Year-18 # Issue-52 # 12 February 2012

মহাসমাবেশে ১০ লাখ লোকের
সমাগম ঘটাবে বিএনপি
ইকরাম-উদ দৌলা
সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ১২ মার্চ স্মরণকালের সর্ববৃহৎ মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ১০ লাখ লোক সমাগমের টার্গেট নিয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানাগেছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের কাছে সমাবেশের মাঠ চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে। তবে কোনটি না পেলে শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই করা হবে। জানাগেছে, এক বন্দর নগরীখ্যাত বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকেই ৫লাখ নেতাকর্মী আর সমর্থক আনা হবে। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যে জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছে। এছাড়া দেশব্যাপী বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটও এ নিয়ে কাজ করছে। দলের সর্বস্তরে যে কোনো মূল্যে ১০ লক্ষাধিক লোক সমাগমের জন্য বিএনপির চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ দিন বিশাল সমাবেশে অংশ নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা দেবেন। যার মধ্যে মানব প্রাচীর, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি থাকবে। তবে এর আগে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলনের মাধ্যমে জনভিত্তি গড়তে চায় বিএনপির প্রধান। এ জন্য বিএনপি নির্ধারিত ৩ টি জনসভার মধ্যে একটি ইতোমধ্যে বেগম জিয়া চাঁদপুরে সম্পন্ন করেছেন। আজ যাচ্ছেন লক্ষীপুর। আগামী ২৮ ফেব্র“য়ারি দুদিনের সফরে যাবেন লালমনিরহাট। জানাগেছে, মহাসমাবেশ সফলে জেষ্ঠ্য নেতাদের দায়িত্বে  প্রায় অর্ধশত সাংগঠনিক টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে। যারা সার্বক্ষণিক এ নিয়ে পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনা করছেন। জেষ্ঠ্য নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যে ঢাকা চলো কর্মসূচিকে সফল করতে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক ও সংশ্লিষ্ট জেলায় সফর করছেন। আর কেন্দ্রীয়য়ভাবে ঢাকাতেও বিএনপির গুলশান কার্যালয়,নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ঢাকা মহানগর কার্যালয়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্তরের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করা হচ্ছে। চারদলীয় জোটের শরিক দল ও অন্যান্য সমমনা দলগুলোও প্রতিদিনই বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি জোরদার করছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ঢাকা চলো কর্মসূচি সফলের উদ্দেশ্যে যৌথসভা করেছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কবৃন্দ, ঢাকা মহানগর বিএনপির অধীনস্থ প্রত্যেক থানা এবং ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ, নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ ও সাবেক কাউন্সিলরবৃন্দকে সরকারের সব ধরনের হুমকি উপেক্ষা করে মহাসমাবেশকে স্মরণকালের বৃহত্তর সমাবেশে পরিণত করতে জোর দেয়া হয়েছে। এদিকে ঢাকা চলো কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। অন্যদিকে সমাবেশের প্রচারণা চালাতে দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা ও থানায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করে দেয়ালে পোস্টার, ব্যানার সাঁটিয়েছে। সূত্র জানায়, গত ৯ ফেব্র“য়ারি চারদলের ঢাকা চলো কর্মসূচি সফল করতে ৪৫টি সাংগঠনিক টিম গঠন করেছে বিএনপি। এর মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সিলেট জেলা ও মহানগরের দায়িত্বে, ঢাকা জেলা ও মহানগরের দায়িত্বে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে.জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান রাজশাহী জেলা ও মহানগরের দায়িত্বে, তরিকুল ইসলাম খুলনা জেলা, খুলনা মহানগর ও বাগেরহাট, এমকে আনোয়ার চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ, বি.জে (অব.) আসম হান্নান শাহ রংপুর, কুড়িগ্রাম, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার নোয়াখালী,মির্জা আব্বাস বরিশাল মহানগর, দক্ষিণ ও উত্তর, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যশোর, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ফরিদপুর, ড. আবদুল মঈন খান শেরপুর, ময়মনসিংহ দক্ষিণ ও উত্তর এবং নজরুল ইসলাম খান গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলা টিমের দায়িত্বে রয়েছেন। সহ-সভাপতিদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল নোমান টাঙ্গাইল ও দিনাজপুর, এম মোরশেদ খান রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান, শমসের মবিন চৌধুরী হবিগঞ্জ, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মাদারীপুর, রাজিয়া ফয়েজ নড়াইল, আলতাফ হোসেন চৌধুরী জামালপুর ও ভোলা, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন গাজীপুর, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুর এবং সেলিমা রহমানকে ঝালকাঠী,পিরোজপুর ও পটুয়াখালীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে হারুন আল রশিদ মৌলভিবাজার, ডা.এজেডএম জাহিদ হোসেন সুনামগঞ্জ, ইনাম আহমেদ চৌধুরী নীলফামারী ও সৈয়দপুর, মীর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন লালমনিরহাট, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বগুড়া ও পাবনা, ফজলুর রহমান পটল নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, শামসুজ্জামান দুদু নাটোর, ঝিনাইদহ, ড. ওসমান ফারুক মেহেরপুর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মাগুরা, অধ্যাপক আবদুল মান্নান নেত্রকোনা, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর কিশোরগঞ্জ, আবদুল মান্নান মুন্সীগঞ্জ, খন্দকার মাহবুব হোসেন বরগুনা, মে. জে. (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী খাগড়াছড়ি এবং আবদুল আউয়াল মিন্টু ফেনী জেলার দায়িত্ব পেয়েছেন। যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে মিজানুর রহমান মিনু পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ,রিজভীআহমেদ সাতক্ষীরা, আমানউল্লাহ আমান মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, সালাউদ্দিন আহমেদ নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, মোহাম্মদ শাহজাহান কক্সবাজার, বরকতউল্লাহ বুলু চাঁদপুর এবং ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন লক্ষ্মীপুর জেলার দায়িত্ব পেয়েছেন। এসব এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করবেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ১২ মার্চ ঢাকায় পাল্টা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়ায় সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকলেও আপাতত ১২ মার্চই মহাসমাবেশ করার সার্বিক প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। তবে কোন কারণে ২৯ জানুয়ারির গণমিছিলের মতো নিষেধাজ্ঞা জারি হলে সে ক্ষেত্রে তারা ১২ মার্চের পর সুবিধাজনক সময়ে এ কর্মসূচি পালনের মানসিক প্রস্তুতিও রাখছে। বিএনপির নীতি নির্ধারণী মহল মনে করছে হার্ডলাইনে গিয়ে সরকারি দলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একই দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে গেলে আবার দেশে এক-এগারো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আবারও রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়তে পারেন। তাই ধৈর্যধারণ করে ধীরে ধীরে আন্দোলন করে এ সরকারকে ফাঁদে ফেলার কৌশল নিয়েছে বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ সময়কে বলেন, ১২ মার্চের মহাসমাবেশ হবে সর্বকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ। চট্টগ্রাম থেকেই ৫লাখ লোক আনা হবে এ সমাবেশে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশররফ হোসেন বলেন, এ সমাবেশ থেকেই সরকারকে হুঁশিয়ারি দেয়া হবে, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে ফল ভালো হবে না। আর কোনো প্রকার বাধা দিয়ে সমাবেশ ভণ্ডুল করার চেষ্টা করা হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের এ কর্মসূচিতে শরিক দলগুলো ছাড়াও সমমনা ও ইসলামী দলগুলো অংশ নেবে। এ সমাবেশ থেকেই সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা হবে। আর শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতে বাধা দিলে তার পরিণতি খুব খারাপ হবে।  

১২ মার্চ সহিংসতার আশঙ্কা
মোঃ আলমগীর হোসেন
১২ই মার্চ পল্টন ময়দানে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি পুলিশি হস্তক্ষেপে বিএনপির গণমিছিল ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশ বাতিল হওয়ার পর ১২ মার্চও এমন কিছুর আশঙ্কা করছেন তারা। বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচির ব্যানারে ১২ মার্চ পল্টন ময়দানে মহাসমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দেন। আর  জানুয়ারিরই শেষ নাগাদ এসে শোনা যায়- একই দিন একই স্থানে মুক্তিযোদ্ধা মহাসমাবেশ করবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। ওই সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হচ্ছেন বলেও আলোচনা চলছে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে। রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির এমন অবস্থান বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা তৈরি করেছে। এমনকি ওই সহিংসতা অতীতের যে কোন সহিংস ঘটনার ভয়াবহতা ছাড়িয়েও যেতে পারে। পরস্পরকে আক্রমন করে দেওয়া উভয় পক্ষের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য সহিংসতার আশঙ্কা আরো বাড়িতে তুলছে বলেও মনে করছেন তারা।   তাদেও ধারণা, পরস্পরবিরোধী দুই পক্ষের সমাবেশ একই দিনে হলে রাজপথ ছাড়াও শহরের অলিতে গলিতে সংর্ঘষ ছড়িয়ে পড়তে পারে। সম্ভাব্য এই সহিংসতা এড়াতে ক্ষমতাসীনদেরই এগিয়ে আসা উচিৎ বলেও মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। তাদের অভিমত, দু’টি দলেরই দায়িত্ব আছে। তবে সরকারি দলের দায়িত্বটা অনেক বেশি। তবে আলোচনা আছে এদিন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সমাবেশ করবে। তবে এ পর্যন্ত সংসদের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন ঘোষণা দেয়া হয়নি। আইন প্রতিমন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা এডভোকেট কামরুল ইসলাম এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ১২ই মার্চ বিরোধী দল ঢাকা দখলের ঘোষণা দিয়েছে। এদিন এমন কর্মসূচি দেয়া হবে যে, তারা ঢাকায় প্রবেশেরই সাহস পাবে না।  অন্য এক অনুষ্ঠানে বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, আইন প্রতিমন্ত্রী রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্য দিচ্ছেন। এ ধরনের বক্তব্য দিলে তাকেই ১২ই মার্চের আগে ঢাকা ছাড়তে হবে। অন্য এক অনুষ্ঠানে বিএনপি জ্যেষ্ঠ নেতা এম কে আনোয়ার বলেছেন, বিরোধী দলের কর্মসূচিতে আর কোন বাধা মেনে নেয়া হবে না। এদিকে প্রধান দু’দলের কর্মসূচি নিয়ে পাল্টাপাল্টির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা। তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিলে তাতে রাজনৈতিক সংঘাত আরও বাড়বে। এ বিষয়ে সুজন সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকার। সেখানে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে একে অন্যের বাধা হয়ে দাঁড়ালে সামনে সংঘাত আরও বাড়বে। একই কথা বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও কর্মসূচি শুভ লক্ষণ নয়। এ ধরনের কর্মসূচির কারণে দলগুলোর মধ্যে বিভেদ আরও বাড়বে। নতুন সমস্যারও সৃষ্টি হবে। এর আগে গত ২৯শে জানুয়ারি ঢাকায় বিএনপির গণমিছিলের দিনে মহানগর আওয়ামী লীগ সমাবেশের ঘোষণা দিলে ঢাকায় এদিন ঢাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে পুলিশ। এ নিয়ে রাজনীতিতে উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে বিএনপি তাদের নির্ধারিত কর্মসূচি পরের দিন পিছিয়ে নেয়। মহানগর আওয়ামী লীগও ওইদিন সমাবেশ করে। তবে কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। বিরোধী দলের এ গণমিছিল কর্মসূচিতে ঢাকায় কোন অঘটন না ঘটলেও এটিকে কেন্দ্র করে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে ৫ জন মারা যায়। নিহতরা বিএনপি ও জামায়াতকর্মী। কর্মী হত্যার প্রতিবাদে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো এখন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে।
মহাজোটের কর্মসূচি নেই
১২ই মার্চ বিএনপির কর্মসূচির দিনে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের কোন কর্মসূচি ঘোষনা দেয়া হয়নি। দলীয়ভাবে কর্মসূচি দেয়া হলে তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামসমূহে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ বিষয়ে দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বা জোটের পক্ষ থেকে পাল্টা কোন কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান এ পর্যন্ত যে সব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলোই পালন করা হবে। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের কর্মসূচির আগে ও পরে আমাদের কর্মসূচি থাকতে পারে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানিয়েছেন, ১২ই মার্চ কোন কর্মসূচি নেই। তবে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চলছে। দলীয় সূত্র জানায়, বিরোধী দলের কর্মসূচির আগের দিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাজধানীতে শো-ডাউন করা হতে পারে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আগামী ৭ই মার্চ রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত মানববন্ধন করবে ১৪ দল। এটি তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি। এছাড়া পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী থানা ও ওয়ার্ডে পর্যায়ক্রমে কর্মসূচি চলছে। এছাড়া ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জš§দিন উপলক্ষে কর্মসূচি ঠিক করতে দলের কার্যানির্বাহী সংসদের বৈঠক হয়েছে। এতে দিবস ভিত্তিক কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে। তবে ১২ই মার্চ মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করার পরিকল্পনা নিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কর্সসূচি ঘোষণা দেয়া হয়নি। এদিকে আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে- গত ২৯শে জানুয়ারি একই দিন পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঢাকায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরের দিন বড় দু’দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন এ সমালোচনাকে আরও জোরালো করে। এ কারণে বিএনপির ১২ই মার্চের দিনে নতুন কোন কর্মসূচি দিতে চাইছেন না দলটির নেতারা।
কর্মসূচিতে বাধা আর সহ্য করা হবে না- এম কে আনোয়ার
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেছেন, বিএনপির বৈধ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেয়া আর সহ্য করা হবে না। সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, সাহস থাকলে পুলিশ-র‌্যাব বাদ দিয়ে মাঠে আসুন। তখন কারা মাঠে থাকবে সেটা দেখা যাবে। সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘হƒদয়ে বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের গণমিছিলে লোক সমাগম দেখে সরকার ভীত হয়েছে। ১২ই মার্চ মহাসমাবেশে যাতে লোক সমাগম কম হয় সেজন্য সরকারের কয়েক জন মন্ত্রী রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

মহাসমাবেশ সফল করতে সরকারের সহযোগীতা কামনা বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ১২মার্চের মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে পালন করার প্রতিশ্র“তি দিয়ে সরকারের সহযোগীতা কামনা করেছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পাল্টা কোনো কর্মসূচি না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, আমরা ১২ মার্চের মহাসমাবেশ সফল করবো। আপনারা সহযোগীতা করুন। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলবেন না। রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ একটি হোটেলে গত বুধবার বিএনপি আয়োজিত এক রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পূর্ব ঘোষিত মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে করা হবে। কোনো পাল্টা কর্মসূচি কিংবা কোনো বাধা না দিয়ে সমাবশে সফলে সহযোগীতা করুন। কারণ বিএনপির নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করা হলে তার পরিণতি ভালো হবে না। এতে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। তিনি আরো বলেন, এদিন দেশের মানুষের কাছে বিএনপি তার দাবি তুলে ধরবে। দয়া করে বাধা না দিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সহযোগীতা করুন। রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই আমাদের জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি করতে হবে। এজন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ে এই ধরণের প্রশিক্ষণ ছিলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে সময় মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিলো। প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষা দিতে হতো। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের একটি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের কারণে দেশে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এখন সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। অথচ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সরকার তা বন্ধ করতে পারছে না। তিনি আরো বলেন, সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ও জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে যাচ্ছেতাই করছে। সংবিধান সংশোধন করে আর বিরোধী দলের উপর নির্যাতন নিপীড়ন করে ক্ষমতায় আসার বন্দোবস্ত করেছে। সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে সমন্বয় নেই উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন সম্পর্কে মন্ত্রীরা একেক রকম তথ্য দিচ্ছেন। যোগাযোগ মন্ত্রী বলছেন ২১ ফেব্র“য়ারি এ নিয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হবে। আর অর্থমন্ত্রী বলছেন পদ্মাসেতুর অর্থায়ন নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তির সকল বিষয়বস্তু দেশাবাসি জানতে চায়। তাই এ চুক্তির বিভিন্ন তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। এ সময় অন্যন্যের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কবির মুরাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, বিশ্ব রাজনীতি ও বাংলাদেশ, গণতন্ত্র-সরকার-বর্তমান রাজনীতি, জিয়াউর রহমানের জীবনালখ্য, দলের গঠনতন্ত্র ও মূলনীতি এবং সংবিধানের আনীত সংশোধন সস্পর্কিত ৫টি বিষয়ের উপর এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এমকে আনোয়ার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন। কর্মশালায় ২১ জেলার ৬৩ জন প্রতিনিধি প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে অংশ নেন।

বায়ু দূষণে দায়ী এক-তৃতীয়াংশ
ইটভাটাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ হুমকির  মুখোমুখি হবার অন্যতম কারণ
হাসান মাহমুদ রিপন
দেশের অধিকাংশ ইটভাটার মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ যে হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে তার অন্যতম কারণ হলো ইটভাটার নির্গত কালো ধোঁয়া। বায়ু দূষণের জন্য ইটভাটাগুলো এক-তৃতীয়াংশ দায়ী। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর এজাজ হোসেন বলেন, ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ার যেসব ক্ষতিকর পদার্থ থাকে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকর কণা। বাতাসে এসব কণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা ফুসফুসে অ্যাজমাসহ বিভিন্ন জটিল রোগের সৃষ্টি করে। এ ছাড়া উচ্চ সালফারসম্পন্ন কয়লা ইটভাটায় পোড়ানোর ফলে তা বাতাসের সঙ্গে মিশে বিভিন্ন এসিড তৈরি করে। জানা গেছে, বিশ্বে বর্তমানে ইট পোড়ানোর অনেকগুলো পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বাংলাদেশেও স্বল্প পরিসরে এই পদ্ধতি চালু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও ইট প্রস্তুতকারীদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। যদিও আইনে ইট পোড়াতে কাঠ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৫ ধারা অমান্য করলে এক বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। তবুও ইটভাটার প্রধান জ্বালানি হিসেবে বাংলাদেশে ব্যবহƒত হচ্ছে জ্বালানি কাঠ। বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বাবুল বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থাই নেয়া হোক আমরা তার পক্ষে আছি। তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশেই এসব অবৈধ ইটভাটা চালানো হচ্ছে। আর এসব ইটভাটাতেই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহƒত হচ্ছে কাঠ। সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে মোট ইটভাটা আছে ৪ হাজার ৫১০টি। এর মধ্যে অবৈধ ইটভাটার (পরিবেশগত ছাড় নেই) সংখ্যা ১ হাজার ১৯৯টি। এসব ইটভাটায় প্রতি হাজার ইটের জন্য কাঠ পোড়াতে হয় ৮ মণ। এদিকে ইটভাটায় নির্বিচারে কাঠ পোড়ানো ও ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সরকার বিশেষ উদ্যোগ নেবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১২ সদস্য বিশিষ্ট ‘ন্যাশনাল ব্রিক এ্যাডভাইজারি কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই কমিটি ইট পোড়ানো পদ্ধতির আধুনিকায়নে বিভিন্ন প্রস্তাব সরকারের কাছে তুলে ধরবে। এ ছাড়া ইটভাটা স্থাপন ও ইট পোড়ানোর কাজে তদারকিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর গৃহীত ব্যবস্থা এবং আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. জাফর আহমেদ খান বলেন, শুধু সরকারি পর্যায় থেকেই নয়, ইট পোড়ানোর ক্ষতিকর বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবগত হতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দ রেজোয়ানা হাসান বলেন, শুধুমাত্র নিষিদ্ধ জ্বালানি ব্যবহার করেই নয়, পরিবেশ আইনে ইটভাটা স্থাপনে বসতি ও বনভূমি থেকে যে দূরত্বের কথা বলা আছে অধিকাংশ ইটভাটা তা মেনে চলছে না। ইটভাটা স্থাপন ও নিষিদ্ধ জ্বালানি ব্যবহারের বিরুদ্ধে যে আইন রয়েছে তা একেবারেই প্রয়োগ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে।     
সংসদে বিল পাস
মানব পাচারের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
সংসদ প্রতিবেদক
পাচারের অপরাধে দোষী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান  রেখে ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন বিল-২০১২’ সংসদে পাস হয়েছে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে  সেটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলটির ওপর  দেয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবকারী সদস্যরা অনুপস্থিত থাকায়  সেগুলো নাকচ হয়। উল্লেখ্য, গত বছর ৬ জুলাই বিলটি মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদন পায়। ১২ ডিসেম্বর বিলটিকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। পরে এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। চলতি অধিবেশনের প্রথম দিন বিধান অনুযায়ী অধ্যাদেশটি সংসদে উত্থাপন করা হয়। উত্থাপনের পরে ৩০ দিনের মধ্যে  যেকোনো অধ্যাদেশ বিল আকারে পাস না হলে অকার্যকর হবে বলে বিধান রয়েছে। গত ৬  ফেব্র“য়ারি অধ্যাদেশটি বিল আকারে সংসদে উত্থাপন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে বিলটি ১০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলে মানব পাচারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ভয়ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগ করে প্রতারণা করে বা অর্থ বা অন্য কোনো সুবিধা লেনদেন-পূর্বক উক্ত ব্যক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এমন ব্যক্তির সম্মতি নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে যৌন  শোষণ বা নিপীড়ন বা শ্রম  শোষণ বা অন্য  কোনো শোষণ বা নিপীড়নের উদ্দেশে বিক্রয় বা ক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকিয়ে রাখা বা আশ্রয়  দেয়া। বিলে মানব পাচারের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে,  কোনো সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর একাধিক সদস্য গোষ্ঠীর সব সদস্যের সাধারণ অভিপ্রায় সাধনের উদ্দেশ্যে কোনো আর্থিক বা অন্য কোনো বস্তুগত বা অবস্তুগত মুনাফা অর্জনের জন্য এ আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করলে ওই গোষ্ঠীর প্রত্যেক সদস্য অপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত হবে। অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে। বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি মানব পাচারের ষড়যন্ত্র করলে শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ সাত বছর ও সর্বনিম্ন তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২০ হাজারা টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। বিলে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি  বেআইনিভাবে অন্য কোনো ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করাতে বাধ্য করলে বা ঋণদাস করে রাখলে কিংবা হুমকি দিয়ে শ্রম ও সেবা আদায় তিনি অপরাধী বলে বিবেচিত হবেন। এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১২ বছরের সর্বনিম্ন ৫ বছর কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। পতিতালয় স্থাপন ও পরিচালনাকেও এ আইনের অধীনে অপরাধ হিসেবে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে,  কোনো ব্যক্তি পতিতালয় স্থাপন বা পরিচালনা করলে অথবা তা স্থাপন বা পরিচালনা করতে সক্রিয়ভাবে সহায়তা বা অংশ নিলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে। এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের এবং সর্বনিম্ন তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা  ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। যে কোনো ব্যক্তি এ আইনের অধীন মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা করলে মামলাকারীকে অপরাধী হিসেবে ধরা হবে বলে বিলে বলা হয়েছে। এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর ও সর্বনিম্ন দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিলের ২১ দফায় বলা হয়েছে, এ আইনের অধীনে অপরাধগুলো দ্রুত বিচারের উদ্দেশ্যে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, দায়রা জজ বা অতিরিক্তি দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের সমন্বয়ে যেকোনো মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে।

