Year-20 # Issue-30 # 8 September 2013

সর্বাত্নক প্রতিরোধে যাবে বিএনপি
দেশি-বিদেশি চাপ মানতে নারাজ খালেদা জিয়া
শফিউল আলম দোলন ও মাহমুদ আজহার
সরকার সংসদ বহাল রেখে একতরফা নির্বাচনে গেলে সর্বাত্মক প্রতিরোধ আন্দোলনে যাবে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশি-বিদেশি কোনো চাপেই সরকারের অধীনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নির্বাচনে যেতে নারাজ। গত মঙ্গলবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, সবাইকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। তার আগের দুই দিনই রাতের বেলায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে অনির্ধারিতভাবে বৈঠক করেন তিনি। এসব বৈঠকেও সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষকে এ আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট অপেক্ষা করছে দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার। গতকাল রাতেও অপর একটি পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এ ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, কিছুতেই তা হতে দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকার বাইরে জনসভা শুরু করবেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। নরসিংদীতে অনুষ্ঠেয় প্রথম জনসভায় তিনি দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে সর্বাত্দক প্রতিরোধে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাবেন দেশবাসীকে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই তিনি পর্যায়ক্রমে দেশের সাতটি বিভাগের জনসভাতেই সাধারণ মানুষের সমর্থন চাইবেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে। ঈদুল আজহার পর অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামের জনসভা। এরপরই ঢাকায় অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত আহ্বান জানাবেন বেগম খালেদা জিয়া। সে সমাবেশ থেকেই দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করবেন বিরোধীদলীয় নেতা। এর আগ পর্যন্ত সারা দেশে সভা-সমাবেশ আর জনসংযোগের মাধ্যমে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাবে বিরোধী দল। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার যদি এ ধরনের আত্দঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না আসে, তবে তার পরিণতি শুভ হবে না। বরং রাজনৈতিক দল হিসেবেই আওয়ামী লীগ তার অস্তিত্ব হারাবে। আর দেশ যদি কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ বা নৈরাজ্যের স্বীকার হয়, তবে তারও সমস্ত দায়-দায়িত্ব এ সরকারকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের রীতি নেই। দেশে-বিদেশে কারও কাছেই এ ধরনের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো করবেই না, বরং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা রুখে দেবে। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সরকার যদি এ ধরনের নির্বাচন থেকে সরে না আসে তবে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। যে কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ, নৈরাজ্য আর অস্থিরতার জন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ জনগণ এই ধরনের নির্বাচন কিছুতেই হতে দেবে না। কারণ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে স্বপ্ন আওয়ামী লীগ দেখছে তা পূরণ হলে বাংলাদেশের অপমৃত্যু হবে। তিনি আরও বলেন, এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মানুষের এই দাবি পূরণ করতে- আওয়ামী লীগের নীলনকশার নির্বাচন বিএনপি কখনো হতে দেবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পাকা ব্যবস্থা করে রেখেছে। তারা সব দলকে বাইরে রেখে এককভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিএনপি স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ও দলের নীতি-নির্ধারক তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের পাতানো ফাঁদে আর পা দেবে না বিএনপি। এ ধরনের নির্বাচন জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক- কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রহসনের এই নির্বাচন রুখে দাঁড়াতে হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান আশা করেন- শেষ মুহূর্তে হলেও সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেশের মানুষকে ভয়াবহ সংঘাত-সংঘর্ষের মুখে ঠেলে দেওয়ার আগে সরকার অন্তত আরেকবার ভেবে দেখবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে- যাতে রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে পাখি উড়ে যেতেও ভয় পায়। কারণ এই আওয়ামী লীগ সহজেই ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্যই আজ তারা জনমতকে উপেক্ষা করে এই ধরনের নীলনকশার নির্বাচনের আয়োজন করেছে। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের এই চক্রান্ত কিছুতেই বাস্তবায়ন হতে দেবে না। 
চাপ মানতে নারাজ খালেদা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকার প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিক মহল বিএনপিকে নির্বাচনমুখী হওয়ার চাপ দিচ্ছে। দেশের মধ্য থেকেও নানাভাবে বিএনপিকে নির্বাচনের পথে হাঁটার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলো, সম্প্রতি পরপর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে। ওইসব নির্বাচনে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মহল বিশেষ দাবি করছে। অবশ্য বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা আগামী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি কূটনৈতিক মহলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যত চাপই আসুক না কেন কোনো চাপেই শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশি-বিদেশি চাপ থাকুক আর নাই থাকুক, আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ইতোমধ্যেই দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। অনেকেই বলে থাকেন, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন তো দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে এবং সেখানে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু আমরা বলছি, সেটা ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সরকার বদলের নির্বাচন না। বিএনপি কোনো পাতা ফাঁদে পা দেবে না। 
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরা। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন। কিন্তু দুই দলই নিজেদের অনড় অবস্থান তাদের জানিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টদের বোঝানো হচ্ছে- পাঁচটি সিটি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলেও সুষ্ঠু হয়েছে। সেখানে বিএনপি বিজয়ী হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রভাব বিস্তার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহলের এসব বক্তব্য বিএনপির কাছে তুলে ধরে তাদের নির্বাচনমুখী হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরা। বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপিকে ট্র্যাপে ফেলতে সরকার নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কূটনৈতিকদের দিয়ে বিএনপিকে বুঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলেও বিএনপির বিজয় নিশ্চিত। যার প্রমাণ পরপর পাঁচটি সিটি নির্বাচনের বিজয়। তাছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও শক্তিশালী গণমাধ্যমের সরব ভূমিকার কারণে কোনো ধরনের কারচুপি কিংবা নির্বাচনী ফলাফল পাল্টানোর সুযোগও থাকবে না। নেতারা জানান, অতীতের মতো আর এ ধরনের পাতা ফাঁদে পা দেবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। এ জন্য প্রয়োজনে রাজপথের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে। দলের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত নির্বাচনের মতো একই ভুল বিএনপি করবে না। সে সময়কার সরকারের তৈরি করা একটি ভিত্তিহীন জরিপ একটি পত্রিকায় প্রকাশ করে বিএনপির ওপর শরিকরা চাপ সৃষ্টি করেছিল। একইভাবে বিদেশিদেরও চাপ ছিল তীব্র। এবারও একইভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে কূটনৈতিক মহল চাপ দিচ্ছে এ কথা বলা ঠিক হবে না। তবে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো চাচ্ছে নির্বাচন প্রধান দুই দল নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সংলাপে বসুক। সংলাপে না বসলে দেশ সংঘাতের দিকে যাবে এমন আশঙ্কাও কূটনীতিকদের। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। 
খালেদাকে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না: এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না এবং হতেও দেব না। নির্বাচন হতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে। যাতে করে দেশের সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারে। অন্যথায় দলীয় সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কারণ ডিসি-এসপিসহ সব প্রশাসন থাকবে তাদের অধীনে। তাদের কথায় চলবে সব কিছু। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তিনি বলেন, সরকারকে অনেক সময় দিয়েছি, আর নয়। আমরা জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করব। সার্বিক পরিস্থিতি তাদের সামনে তুলে ধরব। গতকাল গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/09/05/14484#sthash.RZKpMznl.dpuf
সর্বাত্নক প্রতিরোধে যাবে বিএনপি
দেশি-বিদেশি চাপ মানতে নারাজ খালেদা জিয়া
শফিউল আলম দোলন ও মাহমুদ আজহার
সরকার সংসদ বহাল রেখে একতরফা নির্বাচনে গেলে সর্বাত্মক প্রতিরোধ আন্দোলনে যাবে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশি-বিদেশি কোনো চাপেই সরকারের অধীনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নির্বাচনে যেতে নারাজ। গত মঙ্গলবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, সবাইকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। তার আগের দুই দিনই রাতের বেলায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে অনির্ধারিতভাবে বৈঠক করেন তিনি। এসব বৈঠকেও সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষকে এ আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট অপেক্ষা করছে দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার। গতকাল রাতেও অপর একটি পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এ ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, কিছুতেই তা হতে দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকার বাইরে জনসভা শুরু করবেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। নরসিংদীতে অনুষ্ঠেয় প্রথম জনসভায় তিনি দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে সর্বাত্দক প্রতিরোধে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাবেন দেশবাসীকে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই তিনি পর্যায়ক্রমে দেশের সাতটি বিভাগের জনসভাতেই সাধারণ মানুষের সমর্থন চাইবেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে। ঈদুল আজহার পর অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামের জনসভা। এরপরই ঢাকায় অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত আহ্বান জানাবেন বেগম খালেদা জিয়া। সে সমাবেশ থেকেই দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করবেন বিরোধীদলীয় নেতা। এর আগ পর্যন্ত সারা দেশে সভা-সমাবেশ আর জনসংযোগের মাধ্যমে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাবে বিরোধী দল। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার যদি এ ধরনের আত্দঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না আসে, তবে তার পরিণতি শুভ হবে না। বরং রাজনৈতিক দল হিসেবেই আওয়ামী লীগ তার অস্তিত্ব হারাবে। আর দেশ যদি কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ বা নৈরাজ্যের স্বীকার হয়, তবে তারও সমস্ত দায়-দায়িত্ব এ সরকারকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের রীতি নেই। দেশে-বিদেশে কারও কাছেই এ ধরনের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো করবেই না, বরং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা রুখে দেবে। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সরকার যদি এ ধরনের নির্বাচন থেকে সরে না আসে তবে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। যে কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ, নৈরাজ্য আর অস্থিরতার জন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ জনগণ এই ধরনের নির্বাচন কিছুতেই হতে দেবে না। কারণ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে স্বপ্ন আওয়ামী লীগ দেখছে তা পূরণ হলে বাংলাদেশের অপমৃত্যু হবে। তিনি আরও বলেন, এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মানুষের এই দাবি পূরণ করতে- আওয়ামী লীগের নীলনকশার নির্বাচন বিএনপি কখনো হতে দেবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পাকা ব্যবস্থা করে রেখেছে। তারা সব দলকে বাইরে রেখে এককভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিএনপি স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ও দলের নীতি-নির্ধারক তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের পাতানো ফাঁদে আর পা দেবে না বিএনপি। এ ধরনের নির্বাচন জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক- কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রহসনের এই নির্বাচন রুখে দাঁড়াতে হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান আশা করেন- শেষ মুহূর্তে হলেও সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেশের মানুষকে ভয়াবহ সংঘাত-সংঘর্ষের মুখে ঠেলে দেওয়ার আগে সরকার অন্তত আরেকবার ভেবে দেখবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে- যাতে রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে পাখি উড়ে যেতেও ভয় পায়। কারণ এই আওয়ামী লীগ সহজেই ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্যই আজ তারা জনমতকে উপেক্ষা করে এই ধরনের নীলনকশার নির্বাচনের আয়োজন করেছে। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের এই চক্রান্ত কিছুতেই বাস্তবায়ন হতে দেবে না। 
চাপ মানতে নারাজ খালেদা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকার প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিক মহল বিএনপিকে নির্বাচনমুখী হওয়ার চাপ দিচ্ছে। দেশের মধ্য থেকেও নানাভাবে বিএনপিকে নির্বাচনের পথে হাঁটার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলো, সম্প্রতি পরপর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে। ওইসব নির্বাচনে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মহল বিশেষ দাবি করছে। অবশ্য বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা আগামী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি কূটনৈতিক মহলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যত চাপই আসুক না কেন কোনো চাপেই শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশি-বিদেশি চাপ থাকুক আর নাই থাকুক, আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ইতোমধ্যেই দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। অনেকেই বলে থাকেন, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন তো দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে এবং সেখানে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু আমরা বলছি, সেটা ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সরকার বদলের নির্বাচন না। বিএনপি কোনো পাতা ফাঁদে পা দেবে না। 
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরা। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন। কিন্তু দুই দলই নিজেদের অনড় অবস্থান তাদের জানিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টদের বোঝানো হচ্ছে- পাঁচটি সিটি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলেও সুষ্ঠু হয়েছে। সেখানে বিএনপি বিজয়ী হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রভাব বিস্তার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহলের এসব বক্তব্য বিএনপির কাছে তুলে ধরে তাদের নির্বাচনমুখী হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরা। বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপিকে ট্র্যাপে ফেলতে সরকার নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কূটনৈতিকদের দিয়ে বিএনপিকে বুঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলেও বিএনপির বিজয় নিশ্চিত। যার প্রমাণ পরপর পাঁচটি সিটি নির্বাচনের বিজয়। তাছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও শক্তিশালী গণমাধ্যমের সরব ভূমিকার কারণে কোনো ধরনের কারচুপি কিংবা নির্বাচনী ফলাফল পাল্টানোর সুযোগও থাকবে না। নেতারা জানান, অতীতের মতো আর এ ধরনের পাতা ফাঁদে পা দেবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। এ জন্য প্রয়োজনে রাজপথের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে। দলের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত নির্বাচনের মতো একই ভুল বিএনপি করবে না। সে সময়কার সরকারের তৈরি করা একটি ভিত্তিহীন জরিপ একটি পত্রিকায় প্রকাশ করে বিএনপির ওপর শরিকরা চাপ সৃষ্টি করেছিল। একইভাবে বিদেশিদেরও চাপ ছিল তীব্র। এবারও একইভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে কূটনৈতিক মহল চাপ দিচ্ছে এ কথা বলা ঠিক হবে না। তবে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো চাচ্ছে নির্বাচন প্রধান দুই দল নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সংলাপে বসুক। সংলাপে না বসলে দেশ সংঘাতের দিকে যাবে এমন আশঙ্কাও কূটনীতিকদের। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। 
খালেদাকে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না: এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না এবং হতেও দেব না। নির্বাচন হতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে। যাতে করে দেশের সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারে। অন্যথায় দলীয় সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কারণ ডিসি-এসপিসহ সব প্রশাসন থাকবে তাদের অধীনে। তাদের কথায় চলবে সব কিছু। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তিনি বলেন, সরকারকে অনেক সময় দিয়েছি, আর নয়। আমরা জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করব। সার্বিক পরিস্থিতি তাদের সামনে তুলে ধরব। গতকাল গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/09/05/14484#sthash.RZKpMznl.dpuf
সর্বাত্নক প্রতিরোধে যাবে বিএনপি
দেশি-বিদেশি চাপ মানতে নারাজ খালেদা জিয়া
শফিউল আলম দোলন ও মাহমুদ আজহার
সরকার সংসদ বহাল রেখে একতরফা নির্বাচনে গেলে সর্বাত্মক প্রতিরোধ আন্দোলনে যাবে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশি-বিদেশি কোনো চাপেই সরকারের অধীনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নির্বাচনে যেতে নারাজ। গত মঙ্গলবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, সবাইকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। তার আগের দুই দিনই রাতের বেলায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে অনির্ধারিতভাবে বৈঠক করেন তিনি। এসব বৈঠকেও সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষকে এ আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট অপেক্ষা করছে দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার। গতকাল রাতেও অপর একটি পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এ ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, কিছুতেই তা হতে দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকার বাইরে জনসভা শুরু করবেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। নরসিংদীতে অনুষ্ঠেয় প্রথম জনসভায় তিনি দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে সর্বাত্দক প্রতিরোধে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাবেন দেশবাসীকে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই তিনি পর্যায়ক্রমে দেশের সাতটি বিভাগের জনসভাতেই সাধারণ মানুষের সমর্থন চাইবেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে। ঈদুল আজহার পর অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামের জনসভা। এরপরই ঢাকায় অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত আহ্বান জানাবেন বেগম খালেদা জিয়া। সে সমাবেশ থেকেই দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করবেন বিরোধীদলীয় নেতা। এর আগ পর্যন্ত সারা দেশে সভা-সমাবেশ আর জনসংযোগের মাধ্যমে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাবে বিরোধী দল। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার যদি এ ধরনের আত্দঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না আসে, তবে তার পরিণতি শুভ হবে না। বরং রাজনৈতিক দল হিসেবেই আওয়ামী লীগ তার অস্তিত্ব হারাবে। আর দেশ যদি কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ বা নৈরাজ্যের স্বীকার হয়, তবে তারও সমস্ত দায়-দায়িত্ব এ সরকারকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের রীতি নেই। দেশে-বিদেশে কারও কাছেই এ ধরনের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো করবেই না, বরং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা রুখে দেবে। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সরকার যদি এ ধরনের নির্বাচন থেকে সরে না আসে তবে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। যে কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ, নৈরাজ্য আর অস্থিরতার জন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ জনগণ এই ধরনের নির্বাচন কিছুতেই হতে দেবে না। কারণ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে স্বপ্ন আওয়ামী লীগ দেখছে তা পূরণ হলে বাংলাদেশের অপমৃত্যু হবে। তিনি আরও বলেন, এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মানুষের এই দাবি পূরণ করতে- আওয়ামী লীগের নীলনকশার নির্বাচন বিএনপি কখনো হতে দেবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পাকা ব্যবস্থা করে রেখেছে। তারা সব দলকে বাইরে রেখে এককভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিএনপি স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ও দলের নীতি-নির্ধারক তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের পাতানো ফাঁদে আর পা দেবে না বিএনপি। এ ধরনের নির্বাচন জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক- কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রহসনের এই নির্বাচন রুখে দাঁড়াতে হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান আশা করেন- শেষ মুহূর্তে হলেও সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেশের মানুষকে ভয়াবহ সংঘাত-সংঘর্ষের মুখে ঠেলে দেওয়ার আগে সরকার অন্তত আরেকবার ভেবে দেখবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে- যাতে রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে পাখি উড়ে যেতেও ভয় পায়। কারণ এই আওয়ামী লীগ সহজেই ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্যই আজ তারা জনমতকে উপেক্ষা করে এই ধরনের নীলনকশার নির্বাচনের আয়োজন করেছে। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের এই চক্রান্ত কিছুতেই বাস্তবায়ন হতে দেবে না। 
চাপ মানতে নারাজ খালেদা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকার প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিক মহল বিএনপিকে নির্বাচনমুখী হওয়ার চাপ দিচ্ছে। দেশের মধ্য থেকেও নানাভাবে বিএনপিকে নির্বাচনের পথে হাঁটার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলো, সম্প্রতি পরপর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে। ওইসব নির্বাচনে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মহল বিশেষ দাবি করছে। অবশ্য বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা আগামী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি কূটনৈতিক মহলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যত চাপই আসুক না কেন কোনো চাপেই শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশি-বিদেশি চাপ থাকুক আর নাই থাকুক, আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ইতোমধ্যেই দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। অনেকেই বলে থাকেন, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন তো দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে এবং সেখানে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু আমরা বলছি, সেটা ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সরকার বদলের নির্বাচন না। বিএনপি কোনো পাতা ফাঁদে পা দেবে না। 
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরা। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন। কিন্তু দুই দলই নিজেদের অনড় অবস্থান তাদের জানিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টদের বোঝানো হচ্ছে- পাঁচটি সিটি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলেও সুষ্ঠু হয়েছে। সেখানে বিএনপি বিজয়ী হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রভাব বিস্তার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহলের এসব বক্তব্য বিএনপির কাছে তুলে ধরে তাদের নির্বাচনমুখী হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরা। বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপিকে ট্র্যাপে ফেলতে সরকার নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কূটনৈতিকদের দিয়ে বিএনপিকে বুঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলেও বিএনপির বিজয় নিশ্চিত। যার প্রমাণ পরপর পাঁচটি সিটি নির্বাচনের বিজয়। তাছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও শক্তিশালী গণমাধ্যমের সরব ভূমিকার কারণে কোনো ধরনের কারচুপি কিংবা নির্বাচনী ফলাফল পাল্টানোর সুযোগও থাকবে না। নেতারা জানান, অতীতের মতো আর এ ধরনের পাতা ফাঁদে পা দেবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। এ জন্য প্রয়োজনে রাজপথের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে। দলের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত নির্বাচনের মতো একই ভুল বিএনপি করবে না। সে সময়কার সরকারের তৈরি করা একটি ভিত্তিহীন জরিপ একটি পত্রিকায় প্রকাশ করে বিএনপির ওপর শরিকরা চাপ সৃষ্টি করেছিল। একইভাবে বিদেশিদেরও চাপ ছিল তীব্র। এবারও একইভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে কূটনৈতিক মহল চাপ দিচ্ছে এ কথা বলা ঠিক হবে না। তবে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো চাচ্ছে নির্বাচন প্রধান দুই দল নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সংলাপে বসুক। সংলাপে না বসলে দেশ সংঘাতের দিকে যাবে এমন আশঙ্কাও কূটনীতিকদের। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। 
খালেদাকে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না: এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না এবং হতেও দেব না। নির্বাচন হতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে। যাতে করে দেশের সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারে। অন্যথায় দলীয় সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কারণ ডিসি-এসপিসহ সব প্রশাসন থাকবে তাদের অধীনে। তাদের কথায় চলবে সব কিছু। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তিনি বলেন, সরকারকে অনেক সময় দিয়েছি, আর নয়। আমরা জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করব। সার্বিক পরিস্থিতি তাদের সামনে তুলে ধরব। গতকাল গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/09/05/14484#sthash.RZKpMznl.dpuf
সর্বাত্নক প্রতিরোধে যাবে বিএনপি
দেশি-বিদেশি চাপ মানতে নারাজ খালেদা জিয়া
শফিউল আলম দোলন ও মাহমুদ আজহার
সরকার সংসদ বহাল রেখে একতরফা নির্বাচনে গেলে সর্বাত্মক প্রতিরোধ আন্দোলনে যাবে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশি-বিদেশি কোনো চাপেই সরকারের অধীনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নির্বাচনে যেতে নারাজ। গত মঙ্গলবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, সবাইকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। তার আগের দুই দিনই রাতের বেলায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে অনির্ধারিতভাবে বৈঠক করেন তিনি। এসব বৈঠকেও সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষকে এ আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট অপেক্ষা করছে দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার। গতকাল রাতেও অপর একটি পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এ ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, কিছুতেই তা হতে দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকার বাইরে জনসভা শুরু করবেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। নরসিংদীতে অনুষ্ঠেয় প্রথম জনসভায় তিনি দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে সর্বাত্দক প্রতিরোধে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাবেন দেশবাসীকে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই তিনি পর্যায়ক্রমে দেশের সাতটি বিভাগের জনসভাতেই সাধারণ মানুষের সমর্থন চাইবেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে। ঈদুল আজহার পর অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামের জনসভা। এরপরই ঢাকায় অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত আহ্বান জানাবেন বেগম খালেদা জিয়া। সে সমাবেশ থেকেই দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করবেন বিরোধীদলীয় নেতা। এর আগ পর্যন্ত সারা দেশে সভা-সমাবেশ আর জনসংযোগের মাধ্যমে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাবে বিরোধী দল। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার যদি এ ধরনের আত্দঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না আসে, তবে তার পরিণতি শুভ হবে না। বরং রাজনৈতিক দল হিসেবেই আওয়ামী লীগ তার অস্তিত্ব হারাবে। আর দেশ যদি কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ বা নৈরাজ্যের স্বীকার হয়, তবে তারও সমস্ত দায়-দায়িত্ব এ সরকারকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের রীতি নেই। দেশে-বিদেশে কারও কাছেই এ ধরনের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো করবেই না, বরং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা রুখে দেবে। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সরকার যদি এ ধরনের নির্বাচন থেকে সরে না আসে তবে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। যে কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ, নৈরাজ্য আর অস্থিরতার জন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ জনগণ এই ধরনের নির্বাচন কিছুতেই হতে দেবে না। কারণ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে স্বপ্ন আওয়ামী লীগ দেখছে তা পূরণ হলে বাংলাদেশের অপমৃত্যু হবে। তিনি আরও বলেন, এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মানুষের এই দাবি পূরণ করতে- আওয়ামী লীগের নীলনকশার নির্বাচন বিএনপি কখনো হতে দেবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পাকা ব্যবস্থা করে রেখেছে। তারা সব দলকে বাইরে রেখে এককভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিএনপি স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ও দলের নীতি-নির্ধারক তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের পাতানো ফাঁদে আর পা দেবে না বিএনপি। এ ধরনের নির্বাচন জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক- কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রহসনের এই নির্বাচন রুখে দাঁড়াতে হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান আশা করেন- শেষ মুহূর্তে হলেও সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেশের মানুষকে ভয়াবহ সংঘাত-সংঘর্ষের মুখে ঠেলে দেওয়ার আগে সরকার অন্তত আরেকবার ভেবে দেখবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে- যাতে রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে পাখি উড়ে যেতেও ভয় পায়। কারণ এই আওয়ামী লীগ সহজেই ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্যই আজ তারা জনমতকে উপেক্ষা করে এই ধরনের নীলনকশার নির্বাচনের আয়োজন করেছে। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের এই চক্রান্ত কিছুতেই বাস্তবায়ন হতে দেবে না। 
চাপ মানতে নারাজ খালেদা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকার প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিক মহল বিএনপিকে নির্বাচনমুখী হওয়ার চাপ দিচ্ছে। দেশের মধ্য থেকেও নানাভাবে বিএনপিকে নির্বাচনের পথে হাঁটার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলো, সম্প্রতি পরপর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে। ওইসব নির্বাচনে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মহল বিশেষ দাবি করছে। অবশ্য বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা আগামী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি কূটনৈতিক মহলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যত চাপই আসুক না কেন কোনো চাপেই শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশি-বিদেশি চাপ থাকুক আর নাই থাকুক, আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ইতোমধ্যেই দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। অনেকেই বলে থাকেন, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন তো দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে এবং সেখানে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু আমরা বলছি, সেটা ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সরকার বদলের নির্বাচন না। বিএনপি কোনো পাতা ফাঁদে পা দেবে না। 
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরা। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন। কিন্তু দুই দলই নিজেদের অনড় অবস্থান তাদের জানিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টদের বোঝানো হচ্ছে- পাঁচটি সিটি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলেও সুষ্ঠু হয়েছে। সেখানে বিএনপি বিজয়ী হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রভাব বিস্তার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহলের এসব বক্তব্য বিএনপির কাছে তুলে ধরে তাদের নির্বাচনমুখী হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরা। বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপিকে ট্র্যাপে ফেলতে সরকার নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কূটনৈতিকদের দিয়ে বিএনপিকে বুঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলেও বিএনপির বিজয় নিশ্চিত। যার প্রমাণ পরপর পাঁচটি সিটি নির্বাচনের বিজয়। তাছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও শক্তিশালী গণমাধ্যমের সরব ভূমিকার কারণে কোনো ধরনের কারচুপি কিংবা নির্বাচনী ফলাফল পাল্টানোর সুযোগও থাকবে না। নেতারা জানান, অতীতের মতো আর এ ধরনের পাতা ফাঁদে পা দেবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। এ জন্য প্রয়োজনে রাজপথের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে। দলের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত নির্বাচনের মতো একই ভুল বিএনপি করবে না। সে সময়কার সরকারের তৈরি করা একটি ভিত্তিহীন জরিপ একটি পত্রিকায় প্রকাশ করে বিএনপির ওপর শরিকরা চাপ সৃষ্টি করেছিল। একইভাবে বিদেশিদেরও চাপ ছিল তীব্র। এবারও একইভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে কূটনৈতিক মহল চাপ দিচ্ছে এ কথা বলা ঠিক হবে না। তবে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো চাচ্ছে নির্বাচন প্রধান দুই দল নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সংলাপে বসুক। সংলাপে না বসলে দেশ সংঘাতের দিকে যাবে এমন আশঙ্কাও কূটনীতিকদের। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। 
খালেদাকে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না: এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না এবং হতেও দেব না। নির্বাচন হতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে। যাতে করে দেশের সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারে। অন্যথায় দলীয় সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কারণ ডিসি-এসপিসহ সব প্রশাসন থাকবে তাদের অধীনে। তাদের কথায় চলবে সব কিছু। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তিনি বলেন, সরকারকে অনেক সময় দিয়েছি, আর নয়। আমরা জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করব। সার্বিক পরিস্থিতি তাদের সামনে তুলে ধরব। গতকাল গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/09/05/14484#sthash.RZKpMznl.dpuf
সর্বাত্নক প্রতিরোধে যাবে বিএনপি
দেশি-বিদেশি চাপ মানতে নারাজ খালেদা জিয়া
শফিউল আলম দোলন ও মাহমুদ আজহার
সরকার সংসদ বহাল রেখে একতরফা নির্বাচনে গেলে সর্বাত্মক প্রতিরোধ আন্দোলনে যাবে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশি-বিদেশি কোনো চাপেই সরকারের অধীনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নির্বাচনে যেতে নারাজ। গত মঙ্গলবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, সবাইকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। তার আগের দুই দিনই রাতের বেলায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে অনির্ধারিতভাবে বৈঠক করেন তিনি। এসব বৈঠকেও সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষকে এ আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট অপেক্ষা করছে দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার। গতকাল রাতেও অপর একটি পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এ ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, কিছুতেই তা হতে দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকার বাইরে জনসভা শুরু করবেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। নরসিংদীতে অনুষ্ঠেয় প্রথম জনসভায় তিনি দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে সর্বাত্দক প্রতিরোধে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাবেন দেশবাসীকে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই তিনি পর্যায়ক্রমে দেশের সাতটি বিভাগের জনসভাতেই সাধারণ মানুষের সমর্থন চাইবেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে। ঈদুল আজহার পর অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামের জনসভা। এরপরই ঢাকায় অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত আহ্বান জানাবেন বেগম খালেদা জিয়া। সে সমাবেশ থেকেই দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করবেন বিরোধীদলীয় নেতা। এর আগ পর্যন্ত সারা দেশে সভা-সমাবেশ আর জনসংযোগের মাধ্যমে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাবে বিরোধী দল। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার যদি এ ধরনের আত্দঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না আসে, তবে তার পরিণতি শুভ হবে না। বরং রাজনৈতিক দল হিসেবেই আওয়ামী লীগ তার অস্তিত্ব হারাবে। আর দেশ যদি কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ বা নৈরাজ্যের স্বীকার হয়, তবে তারও সমস্ত দায়-দায়িত্ব এ সরকারকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের রীতি নেই। দেশে-বিদেশে কারও কাছেই এ ধরনের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো করবেই না, বরং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা রুখে দেবে। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সরকার যদি এ ধরনের নির্বাচন থেকে সরে না আসে তবে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। যে কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ, নৈরাজ্য আর অস্থিরতার জন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ জনগণ এই ধরনের নির্বাচন কিছুতেই হতে দেবে না। কারণ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে স্বপ্ন আওয়ামী লীগ দেখছে তা পূরণ হলে বাংলাদেশের অপমৃত্যু হবে। তিনি আরও বলেন, এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মানুষের এই দাবি পূরণ করতে- আওয়ামী লীগের নীলনকশার নির্বাচন বিএনপি কখনো হতে দেবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পাকা ব্যবস্থা করে রেখেছে। তারা সব দলকে বাইরে রেখে এককভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিএনপি স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ও দলের নীতি-নির্ধারক তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের পাতানো ফাঁদে আর পা দেবে না বিএনপি। এ ধরনের নির্বাচন জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক- কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রহসনের এই নির্বাচন রুখে দাঁড়াতে হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান আশা করেন- শেষ মুহূর্তে হলেও সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেশের মানুষকে ভয়াবহ সংঘাত-সংঘর্ষের মুখে ঠেলে দেওয়ার আগে সরকার অন্তত আরেকবার ভেবে দেখবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে- যাতে রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে পাখি উড়ে যেতেও ভয় পায়। কারণ এই আওয়ামী লীগ সহজেই ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্যই আজ তারা জনমতকে উপেক্ষা করে এই ধরনের নীলনকশার নির্বাচনের আয়োজন করেছে। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের এই চক্রান্ত কিছুতেই বাস্তবায়ন হতে দেবে না। 
চাপ মানতে নারাজ খালেদা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকার প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিক মহল বিএনপিকে নির্বাচনমুখী হওয়ার চাপ দিচ্ছে। দেশের মধ্য থেকেও নানাভাবে বিএনপিকে নির্বাচনের পথে হাঁটার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলো, সম্প্রতি পরপর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে। ওইসব নির্বাচনে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মহল বিশেষ দাবি করছে। অবশ্য বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা আগামী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি কূটনৈতিক মহলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যত চাপই আসুক না কেন কোনো চাপেই শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশি-বিদেশি চাপ থাকুক আর নাই থাকুক, আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ইতোমধ্যেই দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। অনেকেই বলে থাকেন, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন তো দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে এবং সেখানে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু আমরা বলছি, সেটা ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সরকার বদলের নির্বাচন না। বিএনপি কোনো পাতা ফাঁদে পা দেবে না। 
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরা। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন। কিন্তু দুই দলই নিজেদের অনড় অবস্থান তাদের জানিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টদের বোঝানো হচ্ছে- পাঁচটি সিটি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলেও সুষ্ঠু হয়েছে। সেখানে বিএনপি বিজয়ী হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রভাব বিস্তার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহলের এসব বক্তব্য বিএনপির কাছে তুলে ধরে তাদের নির্বাচনমুখী হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরা। বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপিকে ট্র্যাপে ফেলতে সরকার নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কূটনৈতিকদের দিয়ে বিএনপিকে বুঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলেও বিএনপির বিজয় নিশ্চিত। যার প্রমাণ পরপর পাঁচটি সিটি নির্বাচনের বিজয়। তাছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও শক্তিশালী গণমাধ্যমের সরব ভূমিকার কারণে কোনো ধরনের কারচুপি কিংবা নির্বাচনী ফলাফল পাল্টানোর সুযোগও থাকবে না। নেতারা জানান, অতীতের মতো আর এ ধরনের পাতা ফাঁদে পা দেবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। এ জন্য প্রয়োজনে রাজপথের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে। দলের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত নির্বাচনের মতো একই ভুল বিএনপি করবে না। সে সময়কার সরকারের তৈরি করা একটি ভিত্তিহীন জরিপ একটি পত্রিকায় প্রকাশ করে বিএনপির ওপর শরিকরা চাপ সৃষ্টি করেছিল। একইভাবে বিদেশিদেরও চাপ ছিল তীব্র। এবারও একইভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে কূটনৈতিক মহল চাপ দিচ্ছে এ কথা বলা ঠিক হবে না। তবে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো চাচ্ছে নির্বাচন প্রধান দুই দল নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সংলাপে বসুক। সংলাপে না বসলে দেশ সংঘাতের দিকে যাবে এমন আশঙ্কাও কূটনীতিকদের। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। 
খালেদাকে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না: এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না এবং হতেও দেব না। নির্বাচন হতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে। যাতে করে দেশের সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারে। অন্যথায় দলীয় সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কারণ ডিসি-এসপিসহ সব প্রশাসন থাকবে তাদের অধীনে। তাদের কথায় চলবে সব কিছু। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তিনি বলেন, সরকারকে অনেক সময় দিয়েছি, আর নয়। আমরা জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করব। সার্বিক পরিস্থিতি তাদের সামনে তুলে ধরব। গতকাল গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/09/05/14484#sthash.RZKpMznl.dpuf
সর্বাত্নক প্রতিরোধে যাবে বিএনপি
দেশি-বিদেশি চাপ মানতে নারাজ খালেদা জিয়া
শফিউল আলম দোলন ও মাহমুদ আজহার
সরকার সংসদ বহাল রেখে একতরফা নির্বাচনে গেলে সর্বাত্মক প্রতিরোধ আন্দোলনে যাবে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশি-বিদেশি কোনো চাপেই সরকারের অধীনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নির্বাচনে যেতে নারাজ। গত মঙ্গলবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, সবাইকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। তার আগের দুই দিনই রাতের বেলায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে অনির্ধারিতভাবে বৈঠক করেন তিনি। এসব বৈঠকেও সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষকে এ আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট অপেক্ষা করছে দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার। গতকাল রাতেও অপর একটি পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এ ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, কিছুতেই তা হতে দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকার বাইরে জনসভা শুরু করবেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। নরসিংদীতে অনুষ্ঠেয় প্রথম জনসভায় তিনি দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে সর্বাত্দক প্রতিরোধে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাবেন দেশবাসীকে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই তিনি পর্যায়ক্রমে দেশের সাতটি বিভাগের জনসভাতেই সাধারণ মানুষের সমর্থন চাইবেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে। ঈদুল আজহার পর অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামের জনসভা। এরপরই ঢাকায় অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত আহ্বান জানাবেন বেগম খালেদা জিয়া। সে সমাবেশ থেকেই দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করবেন বিরোধীদলীয় নেতা। এর আগ পর্যন্ত সারা দেশে সভা-সমাবেশ আর জনসংযোগের মাধ্যমে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাবে বিরোধী দল। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার যদি এ ধরনের আত্দঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না আসে, তবে তার পরিণতি শুভ হবে না। বরং রাজনৈতিক দল হিসেবেই আওয়ামী লীগ তার অস্তিত্ব হারাবে। আর দেশ যদি কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ বা নৈরাজ্যের স্বীকার হয়, তবে তারও সমস্ত দায়-দায়িত্ব এ সরকারকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের রীতি নেই। দেশে-বিদেশে কারও কাছেই এ ধরনের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো করবেই না, বরং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা রুখে দেবে। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সরকার যদি এ ধরনের নির্বাচন থেকে সরে না আসে তবে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। যে কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ, নৈরাজ্য আর অস্থিরতার জন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ জনগণ এই ধরনের নির্বাচন কিছুতেই হতে দেবে না। কারণ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে স্বপ্ন আওয়ামী লীগ দেখছে তা পূরণ হলে বাংলাদেশের অপমৃত্যু হবে। তিনি আরও বলেন, এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মানুষের এই দাবি পূরণ করতে- আওয়ামী লীগের নীলনকশার নির্বাচন বিএনপি কখনো হতে দেবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পাকা ব্যবস্থা করে রেখেছে। তারা সব দলকে বাইরে রেখে এককভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিএনপি স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ও দলের নীতি-নির্ধারক তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের পাতানো ফাঁদে আর পা দেবে না বিএনপি। এ ধরনের নির্বাচন জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক- কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রহসনের এই নির্বাচন রুখে দাঁড়াতে হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান আশা করেন- শেষ মুহূর্তে হলেও সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেশের মানুষকে ভয়াবহ সংঘাত-সংঘর্ষের মুখে ঠেলে দেওয়ার আগে সরকার অন্তত আরেকবার ভেবে দেখবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে- যাতে রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে পাখি উড়ে যেতেও ভয় পায়। কারণ এই আওয়ামী লীগ সহজেই ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্যই আজ তারা জনমতকে উপেক্ষা করে এই ধরনের নীলনকশার নির্বাচনের আয়োজন করেছে। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের এই চক্রান্ত কিছুতেই বাস্তবায়ন হতে দেবে না। 
চাপ মানতে নারাজ খালেদা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকার প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিক মহল বিএনপিকে নির্বাচনমুখী হওয়ার চাপ দিচ্ছে। দেশের মধ্য থেকেও নানাভাবে বিএনপিকে নির্বাচনের পথে হাঁটার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলো, সম্প্রতি পরপর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে। ওইসব নির্বাচনে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মহল বিশেষ দাবি করছে। অবশ্য বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা আগামী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি কূটনৈতিক মহলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যত চাপই আসুক না কেন কোনো চাপেই শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশি-বিদেশি চাপ থাকুক আর নাই থাকুক, আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ইতোমধ্যেই দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। অনেকেই বলে থাকেন, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন তো দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে এবং সেখানে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু আমরা বলছি, সেটা ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সরকার বদলের নির্বাচন না। বিএনপি কোনো পাতা ফাঁদে পা দেবে না। 
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরা। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন। কিন্তু দুই দলই নিজেদের অনড় অবস্থান তাদের জানিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টদের বোঝানো হচ্ছে- পাঁচটি সিটি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলেও সুষ্ঠু হয়েছে। সেখানে বিএনপি বিজয়ী হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রভাব বিস্তার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহলের এসব বক্তব্য বিএনপির কাছে তুলে ধরে তাদের নির্বাচনমুখী হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরা। বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপিকে ট্র্যাপে ফেলতে সরকার নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কূটনৈতিকদের দিয়ে বিএনপিকে বুঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলেও বিএনপির বিজয় নিশ্চিত। যার প্রমাণ পরপর পাঁচটি সিটি নির্বাচনের বিজয়। তাছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও শক্তিশালী গণমাধ্যমের সরব ভূমিকার কারণে কোনো ধরনের কারচুপি কিংবা নির্বাচনী ফলাফল পাল্টানোর সুযোগও থাকবে না। নেতারা জানান, অতীতের মতো আর এ ধরনের পাতা ফাঁদে পা দেবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। এ জন্য প্রয়োজনে রাজপথের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে। দলের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত নির্বাচনের মতো একই ভুল বিএনপি করবে না। সে সময়কার সরকারের তৈরি করা একটি ভিত্তিহীন জরিপ একটি পত্রিকায় প্রকাশ করে বিএনপির ওপর শরিকরা চাপ সৃষ্টি করেছিল। একইভাবে বিদেশিদেরও চাপ ছিল তীব্র। এবারও একইভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে কূটনৈতিক মহল চাপ দিচ্ছে এ কথা বলা ঠিক হবে না। তবে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো চাচ্ছে নির্বাচন প্রধান দুই দল নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সংলাপে বসুক। সংলাপে না বসলে দেশ সংঘাতের দিকে যাবে এমন আশঙ্কাও কূটনীতিকদের। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। 
খালেদাকে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না: এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না এবং হতেও দেব না। নির্বাচন হতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে। যাতে করে দেশের সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারে। অন্যথায় দলীয় সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কারণ ডিসি-এসপিসহ সব প্রশাসন থাকবে তাদের অধীনে। তাদের কথায় চলবে সব কিছু। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তিনি বলেন, সরকারকে অনেক সময় দিয়েছি, আর নয়। আমরা জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করব। সার্বিক পরিস্থিতি তাদের সামনে তুলে ধরব। গতকাল গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/09/05/14484#sthash.RZKpMznl.dpuf
সর্বাত্নক প্রতিরোধে যাবে বিএনপি
সর্বাত্নক প্রতিরোধে যাবে বিএনপি

সর্বাত্নক প্রতিরোধে যাবে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার সংসদ বহাল রেখে একতরফা নির্বাচনে গেলে সর্বাত্মক প্রতিরোধ আন্দোলনে যাবে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশি-বিদেশি কোনো চাপেই সরকারের অধীনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নির্বাচনে যেতে নারাজ। গত মঙ্গলবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে চিকিসকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, সবাইকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। তার আগের দুই দিনই রাতের বেলায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে অনির্ধারিতভাবে বৈঠক করেন তিনি। এসব বৈঠকেও সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থক পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষকে আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট অপেক্ষা করছে দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার। গতকাল রাতেও অপর একটি পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, কিছুতেই তা হতে দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকার বাইরে জনসভা শুরু করবেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। নরসিংদীতে অনুষ্ঠেয় প্রথম জনসভায় তিনি দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে সর্বাত্দক প্রতিরোধে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাবেন দেশবাসীকে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই তিনি পর্যায়ক্রমে দেশের সাতটি বিভাগের জনসভাতেই সাধারণ মানুষের সমর্থন চাইবেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে। ঈদুল আজহার পর অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামের জনসভা। এরপরই ঢাকায় অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত আহ্বান জানাবেন বেগম খালেদা জিয়া। সে সমাবেশ থেকেই দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করবেন বিরোধীদলীয় নেতা। এর আগ পর্যন্ত সারা দেশে সভা-সমাবেশ আর জনসংযোগের মাধ্যমে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাবে বিরোধী দল। প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার যদি ধরনের আত্দঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না আসে, তবে তার পরিণতি শুভ হবে না। বরং রাজনৈতিক দল হিসেবেই আওয়ামী লীগ তার অস্তিত্ব হারাবে। আর দেশ যদি কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ বা নৈরাজ্যের স্বীকার হয়, তবে তারও সমস্ত দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের রীতি নেই। দেশে-বিদেশে কারও কাছেই ধরনের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি ধরনের প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো করবেই না, বরং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা রুখে দেবে। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য . খন্দকার মোশাররফ হোসেনও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সরকার যদি ধরনের নির্বাচন থেকে সরে না আসে তবে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। যে কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ, নৈরাজ্য আর অস্থিরতার জন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ জনগণ এই ধরনের নির্বাচন কিছুতেই হতে দেবে না। কারণ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে স্বপ্ন আওয়ামী লীগ দেখছে তা পূরণ হলে বাংলাদেশের অপমৃত্যু হবে। তিনি আরও বলেন, এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মানুষের এই দাবি পূরণ করতে- আওয়ামী লীগের নীলনকশার নির্বাচন বিএনপি কখনো হতে দেবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পাকা ব্যবস্থা করে রেখেছে। তারা সব দলকে বাইরে রেখে এককভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিএনপি স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য দলের নীতি-নির্ধারক তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের পাতানো ফাঁদে আর পা দেবে না বিএনপি। ধরনের নির্বাচন জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক- কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রহসনের এই নির্বাচন রুখে দাঁড়াতে হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান আশা করেন- শেষ মুহূর্তে হলেও সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেশের মানুষকে ভয়াবহ সংঘাত-সংঘর্ষের মুখে ঠেলে দেওয়ার আগে সরকার অন্তত আরেকবার ভেবে দেখবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে- যাতে রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে পাখি উড়ে যেতেও ভয় পায়। কারণ এই আওয়ামী লীগ সহজেই ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্যই আজ তারা জনমতকে উপেক্ষা করে এই ধরনের নীলনকশার নির্বাচনের আয়োজন করেছে। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের এই চক্রান্ত কিছুতেই বাস্তবায়ন হতে দেবে না। 
চাপ মানতে নারাজ খালেদা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকার প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিক মহল বিএনপিকে নির্বাচনমুখী হওয়ার চাপ দিচ্ছে। দেশের মধ্য থেকেও নানাভাবে বিএনপিকে নির্বাচনের পথে হাঁটার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলো, সম্প্রতি পরপর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে। ওইসব নির্বাচনে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মহল বিশেষ দাবি করছে। অবশ্য বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা আগামী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি কূটনৈতিক মহলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যত চাপই আসুক না কেন কোনো চাপেই শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা . এম ওসমান ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশি-বিদেশি চাপ থাকুক আর নাই থাকুক, আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ইতোমধ্যেই দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। অনেকেই বলে থাকেন, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন তো দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে এবং সেখানে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু আমরা বলছি, সেটা ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সরকার বদলের নির্বাচন না। বিএনপি কোনো পাতা ফাঁদে পা দেবে না। সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরা। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন। কিন্তু দুই দলই নিজেদের অনড় অবস্থান তাদের জানিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টদের বোঝানো হচ্ছে- পাঁচটি সিটি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলেও সুষ্ঠু হয়েছে। সেখানে বিএনপি বিজয়ী হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রভাব বিস্তার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহলের এসব বক্তব্য বিএনপির কাছে তুলে ধরে তাদের নির্বাচনমুখী হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরা। বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপিকে ট্র্যাপে ফেলতে সরকার নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কূটনৈতিকদের দিয়ে বিএনপিকে বুঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলেও বিএনপির বিজয় নিশ্চিত। যার প্রমাণ পরপর পাঁচটি সিটি নির্বাচনের বিজয়। তাছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক শক্তিশালী গণমাধ্যমের সরব ভূমিকার কারণে কোনো ধরনের কারচুপি কিংবা নির্বাচনী ফলাফল পাল্টানোর সুযোগও থাকবে না। নেতারা জানান, অতীতের মতো আর ধরনের পাতা ফাঁদে পা দেবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। জন্য প্রয়োজনে রাজপথের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে। দলের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত নির্বাচনের মতো একই ভুল বিএনপি করবে না। সে সময়কার সরকারের তৈরি করা একটি ভিত্তিহীন জরিপ একটি পত্রিকায় প্রকাশ করে বিএনপির ওপর শরিকরা চাপ সৃষ্টি করেছিল। একইভাবে বিদেশিদেরও চাপ ছিল তীব্র। এবারও একইভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে কূটনৈতিক মহল চাপ দিচ্ছে কথা বলা ঠিক হবে না। তবে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো চাচ্ছে নির্বাচন প্রধান দুই দল নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সংলাপে বসুক। সংলাপে না বসলে দেশ সংঘাতের দিকে যাবে এমন আশঙ্কাও কূটনীতিকদের। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। 
খালেদাকে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না: এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না এবং হতেও দেব না। নির্বাচন হতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে। যাতে করে দেশের সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারে। অন্যথায় দলীয় সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কারণ ডিসি-এসপিসহ সব প্রশাসন থাকবে তাদের অধীনে। তাদের কথায় চলবে সব কিছু। অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তিনি বলেন, সরকারকে অনেক সময় দিয়েছি, আর নয়। আমরা জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করব। সার্বিক পরিস্থিতি তাদের সামনে তুলে ধরব। গতকাল গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।



সারাদেশ অপরাধ বেড়েছে : জননিরাপত্তা হুমকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অপহরণ, গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস, চঁাদাবাজি, কমিশনবাজি, টেন্ডারবাজি, জালিয়াতি, দখলবাজি, প্রতারণা, নিয়োগ বাণিজ্য, ভর্তিবাণিজ্য, গ্রেফতার বাণিজ্য, ঘুষ দুর্নীতি বহুগুণে বেড়ে গেছে। রাজধানী ঢাকা মহানগরীতে অনেকগুলো চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর আন্ডার ওয়ার্ল্ড অপরাধ জগতের গুরুত্বপূর্ণ ভয়ংকর সদস্য কিলার শিমুলের কাছ থেকে সামপ্রতিক সময়ের অপরাধ জগতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে র্যাব। fপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন--এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল কিসমত হায়াত এক সংবাদ সম্মেলনে কিলার শিমুলের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য জানিয়ে বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগারে বসে, বিদেশে থেকে, প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে থেকে এবং আত্মগোপনে থেকে অপরাধ চঁাদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে। ধৃত আসামি শিমূল কথিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ব্যাংকক সুমনের নির্দেশে মাদক ব্যবসা, চঁাদাবাজি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে আসছে বলে র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। ব্যাংকক সুমনের নির্দেশে গত এক বছরে সে মহাখালী এলাকায় আরও কয়েকজনকে গুলী করে হতাহত করার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। ব্যাংকক সুমনের নির্দেশে শিমুলের সন্ত্রাস, চঁাদাবাজি, খুন, মাদক ব্যবসায়ে লপ্তি থাকার মতো আরও অসংখ্য দাগী চিহ্নিত সন্ত্রাসী প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে থেকে বিভিন্ন ধরনের গুরুতর অপরাধ সংঘটনে সক্রিয় রয়েছে। বিশেষত কারাগারে বসে প্রভাবশালীদের মদদে এবং আইনের ফঁাকফোকর গলিয়ে জামিনে বেরিয়ে এসে দাগী চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের লোমহর্ষক তত্পরতা উদ্বেগজনক অবস্থায় পঁেৌছে গেছে। মদদপুষ্ট এসব সন্ত্রাসী অপরাধীরা সাধারণত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাই সন্ত্রাসী অপরাধীরা পুলিশের ধরাছঁোয়ার বাইরে- থেকে যাচ্ছে। সশস্ত্র সন্ত্রাস, সিরিয়াল কিলিং, অপহরণ, খুন, গুম, প্রত্যক্ষ অপরাধ সংঘটন অব্যাহত চঁাদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, জালিয়াতি, প্রতারণা, মাদক ব্যবসায়, নারী শিশু পাচারের মতো অপরাধমূলক ঘটনাসহ বহুসংখ্যক মামলায় আটক শীর্ষ সন্ত্রাসী, অপরাধীদের কেউ কেউ জেলখানাকে যেন নিরাপদ জোন হিসেবে গ্রহণ করেছে। জেলখানার বাইরে থাকা নিজ দলের কাডারদের দিয়ে সন্ত্রাস, চঁাদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, মাদক অস্ত্র ব্যবসায়সহ নানাভাবে প্রাপ্ত বিপুল অংকের টাকায় তারা কারাগারেও রাজারহালে জীবন-যাপনে অভ্যসত্ম হয়ে পড়েছে এবং মোবাইল ফোনসহ তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জেলখানা বা কয়েদখানা থেকে অপহরণ, খুন, গুম, মাদক অস্ত্র ব্যবসায় এবং চঁাদাবাজির নেটওয়ার্ক সক্রিয় রাখছে। বিগত সাড়ে বছরে সন্ত্রাস অপরাধ অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। জেলখানার চার দেয়ালের ভেতরে বসে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের খবর বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় আগেও প্রকাশিত হয়েছে। Èকারাগারে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করছে ল্যাপটপ' শিরোনামের একটি সংবাদ বছর আগে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। পুরস্কার ঘোষিত একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে নিয়ম অনুসারে ডান্ডাবেড়ি পরানোর কথা থাকলেও তাদেরকে আয়েশী জীবন-যাপন মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। সাজাপ্রাপ্ত বা আটক বিচারধীন অপরাধীদের কারাগারে বসে মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহারের সুযোগ কি করে সম্ভব হচ্ছে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। দেশের সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা পুলিশের মূল দায়িত্ব হলেও পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় দাগী চিহ্নিত সন্ত্রাসী অপরাধীরা আরও বেপরোয়া তত্পরতার মাধ্যমে নাগরিক জীবনকে সন্ত্রসত্ম নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে।  বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের শাসিত্ম বা সংশোধনের জায়গা কারাগার যদি শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলারদের অভয়ারণ্যে পরিণত করা হয়, তাহলে আইনের শাসন নিরাপত্তা লাভের অধিকার থেকে দেশের সাধারণ মানুষ শুধু বঞ্চিতই হয় না, গোটা সমাজকে বিশৃঙ্খলা নিরাপত্তাহীনতার বিভীষিকাময় অন্ধকারও গ্রাস করে। তাই কারাগারগুলোকে সন্ত্রাসী অপরাধীদের শাসিত্মর জায়গা হিসেবেই দেখতে চায় দেশের জনগণ।

বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১০৪৪ ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক: সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সূচেকে উন্নতির ফলে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় এক হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার পরিসংখ্যান ভবনে এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বার্ষিক ৯২৩ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৪৪ ডলার। ২০০৮ সালে যেখানে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ছিল ৬৩০ ডলার, পঁাচ বছরের মাথায় তা ৪১৪ ডলার বেড়েছে।

সরকার চলতি অর্থবছর দশমিক শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করছে। মাথাপিছু আয় ১১৯০ ডলারে উন্নীত করতে পারলে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার তিনটি শর্তের একটি পূরণ হবে বাংলাদেশের। এছাড়া অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মানব সম্পদ সূচকেও উলে্লখযোগ্য অগ্রগতি দেখাতে হবে বাংলাদেশকে। এসব শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের তকমা ঘঁোচাতে এরইমধ্যে একটি Èকর্মপরিকল্পনা' অনুমোদন করেছে মনি্ত্রসভা। সামাজিক নিরাপত্তা দারিদর্্য বিমোচনে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের তথ্য বিশ্ব ব্যাংকের সামপ্রতিক এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।
গত জুনে প্রকাশিত Èবাংলাদেশ পোভার্টি অ্যাসেসমেন্ট' শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়, দারিদর্্য বিমোচনে চলতি বছরের মধ্যেই জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এমডিজি) পঁেৌছে যাবে বাংলাদেশ। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে ছিল। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালে তা কমিয়ে ২৮ দশমিক শতাংশে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে গত এক দশকের তথ্য-উপাত্ত বিশে্লষণ করে বিশ্ব ব্যাংক মনে করছে, নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগেই চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে।ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক দশকে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশে দারিদর্্যের হার ধারাবাহিকভাবে কমে এসেছে। ২০০০ সালে যেখানে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল কোটি ৩০ লাখ, ২০০৫ সালে তা কমে সাড়ে কোটি এবং ২০১০ সালে তা আরো কমে কোটি ৭০ লাখে নেমে এসেছে। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, প্রধানত দুটি কারণে বাংলাদেশ এই সাফল্য অর্জন করেছে। এর একটি হলো- মজুরি বৃদ্ধি। সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রেই শ্রমের মজুরি বেড়েছে গত এক দশকে।আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে এসে নির্ভরশীল লোকের সংখ্যা কমে যাওয়াও এই সাফল্যের একটি কারণ। বর্তমানে তা বেড়ে ৯২৩ ডলারে উন্নীত হয়েছে। গ্রামে কর্মসংস্থান মজুরি বেড়েছে। দেশের ভেতরে চাহিদা বেড়েছে। স্থানীয় বাজার সমপ্রসারিত হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে। তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। অর্থ মন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে আমরা গত কয়েক বছর ধরে আমরা ভাল করছি। তারই ইতিবাচক ফল হচ্ছে মাথাপিছু আয়ের এই উন্নতি। তিনি জানান, চলতি অর্থবছর থেকে মূল্যস্ফীতির মতো মোট জাতীয় আয়ের (জিডিপি) তথ্যও নতুন ভিত্তি বছরে হিসাব করা হবে। এতোদিন ১৯৯৫-৯৬ ভিত্তিবছরের বিভিন্ন তথ্যকে ভিত্তি ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হিসাব করা হতো। চলতি বছর থেকে ২০০৫-০৬ ভিত্তি বছরের তথ্যকে এই হিসাবের কাজে ব্যবহার করবে পরিসংখ্যান বু্যরো। হালের তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ২০১৫ সাল নাগাদ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও শতাংশ পয়েন্ট কমে আসবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। দারিদর্্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের হার তখন দঁাড়াবে ২৬ শতাংশের কাছাকাছি। বর্তমানে দেশে দারিদ্রের হার ২৭ শতাংশের নিচে।

বছরের শিশুকে খুনিত্ম দিয়ে পুড়িয়েছে গৃহকর্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: নয় বছর বয়সী গৃহপরিচারিকার গায়ে গরম খুনিত্ম দিয়ে পুড়িয়ে নির্যাতনের অভিযোগে এক দম্পতিকে আটক করেছে পুলিশ। শিশুটিকে রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ায় নির্যাতনের সময় তাকে উদ্ধার করে এলাকার লোকজন। এই শিশু এখনও বলতে পারে না তার গ্রামের ঠিকানা। টুনি নামের নয় বছরের শিশুটি গত দু'বছর ধরে কাজ করছে  নাখালপাড়ার মোহম্মদ ইউসুফ পরিবারে। কিন্তু, গৃহকর্ত্রী সালমা প্রায়ই ছোটো খাটো ভুল ধরে গরম খুনিত্ম দিয়ে গা পুড়িয়ে দিতেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ আটক করে মোহম্মদ ইউসুফ তার স্ত্রী সালমাকে। পুলিশ বলছে, ওই দম্পতি শিশুটিকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে। শিশুটি পুলিশকে জানিয়েছে, গত দু'বছর ধরেই তাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সালমার নিজের বাচ্চাটি কঁেদে ওঠার পর গরম খুনিত্ম দিয়ে টুনির শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুনিত্ম চালান সালমা। টুনিকে চিকিত্সার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ বলছে, ওই দম্পতির বিরুদ্ধে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হবে।  

ব্যবসায়ীরা তৃতীয় শক্তি দেখতে চায় না

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর সভাপতি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজি আকরাম উদ্দিন আহম্মেদ বলেছেন, ব্যবসায়ীরা তৃতীয় শক্তি দেখতে চায় না।  কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত দুই বছরে ব্যবসায়ীদের অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।

বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুলে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৮২তম শাখার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি কথা বলেন। কাজি আকরাম বলেন, ১৯৯১ থেকে আজ অবধি গণতানি্ত্রক সরকারের শাসনামলেই দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়েছে। তাই রাজনীতিবিদদের আলোচনার মাধ্যমে শানিত্মপূর্ণভাবে ক্ষমতা হসত্মানত্মরের পথ খুজে বের করতে হবে, যেন তৃতীয় শক্তি কোনো সুযোগ নিতে না পারে। আবারও তৃতীয় শক্তি ক্ষমতায় আসলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, বর্তমান সরকার ঝুঁকি নিয়ে কুইক রেন্টাল বিদু্যত্ প্রকল্প গ্রহণ করে বিদু্যত্খাতের যে উন্নয়ন করেছে সেই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে। গ্যাস সুবিধা দিতে পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে উলে্লখ করে তিনি বলেন, অচিরেই অর্থনৈতিক টাইগারে পরিণত হবে বাংলাদেশ।পরে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তিনি। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস ফারুখির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট অশোক কুমার সাহা, এক্সিকিউটিভ কমিটির সভাপতি পরিচালক . আজিজ, পরিচালক ফিরোজুর রহমান প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না ১৮ দল
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য . খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে ১৮ দল অংশ নেবে না। প্রধানমন্ত্রীর একগুঁয়েমি সরকারের ক্ষমতার মোহে অন্ধত্বের কারণেই সমঝোতার কথা শুনছে না তারা। তাই আন্দোলন ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প নাই। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের হলরুমে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি মনত্মব্য করেন। Èরাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা' শীর্ষক সভার আয়োজন করে সুশীল ফোরাম নামের একটি সংগঠন।জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল প্রসঙ্গ টেনে মোশাররফ বলেন, দলের নিবন্ধন বাতিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইসু্যর চেয়েও এখন আগামী জাতীয় নির্বাচন বড় উত্কণ্ঠার বিষয় হয়ে দঁাড়িয়েছে। তারা (সরকার) ১৮ দলীয় জোটকে বাইরে রেখে পাতানো নির্বাচনের পঁায়তারা করছে। আগামী নির্বাচন তাই এখন অনেকটাই অনিশ্চিত। তিনি বলেন, বাকশাল পঞ্চদশ সংশোধনী একে অন্যের পরিপূরক। মোশাররফ বলেন, সরকারের ষড়যন্ত্র জনগণ প্রতিফলিত হতে দেবে না। পাতানো নির্বাচন জনগণ প্রতিহত করবে। সংগঠনের সভাপতি মো. জাহিদের সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সাইফুর রহমান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন সাহেদ।

সর্বাত্নক প্রতিরোধে যাবে বিএনপি
দেশি-বিদেশি চাপ মানতে নারাজ খালেদা জিয়া
শফিউল আলম দোলন ও মাহমুদ আজহার
সরকার সংসদ বহাল রেখে একতরফা নির্বাচনে গেলে সর্বাত্মক প্রতিরোধ আন্দোলনে যাবে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশি-বিদেশি কোনো চাপেই সরকারের অধীনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নির্বাচনে যেতে নারাজ। গত মঙ্গলবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, সবাইকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। তার আগের দুই দিনই রাতের বেলায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে অনির্ধারিতভাবে বৈঠক করেন তিনি। এসব বৈঠকেও সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষকে এ আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট অপেক্ষা করছে দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার। গতকাল রাতেও অপর একটি পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচন যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এ ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো দূরের কথা, কিছুতেই তা হতে দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকার বাইরে জনসভা শুরু করবেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। নরসিংদীতে অনুষ্ঠেয় প্রথম জনসভায় তিনি দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচন যে কোনো মূল্যে সর্বাত্দক প্রতিরোধে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাবেন দেশবাসীকে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই তিনি পর্যায়ক্রমে দেশের সাতটি বিভাগের জনসভাতেই সাধারণ মানুষের সমর্থন চাইবেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে। ঈদুল আজহার পর অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামের জনসভা। এরপরই ঢাকায় অনুষ্ঠেয় মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত আহ্বান জানাবেন বেগম খালেদা জিয়া। সে সমাবেশ থেকেই দলীয় সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগের এই একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করবেন বিরোধীদলীয় নেতা। এর আগ পর্যন্ত সারা দেশে সভা-সমাবেশ আর জনসংযোগের মাধ্যমে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাবে বিরোধী দল। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার যদি এ ধরনের আত্দঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না আসে, তবে তার পরিণতি শুভ হবে না। বরং রাজনৈতিক দল হিসেবেই আওয়ামী লীগ তার অস্তিত্ব হারাবে। আর দেশ যদি কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ বা নৈরাজ্যের স্বীকার হয়, তবে তারও সমস্ত দায়-দায়িত্ব এ সরকারকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের রীতি নেই। দেশে-বিদেশে কারও কাছেই এ ধরনের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো করবেই না, বরং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা রুখে দেবে। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সরকার যদি এ ধরনের নির্বাচন থেকে সরে না আসে তবে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। যে কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ, নৈরাজ্য আর অস্থিরতার জন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ জনগণ এই ধরনের নির্বাচন কিছুতেই হতে দেবে না। কারণ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে স্বপ্ন আওয়ামী লীগ দেখছে তা পূরণ হলে বাংলাদেশের অপমৃত্যু হবে। তিনি আরও বলেন, এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মানুষের এই দাবি পূরণ করতে- আওয়ামী লীগের নীলনকশার নির্বাচন বিএনপি কখনো হতে দেবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পাকা ব্যবস্থা করে রেখেছে। তারা সব দলকে বাইরে রেখে এককভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। বিএনপি স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ও দলের নীতি-নির্ধারক তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের পাতানো ফাঁদে আর পা দেবে না বিএনপি। এ ধরনের নির্বাচন জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক- কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রহসনের এই নির্বাচন রুখে দাঁড়াতে হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান আশা করেন- শেষ মুহূর্তে হলেও সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেশের মানুষকে ভয়াবহ সংঘাত-সংঘর্ষের মুখে ঠেলে দেওয়ার আগে সরকার অন্তত আরেকবার ভেবে দেখবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে- যাতে রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে পাখি উড়ে যেতেও ভয় পায়। কারণ এই আওয়ামী লীগ সহজেই ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্যই আজ তারা জনমতকে উপেক্ষা করে এই ধরনের নীলনকশার নির্বাচনের আয়োজন করেছে। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের এই চক্রান্ত কিছুতেই বাস্তবায়ন হতে দেবে না। 
চাপ মানতে নারাজ খালেদা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ওপর দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে ঢাকার প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিক মহল বিএনপিকে নির্বাচনমুখী হওয়ার চাপ দিচ্ছে। দেশের মধ্য থেকেও নানাভাবে বিএনপিকে নির্বাচনের পথে হাঁটার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলো, সম্প্রতি পরপর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে। ওইসব নির্বাচনে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মহল বিশেষ দাবি করছে। অবশ্য বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা আগামী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি কূটনৈতিক মহলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যত চাপই আসুক না কেন কোনো চাপেই শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশি-বিদেশি চাপ থাকুক আর নাই থাকুক, আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ইতোমধ্যেই দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। অনেকেই বলে থাকেন, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন তো দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে এবং সেখানে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু আমরা বলছি, সেটা ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সরকার বদলের নির্বাচন না। বিএনপি কোনো পাতা ফাঁদে পা দেবে না। 
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরা। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন। কিন্তু দুই দলই নিজেদের অনড় অবস্থান তাদের জানিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টদের বোঝানো হচ্ছে- পাঁচটি সিটি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলেও সুষ্ঠু হয়েছে। সেখানে বিএনপি বিজয়ী হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রভাব বিস্তার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহলের এসব বক্তব্য বিএনপির কাছে তুলে ধরে তাদের নির্বাচনমুখী হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরা। বিএনপির কূটনৈতিক সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপিকে ট্র্যাপে ফেলতে সরকার নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কূটনৈতিকদের দিয়ে বিএনপিকে বুঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলেও বিএনপির বিজয় নিশ্চিত। যার প্রমাণ পরপর পাঁচটি সিটি নির্বাচনের বিজয়। তাছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও শক্তিশালী গণমাধ্যমের সরব ভূমিকার কারণে কোনো ধরনের কারচুপি কিংবা নির্বাচনী ফলাফল পাল্টানোর সুযোগও থাকবে না। নেতারা জানান, অতীতের মতো আর এ ধরনের পাতা ফাঁদে পা দেবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। এ জন্য প্রয়োজনে রাজপথের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে। দলের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত নির্বাচনের মতো একই ভুল বিএনপি করবে না। সে সময়কার সরকারের তৈরি করা একটি ভিত্তিহীন জরিপ একটি পত্রিকায় প্রকাশ করে বিএনপির ওপর শরিকরা চাপ সৃষ্টি করেছিল। একইভাবে বিদেশিদেরও চাপ ছিল তীব্র। এবারও একইভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে কূটনৈতিক মহল চাপ দিচ্ছে এ কথা বলা ঠিক হবে না। তবে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো চাচ্ছে নির্বাচন প্রধান দুই দল নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সংলাপে বসুক। সংলাপে না বসলে দেশ সংঘাতের দিকে যাবে এমন আশঙ্কাও কূটনীতিকদের। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। 
খালেদাকে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না: এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না এবং হতেও দেব না। নির্বাচন হতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে। যাতে করে দেশের সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারে। অন্যথায় দলীয় সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কারণ ডিসি-এসপিসহ সব প্রশাসন থাকবে তাদের অধীনে। তাদের কথায় চলবে সব কিছু। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তিনি বলেন, সরকারকে অনেক সময় দিয়েছি, আর নয়। আমরা জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে সারা দেশে মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করব। সার্বিক পরিস্থিতি তাদের সামনে তুলে ধরব। গতকাল গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/09/05/14484#sthash.RZKpMznl.dpuf