Year-18 # Issue-36# 23 October-2011

গাদ্দাফি সাম্রাজ্যের অবসান
ডেস্ক রিপোর্ট
লিবিয়ার ক্ষমতাচ্যুত নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে দেশটির জাতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ (এনসিটি)। তবে নিরপেক্ষ কোনো সূত্র তাৎক্ষণিকভাবে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেনি। এর আগে এনটিসির এক মুখপাত্র গত বৃহস্পতিবার গাদ্দাফিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার করা হয় বলে দাবি করেছিলেন। এনটিসির ওই কর্মকর্তার নাম মোহামেদ লেইথ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে তিনি তখন বলেছিলেন, গাদ্দাফিকে সিরতে থেকে আটক করা হয়েছে। তিনি গুরুতর আহত। তবে এখনও শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। গাদ্দাফির আটকের ব্যাপারে এনটিসির আরেক কর্মকর্তা আবদেল মাজিদ বলেছেন, তিনি আটক হয়েছেন। তিনি দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের আরো জানান, শুধু দুই পায়ে নয়, তার মাথায়ও গুলিবিদ্ধ হয়েছে। একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান মাজিদ। আর অপর এনটিসি কর্মকর্তা মোহামেদ লেইথের দাবি গাদ্দাফি আর বেঁচে নেই। অপরদিকে লিবিয়ার ক্ষমতাচ্যুত নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির জš§শহর সিরতের নিয়ন্ত্রণ এখন বিদ্রোহীদের হাতে। গত বৃহস্পতিবার ওই শহরের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী এ কথা নিশ্চিত করেছেন বলে কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে।
এদিকে এনডিটিভির খবরে এনটিসির একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, মৃত্যুর আগ মুহূর্তে এনটিসির সেনারা তার বাংকারে অতর্কিতহানা  দেওয়ার পর গাদ্দাফি পালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হলে গাদ্দাফি এটিসি সেনাদের উদ্দেশে ডোন্ট শুট, ডোন্ট শুট বলে চিৎকার করছিলেন। কিন্তু  তার কথায় কর্ণপাত না করে এনটিসি সেনারা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এনটিসির একাদশ ব্রিগেডের কমান্ডার আব্দুল হাকিম আল জলিল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় বৈরুতের ডেইলি স্টার পত্রিকাকে বলেন, তিনি গাদ্দাফির অনুগত বাহিনীর প্রধান সেনাধ্যক্ষ আবু বকর ইউনুস জবরের মৃতদেহও  নিজের চোখে দেখেছেন। তিনি বলেন, আমি নিজের চোখে ইউনুস জবরের লাশ দেখেছি। তিনি এ সময় প্রমাণ হিসেবে রয়টার্স ও বৈরুতের ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রতিনিধিকে জবরের রক্তাক্ত লাশের একটি ছবিও দেখান। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জš§শহর সিরতের পতনের পর  এনটিসির হাতে গাদ্দাফির আটক হওয়ার খবরটি প্রকাশ পাবার কিছুক্ষণ পরই তার ও তার প্রধান সেনাপতির মৃত্যুর অসমর্থিত খবরটি পাওয়া গেল। লিবিয়াতে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর পর গত আগস্টে গাদ্দাফির ৪২ বছরের শাসনের সমাপ্তি ঘটে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তার বিরুদ্ধে প্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
গাদ্দাফির জš§শহর সিরতের পতন: লিবিয়ার জাতীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের (এনটিসি) একজন সদস্য হাসান দ্রাওয়া সিরতে পতনের খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের বাহিনী সিরতের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। শহরটি এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, সিরতেই গাদ্দাফির অনুগত সেনাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থানগুলো দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা সেনারা।
রাজধানী ত্রিপোলির পতনের পর সিরতে দখলের জন্য একাধিক অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছিল এনটিসি বাহিনী। চরম প্রতিরোধের মুখে কয়েকবার পিছু হটতে বাধ্য হয় তারা। ত্রিপোলি পতনের দুই মাস পর অবশেষে শহরটির পতন ঘটল। সেখানে অবস্থারত সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয়। টানা ৯০ মিনিট যুদ্ধ চলে। এই অভিযানের মাত্র কিছু সময় আগে পাঁচটি গাড়িতে করে গাদ্দাফির অনুগত সেনারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তারা বিদ্রোহী যোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। বিদ্রোহী সেনাদের গুলিতে তাদের কমপক্ষে ২০ জন সদস্য নিহত হয়েছে।
সিরতের পতনের পর এনটিসি সেনারা বিভিন্ন ভবনে গাদ্দাফি সেনাদের খুঁজতে অভিযান শুরু করেছে। গাদ্দাফি বাহিনীর কমপক্ষে ১৬ জন সদস্য তাদের হাতে আটক হয়েছে বলে জানা গেছে। সিরতে শহরে ফাঁকাগুলি করে বিজয়োল্লাস করছে এনটিসি সেনারা।
গাদ্দাফির জীবনপঞ্জি
আফ্রিকা ও আরব বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের শাসক লিবিয়ার কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি। এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে লিবিয়া শাসন করা গাদ্দাফির জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাপঞ্জি:
১৯৪২: লিবিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের সিরতে এক যাযাবর গোত্রে জš§ নেন গাদ্দাফি। বেনগাজি ইউনিভার্সিটিতে ভূগোল বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও মাঝপথে তা বাদ দিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন যুবক গাদ্দাফি।
১৯৬৯: ২৭ বছর বয়সে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লিবিয়ার তৎকালীন রাজা ইদ্রিসকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন গাদ্দাফি। ভিন্নমতালম্বীদের কঠোরভাবে দমন করে খনিজ তেল সমৃদ্ধ লিবিয়ার দখল ধরে রাখেন তিনি। ক্ষমতা দখলের পরে তিনি ইসলামঘেঁষা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ঐক্যবদ্ধ প্যান-আরব গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। এসময় দেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখলেও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যক্তি মালিকানায় রাখার অনুমতি দেন।
১৯৭৭: সালে দেশের নাম বদলে গ্রেট সোস্যালিস্ট পপুলার লিবিয়ান জামাহিরিয়াহ (জনতার রাষ্ট্র) রাখেন। এসময় দেশের সাধারণ মানুষদের পার্লামেন্টে তাদের মতামত জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। তবে তার বিরুদ্ধে স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখার জন্য হাজার হাজার মানুষকে অবৈধভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ও বন্দি করে রাখার অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
১৯৭৮: যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ডেভিডে আরব বিশ্বের তৎকালীন বিবদমান দুই প্রতিপক্ষ মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের জন্য তাদের মুখোমুখি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন গাদ্দাফি। তবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সঙ্কট সমাধানে অত্যন্ত কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আরব দেশ তার সমালোচনা করে। এসময় থেকে তার প্যান-আরব নীতি পরিবর্তিত হয়ে প্যান-আফ্রিকা পরিকল্পনায় রূপ নেয়। তার ঐক্যবদ্ধ আফ্রিকা গঠনের উদ্যোগই পরবর্তী সময়ে আফ্রিকান ইউনিয়নের জš§ দেয়। তবে পশ্চিমা বিশ্বে সবসময়ই গাদ্দাফিকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে দেখা হয়। কলাম্বিয়ার রেভ্যুলেশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলাম্বিয়া (ফার্ক) এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের আইরিশ রিপাবলিকান আর্মিকে (আইআরএ) সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
১৯৮৬: জার্মানির বার্লিনে একটি নাইটক্লাবে বোমা হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের দুই সেনা সদস্য নিহতের ঘটনায় লিবিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ সময় গাদ্দাফিকে ‘পাগলা কুকুর’ বলেও অভিহিত করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। এ ঘটনার পরে ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলায় গাদ্দাফির পালিত মেয়েসহ ৩৫ জন লিবীয় নিহত হয়।
১৯৮৮: স্কটল্যান্ডের লকারবিতে প্যান অ্যাম এয়ারলাইন্সের একটি জাম্বো জেট বিমানে বোমা হামলায় ২৭০ জন নিহতের ঘটনায় গাদ্দাফির জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পরিকল্পনা করার জন্য অভিযুক্ত হন একজন লিবীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা। বহু বছর ধরে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন তিনি। এর ফলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয় লিবিয়াকে।
২০০৩: গাদ্দাফি প্রশাসন এ বোমা হামলার দায় স্বীকার করে নেয়। এ ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের এক কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হন তিনি। এছাড়া তার দখলে থাকা গণবিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস করার ঘোষণাও দেন এসময়। এর ফলে তার প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর মনোভাবের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে।
২০০৪: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ লিবিয়ার উপর থেকে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। এর ফলে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে লিবিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হওয়ায় লিবিয়ার অর্থনীতি বেশ সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। তবে ২০০৯ সালে অভিযুক্ত লিবীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলে গাদ্দাফির পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হলে আবারো যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সমালোচনার মুখে পড়েন গাদ্দাফি।
২০০৯: জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে যান গাদ্দাফি। এ অধিবেশনে ১৫ মিনিটের বদলে দেড় ঘণ্টা ভাষণ দেন, জাতিসংঘের নীতিমালার অনুলিপি ছিঁড়ে ফেলেন এবং নিরাপত্তা পরিষদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে তুলনা করেন। একইসঙ্গে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনের ক্ষতিপূরণ হিসেবে আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলোর জন্য ৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
২০১০: সম্পর্কোন্নয়নের উদ্দেশ্যে ইতালি সফর করেন গাদ্দাফি। কিন্তু সফরের সময় প্রায় দু’শ ইতালীয় নারীকে ইসলামধর্ম গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানালে গাদ্দাফির মূল উদ্দেশ্য ঢাকা পড়ে যায়।
২০১১: ফেব্র“য়ারিতে গাদ্দাফির শাসনের বিরুদ্ধে লিবিয়ায় গণআন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু ওই গণআন্দোলনকে তেমন আমলে না দিয়ে কঠোরহস্তে দমনের চেষ্টা চালান গাদ্দাফি। পরবর্তী সময়ে এই গণআন্দোলন গণবিদ্রোহে রূপ নেয় যা দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ১৭ মার্চ গাদ্দাফির অনুগত নিরাপত্তা বাহিনীর হাত থেকে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় লিবিয়ায় উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা প্রতিষ্ঠা এবং সেখানে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ১৯ মার্চ সেখানে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে পশ্চিমা যৌথবাহিনী। পরবর্তীতে ন্যাটোর নেতৃত্বে হামলা চলতে থাকে। একদিকে ন্যাটোর বিমান হামলা ও অন্যদিকে বিরোধী ন্যাশনাল ট্রাডিশনাল কাউন্সিলের (এনটিসি) যোদ্ধাদের হামলার মুখে গত ২২ অগাস্ট রাজধানী ত্রিপোলির দখল হারান গাদ্দাফি। ২০ অক্টোবর গাদ্দাফির জš§শহর সিরতের দখল নেয় এনটিসির যোদ্ধারা। এদিন প্রথমে তাকে আটকের খবর জানানো হলেও পরে বলা হয় নিহত হয়েছেন গাদ্দাফি।

ক্ষমতা পাচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
উপজেলা পরিষদ কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর অংশ হিসেবে উপজেলাকেন্দ্রিক বিভিন্ন কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের পরিবর্তে উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্রধান করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে খুব শিগগির নির্বাহী আদেশ জারি করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় গণভবনে উপজেলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানদের উদ্দেশে বলেন, পদত্যাগ করা কোনো সমাধান নয়। প্রসঙ্গত দাবি মানা না হলে উপজেলা চেয়ারম্যানরা পদত্যাগের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এ প্রেক্ষাপটেই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক হারুন অর রশীদ হাওলাদার জানান, উপজেলা চেয়ারম্যানকে উপজেলা পরিষদে হস্তান্তরিত সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কমিটিগুলোর প্রধান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য খুব শিগগির নির্বাহী আদেশ জারি করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা (ইউএনও) এসব কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বৈঠকে উপজেলা পরিষদ কার্যকর করা এবং উপজেলা আইনের বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
গত বছর ১৭ জুন স্থানীয় সরকার বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে অবস্থিত ১৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের স্থানীয় কাজকর্ম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের হাতে ন্যস্ত করে। তাতে ইউএনওর কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগে সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। পরিষদের অর্থ ব্যয় ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের সব বিষয় অনুমোদনের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে নথি উপস্থাপন করবেন। তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবেন। ১৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের স্থানীয় দফতরপ্রধানের কাজ সম্পর্কে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে ও ইউএনওর সমন্বয়ে কাজ করবেন। তিনি সব নথি অনুমোদনের জন্য নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে উপস্থাপন করবেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ প্রজ্ঞাপন গেজেট আকারে প্রকাশ করা হলেও তা কোথাও কার্যকর নয়। ইতোমধ্যে সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে স্থানীয় সরকার ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দুই দফা তাগিদ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়গুলো আগের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে। ফলে এখনও উপজেলা পরিষদের ওপর চেয়ারম্যানদের কোনো কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের স্থানীয় দফতর উপজেলা পরিষদের কাছে ন্যস্ত করা হলেও তারা চলে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে। এ সমস্যার সমাধানে জাতীয় কমিটি গঠন করা হলেও কমিটির সুপারিশ কার্যকর হচ্ছে না। নেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে উপজেলা পরিষদ কার্যকরের পথ অনেকটা সুগম হবে বলে চেয়ারম্যানরা আশা করছেন। উল্লেখ্য, দেশের ৪৮১টি উপজেলার মধ্যে ৩৮৫টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান রয়েছেন। মোট এক হাজার ৪৪৩ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে এক হাজার ২০০ জনই আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্থানীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
 
মন্ত্রিসভায় খসড়া অনুমোদন
দু’ভাগ হচ্ছে ঢাকা সিটি করপোরেশন
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভাগ করতে স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইনের সংশোধিত খসড়া গতকাল সোমবার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একটি সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে বিশাল এই মহানগরীর জনসাধারণকে সঠিক সেবা দিতে না পারার কারণে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে ৫৬টি ওয়ার্ড নিয়ে দক্ষিণে একটি এবং ৩৬ ওয়ার্ড নিয়ে উত্তরে আলাদা সিটি করপোরেশন হবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করতে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ সংশোধনের প্রস্তাবে মন্ত্রিসভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা সিটি করপোরেশনে (ডিসিসি) মোট ৯২টি ওয়ার্ড রয়েছে। ভাগ হওয়ার পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ওয়ার্ড হবে ৫৬টি এবং উত্তরে ৩৬টি। জানা গেছে, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৬ থেকে ৯২ নং ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ১ থেকে ২৩, ৩৭ থেকে ৪৫,  ৫৪ ও ৫৫ নং ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন গঠন করা হবে।
বঙ্গবন্ধু একাডেমি আইন অনুমোদন: দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে সুষ্ঠু পরিবেশ ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে ‘প্রতিযোগিতা আইন ২০১১’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয় বৈঠকে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতে ‘বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্যবিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি আইন-২০১১’এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। আজাদ জানান, গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলায় বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্যবিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি যেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদান রাখতে পারে সেজন্য স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে এই আইন করা হচ্ছে। বন আইন (সংশোধিত) ২০১১-এর খসড়াও মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়। সম্পূরক এজেন্ডায় বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারক সম্পর্কে, বঙ্গোপসাগরে সম্প্রসারিত মহীসোপানে বাংলাদেশের দাবি সর্ম্পকেও অবহিত করা হয়। এর আগে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের নিষিদ্ধ ঘোষিত মৌজাগুলোতে স্থাপিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য ম্যাপে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেয়া হয়।

শামীম আইভি তৈমুরের ভোটযুদ্ধ
গুরুত্ব হারাচ্ছে রাজনৈতির ইমেজ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে  মেয়র পদে  ত্রিমুখী ভোট যুদ্ধ চলছে। লড়াই হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী  শামীম, আইভী এবং বিএনপির  তৈমুরের। এই ভোট যুদ্ধে ম্লান হয়ে গেছে রাজনীতির ইমেজ। রাজনীতির চেয়ে ব্যক্তি মানুষটিই ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছে সাধারণ ভোটারদের কাছে। এমনটাই আভাস পাওয়া গেছে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে। আমাদের দেশে নির্বাচন মানেই দলীয় রাজনীতি, দলীয় প্রার্থী, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি ।  এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে চিরচেনা সে দৃশ্যে পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। 
নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন, ভোটাররাও অনেকটা সচেতন। শামীম ওসমান, তৈমুর আলম খন্দকার এবং ডা. সেলিনা হায়াত আইভি তিন জনই জাঁদরেল প্রার্থী। শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জে পরিচিত মুখ। দুই দশক  ধরে তিনি এখানকার আওয়ামী লীগের রাজনীতির একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তার বিরুদ্ধে অনেক সমালোচনা থাকলেও আবার  কেউ কেউ মনে করেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শামীম ওসমানের প্রয়োজন আছে।
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার জেলা বিএনপির সভাপতি। নির্বাচনে তিনি আলোচিত হয়ে উঠেছেন বিএনপির একক প্রার্থী হয়ে। সুতরাং ভোটের আলোচনায় তিনিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছেন। ডা. সেলিনা হায়াত আইভী সদ্য বিলুপ্ত পৌরসভার সাবেক মেয়র। তার পিতা মরহুম আলী আহমেদ চুনকা   পৌরসভার দু’বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। ডা.সেলিনা হায়াত আইভী আলোচিত হয়ে উঠেন পৌর মেয়র থাকাকালীন। আট বছর পৌর মেয়র থাকাকালীন আইভীর বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতি স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেনি। পৌর এলাকাকে তিনি ঢেলে সাজিয়েছেন। ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন । ওই সব কারণে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছেন ডা. সেলিনা হায়াত আইভি।
নির্বাচনে  যিনিই জিতুন বা হেরে যান কিংবা ভোটের ফলাফল যাই হোক নবগঠিত মহানগরবাসীর আলোচনায় আছেন তিন প্রার্থীই। কেউ কারো চেয়ে কম নয়। আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ঘোষিত হলে হয়তো নির্বাচনের চেহারা অন্যরকম হতো। নির্বাচন হয়ে পড়তো দ্বিমুখী আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। কিন্ত আওয়ামী লীগের সমানতালের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী মাঠে থাকায় রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে ব্যক্তিগত ইমেজটাই প্রাধান্য পেয়েছে ।
নারায়ণগঞ্জে বিএনপির অনেকেই মনে করছেন আওয়ামী ঘরানার দুই প্রার্থী মাঠে থাকায় দলীয় ভোট এবং দলের ইমেজে সহজে পার পেয়ে যাবেন তারা। আবার বিএনপিরই কেউ কেউ মনে করেন দলীয় ইমেজকে কেন্দ্র করে নির্বাচনে পার পেয়ে যাবেন বিষয়টি এত সহজ হিসেব কষলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জের এক পরিবহন ব্যবসায়ী বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এখানে রাজনীতি প্রভাব ফেললেও  কখনোই পুরোপুরি করে না। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে নৌকা বা ধানের শীষ  মার্কা নেই। এখানে ব্যক্তিগত পরিচয় পরিচিতি আচরণ, আঞ্চলিকতা, পারিবারিক পরিচিতি  এগুলো ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। এ নির্বাচনেও তেমনই হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
ব্যবসায়ী মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি একটি দলের সমর্থক। জাতীয় নির্বাচনে সে দলের প্রতীকে ভোট দিই কিন্তু সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট দেব আমার পছন্দের প্রার্থীকে। এখানে কোনো দল নেই।   দেওভোগ এলাকার ঠেলাগাড়ি চালক সিরাজ মিয়া জানান, দল বুঝি না ভোট দেব  আমাদের এলাকার প্রার্থীকে। একই ধরনের কথা বললেন চাষাঢ়া এলাকার বাসিন্দা একটি বেসরকারি সংস্থার  চাকরিজীবী হাসান, তিনি বলেন আমার এলাকার প্রার্থী জিতলে ঘুম থেকে উঠলে মেয়রের সঙ্গে দেখা হবে এটাই বড় পাওনা।
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা যায় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রাজনীতির পরিচয়ের চেয়ে প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজকে ভোটাররা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। রাজনীতি অনেকটা গৌণ হয়ে পড়েছে। সময় যতো গড়াচ্ছে এই বিষযটা ভোটারদের বেশি  বেশি তাড়া দিচ্ছে ।
কেন্দ্রীয় নেতাদের আনাগুনা শুরু: সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমান ও এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার এই দুই মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নারায়ণগঞ্জ এসে ভোট চাইতে শুরু করেছেন । অন্যদিকে সাবেক পৌর মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়াতে ঢাকা থেকে নেতৃবৃন্দ আনতে উৎসাহী নন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে । সাবেক সাংসদ একেএম শামীম ওসমান গত বৃহস্পতিবার তিন জন সাংগঠনিক সম্পাদককে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসেন তার সমর্থনে । তারা হলেন, আহাম্মেদ হোসেন, আবু সাইদ আর স্বপন,খালেদ মাহমুদ এমপি। এর দুই দিন পর আসেন যুবলীগের ৭ জন কেন্দ্রীয় নেতা । গত  রোববার আসেন ঢাকা মহানগর নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া । গত কাল এসে  গেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ  নেতৃবৃন্দ । আরো অনেকে আসবেন বলে কৃষকলীগ নেতা চন্দন শীল জানান।
অপরদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের সমর্থনে গতকাল নারায়ণগঞ্জে আসেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের বড় ছেলে নাসির রহমান । তিনি সিটি এলাকার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ভোটারদের কাছে এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। সন্ধ্যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ীকমিটির সদস্য বিগ্রেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহসহ কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারণায় অংশ নেন । এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার জানায়, এখন থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে নিয়মিত গণসংযোগ করবেন। এদিকে অপর হেভিওয়েট প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভি’র পক্ষে এখনো কোনো কেন্দ্রীয় বা বাইরের কেউ ভোট চাইতে আসেন নি । ডা.আইভির ঘনিষ্ঠ সূত্র গতকাল সোমবার জানান, সিটি নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এখানে মানুষ ব্যক্তি ইমেজকে প্রাধান্য দেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের কথায় দলের লোকজন ভোট দিবেন অন্যরাতো দিবেন না। তাদের ভোট আসবে কিভাবে । ডা. আইভি একজন শক্ত আওয়ামী লীগ নেত্রী । এ বিষয়টি নগরবাসীর জানা আছে । ডা. আইভির বিশ্বাস নেতা নয় জনতাই তার শক্তি ।
ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেয়া শেখাচ্ছে ইসি: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নিবাচনে ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯টি ওয়ার্ডে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে । ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে জনমনে কিছুটা শংঙ্কা রয়েছে। ভোটারদের ভোট দেয়ার পদ্ধতি শেখানোর জন্য গতকাল সোমবার থেকে তিনটি ওযার্ডের ভোটারদের মধ্যে ইভিএম পদ্ধতিতে কিভাবে ভোট প্রয়োগ করতে হয় ভোটার তা অবগতি করতে মেশিন প্রদর্শন শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন । প্রথম দিনে তিনটি থানা এলাকার তিনটি ওয়ার্ডে ইভিএম দেখানো এবং ভোট দেয়ার পদ্ধতি শেখানো হয় আগ্রহি ভোটারদের । রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান জানান, সিদ্ধিরগঞ্জে ৭ নারায়ণগঞ্জে ১৬ ও বন্দরে ২২ নং ওয়ার্ডে ইভিএম দেখানো ও ভোট দেয়ার পদ্ধতি শেখানো হয় । বিপুল সংখ্যক ভোটার ইভিএম শিখতে আসেন বলে কেন্দ্র গুলোতে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন । সিদ্ধিরগঞ্জের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এম ডব্লিউ হাই স্কুলে থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সহ কমিশনের লোকজন ইভিএম ব্যবহার শেখান । ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেওভোগ ২২-২৩নং সরকারি প্রাথমিক বালক বালিকা বিদ্যালয়ে আফজাল আহমেদ এবং ২২নম্বর ওয়ার্ডের বন্দর আদর্শ শিশু বিদ্যালয়ে মো. নাজিম উদ্দিন ইভিএম প্রদর্শন ও ভোট প্রদান শেখান  ভোটারদের । রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান জানান, ইভিএম মেশিন দেখতে এবং ভোট  দেয়া শিখতে সন্তোষ জনক সংখ্যক ভোটার অংশ নেন । 
এনসিসিতে ভোটের বাইরে ১০ হাজার তরুণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভোটার তালিকা হালনাগাদ না হওয়ায় নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না প্রায় ১০ হাজার জন। এ বছর ১৮ বছরে পা দেওয়া (২০১১ সালের জানুয়ারিতে যারা ভোটারযোগ্য হয়েছেন) চার হাজারের বেশি তরুণ-তরুণী ভোটার হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ছাড়া গতবারের বাদপড়াদের সংখ্যা কমপক্ষে পাঁচ হাজার। নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, নির্বাচনের আগে এ বছর হালনাগাদ কার্যক্রম হাতে না নেওয়ায় তারা ভোটার হতে পারেনি। এখন আর সময় নেই। বছরের শেষের দিকে ডিসেম্বরে হালনাগাদ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। সর্বশেষ ২০১০ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছিলো। এর আগে নবম সংসদ নির্বাচনের পর ২০০৯ সালেও নতুন ও বাদ পড়ারা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।
ইসি সচিবালয়ের উপসচিব (নির্বাচন) মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকায় প্রথমবারের ভোটার হন ৮ কোটি ১০ লাখেরও বেশি ভোটার। পরবর্তী দুই বছরের হালনাগাদে নতুন ও বাদপড়া (যারা ১৮ বছরেরও বেশি তালিকাভুক্ত হতে পারেনি) ভোটার তালিকাভুক্ত হন ৪৬ লাখেরও বেশি পুরুষ-মহিলা। তালিকাভুক্ত হওয়ার হার পর্যবেক্ষণ করে এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবছর নতুন ভোটারের হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ সময় বাদপড়াদের হার হবে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪ হাজার ১৮৯ জন। নারায়ণগঞ্জে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে নতুন ভোটারযোগ্য পুরুষ-মহিলার সংখ্যা কেমন হতে পারে- জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা জানান, ন্যূনতম ভোটার হারে হিসাব করলেও এদের সংখ্যা ৪ হাজারের বেশি। ঘনবসতিপূর্ণ শহরাঞ্চল হওয়ায় গ্রামের চেয়ে বাদপড়া ভোটারদের হারও বেশি থাকতে পারে। এদের সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম হবে না। ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, দেশের চারটি এলাকায় ছোট পরিসরে (নওগাঁ, গাজীপুর, ঢাকা ও কক্সবাজার) হালনাগাদের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়েছে গত মাসে।
 মুখোমুখি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বীমা উদ্যোক্তারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি বীমা কোম্পানির উদ্যোক্তারা। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বলছে, কোনো ধরনের বাড়তি চার্জ নেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অতি উত্সাহী কার্যক্রম এ খাতের বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) মনে করে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাম্প্রতিক কিছু নির্দেশনা এ খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আইডিআরএ’র এসব নির্দেশনা ও কিছু অতি উত্সাহী কার্যক্রম দেশের বীমা খাতের ব্যবস্থাপনায় সৃষ্টি করছে বিশৃঙ্খলা। এর ফলে আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ জন্য এসব নির্দেশনা স্থগিত করে বীমা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিআইএ।
গত সোমবার ঢাকা ক্লাবে বিআইএ আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতারা এসব কথা বলেন। ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি এ. কে. আজাদ এবং বিআইএ চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন। প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে বিআইএ নেতারা আইডিআরএ’র সম্প্রতি জারি করা বিভিন্ন সার্কুলার ও বীমা খাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। জানা গেছে, বৈঠকে আইডিআরএ’র জারি করা বীমা কোম্পানির পরিচালকরা অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক থাকতে পারবেন না, বীমা কোম্পানির পরিচালকের নিজের বা পরিবারের অন্য কোম্পানির বীমা নিজ বীমা কোম্পানি করতে পারবে না এবং লেনদেনের তথ্য জানতে চাওয়া সংক্রান্ত সার্কুলার, ট্যারিফ রেট নির্ধারণ ও ট্যারিফ রেট অমান্য করার কারণে জরিমানা বিষয়ক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। এসব সার্কুলারের কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য বিআইএ এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্বে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবে। প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তারা বৈঠক করবে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, আইডিআরএ’র বেপরোয়া কার্যক্রমের ফলে দেশের অনেক বীমা কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ বলেন, আইডিআরএ এরই মধ্যে বেশ কিছু সার্কুলার জারি করেছে, যা ব্যবসাবান্ধব নয়, এমনকি বাস্তবসম্মতও নয়। বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছে, দেশে বিদ্যুত্-গ্যাসের অভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো উত্পাদন করতে পারছে না। এ রকম সময় বীমা খাতের খরচ বেড়ে যায় বা বীমার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে খরচ বেড়ে যায়-এ ধরনের উদ্যোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইডিআরএ বীমা ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এককভাবে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, বীমা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত; কিন্তু এ খাতটির নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব এমন এক ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে যার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্ন আছে। এ রকম একজন ব্যক্তিকে দিয়ে আইডিআরএ চলবে কি না তা ভেবে দেখা দরকার।
আইডিআরএ এরই মধ্যে বেশ কিছু জরিমানা করেছে। এ থেকে বীমা খাতের গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বীমা শিল্প টিকিয়ে রাখতে আইডিআরএ’র জারি করা সার্কুলারগুলো আপাতত স্থগিত করার কোনো বিকল্প নেই। বিআইএ চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, আইডিআরএ সার্কুলারের কারণে দেশের বীমা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসব সার্কুলার স্থগিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিতে হলে আইডিআরএকে অবশ্যই বিআইএ’র সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
গ্রাহকের আঙিনায় ব্যাংকসেবা
নতুন নীতিমালা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্যাংক হিসাব খোলা, আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণসহ গ্রাহক আকর্ষণে ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরে চলছে বড় ধরনের প্রতিযোগিতা। গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হচ্ছে ব্যাংক। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেবার পরিধি বাড়াতে গিয়ে বাড়ছে নানা ঝুঁকিও। গ্রাহকের আঙ্গিনায় গিয়ে সেবা দেওয়া এবং এর ঝুঁকি মোকাবেলায় নতুন নীতিমালা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে একটি খসড়া নীতিমালা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহক বাড়ানো, আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোতে অঘোষিত প্রতিযোগিতা চলছে। এ প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হচ্ছে ব্যাংক। অনেক ব্যাংক গ্রাহক সংগ্রহ সপ্তাহ, সেবাপক্ষ, আমানত সংগ্রহের মাসসহ ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে চলছে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি খণ্ডকালীন কর্মী নিয়োগ করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গ্রাহকের বাড়ি থেকে আমানত সংগ্রহ ও গ্রাহকের অফিসে গিয়ে ঋণ বিতরণও করছে অনেক ব্যাংক। এসব সেবা দিতে গিয়ে ব্যাংকিং খাতে বাড়ছে নানামুখী ঝুঁকি। এসব ঝুঁকি থেকে ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করতে নতুন নীতিমালা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নিজস্ব স্কিমের আওতায় গ্রাহকের প্রাঙ্গণে ব্যাংকিং পরিসেবা (যেমন নগদ অর্থ, ডিমান্ড ড্রাফ্ট, পে-অর্ডার, ইত্যাদি সংগ্রহ ও সরবরাহ) প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে মর্মে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গ্রাহকের অধিকার ও দায়-দায়িত্বের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনয়ন, বিভিন্ন ব্যাংকের দেওয়া পরিসেবার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান এবং নিরাপদ ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে গ্রাহকের প্রাঙ্গণে প্রদত্ত ব্যাংকিং পরিসেবা একটি সুস্পষ্ট নীতিমালার আওতায় পরিচালিত হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে। এমতাবস্থায়, গ্রাহকের প্রাঙ্গণে বিভিন্ন ব্যাংকিং পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এই সার্কুলারে বর্ণিত নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্ব-স্ব স্কিম প্রণয়নের জন্য দেশের ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। এতে আরও বলা হয়, ব্যাংকগুলো গ্রাহকের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সেবা দিয়ে আসছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকের অনুকূলে নগদ অর্থ ও দলিলাদি সংগ্রহ, চেকের বিপরীতে নগদ অর্থ সরবরাহ ও যে কোনো ধরনের আর্থিক দলিলাদি সরবরাহ করে থাকে। ব্যাংক এসব সেবা দিতে গিয়ে নিজস্ব জনবল ছাড়াও এজেন্ট নিয়োগ করতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে গ্রাহকের অধিকার ও দায়-দায়িত্বের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনয়ন, বিভিন্ন ব্যাংকের সেবার মধ্যে সামঞ্জস্য আনা এবং নিরাপদ ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসব সেবা একটি নির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় পরিচালিত হওয়া দরকার বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে। আর সে লক্ষ্যেই এ নীতিমালার ওপর কারও কোনো মতামত থাকলে তা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ হবে ইলেকট্রনিক পণ্যের রাজধানী: দেশেই তৈরি হবে গাড়ি
নিজস্ব প্রতিবেদক
টেলিভিশন, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল ও মোবাইল তৈরিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে ওয়ালটনের লক্ষ্য বহুদূর। ভবিষ্যত্ ওয়ালটনকে ইলেকট্রিক পণ্য উত্পাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এর পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। উত্পাদনমুখী এ প্রতিষ্ঠানে বৈচিত্র্য আনতে বহুমুখী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশকে এশিয়ার ইলেকট্রনিক শিল্পের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিণত করার স্বপ্ন দেখছে ওয়ালটনের কলাকুশিলবরা।
শতভাগ দেশীয় এ প্রতিষ্ঠানটির চমকপ্রদ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে এলসিডি টেলিভিশনের মূল উপাদান এলসিএম তৈরি, গাড়ি প্রস্তুত এবং কম্পিউটারের মাদারবোর্ড ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা স্থাপন। নিজেদের একটি ব্র্যান্ড তৈরি করতে ২০১৩ সালের মধ্যে এলসিএম, ২০১৫ সালের মধ্যে গাড়ি ও পর্যায়ক্রমে অন্যান্য উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
টয়োটা যেমন জাপানকে এবং টাটা যেমন ভারতকে সারা বিশ্বে পরিচিত করিয়েছে, তেমনি ওয়ালটন সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এর কর্ণধাররা। আমেরিকায় ওয়ালটন ইনকরপোরেশন নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। খুব শিগগিরই আমেরিকার বাজারে রফতানি হবে ওয়ালটন পণ্য।
এলসিএম (লিকুইড ক্রিস্টাল মডিউল) কারখানা স্থাপনের জন্য ময়মনসিংহের ভালুকায় কয়েকশ’ একর জমির ওপর নতুন একটি কারখানা তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে ওয়ালটন। বর্তমান কারখানার চেয়েও এর আকার অনেক বড় হবে। কোম্পানির নীতিনির্ধারকরা আশা করছেন, এলসিএম বানাতে পারলে এশিয়া অঞ্চলের ইলেকট্রনিক শিল্পে সাড়া পড়ে যাবে। বাংলাদেশ হবে এই অঞ্চলের ইলেকট্রনিক শিল্পের হাব বা কেন্দ্রভূমি। জাপানের বড় কোম্পানি সনির পর্যন্ত নিজস্ব এলসিএম তৈরির কারখানা নেই। কোরিয়া ও তাইওয়ানের দুটি কোম্পানির কাছ থেকে সনি এলসিডি প্যানেল কেনে। এমনকি ভারতেও নেই এলসিএম তৈরির কারখানা।
এলসিএম তৈরি হলে বাংলাদেশ এই সেক্টরে অনেকাংশেই জাপানের পর্যায়ে চলে যাবে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের এই পণ্য ছড়িয়ে যাবে। এলসিডি প্যানেল কেনার জন্য পৃথিবীর অনেক বড় কোম্পানি তখন এ দেশে আসবে। বর্তমানে জাপান, তাইওয়ান, কোরিয়া এলসিএম তৈরি করে। গুণগত মান ঠিক রাখতে পারলে প্রতিযোগিতামূলক দামে বাংলাদেশে তৈরি এই প্যানেল পৃথিবীর ইলেকট্রনিক খাতে সাড়া ফেলবে।
এলসিডি টেলিভিশন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে মোবাইল ফোনের স্ক্রিন পর্যন্ত বানাতে এলসিএম ব্যবহূত হয়। এলসিডি প্যানেলের আগের ধাপ হচ্ছে এলসিএম। এটি হচ্ছে অনেকটা মূল উপাদান। এটি হাতে থাকলে ইচ্ছেমতো টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে প্যানেল বানানো যাবে। বর্তমানে এলসিডি প্যানেল পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এলসিএম বানালে তখন শুধু প্যাটেন্ট প্রোডাক্ট হিসেবে প্রয়োজনীয় সেল আমদানি করতে হবে। পৃথিবীর সব উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে প্যাটেন্ট কোম্পানির কাছ থেকেই এ সেল কিনতে হয়।
এলসিএম বানাতে পারলে পৃথিবীর অনেক দেশ প্রাথমিক পণ্য হিসেবে এটা বাংলাদেশ থেকেই আমদানি করবে। এটি ব্যবহার করে এলসিডি টেলিভিশন বানাবে অন্যান্য দেশ। এলসিএম বানানো সম্ভব হলে জাপানে যেসব কোম্পানি টেলিভিশন ও কম্পিউটার বানায় তারা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি লাভ করতে পারবে না। কেননা এ দেশের সস্তা শ্রমের কারণে উত্পাদন ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম। কাঁচামাল হিসেবে এলসিএম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এলসিএম বানানো সম্ভব হলে এখানে এলসিডি টেলিভিশন সাধারণ টেলিভিশনের দামে নেমে আসবে। কম্পিউটার, ল্যাপটপের দামও কমবে।
দেশেই তৈরি হবে গাড়ি
খুব শিগগিরই চার চাকার গাড়ি বানাতে যাচ্ছে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রি। দেশেই আন্তর্জাতিক মানের গাড়ি তৈরির এ খবর চমকে ওঠার মতো হলেও তা বাস্তবে রূপ দিতে কাজ শুরু করেছে কোম্পানিটি। প্রাথমিক পর্যায়ে খুব বেশি বড় বা ছোট আকারের দিকে না গিয়ে স্ট্যান্ডার্ড সাইজের গাড়ি বানাতে চায় ওয়ালটন। এ ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের চাহিদার প্রতি নজর রাখা হবে বলে জানান শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ শিল্পকে সমর্থন দিতে অন্যান্য ছোট কারখানাও গড়ে তোলা হবে। সহযোগী এসব কারখানায় পৃথকভাবে চাকা, বনেট, লাইট ও গাড়ির বডি বানানো হবে। এ রকম কারখানার সংখ্যা হবে একশ’র ওপরে। ওইসব কারখানায় ওয়ালটনের ডিজাইন, স্পেসিফিকেশন, কোয়ালিটি মেনে শুধু গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি হবে। একটি ‘চেইন ইন্ডাস্ট্রি’ হিসেবে এটিকে গড়ে তোলা হবে। বিশ্বের বৃহত্ গাড়ি কোম্পানি যেভাবে কাজ করে ওয়ালটনও সেভাবে গাড়ির কারখানা গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেছে বলে জানান এ প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকরা। প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গাড়ি তৈরির এ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারেও তালিকাভুক্ত করা হবে বলে তারা উল্লেখ করেন।
কম্পিউটারের মাদারবোর্ড ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ তৈরি হবে
দেশে ক্লোন কম্পিউটারের বাজার দখলে নিতে চায় ওয়ালটন। এ জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। শিগগির কম্পিউটারের মাদারবোর্ড দেশে তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এ জন্য বিশাল একটি কারখানা স্থাপনের প্রস্তুতি চলছে। এতে কম্পিউটারের জন্য প্রয়োজনীয় অন্য যন্ত্রাংশও তৈরি করা হবে। বিশেষত কম্পিউটারের জন্য মেকানিক্যাল যন্ত্রাংশ, স্পিকার, ক্যাপাসিটর ও পিসিবি বোর্ড তৈরি করা হবে। যাতে পুরো কম্পিউটার তৈরি করা যায় দেশে তৈরি পণ্য দিয়েই।
মোটরসাইকেল ও ফ্রিজের আরও উন্নয়ন হবে
মোটরসাইকেল ও ফ্রিজ তৈরির জন্য ওয়ালটনের রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের উত্পাদনমুখী কারখানা। দেশীয় বাজারে এখন ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত ওয়ালটন অন্য আমদানিকারকদের দুর্ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। তুলনামূলক কম দাম, রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি, বিক্রয়োত্তর সেবা ও দেশব্যাপী সার্ভিসিং নেটওয়ার্ক নিয়ে ওয়ালটনের মোটরসাইকেল, ফ্রিজ আমদানিকৃত অথবা স্থানীয়ভাবে সংযোজন করা বিদেশি পণ্যকে দারুণ চাপের মুখে ফেলেছে। এ দুটি পণ্যকে আরও উন্নত করতে কাজ করছে ওয়ালটন।
ওয়ালটনের ফ্রিজ শুধু দেশে নয়, বাইরেও সমাদৃত। আমদানিকারক দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন রফতানিকারক দেশ। ওয়ালটন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এগিয়ে আসছে ওয়ালটন পণ্যের প্রসার ঘটাতে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ওয়ালটন সামগ্রী। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে শিগগিরই যাবে এ কোম্পানির ফ্রিজ। সিঙ্গাপুর, মিয়ানমারসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বাজার তো বটেই, আফ্রিকার বাজারে এমনকি খোদ আমেরিকার বাজারে হাজির হচ্ছে এই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ওয়ালটন পণ্য।

বেদখল হয়ে গেছে নেত্রীর পৈত্রিক বাড়ি
শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) থেকে আব্দুল ওহাব
ঝিনাইদহের শৈলকুপা শহর থেকে দক্ষিণে ১৩ কিলোমিটার দুরের গ্রাম বাগুটিয়া। গ্রামের একপ্রান্তে কাঁচা রাস্তার পাশে চুন-সুড়কি দিয়ে গাঁথা ৯ রুমের পুরাতন একটি দ্বিতল বাড়ি। বাড়িটিতে এখন হাজী কিয়াম উদ্দিনের ছেলেরা বসবাস করেন। তারা কিভাবে বাড়িটির মালিক হয়েছেন তা কেউ বলতে পারে না। গ্রামের মানুষ শুধু জানেন বাড়িটি এক সংগ্রামী মানুষের। সেই সংগ্রামী মানুষটি হচ্ছেন তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী, সংগ্রামী নারী, নাচোলের রানী ইলা মিত্র। শৈলকুপা উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামের এই বাড়িটি ইলা মিত্রের পৈত্রিক বাড়ি। ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আজো বাড়িটি দাড়িয়ে থাকলেও রয়েছে বে-দখলে। ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে ইটের গাথুনিগুলো। চওড়া দেয়াল ঘেরা প্রাচীরের অনেক অংশ ভেঙ্গে ফেলেছে দখলদাররা। শুধু বাড়ি নয়, দখল করা হয়েছে বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের রেখে যাওয়া শত শত বিঘা জমি। সরকারের খাতায় এগুলো ভিপি তালিকাভুক্ত হলেও বাস্তবে এলাকার প্রভাবশালীদের দখলে।
ইলা মিত্র বাংলাদেশের কিংবদন্তি নারী। বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের চাকুরীর সুবাদে ইলা সেনের জš§ কলকাতায়। ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর তিনি জš§ গ্রহণ করেন। তার বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন বেঙ্গলের ডেপুটি অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল। মা মনোরমা সেন গৃহিনী। ঝিনাইদহের বাগুটিয়া গ্রাম তাদের পৈত্রিক নিবাস। বিয়ের পর তার নাম হয় ইলা মিত্র।
তিনি ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত চাপাইনবাবগঞ্জের নাচোল অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এই আন্দোলনের সময় তার উপর পুলিশের অমানবিক নির্যাতন চলে। ১৯৫৪ সালে কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে কলকাতায় চলে যান। এরপর তিনি কলকাতার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তিনি কলকাতার মানিকতলা নির্বাচনী এলাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন। কর্ম জীবনে তিনি কলকাতা সিটি কলেজের বাংলা সাহিত্যে অধ্যাপিকা হিসেবে ১৯৮৯ সালে অবসর নেন।
সরেজমিনে ইলা মিত্রের পৈত্রিক বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পুরাতন আমলের নিদর্শন চুন-সুড়কির তৈরী দ্বিতল বাড়িতে বসবাস করছেন হাজি কিয়াম উদ্দিনের তিন সন্তান। বড় ছেলে আলী হোসেন জানান, তারা বাগুটিয়া ১১৬ নং মৌজার ২৩৪৫ দাগের জমির উপর বাড়িটি সহ ৮৪ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। বাবা হাজি কিয়াম উদ্দিন বহু পূর্বে ইলা মিত্রের বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের শাশুড়ি সরদিনি সেনের কাছ থেকে এই জমি ক্রয় করেন। সরদিনি সেন কিভাবে এই জামির মালিক হলেন তা তিনি বলতে পারেন না বলে জানান। তিনি ছাড়াও তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুর রশিদ ও রাশিদুল ইসলামের পরিবার এখানে বসবাস করেন। মূল ঘরটির ৫ টি রুম ব্যবহার করা যায়। সেগুলো ভায়েরা ভাগ করে নিয়েছেন। 
কিংবদন্তী নারী ইলার শৈশব কৈশোর সময় পার করা বাগুটিয়া, গোপালপুর, শেখরা, রঘুনন্দপুর, শাহাবাজপুর সহ কয়েকটি গ্রামে। তার বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন, মা মনোরমা সেন, দাদা রাজমোহন সেনের নামে রয়েছে কয়েক’শ বিঘা জমি। এসব সম্পত্তি ভিপি হিসাবে সরকারী খাতায় থাকলেও তার সবটুকুই এখন বে-দখল। তবে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা জানান এসব সম্পত্তির ব্যাপারে সেটেলমেন্ট অফিসে আপত্তি ও দুই শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।
