Year-19 # Issue-3 # 4 March 2012

বিপিএলের প্রথম শিরোপা ঢাকার
খাদেমুল ইসলাম
হাজার সমর্থকের মুহুর্মুহু চিৎকার আর করতালির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ঘরোয়া লিগের সবচেয়ে বড় আসর বিপিএলের প্রথম শিরোপা ঘরে তুলল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। যতদিন বাংলাদেশের ক্রিকেট থাকবে, যতদিন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ থাকবে ততদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের নামও। বিশ্বের নামী-দামি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণে এই আসর বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। এ আসরে একদিকে যেমন ছিল ক্রিস গেইলের মতো খেলোয়াড়, অন্যদিকে আফ্রিদি ও আজমলের শেষ বেলার আগমনে আসরটিকে আরও মনমুগ্ধ করেছে। শিবনারায়ন চন্দরপল, ব্রাড হজ, ডোয়াইন স্মিথ, আন্দ্রে রাসেল, আজহার মাহমুদ ও ইমরান নাজিররাও কম দেখাননি। এত নামী-দামি খেলোয়াড়ের মধ্যেও দেশীয় অনেকেই পেয়েছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এমতাবস্থায় দীর্ঘ ২০ দিনব্যাপী আয়োজনে নজর ছিল সকলেরই ফাইনালের দিকে। দেশের ছয় বিভাগের মধ্য থেকে কে তুলে নিতে পারে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি, সেই প্রত্যাশায় ছিল গোটা ক্রিকেটামোদীগণ। দু’টি সেমিফাইনাল থেকে ফাইনালে উঠে আসে বরিশাল বার্নার্স ও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। আর এ দু’দলের লড়াইয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে ঢাকা প্রমাণ করল সে শুধু বাংলাদেশের রাজধানীই নয় ক্রীড়াঙ্গনের আধিপত্যও তাদের। আগের ম্যাচে আফ্রিদি ও আজমল আসায় ঢাকার জন্য একটি ভাল সুযোগ তৈরি হয়। আর এ সুযোগের পূর্ণ ফল ঘরে তুলে নিল মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে থাকা ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। নিজের ওভারেই ধিমান ঘোষের ক্যাচ মিস কিছুটা অশুভ ইঙ্গিত দিলেও ঐ বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসে তার দল। চার ওভার খেলার পর বরিশালের রানরেট যখন ১০-এর ওপর তখন চূড়ান্ত সংগ্রহ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কাই ছিল ঢাকার। কিন্তু সেই শঙ্কা দানা বাঁধতে দেননি শহীদ আফ্রিদি। নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই বরিশাল দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান আহমেদ শেহজাদকে ফিরিয়ে দেন। ষষ্ঠ ওভারেই আসেন সাঈদ আজমল। তিনিও দ্বিতীয় বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন ফিল মাস্টার্ডকে। ষষ্ঠ ওভারে আবারও বোলিংয়ে আসেন শহীদ আফ্রিদি। ঐ ওভারেরও ঠিক দ্বিতীয় বলে ফিরিয়ে দেন মিথুন আলীকে। মাত্র ১ রান সংগ্রহ করে ইমরান নাজিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে মিথুন যখন মাঠ ছাড়েন তখন বরিশালের সংগ্রহ ৪৯ রান। ব্রাড হজকে মাঠে রেখে একে একে মাঠ ছাড়েন মুমিনুল হক (১১), ফরহাদ হোসাইন (১১), ইয়াসির আরাফাত (৫) ও কবির আলী (৬)। সর্বোচ্চ ৭০ রানে অপরাজিত থাকা ব্রাড হজের ক্যাচও একবার মিস করেন আফ্রিদি। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে বরিশাল বার্নার্সের দলীয় স্কোর দাঁড়ায় ১৪০/৭। ঢাকার পক্ষে আফ্রিদি ৩টি ও রানা নাভেদ ২টি উইকেট লাভ করেন। বরিশালের দেয়া ১৪১ রানের জয়ের লক্ষ্য তাড়া করতে মোটেই বেগ পেতে হয়নি ঢাকার। মাত্র ১৫.৪ ওভারেই পৌঁছে যায় জয়ের দ্বারপ্রান্তে ২ উইকেটের বিনিময়ে। বোলিংয়ে পাকিস্তানিদের প্রাধান্য থাকলেও ব্যাটিংয়ে তাতে ভাগ বসিয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ ব্যাটসম্যান আনামুল হক বিজয়। তিনি ৩৮ বল থেকে ৪৯ রান অপরাজিত থাকেন। অপরদিকে ইমরান নাজির ৪৩ বল থেকে ৭৫ রান করে আউট হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ৪ ওভার ২ বল হাতে থাকতেই জয় নিশ্চিত হয় গ্ল্যাডিয়েটর্সের।

চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ চার হাজার কোটি টাকা
সাইদ আরমান
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপী ঋণ চার হাজার ৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের শীর্ষ ৮০ প্রতিষ্ঠানের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পাওনা তিন হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপী ঋণের তিন-চতুর্থাংশ রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে। ব্যাংকেরগুলোর পক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দেওয়া ঋণের হাল নাগাদ তথ্য থেকে এ খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছে সোনালী ব্যাংকের পাওনা রয়েছে এক হাজার ১৫৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অবশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছু কমেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৪৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যা ফেব্রুয়ারিতে এসে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৫ কোটি টাকায়। এ সময়ের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমেছে এক হাজার ১১ কোটি তিন লাখ টাকা।
জানা গেছে, প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের এক-চতুর্থাংশ রয়েছে মুষ্টিমেয় কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে। ১৫ থেকে ২০টি প্রতিষ্ঠান বড় অংকের খেলাপি ঋণের জন্য দায়ী। আর এজন্য ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বিষয়টি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী এসএম আমিনুর রহমানকে কয়েকবার টেলিফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠান
সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ প্রতিষ্ঠানের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পাওনা এক হাজার ১৫৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেঘনা পেপার মিল, জিএম টেক্সমিল লিমিটেড, ফেয়ার এক্সপো ওয়েভিং মিলস লিমিটেড, এপলিক ফ্যাশন, ওয়ান স্পিনিং মিলস, ক্লাসিক সাপ্লাইয়ার্স, মাক্স সুয়েটার কম্পোজিট লিমিটেডট, রোকেয়া টেক্সটাইলস মিলস, কমো এপারেলেস, ব্রাইট টেক্সটাইল লিমিটেড, এম্পেলিয়ার ডাইং মিলস লিমিটেড, উডল্যান্ড এপারেল্স লিমিটেড, সানবিম টেক্সটাইল মিলস, সুুমিস সুয়েটার, বাংলাদেশ অটো রিকশা, নিউ স্টাইল গার্মেন্টেস, আরকে খান ও ডেন্ডি ডাইং, কে. পি. এফ টেক্সটাইল লিমিটেড।
জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপি:
শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৭৭২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- সোহরাব গ্রুপ, লেক্সকো লিমিটেড, নির্মাণ ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকটিং কোম্পানি, রুপালী ট্যানারি, ফাহিম মার্বেল করপোরেশন লিমিটেড, ওয়ান ডেনিম লিমিটেড, বেঙ্গল লেদার ইন্ড্রাস্ট্রিস লিমিটেড, ট্রপিকেল নিটটেক্স লিমিটেড, শাহজালাল লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড, এসএস স্টীল, আলহাজ্ব অয়েল মিলস লিমিটেড, মন্নু ফেব্রিকস লিমিটেড, ইস্ট কুইন শিপিং লিমিটেড, খোরাশানি অয়েল রিফাইনারি প্রাইভেট লিমিটেড, ডায়নামিক টেক্সটাইল ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড, এশিয়া ট্যানারি, গ্রীন এরো ট্যানারি, বাংলাদেশ অটো রিকশা, সিকেএস ফেডারেশন, বাংলাদেশ মাইজ প্রোডাক্টস  লিমিটেড ও আশরাফ উদ্দিন আহমেদ অ্যান্ড আশরাফ অয়েল অ্যান্ড ভেজিটেবল।
রূপালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠান
শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছে রূপালী ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৩৫৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- মিজান অ্যান্ড সুমন ট্যানারিজ প্রাইভেট, পুবালী ট্যানারিজ, জেসো এলোকেটিং প্রাইভেট লিমিটেড, ডব্লিই রহমান জুট মিলস লিমিটেড, এনি এন্টারপ্রাইজ, এফ. কে লেটার কমপ্লেক্স লিমিটেড, মেট্রোপলিটন স্টিল মিলস লিমিটেড, প্যারাগন লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড, এমবি ট্যানারি লিমিটেড, আশরাফ জুটস মিলস লিমিটেড, হোসাইস ব্রাদার্স টেনারি, সেতু ইন্টারন্যাশনাল, এমবিয়া মেমোরিয়াল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেড, মেইজদি টেনারী লিমিটেড, সিরাজগঞ্জ স্পিনিং অ্যান্ড কটন মিলস লিমিটেড, গাউসিয়া কটন অ্যান্ড স্পিনিং মিলস লিমিটেড, মেটালেক্স করপোরেশন লিমিটেড, ডেনেসটি টেক্সটাইল লিমিটেড, বিডি প্লাস্টিক প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড ও হোমল্যান্ড ফুটওয়্যার লিমিটেড।
অগ্রনী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠান:
অগ্রনী ব্যাংক শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাবে ৯৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- রহমান এহসান কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেড, জাবেদ স্টিল মিলস লিমিটেড, ফনিক্স লেদার কমপ্লেক্স প্রাইভেট লিমিটেড, শাওন ফেব্রিকস, এমএস আর্চ লিমিটেড, ব্যানগার্ড স্টীল লিমিটেড, সাত্তার টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, ফেলা মেঙ্গু এগ্রো ট্রাস্ট লিমিটেড, ঢাকা ম্যাচ ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড, ময়নামতি টেক্সটাইল লিমিটেড, ইস্ট এশিয়া টেনারীজ প্রাইভেট লিমিটেড, দ্য আর্থ ইন্টারন্যাশনাল টেনারিজ লিমিটেড, বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড, ব্লু সিল্ক টেক্সটাইল লিমিটেড, পলি ফেব্রিক্স লিমিটেড, এস কে এম জুট মিলস লিমিটেড, ইউনি এশিয়া টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, গচিহাটা একুয়াকালচার ফার্মস, ঢাকা জুট মিলস লিমিটেড এবং আলহাজ টেক্সটাইল মিলস।
সাংবাদিকরা খারাপ সময় অতিবাহিত করছেন: শওকত মাহমুদ
শওকত মাহমুদের জন্ম কুমিল্লায়, ১৯৫৯ সালের ২৯ জুলাই। পড়াশোনা ঢাকায়। অনার্স করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সাংবাদিকতায়। প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েও মাস্টার্স করেননি। ১৯৭৮ সালে দৈনিক সংবাদের মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু। পরবর্তিতে মানবজমিনে নির্বাহী সম্পাদক ও দিনকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, বৈশাখী টেলিভিশনে এডিটর নিউজ’র, চ্যানেল ওয়ান’র ডিরেক্টর নিউজের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে সাপ্তাহিক ইকোনমিক টাইমস’র সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশ মিডিয়া কমিশনের মহাসচিব। শওকত মাহমুদ জাতীয় প্রেসক্লাবের এই অবিসংবাদিত নেতা। চারবার সাধারণ সম্পাদক, দু’বার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বার্তা২৪ ডটনেট’র সাথে খোলামেলা কথাবার্তা বলেছেন শওকত মাহমুদ।  সাপ্তাহিক খোঁজখবররের পাঠকদের জন্য এই সাক্ষাৎকারটি হুবহু প্রকাশ করা হল।
প্রশ্ন : গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মতামত কি?
শওকত মাহমুদ: গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি সার্বিকভাবে অস্থির।  কারণ বর্তমান সরকার চায়না কোনো মিডিয়া সরকারের সমালোচনা করুক। বর্তমান সময়ে গণমাধ্যম নানা চাপে সরকারের দুর্নীতির কথা প্রকাশ করতেও ভয় পাচ্ছে। সরকারের পদস্থ ব্যক্তিরা নানাভাবে মিডিয়ার সমালোচনা করে মিডিয়াকে সেলফ সেন্সরশিপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এখন সাংবাদিকদের কোনো স্বাধীনতা বা নিরাপত্তা নেই। সাংবাদিকদের রাস্তায় মারা হচ্ছে। মিছিলে পুলিশ পেটাচ্ছে। ঘরে গিয়ে খুন করছে। সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীন জীবনযাপন করছে। সরকার দলীয় বিবেচনায় নতুন মিডিয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। সাংবাদিক সমাজ একটি খারাপ সময় অতিবাহিত করছে।
প্রশ্ন : সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকান্ডের ব্যপারে সার্বিক পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে বলে আপনার মনে হয়।
শওকত মাহমুদ: এই নির্মম ঘটনায় পুরো সাংবাদিক সমাজ শোকাহত। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সাংবাদিক সাগর-রুনি দম্পতি খুনিদের গ্রেফতার না করায় সাংবাদিকদের ক্ষোভের মাত্রা বেড়েছে । এই ঘটনায় প্রমাণ হয় সাংবাদিকরা ঘরে থাকলে খুন হয় আর অ্যাসাইনমেন্টে থাকলে নির্যাতিত হয়। এই ঘটনায় সরকার তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। সাংবাদিকদের হত্যার কোনো বিচার হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের ঘোষণা অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের কথা বলেছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন । ব্যর্থতার দায়ে তাই তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল। তবে সাগর-রুনির ব্যপারে সরকারের লোকরা জড়িত কিনা এটা বলার সময় এখনো আসেনি। কিন্তু সরকারের কাজ পুরোপুরি স্বচ্ছ নয়।
প্রশ্ন : সাংবাদিকদের বিভক্তি কি সাংবাদিক সমাজকে দুর্বল করেছে?
শওকত মাহমুদ: সাংবাদিকদের বিভেদ অবশ্যই সাংবাদিক সমাজকে দুর্বল করেছে। কিন্তু বিভেদ সত্ত্বেও সাংবাদিক সমাজ বিভিন্ন সমস্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার। ইউনিয়ন বিভক্ত না থাকলে আরও ভালো হতো। এখনকার ইউনয়নের বিভক্তি অনেকটা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে । আমরা নিজেদের মতামতে যেসব পত্রিকা চলে সেসবেও সব সমস্যার সমাধান করতে পারিনি। সার্বিকভাবে সাংবাদিক সমাজের সমস্যার ভালো কোনো সমাধান হচ্ছে না।
প্রশ্ন :  গণমাধ্যমের বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আপনার পরামর্শ কি?
শওকত মাহমুদ: বিভিন্ন সময়ে যেসব সাংবাদিক হত্যা বা নির্যাতন করা হযেছে সেসবের ব্যাপারে সাংবাদিকদের নিজস্ব তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। আমি প্রস্তাব করবো সব মিডিয়ার সেরা ক্রাইম রিপোর্টারদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে তদন্ত করা উচিত। এতে বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা যেই দায়ী হোক তা প্রকাশ করতে হবে। সাগর-রুনির ব্যপারে এই পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। সাংবাদিক সমাজকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে দলীয়ভাবে একমত না হলেও সাংবাদিকদের স্বার্থে নানা ইস্যুতে একমত হতে পারে। সরকার সাংবাদিক নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয় না, বরং তাদের পুরস্কৃত করে। যেমন আওয়ামী লীগ নেতা কামাল মজুমদার কর্তৃক সাংবাদিক নির্যাতনের প্রমাণ রয়েছে। সাংবাদিক নির্যাতনের পর সরকার তাকে একটি মিডিয়ার লাইসেন্স দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। যখন নির্যাতনকারীরা এভাবে পুরস্কৃত হয় তখন কিভাবে সাংবাদিকরা নিরাপদে থাকবে? বর্তমান সরকার অনেকগুলো মিডিয়ার লাইসেন্স দিয়ে মিডিয়ার মালিক হওয়াকে ফ্যাশনে পরিণত করেছে। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
প্রশ্ন : দেশের অনলাইন মিডিয়ার উন্নতি হচ্ছে ।তিনটি প্রফেশনাল অনলাইন পত্রিকা কাজ করছে।আগামীতে অনলাইন মিডিয়া কোন অবস্থানে থাকবে বলে আপনার মনে হয় ?
শওকত মাহমুদ: অনলাইন মিডয়া তরুণদের মিডিয়া। এর অগ্রগতি ইতিবাচক। টেলিভিশন বা পত্রিকাতে লবিং করে বা আত্মীয়-স্বজন সূত্রে অনেকেই কাজ করেন। কিন্তু অনলাইনে এটা সম্ভব নয়। কারণ এখানে প্রতিদিন প্রতি মূহুর্তেই যোগ্যতার পরিচয় দিতে হয়। দ্রুতগতির অনলাইনে আধুনিক মনস্ক সাংবাদিক দরকার হয়। আগামীতে অনলাইন আরও এগিয়ে যাবে । তবে সমাজকে এর সাথে অভ্যস্থ হতে আরও সময় লাগবে । কারণ সমাজের সব অংশ এতো অগ্রসর নয়। পুরনো ধারনা, নতুন মার্কেট-এসব চালেঞ্জ মেকাবেলা করতে হবে। পুরনো ধারার আমলা, ব্যবসায়ীদের এই নতুন মিডিয়াকে বুঝতে সময় লাগবে। তবে এর অগ্রগতি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।

রোববার ডিএসই’র পরিচালক পদে নির্বাচন
এসএমএ কালাম
  রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ’র (ডিএসই) ২০১২ সালের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ডিএসই’র হল রুমে এ ভোটগ্রহণ চলবে। ডিএসই’র নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২২৯ জন। এবারের নির্বাচনে ৪ জন পরিচালক পদের বিপরীতে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
৬ জন প্রার্থী হলেন, ডিএসই’র সাবেক সভাপতি ও রয়েল গ্রিণ সিকিউরিটিজ’র চেয়ারম্যান আব্দুল হক, বর্তমান সহ-সভাপতি ও জাহান সিকিউরিটিজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান, শহীদুল্লাহ সিকিউরিটিজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ আনোয়ার হোসেন, র‌্যাপিড সিকিউরিটিজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হানিফ ভূঁইয়া, গ্লোবাল সিকিউরিটিজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব আবুল মোক্তার, বিএলআই সিকিউরিটিজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি ডিএসই’র বোর্ড সভায় ২০১২ সালের নির্বাচন পরিচালনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন’র সদস্য অধ্যাপক আবুল হাসেমকে চেয়ারম্যান করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন’র সদস্য হিসেবে রয়েছেন এম কামালউদ্দীন এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পিএসসি। নির্বাচন বিষয়ে আপিল নিষ্পত্তির জন্য ডিএসই’র সদস্য এম আকবর আলীকে আপিল বোর্ড’র প্রধান করে তিন সদস্যের বোর্ড করা হয়। বোর্ড’র বাকি ২ সদস্য হলেন, ডিএসই’র পরিচালক কেএম রফিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সুধীর কুমার। নির্বাচন কমিশন জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ২০১২ সালের ডিএসই’র চার পরিচালক পদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রথম অবস্থায় ১০ জন প্রার্থী আগ্রহ প্রকাশ করেন। নিয়ম অনুযায়ী পরে ১০ জন প্রার্থীর আগ্রহপত্র গ্রহণ করে গত ২ ফেব্রুয়ারি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) পাঠানো হয়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সকল প্রার্থীকে অনাপত্তিপত্র দেয় এসইসি। এসইসি’র অনাপত্তিপত্র পাওয়া ১০ প্রার্থীর মধ্যে ৮ জন প্রার্থী ১৯ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেন। কাজী ফিরোজ রশীদ সিকিউরিটিজ’র চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাজেদুল ইসলাম এসইসি’র অনাপত্তিপত্র পাওয়ার পরেও মনোনয়নপত্র জমা দেননি। পরবর্তীতে গত ১ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ৮ প্রার্থীর মধ্যে বুলবুল সিকিউরিটিজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহুদুল হক বুলবুল ও মো. ফখরুল ইসলাম সিকিউরিটিজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। আগামী ১৫ মার্চ ডিএসই’র বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিনই নতুন পুরাতন নির্বাচিত ১২ পরিচালকের মধ্যে থেকে এক বছরের জন্য সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদের মোট সদস্য সংখ্যা ২৪। এদের মধ্যে ১২ জন পরিচালক ডিএসই’র সদস্যদের ভোটে সরাসরি ৩ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ১২ জন পরিচালক বিভিন্ন পর্যায় থেকে মনোনীত হন। নির্বাচিত ১২ পরিচালকদের মধ্যে প্রতি বছর ৪ জন পরিচালক অবসর গ্রহণ করেন। ফলে ওই চারটি শূন্য পরিচালক পদে পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ডিএসই’র নির্বাচিত ১২ জন পরিচালকের ভোটে এক বছরের জন্য সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।  
কামাল হত্যার প্রকৃত খুনীরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের পুলিশ বিভাগ আগের চেয়ে অনেক দক্ষ ও শক্তিশালী হয়েছে। এ কথা যেমন সঠিক তেমনি কিছু পুলিশ সদস্যের দুর্নীতির কারনে এখনও অনেক স্থানে পুলিশের ব্যর্থতাই প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। এমনই এক ঘটনার খবর পাওয়া গিয়েছে রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জে। দুবছরের বেশী হয়ে গেলেও কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ আজও কামাল হত্যার আসামীদের ধরতে পারেনি।  গত ২৪ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে ঢাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাড্যা ইউনিয়নের খেজুরবাগ এলাকার বালুর মাঠে সন্ত্রাসীরা ইট, বালু ও জমির ব্যবসায়ী কামালকে কুপিয়ে হত্যা করে। কিন্তু হত্যাকান্ডের সহিত জড়িত প্রকৃত খুনীরা আজও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গিয়েছে। আসামীরা বাদি পক্ষকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করছে বলে জানা গিয়েছে। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে যে, আগামী ২৯ মার্চ এই মামলার রায় ঘোষনার তারিখ ঘোষিত হওয়ার পর থেকে সন্ত্রাসী আসামীরা আরো বেশী ক্ষেপে গিয়েছে। মামলার সন্দেহভাজন কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও আসল খুনীদের পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি বলে বিভিন্ন বিস্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে। এলাকার জাসদ নেতা খোকন ভূইয়াসহ আরো ৪/৫ জন মিলে পূর্ব শত্র“তার জের ধরে এবং চাঁদার টাকার ভাগ না দেয়ায় এই খুন করেছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গিয়েছে। 

নদীমাতৃক বাংলাদশে নদ-নদীর অপমৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক
নকিট অতীতরে নদী মাতৃক বাংলাদশেে নদÑনদীর অপমৃত্যু ক্রমশ যোড়াল হচ্ছ।ে তড়ান্বতি হচ্ছে ভয়াবহ পরবিশে বর্পিযয়। বলিুপ্তরি আশংকা সৃষ্টি হচ্ছে সবচয়েে সুলভ নৌযোগাযোগ ব্যাবস্থা সহ কৃষÑিসচে ও মৎস সম্পদও । বন্ধু প্রতমি(?) প্রতবিশেী দশেরে ববিকেহীন বনিাশী তৎপড়তায় বাংলাদশেরে একরে পর এক নদÑনদীর বুক ক্রমশ মরুভূমীতে পরনিত হচ্ছ।ে কোনমতে অস্তত্বিরে জানান দয়ো নদÑনদীগুলোও ইতোমধ্যে তনিÑচতর্’থাংশ ভড়াট হয়ে র্সবকালরে র্সবন¤িœ নাব্যতায় পৌছছে।ে গত ৫০বছরে দশেরে ৫শতাধীক ছোটÑবড় নদÑনদী বলিীন হয়ে গছেে বলে সম্প্রতকি এক গবষেনায় বলা হয়ছে।ে এমনকি র্বতমানে যে ২৩০টি নদ-নদী তার অস্তত্বি ধরে রখেছে,ে তারও অন্তত পৌনে ২শ অদুর ভয়াবহ নাব্যতা সংকটরে কবলে বলে মনে করছনে নদী বশিষেজ্ঞগন। বআিইডবউিøটএি’র নৌপথ সংরক্ষন ও পরচিালন বভিাগরে পরচিালক মোঃ এমদাদুল হক-এর মতে দশেরে ১১৭টি নদ-নদীর ৪হাজার ৬৬০কলিোমটিার নৌ পথ ইতোমধ্যে হয় বন্ধ হয়ে গছেে বা নাব্যতা হারয়িে তার মূল চরত্রি বলিুপ্ত হয়ছে।ে দশেরে র্আথÑসামাজকি বর্পিযয় রোধ ও উন্নয়নে তনিি মৃত ও মৃয়মান নদÑনদী সমুহরে উন্নœয়ন ও সংরক্ষনরে ওপর গুরুত্বারোপ করছেনে। এলক্ষে ব্যাপক ড্রজেংি সহ শুকনো মওশুমে কাবখিা ও সচ্ছোশ্রমে মৃত নদÑনদীগুলোকে খননরে ওপর গুরুত্বারোপ করনে র্দীঘ দনিরে এ নদী র্পযবক্ষেক। তবে এলক্ষে তনিি পরকিল্পতি নদী খননরে ওপরও গুরুত্বারোপ করে গ্রামরে বকোর জনগোষ্ঠীকে পরকিল্পতিভাবে কাজে লাগানোর কথাও জানান। তার মতে নদী গবষেনা ইনস্টটিটিউিট, বুয়টে ও বঅিইডব্লউিটএি যৌথভাবে কাজ করলে নদ-নদীর উন্নয়ন সহজতর হব।ে ইমদাদুল হক-এর মতে পদ্মা, মঘেনা, সুরমা ও কুশয়িারার মত নদী খুব কম খরচে বাঁশ ও চাটাই দয়িে বান্ডলংি পদ্ধততিওে নাব্যতা বৃদ্ধি করা যতে পার।ে
পকিএেসএফ-এর চয়োরম্যান প্রফসের ড. কাজী খলীকুজ্জামান-এর মত,েআমরা সবাই নজিরে র্স্বাথরে বাইরে কছিু ভাবনিা। দশেরে র্স্বাথ, পরবিশেরে র্স্বাথ চন্তিা করছি না কউে। আর এ জন্যই বন্ধ হচ্ছে না নদীহত্যা। তারমতে ‘নদী বলিীন হবার ফলে ইতোমধ্যইে দশেরে র্অথনীতি আর পরবিশেে বরিূপ প্রভাব পড়তে শুরু করছে।ে ক্রমাগত আরো নদী বলিীন হতে থাকলে ভবষ্যিতে ভয়ঙ্কর এক বভিীষকিাময় পরস্থিতিি বরন করতে হব।ে তাই এখনই নদী-জলাশয়গুলোকে দখলমুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তনিি সরকারকে দায়ত্বিশীল হবারও তাগদি দয়িছেনে। এ কাজে রাজনতৈকি প্রতশ্রিুতি সহ জনগণকওে শামলি করে নদী রক্ষার লড়াইয়ে সকলরে অংশ গ্রহনরে ওপরও তনিি যোরদনে। বাংলাদশে পানি উন্নয়ন র্বোডরে  গবষেনা গ্রন্থ ‘বাংলাদশেরে নদ-নদী ২০০৪’এ ৩১০টি নদীর কথা বলা হলওে বআিইডব্লউিটএি’র ১৯৭৫সালরে ‘রভিার মাইলজে টবেলি’ে প্রদত্ত হসিবে মতে এর সংখ্যা ২৩০টি বলা হয়ছে।ে তবে একই নদী দশেরে বভিন্নিস্থানে একাধীক নামে প্রবাহতি হওয়ায় এর সংখ্যা হাজাররে র্উধে হতে পার।ে তবে কারো কারো মতে নদÑনদীর সংখ্যা ১৩শর বলওে উল্লখে করা হয়ছে।ে অপর এক গবষেনায় গত র্অধ শতাব্দীতে দশেরে ৫২০টি নদÑনদী বলিীন হবার কথা বলা হয়ছে।ে এমনকি হাজার বছর আগে র্বতমান বাংলাদশেরে ভৌগলকি সীমানায় দড়ে হাজাররে মত নদ-নদী ছলি বলে উল্লখে করে বগিত শতাব্দীর ষাটরে দশক র্পযন্ত সাড়ে ৯শ বছরে সাড়ে ৭শ নদÑনদী ধংশ হয়ছেে বলে উল্লখে করা হয়ছে।ে এ হসিবে বছরে ১টরিও কম নদী ধংশ হলওে র্বতমানে এ হার ১০-এরও অধীক বলে উল্লখে করা হয়ছে।ে এমনকি র্বতমান পরস্থিতিি অব্যাহত থাকলে ভবষ্যিতে নদী ধংশরে হার আরো বাড়বে বলওে আশংকা প্রকাশ করা হয়ছে।ে এমনকি র্বতমানে আরো ২৫টি নদ-নদী অবধারতি অস্তত্বি সংকটরে মুখে বলওে উল্লখে করা হয়ছে।ে
১৯৬৫থকেে ১৯৬৭সাল র্পযন্ত নদোরল্যান্ডরে নদী গবষেনা বশিষেজ্ঞদরে সহায়তায় বাংলাদশেরে নদÑনদীর ওপর ব্যাপক জরপি  চালয়িে ‘ঘবফবপড় জবঢ়ড়ৎঃ’ ও ১৯৭৫সালে আইডব্লউিটএি থকেে প্রকাশতি ‘মাইলজে টবেলি’ এবং ১৯৮৮-৮৯সালে ডাচ উঅঠ কতৃক পুনরায় সমীক্ষা প্রতবিদেন সহ র্সবশষে জরপিে দশেরে অভ্যন্তরীন ও উপক’লীয় নদÑনদীর এক ভয়ংকর চত্রি উঠে এসছ।ে এসব প্রতবিদেন সহ বঅিইডব্লউিটএি’র সম্প্রতকি তথ্য উপাত্তরে ভত্তিতিে দশেরে ১১৭টি নদ-নদীর দুই শতাধীক নৌপথরে সাড়ে ৪হাজার কলিোমটিাররে বশেী নদী সীমানা হয় বলিুপ্ত, অথবা চরম অস্তত্বি সংকটে রয়ছেে বলে উল্লখে করা হয়ছে।ে এসব নৌপথ ও নদÑনদীর মধ্যে দশেরে অতি জনগুরুত্বর্পূণ নৌপথও রয়ছে।ে অথচ এখনো রলেপথ এবং সড়ক পথরে তুলনায় নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরবিবহন ব্যায় একÑতৃতীয়াংশরেও কম। এমনকি প্রকৃতি প্রদত্ত নৌপথ সংরক্ষন ব্যায়ও সড়ক ও রলেপথরে তুলনায় এক চতর্’থাংশরেও কম বলে বশিষেজ্ঞগন মনে করনে। নকিট অতীতে নৌপথই ছলি দশেরে র্সববৃহত ও নর্ভিরযোগ্য যোগাযোগ মাধ্যম। কন্তিু দশেÑবদিশেরে কুচক্রী মহলরে লাগাতর নদী হত্যা প্রবনতা সে পরস্থিতিরি র্সবনাশা পরর্বিতন ঘটয়িছেে বলে বশিষেজ্ঞগন মনে করনে। নকিট অতীতওে নদÑনদী ও নৌপথ সংরক্ষনরে বষিয়টি সরকাররে দায়ত্বিশীল মহলে যথাযথ গরুত¦রে সাথে ববিচেতি হতনা।
নদোরল্যান্ড ও বাংলাদশেরে বভিন্নি সরকারী প্রতষ্ঠিানরে জরপিে যে বপিুল সংখ্যক নদÑনদীর অস্তত্বি সংকটরে কথা উঠে এসছ,ে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছ,ে ব্রক্ষ্মপুত্র,পুরাতন ব্রক্ষ্মপুত্র, পদ্মা, গঙ্গা, গড়াই, মহানন্দা, হুরসাগর, করতোয়া, বড়াল, বরানী, যমুনা, ইছামত,ি ধলশ্বেরী, পুরাতন ধলশ্বেরী, ধরলা, কালগিঙ্গা, মধুমত,ি মধুমতি লুপ, নবগঙ্গা, বলশ্বের, কচা, ডুমুরয়িা গাং, ঘাঘর/শলৈদহ, বর্মেতা খাল, আড়য়িাল খাঁ, জয়ন্তয়িা, মঘেনা, কলৈর নদী, টরকী নদী, পালং নদী, নড়য়িা নদী, নড়য়িা খাল, বানর নদী, কাওরাইদ নদী. বুড়নিালা নদী, পাগলা নদী, ততিাস, কালনী নদী, জালালপুর নালা, ববিয়িানা, কুশয়িারা, ক্যায়াঞ্জা নদী, বরাক নদী, পুরাতন সুরমা, সুরমা, ধাণু নদী, মনু নদী, মোরা নদী, বাথাল নদী, ছাইদুলী নদী, কংশ নদী, কোনাই গাঙ্গ, সোমশ্বেরী নদী, উবদা খাল, গুনাই নদী, ঢালী নালা, বাউলাই নদী, খয়রা নদী, পাটনাই গাঙ্গ, যাদু কাটা নালা, রক্তনিালা নদী, পান্দয়িা নদী, খাজাঞ্চি নদী, মাকুন্দা নালা, ডাকুয়া নদী, মতি জুরি নালা, কালগিঙ্গা, তুরাগ, বংশী, গাজীলখালী, বঙ্গোড়া খাল, লৌহজং নদী/ কোদালপুর খাল, তুলশী খালী খাল, ভাঙ্গাভটিার খাল,গুমতী, কালাতয়িা নালা, ছোট মঘেনা বা বাতাকান্দি নালা, নয়া ভাঙ্গনী, ডাকাতয়িা, সোলমারী নালা, তালতলা খাল, কুমারÑমধুমতি বলিরুট, ভুবনেশ্বর নদী, আঠারো বাকী নদী, ভরৈব নদ, চত্রিা নদী, কাটাখালী, কুমার নদ, শীতলক্ষা, ময়নাকাটা, মুল্লার বলি, মহারাজপুর খাল, সালতানামা, হারবাড়য়িানালা, সবিশা নদী, কপোতাক্ষ নদ, গ্যাঙ্গারাইল/ভাঙ্গারয়িা নালা/নাসরিপুর খাল, মরচিাপ নদী, খোলপটুয়া, গালগসেয়িা নদী, গুনতয়িাখালী/হাব্রানালা, কংশীয়ালী নদী, চুনার নদী, শালখিা নালা, বাদুরগাছা, চুনকড়,ি ভদ্রা/ঢাকী, মনিজানদী/কারুলয়িা নালা, সুতারখালী, হড্ডা খাল/বানয়িাখালী, কয়ড়া নদী, কদমখালী নদী/ দুমখালী, শাকবাড়ী, বতেনা নদী, কুঙ্গা নদী/মারজাতা নদী, দাউদখালী নালা, লক্ষা নদী, পুরাতন লাক্ষা ও করেবার চর নালা।
বআিইডব্লউিটএি’র নৌ পথ সংরক্ষন ও পরচিালন বভিাগরে পরচিালক এমদাদুল হক-এর মতে আমাদরে গোটা দশেরে পরবিশেগত ভারসাম্য রক্ষা সহ অস্তত্বি রক্ষায় নদÑনদী সংরক্ষনরে কোন বকিল্প নইে। উজান থকেে নদীতে সাগরমুখি প্রবাহ হ্রাস পাবার ফলে সাগররে নোনা পানি ক্রমশ উজানে  উঠে আসছ।ে যা বশ্বিরে র্সববৃহত লবনাম্বুজ বন-সুন্দরবনরে অস্ত¡িকওে ভয়াবহ ঝুকরি দকিে নয়িে যাচ্ছে । পাশাপাশি উপক’লীয় এলাকা ছাপয়িে দক্ষনিাঞ্চলে লবনাক্ত এলাকার পরমিানও ক্রমশ বাড়ছে বলওে তনিি জানান। ফলে কৃষ,িসচে সহ মৎস সম্পদও মারাত্মক ঝুকরি মুখ।ে
নদী বশিষেজ্ঞদরে মতে ফারক্কার বরিুপ প্রভাব সহ সীমান্তরে ওপাড়ে আমাদরে অভন্নি ৫৪টি নদÑনদীর প্রবাহ ভারত কতৃক একতরফাভাবে নয়িন্ত্রনরে ফলইে আমাদরে অভ্যন্তরীন প্রায় সব নদ-নদীর প্রবাহ হ্রাস সহ নাব্যতা সংকট সৃষ্টরি মূল কারন। পাশাপাশি ভারত সাম্প্রতকিকালে ‘টপিাইমুখ বাঁধ’ নর্মিানরে যে উদ্যোগ গ্রহন করছে,ে তা বাস্তবায়তি হলে ততিাস,কুশয়িারা সহ দশেরে র্পূবÑউত্তরাংশরে সব নদ-নদীই অদুর ভবষ্যিতইে অস্তত্বি হারাবে বলে মনে করছনে নদী বশিষেজ্ঞগন। এমনকি এর ফলে মঘেনায় প্রবাহও আরো বাধাগ্রস্থ হয়ে দশেরে অন্যতম বৃহত্বম এ নদী অববাহকিায় মরুময়তা আরো তড়ান্বতি হব।ে সব মলিয়িে আমাদরে নদÑনদী সমুহরে অস্তত্বি রক্ষায় দশেরে প্রতটিি ছোট-বড় নদÑনদী সংরক্ষন ও উন্নয়নরে যমেনি কোন বকিল্প নইে, তমেনি প্রতবিশেী ভারতরে কাছ থকেে প্রতটিি অভন্নি নদীর পানরি ন্যায্য হস্যিা আদায়রে ওপরও র্সবাত্মক প্রচষ্টোর ওপর গুরুত্বারোপ করছেনে বশিষেজ্ঞ মহল। উল্লখ্যে, নকিট অতীতওে দশেরে ২৪হাজার কলিোমটিার র্দীঘ নদÑনদীর মধ্যে অভ্যন্তরীন নৌপথরে পরমিান প্রায় ৭হাজার কলিোমটিার বলে ধরা হত। যারমধ্যে মাত্র ৩,৮০০কলিোমটিার নৌপথ অভ্যন্তরীন নৌপরবিহন কতৃপক্ষ-আইডব্লউিটএি সংরক্ষনরে দায়ত্বিপ্রাপ্ত। তবে এখনো নদÑনদী বহুল আমাদরে দশেে মাত্র ১,৪০০কলিোমটিার নৌপথ দবিা-রাত্রী নৌযান চলাচল উপযোগী থাকলওে ভয়াবহ নাব্যতা সংকটে তার অধকিাংশরেই অস্তত্বি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছনে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক দায়ত্বিশীল মহল।

দখল আর দূষণে এক বছরেই হারিয়ে গেছে ২৫টি নদী
মো. মহিদুল ইসলাম (জাকির)
মুছে যাচ্ছে বাংলাদেশের ‘নদীমাতৃক’ পরিচয়। কারণ এদেশে কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে নদী হত্যা। একের পর এক ঘটছে নদীর মৃত্যু। অব্যাহত দখল আর দূষণে এক বছরেই হারিয়ে গেছে ২৫টি নদী। আরো প্রায় ২শ’ নদীর অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন। এসব নদীও ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। অথচ নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশ, সরকার প্রধানের দৃঢ় প্রত্যয়, টাস্কফোর্সের হুশিয়ারি এবং দখল ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানও কোনো কাজে আসছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে দেশে বর্তমানে নদীর সংখ্যা ২৩০টি। এর মধ্যে গত এক বছরে হারিয়ে গেছে ২৫টি নদী। বিপদাপন্ন অবস্থায় রয়েছে ১৭৪টি নদী। এসব নদীর মধ্যে ১১৭টি নদী ধাবিত হচ্ছে অবধারিত মৃত্যুর দিকে। তাছাড়া গত এক বছরে সারাদেশের সব নদ-নদীই কমবেশি দ্রুত হারে বিনষ্ট হচ্ছে। ছোটবড় দখলদারি ঘটনা ঘটেছে প্রায় সব নদীতেই। আর গত বছর এসব নদীতে বিপর্যয়কর ঘটনা ঘটেছে ২ শতাধিক। তাছাড়া কমবেশি দূষণ গ্রাসেরও শিকার হয়েছে সবগুলো নদী। অথচ এদেশের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যই হচ্ছে নদীকেন্দ্রিক প্রাচুর্য। কৃষিনির্ভর এদেশের জীবপ্রকৃতির প্রতিটি ধারার সাথেই নদীর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের নদীগুলো একের পর এক শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকা  নদীকে গলাটিপে মেরে ফেলছে। পলির চাপ এবং বিকল্প বাঁধও নদীগুলোর পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি করছে। সূত্র জানায়, দেশের নদী মৃত্যুর ঘটনায় বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রার চিত্রও। পাশাপাশি দেখা দিচ্ছে ভয়াবহ পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্যের বিপর্যয়ও। দেশের প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন জায়গাতে পলি জমে স্রোতধারা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে এসব নদীর শাখা-উপশাখাও। ফলে নদীর তীরবর্তী জীবনধারা বিপন্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। অথচ ১ হাজার বছর আগে এ অঞ্চলে মোট নদী ছিল দেড় হাজারেরও বেশি। গত ৬০-এর দশকেও এদেশে নদী ছিল সাড়ে ৭শ’। আর বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৩০টিতে। অর্থাৎ গত ৫০ বছরেই এদেশ থেকে হারিয়ে গেছে ৫২০টি নদী। নদী মৃত্যুর পেছনে সরকারি ভূমিকাও কম নয়। গত এক বছরে ১৭৪টি নদী বিপর্যয়ের পেছনে সরকারি কর্মকাণ্ড জড়িত। নদী থেকে অবৈধ বালু ব্যবসায়ী উৎখাত করতে গিয়েও করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরকারের একপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান চালালে অন্য কোনো বিভাগ তার বাধার সৃষ্টি করছে। একইভাবে আইন থাকা সত্ত্বেও নদীতে শিল্পদূষণ ঠেকানো যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে পরিবেশ ও বন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাফল্য প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। মূলত সরকারি দফতরগুলোর মধ্যে সমন¦য়হীনতার কারণে নদীরক্ষায় কোনো কার্যকর ভূমিকা পালিত হচ্ছে না। অথচ দেশ ও মানুষের স্বার্থে নদী রক্ষা করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সূত্র আরো জানায়, ১৯৭৫ সালে এদেশে নৌপথ ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটারে। শুকনো মৌসুমে তা আরো কমে দাঁড়ায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটারে। বর্তমান সরকার নদীরক্ষায় নানামুখী উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ক্ষমতায় আসার পর পরই বর্তমান সরকার নদী খনন কাজের জন্য ২৪ হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা নিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কারণ নদীগুলোর নাব্যতা বাড়াতে হলে পানি লাগবে। এজন্য বাড়াতে নদীর পানির ধারণক্ষমতা। কিন্তু দখল ও দূষণের কারণে অধিকাংশ নদীর মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীর প্রবাহ শক্তি কমে গেছে। ফলে নদীগুলোর পানি সমুদ্রে প্রবাহিত হচ্ছে খুবই ধীরে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩০টি নদী এখন পানিশূন্য। তাছাড়া মেঘনা-কীর্তনখোলা-সুগন্ধা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী ডেমরায় বালু ব্যবসায়ীদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বরাক মোহনায় চরে নাব্যতা হারাচ্ছে সিলেটের ৬ নদী। অবৈধ দখলে নাব্যতা হারাচ্ছে বরগুনার খাকদোন নদী। ভোলায় নদী ও বনের ওপর দিয়ে বাঁধ দেয়া হচ্ছে আড়াআড়িভাবে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বড়াল নদী উদ্ধারের নির্দেশ দেয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে দেশের একাধিক পানি বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকদের জানান, নদী রক্ষা করা ছাড়া দেশরক্ষা সম্ভব নয়। এজন্য নদীরক্ষায় সরকারকে আরো কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। পাশাপাশি দেশের মৃত্যুমুখী ছোট ও মাঝারি নদীগুলোকে যেভাবে সরকারি উদ্যোগে বা অবহেলায় চূড়ান্ত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। 

রাষ্ট্রায়ত্ত বস্ত্রকলগুলোর লোকসানের ভারে নুয়ে পড়ছে বিটিএমসি
নিজস্ব প্রতিবেদক
বছরের পর বছর লোকসান গুনে চলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বস্ত্রকলগুলো। দীর্ঘ ৩০ বছরেও সরকারের পক্ষ থেকে এসব রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বরং এসময়ের সব সরকারই রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিতেই বেশি আগ্রহী। ইতিমধ্যে লাভজনক না হওয়ার কারণে ১৯৭৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত শিল্প মন্ত্রণালয় ৩টি এবং বেসরকারিকরণ কমিশন ১২টি বস্ত্রকল দরপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে বিক্রি করে দিয়েছে। বর্তমানে সরকারের হাতে ২৩টি বস্ত্রকল থাকলেও চালু আছে মাত্র ৪টি। তবে চালু এসব বস্ত্রকলগুলোও লোকসান গুনছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে সরকারের হাতে যেসব বস্ত্রকল রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ১৫টি। আর বিক্রির জন্য বেসরকারিণ কমিশনের কাছে রয়েছে ৩টি এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে ৫টি বস্ত্রকল। এর মধ্যে ৪টি বস্ত্রকল বর্তমানে সার্ভিস চার্জের ভিত্তিতে চলছে। তাছাড়া বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন ১৫টি বস্ত্রকলের বিপরীতে সরকার ও ব্যাংকের কাছে গতবছর পর্যন্ত বিটিএমসির দেনা হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ সরকারের পাওনা ১ হাজার ৩২৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ব্যাংক পাবে ১ হাজার ৮৪ কোটি টাকা আর পরিষেবা খরচ বাবদ রয়েছে ২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। একই সাথে সাবেক মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা ৩৫টি বস্ত্রকল থেকেও বিটিএমসি ও সরকারের পাওয়া রয়েছে যথাক্রমে ৮৬৪ কোটি ও ১৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ঋণ বাবদ বিটিএমসির দায় ৭৩৩ কোটি টাকা। পাশাপাশি বস্ত্রকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছে হস্তান্তর করা  ৯টি বস্ত্রকল থেকেও বিটিএমসি ও সরকারের পাওনা যথাক্রমে ৩৯৪ কোটি ও ৫শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকঋণ বাবদ ৩৭৫ কোটি টাকা বিটিএমসির দায় রয়েছে। তাছাড়া বেসরকারিকরণ কমিশন ও শিল্প মন্ত্রণালয় দরপত্রের মাধ্যমে যে ১৫টি বস্ত্রকল বিক্রি করেছে তার দায়দেনাও চেপেছে বিটিএমসির কাঁধে। এসব বস্ত্রকল থেকে বিটিএমসি সাড়ে ৫শ’ কোটি ও সরকারের ৩৬১ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭৫ কোটি টাকা ব্যাংকঋণের দায় বর্তছে বিটিএমসির ওপর।
সূত্র জানায়, কমদামে রাষ্ট্রায়ত্ত বস্ত্রকল বিক্রি করায় সরকারের লোকসান আরো বেড়েছে। পাশাপাশি যথাযথ তদারকি না থাকার কারণেও বর্তমান বস্ত্রকল মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা উদ্ধার করা যাচ্ছে না। বরং নিয়মিত দায়-দেনা নি?ত্তি না করার কারণে কয়েকশ’ কোটি টাকার ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে সরকারকে। তাছাড়া বেসরকারিকশন লোকসানি বস্ত্রকলগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিলেও এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে বিটিএমসিকে। গতবছরের জুন পর্যন্ত এ খাতে বিটিএমসির খরচ হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময় বিক্রি ও হস্তান্তর করা বস্তকলের দায়দেনায় এখন বিটিএমসি জর্জরতি। তাছাড়া অব্যাহতভাবে লোকসান দেয়ার কারণে বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যান্য বস্ত্রকলগুলোর দায়দেনাও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সূত্র আরো জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানী বস্ত্রকল বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার সিএ ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষা করার পর বেসরকারিকরণ কমিশন তা বিক্রি করে। এভাবে ১২টি বস্ত্রকলের দাম ধরা হয়েছিল ২৬৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। এসব বস্ত্রকলের মোট জমির পরিমাণ ছিল ২০১ একর। দরপত্রের মাধ্যমে বস্ত্রকলগুলোর এ জমি বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকায়। এর মধ্যে এখনো প্রায় ৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বর্তমানে বিক্রির জন্য বেসরকারিকরণ কমিশনের হাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ৩টি বস্ত্রকল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল, টাঙ্গাইল কটন ও মাগুরা টেক্সটাইল মিল। তবে বার বার দরপত্র আহ্বান করার সত্ত্বেও এখনো এ বস্ত্রকলগুলো বেসরকারি খাতে বিক্রি করা যায়নি। এ প্রসঙ্গে বিটিএমসির চেয়ারম্যান মাহমুদ উল আলম সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবেই সরকারি বস্ত্রকলগুলোতে এ দৈন্যদশা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া বেসরকারি খাতে একের পর এক মিল ছেড়ে দেয়া এবং কোনো তদারকি না থাকার জন্যও এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তবে কিছুটা দেরি হলেও বিটিএমসিকে লাভজনক করতে নানামুখী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পরিশোধ করা হচ্ছে ব্যাংক দেনাও। ইতিমধ্যে প্রায় ৪৭ কোটি টাকার ব্যাংক দেনা পরিশোধ করেছে বিটিএমসি।
তিনি আরো বলেন, বিটিএমসির বস্ত্রকলগুলোর যে বিশাল সম্পত্তি রয়েছে তার সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই বিটিএমসিকে লাভজনক ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য বস্ত্রকলের জায়গায় টেক্সটাইল পল্লী করা যেতে পারে। তাছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রমের মিলগুলোতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালনা করা যেতে পারে। আর এ থেকে পাওয়া মুনাফা দিয়েই বিটিএমসির অন্যান্য বস্ত্রকলগুলো পরিচালনা করা সম্ভব।


নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে অকার্যকর টিসিবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
অকার্যকর হয়ে পড়ছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। বর্তমানে এ সংস্থাটির বিদেশ থেকে সরাসরি পণ্য আমদানির ক্ষমতা এবং আর্থিক সামর্থ্য নেই। বরং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছ থেকে পণ্য কিনে আবার তাদের কাছেই বিক্রি করছে। এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটির পক্ষে ভোক্তাদের স্বার্থে কোনো ভূমিকাই পালন করতে পারছে না। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার প্রতিশ্র“তি দেয়া সত্ত্বেও গত ৩ বছরে টিসিবিকে আশানুরূপ সক্রিয় করতে পারেনি। আগামী ২ বছরে তা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন খোদ টিসিবি সংশ্লিষ্টরাই। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ছিল বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি। কিন্তু সরকার কোনোভাবেই দেশের অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। এমনকি টিসিবিকেও দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা ও অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবল থেকে উদ্ধার করতে পারেনি। ফলে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রতিষ্ঠিত টিসিবি ভোক্তা স্বার্থে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এতে নিশ্চিত করা যায়নি দেশের সাধারণ ভোক্তাদের মাঝে ন্যায্যমূল্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ। সূত্র জানায়, গত ২০১১ সালে বছরজুড়েই দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার ছিল বেসামাল। তখন বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। টিসিবি হিসাবে, ওই বছর দেশে পণ্যমূল্য বেড়েছে ১২ দশমিক ৭৭ ভাগ। এ পরিস্থিতিতে সরকার চেয়েছিল টিসিবিকে ঢেলে সাজিয়ে কার্যকর করতে। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু দেশে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য  নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে বাজারে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই। আর সরকারের পক্ষে টিসিবির মাধ্যমেই করা সম্ভব। কিন্তু টিসিবিকে সে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। ফলে বাজারে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণেও সরকার আশানুরূপ সফল হয়নি। সূত্র আরো জানায়, বিগত সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টিসিবির ওপর দিয়ে নানা ঝড়Ñঝাপটা গেছে। একাধিকবার ছাঁটাই করা হয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের জনবল। বর্তমানে টিসিবিতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৭৯ জন। তাছাড়া টিসিবিকে পূর্ণ কার্যকর করার আইন এখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পড়ে রয়েছে। সরকারও পিটসিবিকে টাকা দিচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে টিসিবি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১৪ শতাংশ হারে সুদ দিয়ে পণ্য কিনে তা সরবরাহ করতে পারছে না। তাছাড়া  টিসিবি সরকারি ক্রয় বিধিমালায় সরাসরি পণ্য আমদানি করতে পারবে এমন কোনো কথাও বলা নেই। ফলে দিন দিন অকার্যকর হয়ে পড়ছে হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি। অথচ সরকারের পক্ষে দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা ছাড়া কোনো বিকল্প আছে বলেও মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলেও মনে করছেন তারা। এদিকে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যেগুলোর মধ্যে ভোজ্যতেলেরই বার্ষিক চাহিদা ১০ থেকে ১৪ লাখ টন। এর বিদেশ থেকে ভোজ্যতেল আমদানি করা হয় ১২ লাখ টনেরও বেশি। কিন্তু টিসিবি আমদানি করতে পারে বছরে মাত্র ২ লাখ টন। তাছাড়া দেশে বছরে চিনির চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ টন। এর মধ্যে আমদানি হয় ১২ লাখ টন। এর মধ্যে টিসিবি আমদানি করতে পারে মাত্র ২ লাখ টন। একইভাবে দেশে মসুর ডালের চাহিদা প্রায় ৫ লাখ টন। এর মধ্যে বেসরকারিভাবে বিদেশ থেকে আমদানি হয় ৩ লাখ টন। আর টিসিবি আমদানি করতে পারে মাত্র ২৫ হাজার টন। এ প্রসঙ্গে টিসিবি চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের জানান, বাজার চাহিদা বিবেচনা করে টিসিবি চাইলেও বিদেশ থেকে সরাসরি কোনো পণ্য কিনতে পারে না। তাছাড়া সরকার টিসিবিকে পণ্য আমদানির লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়ায় সারা বছর এ সংস্থার পক্ষে কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
বেড়েই চলেছে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি
নিজস্ব প্রতিবেদক
মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই মিথ্যা ঘোষণায় বিপুল পরিমাণ পণ্য আসছে দেশে। অথচ এ থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। কতিপয় আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কাস্টমস বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশেই তা হচ্ছে। মূলত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে তা হচ্ছে। মিথ্যা ঘোষণায় দেশে ব্যাপকভাবে পণ্য আমদানির ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানিকারকরদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের প্রতিটি বন্দর দিয়েই মিথ্যা ঘোষণায় বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে কিছুসংখ্যক সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি, পিএসআই কোম্পানি, অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে খালাস হয়ে যাচ্ছে। ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে। বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য শনাক্তকরণের জন্য স্ক্যানার মেশিন বসানো হলেও অনেক ক্ষেত্রেই সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি ও দুর্নীতিবাজ কিছু কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে স্ক্যানিং মেশিনের যান্ত্রিক ত্র“টির অজুহাত দেখিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত পণ্য খালাস করে দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলকভাবে দেয়া হচ্ছে আমদানি পণ্যের ভুল স্ক্যানিং প্রতিবেদনও। তবে কোনো কারণে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত পণ্য ধরা পড়লে প্রচলিত আইনে পণ্য বাজেয়াপ্ত করাসহ মামলা হচ্ছে। এক্ষেত্রেও ফায়দা নিচ্ছে অসাধু আমদানিকারকরা। তারা বাজেয়াপ্ত পণ্য পরবর্তীতে নিলামের মাধ্যমে পুনরায় কম দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বায়োপ্ত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনে যেসব মামলা হচ্ছে তার নি?ত্তিতেও দীর্ঘসময় লাগছে। একই সাথে  অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব মামলায় উল্লেখযোগ্য কোনো শাস্তির মুখোমুখিও হচ্ছে না অভিযুক্তরা। ফলে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির পরিমাণ দিন বেড়েই চলেছে। সূত্র জানায়, দেশের অন্যতম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষনায় পন্য আমদানির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। অথচ এ বন্দরটিই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের রাজস্ব জোগানোর অন্যতম খাত। প্রতি বছর দেশের মোট রাজস্বের প্রায় ৩০ শতাংশ এ বন্দর থেকেই আসে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি ও রফতানির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। এতে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে। কিছুসংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ী অহরহই কাস্টমস বিভাগের লোকজনের সহায়তায় অহরহ মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি ও রফতানি করছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওই বন্দরে মিথ্যা ঘোষণার বিপুল পরিমাণ পণ্য আটক করা হয়েছে। অথচ নিয়মানুযায়ী বিদেশ থেকে কোনো পণ্য আমদানি করা হলে পিএসআই (প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন) কোম্পানি আমদানিকৃত পণ্যের সঠিক পরিমাণ, পণ্যের বিবরণ ও এইচএস কোড (হারমোনাইজ সিস্টেম কোড) সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। আর ওই সার্টিফিকেটে দেখেই সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্মকর্তারা আমদানিকৃত পণ্যের শুল্কায়ন করে। কিন্তু বন্দরে প্রায়ই দেখা যায় আমদানিকৃত পণ্যের মিথ্যা সার্টিফিকেট দাখিল করে এক পণ্যের জায়গায় অন্য পণ্য, পণ্যের ওজনের তারতম্য, কম মূল্য ও এইচএস কোডের মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে পিএসআই কোম্পানি এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারকরা দায়ি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির কারণে ইতিমধ্যে পিএসআই কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে অনেক মামলা হয়েছে। কিন্তু ওসব মামলায় তেমন কোনো শাস্তি হচ্ছে না। ফলে দেশে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানিতে সংশ্লিষ্টরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তা রোধ করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।


এডিপির প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশী সহায়তার টাকা ফেরত দিয়েছে সরকারের ৮টি মন্ত্রণালয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারের ৮টি মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণসহায়তার বরাদ্দের টাকা ফেরত দিয়েছে। এরকম ২৩টি প্রকল্পের প্রতিটি থেকেই ফেরত যাওয়া টাকার পরিমাণ ৪০ কোটি টাকারও বেশি। আর সবগুলো প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে টাকা ফেরত গেছে ৩ হাজার ৭শ’ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা। মন্ত্রণালয়গুলো স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই এ টাকা ফেরত দিয়েছে। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলোর বক্তব্য হচ্ছে, প্রকল্পগুলোতে বৈদেশিক ঋণ সহায়তার বরাদ্দকৃত টাকা খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে এডিপির অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো থেকে বৈদেশিক সহায়তার টাকা কেন ফেরত দেয়া হয়েছে তার কারণ জানতে চেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের এডিপির অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ২৩টি প্রকল্প থেকে বৈদেশিক সহায়তার টাকা ফেরত পাঠানো মন্ত্রণালয়গুলো হচ্ছে যোগাযোগ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন, বিদ্যুৎ, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রেল ও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। অথচ এডিপির অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এ ২৩টি প্রকল্পই খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এসব প্রকল্পের বিপরীতে যথেষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ সহায়তার অর্থ থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়গুলো কেন সে টাকা খরচ করতে পারেনি তার ব্যাখ্যা চেয়েছে ইআরডি। তবে মন্ত্রণালয়গুলোও এ বিষয়ে সরকারকে ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেছে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক ঋণসহায়তা থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন’ প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এ টাকা খরচ করা সম্ভব হবে না এমন ধারণায় বৈদেশিক ঋণ-সহায়তার প্রায় ৬১ কোটি টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে সংশোডধিত এডিপিতে এ প্রকল্পে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। একইভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আরবান পাবলিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সেক্টর ডেভলপমেন্ট প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১শ’ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে এ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে মাত্র ১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ প্রকল্প থেকে ফেরত পাঠিয়েছে প্রায় ৮৮ কোটি টাকা। এ প্রকল্পেও ঋণ দিচ্ছে এডিবি। তাছাড়া সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ নামে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে ৩৫২ কোটি ৬২ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে সওজ বরাদ্দ চেয়েছে মাত্র দেড়শ’ কোটি টাকা। আর ফেরত দেয়া হয়েছে ২০২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ টাকাও ঋণ দিচ্ছে এডিবি। সূত্র আরো জানায়, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর আধুনিকায়ন নামে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১৫৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা। বাকি টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে ড্যানিডা। একইভাবে বিদ্যুৎ বিভাগের খুলনা দেড়শ’ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ২শ’ কোটি টাকা। আর সংশোধিত এডিপিতে এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১শ’ কোটি টাকা। বাকি ১শ’ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ প্রকল্পের ঋণের টাকা যোগাচ্ছিল এডিবি। তাছাড়া জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ ‘বাখরাবাদ সিদ্ধিরগঞ্জ গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন’ প্রকল্পের জন্য দেড়শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। আর ফেরত পাঠানো হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইডিএ এ ঋণ সহায়তা দিয়েছে। একইভাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল দেড়শ’ কোটি টাকা। কিন্তু মন্ত্রণালয় সাড়ে ৮৪ কোটি টাকা ফেরত পাঠিয়েছে। আর সংশোধিত এডিপিতে এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৬৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিয়েছে আইডিএ।


পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে দুর্নীতির মচ্ছব
নিজস্ব প্রতিবেদক
দুর্নীতির মচ্ছব চলছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। পাওয়া যাচ্ছে না বিপুল অংকের টাকার হদিস। শত শত কোটি টাকা কিভাবে খরচ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কাছে তার কোনো হিসাব নেই। এ ব্যাপারে বার বার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তার কোনো জবাব দিচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে টাকার হিসাব চেয়ে প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আলাদাভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিপত্রও জারি করেছে।  সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় ৩৮ হাজার অডিট আপত্তিতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু দীর্ঘদিনেও নি?ত্তি হচ্ছে না এসব অডিট আপত্তি। বরং বার বার এসব অডিট আপত্তির তাগাদা দেয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুধু পরিপত্র জারি করেই থেমে থাকেনি। বিশেষভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে। তাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পুরনো অডিট আপত্তিগুলো নি?ত্তির তাগিদ দেয়া হয়েছে। এজন্য বছরভিত্তিক অডিট আপত্তির তথ্য সরবরাহের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, দ্রুত অডিট আপত্তি নি?ত্তির জন্য যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালযের প্রায় ১৬৬ কোটি টাকার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ পরিমাণ টাকা এক অর্থবছরে সরকারের দেয়া অনুদানের সমান। কিভাবে এবং কোথায়  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো টাকা খরচ হয়েছে তার কোনো তথ্য নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্রও নেই। ১৯৭২ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সময়ে এসব টাকা খরচ হয়েছে। এ টাকার অডিট আপত্তি নি?ত্তির জন্য বার বার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তার কোনো সঠিক জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ১৯৭৪ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৫৯০টি সাধারণ, ১০১টি অগ্রিম ও ১৬টি খসড়া অডিটের জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মওলানা ভাসানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫শ’ অডিট আপত্তিও অনি?ন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। সূত্র আরো জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দফতরের বিপরীতে বিপুল অডিট আপত্তি অনি?ন্ন অবস্থায় রয়েছে। যথাসময়ে এসব অডিট আপত্তি নি?ত্তিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে না। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনি?ন্ন অডিট আপত্তি নি?ত্তি, আপত্তিতে জড়িত অর্থ আদায় ও সরকারি টাকা খরচে অনিয়ম পরিহার করে জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বার বার তাগিদ দিচ্ছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কখনোই সঠিকভাবে অডিট আপত্তির তথ্য সরবরাহ এবং রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ করছে না। মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর্থিক বিধি-বিধান সঠিকভাবে পালিত না হওয়ার কারণেই অডিট নি?ত্তিতে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না। ফলে দিন দিন পুঞ্জিভূত অডিট আপত্তির সংখ্যা যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে সময়ের ব্যবধানে অডিট আপত্তিগুলো সিএজির অডিট রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এতে শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তিই ক্ষুণœ হচ্ছে তা নয়, সংসদের হিসাব সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির কাছে জবাবদিহিও করতে হচ্ছে। মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর না থাকায় প্রায়ই একই ধরনের আপত্তি বার বার উত্থাপিত হচ্ছে। এটি কাম্য হতে পারে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিপুলসংখ্য অডিট আপত্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গরিবের টাকায় চলে। কাজেই এসব বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে এবং কোথায় এতো বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেছে তা সবারই জানার অধিকার রয়েছে।


কমে যাচ্ছে ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানি
নিজস্ব প্রতিবেদক
ক্রমান¦য়ে নিচে নেমে যাচ্ছে ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী এক দশকের মধ্যেই তীব্র পানি সঙ্কটে ঢাকা মহানগরী বসবাসের উপযুক্ততা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। কারণ প্রতিবছরই ৩ মিটার করে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে। বর্তমানে রাজধানীতে ব্যবহৃত পানির প্রায় ৯০ শতাংশই সংগ্রহ করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ থেকে। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে রাজধানীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা শতভাগ ভূ-উপরিভাগ থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায় আগামী ২০ বছর পরে কোনো ব্যবস্থাই কাজে আসবে না। তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকায় তীব্র পানি সঙ্কটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে গত কয়েক বছরেই ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তরগুলো শুকিয়ে গেছে। বর্তমানে পানির প্রাপ্যতা ২শ’ থেকে আড়াইশ’ ফুট নিচে নেমে গেছে। ফলে পাম্প বসিয়ে পানি তুলতে হলে কমপক্ষে ১ হাজার ফুট নিচে যেতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আরো নিচের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর মানুষের জন্য কতোটা উপযোগী হবে তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি এতো মাটির এতো নিচের স্তরের পানি কোথা থেকে আসবে এবং কতদিনে তা তোলা যাবে সে সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে মাত্র ১০ থেকে ১৩ শতাংশ পানি ভূউপরিভাগ থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী এক দশকের মধ্যেই শতভাগ পানি ভূউপরিভাগ থেকে সরবরাহ করা না গেলে পানির স্তর আরো নিচে নেমে যাবে। তখন ঢাকা মহানগরীতে পানি সরবরাহের ক্ষমতা হারাবে ওয়াসা। বাধ্য হয়ে পানির জন্য মানুষ হাহাকার করবে। সূত্র জানায়, ১৯৫৪ সালের দিকে ঢাকা মহানগরীতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ছিল মাত্র ১০ থেকে ১২ ফুট নিচে। কিন্তু বর্তমানে পানির স্তর নেমে গেছে প্রায় আড়াইশ’ ফুট নিচে। এ ধারায় পানির স্তর অব্যাহতভাবে নিচে নেমে যেতে থাকলে অচিরই ঢাকা পানিশূন্য হয়ে পড়বে। পাশাপাশি বাড়ছে ঢাকা শহর দেবে যাওয়ার আশঙ্কাও। ঢাকা শহরকে রক্ষা করতে ১৯৯১ ও ২০০০ সালে দুটি গবেষণা করা হয়। ওইসব গবেষণায় ঢাকাতে অধিক পরিমাণে ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়। তাছাড়া ওই গবেষণাতেই বলা হয়েছিল, ২০০৫ সালের পর ঢাকায় কোনো ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হবে না। এজন্য ২০০৮ সালের মধ্যেই সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার-২ পানি সরবরাহ শুরু করার কথা। কিন্তু এখনো ওই পানি শোধনাগারটির নির্মাণ কাজই শেষ হয়নি। তাছাড়া ২০১২ সালের মধ্যেই পানি শোধনাগারের ফেজ-৩ এর কাজও শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো ওই শোধনাগারের কোনো কাজই শুরু করা যায়নি। এ নিয়ে খোদ ওয়াসা কর্তৃপক্ষই চিন্তিত। ওয়াসা যে কোনোভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোরন কমিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। কারণ ঢাকাতে বাঁচাতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই ওয়াসার হাতে। ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্কট নিরসেন ওয়াসা ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ২ ইঞ্জির বেশি ব্যাসার্ধের গভীর নলকূপ স্থাপনের অনুমতি দেয়া। তবে একান্ত জরুরি হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। কারণ গত এক দশকে ঢাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমেছে আড়াই মিটার হারে। একই সময়ে বাংলাদেশের পানির স্তর নিচে নেমেছে প্রায় ১ মিটার হারে। তবে ওয়াটার এইড বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী ঢাকায় প্রতি বছর পানির স্তর নিচে নামছে ৩ মিটার হারে।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকায় ভূ-উপরিস্থ ভাগে যেসব পানির উৎস আছে তার ৯২ শতাংশই দূষণের শিকার। রাজধানীতে ঘিরে রাখা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ এবং বালু নদীর পানি প্রায় একশ’ ভাগই নষ্ট। এসব নদীর পানি দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে শিল্পবর্জ্য। কারণ এ নদীগুলোতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলছে। নদীর দূষণ সম্পর্কে বার সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া রাজধানীতে ওয়াসার পানি বিতরণ ব্যবস্থায় বিশৃ´খলা, পানিতে গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলা, মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর বর্জ্য মিশেও দূষণ বাড়াচ্ছে। বর্তমান হারে পানির স্তর নিচে নামা অব্যাহত থাকলে এবং উপরিভাগের ব্যবহারযোগ্য পানির দূষণ রোধ করা না গেলে আগামী ২০১৫ সালের মধ্যেই ঢাকায় পানযোগ্য বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দেবে। এ প্রসঙ্গে ওয়াসার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার বিষয়টি হঠাৎ করেই কারো চোখে ধরা পড়বে না। এর প্রতিক্রিয়া হবে ধীরে। একদিন তা চরম আকার ধারণ করবে। ঢাকায় যে হারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে তা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে রাজধানী বহুতল ভবন নির্মাণের অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। তখন অনেক বহুতল ভবনই দেবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। আর এ পরিস্থিতিতে সামান্য ভূকম্পনই ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনতে পারে। মূলত ভূগর্ভস্থ পানির সুষম ব্যবস্থাপনার অভাবেই প্রতিনিয়ত চাপ বাড়ছে। এ চাপ কমাতে ওয়াসা নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও বাস্তবে তা কোনো কাজে আসছে না। এতে ঢাকামহানগরীর ঝুঁকি আরো বাড়ছে।


নকল ও ভেজাল কীটনাশকে সয়লাব দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের বাজার ভরে গেছে ভেজাল ও নকল কীটনাশকে। অন্যতম এ কৃষি উপকরণটি কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে কৃষকরা। পাশাপাশি কমে যাচ্ছে কৃষি উৎপাদন। দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় ভেজাল কীটনাশক। তাছাড়া কীটনাশক উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার নকল ব্র্যান্ডও বিক্রি হচ্ছে অবাধে। এতে শুধু যে কৃষক ও কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল রাজস্ব থেকে। মূলত বাজারে তুলনামূলকভাবে দাম কিছুটা কম হওয়ার কারণে নকল ও ভেজাল কীটনাশকের বাজার রমরমা। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জনবহুল এদেশে খাদ্য চাহিদা মেটাতে দিন দিন বাড়ছে কৃষি চাষের পরিমাণ। আর এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কীটনাশকের ব্যবহারও। আর এ সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওই চক্রের সদস্যরা নকল ও ভেজাল কীটনাশকের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। অনেকে খুলে বেসেছেন নকল কীটনাশকের কারখানাও। এসব নকল ও ভেজাল কীটনাশক চেনার কোনো উপায় নেই। ফলে কৃষকরা নকল ও ভেজাল কীটনাশক ব্যবহার করলেও জমিতে পোকামাকড় ও বালাই দমনে তা কোনো কাজে আসছে না। ফলে এ থেকে কৃষকরা কোনো উপকারই পাচ্ছে না, অথচ কীটনাশকের নামে তাদের গাঁটের পয়সা চলে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেটে। অবিযোগ রয়েছে, নকল ও ভেজাল কীটনাশকের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের জানালেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি ভেজাল কীটনাশকের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাও জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং কৃষি কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই অসাধু চক্রের সদস্যরা নকল ও ভেজাল কীটনাশকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এ অভিযোগ মানতে নারাজ কৃষি কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, ভেজাল কীটনাশক প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা তৎপরত রয়েছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে অনুমোদিত ১২টি ফরমুলেশন (দানা কীটনাশক উৎপাদন) কারখানা রয়েছে। তবে এর বাইরে আরো কয়েকটি অবৈধ কারখানাও ভেজাল কীটনাশক তৈরি করার খবর পাওয়া গেছে। ইটের গুঁড়া ও পাথুরে বালি দিয়ে দানাদার কীটনাশক তৈরি করে তাতে তরল কীটনাশকের প্রে করা হয়। পরবর্তীতে তা বিক্রির জন্য প্যাকেটজাত করে অসাধু ডিলার ও ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়। দীর্ঘদিন ধরেই দেশজুড়ে এ অবস্থা চলতে থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো পদক্ষেপের উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বরং অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের কর্তব্যক্তিদের ম্যানেজ করেই নকল কীটনাশক কারখানাগুলো দেশে ব্যবসা করছে। সূত্র আরো জানায়, রাজধানী ঢাকা, বগুড়া, ঝিনাইদহ, নোয়াপাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই নকল ও ভেজাল কীটনাশক তৈরির কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার তৈরি কীটনাশক বিক্রি হচ্ছে দেশজুড়ে। তবে সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে ভেজাল ও নকল কীটনাশকের ব্যবসা বেশ রমরমা। গত ২০১০ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি নকল ও ভেজাল কীটনাশকের কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই কারখানায় ইটের গুঁড়া ও পাথুরে বালি মিশিয়ে তৈরি করা হতো কীটনাশক। তাছাড়া চলতি মাসেই রাজধানীর মাতুয়াইলে একটি নকল কীটনাশক কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ড ও ভুয়া কোম্পানির নামে দানাদার কীটনাশক তৈরি করা হতো। তবে অভিযানকালে পুলিশ নকল কীটনাশক কোম্পানি থেকে বিপুল পরিমাণ খালি প্যাকেট, কেমিক্যাল, প্যাকেট সিলার মেশিন, ডাইসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম আটক করলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এদিকে দেশে ভেজাল ও নকল কীটনাশকের ব্যবসার কথা স্বীকার করেছেন খোদ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। তাদের মতে, সারাদেশেই একটি অসাধু চক্র সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অস্তিত্বহীন কোম্পানির নামে এবং নামি ব্র্যান্ডের নামে নকল কীটনাশক তৈরি করে কৃষকদের সাথে প্রতারণা করছে। এ প্রসঙ্গে একাধিক ঊর্ধ্বতন কৃষি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, দেশে ভেজাল ও নকল কীটনাশকের বাজারজাতকরণ রোধে অব্যাহতভাবে কার্যক্রম চলছে। আর এজন্যই মাঝে মধ্যে ধরা পড়ছে ভেজাল কীটনাশক।


গ্যাসের অভাবে বাড়ানো যাচ্ছে না বিদ্যুত উতপাদননিজস্ব প্রতিবেদক
 গ্যাসের অভাবে শুধু যে পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তাই নয়, চালু করা যাচ্ছে না নতুœ বিদ্যুৎ কেন্দ্রও। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সর্বোচ্চ চাহিদা দৈনিক প্রায় ১শ’ কোটি ঘনফুট। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে ৭৫ কোটি ঘনফুটের মতো। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ গ্যাসের অভাবে চালু হতে না পারা নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ৭টিতে উন্নীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নতুন ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহের ফলে পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন মারাÍকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট বাড়লেও ঘাটতি কমানো যাচ্ছে না। সরকারি হিসাবে এ বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা হবে সাড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। কিন্তু জ্বালানি সমস্যার কারণে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই আরো অন্তত ৩টি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হওয়ার সম্ভাবনা রযেছে। এগুলো হচ্ছে ঘোড়াশাল ১শ’ মেগাওয়াট, ফেঞ্চুগঞ্জ ১শ মেগাওয়াট ও আশুগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গ্যাসের অভাবে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবগুলো ইউনিট পূর্ণ ক্ষমতায় চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ দিতে হলে পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, আগামী ২০১৩ সালের মাঝামাঝির আগে দেশে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সামঞ্জস্য আনার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ গ্যাসের উৎপাদন বাড়লেই সমস্যার সমাধান হবে না। বরং গ্যাসের উৎপাদন বাড়লেও সরবরাহের জন্য সঞ্চালন লাইন ও কম্প্রেসার স্থাপন করতে হবে। তাছাড়া সরকার তলল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির মাধ্যমে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের যে উদ্যোগ নিয়েছিল তাও পিচিয়ে যাচ্ছে। কারণ আগামী ২০১৩ সালের আগস্ট মাসের আগে চট্টগ্রামের মহেশখালেিত এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদিও পরিকল্পনা অনুযায়ী এ টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলতি বছরের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। সূত্র আরো জানায়, গতবছরের আগস্ট মাসেই শেষ হয়েছে শিকলবাহা দেড়শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ। চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণ ঠিকাদার কেন্দ্রটি ঠিকভাবে চালানোর জন্য এক বছরের নিশ্চয়তা দেয়ার কথা। কিন্তু গ্যাসের অভাবে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে ৪ মাসের মাথায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ঠিকাদারের কাজ সঠিকভাবে যাচাই করার সুযোগ থাকছে না। পরে যদি ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে কোনো যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেয় তাহলে এর দায় সরকারকে বহন করতে হবে। কারণ এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সরকারি খাতের। একইভাবে চাঁদপুরে দেড়শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। এরপর থেকেই নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাস সরবরাহের আবেদন জানাতে থাকে। কিন্তু কয়েকদিন আগে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর জন্য গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। তবে ওই কেন্দ্রে সীমিত পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হবে। অথচ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পূর্ণ ক্ষমতায় চালানোর মতো সংযোগ কবে নাগাদ পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। নতুন নির্মিত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও সরকারি খাতের। তাছাড়া দোহাজারী ১শ’ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজও শেষপর্যায়ে আছে। কিন্তু এখনো ওই কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলক চালানোর মতো গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। চুক্তি অনুযায়ী বেসরকারি খাতের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ করা না গেলে বিদ্যুৎ পাওয়া তো দূরের কথা, সরকার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হবে। এছাড়া সিরাজগঞ্জের দেড়শ’ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চলতি বছরের মাঝামাঝি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কেন্দ্রটিতে বর্তমানে গ্যাস সংযোগ দেয়ার প্রস্তুতি আছে। কিন্তু আশুগঞ্জ ও এলেঙ্গায় সঞ্চালন লাইনে কম্প্রেসার বসানোর আগে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে পূর্ণ ক্ষমতায় চালানোর মতো গ্যাস সরবরাহ করা যাবে না। যদিও ভোলার শাহবাজপুর ক্ষেত্রের গ্যাস অব্যহৃত অবস্থায় আছে। কিন্তু তারপরও সেখানে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সেখানে ৩৫ মেগাওয়াটের যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আছে গ্যাসের অভাবে সেটিও চলছে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিডিবির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ আছে গ্যাসের অভাবে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরকারি একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রও চলছে না। এ পরিস্থিতিতে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ অনিশ্চিততা দেখা দিয়েছে।

১৭৭ জন দরিদ্র রোগী ফিরে পেল দৃষ্টি
হেলথ ডেস্ক
 দেশের ১১৭ জন দরিদ্র রোগীর বিনামূল্যে গ্লুকোমা ও ছানি (ফ্যাকো) অপারেশন করলেন লন্ডনের কিংস্টন হাসপাতালের বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক ও সার্জন ডা. হোমান শেরাফাত।
এমন মহৎ উদ্যোগই দরিদ্র মানুষগুলোর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে এনেছে। পৃথিবীর রং, রূপ এবং সৌন্দর্য যারা হারাতে বসেছিল তারাই পেল এই চিকিৎসা সেবা।
বাংলাদেশ আই কেয়ার সোসাইটির ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় ঢাকার বনানীস্থ এমএমআর আই ফাউন্ডেশন ও রিসার্চ সেন্টারে ২৫শে ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত বিনামূল্যে গরীব রোগীদের সর্বাধুনিক ফ্যাকো মেসিনের মাধ্যমে গ্লুকোমা ও ছানি অপারেশন করা হয়।
লন্ডনের গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট এর আর্থিক সহযেগিতায় এই চক্ষু চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে মোট ১১৭ জন দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে গ্লুকোমা ও ছানি (ফ্যাকো) অপারেশন করা হয়।
এছাড়াও ঢাকার বাইরে থেকে আগত রোগীদের বিনামূল্যে থাকা-খাবার ব্যবস্থা ও ওষুধ দেয়া হয়েছে। এই অপারেশন দলে ছিলেন, লন্ডনের কিংস্টন হাসপাতালের বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক ও সার্জন ডা. হোমান শেরাফাত, গ্লুকোমা রিসার্চ এন্ড আই হসপিটালের ডাইরেক্টর ও চিফ কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, কিংস্টন হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসক ও সার্জন ডা. জিয়াউল হক, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাবনীন রহমান, গ্লুকোমা রিসার্চ এন্ড আই হসপিটালের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট ডা. সাহেদারা বেগম এবং অন্যান্য সহকারীবৃন্দ। গ্লুকোমা রিসার্চ এন্ড চক্ষু হাসপিটালের ডাইরেক্টর ও চিফ কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, গ্লুকোমা চোখের এমন একটি মারাত্মক রোগ যা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অন্ধত্বের দ্বিতীয় প্রধান কারণ। বাংলাদেশ আই কেয়ার সোসাইটির দেশব্যাপী একটি জরিপে দেখা গেছে ৩৫ বৎসর বয়স ও তার উধ্বের্ শতকরা ৩.১ ভাগ মানুষ গ্লুকোমা রোগে ভুগছে। শতকরা ১০ ভাগ লোক গ্লুকোমা রোগ আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। শতকরা ৯৬ ভাগ মানুষ গ্লুকোমা রোগের নামই শুনেননি। যাদের গ্লুকোমা রোগ আছে তাদের মধ্যে শতকরা মাত্র ছয় জন লোকের গ্লুকোমা রোগটি আছে বলে সনাক্ত করা হয়েছে এবং চিকিৎসা পাচ্ছে। বাকি শতকরা ৯৪ জন জানেই না যে তারা এই রোগে ভুগছে। তাদের স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে সনাক্ত করে ‍চিকিৎসা না করলে অন্ধত্ব অনিবার্য্য। বিশেষ করে গ্লুকোমা পরীক্ষার জন্য ৩৫ বছর বয়সের পর থেকে বৎসরে একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে চোখ পরীক্ষা করা উচিৎ। তিনি আরও জানান, আমাদের দেশে বহু লোক গ্লুকোমা রোগে ভুগে নিজের অজান্তেই সারা জীবনের জন্য অন্ধ হয়ে যান। অথচ এটি কোন দূরারোগ্য ব্যাধি নয়। একবার গ্লুকোমা রোগ নির্ণয় হলে নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করলে অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। নীরব অন্ধত্বের কারণ চোখের উচ্চচাপ। এ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
গ্লুকোমা রোগী তার রোগ ও চিকিৎসার অভিজ্ঞতা আশপাশের লোকজনকে জানালে অন্যরাও অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। গ্লুকোমা রোগ থেকে চোখের যে দৃষ্টিশক্তি হারায় তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। গ্লুকোমা রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতাই পারবে অন্ধত্বের হাত থেকে বাঁচাতে। চোখের ছানি রোগ সম্পর্কে অধ্যাপক রহমান জানান যে, বাংলাদেশের পূর্ণ বয়স্কদের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ অন্ধত্বের প্রধান কারণ হলো চোখের ছানি। সাধারণ মানুষ ছানিকে চোখে পর্দা পড়া বলে থাকে। ছানি হলে চোখের দৃষ্টি শক্তি ধীরে ধীরে কমে যাবে, ছানি পরিপক্ক হলে চোখ দিয়ে দেখা যাবে না এবং চোখের মনির রং কালোর পরিবর্তে ধূসর বা সাদা দেখা যাবে। ছানির একমাত্র চিকিৎসা হল অপারেশন। সময়মত অপারেশ না করে দেরি করলে বিভিন্ন ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং পরবর্তিতে চোখ সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। বর্তমানে ছানি অপারেশনের পর একটি কৃত্রিম লেন্স ভিতরে লাগিয়ে দেওয়া হয় যাতে রোগী চশমা ছাড়াই পূর্বের মত দেখতে পায়। উল্লেখ্য, গ্লুকোমা রিসার্চ এন্ড আই হসপিটাল বাংলাদেশ আই কেয়ার সোসাইটি একটি অলাভজনক স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রকল্প। এখানে রোগীদের অত্যন্ত কম খরচে চোখের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অপারেশন করা হয় এবং গরীব রোগীদের বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। নর্থ আমেরিকান বাংলাদেশি ইসলামিক কমিনিউটি (নাবিক) এর আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবিত হাসপাতালের ৯তলা ভবনের প্রথম দফার (ব্যাজম্যান্ট, গ্রাউন্ড ও ফার্ষ্ট ফ্লোর) কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে যা আগামী ২০১২ সালের জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এবং অন্যান্য দাতা প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা পেলে হাসপাতালের ৯তলা ভবনের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে এবং এতে সমগ্র বাংলাদেশের জনগণ সুলভমূল্যে গ্লুকোমাসহ চোখের যাবতীয় রোগের চিকিৎসাসেবা পাবে বলে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।
কর্মজীবী নারী আপনি সচেতন তো?
মৌসুমী মণ্ডল
 আধুনিক নারীদের একটু বেশিই কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। দিনের বেলা কর্মক্ষেত্রে খাটুনি। আর বাসায় ফিরে সন্তান, সংসার ও পরিবারের লোকজনকে দেখভাল করতে হয়।
আমাদের দেশের কর্মজীবী পুরুষদের এখনও পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অর্থ উপার্জনটাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। তাই তাদের এ মানসিকতার পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত নারীকেই অনেক দায়িত্ব নিতে হচ্ছে।
আপনারা মনে করুন যুগসন্ধিক্ষণের নারী। যে সময়টা আপনারা পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছেন। যার কারণে আপনার উত্তরসূরিরা পাবে সুন্দর একটি পরিবেশ। যেখানে নারীর পাশাপাশি পুরুষও একই রকম কাজ করবে।
তাই এমন সময়ে নিজেকে ফিট রাখতে প্রয়োজন সচেতনতা। তাই পরিবারের সদস্যদের প্রতি যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি নিজের যত্নে একটু সচেতন হোন।
পরিবারের কর্ত্রী হিসেবে নারীকেই পরিবারের সদস্যদের ভাল-মন্দ দেখতে হয়। আবার কর্মক্ষেত্রেও নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হয়।
সারাদিন ঘরে-বাইরে কর্মময় জীবনের পরে শরীর ও মনের উপরে যে চাপ পড়ে তা কাটানোর জন্য নিয়মিত ঘুম ও খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু কয়জনই বা পারে সবকিছু ঠিক রেখে নিজের প্রতি যত্নশীল হতে । বেশিরভাগ সময়েই কর্মজীবী নারীরা সময়ের অভাবে নিজেদের খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে পারে না যা তাদের পরবর্তী স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ । কাজের চাপ ও অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়ার কারণে অনেক নারীই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সুস্থ জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজন সঠিক পুষ্টি উপাদান । নারীদের বিভিন্ন বয়সে পুষ্টি চাহিদা বিভিন্ন হয়। তাই প্রতিটি কর্মজীবী নারীকে প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে হবে। সঠিক পুষ্টি উপাদান যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, অ্যালার্জি, আর মাথাব্যথার মতো রোগকে দূরে ঠেলে দেয় তেমনি সুন্দর চুল, ত্বক ও স্বাস্থ্য উপহার দেয়। একটু সচেতন হলেই কিন্তু যে কোনো কর্মজীবী নারী শত ব্যস্ততার মধ্যেও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারেন ।
নিচে এ সম্পর্কে কিছু টিপস দেয়া হল:
    সারাদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে । পানির মাধ্যমেই অক্সিজেন ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সম্পূর্ণ শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং দূষিত বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
    সারাদিনে অতিরিক্ত ক্যাফেইন যুক্ত খাবার যেমন চা, কফি, চকোলেট খাওয়া উচিৎ নয়।
    সকালের নাশতা কখনও বাদ দেয়া উচিৎ নয়।
    সকালের নাশতা খুব বেশি ভারি হওয়াও উচিৎ নয়। এতে হজমের জন্য শরীরে প্রচুর শক্তির অপচয় হয়। ফলে ঝিমুনি ও দুর্বল বোধ হয়।
    সকালের নাশতায় যে কোনো একটি ফল খাওয়া যেতে পারে। ফল হজমশক্তি বাড়িয়ে মস্তিষ্কে গ্লুকোজ সরবরাহ করে যা সারাদিন মানুষকে কর্মক্ষম রাখে।
    খাবারের তালিকায় শর্করা জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটির পরিমাণ কম রেখে শাকসবজি ও সালাদের পরিমাণ বেশি রাখতে হবে।
    প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় আমিষ জাতীয় খাবার থাকতে হবে। আমিষের সবচেয়ে ভালো উৎস হচ্ছে ডাল, ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম। যারা নিরামিষভোজী তারা আমিষের ঘাটতি পূরণের জন্য কয়েক প্রকারের ডাল একসঙ্গে মিশিয়ে রান্না করে খেতে পারেন।
    প্রতিদিন আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদরোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। আঁশযুক্ত খাবার হচ্ছে তাজা ফলমূল, শাকসবজি, লাল চাল ও লাল আটা।
    খুব বেশি প্রক্রিয়াজাত ও ভাজা পোড়া খাওয়া উচিৎ নয়।
    ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের খুব ভালো উৎস হল দুধ, শাকসবজি ইত্যাদি।
    রাতের খাবার খুব হালকা হওয়া উচিৎ।
    রাতে ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে দু’ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করা উচিৎ।
    সারাদিনে অন্তত ৩০ মিনিট যে কোনো হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা করার অভ্যাস শরীরকে সুস্থ রাখে তেমনি মনে প্রশান্তি আনে।

 হুমকির মুখে দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতু
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের গুরুত্বপুর্ণ ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি উপজেলার মেঘনা-গোমতী নদীর উপর ১৯৯৪ সালে ১ দশমিক ৪৭ কিঃমিঃ দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করে দীর্ঘদিনের বিড়ম্বনা ফেরি -চলাচল ওঠে গিয়ে বন্দরনগরী চট্রগ্রামের সাথে রাজধানী ঢাকা যোগাযোগ অবস্থার নতুন যুগের সূচনা হয়। কিন্তু দেশের জাতীয় সম্পদ দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু সঠিক ভাবে রক্ষনা-বেক্ষণের কারণে হুমকির মুখে মেঘনা-গোমতী সেতু। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সেতুর টোল আদায়কারী রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপালনকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ট্রাফিক টেকনোলজীর সূত্র থেকে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে পহেলা নভেম্বর সেতুটি উদ্বোধনের পর বর্তমানে সেতুর নিচের মেঘনা নদী থেকে ঢাকা- চট্রগ্রাম মহাসড়কের ৪ লেন সম্প্রসারণের কাজের জন্য বালু উত্তোলনের ফলে সেতুটির ১২ পিলারের প্রতিটি পিলার ১শ ২০ফুট গভীরে ভিত্তিস্থাপন করা হলেও ৪টি পিলারের গোড়া থেকে ৪০ ফুটের মত মাটি সরে যাওয়ায় সেতুটির উপর দিয়ে গাড়ী চলাচলের সময় কম্পন অনুভূত হয়। গত সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটি দোলনার মত দুলতে থাকে এবং একটি পিলার থেকে আরেকটি মাঝে মাঝে যে এক্সপানশন জয়েন্ট রাখা হয়েছে তার ওপর যে রাবারের পাত বসানো হয়েছিল ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে সে রাবারের পাতগুলো ওঠে গিয়ে সেই ফাঁক দিয়ে সেতুর নীচে চরের ফসলি ধানীজমি দেখা যায়। আর ভারী যানবাহন চলাচলের সময় এক্সপানশন জয়েন্টে বোমার মত বিকট শব্দে সেতুর কম্পন অনুভূত হয় এবং যাত্রীবাহী বাসের যাত্রীরা ভয়ে দোয়া দুরুদ পড়তে থাকে বলে তারা জানায়। অতিরিক্ত মালবোঝাই যানবাহন দ্রুত গতিতে সেতু পারাপারের সময় গাড়ির চাকা পাম্পসার বা এঙ্গেল ভেঙ্গে বিকল হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় । টোল আদায়কারী ও মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান দ্রুত সড়ক ও জনপথ বিভাগ নারায়নগঞ্জকে অবহিত করলে, তারা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগকে জানান। বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টি গত বছর ডিসেম্বর মাসে সরেজমিনে মেঘনা-গোমতী সেতু পরিদর্শন করেন। তিনি এ সেতুটির ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থা দেখে টোল আদায়কারী ও প্রাথমিক রক্ষণাবেক্ষণকারী দায়িত্বে নিয়োজিত এশিয়ান ট্রাফিক টেকনোলজীর প্রতিষ্ঠান এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীকে এর কারণ ও সেতুটি রক্ষায় করনীয় সম্পর্কে নির্দেশ দেন। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে ফোর লেনের কাজের অগ্রগতি দেখতে এসে তিনি সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সময় এসেতু দিয়ে যে হারে যানবাহন চলার কথা তার চেয়ে চারগুণ গাড়ি চলাচল এবং অতিরিক্ত মালবোঝাই যাবাহন চলাচলের কারনেই মেঘনা-গোমতী সেতু ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে । তাই গত জানুয়ারি মাসের দুই তারিখে ওভারলোড কন্ট্রোল মেশিন বসিয়ে অতিরিক্ত মালবোঝাই যাবাহনকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রথম দিকে একজন ম্যাজিষ্ট্রেট, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, টোল আদায়কারী ও হাইওয়ে পুলিশ এক সাথে দায়িত্ব পালন করলেও পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনের করণিক, পিয়ন আর টোল আদায়কারীর প্রতিষ্ঠানের পিয়ন আর ঝাড়ুদার দিয়ে চলছে মেশিনটির নিয়ন্ত্রণ । ফলে আগের মতই অতিরিক্ত মালবোঝাই যানবাহন চলাচল করছে। নাম মাত্র কিছু অতিরিক্ত মালবোঝাই গাড়ী ধরা হলেও তারপর ঘুষের বিনিময়ে তা ছেড়ে দেওয়া হয় এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে জরিমানা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হলেও তারপর নিয়ম করা হয় অতিরিক্ত মালবোঝাই গাড়ীগুলোকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। সরেজমিনে গিয়ে পাওয়া গেল মেশিন নিয়ন্ত্রণকারীর পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করছে পিয়ন সোহেল আহমেদ। তার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেশিন নিয়ন্ত্রণকারী ছুটিতে আছে। টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার নুরুল আমিন বলেন কত চেক করবো একটু ভালো মতো চেক করলে লম্বা যানজটের সৃষ্টি হয়ে যায়। কিছুদিন আগে আমাদের একজন সহকারী গাড়ী চাপায় মারা গেছে। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই কি করবো চেক? এব্যাপারে আটককৃত চালকদের সাথে আলাপ করলে ট্রাকের ড্রাইভার আবুল মিয়া বলেন, আপনারা সাংবাদিক দেখে আমাদেরকে আটকাইছে। আপনারা চলে গেলে টোলও ঘুষ দু’টাই দিয়ে সেতু পার হতে হবে। কাভার্ডভ্যান চালক মোখলেছ বলেন, গাড়ী ওজন মাপার মেশিনটি বসিয়ে টাকা খাওয়ার ফাঁদ বসানো হয়েছে। এব্যাপারে দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ারুল নাসের বলেন, ওভারলোড কন্ট্রোল মেশিন বসানোর পর আমি নিজে এবং আমার সহকারী অফিসার (ভূমি) শফি কামাল ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করি । উপজেলায় প্রশাসনের কাজের চাপ থাকায় নি¤œ পর্যায় কর্মকর্তা কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছে। তবে কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট সাইফুল ইসলাম জানান, মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হলে আমরা দ্রুত নিরসন কাজে দায়িত্ব পালন করি । ওভারলোড কন্ট্রোল মেশিন নিযন্ত্রণকালে তাদেরকে হুমকি দিয়ে অতিরিক্ত মালবোঝাই গাড়ী সেতু দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছে আমাদেরকে জানায় না । তাই চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি না । টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মোঃ মাহবুব কবির এর সাথে আলাপকালে জানান, আমাদের আগের টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান সেতুটির বারটা বাজিয়েছে। ওভারলোড কন্ট্রোল মেশিন বসিয়ে অতিরিক্ত মালবোঝাই গাড়ীগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে । তবে ঘুষের বিনিময়ে অতিরিক্ত ওজনের গাড়ী ছেড়ে দেয়া হয়েছে তা ঠিক না । অনেক সময় উপর লেবেল থেকে হুমকির কারণে ছাড়তে বাধ্য হই। এব্যাপারে তিনি বলেন র‌্যাব ও পুলিশ না থাকলে আমাদের লোক দিয়ে ওভারলোড কন্ট্রোল মেশিননিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। তিনি আরো জানান, অতিদ্রুত সেতুর এক্সপানশন জয়েন্ট লোহার পাতের নীচে বেয়ারিংগুলো মেরামত করা না হলে সেতুটি ঝুকিপুর্ণ হয়ে পড়ছে। সেতুটি উদ্বোধনের পর ২০০৮ সালে ১৫ মে বিদেশী ও বাংলাদেশের জয়েন্ট ভেঞ্চার ব্রোমাস সেতুর ওপরের ১৭টি এ রাবার ও ষ্টীলেরপাত দিয়ে মেরামতের কাজ সম্পন্ন করেন। মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের মালামাল দিয়ে সেতুটি মেরামত করায় সেতু ওপরের প্রতিটি জয়েন্টের সাথে রাবারের পাত উঠে যাওয়ায় সেতুটি উপরের দুইটি জয়েন্টের সাথে সংযুক্ত না থাকায় যানবাহন চলাচলের সময় বিকট শব্দ হয়ে কম্পন অনুভূত হয়। দুর্বল মেরামতের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সেতুর জয়েন্টের রাবার সমূহ ওঠে যাওয়ায় সেতুটি মেরামত জরুরি হয়ে পড়ে।
এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নারায়নগঞ্জ অঞ্চলের উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফরিদ উদ্দিন আলাপকালে জানান, ওভারলোড কন্ট্রোল মেিেশনটিকে টোল আদাযকারী প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। তবে আমাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে এটি পরিদর্শন করেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ওভারলোড কন্ট্রোল মেশিনটি সড়িয়ে নিতে অতি দ্রুত সেতুর পূর্বদিকে বড় আয়তনের রাস্তা তৈরি করছে। মেরামতের কাজ শেষ হলে যমুনা সেতুর মত একটি সংস্থার মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হবে। টোল আদাকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের নিকট অভিযোগ জানিয়েছে অতিরিক্ত ওজনের যানবাহনগুলো হুমকির মুখে ছাড়তে বাধ্য হই। তবে ২০০৮ সালে সেতুর যে মেরামত করা হয়েছে তা নি¤œ মানের রাবার দিয়ে এবং এর নীচে যে বেয়ারিং আছে তা মেরামত করা হয়নি। তাই সেতুর যে ক্ষতি হয়েছে তা মেরামতের জন্য অতি দ্রুত বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ টিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মেঘনা-গোমতী সেতু মেরামতের জন্য টেন্ডার আহবান করা হবে।

শোবিজের তিন আলোকিত নারী
বিপুল হাসান
সমাজ-সভ্যতাকে গতিশীল করে তুলতে যুগে যুগে নারী পালন করে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নারীর এই সুকীর্তিকে স্বীকৃতি জানাতে বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ৮ মার্চ পালন করা হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বের অন্যসব দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনটি পালিত হচ্ছে নানা আয়োজনে।
আমাদের মিডিয়ায় আপন মেধা ও যোগ্যতায় আলাদা অবস্থান গড়ে তুলেছেন এমন তিন নারীর কর্ম-সাফল্য-পরিচিতি আর সাক্ষাৎকার দিয়ে নারী দিবসে বাংলানিউজের বিশেষ আয়োজন সাজানো হয়েছে। এই তিনজন হলেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নায়িকা ববিতা, সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী রহমান এবং বরেণ্য নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ।
‘নারী’ শব্দটির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগটা নাড়ির। নারী মানে কন্যা-জায়া-জননী। যার মধ্যে রয়েছে আবেগ আর মমতাঘেরা কতো না সুখের কাব্য। নারীর অভিধানে একটা সময় অবহেলিত-অসহায়ত্ব-বঞ্চিত এই শব্দগুলো খুব মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেও এখন আর সেখানে এই শব্দগুলো খুব দুর্বল চেহারা নিয়ে তাকিয়ে থাকে। সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশের নারীরাও নিজেদের সাফল্যের গল্প রচনা করেছেন বহু দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে। তেমনি আমাদের শোবিজ জগতের নারীদের সাফল্য গাঁথাও চোখে পড়ে বড় করে। আপন মহিমায় বিকশিত আমাদের দেশের তিন মহীয়সী নারী হলেন ববিতা, ফেরদৌসী রহমান ও মুনমুন আহমেদ
ববিতা
শুধু দেশে নয়, চলচ্চিত্র নায়িকা ববিতার খ্যাতি ছড়িয়ে আছে বিদেশেও।  মা ডাক্তার হওয়ায়  ববিতা চেয়েছিলেন ডাক্তার হতে। জহির রায়হান পরিচালিত ‘সংসার’ নামের একটি ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ১৯৬৮ সালে। এ সময় তার নাম ছিল সূবর্ণা। ববিতা নাম নিয়ে তিনি নায়িকা হন ‘শেষ পর্যন্ত‘ ছবিতে। সত্তর ও আশির দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ববিতা ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেত্রী। সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনেও তিনি প্রশংসিত হন। ববিতা দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। এখনও অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন। ববিতা অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আরো রয়েছে টাকা আনা পাই, স্বরলিপি, সুন্দরী, কসাই, লাঠিয়াল, গোলাপী এখন ট্রেনে, জন্ম থেকে জ্বলছি, নয়ন মনি, পেনশন, ডুমুরের ফুল, বসুন্ধরা, প্রতিজ্ঞ প্রভৃতি। ববিতা সাম্প্রতিক সময়ে অবহেলিত ও বঞ্চিত শিশুদের অধিকার আদায়ে নিজেকে নিবেদিত করেছেন।
ফেরদৌসী রহমান
বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে একটি বরেণ্য নাম ফেরদৌসী রহমান। তিনি পল্লী গীতি সম্রাট আব্বাস উদ্দিনের মেয়ে। বাবার যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে বিগত প্রায় পাঁচ দশক ধরে ফেরদৌসী রহমানের সংগীত জগতে পদচারণা চলছে। পল্লীগীতি, নজরুল সঙ্গীত, রবীন্দ্রসঙ্গীত, আধুনিক আর প্লে-ব্যাক সব ধরনের গানই তিনি করেছেন।ফেরদৌসী রহমানের গানে হাতেখড়ি হয় তার বাবার কাছেই। পরবর্তীতে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, ইউসুফ খান কোরেইশী, কাদের জামেরী, গুল মোহাম্মদ খান ইত্যাদি সঙ্গীতজ্ঞের কাছে বিভিন্ন সময় তালিম নেন। খুব অল্প বয়স থেকে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়া শুরু করেন।। মাত্র ৮ বছর বয়সে রেডিওতে খেলাঘর নামের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ১৯৬০ সালে ‘আসিয়া’ ছবিতে চলচ্চিত্রে প্রথম প্লে­ব্যাক করেন। ৬০ ও ৭০-এর দশকের বহু চলচ্চিত্রে তিনি নেপথ্য কন্ঠশিল্পী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তার প্লে- ব্যাক করা চলচ্চিত্রের সংখ্যা ২৫০-এর মতো। ১৯৫৭ সালে তিনি প্রথম গান রেকর্ড করেন এইচএমভি থেকে। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ফেরদৌসী রহমান বাংলাদেশ টেলিভিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান করেন। এ পর্যন্ত তার কণ্ঠে প্রায় পাঁচ হাজার গান রেকর্ড করা হয়েছে। বিটিভিতে প্রচারিত ছোটদের ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তা পান।
মুনমুন আহমেদ
আমাদের দেশের জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ। নৃত্যকলাতেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। ১৯৯০ সালে উচ্চাঙ্গ নৃত্যে ভারতের কত্থক কেন্দ্র থেকে সম্মান সহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। দেশে ফিরে নৃত্য-শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। গড়ে তোলেন নৃত্যধারা। এই সংস্থা বাংলাদেশের নৃত্য ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। নৃত্যশিল্পী হিসেবে মুনমুন পারফর্ম করেছেন ভারত, পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, অষ্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, কেনিয়া, জাম্বিয়া, নাইজেরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইরাক, কাতার, লিবিয়া প্রভৃতি দেশে। পেয়েছেন অসংখ্য স্বীকৃতি ও পুরস্কার। নাচ ছাড়াও বিভিন্ন সময় টিভিনাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে থাকেন।
নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে : ববিতা
বিপুল হাসান
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা ববিতা। বর্তমানে অবহেলিত বঞ্চিত শিশুদের অধিকার আদায় ও তাদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। কাজ করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিসট্রেড চিলড্রেন এন্ড ইনফ্যান্ট ইন্টারন্যাশানাল (ডিসিআই)-এর শুভেচ্ছা দূত হয়ে। উদ্যোগ নিয়েছেন নানাবাড়ি নড়াইলের লোহাগড়ায় একটি আধুনিক হাসপাতাল গড়ে তোলার। বিশ্ব নারী দিবস সামনে রেখে বাংলানিউজের বিভিন্ন প্রশ্নের তিনি উত্তর দেন।
বাংলানিউজ : বিশ্ব নারী দিবসটিকে কীভাবে দেখেন?
ববিতা : নারীদের অধিকার ও সম্মানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যই বিশ্ব জুড়ে ৮মার্চ নারী দিবস পালন করা হয়। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই নারীর পিছিয়ে আছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশে নারীদের ভাগ্য এখনও পুরুষদের উপর নির্ভরশীল। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে না পারলে, এদেশে নারীর অধিকার কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। তাই দিবস বা বিবৃতির মধ্যে নারীর অধিকার নিয়ে কথা বললে চলবে না। নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নেওয়া জরুরী।
বাংলানিউজ : একজন নারী হিসেবে আজকের পর্যায়ে কি কি বাঁধা অতিক্রম করে এসেছেন?
ববিতা : জন্মের পর থেকেই ছেলে আর মেয়ের মধ্যে ব্যবধান তৈরি করা হয়। ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের নানারকম বাঁধানিষেধের মধ্যে পড়তে হয়। নানারকম সামাজিক আর ধর্মীয় অনুশাসন চাপিয়ে দেওয়া হয়। একজন নারী হিসেবে আমাকেও এসব বাঁধার পাহাড় ডিঙিয়ে আসতে হয়েছে। তবে আমাকে দিয়ে তো সমাজকে দেখলে হবে না, তৃণমুল পর্যায়ে চোখ রাখতে হবে। তৃণমুল পর্যায়ের নারীরাই বেশি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
বাংলানিউজ : শোবিজের নারীরা কেমন আছেন?
ববিতা : শোবিজে মুক্তমনা মানুষরা কাজ করে, তাই সমাজের অন্যসব জায়গা থেকে এখানকার অবস্থা অনেক ভালো। তবে এখানেও যে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে না, তা নয়। অনেকেই শোবিজের নারীদের সম্মানের চোখে দেখেন না। এ জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা জরুরী
বাংলানিউজ: আপনি তো অবহেলিত শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন, এ সম্পর্কে বলুন?
ববিতা : আমি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন  ডিসট্রেনড চিলড্রেন এন্ড ইনফ্যান্ট ইন্টারন্যাশানাল (ডিসিআই)-এর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করছি। এই সংগঠনটি বাংলাদেশের সুবিধা বঞ্চিত শিশু ও তাদের পরিবার নিয়ে কাজ করে। এটি শিশু স্পনসর কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র শিশুদের জীবনযাপনের মান উন্নত করার জন্য কাজ করছে। কিছুদিন আগে আমি এই সংগঠনটির হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফরে গিয়েছিলাম । নিউইয়র্ক, শিকাগো, মেরিল্যান্ড, ফিলাডেলফিয়া, মিশিগান, কালিফোর্নিয়া প্রভৃতি শহরে শিশু অধিকার বিষয়ক সম্মেলনে বক্তব্য রাখি এবং অনেক মানুষের সঙ্গে সাক্ষাত করি, যারা দরিদ্র দূরীকরণের সমাধান নিয়ে ভাবছে। শুভেচ্ছা দূত হিসেবে আমি বাংলাদেশের গরিব মানুষদের কথা ও বঞ্চিত শিশুদের দূর্দশা নিয়ে কথা বলি। সমাজের বিত্তবানদের কাছে আহ্বান জানাই তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়াতে। এই আহ্বান নিয়েই ভ্রমনে করি। এই ভ্রমণে গিয়ে নতুনভাবে উপলব্ধি করি মানুষের মধ্যে এখনো মানবতা আছে। দেশি-বিদেশী অনেকেই এ সময় ডিসিঅইয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন।
বাংলানিউজ : আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কথা জানতে চাই।
ববিতা : আমার শিল্পী জীবনে মানুষেরা আমাকে দিয়েছে অনেক অনেক ভালোবাসা। তারাই আমাকে আজকের ববিতা বানিয়েছে। ভালোবাসা কখনো ওয়ান ওয়ে জার্নি হতে পারে না। যদি হয় তাহলে গলদ থাকে। তাই আমি মনে করি, এখন আমার রিটার্ন দেওয়ার সময় এসেছে। ভালোবাসার পরিবর্তে ভালোবাসাই দিতে চাই। এ জীবনে পেয়েছি অনেক। আমার আর পাওয়ার কিছু বাকি নেই। তাই এ জীবনটা আমি মানুষের কল্যাণে উৎসগ করতে চাই। ফুলের মতো শিশুদের যেন অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার হতে না হয়, সেজন্য সবাইকে সচেতন করে তোলার মধ্য দিয়ে এ জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।
ইনিংস ঘোষণা করেছেন দ্রাবিড়
স্পোর্টস ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন ‘দ্য ওয়াল’ খ্যাত রাহুল দ্রাবিড়। টি-টোয়েন্টির পর গত বছর অবসর নেন ওয়ানডে থেকে। শুক্রবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন টেস্ট থেকেও। এর মধ্যদিয়ে ১৬ বছরের বণার্ঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন মধ্যপ্রদেশের এই ক্রিকেটার।
১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় দ্রাবিড়ের। এরপর অনেক চড়াই-উৎড়াই’র মধদিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। টেকনিক, কৌশল ও ধৈর্য্যরে নিপুণ শিল্প প্রদর্শন করে টেস্ট ক্রিকেটে রাহুল নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে। এজন্য বোদ্ধারা তাকে উপাধি দিয়েছেন ‘দ ওয়াল’।
১৬৪টি টেস্ট খেলে ৩৬টি শতক হাঁকিয়েছেন। নিজের নামের পাশে যোগ করেছেন ১৩,২৮৮ রান। টেস্টের পাশাপাশি ওয়ানডেও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন ৩৯ বছর বয়সী ডানহাতি এই ক্রিকেটার। ৩৪৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে করেছেন ১০,৮৮৯ রান। হাঁকিয়েছেন ১২টি শতকও। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সফরের স্মৃতি সুখের হয়নি ভারতের সাবেক এই অধিনায়কের। তাই নিন্দুকদের সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়েছেন দলের তিন গ্রেট সচিন টেন্ডুলকার, ভিভিএস লক্ষ্মণ ও রাহুল দ্রাবিড়। এদের মধ্যে সবার আগে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দ্রাবিড়। সংবাদ সম্মেলনে দ্রাবিড় বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। ১৬ বছর আগে ভারতের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলেছি। এখন সময় হয়েছে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার।’
দ্রাবিড়কে মিস করবো : সচিন
স্পোর্টস ডেস্ক
  ‘দ্য ওয়াল’ নামে পরিচিত রাহুল দ্রাবিড়ের অবসরের খবরে স্মৃতিকাতর হয়েছেন সচিন টেন্ডুলকার। লিটল মাস্টার জানিয়েছেন, ড্রেসিং রুম ও মাঠে দ্রাবিড়ের অভাব কেউই পূরণ করতে পারবে না।
টেন্ডুলকারের থেকে চার মাসের ছোট দ্রাবিড়ের প্রসঙ্গ টানতে গিয়ে টেন্ডুলকার বলেন,‘আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তগুলো দ্রাবিড়ের সঙ্গেই ভাগভাগি করেছি। তাঁর অভাব কেউই পূরণ করার মতো নয়।’
‘শুধু ড্রেসিং রুমেই নয় মাঠেও তাঁর অভাব অনুভব করবো,’-জানান ব্যাটিং জিনিয়াস।
টেস্ট দলে টেন্ডুলকারের থেকে পাঁচ বছর পর দ্রাবিড়ের অভিষেক হয়েছিলো। কর্নাটকের এই ব্যাটসম্যান লিটল মাস্টার থেকে মাত্র ২ হাজারের মতো কম রান করেছেন। টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন দ্রাবিড়। এই ডানহাতির ব্যাট থেকে এসেছে ১৩,২৮৮ রান। তাঁর আগে আছেন সচিন টেন্ডুলকার (১৫,৪৭০ রান)। দ্রাবিড়ের পরের স্থানে আছেন অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং (১৩,২০০ রান)। টেস্টে দ্রাবিড়ের সেঞ্চুরি ৩৬টি এবং হাফ সেঞ্চুরি আছে ৬৩টি। টেস্ট বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাত হলেও ওয়ানডেতে তাঁর কীর্তি কম নয়। এখানেও করেছেন ১০ হাজারের উপরে রান।
বৈশাখে কণ্ঠশিল্পী তারিনের অভিষেক
বিনোদন প্রতিবেদক
নন্দিত অভিনেত্রী তারিনের গাওয়া গানের প্রথম অ্যালবাম ‘আকাশ দেবো কাকে’। প্রকাশ পাওয়ার আগেই এটি চলে এসেছে আলোচনায়। গত বছর শুরু করা এই অ্যালবামটি এবারের ভালোবাসা দিবসে রিলিজ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভিনয় নিয়ে তারিনের ব্যস্ততার কারণে সেটি সম্ভব হয় নি। আসন্ন পয়লা বৈশাখে অ্যালবামটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এবারের পয়লা বৈশাখে প্রথম একক অ্যালবাম ‘আকাশ দেবো কাকে’ প্রকাশের মাধ্যমে কণ্ঠশিল্পী তারিনের অভিষেক হচ্ছে। অবশ্য অ্যালবাম প্রকাশের আগেই তারিনকে বেশ কিছু অনুষ্ঠানে সরাসরি গাইতে দেখা গেছে। শৈশব পার করার পর তারিন গান চালিয়ে গেলেও কোনো অনুষ্ঠানে তাকে গান গাইতে আগে দেখা যায় নি। গান গেয়েছে কেবল ঘরোয়া অনুষ্ঠানে। কিন্তু ইদানিং টিভি অনুষ্ঠানসহ একাধিক স্টেজ প্রোগ্রামে গান গাইতে দেখা গেছে। গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের হাততালিও পাচ্ছেন এই সুঅভিনেত্রী।
অ্যালবামের ১০টি গান রেকর্ড করে তারিন এখন গানের বিষয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। সেই আত্মবিশ্বাসের জোরেই সুঅভিনেত্রী তারিন এখন গানের আকাশে উড়ছেন গানচিল হয়ে। অভিনয় কমিয়ে দিয়ে তারিন এখন মন বসিয়েছেন গান আর নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘এ নিউ ট্রি এন্টারটেইনমেন্ট’-এর কাজে। নিজের প্রথম একক অ্যালবাম  প্রসঙ্গে তারিন বলেন, গান তো শিখছি-গাইছি সেই ছোটবেলা থেকেই। বুও গানটাকে বাইরে প্রকাশ করিনি। আমার কণ্ঠে গানটা ছিল একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়ের মতো। যদিও পারিবারিকভাবে অনেকেই বলেছেন আমাকে গানটা নিয়মিত করার জন্য। আমি সেটা কর্ণপাত করিনি এই ভেবে- একসঙ্গে দুটো কাজ হয় না। তাই এতদিন অভিনয়টাই করেছি মন দিয়ে। তবে এই পর্যায়ে এসে মনে হল গানটা এবার টুকটাক করা যায়। অন্তত একটা অ্যালবাম। এরপর গীতিকার জুলফিকার রাসেলের  সহযোগিতায় গানগুলোর রেকর্ডি শেষ করেছি। আশা করছি এবারের বৈশাখের প্রথম দিন অ্যালবামটি শ্রোদাদের হাতে পৌঁছাতে পারবো। তারিনের প্রথম একক অ্যালবাম ‘আকাশ দেবো কাকে’ অ্যালবামে ৪টি দ্বৈত আর ৬টি একক গানের সবক’টি গানই লিখেছেন জুলফিকার রাসেল। দ্বৈতকণ্ঠের গানগুলোতে তারিনের সহশিল্পী হিসেবে থাকছেন তপন চৌধুরী, ইবরার টিপু, কলকাতার রূপঙ্কর ও রাঘব চ্যাটার্জি। সবক’টি গানের সুর করেছেন বাপ্পা মজুমদার, ইবরার টিপু, জয় সরকার, রূপঙ্কর ও বেলাল খান।
সখী ভালোবাসা কারে কয়?
গ্রন্থনা: শেরিফ আল সায়ার
আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিশ্বময় এ দিনটি উদযাপিত হয় উপহার বিনিময়ের মধ্য দিয়ে। ভালোবাসার মানুষটির মুখে অন্তত একদিন হাসি ফুটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে সবাই। তবে ভালোবাসা একদিনের জন্য নয়। ভালোবাসা হোক প্রতিদিনের জন্য। তারপরও বাংলাদেশে বেশ কয়েক বছর ধরেই এদিনটি পালন হয়ে আসছে। তরুণ প্রজন্ম এদিনটি রঙিন করে পালন করে থাকে। তবে যে অনুভূতি ‘ভালোবাসা’ নিয়ে এতো আয়োজন সে সম্পর্কে তাদের ভাবনা কী? এমন প্রশ্নই করা হয়েছে বহুজনকে। প্রশ্ন করা হয়েছিল রবি ঠাকুরের গানের লাইনের মতই ‘সখী ভালোবাসা কারে কয়?’ সবাই উত্তর দিলেন তাদের মত করেই।
Ireenআইরিন সুলতানা, ব্লগার
ভালোবাসা কারে কয়? এর উত্তর পুঁথিগতভাবে লিপিবদ্ধ করা কখনই সম্ভব না। রবি ঠাকুরের গানের সেই বিখ্যাত চরণ, ‘সখী ভালোবাসা কারে কয়’ এর রেশ দেখা যায় অধুনা টুটুলের গানেও। যত বছর বয়সেই লিখুন না কেন, মনের তারুণ্যে সে সময় রবি ঠাকুর খানিকটা বিষ্মিত আবেগ নিয়ে জানাতে অথবা জানতে চেয়েছিলেন, ‘সেকি কেবলি যাতনাময়’ । আর আধুনিক প্রজন্মের টুটুলের গানে শোনা যায়, ‘নদীর জলে ভালবাসা খোঁজার কোনও অর্থ কি হয়’! অর্থ্যাৎ ভালোবাসার মত এত প্রাচীন একটা বিষয় এখনো রহস্যই রয়ে গেল! সম্ভবত এ কারণে হালের ফেসবুক প্রজন্ম সম্পর্কের স্ট্যাটাসে জানান দিচ্ছে ‘It`s complicated’ ।
কিন্তু ভালবাসা আসলে জটিল নয়, একে জটিল-কুটিল করার দায়ভার মানুষেরই। ব্যক্তি বিশেষে কেউ বুদ্ধি দিয়ে ভালোবাসে, কেউ যুক্তি-দর্শন দিয়ে, কেউবা নির্জলা আবেগ দিয়ে, কারো জন্য ভালোবাসা ফ্যাশন, কারো জন্য প্যাশন! ভালোবাসার এই কাঠামো ও এর বিপরীতে সম্ভাব্য কমপ্লিকেসি, সেটা man made, মানে মনুষ্য ‍সৃষ্ট। ভালোবাসা মনোযোগ প্রত্যাশী। অস্থিরতা, মনোচাঞ্চল্য সম্পর্কের সাবলীল সরগমকে বিঘ্ন করে। অবিশ্বস্ততা ভালোবাসাকে সমাপ্তির কফিনে শায়িত করে। অথচ তরুণ প্রজন্ম মাত্রই অস্থির-চঞ্চল! তরুণ প্রজন্ম যদি নিজেরাই নিজেদের মুখোমুখি হয়ে দেখে-ভেবে-বুঝে নেয় তাদের ধরণকে, তাহলে ভালোবাসা নিয়ে ‘কমপ্লিকেটেড’ ধারণা পোষণকারী প্রজন্ম ভালোবাসার একটা নিশ্চিত বিহিত নিজেরাই খুঁজে পেতে পারে।
ভালোবাসা নিজের জন্য হোক, প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য হোক, পরিবারের জন্য হোক, দেশের জন্য হোক। প্রতিদিনই হোক। দিবসের জন্য ভালবাসা বসে থাকবে না। তবে একটি বিশেষ দিবসে সবাই মিলে ঘোষণা করে ভালোবাসা উদযাপন এমন কিছু মন্দ নয়। মজার হলো, পৃথিবী টিকে থাকলে, মানব প্রজাতি বেঁচে থাকলে আগামি ১০০ বছরেও মানুষ ‘ভালোবাসা কারে কয়’ এর উত্তর খুঁজবে। মানুষ যতবার ভালোবাসা খুঁজবে, ততবারই ‘ভালোবাসা কারে কয়’ এর উত্তর খুঁজবে। প্রশ্নটা তরুণ প্রজন্মের প্রত্যেকের কাছ থেকেই প্রতিধ্বনিত হবে। তবে একজন যত বড় দার্শনিক-ঋষি-মনীষীই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত ভালোবাসার প্রস্তুতকারক ট্যাগ হিসেবে লেখা থাকুক ‘made in heart’ , কারণ একজন ‘হৃদয়বিদ’ এর পক্ষেই ভালোবাসা সম্ভব।  
ফারজানা রুম্পা, লেখক
ভালোবাসা একটি আপেক্ষিক বিষয়। এটি একটি সুক্ষ্ম অনুভূতি যা মানুষকে প্রতিদিন নতুন করে বাঁচার উৎসাহ দেয়। মানুষ নানা কারণে একে অপরকে ভালোবাসে। হয়তো সোন্দর্য্য, হয়তো স্মার্টনেস, হয়তো মেধা বা কখনো কখনো সাধারণ কথাবলাই ভালো লাগার কারণ হয়ে পড়ে। কিন্তু আজকালকার যুগে এসব কিছুর উপরেও যা প্রয়োজন তা হলো স্বাচ্ছন্দ্য। যখন মানুষ কারো সঙ্গে থাকতে ভালোবাসে, তখনই মানুষ তাকে ভালোবাসে। কোনও প্রয়োজনের তাগিদে একসাথে বসবাস করাটা আসলে কোনও এক সময় জীবনভর যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যে সম্পর্কে নিজের চাওয়া পাওয়া যাকে বোঝাতে হয় না, কোনও আরোপিত ভালোবাসা-বাসি যখন থাকে না, সেটাই ভালোবাসা। স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে জীবন শেয়ার করার অপর নাম ভালোবাসা। আর যখন এই একসাথে থাকা অভ্যাসে পরিণত হয় তখনই মানুষ সুখী হয়। এগুলো পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত, সম্পূরক। আর এই অনুভূতিটাকে অনুভব করার জন্য যা প্রয়োজন তা হলো- নিজেকে ভালোবাসা।

সজিব আহমেদ, সংগঠক
ভালোবাসা মানেই হলো বিশ্বাস। যে বিশ্বাসে বিনা বাধায় নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া যায় সাগরের জলে। যে বিশ্বাসে ভর করে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে বলা যায়- ওই আকাশ আমার। আর সেই বিশ্বাসের জোরেই হাতে হাত ধরে পায়ে পা মিলিয়ে পাড়ি দেওয়া যায় অনন্ত পথ।

ফৌজিয়া করিম অনু
ভালোবাসা হলো সিগারেটের মত। না থাকলে উশখুশ লাগে, ভরপেটে খেলে ঢেকুর উঠে। বেশি খেলে বুকে ব্যাথা করে। পকেটের ওজনও কমায়। যারা আশেপাশে থেকে পজিটিভ ক্ষতির শিকার হয়, তাদের কাছে হাজারবার ছেড়ে দেবো ভেবেও ছাড়া হয়ে ওঠে না। বাবা-মায়ের অগোচরেই এসব করতে হয়। তবে ভালোবাসার মধ্যে কোনো সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ নেই।
সুপ্রিয়া শৈলী, সংগঠক
ভালোবাসা হলো একটা বিশেষ অনুভূতি যা প্রিয়জনকে ঘিরে আমার মাঝে সারাক্ষণ একটু একটু করে বেড়ে চলা একটি নাম। নিজেকে ভালোবাসার আবিরে রাঙাতে চাই শুধু তার জন্য। যেখানে যাই আমার সব পথ কীভাবে যেন তার কাছাকাছি হয়ে যায় জানি ‍না। ভালোবাসা মানে পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষের মাঝে প্রিয় মানুষটিকে আলাদা করে দেখা।


ইশিতা শারমিন রায়হান, শিক্ষার্থী, ইউল্যাব
ভালোবাসার সংজ্ঞা দিতে সবাই ব্যস্ত আজ। কারণ আজ ভালোবাসা দিবস। কিন্তু আমরা যে প্রতিদিন একটু একটু করে ভালোবাসি তা ভুলে যাই খুব সহজে। মা তার সন্তানকে ভালোবাসে প্রতিদিন। বউ তার স্বামীকে, বন্ধু তার বান্ধবীকে এমনকি ভাই বোনের ভালোবাসাও প্রতিদিন আদান প্রদাণ করা হয়। ভালোবাসা দিবসটা শুধু ভালোবাসাকে একটা রূপ দেওয়ার জন্য। কখনও ভালোবাসা প্রকাশ পাচ্ছে ফুল দেওয়া নেওয়ার মাঝে। কখনও চকলেট বা কখনও অন্যকোনো উপহার। ভালোবাসা সবার জন্য সমান নয় কিন্তু ভালো লাগে অনুভূতিটা সবার কাছে এক ও অদ্বিতীয়। তাই আমি মনে করি ভালোবাসার কোনো নাম নেই, দিবস নেই, প্রতিদিনই আমরা ভালোবেসে যাই।
মৌরি মেহজাবীন, শিক্ষার্থী, ইউল্যাব  
ভালোবাসা হলো এমন এক সম্পর্ক যা প্রথম প্রথম বোঝা যায় না। এটি এক শব্দে বলতে হয় অনুভব করার মতো। হঠা‍ৎ করেই মনের কোণে নাড়া দিয়ে উঠে এই টান। প্রাণে বয়ে ‍যায় স্নিগ্ধতার বাতাস। পরিচিত সেই মানুষটির সামনে গেলে কেমন জানি আকুলতা, লজ্জা কাজ করে মনের অন্তরালে। ভালোবাসা গড়ে ওঠার পর থেকে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কাটানো এক একটি মুহূর্ত যেন স্বপ্নীল আকাশের দিকে হাতছানি দেয় আর কানে কানে বলে ‍যায়- তুমি একা নও, কেউ আছে তোমার জন্য এই সুন্দর পৃথিবীতে।

প্রভাবশালী উদ্যোক্তা সুমাইয়ার গল্প
মাহবুব আলম
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিজনেস সাপ্তাহিক পত্রিকায়গুলোতে সেরা তরুণ উদ্যোক্তাদের মাঝে উঠে আসছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সুমাইয়া কাজীর নাম। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সিএনএন নির্বাচিত ‘ইয়াং পার্সন হু রকস্’ প্রতিযোগিতায়ও সেরাদের কাতারে সুমাইয়া কাজী।
এসব কারণেই সুমাইয়া এখন বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০ উদ্যোক্তার নামের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং ক্লাউট ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকায় তার অবস্থান স্থান ১৬ নম্বরে। সুমাইয়ার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডক্টর কাজী গোলাম নিজামউদ্দিন। মা মেরিনা নিজাম। সুমাইয়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকোর বে এলাকায় বাস করেন। সুমাইয়া কাজীর পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশে ফেনী জেলার মাথিয়ারা গ্রামে।
সুমাইয়া কাজী যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়ার ফাঁকে সমাজসেবায় মনোনিবেশ করেন। তিনি সানমাইক্রো সিস্টেমে মার্কেটিং ম্যানেজারের কাজ নেন। পাশাপাশি ২০০৫ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘কালচারাল কানেক্ট ডট কম’ (টিসিসিসি) নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
৩৫ বছরের কম বয়সী তরুণদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে উজ্জীবিত করতে টিসিসিসি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে সুমাইয়া কাজীর প্রতিষ্ঠান টিসিসিসি থেকে প্রকাশিত হচ্ছে পাঁচটি সাপ্তাহিক ই-ম্যাগজিন। ম্যাগাজিনগুলো হচ্ছে,  দ্য দেশি কানেক্ট, দ্য মিডেলইস্ট কানেক্ট, দ্য এশিয়া কানেক্ট, দ্য ল্যাটিন কানেক্ট এবং দ্য আফ্রিকান কানেক্ট। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এসব ম্যাগাজিনের গ্রাহক সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। ২০০৫ সালে মাত্র তিনজন স্টাফ নিয়ে যাত্রা করা এসব ম্যাগাজিনে বর্তমানে ৫০ জন কাজ করছেন। সুমাইয়া পড়াশোনা করেছেন মার্কেটিং অ্যান্ড স্ট্র্যাটিজিক প্ল্যানিংয়ে। সুমাইয়া কাজী এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ম্যাগাজিনগুলো দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ায় বর্তমানে দুটি দেশের আট অঙ্গরাজ্যের ১৮টি শহরে এর অফিস শুরু করতে হয়েছে। এখানে আমরা সবাই একটি টিমওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করছি।’ উল্লেখ্য ২০০৬ সালে বিজনেস উইক ম্যাগাজিন কর্তৃক আমেরিকায় অনূর্ধ্ব ২৫ বছর বয়সের সেরা উদ্যোক্তার তালিকায় স্থান পান সুমাইয়া কাজী। ওই বছর সেই ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিশ্বের সেরা ৭৫ মহিলা উদ্যোক্তার একজন নির্বাচন হন সুমাইয়া।
তরুণদের প্রথম বইয়ের গল্প
গ্রন্থনা: শেরিফ আল সায়ার
বইমেলার বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গেছে। শেষ হবে লেখক-পাঠকের মিলন মেলা। প্রতিবছর নবীন প্রবীন লেখকদের বই প্রকাশে ব্যস্ত থাকে প্রকাশকরা। আর পাঠকরা খুঁজে বেড়ায় মনের মত বই। এবছর বলা হচ্ছে, তরুণ লেখকদের বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ বাড়ছে। যা সত্যিই বাংলা সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। তরুণদের বই কিংবা তরুণদের প্রথম বই তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। পাঠকদের কাছে তরুণরা নিজেদের ভাবনাকে ছড়িয়ে দিতে চায় বইয়ের মাধ্যমে। প্রতিবছর বইমেলায় তরুণদের প্রথম বই প্রকাশ ‍পায়। যার ব্যতিক্রম হয়নি এ বছরও। কয়েকজন তরুণ লেখকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি। স্বপ্নযাত্রার এবারের আয়োজন সেই সব তরুণ লেখকদের নিয়েই যাদের এবছর প্রথম বই প্রকাশিত হয়েছে। তাদের কাছেই জানতে চাওয়া হলো নিজের লেখা প্রথম বই হাতের পাওয়ার পর কেমন অনুভূতি হয়েছে।
সেই সকালের গল্প, উপন্যাস
ফাতেমা আবেদীন নাজলা
প্রকাশনী: জাগৃতি
কোনো একটি বইয়ের আদ্যোপান্ত সম্পূর্ণ আমার কথা এই অনুভূতি অন্য যেকোনো আনন্দময় অনুভূতির চেয়ে অনন্য। আমার ক্ষেত্রে ‘আমার বই’ এই আনন্দের চেয়ে একটু আশঙ্কাই বেশি কাজ করেছে। মনের মধ্যে একটু খুতখুত। আদৌ লেখার সময় হয়েছে কিনা!, হঠাৎ করে বই লেখাটা বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন কেমন করে নেবে সেটিও মনের মধ্যে কাজ করেছে।
বলা যায় আনন্দের চেয়ে ভয়টা একটু বেশিই কাজ করেছে বলে আনন্দকে অনুভব করতে একটু সময় লেগেছে। সেক্ষেত্রে ভিন্ন একটা অনুভূতির কথা বলা যায়। বইটি পড়ে পাঠকদের মন্তব্য আমাকে আপ্লুত করেছে।
একজন পাঠক একটি বই কিনে পড়ে আরো ৫টি বই কিনে নিয়ে গেছেন। ভদ্রলোক ফোন করে জানিয়েছেন, অনেকদিন পর একটি মনের মতো বই পড়েছি, তাই আরো ৫টা কিনলাম, বন্ধুদের দেব। এত অদ্ভুত লাগছিল। মনে হচ্ছিল ভুল শুনছি।
সব মিলিয়ে ভালো লাগা কষ্ট আনন্দ মিলেমিশে ফুচকা খাওয়ার একটা অনুভূতিই কাজ করছে, সব সময় কুরমুরে ফুরফুরে।
হুদাই
গোলাম রাব্বানী
প্রকাশনী : শূন্য প্রকাশ
পৃথিবীর কোনো শিল্পকলাতেই মানুষ নিজেকে অতিক্রম করতে পারেনি। প্রতিদিন লেখা হয়, একই গল্প, একই কবিতা, তাই সব গল্প একই রকম। শুধু পুরাতন সময়কে নতুন করে ব্র্যান্ডিং করা। আমিও তাদের একজন। এই ‘হুদাই’ পুস্তিকার লেখায় আমাকেই পাওয়া যাবে। নিজেকে অতিক্রম করতে পারিনি। প্রথম বই প্রকাশ নিয়ে এক ধরনের উত্তেজনা তো ছিলই। মজার বিষয় হচ্ছে এ মাসে আমার দুটি সন্তানের জন্ম হল। এক আমার কন্যা প্রজাপতি কাজী দ্বিতীয় আমার বই ‘হুদাই’ ফলে বসন্ত বাতাসে বেশ ফুরা ফুরা ফূর্তিতেই আছি।
বাংলা ব্লগের ইতিবৃত্ত
একরামুল হক শামীম
প্রকাশনী: শুদ্ধস্বর
প্রথম বই নিয়ে লেখা ফেসবুকের স্ট্যাটাসটিই শুরুতে তুলে দেই – ‘আমি একজন অতিমাত্রায় অলস শ্রেণীর লেখক। ২০০৯ সাল থেকে বই বের করার পরিকল্পনা করে যাচ্ছি। প্রতিবছরই শেষ পর্যন্ত লেখার কাজ শেষ করতে পারিনি।’ মজার ব্যাপার হলো গত তিন বছরে আলাদা আলাদা তিনটা বই নিয়ে কাজ করেছি এবং ডেডলাইন মিস করার পর সেই বই নিয়ে আর কাজ করিনি। কিন্তু এ বছর পুরনো নিয়ম ভঙ্গ করে জানুয়ারি মাসে বই লেখার কাজ শেষ করে ফেললাম। আমার প্রথম বই ‘বাংলা ব্লগের ইতিবৃত্ত’। বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। বইটি পাওয়া যাবে শুদ্ধস্বরের স্টলে। স্টল নং ৪৪৪, ৪৪৫, ৪৪৬। প্রথম বই প্রকাশের ব্যাপারটি আমার জন্য অন্যরকম অনুভূতি। দীর্ঘদিন ধরেই ইচ্ছে ছিল বাংলা ব্লগের নানা দিক নিয়ে একটা বই লেখবো। এর আগে বাংলা ব্লগ নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন ও গবেষণাপত্র প্রকাশিত হলেও বাংলা ব্লগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কোন বই প্রকাশিত হয়নি। সেই হিসেবে এই বইটিই বাংলা ব্লগ কেন্দ্রিক প্রথম বই। বাংলা ব্লগিংয়ের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি বইটি লেখার ক্ষেত্রে। আমি একটি গবেষণানির্ভর বই তৈরি করতে চেয়েছি। নিজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি অন্যান্য ব্লগাররা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কী ভেবেছেন তাও তুলে ধরেছি বইটিতে। এই বইটি ব্লগ সম্পর্কে আগ্রহীদের পাশাপাশি নিউ মিডিয়া স্টাডিজের শিক্ষার্থীদেরও কাজে লাগবে বলে মনে করি। বইটিতে মোট দশটি অধ্যায় রয়েছে। এগুলো হলো- ১. ব্লগের সূচনা ও বাংলা ব্লগ, ২. বাংলা ব্লগ ও ব্লগ-কমিউনিটির ভাঙা গড়া, ৩. ব্লগ সংস্কৃতি, ৪. ব্লগ রাজনীতি ও ব্লগের রাজনীতি, ৫. ব্লগের ভাষা, ৬. ব্লগের সাহিত্য ও ব্লগ সাহিত্য, ৭. ব্লগ, নাগরিক ও সামাজিক সাংবাদিকতা, ৮. গণজাগরণ ও ব্লগের সম্ভাবনা
নানা কাজের মুক্ত সফটওয়্যার
নুরুন্নবী হাছিব, তাম্রলিপি প্রকাশনী
স্কুলে পড়ার সময় থেকেই সংবাদপত্র, মাসিক ম্যাগাজিন পড়ার প্রতি আমার দারুন আগ্রহ। পড়ার আগ্রহ থেকেই লেখালেখির শুরু। গ্রামে পড়াশোনার সময়ে প্রতিদিনের সংবাদপত্র কিংবা ম্যাগাজিন সংগ্রহের বিষয়টি ছিলো বেশ কঠিন। মনে পড়ে আমাদের বাড়ির কাছ দিয়ে হকার যেতো দিনে একবার। তাও আবার যাওয়ার সময়টা নির্দিষ্ট ছিল না। আর তাই রাস্তার পাশে গিয়ে অপেক্ষা আর অপেক্ষা।
তখন থেকেই লেখালেখির শুরু যা আজো প্রিয় কাজের মধ্যে একটি। এক সময়ের শখ পরবর্তীতে নেশা। এখনতো পেশা হিসেবেই যুক্ত হয়ে গেছে। লেখালেখির সঙ্গে জড়িত থাকার কারনেই বইয়ের প্রতি দারুন এক নেশা তৈরি হয়ে যায়। পরিচিত কারো বই হাতে পেলে দারুন লাগতো। সুন্দর প্রচ্ছদ, চকচকে ছাপা, সুন্দর ভাবে বাঁধানো একটি বই হাতে নিয়েই খুশিতে মন ভরে যেতো। সে সময় থেকেই মনে সুপ্ত ইচ্ছে ছিলো একদিন আমারও বই প্রকাশ হবে। আমার বইয়ের পাঠকরাও এমন অনুভূতি পাবে! আমার সে আশা এবারের বইমেলায় পূরণ হলো। আমার প্রথম বই ‘নানা কাজের মুক্ত সফটওয়্যার’ প্রকাশিত হয়েছে এবছরের একুশে বইমেলায়। যেদিন বইটি প্রকাশ হবে সেদিন মনে এক উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। বইটি হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যরকম অনুভূতি হয়েছিল। প্রচ্ছদ উল্টে বইটি খুলতে নতুন গন্ধ নাকে লাগলো। মনে পড়ে গেলো সেদিনের কথা, ‘সুন্দর প্রচ্ছদ, চকচকে ছাপা, সুন্দর ভাবে বাঁধানো একটি বই!’ কবে থেকে ভেবেছি আমার একটি বই প্রকাশ হবে এবং সেটি হয়েছে। অনেকদিনের অপেক্ষার অবসান হওয়ায় মনে হয়েছিল অবশেষে হলো।