মঙ্গল শোভাযাত্রায় সমুদ্র জয়
রহমান মাসুদ, ইমতিয়াজ মোমিন ও মাহমুদুল হাসানএসো সত্য, এসো সুন্দর, এসো মুক্তি- স্লোগান নিয়ে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা-১৪১৯ এ হাজারো মানুষের ঢল নামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের উদ্যোগে সকাল ৯টা ২৪ মিনিটে অনুষদের সামনে থেকে এই শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ থেকে হোটেল রুপসী বাংলার মোড় এবং সেখান থেকে টিএসসি হয়ে চারুকলার সামনে শেষ হয়। শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিকী। এছাড়াও শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে মিলন মেলায় পরিণত হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ধরণের মুখোশ, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন বহন করে। তারা ঢাক-ঢোল বাজিয়ে নেচে-গেয়ে প্রাণের উৎসবে মিলিত হয়। গায়ে বর্ণিল পোশাক আর মুখে বাঁশির সুর মোহিত করে তোলে শোভাযাত্রাকে। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া মানুষের মধ্যে ছিল অমলিন আনন্দ। সবকিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র জয়ের বিষয়টি প্রাধান্য পায় শোভাযাত্রায়। পুরান ঢাকা থেকে আগত গৃহকর্মী মেহজাবিন বাংলানিউজকে বলেন, এটা বাঙালির অনুষ্ঠান। এটা শুধুই আমাদের। তাই এতে অংশ নিয়ে সরাবিশ্বের সামনে আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চাই। তিনি বলেন, সরকারের উচিত সারাবিশ্বে বাঙালি সংস্কৃতি তুলে ধরা। বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশিরাও বাঙালি পোশাক ও ঢঙে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক নাতাল স্মিথ বলেন, ‘বাঙালির এই মিলন মেলা দেখে আমি অভিভূত। সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে এই গরমের মধ্যেও তাদের নিজস্ব পোশাকে অংশ নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। আর এমন উৎসবে যোগ দিতে পেরে ভালো লাগছে। এদিকে শোভাযাত্রা উপলক্ষে ৠাব, পুলিশ, সোয়াত বাহিনীর উদ্যোগে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। শোভাযাত্রাকে ঘিরে ক্যাম্পাস এলাকায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। বাঁশি ও ঢাক-ঢোলের শব্দে পুরো ক্যাম্পাস এলাকা মুখরিত। এদিকে ক্যাম্পাসের রাস্তার পাশে দেশীয় বিভিন্ন খাবার ও পণ্যের দোকান বসিয়েছেন বিক্রেতারা। এছাড়াও বিভিন্ন স্পটে আলপনা আঁকিয়েরাও ছিলেন ব্যস্ত।
ফাহিম ফয়সাল
পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ; শুরু হচ্ছে বঙ্গাব্দ ১৪১৯। সবাই গলা ছেড়ে গাইবো কবিগুরুর সেই বিখ্যাত গান ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো...’। পহেলা বৈশাখ ছাড়া বাঙালীর এতবড় সার্বজনীন উৎসব আর নেই। বিদায়ী বছরের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, হতাশা-ক্লান্তি, বেদনা-হাহাকারের পালা সাঙ্গ করে নতুন উদ্দীপনায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার গান নিয়ে নতুন বছরকে বরণ করছে বাঙালী জাতি। বাংলা নববর্ষ বাঙালীর প্রাণের উৎসব। এদিনটিতে সারা বিশ্বের বাঙালীরা পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করতে উৎসবে মেতে উঠে। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে এই উৎসবের ধরণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। একেক অঞ্চলে একেক রকম আয়োজনে উদযাপিত হয় বৈশাখী মেলা, হালখাতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, চৈত্র সংক্রান্তী ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। তবে রাজধানী ঢাকায় প্রতি বছর নববর্ষের দিনের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে থাকে ‘মঙ্গল শোভা যাত্রা’। রাজধানীতে নববর্ষের অন্যতম বিশেষ আয়োজন হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রতিবারই বাংলা নববর্ষকে বর্ণিল আয়োজনে বরণ করে নিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয় চারুকলায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি। এবছর মাস্টার্স এগারোতম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নের্তৃত্বে চারুকলার সব শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়েছে। সার্বিক তত্বাবধানে রয়েছে একটি কমিটি। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন চারুকলার শিক্ষক শিশির ভট্টাচার্য, নেসার হোসেন, আবুল বারক আলভি প্রমুখ। পহেলা বৈশাখে সকাল নয়টার দিকে চারুকলা থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয়ে হোটেল রূপসী বাংলার (সাবেক শেরাটন হোটেল) সামনে দিয়ে ঘুরে সোজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে যাবে। সেখান থেকে আবার শোভা যাত্রাটি চারুকলার সামনে এসে শেষ হবে। জানা যায়, নরসিংদীর ওয়ারীর বটেশ্বর প্রমাণ করে বাঙালীর সভ্যতা আড়াই থেকে তিন হাজার বছরেরও প্রাচীন। আর এ ইতিহাসের রয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। সে বিবেচনায় এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বাংলার ইতিহাসের নেগেটিভ ও পজিটিভ দিক’। এর মধ্যে রয়েছে সাশান (বাংলাদেশের সামুদ্রিক সিমানা জয়), অপশক্তির বিরদ্ধাচারন, হাতী, ঘোড়া ও পাখী। এই থিমকে ধরেই শোভাযাত্রার প্রতীক তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রথম শোভাযাত্রা চালু হওয়ার বিষয়ে জানা যায়, ১৯৮৮ সালের যশোরের চারুপীঠ নামক একটি প্রতিষ্ঠান সর্বপ্রথম এরকম একটি শোভা যাত্রার আয়োজন করে। তৎকালীন স্বৈরশাসকের সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তার প্রতিবাদে সেই শোভা যাত্রাটির আয়োজন করা হয়। সে সময় শোভা যাত্রাটির মূল উদ্যেক্তা ছিলেন মাহবুব জামিল শমিম, হিরন্ময় চন্দ, মোখলেসুর রহমান। এর পরের বছর ১৯৮৯ সাল থেকে খুব অল্প পরিসরে চারুকলার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিজস্ব অর্থায়নে প্রতি বছরই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ উৎসবটি করে থাকে। চারুকলার আয়োজনে প্রথম শোভাযাত্রার উদ্যোক্তা উপদেষ্টা ছিলেন- শিল্পী ইমদাদ হোসেন, রফিকুননবী (রনবী), আবুল বারাকাত আলভী, ওয়াহিদুল হক, ফয়েজ আহমেদ, নাসিরদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। তৎকালীন শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন- নেসার হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য, এম মনিরুজ্জামান, সাখাওয়াত, কামাল পাশা চৌধুরী, বিপুল শাহ। তবে আগে অল্প পরিসরে হলেও ২০০০ সালের দিকে এসে এর পরিসর বাড়তে থাকে। পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার উৎসবটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে মোটা অংকের বাজেটও লাগে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শোভাযাত্রার জন্য চারুকলা কখনোই স্পন্সর নেয়নি। অর্থ সংগ্রহের জন্য শিক্ষার্থীরা বাঙালী সংস্কৃতির নানা বিষয় রং-তুলির আঁচড়ে তুলে ধরেন মাটির সরায়, ক্যানভাসে ও মুখোশে। শিক্ষকদের কাছেও রংতুলি ও পেপার পাঠানো হয়। শিক্ষকরা ছবি এঁেক পাঠিয়ে দেন। তাঁদের আঁকা ছবি বিক্রি করেও অর্থ সংগ্রহ করা হয় উৎসবের জন্য। শিক্ষকদের চিত্রকর্ম সর্বনিম্ন আড়াই হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়ে থাকে।
তবে আরও বেশি দামের চিত্রকর্মও রয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি এক হাজার ও পাঁচ’শ টাকা করে বিক্রি করা হয়। এছাড়া লোকজ মোটিভ সম্বলিত সরার মধ্যে ছোট সরা ৩শ‘ ও বড় সরা পাঁচ’শ টাকা করে এবং মুখোশ ৬’শ টাকা করে বিক্রি করা হয়। শোভাযাত্রার অর্থায়নের জন্য চারুকলায় আরো বিক্রি করা হয় - মুখোশ, জল রং, সরা পেইটিং, টি শার্ট, তুলার পাখি ইত্যাদি। পঞ্চাশ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে এসব জিনিস ক্রেতা সাধারন কিনতে পারেন। তবে শিক্ষকদের কাজ এবং আরও বিশেষ কিছু কাজ নিলামের মাধ্যমে প্রতি বছর বিক্রি হয় বলে জানান, এগারোতম ব্যাচের ছাত্র মিথুন দত্ত। তিনি বলেন, বাঙালী সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী আপাদমস্তক বাঙালীরা বাংলা নববর্ষের এই উৎসবকে স্বার্থক করে তুলতে তাদের আঁকা সরা, ছবি, মুখোশ এবং তাদের শিক্ষকদের আঁকা ছবি ক্রয়ের মাধ্যমে ফান্ড তৈরিতে সহায়তা করে। শোভাযাত্রার প্রতীক তৈরিতে এবার ফোক মোটিভ হিসাবে তিন পাখির একটি কম্পোজিশন তৈরির কাজ হয়েছে।
পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী হালখাতা
মফিজুল সাদিকস্টাফ করেসপন্ডেন্টনিজ নিজ ধর্মীয় রীতি অনুসারে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা হালখাতা উদযাপন করছেন। গনেশ পুজার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী ও দোয়া-মোনাজাতের মধ্য দিয়ে মুসলিম ব্যবসায়ীরা এক বছরের বাকি উঠানোর জন্য তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান পালন করছেন।পহেলা বৈশাখে হালখাতা শব্দটি আমাদের সামনে এলেই রাজধানীর তাঁতী বাজার, শাঁখারি বাজার এবং ইসলামপুরের কথা মনে পড়ে যায়। এখানে ধর্ম বর্ণ ভুলে হালখাতার মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে চলছে লেনদেনের হিসাব ও কুশল বিনিময়। সতাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় রীতি অনুসারে গনেশ পুজার মধ্য দিয়েই শুরু করেছেন হালখাতা। সে উপলক্ষ্যে পুরান ঢাকার অলি-গলিতে চলছে গনেশ পুজার উৎসব। আর পুজারিরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন, দোকানে দোকানে দিচ্ছেন পুজা। শ্রী শ্রী দুর্গা মায়ের মন্দিরের পুজারি নন্দ দুলাল ব্রহ্মচারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘হালখাতা উপলক্ষে দোকানে দোকানে গনেশ পুজা দেব এবং ভগবানের কাছে আগামী বছর ব্যবসার সমৃদ্ধি কামনা করবো। হালখাতা মানেই পুরাতনের নিস্পত্তি এবং নতুনের হিসেব শুরু।’ নতুন বছর উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের টালি খাতা মন্দিরে মায়ের চরণ স্পর্শ করাচ্ছেন। খাতায় পুজারির হাত দিয়ে গনেশ ঠাকুরের নামও লেখাচ্ছেন তারা। শাঁখারি বাজারের সুর বিতানের মালিক দেবনাথ সুর বলেন, ‘আমরা মন্দিরে এসেছি মায়ের চরণে খাতা স্পর্শ করাতে। এরপর ক্রেতা-বিক্রেতা সকলে মিলে হালখাতা উদযাপন করব।
সাধ্যমত ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করাবো।’ তিনি বলেন, ‘আজকের এই দিনে ধর্মের কোনো ভেদাভেদ নেই। পুরাতন বছরের সব কিছু ভুলে গিয়ে আমরা একে অপরে হালখাতা উদযাপন করছি। হালখাতায় ধর্মীয় উৎসবের মতো আনন্দ পাচ্ছি। গনেশ পুজা এই বৈশাখ থেকে আগামী বৈশাখ পর্যন্ত বহাল থাকবে।’ এদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও হালখাতা উদযাপনে কোনো কমতি নেই। মুসলিম সম্প্রদায়ের দোকানে দোকানে চলছে কোরানখানি, তেলাওয়াত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। ইসলামপুর বাজারের ফরহাদ বস্ত্র বিতানের মালিক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আজকে মূলত একে অপরের খোঁজ খবর নেব। যারা আসছে সাধ্যমত আপ্যায়ন করছি। আর যারা বাকি পরিশোধ করতে না পেরে দোকানে আসতে লজ্জা পাচ্ছেন, কর্মচারীর মাধ্যমে তাদের বাসায় মিষ্টি পাঠানো হচ্ছে।’ পহেলা বৈশাখে পুরান ঢাকায় শুধু হালখাতাই নয়, ধনী-গরীব-দুঃস্থ অসহায় সকলে মিলিত হয়ে উদযাপন করছে পহেলা বৈশাখ। অনেকে দুঃস্থদের মধ্যে মিষ্টি ও শাড়ি বিতরণ করছেন।
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে
সুকুমার সরকার
সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্যতম নজির সুরঞ্জিতের পদত্যাগ
শামীম খান
বলেছেন, পদত্যাগ করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আপাদমস্তক এবং আজীবন রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রয়োজন বাংলাদেশের রাজনীতিতে রয়েছে সবসময়ই থাকবে বলেও মত দিয়েছেন তারা। কেউ কেউ সুরঞ্জিতের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ প্রতিহিংসা বা বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র কিনা সে প্রশ্ন তুলে বলেছেন একমাত্র সুষ্ঠু তদন্তের মধ্য দিয়েই তার প্রমাণ পাওয়া সম্ভব। একজন রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ ওঠার ঘটনাকে স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করছেন কেউ কেউ। তবে এই ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্্ঘাটন প্রকৃত রহস্য জনসম্মুখে তুলে ধরার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রত্যেকেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের দেশে এই প্রথম সংসদীয় গণতন্ত্রের সংস্কৃতির দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত বিএনপির দুর্নীতির অনেক ঘটনা ধরা পড়েছে কিন্তু তারা কেউ পদত্যাগ করেনি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ একটা সাহসী কাজ।” “তবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পেছনে কি কারণ আছে তার সুক্ষ্ম ও গভীর তদন্ত দরকার। হতে পারে প্রতিহিংসা, হতে পারে সঠিক সাবলিল ঘটনা,” বলেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বলেন, “আমাদের দেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, পদত্যাগের দাবি উঠে। কিন্তু কেউ কখনো পদত্যাগ করেনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্রে পদত্যাগের রেওয়াজ আছে। আমাদের দেশে এটাই প্রথম দৃষ্টান্ত। কিন্তু ঘটনা ধামাচাপা যেনো পড়ে না যায়। কারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো তা মানুষ জানতে চায়।” তিনি বলেন, “আমাদের দেশে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে কিন্তু সামরিক-বেসামরিক আমলাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠে না। তারা ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যায়। নানা কারণেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে পারে। বিরাজনীতিকরণের জন্যও অভিযোগ উঠতে পারে। তবে সরকার যেনো এর সুষ্ঠু তদন্ত করে।” জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বাংলানিউজকে বলেন, “সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এই পদত্যাগ বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বলিষ্ঠ ও সাহসী সিদ্ধান্ত। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক নতুন ধারার সুচনা হলো। তার এই সিদ্ধান্ত দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সঠিক চিত্র খুঁজে বের করতে ও দোষীদের সাজা দিতে সহায়তা করবে।” ইনু বলেন, “আমি তার বিরুদ্ধে দুনীতির অভিযোগ দেখছি না। তার মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। সম্পৃক্ততা আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন বাবলু বাংলানিউজকে বলেন, “সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য শুভ দিক। তবে তার মতো একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠাটা দঃখজনক। যদিও রাজনীতিবিদদের উত্থান-পতন, অনুকুল-প্রতিকুল সব পরিবেশের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। সে দিক থেকে তার এটি স্বাভাবিক ঘটনা।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, “সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না। দলের ভেতরে ও বাইরে উভয় জায়গা থেকেই তিনি সমর্থন হারিয়ে ফেলেছিলেন। পার্টির ভেতরে আগে থেকেই তার প্রতি সমর্থন ভালো ছিলো না। বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী প্রেক্ষাপটে। এ কারণে পার্টির ভেতর থেকে পরিস্থিতি সমলানোর ক্ষমতাও তার ছিলো না।” “তবে যতক্ষণ তদন্ত না হবে ততক্ষণ বলা মুশকিল সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কতটুকু দোষী,” বলেন ড. ইমতিয়াজ। সাবেক সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বাংলানিউজকে বলেন, “সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগের সিদ্ধান্তটি ভাল। তার পদত্যাগের ফলে তদন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তবে এটা প্রথম পদক্ষেপ। শেষ পদক্ষেপ হবে- কি ঘটনা ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে তা বের করা। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তদন্ত শেষ হওয়ার আগে সেটা নিয়ে মন্তব্য করা কাদা ছোঁড়াছুঁড়িরই নামান্তর।” আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহ্্দীন মালিক বলেন, “দুর্নীতির এই ধরণের অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়া এবং মন্ত্রীর পদত্যাগ করার প্যাকট্রিস দেশের জন্য নিসন্দেহে মঙ্গলজনক।” তিনি বলেন, “সেনগুপ্তের এই পদত্যাগের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে ইতিবাচক হয়ে থাকবে।” সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. এম জহির বলেন, “রেলমন্ত্রী হিসেবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রথমেই পদত্যাগ করা উচিত ছিলো। তবে পদত্যাগই শেষ কথা নয়। এ ঘটনার সঠিক তদন্ত হতে হবে। সুরঞ্জিতের জন্য এ ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে ড. জহির বলেন, “তিনি সারা জীবন রাজনীতি করেছেন এ ঘটনাটি হয়তো তার জন্য ব্যাড লাক।”
সুরঞ্জিত দফতরহীন মন্ত্রী
মঙ্গলবার রাতে এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ‘১৯৯৬ সালের কার্যপ্রণালী বিধির ৩(৪) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’ গত ৯ এপ্রিল সোমবার রাতে মন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িতে অর্থ পাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই সময় গাড়িতে রেলের পূর্বাঞ্চলের জিএম ইউসুফ মৃধাও ছিলেন। রেলওয়েতে নিয়োগ বাবদ পাওয়া ঘুষের ৭০ লাখ টাকাসহ তারা পিলখানা বিজিবি সদর দফতরের প্রধান ফটকে আটক হন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার দায় স্বীকার করে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
সোহেল তাজের চিঠি পেয়েছে সরকার
মন্ত্রিত্ব ছাড়ার ৩৩ মাস পরও বেতন কেন?
মান্নান মারুফ
যা সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও আমার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা ছাড়াও এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।`` তিনি বলেন, ``আমার পাঠানো পদত্যাগপত্র গেজেট নোটিফিকেশন না করে উল্টো আমার অজান্তে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ২০০৯ এর আগস্ট থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর মাসিক বেতন ভাতার চেক জমা দেওয়া হয়েছে। অথচ ২০০৯ সালের জুন মাস থেকে কোনো কিছুতেই প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমার স্বাক্ষর নেই।`` বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোরও অনুরোধ জানিয়েছেন সোহেল তাজ। উল্লেখ্য, সোহেল তাজ বর্তমানে ওয়াশিংটনের উপকণ্ঠে ম্যারিল্যান্ডে অবস্থান করছেন। রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের গাড়িতে ৭০ লাখ টাকা পাওয়ার ঘটনা এবং এর জের ধরে মন্ত্রীর পদত্যাগের পটভূমিতে সোহেল তাজের এই চিঠি পাঠানোকে তাৎপর্যময় মনে করা হচ্ছে।
চিঠি পেয়েছে সরকার
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজের চিঠিটি মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার হাতে পৌঁছায়। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরেই এ ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
১৮ এপ্রিল সম্প্রসারিত জোট ঘোষণা খালেদার
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনির্য়াস মিলনায়তনে ১৮ এপ্রিল নবগঠিত জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া। এ উপলক্ষে ওই দিন বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। আপাতত ১৬ দল নিয়ে সম্প্রসারিত জোট গঠন করা হলেও এ জোট আরো বড় হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে ভাগ্য বিপর্যয় ঘটছে সমমনা দলগুলোর ব্যানারে এতোদিন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে আসা দল জমিয়তে ওলামা ইসলামের। জোটে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েও এ দলটিকে নতুন জোটে রাখা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে অন্য একটি সূত্র। এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সম্প্রসারিত হচ্ছে, এ খবরে আনন্দে আছে সমমনা দলগুলো। এক দল এক নেতা, নেই অফিস, নেই ঠিকানা এমন দলগুলোর অবস্থান হবে এখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাশে। শরিক দলগুলোকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। জোট সম্প্রসারণ নিয়ে গত বছর থেকেই আলোচনা হচ্ছিল। সমমনা ও চারদলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এ নিয়ে একাধিক বার বৈঠকও হয়েছে। ১২ মার্চ মহাসমাবেশে জোট সম্প্রসারণের ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত দেয়নি বিএনপি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাংলানিউজকে বলেন, ‘জোট গঠন নিয়ে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছিলাম। এর আগেও একবার জোট ঘোষণা দেওয়ার চিন্তা ছিল। তবে তা বিভিন্ন কারণে হয়ে উঠেনি। তবে এখন মোটামুটি চূড়ান্ত, আগামী ১৮ এপ্রিল জোট ঘোষণা হচ্ছে। এ ঘোষণা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেবেন বলেও তিনি জানান। জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান নতুন জোট ঘোষণার কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সমমনা দলগুলো খুশি, খালেদা জিয়া নিজেই জোট ঘোষণা দেবেন শুনে।’ এনডিপির সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নীলু জোট ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগামী ১৮ এপ্রিল জোট ঘোষণার বিষয় জানিয়ে আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ জোট ঘোষণার বিষয়টি জানিয়ে বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তাফা ভঁূইয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিনের দাবি ছিল আমাদের জোটে নেওয়ার বিষয়টি। শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া ১৮ এপ্রিল ১৬টি দল নিয়ে জোট ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন।’ ১৬টি দল হচ্ছে, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জাগপা, এনপিপি, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি. মুসলিম লীগ, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, এনডিপি ও ডিএল। সূত্র বলছে, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে জোটে নিচ্ছে না বিএনপি।
ফের স্বপ্ন খানখান করেছে আ.লীগ: ফখরুল
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
দক্ষিণের মনোনয়নপত্র নিলেন কাজী ফিরোজ রশিদ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
সংস্কৃতিতে বাংলা নববর্ষ
আরিফুল ইসলাম আরমানপহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন, বাংলা নববর্ষ। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়।
ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নেয়। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন উৎসব। বিশ্বের সকল প্রান্তের সকল বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়, ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে অতীত বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা একে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেয়। নববর্ষের উৎসব বাংলার গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, ফলে সাধারণ মানুষের কাছে দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সাধারণত নববর্ষের দিনে সবাই বাড়িঘর পরিষ্কার রাখে, ব্যবহার্য সামগ্রী ধোয়ামোছা করে এবং বছরের প্রথম দিনে ভোরে গোসল সেরে পাক পবিত্র হয়। এ দিনে ভালো খাওয়া, ভালো থাকা ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক বলে মনে করা হয়। নববর্ষে ঘরে ঘরে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং প্রতিবেশীদের আগমন ঘটে। মিষ্টি, পিঠা, পায়েসসহ নানারকম লোকজ খাবার তৈরির ধুম পরে যায়। একে অপরের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় চলে। প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার মাধ্যমেও নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় হয় যা শহরাঞ্চলে এখন বহুল প্রচলিত। নববর্ষকে উৎসবমুখর করে তোলে বৈশাখী মেলা। এটি মূলত সর্বজনীন লোকজ মেলা। এ মেলা অত্যন্ত আনন্দঘন হয়ে থাকে। স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য, কারুপণ্য, লোকশিল্পজাত পণ্য, কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, সকল প্রকার হস্তশিল্পজাত ও মৃৎশিল্পজাত সামগ্রী এই মেলায় পাওয়া যায়। এছাড়া শিশু কিশোরদের খেলনা, মহিলাদের সাজ সজ্জার সামগ্রী এবং বিভিন্ন লোকজ খাদ্যদ্রব্য যেমন: চিড়া, মুড়ি, খৈ, বাতাসা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি প্রভৃতির বৈচিত্রময় সমারোহ থাকে মেলায়। মেলায় বিনোদনেরও ব্যবস্থা থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগায়ক ও লোকনর্তকদের উপস্থি’তি থাকে। তাঁরা যাত্রা, পালাগান, কবিগান, জারিগান, গম্ভীরা গান, গাজীর গান সহ বিভিন্ন ধরনের লোকসঙ্গীত, বাউল , মারফতি, মুর্শিদি, ভাটিয়ালি ইত্যাদি আঞ্চলিক গান ও লাইলী-মজনু, ইউসুফ-জুলেখা, রাধা-কৃষ্ণ প্রভৃতি পরিবেশন করেন। এছাড়া শিশু কিশোরদের আকর্ষণের জন্য বায়োস্কোপ, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের যেসব স্থানে বৈশাখী মেলা বসে সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সাভার, রংপুরের পায়রাবন্দ, দিনাজপুরের ফুলছড়িঘাট এলাকা, মহাস্থানগড়, কুমিল্লার লাঙ্গলকোট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, মহেশপুর, খুলনার সাতগাছি, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল অঞ্চল, সিলেটের জাফলং, মণিপুর, বরিশালের ব্যাসকাঠি-বাটনাতলা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, টুঙ্গিপাড়া, মুজিবনগর এলাকা ইত্যাদি। দিনাজপুরের ফুলতলী, রাণীশংকৈল, রাজশাহীর শিবতলীর বৈশাখী মেলাও বর্তমানে বড় উৎসবে রূপ নিয়েছে। কালের বিবর্তনে নববর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক পুরনো উৎসবের বিলুপ্তি ঘটেছে। আবার সংযোগ ঘটেছে অনেক নতুন উৎসবের। ঢাকার ঘুড়ি ওড়ানো এবং মুন্সিগঞ্জের গরুর দৌড় প্রতিযোগিতা এক সময় অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন আঞ্চলিক অনুষ্ঠানের মধ্যে চট্টগ্রামের বলীখেলা এবং রাজশাহীর গম্ভীরা প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনায় অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে নগরজীবনে নগর সংস্কৃতির আদলে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে নববর্ষ উদযাপিত হয়। এদিন সাধারনত সকল শ্রেণীর এবং সকল বয়সের মানুষ ঐতিহ্যবাহী বাঙ্গালি পোষাক পরিধান করে। নববর্ষকে স্বাগত জানাতে তরুণীরা লালপেড়ে সাদা শাড়ি, হাতে চুড়ি, খোপায় ফুল, গলায় ফুলের মালা এবং কপালে টিপ দেয়। আর ছেলেরা পাজামা ও পাঞ্জাবি পরে, কেউ কেউ ধুতি পাঞ্জাবিও পরে। এদিন সকালে পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ ভাজা ও নানারকম ভর্তা খাওয়া একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। বর্ষবরণের চমকপ্রদ ও জমজমাট আয়োজন ঘটে রাজধানী ঢাকায়। রমনার বটমুলে বৈশাখী উৎসবের অনুষ্ঠানমালা এক মিলনমেলার সৃষ্টি করে। ছায়ানটের উদ্যোগে জনাকীর্ণ রমনার বটমূলে রবীন্দ্রনাথের আগমনী গান এসো হে বৈশাখ এসো এসো-এর মাধ্যমে নতুন বর্ষকে বরণ করা হয়।
নববর্ষ যে ভাবে এলো
খাজনা আদায়ের সুষ্ঠুতা দানের লক্ষে মুঘল সর্মাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জতে সংস্কার আনার লক্ষে আদেশ দেন। সর্মাটের আদেশে বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজির ওপর আরপিত হয় আদেশ। তিনি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। মুঘল সর্মাট ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রজাদের ওপর আরোপিত কর আরবী সন হিজরী অনুসারে নেওয়ার প্রথার সাথে সমকালীন বাংলার আবহাওয়ার মিল না থাকায় প্রজাদের ফসল আরবি মাসের সাথে মিলত না এবং প্রজারা তাদের খাজনা বা কর পরিষোধ করতে পারতনা। প্রজাদের অসুবিধার কথা লক্ষ করে মুঘল সর্মাট আকবর বাংলার আবহাওয়ার সাথে কৃষকের ফলমান ফসলের মিল রেখে তৈরি করা হয় ‘ফসলি সন’। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে ফসলি সন গণনা শুরু হয়। এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় ৫ নভেম্বর, ১৫৫৬ সাল থেকে। পরবর্তীতে এটি প্রকাশ পায় বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ হিসেবে। ঐতিহাসিকেরা অনেকেই মনে করেন, বাংলা সন বহু আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। আসাম, বঙ্গ, কেরল, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়– এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হতো। এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় এটি ছিল আর্তব তথা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হত। তখন এর মূল বিষয় ফুঠে উঠত কৃষিকাজ। কৃষকদের ঋতুর ওপরই নির্ভর করতে হতো প্রণিত এই বংলা সনের ওপর। যুগের বিবর্তন ধারায় নতুন বর্ষ শুরু এবং হিসেবের জটিলতা দূর করতে হালখাতা হয়ে উঠে ব্যবসায়ীদের ও ক্রেতাদের মিটমাটের দিন।
বাঙালিয়ানা
দিদার খান চৈত্রের দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে চিরায়ত কাল থেকে বাঙালি স্বাগত জানিয়ে বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ার পরশ পেতে চায়। কতো রঙ আর রূপে রাঙানো সেই আগমনি বার্তা। কতো না গানে গুঞ্জনে মেতে ওঠে সেই আনন্দঘন মুহূর্তটি। সকল প্রতীক্ষা আর আয়োজন সেই শুভ লগ্নটির জন্য। সবকিছুই প্রস্তুত, অপেক্ষা কখন সূর্যের কিরণ বঙ্গজননীকে নবরূপে উদ্ভাসিত করবে। বাঙালির আর যেন তর সইছে না, সবাই কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে সেই নবজাগরণের গানে চারিদিক মাতিয়ে তুলবে। সব জীর্ণ-পুরাতন, দু:খ-বেদনা ভুলে গিয়ে আবার স্বপ্ন দেখবে নতুন দিনের। সব শত্রুতা ভুলে গিয়ে, কাধে কাধ মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে বৈশাখ শত শত বছর ধরে বাঙালির জীবনে বয়ে আনে নতুনের বার্তা। আসলে বৈশাখ কিংবা বৈশাখী ঝড় বাঙালি জাতির জীবনে এক অন্যরকম অনুপ্রেরণা। যুগে যুগে সকল সংকট মুহূর্তে বাঙালি জাতি বৈশাখকে মনে প্রাণে কামনা করে। বৈশাখী ঝড় যেমন পূর্বের সব জীর্ণতা দূর করে প্রকৃতিকে নতুন রূপে সজ্জিত করে, বাঙালি জীবনও ঠিক সেই ঝড়ের মতো সব কপটতা, অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার গ্লানি মুছে ফেলে নতুন করে বাঁচতে শেখে। আমরা নতুনের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে সহজেই পুরাতন দু:স্বপ্নগুলো মুছে ফেলতে পারি বলেই হয়তো জাতি হিসাবে আমরা সুখি। শত বেদনা, শত শোষণ নিপিড়ন ভুলে গিয়ে মুখে হাসি ফোটাই বৈশাখী ঝড়ের আগমনী বার্তায়। সময়ের বিবর্তনে হয়তো অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। পাল্টে গেছে আমাদের সমাজ, মূল্যবোধ আরো অনেক কিছুই। বিদেশি অপসংস্কৃতির কালো ছায়ায় আমাদের ভাষা, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, আমাদের চেতনা ইত্যাদি অনেক কিছুই আজ হুমকির মুখে। শত চেষ্টা করেও কিছুতেই এই ধারার পথরোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। সবাই যখন হাল ছেড়ে দিচ্ছেন, আমরা তখন আশাবাদী হয়ে উঠি যখন বৈশাখ বাঙালির জীবনকে রঙে রূপে ভরিয়ে দেয়। অন্তত এই একটি দিনের জন্য হলেও বাঙালি তার আসল বাঙালিয়ানায় ফিরে আসে, নিজেকে নতুনরূপে চিনতে পারে, নিজের সংস্কৃতি ঐতিহ্য আর গৌরবের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। মাঠে-ঘাটে, শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই বৈশাখের নতুনের বার্তা বইতে থাকে। সবার কণ্ঠ গুন গুন করে গেয়ে ওঠে বৈশাখের আগমনী গান। অনেকে হয়তো বলতে পারেন যতো সব আদিক্ষেতা, এক দিনের সখের বাঙালি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। কিন্তু একদিনের জন্য হলেও পহেলা বৈশাখের এই দিনটির জন্যই বাঙালি তার অতীত ঐতিহ্যকে কাছ থেকে জানার ও দেখার সুযোগ পায়। তাঁতের শাড়ি, পান্তা, ইলিশ, বাহারী মেলা, নগরদোলা, সাপের খেলা, বাউল গান, রমনার বটমূল; একটি দিনের জন্য হলেও ক্ষতি কি? হোক না। বৈশাখ আছে বলেই তো হাজার বছর পরও আমরা গর্ব ভরে বলতে পারি – আমি বাঙালি। আমাদের জীবনে এটি এমন একটি দিন যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে একই সুতোয় গেথে রেখেছে। বৈশাখ আছে বলেই আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি অসাম্প্রদায়িক এক শস্য-শ্যামল বাংলাদেশের। বৈশাখের আগমনী বার্তায় নিহিত থাকে আমাদের নবজাগরণের বাণী। আমাদের মূল্যবোধকে পূণরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা একমাত্র বৈশাখেরই আছে। আমরা তাই প্রতি বছর পহেলা বৈশাখের এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করি অধীর আগ্রহে, এবার বুঝি মুক্তি পাবো সকল অসাঢ়তার জঞ্জাল থেকে।
বৈশাখ বাঙালির ঐতিহ্য
শামীম হোসেন
আমরা এখন দিবস কেন্দ্রীক বাঙালি হয়ে গেছি। এটা শুনতে হয়তো আমাদের কারো কারো খারাপ লাগতে পারে। বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখকে যেন এ মাসেই মনে পড়ে। সারা দেশের মানুষ প্রতি বছরই এ দিনে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মেতে ওঠেন পরম আনন্দে। এ দিনে আমরা জাত-কুল-বর্ণ-ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে যাই। সবাই শামিল হন এক কাতারে। একদিনের জন্য হলেও পহেলা বৈশাখ সবাই মনে-প্রাণে হয়ে উঠেন বাঙালি। এই বৈশাখী উৎসব দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে অব¯’ানরত বাঙালিরা এখন বেশ ধুমধাম করে উদযাপন করে থাকেন। অনেকরকম আশঙ্কার মধ্যেও পহেলা বৈশাখ নিয়ে সবারই অবস্থান ভেদে পৃথক পৃথক ভবনা থাকে। অনেকেই হয়ত ভাবেন দিনটাতে মেঘমুক্ত শুস্ক আবহাওয়া থাকবে আবার কেউ কেউ ভয়ে থাকেন কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানবে কিনা? ব্যবসায়ীদের ভাবনাটাও কিš‘ এই বৈশাখ কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। কারণ তারা নতুন বাংলা বছরে হালখাতা করে তাদের বকেয়া আদায় করেন। আবার কেউ কেউ নতুন বছর থেকে নতুন ব্যবসা শুরু করেন। অবস্থান ভেদে সবার ভাবনাগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়। আর শিশু-কিশোরদের ভাবনার বিষয়ে বলা যায়, ঈদের পরেই সবচেয়ে আকর্ষণীয় উৎসব হল বৈশাখী মেলা। এই মেলা থেকে শিশুরা তাদের শখের খেলনাসহ নানা রকম জিনিস সংগ্রহ করে। যার ভাবনা যে রকমই হোক আমাদের সবার লক্ষ্ একটাই তাহলো বাঙালির সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখকে আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করার। বাঙালির প্রায় ৮০০ বছরের পুরোনো সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখ উৎসব। রাজস্ব অর্থাৎ খাজনা আদায়ের জন্য চালু হয়েছিল এ সংস্কৃতি। পহেলা বৈশাখই আমাদের দেশের একমাত্র বড় উৎসব যে উৎসবে আমরা সবাই ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষ এক কাতারে শামিল হই। পহেলা বৈশাখে এখন সরকারিভাবে রাজস্ব আদায় হয়না ঠিকই তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের মধ্যে হাল খাতার রীতি এখনো চালু রয়েছে। এ দিনে পুরাতন বছরের হিসাবের খাতা বাদ দিয়ে নতুন বছরের খাতা খোলা হয়। আর এজন্য ব্যবসায়ীরা হালকা মিষ্টি খাবারের আয়োজনও করে থাকেন।পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে গ্রাম-বাংলার নানান জায়গায় বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। গ্রাম-বাংলার মেলার রীতি এখন শহরে এসেও যুক্ত হয়েছে। রেওয়াজ চালু হয়েছে মাটির পাত্রে পান্তা ইলিশ খাওয়ার। যদিও নিম্ম-মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষরা এই রেওয়াজকে বাঙালিয়ানা মনে করে না। কারণ রেওয়াজ ছিল ১ বৈশাখের সকালে দই-চিড়া খাওয়ার। কিš‘ শহুরেদের মধ্যে পান্তা ইলিশের এই চল পাকাপাকিভাবেই যুক্ত হয়ে গেছে বৈশাখী উৎসবে। ঢাকার জীবনেও বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে পহেলা বৈশাখ। এদিন ঢাকার মানুষজন ইট-কাঠের বন্দীদশা থেকে বের হয়ে একটু আনন্দ করে পরিবারের সাবাই মিলে। কেউবা আবার বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে ঘুরতে বের হয়। ঢাকার বৈশাখী ঐতিহ্যের সঙ্গে ছায়ানট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। রমনার বটমূলে ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের বৈশাখি গানের অনুষ্ঠান শুরু হয়। আর চারুকলা আয়োজন করে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। শোভাযাত্রায় বাঙালির সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা হয়ে ওঠে উৎসবের নগরী। রমনা, টিএসসি চত্বরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় মেলার। রাজধানীতে পহেলা বৈশাখকে ঘিরে লাখো মানুষের ঢল নামে। শাহবাগ মোড় থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত মানুষের মিলনমেলা বসে। বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা,চন্দ্রিমা উদ্যান, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর ও লেকসহ সর্বত্রই থাকে লোকে-লোকারণ্য। বড় ঢল নামে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও টিএসসিকে ঘিরে। নতুন বাংলাবছর ১৪১৯ শুরু হোক সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী। আমাদের সবার অবস্থান থেকে আমরা সবাই ভালো থাকি, বিকাশ ঘটাই দেশীয় সংস্কৃতির এবং নতুন বাংলাবছর ১৪১৯ সবার জীবনে শান্তির সুবাতাস বয়ে যাক।
পহেলা বৈশাখ ও আমার ভাবনা
সাদিয়া ফাতেমা কবীর
‘বার মাসে তের পার্বণ’ খ্যাত বাঙালিদের অনেক প্রিয় উৎসবের একটি হল পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা বর্ষবরণ। একজন উৎসবপ্রিয় বাঙ্গালী হিসেবে আমার ও এই নববর্ষ বরণ নিয়ে উৎসাহের অন্ত নেই। আনন্দঘন, উৎসবমুখর এই দিনটি নিয়ে ভাবতে গেলেই কিছু ভাবনা আপনা-আপনি চলে আসে। পহেলা বৈশাখ মানেই আমার কাছে মঙ্গল শোভাযাত্রা, রঙ্গিন আল্পনা, গরদ তথা লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, মাটির গয়না, হাত খোঁপায় জড়িয়ে, রাখা চুলে ফুলের ছোঁয়া, মেহেদী-আলতার রঙ্গে হাত রাঙ্গানো,বৈশাখী মেলায় ঘুরতে ঘুরতে মুড়িমুড়কি, মন্ডা-মিঠাই এর স্বাদ নেওয়া, নাগরদোলা, পুতুল নাচ... জল আনা স্বাদ-এর এক অভূতপূর্ব সমন্বয় এই দিনটি। নিজেকে এবং নিজের শেকড় কে নতুনরূপে ফিরে পেতে এই দিনটি বরাবরই আমার কাছে অনন্য। প্রতি বছরের মত ১৪১৯ কেও একই ভাবে বরণ করার আশা রাখছি। তবে আমার একটা স্বপ্ন আছে যেটা প্রতিবারই দেখি, চেষ্টা করি যতটা সম্ভব স্বপ্নটাকে সত্যতা দেওয়ার। এবারও ব্যাতিক্রম হবেনা জানি। আমি স্বপ্ন দেখি আমাদের সমাজটা একদিন এমন হবে যেদিন বর্ষবরণের দিনে কোন পথশিশু ভাত খাবার জন্য দুটো পয়সা চেয়ে কাঁদবেনা, ফেলে দেওয়া তরমুজের খোসা, পান্তার বাসন খুঁটে খাবার খুঁজে ফিরবেনা। সমাজের উঁচু তলার মানুষগুলোর বদ্ধ গাড়ির কাঁচের সামনে ফুল হাতে কাকুতি-মিনতি করবেনা কোন শিশু। আমাদের সমাজে সামর্থ্যবান মানুষের অভাব নেই। খুঁজলে এমন অনেক পাওয়া যাবে যারা নতুন বছরকে বরণ করতে হাজার হাজার টাকা শপিং সেন্টারে বিলিয়ে দিচ্ছেন অনায়াসেই। আমি বলিনা যে মানুষ শখ পুরন করবেনা। মানুষ অবশ্যই তার শখ পূরণ করবে কিন্তু একবার ভেবে দেখা বোধহয় উচিত যে আমার শখের জন্য বরাদ্দ হাজার টাকার সামান্য কিছুটা দিয়ে আমি আরও একজনের শখ না বরং প্রয়োজন মেটাতে পারি। লিখছি বলেই না, আমার মন এভাবেই আমাকে বলে। আমি জানি হয়ত আমি একা না, আমার মত এরকম ভাবে আরও অনেকেই ভাবেন। সেটাই আশার কথা। আমরা জাতিগত ভাবে আশাবাদী আর তাই আশা করি এমন একদিন অবশ্যই আসবে যেদিন আমার এই ভাবনাগুলো সত্য হবে, মানুষ বুঝতে শিখবে জাতির ঐতিহ্য। রক্ষায় সব থেকে আগে দরকার মানুষগুলোকে রক্ষা করা আর সেদিনের বর্ষবরণ খুঁজে পাবে প্রকৃত সার্থকতা। পঞ্চমবর্ষ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল
হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ
বিনোদন প্রতিবেদক
পহেলা বৈশাখে নারীর সাজের গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ কাচের রেশমি চুড়ি। রিনিঝিনি শব্দে এক আলাদা আবহ তৈরি করে কাচের চুড়ি। তাই বৈশাখে হাতভর্তি রেশমি চুড়ি না হলে যেন নারীর সাজ পূর্ণ হয় না। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে চুড়ি কিনেছেন তো। এখনো না কিনে থাকলে জেনে নিন কোথায় পাবেন মনের মতো কাচের চুড়ি। ইডেন কলেজ, হোম ইকোনমিকস কলেজের পাশে গড়ে উঠেছে চুড়ির এক বড় বাজার। টিএসসির মোড়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ভবনের পাশে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং ছবির হাট ও চারুকলার সামনে গড়ে উঠেছে কাচের চুড়ির সম্ভারও কম নয়। এ ছাড়া নিউ মার্কেট, গাউসিয়া, বসুন্ধরা সিটি, মৌচাক মাকের্টসহ সব শপিং সেন্টারেই কাচের চুড়ি পাওয়া যায়। মাত্র ২০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ২০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন পছন্দের এক ডজন কাচের চুড়ি। ইডেনের সামনে প্রায় ১০ বছর ধরে চুড়ি বিক্রি করেন, সখিনা বেগম চুড়ি বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। সখিনা বলেন, সারা বছরই ছাত্রীরা চুড়ি কেনে তবে পহেলা বৈশাখের আগে তার বিক্রি কয়েকগুন বেড়ে যায়। বৈশাখে লাল শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে সেখানে চুড়ি কিনছিলেন বাংলায় অনার্সে পড়া ছাত্রী শায়লা। শায়লা লাল চুড়ি নিচ্ছেন। সে জানালো, বড় মার্কেটগুলোতে একই ধরণের পন্য পাওয়া গেলেও দাম অনেক বেশি। খালার কাছে একটু দেখে কিনলে কম দামেই পছন্দের চুড়ি কেনা যায়।
চলো আকাশ ছুঁয়ে আসি
হেজলুল ইসলাম
বাস্তবে যদি পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচ্চতায় যাওয়ার সুযোগ থাকে তবে তা কে না নিতে চায়? সেরকম একটি কাজ দূর্গম হিমালয় পর্বতমালার ভেতর পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু সড়ক পথে সাইক্লিং করা। শুরুটা ছিল হঠাৎ করেই, একদিন ইন্টারনেটে দূর্গম হিমালয় পর্বতমালার ভেতর পৃথিবীর সব চেয়ে উঁচু সড়ক পথে সাইক্লিং করার একটি অদ্ভুত তথ্য নজরে আসে। এই সড়কটি ভারতের মানালি থেকে ভারত নিয়ত্রিত কাশ্মিমের লাদাক অঞ্চল, অত:পর লাদাক থেকে খারদুং লা। সংক্ষেপে আফগানিস্তান ও তিব্বতের দক্ষিণ-পশ্চিমে হিমালয়ের মাঝে। এখানে সাইক্লিং করার সুযোগটি আসালেই উত্তেজনাপূর্ণ।পরবর্তী দিন, ব্যক্তিগত খরচে, আমার এই সাইক্লিং করার সিদ্ধান্তটির ঘোষণাটি, অফিস সহকর্মী ও বন্ধুমহলে অত্যন্ত হাসির একটি কারণ হয়ে দাড়ায়। এক অর্থে তারা ভুল কিছুই করেনি, এটা কোন ছেলে খেলা নয়। ৬০০কি:মি: পথের সাথে ৩০০কি:মি: সমান উঁচু পাহাড়ি পথে সাইক্লিং করার জন্য শারিরীক ভাবে যথেষ্ট সামর্থ থাকতে হবে অবশ্যই। শুধু তাই নয়, বৈরি আবহাওয়ার সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭০০০ ফিটেরও অধিক উচ্চতায় অক্সিজেনও কম থাকে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রস্বাসের জন্য। অত:পর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন যে বিষয়টি শেখার ছিল তা হল, মানসিক ভাবে এ কাজের প্রস্তুতি নেয়া, যেখানে হিমালয় এক জনবসতিহীন স্থান, আর রয়েছে খাবার ও খাবার পানির অপ্রতুলতা।
সব কঠিন কাজের প্রথম যে কাজটি করতে হয় তা হল একটি দামি ও উন্নতমানের পাহাড়ে চালনোর উপযোগী সাইকেল যোগাড় করা ও পর্যাপ্ত অর্থ। এখন আমার আছে একটি ভাল সাইকেল ও একটি স্বপ্ন, উঁচু নিচু হিমালয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু সড়ক পথে সাইক্লিং করা।
মানসিক এবং আর্থিক প্রস্তুতির পর আমি পথের একটি প্রাথমিক পরিকল্পনা করে নেই। তা ছিল এমন:
দিন ০১: মানালি থেকে মাড়ি
দিন ০২: মাড়ি থেকে শিশু
দিন ০৩: শিশু থেকে পাতসিও
দিন ০৪: পাতসিও থেকে সারচু
দিন ০৫: সরচু থেকে পাং
দিন ০৬: পাং থেকে লাতো
দিন ০৭: লাতো থেকে লেহ্
দিন ০৮: লেহ থেকে খারদুং লা।
দিন ০২: মাড়ি থেকে শিশু
দিন ০৩: শিশু থেকে পাতসিও
দিন ০৪: পাতসিও থেকে সারচু
দিন ০৫: সরচু থেকে পাং
দিন ০৬: পাং থেকে লাতো
দিন ০৭: লাতো থেকে লেহ্
দিন ০৮: লেহ থেকে খারদুং লা।
অফিস সহকর্মী ও বন্ধুমহল থেকে শুনতে হয় আমি পাগল এবং একাজটি সম্পূর্ণ করা আমার পক্ষে অসম্ভব। আবার কেউ কেউ বলে এটি আত্মহত্যা ছাড়া কিছুই নয়। একটি মজার প্রশ্ন ছিল যেখানে বিমানে যাওয়া সম্ভব সেখানে কেন সাইকেল? সত্যি, যদি তা আমার জানা থাকত, কেন.... শুধু জানা ছিল পরবর্তী ১০টি দিন খুবই কষ্টকর যাবে, যা সাধারন জীবনযাত্রা থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। যেহেতু দীর্ঘদিন সন্ধান চালোনোর পর দ্বিতীয় একজন সামর্থবান সাইকিলিস্ট পাওয়া যায়নি, অগত্যা একাই যাত্রা শুরুর করতে হয় পৃথিবীর সেই অজানা পথে। আনুসঙ্গিক পোশাক, মেরামত করার যন্ত্রপাতি ও সাইকেল নিয়ে ২০১১ সালের আগষ্ট মাসের ২০ তারিখ যাত্রা করি প্রথমে বিমানে করে দিল্লি। পরবর্তীতে দিল্লি থেকে বাসে করে ১২ ঘন্টার যাত্রা শেষে মানালি। মানালি, যেখান থেকে যাত্রা শুরু এই উত্তেজনাপূর্ণ অভিযান।
দিন ০১: মানালি থেকে মাড়ি
প্রথম দিন হিসেবে দিনটি ছিল যথেষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ, দেশ থেকে বহু দূরে একা আমি হিমালয় এর মত জনশূণ্য পাহাড়ে সাইক্লিং করছি। একটি স্বপ্ন পূরণের আশায় এগিয়ে যাই সামনের দিকে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, সকালবেলা মানালি পৌঁছানো মাত্র চলতে শুরু করি বহুল প্রতিক্ষিত মানালি-লাদাক সড়ক পথে। জায়গাটি হিমালয়ে হওয়াতে শুরু থেকেই উচ্চতার দিকে সাইক্লিং শুরু করতে হয়। যতই উঁচুতে যাচ্ছি ততই ঠান্ডা বাড়ছিল।
শুরুতেই যে পাহাড়টিতে সাইক্লিং শুরু করি তার নাম হল রোথাং। ধীরে ধীরে পলচান নামক জায়গা পার হয়ে রোথাং এর সোলান উপত্যকার মাঝদিয়ে গুলাবা নামক স্থানে পৌঁছি যা মানালি থেকে ২৫কি:মি দূরে। এখানে হালকা খাবার খেয়ে আবার যাত্রা শুরু হয় মাড়ির দিকে। রোথাং নামের সবুজ পাহাড়টি পযর্টকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। রোথাং এর গায়ে আছড়ে পরা মেঘ ভেদ করে, ঠান্ডা আবহাওয়ার ভেতর দিয়ে চলে যাই মাড়ি। এ জায়গায় কোন বসতি চোখে পড়বে না কিছু তাবু ছাড়া। তাবুগুলো মূলত পর্যটকদের থাকার জন্য ব্যাবহৃত হয়। মাড়ি পৌঁছাতে প্রায় সন্ধে হয়ে যায়, তাই সিদ্ধান্ত নেই এখানেই আমার প্রথম দিনের যাত্রাবিরতি এবং রাতের খাবার জলদি শেষ করেই ঢুকে যাই নিজের তাবুতে। যেহেতু পাহাড়ে খুব দ্রুত রাত নামে এবং প্রথম দিনে যথেষ্ট পরিশ্রমের পর, নির্জন পাহাড়ে তাবুই ছিল আমার সোনার প্রাসাদ রাত কাটানোর জন্য। এভাবেই তাবুতেই রাত কাটতে হবে প্রতি রাতে, যার আর কোন বিকল্প নেই পরবর্তী দিনগুলোতে।
দিন ০২: মাড়ি থেকে শিশু
দ্বিতীয় দিনটি শুরু হয় ৭0সে: তাপমাত্রার ঠান্ডায় সাইক্লিং করে। একটি তাবুর দোকানে নুডলস দিয়ে সকালের নাস্তা শেষে চা পান করে শরীর গরম করে আবার শুরু হয় সাইক্লিং রোথাং এর চুড়ার দিকে। প্রথমে বেশ খানিকটা পথ ভালই ছিল কিন্তু কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় ভাংগা পথ। মাটি ও পাথরের টুকরার ওপর দিয়ে যেতে হয় প্রায় ১৮কি:মি: ওপরের দিকে। সম্পূর্ণ যাত্রার মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে খারাপ পথ কারণ বৃষ্টির জন্য ভূমি ধ্বসের কারণে কোথাও কোথাও রাস্তার বিন্দুমাত্র চিহ্নও ছিল না। অবশেষে ১৩১০০ ফিট উচ্চতায় রোথাং পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে পারি। ১৬ কি:মি: পথ পাড়ি দিয়ে মাত্র ২২০০ফিট উচ্চতা অতিক্রম করতে সক্ষম হই। যায়গাটি ভ্রমন পিয়াসীদের জন্য একটি অনন্য স্থান। চুড়ায় পৌঁছানোর পর আবার শুরু হয় নিচের দিকে নামা। রাস্তার এতটাই বাজে অবস্থা যে বলে বোঝাবার মত নয়। একটু পিছলে গেলেই হাজার ফিট নিচে পড়ে যাবার আশংকা। ধীরে ধীরে নামতে নামতে হয় খোকসার নামক স্থানে। এখানে একটি বাধ্যতামূলক বিরতি নিতে হয় কারন প্রথম বারের মত একটি পুলিশ ফাঁড়ি দেখতে পাই। এখানে সবাইকে পাসপোর্ট বা পরিচয় পত্র লিপিবদ্ধ করতে হয়।
বলে রাখা ভাল, অভিযানের এই পথটি সাধারন পর্যটকদের জন্য গত ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল। এ পথটি মূলত ইন্ডিয়ান সামরিক বাহিনীর প্রযোজনে ব্যবহৃত হয়। যার জন্য মাঝে মাঝে পুলিশ বা সামরিক বাহিনির চেক পোষ্টে লিপিবদ্ধ করে সামনে যেতে হয় এখনও।
একজন পুলিশ অফিসার প্রথম বাংলাদেশী সাইকেল পর্যটক বলে আমাকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রন জানায়। তার সাথে দুপুরের খাবার শেষে আবার বেড়িয়ে পড়ি পাহাড়ি পথে। এখান থেকে রাস্তাটি যথেষ্ট ভাল বিধায় কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই বয়ে চলা বাঘা নাদীর পাশ দিয়ে চলে যাই শিশু।
শিশুতে এক পাহাড়ির বাড়ির সামনে একটু ভাল যায়গা দেখে তার অনুমতি নিয়ে আমার তাবু ফেলি। যখন আমি আমার তাবু ফেলতে ব্যস্ত, তখন হঠাৎ সেই পাহাড়ি তার বাড়ির ভেতর থাকার আমন্ত্রন জানায়। শুধু এখানেই শেষ নয়, সে তার বাড়িতে গরম পানি, দুধ এমনকি গরম বিছানারও ব্যবস্থা করে। রাতের খাবারও তাদের সঙ্গে শেষ করে, কিছুক্ষণ আমার ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে তাদের সঙ্গে গল্প করি। গল্প শেষে তাদের কাছ থেকে অগ্রিম বিদায় নিয়ে বিছানায় চলে যাই যেহেতু খুব ভোরে তাদের ঘুম ভাঙ্গার আগেই আমি বেড়িয়ে পড়ব লাদাকের পথে।
দিন ০৩: শিশু থেকে পাতসিও:
যাত্রার তৃতীয় দিনে খুব ভোরবেলা ৫টা বাজতেই বেরিয়ে যাই সাইকেল নিয়ে। জিনজিনবার পর্যন্ত রাস্তা কিছুটা উঁচু হলেও গনডালা পর্যন্ত রাস্তা ছিল খুবই উঁচু। এখান থেকে হিমালয়ের এক অদ্ভূত সৌন্দর্য চোখে পড়ে। সূর্যের আলো যখন দূর পাহাড়ের চূড়ায় পড়ে, তখন মনে হয় যেন কেউ পাহাড়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে কিংবা স্বর্ণ দিয়ে পাহাড়কে মুড়িয়ে রেখেছে, আর খুবই নিচে দিয়ে বয়ে চলা সেই বাঘা নদী, সে এক অপূর্ব দৃশ্য। এভাবে চলতে চলতে পৌঁছে যাই তানডি, যেখানে দেখা মেলে বিপরীত দিক থেকে আসা আরো দুই সাইকেল আরোহীর সঙ্গে। তাদের একজন জার্মান ও অপর জন স্পেনিশ। তাদের মতে এ পথে একা যাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু কি আর করা? তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বিদায় নিয়ে চলতে থাকি কেলং এর পথে। পথে বরফ গলা পানির ঝরনা থেকে পানির তেষ্টা মেটাই। এই ঝরনা গুলোই ছিল আমার জীবন রক্ষার একমাত্র পানির উৎস। কেলং থেকে ইসতিংরি পর্যন্ত কিছুটা নিচু পথ হলেও ইসতিংরি থেকে জিপসা ছিল ৮০০ফিট উঁচু পাথুরে পথ, মাঝে ৪০০ ফিটের কিছুটা ঢালু পথও ছিল। এই পথটি ছিল কিছুটা বিপদজনক কারন একটু অন্যমনষ্ক বা নিয়ন্ত্রন হারালে মুহূর্তের মাঝেই পড়ে যেতে হবে ১০০০ফিটেরও বেশি নিচু খাদে। এভাবেই উঁচু পথ ধরে পৌছে যাই বারালাছা লা পাহাড়ের পাদদেশে এবং সেখান থেকে মাত্র ১০ কি:মি: দূরে দারচা পুলিশ ফাঁড়িতে। দারচা পুলিশ ফাড়িতে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আবারও শুরু করি বারালাছা লা পাহাড়ে ওঠা। প্রায় ১০ কি:মি: ওঠার পরই সন্ধে হয়ে আসতে শুরু করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই রাত। পাহাড়ে খুব অল্প সময়েই রাত হয়ে যায় কারন সূর্য পাহাড়ের আড়াল হলেই অন্ধকার। সুতরাং পাতসিও নামক এই স্থানেই তাবু ফেলতে হয় এই দিনের জন্য। অপ্রত্যাশিত ভাবে কিছুটা দূরে আরো দুটি তাবু নজরে আসে, কিন্তু রাত হওয়াতে জানা সম্ভব হয়নি কারা ছিল সেই তাবুতে। সঙ্গে থাকা শুকনো রুটি আর ঝরনার পানি খেয়ে ঢুকে পড়ি স্লিপিং ব্যাগ এর ভিতর সে দিনের জন্য। আগের তিনদিনের রোমাঞ্চকর যাত্রার সঙ্গে যারা ছিলেন, চলুন এবার আপনাদের নিয়ে ভ্রমণের শেষ পর্যন্ত জানি।
দিন ০৪: পাতসিও থেকে সারচু
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই আগের মত শুকনো রুটি খেয়েই রওনা হবার সময় পরিচিত হই সেই তাবুবাসীদের সঙ্গে। একটি তাবুতে ছিল কারলো (ইতালি) ও অপর তাবুতে ছিল যাদক দম্পতি (ইসরায়েল)। এত দিন পর তিন জন সাইকেল সঙ্গী পেয়ে একটু সাহস বেড়ে যায়। কিন্তু বেশিক্ষণ তাদের সঙ্গে সাইকেল চালানো যায়নি, তারা আমাকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যায়। এর কারন তাদের ছিল ট্যুর গাইড যারা তাদের মালামাল বহন কাছিল। আর আমি আমার ভারি মালপত্র একাই বহন করে ধীরে ধীরে এগুতে থাকি। পাতসিও থেকে দৃশ্যপট হঠাৎ ই বদলে যায় শুকনো ও ধুসর হিমালয় অঞ্চলে। এ জায়গাটি মূলত সামরিক ঘাঁটি। তাই যথেষ্ট নিরাপদ বোধ করি একা একা যাত্রার এই অংশটুকুতে। এখান থেকে ২ কি:মি: দূরেই বারালাছা লা পাহাড়ের বেস ক্যাম্প। এই বেস ক্যাম্প থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে উঠতে থাকি যার উচ্চতা প্রায় ১৬৫০০ফিটেরও বেশি। ধীরে ধীরে যখন চূড়ায় পৌঁছি সেখানে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেই। উচ্চতা, অক্সিজেন স্বল্পতা ও ক্লান্তি সব মিলিয়ে ঘুম যেন অনিবার্য হয়ে পড়ে। এখান থেকে সারচু মাত্র ২৫কি:মি:। সারচু এ যেন এক যাদুর এলাকা, ভৌগালিক অবস্থান এমনই যে এখানে কোন রকম চেষ্টা ছাড়া সাইকেল আপনা থেকেই প্রায় ২০কি:মি: বেগে চলতে থাকে। কারও মতে এখানে একরকম চৌম্বকীয় ক্ষেত্র আছে যা লোহাযাতীয় যেকোন কিছুকেই টানতে থাকে। জায়গাটি আসলে ঢাল বলেই মূলত এমনটি হয়ে থাকে যা দৃশ্যত সমতল মনে হয়। প্রায় সন্ধে বেলা সারচু গিয়ে প্রথমেই একটি সামরিক ঘাটি চোখে পড়ে। এই যায়গায় এসে সেই তিনজন সাইক্লিস্টের সঙ্গে দেখা হয় আবার। তারা আমার তিন ঘন্টা আগেই এখানে চলে আসে । সিদ্ধান্ত নেই আমরা এখানেই রাত কাটিয়ে পরদিন এই ঘাটি পার হব।
দিন ০৫: সারচু থেকে পাং
আগের রাতগুলো এতটা ঠান্ডা ছিলনা যেমনটা আজ অনুভূত হচ্ছে । স্বল্প সময়ে সামরিক ঘাঁটিতে কার্যাদি সম্পন্ন করে বেরিয়ে পড়ি নকিলা পাহাড়ের দিকে। পাহাড়টির উচ্চতা প্রায় ১৬,২৩০ফিট। আজকের দিনটা খুবই স্বরণীয় ৩ টি ঘটনার জন্য। প্রথমত, নকিলা পাহাড়ে ওঠার জন্য ২১টি লুপ যা গাতা লুপ নামে পরিচিত, সহজভাবে বললে ২১টি বিপরীত মূখী রাস্তা যা মাসসিক ও শারিরীক উভয় দক্ষতার জন্য অগ্নিপরীক্ষা। দ্বিতীয়ত, আকষ্মিক ও ভয়াবহ আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং তৃতীয়ত, সাইকেলের বা পার্শের প্যাডেল নষ্ট হওয়া। প্রথমে বা পার্শের প্যাডেলটি সঙ্গে থাকা যন্ত্রপাতির সাহায্যে তার দিয়ে বেধে চালানো শুরু করি। শুরু থেকে ১০কি:মি: এর মধ্যে ১৫০০ফিট উচ্চতায় ওঠার জন্য সেই ২১টি বিপরীত মূখী রাস্তা যে কি ভয়ঙ্কর কষ্টকর তা বলে বোঝাবার মত নয়। একটি শেষ করতে না করতে আরেকটি শুরু হয়ে যায়। এ যেন আর শেষ হয় না....। এরই মধ্যে খাবার পানিও শেষ। রাস্তার পাশে ঝরনার পানি পান করে কোনরকম শেষ হয় গাতা লূপ। এই কষ্টকর লুপ শেষ করে দুপুরের খাবারের বিরতি নেই। সারচু থেকে তৈরি করা খাবার দিয়েই দুপুরের খাবার শেষ করে আবারও শুরু হয় যাত্রা। ধীরে ধীরে আরও ওপরে উঠতে উঠতে প্রায় দুপুর ২টা বেজে যায় নকিলা পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছোতে। সেখানে কিছুক্ষণ ছবি তুলে আবার পাহাড়ের অন্য পাশ ধরে নিচে নামতে শুরু করি। নিচে নামাটা সব সময়ই আনন্দদায়ক। কারন, নকিলা পাহাড়ের নিচে নামতে মাত্র ১ঘন্টারও কম সময় লাগে। এভাবেই বেলা ৩টার মধ্যে পৌঁছে যাই হুইস্কি নুল্লাহ। হুইস্কি নুল্লাহ থেকে পাং মাত্র ৩২ কি:মি: এবং এর মাঝে আছে আরও একটি ১৬৮০০ফিট উচ্চতার লাচুং চূড়া।
ঘণ্টা খানিকের মধ্যেই ভয়ঙ্কর ভাবে বদলাতে শুরু করে আবহাওয়া। হিমালয়ের পাহাড়ে যে কখন কি হয় বলা খুবই মুশকিল। হঠাৎ করেই বরফ পড়তে শুরু করে ১৫মি: এলাকা জুড়ে। চারদিক সাদা হয়ে উঠে। ভয় শুধু যদি রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায়, তাহলে চালানো তো দূরের কথা পালাব কোথায়? ওপরওয়ালার বিশেষ রহমতে ১৫মি: পর বরফ ছাড়া ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করে। এরই মাঝে পানি শেষ হয়ে যাওয়াতে বরফ চুষেই পানির তৃষ্ণা মেটাতে হয়। আনুমানিক ৫টার দিকে এভাবেই প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে সব শেষে লাচুং চূড়ায় পৌঁছে যাই। এখানে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান ছিল ৫১% প্রায়। এখান থেকে শুধু নিচের দিকেই নামা আর নিচে নামলেই পাং নামক স্থানে রয়েছে আরও একটি সামরিক ঘাঁটি। সব মিলিয়ে শরীর এতটাই ক্লাস্ত ছিল যে বিশ্রাম নেবার সময় কখন যে ঘুমিয়ে যাই বলতে পারি না। এতদিনের জীবনে এত মজার ঘুম কখনোই ঘুমাইনি যতদূর মনে পড়ে। যখন ঘুম ভাঙ্গে, নিজেকে আবিষ্কার করি সেই সামরিক ঘাঁটির হাসপাতালে এবং সন্ধে হয়ে গেছে ততক্ষণে। প্রথমে বেশ কিছুক্ষণ কিছুই মেলাতে পারিনি, কোথায় আমি? আর হাসপাতালেই বা কেন? পরে ডাক্তারের কাছ থেকে জানতে পারলাম, দুই ইউরোপীয়ান ভ্রমণকারী আমাকে ঘুমস্ত অবস্থায় পায় লাচুং চূড়ায় এবং তারা আমাকে ডাকলে তাদের ডাকে সাড়া না দেয়ায় ওরা ধরে নেয় আমার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আর তাই তাদের গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। ডাক্তার পরীক্ষা করে আমাকে ছেড়ে দেয় আর বলে দেয়, এমন অবস্থায় না ঘুমানোর জন্য। পাহাড়ে এমন জায়গায় ঘুম পেলে সাইক্লিং বাদ দিয়ে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করতে। কারন, যেখানে অক্সিজেন কম থাকে, তখন রক্তে ও মাস্তিষ্কেও অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে যা ঘুম থেকে মুত্যুর দিকে গড়িয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে বিদায় নিয়ে হাসপাতালের কাছেই তাবুতে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ি।
দিন ০৬: পাং থেকে লাতো
পরের দিন ঠিক ডক্তারের কথা মাথায় রেখেই সকাল ৭টায় আবার সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি। প্রথম ১০ কি:মি: সাইক্লিং করে ১৫৬০০ফিট উ”চতার মরি প্লেইন নামক স্থানে পৌঁছি। জায়গাটি দৈর্ঘ্যে ৪০কি:মি ও প্রস্থ্’ ৫০কি:মি: এর মত পাহাড়ে ঘেড়া সমতল ভূমি। প্রায় ৪০কি:মি: সাইক্লিং করে আবার ৬০০ফিট নিচে নেমে আসি। এখানে একটি ঝরনার পাশে পানি আর বিস্কুট খাবার সময় একটি খালি সামরিক গাড়ি এসে থামে। ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমেই তার চুলা, চাল, ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না শুরু করে দেয়। সে আমাকে শুধু বিস্কুট খেতে দেখে তার খাবার খাওয়ার আমস্ত্রন জানায়। যেহেতু একা চলছি, তাই সেরকম ভারি খাবার বয়ে বেড়ানো একেবারেই অসম্ভব ছিল আমার জন্য। তার এক প্রস্তাবেই সাড়া দিয়ে দেই। মনে হচ্ছিল কত যুগ পরে একটু ভাল খাবার পেলাম। তারপর এখান থেকে আবার শুরু হয় ১৭৫৮০ফিট উচ্চতার তাংলাং চূড়ায় ওঠা। মাত্র ২১ কি:মি: পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছে যাব সেই চূড়ায় পৃথিবীর দ্বিতীয় উচু সড়ক পথ। পাহাড়ি নদী, মেঘ, মেঘের ছায়া, বরফ ঢাকা পাহাড় এসব দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে অবশেষে আমি তাংলাং চূড়ায়। এখান থেকে শুধুই নিচের দিকে নেমে যাওয়া লাতো পর্যন্ত। যতই নিচে নামছিলাম ততই মানুষের সভ্যতার চিহ্ন চোখে পড়ছিল। রুমপটসে, গয়া ও অন্যান্য ছোট ছোট গ্রাম এর পাশ দিয়ে পৌঁছে যাই লাতো। জায়গাটি এতই সুন্দর যে মনে হচ্ছিল সম্পূর্ন যাত্রায় এই জায়গাটিই সবচেয়ে সুন্দর। চারদিকে সবুজ গাছপালা ঘেরা ও পাহাড়ি নদীর পাশে এমনই একটি জায়গা তাবু করে থাকার জন্য উপযুক্ত স্থান। এরই সাথে মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিল একটাই চিন্তা আর মাত্র ১ দিন আর তার পরই সেই স্বপ্ন পূর্ণ হবে।
দিন ০৭: লাতো থেকে লেহ
৭০কি:মি: মাত্র লেহ ও আমার মাঝে দূরত্ব। ১৫ কি:মি: পর্যন্ত নিচু পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া উপসি পর্যন্ত। তারপর ৫০কি:মি: এ মত উচু নিচু পথ ধরে সাইক্লিং করে থিকসে নামক জায়গার দিকে এগুতে থাকি। পথে কারু নামক স্থানে ছোট একটি যাত্রা বিরতি নেই। কারু হচ্ছে সেই যায়গা যেখান থেকে পৃথিবীর তৃতীয় উচু সড়ক পথ চ্যাং লা যাওয়া যায় এবং একই রাস্তা ধরে যাওয়া যায় প্যানগং লেক যা কিনা ১৫০০০ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। থিকসে পৌঁছে যাই স্বল্প সময়ের মধ্যেই। তারপর যে শহরটি আছে তা হচ্ছে চংলামসার যা লেহ থেকে মাত্র ৬কি:মি দূরে। ধীরে ধীরে সরকারি ভবন, স্কুল, মন্দির ইত্যাদি চোখে পড়তে থাকে। অবশেষে দুপুর ২টায় লেহ শহরে পৌঁছে যাই। শহরে পা রেখেই দুপুরের খাবার সেরে হোটেল খুজে বের করি এত দিন পর একটু আরাম করে এক রাত থাকার জন্য। বিকেল বেলা বের হই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি অনুমতি পত্র নেয়ার জন্য। অত্যন্ত হৃদয় বিদারক একটি খবর আমার মনকে একেবারেই ভেঙ্গে দেয়। তা হল বাংলাদেশীরা খারদুং লা যেতে পারবে না। মনে হল, আমরা আমাদের দেশের ভাবমূর্তি এতটাই নিচে নামিয়েছি যে আমরা যেতে পারব না। অবশেষে পরদিন ঠিকই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি খারদুং লার পথে। যাই হোক অবশেষে খারদুং লা পৌঁছি। কিন্তু খারদুং লার চূড়ায় যাওয়ার পথেই একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে ফিরে আসতে হয়। সান্তনা এতটুকুই যে, সেই চুড়াতে পৌঁছাতে না পারলেও সেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ পথে তো গিয়েছি! শুধু মানালি থেকে লেহ পর্যন্ত শুধু সাইক্লিং করে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সড়ক পথে ওঠা নয়। বরং তার চাইতেও বেশি কিছু। এটা সেই সকল মানুষের পুরস্কার, যারা জীবন বাজি রেখে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ব্যতিক্রম কিছু করার ক্ষমতা রাখে। আর বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেয় আমরা বাংলাদেশীরাও পারি সুযোগ পেলে ভাল, ব্যাতিক্রম কিছু করার। দেশে ফিরে বন্ধু আর সহকর্মীদের যখন গল্প করছিলাম, তখন বুঝতে পেরেছি আমাদের ছোট্ট এই জীবনে আসলে কী অর্জন করেছি। নিজের চোখে পৃথিবীর অপরূপ রূপ দেখার অভিজ্ঞতার কাছে ১০ দিনেই কষ্ট এখন আর কিছুই মনে হয় না।
বৈশাখের পোশাক
শারমীনা ইসলামনববর্ষ আমাদের জীবনে আনন্দের বারতা নিয়ে আসে। ঐতিহ্যবাহী এই দিনটিকে ঘিরে বাঙালির আগ্রহের কমতি নেই। ফ্যাশন হাউজগুলো ক্রেতাদের আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনা করে বৈশাখ বরণের জন্য তৈরি করেছে আবহাওয়া উপযোগী আরামদায়ক সুতি পোশাক। ফ্যাশন পাঠশালার কর্ণধার বরেন্য ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষ বরণে নতুন দেশি পোশাক আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। সারা বছর বাঙালি অপেক্ষা করে পহেলা বৈশাখের জন্য। তিনি আরও বলেন, বৈশাখ রূপ নেয় মিলন মেলায়। শুধু নতুন পোশাকে নয় এই দিনটিতে আমরা গ্রামীণ মেলা, দেশি খাবারে ফিরে যাই হারানো সেই ছোট বেলায়।পহেলা বৈশাখে যেহেতু গরম থাকবে তাই সুতি পোশাকে হালকা সাজে বাইরে যাওয়ার পরামর্শ দেন এমদাদ হক। এবারের বৈশাখে ফ্যাশন হাউজগুলোর আয়োজন:
গ্রামীণ মেলা: বৈশাখে ফ্যাশন হাউজ গ্রামীণ মেলায় এসেছে শাড়ি, থ্রি-পিস শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া ও শিশুদের পোশাক। দেশীয় কাপড়ে বৈশাখী আমেজের রঙে ও নকশায় এসব পোশাক তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন প্রিন্ট ও হাতের কাজের মাধ্যমে। ফোন : ৯০১১৩৪৪, ৯৩৩৪০৬১
রাংতা: বৈশাখ উপলক্ষে ফ্যাশন হাউজ রাংতায় এসেছে রকমারি নকশার পোশাক। এসব পোশাকের মধ্যে আছে শাড়ি, থ্রি-পিস, ফতুয়া, শার্ট এবং পাঞ্জাবি। দেশি তাঁতের কাপড়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও হাতের কাজের মাধ্যমে শাহানাজ খান এসব পোশাকের নকশা করেছেন। মোবাইল: ০১১৯৯৮৭৩৫৬০
গো-কার্ট: আসছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে গো-কার্ট এনেছে বৈশাখী শর্ট পাঞ্জাবি। প্রতিটি পাঞ্জাবি গায়ে জড়ানো যাবে বৈশাখের দিন। বৈশাখের বিভিন্ন বিষয়কে উপজীব্য করে তৈরি করা হয়েছে প্রতিটি শর্ট পাঞ্জাবি। সময় উপযোগী করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে আরাম দায়ক ফেব্রিকস। এ ছাড়াও এনেছে নতুন ডিজাইনের মেয়েদের বৈশাখি টপস। ফোন: ০১৭১৯৫৯০২৬৪।
তাজুশীর: ফ্যাশন হাউজ তাজুশীর ও বৈশাখে এনেছে শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া ও নান্দনিক গহনা। দেশীয় তাঁতের কাপড়ে তৈরি তাজুশীর এসব পোশাকের রঙে ও নকশায় রয়েছে বৈশাখের ভিন্ন আমেজ। যোগাযোগ : ০১৭৬৪ ২৭৭৬৭৩
মুসলিম কালেকশন: স্বনামধন্য শার্ট প্র¯‘তকারক প্রতিষ্ঠান মুসলিম কালেকশন বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এনেছে ভিন্ন ধরণের শার্ট। নতুন এ শার্টে ফুটে উঠেছে বৈশাখী আবহ। শত ভাগ সুতি কাপড়ে তৈরি এসব শার্টে ব্যবহার করা হয়েছে গরম উপযোগী কাপড়। ফোন : ০২-৭৭৬২৬৩৬।
জেন্টাল পার্ক: বাঙালির বর্ষ শুরুর উৎসব কদিন বাদেই। উৎসবের রঙে নিজেকে সাজাতে ট্রেন্ডি পাঞ্জাবি এনেছে জেন্টাল পার্ক। নকশাকারদের ডিজাইনকৃত মোটিভকে গ্রাফিক্স দিয়ে অলংকারিক করে পোশাকে আনা হয়েছে ভিন্নতা। আটসাট ক্যাটিং বৈশিষ্ট্যের শর্ট পাঞ্জাবি আর লং পাঞ্জাবিতে থাকছে এম্রডারি, প্রিন্ট বা এপ্লিকের কাজ। ফেব্রিক ভেরিয়েশনের কারণে গরমেও পাওয়া যাবে বিশেষ আরাম। ঢাকা, সিলেট, বগুড়া, চট্টগ্রাম এর সকল শোরুমে থাকছে বৈশাখের যাবতীয় নতুন ফ্যাশন আউটলাইন নতুন বছরের আনন্দ শুধুমাত্র নতুন পোশাকে সীমাবদ্ধ নয়। যাদের সামর্থ কম, পোশাক কিনতে পারছি না, তারা আগের বছরের পোশাক পরিস্কার করেও এবার পরতে পারি। এতে আমাদের বর্ষ বরণের আনন্দ একটুও কমবে না।
বৈশাখেও নগরদোলা বেছে নিয়েছে বিশ্বনন্দিত ইন্দোনেশিয়ান বাটিক
লাইফস্টাইল ডেস্কসালোয়ার কামিজ- ১১৯০ টাকা থেকে ৪১৯০ টাকা, ফতুয়া (ছেলে)- ৪৯০ টাকা থেকে ৯৯০ টাকা, ফতুয়া (মেয়ে)- ৪৯০ টাকা থেকে ১০৯০ টাকা
শাড়ি- ১২৯০ টাকা থেকে ৪১৯০ টাকা, পাঞ্জাবি- ৬৯০ টাকা থেকে ১৮৯০ টাকা, স্কার্ট- ৯৯০ টাকা থেকে ১২৯০ টাকা,
নববর্ষে গাঁও গেরাম
লাইফস্টাইল ডেস্ক
বছর ঘুরে আবার এলো বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখ। এটি সার্বজনীন লোক উৎসব। এই দিন আনন্দঘন পরিবেশে বরন করে নেয়া হয় নতুন বছরকে। পোশাকে বর্ণালী হয়ে উঠতে চাই সব বাঙালি। আর এ জন্য গাঁও গেরাম ক্রেতাদের জন্য প্রতি বছরের মত এবারও করেছে বিশেষ আয়োজন। গাঁও গেরাম তার বর্ণিল পোশাকে ব্যবহার করেছে লোকজ নকশা। কুমিল্লা, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জের তাঁতে উৎপাদিত কাপড়ে তৈরি হয় মেয়েদের থ্রি পিস, টপস, ছেলেদের ফতুয়া ও পাঞ্জাবি। টাই- ডাই- এর বর্ণিল সংগ্রহ গাঁও গেরামের আরেকটি বিশেষত্ব। গাঁও গেরাম তার পোশাকে সবসময় বাংলাদেশের আবহাওয়াকে প্রাধান্য দেয়। টাঙ্গাইলের সুতি শাড়ি, হাফ সিল্ক শাড়ি, সুতি শাড়িতে এন্ডি সুতার ব্যবহার, ব্লক ও বাটিকের ব্যবহার বাঙালির পোশাকে ও মনে এনে দেবে বৈচিত্র্য। সাজপূর্ণতা পায় গহনায়, গাঁওগেরামে আপনি পাবেন রেশমি চুড়ি, পুতির মালা ও দুল। যেকোন উৎসব ও আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু ছোট্ট সোনামণিরা। তাদের অংশ গ্রহণে উৎসব পূর্ণতা পায়। তাই ছোট্ট সোনামণিদের জন্য গাঁও গেরামে সবসময় থাকে বিশেষ আয়োজন। এবারও গাঁও গেরাম ছোট্ট সোনামণিদের জন্য তৈরি করেছে থ্রি-পিস, ফ্রক, স্কার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, পায়জামা, শাড়ি ইত্যাদি। থ্রি পিস- ১০০০ টাকা থেকে ৩৫০০পর্যন্ত, টপস- ৩৫০ থেকে ১১০০পর্যন্ত, ছেলেদের ফতুয়া- ৩০০টাকা থেকে৫০০পর্যন্ত, পাঞ্জাবী- ৪০০ টাকা থেকে১২০০পর্যন্ত। ছোটদের ফতুয়া- ১৫০ টাকা থেকে৩০০পর্যন্ত, থ্রী পিস-৭০০ থেকে ৯০০পর্যন্ত, শাড়ি- ২৫০ টাকা থেকে৬০০টাকা পর্যন্ত। গহনা ৫০টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। গাঁও গেরাম থেকে আপনি আপনার পরিবারের সকলের জন্য পোশাক কিনতে পারবেন।
ওজি’র পোষাকে একুশ
ফ্যাশন হাউস ওজি এবার তাদের একুশের আয়োজনে এনেছে শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ছেলে-মেয়েদের ফতুয়া এবং ছেলেদের পাঞ্জাবি। ছেলেদের বেশিরভাগ পাঞ্জাবি করা হয়েছে সাদা আর কালোয়। সুতি কাপড়ের অন্যান্য পোষাকগুলোতে করা হয়েছে ব্লক, স্ক্রিন ও এমব্রয়ডারির কাজ। ওজি’র পোশাকের দামও রয়েছে নাগালের মধ্যেই। শাড়ি পাওয়া যাবে ৭৯৫-১৭৯৫ টাকায়, ফতুয়া ৪৯৫-৮৯৫টাকায়, সালোয়ার কামিজ ১৫৯৫-২২৯৫ টাকায় এবং ছেলেদের পাঞ্জাবি ৮৯৫-১২৯৫ টাকায়। পোশাকগুলো মিলবে সোবহানবাগ, সীমান্ত স্কয়ার ও মালিবাগে ওজি’র নিজস্ব আউটলেটে।
মেঘে একুশের পোশাক : ফ্যাশন হাউজ মেঘ অমর একুশে উপলক্ষে বিভিন্ন নকশার পোশাক এনেছে। প্রিন্ট ও হাতের কাজের মাধ্যমে নকশা করা এসব পোশাকের মধ্যে আছে মেয়েদের থ্রি-পিস, ফতুয়া, ছেলেদের শর্ট পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট ও টি-শার্ট। সুতি, সিল্ক, খাদি, এন্ডিসহ বিভিন্ন দেশিয় তাঁতের কাপড়ে তৈরি হয়েছে এসব পোশাক।
শিশুদের একুশের পোশাক: বড়দের পাশাপাশি মেঘ শিশুদের জন্যও একুশের পোশাক এনেছে। দেশিয় তাঁতের কাপড়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও হাতের কাজের নকশায় এসব পোশাকের মধ্যে আছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, ফ্রক ও টি-শার্ট। মেঘের ঠিকানা: আজিজ সুপার মার্কেট (দোকান নং-৬২ ও ১১৪), শাহবাগ;
শ্যামল চন্দ্র নাথবিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ছাত্র ছিলেন অমিতাভ রেজা। কিন্তু ফিল্ম আর ইমেজ নিয়ে চর্চা ছাত্রজীবন থেকেই। প্রথমে টেলিভিশনে দু‘একটা নাটকে কাজ করার পর বিজ্ঞাপন নির্মাণকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। অমিতাভ রেজা দেশের বিজ্ঞাপনকে নিয়ে গেছেন শিল্পের পর্যায়ে। প্রতিষ্ঠা করেছেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘হাফ স্টেপ ডাউন’। বিজ্ঞাপন নির্মাণের পাশাপাশি ছোটপর্দায় উপহার দিয়েছেন দারুণ কিছু নাটক। বর্তমানে তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন চলচ্চিত্র নির্মাণের। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এই মেধাবী নির্মাতার সাফল্যে বাঁধা হতে পারেনি। নিত্য-নতুন আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। সম্প্রতি অমিতাভ রেজার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলানিউজ। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন তার সৃজনশীল কর্মকান্ড, চিন্তা-ভাবনা আর আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা। অমিতাভ রেজার সঙ্গে বাংলানিউজের আলাপচারিতার নির্বাচিত অংশে আসুন চোখ রাখি।
বাংলানিউজ : বিজ্ঞাপন নির্মাণে আগ্রহী হলেন কী করে?
অমিতাভ রেজা : ছোটবেলা থেকেই ছবি তোলার প্রতি আমার ঝোঁক ছিল। শাহিন স্কুলের ছাত্র থাকার সময় ছবি তোলা ছিল আমার হবি। ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম দূর দূরান্তে নানা জায়গায়। বিএফ শাহিন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে আমি ভারতের পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। বিষয় ছিল অর্থনীতি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস আমার ভালো লাগতো না। পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করতাম। পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ছাত্র-শিক্ষক তাদের সঙ্গে গড়ে উঠে আমার সখ্য। তাদের সঙ্গে থেকেই ফিল্মের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। পুনে ইনস্টিটিউটের ছাত্র না হলেও ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। এসময় ভারতীয় চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপননির্মাতা অমিত সেনের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে। তার সঙ্গে দু’একটি কাজ করার পর তিনিই আমাকে বিজ্ঞাপন নির্মাণে উৎসাহিত করেন। আমারও মনে হলো, খুবই সীমিত সময় পরিসরের মধ্যে একটি বক্তব্য ফুটিয়ে তোলার এই কাজটি বেশ চ্যালেঞ্জিং। দেশে ফিরে প্রথমে অবশ্য নাটক নির্মাণের সঙ্গেই জড়িত হই। সেই সময়ের একুশে টিভির জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘বন্ধন’-এ কাজ করি আফসানা মিমির সঙ্গে। এর মধ্যেই হাতে আসে বিজ্ঞাপনের কাজ। তারপর আর কী, বিজ্ঞাপন নির্মাণই হয়ে ওঠে আমার প্রধান অবলম্বন।
বাংলানিউজ : বিজ্ঞাপন নির্মাণকে পেশা হিসেবে বেছে নিলেন কেন?
অমিতাভ রেজা : আগেই বলেছি আমার আগ্রহের জায়গাটা ছিল ভিন্ন। ফিল্ম মেকিংটা আমার আবেগের অংশ। ফিল্ম মেকিং ব্যাপারটাকে আমি উপভোগ করি। ফিল্ম মেকিং বলতে বোঝাচ্ছি ফিচার ফিল্ম, পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি, ডকুমেন্টারি ফিল্ম, সোস্যাল অ্যাওয়ার্নেস ফিল্ম, অ্যাডভার্টাইজিং ফিল্ম এবং টিভি ফিকশন-- অর্থাৎ সবকিছু। এক সময় আমি দেখলাম ৩৫ এমএম ফিল্ম ফরম্যাটে কাজ করে, বড় ক্যানভাসে কাজ করে অনেক আনন্দ। কিন্তু টেলিভিশন, টাকা-পয়সা এগুলো আমাকে সেই আনন্দটা দিতে পারছে না। আমি চিন্তা করলাম যে, বড় ক্যানভাসে কাজ করব। বড় ক্যানভাস বলতে অনেক মানুষ অনেক আয়োজন। যেখানে আমার চিন্তাকে সম্পূর্ণ কাজে লাগাতে পারবো। এ কারণেই আমি অ্যাডভার্টাইজিং ফিল্ম মেকিং শুরু করেছি এবং উপভোগ করছি।। চিন্তা-ভাবনা করেই আমি এই প্রফেশনে এসেছি। কারণ এটা নিলে ফিল্মও হবে, ৩৫ মিলিমিটারেও কাজ করতে পারবো, দেশ-বিদেশে ফিল্মের পোস্ট প্রোডাকশনও করতে যেতে পারবো। তাছাড়া ভালো গাড়িতে চড়তে পারবো, ভালো খাবার খেতে পারবো, ভালো লাইফস্টাইল মেইনটেইন করতে পারবো। আমার কাছে এগুলোকেও বড় মনে হয়েছে। তবে আসল কথা হলো, অ্যাডভার্টাইজিং ফিল্ম করতে গেলে অনেক কিছু করার সুযোগ থাকে। এগুলোতে অনেক দক্ষতা আসে, অনেক কিছু প্র্যাকটিস করার আনন্দ থাকে। সে আনন্দ থেকেই আমি অ্যাডভার্টাইজিং ফিল্ম করি এবং এ আনন্দ পাই। এই সূত্র ধরেই ফিচার ফিল্ম করতে চাই। এই দক্ষতা, এই শক্তি কাজে লাগিয়ে একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি করতে চাই। ব্যাপারটা আমার কাছে এ রকমই।
বাংলানিউজ : অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, আপনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে কতদূর এগিয়েছেন?
অমিতাভ রেজা : ফিচার ফিল্ম তৈরির পরিকল্পনা এখনো বাক্সবন্দি অবস্থায় আছে। খুব বেশি দূর অগ্রসর হতে পারিনি। আসলে বিজ্ঞাপনের কাজ নিয়ে আমি এখন অনেক ব্যস্ত। কাজের চাপ আমার পিছু ছাড়ছে না। বর্তমানে নির্মাণ করছি রবি, এবি ব্যাংক আর সেভেন আপের বিজ্ঞাপন। হাতে আছে আরো প্রায় ডজনখানেক বিজ্ঞাপন নির্মাণের কাজ। আমার প্রতিটি কাজেই নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা থাকে। তবে সব কাজের মধ্যেই আমি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবির জন্য একটা ভালো গল্প খুঁজছি। দু-একটা গল্প ভালো লাগলেও এখনো মনের মতো গল্প খুঁজে পাইনি। আশা করি ভাল গল্প পেলে নিশ্চয়ই কাজ শুরু করবো। দীর্ঘদিনের কাজের দক্ষতা নিয়েই আমি ফিচার ফিল্মে ফুটিয়ে তুলতে চাই। আমি ভাল কিছু দিতে চাই। নতুন চিন্তা চেতনার সমাবেশ ঘটাতে চাই।
বাংলানিউজ : ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণে কারিগরি বিষয়টাও যথেষ্ট জরুরী। আপনি কী মনে করেন, ভালো মানের ছবি তৈরির মতো কারিগরি সুবিধা এদেশে আছে?
অমিতাভ রেজা : আমি আসলে কারিগরি দিকটা অতটা জরুরী বিষয় বলে কখনোই মনে করি না। বিষয় হচ্ছে, নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা। আমার কাজে নিজের চিন্তা-ভাবনা কতোটা ফুটিয়ে তুলতে পারলাম, কতোটা ভালোভাবে কাজটা করতে পারলাম। নিজের মনের ভেতরের ছবিগুলো নিয়ে কতোটা ভালো নির্মাণ করতে পারলাম। ফিল্মের প্রথম যুগে তো কারিগরি সুবিধা ছিল না, তাই বলে কী তখন মান সম্পন্ন ছবি তৈরি হয়নি! এখন যে এতো কারিগরি সুবিধা, এতো সুবিধার পরও কেন তাহলে মানহীন ছবি তৈরি হবে? যতো কারিগরি সুবিধাই থাকুক, আগে কারিগরি বিষয়গুলো কাজে লাগানোর জ্ঞান অর্জন করা জরুরি।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা এখন কেমন?
অমিতাভ রেজা : আমার ধারণা বাংলাদেশে কোটি কোটি টাকার চলচ্চিত্রের বাজার রয়েছে। বাংলাদেশে ছবির সম্ভাবনা অনেক বেশি এটা আমি দেখতে পাই। আমরা অনেক ভালো ছবি বানাবো এটা জানি। আমাদের দেশে যারা টেলিভিশনের জন্য কাহিনিচিত্র নির্মাণ করে, বিশেষ করে অনিমেষ, সুমন, আতিক ভাই তারা অসাধারণ কাহিনিচিত্র নির্মাণ করতে পারেন। তারা যখন ছবি বানাবেন তখন অসাধারণ ছবি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। অনেক গল্প এ দেশের মানুষের। এ দেশের মানুষ সংগ্রামী, এদেশের মানুষের বিশাল রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। পৃথিবীর খুব কম জাতিরই এ রকম ইতিহাস আছে। এ দেশের মানুষের সাহিত্যের কথা যদি বলি সেটাও খুব উন্নত। অনেক বেশি রসদ আমাদের আছে। ভালো কাহিনিচিত্র নির্মাণ করার সম্ভাবনাও তাই অনেক ।
বাংলানিউজ : এক্ষেত্রে আমাদের চলচ্চিত্রে এখন এই দৈন্যদশা কেন?
অমিতাভ রেজা : আমরা সবাই বলছি দৈন্যদশা। প্রতিটা মানুষ মনে করছে যে, চলচ্চিত্রের অবস্থা খারাপ। এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, ভালো কাজ হচ্ছে। আমাদের চলচ্চিত্র সম্ভাবনাময়, এভাবেই একদিন পরিবর্তন আসবে।
বাংলানিউজ : আমাদের টিভিনাটকের অবস্থা এখন কেমন?
অমিতাভ রেজা : আমাদের দেশে টিভি চ্যানেল অনেক, অথচ পৃষ্ঠপোষক কম। এতে টিভি-ফিকশনের নির্মাণ বাজেট অনেক কমে গেছে। প্রচুর মানুষ ফিকশন (নাটক) করে এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই সব ফিকশন ভালো হয় না। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যে দেশ টেলিভিশনের জন্য ছোট ছোট ফিকশন করে। এক ঘণ্টার ফিকশন করে। এমনটা খুব কম দেশেই হয়। আর এই ছোট ছোট ফিকশন যত বেশি হবে সৃজনশীল কাজ তত বেশি হবে। কারণ সিরিয়াল বা ধারাবাহিক নাটক অত ভালো করা যায় না সাধারণত। এই এক ঘণ্টার নাটকে আমরা অনেক ভালো করে যাচ্ছি বলে আমার কাছে মনে হয়। তাছাড়া আমাদের একটা ফিকশন বানাতে খরচ ব্যয় হয় মাত্র দুই লাখ টাকা আর বাইরের দেশে দুই লাখ ডলার। এতো কম বাজেটে এখানে ফিকশন তৈরি হচ্ছে, এটা আর কোথাও সম্ভব না।
বাংলানিউজ : আমাদের দেশে এখনকার বিজ্ঞাপনের মান কেমন?
অমিতাভ রেজা : আমাদের দেশে এখন বিজ্ঞাপন অনেক উন্নত মানের হচ্ছে । এই বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। বিজ্ঞাপন নির্মাণটা নির্ভর করে যে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞাপন করছি তার উপর। প্রতিষ্ঠান যদি তার প্রোডাক্ট মার্কেটিংয়ের জন্য বিজ্ঞাপনকে বেশি গুরুত্ব দেয়, তাহলে বিজ্ঞাপনের জন্য বাজেট বরাদ্দ বেশি থাকে। বাজেট বেশি থাকলে বিজ্ঞাপনের মান ভালো করা যায়।
বাংলানিউজ : প্রত্যেক নির্মাতা কোনো না কোনোভাবে কবি, সাহিত্যিক বা দার্শনিক। আপনার দর্শন বা জীবনবোধ জানতে চাই?
অমিতাভ রেজা : আমি আসলে বস্তুবাদী দর্শনে বিশ্বাস করি। ভাববাদী দর্শনে বিশ্বাস করি না। আমি বাস্তবতার নিরিখে বিচার করি। আবার বলছি বাস্তবতা মধ্য দিয়েই এ জীবন অতিবাহিত করছি। এটাই সত্য এবং ধ্রুব সত্য। বর্তমান আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি শুধু বস্তুবাদী দর্শনেই বিশ্বাসী।
বাংলানিউজ : কাজকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
অমিতাভ রেজা : কাজ না থাকলে প্রত্যেকটা মানুষের জীবন স্থবির হয়ে যায়। আমি কাজকে সীমাহীন শ্রদ্ধার সাথে আলিঙ্গন করি। কাজ ছাড়া আমি কখনোই থাকি না। এমন কি অবসরেও কাজের ভাবনাটা আমাকে সারাক্ষণ নাড়া দেয়। প্রতিনিয়ত ভাবি। এই ভাবনায় আমাকে প্রতিদিন বিনির্মাণ করে চলেছে।
বাংলানিউজ : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
অমিতাভ রেজা : খুব বেশি কিছু না। নিজে ভালো থাকা। ভালো কিছু দেওয়া। ভালোভাবে আনন্দের সঙ্গে জীবনটা উপভোগ করা।
পাসপোর্ট বিড়ম্বনায় ইমন
অনন্যা আশরাফ
নিজের হ্যান্ডব্যাগ খুলে ইমন দেখতে পান তার পাসপোর্টটি ঠিক আছে। কিন্তু তার ব্যাগের ভেতরে রাখা মোবাইল ফোনটি নেই। আরেকবার পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোবাইলের ব্যাপারে জেরা করলে ক্যাব চালক লুকিয়ে রাখা মোবাইলটি বের করে দেয়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন ইমন। মোবাইল আর পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়ায় ইমন ক্যাব চালকের বিরুদ্ধে জিডি তুলে নেন। ব্যাংককে পাসপোর্ট হারানোর পর ৩ ঘন্টার মধ্যেই নাটকীয়ভাবে পাসপোর্টটি ফিরে পাওয়ায় ইমন নিজেই ভীষণ অবাক হয়েছেন। দেশে ফিরে এই ঘটনটি তিনি এখন কাছের মানুষদের কাছে বলে বেড়াচ্ছেন।
সালমার ফেরা
বিনোদন প্রতিবেদক
অ্যালবামটির সবগুলো গানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় থাকছেন খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ক্লোজআপ ওয়ান ইভেন্টের বিচারক থাকার সময় থেকেই সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের স্নেহধন্য সালমা। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল সালমাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করেন। দুই বছর বিরতির পর পিতৃতুল্য এই সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হাত ধরেই সালমা ফিরছেন গানে। পাশাপাশি শুরু করছেন নিয়মিত স্টেজ শো আর টিভি প্রোগ্রাম।
রয়াগ ফিল্ম সিটির উদ্বোধনে শাহরুখ খান, বাসুদেব বাগচী ও অভীক বাগচী। |
রক্তিম দাশ, কলকাতা
প্
|
কোয়ালিটির প্রতি নজর দেওয়ার সময় এসেছে : শাকিব খান
বিপুল হাসানফুরফুরে মেজাজে আছেন ঢালিউডের শীর্ষনায়ক শাকিব খান। নির্মাতাদের কাছে বর্তমান সময়ের একমাত্র নির্ভরযোগ্য নায়ক তিনি। সাফল্য তার মুঠোবন্দী হয়েছে কয়েক বছর আগেই। বাকি ছিল একটা অপ্রাপ্তি। সেটি হলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সম্প্রতি ‘ভালোবাসলে ঘর-বাঁধা যায় না’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ২০১০ সালের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে প্রাপ্তি ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে তার। সম্প্রতি ‘মাই নেম ইজ খান’ ছবির শুটিং চলাকালে এফডিসিতে শাকিব খানের সঙ্গে বাংলানিউজের কথা হলো। শুরুতেই প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তির অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বললেন, পুরস্কার পেতে সবারই ভালো লাগে। বিশেষ করে একজন শিল্পীর জন্য পুরস্কার হলো অনুপ্রেরণার উৎস। ক্যারিয়ারে অনেক পুরস্কারই এ পর্যন্ত পেয়েছি। তবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মর্যাদা আলাদা। এটা হলো রাষ্ট্রিয় পর্যায়ের স্বীকৃতি। এই পুরস্কার আরো ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। শাকিব খান চলচ্চিত্র শিল্পীদের সম্মিলিত প্লাটফর্ম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই সংগঠনের বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার সময় বলেছিলাম, চলচ্চিত্রের কোনো শিল্পীকে অসুস্থ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে দেব না। দুঃস্থ শিল্পীদের সহায়তার জন্য ৫০ লাখ টাকার একটি তহবিল ঘটনের জন্য বর্তমানে আমরা কাজ করছি। এ ক্ষেত্রে অনেকের আশ্বাস ও সহায়তা পেয়েছি। আগামী দুই বছর নাকি আপনার কোনো শিডিউল খালি নেই ? এ প্রশ্নের উত্তরে শাকিব খান বললেন, কথাটা খানিকটা সত্য। তবে নির্ধারিত শিডিউলের বাইরেও আমি অনেক সময় কাজ করে থাকি। কাজটি যদি ভালো আর মন মতো হয়, তাহলে নিজের ব্যক্তিগত সময় থেকে বাড়তি সময় বের করে কাজটি করার চেষ্টা করি। তবে বেশিরভাগ সময়ই তো এখন আমার ডাবল শিফটে কাজ করতে হচ্ছে। শাকিব খান জানালেন, একটা সময় কোনো বাদ-বিচার না করে একের পর এক ছবিতে অভিনয় করলেও এখন তিনি বেছে বেছে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, হাতের কাজগুলো শেষ করার পর বছরে ১০টির বেশি ছবিতে আর অভিনয় করবোনা। এ বছর অবশ্য ১৫টি ছবিতে অভিনয় করছি। তবে আগামী বছর থেকে এটি মেনে চলার চেষ্টা করবো। আসলে কাজের চাপ বেশি নিলে কাজের মান ভালো হয় না। এখন আমার কোয়ালিটির প্রতি নজর দেওয়ার সময় এসেছে। শাকিব খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য তিনি নানারকম পলিটিক্সের আশ্রয় নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বললেন, এটা পুরোপুরি ভিত্তিহীন একটি অভিযোগ। যারা অভিযোগ তুলেছেন তারা অনেকেই আমাকে তাদের ছবিতে অভিনয়ের জন্য বলেন। কিন্তু গল্প ও চরিত্র পছন্দ না হওয়া বা শিডিউলের কারণে যখন তাদের না করে দেই তখনই তারা আমাকে নিয়ে এসব কথা বলেন। পলিটিক্স করে কেউ চলচ্চিত্রের সেরা নায়ক হতে পারে না। নায়ক হওয়ার জন্য সাধনা দরকার। সাধনার মধ্য দিয়েই আজকে আমি এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি।
অ্যাকশন লেডি ক্যাটরিনা
অনন্যা আশরাফ
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও ব্র্যাড পিটের বাগদান
অনন্যা আশরাফ
আত্মার প্রশান্তির জন্য সুফি গান বেছে নিয়েছি
তাহসানফাহিম ফয়সালশোবিজের নানা শাখা-প্রশাখায় চলাচল থাকলেও তাহসানের আসল পরিচয়-- তিনি একজন সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। ব্যান্ডসঙ্গীতের সঙ্গে তার যোগাযোগটা দীর্ঘদিনের। যুক্ত ছিলেন জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক’-এর সঙ্গে। বছর তিনেক আগে ব্ল্যাক ছাড়েন। এরপর দেশের বাইরে পড়াশোনার পাশাপাশি এককভাবেই গানের চর্চাটাও চালিয়ে যান। গুণী এই শিল্পী শ্রোতাদের অনেক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। সম্প্রতি তাহসান নতুন ব্যান্ড গঠন করেছেন। ব্যান্ডের নাম ‘তাহসান এন্ড সুফিজ’।
পেশাগত জীবনে ইউনির্ভাসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর শিক্ষক তাহসানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলানিউজ। নতুন ব্যান্ড গঠন, শোবিজ নিয়ে ভাবনা আর আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন তাহসান। অভিনেতা, মডেল আর উপস্থাপক হিসেবে তাহসান মুন্সিয়ানা দেখালেও গানই তার চলার পথের অবলম্বন। সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে ব্যান্ডের মাধ্যমেই যেহেতু তার শুরু, গানের ভুবনে তাই একাকী পথ চলতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য পান নি। দলীয়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে তাহসান গঠন করেছেন নতুন ব্যান্ড ‘তাহসান এন্ড দ্য সুফিজ’। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে এক জমকালো কনসার্টের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ব্যান্ডটি।
তাহসানের কাছে বাংলানিউজে শুরুতেই জানতে চায়, ‘ব্ল্যাক’ ব্যান্ড ছেড়ে দীর্ঘদিন এককভাবে কাজ করার পর কেন আবার নতুন একটি ব্যান্ড গড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? উত্তরে তাহসান বললেন, ‘আসলে আমি যে ঘরানা গান করি, সেটি ব্যান্ড সঙ্গীত। ব্যান্ডের মাধ্যমেই আমার মিউজিশিয়ন হয়ে উঠা। দীর্ঘদিন এককভাবে গান গাওয়ার পর মনে হলো, সত্যিকার অর্থে আমি ব্যান্ড সঙ্গীতটাকে মিস করছি। তাছাড়া ভিন্ন ধারার গান করবো বলেই মূলত তাহসান এন্ড দ্য সুফিজ গঠন করি। তাছাড়া যেহেতু আমি শিক্ষকতা করি, তার পাশাপাশি যে সময়টুকু পাই সে সময়ে আমি সঙ্গীত চর্চা করি। তাই সমমনা বন্ধুদের নিয়ে আমার মতো করে গান নিয়ে এগিয়ে চলতেই নতুন ব্যান্ড গঠন।’ ‘তাহসান এন্ড দ্য সুফিজ’ ব্যান্ড সম্পর্কে কিছু বলুন? তাহসান বললেন, ‘ব্যতিক্রমধর্মী একটি ব্যান্ড গঠনের দীর্ঘদিনের একটা ইচ্ছা মনের ভেতর ছিলো। মানুষের মানসিক প্রশান্তি হয় এ ধরনের কিছু গান ও মিউজিক করতে চাই। সেটা করতে হলে অবশ্যই সুফি ধাঁচের কিছু একটা করতে হবে। যা মানুষকে উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জীবন সম্পর্কে ভাবাতে ও মানসিক প্রশান্তি দিতে সক্ষম হবে। বর্তমানে আমাদের দেশে খুব অস্থির একটা সময় যাচ্ছে। লোভের কারণে মানুষের মানবিক গুনাবলী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষ হিসেবে আমাদের জন্য এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক একটি বিষয়।’ ব্যান্ডে ঠিক কি ধরনের গান করবেন?-- ‘সুফি রক গান। সুফি রক হচ্ছে কথা প্রধান গান, রাগ ভিত্তিক গান। সুরের পাশাপাশি থাকবে তালের খেলা। টোটাল মিউজিকে একটা সামঞ্জস্য থাকবে। এক একটি গান হবে একেক রকমের । এছাড়াও থাকবে ইন্সট্রুমেন্টাল। আসলে আমাদের গানে আমরা সমাজের সমস্যার কথা অবলীলায় বলতে চাই। সমাজের চিত্র ও মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে চাই।’ তাহলে কি আমরা ধরে নিতে পারি যে, বাংলাদেশে আপনারা সুফি রক গানের ধারক ও বাহক?-- ‘আসলে আমরা ধারক ও বাহক কিছুই না। সুফিজম হচ্ছে এমন একটি বিষয় বা দর্শন যা ধর্ম, গোত্র, জাতি, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবার আত্ম-উন্নয়নে কাজে লাগে। মানুষের আত্মার প্রশান্তির জন্য কাজে লাগে। আমরা চেষ্টা করছি, এরকম কিছু গান করে এর প্রসারটা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে। পাশাপাশি আরেকটা কথা বলি, আমাদের গান সবাই নাও শুনতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, যে অল্প সংখ্যক মানুষ আমাগানগুলো শুনবে, এরপর তার মাঝে একটি পজিটিভ পরিবর্তন আসবে।‘ সুফি গান প্রসঙ্গে তাহসান আরো বললেন, ‘সুফি গানের প্রতি আমার আগ্রহ সব সময়ই ছিল। গান লেখা এবং সুর করার ক্ষেত্রে সুফি ঘরানা আমার কাছে প্রাধান্য পেয়েছে। ব্ল্যাক ব্যান্ড থেকে বেরিয়ে আসার পর আলাদা করে সুিফ গান নিয়ে আমার মধ্যে আগ্রহটা নতুন করে তৈরি হয়। তাছাড়া দেশের শ্রোতাদের নতুন কিছু উপহার দেওয়ার জন্যই সুফি গান নিয়ে ব্যান্ড গঠন করা।’
‘তাহসান এন্ড দ্য সুফিজ’ ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম শ্রোতারা কবে নাগাদ পাচ্ছে? তাহসানের উত্তর, ‘আমরা আপাতত ৫টি গান নিয়ে কাজ করছি। অ্যালবামের কাজ কবে শেষ করতে পারবো তা বলতে পারছি না। তবে যতদিন না গানগুলো মনের মতো হচ্ছে ততদিন পর্যন্তকাজ করে যাবো।’ আপনি যখন ‘ব্ল্যাক’ ছেড়ে চলে আসেন তখনতো ব্যান্ডটির জনপ্রিয়তা অনেক ছিলো। ব্ল্যাক ছাড়ার কারণ কি? এ প্রশ্নের উত্তরে তাহসান বললেন, ‘ব্ল্যাক ব্যান্ডের সবাই এখনো আমার ভালো বন্ধু। আসলে ওরা অল্টারনেটিভ রক ধাঁচের গান করতে চেয়েছে। আর আমি সেøা ব্যালে ধাঁচের গান করি। তাই আমি ওদের ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়েছি। ওদের কথাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। নিজের ইচ্ছেকে জোর করে অন্যদের উপর চাপিয়ে দিতে চাইনি।‘ ‘কোন ঘরে বসত করি/ তাতে কি আসে যায়/ কোন পাতে আহার করি/তাতে কি নষ্ট হয় তায়...’ এ ধরণের ব্যতিক্রমী কথা ও সুরের গান নিয়েই যাত্রা শুরু করেছে ‘তাহসান এন্ড সুফিজ’ ব্যান্ডটিভ
ব্যান্ডে লাইনআপ হচ্ছে:
কি-বোর্ড, পিয়ানো ও ভোকাল- তাহসান
লিড গিটার- জিয়া
বেস গিটার- শিমুল
ড্রামস- রুবেল।
ব্যান্ডের সদস্যদের সম্পর্কে তাহসানের মূল্যায়ন হলো, ‘জিয়া খুব ভালো গিটার বাজায়। তার গিটার প্লেয়িং আমার কাছে ভালো লাগে। দশ বছর আগে থেকেই জিয়ার সাথে আমার পরিচয়। সেই সুবাধে একসাথে কাজ শুরু করা। আমাদের বেস গিটারিস্ট শিমুলও খুব ভালো বাজায়। তার মধ্যে ব্যতিক্রমী কাজ করার চেষ্টা থাকে। রুবেল খুব ভালো ড্রামস প্লে করে। আসলে সুফি রক গান করতে গেলে যে ধরনের ড্রামস পেলয়িং দরকার তা সে খুব ভালো বুঝে। আমি ভোকাল আর কি-বোর্ড বাজাই। নিজের সম্পর্কে কিছু নাইবা বললাম। আমাদের ব্যান্ডের গানের কথা ও সুর করি আমি আর জিয়া।
১৯৯৮ সালে তাহসান ও আরো কয়েক বন্ধু মিলে গঠন করেন ব্যান্ডদল ব্ল্যাক, পরবর্তীতে তিনি ব্যান্ড ছেড়ে একক ক্যারিয়ার গঠনের প্রতি মনোযোগ দেন। বেশ কয়েকটি একক অ্যালবাম বেরিয়েছে তাহসানের। এসব অ্যালবামে স্ত্রী মিথিলার সঙ্গে তাহসান গেয়েছেন বেশ কিছু গান। তাহসানের একক অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে- ‘কথোপকথন’, ‘কৃত্যদাসের নির্বাণ’, ‘ইচ্ছে’, ‘নেই’, ‘প্রত্যাবর্তন’ ‘প্রত্যাবর্তন-২’। ব্ল্যাক ব্যান্ডে কাজ করার সময় বের করেন- ‘আমার পৃথিবী’ও ‘উৎসবের পর’। এছাড়া তাহসান বেশ কিছু মিশ্র অ্যালবামে গান গেয়েছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘প্রতিজ্ঞা : বোকা মানুষটা’, ‘রোদেলা দুপুর : দ্য হিট অ্যালবাম’, ‘ফিরে এসো অনন্তকালের পথযাত্রী’, ‘জুয়েল উইথ দ্য স্টার, ‘দখিনের জানালায় বন্ধুতা’ প্রভৃতি। পাশাপাশি তাহসান নিজের সঙ্গীতায়োজনে বের করেন ‘ডানপিটে’ ও ‘আড়ি’ অ্যালবাম। তাহসান যে শুধু গানই করেন না, তা জানেন সবাই। অনিয়মিতভাবে হলেও তাকে যায় নাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয় করতে। কাজ করেছেন একাধিক বিজ্ঞাপনচিত্রেও। এক্সক্লুসিভ স্টেজ শোতে তাকে উপস্থাপনাও করতে দেখা যায়।
তাহসান অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘কাছের মানুষ’ (ধারাবাহিক), ‘অফবিট’, ‘মধুরেণ সমাপয়েতে, ‘অন্তর্গতা’, ‘হিট উইকেট’, ‘আমাদের গল্প’ (টেলিফিল্ম) প্রভৃতি। সম্প্রতি ‘টু বি কন্টিনিউড’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। উপস্থাপনা করেছেন ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৫’, ‘ইউ গট দ্য লুক’, ‘ঈদ আনন্দে সুরের ছন্দে’, ‘চ্যানেল নাইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান’ প্রভৃতি। এছাড়াও মডেল হিসেবে তাকে দেখা গেছে ‘পন্ডস’, ‘বাংলালিংক আমার টিউন’, ‘জুঁই নারিকেল তেল’, ‘আফতাব গুড়া মসলা’, ‘ক্লোজ আপ টুথপেস্ট’ ইত্যাদির বিজ্ঞাপনে। তাহসানের সঙ্গে কথোপকথনের শেষ পর্যায়ে তিনি বললেন, ‘আমরা সবাই সুখী হতে চাই, কিন্তু কিভাবে সুখী হতে হয় তা আমরা জানিনা। কিভাবে আত্মার সুখ লাভ করা যায়, সুফিজমে সে রকম কিছু কথা বল হয়। প্রশান্তির পাশাপাশি মানসিক স্থীরতা ও দৃঢ়তা বাড়ে সুফিধর্মী গান শুনলে’। সবশেষে তাহসান জানালেন তার স্বপ্নের কথা। তিনি স্বপ্ন দেখেন-- পরিবার, দেশ, রাজনীতি সর্বত্র শান্তির। যেখানে ধনী-গরীবের ভেদাভেদ থাকবে না। সমাজে চলবে ন্যায্য বন্টন। লোভ থেকে দূরে থাকবে পৃথিবীর সব মানুষ।
এক নজরে তাহসান:
পরিচয় : দেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, গিটার বাদক, কি-বোর্ড বাদক এবং শিক্ষক।
পুরো নাম : তাহসান রহমান খান।
জন্ম : ১৮ অক্টোবর, ১৯৭৯ সাল।
পৈতৃক নিবাস : মুন্সিগঞ্জ।
শিক্ষা : এ জি চার্চ স্কুল (ঢাকা), নটর ডেম কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনিস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে বিবিএ(মার্কেটিং) ও এমবিএ (ফাইন্যান্স) এবং স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্টের উপর মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।
সঙ্গীতে হাতেখড়ি : ছায়ানট থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীতের উপর কোর্স করেন। চর্চা করেছেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উপরও।
মঞ্চে গাওয়া প্রথম গান : পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল।
প্রথম ব্যান্ড : ব্ল্যাক।
বর্তমান ব্যান্ড : তাহসান এন্ড দ্য সুফিজ।
বিয়ে : ২০০৬ সালের ৩ অগাস্ট বিয়ে করেন মডেল ও অভিনেত্রী মিথিলাকে।
পেশা : শিক্ষকতা। ইউনির্ভাসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বা ইউল্যাব।