২১(২) দফায় বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়া পর্যন্ত সরকার প্রত্যেক  জেলার নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনালকে ওই জেলার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে। বিলের ২২ দফায় ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতার সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ আইনের বিধান অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের দায়রা আদালতের সব ক্ষমতা থাকবে। বিচারের স্বার্থে কোনো সুরক্ষামূলক আদেশসহ  কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তার অধীনে থাকা প্রতিবেদন, দলিল ট্রাইব্যুনালে উত্থাপন করা নির্দেশ দিতে পারবে। বিলে বলা হয়েছে, এ আইনের অধীন সংঘটিত  কোনো অপরাধের অভিযোগ গঠনের ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার  শেষ করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের রায়, আদেশ বা দণ্ডের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল বিভাগে ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে বলেও বিলে বলা হয়েছে। বিলে আরও বলা হয়েছে,  কোনো বাংলাদেশি নাগরিক অন্য কোনো দেশে মানব পাচারের শিকার হলে বাংলাদেশ সরকার ওই  দেশের দূতাবাসের এবং প্রয়োজনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ওই ব্যক্তিকে দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। পাচারের শিকার ব্যক্তির পুনর্বাসন সম্পর্কে বিলে বলা হয়েছে, পাচারের শিকার ব্যক্তিদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা সেবা, পুনর্বাসন ও পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের সুযোগ সৃষ্টিতে সরকার সারাদেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক আশ্রয়  কেন্দ্র এবং পুনর্বাসন  কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে। এছাড়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার বাইরে অথবা বাংলাদেশের  কোনো জাহাজ বা বিমানে কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে এ আইনের আওতাধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করলে এ আইনের বিধান কার্যকর হবে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানব পাচার  কোনো দেশের একক সমস্যা নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও সুনির্দিষ্ট আইনের অভাবে মানব পাচার  রোধ করা যাচ্ছে না। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে  বৈদেশিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে যেসব কর্মী প্রতি বছর বাইরে যায় তাদের কর্মসংস্থান এবং অন্যবিধ সুযোগের বিষয়ে পাচারকারীদের মিথ্যা প্রলোভনের ফলে  সেসব মানুষ হয়রানির শিকার হয়। এ অবস্থা  থেকে উত্তরণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়।
হাজারো সমস্যার আবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছে পুরান ঢাকার মানুষ
ইফতেখার আহমেদ টিপু
রাজধানীর পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা, দোকান এবং গুদাম সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত লালফিতায় আটকা পড়ে আছে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের দাপটের কাছে হার মানছে পুরান ঢাকার লাখ লাখ মানুষের নিরাপত্তা। সংকীর্ণ গলির বিভিন্ন বাসাবাড়িতে যেসব কারখানা, গুদাম ও দোকান রয়েছে তাতে আগুন লেগে যে কোনো সময় নিমতলীর মতো ট্র্যাজেডির জš§ দিতে পারে। নিমতলী বিপর্যয়ের পর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে পুরান ঢাকার জনবসতি থেকে কেমিক্যাল কারখানা, গুদাম ও দোকান সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়নের যেন কেউ নেই। নিমতলী দুর্ঘটনার পর শিল্প মন্ত্রণালয়, বিস্ফোরক পরিদফতর, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ দফতর এ উদ্দেশ্যে মাঠে নামলেও দুই-তিন মাসের মধ্যে তাদের উৎসাহে ভাটা পড়ে। রাজধানীর লালবাগ, চকবাজার, বংশালসহ এ এলাকার হাজার হাজার কেমিক্যাল কারখানা, গুদাম এবং দোকান যেন টাইম বোমার মতো বিরাজ করছে। কারখানাগুলোতে সালফার, ফসফরাস, পটাশ, সালফিউরিক এসিড, ইথানল, নাইট্রিড এসিড, মিথাইল, রেক্টিফায়েড স্পিরিট, ফরমালডিহাইড, তারপিন, এডহেন্সিভ বা সলিউশনসহ নানা ধরনের বিস্ফোরক ও কেমিক্যাল দ্রব্যের ব্যবহার চলছে। এসব কারখানায় কাজ করছে বিপুলসংখ্যক শিশু শ্রমিক। সামান্য ভুলে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়। পুরান ঢাকার সমস্যার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ বাড়ি, রাসায়নিকের গুদাম, পর্যাপ্ত রাস্তার অভাব, যানজট, বিদ্যুতের লোডশেডিং, গ্যাস সঙ্কট, ময়লাযুক্ত ওয়াসার পানি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশসহ অগণিত সমস্যার আবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছে পুরান ঢাকার মানুষ। শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ মৌলিক চাহিদা পূরণের অব্যবস্থাপনায় এ এলাকার মানুষ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অথচ এই পুরান ঢাকা ছিল ষোড়শ শতকের সুবে বাংলার রাজধানী। সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা, পরীবিবির মাজার, হোসনি দালান এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সত্য, সেই জৌলুস দিন দিনই ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ১৯ বর্গকিলোমিটার এলাকার পুরান ঢাকা পুরোটাই যেন পরিণত হয়েছে বৃহৎ আকৃতির ভাগাড়ে। অপরিচ্ছন্ন, নোংরা আবর্জনা এবং ছোট-বড় কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য এখন পুরান ঢাকার অন্যতম সমস্যা। বিপজ্জনক রাসায়নিকের কারখানা নাগরিক জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। পুরান ঢাকার অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট এতই অপ্রশস্ত যে কোনো বিপর্যয় ঘটলে লোকজনকে উদ্ধার করা সত্যিকার অর্থেই কঠিন হয়ে পড়ে। অপ্রশস্ত গলিতে নির্মাণ করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক ভবন। একটি ভবনের সঙ্গে আরেকটি ভবন একেবারেই গায়ে লাগানো। বেশিরভাগ ভবন নির্মিত হয়েছে রাজউকের অনুমতি ছাড়াই। পুরান ঢাকায় নড়বড়ে বাড়ির সংখ্যাও অনেক। পুরান ঢাকা এখন বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতি এলাকা। অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট এবং বাড়িঘরের কারণে এ এলাকা ক্রমেই মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। রাস্তাঘাট এতটা অপ্রশস্ত— যে বেশিরভাগ রাস্তায় দমকল বাহিনীর গাড়ি প্রবেশ দুরূহ ব্যাপার। পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বাইরে থেকে পানি আনা ছাড়া বিকল্প উপায় থাকে না। তার পরও পুরান ঢাকায় লোকালয়ের মধ্যেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্লাস্টিক কারখানা, যেখানে সেখানে রয়েছে কেমিক্যাল গোডাউন বা দোকান। ঘিঞ্জি এই জনপদের বৈদ্যুতিক লাইনগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ যে কোনো কারণে শর্ট সার্কিটে আগুন ধরে গেলে ঘটতে পারে বিপর্যয়। নিমতলীর একটি বিয়েবাড়িতে এ ধরনের একটি রাসায়নিকের গুদামে আগুন লেগে প্রাণ হারিয়েছিল ১২২ জন। সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর পুরান ঢাকার সব রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নেয়ার কথা জোরেশোরে শোনা যাচ্ছিল; কিন্তু তা বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ চোখে পড়েনি। পুরান ঢাকায় মাটি বলতে যেন কিছু নেই। দেয়াল ঘেঁষে দালান। এক বাড়ির বারান্দা ঢুকে যাচ্ছে অন্য আরেক বাড়িতে। দুই বাড়ির মধ্যখান দিয়ে সরু রাস্তা। একজনের বেশি লোক চলাচল করতে পারেন না। লাইন দিয়ে একজন একজন করে রাস্তা পার হতে হয়। সিটি কর্পোরেশনের মতে, পুরান ঢাকার ৬০ শতাংশ বাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ। মহানগরীর অংশ হলেও পুরান ঢাকা যেন এক বিচ্ছিন্ন এলাকা। নাগরিক সুযোগ-সুবিধার কম-বেশি ঘাটতি আছে নগরের সব এলাকায়ই। পুরান ঢাকার সমস্যা এতটাই প্রকট, ভুক্তভোগী ছাড়া তা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। পরিবেশগত অবস্থান এবং অবকাঠামো ও অন্যান্য বিন্যাসের দিকটি মাথায় রেখে পুরান ঢাকার সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়া পুরান ঢাকাকে স্বাভাবিক জীবন দান করা আমাদের দায়িত্ব। ঐতিহ্য এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই। পুরান ঢাকাকে বাঁচাতে প্রয়োজন সম্মিলিত একটি মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন। যে কোনো শর্তেই ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকাকে বাঁচাতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পুরান ঢাকা যানজট, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, আইনশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস, চুরি, পরিবেশ দূষণসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। সরকারই পারেন ঢাকাকে রক্ষার ব্যাপারে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে। বর্তমানে পুরান ঢাকার যে অবস্থা আগামীতে তা অচল হয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কেমিক্যাল কারখানা, দোকান বা গুদামের জন্য বিভিন্ন দফতরের অনুমতির প্রয়োজন হলেও সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া সিংহভাগ কারখানার অন্য কোনো অনুমতি নেই। নিমতলী বিপর্যয়ের আগে যেখানে সাইনবোর্ড লাগিয়ে ব্যবসা চালানো হতো, এখন সেখানে সাইনবোর্ড ছাড়াই চলছে কেমিক্যালের কারবার। প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের গোপন সমঝোতা গড়ে ওঠায় তারা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ বিষয়ে সরকারের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙবে, লাখ লাখ মানুষের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানাগুলোকে সরানো হবেÑ এমনটিই কাম্য।

দেশে ৮৪ ভাগ পরিবার আয়োডিনযুক্ত লবন গ্রহণ করছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা ৮৪ শতাংশ পরিবার আয়োডিনযুক্ত ভোজ্য লবণ গ্রহণ করছে। ১৯৮৯ সালে দেশে আয়োডিনের ঘাটতিজনিত রোগাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল শতকরা প্রায় ৭০ শতাংশ। গত দু’দশকে এ সংখ্যা কমে শতকরা ৩৪ শতাংশে পৌঁছেছে। সম্মিলিত সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে সকলের জন্য আয়োডিনযুক্ত লবণ নিশ্চিত করা সম্ভব। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘টেকসই ও শতভাগ আয়োডিনযুক্ত লবণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বিষয়ক নীতি সংলাপে বক্তারা একথা বলেন। ইউনিসেফ, মাইক্রোনিউট্রেন ইনিসিয়েটিভ (এমআই) এবং বিসিকের সার্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। বিসিক চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিবুর রহমান ফকির এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ হুমায়ুন কবির। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবি’র পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগীয় পরিচালক ডা. তাহ্মিদ আহমেদ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মাইক্রোনিউট্রেশন ইনিসিয়েটিভ (এমআই), এশিয়া’র আঞ্চলিক পরিচালক মেলানী গালভিন, সার্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ প্রকল্পের পরিচালক মো. আবু তাহের খান বক্তব্য রাখেন। সংলাপে বক্তারা বলেন, দেহে আয়োডিন ঘাটতির ফলে মানুষের স্বাভাবিক বিকাশ, শরীরের তাপমাত্রা, রক্তপ্রবাহ ও মেধার বিকাশ ব্যাহত হয়। আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড রোগে আক্রান্ত হবার পাশাপাশি শিশুরা কমবুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে থাকে। শিশু ও মহিলাদের অপুষ্টির কারণে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শতকরা এক ভাগ কম হচ্ছে। তারা সকলের জন্য পরিমিত মাত্রার আয়োডিন নিশ্চিত করতে ভোজ্য লবণের পাশাপাশি পশু খাদ্যে ব্যবহƒত লবণেও আয়োডিন মিশ্রণ বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দেন। বক্তারা বলেন, আয়োডিন ঘাটতি শুধু বাংলাদেশে নয়, গোটা বিশ্বেই একটি মারাÍক সমস্যা। আয়োডিনযুক্ত লবণের মূল্য বেশি বিধায় দেশের অনেক মানুষ আয়োডিনের অভাবজনিত রোগে ভুগছে। প্রতি এক মেট্রিকটন লবণে আয়োডিন মিশ্রণের জন্য মাত্র এক মার্কিন ডলার খরচ হয়ে থাকে। এ বিবেচনায় আয়োডিনযুক্ত ভোজ্য লবণের দাম সাধারণ জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা উচিত। এক্ষেত্রে মুনাফার পরিবর্তে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এগিয়ে আসার জন্য তারা ব্যবসায়ী সমাজের প্রতি আহবান জানান। শিল্পমন্ত্রী বলেন, মহাজোট সরকার গৃহিত উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ ভোজ্য লবণ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, শতভাগ পরিবারে আয়োডিনযুক্ত লবন ব্যবহার নিশ্চিত করা। মন্ত্রী বলেন, সরকার লবণের উৎপাদন বৃদ্ধি ও লবণ চাষীদের ন্যায্যমূল্য দিতে জাতীয় লবণনীতি-২০১১ ঘোষণা করেছে। এ নীতির আওতায় লবণ চাষী, মিল মালিক, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্ভব সব ধরণের নীতি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। দেশে আয়োডিনযুক্ত ভোজ্য লবণের প্রসারে তিনি বিসিকের সার্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ প্রকল্পের আওতায় অর্জিত সাফল্যের প্রশংসা করেন। সম্মিলিত উদ্যোগে বাংলাদেশ শীঘ্রই শতভাগ আয়োডিনযুক্ত লবণ ভোগীর দেশে পরিণত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, মানবদেহে আয়োডিনের ঘাটতিজনিত রোগ-বালাই প্রতিরোধে বিসিক ১৯৮৯ সালে সার্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ প্রকল্প গ্রহণ করে। ইউনিসেফ ও মাইক্রোনিউট্রেন ইনিসিয়েটিভ (এমআই) এ প্রকল্পে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা করে আসছে। প্রকল্পের আওতায় লবণ চাষীদের মধ্যে উন্নত প্রযুক্তি হস্তান্তর, লবণ মিলে আয়োডিন মিশ্রণ যন্ত্রপাতি স্থাপন, পটাশিয়াম আয়োডেট সরবরাহ ও আয়োডিনযুক্ত ভোজ্য লবণ ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

রাজধানীতে সাংবাদিক দম্পতি খুন
জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক
গত শুক্রবার রাতে রাজধানীতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন এক সাংবাদিক দম্পতি। হতভাগ্য দুজন সাংবাদিক হলেন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ প্রাণে বাঁচলেও চোখের সামনে প্রাণপ্রিয় বাবা মায়ের মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গেছে। রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজার ভাড়া বাসাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন এই সাংবাদিক দম্পতি। পেশাগত জীবনে বিভিন্ন অপরাধের সংবাদ পরিবেশন করার পর নিজেরাই গণমাধ্যমের মর্মস্পর্শী সংবাদ শিরোনাম হলেন তারা। কেনই বা তারা খুন হলেন এবং কারাই বা তাদের খুন করেছে তার কোনো রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়নি। অতীতেও একের পর এক সাংবাদিক খুন হওয়া এবং এই খুনের সঙ্গে জড়িতদের কোনো শাস্তি না হওয়ার ফলে সাংবাদিকরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। একই সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সাংবাদিক সমাজ। সাগর-রুনি দম্পতির অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,বিরোধীদলীয় নেতা  বেগম খালেদা জিয়া, বিভিন্ন মন্ত্রিসহ রাজনৈতিক নেতারা। পুলিশ র‌্যাবসহ তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং নিহতদের পরিচিত বা স্বজনদের কেউ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে। ধারালো অস্ত্রের উপুর্যপরি আঘাতে গত শুক্রবার রাত তিনটা থেকে ভোর পাঁচটার মধ্যে তাদের হত্যা করা হয়েছে। সাগরের শরীরে ২০টির বেশি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। এছাড়া একটি হাতলবিহীন ছুরি তার দেহে বেঁধানো ছিল। রুনির পেটে ছিল ২টি বড় ক্ষতের চিহ্ন । প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে যারা খুনের সঙ্গে জড়িত তারা অপেশাদার। তবে তারা কিভাবে ঘরে ঢুকলো এবং বেড়িয়ে গেলো তা এখনো পরিষ্কার নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি সাহারা খাতুনও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। অতীতেও দেশের  বহু নামজাদা সাংবাদিক নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন। তাদের ব্যাপারেও খুনিকে অবিলম্বে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। সেসব নির্দেশে খুনিদের  কেউ গ্রেফতার হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আর গ্রেফতার না হলে শাস্তির তো কোনো প্রশ্নই আসে না। তারপরও আমরা মনে করি এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি যারা ঘটিয়েছে প্রশাসন তাদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রদানের ব্যাপারে তৎপর হবে। তাহলে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জনগণের যে অনাস্থা বিরাজ করছে তা কিছুটা হলেও কমবে।
স্বাগতম নবনিযুক্ত সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের একই সঙ্গে অভিনন্দন বিদায়ীদেরও
মাহবুবুল আলম
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম সার্চ কমিটি বা অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ ও অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। সাবেক সিএসপি ও সচিব সিএসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ ও নির্বাচন কমিশনার সাবেক অতিরিক্ত সচিব আবু হাফিজ, সাবেক যুগ্মসচিব আব্দুল মোবারক ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাবেদ আলীর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে তাদের নিয়োগ ও যোগদান পুরোপুরি কার্যকরী হলো। গতকাল ৯ ফেব্র“য়ারি বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বিকেল চাটায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে নতুন নিয়োগ পাওয়া সিইসিসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে শপথবাক্য পাঠ করান। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম মাননীয় রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময়ের এক দিন আগেই ১০ জনের নাম সুপারিশ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেন। এর পর ৮ ফেব্র“য়ারি ২০১২ বুধবার রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান সংবিধানের ১১৮ এর ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদানের পর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
তাই আমরা অন্যান্য রাজনৈতিক দল, দেশের সুশীল সমাজ ও সচেতন নাগরিকদের মতো তাদের স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে আমরা আশা করব নবগঠিত নির্বাচন কমিশন তাদের মেধা, যোগ্যতা ও স্ব স্ব ক্ষেত্রে অর্জিত দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামীতে দেশে অর্থবহ,  অবাধ নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবেন। একই সঙ্গে অভিনন্দন জানাই বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারদের, যারা বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে একটা গ্রহণযোগ্য অবস্থানে পৌঁছে দিয়ে গেছেন। আমাদের মতো বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক্ষেত্রেও বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতিবাচকতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। তারা এ নির্বাচন কমিশনকে সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন এ নির্বাচন কমিশন আমরা মানি না। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে। গণআন্দোলনের মাধ্যমে এর সরকারকে হটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তবেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি নচেৎ নয়। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যকে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সদ্য গঠিত নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করে রাখার কৌশল হিসেবেই মনে করছেন। ভবিষ্যতে সুযোগ বুঝে যাতে বলতে পারে ‘আমরা আগেই বলেছি এ নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ।’ আমরা দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির এ ডাবল স্ট্যান্ডার্ড রাজনীতি দেখে আসছি। বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনেও তারা বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং যেখানে যেখানে নিজেদের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে তাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। অনেকে মনে করেন এ ধরনের রাজনীতি অপকৌশল ছাড়া কিছু নয়।
এ দেশের জনগণ দীর্ঘদিন থেকে লক্ষ্য করে আসছে বর্তমান বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াত তথা চারদলীয় ঐক্যজোট সরকারের  কোনো কর্মসূচিই মানতে রাজি নয়। সব কিছুতেই তাদের গায়ের জোর। সরকার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাতেই বলে মানি না মানব না। মানতে হবে, না হলে মানতে বাধ্য করা হবে। বিএনপি নামক দলটিই যেহেতু গায়ের জোরে প্রতিষ্ঠিত তাই তারা সব কিছুতেই গায়ের জোর খাটাতে অভ্যস্ত। এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার নীল নকশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে, বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখল করে, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে অসাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা চালু ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট সায়েমকে আবার বন্দুকের নলের মুখে সরিয়ে নিয়ে রাষ্ট্রপতি বনে গিয়েছিলেন। পরে এ পদ গ্রহণকে জায়েজ করার জন্য তার প্রভু আইয়ুবীয় স্টাইলে জঘন্যতম কারচুপির ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোটের মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতা গ্রহণকে জায়েজ করে নিয়েছিলেন। কাজেই বর্তমান বিএনপিও জেনারেল জিয়ার গায়ের জোরের লিগ্যাসি বহন করবে তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। এ বিষয়টি আমি ৭ ফেব্র“য়ারি ২০১২ দৈনিক বাংলাদেশ সময়ে প্রকাশিত আমার ‘সালিশ মানি কিন্তু তাল গাছ আমার’ শিরোনামের নিবন্ধে উল্লেখ করেছি। তাই এখানে এর বিষদ আলোচনা করতে চাই না। আমরা দীর্ঘদিন থেকেই বিএনপির রাজনীতিতে প্রচ্ছন্ন গায়ের জোর লক্ষ্য করে আসছি। তারা যেটা বিশ্বাস করেন তাই ঠিক, এ মনোভাবটি আরো বেশি স্পষ্ট তাদের ’৯০-এর পরবর্তী রাজনীতিতে। সেই সময় থেকে বিভিন্ন নির্বাচন, উপ-নির্বাচনে গায়ের জোরে নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করে এনেছে। এমনও সময় গেছে যে বেলা ১২টার আগেই অধিকাংশ নির্বাচনী কেন্দ্রে বল প্রয়োগপূর্বক ঢুকে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে ইচ্ছা মতো সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে ফেলেছে। তখন তাদের মনোভাবটা এমন ছিল ‘জোর যার মুল¬ুক তার’ প্রবচনটির মতো। মাগুরা, তেজগাঁওসহ এমন অনেক নির্বাচনী এলাকার উদাহরণ এখানে দেয়া যেতে পারে। আর ১৯৯৬ সালের ভোটার সকল রাজনৈতিক দলের বয়কটের মাধ্যমে ভোটারবিহীন ভোট ডাকাতির নির্বাচনের কথা তো দেশের মানুষ বিস্মৃত হয়নি। ২০০৬ সালে গায়ের জোরে নির্বাচন করে ফেলার জন্য আবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি টোকো আজিজকে দিয়ে কত ছিনিমিনিটাই না করা হলো। তারা ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নে বাধা সৃষ্টি করে জন দাবিকে উপেক্ষা করে একতরফা ভোট তালিকা তৈরি করে সোয়া কোটি ভুয়া ভোটার  সংবলিত একটি ভোটারলিস্ট তৈরির মাধ্যমে আবার কারচুপি করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সে স্বপ্নও তাদের পূরণ হয়নি। এক এগারো তাদের সে স্বপ্নকেও ধূলিসাৎ করে দেয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে সংসদে যোগদান থেকে শুরু করে হালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল, নির্বাচনে ইভিএমের বিরোধিতা, (ইভিএমের ভোটে নিজদের প্রার্থী জয়লাভ করলে আবার ফুল দিয়ে বরণ করেও নেন তারা।) এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে নির্বাচন গঠনের উদ্দেশ্যে সার্চ কমিটিরও বিরোধিতা করেছিল তারা।
আগেই বলা হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনো সার্চ কমিটি গঠন করে ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত এবং সুপারিশের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়নি। কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন হলো দেশের এগারোতম নির্বাচন কমিশন। এর আগে অর্থাৎ এক এগারো পূর্ববর্তী সময়ে যত নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল তাদের অধিকাংশই দেশের সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফলতার পরিচয় দিতে পারেনি। ২০০১ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে কলঙ্কজনক সালসা নির্বাচনের ইতিহাস এখনো মানুষের স্মৃতিতে জ্বল জ্বল করছে। তাছাড়া এরও আগে নব্বই পূর্ববর্তী যত নির্বাচন গঠিত হয়েছিল তার প্রায় সবই ছিল সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন। এখানে বলে রাখা ভালো যে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের নেতৃত্বে বাংলাদেশে যতটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল তার প্রতিটিই ছিল সামরিক স্বৈরাচারদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন। ২০০৬ সালে তার শাসনামলে গঠিত টেকো আজিজের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের কথা  এ দেশের মানুষ ভুলে যায়নি, কোনো দিন ভুলে যেতে পারবেও না। নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে কিভাবে নির্বাচন কারচুপি করতে হয় বেগম খালেদা জিয়ার চেয়ে কারো বেশি জানার কথা নয়। সেই কারণেই হয়ত নির্বাচন কমিশন নিয়ে তার এত ভয়। বিএনপি নেত্রীর এমন নেতিবাচক মনোভাবে পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোর দিয়ে বলেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে আসতেই হবে।’ তিনি বলেন, ‘এত উদারভাবে অতীতে বাংলাদেশে কোনো দিন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়নি।’ গতকাল ৯ ফেব্র“য়ারি বৃহস্পতিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নির্বাচন গঠন নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আরো বলেন, ‘অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও চড়াই উতরাই পেরিয়ে দেশে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। সেই কষ্টার্জিত গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে। তাদের এ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে নেতকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান। 
আমি নিজেও গত দু’দিন ধরে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সংবাদ এবং প্রতিবেদন মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি। দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার জনগণ, বুদ্ধিজীবী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের  অনেকেই  বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন, বেআইনি, অসাংবিধানিক’ এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, ‘এভাবে সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত ও সুপারিশের মাধ্যমে আগে বাংলাদেশে কখনো নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়নি। যথাযথ নিয়ম মেনেই রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১১৮ এর ১ অনুচ্ছেদ ক্ষমতা বলেই নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। এ জন্য সবাই রাষ্ট্রপতি ও বর্তমান সরকারকে সাধুবাদও জানিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি ও তার মিত্ররা রয়ে গেছে সেই পুরনো বৃত্তেই। যাক, লেখার পরিধি না বাড়িয়ে নবনিযুক্ত সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমদের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়েই আমার লেখার ইতি টানতে চাই। শপথ গ্রহণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নবনিযুক্ত সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধান রক্ষার শপথ নিলাম, এটা কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তবে আমরা প্রস্তুত।’ তিনি বলেন, নির্বাচন একটি চলমান প্রক্রিয়া, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন একটি  মৌলিক অধিকার। বিশ্বের সব দেশেই সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন করে সে অধিকার রক্ষা করা হয়। আমাদের লক্ষ্যও তাই।’ বিএনপি ও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নতুন নির্বাচন কমিশনের বিরোধিতা করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নতুন সিইসি বলেন, ‘প্রত্যেক দলেরই একটা নিজস্ব স্ট্রাটেজি থাকে। কাজের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেব।’ আমরাও সিইসির এ বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে তাকেসহ শপথ নেয়া অন্য তিন নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার সহকর্মী নির্বাচন কমিশনারদের। কারো কারো অনেক নেতিবাচক অবস্থানের পরও বিদায়ী নির্বাচন কমিশন গত জাতীয় নির্বাচন ও বেশ কিছু উপনির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও কয়েকটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। কোনো উস্কানিতে কান না দিয়ে তারা তাদের কর্তব্য ও দায়িত্বে অবিচল থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছেন। এ জন্য বাংলাদেশের মানুষ চিরদিন তাদের মনে রাখবে। নবনিযুক্ত সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররাও কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করবেন ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী ফলে পরিচয়’Ñ এ প্রবাদ বাক্যটি।
লেখক: কবি-কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট 

গণতান্ত্রিক রাজনীতি এবং বিরোধী দল: জাতি কি চায়
ড. ইশা মোহাম্মদ
সাধারণ হিসেবে বিরোধী দলের রাজনীতি কেবলমাত্র  নেতিতে উপনীত হওয়া গণতান্ত্রিকতার পর্যায়ে পড়ে না। বাংলাদেশে প্রায় সময়েই দেখা যায়, সরকারই  দখল ক্ষমতা দেখায়। এটি একটি সাধারণ চরিত্রে পৌঁছে গেছে। কিন্তু সে কারণে রাজনৈতিক দল কিংবা ব্যক্তিত্ব হতাশ হয় না। তারা তাদের কৌশল পরিবর্তন করে এবং অসংখ্য বিকল্প পথ ব্যবহার করে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির এটাই সাধারণ চল, বিশেষ করে বাংলাদেশে কখনোই কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দল হতাশ হয় না। এর ফলও হয় সব সময়েই ভালো। সাধারণ মানুষ পরিবর্তন প্রত্যাশা করলে পরিবর্তন আসে। একটি দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না। বিশেষত গণঅসন্তোষ তৈরি করে কোনো দলই দীর্ঘদিন সরকারি ক্ষমতায় থাকেনি, কেবলমাত্র সামরিক শাসন ছাড়া। বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের বিভিন্ন রূপের এক্সপেরিমেন্ট চলছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এই জাতীয় এক্সপেরিমেন্ট করছে, না সাম্রাজ্যবাদ বাংলাদেশকে একটি লুম্পেন রাষ্ট্র বানানোর জন্য, নানান কিসিমের তরিকা প্রয়োগ করছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। কোনো দেশপ্রেমিক জাতীয় সরকার যাতে ক্ষমতায় না থাকে একটি দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যকর করতে না পারে সে জন্য সাম্রাজ্যবাদ অপকৌশল প্রয়োগ করতে পারে। তারা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কিংবা গোপন কৌশলে বিরোধী দলকে উস্কানি দিয়ে বা মৌলবাদীদেরকে ব্যবহার করে নাশকতামূলক কাজ কারবার করিয়ে সরকার বদল করে। যে কোনো লুম্পেন রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার ক্ষমতা সংহত করে দীর্ঘমেয়াদি শাসনে যেতে পারে না। পাকিস্তানে যেমন কোনো গণতান্ত্রিক সরকার স্বাভাবিকভাবে দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বারবার অপশক্তির কারণে গণতন্ত্র বিপদগ্রস্ত হয়। রাষ্ট্রটি এখন পুরোপুরি লুম্পেন হয়ে গেছে। বাংলাদেশকেও একটি লুম্পেন রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সম্ভবত সাম্রাজ্যবাদই মৌলবাদকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী দলকে দিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা  তৈরি করতে চায়। নৈরাজ্যই তাদের কাম্য। বর্তমানে বিরোধী দল যেভাবে তাদের রাজনৈতিক কলাকৌশল প্রয়োগ করছে, তাতে সন্দেহ হয় যে, তারা সাম্রাজ্যবাদের নীলনকশাই বাস্তবায়ন করার অপচেষ্টা করছে। সম্প্রতি মৌলবাদীরা যেভাবে ধরা পড়ছে এবং তাদের অপকীর্তি সম্পর্কে জানান দিচ্ছে, তাতে বেশ বোঝা যায় তাদের মূল লক্ষ্য নৈরাজ্য ও অস্থিরতা। আরো দেখা যাচ্ছে সব  বিরোধীদলীয় কর্মসূচিতে জামায়াতের এবং মৌলবাদীদের অংশগ্রহণ থাকছে। এরা জামায়াতকে ক্ষমতায় যেতে সাহায্য করছে, নাকি বিএনপিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে, সেটিও খালি চোখে দেখা যাচ্ছে না। সম্ভবত বিএনপি সবই বোঝে এবং বুঝে শুনেই এ সব রাজনৈতিক অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক দেশে এখন গোয়ার্তুমিতে পর্যবশিত হয় না। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই একটি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে তাদের ঘাড়ে মৌলবাদী অধ্যুষিত জামায়াত বসে থাকার কারণে-সাধারণ মানুষ চারদলীয় জোটকে প্রত্যাখ্যান করে মহাজোট সরকারকে ব্যাপক সমর্থন জানায় এবং মহাজোট একটি সর্বদলীয় সরকার গঠন করে। এটি বাংলাদেশের জন্য শুভসূচনা বলতে হবে। একটি দল সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও শরিক দলগুলোকে সম্মান দেখিয়ে ‘সরকারে’ তাদেরকে নিয়ে গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য তৈরি করার একটা রীতি চালু করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ এই গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য পছন্দও করেছে। আশা করা যায় আগামীতে এই গণতান্ত্রিক রীতির অনুশীলন অব্যাহত থাকবে। সরকারদলীয় গণতান্ত্রিক রীতি সৌন্দর্যমণ্ডিত হলেই কেবল গণতান্ত্রিক রাজনীতি সুন্দর হবে এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। বিরোধী দল গণতন্ত্রে একটি অপরিহার্য শর্ত। বিরোধীদলীয় রাজনীতি ও রাষ্ট্রপরিচালনায় তাদের অংশগ্রহণও সুন্দর হতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের বিরোধী দল রাষ্ট্রপরিচালনায় পুরোপুরি বিপরীতে অবস্থান করছে। এতে গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য সৃষ্টি না হয়ে রাজনৈতিক ক্লেদ তৈরি হচ্ছে। গণতন্ত্রের শুভযাত্রা কলংকিত হচ্ছে। জনসাধারণের কোনো লাভ হচ্ছে না। কিন্তু এর উল্টোটাই হওয়া উচিত ছিল। রাষ্ট্রপরিচালনায় বিরোধী দলের স্বাভাবিক অংশগ্রহণ প্রয়োজন ছিল। এবং ওই জাতীয়  অংশগ্রহণের প্রথম কাজ হচ্ছে সংসদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ এবং ভিন্নমত কর্মসূচির উত্থাপন ও আলোচনা। বর্তমান বিরোধী দল সে পথে হাঁটছেই না। তারা কেবল রাস্তায় হাঁটছে। এভাবে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে আর যা কিছু করা যাক না কেন, গণতন্ত্রকে গণকল্যাণকর করা যাবে না। আর বিরোধী দলও গণকল্যাণের পথে রাজনীতি না করে, জনগণকে অতিষ্ঠ করে, গণঘৃণার কারণ হয়ে কোনো দিনই ক্ষমতায় যেতে পারবে না। যে অভক্তি তারা বাড়িয়েছে ভক্তিসীমা বাড়িয়েই তা দূর করতে হবে।
গণবিচ্ছিন্নতা যা তৈরি হয়েছে গণসম্পৃক্ততার মাধ্যমেই তা দূর করতে হবে। নইলে এখনো যতটুকু শ্রদ্ধাভক্তি মানুষের অবশিষ্ট আছে তা অচিরেই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। মৌলবাদীদের কুপরামর্শে গণতান্ত্রিক রাজনীতি পরিত্যাগ করে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে ক্ষমতায় যাওয়ার দুঃস্বপ্ন দেখা উচিত হবে না। বিএনপি এবং তার শরিক দু’-একটি দল গণতান্ত্রিক হিসেবে সাধারণ্যে পরিচিতি লাভ করেছে। তাদের সেই গণতান্ত্রিক পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে আরো অনেক গণতান্ত্রিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে ঐক্যসাধন করা তাদের রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকার স্বাভাবিক উপায়। যে মারাÍক রাজনৈতিক বিপর্যয় সংঘটিত হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠে রাজনীতিতে টিকে থাকাই তাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। তা না হলে বিএনপির ধ্বংস সাধন হলে জামায়াত কিংবা মৌলবাদ অধ্যুষিত অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বিএনপির ধ্বংসাবশেষের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে। যা পরিণতিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি ক্ষতিকর রাজনীতির জš§ দেবে। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির কি উচিত হবে, বাংলাদেশের জন্য কোনো অপশক্তিকে আবাহন করে নিয়ে আসা- নিজেরা আÍহত্যা করে। অবশ্যই তাদের জন্য বিকল্প রাজনৈতিক লাইন বর্তমান আছে। তাদের উচিত হবে গণতান্ত্রিক বিকল্পগুলোকে ব্যবহার করা।
দুটি পরিষ্কার বিকল্প দেখা যাচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে ঐক্যসাধনের মাধ্যমে রাজনৈতিক শক্তির সম্প্রসারণ এবং মাথা থেকে অপরাজনৈতিক শক্তি ঝেড়ে ফেলা। প্রথমেই তাদেরকে জনসমক্ষে ঘোষণা দিতে হবে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। তাদেরকে বলতে হবে, কোনো মৌলবাদী এবং যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতকে পরিত্যাগ করতে হবে। গোপনেও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যাবে না। দ্বিতীয় সাধারণ কৌশল হচ্ছে সংসদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ। সামনেই ইলেকশন। তারা নির্বাচন করে তো সংসদেই যাবে। জনসাধারণকে বুঝতে দিতে হবে যে তারা সংসদীয় কার্যক্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এতে তাদের প্রতি যে গণঅভক্তি তৈরি হয়েছে তা অনেকখানি কমে যাবে। সংসদে গিয়ে তারা যে খুব একটা পাত্তা পাবে তা নয়। মহাজোট সংসদে মহাশক্তিশালী। ওই শক্তির বিরুদ্ধে শক্তি দিয়ে কিছুই করা যাবে না। কিন্তু যুক্তি দিয়ে অনেক কিছুই করা সম্ভব। তাছাড়া জনসাধারণও দেখতে চায়, তারা সংসদে সংসদীয় আচরণ করেছে এবং সরকারকে যুক্তিসিদ্ধ সমালোচনা করেছে। বিএনপিকে সংসদে এসে বক্তব্য ও যুক্তি তুলে ধরতে হবে। অবশ্য তাতেও খুব একটা কাজ নাও হতে পারে। কাজ না হলেও তারা বিস্তর চেঁচামেচি করতে পারবে। তাদের বিস্তর চেঁচামেচির সুযোগটা নেয়া উচিত। সংসদে উপস্থিতি এবং বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে তারা জনসাধারণের কাছে নিজেদের নতুন পরিচয়ও উপস্থাপন করতে পারবে। মোট দু’বছর আছে সামনে, শেষ বছরটিতে সংসদে তারা বেশিক্ষণ কাটাতে পারবে না। মাঠে- ময়দানেই তাদের সময় ব্যয় হবে বেশি। তাই এই বছরটাই তাদের সংসদীয় সময় ধরে নিয়ে রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। সংসদ এবং রাজপথ দুটোর মধ্যে সমন্বয় করতে পারলে তাদের রাজনৈতিক আদর্শের ‘ভাব ও বস্তুর’ মিলন হতে পারে। তাদের নীতিনির্ধারকরা কি এটা একটু ভেবে দেখবে? বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে একেবারে নির্মূল হওয়ার চেয়ে রাজনীতিতে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে টিকে থাকাটা কি তাদের জন্য ভালো হবে না? বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদ এবং সম্প্রসারণবাদ তাদের কালো থাবা বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কোনো গণতান্ত্রিক শক্তির নৈতিক দায়িত্ব সাম্রাজ্যবাদ এবং সম্প্রসারণবাদের অপকৌশল বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করা এবং তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেয়া। কেবলমাত্র ক্ষমতালিপ্সা নয়Ñ গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার জন্যই গণতান্ত্রিক রাজনীতি করা উচিত। জাতীয় কল্যাণেই গণতান্ত্রিক রাজনীতি করা উচিত। আশা করা যায় বিএনপি যদি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হয় তবে অবশ্যই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করবে। অপকৌশল পরিত্যাগ করবে এবং বাংলাদেশের জন্য একটি শুভসত্তায় পরিচিত হবে।
 লেখক: কলামিস্ট

