Year-18 # Issue-34 # 9 Octobaer 2011

প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সঙ্গী করে বেঁচে আছে দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ
মিজান রহমান
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ প্রকৃতিক দুর্যোগকে সঙ্গী করে বেঁচে আছে। গত কয়েক বছরে আইলা, সিডো ও নানা ধরণের প্রকৃতিক দুর্যোগ তাদের নি:স্ব করে দিয়ে গেছে। এ দুর্যোগের হুমকির মুখে উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ আজ বসবাস করছে। এসব মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ অঞ্চলে দুর্যোগ মোকাবেলা করার মতো সরকারের উদাসীনতাই অনেকাংশে দায়ি বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আশ্রয় নেয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই, নেই খাবারসহ প্রাথমিক মোকাবেলার কোন উপকরণ। বিশেষ করে ভোলা, বরগুনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, খুলনা, বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলাগুলোতে সাইক্লোন শেল্টারের স্বল্পতার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে চরম বিপদের সময় তাদেরকে আল্লাহর ওপর ভরসা করেই বেঁচে থাকতে হয়।
সূত্র জানায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৪৭টি উপজেলার সাড়ে ১৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা উপকূলীয় হিসেবে চিহ্নিত। এখানে বসবাস করে প্রায় ২ কোটি মানুষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের গতিপ্রকৃতি অনুসারে উপকূলীয় এলাকাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে ‘হাই রিক্স সাইক্লোন এরিয়া’ বা এইচআরসিপি। মারাÍক ঝুঁকিপূর্ণ এ তালিকায় স্থান পেয়েছে ১৩ জেলার ৩১টি উপজেলা। বাকি ৬ জেলা তালিকাভুক্ত হয়েছে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়র এলাকা হিসেবে। উপকূলীয় এলাকায় সাড়ে ২২ হাজার সাইক্লোন শেল্টারের প্রয়োজন হলেও আছে মাত্র ২৭শ’র কিছু বেশি। এসব শেল্টারে প্রতিটিতে গড়ে ৮শ’ থেকে ১ হাজার নারী-পুরুষ আশ্রয় নিতে পারে। ফলে উপকূলীয় এলাকার প্রায় দেড় কোটি লোকই সাইক্লোন শেল্টারে স্থান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কাগজে-কলমে উপকূলীয় এলাকায় ২৭শ’ সাইক্লোন শেল্টার থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবে-এর মধে বিশাল শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। উপকূলীয় ১৩ জেলায় থাকা ১ হাজার ৮৪১টি সাইক্লোন শেল্টারের মধ্যে ২৫৬টি নির্মিত হয়েছে ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে। এর বেশিরভাগই এখন জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী। বিশেষ করে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, পটুয়াখালী ও ভোলার বহু সাইক্লোন শেল্টার আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাছাড়া ’৭৯ সালের পর ওসব এলাকায় যেসব সাইক্লোন শেল্টার নির্মিত হয়েছে সেগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। সরকারি বরাদ্দের অপ্রতুলতার কারণে কখনোই এসব সাইক্লোন শেল্টারের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। অবাক হলেও সত্য যে, উপকূলীয় এলাকার জনগণের জন্য প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি খাতে সরকারের বার্ষিক বরাদ্দ মাথাপিছু ২ টাকারও কম। আবার এর বেশিরভাগই খরচ হয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও ঘূর্ণিঝড়কালীন সময়ে ব্যবহƒত ভিএইচএফ ওয়ারলেস সেটগুলোর নিয়মিত পরিচর্যাতে। যদিও বর্তমান এ পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে।
সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে সুপার সাইক্লোন সিডরের পর সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৩শ’ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। তাছাড়া ২০০৫ সালে এইচআরসিপি চিহ্নিত ১৩ উপকূলীয় জেলায় ১ হাজার ৮৪১টি সাইক্লোন শেল্টার ছিল। এর মধ্যে কক্সবাজারে ৪০১টি, বরগুনায় ৪২, পটুয়াখালীতে ১৬১টি, বরিশালে ৬২টি, পিরোজপুরে ৩১টি, নোয়াখালীতে ১৯৮টি, ঝালকাঠিতে ২৬টি, ফেনীতে ১০৬টি, বাগেরহাটে ৭টি, সাতক্ষীরায় ২৮টি, ভোলায় ১৫২টি, চট্টগ্রামে ৪৯৭টি এবং খুলনায় ৩৪টি শেল্টার ছিল। তবে এসব সাইক্লোন শেল্টারে কখনোই দুর্যোগের সময় চাহিদা পূরণ হয়নি।
সূত্র আরো জানায়, মূলত বিগত সরকারগুলোর উদাসীনতার কারণেই প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। ১৯৮৬ সালে উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ২শ’ কোটি টাকার এ প্রকল্পের প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে অদৃশ্য কারণে থেমে যায়। পরবর্তীতে ’৯১-এর জলোচ্ছ্বাসে প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যুর পর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে বুয়েটের সাবেক ভিসি ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়। কমিটি দীর্ঘ ও ব্যাপক অনুসন্ধান শেষে দেশে আরো অন্তত সাড়ে ৩ হাজার সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সে প্রস্তাবও আলোর মুখ দেখেনি। এরপর ২০০৭ সালে সিডরের পর দেশী-বিদেশী উদ্যোগে প্রায় ৩শ’ নতুন সাইক্লোন শেল্টার নির্মিত হওয়া ছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জানমাল রক্ষায় আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারী মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি আগাগোড়াই অবহেলিত রয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বাংলাদেশ সময়কে জানান, অতিঝুঁকিপূর্ণ সাইক্লোন এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই। যা ছিল তার অনেকগুলোই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার বেশিরভাগ চরেই সাইক্লোন শেল্টার তো দূরের কথা, বেড়িবাঁধই নেই। দুর্গম এলাকা হওয়ায় ঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসের সময় এসব এলাকার মানুষ মূল ভূখণ্ডে এসেও আশ্রয় নিতে পারে না। ফলে এসব অঞ্চলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়।
নিয়ম-শৃঙ্খলার বালাই নেই
শিক্ষার বাজার দখল করে আছে কোচিং সেন্টার আর শিক্ষক নামধারী ব্যবাসায়ীরা
হাসান মাহমুদ রিপন
শিক্ষার বাজার আজ দখল করে আছে কোচিং সেন্টার আর শিক্ষক নামধারী ব্যবাসায়ীরা। যেখানে নিয়ম-শৃঙ্খলার বালাই নেই। তার খোঁজ নেয়ারও কেউ নেই। অনিয়ম আর নানামুখী দুর্ববলতার পরেও সরকারী কোন বিধানের ধার ধারেন না এসব স্কুল কর্তৃপক্ষ। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে গেলে শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের আজ নতুন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
রাজধানীর বনশ্রীর ব্লক সি’র তিন নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িতে আকর্ষণীয় সাইনবোর্ডে লেখা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নাম ‘নলেজ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।’ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হিসেবে এখানে অক্সফোর্ড কিংবা ক্যামব্রিজের শিক্ষাক্রম অনুসারে ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এমনটাই জানেন সকলে। কিন্তু উদ্বেগজনক হলেও সত্য, এটি কোন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নয়। ভাড়া করা কক্ষে নজরকাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সাইনবোর্ড থাকলেও এখানে রীতিমতো চলছে কোচিংয়ের আদলে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষা। তেজগাঁওয়ের বিজয় সরণির পাশে সেন্ট লরেন্স একাডেমীর সাইনবোর্ডে শিক্ষার এমন এক মাধ্যমের কথা বলে মানুষকে আকৃষ্ট করা হয়েছে যার অস্তিত্ব নেই দুনিয়াতেই। সাইনবোর্ডে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্পষ্ট করে লেখা হয়েছে ‘সেমি ইংলিশ! এর পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলোতেই ছাত্রীদের বেশী যৌন হয়রানীর শিকার হতে হয়।
ব্যানবেইসের প্রধান পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শামসুল আলম বললেন, এদের নিয়ে কাজ করা খুব কঠিন। কাজ করতে গিয়ে আমাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। ভেতরে কোচিং সেন্টার আর বাইরে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সাইনবোর্ডের প্রমাণ পেয়েছি আমরা। শিক্ষার এই লুকোচুরির কারণ হিসেবে আপনাদের কি মনে হয়? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে বললেন, বাংলার খবর নেই, কি হয়? কি পড়ানো হয়? পড়ালেখার খরচ কেমন? শিক্ষক কারা? তাদের বেতন কত? এসব জানতে চাওয়াই লুকোচুরির কারণ।
গ্রামের স্কুল গুলোর দিকে তাকান তা হলে দেখবেন গ্রামাঞ্চলে শিক্ষাথীদের জন্য যে বই বরাদ্দ দেয়া হয় তা তারা চোখেও দেখে না। কারণ নৈতিকতার মুর্ত প্রতীক শিক্ষক সহজেই এই অনৈতিক কাজ গুলো করছেন। আর গাইডবই কোম্পানির কাছ থেকে পার্সেন্টেজ খেয়ে ছাত্রদের জন্য প্রেসকাইব করছেন আজেবাজে প্রকাশনীর নিু মানের পাঠ্য পুস্তক। এইখানের দুলক্ষ টাকা খরচ করলেই একটা চাকুরি পাওয়া যায় বলে ধারনা করছে অনেকে। যার গোড়াতেই গলদ তার পরবর্তী কাজ আর কতটুকুই বা উন্নত মানের হবে তা সহজেই অনুমেয়। আর এই সব সাইনবোর্ড বিহীন টিউশনি গুলোকে ১০০% ট্যাক্সের আওতায় নিতে পারলে হয়তো এই শিক্ষকদের দৌরাত্ত কিছুটা কমতে পারে।
শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় কোচিং সেন্টারের বিষয় বলেন, কোচিং সেন্টারগুলোতে ছাত্রীদের বেশি হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হবে।
মোহাম্মদপুর ইকবাল রোডের ১২/১৫ নম্বর বাড়িতে ‘রেডল্যান্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’-এর নামে চলছে রীতিমতো কোচিংয়ের আদলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষা। বিষয়টি ধরা পড়েছে সরকারী তদন্তেও। বিষয়টি সম্পর্কে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দু‘দিন চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ভাই নিয়ম মেনে তো কেউই কাজ করে না। খালি এই প্রতিষ্ঠানকে দোষ দিলে হবে না।
সরকারের উচিৎ শিক্ষাক্ষেত্রে একটু নজর দেয়া আর আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য অনুসারে সকল ইনিস্টিটিউশনে ড্রেসকোড নির্ধারিত করে দেয়া। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে গেলে আমাদের আজ নতুন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে উন্নত শিক্ষা প্রদানের নামে অসংখ্য তথাকথিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার নামে চলা বহুমুখী প্রতারণার চিত্র। অনুসন্ধানে ভেতরে কোচিং সেন্টার আর বাইরে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সাইনবোর্ডেরও অসংখ্য প্রমাণ পেয়েছে সরকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। জানা গেছে, দেশে আসলে কতটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে তার সঠিক সংখ্যা নেই সরকার ও বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠানের কাছেই। তবে এগুলো এতই নিয়ন্ত্রণহীন যে দেশজুড়ে অন্তত ১৮ হাজার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অস্তিত্ব আছে বলে ধারণা করা হলেও সরকারের রেজিস্ট্রেশন আছে মাত্র ৯১টির। আর ব্যানবেইস বলছে, ইংলিশ মিডিয়ামের নামে যত হাজার প্রতিষ্ঠানই থাকুক না কেন ইংলিশ মিডিয়াম হিসেবে বিবেচনা করা যায় এমন প্রতিষ্ঠান হবে সর্বোচ্চ ২০০টি। বাকিরা ইংলিশের নামধারী ভূঁইফোড় কিন্ডারগার্টেন না হয় কোচিং সেন্টার। উন্নত শিক্ষার নামে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সেজে শিক্ষার নামে রীতিমতো প্রতারণা চলছে দেশজুড়ে। যেখানে নিয়ম-শৃঙ্খলার বালাই নেই। বাংলা ভাষা, বাঙালী সংস্কৃতি রীতিমতো নিষিদ্ধ। কি হয়? কি পড়ানো হয়? পড়ালেখার খরচ কেমন? তার খোঁজ নেয়ারও কেউ নেই। খোদ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই আক্ষেপ করে বলছেন, আসলে আল্লাহর নামে চলছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রেজিস্ট্রেশন অব প্রাইভেট স্কুলস অর্ডিন্যান্স-১৯৬২-এর অধীনে ২০০৭ সাল থেকে একটি নীতিমালায় বেসরকারী (ইংরেজী মাধ্যম) বিদ্যালয়ের সাময়িক নিবন্ধন প্রদান শুরু হয়। কিন্তু নিবন্ধনের জন্য শিক্ষা বোর্ডের দ্বারস্থ হন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। কর্মকান্ডে চরম অস্বচ্ছতা, অনিয়ম আর নানামুখী দুর্ববলতার পরেও সরকারী কোন বিধানের ধার ধারেন না এর কর্তৃপক্ষ। নীতিমালা অনুযায়ী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলকে প্রথমে সাময়িক অনুমোদন দেয়া হয় দু‘বছরের জন্য। এরপর প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও মান যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনানুসারে আরও দু‘বছর কিংবা পাঁচ বছরের জন্য সাময়িক অনুমোদন দেয়া হয়। স্থায়ীভাবে এসব প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেয়া হয় না। পাঁচ বছর পর পর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কার্যক্রমের ওপর তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়। নীতিমালায় ভাড়া বাড়িতে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্রতিষ্ঠার নিয়ম নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো ভাড়া বাড়িতেই চলছে এদের কার্যক্রম। বিধান মেনে নিজস্ব ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এমন ৫টি প্রতিষ্ঠানও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বর্তমানে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সাময়িক নিবন্ধনপ্রাপ্ত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে মাত্র ৭৯টি। এসব প্রতিষ্ঠান যথাযথ বিদেশী সিলেবাস অনুসরণ ‘ও’ (মাধ্যমিক) কিংবা ‘এ’ (উচ্চ মাধ্যমিক) লেভেলের পড়ালেখা চলছে বলে দাবি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের। নিবন্ধনহীন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের তালিকা শিক্ষা বোর্ডের কাছে নেই। দু-একটি ছাড়া সাময়িক নিবন্ধনপ্রাপ্ত কোন স্কুলই সাময়িক অনুমোদনের শর্তকে কেয়ার করে না। উন্নত শিক্ষা বিস্তারের নামে এসব প্রতিষ্ঠান কেবল শিক্ষা বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি সম্পর্কে কোন নীতিমালা না থাকায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো টিউশন ফি আদায় করছে। কর্তৃপক্ষের ইচ্ছামতো বেতন, ফি বাড়বে। অভিভাবকরা মানতে বাধ্য। অন্য প্রতিষ্ঠান হলে তাও শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা শিক্ষা বোর্ড, অধিদফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ নিয়ে যেতে পারেন, কিন্তু এখানে যেন অভিযোগ জানানোর জায়গাও নেই। শিক্ষার্থীদের কাছে ভাল মানের বলে চিহ্নিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ভর্তি ফি এখন এক লাখ টাকারও বেশি আছে। ৬০ হাজার টাকার নিচে সন্তানকে কোন ভাল মানের দাবিদার প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আশাও করতে পারছেন না অভিভাবকরা।
জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক শেখ একরামুল কবীরের কাছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কথা বলতেই হতাশার সুরে বললেন, নিয়ন্ত্রণহীন শিক্ষার অশুভ ফল আজকের এই চিত্র।
তেজগাঁওয়ের বিজয় সরণির পাশে সেন্ট লরেন্স একাডেমী শিক্ষার এমন এক মাধ্যমের কথা বলে মানুষকে আকৃষ্ট করা হয়েছে যার অস্তিত্ব নেই দুনিয়াতেই। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্পষ্ট করে লেখা হয়েছে ‘সেমি ইংলিশ’! অদ্ভুত এই ‘কলা’ লিখে সকলকে আকৃষ্ট করলেও এর মানে কি এই ব্যাখ্যায় যেতে রাজি হন এর মালিকপক্ষ। এ বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলতে রাজি নন। সন্তানকে নিয়ে স্কুলে এসেছেন এক মা সেলিনা আক্তার সোমা। নিজের পরিচয় দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সেমি ইংলিশ বলতে কর্তৃপক্ষ আপনাদের কি বুঝিয়েছে? তিনি স্পষ্টই বললেন, এত কিছু জানি না ভাই। তবে তাঁরা বলেন, এখানে সাধারণ বাংলা মাধ্যমের স্কুলের চেয়েও একটু বেশি ইংরেজীর চর্চা হয়, আবার ইংরেজী মাধ্যমের মতো সব ইংরেজী নয়। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কেবল এই একটিই নয়, কেবল মানুষকে আকৃষ্ট করতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রতি গড়ে উঠেছে অদ্ভুত এই মাধ্যমের স্কুল। মিরপুর, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, মহাখালী, শান্তিনগরসহ বেশকিছু এলাকায় কোনমতে কিন্ডারগার্টেন বা কোচিং সেন্টার নিয়ে ব্যাবসা চললেও আকর্ষণীয় সাইনবোর্ডে লিখে রাখা হয়েছে ‘সেমি ইংলিশ’। শিক্ষা নিয়ে এ ধরনের ব্যবসায় হতবাক শিক্ষাবিদরাও।
বেড়েছে পরিবহন ব্যয় ও পণ্য মূল্য: দুর্ভোগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের
নিজস্ব প্রতিবেদক
জ্বালানি তেল ও সিএনজি’র দাম বাড়ার কারণে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে সর্বক্ষেত্রে। এরই মধ্যে দেশব্যাপী পরিবহণ ভাড়া বেড়েছে। আর এর ফলে বেড়েছে পণ্য মূল্য। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের। জ্বালানি তেল ও সিএনজি’র দাম বাড়ার কারণে আন্তজেলার প্রতিটি ট্রাকে পণ্য পরিবহন ভাড়া ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বেড়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহনের জন্য আগে ট্রাক ভাড়া ছিল ১৭/১৮ হাজার টাকা। এখন সে ভাড়া বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা। দিনাজপুর থেকে ঢাকায় চাল-ডালসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনের জন্য আগে ট্রাক ভাড়া ছিল ১৬/১৭ হাজার টাকা। এখন সেই ট্রাক ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ থেকে ২০ হাজার টাকা। এমনিভাবে সব জেলা থেকে ট্রাকে ঢাকায় পণ্য আনা এবং ঢাকা থেকে পণ্য নেয়ার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে পরিবহন ভাড়া অনেক বেড়ে গেছে। পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় গত দু’সপ্তাহে দেশব্যাপী নিত্য প্রয়োজনীয়সহ সকল পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়ে গেছে। পণ্যমূল্য বাড়ার এ হার  অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকার কর্তৃক গত ১৮ সেপ্টেম্বর ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম প্রতি লিটারে ৫ টাকা বাড়ানো হয়। এর পরদিন বিইআরসি সিএনজি’র দাম ২০ শতাংশ বাড়ানোর আদেশ জারি করে। জ্বালানির দাম বাড়ার পর ১৯ সেপ্টেম্বর সরকার গণপরিবহনের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু গণপরিবহনের মালিকরা সরকার কর্তৃক পুনঃনির্ধারিত ভাড়ার হার মানছে না। তারা ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করে চলেছে।
বর্তমান সরকার কয়েক দফায় জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করেছে। চলতি বছরেই জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে দু’দফায়। এতে বাসসহ সকল ধরণের পরিবহন ভাড়াও বেড়েছে দু’দফায়। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং সেই সাথে পরিবহন ও যাতায়াত ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও দফায় দফায় বেড়ে চলছে। দেশে সুবিধাভোগী এক শ্রেণীর মানুষের আয় বাড়লেও সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি; বরং বেড়ে চলছে ব্যয়। এখন বাজারে দ্রব্যসামগ্রীর অগ্নিমূল্য। এতে সাধারণ মানুষ একদিকে হতাশ এবং অপরদিকে ক্ষুব্ধ।
গতকাল শুক্রবার খিলগাও, ফকিরেরপুল ও কাওরান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে কাঁচামাল থেকে শুরু করে কোন পণ্যেরই কোন ঘাটতি নেই। কিন্তু মূল্য খুবই চড়া। কওরান বাজারের কাঁচামালের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং সেইসাথে ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে শাক-সবজী-মাছসহ মফস্বল থেকে সরবরাহকৃত সব পণ্যের ওপর। জ্বালানির  মূল্য যদি আর এক দফা বাড়ানো না হতো এবং ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি যদি বন্ধ হতো তাহলে শাক-সবজি’র মূল্য এখনকার চেয়ে কেজি প্রতি কম করে হলেও ১০ থেকে ১৫ টাকা কম হতো। মাছের মূল্য কম হতো কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং চাল-ডাল-পেঁয়াজ-রসুনের মূল্য কম হতো কেজি প্রতি ৫/৬ টাকা। গতকাল ফকিরেরপুল বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ৪০ টাকা কেজি দরের করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। ২৫ টাকা কেজি দরের শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। ২৫ টাকা কেজি দরের বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এমনিভাবে ১৫ টাকা দরের পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। ২০ টাকা দরের কচুরলতি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। ২৩/২৪ টাকার ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। বাজারে আটার দামও বেড়ে গেছে। এখন  খোলাআটার কেজি ৩০ টাকা। বেড়ে গেছে চিনির দাম। গতকাল চিনি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৭ টাকা থেকে ৭০ টাকায়।
সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, দেশে খাদ্য দ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কোন ঘাটতি নেই। তারপরও কারণে অকারণে দাম বেড়ে চলেছে। একবার কোন পণ্যের দাম, পরিবহন ভাড়া বা সার্ভিস ফি বেড়ে গেলে তা আর কোনদিন কমে না। বাজারে পণ্যের যতই সরবরাহ থাক তারপরও পণ্য অযৌক্তিকভাবে বেশি দামে বিক্রি হতে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সাথে ঘন ঘন বৈঠকের সুফল পায়নি ক্রেতা। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
তেল-গ্যাস-জ্বালানি ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তেল-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ও বাজারে এর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে বলেন, ‘সরকার এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে হয় পাশ কাটিয়ে, নয়তো প্রভাবিত করে তেল-গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম উপর্যুপরি বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। বারবার দাম বৃদ্ধির ফলাফল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে সরাসরি আঘাত করার শামিল। দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্য পরিবহন ও জনপরিবহনে ব্যয় বেড়েছে। কৃষি ও শিল্পোৎপাদনে ব্যয় বেড়েছে, ব্যয় আরো বাড়তে যাচ্ছে। সব পণ্যের মূল্য উর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এসবের কারণে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠি খুবই লাভবান হয়েছে এবং হচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সব চাপ পড়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ওপর। লাখ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র সীমার নিচে পতিত হচ্ছেন। সীমিত ও নিু আয়ের মানুষের খাদ্য বাজেট কমাতে হচ্ছে, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে ব্যয় কাটছাট করতে হচ্ছে। নারী ও শিশুর চিকিৎসা আরো সংকুচিত হচ্ছে। ঋণ বাড়ছে । জীবন দুর্বিসহ হচ্ছে।
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এ প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংক। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সোমবার এ তথ্য জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার এ দুর্নীতি তদন্ত করবে। দেশের সর্ববৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতু তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ১২০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি হয় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। সংস্থাটির অভিযোগ, শুরুতেই এ প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে নদী শাসন, পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রাক যোগ্যতা যাচাই নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করেছে। তারা আপাতত অর্থায়ন স্থগিত করেছে।
তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে সরকার তদন্ত করবে। ইতোমধ্যে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) কাজ শুরু করেছ। পদ্মা সেতু প্রকল্প তদারকির জন্য প্রাক নির্বাচনী তালিকায় থাকা কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের দুর্নীতির তদন্তে বিশ্বব্যাংক কানাডা পুলিশকে অনুরোধ করলে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্য হয়। এ নিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দিকে অভিযোগের আঙুল থাকলেও ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন দুর্নীতির অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯০ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংক ছাড়া এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা এ সেতু নির্মাণের জন্য।
এর আগে গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা হয় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে শূন্য পরিমাণও দুর্নীতি হবে না। এ প্রকল্পে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হবে। সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলছে। মূল সেতু নির্মাণের কাজ অক্টোবরের মধ্যে শুরু হবে এবং বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যেই  এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নগোজি ওকোনজো তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অংশ নিতে পেরে বিশ্বব্যাংক খুবই খুশী। এ সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাংকের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প। এ কারণে বিশ্বব্যাংক এ সেতু নির্মাণে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করছে। এ সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্তির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিশ্বব্যাংকের জন্য একটি বৃহৎ প্রকল্প আর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প। 
এসময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, দরপত্র ও কারিগরি কাজ যাতে সঠিকভাবে হয় তার জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ৪০ বছরের। এখন বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক গোপন নয়, কোনো দলিলপত্র গোপন নয়। এখন সবকিছু প্রকাশ্য।  
যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেছিলেন, পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যেই শেষ করা হবে। এ নিয়ে কোনো সংশয়ের অবকাশ নেই। রেললাইনের ব্যবস্থাসহ সেতু নির্মিত হবে। জাজিরা থেকে টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ঢাকা থেকে সেতু পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে কিছু বিলম্ব হবে। এ সেতু চালুর পর ঢাকা থেকে সেতু পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হবে। তখন মংলা থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত রেল চলাচল করতে পারবে।
বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) পদ্মা সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়া পয়েন্টে পদ্মাসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রকল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদনের প্রেক্ষিতে নিয়োজিত ডিজাইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেতু ও নদীশাসনসহ প্রকল্পের ডিজাইন চূড়ান্ত করে। চূড়ান্ত ডিজাইন অনুযায়ী প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 
চলে গেলেন গজলশিল্পী জগজিৎ সিং
ডেস্ক রির্পোট
উপমহাদেশের জনপ্রিয় গজলশিল্পী জগজিৎ সিং আর নেই। গতকাল সোমবার সকালে জীবনাবসান হয় এই বিশ্ববিশ্র–ত সঙ্গীত   প্রতিভার। এর আগে তাকে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। তার মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা ছিল। হাসপাতালে ভর্তির পরই জরুরিভিত্তিতে তার একটি অস্ত্রোপচার করা হয়।
জগজিৎ সিং প্রায়ই হƒদরোগের চিকিৎসা নিতেন। ৭০ বছর বয়সী শিল্পীর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও ছিল।
কয়েক দিন আগে ভারতের মুম্বাইয়ে আরেক গজলশিল্পী গুলাম আলীর সঙ্গে জগজিৎ সিংয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
৭০ বছর বয়সী গজল সম্রাট দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ভারতের আরেক জনপ্রিয় গজলশিল্পী পঙ্কজ উদাস বলেন, জগজিৎ সিংয়ের মৃত্যু সঙ্গীত জগতের এক বিশাল ক্ষতি।
ভারত সরকারের পদ্মভূষণ খেতাব পাওয়া জগজিৎ সিং গত কয়েক দশক ধরে একাধারে হিন্দি, বাংলা, পাঞ্জাবি, উর্দু, গুজরাটিসহ নানা ভাষায় গান গেয়েছেন। তার স্ত্রী চিত্রা সিংও একজন বিখ্যাত শিল্পী।
বাংলাদেশে এসেও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন জগজিৎ সিং। বাংলা ভাষায় তার গাওয়া ‘বেদনা মধুর হয়ে যায়’, ‘বেশি কিছু আশা করা ভুল’,  ‘তোমার চুল বাঁধা দেখতে দেখতে’ গানগুলো শ্রোতাদের মনে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
১৯৪১ সালের ৮ ফেব্র–য়ারি রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগরে জš§গ্রহণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাধারণ শ্রোতা থেকে সমস্ত সঙ্গীত মহলে। পাঞ্জাবি, হিন্দি, উর্দু, বাংলা, গুজরাতি, সিন্ধি, নেপালি প্রভৃতি ভাষায় তিনি গান গেয়েছেন। ২০০৩ সালে পেয়েছেন পদ্মভূষণ। প্রেমগীত, অর্থ, সাথ সাথ, সরফারোশ প্রভৃতি চলচ্চিত্র সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর গানে। কাজ করেছেন মির্জা গালিবের মতো দূরদর্শন ধারাবাহিকেও।
‘হোসওয়ালো কো খবর ক্যায়া বেখুদি ক্যায়া চিজ হ্যায়...’ হিন্দি ফিল্মের এই সমস্ত ‘হিট’ গানও তাঁর গলায় পেয়েছে অসম্ভব জনপ্রিয়তা। বিখ্যাত গানগুলির মধ্যে রয়েছে আদমি আদমি কো, আপ কো দেখ কর, আয়ে হ্যায় সমঝানে লোগ, যব কভি তেরা নাম, ফির আজ মুঝে, ইউ জিন্দেগি কি রাহা, মেরে দিল মে তু হি তু হ্যায়, জখম যো আপকি ইনায়ত... ইত্যাদি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির কবিতায় সুর দিয়ে নিজেই গেয়েছন সেই গান। ‘নয়ি দিশা’ ও ‘সমবেদনা’ নামের সেই অ্যালবাম দু’টিও পেয়েছিল শ্রোতাদের ভালবাসা।
‘চিঠি না কোয়ি সন্দেশ, জানে উও কওন সা দেশ, যাহা তুম চলে গয়ে...’ তাঁর গাওয়া এই গানই এখন একমাত্র আশ্রয় শ্রোতাদের।
এডিস মশা নিধনে সরকারি উদ্যোগের অভাবে রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে
হাসান মাহমুদ রিপন
রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে চলছে। প্রতি বছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ থাকে। যথাযথ সরকারি উদ্যোগের অভাবে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর। এ কারণে নগরীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে এ রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত রাজধানীতে ৪০৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেলেও প্রকৃত সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ হাসপাতাল-ক্লিনিক ছাড়াও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ৯ বছরের সন্তান রাতুলের অসুস্থতা পরীক্ষা করাতে এসেছেন ডেমরার বাসিন্দা বেল্লাল হোসেন। পরীক্ষায় রাতুলের ডেঙ্গু জীবাণু ধরা পড়ে।
রাতুলের বাবা জানান, প্রথম দিকে মাথায় ব্যথা অনুভব করতো। স্বাভাবিক জ্বর মনে করে প্যারাসিটামল খাওয়ানো হয়। কিন্তু ২ দিন পার হলেও রাতুলের ব্যথা সারেনি। বরং শরীরের অন্যান্য স্থানে ব্যথা অনুভব করে সে। পরে হাসপাতালে পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু জীবাণু ধরা পড়ে। এ রকম প্রতিদিন সব বয়সের মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বিএসএমএমইউ-এর মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞ ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আমার চেম্বারে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ জন ডেঙ্গু রোগী আসছে। এরা নগরীর ধানমন্ডি, গ্রীন রোড, হাতিরপুল, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ ও সিদ্ধেশ্বরী এলাকার বাসিন্দা।
তিনি আরও বলেন, এ বছর হিমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের আক্রান্তদের নাক ও দাঁত দিয়ে এবং কাশির সঙ্গে রক্ত ক্ষরণ হয় এবং পিঠ, ঘাড়, মাথা ও চোখের পেছনে ব্যথা অনুভুত হয়। ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে জ্বর না কমলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে এবং চিকিৎকের নির্দেশ ছাড়া জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল বাদে কোন ওষুধ না খেতে পরামর্শ দেন তিনি।
এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, রোগিকে বেশি মাত্রায় পানি, বিশেষ করে শরবত খাওয়ানো যেতে পারে। দিনের বেলায় ঘুমানোর সময়ও মশারি ব্যবহার করা উচিত। বাসায় খোলা পাত্রে পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। এতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। বাসা সর্বত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের  মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ গাইড লাইনের অন্যতম প্রণেতা অধ্যাপক কাজী তরিকুল ইসলাম বলেন, গতবারের তুলনায় এবার ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি। তিনি আরও বলেন, এ বছর প্রাথমিক সংক্রমণের শিকার হওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। আক্রান্তরা সাধারণত শরীর, পিঠ, চোখ ও মাথা ব্যথা অনুভব করেন। কিন্তু এবার ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শরীরের চামড়ায় ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি (রক্তস্ফোত) দেখা যাচ্ছে। ৩ দিনের জ্বরেই রোগী অধিক মাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর রক্তস্ফোতে চুলকানি অনুভূত হওয়ার কথা বলছে রোগী, যা আগে ঘটেনি। তবে ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। ২০০৯ সালে সরকারিভাবে তৈরি ডেঙ্গু প্রতিরোধ গাইডলাইন অনুসরণ করার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জাতীয় গাইডলাইনের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে। গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০০০ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব তীব্র আকার ধারণ করে। ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশের ২৩ হাজার ৪২৬ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু ঘটেছে ২৩৩ জনের। ২০০৯ সালে সারাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৭শ’ ছাড়িয়ে যায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (এম এন্ড পিডিসি) এবং প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ডেঙ্গু) ডা. মো. আবদুর রশিদ মৃধা বলেন, প্রতিবছর এ সময় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে। তবে দেশে ডেঙ্গু  রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা দিতে পারলে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে না বলে তিনি জানান।
প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ  
 সেলিনা আইভী দোয়াত কলম  শামীম ওসমান দেয়াল ঘড়ি
তৈমূর আলম আনারস

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে  মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী দোয়াত কলম প্রতীক ও অপর মেয়র প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান দেয়াল ঘড়ি প্রতীক পেয়েছেন। বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার পেয়েছেন আনারস প্রতীক । তিন প্রার্থী আলাদা প্রতীক চাওয়ায় বিনা বাধায় তাদের প্রতীক বরাদ্দ দেয় নির্বাচন কমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ জিয়া হল মিলনায়তনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
অন্য তিন মেয়র প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আতিকুর রহমান নাননু মুন্সী, স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ মোহাম্মদ ও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম জীবন তিনজনই গরুর গাড়ি চাওয়ায় লটারির মাধ্যমে তাদের প্রতীক দেয়া হয়। লটারিতে আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সী পেয়েছেন গরুর গাড়ি প্রতীক, আতিকুল ইসলাম জীবন তালা ও শরীফ মোহাম্মদ পেয়েছেন হাঁস প্রতীক। স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ মোহাম্মদ ও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম জীবন তিনজনই গরুর গাড়ি চেয়েছিলেন। এ কারণে লটারির মাধ্যমে তাদের প্রতীক দেয়া হয়। তবে প্রতীক বরাদ্দকালে আলোচিত তিন প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ও বিএনপির তৈমূর আলম খন্দকার আসলেও শামীম ওসমান আসেননি। তার পক্ষে প্রতীক বরাদ্দ নেন শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন।
সকাল সাড়ে ৯টায় শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ জিয়া হল মিলনায়তনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রথমে শুরু হয় মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ।  মেয়র পদে ৬ প্রার্থী ও সাধারণ কাউন্সিলার পদে ২৩৮ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলার পদে ৫৬জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার সময়ে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান, সহকারি রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হবে। প্রথমে মেয়র, পরে নারী কাউন্সিলার ও সবশেষ কাউন্সিলারদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। আগামী ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে  দেশের সপ্তম নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ।
রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান জানান, মেয়র পদে ৬ প্রার্থী ও কাউন্সিলার প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামীকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় ইভিএম মেশিনে ভোট দান সম্পর্কে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ দেবেন এবং প্রার্থী ও  নাগরিকদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবেন। নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য হিসাব মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রার্থীদের হিসাব ১৪, ২২ ও ২৯ অক্টোবর জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে। এগুলো যাছাই বাছাই করবেন তারা। নির্বাচনী কেন্দ্রে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে ওই প্রার্থীর সমযোগ্যতা থাকতে হবে। প্রার্থীও সমর্থকদের নজরদারির জন্য ২৭টি ওয়ার্ডে ক্যামেরা থাকবে। প্রতীক বরাদ্দ  পেয়ে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আনারস হচ্ছে সাধারণ মানুষের প্রতীক। আমি আশাবাদী নারায়ণগঞ্জে আগামী ৩০ অক্টোবর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভাটাররা আনারস প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে জয়ী করবেন।  নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ প্রসঙ্গে তৈমুর বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ বিএনপি তথা চার দলীয় জোটের পক্ষে রায় দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। সুতরাং তাদের বঞ্চিত করা যাবে না। এজন্য আমি ইভিএম পদ্ধতিতে অংশ নিব। তবে ইভিএম পদ্ধতিতে ত্র“টি রয়েছে বলেও আবারো দাবি করেন তৈমুর। তিনি বলেন, এ মেশিনে কারচুপির বিষয়টি আমি প্রমাণ করবো।
দোয়াত কলম প্রতীক পেয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রত্যাশী মেয়র প্রার্থী ও সদ্য বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেছেন, দোয়াত কলম প্রতীক পেয়ে আমি খুশি। এটা শিক্ষার প্রতীক। নারায়ণগঞ্জবাসী আমার সঙ্গে আছেন। আমি গত তিন দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্বাচন করার জন্য দোয়া নিয়েছি। ইভিএম মেশিন ব্যবহারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,  নতুন হলেও ইভিএম  ব্যবহারে আমার আপত্তি নেই। কারণ আমাদেরকে প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আইভী নির্বাচনে ভোটের কারচুপির আশঙ্কা করে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সেনা মোতায়েন প্রয়োজন। কারণ অতীতে অনেক নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখলসহ অনেক ঘটনা ঘটেছে। তবে অপর হেভিওয়েট প্রার্থী শামীম ওসমান প্রতীক বরাদ্দের সময়ে স্বশরীরে উপস্থিত না হওয়ায় তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
প্রার্থীদের হলফনামায় দেয়া তথ্য প্রকাশ
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন গতকাল বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশে¬ষণ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। ভোটারদেরকে ক্ষমতায়িত করা, যাতে তারা জেনে শুনে বুঝে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। প্রার্থীর বিষয়ে সাধারণ ভোটারদের তথ্য দিয়ে সচেতন করতে সুজন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের হলফনামা থেকে ৭ টি বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন।
সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ তথ্য প্রকাশ করেন। এ সময় সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সারারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ও সুজনের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির আহ্বায়ক এডভোকেট আহসানুল করিম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
প্রার্থীর বিষয়ে সাধারণ ভোটারদের তথ্য দিয়ে সচেতন করতে সুজন প্রার্থীদের হলফনামায় দেয়া ৭টি বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন। এর মধ্যে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা / জীবিকা, অতীতে ও বর্তমানে ফৌজদারী মামলা আছে কিনা, প্রার্থী এবং প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদের বিবরণ, প্রার্থীর ঋণ সংক্রান্ত তথ্য, কর প্রদানের তথ্য আয় ব্যয়সহ অন্যান্য তথ্য তুলে ধরেন এবং প্রার্থীদের দেয়া তথ্যে সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন মেয়র প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১টি হত্যা মামলাসহ ৫টি মামলা ও অতীতে ৩টি হত্যা মামলাসহ ১২টি মামলা ছিল। অপর মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী’র বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। অপরদিকে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে ১টি হত্যা মামলাসহ ১১টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও ২৩৮ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। যার মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে। সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমানে ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
৬ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতায় তিন জন এসএসসি’র নিচে তিনজন স্নাতক ডিগ্রির অধিকারী। কাউন্সিলর পদে ২৭৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৮৯ জন প্রার্থী এসএসসি’র নিচে। ৩৪ জন প্রার্থী এসএসসি পাস, ২৩ জন এইচ এস সি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর যথক্রমে ২২ ও ৪ জন। সংরিক্ষত মহিলা কাউন্সিলরদের ৩৯ জন প্রার্থী এস এস সি’র নিচে। ৪জন প্রার্থী স্নাতক ও ২ জন স্নাতকোত্তর।
প্রতিদ্বন্দ্বী ৬ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে শামীম ওসমান, শারীফ মোহাম্মদ, ও আতিকুল ইসলাম জীবন পেশা হিসেবে ব্যবসা উল্লে¬খ করেছেন। ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী চিকিৎসা ও তৈমূর আলম খন্দকার আইন ব্যবসাকে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সী পেশার কথা উল্লেখ করেননি।
পেশাগত দিক থেকে তুলনামূলক বিচারে কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের ২১০ জনই ব্যবসায়ী। অর্থাৎ জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য নির্বাচনের ন্যায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের আধিক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে শামীম ওসমান, তৈমূর আলম খন্দকার, আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সী কোটিপতি। লাখপতি ২ জন একজন সম্পদের মূল্য উল্লে¬খ করেনি। সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকেই সম্পদের মূল্য উল্লেখ করেননি। তবে ২৪৩ প্রার্থীর সম্পদ ৫ লাখ টাকার নিচে। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫২ জনই ৫ লাখ টাকার নিচে।
দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে হিলারী ক্লিনটন
মানবতাবিরোধী অপরাধের স্বচ্ছ বিচার সারাবিশ্বের জন্যে একটি মডেল হবে
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে এনা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্্েরর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন বলেছেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত হলে তা হবে সারাবিশ্বের জন্যে একটি মডেল। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার সঙ্গে বিচার হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্যে ইতোমধ্যেই আমরা দু’দফা লোক পাঠিয়েছি ঢাকায়। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
১২ অক্টোবর বুধবার স্থানীয় সময় অপরাহ্ন ৩টা থেকে প্রায় আধ ঘণ্টা স্থায়ী এ বৈঠক শেষে দীপু মনি বলেছেন, অত্যন্ত হƒদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং দ্বি-পাক্ষিক অনেক বিষয়ে কথা হয়েছে। বাংলাদেশের সার্বিক কল্যাণে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় পাশে থাকবে বলেও হিলারী তাকে জানিয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গে হিলারী তার পুরনো উদ্বেগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আশা পোষণ করেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে গ্রামীণের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। দীপু মনি বলেন, সামনের বছর হিলারী ক্লিনটন বাংলাদেশ সফর করবেন। প্রেসিডেন্ট ওবামাকেও ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। হিলারীর সফরের পরই হয়তো হোয়াইট হাউজ ওবামার সফরের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে।
হিলারীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের। রাষ্ট্রদূত কাদের বলেন, দু’পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকটি ছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে পরিপূর্ণ। বৈঠক শেষে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফিং রুমে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় পতাকা দু’পাশে রেখে হিলারী ক্লিনটন এবং ডা. দীপু মনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। সে সময় হিলারী ক্লিনটন বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান বহুমুখী কার্যক্রমের আলোকে সুশীল সমাজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ওয়াশিংটনে এসেছেন, আমি তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। হিলারী বলেন, ঐ অঞ্চলের শান্তি, উন্নয়নে বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আমরা নিবিড় সম্পর্ক রেখে কাজ করতে চাই। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশের কার্যক্রমকে আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি। সন্ত্রাস নির্মূলে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সহায়তার প্রশংসা আমরা সব সময় করে আসছি এবং আমাদের দুটি দেশের জন্যে এ ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বপর্ণ। হিলারী উল্লেখ করেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই। তবে অনেক সময় কিছু সমস্যা দেখা দেয় যার ফলে অবাধ বাণিজ্যের বিষয়টি বাধাপ্রাপ্ত হয়। একে অতিক্রম করতে হবে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে, তাহলেই এ অঞ্চলের মানুষ এগিয়ে চলার পথ খুঁজে পাবে।
হিলারী উল্লে¬খ করেন, এটি আমরা সকলেই জানি যে, সরকারের একার পক্ষে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হয় না, সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হয়, একযোগে কাজ করতে হয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান রাখতে চাই যে, মিডিয়াগুলোকে মুক্ত স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এনজিওগুলোকেও বাংলাদেশের সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে অবাধে কাজের সুযোগ দিতে হবে। হিলারী আরো বলেন, অবশ্যই আমরা সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশে আমাদের উদ্বেগের কথা জানাতে চাই এবং আশা করতে চাই যে, সারাবিশ্বে সুপরিচিত, বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানের জন্যে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক তার কার্যক্রম যথাযথভাবে অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে। হিলারী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আরো ফলপ্রসূ একটি বৈঠকের অপেক্ষায় রইলাম।
 বিটিআরসি-গ্রামীণফোন মুখোমুখি
নিজস্ব প্রতিবেদক
আর্থিক লেনদেনে অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এবং শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি মোবইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। আলোচনায় বসার শর্ত হিসেবে পাওনা চেয়ে বিটিআরসির পাঠানো চিঠি প্রত্যাহারের শর্ত দিয়েছে গ্রামীণফোন। আর বিটিআরসি বলেছে, এখন তারা আইনি পথে এগোবে। গতকাল সোমবার এ নিয়ে গ্রামীণফোন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের আলোচনার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। এ জন্য গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছে বিটিআরসি।
জানা যায়, একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে গত ৩ অক্টোবর বিটিআরসি ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা পাওনা চেয়ে গ্রামীণফোনকে চিঠি দেয়। এরপর গ্রামীণফোন ওই নিরীক্ষার ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন তোলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি গতকাল সোমবার এক বৈঠকের আয়োজন করে। গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টরে জনসনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল গতকাল দুপুরে বিটিআরসিতে যায়। বিটিআরসি থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আলোচনায় বসার আগে বিটিআরসির চিঠি (পাওনা চেয়ে) স্থগিত রাখার কথা বলে এসেছি। অন্যদিকে বিটিআরসির চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ বলেন, তারা আলোচনা এড়িয়ে গেছে। এখন আমরা আলোচনা করে কী আইনি পদক্ষেপ নেয়া যায়, তা-ই দেখবো।
প্রসঙ্গত নিরীক্ষা প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বিটিআরসি বলছে, ২০১১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত গ্রামীণফোন ৩৮ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা আয় করেছে। এ হিসাবে এর ২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা বিটিআরসির পাওয়ার কথা। তবে প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। সুদসহ আরো পাওনা রয়েছে ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানোর পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণফোন দাবি করে, যে নিরীক্ষার ভিত্তিতে গ্রামীণফোনকে সরকার ৩ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলেছে তা ‘ভুল ধারণার ভিত্তিতে’ করা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের নিরীক্ষা হয়নি বলেও দাবি করা হয়। এরপর ৫ অক্টোবর নিরীক্ষার বিষয়ে আলোচনা করতে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষকে দেখা করতে বলে বিটিআরসি। নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে গ্রামীণফোনের আপত্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও নিয়ে আসতে বলা হয়। কিন্তু গতকাল কোন সুরাহা ছাড়াই বৈঠকটি শেষ হয় বলে জান গেছে।

রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশংকা
শিল্পোদ্যোক্তারা বিদেশমুখী পাচার হচ্ছে বিপুল অর্থ
নিজস্ব প্রতিবেদক
তত্ত্বাবধায়ক বা কেয়ারটেকার সরকার ইস্যুতে জাতীয় রাজনীতিতে গভীর আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। দলীয় সরকারের অধীনেই আ’লীগ আগামী সংসদ নির্বাচনে অনড়। আর এর সম্পুর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে বিরোধীদল বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এ ইস্যুতে ইতোমধ্যে রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করছে তারা। ফলে আগামী নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জাতীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে পরস্পর বিরোধী কর্মসূচি। তবে এই ঝড় শুধু রাজনৈতিক ময়দানেই সীমাবদ্ধ নেই। এর ঝাপটা লেগেছে দেশের অর্থনীতিতেও। ওয়ান ইলেভেনের তিক্ত অভিজ্ঞতা দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এখনও ভোলেনি। সে ক্ষত না শুকাতেই আবারও রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখে বাংলাদেশ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিল্পোদ্যোক্তারা এবার আগে-ভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ।
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের একটি সূত্রে জানা গেছে, ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কোনভাবেই আস্থায় নিতে পারছেন না দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। তাদের আশঙ্কা, দেশে আবারও ওয়ান ইলেভেনের মতো কোন সরকারের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে। আর ঐ অবস্থায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা। উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ইতোমধ্যেই বিদেশমুখী হয়েছেন। কেউ কেউ পাড়ি জমিয়েছেন আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া এবং চীনে। কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০টি কোম্পানি ইতোমধ্যে বহির্বিশ্বে অফিস খুলেছে। বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের প্রস্তুতিও রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর। তবে বিদেশে বিনিয়োগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের এই সুযোগে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হওয়ারও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ ইতোমধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রকাশ্য সমাবেশেই তিনি কেয়ারটেকার সরকারের তীব্র সমালোচনাও করছেন। বলেছেন, যারা ৩ মাসের জন্য ক্ষমতায় এসে দু’বছর দেশের শাসনভার নিয়ন্ত্রণ করে তাদের হাতে ক্ষমতা অর্পণের আগে অবশ্যই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মতামত নিতে হবে। তিনি দাবি করেন, ট্যাক্স এবং ভ্যাট প্রদান করে দেশের উন্নয়নে দেশের ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। কিন্তু সেই ব্যবসায়ীদের যখন বিনাবিচারে জেলে পোড়া হয়, মারপিট এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়, ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করা হয়, তখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আশা করা যায় না। জানা গেছে, আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েই ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। জানা গেছে, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহাবুদ্দিন ইতোমধ্যেই কানাডায় বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছেন। অনেকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এব্যাপারে এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বাংলাদেশ সময়’কে বলেন, রাজনৈতিক আস্থার সঙ্কট দূর না হওয়ায় উদ্যোক্তারা বিদেশমুখী হচ্ছেন। অনেকেই বিদেশে অফিস নিয়েছেন। এছাড়া দেশের বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংকটের উন্নতি না হওয়ায় অনেকে বিদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন,  নতুন কর্মসংস্থান এবং উন্নয়নের জন্য অবশ্যই বিনিয়োগে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া সবচেয়ে জরুরি। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব জনতা ব্যাংকের পরিচালক মো. নজিবর রহমান বলেন, উদ্যোক্তারা যদি বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ নেয় তবে দেশের অর্থনীতিতে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। বর্তমান ব্যাংকে নগদ টাকার যে সঙ্কট চলছে তার মধ্যে এটিও একটি কারণ। তিনি বলেন, বিদেশে বিনিয়োগের নামে ইতোমধ্যেই দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এটা কোনভাবেই দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হতে পারে না। 
সূত্র জানায়, গ্যাস-বিদ্যুতের অপ্রতুলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংক সুদের উচ্চ হার, চাঁদাবাজি এবং শ্রমিক অসন্তোষের মুখে স্থানীয় বিনিয়োগ নিবন্ধনও আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। শুধু রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে গত অর্থবছরের তুলনায় বিনিয়োগ কমেছে ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। এছাড়া রসায়ন, প্রকৌশল এবং কৃষিভিত্তিক খাতেও অগ্রগতি নেই। দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ আকর্ষণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান  বলেন, এজন্য দেশের অবকাঠামো খাতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু গ্যাস-বিদ্যুতের উন্নয়ন করলেই বিনিয়োগ বাড়বে না, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বজায় রাখতে হবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে সরকার এবং বিরোধী দলের ঐকমত্য এক্ষত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনিয়োগের উপর ভর করেই দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যায়। কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা এবং দারিদ্র্যবিমোচনে অবশ্যই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট, বিশ্ব অর্থমন্দা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দাতা সংস্থাগুলোও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। আইএমএফ এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগের উপদেষ্টা মাসাতো মিয়াজাকি সম্প্রতি বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে যাওয়ার আশঙ্কা করে বলেছেন, বিশ্ব অর্থমন্দার কারণে এবার বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ১ শতাংশ কমতে পারে। প্রবৃদ্ধি কমার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থমন্দার কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ শিল্প খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য পণ্যের আমদানি কমেছে, কমেছে রফতানি আয়। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহও কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে জনশক্তি রফতানি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতি বিরুপ পরিস্থিতিতে পড়তে পারে। যা কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলেও মনে করেন তারা।
নাসিক নির্বাচন
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। গড়ে প্রায় প্রতি ৮০ জন ভোটারের বিপরীতে এক জন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকছে। নির্বাচনের আগে পরে মিলে মোট পাঁচ দিন তারা দায়িত্ব পালন করবেন।  গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে  বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ৩০ অক্টোবর ভোটগ্রহণের আগে দুই দিন এবং ভোটগ্রহণের পরে দুই দিনসহ মোট পাঁচ দিন আইন-শৃঙ্খলা বহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে। বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) নিজস্ব সমস্যা থাকায় এ নির্বাচনে তাদেরকে মোতায়েন করা হচ্ছে না। তবে বিজিবির পরিবর্তে অতিরিক্তি ৬শ’ র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হবে।
তিনি বলেন, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও কোস্ট গার্ড মিলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত চার হাজার সদস্য মোতায়েন করা হবে। এসব অতিরিক্ত ফোর্স নির্বাচনের আগে পরে মিলে মোট পাঁচ দিন দায়িত্ব পালন করবে। নিয়মিত এক হাজার ফোর্স ছাড়াও ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৯ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষক দল মোতায়েন থাকছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য ৯ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসারের পরিবর্তে প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে মোট ২৭ জন সহকারী রিটার্নি অফিসার নিয়োজিত থাকছে। নির্বাচন মনিটরিং করার জন্য ২৭টি ওয়ার্ডে নতুন করে ২৭টি ভিডিও ক্যামেরা দেয়া হচ্ছে। কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রমাণসহ কমিশনে তাৎক্ষণিক রিপোর্ট করবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নারায়ণগঞ্জে সেনা মোতায়েন করা হবে কি না- জানতে চাওয়া হলে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এতো কিছুর পরেও যদি সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন পড়ে তাহলে আমরা বিষয়টি দেখব। কমিশনের সব ধরনের অপশন খোলা আছে।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার সভাপতিত্বে আইন-শৃঙ্খলা সভায় ইসি সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক, এনসিসি রিটার্নিং কর্মকর্তা বিশ্বাস লুৎফুর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ব্যাটালিয়ন, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
যেসব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোট ৯টি ওয়ার্ডে ৫৮টি কেন্দ্রের ৪৫০টি  ভোট কক্ষে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে যে ৯টি ওয়ার্ডে তা হলো- ৭, ৮, ৯, ১৬, ১৭, ১৮, ২২, ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড।
নাসিম ওসমানকে আবার সতর্ক করল ইসি
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য এ কে এম নাসিম ওসমানকে আবারো সতর্ক করলো নির্বাচন কমিশন।  বিকেলে রিটার্নিং কর্মকর্তা বিশ্বাস লুৎফর রহমান অচরণবিধি ভঙ্গের কারণে নাসিম ওসমানকে সতর্ক করে চিঠি পাঠায়।
এ বিষয়ে নির্বাচন সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সংসদ সদস্য হয়ে ভাইয়ের এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিশ্র“তি দেয়ায় মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাসিমকে এর আগেও সতর্ক করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বারের মতো এবার সতর্ক করা হচ্ছে। এরপর অচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই, দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আমাদের কাজে বিড়ম্বনা সৃষ্টি করবেন না। কমিশনকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে সহযোগিতা করবেন।
ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রতি কেন্দ্রে ২৪ জন সদস্য
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ২৪ জন করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান।
তিনি বলেন, কেন্দ্রে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও সার্বক্ষণিক টহল দেবে র‌্যাব, কোস্টগার্ডসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স।
বহিরাগতদের অবস্থান নিষিদ্ধ
ভোটের দুই দিন আগে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো বহিরাগত ( বাসিন্দা বা ভোটার নন) অবস্থান করতে পারবে না। নির্বাচনের দিন প্রভাবশালীরা ভোটে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য  বৈঠকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনী এলাকায় দাগী অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে লাইসেন্সধারীরাও যাতে অস্ত্রসহ চলাচল না করে সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা  দেয়া হবে। উল্লেখ্য, নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটির মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩ হাজার ৭০৬ জন।

শীর্ষে জ্বালানী ও  বিদ্যু খাত এক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত 
প্রতিষ্ঠানের  লোকসান ৭ হাজার কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারী হিসেব অনুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছরে সবগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সংশোধিত গড় লোকসান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। এটা এক দশকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লোকসান। গত দশ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সব থেকে বেশি লোকসান দিয়েছিল বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে। সে বছর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট লোকসান হয়েছিল ৯ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। লোকসান কমানোর জন্য সাম্প্রতিক সময়ে সরকারকে বেপরোয়া ভাবে জ্বালানী তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়াতে হয়েছে। বিদ্যুতের দামও সহসাই বাড়ানো হবে এমনটাই বলা হচ্ছে।
সরকারী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক লোকসান দীর্ঘ দিন জাতীয় অর্থনীতির জন্য বড় মাথাব্যাথার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতো। নব্বই দশকের শুরু থেকে দাতাদের চাপে নানা ধরণের সংস্কারমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। এক সময় বিশ্বব্যাংক বলেছিল, সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এক বছরের লোকসান দিয়ে প্রতি বছর একটি করে যমুনা সেতু নির্মাণ করা যায়। পরবর্তী সময়ে বিরাষ্ট্রীয়করণ প্রক্রিয়ায় অনেক অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। অনেকগুলোকে বন্ধ করে দেয়া সহ নানা ধরণের পদক্ষেপ নিয়ে এগুলোর লোকসান ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে সর্বনিম্ন ৪৬২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। পরবর্তি বছরগুলোতে তা আবার ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। গত বছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান লাভ করলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের বড় লোকসানের কারনে গড় লোকসান ৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
২০০৭- ০৮ অর্থবছরে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সাথে বিশ্ব জুড়ে জ্বালানী তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৩০ ডলার থেকে বেড়ে এক লাফে ১৪০ ডলার অতিক্রম করেছিল। সে সময় শুধুমাত্র বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর লোকসানই ছিল সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাবার পর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশীয় বাজারে জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়ে এই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করেছিল ।
বিগত ২০১০-১১ অর্থ বছরে জ্বালানী তেলের দাম খুব একটা বাড়েনি। কিন্তু এর বিপরীতে সরকার দেশীয় বাজারে জ্বালানী তেলের দাম বর্তমান ২০১১-১২ অর্থবছরের শুরুতেই দুই দফা বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু লোকসান কমেনি। অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেলের সংশোধিত হিসেব অনুযায়ী ২০১০-১১ অর্থবছরে শুধু মাত্র বিপিসির লোকসানের পরিমান বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। বিপিসির এই লোকসানও গত এক দশকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে শুধুমাত্র ২০০৭-০৮ অর্থবছরে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছিল। আর অন্য বছরগুলোতে লোকসান ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। দেশে বর্তমান সময়ে বেসরকারি খাতে বেশ কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছে। ফলে বিদ্যুৎ খাতে লোকসান আরো বাড়বে। ২০১১ এর সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত সাতটি খাতে মোট লোকসান হয়েছে ৬ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। এই খাতগুলো হচ্ছে শিল্প, ইউটিলিটি, পরিবহন, যোগাযোগ, বাণিজ্যি, কৃষি ও মৎস্য, নির্মাণ এবং সার্ভিসেস।
শিল্প: গত ২০১০-১১ অর্থবছরে শিল্পখাতের মোট ৬টি সংস্থার মধ্যে চারটিই বড় আকারের লোকসান দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিটিএমসির লোকসান ২২ কোটি ৯৪ লাখ, বিএসএফআইসি ১৯৮ কোটি, বিজেএমসি ১৬ কোটি ৯২ লাখ এবং বিসিআইসির ৩৭৮ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। লাভ করতে পেরেছে মাত্র দুইটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান  দুটি হচ্ছে বিএসইসি ৪৪ কোটি ৮৬ লাখ এবং বিএফআইডিসি ৪১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, সবগুলো লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের পরিমান বাড়লেও, কমছে লাভজনকগুলোর ।
সেবাখাত: এই খাতের মোট ৬টি সংস্থার মধ্যে ৫টিই মুনাফা করেছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) লোকসান দিয়েছে। এই লোকসান সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪৭১৬ কোটি টাকা। অপরদিকে বিওজিএমসির মুনাফা ২০২৪ কোটি টাকা, ডেসার মুনাফা ৯ কোটি ৪৫ লাখ, চট্টগ্রাম ওয়াসার মুনাফা করেছে ৯ কোটি ১২৩ লাখ ও ঢাকা ওয়াসা ১০৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
পরিবহন ও যোগাযোগ: সরকার নিয়ন্ত্রিত পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের মোট ১১টি সংস্থার মধ্যে ৩টি মাত্র লোকসান দিয়েছে। মুনাফা করেছে ৮টি সংস্থা। লোকসানি ৩টি সংস্থা হচ্ছে বিআরটিসি। এর লোকসান ৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এমপিএর লোকসান ২০ কোটি ১০ লাখ, এমডিব্লিউএমবির লোকসান ২ কোটি এবং বিটিআরসির লোকসান হচ্ছে ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। লাভজনক সংস্থাগুলো হচ্ছে বিএসসি, বিআইডব্লিউটিসি, এমডিডব্লিউএমবি এবং জেএমবিসিএ।
বাণিজ্যিক: সরকার পরিচালিত তিনটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি বড় আকারের লোকসান দিয়েছে। বাকি দুটো সামান্য মুনাফা করেছে। লোকসানি প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। বিপিসির মোট লোকসান ৭২০৮ কোটি টাকা। লাভজনক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিজেসি ও টিসিবি। টিঁসিবির লাভ ৭ কোটি ৩০ লাখএবং বিজেসির মাত্র ১৮ লাখ টাকা।
কৃষি ও মৎস্য: কৃষি ও মৎস্য খাতের দুটো প্রতিষ্ঠানের একটি লাভ করেছে অপরটি  লোকসান দিয়েছে। এ দুটো প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিএডিসি ও বিএফডিসি। বিএডিসির লোকসান হচ্ছে ৪ কোটি ৭২ লাখ। বিএফডিসির (মৎস্য)  লাভ ১ কোটি ৬৪ লাখ
টাকা।
নির্মাণ: বরাবরের মতো নির্মাণ খাতের ৫টি সংস্থার সব কটিই মুনাফা করেছে। এগুলোর মধ্যে রাজউক ১০৮ কোটি ৯ লাখ। সিডিএ ২০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, কেডিএ ৯ কোটি ৭৩ লাখ এবং আরডিএ ১ লাখ টাকা।
সার্ভিস ও অন্যান্য: সার্ভিস ও অন্যান্য খাতের মোট ১৫টি সংস্থার মধ্যে ৩টি সংস্থা বড় আকারের লোকসান দিয়েছে। লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বিএফএফডব্লিউটি। এর লোকসান ২কোটি ২০ লাখ। বিআইডব্লিউটিএর লোকসান ৮ কোটি ৯২ লাখ। বিএফডিসি (ফিল্ম) লোকসান দিয়েছে ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিএসটিআই লোকসান দিয়েছে ২৭ লাখ টাকা। বিডব্লিউডিবির লোকসান ১৭১ কোটি টাকা ও বিএইচবি ১ কোটি টাকা। অপরদিকে এই খাতের লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে বিএফডিসির মুনাফা ২৫ লাখ, বিপিআরসির ২০ লাখ, সিএএর ১৬ কোটি ৪৩ লাখ, বিসিক-এর ১ কোটি ৫৭ লাখ, বেপজার ১০৩ কোটি, আরইবির ২৫২ কোটি, বিটিবি ২ কোটি ৯৯ লাখ ও ইপিবির ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। 
সীসাযুক্ত রঙের ব্যবহার বেড়েই চলেছে
দেশের ৮৮ ভাগ মানুষ সীসা দূষণের শিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে উৎপাদিত ও আমদানী করা সব ধরনের রঙেই ব্যবহার হচ্ছে পরিবেশ ও জীব সম্পদায়ের অন্যতম বিনষ্টকারী সীসা। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৮ ভাগ মানুষই বিভিন্ন ভাবে সীসা দূষণের শিকার। দেশের বিভিন্ন নগরীতে বসবাস রত প্রায় ৯৩.৭ ভাগ মানুষ সীসা দূষণের কবলে পরছে। ঘন বসতিপূর্ণ এলাকার বসবাসরত প্রায় ৯৭.৭ ভাগ মানুষ সীসা দূষণের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। বাংলাদেশে শোভাবর্ধনসহ ব্যবহƒত সবধরনের রঙেই ক্ষতীকারক সীসা রয়েছে। অধিকাংশ কোম্পানির রঙে সীসার পরিমান সহনীয় মাত্রার থেকে অনেক বেশি গুণে দেয় থাকে। যা দেশের জীব সম্প্রদায় ও পরিবেশের উপর অশুনি সংকেত। সীসাযুক্ত রঙ ব্যবহারের ফলে ১০ বছর পর শিশু বিকলঙ্গের হার বাড়বে ৩৫ শতাংশ। শিশুর স্বাভাবি জš§ ব্যবহত হবে। পশু-পাখি এবং অনুজীব ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রকৃতির উপর ব্যাপক প্রভাব পরবে।
ছোট ছোট শিশু থেকে শুরু করে মানুষের নিত্য ব্যবহার্য প্রায় প্রতিটি জিনিসেই এই ক্ষতিকার উপাদান অধিকমাত্রায় মিশ্রীত রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ পরীক্ষিত এই গবেষণাটিতে দেখা গেছে, দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৭৭ ভাগ সীসাযুক্ত রঙের দুষণজনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে সীসার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে চিকিৎসক সূত্রে জানা যায়, এই বিষ নারী-পুরুষ উভয়ের প্রজননক্ষমতা কমায়, অনেকক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যায়, উচ্চরক্তচাপ, কিডনী সমস্যা, পেশী-হাড়ের সংযোগে ব্যথা, মানসিক এবং স্নায়ুচাপে আক্রান্ত হন, স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ ও ঘুম কমে যায়, পগুত্ব বা অকাল মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়। রঙের মাধ্যমে নির্গত সীসা শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকি নয়, পরিবেশের জন্য মারাতœক হুমকির কারন হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সীসাযুক্ত রঙ তরল ও কঠিন অবস্থায় মাটি, পানি ও বায়ুদুষণ করছে। দেশের বাজারে ৩১টি স্থানীয় কোম্পানি এবং ৬টি বিদেশী কোম্পানির রঙ সরবরাহ করা হচ্ছে। এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোসাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) এর এক পরীক্ষায় দেখাগেছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত এবং আমদানীকৃত সকল ধরনের রঙেই অধিক পরিমান সীসা রয়েছে। ইউএস কোড অব ফেডারেল রেগুলেশনের তথ্য অনুযায়ী, রঙের মধ্যে সীসার গ্রহণ যোগ্য মাত্রা ৬’শ পিপিএম (০.০৬%) এর কম থাকবে। কিন্তু আমাদের দেশে রঙ প্রস্তুত এর ক্ষেত্রে পিপিএম এর চিত্র একদম ভিন্ন। আমাদের বাজারে যেসকল রঙ ব্যবহƒত হয় এরগুলোর মধ্যে সীসার মাত্রা সর্ব নিু ১০ হাজার ৮’শ পিপিএম। যা প্রায় ১০ হজিরি ২’শ পিপিএম বেশি। রঙে সীসা ব্যবহারের মূল কারন হলো, সীসা সহজলভ্য বলে উৎপাদন খরচ বহুলাংশে কমে যায়। ফলে উৎপাদনকারীদের লাভের হার বেশী থাকে। এছাড়া সীসা দ্রুত রঙ শুকাতে সাহায্য করে, রঙের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে, রঙের চকচকে ভাব ও নতুনত্ব বজায় রাখে এবং আদ্রতারোধের মাধ্যমে ক্ষয়রোধ করে। তাই দেশের সবগুলো রঙ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানই কমবেশী ক্ষতিকর সীসা ব্যবহার করছে।
পরিবেশ বিদ ড. হোসেন শাহরিয়ার ভোরের ডাককে জানান, আমাদের দেশে উৎপাদিত এবং আমদানি করা সকল ধরণের রঙে সীসার ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত। এর ফলে দেশের পরিবেশ ও জীব সম্প্রদায় ব্যাপক ভাবে হুমকির সম্মুখিন। ১০ বছর পর সুস্থ্য ও স্বাভাবিক শিশুর জš§ মারাতœক ভাবে হ্রাস পাবে। বর্তমান সময়ে সীসার ব্যবহার রোধ করতে না পারলে ভবিষ্যতের এর মাশুল দেয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। তিনি আরো বলেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলো পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র রক্ষার্থে অনেকপূর্বেই সীসার ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে। আমাদের দেশেও এর ব্যবহারের প্রতি সরকারের দ্রুত নিষেধাঞ্জা আরোপ করা প্রয়োজন। অনেকগুলো মালটি ন্যাশনাল কোম্পানি দেশের বাজারে সীসাযুক্ত রঙ সরবরাহ করে বিপুল পরিমান অর্থ মুনাফা করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ধাতব পদার্থের সাথে সীসা বাতাসের মাধ্যমে বিক্রিয়া করে বাতাসে ছড়িয়ে পরে। যা আমাদের পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। বায়ুতে সীসা ছড়িয়ে পড়ার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় শিশুরা। ৯ বছর বয়সের কম শিশুদের ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। সীসা দূষণের ফলে শিশুদের মস্তিষ্ক ও ¯œায়ু তন্ত্রের ক্ষতি সাধিত হয়। শিশুর শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। শ্রবণ সমস্যা এবং মাথা ব্যাথা লেগেই থাকে। এছাড়াও প্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্যও সীসার ব্যাপক ক্ষতিকারক প্রভাব রয়েছে। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেতেই প্রজননের সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত মানুসক ও ¯œায়ু চাপ দেখা দেয়। স্মৃতি শক্তি ও মনোসংযোগ ব্যাপক ভাবে কমে যায়। এছাড়াও দীর্ঘ সময় সীসা দূষণের শিকার হলে হঠাৎ করেই খাদ্যাভাস কমে যায়। তবে রঙ সম্বলিত কাজের সাথে জড়িত ব্যাক্তিদের আয়ুষ্কাল অনেক কমে যায়। পঙ্গুত্ব বা অকাল মৃত্যুর সমূহ সম্ভবনা দেখা দেয়।
 এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোসাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) সূত্রে আরো জানা যায়, যে সমস্ত শ্রমীকরা সরাসরি ¯েপ্র মেশিনের সাহায্যে রঙের কাজ করে। তাদের আয়ু তুলনামূল ভাবে অতিদ্রুত কমে যায়। তারা দ্রুত সীসার দ্বারা আক্রান্ত হয়। এধরনের কাজ করতে অত্যন্ত সচেতন হতে হয়। প্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিস ব্যবহার করাই এর প্রতিকারের সাময়ীক ব্যবস্থা। তবে রঙ সংযুক্ত কোনো ধরনের কাজ করলেই তাকে সীসার দ্বারা আক্রান্ত হতে হবে। একটি গবেষণা সূত্রে জানা যায়, শিশুদের বিভিন্ন লোভনীয় খেলনাতে বিভিন্ন রঙ্গের ছড়া ছড়ি থাকে। এই সমস্ত রং অধিক সীসাযুক্ত। যা শিশুর ক্ষতি সাধন করে। তবে শুধুর শিশু কিংবা প্রাপ্ত বয়ষ্ক নয় বরং পরিবেশের উপরেও সীসার ক্ষতীকারক প্রভাব রয়েছে।
একটি গবেষণায় জানাগেছে, কলকার খানা থেকে নির্গত সীসা মাটি ও পানিতে প্রায় ২ হাজার বছর মিলিত অবস্থায় থাকে। কৃষি কাজে ব্যবহƒত জিনিসে সীসা থাকার ফলে জমির উৎপাদন এবং শক্তি অনেকটাই হ্রাস পায় এবং ফসলেও সীসা দূষণের সমূহ সম্ভবনা থাকে। মাটির উবর্বরতা নষ্টের জন্য সীসা অনেকাংশেই দায়ী। সীসা উদ্ভিদের স্বাভাবিক গঠন ব্যবহ করে। এটি পানিতে মিশে জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বসবাসের অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে। সীসা দূষণের ফলে বিশ্ব মন্ডলের প্রাকৃতিক বৈচিত্র বিলান হয়ে যেতে পারে। অতি সাম্প্রতি একটি গবেষণাতে দেখা গেছে, সীসা দূষণ জনিত কারণে উদ্ভিদ ওপ্রাণীর জীন গঠনে বাধাগ্রস্ত হয়।
দেশি ল্যাপটপের আগমন
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পূর্ব সংকেত
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্লোগান নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তা পূরণে বদ্ধপরিকর মহাজোট সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো দেশি ল্যাপটপের বাজারে আগমন এক অভাবনীয় সফলতার পূর্ব সংকেত। ২ বছর প্রতীক্ষার পর হলেও দেশি ল্যাপটপ বাজারে এসেছে। এটা বাংলাদেশে প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। প্রথম দিকে বাজারে সীমিত পরিসরে ল্যাপটপ পাওয়া গেলেও ধীরে ধীরে এর সহজলভ্যতা বাড়বে। দেশি ব্রান্ডের ল্যাপটপ বাজারে আসায় স্বল্প আয়ের লোকেরাও তাদের সাধ্যমত ক্রয় করতে পারবে। প্রযুক্তির পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চড়ে দুর্বার গতিতে অপার সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদশ।
প্রাথমিকভাবে চার ধরনের ল্যাপটপ বাজার এনেছে সরকারি টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস)। সর্বনিু ১০ হাজার থেকে শুরু করে ২৬ হাজার ৫শ টাকার মধ্যে এ দেশি ল্যাপটপ বাজারে পাওয়া যাবে। এর মধ্যে ১৩ হাজার টাকার ল্যাপটপে ২ হাজার টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। ভর্তুকি দিয়ে হলেও সরকার প্রযুক্তির কথা চিন্তা করে দেশি ল্যাপটপ বাজারে এনেছে এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। টেশিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে আরো ২৫ হাজার ল্যাপটপ বাজারে আসবে। তিনটি বহুজাতিক ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির সহায়তায় টঙ্গীতে টেশিসের কারখানায় এসব ল্যাপটপ ও নেটবুক প্রস্তুত হয়েছে। চীন, তাইওয়ান, কোরিয়াসহ বিশ্বের ১০টি দেশ থেকে ১৫০ থেকে ১৭৫ ধরনের ল্যাপটপ ও নেটবুকের যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়েছে। কিছু যন্ত্রাংশ বাংলাদেশেও তৈরি হয়েছে। বাজারে দেশি ব্রান্ডের ল্যাপটপ আসার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ব্রান্ডের ল্যাপটপের দামও কমবে। এতে করে ব্যবহারকারীরা আরো কমে ল্যাপটপ ক্রয় করতে পারবে। বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে দেশীয় পণ্যের মান বৃদ্ধির দিকে আরো বেশি নজর দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া দেশীয় পণ্য ব্যবহারে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশীয় পণ্য বেশি করে বিক্রয় হলে দেশের আর্থিক বুনিয়াদ আরো দৃঢ় হবে।
সর্বপ্রথম দেশি ল্যাপটপ বাজারে আসায় প্রযুক্তিতে পরনির্ভরশীলতা অনেকাংশে কমবে বলে আমরা মনে করি। এ সফলতা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মান বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে। সফলতার এ ধারা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার যেন পিছু পা না হয় এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও রাষ্ট্রীয় খাত
মোর্শেদ আলী
ইদানীং সংবাদপত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও দেশের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে বেশ লেখালেখি হচ্ছে। সরকারের হাত বদল হলেই রাষ্ট্রের প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালক পরিবর্তন ঘটে থাকে। এবারো আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের পরিবর্তন করে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। প্রথমেই  এরা সব চমক দেখানো কথাবার্তা বলেন। তবে পরে যতই দিন গড়াতে থাকে অবস্থা বেহাল হতে থাকে। সঙ্গে বড় বড় কথাও কমে আসে। অনেকে মনে করেন ব্যক্তির পরিবর্তন ঘটলেই সমস্যা কেটে যাবে। মোটেও তা নয়। ব্যবস্থা যদি একই থাকে তাহলে ব্যক্তির কিছু করার থাকে না। পূর্বের দুরবস্থা নতুনভাবে পরিবর্তিত চেহারায় সামনে এসে নতুন নতুন সঙ্কটের সৃষ্টি করতে থাকে। সেটাই ঘটে চলেছে শেয়ার বাজারে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে।
দেশ স্বাধীন হওয়ায় পর ব্যাংক বীমা যখন জাতীয়করণ করা হলো তখন থেকেই অতীতের সব দায় দেনাসহ পূর্বের ব্যবস্থাপনায় চলতে থাকল। তার সঙ্গে স্বাধীনতার পর যুক্ত হলো শ্রমিক-কর্মচারী-ইউনিয়নগুলোর দাপট (ব্যাংকগুলোতে ) ও রাজনৈতিক প্রভাব। সেই অবস্থা এখনো চলছে এবং ’৭৫-এর পরবর্তীতে অব্যবস্থা দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অব্যাহতভাবে চলেছে। যদিও ’৭৫ পূর্বাবস্থায় বলা হয়েছিল যে জাতীয়করণ করে আর্থিক দুরবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু এখনতো জাতীয়করণ প্রধান খাত নয়। ব্যক্তিখাত এখন প্রধান খাত। এখন দেশের অর্থনীতি ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’-র পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। এখন মোটা অঙ্কের টাকা বেতন দিয়ে বিদেশি অর্থনৈতিক পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দুরবস্থা দূর করার পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। সর্বোপরি বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে ’৭৫-এর পরবর্তী সরকারগুলো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এ সত্ত্বেও সমস্যা দূর হচ্ছে না বরং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা বেড়েই চলেছে। এখন বিশ্বব্যাংক এডিবি আইএমএফ নানা কথা বলছে এবং দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ তুলে প্রস্তাবিত ঋণদান বাধাগ্রস্ত করছে। বিগত ৪০ বছর বাংলাদেশে যে সব আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি চলেছে তা যেন উনারা জানতেন না বা দেখতে পাননি। তাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় খাতকে ধ্বংস করে দিয়ে (অথচ নিজেদের দেশে অনেক বড় বড় রাষ্ট্রীয় খাত আছে এবং কৃষিতে প্রচুর ভর্তুকি চালু রেখেছে) ব্যক্তি খাত ও মুক্ত বাজার অর্থনীতি চালু করার। সে কাজ করতে তো লুটপাট-দুর্নীতি প্রয়োজন হয় (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ওই কাজ তাদের সম্পন্ন হয়েছে। দেশে এখন বাজার অর্থনীতি দাপটের সঙ্গে ক্রিয়াশীল। কোনো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সর্ব ক্ষেত্রেই মাফিয়াচক্র সিন্ডিকেট সক্রিয় । দৈনন্দিন বাজার দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি থেকে মুদ্রা বাজার ও পুঁজি বাজারে যে অস্থিরতা সেটা চলমান গৃহীত নীতি ও ব্যবস্থার ফলশ্র“তি।
আসা যাক রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক প্রসঙ্গে। কিছু কথা পূর্বে উল্লেখ করেছি। এই ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক হচ্ছে সরকার। এ ব্যাংকগুলোতে যে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা চলছে সেটা সরকারের অজানা নয়। বর্তমান ও বিগত দিনের অর্থমন্ত্রীদের তা জানা আছে বা ছিল। এ সব ব্যাংকে তথ্য নিলে দেখা যাবে যত বড় বড় ঋণ খোলাপি তারা হচ্ছে মন্ত্রী বাহাদুরদের আÍীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব। প্রায় ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রভাবে এ ঋণ দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো সরকার ঋণ খেলাপিদের কেশ পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারেনি। বরং মন্ত্রীরা বা সরকার তাদের নিজেদের গদি রক্ষার জন্য তাদের তোয়াজ করতে ব্যস্ত। ঋণ খেলাপিরা বর্তমান সরকার ব্যবস্থায় ভীষণ ক্ষমতার অধিকারী। মাঝে মধ্যে ঋণ খেলাপির বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ে পরামর্শ হয় এবং খেলাপি ঋণের ক্যাটাগরি তৈরি করে কোনটা ‘ব্যাড লোন’ ইত্যাদি ঠিক করা হয় এবং কিছু ঋণ মওকুফ করার সিদ্ধান্ত হয়। সে সব ক্ষেত্রে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপিরা উপহার পেয়ে যায়। তবে দু’দিন পূর্বে আবার পত্রিকায় দেখা গেল এক কৃষক দশ হাজার টাকার ঋণ পরিশোধ না করতে পারায় পুলিশ হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে  বোঝা গেল দেশে আইন আছে, সেটা প্রয়োগ হয় গরিব কৃষক বা ক্ষুদে উৎপাদনকারীদের ওপর। শত বা হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপিদের ওপর নয়। তাছাড়া এ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক থেকে সরকার এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রচুর ঋণ নেয়। সেগুলো বছরের পর বছর পরিশোধ হয় না। সুদে আসলে বাড়তেই থাকে। এ ধরনের অবস্থা চললে এ ব্যাংকগুলো সুস্থ ও লাভজনকভাবে চলবে কি করে?
প্রসঙ্গ উঠেছে প্রাইভেট ব্যাংকসমূহের। সোনালী ব্যাংকের সারাদেশে যত শাখা আছে সব প্রাইভেট ব্যাংকের শাখা যোগ দিলে তার সমান হবে কি না সন্দেহ। তবে ওই সমস্ত ব্যাংকের অনেক মালিকই ঋণ নিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে। আমি এ সব বিষয়ে পণ্ডিত নই। কিন্তু খোঁজ খবর রাখি এবং এক কালে ট্রেড ইউনিয়ন নেতা থাকার সুবাদে অনেক হাঁড়ির খবরই জানি বা জানা সম্ভব। জোট সরকারের আমলে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সাহেবের ছেলে সোনালী ব্যাংকে প্রায় পাঁচ শত কোটি টাকার এক প্রজেক্ট সাবমিট করেছিল। এটা যে অফিসারের পাস করানোর দায়িত্ব ছিল সে আক্ষেপ করে বলল, এ ধরনের ঋণগুলো তো ঋণ খেলাপি হয়। ফলে এ প্রক্রিয়া সরকারিভাবে কঠোর হস্তে না ঠেকাতে পারলে, কঠোর হস্তে খেলাপি ঋণ আদায় না করতে পারলে কি ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো লাভজনকভাবে চলবে? একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা দূর করতে হবে। সেবা দেয়ার ক্ষেত্র আরো দ্রুত এবং দক্ষ হতে হবে। এই ব্যাংকগুলোর সব শাখা এখনো কম্পিউটারাইজ (ঈড়সঢ়ঁঃধৎরংব) হয়নি। অফিসার ও কর্মচারীদের দক্ষতা আরো বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের মটিভেট করতে হবে যে ব্যাংক রক্ষা করতে পারলে তোমাদের চাকরি রক্ষা পাবে। না হয় পথে বসতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকের অফিসার-কর্মচারীদেরও উদ্যোগ প্রয়োজন। আর এ ব্যাংকগুলোর পরিচালনার জন্য দক্ষ, অভিজ্ঞ ও সৎ ব্যক্তিদের নিয়োগ খুব জরুরি। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরাই যথেষ্ট নয়। সাংবাদিক ভাইদের উচিত সেটার অতীত তথ্য বের করা, কেন ব্যাংকগুলো এ অবস্থা এলো। আর এই সমস্ত অব্যবস্থা ও দুর্নীতির জন্য কে বা কারা দায়ী। এ চিত্র জনসম্মুখে তুলে ধরলে সত্যি দেশের ও আর্থিক সেক্টরের উপকারে আসবে।  লেখক: রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট
মর্টগেজ ভাড়াটিয়া
মযহারুল ইসলাম বাবলা
মর্টগেজ ভাড়াটিয়া বা বন্ধকী ভাড়াটিয়া নামক শব্দের সঙ্গে আমাদের পূর্ব পরিচয় নেই। তাই শোনামাত্র চমকে উঠেছিলাম। এ আবার কেমনতরো ভাড়াটিয়া! যার নামের পূর্বে মর্টগেজ বা বন্ধকী শব্দটি জুড়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের  সনাতনী অভিজ্ঞতাটি হচ্ছে মাসিক ভাড়া প্রদান সাপেক্ষে মানুষ বাড়ি-ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে থাকে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা জামানত বাবদ অগ্রিম অর্থ বাড়ির মালিকদের প্রদানেরও বিধান আছে। অগ্রিম অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে  হের-ফের হয়ে থাকে। কারো ক্ষেত্রে তিন মাসের ভাড়ার অগ্রিম, কারো ক্ষেত্রে দুই-এক মাসের। ঢাকা শহরের বাড়ির বা ফ্ল্যাটের মালিকদের  চেয়ে ভাড়াটিয়ার সংখ্যাই অধিক। এ বিষয়ে কোনো দ্বিমতের সুযোগ নেই। আমাদের বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়াদের সনাতনী ব্যবস্থায় মর্টগেজ ভাড়াটিয়া নতুন সংযোজন।  না জানা অবধি আমিও অবাক বিস্ময়ে বিষয়টি বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হয়ে মর্টগেজ ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালা উভয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। জেনেছি চমকপ্রদ অভিনব ব্যবস্থাটি।
ব্যবস্থাটি বিগত তিন-চার বছর যাবৎ পুরান ঢাকায় চালু হয়েছে এবং ক্রমেই এর দ্রুত বিস্তার ঘটেছে। পুঁজির শক্তি এবং পুঁজির ক্ষমতা এতে প্রকটভাবেই ফুটে উঠেছে। বাড়িওয়ালাদের অর্থের প্রয়োজন মেটাতেই মর্টগেজ ভাড়াটিয়া ব্যবস্থাটি চালু হয়েছে। বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকদের তিন বা পাঁচ লাখ টাকা একত্রে প্রদান করে মর্টগেজ ভাড়াটিয়া বাড়ি বা ফ্ল্যাটে ওঠে। ব্যবহƒত গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানির বিলই তারা  কেবল পরিশোধ করে। মাসিক কোনো ভাড়া তাদের দিতে হয় না। এক সঙ্গে নগদ তিন-পাঁচ লাখ টাকা প্রদানের কারণেই বিনে ভাড়ায় বসবাসের এমন ব্যবস্থা। রীতিমতো দলিল-দস্তাবেজ করেই পরস্পর চুক্তিবদ্ধ হয়। তিন বা পাঁচ বছর মেয়াদে সাধারণত চুক্তি হয়ে থাকে। চুক্তির সময়সীমা অতিক্রমের পর বাড়িওয়ালাকে শুরুতে দেয়া তিন বা পাঁচ লাখ টাকা মর্টগেজ ভাড়াটিয়াকে একত্রে ফেরৎ দিতে হয়। অর্থাৎ চুক্তির মেয়াদকাল পর্যন্ত মর্টগেজ ভাড়াটিয়া বিনে ভাড়ায় থাকবে। কেবল গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানির বিল পরিশোধ করবে। চুক্তির মেয়াদ শেষে লগ্নির পুরো টাকা একত্রে ফেরৎ নেবে। কোনো কারণে বাড়িওয়ালা অর্থ ফেরৎ দিতে অক্ষম হলে তাদের মধ্যে পুনরায় নতুন করে চুক্তিপত্র সম্পাদন করে আগের নিয়মেই ফ্ল্যাটে বা বাড়িতে বিনে ভাড়ায় বসবাস করতে পারবে।
ব্যবস্থাটি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মূল কারণটিও  জেনেছি। নগদ অর্থের তাগিদেই নিরুপায় বাড়ির মালিকদের এমন চুক্তি করতে হয়। পুরান ঢাকার জায়গা বাড়েনি। কিন্তু বেড়েছে পরিবার। পৈতৃক সম্পত্তিতে অংশীদারদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারায় কারো মালিকানার জায়গার পরিমাণ আধা কাঠা থেকে সোয়া কাঠার ঊর্ধ্বে নয়। খুব কম সংখ্যক আছে যাদের জমির পরিমাণ তিন-চার কাঠা। সংখ্যাগরিষ্ঠ পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের জায়গার পরিমাণ আধা কাঠা থেকে সোয়া কাঠা হবার কারণেই এ স্বল্প জায়গায় রাজউকের অনুমোদন পাওয়া সম্ভব হয় না। এছাড়া আছে সরু রাস্তার জন্য রাজউকের অনুমোদন না দেবার পাকা ব্যবস্থা। রাজউকের অনুমোদন লাভের ক্ষেত্রে আরেক অন্তরায় বাড়ি নির্মাণে চারদিকে জায়গা ছেড়ে বাড়ি নির্মাণের শর্তারোপ। যা পুরান ঢাকার জমির মালিকদের ক্ষেত্রে পালন অসম্ভব। আধা কাঠা থেকে সোয়া কাঠা জায়গার চারদিকে জায়গা ছাড়লে তো বাড়ি নির্মাণের ন্যূনতম জায়গাও থাকে না। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বল্প জায়গার মালিকরা রাজউকের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে স্বউদ্যোগে জীবনের সকল সঞ্চয় বিনিয়োগ করে বাড়ি নির্মাণে হাত দেয়। রাজউকের অনুমোদন না থাকায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় বা বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহ নির্মাণ ঋণ পাওয়াও সম্ভব হয় না। নির্র্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে  অগত্যা তাদের মর্টগেজ ভাড়াটিয়াদের শরণাপন্ন হতে হয়। তিন-পাঁচ লাখ নগদ টাকা গ্রহণ করে মর্টগেজ ভাড়াটিয়াদের ঘর-ফ্ল্যাট বিনে ভাড়ায় দিতে হয়। পুরান ঢাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বল্প জমির মালিকদের একই দশার কারণে মর্টগেজ ভাড়াটিয়া ব্যবস্থাটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে চলেছে। খুব কম সংখ্যকই ব্যক্তিগত এবং পরিবারিক অর্থের প্রয়োজন মেটাতে মর্টগেজ ভাড়া দিয়ে থাকে। একজন জানিয়েছে মেয়ের বিয়ের পণের অর্থ প্রদানের জন্য বাধ্য হয়ে নিজেদের দুই রুম মর্টগেজ ভাড়া দিয়ে ছাদে টিন শেডের ঘর তুলে নিজেরা বসবাস করছে। মর্টগেজ ভাড়াটিয়ারাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যে বাড়ির মালিকদের নগদ অর্থের প্রয়োজন মেটানোর সুযোগটি তারা কাজে লাগিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। মানি মেকস্ মানি অর্থাৎ টাকাই টাকা তৈরি করে। ব্যাংকের সুদও এত অধিক নয়। ব্যবসায় বিনিয়োগে নানা ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি নেই। নিরাপদ লাভজনক বিনিয়োগই তারা মনে করে।
সাধারণত ভাড়াটিয়াদের ওপর বাড়িওয়ালাদের স্বেচ্ছাচারিতার নানা অভিযোগ আছে। তবে মর্টগেজ ভাড়াটিয়াদের তেমন কোনো অভিযোগ নেই বরং তারা অধিক সমীহ ও মর্যাদা বাড়িওয়ালাদের থেকে পেয়ে থাকে। বাড়িওয়ালাদের আর্থিক দুরবস্থার এই সুযোগ নেয়া নৈতিক কিনা! জানতে চাইলে বলে, “একজন নিরুপায় বাড়ির মালিককে অর্থ দিয়ে উপকার করেছি। বিনিময়ে নিজেরাও লাভবান হচ্ছি। এখানে অনৈতিক কিছু নেই। বরং আমরা অর্থ না দিলে তাদের পক্ষে বাড়ি নির্মাণের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা সম্ভবপর ছিল না। আর তারা মাথা কুটলেও রাজউকের অনুমোদন না থাকার কারণে আর্থিক কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে একটি টাকাও ঋণ পাবে না। নিজেরা লাভবান হচ্ছি সত্য তাই বলে বাড়ির মালিকও যে লাভবান হচ্ছে না তাও অসত্য নয়।”
দেশজুড়ে সর্বত্র চলছে পুঁজির অসীম দৌরাত্ম্য। পুঁজির নীরব শোষণও। পুঁজির শাসন ও শোষণের ক্ষেত্র ক্রমেই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিস্তার করে চলেছে। বর্তমান ব্যবস্থায় এর  থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই। বিকল্প ব্যবস্থা না আসা পর্যন্ত হরেক ক্ষেত্রে পুঁজির দৌরাত্ম্য আমাদের দেখতে হবে এবং ভুগতেও হবে।
জাল সনদের রমরমা ব্যবসা
সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিরোধ চাই
অরুণ ব্যানার্জী
ঢাকায় নীলক্ষেতে জাল সনদের রমরমা ব্যবসা নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সনদ জাল হচ্ছে। নজরদারি না থাকায় এ জাল সনদ ব্যবসা রাজধানী থেকে এখন দূর-দূরান্তের গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। জাল সনদের বিস্তৃতি এতটাই যে চাইলেই হাতের নাগালে পাওয়া যায়। চিকিৎসা ও প্রকৌশল, নামকরা সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স, মাস্টার্স ও ডিপ্লোমা, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক সনদ অহরহ জাল হচ্ছে। আবার এ জাল সনদ নিয়ে অনেকেই দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চাকরি করছেন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের অনেককে ইতোমধ্যে শনাক্ত করলেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন জাল সনদ হাতের নাগালে পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখন আর পড়ালেখায় মনোযোগী নয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও টাকার বিনিময়ে জাল চক্রের সদস্যদের কাছে সব সনদই মেলে। আসল সনদের আদলেই তৈরি করা হয় জাল সনদ। সংশ্লিষ্ট বোর্ড কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাচাই ছাড়া সাধারণ চোখে জাল সনদ ধরা অসম্ভব। এক শ্রেণীর মানুষ এসব জাল সনদ নিয়ে চিকিৎসা পেশা থেকে শুরু করে অনেক পেশাতেই চাকরি করছেন। দেশের স্বনামধন্য এ্যাপোলো হাসপাতালেও সম্প্রতি জাল সনদধারী ভুয়া ডাক্তার ধরা পড়েছে। ২০০৭ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফয়েজির সনদও জাল ধরা পড়ে। জাল সনদ তৈরির রেজিস্ট্রার ভবন নামে খ্যাত নীলক্ষেতে থেমে নেই জাল সনদ তৈরির কার্যক্রম। এক হিসেবে কেবল নীলক্ষেত থেকে বছরে প্রায় ৩৬ হাজার জাল সনদ তৈরি হচ্ছে। এ  থেকে বেরিয়ে আসছে আমাদের দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজের একটি চালচিত্র। অর্থ নামক পরমার্থ দিয়ে হচ্ছে অনেক কিছু।
মানুষ সমাজের ওপর নির্ভরশীল। সামাজিক অবয়ব শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম ইত্যাদির সমন্বিত ফল। যে ছাত্রবন্ধুটি শিক্ষাঙ্গনে সমাজপ্রগতির কথা বলেন তিনি যখন বিনা টিকেটে দলবল নিয়ে ট্রেনে চলাফেরা করেন তখন তার সমাজপ্রগতি একাকার হয়ে যায় ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাচার আর দুর্নীতির কাছে। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা চাকরিতে ঢোকেন দেশ, সরকার ও জনগণের সেবা করার অঙ্গীকার নিয়ে। কিন্তু নগণ্যসংখ্যক কর্মকর্তা এ মানসিকতা লালন ও বাস্তবায়ন করেন। ডাক্তাররা আর্তমানবতার সেবা করার মনোভাব নিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হন। পাস করে চাকরিতে ঢোকেন বা প্রাইভেট প্রাকটিস করেন। কিন্তু পরবর্তীতে এরা অনেকেই হয়ে ওঠেন টাকা ইনকামের যন্ত্র। ‘পুলিশ জনগণের সেবক’ একথা বলা হলেও বাস্তবে তারা জনগণের রক্ষক নয়, ভক্ষক। যে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা বা কর্মচারী নানারকম ছলাকলায় দৈনন্দিন জীবনে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ায়, তিনি বা তারা যখন ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট নিয়ে কথা বলেন তখন বড্ড বেমানান ঠেকে। রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে দলের মধ্যে উপদল। জনসভায় বক্তব্যের সঙ্গে কাজের কত না বৈপরীত্য। দল ক্ষমতায় থাকলে টেন্ডারবাজি আর পেশিশক্তির মহড়া। আর মায়াকান্না। জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে জলগণের জন্য ‘জান কোরবান’ করার অঙ্গীকারই এখন রাজনীতি নামক নীতিহীন বাণিজ্যের গোপন কথা। প্রাইমারী স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত শিক্ষকদের মাঝে চলছে চটকদারী কথার আড়ালে প্রাইভেট পড়ানোর প্রতিযোগিতা। অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারক কমকর্তাদের কল্যাণে চলছে সীমিতসংখ্যক কিছু প্রশ্নের সাজেশন দিয়ে পরীক্ষা নেয়ার কলাকৌশল। বিসিএস পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। পরীক্ষা অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী শুধু বহিষ্কার হয় না; অনেক সময় বহিষ্কৃত হন পরিদর্শক শিক্ষকও। পরীক্ষার খাতা টেম্পারিংয়ের অভিযোগে পরীক্ষক গ্রেফতার হন। এসব নিয়ে তৈরি হয় মুখরোচক গল্প। সমাজের সর্বত্র চলছে এরকম অনিয়ম আর দুর্নীতির বলগাহীন স্রোত। এ গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে কিছু ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আর পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে দ্রুত অর্থের অবৈধ মালিক হওয়ার নেশায় মেতে উঠবে, তাতে আর বৈচিত্র্য  কোথায়?
জাল সনদ সংগ্রহকারীদের কাছে দেশের রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে নীলক্ষেত। এক সময় জাল কাপড়, সূঁচ, তৈজসপত্রসহ  বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির আখড়া হিসেবে বিবেচিত হতো ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর অপরপারের জিনজিরা। এখন দেশের সব স্কুল, কলেজ, মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংস হিসেবে পরিণত হয়েছে নীলক্ষেত। এই নীলক্ষেত এলাকায় কম্পিউটারের অনেকগুলো দোকান অসাধ্য সাধনে সিদ্ধহস্ত। এর জন্য বৃথা ক্লাস করতে হয় না। রাত জেগে পড়তে হয় না। মাথা ঘামাতে হয় না টিউটোরিয়াল নিয়ে। বার্ষিক পরীক্ষা বা টার্ম ফাইনাল নিয়ে ভুগতে হয় না টেনশনে। কিছু ‘নগদ নারায়ণ’ হলে কম্পিউটারের দোকানে তৈরি জাল সনদ সংগ্রহ করা সম্ভব। এসব সনদ এমনভাবে তৈরি করা হয় যে আসল নকল ধরার কোনো উপায় নেই। পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাকের ডগায় জাল সনদ সরবরাহকারীদের এ তৎপরতা দিনের দিনে বেড়েই চলেছে। পুলিশ অবশ্য কয়েকবার হানা দিয়ে গ্রেফতার করেছে জাল সনদ ব্যবসায়ীদের। কিন্তু তাতেও কমেনি তাদের অপতৎপরতা। বিশেষ করে জাল  সনদ প্রস্তুতকারকদের নেপথ্য নায়করা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ‘যুগান্তরে’ প্রকাশিত অনুসন্ধিৎসু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বর্তমানে নীলক্ষেতে জাল সনদ প্রস্তুতকারীদের তৎপরতা সীমাবদ্ধ নেই। এর আশপাশের এলাকা আজিমপুর সরকারি কলোনী, লালবাগ এলাকায় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে এ জাল সনদ ব্যবসা চলছে। এছাড়া রাজধানীর ফার্মগেট, সদরঘাট, মিরপুর ১০ নম্বরের বেশ কিছু কম্পিউটারের দোকানেও তৈরি হচ্ছে জাল সনদ। নীলক্ষেত মার্কেটে ৫ শতাধিক কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ১শ টিরও বেশি দোকানে তৈরি হচ্ছে জাল সনদ। সে হিসেবে বছরে ৩৬ হাজার জাল সনদ তৈরি হচ্ছে দোকান থেকে। এসব জাল সনদ নিয়ে অনেকেই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে দাপটের সঙ্গে চাকরি করছেন। ভুয়া ডাক্তারি সনদ নিয়ে অনেকেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেজে চাকরি করছেন বিভিন্ন নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে। ভুয়া ডাক্তার কাজী তানভীর জামান দেশের বিশেষায়িত এ্যাপোলো হাসপাতালে চার বছর নিয়োজিত ছিলেন ডাক্তারি পেশায়। হাইকোর্টের বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজির ভুয়া এলএলবি সার্টিফিকেট নিয়ে আলোড়ন উঠেছিল সামাজিক অঙ্গনে। সচেতন মানুষ প্রশ্ন তুলেছিলেন একজন মহামান্য বিচারপতির আইনের ডিগ্রি নিয়ে যেখানে এই বেহাল অবস্থা সেখানে মানুষ আইনের শাসন পাবে কোথায়? সম্প্রতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলরের শিক্ষাগত সনদপত্রের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার বিষয়টার সত্যাসত্যের যদিও এখনো নিষ্পত্তি হয়নি, তবু কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। একজন শিক্ষিত মানুষের প্রশ্নবিদ্ধ সনদ নিয়ে কোন্ খুঁটির জোরে তিনি ভিসি পর্যন্ত হবার সুরম্য সিঁড়িতে পৌঁছাতে পারলেন?
আমরা বিশ্বাস করি জাল সনদের দৌরাÍ্যে সমাজে মুখোশধারী ভদ্রলোকের সংখ্যা বাড়ছে। হারিয়ে যেতে বসেছে মেধাবী মানুষের মেধার গুরুত্ব। আর্থিক কৌলিন্য আর জাল সার্টিফিকেটের কারণে মেধার জগতে বিরাজ করছে নীরব পঙ্গুত্ব। এ অবস্থা সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও দেশের জন্য আদৌ শুভ নয়। নয় বাঞ্ছনীয়। এ অবস্থা চলতে দেয়া উচিত নয়। আমরা মনে করি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া দরকার। আইন সংশোধন করে জাল সনদ প্রস্তুতকারী ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ও নেপথ্য নায়কদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক  শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া দরকার। উল্লেখিত মন্ত্রণালয়গুলো তৎপর হলে সমাজের মুখোশধারী ভদ্রলোকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। তাদের অপকর্ম খবরের কাগজ ও প্রিন্টিং মিডিয়ায় ছবিসহ প্রকাশ হতে থাকলে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে এদের মুখোশ খসে পড়বে। আমরা তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর ইতিবাচক তৎপরতা আশা করি।   লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

ঢাবিতে ভর্তিচ্ছু দুই শিক্ষার্থীর হতাশালাপ/সংলাপ
এম.রেজাউল করিম
স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন এলাকার একটি ছায়া সুশীতল বৃক্ষের তলদেশ। অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর পদচারণায় সকালেই মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রীদের আগমনে কর্ম-চাঞ্চল্য স্বাভাবিকভাবেই বেশি। অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক তাদের সন্তান-সন্তুতিদের সঙ্গে ভর্তির ব্যাপারে সঙ্গে এসেছেন। নতুন একটি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে প্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপাঠ বলে খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সবাই আগ্রহী। তাই শিক্ষার্থীদের মনে অন্যরকম আমেজ। ভর্তির আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর একই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা দুই ছাত্রছাত্রী তাদের ভর্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠিত। শিক্ষার্থীদ্বয়ের অনতিদূরে পিছন ফিরে বসে থাকা এই লেখকের কানে তাদের আলাপচারিতা ভেসে এলোঃ
ছাত্রীঃ দীপ্ত ভাইয়া, কি মনে হচ্ছে? আমরা ভর্তি হতে পারব  তো?
ছাত্র ঃ ব্যাপার না। নিশ্চয়ই আমরা ভর্তি পরীক্ষায় কোয়ালিফাই করব।
ছাত্রীঃ তুমি তো ‘ট্যালেন্টড’ ছাত্র। তোমার জন্য পরীক্ষায় ভালো করাটা ‘ব্যাপার’ না হলেও আমার জন্য বেশ ‘টাফ’ হবে।
ছাত্রঃ হতাশ হও কেন? যুদ্ধে যখন নেমে পড়েছে তখন মরণপণ লড়াই কর- জয় অবধারিত।
ছাত্রীঃ তুমি তো খুব আশাবাদী। কিন্তু, আমার ভয় করছে...
ছাত্রঃ ভয়ের কিছু নেই। ঢাবিতে না হলেও বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, রাবি, চবি, খুবি, জাবি,  আরো কত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে না?
ছাত্রীঃ তুমি ছেলে মানুষ। যেখানে-সেখানে গিয়ে পড়তে পার। আমার পক্ষে তো ঢাকার বাইরে গিয়ে পড়া সম্ভব নয় ভাই...।
ছাত্রঃ হতাশা বাদ দাও, দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।  তুমিও তো খারাপ ছাত্রী নও...।
ছাত্রীঃ তুমি বলছ তাহলে? আমারও হয়ে যাবে? ‘ফুল চন্দন’ পড়–ক তোমার মুখে...।
ছাত্রঃ এসো নিজেদের তুমি না ভেবে অন্যদেরটাও একটু ভাব।
ছাত্রীঃ তুমি মহৎ মানুষ,  তুমি না ভাবলে  আর কে ভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা?
ছাত্রঃ মহৎ টহতের কথা বাদ দাও...। তুমি জানো রাবিতে ছাত্রছাত্রীরা বর্ধিত বেতন-ফ্রির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে?
ছাত্রীঃ শুনেছি। সেখানকার ভিসি নাকি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে অনাকাক্সিক্ষত মন্তব্য করেছেন? পুলিশ ডেকেছেন...।
ছাত্রঃ হ্যাঁ,  তিনি বলেছেন, উচ্চশিক্ষা নাকি শুধু সিলেকটেড পারসনদের জন্য।’
ছাত্রীঃ সিলেকটেড বলতে কাদের বুঝিয়েছেন তিনি? দলীয় লোক, আÍীয়স্বজন না বড়  লোকদের?
ছাত্রঃ এতে তিনি কাদের ‘মীন’ করেছেন তা জানি না। তবে একথা তার বলা উচিত হয়নি....।
ছাত্রীঃ ঠিক বলেছ, একজন ভিসির মুখো এমন কথা শোভা পায় না।
ছাত্রঃ  বলো তো দেখি তোমার মতামত?
ছাত্রীঃ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা নেবে। সেক্ষেত্রে তারা যদি দরিদ্র হয় তাহলে টিউশন ফিসহ হাজারো রকমের টাকা পরিশোধ করে কি তাদের লেখাপাড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব?
ছাত্রঃ ঠিক  বলেছ তুমি। কিন্তু, এই সাধারণ কথাটা একজন ভিসি বুঝতে পারলেন না।
ছাত্রীঃ এজন্য তার পদ ছেড়ে দেয়া উচিত নয় কি?
ছাত্রঃ অবশ্যই। ওই পদে থাকা তার আর সাজে না।
ছাত্রীঃ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইদানীং ভর্তির জন্য অযৌক্তিক সব ‘ফি’ ধার্য  করেছে এবং ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করলেই নৈতিকতাবিরোধী মন্তব্য করা হচ্ছে।
ছাত্রঃ ঠিক বলেছ তুমি। জানো কি ‘এ লেভেল’ পাস ছাত্রছাত্রীদের ভার্সিটিতে ভর্তির সময় এক বিচিত্র সমস্যার  পড়তে হয়?
ছাত্রীঃ নাতো, কি সে সমস্যা?
ছাত্রঃ ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার কারণে মার্কস শীটের’ ‘ইকুইভিলেন্ট সার্টিফিকেট’ জমা দিতে হয়।
ছাত্রীঃ তাতো তো দিতেই হবেÑএতে বিচিত্র সমস্যার কি দেখলে?
ছাত্রঃ ‘বিচিত্র’ এ কারণে যে, ভার্সিটিতে ভার্সিটিতে গিয়ে টাকা গুনে দিয়ে তা সংগ্রহ করতে হয়।
ছাত্রীঃ কেন, সরকারিভাবে ‘স্ট্যান্ডার্ড মার্কস কত হবে তা নির্ধারণ করে দেয় না কেন?
ছাত্রঃ তাহলে মানুষকে হয়রানি করবে কিভাবে?
ছাত্রীঃ বুঝলাম না...।
ছাত্রঃ কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইকুইভিলেন্ট সার্টিফিকেটের’ জন্য টাকা নেয় আবার কেউ নেয় না।
ছাত্রীঃ তুমি বলতে চাচ্ছ সার্টিফিকেটেরে জন্য ‘ফি’ ধার্য করে তারা ব্যবসায় ফোঁদে বসেছে?
ছাত্রঃ নয়তো কি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রত্যেক ইউনিটে পরীক্ষা দেয়ার জন্য আলাদা আলাদা ইকুইভিলেন্ট সার্টিফিকেট জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা চালু করেছে।
ছাত্রীঃ অর্থাৎ একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক ইউনিটে আবেদন করতে একাধিক ইকুইভিলেন্ট সার্টিফিকেট’ কিনতে হবে, তাই না?
ছাত্রঃ যথার্থ বলেছ...।
ছাত্রীঃ এ ব্যাপারে বুয়েটের অবস্থানটা কি বলতে পারে?
ছাত্রঃ আলবৎ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো তারাও কোনো ফি ধার্য করেনি।
ছাত্রীঃ তাহলো ঢাকা ভার্সিটিকেই আমরা বেশি বাণিজ্যমুখী বলতে পারে।
ছাত্রঃ তাই তো দেখছি...।
ছাত্রীঃ সেজন্যই বোধ হয় বিশ্বমানের র‌্যাংকিংয়ে ক্রমাগত নিচে নামতে নামতে এক শ’র নিচে নেমে গেছে ঢাবি।
ছাত্রঃ বিষয়টা বেশ লজ্জার কি বল?
ছাত্রীঃ তাতো বটেই। মাঝে মধ্যেই ঢাবিতে যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম দারুণভাবে ক্ষুণœœ হচ্ছে।
ছাত্রঃ নতুন করে আবার কি ঘটলো?
ছাত্রীঃ ঢাবির স্টোর থেকে হিসাব বহির্ভূত ৬ হাজার ৭০৮ টি শূন্য সনদপত্র এবং ২ হাজার ৭শ’ ১২টি শূন্য নম্বরপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
ছাত্রঃ তার মানে এক শ্রেণীর কর্মচারী চুটিয়ে সনদ ও নাম্বারপত্রের জালিয়াতি করে যাচ্ছিল এতদিন?
ছাত্রীঃ মজার ব্যাপার হলো দু’মাস আগে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা উঘাটন হলেও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন কিংবা শাস্তিদানের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ছাত্রঃ এ নীরবতার কারণ কি বলে মনে হয় তোমার?
ছাত্রীঃ যে কর্মকর্তার বাড়তি সনদপত্র ও নম্বরপত্রের তথ্য উঘাটন করেছেন তাতে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে। হয়তো একই কারণে কর্মকর্তারাও উদ্যোগ নিতে ভয় পাচ্ছেন।
ছাত্রঃ জালিয়াতি চক্রটি এতই শক্তিশালী?
ছাত্রীঃ শুধু শক্তিশালী হলে কথা ছিল। ওরা ভয়ঙ্কর শক্তিশালী।ৎ
ছাত্রঃ তাই নাকি?
ছাত্রীঃ তাহলে আর বলছি কি? ওদের হুমকিতে তো তথ্য উদঘাটনকারী কর্মকর্তা চাকরিই ছেড়ে দিয়েছেন।
ছাত্রঃ সর্বনাশ! বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও তাহলে সন্ত্রাসী-গডফাদার আছে?
ছাত্রীঃ শোননি, ঐসব গডফাদারের মিথ্যা কাগজপত্র তৈরি করে চোরাপথে ডজনে ডজনে ছাত্রছাত্রী ভর্তির ঘটনা ধরা পড়ায় ওই শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে?
ছাত্রঃ অথচ যারা অনিয়ম করলো, লাখ লাখ টাকা দুর্নীতি করে বাড়ি গাড়ি কিনল তাদের কিছুই হলো না...।
ছাত্রীঃ ওই যে বললাম, সন্ত্রাসী গডফাদার... যুগে যুগে ওরাই তো টিকে থাকবে-সহজ সরল-নিলীহ মানুষেরা নিঃশেষ হয়ে যাবে।
ছাত্রঃ এবার ভর্তির সময়ও অনিয়ম দলীয় তদবির জালিয়াতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না, কি বল?
ছাত্রীঃ তেমন হলে তো আমাদের ভর্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যাবে নি:সন্দেহ নেই।
ছাত্রঃ এসো তাহলে আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে ঢাবিসহ সকল ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে সকল প্রতিবন্ধকতা অবসানের জন্য প্রার্থনা জানাই....।
ছাত্রীঃ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সমাজ- তথা রাষ্ট্র যদি মেধাবীদের উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সৃষ্টিকর্তার অনুকম্পা চাওয়া ছাড়া আর বিকল্প কিছু  নেুই...।
ছাত্রঃ ঠিক আছে, দু’মিনিট নীরব প্রার্থনা জানাই এসো....
শিক্ষার্থী দু’জন ঢাবি চত্বরের শিশির ভেজা ঘাসে ওপর দু’হাত বিচ্ছিয়ে দিয়ে মৌন প্রার্থনায় মনোনিবেশ করল। ঠিক ওই মুহূর্তে বাতাসে ঝাপটায় মাথার ওপরে দণ্ডায়মান গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের এক চিলতে আলোকরশ্মি যেন আছড়ে পড়ল ওদের প্রসারিত হাতের ওপর। লেখক খেয়াল করলেন দু’টো ছোট্ট পাখি কিচির মিচির   করতে করতে গাছের ডাল থেকে দিয়ে নীল আকাশের বুকে পাখা মেলে দিয়েছে।
সিংড়ায় পৌর মেয়রের অনুপস্থিতিতে ২ প্যানেল মেয়র কর্মরত!
প্যানেল মেয়রের স্বাক্ষর নিয়ে পৌরবাসী বিপাকে
নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের সিংড়া পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র শামিম আল রাজীর এক মাসের জন্য বিদেশে অবস্থানের কারণে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে বর্তমানে দুইজন কাউন্সিলর নিজেদের প্যানেল মেয়র ঘোষণা দিয়ে পৌরসভার যাবতীয় কাজ করছেন। এতে পৌর নাগরিকদের মধ্যে কাজের স্থায়ীত্ব নিয়ে উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পৌরসভার একটি সূত্র দাবী করেন, গত ১২ জানুয়ারী সিংড়া পৌর সভার নির্বাচনের পর বিএনপি সমর্থিত ও নির্বাচিত মেয়র শামিম আল রাজীকে পরবর্তি ৩০ দিনের মধ্যে প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করার জন্য সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দায়িত্ব দেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেয়র শামিম আল রাজী ১ নং প্যানেল মেয়র হিসেবে ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: রফিকুল ইসলাম, ২নং প্যানেল মেয়র হিসেবে ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: সায়েদ আলী এবং ৩নং প্যানেল মেয়র হিসেবে ১,২ ও ৩ নং সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর আঞ্জুয়ারা বেগমকে নির্বাচিত করেন যা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়।
ওয়ার্ল্ড লার্নিং ভিজিটর এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে এর আমন্ত্রণে নির্বাচিত মেয়র শামিম আল রাজী ওয়াশিংটন ডিসিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য লেগি¯েস্লটিভ ফেলোজ প্রোগ্রাম ফর সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়ায় যোগদান করেন। এর আগে মেয়র শামিম আল রাজী ২২ সেপ্টেম্বর অফিস আদেশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যতিত অন্যান্য সকল স্বাভাবিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য ১নং প্যানেল মেয়র ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: রফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব অর্পণ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর জানান, মেয়র শামিম আল রাজী গত ২৩ সেপ্টেম্বর সিংড়া থেকে আমেরিকার উদ্যোশ্যে  রওনা দেওয়ার পর ২৫ সেপ্টেম্বর ১১টার দিকে মেয়রের কার্য্যালয়ে পৌরসভার ১৫জন কাউন্সিলর এক বিশেষ সভায় মিলিত হন। নিয়মানুযায়ী মেয়রের অনুপস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলামই সভার সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৫ কাউন্সিলর ক্ষমতার জোর ও ভয়ভিতি দেখিয়ে ২নং প্যানেল মেযর আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সায়েদ আলীকে দিয়ে সভাপতিত্ব করান। সভায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলরগণ ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আদনান মাহমুদকে প্যানেল মেয়র করা প্রস্তাব দিলে বিএনপি সমর্থিত অপর দশজন কাউন্সিলর তা প্রত্যাক্ষাণ করেন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ০৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম কে প্যানেল মেয়র বলবৎ রাখার দাবী জানান। কিন্তু বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলরদের দাবী অগ্রাহ্য করে জোর করে ও সকলকে ভয়ভিতি দেখিয়ে তাদের ক্রয়কৃত নোটিশ বই এবং রেজুলেশন বইতে সকলের উপস্থিতি স্বাক্ষর নেয়। এরপর তারা গত ২৭ সেপ্টেম্বর পৌর সচিবকে সাথে নিয়ে মেয়রের ব্যবহারকৃত গাড়িসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত নির্বাচিত এমপি জুনাইদ আহমেদ পলকের সহায়তায় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারীভাবে প্যানেল মেয়র হিসেবে আদনান মাহমুদকে নিয়োগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
এঘটনায় পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের দশ কাউন্সিলর সম্প্রতি সরকার সমর্থিত কাউন্সিলর আদনান মাহমুদের এই কাজে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পৌরসভার জন্ম সনদে স্বাক্ষর, পরিচয় পত্র ও ব্যবসায়ী লাইসেন্স প্রদান সহ বিভিন্ন কাগজ পত্রে রফিকুল ইসলাম রফিক ও আদনান মাহমুদ দুই জনই প্যানেল মেয়র হিসেবে স্বাক্ষর প্রদান ও অফিস দেখাশোনার কাজ করছেন। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ ওয়ার্ডবাসী মেয়রের অনুপস্থিতিতে নিজেদের প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রে কোন প্যানেল মেয়রের স্বাক্ষর কাজে আসবে অথবা পরে বাতিল হয়ে যাবে কিনা এ নিয়ে পরেছেন উদ্বিগ্নতায়। বিএনপি সমর্থিত ১০কাউন্সিলর ও আ’লীগ সমর্থিত ৬কাউন্সিলরদের মধ্যে প্যানেল মেয়র গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব, মেয়রের বিদেশ যাত্রা এবং দুই কর্মচারীর অনুপস্থিতিতে অচল হয়ে পড়েছে সিংড়া পৌরসভা। গত সাত দিন ধরে এই অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রয়োজনী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী। কর্মকতা-কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ আর হতাশ। কাউন্সিলরা আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই গ্র“পে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কাজ কর্মে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। অনেক প্রকল্পের মুখ আবার থুবড়ে পড়েছে। নেই কোন উন্নয়ন কাজ।
পৌরসভা সূত্র জানায়, গত ৭দিন ধরে পৌর সচিব আব্দুল মতিন ছুটি না নিয়ে বাড়ি চলে যান। এর আগে ক্যাশিয়ার আল মামুন সচিবের কাছে ছুটি নিয়ে চল্লি¬শ দিনের তাবলীগে গেছেন। এখন পৌরসভা দেখভালের জন্য কেউ নেয়। ফলে পৌর প্রশাসনের সকল কাজ কর্মে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে রফিকুল ইসলাম জানান, বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র (অফিস আদেশ অনুয়ায়ী) রফিকুল ইসলাম রফিক দাবি করে বলেন, আমেরিকা যাওয়ার আগে নির্বাচিত মেয়র শামিম আল রাজী এক অফিস আদেশের মাধ্যমে তাকেই প্যানেল মেয়র হিসেবে অফিস পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করেছেন যার প্রমাণপত্র তাঁর কাছেসহ অন্যান্যদের কাছেও রয়েছে। ০২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আদনান মাহমুদ ক্ষমতার জোরে নিজেকে অবৈধভাবে প্যানেল মেয়র হিসেবে পরিচয় দিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন কাজ করছেন যা আইন সঙ্গত নয়। অফিস আদেশ অনুয়ায়ী কাগজে কলমে আমি প্যানেল মেয়র হিসাবে মেয়র আমাকে নির্বাচিত করেছেন। বর্তমানে পৌরসভার জন্ম সনদ, পরিচয় পত্র ও ব্যবসায়ী লাইসেন্স প্রদান সহ বিভিন্ন কাগজ পত্রে প্যানেল মেয়র হিসেবে স্বাক্ষর প্রদান ও অফিস দেখাশোনার কাজ করছি। তবে তিনি পৌরসভা অচলের কথা স্বীকার করে বলেন, সচিব ছুটি নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। মেয়র দেশে ফিরলেই সব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আ.লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর (প্যানেল মেয়র হিসাবে দাবি) আদনান মাহমুদ বলেন, গত ২৫ সেপ্টম্বর সকল কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে আমাকে প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করা হয়েছে।। যদি মেয়র কাউকে প্যানেল মেয়রের দায়িত্ব দেয়, তাহলে চুরি করে দেয়া হয়েছে। এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে আমার প্যানেল মেয়রের কাগজ জমা দেওয়ার আগে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আনিসুল ইসলাম সিংড়া পৌরসভার সচিব আব্দুল মতিনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে নির্বাচিত মেয়র বিদেশ যাওয়ার আগে কাউকে প্যানেল মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেছেন কিনা। উত্তরে তিনি না বলায় উপসচিব মহোদয় তাঁর কাগজপত্র জমা নেন।
পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ নাগরিকরা মনে করেন, নির্বাচিত মেয়রের অনুপস্থিতিতে প্যানেল মেয়র নিয়ে যে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা সকল পৌরবাসীর জন্যই উদ্বিগ্নের কারণ। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নির্বাচিত মেয়র শামিম আল রাজি দেশের বাহিরে থাকায় এবিষয়ে জানা সম্ভব হয়নি। 

Year-18 # Issue-33 # 2 Octobaer 2011

শান্তিতে নোবেল পেলেন তিন নারী
ডেস্ক রিপোর্ট
এবছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতে নিলেন তিন নারী। এরা হলেন, লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট এলেন জনসন সারলিফ এবং একই দেশের নাগরিক লেমাহ বোয়িই এবং ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান। নোবেল কমিটি গতকাল শুক্রবার এ ঘোষণা দিয়েছে। নরওয়ের নোবেল শান্তি কমিটি বলেছে, মহিলাদের নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত করতে তারা অহিংস পথে যে সংগ্রাম চালিয়েছেন তার স্বীকৃতি হিসেবেই এই তিনজনকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হলো।
এলেন জনসন সিরলিফ আফ্রিকার প্রথম গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত নারী প্রেসিডেন্ট। তিনি লাইবেরিয়ার শান্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন। এছাড়াও দেশটির অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নে রয়েছে তার ব্যাপক অবদান। অপরদিকে, লিমাহ জিবোই নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে নারীদের সংগঠিত করার কাজ করছেন। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে তিনি লাইবেরিয়ার নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন। লাইবেরিয়ার যুদ্ধ পরবর্তী পশ্চিম আফ্রিকার নারীদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে প্রভাবশালী। অন্যদিকে ইয়েমেনে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কথিত ‘আরব বসন্ত’র আগ পর্যন্ত কাজ করে গেছেন তাওয়াক্কুল কারমান। এছাড়াও ইয়েমেনের গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের পথিকৃৎ বলা হয় তাকে। একই সঙ্গে তিনি কাজ করছেন নারীর ক্ষমতায়নের জন্য। অন্যদিকে তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। তিনিই সেই নারী যিনি ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহ’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে মানুষ জড়ো করেন।
আর শান্তিতে এই তিন নারীর নোবেল পাওয়া নিয়ে নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, নোবেল কমিটি আশা করছে শান্তিতে এই তিন নারীর নোবেল প্রাপ্তি আরও অনেক দেশের নারীর কাছে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেবে। একই সঙ্গে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং গণতন্ত্রের পথে যাত্রায় বিশ্বের নারীরা এগিয়ে আসবেন।
লেমাহ বোয়িই: জাতিগত এবং ধর্মীয় বিভাজন রেখা মিটিয়ে নারীদের সংহত ও সংগঠিত করার মাধ্যমে লাইবেরিয়ার দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ বন্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণই শান্তিতে লেমা বোয়িই নোবেল জয়ে বিবেচিত হয়েছেন। পাশাপাশি নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণে তার অবদানের বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে নোবেল কমিটির কাছে। লাইবেরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর আগ থেকে পশ্চিম আফ্রিকায় নারীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে কাজ করে আসছেন মানবাধিকার কর্মী লেমা। নারীদের সংগঠিত করার মাধ্যমে ২০০২ সালে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট চার্লস টেইলরকে গৃহযুদ্ধের অবসানে চাপ প্রয়োগ করার অবদানও তারই। আর এই নারীরা ছিলেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া দুই পক্ষের যোদ্ধাদের মা, স্ত্রী কিংবা বোন। এলেন জনসন সারলিফের তুলনায় বোয়ি লাইবেরিয়ার বাইরে অনেকটা কম পরিচিত বললে অত্যুক্তি হবে না। তবে দেশে তার ব্যাপক পরিচিতি ও সমর্থন রয়েছে। গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত দেশটিতে যুদ্ধ পরবর্তী ২০০৫ সালের নির্বাচনে এলেন জনসন সারলিফের পক্ষে প্রচারে খ্রিস্টান ও মুসলিম সমর্থকদের নিয়ে লেমা বোয়ি ১৫টি প্রদেশে কাজ করেন। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত উইমেন পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি  নেটওয়ার্ক আফ্রিকা নামে মানবাধিকার সংগঠনের সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা তিনি। মূলত এটি পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে নারীদের নিয়ে কাজ করে।
এলেন জনসন সারলিফ: লাইবেরিয়ায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে ২০০৫ সালে আফ্রিকার প্রথম নির্বাচিত নারী প্রেসিডেন্ট এলেন জনসন সারলিফ তার সমর্থকদের কাছে ‘লৌহমানবী’ নামেই পরিচিত। প্রেসিডেন্ট পদে এক মেয়াদে দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্র“তি দিলেও গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন তিনি। তবে এরই মধ্যে গতকাল শুক্রবার জয় করে নিলেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। নোবেল কমিটি তার অহিংস উপায়ে নারীদের নিরাপত্তা এবং অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করার বিষয়টিকে বিবেচনা করেই পুরস্কারের জন্য তার নাম ঘোষণা করে। ৭২ বছর বয়সি সারলিফ লাইবেরিয়ার ২৪তম এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট। এর আগে ১৯৭৯ সাল থেকে ৮০ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম টোলবার্টের অধীনে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি। এরপর দেশ ছেড়ে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন অর্থনীতি বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী এই নারীনেত্রী। ১৯৯৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হলেও ২০০৫-এর নির্বাচনে ঠিকই জনগণের আনুকূল্য পান তিনি। হয়ে যান আফ্রিকায় নির্বাচিত প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান। ১৯৩৮ সালের ২৯ অক্টোবর মনরোভিয়ায় সারলিফের জš§। ছাত্রী অবস্থায়ই মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন সারলিফ। স্বামী জেমস সারলিফ। আর এরপরই লাইবেরিয়া ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ঘর-সংসার শুরু করলেও পড়াশোনাটা ছাড়েননি অর্থনীতির এই ছাত্রী। নিজ আগ্রহে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসন থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিষয় এবং এরপর ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো, বাউল্ডার থেকে নেন অর্থনীতির উপর ডিগ্রি। ১৯৬৯ থেকে ৭১ পর্যন্ত অর্থনীতি ও পাবলিক পলিসি বিষয়ে পড়াশোনা শেষে লোক প্রশাসন বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রি নেন তিনি।
তাওয়াকুল কারমান: তাওয়াকুল কারমান (৩২) ইয়েমেনে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। আরব বিশ্বে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনের উত্তাল সময়ে ইয়েমেনে নারী অধিকারের জন্য সংগ্রামে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনের জন্য কারমান স্বীকৃতি পেয়েছেন। এদিকে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ৩২ বছর বয়সী তাওয়াক্কুল কারমান তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমি এই পুরস্কার পেয়ে খুব খুশি। যে তরুণরা ইয়েমেনের বিপ্লবের জন্য কাজ করছেন, তাদের জন্য আমার এই পুরস্কার।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিরোধী দল আন্দোলনের ছক আঁকছে। সে সঙ্গে সরকারও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়াই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। এ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে চলছে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। আর এতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বস্তুত সরকারি দল ও বিরোধী দল এখন হার্ডলাইনে অবস্থান করছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, পরিস্থিত যেদিকে এগুচ্ছে তাতে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার জন্য সরকার ও বিরোধী দল পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করে চলছে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নয়পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আয়োজিত বিশাল জনসভায় বিএনপির চেয়ারপারসন তো ঘোষণা দিয়ে দিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে একতরফা সংবিধান পরিবর্তনের অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করতে না পারায় জনগণ আওয়ামী লীগের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এজন্য ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এছাড়া খালেদা জিয়া অক্টোবরের পরেই ফাইনাল খেলা খেলার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের আগেই এ সরকারের পতন ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করবে। জালেম সরকারকে হটাতে বৃদ্ধ বয়সে আরেকটি আন্দোলন করতে চান বলেও দেশবাসির সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।
তবে বিরোধী দলের হুঙ্কার আমলেই নিচ্ছে না সরকার। বরং অনেক সময় হাসি ঠাট্টার বিষয় হিসেবে দেখছে। আবার পাল্টা সমালোচনার তীর যেমন ছুড়ছে তেমনি সময়ের আগে নির্বাচন না দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ও ব্যক্ত করছে।
গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেছেন যে যাই বলুক আমরা আমাদের কাজ করে যাবো। আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নয়। আর বিএনপি যদি রাজনীতি করে তাহলে অবশ্যই সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এজন্য তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সংসদে এসে আলোচনার আহ্বান জানান।
গত পরশু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, খেলোয়াড়, রেফারী, লাইন্সম্যান সরকারি দলের হলে সে খেলা বিএনপি খেলবে না। কেবল মাত্র লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করলেই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার সরকার পতন দিবাস্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়। কারণ দিন তারিখ ঠিক করে কারো পতন ইতিহাসে নেই। এছাড়া ২৭সেপ্টেম্বরের জনসভা যদি প্রথম রাউণ্ড হয় তবে দ্বিতীয় রাউণ্ড, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এখনো বাকি রয়েছে। তারপর তো ফাইনাল খেলতে হবে। তিনি আরও বলেন, ফাইনাল ম্যাচের নিরপেক্ষ রেফারি ঠিক করা, রুলস- রেগুলেশন ঠিক করার জন্য বাইরে তর্ক না করে সংসদে এসে বিতর্ক শুরু করতে হবে।
এদিকে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলোর যে কোনো কর্মসূচিতে নাশকতা এড়াতে সরকারের ব্যাপক প্রস্তুতি লক্ষণীয়। জলকামান, সাজোয়া যান নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি সরকার বিরোধীদের কোনো আন্দোলনেই রাজপথে অবস্থান নিতে দিচ্ছে না। এছাড়া বিএনপিকে মূলত নয়াপল্টনের মধ্যে বেষ্টনী এঁটে দিয়েছে সরকার। কোনো স্থানেই সমাবেশের কোনো অনুমতি মিলছে না। অন্যদিকে বিরোধী দল যেইমাত্র একটু হট্টগোল বাধানোর চেষ্টা করে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ র‌্যাবের হস্তক্ষেপে তা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এছাড়া যেসব নেতৃবৃন্দ অধিক মাত্রায় সক্রিয় কিংবা সরকার বিরোধী সমলোচনার ঝড় তুলছেন, তাদের নামেই হচ্ছে নতুন নতুন মামলা। ঢাকাসহ সারাদেশেই বিএনপির নেতৃবৃন্দের নামে পুরোনো মামলাগুলো আবার সচল করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এদিকে তারেক জিয়াসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় নথিভূক্ত করা হয়েছে। বিরোধী দল যত বেশী কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে চাচ্ছে সরকার ততবেশী মামলার ঘেরাটোপে আটকে ফেলছে। এদিকে জাতীয় পার্টি এককভাবে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় এক-এগারো সরকারের আরেকটি সংস্করণ হয়তো জাতির ঘাড়ে ভর করতে পারে বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা। তাদের মতে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অবশ্যই ২০০৭ সনের সংঘাতময় পরিস্থিতির ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। কোনোভাবেই তৃতীয় শক্তিকে রাজনীতিতে আসতে দেয়া যাবে না। এদেশের গণতন্ত্র এমনিতেই শিশু গণতন্ত্র। একে কৈশরের দিকে এগিয়ে নিতে সরকার ও বিরোধী দল আন্তরিক না হলে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা আবারো হোঁচট খাবে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজ উদ্দীন আহমেদ বাংলাদেশ সময়কে বলেন, দেশ ক্রমেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা। তিনি আরো বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে দেশের মানুষের যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তাই সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার স্বার্থে নির্বাচন নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছানো খুব জরুরী।
আইন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
মুফতি হান্নানের জবানবন্দি নিয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের দেওয়া বক্তব্য বিচার প্রভাবিত করার শামিল বলে দাবি করেছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের নেতা রফিকুল ইসলাম মিয়া। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শনিবার এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি বলেন, তিনি (আইন প্রতিমন্ত্রী ) ২১ আগস্টের বিচারাধীন মামলার বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করে নিজের সাংবাবিধানিক শপথ ভঙ্গ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি আদালতকে প্রভাবিত করছেন। এটা বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। বিচারাধীন বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী নিজের চেম্বারে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন। এটাও তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পারেন না। ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় তারেক রহমানকে ‘ষড়যন্ত্র’ করে আসামি করা হয়েছে বলে দাবি করছে বিএনপি।
গত বুধবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মুফতি হান্নানের যে জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে তারেককে আসামি করা হয়েছে তা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন হুজি নেতা।  এর জবাবে পরদিন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মুফতি হান্নানের জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন যথাযথভাবে হয়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল বলেন, মুফতি হান্নান মঙ্গলবার আদালতের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছেন, ১৬৪ ধারার জবানবন্দি তার নয়, এটা সরকারের তৈরি করা স্টেইটমেন্ট। বিচারপতি হামিদুল হক চৌধুরীর একটি রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি রফিকুল বলেন, “কাউকে জোর করে সাক্ষ্য আদায় করার অধিকার রাষ্ট্রের নেই। বল প্রয়োগ করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি আদায় করা যাবে না। মুফতি হান্নান তার আইনজীবীর মাধ্যমে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন, যা আদালত নথিভুক্ত হয়েছে। এটা তো আদালতের দেখার কথা। এখন আইন প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে কেন কথা বলছেন। এ থেকে বোঝা যায়, প্রতিমন্ত্রীর শলাপরামর্শে তা (জবানবন্দি) হয়েছিলো। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রজš§’ নামে একটি সংগঠনের কর্মসূচিতে অংশ নেন রফিকুল।
তিনি বলেন, নির্যাতন চালিয়ে এবং হত্যার হুমকি দিয়ে জোর করে তারেক রহমানকে জড়াতে মুফতি হান্নানের কাছ থেকে মিথ্যা জবানবন্দি আদায় করা হয়েছিলো। খালেদার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলার অভিযোগও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন বিএনপি নেতা। মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সোহরাব উদ্দিন, আবদুল মতিন প্রধান, মুক্তিযুদ্ধ প্রজšে§র সৈয়দ মুজাম্মেল হোসেন শাহীন, ইব্রাহিম হোসাইন প্রমুখ।
পরিবেশ বিপর্যয়ে উন্নত দেশগুলো দায়ী: রুশনারা আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত বৃটিশ পার্লামেন্ট সদস্য রুশনারা আলী গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনার ধনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত বেসরকারি সংস্থা কেয়ারের কয়েকটি প্রকল্প ঘুরে দেখার সময় বলেছেন, ধনী দেশগুলোর কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে। ফলে পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। এতে হাওর অঞ্চলের মানুষ বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছেন। এ পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য উন্নত দেশগুলো দায়ী।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো। এ সময় তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অবহিত হন। রুশানারা  আলী বলেন, আমি বিরোধীদলের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন তহবিল বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী হিসেবে হাওরে অতিদরিদ্র মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখতে এসেছি। ঘর-বাড়িহারা মানুষের কষ্ট নিজের চোখে দেখেছি। বৃটেনে ফিরে যাওয়ার পর এ নিয়ে ক্যাম্পেইন শুরু করবো এবং একই সঙ্গে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবো। যেন পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সাহায্যের পরিমাণ বাড়ানো হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরবো।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, পরবর্তী নির্বাচনে তার দল লেবার পার্টি  ক্ষমতায় যাবে। অতীতে আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তখনও আমরা পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য তহবিল প্রতি বছর বাড়িয়েছি। ভবিষ্যতেও এ সাহায্য অব্যাহত থাকবে। সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বৃটিশ এমপি আরো বলেন, বাংলাদেশের হতদরিদ্র নারীরা শতকষ্টের মধ্যেও নিজেদের ভবিষ্যত ভাগ্য বদলাতে কঠোর পরিশ্রম করছে। তাদের এ প্রচেষ্টা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
নিত্যপণ্য সামগ্রীর ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মানুষ হিমশিম খাচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিত্যপণ্য সামগ্রীর লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি এবং অস্বাভাবিক হারে গণপরিবহণের ভাড়া বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে দেশের সারারণ মানুষের। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ মানুষকে সাংসারিক বাজেটে হিমশিম খেতে হচ্ছে।  নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরাই বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন দেশের সাধারণ মানুষ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অথনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বলেন, রাতারাতি জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এর জন্য সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সরকারের ব্যয় কমানো, সংকোচন মুদ্রানীতি ও রেশনিং প্রদ্ধতি চালু এবং খাদ্য মজুদ বাড়ানো দরকার। এর জন্য প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন।
অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মঈনুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় পণ্যের বেশির ভাগই আমাদের আমদানি করতে হয়। ডলারের বিপরীতে টাকার মানও কম। তার ওপর আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মান কমে টাকার মান আরো পড়ে যাচ্ছে। ফলে আমদানিকৃত পণ্যের দামও বেশি পড়ছে। এরপর আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে পণ্যমূল্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। আর এর প্রভাব পড়ে বাজারে, মাশুল গুণতে হয় সাধারণ মানুষকে।
ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের (ডব্লিউবিবিট্রাস্ট) প্রকল্প পরিচালক মারুফ রহমান বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি গণপরিবহণ খাতে অরাজকতায় মানুষকে দ্বিগুণ যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। মহানগরীর লোকসংখ্যার তুলনায় গণপরিবহণের সংখ্যা কম। এর ফলে নগরবাসী দুর্ভোগ তো লাঘব হচ্ছেই না বরং ভোগান্তির মাত্রা আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগ জিইয়ে রেখে প্রশাসন ঘুমাচ্ছে। এ ব্যাপারে কারো কোনো উদ্বেগ লক্ষ করা যাচ্ছে না।
সিটিজেন রাইটস্ মুভমেন্টের মহাসচিব তুষার রেহমান বলেন, রাজধানীর প্রতিটি রুটে যাত্রী পরিবহণ হয় মালিকদের ইচ্ছেমতো। অফিস সময় এবং অফিস ছুটির পর প্রতিটি বাস স্টপেজে শত শত মানুষ দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেন। হাজার চেষ্টার পরও বিড়ম্বনা পিছু ছাড়ছে না কর্মজীবী মানুষের। যানবাহনের অভাবে অনেকেই সঠিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছতে পারেন না। অতিরিক্ত ভাড়াকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত যাত্রী ও পরিবহণ শ্রমিকদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা লেগেই থাকে। অনেক সময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। আর সবচেয়ে দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে নারী যাত্রীদের।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু শহর নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে এর প্রভাব। গ্রামে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেখানকার মানুষরা ক্রমেই হারাচ্ছে ক্রয়ক্ষমতা। অলস সময় কাটছে কর্মহীন মানুষের। কাজ নেই বলে ঋণ আর দাদন নিয়ে অনেককে সংসার চালাতে হচ্ছে। ফলে বেকার যুব সমাজের একটা অংশ বিপথগামী হয়ে পড়ছে। তারা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কমকাণ্ডে। এর ফলে সারাদেশেরই আইনশৃ´খলা ক্রমাবনতির দিকে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অবস্থান উদ্বেগজনক : অর্থমন্ত্রী
ডেস্ক রিপোর্ট
পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছেÑএমন অভিযোগ বিশ্বব্যাংকের। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক সাহায্য বন্ধ রাখবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত বুধবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জে এফ কে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কে কিছুটা শীতল অবস্থা বিরাজ করছে বলেও জানান। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক বলেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। তারা তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে উপস্থাপন করেনি। বলেছে, কোনো তদন্ত সংস্থা ছাড়া বিশ্বব্যাংক এ ধরনের কোনো তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করবে না। বিশ্বব্যাংকের এ অবস্থানকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে মুহিত বলেন, দেশে ফিরেই বিষয়টি নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করব।
বিশ্বব্যাংকের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কী বা কার বিরুদ্ধে এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, তারা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির কথা বলেছে। তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে দুর্নীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম বলা যাবে না। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংককে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে যে, আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী মন্তব্য করেন, খালেদা জিয়া সরকারের সময়কালের দুর্নীতির জন্য এখনো আমাদের খেসারত দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশে কোনো প্রকল্প সহযোগিতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এমন কোনো তথ্য আমাদের হাতে নেই। অনেকেই বলেছেন, ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের কারণে প্রকল্প সাহায্য বন্ধ হতে পারে। কিন্তু তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং বাংলাদেশে এবার অর্থ-সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গরিবের বন্ধু উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, নোবেল পদক তাঁর প্রাপ্য ছিল। তবে ৩৬ বছর গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা করে তিনি কেন কোনো বিকল্প নেতৃত্ব সৃষ্টি করেননি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অর্থমন্ত্রী। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, বিএনপি ও জামায়াত চক্র বিশ্বজুড়ে এখন বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় নেমেছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া নিয়ে তারা আন্তর্জাতিক মহলে প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের সরকারের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আমরা সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছি এবং আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিচারকাজ সম্পন্ন হচ্ছে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অভিযোগ আনা হয়েছে। শিগগিরই বড় অপরাধী গোলাম আযমের নামে আদালতে অভিযোগপত্র উপস্থাপন করা হবে।
অর্থমন্ত্রী শেয়ারবাজার নিয়ে অস্থিরতা সম্পর্কে বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, শেয়ার মার্কেট এসব নিয়ে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব ব্যাপার। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন অর্থমন্ত্রী।
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি
বরিশাল নগরীর সরকারি কলেজে শিক্ষক সংকট
বিশেষ প্রতিনিধি, বরিশাল থেকে
বরিশাল নগরীর সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিতে মারাÍক বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষক সংকটের কারণে ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে না। হচ্ছে না নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষাও।  সরকারি বিএম কলেজ, সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ ও বরিশাল কলেজের ২ শতাধিক পদের মধ্যে ৭০টি পদই শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে শূন্য পদগুলোতে নিয়োগের জন্য একাধিকবার আবেদন করা হলেও কোনো লাভ হয়নি। সরকারি বিএম কলেজের অনার্স ও মাস্টার্সের ৩৭টি বিষয়ে শিক্ষকের জন্য মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে ১৯১টি। অথচ এর মধ্যে ৪৭টি পদই শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এর মধ্যে আবার বাংলা, রসায়ন বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক সংকট সবচেয়ে বেশি। মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে ১২টি পদের ৯টি, রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগে ১৪টি পদের ১০টি, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ৭টি পদের ৪টি এবং বাংলা বিভাগে ১২টি পদের মধ্যে ৭টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। অন্যান্য বিভাগে শিক্ষক স্বল্পতা কম হলেও সেখানেও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। মৃত্তিকা বিভাগের এক শিক্ষার্থী জহির জানান, শিক্ষক স্বল্পতার কারণে অনেক সময়ই ক্লাস হয় না। যার ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের ৫৮টি পদের মধ্যে ১৬টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এর মধ্যে মার্কেটিং বিভাগে ১১টি পদের ৫টি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৯টি পদের ৪টি পদ শূন্য রয়েছে। সরকারি বরিশাল কলেজে শূন্য রয়েছে ৪১টি পদের মধ্যে ৭টি। এখানেও মার্কেটিং ও সমাজ কল্যাণ বিভাগে শিক্ষক সংকট চরমে। বিএম কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ননী গোপাল দাস জানান, শিক্ষক সংকটের বিষয়টি একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষা কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না বলে তিনি দাবি করেন।
আ’লীগের সমর্থন পাচ্ছেন না শামীম আইভি কেউই
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী চূড়ান্ত না করে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আভাস দিয়েছেন, এককভাবে কোনো প্রার্থীকেই সমর্থন দেয়া হচ্ছে না। এর ফলে শামীম ওসমানের শিবিরে হতাশা অন্যদিকে আইভীর শিবিরে স্বস্তির আলামত লক্ষ্য করা গেছে। দলের নেতাদের এ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের দুই গ্র“পের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে নতুন চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভি কিংবা এ কেএম শামীম ওসমান দু’জনেই মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এটাই আপাতত মনে করা হচ্ছে। গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, কোনো একজনকে মনোনয়ন দিলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একজনকে মনোনয়ন দিলে অপরজন যদি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন তবে দলের ভোট ভাগ হয়ে যাবে। দুই জনের দলাদলিতে বিরোধী দলের প্রার্থী সুবিধা পেতে পারেন। তাছড়া সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এখানে দলীয় নমিনেশনের কিছু নেই। এজন্য আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে কাউকে সমর্থন না দিয়ে প্রার্থীতা উš§ুক্ত করে দিচ্ছে।
গতকাল টেলিভিশনে দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুবুল হানিফের এ বক্তব্য প্রচারের পরেও নারয়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারছেন না। এ ব্যাপারে শামীম ওসমান বলেন, দলের একক প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার অনেক সময় রয়েছে। ১২ অক্টোবর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ ব্যাপারে ডা. আইভীর কোনো প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও তার পক্ষে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, জনপ্রিয়তার দিক থেকে ডা. আইভি অনেক এগিয়ে আছেন। উš§ুক্ত প্রার্থী দিয়ে দল নির্বাচন করলে আইভী জয় লাভ করবেন এটা নিশ্চিত। আর এজন্যই দলীয় হাইকমান্ড মাঠের পরিস্থিতি বিবেচনা করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দুইজনের কাউকেই সমর্থন দিচ্ছে না। তবে আমার বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত ডা. আইভীই হবেন দলের সমর্থিত একমাত্র প্রার্থী। অন্যপ্রার্থী নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়াবেন। অন্যদিকে স্থানীয় রাজনীতিতে শামীম ওসমানের সমর্থক হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা সাংবাদিকদের জানান,  স্থানীয় নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন দেয়ার কোনো বিষয় নেই। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে মনোনয়নের বিষয়ে তীব্র সমালোচনা করে কোনো দল যাতে কোনো প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন না দেয় সেজন্য হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। আর এজনই আওয়ামী লীগ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে দলীয় সমর্থন দিচ্ছে না। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানকে গ্রীন সিগন্যাল দিয়েছে। নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় নেতারা তার পক্ষে ভোটের প্রচারণায় আসবে। গতকাল এ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের দু’গ্র“পের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে নতুন চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন যাবত নারায়ণগঞ্জের সব মহল অপেক্ষা করছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের টিকিট কে পাচ্ছেন তা দেখার জন্য। শামীম ওসমানের সমর্থকরা দৃঢ়ভাবে জানিয়েছিলেন তাদের নেতাই দলের সমর্থন পাবেন। এমনকি শামীম ওসমানও বলছিলেন দল তাকে সমর্থন দিবে। তিনি সমর্থন পেয়ে গেছেন সে কথা প্রচারণায় এসেছিল। শামীম সমর্থকদের অনেকে দলীয় সমর্থন নিশ্চিত মনে করে নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেছিল। এই মিষ্টি বিতরণ দেখে ডা. আইভির সমর্থকরা অবশ্য বলেছিল এতো আনন্দের কি হলো। আগে ঘোষণা আসুক তার পরে দেখা যাক। অন্যদিকে ডা. আইভি নিজেই জোর দিয়ে বলছিলেন তাকেই সমর্থন দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তাকেও এককভাবে দল থেকে সর্মথন দেয়া হলো না । তবে গতকাল কাউকে সমর্থন না দেয়ার খবরে আইভি সমর্থকরা বেশ উৎফুল¬ ছিল। আইভীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদির, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নিজামউদ্দিন আহম্মেদ, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত সাংবাদিকদের জানান, জনপ্রিয়তার দিক থেকে সাবেক মেয়র ডা. আইভী শামীম ওসমানের তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছেন। তারা দাবি করেন ডা. আইভী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচিত হবেন এটা শতভাগ নিশ্চিত। দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই তারা আইভীর পক্ষে কাজ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। গতকাল চ্যানেল আই মাহাবুবুল হানিফের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার প্রচার করে। এতে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে কাউকে সমর্থন দেয়া হচ্ছে না বলে তিনি জানান। কারণ হিসেবে বলেন, এতে দলে বিভক্তি বাড়বে। নারাণণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আঃ রহমান সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগ বড় এবং গণমানুষের সংগঠন। যে যাই বলুক দলের নেতৃত্বে কোনো অথর্ব নেই। সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাশা করছিলাম। এখানে কাউকে সমর্থন না দিয়ে সবার মন রক্ষা করার প্রয়াস চালানো হয়েছে। তবে যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করা গেলে উত্তম হতো। আমরা মনে করি ডা. আইভীর প্রাথমিক বিজয় হয়েছে।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান ও ডা. সেলিনা হায়াত আইভী দুই জনই অনড় অবস্থান নেন। পরে দলীয় হাইকমান্ড দুইজনকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে আইভি ও শামীমকে বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তারা কেউই  প্রস্তাবে রাজি না হয়ে নির্বাচন করার জন্য অনমনীয় মনোভাব প্রকাশ করে। দলীয় হাইকমান্ড সমঝোতার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তাদের ভেবে দেখার চারদিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু তারা কেউই কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এ পর্যায়ে সমর্থন প্রত্যাশী ডা. আইভি এবং শামীম ওসমানকে পরস্পর বিরোধী কথাবার্তা না বলতে নির্দেশ দিয়ে বিদায় জানান নেতৃবৃন্দ। গত বৃহস্পতিবার সে সময় শেষ হলেও শামীম কিংবা ডা. আইভি কেউ তাদের অবস্থান থেকে সরেননি। উভয়ে নিজের মতো করে গণসংযোগ কর্মী সংগঠিত করছেন এবং প্রস্তুতি নিচ্ছেন নির্বাচনের জন্য।
 কৌশলে চলছে প্রচারনা 
একই বিষয়ে দুইবার আচরন বিধি লংঘন করলে প্রার্থীতা বাতিল
আহসান সাদিক, নারায়ণগঞ্জ থেকে
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরন বিধি লংঙ্ঘন করে প্রাচারনা চালাচ্ছেন। বিধি নিষেধ থাকায় প্রার্থীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন । কেউ সভা করছেন আবার কেউবা করছেন গনসংযোগ।এ জন্য  মেয়র কাউন্সিলর প্রার্থীরা বেছে নিচ্ছেন খুব সকাল অথবা গভীর রাত। জুম্মার নামাজ, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন প্রার্থীরা । এ ভাবে গত কয়েকদিন যাবত প্রাচারনা চালাচ্ছ  প্রার্থীরা। সাধারনত এসময় নির্বাচন কর্মকর্তারা কেউ ঘুমে থাকে আবার কেউ থকেন অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত।  অনেক প্রার্থী আবার ভোট চাওয়ার কৌশল হিসেবে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে প্রার্থীর পক্ষে তার সমর্থক কেউ ভোটের জন্য আবেদন করছে ।      নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন কমিশন  সূত্রে জানা গেছে, আচরন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে এ পর্যন্ত  তিন মেয়র প্রার্থী সহ ২০ জন প্রার্থীকে  সর্তক নোটিশ প্রদান করা হয় । কিন্তু অনেক প্রার্থী সর্তক নোটিশের জবাব দিয়েও পুনরায়   আচরন বিধি লংঙ্ঘন করছেন। প্রথম নোটিশ প্রদানের এক দিন পর শামীম ওসমান শহরের দেওভোগ এলাকায়  ও তার স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি জামতলা হিরা কমিউিনিটি সেন্টারে মহিলাদের নিয়ে সভা করেন। পরে নির্বাচন কর্মকর্তারা খবর পেয়ে দুটি সভা পন্ড করে দেয় । দেওভোগের সভা থেকে প্রমান স্বরুপ দশটি চেয়ার জব্দ করেন । এর এক দিন পর আবার শামীম ওসমানের স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি  এবং বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের স্ত্রী হালিমা খন্দকার সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গণসংযোগ করেন। তাদের এ গনসংযোগের ছবি স্থানীয় পত্রিকায় ছাপা হবার পর বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের গোচরে আসে এবং আবারও দুই মেয়র প্রার্থীকে সতর্ক করে নোটিশ প্রদান করা হয় ।
অন্যদিক মেয়র প্রার্থী শামীম ওসমানের বড় ভাই নারায়ণগঞ্জ পাচঁ আসনের সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে উন্নয়ন কর্মকান্ড পর্যবেক্ষন, গ্যাসের চাপ বাড়ানোর জন্য গ্যাসের নতুন মিটার বসানো এবং শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেরী সার্ভিস চালুর জন্য এপ্যোচ সড়ক নিমান কাজের জন্য জায়গা পরিদর্শনে যান তিনি। সাথে নিয়ে যান বিআইইব্লউডিটিএ সহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের ৮ জন কর্মকর্তাকে।এ ঘটনায়  নির্বাচন কমিশন  সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান ও সরকারী কর্মকর্তাদের সর্তক করে ২৪ ঘন্টার সময় বেধে দিয়ে জবাদ দেয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করেন। অন্য দিকে প্রচারনার নির্ধারিত সময়ের আগে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলায় মেয়র প্রার্থী ডা. আইভিকে সতর্ক করে পত্র দেয়া হয়েছিল । এর পর আর তার বিরুদ্ধে আচরণ বিধি লংঘনের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি ।
একটি সুত্র জানায়, মেয়র প্রার্থী শামীম ওসমান গতকাল শুক্রবার সকালে ৮ নং ওয়ার্ডে সমাবেশ করছেন। এমন খবর পেয়ে রিটার্নিং অফিসার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সেখানে প্রেরন করেন। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার জানান, আমরা সংবাদ পেয়ে সেখানে লোক পাঠিয়ে ছিলাম কিন্তু সভা সমাবেশষ করেছে এমন কোন প্রমান পাওয়া যায়নি ।  তার সাথে ৩/৪ জন লোক ছিল । হেটে হেটে গণ সংযোগ করার সময় তাকে দেখে কয়েকজন জড়ো হয়েছিল। একজন প্রার্থীকে দেখে ভোটাররা দাঁড়াবেন এটা স্বাভাবিক বিষয় । এতে আচরন বিধি লংঘন হয় না ।
রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান আরো জানান, এ পর্যন্ত তিন মেয়র প্রার্থী সহ ২০ জন প্রার্থীকে সতর্ক করে নোটিশ দেয়া হয়েছে । একই বিষয়ে দুই বার আচরন বিধি লংঘন করলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন ছাড় নেই । এর আগে শামীম ওসমান এবং এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার একই বিষয়ে দুইবার আচরন বিধি লংঘন করেননি। তাদের একই বিষয়ে দুইবার সতর্ক করা হয়নি। প্রথম বার তারা নিজেরা আচরন বিধি লংঘন করেন । পরের বার তাদের স্ত্রীরা আচরন বিধি লংঘন করেন । এ পর্যন্ত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারনা চালানোর কারনে ১০/১২ জনকে নোটিশ দেয়া হয়েছে । গতকাল বৃহষ্পতিবার আরো তিন জন কাউন্সিলর প্রার্থীকে এবং আজ শুক্রবার ২ জনের নামে নোটিশ প্রস্তত করা হচ্ছে । একই কারনে দ্বিতীয়বার আচরন বিধি ভঙ্গ করলে ঐ প্রার্থীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে । এক্ষেত্রে প্রার্থীতা বাতিলসহ জরিমানার বিধান রয়েছে ।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরন বিধি মালা ২০১০-এর ৯ ধারায় বলা হয়েছে,-কোন প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি নির্বাচন পূর্ব সময়ে এই বিধি মালার কোন বিধান লংঘন করিলে উহা একটি অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনধিক ৬ (ছয়) মাস কারাদন্ড অথবা অনধিক ৫০.০০০/-(পঞ্চাশ হাজার) টাকা  অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
১০ এর (২) উপ ধারায় বলা হয়েছে, উপ-বিধি (১) এর অধীন তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তির পর কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, কোন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী বা তার নির্বাচনী এজেন্ট বা তাহার নির্দেশে বা তাহার পক্ষে তাহার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্মতিতে অন্য কোন ব্যক্তি এই বিধি মালার বিধান লংঘন করিয়াছেন বা চেষ্টা করিয়াছেন এবং অনুরুপ লংঘন বা লংঘনের চেষ্টার জন্য তিনি মেয়র বা কাউন্সিলর নির্বাচিত হইবার অযোগ্য হইতে পারেন  ,তাহা হইলে কমিশন,তাৎক্ষনিকভাবে লিখিত আদেশ দ্বারা, উক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করিতে পারিবে।
উল্লেখ্য, আগামী ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ কারীদের মনোনয়ণপত্র এরই মধ্যে বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। মেয়র পদে ৮ জন এবং ২৭ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে পদে ২৪৭ জন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৫৬ জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বৈধা ঘোষনা করা হয়েছে।
নাসিক নিবার্চন
ঝুঁকিপূর্ণ  ২৫ কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাাচনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে এমন কয়েকটি ঝুকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে প্রার্থীদের ব্যয় সংকোচন ও আচরণবিধি মনিটরিংয়ে মাঠে নেমেছে নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকরা। স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারণা চালানোর কারণে ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী ওমর খৈয়াম চঞ্চল এবং ১৬ নং ওয়ার্ডের সাইফুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী হুমায়ন কবিরের বিরুদ্ধে লিফলেট বিতরণ করার অভিযোগ তদন্ত করে দেখছে কমিশন। গতকাল শুক্রবার কমিশনের পর্যবেক্ষক দল সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজের সময় উপস্থিত ছিলেন তারা।
বেলা ১১ টা থেকে রির্টানিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের নিয়ে শহরের নলুয়া, দেওভোগ, পশ্চিম দেওভোগ, চাষাঢ়া, তল্লা, খানপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ৭টি ওয়ার্ডে বেশ কিছু ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা কেন্দ্র গুলোর আশে-পাশে ঘুরে দেখেন। যেসব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে সেসব কেন্দ্রের স্থান চিহ্নিত করেন তারা।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকার মসজিদ,  মাদ্রাসা উন্নয়নে অর্থ দানের  প্রতিশ্রুতি বা সরাসরি অর্থ প্রদান বা অন্য কোনো সহায়তা প্রদান করছেন কি-না তা তদারকি করতে মাঠে নেমেছেন তারা। গতকাল জুমার নামাজের পরে একটি ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলার প্রার্থীর পক্ষে লিফলেট বিতরণের প্রমাণ পেয়ে তাকে শোকজ করেছেন রিটানিং অফিসার। এছাড়া অপর এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠায় তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া শুক্রবার বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছেন কর্মকর্তারা। কোন প্রার্থী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছেন কিনা তাও পর্যবেক্ষণ করবেন তারা।
রির্টানিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান জানান, সিটি কর্পোরেশনের ২৭টির ওয়ার্ডের মধ্যে ৯ টি ওয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ২৫টি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এ ছাড়াও প্রয়োজন বোধ করলে কেন্দ্রের বাইরেও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হতে পারে। কোন প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখছে নির্বাচন কমিশন। যদি কোন নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করে তাহলে তার প্রার্থীতা বাতিল করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, শুক্রবার নাসিক ১৫ নং ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলার প্রার্থী হুমায়ন কবিরের পক্ষে কিছু লোক লিফলেট বিতরণ করছিল। অভিযোগ পাওয়ার পর আামাদের কর্মকর্তারা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে। সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় পত্রিকায় কোন প্রার্থী বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোটারদের কাছে দোয়া চাচ্ছেন। এটাও এক ধরণের প্রচারণা। এরকম দুজন কাউন্সিলার প্রার্থীকে চিহ্নিত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা হচ্ছেন, ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী ওমর খৈয়াম চঞ্চল এবং ১৬ নং ওয়ার্ডের সাইফুল ইসলাম।   
স্টিভ জবস আর নেই
একজন স্বপ্নদ্রষ্টার জীবনাসান
ডেস্ক রিপোর্ট
বিশ্বখ্যাত কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস আর নেই। গত বুধবার ৫৬ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আলতোয় তিনি মারা যান। গতকাল বৃহস্পতিবার অ্যাপলের ওয়েবসাইটে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। অ্যাপলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, স্টিভের মেধা, ভালোবাসা এবং উদ্যমই ছিল অসংখ্য উদ্ভাবনের নেপথ্যে, যা আমাদের সবার জীবনযাত্রার মানোন্নয়ে বিশাল ভূমিকা রেখেছে। স্টিভের জন্যই বিশ্ব আজ অনেক উন্নত।
অ্যাপল এই স্বপ্নদ্রষ্টার সম্মানে তাদের ওয়েবসাইটে স্টিভের সাদাকালো একটি বড় ছবি জুড়ে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারে ভুগছিলেন এই কম্পিউটার প্রকৌশলী ও উদ্যোক্তা। ম্যাক, আইফোন ও আইপডের মতো বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিস্ময়ের উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান নির্বাহী ছিলেন।
অ্যাপলের ওয়েবসাইটে তার মৃত্যুসংবাদ জানানোর পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। এই তালিকায় অ্যাপলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত মাইক্রোসফটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং ফেইসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জুকারবার্গও রয়েছেন। চলতি বছরের অগাস্টে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন জবস। তার স্থলাভিষিক্ত হন জবসের দীর্ঘদিনের সহকর্মী টিম কুক। শারীরিক অসুস্থতার কারণেই অ্যাপলের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত জবস পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। সেখানে লেখা, ‘স্টিভ জবস: ১৯৫৫-২০১১’। প্রতিষ্ঠানটির সদর দপ্তরের বাইরে তাদের পতাকা অর্ধনমিত। দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন স্টিভ জবস। অগ্ন্যাশয়ে বিরল ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। তার অসুস্থতার কারণে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যতসহ, বিনিয়োগকারী এবং স্টিভের ভক্তদের মাঝে গভীর উদ্বেগ ছিল। অ্যাপল তাদের নতুন আইফোন বাজারজাতের ঘোষণা দেওয়ার একদিন পরই স্টিভ মারা গেলেন। স্টিভের মৃত্যুর খবর শোনার পর বিল গেটস তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, পৃথিবী গৌরবজনক প্রভাববিস্তারী এক বিরল ব্যক্তিত্বকে প্রত্যক্ষ করেছে। আগামী অনেক প্রজš§ তাকে স্মরণ করবে। আমরা যারা তার সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, তারা সত্যিই ভাগ্যবান। নিশ্চিতভাবেই এ এক বিশাল সম্মানের বিষয়। নিউ ইয়র্কে অ্যাপলের বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে শোকার্তরা মোমবাতি জ্বালিয়ে এবং ফুল দিয়ে স্টিভের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
১৯৭৬ সালে বন্ধু স্টিভ ওজনিয়াককে সাথে নিয়ে তিনি অ্যাপল প্রতিষ্ঠা করেন। দ্রুতই এটি বিশ্বের শীর্ষ কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। চলতি বছরের ২৪ অগাস্ট অ্যাপলের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান স্টিভ জবস। স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে নিজ হাতে গড়া ওই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদটি ত্যাগ করেন তিনি। তার স্থলাভিষিক্ত হন চিফ অপারেটিং অফিসার টিম কুক।
এ বছরের ১৭ জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্যগত কারণে ছুটিতে ছিলেন ৫৬ বছর বয়সী স্টিভ জবস। তিনি কতদিন ছুটিতে থাকবেন ওই সময় তা জানানো হয় নি। পরবর্তী সময়ে আবারও তিনি ফিরে আসেন তার নিজ হাতে গড়া স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে।প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে জবস তার অসুস্থতাকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। অ্যাপল বোর্ড বরাবর পাঠানো সংক্ষিপ্ত একটি চিঠিতে জবস লিখেছিলেন, “আমি সবসময়ই বলেছি, যদি এমন কোনোদিন আসে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব ও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি না, তবে আমিই সেটি প্রথম জানাবো। অপ্রত্যাশিতভাবে সেই দিনটি এসেছে। আমি অ্যাপলের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।চিঠিতে জবস সব সহকর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছিলেন। ২০০৪ সালের অগাস্টে স্টিভ জবসের শরীরে বিরল ক্যান্সার ধরা পড়ে। তখন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার ক্যান্সারআক্রান্ত টিউমার অপসারণ করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে স্টিভ জবসের পাকস্থলী প্রতিস্থাপন করতে হয়। সৃজনশীলতা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জবসের অসামান্য দক্ষতার কারণে অ্যাপল বিশ্বের অন্যতম প্রধান কম্পিউটার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ক্রমে অ্যাপল ও স্টিভ জবস সমার্থক হয়ে ওঠে। ২৪ অগাস্ট অ্যাপলের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আগে সর্বশেষ ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ছুটি নেন তিনি।
২০০৩ সালে জবসের অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার ধরা পড়ে। তবে নিজের অসুস্থতার কথা জবসের ঘনিষ্ট কয়েকজন ছাড়া কাউকে জানতে দেন নি তিনি।
অস্ত্রোপচার করতে অসম্মতি জানিয়ে বিকল্প বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা নিতে থাকেন জবস যার মধ্যে একটি ছিলো বিশেষ ধরনের খাদ্যাভ্যাস। অবশেষে ২০০৪ সালে অস্ত্রোপচার করাতে রাজি হন জবস।
২০০৫ সালে ৭০০ কোটি ডলার মূল্যে পিক্সার কিনে নেয় ডিজনি। এর ফলে ডিজনির সবচেয়ে বড় অংশীদার হয়ে দাঁড়ান জবস। এর দু’বছর পরে আইপডের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় আইফোন বাজারে আনেন। পণ্যটি বাজারে উš§ুক্ত হওয়ার প্রায় এক দিন আগে থেকে স্থানীয় বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর সামনে ক্রেতাদের বিশাল লাইন তৈরি হয়। ২০০৮ সালে বাজারে আসে অত্যাধিক হালকা ও পাতলা ম্যাকবুক এয়ার।
কালো টার্টেল নেক টিশার্ট এবং জিন্স পরিহিত চিরপরিচিত চেহারার জবস ২০০৯ সালে ক্ষীণকায় হয়ে আসতে থাকলে তার অসুস্থতার খবরটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সে বছর জবস ঘোষণা দেন, হরমোনজনিত অসুস্থতা থেকে মুক্ত হতে ছয় মাসের ছুটিতে যাচ্ছেন তিনি। সে বছর এপ্রিলে জবসের যকৃৎ প্রতিস্থাপন করা হয়। তার চিকিৎসকরা জানান, অস্ত্রোপচারের পর জবসের প্রতিস্থাপিত যকৃত চমৎকার কাজ করছে। তবে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে অ্যাপল ঘোষণা দেয়, শারীরিক অসুস্থতার কারণে অবসরে যাচ্ছেন জবস।
প্রতিদ্বন্দ্বী সমসাময়িক আরেক তথ্যপ্রযুক্তি জায়ান্ট বিল গেটসের মতো নিজের সম্পদ দাতব্য কাজে ব্যবহারের আগ্রহ কখনো খুব একটা দেখান নি জবস। স্বঘোষিত এ বৌদ্ধধর্মের অনুসারী পরিবেশবাদীদের অনেক বিরোধিতা স্বত্ত্বেও সহজে পুনঃব্যবহারযোগ্য পণ্য উৎপাদনের ব্যাপারেও ছিলেন বরাবরই অনুৎসাহী। নিজের সক্ষমতায় পরিপূর্ণ আস্থা ছিলো স্টিভ জবসের, এবং তার মতের বিরুদ্ধে যাওয়াদের বিরুদ্ধে ছিলো অসহিষ্ণুতা। তবে বাজার বিশ্লেষণের দক্ষতা, ভোক্তাদের রুচি বোঝা এবং তাদের পছন্দসই নকশার পণ্য উদ্ভাবনের ক্ষমতা জবসকে করে তুলেছিলো অনন্য।
জবস বলতেন, ক্রেতা কি চায় তা ক্রেতার কাছে জানতে চেয়ে তা বানানো শেষ করার আগেই আপনার ক্রেতা নতুন কিছু চাইতে শুরু করবে।বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের হিসেব অনুযায়ী ২০১০ সালে জবসের সম্পদের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৬.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এই হিসেব অনুযায়ী আমেরিকার ধনীদের তালিকায় জবসের ঠাঁই হয় ৪২ নম্বরে।তবে তার এই বিশাল সম্পদের উত্তরাধিকারী কে বা কারা হবেন সে সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কোনোকিছু জানা যায় নি।

 
স্টিভ জবসের অকাল বিদায়
প্রযুক্তি বিশ্বের জন্য বিশাল এক ক্ষতি
প্রযুক্তি বিশ্বের এক বিশাল নক্ষত্র পতন হল। অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে চলে গেলেন প্রযুক্তি জগতের এক অসাধারণ মেধাবী পুরুষ স্টিভ জবস। সদ্য অবসর নেয়া অ্যাপলের সিইও।
বন্ধু স্টিভ ওজনিয়াককে নিয়ে ১৯৭৬ সালে শুরু করেছিলেন নিজস্ব কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। আইবিএম-এর প্রবল দাপটের যুগে নিঃসঙ্গ যোদ্ধা হিসেবে অ্যাপলের যে ভূমিকা তা অবিস্মরণীয়। ডস নিয়ন্ত্রিত কম্পিউটারের যুগে অ্যাপেলের হাত থেকে বেরিয়ে এল ইউজার ফ্রেন্ডলি কম্পিউটার ম্যাকিনটোশ, যার পুল ডাউন মেনু বহু পরে অনুসরণ করল সারা পৃথিবীর কম্পিউটার নির্মাতারা। বলে রাখা ভাল প্রথম কম্পিউটারটি তারা তৈরি করেছিল একটি গ্যারেজে বসে। আর সেটি বিক্রি করেছিল ৬৬৬ ডলার ৬৬ সেন্টে। সময়টা ১৯৭৬, স্টিভ জবসের বয়স তখন ২১।
মাত্র চার বছরের মাথায় ১৯৮০ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয় অ্যাপেল। পরবর্তী দু’বছরের মধ্যে অ্যাপলের বিক্রি ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। ১৯৮৫ সালে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী জন স্ক্যালির সাথে দ্বন্দ্বের কারণে দু’বন্ধু একত্রে অ্যাপেল ছেড়ে চলে যান। ১৯৮৬ সালে স্টিভ প্রতিষ্ঠা করেন নতুন কোম্পানী নেক্সট। ইন্টারনেটের প্রথম সার্ভার কম্পিউটার ছিল নেক্সটের।
১৯৮৬তেই হলিউডের লোকসানী প্রতিষ্ঠান গ্রাফিক্স গ্র“প কিনে নাম দিলেন পিক্সার স্টুডিও। লোকসানী এ প্রতিষ্ঠানটির পেছনে বিনিয়োগ করলেন নিজের মেধা ও ১ কোটি ডলার। ৯ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার পর সমস্ত অ্যানিমেশন দুনিয়াকে বিস্মিত করে প্রকাশিত হল এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিনেমা, টয় স্টোরি। তারপর জবসের হাত ধরে এলো অসাধারণ সব অ্যানিমেশন ছবি- আ বাগস লাইফ, টয় স্টোরি-২, মনস্টার ইনকরপোরেশন, ফাইন্ডিং নিমো, ব্যাটাটুলি ইত্যাদি। ২০০৬-এ ৭৪০ কোটি ডলারে প্রতিষ্ঠানটি কিনে নেয় ওয়াল্ট ডিজনী। এই সুযোগে ডিজনীর সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার হয়ে যান জবস।
১৯৯৭-এ অ্যাপলে ফিরে আসেন জবস। অ্যাপল তখন বছরে ৮০ কোটি ডলার লোকসান গুণছিল। জবস এসে হাল ধরলেন প্রতিষ্ঠানের। লোকসানী প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ করে দিলেন। একের পর এক বাজারে আসতে শুরু করল আইম্যাক, পাওয়ারবুক, আইপড, আইফোন। প্রযুক্তি বিশ্ব আবার নড়েচড়ে বসল। অ্যাপলের বার্ষিক আয় ছাড়িয়ে গেল সাড়ে ছয় হাজার কোটি ডলার।
স্টিভ জবসের মৃত্যু প্রযুক্তি বিশ্বের জন্য এক বড় আঘাত। সনাতনী পণ্যের ধারণা বদলে দিয়েছিলেন এই মানুষটি। তিনি ছিলেন পথ প্রদর্শক। সারা পৃথিবী অনুসরণ করেছে তাকে। স্বপ্নদ্রষ্টা এই মানুষটির প্রতি আমাদের শেষ সালাম জানাচ্ছি।
নিজামীর চিকিসা
ব্যাখ্যা দিতে তলব কারারক্ষককে
নিজস্ব প্রতিবেদক
জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর চিকিৎসার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের রক্ষক (জেল সুপার) আলতাফ হোসেনকে তলব করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। নিজামীর আইনজীবী মোহম্মদ তাজুল ইসলামের করা আদালত অবমাননার এক আবেদনে গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন আদালত। নিজামীকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না বলে তার আইনজীবীর অভিযোগ। এর জবাব দিতে আগামী ২৩ অক্টোবর কারারক্ষককে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে হবে। গত ৩ অক্টোবর আদালত অবমাননার আবেদনটি করেন নিজামীর আইনজীবী।
আবেদনে বলা হয়, গত ২১ এপ্রিল আটক চার জামায়াত নেতার জন্য কারাগারের ভেতর বা বাইরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে কারা কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দেয় আদালত। একইসঙ্গে আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ এ চার নেতা বারডেম হাসপাতালে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিতে পারবেন। প্রয়োজনে কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বাইরে থেকে ওষুধ সংগ্রহ পারবে। গত ২৪ অগাস্ট সর্বশেষ বারডেমের হাসপাতালে অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. মজিবুর রহমান ১৫ দিন পর নিজামীকে ফিজিও থেরাপি দেওয়ার ব্যবস্থাপত্র দেন। কিন্তু পরে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি বলে আবেদনে অভিযোগ করা হয়। নিজামী ছাড়া আটক অন্য তিন নেতা হলেন- জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা।
গ্রামীণ নারীদের পণ্য বিক্রির জন্য সরকারি উদ্যোগে বাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক
ক্ষুদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি এবং এসবের বাজার সৃষ্টির জন্য ঢাকায় নতুন মহিলা বাজার (মার্কেট) করা হচ্ছে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে একটি প্রকল্পের আওতায় আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কের রাপা প্লাজার দুটি তলায় বিশেষায়িত এ বাজারের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমীন চৌধুরী।
৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের পুনর্বাসন প্রকল্পে’র অধীনে এ কার্যক্রম আগামী তিন বছর পর্যন্ত চলবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রথমে ‘মহিয়সী’ নামে এ বাজার শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এখন নাম বদলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নামটি উদ্বোধনের আগে প্রকাশ করা হবে না। এ কার্যক্রম শুরুর উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের অধীনে বর্তমানে গোটা দেশে প্রায় ১৬ হাজার সমিতি রয়েছে। এসব সমিতির সদস্যদের মধ্যে অনেকেই হস্তশিল্প, কারুশিল্প, তাঁত বস্ত্র এবং খাদ্য সামগ্রী তৈরি করছে। এসব পণ্য বিক্রির জন্য নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তারা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। ফলে কিছু নাম করা বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) বিক্রয় কেন্দ্রগুলো এসব পণ্য স্বল্পমূল্যে কিনে অনেক চড়া দামে বিক্রি করছে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় এবং মহিলা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এ বাজারের কার্যক্রম শুরুর জন্য অধিদপ্তরের নিজস্ব অর্থ থেকে রাপা প্লাজার চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ২৪ হাজার বর্গফুট জায়গা ভাড়া করা হয়েছে। এখানে ১৬০ থেকে ১৮০টি দোকান করা হচ্ছে। গ্রামীণ মেলার আদলে করা হচ্ছে এসব দোকান। ইতোমধ্যেই দোকানগুলো তৈরি ও সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। এখানে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজানোর দোকান ছাড়াও একটি বিশেষ ধরণের মঞ্চ স্থাপন করা হবে। মঞ্চটিতে মেলার আদলেই দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরতে প্রতিদিনই আয়োজন হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। একেক দিন একেক সংগঠনের কর্মীরা এ মঞ্চে অনুষ্ঠান করবে। এ বিষয়ে শিরীন শারমীন বলেন, শহরের পরিবেশে পণ্য বিক্রির সুযোগ সৃষ্টির জন্য এ মার্কেট করা হলেও দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার একটি ক্ষেত্র হিসেবে এ উদ্যোগকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। দেশীয় উচ্চ শ্রেণীর ক্রেতা ছাড়াও বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এতে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রাথমিকভাবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ ২০১৩ সাল পর্যন্ত চালানোর জন্য এ বাজারটি তৈরি করা হচ্ছে। তবে উদ্যোক্তারা চাইলে এর পরও এর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে এ বাজারের ১৮০টি দোকান ১৮০টি সমবায় সমিতির মধ্যে বরাদ্দ করা হবে। পরবর্তীকালে পর্যায়ক্রমে অন্য সমিতির সদস্যরাও এসব দোকান বরাদ্দ পাবেন। কোনো সমিতির পণ্য বিক্রি বন্ধ থাকলে এতে অন্য সমিতিকে পণ্য বিক্রির সুযোগ দেওয়া হবে। কোনো দোকানই বন্ধ রাখা হবে না। দোকান বরাদ্দের জন্য উদ্যোক্তা সমিতিগুলো থেকে ২৫ হাজার টাকা জামানত নেওয়া হবে। বাকি টাকা দেবে মহিলা অধিদপ্তর। এ টাকা সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকে দিতে হবে না। সমিতিগুলো অধিদপ্তরের ঋণ নিয়ে এ অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন। আবেদন পেলে অধিদপ্তর এ ঋণের ব্যবস্থা করবে। দিতে হবে না দোকান ভাড়াও। প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমীন বলেন, শুধু পণ্য বিক্রির বাজার সৃষ্টিই নয়, দোকান বরাদ্দ পাওয়া সমিতির উৎপাদিত পণ্যের মান উন্œয়ন, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পণ্যের রং নির্ধারণ এবং হিসাব রাখার শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সদস্যদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। এরই মধ্যে কিছু কিছু সমিতির সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়াও শুরু হয়েছে। ঢাকার এ বাজারে সফলতা পেলে ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এমন বাজার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
শামীম ও তৈমুর বেশ কয়েকটি মামলার আসামী
নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচন ইতিমধ্যেই জমে উঠেছে। আট মেয়র প্রার্থীর তিনজন হেভিওয়েট এবং তাঁরা প্রত্যেকে উচ্চতর ডিগ্রিধারী। তবে তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধে অন্তত ২৮ মামলা রয়েছে। এ দুজন হলেন- আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমান এবং বিএনপি নেতা এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার।
এদিকে, নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সোমবার রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে প্রাপ্ত মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ¡ী প্রার্থীদের হলফনামায় দেখা যায়, শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে মামলা চলমান আছে ৫টি। অতীতে ছিল ১২টি। তৈমুর আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনেই মামলা আছে ৯টি। অতীতে তার বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা ছিল, তা তার মনেই নেই। অপর দুই প্রার্থী এস এম আকরাম এবং ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া তথ্যে এসব জানা গেছে। আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রত্যাশী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান তার হলফনামায় উল্লেখ করেন, দুর্নীতি দমন আইনে ২টি মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশে কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। অস্ত্র আইনের মামলা বিচারাধীন। অপর ২টি মামলার বিচার কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত আছে। এ ছাড়া অতীতের ১২টি মামলায় রাষ্ট্রের আবেদনে প্রত্যাহার, অব্যাহতি, বেকসুর খালাস পেয়েছেন। বিএনপি সমর্থিত একক প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের হলফনামায় দেখা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ৯টি মামলা হয়। এর মধ্যে ৩টি মামলায় বিশেষ আদালত তাকে সাজা দিলেও হাইকোর্টের আদেশে তা স্থগিত আছে। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ উঠে গেলে যে কোনো সময় তাকে কারাভোগ করতে হতে পারে। এ ছাড়া ৬টি মামলার কার্যক্রমের ওপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আছে।
শামীম ওসমানের প্রধান পেশা ব্যবসা হলেও এ খাত থেকে কত টাকা আয় হয় তা স্পষ্ট নয়। তিনি তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তার স্ত্রী পৃথকভাবে অংশীদারি ব্যবসা করে বার্ষিক ৯ লাখ ৪০ হাজার ৮শ’ টাকা এবং কলেজপড়ূয়া সন্তান ইমতিনান ওসমান মাত্র ২৩ বছর বয়সে বিবিধ মালের ব্যবসা করে ১৭ লাখ ৩৩ হাজার ৪৮০ টাকা আয় করেন। স্ত্রীর নামে সঞ্চয় আছে ৯২ হাজার ১৫০ টাকা। স্ত্রী চাকরি থেকে আয় করেছেন ২৪ লাখ টাকা। নিজের নামে ১০ শতাংশ কৃষি জমি থাকলেও তা ৬৫ লাখ টাকায় বিক্রি করবেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। স্ত্রীর নামে ১৪ শতাংশ কৃষি জমি থাকলেও ৫ শতাংশ বিক্রি করে দিয়েছেন। তার এবং তার পরিবারের নামে কোনো অকৃষি জমি, দালান, আবাসিক, বাণিজ্যিক, মৎস্য খামার, চা বাগান, খামার বা অন্য কোনো সম্পদ নেই। তবে নিজ নামে ১৬ শতাংশ জমির উপর দোতলা একটি আবাসিক ভবন আছে। তিনি কোনো ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ না নিলেও বিদেশে কর্মরত বন্ধুর কাছ থেকে ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫০ টাকা, স্ত্রীর বড় ভাই শামীম আহমেদের কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকা, স্ত্রীর ছোট ভাই তানভীর আহমেদের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা এবং বাড়ি ভাড়া বাবদ অগ্রিম ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন। বাড়ি ভাড়া এবং ব্যবসা থেকে তার আয় যথাক্রমে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৪ টাকা এবং ৯ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ টাকা। তার নিজের কোনো সঞ্চয় নেই।
শামীম ওসমান নির্বাচনে ১৫ লাখ টাকা খরচ করবেন। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা তিনি নিজে, স্ত্রী সালমা ওসমানের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা, স্ত্রীর বড় ভাই শামীম আহমেদের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা এবং তার ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ মোঃ খালেদ হায়দার খানের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে খরচ করবেন। তৈমুর আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতির অভিযোগে ৯টি মামলা করলেও হলফনামায় তিনি পাই-পয়সার হিসাব দিয়েছেন। ব্যাংক থেকে সুদ বাবদ ৪৫ হাজার ৯৮৪ টাকা এবং তার ওপর নির্ভরশীলরা ১ লাখ ৪৩ হাজার ১৩৪ টাকা আয় করেন। হলফনামায় নিজেকে আইনজীবী হিসেবে উল্লেখ করে এ খাত থেকে বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা আয় করেন বলে জানান। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকান ভাড়া থেকে তার এবং পরিবারের বার্ষিক আয় ৯ লাখ ৪০ হাজার ৩৮৬ টাকা। তার নিজের নগদ টাকার পরিমাণ ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ৪৩৯ টাকা এবং স্ত্রীর কাছে আছে ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার ১৯৭ টাকা। দু’জনের নামে ব্যাংকে জমা আছে ৫৪ লাখ ৮ হাজার ৬১১ টাকা ৭০ পয়সা। বিয়ের সময় তিনি ১৪ তোলা স্বর্ণ এবং স্ত্রী ২৬ তোলা স্বর্ণালঙ্কার উপহার হিসেবে পান। তাদের কৃষি-অকৃষি জমি, দালান, আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবন, চা বাগান, রাবার বাগান, মৎস্য খামার বা অন্য কোনো সম্পদ নেই। শুধু ঢাকায় নিজ নামে ১৭ শতাংশ জমিতে নির্মাণাধীন ৬ তলা বাড়ি এবং রাজউকের কাছ থেকে ৫ কাঠার একটি প্লট পেয়েছেন। স্ত্রীর নামে তোপখানা রোড ও সেগুনবাগিচায় ৩টি ফ্ল্যাট আছে। পাশাপাশি বিসিক ফতুল্লায় একটি প্লট পেয়েছেন। তৈমুর আলমের চেম্বারে ফ্রিজ, ওভেন, আইপিএস থাকলেও বাড়িতে এসব সামগ্রী নেই বলে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। বক্তৃতা দেওয়ার জন্য তিনি একটি টেবিলও কিনেছেন। আর শ্রোতাদের জন্য ২০০টি প্লাস্টিকের চেয়ার কিনেছেন। জুতার আলমারি আছে একটি। সেলিনা হায়াৎ আইভী পেশায় ডাক্তার হলেও তার নিজের কোনো আয় নেই। কৃষি, বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান বা অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা সঞ্চয় বা অন্য কোনো খাত থেকে তিনি নিজে এবং তার ওপর নির্ভরশীল কেউ এক টাকাও আয় করেন না। তবে তার নিজের নামে ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা জমা আছে এবং ৩০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার আছে। তার নিজের বা স্বামী বা সন্তানের নামে কোনো কৃষি, অকৃষি জমি, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট, চা বাগান, রাবার বাগান, মৎস্য খামাম বা অন্য কোনো সম্পদ নেই। যৌথ মালিকানায় উত্তরাধিকারসূত্রে ১৪ শতাংশ জমির মালিক তিনি। আকরামের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। পেশার ঘরে লিখেছেন- অন্যান্য। পৈত্রিক সূত্রে তিনি ৪ বিঘা কৃষি জমি পেয়েছেন। এ খাত থেকে তার আয় ১৪ লাখ টাকা। সঞ্চয় আছে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পরামর্শক হিসেবে আয় ২ লাখ ৮৫ হাজার ৬০২ টাকা। চাকরি থেকে আয় ১ লাখ ৯ হাজার ৩৫৬ টাকা। তার এবং স্ত্রীর নগদ টাকার পরিমাণ ৭০ হাজার টাকা। উভয়ের নামে ব্যাংকে জমা ৯০ লাখ টাকা। উভয়ের নামে শেয়ার আছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ২০০ টাকার। সঞ্চয় আছে ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নিজের স্বর্ণালঙ্কার আছে ১০ লাখ টাকার আর স্ত্রীর আছে ৫০ লাখ টাকার। নিজে ৭৫ একর জায়গা জুড়ে রাবার বাগান তৈরি করেছেন। এসএম আকরাম এমএ এলএলবি এবং তৈমুর আলম খন্দকার এলএলবি পাস। শিক্ষাগত যোগ্যতায় দেখা যায় শামীম ওসমান বিএ এলএলবি পাস। ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এমবিবিএস পাস।
হাকালুকিতে অতিথি পাখির আগমন শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
অনেকটা বৈরী প্রকৃতীতে প্রতি বছরের মতো এবারও আসতে শুরু করেছে শীতের অতিথি পাখি। হাওর ভর্তি বন্যার পানি আর শীতের অনেক দেরি তবু হাওর ও আশপাশ এলাকায় অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে। হাওর তীরবর্তী বিল জলাশয়ে এসব পাখি বিচরণ করছে।
দেশের যে কয়টি স্থানে অতিথি পাখির সমাগম ঘটে হাকালুকি হাওর তাদের অন্যতম। অতিথি পাখির সর্ববৃহৎ এই সমাগমস্থলে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে শীতের আগামনী ধ্বনিকে স্বাগত জানাতেই যেন অতিথি পাখিরা ছুটে আসে। পুরো শীত মৌসুম হাওরে বিচরণ করে আবার গরমের শুরুতেই তারা ফিরে যায়। এবার হাকালুকি হাওর এলাকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। হাওর ভর্তি বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। হাওর এলাকার মানুষের মতে ভাদ্র মাসের ১৫ তারিখ শীতের শুরু। আশ্বিন মাসে কুয়াশা আর শীত অনেকটা জেঁকে বসে। কিন্তু এবার বৃষ্টি হচ্ছে থেমে থেমে। ফলে হাকালুকি হাওরে যেন চলছে বর্ষা মৌসুম। এমন বৈরী প্রকৃতীতেও আসছে অতিথি পাখি। অন্যান্য বছর হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিলে অতিথি পাখির বিচরণ থাকলেও এবার ভিন্ন চিত্র চোখে পড়ছে হাওর পাড়ের মানুষের। হাওরের পার্র্শ্ববর্তী বিভিন্ন বিলে অতিথি পাখিরা বিচরণ করছে। হাওর তীরের ধলিয়া, দহবিলসহ বিভিন্ন বিলে অতিথি পাখির সমাগম বেশি।
বৈষম্যহীন শিশুবান্ধব পরিবেশ হোক কাম্য
মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করাসহ একটি  বৈষম্যহীন শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে সকলের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে গত ৩ অক্টোবর বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০১১ উপলক্ষে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা। তিনি প্রতিটি শিশুকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এনে ৬ মাস পর্যন্ত তার মাতৃদুগদ্ধ পান ও ৫ বছর বয়সে স্কুলে যাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া দরিদ্র পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের সাহায্যের জন্য শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট তহবিল গঠনে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার বিধান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। ‘তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে জানবে শিশু জগতটাকে’ এবারের বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের   এমন প্রতিপাদ্য বিষয়ের আলোকে একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ লাভের লক্ষ্যে শিশুদের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্বের বিষয় আলোকপাত করা হয়। বাংলাদেশের লাখ লাখ শিশু-কিশোর বড় হয় অনাদর আর অযতœ-অবহেলার মধ্য দিয়ে। ওদের পেটে খাবার নেই, পরনে বস্ত্র নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক   অধিকার থেকে ওরা বঞ্চিত। দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতায় ভুগছে। তাদের ৫ ভাগের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১০ ভাগেরও কম। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫ লাখ শিশু প্রাথমিক শিক্ষার বাইরে থাকে। লাখ লাখ শিশু অপুষ্টির শিকার হয়। আমাদের দেশে শিশু মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক। সামাজিক নিরাপত্তার লেশমাত্র নেই এদের জীবনে।  দেশের মোট জনসংখ্যার বিরাট একটা অংশ রেল স্টেশনে, লঞ্চ টার্মিনালে, অফিসের বারান্দায়, এমনকি ফুটপাথে খোলা আকাশের নিচে জীবন কাটায়। নদীভাঙন, মঙ্গাপীড়িত এলাকার এসব পরিবারের নিজস্ব কোনো ঠিকানাই নেই। শিশুকাল থেকে এসব  সন্তান মা-বাবার স্নেহ-মমতা বঞ্চিত হয়ে পরিবার  থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রতিকূল পরিবেশে নানা রকম অবহেলা, বঞ্চনা এবং নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে এক সময় অপরাধ জগতের নিঃসীম অন্ধকারে পা বাড়ায়। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত শিশু-কিশোররাই প্রথমে অপরাধ জগতের নবীন সদস্য হয়ে কালক্রমে শীর্ষস্থানে চলে যায়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিশু-কিশোররা আজকাল ছিনতাই, মাদক বিক্রি ও অস্ত্র বহনসহ নানারূপ অপরাধে  ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ছে। শিশু-কিশোরদের এ ধরনের অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হওয়ার পেছনে কাজ করছে  এক শ্রেণীর  সন্ত্রাসী ও অপরাধী চক্র। সন্ত্রাসী চক্রের সদস্যরা দেশব্যাপী বিশেষ করে রাজধানীতে বসবাসকারী নিম্নবিত্ত, ছিন্নমূল পরিবারের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে ব্যবহার করছে এসব পরিবারের  শিশু-কিশোরদের। সাহসী ও বুদ্ধিমান বলে স্বীকৃত শিশু-কিশোরদের চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ছোটখাটো অপরাধের বাইরেও মাদক বিক্রি, অস্ত্র ও বোমা বহনের মতো মারাত্মক অপরাধ কাজে লিপ্ত করানো হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে জানা গেছে। এ কাজের জন্য তাদের দেয়া হয় লোভনীয় অঙ্কের টাকা। অর্থের  প্রলোভনে এবং বেঁচে থাকার প্রয়োজনে অবশেষে এসব শিশু-কিশোর ক্রমে অপরাধ জগতের স্থায়ী সদস্য হয়ে যায়।  ধীরে ধীরে কেউ কেউ বনে যায় শীর্ষ সন্ত্রাসী। মাদক ও অস্ত্র বহনের মতো অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে কিশোর বয়সে এরাও হয়ে পড়ে মাদকসেবী। রাজধানী ঢাকার বাইরের ছোট-বড় শহরগুলোতে এ ধারা কম-বেশি প্রবাহমান। সাম্প্রতিককালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের শিশু-কিশোরদের ডান্ডি নামের কম মূল্যের রাবার সলিউশন  নিশ্বাসে টেনে নেশাগ্রস্ত হবার  চাঞ্চল্যকর তথ্য  পাওয়া গেছে। বস্তিবাসী, পথশিশু অথবা ছিন্নমূল পরিবারের এসব সন্তানরা সাধারণত ভাঙ্গারি টোকায় বা রিক্সার গ্যারেজে কাজ করে। অনুশাসনের অভাবে বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওরা কঠোর শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত অর্থ ব্যয় করে নেশার পেছনে। পরিবার বিচ্ছিন্ন এসব শিশু-কিশোর নিজের অজান্তে একদিন অপরাধ জগতের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যায়। রাজধানীকেন্দ্রিক শিশুদের মনে নির্মল আনন্দদান এবং  মুক্ত চিন্তার বিকাশ ঘটাতে কখনো  আয়োজন করা হয় চলচ্চিত্র উৎসবের।  বাংলাদেশসহ বিশ্বের কিছু দেশের  শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শনও করা হয়। অথচ  অযতœ-অবহেলায় বেড়ে ওঠা অধিকারবঞ্চিত দেশের লাখ লাখ শিশু কখনো এ সবের আওতায় পড়ে না।
সকল খাত থেকে শিশুশ্রম বন্ধ করে শহরাঞ্চলে কর্মজীবী শিশুদের জন্য কর্মভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের শিশু সনদের আলোকে জাতীয় শিশু নীতি-২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১১ সালের মধ্যে শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে গত বছর প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে ১৯ কোটি বইকে বর্তমানে ২৩ কোটিতে উন্নীত করা হয়েছে।  শিশুদের স্কুলমুখী করতে তাদের  দুপুরের খাবার স্কুলে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউনিসেফের সহায়তা কামনা করা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের বিনা বেতনে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিদ্যালয়ে শিশুদের অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রেখে  শিশুদের অধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টিসহ ভবিষ্যৎ প্রজš§ শিশুদের জন্য সমাজের  বিত্তবানদের অবহেলিত শিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দেশ গড়ার কাজে লাগাতে হবে। শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যবহার বন্ধ করাসহ  শিশু ও নারী পাচার রোধে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এ সবের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে  দেশের শিশুরা অপরাধ জগৎ থেকে বের হয়ে আলোর পথে ফিরে আসবে।  দেশ গড়ার কাজে নিজেদের আত্মনিয়োগ করার দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবে। এবারের বিশ্ব শিশু দিবসে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের সবসময় হ্যাঁ বলার অভ্যাস গড়ে তুলে তাদের সৃজনশীল ক্ষমতা বিকাশে সহায়তাদানে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। দিনে দিনে বেড়ে উঠে শিশু পরিণত বয়স্ক হয়। ধীরে ধীরে শিশুমনে চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটে। বিদ্যা-বুদ্ধি-মননে, প্রতিশীলতায় সমৃদ্ধি লাভ করে। দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব দেয়। সম্ভাবনাময় সমাজ গঠনে রাখে সক্রিয় ভূমিকা। তাই দেহমনের স্বাভাবিক বিকাশ বিকাশের জন্য প্রতিটি শিশুর প্রয়োজন শারীরিক ও মানসিক পরিচর্যা, অফুরন্ত আলোকময় পরিবেশ। শুধু আইন করে নয়,  সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশের মধ্যে এ দেশের শিশুদের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে  দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। শুধু আইন ও সনদ দিয়ে শিশুদের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ জন্য আমাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন দরকার। শিশুদের জন্য আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে অভিভাবক, সামর্থ্যবান ব্যক্তি ও শিশুকল্যাণে নিবেদিত সব সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। এবারের বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০১১ উপলক্ষে দেশের অধিকারবঞ্চিত শিশুদের  শিক্ষাদানসহ  জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে সকলের সাহায্য প্রত্যাশার ফলশ্র“তিতে এ দেশের অধিকারবঞ্চিত  শিশুরা প্রয়োজনীয় খাদ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, বস্ত্র , স্বাস্থ্যসেবা ও যথাযথ বিনোদন সুবিধা পাক। ওদের সামাজিক নিরাপত্তা ও  বাঁচার ন্যূনতম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুরা মূল ধারায় ফিরে আসার সুযোগ পাক। দক্ষ মানবসম্পদে উন্নীত হোক এ দেশের সকল শিশু। বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর মুখে হাসি ফুটুক। আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর জীবন। শিশুরা  জাতির বড় সম্পদÑ তাই তাদের বিদ্যা-বুদ্ধিতে বেড়ে ওঠার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে আজকের শিশুরা আগামী দিনে দেশ ও জাতির কল্যাণে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। প্রতিটি শিশুর জন্য  আলোকিত নিরাপদ স্বদেশ গড়ে উঠুক এটাই হোক এবারের বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের প্রত্যাশা।   লেখক: গল্পকার ও প্রাবন্ধিক 
খালেদাকে নির্বাচনে আসতেই হবে: হাসিনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার খালেদা জিয়ার হুমকির জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরোধী দলকে নির্বাচনে আসতেই হবে।  যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানাতে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে গতকাল শনিবার এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বিরোধী দলের সঙ্গে সংসদে আলোচনার পথ খোলা রয়েছে বলেও আবার মন্তব্য করেন হাসিনা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা গত মঙ্গলবার ঢাকায় জনসভায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, নির্বাচন হবে, হবে, হবেই। জনগণ নির্বাচন করবে, করবে, করবেই। উনি (খালেদা) এত কথা বলছেন,,, উনি নির্বাচনে আসবেন। উনাকে নির্বাচনে আসতেই হবে। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে নির্বাচনে আসতেই হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগপ্রধান। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে দায়ী করেন শেখ হাসিনা।
২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দিকে ইঙ্গিত করে হাসিনা বলেন, তিনিই (খালেদা) তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করার পর সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। ফলে এখন এখন নির্বাচিত সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হবে। চলমান রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর করতে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে কি না- প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (খালেদা) তো সময় বেঁধে দিয়েছেন সরকার উৎখাতের, তাহলে আর আলোচনা কীসের? সংসদে চলে আসুক, সংসদে কথা বলুক, সংসদেই আলোচনা হবে। সরকার পতনের আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে জনসভায় খালেদা বলেছিলেন, আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বর্তমান সরকারকে বিদায় করা হবে। তবে নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতা হস্তান্তরের আশা প্রকাশ করে হাসিনা বলেন, জনগণ নির্বাচন চায়। ভোট দেওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। জনগণ যদি ভোট না দেয়, সে ক্ষমতা আমরা চাই না। জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা নেই। তবে সন্ত্রাস করলে তার বিচার হবে। মন্ত্রিসভায় রদবদলের বিষয়ে তিনি সরাসরি উত্তর এড়িয়ে বলেন, পরিবর্তন এলে তা সবাই দেখবে।
বঙ্গবন্ধু হাসপাতালেই প্রাইভেট প্র্যাকটিস
নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে হাসপাতালেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসাপত্র দেওয়ার প্রথা চালু করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। এতে রোগীরা উপকৃত হবে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও এর সমালোচনাও এসেছে। গতকাল শনিবার বিকালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রোগী দেখার এ সেবা চালু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত এর উদ্বোধন করেন।
কেবিন ব্লক ভবনের দোতালায় চেম্বারে মেডিসিন, শিশু, গাইনি, চর্ম, কান-নাক-গলা ও ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকরা প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত রোগী দেখবেন। রোগীদের কাছ থেকে এজন্য ২০০ টাকা ফি নেওয়া হবে। বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে রোগী দেখাতে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা লাগে।
সেবার উদ্বোধনের পর উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, হাসপাতালেই প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সেবা দেওয়ার জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ২০০ টাকার মধ্যে ৫০ টাকা পাবে বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি টাকা হাসপাতালে বাড়তি সময় দেওয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং কর্মচারীদের দেওয়া হবে। বাকি অর্থ ভাগাভাগির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে উপাচার্য জানান। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও রোগী দেখা শুরু করবে। এখানে সহযোগী অধ্যাপকের চেয়ে নিচের পদের কেউ রোগী দেখবেন না বলে জানান প্রাণ গোপাল। নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ প্রাণ গোপালকে দেখাতে মাকে নিয়ে কুমিল্লা থেকে এসে সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন আল আমিন। তিনি বলেন, “আমি সকালে উনার চেম্বারে গিয়ে সিরিয়াল পাইনি, তারা আমাকে বলেছে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে বিকালে তাকে দেখাতে।”
নতুন এ সেবা চালু হবার পর ৪০ মিনিটের মধ্যে কমপক্ষে ৭০টি টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।
বেসিক সায়েন্স ডিভিশনের অধ্যাপক ও সরকার সমর্থক চিকিৎসক সংগঠন স্বাচিপ’র নেতা এম ইকবাল আর্সালান বিনিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, এটি ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে একটা অনন্য উদাহরণ। এটা যদি ধরে রাখা যায়, তবে একটা নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।

নতুন ব্যাংকের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বেসরকারি খাতে নতুন ব্যাংক স্থাপনের জন্য আবেদন চেয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আবেদনপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। আবেদনের সঙ্গে ১০ লাখ টাকার অফেরতযোগ্য ব্যাংক ড্রাফট জমা দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বরাবরে। নতুন ব্যাংকের বিষয়ে একটি নীতিমালাও প্রকাশ করা হয়েছে।
ব্যাংক হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ৪০০ কোটি টাকা। শুধু সাধারণ শেয়ারের মাধ্যমে এ মূলধন পূরণ করতে হবে। অনুমোদন পাওয়ার পর একটি ব্যাংককে ব্যবসা শুরুর তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে বাজারে শেয়ার ছেড়ে পরিশোধিত মূলধনের সম-পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। উদ্যোক্তা হতে হলে একজনকে কমপক্ষে এক কোটি টাকার যোগান দিতে হবে। আর তার সর্বোচ্চ বিনিয়োগ হতে পারবে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ। কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্য ঋণখেলাপি অথবা করখেলাপি হলে তারা ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না।
বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি মিলিয়ে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৪৭। এর বাইরে আরো শতাধিক বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিভিন্ন মহল বিরোধিতা করলেও সরকারের আগ্রহে সম্প্রতি নতুন আরো কয়েকটি ব্যাংককে অনুমোদন দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকও এক সময় নতুন ব্যাংক চালুর ব্যাপারে জোর আপত্তি জানিয়েছিলো। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বলেছিলেন, দীর্ঘ এক যুগ পর নতুন বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের আগের সরকারের মেয়াদে ১৯৯৬-২০০১ সময়ে কয়েকটি নতুন ব্যাংক যাত্রা শুরু করেছিল। এরপর আর  কোনো ব্যাংক অনুমোদন পায়নি। তবে এ দফায় কয়টি ব্যাংককে অনুমোদন দেওয়া হবে, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, বর্তমানে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এমন কোনো ব্যাংকের পরিচালক বা উপদেষ্টা নতুন কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। নতুন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সংখ্যা হবে ১৩ জন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে ব্যাংকিং বিষয়ে কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। শহর ও গ্রামে নতুন ব্যাংকের শাখার অনুপাত হতে হবে ১:১। অথবা বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে যে নির্দেশনা দেবে- সে অনযায়ী শাখা খুলতে হবে। ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের কমপক্ষে ৫ শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণ করতে হবে। নতুন ব্যাংককে অবশ্যই কর্পোরেট স্যোশাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
মন্ত্রী যখন পরীক্ষার্থী
ডেস্ক রিপোর্ট
ভারতের পদুচেরির তিনদিবানম স্কুলের শিক্ষার্থীদের অবাকই হতে হলো। কারণ পরীক্ষা হলে শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতি। পরিদর্শক হলে কথা ছিলো, কিন্তু ঘটনাটি তো তা নয়। মন্ত্রী নিজেই পরীক্ষা দিয়েছেন তাদের সঙ্গে। কেন্দ্রশাসিত রাজ্য পদুচেরির এ শিক্ষামন্ত্রী হলেন পি এম এল কল্যাণসুন্দরম। দশম শ্রেণীর পরীক্ষার উত্তীর্ণ হতে না পেরে ১৯৯১ সালে লেখাপড়ার পাট গুটিয়ে ফেলা কল্যাণের ৩৪ বছর বয়সে এসে মনে হলো, ডিগ্রিটা নেওয়া দরকার। তাই পরীক্ষার্থীর আসনে তার বসা।
গত বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা দেওয়ার পর কল্যাণসুন্দরম টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেন, অনেকে আমাকে বলেছিলো- টাকা দিয়ে তো ডিগ্রি কেনাই যায়, তবে এত কষ্ট কেন? কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, সব কিছু নিয়মমাফিকই হওয়া উচিত। সংবাদ মাধ্যমের নজরে পড়তে চাননি কল্যাণসুন্দরম। তাই পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন পদুচেরি শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের ভিলুপুরাম জেলার তিনদিবানমের একটি সরকারি বিদ্যালয়। আর মন্ত্রী পরীক্ষা দেওয়ার আগ পর্যন্ত বিষয়টি না জানার সরল স্বীকারোক্তিও দেন স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তা সি শানুমুগাম।
১৯৯১ সালে বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞানে ফেল করে লেখাপড়ার পাট গুটিয়েছিলেন কল্যাণসুন্দরম। পরে মন দেন পারিবারিক ব্যবসায়। ২০০১ সালে রাজনীতির অঙ্গনে পা ফেলেন। ২০০৬ সালে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়ে মন্ত্রিসভায় আসেন। গত বৃহস্পতিবারের বিজ্ঞান পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলেই জানান কল্যাণসুন্দরম। তিনি আশা করছেন, ৬০ এর বেশি নম্বরই তিনি পাবেন। ১৯৯১ সালের পরীক্ষায় গণিতে ৭৫ নম্বর পেয়েছিলেন মন্ত্রী। তামিল আর ইংরেজিতে যথাক্রমে পেয়েছিলেন ৪৮ ও ৪৭।
আন্ডার ইনভয়েসিং ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে এনবিআর
নিজস্ব প্রতিবেদক
আমদানিকৃত বিভিন্ন পণ্যের আন্ডার ইনভয়েসিং ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পণ্যের সঠিক মূল্য গোপন রেখে অনেক কম মূল্য দেখিয়ে রাজস্ব ফাঁকিই হচ্ছে আন্ডার ইনভয়েসিং-এর মূল উদ্দেশ্য। সম্পূর্ণ অবৈধ রাজস্ব ফাঁকির এই খেলায় কিছু ব্যবসায়ী লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্প। এই অশুভ প্রবণতা রোধে কাস্টম হাউজগুলোকে রেফ্রিজারেটর আমদানিতে প্রতি লিটারে ন্যূনতম এক ডলার থেকে দেড় ডলার কর নির্ধারণ করে দিয়েছে এনবিআর। এটা কার্যকর হলে একদিকে যেমন কর ফাঁকি বন্ধ হবে অন্যদিকে সরকারের রাজস্বও অনেক বৃদ্ধি পাবে।
তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মিথ্যা ও অবৈধ ঘোষণায় শত শত কোটি টাকার পণ্য আমদানি হচ্ছে। একশ মার্কিন ডলারের পণ্য আন্ডার ইনভয়েসে আসছে মাত্র ১০ থেকে ২০ মার্কিন ডলারে। এভাবে বছরে গড়ে প্রায় হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হচ্ছে মাত্র শত কোটি টাকা মূল্য ঘোষণা দিয়ে। এতে সরকার বছরে কয়েকশ কোটি টাকার শুল্ক হারাচ্ছে। পক্ষান্তরে বিদেশি সরবরাহকারীকে পণ্যের প্রকৃত মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে অনেক গুণ বেশি অর্থ পাচার করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব অপরাধীদের নামমাত্র জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন একজন কাস্টমস কর্মকর্তা জানান, পিএসআই সনদ বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কিছু পণ্য পিএসআই ছাড়াই ব্যাপক হারে আমদানি করা হচ্ছে। নন-পিএসআই পণ্য আমদানির বিষয়টি এনবিআরও অবগত রয়েছে। কিন্তু তারপরও এর আগে জরিমানার অঙ্ক বাড়ানো বা এ ধরনের পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণে কোনো বিধিনিষেধ জারি করা হয়নি। কারণ এর বেনিফিশিয়ারি অনেকেই।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহ আলম খান বলেন, আন্ডার ইনভয়েসিং প্রতিহত করতে এনবিআর কঠোর অবস্থানে রয়েছে। একে নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন সময় অবৈধ আমদানিকারকদের জরিমানা করাসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পণ্যের সঠিক দাম নিশ্চিত করতে ভ্যালুয়েশন রেগুলার করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধে কাস্টমস কমিশনারদের দায়িত্ব অনেক বেশি। কারণ তারা সরাসরি ফিল্ড লেভেলে কাজ করেন। তবে এ বিষয়ে ছাড় না দিতে এনবিআরও শক্ত অবস্থানে। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যাতে এটা করতে না পারে সেজন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
গত ২৯ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস বিভাগ জরুরি ভিত্তিতে রেফ্রিজারেটর আমদানিতে প্রতি লিটারে এক মার্কিন ডলারের নিচে কর নির্ধারণ না করতে নির্দেশনা জারি করেছে। কাস্টমস বিভাগ ঢাকা, চট্টগ্রাম, মংলা, বেনাপোল, সিলেট, রাজশাহী, যশোর এবং খুলনা কাস্টমস হাউসসহ সব কাস্টমস হাউসে এই নির্দেশনা পাঠিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কাস্টমসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, সঠিক মূল্য গোপন রেখে পণ্য আমদানির অভিযোগের ভিত্তিতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই নিদের্শনা অনুযায়ী দ্ইু দরজা বিশিষ্ট রেফ্রিজারেট আমদানিতে প্রতি লিটারে সর্বনিম্ন এক ডলার অর্থাৎ ১০০ লিটারের ফ্রিজ হলে ১০০ ডলার এবং তিন দরজা ও ডিসপে¬ প্যানেল বিশিষ্ট রেফ্রিজারেটরের ক্ষেত্রে প্রতি লিটারে সর্বনিম্ন দেড় ডলার কর নির্ধারণ করতে হবে।
আরো জানা যায়, এনবিআরের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিনিধিদল রেফ্রিজারেটর রপ্তানিকারক কয়েকটি দেশ সফর করে। সরেজমিন পর্যবেক্ষণ এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিনিধিদলটি এই কর প্রস্তাব করে। একইসঙ্গে নন ব্র্যান্ড ফ্রিজের ক্ষেত্রেও একই কর ধার্য করা হয়েছে। প্রতিনিধিদলটি চীন ও থাইল্যান্ড পরিদর্শন করে রেফ্রিজারেটরের সঠিক মূল্য সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বিক্রয় এবং পরিবহন খরচসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু বিবেচনা করে প্রস্তাবিত মূল্যে নির্ধারণ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশে সব রেফ্রিজারেটর কোনো না কোনো ব্র্যান্ডের নামে আমদানি করা হয়। সুতরাং কাস্টমস ব্র্যান্ড ছাড়া পণ্য আমদানিতে কোনো প্রকার কর সুবিধা দেবে না।
এদিকে বাংলাদেশি রেফ্রিজারেটরের উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন এনবিআরের ওই নির্দেশনাকে স্বাগত জানিয়েছে। ওয়ালটনের এক কর্মকর্তা বলেন, এর ফলে দেশীয় উৎপাদনকারীরা উপকৃত হবে, দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটবে, সরকারও তার প্রাপ্য রাজস্ব পাবে। রাজস্ব ফাঁকির এই প্রবণতা বন্ধে তিনি সরকারকে আরো কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানান। প্রসঙ্গত: ২০১০ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রচুর ভুয়া কাগজপত্র ও নিম্নমানের ফ্রিজ আমদানি করার সন্ধান পেয়েছে সরকার। এরপর ট্যারিফ কমিশন এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে এনবিআরকে নির্দেশ দেয়। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবর রহমান বলেন, কমিশন এটা গুরত্বের সঙ্গে তদন্ত করেছে এবং এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। আমরা সঠিক তথ্য সংগ্রহ করছি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।

তরকারি সংকট
খুলনায় ২৬ কাঁচা বাজারে ধর্মঘট অব্যাহত 
খুলনা প্রতিনিধি
পাইকারী বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খুচরা ব্যবসায়ীদের বিরোধ এবং ভুট্টো নামে একজন খুচরা ব্যবসায়ীকে আহত করার প্রতিবাদে খুলনার ২৬টি কাঁচা বাজারে গতকাল শনিবারও ধর্মঘট অব্যহত ছিল। কাঁচা তরিতরকারি বেচাকেনা বন্ধ থাকায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ক্রেতাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
গতকাল খুলনার ২৬ বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন কালু জানান, তাদের সমিতির প্রায় তিন হাজার এবং ভ্রাম্যমান প্রায় পাঁচশ’ খুচরা কাঁচামাল ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা সবাই নগরীর সোনাডাঙ্গা ট্রাক টার্মিনালের পাশে অবস্থিত কেসিসি পরিচালিত পাইকারী কাঁচাবাজার থেকে কাঁচামাল ক্রয় করে থাকেন।
গতকাল শনিবার নগরীর বড়বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজার, জোড়াকল বাজার, পূর্ব রূপসা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা বাজার একেবারে ফাঁকা। ক্রেতারা বাজারে গিয়ে তরকারি কিনতে না পেরে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। জোড়াকল বাজারে বাজার করতে আসা খালিদ জানান, এমনিতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, তারপর আবার কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট। নজরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা জানান, তিন দিন ধরে বাজারে গিয়ে কোনো তরকারি কিনতে পারছি না। এই দুর্ভোগের অবসান হওয়া উচিত।
এদিকে গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় কেসিসি পরিচালিত পাইকারী কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আড়ৎদার ও ব্যাপারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। প্রতিটি আড়ৎদারের দোকানে প্রচুর পরিমাণ কাঁচা তরকারি পড়ে আছে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ব্যাপারী মোহাম্মাদ আলী শেখ ও যশোর জেলার মনিরামপুর এলাকার নোয়াব আলী জানান, পাইকারী ক্রেতারা না আসায় তারা তরকারি বিক্রি করতে পারছেন না। তবে ২৬ বাজারের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও একজন খুচরা ব্যবসায়ীকে মারধর করার ঘটনা অস্বীকার করেছেন পাইকারী কাঁচা বাজার সমিতির যুগ্ম আহবায়ক টি এম আরিফ। তিনি বলেন, ২৬ বাজারের নেতারা তাদের নামে অহেতুক মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।
উল্লেখ্য গত বুধবার সন্ধ্যায় খুচরা ব্যবসায়ী ও তাদের সমিতির সদস্য ভুট্টো পাইকারী কাঁচা বাজারে গিয়ে তরকারি কেনার সময় কয়েকজন আড়তদার ও ব্যাপারীর সঙ্গে তার বসচা হয়। একপর্যায়ে তারা ভুট্টোকে পিটিয়ে আহত করে। পরবর্তীতে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভুট্টোকে মারধরের কারণ জানতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে খুলনার ২৬ বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতি গত বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট আহবান করে।
যশোরের ৩ ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ দেড় মাস ধরে পানিবন্দি
মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি 
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার তিন ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ গত দেড়মাস ধরে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। কপোতাক্ষ নদের পূর্বপাড় ঘেষা ঝাঁপা, মশ্বিমনগর ও হরিহরনগর  ইউনিয়নে বৃষ্টি আর কপোতাক্ষের উজানের পানিতে গ্রাস করে নিয়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ। বন্যায় কেড়ে নিয়েছে সবই। ঝাঁপা ইউনিয়নের ডুমুরখালী, পাঁচপোতা, চাকলা, নয়ালি, খাটুরা, গোয়ালবাড়ী গ্রামের মানুষের জীবন কাটছে দুর্বিসহভাবে। ঝাঁপা গ্রামের রাস্তার উপর টং ঘরে থাকা ১০৫ বছরের বৃদ্ধ- শামসের মোড়ল জানান- সময় মতো পেটে ভাত নেই পরিবারের লোকজন নিয়ে গত দেড় মাস বসবাস এই রাস্তার উপর খুপড়ির মধ্যে। প্রতিবন্ধি দুখুমিয়া, স্ত্রী ও ২ সন্তান নিয়ে রয়েছে পাশের খুপড়িতে। দুখুমিয়ার মতো-শত শত দুঃখি মানুষ বাড়ীঘর ছেড়ে ঠাই নিয়েছে রাস্তার উপর। বৃদ্ধ আব্দুল মমিনের আক্ষেপ কেউ খোঁজ-খবর নেননা আমাদের। গৃহবধূ রোকেয়া, ছকিনা, হাফিজা, জোছনা, জানায়- অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটছে তাদের। বন্যার পানিতে ধ্বসে পড়েছে ৩ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ী। ঝাঁপা গ্রামের আজিজুর রহমান, আব্দুল মমিন, মুনসুর আলী, আব্দুর রশিদ, আফসার মোড়ল, সাদেক সোহরাব আলিমদের ঘরবাড়ী বিলিন হয়ে গেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য রাশেদুজ্জামান জানান- ঝাঁপা গ্রামেই প্রায় ২০ হাজার লোকের বসবাস। এদের অর্ধেকের বেশি ঘরবাড়ী ছেড়ে রাস্তা ও স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ত্রানের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত দেড় মাসে এ গ্রামে চাল এসেছে মাত্র ১২ মণ। হানুয়ার গ্রামের ২ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কেবল সাধারণ জনগণ নয়, রাজগঞ্জ পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে এখন হাটুপানি। এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অ-ঘোষিত ভাবে  বন্ধ। বিশুদ্ধ খাবার পানি, চাহিদা মতো সাহায্য না থাকায় দুর্বিসহ জীবন কাটছে তাদের। ডাইরিয়া, আমাশয়সহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সাবেক চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান জানান- কপোতাক্ষের স্থায়ী সমাধান না হলে এলাকার জনগণের দুর্দশা থেকেই যাবে। বর্তমান চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন জানান- কপোতাক্ষ-ঝাঁপা খালের সংযোগস্থলের ব্রীজটিতে জরুরীভাবে স্লুইজ গেট স্থাপন করলে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। কপোতাক্ষের নাব্যতা হারানোর ফলে উজানের পানিতে ২০০০ সাল হতে বন্যা শুরু হয় এলাকাটিতে। একই সমস্যার কথা জানালেন- হরিহরনগর ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। এলাকাবাসীর দুর্দশা থেকে মুক্ত করতে কপোতাক্ষ নদ খনন পূর্বক স্রোত ধারা সৃষ্টির বিকল্প নেই বলে জোর দিয়ে বললেন তিনি। মশ্বিমনগর ইউনিয়নের পারখাজুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একতলা পনির নিচে। এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন বসবাস করছেন ভেড়ি বাঁধের উপর। চাকলা গ্রামের অসংখ্যা পরিবার ঘরবাড়ী ছেড়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। ফসলের ক্ষেত পানির নিচে। নেই মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্য, নেই গরু, ছাগলের খাদ্য-গত দেড় মাস তারা দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান এ্যাডঃ আব্দুল গফুর জানান- কপোতাক্ষের সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে আগামীতে এ  এলাকার মানুষের অন্যত্রে চলে যেতে হবে।
গ্রাম্য শালিসে অপবাদ হাটহাজারীতে কিশোরীর আÍহত্যা
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের আর্দশ গ্রামে গ্রাম্য সর্দার ও এলাকাবাসীর দেয়া মিথ্যা অপবাদ ও শালিসের অপমান সইতে না পেরে নূরজাহান বেগম বাচু (১৬) নামের এক কিশোরী আÍহত্যা করেছে। গতকাল রবিবার  সকাল ৮টায় এই ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায় , একই গ্রামের মনছুরাবাদ মহল্লার শাহজাহান এর সাথে নুরজাহানের প্রেমের সর্ম্পক ছিল। নুরজাহান পেটের দায়ে হাটহাজারী বড়দিঘীরপাড় এলাকায় এক বাসাবাড়িতে ঝি এর কাজ করত। গত দুু’দিন আগে নুরজাহান ছুটি নিয়ে বাড়িতে বেড়াতে আসে। বাড়িতে আসার পর গত শনিবার বিকেলে সে প্রেমিকের সাথে আদর্শ গ্রাম সংলগ্ন পাহাড়ে বেড়াতে যায়। তার বেড়াতে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার গ্রাম্য সর্দার মাহাবুব আলম ও তার সহযোগীরা নুরজাহানের চরিত্র নষ্ট হয়েছে আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে এলাকায় মিথ্যা অপবাদ রটাতে থাকে। রাতে গ্রাম্য শালিসে মাহাবুব আলম ও তার সহযোগীরা নুরজাহান ও তার মাকে ডেকে এনে জোর পূর্বক খালি স্টাম্পে সই নেয় এবং দুই হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে। শালিসে এলাকাবাসীর সামনে অপমানিত হয়ে কিশোরী নুরজাহান ঘরের আড়ার সাথে ফাঁস দিয়ে আÍহত্যা করেছে বলে নিহত কিশোরীর বড় ভাই নজরুল জানায়।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯/ক ধারায় প্রেমিক শাহাজাহান, সর্দার মাহাবুব আলম ও তার সহযোগী অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্থানীয় মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: সেকান্দর চৌধুরী জানান, তার অজ্ঞাতেই এসব গ্রাম্য সর্দাররা শালিস করে।
নোয়াখালীতে হিযবুত তাওহীদ’র ১১ সদস্য আটক
নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালী সুধারাম মডেল থানা পুলিশ গত শনিবার  সোনাপুর থেকে এক মহিলাসহ ১১জন হিযবুত তাওহীদ’র সদস্যকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলো ফেনী জেলার মোঃ আইয়ুব (৩৮), গোলাম কিবরিয়া (২৬), শাহাদাত হোসেন (২২), জামাল উদ্দিন রুবেল (২৭), নোয়াখালী জেলার ফুল নাহার (৩৫), নিজাম উদ্দিন (২৫), ফখরুল ইসলাম (১৯), টিপু সুলতান (৫৮), আবু তাহের ভূঁইয়া (৩০), খাগড়াছড়ি জেলার সাইফুল ইসলাম (৩০) এবং চাঁদপুর জেলার সফিকুল আলম (৪০)। সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন তরফদার জানান, আটককৃতরা সকলেই ২০০৯ সালে সোনাইমুড়ী উপজেলায় চাষীরহাটের এলাকায় সামাজিক ভাবে বহিষ্কৃত হওয়ায় নোয়াখালীর সদরে সোনাপুর বাজারে ভাড়া বাসায় থাকত। গতকাল সকালে তারা সোনাপুর থেকে সোনাইমুড়ীর চাষীরহাট এলাকায় পুনরায় বসত ঘর স্থাপনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে এলাকার লোকজন তাদের গতিবিধি সন্দেহ করে আটক করে মারধর করার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদেরকে গ্রেফতার করে  থানায় নিয়ে আসে। আটককৃতরা জানায়, তাহারা হিযবুত তাওহীদের সদস্য। এ সংগঠন নিষিদ্ধ নয়। 
৩দিনেও চালু হয়নি বরিশালের লাহারহাট ভেদুরিয়া ফেরি সার্ভিস
বরিশাল থেকে ইসমাইল হোসেন নেগাবান
বরিশালের লাহারহাটÑভেদুরিয়া ফেরি সার্ভিসটি ৩দিনেও নির্বিঘœ করতে পারেনি বিআইডব্লিউটিসি। কবে নাগাদ এ রুটে ইউটিলিটি ফেরি সচল হবে, সে সম্পর্র্কে সংস্থাটির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো কিছু বলতে পারছে না। অবিলম্বে ফেরি সার্ভিস চালু করার দাবীতে পরিবহন শ্রমিকরা দফায় দফায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। এদিকে যানবাহন পারপার বন্ধ থাকায় বরিশালের তেল ডিপোগুলো থেকে ভোলায় জ্বালানী পরিবহন প্রায় বন্ধ। অপরদিকে চট্টগ্রাম থেকে বরিশালের জন্য এলপি গ্যাসবাহী ট্রাকও আটকা পড়ে আছে ভেদুরিয়া ঘাটে।
এ রুটের জন্য মাত্র ৯মাস আগে সংগ্রহ করা ফেরি ‘অপরাজিতা’ ও ‘দোলনচাপা’ যথাক্রমে গত ১৮জুলাই ও ২আগষ্ট থেকে দফায় দফায় বিকল হলেও তার যন্ত্রাংশ সমুহ সংগ্রহ করে সচল করার তড়িৎ কোন পদক্ষেপ নেই । এমনকি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির এক বছরের ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে বিকল হওয়া ফেরি দুটি মেরামতে বিধিগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও তেমন কোন আগ্রাহ দেখাচ্ছেনা বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে বিধি মোতাবেক সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফেরি দুটি মেরামত করাতে না পারলেও সংস্থা তার নিজস্ব অর্থে  যন্ত্রাংশ আমদানীর চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। তবে সে ক্ষেত্রেও সংস্থাটির ক্রয় বিভাগের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অগ্রগতি খুবই ক্ষীন বলেও জানা গেছে। বিআইডব্লিউটিসি’র শীপ রিপেয়ার সার্ভিসের প্রধান গত দু’দিন ধরে বরিশালে অবস্থান করলেও ফেরি দুটি মেরামতে কোন অগ্রগতি হয়নি। ফেরি মেরামতে যন্ত্রাংশ সংগ্রহে অগ্রগতি না থাকলেও সড়ক বিভাগ থেকে ভাড়ায় আনা বিকল অপর একটি ইউটিলিটি ফেরি মেরামতে আপতত কাজ করছেন সংস্থার প্রকৌশলীরা। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সড়ক অধিদফতরের ফেরিটিও সচল করা সম্ভব হয়নি। তবে আজকের মধ্যে সড়ক বিভাগের ফেরিটি সচল করার মাধ্যমে যানবাহন পারাপার শুরু হবে বলে আশাবাদী বিআইডব্লিউটিসি।
তবে এ সেক্টরে সংস্থার নিজস্ব ইউটিলিটি ফেরি ‘অপরাজিতা’ ও ‘দোলনচাপা’ মেরামতে এখনো সংস্থাটির ক্রয় বিভাগ যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করতে পারেনি। মাত্র নয় মাস আগে নির্মিত ফেরি দুটির মূল ইঞ্জিনের ইনজেক্টর নজেল অকার্যকর হয়ে পড়া ও তা সময়মত সংগহ না হওয়ায় গত জুলাই ও আগস্টের প্রথম থেকেই এসব ফেরি বিকল রয়েছে। ফলে দেশের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা ভোলা মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর সহ বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল হাসিনার প্রতারণা: ব্যারিস্টার রফিকুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছেন, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার মতো লুণ্ঠনকারীর সঙ্গে বেগম জিয়া কথা বলবেন কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। “বিপন্ন মানবতা : ভুলুণ্ঠিত গণতন্ত্র’’ শীর্ষক এ আলোচনাসভার আয়োজন করে অ্যাগ্রিকালচারিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের মহাসচিব গোলাম রব্বানী। রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, এখন গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ে তিনটা পার্ট ছিল। একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, দ্বিতীয়টি আরো দুই টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে আর তৃতীয়টি হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান কে হবেন তা নির্ধারণ করবে সংসদ। এই রায়ের দুটি অংশ না মেনে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছেন। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল ১৯৯৪ সালে সংসদে যাওয়া বন্ধ করে এরশাদ-নিজামীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। তখন নিজামী যুদ্ধাপরাধী ছিল না, তাদের বন্ধু ছিল। সেদিন আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বদরুল হায়দার চৌধুরীর পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের কাছে ধরনা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সরকার বলছে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি সাদেক হোসেন খোকা দশ বছর ধরে মেয়র থাকলেও নির্বাচন দেয় না। নির্বাচন কমিশন ঢাকা সিটি নির্বাচন করতে চাইলেও সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় করতে পারছে না।
ব্যারিস্টার রফিকুল বলেন, সুজনের মতো প্রতিষ্ঠান যারা চারদলীয় জোটের বিরোধিতা করেছে তাদের অনুষ্ঠানে গতকাল সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে কথা বলেছে। তিনি বলেন, বৃটিশ সরকারের সময়ের আইনে রাজনৈতিক কারণে যাদের গ্রেফতার করা হতো তাদের রাজবন্দি বলা হতো। জেলখানায় তাদেরকে ডিভিশন দেয়া হতো। অথচ এই সরকার হত্যার আসামির মতো জামায়াতের নেতাদের ডাণ্ডাবেরি পরিয়ে আদালতে এনেছে। কারণ ভবিষ্যতে যাতে কোনো নেতা সরকারের সমালোচনা করার সাহস না পায়। তিনি বলেন, দুর্নীতির কথা শেখ হাসিনার মুখে সাজে না। শেখ হাসিনার নামে কোটি কোটি টাকা চুরির ১৮টি মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। যার আমলে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি, যোগাযোগমন্ত্রীর দুর্নীতি, কৃষি মন্ত্রণালয়, নৌ-মন্ত্রণালয়সহ সব জায়গায় কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি হচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, দুর্নীতির প্রমাণ দিতে হবে। দুর্নীতি কীভাবে হয় এটার প্রমাণ দেয়া জনগণের দায়িত্ব নয়। সরকারই বের করবে কারা দুর্নীতি করে। তিনি বলেন, এই সরকারের রাষ্ট্রপতি ফাঁসির আসামিদের ছেড়ে দিয়েছেন। একদিকে নিজ দলের ফাঁসির আসামিদের ছেড়ে দেবেন আর অন্যদলের লোকদের ফাঁসি দেয়ার ব্যবস্থা করবেন এটা জনগণ মেনে নেবে না।
মিসর ও তিউনিসিয়ার উদাহরণ টেনে ব্যারিস্টার রফিক বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যতক্ষণ না এই দুর্নীতিবাজ, জুলুমবাজ সরকারের পতন হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। 
এমবিবিএস প্রশ্ন ফাঁস
টাকা দিতে চেয়েছিলেন শুভেচ্ছার মালিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শুভেচ্ছা কোচিং সেন্টারের মালিক আবদুল মান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর ছাপাখানার গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিক শাহেনশাহ ঠাকুরের জবানবন্দির ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোরে তাকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করে।
ডিবি’র উপ-কমিশনার মহাবুবুর রহমান জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর মহাখালীর সরকারি প্রেস থেকে অন্তর্বাসের নিচে একটি প্রশ্নপত্র নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন শাহেনশাহ ঠাকুর। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে ওই ছাপাখানার ব্যবস্থাপক ফাইজুর রহমান (৪৭) ও কারিগর এস এম আলমগীরকে (৩৯) গ্রেপ্তার করা হয়। শাহেনশাহ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শুভেচ্ছা কোচিং সেন্টারের মালিক আবদুল মান্নানের নামও বলেছে।
শাহেনশাহের জবানবন্দির উদ্ধৃতি করে মাহবুবুর রহমান জানান, মান্নানের কাছে এক কপি প্রশ্নের দাম ১৫ লাখ টাকা চেয়েছিলো শাহেনশাহ। কিন্তু মান্নান বলেছিলো ১৫ কেনো প্রশ্নপত্র পেলে তিনি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি আছেন। মান্নানের ফার্মগেটের অফিসে বসেই তাদের মুখোমুখি কথাবার্তা হয়। এ সময় শাহেনশাহের মামা ছাপাখানার ব্যবস্থাপক ফাইজুরও ছিলেন। মান্নানকে গ্রেপ্তারের পর ডিবি তাকে বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে বৃহস্পতিবার ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, ব্যংক কর্মকর্তা, কোচিং সেন্টারের পরিচালকসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়।
বিসর্জনে বিদায় নিলেন দেবী
নিজস্ব প্রতিবেদক
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী বিজয়া দশমীতে মর্ত্য ছেড়ে পুনরায় কৈলাসে চললেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। সারা দেশে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে এ বছরের মতো শেষ হয়েছে বাঙালি হিন্দুদের সবচে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। রাজধানীসহ সারাদেশে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিজয়া দশমীর বিহিত পূজা শেষ করে দর্পণ বিসর্জন দেওয়া হয়। বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে শোভাযাত্রার মাধ্যমে দেবীকে নিয়ে আসা হয় বুড়িগঙ্গার তীরেএবং ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
মহানগর সার্বজনীন পূজা উৎযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল চন্দ্র দেব নাথ  জানান, ৫টার পর পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাট এলাকার বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে শুরু হয় বিসর্জন। ধূপগন্ধে মুখরিত নদীর ঘাটে ঢাকের বাদ্য আর আবীর মেখে আরতি মাঝে প্রথম বিসর্জন দেওয়া হয় সূত্রাপুরের ভোলাগীরি পূজা মণ্ডপের প্রতিমা। এর পর একের পর এক প্রতিমা বিসর্জন চলে।
ঢাকা মহানগরের ১৯৯টি মণ্ডপের প্রতিমার মধ্যে ১৩০টি বিসর্জন হয় বীণাস্মৃতি স্নানঘাটেই। বাকিগুলো বিসর্জন দেওয়া হয় পোস্তগোলা শ্মশানঘাট ও হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ এলাকায়। এছাড়া উত্তরার প্রতিমাগুলো বিসর্জন দেওয়া হয় তুরাগ নদীতে। ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশন মঠের পুরোহিত অমল মহারাজ বলেন, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি যেমন কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মুলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।
হিন্দু পঞ্জিকা মতে, এবার দেবী এসেছেন গজে (হাতি), গেছেন  দোলায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, দেবী হাতিতে এলে সুখ-সমৃদ্ধি বয়ে আনেন। তবে দোলায় যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের বার্তা দেয়। দশভূজা দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে গত রোববার পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়। এ বছর সারাদেশে প্রায় ৩ হাজার মণ্ডপে পূজা হয়েছে।
শারদোতসব ও আমরা
দীপংকর চক্রবর্তী
দুর্গাপূজার শুরু বাংলায়। বাঙালি হিন্দুর সবচাইতে বড় উৎসবের নাম দুর্গাপূজা। বহুকাল আগে থেকে এই পূজা শুরু হয়েছে এখানে। পূর্বসূরীদের আড়াইশ, তিনশ বছর আগে শুরু করা পূজার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এখনো নানা জায়গায় পূজা করছে তাদের উত্তরসূরীরা। এরকম দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় চলে আসা পূজা বাংলাদেশে নেই, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে অনেক খুঁজে পাওয়া যাবে। শ্যামনগরের ঘটকবাড়ির পূজা চলতি বছরে ৩১৩ তে পা রাখল। আগরপাড়ার ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পূজার বয়স হল ৩৩৫ বছর। বারাসাতের দক্ষিণ পাড়ায় পূজা হচ্ছে ১৬৬০ সাল থেকে।
বাঙালির হাত ধরেই পূজা ছড়িয়েছে ভারতের বড় শহরগুলিতে। পৃথিবীর যেসব দেশে বেশকিছু বাঙালি একত্রিত হয়েছেন সংসারসহ  সেখানেই ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গাপূজা । লন্ডনে এখন ১৫-২০টা পূজা হচ্ছে কমপক্ষে। এবং এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
দিন যত বদলাচ্ছে বাঙালির পূজায় আসছে হাজারো বিভিন্নতা। সম্ভাব্য প্রায় সবকিছু দিয়ে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে মাটির প্রতিমার আদলে। পাথর, লোহা, কাঠ, কাঁচ, পুঁতি, ধান, গম  থেকে হেন জিনিস বাকি নেই যা দিয়ে শিল্পীরা প্রতিমা বানান না। বাংলাদেশে এসব কাজ তেমন হয় না। হয় পশ্চিমবঙ্গে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের পূজা হয় থিম ভিত্তিক।
ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে পূজা হচ্ছে ১৯৯৯ থেকে। ফ্লোরিডায় পূজা হচ্ছে বেশ ক’বছর হল। বার্লিনতো অনেক এগিয়ে। এখানে পূজা হচ্ছে ১৯১৩ থেকে। গত বছর থেকে পূজা শুরু হয়েছে নেদারল্যান্ডস-এ। অস্ট্রেলিয়ায় পূজার শুরু ১৯৯৩ থেকে।
বিদেশের পূজায় নানা চেহারা। দেশি আর ফরেন ডিশের চমৎকার মিশ্রণ ঘটে এসব পূজায়। মিষ্টি থাকতেই হবে, নাহলে পূজা কিসের। একদিন হলেও সবাই মিলে পাত পেড়ে খাওয়া। গান, নাটকের ব্যবস্থা থাকছে প্রায় সর্বত্র।
ডাকের সাজে সজ্জিত একচালা মাটির প্রতিমা কিংবা হালের ফাইবার গ্লাসের প্রতিমার পাশাপাশি থার্মোকলের প্রতিমারও দেখা মিলবে বিদেশে। প্রতিমাকে সযতেœ সংরক্ষণ করা হয় অধিকাংশ জায়গায়। পরের বছর আবার নতুন সাজে সাজানো হবে তাকে।
পূজায় শুধু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শহরের মানুষরা নয়, শহরের বাইরে থেকেও মানুষ আসে। কোথাও আয়োজন করা হয় নানা প্রতিযোগিতার। দুঃসাহসী কেউ হঠাৎ করেই প্রকাশ করে বসে পূজা সংখ্যা।
বিদেশে পূজা হয় সুযোগ সুবিধা মেনে। কোথাও ৪দিন, কোথাও ৩ তিন, কোথাও ২ দিন, কোথাও শুধুমাত্র ছুটির দিনে। হেলসিঙ্কিতে এবার পূজা হবে ৩ তিন। ৩০ সেপ্টেম্বর, ১ অক্টোবর এবং ২ অক্টোবর। তিনদিনের পূজা। ছুটির দিনকে সামনে রেখে। ফ্লোরিডায় পূজা হবে ২ দিনের। ১ ও ২ অক্টোবর।
ইন্দিরাকে লিখছেন রবীন্দ্রনাথ, ‘কাল দুর্গাপূজা আরম্ভ হবে, আজ তার সুন্দর সূচনা হয়েছে। ঘরে ঘরে সমস্ত  দেশের লোকের মনে যখন একটা আনন্দের হিল্লোল প্রবাহিত হচ্ছে তখন তাদের সঙ্গে সামাজিক বিচ্ছেদ থাকা সত্ত্বেও সে আনন্দ মনকে স্পর্শ করে। পরশু দিন সকালে সুরেশ সমাজপতির বাড়ি যাবার সময় দেখছিলুম রাস্তার দুধারে প্রায় বড়ো বড়ো বাড়ির দালান মাত্রেই দুর্গার দশ হাত তোলা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে- এবং আশেপাশে সমস্ত বাড়ির ছেলের দল ভারী চঞ্চল হয়ে উঠেছে। দেখে আমার মনে হল েেশর ছেলে বুড়ো সকলেই হঠাৎ দিনকতকের মতো ছেলেমানুষ হয়ে উঠে সবাই মিলে একটা বড় গোছের পুতুল খেলায় প্রবৃত্ত হয়েছে। ভালো করে ভেবে দেখতে গেলে সমস্ত উচ্চ অঙ্গের আনন্দ মাত্রই পুতুল-খেলা, অর্থাৎ তাতে কোনো উদ্দেশ্য নেই, লাভ নেই- বাইরে থেকে দেখে মনে হয় বৃথা সময় নষ্ট। কিন্তু, সমস্ত দেশের লোকের মনে যাতে করে একটা ভাবের আন্দোলন, একটা উচ্ছ্বাস এনে দেয়, সে জিনিষটি কখনোই নিষ্ফল এবং সামান্য নয়।... প্রতি বৎসরের  এই ভাবের প্লাবনে নিশ্চয়ই মানুষকে অনেকটা পরিমাণে ঐঁসধহরুব করে দেয়; কিছুকালের জন্য মনের এমন একটি অনুকূল আর্দ্র অবস্থা এনে দেয় যাতে øেহ প্রীতি দয়া সহজে অঙ্কুরিত হতে পারে- আগমনী, বিজয়ার গান, প্রিয়সম্মিলন, নহবতের সুর, শরতের রৌদ্র এবং আকাশের স্বচ্ছতা, সমস্তটা মিলে মনের ভিতরে একটি আনন্দময় সৌন্দর্যকাব্য রচনা করে দেয়।’
শুধু চিঠিপত্রে নয়, কবিতায় গানে, ছোটগল্পে, উপন্যাসে, নাটকে শারদোৎসবের কথা, দুর্গাপূজার কথা বার বার লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। অথচ তার জš§কালে পারিবারিক দুর্গোৎসব বন্ধ হয়ে গেছে। ১৮৩৯-এর পরও কিছুদিন প্রতিমাপূজা হয়েছে ঠাকুর বাড়িতে। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ পূজার সময়টা প্রবাসে কালাতিপাত করতেন। তারপর একসময় পূজা উঠে গেল, পূজার রেশ রয়ে গেল রবীন্দ্র জীবনে। যতই ব্রাহ্ম ধর্ম বরণ করুন, সমাজকে এড়াতে পারেননি। অস্বীকার করতে গিয়েও তার কাছেই ফিরে ফিরে যেতে হয়েছে।
আজকাল পূজাসংখ্যার ছড়াছড়ি। ভাবনাটা প্রথম আসে রবীন্দ্রনাথের মাথায়। গায়ে ভারী পত্রিকা হাতে পেলে ছুটির অবসরে আয়েস করে পড়া যাবে। এই ছিল পূজা সংখ্যার পেছনের ভাবনা। ১২৯৯ এ যুগ্ম ভাদ্র-আশ্বিন সংখ্যা বেরোয় সাধনা পত্রিকার। বেশী লেখা, মোটা পত্রিকা। পরিকল্পনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রবীন্দ্রনাথের মেয়ে মীরার স্বামী নগেন্দ্রনাথ ১৩২৫-এর পূজায় বের করেছিলেন ছোটদের জন্য পূজা-সাহিত্য সংকলন। নাম, পার্বনী।
পূজার কথা মনে হলেই মনে পড়ে ছোটবেলার কথা। পায়ে হেঁটে ঘুরে ঘুরে পূজা দেখার কথা। প্রতিমার মুখ কোথায় কতটা সুন্দর হলো এ বিচার করতো সবাই। বলতো মাতৃমুখ। ভাটিখানা, কাঠপট্টি, কালিবাড়ি, ঝাউতলা, সদর  রোড কোথায় প্রতিমা সবচে’ সুন্দর সেটা দেখত সবাই। এখনকার মত বিচারক পাঠিয়ে নম্বর দেয়ার নিয়ম ছিল না। তবে শহরের সবাই নিজস্ব বিচারেই জেনে যেত কোন প্রতিমা কতটা সুন্দর হয়েছে।
বারোয়ারি পূজার তুলনায় ব্যক্তিগত পূজাগুলি ছিল অনেক সাদামাটা। কিন্তু সেখানে প্রাণের স্পর্শ ছিল অনেক অনেক বেশি। পূজার øিগ্ধতামাখা সৌন্দর্য এসব পূজাকে আলাদা সুষমা এনে দিত।
পূজার মন্ডপে বাজত চমৎকার সব গান। কোথাও কোথাও বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কণ্ঠে চন্ডীপাঠ। পুরোহিতরা তখনও সংস্কৃতের সাথে সম্পর্কচ্যূত হননি বলে কোথাও কোথাও তাদের স্বকণ্ঠে চন্ডীপাঠ আলাদা করে আকৃষ্ট করতো আমাদের।
পূজায় একটা দীর্ঘ পাঠবিরতি থাকত তখন। স্কুলগুলো বেশ বড় ছুটি দিত এসময়। পূজার দিনগুলি তাই ঝলমলে আনন্দময় ছিল। কোথাও কোথাও পূজার পাঠাবলি হত। এখন প্রায় সব জায়গা থেকে এ প্রথা উঠে গেছে।
সন্ধ্যায় আরতি হত। কোথাও কোথাও আরতির প্রতিযোগিতাও হত। ঘন ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে এক বা একাধিক মানুষ, কেউ কাউকে ধাক্কা না দিয়ে পাঁচ সাতটা ধুনুুচি অদ্ভূত কায়দায় ব্যালান্স করে নানাভঙ্গীতে নৃত্য করত। নাচের ব্যাকরণ খুব মানা না হলেও ঐ রকম চোখ পোড়ান ধোঁয়ার মধ্যে ধূপাধারের চমৎকার ব্যালান্স কিশোর মনকে আকৃষ্ট করত।
আর ছিল গান। পূজামন্ডপকে ঘিরে কোথাও কোথাও বিচিত্রানুষ্ঠান। পূজার গান বলে হƒদয়কাড়া কিছু গান কানের কাছে বাজত অবিরাম। তখনো সিডি, ডিভিডির আগমন ঘটেনি। ৭৮ আরপিএম রেকর্ড আর লং প্লে রেকর্ড। টেলিভিশনও আসেনি তখন। কলকাতা বেতারের অনুরোধের আসরে পূজার বেশ আগে থেকেই পূজার গান বাজত। সেই সাথে পুরানো জনপ্রিয় গান আর সিনেমার গান শুনতে শুনতে মন ভরে যেত। বাঙালি সমাজে হিন্দি গান তখনো এমন অশ্লীল অভব্যতায় জাঁকিয়ে বসেনি। গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার, শ্যামল গুপ্ত, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সুধীন দাশগুপ্ত, প্রনব রায়, সুধীন দাশগুপ্ত, অনল চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষসহ অসংখ্য গীতিকার নিবেদন করতেন তাদের শ্রেষ্ঠতম বাণী অর্ঘ্য। শ্রেষ্ঠ সুরকারদের দেয়া সুরে সেরা শিল্পীদের কণ্ঠে সেসব গান অনিবার্যভাবে ছুঁয়ে যেত সবার মন। কিশোর থেকে বৃদ্ধ সবার।
গানের আগে নিয়মমাফিক শিল্পীর নাম ঘোষণা হত বেতারে। সুরকার, গীতিকারদের সে সৌভাগ্য হত কদাচিৎ। বাংলা গানের সুরকার, গীতিকার আড়ালেই থাকত বেশির ভাগ সময়। তাদের নাম জেনে নিতে হত রেকর্ডের ওপরের ছাপা লেবেল দেখে।
গীতিকার পবিত্র মিত্রের কথা  কেউ মনে রেখেছেন কিনা জানি না। অসাধারণ কিছু গানের বাণী সাজিয়েছিলেন তিনি। তার জনপ্রিয় অধিকাংশ গানই পঞ্চাশের দশকের শেষ বা ষাটের দশকের প্রথম দিকের। এখনো সেসব গান বেজে উঠলে হƒদয় নেচে ওঠে। এরকম পাঁচটি গান (১) আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে (২) আজ মনে হয় এই নিরালায় সারাদিন ছন্দের গান শুনি (৩) ও আমার ছোট্ট পাখি চন্দনা (৪) কাজল নদীর জলে ভরা ঢেউ ছলছলে ও (৫) তুমি আর আমি শুধু জীবনের খেলাঘর/ হাসি আর গানে ভরে তুলব।
বেতার ছিল টিভিহীন সেইসব দিনে বিনোদনের, উপভোগের সবচেয়ে ঘরোয়া মাধ্যম। অনুরোধের আসরে, আগেও বলেছি, পূজার বহু আগে থেকে প্রচারিত হত পূজার গান। রেডিও ঘিরে থাকত ঘরে সবাই। এরপর কার গান হবে। কার গান সবচেয়ে শেষে যাচ্ছে। কে হচ্ছে সেরাদের সেরা।
এ বেতার অবশ্য আকাশবাণী। পূজার আগে রাত থাকতে উঠে মহালয়ার অনুষ্ঠান শুনতো সবাই। বছরের পর বছর বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কণ্ঠের ধারাভাষ্য পাঠের সাথে সাথে সংগীতের যে নৈবেদ্য পরিবেশিত হত তার আকর্ষণ সময়ের অগ্রগতি সত্ত্বেও আজো অপ্রতিরোধ্য।
পূজার আরেকটি প্রিয় আকর্ষণ ছিল পূজাসংখ্যা। কেমন করে যেন হাতে এসে পৌঁছাত কলকাতা থেকে প্রকাশিত পূজাসংখ্যাগুলি। শিশুদের জন্য আলাদা করে দেব সাহিত্য কুটির বা আরো দু’একটি প্রতিষ্ঠান প্রকাশ করত বিশেষ সংখ্যা। প্রকাশিত হত শিবরামের নতুন বই।
বরিশালের দূর্গাপূজার বেশির ভাগ হত শহরের উত্তরাঞ্চলে। পুকুরের দক্ষিণে কোনো পূজা হত কিনা মনে পড়ে না। দশমীর দিনের বিদায় বেদনা আর বার-দশরার সৌহাদ্যপূর্ণ কোলাকুলি ও প্রণামের স্মৃতিও বেশ মনে পড়ে আজো।
পূজায় অনেক কিছু বদলে গেছে। তারপরও পূজার মধ্যে এমন একটা কিছু আছে যা রবীন্দ্রনাথের কথায় ‘মানুষকে অনেকটা পরিমাণে ঐঁসধহরুব করে দেয়। রবীন্দ্রনাথের কথা ধার করে নিজের কথায় বলি পূজাকে কেন্দ্র করে অঙ্কুরিত হোক øেহ প্রীতি আর দয়া। বিজয়ার এই মহামিলনের গান সবার মনের মধ্যে রচনা করুক আনন্দময় এক সৌন্দর্যকাব্য।

বিরোধিতা বনাম রাষ্ট্রবৈরিতা: গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কৌশল প্রসঙ্গে
ড. ইশা মোহাম্মদ
বিরোধী দল মৌলবাদীদের উস্কানি পেয়ে বড় ধরনের আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। তারা রোডমার্চ করবে। উদ্দেশ্য গণসমর্থন পুনরুদ্ধার করা। তাদের ধারণা হয়েছে, গণসমর্থন পুনরুদ্ধার করা গেলে সরকার তাদের  ভয়ও পাবে, পাত্তাও দেবে। এখন যেমন বিরোধী দল পাত্তাহীন হয়ে গেছে, তেমন অবস্থা থেকে উদ্ধার পাবে। আর এ জন্য মাঠে ময়দানে নামার জন্য রাস্তা-ঘাটে চলে ফিরে বেড়াবার জন্য রোডমার্চ করার জন্য মৌলবাদীদের সাহায্য-সহযোগিতা দরকার। শুধু যে লোকবলের কমতি, তা নয়, অর্থবলের ঘাটতিও বর্তমান। মৌলবাদীরা তাদের রাজনৈতিক অবস্থান দূর করার জন্য দেদারসে টাকা ঢালছে। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওই সব উড়ন্ত-পড়ন্ত টাকা পয়সা হাতাতে চায়। তারাও একটা বিশেষ কর্মসূচি চায়। সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যুদ্ধাপরাধীর বিচার করবেই। যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে জামায়াত মরিয়া হয়ে উঠেছে। অনেকেই তাদের কুবুদ্ধি দিয়েছে। সরকারকে অন্য সমস্যায় ব্যতিব্যস্ত রাখতে পারলে তারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার বিলম্বিত করতে বাধ্য হবে। তাই তারা নির্জীব বিরোধী দলকে টাকা পয়সা ও লোকবল দিয়ে তাজা করিয়ে বড় ধরনের আন্দোলনের নামতে চায়। উদ্দেশ্য সরকার চাপের মধ্যে পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করুক। সরকার বিরোধীদের আগামী আন্দোলনের হুমকি মূলত সে কারণেই।
বাংলাদেশ এখন অনেক সমস্যায় আছে। সরকারকে দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরের কাজ সামলাতে হচ্ছে। পৃথিবীব্যাপী নানান কিসিমের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন সংঘটিত হচ্ছে। গণতন্ত্রীরা অর্থকষ্টে ভুগছে। তারা তাদের অর্থকষ্ট লাঘব করার জন্য এশিয়ার দুর্বল দেশগুলোকে টার্গেট করছে। পাকিস্তান আক্রান্ত হওয়ার মুখে। লিবিয়া তাদের করতলগত। লিবিয়া মিসর অন্তর্গত। ইসরাইল ও প্যালেস্টাইনিদের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্যালেস্টাইনকে অভুক্ত রেখে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য উস্কানি দেয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব যে কোনো মুহূর্তে হুমকির মুখে পড়তে পারে। দেশবৈরীরা তাদের পরিকল্পনামাফিক এগুচ্ছে। তারা একটা স্থায়ী ‘নৈরাজ্য’ চায়। বিরোধীদের আগামী মহাআন্দোলনের হুমকি ও ফাইনাল খেলার বিষয়টি ওই সব দেশবৈরীর অসৎ পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পর্কিত।
প্রশ্ন যখন দেশের স্বার্থ তখন অন্য বিকল্প ভেবে দেখার সুযোগ নেই। সরকারকে বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে দেশের স্বার্থে ‘সংহত’ হতে হবে। তবে একা একা নয়, মহাজোটের সকলকে নিয়ে, প্রয়োজনে আরো দল, সংঘ, গ্র“প এবং রাজনৈতিক সচেতন সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে দেশবৈরীদের রাষ্ট্র  বৈরী পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে। একা একা আওয়ামী লীগ করবে না কিন্তু সংগ্রামে আওয়ামী লীগের সহযোগীর অভাব হবে না। সেই ভরসায় আওয়ামী লীগ যথাস্থানে অবস্থান নিতে পারে। আওয়ামী লীগের প্রকৃত অবস্থান কোথায়, ঠিকানা কি?
সরকার গঠনের পরপরই মহাজোটের মহানেতারা রাজপ্রাসাদের অবস্থান গ্রহণ করেছেন। রাস্তা-ঘাটে, গ্রামে-গঞ্জে তাদের আর দেখাই যায় না। কিন্তু প্রয়োজন ছিল, তাদের রাস্তা-ঘাটেই থাকা। সদর রাস্তাই তাদের প্রকৃত অবস্থান হওয়া উচিত। কাঙালের ঘরই। এই কাঙালরা যাকে হাটে মাঠে ঘাটে গ্রামে-গঞ্জে। নেতানেত্রীরা মোটেই সময় পায় না এদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলার। ফলে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। রোডমার্চ ওই বিচ্ছিন্নতার সুযোগ নিয়ে তাদের গণবিচ্ছিন্নতা কমিয়ে ফেলতে পারে। যেহেতু গণতন্ত্রে আন্দোলনের অধিকার গণতান্ত্রিক, তাই বিরোধী দলের আন্দোলন প্রত্যক্ষভাবে রুখে দেয়ার সুযোগ নেই। প্রত্যক্ষভাবে রুখে দিলে দুষ্টলোকে স্বৈরতন্ত্রী বলবে। সেটা এখন প্রয়োজন হলেও বাস্তবতার নিরিখে চলবে না। তাই বিরোধী দলের আন্দোলনকে জনবিচ্ছিন্ন রাখার ও অকার্যকর করার জন্য অপ্রত্যক্ষ প্রতিরোধ করতে হবে। রাস্তা-ঘাট দখলে রাখা তেমনিই একটা কৌশল, বাংলার কাঙালরা, অভাবীরা যাতে ওই আন্দোলনে বিচ্ছিন্ন অবস্থানে থাকে সে ব্যাপারে তৎপর হওয়াটাও একটি কৌশল। কেবলমাত্র ভদ্রলোকরা তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক রোডমার্চ করুক। সেটা ভদ্রতাও হবে, গণতান্ত্রিকও হবে।
মৌলবাদীদের রাজনৈতিক তৎপরতা কম সুযোগ নেই, থাকতেই পারে না। তাই বিরোধী দলের আন্দোলনে, যে সব মৌলবাদী অংশগ্রহণ করবে তাদের শনাক্ত করতে হবে এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ‘সংগ্রহ’ করতে হবে। মোদ্দা কথা, কোনো মৌলবাদীকেই রাজনৈতিক আন্দোলন করে জনগণের কাছাকাছি অবস্থান করতে দেয়া যাবে না। তারা জনবিচ্ছিন্ন আছে। জনবিচ্ছিন্নই থাকবে। শোনা যাচ্ছে, তারা রোডমার্চের সুযোগ নিয়ে অন্দর-কোন্দর থেকে বেরিয়ে আসবে এবং সুনির্দিষ্ট এলাকায় দৌড়াদৌড়ি করে আবার অন্দরে- কোন্দরে ঢুকে পড়বে। এলাকাভিত্তিক ‘টহল’ বসিয়ে ওদের পূর্বাহ্নেই চিহ্নিত করতে হবে এবং এদের কাউকেই রাস্তায় বেরুতে দেয়া যাবে না। যারা     ‘রাস্তায়’ নামবে এবং ব্যাকগ্রাউন্ড দুলিয়ে দুলিয়ে দুংকার দিয়ে মিছিল করবে, তাদের একজনকে ওই একইভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড দুলিয়ে দুলিয়ে হেঁটে হেঁটে ঘরে ফিরতে দেয়া যাবে না। বিএনপি ভালোভাবেই টের পেয়েছে যে জামায়াতের বেইমানির কারণেই তাদের ভরাডুবি। আগামী নির্বাচনেও যে  জামায়াত বেইমানি করবে না তার নিশ্চয়তা চায় নিএনপি। ‘আন্দোলন’ যদিও মৌলবাদীদের উস্কানি তবুও বিএনপির আস্থা অর্জনের জন্য জামায়াত আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দেখতে চায় যে তারা বেইমান নয়। এটি যে, উস্কানি তা বুঝার ক্ষমতা বিএনপির ‘বড়  নেতাদের’ নেই। তাই তাদের আশা আগামী আন্দোলনে জামায়াত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং আওয়ামী লীগকে শাসানী দেবে। ধারণাটা এই রকমÑজামায়াতীদের তৎপরতায় আওয়ামী লীগ ভয় পেয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করবে।
বিরোধী দলের ফাইনাল খেলার খায়েশ মিটিয়ে দেয়ার জন্য গণতান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করা জরুরি। বিএনপি, আর যাই করুক যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে সশরীরে প্রত্যক্ষভাবে ‘কাজে’ নামবে না। আর যুদ্ধাপরাধী হিসেবে  জামায়াতের আলবদর, আলশামস ও রাজাকার হিসেবে বিএনপির কোনো বড় নেতা নেই। তাছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করলে বিএনপি যে তরুণ প্রজšে§র ঘৃণার পাত্র হবে, সেটা তারা ভালোভাবেই বোঝে। তরুণ প্রজšে§র তীর্যক চাহুনিতে তাদের অন্তরাÍা শুকিয়ে যাবে। তারা কোনোমতেই তরুণ প্রজš§কে চটানোর ঝুঁকি নেবে না। তাই যুদ্ধাপরাধীর বিচার ত্বরান্বিত করা একটা গণতান্ত্রিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বিরোধী দল নৈরাজ্যমূলক সর্বাÍক আন্দোলনে যাওয়ার আগেই গণতান্ত্রিক কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিনিধিত্বমূলক কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীকে ন্যায় বিচার করে দণ্ড কার্যকর করতে হবে। অহেতুক বিলম্ব না করেই। যখন জামায়াতীরা দেখবে, তাদের পতিত নেতারা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ঝুলে গেছে তখন তাদের বোধোদয় হবে। তারা খামোশ হয়ে যাবে এবং বিএনপির পদতলে আশ্রয় সন্ধান করবে না। আওয়ামী লীগের হাতে এখন টালবাহানা করার সময় নেই। যে কোনো মুহূর্তে আন্দোলন তুঙ্গে উঠতে পারে। তাই আন্দোলনের মুখে এখনই ‘লবণ’ দেয়া দরকার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য তরুণ প্রজš§ উসুখ হয়ে আছে। তাদেরও আর তয় সইছে না। এখন যদি ন্যায় বিচার করে চিহ্নিত ও প্রতিনিধিত্বশীলদের ঝুলিয়ে দেয়া যায় তবে খুব বড় কাজ হবে। ভালো হবে। আজ নয়ত কাল। তবে মোক্ষম সময়ে যদি রায় কার্যকর করা যায় তবে সময়ের এক ফোঁড়ের মতো কার্যকর হবে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার গতানুগতিক হওয়াও ঠিক নয়। এটি জমকালো হওয়া ভালো। বাংলাদেশের মানুষের হƒদয়ে যাতে গেঁথে যায় চির দিনের মতো। মীরজাফরদের পরিণতি কী হয়, কৃতঘœদের জাতি কী শাস্তি দেয়। সবাই জানুক, বুঝুক। ভবিষৎতে দেশবৈরীর জš§ কমে যাবে। এখনও যারা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন তাদের জন্য এটি একটি ‘বার্তা’ হবে।
দেশ রক্ষায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলে যথেষ্ট দুর্বল মনে হয়। তা না হলে গুটিকয়েক তথাকথিত বিরোধী  নেতা সামলাতে হিমশিম খাওয়ার কথা নয়। তাদের বুঝতে হবে বর্বরতার বিরুদ্ধে ভদ্রতা কোনো রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে না। বর্বরদের বিরুদ্ধে ‘শানিত কৃপাণ’ প্রয়োজন হয়। মাঝে মধ্যে ‘এলাকায়’ মৃদু বেদনার অনুশীলনও করতে হয়। যস্মিন দেশে সদাচার করতেই হবে। বিরোধদলীয় জনাকয়েক নেতার হুংকারের জবাবে আওয়ামী লীগের ‘বার্তাবহের’ মিটি মিটি কথা কী করে চলবে। প্রতিপক্ষ যদি সেয়ানা হয় তবে অন্য কোনো সেয়ানাকেই লড়তে দিতে হবেÑ কোনো বালককে নয়। সাধারণ মানুষও এটাকে ভালো চোখে দেখছে না। তারা আওয়াজ তুলে কথা বলে আর আওয়ামী লীগ মিটি মিটি স্বরে কী যেন বলে, পাবলিক শুনতেই পায় না। এটি কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়Ñবিশেষ করে রণক্ষেত্রে। শত্র“ সেনাদের দুর্বল ভেবে অবহেলা ভরে যুদ্ধ করার নিয়ম নেই। প্রতিপক্ষকে ‘দক্ষ’ ভাবতেই হবে। এটাই রণকৌশল নির্ণয়ের সাধারণ নিয়ম। মিটি মিটি স্বরে কথা বলার কায়দা বদলাতে হবে। কেন যেন তথাকথিত আওয়ামী বার্তাবহের মিটি মিটি গলাÑতা বোঝা যায় না। এদের কি যথাস্থানে চিকিৎসা প্রয়োজন, দেখা যায় মাঝে মধ্যে অস্থানে-কুস্থানে ‘সাইনবোর্ড’ ঝুলছে সদম্ভে ঘোষণা দিয়েÑএখানে গ্যারান্টি দিয়ে অর্শ ভগন্দর কিংবা পাইলসের সুচিকিৎসা করা হয়। শতভাগ গ্যারান্টি। এই মিহিদানা খাওয়া বার্তাবহদের কী ওই সব ডাক্তারখানায় চিকিৎসা করাতে হবে? জনগণ যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করছে।
সময় খুবই কম। সিদ্ধান্ত এবং কাজ এক সঙ্গেই করতে হবে। তবে অগোছালো হয়ে নয়, নেতৃত্বকে আরো সাবধান হতে হবে এ কারণে যে, তার বেঁচে থাকাই এখন প্রধান রাজনীতি। আশা করি কথাটা তিনি বুঝবেন।