ইলা মিত্রের পরিবার সম্পর্কে ওই গ্রামের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জানান, তারা শুনেছেন নগেন্দ্রনাথ সেন নামে এক ব্যাক্তি তাদের এলাকার ছোট-খাটো জমিদার ছিলেন। বাগুটিয়াসহ পাশ্ববর্তী কয়েকটি মৌজায় বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের অঢেল জমি-জিয়ারত ছিল। যা বর্তমানে এলাকার প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে। হাজি কিয়াম উদ্দিন ছাড়াও জনৈক আমিনুল ইসলামের দখলে রয়েছে ওই নগেন্দ্রনাথ সেনের সিংহভাগ জমি। তবে তিনি যে ইলা মিত্রের বাবা ছিলেন এটা তারা জানতেন না। তার দাবি বাড়িটি যদি ইলা মিত্রের হয় তাহলে এটি সংরক্ষন করা জরুরী। কারণ এটা রক্ষা হলে এক কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাস রক্ষা হবে। 
২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর এই মহিয়সী নারী কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। ইলা মিত্রের অসাধারণ সাহসী ও সংগ্রামী জীবন বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার প্রগতিশীল মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। তাই এখানকার মানুষের দাবী ইলা মিত্রের পৈত্রিক ভিটাবাড়ি ও সম্পদ সংরক্ষণ ও দর্শনীয় করে তোলা হোক।
ত্রিশালে কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে অচলাবস্থা
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে বিভাগীয় একজন শিক্ষককে বরখাস্তের আদেশ নিয়ে চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার থেকে বিভাগের প্রায় ২শ’ শিক্ষার্থী ক্লাশ ও পরীক্ষা বর্জন করে চলেছেন। একই সাথে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি পেশ ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে তারা এ আদেশ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ষড়যন্ত্র করে বেশ কিছু অযোগ্যতার অভিযোগ এনে সংগীত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. রশীদুন্নবীর মতো গুণী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যাক্তিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। এ আদেশ কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের ওপর আঘাতই নয়, বাংলাদেশের সংস্কৃতির ওপর আঘাত। শিক্ষার্থীরা জানায়, ড. রাশিদুন্নবী স্যার বাংলাদেশ ও ভারতে অন্যতম একজন নজরুল সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া তিনি সঙ্গীত বিভাগের সার্বিক উন্নয়নকল্পে তার নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের তুলনায় আমাদের সঙ্গীত বিভাগকে আরো মর্যাদাবান ও গতিশীল করে তুলেছে এবং এর ফলে আমাদের বিভাগ, তথা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি আরো উজ্জল হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, সংগীত বিভাগে ড. রশিদুন্নবীর অনুপস্থিতি তাদের পড়াশোনার পুরো কার্যক্রমকে ব্যাহত করবে। শিক্ষার্থীরা তাদের এ দাবী উপচার্য বরাবরে পেশ করেছে বলেও জানায়। সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন মামুনুল ইসলাম, ফারহানা আফরীন তারেক মাহমুদ, রওশন আলম, জীবন চৌধুরী, আফসানা ইয়াসমীন সহ সঙ্গীত বিভাগের আরো অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। 

কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ
মনির তালুকদার
শুধু চাকরির সুবাদে নয়, মানবিক কূটনীতিকের গুণ দিয়ে বাংলাদেশকে অনুভব করেন এমনো একজন কূটনীতিক, ঢাকায়, কানাডার রাস্ট্রদূত রবাট ম্যাগডুগালা গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশের এ রাষ্ট্রদূত যে বাংলাদেশের সঙ্গে তার দেশের বাণিজ্যের সর্বশেষ গতিধারা সবসময় পর্যবেক্ষণ রাখেন তা বারবার টের পাওয়া গেছে তার কাজের মাধ্যমে।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কটিকে অটুট রাখা বা আরো এগিয়ে নেয়ার প্রয়াসেই হয়ত ম্যাগডুগাল এখন সহযোগী হয়েছেন “কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার এন্ড কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি” বা ক্যানচ্যাম এর।  গত দুই দশকে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ইতিহাস যদি পর্যালোচনা করা হয় তবে সেটি উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির এক ইতিহাসেরই বর্ণনা হবে। রফতানির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে, কানাডা বাংলাদেশের পণ্যের সবচেয়ে বড় ৫টি রফতানি বাজারের মধ্যে একটি। ২০০৪ সাল থেকে কানাডা বাংলাদেশকে অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের সঙ্গে প্রায় শর্তহীন শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার দিয়েছে যা আর কোথাও এখনো পায়নি বাংলাদেশ।
২০১০ সালের শুরুর দিকে কানাডা ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অংক ছাড়িয়েছে। এমন বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য বাংলাদেশের আছে বড়জোর গোটা দশেক দেশের সঙ্গে। তবে কানাডা আর বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্কে একটু স্থিরতা কিংবা অনেকেব ক্ষেত্রে ঋণাÍক প্রবৃদ্ধি স্পষ্ট হয়ে ওঠে ২০১০ সালে। ২০০৯ সালের চেয়ে ২০১০ সালে রফতানি সামান্য কমে, তবে আমদানি কমে বেশি।
প্রথমে রফতানির কথায় আসা যাক। বাংলাদেশ থেকে যা রফতানি হয় কানাডার তার ৮০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক রফতানির মাধ্যমে। তৈরি পোশাকের জন্য বাংলাদেশ কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানি সূত্র। চীন একাই সে বাজারের ৭৫ শতাংশ দখল করে আছে। বাংলাদেশের ওভেন ওনিট পোশাক দুটোই কানাডায় যায়। হোম টেক্সটাইল টেরিটা ওয়েল ওকার্পেটসহ টেক্সটাইল ক্যাটাগরির কিছু পণ্যও যায়। ২০১০ সালে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছিল এর  প্রধান কারণ ছিল বিশ্ব মন্দা। তাদের পোশাক আমদানির প্রবৃদ্ধি ঋণাÍক। তবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতো চীন বা অন্যদের মতো ঋণাÍক ও হওয়ার কথা নয়। কারণ বাংলাদেশের আছে সহজতম শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা। মন্দার বাজারে তো বরং চীনের হারানো অর্ডার বাংলাদেশের রফতানিকারকদেরই পাওয়ার কথা ছিল। তবে কম্বোডিয়া ও তুরস্কের কানাডার বাজারে পোশাক রফতানি বাড়ছে কেন, তা ভেবে দেখা দরকার।
কানাডার পোশাক আমদানির অবস্থা না হয খারাপ ছিল, কিন্তু দেশটিতে তো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের আরো নানা পণ্য আমদানি করছে। আর সেখানে প্রবৃদ্ধি আছে ঠিকই এটিও নজরে আনতে হবে। তবে চলতি বছরে কানাডায় হিমায়িত খাদ্য রফতানি আবার বাড়ছে সেটি ভালো খবর। তাছাড়া বাংলাদেশ আরো খাদ্য পণ্য ও কিছু পরিমাণে রফতানি হওয়া শুরু হয়েছে কানাডায় এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে কানাডার বাজারে পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বৈচিত্র্য আনতে পারলে সম্ভাবনা আছে প্রচুর। শুধু এর বাস্তবায়ন দরকার এখন।
কানাডা থেকে বাংলাদেশ প্রচুর আমদানিও করে। সেগুলো হচ্ছেÑকানাডিয়ান গম, লেনটিল আর ক্যানোলা, ডাল, রেলের, যন্ত্রপাতি, বেশ কিছু স্টিল পণ্য, ওষুধ, শিল্প যন্ত্রাংশ, পাল্প পেপার আসে কানাডা থেকে। তবে ২০১০ সালে কানাডা থেকে আমদানি গড়ে প্রায় ৫ শতাংশ কমে ছিল। ডালের আমদানি কমেছিল বেশ। বর্তমানে গম ও ক্যানোলার সম্প্রতি যেভাবে দাম বেড়েছে সে তুলনায় আমদানি ব্যয় বাড়েনিÑমানে পরিমাণে কমেছে আমদানি। তবে গেল বছরের চেয়ে চলতি বছরে আমদানি ও রফতানি দু’টোই কিছুটা হলেও বেড়েছে। সেক্ষেত্রে পরিকল্পিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে কানাডা ও বাংলাদেশের বাণিজ্য সহযোদ্ধা আরো দৃঢ় করতে হবে যে কোনো দুঃসময়কে অবশ্যই জয় করে। তবে কানাডা সেবা খাত এবং প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর উন্নত অর্থনীতির দেশ কানাডা। সেক্ষেত্রে কানাডা হলো বিশ্বের নবম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বিশ্বের ধণী দেশগুলোর মধ্যেও এটি অন্যতম। উন্নত ওই দেশটির অর্থনীতির সেবা খাত দ্বারা বেশি প্রভাবিত। সেবা খাতই কানাডার ৭৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। কানাডার শিল্প খাতের প্রধান আটোমোবাইল। এছাড়াও তেল-সহ বিভিন্ন প্রাথডিমক খাতের ও প্রধান্য রয়েছে। বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে স্বাধানীতাপ্রাপ্ত দেশ গুলোর মধ্যে প্রথম দিকের দেশ কানাডা। বাজারনির্ভর অর্থনীতি এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার দিক থেকে কানাডার অর্থনীতি অনেকটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো। ২০০৭ সাল থেকে ২০১০ সাল সময়ে বিশ্বেব্যাপী মন্দার সময়ে দেশটির অর্থনীতি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে ছিল। এর প্রভাবে দেশটিতে বেকারত্বের হার প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ উঠে যায়। মন্দার আগে কানাডায় বেকারত্বের হার ৫ শতাংশের কম ছিল।
২০১০ সালের হিসেবে অনুযায়ী কানাডার জিডিপি’র পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৬৩২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। মাথাকিছু জিডিপি’র হার ছিল ৪৩ হাজার ১০০ ডলার। দেশটির জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ছিল ৭১ শতাংশ। ২০১০ সালে দেশটির মূল্যস্ফীতি ছিল ১ দশমিক ৬ শতাংশ। ইজি অব বিজনেস ডুয়িংয়ের কি থেকে দেশটির অবস্থান বিশ্বে সপ্তমা কানাডার প্রধান শিল্পগুলো হলোÑ যানবাহনের যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক, দ্রব্যাদি, সংশোধিত এবং অসংশোধিত খনিজ, কাঠ, খাদ্যদ্রব্য, কাগজ মাছ তেল এবং  প্রাকৃতিক গ্যাস।
২০১০ সালের হিসেবে অনুযায়ী দেশটির রফতানির পরিমাণ ৪০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে যানবাহন রাসায়নিক দ্রব্যাদি, সার, অসংশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি। কানাডা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটিন, চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করে থাকে। বৈদেশিক বাণিজ্য হলো কানাডার অর্থনীতির একটি বড় অংশ। বিশেষ করে প্রাকৃতিক সম্পদ বাণিজ্য দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কানাডার প্রধান খনিজদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে কয়লা, তামা, আকরিক লোহা, প্লাটিনাম, এবং স্বর্ণ। ২০০৯ সালে কানাডার মোট রফতানির ৫৮ শতাংশই ছিল বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও মোটেরগাড়ির রফতানির পরিমাণ ছিল মোট রফতানির ৩৮ শতাংশ।
২০১০ সালের হিসেবে অনুযায়ী কানাডার আমদানির পরিমাণ ৪১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমদানি করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে যন্ত্রপাতি, মোটরগাড়ি, গাড়ির যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, তেল এবং ভোগ্যপণ্য। কানাডা আমেরিকা, যুক্তরাজ্য চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ওইসব পণ্য আমদানি করে থাকে। দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রধান। অংশীদার হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কানাডার মোট, রফতানির ৭৩ শতাংশ এবং আমদানির ৬০ শতাংশ হয়ে থাকে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের সঙ্গে। কানাডা বিশ্বের বৃহৎ কৃষিপণ্য যোগানদাতা দেশ। বিশেষ করে গম এবং বিভিন্ন খাদ্য শস্য যোগানে দেশটি শীর্ষে রয়েছে। কানাডা তাদের কৃষিপণ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রফতানি করে থাকে আমেরিকা, এশিয়া এবং পূর্ণ ইউরোপে। এক সময় দেশটির জিডিপিতে কৃষি খাতের অনেক অবদান থাকলেও বিংশ শতাব্দীতে এসে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
একটা দেশকে ধণী দেশে রূপান্তারিত হতে হলো সবাধারণত তাকে প্রাইমারি শিল্পের দেশ থেকে প্রথমে শিল্পনির্ভর পরে সেবাখাত নির্ভর দেশ হতে হয়। বর্তমানে কানাডাও সে পদ্ধতি অনুসরণ করে সমৃদ্ধিশালী  দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯৪৪ সালেও কানাডায় জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ২৯ শতাংশ যা ২০০৫ সালে এসে কমে সাড়ে ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
কানাডার সেবা খাতের মূল হলো রিটেইল সেক্টর। ওই খাতেই দেশটির ১২ শতাংশ মানুষ কাজ করে। সেবা খাতের মধ্যে দ্বিতীয় ব্যাংকিং বীমা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতও রয়েছে সেবা খাতের মধ্যে।


আমার স্মৃতিতে অধ্যক্ষ সৈয়দ আমিনূল ইসলাম জাকির
এ্যাডভোকেট মো. তারিকুল ইসলাম
আমার চোখ থেকে সহসা পানি পরে না। ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে লিটন চাচার ফোন পেয়ে আমার চোখ থেকে পানি পরেছে। ঐ সময় জেনেছি আমার প্রিয় অধ্যক্ষ সৈয়দ আমিনূল ইসলাম জাকির মৃত্যুকে আলিংগন করে চলে গেছেন। আর সে কারনেই আমার চোখ থেকে পানি পরেছিল অঝোরে।
অধ্যক্ষ সৈয়দ আমিনূল ইসলাম জাকির পিতা-পূত্র সবার কাছে জাকির স্যার নামে পরিচিত। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে তাঁরই মোবাইলে ফোন করলে তাঁর এক বোন ফোন রিসিভ করেন। আমি তাঁর বোনের কাছে সমবেদনা জানানো কালে ফুপিয়ে কেঁদে ছিলাম।
তিনি আমার পিতার সাথে বহুবার আমাদের বাসায় এসেছেন। সে কারনেই আমি বাল্যকাল থেকেই তাঁকে চিনতাম। কিছুদিন ছাত্র হিসেবে আমি তাঁর সান্নিধ্য সরাসরি পেয়েছি। আমার ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক থাকা অবস্থায় আমি তাঁর সাথে বিভিন্নত্র বেড়ানোর সুযোগ হয়েছে। রুচিশীল মানুষ হিসেবে লঞ্চ ভ্রমনে তিনি মুরগি ও দামি বালাম চাল নিয়ে লঞ্চে উঠে ঐ মুরগি এবং চাল লঞ্চের বাবুর্চিদের রান্না করতে দিতেন। রান্না শেষে ঐ মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খেতে খুবই মজা লাগত। তাঁর সাথে সেনা প্রধান, পুলিশ প্রধান সহ বহু রাজনৈতিক নেতা ও পদস্থ কর্মকর্তার বাসায় গিয়েছি। তাঁর দেয়া একটি চিঠি নিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে এসে আমার এক বন্ধুর বদলি অনায়াসে বাতিল করিয়ে ছিলাম। ঐ সময় তাঁর যোগাযোগের হাত কত যে লম্বা তা বুঝতে পেরে ছিলাম।
রাজনৈতিক ভাবে তিনি এবং আমি ভিন্ন মেরুর। তার পরেও তাঁর সাথে আমার ব্যক্তিগত সর্ম্পক ছিল অত্যন্ত সুমধুর। এক কথায় তাঁর কাছে আমার সর্ম্পকে কেউ কোন অভিযোগ করলে তিনি তা বিশ্বাস করতেন না। আমার ব্যক্তিগত বিপদে আপদে তিনি আমাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতেন। একজন শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবীদ, আইনবীদ হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল অতুলনীয়। তিনি বানারীপাড়া আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বিরতিহীন ভাবে তিনি আমৃত্যু আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেছেন। রাজনৈতিক জীবনে তাঁর কোন প্রাপ্তি নেই। বঙ্গবন্ধুর অবিনাশী আদর্শের তিনি ছিলেন আপোষহীন, কারাবরনকারী নেতা। এরশাদ আমলে মন্ত্রী পরিষদ সদস্য হওয়ার প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখান করেছেন। শিক্ষকতা জীবনে তিনি বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় অপরিসীম ভূমিকা রেখেছেন। বহু পথভ্রষ্টদের লেখাপড়া শিখিয়ে শিক্ষিত করেছেন, চাকুরি দিয়েছেন। স্বল্প সময় আইন পেশায় নিয়োজিত থেকে তিনি অসহায় মানুষদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে আইনি সহায়তা দিয়েছেন।
বরিশাল আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে একবার আমি অন্যায় ভাবে পেশাগত হয়রানিতে পরেছিলাম। তখন তাঁর এক আত্মীয় বরিশাল আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বে ছিলেন। বিষয়টি তাঁকে জানানো মাত্রই তিনি তাঁর আইনজীবী নেতা আত্মীয়কে বলে আমাকে হয়রানি হতে রক্ষা করে ছিলেন। আইন পেশায় প্রতিষ্ঠা ও পরিচিতি পেতে তিনি আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। আইনি সহায়তার জন্য তিনি আমার কাছে বহু লোক পাঠিয়েছেন। বানারীপাড়া-বরিশাল সড়কে এক অশিক্ষিত বিএনপি নেতার হামলা থেকে তিনি আমাকে বাঁচিয়ে ছিলেন। ১৯৯৬ সন হতে ২০০১ সন পর্যন্ত আমি, প্রয়াত মিল্লাত এবং লিটন বেশ কিছু সাংবাদিকদের নিয়ে তাঁর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সাহসের সাথে সাংবাদিকতা করেছি। আমরা তাঁকে বানারীপাড়া প্রেসক্লাব পদকে ভূষিত করেছিলাম। তিনি বানারীপাড়া পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকালে দক্ষিণ নাজিরপুর গ্রামে তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দিয়ে সোনার চাবি উপহার দিয়েছিলাম। তিনি ইতিহাসের শিক্ষক হওয়ার কারনে তাঁর পরামর্শে আমি শিক্ষাজীবনে ইতিহাস পাঠ্য হিসেবে নিয়েছিলাম। তাঁর মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁদের বাড়িতে গেলে তিনি আমার উচ্চসিত প্রশংসা করে তাঁর স্বজনদের কাছে আমাকে পরিচিত করে ছিলেন। বানারীপাড়া হাসপাতালে আমার ভাগ্নী ঐশী’র ভূমিষ্ট হওয়ার এবং বরিশাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে আমার মেয়ে তাসফি’র আবির্ভাবের খবর শুনে তিনি হাসপাতালে গিয়ে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। আমার পিতার হৃদরোগের চিকিৎসার সময় অজস্রবার ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং আমাকে সাহস যুগিয়েছেন। তিনি বিয়ে করার পর ভাবীকে তুলে আনার আগেই অনাত্মীয়দের মধ্যে সর্বপ্রথম আমি, প্রয়াত মিল্লাত এবং লিটন ভাবীর বাড়িতে গিয়ে ভাবীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম। একবার শেষ রোজায় তিনি আমাকে ও প্রয়াত মিল্লাতকে ইফতারির আমন্ত্রণ জানিয়ে ঈদের জামা-কাপড় দিয়েছিলেন। কোন এক সময় সাংবাদিক মামুন আমাকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিল। আমরা তাঁর বাড়ির বারান্দায় বসেছিলাম। আমি আসার খবর শুনে ভাবী দরজার পর্দার ফাক দিয়ে আমাকে ইশারায় বারান্দা থেকে বাড়ির ভেতরে নিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের সাথে আমার এমন সম্পর্ক দেখে সাংবাদিক মামুন হতবাক হয়েছিল। ২০০৮ এর সংসদ নির্বাচনের দু’দিন পরে তিনি আমার কাছে ফোনে অধিকার করে জানতে চাইলেন কেন আমি তাঁদের বিজয়ে শুভেচ্ছা জানালাম না ? আমি বিনয়ের সাথে আমতা আমতা করে অন্যরূপ উত্তর দেয়ার চেষ্টা করলে তিনি আমাকে আদরের সাথে ধমক দিয়ে বললেন-“ তোমার সাথে কি আমার রাজনৈতিক সম্পর্ক ?” ২০০৯ সনে উপজেলা নির্বাচনে তাঁর দেয়া দায়িত্ব আমি পালন করতে চেষ্টা করেছি। তাঁর মৃত্যুর অল্প কয়েকদিন আগে আমি তাঁকে আমার সাম্প্রতিক সময়ের আইনি সমস্যার কথা জানিয়ে ছিলাম। তখন তিনি তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কথা আমাকে জানিয়ে আমার সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বত্র ফোন করেছিলেন। ওটাই তাঁর সাথে আমার শেষ কথা। এছাড়া ঈদ, কোরবানি, নববর্ষ সহ বিভিন্ন সময় তাঁর সাথে আমার নিয়মিত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে শুভেচ্ছা বিনিময় হতো।
তিনি ছিলেন আমার মনের মানুষ। আজ তিনি নেই। স্মার্ট, হাস্যজ্জ্বল, উদার, রুচিশীল, প্রঞ্জাবান এ মানুষটি হাজারো মানুষকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন পরপারে। জনপ্রিয়তার কারণে বানারীপাড়ার ইতিহাসে একমাত্র তাঁরই পাঁচবার জানাজার নামায হয়েছে। তাঁর সাথে আমার আবার দেখা হবে কেয়ামতের দিনে। তাঁর প্রতি আমার প্রগাঢ় ভক্তির নৈবেদ্য থাকবে চিরকাল। কোন অন্যায় করলে তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করেন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাত বাসি করুন। এরূপ অপূরনীয় ক্ষতিগ্রস্ত ভাবী ও নাবালিকা কন্যা জারিন-এর প্রতি আমার সমবেদনা রইল।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ৩ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ আটকে আছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে নির্বাচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন সারাদেশে ৩ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ।  শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ১০টি মাধ্যমিক স্কুলের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের তালিকা নিয়েছে। সংসদ সদস্যগণ এ তালিকা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার কর্মকর্তারা ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের জন্য এখনো সারাদেশের নির্বাচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের জন্য স্কুল বাছাইয়ের নামে বার বার তালিকা পরিবর্তন করছে মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এসব কারণে আজও ৩ হাজার মাধ্যমিক স্কুলের তালিকা চূড়ান্ত করা যায়নি। কিন্তু নির্বাচিত স্কুলের তালিকা প্রণয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার কর্মকর্তারা নিজ ব্যর্থতার কথা স্বীকার করতে রাজি নন। তারা বলছেন, সংসদ সদস্যগণ বার বার নির্বাচিত স্কুলের নাম পরিবর্তন করার কারণেই তারা স্কুলের তালিকা চূড়ান্ত করতে পারছেন না। এজন্য এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৩ হাজার স্কুলের মধ্যে মাত্র ১৪শ’ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, গত ডিসেম্বর মাসে সংসদ সদস্যদের কাছে তাদের নির্বাচনী এলাকার ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের তালিকা চাওয়া হয়। কিন্তু অনেক সংসদ সদস্যই যথাসময়ে সে তালিকা দেয়নি। আবার অনেক সংসদ সদস্য তালিকা দেয়ার পরও বার বার তা পরিবর্তন করছেন। এসব কারণে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে নির্বাচিত স্কুলের তালিকা প্রণয়নে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি অনেক এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও সরকারের কাছেও বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের চাহিদাপত্র দিয়েছেন। এসব কারণে এখন পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে ১ হাজার ৪০৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়েছে। শিগগিরই এসব বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শুরু হবে।
সূত্র জানায়, দেশে শিক্ষার মাধ্যমিক স্তরে গুণগত পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে সরকার সারাদেশের প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় ১০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য নির্বাচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে ২০০৯ সালে। ওই বছরের আগস্ট মাসে শিক্ষামন্ত্রী প্রকল্পটির অনুমোদন দেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে একনেক প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। একনেক ২ হাজার ১১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটির বাস্তবায়নের অনুমোদন দেয়ার পরই শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে প্রত্যেক সংসদ সদস্যকেই নিজ নির্বাচনী এলাকার সংকটে থাকা ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য চিঠি দেয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রী নির্বাচিত এসব স্কুলের তালিকা শুধুমাত্র সংসদ সদস্যদের থেকে গ্রহণ করার নির্দেশ দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা গ্রহণ করে। ফলে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের স্কুলের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করতে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি তালিকা বাছাইয়ে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতিরও অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে নির্বাচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন ৩ হাজার স্কুলের উন্নয়ন কর্মকা  বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে সরকারের খরচ হবে ২ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পের জন্য সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ১২০ কোটি টাকা। মোট ৭টি শ্রেণীতে দেশজুড়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ করা হবে। এর মধ্যে বিভাগীয় শহরের স্কুলে ৬তলা এবং অন্য শহরের স্কুলে ৪তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের অধীন প্রতিটি স্কুলে কমপক্ষে ৫৮ লাখ এবং সর্বোচ্চ ৭৯ লাখ টাকার অবকাঠামো, পয়ঃনিষ্কাশন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ, বৈদ্যুতিক কাজ, আসবাবপত্র সরবরাহ ও আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে। তবে সমতল ভূমি, হাওর, পাহাড়ি এলাকা, উপকূলীয় অঞ্চলের আবহাওয়া বিবেচনা করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন তৈরির ক্ষেত্রে ভিন্নতা রাখা হয়েছে। সমতল ও হাওরাঞ্চলে নির্মিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবনের আয়তন হবে ২৯৫ বর্গমিটার। আর উপকূলীয় এলাকায় স্কুল ভবনের আয়তন হবে প্রায় ৫৯০ বর্গমিটার।
 
পলিথিন ব্যাগ কি নিষিদ্ধ!
পলিথিন শপিং ব্যাগ শুধু কাগজপত্রেই নিষিদ্ধ হয়ে আছে। বাজারে এর কোনো প্রতিফলন চোখে পড়ে না। মাছ-মাংস, শাকসবজি থেকে মুদি দোকানের পণ্য সবই দেয়া-নেয়া হচ্ছে পলিব্যাগে। শুধু আকারটা পাল্টেছে। অর্থাৎ আগের মতো হাতলওয়ালা রঙিন ব্যাগগুলো বাজারে নেই, কিন্তু এগুলোর জায়গা ভালোমতো দখল করে আছে বিভিন্ন সাইজের আধাস্বচ্ছ পলিপ্যাকেট। পরিস্থিতি দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক পলিথিন কী আসলেই নিষিদ্ধ? অবাক করা ব্যাপার যে, যাদের কাজ পলিব্যাগের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা, সেই পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেই আটককৃত টন টন পলিব্যাগ আবারো বাজারে চলে যাচ্ছে। 
বৃহস্পতিবারের একটি জাতীয় দৈনিকের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সম্প্রতি চট্টগ্রামের এক গুদাম থেকে ২১ দশমিক ৩০ টন পলিথিন আটক করা হয়। সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে একইসঙ্গে বিস্ময়কর ও উদ্বেগজনক তথ্য যে, এসব পলিথিন পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এসব পলিব্যাগ আটক হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একে স্রেফ ‘নিষ্পাপ ভুল’ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আদতে কি তাই? বলার অপেক্ষা রাখে না, এই বিপুল পরিমাণ পলিথিন ব্যাগ পরিবেশ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন সময় বাজার থেকে বা কারখানা থেকে জব্দ করেছেন। জব্দকৃত এসব পলিব্যাগ নষ্ট করে ফেলার কথা। কিন্তু তা না করে তা আবার বাজারে ছেড়ে দিয়েছে কোনো অসাধু মহল। এটাও নিশ্চিত যে, এ কাজটি ঘটেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনের হাতেই। এ কাজটা যে এবারই প্রথম হয়েছে বা এর আগে আর হয়নি তার নিশ্চয়তা কোথায়? এই কা-টা অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের জ্ঞাতসারে বা যোগসাজশে হচ্ছেÑ এ রকম সন্দেহও অমূলক নয়। এরকমটা হলে সেটা যে খুবই উদ্বেগজনক তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পলিথিন বিশেষ করে পলিব্যাগ আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিÑ তা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। ঢাকার আশপাশের নদীগুলো বিশেষ করে বুড়িগঙ্গার তলদেশে পলিথিনের বর্জ্য জমে নদীকে মৃত এবং এর পানিকে এমনই বিষাক্ত করে তুলেছে যে সেখানে কোনো প্রাণীর পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এ ছাড়া রাজধানীর ড্রেন-নালাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ এই পলিব্যাগ। আজ একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহর নোংরা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়, এর জন্য বহুলাংশে দায়ী এই পলিব্যাগ। কিন্তু পলিব্যাগ ব্যবহার বন্ধে সচেতন প্রচেষ্টা না সরকার না জনগণ কারো মধ্যেই দেখা যাচ্ছে না। প্রথম যখন পলিব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়, তখন বাজারে বেশ মনিটরিং ছিল। সচেতনতামূলক প্রচারণাও ছিল। নগরবাসী বাধ্য হয়ে হলেও কাপড় বা চটের বা বিকল্প কোনো টেকসই ব্যাগ নিয়ে বাজারে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু কালক্রমে সবই ঢিলে হয়ে যায়। এর জন্য মূলত দায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ঢিলেমি। হাতলওয়ালা শপিং ব্যাগ আকারের পলিব্যগ বাজারে নেই ঠিকই তার জায়গায় সাদা বা আধা স্বচ্ছ প্যাকেট আকারের পলিব্যাগে বাজার এখন সয়লাব। এটা যেন দেখার কেউ নেই। নেই কোনো মনিটরিং, প্রচার-প্রচারণাও। এই ওয়ানটাইম পলিব্যাগ একেতো পরিবেশ ধ্বংস করছে, অন্যদিকে অর্থের অপচয় ঘটাচ্ছে। পলিব্যাগ ব্যবহার বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর বা অন্য দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম এখন দৃশ্যমান নেই বললেই চলে। এর মাঝে যদি আটককৃত পলিব্যাগ বাজারে ছাড়ার মতো অপকর্ম ঘটে খোদ অধিদপ্তর থেকে, তাহলে আর বলার কী থাকে! সর্ষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে তাহলে সে সর্ষে দিয়ে ভূত তাড়ানো যাবে কি? কাজেই আগে সর্ষের ভূত দূর করা দরকার। দরকার কারখানা ও বাজারে পলিব্যাগ বিরোধী জোরালো অভিযান পরিচালনা করা। এবং অতিঅবশ্যই ব্যাপকভাবে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি অব্যাহত রাখা। 

এলাকাবাসীর গলার ফাঁস জুড়ীর নির্মাণাধীন সেতু ॥ বাধায় মুখে নির্মাণকাজ বন্ধ
রমা পদ ভট্টাচার্য্য শংকর
মৌলভীবাজারের জুড়ীতে ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ভোগতেরা সেতুটি ২০ গ্রামবাসীর উপকারের আসার পরিবর্তে গলার ফাঁস হিসেবে পরিণত হয়েছে। ৫ফুট উচু করার দাবিতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর আপত্তির মূখে ৭ দিন থেকে সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিন নির্মাণাধীন ব্রিজ এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, মৌলভীবাজার-জুড়ী-চান্দগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের জুড়ী-কুলাউড়া অংশের ভোগতেরা খালের উপর সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। শুরু থেকেই এ ব্রীজে অত্যান্ত নিম্নমানের কাজ চলছে। নির্মাণকাজ শুরুর সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থানীয় লোকজনদেরকে জানিয়েছেন বর্তমান অবস্থান থেকে নির্মিত সেতুটি অনেক উচু হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সেতুটি আগের অবস্থানেই রয়ে যাচ্ছে। বৃটিশ আমলের সেতুর চেয়েও যা অনেক নিচু। যেহেতু সেতুটি স্থায়ী ভাবে হচ্ছে, সেহেতু সেতুর উচ্চতা বাড়ানো আবশ্যক। এলাকাবাসী জানান, উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, চাটেরা, ভোগতেরা, কালীনগর, রানীমুরা, চম্পকলতা, বাহাদুরপুর, ভবানীপুর, মনতৈল, হামিদপুর, গৌরীপুর, জায়ফরনগর, হাসনাবাদসহ প্রায় ২০ গ্রামের বাসিন্দারা কৃষির উপর নির্ভরশীল। কালনীর হাওর ও হাকালুকি হাওরে কৃষি কাজ করে ফসল উৎপাদন এবং প্রতিটি বাড়ীতে উৎপাদিত মৌসুমী ফসলের উপর ভিত্তি করেই মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কালনীর হাওর ও উল্লেখিত গ্রামগুলোর পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ হচ্ছে ভোগতেরা খাল। এমনকি মৌসুমী ফসল বাজারজাতকরণ এবং হাকালুকি হাওরে উৎপাদিত ধান ও সবজি বাড়ীতে আনার জন্য একমাত্র বাহন হচ্ছে নৌকা। আর নৌকা চলাচলের একমাত্র ও সহজ রাস্তা হচ্ছে কালনীর হাওর থেকে উৎপন্ন হয়ে হাকালুকি হাওর পর্যন্ত বিস্তৃত ভোগতেরা খাল। এই খালের উপর ভোগতেরা সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। বর্তমান অবস্থায় সেতুর কাজ শেষ হলে বর্ষাকালে সেতুর গার্ডারের অধিকাংশই পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এতে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি ব্যাপক আকারে বাড়ীঘর পানিতে তলিয়ে যাবার আশংকা রয়েছে। যার ফলে অত্র এলাকাবাসীর দুর্ভোগ, খরচ ও কষ্ট বাড়বে। যথাসময়ে মৌসুমী ফসল ও ধান স্থানান্তর করা যাবেনা বিধায় কৃষকগন মারাত্বক ক্ষতির সম্মূখিন হবেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ গোলাম রসুল গত ২০ জুন সরেজমিন সেতুটি পরিদর্শকালে উপস্থিত শতশত মানুষ বিষয়টি জানান। এ সময় উপস্থিত প্রকৌশলীদ্বয় জানান, ২০০৭ সালে প্রণীত নকশা অনুযায়ী সেতুর কাজ চলছে। ২০১০ সালের ভয়াবহ বন্যার কথা পরবর্তীতে আর বিবেচনায় আনা হয়নি। বর্তমানে সেতুর ক্যাপ নির্মানের কাজ শেষ হয়ে গার্ডার নির্মাণের কাজ চলতে থাকায় এমুহুর্তে নকশা পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। নবনির্বাচিত স্থানীয় জায়ফরনগর ইউপি চেয়ারম্যান নজমুল ইসলাম জানান, নির্মাণাধীন সেতু প্রায় ২০টি গ্রামবাসীর উপকারের পরিবর্তে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুরু থেকেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নি¤œমানের কাজ চলছে। নির্মিত সেতুর বটম লেবেল বর্তমান অবস্থান থেকে আরও ৪/৫ ফুট উচু করার দাবি জানান তিনি। উল্লেখ্য, সংযোগ সড়কসহ ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ৩১.২৪ মিটার দীর্ঘ সেতুর কাজ গত বছরের ফেব্র“য়ারী মাসে শুরু হয়। বন্যার কারনে প্রায় ৯ মাস কাজ বন্ধ ছিল। বর্তমানে আবারও কাজ চলছে। আগষ্ট মাসের মধ্যেই সেতুর কাজ শেষ করার কথা।
সিংড়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি দখলমুক্ত ॥ গ্রাহকদের শঙ্কা
নাটোর সংবাদদাতা
সিংড়া উপজেলার দমদমা-বস্তামৌজা এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা আব্দুর রাজ্জাকের আবাসন প্রকল্পের ক্রস ড্রেন উচ্ছেদ ও বালি অপসারণের মাধ্যমে জায়গা দখলমুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারী জায়গা দখলমুক্ত করা হলেও আাবাসন এলাকায় বসবাসের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের গ্রাহকরা। প্রকল্পের গ্রাহকরা তাদের বসবাসের জন্য প্রকল্পের নিজ জায়গায় রাস্তা নির্মাণ ও ক্রস ড্রেন নির্মাণে আবাসন প্রকল্পের কতৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছেন।
জানা যায়, বেশ কিছুদিন আগে উপজেলার জিয়া নগরের পার্শ্বে আব্দুর রাজ্জাক নামে জনৈক ব্যক্তি একটি আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। প্রকল্পের গ্রাহক সংগ্রহের পাশাপাশি তাদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বরাদ্দের জন্য প্লট নির্মাণ করতে থাকেন। আবাসন এলাকায় বসবাসকারীদের চলাচল ও সংশ্লিষ্ট এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য নিজ জমির সাথে সাথে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বেশ কিছু জমিতে বালি ফেলা হয়। এরপর পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি চওড়া ক্রস ড্রেন নির্মাণ করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কয়েকদিন আগে বিভাগের গাড়ি ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট জায়গার বালি অপসারণ করেন। এরপর সড়ক বিভাগের জায়গায় গড়ে ওঠা ক্রস ড্রেন ভেঙ্গে ফেলা হয়।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তাদেরকে অবগত না করেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে বালি ভরাট ও ক্রস ড্রেন নির্মিত হয়েছিল। বিষয়টি প্রকল্প কতৃপক্ষকে বার বার জানানো স্বত্বেও কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় বাধ্য হয়ে তারা নিজ উদ্যোগেই সরকারী জায়গা দখলমুক্ত করেছেন।
 এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্লট ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ক্রস ড্রেন ভেঙ্গে ফেলায় ও বেশ কিছু এলাকার বালি উত্তোলিত হওয়ায় গ্রাহকদের সাথে সাথে প্রকল্প কর্তপক্ষও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে গ্রাহকদের নির্বিঘœ বসবাস ও চলাচলের যাবতীয় অসুবিধা দূর করার বিষয়টি তাদের চিন্তায় আছে।
বানারীপাড়ায় তালিকাভূক্ত ৫০ ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত
রাহাদ সুমন, বানারীপড়া
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের  সহায়তায় বিশেষ গেজেটের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও বানারীপাড়ার ৫০ ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অথচ  মুক্তিযুদ্ধে এদের কারোরই কোন অবদান নেই। কেউ যুদ্ধেও অংশ গ্রহন করেননি। বানারীপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার তরুন ঘোষ জানান এরা সবাই ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা । ম্যানেজ প্রক্রিয়া ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে এসব ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা  তালিকায় অর্ন্তভূক্ত  হয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হওয়ার জন্য প্রথমে উপজেলা কমান্ডের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে আবেদন করতে হয়। সেখান থেকে আবার উপজেলা কমান্ড কাউন্সিলে যাচাই বাছাই করার জন্য পাঠানো হয় । যাচাই-বাছাই শেষে জেলা কমান্ডে পাঠানো হয়। জেলা থেকে পরে কেন্দ্রীয কমাান্ড কাউন্সিল হয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে গেজেট হয়ে আবেদনকারী  তালিকাভূক্ত হয়। কিন্তু উক্ত  ব্যাক্তিরা এ প্র্িরক্রয়া না মেনে সরাসরি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের  মাধ্যমে বিশেষ গেজেটে তালিকা ভূক্ত হয়েছেন। সম্প্রতি বিশেষ গেজেটে তালিকাভূক্ত হওয়া এসব ভূয়া মুক্তিযোদ্ধারা হলেন চাখারের বলহার গ্রামের খন্দকার আছাদুজ্জামান, বড় চাউলাকাঠী গ্রামের মোঃ মোখলেছুর রহমান,সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের মহিষাপোতা গ্রামের আব্দুর রব হাওলাদার, মাদারকাঠী গ্রামের দু’ সহোদর কামাল পাশা ও জামালপাশা, সলিয়াবাকপুর গ্রামের এ কেএম   মহি উদ্দিন ও মোঃ আলাউদ্দিন,চাখারের হাবিবুর রহমান,বাইশারী গ্রামের মোঃ সেকেন্দার, উদয়কাঠী ইউনিয়নের লবনসারা গ্রামের সৈয়দ জাহিদ হোসেন ও সৈয়দকাঠী ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গ্রামের ফজলুর রহমান।  এছাড়াও বিভিন্ন সময় আরও ৩৯ জন  ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা  একইভাবে তালিকাভূক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে এসব ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বেশিরভাগই ভাতা সুবিধাও ভোগ করছেন।  ফলে সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে  তারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। মৃত্যুর পর  তারা পাবেন রাষ্ট্রীয় মর্য়াদা। পর্যায়ক্রমে পরিবারের উত্তরসুরীরাও  ভোগ করবেন  যাবতীয় সুযোগ সুবিধা। এদিকে উপজেলা সমাজসেবা অফিস মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে না জানিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে এসব ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিচ্ছেন বলে  অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহজাদী আক্তার ভাতা প্রদানে   অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান নীতিমালার বাহিরে কোন কিছুই করা হয়না। এদিকে  মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামীলীগ সরকার আমলে মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও তালিকাভুক্ত হওযায় বানারীপাড়ার সচেতন মহল বিস্ময় প্রকাশ করেছ্ ে।
কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ার উর্বরা মাটির ইট যাচ্ছে ভারতে
হাবিবুর রহমান ফজলু
কমলগঞ্জ  ও কুলাউড়া সহ মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকার  প্রায় অর্ধশতাধিক ইটের ভাটা রয়েছে। কৃষি জমির উর্বর মাটি এনে এসব ভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। গ্রামের দরিদ্র কৃষক অর্থাভাবে আবার কেউ কেউ সচেতনতার অভাবে জমির উর্বর মাটি বিক্রি করছেন ইট ভাটায়। অধিকাংশ ভাটায় ধোঁয়া বের হওয়ার চিমনি থাকলেও বেশ কয়েকটিতে চিমনি দেখা যায়নি। কমলগঞ্জের গ্রামাঞ্চল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশেই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুুমতি নিয়ে এভাবেই জমজমাট ইট ভাটার ব্যবসা চলছে। কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইট বিক্রি করলেও গত দু’বছর ধরে ভারতে ইট রফতানি হওয়ায় দেশীয় ইট ভাটার মালিকরা নির্মাণ সামগ্রির সাথে ইটের দাম হু হু করে বাড়িয়ে দিয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার রাজদিঘীর পাড় এলাকার একটি ইট ভাটার ম্যানেজার ও কুলাউড়া উপজেলার সরিষাতলা এলাকার এএসবি ইট ভাটার মালিক কৃষি জমির উর্বরা মাটি দিয়ে তৈরি ইট ভারতে রফতানি হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ভারতে ইট রফতানি হওয়ায় ইটের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ইট ভাটার মালিকরা লাভবান হচ্ছেন। ভারত ইট ক্রয় করায় ৪ হাজার থেকে ৬ ও সাড়ে ৬ হাজার টাকা দরে ইট বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। চাতলাপুর শুল্ক অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ৭১৯৫ মেট্রিক টন প্রায় ৭ কোটি ২ লক্ষ টাকার ইট রফতানি করা হয়েছে, যা ৯ লক্ষ ৮৯ হাজার ডলার বৈদেশিক মুর্দ্রা অর্জন করেছে। কৃষি জমির উর্বরা মাটি ও গাছগাছালি ইট ভাটায় ব্যবহার করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা’র) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক এডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার। তিনি বলেন, আইন বহির্ভূতভাবে ফসলি জমির ৬ ইঞ্চি থেকে ৮ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি গভীর হলে খুবই ক্ষতি। কৃষি চাষাবাদ সম্ভব হয় না। এছাড়াও তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, কৃষির জন্য জমির উর্বরা মাটি খুবই উপকারী। এ মাটি ইট ভাটায় চলে যাওয়ায় কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে। সেজন্য ইট ভাটায় জমির উর্বরা মাটি যাতে না যায় সেজন্য ইতিমধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মাইকিং করা হয়েছে। তাছাড়া নতুন করে যাতে কেউ ইট ভাটার অনুমতি না পায় সে ব্যাপারেও সুপারিশ করা হয়েছে। ফসলি জমির উর্বরা মাটি রক্ষায় ভারতের পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক যত্রতত্র ইটভাটা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেখানে দিন দিন ইট ভাটার সংখ্যা কমে আসছে। অপরদিকে সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় অঞ্চলের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশে প্রস্তুত করা ইটের গুণগতমান ও দাম কম হওয়ায় সরবরাহ বেড়েই চলেছে। কৃষি জমির উর্বরা মাটি সংগ্রহ করায় আগামীতে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিনাশুল্কে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইট রফতানি হওয়ায় বাংলাদেশে ইটের দাম প্রায় দ্বিগুণ। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের বিধি মোতাবেক লোকালয় ও বনায়ন এলাকা থেকে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে ইটখোলা নির্মাণ করার বিধান রয়েছে। এমনকি কৃষি জমিতে ইটখোলা তৈরির আইনগত নিষেধ থাকলেও মৌলভীবাজারের বনায়ন সংলগ্ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ও কৃষি জমিসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ইট খোলা।
রাজাপুর-বেকুটিয়া সড়কের বেহাল দশা 

রাজাপুর (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি
বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের পিরোজপুরের বেকুটিয়া-ঝালকাঠির রাজাপুর সড়কের গর্তে প্রতিনিয়ত মালবাহি ট্রাক ও যাত্রীবাহি বাস আটকে যাওয়ার পর এবার উপজেলার সাতুরিয়া এলাকায় একটি বেইলি সেতু দেবে গিয়ে শুক্রবার ভোর রাত থেকে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে সেতুর দু’পার্শ্বে যানযটের সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে অনেক যাত্রী। রাজাপুর ও পিরোজপুরের সিমান্তবর্তী এ সেতুর সংস্কারের জন্য শুক্রবার সকালে পিরোজপুর সড়ক ও জনপদের লোকজন কাজ শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে পিরোজপুর সড়ক ও জনপদের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, ভোর রাতে মালবাহি একটি ট্রাকের ধাক্কায় সেতুটি দেবে গেছে। তাই যানচলা চল বন্ধ করে আমরা দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু করেছি এবং সন্ধ্যার মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে। গত কয়েকদিন কয়েক দিন আগেও এ সড়কের বিশ্বাস বাড়ি নামক স্থানে বেইলি সেতুর প্লেট ভেঙ্গে একটি চাল ভর্তি ট্রাক আটকে পড়ে। এছাড়াও আর কয়েকটি বেইলি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ দিকে রাজাপুর-বেকুটিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কে প্রতিনিয়ত মালবাহি বাস ও ট্রাক আটকে পড়ছে। রাস্তার মধ্যে বড় বড় গর্ত অতিক্রম করে কোনভাবেই চলাচল করতে পারছেনা ভারী যানবাহন আর যাও চলছে তাও না চলার মতো। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পথে। প্রতি দিনই এ রাস্তাটির কোন না কোন স্থানে গাড়ি আটকে পড়ার খবর নতুন কোন ঘটনা নয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে ১০ টন ব্রয়লার মুরগির খাদ্যসহ বরিশাল থেকে খুলনার মংলা পোর্টগামী আঁখি এন্টার প্রাইজের (খুলনা মেট্রো ড-১১-০১৬৮) মালবাহি ট্রাকটি উপজেলার মেডিকেল মোড় এলাকার গ্রামীণ ব্যাংকের সামনে রাস্তার গর্তে আটকে পড়ে। পরে প্রায় ৩ ঘন্টা আটকে থাকার পড়ে মাল নামিয়ে ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়। আটকে পড়া ট্রাক চালক মোঃ হালিম হোসেনসহ একাধিক গাড়ি চালকরা জানান, এ রাস্তায় কোনভাবেই গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। পুরো রাস্তায় গর্ত, মাল নিয়ে যাতায়াত করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। ফলে চরম দুর্ভোগে বরিশালের সাথে খুলনা, সমুদ্র বন্দর মংলা ও যশোরসহ পশ্চিমাঞ্চরের যাতায়াতকারী গাড়ির চালক, মালবাহি গাড়ি ও হাজার হাজার যাত্রীরা। বরিশাল ও খুলনার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মহাসড়টি নামমাত্র ইট দিয়ে মেরামত করার ফলে দুর্ভোগ আর বেড়েছে। বর্ষা মৌসুমে এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তে সৃষ্টি হয়ে একাকার হয়ে গেছে। সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে নামমাত্র ইট বিছিয়ে দেয়া হলেও এর মধ্য দিয়ে হেলে দুলে যানবাহন চলাচল করছে। বর্তমানে এ সড়কটিতে ধূুলাবালিতে একাকার। রাস্তার অবস্থা বেহাল হওয়ায় যানবাহন সঠিক সময়ে গিয়ে বেকুটিয়া ফেরি পাচ্ছে না। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। এ সড়কটি ৯ কিঃ মিঃ ঝালকাঠির মধ্যে বাকি ৩ কিঃ মিঃ অংশ পিরোজপুর আওতায়। এ ব্যাপারে ঝালকাঠি জেলা সড়ক ও জনপদ নির্বাহী প্রকৈৗশলী মোঃ শাহিন সরকার বলেন, এ সড়কটির নিচের মাটি ভাল না তাই যত কাজই করছি না কেন, কোন কাজ হচ্ছেনা। বর্তমানে কোন বরাদ্দ নাই তাই এ সড়ক সংস্কারের জন্য বড় কোন প্রকল্প নিতে পারছি না, গর্তে ইট দিয়ে সংস্কার করছি। অর্থ বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
রাজারহাট হাসপাতালে রোগীরা শুধু ব্যবস্থাপত্র পায়
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সাব সেন্টারে রোগীদের কোন দামী ঔষুধ দেয়া হয় না। রোগীদেরকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বিদায় করা হয়। অপরদিকে সরকারী নিয়ম উপেক্ষা করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারা নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ করে।
দুর্গাচরণ থেকে আসা রোগী বুলো রানী জানান, ২০দিন ধরে আমি হাসপাতালে ভর্তি আছি প্যারাসিটামল হিস্টাসিন ম্যাট্রো ও টিসি ছাড়া কোন ওষুধ দেওয়া হয় না। বাহিরে থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সুই সুতা কিনতে হচ্ছে। অপরদিকে উমর মজিদ ইউনিয়নের ইছাহাক আলী, আবুল কালাম, ছিনাই ইউনিয়নের হায়দুল  জানান ৫ দিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি আছি খাসির মাংসর পরিবর্তে বয়লারের মাংস ও ভাল মাছের পরিবর্তে সিলভার কার্প ও পাঙ্গাস মাছ ছোট আঁকারে একটি করে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে সারা বছরে ওষুধ সংকট থাকে। একটি সূত্র জানায়, সরকারীভাবে যে দামী ওষুধ দেয়া হয়, সে দামী ওষুধ গুলো ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরা কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন আমিও হাসপাতালে পণ্য সরবরাহ ও ওষুধ সংকটের অভিযোগ পেয়েছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তার দেখা পাওয়া যায়নি।
রাস্তার উপর পার্কিং, তাই রাস্তা সীমানা হারিয়ে ফেলেছে!
হাবিবুর রহমান ফজলু/বিকাশ মল্লিক
কুলাউড়া উপজেলা সদরে অবস্থিত কুলাউড়া পৌরসভা শহর বলতে যা বুঝায় তা ঐ পৌরসভায়ই অবস্থিত। মৌলভীবাজার জেলার অন্যান্য উপজেলায় বা দেশের অন্য কোন অঞ্চলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কুলাউড়া শহরের উপরে অবস্থিত কুলাউড়া-মৌলভীবাজার সড়কটি একমাত্র অবলম্বন।  রাস্তাটির যানজট ক্রমাগত তীব্রতর হচ্ছে। যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং এর জন্য রাস্তাটি তার সীমানা হারিয়ে ফেলেছে। রাস্তার উপর ঠায় দাড়িয়ে থাকা যানবাহন বিশেষ করে সিএনজিগুলো কারণে রাস্তা কি পরিমাণে প্রশস্ত তা বুঝা মুশকিল। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় রাস্তার ঐ অংশটুকু সিএনজিওয়ালাদের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ফুটপাততো অনেক পূর্বেই ইজারা দেওয়া হয়ে গেছে! কোন রহস্যজনক কারণে খুব কাছে থেকেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টির সীমানায় তা পড়ে না? এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের। যানজট দুর্ভোগের কিছু দৃশ্য উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরা হল- প্রথম দৃশ্যপট ঃ ২অক্টোবর শনিবার সকাল ১০টায় স্থান মৌলভীবাজার বাস ষ্ট্যান্ড সংলগ্ন প্রধান সড়ক, সড়কের বামপাশে অপেক্ষমান দুটি বাস দাড়িয়ে আছে অতিরিক্ত যাত্রীর জন্য এবং দুটি বাাসই রীতিমত প্রতিযোগিতা করে অবিরাম বাজিয়ে যাচ্ছে বিকট শব্দের হর্ন। সিলেটগামী ও মৌলভীবাজারগামী এ দুটি বাসের পেছন পেছন আবার ষ্ট্যান্ড থেকে বের হচ্ছে রবিরবাজারগামী আরেকটি বাস। বাস, আটকে দিলো স্কুল চৌমূহনী থেকে আসা দক্ষিণ বাজারগামী ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কুলাউড়া বালিকাা উচ্চ বিদ্যালয়গামী অসংখ্য ছাত্রীদের বহনকারী অজস্র রিক্সা স্কুল চৌমূহনীগামী অন্যান্য রিক্সা, অটো রিক্সা, টেম্পু। দ্বিতী দৃশ্যপট ঃ ২অক্টোবর দুপুর ২টায় একই স্থানের অদূরে অবস্থিত একটি ফোন ফ্যাক্সের দোকানে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি বিদেশে বসবাসকারী তার অসুস্থ মেয়ের সাথে কথা বলার আপ্রান চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাসের কান ফাটানো হর্ণের শব্দে কিছুই শুনতে পারছেন না একটা পর্যায়ে অসুস্থ মেয়ের খবর জানতে ব্যর্থ হয়ে তীব্র দুশ্চিন্তাগ্রস্থ এ ব্যক্তি নিজেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তৃতীয় দৃশ্যপট ঃ ঐ একই দিন বিকাাল ৪টায় বনফুল কনফেকশনারী থেকে কিছু স্ন্যাক্স কেনার জন্য জনৈক বয়স্ক ভদ্রমহিলা তার প্রাইভেট গাড়ী পার্ক করানোর জন্য ড্রাইভারকে বললে, ড্রাইভার তাকে এ কনফেকশনারীর সামনে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি এগিয়ে নিয়ে পার্ক করে রাখতে বাধ্য হয় ফায়ার সার্ভিস অফিসের প্রায় কাছাকাছি স’ানে নিয়ে, কারণ এ কনফেকশনারীর সামনে কোন গাড়ী পার্ক করে নিষেধ, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এ আইন ট্রাফিক কন্ট্রোল বিভাগের নয় এ আইন সিএনচি চালিত ফোর স্ট্রোক চালকদের। এমতাবস্থায় ঐ প্রৌঢ ভদ্র মহিলাকে কেনাকাটা করে এতদুর হেটে এসে গাড়িতে উঠতে হয় কারণ দক্ষিণবাজারের মুখ থেকে শুরু করে মৌলভীবাজার বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশই সিএনজি চালিত ফোর স্ট্রোকগুলো দখলে। নিয়মিত মাসোহারা পাওয়া যায় তাই ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টরা এ ব্যাপারে নির্বিকার থাকেন সারা বছরই। মাঝে মধ্যে তাদের তৎপরতা চোখে পড়ে যখন কোন ভিআইপি এলাকায় চরণধূলি ফেলার প্রয়োজন মনে করেন। এছাড়া উপরোক্ত ঘটনাবলী কোনে একদিনের বা বিশেষ কোন দিনের চিত্র নয় এরকম স্থবিরতা শুধু যে একটি নির্দিষ্ট এলাকার তাও নয়, একই দৃশ্য আউটার রেলক্রসিং থেকে শুরু করে সেই সকুল চৌমূহনী পর্যন্ত বিস্তৃত, আর এর মধ্যবর্তী স্থান সিএনজি ফিলিং স্টেশনে অপেক্ষমান ফোরস্ট্রোকের দীর্ঘ সারি যেন জানানোর চেষ্টা করছে আর বেশি দেরি নয় বাজেটের দিক থেকে এই পৌর এলাকা ছুতে যাচ্ছে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা মতিঝিল কিংবা খিলাগাঁওকে, উন্নয়নের দিক থেকে এ দুই স্থানের মধ্যে যত ফারাকই থাকুক না কেন।
মৌলভীবাজারে কফি চাষের সম্ভাবনা
হাবিবুর রহমান ফজলু
সম্ভাবনা থাকার পরও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের অভাবে মৌলভীবাজার জেলায় কফি চাষ হচ্ছে না। এ অঞ্চলের মাটি, জলবায়ু ও আবহাওয়া কফি উৎপাদনের উপযোগী হওয়ায় এখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কফি চাষ লাভজনক হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। জানা গেছে, ১৯৮০ সালে দেশের অন্যতম চা উৎপাদনকারী স্টার্লিং কম্পানি জেমস ফিনলে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে চা আবাদের পাশাপাশি কফি চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। জেমস ফিনলে কম্পানি ওই বছরই শ্রীমঙ্গলের সোনাছড়ায় প্রায় ৫৬০ একর জমিতে কফি বাগান গড়ে তোলে। ‘ফিনলে কফি’ নামে পরিচিত ওই কফির ক্রেতা ছিল আন্তর্জাতিক হোটেলগুলো। জেমস ফিনলে কম্পানি ব্যবসায়িক সাফল্য লাভের প্রত্যাশা নিয়ে এ দেশে কফি চাষ শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত ব্যবসা লাভজনক হয়ে ওঠেনি। উৎপাদিত কফির গুণগত মান আন্তর্জাতিক মানের না হওয়ায় এবং হেক্টরপ্রতি উৎপাদন আশাতীত নয় বলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। এতে কফি উৎপাদন অলাভজনক হওয়ার প্রেক্ষাপটে ১৯৯২ সালে ওই কম্পানি কফি চাষ বন্ধ করে দেয়। শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত চা বোর্ড ও চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তথা বাংলাদেশে বর্তমানে কফি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও বর্তমানে কফির বেশ চাহিদা রয়েছে। দেশে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল ও চায়নিজ রেস্তোরাঁগুলোতেও কফির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে কফির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ প্রেক্ষাপটে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উন্নত জাতের অধিক উৎপাদনশীল কফি চাষ করে দেশের চাহিদা মেটানো যাবে বলে সংশিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন। চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন বিজ্ঞানী জানান, এখানকার আবহাওয়া, মাটি ও জলবায়ু চা, রাবার, লেবু, আনারস ও কফি উৎপাদনের জন্য উপযোগী। তিনি আরো জানান, কফি চায়ের মতো একটি দীর্ঘজীবী উদ্ভিদ। চায়ের মতো কফির ফলনও এখানে খুব ভালো হতে পারে। সংশিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত এবং যেসব জায়গায় পানি জমে থাকে না, সেসব স্থানে কফি চাষ ভালো হয়। এসব বিবেচনায় শ্রীমঙ্গলে কফি উৎপাদনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। চা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশে এরাবিকা ও রোবাস্টা এ দুই জাতের কফি চাষ হতে পারে।
 
বক পাখিদের অভয়ারণ্য ব্রাহ্মণবাজারের মনোহরপুরমোক্তাদির হোসেন/হাবিবুর রহমান ফজলু
ঐ দেখা যায় তাল গাছ ঐ আমাদের গাঁ, ঐ খানেতে বাস করে কানা বগির ছাঁ। কবির কবিতা আজ ঠিকই আছে। কিন্তু আমাদের গাঁ গুলির ঐতিহ্যমূলক পরিচিতি এখন আর নেই। তালগাছগুলো এক পায়ে দাড়িয়ে এখন আর ্কাশের দিকে উকি দেয় না। আর হাজার হাজার কানা, সাাদা-কালো বক এখন অনেকটাই রূপকথার গল্প কিংবা স¥ৃতি হয়ে পড়েছে। বর্ষার দিনগুলিতে চারদিকে থাকে পানির মেলা। বদ্বীপের ন্যায় সবুজের সমারোহে রয়েছে বেশ কিছু বাঁশঝাড় আর এখানেই যে, নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে খুজে পেয়েছে বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রায় কালো ও সাদা বক, ডাহুক, পানকৌড়ি। কয়েক বছর আগে ঝাঁকে ঝাঁকে যে বকগুলো নিরাপদে নদী নালা, খাল বিল, হাওর বাওরে বিচরণ করত অবাধে, কালের পরিক্রমায় আজ যেন তাদের বিচরণের পরিধি দিন দিন কমে আসছে। কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতায় এসব পাখি সংরক্ষণের কোন আন্তরিক প্রচেষ্টা না থাকায় আমাদের ঐতিহ্যের দাবিদার এসব পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। এক সঙ্গে কয়েক হাজার বকের বাসস্থান দেখে নতুন প্রজন্মের যে কেউ চমকে উঠে পূর্বসুরীদের বলা স্মৃতিকথার বাস্তবতায় মুগ্ধ হতেই পারেন। আর এটা অনেকটাই বাস্তবিক। ঝাঁকে ঝাঁকে বক উড়ার দৃশ্য দেখে নতুন প্রজন্মের এক তরুণ তো ঝটপট বলেই ফেলর বাপরে আমার জন্মেও এক বক এক সাখে দেখিনি। তারপর আবার ডাহুক ও কালো বক। গোধূলীলগ্নে হাজার হাজার বক উড়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে কার না ভাল লাগে। গ্রামটির নাম মনোহরপুর। কুলাউড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের ব্রাহ্মণবাজারের অতি সন্নিকটে এর অবস্থান। গ্রামটি দেখতে মনোহর না হলেও পাখিদের প্রতি সহমর্মিতা ও আন্তরিকতায় গ্রামটি সবার কাছে সম্মানের সাথে সমাদৃত হচ্ছে। পাখিদের প্রতি এমন দরদের কারণে বাড়িটির নাম এখন ‘পাখিবাড়ি বাা বগুলা বাড়ি’’ হিসেবে পরিচিতি  পাচ্ছে। বিকেল বেলায় বাড়ির পাশে অনেক পাখি প্রেমিদের ঘুরাঘুরি করতে দেখা যায়। সরেজমিনে গিয়ে এসব কৌতুহলী পাখি প্রেমিদের  অনেককেই দেখা গেল। এখানে যেন বসেছে পাখিদের মিলন মেলা। প্রায় ১ কিলোমিটার দূর থেকে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল নানা রংয়ের বক উড়াউড়ির দৃশ্য। বাড়িটির আয়তন বেশ বড় নয়। ১২০ শতকের মতো জায়গার উপর নির্মিত বাাড়িটির কাছাকাছি যেতেই যেন হাজার পাখি তাদের রাঝ্যে হারিয়ে যাবার আহবান জানালো। বর্ষার দিন থাকায় বাড়ির চারদিকে পানিতে টুইটুম্বুর। বাড়িতে প্রবেশের আগেই পাখিরা মাথার উপর উড়াল দিয়ে যেন আমাদের বরণ করে নিল। বিস্ময়কর মনে হলেও দেখা গেল রং এবং বেরং এর পাখিরা নিজেদের স্বজাতি নিয়ে দলে দলে বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদা বসবাস করছে। এ বাড়িতে পাখি খুব নিরাপদে নিরাপদে আছে। ‘আমরা পাখিগুলো মরতে দেই না। আমরাও পাখিগুলো মারি না’’ বলনেন এ বাড়ির সদস্য বৃদ্ধ হীরা মিয়া। তিনি জানান, তাদের বাড়িতে ৫০/৬০টি বাঁশ ঝাঁড় রয়েছে। বাঁশ ঝাড়েই আশ্রয় নিয়েছে বক গুলো। সঙ্গে রয়েছে শালিক, বাবুই, চড়–ই, ডাহুক, পানকৌড়িসহ নানা জাতের পাখি। এখানে যারা পাখি দেখতে আসেন তারা পাখি দেখে মুগ্ধ হয়ে ফিরে যান। বাড়িতে এত পাখির আশ্রয় কোন রহস্য কি? জাানতে চাওয়া হলে বাড়ির অপর কনিষ্ট এক সদস্য আবু সুলতান জানান এখানে এসে হাজার হাজার পাখি আশ্রয় নিত। কিন্তু আামাদের এখানে কেউ তাদের মারতো না বা তাড়িয়েও দিতেন না। বৃদ্ধ হীরা মিয়া জানান প্রায় ৫০বছর থেকে বছরের ৬মাস নানা জায়গা থেকে এখানে বকগুলি এখানে আসে এবং বাচ্চা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ে তারা ফিরে যায়। তিনি এর পিছনে একটি অলৌকিক ছায়া আছে বলে বিশ্বাস করেন। জোর গলায় জানালেন তাই। তা হলে এত বক এখানে আসবেই বা কেন। মন্তব্য করলেন তিনি। বর্তমানে এই বাড়িতে মোট কত প্রজাতির কি পরিমাণ পাখি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন ৪ প্রজাতির বকের দেখা পাওয়া গেছে। এছাড়াা ডাহুক, পানকৌড়ি ছাড়া অন্যান্য পাখি তো আছেই। ওদের সংখ্যা অন্তত ১০/১৫ হাজারের মতো হবে। পাখিদের কারণে তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন এদের বিষ্টার কারণে গাছপালার সমস্যা হচ্ছে, ফলন হচ্ছে না। পাখিদের আশ্রয় বাঁশ ঝাঁড়ে যাওয়া যায় না। এসব সমস্যা হলেও পাখিদের ভালবাসার জন্যই ভালই লাগছে। অন্তত প্রকৃতির একটা জিনিসকে তো নিরাপদ আশ্রয় দিতে পেরেছি। তবে দেশীয় প্রজাতির এই পাখিগুলি রক্ষায় সরকারি পর্যায়ের কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে আরও ভালো হতো। বেঁচে থাকত দেশীয় প্রজাতির এ সকল পাখি।
বানারীপাড়া উপজেলা আ’লীগে নেতৃত্ব সংকট চরম পর্যায়ে
রাহাদ সুমন বানারীপাড়া থেকে
উপজেলা আ’লীগের আহবায়ক অধ্যক্ষ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম জাকিরের মৃত্যু, যুগ্ম আহবায়ক এ্যাডঃ সুভাষ চন্দ্র শীলের পদত্যাগ ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত ৩সদস্যকে বহিষ্কার করায় বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগে নেতৃত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আহবায়ক কমিটির মেয়াদ ৩মাস হলেও বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটি ১৪বছর অতিক্রম করছে। গঠনতন্ত্র ফলো করা হলে ৩মাস পরেই ওই কমিটি আপনা - আপনি বিলূপ্ত হয়ে গেছে। তবুও দীর্ঘ ১৪বছর পদ পদবী আকঁড়ে ধরে কমিটিকে সচল দেখানো হয়েছে। গত রোববার উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক অধ্যক্ষ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম জাকির ঢাকার পান্থ পথের গ্যাষ্ট্রো লিভার হাসপাতালে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন। সম্প্রতি যুগ্ম আহবায়ক এ্যাডঃ সুভাষ চন্দ্র শীল ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের জন্য কিছু করতে না পারার  মনোঃযন্ত্রনায় দল থেকে পদত্যাগ করেন। সদ্য সমাপ্ত পৌর সভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী গোলাম সালেহ্ মঞ্জু মোল্লার বিরোধীতা করায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আহবায়ক কমিটির সদস্য এম ওসমান গনি, এম এ ওহাব ও এ্যাডঃ মাহমুদ হোসেন মাখনকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক মূল পদ দুটি সহ ৫টি পদ শূন্য হওয়ার পর কমিটিতে নেতৃত্ব ও অস্থিত্ব সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের কোন কমিটিই বর্তমানে নেই।
দুই বড় দলের অভ্যন্তরে ভিন্নমত প্রকাশ প্রসঙ্গ
শেখর দত্ত 

কাকতালীয় কিনা জানি না। আবার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বলে তা যে সত্য হবে এমনটাও মনে করতে পারি না। তবে আগ্রহোদ্দীপক। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রোববার দুটো জাতীয় দৈনিকের রিপোর্ট পাঠে জানা যায়, দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই ধরনের সভায় একই বিষয় নিয়ে একই ধরনের মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা হয়েছে গত শুক্রবার। ঐ সভায় দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে যে, সরকার ও মন্ত্রীদের কারো কারো বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ ও সমালোচনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যাতে সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছে। এটা দল ও সরকারের জন্য ক্ষতিকর এবং কখনো কখনো তা শত্রুর হাতে অস্ত্র হিসেবে চলে যায়। তাই বাইরে কথা না বলে দলীয় ফোরামে অভিযোগ ও সমালোচনা উত্থাপন করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। অর্থাৎ ‘মুখর’ নেতাদের সংযত হয়ে কথা বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে বিএনপির ঢাকা সমাবেশ সফল করা নিয়ে আহূত প্রস্তুতি সভায় ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য নেতাদের লাগামহীন বক্তব্য প্রদান বন্ধ না করলে সরকারবিরোধী আন্দোলন ফলপ্রসূ হবে না বলে সভায় নিচু পর্যায়ের নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য নেতারা উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিলে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থিত জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এই মন্তব্য করে সভা থেকে বলা হয় যে, ওইসব নেতাদের চিঠি দিয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করা হোক। ঐ সভা থেকেও বলা হয় যে, শৃঙ্খলাবিরোধী মতামত প্রকাশ বাইরে না করে দলীয় ফোরামেই আলোচনা করা প্রয়োজন।
দুই দলের দুই ধরনের সভার মতামত থেকে এটা বুঝতে পারা যায় যে, দলীয় ফোরামে অর্থাৎ গঠনতান্ত্রিক বিধি অনুযায়ী আহূত বৈঠক, সভা, সম্মেলনেই দলীয়ভাবে গণতন্ত্র চর্চার জন্য একমাত্র স্থান বলে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে, দল যখন বেকায়দায় পড়ছে কিংবা দলে যখন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, তখন দলীয় ফোরামই হচ্ছে দলের ঐক্য ও সংহতি রক্ষা এবং দলীয় সদস্যদের মতামত ও ইচ্ছা আকাক্সক্ষা একসূত্রে গ্রথিত করার প্রধান অবলম্বন। কিন্তু এটাই তো বাস্তব যে, আওয়ামী লীগ কিছুটা এগিয়ে এবং বিএনপি পিছিয়ে থাকলেও ফোরামের গঠন ও ফাংশনিংই হচ্ছে দুই বড় দলের প্রধান সাংগঠনিক সমস্যা। যথাসময়ে সম্মেলন হয়ে কমিটি না হওয়া, কমিটির বৈঠক নিয়মমাফিক অনুষ্ঠিত না হওয়া, সভায় গণতন্ত্রসম্মতভাবে মতামত প্রকাশের পরিবেশ অনেকক্ষেত্রে না পাওয়া প্রভৃতি সমস্যা যে বছরের পর বছর ধরে কমবেশি দুই দলেই বিরাজমান থাকছে, তা বোধকরি কারোরই অস্বীকার করার উপায় নেই।
তদুপরি এই দুই দলের সদস্যদের অনেকেই ফোরামের মধ্যে নেই। এমন অনেক সুপরিচিত নেতা রয়েছেন, যিনি কোনো কারণে কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন এবং এখন আর কোনো দলীয় ফোরামেই নেই। বাস্তবেই দুই বড় দলেই কমবেশি দলের অভ্যন্তরে মত প্রকাশ এবং মতামতের মূল্যায়ন পাওয়া এক বিরাট সমস্যা। কিন্তু মত প্রকাশ করা এবং মতামতের মূল্যায়ন পাওয়া হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম এবং যারা দল করেন তারা এ ব্যাপারে আরো উৎসাহী থাকেন। ফোরামে যেহেতু মত প্রকাশিত হতে পারছে না বা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে; তাই সুযোগ পেলে বা সুযোগ খুঁজে নিয়ে মত প্রকাশের ঘটনা ঘটবেই। সর্বোপরি স্বার্থের ভিন্নতা, আকাক্সক্ষা অনুযায়ী পদ বা মূল্যায়ন না পাওয়ার কারণে দলের মধ্যে যে ক্ষোভ-বিক্ষোভের জন্ম হয়, তা থেকে সৃষ্ট হওয়া বিরূপ মতামত বের হয়ে আসার পথ করে নিতে চাইবেই। নির্দেশ-আদেশ কিংবা কড়া চিঠি দিয়ে তা সাময়িকভাবে হয়তো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হবে এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। বরং বাধা পেলে দল বিপদে পড়লে তা বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বের হয়ে আসার পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।
প্রসঙ্গত, বিগত নির্বাচনী ইশতেহার ২০০৮ ‘দিনবদলের সনদ’-এ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অপরিহার্য শর্ত হিসেবে বলা হয়েছিল যে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কতিপয় সুনির্দিষ্ট বিষয় ছাড়া সংসদ সদস্যদের ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার দেয়া হবে।’ নির্বাচনী অঙ্গীকার করা হলেও এটাই তো সত্য যে, সংসদ সদস্যদের দলীয় ফোরামে এই শর্তটি কিভাবে কখন থেকে প্রয়োগ করা হবে তা স্থিরীকৃত হয়নি। তেমনি এই অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না এমনটাও বলা হয়নি। এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় গঠনতন্ত্র ভিন্নমত প্রকাশের কোনো সুযোগ রাখেনি। এই দিক বিচারে একটা সমস্যা বা অসামঞ্জস্য তো থেকেই যাচ্ছে। এই অবস্থায় দলীয় সংসদ সদস্যরা, যারা সুপরিচিত নেতা এবং দলীয় ফোরামের মধ্যেও রয়েছেন, তারা নানা বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশসহ সমালোচনা ও অভিযোগ করে চলেছেন। যা দলের নেতাকর্মী ও সমর্থক জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে যে, বাড়তি কথা কিংবা দায়িত্বহীন ভিন্ন মত প্রকাশ, যাকে পত্রপত্রিকায় বলা হচ্ছে মুখরতা, তা তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থক জনগণ একটুও পছন্দ করছে না। নিঃসন্দেহে এই অবস্থা দলের জন্য ক্ষতিকর। তাই ভিন্ন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে নির্বাচনী অঙ্গীকারে ঘোষিত নীতিটি আওয়ামী লীগ কিভাবে প্রয়োগ করবে নাকি এখন করবে না সে সম্পর্কে দলীয় ফোরামে মতামত সুনির্দিষ্ট করা অতীব প্রয়োজন। বিএনপির অবশ্য এই সমস্যা নেই। কারণ বিএনপি ভিন্নমত প্রকাশের ব্যাপারটি এখনো বিবেচনায়ই নেয়নি।
ধারণা করা চলে এবং এটা হওয়াই সঙ্গত যে, উল্লিখিত আওয়ামী লীগের সভার নির্দেশে এখন আর ভিন্নমত তথা সমালোচনা ও অভিযোগ কোনো নেতা প্রকাশ্যে করবেন না, দলীয় ফোরামেই তা তুলে ধরবেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দলীয় ফোরামে কেউ যদি কোনো মত তুলে ধরে তবে তা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসবে না এমন গ্যারান্টি কি কেউ দিতে পারবে! আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সর্বোচ্চ ফোরামে উত্থাপিত কোনো কথা কেউ বললে তা বিদ্যমান বাস্তবতায় প্রকাশ হবেই। সংবাদ মাধ্যম এখন এতোটাই শক্তিশালী এবং এর জাল এখন এতোটাই বিস্তৃত যে, যতো গোপনই হোক, খবর তারা বের করে আনতে পারবেই। বাস্তবে বর্তমানে তথ্যের বিষয়ে গোপন কিছু আর থাকতে পারছে না। অর্থাৎ এখন ভিন্নমত বা সমালোচনা ও অভিযোগ তোলা হচ্ছে প্রকাশ্যে এবং তা ছাপা হচ্ছে। উল্লিখিত সভার নির্দেশ মানলে তা ফোরামের বাইরে চুঁইয়ে এসে প্রকাশ্য হয়ে পড়বে। অবশ্য দুই ক্ষেত্রেই তথ্যের বিকৃতির সম্ভাবনা থাকবে। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, চুঁইয়ে আসা প্রকাশিত খবরই বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
উপরের কথাগুলো বলা হলো এ কারণে যে, বর্তমানে অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে কারো মতামতকেই গোপন করার কোনো উপায় থাকছে না। এই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে বলা সঙ্গত হবে যে, বিংশ শতকে রাজনৈতিক দল সাংগঠনিক যে নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে চলতো, তা একবিংশ শতাব্দীতে এসে অনেক ক্ষেত্রেই পুরোনো-অকেজো হয়ে যাচ্ছে। সম্পূর্ণ নতুন পরিস্থিতি মত প্রকাশের ক্ষেত্রে নতুন নিয়মকানুন চালুর দাবি জানাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের উল্লিখিত শর্তটি তারই ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, নতুন চিন্তা থেকে উদ্ভূত মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বহন-লালন করার মতো শক্তি সংহত করা যাচ্ছে না। সহজেই ধারণা করা যায়, সমস্যাটা এখানেই। প্রশ্নটা হলো, এই সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে সমাধান বের করার পথ কি খুঁজবে দলগুলো নাকি নির্দেশ কিংবা সতর্কতামূলক চিঠি দিয়ে তা বন্ধ করে দেবে? কোনটা শ্রেয় তা দলগুলোকে বাস্তবতা বিচার ও যুগোপযোগী চিন্তা দিয়ে বের করে আনতেই হবে। তাছাড়া ভিন্ন কোনো বিকল্প নেই।
এ ক্ষেত্রে বলাই বাহুল্য, পুরাতনে থাকা যাচ্ছে না আবার নতুনও হজম হচ্ছে না, তাই পথটা কি? এখানে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অভিজ্ঞতা উল্লেখ করতেই হচ্ছে। একবিংশ শতক যখন দোরগোড়ায়, তখন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ‘গ্লাসনস্ত’ অর্থাৎ খোলামেলা ভিন্নমত প্রকাশ্যের নীতি চালু করা হয়েছিল। পরিণতি কি হয়েছিল, তা সকলের জানা। একইভাবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও দলের অভ্যন্তরে ভিন্নমত প্রকাশ করার নীতি গ্রহণ করতে গিয়েছিল। এর পরিণতিও কারোরই অজানা নয়। এই অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক অঙ্গনের চিন্তাভাবনায় এটা রয়েছে যে, ভিন্নমত প্রকাশ কিংবা সমালোচনা-অভিযোগ উত্থাপন করা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার জন্য শুভ। একে গ্রহণ করেই গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার পথে নিয়ে যেতে হবে। নিঃসন্দেহে এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিন্তাও রয়েছে। এই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, যুগের দাবি ও বাস্তবতার মধ্যে একটা ভারসাম্য সৃষ্টি করে অগ্রসর হওয়া ভিন্ন এ ক্ষেত্রে বিকল্প নেই। বিএনপি যেহেতু ইস্যুটি এখনো এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করেনি; তাই ঐ দল কি করবে তা এখানে বলা হচ্ছে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশহেতার ঘোষণার মাধ্যমে তা এজেন্ডায় এনেছে বিধায় কিভাবে ভারসাম্য সৃষ্টি করে এগুবে তা নিয়ে ভাবতে হবে বলে মনে করার সঙ্গত কারণ এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে এটা বলতেই হয়, একটা ধারণা কারো কারো চিন্তাচেতনায় রয়েছে যে, ভিন্নমত কিংবা সমালোচনা-অভিযোগ অবাধে প্রচার করতে দেয়া হোক। কর্মী-সমর্থক ও জনগণই বিবেচনা করবে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ। কারণ তৃণমূলের অগণিত নেতাকর্মী ও জনগণই তো শেষ বিচারে গণতন্ত্রের মূলকথা। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই কথা বলার ভেতর দিয়ে সবটাই অবজেকটিভ তথা বিষয়গত অবস্থার মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয় এবং সাবজেকটিভ তথা বিষয়ীগত অবস্থাকে অস্বীকার করা হয়। অর্থাৎ এতে দলীয় নেতৃত্ব, যা হচ্ছে দলের ঐক্য ও সংহতি রক্ষাকারী, তাকে অস্বীকার করা হয়। কিন্তু একে অস্বীকার করে দল করা বা দলে থাকা যায় না। দলে যোগ দেয়া মানেই হচ্ছে নিজের মত-আকাক্সক্ষা-ইচ্ছাকে যৌথ মত-আকাক্সক্ষা-ইচ্ছার অধীনে নিয়ে আসা। আর দল করেন এমন প্রতিটি ব্যক্তিরই জানা, যৌথ মত-আকাক্সক্ষা-ইচ্ছা দলগত নানা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে নেতৃত্ব তথা প্রধান নেতার গৃহীত নীতি-কৌশল-পদক্ষেপের ভেতর দিয়েই চূড়ান্ত রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। একই সাথে নেতা ও নেতৃত্বে ভূমিকা স্বীকার করে নিয়ে বলা হয়ে থাকে, নেতা বা নেতৃত্বের সবলতা কিংবা দুর্বলতা দলে যারা সমবেত হলেন তাদের সবলতা-দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ।
বলাই বাহুল্য, ভিন্ন মত কিংবা সমালোচনা ও অভিযোগ প্রকাশের ভেতর দিয়ে বর্তমানে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে বের হতে হলে সংশ্লিষ্ট দলকেই পথ খুঁজে নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। ১/১১ দলগুলোর মধ্যে এমন এক জটিল সন্দেহ-অবিশ্বাস সৃষ্টি করে রেখে গেছে, তা থেকে সহজে পরিত্রাণ পাওয়া কষ্টকরও বটে! যাই হোক অবস্থাদৃষ্টে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের মধ্যে যে ভিন্নমত কিংবা সমালোচনা ও অভিযোগ উঠছে, তা দলের মূলনীতি ও ভাবদর্শের সাথে যুক্ত নয়। মূলত মন্ত্রী বিশেষ বা সরকার কিংবা দলীয় পদাধিকারী এতে সমালোচিত হচ্ছে। কিন্তু বিএনপির অভ্যন্তরে উত্থাপিত ভিন্নমত কিংবা সমালোচনা ও অভিযোগের চরিত্র ভিন্ন। বিএনপির মূলে পড়েছে টান। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর অবদানের স্বীকৃতি দেয় না বিএনপি। এখন এই স্বীকৃতি দেয়ার মত বিএনপি নেতাদের কারো কারো পক্ষ থেকেই উঠছে। এই ভিন্ন মত প্রকাশিত হওয়াকে বিএনপির অফিসিয়াল পক্ষ দল ভাঙার সরকারি কারসাজি বলে চিত্রিত করার প্রয়াস চালাচ্ছে। বিএনপি নেতৃত্ব ইতিহাসের যথার্থতার দিকে তাকাচ্ছে না, বিকৃত ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে যে দল গড়া হয়েছিল তা-ই বিবেচনায় নিয়ে অগ্রসর হতে চাইছে। বিএনপির অভ্যন্তরে প্রকাশিত ভিন্নমত মৌলিক হওয়ায় এর প্রভাব যে হবে সুদূরপ্রসারী এবং তা আদেশ-নির্দেশ বা কড়া সতর্ক চিঠি দিয়ে কোনোক্রমেই থামাবার মতো হবে না।
