Year-19 # Issue-30 # 9 September 2012

রাজনৈতিক পুনর্বাসন কেন্দ্র জোট-মহাজোট
নিজস্ব প্রতিবেদক
তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দেশের রাজনীতি নিয়নি্ত্রত হচ্ছে জোট আর মহাজোটের ব্যানারে এই জোট-মহাজোটে প্রধান দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ইসলামী, জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্যদলগুলোর জনপ্রিয়তা প্রায় শূন্যের কোঠায় অসি্তত্ব টিকিয়ে রাখতে নিজেরাই রয়েছে ঝুঁকির মুখে দলগুলো এখন বড় দলগুলোর প্লাটফর্মকে পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে দেশের রাজনীতিতে অবস্থানকারী কিছু কাগুজে দল বিশেষ বিশেষ সময়ে হঠাত্ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে বিশেষ করে যখন জাতীয় নির্বাচনের সময় হয় তখনই এই ছোট দলগুলো আবির্ভূত হয় এসব জোট ক্ষমতায় এলে এসব দলের প্রধান ব্যক্তিদের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উর্ধ্বতন পদে বসিয়ে পুনর্বাসন করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন জোট গুলোর শীর্ষ নেতারা ১৮দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় গণতানি্ত্রক পার্টি (জাগপা) এর সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, যেসব দলের নিবন্ধন নেই তারা কোন ভাবেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না এমনকি জোটের মূল দলের ব্যানারেও অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই এসব দল জোট-মহাজোটের অলংকারের মত জোট ক্ষমতায় এলে এসব দলের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজেদের পুনর্বাসন করতে পারবে এমন উদহারণ বর্তমান মহাজোট সরকারের মনি্ত্রসভা থেকে শুরু করে অনেক স্থানেই রয়েছে অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহজোট বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সিংহ ভাগ শরিক দলের নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই অধিকাংশ প্যাডসর্বস্ব রাজনৈতিক দল নিয়ে গড়ে উঠছে জোট-মহাজোট দুই জোটের বাইরে বাম মোর্চা এবং ইসলামী সমমনা ১২ দলের যে আলাদা জোট আছে, এদেরও অধিকাংশ দল প্যাডসর্বস্ব ইসির গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, কোন দল কোন আসনে শতাংশ ভোট পেলে বা দেশের অর্ধেক জেলায় এবং এক-তৃতীয়াংশ উপজেলায় অফিস কমিটি থাকলে নিবন্ধনের উপযুক্ত হবে নিবন্ধন সনদ লাভে দলগুলোর ১শ' উপজেলায় কমপক্ষে ২শ' করে সদস্য থাকাও বাধ্যতামূলক কিন্তু জোট বা মহাজোটভুক্ত দলগুলোর সিংহভাগের যোগ্যতা নেই হাতেগোনা ১০-১২টি দল ছাড়া কোন দলেরই সারাদেশে নূন্যতম সাংগঠনিক কাঠামো নেই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, দল বদল করে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নতুন দলে অন্তত তিন বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা লাগবে কিন্তু কিছু শর্ত মেনে নতুন দল গড়ে নির্বাচনে অংশ নিতে আইনে কোনো বাধা নেই সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) অনুচ্ছেদ ১২-এর () উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলে তিন বছরের সদস্যপদ না থাকলে একজন ব্যক্তি ওই দল থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না কারণে আবারও বহাল থাকছে কিংস পার্টি বিএনপি-আওয়ামী লীগের দ্বিদলীয় গণতনে্ত্রর মধ্যে যেকোনো এক দলের সঙ্গে জোট বঁেধে এরা নির্বাচনে প্রচার-প্রপাগান্ডার সুযোগ নিতে পারে আর কোনো কারণে যদি গণতন্ত্র ব্যাহত হয়, তখন এরাই আবার হয়ে উঠতে পারে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির মুখপাত্র নানা মেরুকরণে এসব দলের প্রায় সকলেই জোট মহাজোটর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে নিবন্ধনহীন দলের আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ারই সুযোগ নেই আইন অনুযায়ী এসব দল নিবন্ধিত দলের সঙ্গে জোট বাঁধারও কোন সুযোগ নেই মহাজোটে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ছাড়া বাকি দলগুলোর সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে এছাড়া অতিসম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চমক দিয়ে আত্মপ্রকাশ করলেও শুরুতেই শেষ হয়ে যায় এগুলো হলো, ২০০৭ সালে /১১ এর সময়ে বিএনপির সাবেক নেতা . ফেরদেৌস আহমেদ কোরাইশীর পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি), মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এই সময় বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোগুলোতে মেজর জেনারেল (অব.) ইব্রাহিমকে নিয়মিত উপস্থিত হতে দেখা যেত /১১-এর সমর্থনে জেনারেল ইব্রাহিম সময় লক্ষণীয়ভাবে সোচ্চার ছিলেন বিএনপি থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ নামের দল গড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি . বদরুদ্দোজা চেৌধুরী দল গঠনের পরপরই দলটি আলোচনায় চলে আসে শিল্পপতি সাবেক মন্ত্রী আবদুল মান্নান এই দলের মহাসচিব নির্বাচিত হন বিএনপির পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দলটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত হয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিকল্পধারা প্রার্থী দেয় নির্বাচনে জয় তো দূরের কথা, প্রায় সব নির্বাচনী এলাকায় দলটির প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয় কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমের নেতৃত্বে বিএনপির বেশ কয়েকজন এমপি, মন্ত্রী আর সাবেক স্পিকারকে সঙ্গে নিয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির আত্মপ্রকাশ ছিল গত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ের একটি বড় রাজনৈতিক চমক এর আগে কোনো ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বাইরে একসঙ্গে এতজন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচিত নেতা বেরিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক দল গড়ে তোলেননি ইসলামী সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে ১৯৫৭ সালের ২৭ জুলাই যাত্রা শুরু করেছিল মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) আলোচিত সংগ্রামমুখর দলটি আর্থিক সাংগঠনিক দুর্বলতা আর তারুণ্যদীপ্ত নেতৃত্বের অভাবে ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোলন সফল হলেও ইদানীং দলটির সাংগঠনিক অবস্থা খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয় বর্তমানে দলটিতে একমাত্র সক্রিয় কেন্দ্রীয় কমিটি ২০০৮ সালে নিবন্ধন নেওয়ার পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০টি আসনে এককভাবে অংশ নিলেও জয়ের মুখ দেখা তো দূরের কথা, জামানত ঘরে তুলতে পারেননি দলটির প্রার্থীরা সাংগঠনিক অবস্থা বলে বাস্তবে কিছু নেই ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনেছেন জিয়াউর রহমান এরপর এই ধারার রাজনীতিকে আবার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন সাবেক স্বৈরাচার এরশাদ এরশাদের আমলে গড়ে ওঠে জাকের পার্টি ১৯৮৭ সালে ফরিদপুরের আটরশির পীর জাকের পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন সময় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়, আটরশির পীর সাহেবের দুই কোটি মুরিদ এই পার্টির সদস্য ১৯৮৮ সালে এরশাদের ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনে প্রথম অংশ নেয় জাকের পার্টি আবার ১৯৯১ সালেও দলটি জাতীয় নির্বাচনে এককভাবে ৩০০ আসনে অংশগ্রহণ করে কিন্তু দুই কোটি মুরিদের কথা বললেও নির্বাচনে প্রায় সব আসনেই দুই হাজার করে ভোট পেতেও ব্যর্থ হন পার্টির প্রার্থীরা চট্টগ্রাম মাইজভান্ডার দরবার শরিফের ভক্ত-আশেকানদের নিয়ে গড়ে ওঠা দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, যদিও দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয় দেশের সব মাজারের অনুসারীদের নিয়েই তাদের এই দল দলটির চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর বিএনপিতে যোগ দিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বেশ পুরনো একটি রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এই দলটির প্রার্থী ছিল দেশে ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা চালু এবং ধর্মভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন দলের নীতিনির্ধারকরা কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে দলটির প্রভাব আছে ১৯৮১ সালে পীর হাফেজি হুজুরের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত হলেও দলটির সাংগঠনিক কাঠামো সুসংহত নয় মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন হয়নি ২০০৭ সালের শুরুতে ২২ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফতোয়া বিষয়ক পাঁচ দফা চুক্তি করে দেশের রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছিল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস দেশে আল্লাহর খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৯ সালে আত্মপ্রকাশ করে রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিশ বর্তমানে দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন মাওলানা মো. ইসাহাক আর মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১০টি আসনে প্রার্থী দেওয়া এই দলটির বিভাগীয় জেলা কমিটিগুলো ওয়ান-ইলেভেনের পর ক্রমেই নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে
অন্যদিকে ১৪টি দল মহাজোটের অংকে থাকলেও ভোটের অংকে এর অধিকাংশ দলের অবস্থা শূন্যের কোঠায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮দলীয় জোটে বিএনপি, জামায়াত, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ইসলামী ঐক্যজোট ছাড়া ১৮ দলীয় জোটের কোন দলের তেমন কোন সাংগঠনিক তত্পরতা নেই বর্তমানে মোর্চার দলসংখ্যা নেমে এসেছে ৭টিতে এগুলো হল বাসদ (খালেকুজ্জামান), গণসংহতি আন্দোলন, বিপবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতানি্ত্রক আন্দোলন (হামিদুল হক) ৭টি দলের মধ্যে ইসির নিবন্ধনপ্রাপ্ত একমাত্র দলটি হচ্ছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি বাকি দলগুলোর কর্মকাণ্ড দলীয় প্যাডের মধ্যে সীমাবদ্ধ ইসলামী সমমনা ১২ দলের কয়েকটি দল ১৮ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদকে অবলম্বন করে জোট গঠিত জোটের উলে্লখযোগ্য দলগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদ, আইয়াম্মা পরিষদ, এনডিপি, ইসলামিক পার্টি এবং ইসলামী ঐক্য আন্দোলন জোটের একমাত্র নিবন্ধিত দল হচ্ছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। জোটের সিংহভাগ দলই বহুধাবিভক্ত। একটি দল ভেঙে কয়েকটি দল হয়েছে। মহাজোটের অন্যতম শরীক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মলি্লক জানান, মহাজোটের সকল দলের সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী নয়। মহাজোট এখন শুধুমাত্র কাগজে-কলমে, এর কোন কার্যক্রম বর্তমানে নেই। সবাই শুধু নেত্রী বন্দনায় ব্যস্ত।

২০১৪ সালের মধ্যে দেশ নিরক্ষরমুক্ত হচ্ছে না
সিদ্দিকুর রহমান
সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২০১২ সালে স্কুলে যাওযার উপযোগী দেশের সকল শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। সম্ভব হয়নি সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করা। দেশে বর্তমানে প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার সরকারের দাবি অনুযায়ী ৯৯.৪৭ শতাংশ। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা শেষ হতেই না হতে শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। এখনো দেশের বহু প্রত্যন্ত এলাকায় কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। আবার যেসব এলাকায় বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে তার বেশিরভাগের অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা নেই। নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক। অনেক স্থানে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে নামে মাত্র। অবস্থার দ্রুত উন্নতি করা সম্ভব না হলে শতভাগ শিশুর শিক্ষালাভের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন সূত্রে তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০১১ সালে দেশের সকল শিশুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনার এবং ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু এখন কথা থেকে সরে এসেছে। এখন সরকার স্পষ্টভাবে বলছে, ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করার সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এর মূলে রয়েছে, দুর্বল পরিকল্পনা, অপর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, প্রকল্পভিত্তিক দুর্বল ব্যবস্থাপনা, বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারে অনিয়ম দুর্নীতি এবং সেইসাথে দুর্বল মনিটরিং। এসব কারণে সরকার ২০১৪ সাল নাগাদ নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পঁেৌছতে পারছে না। বর্তমানে দেশে নিরক্ষর মানুষের যে শতকরা হার বলা হচ্ছে তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়। প্রাথমিক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেন বলেন, È২০০৯ সালের জরিপ অনুযায়ী দেশে ১১ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নিরক্ষর জনগোষ্ঠী আছে প্রায় কোটি ৭৩ লাখ। ২০০৯ সালের শিক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে ৫৩ দশমিক শতাংশ লোক নিরক্ষর। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর ২০১০ সালের জরিপ অনুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার হচ্ছে ৫৯.৮২ শতাংশ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী, ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণের ঘোষণা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা একটি ট্রাকে পঁেৌছাতে চাই। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী শিশুদের ভর্তির হার ৯৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এদের মধ্যে ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকে। তবে মিড-ডে মিল চালু থাকা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার ৯৬ শতাংশ'উলে্লখ্য, গতবছর সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের প্রাক্কালে সরকারি সূত্রে বলা হয়েছিল, দেশে সাক্ষরতার হার প্রায় ৫৪ শতাংশ। তবে এখন প্রাথমিক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী দাবি করছেন, গত এক বছরের ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষকে সাক্ষরতার আওতায় আনা হয়েছে। শতাভাগ লোক সাক্ষরতার আওতায় না আসার পেছনে আর্থিক সমস্যার বিষয়টি জড়িত বলে প্রতিমন্ত্রী উলে্লখ করেন। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বু্যরোর মহাপরিচালক মো. আলমগীর বলেন, নিরক্ষরদের স্বাক্ষর করতে সরকারের দু'টি প্রকল্প চালু রয়েছে। প্রকল্পগুলো হলো পিএনসি- এবং হার্ড টু রিচ। দু'টি প্রকল্পের মাধ্যমে নিরক্ষর মানুষদের জীবনমুখি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পগুলো দেশের এনজিওদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বু্যরো এসব প্রকল্পের মনিটরিং করছে। তিনি আরো বলেন, অতীতে টোটাল লিটারেসি মুভমেন্ট (টিএলএম) প্রকল্প মাসের বেসিক এডুকেশন বা মেৌলিক শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় স্বাক্ষরতার হার প্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি পায়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টিএলএম প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার প্রকল্প বাতিল করে দেয়। বর্তমানে বিশ্বে সাক্ষরতার হার কতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংক্রান্ত কোনো পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই। সংক্রান্ত কোনো পরিসংখ্যান ইউনিসেফ বা ইউনেস্কোও দিতে পারছে না। প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১৯৭১ সালে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ১৬. শতাংশ। আর ৪১ বছর পর সাক্ষরতার হার এখনও ৬০ শতাংশ অতিক্রম করতে পারেনি। তবে আওয়ামী লীগ সরকার থেকে বলা হয়ে থাকে যে, ২০০০ সালে তাদের শাসনামলে দেশে সাক্ষরতার হার ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল।

অর্থমন্ত্রী নিজেই এখন ‘রাবিশ’: মির্জা ফখরুল 
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে ‘রাবিশ’ বললেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী মানুষকে ছোট করে মজা পান। এ জন্য তিনি কারণে-অকারণে সকলকে ‘রাবিশ’ বলেন। অথচ তিনি নিজেই জনগণের কাছে ‘রাবিশ’ ছাড়া আর কিছুই নন। তাকে এখন আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলার সময় এসেছে। ফখরুল বলেন, ৪ হাজার কোটি টাকা কোনো টাকা নয়, এ কথা বলেও আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন অর্থমন্ত্রী। নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে মহাজোট সরকার পালাবার পথ পাবে না বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সরকারের দলীয়করণ, সন্ত্রাস ও অব্যবস্থাপনার কারণে বুয়েটসহ গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অচলাবস্থা ও সুপরিকল্পিতভাবে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করার চক্রান্তের প্রতিবাদে ১৮ দলের উদ্যোগে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রীকে গাধার সঙ্গে তুলনা করে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মাসেতুর দুর্নীতি প্রকাশ করলো, তখন তিনি দুর্নীতির কথা স্বীকার করলেন না। তবে সরকার শেষ পর্যন্ত দুর্নীতির কথা স্বীকার করলো, আবুল হোসেনকে সরালো।
অর্থমন্ত্রী তখন বিশ্বব্যাংকের কাছে ক্ষমা চাইলেন। আবার তিনিই এখন ঋণ আনার জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে দূত পাঠাবেন। সরকার সবই করলো, কিন্তু গাধা যেভাবে ঘোলা করে পানি খায়, তারাও (সরকার) সেভাবে দুর্নীতির বিষয়টিকে ঘোলা করে তারপর স্বীকার করলো বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল। সমাবেশে ফখরুল সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “পরিস্কারভাবে বলছি, এখনও সময় আছে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিন। তা নাহলে জনগণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আপনাদের বাধ্য করবে।” তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি পথ ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু সরকার সংবিধান সংশোধনের নামে সে পথকে রুদ্ধ করে দিয়েছে।” মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘দুর্নীতির নর্দমায় সরকার নিমজ্জিত হয়ে গেছে। সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিন। নইলে জনগনের আন্দোলনে আপনারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। কোথাও পালাবার পথ পাবেন না।’’ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে বলছি, সৈয়দ আবুল হোসেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মশিউর রহমান, তৌফিক-ই- ইলাহী ও মোদাচ্ছির আলীরা আজ দুর্নীতির নর্দমার মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে গেছেন। আজ মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে, ‘সারা দেশে শোর হ্যায়, আওয়ামী লীগ চোর হ্যায়।’ তাই জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরাতে আপনার কোনো কৌশলই কাজে আসবে না।’’
জাতিকে মেধাশূন্য করতে সরকার বুয়েটসহ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, “তারা প্রথমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করতে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির, এরপর ছাত্রলীগ-ছাত্রদল এবং এখন ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগে মারামারি করছে। জাতিকে মেধাশূন্য করাই তাদের উদ্দেশ্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সমাবেশে বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তিনি যতোই ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করুন, প্রধানমন্ত্রীকে মনে রাখতে হবে জনগণ তার সঙ্গে আর নাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। মির্জা আব্বাস বলেন, শুধু শিক্ষাঙ্গণ নয়, মসজিদ-মাদ্রাসায়ও এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের বসানো হয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের রক্তদানের পর সরকারের বোধোদয় হয়েছে। বিএনপির কর্মীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে জেলে যেতে প্রস্তুত রয়েছেন। জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে অন্যায় আচারণ করা হচ্ছে- অভিযোগ তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, “এদেশে ন্যায় বিচার আর পাওয়া যাবে না। ন্যায় বিচারের চন্য আদালতের দিকে চেয়ে থাকলে চলবে না। আদালত চলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। নেতাদের মুক্ত করতে রাজপথে নামতে হবে।” গয়েশ্বর আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতিবাজ। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ছাত্রদল ও শিবিরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তোমাদের ঢুকতে না দেয়, তবে সেসব প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে দিতে হবে।”
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু ও আমান উল্লাহ আমান, জামায়াতের ঢাকা মহানগরের ভারপ্রাপ্ত আমির হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ গোলাম পরওয়ার, অধ্যাপক মজিবুর রহমান, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, ইসলামিক পার্টির সভাপতি আবদুল মবিন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মহাসচিব ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য দেন। গত মাসের শেষের দিকে ১৮ দলীয় জোট সারাদেশে গণসংযোগ- বিক্ষোভ সমাবেশসহ দেড়মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্য দিয়ে জোটের টানা কর্মসূচি শুরু হলো।
দুই বাংলার হাওয়ায় মৌসুমী
কামরুজ্জামান মিলু
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১। দিনটি আমাদের জন্য যতটা স্মৃতিময়, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ২০১০ সালের চ্যানেল আই লাক্সসুন্দরী প্রতিযোগিতার প্রথম রানার আপ বিজয়ী মৌসুমী হামিদের কাছে। বলছি ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ‘ডেসটিনি ত্রিদেশীয় বিগ শো’ অনুষ্ঠানের কথা। এখানে সেদিন অতিথি হয়ে এসেছিলেন বলিউড তারকা সালমান খান। এ অনুষ্ঠানে দর্শক সারি থেকে মৌসুমীকে উঠিয়ে নিয়ে নাচ করেছিলেন তিনি। সেদিন হয়ত সালমান নিজেই বুঝতে পেরেছিলেন একদিন আমাদের মিডিয়ায় আলো ছড়াবে এ লাক্সতারকা। সেদিনের সে ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৌসুমী বললেন, “সেদিন সত্যি আমি জানতাম না এমন কিছু হবে। আমি আমার বন্ধুদের সাথে শো দেখতে যাই। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেই সালমান খানকে অনেক পছন্দ করি। ছোটবেলা থেকে তার সিনেমা কোনটা মিস করি না। তবে সেদিন যখন তার সাথে মঞ্চে উঠলাম, আমি ভীষণ ভয় পেয়েছি। আর আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না যে আমি সালমান খানের সাথে একই মঞ্চে নাচ করছি।” লাক্সে রানার্স আপ হওয়ার পর থেকে মডেলিং- অভিনয় জগতে কাজ শুরু করেন মৌসুমী। এরইমধ্যে বেশ কিছু নাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন মৌসুমী। সম্প্রতি দেশের মিডিয়া ছাড়িয়ে দুই বাংলার ধারাবাহিকে কাজ করছেন তিনি। বর্তমানে চ্যানেল আই ও ভারতের ইটিভি বাংলার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত বিশেষ ধারাবাহিক নাটক ‘রোশনী’তে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। রূপক সাহার উপন্যাস থেকে ধারাবাহিকটি চিত্রনাট্য লিখেছেন অরুণ চৌধুরী ও সুদীপ পাল। হরনাথ চক্রবর্তীর পরিচালনায় বর্তমানে  এ নাটকটি চ্যানেল আই ও ইটিভি বাংলায় নিয়মিত প্রচার হচ্ছে। এ নাটক ছাড়াও বর্তমানে তার অভিনীত  চ্যানেল আইয়ে ‘নুরজাহান’, এনটিভিতে ‘অচেনা প্রতিবিম্ব’, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে ‘জলছবি’ এবং চ্যানেল নাইনে ‘ডেড এন্ড’ নাটকগুলো প্রচার হচ্ছে। এদিকে কলকাতামুখি হওয়ার পর সম্প্রতি সেখানে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে কাজের প্রস্তাবও পেয়েছেন তিনি। সেখানকার চলচ্চিত্রে নিজের অভিষেকের বিষয় নিয়ে মৌসুমী বাংলানিউজকে বলেন, “সত্যি বলতে রোশনী নাটকটি করতে গিয়ে আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। এ নাটকটি করতে গিয়ে কলকাতার অনেকের সাথে পরিচয় হয়েছে। আমি সেখানকার চলচ্চিত্রে প্রস্তাবও পেয়েছি। কিন্তু কোনকিছু চ‍ূড়ান্ত না করে আমি কাউকে কিছু বলতে চাই না। আমি অনেক ভালো কাজের মধ্য দিয়ে মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।”
গানের মধ্যেই আছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
লিয়াকত হোসেন খোকন
ইচ্ছা ছিল সাহিত্যিক হবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি চলে এলেন গানের জগতে। নাম তার ‘হেমন্ত মুখোপাধ্যায়’। স্বর্ণকণ্ঠ হেমন্তের বিশেষত্ব ছিল তার গায়নভঙ্গি। এই কালজয়ী শিল্পীর মৃত্যুদিন চলে গেল ৬ সেপ্টেম্বর।
