Year-19 # Issue-48 # 13 January 2013

জনশক্তি রফতানির দায়িত্ব বায়রাকে দেয়ার পরামর্শ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের জনশক্তি রফতানিতে বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানিতে বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সিকে (বায়রা) দেয়ার পরমর্শ দিয়েছেন বিশষ্টিজনেরা। গতকাল শনিবার দুপুরে সিরডাপ মিলনায়তনের বিসিডিজেসি, Èআমাদের অর্থনীতি' এবং Èসাপ্তাহিক কাগজ' আয়োজিত Èঅর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান' শীর্ষক জাতীয় পরামর্শ সভায় বক্তরা পরামর্শ দেন। তারা বলেন, পর্যন্ত একশ' বেশি দেশে বায়রা ৯০লাখ জনশক্তি রফতানি করেছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে প্রবাসী শ্রমিকদের অবদান দেশের অর্থনীতিতে দ্বিতীয়। বায়রার অবদানের কথা স্বীকার করে সংস্থাটিকে আবারও সুযোগ দেয়ার দাবি জানান তারা।  বক্তারা বলেন, মালয়েশিয়া ৪০ হাজার লোক পাঠাতে সরকার সময় নিয়েছে বছর। এই কাজটি বায়রাকে দিলে সর্বোচ্চ সময় লাগতো এক বছর। বায়রার অবদান অনস্বীকার্য কথা উলে্লখ করে সরকারের কাছে আবারও মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ দেয়ার দাবি জানান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সভাপতি শাহজালাল মজুমদার। তিনি বলেন, মিডিয়ায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর নামে অপপ্রচারে সরকার এখন বায়রা বিমুখ। মালয়েশিয়ায় হাজার টাকায় লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। অথচ বায়রা দায়িত্ব নিতে চাইলেও দেয়া হচ্ছে না। এর ফলে রিক্রুটিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো কাজ করতে পারছে না। তিনি দাবি করেন, বায়রার সহায়তা ছাড়া মন্ত্রণালয় একা এত কাজ কখনোই করতে পারবে না। কারণ, এত জনবল মন্ত্রণালয়ের নেই। এফবিসিসিআই' প্রেসিডেন্ট কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের মানবসম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। যাদের দেশে থাকতে কোনো মূল্য দেয়া হতো না, তাদের টাকায় এখন দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল। তিনি বায়রার সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, সরকার মালয়েশিয়ায় এককভাবে লোক পাঠাতে চাইছে যখন, করতে দেয়া প্রয়োজন। সরকারের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। এখান থেকে শিক্ষা লাভ করুক। এরপরে না হয় বায়রার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারবে। একই সঙ্গে বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করার জন্য সরকার বায়রার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। আলোচনা অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের . আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে এই শ্রমিকরা বড় অবদান রাখলেও তাদের নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। বরং যারা হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিমানবন্দরে সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হয়। সভাপতির বক্তব্যে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক . আবুল বারকাত বলেন, বৈদেশিক শ্রমবাজার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ১৪ দশমিক বিলিয়ন ডলার আয় হলেও বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, তা ২১ থেকে ২৮ বিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, কৃষিখাত, উত্পাদন এবং বৈদেশিক আয় একটা দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখে। তাই, শ্রমিক রফতানি খাতের ভূমিকা অপরিহার্য। শ্রমিক স্বার্থটাকে আগে দেখতে হবে। শ্রমবাজারকে উন্নয়নে সরকার এবং বাযরাকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন- রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান . আহমদ আল কবির, বিজিএমইএ' সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চেৌধুরী, এফবিসিআইএ' সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল, গোলাম মাওলা রনি, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাবেক উপমন্ত্রী ফখরুল ইসলাম মুনশি, গবেষক মোহাম্মদ খান, সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার, বায়রা সহ-সভাপতি আবুল বারাকা ভূঁইয়া এবং মনসুর আহমেদ কালাম, মেজর জেনারেল আমিন আহমেদ চেৌধুরী প্রমুখ।

Year-19 # Issue-47 # 6 January 2013


বছরেও মেলেনি মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব
নিজস্ব প্রতিবেদক
দুর্নীতি নির্মূলের অঙ্গীকার করে মন্ত্রী সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাব প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায়  গেলেও সরকারের চার বছরে তার বাস্তবায়ন  দেখেনি  দেশবাসী ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত  জোট সরকারের দুর্নীতিকে সামনে এনে তার বিপরীতে মহাজোটকে  ভোট  দেয়ার আহ্বান জানায় আওয়ামী লীগ আর তাতে ব্যাপক সাড়াও  মেলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে  যে পাঁচটি  ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার  দেয়া হয়, তাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা অনুচ্ছেদে (.) ছিল- প্রধানমন্ত্রী, মনি্ত্রসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্য তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব আয়ের উত্স প্রতি বছর জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। সম্পদের হিসাব  দেয়ার কথা গত চার বছরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কয়েকবার বললেও তার ফল  দেখা যায়নি বরং ২০১০ সালে মনি্ত্রসভার  বৈঠকে সদ্ধিান্ত হয়, আয়কর বিবরণীতে  দেয়া হিসাবই যথষ্টে নতুন করে আর সম্পদের হিসাব দিতে হবে না সরকারের এই সদ্ধিানে্ত বিভিন্ন মহল  থেকে সমালোচনা ওঠার পর ২০১১ সালে অর্থমন্ত্রী আবার বলেন, মন্ত্রী, মন্ত্রী পদমর্যাদার উপদষ্টো, সংসদ সদস্য বিচারপতিদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে কিন্তু এরপর  দেড় বছর  পেরিয়ে  গেলেও তার  কোনো বাস্তবায়ন  দেখা যায়নি। নির্বাচনী এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে ২০০৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদষ্টো আকবর আলি খান বলেন, দুঃখজনক হলো এই কাজটিও আমরা করতে পারলাম না মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের হিসাব প্রকাশের অঙ্গীকার সাহসী ছিল উলে্লখ করে তিনি বলেন, এই কাজটি করতে পারলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার  ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে যেত। মন্ত্রীদের সম্পদের হিসাবের বিষয়ে মনি্ত্রপরিষদ বিভাগের সচিব  মোহাম্মদ  মোশাররাফ  হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা তাদের সম্পদের হিসাব সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দিচ্ছেন আমি  খঁোজ নিয়ে  জেনেছি, অনেকেই তাদের সম্পদের হিসাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দিচ্ছেন এই হিসাব জনগণের সামনে প্রকাশের বিষয়ে অবশ্য মনি্ত্রপরিষদ সচিব কিছু বলতে পারেননি। সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাবের বিষয়ে জানতে  যোগাযোগ করা হলে সংসদ সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাহফুজুর রহমান বলেন, আমার জানা মতে, সংসদ সদস্যদের ইনডিভিজুয়াল (ব্যক্তিগত) ইনকাম ট্যাক্স ফাইল সংসদ সচিবালয়ে আছে সম্পদের হিসাব সংক্রান্ত  কোনো ফাইল জমা হয়নি ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব  নেয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী  ঘোষণা দিয়েছিলেন, শুধু মন্ত্রী-এমপি নয়, তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাবও প্রতিবছর জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে  ফেব্রুয়ারি মাস  থেকেই মন্ত্রী সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে এরপর এক বছর  পেরিয়ে  গেলেও কাজে  কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ২০১০ সালের  ফেব্রুয়ারি মাসে মুহিত বলেন, আগামী জুনের (২০১০ সাল) আগেই মন্ত্রী-এমপি, বিচারপতি তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রকাশ করা হবে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রথম বছর সম্পদের হিসাব প্রকাশ করতে না পারায় স্যরি বলেছিলেন তিনি। সম্পদের হিসাব প্রকাশের কারণ ব্যাখ্যা করে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, যাতে  দেশের মানুষ বুঝতে পারে, একজন মন্ত্রী বা এমপি হওয়ার আগে কী পরিমাণ সম্পদ ছিল, দায়িত্ব  নেয়ার পর কী পরিমাণ সম্পদ হয়েছে কিন্তু এর তিন মাসের মাথায় মনি্ত্রসভার  বৈঠকে সদ্ধিান্ত হয়, মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের নতুন করে জনসমক্ষে সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করতে হবে না নির্বাচনের আগে দাখিল করা তথ্যই এই জন্য যথষ্টে এরপর ২০১১ সালের জুন মাসে হঠাত্ করেই অর্থমন্ত্রী  ঘোষণা  দেন, মন্ত্রী, মন্ত্রী পদমর্যাদার উপদষ্টো, সংসদ সদস্য বিচারপতিদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে ওই দিন জাতীয় সংসদের অধিবেশন  শেষে সাংবাদিকদের  ডেকে তিনি বলেন, সম্পদ বিবরণী জমা  দেয়ার কথা বহুদিন বলেছি আজ বিষয়ে চূড়ান্ত সদ্ধিান্ত হয়েছে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নের ভিত্তিতে সম্পদের বিবরণী জমা দিতে হবে কবে এই বিবরণী জমা দিতে হবে- জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, মনি্ত্রপরিষদ সচিবের কাছে এক সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রীদের বিবরণী জমা দিতে হবে ওই বছরের জুলাই মনি্ত্রসভার  বৈঠকে সদ্ধিান্ত হয়, মন্ত্রী-উপদষ্টোরা তাদের সম্পদের হিসাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা  দেবেন সংসদ সদস্য এবং বিচারপতিদের বিষয়ে স্পিকার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করে সদ্ধিান্ত  নেবেন বলে জানান মুহিত। পরে তত্কালীন প্রধান বিচারপতি বি এম খায়রুল হক রাষ্ট্রপতির কাছে তার সম্পদের হিসাব  দেন অনেক বিচারপতিও তাদের সম্পদের হিসাব প্রধান বিচারপতিকে দিয়েছিলেন কিন্তু এরপর মন্ত্রী সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাব  নেয়ার উদ্যোগ থাকলেও তা  দেশবাসীর সামনে প্রকাশ্য হয়নি