Year-18 # Issue-41 # 27 November 2011

পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দর্শনার্থীদের মন কেড়েছে চাখার শেরে বাংলা জাদুঘর ও গুঠিয়া বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্স
আনিসুর রহমান
পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে জাতীয় ভাবে স্বীকৃতি না পেলেও এরই মধ্যে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নিযেছে চাখার শেরে বাংলা জাদুঘর ও গুঠিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদ-ঈদগাহ কমপ্লেক্স। প্রতিদিন এ দু’টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে শত শত লোকের ভীড় জমে। বানারীপাড়ার চাখারে শেরে বাংলার নিজ ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত যাদুঘরে তার ব্যবহৃত জিনিস পত্র দেখতে নিয়মিত দর্শনার্থীদের ভীড় দেখা যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা শেরে বাংলার হাতের লেখা ও পারিবারিক পরিচিতি দেখতে ও জানতে পারেন। চাখার জাদুঘর নির্মানে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শেরে বাংলার বাড়ী পরিদর্শন ও সরকারী ফজলুল হক কলেজের এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে শেরে বাংলার নামে যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার ঘোষনা দেন। সে অনুযায়ী চাখারে শেরে বাংলার নিজ ভূমিতে একটি যাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে জাদুঘরটি জাতীয় ভাবে স্বীকৃতি কিংবা আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধন করা হয়নি। যদিও জাদুঘরটি খুলনা প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রন করছে। অপরদিকে গুঠিয়া বাইতুল আমান জামে মসজিদ-ঈদগাহ্ কমপ্লেক্্ের  প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভীড় জমে। এখানে ঈদ কোরবানি ছাড়াও বিশেষ কোনদিনে উপচে পড়া দর্শনার্থীদের দেখা যায়। একই ভাবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সরকারী- বেসরকারী অফিসের কর্মচারীরা বনভোজনে আসে। ঈদ ও কোরবানীতে প্রিয়জনদের সাথে নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক মানুষ আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে দিন কাটায়। ঈদের দিন গুঠিয়া বাইতুল আমান জামে মসজিদ ঈদগাহ্  কমপ্লেক্স-এ প্রায় ২০ হাজার মুসল্লীরা ঈদের পৃথক দু’টি জামাতে অংশ নেয়। ওই দিন বিকাল ২ টার পর থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে মুখোরিত হয়ে ওঠে। একটানা ৩ দিন এ অবস্থা বিরাজ করে। ২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর উজিরপুরের গুঠিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষানুরাগী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এস. সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু চাংগুরিয়ার নিজ বাড়ির সামনে প্রায় ১৪ একর জমির উপর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে গুঠিয়া বাইতুল আমান জামে মসজিদ-ঈদগাহ্ কমপ্লেক্স এর নির্মান কার্যক্রম শুরু করেন। উক্ত নির্মান কাজের আর্কিটেক্ট ছিলেন, ইনটেক লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জাকির হোসেন মিলন। তার ডিজাইন অনুযায়ী ৩ বছর মেয়াদের মধ্যে উক্ত নির্মান কাজ বাস্থবায়নের দায়িত্বে ছিলেন এস. সরফুদ্দিনের ছোট ভাই মোঃ আমিনুল ইসলাম নিপু। তিনি ২০০৬ সালে উক্ত জামে মসজিদ- ঈদগাহ্ কমপ্লেক্্র নির্মান কাজ সম্পন্ন করেন। তার নির্মানাধীন সময়কালের মধ্যে তিনি একটি বৃহৎ মসজিদ-মিনার, ২০ হাজার অধিক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ঈদগাহ্ ময়দান, একটি ডাকবাংলো নির্মান, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, লেক-পুকুর খনন কাজ সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন-ফুল বাগান তৈরি ও লাইটিং ব্যবস্থা সম্পন্ন করেন। ওই নির্মান কাজে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার নির্মান শ্রমিক কাজ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়। উক্ত নির্মান কাজ শেষে ওই  বছরের ২০ অক্টোবর ছারছীনা দরবার শরীফের পীর হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্ধোধন করেন। এরপর থেকেই সেখানে বিভিন্ন এলাকার  শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে আশা শুরু করে। এছাড়াও প্রতিদিন জেলা শহর ও পাশ্ববর্তী উপজেলা থেকে গুঠিয়া বাইতুল আমান জামে মসজিদ-ঈদগাহ্ কমপ্লেক্সে প্রতিনিয়ত অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় জমায়। দর্শনার্থীরা সেখানের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের নিরাপত্তার জন্য সেখানে একটি পুলিশ ক্যাম্প ও নিজস্ব গার্ডের ব্যবস্থা করেছে। তবে উক্ত প্রতিষ্ঠান নির্মানের ক্ষেত্রে কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা জানা যায়নি। 


সিন্ডিকেটের কব্জায় চামড়া শিল্প
৬ হাজার কোটি টাকার বাজার হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা
মো. রেজাউর রহিম
সিন্ডিকেটের কব্জায় চলে গেছে দেশের চামড়া শিল্প। গত কোরবানির ঈদের পর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ, সংগ্রহ, দালাল ফড়িয়াদের দৌরাÍ্য এবং ট্যানারি মালিক ও রফতানিকারকদের রহস্যজনক ভূমিকায় এ শিল্প আবারও বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার মার্কেট হাত ছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ইউরোপ এবং আমেরিকার অর্থনীতিতে মন্দাবস্থা বিরাজ করায় এ শিল্পে দিন দিন ঝুঁকি বাড়ছে। অপরদিকে, রফতানিমুখী শিল্প হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে ঝুঁকি বাড়লেও আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে দেশে চামড়া পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে না। চামড়া থেকে ব্যবহারযোগ্য পণ্য সামগ্রী তৈরিতে দেশে সেরকম কোন শিল্পেরও বিকাশ ঘটেনি। এতে ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও দেশে চামড়া শিল্পের সম্প্রসারণ হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ লেদারগুডস এন্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বাংলাদেশ সময়’কে বলেন, চামড়া শিল্পের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল দেশেই পাওয়া যায়। আর পাদুকা ও অন্যান্য পণ্য তৈরিতে উৎপাদিত পাকা চামড়ার মাত্র ৫০ শতাংশ ব্যবহƒত হয়। সেদিক থেকে চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের প্রসার দ্বিগুণ করা সম্ভব। দেশের যেকটি চামড়াজাত পণ্য বিদেশে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করেছে, তার অন্যতম হচ্ছে পাদুকা। প্রতিবছরই পাদুকা রফতানি থেকে আয় বাড়ছে। তাছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে পাদুকা রফতানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ । রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছর প্রক্রিয়াজাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি থেকে আয় ছিল ৩৫ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এই আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৫ কোটি ৩২ লাখ ডলার। এর আগের অর্থবছরে রফতানি আয় হয় ১৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। তবে চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আয় হয়েছে ৯ কোটি ২৮ লাখ ডলার, যা এই প্রান্তিকের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। বিশ্বজুড়ে নতুন করে শুরু হওয়া অর্থ মন্দার কারণে গত ২ মাস ধরে চামড়ার দাম কমছে। ২ মাস আগে দেশের ব্যবসায়ীরা প্রতি বর্গফুট প্রক্রিয়াজাত চামড়া দুই ডলার ২০ সেন্টে বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন এর দর নেমে গেছে ১ ডলার ৮০ সেন্ট থেকে ১ ডলার ৯০ সেন্টে। চামড়া শিল্পোদ্যোক্তাদের মতে, দেশের অন্যতম প্রধান খাত- চামড়া শিল্প টিকে আছে শুধুমাত্র রফতানির ওপর নির্ভর করে। আন্তর্জাতিক বাজারে এর আর্থিক মূল্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিশ্ব অর্থমন্দাসহ অভ্যন্তরীণ নানা সঙ্কটে দেশের রফতানিমুখী এ শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। গত দু’বছরে চামড়া রফতানি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। জানা গেছে, কোরবানি ঈদে সারাদেশে প্রায় দেড় কোটি পশু জবাই করা হয়। গরু, মহিষ, ভেড়া এবং খাসির চামড়া থেকেই সারা বছরের কাঁচা চামড়ার জোগানের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সংগ্রহ হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে কোরবানির পশুর চামড়ার সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করেন ট্যানারি মালিক ও ব্যবসায়ীরা। তিন-চার বছর ধরেই এ অবস্থা চলে আসছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের উত্থান-পতনের কারণে গত কোরবানির ঈদে গরু, খাসি ও খাসির চামড়া সংগ্রহে কোন মূল্য নির্ধারণ করেননি ব্যবসায়ীরা। ফলে স্থানীয় ফড়িয়া, দালাল, মাস্তান এবং রাজনৈতিক নেতারা অল্প দামে চামড়া ক্রয়ের সুযোগ নেয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা নেই এই অপপ্রচারের সুযোগ নিয়ে অপেক্ষাকৃত অনেক কম মূল্যে চামড়া সংগ্রহ করা হয়। এদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম হ্রাস পেলেও এ থেকে তৈরি পণ্য সামগ্রীর দাম কমেনি। বরং চামড়ার তৈরি জুতা, স্যান্ডেল, ব্যাগ, বেল্ট, পার্স, মানিব্যাগ, পোশাকসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। আর আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বাটা সু এবং এপেক্স গ্যালারীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চামড়ার তৈরির পণ্যসামগ্রীর দাম ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। জানা গেছে, গত দু’বছরে বাটা’র তৈরি জুতা-স্যান্ডেলের দাম কোন কোন ক্ষেত্রে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। অর্থাৎ একদিকে কাঁচা চামড়ার দাম কমছে, অন্যদিকে চামড়ার তৈরি পণ্য সামগ্রীর দাম ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চামড়া শিল্পের সম্প্রসারণ ঘটলে আন্তর্জাতিক বাজারে  এ শিল্পের বিপর্যয়ের ধকল ঠেকানো সম্ভব। যার মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি সম্ভব বলে মনে করেন তারা।  

 খুলনার মহাসমাবেশে খালেদা জিয়া
রোডমার্চের পরেই গণবিপ্লব ঘটবে
 
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, রোডমার্চে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এই গণজাগরণ থেকেই গণবিপ্লব ঘটবে। তিনি বলেন, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এবার যুদ্ধ করে স্বাধীনতা রক্ষা করব। কেবল রোডমার্চের পরে সরকার দমনের যে কর্মসূচি দেব তাতে আপনাদের অংশ নিতে হবে। গতকাল রোববার রোডমার্চের দ্বিতীয় দিনে খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে আয়োজিত জনসভায় বেগম খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। এর আগে যশোরের ঈদগাহ মাঠে এক পথসভায় বক্তব্য দিয়ে তিনি সরাসরি বাগেরহাটের খানজাহান আলীর (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। সেখান থেকে সার্কিট হাউজ মাঠের মঞ্চে উঠেন। রাস্তায় ভিন্ন ভিন্ন বয়স পেশার উৎসুক জনতা ও নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। বেগম জিয়াও জনতার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন। এসময় বসুন্দিয়া ও নওপাড়া, ফুলতলা, বাগেরহাটে বিশাল মানবপ্রাচীরের সৃষ্টি হয়। বিএনপির এই নেতার আগমন উপলক্ষে ও রোডমার্চ কর্মসূচিকে ঘিরে নতুন সাজে সাজানো হয় গোটা খুলনা শহর। রোডমার্চের গাড়িবহর খুলনায় পৌঁছানোর দু’দিন আগেই রংবেরংয়ের ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ আর শো-ফ্ল্যাগে ছেয়ে যায় পুরো শহর। প্রায় ৪০ হাজার পোস্টার, ৩শ’ ডিজিটাল ফেস্টুন, একহাজার ব্যানার ও শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়। এছাড়া এই সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। সার্কিট হাউজ মাঠ ছাড়িয়ে জনসমুদ্র দক্ষিণে খানজাহান আলী রোড, উত্তরে হাজী কেডি ঘোষ রোড, খান এ সবুর রোড, পূর্বে হাজী মহসিন রোড ছাড়িয়ে যায়। প্রায় ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, রোডমার্চে হাজার হাজার মানুষ সরকারের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করেছে। দেশের মানুষ চায় এই স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতা থেকে সরে যাবে। দেশে সত্যিকারের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি এ পর্যন্ত যে কয়টা রোডমার্চ করেছি প্রতিটা রোডমার্চে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখেছি। তাই সরকার দিশেহারা হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী দিশেহারা হয়ে কাগজ কলম নিয়ে বসেছেন গাড়ির নম্বর হিসাব করতে। তিনি দেশের কোনো সমস্যা সমাধান না করে কেচি নিয়ে বসে আছেন যারা বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলবে তাদের বাড়ির লাইন কেটে দেবে। আর কাকে বাড়ি থেকে বের করবে তাই নিয়ে ব্যস্ত। খালেদা জিয়া বলেন, ফখরুদ্দিন মইন উদ্দিন সময় অনেকের নামে মামলা দেয়া হয়েছিল। তাদের সকল মামলা প্রত্যাহার করা হলেও আমাদেরগুলো হয়নি। বরং নতুন করে মামলা দেয়া হচ্ছে। সরকারকে বলব সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। জেলখানায় জামায়াত-বিএনপির যেসব রাজবন্দিকে আটক রাখা হয়েছে তাদের মুক্তি দিতে হবে। তারা যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তবেই সাজা পাবে। আগে কেন আটক রাখা হবে? তিনি বলেন, বিএনপি সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। ভবিষতেও করবে। সরকারের উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা প্রতিশোধের রাজনীতি করেন। কিন্তু বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতি করে না। আমরা উন্নয়নের রাজনীতি করেছি। এখন আপনারা যেহেতু এগুলো শুরু করেছেন তাই প্রকৃত অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায় সেদিকে আমরা খেয়াল রাখব। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সঙ্গে খুনি রয়েছে। মিলনকেই নয় অনেক বড় বড় লোককে হত্যা করেছে। স্বৈরাচারী এরশাদ এই ২৭ নভেম্বর ডাক্তার মিলনকে হত্যা করেছিল। মিলন হত্যাকারীকে পাশে নিয়ে গণতন্ত্র হবে না। স্বৈরাচারকে পাশে নিয়ে গণতন্ত্র চান। বিরোধীদল বানাতে চান। তা হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, এই সরকার খুলনার কোনো উন্নয়ন করেনি। এ অঞ্চলের রাস্তার কোনো উন্নয়ন হয়নি। তারা নাকি উন্নয়ন করে ভাসিয়ে দিয়েছে। আমি বলব তারা দুর্নীতির উন্নয়ন করেছেন। নিজেরা টাকা বানিয়েছে। খুলনা এক সময় ছিল শিল্প এলাকা। এখন শিল্প এলাকা বলা যায় না। মিলকারখানা সব বন্ধ হয়ে রয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে পুনরায় মিল কারখানা চালু করব। যাতে শ্রমিকরা কাজ করতে পারে।  খালেদা জিয়া বলেন, মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন এই দেশকে পিছিয়ে দিয়েছিল এই সরকার আরো পিছিয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই দেশ চালাতে অনেক কষ্ট হবে। তিনি বলেন, ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু দেয় নাই। বরং ছাঁটাই হচ্ছে। এমনকি সরকারি কর্মচারীদের ছাঁটাই করেছে। ৪৮০ জনকে ওএসডি করে রেখেছে। অথচ নিজেদের লোকদের দুইটা তিনটা প্রমোশন দিয়েছে। সামরিক বাহিনীতেও একই কাজ করা হয়েছে। যাদেরকে এরকম করা হয়েছে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের সবাইকে চাকরি ফিরিয়ে দেয়া হবে। যাদের অন্যায়ভাবে প্রমোশন দিয়েছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে। তিনি বলেন, কৃষকরা বিনামূল্যে সারতো পায়ই না বরং আমরা যেখানে ২৬০ টাকায় ইউরিয়া সার দিতাম সেখানে এখন এক হাজার ষাট টাকা। ধানকাটা হচ্ছে কৃষক ধানের দাম পাচ্ছে না। অথচ চাউলের দাম বেশি। সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনছে না। তিনি সরকারকে কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান কেনার আহ্বান জানান। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, এই সরকার দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, তাবেদার, মিথ্যাবাদী সরকার। তারা লুটপাট নিয়ে ব্যস্ত। রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টে বিনা টেন্ডারে কাজ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে সংসদে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। ফলে বারো হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। এই টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে তুলবে। ইতোমধ্যে তিনবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, রামপালে যৌথভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে। সেখানের জীবজন্তু পশু পাখি মারা যাবে। দেশ-বিদেশ থেকে এখানে অনেক পর্যটক আসে তাও আসতে পারবে  না। এখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেয়া যাবে না। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমি ও পরিবেশবিদেরা আপনাদের সঙ্গে থাকব। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ ও ইলেকশন কমিশনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। পুলিশ ও  সেনাবাহিনীসহ সব কিছু দলীয়করণ করা হয়েছে। এভাবে তারা একদলীয় সরকার কায়েম চায়। সেজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে। অথচ এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দিনের পর দিন হরতাল জ্বালাও পোড়াও করেছে। তিনি বলেন, আমি বিশাল এই জনসভায় বলে দিতে চাই আওয়ামী লীগের অধীনে এই দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, ভারতের জনগণের সঙ্গে জনগণের  বন্ধুত্ব থাকুক সেটা আমরা চাই। আর বন্ধুত্বের ভিত্তিতেই সব কাজ করতে চাই। তিনি আরে বলেন, আইলা উপদ্রুত এলাকার মানুষ কি কষ্টে আছে। সরকার কিছুই করেনি। বাধ করেনি। পুনর্বাসন করেনি। খুলনা এবং সাতক্ষীরায় আইলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করার জন্য সরকারের কাছে দাবি করছি। বাঁধ ও এর সাথে যাবতীয় সমস্যা সমাধান করতে হবে। এখনো সাতক্ষীরা ও খুলনায় জলাবদ্ধতা রয়েছে। এই জলাবদ্ধতা দূর না করলে কোনো ফসল হবে না। খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক নাজির আহমেদ, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম, বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান, মজিবুর রহমান সারোয়ার, ইলিয়াস আলী, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, চট্টগ্রাম মহানগর আমির আনম শামসুল ইসলাম এমপি, খুলনা মহানগর আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সকালে যশোরে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামছুল হুদার সভাপতিত্বে স্থানীয় ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত পথসভায় বক্তব্য রাখেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অযোগ্য ব্যর্থ ও অপদার্থ। তাই জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আওয়ামী না বিএনপি দেশ চালাবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জানে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এ কারণে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে নানা পাঁয়তারা শুরু করেছে। আবার ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের নামে ‘ভোট কারচুপির মেশিন’ আমদানি করেছে। কিন্তু এসব কিছুই ধোপে টিকবে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অধীনেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। এছাড়া সেনা মোতায়েন হলে নির্বাচনে জয়ী হতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বেগম জিয়া বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করেছিল বিধায় আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারেনি। কারণ তারা কারচুপি করতে পারেনি। তাই নায়ারণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করেনি। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম বাতিল, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল ও সেনা মোতায়েন করতে হবে। অন্যথায় সরকাকে সময়ের আগেই বিদায় নিতে হবে। সরকারের মন্ত্রীদের ব্যর্থতার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, এই সরকারের মন্ত্রীরা সব অপদার্থ। এরা কোনো কাজ জানে না। কোথায় কমিশন আছে; কোন কাজ করলে টাকা কামানো যাবে তাই নিয়েই এরা ব্যস্ত। খালেদা জিয়া আরও বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কথা বিশ্বব্যাংক ধরে ফেলেছে। তারা অর্থ দেয় বন্ধ করে দিয়েছে। তাই এই সরকারের আমলে পদ্মা সেতু নির্মাণ হবে না। এখন তারা দ্বিতীয় পদ্মাসেতুর নিমাণের কথা বলে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরাতে চাচ্ছে। খালেদা জিয়া প্রশ্ন তুলে বলেন, যারা একটাই পারে না, তারা দ্বিতীয়টা করবে কেমনে? বরং বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ২টি পদ্মা সেতু হবে। একটা মাওয়া আর একটা দৌলতিয়া রুটে। খালেদা জিয়া বলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা এখন খুবই খারাপ। প্রতিদিন ১২০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে সরকার দেশ চালাচ্ছে। এই ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোও উদ্বিগ্ন। এই অবস্থা চলতে থাকলে তারা দেউলিয়া হয়ে যাবে। আর তা হলে ব্যাংকে রাখা সাধারণ মানুষের টাকাও খোয়া যেতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, শিল্প-কল কারখানায় এই সরকার বিদ্যুৎ, গ্যাস এমনকি পানিও দিতে পারছে না। এ কারণে কল কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর ভারতে বড়লোকরা এই কলকারখানা কিনে নিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, বর্তমান সরকার দেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ভারত সরকার দীর্ঘদিন ধরে এর প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। এই সরকার সবই জানে। অথচ কখনই প্রতিবাদ করেনি। কিন্তু ভারতে কখনই এই বাঁধ নির্মাণ করতে দেয়া হবে না। দু’দেশের যৌথ সমীক্ষা করতে হবে। লাভ ক্ষতির হিসাব করে যৌথভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তার আগে নয়। তিনি আরো বলেন, ভারত আলোচনার মাধ্যমে এ বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও তলে তলে তারা সব কাজ সম্পন্ন করেছে। মহাজোট ক্ষমতায় যাওয়ার আগে ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার তা পারেনি। আর পারবেও না। শুধু চাল নয়, তেল, চিনি, ডালসহ সব পণ্যের দামই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। কারণ আওয়ামী লীগের লোকজন সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে ঢাকায় ঈদের আগের দিন মানুষ কোরবানি দেয়ার জন্যও গরু পায়নি। এই চক্র গরু আটকে রেখে অল্প অল্প করে বাজারে ছেড়ে চড়া দামে বাণিজ্য করেছে। নরসিংদীর মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেরা মারামারি করে মরছে। আর খুনিরাও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ মামলা হচ্ছে অন্যদের নামে, পুলিশও অন্যদের ধরছে। বেগম জিয়া আরও বলেন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সব লীগকে এখন ফ্রি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এরা এখন দেশজুড়ে মানুষ মারা, লুটপাট ও টেন্ডারবাজিতে ব্যস্ত। টেন্ডারবাজি নিয়ে নিজেরা মারামারি করেই মরছে। সারাদেশে খুন, গুম, নির্যাতন বেড়ে গেছে উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সাংবাদিকরাও নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এই সরকারের অপকীর্তির কথা না লেখার জন্য সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এই অপকীর্তি, দুর্নীতির কথা বললে-লিখলে মামলা দিয়ে ধরে এনে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে, নির্যাতন চালানো হচ্ছে। রোডমার্চ প্রসঙ্গ তুলে চারদলীয় জোট নেতা বলেন, বেশ কয়েকটি রোডমার্চ হয়েছে। আর এতে জনগণের মধ্যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পথে নেমে এসেছে। তাই এই অযোগ্য ও ব্যর্থ সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। বেগম জিয়া আরো বলেন, জনগণের প্রতি সরকারের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। এজন্য তাদের দমন করতে উঠে পড়ে লেগেছি। এসময় তিনি পরবর্তী কঠোর কর্মসূচিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথে নেমে আসার জন্য আহ্বান জানান।  


আইভির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী  
সেবার জন্যই ঢাকা ভাগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দুই ভাগ করার উদ্যোগের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণকে সেবা দেওয়ার স্বার্থেই সংসদে এ বিষয়ে বিল তোলা হয়েছে। গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং ৩৭ জন কাউন্সিলরের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জনসংখ্যা বাড়ছে, ঠিকমতো জনসেবা দেওয়া যাচ্ছিল না। তাই মূল ঢাকা ও বর্ধিত অংশকে নিয়ে দুটি পৃথক সিটি কর্পোরেশন করার প্রস্তাব-সংবলিত বিল সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তি দেখান, আসলে বাংলা একাডেমী ও ঢাকা গেট পর্যন্তই ঢাকা শহর ছিল। সেটা বাড়তে বাড়তে উত্তরা পর্যন্ত গেছে। উত্তরার মানুষও বলেন, ঢাকায় যাচ্ছি। আর গুলশানতো গ্রাম ছিল।
প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দুই ভাগ করতে গত ২৩ নভেম্বর জাতীয় সংসদে একটি বিল তোলা হয়। এর আগে এ প্রস্তাবে সম্মতি দেয় মন্ত্রিপরিষদ। ঢাকার ৯২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৬টি নিয়ে দক্ষিণে একটি এবং ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে উত্তরে আরেকটি সিটি কর্পোরেশন গঠনের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। বিলটি সংসদে পাস হলে বর্তমান ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিলুপ্ত হবে এবং পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সরকার দুই সিটি কর্পোরেশনের জন্য দুজন প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দ্বিখণ্ডিত না করে অবিলম্বে নির্বাচন দিন। আমি পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হব না। খোকার দল বিএনপি বলে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের লোক বসাতে চায় বলেই দুটি সিটি কর্পোরেশন করছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শপথ অনুষ্ঠানে বলেন, আইন সংশোধনের ফলে পুরনো ঢাকা থাকবে একটি সিটি কর্পোরেশনের অধীনে। আর নতুন ঢাকার দেখভাল করবে অন্য কর্পোরশন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে শপথ পড়ান শেখ হাসিনা নিজে। আর ২৭ জন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত পদের ১০ জন কাউন্সিলরকে শপথবাক্য পড়ান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। গত ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমান প্রথমে কারচুপির কথা তুললেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন। আইভী পরে সাংবাদিকদের বলেন, আজ জনগণের বিজয় পূর্ণতা পেল। মেয়র ও কাউন্সিলরদের জনসেবায় সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, এ দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা নারী। নারী হিসেবে নারায়ণগঞ্জের মেয়র তাই স্পেশাল অ্যাটেনশন পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শপথ অনুষ্ঠান শেষে মেয়র ও কাউন্সিলরদের আপ্যায়ন করান। নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, শপথ অনুষ্ঠান শেষে সহ সভাপতি আইভী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ শুরু আগামী বছর
সিদ্দিকুর রহমান
কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ শুরু হবে আগামী বছর। এ গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ৩ ধাপে শেষ করা হবে। প্রথম ধাপের নির্মাণ কাজ শেষ করে বন্দর চালু করা যাবে ২০১৬ সাল নাগাদ। প্রথম ধাপে বন্দর নির্মাণ করতে ব্যয় হবে ১৪ হাজার কোটি টাকা। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য সরকার কর্র্তৃক একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণ কাজের সুবিধার্থে শিগগিরই গঠিত হতে যাচ্ছে ‘ডিপ সি’পোর্ট অথরিটি’। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ দিকে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মান্নান হাওলাদার বলেছেন, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ‘গভীর সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়েছে। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দরটি হবে বাণিজ্যিক সমুদ্র বন্দর। এ বন্দর নির্মাণের জন্য একটি গভর্ণিং বডি কাজ করবে। গভর্ণিং বডির প্রধান হবেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী। এ বন্দর ৩টি পর্যায়ে নির্মাণ করা হবে। বন্দর প্রকল্পের মধ্যে শিল্পপার্ক, ট্রান্স এশিয়ান রেল সংযোগ, মহাসড়ক, পর্যটন জোনসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের বার্ষিক মুনাফা বাবদ সঞ্চিত নিজস্ব তহবিলের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকাসহ অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন রেখেছে। ৪টি কার্গো জেটি, ৫টি কন্টেইনার বার্থ স্থাপন করে ২০১৬ সালে প্রথম ধাপে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর চালুর টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বন্দরে ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ নোঙর করতে পারবে। সিঙ্গাপুর বন্দরে যে গভীরতার জাহাজ নোঙর করতে পারে সে গভীরতার জাহাজ সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দরেও নোঙর করতে পারবে। জোয়ারের সময় এ বন্দরে সর্বোচ্চ ড্রাফটের জাহাজও নোঙর করতে পারবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের পুরো নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০৫৫ সালে। আর এতে সর্বমোট ব্যয় হবে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করার পর জাপান ভিত্তিক প্যানপ্যাসিফিক কনসালট্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন স্থানে সমীক্ষা চালিয়ে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য কক্সবাজারের সোনাদিয়াকে উপযুক্ত স্থান বলে সুপারিশ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছর জাপান সফরকালে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য জাপান সরকারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য অনুরোধ জানান। এ বছরের ১৯ মে জাইকার একটি প্রতিনিধিদল গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা করেন।

এদিকে গভীর সমুদ্র বন্দর সেল সূত্রে জানা গেছে, গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পে বিভিন্ন কম্পোনেট রয়েছে। এ কম্পোনেটের মধ্যে রয়েছে, ১শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ৪০ কিলোমিটার সড়ক সংযোগ, ৪০ কিলোমিটার রেল সংযোগ, চ্যানেল খনন কাজ। এসব কম্পোনেটের নির্মাণ কাজ এককভাবে কোন দাতা সংস্থাও করতে পারে। চীন বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চলতি বছরের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে তিনি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য চীন সরকারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য অনুরোধ জানান। পরে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ঝি জিন পিং বাংলাদেশ সফরকালে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন। এ প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ আর্থিক সহায়তা চেয়ে চীন সরকারকে অনুরোধ করে পত্র দিয়েছে। চীনের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, চীন দূতাবাস এবং চায়না মার্চেন্ট হোল্ডিং কোম্পানির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি টিম চলতি বছর জুনে বাংলাদেশ সফরকালে গভীর সমুদ্র বন্দরের সাইট পরিদর্শন করে। তারা নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সচিব আবদুল মান্নান হাওলাদারসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। নৌ-মন্ত্রণালয়ের অপর একটি সূত্রে বলা হয়েছে, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রকল্প হওয়ায় একক কোন দেশ বা দাতা সংস্থা এ প্রকল্পের সমুদয় ব্যয়ভার বহনে আগ্রহী নয়। একাধিক দেশ বা দাতা সংস্থার যৌথ অংশীদারিত্বে অর্থাৎ ‘কোফাইনান্সিং’-এর মাধ্যমে এ বন্দর নির্মাণে আগ্রহী। এ বন্দর নির্মাণে এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক অর্থ লগ্নিকারী সংস্থাসমূহের সহায়তা প্রদানের সম্ভাবনা রয়েছে। এখন সরকার গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে দাতা সংস্থাসমূহের কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুর দিকের কাজ নিজস্ব অর্থায়নে করবে।
নারী নির্যাতনমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার
মোহাম্মদ নজরুল হাসান ছোটন
ইংরেজীতে একটি কথা আছে, ‘ টহরাবৎংধষ ঃৎঁঃয’ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে চিরন্তন সত্য বা সর্বজনীন স্বীকৃত। এর উদাহরণ হচ্ছে, গধহ রং সড়ৎঃধষ- মানুষ মরণশীল। এই চিরন্তন সত্যের আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে, ‘নারী নির্যাতন’।
নারী নির্যাতনকে চিরন্তন সত্য বলার কারণ, ‘নারী নির্যাতন’ কথাটি পূর্বেও ছিল, এখনো আছে এবং বর্তমান সমাজের যেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে ও থাকবে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বেই নারী পূর্বেও নির্যাতিত হয়েছে, এখনো হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে বলে মনে হচ্ছে।
ইতিহাসের পাতা খুললেই দেখতে পাই, বহু বছর আগে সৌদি আরবে কন্যা সন্তান হলে তাকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। যাদের কন্যা সন্তান হতো, তারা ভয়ে ও লজ্জায় অন্য কাউকে বলত না যে তাদের কন্যা সন্তান হয়েছে। জেনার দ্বারা নিজ কন্যার সতীত্ব হারাইতে পারে, এই ভয়েই তখন কন্যা সন্তানকে জীবন্ত করব দেয়া হতো। কিন্তু কন্যা সন্তানটি কী অপরাধ ছিল, তা ইতিহাসের পাতায় আমরা পাই না।
আবার সনাতনধর্মী প্রার্থী অর্থাৎ হিন্দুদের মধ্যে পূর্বে নারীকে সহমরণে যেতে বাধ্য করা হতো। স্বামী মারা গেলে তার স্ত্রীকেও জোর করে একত্রে মরতে হতো। স্বামী মারা যাওয়াটা কি স্ত্রীর অপরাধ? সহমরণকে আত্মহননই বলা চলে। আত্মহনন মহাপাপ। আর এই মহাপাপ কাজটি নারীকে দিয়ে তথাকথিত সমাজ জোর করে করাত। তারপর আবার অল্প বয়সে স্বামী মারা গেলেও সে নারীকে চিরদিন নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হতো, দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারত না। একাকিত্ব জীবন, নিঃসঙ্গ জীবন বড়ই দুর্ভোগের। একাকিত্ব থাকতে থাকতে সে নারী সাধারণত মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ত। এটাও তো এক ধরনের নারী নির্যাতনই।
অতীত যুগের নারী নির্যাতনের কথা রেখে এবার বর্তমানের নারী নির্যাতনের কথা বলি।
এখনো বিশ্বের অনেক জায়গাতেই সেই মধ্যযুগীয় পন্থা বিশ্বাস করে নারীর ওপর নির্যাতন চালায়। গত ৩১ অক্টোবর ইত্তেফাকের পাতায় দেখলাম, শিরোনাম- আফ্রিকার ডাইনী ক্যাম্প, অভিযুক্ত নারীদের অভয়াশ্রম। লেখাটি পড়ে দেখি, এখনো আফ্রিকায় অনেক নারীকেই ডাইনী আখ্যা দিয়ে তাদের পরিবার হতে বের করে দেয়া হয়। কিছু এলাকায় এখনো বিশ্বাস করা হয় ডাইনীবিদ্যার কারণে নানা অঘটন ঘটে। আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে ঘানাতে এই বিশ্বাস বেশ প্রকট। বিশেষ করে ঘানার উত্তরাঞ্চলে টোগোর সীমান্তবর্তী এলাকায় এ বিশ্বাস সবচেয়ে বেশি। এসব জায়গায় বিশ্বাস করা হয় যে, ডাইনীবিদ্যার কারণে নানা ধরনের রোগ-শোক, দুর্ঘটনা, এমনকি কারো মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। নিকটাত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশীর অভিযোগের কারণে ভাগ্য পরীক্ষা করে তাদের জীবন ডাইনী খেতাবে মুড়ে দেয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে তারা দোষী না নির্দোষ সে সিদ্ধান্ত দেয় কিছু পুরোহিত। এমনি এক ভাগ্যহারা হলো পাকপেমা ব্লেগ। একদিন দুর্ঘটনাবশত তার ভ্রাতুষ্পুত্রের আঙ্গুলে সুঁই ফুটে মারাত্মক জখম হয়। আক্রান্ত আঙ্গুল অনেকটা ফুলে উঠে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। যদিও ব্লেগ তখন সেখানে ছিল না। তবুও পরের দিন সকালে এই ঘটনার জন্য তাকেই দায়ী করা হলো। তার দেবর এসে চিৎকার শুরু করে দিল। ডাইনী বলে চেচাতে চেচাতে পাড়ার লোক একত্রে করে ফেলল। এ সময় বড় ভ্রাতুষ্পুত্র তাকে মারতে শুরু করল। তাকে বের করে দেয়া হলো বাড়ি থেকে। একটি বনের ডাইনী ক্যাম্পে তার আশ্রয় হয়। সেখানে তার মতো ৯০০ মহিলা রয়েছে। তাদের সবার গল্পই একই রকম। ব্লেগের মতো তারাও ক্লান্ত, বড় বিষণœ।
১২ নভেম্বর জনকণ্ঠে দেখতে পেলাম, আফগানিস্তানে মা-মেয়েকে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে। আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশে বিয়েবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে এক বিধবা নারী ও তার মেয়েকে পাথর ছুড়ে হত্যা করেছে তালেবান জঙ্গিরা। প্রদেশের কাওয়াজা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ওই বিধবা তার মেয়েকে নিয়ে সেখানে বসবাস করতেন। একদল লোক সেই বাড়িতে প্রবেশ করে মা ও মেয়েকে বাইরে এনে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে পাথর ছুড়ে হত্যা করে। এ সময় প্রতিবেশীরা তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি কিংবা নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষকে খবরও দেয়নি। সেই মধ্যযুগীয় বর্বর পন্থায় এখনো নারী নির্যাতন চলে।
এবার নিজ দেশের নারী নির্যাতনের কথা বলি। আমি পেশাগতভাবে একজন সাংবাদিক। সেই সুবাদে প্রতিদিন প্রায় ৬ থেকে ৮টি পত্রিকার প্রতি আমার নজর যায়। মনে হয়, এমন একটি দিন বাদ নেই যেদিন নারী নির্যাতনের অন্তত একটি খবর পত্রিকাতে আসেনি। আমাদের দেশের নারী নির্যাতনের ধরনগুলো হচ্ছেÑ
১। দরিদ্রের কারণে পারিবারিক নির্যাতন
২। নারী লিপ্সাকারীদের নারী ধর্ষণ
৩। যৌতুকলোভীদের যৌতুকের জন্য নারী নির্যাতন
৪। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নারীকে জখম বা এসিড নিক্ষেপ
৫। দালালের খপ্পরে পড়ে নারী পাচার
প্রতিদিনের নারী নির্যাতনের খবরগুলো মনে রাখা সম্ভব নয়। তবে সেগুলো হতে কিছুটা মনে করে নিম্নে তা প্রকাশ করছিÑ
২৯ জানুয়ারি-২০১১, জনকণ্ঠ
* গোপালপুর উপজেলার ধোলাইকান্দি ইউনিয়নে পঞ্চাশ গ্রামে যৌতুকলোভী স্বামী আরিফ তার স্ত্রী রাজিয়াকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
* নারায়ণগঞ্জে গৃহবধূ সান্তনাকে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে পাষণ্ড স্বামী আশরাফুল ও তার প্রথম স্ত্রী।
২৪ সেপ্টেম্বর-২০১১, বাংলা বাজার পত্রিকা
* স্বামী পরিত্যক্তা সুফিয়া সত্যেন রাহার চালাতে শ্রমিকের কাজ করত। সত্যেন রাহার ছেলে সান্ত রাহা সুফিয়াকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। এতে সুফিয়ার মা বাধা দেয়। তাই রাতে সান্ত রাহা সুফিয়া ও তার মা রহিমার ঘরে আগুন লাগিয়ে তাদের পুড়িয়ে মারে।
* হবিগঞ্জের মাধবপুরে আদাঐর ইউনিয়নের গোয়ালনগর গ্রামে বখাটে আব্দুল আউয়ালের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে কলেজছাত্রী শিমু আত্মহত্যা করে।
২৪ সেপ্টেম্বর-২০১১, জনকণ্ঠ
* শালিকার নির্মিত পাকা ভবনে ভাগ না পেয়ে গরম পানি দিয়ে স্ত্রী মনিলার শরীর ঝলসে দিয়েছে স্বামী বিডিআর সদস্য আলমগীর হোসেন। এমনকি সে স্ত্রীকে শ্বাসরুদ্ধ করে মারারও চেষ্টা করে।
৫ অক্টোবর-২০১১, যায় যায় দিন
* রংপুরে মিঠাপুকুরে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী হযরত আলী স্ত্রী রহিমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এক পর্যায়ে রহিমা মারা যায়।
৯ সেপ্টেম্বর-২০১১, ইত্তেফাক
* হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার কাইতগাঁও গ্রামে গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এসিড নিক্ষেপ করে শরীর ঝলসে দেয় কাইউম মিয়া ও তার বন্ধুরা।
২৪ সেপ্টেম্বর-২০১১, জনকণ্ঠ
* ঠাকুরগাঁও শহরের নিশ্চিতপুর গ্রামে মামাবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করত কলেজছাত্রী মুক্তা। পাশের বাড়ির  মোহাম্মদ আলী তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে মুক্তা। তাই মোহাম্মদ আলী ও তার বন্ধুরা মুক্তার নামে মিথ্যা কুৎসা রটায় যে, মুক্তা ৩ মাসের গর্ভের সন্তান নষ্ট করেছে। এই অপবাদ সহ্য করতে না পেরে মুক্তা আত্মহত্যা করে।
১৪ আগস্ট-২০১১, জনকণ্ঠ
* স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর না করায় রাজশাহীর বাগমারায় গৃহবধূ সোনিয়া আক্তার লাকীকে নির্যাতনের পর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে স্বামী সাইদুল ও তার বাবা-মা।
১ নভেম্বর-২০১১, ডেসটিনি
* ঝালকাঠির রাজাপুরের মনোহরপুর গ্রামের ছত্তার হোসেন স্ত্রী রেনু বেগমের পায়ের রগ ব্লেড দিয়ে কেটে দিয়েছে। এতেই ক্ষান্ত হননি, সে তার মাথার চুলও কেটে দিয়েছে। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রেনু এখন শুধু বলে, আমি বাঁচতে চাই, আপনারা আমারে বাঁচান।
নারী নির্যাতনের এই চিত্র শুধু গ্রাম ও অশিক্ষিত সমাজেই সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষিত সমাজেও নারী নির্যাতনের এ রূপটা আরো বেশি ভয়াবহ হয়ে দেখা দিয়েছে। যেমন-
৩ মে-২০১১,জনকণ্ঠ
* ৩৮ বছর বয়সী এক শিক্ষিত নারী একটি দাতা সংস্থার উচ্চ পদে কর্মরত। কিন্তু তার শিক্ষা ও পদবি তাকে স্বামীর নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে পারেনি। তিনি ভাবতেন, তার সন্তান প্রতিবন্ধী হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় তার মতো আর কাউকে এমন নির্যাতন সহ্য করতে হয়নি বলে তিনি মনে করেন। স্বামী সৈয়দ মিজানুর রহমান যুব উন্নয়ন অধিদফতরের ধানমণ্ডি যুব ইউনিটের যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা। তাদের বিয়ে হয় ২০০৯ সালে। বিয়ের পরই শুরু হয় তার ওপর টর্চার। তার আগে একটি বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু স্বামী কানাডা চলে যাওয়ার পর আর কোনে যোগাযোগ হয়নি। এটাই কী ছিল তার অপরাধ? মিজান সন্তান চাননি। কিন্তু তিনি চাইতেন মা হতে। তাই তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এখন তিনি এক সন্তান নিয়ে ভিন্ন থাকেন।
কিছুদিন আগে পত্রিকাতে দেখতে পাই ঢাকা ভার্সিটির প্রফেসর রুমানাকে তার স্বামী সাঈদ কী মারাÍকভাবে জখম করেছে। সাঈদের এই নির্মমতার জন্য রুমানা হয়ত চিরদিনের মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে যাবে। হিংস্র পশুর মতো সাঈদ রুমানার নাকে কামড় দিয়েছে, কানে কামড় দিয়েছে, চোখ টিপ দিয়ে ধরেছে। এই সাঈদও তো একজন ইঞ্জিয়ার। তিনি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে কি করে এমন নিষ্ঠুর কাজটি করল।
তাহলে দেখা গেল, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শহর-গ্রামÑ সব জায়গাতেই এই নারী নির্যাতন আছে। নারীরা যুগে যুগে নির্যাতিত হচ্ছে।
নারী নির্যাতনের মামলা চট্টগ্রামে গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতের অধীন শিশু ও নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১, ২, ৩-এর রেকর্ড অনুযায়ী চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ১০ অক্টোবর এ ১০ মাসে ৪ হাজার ৪৬০ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গত বছরের তুলনায় যা ১০ শতাংশ বেশি। কিন্তু আদালতে রেকর্ড হওয়া মামলার চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কারণ খুব কম নারীই নির্যাতনের শিকার হয়ে আদালত ও পুলিশের শরণাপন্ন হয়। বেশিরভাগ নারী লোকলজ্জার ভয়ে পুলিশের কাছে ও আদালতে আসে না। ফলে অনেক নির্যাতনের ঘটনা চাপা পড়ে যায়। চট্টগ্রামের মতো অন্য জেলাগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। যেভাবে নারী নির্যাতন বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতের কথা কল্পনাও করা যায় না। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে নারী নির্যাতনের হার। তাই এখনই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। তবে পারিবারিক কাউন্সিলিং ছাড়া কোনোভাবেই এ নির্যাতনের হার কমানো সম্ভব নয়। ২৬ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ দিবস। আসুন, এদিনে আমরা সবাই মিলে অঙ্গীকার করি, নারী নির্যাতন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার দ্বারা ‘নারী নির্যাতন মুক্ত দেশ গড়ি।’
উপমহাদেশের রাজনীতিতে মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শন
মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী
বিংশ শতাব্দীতে আমাদের  উপমহাদেশজুড়ে যে ক’জন আলোচিত, আলোড়িত ও আলোকিত মানুষ রাজনীতির উত্থান-পতন ও সংস্কারবাদে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ভারতীয় রাজনীতি মুসলিম লীগও কংগ্রেসের রাজনীতিতে যখন গোটা ভারত জাতি স্বাধীনতার উত্তাল তরঙ্গে দুলছিল তখনই মওলানা ভাসানী প্রচণ্ড দ্রোহ ভারতীয় রাজনীতিতে আবির্ভূত হন। ৪৭-এর দ্বিজাতি তত্ত্বে যখন ভারত দু’ভাগে ভাগ হতে যাচ্ছিল তখন সিলেট অঞ্চলকে গণভোটের মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে একত্রিত করতে মওলানা ভাসানী বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। দেশ বিভক্তির পর মওলানা ভাসানী যখন স্পষ্ট বুঝতে পারলেন, সে আসলে মুসলিম লীগের মধ্যে ভাঁওতাবাজিই বেশি, ধর্মীয় ও দলীয় আদর্শ বলতে, মাথায় টুপি এবং হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষ ব্যতীত আর কিছু নেই (?) তখনই মওলানা ভাসানী অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চিন্তা চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করে মুসলিম লীগের ভাঙ্গন সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে  মওলানা ভাসানী আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ করেন এবং সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের সামছুল হকের পরিবর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাচিত করেন। দৈনিক ইত্তেফাক এক সময় মওলানা ভাসানী নিয়ন্ত্রণাধীন পত্রিকা ছিল। কিন্তু এই ইত্তেফাকে প্রথম পৃষ্ঠায় মোটা অক্ষরে সেদিন ছাপা হয়েছিল মওলানা ভাসানী ভারতের পেইড এজেন্ট (?) মওলানা ভাসানী বুঝতে পারলেন যে, তার বিরুদ্ধে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তখন অর্থাৎ ’৫৭ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সংক্ষেপে (ঘঅচ) ন্যাপ গঠন করেন। মওলানা ভাসানী কাগমারী সম্মেলনে সর্ব প্রথম পাকিস্তানকে আস্সালামু আলাইকুম জানিয়েছিলেন। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মজলুম জনতার পক্ষে আন্দোলন করে মওলানা ভাসানী অসংখ্য বার কারা বরণ করেছেন। তাই তাকে বাংলার মজলুম জননেতা খেতাবে ভূষিত করা হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগের নেতারা যখন পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর চৌদ্দ শিকলে বন্দি ছিলেন, তখনই মওলানা ভাসানী গভীরভাবে চিন্তা করলেন যে, কিভাবে শেখ মুজিবকে মুক্ত করা যায়? স্থির করলেন গণঅভ্যুত্থান ব্যতীত আর কোনো বিকল্প পথ নেই? ১৯৬৯ সালে মওলানা ভাসানী দেশব্যাপী গণঅভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য প্রতি জেলায় জেলায় মিটিং-মিছিল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এবং সাংগঠনিক সফরে সিলেট এসেছিলেন। সিলেটে ভাসানী ন্যাপ এর সাধারণ সম্পাদক মাস্টার লুৎফুর রহমান পংকী মিয়া সাহের মওলানা ভাসানীর কাছে আবদার রেখেছিলেন, হুজুর শেখ মুজিবের জন্য কিছু করুন? উত্তরে মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, আমি কার জন্য এসব করছি? নিজের জীবন বাজি রেখে যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি তাতে একটি গণঅভ্যুত্থান ঘটতে যাচ্ছে। আর এর সমস্ত ফলই ভোগ করবে শেখ মুজিব। কারণ মুজিব ব্যতীত গোটা জাতির নেতৃত্ব দেয়ার মতো নেতা আমি আর একটি দেখছি না। সত্যি সত্যি মওলানা ভাসানীর আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থান ঘটলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন এবং বঙ্গবন্ধু মুক্তি লাভ করেন। আন্দোলনকারী জনতার চাপে ইয়াহিয়া সরকার ’৭০-এর নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জনের ফলে পাক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি শুরু করলে বাংলার মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ৩ মার্চে ভাসানী উচ্চারণ করেন, আমার এক দফা বাংলার স্বাধীনতা। সে কারণে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক শুনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। মওলানা ভাসানী সারাজীবনই বিরোধী ফ্রন্টে অবস্থান করছিলেন। কখনো ক্ষমতার মসনদের প্রতি লোভ লালসা তার ছিল না। তাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের কঠোর সমালোচনার ভূমিকাও পালন করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে ভারত কর্তৃক ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে মওলানা ভাসানী ১০ লাখ জনতা নিয়ে লংমার্চ করে, গোঠা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মওলানা ভাসানী কৃষক শ্রমিকের জন্য আন্দোলন করে গেছেন। মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শন বিশ্লেষণ করলে, যে বিষয়গুলো গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায় তা হচ্ছে (১) মওলানা ভাসানী ছিলেন উপমহাদেশের একমাত্র ইসলামী চিন্তাবিদ, যিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন, তার চিন্তাধারা ছিল ইসলামের প্রথম যুগে  খোলাফায়ে রাশেদিন যে সমাজ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন তা ছিল সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার সঙ্গে মিল। তাই তিনি তার ৬ লাখ মুরিদানের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক আদর্শে দীক্ষিত করেছিলেন। (২) মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শনে অসাম্প্র্রদায়িকতার সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায়, যেমন: তার মুরিদানদের মধ্যে অসংখ্য হিন্দু মুরিদান ছিল। টাঙ্গাইলের আরপি সাহার ছেলের সঙ্গে তিনি সিলেটের সাধু বাবুর মেয়ের বিয়ে নিজ মধ্যস্থতায় সুসম্পন্ন করিয়ে ছিলেন। (৩) মওলানা ভাসানী কৃষক শ্রমিক মজুর তথা মেহনতী মানুষের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন। (৪) মওলানা ভাসানীর ইসলামী দর্শনের মধ্যে আমরা দেখতে পাই তিনি মৌলবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন। মোল্লাতন্ত্রকে তিনি ইসলামতন্ত্র মানতেন না। তিনি মহানবী (সাঃ)-এর বিদায়ী হজের ভাষণের বাণীগুলো অনুসরণ করতেন। তাই নির্দ্বিধায় বলা যান যে, ভারত উপমহাদেশের রাজনীতিতে একমাত্র মওলানা ভাসানীই এক বিরল দৃষ্টান্ত। অর্থাৎ ভাসানীর উদাহরণ একমাত্র মওলানা ভাসানীই। মওলানা ভাসানীর জীবনাদর্শ কিংবা রাজনৈতিক দর্শন, ১০০ পৃষ্ঠায় লিখেও শেষ করা যাবে না। তাই সংক্ষিপ্ত পরিসরে কিছু তথ্য তুলে ধরলাম। বর্তমানে ভাসানী ন্যাপ এর হাল ধরে রেখেছেন, তার ধর্মস্থ পুত্র মোশতাক ভাসানী। কিন্তু মওলানা ভাসানীর প্রকৃত অনুসারীরা আজ অনেকেই বেঁচে নেই। আর যারা আছেন, তারাও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিশে নিজেদের আদর্শ থেকে সরে পড়েছেন। আমার বিশ্বাস সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ত্যাগী তরুণরা এক সময় তার দলকে গরম করতে সক্ষম হবে এবং মওলানা ভাসানীর আদর্শ ও রাজনৈতিক দর্শন অনুসরণ করে আগামী প্রজš§ ভাসানী ন্যাপ এর ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করবে। মওলানা ভাসানী চিরঞ্জীব হয়ে বেঁচে আছেন, এ দেশের অসংখ্য মানুষের মণিকোটায় এবং থাকবেন জনম জনম। বর্তমান সময়ে মওলানা ভাসানীর মতো একজন রাজনীতিবিদের খুবই প্রয়োজন। আর নির্যাতিত-নিপীড়িত মজলুম জনতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, কবে আসবে তাদের সেই কাক্সিক্ষত নেতা।
লেখক: কবি, সংগঠক ও কলামিস্ট

মোহাম্মদ হানিফ তোমার শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়
মোহাম্মদ হাবিবুল ইসলাম সুমন
ঢাকার রাজনীতির নন্দিত নায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও øেহভাজন, গণতন্ত্রমনা, ঢাকাবাসীর অহংকার, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত সফল মেয়র ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ। যে মানুষটি রাজধানীর প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন ২৮ নভেম্বর ০৬ রাতে ৬২ বছর বয়সে ঢাকা এ্যাপোলা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেনÑইন্নালিল্লাহি---রাজিউন। আজ তার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। মোহাম্মদ হানিফ যৌবনের শুরু থেকে সারাজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। দলীয় রাজনীতি করলেও তার উদার-চিন্তার চেতনা ও সংবেদনশীল মনোভাবের কারণে দলমতনির্বিশেষে সব মানুষের কাছে তার গ্রহণ যোগ্যতা ছিল অপরিসীম। তার জীবন ছিল কর্মময়, ধ্যান-ধারণা ছিল অত্যন্ত সুন্দর, ব্যক্তিগত চরিত্রে ছিল স্বচ্ছতা ও সততা সৌরভ উজ্জ্বল। একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা নগরপিতা খ্যাত যিনি নগরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে প্রথম নির্বাচিত একজন সফল মেয়র। নিজ বিশ্বাসে অটল থেকে তা অকপটে প্রকাশ করতে পারা একজন ব্যক্তিত্ব। সম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প তাকে কোনো দিন স্পর্শ করতে পারেনি। কিন্তু একজন ইমানদার মুসলমান হিসেবে শুধু র্ধম-কর্ম পালন করে ক্ষান্ত হতেন না বরং ইসলামের মহিমার সম্পর্কেও  ছিলেন সোচ্চার। ব্যক্তিগত জীবনে আহলে হাদীস আন্দোলনের সক্রিয় হিসেবে মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন কিছুটা ব্যতিক্রম, যা দেশে ধর্ম প্রচারে তার অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। তিনি তার স্বপ্নে ঢাকা নগরীকে ইসলামী স্থাপত্য কলায় সাজিয়ে তুলবেন সেই সুবাধে মুসলিম প্রধান দেশের রাজধানীতে বিদেশি মেহমান কেউ নেমেই যেন বুঝতে পারেন তারা কোথায় এসেছেন। বুকে হাজারো স্বপ্ন থেকে তা বাস্তবে রূপায়ণের জন্য মোহাম্মদ হানিফ মৃত্যুও আগ পর্যন্ত সচেষ্ট থেকেছেন।
১৯৪৪ সালে ১ এপ্রিল সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার জš§গ্রহণ করেন। পিতা আবদুল আজিজ, মাতা মুন্নি বেগমের পরিবারে মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন সবচেয়ে ছোট ছেলে। ১৯৬৭ সালে ঢাকার প্রখ্যাত পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মরহুম আলহাজ মাজেদ সরদারের কন্যা ফাতেমা খাতুন সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ১ পুত্র ও ২ কন্যার জনক। মোহাম্মদ হানিফ ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে আÍপ্রকাশ করেন। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব থেকে জাতীয়  রাজনৈতিক সক্রিয় থাকেন ১৯৬৫ সালের বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তিনি একান্ত সচিব থাকাকালীন ছয়দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি, ছয়দফা  মুক্তি  সনদ প্রণয়ন এবং প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর জাতীয় নির্বাচন, মহান মুক্তি সংগ্রামে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা চির স্মরণীয়।  স্বাধীনতা  পরবর্তীকালে সব আন্দোলন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সকল আন্দোলন তিনি রাজপথে সংগ্রামের প্রথম কাতার থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অতুলনীয় সাংগঠনিক দক্ষতা এবং সম্মোহনী বাগ্মিতা তাকে কিংবদন্তি তুল্য খ্যাতি এবং ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেয়া ঢাকা ১২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী সময়ে হুইপের মহান দায়িত্ব পালন করেন। সংগ্রামী জীবনে ১৯৭৬ সালে মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মাঝখানে কয়েক দিন বিরত থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ৩০ বছর এ দায়িত্ব পালন করেন। ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন মোহাম্মদ হানিফ। ১৯৯৪ সালে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ঢাকার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এ নেতা। তার নেতৃত্বে ’৯৬-এর মার্চের শেষ সপ্তাহে “জনতার মঞ্চ” গঠন করে আওয়ামী  লীগের রাজনীতির জন্য এটি টার্নিং পয়েন্ট তৈরি করেন। তাই ’৯৬-এর ১২ জুন নির্দলীয় নিরপক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করেন এবং  পরবর্তীতে দেশ পরিচালনার জন্য তার প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগের বিজয় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। একজন প্রকৃত নেতার হিসেবে জাতির প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে এই অকুতোভয় সৈনিক রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৪  সালের ভয়াল ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী  সমাবেশের ট্রাক মঞ্চে শেখ হাসিনার ওপর নারকীয় গ্রেনেড হামলার সময় নিজের জীবন তুচ্ছ করে মানবঢাল রচনা করে তার প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে রক্ষার প্রাণন্তর চেষ্টা করেন মোহাম্মদ হানিফ। একের পর এক ছোড়া গ্রেনেডের সামনে নির্ভয়ে পেতে দিলেন নিজেকে, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রাণে রক্ষা পেলেও মারাÍক আহত হন তিনি। মস্তিষ্কসহ দেশের বিভিন্ন অংশ অসংখ্য ঘাতক স্পি­ন্টার ঢুকে পড়ে। দীর্ঘ দিনের চিকিৎসাতেও কোনো ফল দেয়নি বরং মাথার গভীরে বিঁধে থাকায় ও অস্ত্রোপচার করেও অপসারণ করা সম্ভব হয়নি তার। দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করেই রাজনৈতিক জীবনে সক্রিয় থেকেছেন মোহাম্মদ হানিফ।
২০০৬-এর ৮ ফেব্র“য়ারি মুক্তাঙ্গনে এক সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতা  দেয়ার সময় তিনি হƒদরোগে আক্রান্ত হন, মাথায় বিদ্ধ স্পি­ন্টারের প্রতিক্রিয়া পরবর্তী সময়ে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ও অকাল মৃত্যু কারণ হিসেবে কাজ করেছে। তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা শেষে ঢাকার ফিরে ২৮ নভেম্বর ০৬ সালের এ দিনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অবশেষে চির অবসান ঘটে তার কর্মময় বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাসের।
মোহাম্মদ হানিফ চলে গেলেন জাতীয় এক চরম দুঃসময়ে,বড়ই সংকটপন্ন যখন দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ তখন জননেতা হানিফের মতো আদর্শ নিষ্ঠ, অকুতোভয় বিচক্ষণ নেতৃত্বের বড় বেশি প্রয়োজন। তার মৃত্যুতে সৃষ্ট শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। দেশের রাজনীতিতে তার অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। আমরা তার রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
জনসংযোগ কর্মকর্তা মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন
 
স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচারের প্রতিশ্রতি দেশ রক্ষার প্রধান চ্যালেঞ্জ!
প্রবীর দত্ত
উনিশশো একাত্তরে বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে গোটা জাতিকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। প্রায় ৩০ লাখ বাঙালি জীবন সর্গ করে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে। পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি আর জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির মানসে স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত হয় বাঙালি।
বাঙালির অবিসংবাদী নেতাÑ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশবাসী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপর কেউ আর পেছন ফিরে তাকায়নি। মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে হাজারো পরিবার সহায়-সম্পদ নিঃশেষ করেও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের প্রিয় স্বাধীনতা স্বার্থ ঘরে তুলে এনেছে।
স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরেও স্বাধীনতাকে নিয়ে চরম ষড়যন্ত্র চলছে। স্বাধীতাকে কলঙ্কিত বিতর্কিত করছে। তাকে নিয়ে শঙ্কা দিন দিন ঘনীভূত করছে। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্কে বিরোধীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে, ঘরে বাইরে সমহিমায়। ১৯৭৫- জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করার পরÑ তাদের ষড়যন্ত্র জোরেশোরে সশস্ত্র সফলতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর ষড়যন্ত্রের মধ্যস্ততাকারী হিসেবে যার নামটি সর্বপ্রথম উঠে আসে তিনি হলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান।৭৫-এর পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে জিয়া গণতান্ত্রিক সরকারের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে একমাত্র দেশের একচ্ছত্র ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসেন। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় বসেন। ক্ষমতায় বসেই তিনি দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অংশ হিসেবে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক জামায়াত-শিবিরকে সঙ্গী করে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রথমে জাগদল গড়ে তোলেন। পরে জামায়াতের নামেরশব্দটি দিয়ে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির Í প্রকাশ ঘটান। অর্থাপাকিস্তানি ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা দিয়ে ƒ পাকিস্তানের পুনরুদ্ধারের সকল পথ জিয়াই তৈরি করেন। জিয়া এদেশে জামায়াত-শিবির ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের প্রবক্তা। ধর্মের রাজনীতির অনুপ্রবেশ তার হাত ধরেই এদেশে প্রবেশ ঘটেছে। ধর্মনিরপেক্ষ জাতির মধ্যে বিভেদ-বিসংবাদ সৃষ্টিতে, স্বাধীন দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির Íঘাতী পথ বাতলিয়ে দেয়া ধর্মীয় রাজনীতি দেশ থেকে৭০ সালে জুতা-স্যান্ডেল ফেলে চির বিদায় নিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। সেই ধর্মীয় রাজনীতিকে জীবন দান করা হয়েছে জিয়ার দুঃস্বপ্নের পাকিস্তান বানানোর। এসব অপতপরতার মধ্য জিয়া পাকিস্তানি নাগরিক রাজাকার গং গোলাম আযমকে এদেশে এনে নাগরিকত্ব দিয়েছে। এরপর রাজনীতিতে বসিয়ে পাকাপোক্ত করে নেয়া তাদেরকে বড় বড় পদে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। বিদেশে রাষ্ট্রদূতসহ দেশের ভেতর সম্মানী পদ এবং ব্যবসা-চাকরি-বাকরি দিয়ে শক্তি সম্পন্ন করে তোলা হয়।
২০০১ সালে জামায়াত-শিবির ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীসহ ধর্মীয় অন্যান্য দল এবং বিএনপি সমন্বয়ে চারদলীয় জোটের সমন্বয়ে নির্বাচনে জিতে দেশের সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। জিয়ার দল জামায়াতকে নিয়ে সরকারে গিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। জোটের এমপি-মন্ত্রী হয়ে স্বাধীনতা বিরোধী মানবতা বিরোধী গোষ্ঠী স্বাধীন দেশের পতাকা গাড়িতে উড়িয়ে সারা দেশ চড়ে বেড়িয়েছে। ২০০১-২০০৬ পাঁচটি বছর জামায়াত-বিএনপি জোটের দাপটে দেশ থরকম্পমান হয়ে পড়ে। তারা আবারো দেশের প্রতিটি  মানুষের ওপর অন্যায়-অত্যাচারে৭১-এর মতো মানবতা এবং স্বাধীনতাকে বিপর্যয়ের মুখে ঢেলে দিয়েছে। ঠিক৭১-এর বিভীষিকাময় পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে আসে দেশের পরিণতি। পাঁচটি বছর সূঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হয় তারা। জেএমবি নামে ধর্মীয় সংগঠন তৈরি করে বাংলা ভাইয়ের দ্বারা দেশে হত্যাকাণ্ড পরিচালিত করে। বোমা মেরে হত্যা করে সাধারণ মানুষ থেকে শিশুসহ বিচারক শ্রেণীর সব বুদ্ধিজীবীকে। হায়! সে কি আর্তনাদ আর Íকান্না দেশটাজুড়ে! ২০০১ সাল ছিল চারদলীয় জোট সরকারের আমল জাতির সমূহ ধ্বংসের মুহূর্তকাল দেশ-জাতির অস্তিত্ব রক্ষার শেষ সময়। যেভাবেই  হোক: ‘রাখে ঈশ্বর মারে কে? ’৭১- যেভাবে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে এনেছিল বীর সন্তানরা ২০০১ ঠিক তেমনি চারদলীয় জোটের ষড়যন্ত্রের কবল থেকে সেভাবেই অনিবার্য ধ্বংস থেকে জাতিরক্ষা পেল। ২০০৮-এর সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপির ইস্তেহারে ছিলদেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও।বিএনপিকে স্মরণ করে দিয়ে অনুরোধ করব, তারা যেন সেই সুযোগের মূল্যায়নে আনেন।৭১-এর স্বাধীনতা বিরোধী, মানবতা বিরোধীদের বাঁচাতে তাদের বিচারের পথে বাধা না হয়। তাদের নিয়ে দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি না করে। চল্লিশ বছর পরে হলেও বর্তমান সরকারের মানবতা বিরোধী নেয়া এক পদক্ষেপের বিরোধিতা নয় বরং সরকারকে সহযোগিতা করা। সরকার যেন বিচারের ক্ষেত্রকে বিএনপির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ নিতে না পারে। যেন বিচারের কথা বলে, আবারো আগামীতে ক্ষমতায় আসার কৌশল হিসেবে তার ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে বিএনপিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। খালেদা জিয়া তথা বিএনপিকে আবারো স্মরণ করিয়ে সেইদেশ বাঁচাও মানুষ বাচাওইস্তেহারের প্রকৃতই সুযোগের মূল্যায়ন করা তার যথাযথ রক্ষা করা ভিন্ন পথ নেই। জামায়াতকে না সরিয়ে  দিলে দেশ বাঁচবে না। মানুষও নয়, আগামীতেও জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে জোট রক্ষা হয়ে নির্বাচন করবে, আবারো হয়ত ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগও পাবে। ভেবে দেখা উচিত এর ফল দেশের জন্য শুভ মোটেই নয়। মরহুম জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন মুুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার, আবার বিএনপিই জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষকও বলছে। তবে কথা বিএনপির মুখে কি মানায়? ’৭১- কোনো যুদ্ধ হয়নি? আবার বলছে, সরকার স্বাধীনতা বিরোধীদের কথা বলে  যে আন্দোলন সৃষ্টি করেছে তা ষড়যন্ত্র, অবৈধ? বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি অনুরোধ রাখছি, জনগণের প্রতি রাখা ইস্তেহার দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাওÑ প্রতিশ্রতিকে মিথ্যা, ভাঁওতা বলে তার ছাপ রাখবেন না। মিথ্যার ধূম্রজাল সৃষ্টি করে জাতিকে অপবাদের বিশ্রী পরিণতির দিকে ঠেলে  দেবেন না। জামায়াত চক্রকে পরিত্যাগ না করলে বিএনপিও ঠিক থাকবে না। বনে আগুন লাগলে কাঁচা কিছুই থাকে না পুড়ে সব শেষ হয়। ২০০৮- আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে দিন বদলের প্রতিশ্রতি দিয়ে। তার মধ্যে স্বাধীনতা বিরোধী, মানবতা বিরোধীদের বিচার সম্পন্ন করার প্রতিশ্রতিই ছিল অন্যতম প্রধান। সরকারের পাঁচ বছর ক্ষমতার তিন বছর শেষ হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। বিচারকার্য করে নাগাদ শুরু হবে আদৌ সরকারের টার্মে বিচার কাজ শেষ করা হবে কিনা তা একমাত্র সরকারের কর্তারাই জানেন। এও ঠিক বিচার সম্পন্ন টার্মেই শেষ করতে হবে। নয়ত আগামীতে এর পরিণাম ভয়াবহ হবে, যা শুধু আওয়ামী লীগের জন্য তো বটেই। দেশের জন্যও। আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে, তার সরকারেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার মতলব শেষ অবধি পূরণ হবে তার নিশ্চয়তা আওয়ামী লীগের ওপর রইল।
বিএনপি-জামায়াত জোট আগামীতে ক্ষমতায় এলে স্বাধীনতা বিরোধী, মানবতা বিরোধী জেল থেকে ছাড়া পাবে, বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তখন দেশের পরিবেশ কি হবে, নিজামী, সাকা গংরা জেল থেকে বেরিয়ে দেশের মানুষের পরিণতি কোথায় নিয়ে যাবে, তা ভেবে দেখেছেন? বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তা আঁচ করতে পারে কি? ১৯৭১- স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করে লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম বিসর্জনের পর অর্থাএক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের š§ হয়েছে। সুতরাং বিচার কাজ শেষ না হলে, পর্যায়ে দুই সাগর রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানের পুনর্জš§ ঘটাবে না, এমন সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। যখন দেখি জাতির প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের ষোল জনকে  একরাতে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। নিরপরাধী শিশুটিকে পর্যন্ত তারা রেহাই দেয়নি। শিশুটির আকুতি মিনতি শুনে পাষাণ ƒদয় গলেনি। তার অর্থ নয় কি? এরপর বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনাকে চল্লিশবার হত্যার  চেষ্টা করা তারই আলামত নয় কি? সুতরাং যুদ্ধাপরাধী চক্রের বিচারকার্য যে কোনো অবস্থায় টার্মে করতে হবে। রাজনৈতিক ধূম্রজাল সৃষ্টি করে বিচারকার্যকে বাধাগ্রস্ত করে কোনোভাবেই বিরত রাখা যাবে না। আওয়ামী লীগ-বিএনপি একে ইস্যু করে রাজনীতি করবে জনগণ তা মানবেন। ইস্যুর রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সে চেষ্টা করলে তা হবে দলের জন্য Íঘাতী। এমনিতেই আওয়ামী লীগ নিজের ফাঁদে নিজেই পা দিয়ে বসে আছে।রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, স্বৈরাচারী এরশাদের ক্ষমতায় থাকার ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক কৌশলের ব্যবস্থায় পা দিয়ে এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেনা শাসক পাকিস্তান পুনরুদ্বারে জিয়ার বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিমসংবিধান পুনর্মুদ্রণ করে তা বহাল রেখে এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ধর্মীয় রাজনীতি š§ুক্ত করে দিয়ে ধরা তো খেয়েছে আওয়ামী লীগ এখনই। আর একটি বিষয় যা, আইনের প্রতি আস্থায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অনিবার্য। নয়তো এরও অশুভ পরিণতির দায় আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে। তা না হলে মাঝপথেই বঙ্গবন্ধুর প্রিয় স্বপ্নের সোনার বাংলা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এর পরিণতি হবে৭১-এর চেয়েও ভয়াবহ। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় স্বপ্নের সোনার বাংলাকে অটুট  অক্ষত রাখতে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বিকল্প নেই। বিচার সম্পন্ন শুধুই চ্যালেঞ্জই নয়। অনেক বড় দায়িত্বও।