Year-18 # Issue-51 # 5 February 2012

টাইম সাময়িকীর প্রতিবেদন
বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ পুঁজিবাজার বাংলাদেশে
নিজস্ব প্রতিবেদক
উত্থান-পতনের দিক থেকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাজার বলে টাইম সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি গত ২ ফেব্র“য়ারি টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক ৫৫ শতাংশ কমে যায়। যদিও সে দেশের মানুষ ডিএসইর সূচক গত ৫৮ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উঠতে দেখেছে। এছাড়াও গত ১২ মাসের বেশি সময় ধরে লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পোশাক শিল্পের বিকাশ গড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। দ্রুত উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে ২০০৫ সালে ‘গোল্ডম্যান স্যাকস’ বাংলাদেশকে ‘নেক্সট ১১’-এর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে যা তালিকায় ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের সঙ্গে জায়গা করে নেবে। একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে ‘নাটকীয় উত্থান’ এবং ‘দ্রুত পতন’ নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য অশনীসংকেত বলে প্রতিভাত হয়েছে। যদিও এই বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুতবর্ধমান অভ্যন্তরীণ মূলধনের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার হুমকির ব্যাপারে মোটেও সচেতন নয়। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ২৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। যাদের মাসিক আয় প্রায় ৪০ ডলার। যা দক্ষিণ চীনের তৃতীয় শ্রেণীর মজুরি হিসেবে বিবেচিত হয়। মজুরি কম হওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্বের পোশাক শিল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাক শিল্প থেকে আয় এবং প্রবাসীদের পাঠানো টাকা (রেমিট্যান্স) বাংলাদেশের ৩৬টি ব্যাংকে জমতে থাকে। যার অধিকাংশ ব্যাংক নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত, ছোট এবং যাদের পেশাগত দিক ততোটা মজবুত নয়। যখনই মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে তখনই ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে আসতে শুরু করে এবং গ্রাহকদের আমানত বিনিয়োগ করে অধিক রিটার্ন পেতে শুরু করে। তখন থেকেই ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারের বড় বিনিয়োগকারীতে পরিণত হয়। এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে তাদের মোট ঋণের ১০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়। সুতরাং আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ ধরনের সিদ্ধান্ত ছিল বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা। যেহেতু ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছিল তাই পুঁজিবাজারের সূচকও ছিল সেসময় আকাশচুম্বি। প্রাপ্ত তথ্য মতে ২০১০ সালেই বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সাধারণ সূচক বাড়ে ৯০ শতাংশেরও বেশি। এ ধরনের বৃদ্ধির ফলে বাজার সম্পর্কে জানে না এমন স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগকারী এবং কিছু জানাশোনা আছে এমন বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসতে থাকে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বিও একাউন্টধারীর সংখ্যা ৫ লাখ থেকে ৩৫ লাখে পৌঁছোয়। সে সময় যারা বাজারে আসছিল তাদের কারও বাজার সম্পর্কে কোনও জ্ঞান ছিল না এবং বাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তাই বাজারে এসেই সবাই শেয়ার কেনা শুরু করে। আকস্মিকভাবে পুঁজিবাজারে এ ধরনের বৃদ্ধি থমকে দাঁড়ায়। ২০১০ সালের শেষের দিকে দেশের মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেল। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের রশি টেনে ধরলো। যার ফলে বাজার থেকে ব্যাংক তাদের বিনিয়োগ উঠিয়ে নিল। ফলে গত বছরগুলোতে বাজার যা বেড়েছিল ২০১০ সালে তা পড়ে যায়। আর এখন শেয়ারবাজার পতনের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিলতার মুখে পড়েছে।

বাড়ছে রিজার্ভ
রেমিট্যান্স আয়ে রেকর্ড
মো. রেজাউর রহিম
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা সদ্যসমাপ্ত জানুয়ারি মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে জানুয়ারি মাসে ১১২ কোটি ৫৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এর আগে একক কোনো মাসে দেশে এ পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসেনি। এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহের উচ্চমুখী প্রবাহ অব্যাহত থাকায় রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আগের বছরের জানুয়ারি মাসে দেশে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৯৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। আর ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। জানুয়ারি মাসে রাষ্টায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩১ কোটি ৭২ লাখ ডলার, বিশেষায়িত ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে যথাক্রমে ১ কোটি ১৩ লাখ ডলার ও ১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। আর বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৮৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এর মধ্যে বরাবরের মতো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি.-এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। জানা গেছে, চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি ৭ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৭২৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে দেশে ৬৫২ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল।  বিশেষজ্ঞদের মতে, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসীরা দেশে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠানোর ফলে এ রেকর্ড হয়েছে। তাদের মতে, প্রবাসে অবস্থানরত অনেকেই ডলারের দাম বাড়ার ফলে তাদের জমানো অর্থ দেশে পাঠচ্ছেন। রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বাংলাদেশ সময়’কে জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে গৃহীত বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে তাদের পরিবার-স্বজনদের কাছে অর্থ পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ১০০ ভাগ রেমিট্যান্সই যাতে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে আসে সে লক্ষ্যে কাজ করছে। রেমিট্যান্সের উচ্চপ্রবাহ সামনের মাসগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে ১০১ কোটি ১৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে। আগস্ট মাসে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১১০ কোটি ১৭ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ৮৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার, অক্টোবর মাসে ১০৩ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, নভেম্বর মাসে ৯০ কোটি ৮১ লাখ ডলার এবং ডিসেম্বর মাসে ১১৪ কোটি ৭২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে। সাধারণত উৎসব-পার্বন উপলক্ষে দেশে বেশি রেমিট্যান্স আসলেও গত জানুয়ারি মাসে দেশে বড় ধরনের কোনা উৎসব না থাকলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এদিকে, রেমিট্যান্সের উচ্চপ্রবাহ বজায় থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণও বাড়তে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের স্থিতি ছিল ৯৪২ কোটি ২২ লাখ ডলার। আগের সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৯২৬ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। রেমিট্যান্সের উচ্চপ্রবাহ ও রিজার্ভের পরিমাণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডএস’র গবেষক জায়েদ বখত জানান, যে মুহূর্তে দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে তখন রেমিট্যন্সের উচ্চপ্রবাহ এবং রিজার্ভ বৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। তিনি বলেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে লেনেদেনের ভরসাম্যে যে অচলাবস্থা চলছে তা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। সূত্র জানায়, প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স দেশে পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোকে চিঠি দিয়েছে। এছাড়া রেমিট্যান্স পাঠতে কোনো সমস্যা হলে প্রবাসীদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শও দেয়া হয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় রেমিট্যান্স ও  বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ সম্পর্কে বলা হয়েছে-বিশ্ব অর্থমন্দার প্রভাব কাটিয়ে অর্থবছরের শেষদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধনাত্মক গতি এসেছে। ডিসেম্বর ২০১১ মাসে রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ২০৬৪.৮৫ মিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ৩১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে এ মজুদের পরিমাণ ৯৩৮৬.৪৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১০৩৮৭.৭২ মিলিয়ন ডলার।

তৃণমূল পর্যায়ে মানুষ পরিপাকতন্ত্র ও লিভার ব্যাধির সুচিকিৎসা পাবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পরিপাকতন্ত্র ও লিভারজনিত রোগে আক্রান্ত হন। পরিপাকতন্ত্র ও লিভার ব্যাধি বিশ্বে অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও একটি উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা। পর্যাপ্ত শিক্ষা, জীবনযাত্রার কাক্সিক্ষত মানের সংকটের কারণে এ সংক্রান্ত রোগের প্রাদুর্ভাব আমাদের দেশে অনেক বেশি। পরিপাকতন্ত্র ও লিভার সংক্রান্ত রোগীর উন্নততর চিকিৎসা প্রদানের জন্য গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজী বিষয়ে দেশে আরো বেশি করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন। এর সঙ্গে প্রয়োজন এর চিকিৎসা সেবা তৃণমূল পর্যায়ে সম্প্রসারণ। এ লক্ষ্যে সরকার অতি সম্প্রতি ‘পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল’ স্থাপন প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করেছে। দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াস বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গড়ে তোলার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকার এরইমধ্যে দেশের নতুন ও পুরনো অধিকাংশ মেডিকেল কলেজে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে। গ্যাস্ট্রোএন্টরোলজি বিভাগে নতুন পদ সৃষ্টি, পদায়ন এবং ‘পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল’ প্রকল্পটি গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির বিশেষায়িত সেবা আরো সম্প্রসারিত করবে। সরকার গৃহীত পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আগামীতে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষ পরিপাকতন্ত্র ও লিভার ব্যাধির সুচিকিৎসা পাবে। গত শনিবার হোটেল রূপসী বাংলা’য় বাংলাদেশ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটি আয়োজিত ১৯ তম জাতীয় সম্মেলন ও বৈজ্ঞানিক অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে  প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক তার বক্তব্যে একথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির। বাংলাদেশ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটি’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হসানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণগোপাল দত্ত, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, বিএমএ’র মহাসচিব অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ, সোসাইটির সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. প্রজেশ কুমার রায়, সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ প্রমুখ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবর রহমান ফকির বলেন, বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে নিকট ভবিষ্যতে দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিষয়ে উন্নত চিকিসা সেবা পাবে। এর চিকিৎসা বিষয়ে এখনো যেসব সমস্যা রয়েছে তা শিগগিরই দূর করা হবে। আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আনা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান বলেন, ১৬ কোটি মানুষের এ দেশে প্রায় ১৪০ জন পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বর্তমানে পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও অগ্নাশয়ের রোগের প্রকোপ বেশি হওয়ায় রোগীর সংখ্যাও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীর চেয়ে বেশি। এখন দেশে ২৫ শতাংশ রোগীই হচ্ছে পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও অগ্নাশয়ের রোগী। আর রোগীদের বেশিরভাগ হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ের রোগী। এ কারণে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এ রোগের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনা প্রতিবেদন
সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ইতিবাচক
মো. রেজাউর রহিম
দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ইতিবাচক বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সাপ্তাহিক পর্যালোচনায় রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রা, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার, কলমানি মার্কেট, আমদানি-রফতানি, রাজস্ব, মুদ্রা সরবরাহ ও ঋণ পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতিসহ কৃষি ও শিল্পঋণের ইতিবাচক অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ সম্পর্কে বলা হয়েছে- বিশ্ব অর্থমন্দার প্রভাব কাটিয়ে অর্থবছরের শেষদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধনাÍক গতি এসেছে। গত অর্থবছরে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ ৬.০৩ শতাংশ বেড়ে ১১৬৫০.৩১ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছিল। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.৭ শতাংশ বেড়ে ৭২৮৪.১০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। উল্লেখ্য, সদ্যসমাপ্ত জানুয়ারি মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২১৫.৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স। ডিসেম্বর ২০১১ মাসে রফতানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০৬৪.৮৫ মিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ৩১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে এ মজুদের পরিমাণ ৯৩৮৬.৪৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১০৩৮৭.৭২ মিলিয়ন ডলার।
বৈদেশিক বিনিময় হার, কলমানি মার্কেট ও স্টক এক্সচেঞ্জ মূল্যসূচক: বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের বিনিময় হার এবং স্বর্ণমূল্যের অস্থিতিশীলতায়  বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কিছুটা অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে টাকার বিপরীতে ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী টাকা-ডলার ভারিত গড় বিনিময় হার ৩১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে দাঁড়ায় ৮৪.৪৪০৫ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এবং ৩০ জুন ’১১ এ যার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৭১.১৫০০ ও ৭৪.২৩২৯ টাকা। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আন্তঃব্যাংক কলমানি মার্কেটের ভারিত গড় হারে কিছুটা ওঠানামা পরিলক্ষিত  হচ্ছে উল্লেখ করে পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, গত ৩১ জানুয়ারি তারিখের আন্তঃব্যাংক কলমানি মার্কেটের ভারিত গড় হার দাঁড়িয়েছে ১৯.৯৭ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এবং ৩০ জুন ’১১ শেষে এ হার ছিল যথাক্রমে ১১.৬৪ ও ৯.২৪ শতাংশ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক ৩১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪১৫৩.৯৬ ও ১২১৪২.৫১,  যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল যথাক্রমে ৭৪৮৪.২৩ ও ২১৪২৪.৫৯।
আমদানি: ২০১০-১১ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ৪১.৮ শতাংশ  বেড়েছিল। জুলাই-ডিসেম্বর ’১০-১১র তুলনায় আমদানি ব্যয় অর্থবছর ’১১-১২ এর জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১৬.৯১ শতাংশ বেড়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ঋণপত্র স্থাপনা ভিত্তিক আমদানি ৫.৮২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অপরপক্ষে এ সময়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তিভিত্তিক আমদানি ১৬.০৯ শতাংশ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে খাতওয়ারী ঋণপত্র স্থাপনার তথ্য পর্যালোচনা থেকে দেখা যায় যে ভোগ্যপণ্য, মূলধন পণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি মূল্য যথাক্রমে ৬১.৮২, ৩৪.৯৬ ও ৮.৬৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অপরদিকে, পেট্রোলিয়ামের আমদানি মূল্য ১০৩.৩৬ শতাংশ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে খাতওয়ারী ঋণপত্র নিষ্পত্তির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভোগ্যপণ্যের আমদানি মূল্য ৩১.৫৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অপরদিকে মূলধন পণ্য শিল্পের কাঁচামাল এবং পেট্রোলিয়ামের আমদানি মূল্য যথাক্রমে ২৩.৩২, ১৩.৪৩ এবং ৬৭.৭২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রফতানি: জুলাই-ডিসেম্বর ২০১১-১২ সময়ে রফতানি আয় পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪.৭২ শতাংশ বেড়ে ১১৭৭৪.৬০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। ২০১০-১১ অর্থবছরে রফতানি আয় আগের বছরের তুলনায় ৪১.৪৭ শতাংশ বেড়েছিল। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী অর্থবছর ’১১-১২ জুলাই-নভেম্বর সময়ে কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্সের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ মিলিয়ন ডলার। অর্থবছর ’১০-১১ জুলাই-নভেম্বর সময়ে এ উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৭৬২ মিলিয়ন ডলার। ২০১০-১১ অর্থবছরে এ খাতে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৯৯৫ মিলিয়ন ডলার।
রাজস্ব: সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ডিসেম্বর, ২০১১ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ নভেম্বর ২০১০ মাসের তুলনায় ১২.৮৮ শতাংশ  বেড়ে ৭৩৯২.৪৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬.০৯ শতাংশ বেড়ে ৩৮৯৮৭.০৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। আগের বছরের একই সময়ে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৭.২৪ শতাংশ। উল্লেখ্য, ২০১০-১১ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ২৭.৪৮ শতাংশ বেড়েছিল।
জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ: ২০১১-১২ অর্থবছরের ডিসেম্বর ২০১১ মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৩৬.২৫ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে। ডিসেম্বর ২০১০ মাসে যার পরিমাণ ৯৩.৬৭ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছিল। তথ্যানুযায়ী,  ২০১১-১২ অর্থবছরে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৩৪.০৭ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৯৬৯.৭২ কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২০৫৬.৯০ কোটি টাকা।
মুদ্রা সরবরাহ, অর্থ ও ঋণ পরিস্থিতি: ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের রিজার্ভ মুদ্রা ও ব্যাপক অর্থ সরবরাহ যথাক্রমে ২১.০৯ ও ২১.৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ও বেসরকারি খাতে ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ২৭.৪১ ও ২৫.৮৪ শতাংশ।  যা উক্ত অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার (৬.৬৬%) এবং মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষিতে মোটামুটি সন্তোষজনক উল্লেখ করে পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর সময়ে রিজার্ভ মুদ্রা পরিমাণ ব্যাপক অর্থ সরবরাহ, মোট অভ্যন্তরীণ ও বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ১.৭, ৫.৪৫, ৮.৯৯% ও ৬.২ শতাংশ বেড়েছে। বার্ষিক ভিত্তিতে নভেম্বর, ২০১১ মাসে নভেম্বর ’১০ মাসের তুলনায় রিজার্ভ মুদ্রা, ব্যাপক অর্থ সরবরাহ, মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ও বেসরকারি খাতে ঋণ যথাক্রমে ১৫.৯২, ১৭.৭, ২৫.৯ এবং ১৯.৩৩ শতাংশ  বেড়েছে।
মূল্য পরিস্থিতি: সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ডিসেম্বর, ২০১১ মাসে ১২ মাসের গড় ভিত্তিক ও পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১০.৭১ ও ১১.৬৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে এ হার ছিল যথাক্রমে ৮.১৩ ও ৮.২৮ শতাংশ। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রসার-কে মূল্যস্ফীতি বাড়ার মূল কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
শ্রেণীবিন্যাসিত ঋণ ও মূলধন পরিস্থিতি: বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের মোট ঋণে শ্রেণীকৃত ঋণের অংশ সেপ্টেম্বর ২০১১ শেষে দাঁড়িয়েছে ৭.১৭ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর ২০১০ শেষে ছিল ৮.৪৭। নীট ঋণে শ্রেণীকৃত নীট ঋণের অংশ সেপ্টেম্বর ২০১১ শেষে দাঁড়িয়েছে ১.২৪ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর ২০১০ শেষে ছিল ১.৬৪ শতাংশ। উল্লেখ্য, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ব্যাসেল-২ নীতিমালার আওতায় নির্দেশিত ন্যূনতম আবশ্যকীয় মূলধন সংরক্ষণে সক্ষম হয়েছে।
কৃষি ও শিল্প ঋণ: অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি খাত উল্লেখ করে পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, এ খাতে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনের জন্য কৃষি ঋণ বিতরণের উচ্চতর প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৩৮০০ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যা আগের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১২৬১৭.৪০ কোটি টাকার তুলনায় প্রায় ৯.৩৭ শতাংশ বেশি। উল্লেখ্য, ২০১০-১১ অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার ৯৭শতাংশ অর্জিত হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ডিসেম্বর, ২০১১ মাসে কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায়ের পরিমাণ যথাক্রমে ১৩৭৯.৯৩ এবং ১৩৭৪.৬৮ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায়ের পরিমাণ যথাক্রমে ৫৭৩০.২৮ এবং ৬৪৩১.৮০ কোটি টাকা। আগের  অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬২২৪.৮১ এবং ৬১৯১.০৫ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে কৃষিঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার ৪১.৫২ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে শিল্পখাতে মেয়াদী ঋণ বিতরণ ২৪.৩ শতাংশ  বেড়েছিল। তথ্যানুযায়ী ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে শিল্পখাতে মেয়াদী ঋণ বিতরণ ও আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৭৪৩৭.৪৪ ও ৬৮১০.৮৮ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল যথাক্রমে ৭৪৭৩.৫১ ও ৫৯১৩.৮৭ কোটি টাকা।
আগামী বছর থেকেই ‘কারেন্সি সোয়াপ’ ব্যবস্থা চালু হতে পারে
এক বছরে টাকার মান কমেছে ২১ শতাংশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ডলারের বিপরীতে গত এক বছরে টাকার মান ২১ শতাংশ কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে সরকার। সার্কভূক্ত অন্য দেশগুলোতেও একই ধারা চলতে থাকায় ‘কারেন্সি সোয়াপ’ চালুর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিদেশি এইচএসবিসি ব্যাংক প্রতি ডলার বিক্রি করেছে ৮৫ টাকায়। সোমবার বিক্রি করেছিল ৮৫ টাকা ৫৫ পয়সায়। বেসরকারি উত্তরা ব্যাংকও সপ্তাহের শেষ দিন ৮৫ টাকায় ডলার বিক্রি করেছে। সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ৮৪ টাকা ৭০ পয়সায় ডলার বিক্রি করেছে; কিনেছে ৮৩ টাকা ৭০ পয়সায়। অথচ এক বছর আগেও ৭০ থেকে ৭০ টাকা ২৫ পয়সায় লেনদেন হয়েছে মার্কিন ডলার।  বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। এ কারণেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তিনি বলেন, টাকার মান নিয়ে সত্যিই আমরা চিন্তিত। শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত, পাকিস্তানসহ সার্কভুক্ত সব দেশের মুদ্রারই অবমূল্যায়ন হচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি আমদানি নির্ভর। অধিকাংশ পণ্য আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়। সে কারণে ডলারের দাম বাড়লে পণ্যের দামও বেড়ে যায়। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। মন্ত্রী জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে কৃষি উৎপাদনও ভালো। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানো যাচ্ছে না। ডলারের দর বাড়ায় জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামছে না। তবে আগামীতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে- এমন আশা প্রকাশ করে মুহিত বলেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমছে। সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা কমে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশে নেমে এসেছে। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। অর্থমন্ত্রী জানান, গত সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সার্ক অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকেও মুদ্রার মান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অন্যরাও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ‘কারেন্সি সোয়াপ’ চালুর প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। সার্কের বাকি সদস্যরাও তাতে সমর্থন দিয়েছে। ‘কারেন্সি সোয়াপ’ চালু হলে সার্কের দেশগুলো অন্য দেশ হতে জরুরি প্রয়োজনে নিজের দেশের মুদ্রায় (কারেন্সি) পণ্য আমদানি করতে পারবে। এ ব্যবস্থায় কোনো দেশ যে পণ্য আমদানি করবে তার মোট দামের সমপরিমাণ অর্থ নিজ দেশের মুদ্রায় জমা দিতে হবে। পরে ডলার বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক মুদ্রা দিয়ে নিজেদের মুদ্রা ফেরত নিতে হবে। তবে যতোদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা জমা দেওয়া না হবে, ততোদিন একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ পরিশোধ করতে হবে। আগামী বছর থেকেই এ ব্যবস্থা চালু হতে পারে বলে জানান মুহিত। এদিকে টাকার মান পড়তে থাকায় মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি বিনিয়োগেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত। পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। ফলে শিল্পদ্যোক্তরা মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। এতে শিল্প উৎপাদন কমে যাবে, কমবে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিনিয়োগে, অর্থনীতিতে। এই ধারা চললে বাজেটে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জিত নাও হতে পারে বলে মনে করেন বিআইডিএসের এই জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক) মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। গত ১০ মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি দুই অংকের ঘরে (ডাবল ডিজিট) অবস্থান করছে।

ঢাবিতে ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতন
তদন্ত প্রতিবেদন সংসদে উত্থাপিত হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ও সাবেক সেনা প্রধানসহ পাঁচ জনকে প্রচলিত আইনে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন সংসদে আসছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ওই প্রতিবেদন আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে উত্থাপিত হতে পারে বলে কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন জানিয়েছেন। মেনন বলেন, দিনের কার্যসূচিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারির ‘অর্ডার অব দ্য ডে’তে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। মেনন আরো জানান, এই প্রতিবেদন সংসদে উত্থাপনের সময় সাধারণ আলোচনার জন্য স্পিকারের কাছে সময় চেয়েছে সংসদীয় কমিটি। মেনন বলেন, গত বৃহস্পতিবার স্পিকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সংসদ নেতা ও চিফ হুইপের সঙ্গে আলোচনা করবেন। ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-সেনা সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ ডিসেম্বর ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ ও সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ ছাড়াও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে কমিটি। এরইমধ্যে গত বুধবার ৩৮৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। জানা গেছে, সাবেক সরকার প্রধান, সেনা প্রধান, পুলিশ প্রধানের বিচারের বিষয়টিও সংসদের অনুমোদনের পর সরকারের কাছে প্রদিবেদনটি জমা দেয়া হবে। এদিকে জাতীয় সংসদের কয়েকটি সূত্র জানায়, কমিটির প্রতিবেদন বা সুপারিশ সংসদে উপস্থাপিত হতে পারে। এ নিয়ে সাধারণ আলোচনার সুযোগ নেই। তাছাড়া এখন রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা চলছে। এই অবস্থায় অন্য আলোচনায় যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। এ বিষয়ে রাশেদ খান মেননও বলেন, প্রতিবেদন নিয়ে সাধারণ আলোচনার রেওয়াজ নেই ঠিক। তবে স্পিকার চাইলে সুযোগ দিতে পারেন। আর সরকারদলীয় অনেক সদস্যও এ বিষয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, এর প্রথম ২৯ পৃষ্ঠায় রয়েছে কমিটির মূল প্রতিবেদন। এগারোটি পর্যবেক্ষণ ছাড়াও তেরোটি সুপারিশ রয়েছে এতে। বাকি পৃষ্ঠাগুলোয় সাব-কমিটি সংশ্লিষ্ট  তথ্যাদি উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে ৪২টি বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। উপস্থাপিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সংবাদপত্রের কাটিং, বিবিসি-ভয়েস অব আরেরিকাসহ বাংলাদেশ বেতারের প্রতিবেদনের লিখিত রূপ, কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেওয়া ছাত্র-শিক্ষকদের বক্তব্য রয়েছে। তাছাড়া ওই সময় দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের বক্তব্য, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট আরো অনেকের বক্তব্য এবং সাব-কমিটির ১১টি বৈঠকের সিদ্ধান্ত সংযুক্ত হয়েছে। বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোয় সেসময় প্রচারিত সংবাদের একটি সিডিও প্রতিবেদনের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, সাব-কমিটি ৮ ডিসেম্বর তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। পরে ২০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির মূল কমিটি তা অনুমোদন করে। এর আগে ২০০৯ সালের ৮ জুলাই পাঁচ জন বিশিষ্ট নাগরিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত সাব-কমিটি গঠিত হয়। সূত্র জানায়, কমিটিতে বিরোধী দলীয় সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ প্রথমদিকে এ বিষয়ে বক্তব্য দিলেও শেষে দিকে তিনি কোনো বৈঠকে অংশ নেননি। সে কারণে এ বিষয়ে বিরোধী দলীয় সদস্যদের বক্তব্য নেই। এরইমধ্যে ছাপা হওয়া প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে সাব-কমিটি বলছে, ছাত্র-সেনা সংঘর্ষ পরবর্তী পরিস্থিতিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইচ্ছাকৃত নির্লিপ্ত ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ, সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল (অব.) মইন উ আহমেদ, সে সময় আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) দুই পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) চৌধুরী ফজলুল বারী, ডিজিএফআই’র কর্নেল শামসুল আলম খানের (কর্নেল শামস) বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে বিচার শুরু করতে বলা হয়েছে। সংসদীয় কমিটি এই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার দিন সংবাদ সম্মেলনে মেনন বলেছিলেন, কমিটি মনে করে ডিজিএফআই ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে। তারা নিজেদের দায়িত্বের বাইরে সীমা লংঘন করেছে। একই সঙ্গে তখনকার পুলিশের মহাপরিদর্শক নূর-মোহাম্মদ কমিটির আহবানে সাড়া না দিয়ে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন। প্রতিবেদনে রাজনৈতিক বিষয়ে ডিজিএফআইয়ের হস্তক্ষেপ বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা বাহিনীর শৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা থাকতে পারে। কিন্তু তা কোনো অবস্থায় বেসরকারি কাজে ব্যবহার করা যাবে না। ডিজিএফআইয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবদেনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে। ডিজিএফআই তার দায়িত্বের বাইরে কাজ করেছে। এছাড়া ওই ঘটনার জন্য পুলিশ ও র‌্যাবের বাড়াবাড়িও দায়ী। ছয় নম্বর সুপারিশে বর্তমানে প্রচলিত ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম) সংশোধন করতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সার্বভৌম সংসদ ছাড়া কোনো পর্যায়ে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স পরিবর্তন করা সম্ভব নয় মর্মে সংসদে আইন করতে হবে। সুপারিশে বলা হয়েছে, জনপ্রতিনিধিদের অবস্থান যে কোনো বাহিনীর উপরে থাকা বাঞ্ছনীয়। না হলে সামাজিক শৃঙ্খলা লংঘিত হতে পারে। এছাড়া ওই প্রতিবেদনে এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলা হয়েছে।

মজিনার মধ্যস্থতায় সংলাপের গুঞ্জন
সরকার ও বিরোধীদলে আলোচনার ঝড়
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপের প্রস্তাব নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার মধ্যস্থতায় বিএনপি-আওয়ামী লীগকে সংলাপে বসানোর এ প্রস্তাবের গুঞ্জনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামজিক ও অর্থনৈতিক যে সংকট শুরু হয়েছে, তা এদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেই শুধু নয়, এ নিয়ে কূটনৈতিক পাড়ায়ও জোর আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার মধ্যস্থতায় এ সংলাপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, এমন একটি খবর শুক্রবার দেশের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর শুরু হয় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনার ঝড়। প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়, সরকারি দল রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে দু’দলের পাঁচ জন করে প্রতিনিধির সমন্বয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব বিএনপিকে দিয়েছে। এ ধরনের প্রস্তাবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বলে আসছিলেন, বাংলাদেশে আগামীতে একতরফা নির্বাচন কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন বক্তব্যে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আসছিলেন। বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপির যুক্তরাষ্ট্র লবির নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক সংলাপের বিষয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। আমরা যেমন যুক্তনাষ্ট্রের ভালোমন্দ নিয়ে ভাবি, যুক্তরাষ্ট্রও তেমিনি আমাদের ভালোমন্দ নিয়ে ভাবে। তবে বাইরের লোক কোনো উদ্যোগ নিয়ে সংলাপ করবে এটা ঠিক না। আমাদের সমস্যা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকেই সমাধান করতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যা করছে, তাতে সংলাপের কোনো পরিবেশ নেই। তিনি বলেন, বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, গুলি করে হত্যা ও গুম করে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে সকল আলোচনার পথ সরকারই বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। খালেদা জিয়ার কাছে এ ধরনের কোনো প্রস্তাব এসেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরকম প্রস্তাব দেয়া হয়েছে কিনা তা জানি না। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন এ ব্যাপারে সবসময়ই উদার। তিনি কোনো সমস্যা চান না। তিনি চান সমাধান।
তিনি বলেন, কূটনৈতিকদের মধ্যে অনেক কিছু নিয়ে অনেক সময় আলোচনা হয়। এগুলো বাইরে বলা ঠিক হবে না। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ওসমান ফারুক বলেন, ‘শুধু রাজনৈতিক সংকটই নয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট খুব প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে। এই সংকট দূর করতে শুধু রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলেই হবে না, সব সমস্যা নিয়েই আলোচনা করতে হবে। মজিনার মধ্যস্থতায় যে সংলাপের কথা শোনা যাচ্ছে তা সমর্থন করেন কিনা, এর মাধ্যমে সমাধান সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের মজলিসে সুরা সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, বাংলাদেশে এখন শুধু কোনো রাজনৈতিক দলের সমস্যাই নয়, এটা এখন জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিরোধী দলীয় কোনো নেতাকর্মী শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। রাস্তাঘাট থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে জেলে পুরে দেয়া হচ্ছে। বিরোধী দলকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘বিএনপি জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে শুধু জেলেই নয় রিমান্ডের নামে নির্যাতন করা হচ্ছে। এই অত্যাচার আর নিপীড়ন বন্ধ না করে শুধু রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলে সুষ্ঠু সমাধান পাওয়া যাবে না বলে আমি মনে করি না। শফিকুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে কি না জানি না, তবে যদি নিয়ে থাকে তবে তাকে আমি স্বাগত জানাই। বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। পত্রিকায় এ বিষয়ে রিপোর্ট বেরিয়েছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, আমি পত্রিকা দেখিনি। যদি এ রকম কোনো সংলাপের উদ্যোগ নিয়েই থাকে, সে ক্ষেত্রে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত কোনো মতামত নেই। এটা দলীয় বিষয়। যদি মার্কিন রাষ্ট্রদূত এমন কোনো প্রস্তাব দেয় তবে দলীয় ফোরামে তা আলোচনা হবে। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বিষয়টি ভালো না মন্দ, উচিত না অনুচিত।

আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই
রাজধানীতে নানান অজুহাতে প্রতি বছর বাড়ছে বাড়িভাড়া
হাসান মাহমুদ রিপন
রাজধানীতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মানুষের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে ভাড়াটিয়ার সংখ্যাও। ভাড়াটিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে বাড়িওয়ালাদের রুঢ় আচরণও। বিশেষ করে ফি বছর নানান অজুহাতে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে তারা অসাধু ব্যবসায়ী কিংবা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদেরও হার মানিয়েছেন। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে একটি আইন আছে কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। বাড়িভাড়া আইনে বিস্তারিত সব কিছু থাকলেও বাস্তবে এসবের কোনটিরই প্রয়োগ নেই। অধিকাংশ ভাড়াটিয়ারই জানা নেই তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এরকম একটি আইন আছে। আবার অনেক বাড়িওয়ালাও জানেন না এ আইনটির বিষয়ে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে বচসা ও সংঘাত নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ প্রায়ই ক্যাব অফিসে আসে বলে জানান ক্যাবের জেনারেল সেক্রেটারি কাজী ফারুক। এ সেক্টরটির উপর গুরত্বারোপের জন্য আইনী কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, দেশে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে বিরোধ নিরসনসহ বাড়িভাড়া সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের জন্য ‘বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১’ বলে একটি আইন আছে। কিন্তু আইনটির বাস্তবে কোনো প্রয়োগ নেই। এমনকি আইন আছে কিনা তাও জানেন না অধিকাংশ বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া।
আইন অনুযায়ী জোড়পূর্বক ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ নিষিদ্ধ। কিন্তু কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’র এক জরীপ প্রতিবেদনে দেখা যায় ভাড়া দিতে বিলম্ব হলে ২৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ১২ শতাংশ বাড়িওয়ালা পেশিশক্তি ব্যবহার করে ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করেন। রাজধানীর বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের উপর পরিচালিত ক্যাব’র এক জরিপ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৯৫ ভাগ ভাড়াটিয়া ও ৭০ ভাগ বাড়ির মালিক বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ সম্পর্কে জানেন না। বাড়িওয়ালাদের অযৌক্তিকভাবে এভাবে বাড়িভাড়া বৃদ্ধিতে চোখে সর্ষে ফুল দেখছে ভাড়াটিয়ারা। ভুক্তভূগী তেমন একজন ভাড়াটিয়া হলেন ধানমন্ডি ৬/এ বাড়ির ভাড়াটিয়া বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরীজিবী মোঃ আজিজুর রহমান লিয়ন। তিনি বলেন গত ফেব্র“য়ারী মাসে বাড়িওয়ালা ৭শ’ টাকা বাড়িভাড়া বাড়ালেও ডিসেম্বর মাসে আবরও ১৫শ’ টাকা বাড়িভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দিয়েছেন। এমনিভাবে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে বচসা ও সংঘাত নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। জানা যায়, ঢাকাকে পাঁচটি জোনে বিভক্ত করে ৫ জন সহকারী জজকে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঢাকার সাব জজ রেন্ট কন্ট্রোলার হিসেবে সহকারী জজদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। আইন ও অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার জন্য বাড়ি ভাড়া আদালত নামে পৃথক একটি আদালতও আছে। সাধারণত যে কোনো বিরোধ নিষ্পত্তিতে আদালতে দীর্ঘসূত্রিতা থাকলেও বাড়িভাড়া সংক্রান্ত বিরোধ ৭২ ঘণ্টা থেকে ৩ মাসের মধ্যে মীমাংসার জন্য আইনে উল্লেখ আছে।
বাড়ির মালিকরা চান অধিক ভাড়ার তার বাড়িটি ভাড়া দিতে। এজন্য কিছুদিন পর পর পুরনো ভাড়াটিয়া তুলে দিয়ে নতুন ভাড়াটিয়া বসান। কিংবা বছর বছর এমনকি এক বছরে একাধিকবারও ভাড়া বৃদ্ধি করেন। আবার ভাড়াটিয়ারা চান একই ভাড়ায় দীর্ঘ সময় একই বাড়িতে থাকতে। এসব বিষয় নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বচসা ও ঝগড়া বিবাদের ঘটনা ঘটে আসছে।  জানা যায়, এসব বিষয়কে মাথায় রেখেই ১৯৫১, ১৯৬৩ ও ১৯৮৬ সালে তিন দফা বাড়িভাড়া অধ্যাদেশ করা হয়। ১৯৬৩ সালে অধ্যাদেশটি ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর রাখা হয়। ১৯৮৬ সালে ৩ বছরের জন্য বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ করা হয়। এটির মেয়াদ ১৯৮৯ সালে শেষ হওয়ায় ১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি বর্তমান আইনটি জারি করা হয় এবং ২ জানুয়ারি সরকারি গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় তা প্রকাশ করা হয়। তবে এ আইনটির অধীনে  কোনো বিধিমালা প্রণীত না হওয়ায় ১৯৬৪ সালের বিধিমালাই এখন পর্যন্ত বহাল আছে বলে সাবেক সহকারী জজ বাসুদেব গাঙ্গুলী তার ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১’ বইতে উল্লেখ করেছেন। বাড়িভাড়ার আইন সংক্রান্ত বিষয়ে এ্যাডভোকেট আহসানুর রহমান বলেন, বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১-এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা যে কোন ব্যক্তিকে যে কোন এলাকার জন্য নিয়ন্ত্রক, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রক বা উপ-নিয়ন্ত্রক নিয়োগ নিযুক্ত করতে পারবে। একজন সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজ যথাক্রমে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক ও উপ-নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৫(১) ধারা অনুযায়ী ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ বাড়ির বাজার মূল্যের শতকরা ১৫ ভাগের বেশি হবে না। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১০ ধারায় বলা আছে এক মাসের অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া যাবে না। এর অতিরিক্ত ভাড়া নিলে অতিরিক্ত ভাড়ার দ্বিগুণ জরিমানা করা হবে। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রকের লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে একাধিক মাসের ভাড়া অগ্রিম নেয়া যাবে (ধারা-২৩)। তিনি বলেন, অধিকাংশ বাড়িওয়ালা ভাড়া দিয়ে ভাড়াটিয়াকে কোনো প্রকার রসিদ দেয়না । যা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী। আইনে আরো বলা আছে বাড়ি ভাড়ার রসিদ হতে হবে বিধিমালা ১৯৬৪’র ধারা-১৩ অনুযায়ী। অপরাধের পুনরাবৃত্তির জন্য প্রত্যেকবার ৩ গুণ জরিমানা করা হবে (ধারা-২৩) বলে আইনে উল্লেখ আছে। আইনসম্মত ভাড়া আদায় করলে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না বলে আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে এবং বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক বাড়িওয়ালার সপক্ষে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদের জন্য কোনো ডিক্রিও জারি করতে পারবেন না। জানা যায়, ঢাকাকে পাঁচটি জোনে বিভক্ত করে ৫ জন সহকারী জজকে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঢাকার সাব জজ রেন্ট কন্ট্রোলার হিসেবে সহকারী জজদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। আইন ও অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার জন্য বাড়ি ভাড়া আদালত নামে পৃথক একটি আদালতও আছে। সাধারণত যে কোনো বিরোধ নিষ্পত্তিতে আদালতে দীর্ঘসূত্রিতা থাকলেও বাড়িভাড়া সংক্রান্ত বিরোধ ৭২ ঘণ্টা থেকে ৩ মাসের মধ্যে মীমাংসার জন্য আইনে উল্লেখ আছে। বাড়িওয়ালারা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, সিটি কর্পোরেশনের কর, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ পরিসেবা খাতের বিল বৃদ্ধির অজুহাতে বাড়িভাড়া বাড়িয়ে থাকে বলে জানা যায়। তবে পরিসেবা কর যতটুকু বাড়ে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশী বাড়িভাড়া বৃদ্ধি করে। এ ব্যাপারে ভাড়াটিয়ারা বলেন, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিলের অযুহাতে বাড়িভাড়া বাড়ালেও অধিকাংশ ভাড়াটিয়ারাই এসব বিল নিজেরাই পরিশোধ করে থাকেন। এছাড়া রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির সময় প্রায় বাড়িওয়ালাই হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন। জানা গেছে, গত ২৯ জুন ডিসিসি’র ২০০৯-১০ বাজেট উপস্থাপনকালে মেয়র সাদেক হোসেন খোকা  স্পষ্টভাবে বলেছিলেন ভবিষ্যতে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা ডিসিসি’র নেই। ঢাকা সিটি কর্পেরেশন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান এ ব্যাপারে বলেন, গত ১৯ বছরে বাড়ি ভাড়া ৩০৬.৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও এ সময়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) কোনো হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করেনি। অথচ প্রতি বছর বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির সময় বাড়িওয়ালারা যে কয়টি যুক্তি উপস্থাপন করে থাকেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির বিষয়টি। এদিকে নতুন কোনো বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করতে গেলে বাড়ির মালিকরা নানাপ্রকার ছলচাতুরি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকেন বলে জানান ডিসিসি’র রাজস্ব বিভাগের এ কর্মকর্তা। সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে রাজধানীতে হোল্ডিং ট্যাক্স রি-এসেস করা হয়েছিল। ঐ এসেসমেন্ট অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয় ১২ শতাংশ। এর মধ্যে ৭ ভাগ হোল্ডিং ট্যাক্স, ৩ ভাগ পরিচ্ছন্নতা কর এবং ২ ভাগ কর বিদ্যুৎ এর জন্য। অথচ ফি বছর রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির সময় প্রায়ই বাড়িওয়ালাই হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন। সূত্রে মতে, বর্তমানে রাজধানীতে বাড়িওয়ালা অর্থাৎ হোল্ডিং ট্যাক্স দাতার সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার। উল্লেখ্য, ২০০৯-১০ অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ ডিসিসি কর্তৃক আদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ ছিল ২৮০ কোটি টাকা। তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে সঠিকভাবে বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হলে এ খাতে রাজস্বের পরিমাণ কয়েকগুন বৃদ্ধি পেত। নতুন বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের সময় বাড়ির মালিকরা ভাড়াটিয়াদেরকে আÍীয় পরিচয় দিয়ে ভাড়ার অংক কমিয়ে ট্যাক্স ধার্য্য করে থাকেন। তবে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের ক্ষেত্রে শুধু বাড়ির মালিকরাই নয় ডিসিসি’র রাজস্ব বিভাগের এক শ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাও জড়িত বলে জানা যায়।
হুমকির মুখে বিনিয়োগ
দীর্ঘ সময়েও দেশে প্রসার লাভ করেনি পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ ॥ সরঞ্জামাদির চড়ামূল্য
হাসান মাহমুদ রিপন
দীর্ঘ সময়েও দেশে প্রসার লাভ করেনি পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তি। দফায় দফায় লোডশেডিংয়ের মধ্যেও নগরবাসী তেমন উৎসাহিত হচ্ছে না এ প্রযুক্তিতে। আর ক্রমেই হুমকীর মুখে পড়ছে এ খাতের বিনিয়োগ। এ প্রযুক্তিতে উৎসাহিত না হবার অন্যতম কারণ হচ্ছে সরঞ্জামাদির উচ্চ মূল্য। ব্যাটারি, এলইডি বাতি, যন্ত্রাংশ, ইনভার্টার, চার্জ কন্ট্রোলার ইত্যাদির উপর থেকে কর ও ভ্যাট মওকুফ করা হলে সৌরশক্তির ব্যবহার দ্রুত বাড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গেছে, ৫০ ওয়াটের একটি সোলার সিস্টেমের দাম ২৭ হাজার টাকা। এটা দিয়ে চারটি বাতি ও একটি সাদা-কালো টেলিভিশন চালানো সম্ভব। তবে এই মূল্য গ্রামের যে কোন পরিবারের জন্য খুবই বেশি। দামের কারণেই শহর অঞ্চলে নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তির  তেমন প্রসার ঘটেনি। অব্যাহত বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় সৌরশক্তি ব্যবহার করে লোডশেডিং মুক্ত থাকা সম্ভব। সৌরশক্তির ব্যয়বহুল বলে  একশ্রেণীর মানুষ অপপ্রচার চালাচ্ছে। অথচ ব্যাটরিসহ সরঞ্জামাদির দাম কমানো ও সংযোগকারি প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে বর্তমান বাংলাদেশের জন্য সৌর শক্তি হচ্ছে আদর্শ। এ দেশের আবহাওয়াও  সৌর শক্তি ব্যবহারের শতভাগ উপযোগী। বিদ্যুতের নতুন সংযোগের বেলায় সরকার যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, তাতে স্পষ্ট ভাবেই উল্লেখ রয়েছে যে, দুই কিলোওয়াটের উপরে চাহিদা রয়েছে এমন নতুন সংযোগ পেতে হলে ব্যবহƒত বিদ্যুতের ৩ থেকে ৫ শতাংশ সৌরশক্তি দিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এ শর্তে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার বিধান রেখেই গত বছর ১ নভেম্বর থেকে নতুন সংযোগের বিষয়টি উš§ুক্ত করে বিদ্যুৎ বিভাগ। বাংলাদেশে ১৯৮১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নবায়নযোগ্য সৌরশক্তি কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দিয়ে আসছে। শুধু তাই নয় সৌরশক্তি নির্ভর প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করছে। দুই কিলোওয়াটের প্যানেলের দাম জেনারেটর বা আইপিএসের কাছাকাছি। এ অবস্থায় বিকল্প জ্বালানির সবচেয়ে সহজলভ্য এ খাতের প্রসারে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন উদ্যোক্তারা। বিদ্যুৎ বিতরণী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেক্ট্রিক ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডেসকো),  পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এলাকায় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন জমা পড়ে আছে। এর মধ্যে অর্ধেক গ্রাহক দুই বছরের অধিক সময় ধরে ডিমান্ড নোটের টাকাও জমা দিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। কিন্তু সৌরশক্তি ব্যবহার না করায় সংযোগ মিলছে না। তবে, ওজিপাডিকো ও আরইবি দুই কিলো ওয়াটের নিচে চাহিদার কিছু সংযোগ প্রদান করেছে। ডিপিডিসি মাত্র অল্প সংখ্যক সংযোগ দিতে পেরেছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নতুন সংযোগ না পেয়ে সম্ভাবনাময় আবাসন শিল্প আজ হুমকির মুখে। বিনিয়োগকারিরা বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগের অভাবে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে পারছেন না। এতে ঋণ করে যারা ফ্যাট কিনেছেন, তাদের প্রতি মাসে সুদ ও ঘর ভাড়া দুই গুণতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নবায়নযোগ্য সৌরশক্তি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ও সৌরশক্তি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাইফুল হক বলেন, শহর অঞ্চলে সৌরশক্তি প্রযুক্তির ব্যবহার কম হচ্ছে। এ বিষয়ে অনেক ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। আসলে বিষয়টি ব্যয়বহুল নয়। একটি এসি কেনা হলে তাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়ে থাকে। আর সৌরশক্তি প্যানেল বসানো হলে সেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। লোডশেডিং মোকাবিলায় নগর ও শহরের প্রায় ঘরেই এখন আইপিএস ব্যবহার করা হচ্ছে। তা রিচার্জে যে বিদ্যুৎ প্রয়োজন তা সৌরশক্তি প্যানেল বসালেই চলবে। এতে বিদ্যুতের কোন প্রয়োজন হবে না। ড. সাইফুল হক বলেন, কর্পোরেট হাউজ, অফিস-আদালতে গ্রিডভিত্তিক সৌরশক্তি বসানো হলে লোডশেডিংয়ের সময় ব্যবহারের পর জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। এর জন্য বাড়তি ব্যয়ের প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন, ব্যাটরি, ভ্যাট ও অন্যান্য সরঞ্জামাদির উপর থেকে কর প্রত্যাহার করা  হলে এর খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। তখন সবাই সৌরশক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত হবে। এখন নগরবাসী অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করার ফলে গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। প্রয়োজন মেটাতে তারা অতিরিক্ত ব্যয়ে সৌরশক্তি প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। এক শেণীর উদ্যোক্তা কিস্তিতে ঋণ দিয়ে প্যানেল বিক্রি করছে। শহরের এক একটি বাড়িতে একাধিক গাড়ি রয়েছে। অথচ তারা বাড়িতে সৌরশক্তি ব্যবহার করবে না। সৌরশক্তির ব্যাটারি ৫ বছর পর পর পরিবর্তন করতে হয়। তা  অনেক ব্যয়বহুল হয়। বর্তমান কতিপয় ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ১১ হাজার টাকার ব্যাটারি ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করছে।

হুমকির মুখে চা রপ্তানি
চা চাষের জন্য জমি ইজারা নিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য কাজে
হাসান মাহমুদ রিপন
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, রপ্তানি কমে যাওয়া, উৎপাদন কমে যাওয়া, চা বাগানগুলোর বয়স বৃদ্ধির কারনে হুমকির মুখে পড়ছে দেশের চা শিল্প। চায়ের জন্য জমি ইজারা নিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য কাজে। চায়ের পুরনো জাতের ব্যবহার, দলীয়করণ, আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া না লাগা সহ প্রভৃতি কারণে দেশে চায়ের উৎপাদন বাড়ছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গুণগতমানের কারণে চা আমদানিকারক অন্যান্য  দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি চায়ের স্থান ছিল অনেক উপরে। ফলে এ খাত থেকে বছরে গড়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। কিন্তু দেশের চাহিদা বৃদ্ধি ও বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে চায়ের উৎপাদন হার বাড়েনি। চা বোর্ডের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরে নানা কারণে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। এর মধ্যে অন্যতম হলো, চা চাষের ব্যাপক ভূমি অনাবাদি থাকা। তা ছাড়া সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিবছর শতকরা আড়াই ভাগ চা চাষাবাদের ভূমি বৃদ্ধি না করায় ধীরে ধীরে চায়ের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ দিনের পর দিন চায়ের চাহিদা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেলেও উৎপাদন কমছে। বর্তমানে দেশে  এক বছরে উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৬ কোটি কেজি। এর মধ্যে স্থানীয় ভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ আমদানি করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রতি বছর দেশের প্রতি হেক্টর জমির চা বাগান থেকে গড়ে এক হাজার ৪শ’ কেজি হারে চা উৎপাদিত হচ্ছে। গত ২০ বছরে বাংলাদেশে চায়ের উৎপাদন প্রতিবছর বেড়েছে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ হারে। দেশের সব চা বাগান মিলিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি হচ্ছে বছরে দেড় কোটি কেজি। বিশ্বের চা উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও চীন প্রতি হেক্টর জমি হতে বছরে গড়ে চা উৎপাদন করে সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ’ কেজি পর্যন্ত। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে  এক হাজার ২শ’ কেজি চা উৎপাদন করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় প্রতি হেক্টর জমিতে ২ হাজার কেজি চা কম উৎপাদন হচ্ছে। একইভাবে আমাদের চা চাষে প্রবৃদ্ধির হারও বাড়ছে না।  বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এহেন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্যে চায়ের চাষ বৃদ্ধি, উন্নত জাতের চারা উদ্ভাবন, চা চাষে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ানো এবং রফতানিকারকদের উৎসাহিত করতে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন। চা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, দেশে চা চাষযোগ্য  এক লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ৫৫ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। চা চাষের জন্য সরকারিভাবে লিজ দেয়া হলেও চাষযোগ্য জমিতে রাবার বাগান, বনায়ন, অন্য ফসল চাষাবাদের অভিযোগ উঠেছে। চা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ৪ জেলায় ৮ হাজার ১৪৯ হেক্টর জমিতে রাবার বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। বাঁশ চাষের জন্য ৩ হাজার ৫৪৪ হেক্টর, বনায়নের জন্য ২ হাজার ৫৪২ হেক্টর জমিসহ চা বহির্ভূত খাতে চা চাষের নামে ইজারা নিয়ে প্রায় ৪২ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমি ব্যবহার করা হচ্ছে।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চা বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ক্ষমতাশীন দলের লোকেরা অন্যায়মূলক কাজগুলো করে যাচ্ছে। এদের হাত খুব লম্বা। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে মোট চা আবাদী জমি রয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৮৮৬.৬৬ হেক্টর। যা একরে দাঁড়ায় দুই লাখ ৮৯ হাজার ৭১৬.৬৫। তা থেকে চাষাবাদ হচ্ছে মাত্র ৫৪ হাজার ৮০৪.৫৮ হেক্টর বা এক লাখ ৩৭ হাজার ১১.৪৫ একর জমিতে। এর ফলে অনাবাদী থেকে যাচ্ছে এক লাখ ৫২ হাজার ৭০৫.২ একর জমি।  ২০০০ সালের পর থেকে নানা কারণে বিদেশে চা রপ্তানি কমেছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৯ কোটি ৬৮ লাখ ৫ হাজার কেজি চা রপ্তানি করা হয়েছে। খন্দকার টি এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. রেজাউল করিম এ ব্যাপারে বলেন, উৎপাদন কমে যাওয়া এবং স্থানীয় ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কারণে আগামি পাঁচ বছরের মধ্যে চা আমদানিকারক দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ এ খাত গত কয়েক বছর আগেও রফতানি বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান খাত ছিলো। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে চা উৎপাদন হার কম হবার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো সরকারিভাবে চা শিল্পের জন্য কোনো অর্থ সহায়তা নেই। এডিপিতে এ খাতের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই।  চা রপ্তানির বিপরীতে সরকার প্রতিবছর গড়ে বৈদেশিক মুদ্রা ৮৪১ কোটি টাকা আয় করেছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চায়ের চাহিদা বেড়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারও বেড়েছে সমান তালে। যে কারণে উৎপাদিত চা দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানোর পর বিদেশে রপ্তানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর এ কারণে বিদেশে চা রপ্তানি কমেছে। বাংলাদেশ থেকে ২০০০ সালে ৩ কোটি ৮৭ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা রপ্তানি করা হয়েছিল। আর ২০১০ সালে রপ্তানি করা হয়েছে মাত্র ৩১ লাখ কেজি চা। গত দশ বছরে বিদেশে চা রপ্তানি প্রতিবছর পূর্বের বছরের তুলনায় কমেছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। দেশীয় বাজারে চায়ের চাহিদা বৃদ্ধি, দেশের চায়ের মান নিম্নমুখী হওয়ার কারণে রপ্তানি কমছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চায়ের চাহিদা বছরে প্রায় ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধির বিপরীতে উৎপাদন ২ দশমিক ১৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধির কারণে রপ্তানিযোগ্য চায়ের পরিমাণ কমছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চা বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, সরকার সবসময়ই বলে চা শিল্পকে রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নেবে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া পুরনো চা বাগানে নতুন করে চারা লাগানো সম্ভব নয়। অভ্যন্তরীণ চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উৎপাদন বাড়াতে না পারলে ২০১৫ সালের পর বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম হাসান বলেন, আমি স্বীকার করছি অভ্যন্তরীণ চাহিদা যে ভাবে বেড়ে গেছে, উৎপাদন সেভাবে হচ্ছে না। উৎপাদন বৃদ্ধিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে ঘাটতি মূল্যে চারা বিতরণ, টি প্লান্টারদের ঋণ সহাতা প্রদানসহ পরিচালিত হচ্ছে নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড। চা শিল্পের জন্য বরাদ্দকৃত আট হাজার হেক্টর অনাবাদি জমিকে শিগগিরই চাষের আওতায় আনতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরো ২০ হাজার হেক্টর জমির পুরনো চা গাছ তুলে সেখানে উন্নত ও হাইব্রিড জাতের গাছ লাগাতে হবে। এ লক্ষ্যে চা বোর্ড কাজ করে যাচ্ছে।
(সূত্র : বাংলাদেশ চা বোর্ড ) দশ বছরে চা উৎপাদন ও রপ্তানি
সাল    দেশীয় চাহিদা    উৎপাদন (কেজি)    রপ্তানি (কেজি)    রপ্তানি আয়
২০০০     ৩,৮০,৭৯,০০০     ৫,৩১,৫০,০০০    ১,৮০,১০,০০০     ১,২০৫.২০
২০০১    ৩,৬০,৯৫,০০০    ৫,৩০,৪৭,০০০    ১,২০,৯২,০০০    ৮৯৪.৯৯
২০০২    ৪,১০,৫০,০০০    ৫,৩৬,০২,০০০    ১,০৩,৬৫,০০০    ৯৩৯.৯৩
২০০৩    ৩,৭০,৪৪,০০০    ৫,৮৩,০০,০০০    ১,০২,১৮,০০০    ৯১৫.০৭
২০০৪    ৪,৩০,৩২,০০০    ৫,৬০,০০,০০০    ১,০৩,১১,০০০    ৯৩৪.০৪
২০০৫    ৪,৩০,৩০,০০০    ৬,০১,৪০,০০০    ৯০,০৯,০০০    ৭৪২.৬২
২০০৬    ৪,০০,৫১,০০০    ৫,৩৪,১০,০০০    ৪০,৭৯,০০০    ৪৬৯.৫৯
২০০৭    ৪,৬০,২৭,০০০    ৫,৮১,৯০,০০০    ১,৫৬,০০,০০০    ৮৯৯.০১
২০০৮    ৫,২০,১২,০০০    ৫,৮৬,৬০,০০০    ৮০,৩৯,০০০    ৯৭৬.৯৫
২০০৯    ৫,৩০,৭৪,০০০    ৬,০০,০০০    ৩১,০৫,০০০    ৪৩৩.৫০
২০১০    ৫,৬৮,০০,০০০    ৫,৯১,৭০,০০০    ৩১,০০,০০০    ৪৩০.৫০ 

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন
সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ
মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ
জলবায়ুর দ্রুত এবং অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ। দ্বীপদেশ মালদ্বীপসহ সমুদ্রের বুকের অনেক দেশ পৃথিবীর মানচিত্র থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে। ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের ফলে আকস্মিক জলবায়ু পরিবর্তনই এ ধরনের আশঙ্কার মূল প্রধান কারণ। এ জন্য মানুষ এবং উন্নত দেশগুলোই মূলত দায়ী। এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় বলা হয়, ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে  ভয়াবহ  পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য বিপর্যয় নিয়ে শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা। জলবায়ুর আমূল পরিবর্তনের কারণে বন্যা ও খরার প্রবণতা  বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তাপ বাড়ার কারণে হিমবাহের গলনও বাড়ছে। হিমালয় অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে অসংখ্য হিমবাহ লেক। এসব লেকে বিস্ফোরণ হলে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে বাংলাদেশ। সমুদ্রের পানির আয়তন বৃদ্ধি  এবং পলি জমে সমুদ্রের তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা প্রতিবছর ৩ মি.মি.  করে বৃদ্ধি  লক্ষ্য করা গেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মোট আয়তনের ১৫.৮ শতাংশ স্থল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়াও বিচিত্র নয়। বর্তমানে মেরু অঞ্চলের বরফ যেভাবে গলছে তাতে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৭ ভাগ ভূমি সাগর জলে তলিয়ে যাওয়া সম্ভব। ইতোমধ্যে সমুদ্রের অতলে হারিয়ে গেছে ভোলার ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গা। ব্যাহত হয়েছে বরিশালের ফসল উৎপাদন।  অন্যদিকে অতিরিক্ত জোয়ার এবং জলোচ্ছ্বাসের  লবণাক্ত পানি ভূখণ্ডে  ঢুকে  ভূমির উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে সুস্বাদু পানির প্রাপ্যতা হ্রাস পেয়েছে, বাড়ছে লবণাক্ততা। ঋতুচক্র পরিবর্তনের কারণে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে সবুজ শ্যামল  বৃক্ষরাজি, পশুপাখি। জীববৈচিত্র্যে পড়ছে এর নেতিবাচক প্রভাব। বাংলাদেশের অহঙ্কার তথা বিশ্বের প্রধান ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন হয়ত একদিন চিরতরে হারিয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইতোমধ্যে ৫ হাজার প্রজাতির গাছের ১০৬টির অস্তিত্ব  প্রায় বিলুপ্ত। ক্রমাগত বৃক্ষনিধনের ফলে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে পড়েছে। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রা হরিণ আজ বিপন্নপ্রায়। হারিয়ে গেছে  বাংলার হাজারো প্রজাতির পশুপাখি, জলজপ্রাণী। ৬৩২টি প্রজাতির পাখির মধ্যে ১২টি প্রজাতি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, ৩০টি প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। ১১০টি পশু প্রজাতির ৪০টির অস্তিত্ব নেই। ৭০৮টি প্রজাতির মাছের মধ্যে ৫৪টির  খোঁজ নেই বললে চলে। শুকিয়ে গেছে হাওর, বিল, খাল। এক কালের বিশাল নদ-নদী এখন ধু-ধু বালুচর। নিকট অতীতে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিডর সুন্দরবনসহ উপকূলীয় বিশাল এলাকার বনজ ও পশু সম্পদ নষ্ট করে দিয়েছে।  জলবায়ু পরিবর্তনের  ফলে গত ৫০ বা ১০০ বছরের পরিসংখ্যান বিবেচনায় আগামীতে  বাংলাদেশে   ব্যাপক  অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি,  অসময়ে  প্রবল বন্যা, মরুময়তা,  ঘূর্ণিঝড়,  নিম্নচাপ,  খরার  মতো প্রাকৃতিক দুর্র্যোগের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন  ৩০ ভাগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় ২২ শতাংশ কৃষি জমি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ফলে দেশে খাদ্যাভাবসহ নানা অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা আছে। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং পরিবেশগত সমস্যা পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে প্রকট। অথচ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে এগিয়ে রয়েছে ধনী দেশগুলো। বায়ুমণ্ডলে প্রতিনিয়ত যে কার্বন-ডাই অক্সাইড যুক্ত হচ্ছে তার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী পৃথিবীর মাত্র ২৫টি দেশ। তালিকায় শীর্ষ থেকে তালিকাক্রমে রয়েছে চীন, ভারত ও যুক্তরষ্ট্রের নাম। আর  জার্মানির ওয়াচ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাপল ক্রফ্ট নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, গত ৩০ বছরে বাংলাদেশের ১ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৭ জন মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারা গেছে। গবেষণার তথ্যানুসারে এবং বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্বের বিচারে দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা পূর্বাঞ্চলের হাওর-বাঁওড়, উত্তরাঞ্চলের খরাপ্রবণ এলাকা  বিশ্বের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ।
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে পৃথিবীজুড়েই আলোচনা চলছে দীর্ঘ তিন দশক ধরে। পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ বন্ধে এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিতে অর্থ বরাদ্দে আজো কোনো চুক্তি হয়নি। আইনি কাঠামোর মধ্যে আসেনি অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো। সর্ববেশ দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে কোন্ দেশের কথায় কতটুকু তা নির্ধারিত হয়েছে মাত্র। পাশাপাশি ২০১৫ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার জন্য বাধ্যতামূলক চুক্তিরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘কমিউনিটি বেজড এডাপটেশন টু ক্লাইমেট চেঞ্জ’ কিছুদিন আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬০টি দেশের প্রায় ৩শ’ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ঝুঁকিপ্রবণ দেশগুলোকে সাহায্য প্রদান এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা লাঘবে অধিকমাত্রায় গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণকারী ও উন্নত দেশগুলোকে অভিযোজন কার্যক্রমে জোরালোভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা সমষ্টিগতভাবে কিন্তু ভিন্নতর দায়িত্ববোধ এবং সমতা দিয়ে মোকাবিলা করা প্রয়োজন। ইতোপূর্বে মেক্সিকোর কানকুন সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তার জন্য ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড’ নামে তহবিল গঠনে সমঝোতায় পৌঁছায়। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর খাপ খাওয়ানোর কৌশল নির্ধারণে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক  কানকুন সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯০টি দেশের ২০ হাজারেরও  বেশি কর্মকর্তা ও দশ হাজার বেসরকারি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে  একটি আইনি বাধ্যবাধকতামূলক চুক্তিতে পৌঁছানো, অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনা এবং পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লড়াইয়ে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যকার মতবিরোধ নিরসন ছিল সম্মেলনের উদ্দেশ্য। এ ছাড়াও  বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রতিরোধে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় লক্ষ্য নির্ধারণে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত  কোপেনহেগেন জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল অনুন্নত ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এবং  কার্বন গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক বাধ্যতামূলক আইনি চুক্তি সম্পাদন করা। এ সময় উন্নত ধনী দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শতকরা ৪০ ভাগে কমিয়ে আনার কথা বললেও কোনো সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার না থাকায় সে চুক্তি হয়নি। তবে ধনী দেশগুলো কার্র্বন নির্গমনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য তহবিল প্রদানে সম্মত হয়েছিল। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেয়া ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৮৯টি দেশ এক  অঙ্গীকারে  বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি যাতে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে কম থাকে সে ব্যাপারে সকল দেশ একাত্মতা ঘোষণা করে। চুক্তিতে আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে এনে কোপেনহেগেন গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড গঠনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এ ছাড়া অনেক দেশই কার্বন নির্গমনের প্রতিশ্র“তিও দিয়েছিল। কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন থেকে এর চেয়ে খুব বেশি একটা আশা করা না গেলেও বিষয়টি যে সারা বিশ্বের জন্য গুরুতর  উপলব্ধি করে বিশ্ব জলবায়ু পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য হয়ে ওঠে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের নিজস্ব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।  জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নিজস্ব উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাহায্য সহযোগিতার জন্য হাত বাড়াতে হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাসে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উন্নত বিশ্বের কাছে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে একযোগে কাজ করার  সিদ্ধান্ত দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রশ্নে বিশ্বের ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলায় এবং সংকটাপন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশের অস্বিত্ব টিকিয়ে রাখতে টেকসই পরিবেশ এবং উন্নয়নের জন্য ব্যক্তিগত, জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গল্পকার  
সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন সম্পন্ন
ডেস্ক রিপোর্ট
গত শনিবার সারাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রাইমারী স্কুলের স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
নরসিংদী: গত শনিবার নরসিংদী জেলায় ৬টি উপজেলায় ১২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সরেজমিনে পলাশ উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ জহুরুল হক জানান, স্কুলের ঝরেপড়া রোধ, শিশুকাল থেকে গণতন্ত্র চর্চা শিখন-এর জন্য সরকার সম্পূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের ন্যায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিনিধি পলাশ উপজেলার সানের বাড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা যায় সম্পূর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ১ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ২ জন সহকারী কমিশনার, ১ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৩ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, ৬ জন পোলিং অফিসার ও ৭ জন আনছার সদস্যদের নিয়ে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী লাভলী বিশ্বাস জানায়, এই বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ২০৭ জন ভোটার নিয়ে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিযোগিতা করে। নির্বাচন কমিশনার আরো জানায়, গত মাসের ৩০ তারিখে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে প্রার্থীরা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য ভোটারদের ধারে ধারে ভোট প্রার্থনা করে। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৯৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। এই স্কুলের ভোটার ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র যার ভোটার নং ১২৪ সে জানায়, আমরা স্কুলের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন, গণতন্ত্রের চর্চা ও শিখন পদ্ধতির অংশ হিসাবে আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করি। যার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাছরিন সুলতানা জানান, আমরা যারা শিক্ষক রয়েছি তারা শুধু তাদের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেছি। আর আজকের এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হয়েছে যার ফলে স্কুলের ঝরেপরা রোধ ও গণতন্ত্রের সুষ্ঠু চর্চা শিক্ষার্থীরা জানতে পেরেছে। সকাল ৮টা থেকে শরু হয়ে একটানা দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন শেষে বেসরকারি ফলাফলে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন ৩য় শ্রেণী থেকে আরিফ মিয়া প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ১৪৩, সাব্বির মিয়া প্রাপ্ত ভোট ১১৭, ৪র্থ শ্রেণী থেকে ইমন ভূইয়া প্রাপ্ত ভোট ১১৩, সাইফুল ইসলাম গাজী ৮৮ ভোট, ৫ম শ্রেণী থেকে হিমু ভৌমিক ১২৬ ভোট ও এনামূল হক ৮৯ ভোট।  
গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ২১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টা হতে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে ভোট গ্রহণ চলে। এ উপলক্ষে বিদ্যালয়গুলোতে ছিল নির্বাচনী আমেজ। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. হারুন অর রশিদ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, পৌরশহরের ৪টিসহ উপজেলার মোট ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭টি করে পদের বিপরীতে মোট ২৮৬ জন ক্ষুদে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ৩ হাজার ৪১১ জন ক্ষুদে শিক্ষার্থী সরাসরি গোপান ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে একজন করে পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী, শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী, পানি সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী, স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী ও খাদ্য বিষয়ক মন্ত্রী নির্বাচিত করবে। এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে শিশুকাল হতে গণতন্ত্রের চর্চা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধাশীল হবে। আর আজ নির্বাচন শেষ হলে পরে নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে পরবর্তী অল্প সময়ে মধ্যে নির্বাচিতদের ডেকে কাউন্সিল সদস্যদের মধ্যে থেকে কণ্ঠ ভোটের মাধ্যমে একজনকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত অথবা নির্বাচিত করা হবে। এতে তৃতীয় শ্রেণীর এক হাজার ৩৮৮ জন, চতুর্থ শ্রেণীর এক হাজার ৬৬ জন, পঞ্চম শ্রেণীর ৯৫৭ জন ক্ষুদে শিক্ষার্থী সরাসরি গোপন ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। গতকাল শনিবার দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোট গণনার কাজ চলছিল।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) : স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচনে ফুলবাড়ী উপজেলার ২৫টি স্কুলে ৭ জন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে এবং পরে তারা অধিবেশনে বসে বিভিন্ন পদে মনোনীত হবে। এ নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিজেরাই পালন করেছে। ক্ষুদেদের নির্বাচনে ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা ভোট প্রদান ও এদের মধ্য থেকেই প্রার্থীরা অংশ নিয়েছিল। প্রতিটি স্কুলে ২টি বুথে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়। ফুলবাড়ী বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে যায়, সেখানে ৭টি পদের জন্য একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ৯ জন প্রার্থী। ঐ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩২৭ জন। এরমধ্যে ছাত্র ভোটার ১৫৮ ও ছাত্রী ভোটার ১৬৯ জন। অপরদিকে সুজাপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৭টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ১২ জন প্রার্থী। ঐ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩১৮ জন। এরমধ্যে ছাত্র ভোটার ১৪৮ ও ছাত্রী ভোটার ১৭০ জন। সুজাপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সানজিতা সরকার মিতু অত্র স্কুলের নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন। সে জানায়, প্রার্থীরা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদান করছে।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: জেলা সদর উপজেলার ৩২টি স্কুলে সকাল ৮টা থেকে শুরু করে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই নির্বাচন চলে। নির্বাচনে প্রতিটি স্কুল থেকে ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণী থেকে ১১ জনের মধ্যে ৭ জনকে ভোটাররা ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত করে। নির্বাচিত ৭ জনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ১ম জন বিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণ, ২য় জন বিদ্যালয়ের সকল পাঠ্য পুস্তক ও শিক্ষন সামগ্রী রক্ষণাবেক্ষণ, ৩য় জন বিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যের খোঁজ খবরসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, ৪র্থ জন সংস্কৃতি ও খেলাধুলার আয়োজন, ৫ম জন পানি সম্পদ বিষয়ে, ৬ষ্ঠ জন বৃক্ষ রোপণ এবং বাগান তৈরি ও ৭ম জন অভ্যর্থনা ও আপ্যায়নের বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচিত এই ৭ জনকে দায়িত্ব ভাগ করে দিবেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং সার্বিক সহযোগিতা করবেন বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকগণ।
বরুড়া (কুমিল্লা): কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খুদে শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা মোট ৭ জন প্রতিনিধি সরাসরি ভোটে নির্বাচিত করার লক্ষ্যে সকাল ৯টা থেকে ভোট প্রদান করছে। দুপুর ১টায় ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। 

সরজমিনে বরুড়া পৌর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা ভোট প্রদানের জন্য সকাল ৮-৩০ থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। এ বিদ্যালয়ে তিন শ্রেণীতে মোট প্রার্থী ২৪ জন এবং ভোটার সংখ্যা ২৮০।
কাহারোল (দিনাজপুর): দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল/১২ অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের প্রতিনিধি উপজেলার সাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল ভোট গ্রহণ পরিদর্শনে গেলে ছাত্র/ছাত্রীরা স্বতস্ফূর্তভাবে তাদের প্রতিনিধিকে ভোট দিচ্ছে। ৩য় শ্রেণী থেকে ১২৮ ভোট পেয়ে লাবনী রায় ১ম প্রতিনিধি এবং জীবন রায় ১শ’ ২ ভোট পেয়ে ২য় প্রতিনিধি, ৪র্থ শ্রেণী থেকে ১ শত ৫ ভোট পেয়ে লতা রায় ১ম ও ৮২ ভোট পেয়ে মিঠুন রায় ২য় এবং ৫ম শ্রেণী থেকে ১৫৫ ভোট পেয়ে আকাশ রায় ১ম, ৮৫ ভোট পেয়ে প্রশান্ত রায় ২য় ও ৬৭ ভোট পেয়ে লকী রায় প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। বিদ্যালয়ে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ১৯৫ জন। নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র অনিক রায়। নির্বাচন কমিশনার এর সংগে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচিত সকল প্রতিনিধিকে নিয়ে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রধান প্রতিনিধি নির্বাচন করা হবে।
ভাণ্ডারিয়া প্রতিনিধি: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠনের লক্ষ্যে গতকাল শনিবার ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় মোট ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি  বিদ্যালয়ে পরিবেশ, পুস্তক ও শিখন সামগ্রী, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, পানি সম্পদ, বৃক্ষ রোপন, অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন (মোট ৭টি দপ্তর)  পদে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচিতদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান কাউন্সিলর নির্বাচন বাকিদের পৃথক দপ্তরের দায়িত্ব দেয়া হবে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের মডেলে এ স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০টি স্কুলের মধ্যে নিজ ভাণ্ডারিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭টি পদের বিপরীতে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ বিদ্যালয়ে মোট ভোটার ছিল ৩১৬ জন। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঃ রাজ্জাক জানান তৃণমূল পর্যায় নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা এবং উৎসবমুখর পরিবেশে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে একজন নির্বাচন কমিশনার দুইজন প্রিজাইডিং ও চারজন পুলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।
পীরগঞ্জ (রংপুর): উপজেলার ২১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এবারে ভেন্ডাবাড়ি, ভীমশহর, বড়দরগা, শানের হাট, আরাজী গঙ্গারামপুর, মকিমপুর, পীরগঞ্জ আদর্শ, তুলারামপুর, বাহাদুরপুর, রায়পুর, হাসার পাড়া, খালাশপীর, রাজারামপুর, পতœীচড়া, বিষ্ণপুর, লালদিঘী, মাদারপুর, উজিরপুর, মাদারগঞ্জ ও দশমৌজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল (ছাত্র পরিষদ নির্বাচন) অনুষ্ঠিত হয়েছে। আরাজী গঙ্গারামপুর ও মকিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে) ভোটারদের শান্তি ও সু-শৃংখলভাবে ভোট প্রদানের লক্ষ্যে ছাত্র-ছাত্রীরা আনসার সেজে ভোটারদের সারিবদ্ধ লাইন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। এবং ভোট কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ভোটাররা পোলিং অফিসারের কাছ থেকে নাম যাচাই বাছাই করে ব্যালট পেপার হাতে নিয়ে তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের ভোট প্রদান করে বাক্সে ফেলছেন।
গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জ জেলার ২শ’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন-২০১২’ আনন্দমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচিত করেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র/ছাত্রীরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তৃতীয় শ্রেণীতে ৩ জন, চতুর্থ শ্রেণীতে ২ জন ও পঞ্চম শ্রেণীতে ২ জন করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। গোপালগঞ্জ জেলায় মোট ২০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ২টি বিদ্যালয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ৪০ নং লতিফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ১০ জন। ভোটার সংখ্যা ২৪০ জন, প্রাপ্ত ভোট ২৩২ জন, জয়ী হয়েছেন ৭ জন। ৫ম শ্রেণীতে মোঃ নাহিদ হোসেন রাব্বি, রোল-৮, ভোট পেয়েছেন-১১২, মোঃ সুজন মোল্যা, রোল-২৯, ভোট পেয়েছে-১০৯টি। ৪র্থ শ্রেণীতে ফাহাদ হোসেন সাগর, রোল-০১, ভোট পেয়েছে-১৭০, ফাতেমা তুজ জোহরা, রোল-২, ভোট-৯৫ ও ৩য় শ্রেণীর রাতুল হাসান, রোল-৭৬, ভোট পেয়েছে-১৮৪, সিজান মাহামুদ, রোল-৩৭, ভোট পেয়েছে-১০৮, তামান্না হোসেন, রোল-১৩, ভোট পেয়েছে-৯৪। বিজয়ীরা এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আনন্দিত ও গর্বিত। যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ের জন্য এরকম গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচন সংক্রান্ত নিয়ম-কানুনের ধারণা রপ্ত করতে পারব।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: জেলার ১২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। জেলার কুষ্টিয়া সদর উপজেলাসহ মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, খোকসা ও কুমারখালী উপজেলায় ২০টি করে সর্বমোট ১২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের শিক্ষকমণ্ডলীরা পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচনের কাজে সহযোগিতা করেন। কুষ্টিয়া জেলার ছয়টি উপজেলা থেকে ২০টি করে মোট ১২০টি বিদ্যালয়ে এ নির্বাচন সম্পন্ন হয়। সকাল  থেকেই প্রতিটি  কেন্দ্রে শিশু শিক্ষার্থীদের ভোট দিতে দেখা যায়।
কাপাসিয়া (গাজীপুর) : উপজেলায় গতকাল শনিবার ২২টি বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৩৭৮৭ জন ছাত্র-ছাত্রী সরাসরি ভোটে অংশগ্রহণ করে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষকদের সহযোগিতার লক্ষ্যে এ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ২২টি  বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ৭টি পদের জন্য সর্বমোট ৩২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এর মধ্যে নির্বাচিত হয়েছে ১৫৪ জন। প্রতিটি বিদ্যালয়ে নির্বাচিত ৭ জন প্রতিনিধি পরিবেশ মন্ত্রণালয়, পুস্তক ও শিক্ষা সামগ্রী মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, বৃক্ষ রোপণ ও ফুল বাগান মন্ত্রণালয়, অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবে। প্রত্যেক বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীরা নির্বাচন কমিশানর, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় আনসার ও পুলিশের দায়িত্ব পালন করে।
সিংড়া (নাটোর): নাটারের সিংড়া উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস্ কাউন্সিলের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়া এই কাউন্সিলের মেয়াদ এক বৎসর। প্রতি শ্রেণীতে কমপক্ষে দু’জন করে মোট সাতজন প্রতিনিধি কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়েছে।
সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়, মঠগ্রাম, শেরকোল, বারইহাটি, ডাঙ্গাপাড়া, কালিগঞ্জ, হুলহুলিয়া, স্থাপনদীঘি, ধুলিয়াডাঙ্গা, পাচলাড়–য়া, বোয়ালিয়া, শুকাশ, পাকিশা, সিংড়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দমদমা, ৫১ বিঘা, মহেশচন্দ্রপুর, কৃষ্টপুর ও হরিপুর স্কুলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি : নেত্রকোনা জেলার দুশতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিলের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব, গণতান্ত্রিক মনোভাব তৈরী ও বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকান্ডে সরাসরি অংশ গ্রহণে আগ্রহী করার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এ নির্বাচন আয়োজন করে। বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে ২ জন, চতুর্থ শ্রেণীতে ২ জন, পঞ্চম শ্রেণীতে ৩ জন সদস্য সারাসরি ভোটে এবং এদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে। এ নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। হাতে লেখা পোস্টার ও লিফলেটে ভরে গেছে বিদ্যালয় প্রাঙ্গন। অভিভাবকদের মাঝেও ব্যাপক আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই শুধু ভোট দান করেন।
মণিরামপুর(যশোর) : রোমিও হোসেন (১০) উপজেলার বাধাঘাট মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র। ষ্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনে ঐ বিদ্যালয়ের মোট ১৬৮ ভোটের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৮ ভোট পেয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। রোমিও ছাড়াও আরও ৬ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। সে খুব খুশি। রোমিও বলে, আমাকে সর্বোচ্চ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সার্বিক সহযোগিতা দানের জন্য আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মন্ডলির নিকট আমি চির কৃতজ্ঞ। রোমিওর শিক্ষক পিতা-মাতা আবুল মুকিত ও ফতেমা খাতুনও খুব খুশি ছেলে প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায়। বাধাঘাট মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও উপজেলার ১২০টি সরকারী ও ১৩৮টি বেসরকারী রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
যশোর জেলার ১২৪০টি সরকারী ও বে-সরকারী রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই ষ্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠির ৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশের মাধ্যমে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনের ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে। শিশুদের মধ্যে গনতন্ত্র চর্চাসহ বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়ন করা স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনের প্রধান লক্ষে তৃতীয় শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনী পযর্ন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য থেকে নির্বাচন কমিশনার, প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ৭ সদস্য বিশিষ্ট স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশেদ জানান, নলছিটি উপজেলা বাদে জেলার ৩টি উপজেলার ৬০ টি বিদ্যালয়ে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নলছিটি উপজেলার বিদ্যালয় গুলোতে সিলিকশনের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়েছে।
ফুলবাড়ী (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একযোগে স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠন ও নির্বাচন শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিরতিহীনভাবে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার ২৬নং দশমাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচনে ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণী থেকে ৭টি পদে মোট ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করে। সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ভোট প্রদান করে। প্রায় সকল ছাত্র-ছাত্রীরা শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট প্রদান করে। ৭টি পদে বিজয়ী ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে।   

†bv‡ej cyi¯‹vi I †bv‡ej KwgwU
Avgv‡`i cÖvwß Ges cÖZ¨vkv
Ai“Y e¨vbvR©x
Avj‡d«W †bv‡ej weÁv‡bi BwZnv‡m GK wPi¯§iYxq bvg| Zvi A‡bK¸‡jv Avwe®‹v‡ii g‡a¨ wWbvgvBU wQj Ab¨Zg| wZwb wWbvgvBU Avwe®‹vi K‡iwQ‡jb eo eo cvnvo-ce©Z fv½v  I LwbR m¤ú` AvniY mnRZi Kivi Rb¨| A_P †`‡k †`‡k Gi Ace¨nv‡ii gva¨‡g gvby‡li evwo-Mvwo, RvnvR GgbwK hy‡× aŸsmvÍK Kv‡R e¨enƒZ n‡Z †`‡L wZwb Pig e¨w_Z nb| wWbvgvBU Avwe®‹vi K‡i weivU As‡Ki A_© DcvR©b Ki‡jI wZwb AvÍmy‡L myLx wQ‡jb bv| Zvi wQj gvbeZvev`x `„wófw½| GRb¨ wZwb †P‡qwQ‡jb Zvi mwÂZ A_©we‡Ë mvwnZ¨, c`v_©we`¨v, imvqbkv¯¿, wek¦kvwš— I wPwKrmv †¶‡Î hviv we‡kl Ae`vb ivL‡Qb Zv‡`i‡K cyi¯‹…Z Ki‡Z|
G D‡Ï‡k¨ m¨vi Avj‡d«W †bv‡ej 1896 mv‡j DBj m¤úv`b K‡i hvb| Zvi DB‡ji wb‡`©k Abyhvqx Zvi we‡kl m¤úwËi UvKvq 1901 mvj †_‡K cÖwZeQi IB 5wU †¶‡Î we‡kl Ae`v‡bi Rb¨ GK ev GKvwaK e¨w³ ev cÖwZôvb‡K cyi¯‹…Z Kiv nq| cÖwZeQi Zvi g„Zz¨ w`em 10 wW‡m¤^‡i IB cyi¯‹vi †`qv nq| cieZ©xKv‡j 1969 mvj †_‡K e¨vsK Ae myB‡Wb m¨vi Avj‡d«W †bv‡e‡ji ¯§„wZi D‡Ï‡k¨ A_©bxwZ kv‡¯¿i Ici Pvjy K‡i we‡kl †bv‡ej cyi¯‹vi| †bv‡ej cyi¯‹vi biI‡qi †bv‡ej KwgwU cÖ`vb K‡ib| biI‡qi ivRavbx Am‡jvi wmwU n‡j 1901 mvj †_‡K cÖwZeQi RgKv‡jv Abyôvb Av‡qvRb Kiv nq| G‡Z e¨w³ m¤§vwbZ nb wVKB; wKš‘ Zvi †_‡K RvwZ, ivóª I fvlv †bv‡ej weRqxi †MŠi‡e †MŠievwš^Z nq| †bv‡ej cyi¯‹vi wb‡q cÖ_g †_‡KB P‡j Avm‡Q mgv‡jvPbv I weZK©| G wb‡qI bvbvR‡bi bvbv gZ| 1901-2010 mvj ch©š— 817 Rb K…Zx e¨w³‡K Ges 23wU cÖwZôvb‡K †`qv nq †bv‡ej cyi¯‹vi| wewfbœ wel‡qi Ici †bv‡ej KwgwUi g‡bvbqb Zvrch©c~Y© wn‡m‡e we‡k¦i †KvwU †KvwU m‡PZb gvbyl we‡ePbv Kivi c‡iI kvwš—‡Z †bv‡ej weRqx wb‡q weZK© Zzjbvg~jKfv‡e †ewk| gnvÍv MvÜx 1937-48 mvj ch©š— `xN© GK hy‡M cuvPevi †bv‡ej kvwš— cyi¯‹v‡ii Rb¨ g‡bvbxZ n‡q‡Qb| wKš‘ IB cyi¯‹v‡i Zv‡K f‚wlZ Kiv nqwb| Zvi g„Zz¨i GK `kK c‡i †bv‡ej cyi¯‹vi KwgwU cÖKv‡k¨ G wb‡q Aby‡kvPbv K‡i| biI‡qi †bv‡ej KwgwUi mv‡eK m¤úv`K ÔGLEIR LUNDEF DEFTAD 2006 mv‡j e‡jb, ÔThe Greatest omission in our one hundred six year's history is that Mohonchand Karamchand Gandhi did never receive nobel prize. 1948 mv‡ji 30 Rvbyqvwi gnvÍv MvÜx AvZZvqxi nv‡Z b„ksmfv‡e wbnZ nb| IB eQi KvD‡K kvwš—i Rb¨ †bv‡ej cyi¯‹vi †`qv nqwb| G m¤ú‡K© †bv‡ej KwgwU GB g‡g© wee„wZ w`‡q AvÍc¶ mg_©b K‡ib ÔThere was no suitable candidate.
†bv‡ej cyi¯‹v‡ii bwg‡bkb †`qvi †¶‡Î wePviKgÊjxi c¶cvwZZ¡ I wbi‡c¶Zv wb‡qI cÖ‡kœi Aš— †bB| G wb‡q mgv‡jvPbv I weZK© Kg nqwb| Rvg©vwbi d¨vwm÷ kvmK GWjd wnUjvi 3 Rb‡K †bv‡ej cyi¯‹vi MÖnY Ki‡Z †`bwb| Zviv n‡”Q RICHARD KAUHN ALDOF BUTENANDT I GERHARD DOMAGK †mvwf‡qZ KwgDwb÷ cvwU© 1958 mv‡j BARIS PAWSTERNAK †K †bv‡ej cyi¯‹vi MÖnY bv Ki‡Z eva¨ K‡i| 1975 mv‡j wf‡qZbvg hy‡×i Kvi‡Y †hŠ_fv‡e kvwš— cyi¯‹vi †`qv nq gvwK©b hy³iv‡óªi ZrKvjxb ciivóªgš¿x †nbix wKwmÄvi I Dfq wf‡qZbv‡gi ZrKvjxb †cÖwm‡W›U wjWvK †_v  †K| gvwK©b hy³ivóª wf‡qZbv‡g Zv‡`i AvMÖvmb wUwK‡q ivL‡Z †ZRw¯¿q †evgv el©Y †_‡K ïi“ K‡i Ggb †Kv‡bv RNb¨ KvR †bB hv K‡iwb| GKzk eQi a‡i gvwK©b bxwZwba©viKiv my`~icÖmvix cwiKíbv wb‡q wf‡qZbv‡gi wbixn gvby‡li Ic‡i G KvRwU K‡i‡Qb| ZvB Av‡gwiKvi GKKvjxb RvZxq wbivcËv Dc‡`óv I cieZ©x‡Z †m †`‡ki ciivóªgš¿x †nbix wKwmÄvi gvBjvB‡qi g‡Zv nZ¨vKv‡Êi `vq-`vwqZ¡ †Kv‡bvµ‡gB A¯^xKvi Ki‡Z cv‡ib bv| Gi wecix‡Z wf‡qZbvg hy‡× cÖwZ‡iva msMÖv‡g †bZ…Z¡ w`‡qwQ‡jb †nv-wP-wgb| Zvi g„Zz¨i ci Lee Duc Tho wf‡qZbv‡gi RbM‡Yi cÖwZ‡iva hy‡×i `vwqZ¡ wb‡Ri Kuv‡a Zz‡j †bb| GKw`‡K hy×evR Av‡gwiKvi †bZv †nbix wKwmÄvi, Ab¨w`‡K AvMÖvmx hy‡×i wei“‡× kvwš—i c‡¶ jovKz ˆmwbK Lee Duc Tho †K GKB gvcKvwV‡Z †bv‡ej cyi¯‹v‡i f‚wlZ Kivq we‡k¦i we‡eKevb gvbyl _g‡K `uvwo‡qwQ‡jb| Lee Duc Tho Aek¨  †bv‡ej cyi¯‹vi MÖnY K‡ibwb| ïay wf‡qZbvg hy‡× bq, evsjv‡`‡ki gyw³hy‡×I †nbix  wKwmÄv‡ii b¨°viRbK f‚wgKv i‡q‡Q | wZwb GKvˇii gyw³hy‡× evsjv‡`‡ki ¯^vaxbZv‡K wbg~©j Kivi Rb¨ ee©i cvwK¯—vb evwnbx‡K A¯¿ mieivn K‡iwQ‡jb| w`‡q‡Qb cvwK¯—v‡bi Rj­v` Bqvwnqv Lvb miKvi‡K cÖ‡qvRbxq w`Kwb‡`©kbv| Avevi Rj­v` evwnbxi MYnZ¨v, AZ¨vPvi I wbh©vZ‡b AwZô n‡q ¯^vaxbZvKvgx   evOvwjiv AvkÖq †bq fviZe‡l©i wewfbœ iv‡R¨ I evg©vq (eZ©gvb wgqvbgvi)| †nbix wKwmÄvi  Zvi ˆØZ bxwZi Kvi‡Y fvi‡Zi wewfbœ iv‡R¨ AvwkÖZ kiYv_©x‡`i Rb¨ e¨e¯’v K‡ib wiwj‡di| wZwb g‡bcÖv‡Y evOvwj‡`i ¯^vaxbZvi cÖPÊ we‡ivax wQ‡jb| hvi `i“b wZwb cvwK¯—v‡bi ee©i mvgwiK kvmK Bqvwnqv Lv‡bi `~wZqvjx‡Z Av‡gwiKvi wPi ˆeix MYPx‡bi m‡½ ˆgÎxeÜb M‡o †Zv‡jb| wPwji ccyjvi BDwbwU Mfb©‡g‡›Ui cÖavb mvj‡f`i Av‡j‡›`‡K b„ksmfv‡e nZ¨vi †cQ‡b Zvi mwµq f‚wgKv wQj| G Qvov ZrKvjxb c„w_exi wewfbœ †`‡k Aš—N©vZg~jK Kvh©Kjvc, miKvi cZ‡bi Rb¨ †cQ‡bi `iRv w`‡q mvgwiK Afy¨Ìvb wKsev mvgwiK Afy¨Ìv‡b g`` cÖ`v‡bi m‡½ Rwo‡q i‡q‡Q †nbix wKwmÄv‡ii bvg| ZvB c„w_exi MYZvwš¿K I we‡eKevb gvbyl AZ¨š— N„Yvf‡i D”PviY K‡i Zvi bvg| †nbix wKwmÄvi‡K kvwš—i Rb¨ †bv‡ej cyi¯‹vi cÖ`vb †bv‡ej wbe©vPK KwgwUi m¤§vb I gh©v`v‡K a~wjmvr K‡i‡Q|
2010 mv‡j kvwš—‡Z †bv‡ej cyi¯‹vi cvb Pxbv bvMwiK LIUXIAOBO| biI‡qi †bv‡ej KwgwU hLb Zvi bvg †NvlYv K‡ib, ZLb wZwb Px‡bi KvivMv‡i wQ‡jb Ges GL‡bv KvivMv‡i Av‡Qb| Zv‡K ev Zvi cwiev‡ii c¶ †_‡K †bv‡ej cyi¯‹vi MÖnY Kivi my‡hvM ch©š— †`qwb Pxbv KwgDwb÷ cvwU©| eis  Pxb miKvi ej‡jb, ÔHe never did promote International friendship, disarmament and peace meeting. Zvi †cQ‡b gvwK©b †Mv‡q›`v ms¯’v CIA -Gi mg_©b i‡q‡Q e‡j aviYv †cvlY K‡i Pxb| G Qvov cvðvZ¨ ivóªbvqKiv I ivR‰bwZK fvl¨Kviiv Av‡gwiKv KZ…©K wewfbœ †`‡k AvMÖvmb we‡kl K‡i wf‡qZbvg †Kvwiqv AvdMvwb¯—vb I Biv‡K AvMÖvm‡bi wZwb mg_©K e‡j mgv‡jvPbv K‡ib| GgbwK wZwb RR© eyk I BmivB‡ji cÖkvm‡bi mg_©K Ges ÔNew conservative movement  †K mg_©b K‡ib e‡j Awf‡hvM i‡q‡Q| c¶vš—‡i Px‡b MYZvwš¿K ms¯‹vi Av‡›`vj‡bi `vwe‡Z hviv PvU©vi-GBW B‡¯—nvi iPbv K‡ib 55 eQi eq¯‹ wjD wkqvI‡ev wQ‡jb Zv‡`i Ab¨Zg| Px‡bi kvmK‡`i Kv‡Q wQj GUv eo ai‡bi Aciva| 2009 mv‡ji wW‡m¤^i gvm †_‡K 11 eQ‡ii Kviv`Ê †fvM Ki‡Qb wjD| 2010 mv‡j hLb Zv‡K †bv‡ej cyi¯‹vi †`qv nq Pxb miKvi †bv‡ej kvwš— KwgwUi G wm×vš—‡K †m †`‡ki wei“‡× ¯úó D¯‹vwb, Px‡bi AvBwb e¨e¯’v‡K AvµgY I Px‡bi RbM‡Yi Abyf‚wZ‡Z AvNvZ wn‡m‡e MY¨ K‡i| ZLb †_‡K wjD wkqvI‡evi ew›` Rxeb‡K Av‡iv KwVb K‡i †Zvjv nq| GgbwK 2011 mv‡ji 28 †m‡Þ¤^‡i evevi A‡š—¨wówµqvq †hvM w`‡Z Aí mg‡qi Rb¨ KvivMv‡ii evB‡i Avmvi AbygwZ cvb wZwb| Bqvs wRqvbwb gvwK©b hy³iv‡óª Px‡bi gvbevwaKvi welqK GKwU msMVb cÖwZôv K‡i‡Qb| bvg ÔCitizen power’ 2011 mv‡ji Rvbyqvwi gv‡m RvwZms‡Ni gvbevwaKvi Kwgk‡bi Kv‡Q wZwb wkqvI‡ev‡K gyw³ I Zvi ¯¿x‡K M„new›`Z¡ †_‡K †invB w`‡Z Px‡bi Ici ivR‰bwZK I K‚U‰bwZK Pvc m„wó Ki‡Z AvnŸvb Rvbvb| wKš‘ Zv‡ZI †bv‡ej weRqx wkqvI‡ev gyw³ cvbwb|
2009 mv‡j evivK Ievgv‡K †bv‡ej cyi¯‹v‡ii Rb¨ g‡bvbxZ Kiv nq| ivóªcwZ‡Z¡i GK eQi 12 w`‡bi gv_vq Ievgv‡K G cyi¯‹vi †`qv nq| ÔwbDBqK© UvBgmÕ GUv‡K very pre-matured and undesired e‡j gš—e¨ K‡ib| GgbwK Ievgv wb‡RI G cyi¯‹v‡i we¯§q cÖKvk K‡i  e‡jb, Avwg Gi †hvM¨ bB| Aek¨ wZwb cyi¯‹vi MÖnY K‡ib|
2004 mv‡j kvwš—‡Z †bv‡ej cyi¯‹vi weRqx nb †Kwbqvi cwi‡ekev`x †bÎx Iqv½vix gv_vB| wZwb wQ‡jb Avwd«Kvi cÖ_g bvix †bv‡ej cyi¯‹vi weRqx| cï wPwKrmv welqK miKvi mgw_©Z e‡bi MvQ-MvQvwj wba‡bi wecix‡Z Av‡›`vjb M‡o †Zv‡jb Iqv½vix gv_vB| wesk kZvãxi Avwki `kK †_‡K beŸB `kK ch©š— P‡j Avwd«Kvi eb i¶vi Av‡›`vjb| G Kg©Kv‡Ê ewjô f‚wgKvi Rb¨ kvmK‡Mvôxi nv‡Z PveyK †L‡Z nq Zv‡K| mn¨ Ki‡Z n‡q‡Q Kuv`v‡b M¨v‡mi R¡vjv| GgbwK ¯^v_©v‡š^lx gnj Zv‡K w`‡q‡Q nZ¨vi ûgwK| gv_vB †Kej eb i¶vi Av‡›`vjb K‡ibwb; `yb©xwZi wei“‡×I wQ‡jb †mv”Pvi| wZwb e‡jwQ‡jb Ôeb i¶v Kiv †`‡ki Rb¨ Rxeb-g„Zz¨i welq| †Kwbqvi eo R½j wejywßi gy‡L| GwU gvby‡li ˆZwi mgm¨v|Õ e‡bi MvQcvjv wba‡bi welqwU‡K wZwb ÔAvÍnZ¨vÕ ¯^iƒc e‡j AwfwnZ K‡ib| wZwb g‡b K‡ib eb DRvo Kiv n‡j Zvi cvwb e¨e¯’v I K…wl m¤ú` ¶wZMÖ¯— nq| Rjwe`y¨‡Zi Ici wbf©ikxj Ab¨vb¨ wkíI gvivÍK ¶wZi m¤§yLxb nq| gv_vB‡qi †bZ…‡Z¡ Zvi cwi‡ek welqK msMVb ÔThe Green Belt Movement  Avwd«KvRy‡o 4 †KvwUiI †ewk e„¶ †ivcY K‡i‡Q| 2002 mv‡j gv_vB †Kwbqvi cvj©v‡g›U m`m¨ wbe©vwPZ nb| wZwb †m eQi †Kwbqv miKv‡ii Dcgš¿x wn‡m‡e `vwqZ¡ cvjb K‡ib| Iqv½vix gv_vB‡qi Rxeb Kzmygv¯—xY©  wQj bv| 1989 mv‡j Zvi †bZ…‡Z¡ bvB‡ivex cv‡K© GKwU wØZj feb wbg©v‡Yi cwiKíbvi wei“‡× Av‡›`vj‡b bv‡gb| Zxeª Av‡›`vj‡bi gy‡L †Kwbqvi ZrKvjxb  †cÖwm‡W›U Wvwb‡qj Av‡ivc eva¨ nb IB cwiKíbv evwZj Ki‡Z| Gi GK `kK c‡i Zvi †bZ…‡Z¡ ebf‚wg wewµi cÖwZev‡` we‡¶vf wgwQj nq| wbivcËv i¶x‡`i nv‡Z †eaoK wcUzwbi wkKvi nb wZwb| Avwd«Kvi eb i¶vq we‡kl Ae`v‡bi Rb¨ Zv‡K 2004 mv‡j kvwš—‡Z †bv‡ej cyi¯‹vi w`‡q m¤§vwbZ Kiv nq| MZ eQi 25 †m‡Þ¤^i †Kwbqvi GKwU nvmcvZv‡j K¨vÝv‡i Avµvš— n‡q 71 eQi eq‡m wZwb gviv hvb| kvwš—i Rb¨ †bv‡ej cyi¯‹vi weRqxi Ggb Akvwš—gq ˆ`e `ywe©cvKRwbZ NUbvi bwRi †bnvqZ Kg †bB|
m¨vi Avj‡d«W †bv‡ej cÖewZ©Z G †bv‡ej cyi¯‹vi gvbe mf¨Zvi MwZaviv‡K bZzb Av‡jvq Av‡jvwKZ K‡i‡Q| Zvi c‡iI mvwnZ¨, wPwKrmv weÁvb, imvqbkv¯¿, wek¦ kvwš—, c`v_©we`¨v I A_©bxwZ‡Z †bv‡ej cyi¯‹vi wb‡q weZ‡K©i KgwZ †bB| ag©, ivR‰bwZK wek¦vm, eqm, m„RbkxjZv, †hvM¨Zv BZ¨vw`‡K †K›`Ö K‡i  †bv‡ej KwgwU m¤ú‡K© A‡bK cÖkœ m„wó n‡q‡Q GK kÕ ev‡iv eQ‡i| †KD †bv‡ej cyi¯‹v‡ii A_© gvbeKj¨v‡Y e¨q K‡i‡Qb| †KDev my`~icÖmvix cwiKíbv nv‡Z wb‡q‡Qb| KvR K‡i‡Qb †Kv‡bv †`‡ki wbw`©ó Rb‡Mvôxi †cQ‡b| Avevi †KDev Zv e¨envi K‡i‡Qb e¨w³ ev cvwievwiK wKsev †MvôxMZ ¯^v‡_©| †bv‡ej cyi¯‹vi wb‡q ev †bv‡ej KwgwU wb‡q Avgv‡`i gš—e¨ Kiv Ae©vPxbZvi bvgvš—i gvÎ| Zvi c‡iI Avgiv cÖZ¨vkv Kie †bv‡ej KwgwU c¶cvZgy³ †nvK| g~j¨vqb †nvK cÖK…Z †gavex‡`i| †bv‡ej cyi¯‹vi weRqx‡`i †gav I gbb e¨enƒZ †nvK gvbeKj¨v‡Y|
†jLK: mvsevw`K I Kjvwg÷
হুমকির মুখে মাতৃভাষা
মযহারুল ইসলাম বাবলা
বাংলাদেশ ভূখণ্ডজুড়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বাদে আমরা কেবল একটি ভাষাতেই কথা বলে থাকি। দ্বিতীয় বা বিকল্প কোন ভাষার প্রয়োজন হয় না। এটি যে আমাদের কত বিশাল প্রাপ্তি তা অনুভব করেছি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গিয়ে। হাতেগোনা দু’চারটি প্রদেশ ছাড়া ভারতের সবগুলো প্রদেশ ঘুরে দেখার ও জানার অভিজ্ঞতা হয়েছে। নানা কারণে অসংখ্যবার যেতে হয়েছিল ভারতে। ভারতের মানচিত্রকে ভাগ করে করে অনেক দফায় সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছিল বিশাল ভারত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। পশ্চিমবঙ্গের অনেকে আমাদের দেশজুড়ে মাত্র একটি ভাষা প্রচলনের জন্য জনগণকে ভাগ্যবান মনে করে। তাদের দেশে নয়, তাদের নিজেদের প্রদেশেই প্রাদেশিক ভাষা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। প্রদেশ জুড়ে প্রাদেশিক ভাষায় কথা বলার উপায় নেই। বিকল্প হিন্দির আশ্রয় নিতেই হয়। বাঙালিদের প্রদেশ পশ্চিমবাংলার রাজধানী কলকাতা নগরীতে বাংলাভাষী মানুষের সংখ্যা আনুপাতিক হারে কমে সংখ্যালঘুতে দাঁড়িয়েছে। কলকাতা নগরীও এখন বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি নির্ভর নয়। হিন্দির আগ্রাসনে এবং অন্য ভাষাভাষীদের প্রভাবে কলকাতায় বাংলা ভাষার ব্যবহার কমে গিয়েছে। ট্রামে, বাসে, রিকশায়, ট্যাক্সীতে, হাটে-বাজারে, রাস্তায়-ফুটপাতে, শপিংমলে, হোটেলে যেখানেই কথা বলার প্রয়োজন হবে, কথা বলতে হয় ইংরেজি বা হিন্দিতে, বাংলায় নয়। এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে কলকাতার বাঙালিরা। দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দাদের সিংহভাগ বাঙালি হওয়ায় সেখানে বাংলা ভাষার একচেটিয়া প্রচলন ছিল একসময়। এখন সেখানে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতিতে ভাটির টান পড়েছে। এছাড়া সেন্ট্রাল কলকাতাসহ পুরো কলকাতায় বাংলায় কথা বলার সুযোগ নেই বললে ভুল হবে না। লক্ষ লক্ষ মানুষ ডেইলি প্যাসেঞ্জার হয়ে দূর দূরান্ত থেকে কলকাতায় আসা-যাওয়া করে। বনগাঁ, রানাঘাট, চুঁচড়া, বর্ধমান, হাওড়া, উত্তর-দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর এমনকি খক্ষপুর হতেও ট্রেনে-বাসে চেপে পেশাজীবী মানুষ কর্মস্থল কলকাতায় আসে এবং কাজ শেষে ফিরে যায় যে যার গন্তব্যে। ছুটির দিন ব্যতীত নিত্যই এ দৃশ্য দেখা যায়। শিয়ালদহ-হাওড়া-ধর্মতলার রেল ও বাস স্টেশনগুলোতে সকালে বিকেলের এ দৃশ্য নিত্যদিনের। কলকাতার স্থায়ী অনেক বাসিন্দা মাড়োয়ারী ব্যবসায়ীদের কাছে উচ্চ মূল্য পেয়ে বসতভিটা বিক্রি করে নতুন আবাস গড়েছে শহরতলী ও মফস্বলে। কলকাতা শহরে বাঙালি সংখ্যালঘুতে পরিণত হওয়ার এটাও অন্যতম কারণ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে কলকাতাকে এখন বাংলা ভাষা সংস্কৃতির একমাত্র শহর বলার উপায় নেই। বহু ভাষাভাষী, বর্ণ, সম্প্রদায় ও জাতির শহর এখন কলকাতা। ভারতের বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের আবাস হওয়ায় সেখানে গড়ে উঠেছে মাড়োয়ারী, পাঞ্জাবী, গুজরাটি ভাষাভাষিদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানে নিজ নিজ ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় তারা শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। অথচ বাংলামাধ্যম স্কুলগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । বিশাল ভারতে স্বীকৃত ভাষা প্রায় সাতাশটি। রাষ্ট্রীয় ভাষা হিন্দি হলেও রাষ্ট্রীয় ভাষার অবাধ প্রচলন কিন্তু সকল প্রদেশে নেই। এবং নেই বাধ্যবাধকতাও। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে তো নয়ই। দক্ষিণ ভারতের চার রাজ্যের মধ্যে একমাত্র অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী সিকান্দ্রাবাদ-হায়দরাবাদে হিন্দি-উর্দু ভাষার প্রচলন সামান্য দেখলেও অপর তিন রাজ্যের কোথাও রাষ্ট্রীয় ভাষার প্রচলন দেখিনি। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ উপনিবেশের গোড়া পত্তনে দেশীয় বিশ্বাসঘাতকদের অবদানের প্রচুর নজির রয়েছে। তেমন এক বিশ্বাসঘাতক হায়দরাবাদের নিজাম। যার বিশ্বাসঘাতকতায় এবং সহযোগিতায় ইংরেজদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল বীর টিপু সুলতানকে পরাজিত এবং হত্যা করাও। প্রতিদানে ইংরেজ শাসক নিজামকে পুরস্কৃত করেছিল হায়দরাবাদের শাসনকর্তা রূপে। ভারতের এ ধরনের অনেকগুলো করদরাজ্য ছিল। ব্রিটিশ অধীন করদরাজ্যগুলোর শাসন ক্ষমতা ছিল দেশীয় শাসকদের হাতে। ইংরেজ তাঁবেদার মুসলিম শাসক নিজামদের কারণেই হায়দরাবাদে তেলেগু ভাষার পাশাপাশি উর্দু ভাষার প্রচলন ছিল। সেই সুবাদে দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী হায়দরাবাদেÑসিকান্দ্রাবাদে হিন্দি-উর্দু ভাষার প্রচলন দেখেছি। তবে রাজধানীর বাইরে গোটা প্রদেশজুড়ে তেলেগু ভাষাই প্রচলিত। কেরালা, কর্ণাটক, অন্ধ্র ও তামিলনাড়– দক্ষিণের এই চার রাজ্যে স্ব স্ব প্রাদেশিক ভাষা ও সংস্কৃতি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিন্দির প্রবেশের সুযোগ-উপায় কোনোটি নেই। ঐ চার রাজ্যের মালায়ালম, কানাড়া, তেলেগু এবং তামিল ভাষার একমাত্র বিকল্প ভাষাটি হচ্ছে ইংরেজি, রাষ্ট্রীয় ভাষা হিন্দি নয়। নিজ ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি দক্ষিণের চার রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাবোধ-ভালবাসা অভূতপূর্ব এবং শিক্ষণীয়ও বটে। নিজেদের মাতৃভাষার দাবিতে রক্ত দিয়েও আমরা নিজ ভাষার প্রতি কি অতটা শ্রদ্ধাশীল হতে পেরেছি? আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। কিন্তু আমরা কি রাষ্ট্র ভাষাকে সর্বস্তরে প্রচলন ও প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি? পারি নি। সে ব্যর্থতার দায় দুঃখজনক হলেও আমাদের বহন করতে হচ্ছে। দক্ষিণ ভারতের ঐ চার রাজ্যের মানুষ রাষ্ট্রীয় ভাষা হিন্দিকে কেবল অগ্রহণ করে নি, সচেতনভাবেই প্রত্যাখ্যান করেছে। হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতি রুখতে দ্বিতীয় বা বিকল্প ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষাকে সানন্দে গ্রহণ করেছে। দক্ষিণ ভারতের ঐ চার রাজ্যের সাধারণ মানুষেরা পর্যন্ত অন্য ভাষাভাষী মানুষের সাথে বিকল্প ভাষা ইংরেজিতে অবলীলায়-অনর্গল কথা বলে থাকে। ঐ চার রাজ্যের চার পৃথক ভাষা। কোনোটির সঙ্গে কোনোটির মিল নেই। মালায়ালম, কানাড়া, তেলেগু, তামিল এই চার ভাষাভাষীর মানুষেরা একে অপরের সাথে যার যার মাতৃভাষায় নয়, কথা বলে বিকল্প ভাষা ইংরেজিতে। ভাষার প্রশ্নে কেউ কাউকে ছাড় দিতে বিন্দুমাত্র সম্মত নয়। নিজ ভাষা সংস্কৃতির ওপর এমন অহংকার দেখে হতবাক হয়েছিলাম। তামিলনাড়– প্রদেশের পণ্ডিচেরী গিয়ে ফরাসী ভাষার প্রচলন দেখে অবাক হয়েছিলাম। ব্রিটিশদের থেকে ফরাসীরা পণ্ডিচেরী লীজ নিয়েছিল তাই পণ্ডিচেরীতে ফরাসীদের দীর্ঘ মেয়াদের এক উপনিবেশ ছিল। সেখানকার তামিলভাষীরা অনেকে ফরাসী ভাষা-সংস্কৃতিতে পারদর্শী দেখেছি। শুনেছি ফরাসী সরকার নাকি পণ্ডিচেরীর মানুষদের সুবিধা-অসুবিধা, দেখ-ভালের জন্যে এখনও সেখানে ফরাসী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন। বর্তমান ভারতের একটি প্রদেশ গোয়া, যা পর্তুগীজদের ব্রিটিশরা লীজ দিয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতার এক বছর পর ভারতীয় বাহিনীকে পর্তুগীজদের সাথে যুদ্ধ করে গোয়াকে পর্তুগীজমুক্ত করে ভারতের একটি প্রদেশে পরিণত করতে হয়েছিল। গোয়াতে হিন্দি, মারাঠি, ইংরেজি ভাষায় কথা বলার সুযোগ আছে। তবে স্থানীয় এ্যাংলো খ্রিস্টানদের অনেকে পর্তুগীজ ভাষায়ও অনর্গল কথা বলতে পারে।
স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি হয়েছিল কেন? এমন প্রশ্ন দক্ষিণের মানুষের কাছে করেছিলাম। তাদের উত্তর ছিল; স্বাধীন ভারতের ক্ষমতাসীন শাসকেরা হিন্দিভাষী হওয়ায় হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। ভারতের সব অঞ্চলের মুসলিম সম্প্রদায় উর্দু ভাষায় কথা না বললেও শিক্ষাক্রমে তাদের ভাষাটি উর্দু, হিন্দি নয়। সম্রাট আকবরের শাসনামলে সেনাবাহিনীর ফার্সি ও ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে কথোপকথনের প্রয়োজনে ফার্সি বর্ণমালা এবং হিন্দুস্থানী ভাষার মিশ্রণে উর্দিধারীদের জন্য যে ভাষার উৎপত্তি হয়েছিল তা-ই উর্দু ভাষা। এই উর্দু ভাষা-নির্ভর শিক্ষাক্রমে যুক্ত ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়। দ্বিজাতিতত্ত্বের স্বাধীন পাকিস্তানের পাঁচ ভাগ মানুষের ভাষা উর্দু ছিল না। অথচ সেই উর্দু ভাষা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল অত্যন্ত স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে। স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্যটি ছিল প্রাসঙ্গিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ। ভারত একদিন স্বাধীন হবে। স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রভাষা কি হবে? তেমন প্রশ্নের উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেনÑ“ভারতবর্ষের প্রদেশগুলোতে প্রাদেশিক ভাষার প্রচলন যেমন আছে ঠিক তেমনি থাকবে। তবে রাষ্ট্রভাষা হতে হবে ইংরেজি।” তিনি যে কত দূরদর্শী এবং অগ্রবর্তী চেতনা সমৃদ্ধ ছিলেন তাঁর এই মন্তব্যটি বর্তমান বাস্তবতায় এক অনন্য নজির। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে রাষ্ট্রীয় ভাষার প্রচলন ও ব্যবহারে রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতা বা সরাসরি চাপ নেই বলেই প্রদেশগুলো প্রাদেশিক ভাষার পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে। সেক্ষেত্রে ভারতের প্রদেশগুলোতে প্রাদেশিক ভাষা রক্ষা-প্রচলন এবং ব্যবহারের সমস্ত দায়-দায়িত্ব প্রদেশগুলোর হলেও বাস্তবক্ষেত্রে তা নানা কারণে সম্ভব হচ্ছে না। যেমনটি পশ্চিমবঙ্গে। কেননা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় বাংলাভাষীরা ইতিমধ্যে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া রয়েছে বিশ্বায়ন এবং সর্বভারতীয় প্রচার-প্রতিষ্ঠানের হাতছানি। খ্যাতিবান বাঙালি গায়ক, সুরকার, কাহিনীকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক হতে অনেক গুণী শিল্পী-কুশলীরা সর্বভারতীয় প্রচারÑপ্রতিষ্ঠার মোহে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাই পাড়ি দিয়ে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যহানিতে অবদান রেখেছেন। বাংলা সংস্কৃতির ক্ষতিসাধন সেখান থেকেই শুরু। অথচ কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্র, বাংলা গান উপমহাদেশ জুড়ে এক সময় প্রভাব বিস্তার করেছিল। আজকে বাংলা চলচ্চিত্রের যৎসামান্য সৃজনশীল চলচ্চিত্র ছাড়া সিংহভাগ বাংলা ছবিই হিন্দি রিমেক। অথচ এক সময় বাংলা চলচ্চিত্রের রিমেক এবং বাংলা কথাসাহিত্য অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণের হিড়িক পড়েছিল ভারতজুড়ে। নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিসর্জন দিয়ে পরজীবী হবার এই প্রবণতার কারণে ঐতিহ্যপূর্ণ বাংলা চলচ্চিত্র, বাংলা গান মোটেও মর্যাদার আসনে নেই। বাঙালি দর্শক-শ্রোতা পর্যন্ত অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে অপসংস্কৃতির দাঙ্গাবাজি-অশ্লীল কুরুচীপূর্ণ হিন্দি নাচে-গানে। এতে করে মুনাফাবাজ চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে মওকার সকল সুযোগ। বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির এই অপরিসীম ক্ষতির বিষয় বিবেচনা না করার খেসারত তাদেরই দিতে হচ্ছে চড়ামূল্যে। কলকাতার বাংলা টিভি চ্যানেলগুলো পর্যন্ত হিন্দি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাবমুক্ত নয়, হিন্দির ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে হিন্দি অনুষ্ঠানের রিমেক। অথচ সমৃদ্ধ বাংলা সংস্কৃতিকে দিয়ে নয়, হিন্দির অনুকরণে হিন্দি চ্যানেলের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে এনেছে। মান্না দে’র মতো শিল্পীকেও অকপটে স্বীকার করতে হয়েছিল, ‘হিন্দি গানের ভুবনে আই ওয়াজ অ্যান আউটসাইডার।’ ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের রাজনীতিক-অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় পর্যন্ত আক্ষেপে বলেছেন, সমস্ত যোগ্যতা সত্ত্বেও একমাত্র হিন্দিভাষী না হবার কারণে তার পক্ষে দলের ও সরকারের শীর্ষ পদলাভ সম্ভব হয় নি। দক্ষিণ ভারতের চাররাজ্যে হিন্দি চলচ্চিত্র-হিন্দি গানের প্রবেশ তারা রুখেছে নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতির অধিকতর চর্চার মধ্য দিয়ে। নিজ ভাষার চলচ্চিত্র তাদের কাছে অধিক সমাদৃত বলেই হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র সেখানে প্রবেশের সুযোগ পায়নি। দক্ষিণের গায়ক-অভিনেতা-অভিনেত্রী অনেকে হিন্দি ছবিতে গান এবং অভিনয় করলেও মুম্বাইয়ে স্থায়ী হয়ে নিজেদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে ত্যাগ করেন নি। তামিল গায়ক বালা সুব্রামনিয়াম দক্ষিণে এত জনপ্রিয় ও সমাদৃত যে তাঁকে রিটার্ন টিকেট দিয়ে মুম্বাই বা অন্য কোথাও গান গাইতে নিতে হয়। প্রচুর হিন্দি গান গেয়ে সর্বভারতীয় জনপ্রিয়তা পেলেও, তিনি মোহে পড়ে চেন্নাই ছেড়ে মুম্বাইয়ে স্থায়ী হয় নি। অথচ বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্যপূর্ণ কলকাতার এমন দুর্দশা দেখে হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এক সময়ে কলকাতায় নির্মিত বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের দাপুটে অবাঙালি অভিনেতা-গায়ক কে.এল. সায়গলের বাংলা উচ্চারণ নিয়ে সমালোচনা এবং কটাক্ষ করেছিলেন চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়। অবাঙালি সায়গলের অশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণে বাংলা ভাষার ক্ষতির কথাও বলেছেন। হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র নির্মাণের সকল অনুরোধ-আবেদন সযতেœ প্রত্যাখ্যান করে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, যে ভাষা ভালভাবে বলতে ও বুঝতে সক্ষম নন, সে ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ তাঁর পক্ষে অসম্ভব। অথচ এই সত্যজিৎ রায়কে পর্যন্ত এক পর্যায়ে ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ী’ নামক হিন্দি চলচ্চিত্র নির্মাণ  করতে হয়েছিল। যার পেছনে হয়তো ইচ্ছের চেয়েও অধিক লোভনীয় অন্য কারণ অবশ্যই ছিল। এই বরেণ্য চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় যথার্থই বলেছিলেনÑ“বাংলা ভাষার সাহিত্য-সংস্কৃতির লালন পালন পশ্চিমবাংলা কেন্দ্রীক থাকবে না। তা বাংলাদেশ কেন্দ্রীকই হবে।” তাঁর সেই মন্তব্যের বাস্তবতা এখন ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ভারতের সর্ববৃহৎ চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইয়ে। মুম্বাই চলচ্চিত্র শিল্পের বিশালতার তুলনায় মাদ্রাজ-কলকাতা অনেক অনেক পেছনে। মুম্বাই নির্মিত হিন্দি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র যেমন সর্বভারতীয় চাহিদা পূরণ করছে, পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক প্রসারও লাভ করেছে। হিন্দি চলচ্চিত্র নির্মাণের একমাত্র এবং সর্ববৃহৎ ইন্ডাস্ট্রি মুম্বাই হলেও মুম্বাই হিন্দি বলয়ের কোন প্রদেশ নয়। মহারাষ্ট্র রাজ্যের রাজধানী মুম্বাই। প্রদেশের প্রাদেশিক ভাষা মারাঠি। তবে হিন্দির আগ্রাসনে মারাঠি ভাষা আজ কোণঠাসা অবস্থায়। মারাঠি ভাষার চলচ্চিত্র, নাটক, গান নিয়ে মারাঠি ভাষার সাহিত্য-সংস্কৃতির ধারাটি সচল থাকলেও হিন্দির প্রভাবে অনেকটা ম্রিয়মান হয়ে পড়েছে। মারাঠিদের রাজধানী বন্দরনগরী মুম্বাইয়ে মারাঠিরা সংখ্যালঘু। ভারতের প্রায় সকল প্রদেশের মানুষকেই মুম্বাইয়ে দেখা যায়। সংখ্যায় যারা মারাঠিদের তুলনায় বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মুম্বাইয়ে হিন্দি ভাষার প্রচলন থাকলেও মহারাষ্ট্র রাজ্য জুড়ে মারাঠি ভাষার প্রচলন কিন্তু আছে। মারাঠিরা হিন্দি ভাষায় কথা বলার ক্ষেত্রে দক্ষিণ ভারতীয়দের মতো দ্বিমত পোষণ করে না। অপর ভাষাভাষীদের সঙ্গে বিকল্প ভাষা হিসেবে রাষ্ট্রভাষা হিন্দিতেই কথা বলে থাকে। মুম্বাই নগরীও কলকাতার ন্যায় সর্বভারতীয় মানুষের আবাসস্থল। নানা জাতি-সম্প্রদায়ের শ্রেণী-পেশার মানুষে ঠাসা। সেখানে মারাঠিদের আলাদাভাবে খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবু মারাঠি ভাষার নাটক, চলচ্চিত্র, সাহিত্য-সংস্কৃতি মারাঠিরা পরিত্যাগ করে পুরো মাত্রায় হিন্দিমুখী হয়নি বলেই মারাঠি ভাষার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল স্বকীয়তায় টিকে আছে আজো। তবে প্রতিনিয়ত তাদের হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে।
১৯৮৮ সালে কলকাতার নাট্যদল ‘নান্দীকারে’র আমন্ত্রণে নাট্য উৎসবে অংশ নিতে ঢাকা থিয়েটারের সবাই কলকাতা গিয়েছিলাম। নাট্য উৎসবটি হয়েছিল রবীন্দ্রসদনে। বাংলা ভাষা ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন ভাষার নাটকও উৎসবে অংশ নিয়েছিল। সে উৎসবেই উৎপল দত্তের অভিনীত, লিখিত ও নির্দেশিত নাটক ‘টিনের তলোয়ার’ দেখার সুযোগ হয়েছিল। নাটক শেষে অতিউৎসাহী আমি দৌড়ে গ্রীনরুমে গিয়ে বাস্তবের উৎপল দত্তকে দেখে অবাক হয়ে যাই। কিছুতেই মেলানো সম্ভব হচ্ছিল না। মাত্র একটু আগে যে মানুষটি যুবকের মতো মঞ্চ কাঁপিয়ে এলেন তিনি বয়সের ভারে নত। এই বয়সে এমন অভিনয় তাঁর পক্ষেই ছিল সম্ভব। ঢাকা থিয়েটারের ‘কেরামত মঙ্গল’ নাটকটির প্রদর্শনীর দিন রবীন্দ্রসদন দর্শকে পরিপূর্ণ ছিল। অথচ নাটক শেষে দর্শকদের মাঝে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ লক্ষ্য করে কারণ জানতে চাইলে তাঁরা যা বলেন তা শুনে রীতিমতো আঁৎকে উঠি। ‘কেরামত মঙ্গল’ নাটকের পূর্ববঙ্গীয় গ্রামীণ সংলাপ নাকি তাঁদের বোধগম্য হয় নি। এজন্যই তাদের ক্ষোভ ও হতাশা। ‘নান্দীকার’-প্রধান রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত আক্ষেপে-শ্লেষে আমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেনÑ“হিন্দি ভাষার দৌরাত্ম্যে কলকাতার বাঙালিদের এই দশা। হিন্দি শুনতে শুনতে তাদের কান নষ্ট হয়ে গেছে। হিন্দি বলতে বলতে বাংলা ভাষা পর্যন্ত ভুলতে বসেছে। সেখানে পূর্ববঙ্গীয় বাংলা ভাষার কেরামত মঙ্গল নাটকের সংলাপ তাদের বোধগম্য হবার উপায় কোথায়?
ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল বাঙালির শহর কলকাতা। কলকাতাকে শাসক ইংরেজ সাজিয়েছিল লন্ডনের সাজে। কলকাতা হয়ে উঠেছিল প্রাচ্যের লন্ডন। কলকাতাকে কেন্দ্র করেই উপমহাদেশ জুড়ে গড়ে তুলেছিল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য। ‘ভাগ কর এবং শোষণ কর’ নীতিতে বঙ্গভঙ্গের কূটচাল চেলেছিল চতুর ইংরেজ। সেই স্বপ্নের মোহভঙ্গে ক্ষুব্ধ ইংরেজ কলকাতা থেকে রাজধানী দিল্লি সরিয়ে নেবার পূর্ব পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা। ভারতবর্ষের অপরাপর জাতিসত্তার চেয়ে বাঙালিরা চিন্তা, কর্মে, মননে, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চাসহ রাজনীতিতেও ছিল অগ্রবর্তী। সেই বাঙালি সংস্কৃতির কলকাতা এখন অতীতের গৌরবময় ঐতিহ্য হারিয়ে বিপন্নপ্রায়। কলকাতার বাংলা ভাষার সাহিত্য এখনও মাথা উঁচু করে আছে বাংলাদেশের পাঠকের কারণে। বাংলা ভাষা ছেড়ে বাংলা সাহিত্যিকেরা মুম্বাই ছোটে নি বা সাহিত্যিক ভাষার কারণে ছুটে যাবার উপায় নেই বলে এখনো বাংলা সাহিত্য সৃষ্টিতে কলকাতার সাহিত্যিকেরা অবদান রেখে যাচ্ছেন। তবে বাংলা ভাষার পাঠক কিন্তু নিয়মিতভাবে কমে এসেছে। বাংলাদেশে যেমন পশ্চিমবঙ্গেও তেমনি। আমাদের দেশে প্রকাশনা শিল্পে উৎকর্ষ সাধনসহ প্রচুর বই প্রকাশিত হচ্ছে, তবে মোটা দাগের চটুল ও হালকা সেন্টিমেন্টের মাত্র ক’জন লেখকের বইই বাজারমাত করছে। সৃজনশীল গবেষণা, ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পন্ন লেখকের বই কিন্তু সে তুলনায় পাঠক প্রিয়তা লাভে ব্যর্থ হচ্ছে। আমাদের তরুণদের মাঝে বিশেষ বিশেষ লেখকের চটুল বই কেনা এবং পড়া ফ্যাশনে দাঁড়িয়েছে। আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় বই পড়ার পাঠক বাড়ে নি বরং আনুপাতিক হারে কমেছে। নতুন প্রজšে§র খুব কম সংখ্যকই বই পড়ে। বেশির ভাগই কম্পিউটার, ইন্টারনেট  এবং  আকাশ সংস্কৃতির জ্বরে আক্রান্ত। পাঠকপ্রিয়তা লাভেই বইয়ের গুণাবলী বিবেচিত হয় না। বইয়ের দার্শনিকতা ও ইতিহাস নির্ভরতাই ভালো বইয়ের চূড়ান্ত মাপকাঠি। সে সমস্ত গুণাবলী সমৃদ্ধ বই পাঠকপ্রিয়তা না পাবার মূলে রয়েছে আমাদের বিকলাঙ্গ চিন্তা-চেতনা সর্বোপরি রুগ্ন মানসিকতার তৎপরতা। 
পশ্চিমবঙ্গের জেলা ও মফস্বলে বসবাসরত সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি বাংলা ভাষা-সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে সত্য, তবে এতোদিন সেখানেও হিন্দির আগ্রাসন ঢুকে পড়েছে। হিন্দি ছবি-সিরিয়াল, হিন্দি গানের ভক্তের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে বাংলা ভাষার ছবি, গান, সাহিত্য প্রীতি ক্রমশঃ পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রায় আটাশ বছর আগে পশ্চিমবাংলার ২৪ পরগণা, হাওড়া, বর্ধমান, মোদিনীপুর, প্রভৃতি জেলায় শারদীয় পূজায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। বারোয়ারী পূজা মণ্ডপের মাইকগুলোতে হেমন্ত, সতীনাথ, শ্যামল, শচীন, মানবেন্দ্র, মান্না দে, তালাত মাহমুদ, সলিল চৌধুরী, সুচিত্রা মিত্র, সন্ধ্যা, ভূপেন, সাগর সেন, দেবব্রত প্রমুখ বাংলা গানের কিংবদন্তি গায়ক-গায়িকাদের জনপ্রিয় গান দিন-রাত বাজতে শুনেছি-দেখেছি। অন্য ভাষার কোন গান বাজতে শুনি নি, দেখি নি। অথচ মাত্র ক’বছর পূর্বে শারদীয় পূজায় ঐ সমস্ত স্থানে গিয়ে দেখি সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। দেখি বারোয়ারী পূজা মণ্ডপে দিন-রাত মাইকে গান বাজছে, তবে বাংলা গান নয়, হিন্দি ছবির জনপ্রিয় গানগুলো, যেগুলোর বাদ্য-বাজনার আধিক্যে গানের কথা বোঝার উপায় থাকে না। কলকাতার সুবিধালোভী মধ্যবিত্ত বাঙালি যেমন সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠার পেছনে ছুটতে গিয়ে বাংলা ভাষাকে পরিত্যাগ করে ইংরেজি-হিন্দি নির্ভর হয়ে উঠেছে, একইভাবে আমাদের দেশেও বিত্তবান এবং মধ্যবিত্তরা প্রতিষ্ঠার মোহে বাংলা ভাষার পাঠ্যক্রম পরিহার করে ইংরেজি মাধ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ভারতের প্রাদেশিক ভাষার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের কোন প্রভাব বা চাপ যে নেই তা যেমন বলা যাবে না; তেমনিও বলা যাবে রাজ্য সরকারগুলোর সীমাবদ্ধতার কথাও। আমাদের ক্ষেত্রে তো তেমন আশঙ্কা নেই। তবে আমরা কেন ঐ একই পথে এগোচ্ছি? আমাদের অভিজাত শ্রেণী গণসমষ্টির বাইরে বিচ্ছিন্ন পৃথক এক জগৎ গড়ে তুলেছে। যার সাথে গণসমষ্টির কোন যোগসূত্রতা নেই। নেই কোন মিলও। অভিজাতরা তাদের নিজস্ব সুযোগ-সুবিধার মসৃণ জগৎটি গড়ে তুলেছে। অপরদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সুবিধাবঞ্চিত গণ-মানুষেরা এই সুবিধাভোগীদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। রাষ্ট্রের যত সুবিধা একচেটিয়া অভিজাতরাই ভোগ করে যাচ্ছে এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতাও তাদেরই হাতে। সমষ্টিগত মানুষ অধিকার এবং সুবিধা বঞ্চিত হয়ে অতিসাধারণ এবং নিম্নমানের জীবনযাপন করলেও রাষ্ট্র ও শাসক শ্রেণী তাদের পক্ষে কখনো ছিল না এবং আজো নেই। আজকে আমাদের রাষ্ট্র ভাষাও অবহেলিত এবং বৈষম্যের শিকার। আমাদের সমাজে মধ্যবিত্তের সুবিধাবাদী আকাক্সক্ষা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়েছে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির রক্ষায় নানা কর্মকাণ্ডে যারা সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাÑভালবাসা অর্জন করেছেন তাঁদের অনেকেই মধ্যবিত্তের আকাক্সক্ষা থেকে মুক্ত নন। তাঁদের সন্তানেরা ইংরেজি মাধ্যমে এবং বিদেশে পড়াশোনা করছে। স্ববিরোধিতার রোগে আক্রান্ত এ সমস্ত বরেণ্য ব্যক্তিরা নিজেরা প্রচার মাধ্যমে যা বলেন নিজের ঘরে  বিন্দুমাত্র তা পালন করেন না। বিকারগ্রস্ত মধ্যবিত্তের আকাক্সক্ষায় পরিপূর্ণ এই সকল ব্যক্তিবর্গ কার্যত অদ্ভুত প্রতারণায় নিজেদেরকে যুক্ত করে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছেন। বিশ্বায়নের বিরূপ প্রভাবে ভাষা ও সংস্কৃতির স্বকীয়তা-বৈচিত্র এখন হুমকির কবলে। এর থেকে রক্ষা পেতে প্রত্যেক জাতিকে তার ভাষা-সংস্কৃতির রক্ষায় ভূমিকা পালন করতে হবে। ভাষা বৈচিত্রের পৃথিবীতে বৈচিত্র থাকাটা আবশ্যক এবং জরুরিও। সমস্ত জাতিসত্তার ভাষা-সংস্কৃতি টিকে না থাকলে পৃথিবী বৈচিত্রহীন হয়ে যাবে। যা মোটেই কাক্সিক্ষত হতে পারে না। ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দি। তাই হিন্দির প্রভাব ভারতজুড়ে থাকবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। প্রশ্নটা হলো বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও কি পশ্চিমবঙ্গের মতো হিন্দির আগ্রাসন ঘটেনি? আকাশ সংস্কৃতির কারণে আমাদের দেশেও ঘরে ঘরে হিন্দি ছবি-সিরিয়াল হতে হিন্দি অনুষ্ঠান দেখার আধিক্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের সংস্কৃতিতেও হিন্দির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বেসরকারি টিভিগুলোতে এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। হিন্দি স্টেজ অনুষ্ঠানের আদলে এবং হিন্দি গানের প্রতিযোগিতার অনুকরণে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোতে চলছে একই ধারা। তবে ভাষা এখনো বাংলা এই যা ভরসা। তবু এগুলো অবশ্যই হিন্দির রিমেক ছাড়া অন্য কিছু নয়। পশ্চিমবঙ্গের ভাগ্যবরণ আমরা হয়ত করবো না। তবে হিন্দির এই আগ্রাসনে আমাদের সংস্কৃতিতে-রুচিতে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে তা উদ্বেগজনক। আমাদের সমাজে হিন্দি সংস্কৃতির উগ্র প্রভাব বৃদ্ধির নমুনা আমরা নিয়মিতই দেখছি। পাকিস্তানি শাসকেরা দুই যুগব্যাপী আমাদেরকে উর্দুভাষী করার প্রবল চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল। অথচ আজকে বাংলাদেশের শিশু-কিশোর হতে সকল বয়সী মানুষের মধ্যে হিন্দি ভাষা-সংস্কৃতির প্রভাব প্রচলন নানাভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। সম্প্রদায়গত অভিন্নতা সত্ত্বেও ইরাক এবং তুরস্কের সংখ্যালঘু কুর্দি ভাষীদের ‘কুর্দিস্থান’ পৃথক রাষ্ট্রের দাবীর মূলে রয়েছে কুর্দি ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষার কুর্দি জাতীয়তাবাদী তাগিদ। দেশ দু’টির সংখ্যাগরিষ্ঠ আরবি এবং তুর্কি ভাষীদের নিষ্ঠুর দমন-পীড়নেও কুর্দি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-সংগ্রাম দমন করা সম্ভব হয় নি। বরং স্বায়ত্তশাসনের দাবীটি স্বাধীন পৃথক ‘কুর্দিস্থান’ রাষ্ট্রের দাবীতে পরিণত হয়েছে, যা সশস্ত্র রূপ পর্যন্ত ধারণ করেছে। ফার্সি জাতিসত্তার ইরানের সঙ্গে আরবদের সম্প্রদায়গত মিলও জাতিগত অমিলের কারণে বৈরিতায় পরিণত হয়েছে। আরবদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেও পারস্য নিজেদের অধিক সমৃদ্ধ ফার্সি ভাষা-সংস্কৃতি ত্যাগ করে আরবি গ্রহণ করে নি। আরব ও ফার্সিদের জাতিগত বিরোধ-বিদ্বেষ সুদূর অতীতের ন্যায় আজও টিকে আছে। নানাভাবে এই বিরোধ বিদ্বেষের প্রতিফলন দেখা যায়। মুসলিম আরব রাষ্ট্রসমূহের আরব লীগে নিকট প্রতিবেশী ইরানকে অন্তর্ভুক্ত না করার মূল কারণটি জাতিগত ভিন্নতা। সম্প্রদায়গত অভিন্নতার চেয়েও জাতিগত ভিন্নতা আরবি-ফার্সি বিভাজনের ক্ষেত্রে একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিস্ময় এই যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে পাকিস্তানি হানাদার পাঞ্জাবীদের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গারের বিরূপ প্রভাব পড়েছিল ভারতীয় পাঞ্জাবীদের ওপর। বিক্ষুব্ধ ভারতীয় পাঞ্জাবীদের প্রতিবাদের মুখে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার বন্ধ হবার উপক্রম হয়। কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছিল। পাকিস্তানি এবং ভারতীয় পাঞ্জাবীদের সম্প্রদায়গত ভিন্নতা হার মেনেছিল তাদের জাতিসত্তার কাছে। মানুষ তার সবকিছু পাল্টাতে পারলেও জাতিসত্তাকে পাল্টাতে পারে না। যে কেউ হিন্দু থেকে খ্রিস্টান, বৌদ্ধ থেকে মুসলিম, ইহুদি থেকে শিখ ধর্মাবলম্বী হতে সক্ষম হলেও, তার জাতিসত্তা পাল্টাতে পারে না। একজন বাঙালি বিলেতে পঞ্চাশ বছর বসবাস করে ইংরেজের সমস্ত কৃষ্টি-সংস্কৃতিতে পরিপূর্ণ অভ্যস্ত এবং পারদর্শী হলেও তার পক্ষে ইংরেজ হওয়া অসম্ভব। একই ভাবে কোন জাতিসত্তার কেউ অন্য জাতিসত্তায় পরিণত হতে পারবে না। আর জাতিসত্তার ভিত্তিমূলেই ভাষা।
একমাত্র ভাষা নির্ভর নির্ভেজাল এবং যথার্থ জাতীয়তাবাদী চেতনাই পারে গণতন্ত্রকে বিকশিত করে সকল মানুষের অধিকার ও সুযোগের সাম্য তৈরী করতে। তেমন প্রত্যাশা পূরণ আমাদের ক্ষেত্রে হয় নি। বারবার তা ব্যাহত হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের যে সাংস্কৃতিক উšে§ষ ঘটেছিল তাও বারবার পথ হারিয়েছে। ভাষা আন্দোলনের চেতনার ধারাবাহিকতায় স্বাধিকার আন্দোলন এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। ভাষার দাবিটিই মুক্তিযুদ্ধকে চূড়ান্ত করেছিল। স্বাধীনতার পর সেই বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হলেও রাষ্ট্রভাষার সর্বজনীন প্রচলন ঘটে নি। বরং বৈষম্যের শিকার হয়ে বাংলা ভাষা সাধারণের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে বিত্তবান ও মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে শিক্ষা-দীক্ষা এবং ভাষা-সংস্কৃতিতে বাংলার পরিবর্তে স্থান পেয়েছে হাওলাতি বিদেশি ভাষা। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র জুড়ে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা চরম আকার ধারণ করেছে। সমষ্টিগত উন্নতির বিষয়টিকে কেউ বিবেচনায় আনছে না। এই আত্মকেন্দ্রিকতার অবসান এবং সমষ্টিগত মানুষের মুক্তির মধ্য দিয়েই সমষ্টিগত মানুষের ভাষা-সংস্কৃতি সর্বজনীন হতে পারবে। অন্য কোন বিকল্প পথ নেই।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
সামাজিক বনায়ন
দারিদ্র্য বিমোচনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ
মোস্তফা কামাল পাশা
বৃক্ষরোপণ একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে ইতোমধ্যে দেশের আপামর জনসাধারণের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও এমনটি ছিল না। এখন প্রতিবছর গাছ লাগানোর মৌসুমে গ্রাম-গঞ্জে দেখা যায় মানুষ বাজার থেকে আর দশটি পণ্যের সঙ্গে কয়েকটি গাছের চারাও হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরছে। এ চিত্র এখন দেশের প্রায় সকল গ্রামেই কম-বেশি দেখা যায়। দেশে বৃক্ষসম্পদ বৃদ্ধি ও পরিবেশ উন্নয়নের জন্য সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে প্রতিবছর দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযান পালন করা হয়। এর ফলে একদিকে জনসচেতনতা তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গাছ লাগিয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছে। এতে শুধু যে জনগণের ভাগ্যই পরিবর্তিত হচ্ছে তা নয়, দেশের পরিবেশ উন্নয়নেও এ বৃক্ষরাজি বিরাট ভূমিকা রাখছে। বৃক্ষরোপণ ও বনায়নে সাধারণ এবং দরিদ্র মানুষকে সম্পৃক্ত করার জন্য সামাজিক বনায়ন সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ। সরকারের মালিকানায় থাকা যে কোনো জমিতে কিংবা জমির মালিক স্বেচ্ছায় লিখিত চুক্তির মাধ্যমে সরকারকে এ উদ্দেশ্যে জমি অর্পণ করলে সেই জমিতে বন আইন অনুযায়ী সরকার বন সৃজন করতে পারবে। এই আইনের আওতায় সরকার সারাদেশে পতিত জমি, রাস্তার দু’পাশ এবং চাষাবাদ-অযোগ্য ভূমিতে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে দেশের বনজ সম্পদ বৃদ্ধি ও পরিবেশ সংরক্ষণের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তাকেই বলা হচ্ছে সামাজিক বনায়ন। সামাজিক বনায়নে বনের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কাজে সহায়তা করার জন্য এর পার্শ্ববর্তী লোকজনকে মালিকানা প্রদানের মাধ্যমে সম্পৃক্ত করা হয়। দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বৃক্ষ যে বিরাট অবদান রাখতে পারে তা আজ সর্বজনবিদিত। তাই একদিকে দরিদ্র জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন, অপরদিকে পরিবেশ সংরক্ষণেও সামাজিক বনায়ন আশানুরূপ অবদান রাখবে বলে পরিবেশবাদীগণ মনে করছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সামাজিক বনায়নে জনগণের অংশীদারিত্বের পরিমাণ বাড়িয়েছে। আগে সামাজিক বনায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত উপকারভোগী জনগণ ৪৫ শতাংশ বনজ সম্পদের মালিক হতো। এখন তারা ৭৫ শতাংশের মালিকানা লাভ করবে। এতে সামাজিক বনায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাধারণ মানুষ খুশি। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে জনগণকে বন ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। কারণ আমাদের মতো জনবহুল দেশে বনজ সম্পদ রক্ষা করা শুধু সরকার বা বন বিভাগের পক্ষে অনেক কঠিন কাজ। বন ব্যবস্থাপনা ও বনজ সম্পদ রক্ষায় জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা একদিকে জনগণের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করছে, অপরদিকে জনগণ বন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বনজ সম্পদকে নিজেদের সম্পদ মনে করে এর প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণে অধিকতর মনোনিবেশ করছে।
এ প্রসঙ্গে গত বছরের পয়লা জুন জাতীয় বৃক্ষমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের সরকার বিশ্বাস করে যে, শুধু বন বিভাগের স্বল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা বন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন বনের আশপাশের জনগণের বন সংরক্ষণে সার্বিক অংশগ্রহণ। জনগণের এ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সরকার রক্ষিত এলাকাসমূহে জনগণ ও সকল স্টেকহোল্ডারকে সঙ্গে নিয়ে সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম প্রসারিত করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সুন্দরবন ব্যবস্থাপনার জন্যও একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করে ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ বনজ সম্পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই বিপুল বনজ সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। এর পাশাপাশি বিশাল জনগোষ্ঠীকে এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তাদের বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে এ ধরনের প্রত্যক্ষ অবদান একটি বিরল ঘটনা। পূর্বে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে শুধু ব্যক্তিকে সম্পৃক্ত করা হতো। এখন সহ-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। এতে এলাকার জনগণের মাঝে বনের প্রতি একটি সহমর্মিতা, সচেতনতা এবং মালিকানা বোধ সৃষ্টি হয়েছে। সহ-ব্যবস্থাপনা প্রবর্তিত বনাঞ্চলের সামগ্রিক চিত্র এখন পূর্বের চেয়ে ভিন্ন। বন সংরক্ষণে সহ-ব্যবস্থাপনার কর্মীগণ প্রবলভাবে উদ্বুদ্ধ ও নিবেদিত। বন সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে কমিউনিটির দু’জন সদস্য বনদস্যুদের আক্রমণে প্রাণ পর্যন্ত হারিয়েছেন। বন সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে বন বিভাগ এ সরকারের আমলে অনেক ধরনের পদক্ষেপ ও প্রচেষ্টা গ্রহণ করে যাচ্ছে। বন সংরক্ষণের সকল আইন ও বিধিমালা যুগোপযোগী করাও এসব পদক্ষেপের একটি অংশ। সব ধরনের পদক্ষেপের মধ্যে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে জনগণকে বন সংরক্ষণে সম্পৃক্ত করা সবচেয়ে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হয়েছে। বন বিভাগ সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৭৬ হাজার ৬২২ হেক্টর ভূমি ও ৫৫ হাজার ৩৯৮ কিলোমিটার স্ট্রিপ সৃজন করেছে। সৃজিত বাগানে প্রায় পাঁচ লাখ উপকারভোগী সম্পৃক্ত আছে। সামাজিক বনায়ন বিধিমালা অনুযায়ী সামাজিক বন থেকে প্রথম ৭ বছর পর্যন্ত প্র“নিং ও থিনিংকালে কর্তিত বৃক্ষ, ফলদ বৃক্ষের ফল, উৎপাদিত কৃষি ফসল ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত সকল আয় সম্পূর্ণরূপে উপকারভোগীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। সামাজিক বনায়নের আওতায় ইতোমধ্যে ৯ হাজার ৪৯৬ কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান এবং ২০ হাজার ৮৩৪ হেক্টর বাগান থেকে আহরিত বনজ দ্রব্য নিলামে বিক্রির অর্থ হতে ৯৪ হাজার ২০০ জন উপকারভোগীকে তাদের প্রাপ্য লভ্যাংশ হিসেবে ১৫৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া এসব বনজ দ্রব্য বিক্রির মাধ্যমে ১৫৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা রাজস্ব হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে এবং ৩৪ কোটি টাকা বৃক্ষরোপণ তহবিলে জমা হয়েছে। সামাজিক বনায়ন বিধিমালা সংশোধনের মাধ্যমে অংশীদারদের আইনগত স্বীকৃতি প্রদান এবং অংশীদারিত্বমূলক লভ্যাংশ বণ্টন চুক্তিনামা সম্পাদন ও বৃক্ষরোপণ তহবিল গঠনের ফলে জনগণের আর্থিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে জনগণই হবে সামাজিক বনায়নের মূল চালিকাশক্তি যা হবে দেশের হতদরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের এক কার্যকর চাবিকাঠি।
লেখক: কলামিস্ট