আধুনিক, বাউল, কীর্তনাদ থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, অতুল প্রসাদ, রজনীকান্ত যখনই যা গেয়েছেন শ্রোতারা কখনও প্রশ্ন তোলেনি। বরং মুগ্ধ হয়ে তার গান শুনেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর এখনও শুনে যাচ্ছেন। হেমন্তের জন্ম ১৯২০ সালের ১৬ জুন বারানসীতে। তার পিতার নাম কালিদাস মুখোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম কিরনবালা দেবী। ১৯২৮ সালে আদিনিবাস দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহডু গ্রাম ছেড়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে চলে এলেন কলকাতার ভবানীপুরের রূপচাঁদ নন্দন লেনের বাড়িতে। বেতারে প্রথম গাওয়ার সুযোগ পান ১৯৩৫ সালে। বন্ধু কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাকে সঙ্গে করে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যান। রেডিওতে যে গানটি প্রথম গেয়েছিলেন তার কথা লিখে দিয়েছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। গানের কথা ছিল ‘আমার গানেতে এলে নবরূপে চিরন্তনী/বাণীময় নীলিমায় শুনি তব চরণধ্বনি।’ ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। কলেজে পড়াকালীন কলম্বিয়া রেকর্ডস কোম্পানি থেকে তার প্রথম গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। গান দুটি হলো  ‘জানিতে যদি গো’ এবং ‘বল গো মোরে’। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সিনেমায় প্রথম প্লেব্যাক করলেন ১৯৪০ সালে ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছবিতে।
নিমাইরূপী ছবি বিশ্বাসের মুখে কণ্ঠের সব গানই হেমন্ত   গেয়েছিলেন। তখনকার উঠতি তরুণদের ধর্মমূলক গানের প্রতি তেমন আকর্ষণ ছিল না।
তবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মাদকতাময় কণ্ঠস্বর সেই অসম্ভব কাজটিকে সম্ভব করে তুলেছিল। শুধু তো ধর্মমূলক গানেই নয়, প্রেমের গান, বিষাদের গান, প্রকৃতির গান, গণজাগরণের গান সর্বত্রই যখন হেমন্ত   মুখোপাধ্যায়কে রোমান্টিক আমেজ এনে দিয়েছিল। ১৯৪০ সালে অনাদি দস্তিদারের কাছে ট্রেনিং নিয়ে দুটি রবীন্দ ্রসঙ্গীতের রেকর্ড করেছিলেন। গান দুটি হলো ‘কেন ....এ চঞ্চলতা’ এবং ‘আমার আর হবে না দেরী’। ১৯৪৩ সালে রবীন্দ ্রসঙ্গীতে পংকজ কুমার মল্লিকের দোর্দন্ড আধিপত্যের যুগেও হেমন্ত আলাদা করে নিজেকে চিহ্নিত করেছিলেন দুর্গাদাস-চন্দ্রাবতী অভিনীত নিউ থিয়েটার্সের ‘প্রিয় বান্ধবী’ ছবিতে ‘কী আছে শেষে পথের শেষ কোথায় শেষ কোথায়’ গানখানি গেয়ে। ওই সময় থেকেই রবীন্দ্র সঙ্গীতের তরুণ অনুরাগীরা পংকজ আর হেমন্ত দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে গেছেন একথা অনেকেই বলতেন। হেমন্ত অবশ্য এ কথা স্বীকার করতেন না। দক্ষিণ কলকাতার একটা অনুষ্ঠানে পংকজ মল্লিক আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায় দু’জনেই উপস্থিত ছিলেন। সেখানে দর্শকরা হেমন্তকে ‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে’ গানটি গাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু হেমন্ত  দর্শকের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন ‘পংকজদার সামনে ওই গান গাইতে পারব না। আমাকে মাফ করুন।’
১৯৪৮ সালে ‘প্রিয়তমা’ ছবিতে হেমন্তের গাওয়া ‘স্মরণের এ বালুকাবেলায় চরণচিহ্ন আঁকি, তুমি চলে গেছো দূরে, বহু দূরে, শুধু পরিচয়টুকু রাখি।’ এই গানখানিতে বিষাদছোঁয়া প্রেমের কি অসাধারণ অভিব্যক্তিই না আঁকা হয়ে রইল। বিস্ফোরণ ঘটল ১৯৪৯ সাল নাগাদ। গ্রামোফোন রেকর্ডে সলিল চৌধুরীর লেখা ও সুরে তার গাওয়া ‘গায়ের বধূ’ বাংলা আধুনিক গানের প্রচলিত ধারা পথটিকে যেন বদলে দিল। শ্রোতারা তার কণ্ঠে কাব্যসঙ্গীতের নতুন আস্বাদ পেতে লাগলেন পরপর সুকান্তের ‘অবাক পৃথিবী’ আর ‘রানার’ -এর মধ্যে, সত্যেন দত্তের ‘পাল্কীর গান’-এর মধ্যে। ‘অঞ্জনগড়’ ছবিতে হেমন্তের গাওয়া রবীন্দ্র রসঙ্গীত ‘নাই নাই ভয়’ আর ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’ ছবিতে ‘অয়ি ভুবন মন মোহিনী’ গান দু‘খানি শুনতে শুনতে সেদিনের দর্শক-শ্রোতারা কম রোমাঞ্চিত হয়নি। হেমন্তের গাওয়া অসংখ্য উল্লেখযোগ্য গান এখনও ঘরে ঘরে বাজে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অসংখ্য হিন্দি গানও গেয়েছেন। ১৯৪৮ সালে ‘জমীন আসমান’ ছবিতে প্রথম হিন্দি গানে প্লে­-ব্যাক করেন। শচীন দেব বর্মণের সুরে ‘বহাল’ ছবিতে প্রথম হিন্দি হিট গান গেয়েছিলেন তিনি। গানটি হলো ‘ইয়ে রাত ইয়ে চাঁদ দিল কঁহা’। ১৯৫৫ সালে ‘নাগিন’ (হিন্দি ছবি) ছবির সুরকার হিসেবে তিনি উপমহাদেশে খ্যাতি পেয়েছিলেন। ১৯৪৫ সালে বেলা দেবীর সঙ্গে তিনি পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তার দুই সন্তান- এক ছেলে আর এক মেয়ে। ছেলের নাম জয়ন্ত আর মেয়ের নাম রানু। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ১৯৮৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এ ভূবন ছেড়ে যান।