Year-18 # Issue-47 # 8 January 2012




বাংলার কৃষক ও বঙ্গবন্ধু
কৃষির উপকারিতা ও ফজিলত অপরিসীম। এ সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসুলে পাক (সাঃ) বলেছেন, যে মুসলমান গাছ রোপণ করে কিংবা ফসল ফলায় এবং পাখি, মানুষ ও জীবজন্তু তা থেকে নিজেদের আহার যোগাড় করে, এ কাজ তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই কাজের মাধ্যমে সে ব্যক্তি সওয়াব লাভ করে। এ হাদিসের ব্যাখ্যাদান প্রসঙ্গে শেখ বদরুদ্দিন আইনি বলেন, গাছ রোপণকারী এবং ফসল উৎপাদনকারীর এই কাজের দ্বারা সওয়াব লাভের নিয়ত না করলেও সে সওয়াব পেতে থাকে। এমনকি, সে যদি বৃ রোপন করে এবং ফসল করে বিক্রিও দেয় তবু এটা তার প সদকা হিসেবে বিবেচিত হবে। কেননা, তার এই কাজের ফল আল্লাহ্র সৃষ্ট জীবের জীবিকা বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি কাজ বিশ্ব মানবের প্রতি আল্লাহ্ তায়ালার প থেকে এক বিরাট করুণা ও দয়া। কৃষি ও চাষাবাদ মুসলিম-অমুসলিম সবার জন্যই সমানভাবে কল্যাণকর ও মঙ্গলময়। কৃষকের নিয়ত বা ল্য-উদ্দেশ্য ছাড়াও কৃষি কাজের মাধ্যমে আল্লাহ্ পাকের সৃষ্টি-জীবরা উপকৃত ও লাভবান হয়। আমাদের হানাফি মাজহারের কোনো কোনো আলেমের মতে, ব্যবসা ও শিল্পের চেয়েও কৃষি উত্তম। যুগের অন্যতম দার্শনিক শাহ ওয়ালী উল্লাহ (রঃ) জীবনোপকরণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কৃষির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন। তার মতে, ‘যে দেশে কৃষির উপকরণ রয়েছে, সে দেশে যদি তার প্রতি উপো প্রদর্শন করা হয়, তাহলে সেখানকার সামাজিক অবস্থা কখনো সুষ্ঠু থাকতে পারে না। সে দেশের ধ্বংস ও অকল্যাণ অবশ্যম্ভাবী।’
সুতরাং কৃষি খুবই জনকল্যাণকর একটি পেশা। আর এ পেশার সঙ্গে বাংলার মানুষ জড়িত ও পরিচিত সদর অতীতের প্রাচীন যুগ থেকেই। আর এ অর্থেই এদেশের বাঙালি জাতি কৃষিনির্ভর। কৃষিই তাদের প্রথম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূল উৎস। এর মধ্যে ধান হলো বাংলার প্রধান অর্থকরী ফসল। এ ব্যাপারে চৌদ্দ শতকে বাংলায় ভ্রমণকারী চীনের বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বর্ণনা করেন, ‘এ দেশে তখন প্রচুর ধান জš§াত।’ বার্নিয়ার লিখেছেন, ‘যদিও অনেকের মতে পৃথিবীর মধ্যে মিশরে সবচেয়ে বেশি ফসল উৎপন্ন হয়, প্রকৃতপে এ সুনাম বাংলাদেশের প্রাপ্য। এদেশে এত ধান উৎপন্ন হয় যে, তা বহু দেশে রফতানি করা হয়। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ সুলতানী আমল থেকে অগ্রসর হতে থাকলেও তা আরো সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে মুঘল আমলে। এ আমলে বাংলার জনসংখ্যা ছিল দেড়-দুই কোটি মাত্র। লোকসংখ্যার তুলনায় ফসল উৎপন্ন হতো অনেক বেশি। ঐতিহাসিক আবুল ফজলের বর্ণনা মতে, বাংলার মাটি ছিল যথেষ্ট উর্বর। এ দেশের উদ্বৃত্ত চাল উত্তর ও দণি ভারত, শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপে রফতানি হতো। এ ছাড়াও আখ, তুলা, সর্ষে, পান, গম, মরিচ, হলুদ, আদা, আফিম, পাট ও নল চাষ হতো। এসব কৃষিজাত উৎপাদিত ফসল এবং এসবের দ্বারা তৈরিকৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদি ও মালামাল দণি ভারত, আরব, ইরাক, ইরান, ইউরোপ আর চীনসহ পৃথিবীর নানা দেশে রফতানি করা হতো। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, পরবর্তীতে ইংরেজ কোম্পানি সরকারের সৃষ্ট নীতি ও কুফলের কারণে কৃষিেেত্র এক চরম অবনতি ঘটে। আর এরই ফলে ইংরেজি ১৭৭০ সালে এক ভয়াবহ দুর্ভিে বাংলার কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং সীমাহীন তিগ্রস্ত হয়। কোম্পানি সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মচারী রিচার্ড বেচারের মতে, এ দুর্ভিকেষ বাংলার প্রায় এক কোটি বা এক-তৃতীয়াংশ লোক মারা যা। এ দুর্ভিে জের কাটাতে বাংলার মানুষের বিশ-পঁচিশ বছর লেগে গিয়েছিল। এ ধরনের চরম দুর্ভি এদেশে এরপরে ১৯৪৩ সালে আরো একবার হয়েছে। এ সময়ের দুর্ভিে সরকারি জরিপে পনর লাখ আর বেসরকারি মতে পঁয়ত্রিশ লাখ নারী-পুরুষ প্রাণ ত্যাগ করে। এ দুর্ভিরে কারণগুলো হলো, দেশে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং রপ্তানি শুরু করে দেয়া। এ সুযোগে অসাধু, লোভী এবং মনাফাখোর ব্যবসায়ীরা খাদ্যশস্য গুদামজাত করে। তাছাড়া দেশে অনাবৃষ্টির ফলে বাংলার ফসল উৎপাদনও কমে যায়। এমনকি, এ দুর্ভিরে জন্য বাংলা সরকার কর্তৃক তৎকালীন মন্ত্রিসভা ও মুসলিম লীগকেও দায়ী করা হয়েছিল। তদ্রƒপ, পাকিস্তানি আমলেও পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশ মারাÍক অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়। এদেশ থেকে অবাধে অর্থ পাচারের কাজ চলত। আর এভাবেই দেশের সমুদয় আয় পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যেত। অপরদিকে উদ্বৃত্ত সকল আর্থিক সঞ্চয়ও পশ্চিম পাকিস্তানে জমা থাকত। পাট এ দেশের প্রধান রফতানি পণ্য। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার দুই-তৃতীয়াংশই অর্জিত হতো এদেশের পাট থেকে। কিন্তু পাটের নায্যমূল্য পাট চাষিরা পায়নি, নানা টালবাহানা ও অজুহাত দেখিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানেই।
বাঙালির ওপর পাকিস্তানিদের রাজনৈতিক এবং সামরিক স্বেচ্ছাচারিতার পাশাপাশি এসব অর্থনৈতিক বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিবাদে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্র“য়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলের এক সম্মেলনে ৬ দফা দাবি নামে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঐতিহাসিকভাবে এ কর্মসূচিকে ৬ দফা আন্দোলন বলা হয়। আর এ ৬ দফাই বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে সমর্থন লাভ করে। বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে ৬ দফার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘৬ দফা বাংলার কৃষক, শ্রমিক, মজুর, মধ্যবিত্ত তথা আপামর মানুষের মুক্তির সনদ, ৬ দফা শোষকের হাত থেকে শোষিতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের বলিষ্ঠ হাতিয়ার, ৬ দফা মুসলিম-হিন্দু-খ্রীস্টান-বৌদ্ধদের নিয়ে গঠিত বাঙালি জাতির স্বকীয় মহিমায় আÍপ্রকাশ আর আÍনির্ভরশীলতা অর্জনের চাবিকাঠি।’ বঙ্গবন্ধু আরো বলেছিলেন, ‘আমাদের বাঁচার দাবি ৬ দফা কর্মসূচি।’ ৬ দফার সীমাহীন জনপ্রিয়তায় পাকিস্তান সরকার ভীত হয়ে বাঙালির এ আন্দোলনকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে এর অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচার করতে থাকে। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পর ৬ দফা আন্দোলনকে প্রতিহত করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার ভিন্ন কৌশল অবলম্বন অর্থাৎ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জন সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অবশেষে ছাত্র ও গণআন্দোলনের মুখে পাক সরকার মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়ে থাকলেও ৬ দফাকে ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ কর্তৃক দাবিকৃত ১১ দফার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এই ১১ দফা কর্মসূচিতে কৃষক-শ্রমিকের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবিও যোগ করা হয়েছিল। তার পরই শুরু হয়ে যায় ঊনসত্তরের গণআন্দোলন এবং এ আন্দোলনের পর সত্তরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয়ে পাক সরকার ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে  এবং নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। নির্বাচনের পর খোদ পাক প্রেসিডেন্ট  ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের ‘ভাবী প্রধানমন্ত্রী’ বলে  থাকলেও এ দেশ এবং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে তিন ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেন গুরুত্বরভাবেই। তারপর সংঘটিত হয়  একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। এযুদ্ধের শুরুর  ২৫ মার্চ গভীর রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলেও  তাকে পশ্চিম পাকিস্তানের নিয়ে যাওয়া হয় ২ এপ্রিল। সেখানকার সামরিক আদালতে ১৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবিতে দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। অবশেষে জনতার তীব্র চাপের মুখে পাক সরকার বাহাত্তরের ৮  জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয় এবং ১০ জানুয়ারি তিনি দিল্লির সমাবেশ শেষে স্বদেশে ফিরে আসেন। এরপর শুরু হয়  বঙ্গবন্ধুর সদ্য স্বাধীন ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ার সুদৃঢ় প্রত্যয় এবং সেই ‘রোড ম্যাপ’ অনুযায়ীই তিনি সামনের দিকে এগোতে থাকেন। তবে ধর্মের লেবাসধারীদের চেয়ে বঙ্গবন্ধুর ইমানি-মজবুতি ছিল অনেক বেশি। তিি নতো সারা জীবনই ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা আর অন্যায়ের মূল্যোৎপাটন করতেই আন্দোলন-সংগ্রাম করে গেছেন। তার বক্তৃতা ছিল, ভিার বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মদ ও নোংরা জিনিসের বিরুদ্ধে। তিনি দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য সুগভীর ভালোবাসা দিয়ে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন তার দরাজ গলের বিভিন্ন ভাষণ-বক্তৃতায়, আলাপচারিতায়। বলেছেন, ‘ভাইয়েরা জাতীয় আমার বোনেরা আমার, ভিুক জাতির ইজ্জত নেই। একটা জাতি যখন ভিুক  হয়ে মানুষের কাছে হাত পাতে, আমাকে খাবার দাও আমাকে টাকা দাও সেই জাতির নেতা থাকতে চাই না। আমি চাই বাংলাদেশের প্রত্যেক কৃষক ভাইয়ের কাছে যারা সত্যিকার কাজ করে, যারা প্যান্ট পরা, কাপড় পরা ভদ্রলোক তাদের  কাছেও চাই জমিতে গিয়ে ডবল ফসল করুন। এ প্রতিজ্ঞা করুন, আজ থেকে  ওই শহীদদের কথা স্মরণ করে ডবল ফসল করতে হবে। যদি ডবল করতে পারি আমাদের অভাব ইনশাল্লাহ্ হবে না। ভিুকের মতো হাত পাততে হবে না। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর তার বৃক্তৃতার দুর্নীতিবাজ খতম করার স্লোগান দিয়েছেন, কথা বলেছেন। এই দুর্নীতিবাজ বলতে তিনি কৃষকদের কথা, শ্রমিকদের কথা বলেননি। বলছেন, যারা ঘুষখোর, ব্লাক মার্কেটিং করে, বিদেশি এজেন্ট হয়, বিদেশে টাকা পাচার করে এবং হোর্ড করাসহ নানা দুর্নীতিতে জড়িত রয়েছেন তাদের কথা। এমনকি, দুর্নীতিবাজ বলতে বঙ্গবন্ধু দেশের শতকরা বিশজনের পাঁচজন শিতি লোককেই বুঝিয়েছে, দায়ী করেছেন। বঙ্গবন্ধু এসব শিতি ঘুষখোর দুর্নীতিবাজকে আÍশুদ্ধির কথা বলেছেন, চরিত্র সংশোধনের তাগিদ দিয়েছেন, দায়ী করেছেন। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সঙ্গে নয়, একজন কৃষক, শ্রমিক এবং রিকশাওয়ালাকেও সম্মান দেখিয়ে কথা বলতে বঙ্গবন্ধু শিতি চাকরিজীবীদের পথ নির্দেশ করেছেন। বঙ্গবন্ধু বিশাল জনসমাবেশে তার ভাষণ-বক্তৃতা দেয়া ছাড়াও সরকারি কোনো প্রতিনিধি দল অথবা ব্যক্তিগত কাউকে পেলেই উদ্ধৃতি-বিবৃতি উপমা, উদাহরণ দিতে গিয়ে মনের এসব হƒদয় নিংড়ানো কথাবার্তা জানাতেন। বলতেন তার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার কথা, সোনার মানুষের কথাও। বঙ্গবন্ধু সবচেয়ে বেশি দেশের কৃষকদের পছন্দ করতেন, ভালোবাসতেন। যেন কৃষকরা তার প্রাণ। কৃষকদের সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আমি সোনার মানুষের কথা বলি। আমার কৃষকরাই শুধু সোনার মানুষ। তারা সারা বছর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ফসল ফলায়, ঘরবাড়ি বানায়, নৌকা চালায়, তবেই না আমরা বাবু সেজে পায়ের ওপর পা তুলে আরো কত বড় হব তার খোয়াব দেখি। দৃঢ় আবেগ আর বেদনা নিয়ে বঙ্গবন্ধু আরো বলেছেন ‘বাঙালি খুব গবির, দরিদ্র আমার ভাষায় দুঃখী। আমি যতটা ইতিহাস পড়েছি, তাতে জেনেছি। হাজার বছর ধরেই বাঙালি দুঃখী-অভাবী। তার বিত্ত  নেই, বেসাত নেই। হাতে পয়সা  নেই।... মনে হয় শায়েস্তা খার আমলেও বাঙালি কাঙালিই ছিলে। বাঙালির বিশেষ করে কৃষিজীবী মুসলমান বাঙালির হাতে কোনো কাঁচা পয়সা জুটত। এই টাকা দিয়ে আমাদের বাবা-চাচারা ইলশা মাছ কিনে আনতেন। মা-চাচির জন্য শাড়ি আর নিজের জন্য কিনতেন লুঙ্গি। আমাদেরও নতুন কাপড় জুটত। বছরে পাটের  মৌসুমে এই একবারই। এই তো বাঙালি মুসলমানের অর্থনৈতিক অবস্থা।’ বঙ্গবন্ধুর কৃষক ভাবনা আর কৃষকপ্রীতি আজ দেশে অনেকাংশেই সার্থকতা লাভ করেছে, ফলপ্রসূ হয়েছে। জানা যায়, বর্তমান দেশের কোনো কোনো এলাকায় ‘ডিজিটাল কৃষি বিপ্লব’ ঘটেছে। মানসম্মত ফসল উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কৃষি কাজে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভেষজ কীটনাশক ও কম্পোস্ট সারের ব্যবহারও নিশ্চয়তার পথে এগোতে যাচ্ছে। দেশের রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষির এ ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হয়েছে। এ ব্যাপারে নাকি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কৃষি সম্প্রসারণ শিা’ বিভাগ সহযোগিতা দিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আর আজ এভাবে কৃষির মান্নোয়ন এবং কৃষকের ভাগ্যোন্নয়ন হলেই বঙ্গবন্ধু পরলোকগত আÍা শাস্তি পাবে, সুখ পাবে। তার সর্বশেষ ‘বাকশাল কর্মসূচি’ দেয়াকেও দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের জন্য সীমাহীন কল্যাণ সাধনকারী দল বা সংগঠন মনে করেছিলেন। আমরা জানি, মানুষের বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তা, চেতনা তাকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যায়, বড় বানায়। এেেত্র বঙ্গবন্ধুর অবস্থাটাও ছিল তাই। তিনি বাঙালি জাতির অতিশয় সুখ-সমৃদ্ধির জন্য জীবনের সুদীর্ঘ প্রায় তিন যুগ রাজনীতি করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, ভেবেছেনও। রাষ্ট্রীভাবে মতা গ্রহণের পর থেকে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে ধাপে ধাপে এগোতে এগোতে এক পর্যায়ে সর্বশেষ ও ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটিই তার জন্য বড় কাল হয়ে গিয়েছিল। আর এ জন্য বঙ্গবন্ধু খন্দকার মোশতাকসহ সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তার রোষানলে পড়েন এবং তারা তাকে সপরিবারে হত্যা করে। বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর বাকশাল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটি ছিল দেশের জন্য একটি মহত উদ্যোগে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহে নেই। কিন্তু মোশতাক গংরাসহ ঐসব উচ্চাভিলাষী সেনাবাহিনীর লোরো জানত না যে, বাহ্যিকভাবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের নানা মতে গরমিল  থাকলেও বাকশালের মাধ্যমেই হয়ত সাধারণ জনগণের মধ্যে দেশে-শান্তি সুখ ফিরে আসতে পারত, নিরাপদ আবাসভূমিও গড়ে উঠতে সহায়ক হতো।

পরিবহন খাতে শৃংখলা আসুক
নিজস্ব প্রতিবেদক
যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ওবায়দুল কাদের পরিবহন খাতে শৃংখলা প্রতিষ্ঠার যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা জনমনে কিছুটা হলেও প্রত্যাশার জš§ দিয়েছে। যদিও রাজধানীর যানজট পরিস্থিতি যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, তা রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয়, তবে ট্রাফিক ব্যবস্থায় অনিয়ম ও স্থবিরতা দূর করে পরিবহন খাতে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা গেলে যানজট অনেকটাই কমে আসবে বলে আশা করা যায়। যোগাযোগমন্ত্রী তথা সরকারের আন্তরিক উদ্যোগে তা করা সম্ভব বলে মনে করি আমরা। ভাড়া নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা এ সময়ে পরিবহন খাতের অন্যতম বড় সমস্যা। সরকার জ্বালানির দাম বাড়াচ্ছে ঘন ঘন এবং পরিবহন খাতে প্রতিবারই এর প্রভাব পড়ছে। সরকারিভাবে ভাড়া বাড়ানো না হলেও বাস মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছেন ইচ্ছামতো। আর যে েেত্র সরকার নতুন ভাড়ার হার নির্ধারণ করে দিচ্ছে, সেেেত্র তা মানছেন না অনেক পরিবহন মালিক। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহনের খরচ বেড়ে যায় সন্দেহ নেই। এেেত্র ভাড়া যদি বাড়াতেই হয়, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির হারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তা বাড়াতে হবে। সঠিকভাবে সে হিসাব-নিকাশ করেই নির্ধারণ করতে হবে নতুন ভাড়া। অযৌক্তিক হারে ভাড়া বৃদ্ধি করা হলে তা যাত্রীদের ভোগান্তির কারণ হবে। ফলে যাত্রীদের সঙ্গে বাসচালক, কন্ডাক্টর ও হেলপারদের বচসা লেগেই থাকবে। গত ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বৃদ্ধির পর আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস ভাড়া বাড়ানো হলেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীতে চলাচলরত যানবাহনের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। তা সত্ত্বেও নগরীর বিভিন্ন রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সিএনজির দাম বাড়ানো না হলেও কোন কোন রুটে সিএনজিচালিত বাসেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এেেত্র সরকারি নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী। এর যথাযথ বাস্তবায়ন দেখতে চায় মানুষ। গত বছর মে মাসে সিএনজির দাম বৃদ্ধির পর পরিবহন খাতে ভাড়া নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল চরম নৈরাজ্য। সিএনজিচালিত বাস মালিকরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তোয়াক্কা না করে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অযৌক্তিভাবে। এর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণÑ কোন কিছুতেই কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাস মালিকদের নির্ধারিত ভাড়াই বহাল থেকেছে। আমরা আশা করব, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী কঠোর ভূমিকা পালন করবেন। শুধু বাস নয়, ট্যাক্সিক্যাব ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোও যাত্রী হয়রানির বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা যাতে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোন গন্তব্যে যেতে এবং মিটার অনুযায়ী ভাড়া নিতে বাধ্য হয়, সে ব্যাপারেও কঠোর পদপে কাম্য।
যান চলাচলে শৃংখলা আনতে নগরীর যানবাহনগুলোকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে কঠোরভাবে। অন্তত নগরীর প্রতিটি বড় রাস্তার মোড়ে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশে লোকবলের অভাব থাকলে তা অবিলম্বে দূর করা প্রয়োজন। ট্রাফিক পুলিশের জন্য উন্নত প্রশিণের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি দূর করতে হবে এ খাতে বিদ্যমান অনিয়ম-দুর্নীতি। পরিবহন খাতে শৃংখলা প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ নিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী, আমরা তার সাফল্য কামনা করি। 

বাংলাদেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিক: আব্দুর রাজ্জাক
অরুণ ব্যানার্জী
আওয়ামী লীগ একটি সংস্কারপন্থি দল। ১৯৪৯-এর আওয়ামী মুসলিম লীগ ’৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি উঠে আওয়ামী লীগ হয়েছে। ’৬৬ তে আইয়ুব খানের লাহোরে আহূত সর্বদলীয় বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা উত্থাপন করেন। কিন্তু তিনি দলীয় বৈঠকে ৬ দফা দাবি পাস করতে পারেননি। অথচ সেদিন মাজাহারুল হক বাকী ও আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সভায় তারা স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে রূপান্তরিত করেন গণদাবিতে। আওয়ামী লীগের সংস্কার কর্মসূচির কারণেই স্বায়ত্তশাসনের দাবি রূপান্তরিত হয় স্বাধীনতার আন্দোলনে। দেশ স্বাধীনতার পরেও বঙ্গবন্ধুর বিপ্লবের কর্মসূচি সংস্কারেরই অংশ। আমার মতে জননন্দিত নেতা আব্দুর রাজ্জাক বা অন্য নেতারা দলে  সংস্কারের প্রশ্ন তুলে অন্যায় কিছু করেননি। তাকে দলে  গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বা মন্ত্রিসভায় স্থান না দিয়ে শুধু দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। দেশ, জাতি ও জনগণকে এর মাসুল দিতে হয়েছে। আগামী দিনে ইতিহাস নিশ্চয় এর মূল্যায়ন  করবে। টেলিভিশনের পর্দায় মানুষের ঢল নামার ছবি দেখছিলাম। সে ছবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ছবি। একজন রাজনীতিবিদের মৃত্যুর কফিনে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর দৃশ্য দেখছিলাম। তিনিই সংগ্রামী জননেতা আব্দুর রাজ্জাক। পাকিস্তানের ইসলামী জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদের এক লড়াকু সৈনিক। জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির এক প্রাণপুরুষ। বাংলাদেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের একু তেজোদ্বীপ্ত কণ্ঠ। সর্বোপরি ভোগ নয়, ত্যাগের মহিমায় দেদীপ্যমান ছিলেন আমাদের অনেকেরই রাজ্জাক ভাই। পাকিস্তানে সর্বপ্রথম সামরিক শাসন আসে ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর। রাজ্জাক ভাই ১৯৫৮-৬০ সাল পর্যন্ত ছিলেন ঢাকা কলেজের ছাত্র। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী মনোভাব থেকে তার মনে ছাত্র রাজনীতির উšে§ষ ঘটে। তিনি যুক্ত হন বাঙালি জাতীয়তাবাদী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে। ষাটের দশক তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র রাজনীতির এক সুবর্ণ অধ্যায়। এই দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে শেখ ফজলুল হক মণি, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সিরাজুল আলম খান, আসমত আলী খান, ওবায়দুর রহমান, মাজাহারুল হক বাকী, আব্দুর রাজ্জাক, ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী, আব্দুর রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলী, আমিনুল হক বাদশা, আল মুজাহিদী, তোফায়েল আহমদ, স্বপন চৌধুরী, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাহজান সিরাজ, আসম আব্দুর রব, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, নাসিরুল হক বাচ্চু, লতিফ সিদ্দিকী প্রমুখ একঝাঁক তরুণ নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিলেন। এর মধ্যে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের মূলধারায় রাজনীতির সঙ্গে একটানাভাবে সবাই যুক্ত ছিলেন না। নেতৃত্বের মোহ, চটকদারি স্লোগান, অর্থের হাতছানি তথা বিভ্রান্ত রাজনীতির কানাগলিতে অনেকেই পথ হারিয়েছেন। শেখ ফজলুল হক মণি, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমদ, খালেদ মোহাম্মদ আলী প্রমুখ কিছু নেতা রাজনীতির মূল স্রোতধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন ও আছেন। আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আবাসিক ছাত্র হিসেবে যুক্ত হন ফজলুল হক হলের সঙ্গে। তদানীন্তন সময়ে ফজলুল হক হল ছিল ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের আমলে আব্দুর রাজ্জাক হামিদুর  রহমানের শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। তার আন্দোলনমুখী ভূমিকার কারণে ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের ১৯৬২-৬৩ সালের নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সহসম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি, সিরাজুল আলম খান ও কাজী আরিফ আহমেদÑ এই তিন নেতা সম্মিলিতভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে একটি নিউক্লিয়াসের জš§ দেন। ওই নিউক্লিয়াসের মূল সুর ছিল পর্যায়ক্রমিক আন্দোলন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে দেশকে স্বাধীন করে শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। যার দরুন ১৯৬৬-৬৭ ও ১৯৬৭-৬৮ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে আব্দুর রাজ্জাক সারাদেশের জেলা ও মহকুমা শহর সফর করেন। তিনি ছাত্রলীগের বিশ্বস্ত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে স্বাধীনতার বীজ মন্ত্র সঞ্চারিত করেন। পরবর্তীতে এই নিউক্লিয়াসের নাম দেয়া হয় বামুবা (বাংলাদেশ মুক্তি বাহিনী) ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোনেম খানের সমাবর্তনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত ও গ্রেফতার হন। এ সময় তিনি ছিলেন ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। তিনি অন্য ছাত্রনেতাদের সঙ্গে ওই বহিস্কার আদেশের বিরুদ্ধে রীট মামলা দায়ের করেন। মহামান্য হাইকোর্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই বহিষ্কারাদেশকে বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টে আপিল মামলা দায়ের করেন। ওই  আপিল মামলায় মহামান্য আদালত নিু আদালতের আদেশ বহাল রাখে। জাতীয় রাজনীতির ক্রান্তিলগ্নে তিনি ছাত্রলীগ রাজনীতির সাধারণ সম্পাকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ডিক্টেটর আইয়ুব খান ‘অস্ত্রের ভাষা’ প্রয়োগ করে ৬ দফার জবাব দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্জাক ভাই তার সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে সংগঠিত করেছেন ছাত্র সমাজকে। পাকিস্তানি শাসকদের অর্থনৈতিক প্রশাসনিক ও সামাজিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেছেন জনসভায়। তার জ্বালাময়ী বক্তব্য কাঁপন সৃষ্টি করেছে পাকিস্তানি শাসক ও কনভেনশন মুসলিম লীগের নেতাকর্মীদের মনে। ’৬৬-এর ৭ জুন তার ঐতিহাসিক ভূমিকা জাতির ইতিহাসে থাকবে সমুজ্জ্বল হয়ে।
রাজ্জাক ভাই সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি ছিলেন। লেখাপড়া ও ছাত্র রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকার পরও তিনি মাঝে মাঝে সিনেমা দেখতেন। ফজলুল হক হলের সেক্রেটারি থাকাকালে তিনি এক দিন ফজলুল হক হল থেকে দুপুরের শো’ তে সিনেমা দেখতে চলে আসেন গুলিস্তান সিনেমা হলে। হঠাৎ করে সিনেমা স্লাইডে দেখানো হয় ঃ রাজ্জাক তোমার মা অসুস্থ তুমি তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসো। ইতি তোমার বাবা ইমামউদ্দিন, গ্রাম দক্ষিণ ডামুড্যা, জেলা ফরিদপুর। স্লাইড দেখে তিনি বুঝতে পারেন তার পেছনে গোয়েন্দা দফতরের লোকজন সক্রিয় রয়েছে। সিনেমায় ইন্টারভ্যাল দিলে তিনি বাইরে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাদের হাতে তখনই গ্রেফতার হন রাজ্জাক ভাই। এই ঘটনার দীর্ঘদিন পর তিনি আমাকে বলেছিলেন কেবলমাত্র আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও রাজনৈতিক সহকর্মী জানতেন ওই দিন এক সময় আমি গুলিস্তান সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যাব। কিন্তু তিনি ছিলেন ওহঃবষষরমবহপব উবঢ়ধৎঃসবহঃ-এর বেতনভোগী এজেন্ট। তার ওই বন্ধু পরবর্তীতে দল থেকে বহিষ্কৃত হন এবং খোন্দকার মোস্তাক আহমদের ডেমেক্রেটিক লীগ করতেন। এই ঘটনা তার মনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে, যা তাকে রাজনৈতিক জীবনে বাস্তববাদী হতে সহায়তা করে। মাজাহারুল হক বাকী, ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী, সিরাজুল আলম খান, আল মুজাহিদী, কাজী আরেফ আহমেদ প্রমুখের মতো সৃজনশীল নেতা দল ত্যাগ করে ছিটকে পড়লেও তিনি বিচ্যুত হননি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে। ১৯৬৬ সালে তিনি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক  লীগের সভাপতি মনোনীত হন। ’৭০ -এর নির্বাচনে প্রাক্তন ছাত্রনেতা হিসেবে দেশের বিভিন্ন মহকুমা ও জেলা সফর করে জনমত গঠনে সহায়তা করেন। ’৭১-এর ৭ মার্চ রেসকোর্সে ঐতিহাসিক ভাষণের আগে ও পরে বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্ব যেমন পালন করেন, তেমনি তাকে পৌঁছিয়ে দেন নিরাপদ গোপন স্থানে। ’৭১-এর জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু রাজ্জাক ভাই ও মণি ভাইকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর কাছ থেকে সম্ভাব্য বিপদ আঁচ করে কলকাতা পাঠিয়ে দেন বাড়ি ভাড়া করার জন্য। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান ছিল অসামান্য। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন দায়িত্ববান সংগঠক। রাজ্জাক ভাই ভারতের  মেঘালয়ে মুজিব বাহিনীর ৪ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তিনি মুজিব বাহিনীর একজন সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাদের একজন প্রশিক্ষক ছিলেন। তিনি দেরাদুনে ভারতের সেনাবাহিনীর জেনারেল উবানের কাছে নিয়েছিলেন প্রশিক্ষণ। রাজ্জাক ভাই মুজিব বাহিনী গঠনের অন্যতম রূপকার ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু তার øেহধন্য ও বিশ্বস্ত রাজ্জাক ভাইকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পণ করেন। একটি  স্বাধীন দেশে ঔপনিবেশিক আমলের শাসন ব্যবস্থা চলতে পারে না এই বিবেচনা মাথায় রেখে বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। গঠন করেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সেক্রেটারি জেনারেল হন মো. আব্দুর রাজ্জাক। অপর দু’জন সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন আজকের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও যুবনেতা ফজলুল হক মণি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন সে সময় আব্দুর রাজ্জাকের বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও তার রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতীক্ষা সততা তথা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি অবিচল নিষ্ঠার কারণে তিনি ওই পদে অধিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সেই দুঃসহ দিনগুলোতে সরকার তাকে কারারুদ্ধ করে ও ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর আবার তিনি গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হয়। এতে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিনকে সভাপতি ও আব্দুর রাজ্জাককে সম্পাদক করে  একটি  কমিটি গঠিত হয়। অপর প্যানেলে আব্দুল মালেক উকিলকে সভাপতি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীকে সম্পাদক করে গঠিত হয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আরেকটি কমিটি। ১৯৭৮ সালে উভয় পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে দলের কেন্দ্রীয় বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন হয়। এতে আব্দুল মালেক উকিল সভাপতি ও আব্দুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। দলের এ দুঃসময়ে তিনি গ্রহণ করেন কাণ্ডারীর ভূমিকা। ১৯৮১ সালের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি আবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের  পদ অলংকৃত করেন। এ সময় দলকে আসন্ন ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করতে রাজ্জাক ভাই ড. কামাল হোসেনকে দিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রথমে দলের প্রাথমিক সদস্য ও পরে সভাপতির প্রস্তাব করেন। তার এ প্রস্তাব অধিবেশনে গৃহীত হয়। এ থেকে বোঝা যায় আওয়ামী লীগের দুর্দিনে তার দুঃসাহসিক ভূমিকার কথা। ১৯৮৩ সালে তিনি গঠন করেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নে ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের পর ১৯৯১ সালে রাজ্জাক ভাই আবার আওয়ামী লীগে ফিরে  আসেন। তিনি ১৯৭০, ৭৩, ৯১, ৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। রাজ্জাক  ভাই স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ১৫ দলের অন্যতম রূপকার ছিলেন। পরবর্তীতে ৮ দল ৭ দল ও ৬ দলেরও ছিলেন অন্যতম সমন্বয়কারী। ৯২ সালে জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম আযমসহ  যুদ্ধাপরাধী বিরোধী আন্দোলনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম রূপকার ও সংগঠক ছিলেন তিনি। যুদ্ধাপরাধী  বিরোধী আন্দোলনে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, রাশেদ খান মেমন. আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমদ ও আহাদ চৌধুরী প্রমুখ নেতৃত্বের কারণে গতিময়তা পায়। ৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদমন্ত্রী ছিলেন। তার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দূরদর্শিতার কারণেই সেদিন ভারতের সঙ্গে সফল ফারাক্কা পানি চুক্তি করা সম্ভব হয়েছিল। ২০০৯ সালে ২৫ ফেব্র“য়ারি বিডিআর বিদ্রোহের সময় বিদ্রোহ দমনে যেসব নেতা পরামর্শ ও সাহস দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছিলেন তার মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক অন্যতম।
বর্তমান সময়ে অধিকাংশ রাজনীতিবিদদের কাছে রাজনীতি একটি পেশা। কিন্তু রাজ্জাক ভাই রাজনীতিকে গ্রহণ করেছিলেন সেবার ব্রত হিসেবে। আমাদের এ উপমহাদেশে এমন দৃষ্টান্ত ভুরি ভুরি রয়েছে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ খুব সৌখিন ব্যক্তি ছিলেন। পেশায় ব্যারিস্টার এ রাজনীতিবিদের কাপড় আয়রন হয়ে আসত প্যারিস থেকে। কিন্তু তিনি নিজের কলকাতার বাড়িটি তার রাজনৈতিক দল কংগ্রেসকে দান করেন। আইনজীবী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক কলকাতায় প্রচুর আয় করতেন। কিন্তু গরিব-দুঃখী অনেক মানুষকে দানও করতেন। অনেকদিন এমন হতো যে প্রচুর উপার্জন করার পরও তার বাড়িতে চুলায় হাঁড়ি বসত না। অন্যকে দান করতে গিয়ে অনেক সময় তিনি ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। একবার সুদসহ ঋণের টাকা আদায় করতে গিয়ে একজন মাড়োয়াড়ী ব্যবসায়ী তার বিরুদ্ধে আদালতে দেউলিয়া ঘোষণার মামলা দায়ের করে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তা জানতে পেরে মাড়োয়াড়ী ব্যবসায়ীর দাবিকৃত টাকা নিজের পকেট থেকে পরিশোধ করে রক্ষা করেন শেরে বাংলা একে ফজলুল হককে। ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী থাকতেন দিল্লির একটি কুটিরে। ত্যাগের রাজনীতির কারণে এটা সম্ভব হয়েছিল। আব্দুর রাজ্জাক কর্মীবান্ধব নেতা ছিলেন। যার দরুন ১৯৯১-২০১১ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা না হওয়া সত্ত্বেও তার মৃত্যুর পর ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, গুলশানের বাড়িতে, বনানী কবরস্থানে, সংসদ ভবনের জানাজায় শরীয়তপুর বা দক্ষিণ ডামুড্যার মানুষের  স্বতঃস্ফূর্ত ঢল নেমেছিল। আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার উপেক্ষা আর অবহেলার মধ্য দিয়ে আব্দুর রাজ্জাক ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর লণ্ডনের কিংস হাসপাতালে অন্তিমযাত্রা করেছেন। কিন্তু দেশ-বিদেশের অগণিত নেতা-কর্মী তথা সর্বস্তরের মানুষের হƒদয় থেকে তার সংগ্রামী জীবনের গরিয়ান-মহীয়ান আদর্শকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। আজ যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে, দেশে চলছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের গভীর ষড়যন্ত্র, সেখানে তার মতো দক্ষ ও প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদের  প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০১১ সালে আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বশান্তি পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত শিক্ষক শহীদ জেসি দেবের সরাসরি ছাত্র। সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদবিরোধী রাজ্জাক ভাইয়ের আদর্শ  বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা রাখুকÑ এটাই আমাদের কাম্য। 



২০তম জাতীয় টিকা দিবস উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রীনিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ গঠনের নতুন করে অঙ্গীকার গ্রহণের মধ্যদিয়ে ২০তম জাতীয় টিকা দিবস (এনআইডি) উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শনিবার সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ৫ বছরের কম বয়সী কয়েকটি শিশুর প্রত্যেককে দু’ফোটা পোলিও ভ্যাকসিন ও একটি করে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০তম এনআইডি’র প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ভবিষ্যৎ বংশোধরদের জন্য একটি সুস্থ জাতি গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দেশের সংবিধানে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’ স্বাস্থ্য খাতে তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদেেপর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার ১১ হাজার কমিউনিটি কিনিক পুনরায় চালু করেছেন। এসব কিনিক অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এসব কিনিক প্রতিষ্ঠা করেছিলো এবং এগুলো এখন জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের রূপকল্প বাস্তবায়নে মোবাইল ফোন এবং টেলিমেডিসিন পদ্ধতির মাধ্যমেও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। হাসিনা বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তাঁর সরকার সাফল্যের সঙ্গে ভ্যাকসিন অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে দেশকে পোলিওমুক্ত করেছিল। তিনি বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এ কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছিল এবং সেসময় যথাযথ কর্মসূচির অভাবে পোলিওতে আক্রান্ত হবার কয়েকটি ঘটনাও ধরা পরে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার মতায় আসার পর তাঁর সরকার ৫ বছরের নীচে বয়সী সকল শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এবং দুই ফোটা পোলিও ভ্যাকসিন খাওয়ানোর মাধ্যমে পুনরায় এ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এছাড়া দুই বছর থেকে পাঁচ বছরের নীচে বয়সী সকল শিশুকে ক্রিমিনাশক ট্যাবলেট দেয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী ৫ বছরের নীচে বয়স এমন সকল শিশু যেন পোলিও ভ্যাকসিন কর্মসূচির আওতায় আসে তা নিশ্চিত করার জন্য অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ জানান। শেখ হাসিনা শিশুর পাশাপাশি মায়েদের স্বাস্থ্য পরিচর্যার প্রতি যথাযথ নজর দেয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, মায়েরা যাতে পুষ্টিকর খাদ্যসহ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত না হন সেদিকে আমাদের সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ল্েয ভিজিএফ ও ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে অতি দরিদ্র্য জনগণকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসে সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ ২০১০ সালের জাতিসংঘ এমডিজি-৪ পদক লাভ করেছে। তিনি এ সাফল্যের জন্য ইপিআই কর্মীদের ধন্যবাদ জানান। স্বাস্থ্য সচিব হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা: আ ফ ম রুহুল হক, প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব:) ডা: মজিবুর রহমান ফকির বক্তৃতা করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী গণভবনের লন থেকে বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি উদ্বোধন করেন। সরকারি সুত্র জানায়, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরা আজ দেশব্যাপী  বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বিদ্যালয় এবং বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনের মত যাত্রী চলাচল এলাকাসহ মোট ১ লাখ ৪০ হাজার কেন্দ্রের মাধ্যমে শূন্য থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের ২ কোটি ৪০ লাখ শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়াবেন। এছাড়া এ কর্মসূচি চলাকালে ২ কোটি শিশুকে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এ কর্মসূচির দ্বিতীয় দফার কার্যক্রম আগামী ১১ ফেব্র“য়ারি শুরু হবে।
২০১২ হচ্ছে আওয়ামী লীগের জন্য সংগঠনিক ও সম্মেলনের বছর : হানিফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগের জন্য ২০১২ সাল হবে সাংগঠনিক ও সম্মেলনের বছর। এ বছরেই সারা দেশের সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলার ও জেলা সম্মেলন শেষ করে কেন্দ্রীয় সম্মেলন করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই পরিকল্পনার কথা জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। তিনি বলেন, আগমী মার্চ মাসের মধ্য সারা দেশের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা ও উপজেলা এবং জ্লুাই মাসের মধ্য সারাদেশের সকল সাংগঠনিক জেলাগুলোর সম্মেলন শেষ করা হবে। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ইতমধ্যে প্রতিটি জেলা নেতাদের কাছে চিঠি দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ হয়েছে ৫-৬ বছর আগেই। সর্বশেষ ২০০৩ সালের ২৫ জানুয়ারি যুবলীগ, ২০০৩ সালের ২৭ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ, একই বছর ২৯ জুলাই কৃষক লীগ, ২০০৪ সালের ৮ আগষ্ট তাঁতী লীগ, একই বছর ১৫ মার্চ যুব মহিলা লীগ, ২০০০ সালের ১১ মার্চ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, ২০০৩ সালে ৩ জুলাই শ্রমিক লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুসারে এ সহযোগী সংগঠনগুলোর মেয়াদ ৩ বছর। দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর মেয়াদ অনেক আগে শেষ হওয়া সত্ত্বেও এখনো কেন সম্মেলন করা হচ্ছেনা, জানতে চাইলে মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, আমাদের সকল সহযোগী সংগঠনগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৬ সালের দিকে। ২০০৬ সালে তত্ত্বাধায়ক সরকার ছিল, এ জন্য আমরা কোন সম্মেলন করতে পারিনি। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যেই সকল সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিদায়ী বছরে দল এ বিষয়ে অনেক কাজ শুরু করেছিল। যার অনেক গুলোই এখনো শেষ করা যায়নি। নতুন বছরে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে সারা দেশের অনেক ওয়ার্ড, ইউনিয়নের সম্মেলন শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ বছরের মধ্যেই এসব সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে নীতিগতভাবে পরিকল্পনা নিয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের তৃণমূলের অবস্থা জানতে জেলা নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছেন। ইতোমধ্য কয়েক জেলার নেতাদের সাথে তিনি গণভবনে বৈঠক করেছেন। এছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জনমত গঠন ও মহাজোট সরকারের তিন বছরের সাফল্য তুলে ধরতে নতুন বছরে জেলাগুলোতে জনসভা করা হবে। এসব সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জনমত গঠন ও সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে সারা দেশে একই ধরনের কর্মসূচী পালন করবে দলটি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন জানান, ২০১০ সালে সারা দেশে দলের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সফর কর্মসূচী শুরু হয়েছিল। গত বছরে তা শেষ হয়নি। নতুন বছরে এসব কাজ শেষ করা হবে। সঙ্গে থাকবে আরও অনেক নতুন পরিকল্পনা। নতুন বছরে দলের পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, সারাদেশে ইতোমধ্যে আমাদের তথ্য ও গবেষাণা কর্মশালা শুরু হয়েছে। সিলেট, চট্রগ্রাম ও ঢাকা বিভাগে এখনো করা হয়নি, তবে খুব দ্রুতই এ তিন বিভাগে তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক কর্মশালা শুরু করা হবে। তিনি বলেন, এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড সংগ্রহ করে আমরা প্রতিমাসে উত্তরণ বুলেটিনে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করবো। এছাড়া সরকারের ৩ বছরের সফলতা নিয়ে ডকুমেন্টরি করবো যাতে এর মাধ্যমে আমরা সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারি।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট 
স্কয়ার প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরী আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী সংস্থা স্কয়ার গ্র“পের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরী মারা গেছেন। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। তার ছেলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বলেন, তিনি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। আজ শুক্রবার রাত নয়টায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে তার মরদেহ দেশে আনা হবে বলে অঞ্জন চৌধুরী জানান। গত ২৭ ডিসেম্বর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। এর আগে তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। স্কয়ার গ্র“পের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মুনায়েম বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্যামসন এইচ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর আসে। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্যামসন এইচ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। স্যামসন এইচ চৌধুরীর জš§ ১৯২৬ সালের ২৫ ফেব্র“য়ারি পাবনার আতাইকুলা গ্রামে। বাবা ছিলেন ডিসপেনসারির মেডিক্যাল অফিসার। স্যামসনও ব্যবসায় আসেন ওষুধ শিল্পের মাধ্যমে। ভারতে পড়ালেখা শেষ করে ১৯৫২ সালে গ্রামে ফিরে ছোটো একটি ওষুধের দোকান খোলেন তিনি। পরে চার বন্ধু মিলে ১৯৫৮ সালে গড়ে তোলেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। স্যামসন এইচ চৌধুরীর অক্লান্ত চেষ্টায় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের পাশাপাশি প্রসাধনসামগ্রী, টেক্সটাইল, কৃষিপণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও মিডিয়াতেও বিস্তৃত হয় স্কয়ার। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে স্কয়ারের পণ্য। নামকরণ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে স্যামসন এইচ চৌধুরী বলেছিলেন, এটি চার বন্ধুর প্রতিষ্ঠান। এর লোগোও তাই বর্গাকৃতির। ১৯৫৮ সালে তার সেই ছোট উদ্যোগ আজ বিশাল একটি শিল্পগ্র“পে পরিণত হয়েছে, যার কর্মী সংখ্যা ২৮ হাজারেরও বেশি। স্কয়ার গ্র“পের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এ প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক আয় ৬১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই উদ্যোক্তা-শিল্পপতি। তিনি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন তিনি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপটারের চেয়ারম্যান ছিলেন ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত। শাহবাজপুর টি এস্টেট ও মিউচুয়াল স্ট্রাস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানও ছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী।

আইটিসি লাইসেন্স পেল ৬ প্রতিষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে প্রথমবারের মতো ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) লাইসেন্স হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বিটিআরসি চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়া আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার ছয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে এই লাইসেন্স হস্তান্তর করেন। লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- নভোকম লিমিটেড, ওয়ান এশিয়া-এএইচএলজেভি, বিডি লিংক কমিউনিকেশন লিমিটেড, ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড, সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড এবং ফাইবার এ্যাট হোম লিমিটেড। বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী, আগামী ৬ মাসের মধ্যে আইটিসি লাইসেন্সপ্রাপ্তদের কাজ শুরু করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স জমা দেয়াসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া কয়েক মাস আগেই সম্পন্ন হলেও নানা কারণে লাইসেন্স হস্তান্তরে দেরি হয় বিটিআরসির। কর্মকর্তারা বলছেন, অনুমোদিত ছয়টি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলে ইন্টারনেট আরো সহজলভ্য হবে এবং গ্রাহকরাও সুবিধা পাবে। বাংলাদেশ বর্তমানে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগের জন্য শুধু একটি সাবমেরিন কেবলের ওপর নির্ভরশীল। তবে সংযোগ প্রায়ই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে টেলিযোগাযোগসহ অন্যান্য খাত ক্ষতির মুখে পড়ে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত অপারেটররা টেরেস্ট্রিয়াল অপটিক্যাল ফাইবার লাইনের মাধ্যমে পাশের দেশ থেকে টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে। বিটিআরসি মহাপরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্স) এ কে এম শহিদুজ্জামান জানান, এই লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ছয় প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি টাকা করে ফি দিতে দিয়েছে। এ লাইসেন্স দেয়ার লক্ষ্যে গত ৩১ মার্চ লাইসেন্সিং গাইডলাইনের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে সরকার। লাইসেন্সিং গাইডলাইনের বিজ্ঞাপনে সর্বোচ্চ তিনটি লাইসেন্স দেয়ার কথা উল্লেখ ছিল। পরে তিনটি লাইসেন্সের পরিবর্তে ছয়টি লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। গাইডলাইন প্রকাশের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নয়টি কোম্পানি ওই লাইসেন্স নেয়ার জন্য বিটিআরসিতে আবেদন করে। প্রকাশিত গাইডলাইনে একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ ছিল। গাইডলাইন অনুযায়ী বিটিআরসি ২০ সদস্যবিশিষ্ট একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে। এই কমিটি গাইডলাইনে নির্ধারিত নির্বাচনের মানদণ্ড অনুযায়ী প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে আবেদনকারীদের ক্রম তৈরি করে লাইসেন্স দেয়ার সুপারিশ করে। সব প্রক্রিয়া শেষে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে আইটিসি লাইসেন্স দেয়ার জন্য চূড়ান্ত করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।

গুম রাষ্ট্রের কৌশল : অধিকার 
নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের তৃতীয় বছরে ‘ক্রসফায়ার’ এর নামে হত্যাকাণ্ড কমলেও গুপ্তহত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিকে রাষ্ট্রের ‘কৌশল’ বলে মনে করছে মানবাধিকার সংস্থা অধিকার। ২০১১ সালে অন্তত ৩০টি গুপ্তহত্যা হয়েছে উল্লেখ করে এ সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “অস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দাবির মুখে রাষ্ট্র এই কৌশল বেছে নিয়েছে।” অধিকারের সচিব আদিলুর রহমান খান শনিবার জানান, তাদের এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন জেলার মানবাধিকার কর্মী ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করা উপাত্তের ভিত্তিতে।
এতে অধিকার বলেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার মতায় আসার পর ২০০৯ সালে ক্রসফায়ারের নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১৫৪টি। ২০১০ সালে এ সংখ্যা ছিলো ১২৭। ২০১১ সালে তা কমে ৮৪ তে দাঁড়ায়। তবে গত বছর আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে গুম বা গুপ্তহত্যার ঘটনা। ২০০৯ সালে ২টি গুমের ঘটনার কথা জানা গেলেও ২০১০ সালে হয় ১৮টি। আর ২০১১ সালে গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে র‌্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে হতাহতের ঘটনা কমে আসলেও বিভিন্ন স্থানে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ওই সময় থেকেই ‘গুম’ শব্দটি আলোচনায় আসে।
অধিকাংশ েেত্র দেখা যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোকজন বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর কখনো ডোবা, কখনো নদীতে এসব ব্যক্তিদের লাশ পাওয়া যায়। নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় মিলেছে, তাদের অনেকেই বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নানা স্তরের নেতা-কর্মী।
অবশ্য র‌্যাব ও পুলিশ এ ধরনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যার অভিযোগ ওঠার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, পত্রিকা পড়ে তিনি গুপ্তহত্যার খবর জেনেছেন। আর পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছেন, গুম-অপহরণ-হত্যা অপরাধীদের কৌশল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক ব্যবহার করে তারা এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তিনি এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখার কথা জানালেও এখন পর্যন্ত একটি ঘটনারও কিনারা হয়নি। অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “রিমান্ডে নিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে প্রতিনিয়ত। এই সময় আইন শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর অনেককেই আদালতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাজির না করে থানা হাজতে আটকে রেখে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে।” ২০১১ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে ‘নৈরাশ্যজনক’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, “গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা কমলেও তা নাটকীয় মোড় নিয়েছে। পুলিশ কর্তৃক একদল মানুষকে লেলিয়ে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে ১৬ বছরের কিশোর শামসুদ্দিন মিলনকে।” এছাড়া সীমান্তে ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানীসহ ৩১ জন বাংলাদেশি প্রতিবেশী ভারতের সীমান্তরীদের হাতে নিহত হওয়ার পরও ‘দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির’ কারণে বাংলাদেশ তিপূরণ আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে অধিকারেরর প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের তিন বছরে রাজনৈতিক সহিংসতা চরম আকার ধারণ করেছে। ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় যথাক্রমে ২৫১, ২২০, ১৩৫ জন নিহত হন।” টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ছাত্রাবাসের সিট দখল, হল দখল ও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাকেই এসব সহিংসতার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে অধিকার। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে ৭১১ জন নারী ধর্ষণ, ৫১৬ জন যৌতুকের কারণে সহিংসতা এবং ৬৭২ জন বখাটেদের যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ‘পুরুষতান্ত্রিকতার প্রভাব’ ছাড়াও ‘রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দুর্বৃৃত্তায়ন, আইনশৃংখলা রাকারী বাহিনীর নিস্ক্রিয়তা ও ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার’ কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা যাচ্ছে না।
গত বছর প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করায় এবং মতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠন হামলায় বিরোধী দলের অনেক সভা সমাবেশ পণ্ড হয়ে গেছে উল্লেখ করে অধিকার বলেছে, “প্রতিটি ঘটনার পেছনে মতাসীন দল এবং পুলিশ প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা দেখা গেছে। ২০১১ সালে সারাদেশে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করে ১০৩ টি সভা বন্ধ করে দেয়া হয়।” সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনির মাধ্যমে ‘৫১টি রাজনৈতিক সংবেদনশীল বিষয়ের পরিবর্তন’ ঘটানোয় এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। সরকারের তিন বছরের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়নে অধিকার বলেছে, “গত তিন বছরে এটিই প্রমানিত হয়েছে যে, অগণতান্ত্রিক ও জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী কাঠামো বজায় রেখে শুধুমাত্র একটি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত কোনো দলকে শাসন করতে দিলে তা জনগণের কোনো কাজে আসে না।”
নতুন উ
পাদিত ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না 
নিজস্ব প্রতিবেদক 
গত তিন বছরে জাতীয় গ্রীডে  নতুন ভাবে যুক্ত হওয়া দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে সর্বশেষ বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়েভ সাইটে দেয়া তথ্য ও সরকারী মহলের দেয়া বক্তৃতা বিবৃতির তথ্যে এ বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়েভ সাইটে দেয়া তথ্যানুযায়ী, দেশে এ যাবতকালে সর্বোচ্চ ৫১৭৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ  উৎপাদিত হয়েছিল গত বছর ২৩ নভেম্বর। আর ৫ বছর আগে ২০০৭ সালের ২৯ অক্টোবর দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ৪০৩০ মেগাওয়াট। এ হিসেব অনুযায়ি গত ৫ বছরে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে  মাত্র ১০৪৪ মেগাওয়াট। সম্প্রতি জ্বালানি খাতের রিপোর্টারদের সাথে মত বিনিময়ের সময় পিডিবির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতা কোন ভাবেই ৫৩০০ মেগাওয়াটের বেশি নয়। এ থেকে এটা স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, গত ৫ বছরে প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন কোন ভাবেই এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি বাড়েনি। সরকরি ভাবে সংবাদ সন্মেলন করে বলা হচ্ছে, গেল ৩ বছরে ২৯০০ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যোগ হয়েছে। এ রকম অবস্থায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাহলে কি স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন মতা থেকে আরো প্রায় দেড় হজার মেগাওয়া হারিয়ে গেছে।   
২০০৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঐ বছরের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল ৪০৩৬.৭ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ৪২৯৬ মেগাওয়াট। গত ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল ৪৬৯৮ মেগাওয়াট। এর পর ২০১১ সালের সর্বোচ্চ ৫১৭৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর এর থেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা আর সম্ভব হয়নি। চলতি ২০১২ সালে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১ জানুয়ারি  ৫০৩৬ মেগাওয়াট। দেশে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২১০ কিলোওয়াট ঘণ্টা যা বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় নিতান্ত কম। চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও তা প্রকৃত প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত কম। শুষ্ক মৌসুম শুরু হলে পরিস্থিতির অবনতির আশংকা করা হচ্ছে। অথচ গত ক’বছরে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াটে উঠেছে।
তত্ত্বাবধায়ক না হলে সংলাপে লাভ নেই: মওদুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সে ফয়সালা না হলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে কোনো লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সদস্য মওদুদ আহমদ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ হবে না। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের ফয়সালা না হলে রাষ্ট্রপতির সংলাপও ফলোপ্রসূ হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। সরকার গত জুনে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর থেকেই বিএনপি আন্দোলন করে আসছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিভাগীয় শহরগুলো অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। এদিকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় নতুন কমিশন নিয়োগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের আয়োজন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল¬ুর রহমান। আগামী ১১ জানুয়ারি তিনি বিএনপির সঙ্গে বসবেন। এই সংলাপের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করে মওদুদ বলেন, রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে সংলাপ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে প্রধানমন্ত্রী তাকে বিতর্কের মধ্যে ফেলেছেন। কারণ নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কোনো ক্ষমতা নেই। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী নাম সুপারিশ করবেন, রাষ্ট্রপতি কেবল তাতে অনুমোদন দেবেন।’
জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করতেই সরকার রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এই সংলাপের আয়োজন করিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ১৯৭৪ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি চরম সংকটে। মুুদ্রাস্ফীতির চাপ অর্থনীতির অঙ্গনে ছায়া ফেলেছে। বর্তমান সরকারের অদক্ষতা ও অনভিজ্ঞতার কারণে দেশে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ছাত্রলীগ-জাগপার ৬৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এর আগে মিলনায়তনের সামনে দলীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন করেন জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান। আলোচনা সভার পর হয় শোভাযাত্রা। ছাত্রলীগ-জাগপার সভাপতি সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে শফিউল আলম প্রধান, সহসভাপতি রেহানা প্রধান, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান খান, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, ছাত্রলীগ-জাগপা সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আলম চৌধুরী আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।

প্রতারণা ও গণতন্ত্রকে কবর দেয়ার ৩ বছর: ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
মহাজোট সরকার তিন বছরে জনগণের কাছে করা কোনো অঙ্গীকারই বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলে দাবি করেছেন বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের তিন বছর পূর্তির প্রতিক্রিয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, মহাজোট সরকারের এই তিন বছর ছিল জনগণের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ ও গণতন্ত্রকে ‘কবর’ দেয়ার বছর। সরকারের তিন বছর পূর্তি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে সাফল্যের কথা জনগণকে জানাবেন। আমরা মনে করি, তিনটি বছর ছিল দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণার বছর। আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন না ঘটনায় জনগণের কাছে তা হতাশা ও ব্যর্থতার সময় বলে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সরকারের তিন বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগ মুহূর্তে নয়া পল্টন কমিউনিটি সেন্টারে এক আলোচনা সভায় ফখরুল একথা বলেন। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফখরুল বলেন, সংবিধান সংশোধন করে মহাজোট সরকার গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে দেশকে অন্ধকার সুড়ঙ্গের পথে নিয়ে গেছে। সরকারকে পুরোপুরি ব্যর্থ দাবি করে তিনি বলেন, সরকার তিন বছরে দ্রব্যমূল্য কমাতে পারেনি। জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম দফায় দফায় বাড়িয়েছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নতুন সংযোগের অভাবে এই তিন বছরে কোনো বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন হয়নি। ফলে ঘরে ঘরে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির আশ্বাসও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। সরকার স্বীকার না করলেও দেশের অর্থনীতি সঙ্কটে রয়েছে বলে দাবি করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফখরুল। তিনি বলেন, প্রতিদিন ব্যাংক থেকে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দেশ পরিচালনা করতে হচ্ছে সরকারের। ব্যর্থতা ‘ঢাকতে’ বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন চলছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা। দেশের মানুষ আপনাদের আর চায় না। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল করে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান, সরকারের উদ্দেশে তার বক্তব্য। নির্বাচন বর্জন বিরোধী দলের ভুল সিদ্ধান্ত হবে-বিসিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ অতীতে যেভাবে স্বৈরাচারের সঙ্গে আঁতাত করে এবং জনগণের সঙ্গে বেঈমানি করে নির্বাচন করেছে। বিএনপি সেভাবে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি নজরুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপির মুখপাত্র। ২০০৯ সালে নজরুল নিহত হন। আলোচনা সভায় নজরুলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

অবৈধ ভবন ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ রাজউকের
হাসান মাহমুদ রিপন
ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী (বিএনবিসি) নির্মাণকাজ করবে মর্মে ভবন মালিকরা নকশা অনুমোদনকালে রাজউকের কাছে অঙ্গীকার করলেও নির্মাণকালে তারা বিএনবিসির নির্দেশ না মেনে নিজেদের পছন্দমতো কাজ করে। এর ফলে নির্মাণকালে পাইলিং থেকে শুরু করে ভবনের ভিত্তি, কলাম, বিম, ছাদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্ধারিত দৈর্ঘ্য প্রস্থ, পুরুত্ব, নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহারে প্রচুর গরমিল করা হয়। পাইলিংয়ের জন্য মাটি কাটলে প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থাও করা হয় না। এ কারণে রাজউকের অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ করলেও নির্মাণকালে এবং নির্মিত হওয়ার পর অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আর বিধির দোহাই দিয়ে বিষয়টি জেনেও নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যায় রাজউক। নগরীর যে সব ভবন মালিক ইতিপূর্বে দেয়া সতর্কতামূলক নোটিশ অগ্রাহ্য করেছেন, তাদের উঁচু ভবনসহ অবৈধ স্থাপনা এবং মূল অনুমোদিত প্ল্যান থেকে সরে এসে নির্মিত ভবনের বাড়তি অংশ ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। নিয়ন্ত্রণ কমিটি এ অভিযানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রিহ্যাব ও ল্যান্ড ডেভেলপারদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত বেশ কয়েকটি মনিটরিং টিমকে নগরীর অননুমোদিত ভবন নির্মাণ সনাক্ত করার কাজে নিয়োজিত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের একজন কর্মকর্তা জানান, নির্মাণ ত্র“টির কারণে সম্প্রতি রাজধানীতে অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে। তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়ায় পাইলিং ধস এবং গুলশান ২-এর পাইলিং ও দেয়াল ধসের ঘটনাসহ এ রকম আরও অনেক ঘটনা ঘটছে এ কারণেই। তিনি জানান, তেজগাঁও শিল্প এলাকার নাখালপাড়ার ৩০৪/ই নং প্লটে নির্মাণাধীন ভবনটির স্থাপত্য নকশার অনুমোদন দিয়েছিল রাজউক। তবে বিস্তারিত কাঠামোগত নকশার ত্র“টির কারণে সেটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। রাজউক সদস্য (পরিকল্পনা) শেখ আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে একটি মনিটরিং কমিটি একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটকে সঙ্গে নিয়ে নগরীর গুলশান এলাকা পরিদর্শন এবং বেশ কয়েকটি অননুমোদিত ও অবৈধ ভবন সনাক্ত করেছে। এই পরিদর্শক দলে ছিলেন কমিটির সদস্য স্থপতি জালাল আহমেদ, সাংবাদিক মো. এনামুল হক, ম্যাজিস্ট্রেট রোকনউদ্দৌলা, রাজউকের উপ-পরিচালক (নগর পরিকল্পনা) মো. সিরাজুল ইসলাম এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ও মনিটরিং টিমের সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম। নিয়ন্ত্রণ কমিটির দিক-নির্দেশনা ও বিদ্যমান নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া অথবা নকশা না মেনে স্থাপনা নির্মাণকারীদের অনেকের কাছেই রাজউক নোটিশ পাঠিয়েছে। পরিদর্শন শেষে মনিটরিং কমিটি রাজউক মহাখালী অফিসে বৈঠক করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করে। মনিটরিং কমিটি নগরীর অননুমোদিত ও অবৈধ ভবন ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে তা সনাক্ত করার কাজ শুরু করে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে। নিয়ন্ত্রণ কমিটির দিক-নির্দেশনা ও বিদ্যমান নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া অথবা নকশা না মেনে স্থাপনা নির্মাণকারীদের অনেকের কাছেই রাজউক নোটিশ পাঠিয়েছে। কর্তৃপক্ষেক জানানো হয় যে কতিপয় মালিক রাজউকের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে তাদের ভবন নির্মাণের কাজ অব্যাহত রাখার কারণে নির্মাণস্থলে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং বাড়ছে সম্পদহানি ও হতাহতের ঘটনা। নিয়ন্ত্রণ কমিটি আইনি পদক্ষেপ এড়াতে সংশ্লিষ্ট ভবন মালিকদের তাদের অবৈধ স্থাপনা এবং ভবনের অননুমোদিত অংশ অপসারণ করে অবিলম্বে রাজউককে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজউকের চেয়ারম্যান মো. নুরুল হুদা বলেন, আইন ও বিধিমালা মোতাবেক এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজউক কাজ করছে। অনেক অননুমোদিত বা অবৈধ স্থাপনার মালিক মামলা করায় সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে রাজউক থেমে আছে, এ অভিযোগ সত্যি নয়। তিনি বলেন, জনবল সংকটের জন্য রাজউক ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সামনে জনবল প্রায় তিন গুণ করার চেষ্টা চলছে। তখন কাজের গতি বাড়ানো যাবে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তালিকায় ভবন অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও গত এক বছরে তার একটিও ভাঙা হয়নি। মাঝে মধ্যে ভাঙ্গার ধমকি দিয়ে অধিকাংশ সময় নীরব থেকেছে কর্তৃপক্ষ। বছরের পর বছর ধরে এসব অবৈধ ভবন ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও রাজউক এ ব্যাপারে কার্যকরী কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। যেসব ভবনকে অবৈধ তালিকাভুক্ত করার পরও গত একবছরে ভাঙা হয়নি তা হলো- ২৯০/২, পশ্চিম নাখালপাড়ার জনৈক মো. আবদুল কুদ্দুস মিয়ার ভবন, ২৪৩/২ পূর্ব নাখালপাড়ার মো. মোতাহের হোসেনের ভবন, ১৮ পশ্চিম নাখালপাড়ার মো. আবদুস সালাম ডোমিনিওর ভবন, ২৩৮/২/১, পূর্ব নাখালপাড়ার মো. আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারির ভবন, ৬৮৩ পশ্চিম নাখালপাড়ার মো. গেদা মিয়ার ভবন, ২৬১/এ পূর্ব নাখালপাড়ার মো. মাসুদের ভবন, ২৮০ পূর্ব নাখালপাড়ার আবদুল হান্নানের ভবন, একই এলাকার মো. আবু হানিফের ভবন, ২৮৬/২ পূর্ব নাখালপাড়ার হাজী জহিরের ভবন, ৬৭৯ পশ্চিম নাখালপাড়ার হাজী আবদুর রাজ্জাকের ভবন, ৬৭৮ পশ্চিম নাখালপাড়ার মো. নুরুল ইসলাম ভুইয়ার ভবন, ৪৬৬/২ পশ্চিম নাখালপাড়ার মো. আবদুল মান্নানের ভবন, ২৮৯ পশ্চিম নাখালপাড়ার মো. আবদুস সাত্তার সেতুর ভবন, ৪৬/৩ পশ্চিম নাখালপাড়ার মো. শাহজাহানের ভবন, ২৩১/৫ পূর্ব নাখালপাড়ার শেখ শহিদুর রহমানের ভবন, ১০১ পশ্চিম নাখালপাড়ার বিলকিস বেগমের ভবন, ৯৫/এ নাখালপাড়া-তেজকুনী পাড়ার মো. রফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন জিবিবি প্রপার্টি (সুফিয়া নীড়) ভবন, ৩০৮ পশ্চিম নাখালপাড়ার মো. মুকুলের ভবন ও ৬৪৬ পশ্চিম নাখালপাড়া মো. মকবুল হোসেনের ভবন। এ ছাড়া গুলশানে ২২ তলা জব্বার টাওয়ার, উত্তরায় ১৪ তলা নাটোর টাওয়ার, গুলশানে অনুমোদনহীন ২০ তলা প্রিমিয়ার স্কয়ার, পরীবাগে অনুমোদনহীন গার্ডেন টাওয়ারসহ আরও ২০টি বহুতল ভবন রাজধানীতে নির্মিত হয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, প্রায় আট মাসে যেসব তালিকাভুক্ত স্থাপনার বিরুদ্ধে রাজউক অভিযান চালায়, সেগুলোর মালিক প্রভাবশালী নন। নকশায় সামান্য পরিবর্তন করে বারান্দা বাড়ানো হয়েছে বা কিছু ত্র“টি ধরা পড়েছে, এমন স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।
এ ব্যাপারে রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) শেখ আবদুল মান্নান জানান, বহুতল ভবনে ধসের ঘটনা নিয়ে আমরা এখন ব্যস্ত রয়েছি। রাজউকের তালিকাভুক্ত নাখালপাড়ার অবৈধ ভবন ভাঙা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ ভবন ভাঙা হবে। এজন্য শিগগিরই উক্ত এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে বলেও তিনি জানান। নাখালপাড়ার দায়িত্বে নিয়োজিত অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, লোকবল সংকটের কারণে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে অবৈধ ভবন ভাঙার অভিযান। তিনি জানান, যেসব লোক রয়েছে তা দিয়ে রাজউকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া ভবন মালিকরা মামলা ঠুকে দিয়েও এ কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. জেবুন নাসরিন আহমেদ বলেন, ভবন নির্মাণে স্থাপত্য নকশা ও বিস্তারিত কাঠামোগত নকশা দুই-ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ ইমারত নির্মাণ বিধিমালাতে রাজউক থেকে শুধু কাঠামোগত নকশা অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজউকের কাজ শুধু পাস করা নকশা অনুযায়ী নির্মাণাধীন ভবনের চারপাশে আবশ্যিক উš§ুক্ত স্থান আছে কি না, আর ভবনের বহির্ভাগ পাস করা নকশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না তা যাচাই করা। তিনি বলেন, নির্মাণকাজের ত্র“টির জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ভবন মালিক এবং স্থপতি দায়ী হবেন। তবে রাজউকেরও দায়িত্ব আছে মনিটরিং করার। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিবের মতে, আসলে নিজেদের অপারগতাকে ঢাকার জন্যই বিস্তারিত কাঠামোগত নকশার বিষয়ে রাজউক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এর আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। কারণ এই নকশা বিশ্লেষণ করে তার যথার্থতা যাচাই করার মতো জনবল রাজউকের নেই। দুর্ঘটনা এড়াতে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও সরকারের এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তৎপরতা নেই। এসব বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদা বলেন, ভবন নির্মাণকালে বিস্তারিত কাঠামোগত নকশার বিষয়ে রাজউকের তদারকি থাকলে অবশ্যই ভালো হতো। তবে ইচ্ছা থাকলেও রাজউকের সীমিত জনবল দিয়ে তা করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, শুধু রাজউকের একার পক্ষে পরিকল্পিত নগরায়ন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ভবন মালিকদেরও সহযোগিতা করতে হবে। ভবন মালিকরা আইন মেনে চললে কোনো দুর্ঘটনাই ঘটত না বলে মনে করেন তিনি।
কুসিক নির্বাচন একটি দৃষ্টান্ত: সিইসি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেছেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচন নিয়ে অনেক কানাঘুষা বা সন্ত্রাস ও আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা হলেও কুমিল্লাবাসী নির্বাচনে বিপুলভাবে অংশ নিয়ে একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে এটিএম শামসুল হুদা একথা বলেন। তিনি বলেন, এই নির্বাচন কুমিল্লাবাসীর জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে। এই প্রথম কুসিকের সব ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি জানান, নির্বাচনে ৭৫ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। তিনি বলেন, ইভিএমের কিছু ত্র“টির শোনা গিয়েছিল। মানুষের অজ্ঞতা থাকতে পারে, ধীরে ধীরে লোকজন ইভিএম সম্পর্কে জানবে, তখন ঠিক হয়ে যাবে। ইভিএম জাতীয় নির্বাচনেও ব্যবহার করা যাবে বলে তিনি অভিমত দেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার ওপর ভিত্তি করে আগামী নির্বাচন কমিশন ইভিএম চালু রাখবে। এতে ভোট দিতে মানুষের কোনো ঝামেলা হয়নি। এই নির্বাচন প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য নির্বাচনে ছোটখাটো বিশৃঙ্খলা হলেও এতে কোনো অঘটনই ঘটেনি। এটিএম শামসুল হুদা বলেন, নির্বাচনের মধ্যে দায়িত্ব পালনকালে রিটার্নিং অফিসার, ডিসি, এসপি বা সরকারি কর্মকর্তারা প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করেছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভোট দেয়ায় কুমিল্লাবাসীকে আমি প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি। কুসিক নির্বাচনে ওয়েবক্যাম ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যে সিসিটিভি ব্যবহার করেছি, তা অন্যের কাছ থেকে ধার করা। এবার আমরা নিজেদের ওয়েবক্যাম ব্যবহার করেছি। সেগুলো পড়ে ছিল। এর ফলে নির্বাচনী ব্যয় কমে গেছে। কেউ অভিযোগ করলে ওয়েবক্যামে ধারণা ভিডিওচিত্র থেকে তদন্ত করা যাবে।

মহাজোট সরকারের তিন বছর পূর্তি
দৈনিক সমকালের জরিপ প্রধানমন্ত্রীর করণীয়

সিরাজউদদীন আহমেদ
দৈনিক সমকাল পত্রিকা ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি মহাজোট সরকারের তিন বছরের সফলতা ও ব্যর্থতাÑসরকার ও বিরোধী দলের করণীয় সম্পর্কে এক জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে। সমকালের জরিপ ছিল সময়োপযোগী, তথ্যবহুল এবং উভয় দলের প্রতি সতর্কবার্তা। জরিপের ফল বিশ্লেষণ করেছেন সমকাল পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক অজয় দাসগুপ্ত। জাতির এক কঠিন মুহূর্তে দৈনিক সমকাল চমৎকার জরিপ প্রকাশ করেছে। আমি সহযোগী সম্পাদক অজয় দাসগুপ্ত ও তার সহকর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। স্বল্প সময় ও স্বল্পপরিসরে তারা সরকারের সঠিক চিত্র তুলে ধরেছেÑ তারা জনগণের কথা বলছে, তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারন করে বলেছেন “তীর থেকে দূরে প্রত্যাশার তরী”। সরকারের মাত্র দুই বছর অবশিষ্ট আছে। এই দু’বছরে কয়েকটি করণীয় নির্ধারণ করেছে জনগণ। জরিপের যথার্থতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা সঠিক হবে না। ৬৪ জেলা ও ৩৫১টি উপজেলায় জরিপ চালানো হয়। জরিপের সময়কাল ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাস। জরিপের ৯৬৫২ জন অংশগ্রহণকারীÑ শহরের ৪৫৭৫, গ্রামে ৫০৭৭ জন। তার মধ্যে নারী ৩৩৮৬ পুরুষ ৪৬২৬ জন।  আমি মনে করি ৯৬৫২ জনই একমাত্র কথা বলেননি। তাদের কণ্ঠে সমগ্র জাতির চিন্তা চেতনা উদ্বেগ দাবি ফুটে উঠেছে। দৈনিক সমকাল সমগ্র জাতির মনের কথা প্রাণের কথা প্রকাশ করেছে। জাতি দৈনিক সমকাল পত্রিকার প্রতি কৃতজ্ঞ। পত্রিকার পেশার ঊর্ধ্বে উঠে দেশের কল্যাণে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে তারা। আমার মনে হয় বিরোধী দলের চেয়ে সরকারি দলকে জরিপ থেকে বেশী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। জরিপের করণীয় বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। জরিপকে টকশো হিসেবে গণ্য না করে তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। জরিপে দেখা যাচ্ছে, শতকরা ৬৫ জন বলেছেন যে, রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্রের চর্চা নেই। আওয়ামী লীগ ৬০ বছর পুরানা দল। দলে গণতন্ত্র নেই। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সাল হতে ২০১২ সাল পর্যন্ত সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। ভারতের কংগ্রেসের দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা প্রায় বছরই দলের সভাপতি, সম্পাদক ও অন্যান্য নেতাদের পরিবর্তন করে চলেছে। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি ও বিরোধী দলে গণতন্ত্রের চর্চা নেই। একই ব্যক্তি যুগ যুগ ধরে দলে অবস্থান করছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দল ও জনগণের নিকট তার গ্রহণযোগ্যতা নেই। দলের মুখপাত্র হিসেবে যুগ্মসচিব কথা বলছেন, কিন্তু তার পরিচিতি নেই। দলের ত্যাগী নেতাদের সুকৌশলে নির্বাসন দেয়া হয়েছে। এক বুক ভরা ব্যথা নিয়ে বিদায় নিয়েছেন জাতীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক। দলের জেলা ও উপজেলা কমিটি নেই, বছরের পর বছর একই কমিটি চলছে। জরিপের সুপারিশ অনুসারে অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করা উচিত। সংসদ কার্যকর করার জন্য সরকারি দল দায়িত্ব পালন করছে না। কোনো আলোচনার সুযোগ না দিয়ে তারা কণ্ঠভোটে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ও ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগের বিল পাস করেছেন। বিরোধী দল সংসদে আসছে না। তাদের অব্যাহত অনুপস্থিতি গণতন্ত্রের চর্চা ব্যাহত হচ্ছে। মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভাকে নিয়ে বিগত দুই বছরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। দলের জনপ্রিয়তা দ্রুত হ্রাস পায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জনতার দাবির প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বাণিজ্যমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রীর দফতর বদল হয়েছে। কিন্তু তাদের বাদ দেয়া হয়নি। এর ফলে দলের ও দেশের ক্ষতি হয়েছে তা সরকারি উপলব্ধি করতে পারছে না। জরিপের ৫১ ভাগ মন্ত্রিসভার রদবদল চেয়েছে ৩৪ ভাগ আংশিক পরিবর্তন চেয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে ৮৬ ভাগ উত্তরদাতা মন্ত্রিসভার রদবদল চেয়েছে। জরিপের ফলাফলে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান মন্ত্রিসভার ওপর অনাস্থা দিয়েছে জনগণ। জনগণের বিশাল বিজয়কে অদক্ষ মন্ত্রিসভা ধ্বংস করতে পারে না। বাণিজ্যমন্ত্রী-যোগাযোগমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রী দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে, যোগাযোগমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণে ও অর্থমন্ত্রী অর্থনীতির ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির জন্য অর্থমন্ত্রী অনেকটা দায়ী। তিনি জাতির সামনে সেক্সপিয়রের নাটকের কমেডিয়ানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তাকে জনগণ দেখতে চায় না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনেকেই সমালোচনা করছে। তিনি ক্রসফায়ার, গুম হত্যা বন্ধ করতে পারেনি। মন্ত্রিসভায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী। আগামী নির্বাচনে যদি মহাজোট সরকার জয়লাভ করতে চায় তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে অবিলম্বে মন্ত্রিসভার অযোগ্য মন্ত্রীদের বাদ দিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের ও জোটের নেতাদের নিয়ে পুনরায় মন্ত্রিসভা গঠন করতে হবে। শরিক দলকে মন্ত্রিসভায় যথাযথ মর্যাদায় রাখতে হবে। জাপার সভাপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। তার দলকে মর্যাদা দিতে হবে। জরিপে সরকারের বিদ্যুৎ ও শিক্ষা খাতে সফলতার চিত্র ফুটে উঠেছে। এই দুটি খাতে সরকার ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা সব সফলতা ম্লান করেছে। দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করেছে ৮৩ ভাগ উত্তরদাতা। তবে আশার কথা দেশের মানুষের এখনো শেখ হাসিনার ওপর আস্থা আছে। ৮ ভাগ লোক বলছে তিনি খুব ভালো করছেন, ৪২ ভাগ বলছেন ভালো করছেন, ৫০ ভাগ লোক বলছেন তিনি ভালো করছেন ৩৬ ভাগ লোক বলছেন তিনি ভালো করছেন না। প্রধানমন্ত্রীর কাজের মূল্যায়নের পক্ষে ৫০ ভাগ লোকের আস্থা আছে। অনেক ব্যর্থতার মধ্যে ৫০ ভাগ লোক বলছে তিনি ভালো করছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যার প্রতি মানুষের এখনো আস্থা আছে, এখনো সময় দুই বছর। এই সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
সরকারি দলের করণীয়
মানুষ একটু ভালো থাকতে চায়। কিন্তু প্রধান সমস্যা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। দরিদ্র লোকের জন্য বিনামূল্যে, অর্ধেকমূল্যে বা স্বল্পমূল্যে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্যের কর্মসূচিতে তেমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। মাঠ পর্যায়ে দলের কর্মীরা দুর্নীতি করছে, টেন্ডারবাজি করছে, নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। তারা বেপরোয়া, প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মী ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। জনগণ কি বলতে চায় তা তিনি জানেন না। তাকে মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে হবে। মনে হচ্ছে তিনি খাঁচায় বন্দি। সারাক্ষণ তাকে দেখা যায়, সভা সমিতিতে ভাষণ দিচ্ছেন। সেখানে জনতা নেই, মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা নেই। আমরা জানি শেখ হাসিনার নিরাপত্তা প্রয়োজন। তিনি বিরোধী দলের নেত্রীর ন্যায় উš§ুক্তভাবে জনসংযোগ করতে পারবেন না। তার পরও তাকে জেলায় জেলায় জনসভায় কর্মিসম্মেলন করতে হবে। তাকে দিনের সকালে গণসংযোগ করতে হবে। বিকেলে দাফতরিক কাজ করবেন। মন্ত্রিসভার অধিবেশন পর্যায়ক্রমে সকল জেলায় করতে হবে। মহাজোট সরকার ঢাকার বাইরে মন্ত্রিসভার বৈঠক করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের দু’বছরে ঢাকার বাইরে কয়েকটা সভা করেছে। বিদ্যুৎ খাতে আঁধার দূর হচ্ছে। সরকারকে ধন্যবাদ। বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্রে সফলতা ম্লান করেছেন অর্থমন্ত্রী। বারবার বিদ্যুত ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে স্বল্প আয়ের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আগাম বলেছেন, আরো তিনবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি হবে। অর্থমন্ত্রীর লাগামহীন কথায় জাতি ক্ষুব্ধ। তিনি যে অর্থনীতিবিদ নন, তা তিনি বারবার প্রমাণ করছেন। তাকে অবশ্যই বিদায় দেয়া প্রয়োজন। সরকারের সাফল্য ধ্বংস করছে দুর্নীতি। দুর্নীতির কালো হাত প্রত্যেক দফতরে থাবা দিচ্ছে। ৪৪ ভাগ উত্তরদাতা বলছে, দুর্নীতি বেড়েছে, তেমন বাড়েনি বলছে ৩৪ ভাগ। দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ করেছে। একজন ব্যবসায়ীকে যোগাযোগমন্ত্রী করা হয়েছে। তিনি রাজনীতিবিদ নন, তিনি পরিচিত নন, তিনি জনগণের ভাষা  বোঝেন না। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার তাকে চেনে। এমনিভাবে একজন অচেনা ব্যবসায়ীকে যোগাযোগমন্ত্রী করা প্রধানমন্ত্রীর চরম ভুল হয়েছে। মন্ত্রী মন্ত্রণালয়কে ডুবিয়ে বিদায় নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর একডজন উপদেষ্টা রয়েছেন। তারা কি করছেন তা কেউ জানেন না। উপদেষ্টা এইচটি ইমামকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন। তিনি জনপ্রশাসনকে দুর্বল করে রেখেছেন। জনপ্রশাসনে অনেকের পদোন্নতি হয়েছে, অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের নির্বাচনী ইস্তেহার বাস্তবায়নে প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পদোন্নতি, বিদেশগমন ও বাড়িঘর নির্মাণ ছাড়া আমলাদের কোনো উদ্দেশ্য নেই। উপদেষ্টা গহর রিজভীকে কেউ চেনে না, দেশের সঙ্গে সম্পর্কহীন উপদেষ্টাকে দিয়ে তিস্তা নদীর পানির সমস্যা সমাধান হবে না। জনপ্রতিনিধি এবং জনপ্রিয় নেতারা একমাত্র টিপাইমুখ বাঁধসহ তিস্তা নদীর সমস্যা সমাধান করতে পারবে বলে মনে করি। তিন বছরের উপদেষ্টাদের কাজের মূল্যায়ন করে বিদায় দেয়া উচিত। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অগ্রগতি প্রশংসনীয়। ৫৬ ভাগ উত্তরদাতা অগ্রগতিতে হ্যাঁ বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় প্রধানমন্ত্রীর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিন্তু তাকে মিথ্যা অভিমানের ঊর্ধ্বে উঠে নতুন মন্ত্রিসভাকে জনমুখী প্রশাসনগড়তে হবে ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জনপ্রশাসন স্থবির, সরকারি প্রশাসনে গতি আনতে পারেনি। জনপ্রশাসন উপদেষ্টা প্রথম থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে অযোগ্য কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রশাসন চালাচ্ছে। সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রশাসন আন্তরিক নেই। একদল সুযোগসন্ধানী কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘিরে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে। অনেকের সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দিয়ে সুবিধাবাদীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছে। সরকারের নির্বাচনী ইস্তেহার বাস্তবায়নের জন্য একদল দক্ষ নিবেদিত কর্মকর্তা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হলেন হবেন একজন যুগ্মসচিব। কিন্তু একজন সচিব এই পদটি দখল করে আছেন। সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা। শিক্ষানীতি প্রশংসিত হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য স্থায়ী শিক্ষা ও শিক্ষক কমিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়নের জন্য কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
দৈনিক সমকালের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত জরিপের ভিত্তিতে বিশিষ্ট সাংবাদিক অজয় দাসগুপ্তের বাস্তবমুখী বিশ্লেষণের আলোকে সরকার ও বিরোধী দল তাদের করণীয় সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা বাঞ্ছনীয়। বিরোধী দলকে সংসদে গিয়ে তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি  পেশ করতে হবে। হরতাল বাদ দিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। মহাজোট সরকারকে অবিলম্বে নিুলিখিত পদক্ষেপ নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অর্থনীতির ঝুঁকি দূর করা, মন্ত্রিসভা থেকে অযোগ্য মন্ত্রীদের বাদ দেয়া, মহাজোট সহযোগী দল থেকে মন্ত্রী নিয়োগ করতে হবে। দলের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে, আগামী দুই বছরের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সমাপ্ত করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জোট মুক্তিযুদ্ধের শক্তি নয়, কাজেই মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে ক্ষমতায় পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাকে সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে নিজ দলের ঐক্য সুদূর করতে হবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে নির্বাচনী ইস্তেহার বাস্তবায়ন করে জনগণের হারানো আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এ সকল কাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে করতে হবে। কারণ তিনি সকল ক্ষমতার অধিকারী- তিনি দলের নেতা, সংসদ নেতা তিনি প্রধানমন্ত্রী।
এই কাল এই দেশ
অরুণ ব্যানার্জী
দৈনিক ‘কালের কণ্ঠ’ পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার নিখিল ভদ্র সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ  করেছেন গত ২৮ ডিসেম্বর। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক আরটিভির অপর্ণা সিংহসহ কয়েকজন সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন। কুমিল্লার সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও নাগরিক কমিটির সমর্থিত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। ছাত্রলীগের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ৪ জানুয়ারি গভীর রাতে ধর্ষিতা হয়েছেন এক নৃত্যশিল্পী ছাত্রী। গত বছরের শেষ দিকে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর প্রেক্ষিতে প্রতি কিলোমিটারে দূরপাল্লার গাড়িতে ১৫ পয়সা করে বেড়েছে। বর্ধিত ফি কমানের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামায় ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় ২ জন ছাত্রীসহ আহত হয়েছে ১৫ জন। রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছেন। সাংবাদিকসহ আহত হয়েছে ১২। এই হচ্ছে গত দেড়/দু’সপ্তাহে প্রকাশিত ও আলোচিত খবর। নিখিল ভদ্র ঢাকা প্রেসক্লাবে যাচ্ছিলেন পেশাগত কারণে। প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তা পার হতে গিয়ে ঘাতক বিআরটিসির চালকের দ্বারা তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন। তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে। পঙ্গুত্বের গ্লানি নিয়ে তাকে অতিবাহিত করতে হবে আজীবন। অবশ্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তার চিকিৎসা বাবদ ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেয়া হয়েছে তার পরিবারের হাতে। সরকার পক্ষ থেকে প্রতিশ্র“তি দেয়া হয়েছে তার বিদেশে চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হবে। প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের আনাচে কানাচে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে।  এতে আহত, নিহত ও পঙ্গু হচ্ছেন অসংখ্য নারী-পুুরুষ ও শিশু। চালক বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। লক্কড় মার্কা গাড়ি, যান্ত্রিক ত্র“টিযুক্ত গাড়ি, সুষ্ঠুভাবে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও বিআরটিএ এর সার্টিফিকেট নিয়ে জেলা, আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার গাড়ি চলছে। মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বহন তো নিত্যদিনের স্বাভাবিক ঘটনা। কয়েক মাস আগে তারেক মাসুদ ও মিশুক মনির মানিকগঞ্জে সিনেমা শূটিং করতে গিয়ে ঢাকা-আরিচা রোডে নির্মমভাবে নিহত হন। এনিয়ে হয় অনেক প্রতিবাদ। সড়ক অবরোধ। ধ্বনিত হয় ‘নিরাপদ সড়ক’-এর স্লোগান কিন্তু অবস্থায় তেমন হেরফের ঘটেনি। আমরা চলাচলের জন্য উন্নততর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চাই। চাই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আইনানুগ ও বাস্তবাসম্মত ব্যবস্থা। প্রয়োজনবোধে আইন সংশোধন করা হোক। শুধু চালক-কন্ডাক্টর ও হেলপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া নয়; বাস মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। আমরা সাংবাদিক নিখিল ভদ্রের উন্নততর  বিদেশে চিকিৎসার সরকারি প্রতিশ্র“তির দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। চাই তার নিজের ও পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ।
বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভির তিন সাংবাদিক লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা-১৫ আসনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের বিরুদ্ধে। ৩ জানুয়ারি সকালে রাজধানীর মনিপুরী হাইস্কুলে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় করা হচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আরটিভির স্টাফ রিপোর্টার অপর্ণা সিংহ, ক্যামেরম্যান সাঈদ হায়দার ও মিরপুর অঞ্চলের প্রতিনিধি ওসমান গনি বাবুল ওই স্কুলে গেলে কামাল মজুমদার এমপি তাদের লাঞ্ছিত করেন। স্কুলের অধ্যক্ষ ফরিদউদ্দীন ও উপাধ্যক্ষ রহিমও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গত ৫ জানুয়ারি স্কুল কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়ে তিন শাখার শিক্ষার্থীদের এমপির পক্ষে মানববন্ধন করতে বাধ্য করে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা দুপুর ২টায় গোল চত্বর থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধনে অংশ নেয়। সাংবাদিকরা হচ্ছেন সমাজের বিবেক। মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের পূর্বশর্ত। কোনো সাংবাদিক একজন সাংসদের দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়া সভ্য সমাজের কোনো আচরণবিধিতে পড়ে না। ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের তিন সাংসদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। কামাল আহমেদ মজুমদারের সঙ্গে সেদিন যুক্ত হয়েছিল ফেনীর জয়নাল হাজারী ও নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমানের নাম। সেই কামাল আহমেদ মজুমদার আবার স্বমূর্তিতে আÍপ্রকাশ করবেন তাতে আর বিচিত্র কি? আমরা উপযুক্ত তদন্তের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এমপির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই। জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেনÑ এটা আমাদের প্রত্যাশা। পাশাপাশি শাসক দল আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র মোতাবেক উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেনÑ এটাও আমাদের দাবি। আমরা মনে করি শিষ্টাচারবহির্ভূত একজন দলীয় (তাও আবার ক্ষমতসীন দলের) নেতার আচরণ সংগঠনের ভাবমূর্তিকে দারুণভাবে ক্ষুণœ করেছে। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে ৫ জানুয়ারি। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হয়েছে। বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া নাগরিক কমিটির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বিজয়ী হয়েছেন। বেসরকারি ফলাফলে বলা হয়েছে ‘হাঁস’ মার্কা প্রতীক নিয়ে ৬৫টি কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ৬৫ হাজার ৭শ’ ৪০ ভোট। পক্ষান্তরে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আফজাল খান ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৪শ’ ২৯ ভোট। অর্থাৎ মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩০ হাজার ৩শ’ ১১ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার কোনো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তাদের মনোনীত প্রার্থী জয়লাভ করতে পারেনি। এতে অবশ্য দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবির যথার্থতা প্রমাণিত হয়েছে। তবে সরকার জনজীবনের সমস্যা সমাধানে যেমন ব্যর্থ হয়েছে; তেমনি দলীয় নেতা-কর্মীর আচরণ তথা কর্মকাণ্ডে সিদ্ধান্ত নিতে জনগণ ভুল করে না তা প্রমাণিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জনগণের সেন্টিমেন্ট উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন তা প্রমাণিত হয়েছে। আরো প্রমাণিত হয়েছে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ভোটাররা রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে প্রার্থীর আচরণ ও অতীত কর্মকাণ্ডকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়।
৪ জানুয়ারি গভীর রাতে সাতক্ষীরায় ঘটে এক ন্যক্কারজনক ঘটনা। জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে খুলনা আযম খান কমার্স কলেজের বিবিএর ছাত্রী নৃত্যশিল্পী (১৯) আমন্ত্রিত হয়েছিলেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। স্থানীয় শিল্পকলা একাডেমীতে রাত ১১টায় অনুষ্ঠান শেষ হলে তিনি ( নৃত্যশিল্পী) দাবি করেন তার পারিশ্রমিকের টাকা। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল হাসান বলেন সংগঠনের জেলা শাখার সেক্রেটারি নাজমুল হুদা পলাশ তাকে ও তার স্বামীকে হোটেলে নিরাপদে পৌঁছিয়ে দেয়ার পরই টাকা মিটিয়ে দেবেন। তদানুযায়ী পলাশ নৃত্যশিল্পী ও তার স্বামীকে মোটরসাইকেলের  পেছনে বসিয়ে হোটেলের উদ্দেশে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে নৃত্যশিল্পীর স্বামী সাহাদ খান সৈকতকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে তাকে তার মধ্যকাটিয়ার মেহেদীবাগ বাসায় নিয়ে যায়। অতঃপর ঘরের দরজা বন্ধ করে পলাশ ও জুয়েল নৃত্যশিল্পীকে ধর্ষণ করে। নৃত্যশিল্পীর চিৎকারে পাড়া-প্রতিবেশীরা থানায় খবর দেয়। রাতে পুলিশ এসে নৃত্যশিল্পীকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করে। ৫ জানুয়ারি দুপুরে নৃত্যশিল্পী থানায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে মামলা দায়ের করেন। এ খবর ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক সাতক্ষীরা জেলা কমিটি বাতিল ঘোষণা করেছেন। ঐদিন রাতে পলাশকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ কিন্তু জুয়েল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এ ঘটনাটি গত কয়েক দিন যাবৎ ‘টক অব দি কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। যে ছাত্র সমাজ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশে একদিন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছিল, এখন কোথায় সেই ছাত্র সমাজের ইমেজ? অপরাজনীতির অক্টোপাশে ছাত্ররাজনীতি আজ পথ হারিয়েছে। টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এখন ছাত্র রাজনীতির অলিখিত নীতি। আর ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন হলে তো কথাই নেই। আমাদের বড় বড় দলের নীতিনির্ধারকরা দেশে সুষ্ঠু ধারার ছাত্র রাজনীতির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। নতুবা এভাবে ছাত্ররাজনীতির পদ ব্যবহার করে চলতে থাকবে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও সামাজিক জীবনে নৈতিকতাহীন কর্মকাণ্ড। কোনোরকম আলাপ-আলোচনা ছাড়াই সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়িয়েছে সরকার। মাত্র ৫০ দিনের ব্যবধানে সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হয়েছে লিটার প্রতি ৫ টাকা। এক বছরে ফার্নেস অয়েলের দাম বেড়েছে ৬ বার। আর ৪ বার বেড়েছে কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনের মূল্য। সরকার দূরপাল্লার বাস ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১৫ পয়সা বাড়িয়ে নির্ধারণ করেছে এক টাকা ৩৫ পয়সা। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে দেশের রুটের বাস ভাড়া দূরত্বভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে যেখানে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা সর্বোচ্চ নেয়া যেতে পারে। শুধু তাই নয়, ডিজেলচালিত বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সিএনজিচালিত বাসের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আর যাত্রীসাধারণ ব্যবহƒত হচ্ছে মালিকপক্ষের ‘বলির পাঁঠা’ হিসেবে। এ ব্যাপারে সরকার ও মালিকপক্ষ জরুরিভাবে বৈঠক করে স্বল্পবিত্ত ও নির্ধারিত আয়ের মানুষের দুর্দশার কথা মাথায় রেখে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমরা আশা করি। মালিকপক্ষ আন্তরিক না হলে বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নিলে ভুক্তভোগী যাত্রীসাধারণ উপকৃত হবে। বর্ধিত ফি কমানোর দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল  ৩ জানুয়ারি। এতে হামলা করেছে ছাত্রলীগ। আহত হয়েছে ২ জন ছাত্রীসহ ১৫ জন। রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৫ জানুয়ারি ঘটেছে একই রকম ঘটনা। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ‘বীরদর্পে’ হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট সমাবেশ। এতে আহত হয়েছে ১২ জন। বছরের শুরুতে অশান্ত হয়ে উঠেছে শিক্ষাঙ্গন। কুয়েট, বুয়েট, শাবি ও রাবির ঘটনায় শিক্ষাঙ্গনে বিরাজ করছে অস্থিরতা। অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীরা চিন্তিত ভয়াবহ সেশনজট নিয়ে। আমরা প্রত্যক্ষ করছি ইতিহাসের গৌরবময় রাজমুকুট মাথায় পরা ছাত্রলীগের ললাটে আজ কলঙ্কের তিলক। আমরা এই অবস্থার অবসান চাই। ছাত্রছাত্রীরা বই, খাতা, কলম নিয়ে লেখাপড়া করবে। তাদের মেধার বিকাশ ঘটাবে। শিক্ষাঙ্গন  থেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি তথা সব রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ সোচ্চার হবে। আগামী দিনের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ছাত্রলীগসহ সব ছাত্র সংগঠন সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাবেÑ এটাই আমরা আশা করি।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট 

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে দক্ষ মানবসম্পদ কারিগরি শিক্ষা বিকাশের বিকল্প নেই   
মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ
দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার উন্নয়ন জরুরি হলেও বাংলাদেশে  মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষার যেমন দ্রুত প্রসার লাভ ঘটছে কারিগরি শিক্ষার বেলায় তেমনটি হয়নি। বর্তমানে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষার অধীনে শিক্ষা গ্রহণরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ২.৮ শতাংশ। অথচ জাপানে এ ধরনের শিক্ষায় শিক্ষিত জনবলের শতকরা হার ৬০ ।  দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছে ৪০% এবং মালয়েশিয়ায় ২৫%। বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে মানবসম্পদ উন্নয়নের কোনো  বিকল্প  নেই। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পৃথিবীর উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে  কারিগরি শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং কারিগরি শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে তারা দ্রুত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।  কারণ  কারিগরি শিক্ষার সাহায্যে স্বল্প সময়ে বিপুল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা সম্ভব। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, যে দেশে কারিগরি শিক্ষার হার যত বেশি সে দেশের মাথাপিছু আয়ও তত বেশি। উদাহরণস্বরূপ যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে অধিকসংখ্যক দক্ষ জনশক্তি থাকায় সেখানকার মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৮০০০ থেকে ৪৫০০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি। কিন্তু  বাংলাদেশে মাত্র ২-২.৫ শতাংশ  দক্ষ জনসম্পদ নিয়ে দেশের বর্তমান মাথাপিছু আয় মাত্র ৬০০ মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। এ কথা অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রকৌশলীরা সবচেয়ে বেশি জড়িত। সেবামূলক জরুরি কর্মকাণ্ডেও তাদের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এমনকি বিদেশে কর্মরত দক্ষ জনশক্তির সিংহ ভাগই ডিপ্লোমা ও স্নাতক প্রকৌশলী এবং তারা সুনামের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে  চাকরি করে দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। প্রকৌশলীদের পেশাগত জ্ঞান, কর্মদক্ষতার ওপর যেমনি নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন কাজের মান ও গতিশীলতা তেমনি তাদের ক্রিয়াশীল ভূমিকা গড়ে তোলে দেশের আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধি। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে কারিগরি শিক্ষা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলেও আশানুরূপ বিকাশও ঘটেনি দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর। শিক্ষক স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত এবং পুরনো যন্ত্রপাতি, মানহীন পাঠ্যপুস্তক নিয়ে আজ এ শিক্ষা ব্যবস্থার আশানুরূপ বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয়নি। ফলে   দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের  সম্ভাবনা ক্রমশ বিলীন হতে বসেছে। ব্যাহত হচ্ছে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথও ক্রমশ রুদ্ধ হয়ে আসছে। অথচ দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য স্নাতক প্রকৌশলীর পাশাপাশি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও দক্ষ শ্রময়োপযোগী জনশক্তি বিশেষ প্রয়োজন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই তিন ধরনের পেশাজীবীর গ্রহণযোগ্য অনুপাত ১ঃ৫ঃ২৫ হলেও বাংলাদেশে তা নেই। স্নাতক প্রকৌশলীর অনুপাতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী এবং দক্ষ মানের কোর্স সম্পন্নকারী শ্রময়োপযোগী জনগোষ্ঠী রয়েছে আনেক কম। অথচ স্নাতক প্রকৌশলীদের কর্মপরিকল্পনাকে সঠিকভাবে দেখাশোনা ও বাস্তবায়নের জন্য  প্রয়োজন পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত ডিপ্লোমা প্রকৌশলী।
বর্তমানে বাংলাদেশে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নির্ধারিত প্রকৌশল বিষয়সমূহ ছাড়াও এ ধরনের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃষি ডিপ্লোমা, টেক্সটাইল, মেরিন, মেডিকেল টেকনোলজি,  গ্লাস এন্ড সিরামিক্স ও গ্রাফিক আর্টস এসেছে কারিগরি শিক্ষার অধীনে। ৫০-এর দশকের মাঝামাঝি তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মধ্যম স্তরের কারিগরি শিক্ষা প্রসারের যে শুভসূচনা হয় ষাটের দশকে তা শিক্ষার প্রসার লাভ করতে থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর এ ধরনের পাবলিক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ২০-এ উন্নীত হয়। বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় মধ্যম স্তরের ডিপ্লোমা প্রকৌশল শিক্ষার জন্য  মোট ৫০টি পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং ৬টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ও একটি সার্ভে ইনস্টিটিউট রয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসি (ভোকেশনাল) পর্যায়ের শিক্ষার জন্য রয়েছে ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ। এ ছাড়া বৃত্তিমূলক শিক্ষা বিস্তারে রয়েছে ৩৮টি টেকনিকেল ট্রেনিং সেন্টার, ৪০টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল কলেজ, ১৩টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রসারে বাংলাদেশে আরো চার হাজারের বেশি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বর্তমানে সিভিল, মেকানিক্যাল পাওয়ার, ইলেকট্রিক্যাল কেমিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ছাড়াও কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড  টেকনোলজি, টেলিকমিউনিকেশনের মতো সময়োপযোগী বিষয়সমূহ সন্নিবেশিত হয়েছে। অথচ এসব কোর্সে পাঠদানের জন্য বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পর্যাপ্ত ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই। এ ছাড়াও অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ শিক্ষকের অনেক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে এসব শিক্ষায়তনে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী উপযুক্ত শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণেরও তেমন ব্যবস্থা  নেয়া হয়নি।  ২০০১ সাল থেকে প্রকৌশল ডিপ্লোমা কোর্স ৩ বছর থেকে ৪ বছরে উন্নীত করা হলেও নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী প্রণীত পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের ব্যবস্থা হয়নি। ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রমে ৬০%-এর বেশি ব্যবহারিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের অভাবে ব্যবহারিক ক্লাস পরিচালনায় এর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে শিক্ষার্থীকে পর্যাপ্ত ব্যবহারিক জ্ঞান ছাড়াই প্রকৌশল ডিপ্লোমা সনদ নিয়ে বাস্তব জীবনে প্রবেশ করে কর্মক্ষেত্রে নানারূপ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। স্বনির্ভর, দক্ষ মানব সম্পদসমৃদ্ধ বেকারত্বমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন আনাসহ সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ব্যাপক কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে:
১. বর্তমান বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা বিস্তারের জন্য ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায়তনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেশের মোট শিক্ষার্থীর শতকরা ২০ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা বিকাশে দেশ-বিদেশের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে নিত্য নতুন টেকনোলজি চালু করা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। ২. দেশে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষাপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৫ শতাংশ আত্ম-কর্মসংস্থানে নিয়োজিত রয়েছে। পলিটেকনিক গ্রাজুয়েটদের আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা প্রয়োজন। তাদের জন্য বিদেশে কর্মসংস্থানের অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করার  জোর তৎপরতা চালাতে হবে। ৩. অদক্ষ জনশক্তির চেয়ে কারিগরি শিক্ষায় পারদর্শী জনবল বিদেশে পাঠাতে পারলে বাংলাদেশে  বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ ২/৩ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশে দক্ষ জনশক্তির প্রসার ঘটাতে ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে সারাদেশের বর্তমান কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক মানোন্নয়ন জরুরি। ৪. দেশের বর্তমান কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ প্রতিটি জেলায় আধুনিক মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা প্রয়োজন। সকল সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অবিলম্বে শূন্য শিক্ষকের সকল পদ পূরণ এবং নতুন পদ সৃষ্টি করে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগদান করা বিশেষ জরুরি। ৫. চার বছর মেয়াদী প্রকৌশল ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রম অনুসারে পর্যাপ্ত সংখ্যক পাঠ্যপুস্তক এবং ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা ছাড়া মানসম্পন্ন শিক্ষাদান সম্ভব নয়। ৬. তেজগাঁস্থ টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজকে আরো সম্প্র্রসারিত করে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। কারিগরি শিক্ষার্থীদের শিল্প-কারখানায় বাস্তব প্রশিক্ষণকে ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে কারখানা মালিকদের উদ্বুদ্ধ করতে  শিক্ষা বিভাগকে উদ্যোগী হতে হবে। ৭. কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ে গঠিত মনিটরিং সেলের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল  করা অত্যাবশ্যক। মধ্যম স্তরের প্রকৌশলীদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি ও কাজের সঠিক মূল্যায়নসহ দেশের উন্নয়নের ধারায় তাদের অধিকতর সম্পৃক্ত করা হলে তা দক্ষ জনশক্তি  তৈরিতে সহায়ক হবে যা পক্ষান্তরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার  যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে   বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য  দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন অপরিহার্য বিধায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বর্তমান সরকারের সুদৃষ্টি আশা করে দেশের আপামর জনগণ।

আক্রান্ত সাংবাদিক, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র
ফকির ইলিয়াস
ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন আরেকজন সাংবাদিক। তিনি টিভি চ্যানেল আরটিভির স্টাফ রিপোর্টার অপর্ণা সিংহ। ছাত্র ভর্তির নামে অতিরিক্ত ফি আদায়ের খবর পেয়ে এই টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক ঢাকার মিরপুরের মণিপুর স্কুলের মূল ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কামাল আহমেদ মজুমদারের বিরুদ্ধে। আরটিভির বরাত দিয়ে বিভিন্ন ব্লগ, ইউটিউব, মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে সংবাদটি। তাতে দেখা যাচ্ছে, সাংবাদিক অপর্ণা সিংহ কামাল আহমদ মজুমদারকে বলছেন, ‘আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই’। এটা বলার পরপরই, কামাল আহমদ মজুমদার বলছেন, ‘রাখেন আপনার এইটা’। অর্থাৎ ক্যামেরা দূরে রাখেন। বলেই শুরু হয়ে গেছে ধাক্কাধাক্কি। পরে দেখা গেছে হেনস্তা হয়ে আহত হয়েছেন এই টিভি সাংবাদিক। এখানে লুকানোর কিছু নেই। আজকাল টিভি ফুটেজে অনেক কিছুই ধারণ করা থাকে। এই ঘটনাটিও টিভির কল্যাণে ছড়িয়ে পড়েছে দেশে- বিদেশে। এদিকে কামাল আহমেদ মজুমদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি ওই প্রতিবেদককে সরিয়ে দিয়েছেন মাত্র।
আরটিভির যুগ্ম বার্তা সম্পাদক আকতার হোসেন বিভিন্ন মিডিয়াকে বলেছেন, মণিপুর স্কুলে সরকার নির্ধারিত পাঁচ হাজার টাকা ফির সঙ্গে উন্নয়ন ফি হিসেবে ২০ হাজার টাকা আদায় করার প্রতিবাদ করে আসছেন অভিভাবকরা। গেলো মঙ্গলবার সকালে তাদের সঙ্গে স্থানীয় এমপি কামাল আহমেদ মজুমদারের একটি সভা হওয়ার কথা ছিল। আকতার হোসেন জানান, কামাল মজুমদার স্কুলে গেলে অপর্ণা সিংহ তার সাাৎকার নেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় সংসদ সদস্য আমাদের প্রতিবেদককে ধাক্কা দেন। এক পর্যায়ে তার গায়েও হাত তোলেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এমপি কামাল মজুমদার অন্যভাবে। অভিযোগ অস্বীকার করে কামাল মজুমদার বলেছেন, অভিভাবক মিটিংয়ে যোগ দিতে স্কুলে গেলে আরটিভির রিপোর্টার তার ক্যামেরাম্যানকে বলেন, ওই লোকটার ছবি তোলো। আমি তাকে সরিয়ে দিয়েছি মাত্র। মারধর কেন করবো? তিনি অভিযোগ করেন, ওই রিপোর্টার অনুমতি ছাড়াই কাসরুমে ঢুকে স্কুলের প্রধান শিককে হুমকি দিয়েছেন। এদিকে ঘটনার পরপরই এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন মাননীয় শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার দায়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এ ঘটনায় আমি দুঃখিত ও মর্মাহত। তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এ ধরনের ঘটনা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা, গোটা সাংবাদিক সমাজের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর প্রতিবাদ ও নিন্দা অব্যাহত রয়েছে দেশে বিদেশে। নারী সাংবাদিক কেন্দ্র এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি নাসিমুন আরা হক ও সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা বলেছেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকের ওপর এ ধরনের পেশিশক্তির আক্রমণ অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
এই ঘটনার মাত্র কদিন আগে ঘটেছে আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারিয়েছেন দৈনিক কালের কণ্ঠ’র সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল ভদ্র। ঘাতক বাস তাকে চাপা দিয়েছিল। কী হৃদয়বিদারক দৃশ্য! সুস্থ মানুষটি কিছু সময়ের মাঝেই পঙ্গু হয়ে গেলেন! প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে জানানো হয়েছে নিখিল ভদ্রকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে। এটাই শেষ কথা নয়। কেন এমন হচ্ছে? কেন বাস-ট্রাক ড্রাইভাররা ট্রাফিক আইন মানছে না? নিখিল ভদ্রের এই আহাজারি কিংবা তার জন্য তার পরিবারের কিংবা সতীর্থদের যে কান্না, তার দাম কিভাবে শোধ করবে সরকার?
তিপূরণ দিয়ে সরকার যে কোনো দুর্ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। পারবে না। আজ নিখিলের চিকিৎসা করাতে সরকারের প থেকে যে ব্যয় করা হবে, সেটা তো নিখিলেরই অর্থ, সাধারণ মানুষের অর্থ। চালকের ভুলের খেসারত নিখিল বা নিখিলের মতো সাধারণ মানুষ কেন দেবে? বিআরটিসির মতো প্রতিষ্ঠানে এমন বাসচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যে ট্রাফিক আইন মানে না। এটা অবশ্যই সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেই গণ্য হওয়া উচিত।
সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা হারিয়েছি তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরের মতো কৃতী মানুষদের। মিরসরাই ট্রাজেডির শোক জাতি ভুলে যায়নি। এবার পা হারিয়েছেন নিখিল ভদ্র। দেশে যেন সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়েই চলেছে। দেশের সব প্রান্তে নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। বেশিরভাগ েেত্রই চালকের ভুলের মাশুল গুনতে হচ্ছে নিরীহ মানুষকে। নিভে যাচ্ছে কতো জীবনপ্রদীপ। বারবার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে দেশ। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে বলছেনÑ নিরাপদ সড়ক চাই। কিন্তু লাভ হয়নি। কেন হয়নি? কার স্বার্থে হয়নি? স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চেয়ে পথে নেমেছে সাধারণ মানুষ। তাদের চাওয়া পূরণ হয়নি। না হওয়ার প্রধান কারণ দেশের শীর্ষ দুর্নীতি সিন্ডিকেট। যারা যাকে তাকে লাইসেন্স দেয়। ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা না করেই ওরা গাড়ি চালায়।
তাই এ প্রশ্নটি বারবার আসছে, সরকার কি নিশ্চিন্তে পথে চলার নিরাপত্তাটুকুও দিতে পারবে না সাধারণ মানুষকে? সরকারের প থেকে চালকদের প্রশিতি করার কিংবা ট্রাফিক আইন জোরদার করার উদ্যোগ নেয়ার জোর প্রচেষ্টা করা হবে না? কঠোরভাবে তা পালনের বিধিও কি করার মতা নেই সরকারের শীর্ষ শক্তিধরদের? বাংলাদেশে সাংবাদিকরা আক্রান্ত হয়েই চলেছেন। সাংবাদিকদের ওপর অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত হামলার ঘটনা প্রতিকারহীনভাবেই ঘটে চলেছে। প্রতি বছরই হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সবারই আছে। কিন্তু কেউ প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়ে তাকে শাসানো কিংবা আক্রমণ তো কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না। সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক হামলা ও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা থেকে এটাই প্রমাণ হয় যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তপে করতে চাইছে কেউ কেউ। তারা তাদের অপকর্ম ঢেকে দিতে চাইছে গলার জোরে। এ অবস্থার প্রতিকার দরকার। সরকারের এ বিষয়ে বোধোদয় হওয়া দরকার। কারণ কোনো পেশিবাজ আজ আছে, কাল তার পেশি বলীয়ান নাও থাকতে পারে। কিন্তু সাংবাদিকদের কলম, সাংবাদিকদের ক্যামেরা জাতির পে আছে, থাকবে চিরঅম্লান। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা ধনী নন। খুব বড় অংকের টাকাও তারা কামাই করেন না। সাংবাদিকদের এমনিতেই নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করতে হয়। শাসকদের রক্তচক্ষু উপো করে কাজ করতে হয়। তুষ্ট করতে না পারলে নেমে আসে নির্যাতনের যাতনা। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা আমাদের দেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়। স্বৈরশাসনের আমল থেকে শুরু করে বর্তমান গণতান্ত্রিক শাসনামলেও ঘটছে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা। দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল, সাংবাদিকতা পেশাও মুক্ত পরিবেশ ফিরে পাবে। না, তা হয়নি। অনেকেই দলবাজি বাড়াতে চেয়েছেন সাংবাদিকদের ঘিরে। প্রকাশ্য বিধিনিষেধ না থাকলেও পেশার ঝুঁকি আজো রয়ে গেছে। মিরপুরের ঘটনা গোটা রাষ্ট্রের জন্য বেদনাদায়ক। এর নিন্দা জানানোর কোনো ভাষা নেই। এই ঘটনার সুবিচার হোক।
ফকির ইলিয়াস : কবি ও সংবাদিক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন