Year-19 # Issue-22 # 15 July 2012


পদ্মা সেতু নির্মাণে ২টি ব্যাংক হিসাব খোলার সদ্ধিান্ত মনি্ত্রসভায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সদ্ধিান্ত নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ২টি ব্যাংক হিসাব খোলার সদ্ধিান্ত নিয়েছে মনি্ত্রসভা। এর মধ্যে একটি খোলা হবে বৈদেশিক মুদ্রায়, অন্যটি দেশীয় মুদ্রায় অর্থ সংগ্রহ করা হবে। এছাড়াও ওই সেতু নির্মাণে মনি্ত্রসভার প্রত্যেক সদস্য এক মাসের বেতন দিবেন। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মনি্ত্রসভার নিয়মিত বৈঠকে সদ্ধিান্ত হয়। বৈঠক শেষে মনি্ত্রপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের তথ্য জানান। মনি্ত্রপরিষদ সচিব বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য অর্থ দেয়ার বিষয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ায় প্রধানমন্ত্রী আনন্দিত। দু'টি ব্যাংক হিসাবে জমা পড়া অর্থ কিভাবে ব্যয় হবে, ব্যাপারে অর্থ বিভাগ একটি নীতিমালা তৈরি করবে। তিনি বলেনমনি্ত্রসভার সদস্যরা সেতু নির্মাণে ১মাসের বেতন দেবেন। সচিব বলেন, যারা পদ্মা সেতুতে স্বেচ্ছায় অর্থায়ন করতে চান, তাদের অর্থই হিসাব ২টিতে নেওয়া হবে। এজন্য কাউকে চাপ দেওয়া হবে না। যে কোনো শ্রেণী বা পেশার মানুষ হিসাবে অর্থ জমা দিতে পারবেন। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে তহবিল সংগ্রহকে সরকারের নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ বলে বিরোধী দলের অভিযোগ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ধরনের কোনো আলোচনা মনি্ত্রসভার বৈঠকে হয়নি। তিনি আবারো বলেন, কারো কাছে থেকে জোর করে কিছু নেওয়া হবে না। যারা স্বেচ্ছায় দেবেন, তাদের কাছ থেকেই পদ্মা সেতু তহবিলের জন্য অর্থ নেওয়া হবে।
সম্ক্রতি দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়ার দাবি করে গত ২৯ জুন ২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে দেশে আলোচনা চলছে। গত সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে জটিলতা শুরুর পর মালয়েশিয়ার সঙ্গেও আলোচনা এগিয়ে নেয় সরকার। এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করা হবে। গত জুলাই সংসদে দেওয়া বক্তব্যে অর্থায়নের রূপরেখাও ঘোষণা করেন তিনি। দেশের বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে এডিবির ৬১ কোটি, জাইকার ৪০ কোটি এবং আইডিবির ১৪ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল।

চলতি মাসেই আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে
রাজনৈতিক দলগুলোকে ইসির চিঠি
মাসুদুর রহমান স্বপন                                                                                  
চলতি মাসের মধ্যে বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়ার জন্য সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চিঠিতে বলা হয়েছে, ৩১ জুলাইর মধ্যে হিসাব জমা না দেয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর লংঘন করা হবে। আইন লংঘনকারী দলগুলোর বিরুদ্ধে শাসি্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ অনুযায়ী ইসিতে নিবন্ধিত প্রতিটি রাজনৈতিক দলের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়া বাধ্যতামূলক। গত কয়েক বছর ধরে গতানুগতিক একটা হিসাব ইসির কাছে জমা দিলেও এবার সুনির্দষ্টি ভাবে খাতওয়ারী পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে।
এদিকে রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা হবে কিনা বিষয়ে এখনও সদ্ধিান্ত নিতে পারেনি কমিশন। দ্রুতই বিষয়ে কমিশন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেন, ৩১ জুলাইর মধ্যে নিবন্ধিত দলগুলোর লেনদেনের হিসাব জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। কোন দল জমা না দিলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা আইনে উলে্ল­ আছে। দলগুলোর হিসাব প্রকাশ করা হবে কিনা তা কমিশন বৈঠকে সদ্ধিান্ত হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, আগের বছরের আর্থিক লেনদেন একটি রেজিস্টার্ড চার্টার্ড একাউন্টিং ফার্ম দিয়ে অডিট করিয়ে অডিট রিপোর্টের একটি কপি ৩১ জুলাইর মধ্যে কমিশনে জমা দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বিধান করা হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দল বার্ষিক হিসাব অডিট না করিয়ে একটি মোদ্দা হিসাব কমিশনে ধরিয়ে দিয়ে পার পেয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো রেজিস্টার্ড ফার্ম দিয়ে অডিট করালেও বার্ষিক আয়-ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব জমা দেয়নি। আবার কয়েকটি দল যথাসময়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা না দিয়েই পার পেয়ে গেছে। এসব কারণে, এবার দলগুলোকে দেয়া কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি খাতের সুনির্দষ্টি বিবরণ তারিখ সহ উলে্লখ করতে হবে। কোন অসম্পূর্ণ হিসাব কমিশন গ্রহণ করবে না। আয়ের হিসাব দেয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ফি, কূপন বিক্রি, কাউন্সিলর ফি, জেলার মঞ্জুরি ফি, দলের পত্রিকা, সাময়িকী, প্রচার-পুসি্তকা, পুরাতন কাগজ বিক্রি, ব্যাংকে গচ্ছিত বিভিন্ন মেয়াদি আমানত, সঞ্চয়পত্র হতে লাভ, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের আয়সহ সব হিসাব সুনির্দষ্টিভাবে উলে্লখ করতে হবে।  অন্যদিকে দলগুলোকে ব্যয়ের হিসাব দেয়ার ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের বেতন-বোনাস, আবাসন প্রশাসনিক খরচ, বিদু্যত্, ওয়াসা, গ্যাস, হোল্ডিং খরচ, টেলিফোন, ইন্টারনেট, কুরিয়ার সার্ভিস, পত্রিকা বিল, আপ্যায়ন, পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, স্টিকার, ব্যানার, মাইকিং, পোর্ট্রেট, প্রচার-প্রকাশনা, পরিবহন, যাতায়াত, জনসভা, পথসভা, ঘরোয়া বৈঠক, নির্বাচনী ব্যয়সহ সব খরচ সুনির্দষ্টিভাবে দিতে হবে। গত কয়েক বছর রহস্যজনকভাবে রাজনৈতিক দলের জমা দেয়া হিসাব গোপন রাখে কমিশন। হিসাব গোপন রেখে রাজনৈতিক দলের আর্থিক স্বচ্ছতা কিভাবে নিশ্চিত করা হবে তা নিয়ে খোদ কমিশনেই প্রশ্ন রয়েছে। 

ধর্মের নামে অধর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
নিজস্ব প্রতিবেদক
মুসলিম দেশগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগ আরো ঘনিষ্ঠ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম নগরী ঢাকা থেকে আহ্বান জানাই- আসুন, আমরা ইসলামের নামে যে কোনো অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। মুসলিম বিশ্বের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া আরো ঘনিষ্ঠ করি। ঢাকাকে Èক্যাপিটাল অব ইসলামিক কালচার' ঘোষণা উদযাপনের বছরব্যাপী অনুষ্ঠান গতকাল শনিবার উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা একথা বলেন। ইসলামের নামে বোমাবাজি সন্ত্রাসী তত্পরতা দমনে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইসলামে সন্ত্রাসবাদ ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের কোনো স্থান নেই। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আইএসইএসসিও' মহাসচিব আব্দুল আজিজ ওসমান আলতওয়াইজরি, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, তথ্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদও বক্তব্য রাখেন। মুসলিম দেশগুলোর জোট ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) অঙ্গ সংগঠন ইসলামী শিক্ষা, বিজ্ঞান সাংস্কৃতিক সংস্থা (আইএসইএসসিও) ২০১২ সালের জন্য এশিয়া থেকে ঢাকাকে Èক্যাপিটাল অব ইসলামিক কালচার' ঘোষণা করে। ওআইসিভুক্ত ৫৭টি দেশগুলোকে আরব, এশিয়া আফ্রিকা অঞ্চলে ভাগ করে তিনটি দেশের রাজধানীকে Èক্যাপিটাল অব ইসলামিক কালচার' নির্বাচিত করা হয়েছে।  আরব অঞ্চল থেকে ইরাকের নাজাফ শহর এবং আফ্রিকা অঞ্চল থেকে নাইজারের নিয়ামে নগরী ইসলামী সাংস্কৃতিক রাজধানী নির্বাচিত করা হয়েছে। ঢাকাকে ২০১২ সালের জন্য ইসলামী সংস্কৃতির এশীয় অঞ্চলের রাজধানী নির্বাচন করায় আইসিইএসসিও' মহাপরিচালক ওসমান আলতওয়াইজরির মাধ্যমে ওআইসিভুক্ত সব রাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইসলামী সংস্কৃতির এশীয় অঞ্চলের রাজধানী ঢাকা থেকে আমরা ঐক্য, শানি্ত ন্যায়ানুগ সমাজ এবং বিশ্ব প্রতিষ্ঠার ডাক দিচ্ছি। এমন একটি মুসলিম উম্মাহ প্রতিষ্ঠাই হবে বিশ্ববাসীর কাছে ইসলামের সংস্কৃতির প্রকৃত নিদর্শন। প্রাথমিক যুগের ইসলাম যেভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষাচর্চার মধ্যে দিয়ে বিশ্বকে শাসন করেছিল- সেই ধারাকে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বানও জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটা সম্ভব হবে তখন, যখন সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এক হয়ে কাজ করতে পারবে। বিশ্বায়নের ধারণা ইসলামের ঐক্যের ধারণামূলে প্রোথিত বলে উলে্লখ করেন তিনি।  সূুফিসাধকদের মাধ্যমে ইসলামের বাণী বাংলার এই জনপদে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার স্বতন্ত্র ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশষ্ট্যিকে আত্মস্থ করে ইসলাম এই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করেছে তার মানবিক মহিমা। আর এজন্যেই আমরা লক্ষ্য করি, বাংলার মানুষ আবহমান কাল থেকে ধর্মপ্রাণ, তবে মোটেই ধর্মান্ধ নয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রানে্ত যখন ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত, দাঙ্গা যুদ্ধ চলছে; তখন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে বাংলাদেশের মানুষ শানি্ততে বসবাস করছে।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তার স্বল্পকালীন শাসনামলে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য সমৃদ্ধির জন্য কাজ করেছেন উলে্লখ করেন শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু রাশিয়াতে প্রথম তাবলীগ জামাত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়ে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। মহান নেতা ফিলিসি্তনের সংগ্রামী জনগণের জন্য জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সমর্থন দেন। ঢাকাকে সাংস্কৃতিক রাজধানী নির্বাচন করা যথার্থতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় অর্ধ-সহস্রাব্দের ঐতিহ্যবাহী শহর ইসলামী সংস্কৃতির এক অনন্য পীঠস্থান। মসজিদের শহর হিসেবে এই প্রাচীন নগরীর যে খ্যাতি, তা মোটেও অমূলক নয়। পাড়া-মহল্লার সুদৃশ্য মসজিদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এসব মসজিদ শুধু আরাধনার স্থান হিসেবে নয়, সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবেও বিশেষ তাত্পর্য বহন করে।
ঢাকার মসজিদগুলোর পাশাপাশি আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, নবাব কাটরার ইসলামী স্থাপত্যকলা বিশ্ব সংস্কৃতিরও সম্পদ, বলেন প্রধানমন্ত্রী।   জ্ঞানচর্চা স্থাপত্যকর্মের পাশাপাশি ঢাকার রন্ধন সংস্কৃতির ঐতিহ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকার শাহী খাবার-দাবারে মোগল মুসলিম খাদ্য রুচির পাশাপাশি দেশীয় রীতির অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে। যা দেশ-বিদেশের খাদ্যরসিকদের রসনাকে তৃপ্ত করে চলেছে বহুকাল ধরে। ঢাকাই মসলিনের কথা সবাইকে মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এখানকার তঁাতি সম্প্রদায়ের মনন শ্রমের যুগপত্ মেলবন্ধনে তৈরি এই মসলিন এককালে পৃথিবীর বিভিন্ন রাজদরবারের আভিজাত্য বর্ধন করেছে। পারস্যের কবি ফেরদেৌসী রচিত মহাকাব্য Èশাহনামা' বাংলা তরজমা বেশ কয়েকটি খণ্ডে বাংলা একাডেমীর প্রকাশ করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাচীন এই মহাকাব্যের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ যখন গোটা বিশ্বেই বিরল, তখন বাংলায় এর পুনঃপ্রকাশ প্রমাণ করে অঞ্চলের মানুষের জ্ঞানান্বেষী মন কোনো ভেৌগলিক সঙ্কীর্ণতায় সীমাবব্ধ নয়। তিনি বলেন, শেখ সাদী, রুমি, হাফিজ লালন ফকিরকে আমরা গ্রহণ করি অভিন্ন উত্তরাধিকার হিসেবে। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম স্বাগত বক্তব্য রাখেন। মনি্ত্রসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা বিশষ্টি ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পিলখানা বিদ্রোহ মামলা
২৫৩ জওয়ানের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা
নিজস্ব প্রতিবেদক
তিন বছর আগের বিদ্রোহে জড়িত থাকার অপরাধে পিলখানার হাসপাতাল ইউনিটের ২৫৩ জওয়ানের সাজা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিদ্রোহের বিচারে গঠিত বিজিবির বিশেষ আদালত-১০- এই দণ্ডাদেশ দেন কর্নেল ওবায়দুল আহসান।  সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড হয়েছে ৩৪ জনের। সর্বনম্নি চার মাস কারাদণ্ড হয়েছে ছয়জনের। ১৫ জনকে বছর, ১১ জনকে বছর, ১০ জনকে বছর, ৩৮ জনকে বছর, জনকে বছর মাস, ১১১ জনকে বছর এবং ২৬ জনকে বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।  দণ্ডিতদের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০০ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। এই মামলায় খালাস পেয়েছেন দু'জন। পিলখানার বিজিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট নান্নু মিয়ার করা এই মামলায় ২৫৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ২৮ এপ্রিল অভিযোগ গঠন হয়েছিল। তবে জহিরুল ইসলাম নামে এক আসামি বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ২০০৯ সালের ২৫ ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৩ জন নিহত হন। রক্তাক্ত বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর নাম পরিবর্তিত হয়ে বিজিবি হয়েছে।
সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো হচ্ছে: মোশাররফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
রমজানের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর পেছনে সরকারের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক কর্মসূচিতে তিনি বলেন, রমজান মাস শুরুর আগে দাম বাড়িয়ে দিয়ে মানুষের পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। সরকারের একটি সিন্ডিকেট এভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে অসদুপায়ে মুনাফা অর্জন করছে।
রমজানের আগে বাজারে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকি হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও তার কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না বলে মোশাররফের অভিযোগ।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ বলেন, সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই- দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জরুরি ব্যবস্থা নিন। নইলে জনমনে যে বিস্ফোরণ পুঞ্জিভূত হয়ে আছে, তার পরিণতি শুভ হবে না। এমন সময় আসবে, তখন আপনারা পালাবার পথ পাবেন না। লেবার পার্টির উদ্যোগে প্রতীক অনশন কর্মসূচিতে এই কথা বলেন সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ। তিন ঘণ্টার অনশন শেষে তিনি লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ নেতাদের পানি পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান।
মোশাররফ বলেন, সরকার কেবল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণেই ব্যর্থ হয়নি। তারা জনগণকে বিদু্যত্, পানি গ্যাস সরবরাহ করতেও ব্যর্থ হয়েছে। মানুষের জীবন আজ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদু্যত্ কেন্দ্রের জ্বালানি ভর্তুকির জন্য জনগণের Èপকেট কাটা' হচ্ছে মন্তব্য করে এর মধ্যে বিদু্যতের দাম বাড়ানোর সমালোচনা করেন সাবেক বিদু্যত্ জ্বালানি মন্ত্রী মোশাররফ। তিনি বলেন, বিদু্যত্ নিয়ে সরকার ষড়যনে্ত্র লপ্তি হয়েছে। এর বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে দেশে কার্যত বিদু্যত্ উত্পাদন হচ্ছে না, অথচ প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ভতর্ুকির নামে লুটপাট করা হচ্ছে। বিরোধী দল দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বা কুইক রেন্টাল বিদু্যত্ কেন্দ্রের সমালোচনা করে এলেও সরকার বলছে, সঙ্কটের আশু মোকাবেলায় এর বিকল্প ছিল না।
পদত্যাগে নারাজ ভিসি
আন্দোলনে অটল বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
উপাচার্য উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে মেৌন মিছিলের পর আন্দোলন অব্যাহত রাখার শপথ নিয়েছে বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। টাকা কর্মসূচির চতুর্থ দিন গতকাল শনিবার সকালে প্রশাসনিক ভবন থেকে মেৌন মিছিল বের করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর আগে ক্যাম্পাসে মিছিল করলেও এদিন মিছিলটি ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে শহীদ মিনার এলাকাও ঘুরে আসে। মেৌন মিছিল নিয়ে পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে সেখানে শপথ পড়েন তারা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শপথ পড়ান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।  দুই শতাধিক শিক্ষক শিক্ষার্থী শপথে আন্দোলন কর্মসূচি থেকে সরে না যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
এদিকে দাবির সপক্ষে গণস্বাক্ষরতা অভিযান শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। সংগৃহীত স্বাক্ষরসহ দাবি আজ রোববার আচার্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের কাছে দেয়া হবে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। উপাচার্য অধ্যাপক এস এম নজরুল ইসলাম এবং উপউপাচার্য অধ্যাপক এম হাবিবুর রহমানের পদত্যাগ দাবিতে বুধবার থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থা নিয়ে আছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর ফলে দেশে প্রকেৌশল শিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। আন্দোলনের মুখে অবশ্য ঈদ রোজার ছুটি একমাস এগিয়ে এনেছে কতর্ৃপক্ষ। তবে সেই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ক্যাম্পাসেই অবস্থান নিয়ে আছে শিক্ষার্থীরা।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুয়েট উপাচার্যকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও দাবি থেকে সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।  সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম গত শুক্রবারও বলেন, আমরা তো দুই বছর ধরে তার সঙ্গে আলোচনা করে আসছি। তাতে কাজ হয়নি। এখন আর তার সঙ্গে আলোচনার সুযোগ নেই। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কেউ আলোচনা করতে চাইলে তারা রাজি আছেন বলে এই শিক্ষক নেতা জানান।
পাক জেনারেলের বইয়ে মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের স্বীকারোক্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের Èনির্যাতন-অত্যাচারের' নিন্দায় বই লিখে রেখে গেছেন সেই সময়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্বে থাকা চতুর্দশ ডিভিশন-এর লেফটেন্যান্ট মেজর জেনারেল খাদিম হুসেন রাজা (১৯২২-১৯৯৯) পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের। তবে জীবদ্দশায় তিনি এসব ঘটনার কথা জানিয়ে যেতে পারেননি। তার জীবদ্দশায় এই সত্য প্রকাশ পেলে, তার ওপর যে নির্যাতন নেমে আসবে সেই আশঙ্কায় নিজের পরিবারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কেবলমাত্র তার মৃতু্যর পরেই যেন তার স্বীকারোক্তিমূলক বইটি প্রকাশ করা হয়। বইটির প্রকাশক অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি পাকিস্তান। ১৫৪ পাতার বইটির দাম ৬৯৫ পাকিস্তানি রুপি।
সম্প্রতি রাজার মৃতু্যর পর তার লেখা È স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি: ইস্ট পাকিস্তান ১৯৬৯-৭১' বইটি পাকিস্তানে প্রকাশিত হওয়ায় পর স্বাভাবিকভাবেই প্রবল অস্বসি্ততে পড়েছে ইসলামাবাদ। মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনাদের নির্মম অত্যাচারের সবিস্তার চাক্ষুষ বিবরণই শুধু নয়, সেই সময় পূর্ব পাকিস্তানের কোন জেলায় কোন কোন অফিসার গণহত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তার অকপট স্বীকারোক্তিও রয়েছে বইটিতে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যখন বাংলাদেশে তোলপাড় চলছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই অবসরপ্রাপ্ত সাবেক এই সেনা অফিসারের লেখা বইটি ইসলামাবাদের অস্বসি্ত বাড়িয়েছে। এদিকে, বইটিকে নিষদ্ধি করার জন্য জারদারি সরকারকে চাপ দিচ্ছে পাক সেনারা। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, খুব শিগগিরই বইটি যাতে পাকিস্তানের বাজারে আর না দেখা যায়, তার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।
খাদিম হুসেন রাজা তার বইটিতে জেনারেল আইয়ুব খান এবং জেনারেল ইয়াকুব খানের শাসনকালের বর্ণনা দিয়েছেন। পাক সেনারা কীভাবে বাঙালি নারীদের নির্যাতন করেছে, সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করে অসদুপায়ে অর্থোপার্জন করেছে, তার বিশদ বর্ণনা রয়েছে রাজার লেখায়।
পূর্ব পাকিস্তানের কমান্ডার টিক্কা খানের কথাও উলে্লখ করেছেন রাজা। জানিয়েছেন, ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে Èবিদ্রোহ ঘোষণার জন্য' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বসমক্ষে ফঁাসিতে ঝোলাতে চেয়েছিলেন টিক্কা খান। মেজর জেনারেল রহিম খানের অত্যাচারের কথা বর্ণনা করে তিনি বলেছেন, Èআমি যদিও ব্যক্তিগতভাবে রহিমের বন্ধু ছিলাম, কিন্তু সুযোগ পেলেই তিনি আমাকে ভর্ত্সনা করতেন। তার বক্তব্য ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষেরা একেবারেই কাপুরুষ। অনেক আগেই তাদের শায়েস্তা করা উচিত ছিল। পাঠকরা থেকেই বুঝতে পারবেন, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে কাণ্ড-জ্ঞানের কতটা অভাব ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের কট্টরপন্থী সামরিক কর্তাদের। তিনি নিয়াজিকে অভিযুক্ত করে আরও লিখছেন, পাকসেনাদের বাঙালি নারীদের ওপর ঝঁাপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন কমান্ডার শেখ নিয়াজি। নির্দেশ অমান্য করার জন্য লেখকের সামনেই কোমরবন্ধ থেকে পিস্তল বের করে এক বাঙালি অফিসারকে গুলি করেছিলেন নিয়াজি। এই নিয়াজিই যুদ্ধের শেষ দিকে ঢাকায় ৯০ হাজার পাক সেনা-সহ আত্মসমর্পণ করেন। ঢাকায় তাদের পতন ঘটে। তার কিছুদিন আগেই নিয়াজি লেখকের কাছে তার পূর্ব পাকিস্তানের বান্ধবীদের ফোন নম্বর চেয়েছিলেন বলে বইটিতে জানিয়েছেন রাজা।
প্রবাসীদের স্মারকলিপির জবাব দেবে বিশ্বব্যাংক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া স্মারকলিপির জবাব আগামী সপ্তাহে দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণচুক্তি বাতিলের প্রতিবাদে গত ১১ জুলাই ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ করে বাংলদেশি প্রবাসীরা। বিক্ষোভ শেষে ঋণচুক্তি কেন বাতিল হলো এই মর্মে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
গত শুক্রবার বিক্ষোভের আয়োজক সংগঠন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি . সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন বিশ্বব্যাংকের সাউথ এশিয়ান ডেস্কের ভারত-বাংলাদেশ বিষয়ক প্রতিনিধি কামিলা পারিয়াদি। . সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গত ১১ জুলাই বাংলাদেশের বহুমুখী পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিলের প্রতিবাদে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। তারা স্মারকলিপি নিয়েছেন এবং আগামী সপ্তাহের যেকোনো সময় স্মারকলিপির জবাব দেয়া হবে বলে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়।