Year-20 # Issue-04 # 10 March 2013

সমরাঙ্গণের নারীদের মতোই যুদ্ধ করছেন নারী প্রসিকিউটররা

সমরাঙ্গণের নারীদের মতোই যুদ্ধ করছেন নারী প্রসিকিউটররা
বাম থেকে: নুরজাহান বেগম মুক্তা, ফাতিমা জাহাঙ্গীর চৌধুরি, ড. তুরিন আফরোজ ও সাবিনা ইয়াসমিন খান
ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমে অংশ নিয়ে একাত্তরের সমরাঙ্গণের নারীদের মতই যুদ্ধ করছি। মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোতে নারীদের যে ভোগান্তি, নির্যাতন ও মানুসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়েছে তার বদলা হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাতে হয় সে লক্ষ্যে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এটাই আমাদের নতুন যু্দ্ধ। বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নারী প্রসিকিউটররা।
ট্রাইব্যুনালে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা কার্যক্রম থেকে শুরু করে আদালতে মামলা লড়া পর্যন্ত সবকাজেই নিয়োজিত রয়েছেন এই পাঁচ নারী প্রসিকিউটর। এরা হচ্ছেন নুরজাহান বেগম মুক্তা, ড. তুরিন আফরোজ, সাবিনা ইয়াসমিন খান, রেজিয়া সুলতানা ও ফাতিমা জাহাঙ্গীর চৌধুরি । 
মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনে দুই লাখেরও বেশি নারী তাদের সম্ভ্রম বিকিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। প্রসিকিউশনে গুরু দায়িত্ব পালন করা এই নারী প্রসিকিউটররা নিজেদের সেইসব নারীর প্রতিনিধি হিসেবেই মনে করেন।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে নারীর সম্পৃক্ততা তুলে ধরতে কেবল নির্যাতীতা নারীর চিত্রায়ন করলে চলবে না। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের নারীরা মোটামুটি তিনভাবে অংশ নিয়েছিলেন। সরাসরি সমরাঙ্গনে অস্ত্র হাতে শত্রুদের মোকাবেলা করেছেন তারা। যুদ্ধের সময়টিতে পরিবার, সমাজ, তথা অর্থনীতিও নারীদের হাতেই পরিচালিত হয়। পুরুষরা যুদ্ধে যাওয়ার পর রেখে যাওয়া পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে সামলাতে হত নারীদেরই। তখন পরিবারের সামাজিক, অর্থনৈতিক দেখাশুনাও নারীকে করতে হয়েছে।
আবার সেই সময়টা শুধূ পরিবারের সদস্যদেরকে নয় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আশ্রয় দিয়ে, তাদেরকে রান্না করে খাইয়ে, আহতদের সেবা করেও নারীরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। আবার এই নারীরাই নির্যাতীত হয়েছেন হায়েনাদের হাতে। এটাও এক ধরনের যুদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘একজন অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত মা সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোতেও কিভাবে নিজের পরিবারের পাশাপশি অন্যকে আশ্রয় দিয়েছেন, দৈন্যের মাঝেও টিকে থেকেছেন সেসব গল্প আমাদের সাহিত্যে উঠে আসে না। মূল্যায়ণ হয় না সেদিনের নারীদের সমরাঙ্গণে লড়ার বীরত্বকেও।’
প্রসিকিউশনের সদস্য হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পান তুরিন আফরোজ। তিনি বলেন, ‘এত বছর পরে এই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমে আমরা যেসব নারীরা কাজ করছি। রিসার্চ থেকে শুরু করে কোর্টে মামলা লড়া পর্যন্ত সবকিছুই করছি। যখন আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াই আমাদেরও মনে হয় যেনো সমরাঙ্গণের সেই নারীদের মতই যুদ্ধ করছি।
প্রতিকী অর্থে বলা হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া আমাদের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। যদিও সময় এবং অবস্থার প্রেক্ষাপট আলাদা। তবু বলব সেই যুদ্ধাপরাধের আসামিদের অভিযোগের প্রমাণগুলো সন্দেহের উর্ধ্বে প্রমাণ করার জন্য আমরাও কাজ করে চলেছি।’
তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আমাদের একাত্তরের স্মৃতি জেন্ডার ইস্যুতে খুবই স্পর্শকাতর। সে সময়ে বিভিন্ন বয়সের দুই-চার লাখ নারী নির্যাতীত হয়েছিল। যে কোন যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয় নারীরা। প্রতিপক্ষের পুরুষত্বের ওপর আঘাত আনতেই তাদের নারীর ওপর নির্যাতন করা হয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও নারীদেরকে একইভাবে ধর্ষণসহ নানা ধরনের যৌন নিপিড়নের শিকার হতে হয়।
সেই সব কাজে যারা সহযোগিতা করেছেল প্রায় ৪২ বছর পর তাদের বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকতে পারা বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার, বলেন তুরিন।
তিনি বলেন, ‘নির্যাতীত নারীদের সংখ্যা নিয়ে আজ খেলা চলছে। শর্মিলা বসু এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ যুদ্ধের সময় তিনি এ দেশেই ছিলেন না। কিভাবে তিনি জানবেন কেমন করে কত নিষ্ঠুরভাবে এদেশের মা-বোনদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যুদ্ধের পর হামিদুর রহমান কমিশনের যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় সেখানেও নারীদের উপর নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়নি। তবে সংখ্যার ক্ষেত্রে ব্যাপক তারতম্য আনা হয়। এর প্রেক্ষিতে আমি বলব, একটি ধর্ষণ হলেও সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ। সেই একটিরই বিচার করতে হবে। আমাদের আবেগের জায়গাটি এখানেই ‘
তুরিন আরও বলেন,  ‘এদেশের জন্ম লগ্নে যে গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ সংঘঠিত হয়েছে তা অস্বীকার করা এক ধরনের অপরাধ। যারা এসব অস্বীকার করবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে সরকারের আইন করা উচিত। ’

ট্রাইব্যুনালেও কাজটি মোটে সহজ নয়, বলেন তুরিন আফরোজ। তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে যে সব নারী সাক্ষ্য দিতে আসেন তাদেরকে ৪২ বছর আগের দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয়। যা তিনি বহু বছর ধরে ভুলতে চেষ্টা করেছেন সেই অধ্যায়টিকে নতুন করে খুলতে হয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে যদি কোন নারী এসে ট্রাইব্যুনালে বলেন যে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভিকটিম তাহলে তাকে আর কোন প্রশ্ন করা উচিত নয়। সেই সাহসী নারীর সম্মানার্থে সেটুকু বক্তব্যকেই তার সাক্ষ্য ধরে নেওয়া উচিত।’
তুরিন ‍জানান, ‘বিদ্যমান দুটি ট্রাইব্যুনাল থেকে এ পর্যন্ত দেওয়া তিনটি রায়েই ধর্ষণের ব্যাপারটি এসেছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয় আদালত ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখলেও শাস্তির মাত্রা নির্ধারণে তারতম্য করছেন। একজন মানুষ খুন করলে যদি ফাঁসির অর্ডার হয় তাহলে ধর্ষণের জন্যও একই শাস্তি হওয়া উচিত।’
তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান বলেন, একজন মানুষকে হত্যা করলে তার পরিবার ও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত একজন মানুষকে হারায়। কিন্তু একজন নারীকে ধর্ষণ করলে সমাজে, পরিবারে সে প্রতিনিয়ত, প্রতিমুহুর্তে দগ্ধ হয়ে মরে। এজন্য ধর্ষণের শাস্তি আরো বেশি হওয়া প্রয়োজন এবং রায়েও তা স্পষ্ট করা উচিত। প্রসিকিউশনের গবেষক ফাতিমা জাহাঙ্গীর চৌধুরি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীরা যে অবদান রেখেছিলেন শত চেষ্টা করলেও আমরা তা শোধ করতে পারব না। তবে আমার অবস্থান থেকে তাদের সম্মানটুকু ফিরিয়ে দিতে যেটুকু অবদান রাখতে পারছি সেটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া।
তিনি বলেন, এখানে কাজ করতে এসে দেখেছি যেসব নারী এখানে সাক্ষ্য দিতে আসেন তারা বেশিরভাগই ষাটোর্ধ হলেও অত্যন্ত মানসিক শক্তিতে বলিয়ান। এটা দেখে নিজের মধ্যে অদ্ভুত এক শক্তি জাগে। এই সাহসী নারীদের প্রতি সবারই সম্মান জানানো উচিত।
শুরু থেকেই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকউশনের টিমে থাকা আরেক প্রসিকউটর নুরজাহান বেগম মুক্তা বলেন, ‘প্রসিকউটর হিসেবে আমি যেখানে কাজ করছি সেখানে সাহসী হতেই হয়। এখানে কাজ করা বর্তমান সময়ের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও সব ঝুঁকিকে তুচ্ছজ্ঞান করে আমি যুদ্ধাপরাধী নিধনের কাজ করে যাচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে এটি অনেক বড় পাওয়া।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে নারীরা যেভাবে নির্যাতীত হয়েছিলেন তার বিচার ৪২ বছর ধরে গুমরে কেঁদেছে। অনেক গ্লানি জমেছে। এখন সেটার ফল আসতে শুরু করেছে। যুদ্ধাপরাধদের বিচার চলছে। সেখানে আমি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছি। এটা গৌরবের।’

নুরজাহান বেগম বলেন, ‘নারী যোদ্ধাদের সাক্ষ্য তত্বাবধানের সময় যখন তাদের অশ্রুভেজা চোখে, প্রতিবাদী কণ্ঠে বর্ণণা শুনি তখন মনে হয় আমিও তাদের সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিযে বীর বেশে ফিরে এসেছিলেন। আজ তার সন্তান সম্মুখ সমর না করলেও আইনি যুদ্ধ করছে। এটা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার যুদ্ধ। এখানে আমরা বিজয়ী হবই।’

প্রতিক্রিয়া: কোথায় সে রমণী বীর্যবতী?

প্রতিক্রিয়া: কোথায় সে রমণী বীর্যবতী?
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের নিউজরুম এডিটর আসিফ আজিজের লেখা ‘এই নারী কি বাঙালি নারী!!’ শীর্ষক লেখাটি পড়লাম। নারীর পণ্যীকরণের এই সময়ে তাঁর এই সচেতন প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই।
বাঙালি নারী সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে লেখক অম্বুজাসুন্দরী নামের একজন নারী কবির কবিতা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রাঙ্গদা’ থেকে উদাহরণ টেনেছেন। উদাহরণগুলোর পেছনে তাঁর নিজস্ব ব্যাখ্যাও রয়েছে। বেসরকারি টেলিফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপনচিত্রে নারীর ভূমিকার নেতিবাচক উপস্থাপনকে প্রশ্ন করতে গিয়ে বাংলা সাহিত্য থেকে উদ্ধৃতি দেওয়ার বিষয়টিও প্রশংসার দাবিদার।
বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্র, নাটক ইত্যাদির মতো সাহিত্যও সমাজ থেকেই উঠে আসে। ফলে সাহিত্যও সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। অম্বুজাসুন্দরীর লেখায় নারীর রমণীয়তার গুণগান করা হয়েছে। মানছি। কিন্তু কবির সময় ও পারিপার্শ্বিকতার বিচার করলে দেখা যাবে- ঐ সময়ে নারীর জন্য পড়া এবং লেখার অধিকার বা সুযোগ পাওয়াই কঠিন ছিল। অবরোধ কেবল নারীর শরীর ও চলাফেরায়ই নয়—বরং মতামত প্রকাশের উপরও ছিল। ফলে নারীর প্রথাগত ভূমিকাকে প্রশ্ন করার মতন বাস্তবতা তখন ছিল না। এ প্রসঙ্গে আমরা স্মরণ করতে পারি কবি জীবনানন্দ দাশের মাতা কুসুমকুমারী দাশের সেই বিখ্যাত লাইনগুলো- ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?’ আমরা এখন যতই ‘কন্যাশিশু’ নিয়ে সচেতন থাকি না কেন ঐ সময়ে ‘সন্তান’ এর সমার্থক ছিল ‘ছেলে’, ‘মেয়ে’ নয়।
এবার আসি চিত্রাঙ্গদা প্রসঙ্গে। এই লেখায় চিত্রাঙ্গদার যে লাইনগুলো উদ্ধৃত করা হয়েছে তার নারীবাদী গুরুত্ব আপাতভাবে রয়েছে। কিন্তু আর একটু গভীর পাঠে গেলে দেখবো এমন অনেক অংশ রয়েছে যেখানে রবীন্দ্রনাথের নারীবাদী সচেতনতাকেও ঐ সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনায় আনতে হবে। যেমন- অর্জুন বলছে ‘আগ্রহ মোর অধীর অতি, কোথা সে রমণী বীর্যবতী’। ‘বীর্যবান’ শব্দের সঙ্গে আমরা পরিচিত। শক্তি ও সাহস বলতে ‘বীর্য’ শব্দের প্রয়োগ হয়েছে, ‘সিমেন’-এর বাংলা নয়। ফলে রবীঠাকুর এখানে ‘বীর্যবতী’ বলে শরীর শক্তিমান ও সাহসী ভূমিকার নতুন নাম দিয়েছেন। তিনি একটি প্রণাম পেতেই পারেন। আবার, চিত্রাঙ্গদা বলছে- ‘কি ভাবিয়া মনে নারীতে করেছ পৌরুষ সন্ধান’ অথবা- ‘ছি ছি কুৎসিত কুরূপা যে’- এতে চিত্রাঙ্গদা নিজেই নারীর রমণীয় ভূমিকার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এই পক্ষে রবিঠাকুর নিজেও আছেন। ফলে লেখকের উদাহরণ টানা বৃথা গেছে এ কথা বলা যাচ্ছে না।
সাহিত্য যেমন জীবনের মহান বোধ থেকে তৈরি হয়, বিজ্ঞাপন তেমন নয়। বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য একটি পণ্যের বিক্রয় ও মুনাফা নিশ্চিত করা। সেই হিসেবে সবচেয়ে সফল বিজ্ঞাপন হয় সেই বিজ্ঞাপন যে কিনা তার পণ্যের বিক্রয় বাড়িয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল বিজ্ঞাপন হচ্ছে ‘ফিলিপস’ বাল্বের বিজ্ঞাপন। আমাদের অনেকেরই মনে আছে ‘মাছের রাজা ইলিশ, বাতির রাজা ফিলিপস’। এই বিজ্ঞাপন শুধু জনপ্রিয়তার নিরিখে নয়, পণ্য বিক্রির নিশ্চয়তার হিসেবেও সফলতম। বিজ্ঞাপন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত আছেন এমন বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি এই বিজ্ঞাপনকে পেছনে ফেলতে পেরেছে ইদানীংকালের আরসি কোলার বিজ্ঞাপন ‘কন্যা ফিরা চাও’- গান সমেত মডেল নোবেল ও ভারতীয় একজন নাম না জানা মডেলের নাচানাচি সমৃদ্ধ বিজ্ঞাপনটি। একই সঙ্গে জনপ্রিয়তা ও পণ্য বিক্রির নিশ্চয়তা দিয়ে বিজ্ঞাপন জগতে ক্লাসিক হয়ে গেছে। যেহেতু ‘বিজ্ঞাপনের ইতিহাস’ বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা হয়নি- ফলে নির্মাতা বন্ধুদের দেয়া তথ্যের উপর নির্ভর করলাম।
সফলতম এই দুটি বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু কি ছিল- একটু মনে করি। প্রথমেই দেখা যায় একটা গ্রামের পরিবেশে একটি অল্প বয়সী ছেলে কাটা ডাব হাতে আতিথেয়তা করতে তার ভগ্নিপতিকে জিজ্ঞেস করছে- ‘দুলাভাই, তয় কি মাছ আনমু?’ ‍দুলাভাই একটু ভেবে বলেন- ‘ইলিশ মাছ আনিস’। পরে দুলাভাই ঝাপসা বাতিতে ‘কাটাকুটা কিচ্ছুই দেহি না’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করায় ‘ফিলিপস’ বাতি সে যাত্রায় জামাইয়ের সামনে শ্বশুরবাড়ির মুখ রক্ষা করে।
দ্বিতীয় বিজ্ঞাপনে প্রেমিক তার প্রেমিকার মান ভাঙাতে আরসি কোলা নিয়ে আসে। সঙ্গে এও বলে ‘আরসির মজা কত, তোমার মত যখন যেমন চাই- সুখে দু:খে মনের মত সঙ্গী তারে পাই।’
দুটো বিজ্ঞাপনেই পুরুষতান্ত্রিক আদর্শ স্পষ্ট। মেয়ের জামাই হচ্ছে পরিবারের সবচেয়ে আদরের সদস্য। সে বাদে বাকি সবাই অর্থাৎ স্ত্রীর পরিবারের সবাই নারীর প্রতিনিধিত্ব করছে। ফলে, তাদের অবস্থান নারীর মতোই দ্বিতীয় মাত্রার। তাদের লৈঙ্গিক পরিচয় এখানে মুখ্য নয়। উল্টোটাও সত্যি- বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘ছেলের মা’ পুরুষের প্রতিভু। তাঁর ক্ষমতার সীমা নাই। ‘কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা’ ততটাই ক্ষমতাহীন।
‘আরসি কোলা’র ক্ষেত্রে নারীকে সরাসরি পণ্যের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এ নিয়ে আর কোনো ব্যাখ্যায় যাবার প্রয়োজন বোধ করছি না। এমন সব বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের গণমাধ্যম পরিপূর্ণ। ‘ডাবল কোলা’ নামক একটি পানীয়ের বিজ্ঞাপনে নায়ক ফেরদৌসকে দুইজন নারীর সঙ্গে নাচানাচি করতে দেখা যায়- বলা হয় ‘ডাবল ইয়োর প্লেজার’। গ্রামীণ ফোনের বিজ্ঞাপনে দেখা যায় ক্ষমতাহীন নারী তার স্বামীর জুতাজোড়া বৃষ্টি এলে তুলে রাখছে। তার একটি ফোন করারও অধিকার নেই। সে কেবল ফোন আসার অপেক্ষা করে।
এ ধরনের বিজ্ঞাপনের উদাহরণ দিতে থাকলে এই লেখার দৈর্ঘ্য কেবল বেড়েই যাবে। সেই চেষ্টা না করি। আদতে বিজ্ঞাপন চেষ্টা করে মানুষের কাছে মেসেজ পৌঁছাতে। যদিও আলাদা আলাদা পণ্যের আলাদা আলাদা টার্গেট গ্রুপ থাকে, বিজ্ঞাপনের টার্গেট অডিয়েন্সও আলাদা হয়- কিন্তু দর্শক তো সবাই, ফলে সমাজের মূল স্রোতের মতাদর্শকেই বিজ্ঞাপন প্রতিফলিত করে। একটা বাংলালিংক, একটা গ্রামীণ ফোন, একটা আরসি কোলা অথবা একজন সরোয়ার ফারুকী, একজন অমিতাভ রেজা এই ক্ষেত্রে সমালোচনার মুখে পড়তেই পারেন। কিন্তু সেটা কোনো সমাধান নয়।
সমাজের মূল ধারায় যে পুরুষাধিপত্যবাদী আদর্শ বয়ে যায়- সেই স্রোতটাকে সনাক্ত করতে পারা এখানে জরুরি। লেখকের শ্লেষাত্মক বাক্যবিন্যাস উদ্ধৃত করার প্রয়োজন বোধ করছি-
“আমাদের দেশের নারীবাদীরা মেরি ওলস্টোনক্রাফট, ভার্জিনিয়া উলফ, সিমোঁ দ্য বুভোয়া, হেনরিক ইবসেন, বেগম রোকেয়া পাঠ করে তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে নারীর অধিকার রক্ষায় আলোচনার টেবিল, মাঠ গরম করেন। বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে প্রদর্শনের জন্য সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেন। কিন্তু একটি বিজ্ঞাপনে যখন নারীর চরিত্রে কাণ্ডজ্ঞানহীনতা ও নির্বিবেক স্বার্থপরতা চাপিয়ে দিয়ে নারীকে হেয় করা হচ্ছে, ছোট করা হচ্ছে, এক অর্থে অপমান করা হচ্ছে, তখন কেন তারা চুপ করে বসে আছেন? আমাদের মা, বোনদের মধ্যে কি আমরা এই চরিত্র দেখি? পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব নিশ্চয় আমাদের সমাজে পড়েছে। কিন্তু নারীর এই রূপ আমরা আসলেই কি গড়পড়তা নারীদের মধ্যে দেখি? নিশ্চয় ‘না’ বলবেন।” প্রথমত, এই দায় কেবল নারীবাদীদের নয়, সবার। এটা রোকেয়ার যুগ নয় যে একজন নারীশিক্ষার প্রবর্তন করবেন, নারী অধিকার রক্ষায় জীবনপাত করে দেবেন- বাকিরা সেটার ফল ভোগ করবেন। নারী সব সময় সব রকম আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। কেউ চুপ করে বসে নেই। দ্বিতীয়ত, লেখক উল্লিখিত বিজ্ঞাপনে নারীর অবমূল্যায়ন নয়, বরং বাঙালি নারীর ‘পতিব্রতা’ ইমেজ নষ্ট করার প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। বিনীতভাবে বলতে বাধ্য হচ্ছি- ‘পতিব্রাত্য’ নিজেই একটি পুরুষতান্ত্রিক আদর্শ/ধারণা- পতিব্রাত্যের ধারণা ভেঙে ফেলা নারীর জন্য উপকারীই। নারী ‘পতিব্রতা’ হবেন সেটা সমাজ ঠিক করে দেয়। সমাজের এই নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধেই নারীবাদীদের অবস্থান। আমি বলছি না এই বিজ্ঞাপনটি ভালো। কিন্তু লেখককে তাঁর অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে অনুরোধ করছি। তৃতীয়ত, নারীর রমণীয়তা একটি আরোপিত বিষয়। নারী কতটুকু ‘রমণীয়’ (রমণযোগ্য?) থাকবেন, কতটুকু ‘বীর্যবতী’ হবেন তা অন্য কেউ ঠিক করে দেবে না। সেট ঠিক করবে ব্যক্তি নারী। সেটা নিশ্চিত হলেই কেবল মুক্তি সম্ভব। তার আগে নয়।

রবি’র ফ্যান পেজে কণার সঙ্গে আড্ডার সুযোগ


রবি’র ফ্যান পেজে কণার সঙ্গে আড্ডার সুযোগ
তারকা-শিল্পী সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে চান দর্শক-শ্রোতা-ভক্তরা, বুঝতে চান প্রিয় তারকা কেমন, কীভাবে কথা বলেন, কীভাবে তাকে করা প্রশ্নের জবাব দেন, প্রিয় শিল্পীকে নিয়ে নানা কৌতুহল, নানা জিজ্ঞাসা।
আর সে সব প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসার জবাব পেতে  জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কণার সঙ্গে ফেসবুকে সরাসরি ফেসবুকে আড্ডার এক অপূর্ব সুযোগ করে দিতে যাচ্ছে মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড। শনিবার রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সঙ্গীত তারকা কণার সঙ্গে সরাসরি চ্যাট করার  সুযোগ পাবেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। জনপ্রিয় এ কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গে চ্যাট করতে যে কেউ ফেসবুকে রবি ফ্যান পেজে লগ ইন করতে পারবেন। বলতে পারবেন মনের কথা, জানাতে পারবেন অভিব্যক্তি। জিজ্ঞাসা করতে পারবেন তার পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কেও। রবি সম্প্রতি তরুণদের জন্য বিভিন্ন উদ্ভাবনী সেবা চালু করেছে।

Year-20 # Issue-03 # 03 March 2013

বিভ্রান্ত তরুণরাও শিবির ছেড়ে আসবে আলোর পথে: ইমরান

বিভ্রান্ত তরুণরাও শিবির ছেড়ে আসবে আলোর পথে: ইমরান
তরুণরা আসছে আলোর পথে। তাদের চেতনা জাগ্রত হচ্ছে। তারা সবাই হয়ে উঠছে নতুন শক্তি, নতুন চেতনাবোধে উদ্বুদ্ধ। তাদের হাতেই গড়ে উঠবে নতুন বাংলাদেশ। এটাই স্বপ্ন ইমরানের। দ্রুতই বললেন- স্বপ্ন নয়, এটিই এখন বাস্তবতা। দেশের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে। তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। তারা ভবিষ্যতেও একটি প্রিয় সোনার বাংলাদেশকে দেখতে চায়। আর তার প্রমাণ শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ এবং এই মঞ্চকে ঘিরে দেশজুড়ে গড়ে ওঠা হাজারো মঞ্চ।
ইমরান এইচ সরকার নামটি বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনীতি সচেতন মানুষের জানা। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়েছে এই নামের পরিচিতি। ইমরান একজন ব্লগারের নাম, একজন আন্দোলনকারীর নাম। একজন সংগঠকের নাম। একটি নেতৃত্বের নাম। রাজধানীর শাহবাগে ২০ দিন ধরে যে আন্দোলন চলছে তার প্রথম ডাক যাদের কাছ থেকে এসেছিলো ইমরান তাদের অন্যতম।
ইমরানের সঙ্গে বাংলানিউজের কথা হয় শনিবার রাতে। ভীষণ ব্যস্ততার মাঝেও একটু বেশি সময় ধরেই কথা বলেন ইমরান। আর সে আলোচনায় চলমান আন্দোলনের চেয়েও এই সফল সংগঠকের ভবিষ্যত ভাবনা ও পরিকল্পনাগুলো নিয়েই বেশি কথা হয়।
ইমরান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা নিজেদের ভূখণ্ড পেয়েছি। এই দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত থাকবে। দেশের প্রতিটি মানুষই হবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের। এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা। এই আন্দোলন ও তাতে গণমানুষের অংশগ্রহণ, তাদের মুখে জয় বাংলা স্লোগান- এসব কিছুই প্রমান করেছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি কোনো রাজনৈতিক দল নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এদেশের আপামর জনতা।
নতুন প্রজন্ম নিয়ে চূড়ান্তভাবেই আশাবাদী ইমরান। তিনি বলেন, একটি ছোট্ট ডাকে এমন কোটি মানুষের অংশগ্রহণ আমাকে অভিভূত করেছে। তবে শক্তি যুগিয়েছে তরুণ ও নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ। আমরা বলছি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকবে না। চেতনার জায়গা এমন থাকতে হবে যেখানে কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না। সে জায়গাটা সমাধান হয়ে গেলে আমার মনে হয় তরুণ প্রজন্ম যারা পরবর্তীতে আসবে বা এখন যারা আছে তাদের বিভ্রান্তি চলে যাবে।
যখন দলে দলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে তখন যে শক্তি পাই সে শক্তিই আন্দোলনকে টিকিয়ে রেখেছে, বেগবান করেছে। এই আন্দোলন থেকে সেটাই বড় অর্জন। আর ৫ বছরের যে শিশুটি তার বুকে ‘জয় বাংলা‘ স্লোগানকে ধারণ করলো সেই একদিন বড় হয়ে এই স্লোগানকে টিকিয়ে রাখবে। সেভাবেই বাঙালির প্রাণের স্লোগান ধারাবাহিকভাবে টিকে থাকবে আরও হাজার বছর।
ইমরান বলেন, দেশের মানুষের ভূল ধারণা ছিলো এই নতুন প্রজন্ম নিয়ে। কিন্তু তারা দেখিয়ে দিয়েছে তারা দেশের প্রতিটি ধূলিকনাকে ভালোবাসে। তারা দেশ নিয়ে ভাবে। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে। তারা শেকড় নিয়ে ভাবে।

বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে প্রবীণদের বেশ বড় একটা গ্যাপ ছিল উল্লেখ করে ইমরান বলেন, গত ১০ বা ১৫ বছরে বাংলাদেশে বেশ বড় একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে। সামাজিক মূল্যবোধের জায়গাতেও পরিবর্তন ঘটে গেছে। আগে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পড়া মানুষের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। কিন্তু এখন বেসরকারি বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রচুর স্কোপ তৈরি হচ্ছে। পড়ালেখার প্রতিও এ প্রজন্মের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বলতে গেলে, একটি মডেস্ট প্রজন্ম যারা লেখাপড়া করে, জানে। এবং জানার চেষ্টা করে। অর্থাৎ এরা পলিটিক্যালি অ্যাওয়ার। কিন্তু পলিটিক্যাল পরিবেশের জন্য বা বিভিন্ন সামাজিক কারণে রাজনীতি করে না। ফলে তারা একধরনের লাইফ লিড করে। এবং সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। যেমন, কেউ মুভি পাগল, কেউ ক্রিকেট পাগল, কেউ গান গাচ্ছে। আবার কেউ হয়ত বিভিন্ন সোশ্যাল একটিভিটিজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এগুলো নিয়ে কিন্তু সবাই সবার জায়গা থেকে ব্যস্ত। কিন্তু সবাই রাজনীতি সচেতন। এই সচেতনতা দেখানোর কোনো জায়গা তাদের কাছে ছিল না। বয়োজ্যেষ্ঠরা এ কারণেই বিভ্রান্তিতে ছিলেন এবং ভাবতেন, এ প্রজন্মের কেউ হয়ত কিছু জানে না বা করে না, রাজনীতি নিয়ে এদের কোনো আগ্রহ নেই বা  ইতিহাস নিয়ে এদের কোনো আগ্রহ নেই বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এদের ভালোবাসার কোনো জায়গা নেই। এ বিভ্রান্তের কারণেই একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছিল। এই আন্দোলন সেই গ্যাপটি পূরণ করেছে।
আন্দোলনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এতে নিম্নবিত্তের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ, বলেন ইমরান। তিনি বলেন, আমি বলছি না সব শ্রেণি পেশার মানুষ এতে অংশ নেয়নি। সবাই অংশ হয়েছে এই আন্দোলনের। কিন্তু অতীতের সব আন্দোলনের মতো এবারেও আন্দোলনে বড় অংশগ্রহণ ছিলো খেটে খাওয়া মানুষের।
তবে এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সবচেয়ে বড় যে প্রত্যাশার জায়গাটি তৈরি হয়েছে তা হচ্ছে তরুণ শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ। ইমরান বলেন, আমি চাই দেশে এখন এমন একটি জেনারেশন তৈরি হোক যারা রাজনীতি সচেতন হবে। রাজনীতেতে অংশগ্রহণ করবে। আমরা চাই রাজনীতি সচেতন যে মানুষগুলো পড়ালেখা করবে, রাজনীতি নিয়ে ভাববে, অ্যানালাইসিস করবে তারা রাজনীতিতে আসবে, দেশকে নেতৃত্ব দেবে।
বিরাজমান রাজনৈতিক কাঠামোয় সেটি সম্ভব কী? এমন প্রশ্নে ইমরান বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের দলটিকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে। চূড়ান্ত মৌলবাদী, মানবতাবিরোধী কাজে যারা নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। আর এই দলটিকে বাদ দিলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর যে কাঠামো তার মধ্যেই নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব।
রাজনৈতিক দলগুলো কী এই গণজাগরণের শক্তি উপলব্ধি করতে পেরেছে? এমন প্রশ্নে ইমরান এইচ সরকার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা নেবে সেটাই প্রত্যাশা। শাহবাগে ও শাহবাগকে ঘিরে সারা দেশে তথা সারা বিশ্বে বাঙালি সমাজ যে আজ জেগে উঠেছে তা অবশ্যই একটি রাজনৈতিক কারণে। কিন্তু এ গণজাগরণকে পূঁজি করে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। এবং সে সুযোগ আমরা কোনো দলকেই দেইনি। ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দল কেউই সে সুযোগ পায়নি। তবে আমি প্রত্যাশা করবো- রাজনৈতিক দলগুলো এই আন্দোলনের শক্তি উপলব্ধি করে তাদের পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করবে। ঢেলে সাজাবে তাদের রাজনৈতিক কর্ম-পরিকল্পনা।
আমি মনে করি- রাজনীতির ভেতরের পরিবেশ ধীরে ধীরে শুদ্ধ হতে বাধ্য। আর সেটা সম্ভব হলেই তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিতে অংশ নিতে স্বস্তি পাবে, বলেন ইমরান।
তিনি বলেন, রাজনীতির বাইরে থেকে পরিশুদ্ধ রাজনীতি আমরা করতে পারবো না। জাগ্রত চেতনার তরুণরা যাতে রাজনীতিতে অংশ নিতে পারে সে জন্য রাজনীতির পরিশুদ্ধতা জরুরি। আবার তারা যোগ না দিলেও রাজনীতি পরিশুদ্ধ হবে না, এটা আমরা বুঝতে পারছি। কারণ আমি মনে করি, বাইরে থেকে যদি বলি- বস্তি থেকে গিয়ে নেতা হলো কেন? বা বলি, পড়ালেখা নেই তারা নেতা হচ্ছে কেন? এগুলো কিন্তু বাইরে বলে কোনো সমাধান হবে না। আমি মাঠ ছেড়ে দিয়ে এসে বাইরে থেকে যদি পরিশুদ্ধ রাজনীতি আশা করি, যদি মনে করি যে মেধাবীরা রাজনীতি করবে, কিন্তু আমি আমার গায়ে কাদা লাগাবো না- তাহলে কিন্তু কোনোদিনই এটা বদলাবে না। ওই পরিবেশ কোনোদিনই শুদ্ধ হবে না।
আপনি বললেন, বিরাজমান রাজনৈতিক কাঠামোয় তরুণরা রাজনীতি করতে পারবে। যদি তাই হয় বর্তমান রাজনীতিতে জামায়াত-শিবির বাদ দিলে প্রধান যে কয়টি দল থাকে তাদের মধ্যে কোন দলটিতে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ চাইবেন আপনি? এই প্রশ্নে ইমরান বলেন, আমি মনে করি সত্যিকারের রাজনীতি সচেতন মানুষ তার জন্য যোগ্য দলটি অবশ্যই বেছে নিতে পারবে। যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে, নিজের দেশের ও জাতির শেকড়কে ধারণ করে সে কখনোই দল পছন্দ করতে ভুল করবে না, এটাই আমার বিশ্বাস।
তরুণ প্রজন্মেরই একটি অংশ বর্তমানে জামায়াত-শিবিরেও সম্পৃক্ত। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরাও এতে জড়িয়ে যাচ্ছে- এ বিষয়ে আপনার মত কি জানতে চাইলে ইমরান বলেন, এটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধাপরাধী, সহিংসতায় বিশ্বাসী দলটি এদের টার্গেট করে রিক্রুট করছে। তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মগজধোলাই করে দলে রাখছে। সহিংসতায় বাধ্য করছে। এই বিভ্রান্ত তরুণদের ধীরে ধীরে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, প্রগতিশীলতায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের সঙ্গে আমাদের সাইবার যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধ প্রতিহত করার জন্য যতটা, তার চেয়ে বেশি তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ। এরই মধ্যে অনেকেই ফিরতেও শুরু করেছে।
জামায়াত-শিবিরে যেসব তরুণ যোগ দিয়েছে তাদের এরই মধ্যে সামাজিকভাবে লজ্জায় পড়তে হচ্ছে। তারা সাধারণের সঙ্গে আর মিশতে পারছে না। এই সামাজিক লজ্জার সৃষ্টি হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চের কারণেই। তারা এখন জানতে পেরেছে তারাই বিচ্ছিন্ন। দেশের আপামর জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, তারাই গুটিকয়েক মাত্র এর বিপক্ষে। ফলে সামাজিকভাবে তারা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা হয়ে উঠছে। তরুণরা দ্রুতই এই সহিংস দলটি ছেড়ে আমাদের অহিংসার আন্দোলনের পথে এগিয়ে আসবে এটাই প্রত্যাশা।
আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে ইমরান এইচ সরকার বলেন, আজকে আমরা যে আন্দোলনটি করছি এটি কিন্তু ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের অবদানেই হয়েছে। ভাষা আন্দোলন হয়েছে বলেই দ্রুততম সময়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। তা না হলে হয়ত আরো ১০০ বছর লেগে যেত। ৭১-এর পর নানা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ’৯০এর আন্দোলন হয়েছে। এবং তখন আমরা গণতন্ত্রে ফিরে আসি। এবং আজকের যে আন্দোলন তা ওই সব আন্দোলন থেকে পাওয়া চেতনার বহিঃপ্রকাশ।  তবে অন্য সব আন্দোলন থেকে এটি আবার ভিন্ন প্রকৃতিরও।
এই আন্দোলনের ব্যাপ্তি এবং গণমানুষের সম্পৃক্ততার কারণে এর সাংগঠনিক ভিত্তি দেওয়াটা কঠিন কাজ। আমরা বলেছি আমাদের যে ছয়-দফা দাবি তা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো। তবে এও বারবার বলে আসছি, এমনও হতে পারে যে সময়ের প্রেক্ষিতে আন্দোলনের প্যাটার্ন বদলাবে। যেমন, আপনারা দেখেছেন আমরা সমাবেশগুলো শুরু করে দিয়েছি। আমার মনে হয় সময় আরও যত যাবে বিশেষ করে বিভাগীয় সমাবেশগুলো যখন হবে তখন বিষয়গুলো আরও সুন্দর স্ট্রাকচারড হয়ে যাবে।
আর ছয়-দফা যে দাবি পূরণ মনে হয় না খুব কঠিন কিছু। এখন কিন্তু আন্দোলনটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে। সমাজের প্রতিটি মানুষ যে যার জায়গা থেকে প্রতিবাদ করছে। এ আন্দোলনই যদি সারাদেশের গ্রামেগঞ্জে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে তাহলে আমরা মনে করছি পরবর্তী কার্যক্রমগুলো অর্থাৎ আমাদের আরও যে সমস্যাগুলো তা সমাধান করা আরও সহজ হবে। কারণ তখন একটা প্রতিবাদি বা একটা সচেতন গোষ্ঠী তৈরি হয়ে যাবে প্রতিটি জায়গায়। যখনই এ সচেতন বা প্রতিবাদি গোষ্ঠীকে একসঙ্গে করা যাবে তখনই কিন্তু যে কোনো সমস্যায় তাদের ডাকলে একসঙ্গে পাওয়া যাবে।
আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততা নিয়ে আপনার মত কি? এমন প্রশ্নে ইমরান বলেন,  ইতিমধ্যে আপনারা দেখেছেন বাংলাদেশের প্রগতিশীল যতগুলো ছাত্র সংগঠন সবাই কিন্তু একাত্ম হয়েছে। নিশ্চই তাদের যে মাদার সংগঠন তারাও ভাবছে। তাদের কাছে নিশ্চয় মেসেজ থাকবে যে ছাত্ররা একত্র হলো, যেখানে অনেক ক্ষেত্রেই মূল দলগুলোই ঐক্যবদ্ধ না। এমনকি এখানে যত ছাত্র সংগঠন এসেছে তাদের মধ্যেও আদর্শগত অনেক পার্থক্য আছে। কিন্তু যে দাবিটা নিয়ে আমরা এখানে এসেছি সে দাবি নিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করছে। ঠিক এভাবেই জাতীয় সমস্যাগুলোতে কিভাবে আরও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা যায় আমার মতে সব রাজনৈতিক দলেরই সেটা ভাবা উচিত।
রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে সাধারণ ধারণা আছে, ভোটের আগে তারা টাকা ছড়াবে এবং ভোটের রাজনীতিতে এগুবে। এমন রাজনৈতিক দলের ধারণাতেই ছিল না যে বাংলাদেশের জনগণ এভাবেও জেগে উঠতে পারে। তাদের দলীয় সমাবেশে লাখ লাখ লোক টাকার বিনিময়ে আসে। সে প্রেক্ষাপটে এমন গণজাগরণের পর তাদের মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন আনা উচিত?
আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর গঠণতন্ত্র পড়লেই দেখবেন, তাদের তো গণমানুষ নিয়েই ভাবার কথা। মূলত সাধারণ মানুষ কি চায় কিংবা পরবর্তী প্রজন্ম কিভাবে দেশটাকে দেখতে চায় এ বিষয়টা তাদের মনে হয় বুঝতে হবে। তারা কি চায়, কি তাদের স্বপ্ন এসব বিষয় রাজনীতিবিদদের ভাবতে হবে। কারণ একটা বিষয় দেখেন- ভোটার সংখ্যা ৩৫ বছর বয়সসীমার মধ্যে প্রায় চার কোটি। অর্থাৎ অধিকাংশই তরুণ প্রজন্মের। যদি তারা ভোটের রাজনীতির কথাই ভাবে তাহলেও তো তরুণ প্রজন্মের সংখ্যাটাই বেশি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ চার কোটি মানুষের মনের কথা বুঝতে হবে। তারা কেমন বাংলাদেশ চায়। তাহলে এই চার কোটি মানুষের ভাবনার মতো করে ম্যানিফেস্টো ঠিক করা উচিত, কর্মপন্থা ঠিক করা উচিত।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে এ বিষয়গুলো নিয়ে কি কোনো আলোচনা হয়েছে বলে আপনি মনে করেন? জানতে চাইলে ইমরান বলেন, একটা সময়ে আমি নিজেও একটি দলের ছাত্র সংগঠন করতাম। পরবর্তীতে আমি যখন চিকিৎসক হয়ে যাই তারপর থেকে আমি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। তবে একটি বিষয়ে হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অর্থাৎ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য আমরা খুব সচেতনভাবেই দেখেছি বা শুনেছি। এমনকি জাতীয় নেতাদের কে কি বলছেন সে বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গেই আমরা খেয়াল করেছি। আমার মনে হয়েছে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর যে বক্তব্য ছিল এ আন্দোলন নিয়ে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। এ আন্দোলনকে  উনি সাধুবাদ জানিয়েছেন। উনি বারবারই কথা বলেছেন এ বিষয়ে। আপনারা - শুরু থেকেই কিন্তু আমরা সরকারের কাছে কোনো দাবিদাওয়া নিয়ে যাইনি। আমরা মহান জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকারের কাছে দাবি পেশ করেছি। এমনকি শুরু থেকেই রাজনীতিকদের আমরা বলেছি, তারা যেন এখানে না আসেন। তারপরও অনেকে এসেছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিয়েছেন। সরাসরি পার্টির মুখপাত্র হিসেবে তাদের কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল না। সেটা আমরা রাখিনি। সেজন্য অফিশিয়াল কোনো অবস্থান আমরা জানতে পারিনি। তো বিচ্ছিন্নভাবে রাজনৈতিক যে বক্তব্য তারা দিয়েছেন তাদের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই যথেষ্ট ইতিবাচক ছিল। মানে আশার কথা হবে যদি তিনি আমাদের চেতনাকে ধারণ করেই ওই কথাগুলো বলে থাকেন।
বিরোধী দলের কেউ কেউ এ আন্দোলনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে কি আপনাদের কাছে কোনো তথ্য আছে? বাংলানিউজের এ প্রশ্নে ইমরান বলেন, আমার যেটা মনে হয় তাদের কৌতুহল ছিল। মনে হয় তাদের বিষয়টা বুঝতেও সময় লাগছে। কিংবা তাদের যারা বুঝিয়েছে তারা হয়ত ভুলভাবে বুঝিয়েছে। এজন্য বিভিন্ন সময়ে তারা যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তা কিন্তু খুবই বিভ্রান্তিকর ছিল। যার ফলে একেকজনের সঙ্গে আরেকজনের বক্তব্যের মিল ছিল না।

বিরোধীদল বলছে- এখানে আরও ইস্যু সংযুক্ত হওয়া উচিত ছিল। শাহবাগের রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন কেন? এমন প্রশ্নও তুলেছে। এগুলো কি তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলছে? এমন প্রশ্নে ইমরান বলেন, আরও অনেক বিষয় যোগ করা যেত কথাটি আমার মনে হয় একদমই রাজনৈতিক বক্তব্য। আমরা কিন্তু চেতনার ইস্যু নিয়ে কথা বলছি। এখানে একটা দেশ স্বাধীন হয়েছে তার চেতনার জায়গার ইস্যু নিয়ে কথা বলছি। এখানে অন্য কোনো দাবি যোগ করলাম কি করলাম না তার উপর সমর্থন করা কেন নির্ভর করবে? আর বিষয় তো অনেকই আছে। সেখানে অনেক রাজনৈতিক মতবিরোধও থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রথম যে বিষয়টি এসেছে সেটি হচ্ছে আমরা কোনো রাজনৈতিক ইস্যু এখানে আনবো কি না? কিন্তু আমরা শুরুতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেহেতু কোনো রাজনৈতিক দলকেই কোনোভাবেই ডাকছি না। বিশেষ করে জাতীয় রাজনীতিকেও আমরা স্বাগত জানাইনি। যখনই রাজনৈতিক এজেন্ডা এখানে যোগ করবো তখনই একটা মতবিরোধ তৈরি হবে। আর তাই শুরু থেকেই আমাদের অবস্থান ছিল এখানে আমরা কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা আনবো না।
আর শাহবাগের রাস্তা বন্ধ করার বিষয়ে বলতে চাই, অনেকেই এ আন্দোলনকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ বলতে চাচ্ছেন। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা এখানে এসেছেন তাদের বক্তব্যেই তারা বলেছেন এটাও একটা যুদ্ধ। আমরা বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়নের যে আন্দোলন সে আন্দোলনে একটু সেক্রিফাইস করতে হয়। যে কোনো আন্দোলন আপনি যেখানেই করেন কিছু আপনাকে সেক্রিফাইস করতেই হবে। এখানেও সাধারণ মানুষসহ নগরবাসীরা মূলচত্বর নিয়ে একটু ভোগান্তি হলেও মেনে নিচ্ছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা- আমরা কিন্তু ছেড়ে দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সাধারণ মানুষ না ছাড়লে আমরা কি করতে পারি।
শুরু থেকে যে কোনো কিছুরই কিন্তু একটা এক্সিট স্ট্র্যাটেজি থাকা উচিত।  আপনি যদি বের হতে না পারেন তবে সেটা আত্মঘাতী হয়ে পড়বে। এই আন্দোলনের এক্সিট স্ট্র্যাটেজিটি কি হবে? এ প্রশ্নে ইমরান বলেন, যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতেই আমরা রাজপথে এসেছি। তাদের বের হওয়ার যে ফাঁকফোকরগুলো বন্ধ করতেই আন্দোলন করছি। তবে সে ফাঁকফোকর বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের টপ যুদ্ধাপরাধীদের যদি শাস্তি কার্যকর হয়ে যায় তখন ধীরে ধীরে আন্দোলনটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের দিকে মোড় নেবে। আমাদের দেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলন কিন্তু সবসময়ই শক্তিশালী ছিল। ধীরে ধীরে দেশজুড়ে বাঙালির যে চেতনা সে জায়গায় সাংস্কৃতিক আন্দোলন নিয়ে যেতে পারি। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমেই এ চেতনাকে মজবুত করা সম্ভব হবে। যে চেতনায় আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি সে চেতনাটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করতে পারবে। মূলত এক্সিট বিষয়ে বলতে গেলে, এখন আমরা এমনভাবে আন্দোলনে সম্পৃক্ত সেখান থেকে কোনো কিছু বলা কঠিন। তবে ধাপ বদলাবে। এখন তো দ্বিতীয় ধাপ চলছে। ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। সারা দেশে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। ধীরে ধীরে আমাদের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা খুব শিগগিরই অরগানাইজড হয়ে যাবো। আমাদের যারা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, আমাদের মূল দাবিগুলোর যদি বেশিরভাগ শিগগিরই আদায় হয়, তখন এক্সিট আরও সহজ হবে। এক্সিট নয়, মূলত পরের ধাপে চলে যাওয়া। তবে এতোগুলো মানুষকে একসঙ্গে একটা সিদ্ধান্তের ভেতর নিয়ে আসা দূরহ ব্যাপার।
আমরা কিন্তু অহিংস আন্দোলন করছি। জনতাই আমাদের শক্তি। সেই শক্তিই এই আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখবে।

Year-20 # Issue-02 # 24 February 2013


Year-20 # Issue-01 # 17 February 2013