Year-18 # Issue-50 # 29 January 2012

সিস্টেম লস ২৯.৫ শতাংশ
রাজধানীতে পানির চাহিদা মেটাতে পারছে না ওয়াসা
সিদ্দিকুর রহমান
রাজধানী ঢাকায় মানুষ বাড়ছে; সেইসাথে বেড়ে চলছে বছরে প্রায় ১০ শতাংশ হারে পানির চাহিদা। পানির এ বর্ধিত চাহিদা মেটাতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। অপরদিকে ঢাকা ওয়াসার পানির সিস্টেম লস এখনো ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ রয়ে গেছে। সিস্টেম লস কমিয়ে আনার প্রক্রিয়া এগোচ্ছে খুবই শ্লথ গতিতে। বছরে সিস্টেম লস ২ শতাংশ হারেও কমছে না। চাহিদার বিপরীতে কম পানি উৎপাদন ও সরবরাহ এবং সেইসাথে পানির বড় ধরণের সিস্টেম লসের কারণে রাজধানীর পানি সংকট বাড়ছে। বিশেষত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পানির চাহিদা বেশি থাকায় সে সময় পানি সংকট আরো তীব্র হয়ে উঠে। এখন পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসা পানি সংকট নিরসনে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে না। চলতি বছরও রাজধানীর পানি সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে ঢাকা ওয়াসা’র পানি সরবরাহ বিষয়ে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা ৫৯৯টি গভীর নলকূপ ও ৪টি পানি শোধনাগারের মাধ্যমে দৈনিক ২১৫ থেকে ২৩৫ কোটি লিটার চাহিদার বিপরীতে গড়ে ২১৪ থেকে থেকে ২২৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছে। ওয়াসা ৯৯টি গভীর নলকূপ স্থাপন এবং ১৩২টি নলকূপ প্রতিস্থাপন করেছে। এর ফলে গত ৩ বছরে পানির উৎপাদন দৈনিক ৩৪ কোটি লিটার বেড়েছে। গত ৩ বছরে ঢাকা ওয়াসার সিস্টেম লস ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৯ দশমিক ৫ শতাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। প্রতিবছর ২ শতাংশ হারে সিস্টেম লস কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এরইমধ্যে বিল খেলাপি ও অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। লোডশেডিং এর কথা বিবেচনায় রেখে সে সময় পাম্প চালানোর জন্য ২২০টি জেনারেটর সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২শ’টি ফিক্সড এবং ২০টি মোবাইল জেনারেটর। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার মোট জেনারেটরের সংখ্যা ৪৯৩টি। লোডশেডিং এর সময় বিদ্যুৎ দ্বারা পাম্প চালানোর জন্য ২০৪টি পাম্পে ২টি ফিডার হতে বিদ্যুৎ সংযোগ অর্থাৎ দ্বৈত সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ১০টি পানির গাড়ি ও ৫টি ট্রাক্টর কেনা হয়েছে। ১৭৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পানির লাইন স্থাপন করা হয়েছে ও ১৫৪ কিলোমিটার লাইন পুনর্বাসন করা হয়েছে। গত ৩ বছরে গ্রাহক সংখ্যা অর্থাৎ সংযোগ সংখ্যা ৩৪ হাজার ৯৭১ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওয়াসা সূত্রে বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসা ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর ওপর জোর দিয়েছে। এ লক্ষ্যে সায়েদবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ করার ওপর গুরুত্বারো করেছে। বর্তমানে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার থেকে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি শোধন করে দৈনিক ২২ দশমিক ৫ কোটি লিটার সরবরাহ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে শেষ হলে দৈনিক আরো ২২ দশমিক ৫ কোটি লিটার পানিসহ মোট ৪৫ কোটি লিটার পানি এই শোধনাগার থেকে রাজধানীতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। রাজধানীর ভবিষ্যত পানি সংকট নিরসনের লক্ষ্যে পদ্মা নদী থেকে পানি এনে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্যে পদ্মা (জশলদিয়া) পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের জন্য চীন সরকারের সাথে ঢাকা ওয়াসার আলোচনা চলছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরুর সময় থেকে প্রকল্পটি সম্পন্ন হতে প্রায় ৫ বছর  সময় প্রয়োজন হবে। এছাড়াও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে মেঘনা নদী থেকে পানি এনে খিলক্ষেতে শোধনাগার স্থাপন করে রাজধানীতে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করার অপর একটি প্রকল্প ঢাকা ওয়াসা গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পের ব্যাপারে দাতা সংস্থার সাথে আলোচনা ও অন্যান্য কার্যক্রম চলছে। 

দেশীয় ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের স্টলে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়
বাণিজ্য মেলার মেয়াদ বাড়াতে আবেদন
মো. রেজাউর রহিম
শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠছে মেলা প্রাঙ্গন, বেড়েছে বিক্রিও। তবে এবারের মেলায় দেশীয় ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গণে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, লাখো ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি  ছিল মেলায়। মেলা প্রাঙ্গণ এমনকি এর আশপাশের কোথাও খালি জায়গা ছিলো না। মেলাপ্রাঙ্গন ঘুরে দেখা যায়, বিকেলের দিকে মেলায় হাজার-হাজার ক্রেতা-দর্শনার্থীর পদচারণা। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে প্যাভেলিয়ন ও স্টলগুলো। ক্রেতা-দর্শনার্থী বৃদ্ধির পাশাপাশি  ইলেকট্রনিকস পণ্যের প্যাভেলিয়নগুলোতেও ছিল ব্যাপক ভীড়। কয়েকটি প্যাভেলিয়নে আলাপ করে জানা ড়েছে, গতবারের তুলনায় মেলার ২৭তম দিনেই প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি ইলেকট্রনিকস পণ্য বিক্রি হয়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের এলসিডি, থ্রি ডি ও এলইডি টেলিভিশন, বিভিন্ন মডেলের ফ্রিজ, মোটরমাইকেল, মোবাইল ফোন, ওয়াসিং মেশিন, জেনারেটর, ওভেন, এসিসহ বিভিন্ন পণ্য ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে বলে  প্যাভেলিয়ন থেকে জানা যায়। এদিকে, বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি কোষাগারে বেড়েছে ভ্যাট জমার পরিমাণও। এ প্রসঙ্গে একটি প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ বলেন, চলতি মেলার শুরু থেকেই ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। দর্শনার্থী বাড়ার পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক ক্রেতা আসায় চলতি মেলায় আশানুরুপ বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, মেলার সময় আরও ৭ দিন বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদেও পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সময় বৃদ্ধির নির্দেশনা পেলে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তা কার্যকর করবে। এব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইপিবি’র একজন কর্মকর্তা বলেন, শুনেছি সময় বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে আমরা এখনও এব্যাপারে কোন সার্কুলার পাইনি বলে জানান তিনি। ৭ দিন সময় বাড়ানো হলে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও খরচ পুষিয়ে নিতে পারবে। একই সঙ্গে সরকারও বিপুল পরিমাণ ভ্যাট পাবে।

সরকার সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলেছে: মওদুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
যেমন সরকার তেমন ওষুধ দিতে হবে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই এদের পতন ঘটাতে হবে। কারণ এরা সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলেছে। এখন যত সময় যাবে তত ভুল করবে। গত শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন শীর্ষক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভাটির আয়োজন করে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি এন্ড পিস স্টাডিজ (সিডিপিএস)। ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারের নার্ভ কাজ করছে না। তারা সংবেদনশীলতা হারিয়ে জনগণকে উপেক্ষা করে একের পর এক ভুল করে যাচ্ছে। এবং যত সময় যাবে তত বেশি ভুল করতে থাকবে। আর এজন্য যেমন সরকার তেমন ওষুধ দিতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই এদের পতন ঘটাতে হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে যে সংকট সৃষ্টি করেছে সরকার। তা থেকে উত্তরণের পথ তাদেরই খুঁজে বের করতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উপর আলোচনায় বিএনপির এ নেতা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার (সিজি) ব্যবস্থা তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ব্রেন চাইল্ডকে নিজ হাতে হত্যা করেছেন। এটা একদলীয় বাকশালী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের আগে বিএনপি সরকারের কোনো উদ্যোগকেই গ্রহণ করবে না। এমনকি নির্বাচন কমিশনও (ইসি) মেনে নেয়া হবে না। কারণ প্রথমত ইসি গঠনে সার্চ কমিটি অবৈধ। এটা জাতীয় সংসদকে পাশ কাটিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে করা হয়েছে। যা সংবিধান পরিপন্থি। দ্বিতীয়ত দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে যে কমিশনই গঠন করা হোক না কেন, তা দলীয় প্রভাবমুক্ত হতে পারবে না। এ সময় তিনি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়েও সমালোচনা করেন। সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশই বলতে পারবে না, যে তারা জাতীয় নির্বাচন ইভিএম দিয়ে করেছে। বরং তারা এটাকে বাদ দিয়েছে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও ভারত পরীক্ষামূলক চালু করলেও পরে ব্যবহার করেনি। কারণ এর মাধ্যমে কারচুপির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, যেখানে আমরা মানুষকে বিশ্বাস করতে পারি না, সেখানে যন্ত্রকে বিশ্বাস করবো কিভাবে। কারণ এ যন্ত্র সহজেই হ্যাক করা যায়। ইভিএম ভোটের নয়, ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার যন্ত্র। এতে ভোট হলে ভোটার জানতেই পারেব না সে কাকে ভোট দিচ্ছে। তাই বিএনপির কাছে এ যন্ত্র কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বর্তমানে দেশে যে দুরাবস্থা তার মূলে রয়েছে ’৭৫ সালে বাকশাল কায়েম। এ কারণেই দু’বার সেনা শাসন এসেছিল। ’৭৫ সালে ২৫ জানুয়ারি সংবিধানে পরিবর্তন না আনা হলে কিংবা গণতন্ত্র থাকলে দেশের অবস্থা অনেক ভালো হতো। সেই ধারা এখনো চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য পুরো জানুয়ারি মাস আমাদের কালো মাস হিসেবে উদযাপন করা উচিত। এ প্রজš§কে গণতন্ত্র হরণের ভয়াবহ দিক জানানো উচিত। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে এডভোকেট  শামসুন্নাহার সিদ্দিকী, জাহানারা বেগম, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী ও ড. দেওয়ান গাজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

উপ-নির্বাচন শরীয়তপুর-৩
সম্ভাব্য প্রার্থীদের লবিং-গ্র“পিং শুরু
শরীয়তপুর প্রতিনিধি  
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশ আ’লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে শরীয়তপুর-৩ (ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও গোসাইরহাট) আসনটি শূন্য হয়ে যায়। ফলে ঐ আসনে উপ-নির্বাচনে প্রার্থীদের লবিং-গ্র“পিং শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় শূন্য আসনে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা দেয়া হবে মর্মে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে নির্বাচনে আ’লীগ তথা মহাজোট ও বিএনপি তথা চারদলীয় ঐক্য জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন পাওয়ার আশায় এ লবিং-গ্র“পিং শুরু করছেন। জানা যায়, এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬’শ ১৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৫ হাজার ৯’শ ৭৭ জন, মহিলা ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬’শত ৩৮ জন ভোটার। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার ৩’শ  ৯৬  ভোট।  শরীয়তপুর-৩ সংসদীয় শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনে আগামী ১৬ ফেব্র“য়ারি মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ তারিখ ১৯ ফেব্র“য়ারি ও প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৬ ফেব্র“য়ারি। আগামী ১৫ মার্চ এ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ব্যালটের সাহয্যে ভোট গ্রহণ হবে বলেও জানা যায়। এদিকে আ’লীগ তথা মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, শরীয়তপুর-৩ আসন থেকে বারবার নির্বাাচিত সংসদ সদস্য, আ’লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী মরহুম আবদুর রাজ্জাকের বড় ছেলে, তরুন সমাজ সেবক নাহিম রাজ্জাক, জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ আ’লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের সহ-সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক অনল কুমার দে, শরীয়তপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এম.এ রেজা’র সহধর্মিনী এবং মরহুম হজরত মাওলানা সৈয়দ শাহ সূফী জালাল নূরী আল সুরেশ্বরী (রহ:) এর কন্যা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সৈয়দা শাহজাদী ফরিদা রেজা নূর, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি ও বাংলাদেশ আ’লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আরেক সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক সংগ্রামী ছাত্রনেতা বাহাদুর বেপারী। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-৩ আসনে সংসদ নির্বাচনে সদ্য প্রায়ত আবদুর রাজ্জাকের সাথে বিএনপি তথা চারদলীয় ঐক্য জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক তূখোর ছাত্রনেতা, এক সময়ের যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং শরীয়তপুর-১ আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা কে. এম হেমায়েত উল্যাহ আওরঙ্গজেব। বিএনপি নির্বাচনে আসলে তিনি প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে গোসাইরহাট উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী টি.আই.এম মহিতুল গনি মিন্টু প্রার্থী হতে চান। ইতোমধ্যে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কে.এম হেমায়েত উল্যাহ আওরঙ্গজেব এর পক্ষে বিএনপি তথা চারদলীয় ঐক্যজোটের নেতা-কর্মীরা এলাকায় নির্বাচনী প্রাথমিক কার্যক্রম ও জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে লবিং-গ্র“পি শুরু করে দিয়েছেন। গত ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আবদুর রাজ্জাকের মরদেহ বনানী কবরস্থানে দাফনের পর থেকেই সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা যে যার মত করে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতা ও নেত্রীর কাছে লবিং এবং এলাকার লোকজনের সাথে যোগাযোগ ও তাদের বিভিন্ন ভাবে খোঁজখবর নেয়াসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। তবে সাধারণ ভোটাররা এখন চেয়ে আছে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকে, কে পাবেন আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের মনোনয়ন? এর উপর ভিত্তি করে ভোটাররা ভোট দেয়ার কথা ভাবছেন। আ’লীগের নেতা কর্মীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একদিকে আবদুর রাজ্জাকের দীর্ঘ দিনের রাজনীতিতে এ আসনটিতে তার একটি শক্ত ভীত রয়েছে। আর তার বড় ছেলে এ আসন থেকে উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। যদিও ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর উপর যে নিয়ম কানুন বেধে দিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে কার পক্ষে দলীয় মনোনয়ন চাওয়া এবং পাওয়া সম্ভব হবে; এটাই এখন দেখার বিষয়। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ সমর্থকরা বিভিন্ন এলাকায় তাদের প্রার্থীর পক্ষে নানান সাফাই করে যাচ্ছে। সকলেই আশাবাদী তাদের নেতাই মনোনয়ন পাবেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের এখন চোখে ঘুম নেই। রাত দিন তারা কেন্দ্রীয় নেতা-নেত্রীর বাসায় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় লবিং করে যাচ্ছেন। জানা যায়, নির্বাচন কমিশন থেকে তফসিল ঘোষণা করা হলে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ করবে। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা খুবই চিন্তিত। এদিকে বিএনপি তথা চারদলীয় ঐক্যজোট থেকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে কিনা এ সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে অনেকেই। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এ নির্বাচন নিয়ে নানামুখি ভাবনা। তারা চায় আব্দুর রাজ্জাকের সমতুল্য একজন নেতা এ অঞ্চলের নেতৃত্বে আসুক। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ইতোমধ্যে এ ধরনের জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দিবে তার অপেক্ষায় আছেন ভোটাররা। সম্প্রতি মরহুম আবদুর রাজ্জাক এর কুলখানি ডামুড্যা উপজেলা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানেও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা উপস্থিত থেকে ডামুড্যা, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট উপজেলার সমবেত আ’লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে জনসংযোগ করেছেন।  

ডিসিসি নির্বাচনের সময় বাড়াতে আইন সংশোধন হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সময়ে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন করতে ‘অপারগতা’ প্রকাশ করায় নির্বাচনের সময়সীমা ও প্রশাসকের মেয়াদ বাড়িয়ে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন সংশোধন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধানটি সংশোধন করে ১৮০ দিনে করার একটি প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদের সভায় উপস্থাপনের জন্য পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এতে প্রশাসকের মেয়াদও ৯০ দিনের বদলে ১৮০ দিন করার কথা বলা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান গত শনিবার বলেন, আইনটিতে আবার সংশোধন আনতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছি। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেলে প্রক্রিয়া শেষে তা সংসদে উপস্থাপন করা হবে। ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্তির ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও ইসি তা করতে পারলো না, বা করল না। এ কারণেই সময় বাড়াতে সংশোধনী আনতে হচ্ছে বলে ব্যাখ্যা দেন তিনি। সংশোধন আকারে আইনটি পাস হলে আগামী মে মাসের মধ্যে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে হবে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন স্থানীয় সরকার সচিব। ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ- নামে আলাদা দুটি কর্পোরেশন করে গত ৩০ নভেম্বর স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) আইন, ২০১১ বিলটি সংসদে পাস হয়। এতে বলা হয়, পুরনো ও বিভক্ত সিটি কর্পোরেশনে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে, আর নতুনের ক্ষেত্রে এ সময়সীমা ১৮০ দিন। আইনে সরকারের ‘পছন্দের’ উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগেরও সুযোগ রাখা হয়। তবে প্রশাসকের মেয়াদ রাখা হয় ৯০ দিন। নিযুক্ত প্রশাসক কোনোভাবে একাধিকবার দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি এ আইনে সম্মতি দেওয়ার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে খলিলুর রহমানকে ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রশাসক হিসেবে খোরশেদ আলম চৌধুরীকে নিয়োগ দেয় সরকার। এদিকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান থাকায় ফেব্র“য়ারির মধ্যে বিভক্ত ডিসিসির নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা দেখা দেয়। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা সময় স্বল্পতাসহ তিনটি কারণ দেখিয়ে বিদায়ী ইসির পক্ষে এ নির্বাচন আয়োজনে অপারগতা প্রকাশ করেন। গত ডিসেম্বরেই চিঠি দিয়ে বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানিয়ে দেয় ইসি। ইসি এ অবস্থান নেওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বর্তমান ইসি নয়, আগামী ইসির অধীনেই বিভক্ত ডিসিসির নির্বাচন হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি: ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে আইন সংশোধন করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, ৯০ দিনের মধ্যে বিদায়ী ইসি নির্বাচনটি করতে না পারলেও সব প্রস্তুতি রেখে যাওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারকে এ বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ভোট কেন্দ্র, ভোটার তালিকাসহ অন্তত ১০টি প্রস্তুতিমূলক কাজ ইসির কর্মকর্তাদের এগিয়ে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে কাজ শেষ করে মে মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে কোনো অসুবিধা হবে না। এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্র“য়ারির মাঝামাঝি সময়ে। নতুন ইসি নিয়োগে এরইমধ্যে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি।


পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
প্রমাণ দেখাতে না পারলে দাতা সংস্থার টাকা সরকার নেবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি ঋণদাতা সংস্থা পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলেছে, তার প্রমাণ দিতে না পারলে তাদের অর্থও সরকার নেবে না। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর বিষয়ে একটি দাতা সংস্থা দুর্নীতির অভিযোগ করেছে। কিন্তু, আমরা দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাইনি। আমি ওই সংস্থাকে বলেছি, দুর্নীতির প্রমাণ দেন। দুর্নীতির প্রমাণ দিতে না পারলে আমরা ওই সংস্থা থেকে এই প্রকল্পে অর্থ নেব না। গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইন্সটিটিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের জাতীয় সম্মেলন ও ৩৫তম কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পের কাজ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) করার ওপর আরো গুরুত্ব দিতে হবে। ২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংক ১২০ কোটি ডলার দেয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করলেও পরে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন স্থগিত করে। তাদের এ অভিযোগের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশনও, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কোনো অপবাদ নিয়ে চলতে পারি না। আমাদের আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। দাতাদের অনেক শর্তের কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নে দেরি হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের নিজের টাকায় করা প্রকল্পের কাজ তুলনামূলকভাবে তাড়াতাড়ি শেষ হয়। সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এরই মধ্যে মূল সেতু, নদী শাসন ও সংযোগ সড়কের নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরকার এ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসলেও যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে অন্য মন্ত্রণালয়ে সরিয়ে দেয়া হয়। ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। এরপর পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে ঋণদাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের পাশাপাশি এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। বাকি অর্থের যোগান দেবে সরকার। অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি: ইন্সটিটিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের জাতীয় সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য ‘গণমুখী তথ্যপ্রযুক্তি বদলে দেবে অর্থনীতি’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সে কারণেই গত নির্বাচনে আমাদের অঙ্গীকার ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের পথে সরকার গত তিন বছরে কতটুকু সাফল্য পেয়েছে তা বিচারের ভার জনগণের ওপর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে আমরা আজ জোর দিয়ে বলতে পারি, সরকারি বিভিন্ন সেবা পেতে সাধারণ মানুষকে এখন আর আগের ন্যায় ভোগান্তি পোহাতে হয় না। তিনি প্রকৌশলীদের সততার ওপর জোর দিতে বলেন এবং কাজের গুণগত মান বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, দক্ষ মানবসম্পদের চেয়ে কোনো সম্পদই বড় নয়। আমরা এজন্য জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি জানান, তার সরকারের সময়ে সারাদেশে প্রায় ১ হাজার ৮০০ বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি (ভোকেশনাল) কোর্স চালু করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে ৩টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ ৪৯টি ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত হয়েছে ২০৫টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এছাড়া মেয়েদের জন্য আরো তিনটিসহ মোট ২৫টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা’ গ্রামে গিয়ে ছোট ছোট  উৎপাদন কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলে সরকার তাদের পুঁজি দিয়ে সহযোগিতা করবে। কর্মসংস্থান ব্যাংকসহ তফসিলি ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হবে। সংগঠনের সভাপতি এ কে এম এ হামিদের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমানও বক্তব্য রাখেন।

রাজধানীর যানজটের ক্ষয়ক্ষতি সর্বপ্লাবী
মুহম্মদ আলতাফ হোসেন
রাজধানীতে বেড়েই চলেছে যানজট। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানজটে ক্ষতির পরিমাণ। যানজটের কারণে বছরে দেশের আনুমানিক ১৯ হাজার ৫শ’ ৫৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয় এবং প্রতিদিন ৮১ লাখ ৬০ হাজার কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। তবে স্বাস্থ্যগত দিক হিসাব করলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকা এখন রাজধানীর প্রতিদিনের দৃশ্য। কে কখন কর্মস্থলে  পৌঁছতে পারবেন জানেন না। আর গাড়িতে যানজটের কারণে বিনা প্রয়োজনে পুড়ছে জ্বালানি। এতে বছরে দু’শ’ লাখ কর্মঘণ্টা এবং ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন জ্বালানির ৩০ ভাগ অপচয় হয়। সবার কর্মঘণ্টার দাম একরকম নয়। আবার সবার চলাচল সবসময় কর্মভিত্তিকও নয়। এ ছাড়া রয়েছে পিক এবং অফ পিক আওয়ার। এরপর পিক আওয়ারে কর্মঘণ্টা এবং জ্বালানির ক্ষতির আর্থিক মূল্য আলাদা। যানজটের কারণে রাজধানীবাসীর কর্মক্ষমতা বা উৎপাদনশীলতাও কমে যাচ্ছে; যা প্রভাব ফেলছে পুরো উৎপাদন ব্যবস্থায়। এতে উৎপাদনের ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকার। যানজটে উচ্চমাত্রার শব্দ আর দূষিত পরিবেশে বসে থাকার কারণে স্বাস্থ্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ঢাকা এখন পৃথিবীর ষষ্ঠ জনবহুল নগরী। জাতিসংঘ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৫ সাল নাগাদ এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল শহর হয়ে যাবে। এতই দ্রুত বাড়ছে এ শহরের জনসংখ্যা। স্পষ্টতই সেই হারে বেড়ে চলবে পথচারীর সংখ্যাও। ঢাকার যানজট নিরসনের জন্য নানা উদ্যোগের কথা শোনা যায়। পর্যাপ্ত ফ্লাইওভার, স্কাই ট্রেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেন, সার্কুলার রেলওয়ে, কিছুই আলোচনা-পরিকল্পনার বাইরে নেই। আমাদের নগর পরিকল্পনাবিদরা এসব দীর্ঘমেয়াদি ও উচ্চাভিলাষী চিন্তাভাবনার পাশাপাশি ফুটপাতের দিকে দৃষ্টি দিলে সম্ভবত কিছু ত্বরিত ফল পাওয়া যায়। ঢাকা শহরে প্রায় ৩৭ ভাগ মানুষ হেঁটে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। অবশিষ্টদের মধ্যে প্রায় সমপরিমাণ রিকশা ব্যবহার করেন। বাদবাকিরা নানা ধরনের মোটরযানে চলাচল করেন। মাত্র ৭ ভাগ প্রাইভেট কারে। এখন দেখার বিষয়, এই  যে ৩৭ ভাগ মানুষ হাঁটেন, তাদের জন্য নগরীতে কী ব্যবস্থা রয়েছে? আমাদের অধিকাংশ রাস্তায় ফুটপাত নেই। যে সব রাস্তায় আছে, সে সব ফুটপাতের অবস্থা একেবারেই হতাশাব্যঞ্জক। ৩৭ ভাগ পথচারীর জন্য ১০০ ফুট রাস্তায় ৩৭ ভাগ, অর্থাৎ দু’পাশ মিলিয়ে ৩৭ ফুট ফুটপাত থাকলে তবেই যুক্তিসিদ্ধ হতো। কিন্তু আমাদের বড় রাস্তাগুলোয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু’পাশ মিলিয়ে ১০-১৫ ফুটের বেশি ফুটপাত নেই। ঢাকার ফুটপাতগুলোর তদারকির আদৌ কোনো ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না। পদে পদে উঁচু-নিচু, খানাখন্দক। আবার বহু স্থানে পার্শ্ববর্তী দোকান বা বাড়ির মালিকরা নিজেদের মতো করে ফুটপাতের গঠন পাল্টে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এসব ফুটপাত নিরাপদে এবং নিশ্চিন্ত মনে হাঁটার অযোগ্য। বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক শহরে ফুটপাতের দিকে অনেক বেশি নজর দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় রাস্তার চেয়ে ফুটপাত প্রশস্ত। ফুটপাত তৈরিও করা হয় নিখুঁতভাবে। কড়া নজরদারি থাকে রক্ষণাবেক্ষণে। চোখ বন্ধ করে হাঁটা যায় একটানা দীর্ঘক্ষণ। সেই ফুটপাত দিয়ে চাকাযুক্ত লাগেজ দীর্ঘপথ টেনে  নেয়া যায়। বাজার-সদাই করে বাস-ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা না করে মালামাল টানতে টানতে ফুটপাত দিয়ে অবলীলায় হেঁটে চলা যায়। বাসগুলোয় নির্দিষ্ট জায়গা থাকে মালামাল রাখার। বাস সামনে পেলে উঠে পড়া। বাস থেকে নেমে আবার ফুটপাত ধরে এগিয়ে যাওয়া। এ রকম ব্যবস্থা কি ঢাকা শহরের নাগরিকরাও আশা করতে পারেন না? অতএব ঢাকার ট্রান্সপোর্ট প্লানিংয়ে ফুটপাতের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া দরকার। এসটিপিতে (স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্লানিং) এ দিকটি যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। ওই প্রস্তাবনার বিস্তারিত জানার সুযোগ হয়নি। তবে বিশ্বাস, নগরীর যানজট নিরসনের ক্ষেত্রে ফুটপাত উন্নয়ন, প্রশস্তকরণ ও আধুনিকায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে অফিস, আদালত, প্রাইভেটকার ও জনসংখ্যা। তাহলে ১৫ বছর আগে কেন যানজট ছিল? সেই সময় তো জনসংখ্যা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং গাড়ির পরিমাণও কম ছিল। বর্তমানে এখনো এর ছোট্ট একটি প্রমাণ হলো শুক্রবার। এই দিনে সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত বন্ধ থাকে। তার পরও যানজটের হাত থেকে রক্ষা নেই। এখানেই প্রমাণিত হয় যে জনসংখ্যা, গাড়ির চাপ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এগুলোই যানজটের প্রধান কারণ নয়। আরেকটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, মাত্র ২ লেনের সড়ক হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। কিন্তু দৈনন্দিন অতিদ্রুত এবং অধিক গাড়ি ২৪ ঘণ্টা চলাচল করে এই মহাসড়কে। কোনো প্রকার দুর্ঘটনা ছাড়াই তীব্র যানজটের শিকার হতে হয় না। তার কারণ হচ্ছে ওইসব প্রধান সড়কে সংযোগ সড়ক খুবই অল্প যার কারণে প্রধান সড়কের গাড়িগুলো বাধাগ্রস্ত হয় না এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘণ্টায় ৬০/৮০/১০০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে। অপরদিকে ঢাকার ভিতরে প্রতি ঘণ্টায় ১০/১৫ কি.মি. চলা যায় কিনা তারও নিশ্চয়তা  নেই। ৫ মিনিটের রাস্তা কখনো ৩০ মিনিট কখনো ৪৫ মিনিট সময় লাগে। তার প্রধান কারণই হচ্ছে ঢাকার তিন রাস্তা/চার রাস্তার সংযোগ সড়ক বেশি। তেমনি এক নতুন সংযোগ সড়ক হচ্ছে বিজয় সরণি লিংক রোড। এর আগে এখানে এত তীব্র যানজট ছিল না। কিন্তু বর্তমানে এই সংযোগ সড়কের কারণেই তীব্র যানজটের শিকার হচ্ছে সকল যানবাহন। এর তীব্রতা মহাখালী ফ্লাইওভার পর্যন্ত ছড়িয়ে যাচ্ছে। মূলত যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে নিরবচ্ছিন্নভাবে যানবাহন চলতে না পারা। আর রাজধানীতে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে না পারার অন্যতম কারণ সিগন্যালের লালবাতি/তিন/চার রাস্তার মোড়। পর্যাপ্ত সড়ক থাকা সত্ত্বেও সিগন্যাল/লালবাতির আওতায় সকালের শুরু থেকে রাজধানীতে যানজটের উৎপত্তি। একটি তিন রাস্তা/চার রাস্তার সিগন্যালের কারণে প্রধান সড়কসহ সংযোগ সড়কগুলোর যানবাহন বার বার বাধাগ্রস্ত হয় এবং তীব্র যানজটের শিকার হয় এবং গাড়িগুলো ধীরগতির হয়ে স্থির হয়ে যায়। ট্রাফিক পুলিশ এক পাশের গাড়িগুলোকে চলার সুযোগ করে দিতে গিয়ে আরো কয়েক লেনের গাড়িকে লাল সিগন্যালের আওতায় স্থগিত করে দিতে হয়। প্রযুক্তির অভাবেই বহু বছর যাবৎ এই যানজটের সমস্যা। যার কারণে কিছুক্ষণ এই লেন সচল করে ওই  লেন বন্ধ করে এবং ওই লেন সচল করে এই লেন বন্ধ করে। পর্যাপ্ত সড়ক থাকা সত্ত্বেও চলমান গাড়িগুলো বাধাগ্রস্ত হয় এবং অপেক্ষা করতে হয়। এই অপেক্ষার কারণে ওই গাড়িগুলো যেখানে কয়েক কিলোমিটার চলে যেতে পারত এবং তার পেছনের গাড়িগুলো অগ্রসর হয়ে চলে আসতে পারত, সেখানে এই অপেক্ষার ফলে  পেছনের গাড়ি সামনের গাড়ি এক সঙ্গে জড়ো হয়ে যাচ্ছে এবং সিগন্যাল ছাড়ার পর হুলস্থূল করে  ছোটাছুটি করছে। এভাবে চলতে চলতে এক পর্যায়ে চারপাশের সড়ক ব্লক হয়ে যায় এবং নগরীতে দুর্বিষহ যানজটের সৃষ্টি হয়। তখন ট্রাফিকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্য যে, এই পদ্ধতিতে ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন সড়কই বিভিন্ন সময়ে অব্যবহƒত থাকে সিগন্যাল তথা লালবাতির কারণে। এই চলমান গাড়িকে বাধা সৃষ্টি এবং অব্যবহƒত সড়ক প্রকৃতভাবে ব্যবহার না হওয়ার কারণেই প্রধান সড়ক এবং শাখা সড়কগুলোতে যানজটে স্থির হয়ে থাকে। কাজেই কেবল স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে যানজট সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। 

কর্মসংস্থানের জন্য দেশে বড় শিল্পখাত গড়ে উঠছে না
মো. রেজাউর রহিম
দেশে প্রতিবছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে শ্রমবাজারে বিপুল সংখ্যক মানুষ যুক্ত হলেও কর্মসংস্থানের জন্য বড় কোন শিল্পখাত গড়ে উঠছে না। গত কয়েক বছরে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতে বিনিয়োগ কম হওয়ায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমে যাচ্ছে। আর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে সরকারি শিল্প খাত। অপর দিকে বেসরকারি খাতে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক ও বস্ত্রখাতে সবচেয়ে বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে দিন দিন বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। অন্যদিকে অর্থমন্দাসহ বিভিন্ন সংকট ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কায় দেশের বড় ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মচারি ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নিচ্ছে। স্থানীয়, বহুজাতিক কিংবা কর্পোরেট হাউজগুলোতে এখন চাকরি ছাঁটাইয়ের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ পরিকল্পনা ইতোমধ্যে অনেকেই বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও চাকরি ছাঁটাইয়ের প্রস্তুতি চলছে বলে সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে। ব্যাবসায়ী-শিল্পপতিদের সূত্রে জানা গেছে, দেশে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যমান বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পোশাকশিল্প দেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্পখাতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া এ শিল্পের কারণেই দেশে ব্যাক-ওয়ার্ড  লিংকেজ শিল্পসহ অনেক পরিপূরক ও সহযোগী শিল্প গড়ে উঠেছে। শুধু বস্ত্র ও পোশাক খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে দক্ষ-অদক্ষ মিলিয়ে প্রাায় ৪০ লাখ শ্রমিকের, যাদের মধ্যে আবার ৮০ শতাংশই নারী। গত ২০০৯-১০ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৬ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা যা মোট রফতানির ৭৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া জিডিপি’তে কৃষির অবদানের পরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রবাহে বেশি অবদান হচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্প খাতের। সম্প্রতি এ শিল্প নিয়ে শুরু হয়েছে অশুভ তৎপরতা, যা শুধু দেশ ও দেশের অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে। ফলে কমে যাচ্ছে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা। এখনই যদি এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন না করা হয়, তবে শ্রমঘন এ শিল্পের অস্তিত্ব নিয়ে শংকিত হয়ে পড়ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি এবং পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী জানিয়েছেন, বিশ্বের সকল দেশে মেড ইন বাংলাদেশ ছড়িয়ে দিতে পোশাকশিল্পকে রক্ষা করা জরুরি। এ শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন। তৈরি পোশাক শিল্পে আমাদের সম্ভাবনা অনেক। তিনি বলেন, এ খাতে বিশ্ববাজারে আমাদের শেয়ার মাত্র ৩ শতাংশ। আর ব্যাপক এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ১২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের শিল্পকে দ্বিগুণে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এদিকে, ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র দু’বছর বাকি। গত ৩ বছরে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী প্রতি ঘরে অন্তত এক জনের চাকরির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। এছাড়া বর্তমানে নতুন করে শুরু হওয়া অর্থমন্দার কারণে বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে।  