Year-20 # Issue-04 # 10 March 2013

সমরাঙ্গণের নারীদের মতোই যুদ্ধ করছেন নারী প্রসিকিউটররা

সমরাঙ্গণের নারীদের মতোই যুদ্ধ করছেন নারী প্রসিকিউটররা
বাম থেকে: নুরজাহান বেগম মুক্তা, ফাতিমা জাহাঙ্গীর চৌধুরি, ড. তুরিন আফরোজ ও সাবিনা ইয়াসমিন খান
ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমে অংশ নিয়ে একাত্তরের সমরাঙ্গণের নারীদের মতই যুদ্ধ করছি। মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোতে নারীদের যে ভোগান্তি, নির্যাতন ও মানুসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়েছে তার বদলা হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাতে হয় সে লক্ষ্যে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এটাই আমাদের নতুন যু্দ্ধ। বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নারী প্রসিকিউটররা।
ট্রাইব্যুনালে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা কার্যক্রম থেকে শুরু করে আদালতে মামলা লড়া পর্যন্ত সবকাজেই নিয়োজিত রয়েছেন এই পাঁচ নারী প্রসিকিউটর। এরা হচ্ছেন নুরজাহান বেগম মুক্তা, ড. তুরিন আফরোজ, সাবিনা ইয়াসমিন খান, রেজিয়া সুলতানা ও ফাতিমা জাহাঙ্গীর চৌধুরি । 
মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনে দুই লাখেরও বেশি নারী তাদের সম্ভ্রম বিকিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। প্রসিকিউশনে গুরু দায়িত্ব পালন করা এই নারী প্রসিকিউটররা নিজেদের সেইসব নারীর প্রতিনিধি হিসেবেই মনে করেন।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে নারীর সম্পৃক্ততা তুলে ধরতে কেবল নির্যাতীতা নারীর চিত্রায়ন করলে চলবে না। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের নারীরা মোটামুটি তিনভাবে অংশ নিয়েছিলেন। সরাসরি সমরাঙ্গনে অস্ত্র হাতে শত্রুদের মোকাবেলা করেছেন তারা। যুদ্ধের সময়টিতে পরিবার, সমাজ, তথা অর্থনীতিও নারীদের হাতেই পরিচালিত হয়। পুরুষরা যুদ্ধে যাওয়ার পর রেখে যাওয়া পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে সামলাতে হত নারীদেরই। তখন পরিবারের সামাজিক, অর্থনৈতিক দেখাশুনাও নারীকে করতে হয়েছে।
আবার সেই সময়টা শুধূ পরিবারের সদস্যদেরকে নয় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আশ্রয় দিয়ে, তাদেরকে রান্না করে খাইয়ে, আহতদের সেবা করেও নারীরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। আবার এই নারীরাই নির্যাতীত হয়েছেন হায়েনাদের হাতে। এটাও এক ধরনের যুদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘একজন অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত মা সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোতেও কিভাবে নিজের পরিবারের পাশাপশি অন্যকে আশ্রয় দিয়েছেন, দৈন্যের মাঝেও টিকে থেকেছেন সেসব গল্প আমাদের সাহিত্যে উঠে আসে না। মূল্যায়ণ হয় না সেদিনের নারীদের সমরাঙ্গণে লড়ার বীরত্বকেও।’
প্রসিকিউশনের সদস্য হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পান তুরিন আফরোজ। তিনি বলেন, ‘এত বছর পরে এই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমে আমরা যেসব নারীরা কাজ করছি। রিসার্চ থেকে শুরু করে কোর্টে মামলা লড়া পর্যন্ত সবকিছুই করছি। যখন আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াই আমাদেরও মনে হয় যেনো সমরাঙ্গণের সেই নারীদের মতই যুদ্ধ করছি।
প্রতিকী অর্থে বলা হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া আমাদের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। যদিও সময় এবং অবস্থার প্রেক্ষাপট আলাদা। তবু বলব সেই যুদ্ধাপরাধের আসামিদের অভিযোগের প্রমাণগুলো সন্দেহের উর্ধ্বে প্রমাণ করার জন্য আমরাও কাজ করে চলেছি।’
তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আমাদের একাত্তরের স্মৃতি জেন্ডার ইস্যুতে খুবই স্পর্শকাতর। সে সময়ে বিভিন্ন বয়সের দুই-চার লাখ নারী নির্যাতীত হয়েছিল। যে কোন যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয় নারীরা। প্রতিপক্ষের পুরুষত্বের ওপর আঘাত আনতেই তাদের নারীর ওপর নির্যাতন করা হয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও নারীদেরকে একইভাবে ধর্ষণসহ নানা ধরনের যৌন নিপিড়নের শিকার হতে হয়।
সেই সব কাজে যারা সহযোগিতা করেছেল প্রায় ৪২ বছর পর তাদের বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকতে পারা বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার, বলেন তুরিন।
তিনি বলেন, ‘নির্যাতীত নারীদের সংখ্যা নিয়ে আজ খেলা চলছে। শর্মিলা বসু এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ যুদ্ধের সময় তিনি এ দেশেই ছিলেন না। কিভাবে তিনি জানবেন কেমন করে কত নিষ্ঠুরভাবে এদেশের মা-বোনদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যুদ্ধের পর হামিদুর রহমান কমিশনের যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় সেখানেও নারীদের উপর নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়নি। তবে সংখ্যার ক্ষেত্রে ব্যাপক তারতম্য আনা হয়। এর প্রেক্ষিতে আমি বলব, একটি ধর্ষণ হলেও সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ। সেই একটিরই বিচার করতে হবে। আমাদের আবেগের জায়গাটি এখানেই ‘
তুরিন আরও বলেন,  ‘এদেশের জন্ম লগ্নে যে গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ সংঘঠিত হয়েছে তা অস্বীকার করা এক ধরনের অপরাধ। যারা এসব অস্বীকার করবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে সরকারের আইন করা উচিত। ’

ট্রাইব্যুনালেও কাজটি মোটে সহজ নয়, বলেন তুরিন আফরোজ। তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে যে সব নারী সাক্ষ্য দিতে আসেন তাদেরকে ৪২ বছর আগের দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয়। যা তিনি বহু বছর ধরে ভুলতে চেষ্টা করেছেন সেই অধ্যায়টিকে নতুন করে খুলতে হয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে যদি কোন নারী এসে ট্রাইব্যুনালে বলেন যে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভিকটিম তাহলে তাকে আর কোন প্রশ্ন করা উচিত নয়। সেই সাহসী নারীর সম্মানার্থে সেটুকু বক্তব্যকেই তার সাক্ষ্য ধরে নেওয়া উচিত।’
তুরিন ‍জানান, ‘বিদ্যমান দুটি ট্রাইব্যুনাল থেকে এ পর্যন্ত দেওয়া তিনটি রায়েই ধর্ষণের ব্যাপারটি এসেছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয় আদালত ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখলেও শাস্তির মাত্রা নির্ধারণে তারতম্য করছেন। একজন মানুষ খুন করলে যদি ফাঁসির অর্ডার হয় তাহলে ধর্ষণের জন্যও একই শাস্তি হওয়া উচিত।’
তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান বলেন, একজন মানুষকে হত্যা করলে তার পরিবার ও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত একজন মানুষকে হারায়। কিন্তু একজন নারীকে ধর্ষণ করলে সমাজে, পরিবারে সে প্রতিনিয়ত, প্রতিমুহুর্তে দগ্ধ হয়ে মরে। এজন্য ধর্ষণের শাস্তি আরো বেশি হওয়া প্রয়োজন এবং রায়েও তা স্পষ্ট করা উচিত। প্রসিকিউশনের গবেষক ফাতিমা জাহাঙ্গীর চৌধুরি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীরা যে অবদান রেখেছিলেন শত চেষ্টা করলেও আমরা তা শোধ করতে পারব না। তবে আমার অবস্থান থেকে তাদের সম্মানটুকু ফিরিয়ে দিতে যেটুকু অবদান রাখতে পারছি সেটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া।
তিনি বলেন, এখানে কাজ করতে এসে দেখেছি যেসব নারী এখানে সাক্ষ্য দিতে আসেন তারা বেশিরভাগই ষাটোর্ধ হলেও অত্যন্ত মানসিক শক্তিতে বলিয়ান। এটা দেখে নিজের মধ্যে অদ্ভুত এক শক্তি জাগে। এই সাহসী নারীদের প্রতি সবারই সম্মান জানানো উচিত।
শুরু থেকেই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকউশনের টিমে থাকা আরেক প্রসিকউটর নুরজাহান বেগম মুক্তা বলেন, ‘প্রসিকউটর হিসেবে আমি যেখানে কাজ করছি সেখানে সাহসী হতেই হয়। এখানে কাজ করা বর্তমান সময়ের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও সব ঝুঁকিকে তুচ্ছজ্ঞান করে আমি যুদ্ধাপরাধী নিধনের কাজ করে যাচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে এটি অনেক বড় পাওয়া।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে নারীরা যেভাবে নির্যাতীত হয়েছিলেন তার বিচার ৪২ বছর ধরে গুমরে কেঁদেছে। অনেক গ্লানি জমেছে। এখন সেটার ফল আসতে শুরু করেছে। যুদ্ধাপরাধদের বিচার চলছে। সেখানে আমি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছি। এটা গৌরবের।’

নুরজাহান বেগম বলেন, ‘নারী যোদ্ধাদের সাক্ষ্য তত্বাবধানের সময় যখন তাদের অশ্রুভেজা চোখে, প্রতিবাদী কণ্ঠে বর্ণণা শুনি তখন মনে হয় আমিও তাদের সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিযে বীর বেশে ফিরে এসেছিলেন। আজ তার সন্তান সম্মুখ সমর না করলেও আইনি যুদ্ধ করছে। এটা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার যুদ্ধ। এখানে আমরা বিজয়ী হবই।’

প্রতিক্রিয়া: কোথায় সে রমণী বীর্যবতী?

প্রতিক্রিয়া: কোথায় সে রমণী বীর্যবতী?
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের নিউজরুম এডিটর আসিফ আজিজের লেখা ‘এই নারী কি বাঙালি নারী!!’ শীর্ষক লেখাটি পড়লাম। নারীর পণ্যীকরণের এই সময়ে তাঁর এই সচেতন প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই।
বাঙালি নারী সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে লেখক অম্বুজাসুন্দরী নামের একজন নারী কবির কবিতা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রাঙ্গদা’ থেকে উদাহরণ টেনেছেন। উদাহরণগুলোর পেছনে তাঁর নিজস্ব ব্যাখ্যাও রয়েছে। বেসরকারি টেলিফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপনচিত্রে নারীর ভূমিকার নেতিবাচক উপস্থাপনকে প্রশ্ন করতে গিয়ে বাংলা সাহিত্য থেকে উদ্ধৃতি দেওয়ার বিষয়টিও প্রশংসার দাবিদার।
বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্র, নাটক ইত্যাদির মতো সাহিত্যও সমাজ থেকেই উঠে আসে। ফলে সাহিত্যও সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। অম্বুজাসুন্দরীর লেখায় নারীর রমণীয়তার গুণগান করা হয়েছে। মানছি। কিন্তু কবির সময় ও পারিপার্শ্বিকতার বিচার করলে দেখা যাবে- ঐ সময়ে নারীর জন্য পড়া এবং লেখার অধিকার বা সুযোগ পাওয়াই কঠিন ছিল। অবরোধ কেবল নারীর শরীর ও চলাফেরায়ই নয়—বরং মতামত প্রকাশের উপরও ছিল। ফলে নারীর প্রথাগত ভূমিকাকে প্রশ্ন করার মতন বাস্তবতা তখন ছিল না। এ প্রসঙ্গে আমরা স্মরণ করতে পারি কবি জীবনানন্দ দাশের মাতা কুসুমকুমারী দাশের সেই বিখ্যাত লাইনগুলো- ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?’ আমরা এখন যতই ‘কন্যাশিশু’ নিয়ে সচেতন থাকি না কেন ঐ সময়ে ‘সন্তান’ এর সমার্থক ছিল ‘ছেলে’, ‘মেয়ে’ নয়।
এবার আসি চিত্রাঙ্গদা প্রসঙ্গে। এই লেখায় চিত্রাঙ্গদার যে লাইনগুলো উদ্ধৃত করা হয়েছে তার নারীবাদী গুরুত্ব আপাতভাবে রয়েছে। কিন্তু আর একটু গভীর পাঠে গেলে দেখবো এমন অনেক অংশ রয়েছে যেখানে রবীন্দ্রনাথের নারীবাদী সচেতনতাকেও ঐ সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনায় আনতে হবে। যেমন- অর্জুন বলছে ‘আগ্রহ মোর অধীর অতি, কোথা সে রমণী বীর্যবতী’। ‘বীর্যবান’ শব্দের সঙ্গে আমরা পরিচিত। শক্তি ও সাহস বলতে ‘বীর্য’ শব্দের প্রয়োগ হয়েছে, ‘সিমেন’-এর বাংলা নয়। ফলে রবীঠাকুর এখানে ‘বীর্যবতী’ বলে শরীর শক্তিমান ও সাহসী ভূমিকার নতুন নাম দিয়েছেন। তিনি একটি প্রণাম পেতেই পারেন। আবার, চিত্রাঙ্গদা বলছে- ‘কি ভাবিয়া মনে নারীতে করেছ পৌরুষ সন্ধান’ অথবা- ‘ছি ছি কুৎসিত কুরূপা যে’- এতে চিত্রাঙ্গদা নিজেই নারীর রমণীয় ভূমিকার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এই পক্ষে রবিঠাকুর নিজেও আছেন। ফলে লেখকের উদাহরণ টানা বৃথা গেছে এ কথা বলা যাচ্ছে না।
সাহিত্য যেমন জীবনের মহান বোধ থেকে তৈরি হয়, বিজ্ঞাপন তেমন নয়। বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য একটি পণ্যের বিক্রয় ও মুনাফা নিশ্চিত করা। সেই হিসেবে সবচেয়ে সফল বিজ্ঞাপন হয় সেই বিজ্ঞাপন যে কিনা তার পণ্যের বিক্রয় বাড়িয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল বিজ্ঞাপন হচ্ছে ‘ফিলিপস’ বাল্বের বিজ্ঞাপন। আমাদের অনেকেরই মনে আছে ‘মাছের রাজা ইলিশ, বাতির রাজা ফিলিপস’। এই বিজ্ঞাপন শুধু জনপ্রিয়তার নিরিখে নয়, পণ্য বিক্রির নিশ্চয়তার হিসেবেও সফলতম। বিজ্ঞাপন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত আছেন এমন বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি এই বিজ্ঞাপনকে পেছনে ফেলতে পেরেছে ইদানীংকালের আরসি কোলার বিজ্ঞাপন ‘কন্যা ফিরা চাও’- গান সমেত মডেল নোবেল ও ভারতীয় একজন নাম না জানা মডেলের নাচানাচি সমৃদ্ধ বিজ্ঞাপনটি। একই সঙ্গে জনপ্রিয়তা ও পণ্য বিক্রির নিশ্চয়তা দিয়ে বিজ্ঞাপন জগতে ক্লাসিক হয়ে গেছে। যেহেতু ‘বিজ্ঞাপনের ইতিহাস’ বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা হয়নি- ফলে নির্মাতা বন্ধুদের দেয়া তথ্যের উপর নির্ভর করলাম।
সফলতম এই দুটি বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু কি ছিল- একটু মনে করি। প্রথমেই দেখা যায় একটা গ্রামের পরিবেশে একটি অল্প বয়সী ছেলে কাটা ডাব হাতে আতিথেয়তা করতে তার ভগ্নিপতিকে জিজ্ঞেস করছে- ‘দুলাভাই, তয় কি মাছ আনমু?’ ‍দুলাভাই একটু ভেবে বলেন- ‘ইলিশ মাছ আনিস’। পরে দুলাভাই ঝাপসা বাতিতে ‘কাটাকুটা কিচ্ছুই দেহি না’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করায় ‘ফিলিপস’ বাতি সে যাত্রায় জামাইয়ের সামনে শ্বশুরবাড়ির মুখ রক্ষা করে।
দ্বিতীয় বিজ্ঞাপনে প্রেমিক তার প্রেমিকার মান ভাঙাতে আরসি কোলা নিয়ে আসে। সঙ্গে এও বলে ‘আরসির মজা কত, তোমার মত যখন যেমন চাই- সুখে দু:খে মনের মত সঙ্গী তারে পাই।’
দুটো বিজ্ঞাপনেই পুরুষতান্ত্রিক আদর্শ স্পষ্ট। মেয়ের জামাই হচ্ছে পরিবারের সবচেয়ে আদরের সদস্য। সে বাদে বাকি সবাই অর্থাৎ স্ত্রীর পরিবারের সবাই নারীর প্রতিনিধিত্ব করছে। ফলে, তাদের অবস্থান নারীর মতোই দ্বিতীয় মাত্রার। তাদের লৈঙ্গিক পরিচয় এখানে মুখ্য নয়। উল্টোটাও সত্যি- বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘ছেলের মা’ পুরুষের প্রতিভু। তাঁর ক্ষমতার সীমা নাই। ‘কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা’ ততটাই ক্ষমতাহীন।
‘আরসি কোলা’র ক্ষেত্রে নারীকে সরাসরি পণ্যের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এ নিয়ে আর কোনো ব্যাখ্যায় যাবার প্রয়োজন বোধ করছি না। এমন সব বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের গণমাধ্যম পরিপূর্ণ। ‘ডাবল কোলা’ নামক একটি পানীয়ের বিজ্ঞাপনে নায়ক ফেরদৌসকে দুইজন নারীর সঙ্গে নাচানাচি করতে দেখা যায়- বলা হয় ‘ডাবল ইয়োর প্লেজার’। গ্রামীণ ফোনের বিজ্ঞাপনে দেখা যায় ক্ষমতাহীন নারী তার স্বামীর জুতাজোড়া বৃষ্টি এলে তুলে রাখছে। তার একটি ফোন করারও অধিকার নেই। সে কেবল ফোন আসার অপেক্ষা করে।
এ ধরনের বিজ্ঞাপনের উদাহরণ দিতে থাকলে এই লেখার দৈর্ঘ্য কেবল বেড়েই যাবে। সেই চেষ্টা না করি। আদতে বিজ্ঞাপন চেষ্টা করে মানুষের কাছে মেসেজ পৌঁছাতে। যদিও আলাদা আলাদা পণ্যের আলাদা আলাদা টার্গেট গ্রুপ থাকে, বিজ্ঞাপনের টার্গেট অডিয়েন্সও আলাদা হয়- কিন্তু দর্শক তো সবাই, ফলে সমাজের মূল স্রোতের মতাদর্শকেই বিজ্ঞাপন প্রতিফলিত করে। একটা বাংলালিংক, একটা গ্রামীণ ফোন, একটা আরসি কোলা অথবা একজন সরোয়ার ফারুকী, একজন অমিতাভ রেজা এই ক্ষেত্রে সমালোচনার মুখে পড়তেই পারেন। কিন্তু সেটা কোনো সমাধান নয়।
সমাজের মূল ধারায় যে পুরুষাধিপত্যবাদী আদর্শ বয়ে যায়- সেই স্রোতটাকে সনাক্ত করতে পারা এখানে জরুরি। লেখকের শ্লেষাত্মক বাক্যবিন্যাস উদ্ধৃত করার প্রয়োজন বোধ করছি-
“আমাদের দেশের নারীবাদীরা মেরি ওলস্টোনক্রাফট, ভার্জিনিয়া উলফ, সিমোঁ দ্য বুভোয়া, হেনরিক ইবসেন, বেগম রোকেয়া পাঠ করে তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে নারীর অধিকার রক্ষায় আলোচনার টেবিল, মাঠ গরম করেন। বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে প্রদর্শনের জন্য সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেন। কিন্তু একটি বিজ্ঞাপনে যখন নারীর চরিত্রে কাণ্ডজ্ঞানহীনতা ও নির্বিবেক স্বার্থপরতা চাপিয়ে দিয়ে নারীকে হেয় করা হচ্ছে, ছোট করা হচ্ছে, এক অর্থে অপমান করা হচ্ছে, তখন কেন তারা চুপ করে বসে আছেন? আমাদের মা, বোনদের মধ্যে কি আমরা এই চরিত্র দেখি? পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব নিশ্চয় আমাদের সমাজে পড়েছে। কিন্তু নারীর এই রূপ আমরা আসলেই কি গড়পড়তা নারীদের মধ্যে দেখি? নিশ্চয় ‘না’ বলবেন।” প্রথমত, এই দায় কেবল নারীবাদীদের নয়, সবার। এটা রোকেয়ার যুগ নয় যে একজন নারীশিক্ষার প্রবর্তন করবেন, নারী অধিকার রক্ষায় জীবনপাত করে দেবেন- বাকিরা সেটার ফল ভোগ করবেন। নারী সব সময় সব রকম আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। কেউ চুপ করে বসে নেই। দ্বিতীয়ত, লেখক উল্লিখিত বিজ্ঞাপনে নারীর অবমূল্যায়ন নয়, বরং বাঙালি নারীর ‘পতিব্রতা’ ইমেজ নষ্ট করার প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। বিনীতভাবে বলতে বাধ্য হচ্ছি- ‘পতিব্রাত্য’ নিজেই একটি পুরুষতান্ত্রিক আদর্শ/ধারণা- পতিব্রাত্যের ধারণা ভেঙে ফেলা নারীর জন্য উপকারীই। নারী ‘পতিব্রতা’ হবেন সেটা সমাজ ঠিক করে দেয়। সমাজের এই নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধেই নারীবাদীদের অবস্থান। আমি বলছি না এই বিজ্ঞাপনটি ভালো। কিন্তু লেখককে তাঁর অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে অনুরোধ করছি। তৃতীয়ত, নারীর রমণীয়তা একটি আরোপিত বিষয়। নারী কতটুকু ‘রমণীয়’ (রমণযোগ্য?) থাকবেন, কতটুকু ‘বীর্যবতী’ হবেন তা অন্য কেউ ঠিক করে দেবে না। সেট ঠিক করবে ব্যক্তি নারী। সেটা নিশ্চিত হলেই কেবল মুক্তি সম্ভব। তার আগে নয়।

রবি’র ফ্যান পেজে কণার সঙ্গে আড্ডার সুযোগ


রবি’র ফ্যান পেজে কণার সঙ্গে আড্ডার সুযোগ
তারকা-শিল্পী সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে চান দর্শক-শ্রোতা-ভক্তরা, বুঝতে চান প্রিয় তারকা কেমন, কীভাবে কথা বলেন, কীভাবে তাকে করা প্রশ্নের জবাব দেন, প্রিয় শিল্পীকে নিয়ে নানা কৌতুহল, নানা জিজ্ঞাসা।
আর সে সব প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসার জবাব পেতে  জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কণার সঙ্গে ফেসবুকে সরাসরি ফেসবুকে আড্ডার এক অপূর্ব সুযোগ করে দিতে যাচ্ছে মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড। শনিবার রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সঙ্গীত তারকা কণার সঙ্গে সরাসরি চ্যাট করার  সুযোগ পাবেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। জনপ্রিয় এ কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গে চ্যাট করতে যে কেউ ফেসবুকে রবি ফ্যান পেজে লগ ইন করতে পারবেন। বলতে পারবেন মনের কথা, জানাতে পারবেন অভিব্যক্তি। জিজ্ঞাসা করতে পারবেন তার পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কেও। রবি সম্প্রতি তরুণদের জন্য বিভিন্ন উদ্ভাবনী সেবা চালু করেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন