Year-20 # Issue-22 # 14 July 2013

 
খেজুরের দাম নিয়ে কারসাজি!
ইরাকের জাহেদি জাতের খেজুর গরিবের খেজুর নামেই পরিচিত। পুরান ঢাকার বাদামতলীতে অনেকে আবার একে ‘হলুদ বস্তা’ খেজুর নামেও অভিহিত করে থাকেন। ইরাক থেকে হলুদ বস্তায় আমদানি হওয়ার কারণেই এর এমন নামকরণ।রমজানে দেশের ৮০ শতাংশ খেজুরের চাহিদা মেটায় জাহেদি খেজুর। তবে রমজানে এর দাম বেড়ে গেছে। চলতি রমজানে রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে জাহেদি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা প্রতি কেজি দরে। অথচ গত রমজানেও পাইকারি বাজারে জাহেদি খেজুর মিলত ৫০ থেকে ৬০ টাকা প্রতি কেজিতে। জানা গেছে, বাদামতলী পেরুলেই খেজুরের দাম বেড়ে যায় কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। লালবাগের কেল্লার মোড়ের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি জাহেদি খেজুর বিক্রি হতে দেখা গেছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। বাজারের সবচেয়ে দামি খেজুর হচ্ছে ইরানের মরিয়ম খেজুর। বাদামলীতে প্রতি কেজি মরিয়ম খেজুর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলজেরিয়‍ার ফরিদা খেজুর ২০০ টাকা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগাল খেজুর ১২০ টাকা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সায়ের খেজুর ১২০ টাকা, আলজেরিয়ার আল-শাহদ ২০০ ‍টাকা, সৌদি আরবের লুলু ১৩৫ টাকা, ইরানের হারমানি ১০০ টাকা এবং দুবাইয়ের দাবাস খেজুর ১১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেটজাত আলজেরিয়ান খোরমা খেজুর ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫ কেজির প্যাকেটজাত তিউনিসিয়ার খেজুর ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১০ কেজির প্যাকেটজাত দুবাই ক্রাউন খেজুর ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারে খেজুরের দাম পাইকারি বাজারের থেকে বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বাইতুল মোকাররমের সামনে প্রতি কেজি ইরানি মরিয়ম খেজুর ১ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে, অথচ বাদামতলীর সাথী ফ্রেশ ফ্রুটে একই খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে দরে। তবে শুধু খুচরা বাজারই নয়, খেজুরের দামের কারসাজি দেখা গেছে পাইকারি বাজারেও। বাদামতলীর আল মদিনা ফার্মে প্রতি কেজি জাহেদি খেজুর ৯০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ কয়েক গজ দূরে আহসানউল্লাহ রোডে অবস্থিত বন্ধু মেসার্সে একই খেজুরকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাদামতলীর অন্যতম খেজুরের পাইকারি আড়ৎ সাথী ফ্রেশ ফ্রুট। এখানে ৫ কেজি প্যাকেটজাত মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়। অথচ একই খেজুর পাশের মৌসুমী এন্টারপ্রাইজে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ১শ’ টাকায় পর্যন্ত। মাত্র কয়েক গজ দূরত্বেই খেজুরের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১ হাজার টাকারও বেশি!
তবে বাদামতলীর পাইকারি বিক্রেতারা অবশ্য দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দায়ী করছেন রফতানিকারক দেশগুলোতে খেজুরের উৎপাদন কমে যাওয়াকেই।
মধ্যপ্রাচ্যে এ বছর খেজুরের উৎপাদন কম হয়েছে। বাদামতলীতে সাধারণত ইরাক, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মিশর, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া থেকে খেজুর আমদানি করা হয়। প্রতি বছর খেজুরের ফলন সমান হয় না। এক বছর পর পর খেজুরের ফলন ভাল হয়। ২০১২ সালে খেজুরের ফলন ভাল হওয়ায় আবার ২০১৪ সালে খেজুরের ফলন ভাল হবে আশা করছেন পাইকারি খেজুর বিক্রেতারা। রমজানে ইফতারির অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ খেজুর। সুস্বাদু ও মিষ্টি খেজুর ছাড়া যেন ইফতারি জমেই ওঠে না। খেজুর দিয়ে ইফতারি করা সুন্নত। পাশাপাশি খেজুরে খাদ্যের অনেক পুষ্টিগুণাগুণ থাকে। শর্করা, প্রোটিন, কার্বো-হাইড্রেড, ইনভার্ট সুগার, পটাশিয়াম, ফসফরাস,ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে খেজুরে। এ সব কারণে রমজানে মানুষের মাঝে খেজুরের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। ক্রেতাদের খেজুরের প্রতি এই দুর্বলতার সুযোগে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা রমজানে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেন। আর তাদের প্রতারণার অসহায় শিকারে পরিণত হতে হয় ক্রেতাদের। খেজুরের দামের কারসাজি প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রফতানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম  বলেন,“ সরকারকে ৪ শতাংশ পোর্ট ডিউটি খরচ দিতে হয় যা গত বছর ছিল না। এর ফলে প্রতি কেজি খেজুরে বাড়তি খরচা ৭ টাকা পড়ে যায়। যা গত বছর ছিল মাত্র ৩ টাকা। তা ছাড়া আমাদের দেশে প্রায় ৮০ ভাগ খেজুরের চাহিদা পূরণ করে জাহেদি খেজুর। এবার ইরাকে এই খেজুরের উৎপাদন কমেছে। ফলে এবার খেজুরের আমদানি কম। কিছু খেজুর পাইপ লাইনে আছে। আমরা চট্টগ্রাম বন্দরে জাহেদি খেজুর ৭৩ টাকা দরে বিক্রি করছি এবং ঢাকায় বিক্রি করছি ৮৫ টাকা দরে। এক সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পাইপ লাইনে থাকা খেজুর খালাস হলে আশা করা যায় দাম কিছুটা কমবে।”

রাশিয়া-বেলারুশ দেশি পোশাক শিল্পের বড় বাজার
রাশিয়া-বেলারুশ দেশি পোশাক শিল্পের বড় বাজার
রাশিয়া ও বেলারুশে পোশাক শিল্পের বড় বাজার সৃষ্টি হবে। শুধু রাশিয়া এবং বেলারুশ নয় বিশ্বের পূর্ব পশ্চিম ও উত্তর দক্ষিণের সব দেশই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়বে। কারণ এত সস্তায় বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশ পোশাক দিতে পারবে না। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ এ কথা জানান। শনিবার শেরে বাংলানগর আগারগাঁওস্থ এলজিইডি ভবনের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ এমব্রয়ডারি ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিইএসইএ) ১৫তম বার্ষিক সাধারণ সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বেলারুশে গিয়ে একটি ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বেলারুশ সফরে আমিও সঙ্গী ছিলাম যোগ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি এসব সম্ভাবনার কথা বলেন। কাজী আকরাম উদ্দিন বলেন, এমব্রয়ডারি শিল্প বাংলাদেশের দেশীয় ও রপ্তানিমুখী পোশাক খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিদ্যমান সমস্যা নিরসন করে এমব্রয়ডারি শিল্পকে একটি আধুনিক রপ্তানিমুখী শিল্পে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে বিইএমইএকে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কাজী আকরাম উদ্দিন বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নতি করতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। সামনে নির্বাচন। এ নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। নির্বাচন উপলক্ষে কি হবে আমরা বলতে পারছি না। তবে আমরা চাই একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা হস্তান্তর হোক। কোনো রক্তপাত ও হানাহানি ছাড়াই যেন ক্ষমতা হস্তান্তর হয়। এটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা।
এ অনুষ্ঠানে বিইএমইএ-এর সভাপতি শাহনেওয়াজ চৌধুরির সভাপতিতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোশারফ হোসেন, মহাসচিব আহসান হাবীব দুলাল এবং যুগ্ম-মহাসচিব গোলাম জব্বার সনেট। কোটা ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাসের এখনই সময় কোটা ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাসের এখনই সময়
বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে অংশগ্রহণকারী প্যানেল বক্তা ও দর্শক-শ্রোতারা বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার বা তুলে দেওয়ার এখনই সময়। বর্তমানে কোটা ব্যবস্থার অনেক ক্ষেত্রে অপব্যবহার হচ্ছে। শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমীর মিলনায়তনে বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে তারা এ কথা বলেন।
বিবিসির সংবাদদাতা আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচক ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ‘উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা’র (উবিনীগ) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার।
এক বক্তা জানতে চান, বিসিএসসহ সব সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস বা সংস্কারের সময় কি এসেছে? এর জবাবে ফরিদা আখতার বলেন, “কোটা বৈষম্য তৈরি করছে। আন্দোলনকারীদের দাবি যৌক্তিক।” তবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা রাখার পক্ষে মত দেন তিনি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “অব্যশই এই কোটার পুনর্বিন্যাস দরকার। মেধাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও বিবেচনা করে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দিতে হবে। দেশে ৫৬ ভাগ কোটার প্রচলন আছে। কিন্তু, এগুলোর বিপরীতে প্রার্থী নেই। তাই, পদগুলো শূন্য থেকে যাচ্ছে। এগুলো মেধা দিয়ে পূরণ করা উচিত।” খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “সার্বিকভাবে কোটা পুনর্বিন্যাস করার সুযোগ এসেছে। মেধাকে বিবেচনা করেই সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।”  কোটাবিরোধী আন্দোলন সরকার বিরোধী আন্দোলন কিনা, একজন দর্শক-শ্রোতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মোটেও না। এটাকে আমরা সরকারবিরোধী আন্দোলন ভাবছি না। তবে আন্দোলনের নামে যে ভাঙচুর করা হয়েছে, তা ঠিক হয়নি।” বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “কোটা কমিয়ে আনা বা পুনর্বিন্যাস করার সময় এখনই।” আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কোটা প্রস্তুতি পুনর্বিন্যাস করা হবে।” জেলা ও নারী কোটাও পুনর্বিন্যাস করার কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি আন্দোলনকারীদের ওপর সরকার দলীয় ও পুলিশের আচরণের নিন্দা জানান।
রাজনৈতিক দলগুলোকে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত করে যে রিপোর্ট প্রকাশ করে টিআইবি, তা কি উদ্দেশ্যমূলক, সৈয়দা সীমা করিমের এমন প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “টিআইবির অবশ্যই উদ্দেশ্য আছে। তবে তা বাংলাদেশের জনগণ দেশকে যেভাবে দেখতে চায়, টিআইবি রিপোর্ট সেই উদ্দেশ্যেই। মূল রিপোর্ট ভিন্নখাতে উপস্থাপিত হয়নি। বরং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সংশোধন করতেই এই রিপোর্ট।” খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “এখানে অবশ্যই অন্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে। যেমন- ওয়ান-ইলেভেনে বিশ্বব্যাংক তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে চেয়েছিল। এবারও এ ধরনের কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তাই, দলীয়ভাবে অভিজ্ঞতার আলোকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি।” ড. মোশাররফ বলেন,  “টিআইবি যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে জনসম্পৃক্ততা আছে কিনা, সে প্রশ্ন থাকে। এবার যেহেতু টিআইবির রিপোর্টে রাজনৈতিক দলের বিষয়টি প্রথমে এসেছে, তাই, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলের নাম না এসে যদি রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম আসতো, তাহলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হতো।” তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, টিআইবির রিপোর্টে রাজনৈতিক দল হিসেবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে বোঝানো হয়েছে। কারণ, বিরোধীদল দুর্নীতি করবে, তা ঠিক নয়।” ফরিদা আখতার বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোতে দুর্নীতি অবশ্যই আছে। প্রকৃত রাজনীতিবিদদের নমিনেশন না দিয়ে টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের নমিনেশন দেওয়া হচ্ছে। সে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোতে দুর্নীতি বাড়ছে।” এ ছাড়া সংলাপে পোশাক খাতের নিরাপত্তা বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।