এ অবস্থায় বাংলাদেশেও সামষ্টিক অর্থনীতির সবগুলো সূচক নিুমুখী। আর আগামী দু’বছরে চাকরির বাজারে যে সুখবর আসবে তার কোন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের ‘মোর এন্ড বেটার জবস ইন সাউথ এশিয়া’- শীর্ষক এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো আগামী দুই দশকে বিশ্ব শ্রম বাজারে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক সরবরাহ করবে। তবে ঐ সময়ে এ অঞ্চলে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ লাখ নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দারিদ্র্য নিরসনে প্রতি মাসে নতুন অন্তত ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। এব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বাংলাদেশ সময়’কে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নেয়া মুদ্রানীতির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে সাম্প্রতিক  যে অনিশ্চয়তার চিত্র ফুটে উঠেছে তা কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে ফেরত আসা মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেশে নেই বললেই চলে। সেক্ষেত্রে নতুন করে বেকারত্বের চাপ বাড়বে অর্থনীতিতে। বিজিএমইএ’র ২য় সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, একক খাত হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্পে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কিন্ত নতুন করে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে অর্থমন্দাসহ নানা সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় এ শিল্প বর্তমানে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জন ও কর্মসংস্থানে বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি অবশ্যই পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। দেশের রফতানি শুধু তৈরি পোশাকশিল্প নির্ভর হয়ে আছে। তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবশ্যই ওষুধ, জাহাজ নির্মাণ এবং সিরামিকসের মতো খাতগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে এবং রফতানি বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে। অন্যথায় যেকোন সময় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও পণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরী বলে মনে করেন তারা।

কোচিং বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন
মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে প্রাইভেট কোচিং বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ করা হয়েছে। কোনো শিক্ষক তাঁর নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় বা অন্য কোথাও কোচিং করাতে পারবেন না। তবে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন।’ এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দেশে কোচিং বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ না হলেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা যায়। এ কথা অনস্বীকার্য, দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে নানা সংকট বিরাজ করছে। শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে পড়েছে কোচিংনির্ভর। নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রবল অনীহা লক্ষ্য করা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা গ্রহণের চেয়ে গৃহশিক্ষকের কাছে বা কোচিং সেন্টারে গিয়ে পড়াশোনায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এমন শিক্ষার্থীরও দেখা মেলে যারা সারা বছর ক্লাসে উপস্থিত না থেকে শুধু কোচিং সেন্টারে পড়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যায়।  ক্লাসে শিক্ষার্থীর নিয়মিত উপস্থিতি ও তার সারা বছরের কার্যকলাপের ধারাবাহিক মূল্যায়নের বিষয়টি কোনো বিবেচনায় আনা হয় না। এ ছাড়া ভর্তি বাণিজ্যসহ নানাবিধ দুর্নীতির কারণে শিক্ষাঙ্গন ক্রমাগত কলুষিত হচ্ছে। কোচিং বাণিজ্যের নামে শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। ক্লাসের বাইরে অনেক শিক্ষার্থীকে নানা বিষয়ে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা হয়। এমনকি প্রাইভেট না পড়লে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় পাস করায় সংকট দেখা দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অথচ স্কুলে শিক্ষাদানসহ প্রতিটি কর্মকাণ্ডের জন্য শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। বহু আগে থেকে বাংলাদেশের কিছু সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা অনিয়মের কারণে সরকারের শিক্ষানীতিও সঠিক বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। সেই পঞ্চাশ-ষাটের দশকেও বাংলাদেশে কোচিং বলতে তেমন কিছুর অস্তিত্বই ছিল না। গৃহশিক্ষক দিয়ে পড়ার ব্যবস্থাও ছিল একেবারে সীমিত।  বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে বসেই তাদের লেখাপড়া সেরে ফেলত। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক এমন ভাবে পাঠদান করতেন যে শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে খুব একটা পড়াশোনা করার প্রয়োজন পড়ত না। পরীক্ষার পূর্বে কিছুদিন বাসায় লেখাপড়া করে ভালো ফলাফল করা যেত। শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পড়া আদায়ও করে নিতেন। শ্রেণীকক্ষে পরীক্ষা হতো নিয়মিত। শিক্ষকের ভয়ে নিয়মিত লেখাপড়া না করে শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত হওয়ার দুঃসাহস করত না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পাঠ রপ্ত করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যেত। প্রয়োজনে অবসর সময়ে শিক্ষক রুমে গিয়ে কঠিন কোনো বিষয় বুঝে নিতে কোনো বাধা ছিল না।  গৃহশিক্ষক দিয়ে পড়াশোনার প্রচলন ছিল একেবারে কম। বিশেষ ক্ষেত্রে কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষকের বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়লেও তার বিনিময়ে শিক্ষককে মোটা অংকের সম্মানী দিতে হতো না।  শিক্ষক এ কাজটিকে তার শিক্ষকতার অংশ হিসেবে মনে করতেন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মাঝে লেখাপড়া শেখার প্রবল আগ্রহের কারণে শিক্ষকদেরও শিক্ষাদানের কাজটি সহজ হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেন বদলে গেল সবকিছু। ঝকঝকে উঁচু উঁচু ভবন, দামি  চেয়ার-টেবিল, প্রতিটি কক্ষে বৈদ্যুতিক পাখা,  প্রতিষ্ঠান প্রধানের রুমে এ্যাকুরিয়াম চলে এলো দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এ সবই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নতির লক্ষণ। জীর্ণশীর্ণ স্কুল ভবন, বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন টিনের ঘরে ভাঙ্গাচোরা চেয়ার- টেবিল, চকখড়ি দিয়ে লেখার জন্য ব্লাকবোর্ড এখন আর শহরাঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা যায় না। এখন সেখানে এসেছে দামি ট্যাবলেট চেয়ার, হোয়াইট বোর্ড, মার্কিং কলম কত কি! এখন আর শিক্ষার্থীদের নাকে চকের ধুলা যাওয়ার ভয়  নেই। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফ্যানের বাতাস খেতে খেতে পাঠাভ্যাস করা সম্ভব। শুধু প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নতি ছাড়াও শিক্ষকরাও আজ অনেক বেশি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। দামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আছে অনেকের। ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে আজ দূরত্ব কমেছে। গড়ে উঠেছে বন্ধুত্বের নিবিড় সম্পর্ক। এ সবই আশার কথা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এত কিছুর পরও বাড়েনি শিক্ষার মান। বরং দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন আজ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকতা পেশা আর দশটা-পাঁচটা চাকরির মতো হয়ে গেছে। এখন আর শিক্ষকতাকে মহান ব্রত হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি নন অনেকে। শিক্ষকরা অনিয়মিত ক্লাসে আসেন। কেউ কেউ গতানুগতিকভাবে পাঠদান করেন। অনেক শিক্ষক পড়াতে গিয়ে ভালো টেক্সট বইয়ের সাহায্য পর্যন্ত নেন না। সস্তা নোটবই আর গুটিকতক প্রশ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে লেখাপড়া। শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে পাঠ্যের বিষয়বস্তু হƒদয়ঙ্গম করতে পারল কি পারল না তাতে শিক্ষকের কিছু যায় আসে না। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। শ্রেণীকক্ষের লেখাপড়ার এ ঘাটতি শিক্ষার্থীকে ঠেলে দিচ্ছে প্রাইভেট টিউটর বা কোচিং সেন্টারের দিকে। আজ তাই দেশজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে  উঠেছে কোচিং সেন্টার! স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাই সাধারণত এখানে পড়ান। অনেক শিক্ষকের রয়েছে নিজস্ব কোচিং সেন্টার! সকালে-বিকেলে-রাতে এমন কি স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময়েও শিক্ষকদের কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অনেক শিক্ষক বাসায় নিয়মিত ব্যাচ করে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান। শিক্ষকের বাসগৃহই রূপ নেয় কোচিং সেন্টারে! ফলে শিক্ষকের বাসা বা কোচিং সেন্টারের লেখাপড়ার সীমিত গণ্ডির মধ্যেই ঘুরপাক খায় দেশের সকল শিক্ষা কার্যক্রম। বিত্তশীল ঘরের শিক্ষার্থীরা অনেক সময় এসব কোচিং সেন্টারে গিয়ে লেখাপড়া করে না। তাদের জন্য বাসায় নিয়ে আসা হয় নামি দামি শিক্ষককে অনেক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে। প্রতি বিষয়ের জন্য আলাদা গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থাও করা হয় কারোর জন্য। একই বিষয়ের জন্য একাধিক শিক্ষক নিয়োগেও কোনো বাধা নেই। শিক্ষা গ্রহণ নয়, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করাই হচ্ছে টার্গেট। কোচিং সেন্টারে লেখাপড়ার মতো যন্ত্রনির্ভর ব্যবস্থায় পরীক্ষায় ভালো ফলাফল, জিপিএ-৫ পাওয়া অসম্ভবও নয়। তারা যেভাবেই হোক শিক্ষার্থীর মগজের মধ্যে পাঠ্যক্রমের সীমিত বিষয়বস্তু ঢুকিয়ে দেন যা পরীক্ষার হলে কোনোমতে উগড়িয়ে দেয়া একজন শিক্ষার্থীর জন্য তেমন কষ্টকর হওয়ার কথা নয়। আর এসব বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খ্যাতিমান শিক্ষকরাই তো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন। কাজেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের বিষয়গুলো গৃহশিক্ষকের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় শিক্ষার্থীর জ্ঞাত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আর ন্যায় নীতিজ্ঞানহীন শিক্ষক হলে নিজের নাম-যশ কুড়াতে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেও দিতে পারে বৈকি! আজকাল কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন পাবলিক ও নির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ একেবারে মিথ্যা নয়। এহেন পরিস্থিতিতে আজ আর প্রত্যন্ত গাঁয়ের কোনো স্কুলের কৃষক-শ্রমিকের সন্তানের পক্ষে খুব একটা ভালো ফলাফল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের স্কুলে যোগ্য শিক্ষক নেই। নেই ভালো বইপত্র। গৃহশিক্ষক রেখে বা কোচিং সেন্টারে গিয়ে লেখাপড়ার সুবর্ণ সুযোগ বা সামর্থ্য কোনোটাই তাদের নেই। কোচিং সেন্টারনির্ভর শহরকেন্দ্রিক লেখাপড়া ধীরে ধীরে বিত্তশীলদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। রাজধানীর স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মফঃস্বল শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়েরা প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছে না। বিগত সময়ের চেয়ে আজকাল পড়াশোনার পরিধি বিস্তৃত হয়েছে। পাঠ্য বিষয়সমূহ হয়েছে উন্নত। সময়ের প্রয়োজনে পাঠ্যক্রমে অনেক প্রয়োগিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভালো পাঠ্যপুস্তক, কম্পিউটারসহ নানা সাহায্যকারী জিনিস শিক্ষার কাজে ব্যবহƒত হচ্ছে। উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষকের সংখ্যাও নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি পেয়েছে। এত কিছুর পরও শিক্ষকতা পেশার প্রতি অনেক শিক্ষকের ডিভোশান  নেই। ক্লাসে নিয়মিত পাঠদান করে সময়মতো কোর্স শেষ করার তাগিদ নেই।  শিক্ষক, শিক্ষার্থী উভয়ই শিক্ষাঙ্গনে অলস সময় কাটিয়ে কোচিং সেন্টারে থাকেন সদাব্যস্ত। একজন শিশু শ্রেণীর সন্তানকে কোচিং সেন্টারে ঢুকিয়ে মায়েরা বারান্দায় অথবা লনে বসে থাকেন সারাদিন। সীমিত সংখ্যক প্রশ্ন এবং শিক্ষকের তৈরি করে দেয়া উত্তরের ওপর নির্ভর করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। এ ভাবে ভালো ফলাফলও করে অনেকে। বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানার্জন করা বা বিদ্যাশিক্ষার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না । বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে কোচিং বাণিজ্যের অবসান জরুরি। এ লক্ষ্যে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের মাঝে নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণের মানসিকতা জš§াতে হবে। মাথা থেকে ঝেরে ফেলতে হবে কোচিং নির্ভরশীলতা। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীর মা-বাবা, অভিভাবকের ভূমিকা নিতে হবে। শিক্ষকতার মতো একটি মহান পেশার প্রতি সর্বস্তরের শিক্ষকদের হতে হবে শ্রদ্ধাশীল। শিক্ষায়তনে বসেই শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে শিক্ষার্থীদের আর কোচিং সেন্টারে গিয়ে বা গৃহশিক্ষকের সাহায্য নিয়ে লেখাপড়া করার প্রয়োজন হবে না। সাম্প্রতিক কোচিং বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজধানীসহ দেশব্যাপী শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মনিটরিং জোরদার করতে হবে। কমিটির সুপারিশ অনুয়ায়ী শিক্ষকদের মধ্যে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট পড়ানো বা কোচিং করা বন্ধ হলে অবস্থার অবশ্যই পরিবর্তন হবে। এ ছাড়া শিক্ষকরা অন্য স্কুলের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ালে বর্তমান প্রাইভেট বাণিজ্যের মতো নেতিবাচক প্রভাব শিক্ষা ক্ষেত্রে পড়বে না। দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার কারণে শিক্ষকদের ঘণ্টাপ্রতি ১৭৫ টাকা অথবা যে কোনো যৌক্তিক সম্মানী প্রদান ভালো সিদ্ধান্ত। ভবিষ্যতে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে কোচিং সম্পূর্ণ বন্ধ করতে প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম শতকরা আশি ভাগ উপস্থিতি এবং বিষয়ভিত্তিক ধারাবাহিক মূল্যায়নের ব্যবস্থার প্রবর্তন করা যেতে পারে। শিক্ষায়তনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ, উচ্চ শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক দ্বারা নিয়মিত পাঠদান নিশ্চিত করাসহ শিক্ষায়তনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারলে কোচিং বাণিজ্য একেবারেই হ্রাস পাবে, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কেরও উন্নতি হবে যা পক্ষান্তরে শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। দুর্নীতিমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক শিক্ষাঙ্গন ছাড়া আগামী দিনের আদর্শ নাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।

শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট
বিশেষ প্রতিনিধি
দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবত ছাত্র-ছাত্রীদের তীব্র আবাসন সংকট বিরাজ করছে। কলেজের মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১২ শত। তাদের জন্য ৫টি আবাসিক হোস্টেলে সিট সংখ্যা হচ্ছে ২৮৮টি। ফলে আবাসিক ভবনগুলোতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ শিক্ষার্থী বসবাস করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কলেজের উপধ্যক্ষের বাসভবন ও ১টি ছাত্রী নিবাসের তত্ত্বাবধায়কের বাসভবনে ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শেবাচিম সূত্রে জানা গেছে, কলেজে ছাত্রদের জন্য ৩টি এবং ছাত্রীদের জন্য দু’টি আবাসিক হোস্টেল রয়েছে। ৩টি ছাত্রাবাসে ১৬৮টি এবং ২টি ছাত্রীনিবাসে ১২০টি সিট রয়েছে। কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু হওয়া ডেন্টাল বিভাগের ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ায় এখন কলেজটিতে মোট ১২শ’ এক জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। সর্বশেষ ৪৩ তম ব্যচে ভর্তি হওয়া ৭৭ জন ছাত্রীর নিধারিত দু’টি হলে সিট দিতে না পেরে তাদেরকে কমনরুমে থাকার ব্যবস্থা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের ১ নম্বর জামিলুর রহমান ছাত্রাবাসে সিট সংখ্যা হচ্ছে ৬৭টি। সেখানে থাকছে ২৪০ জন ছাত্র। ২ নম্বর হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাসে সিট সংখ্যা হচ্ছে ৫৪টি। সেখানে রয়েছে প্রায় ২শ ছাত্র। ৩ নম্বর মঈনুল হায়দার ছাত্রাবাসের সিট সংখ্যা হচ্ছে ৪৮টি। সেখানে থাকছে প্রায় ১৫০ জন ছাত্র। অন্যদিকে ২টি ছাত্রী নিবাসের মধ্যে পুরাতন ছাত্রী নিবাসে ৮০টি এবং নতুন ছাত্রীনিবাসে ৪০টি সিট রয়েছে। অথচ পুরাতন ছাত্রী নিবাসে ৩০০ এবং নতুন হলে ২০০ ছাত্রী এখন বাস করছেন। চলতি শিক্ষাবর্ষে চালু হওয়া ডেন্টাল বিভাগে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতোমধ্যে ২১ জন ক্লাসে যোগ দিয়েছে। তাদের কোন আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারছেনা কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় কলেজের উপাধ্যক্ষের বাসভবন ডেন্টাল বিভাগের ছাত্রদের এবং ছাত্রীনিবাসের তত্ত্বাবধায়কের বাসভবনটিতে ছাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই দু’টি ভবন ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসন উপযোগী করে তোলার জন্য স্থানীয় গণপূর্ত দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বছর থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের হাসপাতালে প্রাকটিক্যাল ক্লাশ করতে হয়। আর তৃতীয়, চতুর্থ বছরে হাসপাতালে ডিউটি দিতে হয়। এছাড়া মেডিকেলের বই কিনে পড়াশুনা করা সম্ভব না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের কলেজের লাইব্রেরীর উপর নির্ভর করতে হয়। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের নিজেদের শিক্ষার জন্য বাধ্য হয়েই ছাত্রাবাসে থাকতে হয়। 

মধুমেলায় সংস্কৃতিপ্রেমীদের দাবি
সাগরদাঁড়িতে প্রতিষ্ঠিত হোক সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়
অরুণ ব্যানার্জী
সত্য সুন্দরের সাধক ও মঙ্গলের উপাসক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখনীর মধ্য দিয়ে একটি সত্য উচ্চারিত হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, সমগ্র বাংলাদেশে একজন মানুষ আছেন। তিনি পণ্ডিত ইশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর। আর সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আÍপ্রত্যয়ের মাদল বাজিয়ে লিখলেন, ‘পালে পালে আজ সুবাতাস লাগিয়াছে, সেখানে নাম লেখো শ্রী মধুসূদন।’ বাংলা সাহিত্যের এক অনির্বাণ দীপশিখা মাইকেল মধুসূদন দত্ত। সার্থক অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক, মহাকাব্যের সফল রচয়িতা তিনি। বাংলা সাহিত্যের তিনি প্রথম বিপ্লবী কবি। একই সঙ্গে প্রথম আধুনিক কবিও মাইকেল মধুসূদন। যার আধুনিকতার মধ্যে ফুটে উঠেছে যুগোত্তীর্ণ মননশীলতা। যিনি জীবনকে চিত্রিত করেছেন জীবনের আলোকে। জীবনকে পরাজয় কিংবা পরাজয়ের গ্লানি দিয়ে নয়; প্রচলিত ধ্যান-ধারণার মর্মমূলে আঘাত হেনে তিনি হয়েছেন প্র্রতিবাদী। যাতে ফুটে উঠেছে ঘুনে ধরা পারিপার্শ্বিকতার বিরুদ্ধে সুস্থ মানবিক মূল্যবোধ। আধুনিক জীবনের প্রতিচ্ছবি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো শুরু হয়েছে মধুমেলা। অমিত্রাক্ষর ছন্দের সার্থক কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জš§স্থান যশোর জেলার কেশবপুর থানার সাগরদাঁড়ি। অনেক ঐতিহ্যবাহী এ মেলা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হরেক নেশা-পেশার মানুষের সমাগম ঘটে মধুমেলায়। অনেক গুণীজন বিপ্লবী কবির জš§দিন উপলক্ষে পদধূলি দেন সাগরদাঁড়ির এই পুণ্যভূমিতে। এমনকি বিদেশ থেকেও উপস্থিত হন বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি কৌতূহলী অনেক নারী-পুরুষ। বাঙালি সংস্কৃতিপ্রবণ জাতি। যার দরুন দীনবন্ধু মিত্র, ডিএল রায়, অতুল প্রসাদ, রজনীকান্ত সেন, মুকন্দ দাস, রমেশ শীল, কেশব চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কেদারনাথ মুখোপাধ্যায়, গিরিশ চন্দ্র প্রমুখ নাট্যকার, যাত্রাশিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আমাদের মননশীলতায় চির ভাস্বর। আবহমান বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের আশা-আকাক্সক্ষা যেমন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তেমনি জড়িত বাঙালির ইতিহাস ও দীর্ঘ ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য, ধর্মান্ধতা কিংবা ধর্মীয় কূপমণ্ডূকতায় ভরা নয়, বরং  অসাম্প্রদায়িকতা তথা ধর্মীয় উদার মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্থান-পতন এবং বিবর্তনের সঙ্গে সাংস্কৃতিক জীবনের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। মানুষ যখন ব্যক্তি জীবনে হতাশাগ্রস্ত হয়, সুস্থ সংস্কৃতি তাকে পথের নির্দেশনা দেয়। পারিবারিক অশান্তি যখন ব্যক্তি জীবনকে মর্মাহত করে তখন নাটক, যাত্রা জীবনকে দেয় আনন্দময় প্রেরণা। মানুষের আবেগ-অনুভূতি সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে কবিতার মাধ্যমে। কবিতা মানুষকে বাঁচার মতো বাঁচতে প্রেরণা দেয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সংস্কৃতি তাই ভ্যানগার্ডের ভূমিকা গ্রহণ করে। মধুকবির জš§স্থান কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী সাগরদাঁড়িতে ১৮৮তম জš§জয়ন্তী উপলক্ষে ৭ দিনব্যাপী মধুমেলা উদ্বোধন করা হয়েছে ২১ জানুয়ারি। যশোর জেলা পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত মধুমেলায় সভাপতিত্ব করেন যশোরের জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খান টিপু সুলতান এমপি, তথ্য সচিব হেদায়েত উল্লাহ আল-মামুন। বক্তব্য রাখেন যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক শেখ রবিউল আলম, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি হারুন অর রশিদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুজাহারুল ইসলাম,  যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি একরামউদ্দৌলা, ‘কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন’ কমিটির নেতা আবু বক্কর সিদ্দিকী, কেশবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন, কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউন নবী, বাংলালিংকের সহকারী ব্যবস্থাপক (বিপণন) শিবলী সাদিক প্রমুখ। মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক মেলা আয়োজনে দিচ্ছে সহযোগিতা। প্রধান অতিথি প্রমোদ মানকিন বলেন, কবিতাঙ্গনে নতুন ধারা সৃষ্টির জন্য মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত  বাংলা সাহিত্য চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন। দেশপ্রেমের জন্যও বাঙালি জাতি চিরকাল তাকে স্মরণ করবে। তিনি আরো বলেন, কবি মধুসূদন বিশ্ব সাহিত্য সভায় বাংলাকে টেনে এনেছেন।  তিনি আধুনিক বাংলা কাব্যেরও মহানায়ক। সাগরদাঁড়িতে সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন যাতে গুরুত্ব পায় সে ব্যাপারে চেষ্টা চালাছেন বলে জানান প্রধান অতিথি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যশোর শিল্পকলা একাডেমী, উদীচী ও চাঁদের হাতের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। কেশবপুর উদীচী ‘রাম রহিমের মা’ নাটক মঞ্চস্থ করে। মেলা উপলক্ষে যাত্রা, সার্কাস, কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ক স্টল ছাড়াও রয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী হস্ত ও কুটিরশিল্প সামগ্রীর সমাহার। বিসিক এবং গ্রামীণ বাহারি পণ্যের বিকিকিনির জন্য সাজানো হয়েছে ৪৭৯টি স্টল। সব মিলিয়ে মধুকবির জš§ তিথি উপলক্ষে মধুমেলা পরিণত হয়েছে বিভিন্ন বয়স ও রুচির নর-নারীর মিলন মেলায়। মধুসূদন দত্ত জš§ নিয়েছিলেন জাহ্নবী দেবীর গর্ভে ও জমিদার রাজনারায়ণ দত্তের ঔরসে। অসম্ভব উচ্চাশা ও রোমান্টিক জীবন তার জীবনকে আলোড়িত করেছিল। মনীষী গ্যাটে বলেছিলেন, মহাকবির জীবনটা হবে মহাকাব্যের মতো। কবি মধুসূদন তার ব্যক্তিগত ও কাব্যিক জীবনে প্রমাণ করেছেন তার জীবন মহাকাব্যের মতো প্রবহমান। এখানে রয়েছে একদিকে ব্যাথা বেদনা ও নিঃশেষ হওয়ার যন্ত্রণা, অন্যদিকে জীবনবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, পাশ্চাত্যের সঙ্গে প্রাচ্যের মেলবন্ধন এবং বাংলা সাহিত্যে আধুনিক ধারার সৃষ্টি এবং  সার্থক কবি ও নাট্যকার হিসেবে অতুলনীয় প্রতিষ্ঠা। মধুসূদন ১৮৩৭ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে কলকাতায় হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি কলেজ) ভর্তি হন। সেখানে অধ্যয়নকালে বায়রন, সেক্সপীয়র, মিল্টন, দান্তে, গ্যাটে শেলী, কীটস,  বোদলেয়ার, ভার্জিল, ওভিদ, হোমার প্রমুখ তার প্রিয় কবি হয়ে ওঠেন। তার মনে অদম্য ইচ্ছা ছিল তিনি বিলেতে যাবেন। হবেন ইংরেজি সাহিত্যের বড় কবি। ১৮৪১ সালের ২৮ মার্চ মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি ইংরেজি কবিতা রচনা শুরু করেন। ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি দুর্মর মোহ ও বিলেতে পাড়ি দেবার স্বপ্নরঙিন আকর্ষণে তিনি ধর্মান্তরিত হন। বাবা-মা, আÍীয়স্বজন, সমাজ এমনকি স্বদেশ ত্যাগ করে বিলেতে পাড়ি জমান মাইকেল মধুসূদন দত্ত। পৃথিবীতে আর কেউ কবি হওয়ার জন্য এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তার কোনো নজির নেই। ইংরেজিতে তিনি রচনা করেছন কবিতা, কাব্য সাহিত্য। কিন্তু ইংরেজদের কাছে লাভ করতে পারেননি মর্যাদা বা সমাদর। ১৮৪১-৫৮ পর্যন্ত তিনি ঘুরেছেন মরীচিকার পেছনে। ১৮৫৮ সালে ‘রতœাবলী’ নাটকের বাংলা অনুবাদের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্য প্রবেশ করেন তিনি। লেখেন বাংলা ভাষায় প্রথম সফল নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’ (১৮৫৮), সার্থক প্রহসন ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ (১৮৬০) ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’ (১৮৬০), সার্থক নাটক ‘পদ্মাবতী’ (১৮৬০), ‘তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য’ (১৮৬০), খণ্ডকাব্য ‘ব্রজাঙ্গনা’ (১৮৬১) সফল ও সার্থক মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ’ (১৮৬১) খণ্ডকাব্য ‘বীরাঙ্গনা’ (১৮৬২) ও ‘চতুর্দশপদী’ কবিতা (১৮৬৬)। তার মৃত্যুর পর ১৮৭৪ সালে প্রকাশিত হয় ‘মায়াকানন’।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার কবিতা অঙ্গনে চলছিল ঈশ্বর গুপ্ত, বিহারীলাল বন্দোপাধ্যায় প্রমুখ কবির পয়ার ছন্দের যুগ। কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছেন রাতে মশা দিনে মাছি/এই নিয়ে কলিকাতায় আছি’ কিংবা ‘কষিত কণক কান্তি কমনীয়তায়/গাল ভরা গোঁফ দাড়ি তপস্বীর প্রায়।’ কিন্তু মাইকেল মধুসূদন প্রথম পয়ার ছন্দকে ভেঙে বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন করেন। তিনিই প্রথম প্রবহমান গতি ও ধারার বিপরীতে আনেন মাত্রা ও যতি চিহ্ন। বাংলা সাহিত্যের তিনি শুধু প্রথম বিপ্লবী কবি নন, প্রথম বিদ্রোহী কবিও বটে। বাংলা সাহিত্যে তিনি প্রথম গ্রীক, ল্যাটিন ও হিব্র“ ভাষার সংযোগ ঘটিয়েছেন। সঞ্চার করেছেন কাব্যাঙ্গনে নতুনতর রুচিবোধ, শিল্প চেতনা ও জীবনবোধের নতুনতর ব্যঞ্জনা। মধুসূদনের যখন বাংলা সাহিত্যে আবির্ভাব তখন ভারতবর্ষের সামাজিক জীবনে চলছে রক্ষণশীলতার জয়গান। অন্যদিকে শিল্প বিপ্লবের কারণে ইউরোপীয় সভ্যতার সুবাতাস সমাজের একটি দূরদর্শী অংশকে আলোড়িত করছে। রাজা রামমোহন রায়, প্রিন্স দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর সতীদাহ প্রথা বিলোপ, বিধবা বিবাহ প্রচলন বহুবিবাহ নিরোধ, স্ত্রী শিক্ষা বিস্তার ইত্যাদি নিয়ে ভাবছেন। আপ্র্রাণ চেষ্টা করছেন সমাজ সংস্কারের। মধুসূদন এসব কর্মকাণ্ডের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তাই তিনি ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্যের মাধ্যমে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো অনন্য সমাজ সংস্কারক নারী মুক্তির প্রবক্তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখলেন ‘বঙ্গ কুলচূড়া/ শ্রীযুক্ত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহোদয়ের/ চিরস্মরণীয় নাম/ এই অভিনব কাব্য শিরে শিরোমান রূপে/ স্থাপিত করিয়া/ কাব্যকার ইহা উক্ত মহানুভবের নিকট যথোচিত সম্মানের সহিত/ উৎসর্গ করিল/ইতি/ ১২৬৮ সাল ১৬ ফাল্গ–ন।’ মেঘনাদবধ কাব্য মাইকেল মধুসূদনের সৃষ্টি শৈলীর এক অনন্য কীর্তি। মেঘনাদবধের আখ্যান অংশ রামায়ণ থেকে গৃহীত হলেও মধুসূদনের নিজস্ব জীবন জিজ্ঞাসার স্পর্শে তা হয়ে ওঠে সমকালীনও। ইউরোপীয় নব জাগ্রত জীবন চেতনার প্রতীক মাইকেল মধুসূদন। ‘ব্রজাঙ্গনা’ কাব্যে ফুটে উঠেছে আধুনিকতম রাধা ও আধুনিকতম কৃষ্ণের জয়গান। কলকাতার বেলগাছির, নাট্যশালার শ্রী কেশবপুর চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কিংবা গিরিশ চন্দ্র ঘোষের নাটক দেখে তার ভালো লাগেনি বলেই তিনি সার্থক নাটক রচনা করলেন শর্মিষ্ঠা ও মায়াকানন।’ তিনি লিখেছেন ‘অলীক কুনাট্য রঙ্গে/ মজে লোক রাঢ় বঙ্গে/ নিরখিয়া প্রাণে নাহি সয়’। বাংলা সাহিত্যের এই কবির জš§ তিথিতে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে সাগরদাঁড়িতে স্মরণসভা হয়ে আসছে। প্রতি বছর এখানে অনেক পিকনিক পার্টি এসে থাকে। কিন্তু পর্যটন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়নি। খুলনা-সাগরদাঁড়ি, যশোর-সাগরদাঁড়ি, সাতক্ষীরা-সাগরদাঁড়ি, রাজশাহী-সাগরদাঁড়ি ও ঢাকা-সাগরদাঁড়ি সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করা দরকার। প্রয়োজন রাস্তাঘাট আধুনিক ও যুগোপযোগী করার। কবি কপোতাক্ষ নদকে নিয়ে যে অমর কবিতা ‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে’Ñ লিখেছেন সেই স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষ প্রশাসনের অবজ্ঞা, উপেক্ষা আর গাফিলতির কারণে মরা নদীতে উপনীত হয়েছে। জলাবদ্ধতায় এর দু’পারের মানুষের জীবন পরিণত হয়েছে নিরাশায়। যশোরের কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলা, সাতক্ষীরা জেলার তালা ও কলারোয়া উপজেলার লাখ লাখ মানুষ তাদের জীবন ও জীবিকার তাগিদে শামিল হয়েছেন ‘কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন’-এ। কপোতাক্ষ দূরদর্শী ও পরিকল্পিত উপায়ে সচল করা হলে পর্যটকদের জন্য সৃষ্টি হবে নতুনতর ব্যঞ্জনা। পর্যটকদের থাকার উপযোগী অল্প খরচে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে হোটেল ও মোটেলের ব্যবস্থা করা জরুরি। মধুকবির স্মৃতি রক্ষার্থে বাংলাদেশ প্রতœতত্ত্ব বিভাগ উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। একে আরো ঐতিহ্যমণ্ডিত ও পরিশীলিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। আমরা মনে করি মাইকেল মধুসূদনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং এলাকার আপামর মানুষের দাবির প্রতি একাÍতা ঘোষণা করে সরকার সাগরদাঁড়িতে সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নেবেন। মধুকবির অমর সৃষ্টিশৈলী নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা হওয়া দরকার। প্রয়োজন ধর্মান্ধতা, কূপমণ্ডূকতা ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসেবে মুক্ত বুদ্ধির চর্চার বিকাশ ঘটানো।

বিয়ের জন্য ৪০ লাখ রুপির রাজকীয় নেকলেস কিনলেন কারিনা
বিনোদন প্রতিবেদক
কাপুর পরিবারের লাডলি বেভো কারিনা কাপুর সাইফ আলী খানের রাজকীয় বিয়ে হতে যাচ্ছে বছর| রাজকীয় বিয়ের প্রস্তুতিটাও তাই রাজকীয় হওয়া চাই। শুরুতেই মিডিয়ার আলোচনায় উঠে আসে নিজের বিয়ে উপলক্ষে কারিনার ৪০ লাখ রুপির রাজকীয় নেকলেস কেনার খবরটি। রাজ পরিবারের বিয়েতে কনেকে গলায় মূল্যবান নেকলেস পরতে দেখা যায়। যা কারুকাজে মূল্যের দিক থেকেও থাকে স্বতন্ত্রতা| ঠিক তেমনি এক রাজকীয় নেকলেস গলায় জড়াবেন কারিনা কাপুর| এর মধ্যেই বিয়েকে সামনে রেখে নেকলেসটির অর্ডারও করেছেন তিনি। ৪০০ গ্রাম ওজনের নেকলেসটি আবৃত থাকবে মূল্যবান পাথরে। এক অভিজ্ঞ অরনামেন্টস ডিজাইনারের নিখুত কারুকাজে তৈরি হবে নেকলেসটি। প্রায় দুই মাস সময় লেগে যাবে রাজকীয় নেকলেসটি তৈরিতে। শুধু নেকলেসেই শেষ নয়, এরই মধ্যে খবর এসেছে হবু বৌ কারিনাকে বিয়ের উপহার হিসেবে দেবার জন্যে বড় একটি হিরের আংটিও কিনছেন সাইফ| ২০০৮ সালেটাসানছবির শুটিংয়ে সাইফ কারিনার ঘনিষ্ঠতা বেড়ে উঠে| সেই থেকে প্রেমের নদীতে ডুব দিয়েছে সাইফিনাজুটি| ২২ সেপ্টেম্বর পিতা মনসুর আলী পতৌদি মারা যাবার পর নবাবের খেতাব নেন সাইফ| এরপরই সিদ্ধান্ত নেন করিনার সঙ্গে বছরের প্রেমের সফল পরিনতি টানার সময় এসেছে। ঘোষনা দেন ২০১২ সালেই বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন তারা|সাইফ কারিনা দুজনই নিজেদের বিয়ে নিয়ে দারুন উত্তেজিত| প্রেমকে সমাজ স্বীকৃতি দেয়ার আনন্দে দুজনই আটছেন নানা পরিকল্পনা। সাইফের মা বলিউডের এক সময়ের নামকরা নায়িকা শর্মিলা ঠাকুরও চেয়েছেন রাজকীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হবে সাইফ-কারিনার বিয়ে। সব মিলিয়ে রাজকীয় বিয়ের পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে তাদের বিয়ের প্রস্তুতি| বিয়ের তারিখটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত না হলেও কিছুটা আভাষ দিয়েছেন তারা| সাইফের হোম প্রডাকশনেরএজেন্ট বিনোদছবিটি মুক্তির পর এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন জুটি। সাইফের বোন সোহা আলী খানের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘এজেন্ট বিনোদছবিটি ২৩ মার্চ মুক্তি পাবে। তাই মার্চের শেষে কিংবা এপ্রিলের প্রথমেই বিয়ের আয়োজন করা হবে। বলিউডের বহুল প্রতিক্ষীত বিয়ে নিয়ে ভক্তদের কৌতুহলের শেষ নেই|| বিয়েতে কারিনা কি পোষাক পরছেন, কি গহণা পরছেন, এমনকি বিয়ের রীতিতে কোন নিয়ম অনুকরন করা হচ্ছে তা জানার আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন ভক্তরা| তাই কারিনার ভক্তরা তাদের প্রিয় তারকার বিয়ে উপলক্ষে ৪০ লাখ রূপির নেকলেস কেনার খবরে গর্ববোধ করতেই পারেন| তবে এখানেই তো শেষ নয়, রাজকীয় বিয়েতে এমন আরো অনেক চমকই দেখতে পাবে ভক্তরা বিষয়টি নিশ্চিত| ভক্তদের জন্য সুখবর হলো, প্রয়াত মনসুর আলী পতৌদির পুত্র সাইফ আলী খান রাজ কাপুরের নাতনি বেভো কারিনা কাপুরের এই বিয়ের মধ্য দিয়েই তারা দেখতে পাবে বলিউডের প্রথম রাজকীয় বিয়েটি|
সাইফ আলী খান
ভারতের নয়া দিল্লীতে ১৯৭০ সালে ১৬ আগস্ট জন্ম নেন ছোটে নবাব সাইফ আলী খান। প্রয়াত মনসুর আলী পতৌদি অভিনেত্রী শর্মিলার ঠাকুরের ছেলে তিনি। তার বোন বলিউডের অভিনেত্রী সোহা আলী খান| ১৯৯১ সালে বলিউড অভিনেত্রী অমৃতা সিংকে বিয়ে করেন সাইফ| তবে ২০০৪ সালেই আলাদা হয়ে যান তারা। তাদের সংসারে আছে ২টি সন্তান|  ১৯৯২ সালেপরম্পরাছবিতে অভিনয় করে প্রথম বলিউডে পা রাখেন তিনি| তবে প্রথম সাফল্য পান ১৯৯৪ সালেরমে খিলাড়ি তু আনড়িইয়ে দিল্লাগিছবিতে অভিনয় করে। ক্যারিয়ারে খানিকটা বিরতি দিয়ে আবারও অভিনয়ে ফিরেন| ২০০১ সালেরদিল চাহাতা হে’, ২০০৩ সালেরকাল হো না হো’, ২০০৪ সালেরহাম তোমছবির সাফল্যে আবারও অভিনয় ক্যারিয়ারে সাফল্য ফিরে পান| এরপর একে একে ২০০৫ সালেরসালামে নামাস্তেপরিনিতা’, ২০০৬ সালেরওম কারা’, ২০০৮ সালেররেসএবং ২০০৯ সালেলাভ আজ কালছবিতে অভিনয় করেন তিনি। এছাড়াও ২০১০ সালে ভারতের সরকার সাইফকেপদ্ম শ্রিউপাধিতে সম্মানিত করেন  এবং  ২০১১ সালে ৩১ অক্টোবর দশম নবাবের খেতাব অর্জন করেন|  
কারিনা কাপুর  
কিংবদন্তী অভিনেতা রাজ কাপুরের নাতনি কারিনা কাপুর| ১৯৮০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ভারতের  মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে জন্ম নেন তিনি| বলিউডের অভিনেতা রনধীর কাপুর অভিনেত্রী ববিতার ছোট মেয়ে কারিনা| বড় বোন কারিশমা কাপুরের আদরের ছোট বোন তিনি| পরিবারের সদস্যরা আদর করে তাকেবেভোবলে ডাকেন। ২০০০ সালেরিফিউজিছবিতে অভিনয় করে বলিউড ফিল্মে প্রথম পা রাখেন| তবে ২০০১ সালেরকাভি খুশি কাভি গামছবিটি তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্টের কাজ করে।২০০৪ সালেচামেলীছবিতে বির্তকিত চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় উঠে আসেন| ২০০৬ সালেরওমকারা’, ২০০৭ সালেরযাব উই মিট’, ২০০৯ সালেরকুরবানথ্রি ইডিয়েটছবির সাফল্যে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সময়ের বলিউডের শীর্ষস্থানীয় নায়িকাদের একজন হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছেন কারিনা কাপুর|
অবশেষে বালাম
বিনোদন প্রতিবেদক
জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী বালাম নিজস্ব গানের স্বতন্ত্র আঙ্গিক তৈরির মাধ্যমে সুপরিচিতি পান। তার আগের অ্যালবামগুলোর মধ্যেবালামবালাম-পায় ব্যাপক সাফল্য| কিন্তু ৩য় অ্যালবাম দূর্ভাগ্যজনকভাবে অডিও বাজারে খুব একটা আলোড়ন তৈরি করতে পারেনি| তাই কি বালাম চতুর্থ অ্যালবাম বের করার জন্য এতটা সময় নিচ্ছেন! গত প্রায় একবছর ধরে বালামের নতুন কোন অ্যালবাম বের হয়নি। দুই বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিলো বালামের ৩য় একক অ্যালবাম এরপর থেকে অডিও বাজারে তার দেখা নেই। মাঝে মধ্যে কিছু স্টেজ প্রোগ্রাম টিভি শোতে তাকে দেখা গেছে| 
কিন্তু অডিও বাজারে বালাম ছিলেন একবারেই অনুস্থিত| গত রোজার ঈদে বালামের ৪র্থ অ্যালবামটি বের করার কথা ছিল| কিন্তু তা আর  বের হয়নি। পরে বালাম জানিয়েছিলেন, কোরবানি ঈদে অ্যালবামটি রিলিজ দেবেন। রহস্যময় কারনে তখনও তাকে অ্যালবামটি মুক্তি দিতে দেখা যায়নি। যদিও সময় বালাম বলেছেন অ্যালবামটির কাজ তিনি শেষ করে এনেছেন। অবশেষে বালামের নতুন একক অ্যালবামটি বের হতে যাচ্ছে এবারের বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে। অ্যালবামটির নাম দেয়া হয়েছেবালাম ’| বালাম জানিয়েছেন, রোমান্টিক, সেডিস্ট, ম্যালোডিয়াস সুন্দর লিরিকের অ্যালবামটি ভালোবাসা দিবসে ভক্তদের শুভেচ্ছা জানাতে রিলিজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন|