Year-19 # Issue-24 # 29 July 2012

নুহাস পল্লীতে চিরনিদ্রায় হুমায়ূন
নিজস্ব প্রতিবেদক
যে স্থানটি ছিল তার নিজের Èজীবনের চেয়েও' প্রিয় সেই নুহাশ পল্লীতেই সমাহিত হলেন নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ। দূর-দূরান্ত থেকে হুমায়ূনের এই বাগানবাড়িতে এসে অশ্রুজলে লেখককে শেষ বিদায় জানালেন ভক্ত-পাঠক, বন্ধু-স্বজন স্থানীয় বাসিন্দাসহ হাজারো মানুষ। আকাশও যেন বৃষ্টি ঝরালো তারই শোকে। যাদের কঁাধে চেপে খাটিয়ায় শোয়া হুমায়ূন কবরে নামেন, তাদের একেবারে সামনে দেখা গেল লেখকের বড় ছেলে নুহাশকে। তার পরনের নীল পাঞ্জাবিও বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিল একেবারে। হুমায়ূনের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদের মেয়ে শীলা নোভা, দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং তাদের দুই সন্তান নিষাদ নিনিত, লেখকের ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল আহসান হাবীব এবং তাদের দুই বোনও সময় উপস্থিত ছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের হিমঘর থেকে হুমায়ূনের মরদেহ নিয়ে গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা হয় একটি এম্বুলেন্স। ওই এম্বুলেন্সের সঙ্গেই বেলা ১২টা মিনিটে নুহাশ পল্লীতে পেৌঁছান শাওন তার দুই সন্তান। এর কিছুক্ষণ আগেই নুহাশ, শীলা নোভাকে নিয়ে পেৌঁছান জাফর ইকবাল আহসান হাবীব। নুহাশ পল্লীর ভাস্কর আসাদুজ্জামান খঁান জানান, সোমবার গভীর রাতে ঢাকায় পরিবারের সদস্যরা লেখকের দাফনের স্থান চূড়ান্ত করার পর সকালেই তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। সকালেই সেখানে কবর খঁোড়া শুরু হয়। হুমায়ুন আহমেদকে শেষ বিদায় জানাতে ভক্তরা সকাল থেকেই নুহাশ পল্লীতে ভিড় করতে শুরু করেন। মাঝে মধ্যে হালকা বৃষ্টি হলেও তারা অপেক্ষা করতে থাকেন প্রিয় লেখকের জন্য। এক পর্যায়ে পিরুজালি প্রাম থেকে নুহাশ পল্লী পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক লোকারণ্যে পরিণত হয়। বেলা দেড়টার দিকে স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম মজিবুর রহমানের পরিচালনায় হুমায়ূনের জানাজায় অংশ নেন হাজারো মানুষ। এর পরপরই তাকে শোয়ানো হয় লিচু তলায় খঁোড়া কবরে, যে স্থানটিতে শেষ শয্যায় শায়িত হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন তিনি অনেক আগেই। গত ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান ক্যান্সারে আক্রান্ত হুমায়ূন আহমেদ। সেখানেই তার প্রথম জানাজা হয়। সোমবার সকালে তার মরদেহ দেশে পেৌঁছানোর পর দুপুরে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দাফনের বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও লেখককে কোথায় সমাহিত করা হবে তা নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত মতবিরোধ চলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। হুমায়ূনের বর্তমান স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন নুহাশ পল্লীতেই স্বামীর কবর চাইলেও সাবেক স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদের সন্তানরা তাদের বাবাকে ঢাকায় দাফনের পক্ষে মত দেন। এই নিয়ে দিনভর টানাপড়েন চলে। পরিবারের মধ্যে মতদ্বন্দ্বের অবসানে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা কয়েক দফা দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর রাত আড়াইটার দিকে সংসদ ভবন এলাকায় জাহাঙ্গীর কবির নানকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে হুমায়ূনের ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, নুহাশ পল্লীতেই দাফনের বিষয়ে চূড়ান্ত সদ্ধিান্ত হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে শাওন
নুহাশপল্লীতেই উনি শান্তিতে থাকবেন
নিউজ ডেস্ক
 মৃত্যুর আগে বাংলা সাহিত্যের ‘রাজপুত্র’ হুমায়ূন আহমেদ তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বলে গেছেন, “আমার যদি কিছু হয়, আমাকে নুহাশপল্লীতে শুইয়ে রেখো। তবে আমি জানি, আমার কিছু হবে না। ওরা আমার মৃতদেহ নিয়ে টানাটানি করবে। কেউ বাংলা একাডেমীতে নিয়ে যেতে চাইবে, কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বা অন্য কোথাও। তবে আমাকে নুহাশপল্লীতেই রেখো। আমাকে নিয়ে ওদের টানাটানি করতে দিও না।” সোমবার রাতে ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে হুমায়ূনের উদ্ধৃতি দিয়ে এসব কথা জানান মেহের আফরোজ শাওন। অপারেশনের আগের রাতে এসব কথা তাকে বলে গেছেন বলে জানান শাওন। লেখকের দুই মেয়ে নোভা, শিলা ও ছেলে নুহাশের দাবি ছিল তাদের বাবার দাফন ঢাকায় করা হোক। এ প্রসঙ্গে শাওন বলেন, “তারা এতোদিন কোথায় ছিল? তারা তো কোনো দিন বাবার কথা শোনেনি। তারা কেউ নিউইয়র্কে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে বাবাকে বিদায় জানাতে আসেনি। তাহলে এখন কথা বলছে কেন?” “তার (হুমায়ূন) শেষ ইচ্ছা পূরণ না করলে তাকে অসম্মান জানানো হবে। তা না হলে তার আত্মা শান্তি পাবে না।” “অচেনা জায়গায় উনি ভয় পান। আমার সঙ্গে গত ১০ বছর উনি ছিলেন, এ কারণেই আমি এটা জানি। নুহাশ পল্লী উনার অতি পরিচিত ও আপন জায়গা। উনি সেখানে ভয় পাবেন না।” নুহাশ পল্লীর পরিচালনা প্রসঙ্গে শাওন ইন্ডিপেনডেন্টকে বলেন, “নুহাশপল্লী চলবে ট্রাস্টি বোর্ডে মাধ্যমে। এটা আমার কথা নয়। হুমায়ূন আহমেদ আমাকে এটা বলে গেছেন।” নুহাশ পল্লীর উত্তরাধিকার সম্পর্কে মেহের আফরোজ শাওন বলেন, “হুমায়ূন আমাকে বলে গেছেন, আমি তো আমার বাবার কাছ থেকে পাইনি। তাই বলে কি আমি হুমায়ূন আহমেদ হইনি? আমার ছেলেদের মধ্যে যদি ভালো কিছু থেকে থাকে তারাও সেভাবে করবে।” শাওন বলেন, “তার ছেলেমেয়েরা সম্পত্তি বিক্রি করুক, তা উনি চাননি।” হুমায়ূনের ছোট ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব দেশে মৃতদেহ নিয়ে আসার আগেই জানিয়েছিলেন, তার ভাইকে নুহাশ পল্লীতেই দাফন করা হবে। পরিবারের সবাই এটা চায়। হুমায়ূন আহমেদের শেষ শয্যা হচ্ছে তার প্রিয় নুহাশপল্লীতেই। সোমবার দফায় দফায় আলোচনার পর গভীর রাতে এ ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছান পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের মধ্যস্থতায় বৈঠক শেষে রাত দুইটার দিকে সাংবাদিকদের পরিবারের সিদ্ধান্তের কথা জানান হুমায়ূনের ছোটভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এর আগে জাহাঙ্গীর কবির নানকের শেরেবাংলা নগরের বাসায় এবং ধানমণ্ডিতে শাওনের বাসভবন দখিন হাওয়ায় কয়েকবার বৈঠক করেন হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্যরা। পরে গভীর রাতে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল জানান, নূহাশ পল্লীতেই দাফন করা হচ্ছে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যককে। এদিকে, মঙ্গলবার সকাল নয়টার পর বারডেম হাসপাতাল থেকে লেখকের মরদেহ নিয়ে নুহাশপল্লীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছে স্বজনেরা। বাদ জোহর চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন লেখক।
নুহাশপল্লীতে হুমায়ূনের দাফন
অন্তরালের ঘটনা 
আবু তাহের খোকন
একটি শিশুর মাতৃত্বের দাবি নিয়ে দুই নারী বিচারালয়ে গেছেন। দু’জনের প্রত্যেকেই নিজেকে শিশুটির মা বলে দাবি করছেন।আসল মাকে চিহ্নিত করতে হাকিম হুকুম দিলেন, `শিশুটিকে কেটে দুই ভাগ করে তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হোক।` সঙ্গে সঙ্গে পিছু হটলেন এক নারী। বললেন, `শিশুটিকে কাটার দরকার নেই। আমি তার মা নই।` বিচক্ষণ হাকিম বুঝতে পারলেন, এই নারীই শিশুটির আসল মা। কারণ সত্যিকারের মা যে কোনো মূল্যে তার সন্তানকে বাঁচাতে চায়। অধিকার তার কাছে বড় নয়। হাকিম শিশুটিকে তার আসল মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।
অনেক অনেক দিন আগের গল্প এটি। গল্পের মতো এতো সুন্দর সমাধান বাস্তবে হয় না। তবে গল্পটির মর্মবাণী শ্বাশত, যা মানুষকে আলোকিত করে।
এবার সত্যিকারের গল্প
২৩ জুলাই, সোমবার গোটা বাংলাদেশের মানুষ যখন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন, তাঁকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে যখন ঢল নেমেছে, তখন তাঁর দাফন নিয়ে পর্দার অন্তরালে চলছে ঘৃণ্য নাটক। সকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে হুমায়ূনের লাশের সঙ্গে ফেরা দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের জানান, নুহাশপল্লীতে দাফনই ছিল হুমায়ূনের শেষ ইচ্ছা। তবে হুমায়ূন আহমেদের প্রথম পক্ষের তিন সন্তান নোভা, শিলা ও নুহাশ, হুমায়ূনের মা আয়েশা ফয়েজসহ পরিবারের সদস্যরা চাচ্ছিলেন ঢাকায় দাফন করতে। তারা সম্ভাব্য স্থান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবির সমাধি চত্বর, মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও বনানী কবরস্থানের কথা বলেছিলেন। রাজধানীতে দাফন হলে মানুষ সহজে কবর জিয়ারত করতে, শ্রদ্ধা জানাতে পারবে।
কিন্তু নুহাশপল্লীর ব্যাপারে গোঁ ধরে থাকেন শাওন। বেলা যত বাড়তে থাকে এই দ্বন্দ্ব স্পষ্ট ও প্রকট হতে থাকে। দুপুর আড়াইটার দিকে ঈদগাহ ময়দানে হুমায়ূন আহমেদের জানাজা শেষে তার লাশ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়। লেখকের ছোট ভাই জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের জানান, সন্ধ্যায় পারিবারিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পারিবারিকভাবে বিষয়টির সমাধান চেয়েছিলেন দেশবাসীও। কিন্তু তা হয়নি। পর্দার অন্তরালে শাওনের তরফে শুরু হয় রাজনৈতিক যোগাযোগ। জানা যায়, শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফকে টেলিফোন করেন। তিনি বলেন, ``নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদকে দাফনের ব্যাপারে আপনারা সহযোগিতা করুন। হুমায়ূনের প্রথম পক্ষের সন্তানরা, তাঁর মা, ভাই, বোনসহ পুরো পরিবার চাচ্ছে ঢাকায় দাফন করতে। কিন্তু শাওন নুহাশপল্লীতে দাফন করতে চায়। আপনারা সহযোগিতা করুন।``
মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ``আমি যতটুকু জানি, পারিবারিকভাবে হুমায়ূন আহমেদকে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সেখানে আপনারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। এ ব্যাপারে আমাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না।`` এক পর্যায়ে মরিয়া মোহাম্মদ আলী বলেন, ``আমরা দুজন ব্যারিস্টারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। তারা বলেছেন, আদালতের সিদ্ধান্ত শাওনের পক্ষেই যাবে। আপনারা সহযোগিতা করুন।`` এ সময় মাহবুব হানিফ বলেন, ``এর মধ্যে আইন-আদালত টানছেন কেন। বিষয়টি পারিবারিকভাবেই সমাধান করুন।`` এরপর বিরক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফোন সংযোগ কেটে দেন। শাওনের মা আওয়ামীলীগের এমপি তহুরা আলীও বসে ছিলেন না। বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবের কাছে ফোন করে শাওনের ইচ্ছানুযায়ী নুহাশপল্লীতে হুমায়ূনকে দাফনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বলতে বলেন। সন্ধ্যায় গণভবনে কূটনীতিক, সরকারি কমকর্তা ও বিচারপতিদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার পার্টিতে প্রধানমন্ত্রী সবার সঙ্গে সাক্ষাতের এক পর্যায়ে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানককে বলেন, ``হুমায়ূন আহমেদের জানাজা হয়ে গেছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব দাফন করা প্রয়োজন।`` nuhash
তিনি এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীকে দুই পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত দাফনের তাগিদ দেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে হুমায়ূনের প্রথম পক্ষের তিন সন্তান নোভা, শিলা আর নুহাশ মিরপুরে চাচা আহসান হাবীবের বাসায় সাংবাদিকদের জানান, তারা বাবার কবর নুহাশপল্লীতে চান না। তারা এমন কোনো জায়গায় বাবাকে দাফনের কথা বলেন, যেখানে সবাই সহজে যেতে পারে। এরপর থেকেই শুরু দফায় দফায় বৈঠক। হুমায়ূন আহমেদের ভাই জাফর ইকবাল, তাঁর স্ত্রী ইয়াসমীন হক, নোভা, শিলা, নুহাশ, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ ও নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু সংসদ ভবন এলাকায় এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর বাসায় যান। সেখানে হুমায়ূন পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় দাফনের সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেন। রাত পৌনে এগারটায় সেখান থেকে জাফর ইকবাল, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ ও নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানককে নিয়ে ধানমন্ডির ‘দখিন হাওয়া’য় হুমায়ূনের দ্বিতীয় স্ত্রী শাওনের কাছে যান। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আলোচনার পর কোনো সমাধানে না আসতে পেরে তারা আবার এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর বাসায় ফিরে আসেন। তারা পরিবারের সদস্যদের জানান, শাওন তার সিদ্ধান্তে অটল। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে আদালতে যাবেন। রায় না হওয়া পর্যন্ত মরদেহ হিমঘরেই থাকবে। এ কথা শোনার পর নোভা, শীলা ও নুহাশ চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন। তারা ঢাকায় দাফনের কথাই বলতে থাকেন। এসময় জাফর ইকবাল, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু ও এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক তাদের বোঝান। তারা বলেন, লাশটা দাফন হওয়া প্রয়োজন। অবশেষে হুমায়ূনের প্রথম পক্ষের সন্তানেরা তাদের আবেগ চেপে ধরে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ``বাবা হিমঘরে পড়ে থাকবেন, এটা হয় না।`` তারা নুহাশপল্লীতেই বাবার দাফনে সম্মত হন (এসব তথ্য নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিরা নিশ্চিত করেছেন)। অবশেষে ২৪ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে অঝোর ধারায় বৃষ্টির সময় নুহাশপল্লীতে দাফন করা হয় বৃষ্টিপাগল হুমায়ূন আহমেদকে। ১৯ জুলাই নিউইয়র্কে মৃত্যুবরণ করার পাঁচ দিন পর মাটির ঘরে শেষ আশ্রয় হলো তাঁর। এর আগে শাওন অশ্রুসিক্ত নয়নে সবাইকে বলেন, ``হুমায়ূন বলে গেছেন, তাঁকে নুহাশ পল্লীতেই দাফন করার কথা (টিভি চ্যানেলগুলো এই ফুটেজ বারবার প্রচার করেছে)।`` আর এদিকে এখন জানা যাচ্ছে, নিউইয়র্কে শাওন হুমায়ূনের দাফন প্রসঙ্গে ভিন্ন কথা বলে এসেছেন। শাওনের সেই বক্তব্য অনুযায়ী হুমায়ূন তার দাফন বিষয়ে কিছুই বলে যাননি। এনিয়ে আমেরিকায় বাঙালি কমিউনিটিতে এখন তোলপাড় চলছে। শাওনের দুই ধরনের বক্তব্যে বিস্মিত সবাই। হুমায়ূন আহমেদের সত্যিকারের আপনজনেরা তাকে ঢাকায় দাফন করার ন্যায্য দাবি থেকে সরে দাঁড়ালেন। তারা প্রমাণ করলেন, হিমঘরে লাশ রেখে দাফনের স্থান ঠিক করার জন্য আইন-আদালতে যাওয়াকে ‘ভালবাসা’ বলে না। গল্পের মা যেমন নিজের সন্তানকে বাঁচাতে তার মাতৃত্বের অধিকার ছেড়ে দিয়েছিলেন, হুমায়ূনের মা, তিন সন্তান ও ভাইবোনেরা ঢাকায় তার দাফনের দাবি ছেড়ে সত্যিকারের আপনজনের পরিচয় দিলেন। জেদ আর কূটকৌশল করে শাওন জিতে গেলেন। তবে প্রকৃত বিচারে কে জিতল-- বিশ্বজুড়ে হুমায়ূনের কোটি কোটি ভক্ত একদিন তা অনুধাবন করবেন নিশ্চয়ই।
‘দেয়াল’: আদালতের নির্দেশনা ও লেখকের প্রতিশ্রুতি উপেক্ষিত 
মাহমুদ মেনন
প্রসঙ্গ হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’ উপন্যাস। এই উপন্যাসের প্রকাশনার ওপর আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করার ঘটনা ঘটেছে। হুমায়ূন আহমেদ নিজেও উপন্যাসটির কিছু ত্রুটি বিচ্যুতির কথা স্বীকার করে তা সংশোধনের পরেই প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তার মৃত্যুর পর সেই প্রতিশ্রুতি হয়েছে উপেক্ষিত। রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক তার শুক্রবারের সাময়িকীতে `দেয়াল`-এর আরও একটি অধ্যায় প্রকাশ করেছে। অথচ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে `দেয়াল` প্রকাশ না করার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। গত ১৫ মে মঙ্গলবার ওই নির্দেশনা দেন আদালত। এর আগে দেয়ালের দুটি অধ্যায় প্রকাশ করে বিতর্কের সূত্রপাত করে ওই দৈনিক। বঙ্গবন্ধু হত্যা সম্পর্কিত ভুল তথ্য সংশোধন না করা পর্যন্ত জননন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার ‘দেয়াল’ উপন্যাস প্রকাশ করবেন না,  নির্দেশনায় এমনটিই `প্রত্যাশা` করেছিলেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই প্রত্যাশ‍াকে সম্মান দেখিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ নিজেও।
‘দেয়াল’-এ বঙ্গবন্ধু হত্যা সম্পর্কে কিছু ভুল তথ্য এবং ভুলভাবে ঘটনাটি উপস্থাপন করার অভিযোগ উঠলে বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছিলেন স্বয়ং অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার লেখা এই অসমাপ্ত উপন্যাসটিই এখন পাঠকের বিপুল আগ্রহের কারণ হবে এবং তা বই আকারে ছাপা হয়ে বের হলে  হটকেকের মতো বিক্রি হবে ---স্রেফ এমন মুনাফামুখি বিবেচনা থেকেই দৈনিকটি আদালতকে উপেক্ষা করে আরও একটি অধ্যায় প্রকাশ করলো। সেইসঙ্গে তারা চাইছে বিতর্কের কেন্দ্রে থেকে ফায়দা লুটতে। এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলানিউজকে বলেন, ``দৈনিক সম্পূর্ণ অনুচিত একটি কাজ করেছে। আদালতের নির্দেশনা থাকার কারণে ‘দেয়াল’ এর কোনো ধরনের প্রকাশনায় যাওয়া উচিত নয়।``
``হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর `দেয়াল` কিভাবে প্রকশিত হতে পারে বা তার ভবিষ্যত কি হবে``--এ প্রশ্ন করা হলে  অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ``বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।`` দৈনিকটিতে প্রকাশিত `দেয়াল`-র নতুন  অংশ পড়ে এ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবেন বলেও বাংলানি‌উজকে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। উল্লেখ্য, দেয়ালের প্রথম দুটি অধ্যায় প্রকাশিত হওয়ার পর তা নিয়ে দেশজুড়ে ও দেশের বাইরে বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রকাশিত ওই দুটি অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ও প্রসঙ্গ ভুলভাবে আসার কারণেই মূলত সেই সমালোচনা। এ বিষয়টি গুরুত্বসহ গত ১৫ মে তা হাইকোর্টের নজরে আনেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এতে স্বত:প্রণোদিত হয়ে ওই দিনই প্রথমে বঙ্গবন্ধুর হত্যা সম্পর্কিত ভুল তথ্য সংশোধন না করা পর্যন্ত ‘দেয়াল’ উপন্যাস প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ভুল সংশোধনের  নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের ডিভিশন বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই আদেশ দেন। দুপুরের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আদেশটি সন্ধ্যায় সামান্য পরিবর্তন (রিভাইজ) করেন আদালত।  পরিবর্তিত আদেশে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, আদালত প্রত্যাশা করছে হুমায়ূন আহমেদ তার উপন্যাসে বর্ণিত তথ্যগত অসঙ্গতি ও বিভ্রান্তিগুলো দূর করে তাতে ইতিহাসের সঠিক ঘটনা চিত্রায়ন করবেন। ওই দিন আদালত বলেছিলেন, ``হুমায়ূন আহমেদ একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। তিনি বর্তমানে দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। তার ওপরে আদেশ দিয়ে তাকে আমরা বিব্রত করতে চাই না। আবার নতুন প্রজন্ম ভুল ইতিহাস জানুক সেটাও চাই না। কারণ মীর মশাররফের ``বিষাদসিন্ধু``তে কারবালার ইতিহাস যেভাবে অতিরঞ্জিত করে বর্ণনা করা হয়েছে, মানুষ সে ইতিহাস সেভাবেই জানে।``

এ কারণে আদালত শিক্ষা, তথ্য ও সংস্কৃতি সচিবকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ও সাক্ষ্য-বিবরণ হুমায়ূন আহমেদের কাছে সরবরাহ করতে নির্দেশ দেন। যাতে তিনি ভুল সংশোধনের সুযোগ পান। বিষয়টি হয়ে ওঠে সে সময়ের প্রধান আলোচ্য বিষয়। আদালতের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পেপারবুক ‍হুমায়ূন আহমেদকে পাঠানো হয়। বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ২৯ মে বাংলানিউজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মাহবুবে ‍আলম বাংলানিউজকে বলেন, “হুমায়ূন আহমেদের ওপর আমাদের আস্থা আছে। তার কাছে একটাই প্রত্যাশা, তিনি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বিয়োগান্তক ঘটনাটিকে এমনভাবে তুলে ধরবেন যাতে জাতির চেতনা জাগ্রত হয়।” মাহবুবে আলম বলেছিলেন, ``হুমায়ূন আহমেদের পাঠক লাখ লাখ মানুষ। তার মধ্যে যুবক-তরুণরাই বেশি। তাদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টিও করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। এমন একজন লেখকের লেখা, যা হাজার লক্ষ পাঠক পড়বে তাতে কোনো ভুল তথ্য থাকলে তা গোটা সমাজকে প্রভাবিত করবে বলেই আমি মনে করি।” বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ নিজেও। বাংলানিউজকে একান্ত সাক্ষৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আদালতের নির্দেশ মেনে আমি আমার বইয়ে প্রযোজনীয় সংশোধনী আনবো। সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি।” বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় সংক্রান্ত পেপারবুক হাতে পেয়েছেন এবং তা পড়তে শুরু করেছেন বলে জানিয়ে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, “এটি একটি বিশাল নথি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সময় নিয়ে পড়ছি। শেষ করতে সময় লাগবে।” বইটি কবে নাগাদ সংশোধন করে প্রকাশ করা হতে পারে জানতে চাইলে জবাবে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, “আদালত যে নির্দেশ দিয়েছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালনের চেষ্টা করবো। আই অ্যাম আ ল’ অ্যাবাইডিং সিটিজেন (আমি একজন আইন মান্যকারী নাগরিক)।” এই ``ল’ অ্যাবাইডিং সিটিজেন``-এর অনেক আশা ছিলো ক্যান্সারের অপারেশনের পর সুস্থ হয়ে উঠে বইটি লেখার কাজ শেষ করবেন। কিন্তু তার সে ইচ্ছাপূরণ হয়নি। তিন দফা অপারেশনের পর একটি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অস্ত্রোপচার -পরবর্তী ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়ে কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে যান হুমায়ূন আহমেদ। এ অবস্থায় ‘দেয়াল’র ভবিষ্যত কি হবে? সে প্রশ্ন অনেকের মধ্যে তৈরি হলেও কেউ তা সামনে আনেনি। শোকের ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছিলো। ঠিক তেমনই একটি সময়ে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পার না হতেই ওই দৈনিকটি প্রকাশ করলো দেয়ালের আরও একটি অধ্যায়। হুমায়ূন আহমেদের এই `দেয়াল-বিতর্ক` হয়তো আরও দীর্ঘ সময় ধরে চলবে। তবে  তা প্রকাশের আগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা বা হুমায়ূন আহমেদের ইচ্ছার দিকটিও বিবেচনায় রাখা পত্রিকাটির উচিত ছিলো বলেই মনে করছেন অনেকে।
ঈদের জন্য প্রস্তুত বেনারসী পল্লী
মনোয়ারুল ইসলাম বাহারী নাম আর দামের শাড়ির জন্য মিরপুরের বেনারসী পল্লীর নাম আসে সবার আগে। তাই এখান ঈদের প্রস্ততিও সবার আগে শুরু হয়। রমজান মাসের শুরুতেই মিরপুর বেনারসী পল্লী জমে উঠেছে ঈদের আয়োজনে। ভালো বিক্রির জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিয়েছেন বেনারসী পল্লীর ব্যবসায়ীরা। বিরামহীনভাবে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় তাঁতের চাকা ঘুরছে। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে দোকানকে সাজানো হচ্ছে পরিপাটি করে। কম-বেশি প্রত্যেক দোকানে রয়েছে ঈদের বিশেষ আয়োজন। কারণ, রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে তাঁতের দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, ঈদে আলাদা কিছু দিতে বিশেষ প্রস্ততির দরকার আছে। কারণ, এখন শুধু দেশি নয়, বিদেশি কাপড়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়।
দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, অপেরা, ফিগা, মিরপুরি রেশমি কাতান, ফুলকলি কাতান, দুলহান কাতান, মিলেনিয়াম কাতান, বেনারসী কসমস, অরগেন্ডি কাতান, রিমঝিম কাতান, প্রিন্স কাতান, টিস্যু কাতান, মিরপুরি গিনিগোল্ড কাতান, জর্জেট গিনি গোল্ড কাতান, চুনরি কাতান কত যে বাহারি নাম। শুধু তাই নয়, এবারের ঈদ উপলক্ষে আনারকলি ও ফুলকলি শাড়ী ছাড়াও নেট কাতান, পিওর কাতান, জাবেদ কাতান প্রভৃতি নামের বাহারী শাড়ী তৈরি হচ্ছে। কোন কোন দোকান নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নামে স্পেশাল শাড়ি বাজারজাত করার পরিকল্পনা করছে। বেনারসী শাড়ি অনেকের কাছে কাতান শাড়ি নামেও পরিচিত। মিরপুর ওয়ার্ড নং ২, ৩ ও ৫ নম্বর এবং সেকশন হিসেবে মিরপুর ১০, ১১ ও ১২ নম্বরে গড়ে উঠেছে বেনারসী পোশাকের বাজার। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত শত কাতান আর বেনারসী শাড়ির দোকান। প্রায় প্রতিটি দোকানেরই রয়েছে নিজস্ব শাড়ি তৈরির কারখানা। নিজেদের দক্ষতা, ঐতিহ্যবাহী নকশা আর রুচির সমন্বয়ে তৈরি করে চলে একের পর এক কাতান-বেনারসী। কয়েক এলাকা মিলে এখানে প্রচুর তাঁতের পোশাকের শোরুম ও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রতিটি দোকানে শোভা পাচ্ছে তাঁতের পোশাক। মিরপুর বোনারসী পল্লীর শুরুটা সেই ১৯৪৭ সালে। ভারতবর্ষ ভাগ হলো, জন্ম নিল ভারত আর পাকিস্তান। ভারতের বানারস থেকে কয়েকটি পরিবার মিরপুর এবং পুরান ঢাকায় চলে এল, সঙ্গে নিয়ে এল বেনারসি শাড়ি বোনার জাদুকরি কৌশল। এই দক্ষ বেনারসি কারিগররা বাংলাদেশেই থেকে গেল এবং স্বাধীনতার পর মিরপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করল। জীবিকা হিসেবে বেছে নিল বেনারসী শাড়ি তৈরির কাজ। পুরো ঘটনাটি গল্পের মতো শোনালেও, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে মিরপুরের বিশাল এক জায়গা জুড়ে গড়ে উঠল দেশের সর্ববৃহৎ শাড়ির বাজার, মিরপুর বেনারসী পল্লী। সুজন বেনারসী হাউসের কর্ণধার সুজন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা প্রতিবছর রমজানের শুরু থেকেই প্রস্ততি নেই।  কমপক্ষে একটা শাড়ি না কিনলে বাঙালি নারীর ঈদের কেনাকাটা যেন অপূর্ণই থেকে যায় । তাই প্রতিবারই ঈদকে মাথায় রেখে আমরা তৈরি করি বিভিন্ন ডিজাইনের কাতান- বেনারসি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি, ঈদকে সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছে আধুনিক  ডিজাইনের নানারকম শাড়ি। দশ রোজা থেকে ব্যাপক ভিড় শুরু হবে। বিশ রোজার পর পা ফেলা জায়গা পাবেন না বেনারসী পল্লীতে।
বেনারসী শিল্পে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারুকাজ, রং, সুতার ব্যবহার, বুনন, সমন্বয়, নকশা সব মিলিয়ে বেনারসীর অন্যরকম এক আবেদন আগেও ছিল, এখনও আছে। ধনী-গরিব সব নারীরই পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকে বেনারসী। যাদের সামর্থ্য নেই তাদের আকাঙ্খা থাকে অন্তত বিয়ের অনুষ্ঠানটা হবে বেনারসী দিয়ে। যে কারণে মোটামুটি সচ্ছল পরিবারগুলোতে বেনারসী ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠান কল্পনাও করা যেতো না। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে বেনারসীর বাণিজ্যিক নাম বিস্তৃত হতে থাকে। নব্বইয়ের দশকের শেষ পর্যন্ত ঢাকাই বেনারসীর খ্যাতি ছড়াতে থাকে। বাজারে তৈরি হয় ব্যাপক চাহিদা। এ এলাকার শাড়ির দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেল- ঈদ উপলক্ষে বোনা হয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি । ইদানিং ভারতীয় হাতের কাজের শাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতেই যেন প্রায় সব শাড়িতেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে জরি-চুমকির বাড়তি কাজ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সব শাড়িতেই আনা হয়েছে কিছু না কিছু পরিবর্তন। দেশীয় টিস্যু, তসর, ব্রোকেড, জুট আর সফট কাতানের সাথে যুক্ত হয়েছে কোরিয়ান, ইন্ডিয়ান ও চাইনিজ সিল্ক কাতানের নানা ধরন।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কাতানের দাম নির্ভর করে নকশা, উপকরণ আর জরির কাজের ওপর। এসব দোকানে সাধারণত ১৩০০-১৫০০ টাকাতেই ভালো মানের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। তবে আসল বা ভালো মানের কাতান শাড়ির দাম শুরু হয় ২৫০০ থেকে। নকশা আর কাপড়ের মান অনুযায়ী এসব কাতানের দাম ১০০০০-১৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এসব দোকানে দরদাম করেই কেনা যাবে শাড়ি । মদিনা স্টোরের মালিক আব্দুল মোমেন জানান, মাঝে একটা সময় ইন্ডিয়ান জর্জেট শাড়ির জন্য কাতানের চাহিদা একদমই কমে যাচ্ছিল। কিন্তু স্বাতন্ত্র্য আর বৈচিত্র্যের কারণে কাতান আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নকশা আর ধরনে বৈচিত্র্য আনতে পারলে কাতানের চাহিদা কোনোদিন কমবে না। তবে আসল কাতান বা বেনারসী কিনতে মিরপুরেই আসা উচিত। জেরিন সিল্ক কারখানার ম্যানেজার শামীম আহমেদ বলেন, “আমরা এখন বিশ্ববাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছি। বর্তমানে দেশীয় শাড়ির বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিতে এখানেও চলছে নিত্যনতুন শাড়ি তৈরির প্রচেষ্টা। ঈদ উপলক্ষে পুরো বেনারসী পল্লীজুড়েই যেন একটা সাজ সাজ আমেজ। রমজানের শুরু থেকেই এ আমেজ শুরু হয়।” 
বাঁধনের ফেরা
বিনোদন প্রতিবেদক
লম্বা বিরতির পর শোবিজে ফিরে এসেছেন বাঁধন। ঈদের নাটকের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন পুরোপুরি। তবে যেখানেই যান সঙ্গে থাকে পুতুলের মতো ফুটফুটে মেয়ে সায়রা। নাটকের শট দিয়ে এসেই মেয়েকে কোলে তুলে নেন। মেয়েটাও খুব লক্ষ্মী, মা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে একদম চুপচাপ-শান্ত হয়ে বুয়ার কোলে মুখ লুকিয়ে রাখে। শট শেষ অমনি মায়ের প্রতি বাড়িয়ে দেয় দুটি হাত। দীর্ঘ দেড় বছর অভিনয় থেকে দূরে থাকা বাঁধন সম্প্রতি আবার নিজের চেনা জায়গায় ফিরেছেন। এরই মধ্যে তিনি নতুন তিনটি নাটকে কাজ করেছেন। নাটক তিনটির দুটি নির্মাণ করেছেন চয়নিকা চৌধুরী। অন্যটি পরিচালনা করেছেন আরেফিন। নিজের অভিনয়ে ফেরা নিয়ে বাঁধন বলেন, আসলে এই সময়েই কাজ শুরু করব তা ভাবিনি। হঠাৎ করে একদিন পরিচালক চয়নিকা চৌধুরীর সঙ্গে গালগল্প করছিলাম। তখন তিনি আমাকে তার নাটকে কাজের প্রস্তাব করেন।
আমি সে সময় তাকে বলেছিলাম, আমার মেয়েকে রেখে আমি কীভাবে অভিনয় করব? পরিচালক আমাকে বললেন, আমার নাটকের স্পটে বিপাশা হায়াত, রিচি সোলায়মান, শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নিও তাদের সন্তানকে নিয়ে এসে অভিনয় করেছেন। তুইও তোর মেয়েকে নিয়ে আসবি। অভিনয়ের ফাঁকে ফাঁকে মেয়েকে দেখাশোনা করবি। কাজের কারণে তোর মেয়ের যেন কোনো কষ্ট না হয়, আমি সে সুযোগ তোকে দেব। একবার ভাবছিলাম, এভাবে কী আর কাজ করা যায়! পরে পরিচালক আমাকে ভালো করে বিষয়টি বোঝালেন। তাই শেষ পর্যন্ত আমি তার সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়ে গেলাম। এভাবেই আমার কাজে ফেরা। বাঁধন আরো বললেন, এরই মাঝে আমি তিনটি এক ঘণ্টার নাটকের কাজ শেষ করেছি। এর মধ্যে চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় কাজ করেছি ‘ধ্রুবতারা’ ও ‘প্রতিবেশী’ শিরোনামের দুটি নাটকে। আর আরেফিনের পরিচালনায় যে নাটকটিতে অভিনয় করেছি এর শিরোনাম ‘হাঙ্গামা’। মেয়েকে নিয়ে শুটিং স্পটে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাঁধন আরও বলেন, ‘শুটিংয়ের পুরো সময়টা আমার মেয়ে স্পটেই ছিল। আমি শটের বিরতিতে পাশের রুমে গিয়ে মেয়ের দেখাশোনা করে আসতাম। পরিচালকরা আমার মেয়েকে রাখার জন্য সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমি মেয়েকে নিয়ে বেশ আরামেই কাজগুলো করেছি।’ নাটকগুলোতে অভিনয় প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন, ‘আসলে আমি দেড় বছর পরে কাজে ফিরলাম বলে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, আমি বোধ হয় অনেক ভেবে-চিন্তে খুব সিরিয়াস কোনো চরিত্র বা নাটকের মাধ্যমে আবার অভিনয়ে ফিরে দর্শকদের চমকে দেব। নাটকগুলোতে আমি আহামরি কোনো চরিত্রে কাজ করিনি। তবে আমি যেটুকু কাজই করেছি তাতে আমার আন্তরিকতা ছিল। আমি পরিচালকের কথামত কাজটি করার চেষ্টা করেছি। তবে আমার বিশ্বাস, কাজগুলোতে আমার অংশগ্রহণ দর্শকদের খারাপ লাগবে না। মাঝখানে মিডিয়া থেকে দূরে থাকার সময়টাতে অভিনয়কে কতোটা মিস করেছেন জানতে চাইলে বাঁধন বললেন, আসলে সে সময়টা ছিল অন্যরকম। মেয়ে যখন আমার গর্ভে ছিল, সেই সময়টায় আমি ওকে নিয়ে কল্পনায় নানা রকম ছবি এঁকেছি। সে সময় আমার ভাবনার পুরোটা জুড়েই ছিল অনাগত সন্তান। আর মেয়ে জন্মের পর আমি ওকে নিয়ে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম যে, অন্য কিছু ভাবার সুযোগই ছিল না। মেয়ের দেখাশোনা করতে করতেই আমার দিনের বেশিরভাগ সময় চলে যেত। আর তাই তখন অভিনয়কে মিস করা হয়নি। তবে এখন আবার কাজ করার পর একটু একটু করে অভিনয় আমার ভেতরে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। অভিনয়কে আমি মিস করছি। এখন অভিনয়ের প্রতি আমার মধ্যে নতুন করে একটা টান তৈরি হয়েছে। ইদানিং অবসর পেলেই বাঁধন টিভি দেখতে বসে যান। নিজের অভিনয় দেখার পাশাপাশি অন্যদের কাজও তিনি দেখেন। তবে মা হওয়ার আগের সময়ের চেয়ে পরের সময়গুলোতে তার টিভি দেখার সুযোগ কমই হয়। বাঁধন বলেন, ‘আসলে অভিনয় আমার কাছে প্রতি মুহূর্তে শেখার একটি বিষয়। নিজের এবং অন্যের কাজ দেখলে অনেক কিছু বোঝা যায়। আমার এখনও শেখার অনেক বাকি। নিজেকে প্রতি মুহূর্তে নানা চরিত্রের মাধ্যমে গড়তে ও ভাঙতে হলে অভিনয় শেখার কোনো বিকল্প নেই।’ নিজের পরের প্রজন্মেও কাজের মূল্যায়ন করতে বললে বাঁধন বলেন, ‘লাক্স থেকে আমার পর যারা বের হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ তো ভালোই করছে। এই মুহূর্তে বিদ্যা সিনহা মিম ও রাখির কথা মনে পড়ছে। ওরা তো ভালোই কাজ করছে।’
প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নতুন সভাপতি ডিপজল
বিনোদন প্রতিবেদক
ঢালিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নতুন সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতৈক্যর ভিত্তিতে  প্রযোজক পরিবেশক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি পূর্ণগঠন করা হয়েছে। নির্বাচিত কমিটির সভাপতি মাসুদ পারভেজের শারীরিক অসুস্থতায় দায়িত্ব পালনে অপারগতার কারণে তাকে অব্যাহতি দিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ডিপজল। মাসুদ পারভেজকে অবশ্য কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাচিত কমিটির সহ-সাধরণ সম্পাদক সাইদুর রহমান মানিককে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়েছে। সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোনীত হয়েছেন খোরশেদ আলম খসরু। সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে পূর্ণগঠিত কমিটির বৈধতা প্রদান করেছে আদালত। চলতি মাসের শুরুর দিকে চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি মাসুদ পারভেজ শারীরিক অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানান। তিনি অসুস্থতার জন্য কিছুদিন ছুটি চান এবং সুস্থ হয়ে আবার দায়িত্ব গ্রহণের ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু অনির্দিষ্ট কালের জন্য চলচ্চিত্রের নীতি-নির্ধারক এই সমিতির নের্তৃত্বে শূণ্যতা তৈরি হওয়ায় মাসুদ পারভেজকে নির্বাহী সদস্য হিসেবে রেখে তাকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আগের নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডিপজল সভাপতি এবং সাবেক সহ-সাধরণ সম্পাদক সাইদুর রহমান মানিক সাধারণ সম্পদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মনোয়ার হোসেন ডিপজলের নের্তৃত্বে পূর্ণগঠিত  কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২৮ জুলাই শনিবার বেলা ১২টায় এফডিসির প্রযোজক পরিবেশক সমিতির স্ট্যায়ারিং রুমে। সভায় চলচ্চিত্রের সাম্প্রতিক অবস্থা ও আসন্ন ঈদে ছবি মুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়। দেশীয় চলচ্চিত্রের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনিযুক্ত সভাপতি মনোয়ার হোসেন ডিপজল বাংলানিউজকে বলেন, ভাল কিছু করার জন্য নির্বাহী পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েই সভাপতির পদ গ্রহণ করেছি। কারণ নের্তৃত্বে শূন্যতা নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। চলচ্চিত্রের বর্তমানে ক্রান্তিকালে আমরা সবাই মিলেমিশে সংকট উত্তরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবো বলে আশা করছি।
এক নজরে পূর্ণগঠিত নির্বাহী কমিটি
সভাপতি : মনোয়ার হোসেন ডিপজল
সিনিয়র সহ-সভাপতি : খোরশেদ আলম খসরু
সহ-সভাপতি : এজে রানা
সাধারণ সম্পাদক : সাইদুর রহমান মানিক
সহ-সাধারণ সম্পাদক : শামসুল আলম
সহ-সাধারণ সম্পাদক : আনোয়ার হোসেন মিন্টু
কোষাধ্যক্ষ : মেহেদী হাসান সিদ্দিকী মনির
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক : শেখ নজরুল ইসলাম
সাংস্কৃতিক সম্পাদক : জাহিদ হোসেন
কার্যনির্বাহী সদস্য : মাসুদ পারভেজ, ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম, শরীফ উদ্দিন খান দিপু, ইলিয়াস কাঞ্চন, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, মো. রফিকউদ্দিন, মনতাজুর রহমান আকবর, আতিকুর রহমান লিটন, শামীম ওসমান, খন্দকার আরিফুজ্জামান ও হারুনুর রশীদ সাগর।
সোনাক্ষীর ওপর কারফিউ জারি!
ইশতিয়াক হোসেন লাবিব
বলিউডে নতুন প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিনহার ওপর জারি করা হয়েছে কারফিউ! নাহ, ভারতীয় প্রশাসন এই কারফিউ সরকার জারি করেনি। সোনাক্ষী সিংহার বাবা বলিউডের একসময়ের অ্যাকশন হিরো শত্রুঘ্ন সিনহা মেয়ের ওপরই এমনই এক কঠিন নির্দেশ জারি করেছেন। তিনি সোনাক্ষীকে নির্দেশ দিয়েছেন,   যেখানেই যাক আর যাই করুক না কেন, তাকে অবশ্যই বাড়িতে ফিরতে হবে এবং তা রাত ১টার মধ্যেই। বাবা শত্রুঘ্ন সিনহার পথ ধরেই বলিউডে বেশ অল্প সময়েই জনপ্রিয়তার মুখ দেখেছেন ‘দাবাং’ খ্যাত অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিনহা। শোবিজে বেড়ে গেছে তার ব্যস্ততা। একটার একটা ছবি ছাড়াও রিয়েলিটি শো, স্টেজ শো আর বিভিন্ন ইভেন্টস থেকে তার ডাক আসছে। শোবিজের কাজের পাশাপাশি সার্কেলের সঙ্গে সময় কাটিয়ে প্রায় দিনই অনেক রাত করে সোনাক্ষী বাড়ি ফিরেন। এমনও হয়েছে শুটিংয়ের কাজে কখনো কখনো পুরো রাতই তাকে বাইরে কাটাতে হয়। বাড়ি ফেরার প্রতি সোনাক্ষীর এই উদাসিনতায় চিন্তায় পড়ে গেছেন তার বাবা ও পরিবারের অন্য সবাই। মেয়ের বর্তমান খ্যাতি আর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই কঠোর হয়েছেন শত্রুঘ্ন সিনহা। সোনাক্ষীকে তিনি দিয়েছেন কারফিউয়ের মতোই কঠিন আলটিমেটাম। মুম্বাইয়ের বাইরে শুটিং না থাকলে রাত ১টা মধ্যে না ফিরলে মেয়ের জন্য বাড়ির দরোজা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। দেরি করে রাতে বাড়ি ফেরার জন্য বাবাকে সোনাক্ষী সিনহাও বলেছেন, সরি। রাত ১টা নয় আমার চেষ্টা থাকবে আরো আগেই বাড়ি ফেরার।শত্রুঘ্ন সিনহা এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি মিডিয়ার কাছে বলেন, ‘মেয়ের স্বাধীনতার প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন আছে। আমার মেয়ে অবশ্যই সব কিছুতে অংশগ্রহণ করবে এবং জীবনকে ইনজয় করবে, আমিও তা চাই।
কিন্তুএই উঠতি সময়ে আমি তাকে বেপরোয়া দেখতে রাজি নই। তাকে পারিবারিক বিধি-নিষেধের কথা মাথায় রাখতে হবে। রাত ১টার মধ্যে অবশ্যই সোনাক্ষীকে বাড়িতে ফিরতে হবে।’ শত্রুঘ্ন সিংহা মেয়ে সোনাক্ষীসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে মুম্বাইয়ের কেন্দ্রস্থলেই বাস করছেন। মেয়ের ক্যারিয়ারের পাশাপাশি সব বিষয়েই তিনি রেখেছেন কড়া নজর। এখন পর্যন্ত শুটিংয়ের কাজে দীর্ঘ সময়ের জন্য সোনাক্ষীকে মুম্বাইয়ের বাইরে বা বিদেশে যেতে হয় নি। তবে যে হারে তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে, তাতে কাজের প্রয়োজনে অদূর ভবিষ্যতে দূরে কোথাও যেতে হতেই পারে। এখন দেখার বিষয় হলো, বাবা শত্রুঘ্ন সিনহা সব জায়গাতেই মেয়ের সফর সঙ্গী হতে তার প্রতি কড়া নজর রাখতে পারেন কিনা! অনেকেই আবার বাঁকা চোখে বলছেন, দড়ি বেশি টাইট দিলে তা ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

Year-19 # Issue-23 # 22 July 2012

চলে গেলেন হুমায়ূন,না ফেরার দেশে
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক,জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে চিরদিনের মত চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টা ২০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ম্যানহাটন বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। তার মৃত্যুতে সারা দেশে  নেমে এমেছে শোকের ছায়া। 

কিংবদন্তি সাহিত্যিকের জীবনী
শহীদ মুক্তিযুদ্ধা পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান  ও মা আয়েশা ফয়েজের বড় পুত্র ১৯৪৮ সালের ১৩ নবেম্বর   নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের কুতুবপুর গ্রামে নানা বাড়িতে হুমায়ূন আহমেদ জন্ম গ্রহন করেন। তার ডাকনাম ছিল  কাজল। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। এক ভাই জাফর ইকবাল একজন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, ছোটভাই আহসান হাবীব কার্টুনিস্ট। তাঁর মা আয়েশা ফয়েজেরও একটি স্মৃতিকথামূলক বই বেরিয়েছে। তিনি ১৯৭৩ সালে গুলতেকিনকে প্রথম বিয়ে করেন। সেখানে তার চার সন্তান নোভা, শীলা, বিপাশা ও নুহাশ রয়েছে। ২০০৫ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন শাওনকে। এই দম্পতির দুই সন্তান নিষাদ ও নিনীত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই লেখালেখি শুরু করে সাহিত্য সমালোচকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের শিক্ষক হলেও সাহিত্যে রস দিতে  মোটেও ভুল করেনি তিনি।  তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস নন্দিত নরকে।এরপর শ´খনীল কারাগার, রজনী, এপিটাফ, পাখি আমার একলা পাখি, ফেরা, নিষাদ, দারুচিনি দ্বীপ, নির্বাসন, অমানুষ, রূপালী দ্বীপ, শুভ্র, দূরে কোথাও, মন্দ্রসপ্তক, বাদশাহ নামদার, সাজঘর, বাসর, নৃপতির মতো পাঠক হৃদয় জয় করা উপন্যাস আসে তার লেখনীতে।
তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন জোৎ­া ও জননীর গল্প, ১৯৭১, সূর্যের দিনের মতো উপন্যাস। হুমায়ূনসৃষ্ট মিসির আলী ও হিমু হয়ে উঠে পাঠকদের প্রিয় চরিত্র। অনন্ত নক্ষত্র বীথি, ইরিনার মতো কয়েকটি কল্পবিজ্ঞান কাহিনীও লিখেছেন তিনি।
উপন্যাসের  পাশাপাশি তিনি নাটকও লিখেছেন তিনি। ১৯৮০ সালে তার লেখা ও নাট্যরূপ দেওয়া প্রথম নাটক ‘প্রথম প্রহর’ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। এরপর ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ দিয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যান তিনি। এরপর বহুব্রীহি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাতের মতো বহু জনপ্রিয় নাটক আসে তার হাত দিয়ে।
নাটক লেখার এক পর্যায়ে নির্দেশনায়ও নামেন হুমায়ূন। নাটক নির্দেশনায় হাত পাকিয়ে নামেন চলচ্চিত্র পরিচালনায়। আগুনের পরশমনি দিয়ে শুরু করে শ্রাবণমেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামলছায়ার মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র আগুনের পরশমনি কয়েকটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিল। সর্বশেষ তিনি মুক্তিযুদ্ধবিরোধিদের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘দেয়াল’ নানা সমালোচনার জন্ম দেন। একটি জাতীয় দৈনিকে উপন্যাসটির অপ্রকাশিত দুটি পরিচ্ছেদের প্রকাশ ঘটলে, ইতিহাসের ‘সঠিক’ প্রতিচ্ছবির অভাব বিবেচনায় আদালত একটি মতামত ব্যক্ত করে। হুমায়ূন আহমেদও আদালতের সাথে একমত হন। বঙ্গবন্ধু-হত্যা নিয়ে তাঁর এই উপন্যাসটি অসংখ্য মানুষের প্রার্থিত ছিল।  কিন্তু  মৃত্যুতে তা অসম্পর্ণ রয়ে গেল।
উল্লেখ্য, বৃহদান্ত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য নিউ ইয়র্কে যান হুমায়ূন আহমেদ। সেখানে মেমোরিয়াল øোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা নিতে শুরু করেন তিনি।
দুই পর্বে মোট ১২টি কেমো থেরাপি নেওয়ার পর গত ১২ জুন বেলভ্যু হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. জেইন এবং ক্যান্সার সার্জন জজ মিলারের নেতৃত্বে হুমায়ূন আহমেদের দেহে অস্ত্রোপচার হয়।
অস্ত্রোপচারের পর ১৯ জুন বাসায় ফিরেছিলেন এই লেখক। স্ত্রী শাওনসহ সন্তানদের নিয়ে কুইন্সে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকছিলেন তিনি।
বাসায় ফিরলেও অবস্থার অবনতি ঘটলে পুনরায় বেলভ্যু হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। ২১ জুন তার দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার হয়। এরপর গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ছিলেন তিনি।
অস্ত্রোপচারের আগে পরিবার-আÍীয় স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে গত ১১ মে মাসে দেশে আসেন হুমায়ূন। দেশে ২০ দিন অবস্থানের পুরোটা সময় গাজীপুরে নিজের গড়া নুহাশ পল্লীতে কাটিয়েছিলেন তিনি। ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পর একুশে পদকজয়ী হুমায়ূনকে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের উপদেষ্টা নিয়োগ করে সরকার।
লাখ পাঠক-দর্শকে কাদিয়েছেন তিনি
জনপ্রিয় এই সাহিত্যিকের মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছেন দেশ-বিদেশের লাখ পাঠক। সাহিত্য ও বিনোদন অঙ্গনে তার বড় অভাব রয়ে গেল বলে হুমায়ূন ভক্তদের ধারনা। হুমায়ূন ভক্ত বি আই ইউ এর আইন বিভাগের ছাত্র রেজা বলেন, তার মান সম্মত লেখনির জন্য পাঠকরা বই পড়তে আগ্রহী হয়েছে।  তার লেখা বই পড়ে যেমনি জ্ঞান পাওয়া যায় তেমনি অনেক  মজাও পাওয়া যায়।
আরামিন বলেন, সুস্থ হয়ে তিনি ফিরে আসবেন এমনি আশাতেই বুক বেঁধেছিলাম  কিন্তু কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে বিশাল এক শূন্যতায় সবাইকে ভাসিয়ে চলে গেলেন তিনি।
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে শোক
নিজস্ব প্রতিবেদক
গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
তাৎক্ষণিকভাবে শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলাদেশ ও বাংলা সাহিত্য হুমায়ূন আহমেদের অভাব বোধ করবে।
জনপ্রিয় এ লেখকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।
অর্থমন্ত্রী মুহিত তাৎক্ষণিকভাবে শোক প্রকাশ করে বলেন, হুমায়ূন আহমেদের বিদায়ে বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি হুমায়ূনের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, তার মৃত্যুতে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। বাংলা সাহিত্যির অগ্রগতিতে তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন তা চিরদিন স্মরণ করবে জাতি।
বিরোধী দলীয় নেতার শোক
জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া। শোক বার্তায় তিনি বলেন, তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে এক বড় শূন্যতার সৃষ্টি হলো। এই ক্ষতি সহসা পুরণ হওয়ার মতো নয়। হুমায়ুন আহমেদ তার সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন।
শোকবার্তায় হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন তিনি।
ডেপুটি স্পীকারের শোক
জননন্দিত সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নাট্যকার হুমায়ন আহমেদের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার শওকত আলী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোক বাণীতে তিনি বলেন, হুমায়ন আহমেদের মৃত্যুতে দেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় শুন্যতার সৃস্টি হলো। সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তাঁর অবদান বাঙ্গালী জাতি আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্বরন করবে। তিনি মরহুমের বিদেহী আÍার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
স্পীকারের শোক
জনপ্রিয় লেখক ও বরেন্য কথা সাহিত্যিক হুমায়ন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পীকার মো. আব্দুল হামিদ এডভোকেট। বাণীতে তিনি বলেন, কথা সাহিত্যিক হুমায়ন আহমেদ ছিলেন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এক অসাধারন মেধাসম্পন্ন উজ্জ্বল নক্ষত্র। সাহিত্য ও সংস্কৃতির সর্বক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদান। ক্ষণজন্মা এ সাহিত্যিক তাঁর চিন্তাশীল ও দুরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তা চেতনা ও লেখনীর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের সাহিত্য অঙ্গনে যে বিশাল শূণ্যতার সৃস্টি হয়েছে তা পূরণ হবার নয়। তিনি মরহুমের বিদেহী আÍার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
মরহুম হুমায়ন আহমেদের অবদান বাঙ্গালী জাতি আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করবে।

জ্বালানি তেলের মাত্রাতিরিক্ত সরবরাহ ও তাপীয় মান নিয়ে মুখোমুখি পিডিবি ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো
নিজস্ব প্রতিবেদক
জ্বালানি তেল সরবরাহ নিয়ে পিডিবি  এবং কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো মুখোমুখি অবস্থানে। পিডিবির অভিযোগ, বেশ কিছু কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্ধারিত চুক্তির চেয়ে বেশি জ্বালানি তেল নিচ্ছে। কিন্ত পিডিবির এ অভিযোগ মানতে নারাজ অভিযুক্ত কুইক ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। বরং ওসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পক্ষ থেকে পিডিবিকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে মাপে কম পরিমান তেল সরবরাহের। একই সাথে পিডিবির সরবরাহকৃত জ্বালানি তেলের তাপীয় মান কম হওয়ায় একদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন যেমন কম হচ্ছে, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল্যবান যন্ত্রপাতি। এর জবাবে পিডিবি বলছে, অতিরিক্ত জ্বালানি তেল ব্যবহারের টাকা রেখে রাখা শুরু করা হলেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পিডিবির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছে। এর আগে তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো অভিযোগ ছিল না কখনো। আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকারি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পিডিবির সরবরাহকৃত জ্বালানি তেলের তাপীয় মান কম থাকার বিষয়টি প্রমাণিত জরিমানা দাবি করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কুইক ও কুইক রেন্টাল ১৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ১২৭ কোটি টাকার অতিরিক্ত জ্বালানি তেল ব্যবহারের অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পর থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত মাত্রাতিরিক্ত জ্বালানি তেল ব্যবহার করেছে। পিডিবির অভিযোগ, এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালুর পর থেকেই নির্ধারিত চুক্তির চেয়ে বেশি পরিমাণ জ্বালানি তেল নিচ্ছে। যদিও প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্যই স্বাক্ষরিত চুক্তিতে জ্বালানি তেল ব্যবহার নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু নির্ধারিত পরিমাণের বেশি যে এ পরিস্থিতিতে চাহিদার বেশি জ্বালানি তেল নেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে পিডিবি। এজন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু পিডিবির এ অভিযোগ মানতে নারাজ অভিযুক্ত জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। যদিও রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য স্বাক্ষরিত চুক্তিতে তরের ব্যবহার নির্ধারিত রয়েছে। নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে যে পরিমাণ বেশি জ্বালানি তেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করবে চুক্তি অনুযায়ী সে তেলের দাম ওই কোম্পাানির বিদ্যুৎ বিল থেকে কেটে নেবে পিডিবি।
সূত্র জানায়, দেশে গড়ে ওঠা রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো মূলত ডিজেলচালিত। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিপিসি ভর্তুকি দামে ডিজেল সরবরাহ করছে। এতে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দু’ভাবে। একদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অতিরিক্ত তেল নিচ্ছে, অন্রদিকে সরকার প্রতি লিটার জ্বালানি তেলের ১৩ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দিচ্ছে। এতে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ যাচ্ছে বেড়ে। মূলত এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মানহীন পুরনো যন্ত্রাংশ ব্যবহারের কারণেই জ্বালানি তেল বেশি লাগছে। কিন্তু সরকার কেন এ বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল বাবদ অতিরিক্ত অর্থের দায় বহন করবে। এ দায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকেই বহন করতে হবে। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পিডিবি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে যে জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে তার তাপীয় মান ৭ থেকে ৮ ভাগ কম। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পক্ষ থেকে দেশে এবং বিদেশে এ জ্বালানি তেল পরীক্ষা করে তার রিপোর্ট পিডিবিকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু পিডিবি তা আমলে নিচ্ছে না। নিম্নমানের তেল সরবরাহের কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মেশিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, পিডিবি থেকে নির্ধারিত চুক্তির চেয়ে বেশি পরিমাণ জ্বালানি তেল নেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য পিডিবির সরবরাহকৃত জ্বালানি তেলের তাপীয় মান যাচাই করা হবে। এজন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিপিসিকে। আর দেশে সায়েন্স ল্যাবরেটরি জ্বালানি তেলের এ মান যাচাই করবে। একই সাথে যেসব ওয়াগনে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয় তার ক্যালিবারেশন ঠিক আছে কিনা সেজন্যও কমিটি ৩টি ভেসেল পরীক্ষা করে দেখবে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ মনে করছে যেসব জাহাজে করে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হচ্ছে পথিমধ্যে তাতে চুরির ঘটনা ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ভিজিলেন্স টিম গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। এসব বিষয় ঠিক থাকলে পিডিবিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিল থেকে কেটে রাখা টাকা ফেরত দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বিপিসির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, বিদেশ থেকে একই মানের জ্বালানি তেল আমদানি করে বিপিসি এবং তা আন্তর্জাতিক বাজারের নির্ধারিত মানের। আমদানিকৃত এসব তেল দেশে আসার পর বিপিসি, ইআরএল এবং বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তাদের সমন¦য়ে গঠিত কমিটি তেলের মান যাচাই করে। এক্ষেত্রে ৮টি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ারই জ্বালানি তেল রাখা হয়। কোনো একটি বিষয়ে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম উৎপাদন পাওয়া গেলে এ তেল রাখা হয় না। ফার্নেস অয়েলের ক্ষেত্রে ১৮০ সিএসটি এবং ২৫ ভাগ সালফার রয়েছে এমন ডিজেল আমদানি করা হয় দেশে। এক্ষেত্রে বিপিসি মানহীন জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে তা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।
বিপিসির পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, আমদানিকৃত জ্বালানি তেল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার ৩টি ডিপো থেকে সরবরাহ করা হয়। এরপর জ্বালানি তেলের দায়দায়িত্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর। ইতিমধ্যে সরকার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষমতা দিয়েছে। এক্ষেত্রে বিপিসির তেল যদি মানহীন হয় তাহলে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো নিজেরাই বিদেশ থেকে মানসম্পন্ন জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারে। কিন্তু তা না করে বিপিসিকে দায়ি করা কোনোভাবেই ঠিক নয়।
তিস্তায় উজানের ঢলে ৫০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত শুক্রবার সকাল ৬টায় দ্বিতীয় দফায় উজানের ঢলে তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে তিন জেলা নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরের ৫০ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি ফের বন্যার কবলে পড়েছে।
উল্লেখ্য, উজানের ঢলে গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যা থেকে তিস্তা দীর্ঘ একটানা ৪২ ঘন্টা ধরে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তায় এ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল। এরপর ১৭ জুলাই বিকেল ৩টায় বিপদসীমার নিচে নেমে এলে রেড এ্যালার্ট প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ভারতের অংশের দো-মোহনী থেকে জিরো পয়েন্ট মেখলিগঞ্জ পর্যন্ত তিস্তা নদীতে রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, তিস্তা চলতি বর্ষায় দ্বিতীয় দফায় বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিন জেলা নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরের প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পুনরায় বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। লোকজন কে উঁচু স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলো হলো নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পুর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছচাঁপানী, গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী, কৈমারী, লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার ছিটমহল আঙ্গরপোতা দহগ্রামের চর, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, ধুবনী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম কাশিরাম, চর বৈরাতী, নোহালী চর, শৈলমারী চর, ভোটমারী চর, হাজিরহাট চর, আমিনগঞ্জ চর, কাঞ্চনশ্বর চর ও রুদ্ধেশ্বর চর, আদিতমারী উপজেলার চন্ডমারী, দক্ষিণ বালাপাড়া, আরাজি শালপাড়া, চরগুপ্তধন ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটি, খুনিয়াগাছা, রাজপুর, তিস্তা, তাজপুর, গোকুন্ডা, মোগলহাট, বানগ্রাম, রংপুর জেলার গংঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ, লক্ষীটারী, গজঘন্টা, কচুয়া, নোহালী, মর্ণেয়া ও বেতগাড়ি ইউনিয়ন, কাউনিয়ার হারাগাছ পৌরসভা, সারাই, মধুপুর ইউনিয়ন এবং পীরগাছা উপজেলার ছাওলা, তাম্বুলপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন।

ঢাকার সংসদীয় আসন ১০টি রাখার প্রস্তাব ইসির

আসন সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু এমাসেই

মাসুদুর রহমান স্বপন
চলতি মাসেই রাষ্ট্রপতি আদমশুমারি প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করায় দ্রুতই কমিশনকে সীমানা নির্ধারণী কাজ শুরু করতে হবে। ঢাকা মহানগরীর সংসদীয় আসন ১০টি নির্দষ্টি করার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) লক্ষ্যে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত আইন বিধিমালা সম্পর্কে কমিশনের মতামত আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রসঙ্গত বিগত কমিশন বিদায়ের আগ মুহূর্তে সংক্রান্ত আইন বিধিমালার খসড়া তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল; কিন্তু বর্তমান কমিশনের মতামতের জন্য এই খসড়া মন্ত্রণালয় থেকে গত এপ্রিল মাসে কমিশনে ফেরত পাঠানো হয়। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন আগের কমিশনের বিধিমালায় কিছু সংশোধনী এনেছে। বিধিমালার ধারায় () Èসংসদীয় আসনের সীমানা একাধিক জেলায় অবস্থিত ভূূ-খণ্ড সমন্বয়ে গঠন করা যাবে না' বলে যে প্রস্তাব করেছিল সেখানে বিশেষ প্রয়োজনে বিশেষ ক্ষেত্রে এই বিধির কার্যকারিতা শিথিল থাকবে। এদিকে কমিশন আদমশুমারির রাষ্ট্রপতি অনুমোদিত প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্নিধারণের কাজ শুরুর চিন্তা-ভাবনা করছে। কিন্তু আইন বিধিমালা প্রণীত না হলে সীমানা নির্ধারণের কাজ আটকা পড়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের রাজনৈতিক সদ্ধিানে্তর প্রয়োজন রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সংলাপে সরকারি দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনী আইন সংস্কারের প্রশ্নে কোনো মতামত এখনো দেয়নি। বিএনপিও যায়নি সংলাপে। সরকারি দল বিরোধী দলের মতামত ছাড়াই সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করতে বাধ্য হয়েছিল বিগত কমিশন। নিয়ে বিগত কমিশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাত্ চেয়েও পায়নি। ঢাকা মহানগরীর সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী বলেন, Èবিগত কমিশন ঢাকা মহানগরীর আসন জনসংখ্যার ভিত্তিতে করার কারণে ৮টি থেকে ১৫টি করতে হয়েছিল। পরে কমিশনের সদ্ধিান্ত সঠিক ছিল না বলে প্রতীয়মান হয়। জন্য সবক্ষেত্রে জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন বিন্যাস যুক্তিসঙ্গত নয়। তবে ঢাকার আসন ১০টিতে নির্দষ্টি রাখার প্রস্তাব যুক্তিসঙ্গত। নিয়ে আরো আলোচনা-পর্যালোচনা করে পুনরায় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।' বিগত কমিশনের Èনির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিধিমালার নম্বর ধারায় জেলা পর্যায়ে আসন বণ্টন নীতি সম্পর্কে বলা হয় : ) সংসদীয় আসনের সীমানা একাধিক জেলায় অবস্থিত ভূ-খণ্ড সমন্বয়ে গঠন করা যাবে না, ) তিন পার্বত্য জেলার প্রতিটিতে একটি এবং অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুইটি আসন থাকবে, ) ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বর্তমান সীমানা বহাল থাকলে এতে ১০টির বেশি আসন রাখা যাবে না, ) ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১০টি তিন পার্বত্য জেলার ৩টি আসন বাদে বাকি ২৮৭টি আসন ৬১ জেলার মধ্যে বণ্টন করা হবে। বিধিমালার () ধারায় বলা হয়, আদমশুমারির প্রতিবেদনে দেশের মোট জনসংখ্যা থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন পার্বত্য জেলার জনসংখ্যা বাদ দিতে হবে। বাকি জনসংখ্যাকে ২৮৭টি আসন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে জনসংখ্যা কোটা নির্ধারণ করতে হবে। এর পর প্রতিনিধিত্বকারীদের ভাগফল নির্ণয় করতে হবে।  
৬১ জেলার প্রতিটির জনসংখ্যাকে জনসংখ্যা কোটা দিয়ে আবার ভাগ করতে হবে। এর ফলে প্রায় সকল ক্ষেত্রে একটি পূর্ণ সংখ্যা ভগ্নাংশ পাওয়া যাবে। যা হবে জেলা সমূহের প্রতিনিধিত্বকারীর ভাগফল। ভাগফলে প্রাপ্ত পূর্ণ সংখ্যা অনুযায়ী আসনসমূহ জেলায় বরাদ্দ করতে হবে। এর পরে কিছু আসন অবরাদ্দ থাকবে। অবরাদ্দকৃত আসনসমূহের বরাদ্দের জন্য প্রতিনিধিত্বকারীদের ভাগফলে প্রাপ্ত ভগ্নাংশসমূহকে বৃহত্তম থেকে ক্ষুদ্রতম মানে সাজিয়ে উচ্চতর মানের ক্রম অনুসারে অবরাদ্দকৃত শেষ আসনটি পর্যন্ত বরাদ্দ করতে হবে। জেলা ভিত্তিক আসন বণ্টনের পর জেলার গড় জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলার অন্তর্গত আসনসমূহের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া উপজেলা অবিভাজিত রাখা এবং ইউনিয়ন, পেৌরসভা, সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড একাধিক আসনের মধ্যে ভাগ করা যাবে না এবং প্রশাসনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ করতে হবে। তবে নির্বাচন সংশি্লষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভেৌগোলিক অখণ্ডতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ভেৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে প্রয়োজনে বিশেষ ক্ষেত্রে একাধিক জেলার সমন্বয়েও আসন হতে পারে। অতীতেও দুই-তিনটি জেলার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হয়েছিল।
শংকা কাটছে না মানুষের
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নির্দেশ
মানছে না ব্যবসায়ীরা
মো. রেজাউর রহিম
রমজানে অতিরিক্ত মুনাফাকারী, ভেজাল খাদ্য তৈরি বিপণন এবং ওজনে কারচুপিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার ১৯৭৪ সালের Èবিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেও রমজানের শুরুতেই বিভিন্ন ধরনের নিত্যপণ্যের দাম আবারও বাড়ল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে পণ্য বিপণনের সব পর্যায়ে পঁাচটি আইন মেনে চলার তাগিদ দিয়ে বলা হয়েছিল, রমজানে সব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় স্বাভাবিক রেখে তা ভোক্তা সাধারণের কাছে পেৌঁছে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সম্পর্কিত আইন আদেশ অমান্য করে কোনো কোনো ব্যবসায়ী ভোক্তা সাধারণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করছে। আদেশে অসাধু ব্যবসায়ী চঁাদাবাজদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের Èবিশেষ ক্ষমতা আইন' প্রয়োগে দেশের সব জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ প্রদানের পাশাপাশি প্রতি বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার মধ্যে মন্ত্রণালয়ে সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণ তবুও সম্ভব হয়ে উঠছে না। ফলে রমজান মাসে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ে মানুষের মাঝে এক ধরনের শংকা বিরাজ করছে। কারণ বিশ্ববাজারে পর পর দু'দফা দাম কমলেও চিনি, ডালে দেশের বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না। দেশে ব্যবসায়ীরা রমজান শুরু হওয়ার বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে, যা অব্যাহত রয়েছে। সরকারি ভাষ্যমতে, রমজান উপলক্ষে মজুদ সরবরাহ পরিস্থিতিও স্বাভাবিক। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাত পণ্যমূল্য বাড়াচ্ছে বলে ভোক্তাদের অভিযোগ। তাদের মতে, যথাযথ সরকারি মনিটরিং কঠোর পদক্ষেপ না থাকায় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। গত সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিনিয়ত বাড়ছে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, খেজুরসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা নিয়ে চলছে রীতিমতো ভেলকিবাজি। কোনোদিকে তোয়াক্কা না করেই ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম আদায় করছেন মানুষের কাছ থেকে। দাম বৃদ্ধির জন্য ক্ষুদ্র দোকানদাররা পাইকারদের, পাইকাররা আমদানিকারক ক্ষুদ্র দোকানদারদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চষ্টো করছেন। অবস্থায় নিত্যপণ্যের  ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের শংকা সৃষ্টি হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকার টিসিবি'কে কার্যকর করার পদক্ষেপসহ পঁেয়াজ, রসুন, কঁাচামরিচসহ বেশ কয়েকটি পণ্য রফতানি নিষদ্ধি করে। এতসব কিছুর পরেও বাজারে ক্রমাগত বাড়ছে পণ্যের দাম। অবস্থায় পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দঁাড়িয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টোটা।
মাছ, মাংস বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম আরেক দফা বেড়েছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। খুচরা বাজারে ভোজ্যতেলের সংকটও ভাবিয়ে তুলছে ক্রেতাদের। শুক্রবার রমজান উপলক্ষে প্রয়োজনীয় বাজার করতে এসে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, খুচরা বিক্রেতারা ইচ্ছামতো নিচ্ছেন মাছের দাম। গরুর মাংস বিক্রেতারাও সরকারের বঁেধে দেওয়া রেট মানছেন না। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট। সব ধরনের বোতলজাত তেল সরবরাহ বন্ধ আছে। অনেক খুচরা বিক্রেতা তেল সংকটের কথা বলে নির্ধারিত বাজারদর (এমআরপি) থেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন। ফলে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।
মাসের মধ্যভাগে রোজা পড়ার কারণে চাকরিজীবীদের পক্ষে এমনিতেই একসঙ্গে পুরো মাসের বাজার করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ওপরে পণ্যমূল্য বাড়ায় আতঙ্কিত তারা। তাদের আশঙ্কা, রোজা যত এগোবে, দামও ততোই বাড়বে। তখন নিত্যপণ্য তাদের নাগালের আরো বাইরে চলে যাবে। রাজধানীর পাইকারি বাজার কারওয়ানবাজার শ্যামবাজার, চকবাজার, কাপ্তানবাজার এবং খুচরা বাজার নিউমার্কেট, শুক্রাবাদ জিগাতলা ঘুরে দেখা গেছে, মাংসের দাম চড়া। রমজানের প্রথম বাজার হওয়ার কারণে গতকাল শুক্রবার প্রায় সব ধরনের মাংসের দাম বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে খুচরা বিক্রেতারা পাইকারি বাজারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন। আর পাইকারি বিক্রেতারা অজুহাত দিচ্ছেন আমদানি কম হওয়ার। দেশের বৃহত্ ব্রয়লার মুরগির বাজার কাপ্তানবাজারের বিক্রেতারা দাবি করেন, উত্তরবঙ্গ থেকে মুরগির ট্রাক কম প্রবেশ করেছে ঢাকায়। নরসিংদী, গাজীপুর, যশোর, বগুড়া, নওগঁা সাতক্ষীরা থেকেও মুরগির ট্রাক কম আসছে। ফলে তারা বেশি দামে মুরগির মাংস বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কাপ্তানবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আমদানিকৃত মুরগির তুলনায় চাহিদা বেশি। খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা থেকে ১৬৫ টাকায়। গরুর মাংসের দাম সরকার ২৭৫ টাকা বঁেধে দিলেও তা মানছেন না বিক্রেতারা। এখন কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৮৫ টাকা থেকে ২৯০ টাকা। মহিষের মাংস ১০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা। ৮শ' গ্রামের পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা প্রতিটি এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা দরে। এদিকে হঠাত্ করে বেড়ে গেছে সব ধরনের সবজির দামও। শুক্রবার প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা করে বেড়েছে। তবে সব চেয়ে বেড়েছে টমেটো, শসা এবং বেগুনের দাম। গত সপ্তাহের ৭০ টাকার টমেটো এখন কেজিপ্রতি প্রায় দ্বিগুন ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শসা কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই অবস্থা বেগুনের ক্ষেত্রেও। ৪০ টাকার বেগুন কেজিপ্রতি ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি ১০ টাকা করে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে পটল ৪০ টাকা, ঢঁেড়স ৩০ টাকা এবং মরিচ ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকায়। মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতার কাছ থেকে ইচ্ছা মতো দাম আদায় করছেন খুচরা বিক্রেতারা। বাজার দরের কোনো তোয়াক্কাই করছেন না তারা। নিউমার্কেট কঁাচাবাজারে থেকে ৬টায় এক কেজি ওজনের গলদা চিংড়ি বিক্রি করা হচ্ছিল ১৫শ' থেকে ১৬শ' টাকায়। অথচ সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে একধাপে ৫শ' টাকা কমিয়ে বিক্রেতা এর মূল্য চান ১১শ' টাকা। বাজারে প্রতিটি ৭শ' থেকে ৮শ' গ্রামের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। কেজিপ্রতি দেশি রুই মাছ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চিতল মাছ ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা এবং তেলাপিয়া মাছ ২০০ থেকে ২১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কেজি ওজনের দেশি কাতলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। দুই থেকে তিন কেজি ওজনের দেশি কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। বোতলজাত ভোজ্যতেলের সংকট: শবেবরাতের পর থেকেই বাজারে বিভিন্ন ধরনের ভোজ্যতেলের সংকট দেখা দিয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তারা তাদের স্থানীয় ডিলারের মাধ্যমে রমজানকে সামনে রেখে পর্যাপ্ত তেল পাচ্ছেন না। তেল সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে তেলের মূল্য নেওয়া হচ্ছে, গায়ের দামের চেয়ে বেশি। ৬৭০ টাকার লিটার বোতলজাত তেল বিক্রি করা হচ্ছে ৭০০ টাকায়। তবে পাম তেল বিক্রি লিটার প্রতি ১০৫ টাকা। বিষয়ে খুচরা তেল বিক্রেতারা বলেন, শবেবরাতের পর থেকে তীর এবং রুপচঁাদা বোতলজাত সয়াবিন তেল তারা পাচ্ছেন না। ডিলাররা সংকটের কথাসহ বিভিন্ন অজুহাতে তাদের তেল দিচ্ছেন না। বিষয়ে তীর কনজু্যমার পরিবেশক মো. হারুনার রশিদ বলেন, বিজিবি-পুলিশকে তেল দিতে গিয়ে আমাদের তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হবে। সব ধরনের রসুন, পঁেয়াজ, শুকনা মরিচ এবং আদা অবশ্য গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পঁেয়াজ ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা এবং ভারতীয় পঁেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা। দেশি রসুন ৫০ টাকা এবং চায়নিজ রসুন ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শুকনা মরিচ ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা এবং চিনি আগের মতোই ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ডালের সর্ববৃহত্ পাইকারি বাজার চকবাজারের ডালপট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে, কেজিপ্রতি মশুর ডাল ১০৫ থেকে ১০৮ টাকা, মুগডাল ৮০ থেকে ১০৬ টাকা, খেসারি ৪৬ টাকা থেকে ৫১ টাকা, বুটের ডাল ৯৩ থেকে ৯৫ টাকা এবং ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭৩ থেকে ৮০ টাকা। খুচরা বাজারে এসে সেসব ডালের দাম নেওয়া হচ্ছে কেজিপ্রতি মশুর ডাল ১১৫ টাকা, মুগডাল ১২০ টাকা, খেসারি ৫৫ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা এবং বুটের ডাল ১০০ টাকা দরে।

টমেটোর কেজি ১৫০ টাকা!
নিজস্ব প্রতিবেদক
রমজান মাসের প্রথম দিনেই বাজারে উত্তাপ ছড়িয়েছে সবজির দাম। গতকাল শনিবার পাইকারি এবং খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা করে সবজির দাম বেড়েছে। তবে সব পণ্যকে ছাপিয়ে গেছে টমেটোর দাম। মাত্র একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় টমেটো বিক্রি হওয়ায় ক্রেতাদের নাভিঃশ্বাস উঠেছে। রাজধানীর পাইকারি খুচরা কঁাচাবাজার কারওয়ানবাজার, নিউমার্কেট, জিগাতলা এবং শুক্রাবাদ ঘুরে দেখা গেছে, ইফতারির অনুষঙ্গ কঁাচা সবজির দাম আকাশচুম্বি। টমেটো,  বেগুন, শসা লেবুর দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে। টমেটোর দাম শুক্রবারের তুলনায় কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকা প্রতি কেজিতে ঠেকেছে। আবার আগের দিন বৃহস্পতিবার মূল্য ছিল ৮৫ টাকা। একদিন পরেই ৩৫ টাকা বেড়ে শুক্রবার দঁাড়ায় ১২০ টাকা। অর্থাত্, তিন দিনের ব্যবধানে টমেটোর দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা।
এছাড়া বেগুন প্রকারভেদে ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা, শসা ৪৫ টাকা, লেবুর হালি ২৪ টাকা, পটল ৩০ টাকা, পঁেপে ৩০ টাকা, ঢঁেড়স ৩০ টাকা, করলা ৪০ টাকা পুইঁশাক ২৫ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শুক্রবারের ৩৫ টাকার লাউয়ের মূল্য এখন ৫০ টাকা। প্রতিটি ৫০০ গ্রাম ওজনের বাধা কপি খুচরা বিক্রেতারা হঁাকাচ্ছেন ৩০ টাকা। মরিচের দাম অবশ্য শুক্রবারের মতোই বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি।
বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ সত্য: আনু মুহাম্মদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের আনা দুর্নীতির অভিযোগ সত্য বলে মনে করেন প্রফেসর আনু মুহাম্মদ। গতকাল শনিবার রাজধানীর মুক্তিভবন মিলনায়তনে Èপদ্মা ঋণচুক্তি, বিশ্বব্যাংকের রোডম্যাপ জাতীয় সক্ষমতা' শীর্ষক আলোচনাসভায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সরকার এখনও এই অভিযোগ নাকচ করবার মতো  কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি। দুর্নীতি দমন কমিশনের ভূমিকা দেখে মনে হয় তারা দুর্নীতির অভিযোগ ধামাচাপা দিতে বা সরকারের ইচ্ছামতো কাজ করতে তত্পর।
আনু মুহাম্মদ বিশ্বব্যাংকের সমালোচনা করে বলেন, দুর্নীতিবাজ নিপীড়ক শাসকরাই বিশ্বব্যাংক আইএমএফ এডিবির প্রধান ভরসা। এই সংস্থাগুলো না থাকলে বহুজাতিক পুঁজি, লোভী কনসালট্যান্ট, আমলা আর দেশি ভাগীদারদের সাম্রাজ্য টিকতো না। আলোচনা সভায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খানের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক এম এম আকাশ, . বিনায়ক সেন, শ্রমিক  নেতা শহীদুল্লাহ চেৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফিকুজ্জামান, আইইউবি প্রভাষক  মো. আরাফাত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক . মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিন।
এবারও বড় বাপের পোলায় খায়
ঢাকা এখন ইফতারের নগরী
নিজস্ব প্রতিবেদক
বদলে গেছে বেশিরভাগ মুসলমানের ১১ মাসের গতানুগতিক রুটিন। ব্যক্তিগত জীবনাচরণের মতো মহানগরের দৃশ্যপটেও ঘটেছে পরিবর্তন। সকাল  থেকে হোটেল-রেসে্তারাঁর সামনের দিকে বন্ধ। কোনো কোনোটিতে পর্দা দিয়ে  ঘেরা। নেই প্রকাশ্যে ধূমপান, ফুটপাতের  দোকানে খোলা খাবারের পসরা।  মুয়াজ্জিনের আজানের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় একটা পরিবেশ বিরাজ করছে যেনো পুরো রাজধানীজুড়ে। দুপুর থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। নগরের এসব দৃশ্যপটই জানিয়ে দিচ্ছে শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস। এসেছে রমজান।
গতকাল দুপুরের পর থেকেই ইফতারকে ঘিরে ব্যস্ত রাজধানী। মাথায় টুপি লাগিয়ে ইফতার বিক্রেতারা পসরা সাজিয়ে আছেন। বেলা যতই গড়াচ্ছে, বাড়ছে ক্রেতার সমাগম। কি ফুটপাত, কি পাঁচতারা রেস্টুরেন্ট সর্বত্রই  ক্রেতাদের আকর্ষণে চলছে বাহারি ইফতারি আইটেম তৈরির প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের ইফতারি। গতকাল শনিবার দুপুরে চকবাজারে গিয়ে দেখা যায় বেলা আড়াইটা থেকেই জমে উঠেছে চকবাজারের ইফতারি। পুরান ঢাকার বাহারি ইফতারের গন্ধ যেনো  ক্রেতাদের আরও বেশি করে ইফতারের আইটেম কিনতে বাধ্য করছে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে এসেছেন ভোজন রসিকরা।
উত্তরা  থেকে এসেছেন ফয়েজ আহমেদ  ফেৌজিয়া আক্তার দম্পতি। দম্পত্তি জানালেন টানা কয়েকবছর ধরে প্রথম  রোজাসহ কয়েকটি রোজাতে চকবাজার  থেকে ইফতার কিনে নিয়ে যান। চকের বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায় খাবারটির লোভেই নতুন ঢাকার খাদ্যরসিকরাও ছুটে আসেন পুরান ঢাকার ইফতারি বাজারে। রামপুরা থেকে আসা গার্মেন্ট ব্যবসায়ী মইনুল হোসেন খাবারটি কেনার পর বলেন, শখের দাম আশি তোলা! দাম যাই হোক, বিষয় না। চকের ইফতারের মধ্যে সেলিম বাবুর্চির রয়েছে দীর্ঘদিনের সুনাম। দূর-দূরান্ত  থেকে সেলিম বাবুর্চির ইফতার নিতে ছুটে আসেন ক্রেতারা। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। সেলিম বাবুর্চি জানান, এবার নতুন আইটেম হিসেবে তিনি এনেছেন বড় সাইজের আস্ত মুরগির  রোস্ট। এর প্রতিটির দাম রাখা হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। ছাড়া তার আরেকটি নতুন মুঘল আইটেম আনাম খাসিদ। এর দাম রাখা হবে সাড়ে চার হাজার টাকা। অন্যান্য আইটেমের মধ্যে তিনি বিক্রি করছেন কোয়েল পাখির  রোস্ট, প্রতি পিস ৮০-১০০ টাকা এবং চিংড়ি প্রতি পিস ২০০-২৫০ টাকা।
এবার চকের ইফতারি বাজারে ডিসেন্ট এনেছে বেশ কিছু সুস্বাদু খাবার। এর মধ্যে উলে্লখযোগ্য হচ্ছে শাহি হালিম, যার প্রতিটি বড় হঁাড়ি ৩০০ ছোট হঁাড়ি ১২০ টাকা। ডিসেন্ট আরও বিক্রি করছে টারকি বিফ ২০০, কাশ্মীরি শরবত লিটার ২০০, নিমকপাড়া প্রতি পিস ২০, মুঠিকাবাব প্রতিটি ২০ অ্যারাবিয়ান কাবাব প্রতিটি ৮০ টাকা। চকে বিক্রি হচ্ছে আবদুল জব্বারের বিখ্যাত শাহি দইবড়া। ২০টি দইবড়ার বাটি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। চকবাজারের মজাদার অন্যান্য আইটেমের মধ্যে আরও রয়েছে ডিম চপ পিস ১৫ টাকা, কচুরি এক কুড়ি ৩৫, ফুলুরি পিস , সমুচা পিস -১০, পনির সমুচা পিস , পঁিয়াজু পিস -, আলুর চপ পিস , বেগুনি পিস -, চানা বুট  কেজি ১৩০ডাবলি কেজি ৫০, মুরগির  রোস্ট পিস ১৫০-১৮০, খাসির পায়ের  রোস্ট পিস ৩০০-৩৫০, সাসলিক পিস ৩০। ছাড়া ইফতারের অন্যতম আইটেম খেজুরের প্রতি প্যাকেট বছর ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চকবাজারের পাশাপাশি ধানমণ্ডির স্টার কাবাব, লাজিজ, এইচএফসি, ফখরুদ্দীন, পিন্টু মিয়ার শাহি ইফতারি; কলাবাগানের মামা হালিম, হটহাট, অলিম্পিয়া প্যালেস, আম্বালা, খাজানাসহ অন্য রেসে্তারাঁগুলোতে জমজমাট  বেচাকেনা লক্ষ্য করা যায়। ছাড়া  বেইলি রোড, গুলশান, মিরপুরেও ইফতারির বাজার বেশ জমেছে। উচ্চবিত্তদের অনেকেই অবশ্য পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁও, রূপসী বাংলা (শেরাটন), ওয়েস্টিন র্যাডিসনের দিকেই বেশি ঝুঁকেছে। অন্যান্য স্থানের মতো রোজায় রাজধানী ঢাকার মসজিদগুলোর দৃশ্যপটও বদলে  গেছে। দুপুরের পরই রাজধানীর মসজিদের বারান্দায় বারান্দায় ইফতারের প্রস্তুতি চলে। মসজিদের মুয়াজ্জিন  সেবকদের (খাদেম) ইফতার নিয়ে ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো।  রোজায় মসজিদে ইফতারের দৃশ্যপট সম্পর্কে প্রয়াত কবি শামসুর রাহমান লিখেছেন, Èইফতারের সময় চোখ পড়ে থাকতো সিতারা মসজিদের বারান্দায়। শুধু মনে হতো ওই মুড়ি, ফুল্লুরি,  দোভাজা, ছোলা আর বেগুনি মেশানো খাবারটা যেন রূপকথার দেশ থেকে এসেছে...' কবির বর্ণনার সেই দৃশ্য শুধু পুরনো ঢাকার সিতারা মসজিদেরই নয়, ঢাকার প্রতিটি মসজিদের বর্ণনায় ঘুরেফিরে একই দৃশ্য। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে গ্রাহক হয়রানি বেশি
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সেবা নিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। সাধারণ গ্রাহকের মোট অভিযোগের ২৬ শতাংশই চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিরুদ্ধে। আর একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কৃষিব্যাংকে গ্রাহকরা বেশি হয়রানি হচ্ছেন।  বাংলাদেশ ব্যাংকে আসা অভিযোগের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এক বছরে ৩০টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগের হার ৪৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৬ দশমিক ১৩ শতাংশ, বিশেষায়িত ৪টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ তুলনামূলকভাবে কম, মাত্র দশমিক ২২ শতাংশ। এছাড়া ব্যাংক বহির্ভূত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিমাণ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্রের (সিআইপিসি) বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার গভর্নর . আতিউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদন অনুসারে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ গ্রাহকদের। বিগত এক বছরে মোট ১৪৬টি অভিযোগ এসেছে। যদিও প্রকৃত চিত্র আরো বেশি হবে। দ্বিতীয় তৃতীয় অবস্থানেও রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দু'টি ব্যাংক সোনালী ব্যাংক জনতা। এই দু'টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ যথাক্রমে ১২৪টি ৫২টি। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ গৃহীত হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৫১টি। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৪৯টি, বর্্যাক ব্যাংকের ৩৭টি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৩০টি প্রাইম ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৩০টি। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ২৭টি অভিযোগ গৃহীত হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, অভিযোগ নিষ্পত্তির দিক থেকে সবেচেয়ে পিছিয়ে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। যার মাত্র ৩৫ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত এক বছরে সিআইপিসিতে টেলিফোনে ১১৭০টি এবং লিখিতভাবে ৯৮১টি অভিযোগ এসেছে। মোট অভিযোগের পরিমাণ ২১৫১। টেলিফোনে আসা অভিযোগের অধিকাংশই সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত। মোট অভিযোগের প্রায় ৫৩ শতাংশ এক শ্রেণীর। এরপর ঋণ অগ্রিম সংক্রান্ত অভিযোগ ৩৩ শতাংশ। রেমিট্যান্স সংক্রান্ত দশমিক ৩১ শতাংশ। অন্যদিকে, লিখিতভাবে প্রাপ্ত অভিযোগগুলোর প্রায় ৫১ শতাংশ স্বীকৃতি বিলের মূল্য পরিশোধ না করা সংক্রান্ত। যার ২৬ শতাংশ স্থানীয় বিল   ২৪ শতাংশ বৈদেশিক বিল নিয়ে। এর পরেই রয়েছে সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত অভিযোগ ১৭ শতাংশ। বিগত বছরে সিআইপিসিতে প্রাপ্ত মোট অভিযোগের ৩৫ শতাংশ পাওয়া গেছে ঢাকা জেলার গ্রাহকদের কাছ থেকে। অভিযোগ করেছে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও।  এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের সিআইপিসিতে সর্বাধিক ২৭৬টি অভিযোগ এসেছে, বগুড়া অফিসে ১৪৬টি এবং সিলেট অফিসে ১০০টি।
ঘরের সাজে লাইটের ব্যবহার
ব্যস্ত শহরের এই কোলাহলময় জীবনে সামান্য শান্তির ছোঁয়া পাওয়ার আশায় মানুষ কত কিছুই না করে, যার মধ্যে গৃহ অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা অন্যতম। বর্তমান সময়ে অন্দর মহলের সাজসজ্জা খুুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। মানুষ তার বসবাসের জায়গা অথবা কর্মক্ষেত্রে অন্যরকম নতুনত্ব আনার জন্য এই গৃহশৈলী ব্যবস্থাকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। যে ঘরে আপনার নিত্য বসবাস সেটি আকর্ষণীয় হওয়া চাই, আর এ জন্যই লাইটিং ব্যবস্থার জুড়ি নেই। শুধু ব্যবহার করার জন্যই নয় বরং এটি হয়ে উঠতে পারে আপনার ঘর সাজানোর অন্যতম অনুষঙ্গ। যে কারণে ঘরে লাইটের ব্যবহার এতটা নান্দনিক। বর্তমান সময়ে খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ নয় বরং খুবই সাদামাটা ডিজাইনের লাইট ব্যবহার হচ্ছে।
প্রকৃতির আলোর উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের ঘরকে নান্দনিক ও সুন্দর করে তুলতে পারি। ‘শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি’র ইন্টেরিয়র বিভাগের শিক্ষক রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘আমরা প্রকৃতির উৎস থেকে পাওয়া আলোর যথাযথ ব্যবহার করে বিদ্যুতের চাপ কমাতে পারি, আর যার দায়িত্ব নিতে হবে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের।’
তিনি বলেন, আমরা কোনো ঘরের ডিজাইন করার সময় প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার করার কথা মাথায় রেখে গ্লাসের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা করতে পারি, যা ঘরের সৌন্দর্যে আলাদা মাত্রা দেবে, দেখতেও সুন্দর লাগবে। বর্তমান সময়ে খুব বেশি ব্যবহার হচ্ছে কৃত্রিম লাইট, এই কৃত্রিম লাইট ব্যবহার করে আপনার ঘরে ভিন্নমাত্রা যোগ করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে ঘর তৈরি করার সময় লাইটের সুইচ ও তার কোথায় কোথায় হবে তা আগে থেকেই ভেবে নিন, যাতে লাইটের সুইচগুলো চোখে না পড়ে। কারণ তা সরাসরি থাকলে ঘরের সৌন্দর্য অনেকাংশে নষ্ট হয়ে যায়। তাই অন্দরসাজে লাইটকে এমনভাবে ব্যবহার করুন, যাতে লাইট ও এর আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোর উৎস চোখে না পড়ে, যা আপনার চোখের জন্য আরামদায়ক।
খুব বেশি দামি বা সংখ্যায় অনেক বেশি নয়, বরং বৈচিত্র্যপূর্ণ ডিজাইন আর ব্যবহারের উপযোগিতার কথা ভেবেই বিভিন্ন ধরনের লাইট আমদানি ও বিক্রি করছি, বললেন উত্তরার লাইট সিটির কর্ণধার। মানুষ অতীত ধারণা থেকে বের হয়ে এসে বর্তমানে তার ঘরকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানোর কথা চিন্তা করছে, যার ফলে এ সময় ঘর সাজাতে ও ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরনের লাইটের ব্যবহার অত্যাবশ্যকীয়।
লাইট কিনতে এসে শবনম মুস্তারি পপি বলেন, ‘ঘরকে পছন্দসই নানা ধরনের লাইট দিয়ে একটু ভিন্নমাত্রায় ফুটিয়ে তুলতে নিজেই ঘুরে ঘুরে লাইট সংগ্রহ করছি।’
একটি ঘরের বিভিন্ন কক্ষে বিভিন্ন ধরনের লাইটের ব্যবহার করা যেতে পারে। ড্রইংরুম সাজাতেও পর্যাপ্ত আলো পেতে প্রেনেন্ড লাইট, সেন্ডেলিয়ার লাইট ব্যবহার করুন। এগুলো ক্রিস্টাল আথবা মেটাল দুই ধরনের হতে পারে। বেডরুম সাজানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের লাইটের ব্যবহার চোখে পড়ে। বেডরুমে একটু কম আলো ও রঙিন লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে। বেডরুমের কর্নারে একটু কম আলোর বিভিন্ন রঙের লাইটের ব্যবহারের ফলে রুমের মধ্যে আলো-ছায়ার খেলা খুব উজ্জ্বলভাবে চোখে পড়ে, যা ক্লান্ত দেহকে সামান্য হলেও আরাম দেবে। বেডরুমে বিভিন্ন ধরনের ওয়াল বেকেট, বেডসাইট ল্যাম্প, টিউব শেড, ফেন্সি টিউব শেড ব্যবহার করা যেতে পারে। খাবার ঘরের টেবিলের নতুনত্ব আনতে উজ্জ্বল লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এ ক্ষেত্রে রাতের জন্য øি হলুদ রঙের লাইট ব্যবহার করুন। বাচ্চাদের রুমে লাইট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নজর রাখুন তা যেন হালকা হয়। বাচ্চাদের রুমে স্টাডি লাইট বা টেবিল ল্যাম্প বেশি ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঢাকার উত্তরার লাইটিং সিটি, লাইটিং সেন্টার ও গুলশানের লাইটিং ওয়ার্ল্ড এ ধরনের লাইট বিক্রি করে থাকে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার নবাবপুর, ধানমণ্ডি ও নিউমার্কেটের বিভিন্ন দোকানেও এ ধরনের লাইট পওয়া যায়। লাইটিং সিটির কর্মচারী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন ডিজাইনের লাইটের ওপর ভিত্তি করে এর দাম নির্ধারণ করা হয়। যেমন- বিভিন্ন ধরনের ওয়াল লাইট, ওয়াল বেকেট, টিউব শেড, স্টাডি লাইট, টেবিল ল্যাম্প ইত্যাদির দাম ৩৫০ থেকে শুরু করে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়। আবার প্রেনেন্ড লাইট, সেন্ডেলিয়ার লাইটগুলো ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। তো আর কী? লাইটের ব্যবহারের শৈল্পিকতায় ফুটিয়ে তুলুন আপন ঘরকে, যা আপনাকে জোগাবে মানসিক শান্তি আর ঘরকে করে তুলবে অসাধারণ।