সীমান্তে হত্যা
অলিউর রহমান ফিরোজ
ভারতের বিএসএফ প্রধান সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধ হবে না। ভারত প্রতিশ্র“তি প্রদান করেও এখন তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সীমান্তে গুলি চালানোর কথা যেভাবে ঘোষণা করেছে তাতে করে আমাদের নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। ভারতকে যতোই বন্ধু রাষ্ট্র ভাবা হোক না কেন তারা সে মর্যাদা এখন আর রাখছে না। মনে রাখতে হবে বিএসএফ প্রধান বিবিসিকে যে সাক্ষাতকার দিয়েছেন গুলি চালানোর বিষয়ে, সেটা যদি ভারতের উপরের মহলের বক্তব্য না হয় তাহলে তিনি বিবিসিকে এ বক্তব্য দিতে পারতেন না। এখন আমাদের কূটনৈতিক চ্যানেলে অগ্রসর হওয়া ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই। সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা যতো বিলম্বিত হবে ততই দেশের সীমান্তে নিরীহ মানুষের লাশের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। সীমান্তের ঘটনায় ভারতীয় গণমাধ্যম অমানবিকতা এবং বিভৎস ঘটনাটি যতোটা জনসম্মুখে তুলে ধরেছেন সে তুলনায় আমাদের মানবাধিকার কমিশন বিশ্বের দরবারে নালিশ জানাতে পারেননি। এখন সময় এসেছে ভারতের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার। বাংলাদেশের বিরামপুর সীমান্তে সাইফুল ইসলাম নামের আরেক যুবককে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে। কয়েকদিন আগে আরেক যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যা করলে তখন ভারতীয় গণমাধ্যমও তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল। কিন্তু কোন কিছুতেই বিএসএফের নৃশংসতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হলে তারা ভিন্ন পথ অবলম্বন করে হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে। তারা গোপনে ধরে নিয়ে হত্যা শেষে লাশগুলো নদীতে ফেলে দিচ্ছে । আবার কখনো গুম করে ফেলছে। সে দেশের সরকার তাদের রাবারের গুলি দেয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেখানে এখন শব্দরোধী বন্দুক ব্যবহারের ফলে হত্যাকান্ডের সময় কোন শব্দ পর্যন্ত হচ্ছে না। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে দায়সারা গোছের হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন,ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হত্যাকান্ড মেনে নেয়া হবে না। কূটনৈতিকভাবে প্রচেষ্টা না চালিয়ে তার এ হুঁশিয়ারী যে কোন কাজে আসবে না এটা তার ভালো করেই জানা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ যে ভাবে সীমান্তে বীভৎস নির্যাতন করে একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তাতে মানবিক মূল্যবোধ বলতে আর কিছূ থাকেনা। সীমান্তে কোন অনিয়ম হলে তার জন্য সে দেশের নিজস্ব নিয়ম ও আইনের পরিকাঠামো রয়েছে। কিন্তু এখন তারা যেভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে তাতে করে বিশ্বের দরবারে ভারতের মুখ দেখানোর কোন উপায় নেই। এর আগে ফেলানী নামের এক কিশোরীকে কাটাতারের বেড়া পার হবার সময় গুলি করে হত্যা করলে সাড়া বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। তখন সে দেশের সরকার বিএসএফকে মারণাস্ত্রের পরিবর্তে রবারের গুলি দেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে সে দাবী আদায় করা সম্ভব হয়নি। আর সে কারণেই সীমান্তে নির্বচারের মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা। আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাষ্য, সীমান্তে হত্যা কোন বড় ধরনের ঘটনা নয়। তার মতো লোক যে দলের মুখপাত্র হিসেবে প্রচার মাধ্যমে কথা বলে সে দলের জন্য তার বোধোদয়হীন কথা ক্ষতি ছাড়া কোন ভালো ফল বয়ে আনবে না। অপরদিকে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেছেন, সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে বাংলাদেশের কোন নিরীহ লোক মারা পড়ছে না। শুধু রাতের আঁধারে চোরাকারবারীরাই সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে  মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের একটা বন্ধুত্বমূলক সম্পর্কের কারণেই বাংলাদেশের মানুষ সীমান্তে বিভিন্ন কাজের জন্য যায়। সেখানে কৃষক, জেলে এবং রাখালরা সীমান্তের কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনে যান। সে সুযোগে যদি তাদের চোরাকারবারী মনে করে পাখি শিকার করার মতো মানুষ হত্যায় মেতে ওঠে কেউ তা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। প্রতিদিন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি বিসর্জন দিয়ে যেভাবে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে তা কোন যুদ্ধ চলাকালীন দেশের সীমান্তেও ঘটে না। সরকার নিস্ক্রিয় থাকায় এবং কূটনৈতিক তৎপরতায় ব্যর্থতার কারণেই বিএসএফ এভাবে হত্যা চালিয়ে যেতে পারছে। সীমান্ত হত্যার প্রেক্ষিতে এখন বিজিবিকে ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। ভারতের প্রতিটি বিওপি’র পাশাপাশি আমাদের একটি করে নিরাপত্তা চৌকী স্থাপন করতে হবে। ফেলানী হত্যাকান্ডের পর বহির্বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠলে ভারত সীমান্তে কিছুদিন হত্যাকান্ড বন্ধ রাখলেও আবার বিএসএফ সদস্যরা নৃশংসভাবে হত্যা করা শুরু করেছে। তারা একের পর এক হত্যা করে চলেছে সীমান্তবাসীদের। তাদের বেপরোয়া হত্যাযজ্ঞে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে আবার আগের মতো ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফেলানী হত্যার রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতেই তাদের এহেন কর্মকান্ড আমাদের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেলানী হত্যার পর উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কয়েক দফা বৈঠক হবার পর বিএসএফ আর সীমান্তে কোন হত্যাকান্ড ঘটাবে না বলে প্রতিশ্র“তি প্রদান করলেও এখন আবার হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে এ বাহিনী। রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা পাওয়া দেশের মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার হলেও এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে নির্লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে। ফেলানী হত্যাকান্ডের পর আমাদের দেশের রাষ্ট্রপ্রধান কোন প্রতিবাদ পাঠাননি। পরে বিএসএফ’র নিষ্ঠুর হত্যার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিলে সরকারকে দায়সারা গোছের একটা প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। এ বছর ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের হাতে ৪০ জন নিরীহ বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। গত এক দশকে সীমান্তরক্ষী বিএসএফ আমাদের ছিটমহলের ৯ শত ৯৬ জন নিরীহ লোককে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে। তার মধ্যে ২০০৭ সালে হত্যা করে ১ শত ২০জন এবং তাদের নির্যাতনে আহত হয় ৮২ জন আর তারা ৮৭ জনকে অপহরণ করে। ২০০৮ সালে বিএসএফ ৬২ জনকে হত্যা করে ও ৪৭ জন তাদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন এবং তখন ৮১ জন অপহরনের কবলে পড়েন। ২০০৯ সালে ৯৮ জনকে হত্যা ও ৭৭ জন আহত করা হয়। এসময়ে ২৫ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। ২০১০ সালে ৮৪ জন বিএসএফ কর্তৃক নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হন আর আহত হন ৭৭ জন এবং ২৫ জন লোককে তারা অপহরণ করে। ২০১১ সালে  ৪০ জন হত্যাকান্ডের শিকার হন। অপরদিকে এ বছর জানুয়ারী থেকে ৬ জন লোক তাদের হাতে  নৃশংশতার শিকার হন। বিজিবি দেশের উচ্চ পর্যায় থেকে বার বার কূটনৈতিক চ্যানেলে ভারতের সাথে আমাদের অমিমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে দেন-দরবার করার কথা বললেও সরকার এ ক্ষেত্রে নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা সিটমহলগুলো বিনিময়ের মাধ্যমে সমঝোতার পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। কিন্তু বাস্তবমুখী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে ভারতের সাথে আমাদের কুটনৈতিক ব্যর্থতাই ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ-এর স্পেশাল ডাইরেক্টর জেনারেল প্রণয় সাহা শিলিগুড়িতে তার এক বক্তব্যে ফেলানী হত্যাকান্ডে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠলে সে দেশের সীমান্ত রক্ষীদের রাবার বুলেট দেয়ার কথা বলেন। সে লক্ষ্যে তাদেরকে ‘পাম্প অ্যাকশান বোর গানস’ দেয়ার কথাও বলেছেন। কিন্তু সে পদক্ষেপ কার্যকর না করায়  বিএসএফের হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হচ্ছে না। তারা আবারও মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছে। ফেলানী হত্যার পর পরই দেশের মানুষ প্রতিবাদ করার পাশাপাশি বিদেশের মাটি নিউইয়র্কে পর্যন্ত বাঙালী অধিবাসীরা মানবন্ধন করে ভারতের হত্যাযজ্ঞের ব্যাপারে প্রতিবাদ করেন। পরে ভারত সরকার দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনের সোচ্চার ভূমিকায় সে দেশের বিএসএফ’কে তাদের পদ্ধতিগত ভাবে  মারণাস্ত্র রাখার বিকল্প হিসেবে রাবার বুলেট দেয়ার ঘোষণা দেন। কিন্ত এ ঘোষণাও অন্যান্য  ঘোষণার মতো অকার্যকর থেকে যায়। ভারত সরকার বাংলাদেশী হত্যা বিষয়ে কয়েক দফা বৈঠক চালালেও তা থেকে বাংলাদেশের মানুষ কোন প্রকার সুফল লাভ করতে পারেনি। আর আমাদের দেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতায় ভারত এহেন অপরাধ বার বার ঘটানোর সুযোগ পাচ্ছে। ভারতের সাথে পাকিস্তান এবং অন্যান্য দেশের সীমান্ত এলাকা নিয়ে বৈরীভাব থাকলেও সেখানে কোন হত্যাযজ্ঞের ঘটনা খুব একটা চোখে পড়েনি। তার কারণ হলো পাকিস্তানের সাথে ভারতের বৈরী সম্পর্ক রয়েছে আর তার ফলে সে দেশের সীমান্তবাসীরা সব সময় সতর্কতা অবলম্বন করে চলেন। কিন্তু ভারতের সাথে পাকিস্তানের মতো আমাদের সে রকম  বৈরী সম্পর্ক না থাকার কারণে ভারতের ভূ-খন্ডে বাংলাদেশীরা ভয়-ভীতির উর্ধ্বে থেকে প্রবেশ করে থাকেন। ভারত সরকার সীমান্তে আইন প্রয়োগ বহাল রেখে সীমান্তে মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থি কোন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে বিষয়ে আরো সচেতন হবে সেটাই বাংলাদেশের মানুষের কামনা।

