Year-19 # Issue-24 # 29 July 2012

নুহাস পল্লীতে চিরনিদ্রায় হুমায়ূন
নিজস্ব প্রতিবেদক
যে স্থানটি ছিল তার নিজের Èজীবনের চেয়েও' প্রিয় সেই নুহাশ পল্লীতেই সমাহিত হলেন নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ। দূর-দূরান্ত থেকে হুমায়ূনের এই বাগানবাড়িতে এসে অশ্রুজলে লেখককে শেষ বিদায় জানালেন ভক্ত-পাঠক, বন্ধু-স্বজন স্থানীয় বাসিন্দাসহ হাজারো মানুষ। আকাশও যেন বৃষ্টি ঝরালো তারই শোকে। যাদের কঁাধে চেপে খাটিয়ায় শোয়া হুমায়ূন কবরে নামেন, তাদের একেবারে সামনে দেখা গেল লেখকের বড় ছেলে নুহাশকে। তার পরনের নীল পাঞ্জাবিও বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিল একেবারে। হুমায়ূনের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদের মেয়ে শীলা নোভা, দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং তাদের দুই সন্তান নিষাদ নিনিত, লেখকের ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল আহসান হাবীব এবং তাদের দুই বোনও সময় উপস্থিত ছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের হিমঘর থেকে হুমায়ূনের মরদেহ নিয়ে গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা হয় একটি এম্বুলেন্স। ওই এম্বুলেন্সের সঙ্গেই বেলা ১২টা মিনিটে নুহাশ পল্লীতে পেৌঁছান শাওন তার দুই সন্তান। এর কিছুক্ষণ আগেই নুহাশ, শীলা নোভাকে নিয়ে পেৌঁছান জাফর ইকবাল আহসান হাবীব। নুহাশ পল্লীর ভাস্কর আসাদুজ্জামান খঁান জানান, সোমবার গভীর রাতে ঢাকায় পরিবারের সদস্যরা লেখকের দাফনের স্থান চূড়ান্ত করার পর সকালেই তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। সকালেই সেখানে কবর খঁোড়া শুরু হয়। হুমায়ুন আহমেদকে শেষ বিদায় জানাতে ভক্তরা সকাল থেকেই নুহাশ পল্লীতে ভিড় করতে শুরু করেন। মাঝে মধ্যে হালকা বৃষ্টি হলেও তারা অপেক্ষা করতে থাকেন প্রিয় লেখকের জন্য। এক পর্যায়ে পিরুজালি প্রাম থেকে নুহাশ পল্লী পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক লোকারণ্যে পরিণত হয়। বেলা দেড়টার দিকে স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম মজিবুর রহমানের পরিচালনায় হুমায়ূনের জানাজায় অংশ নেন হাজারো মানুষ। এর পরপরই তাকে শোয়ানো হয় লিচু তলায় খঁোড়া কবরে, যে স্থানটিতে শেষ শয্যায় শায়িত হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন তিনি অনেক আগেই। গত ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান ক্যান্সারে আক্রান্ত হুমায়ূন আহমেদ। সেখানেই তার প্রথম জানাজা হয়। সোমবার সকালে তার মরদেহ দেশে পেৌঁছানোর পর দুপুরে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দাফনের বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও লেখককে কোথায় সমাহিত করা হবে তা নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত মতবিরোধ চলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। হুমায়ূনের বর্তমান স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন নুহাশ পল্লীতেই স্বামীর কবর চাইলেও সাবেক স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদের সন্তানরা তাদের বাবাকে ঢাকায় দাফনের পক্ষে মত দেন। এই নিয়ে দিনভর টানাপড়েন চলে। পরিবারের মধ্যে মতদ্বন্দ্বের অবসানে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা কয়েক দফা দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর রাত আড়াইটার দিকে সংসদ ভবন এলাকায় জাহাঙ্গীর কবির নানকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে হুমায়ূনের ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, নুহাশ পল্লীতেই দাফনের বিষয়ে চূড়ান্ত সদ্ধিান্ত হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে শাওন
নুহাশপল্লীতেই উনি শান্তিতে থাকবেন
নিউজ ডেস্ক
 মৃত্যুর আগে বাংলা সাহিত্যের ‘রাজপুত্র’ হুমায়ূন আহমেদ তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বলে গেছেন, “আমার যদি কিছু হয়, আমাকে নুহাশপল্লীতে শুইয়ে রেখো। তবে আমি জানি, আমার কিছু হবে না। ওরা আমার মৃতদেহ নিয়ে টানাটানি করবে। কেউ বাংলা একাডেমীতে নিয়ে যেতে চাইবে, কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বা অন্য কোথাও। তবে আমাকে নুহাশপল্লীতেই রেখো। আমাকে নিয়ে ওদের টানাটানি করতে দিও না।” সোমবার রাতে ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে হুমায়ূনের উদ্ধৃতি দিয়ে এসব কথা জানান মেহের আফরোজ শাওন। অপারেশনের আগের রাতে এসব কথা তাকে বলে গেছেন বলে জানান শাওন। লেখকের দুই মেয়ে নোভা, শিলা ও ছেলে নুহাশের দাবি ছিল তাদের বাবার দাফন ঢাকায় করা হোক। এ প্রসঙ্গে শাওন বলেন, “তারা এতোদিন কোথায় ছিল? তারা তো কোনো দিন বাবার কথা শোনেনি। তারা কেউ নিউইয়র্কে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে বাবাকে বিদায় জানাতে আসেনি। তাহলে এখন কথা বলছে কেন?” “তার (হুমায়ূন) শেষ ইচ্ছা পূরণ না করলে তাকে অসম্মান জানানো হবে। তা না হলে তার আত্মা শান্তি পাবে না।” “অচেনা জায়গায় উনি ভয় পান। আমার সঙ্গে গত ১০ বছর উনি ছিলেন, এ কারণেই আমি এটা জানি। নুহাশ পল্লী উনার অতি পরিচিত ও আপন জায়গা। উনি সেখানে ভয় পাবেন না।” নুহাশ পল্লীর পরিচালনা প্রসঙ্গে শাওন ইন্ডিপেনডেন্টকে বলেন, “নুহাশপল্লী চলবে ট্রাস্টি বোর্ডে মাধ্যমে। এটা আমার কথা নয়। হুমায়ূন আহমেদ আমাকে এটা বলে গেছেন।” নুহাশ পল্লীর উত্তরাধিকার সম্পর্কে মেহের আফরোজ শাওন বলেন, “হুমায়ূন আমাকে বলে গেছেন, আমি তো আমার বাবার কাছ থেকে পাইনি। তাই বলে কি আমি হুমায়ূন আহমেদ হইনি? আমার ছেলেদের মধ্যে যদি ভালো কিছু থেকে থাকে তারাও সেভাবে করবে।” শাওন বলেন, “তার ছেলেমেয়েরা সম্পত্তি বিক্রি করুক, তা উনি চাননি।” হুমায়ূনের ছোট ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব দেশে মৃতদেহ নিয়ে আসার আগেই জানিয়েছিলেন, তার ভাইকে নুহাশ পল্লীতেই দাফন করা হবে। পরিবারের সবাই এটা চায়। হুমায়ূন আহমেদের শেষ শয্যা হচ্ছে তার প্রিয় নুহাশপল্লীতেই। সোমবার দফায় দফায় আলোচনার পর গভীর রাতে এ ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছান পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের মধ্যস্থতায় বৈঠক শেষে রাত দুইটার দিকে সাংবাদিকদের পরিবারের সিদ্ধান্তের কথা জানান হুমায়ূনের ছোটভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এর আগে জাহাঙ্গীর কবির নানকের শেরেবাংলা নগরের বাসায় এবং ধানমণ্ডিতে শাওনের বাসভবন দখিন হাওয়ায় কয়েকবার বৈঠক করেন হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্যরা। পরে গভীর রাতে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল জানান, নূহাশ পল্লীতেই দাফন করা হচ্ছে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যককে। এদিকে, মঙ্গলবার সকাল নয়টার পর বারডেম হাসপাতাল থেকে লেখকের মরদেহ নিয়ে নুহাশপল্লীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছে স্বজনেরা। বাদ জোহর চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন লেখক।
নুহাশপল্লীতে হুমায়ূনের দাফন
অন্তরালের ঘটনা 
আবু তাহের খোকন
একটি শিশুর মাতৃত্বের দাবি নিয়ে দুই নারী বিচারালয়ে গেছেন। দু’জনের প্রত্যেকেই নিজেকে শিশুটির মা বলে দাবি করছেন।আসল মাকে চিহ্নিত করতে হাকিম হুকুম দিলেন, `শিশুটিকে কেটে দুই ভাগ করে তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হোক।` সঙ্গে সঙ্গে পিছু হটলেন এক নারী। বললেন, `শিশুটিকে কাটার দরকার নেই। আমি তার মা নই।` বিচক্ষণ হাকিম বুঝতে পারলেন, এই নারীই শিশুটির আসল মা। কারণ সত্যিকারের মা যে কোনো মূল্যে তার সন্তানকে বাঁচাতে চায়। অধিকার তার কাছে বড় নয়। হাকিম শিশুটিকে তার আসল মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।
অনেক অনেক দিন আগের গল্প এটি। গল্পের মতো এতো সুন্দর সমাধান বাস্তবে হয় না। তবে গল্পটির মর্মবাণী শ্বাশত, যা মানুষকে আলোকিত করে।
এবার সত্যিকারের গল্প
২৩ জুলাই, সোমবার গোটা বাংলাদেশের মানুষ যখন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন, তাঁকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে যখন ঢল নেমেছে, তখন তাঁর দাফন নিয়ে পর্দার অন্তরালে চলছে ঘৃণ্য নাটক। সকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে হুমায়ূনের লাশের সঙ্গে ফেরা দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের জানান, নুহাশপল্লীতে দাফনই ছিল হুমায়ূনের শেষ ইচ্ছা। তবে হুমায়ূন আহমেদের প্রথম পক্ষের তিন সন্তান নোভা, শিলা ও নুহাশ, হুমায়ূনের মা আয়েশা ফয়েজসহ পরিবারের সদস্যরা চাচ্ছিলেন ঢাকায় দাফন করতে। তারা সম্ভাব্য স্থান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবির সমাধি চত্বর, মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও বনানী কবরস্থানের কথা বলেছিলেন। রাজধানীতে দাফন হলে মানুষ সহজে কবর জিয়ারত করতে, শ্রদ্ধা জানাতে পারবে।
কিন্তু নুহাশপল্লীর ব্যাপারে গোঁ ধরে থাকেন শাওন। বেলা যত বাড়তে থাকে এই দ্বন্দ্ব স্পষ্ট ও প্রকট হতে থাকে। দুপুর আড়াইটার দিকে ঈদগাহ ময়দানে হুমায়ূন আহমেদের জানাজা শেষে তার লাশ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়। লেখকের ছোট ভাই জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের জানান, সন্ধ্যায় পারিবারিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পারিবারিকভাবে বিষয়টির সমাধান চেয়েছিলেন দেশবাসীও। কিন্তু তা হয়নি। পর্দার অন্তরালে শাওনের তরফে শুরু হয় রাজনৈতিক যোগাযোগ। জানা যায়, শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফকে টেলিফোন করেন। তিনি বলেন, ``নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদকে দাফনের ব্যাপারে আপনারা সহযোগিতা করুন। হুমায়ূনের প্রথম পক্ষের সন্তানরা, তাঁর মা, ভাই, বোনসহ পুরো পরিবার চাচ্ছে ঢাকায় দাফন করতে। কিন্তু শাওন নুহাশপল্লীতে দাফন করতে চায়। আপনারা সহযোগিতা করুন।``
মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ``আমি যতটুকু জানি, পারিবারিকভাবে হুমায়ূন আহমেদকে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সেখানে আপনারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। এ ব্যাপারে আমাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না।`` এক পর্যায়ে মরিয়া মোহাম্মদ আলী বলেন, ``আমরা দুজন ব্যারিস্টারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। তারা বলেছেন, আদালতের সিদ্ধান্ত শাওনের পক্ষেই যাবে। আপনারা সহযোগিতা করুন।`` এ সময় মাহবুব হানিফ বলেন, ``এর মধ্যে আইন-আদালত টানছেন কেন। বিষয়টি পারিবারিকভাবেই সমাধান করুন।`` এরপর বিরক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফোন সংযোগ কেটে দেন। শাওনের মা আওয়ামীলীগের এমপি তহুরা আলীও বসে ছিলেন না। বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবের কাছে ফোন করে শাওনের ইচ্ছানুযায়ী নুহাশপল্লীতে হুমায়ূনকে দাফনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বলতে বলেন। সন্ধ্যায় গণভবনে কূটনীতিক, সরকারি কমকর্তা ও বিচারপতিদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার পার্টিতে প্রধানমন্ত্রী সবার সঙ্গে সাক্ষাতের এক পর্যায়ে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানককে বলেন, ``হুমায়ূন আহমেদের জানাজা হয়ে গেছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব দাফন করা প্রয়োজন।`` nuhash
তিনি এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীকে দুই পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত দাফনের তাগিদ দেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে হুমায়ূনের প্রথম পক্ষের তিন সন্তান নোভা, শিলা আর নুহাশ মিরপুরে চাচা আহসান হাবীবের বাসায় সাংবাদিকদের জানান, তারা বাবার কবর নুহাশপল্লীতে চান না। তারা এমন কোনো জায়গায় বাবাকে দাফনের কথা বলেন, যেখানে সবাই সহজে যেতে পারে। এরপর থেকেই শুরু দফায় দফায় বৈঠক। হুমায়ূন আহমেদের ভাই জাফর ইকবাল, তাঁর স্ত্রী ইয়াসমীন হক, নোভা, শিলা, নুহাশ, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ ও নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু সংসদ ভবন এলাকায় এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর বাসায় যান। সেখানে হুমায়ূন পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় দাফনের সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেন। রাত পৌনে এগারটায় সেখান থেকে জাফর ইকবাল, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ ও নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানককে নিয়ে ধানমন্ডির ‘দখিন হাওয়া’য় হুমায়ূনের দ্বিতীয় স্ত্রী শাওনের কাছে যান। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আলোচনার পর কোনো সমাধানে না আসতে পেরে তারা আবার এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর বাসায় ফিরে আসেন। তারা পরিবারের সদস্যদের জানান, শাওন তার সিদ্ধান্তে অটল। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে আদালতে যাবেন। রায় না হওয়া পর্যন্ত মরদেহ হিমঘরেই থাকবে। এ কথা শোনার পর নোভা, শীলা ও নুহাশ চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন। তারা ঢাকায় দাফনের কথাই বলতে থাকেন। এসময় জাফর ইকবাল, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু ও এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক তাদের বোঝান। তারা বলেন, লাশটা দাফন হওয়া প্রয়োজন। অবশেষে হুমায়ূনের প্রথম পক্ষের সন্তানেরা তাদের আবেগ চেপে ধরে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ``বাবা হিমঘরে পড়ে থাকবেন, এটা হয় না।`` তারা নুহাশপল্লীতেই বাবার দাফনে সম্মত হন (এসব তথ্য নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিরা নিশ্চিত করেছেন)। অবশেষে ২৪ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে অঝোর ধারায় বৃষ্টির সময় নুহাশপল্লীতে দাফন করা হয় বৃষ্টিপাগল হুমায়ূন আহমেদকে। ১৯ জুলাই নিউইয়র্কে মৃত্যুবরণ করার পাঁচ দিন পর মাটির ঘরে শেষ আশ্রয় হলো তাঁর। এর আগে শাওন অশ্রুসিক্ত নয়নে সবাইকে বলেন, ``হুমায়ূন বলে গেছেন, তাঁকে নুহাশ পল্লীতেই দাফন করার কথা (টিভি চ্যানেলগুলো এই ফুটেজ বারবার প্রচার করেছে)।`` আর এদিকে এখন জানা যাচ্ছে, নিউইয়র্কে শাওন হুমায়ূনের দাফন প্রসঙ্গে ভিন্ন কথা বলে এসেছেন। শাওনের সেই বক্তব্য অনুযায়ী হুমায়ূন তার দাফন বিষয়ে কিছুই বলে যাননি। এনিয়ে আমেরিকায় বাঙালি কমিউনিটিতে এখন তোলপাড় চলছে। শাওনের দুই ধরনের বক্তব্যে বিস্মিত সবাই। হুমায়ূন আহমেদের সত্যিকারের আপনজনেরা তাকে ঢাকায় দাফন করার ন্যায্য দাবি থেকে সরে দাঁড়ালেন। তারা প্রমাণ করলেন, হিমঘরে লাশ রেখে দাফনের স্থান ঠিক করার জন্য আইন-আদালতে যাওয়াকে ‘ভালবাসা’ বলে না। গল্পের মা যেমন নিজের সন্তানকে বাঁচাতে তার মাতৃত্বের অধিকার ছেড়ে দিয়েছিলেন, হুমায়ূনের মা, তিন সন্তান ও ভাইবোনেরা ঢাকায় তার দাফনের দাবি ছেড়ে সত্যিকারের আপনজনের পরিচয় দিলেন। জেদ আর কূটকৌশল করে শাওন জিতে গেলেন। তবে প্রকৃত বিচারে কে জিতল-- বিশ্বজুড়ে হুমায়ূনের কোটি কোটি ভক্ত একদিন তা অনুধাবন করবেন নিশ্চয়ই।
‘দেয়াল’: আদালতের নির্দেশনা ও লেখকের প্রতিশ্রুতি উপেক্ষিত 
মাহমুদ মেনন
প্রসঙ্গ হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’ উপন্যাস। এই উপন্যাসের প্রকাশনার ওপর আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করার ঘটনা ঘটেছে। হুমায়ূন আহমেদ নিজেও উপন্যাসটির কিছু ত্রুটি বিচ্যুতির কথা স্বীকার করে তা সংশোধনের পরেই প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তার মৃত্যুর পর সেই প্রতিশ্রুতি হয়েছে উপেক্ষিত। রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক তার শুক্রবারের সাময়িকীতে `দেয়াল`-এর আরও একটি অধ্যায় প্রকাশ করেছে। অথচ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে `দেয়াল` প্রকাশ না করার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। গত ১৫ মে মঙ্গলবার ওই নির্দেশনা দেন আদালত। এর আগে দেয়ালের দুটি অধ্যায় প্রকাশ করে বিতর্কের সূত্রপাত করে ওই দৈনিক। বঙ্গবন্ধু হত্যা সম্পর্কিত ভুল তথ্য সংশোধন না করা পর্যন্ত জননন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার ‘দেয়াল’ উপন্যাস প্রকাশ করবেন না,  নির্দেশনায় এমনটিই `প্রত্যাশা` করেছিলেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই প্রত্যাশ‍াকে সম্মান দেখিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ নিজেও।
‘দেয়াল’-এ বঙ্গবন্ধু হত্যা সম্পর্কে কিছু ভুল তথ্য এবং ভুলভাবে ঘটনাটি উপস্থাপন করার অভিযোগ উঠলে বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছিলেন স্বয়ং অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার লেখা এই অসমাপ্ত উপন্যাসটিই এখন পাঠকের বিপুল আগ্রহের কারণ হবে এবং তা বই আকারে ছাপা হয়ে বের হলে  হটকেকের মতো বিক্রি হবে ---স্রেফ এমন মুনাফামুখি বিবেচনা থেকেই দৈনিকটি আদালতকে উপেক্ষা করে আরও একটি অধ্যায় প্রকাশ করলো। সেইসঙ্গে তারা চাইছে বিতর্কের কেন্দ্রে থেকে ফায়দা লুটতে। এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলানিউজকে বলেন, ``দৈনিক সম্পূর্ণ অনুচিত একটি কাজ করেছে। আদালতের নির্দেশনা থাকার কারণে ‘দেয়াল’ এর কোনো ধরনের প্রকাশনায় যাওয়া উচিত নয়।``
``হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর `দেয়াল` কিভাবে প্রকশিত হতে পারে বা তার ভবিষ্যত কি হবে``--এ প্রশ্ন করা হলে  অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ``বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।`` দৈনিকটিতে প্রকাশিত `দেয়াল`-র নতুন  অংশ পড়ে এ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবেন বলেও বাংলানি‌উজকে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। উল্লেখ্য, দেয়ালের প্রথম দুটি অধ্যায় প্রকাশিত হওয়ার পর তা নিয়ে দেশজুড়ে ও দেশের বাইরে বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রকাশিত ওই দুটি অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ও প্রসঙ্গ ভুলভাবে আসার কারণেই মূলত সেই সমালোচনা। এ বিষয়টি গুরুত্বসহ গত ১৫ মে তা হাইকোর্টের নজরে আনেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এতে স্বত:প্রণোদিত হয়ে ওই দিনই প্রথমে বঙ্গবন্ধুর হত্যা সম্পর্কিত ভুল তথ্য সংশোধন না করা পর্যন্ত ‘দেয়াল’ উপন্যাস প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ভুল সংশোধনের  নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের ডিভিশন বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই আদেশ দেন। দুপুরের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত আদেশটি সন্ধ্যায় সামান্য পরিবর্তন (রিভাইজ) করেন আদালত।  পরিবর্তিত আদেশে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, আদালত প্রত্যাশা করছে হুমায়ূন আহমেদ তার উপন্যাসে বর্ণিত তথ্যগত অসঙ্গতি ও বিভ্রান্তিগুলো দূর করে তাতে ইতিহাসের সঠিক ঘটনা চিত্রায়ন করবেন। ওই দিন আদালত বলেছিলেন, ``হুমায়ূন আহমেদ একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। তিনি বর্তমানে দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। তার ওপরে আদেশ দিয়ে তাকে আমরা বিব্রত করতে চাই না। আবার নতুন প্রজন্ম ভুল ইতিহাস জানুক সেটাও চাই না। কারণ মীর মশাররফের ``বিষাদসিন্ধু``তে কারবালার ইতিহাস যেভাবে অতিরঞ্জিত করে বর্ণনা করা হয়েছে, মানুষ সে ইতিহাস সেভাবেই জানে।``

এ কারণে আদালত শিক্ষা, তথ্য ও সংস্কৃতি সচিবকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ও সাক্ষ্য-বিবরণ হুমায়ূন আহমেদের কাছে সরবরাহ করতে নির্দেশ দেন। যাতে তিনি ভুল সংশোধনের সুযোগ পান। বিষয়টি হয়ে ওঠে সে সময়ের প্রধান আলোচ্য বিষয়। আদালতের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পেপারবুক ‍হুমায়ূন আহমেদকে পাঠানো হয়। বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ২৯ মে বাংলানিউজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মাহবুবে ‍আলম বাংলানিউজকে বলেন, “হুমায়ূন আহমেদের ওপর আমাদের আস্থা আছে। তার কাছে একটাই প্রত্যাশা, তিনি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বিয়োগান্তক ঘটনাটিকে এমনভাবে তুলে ধরবেন যাতে জাতির চেতনা জাগ্রত হয়।” মাহবুবে আলম বলেছিলেন, ``হুমায়ূন আহমেদের পাঠক লাখ লাখ মানুষ। তার মধ্যে যুবক-তরুণরাই বেশি। তাদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টিও করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। এমন একজন লেখকের লেখা, যা হাজার লক্ষ পাঠক পড়বে তাতে কোনো ভুল তথ্য থাকলে তা গোটা সমাজকে প্রভাবিত করবে বলেই আমি মনে করি।” বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ নিজেও। বাংলানিউজকে একান্ত সাক্ষৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আদালতের নির্দেশ মেনে আমি আমার বইয়ে প্রযোজনীয় সংশোধনী আনবো। সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি।” বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় সংক্রান্ত পেপারবুক হাতে পেয়েছেন এবং তা পড়তে শুরু করেছেন বলে জানিয়ে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, “এটি একটি বিশাল নথি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সময় নিয়ে পড়ছি। শেষ করতে সময় লাগবে।” বইটি কবে নাগাদ সংশোধন করে প্রকাশ করা হতে পারে জানতে চাইলে জবাবে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, “আদালত যে নির্দেশ দিয়েছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালনের চেষ্টা করবো। আই অ্যাম আ ল’ অ্যাবাইডিং সিটিজেন (আমি একজন আইন মান্যকারী নাগরিক)।” এই ``ল’ অ্যাবাইডিং সিটিজেন``-এর অনেক আশা ছিলো ক্যান্সারের অপারেশনের পর সুস্থ হয়ে উঠে বইটি লেখার কাজ শেষ করবেন। কিন্তু তার সে ইচ্ছাপূরণ হয়নি। তিন দফা অপারেশনের পর একটি মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অস্ত্রোপচার -পরবর্তী ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়ে কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে যান হুমায়ূন আহমেদ। এ অবস্থায় ‘দেয়াল’র ভবিষ্যত কি হবে? সে প্রশ্ন অনেকের মধ্যে তৈরি হলেও কেউ তা সামনে আনেনি। শোকের ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছিলো। ঠিক তেমনই একটি সময়ে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পার না হতেই ওই দৈনিকটি প্রকাশ করলো দেয়ালের আরও একটি অধ্যায়। হুমায়ূন আহমেদের এই `দেয়াল-বিতর্ক` হয়তো আরও দীর্ঘ সময় ধরে চলবে। তবে  তা প্রকাশের আগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা বা হুমায়ূন আহমেদের ইচ্ছার দিকটিও বিবেচনায় রাখা পত্রিকাটির উচিত ছিলো বলেই মনে করছেন অনেকে।
ঈদের জন্য প্রস্তুত বেনারসী পল্লী
মনোয়ারুল ইসলাম বাহারী নাম আর দামের শাড়ির জন্য মিরপুরের বেনারসী পল্লীর নাম আসে সবার আগে। তাই এখান ঈদের প্রস্ততিও সবার আগে শুরু হয়। রমজান মাসের শুরুতেই মিরপুর বেনারসী পল্লী জমে উঠেছে ঈদের আয়োজনে। ভালো বিক্রির জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিয়েছেন বেনারসী পল্লীর ব্যবসায়ীরা। বিরামহীনভাবে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় তাঁতের চাকা ঘুরছে। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে দোকানকে সাজানো হচ্ছে পরিপাটি করে। কম-বেশি প্রত্যেক দোকানে রয়েছে ঈদের বিশেষ আয়োজন। কারণ, রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে তাঁতের দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, ঈদে আলাদা কিছু দিতে বিশেষ প্রস্ততির দরকার আছে। কারণ, এখন শুধু দেশি নয়, বিদেশি কাপড়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়।
দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, অপেরা, ফিগা, মিরপুরি রেশমি কাতান, ফুলকলি কাতান, দুলহান কাতান, মিলেনিয়াম কাতান, বেনারসী কসমস, অরগেন্ডি কাতান, রিমঝিম কাতান, প্রিন্স কাতান, টিস্যু কাতান, মিরপুরি গিনিগোল্ড কাতান, জর্জেট গিনি গোল্ড কাতান, চুনরি কাতান কত যে বাহারি নাম। শুধু তাই নয়, এবারের ঈদ উপলক্ষে আনারকলি ও ফুলকলি শাড়ী ছাড়াও নেট কাতান, পিওর কাতান, জাবেদ কাতান প্রভৃতি নামের বাহারী শাড়ী তৈরি হচ্ছে। কোন কোন দোকান নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নামে স্পেশাল শাড়ি বাজারজাত করার পরিকল্পনা করছে। বেনারসী শাড়ি অনেকের কাছে কাতান শাড়ি নামেও পরিচিত। মিরপুর ওয়ার্ড নং ২, ৩ ও ৫ নম্বর এবং সেকশন হিসেবে মিরপুর ১০, ১১ ও ১২ নম্বরে গড়ে উঠেছে বেনারসী পোশাকের বাজার। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত শত কাতান আর বেনারসী শাড়ির দোকান। প্রায় প্রতিটি দোকানেরই রয়েছে নিজস্ব শাড়ি তৈরির কারখানা। নিজেদের দক্ষতা, ঐতিহ্যবাহী নকশা আর রুচির সমন্বয়ে তৈরি করে চলে একের পর এক কাতান-বেনারসী। কয়েক এলাকা মিলে এখানে প্রচুর তাঁতের পোশাকের শোরুম ও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রতিটি দোকানে শোভা পাচ্ছে তাঁতের পোশাক। মিরপুর বোনারসী পল্লীর শুরুটা সেই ১৯৪৭ সালে। ভারতবর্ষ ভাগ হলো, জন্ম নিল ভারত আর পাকিস্তান। ভারতের বানারস থেকে কয়েকটি পরিবার মিরপুর এবং পুরান ঢাকায় চলে এল, সঙ্গে নিয়ে এল বেনারসি শাড়ি বোনার জাদুকরি কৌশল। এই দক্ষ বেনারসি কারিগররা বাংলাদেশেই থেকে গেল এবং স্বাধীনতার পর মিরপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করল। জীবিকা হিসেবে বেছে নিল বেনারসী শাড়ি তৈরির কাজ। পুরো ঘটনাটি গল্পের মতো শোনালেও, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে মিরপুরের বিশাল এক জায়গা জুড়ে গড়ে উঠল দেশের সর্ববৃহৎ শাড়ির বাজার, মিরপুর বেনারসী পল্লী। সুজন বেনারসী হাউসের কর্ণধার সুজন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা প্রতিবছর রমজানের শুরু থেকেই প্রস্ততি নেই।  কমপক্ষে একটা শাড়ি না কিনলে বাঙালি নারীর ঈদের কেনাকাটা যেন অপূর্ণই থেকে যায় । তাই প্রতিবারই ঈদকে মাথায় রেখে আমরা তৈরি করি বিভিন্ন ডিজাইনের কাতান- বেনারসি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি, ঈদকে সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছে আধুনিক  ডিজাইনের নানারকম শাড়ি। দশ রোজা থেকে ব্যাপক ভিড় শুরু হবে। বিশ রোজার পর পা ফেলা জায়গা পাবেন না বেনারসী পল্লীতে।
বেনারসী শিল্পে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারুকাজ, রং, সুতার ব্যবহার, বুনন, সমন্বয়, নকশা সব মিলিয়ে বেনারসীর অন্যরকম এক আবেদন আগেও ছিল, এখনও আছে। ধনী-গরিব সব নারীরই পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকে বেনারসী। যাদের সামর্থ্য নেই তাদের আকাঙ্খা থাকে অন্তত বিয়ের অনুষ্ঠানটা হবে বেনারসী দিয়ে। যে কারণে মোটামুটি সচ্ছল পরিবারগুলোতে বেনারসী ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠান কল্পনাও করা যেতো না। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে বেনারসীর বাণিজ্যিক নাম বিস্তৃত হতে থাকে। নব্বইয়ের দশকের শেষ পর্যন্ত ঢাকাই বেনারসীর খ্যাতি ছড়াতে থাকে। বাজারে তৈরি হয় ব্যাপক চাহিদা। এ এলাকার শাড়ির দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেল- ঈদ উপলক্ষে বোনা হয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি । ইদানিং ভারতীয় হাতের কাজের শাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতেই যেন প্রায় সব শাড়িতেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে জরি-চুমকির বাড়তি কাজ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সব শাড়িতেই আনা হয়েছে কিছু না কিছু পরিবর্তন। দেশীয় টিস্যু, তসর, ব্রোকেড, জুট আর সফট কাতানের সাথে যুক্ত হয়েছে কোরিয়ান, ইন্ডিয়ান ও চাইনিজ সিল্ক কাতানের নানা ধরন।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কাতানের দাম নির্ভর করে নকশা, উপকরণ আর জরির কাজের ওপর। এসব দোকানে সাধারণত ১৩০০-১৫০০ টাকাতেই ভালো মানের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। তবে আসল বা ভালো মানের কাতান শাড়ির দাম শুরু হয় ২৫০০ থেকে। নকশা আর কাপড়ের মান অনুযায়ী এসব কাতানের দাম ১০০০০-১৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এসব দোকানে দরদাম করেই কেনা যাবে শাড়ি । মদিনা স্টোরের মালিক আব্দুল মোমেন জানান, মাঝে একটা সময় ইন্ডিয়ান জর্জেট শাড়ির জন্য কাতানের চাহিদা একদমই কমে যাচ্ছিল। কিন্তু স্বাতন্ত্র্য আর বৈচিত্র্যের কারণে কাতান আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নকশা আর ধরনে বৈচিত্র্য আনতে পারলে কাতানের চাহিদা কোনোদিন কমবে না। তবে আসল কাতান বা বেনারসী কিনতে মিরপুরেই আসা উচিত। জেরিন সিল্ক কারখানার ম্যানেজার শামীম আহমেদ বলেন, “আমরা এখন বিশ্ববাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছি। বর্তমানে দেশীয় শাড়ির বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিতে এখানেও চলছে নিত্যনতুন শাড়ি তৈরির প্রচেষ্টা। ঈদ উপলক্ষে পুরো বেনারসী পল্লীজুড়েই যেন একটা সাজ সাজ আমেজ। রমজানের শুরু থেকেই এ আমেজ শুরু হয়।” 
বাঁধনের ফেরা
বিনোদন প্রতিবেদক
লম্বা বিরতির পর শোবিজে ফিরে এসেছেন বাঁধন। ঈদের নাটকের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন পুরোপুরি। তবে যেখানেই যান সঙ্গে থাকে পুতুলের মতো ফুটফুটে মেয়ে সায়রা। নাটকের শট দিয়ে এসেই মেয়েকে কোলে তুলে নেন। মেয়েটাও খুব লক্ষ্মী, মা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে একদম চুপচাপ-শান্ত হয়ে বুয়ার কোলে মুখ লুকিয়ে রাখে। শট শেষ অমনি মায়ের প্রতি বাড়িয়ে দেয় দুটি হাত। দীর্ঘ দেড় বছর অভিনয় থেকে দূরে থাকা বাঁধন সম্প্রতি আবার নিজের চেনা জায়গায় ফিরেছেন। এরই মধ্যে তিনি নতুন তিনটি নাটকে কাজ করেছেন। নাটক তিনটির দুটি নির্মাণ করেছেন চয়নিকা চৌধুরী। অন্যটি পরিচালনা করেছেন আরেফিন। নিজের অভিনয়ে ফেরা নিয়ে বাঁধন বলেন, আসলে এই সময়েই কাজ শুরু করব তা ভাবিনি। হঠাৎ করে একদিন পরিচালক চয়নিকা চৌধুরীর সঙ্গে গালগল্প করছিলাম। তখন তিনি আমাকে তার নাটকে কাজের প্রস্তাব করেন।
আমি সে সময় তাকে বলেছিলাম, আমার মেয়েকে রেখে আমি কীভাবে অভিনয় করব? পরিচালক আমাকে বললেন, আমার নাটকের স্পটে বিপাশা হায়াত, রিচি সোলায়মান, শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নিও তাদের সন্তানকে নিয়ে এসে অভিনয় করেছেন। তুইও তোর মেয়েকে নিয়ে আসবি। অভিনয়ের ফাঁকে ফাঁকে মেয়েকে দেখাশোনা করবি। কাজের কারণে তোর মেয়ের যেন কোনো কষ্ট না হয়, আমি সে সুযোগ তোকে দেব। একবার ভাবছিলাম, এভাবে কী আর কাজ করা যায়! পরে পরিচালক আমাকে ভালো করে বিষয়টি বোঝালেন। তাই শেষ পর্যন্ত আমি তার সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়ে গেলাম। এভাবেই আমার কাজে ফেরা। বাঁধন আরো বললেন, এরই মাঝে আমি তিনটি এক ঘণ্টার নাটকের কাজ শেষ করেছি। এর মধ্যে চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় কাজ করেছি ‘ধ্রুবতারা’ ও ‘প্রতিবেশী’ শিরোনামের দুটি নাটকে। আর আরেফিনের পরিচালনায় যে নাটকটিতে অভিনয় করেছি এর শিরোনাম ‘হাঙ্গামা’। মেয়েকে নিয়ে শুটিং স্পটে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাঁধন আরও বলেন, ‘শুটিংয়ের পুরো সময়টা আমার মেয়ে স্পটেই ছিল। আমি শটের বিরতিতে পাশের রুমে গিয়ে মেয়ের দেখাশোনা করে আসতাম। পরিচালকরা আমার মেয়েকে রাখার জন্য সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমি মেয়েকে নিয়ে বেশ আরামেই কাজগুলো করেছি।’ নাটকগুলোতে অভিনয় প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন, ‘আসলে আমি দেড় বছর পরে কাজে ফিরলাম বলে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, আমি বোধ হয় অনেক ভেবে-চিন্তে খুব সিরিয়াস কোনো চরিত্র বা নাটকের মাধ্যমে আবার অভিনয়ে ফিরে দর্শকদের চমকে দেব। নাটকগুলোতে আমি আহামরি কোনো চরিত্রে কাজ করিনি। তবে আমি যেটুকু কাজই করেছি তাতে আমার আন্তরিকতা ছিল। আমি পরিচালকের কথামত কাজটি করার চেষ্টা করেছি। তবে আমার বিশ্বাস, কাজগুলোতে আমার অংশগ্রহণ দর্শকদের খারাপ লাগবে না। মাঝখানে মিডিয়া থেকে দূরে থাকার সময়টাতে অভিনয়কে কতোটা মিস করেছেন জানতে চাইলে বাঁধন বললেন, আসলে সে সময়টা ছিল অন্যরকম। মেয়ে যখন আমার গর্ভে ছিল, সেই সময়টায় আমি ওকে নিয়ে কল্পনায় নানা রকম ছবি এঁকেছি। সে সময় আমার ভাবনার পুরোটা জুড়েই ছিল অনাগত সন্তান। আর মেয়ে জন্মের পর আমি ওকে নিয়ে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম যে, অন্য কিছু ভাবার সুযোগই ছিল না। মেয়ের দেখাশোনা করতে করতেই আমার দিনের বেশিরভাগ সময় চলে যেত। আর তাই তখন অভিনয়কে মিস করা হয়নি। তবে এখন আবার কাজ করার পর একটু একটু করে অভিনয় আমার ভেতরে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। অভিনয়কে আমি মিস করছি। এখন অভিনয়ের প্রতি আমার মধ্যে নতুন করে একটা টান তৈরি হয়েছে। ইদানিং অবসর পেলেই বাঁধন টিভি দেখতে বসে যান। নিজের অভিনয় দেখার পাশাপাশি অন্যদের কাজও তিনি দেখেন। তবে মা হওয়ার আগের সময়ের চেয়ে পরের সময়গুলোতে তার টিভি দেখার সুযোগ কমই হয়। বাঁধন বলেন, ‘আসলে অভিনয় আমার কাছে প্রতি মুহূর্তে শেখার একটি বিষয়। নিজের এবং অন্যের কাজ দেখলে অনেক কিছু বোঝা যায়। আমার এখনও শেখার অনেক বাকি। নিজেকে প্রতি মুহূর্তে নানা চরিত্রের মাধ্যমে গড়তে ও ভাঙতে হলে অভিনয় শেখার কোনো বিকল্প নেই।’ নিজের পরের প্রজন্মেও কাজের মূল্যায়ন করতে বললে বাঁধন বলেন, ‘লাক্স থেকে আমার পর যারা বের হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ তো ভালোই করছে। এই মুহূর্তে বিদ্যা সিনহা মিম ও রাখির কথা মনে পড়ছে। ওরা তো ভালোই কাজ করছে।’
প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নতুন সভাপতি ডিপজল
বিনোদন প্রতিবেদক
ঢালিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নতুন সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতৈক্যর ভিত্তিতে  প্রযোজক পরিবেশক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি পূর্ণগঠন করা হয়েছে। নির্বাচিত কমিটির সভাপতি মাসুদ পারভেজের শারীরিক অসুস্থতায় দায়িত্ব পালনে অপারগতার কারণে তাকে অব্যাহতি দিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ডিপজল। মাসুদ পারভেজকে অবশ্য কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাচিত কমিটির সহ-সাধরণ সম্পাদক সাইদুর রহমান মানিককে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়েছে। সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোনীত হয়েছেন খোরশেদ আলম খসরু। সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে পূর্ণগঠিত কমিটির বৈধতা প্রদান করেছে আদালত। চলতি মাসের শুরুর দিকে চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি মাসুদ পারভেজ শারীরিক অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানান। তিনি অসুস্থতার জন্য কিছুদিন ছুটি চান এবং সুস্থ হয়ে আবার দায়িত্ব গ্রহণের ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু অনির্দিষ্ট কালের জন্য চলচ্চিত্রের নীতি-নির্ধারক এই সমিতির নের্তৃত্বে শূণ্যতা তৈরি হওয়ায় মাসুদ পারভেজকে নির্বাহী সদস্য হিসেবে রেখে তাকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আগের নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডিপজল সভাপতি এবং সাবেক সহ-সাধরণ সম্পাদক সাইদুর রহমান মানিক সাধারণ সম্পদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মনোয়ার হোসেন ডিপজলের নের্তৃত্বে পূর্ণগঠিত  কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২৮ জুলাই শনিবার বেলা ১২টায় এফডিসির প্রযোজক পরিবেশক সমিতির স্ট্যায়ারিং রুমে। সভায় চলচ্চিত্রের সাম্প্রতিক অবস্থা ও আসন্ন ঈদে ছবি মুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়। দেশীয় চলচ্চিত্রের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনিযুক্ত সভাপতি মনোয়ার হোসেন ডিপজল বাংলানিউজকে বলেন, ভাল কিছু করার জন্য নির্বাহী পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েই সভাপতির পদ গ্রহণ করেছি। কারণ নের্তৃত্বে শূন্যতা নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। চলচ্চিত্রের বর্তমানে ক্রান্তিকালে আমরা সবাই মিলেমিশে সংকট উত্তরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবো বলে আশা করছি।
এক নজরে পূর্ণগঠিত নির্বাহী কমিটি
সভাপতি : মনোয়ার হোসেন ডিপজল
সিনিয়র সহ-সভাপতি : খোরশেদ আলম খসরু
সহ-সভাপতি : এজে রানা
সাধারণ সম্পাদক : সাইদুর রহমান মানিক
সহ-সাধারণ সম্পাদক : শামসুল আলম
সহ-সাধারণ সম্পাদক : আনোয়ার হোসেন মিন্টু
কোষাধ্যক্ষ : মেহেদী হাসান সিদ্দিকী মনির
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক : শেখ নজরুল ইসলাম
সাংস্কৃতিক সম্পাদক : জাহিদ হোসেন
কার্যনির্বাহী সদস্য : মাসুদ পারভেজ, ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলম, শরীফ উদ্দিন খান দিপু, ইলিয়াস কাঞ্চন, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, মো. রফিকউদ্দিন, মনতাজুর রহমান আকবর, আতিকুর রহমান লিটন, শামীম ওসমান, খন্দকার আরিফুজ্জামান ও হারুনুর রশীদ সাগর।
সোনাক্ষীর ওপর কারফিউ জারি!
ইশতিয়াক হোসেন লাবিব
বলিউডে নতুন প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিনহার ওপর জারি করা হয়েছে কারফিউ! নাহ, ভারতীয় প্রশাসন এই কারফিউ সরকার জারি করেনি। সোনাক্ষী সিংহার বাবা বলিউডের একসময়ের অ্যাকশন হিরো শত্রুঘ্ন সিনহা মেয়ের ওপরই এমনই এক কঠিন নির্দেশ জারি করেছেন। তিনি সোনাক্ষীকে নির্দেশ দিয়েছেন,   যেখানেই যাক আর যাই করুক না কেন, তাকে অবশ্যই বাড়িতে ফিরতে হবে এবং তা রাত ১টার মধ্যেই। বাবা শত্রুঘ্ন সিনহার পথ ধরেই বলিউডে বেশ অল্প সময়েই জনপ্রিয়তার মুখ দেখেছেন ‘দাবাং’ খ্যাত অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিনহা। শোবিজে বেড়ে গেছে তার ব্যস্ততা। একটার একটা ছবি ছাড়াও রিয়েলিটি শো, স্টেজ শো আর বিভিন্ন ইভেন্টস থেকে তার ডাক আসছে। শোবিজের কাজের পাশাপাশি সার্কেলের সঙ্গে সময় কাটিয়ে প্রায় দিনই অনেক রাত করে সোনাক্ষী বাড়ি ফিরেন। এমনও হয়েছে শুটিংয়ের কাজে কখনো কখনো পুরো রাতই তাকে বাইরে কাটাতে হয়। বাড়ি ফেরার প্রতি সোনাক্ষীর এই উদাসিনতায় চিন্তায় পড়ে গেছেন তার বাবা ও পরিবারের অন্য সবাই। মেয়ের বর্তমান খ্যাতি আর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই কঠোর হয়েছেন শত্রুঘ্ন সিনহা। সোনাক্ষীকে তিনি দিয়েছেন কারফিউয়ের মতোই কঠিন আলটিমেটাম। মুম্বাইয়ের বাইরে শুটিং না থাকলে রাত ১টা মধ্যে না ফিরলে মেয়ের জন্য বাড়ির দরোজা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। দেরি করে রাতে বাড়ি ফেরার জন্য বাবাকে সোনাক্ষী সিনহাও বলেছেন, সরি। রাত ১টা নয় আমার চেষ্টা থাকবে আরো আগেই বাড়ি ফেরার।শত্রুঘ্ন সিনহা এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি মিডিয়ার কাছে বলেন, ‘মেয়ের স্বাধীনতার প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন আছে। আমার মেয়ে অবশ্যই সব কিছুতে অংশগ্রহণ করবে এবং জীবনকে ইনজয় করবে, আমিও তা চাই।
কিন্তুএই উঠতি সময়ে আমি তাকে বেপরোয়া দেখতে রাজি নই। তাকে পারিবারিক বিধি-নিষেধের কথা মাথায় রাখতে হবে। রাত ১টার মধ্যে অবশ্যই সোনাক্ষীকে বাড়িতে ফিরতে হবে।’ শত্রুঘ্ন সিংহা মেয়ে সোনাক্ষীসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে মুম্বাইয়ের কেন্দ্রস্থলেই বাস করছেন। মেয়ের ক্যারিয়ারের পাশাপাশি সব বিষয়েই তিনি রেখেছেন কড়া নজর। এখন পর্যন্ত শুটিংয়ের কাজে দীর্ঘ সময়ের জন্য সোনাক্ষীকে মুম্বাইয়ের বাইরে বা বিদেশে যেতে হয় নি। তবে যে হারে তার জনপ্রিয়তা বাড়ছে, তাতে কাজের প্রয়োজনে অদূর ভবিষ্যতে দূরে কোথাও যেতে হতেই পারে। এখন দেখার বিষয় হলো, বাবা শত্রুঘ্ন সিনহা সব জায়গাতেই মেয়ের সফর সঙ্গী হতে তার প্রতি কড়া নজর রাখতে পারেন কিনা! অনেকেই আবার বাঁকা চোখে বলছেন, দড়ি বেশি টাইট দিলে তা ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন