের। অগত্যা সভার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয় ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেনকে। জুন, জুলাই এবং আগস্টে বাংলাদেশ দলের যখন কোনো খেলা ছিলো না তখন বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় আয়ারল্যান্ড। পরে জুনে জিম্বাবুয়েতে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোতে বিসিবি একাদশের জন্য টি-টোয়েন্টি সিরিজ হওয়ায় ভোল পাল্টে ফেলেন মোস্তফা কামাল। বিসিবি সভাপতিসহ পরিচালকদের একটা বড় অংশের ধারণা আয়ারল্যান্ডে খেলতে গিয়ে সিরিজ হেরে গেলে সমালোচনার মুখে পড়ে যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে টেস্ট দলের স্বীকৃতি আদায়ে চেষ্টা করবে সিআই। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সিআই’কে সমর্থন দেবে বলেও বিসিবি কর্মকর্তাদের অনুমান। সে জন্যই জুলাইয়ে জাতীয় দলকে ওয়ানডে খেলার জন্য আয়ারল্যান্ডে পাঠাতে রাজি হননি কর্মকর্তারা। যদিও প্রথমে বলা হয়েছিলো আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে গেলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ক্রিকেটারদের পারফরমেন্সে। এ সম্পর্কে বিসিবি সভাপতি মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন টি-টোয়েন্টি ছাড়া আর কোনো খেলা হবে না। আয়ারল্যান্ড টি-টোয়েন্টি খেলতে রাজি থাকলে ভালো, তা না হলে বিশ্বকাপের পরে তাদের ওখানে ওয়ানডে খেলতে যাবো। তাদেরকেও আমাদের দেশে আমন্ত্রণ করবো। আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক আছে তা থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরও জোরদার হবে। তারা চাইলে জুলাইয়ে আমাদের এখানে খেলতে আসতে পারে, সে প্রস্তাবও দেওয়া হবে। এই কন্ডিশনে খেললে তাদেরও যেমন লাভ হবে তেমনি আমাদের উপকারে আসবে।’ আইসিসি থেকে যে অনুদান নেওয়া হয়েছে তাতে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে স্কটল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসের স্বার্থ জড়িত। আয়ারল্যান্ড টি-টোয়েন্টি খেলতে রাজি হলেও বাকি দুটি দল টি-টোয়েন্টির বিরোধিতা করতে পারে। আরেকটি সমাধান অবশ্য আছে, আইরিশ দল ইচ্ছে করলে বাংলাদেশে খেলতে আসতে পারবে। প্রয়োজনে বিসিবি তাদের খরচ বহন করতেও রাজি। আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসকে তিন ধরণের প্র্যাকেজের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিলো বিসিবি থেকে। ১৪ থেকে ২৮ জুলাই একটি প্রস্তুতি ম্যাচ ছাড়াও পাঁচটি ওয়ানডে। দ্বিতীয়ত, ১৩ থেকে ২৮ জুলাই, দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ এবং পাঁচটি ওয়ানডে। তৃতীয়ত, একটি চারদিনের ও একটি ওয়ানডে প্রস্তুতি ম্যাচের সঙ্গে পাঁচটি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে। সিআই একটি প্রস্তুতি ম্যাচ এবং পাঁচটি ওয়ানডের খরচ বহন করতে রাজি হয়। চারদিনের ম্যাচ খেললে খরচ বাবদ সিআইকে ৮০ হাজার আর অতিরিক্ত একটি ওয়ানডে প্রস্তুতি ম্যাচ খেললে ২৫ হাজার ইউএস ডলার দিতে হতো। আয়ারল্যান্ড যে ম্যাচগুলো আয়োজন করবে সেগুলো খেললে শুধু বিমান ভাড়া লাগবে বিসিবির। ওয়ানডে সিরিজের জন্য তৈরি হয়ে বিসিবির উত্তরের জন্য অপেক্ষায় ছিলো সিআই। একপর্যায়ে বিসিবিকে আলটিমেটামও দিতে বাধ্য হয়। বোর্ড সভায় একটা সিদ্ধান্ত হওয়ায় ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ সিআই’কে তা জানিয়ে দিতে পারবে। নতুন করে যে প্রস্তাব দেওয়া হবে সিআই তা কিভাবে নেয় তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বিসিবিকে।এদিকে বিসিবির জরুরী সভায় জাতীয় দলের ম্যানেজার নিয়োগ করেছে তানজিব আহমেদ সাদকে। আগেও কয়েক মেয়াদে জাতীয় দলের ম্যানেজার ছিলেন তিনি। জাতীয় দলের সঙ্গে সর্বশেষ ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন সাবেক ক্রিকেটার জাহিদ রাজ্জাক মাসুম।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দশম শিরোপার স্বপ্ন রোনালদোর
স্পোর্টস ডেস্ক

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সবচেয়ে বেশি নয়বার শিরোপা জিতেছে স্পেনের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। ক্লাবের পর্তুগিজ উইঙ্গার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতে, সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন প্রতিযোগিতার দশম শিরোপা জিতবে রিয়াল। গেলো মৌসুম খারাপ কাটেনি রিয়ালের। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনাকে হতাশায় ডুবিয়ে স্প্যানিশ লিগের ৩২তম শিরোপা জিতেছে মাদ্রিদের দলটি। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরে যাওয়ায় কিছুটা হতাশা আছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ব্যর্থতায় কোচ হোসে মরিনহোও আক্ষেপে পুড়েছেন। কয়েকদিন আগে ঘোষণাও দিয়েছেন পরের দুই মৌসুমে অন্তত একটি হলেও উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতবেন। রোনালদোও কোচের কথায় সুর মিলিয়েছেন। বলেন, ‘আমার লক্ষ্য রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দশম শিরোপা জেতা। এ প্রতিযোগিতা নিয়ে মাদ্রিদে সবাই আলোচনা করে। খেলোয়াড় হিসেবে আমরা সেটা অনুভব করি। এ বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছি। সাফল্য পেতে আমাদের অনেক কিছু প্রয়োজন। বিশেষ করে ভাগ্য। আশা করি, আগামী বছর অথবা আগামীতে শিরোপা জিতবো.....।’ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল সর্বশেষ শিরোপা জেতে ২০০২ সালে। সেবার জার্মানির বায়ের লেভারকুসেনকে ২-১ গোলে হারায় রিয়াল।
ভাঙলো এবার ন্যান্সির সংসার
বিপুল হাসান
``বাহির বলে দূরে থাকুক, ভিতর বলে আসুক না`` গানের তুমুল জনপ্রিয় গায়িকা ন্যান্সি এবার নিজেই সংসারজীবনে  শিকার হলেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বের। তবে দ্বিধা-দ্বন্দ্বকে তিনি প্রশ্রয় দেননি। ভালোবেসে বিয়ে করা আবু সাঈদ সৌরভের সঙ্গে গড়ে তোলা সাত বছরের সংসার জীবনের তিনি ইতি টেনেছেন। সম্প্রতি পারিবারিকভাবে ন্যান্সি ও সৌরভের ডিভোর্স সম্পন্ন হয়েছে।বাংলানিউজ এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে ফোনে কথা বলে ন্যান্সির সঙ্গে। সৌরভের সঙ্গে ডিভোর্সের ব্যাপারটি তিনি স্বীকার করে নেন। ডিভোর্সের কারণ জানতে চাইলে ন্যান্সি বলেন, ``ইদানিং আমার আর সৌরভের মধ্যে ঠিক মতো বোঝাপড়া হচ্ছিল না। সংসারের নানা বিষয়ে আমাদের মতভেদ দেখা দেয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য শুরুতে দুজন বসে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা একমত হতে পারি নি। শেষ পর্যন্ত দুজন মিলেই নিজেদের ভালোর জন্যই আমরা দাম্পত্য-সম্পর্কের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিই।’ আবু সাঈদ সৌরভ প্রসঙ্গে কোনো অভিযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে ন্যান্সি তা অস্বীকার করে বলেন, ``কারো প্রতি আমাদের কারোরই কোনো অভিযোগ বা ক্ষোভ নেই। একসঙ্গে থাকতে গিয়ে আমাদের সমস্যা হচ্ছিল। তাই আমরা দুজন মিলে আলোচনা করেই সুন্দরভাবে বিষয়টি সমাধান করেছি। আমি সৌরভের শুভাকাঙ্ক্ষী থাকবো আজীবন। সৌরভের আছে আমার জন্য শুভকামনা। আপন কণ্ঠের জাদুতে অল্প সময়ে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে গায়িকা নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি ২০০৬ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন আবু সাঈদ সৌরভকে। রোদেলা নামে তাদের এক চার বছর বয়সী কন্যা সন্তান আছে। রোদেলা বর্তমানে মা ন্যান্সির সঙ্গেই আছে।
কান উতসবে ভারতীয় ঐতিহ্যে ঐশ্বরিয়া
অনন্যা আশরাফ

৬৫তম কান চলচ্চিত্র উতসব চলছে। এ উতসবে যোগ দেওয়া সেলিব্রিটিদের পোশাক আর স্টাইল নিয়ে এখন মুখরিত ওয়ার্ল্ড শোবিজ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ আলোচনার শীর্ষে হলিউডের পাশাপাশি বলিউডের সেলিব্রিটিরাও ওঠে আসছেন। বলিউড সেলিব্রিটিদের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে কান উতসবে ওয়ার্ল্ড মিডিয়ার দৃষ্টি জুড়ে থাকেন সাবেক বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া। উতসবে ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন আসছেন কবে, তার পরণে থাকবে কেমন পোশাক? এই কৌতুহল শুধু তার ভক্তদেরই নয় উতসবে আসার সবার মধ্যেই কম বেশি আছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বলিউড বিউটি ঐশ্বরিয়া ২৪ মে এবারের কান উৎসবে পা রাখছেন। ২৫ মে দিনভর তিনি ভেন্যুতে থাকবেন। সবাই এখন গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন, উৎসবের রেড কার্পেটে কি পরছেন ঐশ্বরিয়া! টানা ১০ বছর ধরে কান চলচ্চিত্র উৎসবের রেড কার্পেটে হাঁটছেন এ বিশ্বসুন্দরী। তবে মা হবার পর রেড কার্পেটে হাঁটার অভিজ্ঞতাটা এবারই প্রথম।  কান জুড়ি বোর্ডের প্রথম ভারতীয় সদস্য হিসেবে ও ল’রিয়ালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে রেড কার্পেটে হাঁটার মধ্য দিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করবেন ঐশ্বরিয়া। ১১ বছরের অভিজ্ঞতায় নিজেকে বিশ্বের সামনে কিভাবে তুলে ধরতে হয়, সে বিদ্যাটা তার খুব ভালো করেই আছে। এবারের কান উৎসবের জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী স্টাইলকে। গাঢ় রংয়ের পোশাক এড়িয়ে হালকা রংকেই এবার বেছে নিয়েছেন তিনি। কান উৎসবের প্রস্তুতি সম্পর্কিত একাধিক পত্রিকার তথ্যে জানা গেছে, ঐশ্বরিয়া এ বছর উৎসবের একদিন পরবেন হালকা বাদামী রংেয়র চুড়িদার পায়জামার সঙ্গে আনারকলি স্টাইলের লম্বা কুর্তা । অন্যদিন পরবেন ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক শাড়ি। অফ হোয়াইট কালারের জমিনে উপর এন্টিক গোল্ডেন জরির এমব্রয়ডারি করা শাড়ি দেখা যাবে তার পরনে। দুটি পোশাকই ডিজাইন করেছেন সন্দীপ খোশলা- আবু জানি। ঐশ্বরিয়ার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, উৎসবে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতির শুরুতেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। লম্বা গাউন পোশাক না পরে ভারতীয় পোশাকেই রেড কার্পেটে হাঁটার পরিকল্পনাও তার। সব্যসাচী মুখার্জী, আবু-সন্দীপ ও সাহাদ দুরাজির মত বড় বড় ফ্যাশন ডিজাইনারা তার পোশাক ডিজাইনিংয়ের অফার দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে থেকে ঐশ্বরিয়া বেছে নেন ডিজাইনার আবু-সন্দীপকে। ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাক বা স্টাইলকে বিশ্বের কাছে পরিচয় করে দেওয়ার জন্যই সাবেক বিশ্ব সুন্দরীর এই ভাবনা। এর আগেও তিনি ২০০২ সালে হলুদ রংয়ের একটি শাড়ি, গলায় কারুকাজ করা গোল্ডের নেকলেস ও হাতে মোটা বালা পরে উৎসবে উপস্থিত হন। ২০০৩ সালে তিনি সবুজ রংয়ের একটি শাড়ি পরে উৎসবে যোগ দেন। তাকে আবার শাড়িতে কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখা যায় ২০১০ সালে। সে বছর সব্যসাচীর ডিজাইনে ভারী এমব্রয়ডারির শাড়ি আর সঙ্গে কন্ট্রাস্ট করে সিøভলেস ব্লাউজ, কপালে বিনদি ও চোখে কালো ম্যাকআপ নিয়ে কান উৎসবে হাজির হয়েছিলেন ঐশ্বরিয়া। ২০১২ সালে ঐশ্বরিয়াকে ভারতীয় ঐতিহ্যে দেখার অপেক্ষায় আছে এখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা তার ভক্তরা। স্বামী অভিষেক বচ্চন একটি ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকায় চলতি বছর রেড কার্পেটে ঐশ্বরিয়াকে সঙ্গ দিতে পারছেন না। তবে এবার ঐশ্বারিয়ার সঙ্গে বড় চমক হিসেবে থাকছে বচ্চন পরিবারের নতুন অতিথি আরাধ্য বচ্চন ওরফে বেটি বি। এ উৎসবেই কন্যা সন্তান প্রথম প্রকাশ্যে নিয়ে আসছেন বিশ্বসুন্দরী মা ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন।