Post Editorial

ধন্যবাদ নির্বাচন কমিশন ধন্যবাদ নারায়ণগঞ্জবাসী
মোর্শেদ আলী
গত ৩০ অক্টোবর ২০১১তে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। স্থানীয় সরকার অরাজনৈতিক আখ্যায়িত হলেও শেষ পর্যন্ত অরাজনৈতিক থাকে না। দলগুলো কোনো না কোনো প্রার্থীর পক্ষ নেয়। যেমন এবার মেয়র প্রার্থী শামীম ওসমানকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে অন্য দিকে তৈমুর আলম খন্দকারকে সমর্থন করেছে বিএনপি। অপর প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী নারায়ণগঞ্জের আমজনতার প্রার্থী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন (যা প্রমাণ হয়ে গেছে)। যদিও আইভী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভানেত্রী। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পূর্বে দুই প্রার্থীর স্বার্থেই একাধিক বৈঠক করেছেন এবং নানান প্রস্তাব দিয়েছেন দু’জনের একজনকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াতে। কিন্তু মানুষের সমর্থন ও কর্মীদের আকাক্সক্ষা বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। শেষ পর্যন্ত যা ঘটল তা সকলেই দেখলেন।
 নির্বাচনটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী সিডিউল ঘোষণার পর থেকে কমিশন প্রতিটি পদক্ষেপ দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন এবং নির্বাচনটি যাতে সুষ্ঠু, নিরপক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করেছেন। শেষ পর্যন্ত জনতার আকাক্সক্ষা অনুযায়ী সেনাবাহিনী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু সরকার নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে কার্যকর না করে নিজেদের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এতে নির্বাচন কমিশন বিচলিত না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করে কি ভাবে ভালোমতো নির্বাচনটি সম্পন্ন করা যায়, তার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং প্রতিটি পদক্ষেপ সুচিন্তিতভাবে দেন। কমিশন নির্বাচনটি সুসম্পন্ন করেছে তার জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। অনেকে সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে আরো দৃঢ়পদক্ষেপ দাবি করেছিলেন। সেটার বদলে যা ঘটেছে এটা বর্তমান পরিস্থিতিতে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার কাজ হয়েছে। এতে দল বিশেষ বা রাজনৈতিক  পাঠক অসস্তুষ্ট হতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন যথার্থ কাজটি করেছে।
সর্বোপরি ঘটনার আসল নায়ক জনগণÑ নারায়ণগঞ্জের জনগণ। তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অতীত অতি উজ্জ্বল। এখানে এক সময় অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে বাম রাজনীতির বিকাশ ঘটেছিল এবং বর্তমান সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও তার আশপাশে ব্যাপক শ্রমিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। নারায়ণগঞ্জকে পাট ব্যবসার জন্য প্রাচ্যের ডাণ্ডি বলা হতো। সেই জুটবেলিং শ্রমিকসহ গোদনাইল সুতাকল শিল্প এলাকায় ব্যাপক শ্রমিকদের মধ্যে কমিউনিস্ট নেতাগণ ও তাদের পার্টির কর্মকাণ্ড ছিল। তারই জোর ধরে পূর্ব পাকিস্তান পর্বে প্রথমে কমিউনিস্টদের সমর্থনে আওয়ামী লীগ ও পরর্বতীতে ন্যাপ শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠে। পাকিস্তানপন্থী মুসলিম লীগ কোনো সময় তেমন খুব জোরদারভাবে  সংগঠিত ছিল না বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ এলাকায়। তবে বন্দর নগরী এবং ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে নানা ধরনের নানা পেশার মানুষের বসবাসের স্থান ছিল নারায়ণগঞ্জ। স্বাধীন বাংলাদেশে নারায়ণগঞ্জ আবার একটি শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। রাস্তা ঘাট কিছু উন্নত হয়েছেÑ অনেক কিছুর প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে সাধারণ ও অতি সাধারণ মানুষের জন্য। নদী-বন্দর ও রেলকে উন্নত করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।
সেই ব্রিটিশ ও পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সাংস্কৃতিক আন্দোলন চলে এসেছে। বিশেষ করে ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। মধ্যবিত্ত ছাত্র-যুবদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্র লীগ ও উদীচীর মতো সংগঠন বিকশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে এ জেলার ছাত্র, যুব, কৃষক, শ্রমিকরা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে। ছয় ও এগারো দফা আন্দোলনে আদমজীর শ্রমিকসহ নারায়ণগঞ্জে ছাত্র-যুবকরা ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এ ভাবে স্বাধীনতার ধারায় নারায়ণগঞ্জে এক বড় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে উঠে এবং কমরেড সত্যেন সেন ও রণেশ দাশগুপ্তের মতো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিগণের অবদান এর পেছনে ছিল। তাছাড়া এই দু’জনই ছিল বৃহত্তর ঢাকার কৃতী সন্তান। তাই নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে যে বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজে যারা রয়েছেন তারা প্রগতিশীল ঐতিহ্যকে ধারণ করে চলেছেন। এরা অনেকে রাজনৈতিকভাবে এখন নানা দল করেন। কিন্তু প্রগতির ঝাণ্ডার নিচে তারা ঐক্যবদ্ধ হন। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের ৪০ বছরে যে সমস্ত অপরাজনীতি জš§ হয়েছে সেসব রাজনীতি খুব সহজভাবে এখানে এগুতে পারে না। নারায়ণগঞ্জের এই ধারা দেশের সব জেলায় পরিস্ফুটিত হয়ে উঠুক সেটাই মানুষের চাহিদা। অর্থ পেশিশক্তি মুখ থুবড়ে পড়–ক সাধারণ মানুষ তাই চায়।
এই নির্বাচন সারাদেশের জন্যও ইঙ্গিতবহ। মানুষ আজ দুই মেরুর রুগ্ন রাজনীতিতে অতিষ্ঠ। সে ক্ষেত্রে সারাদেশেই যদি সেলিনা হায়াতের মতো তৃতীয় বলয়  পেতো তাহলে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ধারা, উন্নয়নের ধারা এগিয়ে যেতে পারত। তবে সে ক্ষেত্র অনেক ঝুঁকি নিয়ে আদর্শিক অবস্থান থেকে মেরুদণ্ড সোজা করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ প্রেমিক শক্তিকে দাঁড়াতে হবে।
লেখক: রাজনীতিক ও কলামিস্ট
লিবিয়ার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ
আরজিনা রহমান
গাদ্দাফি পরবর্তি লিবিয়ায় দেশটির জাতীয় অন্তর্বতী পরিষদকে (এনটিসি) অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। গত ২০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার গাদ্দাফি নিহত হওয়ার পর এনটিসি চূড়ান্ত জয়ের ঘোষণা দেয় । এনটিসি নেতারা জানিয়েছেন লিবিয়ার নতুন সংবিধান এবং একটি অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপে নির্বাচনের কাঠামো ঘোষণা করা হবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে অন্তবর্তী সরকারের কাঠামো ঘোষণা বা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেই যে লিবিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বিষয়টি এত সহজ নয়। কারন গাদ্দাফির মৃত্যু হলেও তার উত্তরসূরি বলে যাকে ভাবা হতো সেই সাইফ আল ইসলামকে এখনো পাওয়া যায়নি। সেই সাইফ কোথায় কীভাব আছে এনটিসি ও তা নিশ্চিত করতে না পারলে তিনি দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পথে বাধা হয়ে দাড়াতে পারেন।
এনটিসি ও প্রধানমন্ত্রী মাহমু জিররিন বলেছেন সাইফ কোথায় আছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আমাদের ধারনা, সিরত শহরের আশে পাশের কোনো গ্রামে তিনি লুকিয়ে থাকতে পারেন। এনটিসি লিবিয়ার নিরা পত্তা নিশ্চিত করতে পারবে কিনা তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছে দেশটিতে অনেক সশষস্ত্র প রয়েছে যাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ¡ রয়েছে। এই পগুলো কখন ও বিচ্ছিন্নভাবে কখনও বিদ্রোহীদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে গাদ্দাফি বিরোধী লড়াই করেছে। গাদ্দাফি পরবতী লিবিয়ার তারা নিজেদের স্বার্থ রার হিসাব কষবে। গাদ্দাফি ও তার শাসনামলে দেশটির উচ্ছৃ´খল সশস্ত্র অনেক পরে কাছ থেকে বিদ্রোহের হুমকি পেয়েছিলেন। তাই এনটিসি এখন এইপগুলোকে কীভাব সামল দেবে তা দেখার বিষয়। বিশ্লেষকদের মতে ন্যাটোর সহায়তায় গাদ্দাফি বাহিনীকে পরাজিত করেছে বিদ্রাহীরা এরপরও অনেক সময় বিদ্রোহী বাহিনীকে খুব সংহত মনে হয়নি। ন্যাটোর প্রয়োজন হবে। এমন সংহত একটি সেনাবাহিনী গড়তে এনটিসি কতটা সম হবে এ ব্যাপারে প্রশ্ন রয়েছে। স্থিতিশীল লিবিয়া গড়তে অবশ্যই একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সেই প্রক্রিয়ায় দেশটির সব পরে সহযোগিতা জরুরি। সেই প্রক্রিয়া সহযোগিতা এনটিসি কতটা পাবে তাও লনীয়। কারন জয়ী যোদ্ধারা তাদের গোষ্ঠীগত স্বার্থে আঘাত লাগল তা কীভাবে নেবেন তারা অস্ত্র সংবরণ করতে রাজি হবেন কিনা এর ওপর দেশটির স্থিতিশীলতা অনেকটাই নির্ভর করছে। এসবের পাশাপাশি এনটিসিকে একেবারে সাধারন জনগনের কথাও ভাবতে হবে। তাদের প্রত্যাশা একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধশালী লিবিয়া। স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার আগে সেই প্রত্যাশা পূরণ হবার নয়।
লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে তার জন্মের শহর সিরতে বৃহস্পতিবার বিদ্রোহীরা তাকে পানি নিষ্কাশন পাইপের ভেতর থেকে বের করে প্রথমে নির্যাতন পরে গুলি করে হত্যা করে। তার আগে ন্যাটো বাহিনীর অর্ন্তভুক্ত ফরাসি বিমান হামলা চালায়। ন্যাটো বাহিনী লিবিয়ার বিদ্রোহীদের পে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে সর্বাÍক যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকলে গাদ্দাফি ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি কাপুরুষের মতো ধরা দেবেন না। বীরের মতো আমৃত্যু লড়াই করে যাবেন। গাদ্দাফি প্রমাণ করলেন তিনি তার সঙ্কল্পে অটুট ছিলেন।
মুয়াম্মার গাদ্দাফি স্বৈরশাসক ছিলেন কিন্তু আল জাজিরা টেলিভিশনে তার নির্যাতন ও হত্যার যে ভিডিও চিত্র প্রচার করা হয়েছে। তা নৃশংস। এমন নৃশংসতা এবং এর প্রতি পশ্চিমা রাষ্ট্র শক্তিগুলো সমর্থন প্রশ্ন বিদ্ধনা হয়ে পারে। না নানা গোত্রে বিভক্ত তেল সমৃদ্ধ দেশ লিবিয়ার জাতীয় ঐক্য ও অর্থ নৈতিক স্থিতিলীলতা রায় মৃয়াম্মার গাদ্দাফির বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু তার স্বৈরাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা দেশটির সামাজিক অগ্রগতির জন্যে ছিল বিরাট প্রতি বন্ধকতা। গাদ্দাীফ মূলত একট কঠোর পুলিশ রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা নাগরিক ও মানবিক অধিকবাগুলো ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। গাদ্দাফির একচ্ছত্র শাসনে লিবিয়া পরিণত হয়েছিল একটি বদ্ধ স্থবির সমাজে। ফলে তারা বিরুদ্ধে অসন্তোষ জমে উঠেছিল। কিন্তু এ বছরের গোড়ার দিকে আরব বিশ্বে গণতান্ত্রিকা আন্দোলন শুরুর আগে পর্যন্ত লিবিয়ায় গাদ্দাফি বিরোধী বিদ্রোহীদের অসন্তোষর সহিংস বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। তিউনিসিয়া ও মিসরে গণ অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পর লিবিয়ায় গাদ্দাফির বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয় তা ছিল অধিকতর সংর্ঘবদ্ধ ও অস্ত্র সজ্জিত। আর্ন্তজাতিক সংবাদ বরাতের সাধ্যমে জানা যায় গাদ্দাফি বিরোধী বিদ্রোহীদের অস্ত্র গোলাবারুদ গোয়েন্দ তথ্য ও কৌশলগত পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছে পশ্চিমা রাষ্ট্র শক্তিগুলো। তারপর ন্যাটো বাহিনীর সরাসরি যুদ্ধ শুরু করার মধ্যে দিয়ে বল প্রয়োগের মাধ্যমে কথিত স্বৈরশাসকের অবসান ঘটিয়ে গনতন্ত্র রপ্তানি করার যে নীতি গ্রহন করেছে তার সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিণতি বিপুল সংখ্যাক মানুষের প্রাণহানি। জনগণের সম্পদের য়তি এবং জীবন জীকিবায় অচলা অবস্থা। এখন এসব য়তি কাটিয়ে উঠে দেশটিতে শৃ´খলা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ অর্জনের বিরাট কাজ রয়েছে সামনে। প্রথমত দেশটির স্থিতি রাজনীতি প্রয়োজন গাদ্দাফির মতা চুত্যর পর থেকে যে ট্রানজিলনাল ন্যাশানল কাউন্সিল লিবিয়ায় সরকার পরিচারনা করছে তারা অঙ্গীকার করেছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু লিবিয়া এমন একটি দেশ যেখানে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা কখনই ছিলনা। দেশটিতে কোনো রাজনৈতক দলও নেই। পশ্চিমা গণতন্ত্রের প্রচলিত ধারায় সেখানে শাসন ব্যবস্থা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের মতো একটি আইন সভা প্রতিষ্ঠা প্রাথমিক কাজ। তবে এ মূর্হুতের সবচেয়ে জরুরি কাজ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র যেসব গোষ্ঠি এখনো সক্রিয় রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রনে এনে শান্তি শৃ´খলা প্রতিষ্ঠা করা। সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ ও আঞ্চলিক বিভক্তি থেকে লিবিয়াকে রা করা। গাদ্দাফি কৃতিত্ব তিনি তার দেশকে কল্যান রাষ্ট্র বানাতে সন হন। পশ্চদ পদ লিবিয়াকে তিনি অন্যতম প্রভাবশালী আরব রাষ্ট্র বানাতে সম হন। গাদ্দাফির জীবনের ট্রাজেডি হলো মতায় আসার সময় যে লিবীয়রা তাকে হৃদয়ের উচ্ছাস দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিল তার পতনকে ও আরও উচ্ছাস দিয়ে গ্রহন করেছে। তার ৪২ বছরের শাসনামলে লিবিয়া ছিল সন্ত্রসীদের অভয়ারন্য।
গাদ্দাফির পতন বিশ্বের শান্তিকামী ও গণতান্তিক মানুষের কাছে কাম্য হলেও তাকে গ্রেফতারের পর বিচারে ছাড়া যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা কোনা ভাবেই কাম্য নয়।
লিবিয়ার জনজীবনে স্থারী শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক সেটাই আমাদের কাম্য।
পুলিশের অপরাধ রোধে কার্যকর পদপে চাই
মুহম্মদ আলতাফ হোসেন
নাগরিকদের সেবা এবং নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে চরম ােভ। জনসাধারণের জানমাল নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠেছে। এছাড়াও অভিযোগ পাওয়া যায়, সারাদেশের বিভিন্ন থানায় সেবার মান নিচে নেমে গেছে। থানায় জিডি বা মামলা করতে গেলে অভিযোগকারীকে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়।
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আর বিশেষ অঞ্চলে বাড়ি হওয়ায় থানার কিছু কর্মকর্তা খোদ ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও তোয়াক্কা করে না। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে তাদের বেপরোয়া আচরণ কারও কারও অপরাধপ্রবণতা এবং থানার সেবার মান নিয়ে খোদ ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যেও ােভ রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি অংশ চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ছিনতাইকারীদের সঙ্গে লেনদেন, থানায় আটক করে অর্থ আদায়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।
সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজদের সঙ্গে পুলিশের একটি অংশের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আজ সর্বজনবিদিত। ফুটপাতের হকার থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ীদেরও নিয়মিত চাঁদার একটি অংশ পুলিশকে দিতে হয়। অভিনব কায়দায় পুলিশ বাহিনীর চাঁদাবাজির সচিত্র  প্রতিবেদন বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে ছিনতাই থেকে শুরু করে বাড়িতে গিয়েও নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ দাবি করার ঘটনায় জড়িত পুলিশের একাংশ।
ঘুষ দুর্নীতিতে এত ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েছে পুলিশ বাহিনী, যা দেশের জন্য অশনি সংকেত। ঘুষ, চাঁদাবাজি নানা অপরাধের পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীর দুর্ব্যবহার, ছোটখাটো নানা ব্যাপারে পুলিশের কাছে সহযোগিতার পরিবর্তে নিগৃহীত হওয়া, পুলিশ সম্পর্কে ভীতি এবং নেতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের ভেতর। ফলে জনজীবন আজ হুমকির মুখে। পুলিশ সম্পর্কে জনমনে বিন্দুমাত্র আস্থা নেই।
জনসাধারণের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এখনই অভিযুক্ত পুলিশদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশ বাহিনীর বেপরোয়া হওয়ার প্রধান কারণ রাজনৈতিক কারণে অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা। তাছাড়া  আইনশৃ´খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরই উপো করে আসছেন। একই সঙ্গে র‌্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডগুলোও অপরাধীকে অপরাধ করতে উৎসাহিত করে আসছে।
অপরাধ করে পার পাওয়া যায়থ এ উপলব্ধি অপরাধীকে বেপরোয়া করে। আইনশৃ´খলা নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম নষ্ট হওয়ার আগেই আইনি পন্থায় এর মোকাবিলা করতে হবে। পুলিশের অপরাধপ্রবণতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিভাগীয় তদন্ত বা শাস্তির মধ্য দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। টাস্কফোর্স গঠন করে, দ্রুত তদন্ত করে, বিচারিক প্রক্রিয়ায় অপরাধপ্রবণ পুলিশের বিচার করতে হবে। ব্যাপকভাবে অপরাধ ছড়িয়ে পড়ার আগেই দল-মতের ঊর্ধে উঠে অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
২.
রাজধানীর থানাগুলোতে পুলিশের সেবার মান নিচে নেমে গেছে। জিডি-মামলা দায়ের থেকে শুরু করে বিভিন্ন নাগরিক সেবার জন্য সাধারণ মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। থানাগুলোর বেপরোয়া কিছু কর্মকর্তার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অপরাধ করেও এসব কর্মকর্তাই আছেন বহাল তবিয়তে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি অংশ এখন চাঁদাবাজি আর দলবাজিতে ব্যস্ত। একসময় ছাত্র রাজনীতি করা এসব পুলিশ অফিসার কাউকেই কেয়ার করেন না। অনেক সময় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের কথাও তারা শোনে না। রাজনৈতিক ছত্রছায়া আর বিশেষ অঞ্চলে বাড়ি হওয়ায় এসব পুলিশ কর্মকর্তা নানা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কিছু অতিউৎসাহী কর্মকর্তার বেপরোয়া আচরণে পুলিশসহ সরকারও পড়েছে ব্যাপক সমালোচনার মুখে। রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য অনেক সময় বেপরোয়া আচরণ করে। এজন্য পুরো পুলিশ বাহিনীর ওপর দোষ পড়ে। এছাড়া পুলিশের কিছু সিনিয়র কর্মকর্তা তাদের প্রশ্রয় দেয়ায় অপরাধ করেও বহাল তবিয়তে ডিএমপিতে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তবে কিছু পুলিশ কর্মকর্তার দায় পুরো পুলিশ বাহিনীর ওপর চাপানো ঠিক হবে না।
সম্প্রতি বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালে পুলিশের এক ইন্সপেক্টর এক পিকেটারকে বুট দিয়ে পিষ্ট করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে সাজা প্রদান করা হয়। সাজ্জাদ নামে ওই পুলিশ কর্মকর্তার অতিউৎসাহী আচরণের জন্য পুলিশ বাহিনী ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়ে। অবশ্য পরে তাকে বরখাস্ত করা হয় এবং এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এছাড়া ঘুষ-দুর্নীতিতে ব্যাপকহারে জড়িয়ে পড়েছে পুলিশ। গত ৬ অক্টোবর জুয়েল নামে এক আসামির কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে রুহুল আমিন, সফি উদ্দিন শেখ ও গিয়াস উদ্দিন নামে পরিদর্শক পদমর্যাদার ৩ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের কাছ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাদের হাতেনাতে আটক করে। পরে আটকৃতদের ডিবির হাতে সোপর্দ করা হয়। ডিবি প্রাথমিক তদন্ত শেষে আটকৃতদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। এ ব্যাপারে ডিএমপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু ডিএমপি ওই তিন পুলিশ কর্মকর্তার সাসপেন্ডের আদেশ প্রত্যাহার করে। ঘটনাটি নাকি ছিল ডিবি ও এনএসআইর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি। এ ব্যাপারে এনএসআইর ডিজি ভুল শিকার করে দুঃখ প্রকাশ করলে ওই ৩ ইন্সপেক্টরের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তবে এ ঘটনায় তদন্ত চলবে।
এদিকে থানা পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়ে অনেকেই পড়েন বিপদে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীদের অব্যাহত চাঁদার দাবিতে দিশেহারা এক মহিলা ভয়ে শাহআলী থানায় আসেন সাহায্যের জন। এ ঘটনায় শাহআলী থানায় একটি জিডি নেয়া হয়। কিছুণ পরেই মাকসুদা বেগম নামে ওই মহিলার সামনেই থানার এএসআই আবুল হোসেন সরকারি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সন্ত্রাসীর কাছে তার বিরুদ্ধে জিডির কথা বলে দেয়। পরে সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ সময় বিকাশ নামে ওই সন্ত্রাসী মোবাইল ফোনে ওই মহিলাকে হুমকি দিয়ে বলে, থানায় জিডি করেছেন, আপনার ছেলের স্কুলে আর যাওয়া হবে না। কাফনের কাপড় প্রস্তুত রাইখেন। নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করে আরও বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েন মাকসুদা। স্বামী বিদেশে থাকায় দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি রয়েছেন আতংকের মধ্যে। ঘটনাটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে নজরে আসলে মহিলার নিরাপত্তার খাতিরে বাসার সামনে পুলিশ পাহারা বসানো হয়।
অনেক সময় প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না খোদ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা। গত ৩১ আগস্ট সন্ধ্যায় তৈমুর নামে পুলিশের এক এসআই স্ত্রী তন¦ীকে নিয়ে কল্যাণপুর থেকে পল্লবীতে যাওয়ার পথে মিরপুর কাজীপাড়া এলাকায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে। এ সময় ছিনতাইকারীরা তাকে চাপাতি দিয়ে কোপায় এবং স্ত্রীকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে মোটরসাইকেল, স্বর্ণালঙ্কার ও মালামাল ছিনিয়ে নেয়। পুলিশ দম্পতি মিরপুর মডেল থানায় দেখলে সন্ত্রাসীদের চিনবে উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। গত ৬ সেপ্টেম্বর ছিনতাই করা মোটরসাইকেলসহ ৩ ছিনতাইকারীকে আটক করে। পরে তৈমুর থানায় গিয়ে এক ছিনতাইকারী ও তার মোটরসাইকেলটি শনাক্ত করেন। কিন্তু পুলিশ মোটরসাইকেলটি ফিরিয়ে না দিয়ে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে বলে তৈমুর অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে মিরপুর থানার ওসি জানান, উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেল তৈমুরের নয় এবং তৈমুরের কাছ থেকে যারা মোটরসাইকেল ছিনতাই করেছে তাদের গ্রেফতার করা যায়নি।
সম্প্রতি গুলশান থানায় গাড়িচোর সাজিয়ে এক মহিলা ও তার ভাগ্নেকে আটক করে মোটা অংকের টাকা দাবি করে পুলিশ। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারাও তদবির করে ওই মহিলাকে থানা থেকে ছাড়াতে পারেনি। পরে পুলিশের ওই  প্রভাবশালী এসআইকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে মহিলা ছাড়া পায় বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী মহিলা জানায়।
আমরা মনে করি পুলিশ একটি সুশৃ´খল বাহিনী। তারা চেইন অফ কমান্ড মেনে কাজ করেন। কোন বিশেষ এলাকা বা রাজনৈতিক পরিচয় দেখার সুযোগ তাদের নেই। পুলিশ তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যেকোন বৈধ আদেশ মানতে বাধ্য। আর পুলিশ কোন অপরাধ করলে এবং তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এটাই সকলের কাম্য।
(মুহম্মদ আলতাফ হোসেন এফএনএস’ প্রধান সম্পাদক)

ছিনতাইকারীরা কি দুর্দমনীয়?
এমএম নিজামউদ্দীন
ছিনতাই-চুরি-ডাকাতি এখন ঢাকা শহরে একেবারেই নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু ঢাকা শহরই-বা বলি কেন, সারাদেশেরই এক অবস্থা। বিশেষ করে দেশের শহরাঞ্চলে ছিনতাই ঘটছে বেশি, উদ্বেগজনকভাবে। পরিস্থিতিদৃষ্টে মনে হচ্ছে ছিনতাইকারীরা হয়তো দুর্দমনীয়। কিছুতেই যেহেতু তাদের দমন করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন সকালে সংবাদপত্রের পাতা খুলে ছিনতাইয়ের খবর পড়ে চোখে জ্বালা ধরে যায়। একরাশ উদ্বিগ্নতা অক্টোপাসের মতো আমাদের জাপটে ধরে কুঁরে কুঁরে খায়। ভাবতে অবাক লাগে, গৃহবধূ, প্রাতঃভ্রমণকারী, রিকশাওয়ালা কেউই ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রা পাচ্ছে না! প্রায়ই দেখা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর পরপরই ছিনতাইকারীরা তাদের গুলিবিদ্ধ বা ছুরিকাঘাত করে টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে। ছিনতাইকারীদের রয়েছে অসংখ্য ইনফরমার। এছাড়া গাড়ির চালকদের সঙ্গেও ছিনতাইকারীদের যোগাযোগ থাকে বলে পুলিশের ধারণা। এ ছাড়াও প্রতিদিন মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টির হাতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। ব্যবসায়ীদের মালামালও ছিনতাই হচ্ছে এখন দেদার। কিছুদিন আগে এক বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এহেন অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠবে। কিন্তু তাদের বরাবলিতে কোনো ফলোদয় হয়নি। দেশে ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রতিদিনই ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ধরা পড়ার পরও কোনো কোনো েেত্র রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যাওয়ায় পরবর্তী সময় এহেন দুষ্কর্ম করতে তারা দ্বিধা করে না। এছাড়া দেশে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, শেয়ারবাজার পতন, মাদকাসক্তি ইত্যাদি কারণগুলো ছিনতাই বৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে। এ অপরাধপ্রবণতা আসলে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গেই সম্পৃক্ত। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে আমার মনে হয়, ছিনতাইকারীরা সরকারের নিয়োজিত বাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি চৌকস। আমার এমন মনে হওয়াকে আইন-শৃ´খলা রাকারী বাহিনী হয়তো অপরাধ বলে ভাবতে পারেন, তবে এটাই এ মুহূর্তে নির্জলা সত্য। পুলিশের ওপর আস্থা রেখে আমাদের মনের ভয় যাচ্ছে না। মনে হয়, রাজধানীর যেকোনো স্থানে যেকোনো সময় যে কেউ ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়তে পারে। অনিশ্চয়তা ও ভীতির মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হয় রাজধানীবাসীর। তবে এ অবস্থার অবসানে সম্প্রতি রাজধানীতে ডিবি পুলিশের ২৫টি বিশেষ টিম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ডিবি পুলিশের বিশেষ টিম নিয়োগকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু তারা যেন ঠুঁটো জগন্নাথ না হয়। কারণ, শুধু টিম গঠন করলেই হবে না, টিমের সদস্যদের কাজেকর্মে প্রমাণ করতে হবে যে, তাদের পে ছিনতাইকারী চক্রের দৌরাÍ্য বন্ধ করা সম্ভব। প্রতিদিন যেন আমাদের দেখতে না হয় যে, মিল্টন নামের এক তরতাজা তরুণকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। খুন করেছে ছিনতাইকারীরা। উদ্দেশ্য, মিল্টনের মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়া। খোদ ঢাকা শহরে রমনা থানার অদূরে অফিসার্স কাবের সামনে এমন ঘটনা ঘটেছে। ডিবির টিমের সদস্যরা নিশ্চয়ই খেয়াল রাখবেন যে, ঈদের মতো পালা-পার্বণের আগে ছিনতাইয়ের ঘটনা আরও বেড়ে যায়। সে সময় অতিরিক্ত আইন-শৃ´খলা বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়। কিন্তু বাস্তবে আমরা এর কোনো সুফল দেখি না। এবারও ঈদের আগে রাজধানীতে ডিবির ২৫ বিশেষ টিম অভিযানে নামছে। গত মঙ্গলবার একটি দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে ডিবি টিমের খবর জানা যায়। ২৫টি টিমের মধ্যে পাঁচটি থাকছে মহিলা টিম। মার্কেট, গরুর হাট, পরিবহন টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকায় টিমগুলো দায়িত্ব পালন করবে। থাকবে মানি ‘স্কোয়াড’। তারা ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের ব্যাপারে গ্রাহকদের নিরাপত্তা দেবে। তাই এ টিমের সদস্যরা আসন্ন ঈদ সামনে রেখে তাদের যোগ্যতা প্রমাণের সর্বাÍক চেষ্টা চালাবেন এটাই এখন কাম্য। তারা যদি ফেল করে তো পুলিশের প্রতি মানুষের অবশিষ্ট আস্থাও উবে যাবে। আমাদের কথা, ছিনতাইকারী, তাদের ইনফরমার এবং যারাই জড়িত থাকুক না কেন সকলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ছিনতাইকারীদের পাকড়াও করে দ্রুত বিচার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। নগরবাসী যদি স্বস্তি ও শান্তিতে চলাফেরা করতে না পারে, তাহলে আমরা কীভাবে দাবি করব যে আমরা এক সভ্য দেশে বাস করছি।
আমরা কোনো কিছুর নেতিবাচক দিক নিয়ে কথা বলি আগে, সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হওয়ার জন্য। তারা যেন আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে উদ্যমী হয়- এটাই উদ্দেশ্য। কিন্তু আমাদের আÍবিশ্বাস আছে, ডিবি টিমের সদস্যরা নিজেদের সামর্থ্য উজাড় করে ছিনতাইকারী চক্রকে রুখে দিয়ে পুলিশ বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম ফিরিয়ে আনতে সম হবে। আমাদেরওু আর লিখতে হবে না- ‘ছিনতাইকারীরা কি দুর্দমনীয়’?
নির্বাচন কমিশনের ওয়াদা ঠিক রাখা উচিত
মো: শাহিন হোসেন
গত ৩০ অক্টোবর শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। এটি স্থানীয় সরকার সংস্থার একটি নির্বাচন, তার পরও এটা নিয়ে দেশব্যাপী বাড়তি আগ্রহ ছিল এ জন্য যে, নবগঠিত নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশনের কে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হবেন। তা ছাড়া রাজধানীর কাছেই হওয়াতে আরও বেশি আগ্রহ যুক্ত হয়েছিল। অন্যদিকে দেশের বড় দুটি দলের স্থানীয় নেতারা এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দি¡তা করছেন। এখানে আওয়ামী লীগের দুজন প্রার্থী: একজন শামীম ওসমান, যাঁকে সমর্থন দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। আরেকজন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, যিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সমর্থন পেয়েছেন। আর আছেন বিএনপির সমর্থিত একক প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের দিন ৩০ অক্টোবর সকালে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কিন্তু তৈমুর আলম খন্দকারের সেই ঘোষণা কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। এটিকে জনগণ ধরে নিয়েছে- নিশ্চিত পরাজয় জেনে দলীয় কৌশলগত কারণে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনও সেরকমই বলেছে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পর এটিই প্রথম নির্বাচন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্যও এটি বড় এবং সম্ভবত শেষ নির্বাচন। তাই নির্বাচন কমিশন, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার জন্যই এটা ছিল একটা বড় পরীা। নির্বাচন কমিশনকে একটি সুষ্ঠু, নিরপে ও অবাধ নির্বাচন করতে হবে। কেননা নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব মূলত তাদেরই। সাধারণ ভোটাররাও তা-ই চান। তা ছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন কারণে এ নির্বাচন নিয়ে বিপুল আবেগ-উদ্দীপনাও জেগেছিল। এই অবস্থায় সবাই চেয়েছে নির্বাচনে কোনো রকম বিঘœ না ঘটুক। সে জন্যই আইনশৃ´খলা পরিস্থিতির ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এসব কারণেই একাধিক প্রার্থী, ভোটার ও নির্বাচন কমিশনসহ অনেকেই  নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়েছিলেন। শুক্রবার পর্যন্ত ধারণা ছিল যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। সবকিছু মোটামুটি ঠিকই ছিল। এর মধ্যে অনাকাক্সিত ও অপ্রত্যাশিতভাবে সেনা মোতায়েন হয়নি। এই অঘটনে নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা হতাশ হয়েছিলেন আর দেশবাসীর অনেকেই হয়েছিলেন শঙ্কিত। এ থেকেই অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন নির্বাচন কতটা নিরপে হবে তা নিয়ে। এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, সরকার যেহেতু তাঁদের চাহিদামতো সেনা মোতায়েন করেনি, সেহেতু কোনো গোলযোগ হলে তার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়। যাই হোক শেষ পর্যন্ত সকল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সেনাবাহিনী ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে। টিভির সরাসরি প্রচারিত অনুষ্ঠানে দেখা গেছে, স্থানীয় বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিচ্ছেন। অনেক ভোটার তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে তারা ভোট দিচ্ছেন। আমরা নির্বাচন কমিশনকে এজন্য ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু কথা হলো সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে। সাধারণত উত্তেজনা ও অশান্ত পরিস্থিতিতে কখনো কখনো সেনাবাহিনী একটা প্রতিরোধক শক্তি হিসেবে কাজ করে। এর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও প্রথমে সেনাবাহিনী দেওয়া হয়নি। পরে তাদের মোতায়েন করা হয় এবং তার ফল ভালোই হয়। এই নির্বাচনেও সরকার সুবিবেচনার পরিচয় দিতে পারত। নির্বাচন কমিশন যখন ঘোষণা দিয়েছিলেন সেনা মোতায়েনের তখন তাতে আপত্তি না-ও করতে পারত সরকার। তবে ভবিষ্যতের জন্য আমাদের মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনই কিন্তু শেষ নির্বাচন নয়, ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচন আসছে। তার জন্য ভোট-প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন করার সরকারি সামর্থ্য ও সদিচ্ছার ওপর জনগণের আস্থা নির্ভর করবে। নির্বাচন কমিশন ও সরকার আগেভাগে সিদ্ধান্ত জানাবেন যে, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে কিনা। জনগণকে দেয়া কথা রাখা উচিত সরকারের। আগামী নির্বাচন যার অধীনেই হোক, সে রকম একটি সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, সেই আস্থার প্রমাণ তো সরকারকেই দিতে হবে। না হলে সরকারের কোনো যুক্তিই ধোপে টিকবে না। ভবিষ্যতে প্রার্থীদেরও মনে রাখতে হবেÑ মানুষ এখন অনেক সচেতন, শুধু দলীয় সমর্থনের ওপর নির্ভর করে নির্বাচনে জয়ী হওয়া যাবে না। মানুষ এখন নিজস্ব বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করছে, নিজস্ব পছন্দের প্রার্থী বেছে নেওয়ার আকাক্সা প্রবল হচ্ছে। তাদের সেই আকাক্সা বাস্তবায়নের সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে।