Year-19 # Issue-34 # 7 October 2012




হবিগঞ্জে ১৮ দলীয় জোটের জনসভায় খালেদা
আন্দোলনে বাধা দিলে পরিণতি ভয়াবহ
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঈদের পর আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দিয়ে বিএনপি  চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, এই আন্দোলনে বাধা দিলে পরিণতি ভালো হবে না। গতকাল শনিবার বিকালে হবিগঞ্জে ১৮ দলীয় জোটের জনসভায় তিনি কথা বলেন। খালেদা জিয়া বলেন, আজ বিশ্বচোর বিশ্ববেহায়া এক হয়েছে। এদের হাত  থেকে দেশকে রক্ষা করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। সামনে ঈদের পর আমরা নির্ভয়ে- নির্বিঘ্নে আন্দোলন শুরু করব। সরকার বাধা দিলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ কঠিন। সবাইকে আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ আন্দোলনে রাজপথে আপনাদের সঙ্গে আমার দেখা হবে।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পূরণে জনমত গঠনের অংশ হিসেবে হবিগঞ্জে এই জনসভা করেন বিরোধী দলীয় নেতা। এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরের গোর--শহীদ ময়দানে জনসভা করেছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে হবিগঞ্জের পেৌরসভা মাঠে খালেদা জিয়া জনসভা করেছিলেন। গতকাল দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে জনসভাস্থল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিট থেকে শুরু হওয়া ৪৫ মিনিট স্থায়ী বক্তব্যে বিরোধী দলীয় নেতা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক অবস্থা, দুর্নীতি, পদ্মাসেতু প্রকল্প, বেৌদ্ধ বিহারে হামলাসহ সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে দাবির যেৌক্তিকতা তুলে ধরে খালেদা বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে যাবত্কালে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তাই তাদের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে আমরা মনে করি। সরকারকে বলব, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে প্রমাণ করুন আপনাদের জনপ্রিয়তা আছে। বক্তৃতায় বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। 
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়। তারা আওয়ামী লীগের সুরে কথা বলে। তাই এই আজ্ঞাবহ কমিশনের অধীনে কোনো অবাধ সুষ্ঠু হতে পারে না। বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়াই বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। দুদকের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ হচ্ছে- কুমির, রাঘব-বোয়াল তিমি মাছ ধরা। কিন্তু তা না করে তারা বিরোধী দলের  নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। সরকারি দলের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে  কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দুদককে হুঁশিয়ার করে দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে দুর্নীতিবাজকে ধরা না হলে ভবিষ্যতে দুদককে ধরা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ  মোহাম্মদ ফয়সলের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, সহ-সভাপতি শমসের মবিন চেৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদষ্টো শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু,  মোহাম্মদ শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুক, সাংসদ শেখ সুজাত মিয়া, শাম্মী আখতার, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পেৌর  মেয়র জি কে গউছসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। ১৮ দলীয় জোট  নেতাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মজিবুর রহমান,  খেলাফত মজলিশের  চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইসহাক, মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি অলি আহমেদ, কল্যাণ পার্টির  চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় গণতানি্ত্রক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমীর মাওলানা মুখলেছুর রহমান, খেলাফত মজলিশের  জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল বাসেত আজাদসহ প্রমুখ নেতারাও বক্তব্য  দেন। 


পদ্মাসেতু দুর্নীতি
তদন্ত পর্যালোচনায় নেতৃত্ব দেবেন ওকাম্পো
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের পদ্মাসেতু দুর্নীতির অভিযোগ তদনে্তর পর্যালোচনায় নেতৃত্ব  দেবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবের প্রধান প্রসিকিউটর লুইস  মোরেনো ওকাম্পো। বিশ্বব্যাংকের একটি ঘোষণায় একথা জানানো হয়েছে।  ঘোষণায় বলা হয়েছে, তিন সদস্যের একটি প্যানেলের নেতৃত্ব দেবেন ওকাম্পো। তারা পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত . বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা দেয়ার সুযোগ কতটুকু রয়েছে তা পর্যালোচনা করে বিশ্বব্যাংককে রিপোর্ট দেবেন। পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যনে্ত্রর অভিযোগ এনে ঋণ সহায়তা প্রত্যাহারের ঘোষণা  দেয় বিশ্বব্যাংক।  দীর্ঘ অচলাবস্থা শেষে বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাংকের দেয়া শর্তপূরণে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ায়  সংস্থাটি প্রয়োজনীয় পর্যালোচনা করে প্রকল্পে আসার নীতিগত সদ্ধিান্ত নিয়েছে। তবে তার আগে যে 'টি বিষয়ে নিশ্চিত হতে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি শর্তারোপ করেছে তার অন্যতম হচ্ছে পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির সঠিক তদন্ত। এই তদন্ত কাজের যথার্থতা পর্যালোচনা করবেন লুইস  মোরেনো তার দল। নেদারল্যান্ডসের  হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের জেরা করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে মোরেনো ওকাম্পোর। প্যানেলে ওকাম্পোর সঙ্গে থাকছেন হংকংয়ের দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন কমিশনের সাবেক কমিশনার টিমোথি টং এবং ব্রিটেনের সিরিয়াস ফ্রড অফিসের সাবেক পরিচালক রিচার্ড আলডারম্যান। গত জুনে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে পদ্মাসেতু প্রকল্পে তাদের হাতে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণাদি রয়েছে এই দাবি করে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা  দেয়ার পূর্ব ঘোষণা প্রত্যাহার করে  নেয়। পরে জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দীর্ঘ দূতিয়ালির পর গত  সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রদানের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার সদ্ধিান্ত নেয়। তবে ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত আরোপ করে। যার অন্যতম হচ্ছে একটি বিশেষজ্ঞ দলের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে পরিচালিত তদনে্তর গ্রহণযোগ্যতা পর্যালোচনা করে দেখা। প্যানেলটির তৈরি রিপোর্ট বাংলাদেশ সরকারকেও সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ওই দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাকে পদত্যাগের মাধ্যমে নয়তো ছুটি দিয়ে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে  রেখেছে।  বিশ্বব্যাংকের অন্য শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতির দমন কমিশনের পক্ষে তদনে্তর জন্য একটি বিশেষ তদন্ত প্রসিকিউশন দল গঠন করা এবং পদ্মাসেতু প্রকল্পের জন্য একটি নতুন ক্রয় প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা যা হবে আরো বেশি স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক। বিশ্বব্যাংকের  প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিং বিবৃতিতে বলেছেন তার নেতৃত্বাধীন সংস্থাটি মর্যাদার সঙ্গে পদ্মাসেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন চায়। তিনি বলেন, ওকাম্পোর  নেতৃত্বে গঠিত প্যানেলটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা সুশাসনের পক্ষে একটি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে।  উলে্লখ্য, পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ পেতে কানাডাভিত্তিক প্রকেৌশলী কোম্পানি এসএনসি-লাভালিন গ্রুপ বাংলাদেশের সেতু সংশি্লষ্ট উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজনকে ঘুষ দিয়েছে এমন অভিযোগের পরই বিশ্বব্যাংক তার ঋণ-প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে।বিষয়টি কানাডা সরকারের নজরে আনলে তারাও বিষয়ে তদনে্তর উদ্যোগ নেয়। 
রামু হামলার পরিকল্পনাকারীরা শনাক্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজারের রামুতে বেৌদ্ধমন্দিরে অগ্নিকাণ্ড, ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনায় পরিকল্পনা হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পেরেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজ, ছবি, আটক ব্যক্তিদের দেয়া তথ্য মতে এদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। জামায়াত ইসলামপন্থি কয়েকটি রাজনৈতিক দল, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জঙ্গি পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি সংঘটিত করে। এসব ব্যক্তিকে আটকের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জোর প্রচষ্টো অব্যাহত রেখেছে।
সংশি্লষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফেইসবুকে ট্যাগ করে একটি ছবিকে কেন্দ্র করে ২৯  সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টা  থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত রামু উপজেলার  বেৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অধু্যষিত এলাকায় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুর চালিয়েছে কিছু লোক। এতে রামু উপজেলার ১৩টি  বেৌদ্ধ মন্দির, প্রায় ৩০টি বসত ঘরদোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসময় আরো শতাধিক বাড়ি   দোকানে হামলা, লুটপাট ভাঙচুরও হয়েছে। এর পরদিন উখিয়া   টেকনাফেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে সরকারি, বেসরকারি ব্যক্তি, রাজনৈতিক মহল ঘটনাকে পরিকল্পিত বলে দাবি করতে শুরু করে। এতে গান পাউডার, পেট্রোলসহ নানা বিস্ফোরণ দ্রব্য ব্যবহার করা হয়েছে ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
ঘটনার জের ধরে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক তত্পরতা শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনার নেপথ্যের সন্ধানে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত দল পুরোদমে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিস্ফোরণ দ্রব্যের নানা আলামত তারা জব্দ করেছে। জানা যায়, তদনে্তর অংশ হিসেবে গত শুক্রবার পুরোদিন সিআইডি ক্রাইমসিন ইউনিটের তদন্তদলের প্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্ত বেৌদ্ধ মন্দির, বসত বাড়ি ঘুরে দেখেন। এর পর প্রতিনিধিদলের প্রধান সিআইডির এএসপি হ্লাচিংপ্রু জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ঘটনায় ব্যবহূত হাতবোমার খোসা, পাউডারের পোড়া আলামত, রাসায়নিক তরল পর্দাথসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করেছে। এসব আলামত সিআইডি' ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রামু উপজেলায় বেৌদ্ধমন্দির বসতঘরে আগুন, হামলা লুটপাটের ঘটনায় গান পাউডার, পেট্রোল ছাড়াও ব্যবহার করা ককটেলসহ বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য আলামত জব্দ করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল। তদন্ত দলের প্রধান চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, উত্তর মিঠাছড়ি বিমুক্তি বিদর্শন কেন্দ্রে পাওয়া কয়েকটি কেৌটা ( যেগুলো ককটেলের কেৌটা বলে ধারণা করা হচ্ছে) সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার পর ককটেল কিনা নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে সহিংসতায় ব্যবহূত  যেসব বিস্ফোরকের নাম শোনা যাচ্ছে এর কিছু কিছু আলামত সংগ্রহ করে ইতোমধ্যে পরীক্ষার জন্য এক্সপার্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার পর রিপোর্ট আসলে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আলামত সংগ্রহের পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজ, ছবি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। এর সূত্র ধরে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় আটকদের দেয়া তথ্য মতে ঘটনার পরিকল্পনাকারীদেরও শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
গোয়েন্দাদের তথ্য মতে, পবিত্র  কোরআন অবমাননাকর ছবিটি ২৭  সেপ্টেম্বর ইনসাল্ট আল্লাহ নামে ওই বিতর্কিত পেজ উত্তম বড়ুয়ার  ফেইসবুকে ট্যাগ করা হয়েছিল। আর ওই ছবিকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে  বেৌদ্ধ উপাসনালয়ে হামলার ঘটনায়  রোহিঙ্গা এবং মেৌলবাদী শক্তির ইন্ধন ছিল। এর জন্য স্থানীয় লোকজনকে আগে থেকে ম্যানেজ করে চক্রটি। ম্যানেজ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন  পেশাজীবী লোকজনকে দিয়ে মিছিল সংঘটিত করা হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুতে খণ্ড, খণ্ড মিছিল বের করার পর থেকে  জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকমোটরসাইকেল, মিনিবাসযোগে বহিরাগত লোকজন রামুতে গিয়ে  পেৌঁছে। আর ওই বহিরাগত  লোকজনের হাতে ছিল ওই সব বিস্ফোরণ দ্রব্য। গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, ইতোমধ্যে রামুতে বহিরাগত লোকজন বিভিন্ন পরিবহনযোগে রামুতে তাণ্ডব চালানোর জন্য সমাগমের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর ভিডিও ফুটেজ ছবি দেখে ব্যবহূত অনেক গাড়িও প্রশাসন আটক করতে সক্ষম হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, ৩০ সেপ্টেম্বর ভোরে রামুতে থেকে হামলা শেষে ফেরার সময় ৩২ জন হামলাকারীসহ একটি গাড়ি আটক করা হয় নাইক্ষ্যংছড়িতে। বিজিবি সদস্যরা গাড়িটি আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। শুক্রবার ( অক্টোবর) রাত পর্যন্ত আটক হয়েছে আরো ২টি ট্রাক। এর মধ্যে কুমিল্লা  থেকে একটি ট্রাক আটক করা হয়। অপর গাড়িটি আটক করা হয় চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানায়। সীতাকুন্ড থানায় আটক ট্রাকটির নম্বর হলো, চট্ট মেট্টো ১১-০২৭২। ওই সময় ট্রাকটির হেলপার রমজান আলীকেও আটক করা হয়েছে। 
গোয়েন্দা তথ্য মতে, রামুতে তাণ্ডব চালানো মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কক্সবাজার শহরে পৃথক বৈঠক করেছে  মেৌলবাদী সংগঠনের লোকজন। তার মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী শহরের  কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন লারপাড়া এলাকার জামায়াত নেতা মনিরের বাড়িতে বৈঠক করে একটি দল। একসময়ের শিবির ক্যাডার বাহাদুরসহ ওই বৈঠকে কক্সবাজার সরকারি কলেজের দায়িত্বশীল নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিল। এমন কি ওই বৈঠক জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেরও উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়েছে।  বৈঠকের সদ্ধিান্ত মতে, কক্সবাজার শহর  থেকে ১০টি ট্রাক ভাড়া করা হয়। আর ওই ট্রাকগুলো ভাড়া নেয়ার দায়িত্ব  দেয়া হয় লারপাড়া এলাকার মনিরকে। ওই সব ট্রাক ভাড়া করে সন্ধ্যার আগেই  পেৌঁছে দেয়া হয় খরুলিয়া, গর্জনিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি, ঈদগাঁও, ঈদগড়, কচ্ছপিয়া চকরিয়া এলাকায়। একটি ট্রাক রেখে  দেয়া হয় বাস টার্মিনাল এলাকা। আর ওই ট্রাকটি ছিল কক্সবাজার শহরের  বৈদ্যঘোনা এলাকায় বসবাসকারী জে  কে এন্টারপ্রাইজের জাকারিয়ার মালিকানাধীন।
 স্থানীয় লোকজনের দাবি, ওই জাকারিয়া মিয়ানমারের নাগরিক ছিল। গত ২০ বছর ধরে শহরে বসবাস করে আসছে।  গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, ওই রাতে বাস টার্মিনালে দঁাড়ানো ট্রাকযোগে রামু যান প্রায় ৭০ জন বিভিন্ন বয়সের লোক। ট্রাকের পর পরই শিবির ক্যাডার বাহাদুর  মোটরসাইকেলযোগে রামুতে যায় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জানা যায়, ২৯  সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড় থেকে শুরু করে লিংক  রোড পর্যন্ত এলাকায় জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মী তত্পর ছিল। তার মধ্যে ৪০/৫০ লোকসহ জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আবু হেনা  মোস্তফা কামাল, শিবিরের সাবেক  জেলা সভাপতি কামরুল হাসানকে  ভোলবাবুর পাম্প এলাকায়  দেখা  গেছে। একই সঙ্গে একদল শিবির কলেজ গেইট এলাকা ভোর রাত সাড়ে ৩টায় দেখতে পান এক জনপ্রতিনিধি। বিষয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করার পর এরা ওই স্থান ত্যাগ করে।গোয়েন্দাদের তথ্য মতে, শহরের তত্পর থাকা ওই সব ব্যক্তি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটানোর চষ্টোও চালিয়ে ছিল। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের কারণে তা সম্ভব হয়নি। সংশি্লষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২৯ সেপ্টেম্বর দিনে কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক  হোটেলে বৈঠক করে অপর একটি  মেৌলবাদী দলের নেতারা। গত জুন মাসে কক্সবাজারের হোটেল পালংকিতে  বৈঠককালে আটক জন এবং ওই  বৈঠক থেকে পালিয়ে যাওয়া লোকজন   বৈঠকে উপস্থিত ছিল। বৈঠক থেকে ফিরে রামুর আবদুল হক নামের এক  মেৌলভী রামুর ফকিরাবাজারে অবস্থান করে পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে  যোগাযোগ করে। জানা যায়, ২৯  সেপ্টেম্বর রামুর ফকিরাবাজারে অবস্থিত Èফারুক কম্পিউটার টেলিকম' নামের একটি দোকানে এসে মুক্তাদির নামের চট্টগ্রাম পলিটেকলিক্যাল কলেজের এক শিবির নেতা উত্তম কুমার বড়ুয়ার   ফেইসবুক পরিদর্শন করে বিতর্কিত সেই ছবিটি বের করে। এরপর পেজের ছবিটি শত শত কপি প্রিন্ট করে সরবরাহ করা শুরু করা হয়। কাজটি করে আবদুল হক, রোহিঙ্গা জঙ্গি হাফেজ আহমদ, শিবিরের সাবেক কর্মী খোরশেদ আলমসহ অনেকেই
ইতোমধ্যে ওই ফারুক কম্পিউটার  টেলিকম-এর মালিক ফারুককে আটক করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার  দোকানের কম্পিউটারসহ অন্যান্য মালামালও জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ওইসব তথ্য ফারুক স্বীকারও করেছে। নাইক্ষ্যংছড়িতে আটক ৩২ জনও পরিকল্পনাকারীদের নাম প্রকাশ করছে বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন নিশ্চিত করেছে। একই সঙ্গে ঘটনায় সংশি্লষ্ট রামু, উখিয়া টেকনাফে আটক ১৮৯ জনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত  রেখেছে। এরা প্রাথমিকভাবে ব্যাপক তথ্য প্রকাশও করছে বলে জানা গেছে। ঘটনার পর থেকে পরিকল্পনাকারীরা আত্মগোপনে রয়েছে।