আমাদের নারী সমাজ
জালাল কবির
ইসলাম সাম্য আর তৌহিদের বলিষ্ঠ  বাণীতে সুপ্রতিষ্ঠিত। সব মানুষ এক সৃষ্টিকর্তার প্রিয় বান্দা। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নেই। কিন্তু ইসলামি আদর্শ ও ভাবধারায় নারী এবং পুরুষের মধ্যে রয়েছে জাতিগত বাস্তব ব্যবধানের মানসিকতা। বিষয়টি খুব সুক্ষ্ম কিন্তু ব্যাপক। পুরুষ যখন নারীর দিকে আগ্রহ ভরে তাকায় অথবা সৌন্দর্য্যরে কারণে একাদিকবার দৃষ্টিপাত করে তখন নারীরা, এমনকি গোড়া মনোভাবাপন্ন পুরুষরাও উষ্মা প্রকাশ করে বলেন ‘লোকটির স্বভাব ভালো নয়’। বহু মুসলিম অধ্যুষিত সমাজে নারীর দিকে চোখ তুলে তাকালে কিংবা হেসে কথা বললে বা ঘাড় ফিরিয়ে তাকালে সে হয়ে যায় হারামি (আরবি ভাষায়)। শাস্তি পাওয়ার মতো একটি অপরাধ। সেই সঙ্গে নোংরা অপবাদতো জুটবেই এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। বাল্যকাল থেকে সমাজ নারীকে নীরব শিক্ষা দিচ্ছে যে, পুরুষদের বাইরের উপাধি মানুষ হলেও বাস্তবে এবং কার্যক্ষেত্রে সে বন্ধু নয় বরং ষোলোআনা প্রভু। সমাজে এমন প্রচলিত ধারা খুবই ধীর গতিতে বেড়ে ওঠে। যেমন করে ছায়া ধীরে ধীরে পরিণত হয় অন্ধকারে। পাপ মানেই তো অপরাধ। এই পাপবোধ ও অপরাধবোধ মানুষের মনকে সংকীর্ণ করে এবং অন্যের প্রতি সন্দেহপ্রবণতা বাড়িয়ে তোলে। নারী সম্বন্ধে কোন সুস্থ চিন্তা তার মনে প্রবেশ করার রাস্তা খুঁজে পায় না। উদারতার সফল দৃষ্টিভঙ্গিও লোপ পায়।
 আমাদের এই রক্ষণশীল এবং আধুনিক শিক্ষা বিবর্জিত সমাজে পুরুষের মনের চোখে নারী শুধুই ভোগের বস্তু , সোনাদানা ও মূল্যবান সম্পদের মতো। তাই ওকে আড়াল করে রাখা একান্ত জরুরি। সে যার দখলে যাবে সে’ই তার ভোগের সামগ্রী  হিসেবে ব্যবহƒত হবে। বাস্তবেও দেখা গেল পুরুষ তাই করছে তার শক্তির জোরে, তার শিক্ষাহীনতা ও সমাজ থেকে পাওয়া সংর্কীণ মনোভাবের কারণে। পুরুষরা ইসলামি সমাজের ধ্যানধারণা থেকে জেনেছে ‘নারী শস্যক্ষেতের মতো’। (আল কোরআন ছুরা বাকারাহ, আয়াত ২২৩) পুরুষ স্বচক্ষে দেখছে বাইরে নারীর কোন ভুমিকা নেই। বিশাল বিশ্বটি পুরুষ দ্বারাই শাসিত ও পরিচালিত। সুতরাং তার আত্মবিশ্বাস নারীর জ্ঞান অতি সামান্য ও সীমিত। তার জ্ঞান কিছু কাচ্চা বাচ্চা, কিছু হাঁড়ি পাতিল, কিছু আত্মীয়স্বজন। এবং একারণে পুরুষরা খেদ করে বলে ‘সাত নারীকে একত্রে কেটে জোড়া দিলেও এক পুরুষের সমান হয় না’। অর্থাৎ নারীর জ্ঞান বুদ্ধি অতি সামান্য। কিন্তু কেন ? কী কারণে ? সেটা পুরুষরা তাদের জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে বুঝতে চায় না। তাদের অন্ধ ধারণা আল্লাহ এভাবে দিয়ে দিয়েছেন। পুরুষরা এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধ্যানধারণা ও কথাবার্তা থেকে সেজে বসেছে এক ষাঁড়পুরুষমার্কা প্রভূ। বাইরের জগতে সে ‘ভেজা বিড়াল’ কিংবা ‘গোবরে গণেশ’ হলেও তার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু নারীর উপর তার বিশাল প্রভুত্ব ও কর্তৃত্ব থাকা চাই। এই আভ্যন্তরীণ অহংকার ও ক্রোধ-স্বভাব নারীকে চিরকাল ভীতু ও দুর্বল করে রেখেছে। সৎসাহসের মতো গুণটি ও নারীর মধ্যে থেকেও নেই। এদিকে নারীকে নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে, পুরুষের দৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচাও। পুরুষরা সর্বদাই বেগানা। ওরা শিকারি তুমি শিকার, ওরা প্রভূ তুমি দাসী, ওরা বীর, তুমি ভীরু, ওরা জ্ঞানী তুমি মূর্খ। অতএব তোমার জ্ঞানবুদ্ধি শ্রম সব কিছুই তার কাছে সমর্পণ কর। সমর্পণ কর তোমার সমস্ত সত্তা। আত্ম-সমর্পণে তুমি বিলীন হয়ে যাও এতেই তোমার শান্তি। নারী সে আদেশ মেনে নিচ্ছে। পুরুষরা তাকে পাঁজাকোলা করে পালকিতে তুলে দিচ্ছে না হয় গাড়িতে ঢুকিয়ে বিয়ে দিচ্ছে। তার চারপাশে অভিভাবকরা ঘিরে বসে শর্ত শুনাচ্ছে অমুকের ছেলে অমুক এতোটাকা (মোহরানা) দানের বিনিময়ে তোমাকে বিয়ে করছে তুমি ওকে স্বামী হিসেবে কবুল বল, কবুল। স্বামী লোকটি কানা, খোঁড়া, মুর্খ, বোকা, বধির এসব যাচাই করার কোন দায়দায়িত্ব নারীর নেই, তা অভিভাবকদের। অপরের জ্ঞানে ভালোমন্দ যাচাই করা এবং অপরের চোখে ভালো লাগা, না লাগা যে কত বিস্তর তফাৎ তা বিবেকবান মাত্রই জানেন। এই দায়িত্ব অপরের হাতে ন্যস্ত মানেই তো পরাধীনতা। যে পুরুষ মোহরানার বিনিময়ে বিয়ে করবে, ভালোবাসার বিনিময়ে নয়, সে পুরুষ তার স্ত্রীকে মন থেকে কীভাবে গ্রহণ করবে তা বলা মুশকিল। পছন্দ হলে হয় তো তাকে ভালোবাসবে আর না হলে শুরু হবে জীবনের অন্যপর্ব। বিয়ের মুখ্য ব্যাপারটি টাকার, পুরুষ তা খরচা করে কারণ এখানে তার ভোগ, সেবা ও ভালোবাসা আদায় করার দাবি সে কিনে নিচ্ছে। তৎসঙ্গে তার ভবিষ্যৎ বংশবিস্তারের গভীর প্রশ্নটিও জড়িত। সুতরাং সে ধুমধাম খরচার মাধ্যমে সমাজে বাহবা এবং ইজ্জত নিয়ে প্রতিষ্ঠা পেতে চায়। এটাই আমাদের সমাজের বাস্তবতা, এবং এটা লিখে প্রকাশ করার অর্থ এই নয় যে আমি এটাকে সমর্থন দিচ্ছি। একই কারণে ধনী কন্যার পিতারা মেয়ের সঙ্গে এক জাহাজ মালামাল দিয়ে সমাজে আত্মপ্রতিষ্ঠার নেশায় মদমত্ত মাতালের মতো বিভোর থাকেন।  তারা আবার গুপ্ত পলিটিক্স হিসাবে এটাও মনে করেন যে, এতে করে মেয়েটি বিনা দ্বিধায় তার স্বামীর উপর কর্তৃত্ব খাটাতে পারবে। শ্বশুর বাড়ির লোকেরাও বুঝতে পারবে সে গরিব ঘরের মেয়ে নয়, স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে সুতরাং  বধূকে অর্থনৈতিকভাবে খাটো চোখে দেখার কোনো অবকাশ নেই। এসব মনোভাবের নিদর্শন হিসাবে তারা টাকাকে সমাজের পাল্লাতে ওজন করে নিজের মানসিক ব্যাধির পরিচয় দেন। উপঢৌকনের নামে এসব দাবাখেলার মন্ত্রীগিরিতে সমাজের অন্যান্য গরিব পিতাদের যে বারোটা বাজানো হচ্ছে সেদিকে তাদের বিন্দুমাত্র হুঁশ নেই। যেন মগের মুল্লুকে শেয়ালের দাপট।  এদের ঔদ্ধত্যের কারণে সমাজে যৌতুক প্রথার লেলিহান শিখায় আজ পুড়ে ভষ্ম  হচ্ছে সাধারণ মানুষ। পৃথিবীর অধিকাংশ সমাজে একজন পিতা মেয়ের বিয়ে নিয়ে এভাবে দুশ্চিন্তায় ও দুর্দশায় জর্জরিত হতে দেখা যায় না। অপর দিকে একজন স্ত্রী স্বামীর মোহরানা মাফ করে দেবে কিনা এই প্রশ্ন পরের, কিন্তু তার আগে কিছু যৌতুক আদায়  করে নিলে স্ত্রীর পক্ষকে দুর্বল রাখা যায়। অর্থাৎ সবাই নিজ নিজ চতুরতার আশ্রয়ে জয়ী হতে চায়। পুরুষ স্বামীটি মুক্তমনা হলেও তার মাবাপ ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ যে মুক্তমনা হবেন এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। ওরা কেউ না কেউ নববধুকে নানা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে এবং ওইরকমভাবে বিবেচনা করে। এরপর ও রিস্ক থেকে যায় সেই নব বিবাহিত নারীটি কাজকর্মে দক্ষ কিনা ? আচার আচরণে ভালো কি’না ? অতীতে খারাপ কিছু করেছিল কি’না ? তার মাবাপ আত্মীয়স্বজন কেউ প্রকাশ্যে দুর্নীতি বা অপরাধ বা এজাতীয় কিছু করেছিল কি’না। যদি করে থাকে তবে তার জবাবদিহি হতে হবে। এ নিয়ে নববধুর শ্বশুর বাড়িতে ইজ্জত হুরমতের প্রশ্ন দাঁড়ায়। সুতরাং নারীর জীবনের রিস্ক বা ঝুঁকি পদে পদে, ঘাটে ঘাটে। শান্তি তার কোথাও নেই। ননদ শ্বাশুরির গঞ্জনার কথা আমরা সবাই জানি। নারী তাই তো নিরূপায় হয়ে পুরুষের দয়ার ভিক্ষায় বেঁচে আছে। সকল আদেশ নত শিরে পালন করছে। আমি নারীর স্বপক্ষে অনেক কথাই বললাম,  তবে কিছু কথা আমাদের নারীসমাজের জেনে রাখা উচিত । আর তা হলো, আমাদের সমাজে প্রচুর নারীরা আছেন যারা অনর্থক ভালো কথাকে মিথ্যাতে পরিণত করে অন্যের কাছে তা পাচার করেন, মুখবাজিতে, মিথ্যাবাদিতায়, হিংসা ও কূটনীতিতে ওস্তাদ। তারা মনে করেন তাদের মতো শেয়ানা পৃথিবীতে আর কেউ নেই। তাদের এহেন চরিত্রের কারণে সমাজের রক্ষণশীল মানুষেরা তাদেরকে দাসী হিসেব বিবেচনা না করে উপায় নেই। কারণ তারা  প্রশ্রয় ও সুযোগ পেলে সংসারে অশান্তির আগুনে অনেক কিছু পুড়াতে ভালোবাসেন। জেদ মেটানোর জন্য তারা যে কোন কিছু করতে দ্বিধাবোধ করেন না। এজন্য বিশেষ করে বাঙালি সমাজে বয়স্ক মুরব্বিগণ বলে থাকেন ‘বিয়ের পর নারীরা সংসারে যেমন ফুল ফুটাতে জানে, তেমনি অনেকে বিষাক্ত হুল ফুটাতেও জানে’।
যাহোক, ধর্মীয় দৃষ্টিতে এখনও প্রভু পুরুষের আদেশে নারী নিজেকে আড়াল করছে পুরুষের মনের জেনা থেকে, চোখের জেনা থেকে, অর্থাৎ কামভাব থেকে। এসব না মানলে সে কতকাল নরকের আগুন পুড়ে পুড়ে ভষ্ম হবে তার ইয়ত্তা নেই। অতএব তাদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে প্রতিরোধ। প্রতিরোধ হিসেবে আছে আপাদমস্তক বোরখা, হিজাব, আছে লজ্জায় জড়সড় হয়ে থাকার ভদ্র অভিনয়, আছে কুৎসা রটানোর হাতিয়ার, আছে সমাজের রক্তচক্ষু এবং পরিবারের কর্তাদের খড়গহস্ত। এসমস্ত উপকরণ তাকে পাপ থেকে বাচাচ্ছে এটাই তাদের “নারীশিক্ষা”। পুরুষ থাকে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল আর নারীকে থাকতে হবে পুরুষের উপর নির্ভরশীল এটাই নারীশিক্ষার বিশেষ অঙ্গ। যে তাদেরকে ভাত কাপড়ের নিশ্চয়তা দেবে সে তাকে ভোগ করবে। এই মানসিকতা ও নির্ভরশীলতা নারীদেরকে করেছে পঙ্গু। নিজের জীবন নিয়ে মুক্ত কিছু ভাবার অবকাশ নারীদের নেই। বাচ্চা কাচ্চা পালবে, মোহরানা প্রদত্ত স্বামীর সেবা করবে, এটা কোনো কঠিন কাজ ও নয়। অতএব এই সুখ থেকে বঞ্চিত হবার জন্য যারা নারী স্বাধীনতার কথা বলে তারাই তাদের  অর্থাৎ রক্ষণশীলদের বা ধার্মিকদের শত্রু। নারী অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করে স্বতর্স্ফূতভাবে একত্রে ঘরসংসার করার কোনো রাস্তা বা উপায় খুঁজে বের করতে না দেওয়াই হলো আমাদের সমাজের ধর্মীয় মানসিকতা। সবাই যেন ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বলছে খবরদার ‘কানা সাপকে পথ চিনিয়ে দিওনা’। প্রশ্রয় দিলে মাথায় উঠবে। সুতরাং নারী তার ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা হারিয়েছে আত্মসমর্পণ নামের এক অজ্ঞ মোহজালে। আর একাজটি শুধু পুরুষ একা করে যাচ্ছে না, সঙ্গে পুর্ণ সমর্থন এবং যুক্তি দিয়ে যাচ্ছে মা নামের প্রত্যেক মহিলাগণ।  নারীদরকে এভাবে পেছনে ফেলে রাখার জন্য সমাজে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না কর্মী, সাহসী, বীর্যবান, সৎ, উদার, বীরনারী কিংবা বীরপুরুষ। যে কারণে আমরা চিরকাল জাতি হিসাবে অসহায়, পঙ্গু, দুর্বল। নারী যদি স্বাবলম্বী ও মুক্তচিন্তার অধিকারী হতো তাহলে আজকের সমাজ এত পেছনে থাকতোনা। আলো, পানি ও সারপ্রাপ্ত ঘনসবুজ বৃক্ষের মতো সমাজ হতো সতেজ সুন্দর স্বাস্থ্যবান। নিবন্ধের আলোচনা থেকে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, পাশ্চাত্যে তো মুক্ত বিয়ে হচ্ছে তাহলে ওখানে কেনো এত বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে ? এর জবাবে একটি কথা বলা যেতে পারে, এই নিবন্ধে পাশ্চাত্যকে অনুকরণের কথা বলা হয় নি। বরং কুসংস্কারকে এড়িয়ে চলে যুগোপযোগী একটি বাস্তবমুখি ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে। আমাদের দেশে বিবাহ বিচ্ছেদ কোন অংশেই কম নয়। প্রচুর দাম্পত্য জীবন জোরপূর্বক টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। নারীর প্রকৃত অধিকার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কোনো বিচার বা ফলাফল পাওয়া যায় না বলেই নারীরা  নীরবে সব সহ্য করে যাচ্ছেন। অধিকাংশ  বিবাহিতা নারীরা বৎসর অন্তে , না হয় দু তিন বৎসরের মধ্যে মাতৃত্ব লাভ করেন। তখন ওই মায়েরা নিজ সন্তানদের কারণে জীবনের সমস্ত সুখ আশা আকাঙ্খাকে বিসর্জন দিয়ে অসীম কষ্টের মধ্যে তাদের জীবন অতিবাহিত করেন। সন্তানদের বিচ্ছেদ তাদের কাছে যে কোনো বিপদের চেয়ে ভয়াবহ। আমাদের সমাজে নারী একবার তালাকপ্রাপ্তা হলে তাকে আর কেউ সহজে বিয়ে করতে চায় না। বাপের বাড়িতে তারা হয় অতিরিক্ত বুঝা। এসমস্ত অনিশ্চয়তার কারণে নারীরা শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারকে ভাষাহীন প্রাণীর মতো সহ্য করে জীবন কাটান। তবুও তারা বিবাহ বিচ্ছেদর কথা কল্পনা করেন না। অধিকাংশ নারীরা জানেন নিজের সন্তানেরা কোন রকমে বড় হয়ে গেলে নিজের পারিবারিক আসন স্থায়ী হয়ে যায়। সেকারণে তারা ধৈর্য ধরে ওই দিনগুলোর অপেক্ষা করেন। উল্লিখিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় এমন নারীজীবন সমাজের পুরুষদের সেবা দেয়া ছাড়া কোনো উপকারে আসছে না। অর্থাৎ সমাজে নারীর কোনো ভেল্যু সৃষ্টি হচ্ছে না, তারা শুধুই যেন সন্তান উৎপাদনের মেশিন। তাদেরকে বাস্তবের বহু জ্ঞানচেতনা ও অভিজ্ঞতা থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয় বলে তাদের দ্বারা (সন্তান লালিত পালিত হলেও) সুসন্তান গড়া হয় না, বা সমাজ গঠনের কোন ভূমিকা পালন হয় না। অথচ তারাই পুরুষ শাসিত সমাজের অর্ধেক অংশ। আগেই বলেছি সমাজের প্রচলিত ব্যবস্থায় নারী পুরুষের চোখ থেকে নিজেকে মনেপ্রাণে আড়াল করে রাখছে। এতে পুরুষের মনে আরও সন্দেহ বাড়ছে। নারী কেনো নিজেকে এত ব্যবধানে সরে থাকতে চায় ? তাহলে নিশ্চয়ই কোনো রহস্য আছে ? পুরুষরা হয়ে ওঠে আরও কৌতূহলী আরও আগ্রহী। তার মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। নারীর দিকে না তাকাবার ইচ্ছে হলেও  তাকাবার জন্য  মনে উসকানি দিচ্ছে সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা।
নারীকে পুরুষ থেকে ভিন্ন জাতি হিসাবে বিচ্ছিন্ন রাখায় পুরুষরাও মনে মনে বুঝে নিয়েছে নারী তার যৌবনের একটা আহার মাত্র। তাই ওরা মেয়ে দেখলে শীষ দেয়,  যৌনতা নিয়ে চটুল মন্তব্য করে, বিশ্রী কথাবার্তা বলে। যাকে আমরা যৌনহয়রানি বা নারী অপমান বলি। এতে মেয়েরা আরও জড়সড় হয়ে ভয় পায়। ভীরুতা তাদের হƒদয়ে বাসা বাধে। আমি আমার লঘু ভাষা প্রয়োগের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী, যদিও সুন্দর ভাবে বলা লেখকের পবিত্র দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবের বিচারে মানুষ কত নীচুমনা হতে পারে সেটুকু বুঝাবার জন্য আমি এভাবে ভাষা ব্যবহার করেছি। পৃথিবীর বহু দেশ ঘুরেছি কিন্তু নারীকে নিয়ে এভাবে কেউ প্রকাশ্যে টিটকারী মারতে দেখি নি। এমনকি একজন মদ্যপ নারীকেও নিয়ে নয়। বাল্যকাল থেকেই শোনে আসলাম ‘বেগানা নারীর’ দিকে তাকালে চোখের অত্যাধিক ক্ষতি হয়। চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, রাত কানা রোগ বাড়ে। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম নারীর রূপ দর্শনে চোখের জ্যোতি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। মনে আসে অনাবিল তৃপ্তি। একারণে বয়োজ্যেষ্ঠরা স্ত্রী বিয়োগ হলে পুনরায় ঘরে যখন স্বাস্থ্যবান রূপসী বউ নিয়ে জীবন কাটান তখন তারাও দৃষ্টিতে পান শক্তি, চেহারায় লাভ করেন কোমলতা। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞানে জানা গেলো ভিটামিনের অভাবে বাড়ে রাতকানা রোগ। যে দেশের নারীকে রাতের অন্ধকারে ঘরের দরজা ভেঙে তার ইজ্জত হানি করা হয়, হয় না তার সুষ্ঠু বিচার। যে দেশে নারীর সাথে মুক্ত বন্ধুত্ব করার অভাবে, উঠতি বয়েসি ছেলেরা হয় বলশালী পুরুষের যৌনতার শিকার, না হয় সমমৈথুনতার শিকার, সেসব দেশে ইসলামের দেহরক্ষী ও জেহাদি স্বেচ্ছাসেবকরা কী সাহায্য এবং কী প্রতিকার নিচ্ছেন ? তারা কি মনে করেন এসব পাশ কেটে চললে এবং সুন্দর মাছাল্লায় কপাল ঠেকিয়ে প্রার্থনা করলেই মুক্তি পেয়ে যাবেন ? না কখ্খন ও না।
নিচে কিছু মানানসই তথ্য দেওয়া গেল
(ক) নারী পুরুষ একে অন্যকে ভালোবেসে বিয়ে করবে। ভালোবাসতে গিয়ে নারী পুরুষের যৌনসঙ্গী হয়ে পড়লে উভয়ের কী কী ক্ষতি হতে পারে সে সম্বন্ধে স্কুলে বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণ। ধর্মীয় শিক্ষায় পরকালের নরক ভয় দিয়ে যদি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা হলে বাস্তবের চাক্ষুস ক্ষতি সম্বন্ধে জ্ঞানদান  সমাজে আরও বেশি কার্যকর হবে।
(খ) ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে সম্বন্ধে যুক্তি ও শিক্ষার পরামর্শ গ্রহণ।
(গ) বিয়ের পূর্ণ সিদ্ধান্তে যাওয়ার পূর্বে উভয় পরিবারের অভিভাবকদের তা অবহিত করা। সকল সামাজিক অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় কার্যকলাপে নারী ও পুরুষের একত্রে অংশ গ্রহণ করা। এতে একে অন্যের চরিত্রের ভালোমন্দের দিক উদঘাটন করতে পারবে।
(ঘ) খেলাধুলা, বিচার আচার, মার্কেটিং, ধর্মীয় প্রার্থনা ইত্যাদিতে নারীর পূর্ণ দায়দায়িত্ব অর্পনসহ মতামত ও সিদ্ধান্তের অগ্রাধিকার দেওয়া।
(ঙ) নারী পুরুষের ফ্যাশন ও পোশাক আশাক এমন হওয়া প্রয়োজন যা সমাজে ভদ্র হিসেবে পরিগণিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যে কোনো ফ্যাশন হোক তা হাটুর নিচে দশ ইঞ্চি অবধি কাপড়ে আবৃত থাকা উচিত। হাতের কনুই থেকে তিন ইঞ্চি উপর পর্যন্ত অনাবৃত থাকতে পারে। নাভী, কাঁধ, পিঠ উš§ুক্ত রাখা উচিত হবে না। যেহেতু আমাদের সমাজটা এখনও প্রগতিশীল নয়, এখানে  এখনও ভদ্র অপেক্ষা বখাটেদের দাপট বেশি। গলা ও ঘাড় উš§ুক্ত রাখা অবশ্যই প্রয়োজনীয়। চুলের এলোমেলো বা হিজিবিজি ফ্যাশন সর্বদাই পরিহার করে চলা ইত্যাদি।

দেশে জমি বেচা-কেনায় নীতিমালা প্রণয়ন দরকার
মুহম্মদ আলতাফ হোসেন
গত ৩৫ বছরে ঢাকায় জমির দাম বেড়েছে ১২শ’ গুণ । দাম বৃদ্ধির এ প্রবণতা বিপজ্জনক। ক্রমেই ঢাকার জমি চলে যাচ্ছে উচ্চবিত্তদের হাতে। জমির এত দাম উঠায় ধীরে ধীরে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা হারাচ্ছে মালিকানা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জমি চলে যাচ্ছে করপোরেট কোম্পানিগুলোর কাছে। জমির দাম বৃদ্ধির এ প্রবণতা উন্নত বিশ্বের কিছু কিছু শহরকেও হার মানিয়েছে। এক শ্রেণীর মানুষের কাছে প্রচুর কালো টাকা আছে। এই বিপুল পরিমাণ কালো টাকা জমিতে বিনিয়োগ করার কারণেই জমির দাম এতো অস্বাভাবিক বেড়েছে। কারণ কালো টাকার মালিকদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ হচ্ছে জমিতে বিনিয়োগ। ৫০ লাখ টাকার জমি কিনে বিনা বাধায় তা পাঁচ লাখ টাকা মূল্য দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করা সম্ভব। ৪৫ লাখ টাকা দ্রুত সাদা করে ফেলা সম্ভব। এভাবে সরকারের হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। আর ভূমি অফিসের সামান্য কেরানি পর্যন্ত এই দুর্নীতিতে সহযোগিতা করে বিপুল বিত্তের মালিক হচ্ছেন। এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, ১৯৭৫ পরবর্তীকাল থেকেই জমির দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকায় গড়ে কাঠাপ্রতি জমির দাম ১৯৭৫ সালে ছিল ২০ হাজার ২০০ টাকা। ১৫ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯০ সালে একই পরিমাণ জমির দাম বেড়ে হয় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জমির দাম বৃদ্ধির পরিমাণ ২২ গুণের উপরে। পরবর্তী ১০ বছরে অর্থাৎ ২০০০ সালে এক কাঠা জমির গড় দাম দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। অর্থাৎ এক দশকে দাম বৃদ্ধির পরিমাণ ৩ দশমিক ৮৮ গুণ। ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে জমির দাম দাঁড়ায় কাঠাপ্রতি ১ কোটি ২৫ লাখে। বৃদ্ধির পরিমাণ ৭ দশমিক ১৪ গুণ। পরবর্তী এক বছরে অর্থাৎ ২০১১ সালে সেই একই পরিমাণ জমির দাম দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।
দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ঢাকার নি¤œ মধ্যবিত্ত অথবা মধ্যবিত্ত এলাকার তুলনায় অভিজাত এলাকার মধ্যে অনেক তফাৎ। অভিজাত এলাকায় দাম বেড়েছে তুলনামূলক বেশি। বলা চলে ক্ষেত্র বিশেষে ১০ গুণেরও বেশি। সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, বারিধারায় গত বছর এক কাঠা জমি বিক্রি হয়েছে তিন কোটি টাকায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বারিধারার জমি বিক্রি হয়েছে কাঠাপ্রতি পাঁচ কোটি টাকায়। এই এলাকার জমি ১৯৭৫ সালে বিক্রি হয়েছে গড়ে মাত্র ২৫ হাজার টাকা কাঠায়। বারিধারায় ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৪ গুণ। অপর দিকে ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০০০ পর্যন্ত দাম বেড়েছে আট গুণ। ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত এলাকা গুলশান-বারিধারায় এ বছরের শুরুতে জমির দাম কাঠাপ্রতি ৩ থেকে ৫ কোটি টাকার মধ্যে থাকলেও এখন তা ৫-৬ কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে। আর গুলশান এভিনিউয়ে এখন প্রতি কাঠা জমির দাম হাঁকা হচ্ছে ১০-১২ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, যে মূল্যবৃদ্ধি দীর্ঘকাল স্থায়ী থাকে, তার কারণ অনুসন্ধান করা সরকারের কাজ। কিন্তু রাজউক, গণপূর্ত ও ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জমির দাম নিয়ে সরকারি কোনো নীতিমালা নেই। যে কারণে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে এর দাম। জমির তুলনায় চাহিদা বেশি। একশ্রেণীর মানুষের হাতে অগাধ টাকা ও অর্থনীতিতে বড় ধরনের বৈষম্য জমির দামকে উসকে দিচ্ছে। আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছে, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কেউ কোথাও বেশি দাম দিয়ে জমি কিনলে সেটাই প্রচলিত দাম হয়ে যাচ্ছে। কোনো জমি আজ যে দামে কেনা হচ্ছে, পরদিনই তা বেড়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, ঢাকায় জমির দাম ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মতো পার্শ্ববর্তী দেশই শুধু নয়, বরং লন্ডন-নিউইয়র্কের তুলনায়ও অনেক বেশি। জমিতে বিনিয়োগ বরাবরই লাভজনক। ব্যাংকে উচ্চসুদে টাকা রাখলেও মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকৃত আয় যেখানে অনেক কমে যায়, সেখানে জমির দাম মূল্যস্ফীতির চেয়েও কয়েকগুণ বেশি হারে বাড়ে। তাই অনেকেই জমি কিনছে। এভাবে চাহিদা তৈরি হয়ে দাম বাড়তে থাকে। দাম বাড়া দেখে আরো অনেকেই জমি কিনতে শুরু করেন। এতে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়ে দাম আরো বেড়ে গেছে। আবার গত বছর পর্যন্ত যারা শেয়ারবাজারে ব্যবসা করেছে তাদেরও অনেকে জমিতে বিনিয়োগ করেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে জমি নিতে গিয়ে দাম বাড়ানোয় ভূমিকা রেখেছে। জমির মূল্যবৃদ্ধিতে ফ্ল্যাটের দাম বাড়ছে। এখন কোনো মধ্যবিত্তের পক্ষেও ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব নয়। স্বাধীনতার পর পর মধ্যবিত্তরা এক খন্ড জমি কিনে বাড়ি করতে পারতো। তারপর এক সময় জমি কিনে বাড়ি করা দুরূহ হয়ে পড়লো। তখন তারা ফ্ল্যাটের দিকে ঝুঁকলো। কিন্তু এখন মধ্যবিত্তরা ফ্ল্যাটও কিনতে পারছে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা শহরে এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের সর্বনিম্ন দাম ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। সে হিসেবে ১২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ৮০ লাখ টাকারও উপরে। আরেকটু ভালো ফ্ল্যাট কিনতে গেলে কোটি টাকার উপরে পড়ে যায়। কিন্তু মধ্যবিত্তের পক্ষে এত টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা কিছুতেই সম্ভব নয়। জানা যায়, শুধু ঢাকা শহর নয়, বাংলাদেশের সব এলাকাতেই জমির দাম এখন খুবই চড়া। তাই মধ্যবিত্তদের পক্ষে ঢাকা শহর কেন,  গ্রামে গিয়েও জমি কেনা সম্ভব নয়। কালো টাকার মালিকরা আর প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জমি কেনায় বিনিয়োগ করা হয়। ফলে কৃষকরা আর জমি রাখতে পারছেন না। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর সব জমি তো টাকাওয়ালারা কিনে নিয়েছেই, অজপাড়া গাঁতেও এখন টাকাওয়ালারা জমি কেনায় জমি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। এতে করে একটা বিরাট জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা বাসস্থান ক্রমেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত ছিলো কালো টাকার মালিক এবং কালো টাকার উৎস উভয়ই নিয়ন্ত্রণ করা। একটা জমির দর মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা। যেখানে সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞ থাকবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটা আছে। এ কমিটি নির্দিষ্ট সময় পরপর এলাকাভেদে জমির একক প্রতি নির্দেশক দাম নির্ধারণ করবে। অর্থাৎ এ দাম বিবেচনায় নিয়ে বাজারে অন্যরা জমি বেচাকেনায় নিজস্ব দর ঠিক করবে। আর সরকারি দরটি আয়কর নির্ধারণে ও জমি নিবন্ধনে অনুসৃত হবে। অনেক ক্ষেত্রেই এখন সরকার নির্ধারিত দরে জমি নিবন্ধন হলেও প্রকৃত কেনাবেচা অনেক বেশি দরে হয়। তাই নিবন্ধন মাশুলও কমানো উচিত। সাধারণ মানুষের আবাসনের দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। সরকারের উচিত গ্রহণযোগ্য একটা সমাধান বের করা। এছাড়া সাধারণের জন্য আবাসন বাবদও সরকারের ভর্তুকি দেয়া উচিত।
(মুহম্মদ আলতাফ হোসেন বার্তা সংস্থা বিএনএস’র প্রধান সম্পাদক)।


লালটিপ : যাত্রা হলো শুরু

অনন্যা আশরাফ
প্রিমিয়ার শোতে কুশীলব ও কলাকুশলীদের লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়ার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলো ‘লাল টিপ’। ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়েছে ছবিটির প্রিমিয়ার প্রদর্শনী। দেশীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বাধিক বাজেটে তৈরি এ ছবিটি বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে ১৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে লাল-গালিচা সংবর্ধনা দেওয়ার রেওয়াজ র্দীঘদিনের। বাংলাদেশে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়ার মাধ্যমে কোনো ছবির প্রিমিয়ার প্রদর্শনী এটিই প্রথম। বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের যৌথ প্রযোজনার এ ছবিটির পরিচালক স্বপন আহমেদ। ছবিটি প্রযোজনায় বাংলাদেশ থেকে রয়েছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও পরিবেশনায় রয়েছে আশীর্বাদ চলচ্চিত্র। ‘লালটিপ’ ছবির রেডকার্পেট প্রিমিয়ার শোতে উপস্থিত ছিলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, ফ্রান্স অংশের নির্বাহী প্রযোজক এনায়েত উল্লাহ, ছবির পরিচালক স্বপন আহমেদ, ছবির প্রধান দুই চরিত্র কুসুম সিকদার ও ইমনসহ ছবির অন্যান্য অভিনয়শিল্পী এবং কলাকুশলীরা। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রতারকা আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, পূর্ণিমা, কণ্ঠশিল্পী আবদুল হাদী, জেমস, কনা প্রমুখ। প্রিমিয়ার প্রদর্শনীর আগে লালগালিচা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন মুনমুন। স্বাগত বক্তব্যে  ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, চ্যানেল আইয়ের দুই কোটি দর্শকের সঙ্গে আমিও একজন একটি ধরনের আন্তর্জাতিক মানের প্রিমিয়ার শো প্রথম দেখলাম। অনুষ্ঠানে ফ্রান্স অংশের নির্বাহী প্রযোজক এনায়েত উল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিমান চিত্রপ্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্মের সাথে আন্তর্জাতিক মানের এমন একটি ছবি (লালটিপ) প্রযোজনায় অংশীদার হতে পেরে আমি গর্বিত। লালটিপ ছবির পরিচালক স্বপন আহমেদ বলেন, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম আমার মনে যে আশার আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে আমি কোনো দিনই ভুলবো না। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের সার্বিক সহযোগিতায় আমি আশাবাদী আন্তর্জাতিক মানের একটি ছবি উপহার দিতে পেরেছি। ছবিটি নির্মাণে আমার মাঝে কোনো অস্থিরতা ছিলো না। আমি অনেক যতেœর সাথে ছবিটি নির্মাণ করেছি। এ সময় উপস্থিত অতিথিরা সদ্যপ্রয়াত শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি স্মরণে ৩০ সেকেন্ড নিরবতা পালন করেন। প্রবাসী বাঙালীর হৃদয়ে নিজস্ব সংস্কৃতিকে লালনের রূপকে তুলে ধরা হয়েছে এ ছবিতে। প্যারিসে বড় হওয়া একটি বাঙালী মেয়ে নিধি। বাবা মা রোড এক্সিডেন্টে মারা যাবার পর বিদেশে বড় বোনের বাড়িতেই থাকছেন ছোট বেলা থেকে। বোন ও দুলাভাইয়ের অত্যন্ত আদরের সে। উপযুক্ত পাত্রের হাতে নিধিকে তুলে দেয়ার চেষ্টায় থাকেন তারা। জাতিসংঘের কর্মরত এক বাঙালী ছেলে অর্ণবকে ঠিক করেন নিধির জীবনসঙ্গী হিসেবে। কিন্তু বিদেশের পরিবেশে বড় হয়েছে নিধি। তার আচরনে মাখিয়েছে বিদেশী সংস্কৃতির ভাব। যাচ্ছে তাই ভাবে চলা যেন তার স্বভাবজাত অভ্যাস। পরিবারের বেঁধে দেয়া জীবনসঙ্গীকে মেনে নিতে অমত জানান তিনি। অন্যদিকে বাঙালী মেয়ে নিধি সরল মনেই ভালোবাসেন ফরাসি এক ছেলেকে। ভালেবাসার ঘোরে একসময় পরিবারের বিয়ের জোড়াজোড়িতে নিজ বাড়ি ছেড়ে উঠে আসে ফরাসি সে ছেলের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে নিধির সরল মন ধোঁকা খায়। ফরাসি প্রেমিকের আরেক গালফ্রেন্ড থেকে তার আসল রূপ জানতে পারে নিধি।  পালিয়ে আসে সে বাড়ি থেকে। কিন্তু পথেই আবার জোড় করে নিজ বাড়ীতে নিয়ে যেতে চায় তার ফরাসি প্রেমিক। সেখান থেকে নিধিকে উদ্ধার করে অর্ণব। নিধিকে নিয়ে যায় নিজের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে নিধি দেখে ভালোবাসার আরেক রূপ। অর্ণবের মনে লালিত গোপন ভালোবাসা দিয়ে আঁকা নিজের ছবি দেখে অবাক হয়ে যায় নিধি। উপলব্ধি করে অর্ণবের ভালোবাসার গভীরতা। একে অন্যকে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে এবং পরিবারকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পরিণতি তাদের টেলে দেয় অন্য দিগন্তে। হারিয়ে ফেলে দুজন দুজনকে। ভালোবাসার উম্মাদনা নিয়ে খুঁজে বেড়ায় একে অন্যকে। এগিয়ে যায় কাহীনির দৌড়ত্ব। অবশেষে নিধিকে খুঁজে পায় অর্ণব। মায়ের ইচ্ছেতেই অর্ণব নিধির কপালে পরিয়ে দেয় লালটিপ।
‘লাল টিপ’ ছবিটির শুটিং করতে পরিচালক স্বপন আহমেদ পাড়ি দিয়েছেন ফ্রান্স, থাইল্যান্ড ও ভারতের বিভিন্ন লোকেশনে। ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের ১৮০টি লোকেশনে ছবিটির শুটিং হয়েছে। প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, মুল্যারুজ, সঞ্জেলিজে, পন্ট আলেকজান্ডর-৩, পন্তেয়ন, সেইন নদী, বীর হাকিম ব্রীজসহ ফ্রান্স, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের বিভিন্ন আকর্ষণীয় লোকেশনে ছবিটি চিত্রায়িত হয়েছে।
’লালটিপ’ ছবিটির বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে বাংলাদেশের ও আর্ন্তজাতিক অঙ্গনের বিখ্যাত সব মিউজিশিয়ানদের মিউজিক। এ ছবির মিউজিক করেছেন ফ্রান্সের অস্কারজয়ী মিউজিক কম্পোজার মরিস জার, বাংলাদেশের ফুয়াদ, ইবরার টিপু, আরেফিন রুমী, আলী আকবর রূপু। গানে কন্ঠ দিয়েছেন মাইকেল জ্যাকসনের বোন লাটয়া জ্যাকসন, বাংলাদেশের কনা, ন্যান্সি, পড়শি, তাপস, কাজী শুভ, উপল, আরেফিন রুমী, ইবরার টিপু, ফুয়াদ, জেমস ও সৈয়দ আব্দুল হাদী। গত বছর ২৫ ডিসেম্বর ছবিটির অ্যালবাম লঞ্চিংয়ের জমকালো আয়োজন করা হয়। তবে অডিও অ্যালবামটি মুক্তি পায় ৩ ফেব্রুয়ারি।
’লালটিপ‘ ছবিতে ইউরোপ ও আমেরিকার প্রায় ৪ হাজার শিল্পী অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে ইমন ও কুসুম শিকদার মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এছাড়াও এ ছবিতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন এটিএম শামসুজ্জামান, সোহেল খান, শহিদুল আলম সাচ্চু, মিশু সাব্বির, কোনাল, মিথিলা, ফ্রান্স ও আমেরিকার শিল্পী যর্থাক্রমে আনা লেভিস, নাতালী ফ্যান্সেস্কী ও ড্যানিয়েল ।
ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেয়াকে সামনে রেখে পরিচালক স্বপন আহমেদসহ অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ব্যাপক প্রচারনা চালিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি ক্যাম্পাসগুলোতে আকর্ষণীয় ট্রেলর প্রদর্শনের করায় এরই মধ্যে ছবিটি নিয়ে তরুণ-তরুণীদের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। পরিচালক স্বপন আহমেদ আশা করছেন, প্রচারনায় যে সাড়া পেয়েছেন ছবিটি মুক্তির পর তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষের সাড়া পাবেন। ‘লাল টিপ’ ছবিটি আর্ন্তজাতিকভাবে মুক্তি দেওয়া হবে এবারের বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ ১৪ এপিল তারিখে। বাংলাদেশে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ছবিটি একযোগে প্রদর্শিত হচ্ছে - স্টার সিনেপ্লেক্স (ঢাকা), বলাকা সিনেওয়াল (ঢাকা), জোনাকি (ঢাকা) , অভিসার (ঢাকা), পুনম, শাহীন (ঢাকা ক্যান্ট:), সনি, চম্পাকলি (টঙ্গি), বর্ষা (গাজীপুর), মনিহার (যশোর),সঙ্গীতা (খুলনা)।

ভালোবাসার ঘর-সংসার 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম


ভালোবাসার জন্য নাকি বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না। ভালোবাসার ঘর-সংসারে সারাবছরই বজায় থাকে ভালোবাসা সুবাতাস। ভ্যালেন্টাইন জুটিরা অবশ্য বছরের প্রতিদিনই প্রিয়জনকে ভালোবাসে। একটা প্রচলিত কথা আছে, জীবনসঙ্গী স্বর্গ থেকে তৈরি হয়ে আসে। এরপর তাদের মধ্যে বিশ্বাস, ভালোবাসা ও রোমান্স দুজনের ভালোবাসাকে আরো জোড়ালো করে। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে বলিউড ও হলিউডের কয়েকটি ভ্যালেনটাইন জুটিকে নিয়ে বাংলানিউজের একটি আয়োজন।
ঐশ্বরিয়া-অভিষেক : বলিউডে ভ্যালেন্টাইন জুটি হিসেবে তালিকার প্রথমে নাম আসে ঐশ্বরিয়া ও অভিষেকের।  ‘কুচ না কাহো’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়েন এ জুটি। ২০০৭ সালে বিয়ের পর ভালোবাসার এ জুটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে আছেন ভক্তদের কাছে। তাদের বোঝাপড়া ও সমঝোতার মাত্রাটাও বেশ জোড়ালো। ২০১১ সালে ফুটফুটে একটি কন্যা শিশুর বাবা-মা হয়েছেন তারা। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি অমিতাভ ও জয়াকে নিয়ে বেশ ভালোই কাটছে তাদের দাম্পত্য জীবন।
শাহরুখ-গৌরি : বলিউডের কিং খান শাহরুখ তার বৌ গৌরিকে অনেক ভালোবাসে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই ভক্তদের মনে। ১৯৯১ সালে বিয়ে করেন এ জুটি। দুটি সন্তান আরিয়ান ও সুহানাকে নিয়ে দাম্পত্য জীবনে বেশ সুখী আছেন শাহরুখ। তবে মাঝে প্রিয়াংকাকে নিয়ে খানিকটা যুক্তি তর্কের বেড়াজালে পড়লেও এখন অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন শাহরুখ।


হৃত্বিক-সুজানা : সত্যিকার ভালোবাসা যে ধর্মের বাধা মানে না তা প্রমান করেছেন হৃতিক-সুজানা। বলিউডের হট জুটির তালিকায় তাদের নাম আগে উঠে আসে। তাদের একে অন্যের প্রতি অনেকদিনের ভালোবাসার পর  ২০০০ সালে বিয়ে করেন তারা। এ জুটি একটি আইডল হিসেবে গন্য করা হয়। ২০০৬ সালে রেহান ও ২০০৮ সালে রেদান নামে দুটি সন্তান আছে তাদের।
কাজল-অজয় দেবগন : বলিউডে আরেকটি ভ্যালেন্টাইন জুটি কাজল ও অজয়। ৫ বছর প্রেম করে ১৯৯৯ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেন এ জুটি। একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়েই ঘনিষ্টতা বেড়ে উঠে। অনস্ক্রিনে অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন এ জুটি। তবে পর্দায় তাদেও ভালোবাসা যতটা গভীর ছিল তার চেয়ে বেশী গভীরতা প্রকাশ পায় অফস্ক্রিনে অর্থাৎ দাম্পত্য জীবনে। ২০০৩ সালে নিশা নামে একটি কন্যা ও ২০১০ সালে যুগ নামে একটি ছেলে সন্তানের বাবা মা হন এ জুটি।
রিতেশ-জেনেলিয়া : বলিউডের ‘লাভ বার্ড’ হিসেবে পরিচিত রিতেশ-জেনেলিয়া জুটি। ৮ বছরের গোপন প্রেমের পর এ বছর ৩ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেছেন তারা। ৪দিন টানা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার পর এ জুটি এখন নতুন দাম্পত্য জীবন শুরু করেছেন। ’তুঝে মেরি কাসাম’ ছবিতে অভিনয়েই প্রেম ঘটে তাদের।
 কারিনা-সাইফ : বলিউডের ছোটে নবার সাইফ ও বেভো কারিনা কাপুরের প্রেম ৩ বছরের। বলিউডের হটেস্ট জুটি এটি। ২০০৮ সালে ‘টাসান’ ছবিতে অভিনয়ে তাদের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে উঠে। দুই পরিবারের সম্মতি এ বছর এপ্রিলে রাজকীয় বিয়ে সম্পন্ন হবে এ সাইফিনা জুটির।

হলিউডের সর্বকালের সেরা ১০ প্রেমের ছবি

প্রীতি ওয়ারেছা
সেই উনিশ শতকের শেষভাগে চলচ্চিত্রের উদ্ভাবন হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্বের নানা দেশে তৈরি হয়েছে কতো কতো ছবি। নানা বিষয়ে হরেক রকম চলচ্চিত্র মাতিয়েছে বিশ্ব। চলচ্চিত্র হয়ে উঠেছে শোবিজের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম। মানবজীবনে ভালোবাসার আবেদন যেমন সার্বজনীন, তেমনি ভালোবাসার আবেদন নিয়ে নির্মিত ছবিগুলোও দেশে দেশে পেয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এবারের বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো হলিউডের ১০টি দর্শকনন্দিত রোমান্টিক ছবি।

১.‘কাসাব্লাঙ্কা’। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন হ্যামফ্রে বোগার্ট এবং ইনগ্রিড বার্গম্যান। মানুষ বারেবারে ভালবাসা খুঁজে বেড়ায় বিভিন্ন জনে। একসময় সত্যিকার প্রেম এসে ধরা দেয়। অনবদ্য এক প্রেমের ছবি কাসাব্লাঙ্কা। ছবিটি ড্রামা,রোমান্স এবং সাসপেন্স এইসবগুলো উপাদানের সমন্বয়ে পরিপূর্ণ একটি ক্লাসিক বিউটি। ১৯৪২ সালে নির্মিত হয়েছে কাসাব্লাঙ্কা ছবিটি।
২.‘ গন উইথ দ্য উইন্ড’। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ক্লার্ক গেবল এবং ভিভিয়েন লেই। প্রকাশহীনতায় প্রেম গাঢ় হয়ে ওঠে। প্রেমের সহজাত এ অনুভূতির খুব সুন্দর রুপায়ন ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’। ১৯৩৯ সালে নির্মিত হয় ছবিটি।
৩.‘ নটিংহিল ’। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন জুলিয়া রবার্ট এবং হিউ গ্র্যান্ট। পৃথিবীর শ্রেষ্ট আকর্ষনীয় সুন্দরী অভিনেত্রী আনা স্কট যিনি প্রেমে পড়েন একটা বুকশপের মালিক উইলিয়াম থ্যাকারের। দুটি ভিন্ন স্ট্যাটাসের দুটি মানুষের মানষিক টানাপোড়েন এখানে দেখানো হয়েছে। অসম্ভব সুন্দর ডায়ালগ সমৃদ্ধ এ ছবিটি। শেষ দৃশ্যে আনা স্কটের প্রেস কনফারেন্সটি উত্তেজনা ভরপুর ভীষণ সুন্দর একটি মুহূর্ত। নিরেট ভালবাসার ছবি নটিংহিল। 
৪.‘দ্য নোটবুক’। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন টিম আইভী এবং জেনা রোনাল্ড। অ্যালি এবং নোয়াহ্ নামক দুই প্রেমিক জুটির চিরাচরিত ধনী গরীব দন্দ্ব এখানে গল্পাকারে নির্মিত হয়েছে। পরিবারের চাপে পড়ে অ্যালি’র অন্য জায়গায় বাগদান হয় তারপরেও প্রথম প্রেমের হাতছানি অ্যালিকে তার স্বপ্ন পূরণে মরিয়া করে তোলে। অপূর্ব এই প্রেমের ছবিটি ২০০৪ সালে নির্মিত হয়।
৫.‘এ অফিসার এন্ড এ জেন্টেলম্যান’। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিচার্ড গিয়ার এবং ডেব্রা উইঙ্গার। নেভি রিক্রুট জীবনের ভালবাসার বিভিন্ন প্রবাহ এখানে চিত্রায়িত হয়েছে। শক্তিশালী গল্প এবং সফল চরিত্রায়নের জন্য ছবিটি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। সেই সাথে এটিকে শ্রেষ্ঠ প্রেমের ছবি হিসাবে গণ্য করা হয়। ‘এ অফিসার এন্ড এ জেন্টেলম্যান’ ছবিটি ১৯৮২ সালে নির্মিত।
৬.‘এন অ্যাফেয়ার টু রিমেমবার’। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ক্যারি গ্র্যান্ট এবং ডেবরা কের। হ্যান্ডসাম প্লেবয় চরিত্রের নিকি একজন চিত্রশিল্পী এবং নাইটক্লাব সিঙ্গার টেরি, দুজনের পরিচয় ঘটে ইউরোপ থেকে নিউইয়র্ক যাবার পথে।  অন্যের সাথে বাগদান থাকা সত্বেও এই দুজন প্রেমের সম্পর্ক্যে জড়িয়ে পড়ে। এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং এ দুজন দেখা করবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু ঘটতে থাকে অন্যরকম কিছু। ১৯৫৭ সালে নির্মিত ছবিটি মন ছুঁয়ে যাওয়া এক প্রেমের ছবি।
৭.‘ টাইটানিক’। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিকাপ্রিও এবং কেট উইন্সলেট। নর্থ আটলান্টিক সমুদ্রের বুকে সৃষ্টি একটি মানবিক প্রেম এবং তার করুন সমাপ্তি নিয়ে তৈরি টাইটানিক ছবিটি। ১৯৯৭ সালে নির্মিত একটি ট্র্যাজেডিক প্রেম কাহিনী টাইটানিক। বিপুল জনপ্রিয়তার সাথে এই ছবিটি অস্কার জয় করে।
৮.‘প্রিটি ওম্যান’। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিচার্ড গিয়ার এবং জুলিয়া রবার্ট। ভালবাসা যেকোন সময় মনের কোণে এসে উঁকি দিতে পারে। প্রিটি ওম্যান ছবিতে এক সম্পদশালী পুরুষের কাছে তাই প্রেম হয়ে এসেছিল বন্ধনহীন প্রেমহীন এক নিশীথচারিনী। ১৯৯০ সালে নির্মিত ভীষণ সাবলিল সুন্দর এক প্রেমের ছবি প্রিটি ওম্যান।
৯.‘রোমিও জুলিয়েট’। বিশ্ববিখ্যাত লেখক উইলিয়াম সেক্সপিয়ারের কালজয়ী ট্র্যাজেডি গল্প অবলম্বনে ১৯৯৬ সালে নির্মিত হয় রোমিও জুলিয়েট। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিকাপ্রিও এবং ক্লেয়ার ডেনিস। এর আগেও অনেকবার এই প্রেমকাহিনী নিয়ে ছবি নির্মিত য়েছে। দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি এবং আভিজাত্যের অহংকারকে পেছনে ফেলে দুজন মানুষ প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যায়। নানা রকম টানাপোড়েনের পর তাদের বিয়ে হয় এবং তথ্যগত ভুলের কারণে জীবনে একসময় নেমে আসে প্রেম উপাখ্যানের ট্র্যাজেডি।
১০.‘দ্য আফ্রিকান কুইন’। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ক্যাথরিন হেপবার্ন এবং হ্যামফ্রে বোগার্ট। একটা পুরুষের জীবনের সবচেয়ে বড় অ্যাডভেঞ্চার হল নারী। ভিন্ন ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন দুটি মানুষের যুদ্ধকালীন সময়ে প্রেমে পড়ার অনবদ্য কাহিনী নিয়ে ১৯৫১ সালে নির্মিত দ্য আফ্রিকান কুইন ছবিটি। ভীষণ সুন্দর প্রেমের ছবি।

চার তারকা জুটির ভালোবাসার গল্প

বিনোদন প্রতিবেদক
রাজপ্রাসাদ থেকে পর্ণকুটির, কোথায় নেই ভালোবাসা! আমাদের শোবিজের তারকাদের মধ্যেও চলছে ভালোবাসার ভাঙাগড়া। চলতি সময়ের চার তারকা জুটির ভালোবাসা এখন অনেকটা ওপেন-সিক্রেট। এই চার তারকা জুটি হলো নিরব-সারিকা, হিল্লোল-নওশীন, হৃদয়-সুজানা এবং শুভ-জেনী। এবারের ভ্যালেনটাইন ডে’তে আসুন শুনি তাদের ভালোবাসার গল্প।
নিরব-সারিকা : বাঁধভাঙা ভালোবাসা
মিডিয়ার আলোচিত জুটি নিরব-সারিকা। যেখানে সারিকা, সেখানেই নিরব আর যেখানে নিরব, সেখানেই সারিকা। তাদের প্রেমের গল্পটা প্রায় দেড় বছরের পুরনো। একটি ফ্যাশন হাউজের শুটিং করতে গিয়ে তাদের পরিচয়। সেই পরিচয় খুব দ্রুতই রূপান্তরিত হয় প্রেমে। দুই পরিবারই মেনে নিয়েছে তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক। ভালোবেসে ঘরবাঁধাটাই এখন কেবল বাকি। যদিও শেষপর্যন্ত নিরব-সারিকা সম্পর্কটি চুড়ান্ত পরিনতি পায় কিনা তা নিয়ে আছে অনেকেরই সন্দেহ।
অবশ্য নিরব-সারিকা কেউ-ই পিছু-কথায় কান দিতে নারাজ। রাতগভীরে দুজনে লং ড্রাইভ, সেট থেকে সারিকাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া, বেইলি রোডের জুস বার কিংবা বনানীর সুপার স্টার হোটেলে একসঙ্গে খাওয়া, রাজধানীর অদূরে ফ্যান্টাসি কিংডমে ডিজে শোতে অংশগ্রহণ ইত্যাদি চলছে তাদের রুটিনমাফিক। নতুন প্রজন্মের ধ্যানে-জ্ঞানে এখন স্বপ্নপরী সারিকা। দেশের শীর্ষ মডেল সারিকার সঙ্গে নিরবের প্রেম বরাবরই দুজনকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে। ১১.১১.১১-তে তারা বিয়ে করছেন বলে গুঞ্জনে ডালপালা মেলেছিল। কিন্তু খুব সম্ভবত নিরব-সারিকার এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তা আর বাস্তবায়িত হয় নি। তবে ওই তারিখে ঠিকই এক অঘটন ঘটান সারিকা। ঈদের পর একজন নির্মাতার সিডিউল ফাঁসিয়ে মাহফুজ নামে তরুণের সঙ্গে কক্সবাজারে উধাও হয়ে যান সারিকা। এই ঘটনায় দীর্ঘদিনের প্রেমিক নিরবকে পাশ কাটিয়ে চলা এই জুটির ভাঙনের আশঙ্কা জাগিয়ে তুলেছিল। অবশ্য শেষপর্যন্ত প্রেমিক নিরব আর সারিকার মা প্রচেষ্টার কাছে আত্মসমর্পন করেন সারিকা। তারা সারিকাকে কক্সবাজার থেকে ঢাকা ফিরিয়ে আনেন। এরপর আবারও চলতে থাকে নিরব-সারিকার বাঁধভাঙা প্রেম । এই প্রেম শেষপর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌছায় তাই হলো দেখার বিষয়।
হিল্লোল নওশীন : পোড়খাওয়া ভালোবাসা
একসঙ্গে নাটকে অভিনয় করতে গিয়েই হিল্লোল-নওশীন পরস্পরের কাছে আসেন। এমন এক সময়ে তারা পাশাপাশি আসেন যখন হিল্লোল তার স্ত্রী তিন্নি সান্নিধ্য হারিয়ে বিপর্যস্ত এবং একা। এ সময় নওশীনও ডিভোর্সের পর একাকীই দিন কাটাচ্ছিলেন। দুজনের পোড়খাওয়া ভালোবাসা একবিন্দু মিলেমিশে যেতে তাই  খুব বেশি সময় লাগে নি। হিল্লোল-নওশীনের ভালোবাসার সম্পর্ক চলছে প্রায় একবছর ধরে।
আমাদের শোবিজের নতুন এই প্রেমিক জুটির সবচেয়ে বড় মিলটা হচ্ছে, দুজনেরই প্রথম সংসার টেকেনি। এক্ষেত্রে দুজনেরই প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতা। এজন্য নওশীন তার একমাত্র ছেলে আর হিল্লোল মেয়েকে নিয়ে এতদিন একাই ছিলেন। এমনিতে নওশীন-হিল্লোল দুজনই বেশ ভালোই ছিলেন। প্রথম সংসারের যাতনায় দুজনেই দ্বিতীয়বার আর কারও সঙ্গে জড়াবেন না বলেই স্থির করেছিলেন। পোড়খাওয়া অভিজ্ঞতা মিলে যাওয়ায় গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক। দুজনই অবশ্য এই সম্পর্কটিকে বলছেন, স্রেফ বন্ধুত্ব। কিন্তু বন্ধুত্বের চেয়ে এটি যে অনেক বেশি কিছু তা তাদের কর্মকান্ডের মধ্যেই প্রকাশ পায়। তবে কবে তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন, সেই সিদ্ধান্ত এখনো নেন নি।
হৃদয়-সুজানা : অসম ভালোবাসা
সদ্য টিনএজ পার করা জনপ্রিয় গায়ক ও মিউজিশায়ন হৃদয় খান বাঁধা পড়েছেন তারচেয়ে প্রায় পাঁচবছরের বড় মডেল ও অভিনেত্রী সুজানার আঁচলে। আমাদের শোবিজে অসম প্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই জুটি। তাদের ভালোবাসাবাসি আর মাখামাখি সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। প্রেম-বিয়ে নিয়ে ওপেন সিক্রেট এই জুটির খোলামেলা মন্তব্য অন্য প্রেমিক-প্রেমিকাদেরও উৎসাহিত করেছে।


আগে একবার ভালোবেসে ঘর বাঁধা সুজানার এ বিষয় স্পষ্ট মন্তব্য, আমাদের ভালোবাসার সম্পর্ক আছে। তবে বিয়ের ব্যাপারে আমরা এখনো ভাবছি না। সম্পর্ক নিয়ে লুকোচুরি খেলা আমরা মোটেও পছন্দ করি না। যদি বিয়ে করি, সেটা সবাইকে জানিয়েই করবো। এই সময়ের হার্টথ্রব গায়ক হৃদয় খানও স্বীকার করে নিয়েছেন সুজানার সঙ্গে গড়ে ওঠা প্রেমের সম্পর্ককে। প্রেমিকার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য হৃদয় মিরপুরে সুজানার বাসার পাশেই ফ্ল্যাট নিয়ে গড়ে তুলেছেন স্টুডিও। র‌্যাম্প মডেল সুজানার সঙ্গে হৃদয়ের পরিচয় হয় প্রায় তিন বছর আগে। হৃদয়ের একটি মিউজিক ভিডিওতে মডেল হয়েছিলেন সুজানা। এরপরই দুজনার ঘনিষ্ঠতা তুঙ্গে পৌছায়। মিডিয়ায় দীর্ঘদিন তারা নিজেদের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এরপর তাদের রোমান্টিক সম্পর্ক প্রকাশ পেয়ে যায়। বিয়ের সিদ্ধান্ত না নিলেও প্রেমের সমূদ্রে ডুবে আছেন এই অসম প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি।
শুভ-জেনী : সতর্ক ভালোবাসা
গতবছর ভ্যালেন্টাইন ডের বিশেষ একটি নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে অভিনেতা আরেফিন শুভ আর মডেল আর অভিনেত্রী নওরীন হাসান খান জেনী একে অন্যের কাছে আসেন। সেখানে থেকেই ভালোবাসার গল্প লিখতে শুরু করেন এই জুটি। তাদের এই প্রেমকেও অনেকে অসম বলছেন। কারণ বয়সে জেনী শুভর চেয়ে তিন বছররে বড়। তাছাড়া এর আগে জেনি বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজার সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন। কিন্তু সেই সংসার টিকে নি। শুভ এর আগে বিয়ে না করলেও প্রেম করেছেন একাধিক অভিনেত্রীর সঙ্গে। বিশেষ করে লাক্স সুন্দরী বিন্দুর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠার বিষয়টি অনেকেই জানেন। প্রেমের ক্ষেত্রে আরেফিন শুভ আর নওরীন হাসান খান জেনী মিডিয়ায় তাদের সিনিয়রদের তৈরি করা পথেই হাঁটছেন। অর্থাৎ সিনিয়র তারকাদের মতোই কেউই প্রকাশ্যে এই সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নেন নি। সবার মতোই বলছেন, আমরা একে-অন্যের খুব ভালো বন্ধু। মুখে এই কথা বললেও দিনের কিছুটা সময় একসঙ্গে কাটাচ্ছেন ঘনিষ্ঠভাবে। আগের সম্পর্ক থেকে শিক্ষা নিয়ে এই জুটি খুব সতর্কতার সঙ্গেই এগিয়ে চলেছেন। তাদের সম্পর্কটা চুড়ান্ত পরিনতি পায় কিনা তা দেখার জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করা ছাড়া আপাতত উপায় নেই।

ফরীদির জন্য ভালোবাসা

বিনোদন প্রতিবেদক

ক্ষণজন্মা অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। যুগে যুগে এমন অসাধারণ ক্ষমতাবান অভিনেতা খুব বেশি আসে না। হুমায়ুন ফরীদির মৃত্যুতে তাই শোকাহত সতীর্থ-শুভাকাঙ্খীরা । আমাদের শোবিজের কৃতি ব্যক্তিত্বদের কাছে বাংলানিউজ জানতে চেয়েছিল হুমায়ুন ফরীদির সম্পর্কে। দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে তারা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করেছেন হুমায়ুন ফরীদির প্রতি।
অসময়ে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছি না : ড. ইনামূল হক
ফরীদি শুধু আমার প্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে একজনই নয়, ব্যক্তিগতভাবে আমি তাকে খুব পছন্দ করতাম। আমার পরিবারের সবাই তাকে পছন্দ করতো। তার এই অসময়ে চলে যাওয়াটা আমি মেনে নিতে পারছি না। অসুস্থ শরীরেও তাই তাকে একনজর দেখার জন্য ছুটে এসেছি। অনেক নাটকেই ফরীদির সঙ্গে আমি অভিনয় করেছি। প্রথম আমরা একসঙ্গে অভিনয় করি ‘সংশপ্তক’ নাটকে। এতে ‘কানকাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয় করেছিল ফরীদি। সে সময়ে তার অভিনয় খুব প্রশংসিত হয়েছিল। সে যেই চরিত্রে অভিনয় করতো তাই অদ্ভুতভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতো।
আমারই তো আগে চলে যাওয়ার কথা : এটিএম শামসুজ্জামান
হুমায়ুন ফরীদি আর আমি দুজনই চলচ্চিত্রের মন্দ মানুষ চরিত্রে অভিনয় করেছি। চলচ্চিত্রের বাইরেও তার সঙ্গে ছিল আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আমরা একসঙ্গে অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি। এ মুহূর্তে মনে পড়ছে শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘ভন্ড’ ছবির স্মৃতি। এই ছবিতে আমরা বোকাসোকা দুই ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। ছবিটির শুটিংয়ের সময় আমরা ভীষন আনন্দ করেছিলাম। ফরীদির সঙ্গে সর্বশেষ ‘চেহারা’ ছবিতে অভিনয় করেছি।ফরীদির সঙ্গ আমি খুব উপভোগ করতাম। বয়সে ফরীদি আমার অনেক ছোট। আমারই তো আগে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমি রয়ে গেলাম আর ফরীদি চলে গেল।
ফরীদির তুলনা কেবল ফরীদিই : রামেন্দু মজুমদার।
মঞ্চে-টিভি আর চলচ্চিত্র সব মাধ্যমেই অসম্ভব দক্ষ ও প্রতিভাবান এক অভিনেতা ছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। তার কোনো দুটো অভিনয় এক রকম ছিল না। ফরীদির তুলনা কেবল ফরীদিই। বিভিন্ন চরিত্র ফুটিয়ে তোলার ব্যাপারে তার প্রবল আগ্রহ ছিল। চলচ্চিত্রকে তিনি এক সময় পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সেখানে এমন কিছু চরিত্র তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন, যেখানে তার আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এদেশের মানুষ ফরীদিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রাখবে।
আরো অনেক কিছু দেওয়ার ক্ষমতা ছিল : নাসিরউদ্দিন ইউসুফ
হুমায়ুন ফরীদির মতো ক্ষমতাবান অভিনেতা আমাদের দেশে খুব জন্ম নেয় নি। মঞ্চ কিংবা টেলিভিশন নাটকের মতো বাংলা চলচ্চিত্রকেও এক অনন্য উচ্চতায় তুলে নেওয়ার ক্ষমতা ফরীদি দেখিয়েছেন। কিন্তু বড় দুঃখ, আমাদের নির্মাতারা ফরীদির মতো অসামান্য প্রতিভাধর মানুষটিকে ব্যবহার করতে পারেননি। তার আরো অনেক কিছু দেওয়ার ক্ষমতা ছিল। ফরীদির সঙ্গে কাটানো সময়গুলো আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সংশপ্তক নাটকে একসঙ্গে কাজে স্মৃতি মনে পড়ছে : খলিল
বিটিভির তুমুল জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’-এ আমরা একসঙ্গে অভিনয় করেছি। আমি ছিলাম মিয়ার বেটা আর ফরীদি ছিল কান কাটা রমজান। এই দুই চরিত্রই দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়তা পায়। খুব মনে পড়ছে ওই নাটকে একসঙ্গে অভিনয় করার স্মৃতি। খুব ভাল মনের একজন মানুষ ছিল ফরীদি। শিশুদের মতো কোমল হৃদয় ছিল তার। তার এই হঠাৎ চলে যাওয়াটা মেনে নেয়ার মতো নয়। খুব খারাপ লাগছে।
ফরীদির অভাব পূরণ হবে না : পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়
ফরীদির মতো একজন অভিনেতা আমরা হয়তো অনেকদিন পাবো না। বিশেষ করে টেলিভিশন আর চলচ্চিত্রে তার মতো একজন শিল্পীর অভাব পূরণ হওয়ার নয়। ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যখন হুমায়ুন ফরীদি যুক্ত হন তখন থেকেই তার পাগলামী দেখেছি। মঞ্চে দাঁড়ালেই ফরীদি যেন আর ফরীদি থাকতো না। চরিত্রের সঙ্গে একাকার হয়ে মিশে যেত। রাত দুপুরে ওর বাসায় অনেক সময় কাটিয়েছি। আসলে ফরীদির সঙ্গে আমার এতো এতো স্মৃতি রয়েছে, যা বলে শেষ করা যাবে না।

খুব উঁচু মাপের অভিনেতা ছিলেন : শিমূল ইউসুফ
আমার খুব কাছের একজন বন্ধু ছিলেন ফরীদি। তার পাগলামী সবসময়ই আমি উপভোগ করতাম। তার ছেলেমানুষী খুব ভালো লাগতো আমার। খুব উঁচু মাপের অভিনেতা ছিলেন হুমায়ূন ফরীদি। যখন যে চরিত্রটি তিনি করেছেন, তাতে যোগ করেছেন নতুন বৈশিষ্ট্য। তার স্মৃতি আজ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ফরীদি নেই এটি ভাবতেও আমার বেশ কষ্ট হচ্ছে।
হুমায়ুন ফরীদির অভিনয় পুরোপুরোই ন্যাচারেল : শাকিব খান
আমার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে অনেক অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি। সর্বশেষ এ কৃতি অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করেছি ‘চেহারা’ ছবিতে। তিনি যে একজন সাংঘাতিক অভিনেতা তা তার সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে আমরা টের পেয়েছি। তার অভিনয় ছিল পুরোপুরোই ন্যাচারেল ছিল। ছোটপর্দার অভিনেতারা বড়পর্দায় সুবিধা করতে পারেন না, সেটি ভুল বলে প্রমাণ করেছেন হুমায়ূন ফরীদি। টিভিমিডিয়ার কোন অভিনেতা নিজেকে বড় পর্দায় প্রমাণ করার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফরীদি ভাই। আমি এই মহান অভিনেতার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
খুব ভাল একজন বন্ধু হারালাম : শম্পা রেজা
হুমায়ুন ফরীদি আমার প্রিয় বন্ধুদের একজন। আমি খুব ভাল একজন বন্ধু হারালাম। এমন একজন বন্ধু এই জীবনে আর কখনও ফিরে পাবো না। খবরটা শোনার পর থেকেই কোন কাজে আর মন বসাতে পারছি না। খুব মনে পড়ছে ফরীদির সঙ্গে ‘শীতের পাখি’ আর ‘অধরা’ নাটকের কথা। এই দু’টি নাটকের সময়কার কথা বিশেষভাবে মনে পড়ছে। বয়সে তিনি আমার বেশ কয়েক বছরের বড় হলেও আমাদের মাঝে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। দেখা-সাক্ষাৎ খুব কম হলেও ফোনে তার সঙ্গে আমার খুব যোগাযোগ ছিল। আমি আমার এই বন্ধুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি : শহীদুজ্জামান সেলিম
হুমায়ুন ফরীদিকে খুব কাছ থেকে দেখেছি বলে নিজেকে আমি সৌভাগ্যবান মনে করি। তার মতো প্রাণবন্ত মানুষ আমি কমই দেখেছি।  সর্বশেষ আমাদের দেখা হয়েছিল হাসপাতালে যখন তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। তখনও খুব সাবলীল ছিলেন । তিনি বলেন, কিছুই হয়নি রে আমার; তোরা এতো ভাবিস না। দুঃখজনক হলেও সত্যি আজ তিনি নেই। ভাল থাকেন ফরীদি ভাই। আপনার স্মৃতি থাকবে আজীবন আমাদের মাঝে।

সি-লায়নের আক্রমণের শিকার শাকিরা

প্রীতি ওয়ারেছা

পপক্রেজ শাকিরা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী সি-লায়নের আক্রমনের শিকার হয়েছেন। সি-লায়নকে আমাদের দেশে অনেকেই বলেন শিল মাছ বলে। ওয়াকা ওয়াকা গানের জাদুকরী কন্ঠের কলম্বিয়ান পপসিঙ্গার শাকিরা তার টুইটার অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে তার আতঙ্কের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন।
হিপহপ সুন্দরী শাকিরা সাউথ আফ্রিকার কেপটাউনে ছুটি কাটাতে গেছেন সম্প্রতি। সেখানে কয়েকটা দিন তিনি বেশ নিরিবিলি ছুটি কাটাচ্ছেন। ভ্যাকেশনের ছবিও টুইটারে আপলোড করছেন হরদম। বরাবরই পশুপ্রেমী শাকিরা। কখনও ছবিতে তার সাথে পেঙ্গুইন দেখা যাচ্ছে আবার কখনও দেখা যাচ্ছে জংলী বেবুন তার গাড়ির উপড় বসে আছে। ছুটির আমেজ গায়ে মাখতে আজ তিনি গিয়েছিলেন সমুদ্রে। যেখানে সি-লায়নের আবাস তার কাছাকাছি গিয়ে সি-লায়নের ছবি তুলতে থাকেন তিনি। হাতে ছিল ব্ল্যাকবেরি মোবাইল। সেটা দিয়েই ছবি তুলছিলেন শাকিরা।
হঠাৎ করে একটা সি-লায়ন দলচ্যুত হয়ে লাফ দিয়ে শাকিরার একেবারে কাছে চলে আসে।  শাকিরার কাছ থেকে মাত্র ৩০ সেন্টিমিটার দূরে সি-লায়নটি লেজের উপর দাঁড়িয়ে বিকট শব্দে আর্তনাদ করতে থাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় আতঙ্কে শাকিরা স্থবির হয়ে যান। এমনকি দৌড় দেওয়ার কথাও ভুলে যান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘মনে হচ্ছিল প্যারালাউজড্ হয়ে গেছি’। সি-লায়নটি দাঁত বের করে তেড়ে আসে তার দিকে। শাকিরাকে কামড় দিতে যাবে ঠিক এমন সময় শাকিরার ভাই টনি তাকে টেনে হেঁচড়ে দূরে নিয়ে আসে। হতবিহবল শাকিরাকে বাঁচানোর জন্য এই ঘটনার পর টনিকে ‘সুপার টনি’ নামে ভূষিত করেছেন তিনি। শাকিরা বলেছেন, তিনি সি-লায়নকে খুব নিরীহ প্রাণী বলেই জানতেন তাই তাদের অত কাছে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন। তবে তার ধারণা হয়েছে ছবি তোলার সময় ব্ল্যাকবেরি মোবাইলের  উজ্জ্বল রিফ্লেকশনের কারণে সি-লায়ন ভয় পায় এবং তাকে আক্রমন করতে আসে। এরপর থেকে তিনি আরো সাবধান হবেন বলেও টুইটারে জানিয়েছেন।

সুবর্ণার আহাজারি !


বিনোদন প্রতিবেদক

একবুক অভিমান, নিঃসঙ্গতা আর একাকীত্ব নিয়ে ধীমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। হুমায়ুন ফরীদির এই নীরব প্রস্থানের অন্যতম কারণ হিসেবে কাছের মানুষদের অনেকেই মনে করছেন সুবর্ণাহীন তার একাকীত্বকে। হুমায়ুন ফরীদির মৃত্যুর পর তার সাবেক স্ত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার মনোভাব জানার চেষ্টা চালায় বাংলানিউজ।
ফাল্গুনের প্রথম দিন যখন সবাই বসন্তকে স্বাগত জানাতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই অভিনয় দিয়ে দীর্ঘদিন মানুষের মনরাঙানো প্রিয় অভিনেতা ফরীদি সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ধানমন্ডির নিজের বাসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। হুমায়ুন ফরীদির আকস্মিক মৃত্যুর খবর মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে খুব বেশি সময় লাগে নি।

হুমায়ূন ফরীদির দীর্ঘদিনের সাথী সাবেক স্ত্রী সূবর্ণা মুস্তাফার কাছেও পৌঁছে যায় দুঃসংবাদ। সূবর্ণা মুস্তাফা তখন ‘গ্রন্থিকগণ কহে’ নামের একটি ধারাবাহিকের শুটিংয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। গন্তব্য পুবাইলের ভাদুন। সঙ্গে আছে যথারীতি তার তরুণ স্বামী বদরুল আনাম সৌদ। টঙ্গী ব্রিজ পেরিয়ে যাওয়ার পর দুঃসংবাদটি কানে যায় সুবর্ণা মুস্তাফার। দীর্ঘদিনে স্মৃতি তাকে আবেগ তাড়িত করে বলেই হয়তো তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে ধানমন্ডির দিকে রওনা দেন।
ধানমন্ডির ৯/এ রোডের ৭২নং বাড়িটির যে এপার্টমেন্টে হুমায়ুন ফরীদি মারা গেছেন, সেটি ছিল সুবর্ণা মুস্তাফার আগে থেকেই চেনা। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, হুমায়ুন ফরীদি ২০০৬ সালে এই এপার্টমেন্টটি কিনে উপহার দিয়েছিলেন তার সেইসময়ের স্ত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে। ২০০৮ সালের ৭ জুলাই তরুণ স্বামী বদরুল আনাম সৌদের বাহুলগ্না হওয়ার আগে সূবর্ণা মুস্তাফা এই এপার্টমেন্টটি হুমায়ুন ফরীদিকে ফিরিয়ে দেন। সেই এপার্টমেন্টেই নিরবে-নিভৃতে একাকী চিরবিদায় নেন হুমায়ুন ফরীদি। অনেকেই ভেবেছিলেন, হুমায়ূন ফরীদির মৃত্যুর পর সুবর্ণা মুস্তাফা তাকে শেষবার দেখতেও হয়তো আসবেন না। কারণ সুবর্ণার সেই মুখ নেই। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ধানমন্ডির বাসায় অশ্রুসিক্ত নয়নে হাজির হলেন তিনি। সঙ্গে ছিল স্বামী বদরুল আনাম সৌদ। ততোক্ষণে অবশ্য দেরি হয়ে গেছে। দেখা পেলেন না তিনি ফরীদির। সুবর্ণা মুস্তাফা আসার ঠিক ১০ মিনিট আগেই হুমায়ুন ফরীদির প্রাণহীন দেহ এম্বুলেন্সযোগে নিয়ে যাওয়া হয় বিটিভির উদ্দেশ্যে। ধানমন্ডির সেই বাড়িতে পৌঁছে ফরীদিকে না পেয়ে ভেঁজাকণ্ঠে আক্ষেপ করেন সূবর্ণা, আরও কিছুক্ষণ কেনো রাখা হলো না। কেনো এমন তাড়াহুড়ো করে বিটিভিতে নিয়ে যাওয়া হলো। সুবর্ণার কান্না ভেঁজা আহাজারি অবশ্য উপস্থিত কাউকেই স্পর্শ করতে পারে নি। বরং প্রিয় অভিনেতা ফরীদির মৃত্যুর পরোক্ষ কারণ হিসেবে সুবর্ণাকে দায়ী মনে করায় অনেকেই তাকে দেখে ভেতরে ভেতরে ফুঁসছিলেন। নিজেদের মধ্যে অনেকেই বলাবলি করেছেন, বেঁচে থাকতে যার খবর রাখেন নি, আজ তার প্রাণহীন মুখ দেখার জন্য কেন এই মায়া কান্না!
১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকালে বরেণ্য অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির প্রতি সর্বস্তরের মানুষের সম্মান প্রদর্শণের জন্য তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সুবর্ণা মুস্তাফা শহীদ মিনার আসার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু স্বামী বদরুল আনাম সৌদ তাকে সেখান যেতে নিষেধ করেন। মিডিয়ার অনেকেই সৌদকে জানিয়েছে, সুবর্ণার শহীদ মিনার যাওয়াটা ঠিক হবে না। কারণ ফরীদির হাজার হাজার ভক্তের ঢল নেমেছে শহীদ মিনারে। তাদের অনেকেই মনে করেন, সূবর্ণাহীন একাকীত্বই হুমায়ুন ফরীদিকে অসময়ে মৃত্যুর পথে নিয়ে গেছে। সুবর্ণা শহীদ মিনারে গেলে উপস্থিত জনতার রোষে মুখে পড়তে পারেন। পাবলিক সেন্টিমেন্ট বলে কথা। যুক্তির কাছে হার মেনে হুমায়ুন ফরীদিকে শেষবার দেখার ইচ্ছে ত্যাগ করতে হয় সুবর্ণা মুস্তাফাকে।
হুমায়ুন ফরীদির আকস্মিক মৃত্যুর পর সুবর্ণা মুস্তাফার মনোভাব জানার জন্য বাংলানিউজ যোগাযোগ করে তার সঙ্গে। শুরুতে সুবর্ণা মুস্তাফা জানান, কথা বলার মতো মানসিক অবস্থায় তিনি নেই। পরে আবার যোগাযোগ করার পর তিনি অল্পকথায় হুমায়ুন ফরীদি সম্পর্কে বলেন, দীর্ঘদিন আমরা পাশাপাশি ছিলাম স্বামী-স্ত্রী হিসেবে। তবে আমাদের সম্পর্কটা ছিল পুরোপুরি বন্ধুর মতো। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছাড়াও আমরা একে অন্যের ভালো বন্ধু ছিলাম। ফরীদির মৃত্যু মঞ্চ, টিভি আর চলচ্চিত্রে একটা বড় শূন্যতা তৈরি করেছে। এটা অপূরণীয় ক্ষতি। এমন শক্তিমান অভিনেতা যুগে যুগে খুব কমই আসে।
বাংলানিউজকে সূবর্ণা মুস্তাফা জানান, ঢাকা থিয়েটারে আফজাল হোসেন, হুমায়ুন ফরীদি আর তাকে ডাকা ‘ত্রি-রতœ‘ নামে। খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল তাদের মাঝে। তিনি আরো জানান, চার বছর আগে অর্থাৎ ২০০৮ সালে শেষবার ফরীদির সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। সুবর্ণা মুস্তাফার মা মারা যাবার পর ফরীদি তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। তখনই শেষ কথা। দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে আর কথা হয় নি।
হুমায়ন ফরীদির সঙ্গে সুবর্ণা মুস্তাফা প্রেম-ভালোবাসা, বিয়ে এবং বিচ্ছেদ সবই ছিল মিডিয়া আলোচিত বিষয়। এবার একটু পেছন ফিরে এই জুটির সম্পর্ক গড়ে ওঠা ও ভেঙ্গে যাওয়ার বিভিন্ন ঘটনায় চোখ রাখা যাক।
আশির দশকের শুরুতে টিভিনাটকের তুমুল জনপ্রিয় জুটি ছিলেন আফজাল হোসেন আর সুবর্ণা মুস্তাফা চুটিয়ে অভিনয় করে যাচ্ছেন। আফজাল-সূবর্ণার রোমান্টিক সম্পর্ক নিয়ে পত্র-পত্রিকায় নিয়মিতই রসালো প্রতিবেদন ছাপা হতো। যদিও এর আগে রাইসুল ইসলাম আসাদ ও আল-মনসুরের সঙ্গে সুবর্ণার সম্পর্ক নিয়েও গুঞ্জন শোনা গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া হুমায়ূন ফরীদি সবে অভিনয়টা শুরু করেছেন। প্রয়াত নাট্যকার সেলিম আল দীনের মাধ্যমে তিনি ঢাকা থিয়েটারে যোগ দেন। তার আগেই অবশ্য দীর্ঘ দিনের প্রেমের পরিনতিতে বেলি ফুলের মালা দিয়ে চাঁদপুরের  মিনুকে বিয়ে করেন ফরীদি। বছর ঘুরতেই তাদের সুখের সংসার আলো করে আসে কন্যা সন্তান দেবযানী। শুরু হয় হুমায়ুন ফরীদির টিভিনাটকে অভিনয়। জনপ্রিয়তা তার পিছু নেয়। আসে অর্থ আর প্রতিপত্তি। এরই সাথে ফরিদী- মিনুর ভালবাসাও ফিকে হতে থাকে।
হুমায়ুন ফরীদির দুর্দান্ত অভিনয় ক্ষমতা তাকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ঢাকা থিয়েটারের সতীর্থ সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে জুটি বেঁধে হুমায়ুন ফরীদি কয়েকটি টিভিনাটকে অভিনয় করলে তাদের জুটিও জনপ্রিয়তা পায়। ধীরে ধীরে আফজাল দৃশ্যপট থেকে সরে যেতে থাকে। সুবর্ণার সঙ্গে ফরীদির বন্ধুত্ব একসময় প্রেমে রূপান্তরিত হয়। তারপর ফরীদি তার পুরাতন সংসার ভেঙে সুর্বণার সঙ্গে  শুরু করেন নতুন সংসার। মিনুর সঙ্গে ফরীদির বিচ্ছেদে কষ্ট পেয়েছিল অনেক ভক্তই।
হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে সুবর্ণার মতো বিরোধ দেখা দেয় বানিজ্যিক চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়ে। টেলিভিশন তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা ফরীদিকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন অনেক নির্মাতা। ফরীদির ইচ্ছে আছে, কিন্তু সুবর্ণার আপত্তি। সুবর্ণা চান, ফরীদি টিভি আর মঞ্চনাটক নিয়েই থাকুক। ফরীদির কথা, ‘দেখি না একটা সিনেমায় কাজ করে। আমি তো আমার মতো করে কাজ করব।’ দুজনের মধ্যে সমঝোতা করতে তখন এগিয়ে আসেন আফজাল হোসেন।
বানিজ্যিক চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করে হুমায়ুন ফরীদি ব্যাপক সাফল্য পান। প্রতিটি ছবিতেই তিনি যোগ করেন নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য। চলচ্চিত্রে তুমুল চাহিদা তৈরি হয় ফরীদির। চলচ্চিত্র নিয়ে দিন-রাত তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এদিকে দুরত্ব বাড়তে থাকে সুবর্ণার সঙ্গে। এই দূরত্ব কমাতে সুবর্ণাকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে নিয়ে আসেন ফরীদি। কিন্তু চলচ্চিত্র দর্শকেরা সুবর্ণা মুস্তাফাকে গ্রহণ করলো না। পরবর্তীতে বাংলাদেশের ছবিতে অশ্লীলতা বেড়ে যাওয়ায় হুমায়ুন ফরীদি চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। আবার টিভিনাটকে ঝুঁকেন। কিন্তু সুর্বণার সঙ্গে গড়ে ওঠা দুরত্ব কমাতে তিনি পারেন নি।
২০০৮ সালে আফসানা মিমির ‘ডলস হাউস’ ধারবাহিকে অভিনয়ের সময় নাটকটির অন্যতম পরিচালক বদরুল আনাম সৌদের সঙ্গে গড়ে উঠে সুবর্ণা মুস্তাফার অসম। বয়সে প্রায় ১৫ বছরের ছোট তরুণ নির্মাতার প্রতি সুবর্ণা এতোটাই অনুরক্ত হয়ে পড়েন যে, ফরীদির সঙ্গে দীর্ঘদীনের দাম্পত্য সর্ম্পক চ্ছিন্ন করতে পিছু পা হননি। এই ঘটনায় মানসিকভাবে ভীষণ আঘাত পান ফরীদি। ষাট বছরের কাছাকাছি বয়সে পৌছে হয়ে যান নিঃসঙ্গ। একাকীত্ব গ্রাস করে তাকে। জীবনের প্রতি একবুক অভিমান, নিঃসঙ্গতা আর একাকীত্ব নিয়েই হুমায়ুন ফরীদি বিদায় নেন পৃথিবী থেকে।