Year-18 # Issue-48 # 15 January 2012

তাবলীগে জামায়াতের বিশ্ব ইজতেমা
॥ জুলফিকার আহমদ॥
গত শুক্রবার ১৩ জানুয়ারি (২০১২ ইং) অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও ঢাকার টঙ্গীতে তাবলীগে জামায়াতের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে দেশ-বিদেশের লাখো মুমিন-মুসলমানের টঙ্গীতে সমাবেশ ঘটেছে। ইজতেমা শেষে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের জন্যে সম্মিলিত মোনাজাত করা হয়। এই মোনাজাতে শরীক হবার জন্যে শেষদিন তুলনামূলকভাবে ইজতেমায় জনসংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যায়। এবারও সেখানে লোকে লোকারণ্য হবার কথা।
কোন মহৎ আদর্শকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বাস্তবায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট আদর্শিক কাজের সাথে জড়িতদের নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, ত্যাগ ও নিঃস্বার্থতা। তাবলীগী জামায়াতের প্রতি দেশ-বিদেশে অগণিত মানুষের আগ্রহ-আকর্ষণের পেছনে এই গুণাবলীসমূহ বিশেষভাবে কাজ করছে। পেটের ধান্ধায় আজকের দিনের সদাব্যস্ত মানুষদের মধ্যে প্রায় দুর্লভ এসব গুণ সৃষ্টি করা কিংবা সৃষ্টি হওয়া সহজ ব্যাপার নয়। তাবলীগী জামায়াতের নেতৃত্ব বৈষয়িক স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পর্ণ নিরস ও শুষ্ক। তারপরও দেশ-বিদেশের অগণিত মানুষকে এর প্রতি পিপাসু করে তোলা চাট্টিখানি কথা নয়। এই ফিতনার যুগেও এই মহান দ্বীনী প্রচারের ক্ষেত্রে মানুষকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে এই সংগঠনের প্রথম আহবায়ক হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর এটি যে একটি উজ্জ্বল অবদান, নিঃসন্দেহে তা স্বীকার করতে হবে। অবিভক্ত ভারতে ঔপনিবেশিক ইংরেজ শাসনামলে সম্পর্ণ প্রতিকূল পরিবেশে হযরত ইলিয়াস (রহ.) প্রথমে এ নিয়মের তাবলীগের কাজ শুরু করেন। ৬ উসূল ভিত্তিক তাঁর একাজ ইসলামের প্রাথমিক মৌলিক বিধানসমূহের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। তাবলীগ একজন মানুষের মধ্যে দ্বীনী কাজের প্রেরণা এবং অপর মানুষকে দ্বীনের দিকে নিয়ে আসার জন্যে যেই চারিত্রিক গুণাবলী সৃষ্টি করে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের আদর্শে আজকের শোষিত-বঞ্চিত মানব সমাজে দ্বীনী পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নিপীড়ন দূর করে একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে এসব গুণের জুড়ি মিলে না। কিন্তু এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, সমাজের যেই পরিমাণ মানষের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলী সৃষ্টি করে একটি দেশ ও সমাজকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র ও পূর্ণ ইসলামী সমাজরূপে গড়ে তোলা যায়, এখনও সেই পরিমাণ লোক তৈরি হয়নি বলেই হয়তো মুসলিম বিশ্বে কাক্সিক্ষত সেই সমাজ ও শোষণমুক্ত ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারছে না অথবা লোক তৈরি হলেও দ্বীনের দাবির ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গিগত কোন পার্থক্যের কারণে সেটি হচ্ছে না। বলতে কি, সেটি না হওয়ায় ইসলামী খেলাফত বা ইসলামী হুকুমতের অভাবেই জীবনের সকল স্তরে, সমাজের সকল বিভাগে বেদ্বীনী শক্তির অপতৎপরতা প্রাধান্য পায়। ফলে মানব কল্যাণে আমাদের এ জাতীয় সকল বিরাট দ্বীনী কর্মতৎপরতা উক্ত লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছতে আজ ব্যর্থ অবস্থায়, অথচ এ জন্যেই পৃথিবীতে নবী মোস্তফা (সা.)-এর আগমন ঘটেছিল। বলা বাহুল্য, ঐ লক্ষ্যটি হলো কুরআনের ভাষায় ‘এযহার-এ-দ্বীন’ ও ‘ইকামত-এ-দ্বীন’ অর্থাৎ আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা ও ন্যায় বিধানকে মানুষের কল্যাণে মানব রচিত সকল বিধি-ব্যবস্থার ওপর বিজয়ী করা, যা সূরায়ে সাফ এবং অন্যান্য সূরায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বাক্সময় হয়ে উঠেছে। ফলে মুসলিমদের কষ্টোপার্জিত অর্থ আল্লাহর দ্বীনের কাজের বদলে এবং মুসলমানদের বাঁচার অধিকার ও তাদের জীবনমান উন্নতকরণের কাজে ব্যয়িত না হয়ে সমাজের একশ্রেণীর চরিত্রহীন নেতৃত্বের ভোগ-বিলাসে ব্যয়িত হচ্ছে, অপচয় হয়ে যাচ্ছে তাদের স্বেচ্ছাচারী অন্য শয়তানি প্রবণতা ও অপর মুসলিম ভাইয়ের অধিকার হরণের হিংস্রতাপূর্ণ লড়াইয়ে। অবশ্য এক্ষেত্রে চলমান পরিস্থিতিতে তাবলীগের অনুসৃত নীতির বিষয়টিও একটি কারণ। কেননা দেশ, সমাজ গড়ার যে ৬টি সেক্টর (১) শিক্ষা, (২) অর্থ, (৩) প্রশাসন, (৪) বিচার বিভাগ, (৫) প্রচার মাধ্যম ও (৬) প্রতিরক্ষা। রাষ্ট্রীয় এই সেক্টরগুলো মহানবী (সা.) ও সাহাবীদের শাসন কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বের অনুরূপ ইসলামী নেতৃত্বাধীন থাকলে দেশ-সমাজের অবস্থা কিছুতেই এ রকম হতো না। এজন্যে আমাদের মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষের উপযুক্ত নজর দেয়া দরকার ছিল। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে নবী জীবনের অনুরূপ আদর্শ সমাজ বিনির্মাণকল্পে রাষ্ট্রীয় ও সমাজ সংশোধনের উল্লিখিত ৬টি মহাগুরুত্বপূর্ণ সেক্টর পরিচালনার যোগ্য নেতৃত্ব মাদরাসায় সৃষ্টিকারী পাঠ্যনীতি অবলম্বন করলে এগুলো আজ অন্যদের হাতে গিয়ে সেখান থেকে এমন নেতৃত্ব তৈরি হতো না, যারা বিসমিল্লাহ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান-আস্থাকে সহ্য করতে পারে না। তদ্রুপ ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত ইসলামী আন্দোলনকারী উলামা-মাশায়েখদের ওপর জুলুম ও কারা নির্যাতন চালাতো না এবং নানান মিথ্যা অভিযোগে তাদেরকে আমজনতার কাছে বিভিন্নভাবে অপমানিত ও হেয় প্রতিপন্ন করতো না। এই তিক্ত পরিণতির এটাই দাবি যে, ঐসব মাদরাসায় কুরআন-হাদিসের সঙ্গে এমন সব বিষয়ও শিক্ষা দিতে হবে, যাতে রাষ্ট্রীয় ঐ গুরুত্বপূর্ণ ৬টি সেক্টরে [(১) শিক্ষা বিভাগ, (২) অর্থ বিভাগ, (৩) আইন আদালত বিচার বিভাগ, (৪) শাসন বিভাগ, (৫) প্রচার মাধ্যম, (৬) প্রতিরক্ষা]  মহানবী (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের ন্যায় তাদের আদর্শে নাগরিকদের গড়ে তুলতে পারে। তা না হওয়াতে ফল হয়েছে এই যে, দেশের ঐ শ্রেণীর মাদরাসাসমূহ ওয়াজ-নসীহতের বড় মাহফিল, তাবলীগের টঙ্গীর মতো লাখ লাখ মানুষের ইজতেমা এবং পীর-মাশায়েখ ও মসজিদসমূহে যত ওয়াজ-নসীহত হয়, সবকিছুর প্রভাব রাষ্ট্রীয় ঐ ৬ বিভাগের ছিদ্রপথ দিয়ে এমনভাবে দুর্বল ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় যে, তখন দেশের সকল ইসলামপন্থী দল একত্রিত হয়েও তার কোন প্রতিকার করতে পারে না। এজন্যে ইসলামের এবং দ্বীনের যেই মহা ক্ষতি হয়ে আসছে, কাল-কেয়ামতের দিন যদি সংশ্লিষ্ট সকল ইসলামপন্থীকে আল্লাহ জিজ্ঞাসা করেন যে, শেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.) কি জাতি ও সমাজ গঠনের রাষ্ট্রীয় ঐ ৬টি বিভাগ আবু লাহাব, আবু জাহল চরিত্রের লোকদের নেতৃত্ব ও পরিচালনাধীন ছেড়ে দিয়ে আবু বকর, ওমর, উসমান, আলী (রা.) প্রমুখকে নিয়ে শুধু মসজিদ, মাদরাসা, খানকাহ এবং ওয়াজ নসীহত ও দাওয়াতী কাজেই ব্যস্ত ছিলেন? যদি তাই না হয়, তাহলে তোমরা কেন নবীর তরিকা পরিহার করে ঐগুলো অন্যদের হাতে ছেড়ে দিয়ে রেখেছিলে? তোমাদের মাদরাসা ও তাবলীগ জামায়াতে সেসব পদের উপযোগী ইসলামী নেতা পরিচালক সৃষ্টির উপযোগী শিক্ষানীতি ও কর্মসূচি কেন তৈরি করেনি? তখন সংশ্লিষ্টদের কোন জবাব থাকবে কি? তাবলীগ বা দ্বীনী দাওয়াতের দায়িত্ব মুসলমানদের ওপর একাধিক আয়াত ও একাধিক হাদীসের দ্বারা অর্পিত। তন্মধ্যে বিখ্যাত আয়াতটি হলো-‘তা’মুরুনা বিল মারূফে ওয়া তানহাওনা আনিল মুনকার,- ‘‘তোমরা কল্যাণের দিকে মানুষকে নির্দেশ করবে আর মন্দ ও গর্হিত কাজ থেকে তাদের বিরত রাখবে।’’ এছাড়া পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ আরও সরাসরি বলেছেন, ‘বাল্লিগ মা উনযিলা ইলাইকা’ -‘তোমার কাছে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অপরের কাছে পৌঁছাও।’ বস্তুত এ আয়াত এবং এ জাতীয় আরও যেসব আয়াত ও মহানবীর (সা.) হাদীসের নির্দেশের ভিত্তিতে যুগে যুগে মুসলমানরা তাবলীগ বা ইসলামী দাওয়াতের কাজ করেছেন, পালন করেছেন দ্বীন প্রচার ও বিশ্বময় ইসলাম বিস্তারের দায়িত্ব, তাঁরা দ্বীনকে খন্ডিতভাবে না দেখে একে পরিপূর্ণ আকারেই দেখেছেন এবং পরিপূর্ণভাবেই বিশ্বের মানুষের সামনে তুলে ধরে মানব সমাজে এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। ইসলামকে খন্ডিতভাবে যারা দেখেছিল, তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কি আমার বিধান গ্রন্থের কিছু অংশ বিশ্বাস করো আর কিছুকে অবিশ্বাস করো? আল্লাহ অন্যত্র আরও বলেছেন, ‘তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো।’ আরও ইরশাদ হয়েছে, মাইয়াবতাগী গায়রাল ইসলামে দ্বীনান ফালাই ইউকবাল-‘যারা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু অনুসন্ধান করে, তা কখনও গ্রহণ করা হবে না।’ সেই হিসেবে বুঝা যায়, দ্বীনের কতিপয় হুকুম  সংক্রান্ত দায়িত্ব মুসলমানদের স্কন্ধ থেকে দূর হবে না বরং পুরো কুরআনে যা কিছু সবগুলোর তাবলীগ এবং এগুলোর হুকুমই ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠার তাবলীগ অন্তর্ভুক্ত। এটা এজন্যে যে, আমরা যখন নামাজ আদায় করি, তখন নামাযের আয়াতের ওপর আমল করা হলো, যখন যাকাত দেই, যাকাতের আয়াতের উপর আমল হলো, তেমনি যখন রোযা রাখি, রোযার আয়াতের ওপর আমল করা হলো, যখন হজ্জ করি এ সংক্রান্ত আয়াতের ওপর আমল আদায় হলো। কিন্তু কুরআন মজীদে এগুলো ছাড়া আহকাম-এ-তা’যিরিয়া (ঈৎরসরহধষ খধ)ি বা অপরাধ দন্ডবিধি প্রয়োগ সংক্রান্ত কিংবা অর্থনৈতিক ও শোষণের যেসব আহকাম আছে, যেমন সমাজে, রাষ্ট্রের পুরুষ-নারী, চোর-ডাকাতের হাতকাটা এবং জেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত এ জাতীয় পুরুষ ও নারী অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দান, সে সংক্রান্ত বিধানসমূহ যদি জারির কথা তাবলীগী দাওয়াতে ও প্রচার কর্মসূচিতে না থাকে- আবার থাকলেও সে অনুযায়ী এসব খোদায়ী আইন প্রয়োগের জন্যে যেই আইনগত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আছে, সেখানে তাদের প্রশিক্ষিতরা না গিয়ে, না বসে এসব আইন কার্যকর করা না হয়, তাহলে কি করে আল্লাহর এই সংক্রান্ত আয়াতসমূহের উপর আমল হবে? তেঁতুলের বীজ বপন করে কি ফজলি আমের আশা করা যায়? তা না করে কেয়ামত পর্যন্ত এসব আয়াতের হয়তো তিলাওয়াতই হবে, এগুলোর মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর আমল কোনো দিনই হবে না। এই জন্যে প্রিয় নবী (সা.) এবং তাঁর সুন্নাত ও আদর্শের অনুসারী উম্মত ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কাতারে স্থান পেতে হলে মহানবীর পূর্ণ ইত্তেবা ও আল্লাহর কালামের ওপর পূর্ণ আমল ছাড়া গত্যন্তর নেই। আল্লাহ্ শেষ নবীকে উস্ওয়া বা উত্তম আদর্শ বলে কুরআনে ঘোষণা করেছেন। সেই উসওয়া বা আদর্শের অনুসরণ না করলে মুক্তি কিভাবে হবে? রাষ্ট্রীয় আইন সংক্রান্ত আয়াতসমূহের ওপর আমল করতে হলে তা তার পূর্বশর্ত রাষ্ট্রীয় পদে যাবার সুন্নাতে নববী ও সুন্নাতে-সাহাবী মেনে চলতেই হবে। নিজেরা কোনো ‘‘মোসলেহাতে’’ না গেলেও এ জাতীয় কাজে অন্তত সমর্থন দিয়ে হলেও আল্লাহর নির্দেশ ‘‘সৎ কাজে সহযোগিতা করো’’-এর উপর আমল করতে হবে। এই সুমহান দায়িত্ব পালনে তাবলীগী জামায়াতে যেভাবে লোকদের নৈতিক গুণাবলীর প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং তাদের মধ্যে ‘‘এখলাস’’ ‘‘ঈছার’’-কুরবানী’’ ও মেহনতের মনোভাব জাগিয়ে তোলা হয়, শোষণমুক্ত সমৃদ্ধ সমাজ ও কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এসব গুণ বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে। তাবলীগ-এ-দ্বীনের পূর্ণ সফলতার চিন্তা স্বভাবতই আধুনিক মনমানসিকতাকে যেই বিষয়টির প্রতি নিয়ে যায়, সেটি হলো, আজকের দিনের ‘‘মারূফ’’ তথা ‘‘ভাল ও কল্যাণের’’ কাজের প্রসার দানের মাধ্যম ও ‘‘মুনকার’’ তথা মন্দ বা গর্হিত কাজের প্রসার দানের মিডিয়া শক্তি ও এর গতির প্রতি এ মহান দায়িত্বে নিয়োজিতদের তেমন ভ্রূক্ষেপ না দেয়া। যার ফলে একদিকে সমাজে এই মহৎ কাজ চললেও অপরদিকে তার লক্ষ্য বিরোধী কাজের প্রাধান্য ও দৌরাÍ্য দ্রুত বেড়েই চলেছে, যার ভয়াবহতা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। তাবলীগ জামায়াতের সম্মানিত মনীষীরা এদিকে দৃষ্টি দিলে বিরাট কল্যাণ হবে বলে অনেকে মনে করে। সমাজে আল্লাহর দ্বীনের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই তাবলীগ-এ-দ্বীন আবশ্যক। এ কাজের ইহজাগতিক ও পরকালীন ‘হাসানা’ বা সুফল পেতে হলে মন্দের প্রচারশক্তির চাইতে কল্যাণের প্রচারশক্তি আরও শক্তিশালী হওয়া ছাড়া দ্বীনী লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এদিকটিও এ যুগের তাবলীগ-এ-দ্বীনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের বিচার বিবেচনায় থাকলে ভাল হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এটাও মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাত অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় শক্তির আসনে যাওয়া ছাড়া অর্জন সম্ভব নয়। কেননা, মানব সমাজকে সুষ্ঠু পথে পরিচালনা, তাদের চিন্তা-চেতনা ও আকিদা বিশ্বাসের পরিবর্তন সাধন এবং সৎ ও মহৎ কাজে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার যেই কয়টি বলিষ্ঠ মাধ্যম আছে, তন্মধ্যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, জনশিক্ষা, প্রচার মাধ্যম ও শাসন ব্যবস্থা সবগুলোর নীতিনির্ধারক ও নিয়ন্ত্রকই থাকে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন। সেক্ষেত্রে এ তিনটি মস্তবড় মাধ্যমকে যদি উপেক্ষা করে তাবলীগী দায়িত্ব পালন করা হয়, তাহলে সেটি হবে অসম প্রতিযোগিতা। অথচ আল্লাহ বলেছেন, ‘‘তোমরা ‘মুনকার’-এর শক্তির প্রতি লক্ষ্য রেখে যথাসাধ্য নিজেদের প্রস্তুতি নাও।’’ এটা স্পষ্ট কথা যে, মারূফ তথা ভাল ও কল্যাণের প্রচারের গতি যদি ঘণ্টায় দশ মাইল হয় আর সে ক্ষেত্রে ‘মুনকার’ বা মন্দের প্রচারের গতি যদি হয় দশ হাজার মাইল, তখন এই দূরত্ব কি করে অতিক্রম করা যাবে? এই প্রস্তাবটি সামনে থাকলে আমার মনে হয় এ সংক্রান্ত অনেক সমস্যারই শুধু সমাধান হতো না, দ্বীনী তাবলীগের মূল লক্ষ্য অর্জনও বহুলাংশে ত্বরানি¦ত হতো।

শিল্প-বাণিজ্যের কিংবদন্তিকে হারাল দেশ
মোঃ আলমগীর হোসেন
ব্যবসা-বাণিজ্যের ইতিহাসের এক কিংবদন্তিকে হারাল দেশ। স্যামসন এইচ চৌধুরীর একজন আদর্শ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি তিনি ছিলেন ওষুধ শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের দিকপাল। এ শিল্প তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হন এবং দেশের অন্যতম শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৩ সালে দেশে যে ওষুধ নীতি প্রণয়ন করে সেটাও স্যামসন এইচ চৌধুরীর অবদান। তিনি শুধু সফল শিল্পপতিই ছিলেনা,তিনি দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ করদাতাও ছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরীর মৃত্যুতে বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। গত ৫ জানুয়ারী’২০১২ বৃহস্পতিবা
র সকাল সোয়া ১০টায় বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোকগমন করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। স্যামসন এইচ চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী অনুষদ ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। স্ত্রী অনীতা চৌধুরী, ৩ ছেলে স্যামুয়েল এস চৌধুরী, তপন চৌধুরী, অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, একমাত্র মেয়ে রতœা চৌধুরী, নাতি-নাতনিসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি। স্যামসন এইচ চৌধুরীর এই নামটিকে অনেকেই তাকে চেনেন ‘ব্যবসার জাদুকর’ হিসেবে। যে ব্যবসাতেই তিনি হাত দিয়েছেন, সেই ব্যবসাতেই সোনা ফলেছে। দীর্ঘ ৫২ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি হার মানেননি কোন চ্যালেঞ্জের কাছেই। হঠাৎ বর্ণাঢ্য কর্মজীবন শেষে ৮৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। ব্যবসার এ কারিগর আরও কখনো ফিরবেন না আমাদের মাঝে। দেশের শিল্পোদ্যোগের ক্ষেত্রে আইকন হিসেবে পরিচিত এ ব্যক্তিত্ব হলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। সততা ও আদর্শের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ধৈর্য আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সব চ্যালেঞ্জ জয় করে প্রতিষ্ঠা করেছেন দেশের অন্যতম বৃহৎ এক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ফার্মেসি থেকে গড়ে তুলেছেন স্কয়ারের মতো বিশাল এক প্রতিষ্ঠান। ১৯৫২ সাল। স্যামসন এইচ চৌধুরী চাকরি করবেন না এমন দৃঢ়তায় একটি ফার্মেসির দোকান দিয়েছিলেন। কোন ব্যবসায়িক ধান্দায় নয়; ধুঁকতে থাকা মানুষের পাশে দাঁড়াতে। প্রাণ বাঁচাতে অপরিহার্য অনেক ওষুধ তৈরি হতো না দেশে। তাই স্যামসনের দোকানদার হওয়া সাজে না; করতে হবে ওষুধ কারখানা। কিন্তু এত কি সহজ ছিল সেই সময়ে একটি বাঙালি তরুণের ওষুধ কারখানার মালিক হওয়া? আজকের মতো ইন্টারনেট নেই, পিচঢালা রাস্তা নেই, বড় ভবন নেই, চাইলেই তথ্য মেলে না। সে এক অদ্ভুত সময়। এ সময়টা কী করে নিজের করে নিয়েছিলেন স্যামসন? বিভিন্ন সময়ে তার বয়ানে তা উঠে এসেছে। বাবা ই এইচ চৌধুরীকে বললেন ফার্মেসি করবেন। বাবা রাজি অতঃপর পাবনার আতাইকুলায় একটি ফার্মেসি হলো। এলাকায় তখন ডাক্তার রশীদ বলে সদ্য পাস করা একজন রোগী দেখতেন। এ ডাক্তার স্যামসনের বন্ধু। গ্রামে প্রতি সপ্তাহে হাট বসে। ডাক্তার রশীদকে হাটের দিন নিজের ফার্মেসিতে বসতে অনুরোধ করলে রাজি হন তিনি। সারাদিন রোগী দেখেন, খাওয়া-দাওয়া করেন, তাসটাস খেলে চলে যেতেন। ওই সময়েই পাবনায় একজন ফার্মাসিস্ট ছিলেন। ম্যালেরিয়ার ওষুধ বিক্রি করতেন। ১৯৪৭ সালে এ ফার্মাসিস্ট দেশ ত্যাগ করেন। তার জায়গা কিনে নিলেন একজন, যিনি পরে ওষুধ কোম্পানি এডরুকের মালিক হয়েছিলেন। মূলত এ কোম্পানিই তরুণ স্যামসনের বুকের ভেতর লেপ্টে থাকা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নকে উসকে দিয়েছিল। ১৫ হাজার টাকা সম্বল। ছোট্ট একটা জায়গা ভাড়া নিয়ে বন্ধুদের নিয়ে কারখানা তৈরি করলেন। মিক্সচার সিরাপ, আর কিছু ট্যাবলেট বানানো হতো এখানে। প্রথম দিকে কোন ঝাড়ুদার ছিল না। নিজেরাই নিজেদের কারখানা ঝাড়ু দিতেন প্রতিদিন। তিন বছর পর কোম্পানির পুঁজি দাঁড়াল ৮০ হাজার টাকা। যাত্রা শুরুর চার বছরে মুনাফার মুখ দেখে স্যামসনদের স্কয়ার। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ঢাকায় ইত্তেফাক মোড়ের কাছে স্কয়ারের নতুন অফিসের কাজ শুরু হলো। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করাটা আজকের মতোই কঠিন ছিল। এরপর ধীরে ধীরে ফলবতী স্কয়ার বড় হতে থাকল। সঙ্গে স্যামসনের ভাবনাও প্রসারিত। স্কয়ার শেয়ারবাজারে এল। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে ব্যক্তিপর্যায়ে দেশের সর্বোচ্চ করদাতাদের একজন। মৃত্যুর আগ পর্যন্তও তিনি তা-ই ছিলেন। এমন নয় যে, তিনি দেশের সেরা ধনী। ওষুধশিল্পের আজকের অবস্থানের পেছনে স্যামসন চৌধুরীর ভূমিকা অসামান্য। শুধু নিজের প্রতিষ্ঠানকে সেরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেননি, এ খাতকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছেন। যখন ওষুধ নীতি করা হয়, তখন লেগে থেকেছেন একটি শিল্পবান্ধব নীতি প্রণয়ন যেন হয়। তার বিদায়ে ওষুধশিল্প অভিভাবকহীন হয়ে পড়ল বলে মনে করছেন শিল্পসংশ্লিষ্টরা।

ব্যাংকিং খাতের কাছে জিম্মি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি
মো. রেজাউর রহিম 
সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা প্রত্যাহারে ব্যাংকিং খাতের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। ফলে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং রফতানি খাতে বিপর্যয়ের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলার জারি করে শিল্প খাতের ঋণের সুদ হারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে নিয়েছে। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যে হারে সুদ ধার্য করবে তা মেনে নিয়েই উদ্যোক্তাদের ঋণ নিতে হবে এবং ব্যাংকগুলোর শর্ত মেনে নিতে হবে বিনিয়োগকারীদের। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে একটি সার্কুলার জারির মাধ্যমে সকল তফসিলি ব্যাংককে এ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, প্রি-শিপমেন্ট রফতানি ঋণ ও কৃষি ঋণ ছাড়া অন্যান্য খাতে ব্যাংক ঋণের ওপর সুদ হারের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার করা হলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন দেশের শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, এর মাধ্যমে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি আরেক দফা ব্যাংকিং খাতের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ল। সুদ হারের সীমা তুলে নেয়ার এ সিদ্ধান্ত মোটেই যথাযথ হয়নি বলেও মনে করেন তারা।  সংশ্লিষ্টদের মতে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বাজেট সাপোর্ট বিষয়ক ১শ’ কোটি ডলার ঋণ পেতে, তাদের চাপে ঋণের সর্বোচ্চ হার তুলে দেয়া হয়েছে। ফলে দেশের মানুষকে আরো মুদ্রাস্ফীতির চাপে ফেলা হলো বলেও মনে করেন তারা। জানা গেছে, এর আগে গত ৯ মার্চ শিল্প খাতের ঋণের সুদ হারের সীমা তুলে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে কৃষি ও মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদ হার ১৩ শতাংশ, চাল, চিনি, গম, ভোজ্যতেল, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের সুদ হার ছিল সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ । এর মাধ্যমে ৯ মাস পর ঋণের সর্বোচ্চ সীমা প্রত্যাহার করে নিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণের সুদ হার উš§ুক্ত করার ফলে ব্যাংকগুলো বেপরোয়াভাবে শিল্প ও আমদানি ঋণে লাগামহীন সুদ আরোপ করবে। এতে ব্যাংকের আয় বাড়লেও উচ্চ হারের সুদ ও সার্ভিস চার্জের কারণে শিল্প খাত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। এদিকে, শুধু ব্যাংকিং খাত নয় গোটা অর্থব্যবস্থার অভিভাবক এবং বিচারক হিসেবে যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে সেই বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছে। জানা গেছে, সুদ ও সার্ভিস চার্জ নিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে চলছে চরম অরাজকতা। উচ্চ হারের সুদের কারণে উদ্যোক্তারা দিন দিন দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে পুরোপুরি জিম্মি হয়ে পড়ছে সাধারণ কৃষক থেকে ব্যবসায়ী ও শিল্পমালিকরা। শিল্পপ্রতিষ্ঠান রুগ্ন হওয়ার জন্য যেমন ব্যাংকগুলো দায়ী, ঠিক তেমনি দায়ী খেলাপি হওয়ার জন্যও। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ব্যাংক সুদ এবং সার্ভিস চার্জের কারণেই প্রতিবছর দেশে রুগ্নশিল্প বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে বাড়ছে ঋণ খেলাপির সংখ্যা। শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের ফলে ঋণের সুদ হারের সর্বোচ্চ সীমা বলে এখন আর কিছু থাকবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সার্কুলার অনুযায়ী ব্যাংক এবং ঋণগ্রহীতা মিলেই সুদ হার কত হবে তা নির্ধারণ করবে। এক্ষেত্রে শতভাগ কিংবা তার চেয়েও বেশি সুদ হার ধার্য হতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের ফলে নতুন বিনিয়োগ করতে আগ্রহী অনেক শিল্পোদ্যোক্তাই এখন পিছু হটতে শুরু করেছেন।  তারা বলছেন, ব্যাংকিং খাতের কাছে এমনিতেই দেশের অর্থব্যবস্থা অনেকাংশে জিম্মি, তার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে আশংকা তাদের। এছাড়া উচ্চ সুদের কবলে পড়ে দেশে রুগ্নশিল্পের তালিকাও আরো দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন চেম্বার ও এসোসিয়েশনের পক্ষ  থেকে ঋণের সুদ হার কমানোর দাবি দীর্ঘদিনের। আগামী বাজেট ঘোষণার আগে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের বাজেট প্রস্তাবনায়ও সুদ কমানোর প্রস্তাব রয়েছে। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদ হারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে নেয়ায় উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ থেকে আবার পিছুটান দিয়েছেন। এব্যাপারে দেশের প্রধান রফতানি খাত-পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারদের সংগঠন বিজিএমইএ’র দ্বিতীয় সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশ সময়’কে বলেন, এ মুহূর্তে পোশাকশিল্পের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মন্দার কারণে দরপতন, এছাড়া ব্যাংক ঋণের সুদের বিষয়টিতো রয়েছেই। তিনি বলেন, পোশাকশিল্পের বর্তমান প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিক রাখতে হলে দেশের রফতানি বাণিজ্যে ঋণের সুদের ওপর ৫ শতাংশ ভর্তুকী প্রদান অথবা সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। অন্যদিকে, যারা ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ করেছেন তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এর ফলে ব্যাংকিং খাতে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছিল তা দূর হবে। 

সারাদেশে আরো ৪শ’ খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে
আইএনবি, ঢাকা
দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নিরাপদ মজুত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ধারণ ক্ষমতা আগামী দু’বছরে ২২ লাখ এবং ২০২১ সাল নাগাদ ৩০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করতে নতুন ৪০৫টি খাদ্য গুদাম এবং সাইলো নির্মাণ করা হচ্ছে।  খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসব গুদামের মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ১৪০টির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকী ২৬১টির মধ্যে ১৭০টির নির্মাণ কাজ আগামী ডিসেম্বর এবং অন্যগুলোর কাজ চলতি বছরের জুন নাগাদ শেষ হবে। মন্ত্রণালয় থেকে আরো জানানো হয়, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময়ে দেশের সরকারি খাদ্যগুদামের ধারণক্ষমতা ছিল মাত্র ১৫ লাখ টন। প্রকৃত মজুত ক্ষমতা সাড়ে ১৪ লাখ টনের মতো। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার নিরিখে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে এ মজুত ক্ষমতা পর্যাপ্ত নয়।এ পরিস্থিতিতে সরকার খাদ্যগুদামের ধারণক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উদ্যোগের অংশ হিসাবে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় এক লাখ ১০ হাজার মে.টন ধারণক্ষমতার ১৪০টি গুদামের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে এক লাখ ৩৫ হাজার মে.টন ধারণক্ষমতার ১৭০টি গুদাম নির্মাণের কাজ চলছে। চলতি বছরেই এসব গুদামের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর অংশ হিসাবে চট্টগ্রামের হালিশহরে ৮৪ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার নতুন ৯১টি খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী জুনের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এর বাইরে  জাপানী সহায়তায় মংলাতে জেটিসহ ৫০ হাজার টন ধারণক্ষমতার একটি সাইলো নির্মাণ করা হচ্ছে। ভূমি উন্নয়ন, পুকুর খনন, সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলছে। পরামর্শক সংস্থা প্রকল্প এলাকা জরিপ, মাটি পরীক্ষা, পশুর নদীর চ্যানেল জরিপসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। পাশাপাশি বগুড়া জেলার শান্তাহারে ২৫ হাজার টনের মাল্টিস্টোরেড গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। জাইকা এ গুদাম নির্মাণে সহায়তা দিচ্ছে। চট্টগ্রামে এক লাখ টনের একটি সাইলো ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সাহয়তায় দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সাইলো নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিরূপণের জন্য সমীক্ষা কাজ চালানো হচ্ছে। আগামী জুনের মধ্যে সমীক্ষা কার্যক্রম শেষ হবে। এ সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে আরো নতুন সাইলোর নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হবে। সাইলোগুলোর নির্মাণ কাজ ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে। বাংলাদেশ আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ সাইলো নির্মাণ করা হবে। এসব সাইলোর মোট ধারণক্ষমতা হবে ১০ লাখ মে.টন। এগুলো মুলত চাল সংরক্ষণের জন্য নির্মাণ করা হবে। কমপক্ষে তিন বছর সংরক্ষণ করা যায় এমন ব্যবস্থা থাকবে এসব সাইলোতে। চাল বস্তায় সংরক্ষণ না করে এ সাইলোতে ঢেলে খোলা অবস্থায় রাখার ব্যবস্থা করা হবে। সেখান থেকে ৫০ কেজির চটের বস্তায় এবং ২ কেজি, ৩ কেজি ও ৫ কেজি পলিব্যাগে বিভিন্ন পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্থানীয় (এলএসডি)  গুদামে সরবরাহ করা হবে। এসব এলএসডি থেকে পলিব্যাগের চাল ভিজিডি, ভিজিএফ, ওএমএসসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ভোক্তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এছাড়া ট্রাকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা ওএমএস কর্মসূচির চাল সাইলো থেকে সরবরাহের ব্যবস্থাও রাখা হবে। এ মন্ত্রণালয় জানায়, এ প্রকল্পের বিষয়ে আইডিএ থেকে এক মিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে নারায়ণগঞ্জ সাইলো, নারায়ণগঞ্জ সিএসডি, আশুগঞ্জ সাইলো, খুলনা শহরের মহেশ্বরপাশায় বিদ্যমান পরিত্যক্ত স্টিল সাইলো, দিনাজপুর সিএসডি’র বিদ্যমান অব্যবহৃত ভূমিতে নির্মাণের স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। প্রকল্পের পরামর্শক সংস্থা নিয়োগের কারিগরি এবং আর্থিক মূল্যায়ন কাজ শেষ করেছে। এ জন্য বিশ্বব্যাংক ৩’শ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২২শ’ কোটি টাকার সফট লোন দিচ্ছে।এছাড়া সরকারি খাদ্যগুদামের ধারণক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিদ্যমান গুদামগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। এ জন্য ১৭ কোটি ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যগুদাম ও সহায়ক অবকাঠামো পুন:নির্মাণ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ৬১টি কেন্দ্রের ১৫৮টি খাদ্যগুদাম সংস্কার ও আনুষঙ্গিক সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরো জনানো হয়, আটার চাহিদা পুরণে বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারি পদক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি করতে ঢাকার পোস্তাগোলায় একটি আধুনিক ময়দাকল নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্য একটি খসড়া প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে এখানে একটি ময়দা মিল থাকলেও তা বিগত জোট সরকারের সময়ে বিক্রি করে দেয়া হয়। ফলে এ বছরে খোলাবাজারে চালের সাথে আটা বিক্রির কর্মসূচি গ্রহণ করলে বেসরকারি আটা কল মালিকদের সহায়তায় সরকারি গুদামের গম সরবরাহ করে অর্থের বিনিময়ে আটা করে আনতে হয়েছে। এ ব্যাপারে  খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বর্তমান সরকার দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সুষ্ঠু খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনা  গড়ে তুলতে বেশ কটি যুগান্তকরি পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদেেপর কারণে দেশে খাদ্য উৎপাদন অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্নতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। সাথে সাথে সুষ্ঠুু খাদ্য ব্যবস্থাপনার ফলে দেশে খাদ্যশস্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচীর মাধ্যমে অতিদরিদ্র দুস্থ, স্বল্পআয়ের জনগোষ্ঠী, মওসুমী অভাবগ্রস্ত (মঙ্গা) এলাকা ও শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে, সাশ্রয়ী মূল্যে ও ন্যয্যমূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হয়েছে। অবশ্য এজন্য সরকারের খাদ্যমজুদ ব্যবস্থা আরো উন্নত ও ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, মজুদ ব্যবস্থা আরো উন্নত ও ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ইতোমধ্যে কার্যকর কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশে সরকারিভাবে খাদ্য মজুদের ধারণক্ষমতা  ৩০ লাখ  টনে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে এসব কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, সরকারের এসব কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে আগামী দুবছরে এ ক্ষমতা ২২ লাখ টনে উন্নীত হবে।

বিশ্ব অর্থনীতির বেহাল অবস্থা
মনির তালুকদার
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় পুনরুদ্ধার কার্যক্রম সেভাবে গতি পাচ্ছে না। ঋণ সংকট, বাজেট ঘাটতি, বেকারত্ব, ব্যয় হ্রাস, পুঁজিবাজারে অস্থিরতাসহ নানান ঘটনায় স্থবির হয়ে পড়া পশ্চিমা অর্থনীতির টানাপোড়েনের প্রভাব পড়ছে ছোট-বড় সব দেশের অর্থনীতিতে।
জাপানও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে সাম্প্রতিককালে জাপান বেশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সুনামি ও ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপ থেকে ধীরে ধীরে মাথা তুলতে শুরু করেছে পরিশ্রমী জাতি হিসেবে পরিচিত ওই দেশটি। তবে জাপানের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির অমোঘ টালমাটাল অবস্থা।
পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনীতির চরম এই সংকট থেকে উত্তরণ ও আরেকটি বিশ্ব মন্দা মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের দৌড়ঝাঁপ চলছে নিরন্তর। নানাভাবে তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ক্রমেই বাড়ছে। সরকারি এবং বিরোধী দলের যৌথ উদ্যোগও ঘাটতি কমাতে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকারি ব্যয়-হ্রাসের উদ্যোগের বিরোধিতা জোরদার হচ্ছে এক দেশ থেকে অন্য দেশে। অন্যদিকে ইউরোপের আর্থিক সংকট এমন এক জায়গায় উপনীত হয়েছে যে, ইউরো-জোন ভেঙে যাওয়ার কথাও উঠেছে। বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির এই বিপর্যয়ের জন্য ধনীদের দায়ী করে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন স্তরের লাখ লাখ মানুষ। পুঁজিবাদবিরোধী ওই আন্দোলনের শুরু খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেই ওয়াল স্ট্রিটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। তার পরও নানা কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে মাঠে নামছে লাখ লাখ ছাত্র-যুবক, শ্রমিক এবং নানা পেশার মানুষ। ওয়াল স্ট্রিটবিরোধী আন্দোলন হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত পাওয়া ওই গণআন্দোলন ক্রমেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত। বিভিন্ন দেশের সরকার দমন-পীড়ন, গ্রেফতার এবং নির্যাতন করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নামা লাখ লাখ জনগণকে রুখতে পারছে না। এরই মধ্যে আন্দোলনের বয়স তিন মাস হতে চলছে। ওই আন্দোলন শুরু হয়েছিল জুকোটি পার্ক থেকে। আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়াল স্ট্রিটের দখল নিতে না পারলেও ব্র“কলিন ব্রিজসহ নিউইয়র্কের বিভিন্ন রাস্তায় মিছিল করে আন্দোলনকারীরা। ওই সমগ্র আন্দোলনের একমাত্র ইতিবাচক সাধারণ স্লোগানটি হচ্ছে জনগণের ক্ষমতায়ন চাই এবং চাই প্রকৃত গণতন্ত্র।
সাম্প্রতিককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে শুরু হওয়া ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ আন্দোলন বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সাম্রাজ্যবাদের মূল আখড়া যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে সৃষ্ট সামাজিক অস্থিরতা, মাত্রা ছাড়ানো বেকারত্ব, ধনী-গরিবের সম্পদের আকাশ-পাতাল তারতম্য প্রভৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে দেশটির তরুণ সমাজ। তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বিশ্বের তথাকথিত বিভিন্ন উন্নত, গণতন্ত্রের ধ্বংজাধারী দেশে ওই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো। সামাজিক বৈষম্য, বেকারত্ব, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মদদে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিগ্রহ এবং রাজনীতির ওপর কর্পোরেট জগতের আধিপত্য নিরসনের দাবিতে এ আন্দোলন স্বাভাবিকভাবেই সারা বিশ্বের আপামর সাধারণ জনগণের সমর্থন আদায়ে সফল হয়েছে। অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট ও বিভিন্ন দেশে এর সমগোত্রীয় আন্দোলনগুলো মূলত পরিচালিত হচ্ছে ছাত্র-যুব ও শ্রমিকসহ পেশাজীবী সমাজের প্রতিনিধিদের দ্বারা। যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের পরিমাণ ১৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে সরকারের ব্যয় কমানোর বিভিন্ন দিক নিয়ে যখন তুমুল আলোচনা চলছিল ঠিক তখনই ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির ওই খবর প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কেন্দ্রীয় রাজস্ব বিভাগ জানিয়েছে, সরকারের অতিমাত্রায় ঋণ নেয়ার কারণে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে মোট ১৫ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। মার্কিন সরকারের বর্তমান ঋণের পরিমাণ দেশটির ২০১১ সালের প্রক্ষেপিত মোট অর্থনীতির প্রায় ৯৯ শতাংশ। বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতির দেশটির ঋণ গ্রহণের এই উচ্চহারকে অত্যন্ত নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন দেশটির বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছরের ২ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। দেশটির ঋণের পরিমাণ ১৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি স্পর্শ করা সরকারি দল ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় দলের জন্য একটি বড় ধরনের আঘাত। কেননা উভয় দলের সমন্বয়ে গঠিত মার্কিন কংগ্রেসের একটি প্যানেল যৌথভাবে সরকারের ব্যয় কমানোর বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছে। ঋণের পরিমাণ এমন এক সময় বেড়েছে যখন দেশটি চলতি বছরের ২৩ নভেম্বরের মধ্যে অচলাবস্থায় কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা করছিল। তবে প্রতি মাসে ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। গত দুই বছর দরে চলা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট কাটার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। একের পর এক সম্মেলন করেও কূলকিনারা করতে পারছে না ওই অঞ্চলের দেশগুলো। সম্মেলন শেষ হতে না হতেই পরিস্থিতি নতুন মোড় নিচ্ছে। বিভিন্ন রকমের অর্থনৈতিক তত্ত্ব আমলে এনেও সামাল দেয়া যাচ্ছে না ওই ভয়াবহ বিপর্যয়। পুঁজিবাজার থেকে শুরু করে শিল্প উৎপাদন ও ভোগ্যপণ্যের বাজারে নেতিবাচক অবস্থা দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার স্থবির হয়ে পড়েছে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে জার্মানি ও ফ্রান্সের আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ইউরো অঞ্চলে অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে স্থবিরতা কাটেনি। অন্য দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার আগের চেয়ে কমে যাওয়ায় কিংবা কোনোটির নেতিবাচক হওয়ায় সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। গ্রিস আর ইতালির সংকটের মধ্যে ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিয়ে মৌলিক প্রশ্ন উঠেছে। দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোকে তাড়িয়ে শক্তিশালীদের নিয়ে নতুন সূচনা, নাকি বিপদের মধ্যেও পরস্পরের প্রতি সংহতি বজায় রাখা উচিৎ। এ নিয়ে বিতর্ক তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। ব্যয-হ্রাসের মাধ্যমে ২৭টি দেশের ওই জোট ২০১২ সালে এর লক্ষ্যমাত্রা ১৭৪ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে। যেটি ২০১১ অর্থবছরের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। ইইউ জোটের ঋণ সংকটের কারণে বড় আকারের ব্যয় কমানোর ওই পদক্ষেপকে কৃচ্ছ্র সাধন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে বাজেটে ১৮০ বিলিয়ন ডলারের ব্যয় সংকোচনের প্রস্তাব গত ২৬ অক্টোবর ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে বাতিল হয়ে যায়। ভোটদাতাদের মধ্যে অনেকেই ব্যয় কমানোর ব্যাপারে ইইউর দেশগুলোকে বাধ্য করার বিপক্ষে ছিল যদিও অনেকেই বলেছিল এটা করা না গেলে এর জন্য উচ্চহারে ঋণ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজেটে ২ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানো ছিল রাষ্ট্রগুলোর জন্য সর্বোচ্চ এবং এটাই হলো বাস্তবতা। তবে ওই ব্যয় বৃদ্ধির কারণে খারাপ অর্থনীতির দেশগুলো সমস্যায় পড়তে পারে। বাড়তি ব্যয় নির্বাহের জন্য দেশগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে মনে করেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা ইইউ পার্লামেন্ট ২০১২ সালৈ ১৩৩ বিলিয়ন ইউরো ব্যয় করবে, যা ২০১১ সালের থেকে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ইউরো বেশি। সম্প্রতি ইইউর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ অক্টোবর মাসে দাম বৃদ্ধির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইউরোপজুড়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে আর ব্রিটেনে তা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ শতাংশ। একই সময়ে ইইউ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে ২০১২ সাল জুড়ে ইউরোপে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশ হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সব দেশেই সংকট আসে এবং কিছুকাল পর তা কেটে যায়। কিন্তু ইউরো অঞ্চলের সংকটের চূড়ান্ত সমাধান সূত্র যে কী, তা এখনো অজানা। গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল ও ইতালির মতো একেকটি দেশের সংকট কাটাতে বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চলছে। সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে এ অঞ্চলের নেতারা একমত হলেও তা বাস্তবায়ন সুদূরপরাহত। কম-বেশি সাফল্য পেলেও সার্বিক সমাধান সূত্র দেখা যাচ্ছে না। আরো কতকাল ধরে জরুরি ভিত্তিতে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে যেতে হবে, এমন পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা ও ধৈর্যই বা কতদিন থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে সর্বশেষ ইতালির মতো বড় অর্থনীতির দেশের সংকট সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে জার্মানি ও ফ্রান্সসহ ইউরোপীয় দেশগুলো। বর্তমানে ইউরোপ চাকরির বাজারে মন্দা শুরু হয়েছে। চলতি বছরে ইউরোপজুড়ে বেকারত্বের হার বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২১ শতাংশ তরুণ-তরুণীর এখন কোনো কাজ নেই। আফ্রিকার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই ভয়াবহ। উত্তর আফ্রিকার আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্বে লোহিত সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত সাহারা মরুভূমি সন্নিহিত অঞ্চলকে সাহেল অঞ্চল বলে। ওই অঞ্চলের খাদ্য পরিস্থিতি আবার উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছে গেছেÑ সংবাদ সম্মেলনে অক্সফামের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপক এরিক হ্যাজার্ড ওই কথা বলেছেন। সাহেল অঞ্চলের ৫টি দেশ মৌরি তানিয়া, শাদ, মালি, নাইজার ও বারকিনা ফাসোর ৯০ লাখের বেশি মানুষ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হবে। ওই অঞ্চলের দেশগুলোর খাদ্যশস্যের ঘাটতি প্রায় ২৫ লাখ টন। গত বছরের তুলনায় শাদ ও মৌরি তানিয়ায় খাদ্য শস্যের উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই অবস্থায় নাইজারের প্রায় অর্ধেক মানুষ অর্থাৎ প্রায় ৬০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে মারাÍক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অপরদিকে ওই সংকট সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া ও জিবুতির ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে অনাহারের ঝুঁকির মুখে দাঁড় করিয়েছে। বিগত তিন মাসে পূর্ব আফ্রিকার ছোট দেশ সোমালিয়াতে দুর্ভিক্ষজনিত কারণে অনাহারে প্রায় ২৯ হাজার শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। গোটা দেশে আরো প্রায় ১ লাখ শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে। মোট ৭৫ লাখ জনসংখ্যার দেশ সোমালিয়াতে ৩০ লাখের বেশি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজন ন্যূনতম দৈনিক খাদ্যের। তাছাড়া সাহেল অঞ্চলের অন্য দেশগুলো যেমন- সেনেগাল, দক্ষিণ আলজেরিয়া, উত্তর নাইজেরিয়া, দক্ষিণ সুদান, দারফুর, উত্তর ইথিওপিয়া এবং ইরিত্রিয়ার মানুষ খাদ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। আইএমএফ প্রধান ক্রিস্তিন লাগার্দত্ত আরেকটি বিশ্ব মন্দার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ইউরোপ ও আমেরিকা ঠিকমতো নিজেদের ঘর গোছাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে আরো একটি বড় বিপর্যয়ের মধ্যে তলিয়ে যাবে পুরো বিশ্ব বলে সতর্ক করে দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। 

এক এগারোর জন্য দায়ী কে? 
সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ
মাঝে মাঝে বিশেষ করে ১/১১ এলে নানা ধরনের আলোচনা হয়। দাবি ওঠে যে ১/১১-এর নায়কদের তথা খলনায়কদের বিচার করা প্রয়োজন। বিএনপি সবচেয়ে বেশি সোচ্চার এবং তীব্র সমালোচক কারণ তারা মনে করে যে, তাদের সামনে থেকে বাড়া ভাতের থালা কেড়ে নেয়া হয়েছে। ছলে-বলে-কৌশলে ২০০৭-এর নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছিল। যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান কে হবেন এবং তাদের লোক হবেন এ কথা মাথায় রেখে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা বাড়িয়ে দেয়া হলো। এক কোটি জাল ভোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই জাল ভোট তৈরি করার জন্য কতোরকম নিষ্পেষণ করা হয়েছিল ভোটার নিবন্ধন অফিসারদের ওপর, তার একটি কাহিনী পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল। শেরেবাংলা নগর সরকারি বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক এরকম কাজ করতে অস্বীকার করায় শুধু তিনি নন, তার গোটা পরিবারের ওপর অত্যাচার চালানো হয়েছিল বিভিন্ন কায়দায় যেমনÑ শাস্তিমূলক বদলি। সর্বোপরি এমন একজন রাষ্ট্রপতি ছিলেন সে সময় যার আচার-আচরণ প্রচ-ভাবে বিতর্কমূলক এবং সন্দেহজনক। হ্যাঁ, ১/১১-তে যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন তাদের বিচার হওয়া উচিত। তা উচিত বটে, তবে সেই সঙ্গে ’৭৫-এ এবং ’৮২-তে যারা জনগণের সরকারকে উৎখাত করেছিল তাদেরও তো বিচার হওয়া প্রয়োজন। অবশ্য ইতোমধ্যে মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক এসব সরকার অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। তবে দুর্ভাগ্য যে, এই দুর্ঘটনার কুশীলবদের সঙ্গে কয়েকজন মাননীয় বিচারপতিও জড়িত। আইন সবার জন্য সমান। অতএব তাদেরও বিচার হওয়া উচিত বৈকি? প্রয়োজনবোধে মরণোত্তর বিচার হবে, মরণোত্তর পুরস্কার যদি দেয়া যায়, তাহলে বিচার করতে অসুবিধা কোথায়? এখন আসি ১/১১ প্রসঙ্গে। ১/১১ মানে ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখে সাবেক সিএসপি এবং বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা ফখরুদ্দীন আহমদের ক্ষমতা গ্রহণের তারিখ। তিনি চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। আমরা ১/১১ বলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১-এর কায়দায়। অন্যথায় আমরা কিন্তু প্রথমে দিন, তারপর মাসের নাম বলি। সে হিসেবে আমাদের বলার কথা ১১/১। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন-উ-আহমেদ ছিলেন নেপথ্য নায়ক। যে জন্য ফখরুদ্দীনের সরকারকে বলা হয় সেনাসমর্থিত সরকার। আর ’৭৫ এবং ’৮২-তে এসেছিল সেনাদের সরকার। এবার আসি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে। বস্তুত ৪টি সংসদীয় নির্বাচন হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। প্রথম নির্বাচনটি হয় ১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের সরকারের অধীনে। এটি সংবিধানের বিধি অনুযায়ী হয়নি কিন্তু সবকটি বিরোধী দলের সমঝোতার ভিত্তিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জনাব সাহাবুদ্দীন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মোটামুটি গ্রহণযোগ্য এবং কারচুপিবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। তবে জামাতে ইসলামী বাইরে থেকে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু যদিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সকলের প্রতি নিরপেক্ষ মনোভাব দেখানোর কথা, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। সাহাবুদ্দীন সরকার আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রতি সমান দৃষ্টি দিয়েছিল। কিন্তু এরশাদের জাতীয় পার্টির প্রতি সমদৃষ্টি দেয়া হয়নি। এক কথায় বলা চলে যে, জাতীয় পার্টির প্রতি প্রচ-ভাবে অবিচার করা হয়েছিল। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সন্নিবেশিত হওয়ার পর মোটামুটি নির্বিঘেœ ’৯৬ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০০১ সালেই কিছু সমস্যা দেখা দিলো। এটুকু না ঘটলে নির্বাচনের ফলাফলে তেমন প্রভাব পড়তো না। কিন্তু এর ফলে যা প্রতিভাত হয়ে উঠলো, তাহলো তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকেও কায়দা-কৌশল করে নিজের উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহার করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় তিনজন ব্যক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা এবং চিফ ইলেকশন কমিশনার। ২০০৭ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি সেই পথ লক্ষ্য করে চলতে লাগলো। রাষ্ট্রপতি তো তাদের খাস আদমি। প্রধান উপদেষ্টার জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের অবসর গ্রহণের বয়স বাড়ানো হলো। আর চিফ ইলেকশন কমিশনার হিসেবে যাকে নিয়োগ দেয়া হলো, তার কথা না বলাই ভালো। যখন বিএনপির ইপ্সিত ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা করা গেলো না তখন রাষ্ট্রপতি নিজেই সেই পদ দখল করে বসলেন। ২০০৬ সালের ২৭/২৮ অক্টোবরে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। তারপর আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই দলের ভেতর সংঘাত শুরু হয়ে যায়। অবশ্য ইতোমধ্যে উভয়পক্ষ জোট বেঁধেছে। তবে জেনারেল এরশাদ হয়ে দাঁড়ালেন ট্রাম্প কার্ড। তাকে দলে ভেড়ানোর জন্য উভয় নেত্রী প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেন। এরশাদকে অতীতের স্বৈরাচার আখ্যায় আখ্যায়িত করেছিলেন উভয় নেত্রী। কিন্তু নীতিহীন রাজনীতির কাছে সব ধুয়েমুছে যায়। শেষ পর্যন্ত জয়ী হলেন শেখ হাসিনা। এরশাদ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোটে যোগ দিলেন। ২০০৬ সালে অক্টোবরের শেষভাগ থেকে ১১ জানুয়ারি ২০০৭ পর্যন্ত দেশের অবস্থা কেমন ছিল বিশেষ করে ঢাকা শহরের অবস্থা। গুলিস্তান-মতিঝিল দুটো সংগ্রামরত জোটের দখলে। এক অঞ্চলে দেখা যেতো গজারি কাঠের ডগায় ঝা-া বেঁধে উগ্রমূর্তি ধারণ করে একদল রাজনৈতিক কর্মী ঘোরাফেরা করছে। অপর অঞ্চলে লগিবৈঠা হাতে আরেক দল। জাতীয় জীবনে দেখা যায় আতঙ্ক এবং স্থবিরতা। চারজন উপদেষ্টা সমান সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করে ব্যর্থ হন এবং পদত্যাগ করলেন। আজ তাদের ভেতর একজন ইদানীং মিডিয়ার সামনে নানা কথা বলছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছেন। তবে তিনি বা তারা যে ব্যর্থ হলেন, সে ব্যাপারে খুব পরিষ্কার বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে তো প্রশ্ন করা যায় যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এ গ্যারান্টি কি দেয়া যায়? এখন যাই বলা হোক না কেন, ১১ তারিখে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল তাকে বিএনপি-জামাতের হার্ডকোর নেতাকর্মী ছাড়া দেশের আপামর জনসাধারণ স্বাগত জানিয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের ব্যর্থতার জন্য সে সরকার জনপ্রিয়তা হারিয়েছিল, সেটা ভিন্ন কথা। এখন বলা হয়ে থাকে যে, তারা ৯০ দিনের বেশি ক্ষমতায় থেকে অবৈধ কাজ করেছে। এখানেও আমরা ভুল করছি। সংবিধানে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেছি, এটি সেভাবে গঠিত হয়নি। ফলে তারা কারো কাছে দায়বদ্ধ নন। এখন বলা হয়ে থাকে যে, এরা অবৈধভাবে ক্ষমতায় ছিল। হয়তো হবে তাই, তবে এটা নতুন নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ শাসিত হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলদারদের দ্বারা। কেউ তো এ প্রশ্ন তুলছেন না। সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সুশাসনের জন্য প্রয়োজন অনেক কিছুর। প্রথমেই প্রয়োজন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের। স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ এসব প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে হবে। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক যে, চারটি গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসীন হলো। তারা উভয়েই প্রশাসনকে প্রবলভাবে দলীয়করণ করেছে। এটা কি কল্পনা করা যায় যে, স্বপদে বহাল থেকে নির্বাচনী প্রচার চালানো যায়। এই বাংলাদেশে তাও ঘটেছে। কর্মরত বিচারক নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য পূর্ব থেকে প্রচার চালিয়েছেন। এহেন পরিস্থিতিতে জনগণ ভেবেছিলেন যে, নতুন তত্ত্বাবধায়ক তাদের জন্য কিছু কল্যাণ করবে। তাতো হলো না। বরঞ্চ কিছু কিছু সামরিক কর্মকর্তা পাকিস্তানের মিলিটারি একাডেমি কাকুল সিনড্রমে প্রবাহিত হয়ে উল্টো-পাল্টা কাজ করে বসলেন। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। সেখানে সেনাক্যাম্প করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এটা করার ফলে একটা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কি ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেলো। আর যেটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং এটি কোনো অবস্থাতে মেনে নেয়া যায় না। তাহলো শিক্ষক-ছাত্রদের ওপর নির্যাতন। পাকিস্তানি গুরুদের কাছ থেকে নির্যাতন করার যে দীক্ষা সেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারা পেয়েছিলেন, তাদের ভেতর কয়েকজন সেই শিক্ষাকে কাজে লাগালেন। আমরা হতবাক হয়েছিলাম যে কিভাবে আমাদের সেনাবাহিনী তাদেরই আপনজনের ওপর এহেন মধ্যযুগীয় নির্যাতন চালাতে পারে।
এখানে আরো একটি কথা বলতে হয়, সিলেটের সন্তান আনোয়ার চৌধুরী ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। তার এক উত্তরসূরি এই মর্মে সাফাই গেয়েছেন যে, ১/১১-এর ঘটনাবলীর সঙ্গে আনোয়ার চৌধুরীর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তা হয়তো ছিল না। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনের সময় তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, এই আন্দোলন করার জন্য উস্কানি দেয়া হয়েছে। এটি কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত, অজ্ঞাতপ্রসূত তো বটেই। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ছিলেন ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। পাকিস্তানের এলিট সিভিল সার্ভিসের সদস্য। ডক্টরেট তো বটে। এতোকিছুর পরও তার বিবেক শাণিত হয়নি অন্যায় এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য। তিনি তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আমাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আমাদের বিষয় নিয়ে আমাদেরকে ভাবতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রমেই সংঘাতের দিকে এগুচ্ছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ ব্যক্তিগত ইগো, অসহিষ্ণুতা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অভাব এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতা। আর রাজনীতিতে আর্থিক দুর্নীতি বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ রাজনীতি এখন শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। স্বজনপ্রীতি এবং পরিবারতন্ত্র শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি এশিয়া মহাদেশে ব্যাপক। ভারতের বিজেপি থেকে অটলবিহারি বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গর্বভরে বলেছিলেন যে, ভারতে পরিবারতন্ত্র শেষ হলো। কিন্তু তা হয়নি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে, জোরেশোরে আবার পরিবারতন্ত্র ফিরে আসছে। শ্রীলঙ্কার বর্তমান রাষ্ট্রপতির বড় অবদান যে, তিনি দীর্ঘদিনের তামিল সংঘর্ষের অবসান ঘটিয়েছেন। কিন্তু তার বিনিময়ে তিনি বোধহয় বড় বেশি প্রতিদান আদায় করছেন। তার ভাইসহ জ্ঞাতিগোষ্ঠী ব্যাপকভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ আসন দখল করে চলেছেন। শ্রীলঙ্কাবাসীকে আবার একদিন ভয়াবহ পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে হবে কিনা তা সময় বলে দেবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিক সুশীল সমাজ সবাইকে অনুধাবন করতে হবে যে, ১/১১-এর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তারাই দায়ী। আর যেন সে পরিবেশ পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সে জন্য সজাগ থাকতে হবে। জনগণের সচেতনতা অনেক বেড়েছে। নারায়ণগঞ্জ এবং কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সে কথা মনে করে দেয়। কুমিল্লার রাজনীতিকরা জেলা পর্যায়ে যে সৌজন্য এবং দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন, তা এখন জাতীয় পর্যায়ে উন্নীত হওয়া প্রয়োজন। দেশের তথা জনগণের কল্যাণ যদি সবার আন্তরিক লক্ষ্য হয় তাহলে তো কলহ করার অবকাশ থাকে না। হলিয়ার দ্যান দাউ, এই মানসিকতা সকলকে পরিহার করতে হবে। দেশপ্রেম ব্যক্তিগত বা দলগতভাবে কারোরই পেটেন্ট রাইট নয়, সে কথা সবার মনে রাখতে হবে। ভাষাও সেভাবে সংযত রাখতে হবে। অপরের ভুল ধরার আগে কিংবা তার সমালোচনা করার আগে নিজের চেহারা, নিজের অতীত নিয়ে একটু ভাবলে সবার জন্য মঙ্গল হবে।
সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ : সাবেক ইপিসিএস ও কলামিস্ট।
বৃষ্টি ও পানি আল্লাহর অমূল্য নেয়ামত
॥ মুহাম্মদ আবু মুনীর ॥
মাটি, পানি, আলো, বাতাস সবকিছুই মানুষের উপকারে এসে থাকে। পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগি করতে এসবের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এর একটিকে বাদ দিয়ে আমরা বেঁচে থাকতে পারি না। আর এসবের নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন মহান স্রষ্টা আল্লাহ। পানি সাধারনতঃ নদী-সাগর, পুকুর ও মাটির নীচ থেকে পেয়ে থাকলেও বৃষ্টি পানির অন্যতম মাধ্যম। আর সরাসরি আল্লাহ নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ার অন্যতম বৃষ্টি। শ্যামলীময় সুশোভিত বসুন্ধরা বৃষ্টির স্পর্শেই মানুষের জন্য বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। বৃষ্টির ছোঁয়ায় ভূমিকে উর্বর ও উৎপাদনশীল করে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রকৃতি সজীবতায় ভরে ওঠে বৃষ্টির যাদুতে।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন এবং আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করে তদ্দারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেন। সুতরাং জেনে শুনে কাকেও আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করিও না” (সূরা বাকারা-২২)।
শান্তিময় পরিবেশ বজায় রাখতে আকাশ ও পৃথিবীকে সুশোভিত করা হয়েছে। বৃষ্টিকে শোভাবর্দ্ধন করতে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। শোভাবর্দ্ধন কেবল নয় বরং আমাদের চাহিদা পুরনে বৃষ্টিপাতের ফলে খাদ্য-শস্য, ফুলে-ফলে ভরপুর করে দেওয়া হয় ভূ-মণ্ডলকে। গ্রীষ্মের তাপদাহ কিম্বা প্রচণ্ড খরায় শস্যক্ষেত যখন ফেটে চৌচির হয়ে যায়, তখন একপশলা বৃষ্টি হলে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয় পৃথিবীতে। এটি আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা তাদের সকল ক্ষমতা একত্রিত করেও একাজটি করতে পারেন না। অথচ আল্লাহর মর্জি হলে মুহুর্তের মধ্যে একটি দেশ, মহাদেশ কিম্বা পৃথিবীকে বৃষ্টির স্পর্শ বুলিয়ে দিতে পারেন। এমনকি প্রচুর বৃষ্টির কবলে ফেলে দেওয়ার কাজটিও করতে পারেন। একাজের প্রতিবন্ধকতা সৃৃষ্টির ক্ষমতা যেমন মানুষের নেই, তেমনি কাজটি করিয়ে দেখানোর সামান্যতম শক্তিও কারো দেওয়া হয়নি। সবই আল্লাহর নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। আধুনিক জ্যোতি বিজ্ঞানীদের মতে, আদিতে আকাশ, নক্ষত্র, সূর্য, পৃথিবী ইত্যাদির পৃথক পৃথক সত্তা ছিল না। তখন মহাবিশ্ব ছিল অসংখ্য গ্যাসীয় কণার সমষ্টি, যাকে বলা হয় নীহারিকা। এই নীহারিকা পরবর্তীতে বহু খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং এসব খণ্ড ক্রমশ ঘনীভূত হয়ে নক্ষত্রপুঞ্জ, সূর্য, পৃথিবী ও অন্য গ্রহাদির সৃষ্টি হয়। পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলী একসাথে থাকাকালে মানুষের বা প্রাণীকুলের বসবাসের উপযোগিতা ছিল না। জীব বিজ্ঞানীদের মতে, সাগরের অভ্যন্তরে অর্থাৎ পানিতেই প্রোটোপ্লাযম (জীবনের আদিম মূলীভূত উপাদান) হতেই জীবের সৃষ্টি। আবার যাবতীয় জীব-দেহ কোষ দ্বারা গঠিত এবং প্রত্যেকটি কোষের অন্যতম মূল উপাদান হচ্ছে পানি। ভিন্নমতে পানি অর্থ শুক্র। (কুরতুবী)। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?” (সূরা আম্বিয়া-৩০)। মানুষের বাসযোগ্য করে সৃষ্টি করা পৃথিবীতে মানুষের জন্য রুজির ব্যবস্থার পাশাপাশি কল্যানকর করে গড়ে তোলা হয়। আর বৃষ্টিপাতের ফলে সবকিছুকে করা হয় স্বাভাবিক। প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত করতে সজীবতা ও সৌরভিত করা হয়। বিস্তীর্ণ মাঠ, গাছ-গাছালি, প্রাণিকুলের জীবনধারা ব্যাহত না হয় সেজন্য বৃষ্টি-পানির প্রয়োজন। এসব বিবেচনায় বৃষ্টিকে স্রষ্টার অপূর্ব দান ও শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। পবিত্র কুরআনের বাণী ‘আমি জলধর মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত করি, তদ্বারা উৎপন্ন করি শস্য উদ্ভিদ’ এই নেয়ামতের স্বাক্ষ্যবহন করে। আকাশ থেকে নেমে আসা বৃষ্টি, নদী-সাগর ও ভূগর্ভস্থ পানি না থাকলে পৃথিবীর কোন প্রাণি, গাছ-পালা কিছুই বেঁচে থাকতে পারতো না। আল্লাহর এই কুদরতে বিশ্বজাহান সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে আছে। বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিরাজি সমৃদ্ধ পৃথিবী তাঁর কুদরতি ইশারায় চলছে নিরবধি। পৃথিবীর গতিধারা প্রবাহিত হচ্ছে তাঁরই ইচ্ছায়।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “তিনিই সমুদ্রকে অধীন করেছেন যাতে তোমরা তা হতে তাজা মৎস্যাহার করতে পারো এবং যাতে তা হতে আহরণ করতে পারো রতœাবলী যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান করো;------ এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারো” (সূরা নাহল-১৪ ও ১৫)। আল্লাহর নির্দেশেই সবকিছু হয়ে থাকে। মানব জাতিকে আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েÑআশরাফুল মাখলুকাত করে সৃষ্টি করেছেন। জগতের সবকিছুকে মানুষের উপকারে সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ তাদের কর্তব্য-কর্মে স্বাভাবিকতা বজায় না রাখা এবং আল্লাহর নাফরমানি করার কারণে ঐসব (জগতের সবকিছু) মানুষের সাথে বৈরী হয়ে ওঠে। মানুষের উপর নেমে আসে অরাজকতা, কষ্ট ও দুর্ভোগ। সৃষ্টিজগতের সবকিছু জ্ঞানবানদের জন্য শিক্ষার উপযোগি করে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাতে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন বিরাজমান। রাত-দিন, সমুদ্র-নদী, আকাশ-জমিন, ঝড়-বৃষ্টি, পশু-পাখি, গাছ-গাছালি, মেঘমালাসহ যত সৃষ্টি সবকিছুই আল্লাহর অসীম নিদর্শন। সবকিছুকেই আল্লাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এসব যেমন পৃথিবীকে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করে তেমনি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিতেও কাজ করে থাকে। আধুনিক বিজ্ঞানে বৃষ্টিপাতের প্রাকৃতিক বর্ণনা দেওয়া হলেও তার মূলে আল্লাহর অদৃশ্য শক্তি রয়েছে একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। পবিত্র কুরআনে ভাসমান মেঘমালা থেকে বৃষ্টি বর্ষণের সুন্দর বর্ননা দেওয়া হয়েছে এভাবে, “তুমি কি দেখ না, আল্ল¬াহ সঞ্চালিত করেন মেঘমালাকে, তৎপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন, অতঃপর তুমি দেখ যে, তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বারিধারা। তিনি আকাশস্থিত শিলাস্তুপ থেকে শিলাবর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা তা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎ ঝলক দৃষ্টিশক্তিকে যেন বিলীন করে দিতে চায়” (সূরা আন-নূর-৪৩)। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষ সাধন সত্ত্বেও বৃষ্টির বিকল্প আবিষ্কার সম্ভব হয়নি। মাঠের ফসল, জমির উর্বরতা, গাছ-গাছালির সজীবতা, ফল-ফলাদির উৎপাদন, মাছ-জলজ প্রাণির প্রাণ চাঞ্চল্যতা, পশু-পাখির খাদ্য সংস্থানÑ সবকিছুই বৃষ্টিবর্ষণের ওপর নির্ভরতা বিরাজমান। এসব কিছুর সুষ্ঠু জীবন-যাপন এবং স্বাভাবিক অবস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় বৃষ্টির প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন আল্লাহ। তবে স্বাভাবিক অবস্থার ব্যতিক্রম হলেই সহজাত প্রাকৃতিক ধারা ব্যাহত হয়। নেমে আসে দুর্যোগ-দুর্গতি। গাছ-গাছালি, ভূমি, পশু-পাখি, মানুষসহ সকল কিছুরই উপর পড়ে তার বিরূপ প্রভাব। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে, যা মানুষের হিত সাধন করে তাসহ সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযান সমুহে, আল্লাহ আকাশ হতে যে বারি বর্ষণ দ্বারা ধরিত্রীকে তার মৃত্যুর পর র্জীবিত করেন তাতে এবং তার মধ্যে যাবতীয় জীব-জন্তুর বিস্তারণে, বায়ুর দিক পরিবর্তনে, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানবান জাতির জন্য রয়েছে নিদর্শন” (সূরা বাকারা- ১৬৪)। আল্ল¬াহর রহমতের অনন্তধারা পৃথিবীতে না থাকলে মানুষ, জীব-জন্তু, গাছ-গাছালী কোন কিছুর উপযোগী বাস স্থান পাওয়া যেত না। পৃথিবীতে রয়েছে বেশুমার পানিরাশি। কিন্তু তার অধিকাংশই ব্যবহারের অনুপযোগি। লবণাক্ততা ও অন্যান্য দোষণমুক্ত মিষ্ট পানির প্রধান উৎস বৃষ্টি। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হলে মিষ্টি পানির সংকট দেখা দিয়ে থাকে। পর্যাপ্ত মিষ্ট পানির অভাব ঘটলে পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন থমকে যাবে। অনাবৃষ্টির কারণে আমরা ভূগর্ভের পানি যথেচ্ছা ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু সেটিও আমাদের জন্য হুমকি স্বরূপ। বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এব্যাপারে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “ক্ব ুল আরাআয়তুম ইন আসবাহা মায়ুকুম গয়রান ফামায় ইয়াতিকুম বিমায়িম মায়িন” অর্থাৎÑ‘বল, তোমরা ভেবে দেখেছ কি যদি পানি ভূগর্ভে তোমাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, কে তোমাদেরকে এনে দেবে প্রবাহমান পানি!’ আল্লাহর দেয়া পানি আমরা প্রয়োজনে ব্যবহার করবো ঠিকই কিন্তু যথেচ্ছা ব্যবহার বা পানির অপচয় করা মোটেও উচিৎ হবে না। অপচয় করলে তার খেসারত দিতেই হবে। কোন কিছু অতি রঞ্জিত যেমন ঠিক নয়, তেমনি অহেতুক কিছু করাও ইসলাম সমর্থন করে না। পানি দূষিত করাও চরম অন্যায়। আমাদের মনে রাখা দরকার আমি যদি পানির অপচয় ও অপব্যবহার করি তাহলে অন্য কেউ বঞ্চিত হবে। আর এভাবে অপচয় ও অপব্যবহার হতে থাকলে এক সময় অনেকেই বঞ্চিত হবে। এজন্য আমাদের প্রিয় নবী (সা.) মুসলমানদের পারি দ্বারা পবিত্রতা হাছিলের কাজেও অপচয় করা থেকে নিষেধ করেছেন। রসূল (সা.)-এর সাহাবী সাদ ওযুর পানি ব্যবহারে অপচয় করছিলেন দেখে রসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, “তুমি পানি অপচয় করছ কেন? সাদ (রা.) বললেন, ওযুর সময়ও কি পানি অপচয় হয়? রসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ এমনকি যদি তুমি চলমান নদীতেও ওযু কর তাতেও পানির অপচয় হয়” (ইবনে মাজা)। এজন্য আল্ল¬াহর নেয়ামতরাজি উপভোগ করার পাশাপাশি যথাযথ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা আবশ্যক। বৃষ্টিও একটি নেয়ামত। এই নেয়ামত মানুষকে অপরিসীম দয়ার অধিকারী করেছে। আমরা সারাটি জীবন ধরে এই অমূল্য দানের প্রতিদান দিতে চেষ্টা করলেও সম্ভব হবে না। তাই আল্লাহর সকল নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি তাঁর উপর সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা প্রয়োজন।

প্রাচীন মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ আধুনিক এক মানুষ
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
স্যামসন এইচ চৌধুরীকে প্রথম দেখি ষাটের দশকের শেষদিকে। আমার বাবা বিশিষ্ট আইনজ্ঞ দেবেশ ভট্টাচার্যথ পরে যিনি সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি নিযুক্ত হয়েছিলেন, তার কাছে এসেছিলেন। তখন আইয়ুব-মোনায়েম খানের জমানা। বাঙালিরা নিষ্পেষিত। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ। শত্রু সম্পত্তি আইন বলবৎ রয়েছে। সংখ্যালঘুদের মনে প্রশ্ন, দেশে থাকা যাবে তো? এমনই একটি সময়ে স্যামসন চৌধুরী বাবার সঙ্গে আলোচনা করতেন বিনিয়োগ বিষয়ে। বাবারও বাঙালিদের ভষ্যিতের প্রতি গভীর আস্থা। তার দৃঢ় বিশ্বাস, পরিবর্তন আসবেই। এ জন্য যাদের দেখে ভরসা পেতেন তাদের মধ্যে ছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। আশির দশকে শিল্পায়ন নিয়ে গবেষণা চালানোর সময় তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ বেড়ে যায়। খেলাপি ঋণের ইস্যুটি তখন ব্যাপক আলোচনায়। একদল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়নি। সংবাদপত্রে এ নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন বের হতে থাকে। এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় স্যামসন চৌধুরীর শিল্প স্থাপন প্রচেষ্টা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। ঋণখেলাপি না হয়েও যে বড় ধরনের শিল্প স্থাপন সম্ভবথ তিনি প্রমাণ করেন। আশি-নব্বইয়ের দশকে আরও একটি বিষয় আলোচনায় ছিল কর পরিশোধে অনাগ্রহ কিংবা ফাঁকি দেওয়া। কিন্তু স্যামসন চৌধুরীর স্কয়ার গ্রুপ বছরের পর বছর থেকেছে সর্বোচ্চ করদাতার তালিকায়। ইথিকস ইন বিজনেস নিয়ে বিশ্বব্যাপীই আলোচনা চলে। নীতি-নৈতিকতায় অবিচল থাকা যে সম্ভব এবং এটা করেও যে ব্যবসা সম্প্রসারণ করা যায়, তিনি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ প্রসঙ্গে সিএসআর বা করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির কথাও বলা যায়। তিনি যখন তার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের জন্য দুপুরে বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করেছেন তখন বাংলাদেশে সিএসআর শব্দও কেউ শোনেনি। ব্যবসায়ের জন্য নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতাই ছিল প্রধান বিবেচ্য। তৃতীয় বিষয়টি আমি বলব শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে। আমরা দেখেছি, শেয়ারবাজার থেকে কেউ কেউ বিতর্কিত উপায়ে ফায়দা আদায় করেছেন। কেউ কেউ শেয়ার ছেড়ে অর্থ তোলার পরও স্বচ্ছতার সঙ্গে বিনিয়োগ করেননি। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ উপেক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু স্যামসন চৌধুরী ব্যতিক্রম। তার প্রতিটি কোম্পানির ওপরেই ক্ষুদ্র ও বৃহৎ বিনিয়োগকারীদের রয়েছে প্রগাঢ় আস্থা। চতুর্থ যে বিষয়টি আমি বলব, তিনি সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করে লাভবান হতে চাননি। সরকারের ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ তার ছিল। কিন্তু সে পথে চলেননি। আশির দশকে বাংলাদেশে রফতানিমুখী শিল্প গড়ে উঠতে থাকে। তৈরি পোশাক শিল্প হয়ে ওঠে লাভজনক ব্যবসা। এতে বিপুল কর্মসংস্থানও হয়। কিন্তু স্যামসন চৌধুরী পোশাক শিল্পে বিনিয়োগে যাননি। তিনি সেসব শিল্প স্থাপন করায় উদ্যোগী হয়েছেন, যা দিয়ে দেশীয় চাহিদা মেটে। তিনি বিকাশমান মধ্যবিত্তের চাহিদা পূরণে মনোযোগী হয়েছেন এবং এ ক্ষেত্রে মান বজায় রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। স্কয়ার গ্রুপের একের পর এক প্রতিষ্ঠান আমাদের আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দিয়ে চলেছে। তিনি একটি প্রতিষ্ঠান সফলভাবে নির্মাণ করার পর নতুন আরেকটিতে বিনিয়োগ করেছেন। ওষুধ শিল্প গড়ে তোলার পর গড়েছেন আধুনিক মানের হাসপাতাল। প্রসাধনীর পর নিত্যদিনের পণ্য চাহিদা পূরণে মনোযোগী হয়েছেন। সেখান থেকে এসেছেন মিডিয়ায়। আগ্রহ দেখিয়েছেন বিশ্ববাজারে নিজের স্থান করে নিতে। বিশ্ববাজারে স্কয়ারের ওষুধ জনপ্রিয়। যে পণ্য যথেষ্ট মূল্য সংযোজন করতে পারবে, তা রফতানি করতে চেয়েছেন। এ জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার প্রয়োজন হয়, দক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তুলতে হয়। তিনি তা করেছেন। স্যামসন এইচ চৌধুরী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের একজন ছিলেন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয় আমলেই তাদের বঞ্চনা অনেক। কিন্তু তিনি সব বাধা অতিক্রম করেই হয়ে ওঠেন রোল মডেল। সব সম্প্রদায়ের মানুষের স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন। তাকে কেউ সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র গি তে বিবেচনা করেন না, বরং দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সারিতে রাখেনথ এ তো অনন্য অর্জন। তিনি গভীরভাবে ধর্মীয় অনুভূতি পোষণ করতেন। খ্রিস্টীয় দানশীলতায় প্রগাঢ় বিশ্বাস ছিল তার। এ জন্য চ্যারিটি তহবিল গঠনে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। তবে এর সুবিধা ধর্মনির্বিশেষ সবার জন্য যেন নিশ্চিত হয়, সেটা তিনি চেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মানবতাবোধ ছিল প্রধান প্রেরণা। তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে কখনও সংশ্লিষ্ট ছিলেন না, কিন্তু নাগরিক দায়িত্ববোধ ছিল প্রখর। ২০০৬ সালে সিপিডি নাগরিক কমিটি গঠন করলে তিনি তার সদস্য হন। এ সময়ে আর্থ-সামাজিক স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি অনেক ইস্যুতে তার সঙ্গে বিস্তৃত আলোচনার সুযোগ ঘটে। সে সময়ে পরিবেশ মোটেই সহজ ছিল না। কিন্তু তার প্রখর রাজনৈতিক চেতনা, সাহস ও ধৈর্য আমাদের সবার মধ্যে সৃষ্টি করত উৎসাহ। স্যামসন চৌধুরী সুদর্শন ছিলেন। সর্বদা স্টাইলিস্ট দীর্ঘদেহী মানুষটির ছিল নান্দনিক মন। এক কথায় বলতে পারি, প্রাচীন মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ একজন আধুনিক সৃষ্টিশীল মানুষ ছিলেন আমাদের নিকটজন হয়ে। তবে আমাদের সবার জন্য কিছু পরিতাপের বিষয় থাকছেই। আমাদের দেশে ক্ষণজন্মা দুর্লভ গুণের মানুষ আসেন। জ্ঞান, মূল্যবোধ, উচ্চ নৈতিক আদর্শের কারণে তারা বরণীয় হন। কিন্তু দেশ পরিচালনায়, সমাজকে পথনির্দেশ দানে তাদের পরামর্শ কি সর্বদা আমরা কাজে লাগাতে উদ্যোগী হই? এ ধরনের প্রাজ্ঞজনদের কাছ থেকে আরও কিছু পাওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা যায়নি। তার চেষ্টাও লক্ষণীয় নয়। তিনি দেশের জন্য, দশের জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন। রাষ্ট্র ও সমাজ উদ্যোগী হলে তার কাছ থেকে আরও অনেক কিছু গ্রহণ করতে পারত। প্রথাগত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তিনি পাননি। কিন্তু সেটা নিশ্চিত করা তো আমাদেরই দায় ছিল এবং এখনও কিন্তু রয়ে গেছে। তার সঙ্গে আমার শেষ কথা দিয়েই এ লেখার ইতি টানব। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাজে আমি যুক্ত ছিলাম। মেধাস্বত্ব আইনের বিশেষ সুবিধা শেষ হচ্ছে ২০১৬ সালে। এটা বাড়ানো যায় কীভাবে সেটা নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। এমনকি জেনেভাতেও এ নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সুবিধা পেলে বাংলাদেশের লাভ; এ দেশে নতুন নতুন যেসব কোম্পানি আসবে, তাদের লাভ। তার নিজের প্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে নিজের জন্য বিশেষ কোনো অর্জন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তিনি যে সবার কথা ভাবার মানুষ!
 
স্বচ্ছতা নৈতিকতা বজায় রেখেই শিখরে যিনি
মাহবুবুর রহমান

এ ধরনের প্রাজ্ঞজনদের কাছ থেকে আরও কিছু পাওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা যায়নি। তার চেষ্টাও লক্ষণীয় নয়। তিনি দেশের জন্য, দশের জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন। রাষ্ট্র ও সমাজ উদ্যোগী হলে তার কাছ থেকে আরও অনেক কিছু গ্রহণ করতে পারত এমন বড়মাপের মানুষ ছিলেন, এত বড় ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের অধিপতি; কিন্তু আচরণে, কথায়, ব্যবহারে কিছু বোঝার উপায় ছিল না। অহমিকা নেই, আত্মপ্রচারে বিমুখ, বিনয়ীথ স্যামসন চৌধুরী সম্পর্কে এ সবই বলা যায়। এখন যারা বিভিন্ন চেম্বারের দায়িত্বে রয়েছেন, যারা শিল্প-বাণিজ্যের শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত, তাদের বেশিরভাগের সঙ্গে তার বয়সের অনেক পার্থক্য। কিন্তু সবার সঙ্গে মিশতেন এমনভাবে, যেন বহু পুরনো সহকর্মী কিংবা সমবয়সী। আমি আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের সভাপতি। এ সংগঠনে তিনি ছিলেন বোর্ড সদস্য। আমাদের কাজকর্মে তার সহযোগিতা-উপদেশ সর্বদা নিয়েছি। প্রতিটি সভা-সেমিনারে উপস্থিত থাকতেন। পরামর্শ মিলত প্রতিটি কাজে। সহ-সভাপতির একটি পদ শূন্য হলে কাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনাদের আপত্তি না হলে আমাকে নিতে পারেন। আমি তো বিস্ময়ে হতবাক। তাকে বলি, আমি যে সংগঠনের সভাপতি, সেখানে আপনি কী করে সহ-সভাপতি হবেন! সেই চিরপরিচিত হাসিমুখে তিনি বলেন, আপনি সংগঠন ভালো চালাচ্ছেন, সময় দিচ্ছেন। আমি তা পারব না। তিনি সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। যাদের সঙ্গে কথা বলতেন তাদের হৃদয়-মন ছুঁয়ে যেতেন। মাটির মানুষ বলতে যা বোঝায়, তিনি ছিলেন ঠিক তাই। আমাদের দেশে স্যামসন এইচ চৌধুুরীর মতো আরও অনেক উদ্যোক্তার নাম করা যায়। কারও কারও অর্র্থ-সম্পদ হয়তো তার চেয়েও বেশি। কিন্তু তিনি যে উচ্চ নৈতিক মান বজায় রেখেছেন দশকের পর দশক, তা ব্যতিক্রম। তিনি তিলে তিলে যেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, তেমনি সযতেœ তৈরি করেছেন নিজের ভাবমূর্তি। আমি অনেককে দেখেছি, সামান্য অবস্থা থেকে যারা বড় হয়েছেন তাদের অতিমাত্রায় হিসেবি স্বভাব থাকে। কিন্তু তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। তাই বলে ১০ টাকা দেওয়ার প্রয়োজন পড়লে ১০০ টাকা দিতেন না। কিন্তু যদি ১ লাখ টাকা দেওয়ার দরকার হতো, তাতেও কার্পণ্য ছিল না। তিনি মেথোডিক্যাল ছিলেন; একই সঙ্গে ছিলেন উদার হৃদয়ের। তার সঙ্গে অনেকবার সপরিবারে বিদেশ গিয়েছি। লতিফুর রহমান একাধিকবার ছিলেন আমাদের সঙ্গে। এ ধরনের সফরে গল্পে-আড্ডায় মানুষ চেনা যায়। স্যামসন চৌধুরীর ছবি তোলার খুব শখ ছিল। নিজেও ভালো ছুবি তুলতেন। কুয়ালালামপুরে ওয়ার্ল্ড চেম্বার কংগ্রেসে তিনি ও বৌদি এবং আমি ও আমার স্ত্রীর ছবি তোলা হয়েছিল তারই আগ্রহে। এই বড়দিনে এ ছবি দিয়ে কেক পাঠিয়েছিলাম তার কাছে। চীনে আইসিসি কংগ্রেস থেকে হংকং হয়ে ফেরার সময় শপিং মলে বেড়াতে গেলে আমাদের কয়েকজনকে দামি ব্র্যান্ড জুতা কিনে দিয়েছিলেন। তিনি রুচিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন এবং সর্বদা তা বজায় রাখতেন। তিনি শুধু শিল্প-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েননি, সমাজকেও নাড়া দিতে পেরেছিলেন। তার সমকক্ষ কাউকে এখন দেখি না। অনেকের হয়তো তার চেয়ে বেশি অর্থ আছে। কিন্তু নেতৃত্ব, দূরদৃষ্টি, আন্তরিকতা, নৈতিক মানে তিনি অনন্য। প্রকৃতপক্ষে তিনি আমাদের সময়ের লিজেন্ড। তার কাছে শুনেছি এগিয়ে যাওয়ার গল্প। কীভাবে বাধা জয় করেছেন, বলতেন। এ জন্য কখনও হীনম্মন্যতায় ভুগতেন না। কীভাবে নিজের কারখানার সিরাপ বিক্রি করেছেন সে গল্প শুনেছি তার কাছেই। শিল্প স্থাপনের উদ্যোগে অনেক সময় কষ্ট পেয়েছেন। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সহায়তা মেলেনি। সরকার ও প্রশাসনের কেউ কথা দিয়ে কথা না রাখলে কষ্ট পেতেন। রাজনীতি নিয়ে কখনও আলোচনা করতেন না। রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে চাইতেন স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতা। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নতুন কী নীতি দরকার, কোথায় সংস্কার করতে হবে, বলতেন নির্ভয়ে। সরকারের কাছে তার প্রত্যাশা ছিলথ সহায়ক নীতি ও কৌশল ঠিক করে দাও, যেন উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে পারে। সরকার অযথা ব্যবসায়িক কাজে হস্তক্ষেপ করলে কী সমস্যা তৈরি হয় সেটা জানতেন। তিনি সংগ্রাম করে সামনে এগিয়েছেন। সর্বদা চাইতেন, নতুন যারা এগিয়ে আসবে তাদের যেন বাধা কম মোকাবেলা করতে হয়। এতেই দেশের উন্নতি ঘটতে পারে। তার একটি বড় সাফল্য, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নিজের মহৎ গুণাবলি ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। তাদের কাছে নিজের জীবনের কঠিন সময়ের কথা বলতেন। আমরা যেমন বন্ধুবৎসল একজন বড় ভাই পেয়েছি, যে কোনো প্রয়োজনে তার কাছে ছুটে যেতে পেরেছি, তেমনি তার সন্তানেরা সর্বদা পেয়েছে একজন আদর্শ পিতাকে। তাদের পড়াশোনা করিয়েছেন। কাজ শিখিয়েছেন। মানুষকে সম্মান দিতে বলেছেন। মৃত্যুর আগে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে স্ত্রী কাছে গেলে সন্তানরা বলেনথ বাবা, মা এসেছেন তোমার কাছে। তিনি বলেছিলেন, তোমাদের মা সারাক্ষণ আমার সঙ্গে আছেন। পারিবারিক বন্ধনে তার ছিল গভীর আস্থা। এক ভবনে ছেলেমেয়ে সবাইকে নিয়ে থাকতেন। সকালে উঠতেন। অনেক সময় সন্তানেরা অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে তার কাছ থেকে বিদায় নিতে গিয়ে শুনতেন, চেয়ারম্যান আগেই অফিসে চলে গেছেন। তাকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ দায়িত্ব প্রদান ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি ২০টির মতো শিল্প প্রতিষ্ঠান চালাতেন। এর কোনো একটিতে কর ফাঁকির ঘটনা ঘটলে, কেউ ঋণখেলাপি হয়ে পড়লে কিংবা ব্যবসায়িক অসততা ধরা পড়লে টিআইবি নিজেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ত। কিন্তু আমাদের সবার জন্য সৌভাগ্যের কথা যে, তিনি কখনও স্বচ্ছতার গি র বাইরে যাননি। তিনি বছরের পর বছর সর্বোচ্চ করদাতাদের তালিকায় ছিলেন। কারখানা করার জন্য তাকে কখনও ভূমিদস্যুতা করতে হয়নি। তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পণ্যের মান নিয়ে কেউ কখনও প্রশ্ন তোলার অবকাশ পায়নি। আমাদের চারপাশে অনেক প্রলোভনের ফাঁদ রয়েছে। কলুষিত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা মোটেই সহজ নয়। কিন্তু তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছেন। এ কাজ সহজ ছিল না। কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছেনথ স্বচ্ছতা, নৈতিকতা বজায় রেখেই উন্নতির শিখরে পৌঁছানো সম্ভব। তার বিকল্প আপাতত দেখি না।
মাহবুবুর রহমান :আইসিসি, বাংলাদেশ সভাপতি। সৈজন্যে সমকাল-৮-১-২০১২

বাংলাদেশে বিনিয়োগের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত পর্যটন শিল্প
॥ মোঃ নুরুল আমিন ॥
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এবং নিরাপদ বিনিয়োগ খাত দেশের পর্যটন শিল্প। এই পর্যটন শিল্পেই রয়েছে দেশী ও বিদেশি বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়েই আমাদের দেশ পৌছে যেতে পারে উন্নতির চরম শিখরে। তাই এই সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি ভাবেও ব্যপক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ করছে এবং বিনিয়োগে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করছে। যার ফলে দিন দিন এই শিল্পের উন্নয়ন ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা বেড়েই চলেছে। এছাড়াও পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে এক জরিপে দেখা গেছে বিনিয়োগকারীরাও কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় সার্ভিস্ড এ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগকে সবচেয়ে লাভজনক ও নিরাপদ বিনিয়োগ বলে মনে করছে। ইতোমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে কক্সবাজার ও কুয়াকাটাকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের সড়ক পথকে ছয় লেনের হাইওয়ে রোড, রেল যোগাযোগ, বিমান বন্দর ও ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ রোড ছাড়াও কক্সবাজার থেকে টেকনাফ হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত পর্যটনের উন্নয়নের লক্ষ্যে এক মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এর আওতায় হোটেল মোটেল জোন, খেলার মাঠ, সরকারী অফিস-আদালত, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, এ্যামিউজমেন্ট পার্ক, এডুকেশন জোন, ন্যাচারাল পার্ক, ইকোট্যুরিজম, শিল্প এলাকা, ট্যুরিস্ট জোন, সেন্টমার্টিনে ইকোট্যুরিজম এবং আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন বিনোদন ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ করা হয়েছে। এছাড়াও কুয়াকাটাকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতু ছাড়াও ২০১৩ সালের মধ্যে ঢাকা-কুয়াকটা মহাসড়কে ফেরী বিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু, ঢাকা-কুয়াকাটা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন এবং কুয়াকাটাতে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও পদ্মার ওপাড়ে শরিয়তপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর স্থাপিত হলে পর্যটন শিল্পে কুয়াকাটার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বহুগুণে। বেসরকারি উদ্যোগেও পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও কুয়াকাটার উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের সকল সুযোগ-সুবিধাসহ থ্রী স্টার ও ফাইভ স্টার মানের সার্ভিস্ড এ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ ছাড়াও ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। বেসরকারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে গ্রীন ডেল্টা হাউজিং পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করছে। ইতোমধ্যেই তারা বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের থ্রী স্টার ও ফাইভ স্টার সার্ভিস্ড এ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো : কক্সবাজারের কলাতলীতে সমুদ্র বিলাস - ফাইভ স্টার, হিমছড়িতে ঝর্ণা বিলাস - থ্রী স্টার, ইনানীতে সিঙ্গাপুরের মেরিনা বের আদলে ইনানী বে মেরিনা- ফাইভ স্টার এবং কুয়াকাটাতে স্বপ্ন বিলাস- থ্রী স্টার ও গ্রীন ডেল্টা ট্যুরিজম সিটি নির্মাণ করছে। এছাড়াও কক্সবাজারে তাদের আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গ্রীন ডেল্টা হাউজিং ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি আবাসন প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার ও কুয়াকাটার উন্নয়নে  কাজ করছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গ্রীন ডেল্টা হাউজিংয়ের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ নূরুল আমিন বলেন- বর্তমানে আমাদের দেশের বিনিয়োগের যে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সব ধরনের বিনিয়োগকারীগণ হাপিয়ে উঠেছেন। গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিতিশীলতা, শিল্প-কলকারখানা গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া, শেয়ার বাজারে স্বর্বস্ব হারিয়ে মাথায় হাত ইত্যাদি কারনে মানুষ এখন পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগকেই নিরাপদ, হালাল ও লাভজনক বিনিয়োগ বলে মনে করছে। তাই এই সেক্টরে বিনিয়োগের পরিমান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশ আজ উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করেছে। যেমন : দুবাই, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিংগাপুর, চীন, ভারত, মালদ্বীপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশিরভাগ দেশেরই জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সিংহভাগ আসে তাদের পর্যটন শিল্প থেকে। উল্লেখ্য যে মালদ্বীপের মতো অত্যন্ত ছোট একটি দেশের জাতীয় আয়ের ৯০ শতাংশ আসে তাদের পর্যটন খাত থেকে। অথচ আমি মনে করি আমাদের বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে যতগুলো পর্যটন এলাকা রয়েছে এবং যে বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভান্ডার রয়েছে তা পৃথিবীর আর কোন দেশে নেই। আমাদের রয়েছে ৭২০ কি. মি. সমুদ্র পার এই সমুদ্র পারে যদি আমরা দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ রোড নির্মান করে  এবং আমাদের বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে পরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে তুলে বিশ্বের কোটি কোটি পর্যটকদের নিকট পৌছে দিতে পারি তাহলে আমাদের দেশই হবে পর্যটনে বিশ্বের সেরা দেশ। আমাদের দেশ হবে বিশ্বের অগনিত পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত। ভারত ও চীন সহ সারাবিশ্বে^র কোটি কোটি পর্যটনপ্রেমী ছুটে আসবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশে এবং মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার তারা খরচ করবে বাংলাদেশের সৌন্দর্য অবলোকনে। তখন করব আমরা মেহমানদারি, অর্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা, খুলে যাবে দেশ ও জাতির উন্নয়নের দুয়ার। আমাদের দেশের মানুষদের আর বিদেশ গিয়ে ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করা লাগবে না। তখন এই মাতৃভূমিতেই হবে তাদের কর্মসংস্থান পাবে উন্নত জাতি হিসেবে মাথা উচু করে বাচার স্বীকৃতি। 

তিনি আরও বলেন, গ্রীন ডেল্টা হাউজিং এক মহা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে এবং পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করে চলেছে। দেশে এ ধরণের মহা পরিকল্পনা এই প্রথম। ইতোমধ্যেই আমরা কক্সবাজার, হিমছড়ি, ইনানী, টেকনাফ, শাহ্পরীর দ্বীপ ও কুয়াকাটায় আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনের সুবিধা সম্বলিত আধুনিক স্থাপত্য ডিজাইনের বেশ কয়েকটি থ্রী স্টার ও ফাইভ স্টার মানের স্টুডিও টাইপ সার্ভিসড এ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প ও আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি। দেশের পর্যটন শিল্পকে বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে আমরা সেন্টমার্টিন, রাঙামাটি, বান্দরবান, সিলেটের জাফলং, নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ, খুলনা ও সুন্দরবনসহ পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি পর্যটন এলাকায়ও আন্তর্জাতিক মানের থ্রী স্টার ও ফাইভ স্টার সার্ভিসড এ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প ও শপিং সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ভবিষ্যতে পর্যটকদের ভ্রমনের জন্য আমাদের ব্যবস্থাপনায় থাকবে  বিমান, হেলিকপ্টার, স্টীমার, স্পিডবোট, বিলাসবহুল বাস, মাইক্রোবাস ও জীপের  বিশেষ সার্ভিস। তাই আমি বলতে চাই পর্যটন নগরীর উন্নয়নে প্রাইভেট সেক্টরের এই উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে সরকার যদি একযোগে কাজ করে এবং বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে দেয় তাহলে এই পর্যটন শিল্পের মাধ্যমেই আমরা বিশ্বে উন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবো, থাকবে না বেকার সমস্যা মুছে যাবে দারিদ্রতার অভিশাপ।
লেখক: চেয়ারম্যান, গ্রীন ডেল্টা হাউজিং লি.
যে কারণে পরাজিত হচ্ছে আ’লীগ প্রার্থী
নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচন মানেই বিদ্রোহী প্রার্থী, দলীয় কোন্দল এবং পরিণতিতে বিপুল ব্যবধানে পরাজয় এই বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর প্রায় সব নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ পরাজয়ের স্বাদ পাচ্ছে হাড়ে হাড়ে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং বিদ্রোহের জন্যই মূলত এই হার। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সরকার পরিচালনায় নানা ব্যর্থতার কারণে দলের জনপ্রিয়তা হ্রাস। অথচ এই ধারাবাহিক পরাজয় ঠেকাতে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের অবসান কিংবা বিদ্রোহী প্রার্থীকে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা বা কৌশল কোনো নির্বাচনেই দেখা যায়নি। কেন্দ্র থেকে প্রান্ত, জেলা থেকে উপজেলাথসব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে এই দ্বন্দ্ব ও গৃহবিবাদ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে গত তিন বছরে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনের ফলাফল এরকম : পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে মোট ২৩৭টির। এর মধ্যে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জিতেছেন ৯০, আর বিএনপি প্রার্থী জিতেছেন ৯৫ জন। সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে তিনটিতে। এর সব কটিতেই হেরেছে আওয়ামী লীগ। এমপির মৃত্যুর কারণে উপনির্বাচন হয়েছে তিনটি সংসদীয় আসনে। এতেও আওয়ামী লীগ হেরেছে একটিতে। আর চার হাজার ২৯৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দুই হাজার ১৯৭টিতেই হেরেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। অথচ তিন বছর আগের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট জিতেছিল ৩০০টি আসনের ২৬২টিতেই। এর মাত্র ২৪ দিন পরই অনুষ্ঠিত ৪৭৫টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ একক আধিপত্য বজায় রেখে ৩০৪টিতে জয়ী হয়। কিন্তু যতই দিন যেতে থাকে, আওয়ামী লীগের ললাটে লেপন হতে থাকে পরাজয়ের কালিমা। অথচ এই পরাজয়ের গ্লানির বিপক্ষে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন এবং দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব তা প্রমাণ হয়েছে, জনগণের রায়কে দল মেনে নিয়েছে, এটা স্থানীয় নির্বাচন এবং এটাতে জাতীয় রাজনীতির প্রভাব পড়ে নাথএ ধরনের গৎবাঁধা ও দায়সারা জবাব দিয়েই চুপ থাকছেন দলের শীর্ষ নেতারা। আবার দলের দুর্বলতার কারণে নির্বাচনে পরাজয়ের কথা স্বীকার করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও তুলছেন কেউ কেউ। তবে প্রবীণ নেতারা মনে করছেন, দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা নেতারা সংগঠনে ঐক্য প্রতিষ্ঠা আর সঠিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিম লীর সাবেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা এবং দলের সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয় সম্পর্কে গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন, দল বড় হলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তবে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দলের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারছেন না। দলের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় এবং যেকোনো নির্বাচনের আগে সবাইকে বসে একক প্রার্থী নির্বাচন করার তাগিদ দেন তিনি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় করার ক্ষেত্রে দলের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে বলেন, নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর ব্যাপারে দল কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় না বলেই তাঁদেরকে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন নির্বাচনে পরাজয় দলের জন্য ক্ষতিকর মন্তব্য করে হানিফ আরো বলেন, আগে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও পরে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তবে আগামী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হবে এবং একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। দলীয় প্রার্থীকে দলের সব নেতার সমর্থন না দেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ বলেন, দলে কিছুটা সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে। তবে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুর্বলতা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় দলে অনেক সময় সঠিক প্রার্থী নির্বাচন করা সম্ভব হয় না। দায়বদ্ধতার কারণে অনেক সময় জনপ্রিয়তার চেয়ে সংগঠনের প্রতি আনুগত্য বেশি বিবেচনা করা হয়। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ পায় আওয়ামী লীগ। ১৭ জুন ২০১০ অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী পরাজিত হন বিএনপি প্রার্থী এম মঞ্জুর আলম মঞ্জুর কাছে। ৯৫ হাজার ৫২৮ ভোটের বিশাল ব্যবধানে মঞ্জুর হারিয়ে দেন তাঁরই রাজনৈতিক গুরু মহিউদ্দিন চৌধুরীকে। চট্টগ্রাম নির্বাচনে দল মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সমর্থন দিলেও তাঁর পক্ষে মাঠে নামেননি স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আবারও প্রকাশ পায় গত বছর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনগুলোতে। বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ দুই বছরের মাথায় নির্বাচনের রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়ে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পিছিয়ে পড়ে সাধারণ নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়া বিএনপির কাছে। পৌরসভা নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের ২১ জন বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হন। তখনই বিশ্লেষণে বের হয়, ভুল প্রার্থী মনোনয়ন, দলীয় কোন্দল এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের অদক্ষতার কারণে পৌরসভায় কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি ক্ষমতাসীনরা। প্রথম দফায় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের পৌরসভা নির্বাচনে ফলাফল বিপর্যয়ে ক্ষুব্ধ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিষ্ক্রিয় করার নির্দেশ দেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবেথএমন নির্দেশও দেওয়া হয় দলের পক্ষ থেকে। তারপরও নির্বাচন থেকে সরানো যায়নি বহু বিদ্রোহী প্রার্থীকে। পৌরসভার রেশ না কাটতেই শাসক দল আবারও ধাক্কা খায় হবিগঞ্জ-১ উপনির্বাচনে। দেওয়ান ফরিদ গাজীর মৃত্যুর কারণে শূন্য হওয়া এই সংসদীয় আসনটিতে জয় ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় আওয়ামী লীগ। তবে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের উপনির্বাচনে জয় ধরে রাখে আওয়ামী লীগ। এরপর স্থানীয় নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির আমেজ ছড়ানো নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবারও শক্ত ধাক্কা খায় ক্ষমতাসীন দল। গত ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থী লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত হন বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে। আওয়ামী লীগের দুই নেতা শামীম ওসমান ও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী দুজনই ছিলেন সমর্থন-প্রত্যাশী। দফায় দফায় বৈঠক, দুই প্রার্থীকে দলীয় পদ দেওয়া, প্রতিমন্ত্রী কিংবা সংসদ সদস্য বানানোর মতো নানা টোপ ও ফর্মুলায় গিয়েও শেষ পর্যন্ত দুজনের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি দলটি। ফলে নির্বাচনের মাঠে থাকে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীই। অবশেষে আইভী পান এক লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমান পান ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। সব শেষ গত বৃহস্পতিবার নবগঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবারও দলীয় কোন্দল এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর বলি হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। দলের সভাপতিম লীর সদস্য যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কুমিল্লার সব সংসদ সদস্যকে নিয়ে বৈঠক করে আফজল খানকে সমর্থন জানান। কিন্তু পরে দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু ও নূর উর রহমান মাহমুদ তানিমকে নির্বাচনের মাঠ থেকে নিষ্ক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে নির্বাচনে বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া সম্মিলিত নাগরিক কমিটির নেতা মনিরুল হক সাক্কু সহজ জয় পান। তিনি পান ৬৫ হাজার ৫৭৭ ভোট এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত অধ্যক্ষ আফজল খান পান ৩৬ হাজার ৪৭১ ভোট। এ ছাড়া গত বছর ৩১ মে থেকে শুরু হয়ে ৫ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত দেশব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলে বিএনপি। ইউপি নির্বাচনে প্রায় প্রত্যেক জায়গায় ছিল আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। মোট ৪২৯৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ২১০১, বিএনপি সমর্থিত ১৬১৮, জাতীয় পার্টি সমর্থিত ৮৪, জামায়াত সমর্থিত ১২৯, স্বতন্ত্র ২৪৭ এবং অন্যান্য দল ও সংগঠনের সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করে। এ নির্বাচনে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকলেও তাদের ভোট ব্যাংকে হানা দেয় বিরোধী দল বিএনপি। এ ছাড়া ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার ও ধরপাকড় অব্যাহত থাকলেও জামায়াত তৃতীয় অবস্থান দখল করে। আসছে ১৯ জানুয়ারি নরসিংদী পৌরসভা নির্বাচন। সেখানেও রয়েছে আওয়ামী লীগের তিন তিনজন বিদ্রোহী প্রার্থী এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল। ১ নভেম্বর সন্ত্রসীদের গুলিতে নরসিংদী পৌরসভার জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেন নিহত হন। পরে পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গঠিত জেলা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করলে তিনি নিহত লোকমানের ছোট ভাই কামরুজ্জামান কামরুলকে দলের সমর্থন দেন। কিন্তু দলীয় প্রধানের সমর্থন পেলেও কামরুল পাননি জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন। জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা প্রচারে নেমেছেন দলের প্রধান বিদ্রোহী প্রার্থী নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভুঁইয়ার পক্ষে। এ ছাড়া রয়েছে দলের অপর দুই বিদ্রোহী প্রার্থী আমজাদ হোসেন ভুঁইয়া এবং হাজি আফজাল। দলের মধ্যে নতুন আশঙ্কা দেখা দিচ্ছেথএই দ্বন্দ্ব নিরসন করতে না পারলে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের ধারাবাহিকতাই অপেক্ষা করছে নরসিংদীতে।
সাক্কুর সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের অষ্টম ও সবচেয়ে নবীন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বয়স আজ ১৮৯ দিন। ১৮৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম প্রাচীন কুমিল্লা পৌরসভা ও কৃষি অর্থনীতির মূল ভিত্তি নিখাদ গ্রাম নিয়ে গঠিত কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভার সমন্বয়ে কুসিকের জš§ ২০১১ সালের ৬ জুলাই। ৫ জানুয়ারি এ সিটির নির্বাচনে কুমিল্লাবাসী তাদের অভিভাবক হিসেবে নির্বাচিত করেছেন রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান মনিরুল হক সাক্কুকে। ক্ষমতাসীন সরকারে প্রতিনিধিত্বশীল এতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ  থেকে মনোনয়ন পেয়েও এ নির্বাচনে জিততে পারেননি অপর (হেভিওয়েট!) প্রার্থী অ্যাডভোকেট অধ্যক্ষ আফজল খান। তিনি কি শুধুই পরাজিত হয়েছেন? মনিরুল হক সাক্কু আফজল খানের চেয়ে ৫৬ শতাংশ  ভোট বেশি পেয়েছেন। এতে তিনি  হেরেছেন বটে, কিন্তু ফলাফল ঘোষণার আগেই তার পরিবারের পক্ষ থেকে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে মেনে  নেওয়া হয়। আফজল খান নিজেও নবনির্বাচিত মেয়রকে অভিনন্দন জানান এবং সকল সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বিভক্ত কুমিল্লাবাসীকে সব ধরনের বিভক্তি থেকে দূরে রাখেন। এ সবের মাধ্যমে তার এক ধরনের জয়ও হয়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচনের কাজে অংশ নেওয়া নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। তবে এ ক্ষেত্রে জয়ী সাক্কুও বিশাল বিজয়ের পর উচ্ছ্বাসে ভেসে যাননি। তিনি জানেন, এ বিজয় কেবল তার একার নয়। এ বিজয়ের   পেছনে আছেন এক ঝাঁক নেপথ্য কারিগর। যাদের সুদক্ষ রাজনৈতিক কূটনীতি, সম্ভাবনাময় কর্পোরেট পুঁজির হাতছানি ও তার মন্দের ভালো ইমেজ অনেক বেশি কাজ করেছে। সাক্কু এটাও জানেন, জনগণের এ বিশাল চাপ ও চাহিদা সামলানোর সক্ষমতা বা সুযোগ তার কমই আছে। তাই জনগণের আস্থা ধরে রাখা তার জন্য হবে বিশাল চ্যালেঞ্জ। এটা রাষ্ট্র বা রাজ্য পরিচালনার মতো কঠিন না হলেও নারায়ণগঞ্জের নতুন  মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর মতো এতোটা সহজও নয়। মনিরুল হক সাক্কুর জন্য সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জ সবার আগে উঠে আসবে, তা হলো-কৃষি নির্ভর ৬৩টি গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠা কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভার সঙ্গে ১৮৬৪ সালে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা পৌরসভার সমন্বয় সাধন করে সুষম উন্নয়নের ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে দু’দিকেই তার জন্য চ্যালেঞ্জ সমান-সমান। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর কুমিল্লায় বেসরকারি আবাসন ব্যবসায়ীদের আগ্রাসন সবচেয়ে  বেশি। আর এদের ৯৯ ভাগই সরকার অঅনুমোদিত। এরা এক সঙ্গে যেমন শহরের আড়াইশ’ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যগুলো ধ্বংশ করে হাইরাইজ ভবন তৈরি করছে ঠিক তেমনি সদর দক্ষিণ পৌরসভার গ্রাম্য ফসলের ক্ষেত, মাছের খামার, বাশ বাগান, সবজী ক্ষেত্র, পুকুর, নালা, খাল দখল করে হাউজিং ব্যবসার  শেকড় গাড়ছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে কুমিল্লার ঐতিহ্য ও ফসলের ক্ষেত। এসব ভূঁইফোড়  কোম্পানি অনেক ক্ষেত্রেই জমির আইল ভাড়া নিয়ে সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে ব্যবসা করছে। এদের ব্যবসার পুঁজিও সংগ্রহ হচ্ছে অদ্ভূত পদ্ধতিতে। অনেকটা হায়হায়  কোম্পানির মতো এরা অধিক মুনাফার কথা বলে সামাজিক ব্যবসার আদলে আমানতকারীদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করছে। এর একটি উদাহরণ দিলেই পাঠকের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ডেইলি সানের কুমিল্লা প্রতিনিধি মাসুদুর রহমান ও তার স্ত্রী এমন একটি হাউজিং কোম্পানিতে লগ্নি করেছেন ৬ লাখ টাকা। এ জমানত থেকে তিনি প্রতি মাসে মুনাফা পান লাখ প্রতি দুই হাজার টাকা। অনেক কোম্পানি আবার এর চেয়ে অনেক বেশিও মুনাফা দিয়ে থাকে।
নগরপিতা হিসেবে মনিরুল হক সাক্কু কি এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়ে ভাববেন? না ভেবে তার উপায় নেই। কেনে না এসব কোম্পানি যেমন নতুন এ সিটি কর্পোরেশনের অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা করছে তেমনি ধ্বংস করছে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও ঐতিহ্য। হুমকির কিনারে নিয়ে যাচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরও। সাক্কুর জন্য আর একটি চ্যালেঞ্জ হলো শহর ও গ্রামের সমন্বয় সাধন। কুসিকের ১৮ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত ৯টি ওয়ার্ডে মোট ৬৩টি গ্রাম নতুন এ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো সত্যি সত্যিই নিপাট গ্রাম। সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্তির ফলে মুরাদপুর, নুরপুর, নেউরা সৈয়দপুর, উত্তর রসুলপুর, দক্ষিণ রসুলপুর, নোয়াপাড়া, রাজাপাড়া, উনাইসার, দিশাবন্দ, লক্ষ্মীনগর, কাজীপাড়া, আশ্রাফপুর, জাংগালিয়া, রামনগর, শাকতলা, শ্রীবলভপুর, শ্রীমন্তপুর, উত্তর রামপুর, উত্তর হিরাপুর, দক্ষিণ গোপীনাথপুর, মোস্তফাপুর, কচুয়া, দৈয়ারা, লক্ষ্মীপুর, দূর্গাপুর, চাংগিনী, চাঁদপুর, মনিপুর, বাতাবাড়িয়া, নন্দনপুর, জয়পুর, মঠপুস্করিনী, উত্তর বাগমারা, দক্ষিণ বাগমারা, ফিরোজপুর, লালমাই, রামপুর, সালমানপুর, কালিকিংকরপুর, চৌয়ারা, ছোট ধর্মপুর, ডুমুরিয়া, তারাপাইয়া, দয়াপুর, কালিকাপুর, গোয়াল মথন, চাংগিনী, ধনপুর, মহেশপুর, ধনেশ্বর, বলভপুর, বাউবন্দ, রাজেন্দ্রপুর, মাটিয়ারা পূর্ব, মাটিয়ারা পশ্চিম, রায়পুর, সাওড়াতলী, উলুরচর, পাঠারকোট, নোয়াগ্রাম, উত্তর ধানাইতরী, ধানাইতরী, কমলাপুর গ্রামের হাজার হাজার মানুষের ফসলী ক্ষেত, মাছের পুকুর, বাঁশ বাগান, ফলের বাগান, সব্জিক্ষেত খেলার মাঠ অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। ঠিক তেমনি বেড়ে যাবে অধিক কর ও জীবনযাত্রার খরচ। মেয়রকে তা শক্ত হাতেই সামলাতে হবে। নজর দিতে হবে কৃষক ভোটারের যেনো চোখের দু:স্বপ্নে বিলিন না হয়। কুমিল্লা শহরের মানুষের চোখে সবচেয়ে বড় সমস্যা মাদক, যানজট ও জলজট। সীমান্তবর্তী শহর হওয়ায় এখানে সব ধরনের মাদক যেমন সস্তা, তেমন সুলভ। অনেক স্থানীয়েরই ধারণা, কুমিল্লার মোট তরুণ প্রজšে§র অর্ধেকেরই বেশি মাদকাসক্ত। অনেকে মজা করে বলেন, এখানকার মেয়ের বাবারা বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে হস্তান্তরের জন্য উপযুক্ত পাত্র পান না এ মাদকের জন্য। কেননা কেউ তো আর জেনে বুঝে কোন মাদকাসক্তের হাতে তার মেয়ে তুলে দেবেন না। এ ধরনের অপবাদ দূর করার জন্য মেয়রকে আজ থেকেই মনোযোগী হতে হবে। কুমিল্লা শহরে সাড়ে তিনশ’ ইজি বাইকের চলাচলের বৈধ অনুমোদন আছে সাবেক পৌরসভার। কিন্তু শহরে এখন চলছে সাড়ে সাত হাজার ইজি বাইক। তাই অনেকেই এ শহরকে বলে থাকেন ইজি বাইকে বিজি শহর। এ শহরে অবৈধ রিকশার সংখ্যাও বৈধের কমপক্ষে ৭ গুণ। তাই এ শহরে যে কেউ এলেই তার মনে হবে- তিনি বুঝি পুরোনো ঢাকার কোন সড়ক পার হচ্ছেন। সিটি মেয়র হিসেবে এই দুঃসহ যানজট দূর করা সাক্কুর জন্য আর একটি চ্যালেঞ্জ। কুমিল্লা শহরবাসী শহরের জলাবদ্ধতার জন্য সাবেক পৌর মেয়র ও নব নির্বাচিত সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকেই দায়ী করেন। তাদের ধারণা, শহরের মূল ড্রেনগুলো সংকুচিত করে বাগান তৈরির জন্যই এখন সামান্য বৃষ্টিতে শহর হাঁটু পানিতে ডুবে থাকে। এ দুর্ভোগ লাঘবে তাই নগর পিতাকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। মনিরুল হক সাক্কু মেয়র নির্বাচিত হয়েই  এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘তিনি প্রতিশ্রুতি দিতে পছন্দ করেন না এবং তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার পরামর্শে কাজ করবেন। এমন মন্তব্য অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। তবে তিনি কেবল বিএনপির ভোটে বিজয়ী মেয়র নন। তার ভোটারদের একটি বড় অংশই হলো মন্দের ভালোর সমর্থক। তাই সেসব ভোটারের চাহিদার দিকে নজর না দিলে জনগণও সময় মতো তার প্রতিফল দেবে। তবে এ নির্বাচনেরর মাধ্যমে যেমন কুমিল্লাবাসী শতভাগ প্রযুক্তির নির্বাচনে অংশ নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন, তেমনি তারা তাদের ভোটে নির্বাচিত মেয়রকেও সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সব সময় বিজয়ী দেখতে চান।

বর্ষসেরা কোচ গার্দিওলা
ক্রীড়া ডেস্ক
যেমন গুরু তেমন শিষ্য। মেসি, জাভি, ইনিয়েস্তা ও ভিয়াদের নৈপুণ্যে ফুটবল পায় নতুন রূপ। আর এ সকল তারকাদের সমন্বয়ে গঠিত স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনায় যার অধীনে খেলেন তিনিও কম কিসে। তাই মেসিদের গুরু পেপ গার্দিওলাকে বিশ্বসেরা কোচ হিসেবে নির্বাচিত করেছে ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল  ফেডারেশন অব হিস্ট্রি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস (আইএফএফএইচএস)। ২০১ পয়েন্ট নিয়ে ‘বিশ্বসেরা’ কোচ হয়েছেন গার্দিওলা। তার পরে রয়েছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হোসে মরিনহো ও ইলিংশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। গার্দিওলার অধীনে বার্সেলোনার কাছে ধরা দিয়েছে স্প্যানিশ লা লিগা, সুপার কোপা, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা। আর এক সপ্তাহ আগে আইএফএফএইচএস সেরা প্লেমেকার হিসেবে নির্বাচিত করে তার শিষ্য জাভি হার্নান্দেসকে। এছাড়া বিশ্বসেরা গোলরক্ষক হিসেবে নির্বাচত হন রিয়াল মাদ্রিদের ইকার ক্যাসিয়াস।

তৃতীয়বারের মতো বিশ্বসেরা ফুটবলার হলেন লিওনেল মেসি
ক্রীড়া ডেস্ক
তৃতীয়বারের মতো বিশ্বসেরা ফুটবলার হলেন লিওনেল মেসি। ফিফা’র বিশ্বসেরা ফুটবলারের সম্মান ‘ফিফা ব্যালন ডি ওর’ ২০১১ সালের জন্যও নির্বাচিত হলেন তিনি। সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ফিফা জানায় সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজ এবং রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে হারিয়ে ‘ফিফা ব্যালন ডি ওর’-এ হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছেন তিনি। এর আগে দু’বারের বেশি ফিফা বর্ষসেরা হয়েছেন মাত্র দু’জন। তাদের একজন হচ্ছেন ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান এবং অপরজন হলেন ব্রাজিলের রোনাল্ডো লুইজি নাজারিও ডিলিমা। তবে এদের কেউই পরপর তিনবার পুরস্কারটি জিততে পারেননি। সেদিক থেকে সোমবার তাদের দু’জনকেই ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ২০১১-তে ৫৫ ম্যাচে ৫৩টি গোল করেন লিও আর সতীর্থদের দিয়ে করান ২৪টি গোল। তার ক্লাব বার্সেলোনাকে জিততে সহায়তা করেন লা লিগা, ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপসহ পাঁচ পাঁচটি শিরোপা। জাতীয় দল আর্জেন্টিনার অধিনায়ক নির্বাচিত হন এবং দেশের হয়ে ব্যক্তিগত গোল খরা কাটাতে সমর্থ হন গেল বছরেই। ১৯৪ গোল করে তার বার্সেলোনার সর্বকালের সেরা গোলদাতাদের তালিকায় দ্বিতীয়স্থানে উঠে আসেন মেসি। জাভি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে হারিয়ে ‘ইউয়েফা বেস্ট প্লেয়ার ইন ইউরোপ’ এর খেতাবটি জেতেন তিনি। মেসির প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ৫৪ ম্যাচে করেন ৫৩ গোল, এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৪০ গোল করে লা লিগায় গড়েন নতুন রেকর্ড। তবে তার খেলার খুব একটা প্রভাব পড়েনি দল রিয়াল মাদ্রিদের খেলায়। কেবল কোপা দেল রে জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। মেসি যদি বার্সেলোনার প্রাণ হন জাভি হচ্ছেন তার নীরব কম্পন। মেসি-রোনালদোর মতো মাঠে ততটা সরব না থাকলেও খেলার ভিত গড়ে তোলার কাজটা তিনি করে যান ঠিকই। তবুও মাঝে মাঝে মাঠে তার ছিঁটেফোঁটা দেখা যায়। গোল করার পাশাপাশি গেল মৌসুমে তিনি গোল করিয়েছেন মোট ১৪টি। ২০১১’র পারফরম্যান্সের জন্য বিশ্বসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হলে সোমবার মেসি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘পুরস্কারটি অনেক সম্মানের। জয় আনন্দের। আমার ভোটারদের ধন্যবাদ দিচ্ছি। আর্জেন্টিনা সমর্থক ও বার্সার সতীর্থদেরও ধন্যবাদ।’

 সংসার ভাঙছে পূর্ণিমার!
বিনোদন প্রতিবেদক
সংসার ভাঙছে পূর্ণিমার। একান-ওকান হয়ে এ খবর এখন চাউর চলচ্চিত্রপাড়ায়। যদিও এ খবরের সত্যতা জানতে সংবাদ২৪.নেট থেকে বার বার পূর্ণিমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি এবং তার মুঠোফোনটি অনবরত বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাই সন্দেহ আরও জোরালো হচ্ছে। শুধু সন্দেহ নয়, এটিকে সত্য বলে মেনে নেয়ারও যথেষ্ট কারণও রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণিমা নতুন কোনো কাজ হাতে নিচ্ছেন না। গত সপ্তাহে শীর্ষ একজন চলচ্চিত্র পরিচালক তার ছবিতে পূর্ণিমাকে নিতে চাইলে তিনি তাকে ফিরিয়ে দেন। কারণ হিসেবে জানা গেছে, তার স্বামী ফাহাদ চাচ্ছেন না পূর্ণিমা আর অভিনয় করুক। কিন্তু কেন? নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ফাহাদকে বিয়ে করার সময় পূর্ণিমার কাছে তার শর্ত ছিল তাকে মিডিয়ায় অভিনয়শিল্পী কিংবা মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিতে হবে। কিন্তু বিয়ের তিন বছর পরও স্বামী ফাহাদের এ ইচ্ছা পূরণ করে দিতে পারেননি পূর্ণিমা। এখানেই দ্বন্দ্ব এবং সম্পর্কের টানাপোড়েনের সূত্রপাত। সূত্র জানায়, কমপে এক বছর ধরে এ নিয়ে পূর্ণিমা ও ফাহাদের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব অনেক দীর্ঘ হয়েছে। ঝগড়াঝাটি, নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে পূর্ণিমা নাকি এ অবস্থার দ্রুত অবসান চাচ্ছেন। ২০০৮ সালে পূর্ণিমা-ফাহাদের বিয়ে হয়। একটি এয়ারলাইন্সে চাকরি করা চট্টগ্রামের ছেলে ফাহাদকে অবশেষে ডিভোর্স দিতে যাচ্ছেন পূর্ণিমা। ঢালিউডের এক শীর্ষ নায়ক এ খবরের সত্যতাকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পূর্ণিমা-ফাহাদের সংসারে অশান্তির আগুন জ্বলছে।পূর্ণিমা তার এক প্রাক্তন প্রেমিকের কাছে ফিরে যেতে চাইছেন। যে কোনো সময় পূর্ণিমা তাদের ডিভোর্সের ঘোষণা দেবেন।
 

 ফিরছেন প্রভা...
নিবোনদন রিপোর্ট
মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ছেন আলোচিত-সমালোচিত মডেল-অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভা। মাঝখানে টানা প্রায় এক বছর গৃহবন্দি জীবনযাপনের পর সম্প্রতি নতুন স্বামীর হাত ধরে পাখা মেললেন তিনি। ২০১১ সালের ১৯শে ডিসেম্বর মাহমুদ শান্তর সঙ্গে বিয়ের পর নতুন করে নিজেকে গুছিয়ে তুলছেন। গেল সপ্তাহে স্বামী, পরিবারের সব সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে শরীয়তপুরে গিয়েছেন তিনি। উদ্দেশ্য, ছোটখাটো বনভোজন কিংবা হানিমুন! প্রভা জানান, ৭ই জানুয়ারি শনিবার সারাটা দিন আমরা পদ্মার বুকে নৌকা নিয়ে ঘুরেছি। এর ফাঁকে খাওয়া-দাওয়া আর হই-হুল্লোড় তো ছিলই। অনেক দিন পর এমন আয়োজনে আমরা সবাই খুব খুশি। বিশেষ করে আমার কাছে মনে হয়েছে অনেকদিন পর পুরো আকাশটা একসঙ্গে দেখেছি, ঘ্রাণ নিয়েছি শুদ্ধ বাতাসের। নদীর বুকে নৌকায় বসে নিজেকে পাখির মতো স্বাধীন-সুখী মনে হয়েছে।এদিকে পদ্মার বুক থেকে ফিরে এসে আবারও যোগ দিয়েছেন শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্রী প্রভা। প্রভা জানান, চলতি বছরেই নিজের ডিজাইনিং নিয়ে একটা এক্সিবিশন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বিয়ের পর খুব শিগগিরি আবারও নাটকে ফেরার সম্ভাবনার ইঙ্গিত মিলেছে বিভিন্ন সূত্র থেকে। জানা যায়, এরই মধ্যে তিনি কোমর বেঁধে গ্ল্যামার ভূবনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাই এরই মধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছেন বিভিন্ন নির্মাতার সঙ্গে। এর মধ্যে দু’-একজন নির্মাতার শুটিং লোকেশনেও দেখা গেছে নতজানু প্রভাকে। আরও জানা যায়, আবারও মিডিয়ায় ফেরার জন্য উদগ্রীব প্রভার পে রয়েছেন তার স্বামী এবং সাবেক প্রেমিক মাহমুদ শান্ত। তবে এখনও মিডিয়ায় ফেরার বিষয়ে সবুজ সংকেত মিলেনি প্রভার বাবা-মা’র প থেকে। তাতে কি? ব্যক্তিজীবনে অনেকটা ডেসপারেড প্রভা বাবা-মাকে তোয়াক্কা না করে আবারও ফিরবেন গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে- এমনটাই মনে করছেন অনেকে। উল্লেখ্য, একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, নতুন স্বামী মাহমুদ শান্ত প্রভার সাবেক প্রেমিক-স্বামী রাজিব এবং অপূর্বর অনেক আগে থেকেই ভালবেসে আসছিলেন।
সে সময় রাজিব-অপূর্বর ধারাবাহিক আকাশছোঁয়া প্রেমের উত্তাপে মাহমুদ শান্ত প্রভার কাছে অবহেলিত থাকলেও, এখন তার পুরোটা পৃথিবী শান্তকে ঘিরেই। তাইতো প্রভার নিকটাত্মীয় এবং সাবেক সহকর্মীদের অস্ফুট সুরে বলতে শোনা যায়- বাস্তবতা বড্ড বিচিত্র এবং নির্মম। যেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন প্রভা। যদিও সেই তিক্ত-নির্মম অভিজ্ঞতা থেকে প্রভা ঠিক কতটা শিা নিয়েছেন কিংবা নেবেন- সেটাই এখন দেখার বিষয়।

কারিনা ও ক্যাটরিনা নিয়ে দ্বন্দ্ব
নিবোনদন রিপোর্ট
চলতি সময়ে বলিউড ফিল্মডোমে রাজত্ব করছেন কারিনা কাপুর ও ক্যাটরিনা কাইফ। এই দুই হিরোইনের দরোজায় পরিচালকদের লাইন লেগেই থাকে। এই দুই টপ হিরোইনের একজনকে পেলেই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় ছবির বাণীজ্যিক সাফল্য। বলিউডের নামি দুই পরিচালক করন জোহর ও একতা কাপুর সম্প্রতি বিপাকে পড়েছেন কারিনা ও ক্যাটরিনাকে নিয়ে। কারণ এমন এক পরিস্থিতি তাদের সামনে তৈরি হয়েছে যে, কারিনা ও ক্যাটরিনার মধ্য থেকে যে কোনো একজনকে তাদের বেছে নিতে হবে। কাকে বেছে নেবেন তারা, এই নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়েছেন তারা।২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ওয়ানস আপুন এ টাইম ইন মুম্বাই’ ছবির সাফল্যের পর ছবিটির সিক্যুয়েল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিচালক একতা কাপুর। সিক্যুয়েল নির্মাণে সম্প্রতি তার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন বলিউডের আরেক খ্যাতিমান পরিচালক করন যোহর। এবার যৌথ পরিচালনায় নির্মিত হচ্ছে ‘ওয়ানস আপুন এ টাইম ইন মুম্বাই টু’ ছবিটি। ‘ওয়ানস আপুন এ টাইম ইন মুম্বাই টু ’ ছবির নায়িকা চরিত্রটির জন্য একজন শক্তিশালী ও আবেদনময়ী অভিনেত্রীর প্রয়োজন। তাই বলিউডের শীর্ষ স্থানের নায়িকাকে নিয়ে কাজ করার কথা চিন্তা করছেন ছবিটির দুই পরিচালক। কিন্তু মুশকিল হয়েছে পরিচালক দুজনের পছন্দটা দুই রকম। একতা কাপুরের ইচ্ছে বলিউডের আবেদনময়ী ক্যাটরিনাকে কাস্ট করবেন নায়িকা চরিত্রে। কেননা আবেদনময়ী ক্যাটরিনা অভিনয়েও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এছাড়া সৌভাগ্যবতী ক্যাটরিনার জাদু এ ছবিতেও পরবে এ আশাই করছেন একতা কাপুর। অন্যদিকে পরিচালক করন যোহর এ ছবিতে নায়িকা চরিত্রে চাচ্ছেন বেভো কারিনা কাপুরকে। এজন্য কারণও দেখিয়েছেন তিনি। কারিনা কাপুর ধার্মা প্রডাকশনে নিয়মিত অভিনয় করেছেন। এছাড়া কারিনার সৌন্দর্য ও অভিনয় যোগ্যতা সবার কাছেই প্রশংসনীয়। তাই নায়িকা চরিত্রে কারিনার চেয়ে ভালো পছন্দ আর কিছুই হতে পারে না বলে বিশ্বাস করন যোহরের। ‘ওয়ানস আপুন এ টাইম ইন মুম্বাই ’ ছবির মূল চরিত্রে অজয় দেবগণ অভিনয় করলেও ছবিটির সিক্যুয়েলে পরিচালকরা কাস্ট করেছেন বলিউড খিলাড়ি অয় কুমারকে। তবে নায়িকা চরিত্রটির দায়িত্ব কাকে দিচ্ছেন তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন দুই পরিচালক। কারিনা ও ক্যাটরিনার মুখোমুখি এ সংঘর্ষে বাজিমাত কে করছেন তা নিশ্চিত হওয়া যাবে পরিচালকদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর। সেই সঙ্গে শক্তিশালী ও আবেদনময়ী অভিনেত্রী হিসেবে কে বেশি এগিয়ে তা প্রমাণিত হবে ভক্তদের কাছে।

নওশীনের রঙ্গিলা
নিবোনদন রিপোর্ট
ঐশী মধ্যবিত্ত, রণশীল পরিবারের একমাত্র মেয়ে। সারাণ পর্দা করে চলে, কখনও মাথা থেকে কাপড় পড়ে না। বাবা-মায়ের কাছে সে আদর্শ মেয়ে। প্রতিবেশীরা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অন্যদিকে ইউনিভার্সিটির ঐশীকে চেনার উপায় থাকে না। বদলে যায় তার চালচলন পরনে তার লেটেস্ট মডেলের প্যান্ট, শার্ট, হেয়ার স্টাইল। সুদর্শন যুবকদের হƒদয়ে ঝড় তোলা ঐশী তখন আধুনিক একটা মেয়ে। রবিন নামের মধ্যবয়সী ব্যবসায়ীর সঙ্গে গভিড় সম্পর্ক তার। একদিন রবিনের গাড়িতে যাচ্ছিল ঐশী, ট্রাফিক সিগনালে গাড়ি দাঁড়ালে একটা রিকশা পাশে এসে দাঁড়ায়। গাড়িতে ঐশীকে দেখে তার বাবা চমকে ওঠেন। ঐশী বাবা-মাকে বোঝাতে পারে, গাড়ির মেয়েটা সে হতে পারে না। আরেকদিন ঐশীর মামা একই অবস্থা দেখে। বাবা-মার সন্দেহ হয়। নাটকের মোড় ঘুরে যায় যখন অমিতের সঙ্গে ঐশীকে দেখা যায়। ত্রিমাত্রিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়, একটার পর একটা নাটকীয় ঘটনা ঘটতে থাকে। এদিকে জামিলের সঙ্গে ঐশীর বিয়ের কথাবার্তা শুরু হয়। ঐশী জামিলকে নিরুৎসাহিত করার জন্য নাটকীয় পদপে নেয়। বন্ধু অমিতকে সামলানোর জন্য ঐশী আবীরের সাহায্য নেয়। এরকম একটি গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে ধারাবাহিক নাটক ‘রঙ্গিলা। আজ থেকে নাটকটি প্রতি শুক্রবার ও শনিবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে একুশে টেলিভিশনে প্রচার হবে। আবদুস সালামের কাহিনী ও রিজওয়ান খানের চিত্রনাট্যে এ নাটকটি পরিচালনা করেছেন জুয়েল মাহমুদ। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমিরুল হক চৌধুরী, চিত্রলেখা গুহ, নওশীন, ঈশানা, শহীদুজ্জামান সেলিম, মীর সাব্বির, অবিদ রেহান প্রমুখ।

মিলি’র কারণে খুন!
নিবোনদন রিপোর্ট
মনপুরা খ্যাত অভিনেত্রী ফারহানা মিলির কারণে খুন হলেন সাংবাদিক ও জনপ্রিয় অভিনেতা হাসান মাসুদ। তবে বাস্তবে নয় নাটকে খুন হলেন হাসান মাসুদ। আর খুন করলেন ফারহানা মিল’র স্বামী। মিলির স্বামী হাসান মাসুদকে কৌশলে খুন করলেন, যাতে কেউ বুঝতে না পারে। ইন-হাইওয়ে নাটকের কাহিনতে দেখা যাবে মিডিয়া জগতের প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী ফারহানা মিলি নাটকের শুটিং শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে গাড়ির ড্রাইভার গাড়িটি ঠেলে পার্শ্ববর্তী একটি পাম্পে নিয়ে যায়। পাম্পের ম্যানেজার হাসান মাসুদ মিলির প্রেমিক ছিলো। ভালোবাসার চতুর্মূখী দ্বন্দ্বে মিলি এবং হাসানের মিল হয়নি। মিলির বিয়ে হয় মিডিয়ার প্রভাবশালী প্রযোজক মাহমুদুল হাসান মিঠুর সঙ্গে। মিলি বিয়ে করলেও হাসান মাসুদ বিয়ে করেননি। ভালোবাসার মর্যাদা রাখতে মিলি ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে মেনে নিতে পারবেন না বলেই সে বিয়ে করেনি। মিলি বিবাহিত হলেও পুরনো প্রেমিককে পেয়ে পিছনের ইতিহাসের দিকে ফিরে যেতে চেষ্টা করে। দুজন দুজনের সুঃখ-দুঃখের নানা কথা শেয়ার করতে থাকে। আর এখানেই বাদ সাধে মিলির স্বামী মিঠু। সুচতুর ভাবে হাসান মাসুদ কে খুন করে। কারণ মিঠুর মনে ভয় ছিলো মিলি পূরণায় হাসান মাসুদের কাছে ফিরে যাবে। নাটকের চতুর্থ চরিত্র হচ্ছে মনস্বতান্তিক বিষয়টা। পুরো নাটকটি ফ্যাশব্যাকে দেখানো হবে। মনস্বতান্তিক এমন একটি কাহিনী নিয়ে নাটক বাণীয়েছেন রাইসুল তমাল। ফারহানা সালাম এর রচনা এবং রাইসুল তমালের পরিচালনায় ‘ইন-হাইওয়ে’ নাটকটির শুটিং শেষ। এখন যেকোনো একটি বেসরকারি চ্যানেলে প্রচারের অপোয় রয়েছে। ইন-হাইওয়ে নাটকে ফারহানা মিলি এবং হাসান মাসুদ ছাড়াও মাহমুদুল হাসান মিঠু অভিনয় করেছেন। ইন-হাইওয়ে সম্পর্কে ফারহানা মিলি বলেন, নাটকটি আমার নিজের কাছেও ভালো লেগেছে। আশা করি দর্শকদের ও ভালো লাগবে। রাইসুল তমাল ভাই একজন গুনি পরিচালক। ওনার মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ‘ট্রানজিস্টার’ নাটটিও একটি আলোচিত হয়েছিলো। রাইসুল তমাল বলেন, নাটকের কাহিনীতে দর্শক অন্য রকম স্বাদ পাবেন। কারণ এটি একটি ব্যাতিক্রমী বিষয়ের ঘটনা থেকে তৈরি করা হয়েছে। আমি দর্শকদের ঠকাতে চাই না বলেই নাটকটি ভালো করার চেষ্টা করেছি। বাকিটা দর্শক বলবেন।


শিমুর পথ চলা....
বিনোদন প্রতিবেদক
‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা হৃদয়ে সুখের দোলা.....’ জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী কনকচাপার এই গানটি গেয়ে গাও বাংলার গান প্রতিযোগী অনুষ্ঠানে প্রথম হলেন রংপুরের শিমু। পুরো নাম সাদিয়া আক্তার শিমু।
সম্প্রতি রাজধানীর পূর্বানী হোটেলে গাও বাংলার গানের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে আধুনিক গানটি গেয়ে বিচারকদের মাতিয়ে তোলেন সাদিয়া আক্তার শিমু। চূড়ান্ত পর্বের বিচারক ছিলে সুরকার গীতিকার মোস্তাক আহম্মেদ,সুরকার, গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক মিল্টন খন্দকার। শিমুর গান শুনে মিল্টন খন্দকার বলেছিলেন, তুমি বাংলাদেশের ২য় কনকচাপা। দরদী কন্ঠের অধিকারীনি শিমুর বাড়ি রংপুর বিভাগের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা পাড়া গ্রামে।বাবা সুলতান আহমেদ মা মুক্তা বেগমে ২য় কন্যা শিমু রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী। শিমু তার মায়ের অনুপ্রেরনায় ২য় শ্রেণী থেকে সঙ্গীত ভূবনে প্রবেশ করেন।তার সঙ্গীত শিক সুজন বাবু মাধ্যমে সঙ্গীত চর্চা করেন। পরে গীতিকার ,সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক সামসুজ্জামান ভানুর কাছেও গানের তালিম নেন। সঙ্গীতের প্রতিভাবান শিল্পী খুজতে গাও বাংলার গান সারাদেশে অডিশন শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ মার্চ গাও বাংলা গানের অডিশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করে সাদিয়া আক্তার শিমু। এই অডিশনে ঢাকা থেকে বিচারক ছিলেন, সুরকার গীতিকার মোস্তাক আহমেদ, চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনও জালাল মুন্না। এই অডিশনেও গান গেয়ে বিচারকদের মুগ্ধ করেন শিমু। সে দিনের দুটি রাউন্ডে হাজারো প্রতিযোগীর মধ্যে ইয়েস কার্ড পেয়ে ঢাকায় আসেন শিমু। ঢাকার সেগুন বাগিচার কচিকাচা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দুটি অডিশন রাউন্ড চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ায় শিমুর। কিন্তু তার মায়ে আন্তরিক প্রচেষ্টায় হাল ছাড়েনি শিমু।সঙ্গীতের বিভিন্ন যন্ত্রের সঙ্গে তাল লয় সুর ঠিক রেখে গলা ছেড়ে গান গেয়ে বিচারকদের মন জয় করে। বিচারকরাও শিমুকে বিচার করতে ভুল করেনি। তাই সব বিচারকরা তাকে দিয়েছে সর্বাধিক মার্ক। বিচারকদের মার্ক নিয়েই শিমু জায়গা করে নেয় সেরা দশে। এরপর ফাইনাল রাউন্ডের জন্য অপো করতে থাকে শিমু। নিজেকে ফাইনাল রাউন্ডের জন্য তৈরি করতে বেতার শিল্পী আশুতোষ বর্মন আশীষে নিকট তালিম নেন। তাল লয় সুরে শিমু তার গলাকে সাজিয়ে উপস্থিত হোন ফাইনাল রাউন্ডের মঞ্চে। কোন ভয় ভিতি ছাড়াই দরদী কন্ঠে গেয়ে ওঠেন, কনকচাপার সেই জনপ্রিয় সিনেমার গানটি,তুমি মোর জীবনের ভাবনা হৃদয়ে সুখের দোলা। গানের সঙ্গে শিমুর অভিনয় ভঙ্গিমাটা ছিল বিচারকদের দোলা দেয়ার মত। যেন গানটিতে হারিয়ে গিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য।তার অসাধারণ গায়কী ঢংয়ে বিচারকরাও হয়েছেন বিমোহিত। তাই বিচারকের রায়েই প্রথম স্থান অধিকার করেন শিমু। প্রথম হওয়ার অনূভুতি জানাতে গিয়ে সাদিয়া আক্তার শিমু বলেন, গানকে আমি মনে প্রানে ভালবাসি।আর আমি যে গানটি করি তা আন্তরিকভাবেই করার চেষ্টা করি। আজ গাও বাংলা গানে প্রথম স্থান অধিকার করার পেছনে গানের ওস্তাদসহ আমার মা ও নানীর অবদান বেশি। তারা আমাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে।্এছাড়াও গাও বাংলার গানের আয়োজক ও বিচারকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। গান নিয়ে ভবিষ্যত ভাবনা কি জানতে চাইলে, সাদিয়া আক্তার শিমু বলেন, আমি গতানুগতিক গান গাইবো না। সস্তা মানের গান গেয়ে জনপ্রিয় হওয়ার কোন ইচ্ছে আমার নেই। কেননা সঙ্গীতের বাজারে অনেক শিল্পী প্রতিদিন আসে। আবার অল্পকিছু দিনের মধ্যেই হারিয়ে যায়। আমি এমন করে হারিয়ে যেতে চাই না। আমি সুস্থ সঙ্গীত চর্চার মধ্য দিয়ে নিজেকে গড়াতে চাই। ভাল গান গেয়ে সবার মন জয় করতে চাই। এমনকি গান গেয়ে দেশের সেবা করে যাবে বলে জানায় শিমু। এ জন্য সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছে। 

 অসম প্রেমের পরিণতি টানছেন হৃদয় খান
বিনোদন ডেস্ক
এই সময়ের মিউজিক ক্রেজ হৃদয় খান। বছর তিনেক আগে তার একটি মিউজিক ভিডিওতে মডেল হিসেবে কাজ করেন সুজানা। সেই সূত্রে হৃদয় খান ও সুজানার ঘনিষ্ঠতা। দীর্ঘদিন তারা নিজেদের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিলেও তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে রোমান্টিক সম্পর্ক। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন তারা। হৃদয় খানের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর সূত্রে জানা গেছে, র‌্যাম্প মডেল হিসেবে সুপরিচিত সুজানা বয়সে হৃদয়ের প্রায় ৭ বছরের বড়। হৃদয় খান সদ্য টিনএজ পার করেছেন। বয়স এখনও ২১ ছাড়িয়ে যায় নি। তাতে কী ? প্রেম তো কোনো নিয়ম মানে না। তাই হৃদয়-সুজানা জড়িয়ে গেছেন অসম প্রেমে। হৃদয় খান লাইম লাইটে এসেছেন প্রায় তিন বছর হলো। গত দুবছর ধরে হৃদয় খানের প্রায় সব স্টেজ প্রোগ্রামে দেখা যায় সুজানাকে। হৃদয় খানের পোশাক-আশাক ঠিক করে দেওয়ার পাশাপাশি কোন প্রোগ্রামে কোন গানটি গাইবেন তা ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্বটাও অনেকদিন ধরে পালন করছেন সুজানা। হৃদয় খানের বাবা সঙ্গীত পরিচালক রিপন খানও ছেলে হৃদয় খানের হৃদয় ঘটিত সম্পর্কের ব্যাপারটি জানেন। সেলিব্রিটি ছেলের সিদ্ধান্তে বাবারও আছে পূর্ণ সম্মতি। হৃদয় খানের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৭ জানুয়ারি এসিআইয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিতব্য এক কনসার্টে হৃদয় খানের সাথে একই সঙ্গে মঞ্চে উঠবেন সুজানা। হৃদয় খান গাইবেন এবং সুজানা তাতে পারফর্ম করবেন। পারফর্মেন্স শেষে অডিয়েন্সের সামনে তারা দুজন ঘোষণা দিবেন বিয়ে করার। তাদের এই পরিকল্পনার কথা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজের কাছে ফাঁস করে দিয়েছেন দুজনেরই খুব কাছের এক বন্ধু। সুজানা প্রায় আট বছর আগে র‌্যাম্প মডেল হিসেবে মিডিয়ায় পা রাখেন। বড় বড় অনেক ফ্যাশন শোতেই তিনি ক্যাটওয়াক করেছেন। একটি সফট ড্রিংক্সের বিজ্ঞাপন চিত্রে অংশ নিয়ে তিনি বেশ পরিচিতি পান। সুজানার অবশ্য আগে একবার বিয়ে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সামির নামের এক যুবককে ২০০৬ সালে বিয়ে করেন সুজানা। তবে তাদের সংসার একবছরও টেকসই হয় নি। সদ্য টিনএজ পার করা গায়ক ও সুরকার হৃদয় খানের সঙ্গে এর আগে একজন সুপরিচিত ড্রামবাদকে শ্যালিকার গভিড় সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা গেছে।