Year-18 # Issue-39 # 13 November 2011

ডিসেম্বরে সংস্কার প্রস্তাব দেবে ইসি
নিজস্ব প্রতিবেদক
মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে সরকারের কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পদ্ধতির পরিবর্তনসহ একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে যাবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল শনিবার বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তাবিত আইন-বিধি প্রণয়ণের চূড়ান্ত সুপারিশ সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হবে। এর আগে কারো কোনো মতামত থাকলে তা ইসির কাছে তা তুলে ধরতে পারেন। তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে পাওয়া মতামতের ভিত্তিতে এসব সংস্কার প্রস্তাব অনেকটাই চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে এসব সুপারিশ সংসদে তোলা হবে কি না সে সিদ্ধান্ত সরকারই নেবে। এটিএম শামুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্র“য়ারিতে। চলতি বছরের ৭ জুন থেকে ৭ অগাস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আরো সংস্কার, সিইসি ও ইসি নিয়োগ পদ্ধতি এবং নির্বাচনী প্রচারের ব্যয় (জনতহবিল) আইন, সীমানা নির্ধারণ আইন ও বিধিমালা প্রণয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়। বিরোধী দল বিএনপি সংলাপে না গেলেও আইন সংস্কারে বিষয়ে বিরোধিতা করে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জানায়, দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত জানাবে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সর্বোচ্চ ৫ সদস্যের ইসি গঠনের কথা বলা হলেও একজন নারীসহ তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিধান করতে বলেছিল বর্তমান কমিশন। এ কারণে বর্তমান সংবিধানের আলোকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার (নিয়োগ পদ্ধতি) আইন-২০১১ নামে একটি খসড়া তৈরি করেছে ইসি। এতে বলা হয়েছে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সম্ভাব্যদের একটি প্যানেল তৈরি করবে অনুসন্ধান কমিটি (সার্চ কমিটি)। ওই কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিটি পদের বিপরীতে তিনজনের নাম প্রস্তাব করবে। পরে সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটি (সরকার ও বিরোধী দলের সমন্বয়ে) তা পরীক্ষা করে বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে। ইসি মনে করে, সংবিধানে ৫ জন কমিশনার রাখার সুযোগের কথা বলা হলেও তিন জন থাকাই ভালো। কমিশনের সদস্য বেশি হলে সিদ্ধান্ত নিতেও সমস্যা হয়।  এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় ও জামানতের টাকা বাড়ানো, হলফনামায় তথ্য গোপনে প্রার্থিতা বাতিল, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের শাস্তির বিধান এবং দলীয় প্রধানের নির্বাচনী খরচসহ ছয়টি বিষয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নতুন বিধান ও সংশোধনী আনার সুপারিশ করতে যাচ্ছে কমিশন। এতে প্রার্থীদের জামানতের অর্থ ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর নির্বাচনী ব্যয়সীমা ১৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে করতে বলা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। এ বিষয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সবার অংশগ্রহণে ইসি গঠনের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত নিয়োগ পদ্ধতি আইনে। আমরা আইনটি সরকারের কাছে পাঠাবো। বাকিটা উনারা দেখবেন।


প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের নতুন তালিকায় সুন্দরবন নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশনের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন, ভিয়েতনামের হ্যালং বে, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ইগুয়াজু জলপ্রপাত, দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপ, ইন্দোনেশিয়ার কমোডো, ফিলিপাইনের পুয়ের্তা প্রিন্সেসা পাতাল নদী এবং দক্ষিণ আফ্রিকার টেবল মাউন্টেন। স্থান পায়নি বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবন। শুক্রবার ভোটগ্রহণ শেষে প্রাথমিক গণনার পর বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে এ সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এই সাতটি স্থানের মধ্যে কোনো ক্রম বিবেচনা করা হয়নি। ইংরেজি বানানের অদ্যাক্ষর বিবেচনা করে পরপর নামগুলো লেখা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এই তালিকা করা হয়েছে প্রাথমিক গণনার ভিত্তিতে। ভোটের হিসাব আবারো পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে এবং কোনো পরিবর্তন হলে তা ওয়েবসাইটে জানানো হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের নাম ঘোষণা করা হবে ২০১২ সালের শুরুর দিকে কোনো এক সময়। নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশনের এই আয়োজন নিয়ে কয়েকটি দেশে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। এমনকি কোনো কোনো দেশ পর্যটক আকর্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করে নিজেদের কোনো স্থানকে সপ্তাশ্চর্য নির্বাচিত করার জন্য সরকারি পর্যায়ে প্রচারে সহযোগিতা দেয়। তবে প্রতিযোগিতার ধরন, একজন যতো খুশি ততো ভোট দেওয়ার সুযোগ এবং উদ্দেশ্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় অনেক দেশই বিষয়টি নিয়ে মাতামাতি থেকে বিরত থাকে। আর্থিক বিষয়ে আয়োজকদের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। অবশ্য ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশনের দাবি, তারা এই আয়োজন থেকে কোনো লাভ করেনি। জাতিসংঘের শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের প্রথম আয়োজনের শুরুতে নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশনকে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়ার কথা বললেও পরে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয়।

 অর্থবছরের প্রথম ৩ মাস
বিদেশি সাহায্য এসেছে প্রত্যাশার ১০ ভাগেরও কম
মো. রেজাউর রহিম  
চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশেরও কম বিদেশি সাহায্য দেশে এসেছে। চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণ-সহায়তা হিসেবে মোট আড়াইশ’ কোটি ডলার পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রথম ৩ মাসে এসেছে মাত্র ২৪ কোটি ৬২ লাখ ডলার, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশেরও কম বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অবশ্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলছেন, অর্থবছরের শুরুর দিকে বিদেশি সাহায্য ছাড় করার গতি একটু কম থাকে। এদিকে, বিদ্যমান পরিস্থিতি বহাল থাকলে বিদেশি সহায়তার পরিমাণ আরো কমতে পারে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, দাতা দেশ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো গত অর্থবছরের একই সময়ে ৩১ কোটি ৫৯ লাখ ডলার সহায়তা করেছিল। ইআরডি’র সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে মোট ২৪ কোটি ৬২ লাখ ডলারের বিদেশি সাহায্য দেশে এসেছে। এর মধ্যে ২২ কোটি ১২ লাখ ডলার প্রকল্প সাহায্য এবং ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার খাদ্য সহায়তা রয়েছে। আবার এ সাহায্যের মধ্যে ১৭ কোটি ১৮ লাখ ডলার বিভিন্ন সময়ে নেয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে ব্যয় হয়েছে। সে হিসাবে সরকারের হাতে প্রকৃত বৈদেশিক সাহায্য এসেছে ৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আগের ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ সরকার এ ৩ মাসে পূর্বের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ কোটি ডলার বেশি ব্যয় করেছে। গত ২০১০-১১ অর্থবছরে একই সময়ে মোট ৩১ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের (২৮ কোটি ২৯ লাখ ডলার প্রকল্প সাহায্য এবং ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার খাদ্য সহায়তা) বিদেশি সাহায্য এসেছিল। এর মধ্যে আগের ঋণ ও সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছিল ১৪ কোটি ২৯ লাখ ডলার এবং সরকারের হাতে ছিল ১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ইআরডি’র তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, গত অর্থবছরে সবমিলিয়ে ১৭৭ কোটি ৭২ লাখ ডলারের বিদেশি সাহায্য দেশে এসেছিল। এরমধ্যে সুদ-আসল পরিশোধে ৭২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার ব্যয় হয়। সরকারের হাতে থাকে ১০৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
২০০৯-১০ অর্থবছরে মোট ২১৬ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের ঋণ-সহায়তা এসেছিল। এর মধ্যে ৬৮ কোটি ৭৪ লাখ ডলার ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয় এবং নিট ঋণ-সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছই প্রথম দিকে বিদেশি সাহায্য প্রবাহ কম থাকে। পাইপলাইনে অনেক সাহায্য আটকে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী মাসগুলোতে এ প্রবাহ অবশ্যই বাড়বে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা আকবর আলি খান এ প্রসঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান না হলে ভবিষ্যতে বিদেশি ঋণ-সহায়তা আরও কমতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আগামী ৯ মাসে প্রত্যাশার বাকি ৯০ শতাংশ বিদেশি ঋণ পাওয়া যাবে কি-না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির যে অভিযোগ এনেছে, তা দ্রুত সুরাহা করতেও সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আরেক সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিশ্বব্যাংক যদি পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করে তাহলে এ দেশে তাদের অন্যান্য প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়েও ভবিষ্যতে সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে। উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রস্তাবিত মোট ব্যয় ২৯০ কোটি ডলারের মধ্যে ১২০ কোটি ডলার বিশ্বব্যাংকের দেয়ার কথা। কিন্তু এ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কিছুদিন আগে অর্থায়ন স্থগিত করে সংস্থাটি। এদিকে, বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ হ্রাসের ফলে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার প্রবণতাও ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের মোট ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ঋণের পরিকল্পনা থাকলেও অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে- তা কোনো অবস্থাতেই অতিক্রম করা হবে না।  

 সার্ক সম্মেলনে চার চুক্তি সই
ডেস্ক রিপোর্ট
দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের উন্নয়ন ও বাণিজ্য বাড়াতে ১৭তম সার্ক সম্মেলনে ৪টি চুক্তি সই করে সদস্যদেশগুলো। গত শুক্রবার মালদ্বীপের দ্বীপশহর আদ্দু সিটির ইকুয়েটোরিয়াল কনভেনশন সেন্টারে সমাপনী অধিবেশনের শুরুতে সদস্যদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা চুক্তিগুলোতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তিগুলো হলো সার্কে বীজ ব্যাংক গঠন, দুর্যোগ মোকাবেলায় পারস্পরিক সাড়া, সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্যাকেজিং মান পরস্পরের গ্রহণ এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর পণ্যের মান পরস্পরের মধ্যে গ্রহণ সংক্রান্ত চুক্তি। এ ছাড়া সার্কভুক্ত দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো, যোগাযোগ সম্প্রসারণ, সন্ত্রাসের মূলোৎপাটন, ার্থনৈতিক সহযোগিতা, যোগাযোগ বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনসহ ২০ দফা আদ্দু ঘোষণা এসেছে সম্মেলন থেকে। ইকুইটোরিয়াল কনভেনশন সেন্টারে সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের শেষে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে চারটায় সমাপনী অধিবেশন শুরু হয়। সার্কের চেয়ারপারসন ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ সমাপনী অধিবেশন পরিচালনা করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের পর পর্যবেক্ষক দেশগুলোর পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান করা হয়। পর্যবেক্ষকরা অনুষ্ঠানস্থলের দর্শকসারির প্রথমদিকে তাদের আসনে বসে থেকেই বক্তব্য দেন। চীনের পক্ষ থেকে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যে সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বাণিজ্য ও যোগাযোগ ক্রমাগত বাড়ছে বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘সার্কে চীন আরও ভূমিকা রাখতে চায়। সার্ক ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে চীন ২০১২ সালে ৩ লাখ ডলার অনুদানের ঘোষণার কথাও জানান। এদিকে, সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে সার্ক রাষ্ট্রনায়করা আদ্দু সিটির সাংগ্রিলা রিসোর্টে অবকাশযাপন করেন। এ সময় সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় মিলিত হন। পরবর্তী সার্ক সম্মেলন নেপালে অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় অমিত সম্ভাবনার দ্বার উšে§াচন করতে পারস্পরিক সেতুবন্ধন রচনার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে মালদ্বীপের সমুদ্রবেষ্টিত আদ্দু সিটিতে দু’দিনব্যাপী সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের পর্দা নামে। সার্ক নেতারা ভৌগোলিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যমে একুশ শতককে দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তোলার শতক হিসেবে বিনির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, ভুটানের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জিগমে ওয়াই থিনলে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাসিদ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে। দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ১৯৮৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা- সার্কের যাত্রা শুরু হয়। পরে এ জোটে যোগ দেয় আফগানিস্তান।

 আশিয়ান সিটির প্রকল্প বন্ধ, ৫০ লাখ টাকা জরিমানা
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন আশকোনা এলাকায় জলাশয় ভরাট ও জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগে আশিয়ান সিটির আবাসন প্রকল্প তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। পাশাপাশি পরিবেশবিরোধী এই প্রকল্পটিকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর আগে বুধবার সকালে অভিযান চালিয়ে প্রকল্পে মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহৃত ৫ টি বড় আকারের বুলডোজার ও ৮ টি ডাম্পিং ট্রাক জব্দ করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মুনির চৌধুরীর নেতৃত্বে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে প্রকল্পের কাজ বন্ধের এ নির্দেশ দেন। পরে বিকেলে পরিবেশ আদালত বাড়িঘর কবরস্থান ভেঙ্গে জমি দখলের অভিযোগে প্রকল্পটিকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অভিযানকালে স্থানীয় লোকজন র‌্যাব ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পে মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি জব্দ করে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে সূত্র জানায়। সূত্রমতে, কাজ বন্ধের নির্দেশ সম্বলিত একটি নোটিশ আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। আশিয়ান সিটির বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালতের রায়ের পর অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মুনির চৌধুরী জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর দক্ষিণখান থানার আশকোনা ও কাওলা এলাকায়  সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের জমি ও বাড়ি দখলের এক নজিরবিহীন ঘটনা উদঘাটন করেছে। আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ওই এলাকায় নজিরবিহীন ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে বুলডোজার দিয়ে ঘরবাড়ি, কবর ও গাছপালা ধ্বংস করে একটি বেআইনি আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হয়। তিনি জানান, র‌্যাব-১ ও ২ এর সহায়তায় ৩ ঘন্টাব্যাপী এক অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভূমি ভরাট ও জমি দখল কাজে ব্যবহৃত ৮টি বুলডোজার ও ৬টি ডাম্প ট্রাক জব্দ করা হয়। একইসঙ্গে প্রকল্পের অবৈধ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং আশিয়ান সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম ভূইয়াকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, এনফোর্সমেন্ট টিমের পরিচালক ২৩০ একর আয়তন জুড়ে গড়ে তোলা পুরো প্রকল্প এলাকাটি সরেজমিনে ঘুরে দেখে ভূমিদস্যুতা ও জবর দখলের এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনা উদঘাটন করেন। ঘটনাস্থলে স্থানীয় গ্রামবাসী, ভূমি মালিক ও সাধারণ জনগণ পরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর কাছে আশিয়ান সিটির বিরুদ্ধে ভয়াবহ অত্যাচার নিপীড়ন ও নির্যাতনের কাহিনী ব্যক্ত করে। এনফোর্সমেন্ট টিম দক্ষিণখানের হলান নামাপাড়া এলাকায় উপস্থিত হলে আমেনা বেগমের ৫.৫ কাঠা, শহর বানুর ৩ বিঘা, মাজেদা বেগমের ৮ কাঠা, মোমেনা বেগমের ১০ কাঠা জমি জবর দখল করার ঘটনা উদঘাটন করা হয়। এছাড়া মৃত রমজান বেপারীর কবর বুলডোজার দিয়ে আংশিক ধবংস করার ঘটনাও উদঘাটন করে। অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, স্থানীয় মাহবুবা সুলতানার ২ কাঠা জমির সীমানাপ্রাচীর ধবংস করা হয়েছে। মুজিবর রহমান সিদ্দিকীর জমির সীমানাপ্রাচীর ধবংস করে ভরাট করা হয়েছে। বশির আহম্মেদের ৪ শতাংশ জমি দখল করে সীমানাপ্রাচীর ধ্বংস করা হয়েছে। হাজী লেহাজ উদ্দিনের ১.১৬ একরের বাড়ি ও পুকুর ভরাট করা হয়েছে। শাহনাজ বানুর আড়াই কাঠা জমি দখল করে ২৬টি সীমানা পিলার ধবংস করা হয়েছে। অভিযানকালে স্থানীয় অশীতিপর এক বৃদ্ধ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জানান, তাদের ২ শ’ বছরের পারিবারিক করবস্থান আশিয়ান সিটি আংশিক ধবংস করেছে। তিনি এ কবরস্থান হেফাজতের দাবি জানান। উক্ত কবরস্থানটি রক্ষার স্বার্থে পরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর নির্দেশে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে খুঁটি বসানো হয় এবং আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে কবরটি হেফাজত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই এলাকার অদূরে প্রায় শতাধিক কবর আছে, এমন একটি কবরস্থানে চারপাশে মাটি ফেলে কবরস্থানটি দখল করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কবর দখল না করার নির্দেশনা দিয়ে চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে কবরস্থান হেফাজতের নির্দেশ দেয়া হয়। অভিযান চলাকালে উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত শত শত নারীপুরুষ বৃদ্ধ জানান, তারা তাদের বাপদাদার ভিটে মাটি ছাড়তে চান না। কিন্তু আশিয়ান সিটি তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও দালাল লেলিয়ে দিয়ে জমি ও বাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য করছে। ভূমি সন্ত্রাসের এ করুণ কাহিনি ব্যক্ত করতে গিয়ে তারা কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, ভূমি সন্ত্রাসের কারণে তাদের আহার ও নিদ্রা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অভিযানকালে আরো দেখা যায়, এ আবাসন প্রকল্পের আওতাধীন বিস্তীর্ণ এলাকায় ৮-১০ ফুট জলাভূমি, নীচু এলাকা ও পুকুর ভরাট করা হয়েছে, যা পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অভিযানকালে আশিয়ান সিটির পক্ষ থেকে কর্মকর্তারা উপস্থিত হলেও তারা প্রকল্পের কোনও বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তবে বিক্ষুব্ধ মানুষজনের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে আশিয়ান সিটির কর্মকর্তারা ঘোষণা করেন, তারা জবরদখলকৃত জমির মূল্য দেবেন এবং সরকারের অনুমতি ছাড়া প্রকল্পের আর কোনও কাজ করবেন না। তবে ভূমিদস্যুতার প্রতিটি ঘটনার অভিযোগের বিপরীতে তারা সম্পূর্ণ নিরুত্তর থাকেন। ঘটনাস্থলে দেখা যায়, প্রকল্পের মাটি ভরাট কাজে ব্যবহ্ত বুলডোজারগুলি অব্যাহতভাবে জনবসতির উপর দিয়ে মাটি ফেলে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রকল্প এলাকার জমির আয়তন নির্ধারণ করে কোনও সীমানা পিলার কিংবা সীমানা নির্দেশক কিছুই স্থাপন করা হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর মনে করে, দেশের প্রচলিত আইন কানুন এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার লংঘন করে প্রকাশ্যে মানুষের শান্তিপূর্ণ বসবাসের অধিকার এভাবে কেড়ে নেওয়া বাস্তবিক পক্ষে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট টিমের বিবেচনায় আবাসন প্রকল্পের নামে নিরাপরাধ সাধারণ মানুষের জমি কেড়ে নেওয়া মারাত্মক অপরাধ। এতে নিরীহ জনসাধারণ ও মালিকরা শরণার্থীর মতো পূর্ব পুরুষের ভিটে মাটি ছেড়ে অসহায় অবস্থায় এলাকা ত্যাগ করছে। অভিযানকালে উপস্থিত জনসাধারণ সরকারের কাছে এর বিচার ও প্রতিকার দাবি করে এবং ভূমিদস্যুতার শিকার অধিকাংশ মানুষজন তাদের জমি ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। অভিযান শেষে অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মুনীর চৌধুরী ভুক্তভোগী মানুষকে এই বলে আশ্বাস দেন যে, এ অবৈধ দখল ও ভূমিদস্যুতা এবং পরিবেশগত ক্ষতিসাধনের জন্য দায়ী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে আইনসঙ্গত শাস্তি দেওয়া হবে। যারা জমির মূল্য পেতে চান, তাদের জন্য  উপযুক্ত ও  ন্যায়সঙ্গত মূল্য আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং যারা জমি দিতে অনিচ্ছুক তাদের জমি পুনরুদ্ধার করা হবে। এলাকার ভূমিমালিক ও সর্বস্তরের মানুষ পরিবেশ অধিদপ্তরের এ অভিযানকে স্বাগত জানান। এদিকে, বুধবার বেলা ১২ টার দিকে আশিয়ান সিটির সাইট অফিস সংলগ্ন ওই প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিশালাকার জলাশয় ভরাট করে এরই মধ্যেই প্রকল্পের বিশাল এলাকায় মাটি ভরাট করা হয়েছে। এসময় প্রকল্প এলাকায় র‌্যাব ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আসার বিষয়টি জানতে চাইলে সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তারা পুরো বিষয়টি গোপন করেন। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের সহকারি ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সাইয়েদা জুলফা হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রকল্পটির জন্য অনাপত্তিপত্রের আবেদন করেছিলাম। সে বিষয়টি সার্ভে করার জন্য তারা এসেছিলেন।’ এসময় আশিয়ান সিটির ক্যাডার বাহিনীকে প্রকল্প এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।
নবায়ন ছাড়াই চলছে ৬৫০ এনজিও
নিজস্ব প্রতিবেদক
সমাজ কল্যাণমূলক কাজের কথা বলে প্রথমে নিবন্ধন করলেও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের পরও নিবন্ধন নবায়ন করছে না। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট এসব এনজিও নিবন্ধন নবায়ন না করায় সরকার বিরাট অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিবন্ধন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা বেআইনি। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের নজর এড়িয়ে অথবা সরকারের সহনশীলতার সুযোগে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা এনে বিভিন্ন অবৈধ কাজ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনজিও ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি অর্থে যে সব এনজিও চলে প্রতি ৫ বছর পর পর নিবন্ধন নবায়ন করার নিয়ম থাকলেও অনেকে ১৫-২০ বছরেও নবায়ন করে না। ব্যুরোর অধীনে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট এমন অন্তত ৬শ ৫০টি এনজিও রয়েছে যারা নবায়ন ছাড়াই কাজ করছে। এর মধ্যে ৩০০টির বেশি এনজিও এক দশক পেরিয়ে গেলেও নবায়ন করছে না। নিবন্ধন নবায়ন না করায় এনজিওগুলো আদৌ চলছে কি না এর সঠিক তথ্য ব্যুরোতে নেই। এছাড়া বিদেশ থেকে আসা সাহায্য তারা কোন খাতে ব্যয় করছে তারও কোনো তথ্য নেই এনজিও ব্যুরোয়। নিবন্ধন নবায়ন না করায় গত বছরে কয়েক’শ এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করেছে ব্যুরো। নিবন্ধন শেষ হওয়া এনজিওগুলোকে এরই মধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে নবায়নের জন্য। নির্ধারিত সময়ে নবায়নের আবেদন না করলে এ সব এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হবে বলে ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে ব্যুরোতে নিবন্ধতি এনজিওর সংখ্যা ২ হাজার ৮২টি। নিবন্ধন নবায়ন করা হয়নি এমন এনজিওর সংখ্যা ৬২৭টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে ৫৩৮টি এনজিওর নিবন্ধন। এর মধ্যে ২০১০ সালেই বাতিল করা হয়েছে ৫২৬টির নিবন্ধন। নির্ধারিত সময়ে নবায়ন না করায় অনেক এনজিওর কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত নয় ব্যুরো। অনেক এনজিও আছে যারা কাজের স্বচ্ছতার অভাবে নিবন্ধন নবায়ন করছে না। তারা বিদেশ থেকে অর্থ এনে অবৈধ কাজে ব্যয় করছে। এনজিওগুলোর কাজের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য নবায়ন অপরিহার্য। এ কাজ যথাসময়ে শেষ করার জন্য যা যা করণীয় তা নিশ্চিত করতে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। কোনো প্রকার দুর্নীতি ছাড়াই যেন এনজিওগুলোকে দ্রুত নবায়নের আওতায় এনে দেশীয় অর্থনীতিকে আরো সুদৃঢ় করা হয় এটাই আমাদের প্রত্যাশা।  

ডিসেম্বরে চালু হচ্ছে চট্টগ্রামের প্রথম ফ্লাইওভার
নিজস্ব প্রতিবেদক
অচিরেই চট্টগ্রামের যানজট ও কন্টেইনার জট কমার সম্ভাবনা  তৈরী হতে যাচ্ছে। খুব দ্রুত এগোচ্ছে চট্টগ্রামের প্রথম ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ। অ্যাপ্রোচ সড়কসহ এই ফ্লাইওভারের  দৈর্ঘ হবে ১.৪২ কিলোমিটার। নির্মাণ কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৩১টি স্প্যানের মধ্যে ২৮টির নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। বাকি তিনটির কাজও দু’এক দিনের মধ্যে শেষ হবে বলে কর্তৃপক্ষীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পের আওতায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে কাজটি শুরু হয়েছিল। ২০০৮ সালের ১৫ মে প্রকল্পের কার্যাদেশ দেয়া হয়। বিশ মাসের মধ্যে ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল। পারিপার্শ্বিক জটিলতার কারণে তা সম্ভব না হলেও ফ্লাইওভারটি যে অবশেষে আলোর মুখ দেখতে পাচ্ছে তাতেই খুশী চট্টগ্রামবাসী। ডিসেম্বর মাসে এটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে  দেয়া হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনালের (সিসিটি) সাথে এই ফ্লাইওভারের মাধ্যমে সরাসরি সংযোগ ঘটবে বন্দর  টোল  রোডের। যানবাহন চলাচলের জন্য ফ্লাইওভারটি খুলে দেয়া হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দ্রুততম সময়ে ভারি যানবাহন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছাতে পারবে। এর ফলে বন্দরে কন্টেইনার জট কমবে। পাশাপাশি বাড়বে বন্দরের সার্বিক কর্মক্ষমতা। দেশের সামগ্রিক আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের ওপরও এর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞমহলের ধারণা। ভারী যানবাহনের কারণে নিত্য যানজট হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায়। আবার এই যানজট বিমানবন্দর সড়ক হয়ে  পোর্ট কানেকটিং  রোড এবং আগ্রাবাদ এক্সেস  রোড হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে নগরীর একটা এলাকায়। ভারী যানবাহন ফ্লাইওভার হয়ে টোল রোড দিয়ে মহাসড়কে  পৌঁছে  গেলে নগরীর যানজটও বহুলাংশে কমে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতি বছর প্রায় ১৪ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় । প্রতিবছর এই সংখ্যা ২২ শতাংশ হারে বাড়ছে। বর্তমানে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের ২টিতে আংশিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। আগামী বছর নাগাদ অত্যাধুনিক এই টার্মিনালে আরো অন্তত ১০টি গ্যান্টি ক্রেন যোগ হবে । তখন এই টার্মিনালে ১০ লাখের মতো কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। এই ফ্লাইওভারটি  চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার জট ৮০  থেকে ৮৫ শতাংশ কমে আসবে বলে বিশেষজ্ঞমহল মনে করে। ফ্লাইওভার চালু হলে দ্রুততম সময়ে কন্টেইনারবাহী ভারী যানবাহন মহাসড়ক এবং চট্টগ্রামের বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনালগুলোতে পৌঁছে যাবে। যাতায়াতের সীমাবদ্ধতা কেটে গেলে অনেক সাশ্রয়ী হয়ে উঠবে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং। আমাদের প্রত্যাশা, বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের প্রথম ফ্লাইওভারটির উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠুক সমুদ্র মেখলা এই শহরটি । 


ব্রিটেনে স্পাউস ভিসার বয়সসীমা ফের ১৮ বছর
ডেস্ক রিপোর্ট
বিয়ে সূত্রে ইউরোপের বাইরে থেকে ব্রিটেনে অভিবাসনের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ২১ থেকে কমিয়ে আবারও ১৮ বছর করা হয়েছে।  অভিবাসন সংক্রান্ত একটি মামলায় সুপ্রিম  কোর্টের রায়ে এ সিদ্ধান্ত হয়। মানুষের মৌলিক অধিকার ও পারিবারিক জীবন যাপনের অধিকার বিবেচনায় নিয়ে ওই রায় দেয় আদালত। আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে এ নিয়ম কার্যকর হবে। ফলে ইউরোপের বাইরের  দেশগুলো থেকে আরো প্রায় ৫ হাজার মানুষ ব্রিটেনে গিয়ে তাদের স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাবে। ৩ বছর আগে লেবার সরকারের সময়ে নিয়ম করা হয়, স্পাউস ভিসায় কেউ ব্রিটেনে আসতে চাইলে তার বয়স অন্তত ২১ হতে হবে। আগে এই বয়সসীমা ছিল ১৮ বছর। এই নিয়ম করার  ক্ষেত্রে সরকারের যুক্তি ছিল, স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে মানিসকভাবে পরিপক্বতা অর্জন এবং জীবন সম্পর্কে দক্ষতা অর্জনের জন্য ন্যূনতম ২১ বছর বয়স হওয়া প্রয়োজন। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টি এবং লিবারেল  ডেমোক্র্যাটরাও তখন ওই আইনকে স্বাগত জানায়। পরবর্তীতে বলা হয়,  ফোর্সড ম্যারেজ অর্থাৎ জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধ করার জন্যই বয়সসীমা বাড়ানো হয়েছে। ব্রিটিশ অভিবাসন আইনের ২৭৭ নম্বর ধারার এই বিধি চ্যালেঞ্জ করে চিলির একজন নাগরিক এবং ব্রিটেন ও এশিয়ার দুই দম্পতি আদালতে মামলা করেন। হাইকোর্ট সরকারের পক্ষে রায় দিলে তারা আপিল করেন। এরপর গত ১২ অক্টোবর সুপ্রিম  কোর্টের এক রায়ে স্পাউস ভিসার বয়সসীমা ২১ বছর করার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। আর ৭ নভেম্বর ইউকে বর্ডার এজেন্সি আদালতের রায় মেনে নিয়ে এই বয়সসীমা আবার ১৮ বছর নির্ধারণ করে। তাদের নির্দেশনায় বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্পাউস ভিসার ক্ষেত্রে ১৮ বছর বয়স সংক্রান্ত আইনটি পুনর্বহাল করা হচ্ছে।
 
সিএনজি’র সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না
মো. রেজাউর রহিম                                                             
দেশের পরিবেশ রক্ষা এবং জ্বালানি সাশ্রয় এবং কম খরচে সাধারণ মানুষের যাতায়াত সুবিধা দিতে সরকার রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর জোর দিলেও এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের বেশিরভাগ মানুষ। ১ ইউনিট সিএনজি’র বর্তমান মূল্য মাত্র ২৫ টাকা। সরকার জ্বালানি সহজলভ্য ও পরিবহন খাতে সাধারণ মানুষের জন্য সেবার মান বৃদ্ধি করতে সিএনজির এই মূল্য নির্ধারণ করেছিল। তবে সিএনজি’র কমমূল্যের এ সুবিধা দেশের সাধারণ মানুষ পায়নি। প্রথম পর্যায়ে শহরের বিত্তবান শ্রেণী পুরোপুরি সিএনজি’র কম মূল্যের এ সুবিধা ভোগ করে। পরবর্তীতে মধ্যবিত্তরাও সিএনজি’র স্বল্পমূল্যের সুবিধা পেতে প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারের দিকে ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়ে। ফলে রাজধানী ঢাকাসহ সিএনজি সহজলভ্য এমন অঞ্চলগুলোতে প্রাইভেট কার ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এত কম জ্বালানি খরচে গাড়িতে সিএনজি ব্যবহারের সুযোগও নেই। ফলে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহর এমনকি হাইওয়েগুলোতেও একদিকে বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত যানযট। অন্যদিকে যাত্রীবাহী বাস ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ অল্প পয়সায় যাতায়াতের যে সুবিধা পাওয়ার কথা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাস মালিকরা তাদের গাড়িতে সিএনজি ব্যবহার করে তাদের খরচ সাশ্রয় করলেও, যে উদ্দেশ্যে তাদের এ সুযোগ  দেয়া হচ্ছে সে উদ্দেশ্য-অর্থাৎ সাধারণ মানুুষ কম খরচে যাতায়াতের সুবিধা পাচ্ছেন না। এর পুরো লাভটাই যাচ্ছে বাস মালিকদের পকেটে।    
পেট্রোবাংলার একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক গ্যাস দেশের মোট বাণিজ্যিক জ্বালানির প্রায় ৭৫ শতাংশ পূরণ করছে। জ্বালানির এই বৃহৎ অংশ পূরণ করছে যে গ্যাস-তা অতি দ্রুতই ফুরিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, গত ২০০১-০২ অর্থবছরে গাড়িতে সিএনজি গ্যাসের ব্যবহার শুরুর পর প্রথম পর্যায়ে তেমন সাড়া না পড়লেও বর্তমান এর ব্যবহার অনেকগুণ বেড়েছে। সরকারি হিসেবেই গত ডিসেম্বর ২০০৯ পর্যন্ত সিএনজি চালিত গাড়ির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৫৫টি। তবে বর্তমানে তা ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ১৭টি গ্যাস ক্ষেত্রের ৭৯টি কূপ হতে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে মোট প্রাকৃতিক গ্যাসের বর্তমান মজুদের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৮৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট এবং প্রাথমিকভাবে উত্তোলনযোগ্য মজুদের পরিমাণ ২০ দশমিক ৬০৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। ডিসেম্বর ২০০৯ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জি প্রকৃত গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ দশমিক ৭২৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। আর জানুয়ারি ২০১০ সময়ে উত্তোলনযোগ্য নীট গ্যাস মজুদের পরিমাণ ছিল ১১.৮৮ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। জানা গেছে, ২০১০ সালের ডিসেম্বর  মাসে সিএনজি খাতে প্রায় ৯১ এমএমসিএম গ্যাস ব্যবহƒত হয়েছে, যা প্রায় ১১ কোটি লিটার জ্বালানি তেলের সমপরিমাণ। সিএনজি জ্বালানি’র মূল্য কম হওয়ায় রূপান্তরিত যানবাহনের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রাজধানী ঢাকায় গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে মাত্রাতিরিক্ত হারে। গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে যানজটও। ফলে বাসা-বাড়িতেও প্রয়োজনীয় গ্যাস সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সকল প্রকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত অনেকটা বিরক্ত হয়েই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সিএনজি’র সুবিধা দেশের সাধারণ মানুষ পায় না। এই  সুবিধা ভোগ করছে গাড়ির মালিক ও শিল্পপতিরা। তাই দেশের স্বার্থেই সিএনজি গ্যাসের দাম বাড়ানো প্রয়োজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ সময়’কে বলেন, গ্যাস সম্পদের ওপর দেশের ১৬ কোটি মানুষের সমান অধিকার রয়েছে। কিন্তু সব মানুষ সম্পদের এই সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। সিএনজির এই সুবিধা ভোগ করছে মূলত শহরের বিত্তবান ও ধনীরা। যে পরিবারে একটি গাড়ি হলে চলে সেখানে ব্যবহার হচ্ছে একাধিক গাড়ি। এছাড়া রাস্তাঘাটের স্বল্পতা এবং গাড়ির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে বাড়ছে যানজট, নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সময়। যা ক্রমান্বয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথেও বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর অন্যদিকে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে সিএনজি ব্যবহার হলেও ভাড়া নেয়া হচ্ছে ডিজেল চালিত গাড়ির সমানই। জানা গেছে, তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে রাজধানী ঢাকার অনেক জায়গায় ঠিকমতো রান্না হয়না। এ সুযোগে এলপি গ্যাসেরও দাম বাড়িয়েছে এ খাতের ব্যবসায়ীরা। অথচ সিএনজি মিলছে বেশ সহনীয় মূল্যে। জানা গেছে, বাংলাদেশে সিএনজির দাম প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানের চেয়েও অনেক কম। দেশে অকটেনের তুলনায় সিএনজি ৭১ দশমিক শূন্য ৯ এবং ডিজেলের তুলনায় ৪৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ সাশ্রয়ী, সেখানে ভারতে এই সাশ্রয়ের হার যথাক্রমে ৫৮ ও ২৮ শতাংশ। কিন্তু তারপরও সিএনজি চালিত পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ভাড়া নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর ডিজেল বা অকটেন চালিত গাড়ির সঙ্গে সিএনজি চালিত যানবাহনের ভাড়া বাড়ার আশঙ্কাও করছে সাধারণ মানুষ। এর ফলে কষ্ট ও দুর্ভোগ বাড়বে সাধারণ মানুষের । বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষার্থে সিএনজি ব্যবহার এবং মূল্য সংক্রান্ত যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি ।  

ভারতে আরো ১৫ পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের দাবি করা ৬১টি পণ্যের সবগুলোরই ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশ নিশ্চিত হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ওমর ফারুক  দেওয়ান রোববার সাংবাদিকদের জানান, ভারতের বাজারে বাংলাদেশী ১৫টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন সে দেশের সরকার গত ৯ নভেম্বর জারি করেছে।  এর আগে গত  সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে ৪৬টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায় বাংলাদেশ।
নতুন করে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়া পণ্যগুলো হচ্ছে- সুপারি, টয়লেট বা  ফেসিয়াল টিস্যু পেপার, প্লাস্টিকের মনোফিলামেন্ট, আলু, পরিশোধিত নারকেল তেল, প্রিন্টেড পেপার বা  পেপার বোর্ড লেবেল, লুব্রিকেটিং অয়েল, সিআর কয়েল, সিআই শিট বা ঢেউটিন, জিপি শিট, আয়রন বার (রড), এসএস বার (রড), আয়রন এঙ্গেল, শেপ ও  সেকশন এবং গবাদিপশুর হাড়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারুক জানান, ৯ নভেম্বর জারি করা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভারত সাফটা স্পর্শকাতর তালিকা (সেনসিটিভ লিস্ট) ৪৮০ থেকে  কমিয়ে মাত্র ২৫টি করেছে। এতে বাংলাদেশের দাবি করা ৬১টি পণ্যের সবগুলোই ভারতে শুল্ক মুক্ত সুবিধা  পেলো। এখন ভারতের স্পর্শকাতর তালিকায় শুধু বিভিন্ন প্রকার মদ, পানীয় এবং তামাকজাতীয় ১৪টি পণ্য রয়েছে।
বাংলাদেশ ইতোপূর্বে ৪৬টি তৈরি  পোশাক পণ্যসহ (আরএমজি) মোট ৬১টি পণ্যকে শুল্ক মুক্ত সুবিধা  দেয়ার জন্য ভারতকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১০-১১ অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৭৪ মিলিয়ন ডলার। এ সময় বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫৮৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি এবং ৫১২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য ভারতে রফতানি করে। সদ্য পাওয়া শুল্কমুক্ত সুবিধা ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে এবং দুই  দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনবে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি সম্পর্কে মনমোহনও তার সফরের সময় বলেছিলেন, দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্য বিষয়ে ভারত পূর্ণ সচেতন রয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ৪৬টি পণ্যকে ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার ঘোষণা দিতে  পেরে আমি আনন্দিত। 

আমিরাতেও গণজাগরণের ঢেউ
মনির তালুকদার
মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের মধ্যে সেই উত্থান আর সচেতনতার অবস্থা, যা আজ এতদঞ্চলের জাতিগুলোর মধ্যে বিশাল এক পরিবর্তন সাধন করেছে। এমন সব বিদ্রোহ ও বিপ্লব সংঘটিত করেছে, যা কখনোই এ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে থাকা অশুভ শক্তিগুলোর হিসাব-নিকাশে স্থান পায়নি। এ এক মহাজাগরণ যা স্বৈরাচার ও সাম্রাজ্যবাদের দেয়ালগুলো ধ্বংস এবং তাদের পাহারাদার শক্তিগুলোকে পরাজিত ও পরাভূত করে ছেড়েছে।
আরব গণজাগরণের ঢেউ উপসাগরের অন্যতম ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতেও দোলা দিচ্ছে আর সেই জাগরণে অস্বস্তিবোধ করছে সে দেশের শাসকগোষ্ঠী। রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ প্রভৃতি এখনো হয়নি, তবে গণতন্ত্রের চেতনায় মানুষ যে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে তার লক্ষণ ইতোমধ্যে নানাভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তবে, ছিটাফোঁটা যেটুকু প্রকাশ পেয়েছে, সেটুকুও সেদেশের শাসকদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত মার্চ মাসে দেশটির বিশিষ্ট নাগরিকদের কয়েকজন শাসক শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের কাছে একটি দাবিনামা পেশ করেন। বিনয় ও সৌজন্যের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে সেই লিখিত দাবিনামায় উল্লেখ করা হয় যে, আমিরাতের সংবিধানে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কাজেই মহামান্য শাসক শেখ নাহিয়ান ফেডারেল ন্যাশনাল কাউন্সিলকে (এফএনসি) সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত একটি সত্যিকারের পার্লামেন্টে পরিণত করার কথা বিবেচনা করতে পারেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, এফএনসি সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন এটি আইনসভা যার ৫০ শতাংশ সদস্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত এবং বাকি ৫০ শতাংশ সদস্য বাছাই করা নির্বাচকমণ্ডলীর দ্বারা নির্বাচিত করা হবে।
বিশিষ্ট নাগরিকদের স্মারকলিপির আকারে দাবিনামা পেশ করার অল্পদিনের মধ্যে উত্তর পাওয়া গেল। সরকার থেকে ঘোষণা করা হলো, চলতি বছরের শেষ দিকে এফএনসি নির্বাচনে যারা ভোট দিতে পারবে তাদের সংখ্যা সাত হাজার থেকে বাড়িয়ে প্রায় ৮০ হাজার করা হবে। সোজা কথায় ১০ গুণ বাড়ানো হবেÑ ভোটার সংখ্যা। অপরদিকে ২৭ জুন ২০১১, আইনসভা বিষয়ক দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ঘোষণা করলেন, ২০১৯ সাল নাগাদ সব আমিরাতী নাগরিকের ভোটাধিকার হবে। বলাবাহুল্য বিশিষ্ট নাগরিকদের সবিনয়ে প্রদত্ত স্মারকলিপির জবাবে যে সরকারের তরফ থেকে ওই বদান্যতার পরিচয় দেয়া হয়েছে তা নয়। আমিরাতে আইনসভা বা এফএনসি একটা ক্ষমতাহীন প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের আইন প্রণয়নের কোনো ক্ষমতা নেই। তবে আইন নিয়ে আলোচনা করতে পারে। এমন একটা প্রতিষ্ঠানকে পরিবর্তন করার কোনো লক্ষণ সরকার দেখায়নি। তবে যেটা করেছে তা হলো স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর দেয়া ১৩৩ নাগরিকের কয়েকজনকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের সেলফোন থেকে। তাছাড়া পাঁচজন রাষ্ট্রের সুপরিচিত ব্যক্তি এবং অর্থনীতির এক বিশিষ্ট অধ্যাপক এপ্রিল ২০১১- এর প্রথমদিকে গ্রেফতার হওয়ার পর কারাগারে ধুঁকছে। এদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করা এবং আমিরাতের শাসকদের অপমান করার অভিযোগ আনা হয়েছে। যার পরিণামে কমপক্ষে তাদের পাঁচ বছর জেল হতে পারে। গত জুন মাসের মাঝামাঝি প্রাথমিক একটি আদালতে তাদের শুনানি চলাকালে সরকারপন্থি একদল মার্কিন দালাল আদালত কক্ষে ঢুকে হৈ চৈ জুড়ে দেয় এবং তাদের বৈহমান ও ইরানি এজেন্ট বলে গালাগাল করে। স্থানীয় পত্রিকাগুলোও যেগুলো মূলত মার্কিন টাকায় চলে, সেগুলোও একই ধরনের বক্তব্য বিবৃতি দেয়।
নানান মানদণ্ডের বিচারে আমিরাত একটি বিচিত্র দেশ। দেশটির ৮২ লাখ অধিবাসীর এক-পঞ্চমাংশের কম স্থানীয় নাগরিক। বাকিরা বহিরাগত। বিশ্বের সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া জনগোষ্ঠী যে গুটিকয়েক দেশে রয়েছে তার অন্যতম হলো আমিরাতের নাগরিকরা। তেলসমৃদ্ধ এ দেশটির শাসকরা জনগণের কল্যাণমূলক ব্যবস্থার পেছনে অকাতরে অর্থ ব্যয় করে থাকেন। এসব কল্যাণমূলক সুযোগ-সুবিধা আমিরাতের নাগরিকরা জš§ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ভোগ করে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে আমিরাত সমাজ হলো সবচেয়ে স্বাধীন সমাজ, যেখানে সহনশীল জীবনধারা অনুসৃত হয়ে থাকে। কাজেই বাকস্বাধীনতা এবং পূর্ণ রাজনৈতিক অধিকারের মতো ব্যাপারগুলো দাবি করা একেবারেই ভণ্ডামি বলে আমিরাতের অনেকে ভেবে থাকলে তাতে অবাক হবার কিছু নেই। তবে এর বিপরীত স্রোতও আছে। আমিরাতের উদারপন্থিরা মনে করে সামান্য ভিন্নমত পোষণ করার বিরুদ্ধে সরকারের এতটা খড়গহস্ত হওয়া ঠিক হয়নি। তারা বুঝতে পারছেন না, কেন ওই ধরনের বিরোধীবাদীদের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে ক্রমবর্ধমান প্রচারাভিযান। তবে দেশটির সুশীল সমাজের সবচেয়ে পুরনো দুই প্রতিষ্ঠান শিক্ষক সমিতি এবং আইনজীবী সমিতির পরিণতির কথাই ধরা যাক। গত ৬ এপ্রিল ২০১১, ওই দুই সংগঠন বৃহত্তর গণতন্ত্রের দাবিতে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল। ওইসব দাবি জানানোর ফল কি হতে পারে এক মাসের মধ্যে তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেল। সরকার ওই দুটো সমিতির নির্বাচিত পরিচালকমণ্ডলী ভেঙে দিল এবং সে জায়গায় বসিয়ে দেয়া হলো সরকারপন্থি লোকদের। গত জুন মাসে আরেক ঘটনা ঘটে। দুবাইয়ে গত ১০ বছর ধরে চালু থাকার পর গালফ রিসার্চ সেন্টার নামে একটি স্বনামধন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বেসরকারি অর্থায়নে পরিচালিত ওই প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি হস্তক্ষেপ দিন দিন বাড়ছিল বলে অভিযোগ ছিল। অন্যান্য শিক্ষা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানেও একই ধরনের অভিযোগ ছিল। বিশেষ করে রাজনৈতিক সংস্কার সম্পর্কিত যে কোনো কর্মকাণ্ডে সরকারের বেশি মাত্রায় নাক গলানো নাকি উত্তরোত্তর বেড়েই চলছিল। এই স্বৈর শাসকদের ভয়ই মুক্ত গণতন্ত্র নিয়ে।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় পরিবেশিত একটি খবর আমিরাতের সংস্কারপন্থিদের বেশি উদ্বিগ্ন হবার কারণ ঘটিয়েছে। খবরটা হলো এ রকম- আবুধাবির শাসকের ভাই এবং যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়িদ বিদেশি ভাড়াটে সেনাদের নিয়ে একটি ক্র্যাক ব্যাটালিয়ন গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। ৮০০ সদস্যের এই বাহিনীর অন্যান্য কাজের মধ্যে একটি কাজ হবে নিরস্ত্র জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা।
১৯৭১ সালের আগে আমিরাত ট্রসিয়াল রাষ্ট্র বা ট্রসিয়াল ওমান নামে পরিচিত ছিল। এমন নামটি হওয়ার কারণ হচ্ছে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটেন ও কয়েকজন আরব শেখের মধ্যে সম্পাদিত একটি চুক্তি বা ট্রস । আমিরাতের সংবিধান আছে। এমন কি একজন প্রেসিডেন্টও আছেন। তবে দেশটি নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রও নয়, আবার প্রজাতন্ত্রও নয়। এটি সাত রাজতন্ত্রের একটি ফেডারেশন যার শাসকরা নিজ নিজ আমিরাতের মধ্যে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। ওই আমিররা তাদের নিজেদের মধ্যে থেকে একজনকে ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে থাকেন। তবে তাতে আমিরাতগুলোর সরকারের রাজতান্ত্রিক চরিত্রের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। সংবিধান শুধুমাত্র ফেডারেশনের সদস্য হিসেবে আমিরাতগুলোর নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়েই ভাবিত। সাংবিধানিক পদ্ধতির সরকারের ব্যবস্থা কখনো সেখানে ছিল না। সাত আমিরাতের মধ্যে আবুধাবি হলো সবচেয়ে বড় এবং তেলসম্পদে সবচেয়ে সমৃদ্ধ। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে আবুধাবিরই প্রাধান্য রয়েছে। আর এ কারণে এখানেই রয়েছে ফেডারেল রাজধানী। আবুধাবির আমির দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান। দুবাই আমিরাতের নিজস্ব তেলসম্পদ তেমন একটা নেই। কিন্তু কিছুদিন আগেও বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ও জনসংখ্যা স্ফীতির কারণে দুবাই একটা শক্তি হিসেবে উঠে দাঁড়িয়েছিল এবং আবুধাবির দাপটে ভারসাম্য নিয়ে এসেছিল। কিন্তু দুবাইয়ের শাসক মাকতুল পরিবার দু’বছর আগে মারাÍক ঋণ সংকটে পড়ে অধিকতর রক্ষণশীল আবুধাবির শাসক নাহিয়ানদের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়েছিল। আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে তাদের দুর্দশার কাহিনী যেভাবে প্রচার হয় সেটা তাদের জন্য ছিল নিতান্তই বিব্রতকর। যাই হোক ওইসবের কারণে দুবাইয়ের দাপট অনেকটা খর্ব হয়েছে। তবে আমিরাতে আরব গণজাগরণের দোলা অতি সামান্য হলেও লাগার পেছনে দুবাইয়ের ভূমিকা রয়েছে। দুবাইয়ের শাসকরা বেশি উদার। সমাজের দ্বার এরা বহির্বিশ্বের কাছে উš§ুক্ত করে দিয়েছে। তাছাড়া এখানে বিপুল সংখ্যক বিদেশি শ্রমিকের আগমন ঘটেছে। তাদের সঙ্গে চলে এসেছে নানা ধরনের আদর্শ। সমাজে সেই সব আদর্শ নানাভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ও বাইরের উদার চিন্তাধারার বিস্তার ঘটেছে ব্যাপক হারে। যেগুলো ভবিষ্যতে গোটা আমিরাতে গণজাগরণের সঞ্চার করতে পারে। সে কথা ভেবে অনেক আমিরাতের শাসক পরিবার নিজ নিজ ভূখণ্ডে রাজনৈতিক দিক দিয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। গণতন্ত্রের কথা ভাবলেই আমিরাতের শাসককূল ভীত হচ্ছে এবং তত বেশি সংকুচিত হয়ে পড়ছে। মাঝে মাঝে গণতন্ত্রের ভূত দেখে তারা আঁতকে উঠছেন। 

 পদ্মা সেতু: নাম বদনাম এবং সামাজিক রাজনীতি
ড. ইশা মোহাম্মদ
পদ্মা সেতুর সামাজিক অর্থনীতি এখন আর আলোচ্য নয়। পদ্মা সেতুর রাজনৈতিক সার্থকতা এবং ব্যর্থতাই এখন আলোচ্য। পদ্মা সেতু হলে বিশিষ্ট কয়েকটি এলাকার লোকজনরা আলো দেখতে পাবেন। এরকমই কথা বলাবলি হয়েছিল তখনকার দিনে। এখন বলা হচ্ছে সেতু বন্ধ করে তাদের অন্ধকারে রাখতে হবে। যারা বলছে তাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক কিন্তু একেবারেই অর্থনৈতিক নয় তা বলা যাবে না। কেননা, আলোহীন গ্রামে যারা বাস করে তাদের অন্ধকারে রাখতে পারলেই প্রতিক্রিয়াশীলরা নিরাপদে শোষণ করতে পারে। তাদের স্বল্প আয়াসে শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত করবে পদ্মা সেতু, অন্ধকার ঠেলে, আলো দিয়ে। আলো আসবে আধুনিকতা থেকে। এই আধুনিকতা ‘কসমোপলিটন নগরে বাস করে। অতীব দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশে অনেকগুলো নগর তৈরি হয়েছে যা আরবানিজম বর্জিত এবং কসমোপলিটন নগর হয়ে উঠতে পারেনি এবং এই কারণে আধুনিক নয়Ñ বিজ্ঞানমনস্ক নয়। ঢাকা শহরই একমাত্র কসমোপলিটন শহর আর অন্যগুলো প্রতিক্রিয়াবদ্ধ কিংবা ‘অনুসারী’। এরা স্বাতন্ত্র্য অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু এদের সম্ভাবনা বর্তমান ছিল। চট্টগ্রাম হয়ে উঠতে পারত বিশ্বের সেরা কসমোপলিটন নগর। কিন্তু কেবলমাত্র প্রতিক্রিয়াশীল পরিকল্পনা অনুশীলনের কদাচারে সেটি এখনো অন্ধকারে ডুবে আছে। অন্ধকার থেকে আলোয় যেতে চায় সাধারণ মানুষ। তাদের বহুদিনের দাবি কয়েকটি সেতু। যে সেতুগুলো না হলে তাদের নিত্য আনাগোনা সম্ভব নয় ঢাকায়। ঘরে বসেই ঢাকার বাতাস গায়ে লাগিয়ে তারা মুক্তির স্বাদ পেতে চায়। ‘সর্বোচ্চ আইন’ ঢাকা শহরে। ঢাকা শহরে তাদের আসতেই হয়। সর্বোচ্চ শিক্ষা ঢাকা শহরে,  ঢাকা শহরে তাদের আসতেই হয়। সর্বোচ্চ রাজনীতি ঢাকা শহরে, ঢাকা শহরে তাদের আসতেই হয়। কিন্তু ইচ্ছা হলেই পারে না। কেন? কারণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা। এই বিচ্ছিন্নতার সুযোগ নিয়ে ‘টাউট ও রুরাল ক্লিক’ তাদের তান্ত্রিকতা ও প্রতারণার মাধ্যমে শোষণ করে, নির্যাতন করে। তাদের দৈহিক ও আর্থিক অনাচারে কদাচারে জর্জরিত করে। তাদের বহু বছরের আকুতি, বিছিন্নতা থেকে মুক্তিÑযোগাযোগের উন্নয়ন। সেই লক্ষ্যেই তারা অতিবঞ্চিত কয়েকটি আঞ্চলের মানুষ পদ্মা সেতু কামনা করেছিল। কিন্তু তাদের সে সাধ হয়ত আর পূরণ হবে না। মনে ভয় ঢুকে গেছে। পদ্মা সেতু বন্ধ হোক, এটি চেয়েছিল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা। তাদের ধারণা হয়েছিল পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের সার্থকতা হিসেবে গণ্য হবে। তাই বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং এনজিওয়ালারা যৌথভাবে পদ্মা  সেতু ঠেকিয়ে দিতে চায়। তারা আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অর্জন হিসেবে পদ্মা  সেতুর ছবি পোস্টারে দেখানোর সুযোগ দিতে চায় না। তাদের ধারণাÑএটি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে সাধারণ বদনাম উচ্চারিত হয়- আওয়ামী লীগ পারে না, তা চিরতরে স্থায়ী করে দেবে। ভোটের আগে প্রচারণায় জোর গলায় বলা হবে আওয়ামী লীগ পারে না। আসলেই কিন্তু ব্যাপারটা তাই।
আওয়ামী লীগের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, দুর্বলতা আছে। কিন্তু ব্যর্থতা তেমনভাবে উল্লেখ্য নয়। পদ্মা  সেতুই হবে আওয়ামী লীগের মৌলিক ব্যর্থতা। আর আওয়ামী লীগের ব্যর্থতাই হবে বিএনপি জামায়াতের সার্থকতা। তারা যদি পদ্মা সেতু ঠেকিয়ে দিতে পারে তবে নির্বাচনের আগে বলতে পারবে, আওয়ামী লীগ পারে না। তারা সব বিষয়েই ফেল। পদ্মা  সেতুর কথা বলে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যথেষ্ট দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ওই এলাকার ভোটও পেয়েছিল নির্বিচারে। এখন বাতাস উল্টো বইছে। দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতু হবে না-এমনই রটে গেছে গ্রামে-গঞ্জে। তারা বেশ ক্ষেপেও গেছে। তারা  সোচ্চারে বলছে আওয়ামী লীগ দুর্নীতিমুক্ত হতে পারে না। দোষ যোগাযোগমন্ত্রীর না অন্য কারো তা সাধারণ মানুষ দেখবে না। তারা চোখের সামনে পদ্মা  সেতু দেখতে চায়। যে কোনোভাবেই হোক না কেন, পদ্মা  সেতু চাই। সরকার যদি টাকা না পায় আর্থ-সাম্রাজ্যবাদী আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তবে অন্য উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হবে। যেমন ইতোমধ্যেই এশিয়ার কোনো কোনো দেশ উৎসাহ দেখিয়েছে। বাংলাদেশ নিজেই অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। ১৬ কোটি মানুষ বত্রিশ কোটি হাত এবং বাংলাদেশে প্রচলিত আছে আপনা হাত জগন্নাথ। বাংলাদেশের পক্ষে নিজের সংগ্রহীত অর্থেই পদ্মা  সেতু তৈরি করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে সমস্যা হবে, যা ডলার পাউন্ড কিংবা ইউরো দিয়ে কিনতে হবে তা বাংলাদেশি টাকায় কেনা যাবে না। মাহাথিরের দেশও সবই তাদের টাকায় কিনে দিতে পারবে না। তবে আর্থ সাম্রাজ্যবাদ পদ্মা  সেতু বাংলাদেশকে নিজ দায়িত্বে করতে দেবে না বিধায় বাংলাদেশ একটা ‘সুকৌশল’ নিতে পারে। ঘোষণা দিয়ে আর্থ সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠানের দান-অনুদান ঋণ গ্রহণে অপ্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করে বন্ধু দেশের সঙ্গে বিশেষ মিতালী করে তাদের সহযোগিতায় পদ্মা  সেতু তৈরি করতে পারে। যেমন গণচীনের অভিজ্ঞতা। গণচীন পদ্মা সেতুর চেয়েও বড় সেতু আরো কম খরচে তৈরি করেছে। যদি গণচীনের সঙ্গে চুক্তি করা হয় যে, বৈদেশিক অর্থ-যা প্রয়োজন তা তারা সরবরাহ করবে এবং বাংলাদেশ দেশীয় অর্থে যা করা যায় তার সবটুকুই করবে তবে হয়ত তারা রাজি হবে। এভাবে একটা চুক্তি করা গেলে এবং তা বিশ্বময় চাউর হয়ে গেলে দেখা যাবে, আর্থ সাম্রাজ্যবাদীরা সরাসরি হাত আলাদা না করলেও জাপান কিংবা ইউরোপের কোনো কোনো দেশকে বাংলাদেশের পিছনে লেলিয়ে দেবে এবং তারা টাকার পসরা নিয়ে বাংলাদেশের পিছনে, পিছনে ঘোরাঘুরি করবে। উদ্দেশ্য একটাইÑ বাংলাদেশকে তারা ‘গৃহপালিত’ দেখতে চায়Ñ বিদ্রোহী হিসেবে বাঁচতে দিতে চায় না। তাই যেন তেন প্রকারেণ তারা পদ্মা  সেতুতে অর্থ প্রয়োগ করবেই। বাংলাদেশের উচিত হবে, কূটচালে আর্থ সাম্রাজ্যবাদকে কুপোকাত করা এবং তাদের ‘অর্থ পসরা’ নিয়ে বাংলাদেশের পিছনে ঘোরাঘুরি করতে বাধ্য করা। চীনের সঙ্গে চুক্তিতে পদ্মা সেতু তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হবে প্রাক্কলিত ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ যোগ্য করা। প্রাক্কলিত ব্যয় অতি মূল্যায়িত। পদ্মা সেতুর প্রথম হিসেব আর এখনকার হিসেবে বিস্তর পার্থক্য। এটি গণচীন গ্রহণ করবে না। ব্যয়ের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনে একটা বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক মূল্যমান নির্ধারণ করা প্রয়োজন। ব্যয় সঠিক হলে চীন অবশ্যই এগিয়ে আসবে। তাছাড়া চীনের কারিগরি জ্ঞান সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। নদীও অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এ দুটি সমস্যা পদ্মা  সেতুতেও ঘটতে পারে। সেজন্য চীনকে সম্পর্কিত করলে লাভ হবে। কেননা তাদের দীর্ঘলম্বা সেতু নির্মাণের অভিজ্ঞতা বিশ্বমানের এবং অদ্যাবধি প্রশ্নহীন। তাই বাংলাদেশের উচিত হবে চীনের সঙ্গেই পদ্মা সেতুকে সম্পর্কিত করা। তা হলে বাংলাদেশের কুচক্রীরা ষড়যন্ত্র করে কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না। অর্থায়নের সমস্যা বাংলাদেশ খুব সহজেই মোকাবিলা করতে পারবে। কিন্তু পদ্মা সেতুর অর্থকরী বিষয় মোকাবিলা করা হয়ত সম্ভব হবে না। পদ্মা সেতুতে অনেকেই অর্থ সন্ধান করছেন। এদের মধ্যে সরকারি দলের লোকজনও আছে। বিভিন্ন রকম সিন্ডিকেট এখনই তৎপর হয়ে উঠেছে। পদ্মা সেতু এখন রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সরকার সরকারি লোলুপদের ঠেকাতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। তার ওপরে সাম্রাজ্যবাদী ও মৌলবাদীদের চাপ এত বেশি যে ঠেকাতে পারবে এমন মনে হয় না। কিন্তু তাদের ভয়ে কাজ তো ফেলে  রাখা যায় না। তাই অন্য উপায় বের করতে হবে। সেতুর কাজের সমম্বয়ক হিসেবে সেনাবাহিনীকে নিয়োজিত করতে হবে। বিরোধীদলীয় নাশকতা ঠেকাতেও সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হবে। টাকা-পয়সা চুরি চামারি ঠেকাতে এ সেনাবাহিনী প্রয়োজন হবে। মনে রাখতে হবে, যথাসময় পদ্মা  সেতু নির্মাণে ব্যর্থ হলে তার পুরো দায় আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে এবং এই বদনামের কারণে আওয়ামী লীগ পরবর্তী নির্বাচনে এ সুবিধাবঞ্চিত এলাকার সাধারণ মানুষের ভোট পাবে না। পরবর্তী নির্বাচনে যদি একই আওয়াজ পাওয়া যায়, আওয়ামী লীগ পারে না, তবে ভোটের দিনে আওয়ামী লীগকে ‘খবর’ সংগ্রহ করতে হবে। কোনো দ্বিধা নয়, পদ্মা  সেতুর কাজ পুরোদমে শুরু করতে হবে। দেশীয় অর্থের জোগানের বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। চীনের কারিগরি জ্ঞান এবং অলস পুঁজির সহায়তা নিতে হবে। একই সঙ্গে বাস্তবভিত্তিক প্রাক্কলিত ব্যয় সংশোধন করতে হবে। চুরি ও লুটপাটের জন্য ব্যয় দ্বিগুণ হলে দেশীয় অর্থ সংগ্রহ করা কঠিন হবে এবং চীনও আগ্রহ দেখাবে না। আর নিজ দায়িত্বে কাজ শুরু করতে না পারলে আর্থ-সাম্রাজ্যবাদী অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও টাকা নিয়ে বাংলাদেশের পিছন পিছন ঘুরবে না। তাই প্রথমেই উচিত হবে প্রাক্কলন বাস্তবভিত্তিক করে প্রকৃত ব্যয় জনগণকে এবং বিশ্ববাসীকে জানানো। পদ্মার ব্যাপারে আগের সরকারের এবং বর্তমান সরকারের দুর্নীতিবাজদের শাস্তির ব্যবস্থা করা যাতে সাধারণ মানুষের আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা আবার ফিরে আসে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে নির্মোহ সংলাপের মাধ্যমে সহযোগিতা গ্রহণ করা দরকার। সর্বোপরি আওয়ামী লীগকেই পদ্মা সেতুর ব্যাপারে  একনিষ্ঠ করা। এটিরও প্রয়োজন হয়েছে। কেননা, হালুয়া-রুটি বঞ্চিত অনেক আওয়ামী লীগও চাচ্ছে না যে, পদ্মা  সেতু শেখ হাসিনার কীর্তি হিসেবে মহাকালের বুকে স্বাক্ষর রাখুক। তাই সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে এবং সকল সুযোগ গ্রহণ করে পদ্মা  সেতু সম্পূর্ণ নিজের অর্থায়নে তৈরি হচ্ছে এমন ভাবভঙ্গিতে কাজ শুরু করা এবং যথাসম্ভব দ্রুত শেষ করা। প্রয়োজনে  আগামী নির্বাচন কিছুদিন পিছিয়ে দিয়ে হলেও সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করা। মহাজোট সরকারের আমলেই যেন সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়। চীনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগালে আড়াই বছরে সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে। তাই এখনই সরকারের উচিত হবে, বিশ্বব্যাংকের এবং সকল ষড়যন্ত্রকারীদের মুখে ছাই দিয়ে সকল শক্তি নিয়ে পদ্মা সেতু যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া এবং জয়লাভ করা।

লেখক: কলামিষ্ট
  এগিয়ে যাচ্ছে চীনা নারী
মনির তালুকদার
নারী হচ্ছে অর্ধেক আকাশ। সেই অর্ধেক আকাশ মেঘে ঢাকা থাকলে সূর্য আড়ালে পড়বেই। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের জন্য চাই মেঘমুক্ত আকাশ। আর সেটাই হচ্ছে চীনা নারীদের ক্ষেত্রে।
চীনের উন্নয়নে অগ্রগতিতে নারীদের ভূমিকা যে পরিবর্তিত হচ্ছে তা বুঝতে ‘দু লালাস রাইজ’ উপন্যাসের সাফল্যের কথা তুলে ধরা যায়। মিস দু কীভাবে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে গেলেন তা উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। চীনে বেস্ট সেলারের তালিকায় ১৪১ সপ্তাহ ধরে স্থান পেয়েছিল ওই বইটি। ওই উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি চলচ্চিত্র এ বছরের শীর্ষস্থানীয় একটি চলচ্চিত্র হিসেবে স্থান পায় এবং অনলাইন সিরিজ নাটকেও অভাবনীয় সাড়া পাওয়া যায়। এই উপন্যাসের পাঠক ও চীনে বিদেশি কোম্পানির মার্কেটিংয়ে কর্মরত ২৮ বছরের তরুণী লিউ দানহুই উপন্যাসের মিস দুর প্রশংসা করেন এবং বিশ্বাস করেন যে, ভবিষ্যতে চীনে তার মতো আরো অনেক নারী জš§গ্রহণ করবে। বস্তুত লিউ দানহুইয়ের মতো অনেকেই আছেন, যাদের সাফল্যের পেছনে ‘দু লালাস রাইজ’-এর ভূমিকা আছে।
সাফল্যের অর্ধেকই নারীরা এনেছেÑ মাও এর ওই বক্তব্যের কয়েক দশক পর ‘দু লালাস রাইজ’-এর সাফল্য এবং তার ভক্তদের বিষয়ে একটি বিষয় ফুটে উঠেছে যে, চীনের নারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের চেয়েও বেশি উচ্চাকাক্সক্ষী। একটি সমীক্ষায় ও তা স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে। নিউইয়র্কভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর ওয়ার্ক লাইফ পলিসি পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, কলেজ উত্তীর্ণ মার্কিন তরুণীদের মধ্যে এক- তৃতীয়াংশের কিছু বেশি তরুণী নিজেদেরকে উচ্চাকাক্সক্ষী হিসেবে বর্ণনা করেন। অন্যদিকে চীনের তরুণীদের মধ্যে এই হার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। এই সমীক্ষায় আরো দেখা গেছে যে, চীনের ৭৫ শতাংশ নারীই আশা করেন তারা বড় বড় কোম্পানির উচ্চ পদে চাকরি করবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা এ ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছে। তাদের ৫০ শতাংশ নারী বড় কোম্পানির উচ্চ পদে চাকরি করার আকাক্সক্ষা পোষণ করেন। এ ছাড়া চীনের ৭৭ শতাংশ নারীই শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এ ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে আছে। তাদের ৬৮ শতাংশ নারী শ্রমজীবী।
চীনে দ্রুতগতিতে এক্ষেত্রে পরিবর্তন যে হচ্ছে তার একটি কারণ হচ্ছে নারী- পুরুষ উভয়ের দক্ষতার ভিত্তিতে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে সহজেই গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ওয়ার্ক-লাইফ পলিসির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রিপা রিশদ মনে করেন ব্যাপক প্রবৃদ্ধিই এই সুযোগ এনে দিয়েছে এবং সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিকভাবেই চীনা নারীরা শুধু শ্রমজীবীই নয়, তাদের প্রত্যাশাও একই রকম। যাদের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে তাদের মুখে প্রায়ই এই কথাটি শোনা গিয়েছে যে, সমাজতান্ত্রিক সমাজে সব সময়ই জোর দেয়া হয় যে, পুরুষরা যা করতে পারে নারীরাও তা করতে পারে। বস্তুত চীনের কমিউনিস্ট সরকার কয়েক দশক যাবৎ সবার জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ করে দিয়েছে। মাও এর বিপ্লব সমাজে দুঃখ দুর্দশা বাড়ছে বলে মন্তব্য করলেও কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন-এর সিনিয়র ফেলো ইসোবেল কোলম্যান এ কথাও স্বীকার করেন যে, কমিউনিজম নারীদের ক্ষমতায়ন করেছে। শিক্ষা ও অর্থনীতিতে অগ্রগতির ফলে চীনা নারীদের মধ্যে এই বিশ্বাস জšে§ছে যে, ক্ষমতার উচ্চ পর্যায়ে তারা অবস্থান করছে তাদের মধ্যে তারাও আছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সমানাধিকার ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বহুদিন সংগ্রাম করতে হয়েছে। ১৯৯৪ সালে বিল ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সে দেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন মেডেলিন অলব্রাইট। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একে একটি বড় ঘটনাই মনে করা হয়। অনুরূপভাবে ন্যান্সি পেলোসি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার নির্বাচিত হওয়া পর্বতসম অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চীনে নারীদের সাফল্যের পথে খুবই কম প্রাতিষ্ঠানিক বাধা আছে বলে মনে করেন এশিয়া সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক জুদি কিলাচান্দ। গত জুন মাসে তাদের সংগঠনটি হংকংয়ে নারী নেতৃত্বের ওপর একটি সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নারী নেতৃবৃন্দের মধ্যে বহু বিষয়ে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। হংকংয়ের খুবই পরিচিত মুখ হচ্ছে উই। অর্থনৈতিক উদারতার জন্য কাজ করেছেন। সরকারি পর্যায়ে কর্মজীবন শুরু করার আগে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে উপ-প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভুক্তির জন্য কাজ করেছেন এই নারী। আজকের চীনের পার্লামেন্টে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপক। ২৩ দশমিক ৪ শতাংশই নারী সদস্য। মার্কিন কংগ্রেসের তুলনায় চীনের পার্লামেন্টে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি।
আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনা নারীদের উজ্জ্বল উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বড় বড় কোম্পানির উচ্চ পর্যায়েও একই অবস্থা। গ্র্যান্ট থর্নটন ইন্টারন্যাশনালের সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, চীনের প্রতি দশটি কোম্পানির মধ্যে আটটিতেই ব্যবস্থাপনায় নারীদের ভূমিকা রয়েছে। ইউরোপিয়া ইউনিয়নের অর্ধেক কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় নারীদের ভূমিকা রয়েছে। আর দুই-তৃতীয়াংশ মার্কিন কোম্পানিতে নারীদের মোটামুটি ভূমিকা আছে। একইভাবে চীনা কোম্পানির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ৩৫ শতাংশই নারী। আর যুক্তরাষ্ট্রে ওই সংখ্যা ২০ শতাংশ। চীনের সবচেয়ে বড় রিয়েল এস্টেটের মালিক ব্যাপক সিন। তিনি ও তার স্বামী বহু প্রপার্টি নিয়ন্ত্রণ করেন। বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস এর হিসেবে অনুযায়ী ২০১০ সালে পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় ১৪ জন ধনী নারীর মধ্যে ৭ জনই চীনের। চীনের শহরগুলোতে বহু আকাশচুম্বী অট্টালিকা নির্মিত হচ্ছে। রাস্তায় দেখা যায় অসংখ্য বিলাসবহুল গাড়ি। তাই ওই সবের অংশীদার হতে নারীরা স্বাভাবিকভাবেই স্বপ্ন দেখতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সব সময় ইতিবাচক নয়। বিভিন্ন পর্যায়ে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হলেও সাফল্য পেলেও অনেকে মনে করেন, শুধু কর্মজীবনের জন্যই নারীদের ত্যাগ স্বীকার করা উচিৎ। হিলারি ক্লিনটন যখন ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেরও জন্য নিজ দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন অনেকে তখন মন্তব্য করেন যে, হোয়াইট হাউসে যাবার জন্য হিলারি অতি উৎসাহী। তাই ইনটেল কর্পোরেশনের ডাইভারসিটি এন্ড ইনফ্লুশন বিভাগের প্রধান রোসালিন্ড হুডলেন বলেন, বহু মার্কিন নারী উচ্চাকাক্সক্ষী হলেও এটি স্বীকার করতে অনেকে বিব্রতবোধ করেন। চীনের নারীদের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। এটি হচ্ছে চীনে শিশু সেবা কেন্দ্রে সহজেই শিশুদের রাখা যায়। তাই কর্মক্ষেত্রে নারীদের এ নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বে অনেক নারীই পিতা-মাতা, ভাই-বোন থেকে দূরে অবস্থান করেন এবং শিশুদের দিবাযতœ কেন্দ্রে রাখতে অস্বস্তিবোধ করেন। অনেক শিক্ষিত মহিলাও শিশুদের লালন পালনের জন্য বাড়িতে অবস্থান করেন; এমনকি উচ্চ পর্যায়ের চাকরিও পরিত্যাগ করেন। চীনে ওই ধরনের ঘটনা দেখা যায় না। প্রাতিষ্ঠানিক অথবা রাষ্ট্রীয় শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র কর্মস্থলের পাশেই পাওয়া যায় এবং শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যই কর্মজীবনের ওপর জোর দেয়া হয়। গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ক-লাইফ সেন্টারের কর্মকর্তা রিপা রশিদ এই দুই দেশের অবস্থাকে শিশুর যতেœর প্রায়োগিক দিক আর আবেগের বহির্প্রকাশ বলে মন্তব্য করেন। এত কিছুর পর ভালো কিছুর জন্যÑ উচ্চাকাক্সক্ষাকেও একটি গুণ হিসেবেই দেখা হয়। অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল চীনে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্যও উচ্চাকাক্সক্ষাকে গুণ হিসেবে দেখা হয়। চীনের বড় বড় শহরে বাড়ির নাম কয়েক বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে যায়। সবকিছুর জন্যই প্রতিযোগিতা করতে হয়। চীনা তরুণীরা এগুলো পেতে তাই এক ধরনের চাপ অনুভব করেন। অন্যদিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া এই পৃথিবীতে উচ্চাকাক্সক্ষাকে প্রয়োজনীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যাদের মধ্যে এই গুণটি নেই তারা এক সময় পিছিয়ে পড়বে। 

 প্রবীণদের প্রতি এত অবহেলা কেন
মাহবুবুল আলম
যে মা-বাবা তার জীবনের সকল সুখ-শান্তিকে বিসর্জন দিয়ে, খেয়ে না খেয়ে সন্তানকে বড় করে তোলেন, গড়ে তোলেন একজন মানুষের মতো মানুষ হিসেবে। সে মা-বাবার অনন্ত ত্যাগ বেশির ভাগ সন্তানের কাছেই ফিকে হয়ে যায়। প্রবীণ বয়সে এসে সেই সব মা-বাবার জীবনই চরম নিরাপত্তাহীনতায় উপনীত হয়। যে মা তার সমস্ত আনন্দ ও সুখকে জলাঞ্জলি দিয়ে, সন্তানের জরা-ব্যাধি, অসুখে-বিসুখে বিছানায় ভেজা কাঁথায় শুয়ে নিদ্রাহীন  রাত পার করেন; নিজে না খেয়ে সন্তানের জন্য তুলে রাখেন তার ভাগের খাবার; আর বাবা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ফসলের মাঠে কাজ করে পুড়িয়ে তামাটে করেন নিজের দেহ। জীবনের শত বিরূপ সময়ে পরম নির্ভরতার সঙ্গে আগলে রাখেন নিজের সন্তানকে, কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তি করেও চালিয়ে যান ছেলেমেয়ের লেখাপড়া। সেই ছেলেমেয়েরাই বড় হয়ে চাকরি-বাকরি-রুজি রোজগারে ঢুকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুলে যান মা-বাবার সেই সেই সব চরম ত্যাগের কথা। জীবনের শেষ বেলায় এসে তাদের খোঁজখবর নেয়ারও প্রয়োজন বোধ করেন না কোনো কোনো সন্তান। সব মা-বাবারাই জীবন যৌবনের সব প্রতিকূলতাকে ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করে সন্তানদের সব দায়িত্ব পালন করে যখন প্রবীণ বয়সে উপনীত হন তখনই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের জীবনে নেমে আসে এক অসহনীয় দুঃসময়। কর্মক্ষম হয়ে চাকরি-বাকরি থেকে অবসর নিয়ে হয়ে পড়েন তারা চরম অসহায়। নানাবিধ অসুখে-বিসুখে যখন কাবু হয়ে পড়েন তারা, তখন আর তাদের দেখার কেউ থাকে না। ছেলেমেয়েরা যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তখন তাদের জীবন এসে ঠেকে এক অসুখকর-অনিশ্চয়তার মধ্যে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ৬০ বছরের পর থেকেই অসমর্থ ও কর্মহীন হয়ে পড়েন। তারা তখন অন্যের গলগ্রহ। একটা সময়ে এসে তারা সন্তান-সন্ততি থেকে শুরু করে সমাজের বোঝায় পরিণত হন। আমাদের দেশে দরিদ্র ও গ্রামীণ অধিবাসীদের ৬০ বছরের আগেই বার্ধক্যের নির্মম কষাঘাতের সম্মুখীন হতে হয়। এই কারণেই বাংলাদেশে বার্ধক্য এক ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ এবং গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এএসএম আতিকুর রহমানের মতে, প্রবীণদের ক্রমবর্ধমান হার ভবিষ্যতে জনসংখ্যার নির্ভরশীলতার অনুপাতে পরিবর্তন ঘটবে। ফলে প্রবীণদের দেখভালের উপযোগী প্রজš§ কমে আসবে। প্রবীণ কারা? এ নিয়ে দেশে দেশে মত আছে। জাতিসংঘের হিসাব মতে ৬০ বা তদূর্র্ধ্ব বয়সের মানুষকেই প্রবীণ বলে বিবেচনায় রাখা হয়। উন্নত বিশ্বে এ বয়স ধরা হয় ৬৫ বছর। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে প্রবীণদের বয়স নিয়ে বিতর্ক আছে। ঠিক কোন্ বয়সে একজন মানুষকে প্রবীণ হিসেবে গণ্য করা হবে তা নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি ও মতভেদ। আমাদের দেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৬৯ বছর। প্রবীণ হিতৈষী সংঘের নীতিমালায় ৫৫ বছর। হাই কোর্টের বিচারপতিদের অবসরসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৭  বছর। আবার কোনো কোনো পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে  শিক্ষকদের জন্য বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ বছর। প্রবীণত্বের বয়স নিয়ে বিতর্ক ও বিভ্রান্তি যা-ই থাকুক বর্তমানে বাংলাদেশে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করতে যাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশেই নয় এই একুশ শতকে সারা বিশ্বেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে বার্ধক্য সমস্যা। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে ১৯২১ সালে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু ছিল ২০ বছর। ২০০১ সালে এ হার এসে দাঁড়ায় ৬৩ বছরে।  এই হিসাব অনুযায়ী ৮০ বছরে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৩ বছর। বাংলাদেশে প্রবীণদের নিয়ে কাজ করে এমন সব সংস্থার মতে বাংলাদেশে ২০১০ পর্যন্ত প্রবীণদের সংখ্যা প্রায় সোয়া কোটি। এদের মধ্যে ৬৩ ভাগের বয়স ৬০ থেকে ৬৯ বছর। ৩০ ভাগের বয়স ৭০ থেকে ৭৯ বছর। আর ৬ ভাগের বয়স ৮০ বছর বা তারও বেশি। এই বিপুল সংখ্যক বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ২৫ ভাগ লোক বয়স্ক ভাতা পান।  আর  ১০ লাখ পান অবসরকালীন সুবিধা। বাকি প্রবীণদের বেশির ভাগেরই নেই সামাজিক নিরাপত্তা। ফলে দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রবীণ বেঁচে থাকেন ভিক্ষাবৃত্তির ওপর। বর্তমানের এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ প্রবীণদের হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে প্রতি ১০ জনে ১ জন। অর্থাৎ এক কোটি ৯০ লাখ। ২০৫০ সালে এ হার হবে প্রতি ৫ জনে ১ জন। অর্থাৎ ৪ কোটি ৪০ লাখ। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রবীণদের তুলনায় প্রবীণদের  মাঝে বৈধব্যের হারও বেশি। তাদের অসহায়ত্ব আরো বেশি। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে বয়স্ক বিধবা এসব মায়ের সেবা ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে আমাদের সমাজের উদাসীনতা আরো বেশি। আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্রে নারী মাত্রই বঞ্চনার শিকার। এই নারীরা যখন বার্ধক্যে উপনীত হন তখন তাদের অবস্থা হয়ে দাঁড়ায় আরো শোচনীয়। আবার সে নারী যদি বিধবা প্রতিবন্ধী হন তখন তার কষ্টের আর সীমা-পরিসীমা থাকে না। বার্ধক্য এসে নারী সত্যিকার অর্থে অসহায় নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েন। কর্মক্ষম, ক্ষমতাহীন এসব নারী পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এখানে নারী বা পুরুষ আলাদাভাবে না বলে সার্বিকভাবে বলা যায়, দেশের প্রায় ৮০ ভাগ প্রবীণ স্বাস্থ্যগতভাবে অত্যন্ত দুর্বল ও কর্মহীন। জীবনের ঘানি টানতে টানতে শেষ বয়সে এসে এদের প্রায় সবাই নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ ও বার্ধক্যজনিত রোগের কবলে পড়েন। তখন তারা একেবাইে হয়ে পড়েন পরমুখাপেক্ষী। এ সময় পরিবার সমাজের মূল স্রোতধারা থেকে এরা সবাই প্রায় বিচ্ছিন্ন এবং অরক্ষিত হয়ে পড়েন। পদে পদে হয় অবহেলিত ও বঞ্চিত। অপেক্ষাকৃত সচ্ছল প্রবীণদের বেলায়ও এর খুব একটা বেশি হেরফের হয় না। পবিত্র কোরানে বর্ণিত আছে ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সগিরা’ অর্থাৎ প্রার্থনা কর তোমার বয়োবৃদ্ধ পিতা-মাতার জন্য, শৈশবে তারা যেমন তোমাদের দেখাশোনা করতেন তাই যেন তোমরা করতে পার। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা কী আমাদের বয়োবৃদ্ধ মা-বাবার জন্য তা করতে পারছি? বরং তাদের জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে তারা সন্তানদের নানা অবহেলার মুখোমুখি হন। নানা জড়া-ব্যাধি, রোগ-শোকের কবলে পড়ে নিঃসঙ্গতার আঁধারে নিপতিত হন; তখন তাদের আরো কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়। এরা এক সময়ে এসে নিজ গৃহেই হয়ে যান পরবাসী। তখন চরম বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হয়ে এদের অনেককেই আশ্রয় নিতে হয় ওল্ডহোম বা বৃদ্ধাশ্রমে। বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রমের ইতিহাস কবে থেকে শুরু হয়েছে তার সঠিক দিন-তারিখ জানা না গেলেও বর্তমানে বাংলাদেশে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরিচালনায় বেশ কিছু বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান চাপের কারণে সেখানেও আজকাল ঠাঁই পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক মা-বাবার উচ্চ শিক্ষিত সন্তানেরা দেশে-বিদেশে উচ্চ পদে চাকরি-বাকরি করলেও তাদের কর্মব্যস্ততার অজুহাতে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে কুণ্ঠাবোধ করছেন না। যা আমাদের চরম স্বার্থপরতাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। বর্তমানে আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার শিক্ষা, ধর্ম, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি কিছুই প্রবীণদের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়নি। প্রবীণদের নিয়ে আমাদের গণমাধ্যমের ভূমিকাও যথেষ্ট নয়। প্রবীণদের জীবনের পঙ্কিল সময়গুলো নিয়ে আমাদের গণমাধ্যমেও প্রচার হয় না কোনো অবহিতকরণ কর্মসূচি। শুধু বিশ্ব প্রবীণ দিবস এলেই দায়সারা গোছের বিশ পঁচিশ মিনিটের দু’-একটি অনুষ্ঠান প্রচার করেই দায়িত্ব শেষ করে। অথচ তারাই প্রবীণদের নিয়ে প্রায়ই  বিভিন্ন  সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সচেতন করতে পারে। আমাদের দেশের শিক্ষা কর্মসূচিতেও প্রবীণরা থাকছেন অবহেলিত। প্রবীণদের নিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনো পাঠ্যসূচি অন্তর্ভুক্ত নেই; যা পড়ে শিক্ষার্থীরা তাদের মা-বাবার প্রতি কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে পারে। শুধুমাত্র মাধ্যমিক স্তরে ‘মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য’ জাতীয় দু’-একটি প্রবন্ধ রচনা অন্তর্ভুক্ত করেই দায়িত্ব শেষ করা হচ্ছে। আমাদের দেশে প্রায়োগিক শিক্ষায় মা-বার প্রতি অধিক দায়িত্বশীল হওয়ার বিষয়ে পাঠ বা পাঠক্রম না থাকার কারণে আমাদের দেশে ছেলেমেয়ে প্রবীণদের ক্ষেত্রে যতœবান ও দায়িত্বশীল হচ্ছে না। আমাদের দেশে একজন মানুষকে যথেষ্ট সক্ষম থাকার পরেও শুধুমাত্র ৫৭ বছর বয়স অতিক্রান্তের পর পরই এক রকম জোর করেই চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হয়। এ ক্ষেত্রে একজন বিচারক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যদি ৬৫ থেকে ৬৭ বছর পর্যন্ত তাদের সক্ষমতা বজায় থাকে তা হলে অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে কেন তা সম্ভব নয়। এই বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ক্ষেত্রে সরকার অবসরকালীন বয়স বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলে প্রবীণদের জন্য তা সহায়ক হবে। তবে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে প্রবীণদের জন্য বয়স্ক ভাতা চালু করে যা বর্তমানেও চালু আছে। এ উদ্যোগ অপ্রতুল হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে তা প্রশংসার দাবি রাখে। সরকারের এ উদ্যোগের ফলে আমাদের পরিবার ও সমাজের প্রবীণরা আশাবাদী হয়ে উঠেছে। প্রবীণদের ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থা সীমিত হলেও তা সত্যি আশাব্যঞ্জক। এখন প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই প্রায় সব দলই তাদের মেনিফেস্টোতে প্রবীণদের কল্যাণে নানা ধরনের কর্মসূচির কথা অন্তর্ভুক্ত করে। আমাদের দেশে প্রবীণদের যে বয়স্ক ভাতা দেয়া হয় বিশ্বের অনেক দেশেই তা দেয়া হচ্ছে না। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর দেশের বয়স্ক ও প্রবীণদের অসহায় অবস্থার কথা বিবেচনা করে  প্রথম বয়স্ক ভাতার সুবিধা চালু করেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকারের জনকল্যাণে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প বাতিল করে দিলেও জনরোষে পড়ার ভয়ে এ প্রকল্পটি বাতিল করেনি। বরং এর আওতা ও সুবিধা কিছুটা বৃদ্ধি করে। বর্তমানে এ কর্মসূচির অধীনে একজন প্রবীণ প্রতি মাসে ৩শ’ টাকা করে বয়স্ক ভাতা পেয়ে থাকেন। যে মা-বাবার ভালোবাসা, øেহ স্বর্গ সুখের চেয়েও সুখকর ও আনন্দের। যে মা-বাবা নামক বনস্পতির শীতল ছায়া আমাদের ঘিরে রাখে সারাক্ষণ। আমরা সে মা-বাবাকেও আমাদের এ অস্থির সমাজের কোনো কোনো সন্তানের হাতে নিগৃহীত হতে দেখি। কোনো কোনো সন্তান নিজেদের স্বার্থ গুলজারে বৃদ্ধ মা-বাবার গায়ে হাত পর্যন্ত তোলে এমন নজিরও আমাদের সমাজে কম নেই। এর বাইরে এমনও অনেক সন্তান আছে যারা শহুরে জীবনের চাকচিক্য বিলাসবসনে ব্যস্ত থাকেন, নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের জীবন কিভাবে সুখে সুখে ভরে দেয়া যায় সে চিন্তা নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় তাদের। তারা এক বারও ভাবেন না অযতœ-অবহেলায় গ্রামে পড়ে থাকা অসুস্থ বৃদ্ধা মা-বাবার কথা। ভাবেন না মা-বাবা কত কষ্টে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরছেন কোনো নিবৃত পল্লীতে। কিন্তু তারা এক বারও  ভেবে দেখেন না তারাও কোনো না কোনো মা-বাবার সন্তান? আমরা এমন অনেক সন্তানের কথা জানি যাদের জšে§র পর পরই হয়ত কারো মা বা কারো বাবা মারা গিয়েছে। সে অসহায় অবস্থায় একজন মা অথবা একজন বাবা কি সীমাহীন কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে খেয়ে না খেয়ে তাদের সন্তানকে মানুষ করেছেন। হয়ত সেই মা-বাবারই  কোনো সন্তান কোনো মহানগরীর স্বর্গতুল্য বাসভবনে বাস করছে। মা-বাকে সঙ্গে এনে রাখতে তাদের আভিজাত্যে বাধে। 

আমরা যেন শহরের কঠিন ইট-পাথরের জীবনে বসবাস করে কঠিন ও হƒদয়হীন হয়ে যাচ্ছি। আমাদের দেশে এমনও অনেক সন্তান আছে, যারা স্ত্রী ও  সন্তানের কথায় বিশ্বাস করে মার বিরুদ্ধে সালিশ করছে। অর্থ-সম্পত্তির লোভে মা-বাবাকে মামলার আসামি বানাচ্ছি। আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় মা-বাবার প্রতি আমাদের অবজ্ঞা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমরা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসবাস করলেও মা-বাবাকে পাঠাচ্ছি বৃদ্ধাশ্রমে। তাই হয়ত দেশে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আর সে সব বৃদ্ধাশ্রমে পরিবার পরিজনবিহীন পরিবেশে অনেকে হয়ত এই জনপ্রিয় গানটি মনে মনে গেয়ে যান প্রতিনিয়ত ‘ছেলে আমার মস্ত বড় মানুষ, মস্ত বড় অফিসার/মস্ত বড় ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার/নানারকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি/সবচেয়ে কম দামি ছিলাম একমাত্র আমি/ছেলের  আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম/আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।’ শেষকথা, আমাদের বর্তমান সমাজে এমনও অনেক কুলাঙ্গার সন্তান আছে, তারা শুধু মা-বাবাকে অপমানিত ও নিগৃহীতই করে না, মা-বাবাকে খুনও করে থাকে। এ কারণেই শত শত মা-বাবাকে প্রতি বছর সন্তানের হাতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। ধিক্ সে সব কুলাঙ্গার সন্তানকে। সেই কুলাঙ্গার সন্তানদের হয়ত জানা নেই, এমন সময় তাদের জীবনে যখন আসবে, সে সময় তার নিজের সন্তানও তার সঙ্গে এমন আচরণই করবেÑ এটাই নিয়ম। এটাই বিধির বিধান।
লেখক: কবি-কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট

 গ্যাস বিদ্যুত্ পানি এবং জনজীবনের সংকট
মাহতাফ হোসেন
সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা সাধারণ মানুষকে খাদ্যের নিরাপত্তা দেবে এবং অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসবে। এ লক্ষ্যে সরকারকে অনতিবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে মানুষ দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতমুক্ত হয়ে সরকারের সব ভালো কাজ ইতিবাচক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করতে পারে। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, যা কিছুই করা হোক না কেন, প্রথমেই দেখতে হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ওপর তার প্রভাব পড়বে কি না। এ বছর দুই কিস্তিতে ভোক্তাপর্যায়ে জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে প্রায় শতভাগ। এ থেকে সরকারের ভর্তুকি বেঁচেছে মাত্র কয়েক হাজার টাকা, কিন্তু জিনিসের দাম বেড়েছে তার বহু গুণ। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির অনুপাতে সরকার কখনো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই দ্রব্যমূল্য বাড়ে লাগামহীন হারে। গত মাসে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার যানবাহনের ভাড়ার হার নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু অন্য কোনো জিনিসের দাম সরকারের পক্ষে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে দ্রব্যমূল্য প্রায় প্রতি সপ্তাহে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। সুতরাং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে সরকারের যে পরিমাণ আর্থিক লাভ হয়েছে, তার অন্তত দশ গুণ রাজনৈতিক ক্ষতি হয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সন্ত্রাস দমন না করতে পারার কারণে। মনে রাখতে হবে, সরকারের এ রাজনৈতিক ক্ষতি সার্বিক বিচারে যদি এক টাকার সমপরিমাণ হয়, বিরোধীদলের রাজনৈতিক লাভ একই বিচারে অন্তত ১০ টাকার সমপরিমাণ হবে। মানুষের বিরূপ সমালোচনা হজম করে সরকার যেটুকু আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেয়, বিরোধীদল কিছু না করেই তার বহুগুণ রাজনৈতিক মুনাফা অর্জন করে। সুতরাং সরকারের যত ভর্তুকিই দিতে হোক না কেন, এমন কিছুই করা ঠিক হবে না যা মূল্য-সন্ত্রাস বৃদ্ধি করে। সরকার অচিরেই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে যাচ্ছে বলে শোনা গেছে। এটি হবে আÍঘাতী পদক্ষেপ। কোনোক্রমেই এটি করা ঠিক হবে না। দাম বাড়িয়ে বিদ্যুৎ খাতের আর্থিক লোকসান যতটুকু পোষানো যাবে তার শতগুণ রাজনৈতিক লোকসান সরকারকে অজনপ্রিয় করে তুলবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের লোকসান দাম বাড়িয়ে নয়, ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও সাংগঠনিক উৎকর্ষতা বাড়িয়ে পুষিয়ে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সময়ে এবং পরবর্তী ৫-৬ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিতরণের দায়িত্ব ছিল একটিমাত্র সংস্থার ওপরÑতা হচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি)। আশির দশকের গোড়ায় এটিকে ভাঙা শুরু হয়, এখনো চলছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়কেও ভেঙে দুটি বিভাগ করা হয় এবং বিভাগ দুটির দায়িত্ব বিভিন্ন সংস্থায় ভাগ করে দেয়া হয়। ফলে অজস্র সংস্থার উদ্ভব ঘটে এবং বেতন-ভাতা খাতে খরচের পরিমাণ বহু গুণ বৃদ্ধি পায়। শুধু লোকবল বৃদ্ধিই নয়, এসব সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা সরকারি বা পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুলনায় অনেক বেশি করা হয়। এসব স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রধানদের বেতন এক সচিবের তুলনায় বা পিডিবির চেয়ারম্যানের তুলনায় অনেক বেশি। অথচ এই বিশাল অঙ্কের খরচের তুলনায় বিদ্যুৎ খাতে লাভের চেয়ে লোকসানই হয়েছে বেশি। সিস্টেমলস কতটুকু কমেছে জানি না, তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছে বলে মনে হয়। বেসরকারি খাতে বিভিন্ন উৎপাদন কৌশলে খরচ এবং দাম পড়ছে ভিন্ন ভিন্ন। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়েও ভোক্তাপর্যায়ে দাম সহনীয় রাখতে পারছে না। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে। এর প্রতিকার করার জন্য এ মুহূর্তে একটি কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশ পর্যালোচনা করা দরকার। ওইসব সুপারিশ প্রণয়নে এবং পর্যালোচনায় বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো দাতা সংস্থা বা বিদেশি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ সর্বতোভাবে পরিত্যজ্য হতে হবে। নইলে এদের পরামর্শে আরো নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে।
ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধিও এ মুহূর্তে ঠেকিয়ে রাখতে হবে। এখানেও একটি কমিটি গঠন করে দেয়া যেতে পারে। তারা পর্যালোচনা করে দেখবে কীভাবে পানির উৎপাদন খরচ কমানো যায়। মোটকথা পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য কোনোক্রমেই বৃদ্ধি করা যাবে না। আবারো বলছি, এসব খাতে দক্ষতা বাড়িয়ে ভর্তুকি কমাতে হবে, মূল্যবৃদ্ধি করে নয়। এ সবের মূল্যবৃদ্ধি দ্রব্যমূল্যের আগুনে ঘি ঢালে। সরকারের বাকি মেয়াদে দ্রব্যমূল্য মোটেও বাড়ানো যাবে না, বরং কমাতে হবে উল্লেখযোগ্য হারে। নইলে সরকারের ক্ষমতায় ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সবচেয়ে ভালো হয় সব ইউটিলিটির মূল্য এক ধাপ কমিয়ে দেয়া এবং আনুপাতিকহারে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনা। এজন্য যে বর্ধিত ভর্তুকি দিতে হবে, তা অনুৎপাদনশীল উন্নয়ন কাজ আপাতত বন্ধ করে জোগাড় করা যেতে পারে। সাধারণ লোক রাজনীতির কূটচাল বোঝে না। বোঝে সে খেয়ে-পরে ভালো আছে কি নেই।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কার্যকরভাবে মাঠে নামতে হবে। নইলে সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা এবং মধ্যস্বত্বভোগীরা সাধারণ জনগণকে মূল্য-সন্ত্রাসের নিগড়ে আবদ্ধ করে রাখবে। এ ব্যাপারেও একটি কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশ নেয়া যেতে পারে। এর আগে একটি লেখায় আমি যে সার্বজনীন রেশনব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা লিখেছিলাম তার সুচারু বাস্তবায়নে কী কী করা দরকার, তাও একটি কমিটি বসিয়ে জেনে নেয়া যেতে পারে। তবে এর পক্ষে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে আগে, পরে কমিটিকে দিয়ে বাস্তবায়ন পদ্ধতি জেনে নিতে হবে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে হয়তো বাধা আসবে। বলা হবে, জিনিসের দাম তো কমের দিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যমূল্য কমেছে, আরো কমবে, সুতরাং এখন রেশনিংয়ের প্রয়োজন নেই। এ সময় এত ভর্তুকির বোঝা মাথায় নেয়া ঠিক হবে না। কিন্তু কোনো অনুমানের ওপর নির্ভর করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে না। যে কোনো মারণাস্ত্রের চেয়ে খাদ্যের অস্ত্র বেশি মারাÍক। আমাদের সদ্য স্বাধীন দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এ অস্ত্র ব্যবহার করেছিল ১৯৭২ সালে খাদ্যবোঝাই জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে না ভিড়িয়ে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়ে। ফলে দেশে দেখা দিয়েছিল তীব্র খাদ্য সংকট। ১৯৭৪ সালে প্রায় দুর্ভিক্ষে নিপতিত হয়েছিল বাংলাদেশ। খাদ্যের অভাব হলে সব দেশই বেসামাল হয়ে পড়ে। পতন ঘটে অনেক দেশের। নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পেছনে খাদ্যাভাব ছিল অন্যতম কারণ। কয়েক বছর আগে হাইতিতে খাদ্যের দাবিতে দাঙ্গা হয়েছিল। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশে সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা অবশ্যই চালু করতে হবে এবং বলবৎ রাখতে হবে।
রেশনে শুধু চাল, ডাল, আটা দেয়া যেতে পারে। ওয়ার্ড বা গ্রাম ভিত্তিতে প্রতি ৫০০ পরিবারে একটি করে রেশন দোকান থাকতে পারে। কার্ডধারীরা সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক ভিত্তিতে রেশন তুলবেন। কে, কবে রেশন নেবেন তা নির্ধারিত থাকতে হবে, যাতে প্রতিদিন (শুক্রবার বাদে) একটি নির্দিষ্টসংখ্যক কার্ডধারী রেশন তুলতে যান। রেশন ডিলার ইচ্ছা করলে দোকানে অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসও রাখতে পারেন। তবে এগুলো ন্যায্যমূল্যে তাকে পেতে হবে এবং সে মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ মুনাফা রেখে জিনিসগুলো তিনি ক্রেতার কাছে প্রয়োজনানুসারে বিক্রি করবেন। এসব জিনিস তিনি পাবেন সরাসরি মিল, টিসিবি, আমদানিকারক বা উৎপাদকের কাছ থেকে। এলাকাভিত্তিক এগুলো পরিবেশকের মাধ্যমে তার কাছে যাবে। পরিবেশক পাঁচ শতাংশ মুনাফায় এগুলো বিতরণ করবেন। সরকারকে একটি স্থায়ী মূল্য নির্ধারণ কমিশন গঠন করতে হবে। এ কমিশন উৎপাদক বা আমদানিকারক পর্যায়ে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দেবে।
রেশন ডিলার ভোক্তাপর্যায়ে যে দামে রেশনবহির্ভূত জিনিস বিক্রি করবেন সে দামে দেশের যে কোনো দোকানে সে জিনিস বিক্রি করা নিশ্চিত করতে হবে। বস্তুত দেশের প্রতিটি সুপার শপে ওইসব জিনিস নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সে জন্য ওইসব দোকানে একটি ফেয়ারপ্রাইস কর্নার থাকতে পারে। এর মাধ্যমে দোকানের মালিক শুধু ব্যবসা নয়, সামাজিক দায়িত্বও পালন করবেন। গত রমজানে যখন চিনি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছিল তখন দেশের সব সুপার শপে ফেয়ারপ্রাইস কর্নার স্থাপন করে নির্ধারিত মূল্যে চিনি বিক্রি করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে চিনির দুষ্প্রাপ্যতা এবং মূল্য-সন্ত্রাস সহসাই দূর করা যেত।
লেখক: কলামিস্ট

দেশের নতুন জনশক্তি রফতানি বাড়ছে
অরুণ ব্যানার্জী
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জনশক্তি রফতানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর ফলে সরকার প্রতি বছর বিদেশ থেকে প্রচুর রেমিটেন্স পায়। যা দেশের উন্নয়নে সহায়ক হয়। জাতীয় বাজেটে প্রণয়নে রাখে আশার আলোক বর্তিকা। তাই দেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত দক্ষ-অদক্ষ জনশক্তি বিদেশে রফতানি লাভজনক পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিদেশে জনশক্তি রফতানির পূর্বশর্ত। কোনো দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে পর্যটন খাতে আয় বাড়ে। বিদেশিরা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়। একইভাবে বলা চলে বিদেশিরা রাজনৈতিক স্থিতিশীল দেশ থেকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে সানন্দে জনশক্তি আমদানি করে থাকে। আর রাজনৈতিক হানাহানির নামে বোমাবাজি, হরতালের নামে নৈরাজ্য, উৎপাদন বন্ধ, পিকেটিংয়ের নামে সরকারি সম্পদ তছনছ, ভাঙচুর ইত্যাদি অব্যাহতভাবে চলতে থাকলে সেসব দেশ থেকে বিদেশিরা জনশক্তি আমদানিতে আগ্রহ দেখায় না। এর পরেও সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার এ ব্যাপারে তৎপর হলে বিদেশিরা স্বল্প সংখ্যক জনশক্তি আমদানি করে তাও সম্ভাব্য স্বল্প পারিশ্রমিকে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মিয়ানমার, ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে বিভিন্ন সময়ে বিদেশে জনশক্তি রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সৌদি আরব, লিবিয়া, ইয়মেন, সিরিয়া, আরব আমিরাত, মিসর, কাতার, জর্ডান প্রভৃতি দেশ বাংলাদেশের জনশক্তির পুরনো শ্রমবাজার। মিসর, ইয়মেন লিবিয়াসহ কয়েকটি দেশে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। যার দরুন এসব দেশ থেকে বিপুর সংখ্যক শ্রমিক দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতিতে। এনিয়ে সরকার বসে থাকেনি। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। যার দরুন বর্তমানে দ্রুত শ্রমবাজারের পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে। পুরনের শ্রমবাজার এদেশ থেকে অধিকহারে দেখা দিয়েছে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক পাঠাবার সম্ভাবনা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে লিবিয়াতে চলতি বছরের শুরুতে বন্ধ ছিল জনশক্তি রফতানি। জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক শূন্য হাতে বাংলাদেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে পতন হয়েছে গাদ্দাফি সরকারের। গঠিত হয়েছে নতুন সরকার। সেখানে শিগগিরই রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে আশা করছেন রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা। ফলে লিবিয়াতে নতুন করে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে স্বল্প পরিসরে হলেও মিসর ও ইয়মেনে সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকেও অধিকহারে বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠাবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধ-পরবর্তী এদেশে পুনর্গঠনে প্রয়োজন বিপুল সংখ্যক কর্মীর। যার দরুন সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিনিধিদল ইরাক সফর করেছেন। তখন বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়ার ব্যাপারে ইরাকের বিভিন্ন নিয়োগকারী সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছে। এনিয়ে দু’দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আশা করা যায় ইরাকে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হচ্ছে সৌদি আরব। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও অন্যান্য কারণে এদেশের জনশক্তির বাজার সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। সৌদি আরব চলতি বছর আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিক নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে গেছে। পক্ষান্তরে, ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার অল্পদিন পর থেকে শুরু হয় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা। যার দরুন শুরু হয় মালয়েশিয়াতে কর্মরত অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া। এতে করে মালয়েশিয়ায় নতুন করে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠাবার পথ সুগম হবে বলে শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করছেন। একই সঙ্গে ওমান, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরো কয়েকটি দেশে বাড়ছে জনশক্তি রফতানির হার। পুরনো এসব শ্রমবাজারের পাশাপাশি জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধির হার ধরে রাখতে নতুন শ্রমবাজারের সন্ধানে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সরকার। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ১৩২টি গন্তব্যে শ্রমশক্তি রফতানি করা হতো। চলতি বছর তা দাঁড়িয়েছে ১৪৩টি গন্তব্যে রফতানি। শ্রমবাজারে এসব নতুন গন্তব্যের মধ্যে ভুটান, সিসিলি, ঘানা জাম্বিয়া ইত্যাদি একেবারে নতুন নতুন শ্রমবাজারেও বাংলাদেশি শ্রমিকরা যেতে শুরু করেছে। সাইপ্রাস ও যুক্তরাজ্যে রেস্তোরাঁর কাজের দক্ষ কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেসব দেশে সরকার বাংলাদেশি দক্ষ কর্মী পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এ কারণে শ্রমিকদের  প্রশিক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে দক্ষতা উন্নয়ন তহবিলের। কর্মী রফতানি চালু হলে এদুটি দেশে শিগরিরই কমপক্ষে ১ হাজার শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হবে। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও শ্রমিক পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। নিউজিল্যান্ডে মূলত কৃষিভিত্তিক কাজের জন্য কর্মী পাঠানো হবে। পাশাপাশি ইতালি সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব দিয়েছে। একই সঙ্গে সরকার জনশক্তি রফতানির বর্তমান বাজার আরো বাড়াতে তৎপরতা চালাচ্ছে। পাশাপাশি নতুন বাজারের সন্ধানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র মতে চলতি বছরের শুরু থেকে জনশক্তি রফতানি বাড়াতে থাকে। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রায় ৫৩ হাজার বিভিন্ন শ্রেণীর শ্রমিক ও কর্মী বিদেশে গেছে। গত ২০১০ সালে সেপ্টেম্বর মাঝে এ সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৯শ’ ৪৮ জন। চলতি বছর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিক সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছে। এর সংখ্যা ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬শ’ জন। এছাড়া ওমানে গেছেন ৯১ হাজার ৩শ’ ৪৯ জন। কাতারে ৯ হাজার ৬২ জন, সৌদি আরবে ১১ হাজার ৬শ’ ৯৭ জন। বাহারাইনে ৮ হাজার ৬শ’ ৭জন। জর্ডানে ৪ হাজার ২শ’ ২৬ জন, মরিশাসে ৪ হাজার ১শ’ ৬৮ জন ও সিঙ্গাপুরে ৩৫ হাজার ৭শ’ ৭১ জন শ্রমিক পাঠানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএমইটির মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চলতি বছরে জনশক্তি রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখের মতো। কিন্তু গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিক বিদেশে গেছে। এ সময় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ শ্রমিককে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। চলতি বছরে ৫ লাখেরও বেশি জনশক্তি রফতানি সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। বিদেশে জনশক্তি রফতানি নিয়ে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি সম্পর্কে অনেক কথা আছে। এসব জনশক্তি রফতানির মালিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দালালদের দৌরাÍ্যে বহু লোক পথে বসেছে। অনেকে করেছে ভিটামাটি, জমি বিক্রি। কেউ মূল্যবান ব্যবসা ও সম্পদ খুইয়েছেন। কেউ কেউ করেছেন গচ্ছিত অর্থ। জাল ভিসা, ভুয়া রিত্র“টিং এজেন্সির নাম, ঠিকানায় অনেক মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। অনেকে বিদেশে চাকরি পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ট্রাভেল এজেন্সির কর্মকর্তাদের চাকরির প্রকৃতি ও বেতনে দেখা গেছে যথেষ্ট গরমিল। এসব ট্রাভেল এজেন্সির মালিক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে জনশক্তি রফতানি মন্ত্রণালয়ের একশ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশের অভিযোগ হয়েছে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। সরকার পরিবর্তন হয়েছে। বদলি হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। কিন্তু বিদেশে জনশক্তি রফতানি নিয়ে মৌলিক নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। দুর্নীতি কমেনি। বরং দিনে দিনে বেড়েছে। যার দরুন বেড়েছে মানুষের হয়রানির মাত্রাও। এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নতুন করে ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। ট্রাভেল এজেন্সির মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। সোনার হরিণের আশায় এদেশের অনেক মানুষ আদম ব্যাপারীদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন ও হচ্ছেন। এসব ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য আইন সংশোধন করা হোক। আইনকে যুগোপযোগী করা হোক। তা না হলে এভাবে বিদেশে চাকরির খোঁজে যেতে যেতে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে ও প্রতারিত হতেই থাকবে। বিষয়টি আমাদের সরকার এবং জনশক্তি রফতানি মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা যত শিগগিরই অনুধাবন করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন ততই আমাদের দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গল।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট


¶z`ªFY I MÖvgxY e¨vsK
kvgm ingvb
GUv mZ¨, MÖvgxY e¨vsK I Aa¨vcK W. gynv¤§` BDb~m A½vw½fv‡e RwoZ| wZwb GKRb AwZ cwiwPZ e¨w³Z¡| ZvB bZzb K‡i cwiPq K‡i †`qv A_©nxb| Zv‡K wN‡i †`‡k-we‡`‡k AmsL¨ †jLv‡jwL n‡q‡Q MZ K‡qK gv‡m| G †jLv¸‡jv‡K g~jZ `yÕavivq wef³ Kiv hvq| cÖ_g avivi †jLvi g~j welqe¯‘ ms‡¶‡c hv `uvovq ZvÑ
1. Aa¨vcK BDb~m †bv‡ej weR‡qi ga¨ w`‡q RvwZi gyL D¾¡j K‡i‡Qb| ZvB †`‡ki dvBbvbwkqvj Bbw÷wUDk‡bi Ges PvKwii mgqmxgvi cÖPwjZ wbqg hvB †nvK bv †Kb, Zv‡K MÖvgxY e¨vs‡Ki eZ©gvb c` †_‡K Ae¨vnwZ †`qv A‡hŠw³K| 2. evsjv‡`k e¨vsK cÖ`Ë GgwW c` †_‡K Acmvi‡Yi †bvwUk D‡Ïk¨cÖ‡Yvw`Z| 3. Aa¨vcK BDb~‡mi Abycw¯’wZ‡Z A`¶Zv I Awbq‡g MÖvgxY e¨vsK KvVv‡gvMZfv‡e †f‡O co‡e| d‡j jvL jvL FYMÖnxZv ¶z`ªF‡Yi mydj †_‡K ewÂZ n‡e|
Z‡e MÖvgxY e¨vsK Z_v ¶z`ªFY cÖ`vbKvix ms¯’v¸‡jv FYMÖnxZvi Rb¨ Kx ai‡bi Ges KZUv mydj e‡q G‡b‡Q, †m wel‡q G †jLv¸‡jv Z‡_¨ mxwgZÑ g~jZ Av‡eMZvwoZ| †`‡k G †jLv¸‡jv cÖKvwkZ n‡q‡Q cÖavbZ †WBwj ÷vi Ges cÖ_g Av‡jvq|
wØZxq avivi †jLvi g~j welqe¯‘ wbgœiƒc:
1. MÖvgxY e¨vs‡Ki MwÊ wWwO‡q Aa¨vcK BDb~m‡K evsjv‡`‡ki e„nËi †cÖ¶vc‡U e¨vL¨v Kivi †Póv K‡i| 2. Mwiwe-nUv‡bvi cÖ‡Póvq ¶z`ªF‡Yi cÖPvwiZ mdjZvq m‡›`n cÖKvk K‡i Ges 3. ¶z`ªF‡Yi Kvi‡Y FYMÖnxZv‡`i bvbv ai‡bi `y‡f©v‡Mi wPÎ Zz‡j a‡ib| G †jLv¸‡jvI mxwgZ Z_¨ Ges g~jZ anecdotal evidence-Gi Ici wfwË K‡i †jLv| G¸‡jv Qvcv n‡q‡Q cÖavbZ RbK‡É| Gme †jLv‡jwLi m~ÎcvZ Tom Heinemann cwiPvwjZ Caught in Micro-debt bv‡gi GKwU cÖvgvY¨wP·K †K›`Ö K‡i| MÖvgxY e¨vsK Z_v ¶z`ªFY cÖ`vbKvix GbwRIi mvwe©K Kvh©Kjv‡ci Ici wfwË K‡i GB cÖvgvY¨wPÎwU ˆZwi| Avgvi G †jLvi D‡Ïk¨ Ic‡i Dwj­wLZ `yÕavivi †jLvi Av‡jvPbv wKsev cÖvgvY¨wPÎwUi we‡k­lY Kiv bq| Z‡e cvVKiv hviv `yÕavivi †jLv¸‡jv c‡obwb A_ev cÖvgvY¨wPÎwU †`‡Lbwb A_ev †`Lvi my‡hvM nqwb, Zv‡`i cÖwZ GB QwewU †`Lvi Ges wbR¯^ gZvgZ MV‡bi Rb¨ Avgvi mv`i Avgš¿Y iBj|
¶z`ªF‡Yi †h welqwU me‡P‡q †ewk mgv‡jvwPZ nq Zv n‡”Q D”P my‡`i nvi| wZb kÕ wQPwj­kwU we‡kl ¶z`ªFY cÖ`vbKvix ms¯’vi Ici GK Rwi‡c †`Lv hvq, Zv‡`i my‡`i nvi kZKiv 20 †_‡K 40-Gi g‡a¨| A‡bK †¶‡Î Zvi †P‡qI †ewk, kZKiv cÖvq 60 wKsev ZviI E‡aŸ©| m‡›`n †bB, my‡`i nvi AZ¨waK †ewk| wKš‘ cÖkœ n‡”Q, ¶z`ªF‡Yi Kvh©KvwiZv we‡k­l‡Yi GUvB wK gyL¨ gvcKvwV? Ab¨w`‡K ¶z`ªFY I MÖvgxY e¨vs‡Ki mvd‡j¨i †h gvcKvwVwU ¶z`ªFY ms¯’vi c¶ †_‡K e¨vcKfv‡e cÖPvwiZ n‡q Avm‡Q Zv n‡”Q FY cwi‡kv‡ai nvi, hv wKbv kZKiv 98-GiI AwaK| Aek¨ G msL¨v 90-Gi wb‡P e‡j A‡b‡K g‡b K‡i| G †¶‡ÎI †mB GKB cÖkœÑ GUvB wK ¶z`ªF‡Yi mvd‡j¨i cÖavb gvcKvwV nIqv DwPr? mgv‡jvPbvi Rb¨ my‡`i nvi Avi mvdj¨ cÖgv‡Yi Rb¨ cwi‡kv‡ai nvi, Gi †Kv‡bvUvB Avgv‡`i cÖavb we‡eP¨ welq nIqvi K_v bq| hw` bv ¶z`ªFY Zvi Kvw•¶Z j¶¨, Mwiwe-nUv‡Z m¶g nq| Px‡bi †bZv †`s wRqvI wcs‡qi GKwU Dw³ G cÖm‡½ AZ¨š— cÖvmw½KÑ Ôweov‡ji is Kvjv bv ajv, Zv †`Lvi welq bq; weovj Bu`yi gvi‡Z cv‡i wKbv †mUvB Avmj K_v|Õ
¶z`ªF‡Yi g~j D‡Ïk¨ Mwiwe nUv‡bv| GUv RvwZms‡Ni wg‡jwbqvg †W‡fjc‡g›U j‡¶¨iI GKwU cÖavb j¶¨| ZvB Ab¨wKQz bq, g~j j¶¨ AwR©Z n‡”Q wKbv †mUvB nIqv DwPr we‡eP¨ welq| G gš—e¨‡K mg_©b K‡i Pollin e‡jbÑ Ô…as a tool for fighting global poverty, microcredit should be judged by its effectiveness, not good intentionsÕ| G w`KUv ch©v‡jvPbv KivB G cÖe‡Üi D‡Ïk¨|
m¤¢eZ (GB gyn‚‡Z© wVK ¯§iY †bB) 2011-Gi GwcÖ‡ji ïi“‡ZB GKUv B-†gBj cvB| cvwV‡q‡Q hy³iv‡óª emevmiZ Avgvi †Q‡j‡ejvi GK eÜz, †ckvq A_©bxwZwe`| GKwU wPwV ms‡hvwRZ wQj †mB B-†gB‡j| hvi wk‡ivbvgÑ ÔA public letter of support for Dr. Yunus and the Grameen Bank|Õ G wPwV‡Z ¯^v¶i K‡i‡Q †`‡k-we‡`‡k emevmiZ Ges g~jZ wek¦we`¨vj‡q Kvh©Z `yÕWRb evOvwj e¨w³Z¡| wPwVi cÖ_g c¨viv‡Z e‡j‡QbÑ Ô…we write to express our…support for the enormous contributions made by micro-credit…to the task of poverty alleviation in Bangladesh and worldwide|Õ wKš‘ cÖkœ n‡”Q, Mwiwe nUv‡Z, wK †mB enormous contributions? Av‡MB e‡jwQ, G welqwU ch©v‡jvPbv KivB Avgvi G †jLvi welq, Avi Zv Kivi †Póv K‡iwQ G wel‡q mgKvjxb mg‡q cÖKvwkZ M‡elYvg~jK cÖe‡Üi wfwˇZ| Avkv Kwi G cÖeÜ Av‡jvP¨ wel‡q fwel¨r Av‡jvPbv‡K DÏxwcZ Ki‡e|
MZ wZb `kK a‡i ¶z`ªFY Z…Zxq we‡k¦i Dbœq‡bi GKwU cÖavb †KŠkj wn‡m‡e cwiMwYZ n‡q Avm‡Q| GK cwimsL¨v‡b †`Lv hvq, 1997 †_‡K 2007-Gi gv‡S FYMÖnxZvi msL¨v †e‡o‡Q 13.5 wgwjqb †_‡K 155 wgwjq‡b| †mB mg‡q ¶z`ªFY cÖ`vbKvix ms¯’vi msL¨v 618 †e‡o `uvwo‡q‡Q 3550-Gi AwaK| ¶z`ªFY `vZv Ges MÖnxZvi msL¨v evov Kx cÖgvY K‡i? cÖgvY K‡i wK Mwiwe nUv‡Z ¶z`ªF‡Yi e¨vcK BwZevPK cÖfve? bvwK G NU‡Q Ab¨ †Kv‡bv A_©bxwZ m¤úwK©Z Kvi‡Y? evsjv‡`‡ki g‡Zv GKwU `wi`ª †`‡k †hLv‡b kZKiv 80 fv‡Mi AwaK RbMY ˆ`wbK 2 Wjv‡ii `vwi`ª¨mxgvi wb‡P, †mLv‡b F‡Yi Pvwn`v Aek¨B _vK‡e| †hLv‡b FY cÖ`v‡b KgwZ †bB (¶z`ªFY cÖ`vbKvix ms¯’vi msL¨v e„w×B Zvi cÖgvY), Zvi Pvwn`v exRMwY‡Zi nv‡i evo‡e, †mUvB ¯^vfvweK| Avi ZvB N‡U‡Q| G evovi Kvi‡Y FY`vZv‡`i gv‡S nqZ GK åvš— aviYv R‡š§‡Q †h, mieivn Pvwn`vi m„wó K‡i| ev¯—‡e evRvi hw` `ª“Z m¤úªmvwiZ bv nq, ïaygvÎ F‡Yi mieivn e¨emvi mvdj¨ wbwðZ Ki‡Z cv‡i bv|
Mwiwe nUv‡bvi †KŠkj wn‡m‡e ¶z`ªF‡Yi cÖfve †Kgb Zv ej‡Z wM‡q Aa¨vcK BDb~m e‡jbÑ ÔMicro-credit is not a (miracle) cure that can eliminate poverty in one fell swoopÕ Zvn‡j? wZwb Aek¨ g‡b K‡ibÑ Ôit can end poverty for manyÕ| cÖkœ n‡”QÑ Zv‡`i msL¨v KZ? Aa¨vcK BDb~m m¤úªwZ `vwe K‡ib: cÖwZ eQi kZKiv 5 Rb MÖvgxY e¨vs‡Ki m`m¨ `vwi`ª¨mxgv (w`‡b 2 Wjv‡ii wb‡P Avq) †_‡K †ewi‡q Av‡m (The Economist, 16 July, 2009)| wbtm‡›`‡n GUv GKwU wekvj mvdj¨| ev¯—‡e wK ZvB?
AcÖvwZôvwbKfv‡e Õ70-Gi `k‡Ki gvSvgvwS‡Z Ges cÖvwZôvwbKfv‡e 80 `k‡Ki cÖvi‡¤¢ MÖvgxY e¨vsK Z_v AvaywbK ¶z`ªF‡Yi hvÎv ïi“ n‡jI, Mwiwe nUv‡bvi Kvh©KvwiZvq G †KŠk‡ji mvdj¨ wba©vi‡Yi M‡elYvg~jK KvR ïi“ nq Õ90-Gi `k‡K| G wel‡q Hume and Mosley (1996) iwPZ ‘Finance Against Poverty’ MÖš’wU D‡j­L‡hvM¨| M‡elYvg~jK cÖe‡Üi Ici wfwË K‡i iwPZ G MÖ‡š’ hv `vwe K‡ib Zv mwZ¨ fxwZKi| Zv‡`i g‡ZÑpoor borrowers (2 Wjv‡ii `vwi`ª¨mxgvi wb‡P hviv) do not benefit from microloans, its only the borrowers above the poverty line enjoy positive impacts)| Zvn‡j e¨vcviUv Kx `uvov‡jv? hv‡`i Rb¨ FY Zv‡`iB Kv‡R jv‡M bv, gv‡b `vwi`ª¨mxgv †_‡K †ewi‡q Avm‡Z cvi‡Q bv| m¤úªwZ wdwjwc‡Ý GK M‡elYvq GKB ai‡bi djvdj †`Lv †M‡Q| ïay ZvB bq, Karnani Zvi M‡elYvq `vwe K‡ib Ôin some instances microcredi makes life at the bottom of the pyramid worse
m¤úªwZ evsjv‡`‡ki ¶z`ªFY m¤úwK©Z Z_¨ I cwimsL¨vb wb‡q hviv M‡elYvwfwËK KvR K‡i‡Qb Zv‡`i gv‡S Roodman and Morduch (2009)-Gi KvRwU c×wZMZ w`K †_‡K D‡j­L‡hvM¨| G M‡elYvq ¶z`ªFY Ges Mwiwe nUv‡bvi g‡a¨ BwZevPK m¤úK© cwijw¶Z nqwb| cÖvq GK hyM Av‡M evsjv‡`‡ki Ici Av‡iv GKwU M‡elYvq Morduch (1998) GKB ai‡bi Dcmsnvi †U‡b‡Qb| Zvi fvlvq ‘The most important potential impacts are thus associated with the reduction of vulnerability, not of poverty|Õ evsjv‡`‡ki Ici Av‡iv GKwU M‡elYv Morduch (1998) Gi djvdj‡KB mg_©b K‡i|
¶z`ªF‡Yi cÖfv‡ei G ai‡bi djvdj †h ïaygvÎ evsjv‡`‡ki †¶‡ÎB cÖ‡hvR¨, Zv bq| Banerjee et al. (2009) fvi‡Zi nvq`ªvev‡` Ges †Kwbqvq, Avi Karlan and Zinman (2010) wdwjwc‡Ý Zv‡`i M‡elYvq GKB ai‡bi Dcmsnvi Uv‡bb| mvgwMÖKfv‡e GB wZb †`‡ki wZbwU M‡elYv cÖeÜ †_‡K ejv hvqÑ Ô…microfinance had positive impacts on business investment…but did not have impacts on broader measures of proverty and social well-being’ (Odell, 2010)| weªwUk miKv‡ii Avw_©K mn‡hvwMZvq m¤úªwZ (AvM÷ 2011) GKwU we‡k­lYag©x M‡elYv wi‡cvU© cÖKvwkZ n‡q‡Q (Duvendack et al., 2011)| c~‡e©i Ab¨vb¨ M‡elYvi djvd‡ji g‡ZvB, G wi‡cvU©I Dcmsnvi Uv‡bÑ “Despite the apparent success and popularity of microfinance, no clear evidence yet exists that microfinance programs have positive impacts (Duvendack et al., 2011, p. 2)|
Social well-being A_©vr mvgvwRK AMÖMwZi gvcKvwVi g‡a¨ hv hv Aš—f©y³ Zv cÖavbZ ¯^v¯’¨, wk¶v, bvix Øviv wm×vš— MÖn‡Yi my‡hvM ev AwaKvi AR©b BZ¨vw`| mvgvwRK AMÖMwZi gvcKvwVi Ici ¶z`ªF‡Yi mivmwi †Zgb †Kv‡bv BwZevPK cÖfve bvI _vK‡Z cv‡i e‡j A‡b‡K `vwe K‡ib| Zvi D¾¡j `„óvš— kÖxj¼v Ges fvi‡Zi Aܪ cÖ‡`k| wek¦gq ¶z`ªF‡Yi wec­e I we¯—v‡ii A‡bK c~‡e©B kÖxj¼v mvgvwRK AMÖMwZi gvcKvwV‡Z A‡bK AMÖMvgx wQj, hv wKbv aiv n‡Zv DbœZ we‡k¦i mgK¶| AÜ« cÖ‡`‡ki †ejvqI GKB gš—e¨ cÖ‡hvR¨| fvi‡Zi Ab¨vb¨ cÖ‡`‡ki Zzjbvq mvgvwRK AMÖMwZi gvcKvwV‡Z Aܪ cÖ‡`k A‡bK GwM‡q, †hLv‡b ¶z`ªF‡Yi †Zgb †Kv‡bv f‚wgKv †bB| m¤úªwZ evsjv‡`‡ki AwfÁZvi Av‡jv‡K Bhusal (2010) women's empowerment m¤ú‡K© Banerjee et al. (2009)-Gi g‡ZvB gš—e¨ K‡ib| Bhusal e‡jbÑ Ôthe link between microfinance and women’s empowerment is not as strong as generally perceived|Õ Dc‡ii M‡elYvq †h †Kv‡bv e¨wZµg †bB, Zv bq| †hgb evsjv‡`‡k Khandker (2005)-Gi cÖeÜ| Zvi g‡Z ¶z`ªFY FYMÖnxZvi Dbœq‡b mnvqK| Z‡e Zv AwZ ÔmodestÕ| †hgb, cÖwZ 100 UvKv F‡Y GKRb gwnjv FYMÖnxZvi Avq ev‡o 5 UvKv| Dbœq‡b ¶z`ªF‡Yi GB gvÎvi cÖfv‡ei Ici gš—e¨ Ki‡Z wM‡q Roodman and Qureshi (2006) e‡jb Ô… a $250 one-year loan would raise a borrower’s income by $12.50 per year or about $0.03 per day. For someone living on $2 per day that is a 1.5 per cent increase. This does not live up to the microfinace hype’| c~‡e© Pitt and Khandker (1998) ¶z`ªFY I Mwiwe nUv‡bvi g‡a¨ m¤úK© Av‡Q e‡j `vwe Ki‡jI GKB Z_¨ I cwimsL¨vb wb‡q KvR K‡i ch©vqµ‡g Morduch (1998), Chemin (2008), Duvendack (2010) Ges Duvendack and Palmer-Jones (2011) `vwe K‡ib †h Pitt and Khandker (1998) “overestimate(d) the impact of microcredit (Duvendack et al., 2011)| MZ cuvP-Qq eQ‡i (2005-2010) cÖKvwkZ †`‡k-we‡`‡ki wewfbœ M‡elYv cÖe‡Üi Ici wfwË K‡i “Measuring the Imapct of Microfinace- Taking Another Look wk‡ivbv‡g we‡k­lYag©x GK msw¶ß m¼jb cÖKvwkZ nq| Gi MÖš’Kvi Odell (2010)| wZwb Zvi Dcmsnv‡i gš—e¨ K‡ibÑ the overall effect on the incomes and poverty rates of microfinance clients is less clear, as are the effects of microfinance on measures of social well-being, such as education, health and women’s empowerment|
Dc‡ii we‡k­lY †_‡K Zvn‡j wbwØ©avq ejv hvq, Anecdotal evidence-Gi wfwˇZ wew”Qbœ wKQz M‡íi gv‡S Mwiwe nUv‡bvi †cÖ¶vc‡U ¶z`ªFY m¤ú‡K© Avgiv hZB Avkvev`x nB bv †Kb, G wel‡q M‡elYvi djvdj Avgv‡`i wbivk K‡i| we‡k­l‡Y cÖZxqgvb †h, Mwiwe nUv‡bvi †KŠkj wn‡m‡e ¶z`ªF‡Yi cÖfve nq †bwZevPK A_ev eo‡Rvi A¯úó Ges m‡›`nvcbœ| m½Z Kvi‡YB cÖkœ I‡V Zvn‡j, wewjqb-wewjqb Wjvi wK Ab¨ †Kvb Lv‡Z wewb‡qvM Kiv †hZ, Mwiwe nUv‡Z hvi cÖfve Av‡iv ewjô n‡Z cviZ? Gi Dˇi Kvi bvwbi Dw³ AZ¨š— †Rviv‡jv| Zvi g‡Z ‘If societies are serious about helping the poorest of the poor, they should stop investing in microfinance and start supporting large, labour-intensive industries’|
Kvw•LZ j¶¨, Mwiwe nUv‡bvi †¶‡Î ¶z`ªF‡Yi BwZevPK cÖfve †hLv‡b A¯úó I m‡›`nvcbœ, †m‡¶‡Î Aa¨vcK BDb~‡mi `vwe “5 per cent of Grameen Bank’s clients exit poverty every year’ (The Economist, 2009), wKsev ¶z`ªFY †KŠkj Aej¤^‡b We will make Bangladesh free from poverty by 2030’ (Financial Express, 2007) KZUzKz m½Z?
¶z`ªFY †h †Kv‡bv Kv‡RB Av‡m bv, Zv bq| A‡b‡Ki g‡Z hviv `vwi`ª¨mxgvi (w`‡b 2 Wjvi Avq) wb‡P Zv‡`i Rb¨ ¶z`ªFY GK ai‡bi †mdwU †bU cÖ`vb K‡i| hvi mnR gv‡b, ¶z`ªFY `wi`ª‡`i ÔwRB‡q wRB‡q RxweZÕ iv‡L| Avi †mLv‡bB evsjv‡`‡ki e`i“wÏb Dgimn Av‡iv A‡b‡Ki AvcwË| Zv‡`i g‡Z, GB ÔwRB‡q RxweZÕ ivLvi †KŠkj Z…Zxq we‡k¦ mvgvwRK wec­e NUvi cÖavb cÖwZeÜKZv| GB `vwe †h ïay e`i“wÏb Dgi ev Zv‡`i g‡Zv wPš—vavivi †jLK‡`i ZvB bq; †mB m‡½ Av‡iv A‡b‡Ki| Z‡e wK Z…Zxq we‡k¦ mvgvwRK wec­e †iv‡a `wi`ª‡`i ÔwRB‡q wRB‡q RxweZÕ ivLvB ¶z`ªF‡Yi cÖavb j¶¨? Kviv Av‡Q Gi †cQ‡b? Õ70-Gi `k‡K cwðgv we‡k¦, we‡kl K‡i hy³iv‡óª wbD wjev‡ij aviYvi DÌv‡bi m‡½ wek¦gq ¶z`ªF‡Yi wec­e I we¯—v‡ii †Kv‡bv m¤ú„³Zv Av‡Q wK?
†jLK: Aa¨vcK, GgAviAvBwU BDwbfvwm©wU A‡÷ªwjqv