এই দিক থেকে আওয়ামী লীগ সর্বতোভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আপাতত দুটো দিক যদি বিবেচনায় নিয়ে অগ্রসর হওয়া যায়, তবে ভবিষ্যতের পথরেখাকে অবারিত করে পরিবর্তিত অবস্থায় বদল হয়ে যাওয়াটাকে নিঃসন্দেহে সম্ভবপর করে তুলবে। প্রথমটি হচ্ছে এমনভাবে নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়িত আর সেই সাথে দলীয় কার্যক্রম তৃণমূলের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী অগ্রসর করা যাতে কথা তোলার সুযোগ তেমনভাবে কেউ না পান। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, নিজের মত প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বপ্রণোদিতভাবে দায়িত্বশীল হওয়া। যতোটুকু অধিকার আইনকানুনে দেয়া আছে, তা স্ব স্ব অবস্থানে থেকে যথাযথভাবে প্রতিপালন করা। নিঃসন্দেহে দ্বিতীয়টির ওপরই জোর দিতে হবে বেশি। কারণ সরকার ও দল পরিচালনা যেসব সীমাবদ্ধতা-দুর্বলতা এবং এমনকি বলা যায় ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা রাষ্ট্র ও সমাজের বাস্তবতা থেকে উদ্ভূত হচ্ছে। গরিবের সংসারে টানাটানি থাকবেই। রন্ধ্রে-রন্ধ্রে রয়েছে লোভ-লালসাজাত দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বীজ। দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে দক্ষতা-একাগ্রতা-পারদর্শিতা-দূরদর্শিতার চাইতে জড়ত্ব ও উদ্যোগহীনতা রয়েছে পরিব্যাপ্ত হয়ে। এমন কথা কিন্তু কেউ বলতে পারবেন না, দায়িত্ব পেলেই আলাদিনের আশ্চর্যপ্রদীপ তার হাতে এসে যাবে এবং এক ধাক্কায় জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি তিনি সুনিশ্চিত করতে পারবেন। এই দিক বিচারে আয়নায় নিজের মুখ দেখে এবং দলীয় সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসবে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। সরকারের সাফল্য মানে সর্বস্তরের জনগণের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। জনগণ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য চায় আর তাই আওয়ামী লীগের অটুট ঐক্য ও সংহতি এবং মহাজোট সরকারের সাফল্য কামনা করে।
শেখর দত্ত : কলাম লেখক
আয়কর আহরণ : চাই স্থিতিশীল উদ্যোগ
মোহাম্মদ আবদুল মজিদ
 
শব্দের মধ্যে যে উদ্দেশ্য ও বিধেয় লুকিয়ে থাকে সেটিই শব্দের প্রকৃত অর্থ নির্ধারক। শব্দের ভাবগত, ভাষাগত, ব্যুৎপত্তিগত অর্থ স্থান, কাল, পাত্রভেদে ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করতে পারে কিন্তু মূল বা ধাতুগত স্বকীয়তা তার ঠিক থাকে সর্বদা, সর্বত্র। ‘আদায়’ শব্দটি আরবি ‘আদা’ ধাতুমূল থেকে উৎপত্তি। মূল অর্থ পালন করা, সম্পাদন করা, সাধন। সংস্কৃতে আ প্রত্যয়ের সঙ্গে দা ধাতু যোগে আদায় শব্দটি গঠিত। দা ধাতুমূল দায়বদ্ধতার প্রতীক। প্রজা মালিক বা রাজা বা রাষ্ট্রের কাছে দেয় পরিশোধে দায়বদ্ধ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধমে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব লাভের পূর্ব পর্যন্ত অধিকাংশ সময় বিদেশী শাসনের অধীনে থাকা আমাদের এই দেশ ও সমাজে প্রাচীনকাল থেকেই সেস বা খাজনা বা নজরানা সংগ্রহ কার্যক্রমে জোরজবরদস্তি বা বাধ্য করা অর্থে, পাওনা উদ্ধার অর্থে ‘আদায়’ শব্দটি ব্যবহার হয়ে এসেছে। ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত এদেশীয় ভূমির মালিকানা সূত্রে খাজনা সংগ্রহের দায়িত্ব জমিদার শ্রেণীর কাছে অর্পিত হয়। জমিদাররা জমির প্রকৃত মালিক ছিলেন না, তারা জমির চাষবাসেও ছিলেন না, তারা কোম্পানির হয়ে খাজনা সংগ্রাহক ছিলেন মাত্র। এই সংগ্রহ কাজে কোম্পানিকে দেয় পরিশোধের পর উদ্বৃত্ত কমিশন হিসেবে প্রাপ্তির প্রত্যাশী ছিল মধ্যস্বত্বভোগী এই সিন্ডিকেট। ফলে রায়তের সঙ্গে খাজনা সংগ্রহ কর্মে তাদের সম্পর্ক শেষমেশ জুলুম বা জোরজবরদস্তির পর্যায়ে পৌঁছাতো। জমিতে ফসল হলো কিনা, রায়ত চাষবাস করে টিকে থাকতে পারবে বা পারছে কিনা এটা জমিদারদের বিবেচনার বিষয় ছিল না। আর কোম্পানি বিষয়টি অবশ্যই দেখে বা জেনেও না জানার ভান করতো, কেননা তারা তুষ্ট থাকতো রাজস্ব পেয়ে, প্রজার সুযোগ-সুবিধা দেখার বিষয়টি তারা আমলে নিতে প্রস্তত ছিল না। খাজনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে আদায় শব্দটি সেভাবে একটা জোর-জুলুম, অত্যাচার, আত্মসাতের প্রতিভূ হিসেবে বিদ্যমান হয়ে দাঁড়ায়। একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী দেশে ও পরিবেশে রাষ্ট্রকে দেয় ‘আদায়ের’ ঔপনিবেশিক আমলের এসব মানসিকতা অব্যাহত থাকা যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে না।
নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র কর্তৃক আইনের আওতায় কর আরোপ আর রাষ্ট্রকে সেই কর পরিশোধের বিষয়টি এ নিরিখে বিচার করলে দেখা যায় আদায় শব্দটা ততোটা যুতসই নয় যতোটা ভূমি কর বা খাজনার ক্ষেত্রে খাটে। আয়করের দর্শন হলো রাষ্ট্রমধ্যে বসবাস করে নির্ধারিত পরিমাণের বেশি আয় বা সম্পদ অর্জিত হলে রাষ্ট্র তার একটা নির্দিষ্ট অংশ ‘সমাজে সম্পদের বণ্টন ব্যবস্থায় সমতা বিধান এবং আয় উপার্জনের পরিবেশ সৃজন তথা অবকাঠামো নির্মাণ বাবদ আয় উপার্জনের পরিমাণ ভেদে একটা হিস্যা’ হিসেবে প্রাপ্য হিসেবে চাইতে পারে। ভূমি করের ক্ষেত্রে আগে রাষ্ট্র ভূমি বরাদ্দ দেয় এবং তার ভিত্তিতে খাজনা দাবি করেÑ এখানে লেনদেন প্রকাশ্য, সুতরাং দাবি বা আদায়ের যৌক্তিকতা সেভাবে আসে। কিন্তু আয়করের ক্ষেত্রে লেনদেন অপ্রকাশ্য, রাষ্ট্র সৃজিত সুযোগ-সুবিধা সবাই ভোগ করলেও সবাই আয় বা সম্পদ অর্জন করতে পারে না। নিজের মেধা, বুদ্ধি, পরিশ্রম প্রয়োগ করে সম্পদ অর্জন করতে হয়। অতএব সেই আয়ের ওপর রাষ্ট্রের যে দাবি তা নাগরিক দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে প্রদেয়। এখানে রাষ্ট্রের পক্ষে তা ‘আদায়ের’ যৌক্তিকতা অনেকটা গৌণ।
আয়কর দেয়ার মতো আয় যে নাগরিকের আছে তিনি রাষ্ট্রকে দেয় কর পরিশোধ করবেন স্বেচ্ছায়, আইনগত বাধ্যতাধকতা পালন করে, নাগরিক দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে। তবে হ্যাঁ যদি তিনি তা পরিশোধে গড়িমসি করেন, এড়িয়ে চলেন, অসাধু পন্থা অবলম্বন করেন তাহলে আইনের আওতায় রাষ্ট্রের প্রাপ্য উদ্ধারে রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। কেননা কেউ কর ফাঁকি দিলে তা উদ্ধারে ব্যর্থতার দায়ভাগ আহরণকারীর এ জন্য যে তাদের এ অপারগতায় সমাজে ন্যায়-অন্যায় বৈধ-অবৈধ অসম অবস্থানে চলে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে তো বটেই, সমাজে সম্পদের অর্জন বণ্টনে বৈষম্য সৃজিত হতে পারে। এর ফলে সমাজ ও অর্থনীতিতে ভারসাম্য বিনষ্ট হতে পারে। এ নিরিখেই সকল করদাতার সঙ্গে ‘আদায়’জনিত মনোভাব পোষণ বা ক্ষমতার প্রয়োগ বা সে ধরনের পরিবেশ সৃজন যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। সীমারেখা মেনে চলা জরুরি এ জন্য যে তা না হলে কর আরোপ, আহরণ, প্রদান ও পরিশোধের ক্ষেত্রে ভিন্ন নেতিবাচক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, করারোপ ও আহরণকারীর সঙ্গে করদাতার সম্পর্কের মধ্যে অবিশ্বাস, সংশয়, সন্দেহ দানা বাঁধতে পারে, আস্থায় চিড় ধরতে পাারে, পরস্পরকে এড়িয়ে চলার, জোরজবরদস্তির, পক্ষপাতিত্বের, আঁতাতের মতো অনেক কিছুই ঘটতে পারে। স্বচ্ছতার স্থলে অস্বচ্ছতার অনুপ্রবেশে কর আহরণের মতো রাজস্ব আয়ের দেহে সিস্টেমলস বা ইনফর্মাল রেভিনিউরূপী ‘সুগারের’ মাত্রা বেড়ে অর্থনীতি ‘ডায়াবেটিসে’ আক্রান্ত হতে পারে, ‘সাইলেন্ট কিলার’ নামে পরিচিত যে রোগটি দেহে বহু ব্যাধির আহ্বায়ক।
এদেশে আয়কর আইন প্রবর্তন হওয়ার সমসাময়িক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনায় দেখা যায় একটা ঔপনিবেশিক সরকার এর প্রবর্তক আর কর সংগ্রহ (‘পড়ষষবপঃরড়হ ড়ভ ঃধীবং’ আইনের ভাষ্যে শব্দটি এভাবেই আছে) কার্যক্রমটি সে সময়কার ‘আদায়’ মানসিকতা দ্বারা শাসিত। শাসক আর শাসিতের মধ্যে কর আরোপের আর আদায়ের প্রসঙ্গটি রাষ্ট্র ও নাগরিকের পারস্পরিক দায়িত্ব পালনের দর্শনের ভিত্তি রচনার পরিবর্তে রাজা প্রজা প্রভু ভৃত্য বিদেশী বেনিয়া আর দেশীয় (হধঃরাব) প্রতিপক্ষসুলভ। এ পরিবেশেই কর বা রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার, সংশয়-সন্দেহের, জোরজবরদস্তির কিংবা পাকড়াওকরণের চিন্তাচেতনায় ঈড়ষষবপঃরড়হ ড়ভ ঃধী (ড়ৎ ৎবাবহঁব) হয়ে ওঠে আদায় করার বিষয়। রাজস্ব আহরণকারীর মনোভাব ভঙ্গিতে আইনের দৃষ্টিভঙ্গিসঞ্জাত ‘আদায়কারী’ প্রতিভূ হিসেবে প্রতিভাত হয়। রাজস্ব বিভাগের কর্মীরা সামাজিকভাবে সে পরিচয় পেয়ে যান এবং তাদেরকে এড়িয়ে চলার সুকৌশল বাতাবরণ তৈরির জন্য নানান পেশাদারিত্বের উদ্ভব ঘটে সেভাবেই।
রাজস্ব প্রশাসনে কর ‘আদায়’ শব্দটিকে জোরজবরদস্তি ও জুলুম (বীঃড়ৎঃরড়হ), দখল, আত্মসাৎ, ফাঁকি, (বাধফব), সংশয়, সন্দেহের পাড়া থেকে বের করে এনে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে তাকে স্বচ্ছ, সুশোভন, পারস্পরিক উপলব্ধির মাধ্যমে স্বেচ্ছা প্রণোদনের ঘাটে ভেড়াবার জন্য ‘আদায়ের পরিবর্তে আহরণ’ (পড়ষষবপঃরড়হ ড়ভ ঃধী ড়ৎ ৎবাবহঁব) এ আরোহণের আহ্বান জানানো এবং এটি যাতে শুধু শব্দের পাড়া পরিবর্তন না হয় এটি মনমানসিকতায়ও যাতে স্থায়ী বাসা বরাদ্দ পায় তার জন্য আইনের চোখের সংস্কার ও পদ্ধতি প্রক্রিয়ার চিকিৎসারও উদ্যোগ আরো জোরদার হওয়া প্রয়োজন। চলমান প্রয়াস প্রচেষ্টা আরো জোরদার হোক এটাই প্রত্যাশা ও প্রার্থনা এবারের জাতীয় আয়কর দিবসে। এবারের জাতীয় আয়কর দিবস উদযাপনকালে এটা জানা বেশ প্রশান্তি প্রদায়ক যে সরকারের অন্যান্য খাতের বা ক্ষেত্রের চাইতে রাজস্ব, বিশেষ করে, আয়কর আহরণে অগ্রগতি অব্যাহত আছে, উৎসাহব্যঞ্জকভাবেই। আনন্দদায়ক যে আয়কর প্রদানে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি তথা করদাতাবান্ধব পরিবেশ সৃজনে পদ্ধতি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার প্রয়াসের ফসল থেকে এ সাফল্য আসছে। এ সাফল্য ধরে রাখতে হবে অর্থনীতিতে কর জিডিপির অনুপাত ন্যায্য পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত। বাঞ্ছিত পরিমাণ আয়কর আহরণ সরকারের রাজস্ব তহবিলের স্ফীতির জন্য নয় শুধু, সম্পদ বণ্টন ব্যবস্থা সুষমকরণের দ্বারা সামাজিক সুবিচার সুনিশ্চিতকরণে, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও অঞ্চলগত উন্নয়ন বৈষম্য দূরীকরণের জন্যও জরুরি। দেশকে স্বয়ম্ভরের গৌরবে গড়তে ও পরনির্ভরতার নিগড় থেকে বের করে আনতে আয়কর অন্যতম প্রভাবক ভূমিকা পালন করবে। আয়কর বিভাগের প্রতিটি প্রয়াসে তাই থাকা চাই বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার সম্মিলনে উন্মোচিত আত্মবিশ্বাসের, সহযোগিতা-সঞ্জাত মনোভঙ্গি ভজনের, পদ্ধতি সহজীকরণের, করদাতার আস্থা অর্জনের অয়োময় প্রত্যয়।
২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো বৃত্তাবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে কর রাজস্ব আহরণের সাফল্য লাভের পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি এনবিআরকে। গত চার অর্থবছরে সার্বিক রাজস্ব আয় প্রায় শতভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে আর আয়কর ২০০৭-০৮ অর্থবছরে যেখানে অর্জিত হয়েছিল ১১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা ২০১০-১১ অর্থবছরে তা ২২ হাজার কোটির কাছাকাছি পৌঁছেছে। এটা অবশ্য ঠিক যে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাস্তবায়িত এডিপির পরিমাণ ছিল মাত্র ১৮ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা আর ২০১০-১১ অর্থবছরে তা ৩২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এডিপির বাস্তবায়ন পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে স্থিরিকৃত আয়কর অধিক পরিমাণে আহরণের একটা অবারিত সুযোগ ও সম্পর্ক আছে। দেখা যাচ্ছে এ চার অর্থবছরে কোম্পানি ও কোম্পানি ব্যতীত করের অনুপাত ৫৯:৪১ থেকে ৫৫:৪৫ এ উন্নীত হয়েছে, আর সার্বিক কর রাজস্বে আয়করের হিস্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩০ এর কাছাকাছি। তবে বলে রাখা ভালো এখনো আয়কর কর রাজস্ব প্রাপ্তির পরিবারে তৃতীয় শরিক, অর্থনীতির আকার অবয়ব চেহারা ও চরিত্র অনুযায়ী আমদানি শুল্ক (আশু) ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক)-কে টপকিয়ে আয়করের অবস্থান এক নম্বর হওয়া বাঞ্ছনীয়, নয় কি? সার্বিক রাজস্ব আয়ে আশুর হিস্যা এখনো শতকরা ৩৭ আর মূসক ৩৫। আয়করকে মোড়লিপনায় আসতে হলে আরো জোরে চালাতে হবে পা, হতে হবে আরো গতিশীল, চাই অধিকতর সমন্বিত উদ্যোগ।
নতুন নতুন উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি পুরোনো উদ্যোগের সালতামামি বা ফলোআপ আবশ্যক হবে। ২০০৬-০৭ সালে জমকালো জরিপের মাধ্যমে যে লক্ষাধিক করদাতা শামিল হয়েছিলেন করদাতার মিছিলে তারা কি আছেন? ২০০৭-০৮ কিংবা ২০০৮-০৯-এ যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করদাতা হয়েছিলেন তাদের খবর কী? দেশে যে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক ক্রেডিট কার্ডধারী আছেন, আছেন প্রায় সমসংখ্যক গাড়ি বাড়ির মালিক তাদের কাছে যাওয়ার সর্বশেষ অবস্থা কী? ভুয়া টিআইএন ব্যবহারকারীদের সঠিকপথে আনার প্রতিবন্ধকতাগুলোর দিকে নজর দেয়ার সময় ফুরিয়ে যায়নি। আয়করদাতা যাতে নিজেই রিটার্ন ফরম পূরণ করতে পারেন সে ব্যাপারে যে সহায়ক নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়েছিল, প্রচারিত হয়েছিল সিটিজেন চার্টার তাকি গণঅবিহিতির অবয়বে আছে এখনো। আগেও যেসব কর তথ্যকেন্দ্র, সেবাকেন্দ্র খোলা হয়েছিল প্রকল্পের প্রেরণায় সেগুলোর কার্যকারিতা থেমে গেছে কিনা তা দেখার অবকাশ রয়েছে। একই কার্যক্রম বারবার ‘নতুন’ করে চালু করলে ভিন্ন বার্তা পৌঁছাতে পারে টার্গেট গ্রুপের কাছে। কর মেলায় মানুষের উপচেপড়া ভিড় প্রমাণ করে করদাতাদের আগ্রহ বাড়ছে, অনেকেই ঝামেলামুক্ত উপায়ে বা পরিবেশে কর দিতে চান, কর দেয়াকে দায়িত্ব মনে করছেন, তাদের এই আগ্রহকে ধরে রাখতে হবে, তাদের উদ্বোধিত দায়িত্ববোধের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে, তাদের আগ্রহকে সমীহ করতে হবে। করদাতাদের উদ্বুদ্ধকরণে প্রচার-প্রচারণার কাজে আগে তেমন কোনো বরাদ্দ ছিল না, কর আহরণের ব্যাপারে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক থেকে অতীতে বর্তমানের মতো প্রযতœ প্রদানের নজির ছিল না, এখন এসব সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। তবে সেই ১৯৯০ সাল থেকে এ যাবৎ ৭/৮টি প্রকল্প (বিদেশী সাহায্যপুষ্ট, বিদেশী বিশেষজ্ঞের ভারে ন্যুব্জ) বাস্তবায়ন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শুধু অটোমেশন, অনলাইনিং, স্ট্রিমলাইনিং, স্ট্রেনদেনিং এর জন্য। বিশ বছরে সে সব প্রকল্প বাস্তবায়নের দ্বারা অর্জিত অগ্রগতি দৃষ্টিগোচর না হোক অন্তত অনুভব সম্ভব হবে যদি দেখা যায় সকলের মাইন্ডসেট ও কর্মকুশলতায় গুণগত পরিবর্তন এসেছে। তবে এটাও ঠিক বর্তমানে যে অব্যাহত অগ্রগতি তার পেছনে সেই সব প্রয়াসের প্রচ্ছন্ন উপস্থিতি এবং তা নেপথ্য প্রেরণা হিসেবে যে কাজ করছে তা অনস্বীকার্য। একই সঙ্গে সম্মানিত করদাতাদের সার্বিক সহযোগিতা, তাদের অভূতপূর্ব দায়িত্ববোধের উদ্বোধন, জটিল কর আইনসমূহ সহজীকরণের প্রতি তাদের আকিঞ্চন প্রত্যাশাকে সাধুবাদ জানাতে হয়।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান।

সৈয়দ বাড়ির মা
হাসনাইন সাজ্জাদী
ম্যাক্সিম গোর্কীর ‘মা’ উপন্যাসটি বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছিল তার দর্শন, সাহিত্য মান ও মানবাধিকারের কারণে। আমার কাছে নামটি এর বাইরেও আকর্ষনীয় হৃদয়ের কারণে। আমি তাই পুরো নামটিতেই উল্লেখ করে যাব একসাথে বলি ‘ম্যাক্সিম গোর্কীর মা’ আমরা যারা কবিতা লেখালেখি করি তাদের কাছে হৃদম একটি মনোলোভা
বিষয়। যদিও ভাব, ভাষা, ছন্দ, অনুপ্রাস ও চিত্রকল্প কবিতার মূল উপাদান। হৃদম কবিতার মৌলিক কোন কাঠামো নয়। অনেকটা উপরি বিষয়ের মত হৃদমের স্থান হয়ে থাকে কবিতায়। অনেকে অবশ্য ছন্দকে হৃদয়ের পরিপূরক হিসেবে বলে থাকেন। হৃদম আর ছন্দের মধ্যে কে কার সম্পূরক ও কে কার বিকল্প কিংবা ছন্দ ও হৃদম একই বৃত্তের দু’ফুল না দু’বৃত্তের একই ফুল তা কবিতার আলোচনায় বেশী মানায়। আমার আজকের আলোচনাটি একজন মায়ের প্রস্থানে হৃদয়ের আকুতি প্রকাশের জন্য। ২৭রমজান সেহরির সময় অনুজ প্রতিম সাংবাদিক হাবিবুর রহমান ফজলু ফোনে জানালের শাহীন ভাই’র মা মারা গেছেন। ফজলু সাহেব পাতাকুঁড়ির দেশের কুলাউড়া ব্যুরো চীফ। তিনি আমার সম্পাদিত সাপ্তাহিক খোজখবর ইউএই প্রতিনিধি। ফজলু সাহেব কিছুদিন থেকে দুবাই অবস্থান করছেন। তাই তাকে ইউ-এ-ই প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পূর্বে সাপ্তাহিক খোজখবর এর বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন। শাহীন ভাই মানে সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীন পাতাকুড়ির দেশের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক। একই সাথে তিনি মৌলভীবাজার সাংবাদিক সমিতির সভাপতি, দৈনিক জনকণ্ঠ ও গ্রামীণ ফোন মোবাইল সংবাদের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি। তার ছোট ভাই এস এম উমেদ মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সেক্রেটারী ও এন টিভি এবং ইনকিলাবের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি। পাতাকুড়ির দেশের তিনি নির্বাহী সম্পাদক। পাতাকুড়ির দেশ মৌলভীবাজারের সংবাদের ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান অধিকারী এবং নিয়মিত প্রকাশিত সাপ্তাহিকী। অধুনালপ্ত মুক্তকথা’র কার্যকরী সম্পাদক থেকে পাতাকুড়ির দেশ এ সম্পাদক হয়েছেন বন্ধু প্রতিম সাংবাদিক নুরুল ইসলাম শেফুল। তার পূর্বে আমি সাপ্তাহিক মুক্তকথার কার্যকরী সম্পাদক ছিলাম। আমার আগে ছিলেন অগ্রজ সাংবাদিক হাবিবুর রহমান আবু ভাই। মৌলভীবাজারের সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ এবং আমিও তার যৎকৃঞ্চিত অংশীদার। আশির দশকের শুরুতে আমি যখন মৌলভীবাজারে সাংবাদিকতা শুরু করি তখন বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে বর্তমান সকালের খবরের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি রমাপদ ভট্টাচার্য্য শংকর, অধুনালুপ্ত দৈনিক খবর প্রতিনিধি  আবুল কালাম জিলা (বর্তমান এডভোকেট), ছড়াকার আব্দুল হামিদ মাহবুব (বর্তমান জেলা প্রতিনিধি দৈনিক কালের কণ্ঠ), আব্দুল ওয়াশী, সিদ্দিকী (পরবর্তীতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব), অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজের জেলা প্রতিনিধি রাধাপদ দেব সজল (বর্তমান এডভোকেট), আমি এবং আমিনুর রশীদ বাবর ও হুমায়ুন রশীদ ভ্রাতৃদ্বয় তখন তারুণ্যে সাংবাদিকতায় জ্বাজল্যমান। মাথার ওপরে তখন ছাতার মত সব জনাব আব্দুস সালাম, শকতুল ওয়াহেদ, হারুনুর রশীদ (সম্পাদক সাপ্তাহিক মুক্তকথা), এডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব, হাবিবুর রহমান আবু, সৈয়দ মোহাম্মদ আতহার, সৈয়দ রুহুল আমীন, এডভোকেট কিশোরীপদ দেব শ্যামল প্রমুখরা তখন দাপুটে সাংবাদিক। ছড়া কবিতা ও প্রবন্ধ নিবন্ধ নিয়ে তখন সাংবাদিকতা হাতে খড়ি নিচ্ছেন সৌমিত্র দেব টিটো, বর্তমান পাতাকুড়ির দেশ সম্পাদক এডভোকেট নুরুল ইসলাম শেফুল, আকমল হোসেন নিপু, ফ্লাওয়ার প্রমুখ। তার পরের ধাপে অভিষেক ঘটে সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীন ও এস এম উমেদ আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের। কিন্তু শুরুতেই তারা মৌলভীবাজারের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার ইতিহাসে ধুমকেতুর মতো দিক নির্দেশনা ও আলো ছড়ানো শুরু করেনা বলতে গেলে মাইলস্টোন হয়ে দাড়ায় সাপ্তাহিক পাতাকুড়ির দেশ পত্রিকাটি। এক্ষেত্রে নুরুল ইসলাম শেফুল যথাযথ যোগ্যতা প্রদর্শন ও দায়িত্ব পালন করে স্থানীয় সাংবাদিকতার চাকাকে সচল করে বিশেষ কৃতিত্বের প্রমাণ রাখেন। এখন পাতাকুড়ির দেশ একটি ইত্তাস্ট্রি। সুকুমার বৃত্তি এবং জনসচেতনতা তৈরী দু’ভাবেই পাতাকুড়ির দেশ এখন দায়িত্ব পালনরত। এরকম হাউজ গণমানুষের কল্যাণে খুবই কাজে আসে। আর সংবাদপত্র ও সাংবাদিকমহলে এ হাউজের কর্ণধাররা বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ একথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই তাদের প্রতি প্রায় সবারই সফ্ট কর্ণার রয়েছে। তাদের মা এ সময়টাতে তাই সাংবাদিকতায় ব্যস্ত ও ভূমিকা পালনরত সকলের কাছেই মায়ের ভূমিকায় ও সম্মানে অভিষিক্ত। প্রায় ৮৯বছর আয়ু লাভকারিনী সৈয়দা রাবেয়া খাতুন ধরকাপন সৈয়দ বাড়িতে গৃহবধু এসেছিলেন কমবেশী ৬দশক আগে। তারপর তিলে তিলে তিনি সে সংসারকে সাজিয়েছিলেন রক্ত পানি করে করে। মায়ের রক্তে সন্তানের বেড়ে ওঠা প্রকৃতির অমোঘ বিধান। কিন্তু রক্ত পনি করে সন্তানরা যদি মানুষ হয় তবে মায়ের মুখে হাসি থাকে অমলিন, আর যদি কৃর্তিমান সন্তানের মা হন তিনি তবে তার দুনিয়াটাই স্বর্গ। মা তখন স্বর্গের ফুল হয়ে যান। সন্তানরা সে ফুলের খুশবুতে থাকেন মাতোয়ারা। মরহুমা সৈয়দা রাবেয়া খাতুন এর চারপুত্র সন্তানই আপন কীর্তিতে ছিলেন সম্মান ও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। এ শান্তনা নিয়ে তাদের মা চলে গেলেন। বড় তৃপ্তি তার এ তিরোধান। কিন্তু যাদের মা চলে গেলেন তারা নতুন করে নরক সম পৃথিবীর বাসিন্দা হলেন। মায়ের স্থান যেমন পূরণ হয়না তেমনি মায়ের শূন্যতায় তৈরী নরককুন্ডের আগুন নেভে না। এটা আমার  নিজস্ব অভিজ্ঞতা বলছি। ১৯৯৫ সালে আমার মা বকতুন নেসা চৌধুরী মৃত্যুজ্বর নিয়ে অসুস্থ হলেন। কোন চিকিৎসায় তার জ্বর ছাড়ে না। দীর্ঘ চিকিৎসার একপর্যায়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি দিলাম। রক্ত লাগে। প্রয়াত সাংবাদিক বন্ধু ফতেহ ওসমানী, অগ্রজ সাংবাদিক আল আজাদ, আব্দুল হামিদ মানিক প্রমুখদের সহযোগিতায় সিলেটের সংবাদপত্র এবং বেতারে ‘রক্ত চাই’’ বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হলো। অনেকেই রক্ত দান করেছিলেন সেদিন। কুলাউড়া থেকে সৈয়দ আকমল হোসেনের পুত্র সিলেট গিয়ে রক্তদান করে এসেছিলেন। সিলেট শহরের অনেক সাংবাদিক সাহিত্যিক, কবি ও সমাজকর্মীরা রক্ত দিয়েছিলেন। তাদের কাছে আমি চিরঋণী। কিন্তু আমার ‘মা’ কে সেদিন বাচাতে পারিনি। আগে রোগ ধরা না পড়লেও শেষ মুহুর্তে ধরা পড়েছিল তার লিভার সিরোসিস। ১৯৯৪ সালে আমি এ রোগে মৃত্যু পথযাত্রী ছিলাম। শুনেছি মা একরাতে আমার অসুখ তাকে দিয়ে আমাকে সুস্থতা দেবার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আমি তারপর থেকে সুস্থ হতে থাকি এবং তিনি অসুস্থ হতে শুরু করেন। তারপর আমি বেচে যাই আর তিনি মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করেন অনেকটা স্বেচ্ছায় এবং নির্দ্বিধায়। তারাই হলেন মা। তারা হাসিমুখে সন্তানের জন্য মৃত্যু কামনা করেন জীবন দান করেন। আর আমরা সন্তানরা মা বেচে থাকতে অনেক ক্ষেত্রেই মা দেরকে বুঝিনা, বুঝতে পারিনা। যখন বুঝি তখন কিছু করার থাকে না। মা যেদিন চলে গেলেন সেদিন থেকেই মায়ের জন্য আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটতে শুরু করে। আজও সে রক্তক্ষরণ অব্যাহত এবং ঝর্ণাধারার মত নির্গত। যতদিন বেচে থাকবো এ রক্তপ্রপাত অব্যাহত থাকবে। যে মা তার আয়ু দিয়ে আমাকে বাচিয়ে দিয়ে গেলেন তাকে আমি তার আয়ুকালে কতটুকুই আর বুঝতে পেরেছিলাম। প্রথম ভেবেছিলাম হৃদম বিবেচনায় লেখার শিরোনাম কবি ‘উমেদ আলী শাহীনের মা’। কিন্তু পরে মনে হল এ মা কি শুধু উমেদ আলী শাহীনেরই। এ মায়ের তো আরো সন্তান আরো সন্তান আছে ধড়কাপন সৈয়দ বাড়ীতে। এ মায়ের অসংখ্য সন্তান আছে মৌলভীবাজারের সংবাদপত্র সাংবাদিকতার অলি গলিতে। আমাদের অনেকেরই মা তিনি। সারা দেশে তার অসংখ্য সন্তান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংবাদপত্র সেবা ও সাংবাদিকতার মহান পেশাকে গ্রহন করে মায়ের মুখ উজ্জল করার কাজ করছে। তিনি তো তাদের সকলেরই মা। তাই আমার শিরোনাম বদলে করলাম ‘‘সৈয়দ বাড়ির মা’। তার আত্মার শান্তি হোক। স্বর্গে স্থান হোক আমাদের এ সকল মাদের। লেখাটি লিখতে গিয়ে মনে হলো আমার মন ভেঙ্গে ভেঙ্গে হৃদয়ের কান্না উতলে উঠছে। থেমে থেমে ডুকরে উঠা কান্না এক সময় আমার শ্বাস প্রশ্বাসকে ভারী করে তুললো। চোখ ঝাপসা হয়ে এলে আমি বুঝতে পারলাম এ কান্না সংক্রামিত হয়ে চলেছে সৈয়দ বাড়ির জীবিতদের হৃদয়ে। আমার বন্ধুসম হুমায়েদ আলী শাহীন, এসএম উমেদ আলী এমন কি বন্ধু নুরুল ইসলাম শেফুলেরও বুকে এখন অফুরন্ত কান্না ও শূন্যতা। তাদের বন্ধু বান্ধবদেরও অনেকের মধ্যেও তা সংক্রামিত হয়েছে। তাদের সকলকে মহান আল্লাহ পাক শোক সংবরণ করার ক্ষমা দান করুন। আমিন।
লেখক পরিচিতি ঃ হাসনাইন সাজ্জাদী, সম্পাদক ও প্রকাশক, সাপ্তাহিক খোঁজখবর ও মাসিক পূর্বপর।
গ্রেট আসাম বেঙ্গল রেলপথ ধরে...
কবি হাসনাইন সাজ্জাদী
গ্রেট আসাম বেঙ্গল রেলপথটি তদানিন্তন ব্রিটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের আপার আসাম থেকে শুরু হয়ে পূর্ববঙ্গ প্রদেশের ঢাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ও দীর্ঘ রেলপথ হিসেবে সুপরিচিত ছিল। ১৯৪৭ইং সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর শাহবাজপুর (লাতু) সীমান্ত অংশ পূর্বপাকিস্তান রেলওয়ে এবং করিমগঞ্জ সীমান্ত অংশ আসাম প্রদেশে পড়ে গেলে উক্ত খন্ডিত রেলপথটি তার গ্রেট পদবী হারায়। গ্রেট আসাম ভেঙ্গে অরুনাচল, মেঘালয়া এবং আসাম এই তিন প্রদেশে ভাগ হয়ে যায় কালক্রমে। কুলাউড়া - শাহবাজপুর সেকশনটি পূর্ব পাকিস্তানের সিলেট জেলায় পড়ে। এক বুক রক্ত নদী পেরিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয় ১৯৭১ সালে। সিলেট পায় কালক্রমে বিভাগের মর্যাদা এবং অধুনা কালে উক্ত কুলাউড়া - শাহবাজপুর (লাতু) সেকশনটি সামরিক ভাবে বন্ধ ঘোষিত এবং পরিত্যাক্ত। পরিত্যাক্ত এজন্য বলছি, অলাভজনক বলে উক্ত সেকশনটি বন্ধ ঘোষনার পর, রেলের সম্পদ হরিলুটের যে আয়োজন শুরু হয়, অদ্যাবদী তা অব্যাহত আছে। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় সার্কেল এর কর্মকর্তারা তা রোধ না করে এবং কোন কোন স্থানে রেল ষ্টেশনের ভিটেমাঠি পর্যন্ত লিজ দিয়ে দু’পয়সা কামিয়ে নিয়েছেন। বিক্রয় করে দিয়েছেন ঘরের চালা, টিউভওয়েলের মাথা, রেলের ঘন্টি থেকে ঘটি বাটি সবই। কুলাউড়া - শাহবাজপুর রেলপথটি আমার কাছে ছোটকাল থেকেই আকর্ষনীয় লাগতো। আমার জন্ম পাকিস্তান সৃষ্টির প্রায় চৌদ্ধ বছরপর ১৯৬২ সালের ১লা মার্চ তৎকালিন কুলাউড়া উপজেলাধীন ডরির বান গ্রামে। বর্তমানে গ্রামটির নাম গোবিন্দপুর এবং উপজেলা নবগঠিত জুড়ী। সাবেক ও প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের বদান্যতায় জুড়ীকে আমরা উপজেলা হিসাবে পাই বিগত বিএনপি সরকারের আমলে। তাই ব্যক্তিগত রাগ - অনুরাগের উর্ধে অনেকের কাছে যেমন, আমার কাছেও তিনি তেমনি অনেক অনেক সম্মানও শ্রদ্ধার পাত্র। আমার গ্রামটি হাকালুকীর পূর্বপাড়ে আর আমাদের বাড়ীর পূর্ব দক্ষিন বেয়ে গেছে আলোচিত কুলাউড়া - শাহবাজপুর রেলপথটি। হাকালুকীর বিশালতা আমার দাদা মরহুম লোক সাহিত্যিক আমির সাধুকে দিয়েছিল সাম্যবাদের সবক যা তিনি প্রকাশ করেছেলেন বাউলগান ও প্রবাদ প্রবচনে। আর সেই হাকালুকীর বিশালতা আমাকে দিয়েছিল কাব্য-সাহিত্য ভাবালুতা আর আমি তার প্রথম প্রকাশ ঘটিয়ে ছিলাম সেই গ্রেট আসাম বেঙ্গল রেলপথের সমান্তরাল প্রকৃতিকে ভিত্তি করে। মালিক সিংহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রেলপথ ধরে যাতায়াতের সুবাধে দু’পাশের সবুজ প্রকৃতি আমাকে ছড়া সাহিত্যে অভিষিক্ত করে। শুরু করি ছড়া কাটা। তবে জুড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালিন ১৯৭৭ সালের ৭ই আগষ্ট আমার প্রথম ছড়া সিলেট সমাচারের ছোটদের কথা বিভাগে ছাপা হয় “রেল সড়কের পথের ধারে” শিরোনামে। আমার লেখক নাম তখন আব্দুল হক সাজ্জাদী। ছড়াটির ছত্রগুলো এরকম “রেল সড়কের পথের ধারে / সবুজ ঘাসের মেলা / সকাল বিকাল তাদের সাথে/ করি মজার খেলা / খেলা ছেড়ে চলে আসি / থাকতে অনেক বেলা / কখন আবার খেলতে খেলতে / ডুবে যায় বেলা”।
লেখালেখির সুবাদে ১৯৭৯ সালে আমি ঢাকায় কাগজের সাথে যুক্ত হই। জুড়ী তখন থানা- উপজেলা না হলেও বানিজ্যিক হাট হিসাবে এর গুরুত্ব ছিল। আমি ঢাকার কোন কোন কাগজে জুড়ী সংবাদ দাতা হিসেবে কাজ শুরু করি এবং অধুনালুপ্ত সিলেটের সাপ্তাহিক সিলেট সমাচারে ও জুড়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব গ্রহন করি। অধ্যাপক হারুনুজ্জামান চৌধুরী তখন জালালাবাদ নামে একটি সাপ্তাহিকীর প্রকাশনা শুরু করলে সদ্য প্রয়াত মরহুম অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম জুড়ী প্রতিনিধি দায়িত্ব নেন সেই পত্রিকায়। কমলগঞ্জ কলেজ প্রতিষ্ঠা পেলে তিনি তাতে অধ্যাপনায় যোগ দিলে জালালাবাদেরও সংবাদ প্রেরনের দায়িত্ব পড়ে আমার উপর। তখন কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলওয়ে সেকশনটি খুবই জনপ্রিয়। কুলাউড়া থেকে জুড়ীর দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। মালামাল পরিবহন ও জন-পরিবহন দু ভাবেই তখন রেলপথ খুবই জনপ্রিয়। সি এন্ড বি (আজকের সড়ক ও জনপথ) বেহাল দশা ছিল কিন্তু। সি এন্ড বি’র বড় বড় গর্ত আর কাদামাটিতে মুড়ির টিন বাস একবার আটকে গেলে দু চার দিনের আগে নড়তো না।
ফলে সরু সি এন্ড বি তখন যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়তো। তাই দূরত্ব বিবেচনায় কুলাউড়া - জুড়ীর মাঝামাঝি কম দূরত্বে মানিক সিংহ বাজারে একটি নতুন রেল স্টেশন স্থাপনের আবেদন পড়ে। যথারীতি তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে আরো দেড় কিলোমিটার কুলাউড়ার দিকে ভূয়াই বাজারে রেল ষ্টেশন স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা কর্তৃকপক্ষের নজরে আসে। শুরু হয় ভূয়াই বাজারে রেল ষ্টেশন স্থাপনের তোড় জোড়। আবেদনকারী মানিক সিংহ বাসীরা আমাকে ব্যবহার করে তুল কালাম কান্ড ঘটিয়ে দেয়। আমি সিলেট সমাচার ও জালালাবাদ পত্রিকায় সংবাদ পাঠাচ্ছি। দুটো কাজের ডেট লাইন ভিন্ন হওয়াতে যখন যেটাতে সুবিধে প্রথমে সংক্ষিপ্ত ও পরেরটাতে অনুসন্ধানী সংবাদ পাঠাই। খবর পেলাম ভূয়াই বাজারের নিকট মাত্র ০৫ (পাচ) পয়সা ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতদল নবগঠি^ত এবং সেটা ছিল তাদের প্রথম অপারেশন-তাই ০৫ পয়সার মুদ্রাটি তাদের বাধ্য হয়ে নিতে হল। আক্রান্ত ব্যক্তিটি স্থানীয় হলেও রাতের আধারে অচেনা হওয়াতে এবং তার কাছে ডাকাতি করার মত অন্য কিছু না থাকাতে তারা সেটি নিয়ে যায়। তখন তো আজকের মত মোবাইল, স্বর্নের চেইন, আংটি কিংবা টাকা পয়সার এত ঝনঝনানী ছিল না। তাই সেকালে সেটা ছিল বিশ্বাস যোগ্য। সাপ্তাহিক জালালাবাদে সংবাদটি পাঠালাম। প্রয়াত মহিউদ্দিন শীরু ভাই তখন বার্তা বিভাগে কাজ করেন। তিনি বক্স করে পথম পাতায় সংবাদটি ছেপে দিলেন। সংবাদ পত্রের ভাষায় এটা হচ্ছে হেভী ট্রিটমেন্ট। পত্রিকা জুড়ীতে আসার পর মানিক সিংহ বাজারে রেল স্টেশনের পক্ষাবলম্বিরা বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় সার্কেলের নিকট পত্রিকা আন্ডার মার্ক করে পাঠিয়ে দিলে আর যায় কোথা ? ডাকাতী প্রধান এলাকা হিসেবে ভূয়াই বাজারে রেল স্টেশন স্থাপনের কাজ বন্ধ হয়ে গেল। আছুরিঘাট থেকে ভূয়াই বাজার পর্যন্ত তখন নিয়মিত ডাকাতির ঘটনা ঘটতো, এখনো সেই ডাকাতির প্রবনতা তাই “আছুরিঘাট” নামক স্থানে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপিত হয়েছে স¯প্রতি। কিন্তু পরে জেনেছি .০৫ (পাঁচ) পয়সা ডাকাতির ঘটনা তখন ছিল সাজানো। প্রকাশিত সংবাদের ক্ষমতা এবং সংবাদ সূত্রের নিরপেক্ষতার বিষয়টি তখন আমার মাথায় চেপে বসে। অন্যায়ভাবে কেউ যাতে কোন লোক ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে  বিষয়ে আমার সচেতনা বৃদ্ধি পায়। কুলাউড়া- শাহবাজপুর রেলপথের একটি সম্ভাব্য অথচ আতুড় ঘরে মৃত ভূয়াই বাজারের রেল স্টেশনের পরিণতির কথা আজও আমার স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি। গ্রেট আসাম বেঙ্গল রেলপথ বিস্মৃত এবং কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল লাইন পরিত্যাক্ত। আবার আসামের সাথে করিমগঞ্জ-শাহবাজপুর-কুলাউড়া রেল পথ চালুর স্বপ্ন আমি সব সময়ই দেখে থাকি। উত্তর পূর্ব ভারতের আইজল-ডিমাপুর কিংবা আপার আসামের কামরুপ কামাঙ্খার যাদু উপাখ্যান ছোট বেলা থেকেই আমাকে তাড়িয়ে ফিরে। রেলপথ চালু হলে এ পথে আসামের সাথে নাড়ীর সম্পর্কে সম্পর্কিত অনেকেই জীবনের শেষ ভ্রমন হিসেবে আসাম ঘুরে আতœীয়-স্বজনকে দেখে আসতেন, এ-কথা অনেকাংশেই সত্যি। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা বাংলাদেশ অধ্যায় নেই তবে জীবনানন্দ দাস, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, আখতারুজ্জামান্ ইলিয়াছ, সৈয়দ শামসুল হক প্রমূখ পড়ানো হয় এই বাঙ্গালিয়ানা আত্বীয়তা সূত্রেই। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা ও বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজদের সাথে পরাজিত হয়ে আসামের অধিবাসী হয়েছিলেন। পরে সিলেটে প্রবেশ করেন। তবে ছোটকালে অপশন দিয়ে আসাম থেকে চলে আসা কিংবা উল্টো যৌবনে পালিয়ে গিয়ে আসামে স্থিতু হওয়া অনেকের কাছ থেকে কামরুপ কামাঙ্খা দেবীর মহিমা এবং আসাম ললনাদের যাদু শাস্ত্রের প্রভাব আমাকে খুব টানতো। তাই আমার গ্রেট আসাম বেঙ্গল রেলপথ চালূ না হলে ও আমি বার কয়েক মেঘালয় দিয়ে আবার আসাম ঘুরে এসেছি। কামাঙ্খাদেবীর মন্দিরের পাদদে ব্রহ্মপুত্র কত ভয়ংকর আর তার উৎপত্তির ইতিহাস কত মিথ সমৃদ্ধ তা শ্রাস্ত্রকারেরা জানেন? শিব বা মহাদেব তার প্রাণ প্রিয় স্ত্রী মহাময় দেবীকে নিয়ে শশুড় পক্ষের উপর অভিমান করে আসামের জঙ্গলে চলে গিয়েছিলেন। স্ত্রী মারা গেলে তার শোকে তিনি কাতর হয়ে পড়েন এবং তাকে কাঁধে করে অনেক ঘুরাঘুরি শেষে দেববানী প্রাপ্ত হয়ে স্ত্রীর মৃত দেহকে খন্ড খন্ড করে সারা ভারত বর্ষে ছড়িয়ে দেন। যেখানে তার খন্ডিত দেহ পড়েছে সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মহামায়া দেবীর মন্দির। কামরুপ কামাখ্যা  পেয়েছে তার নিন্মাঙ্গ। আসাম মেঘালয় এর পর্বতমালা তাই নীল। কোথায় ও সবুজ নেই। এ ইতিহাস আমি জেনেছি খোদ কামাখ্যা দেবীর মন্দিরে রক্ষিত ইতিহাস গ্রন্থ থেকে।
বিশ্বব্যাপী এখন ট্রানজিট এর জয়জয়কার। বাংলাদেশ ও ভারতকে ট্রানজিট দিচ্ছে সহজ শর্তে। তবু এখানেও গ্রেট আসাম বেঙ্গল রেল পথের উন্নতি বা প্রয়োজনীয়তা নেই। বাংলাদেশ সরকার ও রেল পথের উন্নতির জন্য টাকা ঢালছে। কিন্তু কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলওয়ে সেকশনের উন্নতির জন্য এখনও বাজেটট মিলেনি। এটা খুবই হতাশাজনক চিত্র। কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ চালুর দাবীতে সিলেট বিভাগ উন্নয়ন পরিষদ সমাবেশ করেছে। শাহবাজপুর থেকে ঢাকা গামী মাধবকুন্ড এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর জন্য আমিও সংবাদ পত্রে বার কয়েক লিখেছি। তা কোন মহলেরই দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারেনি। না হলে, একটি ঐতিহাসিক রেল পথকে এভাবে রেল ওয়ের মানচিত্র থেকে উধাও করে দেওয়া, কত মানুষের সহজ চলাচলে ব্যাঘাত তৈরী করা কিংবা রেলওয়ের একটি ব্যবসায়ি