Year-20 # Issue-18 # 16 June 2013

 
মহাজোটের মহাধাক্কা চার সিটিতে
মিজানুর রহমান
মহাজোটের মহাধাক্কা চার সিটি নির্বাচনে। সবকটিতেই মহাজোটের প্রার্থীদের ঘায়ের করেছেন বিএনপি তথা ১৮ দলীয়জোটের প্রার্থীরা। ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গত শনিবার রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে।
শনিবার গভীর রাতে বেসরকারিভাবে পাওয়া খবরে চার সিটিতেই বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। তাঁরা হলেন রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, খুলনায় মো. মনিরুজ্জামান মনি, বরিশালে আহসান হাবিব কামাল ও সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরী। তাঁদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীরা সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী এবং নিজ নিজ সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ মেয়র ছিলেন।
গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরীকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সিলেটে ১২৮টি কেন্দ্রের সবগুলোতে আরিফুল হক (টেলিভিশন প্রতীক) পেয়েছেন এক লাখ সাত হাজার ৩৩০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান (আনারস প্রতীক) পেয়েছেন ৭২ হাজার ২৩০ ভোট। কামরান রাতেই বিজয়ী হিসেবে আরিফুল হককে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
রাত সাড়ে ১২টায় বরিশালে ১০০টি কেন্দ্রের সবগুলোর বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল (আনারস প্রতীক) পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৭৫১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হিরন (টেলিভিশন প্রতীক) পেয়েছেন ৬৬ হাজার ৭৪১ ভোট।
রাত দেড়টার দিকে রাজশাহীতে ১৩৭টি কেন্দ্রের সব কটির ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এতে বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল (আনারস প্রতীক) এক লাখ ৩১ হাজার ৫৮ ভোট পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান (তালা প্রতীক) পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৭২৬ ভোট। ফল ঘোষণার পরপরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা আনন্দ মিছিল বের করেন।
রাত পৌনে দুইটার দিকে খুলনায় মোট ২৮৮টি কেন্দ্রের মধ্যে সব কটির ফল বেসরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়। এতে এক লাখ ৮০ হাজার ৯৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি (আনারস প্রতীক)। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক (তালা) পেয়েছেন এক লাখ ১৯ হাজার ৪২২ ভোট। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ছোটখাটো দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে সার্বিকভাবে এ নির্বাচন ছিল অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ। সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলে। সরকারের শেষ সময়ের এ নির্বাচনের ফলাফলকে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছায়া হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক মহল। এ কারণে এ নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া সত্ত্বেও এতে জাতীয় রাজনীতি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
এ নির্বাচনকে সরকারের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠি হিসেবে দেখছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ নেই। তার পরও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে নিজ নিজ প্রার্থীর প্রতি সমর্থন দেয়া হয়েছে। এমনকি উভয় রাজনৈতিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি আশপাশের জেলার নিজ নিজ দলীয় নেতারাও প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। এ অবস্থায় চার সিটিতেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের ভরাডুবির সঙ্গে আগামী নির্বাচনের হিসাব-নিকাশও মেলাতে শুরু করেছেন অনেকে।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে (৪ আগস্ট) এই চার সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হয়। চারটিতেই জয়ী হন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা। তাই একই সিটি নির্বাচনের ফলাফলকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের পূর্বাভাস হিসেবে দেখছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, এর ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে তাঁদের চলমান আন্দোলন আরও গতিশীল হবে।
তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা মনে করছেন, এ নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক, আওয়ামী লীগের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য তাঁরা কৃতিত্বের দাবি রাখে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তের এ নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যই নয়, নির্বাচন কমিশনের জন্যও একটি পরীক্ষা ছিল। কারণ, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রধান সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচন। এতে আমলে নেয়ার মতো কোনো অভিযোগ ওঠেনি।
চার সিটি নির্বাচনের ফলাফলের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া দেশের সবগুলো সিটির মেয়র হলেন বিএনপিদলীয়। নারায়ণগঞ্জেও আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে হারিয়ে বিজয়ী হন নাগরিক সমাজের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। এছাড়া মেয়াদ পূর্তির দীর্ঘদিন পরও ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়নি। বর্তমান সরকার ঢাকা সিটিকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। আইনি জটিলতার কারণে এক দফা তফসিল ঘোষণা করেও নির্বাচন করা যায়নি। এখন অবশ্য আইনি জটিলতা কেটে গেছে। পবিত্র রমজান মাসের পর ঢাকা সিটির তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। দেখা যাক সেখানে কি ঘটে। 

বিএনপির রাজনীতিতে অপরিহার্য তারেক রহমান
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য এখন তারেক রহমানের মত তরুন মহানায়কের প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত জরুরি। আর সে লক্ষ্যেকে সামনে রেখেই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অচিরেই দেশে ফেরার প্রক্রিয়া চলছে। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সম্ভাব্য সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে। আর তারেক রহমানও দেশে ফেরার জন্য উদগ্রিব হয়ে আছেন। দেশে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা আদালতে চলমান থাকলেও সেসব নিয়ে মোটেই শংকিত নন তিনি। তিনি চাইছেন মামলা আইনগত প্রক্রিয়ায় চলুক। দেশে ফেরার পর যেন অহেতুক হয়রানি করা না হয় তাকে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে এ ব্যাপারে গ্রিন সিগনাল পেলেই খুব সহসা দেশে ফিরবেন তিনি। তারেক রহমানের ঘনিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, এ লক্ষ্যে শিগগিরই মধ্যপ্রাচ্যের তৃতীয় একটি দেশে তারেক রহমানের উপস্থিতিতে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহল অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করছে। তারেক রহমান যাতে নির্বিঘেœ দেশে ফিরতে পারেন সেজন্য চলছে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা। তারেক রহমানের পক্ষে যুক্তরাজ্য, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যোগাযোগ করছেন বেশ কয়েকজন কূটনীতিক ও একজন আইনজীবীর সমন্বয়ে একটি টিম।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের চলমান বিভিন্ন ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে তারেক রহমানের পক্ষে আন্তর্জাতিক মহলে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে তারেক রহমান দেশে ফিরে গেলে যাতে হয়রানির শিকার না হন সে ব্যাপারে দূরপ্রাচ্যের ও মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
তারেক রহমানের প্রাথমিক জীবন
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এবং তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিযার জেষ্ঠ্য সন্তান তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর । তিনি ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ হতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন। ১৯৮৮ সালে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করার পর তিনি পেশা হিসেবে ব্যবসাকে বেছে নেন। তারেক রহমান বস্ত্রশিল্পে বিনিয়োগ করেন ও স্বল্প সময়ের মাঝে ঐ ব্যবসায়ে সাফল্য অর্জন করেন। পরে তিনি নৌ-যোগাযোগ খাতেও বিনিয়োগ করেন ও সাফল্য অর্জন করেন।
রাজনীতি
বাবা শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বগুড়া কমিটির সদস্য হিসেবে তারেক রহমান তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে সংগঠনে যোগ দেয়ার পূর্বেই তারেক রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারেক তার মায়ের সহচর হিসেবে সারা দেশের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তারেক রহমান মা বেগম জিয়ার প্রচারণা কার্যক্রমের পাশাপাশি পৃথক পরিকল্পনায় দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণা চালান। মূলত ২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় তার অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতির প্রথম সারিতে তারেক রহমানের সক্রিয় আগমন ঘটে ।
তারেক রহমানের গণ-সংযোগ
২০০২ সালে তারেক রহমান দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির একজন জেষ্ঠ্য যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। দলের উচ্চ পর্যায়ে নিয়োগ লাভের পরপরই তারেক রহমান দেশব্যাপী দলের মাঠপর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের সাথে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন।
মূল সংগঠনসহ সহযোগী সংগঠন যেমন জাতীয়তাবাদী যুব দল, জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ইত্যাদি আয়োজিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে তারেক রহমান কর্মী-সমর্থকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এ সভাগুলোতে তারেক মূলত দলের গঠনতন্ত্র, উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নেতাকর্মীদের সাথে দীর্ঘ মতবিনিময় করেন। বিস্তারিত মতবিনিময়ের বিষয়বস্তুর মাঝে আরও ছিল প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে দলের করণীয় ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন- অগ্রগতি নিশ্চিতকরণে সরকারী দল হিসেবে বিএনপির করণীয় প্রসঙ্গে আলোচনা। পরবর্তীতে দেখা যায় যে এই জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলে দলের নেতাকর্মীদের তরুণ অংশটির মনোবল অসামান্য বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে তারেক রহমান শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের পরিচিত থেকে বেরিয়ে এসে দলের একজন দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
সেনা সমর্থিত সরকার কর্তৃক গ্রেপ্তার
রাজনৈতিক দলগুলোর ধ্বংসাত্মক কর্মকাে র কারণে দেশে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জানুয়ারী, ২০০৭ নিয়মতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অপসারণ কওে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। যার প্রধান ছিলেন ফখরুদ্দীন আহমদ এবং তখন সেনাপ্রধান ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (পরে জেনারেল হিসেবে অবসর নেন) মঈন উদ্দীন আহমেদ। ১২ জানুয়ারী উপদেষ্টা পরিষদ নামীয় একটি মন্ত্রীসভা গঠিত হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগে অনেক মামলা হয়।
৭ মার্চ, ২০০৭ তারিখে এমনই একটি দূর্নীতি মামলার আসামী হিসেবে তারেক রহমানকে তার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টস্থ মইনুল রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আরও ১৩টি দূর্নীতির মামলা দায়ের করা হয় ও তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়।
আটকাবস্থায় শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ
গ্রেপ্তারের কিছুদিন পর তারেককে আদালতে হাজির করা হলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতির জন্য তার আইনজীবিরা আদালতে অভিযোগ করেন যে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তারেক রহমানের উপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে চিকিৎসকদের একটি দল পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর আদালতকে জানায় যে তারেক রহমানের উপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ যুক্তিযুক্ত। এই পর্যায়ে আদালত রিমান্ডে নেয়ার আদেশ শিথিল করে এবং জিজ্ঞাসাবাদকারীদের সাবধানতা অবলম্বনের আদেশ দেন। এরপর তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিবর্তে ঢাকার শাহবাগস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
২৫ আগস্ট, ২০০৭ তারিখে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে তারেক রহমান তার হাসপাতাল কক্ষে পা পিছলে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখা দেয়, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
তারেকের মুক্তিলাভ
২০০৮ এর আগস্টে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাগুলো আদালতে গতি লাভ করে। প্রায় আঠারো মাস কারান্তরীণ থাকার পর ৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ তারিখে সবগুলো মামলায় তারেক রহমানের জামিনলাভ সম্পন্ন হয় ও তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি লাভ করেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগগুলো এই মুহুর্তে জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে আছে। কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক সন্দেহ পোষণ করেছেন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ অনেকাংশেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
চিকিৎসা ও বিদেশে অবস্থান
১১ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিশেষ কারাগার থেকে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তারেক রহমানকে দেখতে যেন। সেদিন রাতেই তারেক রহমান উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বর্তমানে লন্ডনের সাউথ ওয়েলিংটন হসপিটাল ও লন্ডন হসপিটালে তার চিকিৎসা চলছে এবং চিকিৎসার সুবিধার্থে তিনি সেন্ট্রাল লন্ডনের এডমন্টনে একটি ভাড়া বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করছেন।

জাতীয় রাজনীতিতে নতুন বার্তা
আলমগীর হোসেন ॥ চার সিটি করপোরেশনেই বিরোধী দলের সব প্রার্থীর জয় হলো। জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এই ফলাফল সরকার ও বিরোধী দলের জন্য নতুন বার্তা বলে মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তবে সরকারি দল মনে করে, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়া এই সরকারের জন্য একটি বড় অর্জন। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তা নিরসনে এই ফলাফল নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখানে জাতীয় রাজনীতি প্রাধান্য পেয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে এ ফলাফল প্রভাব রাখতে পারে।
এম সাখাওয়াত মনে করেন, উভয় দলই এ নির্বাচনের ফলাফল আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ব্যবহার করবে। আওয়ামী লীগ বলবে, দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়, এটা তার প্রমাণ। আর বিরোধী দল বলবে, সরকারের জনপ্রিয়তা কমেছে। জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছে। ফলে পাল্টাপাল্টি দাবিতে এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অনুষ্ঠিত এই চার সিটি করপোরেশন (রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চার প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছিলেন। পরাজিত হন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা। সাড়ে চার বছর পর গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত চার সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আগের প্রার্থীরাই  প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। বিএনপিও আগের তিন প্রার্থীকে বহাল রাখে। শুধু সিলেটে প্রার্থী পরিবর্তন করে আরিফুল হককে সমর্থন দেওয়া হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তন আগামী দিনের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ২০০৮ সালের ৪ আগস্টের নির্বাচনের পাঁচ মাসের মাথায় ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের আভাস পাওয়া গিয়েছিল সিটি নির্বাচনের ফলাফল থেকেই। সংবিধান অনুসারে আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে আগামী পাঁচ-ছয় মাস পর নির্বাচন হবে। তাই এই ফলাফল আগামী জাতীয় নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছে পর্যবেক্ষক মহল।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থানীয় নির্বাচন হলেও এই চার সিটি নির্বাচনেই জাতীয় রাজনীতির বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনে সাধারণত প্রার্থীর ব্যক্তিগত গুণাগুণ, যোগ্যতা, এলাকার উন্নয়ন ও আঞ্চলিকতা ভোটারদের কাছে বিবেচনায় থাকে। কিন্তু এ নির্বাচনে এলাকার সমস্যার চেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে জাতীয় রাজনীতি। উভয় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। সরকারি ও বিরোধী দল রাজনৈতিক বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ভোটাররাও নির্বাচনে সরকারের সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন করেছেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট অনেক দিন ধরেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়েও তাদের আপত্তিকর মনোভাব ছিল। ফলে এ নির্বাচনে বিরোধী দলের অংশ নেওয়া নিয়ে কিছুটা দ্বিধা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিরোধী দল অংশ নেওয়ায় দেশে ইতিবাচক রাজনীতির ক্ষেত্রেও একটা বড় অগ্রগতি বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তা ছাড়া নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাও যথেষ্ট উজ্জীবিত হবেন। এ নির্বাচনে সবচেয়ে চাপে ছিল সরকারি দল আওয়ামী লীগ। অন্তরবর্তী সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান থাকায় এ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা বলেন, দলের বিজয়ের চেয়ে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অবাধ করার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তাঁরা। তবে তাঁরা অন্তত দুটি সিটিতে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়নকাজ হওয়ায় সেখানে জয়ের আশা করেছিলেন তাঁরা। বিশেষ করে দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে রাজশাহী শহরে আবাসিক গ্যাস-সংযোগ দেওয়ায় আওয়ামী লীগ জয়ের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী ছিল। খুলনায়ও ব্যাপক উন্নয়নকাজ হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ দাবি করে। তা ছাড়া দলটি মনে করে, মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক একজন ভালো রাজনৈতিক সংগঠক হওয়ায় তিনি জিততে পারবেন। অপর দুই সিটিতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে দলটির ধারণা ছিল। কিন্তু ফল দেখে মনে হচ্ছে, স্থানীয় উন্নয়ন ও প্রার্থীর ব্যক্তিগত প্রভাব বা ভাবমূর্তি কাজে লাগেনি। এ নির্বাচনে ভোটাররা আসলে সরকারের সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন করেছেন। নীতিনির্ধারকেরা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের ফল নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করতে পারে জেনেও সরকার এতে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার নীতিতে সরকার অটল থেকেছে এবং সফল হয়েছে। এই নির্বাচন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্যও বড় পরীক্ষা ছিল। বর্তমান কমিশনের অধীনে বিরোধী দলের অংশগ্রহণে এটাই ছিল বড় নির্বাচন। বর্তমান কমিশন সম্পর্কেও বিরোধী দল সমালোচনামুখর ছিল। শেষ পর্যন্ত এই কমিশনের অধীনে যে নির্বাচন হলো, তাতে ভোটাররা পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। 

উজিরপুরে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা: চেয়ারম্যান ও এমপি পুত্র সহ আসামী তিনশত
বরিশাল ব্যুরো॥ বরিশাল-২ আসনের সরকারী দলীয় সংসদ সদস্য মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি ও উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদলের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ভাংচুর ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় প্রায় তিনশ জনকে আসামী করে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের বিক্ষুদ্ধ সর্মথকরা সাংসদের গাড়ি ভাংচুর করেছে। সংঘর্ষের সময় এমপি মনি’র পুত্র ডঃ রিয়াজুল ইসলাম সুমন উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকদের ওপর তিন রাউন্ড গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সুমন বিষয়টি অস্বীকার করে গুলির ‘গুজব’ ছড়িয়ে লোকজনকে উত্তেজিত করার উপজেলা চেয়ারম্যানের অপকৌশল বলে দাবী করেন। সংঘর্ষে পুলিশ সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। চেয়ারম্যানের সমর্থকরা ঘটনার দিন রাত ৮টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদে সাংসদ ও তার পুত্রকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে র‌্যাব ও পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে বরিশাল নিয়ে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। উপজেলা কৃষি ও প্রযুক্তি মেলায় উপজেলা চেয়ারম্যানকে সভাপতিত্ব করায় বাধাদান, অবমূল্যায়ন ও বরাদ্দ বাতিল করে দেওয়া সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি উজিরপুর উপজেলা মাসিক সমন্বয় ও আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এমপি মনিরুল ইসলাম মনি, তার পুত্র ডঃ রিয়াজুল ইসলাম সুমন ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদলের মধ্যে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে তাদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গুলি বর্ষন ও সংঘর্ষের ঘটনায় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিক সহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানের সর্মথকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে রাখে। একপর্যায়ে নারীরাও ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বিক্ষোভে অংশ নেয়। ঘটনার দিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কয়েক দফা সংঘর্ষে উজিরপুর থানার এএসআই স্বপন চন্দ্র দে, কনেষ্টবল দেলোয়ার, সাংবাদিক আঃ রহিম সরদার, নুরুল ইসলাম, চেয়ারম্যান সমর্থক আঃ সালাম, মোঃ শাহিন, পুলিন, কালাম ফরাজী, মাহাবুব হোসেন, এমপি সমর্থক বাদল হোসেন, এনায়েত কবির ও মোঃ মিজানুর রহমান সহ উভয় গ্র“পের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়।  গুরুতর আহত ৮ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভতির্ করা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল অভিযোগ করেন, সাংসদ মনিরুল ইসলাম মনি ও তার পুত্রের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম-দুনীর্তির প্রতিবাদ করলে সাংসদের পুত্র তাকে ও তার সমর্থকদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। অভিযোগ অস্বীকার করে ড. রিয়াজুল ইসলাম সুমন জানান, গুলির গুজব রটিয়ে লোকজনকে উত্তেজিত করে পরিস্তিতি উত্তপ্ত করা হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার রাতেই এমপি মনি’র সমর্থক গুঠিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি নাসির খান বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল ও উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহাবউদ্দিন আকন সহ ১০ জনকে সুনির্দিষ্ট ও ৩০/৪০ জন অজ্ঞাতনামা ও আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে এমপি মনি’র পুত্র ডঃ রিয়াজুল ইসলাম সুমন ও ছাত্রলীগ নেতা অরুপকে সুনির্দিষ্ট ও ২০/২৫ জন অজ্ঞাত নামা আসামী করে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া পুলিশ বাদী হয়ে ১৫ জন সুনির্দিষ্ট ও দেড়/দুইশত অজ্ঞাতনামা আসামী করে অপর একটি মামলা দায়ের করেন। 

বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ মনিরুল ইসলাম মনির বিরুদ্ধে দুর্ণীতি ও সন্ত্রাস লালনের অভিযোগ
বিশেষ প্রতিবেদক ॥
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ মনিরুল ইসলাম মনির বিরুদ্ধে দুর্ণীতি , অনিয়ম ও সন্ত্রাস লালনসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে নিজ দলের নেতা-কর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করেছে। সম্প্রতি উজিরপুর জেলা পরিষদ ডাক বাংলায় এব্যাপারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার মোঃ জামাল উদ্দিন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সৈয়দ মনিরুল ইসলাম মনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর দলের পক্ষ থেকে দুর্ণীতি ও শোসণমুক্ত সন্ত্রাসবিহীন সমৃদ্ধ উজিরপুর গড়ার জন্য নির্বাচনী ওয়াদা করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর নির্বাচিত সংসদ সদস্য দলছুট আদর্শহীন কতিপয় স্বার্থান্বেষেী মহলকে নিয়ে ব্যক্তি স্বার্থে একটি বলয় তৈরি করেন। যারা টি আর, কাবিখা, কাবিটা, গভীর নলকূপ স্থাপন, ৪০ দিনের কর্মসূচীর প্রকল্পের অনিয়ম দুর্ণীতি ও চাকরি বাণিজ্যসহ দুর্ণীতির মহোৎসবে মেতে ওঠেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, দলীয় ত্যাগী আদর্শিক নেতাকর্মীরা এসব দুর্ণীতি আর অনিয়মের প্রতিবাদ করলে তাদেরকে সাংসদ মনি তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নির্যাতন করেন। এমনকি আওয়ামী লীগের দঃসময়ের পরীক্ষিত ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদেও বিরুদ্ধে একরে পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হয়। আগামীতে দলছুট অরাজনৈতিক নীতিহীন দুর্ণীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে বরিশাল-২ আসনে মনোনয়ন নাদেয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলন থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জনানো হয়।

‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব বিপন্ন করতে পারে 
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া
আমাদের দেশের সরকারগুলোর একটি সমস্যা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ন ইস্যু নিয়ে তারা কখনো খোলামেলা আলোচনা করতে চায় না। সকল সময়ই তারা অত্যান্ত গোপনীয়ভাবে ইস্যুগুলো সমাধান করতে চায়। আর একারনেই তার ঐসকল ব্যাপারে কোন জনমত সংগঠিত করারও উদ্দোগ গ্রহন করে না কিংবা জনগনকে অবহিত করারও প্রয়োজন অনুভব করে না। গুরুত্বপূর্ন ইস্যু নিয়ে দেশের জনগনের মতামতকে গুরুত্ব না দিলে কখনো কখনো তা আত্মঘাতি হয়ে পড়ে। বর্তমানেও এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে দেশে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা চলছে-যা হলো ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’। ‘ট্রেড এন্ড ইনভেষ্টমেন্ট ফ্রেম ওয়ার্ক’ অর্থাৎ ‘টিফা’ বা ‘টিকফা’ চুক্তি করার প্রস্তাব আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রস্তাব দেন। আর এই প্রস্তাব পেয়েই আমাদের দেশের মেরুদন্ডহীন নীতিনির্ধারকরা ব্যাস্ত হয়ে পড়েন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’-চুক্তি বাস্তবায়নে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের একটি চুক্তির ইতিবাচক কিংবা নীতিবাচক দিক বিবেচনা না করেই নীতিনির্ধারকরা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বীর সাজতে চেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ চুক্তি করতে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা শুরু হয়েছে ২০০৩ সালের মাঝামাঝি থেকেই। সেই সময় বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের একজন যুগ্ম সচিবকে চুক্তির শর্ত নির্ধারন করতে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু, দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ ও ট্রেড বিশেষজ্ঞদের প্রচন্ড আপত্তির কারণে বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন সরকার বেশীদুর অগ্রসর হয়নি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই ‘টিফা’ বাস্তবায়ন নিয়ে আবারো আলোচনা শুরু হয়। প্রথম দিকে খুবই দ্রুততার সাথে চুক্তি বাস্তবায়নে তাগিদ দেখা যায়। কিন্তু, প্রচন্ড চাপে তা বাস্তবায়নে কিছুটা ধীরগতিতে এগোয়। সরকারের শেষ সময়ে এসে অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বললে আবারো বিষয়টি দেশবাসীর সামনে আসে। এখন প্রশ্ন চুক্তি বাস্তবায়নে এত তারাহুড়ো কেন, কেন এত গোপনীয়তা? সরকারের শেষ সময় কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বর্তমান সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ বাস্তবায়নে এত ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন? তাদের কি জানা নেই আন্তর্জাতিক মানের যে কোন চুক্তি করতে হলে প্রচন্ড দরকশাকষি করতে হয়। কিন্তু ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ নিয়ে মনে হচ্ছে যে এটি চাপিয়ে দেয়ার প্রবনতা। সরকারী মহলের বক্তব্য শুনে মনে হয় ‘টিকফা’ ‘টিফা’ চুক্তি সম্পাদন হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশ প্রচুর লাভবান হবে। কিন্তু, কি লাভ হবে তা পরিষ্কার করে বলছেন না। কেমন লাভ হবে তা বুঝতে চুক্তির শর্তগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করছে না। উল্লেখ্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো চুক্তিই কংগ্রেস ও পাবলিক ডিবেইট ছাড়া গ্রহন করে না। ফাইলের নোট দিয়ে আমলাদের বিশেষজ্ঞ বানিয়ে বাংলাদেশ এই পর্যন্ত যতগুলো চুক্তি স্বাক্ষর করেছে তার সবই বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের এই বিতর্কিত, বিশেষ আশাপদ, অসম ও বৈশম্যমূলক চুক্তি সম্পাদিত হলে বাংলাদেশের ভাবমুর্তিই ক্ষুন্ন হবে। আর মার্কিনীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়বে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, সামরিকনীতি, পররাষ্ট্রনীতি ও রাজনীতি। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যতে জানা যায় যে, এই ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ চুক্তির খসরাতে ১৯টি প্রস্তাবনা ও ৭টি অনুচ্ছেদ রয়েছে, যার মধ্যে ১৪টি পস্তাবনা ও ৪টি অনুচ্ছেদের ব্যাপারে তৎকালীন সরকার একমত হলেও বাকি প্রস্তবনা ও অনুচ্ছেদের ব্যাপারে আপত্তি প্রদান করে যে সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ তা গ্রহন করতে কিছুতেই রাজি হয়নি। সে ক্ষেত্রে খসরা চুক্তিতে অর্ন্তভুক্ত ঐ বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য চরম অবমাননাকর, অপমানজনক ও বৈষম্যমূলক বলে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। অন্যেিদকে এই চুক্তি সম্পাদন হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একচ্ছত্রভাবে শিক্ষা, টেলিফোন, জ্বালানী, বিদ্যুত সেক্টরে বিনিয়োগ করতে পারবে। এখানো এটি করতে পারছে তবে, অন্যান্য দেশের সংগে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। চুক্তি সম্পাদন হলে অগ্রাধিকার বলে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি আগে কাজ পাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দালাল হিসাবে চিহ্নিত হবে। ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ হচ্ছে একটি ঘুমন্ত বাঘ।  উন্নত দেশের সংগে অনুন্নত দেশের মধ্যে চুক্তিগুলো মূলত করা হয় গরীব দেশের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য। তবে ভাগ্যের বদল হয় না। দক্ষিন এশিয়ার শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের সাথে এবং বিশ্বের অন্যান্য ৭২টি দেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ চুক্তি করেছে। তাতে করে তারা খুব বেশী লাভবান হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যায় না। ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ সম্পর্কে সরকারের বক্তব্যে আপাতদৃষ্টিতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, নিরাপত্তা ব্যাবস্থা এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য ও পররাষ্ট্রনীতিসহ অনেক বিষয় জড়িত। এ ধরনের চুক্তি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কৌশলের অংশ হওয়া যে কোনো বিচারেই ক্ষতিকর। এর ফলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে মার্কিনীদের স্বার্থরক্ষার জন্যই কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বাংলাদেশের নিকট হতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একতরফা সুবিধা ও অগ্রাধিকার পেলে অন্যান্য দেশের কাছ থেকে বাংলাদেশ তার প্রাপ্ত বাণিজ্য সুবিধা হারাতেও পারে। ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’র মতো দ্বীপাক্ষিক চুক্তিতে আবদ্ধ হলে বহুপাক্ষিক ফোরামে স্বল্পোন্নত দেশ তথা তৃতীয় বিশ্ব থেকেও বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।
চুক্তিটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের একতরফা আগ্রহের কারণে নয়-এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহও প্রচন্ড। কারণ বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মান এবং টেলিযোগাযোগ খাত পুরোপুরি বেসরকারীকরনের যে পক্রিয়া শুধু হয়েছে তাকে সামনে রেখেই অত্যান্ত দ্রুততার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ চুক্তি করতে চাচ্ছে। যাতে করে অন্যদেশের বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে না পারে। কারণ ইতিমধ্যে নরওয়েসহ ইউরোপীয় দেশগুলো এবং চীন বাংলাদেশের সেবাখাতে ঢুকে পড়েছে। সুতরাং এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ চুক্তি মূলত বাংলাদেশের জ্বালানী, টেলিযোগাযোগ ও বন্দরের দিকে একক প্রভাব বলয় বিস্তার করা। আর চুক্তিটি সম্পাদিত হলে তারা অনায়াসে এসব ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’র খসড়া প্রস্তাবনার ৪র্থ দফায় ঘুষ-দুর্নীতির বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে মূলত এদেশের সোবাখাতগুলো ও তেল-গ্যাস খাতে ভবিষ্যতে যাতে মার্কিন কোম্পানী ছাড়া অন্য কোনো দেশের কোম্পানী যাতে সুবিধা করতে না পারে এবং একচেটিয়া মার্কিন স্বার্থ যাতে সংরক্ষিত হয় সে ব্যাপারে বাংলাদেশের সরকারগুলোকে চাপের মধ্যে রাখা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ২০০৬সালে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের সাথে ‘টিফা’ বা ‘টিকফা’ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে-সেখানে উল্লেখিত ঘুষ-দুর্নীতি অনুচ্ছেদটি নেই। তার পূর্বে পাকিস্তান ও শ্রীলংকার সাথে সম্পাদিত ‘টিফা’ চুক্তিতেও এ ধরনের ধারা সংযুক্ত করেনি। তাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন ঘুষ-দুর্নীতি বিষয়ক অনুচ্ছেদটি ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’য় যুক্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমুর্তি ও মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ যাবত যতো দেশের সাথে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে তার মধ্যে বাহরাইনের সাথে করা ‘টিফা’ কে সর্বনিকৃষ্ট হিসাবে ধরা হয়। কারণ ঔ ‘টিফা’ চুক্তির বলে বাহরাইনের সমুদয় তেল-গ্যাসসহ প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাইজিরিয়ার সংগেও ‘টিফা’ চুক্তি করেছিল। দেশটিকে একসময় আফ্রিকা মহাদেশের অর্থনৈতিক মডেল বলা হতো। তবে এই চুক্তির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাইজিরিয়াকে এমনভাবে শোষন করেছে যে, দেশটি বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রায় ৯বিলিয়ন ডলারের দেনার দায়ে ডুবে আছে। বাংলাদেশের নতজানু সরকারগুলোও ‘টিফা’ চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক দাসখত লিখে দিতে ব্যাস্ত। সুদূর ভভিষ্যতে এর ফল হবে ভয়াবহ। কারণ বিশ্বের সভ্যতার ইতিহাসে এতো ন্যাক্কারজনক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিনিয়োগ চুক্তি আর নাই।
‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ চুক্তি হলে প্রচন্ড ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আন্তর্জাতিক ফোরামে যাবার সকল পথ বন্ধ হবে। এ ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দেশে বিদ্যমান আইন-কানুন অকার্যকর হয়ে পড়বে। শুল্ক বহির্ভূত বাধা দুর করার নামে মেধাস্বত্ব, স্থিতিশীল পরিবেশ, ঘুষ-দুর্নীতি, শ্রমিক অধিকারসহ বিভিন্ন অজুহাতে দেশে মার্কিন খবরদারী আরো বৃদ্ধি পাবে। ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’র আওতায় বাংলাদেশের রফতানী পণ্য মার্কিন বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো শুল্ক ছাড় পাবে না।
আমরা যারা এই ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ চুক্তির বিরোধীতা করছি তারা কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারি এভাবে- * বাংলাদেশ অতি ছোট দেশ, দরিদ্র দেশ। এদেশ বিশ্বের এক নন্বর শক্তির সাথে এসব চুক্তি করে কখনো জিততে পারবে না। * মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিনিয়োগ আসে বেসরকারী খাতের মাধ্যমে। এই চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার আমাদের অর্থনীতিতে বাড়তি কোনো বিনয়োগ প্রবাহিত করতে পারবে না। * আমাদের বিনিয়োগনীতি অন্য অনেক দেশের তুলনায় অতি বিদেশী বিনিয়োগ বান্ধব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাস ও পাওয়ার কোম্পানিগুলো আমাদের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করে ইতোমধ্যে বেশ ভালো ব্যবসা করেছে। এক্ষেত্রে আরো বিনিয়োগ লাভের জন্য আলাদা করে ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ চুক্তি করার কোনো প্রয়োজন নেই। * ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ চুক্তি স্বাক্ষর হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের হাতে আর একটি অস্ত্র তুলে দেয়া হবে যখন-তখন এই দেশের সরকারের উপর খবরদারী করার জন্য। * বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাসহ অন্যান্য বিশ্ব সংস্থায় বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভোট প্রদান ও দরকষাকষির ক্ষেত্রে আমাদের স্বাধীনতা খর্ব হবে। অথবা আমরা জোরের সাথে কোন অবস্থান নিতে পারবে না। * বাংলাদেশ হলো সেই ১৪টি অনুন্নত দেশের মধ্যে একটি হতভাগ্য দেশ যে দেশ আজো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোটামুক্ত এবং শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের প্রবেশাধিকার পায়নি। এই চুক্তি স্বাক্ষ হলে কি সেই বাধা মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র উঠিয়ে নেবে? সরকার ও যারা এই ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ চুক্তির পক্ষে কথা বলছেন তাদেরকে এ বিষয়গুলো ভেবে দেখতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারকে এই চুক্তির ব্যাপারে না করতে হবে। কারণ এটি কোনো অর্থনৈতিক চুক্তি নয়, এটি একটি রাজনৈতিক চুক্তি। এ চুক্তি বলে মার্কিন সরকার বাংলাদেশের রাজনীতি তথা সমাজ ও অর্থনীতিতে যে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের বৈধতা পাবে। কাজেই দেশের স্বার্থ বিরোধী-জাতির অস্তিত্ব বিরোধী এই ‘টিকফা’ বা ‘টিফা’ চুক্তি কখনো জনগন মেনে নেবে না। নিতে পারে না-তাই এ সাধু সাবধান।
(লেখক: রাজনীতিক ও কলামিষ্ট, মহাসচিব, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ)

আজমীর জয়পুরে ছড়িয়ে থাকা ইতিহাস
হাসনাইন সাজ্জাদী
মহাভারতের রাজস্তান রাজ্য- ফুলের রেনুর মত। ইতিহাস যার পথে প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোথাও দাঁড়িয়ে আছে দেয়ালের মত আবার কোথায়ও ইতিহাস হয়েগেছে রাজ প্রাসাদ। ইতিহাসের রাজপ্রাসাদ ও দেয়ালেরও অভাব নেই এই রাজ্যে। রাজস্তানের তিনটি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আজমীর, বিকানের ও জয়পুর দগদ্বিখ্যাত। আজমীর আধ্যাত্মিক সাধক খাজা মঈন উদ্দিন চিশতীর মাঝার ও তাঁর ধর্মপ্রচারের নানা অলৌকিকত্ত্বের জন্য বিখ্যাত। বিকানের খ্যাতিলাভ করেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। আর জয়পুর মোঘন আমলের নানা স্থাপত্য ও ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত। এখানে রাজস্তানের রাজধানী। রয়েছে মোঘল সম্রাট আকবরের তৈরী আমের ফোর্ট। হাওয়া মহল, জল মহল, পিংক সিটি ও রাজা মানসিংহের হল।  আজমীর ও জয়পুর বেড়ানোর কোন উদ্দেশ্য ছিলনা। ভিসা নেওয়া হয়েছিল কলকাতার বইমেলায় অংশগ্রহণ, দু’ একটি সাহিত্য সমাবেশে যোগদান করা এবং আগ্রার তাজমহল ও দিল্লীর ইতিহাস প্রত্যক্ষ্য করা। প্রতিটি ইতিহাসে সত্য ও মিথ্যা এ দু’পক্ষ থাকে। মিথ্যাবাদীদের ইতিহাস প্রত্যক্ষ করা কুরআনুল হাকিমে ফরজ করা হয়েছে। বলা হয়েছে ফাছিরু ফিল আরদ, ফানজুরু কাইফা কানা আকিবাতুল মুকাজ্জিবিন। এর অর্থ ‘জগৎ ভ্রমন কর এবং মিথ্যাবাদীদের পরিনাম প্রত্যক্ষ্য কর। যারা মহানবীর হাদীস মানে না। আহলে কুরআন বা কুরআন থেকে ফয়সালা গ্রহণ করতে চায়।  তাদের কাছে আল্লাহর নির্দেশ মানেই ফরজ। এই ফরজ সবার জন্য, সব সময়ের জন্য। অসুখ বিসুখে যেমন নামাজ মাফ নেই তেমনি অসুখ বিসুখে এই জগৎ ভ্রমন থেকেই রেহাই নেই। যানবাহনে শুয়ে বসে হলেও প্রত্যেককেই ভ্রমনে থাকতে হবে। অর্থবিত্ত জমা করে বাড়ী গাড়ী করে শুয়ে বসে জীবন কাটানো যাবে না। যাযাবরের মত জমাকৃত অর্থের মালামাল কিনে অন্য কোথায় ভ্রমনে গিয়ে তা বিক্রয় করে অর্জি লাভ দিয়ে ভরনপোষণ এবং পুঁজি দিয়ে সেখানকার মালামাল কিনে অন্য কোথায়ও চলে যেতে হবে। এভাবেই পৃথিবীর জীবনকে ক্ষনস্থায়ী ভেবে পর্যটকের মত জীবন যাপন করতে হবে। হাদীস ইজমা ও কিয়াস পন্থীরা পরবর্তীতে অর্থবিত্তে সুযোগও সুস্থতা থাকলে ভ্রমনের পক্ষে একমত হন। তাছাড়া বিভিন্ন রাষ্ট্রের নিজস্ব আইনেও যে কেউ ইচ্ছে করলেই ব্যবসায়ী হতে পারেন না। পর্যটক হতে পারে না। ভিসা জটিলতা আছে, মালামাল নিয়ে যাতায়াতের পরিবহন জটিলতাও রয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। হাদীস অস্বীকারকারী তথা কেবলমাত্র কুরআনুল হাকিমকে ফয়সালাকারীরা এই ফরজ তরক তথা পালনে অক্ষমতা প্রদর্শনে বাধ্য হন।  হাদীস, ইজমা, কিয়াস, মানতেক, ফিলসাফও তাসাউফের দ্বারা ইসলামকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করা হয়েছে এ দাবি মুক্ত বুদ্ধির চর্চাকারীদের। নবী অবশ্য বলে গেছেন। আমি দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যা তোমরা অনুসরণ করলে কোন বিভ্রান্তি হবে না। তার একটি আল্লাহর কিতাব এবং দ্বিতীয়টি আমার হাদীস। এখানে শিয়ারা অবশ্য বলে ‘আমার পরিবার’। যা সঠিক নয়। আল্লাহ নিজেও বলেছেন আতিউল্লাহা ও আতিউর রাসুলা ওয়াউলিল আমর অর্থ হচ্ছে আমার অনুসরন, নবীর অনুসরন এবং আদেশ প্রদানে যোগ্যদের অনুসরন কর। সব মানলে আর নামাজের মত পর্যটনকে ফরজ বলে ধরে নিতে হয় না। এটা সুযোগের উপর নির্ভর করে। কবর জিয়ারতের জন্য ইসলামে ভ্রমনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাদীসে নিষিদ্ধ কবর জিয়ারতের মধ্যে যদি কোন ইতিহাসের সন্ধান মেলে এবং সেখানে মিথ্যাবাদীদের পরিনামের কথা থাকে তবে তা জায়েজই না শুধু পালন করতে সক্ষম হলে সেই ভ্রমন কোরআনে নির্দেশিত ভ্রমনেরই অংশ। যেমন- হযরত শাহজালালের মাঝার জিয়ারতে গেলে সেখানে মিথ্যাবাদী রাজা গৌড় গোবিন্দের পরিনাম প্রত্যক্ষ কা যায়। তাই তা কোরআন পন্থীদের কাছে ফরজ আর হাদীস অনুসারীদের কাছে সুযোগ থাকলে ফরজ না হলে দরকার নেই।
    অনেক দিন খাজা মঈন উদ্দিনের ইতিহাস নিয়ে চর্চা না থাকাতে সেখানেও যে রাজা পৃথিরাজ শাহাবউদ্দিন মোহাম্মদ ঘৌরী, আনা সাগর, তারাগড়ে সৈয়দ মিরান হোসেন সাহেবের ইতিহাস প্রত্যক্ষ করে কোরআনের নির্দেশ পালন করা সম্ভব তা মনেই ছিলনা। তাই আগ্রার তাজমহলে সম্রাট শাহজাহানের অপব্যয়ের ইতিহাস, দিল্লীর শাহী মসজিদটিকে থাকার ইতিহাস প্রভৃতিকে কোরআর নির্দেশিত ভ্রমনের অংশ মনে করে সেদিকেই লক্ষ্য ছিল। কিন্তু নানা কারণে আমাদের ভ্রমন পিছাচ্ছিল। একজন পিএইচডি গবেষকের ভিসা নিতে দেরি হওয়া, একুশে মেলায় বই প্রকাশে বিলম্ব হওয়ার সম্ভবনা এবং তৎপরে আমার মামা আবদুল গফুর চৌধুরী (আল্লাহ তাঁকে জান্নাত নসীব করুন) র ইন্তেকাল আমাকে আমার দল থেকে বিচ্ছিন্ন করে বসে। আমি গ্রামের দিকে যাত্রা শুরু করি। এদিকে পিএইচডি গবেষক ও পরিবার পরিজন নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে দলপতি ড. মোহাম্মদ আবদুল হাই জানুয়ারী ২০১৩ এর শেষ দিনে যাত্রা শুরু করলেন। টেলিফোনে যোগাযোগ চলছিল। সে অনুযায়ী আমি যেদিন কলকাতায় পৌছুবো তার আগের দিন তারা অনিবার্য কারণে দিল্লীর দিকে যাত্রা করে বসেন। কথা ছিল আমার পৌছানোর পর একত্রে দিল্লী যাত্রা হব্ েতার ব্যত্যয় ঘটাতে আমি মনক্ষুন্ন হলাম সত্যি। কিন্তু কলকাতার অনুষ্ঠানাদির কথা ভেবে পরবর্তী যাত্রা আমার নির্ধারিত হল ৯ ফেব্রুয়ারি। ১০ ফেব্রুয়ারী মোহাম্মদ আবদুল হাই ভাই দিল্লী থেকে কলকাতা এসে পৌছুবেন। কিন্তু আমি কলকাতা পৌছে জানতে পারলাম তাদের আগমন ১৩ তারিখের আগে হচ্ছে না। অগত্যা আমি পরিকল্পনায় পরিবর্তনের আভাস পেলাম। টাঙ্গাইলের মজিদ আল মামুন, সিলেটের রাজু এবং চট্টগ্রামের আবদুর রহিম ভাই ঢাকা থেকে আমার কলকাতা ভ্রমনের সঙ্গী হয়েছিলেন। তারা কলকাতায় গিয়ে আজমীর ও জয়পুর ভ্রমনের আগ্রহ জানালেন। আমি তাদের পাল্লায় পড়ে এবং মোহাম্মদ আবদুল হাই ভাইয়ের পরিবার পরিজন নিয়ে ফিরতে দেরি করাতে আজমীর যাবার জন্য মনস্থ করে বসলাম।
    এবার সবাই মিলে টিকেটের জন্য গেলাম ভারতীয় ইস্টার্ন রেলের সদর দপ্তর ফেয়ারলী হাউজে। সেখানে বড় কর্তা আমাদের সুপরিচিত কবি লিলি হালদার। তার কাছে না গিয়ে বিদেশী কোটায় ক্রয়ের জন্য সরাসরি টিকেট কাউন্টারে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখা গেল প্রায় ২৫০ জনের পরে আমাদের বুকিং পড়ে গেছে। ভেবে দেখলাম ওয়েটিং লিষ্টে এভাবে পড়ে থাকলে যাওয়া হবে না। তাই প্রায় তিনশ ভারতীয় রূপী বেশি দিয়ে ‘তৎকাল’ কোটায় টিকেট নিতে সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু সমস্যা হল, সকাল ৬টা থেকে তৎকাল কোটার যাত্রীরা কাউন্টারে গিয়ে বসে থাকেন। ১০ টায় কাউন্টার খোলার ১০ মিনিটের মধ্যেই তৎকাল কোটা শেষ হয়ে পড়ে। তবে সুবিধা একটি আছে। এজেন্ট দিয়েও তৎকালের টিকেট নেওয়া যায়। ভি আই পি কোটার দাম অতিরিক্ত পড়বে ভারতী হাজার রূপী। সেটা টু-টায়ার, থ্রিটায়ার সিস্টেম। টু-টায়ারে এক বাথে দুসিট আর থ্রি টায়ারে এক বাথে তিন সিট। সিটগুলো উপর নিচ। তাই আমরা স্লিপারে তৎকাল কোটার টিকেট নিতে মনস্থ করলাম। তাও দিতে হবে ৯শ ভারতীয় রূপী। এবার দারস্থ হলাম,-৮ মারকুইজ স্টীটের বাশিরা এপার্টমেন্টে অবস্থিত তাজ ট্রাভেল্স এর স্বত্ত্বাধিকারী শাকিল ভাইয়ের। বিশ্বস্থ হিসেবে তিনি অত্র এলাকায় নাম করেছেন। ১১ ফেব্রুয়ারির কোন টিকেট পাওয়া গেল না। পেলাম পরের দিনের টিকেট, তাও হাওড়া সোধপুর এক্সপ্রেস’র। আমাদেরকে জয়পুর নামতে হবে। তারপর ট্রেনটি চলে যাবে যোধপুর। যোধপুর একটি বড় জংশন এবং ঐতিহাসিক এলাকা। যোধপুর থেকে একটি রেলপথ নাগাউর হয়ে বিকানের এবং অপরটি বালোটা, বারমির হয়ে মোনাবাও সীমান্ত পর্যন্ত চলে গেছে। আমরা অন্য কোন ট্রেনে আজমীর যাব।  ১২ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টায় হাওড়ায় পৌছলাম। হাওড়া ভারতের প্রধান রেলওয়ে জংশন। মানুষ পিপিলিকার মত হাওড়ায় প্রবেশ করছে আর এভাবেই বেরিয়ে আসছে। হাওড়ার মতো বম্বে বড় জংশন, ট্রেন পৌনে বারটায়। এক ঘন্টা প্লাট ফরমে নির্ধারিত আসনে বসার পর আমরা সাড়ে ১০ টায় ট্রেন এর ঘোষণা পেয়ে ট্রেনে চাপলাম। চুরুলিয়া-বর্ধমান আসানসোল হয়ে ট্রেন ডুকলো  ঝাড়খন্ড রাজ্যে। ধনবাদ জংশন পার হয়ে খেয়ে ধেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। প্রাসানাথ থিলায়া পার হলাম ঘুমের মধ্যে। থিলায়ার পর ট্রেন প্রবেশ করে বিহারে। ঘুমের মধ্যে পার করলাম গয়া। তারপর ঘুম থেকে ওঠে বাবুয়া পার করে শশারাম। শশারাম বিহার ও উত্তর প্রদেশের সীমান্তে অবস্থিত। তারপর উত্তর প্রদেশের বানারাশি ১০ টায় পৌছলাম। মোঘল সরাই হয়ে তারপর ফতেহ পুর- ফিরোজাবাদ অতপর ইটাওয়া হয়ে আগ্রা ফোর্ট জংশন। মোঘল সরাইএ বৃহত্তর বিরতি কেন্দ্র। মোঘল আমলে যাত্রীদের প্রশ্রাব-পায়খানা, হাত মুখ ধোয়া, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির জন্য এ মোঘল সরাই। এ মোঘল সরাই পার করে আগ্রাফোর্ট জংশনে নামলেই তাজমহল ও আগ্রাফোর্ট। আগ্রাফোর্ট বা কেল্লা নির্মান করেছিলেন সম্রাট আকবর। আর তাজমহলতো সম্রাট শাহজাহানের অমরকীর্তি। ১৫ বছর বয়সে সম্রাট শাহাজাহান মমতাজ মহলকে বিয়ে করেছিলেন। মমতাজের বয়স তখন বড়জোর ১২ বছর। ২৫ বছর বয়সে শাহজাহান তখতে বসেন। তখন মমতাজ মহল এর বয়স ২২ বছর। অনেক নারী নিয়ে সম্রাট শাহজাহানের জীবন সমৃদ্ধ হলেও মমতাজ মহলকে তিনি ভালবেসেছিলেন পাগলের মত। ১৪ তম সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মমতাজ মহল মৃত্যু মুখে পতিত হন। তার স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য পৃথিবীর মহত্তম স্মৃতি সৌধ হিসেবে তৈরি হয় তাজমহল। যমুনা নদীর তীরে স্বর্গীয় বর্ণনা অনুসারে তাজমহল সৃষ্টি করা হয়েছিল। তাই পৃথিবীর বুকে এটি ছোটখাট স্বর্গ হয়ে আছে। তবে কবিরা একে সময়ের বুকে এক ফোটা অশ্রুবিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। রাজস্তান থেকে আনা মাখরানের বিখ্যাত সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি এটি। কিছু পাথর ইতালি থেকে আনা হয়েছে। অমর হয়ে আছেন শাহজাহানও মমতাজ মহলের মত এর নাম না জানা অজানা শিল্পীরা। সম্রাট শাহজাহান তার বাবার সৌধ থেকে ৪টি মিনার, দাদার সৌধ থেকে চার দেয়াল এবং এর গম্বুজ নিয়েছিলেন তার উর্ধতন কোন পূর্ব পুরুষের সৌধ থেকে যার উচ্চতা ৪০ ফুট। ৫ বছর লেগেছিল মুল সৌধ নির্মানে। ১৬৪৩ সালে এর নির্মাণ শেষ হয়। তারপর ২০ বছরক্ষমতায় ছিলেন শাহজাহান। কিন্তু দুর্ভিক্ষ আর মমতাজ মহলের শোক তাকে রাজ্য পরিচালনার অযোগ্য করে তোলে। এর মধ্যে পারিবারিক ভাবে ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। তিনি এক সময় স্বপুত্রের হাতে বন্ধী হয়ে আগ্রাফোর্টে নীত হন ১৬৬৩ সালে। তখন বন্দী শাহজাহান প্রায় দশ বছর প্রিয়তমা মমতাজ মহলের স্মৃতিসৌধ আপন কীর্তি তাজমহলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কাটিয়ে দেন। প্রেম আর বন্ধী জীবন শাহজাহানকে শোকের পাথরে পরিণত করেছিলেন কীনা তা সহজে অনুমেয়। ১৬৭৩ সালে ৭৪ বছর বয়সে শাহজাহান মৃত্যুবরণ করলে তাকেও তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী শাহজাহানের কবরের পাশে শায়িত করা হয়। যদিও তিনি যমুনা নদীর অপর পাড়ে কাল পাথরের একটি সৌধ নিজের জন্য তৈরির কাজে হাত দিয়েছিলেন কিন্তু তা শেষ করে যেতে পারেন নি। তাঁর আগেই ক্ষমতাচ্ছুত্য হয়ে দুর্ভাগ্যের সাতে আলিঙ্গন করে তিনি জীবন কাটিয়ে দিয়েছিলেন। আমার তাজমহল দর্শনের গল্প পাঠকদের উপহার দিতে আমি আরেকটু সময় নিতে চাই। ভিসা জটিলতায় আমাদের সহযাত্রী কবি নূরুন্নাহার খান, কবি জেবুন্নাহার জনি ও তাঁর শিশু কন্যার যাত্রা বিলম্বিত হয়েছিল। আমার যাত্রার সময় কবি নূরুন্নাহার খান আগের যাত্রায় তাঁর আগ্রা না যাবার কারণ হিসেবে বলেছিলেন প্রিয় মানুষের সহযোগ ছাড়া তাজমহল দেখে পূর্ণতা পাওয়া যায় না। তিনিও আমাকে স্ত্রী, পুত্র, কন্যা কিংবা প্রিয় অন্য কোন মানুষ ছাড়া তাজমহল দেখতে বারন করেছিলেন।
    আগ্রা ছাড়লাম আমরা রাত ৮ টায়। তারপর ভরতপুর, দাউসা হয়ে জয়পুর পৌছলাম রাত ১.৩০ মিনিটে। সেখানে অপেক্ষায় বসালাম শিয়ালদহ আজমীর এক্সপ্রেস এর। রাত সাড়ে তিনটায় শিলায়দহ আজমীর এক্সপ্রেসে চড়ে আজমীর পৌছেই ফজরের আজান শুনতে পেলাম। তারপর সিএনজিতে চড়ে খাজা গরীবে নেওয়াজের দরগার পশ্চিম গেইট পার হয়ে পান্নিগ্রাম ঢাল এলাকায় বাংলাদেশী গেষ্ট হাউজে গিয়ে উপস্থিত হলাম। সেখানে ৪৫০ রূপিতে ডাবল বেডের কক্ষ ভাড়া নিয়ে খানিক্ষণ বিশ্রাম সেরে বেরিয়ে পড়লাম মাঝার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে। মাঝার জিয়ারত করে পূর্বে দিকের গেইট দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। পূর্ব গেইটের নাম নিজাম গেট। তারপরেই দরগা বাজার। সিলেটে হযরত শাহজালালের মাঝারে যেমন তুশা শিরনী বিক্রয়ের জন্য দোকনীদের হৈ হুল্লোড়। এখানেও ফুল বিক্রয়ের জন্য একই রকম দৃশ্য। ক্রেতারা সে ফুল ছড়িয়ে দিচ্ছেন মইনউদ্দিন চিশতী (রহঃ) এর মাঝারের ওপর। সেখানে জেয়ারতে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে নারী পুরুষের উপস্থিতি। তারওপর আছে খাদেমদের দৌরাত্ব। তারা গরীবে নওয়াজের কাছে হাজিরা দেওয়াতে ব্যস্ত। জিয়ারতের নাম হাজিরা। তার জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করে বসেন খাদেমরা। আমরা প্রথমে অজু পড়ে যোহরের নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত করে নিজে নিজেই জেয়ারত সেরে নিয়েছিলাম। হাজিরা পড়ে দেব বলে সুকৌশলে তাদের হাতে থকে ফসকে এসেছিলাম। দরগা বাজারে নেমে আমরা নেমে পড়লাম টিকেটের জন্য ট্রাভেল এজেন্টদের খোঁজাখুঁজিতে। দুএকটি দোকানে খুঁজাখুঁজি করে তারপর একজনকে দায়িত্ব দিয়ে ফিরে এলাম পশ্চিম গেইটে। এখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম দর্শনীয় স্থানের উদ্দেশ্যে। আনা সাগর, রাজা পৃথিরাজের যাদুঘর, জৈন স্বর্ণমন্দির আর সৈয়দ মিরান হোসেন সাহেবের স্মৃতি বিজড়িত তারাগড় পাহাড় দর্শন করলাম। তারাগর পাহাড়ে ছিল মুসলমানদের কেল্লা। এখানে সেনাপতি ছিলেন সৈয়দ মিরান সাহেব। লাহোরে কুতুব উদ্দিন আইবেক পলো খেলায় ঘোড়ার উপর থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেলে পূজারী ও রাজাপূতরা সে রাতেই ঘুমের মধ্যে তারাগড় কেল্লায় হামলা করে ৭০ জনেরও অধিক মুসলমানকে শহীদ করে বসে। সৈয়দ মিরান হোসেন সাহেব ও এ হামলায় শহীন হন। অথচ অনেক আগেই শাহাবুদ্দিন  মোহাম্মদ গৌরির হাতে আজমীরেরা পতন ঘটেছিন এবং গরীবে নওয়াজ তখন আজমীরে দলে দলে মুসলমান তৈরি করে চলেছিলেন। এ দুঃখজনক খবর পেয়ে পরদিন ভোরে খাজা গরীবে নওয়াজ মইনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) তারাগড় পাহাড়ে গিয়ে শহীদদের জানাজা পড়িয়ে দাফন কাপনের ব্যবস্থা করেছিলেন। সেখানে ইসলামের পতাকা এখন উড়ছে এবং মির্থাবাদীদের পরিণাম প্রত্যক্ষ্য করা যায়।
    আনা সাগরের বিষয়ে কিংবদন্তী হল- খাজা গরীবে নওয়াজ যখন আনা সাগরের তীরে প্রথমে এসে তাবু গেড়েছিলেন তখন পৃথিরাজের লোকেরা তাদের সাগরের পানি ব্যবহারে বাঁধা দিয়েছিলেন। তখন খাজা তাঁর এক শিষ্যকে এক লোটা পানি আনতে পাঠান। দেখা যায় এই লোটার মধ্যে সাগরের সকল পানি উঠে আসে। তারপর পৃথিরাজের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইলে আবার সাগরে পানি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর যখন বর্তমান দরগা এলাকায় খাজা এসে তাবু গাড়েন তখন রাজার লোকেরা তাকে এলাকা ছেড়ে যেতে হুমকি দিতে থাকে। তিনি তাঁদেরকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে শান্তিতে বসবাসের অনুরোধ করেন। রাজা শাদীদেও ও অজয় যোগীকে পর পর খাজাকে হত্যার জন্য পাঠায়। তারা খাজার কেরামতির সাথে না পেরে মুসলমান হয়ে যায়। অজয় যোগীর নাম খাজা আবদুল্লাহ রাখেন। তাঁর বংশধররাই এখন মাজারের খাদেম। স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে খাজা বিয়ে করেছিলেন। তাঁর ৪ ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় জনকে তিনি কৃষি কাজে লাগিয়েছিলেন। তার নাম ছিল খাজা ফখরুদ্দীন (রহ:), খাজা হেসামুদ্দিন (রহ.) ও বিবি হাফেজা জামাল (রহঃ) তারা সবাই কঠোর পরিশ্রম করে আল্লাহ’র নৈকট্য লাভ করেছিলেন।
    শাদী দেও ও অজয় যোগীর ইসলাম গ্রহণের পর রাজা পৃথিরাজ ইসলাম গ্রহণ না করে যখন খাজার লোকের সাথে উত্তোরোত্তর অত্যাচার বাড়িয়ে দিয়েছিল তখন গোশ্বা হয়ে একদিন খাজা বলে বসেন আমি রাজা পৃথিরাজকে জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করে মুসলমান সেনাদের হাতে তুলে দিলাম। আর তখনই স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে শাহাবুদ্দীন মোহাম্মদ গৌরি দ্বিতীয়বারের মত আজমীর আক্রমন করে পৃথিরাজকে পরাজয় বরণ করিয়েছিলেন। তারপর আজানের শব্দ অনুসরন করে খাজার তাবুতে গিয়ে নামাজ শেষে তাঁকে দেখে অভিভূত হয়ে পড়েন এবং তাঁর কাছে বয়াত গ্রহণ করেন। স্বপ্নে খাজাই তাঁকে পৃথিরাজের রাজ্য আক্রমন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। বাদশাহ তখন খোরাসান রাজ্যে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে মুলতানে আমেন এবং দরবার বসিয়ে আজমীর অভিযানের কথা ঘোষণা করেন। তারপর সৈন্যসামন্ত নিয়ে লাহোর আসেন এবং সরদার রুকন উদ্দিনকে পৃথিরাজের দরবারে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে পাঠান। পৃথিরাজ ইসলাম গ্রহণ না করে রাজপুত যোদ্ধাদের ওপর ভরসা করে বাদশাহ শাহাবউদ্দিন মুহাম্মদ গৌরীকে এই বলে তিরস্কার করে সংবাদ পাঠায় যে, তুর্কী বাচ্ছা ও আফগান যুবকদের বাঁচাতে চাইলে যুদ্ধের ইচ্ছা পরিবর্তন করে ফিরে যাও। কারণ আমার হাতে আকাশের নক্ষত্রের চেয়েও বেশি সংখ্যক সুঠাম ও দীর্ঘদেহী রাজপুতরা রয়েছে। যাদের তরবারীতে কাবুল ও কান্দাহার পর্যন্ত হিমশীম খেয়ে থাকে। অতএব ফিরে যাও, নতুবা তরবারীর আঘাতে তোমাদের প্রাণ দিতে হবে।
    বাদশাহ শাহাবুদ্দীন মোহাম্মদ গৌরী তার জবাবে পৃথিরাজকে এই বলে সংবাদ পাঠান যে, আমি আমার বড় ভাইর নির্দেশে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে এসেছি। তাঁর নির্দেশনা পেলে আমি ফিরে যেতে পানি না। এর জন্য আমার দু’তিন দিন সময় প্রয়োজন। পৃথিরাজ এই জবাবে বাদশাহ’র বালখিল্যতা আবিষ্কার করেন এবং রাজ্যজুড়ে আনন্দফুর্তির ব্যবস্থা করেন। রাজপুতরা যখন মদ আর নাচগানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখন বাদশা আজমীর আক্রমন করে বসেন এবং তাদেরকে পরাজিত করেন। এ যুদ্ধে রাজা খান্ডেরাও সহ পৃথিরাজের সহযোগী ৫০ জন রাজা নিহত হন এবং স্বরসতী নদীর তীরে পালাতে গিয়ে পৃথিরাজও মারা যান। তখন পৃত্থিরাজের অধিনে ছোট ছোট আরও ৫০টি রাজ্য ছিল বলে জানা যায়। এই যুদ্ধের ফলে ভারত বর্ষের অধিকাশংই মুসলমানদের দখনে চলে আসে এবং স্বরসতী, সামানা (পটিয়ালা), কোহরাম এবং হাঁসির রাজপুত রাজ্যও অনায়াসে মুসলমানদের করতলে চলে আসে। শাহাবুদ্দীন মোহাম্মদ গৌরী আজমীর দখল করে তার রাজ্যভার পৃত্থিরাজের কোলারাজ নামক পুত্রের হাতে হলফনামার মাধ্যমে রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করেন। তারপর কিছুদিন আজমীরে অবস্থান করে খাজার খেদমতকরেন এবং দিল্লী অভিযান পরিচালনা করে তা দখল করে নেন, তারপর তাঁর গোলাম কুতুবউদ্দিন আইবেককে হিন্দুস্তানের ভাইসরয় নিযুক্ত করে গজনী ফিরে যান। কুতুবউদ্দিন আইবেক হিন্দুস্তানের বাকী অংশ জয় করে নেন। এ সময় হরিরাজ নামক এক রাজা আজমীর দখল করে কোলারাজকে আজমীর থেকে বের করে দেন। খবর পেয়ে কুতুবউদ্দিন আইবেক হবিরাজের সাথে যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত করেন এবং কোলারাজকে পুনরায় আজমীরের রাজা করেন। তার সাথে সৈয়দ মিরান হোসেন সাহেবকে রেজিডেন্ট করে পাঠান। তার কেল্লা ছিলা তারাগড়ে সেকথা আগেই বলা হয়েছে। তিনি আজমীরের নিকটবর্তী কিছু সংখ্যক পূজারীও রাজপুতদের হাতে শহীদ হয়েছিলেন।
    ভারতবর্ষের ইতিহাসে ইসলাম প্রচারক হিসেবে খাজা মইনউদ্দীন চিশতী ও খাজা নিজামউদ্দিন কাকির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। দিল্লীর অন্যতম অলি নিজামউদ্দিন  (রহঃ) তার খেদমতে হাজির হয়ে তাঁর কাছ থেকে আত্মাকে বিশুদ্ধ করার সবক নিয়েছিলেন। সত্যবাদীদের জয় ও মির্থাবাদীদের পরিনাম দেখতে ভারতবর্ষে এখনো অনেক জ্বাজ্জ্বল্য প্রমাণ দেখতে পাওয়া যায়। জৌনপুরী তরিকার প্রখ্যাত পীর আবদুল লতীফ ফুলতলী (রহ.) তাই তাঁর নালায়ে কলন্দরে লিখেছিলেন চল গায়ে দ্বারে ইসকন্দর মমলুকাত খাকান কা/ ফকর মে হ্যায় দবদবাই সুলতান হিন্দুস্তান কা/ শাহ নিজামউদ্দিন কাকিও শাহ মইন উদ্দিন কা/ রাহ গিয়া হ্যায় দুনিয়ামে বাকি নামপর আল্লাহ কা।’ বাদশাহ সিকন্দরের রাজ্য মাটির সাথে মিশে গেছে/কিন্তু ভারতের ফকিররা বাদশাহীর আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন/ শাহ নিজামউদ্দিন কাকি এবং শাহ মইনউদ্দিন / আল্লাহর নামের ওপরই জেগে রয়েছেন। এটাই জগৎভ্রমন করে মিথ্যাবাদীদের পরিনাম প্রত্যক্ষ্য করার উপমা।
    পরের দিন বাংলাদেশী গেষ্ট হাউজ ছেড়ে আমরা ট্রাভেল এজেন্টের কাছে এসে জানলাম আমাদের কলকাতার টিকেট হয়টি। তাই আমরা সড়কপথে বাসযোগে জয়পুরের উদ্দেশ্যে কালবিলম্ব না করে রওয়ানা হলাম। জয়পুর পৌছলাম বিকেলের দিকে। বাস টার্মিনালেই জয়পুর পর্যটন কর্পোরেশনের শাখা অফিস। তাদের মাধ্যমে ইউনুছ খানের সাথে পরিচয় হল। তাকে টিকেট কাটার দায়িত্ব দিয়ে তার মাধ্যমে হোটেল অনুজায় উঠলাম। সাড়ে ৮শ রূপী ভাড়া। অনুজার মালিক জয়পুরের অন্যতম মুসলিম শিল্পপতি ফিরোজ খান পরিবার। পরদিন ১২শ রূপিতে ট্রেক্সীক্যাব ভাড়া করে ছুটলাম সম্রাট আকবরের তৈরি আমের ফোর্ট, হাওয়া মহল, জল মহল, পিংক সিটি এবং রাজা মানসিংহের তৈরি হল রয়েছে সেখানে। রানী যোধাবাঈকে নিয়ে সম্রাট আকবর গরমে জলমহলে, শীতে হাওয়া মহলে বাস করতেন। পানির মধ্যে জলমহল এবং পাহাড়ের ভাজে হাওয়া মহল অবস্থিত অপর পাহাড়ে আমের ফোর্ট যা সুরক্ষিত এবং দর্শকের মন কেড়ে নেওয়ার মত। আকবর কোথায় খেতেন, কোথায় শুতেন, কোথায় দরবার বসাতেন তা ইতিহাসের ছাত্রদের কাছে সদা আকর্ষণীয় এবং পর্যটকদের কাছে লোভনীয় বটে। রাজা মানসিংহের হলে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ২৫ বছর পার্লামেন্ট বসেছির। এগুলো দর্শকদের জীবন ভরে দেয় ইতিহাসের সুগন্ধ নিয়ে। রাস্তার দু’ধারে পিংক কালারের শহরটি পিংক সিটি নামে মোঘলদেরই জয়ধ্বনি তুলে ধরে দর্শকদের সামনে। ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখে এসে জানলাম আমাদের পরের দিনের টিকেট হয়েছে কলকাতার। আজমীর শিয়ালদহ এক্সপ্রেসে কলকাতা ফিরবো। বোডিং ছিল জয়পুর থেকে। সিদ্ধান্ত ছিল রাতেই বাসে আগ্রা ফিরবো। কিন্তু বিপত্তি দে খাদিল বোর্ডির নিয়ে। জয়পুরের বোডিং আগ্রা থেকে গাড়ীতে চড়লে সিট থাকবে না। জয়পুরে যখন টিটি দেখবেন সিট খালি তখন তিনি অন্যকে তা দিয়ে দিবেন- এ খবর জানার পর ছুটলাম স্টেশনের দিকে। কিন্তু ২৪ ঘন্টার আগে বোর্ডিং চেঞ্জ করার নিয়ম তাই আমাদের আর কোন বিকল্প নেই। অগত্যা জয়পুরে কিছু কেনাকাটা করে পরের দিনের সকাল কাটালাম। বিকেল ৩ টায় চড়লাম ট্রেনে। ট্রেন ছুটে চলেছে কলকাতার পথে ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রী। সমস্যা একটাই এলাহবাদের কুম্বমেলা। সারা ভারতের ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা ছুটে চলেছে এলাহবাদের দিকে। আসুন আমরা সে কাহিনী জেনে নেই।
কুম্বমেলা, মহাস্নান বা পূণ্যস্নান
উত্তর প্রদেশের এলাহবাদের নদীত্রয় গঙ্গা, যমুনা ও স্বরসতীর মিলস্থলকে কেউ কেই বলে থাকেন সঙ্গম নদী। সঙ্গম নদীর গঙ্গা অংশে প্রতি ১২ বছর অন্তর অন্তর মহাস্নান বা কুম্ভমেলা বসে। ৩ মাস ব্যাপী এ মেলায় শেষ দিনে ভোরের আলো বিচ্ছুরিত হতে না হতেই এ মহাস্নান বা পূর্ণস্নান অনুষ্ঠিত হয়। ৩ মাসে দেশ বিদেশ থেকে ৩০ কোটির ও অধিক পূর্ণাথীরা এসে স্নান করে ফিরে যান। শেষ দিনের পূর্ণস্নানের জন্য তারপর ও লাখ লাখ লোক অপেক্ষা করে থাকেন। তবে এ স্নানেরও মধ্যেও ধর্মীয় রীতিনীতি আছে। প্রথমে থাকবে উলঙ্গ নাগার দল। দ্বিতীয় দলে সাধু বাবারা আর তৃতীয় দলে থাকবে ভক্তরা। এবার (ডিসেম্বর-২০১২-ফেব্রুয়ারী ২০১৩) মেলায় দায়িত্ব পালন করছে ২৫ হাজার সদস্যের একদল চৌকষ পুলিশ। আইন শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এ পুলিশ বাহিনীর অধিনায়ক অলোক শর্মা। লাখ লাখ লোকের এ মহামিছিলকে তারা কখনো ভুল পথ দেখিয়ে ভিড় ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ফলে এ বছর তেমন বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। শুধু নিকটস্থ এলাহবাদ রেলওয়ে জংশনে এক দুর্গটনায় ১২-১৩ জন পূণ্যার্থী মৃত্যুবরন করেছিলেন। তারমধ্যে বাংলাদেশের মুক্তধারা প্রকাশনী সংস্থার একজন কর্মকর্তা ছিলেন। তবে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে। সে বছর পদদলিত হয়ে ১৬শ পূন্যার্থীরা মারা গিয়েছিরেন। কুম্ভ মেলায় অংশগ্রহণকারীরা সবাই পূর্ণস্নানে অংশ নেন। তাতে হিন্দু ধর্মাম্বলীরা তাদের পাপ ধূয়েমুছে সাফ হয়ে যায় এবং সরাসরি তারা স্বর্গীয় মানুষে পরিণত হন বলে বিশ্বাস করেন। খ্রিষ্টান সমাজেও এমন সংস্কৃতি আছে। প্যারিসের সেইন নদীতে স্নান করলে খ্রিষ্টানরা স্বর্গীয় মানুষে পরিণত হন বলে বিশ্বাস করেন। তাদের ও পাপ তখন ধূয়েমুছে যায়। খ্রিষ্টানদের অপর বিশ্বাসটি হচ্ছে, উক্ত ধর্মে প্রবেশকারীদের পাপ যিশুখ্রিষ্ট পূর্বেই মাফ করিয়ে রেখেছেন শুলবিদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে। মুসলিম জাতির পাপমুক্তির পদ্ধতি ভিন্ন। মহান হজ্ব সম্পাদনের মধ্য দিয়ে এমন নিষ্পাপ হবার কথা বলা আছে। এছাড়া তাওবা পদ্ধতি মুসলমানদের নিষ্পাপ করতে পারে। তবে অন্যের হক বা অধিকার যেমন ঋণ, খুন তওবার দ্বারা মাফ হয় না। ব্যক্তি বা তার উত্তরাধিকার থেকে মাফ চেয়ে নিতে হয়। হিন্দু এবং খ্রিষ্টান সমাজে এক স্নানে সব ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবার দলিল পাওয়া যায়। গঙ্গা নদীর কুম্ব মেলার নিকটবর্তী মহাস্নানের স্থানটির জন্ম নিয়েও হিন্দু ধর্মে কিংবদন্তী আছে। দেবতা আর দৈত্ত্বের মধ্যে পৌরানিক যুগে একবার যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে এক ফোটা অমৃত সূধা পড়ে গিয়ে এ স্থানটির জন্ম বলে এত মহাপবিত্র সেখানকার পানী। সেখানে যে বা যারা স্নান করতে যায় সে বা তারা অন্যদের জন্যেও ডুব দিয়ে আসতে পারে। মেলার সময় রাতের দৃশ্যটি লাশ ভেগাস কিংবা পাতায়া সীবীচের ওয়াকিং স্ট্রীটের মত আলোচউজ্জ্বল হতে দেখা যায়। ১২ ফেব্রুয়ারী ভোরে ঘুম ভাঙ্গার পর জানতে পারলাম বিহারের গয়া (পূণ্যস্থান) জংশন আমরা ছেড়ে চলেছি। সকাল ১০টার দিকে পার হলাম এলাহবাদ জংশন আর আজমীর ও জয়পুর ঘুরে ১৮ ফেব্রুয়ারী রাত ১০ টায় ফিরতি পথে এলাহবাদ পেলাম। এখানে আমাদের সঙ্গী হলেন বিখ্যাত মহিলা ফুটবলার পুতুল রায়। তাঁর সাথে এক সাধুবাবা ও পুলিশ দম্পতি ছিলেন। পদমর্যাদায় তিনি ইন্টপেক্টর আর কলকাতার কোন এক থানায় পাসপোর্ট তদন্তের দায়িত্বে আছেন। পুতুলরায় এখনো অবিবাহিত। তার বাবা ও ভাইয়েরা বাংলাদেশে শাখারী পট্রিতে অধিকারী জুয়েলার্স চালান বলে তাঁর নিকট থেকে জানা গেল। তার আগে আমরা আগ্রাফোর্ট জংশন ছেড়ে এসেছি রাত ৮ টায়।
    কুম্ভমেলা ও পূণ্যস্নান এক রহস্যময় অধ্যায়। হাজার হাজার নাগা সন্যাসীরা সেখানে উলংগ হয়ে সাধনা করছেন। তাদের সাধনার পদ্ধতিও কঠিন এবং জটিল। প্রথমে সাধুবাবা তারপর নাগা হওয়া। শুধু নেংটি পরে সাধু বাবা হতে হয়। তারপর নেংটি খুলে ফেলে প্রতি বছর ১০ হাজার সাধু বাবা নাগা হন। নাগা হওয়া মানেই ঈশ্বরের কাছে পুরোপুরি সমর্পিত হওয়া। নাগা ধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ১২ বছর কিংবা আরো অধীক সময় তারা কেউ কেউ কঠিন সাধনা করে থাকেন। ‘চুনা আগারা’ নামে আরেকটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর অস্তিত্ব কুম্ভমেলায় দেখা মেলে। এক নাগার ভিডিও চিত্রে দেখা গেল ১ বছর ধরে এক পায়ে খাড়া থাকার দৃশ্য। রশিতে ঝুলে ঘুম যাওয়া ছাড়াও প্রস্রাব পায়খানার ব্যবস্থা পাশেই রাখা হয়েছে। আরও ২ বছর তাঁকে এ সাধনা করতে হবে। জাগতিক শরীর ছাড়িয়ে যাবেন বলে তাঁর বিশ্বাস। নাগায় যারা অভিষিক্ত হন তারা যৌনতাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেন বলে আরেক ভিডিও চিত্রে দেখা গেল। একজন কে দেখা গেল ৪০ বছর ধরে এক হাত তুলে রেখে কঠিন সাধনা করছেন। হাতের নখ ও লম্বা হয়ে পড়েছে তাঁর। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এক সাধুবাবা এসেছেন। তিনি সাদা চামড়ার মানুষ। তাই তাঁকে কুড়ি বছর ঘুরে তাঁদের (হিন্দু) ধর্মের সাথে মিশতে পেরেছেন। তারমতে, হিন্দু ধর্ম উপভোগের ধর্ম। এখানে বৈচিত্রের সমাহার। ইসলাম ধর্মে দু’ ঈদ আর হজ্ব ছাড়া বৈচিত্রের মিলন মেলা খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর বাইরে আছে শবে কদর। শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরা এখন আশুরা পালনও তাজিয়া মিছিল বের করার নতুন এক পদ্ধতি বের করে নিয়েছে যা ইসলাম সমর্থন করে না। ঠিক একইভাবে বেদাতী ও কবর পুঁজারীরা হিন্দুদের অনুকরণে শবে বরাত, চল্লিশা, মিলাদ অনুষ্ঠান, ওরস মাহফিল প্রভৃতি কে ইসলামের নামে চালিয়ে নিতে শুধু করেছেন। যা প্রকৃত ইসলামে নেই। ফেব্রুয়ারীতেও এলাহবাদ এলাকায় ছিল কনকনে শীত। এক ভিডিও চিত্রে দেখা গেল এ শীতেও সাধু বাবারা খালি গাঁয়ে ছাই মেখে গোসল করছেন। অন্যদের কপালেও ছাইয়ের তিলক দিচ্ছেন সাধু বাবারা। হিন্দু ধর্মে ছাই ঈশ্বরের দেওয়া রক্ষা কবজের প্রতীক। সাধুরা ৭-১০ ফুট মাটির নিচে গুহাতে থাকেন। আর নাগা হওয়ার পর তারা মাটির ওপর নির্ধারিত স্থানে বসবাস করেন। একটি ভিডিও চিত্রের মধ্যে এক জঠলায় দেখা গেল। সেখানে এক সাধু বাবাকে ৯ ফুট মাটির নিচে গর্তে বাতাস ছাড়া থাকার জন্য চাপাচাপি করতে দেখা গেল। তিনি সাধনা বলে বাতাস ছাড়াও বেঁচে থাকবেন বলে চিৎকার করছিলেন। কিন্তু পুলিশ অনাকাংখিত মৃত্যু ঘটবে বলে তাকে এ সুযোগ দেয়নি। তিনি তার সাধনার শক্তি প্রমানের জন্য লিঙ্গে ৫টি ইট বেধে তা তুলে হেটে দেখালেন। যার মোট ওজন হবে ১৭ কিলো। আমরা যখন এলাহবাদ ছেড়ে আসি তখনো মহাস্নানের ১০দিন বাকি। তারমধ্যেই ৩০ কোটি লোকের মহাস্নান হয়ে গেছে। যার পরিমান অস্ট্রেলিয়ার জনগোষ্ঠীর সমান আর আমাদের বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সমান আর আমাদের বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর প্রায় দ্বিগুনের কাছাকাছি।
    পবিত্রজলে ডুব দিতে ফেব্রুয়ারীর শেষ দিন ভোরে দেখা গেল উলঙ্গ যোদ্ধাদের মত কোটি কোটি নাগা ঝড়ের বেগে এসে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পেছনে সাধু বাবারা এবং তারও পেছনে ভক্তদের কথা আগেই বলা হয়েছে। গঙ্গা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে তারা সূর্যোদয়ে অপেক্ষায় রয়েছে। ঝড়ের আগের নিঃস্তব্ধতার মধ্য তাঁদের অবস্থান। ভোরের সূর্যের আলো মহান গঙ্গায় পড়তেই তারা দেছুট। তাদের মধ্যে অধ্যাত্বিক প্রভূরা রঙ বেরঙের রথে চড়ে গঙ্গা তীরে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। পবিত্র জলে ডুব দিয়ে আশীর্বাদ নেওয়ার এ দৃশ্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফীতে বেশ ঘটা করে প্রচার করলে বিশ্বব্যাপী মানুষজন তা দেখে ধর্মীয় বৈচিত্রময়তা লক্ষ্য করেছিল।
    এক বিকেল, পরের রাত, পরের দিন পার করে রাত ৮টার পর কলকাতার আঙ্গিনায় পৌঁলাম। প্রবেশ পথেই নদীর পাড়ে দক্ষিনেশ্বর রামকৃষ্ণ সংঘ আধ্যাপীঠ। এটি একটি সুদর্শন মন্দির। হিন্দুদের যুগাবতার রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের স্বপ্নাদেশে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বিশ্ববাসীকে একত্রিক করার উদ্দেশ্যে শ্রী শ্রী অন্নদাঠাকুর প্রতিষ্ঠা করে গেছেন এ আধ্যাপীঠ। রামকৃষ্ণ দেবের নির্দেশে মন্দিরের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে বিগ্রহ। বিচিত্র সমন্নয় ঘটিয়ে গুরু, কালি ও হরি একই মন্দিরে যথাক্রমে রাধাকৃষ্ণ, আদ্যামা এবং জগদগুরু শ্রী রাম কৃষ্ণ দেবের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সাধক সাধিকা আশ্রম, অনাথ ও দুঃস্থ বালক ও বালিকা শ্রম, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের জন্য পৃথক আশ্রম, রানপ্রস্থ আশ্রম, স্বামী, পুত্রহীন বিধবাদের মাতৃআশ্রম, স্কুল ও ভ্রাম্যমান দাতব্য চিকিৎসালয় অ্যাম্বুলেন্স, এক্সরে, দন্ত, চক্ষু, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাফী, প্যাথলজি সার্ভিস ও প্রতিদিন ৫০০ দরিদ্র নারায়ন সেবা-এ আধ্যাপীঠের প্রধান বৈশিষ্ট্য। ধর্মীযোগষ্ঠীর দ্বরা মানবসেবার প্রকৃত উদাহরণ এ আধ্যাপীঠ। তার পাশ দিয়ে ট্রেন ছুটে চললো শিয়ালদহ স্টেশনের দিকে। বেরুত বেরুতে রাত ৯টা। ১০ টায় হোটেলে পৌছে ড. মোহাম্মদ আবদুল হাই ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেলাম তার হোটেল্ েসেখানে দেখা পেলাম কবি মনিরা খাতুন এর সাথে। তিনি নতুন গতি সম্পাদক এমদাদুল হক নূর এর পতœী। এবার হাই ভাই সহ ৮৮, তালতলা লেনে নতুন গতি কার্যালয়ে। নূর ভাইর সাথে যৎকিঞ্চিত আড্ডা আমার ‘সহজ সাংবাদিকতা কেমন করে’ বইটি নূর ভাইকে উৎসর্গকৃত। তিনি সেজন্য আবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। হাই ভাই তাঁকে কোন বই উৎসর্গ করেন নি সেটাও মজা করে বললেন। আমি নিশ্চয়তা দিলাম তার পক্ষে। ভবিষ্যতের জন্য এ প্রতিশ্রুতি। এলেন লেখক গবেষক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বিশ্বাস। একত্রে বসে রাত্রিভূজ সারলাম পাশের একটি হোটেলে। বিল দিলেন হাই ভাই। ভোরে তিনি কলকাতার ছাড়ছেন। পরের দিনটি কাটালাম কবি সাংবাদিক মোহাম্মদ সাদ উদ্দিনের সাথে। তারপর ঢাকায় ফেরা। 

বিশ্ব টি-টোয়েন্টির জন্য বিকল্প দেশের খোঁজে আইসিসি!
বিশ্ব টি-টোয়েন্টির জন্য বিকল্প দেশের খোঁজে আইসিসি!
স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশ ২০১৪ সালের বিশ্ব টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ভেন্যু ঠিক হয়ে আছে তাও বছর চার হতে যাচ্ছে। এই সময়ের ভেতরে সব টিপটপ থাকার কথা। কিন্তু দেশে বিশ্ব টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আয়োজনের কোন লক্ষণই চোখে পড়ছে না। উল্টো ভেন্যু সংস্কারের মন্থরতায় চিন্তায় পড়ে গেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। এমনকি বিশ্ব টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার কথাও মাথায় রেখেছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। এবারের আইসিসি নির্বাহী কমিটির সভার এজেন্ডায় বিকল্প আয়োজক দেশের প্রস্তাবনাও রেখেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান শুক্রবার ইনডোর ফ্রি হিট ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এসে তাদের শঙ্কার কথা জানালেন সাংবাদিকদের,‘আইসিসির যে পরামর্শক ঘুরে গেছেন তিনি কিন্তু সন্তুষ্ট না। যারজন্য বিকল্প ভেন্যু হিসেবে মিটিংয়ে একটা প্রস্তাব রেখেছে। যেটা নিয়ে আলোচনা হবে। তাদের বোঝাতে হবে, বিকল্প ভেন্যুর দরকার নেই। আমাদের কাছে যা আছে আমরা পারবো। সিলেট স্টেডিয়াম করাটাই হচ্ছে মেজর চ্যালেঞ্জ। প্রথমবার আইসিসি পরিদর্শক দল এসে যে অবস্থায় দেখেছে, এবার এসেও সেই একই অবস্থা দেখেছে। তবে কক্সবাজার ভেন্যু নিয়ে সমস্যা নেই, কারণ ওটা আমাদের টাকায় কাজ হবে।’ উদ্বেগের পাশাপাশি স্বস্তির খবরও দিলেন বিসিবি সভাপতি,‘একটা সুখবর পেয়েছি, সিলেট ভেন্যুর টেন্ডার হয়ে গেছে এবং পুরো দমে কাজ চলছে। আমাদের অর্থমন্ত্রী এবং ক্রীড়া মন্ত্রীর সঙ্গে দুই দিন আগে বসেছিলাম। সেখানে অর্থমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, যা বাজেট লাগবে তার পুরো সাপোর্ট পাব। কাজেই আগামী আগস্ট মাসে তারা এসে সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে আশা করি।’
গত ৯ জুন ভেন্যু পরিদর্শনে এসেছিলেন আইসিসির পরামর্শক দক্ষিণ আফ্রিকান ইঞ্জিনিয়ার ইউজেন ভ্যান ভুরেন। ভেন্যুর অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব কিনা সেটা যাচাই করে আইসিসিকে রিপোর্ট দিয়েছেন তিনি। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরই বিকল্প চিন্তা করে রাখছে আইসিসি।
আইসিসির এই বিকল্প চিন্তার কারণও আছে, বিশ্ব টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য ন্যূনতম চারটি ভেন্যু দেখা হয়। বাংলাদেশ যে চারটি ভেন্যু দেখিছে, তার মধ্যে সিলেট একটি। মূল ভেন্যুর কাজ স্লথ হওয়াতে বিকল্প দেশের কথা চিন্তা করে রাখছে আইসিসি।
এ যুগের রোমিও-জুলিয়েট তারা
এ যুগের রোমিও-জুলিয়েট তারা
বিনোদন প্রতিবেদক: উইলিয়াম শেকসপিয়রের ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ নিয়ে অনেকবার নাটক-চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। নতুন করে আবারো নির্মিত হচ্ছে অমর এই প্রেমকাহিনী। তবে একটু ভিন্নভাবে। গল্প থেকে শুধু সারমর্ম নিয়ে  বর্তমান প্রেক্ষাপটকে উপজীব্য করে নির্মিত হচ্ছে ‘রোমিও-জুলিয়েট’। আর এ যুগের রোমিও-জুলিয়েট হয়েছেন নিলয় ও জেনি। এরই মাঝে তারা নাটকের শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। তিনটি অমর প্রেমকাহিনীর কেন্দ্রীয় চরিত্র নিয়ে নির্মিত হচ্ছে দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘নীল রঙের গল্প’। বর্তমানে এ ধারাবাহিকের শুটিং চলছে। এটি রচনা করেছেন জাকারিয়া সৌখিন এবং পরিচালনা করেছেন কৌশিক শংকর দাশ।
এ ধারাবাহিকটির চরিত্রগুলো হচ্ছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস-পার্বতী’, পারস্য কবি নিজামি গানজাভির ‘লাইলি-মজনু’ এবং উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘রোমিও-জুলিয়েট’। চরিত্রগুলো বর্তমান প্রেক্ষাপটে আধুনিক ঢঙে একটি গল্পে এসে একত্রিত হয়েছে। যেখানে দেখা যাবে, দেবদাস-মজনু-রোমিও একই ইউনিভার্সিটির ছাত্র। আর তিনজনের মধ্যে বন্ধুত্বও চরম। তাদের জীবনে প্রেম আসে। ধীরে ধীরে পূর্ণতা পায় দেবদাস-পার্বতী, লাইলি-মজনু এবং রোমিও-জুলিয়েটের প্রেম।
এরই মাঝে শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন রোমিও-জুলিয়েট চরিত্রের অভিনয় শিল্পী নিলয়-জেনি। খুব শিগগিরই বাকি দুই জুটি শুটিংয়ে অংশ নেবেন। রোমিও চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে নিলয় বাংলানিউজকে  বলেন, “অভিনয়শিল্পীদের জীবনে কিছু স্বপ্নের চরিত্র থাকে। রোমিও তেমন একটি চরিত্র। এমন একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে আমি উচ্ছ্বসিত।” জুলিয়েট চরিত্রের অভিনেত্রী জেনি বলেন, “নাটকের কনসেপ্টটি অসাধারণ। একেবারে আধুনিকভাবে নাটকটি নির্মিত হচ্ছে। আমি এ নাটকের একটি অংশ। আমার ধারণা নাটকটি দর্শকের পছন্দের তালিকায় থাকবে।” ‘নীল রঙের গল্প’ ধারাবাহিকটি নাটক প্রসঙ্গে কাহিনীকার জাকারিয়া সৌখিন বলেন, “এর আগে আলাদাভাবে তিনটি গল্প নিয়ে অনেক কাজও হয়েছে। তাই এক মোড়কে চরিত্রগুলো উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি মাত্র। সবমিলিয়ে অমর তিন প্রেমকাহিনীর সারমর্ম অবলম্বনে ভিন্ন একটি গল্প হয়ে উঠেছে ‘নীল রঙের গল্প’ ধারাবাহিক। আশা করি, দর্শকদের পছন্দ হবে।” নির্মাতা কৌশিক শংকর দাশ বাংলানিউজকে বলেন, “এটাই আমার করা প্রথম সিরিয়াল। আর প্রথম সিরিয়াল নির্মাণ করার জন্য আমি অনেকদিন অপেক্ষা করেছি। কারণ আমি নতুন ধরনের কোনো কনসেপ্ট খুঁজছিলাম। এই কনসেপ্টটি একেবারেই নতুন স্বাদের। এখানে দর্শকরা তিনটি সম্প্রদায়ের আলাদা প্রধান প্রধান চরিত্রের প্রেম কাহিনী দেখতে পাবে, যা সাধারণত এখন কোনো টিভি সিরিয়ালে দেখা যায় না। দর্শকের ভালো লাগলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।” ‘নীল রঙের গল্প’ ধারাবাহিকটি প্রচার হবে এনটিভিতে।
টেনশনে সোনম!
টেনশনে বলিউড অভিনেত্রী সোনম কাপুর

বিনোদন ডেস্ক: বলিউড অভিনেত্রী সোনম কাপুর নাকি টেনশনে হার্ট অ্যাটাক করতে যাচ্ছেন! এটা কোন হাসপাতাল সূত্রের খবর নয়। এ সংবাদ দিয়েছেন অনিলকন্যা নিজেই। শিগগিরই মুক্তি পাচ্ছে তার অভিনীত দুটি সিনেমা ‘রানঝানা’ ও ‘ভাগ মিলখা ভাগ’। আর এ কারণেই একটু বেশি নার্ভাস হয়ে গেছেন সোনম।
রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা পরিচালিত ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ সিনেমার সম্পূর্ণ ট্রেইলার প্রকাশিত হয় ১৯ মে। আর এই দিনই সোনম তার ধুকধুকানির কথা জানালেন টুইটারে। সোনম লিখেছেন-- “আমি সবকিছু নিয়েই চিন্তিত, আমার মাথায় এখন ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু ‘রানঝানা’ ও ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ সিনেমা দুটো। মনে হচ্ছে আমার মিনি হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।” সোনম এখন ব্যস্ত আছেন ২১ জুন ২০১৩ মুক্তি পেতে যাওয়া আনন্দ রায় পরিচালিত ‘রানঝানা’ ছবির প্রচারণা নিয়ে। এ সিনেমায় সোনমের বিপরীতে অভিনয় করেছেন দক্ষিণ ভারতীয় ছবির নায়ক ধানুশ। আর ভাগ মিলখা ভাগ সিনেমাটি ১২ জুলাই ২০১৩ মুক্তি পাবার কথা রয়েছে। খুব কম সময়ের ব্যবধানে দুইটি ছবি মুক্তি পেতে যাচ্ছে সোনমের, একটু টেনশন হওয়াটাতো স্বাভাবিকই।
সিনেমাপ্রিয় মানুষের হƒদয়ে স্থান করে নিতে চায় ছিমি
লিপু খন্দকার॥ ছোটপর্দার সম্ভাবনাময়ী মডেল ও অভিনেত্রী ছিমি। এতো দিন তাকে সবাই ছোটপর্দায় দেখলেও এবার দেখবে বড়পর্দায়। আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আর এক নক্ষত্রের আÍ প্রকাশ ঘটতে চলছে। আকাশ সংস্কৃতির এ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন মডেল ও অভিনয়শিল্পী। কিন্তু তারা কেউ বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। এক-দুটি কাজ করে আর হারিয়ে যায়। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাদের খুযে পাওয়া যায় না। হারিয়ে যায় অনেক দূরে। পুরো নাম শাহানাজ ছিমি। সিনেমিডিয়া প্রযোজিত ও সাজ্জাদুর রহমান বাদল পরিচালিত ডিজিটাল পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বাংলার ফাটাকেষ্ট ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে পা রাখা ছিমির। ফাটাকেষ্টর শুটিং চলা অবস্থায় তার হাতে আরো ডজনখানেক ছবির অফার আছে বলে তিনি জানান। কোনটাই এখন ও ফাইনাল কথা দেন তিনি। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান তিনি কেন ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দায় আসছেন। তিনি বলেন মিডিয়াতে কাজই যদি করবো তবে সব মাধ্যমেই কাজ করেই নিজেকে আবস্থান প্রমাণ করবে। আমার সামনে এখন একটাই টাগের্ট নিজেকে একজন দক্ষ অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। আর আমার বিশ্বাস আমি অচিরেই তা প্রমাণ করে দেখাবো। বাংলা চলচ্চিত্রে চিত্রনায়িকা হিসেবে বাংলাদেশের সিনেমা প্রিয় মানুষের হƒদয়ে স্থান করে নিবো ইনশাল্লা। ছিমি উল্লেখ্য অভিনীত নাটকের মধ্যে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রচার হয়েছে ‘হƒদয় কাব্য’ যা দিগন্ত টিভিতে প্রচার হয়েছে। প্রচারের অপেক্ষা আছে একক নাটক ‘ভাঙন’। রমজানের ঈদে এনটিভির জন্য নির্মিত হয়েছে টেলিফিল্ম ‘টার্ম কার্ড’। এছাড়া রয়েছে ‘ঘাট-অঘাট’ নামক ১০৪ পর্বের একটি ধারাবাহিক নাটক।
নিজেকে পর্নস্টার মানতে নারাজ বীণা
বিনোদন ডেস্ক ॥ ফ্লপ ছবি থেকে স্বয়ম্বর, উনি যাই করুন না কেন সবেতেই সংবাদের শিরোনামে। পরিচালক কাম সহ অভিনেতার সঙ্গে অন্তর্বাস কিনতে গেলেও পিছনে মিডিয়া দৌড়ায় আবার গোঁসা করে অজানার পথে চলে গেলেও মিডিয়ায় হইহই। তা হবে নাই বা কেন? অভিনেত্রীর নাম যে বীণা মালিক। পাকিস্তানের এই মডেল কাম অভিনেত্রী ভারতে আসা ইস্তক আর কাউকে সুস্থির হতে দিচ্ছেন না। ছলাকলা-রূপ সব ভাঙিয়ে বীণা সেই বিগ বস থেকে যা বসগিরি শুরু করেছেন, তাতে পুরুষরা তো বটেই, নারীরাও প্রায় সকলেই কাতর। তবে ইদানিং বিগ বসের গত সিজনের পর্নস্টার সানি লিওনের মার্কেট আর বীণার মার্কেট নিয়ে তুলনা-আলোচনা শুরু হতেই বীণা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, উনি মোটেই পর্নস্টার নন। কাজের প্রয়োজনের শরীর লাস্যে দর্শকদের মাত করতে ওঁর আপত্তি নেই বটে, কিন্তু তাই বলে নিজেকে পর্নস্টারদের সঙ্গে তুলনায় ভীষণ খাপ্পা মেয়ে। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সুদূর পাকিস্তান থেকে উনি এদেশে পড়ে আছে শুধুমাত্র অভিনয় আর পেশার জন্যই। মুশকিল হল বীণার এহেন দাবি নিন্দুকেরা না মানতে চাইলেও মেয়ে বলছেন, তাঁর জীবন নিয়ে তিনি যা বলবেন তাই-ই শেষ কথা।
বিষ্ফোরক বীণা মালিক
সম্প্রতি বীণার দুটি বলিউড ছবি মুক্তি পেতে চলেছে। কিন্তু তাই বলে বলিউড নিয়ে বিন্দুমাত্র খাপ্পা নন তিনি। জানাচ্ছেন, ছম্মো আর গলি গলি চোর হ্যায় আইটেম ডান্সে বলিউড তাঁকে ভালভাবেই ট্রিট করেছে। আর হিন্দি ছবি অনেক দিন পর মুক্তি পেলেও দক্ষিণী ছবিতে প্রচুর কাজের কথা জানাচ্ছেন তিনি। নানা ছবিতে তাঁর খোলামেলা পোশাক আর উষ্ণ দৃশ্যে অভিনয় নিয়ে বেশ বিতর্ক হয়েছে। এমনকি বহু পুরুষকে জড়িয়ে বীণাকে নিয়ে নানা কথাও উঠেছে। কিন্তু এ মেয়ে সেসবে পাত্তা দিতে নারাজ। বলছেন, ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে উনি মুখ খুলবেন না। আর সিনেমায় এমন কিছু করেননি যা এর আগে কেউ করেনি। ছবির স্বার্থে খোলামেলা পোশাক বা হট সিন অনেকেই এর আগে করেছেন, উনিও করছেন। কিন্তু তাই বলে নিজেকে কোনও পর্নস্টারের সঙ্গে মেলাতে নারাজ তিনি। শার্লিন চোপড়া বা পুনম পাে র সাহসী দৃশ্যের সঙ্গে তাঁর কাজকে তুলনা করতেই বেশ ক্ষেপে গেছেন। ‘এই তুলনা একেবারেই ঠিক নয়। আমি মোটেও কোনও পর্নস্টার নই এবং ভবিষ্যতে হতেও চাই না। আমি কখনও সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে শ্যুট করিনি। ব্যাকলেস পোশাক পরে অভিনয় করা আর নগ্ন হয়ে ফোটোশ্যুট করার মধ্যে পার্থক্য আছে। মানুষ এই ফারাকটা বোঝে না বলেই আমায় ওদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে। আমি জানিয়ে দিতে চাই, আমি কখনও পর্ন ছবিতে কাজ করিনি, করবও না। যেটুকু সাহসী পোশাক পরেছি বা দৃশ্য করেছি সবটাই আমার সিনেমার কাজে, খুব স্পষ্ট জবাব মেয়ের।
কিন্তু নিন্দুকের মুখ কি আর তাতে বন্ধ থাকে? প্রায়শই বীণাকে নানান ধরনের বিতর্কিত পোশাক আর নানান পুরুষের সঙ্গে ফোটোশ্যুটে দেখার পরে বীণার এহেন বক্তব্যে নিন্দুকেরা মুখ টিপে হাসছে বইকি।
জোলির জীবনের গল্প
মিজানুর রহমান ॥
বরের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে বুনোবিড়াল নিজের শরীরে এঁকেছিলেন ১০টি ট্যাটু। বলছি বিলি বব আর অ্যাঞ্জেলিনা জোলির কথা। পর্দায় তার সামান্য উপস্থিতি কোটি ভক্তের হৃদয়ে আকাঙ্ক্ষার কাঁপন ধরিয়ে দেয়। ৩৭ বছর বয়সী এই হলিউড অভিনেত্রী একাধারে অস্কার বিজয়ী, চিত্রপরিচালক, জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত আর বিশ্বের নামকরা ম্যাগাজিনের সেরা যৌনাবেদনময়ীর খেতাবসহ সবই তার দখলে। সম্প্রতি নতুন আরেকটি পালক যোগ করলেন তিনি। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি করে। কোটি মানুষের স্বপ্নের নারী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তার স্তনযুগল অপসারণ করিয়েছেন মরণব্যাধি ক্যানসারের আশঙ্কায়। এবার বুঝি মহাভারত অশুদ্ধ হতে চলল! মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ সবই যার সৌন্দর্যের আলাদা আলাদা সংজ্ঞা। শরীরী সৌন্দর্যের অপরূপ রূপের অধিকারিণী টূম্ব রাইডারের সেই লারা ক্রাফটকে আর কি দেখা যাবে রুপালি পর্দায়! এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। বিশ্বের সব গণমাধ্যমগুলোয় জোলির স্তন অপসারণের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়। জোলির মা মার্সেলিনা বার্ট্রান্ড ডিম্বাশয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। বংশানুক্রমিকভাবে পাওয়া বিআরসিএ১ জিন জোলির শরীরে ধরা পড়লে চিকিৎসকরা জানান, তার স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৮৭ ও জরায়ু ক্যান্সারের আশঙ্কা ৫০ শতাংশ। নিজের সন্তানদের মাতৃহারা করতে চান না। চান না মায়ের মতো অল্প বয়সে পৃথিবী ছেড়ে যেতে। আর তাই সময়োপযোগী সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। শুরুতেই তা জানান আট বছরের সার্বক্ষণিক সঙ্গী প্রেমিক ব্রাডপিটকে। তিনিও সানন্দে সম্মতি দেন, কারণ তিনি বুঝেছিলেন জোলি শুধু নিজের আরোগ্য চাননি। চেয়েছেন এই রোগে ঝুঁকিপূর্ণ অনেককে সচেতন করতে পারেন। ব্রাড বলেছেন, আমি শুধু চাই সে [জোলি] যেন সুস্থভাবে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আমার ও বাচ্চাদের সঙ্গে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ জিনের কারণে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় উভয় স্তনই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করেছেন জোলি। ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলসের পিঙ্ক লোটাস ব্রেস্ট সেন্টারে গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে তার চিকিৎসা শুরু হয়। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি তার স্তনের টিস্যু অপসারণের প্রধান অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন হয়। তবে পুরোপুরি সার্জারি শেষ হতে সময় লাগে প্রায় তিন মাস। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ১৪ মে মাই মেডিকেল চয়েস শীর্ষক এক লেখায় এ খবর জানিয়েছেন জোলি। অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা যদিও সহজ ছিল না, তবে তা করতে পেরে জোলি খুবই আনন্দিত যে, তার স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি এখন ৮৭ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। বর্তমান অনুভূতি জানাতে গিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জোলি বলেন, ‘নিজেকে অনেক ক্ষমতাবান মনে হচ্ছে আমি একটি জোরালো সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা নারীত্বকে কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন করেনি।’ চিকিৎসা শেষে নিজের কথা বিশ্ববাসীর কাছে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেসব নারীদের কথা ভেবে, যারা ক্যান্সারের ছত্রছায়ায় বেঁচে আছেন। জোলি আরও বলেন, ‘আমার বিশ্বাস এখন তারাও জিন পরীক্ষা করতে সক্ষম হবেন। প্রয়োজনে তা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেবেন। ‘আমি অ্যাঞ্জেলিনা জোলির প্রশংসা করি, স্তন অপসারণের কথা সবার সঙ্গে শেয়ার করার সাহস আর চিন্তা দেখে।