Year-19 # Issue-17 # 10 June 2012

বসে গেল বিমানের নতুন বোয়িং
ইশতিয়াক হুসাইন
৩০ বছরের পুরনো ডিসি-১০ কিংবা এয়ারবাস নয়, এবার সদ্য কেনা বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ বসে (গ্রাউন্ডেড) গেছে। বোয়িং ৭৭৭-এর গুরুত্বপূর্ণ নেভিগেশন যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় শনিবার উড়োজাহাজটি বসে যায়। উড়োজাহাজটি কেনার ছয় মাসের মাথায় তা বসে গেল। এর আগে গত ১ জুন বিমানের সবগুলো ডিসি-১০ গ্রাউন্ডেড হয়ে যায়। এর এক সপ্তাহের মাথায় নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭ অচল হয়ে গেল। বিমান সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের ইঞ্জিনের পরই নেভিগেশন যন্ত্রাংশ সবচেয়ে দামি। এর কারিগরি নাম এয়ারডাটা ইনারশিয়াল রেফারেন্স ইউনিট। এটি দ্রাঘিমাংশ মাপার যন্ত্র। এর আনুমানিক মূল্য ১৪ লাখ মার্কিন ডলার। বৈমানিক যখন আকাশে থাকেন তখন নেভিগেশন যন্ত্রাংশ উড়োজাহাজের অবস্থান নির্দেশ করে। গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হয় বোয়িং ৭৭৭ (অরুণ আলো)। উড়োজাহাজটি সপ্তাহ খানেক আগে নেভিগেশন যন্ত্রাংশে সমস্যা দেখা দেয়। এরপর স্ট্যান্ডবাই নেভিগেশন সিস্টেম দিয়ে উড়োজাহাজটি চালানো হয়। নেভিগেশন যন্ত্রটি আসলে নষ্ট হয়েছে কিনা তা বোঝার জন্য বিমানের প্রকৌশল শাখা তা খুলে অপর কেনা নতুন বোয়িং ৭৭৭ (পালকি) এ ব্যবহার করে পরীক্ষা করে। এ সময় পালকি’র নেভিগেশন খুলে অরুণ আলোতে ব্যবহার করা হয়। এরপর থেকে নষ্ট যন্ত্রটি পালকিতেই রয়েছে। পালকিও স্ট্যান্ডবাই নেভিগেশন সিস্টেম দিয়ে চালানো হয়। শেষ পর্যন্ত শনিবার সকালে পালকি হ্যাঙ্গারে নিয়ে আসা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বোয়িংয়ের কাছ নতুন নেভিগেশন যন্ত্র আনার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই যন্ত্রাংশটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় বিমানের নষ্ট যন্ত্রটি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত নতুনটি পাঠাবে না বোয়িং। এটি আসতে কমপক্ষে তিনদিন সময় লাগবে। আর দেরি হলে এটি আসতে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে। এই মুহূর্তে নতুন দুটি বোয়িং বিমান বহরের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উড়োজাহাজ। এতদিন বসে থাকলে বিমানের ফ্লাইট শিডিউলে বিপর্যয় দেখা দেবে। বিমানের একজন প্রকৌশলী বাংলানিউজকে জানান, যদি দেখা যায় এটি বিমানের দোষে নষ্ট হয়নি তাহলে বোয়িং এটি পাল্টে নতুন যন্ত্রাংশ দেবে। কিন্তু তা না হলে এর মূল্য বিমানকে পরিশোধ করতে হবে। তবে বিমানের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিমানের নিজস্ব ভুলেই এটি নষ্ট হয়েছে। বিমানের উড়োজাহাজ কেনার সময় এপিইউ (অগজুলারি পাওয়ার ইউনিট) না কেনাতেই এটি নষ্ট হওয়ার মূল কারণ।
সরকার আয় বুঝে ব্যয় করলে মূল্যস্ফীতি আর থাকবে না : গভর্নর
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
সরকার আয় বুঝে ব্যয় এবং সবাই সংযত আচরণ করলে মূল্যস্ফীতি আর থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধারা।” শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম একাডেমি আয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক অধ্যাপক হান্নানা বেগমের ৩টি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। উৎসবে আলোচ্য বই তিনটি হচ্ছে: ‘নারীর মানুষ হওয়ার সংগ্রাম: জাতিসংঘের উদ্যোগ ও বাংলাদেশের চালচিত্র’, ‘বাজেটের কথা ও জনপ্রত্যাশা’ এবং নারী ও বাংলাদেশের অর্থনীতি’। মূল্যস্ফীতি দীর্ঘদিন ডাবল ডিজিটে ছিল উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, “৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি কমছে। এখন খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ৮-এর ঘরে।” অর্থনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আসুন নিজেদের ওপর আস্থা রাখি। আমরা কেন দেশের অন্তর্নিহিত শক্তির কথা মাথা উঁচু করে বলবো না। হতাশার পরিবেশ সৃষ্টি করলে, সংশয়বাদিতার পরিবেশ সৃষ্টি করলে কারও কারও ব্যক্তিগত লাভ হলেও দেশের কোনো লাভ হবে না। তাই সংশয়বাদিতার পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা বাদ দিয়ে ভরসার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমাদের দায়িত্বশীলদের অসংলগ্ন কথা বলা বন্ধ করতে হবে। অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ আত্মবিনাশী অভিযাত্রায় নামি। তারা যদি প্রচার করে দিতে পারেন জিনিসপত্রের দাম আর কমবে না, তাহলে সত্যিই কমানো কঠিন।” স্যামুয়েল সনের উদ্ধৃতি দিয়ে গভর্নর বলেন, “অর্থনীতিবিদরা সহজ জিনিস কঠিন করে ফেলেন। আমরা অযথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কঠিন করে ফেলি।” সরকারের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি সংগঠন ও ব্যক্তি কাজ করছেন বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের গড় আয়ু ৬৯ বছর, ভারতে ৬৭। দারিদ্র্য হার ৬০ শতাংশ থেকে কমে ৩০ শতাংশ এবং গরিব মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি থেকে আড়াই কোটিতে নেমে এসেছে। আমি এ সাফল্য সরকারকে দিচ্ছি না। এটা সবাই মিলে অর্জন করেছি। অতিকথনে এ সাফল্য যেন ম্লান করে না দিই।” বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সত্তরের দশকের আগে কেউ বাংলায় অর্থনীতি নিয়ে লিখতেন না। আমিই প্রথম শুরু করেছিলাম। এখন তো বাংলায় অর্থনীতি নিয়ে প্রচুর লেখা হয়। আগে বাজেট ঘোষণার দিন পত্রিকায় এক কলামে ছোট্ট সংবাদ বেরুত। পরদিন সামান্য একটু সংবাদ হতো। এখন তো বাজেট নিয়ে ১ মাস আগে আলোচনা শুরু হয়। তারপর চলতে থাকে। এখনো তীব্রভাবে চলছে।” ঘরের বাজেটের সঙ্গে জাতীয় বাজেটের খুব বেশি পার্থক্য নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা ‘বাজেট সহজপাঠ’ নিয়মিত বের করতাম। নারীর বাজেট, শিশুর বাজেট, প্রতিবন্ধীর বাজেট নামে খ- বিখ- করতাম। আসলে বাজেট একটি দলিল। কোনো সরকার কী চান তা বাজেটে ফুটে ওঠে। বাজেট সাধারণ মানুষের কাছে সহজভাবে উপস্থাপন করতে পারলে তারাও জবাবদিহি চাইবে।” নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, “নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১১তম।  দেড়-দুই দশক আগেও কোনো কোনো এনজিও অফিস পুড়ে ফেলা হয়েছিল নারী কর্মীদের ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের নারী ভয় পায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক নারীর ক্ষমতায়নে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আবশ্যিক করে দিয়েছি ব্যাংকে নারীর জন্য আলাদা ডেস্ক করার বিষয়টি। আমরা নারীর জন্য রিফাইন্যান্স হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৫ শতাংশ হারে ঋণ দিচ্ছি, তারা ৯ শতাংশ হারে দেবে। ইতিমধ্যে ২৬২ কোটি টাকা নারী উদ্যোক্তারা ঋণ পেয়েছেন।” হানান্না বেগম ও তার বই প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, “তিনি আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী। আজন্ম নিবেদিত। শুধু নারী মুক্তি নয় সামগ্রিক অর্থনৈতিক মুক্তির পক্ষে ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে এখনো আদর্শ থেকে সরেননি। নারী আন্দোলন ও নিষ্পেষিত নারীর কথা ফুটে উঠেছে তার বইয়ে। নারী জাগরণের ইতিহাসের অনন্য দলিল বইগুলো। তার লেখার উদ্দেশ্য মহৎ। আগামী নারী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন যারা তাদের জন্য বইগুলো অবশ্য পাঠ্য হওয়া উচিত।”
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে উৎসবে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক। তিনি বলেন, “হান্নানা বেগম চিন্তা-চেতনায় একজন অর্থনীতিবিদ, গবেষক। তার বইগুলো বলে দেয় তিনি গবেষণাকর্মে আন্তরিক। নারী সমস্যার রাষ্ট্রীয় সমাধান কীভাবে হবে এটাও তার গবেষণার বিষয়। তিনি নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার।” গভর্নরের উদ্দেশে তিনি বলেন, “নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অন্তত ৫০ ভাগ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে পেলে চট্টগ্রামবাসী আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।” চট্টগ্রাম একাডেমির চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেনের সভাপতিত্বে উৎসবে বইয়ের ওপর নির্ধারিত আলোচক ছিলেন কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন ও অধ্যক্ষ আনোয়ারা আলম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক ও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রউফ। আবৃত্তিকার আয়েশা হক শিমুর সঞ্চালনে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক আমিনুর রশীদ কাদেরী।
ক্ষমতা যা আছে, তাতেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব: ইসি
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দেওয়া সংবিধানিক ক্ষমতা দিয়েই যে কোনো পরিস্থিতিতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ। রোববার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। শাহনেওয়াজ বলেন, ``বিগত কমিশনও এই ক্ষমতা দিয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করেছে। আশা করি আমরাও পারব। তবে সরকার মনে করলে কমিশনকে আরো শক্তিশালী করতে পারে। এখনো সে সুযোগ আছে।`` এ নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, ``জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে কমিশন। এ জন্য একটি ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করা হয়েছে। সেই কর্ম পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচনের আগে সকল কাজ সম্পন্ন করা হবে।`` সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ``আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বছরই সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করা হবে। সর্বশেষ আদমশুমারির চূড়ান্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই একাজ শুরু করবে ইসি।`` তবে এক্ষেত্রে গত কমিশন সরকারকে যে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল তার কোনো প্রয়োজন নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিগত কমিশন ঢাকা মহানগরীর সংসদীয় আসন সংখ্যা ১০টি নির্দিষ্ট করে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা প্রণয়নে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু বর্তমান কমিশন মনে করছে, সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত ১৯৭৬ সালের অধ্যাদেশেই পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া আছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা সম্পর্কে তিনি বলেন, ``কমিশন শিডিউল অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যেই তালিকা হালনাগাদ করার কাজ শেষ হবে।`` তিনি জানান, এরই মধ্যে ভোটার হালনাগাদের প্রথম পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দুই ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ওপর আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে বিলম্ব হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহ নেওয়াজ বলেন, ``এজন্য দু’জন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়ত একটু দেরি করছে। তবে আর বেশি সময় ক্ষেপণ হবে না।‘ খুব শিগগিরই উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলেও জানান তিনি।
একে কোনো ক্ষমা নয়!
ফজলুল বারী
ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে সিলেটবাসী সম্পর্কে বিদ্বেষপ্রসূত কাণ্ডজ্ঞানহীন আপত্তিকর মন্তব্যটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান। এর আগে বিক্ষুব্ধ সিলেটবাসীর তরফে বলা হয়েছে, মন্তব্যটির জন্য তাকে সিলেটে গিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। বস্ত্র হারানোর ভয়ে মাহফুজুর রহমানের হয়তো সে সাহস নেই। তাই মিডিয়ায় বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি মন্তব্যটি প্রত্যাহারের কথা বলেছেন! কিন্তু তার এই বক্তব্যটিও তার স্বভাবসুলভ চাতুর্যে ভরপুর! মাহফুজুর রহমান বলেছেন, “গত ৩০ মে লন্ডনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সিলেটবাসীদের সম্পর্কে আমার মন্তব্যে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে এরই মধ্যে গভীর দুঃখ প্রকাশ করি। এরপরেও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আমি আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করছি। আশা করি সিলেটবাসী বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং ভুল বোঝাবুঝির আর কোনো অবকাশ থাকবে না”(সূত্র বাংলানিউজ)। এখন সিলেটের নেতারা তার এই চাতুর্যপূর্ণ বক্তব্যের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটি তাদের বিষয়। কিন্তু আমি বিষয়টি আদালতে নিয়ে যাবার পক্ষে। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র টাকার জোরে দেশের মিডিয়ায় যে এক শ্রেণীর দুর্বৃত্ত-চরিত্রের অনুপ্রবেশ ঘটেছে তাদের ব্যাপারে আইনের ব্যাখ্যা-নির্দেশনা পাওয়া যাবে। কারণ মিডিয়াব্যবসা মানেই আলু-পটলের ব্যবসা নয়। এখানকার নেতৃত্বটা থাকা চাই মানসিকভাবে সুস্থ আর চেতনায় প্রাগ্রসর লোকজনেরই হাতে। সেটাতো নেইই, তার উপর আবার গোদেঁর ওপর বিষফোঁড়ার মতো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ চতুর্থ স্তম্ভটি এখন সরকারের কোপানল আর একশ্রেণীর রাজনৈতিক-সামাজিক দুর্বৃত্তের পাশাপাশি মালিক নামধারী এক শ্রেণীর দুর্বৃত্তের আক্রমন-হেনস্থার শিকার।সাংবাদিকদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষজনও এখন মাহফুজুর রহমানের মতো মিডিয়ামালিকদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না! লন্ডনে মাহফুজুর রহমান সিলেটবাসী সম্পর্কে যে কাণ্ডজ্ঞানহীন চরম বর্ণবাদী মন্তব্যটি করেছেন, সেজন্য তাকে তখনই পুলিশ ডেকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া যেত। অস্ট্রেলিয়ায় হলে আমি তা-ই করতাম। বিলাত-অস্ট্রেলিয়ার আইন সমান। এসব মানবিক রাষ্ট্রে যে কারও যেমন স্বাধীন কথা বলার অধিকার সংরক্ষিত, ঠিক তেমনি  কোনো নাগরিক বা সম্প্রদায়কে আহত করার এখতিয়ার কারও নেই। মাহফুজুর রহমানের বক্তব্যে এক ধরনের বর্ণবাদেরও (রেসিজমেরও) ইঙ্গিত আছে। সে কারণে সে অনুষ্ঠানে পুলিশ ডাকলে আইনানুগ বাকি কাজগুলো পুলিশই করতো। মাহফুজুর রহমান এখনও বিলেতে থেকে থাকলে এখনও তার বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এতে আইনানুগ অন্য ব্যবস্থার  পাশাপাশি ব্রিটিশ হোম অফিস এ ধরনের ক্ষতিকর ব্যক্তির ভবিষ্যতে বিলেতে প্রবেশও বন্ধ করতো। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিলেতের দরজাটিও ঠিক একইভাবে বন্ধ হয়েছিল। কক্সবাজারের এক সমাবেশে ব্রিটিশ নাগরিকদের কটাক্ষ করে বক্তব্য রেখেছিলেন সাঈদী। ব্রিটেনের চ্যানেল ফোর ওই বক্তব্যের ভিডিও প্রচারের সঙ্গে প্রশ্ন তুলে জানতে চায় এ ধরনের দুর্বৃত্ত ব্যক্তি কী করে ব্রিটেনে  প্রবেশের ভিসা পেয়েছে? ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স তখন সাঈদীকে গ্রেফতারের উদ্যোগ নিলে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রভাবশালী এক ব্যক্তি তাদের এই বলে নিবৃত্ত করেন যে, এমন কিছু করলে সাঈদী উল্টো আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় হিরো হবে! এর চেয়ে বরঞ্চ তাকে গ্রেফতারের আয়োজন চলছে এমন খবর পৌঁছালেই সাঈদী চলে যাবে। সারা বিলেতের নানা জায়গায় ওয়াজ মাহফিলের নামে বার্ষিক হাজার হাজার পাউন্ড রোজগারের একটি ভালো বন্দোবস্ত ছিল যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর। কিন্তু ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স তাকে গ্রেফতারের চিন্তা করছে এমন খবর পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সব প্রোগ্রাম বাতিল করে একরকম পালিয়ে তিনি দেশে চলে আসেন। আর কোনোদিন বিলেতের  মাহফিলে ‘ওয়াজ ফরমাইবার’ চিন্তাও করেননি। মাহফুজুর রহমান লন্ডনের যে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে উপস্থিত প্রায় সবাই ছিলেন একইসঙ্গে ব্রিটিশ নাগরিক। বিলাত প্রবাসী প্রায় পাঁচলক্ষ সিলেটি বাংলাদেশিরাও একইসঙ্গে ব্রিটিশ নাগরিক। কাজেই সেদেশের একটি নাগরিক সম্প্রদায়কে কটাক্ষ করার, আহত করার অভিযোগের বিষয়টি ব্রিটিশ পুলিশের নজরে আনলে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারতো তা সহজে অনুমেয়! মাহফুজুর রহমানের বক্তব্যটি অনলাইনে আছে। সেটি দেখলেই এর কদর্য-ভয়াবহ রূপটি আঁচ করা যাবে। সেই সংবাদ সম্মেলনে মাহফুজুর রহমানের পাশে সম্ভবত চ্যানেলটির লন্ডন অফিসের কোনো কর্তা ব্যক্তি বসেছিলেন। ভিডিওটি দেখলেই বোঝা যাবে এসব অসংলগ্ন বক্তব্য চলার সময় ওই ব্যক্তিটি কি রকম অস্বস্তিতে ছিলেন! কারণ বিলেতবাসী হিসাবে তিনি সেখানকার আইন-কানুন, প্রবাসী সিলেটিদের সেন্টিমেন্ট জানেন। আব্দুল গাফফার চৌধুরী থেকে শুরু করে দেশের অনেক প্রতিথযশা সাংবাদিক লন্ডনে থাকেন। বিবিসি’র বাংলা বিভাগের সঙ্গে জড়িত প্রতিথযশা সাংবাদিকরা থাকেন। প্রবাসী সিলেটি কমিউনিটির সঙ্গে তাদের চমৎকার সম্পর্ক। সে কমিউনিটির একজন আনোয়ার চৌধুরী বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রুশনারা আলী দেশের আইন সভার সদস্য, লেবার পার্টির ছায়া সরকারের মন্ত্রী।আর শুধু টাকার জোরে এই মাহফুজুর রহমান লোকটি মিডিয়ার মালিক বনে যেতে পারাতে তার মিডিয়ার মাধ্যমে এখন ‘গায়ক-সুরকার’ হয়েছেন, ‘ডক্টরেট’ কিনেছেন, এসব তার ব্যাপার। কিন্তু তিনি তার প্রতিষ্ঠানের খুন হওয়া এক সাংবাদিককে যেভাবে অভাবিত, ন্যক্কারজনক আক্রমণ করেছেন, দেশের একটি জেলার বাসিন্দাদের, এর হিসাবনিকাশ তাকে বুঝিয়ে না দিলে কিন্তু ভবিষ্যতে তার মতো গাড়ল’রা আরও প্রশ্রয় পাবে। এখন এই মামলাটি লন্ডনে, ঢাকায় বা সিলেটেও করা যায়। সারা সিলেটজুড়ে এ ধরনের মামলা শুরু হলে এসব মামলা মোকাবেলা করতে করতেই কিন্তু তার বাকি জীবন যাবে! তথাকথিত ‘গান’ নামের ভালগার বা বক্তৃতার নামে অন্যদের অত্যাচার করার সুযোগ পাবেন না। মিডিয়ার মালিক বনে যাবার বদৌলতে ব্যবসার উদ্দেশে বাচ্চু রাজাকারের মতো দেশের অন্যতম নৃশংস খুনি-যুদ্ধাপরাধীকে ঘোষণা দিয়ে প্রমোট করার মাধ্যমে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে তিনি যে অনেক পাপ করেছেন, সে উপলব্ধিও তার আসবে। বিষয়টি হাইকোর্টে রিট মামলা আকারেও নিয়ে আসা যায়।এমন লোকজনকে হাইকোর্টে নিয়ে এলে মিডিয়ায় মাহফুজুর রহমান জাতীয় ‘গাড়ল’  লোকজনের নানা বিষয়ও উঠে আসবে। পত্রিকা-মিডিয়ার সম্পাদক হতে কি কি যোগ্যতা লাগে তা আইনে উল্লেখ আছে। আজকাল অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না বলেই উত্তরায় রাতের ষড়যন্ত্রের হোতা মাহমুদুর রহমানরাও দেশের আলোচিত সম্পাদক! টাকার জোরে মিডিয়া মালিক বনে যাওয়া মাহফুজুর রহমানরা মানসিকভাবে যথেষ্ট সুস্থ কিনা তা পরীক্ষা করানোর নির্দেশও দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দিতে পারে হাইকোর্ট। সঙ্গে সঙ্গে একশ্রেণীর মিডিয়া মালিকের ট্যাক্স ফাইল সহ মিডিয়া ব্যবসা করার যোগ্যতা পরীক্ষা করার নির্দেশনাও। মাহফুজুর রহমানকে আমার কখনো মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ বলে মনে হয়নি। মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ নিজের মিডিয়া ব্যবহার করে যা খুশি করতে বা যা খুশি বলতে পারে না। ইভা রহমানের অত্যাচারের পর শুরু করতে পারে না গানের নামে তার অত্যাচার! হাজার বছরের ঐতিহ্যের বাংলা গান যেন এখন এটিএন বাংলায় এসে অবিরাম ধর্ষিত হচ্ছে, খুন হচ্ছে! মানসিকভাবে অসুস্থ এ ধরনের গাড়ল প্রকৃতির লোকজন মিডিয়ার নেতৃ্ত্বে থাকলে কিন্তু দেশে সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসবে না। এর জন্য আমি এদের ব্যাপারে রাষ্ট্র-সরকার-আদালতকে এগিয়ে আসতে বলছি। রাজনৈতিক কারণে সরকার হয়তো এ ব্যাপারে হাত দিতে চাইবে না। সে কারণে আদালতই সে অস্বস্তি থেকে দেশের মানুষকে উদ্ধারে এগিয়ে আসতে পারে। আদালতে এদের মতো লোকজনকে ডেকে এনে সতর্ক করার ব্যাপারে সাম্প্রতিককালে অনিবার্য হয়ে উঠেছিল বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী নেতৃ্ত্বাধীন বেঞ্চ। কিন্তু সে বেঞ্চ নিজেই এখন প্রভাবশলীদের আক্রমণের শিকার! এরপরও তার বেঞ্চের কাছেই এমন একটু সুয়োমোটো আদেশ আশা করছি।
আমাদের প্রিয় মুসা ভাই! 
ফজলুল বারী
জীবিত থাকতেই বরেণ্য সাংবাদিক এবিএম মুসা ভাই’কে সম্মাননা দেয়ায় বাংলাদেশ প্রতিদিন পরিবারকে কৃতজ্ঞতা। তবে এক্ষেত্রে একটি ভুল আছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনই দেশের প্রথম মিডিয়া নয়, যারা গুণীজন সম্মাননার ব্যবস্থা করেছে। দেশের মিডিয়ায় এ ধারাটি প্রথম শুরু করেছিল জনকন্ঠ। জনকন্ঠের গুণীজন সম্বর্ধনায় নির্বাচিত গুণীজনকে শুধু একবারই একটি ক্রেস্ট বা নগদ টাকার চেক নয়, প্রতিমাসে সম্মানজনক ভাতা দেওয়ারও ব্যবস্থা ছিল। মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিক শফিউদ্দিন আহমদসহ আরও অনেকে  একসময় শুধু সে ভাতার উপর নির্ভরশীল ছিলেন। পত্রিকাটির আর্থিক দুরাবস্থা শুরু হলে পরে সে ধারাটিও বন্ধ হয়ে যায়। তবে এবিএম মুসা ভাই’র মতো ব্যক্তিত্ব এই প্রথম দেশের কোনো মিডিয়া প্রতিষ্ঠান থেকে এমন সম্মাননা পেলেন, সেটিও ঠিক। অনুষ্ঠানে মুসা ভাই নিজেই তা বলেছেন। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আরও অনেক কথা বলেছেন মুসা ভাই। যা আমাদের দেশের-মিডিয়ার বর্তমান বাস্তবতায় অকাট্য সত্য। দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক শনিবার ঢাকার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু’র সঙ্গে সাংবাদিকদের, মিডিয়ার সম্পর্ক ভালো ছিল। তার কন্যার কাছে মিডিয়া সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য বা ভূমিকা আশা করি না। অগ্রজ সাংবদিকদের একজন আহমেদ নূরে আলম বিভিন্ন সময়ের আড্ডায় বঙ্গবন্ধু’র সঙ্গে মিডিয়াকর্মীদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা বলে থাকেন। আদর্শিক কারণে ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুণে মানিক মিয়ার মতো অনেক সাংবাদিকও সময় অথবা ঘটনা প্রবাহের দাবিতে নিজেরাই বঙ্গবন্ধু’র নামে অনেক বিবৃতি লিখে মিডিয়ায় দিতেন। সেগুলোর  কোনো কোনোটি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করে দিতেন; কোনো কোনোটির আগে হয়তো বঙ্গবন্ধু’র সঙ্গে আলোচনার সুযোগ বা সময়ও পেতেন না। তার নামে ছাপা বিবৃতি পড়ে সেটির সূত্র ধরেই বক্তব্য রাখতেন বঙ্গবন্ধু। জনগণের জাগরণের আন্দোলনের নেতার সঙ্গে সাংবাদিক অথবা মিডিয়ার সম্পর্ক ছিল এমনই আস্থা আর ঘনিষ্ঠতার। আহমেদ নূরে আলমের মতো সেই সময়ের জুনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গেও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। আস্থা-ঘনিষ্ঠতার সম্পর্কটি এমনই ছিল যে তাদের যাতায়াত ছিল বঙ্গবন্ধু’র শয়নকক্ষ পর্যন্ত! অনেক রিপোর্টিং’এর আইডিয়া-শিরোনাম নিয়ে তারা বঙ্গবন্ধু’র সঙ্গে প্রথম আলোচনা বা তার সঙ্গে প্রথম শেয়ারও করতেন। বঙ্গবন্ধু তখন সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক বা বার্তা সম্পাদককে ফোন করে সে রিপোর্টের ট্রিটমেন্টও বলে দিতেন। এবিএম মুসা ভাই’ও সে কথাগুলোই বিভিন্ন সময়ে বলেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুও যেন আবার শুধু এ ধারার মিডিয়া দেখেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন! মানুষ যার কাছে বেশি চায় বা আশা করে তার কাছে তা ঠিকমতো না পেলে হতাশ হয়ে বা আশাহত হওয়ার বেদনায় তার সমালোচনা করেও বেশি। স্বাধীনতার ওপর যুদ্ধবিধবস্ত দেশে বঙ্গবন্ধুর কাছে তখন সবার পাহাড়সমান আশা! সে পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নামে অনেক নৈরাজ্যকে কেন্দ্রকে করে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর ‘জনপদ’, জাসদের ‘গণকন্ঠ’, মাওলানা ভাসানীর ‘হককথা’, কাজী জাফরের ‘নয়াযুগ’ এমন পত্রিকাগুলোর সমালোচনাও যেন তার কাছে বেখাপ্পা-অসহ্য মনে হয়! এরপর ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মিডিয়া দমনের কালাকানুন, চারটি সংবাদপত্র রেখে বাকি সব বন্ধ করে দেয়া; এসব করে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নেতা, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃ্ত্বদাতা দলটি তার ‘মিডিয়াবান্ধব’ তকমাটিই হারায়! আবার সে সময়ে চাকরিচ্যুত অনেক সাংবাদিকের চাকরিরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আরেকটি তথ্য সচিবালয় বর্ধিত করার উদ্দেশে জাতীয় প্রেসক্লাবকে বর্তমান স্থান থেকে স্থানান্তরের উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল। বর্তমান শিল্পকলা একাডেমির কাছে প্রেসক্লাবের জন্য একটি জায়গাও দেয়া হয়। প্রেসক্লাবের জন্যে সে জমি রেজিস্ট্রেশনও করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর সে উদ্যোগটি থেমে যায়। আজকের দুনিয়ার সব সভ্য দেশেই এখন পত্রিকা-মিডিয়ার সংখ্যা সীমিত। এসব কিন্তু কেউ সীমিত করে দেয়নি বা কেউ ইচ্ছে করে সীমিত করেনি। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে না পেরে পুরনো অনেক মিডিয়া হারিয়ে গেছে অথবা সংকুচিত হয়ে গেছে। অনলাইন মিডিয়া ডেভলপ করায় অনেক পাঠকের রুচি-অভ্যাসেরও পরিবর্তন হয়েছে। সারা দুনিয়াতেই পত্রিকা-মিডিয়া বাজার কাটতির ওপর নির্ভর করে চলে-টিকে থাকে। প্রায় শতভাগ স্বাক্ষরতার দেশ অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যিক রাজধানী সিডনিতে মূলধারার দৈনিক মাত্র চারটি। এ চারটিই আবার এখন এত প্রতিযোগিতায় পড়েছে যে, টিকে থাকার জন্য শনি-রোববারের সংখ্যার সঙ্গে গ্রাহকদের সিডি সহ নানাকিছু দেয়! ‘এমএক্স’ নামের একটি বৈকালিক উইকডেজ অর্থাৎ সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বেরোয় এবং এই পাঁচদিনই ট্রেন-বাস স্টেশনে ফ্রি দেয়া হয় বলে এটি সবচেয়ে বেশি মানুষের হাতে যায়। সে জন্য বিজ্ঞাপনদাতারাও এখন পাগলের মতো এই ফ্রি  দেয়া পত্রিকার দিকে ঝুঁকেছেন! টিভি চ্যানেলও এ দেশে সীমিত। ফ্রি চ্যানেল আছে মাত্র ছ’টি। এদেশে কোনো সাংবাদিককে সপ্তাহে সাড়ে সাতশ ডলারের নিচে বেতন দেয়া যায় না। অথচ বাজার কাটতি না থাকা সত্ত্বেও গুটিকয়েক বাদে সহস্রাধিক মিডিয়া বাংলাদেশে যেনতেনভাবে চলছে অথবা চালানো হচ্ছে-স্টাফকে ঠিকমতো বেতন দিচ্ছে না-মানুষকে জিম্মি করছে, ট্যাক্স ফাঁকিতে বর্ম হিসাবে ব্যবহারের জন্য অনেক কালো টাকার মালিকও যার যার একখানা মিডিয়া হাউস খুলে বসে গেছেন! মিডিয়ার নামে এমন নৈরাজ্যের দেশ আর কোথাও দ্বিতীয়টি এমন আছে বলে আমার জানা নেই। কিন্তু চারটি পত্রিকা রেখে বাকি সব পত্রিকা বন্ধ দেয়ার বঙ্গবন্ধু’র ‘মিডিয়াবিরোধী’ অপবাদটি এখনও রয়েই গেছে।
এবিএম মুসা, ব্যারিস্টার রফিকুল হক দু’জনেই বলেছেন, রাষ্ট্র মিডিয়ার ওপর হাত দিলে গণতন্ত্র টেকে না, থাকে না। এক্ষেত্রে দেশের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে একজন সাধারণ সংবাদকর্মী হিসাবে আরেকটু যোগ করে বলতে চাই, দেশের রাজনীতি ভালো না হলে  ভালো না থাকলে সরকার, পার্লামেন্ট, বিচার বিভাগ, মিডিয়া, প্রশাসন, অর্থনীতি, সমাজ কোনো কিছুই ভালো থাকে না। খারাপ রাজনীতির রাষ্ট্র শুধু মিডিয়া কেন, দেশের যে কোনো অর্গানের ওপর হাত দেবেই এবং এখন দিচ্ছে। আমাদের রাজনীতিকরা তাদের সে সততার ও স্বচ্ছতার নেতৃ্ত্বের কর্তৃ্ত্বেই ব্যর্থ হয়েছেন। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন, মেধার ভিত্তিতে মানুষের কর্মসংস্থান, পদোন্নতির কথা তারা মুখেই বলেন শুধু, কাজের বেলায় উল্টো। রাজনীতির মহান পেশার জায়গাটি অস্বচ্ছ-দুর্নীতিগ্রস্ত যতদিন থাকবে-চলবে ততদিন রাষ্ট্রের অপর অর্গানগুলোর কোনোটিই ঠিক হবে না। একটিকে আরেকটির পরিপূরকের বদলে উল্টো শত্রু-শত্রু মনে হবে। মনের ভিতর যেখানে সমস্যা, মিডিয়াসহ রাষ্ট্রের সব অর্গানকে যেখানে শত্রু-শত্রু মনে হয়, সেখানে সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা, ভালো চলাটা কিভাবে সম্ভব? সততার সমস্যায় এখানে সরকার নিজেই স্বচ্ছ অবস্থানে নেই। তাই মিডিয়া সহ দেশের কোনো কিছুই  ভালো নেই। আমার আরেকটি বিষয় মাঝে মাঝে মনে হয়, বাংলাদেশের ভিতরে-বাইরে দুটিমাত্র গোষ্ঠী আছে; এরাই শুধু কাজে ফাঁকি দেন না বা কাজে ফাঁকি দেবার সুযোগ নেই। তারা হলেন বাংলার কৃষক। আর দেশের বাইরের প্রবাসীরা। যারা অবিরাম রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন দেশে। ফসলের ন্যায্য দাম পান বা না পান, কৃষকেরা কৃষিকাজ চালিয়েই যান। নিজেদের খোরাকির জন্যেই তাদের এই চাষবাসের কাজ চালিয়ে যেতে হয়। বিদেশে যারা কাজ করেন তারা জানেন, এসব দেশে কাজ যাওয়া কত সহজ। কাজ গেলে নিজে মারা পড়বেন, পরিবার-পরিজন মারা পড়বে দেশে। তাই কেউ সে ঝুঁকিতে যেতে চান না। আবার এক্ষেত্রে পরিবেশও গুরুত্বপূর্ণ। সবাই দেখেন তাদের আশেপাশের কেউ কাজে ফাঁকি দেন না। তারাও দেন না। বিদেশে আবার বাংলাদেশিরা আইনানুগ ও পরিশ্রমী হিসাবে বিশেষ প্রশংসিত। ভালো কাজ ও ফাঁকিবাজির কাজ এসব থেকে দেশের মিডিয়াও মুক্ত নয়। রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির প্রতি্চ্ছবি হিসাবে মিডিয়ার ওপর আঘাত, সাংবাদিক খুন-নির্যাতন, এসবের প্রতিবাদ হিসাবে কিছুদিন আগে আমার বন্ধুদের শুরু করা ‘J’র আন্দোলনে আমি যোগ দিতে পারিনি। এজন্যে অনেকে আমাকে ভুল বুঝেছেন। কিন্তু আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি মিডিয়া-সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন নিয়ে আমি সব সময় লিখি, আগামীতেও লিখবো। শুধু সরকারের নির্যাতন না। মাহফুজুর রহমানদের মতো মালিকরুপী একদল দানবদের বিরুদ্ধেও। ‘J’যুক্ত আন্দোলনে শরীক বন্ধুদের আমি  বিনীতভাবে লিখেছি,  এই ‘J’যুক্ত প্রতিবাদ কতদিন চলবে? কি বলেই বা তা নামাবো? এর মাঝে তাদের অনেকের প্রোফাইলেই আর ‘J’ নেই। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নির্যাতন কি বন্ধ হয়ে গেছে? এ ধারার রাজনীতি যতদিন চলবে ততদিন শুধু সাংবাদিক না, মানুষের বিরুদ্ধে অমানবিক নির্যাতনও চলতে থাকবে। রোগটাতো মগজে। মগজের রোগের চিকিৎসা বাদ দিয়ে বা এড়িয়ে পোশাকি চিকিৎসা বা মুখে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি মাখার-মাখানোর চেষ্টা কিন্তু সুস্থতা আনবে না। দীর্ঘ মিডিয়া জীবনের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুষ্ঠানে খুঁটিনাটি অনেক মজার কথা বলেছেন, এবিএম মুসা ভাই। যেমন এক তরুণ সাংবাদিক একদিন তাকে ফোন করে ‘স্যার’ সম্বোধন করেন। তিনি তাকে বলেন, ‘’তুমি স্যার বললে কেন? মুসা ভাই বলবে। তোমার বাবাও আমাকে ডাকবেন মুসা ভাই।’ জনকন্ঠের প্রধান বার্তা সম্পাদক কামরুল ইসলাম খানের আপন মামা পত্রিকাটির উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান। কিন্তু আমাদের সঙ্গে আলোচনায় তোয়াব ভাইকে কামরুল ভাইও ‘তোয়াব ভাই’ সম্বোধন করতেন। এ নিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে বলতেন, ‘ভাই’তো তার নামের অংশ! তোয়াব ভাই। এই হচ্ছে আমাদের মিডিয়া জগৎ। আসলে সাংবাদিকতার পেশার বাইরের লোকজন পত্রিকার সম্পাদক সহ নানা পদে চলে আসায় স্যার-ম্যাডাম এসব মিডিয়াতেও ঢুকে  গেছে! ব্রিটিশ রানীশাসিত দেশ অস্ট্রেলিয়ায়ও কিন্তু ‘স্যার’ বলে কোন পদবি-সম্বোধন নেই। শিক্ষক বা অফিসের বস কাউকেই এখানে ‘স্যার’ বলা হয় না। এদেশে সবাই সবার নাম ধরে ডাকে। এতে কারও প্রতি অসম্মান জানানো হয় না। কাজটাই আসল। আমাদের যারা বিদেশে পড়াশুনা শেষ দেশে শিক্ষকতা সহ নানা পেশায় ফিরে গেছেন, তারা এই ব্রিটিশ বেনিয়াদের ‘স্যার’ সম্বোধনটা কেন বিদায় করতে পারলেন না?? দেশে মাঝে মাঝে সামরিক শাসন আসে, তখন স্যার-ম্যাডাম এসব বেড়ে যায়!! ‘জিয়া স্যার’, ‘এরশাদ স্যার’,’খালেদা ম্যাডাম’, ‘রওশন ম্যাডাম’! অনেক সাবেক সামরিক-বেসামরিক আমলা এখন রাজনীতিক। তারা আগেও ‘স্যার’ ছিলেন, এখনও ‘স্যার’, এসবও এর কারণ হতে পারে। কিন্তু আমাদের জাতির পিতা শেখ মুজিব সব সময়ই ছিলেন ‘মুজিব ভাই’। জাতির পিতা হবার আগেও। পরেও। মুসা ভাই জীবনে টানা ২১ বছর এক পত্রিকায় কাজ করছেন। এখনকার সাংবাদিকরা কেন ঘনঘন মিডিয়া বদলায় সে প্রশ্ন তিনি রেখেছেন। তিনি বলেছেন, এভাবে সাংবাদিকদের ক্যারিয়ারের ক্ষতি হয়। এখন যে অনেকে এভাবে আর্থিকভাবে উপকৃতও হয় মুসা ভাই! বারবার হাউস পরিবর্তনের হাইজাম্প-লংজাম্পে পদ-বেতন অনেক বাড়ে। আবার এভাবে ঘনঘন হাইজাম্প-লংজাম্পে অনেকের কোমরও ভাঙ্গে! পড়ে গেলে আর সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াতে পারেন না! আজকাল সাংবাদিকদের হূদরোগসহ নানা শরীরিক সমস্যা বেড়ে যাবার অন্যতম কারণ মিডিয়া হাউসগুলোর নানান অস্থিরতা। দীনেশ দাশ যখন সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেলেন, এর কিছুদিন আগে তিনি হঠাৎই চাকরিচ্যুত হন। তার মতো একজন নির্বিবাদী মানুষের পক্ষে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ওই ঘটনা সামাল দেয়া সম্ভব ছিলো না। দেশের নব্বুই শতাংশ বা এর চেয়ে বেশি সাংবাদিক হয় নিয়মিত বেতন পান না বা সংসার চালানোর মতো বেতন পান না! মিডিয়া কর্তারাই ঢাকাবাসী সাংবাদিকদের নানা চাপের মধ্যে রেখে এভাবে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন! মুসা ভাইর ছেলে পরশ আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার মেয়ে ঝুমা আপার সঙ্গে আমি কাজ করেছি। প্রতিথযশা এই প্রবীণ সাংবাদিকের সংসার-চিকিৎসা কিভাবে চলছে, এর কিছুটা হলেও জানি। আর অনেকের এখন ফ্ল্যাট সহ নানা সম্পদের হিসাব ঠিক রাখতেই আলাদা খাজাঞ্চির দরকার! সত্য বাবু যে অনেক আগেই মরে গেছেন মুসা ভাই! সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন মুসা ভাই। তাদের সময়ে কিভাবে হাউজের ভিতরে সিনিয়ররা জুনিয়রদের কাজ শেখাতেন-প্রশিক্ষণ দিতেন, তার বৃত্তান্ত বলেছেন। কিছুদিন আগে সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ভাই’ও তার একটি লেখায় একই প্রসঙ্গ তুলে এনেছিলেন। রেজা ভাই লিখেছিলেন টিভি রিপোর্টারদের বেশিরভাগ রুটিন রিপোর্ট করে যাচ্ছেন। প্রশ্নের উত্তরে যে নতুন প্রশ্ন তৈরি হয়, সেটির উত্তর বের করে নিয়ে এসে রিপোর্টে ভ্যারিয়েশন আনছেন না। আমার প্রথম সম্পাদক মিনার মাহমুদকে উদ্ধৃত করে রেজা ভাই লিখেছেন, প্রশ্নের পর প্রশ্ন, এভাবে যতক্ষণ না সম্পূর্ণ তথ্য বা চিত্রটি বেরিয়ে না আসছে, সে পর্যন্ত প্রশ্ন করতে পারাটা একজন রিপোর্টারের যোগ্যতা। দেশের সাংবাদিকতার ফিলহাল অবস্থাটা মুসা ভাই-রেজা ভাই দু’জনেই জানেন।সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যেটি সব সময় পড়াশুনা করার পেশা। কারণ আমাদের রিপোর্ট পড়ে পড়ে পাঠক নিজেদের তৈরি করে, সে আরও অনেকের লেখা-রিপোর্ট পড়ে। তার মধ্যে সৃষ্টি হয় আরও জানার প্রত্যাশা। আরও বেশি। আরও বেশিকিছু। কিন্তু আমাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পড়াশুনার ঘাটতি খুব বেশি। নতুন বিষয়ে পড়াশুনা নেই। পুরনো যা জানি তাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খাচ্ছি! নতুন পড়াশুনার সুযোগ-সময় অথবা ইচ্ছাও নেই।
 এসব কারণে আজকাল অনেক সিনিয়র-জুনিয়রকে শেখাতেও চান না, অথবা শেখানোর যোগ্যতাও অনেকের নেই। সবাই চাইছেন রেডিমেড কিছু। এসব কারণেও নতুনদের অনেক কিছু শেখাও হচ্ছে না। তাদের বেশিরভাগ যার যার যোগ্যতাতেই যা পারছেন করছেন! আগে বিভিন্ন বাম সংগঠনের ছেলেরা রাজনৈতিক পড়াশুনা করে মিডিয়ায় বা সাহিত্যের জগতে আসতেন। বামধারার রাজনীতি দুর্বল হয়ে যাওয়াতে সে যোগানের জায়গাটিও দুর্বল হয়ে গেছে। আর বামধারার রাজনীতিওতো এখন আমাদের এখানে এক রকম গালি হিসাবে ব্যবহূত হয়! কে কতবড় আওয়ামী লীগার-বিএনপি বা ছাত্রলীগ-ছাত্রদল, তা প্রমাণের প্রতিযোগিতা হয়! আজকালতো ছাত্রলীগ-ছাত্রদল হতে-সাজতে পড়াশুনা জানা লাগে না মুসা ভাই। শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়া জানলেই চলে! সাংবাদিকতার চেয়ে তাই এখানে শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়ার পারপাস সার্ভ করা বা তাদের প্রটেকশন দেয়া বা বিরোধিতার কাজই যে বেশি হয়! দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক চিত্রের মতো মিডিয়ারও তাই একই অবস্থা। সে কথা আবার বলি, দেশের রাজনীতি ভালো না হলে কিন্তু মিডিয়া বা কোনোকিছুই ভালো হবে না। অথবা রাজনীতিকে পালটে দেবার মতো শক্তিশালী মিডিয়া বা সাংবাদিক-শক্তি নেই। তাবেদার গোষ্ঠী আছে কেবল। এ তাবেদার গোষ্ঠী বা জেনারেশন দিয়ে পরিবর্তন আসবে না। পরিবর্তন আসবে সেই জেনারেশনের হাতে, যারা এসব তাবেদারি থেকে মুক্ত থকবে স্বাধীন থাকবে। শয়তানের কাছে নিজের আত্মা বিক্রি করবে না। এবং সে জেনারেশন আসছে মুসা ভাই!
প্রিয় মুসা ভাই’র প্রতিটি লেখায় ও বক্তব্যে নতুন অনেক যুক্তি ও চিন্তার খোরাক পাই। মজা করে নিজে নিজে বলেনও, তিনি আওয়ামী লীগের ভিতরে বিরোধীদল! সাহস নিয়ে নিয়ে তাই যে কোনো কথা অকপটে বলতে পারেনও। র‌্যাবের ‘ভুলের গুলি’তে পা হারানো লিমন ইস্যুতে সমালোচনা আর বিবেকের তাড়নায় একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সরকারের ভিতরে প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও শক্তিশালী(!) কোনো্ পক্ষের চাপে প্রত্যাহার করা সেই বিবৃতিটিই মুসা ভাই তার লেখার ভিতরে পুরোটাই তুলে আনেন! এই গাটস বা সৎ সাহস তারই আছে। এর জন্যেই তিনি মুসা ভাই। আমাদের  প্রয়োজনে, দেশের মিডিয়ার প্রয়োজনে, দেশের মানুষের প্রয়োজনে তাই মুসা ভাইকে আরও অনেক অনেকদিন সুস্থ থাকতে হবে, বেঁচে থাকতে হবে। সে প্রত্যাশা রেখেই আপনার উদ্দেশে ও উৎসর্গ করা এ লেখাটা শেষ করছি প্রিয়, মুসা ভাই। ভালো, খুব ভালো থাকবেন!
ব্যাংক পরিদর্শনে আরো কঠোর হতে নির্দেশ
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
তফসিলি ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম দিন দিন বাড়ছে। অতীতের চেয়ে ব্যাংকগুলো বেশি অনিয়মে এবং অস্বচ্ছ প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ছে। এমন তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল। এতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। একই সঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন এবং তদারকি পদ্ধতির গুণগত মান বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। রোববার ৫টায় বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে এ ব্যাপারে পরিদর্শন দলকে আরো কঠোর হতে নির্দেশ নিয়েছেন। বৈঠকের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান, নির্বাহী পরিচালক এসএম মনিরুজ্জামানসহ ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-১, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-২, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৩, ভিজিলেন্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক, অব সাইট সুপার ভিশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এবং আরো ১২টি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, গভর্নর বাণিজ্যিক ব্যাংক পরির্দশন পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানের করার কথা বলেছেন। একই সাথে খেলাপি ঋণ, ক্যামেলস রেটিংসহ ব্যাংকিংখাতের আর্থিক সূচক আন্তর্জাতিক মানদন্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করার কথা বলেন। সূত্র বলছে, বর্তমানে বিশেষ পরিদর্শনে বিভিন্ন ব্যাংকের অনিয়ন বেরিয়ে আসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। বৈঠকে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের মহাব্যবস্থাপকরা জানান, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শাখা বেড়ে যাওয়া কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর্যাপ্ত লোকবল কারণে সঠিক ভাবে পরিদর্শন করা যাচ্ছে না। এ কারণে অনেক অনিয়ম আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক পরিদর্শনে যেসব অনিয়ম উঠে এসেছে বৈঠকে তা তুলে ধরা হয়। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা  নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা তাদের বক্তব্যে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্তিশালী ‘তদারক জাল’ থাকার কারণে নানা অনিয়ম বেরিয়ে আসছে।
বাজেট বাস্তবায়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের বিকল্প নেই: আইবিএফবি
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাজেট বাস্তবায়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য ঘোষিত জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে বলে মনে করে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি)। রোববার দুপুরে সংগঠনটির বনানীস্থ কার্যালয়ে বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আইবিএফবির প্রেসিডেন্ট হাফিজুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে সংগঠনটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, পরিচালক মো. ইকবাল হোসাইন এবং আইবিএফবির সদস্য ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট একে চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইবিএফবির নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম। অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট হাফিজুর রহমান খান আইবিএফবির লিখিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “সার্বিক দিক বিবেচনায় প্রস্তাবিত বাজেটকে একটি সময়োপযোগী কিন্তু চ্যালেঞ্জিং বাজেট বলা যায়। তবে বাজেটের বিভিন্ন সুফল জনগনের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে এর সঠিক বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” এ সময় তিনি বলেন, “বাজেটের সঠিক বাস্তবায়নে অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে সুশাসন। আইবিএফবি বিশ্বাস করে সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের আমলাতন্ত্রের দতা বৃদ্ধি সম্ভব এবং বাজেটের সফল বাস্তবায়নে আমলাতন্ত্রের দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সম্পৃক্ততাও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। দেশের স্থানীয় সরকারের নেতৃত্বকে সরকারের আস্থায় নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য। সেই সাথে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দেশের উন্নয়নে নিজেদের ক্ষুদ্র বিভেদ ভূলে সকলে মিলে একযোগে কাজ করার সংস্কৃতির চর্চাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে এবং সর্বস্তরে গণতন্ত্রের চর্চা নিশ্চিত করতে হবে বলে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে। বাজেটের খরচ মেটানোর জন্য ব্যাংক থেকে ২৩,০০০ কোটি টাকা ঋণ নেবার কথা বলা হয়েছে। এ ঋণ অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ ফেলবে। উপরন্তু যদি বৈদেশিক খাত হতে ঋণ পাওয়ার যে প্রাক্কলন করা হয়েছে তা না পাওয়া যায় তবে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ আরো বেড়ে যেতে পারে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সে সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া যায় না। সে পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে আরো বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হতে পারে। অর্থমন্ত্রী কর্র্তৃক অনুমিত ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মূদ্রাস্ফীতি বিবেচনায় আয়কর প্রদানের ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সর্বোচ্চ সীমা বিদ্যমান ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা হতে বৃদ্ধি করে ৩ লাখ টাকা নির্ধারন করা যৌক্তিক বলে আইবিএফবি মনে করে। মোবাইল ফোনের বিলের উপর ২ শতাংশ হারে উৎসে কর আরোপের বিষয়টি নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে বিষয়টি পূনর্বিবেচনার দাবি রাখা হয় এই সংবাদ সম্মেলনে। এছাড়া ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ভোজ্যতৈল, মা ও শিশুর নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট, জাহাজ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ইত্যাদির ওপর শুল্ক হার হ্রাস অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়।
বাজেট প্রতিক্রিয়া
উৎসে কর কমানোর দাবি জানালো ইএবি
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট


রফতানিমুখী শিল্পের জন্য প্রস্তাবিত ১.২০ শতাংশ উৎসে কর নির্ধারণ করায় এ শিল্প নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। রফতানি পণ্যের প্রধান বাজার ইউরোপ এবং যুক্তরারষ্ট্রে দ্বিতীয় মন্দা বিরাজ করছে। তাই দেশের দুর্বল অবকাঠামোর কথা বিবেচনায় এনে উৎস কর ১.২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে বর্তমান হার ০.৬০ শতাংশে বহাল রাখা প্রয়োজন। রোববার রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে ‘২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী এ দাবি জানান। এ সময় বিভিন্ন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। দেশের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সমস্যা প্রসঙ্গে সালাম মুর্শেদী আরো বলেন, “বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে। উদ্যোক্তারা নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখছেন। শিল্পায়নের মূল উপাদান বিদ্যুৎ ও গ্যাস। শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নতুন কারখানায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ সরবরাহ না পাওয়ায় শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।” ব্যাংক সুদের হার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ ১৮-২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিযোগী দেশগুলোতে এই সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটের মধ্যে রয়েছে। তাই শিল্পের প্রসারে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হার বড় বাধা। শিল্পে বিনিয়োগের বিপরীতে মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদের সীমা-রেখা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।” তিনি আরো বলেন, “মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আলাদা বরাদ্দ, শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দেওয়া, পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, রফতানিমুখী শিল্পের উন্নয়নে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ওষুধ শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠা, রাজধানীর কারওয়ানবাজারের জনতা টাওয়ারকে সফট্ওয়্যার পার্ক করার ঘোষণা, জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য কাঁচামাল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে আনা, সিরামিকের কাঁচামাল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার এবং পরিবেশ রক্ষায় ইটিপি স্থাপনের জন্য আমদানিকৃত যন্ত্রপাতির ওপর আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করার উদ্যোগ রফতানিমুখী শিল্পকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।” সালাম মুর্শেদী বলেন, “শিল্প-খাতের জন্য সকল ব্যাংক কর্তৃক এক ও অভিন্ন ডলার বিনিময় হার নির্ধারণ করা প্রয়োজন। রফতানি বাণিজ্যের গুরুত্ব বিবেচনা করে ভর্তুকি দেয়া প্রয়োজন। এই ভর্তুকি অবশ্যই কর মুক্ত হতে হবে।”
মেসির হ্যাট্রিকে ডুবলো ব্রাজিল
স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে আর্জেন্টিনাকে অসাধারণ জয় এনে দিয়েছেন বার্সা তারকা লিওনেল মেসি। দু’দুবার পিছিয়ে পড়া আর্জেন্টিনা মেসির হ্যাট্রিকে জয় তুলে নেয় ৪-৩ ব্যবধানে। ২৩ মিনিটে নেইমারের ফ্রিকিকের বক্সের সামনে থেকে আলতো টোকায় বল জালে পাঠিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক গোলের দেখা পান ভাস্কো দা গামার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রমুলো বর্জেস মন্তেইরো। খানিক সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে পড়ে নিউজার্সির ইস্ট রাদারফোর্ডের মেটলাইফ স্টেডিয়ামের আর্জেন্টিনা গ্যালারি। এরপরই সমর্থকদের মলিন মুখে হাসি ফিরিয়ে আনেন মেসি। ৩১ মিনিটে গঞ্জালো হিগুয়েনের পাসে লক্ষ্যভেদ করে দলকে সমতায় ফেরান এই বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড। তিন মিনিট পরেই আবারও ব্রাজিল গোলপোস্টে হানা দেন মেসি। এবার ডি মারিয়ার সঙ্গে আদান প্রদানে বিপদসীমায় ঢুকে পড়েন। বক্স থেকে নেওয়া তার শট জালে আছড়ে পড়লে খুশির ঢেউ বয়ে যায় আর্জেন্টিনা শিবিরে। বিশ্রামের পর ছন্দে ফেরা ব্রাজিল সমতা ফেরাতে মরিয়া হয়ে উঠে। কয়েকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর ৫৬ মিনিটে সমতায় ফেরে কোচ মানো মেনেজেসের শিষ্যরা। ইন্টারন্যাসিওনালের সতীর্থ লেন্দ্রো দামিওর পাসে আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক রোমেরোকে পরাস্ত করেন ওস্কার। ৭২ মিনিটে নেইমারের কর্নার থেকে ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন এফসি পোর্তোর ফরোয়ার্ড হালক। পিছিয়ে পড়ে ফের জেগে ওঠে আর্জেন্টিনা। চার মিনিট পরেই গোল করে সমতায় ফেরে কোচ আলেহান্দ্রো সাবেলার দল। ডি মারিয়ার বদলি হিসেবে নেমে কোচের আস্থার প্রতিদান দেন কুন আগুয়েরো। তার কর্নার থেকে দুর্দান্ত হেডে আর্জেন্টিনাকে ম্যাচে ফেরান ফেদেরিকো ফার্নান্দেজ। ৮৫ মিনিটে ব্রাজিলের হারের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে নিজের দায়িত্ব শেষ করেন মেসি। ডানপ্রান্ত থেকে বল পেয়েই দুর্বার গতিতে ব্রাজিল রক্ষণব্যুহ ভেদ করেন মেসি। বক্সের ভেতর থেকে বাঁপায়ের তীব্র শট গোলরক্ষক রাফায়েলকে বোকা বানিয়ে জালে আশ্রয় নিলে শেষ হাসি হাসে আর্জেন্টিনাই। টান টান উত্তেজনার ম্যাচটি শেষও হয় নাটকীয়ভাবে। ইনজুরি সময়ে উভয় পক্ষকেই দশজনের দলে পরিণত করে। বল দখলের লড়াইয়ের মধ্যেই একচোট হয়ে যায় মার্সেলো ও লাভেজ্জির মধ্যে। উভয়কেই লাল কার্ড দেখিয়ে বহিষ্কার করেন রেফারি মারুফো।
ব্রাজিলকে হারানো সবসময়ই আনন্দের: মেসি
স্পোর্টস ডেস্ক

জাতীয় দলের জার্সিতে জ্বলে উঠছেন বর্তমান বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। বার্সা তারকার দুর্দান্ত তিন গোলের সুবাদে আর্জেন্টিনা ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে। দলকে এ দারুণ জয় এনে দেওয়ার পর আর্জেন্টাইন অধিনায়ক এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচই তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের মেল্টলাইফ স্টেডিয়ামে ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রথমে পিছিয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা। এরপর ফরোয়ার্ড গঞ্জালো হিগুয়েনের পাস থেকে দুর্দান্ত গোলে দলকে সমতায় ফেরান মেসি। জয়ের পর সতীর্থদের প্রশংসায় তিনবার ফিফা ব্যালন ডি’ওর জয়ী বলেন, ‘হিগুয়েনের সঙ্গে আমার বোঝাপড়া খুবই চমৎকার। একইভাবে সার্জিও আগুয়েরোর সঙ্গেও। যখন আমরা একই সঙ্গে খেলি এটি চমৎকার। কারণ আমরা অনেক সুযোগ তৈরি করি।’ মেসি বলেন, ‘ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪-৩ ব্যবধানের জয় অন্যরকম। অনেকগুলো গোল করার সুযোগের সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচে অনেক উত্তেজনা ছিলো। এটি ছিলো প্রীতি ম্যাচ। তারপরও এই জয়টি প্রয়োজন ছিলো। ব্রাজিলকে হারানো সবসময়ই চমৎকার। একই সঙ্গে আমি তিনটি গোল করেছি। সব কিছুই ছিলো অসাধারণ।’ ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে মেসি বলেন, ‘সবসময় নেইমার আমার প্রশংসা করে। আমরা একটি পথ পাড়ি দিলাম। ম্যাচে আমরা কথা বলতে পারিনি তবে জার্সি বিনিময় করেছি।’ জাতীয় দলের ক্যারিয়ারে ৭০টি ম্যাচ খেলে ২৬ গোল করেন মেসি। ব্রাজিলের বিপক্ষে হ্যাট্রিকের সুবাদে আর্জেন্টিনার চতুর্থ সর্বোচ্চ স্কোরারে পরিণত হয়েছেন তিনি। জাতীয় দলের জার্সিতে ৩৪ গোল করে তৃতীয় স্থানে আছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর ডিয়াগো ম্যারাডোনা।


গ্র্যান্ড স্ল্যাম চক্র পূর্ণ করলেন মারিয়া শারাপোভা
স্পোর্টস ডেস্ক

 নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন মারিয়া শারাপোভা। মৌসুমে কোর্টে ঝড় তুলেও সাফল্যের মুখ দেখেনি। সবকিছু পেছনে ফেলে ফ্রেঞ্চ ওপেনে স্বরূপে ফিরেছেন রাশিয়ান তারকা। ইতালির সারা এরানিকে হারিয়ে রোলাঁ গারোর শিরোপা জেতার পাশাপাশি ফের বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থানে ফিরেছেন তিনি। এ জয়ের মাধ্যমের গ্র্যান্ড স্ল্যাম চক্র পূর্ণ করেছেন শারাপোভা। ২০০৪ সালে উইম্বলডন, একই বছর ইউএস ওপেন এবং ২০০৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে। এছাড়া ক্যারিয়ারে ২৬টি ডব্লউটিএ একক শিরোপা জিতেছেন ২৫ বছর বয়সী এই টেনিস তারকা। প্রতিযোগিতার ফাইনালে শারাপোভার কাছে পাত্তাই পাননি এরানি। ইতালিয়ান এই টেনিস তারকার বিপক্ষে জিততে শারাপোভা সময় নেন দেড় ঘণ্টা। প্রথম সেটে ৬-৩ গেমে জেতেন রুশ সুন্দরী। দ্বিতীয় ও শেষ সেটে এরানিকে ৬-২ গেমে হারিয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যাম চক্র পূর্ণ করেন শারাপোভা।
অনুপম রায় : নামে নয় গানেই পরিচয়
বিপুল হাসান
‘আমি বাঙালি। আমার মাতৃভাষা বাংলা। এ ভাষায় আমি কথা বলি। এ ভাষায় আমি গান করি। বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষার জন্য বাংলাদেশের মানুষেরা প্রাণ দিয়েছে। পৃথিবীর কোনো জাতির ইতিহাসে এমন গৌরবের ঘটনা নেই। তাই এদেশের মানুষের প্রতি আমার আছে আলাদা শ্রদ্ধাবোধ। আমিও প্রয়োজনে বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিতে প্রস্তুত।’ এভাবেই বাংলাদেশ সম্পর্কে নিজের অনুভূতির কথা জানালেন কলকাতার এই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়ক অনুপম রায়। ‘অনুপম রায়’ নামটি এদেশের মানুষের কাছে খুব একটা সুপরিচিত নয়। তবে তার গাওয়া গান এদেশে তুমুল জনপ্রিয়। ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ এই গানটির গায়ক-গীতিকার ও সুরকার অনুপম রায়। আগে কখনো বাংলাদেশে আসার সুযোগ না হলেও চলতি জুন মাসে পর পর দুবার তিনি এদেশে ঘুরে গেলেন। গত ৩ জুন ঢাকায় আসেন দেশ টিভির একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য। দ্বিতীয়বার আসেন ১২ জুন জিটিভির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার জন্য। পারফর্ম শেষে কলকাতা ফেরার আগে হোটেল লবিতে অনুপম রায় বাংলানিউজের মুখোমুখি হন।
বাংলানিউজ : কেমন লাগলো বাংলাদেশ?
অনুপম রায় : এ মাসেই পর পর দুবার বাংলাদেশে আসার সুযোগ হওয়ায় আমার অনেকদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। ছাত্রজীবনে একবার বন্ধুদের সঙ্গে বাংলাদেশে বেড়াতে আসার পরিকল্পনা করেছিলাম। শেষপর্যন্ত বন্ধুরা ঠিকই বাংলাদেশে বেড়াতে এলো। আমি পারলাম না পকেটের সামর্থ্য ছিল না বলে। কলকাতার অনেক শিল্পীই বাংলাদেশে গান গাইতে আসেন। ফিরে গিয়ে তারা এদেশের প্রাণবন্ত মানুষের আন্তরিকতা আর আতিথেয়তার গল্প করেন। বাংলাদেশে এসে টের পেলাম তারা মোটেও বাড়িয়ে বলেন না। এদেশের মানুষের ব্যবহারে আমি মুগ্ধ।
বাংলনিউজ : বাংলাদেশে আপনার জনপ্রিয়তা কেমন টের পেলেন?
অনুপম রায় : দুঃখিত, আমি এদেশে মোটেও জনপ্রিয় নই। এই তো কিছুক্ষণ আগে একা একা বাইরে থেকে ঘুরে এলাম। কেউ তো আমার দিকে ফিরে তাকালো না। আসলে এ দেশে আমার গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অবশ্য গানের মাঝেই তো আমার আসল পরিচয়। এটা আমার ভাগ্য যে, বাংলাদেশের মানুষ আমার গান শুনছে। সবার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে, আমাকে কেউ বিদেশি শিল্পী যেন না মনে করেন। বিদেশি নই, আমি বাঙালি। রাজনৈতিক কারণে দুই বাংলা আলাদা হলেও সাংস্কৃতিক বন্ধনে আমরা এক। আমি সাংস্কৃতিক পরিচয়টাকে বড় মনে করি।
বাংলানিউজ : বাংলাদেশের গান সম্পর্কে আপনার ধারণা?
অনুপম রায় : ধারণা অনেক উঁচু। রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন, শাহনাজ রহমতুল্লাহ, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গান আমি নিয়মিত শুনি। আরো শুনি মাইলস, এলআরবি আর নগরবাউল জেমসের গান। অল্প বয়সে আমি ছিল মাইলসের গানের খুব ভক্ত। খুব ভালো লাগতো মাইলস ব্যান্ডের গান।
বাংলানিউজ : গানের জগতে আসলেন কী করে?
অনুপম রায় : কী করে যে আসলাম, তা নিয়ে আমিও ভালো বলতে পারবো না। একটা সময় ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছি, তাতে ফেল করি। এরপর কলেজে উঠে ধরলাম ক্রিকেট, সেখানেও ধরা। একটা ম্যাচও জিততে পারতাম না। ছোটবেলা থেকে গান গাইতাম শখে। একটু বড় হলে নিজের লেখা গান নিজেই সুর করতাম আর নিজেই কণ্ঠ দিতাম। ২০০৫ সাল থেকে আমি একটা অ্যালবাম বের করার জন্য কলকাতার বিভিন্ন ক্যাসেট কোম্পানির দরোজায় দরোজায় ঘুরেছি। আমার গাওয়া আটটা গানের সিডি সবাই ফিরিয়ে দিয়েছে। বলেছে, আপনি টাকা দিন আমরা বের করে দিচ্ছি। কিন্তু এইভাবে আমি সিডি বের করতে চাইনি। এতো বছর পর ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের মাধ্যমে গান করে সাফল্য আমার হাতের নাগালে ধরা দিয়েছে। গায়ক হিসেবে এখন আমাকে সবাই চিনে।
বাংলানিউজ : গান নিয়ে এখন ব্যস্ততা কেমন?
অনুপম রায় : ২০১০ সালে ‘অটোগ্রাফ’ ছবির গান ছিল আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। এরপর থেকেই প্লে-ব্যাকে বেশ ব্যস্ত হয়ে উঠে। ‘চলো পালাই’, ‘বাইশে শ্রাবণ’, ‘রঙ মিলান্তি’, ‘বেডরুম’, ‘জানি দেখা হবে’ প্রভৃতি ছবিতে গান করি। এ বছর ‘ল্যাপটপ’ ছবিতে আমার গাওয়া গানগুলো প্রশংসিত হয়েছে। কয়েকদিন আগে বের হয়েছে ‘হেমলক সোসাইটি’র গান। এ ছাড়া ‘ওয়ান লাইনার’, ‘শূন্য অঙ্ক’ প্রভৃতি কিছু ছবির প্লেব্যাকও করলাম। বাংলাদেশের ‘চোরাবালি’ ছবির একটি গান গাইলাম কদিন আগে। এছাড়ার আমার নিজস্ব ব্যান্ড ‘অনুপম রায় ব্যান্ড’ নিয়েও ব্যস্ততা আছে। অনেক স্টেজ শো পাচ্ছি।
বাংলানিউজ : বাংলাদেশে ছবি ‘চোরাবালি’ গান গাওয়া প্রসঙ্গে বলবেন?
অনুপম রায় : ‘চোরাবালি’ ছবির পরিচালক রেদওয়ান রনির সঙ্গে হিরক দাশগুপ্তের মাধ্যমে আলোচনা হয়েছিল। হিরকদা মূলত আমার মিডিয়া ও বিনোদনের নানা বিষয় দেখভাল করেন।‘চোরাবালি’ ছবির একটি গানই করেছি আমি। এর কথা, সুর ও সংগীতায়োজন  আমার নিজেরই করা। শিল্পী হিসেবে নয়, একজন শ্রোতা হিসেবে বলবো গানটি  অনেক চমৎকার হয়েছে। আশা করি ন্যান্সির সঙ্গে এ ছবির ভিন্নধারার এই গানটি শ্রোতাদেরও ভাল লাগবে। তবে এ কাজটি বিচ্ছিন্নভাবে হয়েছে। কেউ যদি চান আমি এ দেশের চলচ্চিত্রের জন্য আরও বেশি সময় নিয়ে গান তৈরি করতে চাই।
বাংলানিউজ : আপনার কী বলিউডের হিন্দি ছবিতে গান গাওয়ার ইচ্ছে আছে ?
অনুপম রায় : আসলে আমার গান তো আমার লেখার উপরই দাঁড়িয়ে আছে। আমি তো অন্যের গানে প্লে-ব্যাক করতে অতটা ইনটারেস্টেড নই। এখন বাংলায় প্রোফেশনালি প্লেব্যাক করি, সেটা ঠিক আছে। আসলে আমি নিজের গান, নিজের কথা শোনাতে অনেক বেশি ইন্টারেস্টেড। ওটাই আমার প্যাশন। বলিউডে আমাকে কেউ সুযোগ দেবে কিনা জানি না, আর হিন্দিতে কতোটা নিজেকে প্রকাশ করতে পারবো, এ নিয়েও আমার নিজেরই সন্দেহ আছে।
বাংলানিউজ : আপনি তো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন গোল্ড মেডেলিস্ট মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পেশা হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে গান বেছে নিলেন কেন?
অনুপম রায় : একাডেমিক পড়াশোনায় গোল্ড মেডেল পাওয়াটা কোনও ইস্যুই না। ওটা ক্লাসের যে-কেউই পেতে পারত। ভাগ্যক্রমে আমি পেয়েছি। আর গান হিট করাটাও সে রকম কিছু বিরাট ব্যাপার না। গান হিট করবে কি না ভেবে তো আর গান লিখিনি। তবে মানুষ যে আমার গান শুনছেন সেটাই অনেক বড় কথা। গানের মাধ্যমে আমি মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারছি, ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে থাকলে তা পারতাম না। তাই পেশা হিসেবে গান গাওয়াটাই ভালো মনে করেছি।
বাংলানিউজ : আপনার জনপ্রিয় একটি গানের কথা হলো ‘সব পেলে নষ্ট জীবন’, এটাকে কী সত্য মনে করেন?
অনুপম রায় : আরে আসল কথা হলো ‘আঙ্গুর ফল টক’। অনেক কিছু পাই নি বলে মনকে সান্তনা দেওয়া, এই আর কী! আসলে তো সব পেলে জীবন নষ্ট হবে না, বরং আমার ভালোই লাগবে। যখন সেটা হয় না, তখন ওই সব লিখতে হয়!
বাংলানিউজ : আপনার আগামী দিনের পরিকল্পনা ?
অনুপম রায় : আমি তো বেঁচে থাকার গান গাই। আগামী দিনেও বেঁচে থাকার গান গেয়ে যেতে চাই। মনের মধ্যে অবশ্য অতৃপ্ত একটা আকাঙ্খা আছে। আমি গানের মতোই ভালো ফিল্মের পোকা। একবার ‘ট্রাইবেকার’ নামে একটা শর্টফিল্ম বানিয়েছিলাম, সেটা উৎকৃষ্ট মানের কিছু হয়নি। ভবিষ্যতে উৎকৃষ্ট মানের ফুললেংন্থ ফিল্ম বানাতে চাই।
গজলসম্রাটের চলে যাওয়া
অনন্যা আশরাফ
‘পাত্তা পাত্তা, বুতা বুতা’, ‘কাব কি বিছরে’ আর  ‘জিন্দেগি মে তো সাভি`-র মতো অজস্র জনপ্রিয় গান গেয়ে কণ্ঠের জাদুতে যিনি অর্ধেক শতাব্দীকাল বিশ্ব মাতিয়েছেন সেই কিংবদন্তির গজলসম্রাট মেহেদি হাসান পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন।  দুনিয়ামশহুর সেই কিন্নর কণ্ঠ আজ থেমে গেছে চিরতরে। আর সেই সঙ্গে যেনবা থেমে গেছে কোটি শ্রোতার হৃদয়ের স্পন্দন!
করাচির আগা খান হাসপাতালে ১৩ জুন বুধবার বেলা ১২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গজলসম্রাট মেহেদি হাসান । শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। প্রায় বছর খানেক ধরে অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হার মেনে মৃত্যুকে সঙ্গী করলেন এই গজলসম্রাট। ৮৪ বছর বয়সী ভুবনজয়ী এই মহান গজলশিল্পী গত ১২টি বছর ধরেই ভুগছিলেন ফুসফুসের সমস্যায়। তার ছেলে আরিফ খান জানান, এ বছরই তাঁর অবস্থা উত্তরোত্তর খারাপ হতে থাকে। গত মাসে তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎই তার অসুস্থতা আবারও বেড়ে গেলে তাকে ১২ জুন মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর একদিন পরেই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। মেহেদি হাসানের জন্ম ১৯২৭ সালে ১৮ জুলাই ভারতের রাজস্থান রাজ্যের ঝুনঝুন জেলার লুনা গ্রামে ১৯২৭ সালে। বাবা উস্তাদ আজিম খান ও চাচা উস্তাদ ইসমাইল খান ছিলেন ধ্রুপদী গায়ক। তাদের কাছ থেকেই তালিম নেন মেহেদি হাসান। স্টেজে পারফর্ম করা শুরু করেন তরুণ বয়সেই। প্রথম কনসার্টে ভাইয়ের সঙ্গে পারফর্ম করেছেন পাঞ্জাবের ফাজিলকা বুংলায়(Fazilka Bungla)। ভারত ভাগ হলে ২০ বছর বয়সে মেহেদি হাসান তার পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানে পাড়ি জমান। এরপর তার পরিবার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হয়ে পড়লে তিনি মোটরসাইকেলের গ্যারেজে কাজ করেছেন বেশ কিছুদিন। তার ভাগ্যের চাকাটা ঘুরে যায় ১৯৫৭ সালে রেডিও পাকিস্তানে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়ে। সেই থেকে গানের জগতে তার রাজসিক পথ চলা শুরু। উস্তাদ বরকত আলী খান, বেগম আখতার ও মুক্তার বেগমের সহযোগিতায় তিনি গজল জগতে নিজের প্রতিভার রোশনাই ছড়াতে শুরু করেন। গানের পাশাপাশি উর্দু কবিতার প্রতিও ছিল তাঁর দুর্মর আকর্ষণ। তবে সর্বসেরা গজলগায়ক হিসেবেই তার পরিচিতি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমশ গজল আর মেহেদি হাসান--এদুটি হয়ে ওঠে পরস্পরের সমার্থক। দীর্ঘ সঙ্গীতজীবনে মেহেদী হাসান অসংখ্যবার বিরল সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। জেনারেল আইয়ুব খান  ‘তমগা-ই-ইমতিয়াজ’, জেনারেল জিয়াউল হক  ‘দ্য প্রাইড অফ পারফর্মেন্স’ ও জেনারেল  পারভেজ মোশাররফ তাকে  ‘হিলাল-ই-ইমতিয়াজ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। এছাড়াও ১৯৭৯ সালে পাকিস্তানের নিগার ফিল্ম ও গ্রাজুয়েট অ্যাওয়ার্ড থেকে ‘সায়গল অ্যাওয়ার্ড’, ১৯৮৩ সালে নেপালে তাঁকে গুর্খা দক্ষিণাবাহু অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। উপমহাদেশের বাইরে থেকেও পেয়েছেন সম্মাননা। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে সফলততম এ গজলগুরু পাকিস্তানে ‘শাহেনশাহ-ই-গজল’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। পাকিস্তানে বসবাস করলেও জন্মস্থান ভারতের প্রতি ছিল তার গভীর অনুরাগ। সর্বশেষ তিনি ভারতে এসেছিলেন ২০০০ সালে। অসুস্থতার পর ভারতে যাওয়ার জন্যে আকুল হয়ে ওঠেন। ২০১০ সালে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারত আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। ভারতে এসে লতা মুঙ্গেশকর, দিলীপ কুমার ও অমিতাভ বচ্চনের সাথে দেখা করতে চান বলে নিজের ইচ্ছের কথাও জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিধি বাম! মুম্বাইতে বোমা বিস্ফোরণের কারণে তার যাত্রা বাতিল হয়ে যায়। সে আশা অপূর্ণ রেখেই তাকে অবশেষে পৃথিবী মায়া ছেড়ে চলে যেতে হয়।
বাংলাদেশেও গজলসম্রাট মেহেদি হাসানের আছেন লাখো ভক্ত-অনুরাগী। তাদের সেই অনুরাগের ছোঁয়া গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন। তাঁর ``গোল্ডেন ভয়েসে`` তিনি বাংলাতেও বেশ কয়েকটি গান গেয়েছেন। সুদীর্ঘ সঙ্গীতজীবনে মেহেদি হাসানের গাওয়া গজলের বহু অ্যালবাম বেরিয়েছে যা গজলের ইতিহাসে সেরা রত্নভাণ্ডার হিসেবে আদৃত ও বিবেচিত।এসবের মধ্যে দুনিয়াজোড়া তুমুল জনপ্রিয় কয়েকটি অ্যালবাম হচ্ছে:  ‘নাজরানা’,  ‘আন্দাজ-ই-মস্তানা’,  ‘গালিব গজলস’,  ‘সারহাদে’,  ‘সাদা-ই-ইশক’,  ‘নকশ-ই-ফারহাদে ’ । আর জনপ্রিয় গজল গানগুলোর মধ্যে আছে ‘আজ তক ইয়াদ হে ও পেয়ার কা মানজার’ ,  ‘আখোঁসে মিলি আঁখে’ ,  ‘আপকি আঁখো কে’,  ‘ আবকে হাম বিছরে তো সায়াদ কাভি খোয়াবো মে মিলে’,  ‘ইক বার চালে আও’,  ‘দিল কি বাত লাবো পার লেকার’,  ‘দিলমে তুফান চুপকে‘ ,  ‘জাব ভি আতিহে তেরি ইয়াদ কাভি সাম কে বাদ’ ,‌ ‌‌‌কিয়া হে পেয়ার জিসে হামনে জিন্দেগি কি তারাফ’,  ‘কিউ হামসে খাফা হো জায়ে এ জানে তামান্না’,  ‘রাফতা রাফতা ও মেরি হাসতি কা সামান হো গ্যয়া‘,  ‘ তেরে মেরে পেয়ার কি ’,  ‘তানহা থি অর হামেশা তানহা হে জিন্দেগি’  ও  `তু মেরে জিন্দেগি হে’  সহ তার  মুক্তোঝরা কণ্ঠে গাওয়া আরও অনেক অনেক গান। সেসব গান আজ ভেসে বেড়াচ্ছে-বেড়াবে পৃথিবীর ইথারে ইথারে;  কিন্তু নেই সেই গানের পাখি। সে উড়ে চলে গেছে দূরে--- আকাশের ওপারে আকাশে!
বাংলাদেশী আইডল : সেপ্টেম্বর থেকে অডিশন
বিনোদক প্রতিবেদক
বিশ্ব কাঁপানো রিয়েলিটি শো ‘আমেরিকান আইডল’। এটি প্রথম শুরু হয় ২০০২ সালে। টিআরপি রেটিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠানটি তৈরি করেছে রেকর্ড। পরবর্তীতে এ অনুষ্ঠানটির লাইসেন্স নিয়ে ভারতেও শুরু হয় ‘ইন্ডিয়ান আইডল’। সেখানও এটি পায় তুমুল জনপ্রিয়তা। এবার বাংলাদেশও আসছে এই রিয়েলিটি শোর দেশি সংস্করণ ‘বাংলাদেশী আইডল’। এ বিষয়ে ‘আমেরিকান আইডল’-এর মূল ব্র্যান্ডিং প্রতিষ্ঠান ফ্রি-মেন্টাল মিডিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ডেল্টা বে’। এ বিষয়ে ডেল্টা বে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুল হোসেন মুকুল বলেন, আমেরিকান প্রতিষ্ঠান ফ্রি-মেন্টলের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের  কাজ শেষ। এবার তাদের গাইড লাইন অনুযায়ী বাকি কাজগুলো শুরু করবো। শিগগিই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণের নিয়ম ও অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করা হবে। আশা করছি সেপ্টেম্বর থেকে অডিশন শুরু করতে পারবো। তিনি আরও জানান, অনুষ্ঠানে মনোনীত বিচারকদের প্রোফাইল এরই মধ্যে মূল প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ তালিকায় আছেন দেশের খ্যাতিমান সঙ্গীতশিল্পীরা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিচারকরাও। আইডল সিরিজের অনুষ্ঠানগুলো বিশ্বে অনেক জনপ্রিয় হয়েছে। সে জনপ্রিয়তা ও আর্ন্তজাতিক মান পুরোপুরি ধরে রাখতে বাংলাদেশী  আইডলকেও বর্ণাঢ্যভাবে উপস্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানটির প্রচার সম্পর্কে তিনি আরও জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে সম্প্রচার শুরু হবে দেশের প্রথম থ্রিজি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ‘এসএটিভি’। এ চ্যানেলেই প্রচার হবে ‘বাংলাদেশী আইডল’। নতুন চমক আরও থাকছে যা ধাপে ধাপে সবাইকে জানানো হবে।
ঢাকায় আন্তর্জাতিক সঙ্গীত উসব
বিনোদন প্রতিবেদক
‘গানে গানে বাঁধব এ বিশ্বকে’ এই স্লোগান নিয়ে আগামী ২১ জুন সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও উদযাপিত হবে আন্তর্জাতিক সঙ্গীত দিবস। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী যৌথভাবে আয়োজন করেছে তিনদিনের বর্ণিল সঙ্গীত উৎসব।
সঙ্গীত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় প্রশান্তি। যুগে যুগে সঙ্গীতের মাধ্যমে কতো কতো শিল্পী-সাধক খুঁজেছেন আত্মার পরিশুদ্ধি। সঙ্গীতের এই তাৎপর্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে ১৯৮১ সালের ২১ জুন ফ্রান্সে প্রথম আন্তর্জাতিক সঙ্গীত দিবস উদযাপন করা হয়। পর্যায়ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইউরোপ ও আমেরিকায়। বছর ঘুরে আগামী আন্তর্জাতিক সঙ্গীত দিবস। পুরো বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও পালিত হবে দিনটি। রাজধানী ঢাকায় আন্তর্জাতিক সঙ্গীত দিবস ২১ জুন শুক্রবার সকাল ৯ টায় জাতীয় শিল্পকলা একাডেমী থেকে বের হবে বর্ণাঢ্য র‌্যালি। বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর যৌথ আয়োজনে বিকেলে জাতীয় নাট্যশালায় উদ্বোধন করা হবে ‘গানে গানে বাঁধব এ বিশ্বকে’ শীর্ষক তিনদিনের সঙ্গীত উৎসব। উৎসবের উদ্বোধনী দিনের জমকালো অনুষ্ঠানমালা জাতীয় নাট্যশালায় উদ্বোধন হলেও ২২ ও ২৩ জুনের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায়। বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, তিনদিনের উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশ নিবেন দেশীয় শিল্পীদের পাশাপাশি বিদেশি শিল্পীরাও। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য ঢাকার সকল দূতাবাসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সঙ্গীতানুষ্ঠানে তাদের ভাষার গান পরিবেশিত হবে। এভাবেই গানের মাধ্যমে বিশ্বকে এক সূত্রে গাঁথার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছু দেশের শিল্পীকে সঙ্গীত পরিবেশনের আমন্ত্রণ জানালেও এখন পর্যন্ত উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন নিশ্চিত করেছে ভারত, শ্রীলংকা, জাপান ও চীনের শিল্পীরা। উৎসবে অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা শেষ মুহূর্তে আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও উৎসবের তিনদিনই থাকছে দেশীয় সঙ্গীত শিল্পীদের বিভিন্ন ঘরানার পরিবেশনা। আন্তর্জাতিক সংগীত উৎসবে বিশ্বের বেশ কজন সুপরিচিত গায়ক-গায়িকা অংশ নিবেন বলে জানা গেছে। তবে আয়োজকদের পক্ষ থেকে শিল্পীদের নাম এখনো প্রকাশ করা হয় নি।
প্রতিদিনই বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলা অনুষ্ঠানে থাকবে ১৫টি সঙ্গীত দলের গানের পরিবেশনা। একক কণ্ঠে গান শোনাবেন ২০ জন শিল্পী। থাকবে ব্যান্ড সঙ্গীত। এর পাশাপাশি ভায়োলিন, ঢোল ও দোতারার সুর মূর্ছনায় পরিবেশিত হবে যন্ত্রসঙ্গীত। এছাড়াও উৎসবের প্রথম দিন শুক্রবার সকাল দশটায় শিল্পকলা একাডেমীর কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলা গানের সঙ্কট ও উত্তরণ’ শীর্ষক সেমিনার। মূল আলোচক থাকবেন ড. রাজীব হুমায়ুন। সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ ও জাতীয় শিল্পকলা একাডেমী এই  আয়োজনকে সার্থক করে তুলতে সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমীর মহড়া কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় উৎসব আয়োজক ও শিল্পীদের মতবিনিময় সভা । তপন মাহমুদের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, ফাতেমা তুজ জোহরা, সুজিত মোস্তফা, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, ডালিয়া নওশিন, এমএ মান্নান, হাসিনা মমতাজ, নাসির আহমেদ, আকরামুল ইসলাম, আমেনা আহমেদ, সেলিম আশরাফ, রফিকুল আলম, মহাদেব ঘোষ প্রমুখ।
সালমানের এক্স-গার্লফ্রেন্ড প্রীতি
বিনোদন ডেস্ক
বডিগার্ড হয়ে গালফ্রেন্ডদের পাশে থাকাটাকে বেশ উপভোগ করেন সালমান খান।  তাই বোধহয় পুরোনো গার্লফ্রেন্ডদের কাউকেই ফেরাতে পারেন না। যে কোনো প্রয়োজন একসময়ের ঘণিষ্ঠ গার্লফ্রেন্ডদের পাশে দাঁড়াতে যেন সর্বদা প্রস্তত থাকেন তিনি। সালমানের একসময়ের গার্লফ্রেন্ড সোমি আলীকে সালমান সহযোগিতা করেছেন অনেকবার। সালমানের  চ্যারিটি ফান্ড ‘হিউম্যান বিইং’ থেকে বেশ কয়েকবার সোমি আর্থিকভাবে সাহায্য পেয়েছেন। সালমানের আরেক এক্স-গার্লফ্রেন্ড ছিলেন বলিউডের একসময়ের অভিনেত্রী সঙ্গীতা বিজলানী। দীর্ঘদিন তাদের মধ্যে প্রেম থাকলেও সম্পর্কটা শেষ হয় অপ্রত্যাশিত ভাবে। এপর তারা দীর্ঘদিন ধরেই দুজন দুজনকে এড়িয়ে চলছে। অনেক দিন পর হলেও এখন সালমান আবার নতুন করে সঙ্গীতার সঙ্গে সম্পর্কের দড়িটা জোড়া লাগাতে চান বলেই মনে করছেন অনেকে।
ভারতীয় সাবেক ক্রিকেট খেলোয়ার মো: আজহার উদ্দিনকে বিয়ে করেন সঙ্গীতা বিজলানী। এরপর থেকে সালমানের সঙ্গে তার দুরত্বটা বেড়ে যায়। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে সঙ্গীতা সালমানকে এড়িয়ে চললেও পারিবারিকভাবে তাদের যোগাযোগটা ছিল। সালমানের বোন অর্পিতা ও আলভিরার সঙ্গে প্রায়ই সময় কাটাতেন সঙ্গীতা। সম্প্রতি একসঙ্গে সময় কাটাতে দেখা গেছে সালমান আর সঙ্গীতাকে । না একা নয়, সঙ্গে ছিল সালমানের পরিবারের সদস্যরা। একরাতে তারা সবাই মিলে বাইরে সময় কাটান। সেখানে তাদের দুজনকেই একে অপরের সঙ্গে স্বাভাবিক থাকতে দেখা যায়। এক্স-গার্লফ্রেন্ড সোমি আলীকে সহযোগিতা, সঙ্গীতা বিজলানীর সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ আর ক্যাটরিনা কাইফের সঙ্গে সম্পর্ক-ভাঙার পরেও একছবিতে অভিনয় চালিয়ে যাওয়া প্রমান করে সালমানের উদারতা। বাকী রয়ে গেল কেবল এক্স গার্লফ্রেন্ড ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। তবে সালমানের এক্স গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরার দুর্লভ গুণের কারণে হয়তো আগামী ঐশ্বারিয়াকে তার পাশে দেখা যেতে পারে বলে মন্তব্য করছেন বলিউডের অনেকে।
বেলাল খানের সুরে ভারতের ‘তারান্নুম ও রূপরেখা’
ফাহিম ফয়সাল
‘পাগল তোর জন্যেরে পাগল এ মন’ খ্যাত জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও সুরকার বেলাল খানের সুরে দ্বৈতগানে কণ্ঠ দিলেন ভারতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী তারান্নুম মালিক ও রূপরেখা। তারান্নুম মালিকের কণ্ঠ মুম্বাই এবং রূপরেখার কণ্ঠ কলকাতার একটি স্টুডিওতে ধারণ করা হয়েছে। বেলাল কণ্ঠ দিয়েছেন ঢাকাতেই। এ প্রসঙ্গে গান দু’টির সুরকার বেলাল খান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সানিয়াত হোসেন পরিচালিত ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’ ছবির জন্য গানগুলো তৈরি করা হয়েছে। লিখেছেন খ্যাতিমান গীতিকার জুলফিকার রাসেল। তিনি তারান্নুম মালিক ও রূপরেখার কণ্ঠ ধারণের বিষয়টিও সমন্বয় করেছেন। সঙ্গীতায়োজন করেছেন সংগীত জুটি বেলাল খান ও মুশফিক লিটু। বেলাল খান বলেন, ‘আমি যেরকম কণ্ঠ মাথায় রেখে গান দু’টি সুর করেছিলাম তার চেয়েও কয়েকগুণ ভালো আউটপুট পেয়েছি। তারা এতোই ভালো গেয়েছেন যে আমার প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। তারান্নুম মালিক যে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন সেটি একটি আইটেম গান। গানটি পুরোপুরি গতানুগতিক ধারার বাইরে সুর করা হয়েছে। আর রূপরেখা’র গানটি চলচ্চিত্রটির টাইটেল গান। আশা করছি শ্রোতারা দু’টি গানই পছন্দ করবেন।’ ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’ ছবির পরিচালক সানিয়াত হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি চলচ্চিত্রেই গান করার সময় শ্রোতারা কোনটা গ্রহণ করবেন সেটা চিন্তা করা হয়। আমি গান দু’টি নিয়ে ভীষণ আশাবাদী। আশা করছি, গানদু’টি বছরের সেরা গান হিসেবে বিবেচিত হবে।’ তিনি আরও জানান, ছবিটির গানগুলো নিয়ে একটি অডিও অ্যালবাম শিগগিরই বাজারে আসবে।
জীবনের অনুভূতি নিয়েই আমার গান : সায়ান
প্রীতি ওয়ারেছা‘আমার ঘরের ঘুলঘুলিতে চড়াই পাখির বাসা/ ধুলোবালি আর খড়কুটো দিয়ে গোছানো সে সংসার/ আমি তাজ্জব বনে যাই দেখি মানুষের ঘর নাই/ দেখ মানুষের ঘরে বাসা বেধে নিল ছোট্ট এক চড়াই’ -- এমনই ব্যতিক্রমী কথা আর হৃদয়ছোঁয়া সুরই সায়ানের গানকে করে তুলেছে সুপরিচিত। বর্তমান সময়ে জেনে-বুঝে আর শিখে যারা গান করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম কণ্ঠশিল্পী সায়ান । কোন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে রাতারাতি তারকাখ্যাতি কিংবা কোনরকমে ঠেলে ঠুলে গান করার পক্ষপাতি কখনও তিনি ছিলেন না। ছোটবেলা থেকেই ক্লাসিকাল সংগীতের ওপর তালিম নিয়েছেন। এখনও প্রতিনিয়ত শুদ্ধ সংগীতের চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোন খ্যাতির পিছনে না ছুটে শুদ্ধ ও বাস্তবমুখী সংগীতের প্রতিই সায়ানের সব টান। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সায়ান নিজেই গান লিখেন, সুর করেন এবং কণ্ঠ দেন। এসব গানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা, অন্ধকারের বিপরীতে আলোর দিশা অনুসন্ধান করে চলেছেন সায়ান। তার সব গানের কথাই মানুষের ভেতরের নিস্ক্রিয় বোধকে জাগিয়ে তোলে। গিটার আর হারমোনিকাতে যুগলবন্দী তার অনবদ্য পারফর্মেন্স। বেয়াদব জনতা,  আমি তাজ্জব বনে যাই,  দুচোখ দিয়েই দেখ, কতটা পথ পেরুলে,  আয়বুড়ি,  আমিই বাংলাদেশ- সহ আরো অনেক গানের জন্য তিনি ভক্তদের কাছে ভালবাসার শিল্পী। মানুষ হিসেবেও সায়ান সবদিক থেকে আগাগোড়া ভিন্নধর্মী। সম্প্রতি জনপ্রিয় শিল্পী সায়ানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলানিউজ।
বাংলানিউজ : আপনার বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই?
সায়ান : আমার জন্ম কানাডার মন্ট্রিলে। ৭ মাস বয়সে মায়ের সাথে বাংলাদেশে চলে আসি। তখন থেকে ২১ বছর বয়স পর্যন্ত বাংলাদেশের আলো বাতাস গায়ে লাগিয়ে বেড়িয়েছি। এরপর টরেন্টোতে চলে যাই। কয়েকবছর পর আবার চলে আসি দেশে। বয়স ২৫ থেকে এখন ৩৫ পর্যন্ত বাংলাদেশেই আছি। সামনে কি হবে জানি না।
বাংলানিউজ : গানের শুরুটা কিভাবে?
সায়ান : বাবা মা দুজনের পরিবারই ছিল গান পাগল। বাবা খসরু ওয়াহিদ, চাচা ফেরদৌস ওয়াহিদ থেকে শুরু করে পরিবারের প্রায় প্রত্যেকেই গানের সাথে জড়িত। আমি ছোট থেকে মায়ের কাছে বড় হয়েছি। মায়ের পরিবারেও গানের চর্চা ছিল। পারিবারিকভাবেই গানের প্রতি ভালবাসার শুরু। আমি গানের জন্য কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেইনি। এটাকে আমি নিজের জন্য সবসময় ভালই বলি। বিশেষ কোন গন্ডির ভেতর আটকে নেই, দ্বিধাহীনভাবে মন খুলে গাইতে পারি।
বাংলানিউজ : সময় হয়েছে নিজেকে সবার সামনে মেলে ধরার, এটা ঠিক কখন মনে হয়েছে?
সায়ান : একুশ বছর বয়সের পর আমি টরেন্টোটে থাকতে শুরু করি। শখ করে সেসময় বিভিন্ন ঘরোয়া অনুষ্ঠান নিজের গানগুলো গাইতাম। আস্তে আস্তে সেখানকার বাংলা কমিউনিটির অনুষ্ঠানেও ডাক পড়তে শুরু করল। পরিচিত  অনেকেই গানের অ্যালবাম বের করতে অনুরোধ করলেন। বেশ উৎসাহ বোধ করলাম। দেশে আসার পর বয়স ২৫-৩২ পর্যন্ত  পুরো ৭ বছর ধরে আমি চেষ্টা করেছি একটা অ্যালবাম দাঁড় করাতে। অবশেষে ২০০৮ সালে বের হল আমার প্রথম অ্যালবাম সায়ানের গান।
বাংলানিউজ : এ পর্যন্ত মোট কয়টা অ্যালবাম বের হয়েছে?
সায়ান : দুটো একক- ‘সায়ানের গান’ ও ‘স্বপ্ন আমার হাত ধরো’ আর একটি মিক্সড ‘জাস্ট ওয়াহিদ’। এই মিক্সড অ্যালবামটি আমাদের পারিবারিক প্রকাশনা। সেখানে আমার সাথে আছে ছোট ভাই এরশাদ এবং চাচাতো ভাই হাবিব ওয়াহিদ।
বাংলানিউজ : আপনার গানের শক্তিশালী অংশ হল গানের কথা। জীবনমুখী ধারার গান করতে উদ্বুদ্ধ হলেন কিভাবে ?
সায়ান : সেই ছোট থেকেই শাহনাজ রহমতুলাহ ছিলেন আমার আইডল। সেসময় তার গান গাইতে পারাটাই ছিল জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। বয়স ১৪ বছর থেকে নিজেই চেষ্টা করতে শুরু করি গান লেখার এবং সুর করার। সেসময় ট্রেডিশনাল প্রেম বিরহের অনুভূতি নিয়েই গান করেছি। এখনকার ধারাটা যদি জীবনমুখী হয় তাহলে বলব বয়স ২৫-এর পর থেকে সেই ধরণটা ভালবাসতে শুরু করেছি। চারপাশে যা দেখছি তাই নিয়েই গান করছি। জীবনমুখী বলেন আর গতানুগতিক বলেন সবই আসলে অনুভূতির গান। জীবনের নানা সময়ে অনুভূতির ধরণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। সেসবই উঠে এসেছে আমার গানে। জীবনের নানারঙের অনুভূতি নিয়েই আমার গান
বাংলানিউজ : দেশকে নিয়ে গাওয়া নিজের কোন গানটা প্রিয়?
সায়ান : নিজের কাছে সব গানই তো ভাল লাগে। তবে ‘মাটির সাথে দোস্তি’ এবং ‘ভয় পেয়ো না তুমি আমার জন্মভূমি’ গান দুটির জন্য একটু অন্যরকম ভাল লাগা কাজ করে।
বাংলানিউজ : ব্যক্তিগত অনুভূতি নিয়ে গাওয়া প্রিয় কোন গানের কথা জানতে চাই।
সায়ান : ‘ওঠ মন ওঠ না’, ‘মন আমার লজ্জা কি তোর’, ‘স্বপ্ন আমার হাত ধরো’- এই গানগুলো আমার নিজের মনের সাথে নিজেরই একান্ত কথা বলা। প্রতিটা মানুষকেই জীবনের একটা কঠিন সময় পার করে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। সেই কঠিন সময় তাদেরকে ভীষণ কষ্ট দেয়। আমারও এমন হয়েছে। তখন কাছের বন্ধুদেরও বুঝে উঠতে পারতাম না। সময় এগিয়ে যেতে থাকলে কষ্টের অনুভূতি ক্রমশ কমে যেতে থাকে। কিন্তু কোথাও একটা দীর্ঘশ্বাস থেকে যায়। সেসময় নিজেই নিজের সাথে কথা বলেছি। কথাগুলোতে সুর দিয়ে সব দীর্ঘশ্বাস ভুলে থাকার চেষ্টা করেছি। জীবনটাকে বুঝতে চেয়েছি। এভাবেই নিজের কথাগুলো একেকটা গান হয়ে উঠেছে।
sayanবাংলানিউজ : আপনাকে কেন একজন ছোট্ট বালকের মত সাজে থাকতে দেখা যায়? পোশাক এবং সাজসজ্জা নিয়ে বলুন।
সায়ান : আমার পোশাক দেখলে অনেকেই ভাবে এই সাজসজ্জা বোধ হয় প্রতিবাদমূলক। আসলে বিষয়টা তা না। পুরোটাই আমার মানসিকতার সাথে জড়িত। ছোট থেকেই পোশাক আর সাজসজ্জার প্রতি আমার তিলপরিমাণ আগ্রহ ছিল না। মনে হত পোশাক পড়তে হবে লজ্জা নিবারনের জন্য তাই শালীন যে কোন পোশাক পড়লেই হয়। একটা সময় পর্যন্ত মা খুব অত্যাচার করেছেন পোশাক নিয়ে। যখন বড় হলাম, সিদ্ধান্ত নিতে শিখলাম, তখন থেকে আমি এভাবেই চলি। মেয়েদের বৈচিত্রময় পোশাক আমাকে কখনো টানতো না। আমি যে সেসব পছন্দ করি না, তাও কিন্তু না। কোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে মা যদি বলতেন কি পড়ব, আমি একটাই অপশন দিতাম সেটা হল শাড়ি পড়। শাড়ির চেয়ে সুন্দর আর কোন পোশাক মেয়েদের আছে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু নিজের জন্য সেটা আমার পছন্দ ছিল না। আমার মনে হতো,  আমার যে চেহারা এটাকে সুন্দর করার আর কিছু নাই। এই ভাল আছি। চেহারা-ছবি নিয়ে চিন্তা করে সময় নষ্ট করতে চাইনা। বছরে মাত্র একবার দর্জ্জিবাড়ি যাই। কোন অনুষ্ঠানে যেতে ৫ মিনিটেই রেডি হতে পারি। ইদানিং আমার ছোট ভাইয়ের বাচ্চারা খুব জালাচ্ছে। ফুপি তুমি এইসব কি কালো কালো ড্রেস পড়! পচা লাগে! ওদের জন্য মাঝে মাঝে রঙিন পোশাক পড়তে হয়। তারপরেও ফতুয়া কিংবা পাঞ্জাবিতেই সীমাবদ্ধ থাকি।
বাংলানিউজ : আপনার পরিবারের কথা জানতে চাই।
সায়ান : আমি মায়ের সাথে থাকি। ছোট একটা ভাই আছে। আমার স্বামী জার্মানিতে থাকে। তিনি একজন সফ্টওয়্যার ডেভেলপার।
বাংলানিউজ : ব্যক্তিগত জীবনের টুকিটাকি নিয়ে বলুন?
সায়ান : আমি আইন নিয়ে পড়াশুনা করেছি। বিভিন্ন ল’ একাডেমিতে ক্লাস নেই। এছাড়া ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কয়েকজন ব্যারিস্টারের আন্ডারে কাজ করি। একসময় একজনের প্রেমে পড়েছি, তাকেই বিয়ে করেছি। সেই প্রেম ছুটেও গেছে। এখন প্রেমের সেই আকর্ষণ আর নাই। প্রেমের আকর্ষণ আসলে থাকেও না সারাজীবন। আকর্ষণটা সংসারের জিনিসপত্রের মধ্যে ঢুকে যায়। নিজের মত স্বাধীনভাবে থাকি। ভাল আছি।
বাংলানিউজ : গান নিয়ে ভবিষ্যৎ কোন পরিকল্পনা?
সায়ান : তেমন কোন পরিকল্পনা নাই। বর্তমানে যে কাজ করছি তাই আমাকে ভবিষ্যতে টেনে নিয়ে যাবে। যা করছি তাই সুন্দরভাবে করে যেতে চাই। রবীন্দ্র-নায়িকা জয়া আহসান
বিনোদন প্রতিবেদক

নন্দিত অভিনেত্রী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পের নায়িকা হচ্ছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। কবিগুরুর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার ‘মুসলমানি’ গল্প অবলম্বনে একটি নাটক নির্মাণ করছেন আলোচিত পরিচালক নূরুল আলম আতিক। নাটকটির নাম ‘না কমলা না মেহেরজান’। এ নাটকে কমলা ও মেহেরজান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান।
রবীন্দ্রনাথের এ গল্পটি নিয়ে প্রথমে ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন নির্মাতা নূরুল আলম আতিক। কিন্তু মানসম্পন্ন ছবি নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট সংস্থান করতে না পারায় গল্পটি নিয়ে নাটক নির্মাণ করছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে নূরুল আলম আতিক বাংলানিউজকে বলেন, ২০১১ সালে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষনা দেয়া হয়েছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার গল্প অবলম্বনে চারজনকে চারটি সিনেমা বানানোর জন্যে অনুদান দেয়া হবে। সে উদ্দেশ্যেই ঠিক করি রবীন্দ্রনাথের এ গল্পটি নিয়ে কাজ করবো। কিন্তু এক বছর পর যোগাযোগ করলে জানতে পারি সরকারের বরাদ্দ বাজেট শেষ। তাই ছবির চিন্তা বাদ দিয়ে গল্পটি নিয়ে এখন নাটক বানাচ্ছি। জয়া আহসানকে এ নাটকের প্রধান চরিত্রে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে জয়ার অতি সাধারণভাবে মিশে যাওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। এ চরিত্রকে যথাযথভাবে উপস্থাপনে দিক থেকেও জয়ার বিকল্প নেই। তার অভিনয় আমাকে আগেও মুগ্ধ করেছে। আমি এবারও মুগ্ধ হয়েছি। নাটকটির কাজ সম্পর্কে তিনি জানান, গাজীপুরের শালবন ও নবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় নাটকটির শুটিং করা হয়েছে। শুটিংয়ের কাজ শেষ। এবার বাকি কাজ শেষ করেই নাটকটি প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হবে। জয়া আহসান ছাড়াও নাটকের অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শংকর সাওজাল, অশোক ব্যাপারী, আহমেদ রুবেল এবং মনিরা মিঠু।
আইফা অ্যাওয়ার্ডেও সেরা বিদ্যা ও রণবীর
বিনোদন ডেস্ক


ভারতের মর্যাদাপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম একাডেমি (আইফা)-এর  এ বছরের আসরে সেরা অভিনেতা ও অভিনেত্রীর খেতাব জিতে নিলেন বলিউডের দুই সেলিব্রিটি রনবীর কাপুর ও বিদ্যা বালান । গত ৯ জুন শনিবার রাতে সিঙ্গাপুরের লায়ন সিটিতে হয়ে গেল এ বছরের আইফা অ্যাওয়ার্ডের জমকালো আসর। এটি এ অ্যাওয়ার্ডের ১৩তম আয়োজন। এতে সেরা অভিনেতার মুকুট পরেন ‘রকস্টার’ ছবির হিরো রনবীর কাপুর ও ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ ছবির জন্যে সেরা হিরোইনের মুকুট জিতে নেন বিদ্যা বালান। বছরের সেরা ছবির অ্যাওয়ার্ডটি লুফে নেয় ‘জিন্দেগী না মিলেগি দোবারা’। ছবিটি পরিচালনার জন্যে সেরা পরিচালকের অ্যাওয়ার্ডটি পান জয়া আকতার। এমনকি এ ছবির থেকেই সেরা পার্শ্ব অভিনেতার অ্যাওয়ার্ডটি পান ফারহান আকতার। আইফার চলতি বছরের সেরা মিউজিক পরিচালকের অ্যাওয়ার্ডটি জিতে নেন অস্কার বিজয়ী মিউজিশিয়ন এআর রহমান ‘রকস্টার’ ছবির জন্য। বছরের সেরা নবাগত নায়িকা ও সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর অ্যাওয়ার্ডটি পেয়েছেন পরিনিতি চোপড়া। ‘লেডিস ভার্সেস রিকি বাহ্ল’ ছবি থেকে তিনি এ দুটি অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন। এছাড়া ‘ফোর্স’ ছবি থেকে বিদ্যুত জামওয়াল সেরা নবাগত নায়কের অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন। বছরের সেরা খলনায়কে চরিত্রে অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন ‘সিঙ্গাম’ ছবির প্রকাশ রাজ। আর সেরা কমেডি চরিত্রের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ‘ডাবল ধামাল’ ছবি থেকে রিতেশ দেশমুখ। আইফা অ্যাওয়ার্ডের এ আসরে বলিউডের অনেক সেলিব্রিটির পারফর্মেন্স মুগ্ধ করেছে উৎসবে উপস্থিত দর্শকদের। কারিনা কাপুর, সোনাক্ষি সিনহা, শহীদ কাপুর, রনবীর কাপুর, রূষি কাপুর, বিপাশা বসু, সোনাক্ষী সিনহা, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া সহ অনেকে এ আসরে নিজেদের জাদু দেখিয়েছেন।
এক নজরে আইফা অ্যাওয়ার্ড ২০১২
সেরা চলচ্চিত্র : জিন্দেগি না মিলে দো বারা
সেরা গল্প : জয়া আখতার এবং রীমা ক্যাটাগী (জিন্দেগি না মিলে দো বারা)
সেরা বেস্ট ডিরেকসন : জয়া আখতার (জিন্দেগি না মিলে দো বারা)
বেস্ট পারফরর্মেন্স (পুরুষ) : রনবীর কাপুর (রকস্টার)
বেস্ট পারফরর্মেন্স (মহিলা) : বিদ্যা বালান (দ্য ডার্টি পিকচার)
বেস্ট পারফরর্মেন্স পার্শ্ব চরিত্র (পুরুষ) : ফারহান আকতার (জিন্দেগি না মিলে দো বারা)
বেস্ট পারফরর্মেন্স পার্শ্ব চরিত্র (মহিলা) : প্রিয়ন্তী চোপড়া (লেডিস ভার্র্সেস রিকি ভাল)
সেরা নবাগত (পুরুষ) : বিদ্যুৎ জামওয়াল (ফোর্স)
সেরা নবাগত (মহিলা) : প্রিয়ন্তী চোপড়া (লেডিস ভার্র্সেস রিকি ভাল)
বেস্ট পারফরর্মেন্স নেগেটিভ রোল : প্রকাশ রাজ (সিঙ্গাম)
বেস্ট পারফরর্মেন্স কমিক রোল : রিতেশ দেশমুখ (ডাবল ধামাল)
ভারতীয় ছবির জন্য অসামান্য সম্মাননা : রেখা ও রামেষ শিপি
বেস্ট মিউজিক ডিরেক্টর : এ আর রহমান (রকস্টার)
বেস্ট প্লে-ব্যাক সিঙ্গার (পুরুষ) : মোহিত চৌহান (নাদান পারিন্দে-রকস্টার)
বেস্ট প্লে-ব্যাক সিঙ্গার (মহিলা) : শ্রেয়া ঘোশাল (তেরি মেরি-বডিগার্ড)
বেস্ট লিরিক : ইরশাদ কামিল (নান্দান পারিন্দে-রকস্টার)
বেস্ট কেরিওগ্রাফী : বস্কো কায়েসার সিনোরিটা (জিন্দেগি না মিলে দো বারা)
বেস্ট ডায়ালগ বা সংলাপ : রাজাট আরোরা (দ্য ডার্টি পিকচার)
সেরা জুটি : রনবীর কাপুুর ও নার্গিস ফাকরি (রকস্টার)
আইফা ২০১২ গ্রীন অ্যাওয়ার্ড: দিয়া মির্জা
বেস্ট অ্যাকশন : জয় সিং নিজ্জর (সিঙ্গাম)
বেস্ট স্পেশাল ইফেক্ট : রেড চিলিস (রা. ওয়ান)
বেস্ট সিনেমাটোগ্রাফিম : কার্লোস কাটালান (জিন্দেগি না মিলে দো বারা)
বেস্ট কস্টিউম ডিজাইনার : নীহারিকা খান (দ্য ডার্টি পিকচার)
বেস্ট ডায়ালগ : রাচাট আরোরা (দ্য ডার্টি পিকচার)
বেস্ট এডিটিং : আনন্দ সুভায়া (জিন্দেগি না মিলে দো বারা)
বেস্ট মেকাপ: বীক্রম গাইকাওয়াড (দ্য ডার্টি পিকচার)
বেস্ট প্রডাকশন ডিজাইন : সাবু সাইরিল (রা.ওয়ান)
বেস্ট স্ক্রীন প্লে: জয়া আখতার এবং রীমা ক্যাটাগী
বেস্ট সাউন্ড রি-রেকর্ডিং: আনুজ মাথুর ও বেইলন ফনসেকা (জিন্দেগি না মিলে দো বারা)
বেস্ট সাউন্ড রেকর্ডিং: রাসেল পকুতি ও আমিত প্রীতম দত্ত (রা.ওয়ান)

মেডিটেশন
সোনিয়া একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করে। গত কিছুদিন ধরে সে কিছুতেই কাজে মন দিতে পারছে না। কোনো কিছুই ভালো লাগেনা তার। কেউ কোনো প্রশ্ন করলে সহজ করে উত্তর দিতে পারছে না। অনেকের সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সোনিয়া এটা চায় না। তার কথায় কেউ কষ্ট পাচ্ছে এটা ভেবে সোনিয়ার মন খারাপ হয়ে যায়। কিছুতেই যেন মন মেজাজ ঠিক করতে পারছেনা।শুধু কর্মক্ষেত্রে নয় এই মানসিক অবস্থার প্রভাব পড়ছে পরিবারেও। সোহাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। তার অবস্থাও সোনিয়ার মতোই। আসলে আমাদের প্রথম প্রয়োজন নিজেদের মনের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এমন অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমরা মেডিটেশন করতে পারি। আমরা জানি পৃথিবীর সব বড় বড় বিপ্লবের সূচনা হয়েছে মৌনতার মাঝে মনের ধ্যানাবস্থায়। দুনিয়ায় মানুষের তৈরি দৃশ্যমান সবকিছুই প্রথম বাস্তবতা লাভ করেছে মনে। তবে এ বিষয়টি আমরা অতোটা গুরুত্ব দিয়ে মানিনা। আমাদের যান্ত্রিক জীবনে একটু শান্তি মতো নিশ্বাস নেওয়ারও সময় নেই। জীবনের সফলতার এই দৌড়ে কখনও কখনও হাপিয়ে উঠি। আবার বিভিন্ন কারণে মন অস্থির থাকে। চিন্তা না করে সিদ্ধান্ত নিলে অনেক সময় ভুল হয়। জীবনে যে কোনো বিষয়ে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন দূরদর্শীতা, ধৈর্য। আর এটা আমরা পেতে পারি ধ্যান বা মেডিটেশনের মাধ্যমে। আমাদের মহানবী(স:) দীর্ঘ দিন হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন ছিলেন।যদি লক্ষ করেন দেখবেন, সব ধর্মপ্রবর্তক, লেখক, সাহিত্যিক, জোত্যির্বিদ ধ্যান করেছেন। এ সময়ে এসে বছরের পর বছর গাছের তলায় হয়তো ধ্যান করার সময় নেই।তবে দিনের কিছুটা সময় হোক মাত্র ১৫ মিনিট, মেডিটেশন করতে পারলে আমাদের বিক্ষুব্ধ মন শান্ত হবে। মেডিটেশন আমাদের ক্লান্তি, অবসাদ এবং খেয়ালী মনের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। মেডিটেশন করতে চাইলে প্রথমে মন ঠিক করতে হবে। এটা খুবই সহজ ও সাধারণ একটি বিষয় এর জন্য বাড়তি কোনো আড়ম্বরের প্রয়োজন নেই। মেডিটেশনের ওপর কিছু বই, সিডি বাজারে পাওয়া যায়। এগুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে নিলে সঠিক নিয়মে মেডিটেশন করতে পারবেন। আমাদের দেশে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা, কয়েক দিনের মেডিটেশনের কোর্স করায়। ইচ্ছা করলে, সামর্থ থাকলে এবং সময় পেলে এই কোর্স করে নিতে পারেন। শরীর সুস্থ রাখতে এবং মানসিক প্রশান্তি পেতে মেডিটেশন করতে পারি।
বর্ষার রাঙামাটি
ওবায়দুল্লাহ সনি
বর্ষায় রিমঝিম বৃষ্টির টাপুর-টুপুর শব্দে ঘরে বসে থাকতে কার না ভালো লাগে? সঙ্গে যদি হয় গরুর মাংস আর ভুনা খিচুরি তহলে তো আর কথাই নেই। কিন্তু যারা ভ্রমণ পিপাসু তাদের আবার অন্য হিসাব। বর্ষায় প্রকৃতির নতুন সাজ তাদের সব সময়ই কাছে টানে। আর তাই রিমঝিম বৃষ্টির টাপুর-টুপুর শব্দ তাদের ঘরে আটকে রাখতে পারে না। এ সময়টা তারা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে ভালোবাসে। কাপ্তাই লেকের বুকে ছোট্ট একটি শহর রাঙামাটি। সর্বত্রই রয়েছে নানা বৈচিত্র্যের ভাণ্ডার। আর বর্ষায় আসে রাঙামাটির নতুন যৌবন। তখন ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে প্রকৃতির ময়ুরীখ্যাত রাঙামাটি যেন ময়ুরের এক পেখম। তাই আমরা কজন প্রকৃতিপ্রেমী গত বর্ষায় বেরিয়ে যাই রাঙামাটির উদ্দেশ্যে। ঢাকা থেকে বাস ছেড়ে সরাসরি থামে রাঙামাটি শহরে। ঢাকা থেকে রাত দশটায় বাস ছাড়লে খুব ভোরেই রাঙামাটি পৌঁছে যায়। যাওয়ার পথে রাঙামাটির কাছাকাছি গাড়ি পাহাড় বেয়ে ছুটে যেতে দেখা যাবে। কখনও ওপরে উঠছে আবার কখনও নামছে নিচে। তখন হয়তো আপনার মনে হবে মাসুদ রানার কোনও কল্পকাহিনীর মধ্যে আছেন। গল্পের খলনায়ককে ধরতে আপনি ছুটে যাচ্ছেন রাঙামাটির অজানা পাহাড়ে। আর সঙ্গে যদি থাকে বেশ কয়েকজন বন্ধু তাহলে তো মনে না হওয়ার কোনও কারণ নেই। রাঙামাটি ভ্রমণ শুরু করা যেতে পারে শহরের একপ্রান্ত থেকে। প্রথমেই যেতে পারেন উপজাতীয় জাদুঘরে। সেখানে রয়েছে রাঙামাটিসহ পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত নানা আদিবাসিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সময়ের নানা সরঞ্জামাদী, পোশাক, জীবনাচরণ এবং বিভিন্ন ধরনের তথ্য।
তারপর নেমে যান প্রকৃতি দর্শনে। প্রায় ১৭২২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ পানি আর বাঁকে বাঁকে পাহাড়ের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। তবে এ হ্রদের প্রকৃতির খুব কাছাকাছি যেতে হলে আপনাকে ভাড়া করতে হবে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা। চিন্তা নেই, শহরের রিজার্ভ বাজার ঘাটে পাওয়া যায় কাপ্তাই লেকে ভ্রমণের নানা রকম ইঞ্জিন নৌকা। সারাদিন কাপ্তাই লেকে ভ্রমণের জন্য একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকার ভাড়া পড়বে ১৫০০-২৫০০ টাকা। এছাড়া রাঙামাটি শহর থেকে এখন প্রতিদিন শুভলং ছেড়ে যায় আধুনিক ভ্রমণতরী কেয়ারি কর্ণফুলী। প্রতিদিন সকালে ছেড়ে আবার বিকেলে ফিরে আসে। যাওয়া-আসার ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। তবে কাপ্তাই লেকে ভ্রমণের জন্য নৌকাটি দেখে-শুনে নিন। বর্ষাকাল থাকায় ছাউনি আছে এমন বোট ভাড়া করুন। বোটে লাইফ জ্যাকেট আছে কিনা আগেই জেনে নিন। বর্ষার মেঘলা আকাশ, টাপুর-টুপুর বৃষ্টি, জলে টৈটুম্বুর কাপ্তাই লেক। এর মধ্যেই কখনও আকাশের ঘনকালো মেঘ ফুঁড়ে সূর্যের হাসি। শ্যালো মেশিনের ভটভট শব্দ ভেদ করে দূর থেকে ভেসে আসে পাহাড়ি পাখির ডাক। উদ্দেশ্য যদি হয় শুভলং ঝর্ণা তবে পথে পাবেন পেদা টিং টিং। মানে পাহাড়ের চূঁড়ায় বাঁশ ও বেতে ঘেরা উপজাতীয় রেস্টুরেন্ট। সেখানে পাবেন নানান ধরনের সুস্বাদু খাবার। এছাড়া রয়েছে টুকটুক ইকো ভিলেজ। কাপ্তাই লেকের একেবারে মাঝে এই ইকো ভিলেজটির সুন্দর সুন্দর কটেজে রাত কাটানোরও ব্যবস্থা আছে। তবে যাওয়ার পথেই আপনাকে খাবারের অর্ডার দিয়ে যেতে হবে। এ জন্য অবশ্য আপনার সঙ্গে থাকা নৌকার মাঝিই গাইডের ভূমিকা পালন করবে।
তারপর প্রকৃতির রূপে ঘেরা কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে চলে যাবেন শুভলং বাজার। এখানে আর্মি ক্যাম্পের পাশ থেকে সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ের ওপরে উঠে কাপ্তাই লেকের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তবে বানর থেকে সাবধান। তাদের বিরক্ত করা যাবে না একদম। আর সেটা করলে ওরা কিন্তু চড়াও হতে পারে। শুভলংয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে ফিরতি পথের শুরুতেই হাতের ডানে শুভলং ঝর্ণা। শুভলং ঝর্ণা- বর্ষাতে এ যেনো আরও মায়াবী। ঝর্ণার অঝোর ধারা দেখে মন চাইবে অনন্তকাল শুধু তাকিয়ে থাকতে। এটা ভাবতে ভাবতে থেমে গেলে হবে না, চলে যান ঝর্ণার একদম নিচে। দেখবেন ঝর্ণার জলধারা আপনার সব ক্লান্তি ধুঁয়ে নেবে। তারপর চলে আসেন পেদা টিং টিংয়ে। প্রকৃতির পাশে বসে খেয়ে নিন মজার মজার সব খাবার। সেই সঙ্গে উপভোগ করুন আদিবাসী আনন্দ। রাঙামাটির দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজ বনবিহার। এ অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর তীর্থ স্থান এটি। এখানে আছে একটি প্রার্থনালয়, একটি প্যাগোডা, বনভান্তের (বৌদ্ধ ভিক্ষু) আবাসস্থল ও বনভান্তের ভোজনালয়। প্রতি শুক্রবার ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে এখানে চলে প্রার্থনা। রাজ বনবিহারে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারেন কাপ্তাই লেকের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। রাজবনবিহারের পাশেই কাপ্তাই লেকের ছোট্ট একটি দ্বীপজুড়ে রয়েছে চাকমা রাজার রাজবাড়ি। নৌকায় পার হয়ে খুব সহজেই যাওয়া যায় এই রাজবাড়িতে। আঁকা-বাঁকা সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে গাছের ছায়ায় ইট বাঁধানো পথের মাথায় এ সুন্দর বাড়িটি। এখানে আরও রয়েছে চাকমা সার্কেলের প্রশাসনিক দফতর। রাঙামাটি শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে রিজার্ভ বাজার ছাড়িয়ে আরও প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে রয়েছে পর্যটন কমপেস্নক্স। এই কমপেস্নক্সের ভেতরেই রয়েছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুটি। সেতু পেরিয়ে সামনের পাহাড়ে উঠলে কাপ্তাই লেকের বড় অংশ দেখা যায়। এখান থেকে কাপ্তাই লেকে নৌ ভ্রমণও করা যায়। তবে এখানে সাম্পানে চড়ে ঝুলন্ত সেতুর আশপাশে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগবে। ঘণ্টা ১০০ টাকায় এখানে পাওয়া যাবে পাঁচজনের চড়ার উপযোগী সাম্পান।
জেনে রাখুন:
বাংলাদেশের একমাত্র রিকশামুক্ত শহর রাঙামাটি। তাই এই শহরের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হয় বেবিটেক্সিতে। এক স্টপেজ থেকে আরেক স্টপেজে পৌরসভা নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া হলো ১০ টাকা। এছাড়া রিজার্ভ নিলে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভাড়া পরবে ৬০-১০০ টাকা।
রাঙামাটি শহর থেকে কিনতে পারেন আদিবাসীদের পোশাক, তাঁতের কাপড়, আদিবাসীদের তৈরি নানা রকম হস্তশিল্প সামগ্রী ইত্যাদি।
প্রতিদিন রাত দশটায় এবং রাঙামাটি থেকে সকাল সাড়ে দশটায় ছাড়ে। এছাড়া যে কোনো বাস, ট্রেন কিংবা বিমানে চট্টগ্রাম এসে সেখান থেকেও রাঙামাটি যেতে পারেন। চট্টগ্রাম শহরের সিনেমা প্যালেস এবং বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতি বিশ মিনিট পরপর রাঙামাটির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় বিরতিহীন বাস। ভাড়া জনপ্রতি ১০০-১২০ টাকা। শহরে রয়েছে বেশ কয়েকটি হোটেল। এখন সেখানে পর্যটকদের ভিড় কম থাকায় হোটেলগুলোও পাওয়া যাবে খুব সস্তায়। হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে পর্যটন কমপ্লেক্সের ভেতরে পর্যটন মোটেল (এসি দু’বেড ১৭২৫ টাকা ও নন-এসি দু’বেড ভাড়া ৮০৫ টাকা); শহরের কাঁঠাল তলীতে হোটেল সুফিয়া (এসি এক বেড ৯০০ টাকা, এসি দু’বেড ১২৫০ টাকা ও নন-এসি দু’বেড ৮০০ টাকা); রিজার্ভ বাজারে হোটেল গ্রিন ক্যাসেল (এসি ১১৫০-১৬০০ টাকা, নন-এসি ৭৫০-১৫০০ টাকা); কলেজগেট এলাকায় মোটেল জজ (এসি ৯০০-১১০০ টাকা, নন-এসি ৩৫০-৭০০টাকা); নতুন বাস স্টেশনে হোটেল আল-মোবা (এসি ১২০০ টাকা, নন-এসি ৩০০-৫০০ টাকা); পর্যটন রোডে হোটেল মাউন্টেন ভিউ (এসি ১২০০ টাকা ও নন-এসি ২০০-১২০০ টাকা। ঢাকার থেকে কলাবাগান, ফকিরাপুল ও কমলাপুর থেকে সরাসরি রাঙামাটির উদ্দেশে ছেড়ে যায় ডলফিন পরিবহন, এস আলম, সৌদিয়া পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, ইউনিক সার্ভিস, হানিফ পরিবহন ইত্যাদি। ভাড়া জনপ্রতি ৪০০-৪৫০ টাকা।
এই বর্ষায় দুদিনের সময় বের করে ঘুরে আসুন রাঙামাটি।
কান্তজির মন্দির

কান্তজির মন্দির, কান্তজীউ মন্দির বা কান্তনগর মন্দির বাংলাদেশের এক অনন্য স্থাপত্য কীর্তি। দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে এর অবস্থান। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন এই মন্দিরটি দেখতে ভীড় করেন। এটি নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত কারণ তিনতলাবিশিষ্ট এই মন্দিরের নয়টি চূড়া বা রত্ন ছিল। মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদীর শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা (জমিদার) প্রাণনাথ রায় শেষ বয়সে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তবে নির্মাণ সমাপ্তির আগেই ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে প্রাণনাথের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরটির চূড়াগুলো ভেঙে যায়। পরে মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরের ব্যাপক সংস্কার করলেও মন্দিরের চূড়াগুলো আর সংস্কার করা হয়নি। মন্দিরের বাইরের দেয়াজুড়ে পোড়ামাটির ফলকে চিত্রিত রয়েছে রামায়ণ, মহাভারতসহ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। পুরো মন্দিরে প্রায় ১৫,০০০-এর মতো পোড়ামাটির (টেরাকোটা) টালি রয়েছে। উপরের দিকে তিন ধাপে উঠে গেছে মন্দিরটি। মন্দিরের চারদিকের সবগুলো খিলান দিয়েই ভেতরের দেবমূর্তি দেখা যায়। মন্দির প্রাঙ্গণ আয়তাকার হলেও, পাথরের ভিত্তির উপরে দাঁড়ানো ৫০ফুট উচ্চতার মন্দিরটি বর্গাকার। নিচতলার সব প্রবেশপথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। দুটো ইটের স্তম্ভ দিয়ে খিলানগুলো আলাদা করা হয়েছে, স্তম্ভদুটো খুবই সুন্দর এবং সমৃদ্ধ অলংকরণযুক্ত। মন্দিরের পশ্চিম দিকের দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। মন্দিরের নিচতলায় ২১টি এবং দ্বিতীয় তলায় ২৭টি দরজা-খিলান রয়েছে, তবে তৃতীয় তলায় রয়েছে মাত্র ৩টি করে।

ধ্বংসের পথে জৈন্তার প্রত্নসম্পদ
অপূর্ব শর্মা, সিলেট থেকেদীর্ঘদিনের অযত্ন অবহেলায় ক্রমশঃ বিলীন হওয়ার পথে প্রাচীন কালের স্বাধীন রাজ্য জৈন্তার (জৈন্তিয়াপুর) ঐতিহ্য, প্রত্নসম্পদ ও পুরাকীর্তি। এসব প্রত্নসম্পদ রক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ভারতবর্ষের অধিকাংশ এলাকা যখন মোগল সাম্রাজ্যের আওতায় ছিল তখনও জৈন্তিয়াপুরের ছিল স্বতন্ত্র অবস্থান। এখানে মানুষের বসতি ছিল প্রাচীনকাল থেকেই। ১৫০০-১৮৩৫ সাল পর্যন্ত ২৩ জন খাসিয়া রাজা জৈন্তিয়া শাসন করেন। ১৬৮০ সালে রাজা লক্ষ্মীনারায়নের সময় জৈন্তিয়া রাজ্যের রাজধানী পর্বত থেকে নিজপাটে স্থাপন করা হয়। নিজপাট ছিল সমতল অঞ্চল। তবে মেঘালয় পাহাড়ের নর্থিয়াংপুঞ্জিতে এই রাজ্যের দ্বিতীয় রাজধানী ছিল। সিংহের প্রতিমূর্তি জৈন্তিয়ার রাজকীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হত।
নিজপাট নগরীতে রাজধানীর অবস্থান ছিল খাসিয়া ও জৈন্তিয়া পর্বতের পাদদেশে। নগরীর উত্তর ও পশ্চিমদিকে নয়াগাং, পূর্বে নাগড়তি ছড়া এবং দক্ষিণে বড়গাং প্রবাহিত ছিল। সুগভীর পরিখাবেষ্টিত ছিল রাজধানী নিজপাট। কালের আবর্তনে এই পরিখাগুলো ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং জঙ্গলাময় হয়ে উঠছে। ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন রাজা রামসিংহের শাসনকালে জৈন্তিয়ার বিভিন্ন স্থানে বহু মঠ-মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাজধানী শহর ৫২টি গলি বা পাড়ায় বিভক্ত ছিল। এখনও এই ৫২ গলির দেখা পাওয়া যায়। রাজবাড়ীর চারদিকে পরিখা খনন করে সুরক্ষিত করা ছিল। এর ভিতরে খননকৃত কূপ, নরবলি দেওয়ার স্থান, বিচারালয়সহ অনেক মূল্যবান পাথর রাখা ছিল। রাজা রামসিংহের শাসনামলে স্থাপিত পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে সারীঘাট এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ঢুপির মঠের টিলা অন্যতম। রামসিংহ ধর্ম বিষয়ে বিশেষ উৎসাহী ছিলেন। তার প্রচেষ্টায় ১৭৭৮ সাল ঢুপি পাহাড়ের একটি শৈল খণ্ডের উপর শিল্পশোভিত সুউচ্চ শিবমন্দির স্থাপন করা হয়। শিবমন্দিরটি ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা যেত। ১৮৯৭ সালে আসাম অঞ্চলের ভয়াবহ ভূমিকম্পে মন্দিরের চূড়াটি ভেঙ্গে যায়। এখনও ওই মন্দিরের ধ্বংসস্তুপের চিহ্ন বিদ্যমান। ঢুপির মঠের পাদদেশে রাম সিংহের খননকৃত পুকুর এবং একটি পান্থশালার অস্তিত্বও বিদ্যমান আছে। ১৮৩৫ সালের ১৬ মার্চ। হ্যারি সাহেব নামক ইংরেজ চুনাপাথর ব্যবসায়ী জৈন্তিয়ার রাজধানী নিজপাট শহরে এসে রাজা রাজেন্দ্র সিংহকে কূট-কৌশলে বিনা যুদ্ধে নিরস্ত্র ও বন্দি করেন। এদিন জৈন্তিয়া রাজ্যের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। রাজঅন্তঃপুর থেকে বহু মূল্যবান সম্পদ লুট করে নিয়ে যায় ইংরেজেরা। জৈন্তার বহুমূল্যবান প্রাচীন নিদর্শন রাজবাড়ি, রাজপ্রাসাদ, রামসিংহের শাসনামলের অনেক পুরাকীর্তি ও তৎকালীন জৈন্তা রাজ্যের নানা স্থাপনা, মেঘাতিলক, কালাপাথর ও বিজয়সিংহ মহারাজার স্মৃতি মন্দিরসহ রাজ্যের পুরাতন নিদের্শনগুলো সংরক্ষণের অভাবে বিলীন হতে চলেছে। রাজবাড়ীর অনেক পুরাকীর্তি নষ্ট ও রাজবাড়ির জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। পুরাকীর্তিগুলো দেখার জন্য প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক পর্যটক এখানে আসেন। এছাড়া সিলেট-তামাবিল সড়কের সারিঘাটে অবস্থিত ঐতিহাসিক পান্থশালাঘর পর্যটকদের কাছে খুবই আর্কষণীয়। জাফলং ভ্রমণের সময় বেশিরভাগ পর্যটক একনজর পান্থশালাঘর পরিদর্শন করে যান। ২০০৭ সালের ২৩ মার্চ জৈন্তপুরে একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের সারিঘাটের ঢুপি গ্রামের একটি নালা খনন করার সময় শিলালিপিটির সন্ধান পায় গ্রামবাসী। উদ্ধারের পর জানা গেছে শিলালিপিটি ৩শ বছর পূর্বের। এটি ১৭১৯ সালে তৈরি করা। পাঁচ ইঞ্চি পুরু শিলালিপিটি লম্বায় ২২ ইঞ্চি ও প্রস্থে ১৫ ইঞ্চি। এর ওজন প্রায় ৩৫ কেজি।
শিলালিপির গায়ের কারূকাজ দেখতে খুবই সুন্দর। জমিনে পানপাতা আঁকা। এতে সংস্কৃত ভাষায় বেশ কিছু লেখা পাওয়া যায়। পরে শিলালিপিটি উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জাতীয় যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই শিলালিপি উদ্ধারের পর উপজেলা প্রশাসন জৈন্তাপুরের জৈন্তেশ্বরী বাড়িকে যাদুঘরে রূপান্তর করার ঘোষণা দেয়। একটি সাইনবোর্ডও টানানো হয়। তবে, ওইটুকুই ব্যাস। এ ব্যাপারে আর কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। জৈন্তার প্রত্নসম্পদ রক্ষায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী এসব সম্পদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে অচিরেই।
ত্রিপুরা আদিবাসী লোককাহিনী-৩
ভূতের কুকুর-ভীতি
অনুবাদ : আবু রেজা
একদিন এক জুমিয়া ওচাইয়ের কাছে গেল। ওচাই হলো গ্রামের পুরোহিত। জুমিয়া ওচাইয়ের কাছে একটি মন্ত্র শিখতে চাইল। প্রথমে ওচাই জুমিয়াকে মন্ত্র শেখাতে রাজি হলো না। কিন্তু নাছোড়বান্দা জুমিয়ার অনুরোধ ওচাই তাকে একটি মন্ত্র শিখিয়ে দিল। ওচাই জুমিয়াকে বলল, এই মন্ত্র পড়ে তুমি সব কাজ অনায়াসে করাতে পারবে। এক হাজার বার মন্ত্র পড়লেই একটি ভূত এসে হাজির হবে। সে তোমার সব কাজ করে দেবে। একথা শুনে জুমিয়া খুব খুশি হলো। মন্ত্রটা সে ভালোভাবে শিখে নিল। আর ওচাইকে অনেক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বাড়িতে চলে গেল। এর মধ্যে অনেক দিন গেল, মাস গেল। নদীতে অনেক জল গড়াল। একদিন জুমিয়া ভাবল, মন্ত্রের ক্ষমতা একবার পরীক্ষা করেই দেখা যাক। যেই ভাবনা সেই কাজ। সে এক হাজার বার মন্ত্র পড়ে যেই শেষ করল আর অমনি কিম্ভুতকিমাকার আর অদ্ভুত রাগী একটা ভূত এসে হাজির হলো। ভূত বলল, প্রভু আজ থেকে আমি আপনার ভৃত্য। হুকুম করুন মালিক, আমি আপনার জন্য কী করতে পারি? ভূত আরও বলল, বিন্দুমাত্র সময় ক্ষেপণ না করে আপনার সব আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। কিন্তু একটা শর্ত আছে। আপনি যদি আমাকে কাজ দিতে ব্যর্থ হন, তবে আমি আপনার ঘাড় মটকাব। জুমিয়া ভাবল, ভূতের আবার শর্ত! ওসব নিয়ে তার চিন্তা-ভাবনা করার দরকার নেই। সে ভূতকে এত কাজ দিবে যে ও সবসময় ব্যস্ত থাকবে।  জুমিয়া ভূতকে বলল, তোমার শর্তে আমি রাজি। এখন যাও, প্রথমে আমার জুমক্ষেতে ভালোভাবে পরিষ্কার করো। জুমিয়া ভাবল, ওর বিশাল জুমক্ষেত পরিষ্কার করতে হয়ত ভূতের অনেক দিন লেগে যাবে। কিন্তু একি! কিছুক্ষণ পর ভূত জুমিয়ার সামনে এসে হাজির হলো। ভূত বলল, জুমক্ষেতের কাজ শেষ। এবার কী কাজ করব? হুকুম করুন মালিক। ওকে দেখে, ওর কথা শুনে জুমিয়া হতভম্ব হয়ে গেল। জুমিয়াকে ভূত বলল, আমাকে অন্য আরেকটি কাজ দিন। জুমিয়া বলল, মাঠে যাও। মাঠ থেকে সব বাঁশ আর গাছগুলো তুলে ফেল। ভূত তৎক্ষণাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এলো। এসেই সে জুমিয়াকে বলল, কাজ শেষ। সে জুমিয়াকে আরেকটি কাজ দিতে বলল। জুমিয়া বলল, যাও, আমার জুমক্ষেত থেকে বড় সড়ক পর্যন্ত একটা সড়ক তৈরি করো। ভূত এই কাজটিও নিমিষে করে ফেলল। মুহূর্তের মধ্যে আবার এসে হাজির হলো। তারপর জুমিয়াকে বলল আরো কাজ দিতে। জুমিয়া একটা পর একটা কঠিন কাজ দিতে লাগল। কিন্তু বিস্ময়কর হলো ভূত সব কাজ মহূর্তের মধ্যেই শেষ করে ফেলে। জুমিয়া এই ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়ল, কীভাবে একটি কাজ দিয়ে ভূতকে অনেকক্ষণ ব্যস্ত রাখা যায়। অনেক ভেবে-চিন্তে সে ভূতকে বলল, এবার আমি তোমাকে খুব সহজ একটি কাজ দিব। ভূত বলল, দয়া করে কাজের কথাটি বলুন প্রভু। জুমিয়া বলল, শোনো, আমার একটি প্রিয় কুকুর আছে। কিন্তু এর লেজ সব সময় বেঁকে থাকে। ওর বাঁকা লেজ আমার পছন্দ নয়। তুমি কুকুরের লেজটি সোজা করে দাও। ভূত বলল, এটা খুবই সহজ কাজ। আমি এখনই করে দিচ্ছি। এবার জুমিয়া কাজের সঙ্গে একটি শর্ত জুড়ে দিল। জুমিয়া বলল, কিন্তু তুমি যদি কুকুরটির লেজ সোজা করতে ব্যর্থ হও তবে আমার কুকুরটি তোমাকে কামড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। ভূত বলল, চিন্তা করবেন না প্রভু। এরকমটি কখনোই ঘটবে না। ভূত অদৃশ্য হয়ে গেল। সে কুকরটি খুঁজতে লাগল। কুকুরটি খুঁজে পেয়ে সে দুই হাত দিয়ে কুকুরের লেজটি ধরে সোজা করে ফেলল। কিন্তু যেই সে লেজটি ছেড়ে দিল অমনি আবার তা বাঁকা হয়ে গেল। তারপর ভূত দড়ি দিয়ে লেজটাকে সোজা করে বেঁধে রাখল। কিছু দিন এ অবস্থায় রেখে দিল। তারপর যেই বাঁধন খুলে দিল অমনি আবার লেজটি আগের মতো বাঁকা হয়ে গেল। ভূত তখন একটা বাঁশের চোঙ এনে লেজটি তাতে ঢুকিয়ে রাখল। কিন্তু যেই ভূত চোঙ থেকে লেজটি বের করল অমনি তা আবার আগের মতো হয়ে গেল। কুকুরটির লেজ সোজা রাখতে না পেরে ভূত এবার খুব ভয় পেয়ে গেল। জুমিয়ার শর্ত মনে পড়ল তার। সে এই কাজ করতে না পারলে কুকুরটি তাকে কামড়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। তাই সে কুকুরের ভয়ে ভীত হয়ে পড়ল। ভয়ে সে দৌড়ে পালাল। তারপর আর কখনো ফিরে আসেনি। এরপর থেকে তারা বিশ্বাস করে, ভূত সব সময় কুকুরকে ভয় পায়।
মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা
তাহজিব হাসান


মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। মাস্ক, গ্লাভস ও বুটজুতা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ময়লা পরিষ্কার করায় তারা এখন শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগচ্ছেন । অজ্ঞতার কারনে চিকিৎসকের পরামর্শও গ্রহণ করছেন না তারা। সোমবার দিবাগত রাতে ঢাকার বিভিন্নস্থানে সরেজমিনে দেখা গেছে, মাস্ক, গ্লাভস ও বুট জুতা ছাড়াই ময়লা পরিষ্কার করছেন উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। মাস্ক, গ্লাভস ও বুটজুতা ছাড়া ময়লা পরিষ্কার করছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে চুক্তিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী আবু তাহের বাংলানিউজকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, মাস্ক, গ্লাভস, বুটজুতা কোথায় পাব? পরিচ্ছনতা বাবদ যে টাকা দেয়া হয় তাতে পরিবারের সদস্যদের খাবার জোগাড় করাই কঠিন । গ্লাভস ছাড়া কাজ করতে সমস্যা হয় কি না এমন প্রশ্নের জবারে আবু তাহের বলেন, অসাবধানতাবশত: অনেক সময় কাচের টুকরা বা অন্য কিছু দিয়ে হাত-পা কেটে যায়। কর্তৃপক্ষ মাস্ক, গ্লাভস সরবরাহ করে কি না জানতে চাইলে তাহের বলেন, কর্তৃপক্ষ ময়লা পরিষ্কারের জন্য সামান্য কিছু টাকা ছাড়া আর কিছুই দেয় না। তিনি জানান, দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে তাদের অনেকেই বিভিন্ন শারিরীক সমস্যায় ভুগছেন। বাংলানিউজকে একই কথা জানান জামাল, রউফ, দীনেশসহ আরো কয়েকজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তারা আরও  জানান, কাজ শেষে শুধু পানি দিয়ে হাত-মুখ পরিষ্কার করেন তারা। কোন সাবান বা জীবানুনাশক ব্যবহার করেন না। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক চিকিৎসক ডা. খন্দকার রেজাউল হক রিজভী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্য পরিষ্কার কাজে নিয়োজিত থাকলে ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। একজিমা, চুলকানিসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। এছাড়া শ্বাসকষ্টসহ ফুসফুসের নানা সমস্যাও হতে পারে। তিনি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দিয়ে বলেন, কাজ শুরু করার আগে তাদের গ্লাভস,মাস্ক এবং বুটজুতা ব্যবহার করতে হবে। কাজ শেষে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত মুখ পরিষ্কার করতে হবে। তিনি আরো বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সাধারণত রাতে কাজ করেন। তাই একজনের প্রতি রাতে কাজ করা ঠিক হবে না। তাদের একদিন অন্তর-অন্তর কাজ করতে হবে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময় পর মেডিক্যাল চেকআপ করাতে হবে। বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় জানা যায়, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। অপর এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী ঢাকায় প্রতিদিন  ৫ হাজার ৯’শ ৫০ মেট্রিক টন গৃহস্থালি, মেডিক্যাল ও  বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ৫০ এবং রাস্তাঘাট থেকে চার’শ মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য অপসারণের জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছেন মাত্র ৭ হাজার ৫শ জন।
শুক্রগ্রহের ট্রানজিট দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

কেবলই রাত পোহানোর অপেক্ষা। রাত পোহালেই দুর্লভ দৃশ্য দেখবে বিশ্ববাসী। বিশ্ববাসীর সঙ্গে দেখবে বাংলাদেশও। আজ বুধবার সূর্যের সামনে দিয়ে শুক্রগ্রহ চলে যাওয়ার বিরল দৃশ্য দেখা যাবে। বিজ্ঞানপ্রেমী ও মহাকাশ সম্পর্কে জানতে আগ্রহীরা এ দৃশ্য দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর এ দৃশ্য মাত্র আটবার দেখা গিয়েছিল। আজকের পর এ দৃশ্য আবার দেখা যাবে ১০৬ বছর পর অর্থ্যাৎ ২১১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর। বুধবার সকালে সূর্য উঠলেই চোখে পড়বে এর বুকে ছোট্ট একটি সচল কালো বিন্দু। ছোট্ট এই কালো বিন্দুটাই শুক্রগ্রহ। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পৃথিবীসহ সব গ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এই ঘূর্ণনের সময় পৃথিবী-শুক্রগ্রহ ও সূর্য যখন একই সরল রেখায় এসে পড়ে, তখন সূর্যের চাকতির ওপর দিয়ে শুক্রগ্রহকে অতিক্রম করতে দেখা যায়। এ ঘটনাকেই শুক্রগ্রহের ট্রানজিট বলে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, আকাশ পরিষ্কার থাকলে বাংলাদেশে সকাল ১০টা ৩৩ মিনিট থেকে ১০টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত এ দৃশ্য দেখা যাবে। সূর্যের ওপর শুক্রগ্রহের এমন ছায়া আবার ১০৬ বছর পর দেখা যাবে।
শুক্রগ্রহ দেখার নানা আয়োজন
শুক্রগ্রহের এ দুর্লভ এ দৃশ্য দেখার জন্য সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠনও নানা কর্মসূচি নিয়েছে। শুক্র গ্রহের এ দুর্লভ দৃশ্য দেখার জন্য শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত বিজ্ঞান জাদুঘরে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা আছে। সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সকাল ১০টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত এই ট্রানজিট দেখা যাবে। অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, শুক্রগ্রহের এ অতিক্রমণ দেখার জন্য ধানমন্ডি ক্লাবে পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প করা হয়েছে। ভোর পাঁচটা ১০ মিনিট থেকে সকাল ১০টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত সবার জন্য এটি উন্মুক্ত থাকবে। বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিত্সুচক্র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সংগঠনটি ঢাকার মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ক্যাম্প করেছে। ঢাকার বাইরে সিলেট শাহজালাল ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশালের পরশ সাগর মাঠে, ঠাকুরগাঁও জিলা স্কুল মাঠে ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। এদিকে বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ জানিয়েছে, ঢাকায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ময়মনসিংহের কাউনিয়া হাইস্কুল, চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ বয়েজ স্কুল, সেন্ট প্লাসিড স্কুল তারা পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প করেছে।
পথ শিশুরাও পারে
আশরাফুল ইসলাম

ফরিদপুরের শিবচর উপজেলার আট বছরের শিশু শফিকুল ইসলাম । বাবা আব্দুল মজিদ দ্বিতীয় বিয়ে করে খোঁজখবর নেIয়া ছেড়ে দেয় । সেই সঙ্গে বন্ধ করে দেয় খরচও দেয়‍াও। উপায়ান্তর না দেখে মা নাসিমা বেগম মাস তিনেক আগে শিশুপুত্র শফিকুলকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি জমায় রাজধানী ঢাকায়। গাবতলীর বাস টার্মিনালের পাশেই একটি বস্তিতে ঠাঁই হয় তাদের। অজঁপাড়াগাঁ’য়ের নাসিমা কোন কাজ জানেন না, তবে রান্নাটা মোটমুটি করতে জানেন। বাসাবাড়িতে রান্নার কাজ জোগাড় হলেও তাতে থাকা-খাওয়ার খরচে উঠে আসে না। বাধ্য হয়ে আদরের শিশুপুত্রকেও কাজে লাগিয়ে দেন নাসিমা। বাসের বডি মেরামতকারী মিস্ত্রির সহকারী, মাসে বেতন পাঁচশ’ টাকা।
এরই মধ্যে শফিকুলের সঙ্গে সাক্ষাত ঘটে পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পি এস টি সি )‘র ‘হেলপিং চিলড্রেন ওয়ার্কিং অ্যান্ড লিভিং অন দি স্ট্রিট’ প্রকল্পের কর্মীদের। তারা শফিকুলকে নিয়ে যায় পি এস টি সি’র গাবতলী পথশিশু ড্রপিং ও শেল্টার সেন্টারে। সেখানেই শফিকুল নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন ছবি আঁকা, গান শেখা ইত্যাদি মেধা বিকাশ ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমেও যুক্ত হয়। অল্প সময়ে সে ছবি আঁকায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। দারিদ্র আর পারিবারিক বিশৃঙ্খলার মাঝেও এগিয়ে চলে শফিকুলের মেধা ভিত্তিকচর্চা। পি এস টি সি’র আয়োজনে জাতীয় জাদুঘরের নলীনিকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী গ্যালারিতে শুরু হওয়া ‍তিনদিনের পথশিশুদের ছবি আঁকা প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানে সোমবার কথা হচ্ছিল শফিকুলের সঙ্গে। অন্য পথশিশুদের মত সেও এসেছে নিজের আঁকা ছবির প্রদর্শনীতে। সে জানালো জীবনে অনেক বড় হওয়ার আকাঙ্খাও আছে তার মনে। শফিকুল জানায়, ‘বড় অইয়্যা ডাক্তার অমু, মানুষ গো ঔষুধ দিমু’। শফিকুলের মতই নানা বঞ্চনার শিকার পথশিশুরাও নিজেদের আঁকা ছবি নিয়ে হাজির হয়েছিল জাতীয় জাদুঘরের গ্যালারিতে। গ্যালারিতে শহুরে অভিজাত আর শিক্ষিত মানুষেরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ এসব শিশুদের আঁকা ছবি দেখে। তাদের আঁকা ছবি দেখতে এতো মানুষের ভিড় যেন আরো বাড়িয়ে দিলো পথশিশুদের মনোবল। পি এস টি সি’র খিলগাঁও মায়াকানন ড্রপিং ও শেল্টার সেন্টারে ছাত্রী লিজা আক্তার (১৪)। বাবা বিল্লাল হোসেন কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। বাবার সামান্য আয়ে সংসার কোন রকম চলে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার খরচ যোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়তো।
এমন কঠিন সময়ে পি এস টি সি’র ড্রপিং ও শেল্টার সেন্টার লিজার পড়াশুনায় এগিয়ে আসে। এখানেই ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয় তার ছবি। অনুভূতি জানাতে যেন মুখের ভাষাই হারিয়ে ফেলে লিজা। সে জানায়, ‘অনেক ভাল লাগছে। সুযোগ পেলে আরো ভাল করতে পারমু’।
পি এস টি সি’র পথশিশুদের এই কার্যক্রমের নানা দিক নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির অ্যাডভোকেসি কো-অর্ডিনেটর তাহমিনা বানু।
তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালে পি এস টি সি প্ল্যান বাংলাদেশের সহায়তায় পথশিশুদের জন্য এই উদ্যোগ হাতে নেয়। রাজধানীতে বর্তমানে প্রায় আড়াই লাখ পথশিশু বা ছিন্নমূল শিশু রয়েছে। প্রতি বছর আমরা রাজধানীর ২৬০০ ছিন্নমূল শিশুকে এই কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত করার টার্গেট নিয়ে কাজ করে থাকি। রাজধানীতে আমাদের ১৩টি ড্রপিং ও শেল্টার সেন্টারে এদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, খাবার-বাসস্থানসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করা হয়।’
তাহমিনা বানু এসব শিশুদের পথশিশু হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘মূলতঃ বাবা-মা’য়ের বিচ্ছেদ, অতিদারিদ্র, সংসারে সৎ মা বা বাবার অত্যাচার ইত্যাদি কারণেই আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে এসব শিশু।’ পথশিশুদের মধ্যেও আশ্চর্য রকমের মেধা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর আগে শিশু অধিকার সপ্তাহে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় আমাদের কেন্দ্রের এক শিশু চতুর্থস্থান অধিকার করে। শহরের অভিজাত পরিবারের শিশুদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হচ্ছে এরা, যাদের পেটে খাবার পর্যন্ত নেই।’ তাহমিনা আরো জানান, ‘এসব শিশুর কেউ কেউ সামান্য উপার্জনের সঙ্গেও যুক্ত। আমরা এতে বাধা দেই না, তবে ঝুঁকিম‍ুক্ত কাজ করতে উৎসাহিত করি।’ তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষে শিক্ষার মূল ধারায় সম্পৃক্ত হতে চায়, আমরা তাদের বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেই। কেউ পরিবারে ফিরে যেতে চাইলে আমরা অভিভাবকদের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের মাধ্যমে শিশুদের তাদের পরিবারে ফিরিয়ে দিই। অনেককে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে স্থায়ী কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। তাছাড়া তাদের উপার্জিত অর্থ অনলাইন সেভিংস এরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে তারা সঞ্চয়ও করতে পারবে।’
ধ্বংসের মুখে হাজীগঞ্জের বাঁশ শিল্প
কাদের পলাশ


 দিনদিন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচেছ চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প। বাঁশ ঝাড় ধ্বংস, আর প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে দিনদিন কমে আসছে বাঁশের ব্যবহার। এদিকে সামন্য পরিবমানে বাঁশ পাওয়া গেলেও অধিক দামে তা কিনে প্রয়োজনীয় সামগ্রি তৈরিতে ছৈয়ালরা (বাঁশ শিল্পি) দিনদিন আগ্রহ হারাচ্ছে। বর্তমানে প্লাস্টিক সামগ্রীর সয়লাবের ফলে এ পেশায় নিয়োজিত শতশত শ্রমিক বেকাদায় হয়ে পড়েছেন। হাজীগঞ্জসহ, কচুয়া, মতলব, হাইমচরের ছৈয়ালরা এ পেশা ছেলে ভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত হচ্ছে।
 জেলার প্রায় শতশত পরিবারের এক সময় এ পেশায় জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তারা বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন ওড়া, ঝুড়ি, টুকরি, কুড়ি, চাটাই, মাছের খাঁচা, মাছ ধরা খোলই (ছাই), বাঁশের হারিকেনসহ ইত্যাদি তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতেন। তবে বংশগত বাঁশ শিল্পীরা পুরোনো পেশা ভুলতে পারেননি। এখনো বিভিন্ন উপজেলায় বড় বড় হাট বাজারে তাদের উৎপাদিত বাঁশ ও বেতের সামগ্রী দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন এনজিও ব্যাংক বিভিন্ন পেশার লোকদের ঋণ দিলেও এ বাঁশ শিল্পীদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেনি। হাজীগঞ্জ উপজেলার ৯নং গন্ধর্ব্যপুর ইউনিয়নের মালিগাঁও গ্রামের মৃতঃ আব্দুল বারেকের ছেলে আলী হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বাপদাদার পেশা তাই জীবন বাঁচাতে কষ্ট হলেও এখানো এ পেশায় আছি। কাঁঠালী গ্রামের মনির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এক সময়ে আমার ৫টি প্রজেক্ট ছিলো। বর্তমানে একটিমাত্র প্রজেক্ট রয়েছে। যেখানে দৈনিক ২০/২৫ জন লোক বিভিন্ন কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করতো। তিনি আরও জানান, বর্তমান জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি বাঁশ ২০০/২৫০ টাকা কিনতে হয় এবং সে বাঁশ থেকে কচ্ছি-কাঠি বের করে বিভিন্ন রকম জিনিস বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে যে টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে অতি কষ্টে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়।
কচুয়া উপজেরা হয়াৎপুর গ্রামের চিত্তরঞ্জন বাংলানিউজকে জানান, আমাদের গ্রামে অনেক পরিবার এ পেশায় সম্পৃক্ত থাকলেও বাঁশের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় এ পেশা থেকে অনেক পরিবার অন্য কাজে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। তবু অনেক পরিবার বা গ্রামে বংশ পরম্পরায় হাতে গোনা কয়েকজন এখনো পেশা ধরে রেখেছে। চাঁদপুরের বাঁশ শিল্পীদের আবেদন সরকার যদি এ শিল্পে ভূর্তুকি বা ঋণ সহায়তা দেয় তবে বাঁশ শিল্প দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে একটি সম্ভাবনাময় খাত হতে পারে।
নীলফামারীর নারীদের তৈরি মাদুর যাচ্ছে বিদেশে
জেলা প্রতিনিধি



জাহেরা বেগম (৩০)। স্বামী, দুই সন্তান আর শ্বশুর-শ্বাশুড়ি নিয়ে ছিল তার অভাবের সংসার। তিন বেলা পেট পুড়ে খেতেও পারতেন না। অনটনের সংসারে অশান্তি লেগেই থাকতো। কিন্তু জাহেরা বেগমের সেই দিন আর নেই। ঘুঁচে গেছে প্রাত্যহিক অভাব-অনটন। উপরন্তু এখন তিনি স্বামী ও সংসারে সহযোগিতা করছেন। পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছেন। জাহেরার বর্তমান এ অবস্থার পেছনে রয়েছে মাদুরের ভূমিকা। মাদুর তৈরি করে জাহেরা নিজে যেমন স্বাবলম্বী  হয়েছেন, তেমনি হয়েছেন একজন প্রশিক্ষকও। তার হাত ধরে এলাকায় আরও ৭৫ জন নারী তৈরি করছেন মাদুর। কর্মব্যস্ত এলাকায় পরিণত হয়েছে নীলফামারী সদরের কুচকাটা ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়া। দিনের যে কোনো সময়ে গেলেই চোখে পড়বে জাহেরা বেগম ছাড়াও জয়া বেগম, শিউলি আক্তার, মোর্শেদা বেগম, মারুফা আক্তার, সাবিনা ইসলামদের কর্মব্যস্ততা। আর এখানে উৎপাদিত মাদুর নীলফামারী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাদৃত হয়েছে। রপ্তানি হচ্ছে কানাডা, ডেনমার্ক, সুইডেন ও প্রতিবেশী দেশ ভারতে। চাহিদা বাড়ায় মাদুর তৈরিতে দরিদ্র মহিলাদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে দিন দিন। সরেজমিনে দেখা গেছে, আরডিআরএস’র ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের সদস্য ছিলেন তারা। শুধু ঋণে নয়, মেধা এবং শ্রম দিয়ে উপার্জন করে নিজে এবং সমাজকে পরিবর্তন করা যায় এমন পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা সম্পৃক্ত হন মাদুর তৈরির প্রশিক্ষণে। এ পর্যন্ত আরডিআরএসএ নীলফামারী সদরের ইটাখোলা, চওড়া, বড়গাছা এবং কচুকাটা ইউনিয়নের ২৭৫ জন নারী ৪৫ দিনের মৌলিক প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেছেন মাদুর তৈরির কাজ। তাছাড়াও প্রশিক্ষণ নেওয়া ওই ২৭৫ জন নারী নিজ নিজ এলাকায় প্রশিক্ষণ দিয়েছেন আরও অন্তত ৫০০ দরিদ্র নারীকে। এখন তারা সংসারের কাজের পাশাপাশি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মাদুর তৈরির কাজে। একটু পরিশ্রম করলেই যে পরিবর্তন এবং নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা যায়, সে কথাই বললেন জাহেরা বেগম।
তিনি বলেন, ‘যখন এ কাজে আমি জড়িত ছিলাম না, তখন নানা সমস্যা লেগেই ছিল। স্বামীর একার উপার্জনে সংসারে অভাব অনটন থাকার পাশাপাশি সময়টা যেন বসে থেকেই কেটে যেত। মাদুর তৈরিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পর উপার্জনের পাশাপাশি নিজেকে আলাদাভাবে গড়তে পারছি’।
জাহেরার শ্বশুর তহিদুল ইসলাম এলাকার নারীদের প্রশংসা করে বলেন, ‘সমাজের সব নারী এভাবে উন্নয়ন কর্মকা-ে নিজেদের সম্পৃক্ত করে, তাহলে গরিব মানুষগুলোর পরিবারে দুঃখ-কষ্ট থাকবে না’। কচুকাটা পশ্চিমপাড়ার জয়া বেগম জানান, তারা প্রতিদিন মাদুর তৈরি করে ১১০ টাকা হারে মাসে ৩৩০০ টাকা উপার্জন করছেন। ইতোমধ্যে তাদের মাদুর তৈরির কাজ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও বিদেশি লোকজন দেখে গেছেন বলে জানান তিনি।
আরডিআরএস সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে এ প্রকল্পটি চালু হয় নীলফামারীতে। যেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা নিজেরা ছাড়াও অন্যদের উৎসাহিত করে মাদুর তৈরিতে সম্পৃক্ত করছেন। সুতা সরবরাহ করে প্রশিক্ষিত ওই দরিদ্র নারীদের তৈরি করা মাদুর (ম্যাট) দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হচ্ছে। যা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও সমাদৃত। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ছাড়াও ডেনমার্ক, কানাডা, ভারত এবং সুইডেনের দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা নীলফামারীতে তৈরিকৃত মাদুরের প্রশংসা করেছেন বলে জানান আরডিআরএস নীলফামারীর কর্মসূচি ব্যবস্থাপক (ঋুদ্র ঋণ) গোলাম মোস্তাফা।
তিনি জানান, আর্থিক সঙ্কট দূর করার পাশাপাশি আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে নীলফামারীর দরিদ্র নারীদের কাছে মাদুর তৈরি এখন বেশ জনপ্রিয়। কচুকাটা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বকুল সরকার জানান, অভাবের সংসারে সহযোগিতায় নারীদের এগিয়ে আসা খারাপ কিছু নয়। বরং যারা মাদুর তৈরি করছেন, তারা আমাদের অহংকার। আরডিআরএস নীলফামারীর সমন্বয়কারী খন্দকার রাশেদুল আরেফীন জানান, প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর এলাকার নারীদের কর্মস্পৃহা অনেক বেড়েছে। এসব এলাকায় যখন মাঠে কাজ থাকে না, তখন গ্রামের এসব দরিদ্র নারীদের কাজের সন্ধান করতে হয় না। এছাড়াও পুরুষদের বাইরে কাজে যাওয়ার প্রবণতাও কমেছে। দরিদ্র নারীদের কাজ দেখে অভিভূত হয়েছেন নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম আযম। তিনি জানান, তার উপজেলায় মাদুর তৈরি ও প্রশিক্ষণে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়নোর ব্যাপারে তিনি উদ্বুদ্ধ করবেন।