Year-19 # Issue-50 # 27 January 2013



ভিক্ষুক পুনর্বাসনের পাইলট কর্মসূচি ব্যর্থ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ভিক্ষাবৃত্তির অপবাদ থেকে মুক্তির জন্য সরকার ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করলেও কার্যত তা ব্যর্থ হয়েছে। সরকার গৃহীত পাইলট প্রকল্প হিসেবে একটি কর্মসূচিতে দেখা গেছে, অভ্যাসগত কারণেই তারা আবার ফিরে এসেছেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। অবস্থায় সরকার ঢাকাকে পর্যায়ক্রমে ভিক্ষুকমুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর সাত স্থানকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভিক্ষুকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ঢাকা শহরের দুই হাজার ভিক্ষুকের পুনর্বাসন এবং পর্যায়ক্রমে ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনের লক্ষ্যে ঢাকা শহরের সকল ভিক্ষুককে জরিপের আওতায় আনা হয়। কর্মসূচির বাস্তবায়ন পর্যায়ে ১০টি এনজিওর মাধ্যমে ঢাকা শহরকে ১০টি জোনে ভাগ করে ১০ হাজার ভিক্ষুকের ওপর জরিপ পরিচালনা করে তাদের ডাটাবেজ  তৈরি করা হয়। সূত্র আরও জানায়, কর্মসূচির পাইলটিং পর্যায়ে ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচি পরিচালনার জন্য ভিক্ষুকের সংখ্যা বিবেচনায় প্রাথমিকভাবে ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল জামালপুর জেলাকে নির্বাচন করে প্রতিজেলা থেকে পঁাচশ' জন করে মোট দুই হাজার জনকে পুনর্বাসনের সদ্ধিান্ত গ্রহণ করা হয়। ঢাকা জেলার পাইলটিং পর্যায়ে পুনর্বাসন কর্মসূচি পরিচালনা করা হলে সারা দেশের ভিক্ষুক ঢাকামুখী হবে- এই বিবেচনায় পরবর্তীতে ঢাকা জেলার কোটা ময়মনসিংহ জেলার অনুকূলে স্থানান্তর করা হয়েছিল। গত বছরের ২০ নভেম্বর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে ময়মনসিংহের ৩৭ জন ভিক্ষুকের মধ্যে ১২ জনকে ১২টি রিক্সা, ১৭ জনকে ১৭টি ভ্যান ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য পঁাচ হাজার করে টাকা এবং বাকি জনের প্রত্যেককে পঁাচ হাজার করে টাকা হস্তান্তর করে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। সে সময় সংশি্লষ্ট সমাজসেবা অফিসারদের উপকারভোগীর  দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড তদারকি এবং বিষয়ে পাক্ষিক প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ২১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক প্রদেয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৩৭ জনের মধ্যে মাত্র ১০ জন প্রাপ্ত উপকরণের সহায়তায় জীবিকা অর্জন নিজ জেলায় অবস্থান করছে। অবশষ্টিদের কেউ কেউ উপকরণ ভাড়া দিয়ে ঢাকায় ফিরে এসেছে। এদের কয়েকজনকে নিজ ঠিকানায়ও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
ময়মনসিংহে প্রকল্পের ব্যর্থতায় অসনে্তাষ প্রকাশ করেছে সরকার। এজন্য ঢাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার ওপর জোর দেয়া হয়। গত ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত Èঢাকা শহরকে ভিক্ষুকমুক্ত করার লক্ষ্যে সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা' সাত স্থানকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়। বিদেশি অভ্যাগতদের চলাচলরত এলাকা যেমন- বিমানবন্দর, কূটনৈতিক জোন দূতাবাস এলাকা, হোটেল সোনারগাঁও, হোটেল রূপসী বাংলা, হোটেল রেডিসন বেইলি রোড এলাকা এর আওতাভুক্ত থাকবে। সভায় ঢাকায় শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নাসিমা বেগম বলেন, ময়মনসিংহের পাইলট প্রকল্পে অনেক উপকারভোগী ঢাকা চলে এসেছেন। এজন্য পর্যায়ক্রমে ঢাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত করা গেলে ভিক্ষাবৃত্তির হাত থেকে মুক্ত হতে পারব। তিনি বলেন, ভিক্ষুকমুক্ত স্থানে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত অক্ষমদের সরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ক্ষমতা পুনরুজ্জীবন, প্রয়োজনীয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ এবং কাজে নিয়োজিত অধিদপ্তরের সংশি্লষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের সদ্ধিান্ত হয়।

Year-19 # Issue-49 # 20 January 2013



জ্বালানি  তেলের দাম বাড়ায় চালসহ নিত্যপণ্যের দাম চড়া
নিজস্ব প্রতিবেদক
জ্বালানি  তেলের দাম বাড়ায় পাইকারি খুচরা বাজারে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম  বেড়েছে আরও একধাপ। পাইকারি খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, জ্বালানি  তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহন খরচ ট্রাকপ্রতি  বেড়েছে  থেকে তিন হাজার টাকা। ফলে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামও  বেড়েছে  সে হারে। রাজধানীর পাইকারি খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে  বেশি। পরিবহন খরচ বাড়ার কারণে প্রতিকেজি চাল তিন  থেকে চার টাকা করে  বেড়েছে। রাজধানীর সর্ববৃহত্ পাইকারি চালের বাজার বাবুবাজার কদমতলী বাজার ঘুরে চিত্র  দেখা  গেছে।
বাবুবাজারে পাইকারি চাল বিক্রেতা বসুন্ধরা রাইস এজেন্সির মালিক সালাউদ্দিন  হোসেন শান্ত বলেন, তেলের দাম বাড়ায়  বেড়েছে চালের দামও। কারণ ট্রাকপ্রতি পরিবহন খরচ  বেড়েছে দুই  থেকে তিন হাজার টাকা। টাঙ্গাইলের  গোপালপুর  থেকে ৩০০ বস্তা চাল আনতে ট্রাক প্রতি ভাড়া ছিলো হাজার টাকা।  তেলের দাম বাড়ার কারণে তা এখন  বেড়ে দঁাড়িয়েছে ১১ হাজার টাকা। এছাড়া রাজধানীতে কুষ্টিয়া  থেকে ৩০০ বস্তা চালের পরিবহন খরচ ছিলো ১৫ হাজার টাকা। বর্তমানে তা  বেড়ে দঁাড়িয়েছে ১৮ হাজারে। নওগাঁ, কুষ্টিয়া চঁাপাইনবাগঞ্জ  থেকে নগরীতে বস্তাপ্রতি (৫০  কেজি) দামের তফাত্ ৫০০ টাকা; যা আগে ছিলো দুই  থেকে তিনশ' টাকা। ৫০  কেজি ওজনের  লাঙ্গল মার্কা  স্পেশাল মিনিকেট  চালের বস্তা চঁাপাইনবাবগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে ১৮শ' টাকা অথচ বাবুবাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৩শ' টাকা বস্তা। চালকল মালিকরা দাবি করছেন,  তেলের দাম বাড়ার কারণে  বেশি দামে কৃষকের কাছ  থেকে ধান কিনতে  হয়। প্রতিমণ ধান কৃষকের কাছ  থেকে কিনতে হয় থেকে হাজার টাকা দরে। এছাড়া দাম বাড়ার কারণে কৃষক ধান মজুদ করে  রেখেছে বলেও দাবি করেন তারা। নওগাঁর গ্রামীণ অটো মিলের মালিক সুলতান মাহমুদ  টেলিফোনে জানান, তেলের দাম বাড়ার কারণে চাষিরা ধান মজুদ করে  রেখেছেন। ফলে ধানের আমদানি কম। মণপ্রতি ধান এখন এক  থেকে  দেড়শ' টাকা  বেশি দামে নিতে হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাও আবার জ্বালানি  তেলের দাম বাড়ার  দোহাই দিয়ে আরও একধাপ বাড়াচ্ছে চালের দাম। ফলে চাল কিনতে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট ৪৫-৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা  তেলের দাম বাড়ার আগে বিক্রি হয়েছে ৩৮-৪০ টাকা দরে। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকা দরে যা  তেলের দাম বাড়ার আগে ছিল ৪০-৪২ টাকা। পারিজা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকা দরে যা আগে ছিল ৩২ টাকা, স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায় যা  তেলের দাম বাড়ার আগে ছিল ৩২ টাকা। পলাশি কঁাচাবাজারের চাল বিক্রেতা ঈসমাইল  হোসেন বলেন, পরিবহন খরচ বাড়ার কারণে আমাদের  বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ এখন মিনিকেট আমনের  মেৌসুম, আমাদের এখন কম দামে চাল বিক্রির কথা।
জ্বালানি  তেলের দাম বাড়ায় শুধু চাল নয় অন্যান্য পণ্যের ওপরও এর প্রভাব পড়ছে টর্নেডোর মতো। সবজি মাছের বাজারে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন  ক্রেতারা। শীতকালে সবজির দাম কম হওয়ার কথা। কিন্তু বিক্রেতারা বলছেন পরিবহন খরচ  বেড়ে যাওয়ায় আমাদের  বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। রাজধানীতে প্রতিকেজি মরিচ ৮০, শসা ৪০-৪৫, শিম ৪০, বিচি শিম ৫০,  পঁেপে ২৫, গাজর ৩০, সাদা মুলা ৩০, লাল মুলা ৩৫,  বেগুন ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি বঁাধাকপি ৩৫, ফুলকপি ৪০ লাউ  ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বছরের শুরুতে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়লেও কিছুদিন পর তা কমতে শুরু করে। বর্তমানে পাইকারি খুচরা বাজারে জ্বালানি  তেলের দাম বাড়ার কারণে আবার  বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা  থেকে ১৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি গরুর মাংস ২৮০ টাকা খাসির মাংস  ৪০০-৪৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দামও চড়া। প্রতিহালি  দেশি মুরগির ডিম  ৪৫, হঁাস ৪৪, ফার্মের সাদা ডিম ৩৮ লাল ডিম ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।