Year-19 # Issue-25 # 5 August 2012



ঈদে বাড়ি ফেরা
টিকিট নিয়ে চলছে যুদ্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাত থেকে লাইনে দঁাড়িয়েও অনেকেই পাননি টিকিট। এছাড়া ঘরমুখো মানুষকে জিম্মি করে পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাণিজ্য শুরু করেছে বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। ঈদে বাড়ি ফেরার অগ্রিম টিকিট নিয়ে বলতে গেলে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। পরিবহনভেদে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা। গভীর রাতে লাইনে দঁাড়িয়ে - ঘণ্টা অপেক্ষার পর যখন একটি টিকিট মিলেছে তখন অনেকেরই মুখে দেখা গেছে হাসির রেখা। প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগাভাগি করবেন ঈদের আনন্দ। এজন্য শত কষ্ট মুখ বুঝে সহ্য করে চলেছেন যাত্রীরা। গতকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানি ঈদের অগ্রিম টিকিট ছাড়তে শুরু করেছে। আগামী দিন টিকিট থাকা সাপেক্ষে তারা কাউন্টার খোলা রাখবে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন যাত্রীরা। আর টিকিট নিতেই রাত থেকে কাউন্টারের সামনে লাইনে দঁাড়ান যাত্রীরা। গতকাল সরজমিন গাবতলীসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে দুর্ভোগের নানা চিত্র। হানিফ পরিবহনের গাবতলীর নিজস্ব টার্মিনালের অন্তত ১২টি কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। পরিবহনে ঢাকা-বগুড়ার টিকিটের দাম নেয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকা। সাধারণ সময়ে নেয়া হয় ৩০০ টাকা। ঢাকা-নওগঁার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৪৪০ টাকা। সাধারণ সময়ে নেয়া হয় ৩৫০ টাকা। রংপুরের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে ৬০০ টাকায়। অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট বিক্রির পরও হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের সামনে হাজারও মানুষের ভিড়। যাত্রীরা বলছেন, ভাড়া বেশি নিলেও হানিফের বাস বেশি। ফলে সময়মতো গাড়ি পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার ফিরোজ আহমেদ বলেন, সব যাত্রীকে টিকিট দেয়ার চষ্টো করছি আমরা। তবে আমাদের লোকবলের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই বিপুলসংখ্যক যাত্রীকে সামলাতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। হানিফ পরিবহনের উত্তরবঙ্গ ম্যানেজার কাজী আকতারুজ্জামান বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চষ্টো করছি। আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করছি। কোনো কাউন্টার থেকে তালিকার চেয়ে বেশি ভাড়া চাওয়া হলে তাত্ক্ষণিক কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরামর্শ দেন তিনি।
গাবতলী বাস টার্মিনালের বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানিও ঈদের অগ্রিম টিকিট ছাড়তে শুরু করেছে। তবে তারাও আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া। গাবতলীর লাবিবা এন্টারপ্রাইজ ঢাকা-বরিশাল রুটে বাস পরিচালনা করে। পরিবহন কোম্পানি বরিশালের টিকিট বিক্রি করছে ৪৮০ টাকায়। অথচ সাধারণ সময়ে বিক্রি করা হয় ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকায়। একইভাবে তারা খেপুপাড়ার টিকিট বিক্রি করছে ৬৫০ টাকায়। কিন্তু সাধারণ সময়ে নেয়া হয় ৫০০ টাকা।
প্রগতি লাইফ ইন্সু্যরেন্সের কর্মচারী আনোয়ার হোসেনের বাড়ি নাটোরে। গতকাল গাবতলীর কাউন্টারের সামনে তিনি দীর্ঘ লাইনের পেছন দিকে দঁাড়িয়েছিলেন। আনোয়ার বললেন, সেহেরি খেয়েই আমি চলে এসেছি। তারপরও এত পেছনে জায়গা পেয়েছি। সকাল ৮টায় কাউন্টার খুলবে। ততক্ষণ দঁাড়িয়ে থাকতে হবে। ওই লাইনে অন্তত ৩শ' লোক দঁাড়িয়েছে। হানিফের নিজস্ব এই টার্মিনালে রকম অন্তত ১২টি লাইন। প্রতিটি লাইনের শেষ প্রান্ত কয়েক বঁাক ঘুরে কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না। সকাল পেৌনে ৮টার দিকে একে একে টিকিট নিয়ে লাইন থেকে বের হয়ে আসতে লাগলেন যাত্রীরা। ১৬ আগস্টের টিকিট নিয়ে উল্লসিত হয়ে বেরিয়ে এলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএ' ছাত্র সালাউদ্দীন সজল। তিনি যাবেন চঁাপাইনবাবগঞ্জ। বললেন, বাসের টিকিটটা পেয়ে গেলাম। এখন আর কোনো চিন্তা নেই। তিনি বলেন, প্রতিবছরই এভাবে লাইনে দঁাড়িয়ে টিকিট কাটি। পরে এলে নানা ঝামেলা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাউন্টারগুলোর সামনের লাইন আরও দীর্ঘ হয়েছে। মাঝে মাঝে লাইন থেকে চিত্কার উঠেছে-কাউন্টারে দু'নম্বরি হচ্ছে। যাত্রীরা অভিযোগ করেন কাউন্টার মাস্টাররা বেশি টাকা নিয়ে পেছনে দরজা দিয়ে টিকিট বিক্রি করছেন।
স্বরূপকাঠির টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫৫ টাকায়। সাধারণ সময়ে স্বরূপকাঠির ভাড়া নেয়া হয় ৪৫০ টাকায়। এরপরও লাবিবা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার বললেন, একটি টাকাও অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে না। গাবতলীর সুরভী পরিবহন ঈদের জন্য ভাণ্ডারিয়ার টিকিট বিক্রি করছে ৫৭০ টাকায়। অথচ সাধারণ সময়ে ভাণ্ডারিয়ার ভাড়া নেয়া হয় ৪৮০ টাকা। শ্যামলী পরিবহন এবার রাজধানীতে একাধিক কাউন্টারের মাধ্যমে ঈদের টিকিট বিক্রি করছে। কল্যাণপুরের সোহরাব পেট্রোল পাম্পের পাশের কাউন্টার থেকে দেয়া হচ্ছে নাটোর, রাজশাহী, চঁাপাইনবাবগঞ্জের টিকিট। যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে তারা সকাল ৭টা থেকেই কাউন্টার খুলছে। ঈদের অগ্রিম টিকিট দেয়া হচ্ছে ১৪ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত। শ্যামলী পরিবহনে চঁাপাইনবাবগঞ্জের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে ৫৭০ টাকায়। সাধারণ সময়ে নেয়া হয় ৪৫০ টাকা। রাজশাহী চঁাপাইনবাবগঞ্জের অন্য রুটগুলোতেও অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ ম্যানেজার সুজন সাহা বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। অন্য সময় সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে কম ভাড়া নেয়া হয়। এখন সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের ট্রেজারার কামাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন পরিবহন মালিক যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত হারেই ভাড়া নেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রতিরোধে এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কয়েকটি টিম মাঠে নামানো হয়েছে। ঈদে ফিরতি বাস খালী আসে- এই অজুহাতে ভাড়া বাড়াচ্ছে মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিবহন মালিকরা। বাস ভাড়া ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে তারা জানিয়েছেন। মহাখালী বাস মালিক সমিতির সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের এই সংক্রান্ত এক বৈঠক গতকাল তেজগঁাও এলেন বাড়ি অফিসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বৈঠকে মালিক পক্ষ আগামী ১৫ আগস্ট থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত ঈদের টিকিট বিক্রি করার ব্যাপারে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেবে বলে জানিয়েছেন, বাস মালিক সামিতির সভাপতি আবুল কালাম। ঈদে এই টার্মিনালে যাতে কোনো ধরনের চঁাদাবাজি না হয় সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। বাস ভাড়া বাড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা ভাড়া বাড়ার পক্ষে নন। তবে ব্রিজের টোলে যাত্রী প্রতি ২৫ টাকা খরচ হয় বলে কালাম উলে্লখ করেন। ১৪ নম্বর কাউন্টারের একতা ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজার সুমন জানান, আজ থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করবেন। তাদের বাস ঢাকা-বগুড়া-নওগঁা রুটে চলাচল করে।  শাহ& ফতেহ& আলী পরিবহনের ১৬ নম্বর কাউন্টারে আমিনুল ইসলাম জানান, ঈদে ফিরতি গাড়ি খালি আসে। তাই ১০০ টাকা ভাড়া বাড়তে পারে। বগুড়ার ভাড়া এখন নেয়া হচ্ছে ৩৫০ এবং নওগঁা ৪৫০ টাকা। বৈশাখী পরিবহন চলাচল করে জামালপুর রুটে। কাউন্টারের ম্যানেজার মালেক বললেন, তারা কোনো অগ্রিম টিকিট দেবেন না। আসলেই সঙ্গে সঙ্গে টিকিট পাবেন যাত্রীরা। এখন তারা ৩০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। এই টার্মিনাল থেকে ৩৮টি কাউন্টারের মাধ্যমে ৮০০ বাস উত্তর অঞ্চলসহ ঢাকা বিভাগের জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল এসব এলাকার রুটে চলাচল করে বলে বাস মালিক সমিতি জানিয়েছে। ঈদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে অনেক যাত্রীই আগে ভাগেই টিকিট বুকিং দিয়ে দিচ্ছেন। ফকিরেরপুল এলাকা থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মেৌলভীবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, যশোর, খুলনা রুটে প্রচুর বাস ছেড়ে যায়। শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার- এর ম্যানেজার মোবারক মিঞা জানালেন, চট্টগ্রাম সিলেট রুটের প্রায় আশি ভাগ টিকিট বুকিং শেষ। বেশিরভাগ যাত্রী বুকিং দিয়েছেন অনলাইনে। আর যাদের সে সুবিধা নেই তারা সরাসরি অথবা ফোন করে আসন টিকিট নিশ্চিত করছেন বলে জানালেন তিনি। মেডিকেল কলেজের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদেৌস তুলি জানালেন, গত ঈদে চট্টগ্রামে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। এবার তাই সাবধান হয়ে আগেভাগেই ১৫ আগস্টের টিকিট নিশ্চিত করেছি। এখানকার ঈগল পরিবহন এখনও অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেনি। রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসটার্মিনালের শ্যামলী পরিবহনের ৯নং কাউন্টারে ঈদের এক সপ্তাহ আগের কোনো টিকিট নেই। একই অবস্থা বিলাসবহুল বাস সার্ভিস সেৌদিয়া মার্সিডিজ বেঞ্জ-এর। এই মাসের ২০, ২১, ২২ তারিখে কক্সবাজারে তাদের কোনো টিকিট অবশষ্টি নেই। গ্রিন লাইনের কক্সবাজার রুটের সব টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে টিকিট সঙ্কট অনেকটা প্রকট চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য। এবার লম্বা সরকারি ছুটি থাকায় ঈদের থেকে দিন আগে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের সংখ্যা একটু বেশি। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ বাস ছাড়ে রাজধানীর বৃহত্তম বাসটার্মিনাল সায়েদাবাদ থেকে। বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবন, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, চঁাদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদীসহ আরও বেশকিছু এলাকার উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায় সায়েদাবাদ থেকে। ঈদের অগ্রিম টিকিট প্রাপ্তি নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে গ্রিন লাইনের ৫নং কাউন্টারের ম্যানেজার ফাইকুজ্জামান বলেন, ঈদে গ্রিন লাইনের বেশির ভাগ যাত্রী অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করছেন। তাদের টিকিট কালোবাজারির কোনো সুযোগ নেই বলে তিনি জানান। সারাদেশে শ্যামলী পরিবহনের রয়েছে ৮০০' বেশি বাস সার্ভিস। কাউন্টারের ইনচার্জ রাজীব বলেন, ঢাকা থেকে বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবন টেকনাফে তাদের বাস সার্ভিস রয়েছে। ঈদের আগে বাড়তি কোনো ভাড়া তারা নিচ্ছেন না বলে দাবি করেন তিনি। ঢাকা থেকে শ্যামলী পরিবহনে সিলেট ৪৪০ টাকা, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ৪৩০ টাকা। এসি বাসে ৭৫০ টাকা। বিজনেস ক্লাসে ১৩৫০ টাকা, রাঙামাটি এসি ৭৫০ টাকা, এসি বান্দরবন ৭৫০ টাকা ভাড়া। তবে ইউনিক পরিবহনের বাস কাউন্টার ম্যানেজার আনোয়ার বললেন, তারা কোনো অগ্রিম টিকিট দিচ্ছেন না। দেশের বৃহত্তম ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। সেজন্য ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকে কিশোরগঞ্জ রুটে যাত্রীদের ভিড় থাকে প্রচণ্ড। কিশোরগঞ্জের জন্য রয়েছে ঈশাখঁা, হাওর বিলাস, অনন্যা, জলসঁিড়িসহ আরও বেশ 'টি বাস সার্ভিস। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। তবে ঈদে অতিরিক্ত যাত্রীদের চাপে বাস চালকরা বাড়িয়ে দেন ভাড়া। নিয়মিত ভাড়ার চেয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়ানো হয়।


মামলা জটে উচ্চআদালতে বাড়ছে জনদুর্ভোগ
আশীষ কুমার সেন
উচ্চআদালতে মামলা জটের কারণে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। বর্তমানে সংখ্য দঁাড়িয়েছে ১৫ হাজারের ওপরে সুপ্রিমকোর্টের সূত্রে জানা যায়, মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তির গতি কম হওয়ায় প্রতি মাসেই থেকে ৫শ' মামলা বাড়ছে। ২০০৯ সালে আপিল বিভাগে মামলার সংখ্যা তিন হাজারের কাছাকাছি ছিল। ২০১০ সালের জানুয়ারি হাজারের মতো থাকলেও বর্তমানে তা দঁাড়িয়েছে ১৫ হাজারেরও ওপরে। তিন বছরের ব্যবধানে আপিল বিভাগে মামলার জট বেড়েছে গুণ। তারপরও একটি বেঞ্চ দিয়েই মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। সুপ্রিমকোর্টের পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, আপিল বিভাগে প্রতি মাসেই মামলার জট বাড়ছে। ২০১০ সালের পর থেকে প্রতি মাসেই চার থেকে ৫শ' করে মামলার সংখ্যা বেড়েছে। এর সংখ্যা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলা ছিল হাজার ৪৪৫টি। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে তা বেড়ে দঁাড়ায় হাজার ৩৬০টিতে। জানুয়ারিতে সংখ্যা দঁাড়ায় ১২ হাজার ৭শ'তে। ফেব্রুয়ারিতে আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলা ছিল ১৩ হাজার ১৫১টি, মার্চ মাসে সংখ্যা দঁাড়ায় ১৩ হাজার ৬১৫তে, এপ্রিলে ১৪ হাজার ২০টিতে, মে মাসে ছিল ১৪ হাজার ৪৭৪টি, জুন মাসে ওই সংখ্যা দঁাড়ায় ১৪ হাজার ৯০৭টি এবং বর্তমানে সংখ্যা ১৫ হাজারের ওপরে দঁাড়িয়েছে। আর নিয়ে আইনজীবীরা বার বার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিলম্বিত বিচার ন্যায়বিচারকে ব্যাহত করে দাবি করে তারা বলেছেন, অতীতে একাধিক বেঞ্চ গঠন করে মামলা নিষ্পত্তির নজির রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আপিল বিভাগে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারপতি থাকা সত্ত্বেও একটি বেঞ্চ কাজ করছে। এর ফলে মামলার জট বেড়েই চলেছে। বাড়ছে জনদুর্ভোগ। ব্যাহত হচ্ছে ন্যায়বিচার। তারা আরও বলেন, সরকারের বিশেষ প্রয়োজনে আপিল বিভাগে একাধিক বেঞ্চ গঠনের নজির রয়েছে। এছাড়া অতীতে বিভিন্ন সময়ে একাধিক বেঞ্চ কাজ করেছে। অথচ জনদুর্ভোগ লাঘবে এখন একাধিক বেঞ্চ গঠন করা হচ্ছে না।
ব্যাপারে বিশষ্টি আইনজীবী রেজাউল করিম বাংলাদেশ সময়কে বলেন, মামলাজট কমানো, একাধিক বেঞ্চ গঠনএসব ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির একক ক্ষমতা রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতিকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তবে কিভাবে মামলার জট কমানো যায় সে ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি সিনিয়র আইনজীবীদের পরামর্শ নিতে পারেন। তিনি আরও বলেন, মামলা নিষ্পত্তির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করা যে কতটা কষ্টদায়ক তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বলতে পারে। তবে কারণে বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে আইনজীবীদেরও কিছুটা হয়রানি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট জয়নুল আবেদিন দুটি বেঞ্চ গঠনের তাগিদ দিয়ে বলেছেন, দাবি বহুবার তুলেছি। অথচ জন বিচারপতিই একটি বেঞ্চে বসে আছেন। কেন দুটি বেঞ্চ গঠন করা হচ্ছে না, তা প্রধান বিচারপতিই ভালো জানেন। তিনি আরও বলেন, জনগণ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আস্থাশীল। তারা চায় মামলা দ্রুত শেষ হোক। ন্যায়বিচারের জন্য আদালতের প্রতি চেয়ে থাকে। আইনজীবীদেরও দীর্ঘদিনের দাবি দুটি বেঞ্চ হোক। তিনি আরও বলেন, একটি বেঞ্চ যথোপযুক্ত ছিল যখন এদেশের মানুষ ছিল আট কোটি। বর্তমানে জনসংখ্যা ১৬ কোটির ওপরে। তাছাড়া আপিল বিভাগের পরে বিচার চাওয়ার আর কোনো বিভাগ নেই। তাই চিন্তাভাবনা করে মামলার রায় দিতে হয়। সেক্ষেত্রে দুটি বেঞ্চ না হলে জনদুর্ভোগ হবেএটাই স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে দুটি বেঞ্চ গঠন করলে দুর্ভোগ কমে যাবে।
১৯৮৬ সালে প্রণীত রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব  প্রেসিডেন্স) বাতিল করে নতুন পদমর্যাদাক্রম তৈরির দাবিতে ২০০৬ সালে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের তত্কালীন মহাসচিব আতাউর রহমান। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে সাংবিধানিক পদাধিকারী হওয়ায় জেলা জজদের পদমর্যাদা রাষ্ট্রের তিন বাহিনীর প্রধানদের ওপরে রাখতে বলা হয়। তবে এর পরপরই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে সরকার। হাইকোর্টের ওই রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেন আপিল বিভাগ। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ আড়াই বছর। ওই আপিলের আর শুনানি হয়নি। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা তাই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দিকে। 


এবারের ঈদের ৪ ছবিতেই নিপুন
বিনোদন প্রতিবেদক

ঢালিউডের এই সময়ের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান, এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। তবে নায়িকা কে? এটা নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না কেউই। তবে এবারের ঈদে অন্য নায়িকাদের পেছনে ফেলে একধাপ এগিয়ে গেছেন নিপুন। অপু বিশ্বাস ও সাহারাকে পেছনে ফেলে আসছে ঈদে নিপুন অভিনীত সর্বাধিক ৪টি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। আসন্ন ঈদে নিপুন অভিনীত মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবির মধ্যে রয়েছে- সাফিউদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘ঢাকার কিং’, আশরাফুর রহমান পরিচালিত ‘তুমি আসবে বলে’, শাজাহান চৌধুরী পরিচালিত ‘আত্মদান’ এবং বাসু চ্যাটার্জি ও মৌসুমী পরিচালিত ‘হঠাৎ সেদিন’। এই চারটি ছবির মধ্যে দুইটি ছবিতে নিপুণের বিপরীতে আছেন নীরব, একটিতে শাকিব খান ও আরেকটিতে ফেরদৌস।nipun অনেকেই মনে করছেন দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী নায়িকা নিপুন ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছেন কাঙ্খিত একনম্বর পজিশনের দিকে। এবারের ঈদে অন্য নায়িকাদের মধ্যে অপু বিশ্বাস অভিনীত ‘ঢাকার কিং’ এবং সাহারা অভিনীত ‘মাই নেম ইজ সুলতান’, বর্ষা অভিনীত ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ এবং ছোট পর্দার উজ্জ্বল মুখ তিন্নি অভিনীত ‘সে আমার মন কেড়েছে’ মুক্তি পাবে। ঈদে নিপুনের চারটি ছবি মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বললেন, একজন নায়িকার জন্য এক ঈদে চারটি ছবি মুক্তি পাওয়া নি:সন্দেহে আনন্দের বিষয়। আমি আশা করবো, দর্শকরা ছবিগুলো দেখতে সিনেমা হলে আসবেন। ঢালিউডের একনম্বর নায়িকা পজিশন প্রসংগে নিপুন বলেন, আসলে পজিশন নিয়ে কখনো চিন্তা করি নি। কাজ করছি মনোযোগ দিয়ে আন্তরিকতার সংগে। একনম্বর পজিশন নয়, অভিনয় দিয়েই দর্শকের মনে আমি জায়গা করে নিতে চাই। চলচ্চিত্র নায়িকা নিপুন বড়পর্দার পাশাপাশি বর্তমানে ছোটপর্দার নাটকেও নিয়মিত কাজ করছেন। এবারের ঈদে বিভিন্ন চ্যানেলের একাধিক নাটক দেখা যাবে।