বাংলাদেশকেই বেছে নিলেন শচীন
অনলাইন প্রতিবেদক
এ মাসের ১২ তারিখে সেঞ্চুরি-খরার এক বছর পূর্ণ করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। গত বছরের ১২ মার্চ ক্যারিয়ারের ৯৯তম সেঞ্চুরি পাওয়ার পর থেকেই শচীনের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু এক বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বহু আকাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ভারতের এই ব্যাটিং আইকন। আর শততম সেঞ্চুরির অনন্য এই রেকর্ডটি করার জন্য বাংলাদেশকেই বেছে নিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। এশিয়া কাপের চতুর্থ ম্যাচে ক্রিকেট বিশ্বকে নতুন এই মাইলফলক উপহার দিলেন লিটল মাস্টার। বাংলাদেশের বিপক্ষে যেন শচীনের সেঞ্চুরিটি না হয়, এটা অবশ্য খুব করেই চেয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘আমি খুব করে চাই, শচীনের শততম সেঞ্চুরিটি হোক, কিন্তু আমাদের বিপক্ষে নয়।’ কিন্তু মুশফিকুরের এই আশা শেষ পর্যন্ত পূরণ হলো না। দীর্ঘদিন পর শচীনের ব্যাট আবার ঝলসে উঠল ঢাকাতেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম থেকেই খুব সাবধানে ব্যাটিং করেছেন টেন্ডুলকার। শততম সেঞ্চুরিটি পূর্ণ করতে তিনি খেলেছেন ১৩৮টি বল।
এর মধ্যে ছিল একটি ছয় ও ১০টি চার। গত বছর অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শচীনকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল হেলমেট খুলে দুই হাত উপরে তুলে আকাশের দিকে তাকানোর ভঙ্গিমায়। এরপর টেস্ট, ওয়ানডে মিলিয়ে ২৩টি ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন ৩৯ বছর বয়সী এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। খেলেছেন ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। কিন্তু অনেক সম্ভাবনা জাগিয়েও ক্রিকেট প্রেমীদের অপেক্ষাতেই রেখেছিলেন শচীন। অবশেষে সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষেই চিরচেনা ভঙ্গিমায় শতক উদযাপন করতে দেখা গেল কিংবদন্তি এই ব্যাটসম্যানকে। মুশফিকুর রহিমের অনিচ্ছা সত্ত্বেও শচীনের এই সেঞ্চুরিটির সঙ্গেই ইতিহাসের অংশ হিসেবে রেকর্ড বুকে জায়গা করে নিল বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের উপস্থিত দর্শকেরাও হয়তো পরবর্তীকালে স্মৃতি রোমন্থন করে আনন্দ পাবেন যে, ‘শচীনের ইতিহাস গড়া এই দিনটিতে সেখানে আমিও ছিলাম।’
কর্মসংস্থান, দারিদ্র্যবিমোচন ও মূল্যস্ফীতি প্রধান চ্যালেঞ্জএর মধ্যে ছিল একটি ছয় ও ১০টি চার। গত বছর অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শচীনকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল হেলমেট খুলে দুই হাত উপরে তুলে আকাশের দিকে তাকানোর ভঙ্গিমায়। এরপর টেস্ট, ওয়ানডে মিলিয়ে ২৩টি ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন ৩৯ বছর বয়সী এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। খেলেছেন ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। কিন্তু অনেক সম্ভাবনা জাগিয়েও ক্রিকেট প্রেমীদের অপেক্ষাতেই রেখেছিলেন শচীন। অবশেষে সব প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষেই চিরচেনা ভঙ্গিমায় শতক উদযাপন করতে দেখা গেল কিংবদন্তি এই ব্যাটসম্যানকে। মুশফিকুর রহিমের অনিচ্ছা সত্ত্বেও শচীনের এই সেঞ্চুরিটির সঙ্গেই ইতিহাসের অংশ হিসেবে রেকর্ড বুকে জায়গা করে নিল বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের উপস্থিত দর্শকেরাও হয়তো পরবর্তীকালে স্মৃতি রোমন্থন করে আনন্দ পাবেন যে, ‘শচীনের ইতিহাস গড়া এই দিনটিতে সেখানে আমিও ছিলাম।’
বাজেট নিয়ে চাপের মুখে সরকার
মো. রেজাউর রহিম
আগামী ২০১২-১৩ অর্থবছরের নতুন জাতীয় বাজেট প্রণয়ন, ঘোষণা এবং বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে চাপের মুখে রয়েছে সরকার। এদিকে, চলতি ২০১১-১২ অর্থবছর শেষ হওয়ার আর মাত্র ৩ মাস বাকি থাকলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ই সফলতা দেখাতে পারেনি। এডিপি বাস্তবায়নে কোনো কোনো মন্ত্রণালয় ৪০ শতাংশও পূরণ করতে পারেনি। ফলে মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্যবিমোচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। বরং চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিট অতিক্রমসহ, মধ্যপ্রাচ্য ও লিবিয়া সংকটের কারণে কর্মসংস্থান-বিশেষ করে বিদেশে জনশক্তি রফতানি ও রেমিটেন্স প্রবাহে নেতিবাচক ধারার আশংকা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি দেশে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাজেট ঘোষণার আগেই খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিটি বাজেটের আগেই দেশে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে একটি চক্র মূল্য বাড়ানোর পাঁয়তারা করে। চলতি বছরে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে এ প্রবণতা আরও বেড়েছে। ইতোমধ্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশ, জনসন এন্ড জনসন, পেপসি এবং কোকাকোলাসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ে নতুন আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বাজেট আসলেই দ্রব্যমূল্য বাড়ে এ কথা মানতে নারাজ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, এটি ঠিক নয়, বরং বাজেটের পর দ্রব্যমূল্য কমে। তিনি বলেন, সরকার আগামী অর্থবছরের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েই বাজেট তৈরির কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। তবে বাজার ঘুরে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। নতুন বাজেট আসতে আরো প্রায় ৩ মাস বাকি থাকলেও ইতোমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে সবধরনের নিত্যপণ্যের দাম। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। সরকারি দল ও বিরোধীদলের পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে পরিবহন সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের দাম। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে দেশের সাধারণ ও নিু আয়ের মানুষের দুর্ভোগ আরো বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে। এদিকে, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় দেশে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা, কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পর্যাপ্ত গবেষণা না থাকা এবং ফসল সংগ্রহ ও মজুদ ব্যবস্থাপনায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা যায়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ সময়’কে বলেন, আসন্ন বাজেটে অবকাঠামো খাতে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ এবং গ্যাস ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে বেশি জরুরি। বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের বিদ্যমান সংকটের সুরাহা করা সম্ভব হলে উৎপাদন বাড়বে এবং উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলে একদিকে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে অন্যদিকে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। জানা গেছে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত। এর মধ্যে আবার ২০ শতাংশ একেবারে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সম্প্রসারণের পাশাপাশি দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশেষ নজর দিতে হবে বলে মনে করেন তারা।
ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ১ মাস বাকি
এখনো ইভিএম তৈরির কার্যাদেশ দেয়নি ইসি
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাত্র এক মাস বাকি থাকতে সংশয় তৈরি হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে। নির্বাচন কমিশন দুই কর্পোরেশনে সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের এক হাজার ভোট কক্ষে ইভিএম ব্যবহারের কথা বলে আসলেও ব্যাটারির দাম বেড়ে যাওয়ায় এখনো ইভিএম তৈরির কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। ইভিএম নিয়ে কমিশনকে সহযোগিতা দিয়ে আসা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আইআইসিটির পরিচালক অধ্যাপক লুৎফুল কবীর বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন আসার পর দেড় মাস সময় পার হয়েছে। ডিসিসি নির্বাচনও ঘনিয়ে আসছে। চীন থেকে ব্যাটারি আনতে আমাদের সময় লাগবে। ইভিএমের বিষয়টি মনে হয় ভালোভাবে খেয়াল করছেন না তারা। ঢাকার এক হাজার ভোট কক্ষে সুষ্ঠুভাবে কাজ চালাতে অন্তত ১১শ’ যন্ত্র তৈরি রাখা দরকার বলে মনে করে ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন- আইআইসিটি। গত কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে আইআইসিটির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে তৈরি ইভিএমই ব্যবহার করা হয়েছে। লুৎফুল কবীর জানান, ইভিএমের ব্যাটারির দাম আগের তুলনায় প্রায় দুইশ’ টাকা করে বেড়েছে। সব মিলিয়ে ডিসিসি নির্বাচনের জন্য ইভিএম তৈরিতে প্রায় ১৪ লাখ টাকার বাজেট দিয়েছে আইআইসিটি। কিন্তু সম্প্রতি কমিশনের সভায় একজন সদস্য এতো দামে ব্যাটারি কেনার বিরোধিতা করেন বলে জানান একজন নির্বাচন কমিশনার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কমিশনার বলেন, দাম নিয়ে আপত্তি ওঠায় ইভিএমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ডিসিসিতে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি ধীরে ধীরে জটিল হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন লুৎফুল কবীর। তিনি বলেন, নতুন ইসিকে ইভিএম দেখতে হবে, মাঠে দেখাতে হবে। পরীক্ষা করতে হবে। এগুলো ঠিকমতো গুছাতে হবে। একদিকে সময় কমছে, অন্যদিকে সিদ্ধান্ত পেতে বিলম্ব হচ্ছে। একটু তো ক্রিটিক্যাল হয়ে যাচ্ছেই। অবশ্য সিদ্ধান্ত নিতে এই দেরির কারণে ঢাকায় ইভিএম ব্যবহারে কোনো সমস্যা হবে বলে কমিশন মনে করছে না। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলছেন, অন্য স্থানীয় নির্বাচনগুলোর ধারাহিকতায় ডিসিসিতেও এক দশমাংশ ভোটকক্ষে ইভিএম ব্যবহার করতে চান তারা। তিনি বলেন, প্রযুক্তিতে এগিয়ে যেতেই হবে। নতুন আসায় আমরা একটু সময় নিয়েছি। তবে শিগগিরই কার্যাদেশ দেয়া হবে।
২৯ মের মধ্যে ডিসিসির দুই ভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এপ্রিলের মাঝামাঝি তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে ইসির। ৩৮ লাখ ৫৪ হাজারের বেশি ভোটারের এই এলাকায় প্রায় দুই হাজার ভোট কেন্দ্রে ১০ হাজারেরও বেশি ভোট কক্ষ থাকবে। বিগত নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রামে একটি ওয়ার্ডে, নারায়ণগঞ্জে এক তৃতীয়াংশ এলাকায়, কুমিল্লায় পুরো সিটি কর্পোরেশনে এবং নরসিংদী পৌর উপ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে সাফল্য পেয়েছে। গত তিনটি স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের যান্ত্রিক খরচ বাবদ প্রায় ৫৫ লাখ টাকা এখনো ছাড় দেয়নি ইসি। বিগত নির্বাচন কমিশনের সময় এ অর্থ পায়নি আইআইসিটি। এ কারণে সম্প্রতি এ অর্থ পরিশোধের জন্য নতুন ইসিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে আইআইসিটির পক্ষ থেকে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য প্রটোটাইপ তৈরির প্রস্তাব নিয়ে ইসি অগ্রসর হলেও শিগগিরই চুক্তি হচ্ছে না বলে একজন নির্বাচন কমিশনার জানান। বিগত প্রধান নির্বাচন কশিনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশনের সভায় ইভিএমের প্রটোটাইপ তৈরির প্রস্তাব অনুমোদিত হয় গত ২২ ডিসেম্বর। এতে বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ২০১২ সালের মে মাসের মধ্যে প্রটোটাইপিং-এর কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু নতুন কমিশন এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়ায় ‘আপাতত কোনো অগ্রগতি নেই’ বলে লুৎফুল কবীর জানান। এ ব্যাপারে ইসির সর্বশেষ অবস্থান জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, প্রতিটি ইভিএমের জন্য ৪০-৪৫ হাজার টাকা করে ধরলে সংসদ নির্বাচনে দুই লাখের বেশি যন্ত্রের জন্য বিশাল অংকের বাজেট দরকার। এতো বড় ব্যয়ের সিদ্ধান্ত ইসি এককভাবে নিতে চায় না। একটু সময় নিয়ে ইভিএমের সিদ্ধান্ত নিলেও কোনো অসুবিধা হবে না। তাছাড়া সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের আগে রাজনৈতিক ঐকমত্যও দরকার। ডিসিসি নির্বাচনের পর ইসি এ বিষয়ে ভাববে।
সংঘাতময় রাজনীতি পরিহার করে দুই নেত্রীর সমঝোতার বিকল্প নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সংঘাতময় রাজনীতি পরিহার করে দুই নেত্রীর এই মুহূর্তে সমঝোতার বিকল্প নেই। বিশেষ করে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দেশের প্রধান দুই নেত্রী একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতায় পৌঁছতে না পারলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেসকরা। তারা মনে করছেন, দেশের স্বার্থে সংঘাতময় রাজনীতি পরিহার করে সমঝোতায় যাওয়া কঠিন কিছু নয়। তবে এই ক্ষেত্রে বরাবরের মতো বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন, দুই নেত্রীর মানসিক দূরত্বকে রাজনীতি হিসেবে ব্যবহার করে দুই দলেই কিছু সুবিধাবাদী নেতা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকেন। এই সুবিধাবাদীচক্রটি সর্বসময়ই দুই নেত্রীকে রাজনিতীতে সমঝোতার পরিবর্তে মুখা-মুখি অবস্থানে রাখার জন্য অপকৌশল অবলম্বন করে। দুই দলেই এই চক্রটি বরাবরের মতই সক্রিয় রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনের আগে অবশ্যই একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে৷ কারণ এতে দেশের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে৷ বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, এই সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে৷ বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া ১২ মার্চের মহাসমাবেশে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে ৯০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন৷ তবে এর দুইদিন পর সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের দাবির ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি৷ তিনি শুধু বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ৷ ফলে দুই প্রধান দলের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান রয়েই গেছে৷ আর রয়েছে দুই দলের পাল্টপাল্টি কর্মসূচি৷ রাজনীতির বিশ্নেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, এই রাজনৈতিক সংঘাত থেকে সরে গিয়ে দুই দলকে সমঝোতায় আসতেই হবে৷ নয়তো তাদেরই ক্ষতি৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী মনে করেন, দুই দলকেই বসে একটি সমঝোতার পথ বের করতে হবে৷ আর তা, সংবিধানের মধ্যে থেকে হলে ভাল৷ আর তা না হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে৷ তিনি আরো মনে করেন, এই সমঝোতা যত দ্রুত হয় ততই ভাল৷ তাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমে৷ আর অধ্যাপক ইমতিয়াজও মনে করেন, দেড় বছর পরে সমঝোতা হওয়ার চেয়ে দেড় বছর আগে সমঝোতা হওয়া ভাল৷ এতে দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ শান্ত থাকবে এবং সরকারও তার উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নে সময় দিতে পারবে৷ তারা দুজনই মনে করেন, এই রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে বিরোধী দল যে সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ইতিবাচক৷ সংসদে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকটের যদি সমাধান হয়, তাহলে তা হবে সবচেয়ে ভাল৷ এদিকে জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট বিরোধী দলের সংসদে ফেরার আলোচনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এলে সংসদ আরো কার্যকর হবে। শুধু সদস্যপদ রক্ষার জন্য নয়, বিরোধী দল হিসেবেই বিএনপির সংসদে ফেরা উচিত। গত শুক্রবার রাজধানীতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তিন দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে স্পিকার এসব কথা বলেন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্পিকার। তবে স্পিকার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিরোধী দল তাদের পুরানো অভ্যাস পরিত্যাগ করতে পারছে কি পারছে না, তা পরীক্ষার দাবি রাখে। তিনি বলেন, সরকার বা বিরোধী দল প্রত্যেকেরই দাবি-দাওয়া আছে। সেটা রাস্তায়, জনসভায় কিংবা জাতীয় সংসদেও জানাতে পারে। স্পিকার বলেন, তবে রাস্তায় বা জনসভায় সরকারি বা বিরোধী দল যাই করুক, আমার কিছু বলার থাকে না। কিন্তু সংসদে কথা বললে আমিও কিছু মতামত দিতে পারি। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ সময়কে বলেন, সংঘাতময় রাজনীতি আমরাও চাই না। কিন্তু রাজনৈতিক ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি মেনে নিলেই সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমানে বিএনপির একটিই দাবি তা হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নাম নিয়ে যদি সরকারের মাথাব্যথা হয় তাহলে কিছুটা পরিবর্তন করা যায়। যেমন অন্তবর্তীকালীন নির্দলীয় সরকার নাম হতে পারে। পুরো নাম পরিবর্তন করেও হতে পারে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেই কাঠামো থাকা উচিত। তিনি বলেন, দেশে সংকটকাল চলছে। ভবিষ্যতে দেশ সংঘাতের রাজনীতির দিকে যায় কি না তা নিয়ে সবারই চোখে-মুখে উদ্বেগ। কেউই সংঘাতের রাজনীতি চায় না। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাংলাদেশ সময়কে বলেন, ব্যবসায়ীদের পরামর্শ রয়েছে হরতাল বা নৈরাজ্যকর রাজনীতি আর যেন দেশের মাটিতে না হয়। বাংলাদেশের রাজনীতি আর যেন সংঘাতপূর্ণ না হয়, মানুষ যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে বর্তমান সরকার সে চেষ্টা করছে।
সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই
দ্বিগুন দামে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে বাজারে
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাষ্ট্রায়ত্ত তিন তেল কোম্পানির ডিলারদের অনিয়ম এবং সরকারের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বাজারে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুন দামে। বাসাবাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ থাকায় এলপিজি কিনতে গিয়ে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। গত অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ বিবেচনা করে সরকার গার্হস্থ্য প্রয়োজনে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়ার বদলে এলপিজির ব্যবহার বাড়ানোর পক্ষে। জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিনও পেট্রোবাংলার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গৃহস্থালিতে নতুন করে আর গ্যাস সংযোগ আর দেবে না সরকার। বরং গৃহস্থালিতে এলপিজি ব্যবহারে উৎসাহ দেয়া হবে। কিন্তু এ উদ্যোগের কার্যকর বাস্তবায়ন দেখা যায়নি গত নয় মাসেও। বরং আবাসিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে জ্বালানি ব্যবহারে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য বেড়েছে। বাসায় পাইপলাইনে গ্যাসের জন্য একজন গ্রাহককে যেখানে মাসে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪০০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে, সেখানে এলপিজি ব্যবহার করতে প্রতি সিলিন্ডারে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৭০০ টাকা। দাম বেশি রাখার কারণ জানতে চাইলে যমুনার ডিলার সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারের কাছ থেকে প্রায় ৭০০ টাকায় সিলিন্ডার পাওয়ার কথা থাকলেও আমাদের কিনতে হয় সাড়ে ৭০০ টাকায়। আমরা সাড়ে ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকায় বিক্রি করছি। কামরুল ইসলাম নামে একজন গ্রাহক বলেছেন, ১৫০০ টাকার কমে কোথাও সরকারি কোম্পানির এলপিজি মেলে না। রাজশাহীর এলপিজির ডিলার আবু বকর আলী বলেন, সেখানে সরকারি কোম্পানি যমুনাসহ কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানির এলপিজি সিলিন্ডার (সাড়ে ১২ কেজি) বিক্রি করা হচ্ছে ১৫৮০ থেকে ১৭০০ টাকায়। বরিশালেও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ টাকা দরে। আর সরকারি কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার ৭০০ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও তা কিনতে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা লাগছে বলে জানান একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। অতিরিক্ত দামের কারণ হিসেবে চাহিদা অনুযায়ী সিলিন্ডার না পাওয়ার কথা বলেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, সাতক্ষীরার একজন ডিলার প্রতি মাসে ৫ থেকে ৭টির বেশি সিলিন্ডার পান না। একই ধরনের কথা বলেন বরিশালে যমুনার ডিলার মো. মামুন। তার দাবি, তিনি প্রতি মাসে ৭ থেকে ১০টি সিলিন্ডার পান। তার মতো আরো ৩৫ জন ডিলার বরিশালে যমুনার এলপিজি বিক্রি করেন। আমাদের সিলিন্ডার নিতে প্রায় ৭০০ টাকা লাগে। আমাদের বলা হয়েছে একশ থেকে দেড়শ টাকা লাভ করা যাবে। মামুন এর অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কথা অস্বীকার করলেও গ্রাহকদের এমন অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন যমুনা অয়েল কোম্পানির বরিশাল ডিপো ইনচার্জ সাঈদ হাসান। তিনি বলেন, বরিশালে মোট ৩৫ জন ডিলার আছে। তাদের কাছে ৬৭৮ টাকায় সিলিন্ডার বিক্রি করা হয়। তবে তারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা নিচ্ছে বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন। এসব ডিলারের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক গত ১৬ ফেব্র“য়ারি সংসদে জানান, দেশে এলপি গ্যাস আমদানি, বোতলজাত ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া উš§ুক্ত রয়েছে। ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের অনুমোদন নিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এলপি গ্যাস আমদানি করে বোতলজাত ও বাজারজাত করে থাকে। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা এলপি গ্যাসের বিক্রয় মূল্য নির্ধারণে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাজার পরিস্থিতি এবং ক্রেতাদের ভোগান্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, কীভাবে বৈষম্য কমিয়ে আনা যায় তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক জানান, তিন লাখ টন চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে প্রতিবছর সরকারি উদ্যোগে প্রায় ২০ হাজার টন এবং বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৮০ হাজার টন এলপিজি আমদানি করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে উৎপাদিত ২০ হাজার টন এলপিজি পাওয়া যাচ্ছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড থেকে।
দেশে সরকারি পর্যায়ে এলপিজি বোতলজাত করার দুটি কারখানা রয়েছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্ল্যান্টের উৎপাদন ক্ষমতা বার্ষিক প্রায় ১৪ হাজার টন। আর সিলেটের কৈলাশটিলা এলপিজিএল প্ল্যান্টের উৎপাদন ক্ষমতা ৭ হাজার টনের মতো। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে আরো ৬টি প্ল্যান্টে এলপিজি বোতলজাত করা হয়। বিপিসির চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সারাদেশে প্রায় ২ হাজার ২০০ ডিলার রয়েছে, যারা বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানি যমুনা, পদ্মা, মেঘনার কাছ থেকে কিনে প্রতি সিলিন্ডার (সাড়ে ১২ কেজি) এলপি গ্যাস ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছে। প্রতি সিলিন্ডারে বেশি দাম রাখার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এমন খবর বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া গেছে, তেল কোম্পানিগুলোকে ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে ডিলারশিপ বাতিল করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিপিসির চেয়ারম্যান জানান, আমদানি করা এলপিজি বোতলজাত করতে বার্ষিক এক লাখ টন ক্ষমতার দুইটি প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য সরকার ২০১০ সালে একটি পরিকল্পনা নেয়। এর মধ্যে বাগেরহাটের মংলায় একটি এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে চট্টগ্রামের কুমিরায় দ্বিতীয় কারাখানাটি হওয়ার কথা। পরিকল্পনা অনুযায়ী মংলা প্ল্যান্টের জন্য ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আর চট্টগ্রামের প্ল্যান্টের ডিপিপি তৈরির কাজ চলছে বলে জানান তিনি। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় বার্ষিক দুই লাখ ৪০ হাজার সিলিন্ডার উৎপাদন ক্ষমতার একটি কারখানার স্থাপনের প্রকল্পও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বিপিসি চেয়ারম্যান জানান।
বঙ্গবন্ধু ভবনে জনতার ঢল
গভীর শ্রদ্ধায় জাতি স্মরণ করল বঙ্গবন্ধুকে
নিজস্ব প্রতিবেদক
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গতকাল ১৭ মার্চ শনিবার গভীর শ্রদ্ধায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯২তম জš§বার্ষিকী পালন করছে বিনম্র জাতি। দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসাবে পালিত হয়। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জš§ নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে কার্যত তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর জš§দিনে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। সকাল ৭টার পর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে তার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময়, সেখানে মন্ত্রিসভার সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। এরপর শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ প্রধান হিসাবে দলের সভাপতিমণ্ডলীর, কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে জাতির জনকের প্রতিকৃতিকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল হামিদ, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোসহ নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি। এদিন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা এবং গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জš§দিনে এক বাণীতে নতুন প্রজš§কে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়নের জন্য নতুন প্রজš§কে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জš§দিন এবং জাতীয় শিশু দিবসে বাংলাদেশকে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করার শপথ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯২তম জš§বার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার সকালে তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে জনতার ঢল নামে। সকাল ৭ টার আগেই বঙ্গবন্ধু ভবনের আশপাশের এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর জš§দিন উপলক্ষে তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে শনিবার সকাল ৭টা থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে জমায়েত হতে থাকে।
বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে উপস্থিত হাজার হাজার নারী-পুরুষের কণ্ঠে উচ্চারিত ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘জামায়াত শিবির রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই দিতে হবে’, ‘মুজিবের বাংলায় খুনিদের ঠাঁই নাই’, স্লোগানে এলাকার আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে। পুষ্পস্তবক অর্পণের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. এস এ মালেক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের, এডভোকেট সাহারা খাতুন, এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও সতীশ চন্দ্র রায়, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকা ত্যাগ করার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নেতৃত্বে মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম এমপির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় যুবলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন মাস্টার ও সাধারণ সম্পাদক রায় রমেশ চন্দ্রের নেতৃত্বে জাতীয় শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমূল আলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার ও সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসরাফুন্নেছা মোশারফ এমপি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলের নেতৃত্বে যুব মহিলা লীগ বঙ্গববন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। এছাড়া কৃষক লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, তরুণ লীগ, যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, স্বেচ্ছসেবক লীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিন, জননেত্রী পরিষদ, যুব শ্রমিক লীগ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মৎস্যজীবী লীগ, হকার্স লীগ, তাঁতী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, ওলামা লীগ, জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু লেখক সমিতি, বঙ্গবন্ধু আদর্শ মূল্যায়ন ও গবেষণা সংসদ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিল্পী গোষ্ঠী, মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যজোট, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগ, ফোর্স অব বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদ পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সংসদ, মুক্তিযুদ্ধ প্রজš§, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ, বাস্তুহারা লীগ, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমিসহ অসংখ্য দল ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে।
টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী
শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। শিশুরাই আগামী দিনে জাতিকে নেতৃত্ব দেবে। তাই তাদের পড়াশোনার মাধ্যমে বিশ্ব উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় টুঙ্গিপাড়ার মাজার কমপ্লেক্স মসজিদ প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯২তম জš§বার্ষিকী ও শিশু সমাবেশ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা প্রথম শিশুদের জন্য আইন করেছেন। তার অনেক পরে জাতিসংঘ শিশুদের জন্য আইন করেছে। আমরা ২০১১ সালে শিশু নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। তিনি বলেন, জাতির পিতা শিশুদের ভালোবাসতেন। তিনি নিজের বইপত্র দরিদ্র শিশুদের দিয়ে দিতেন এবং পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতেন। নিজের খাবার স্কুলের সহপাঠীদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে ভাগ করে খেতেন। শিশুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের অবহেলা করবে না। তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা করবে। মুরুব্বি ও শিক্ষকদের মেনে চলবে। তিনি বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় শিশু ও তরুণদের জন্য একটি করে খেলার মাঠ বা স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রতিটি শিশুকে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চ্চায় পারদর্শী হতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। শুধু সরকারিভাবে না, প্রতিটি স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি ও সমাজের বিত্তবানদের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এতে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা কমে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দরিদ্র বাবা-মা যাতে সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে, সে জন্য মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই দেয়া হচ্ছে। তিনি মার্চ মাসকে ইতিহাসের পাতায় গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, এ মাসটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান ভাষণ দিয়েছিলেন। এ ভাষণে তিনি বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। এ ভাষণের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতি অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। তিনি আরও বলেন, এ মাসেই জাতির পিতার জš§দিন। ২৬ মার্চ জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবার এ মাসে আমরা সমুদ্রসীমা নিয়ে বার্মার সঙ্গে মামলায় জয়ী হয়েছি। সমুদ্রে আমরা বাংলাদেশের সমান আর একটি ভূখণ্ড পেয়েছি। শুক্রবার বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ভারতকে পরাজিত করেছে। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সব সদস্যকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আবার আমাদের উপমহাদেশের ক্রিকেট তারকা ভারতের শচীন টেন্ডুলকার এ ম্যাচেই শততম সেঞ্চুরি করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন, যা কোনো ক্রিকেট খেলোয়াড় এখন পর্যন্ত করতে পারেনি। আমি তাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে আমরা দেশে নিজেরাই ল্যাপটপ তৈরি করছি। দেশের প্রতিটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার দেয়া হবে। আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে কম্পিউটার দিয়ে তথ্য সেবা কেন্দ্র খুলেছি। বঙ্গবন্ধুর জš§বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গোপালগঞ্জ সরকারি বীনাপানি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শ্রেয়সী বিশ্বাস। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিশু সৌরভ পাল শুভ। প্রধানমন্ত্রী পরে দর্শক সারিতে বসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। তিনি শিশুদের জন্য রচিত বইয়ের মোড়কও উšে§াচন করেন। পরে একই স্থানে তিনি ৩ দিনব্যাপী বই মেলার উদ্বোধন করেন এবং মেলায় অংশ নেয়া স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া ক্ষমতায় যেতে আগ্রহী নয় বিএনপি: ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির পেছনের দরজায় দিয়ে ক্ষমতার যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যকে নাচক করে দিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো পন্থায় ক্ষমতায় যেতে আগ্রহী নয় বিএনপি। জনগণের সমর্থন নিয়েই জাতীয়তাবাদী শক্তি সব সময় ক্ষমতায় যায়। দেশের মানুষ তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসায়। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া বিশ্বাস করে না। বরং আওয়ামী লীগ বিকল্প পন্থায় ক্ষমতায় যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’৮৬ সনের নির্বাচনে এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে গিয়েছিলেন। আবার এক-এগারোর সময়েও সেনাসমর্থিত সরকারকে উৎসাহিত করেছিলো। তিনি আরো বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়েই জাতীয়তাবাদী শক্তি সব সময় ক্ষমতায় যায়। দেশের মানুষ তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসায়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো পন্থায় ক্ষমতায় যেতে আগ্রহী নয় বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আশালীন এমন মন্তব্য করে বিএনপির এ নেতা বলেন, তরুণ প্রজš§ ওনার কথা অনুসরণ করলে এ জাতি কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। তিনি বলেন, সরকারের উচিত হবে বেগম খালেদার জিয়ার দেয়া প্রস্তাব মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা। অন্যথায় ১০ জুনের পর মহাসমাবেশের চেয়েও বড় সমাবেশ করে সরকারের পতন ত্বরান্বিত করা হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ক্রান্তিলগ্নে হাল ধরে বিএনপিকে রক্ষা করছেন। উনার দৃঢ়তা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। তাই সামনের আন্দোলন কর্মসূচিকে উনার আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত করে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হবে। এসময় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবা বিষয়ক সম্পাদক হাবীব উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি চায় ভারত
নিজস্ব প্রতিবেদক
মিয়ানমারের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের মালিকানা নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের পর এবার ভারত দ্বিপক্ষীয়ভাবেই সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি চায় বলে জানালেন ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ। গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন। জাতিসংঘ আদালতে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ সংক্রান্ত মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষে যাওয়ার দু’দিনের মাথায় ভারত এ মতামতের কথা জানালো। পঙ্কজ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মেটাতে আন্তর্জাতিক আদালত নয়, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ওপরই জোর দিচ্ছে ভারত’। মিয়ানমারের সঙ্গে রায়ের পর এখন দ্বি-পক্ষীয়ভাবে ভারত সমাধানের দিকে যাবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আমরা করবো। পঙ্কজ বলেন, আমরা কোনো আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজতে চাই না। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতেই সমুদ্রসীমা বিরোধ মীমাংসা সম্ভব। গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। সমুদ্রসীমা নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডের দি হগে অবস্থিত স্থায়ী আরবিট্রেশন আদালতে (আন্তর্জাতিক সালিশ আদালত) ওই বছরের ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে নালিশ জানানো হয়। ভারতের বিপক্ষে ২০১১ সালের জুলাইয়ে দাবিনামা সালিশ আদালতে জমা দেয় বাংলাদেশ। ভারত এ বছর দাবিনামা জমা দেবে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। ২০১৪ সালে এ সালিশের রায় দেবে সালিশ আদালত। ভারতের সঙ্গে বিরোধটিও মিয়ানমারের সঙ্গের বিরোধের মতোই একটি বিষয়। মিয়ানমারের বিপক্ষে সমুদ্রসীমা বিষয়ক আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের জয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, সমুদ্রসীমার মতো বিষয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এ বিষয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চাই। মিয়ানমারের সঙ্গে রায়ের ব্যাপারে বাংলাদেশকে ভারতের পক্ষ থেকে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন বলেও জানান। পঙ্কজ শরণ বলেন, সমুদ্রসীমার মতো বিষয় ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবগুলো বিষয় নিয়ে দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলোচনা করা হবে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এবং স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে বিস্তারিত এখন কিছু নেই।
তিনি বলেন, আলোচনার টেবিলে সবগুলো বিষয়ই রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সুস্থ আলোচনার পরিবেশ রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হাইকমিশনার বলেন, আমাদের মধ্যে খুব হƒদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে কথা হয়েছে। আমি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণার তরফ থেকে তাকে (দীপু মনি) ধন্যবাদ জানিয়েছি। দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ককে খুবই চমৎকার বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চান, বাংলাদেশের সঙ্গে সর্বোচ্চ ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে। দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্কে আরও অনেক কিছু করার আছে বলেও মন্তব্য পঙ্কজ শরণের। দীপু মনির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ঢাকায় ভারতের উপ হাইকমিশনার সঞ্জয় ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন।
সুন্দলপুরের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
নোয়াখালীর সুন্দলপুর ক্ষেত্র থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর জানিয়েছেন, এই ক্ষেত্রের একটি কূপ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে দৈনিক ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার সকালে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সরবরাহ বাড়িয়ে ১২ থেকে ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত করা হবে। পেট্রোবাংলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স দীর্ঘ ১৫ বছর পর নতুন একটি ক্ষেত্র থেকে গ্যাস সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে হোসেন মনসুর বলেন, এটি একটি বড় অর্জন। তিনি জানান, গ্রিডে যোগ হওয়া নতুন গ্যাস চট্টগ্রাম অঞ্চলে দেয়া হবে, যা শিল্পকারখানাসহ বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগবে।
দেশে বর্তমানে দৈনিক ২৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে ২০০ কোটি ঘনফুট উৎপাদন হচ্ছে। সেই হিসেবে ৫০ কোটি ঘনফুট ঘাটতি থাকছে। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহজাদপুর গ্রামে সাড়ে তিন একর জমিতে নতুন এ ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কূপ খনন শুরু হয়। এর আট মাস পর ১৭ আগস্ট শুরু হয় পরীক্ষামূলক গ্যাস উত্তোলন। এ ক্ষেত্রে ভূ-পৃষ্ঠের ১ হাজার ৪০০ মিটার নিচে গ্যাস পেয়েছে বাপেক্স। এর আগে দেশে এতো কম গভীরতায় আর কোথাও উত্তোলনযোগ্য গ্যাস পাওয়া যায়নি। হবিগঞ্জ ক্ষেত্রে গ্যাস পাওয়াস গেছে ভূ-পৃষ্ঠের ১ হাজার ৫০০ মিটার নিচে। সুন্দলপুর ক্ষেত্র নিয়ে দেশে মোট গ্যাসক্ষেত্রের সংখ্যা এখন ২৪টি। নতুন কূপ থেকে উৎপাদন শুরু হওয়ায় চালু কূপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮২টিতে। সুন্দলপুর তেল, গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, সুন্দলপুর গ্যাস ক্ষেত্রে আনুমানিক ৫০ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাস মজুদ রয়েছে। কূপটি একটি চ্যানেলের মধ্যে পড়েছে। এখানে আরেকটি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। সেখানে মজুদ গ্যাসের পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে। সুন্দলপুরসহ এ পর্যন্ত মোট তিনটি ক্ষেত্রে গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে বাপেক্স। ১৯৯৫ সালে ভোলার শাহবাজপুরে প্রথম এবং ১৯৯৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সালদায় গ্যাস পায় প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ২০০৪ সালে কুমিল্লার শ্রীকাইলে গ্যাস পাওয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সেখানে গ্যাস মেলেনি।
গর্ভের শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে মোবাইল ফোন
ডেস্ক রিপোর্ট
মোবাইল ফোনের তরঙ্গ গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে ক্ষতিকর প্রভাব রাখতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক। যুক্তরাজ্যের দি টেলিগ্রাফ গতকাল শনিবার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ইঁদুরের ওপর এ গবেষণাটি চালান। তারা বলছেন, মানব ভ্রƒণের ওপরেও মোবাইল ফোনের তরঙ্গের একই রকমের ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। সম্প্রতি ন্যাচার সাময়িকীর বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিবেদনভিত্তিক ওয়েবসাইট সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। গবেষণায় দুই দল গর্ভবতী ইঁদুরের মধ্যে একটি দলের খাঁচার নীচে মোবাইল ফোন রেখে তাতে নিয়মিত কল দেয়া হয়। অন্য দলটির খাঁচার নিচে একটি বন্ধ মোবাইল ফোন রাখা হয়। উভয় দলে জš§ নেয়া বাচ্চা ইঁদুরগুলোর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা যাচাই করার পর দেখা যায়, সক্রিয় মোবাইল তরঙ্গের মধ্যে থাকা ইঁদুরগুলোর বাচ্চাদের মধ্যে অতিরিক্ত চঞ্চলতা, উদ্বিগ্নতা ও দুর্বল স্মৃতিশক্তির লক্ষণ দেখা দিয়েছে। অন্য দলের ইঁদুরগুলোর বাচ্চাদের মধ্যে এ লক্ষণ দেখা যায়নি। গবেষণাটির নেতৃত্ব দেয়া ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপ্রোডাক্টিভ বায়োলজির পরিচালক হিউ টেইলর বলেন, মানব ভ্রƒণের মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। গর্ভাবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের ব্যাপারে তাই সীমা বেঁধে দেয়া উচিত। গবেষকরা বলেন, মোবাইল ফোনের তরঙ্গের প্রভাবে মস্তিষ্কের পিফ্রন্টাল করটেক্স অংশের নিউরনের গঠন প্রভাবিত হয়েছে। মস্তিষ্কের এ অংশের সমস্যার কারণে শিশুদের মধ্যে অ্যাটেশন ডিফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভ ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি) দেখা দেয়। টেইলর বলেন, আমাদের গবেষণার ফলাফলে আমরা দেখিয়েছি ভ্রƒণাবস্থায় মোবাইল তরঙ্গের সংস্পর্শে থাকার সঙ্গে এডিএইচডির সম্পর্ক রয়েছে। শিশুদের আচরণগত সমস্যার কারণও হতে পারে মোবাইল তরঙ্গ। অবশ্য অন্যান্য গবেষকেরা বলছেন, ইঁদুরের ওপর চালানো এ গবেষণা মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না। ইতোমধ্যে মোবাইল ফোনকে ক্যান্সারের ঝুঁকির তৈরি করতে পারে এমন পণ্যের তালিকায় রেখেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
জুনের আগেই বাড়ছে খুচরা বিদ্যুতের দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি মাসেই পাইকারি ও জুনের মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায় সরকার। এরই মধ্যে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি সমূহের সূত্রে জানা গেছে। বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) দাম ইউনিটপ্রতি ৪১ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব এরই মধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা পড়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এ প্রস্তাবের বিষয়ে আগামী ১৯ মার্চ গণশুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তরল জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের বিদ্যুতের দাম পুনরায় বাড়ানো হচ্ছে। এই মাসে বিদ্যুতের পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো ঘোষণা আসতে পারে বলে বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তরল জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দাম বাড়ানোর কথা বললেও প্রকৃত অর্থে বেসরকারি পর্যায়ে এই খাতের যে বিনিয়োগ হয়েছে, সেই বিনিয়োগের টাকা পরিশোধ করতেই এই দাম বাড়ানো হচ্ছে। জানা গেছে, পাইকারি দাম বাড়ানোর নিকট সময়ে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা তৈরি করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পিডিবি ও পিডিবির নিয়ন্ত্রণাধীন সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোকে গোপন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কোম্পানিসমূহ প্রস্তাবনা তৈরির কাজ শুরু করেছে, যা আগামী মাসেই জমা দিবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এর চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে বলেন, আগামী ১৯ তারিখে গণশুনানি হবে, আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ালে গ্রাহক পর্যায়েও বাড়নোর যৌক্তিকতা সৃষ্টি হয়। এখন পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কোনো প্রস্তাবনা পাননি বলেও জানান তিনি। পিডিবি দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চলতি মাস থেকে সেচ লোডসহ গ্রীস্মকালীন চাহিদার কারণে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো যথাক্রমে ৩০ শতাংশ এবং ৬০ শতাংশ প্লান্ট প্যাক্টরে চালানোর প্রয়োজন হবে। এতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ৪১ পয়সা বৃদ্ধি পাবে। ফলে বর্তমান উৎপাদন ব্যয় ৫ টাকা ২৯ পয়সার স্থলে ৫ টাকা ৭০ পয়সায় দাঁড়াবে। এর ফলে গড় মাসিক জ্বালানি ব্যয় প্রায় ১৪১ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে বলেও প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। ২০১২ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে বর্ধিত তরল জ্বালানি ব্যয় বাবদ অতিরিক্ত ৫৬৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এই কারণে মার্চের শুরু থেকে পাইকারি বিদ্যুতের দাম সব ক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি ৪১ পয়সা করে বাড়ানো প্রয়োজন। চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে গড় পাইকারি বিদ্যুতের দাম তিন টাকা ৪৭ পয়সা। বর্ধিত জ্বালানি ব্যয়সহ উৎপাদন ব্যয় ৫ টাকা ৭০ পয়সা হচ্ছে। ফলে পাইকারি বিদ্যুতে ইউনিটপ্রতি ঘাটতি হয় এক টাকা ৯৬ পয়সা। বিইআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৯ তারিখ গণশুনানির খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পাইকারি বিদ্যুতের দাম ঘোষণা দেয়া হবে। পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পক্ষকালের মধ্যে গ্রাহক পর্যায়েও বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমান মহাজোট সরকার, এর আগে চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেল আনতে সরকারি ব্যাংকগুলো এলসি না খোলা, কঠিন শর্তে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নেয়ার কারণে এই খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। সরকার এখনই বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছে থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে।
এই কারণেই বিদ্যুতের দাম আবারো বাড়ানোর জন্য সরকাররে নীতি নির্ধারক পর্যায়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা। এছাড়া বিশ্বব্যাংক এই সেক্টরের ভর্তুকি কমানোর জন্য চাপ দিয়ে আসছে। ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর বিইআরসি পিডিবির সকল ধরনের পাইকারি বিদ্যুতের দাম দুই ধাপে ৩৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ায়। পাইকারি মূল্যের প্রথম ধাপে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ধাপে ২০১২ সালের এক ফেব্র“য়ারি থেকে ১৪. ৩৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। বর্তমান সরকারের সময়ে প্রথমবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পায় ২০১০ সালের মার্চ মাসে। পরে পুনরায় ২০১১ সালের ফেব্র“য়ারিতে আবারও দাম বাড়ানো হয়। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে আরেক দফা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালের এক ফেব্র“য়ারি বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার কার্যকর করা হয়।
কমিশন প্রথা রেখেই প্লেনের টিকিট বিক্রির নীতিমালা হচ্ছে
ইশতিয়াক হুসাইন
প্রাইম ব্যাংকের অ্যালটিটিউড ইন্টারনেট ব্যাংকিং সার্ভিস চালু
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
মাজেদুল নয়ন, বসুন্ধরা পেপার মিল(মেঘনা, ঢাকা) থেকে
বসুন্ধরা গ্রুপকে শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাই কমিশনার সারাথ কিউরাগোডা। শুক্রবার সকালে মেঘনায় বসুন্ধরা পেপার মিল ইউনিট-১ এ শ্রীলঙ্কার গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং ডিপার্টমেন্টে কার্বণ লেস পেপার রফতানি কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
শ্রীলংকার গর্ভনিং ডিপার্টমেন্টে মোট ৪৮ মেট্রিক টন কার্বনলেস পেপার রপ্তানি করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। সারাথ কিউরাগোডা বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় শিক্ষার হার সর্বোচ্চ। এ কারণে সেখানে কাগজের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। লেখা এবং পড়া উভয় কাজের জন্য আমাদের কাগজের প্রয়োজন হচ্ছে। এক্ষেত্রে বসুন্ধরা গ্রুপ সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে।’ শ্রীলঙ্কার গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং ডিপার্টমেন্ট আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছিল। সেখানে বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের যোগ্যতায় কাজ পায়। শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের বিনিয়োগ কম। বসুন্ধরা গ্রুপের এক্ষেত্রে বড় ধরনের বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশেও শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ অনেক কম বলে জানান সারাথ কিউরাগোডা। বসুন্ধরা গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শ্রীলঙ্কায় অনেক আগে থেকে বসুন্ধরা কাগজ রফতানি করছে। তবে সেগুলো ছিল বেসরকারি পর্যায়ে। এই প্রথমবারের মতো সরকারি পর্যায়ে কাগজ রফতানি করা হচ্ছে। তিনি জনিনি, প্রথম রফতানি হয় টিস্যু পেপার। এরপর প্রায় ১০০ মেট্রিক টন কাগজ রফতানি করা হয়। এই প্রথমবারের মতো কার্বন লেস পেপার রফতানি হচ্ছে।
মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা সঠিক উৎপাদন এবং বাণিজ্যে বিশ্বাসী। এ রফতানির ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ভারতে এ ধরনের শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশকে সে রকম শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার জন্য শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি। বসুন্ধরা পেপার মিল ইউনিট ১ এর প্রকল্প প্রধান গোপাল চন্দ্র মজুমদার বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের শ্রীলঙ্কায় এটি প্রথম বা শেষ রফতানি নয়। শ্রীলঙ্কায় কাগজের আরও বড় বাজার তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ভারত, নেপাল, দুবাই ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসুন্ধরার কাগজ রফতানি হচ্ছে বলেও তিনি জানান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনের মিনিস্টার কাউন্সিলর এজি আবেশেহারা, হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি ডাব্লিউ আই পি কোরে, বসুন্ধরা পেপার মিলের ইউনিট ২ এর প্রকল্প প্রধান এবিএম ইয়াসিন ও বসুন্ধরা পেপার মিলের হেড অব ট্রেডিং খায়রুল খান উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার বসুন্ধরা পেপার মিলের তিনটি ইউনিট ঘুরে দেখেন। কাগজ উৎপাদনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া দেখে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উপায়ে পেপার ও টিস্যু পেপার তৈরি করছে দেশের সর্ববৃহৎ কাগজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা পেপার মিল। বসুন্ধরা পেপার মিলের তিনটি ইউনিট ঘুরে দেখা গেছে, এসব মিল থেকে যেমন কোনো ধরনের বর্জ্য নিঃসরিত হয় না, তেমনি পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর কোনো ধোঁয়াও বের হয় না। বসুন্ধরা আধুনিক প্রযুক্তি ইফ্যুলেন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব কাগজ উৎপাদন করে আসছে। এর আগে দেশে এ ধরনের পরিবেশ বান্ধব কাগজের উৎপাদন ছিল না। এ পদ্ধতিতে বারবার পরিশোধনের মাধ্যমে পানি এবং ধোঁয়ার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হয়। বসুন্ধরা পেপার মিলে যে ধোঁয়া বের হয়, তাকে শক্তিতে রুপান্তরিত করা হয়। বায়ু দূষণ যেন না হয়, সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখা হয়। এ ছাড়াও বর্জ্য পানি পরিশোধিত করে আবার ব্যবহার করা হয়। বসুন্ধরা পেপার মিলে তৈরি কাগজের জন্যে কোনো ধরনের দেশীয় পাল্প (মণ্ড) ব্যবহার করা হয় না। গোপাল চন্দ্র মজুমদার বলেন, বিদেশ থেকে পাল্প নিয়ে আসা হয়। কারণ, দেশে পাল্প তৈরি করতে হলে অনেক বন উজাড় করতে হবে, যাতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তিনি জানান, ১ টন কাগজ উৎপাদনের জন্যে প্রায় ১০০ টন পানি লাগে। এ পানি বর্জ্য হয়ে যেন নদী বা জলাশয়ে গিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করতে না পারে, সেজন্য পানিকে পরিশোধন করে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে পানির অপচয়ও কমে। তিনি বলেন, পরিশোধন প্রক্রিয়ায় সব মিলিয়ে প্রায় ৯৯ শতাংশ পানি ব্যাবহার করা হয়। বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ কাগজই পরিশোধন করে তৈরি করা হয়। কিন্ত বসুন্ধরার কাগজ দেশি মণ্ড থেকে নয়, বরং বিদেশ থেকে আমদানি করা মণ্ডে তৈরি করা হয়। অফসেট এবং রাইটিং পেপার তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় একেবারে ফ্রেস মণ্ড। কোনো ধরনের পুরনো নিউজপ্রিন্ট বা ময়লা দেওয়া হয় না। এ কারণে বসুন্ধরার পেপার দেখতে এতো শুভ্র। গোপাল চন্দ্র মজুমদার জানান, বছরে বসুন্ধরার ৩টি মিলে গড় উৎপাদন ৩৬ হাজার টন পেপার। তিনি বলেন, সর্ববৃহৎ কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের কাগজ আধুনিক মেশিনে তৈরি হচ্ছে সব ধরনের উন্নতমানের কাগজ ও কাগজজাত পণ্য। এসবের মধ্যে রয়েছে ফেসিয়াল টিস্যু, পকেট টিস্যু, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন পেপার, কিচেন টাওয়েল, ক্লিনিক্যাল বেডশিট, হোয়াইট প্রিন্টিং ও রাইটিং পেপার, লাইনার ও মিডিয়া পেপার, স্যানিটারি ন্যাপকিন, বিড়ি ও সিগারেট পেপার, এমজি পোস্টার পেপার, অফসেট পেপার, নিউজপ্রিন্ট পেপার, এ-ফোর পেপার, স্টিফেনার, অ্যালু-ফয়েল পেপার, কার্বনলেস পেপার, আর্ট পেপার, কোটেড ও আনকোটেড বোর্ডসহ অনেক ধরনের কাগজ। ইউনিট-২ এর মিল-২ এ উৎপাদন করা হয় লাইনার এবং প্যাকেজিং পেপার। এসব মিলিয়ে দিনে গড়ে ৭০ থেকে ১০০ টন উৎপাদন হয়। এখানের কোনো ধরনের বায়ু দূষণ হয় না। কারণ ধোঁয়াকে পরিশোধন করে শক্তিতে রুপান্তর করা হয়। এছাড়াও পানির পিএইচ এর ব্যাপারেও সতর্ক থাকা হয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধুনিক টিস্যু পেপার মিলও বসুন্ধরা পেপার মিল-৩। বর্তমানে ৫টি মেশিনে প্রায় ২০০ টন কাগজ উৎপাদন করে ইউনিট-৩। এর মধ্যে ১০০ টন টিস্যু। বাকি ১০০ টন অন্যান্য। তিনি আরো জানান, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়াই তৈরি হয় বসুন্ধরা টিস্যু। সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয়। মাসে ৩ হাজার টন টিস্যু তৈরি করার ক্যাপাসিটি আছে বসুন্ধরা গ্রুপের। কিন্তু বাংলাদেশে চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টনের। ইতিমধ্যে দেশের বাইরেও রফতানি হচ্ছে এ টিস্যু। বসুন্ধরা টিস্যু মিল মূলত ২ ধরনের টিস্যু উৎপাদন করে। একটি হচ্ছে টয়লেট টিস্যু, আরেকটি ফেসিয়াল টিস্যু। ফেসিয়াল টিস্যু তৈরিতে কোনো ধরনের পরিশোধন করা হয় না বলেও জানান তিনি। কারণ, এটি পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরির ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি অনেক নরম এবং আরামদায়ক। বসুন্ধরা গ্রুপ শিল্পোদ্যোগের সময় সব সময়ই পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি খেয়াল রাখে বলেও জানান গোপাল চন্দ্র মজুমদার।
আবারও ডিএসই’র প্রেসিডেন্ট রকিবুর
শেখ নাসির হোসেন
জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর অনিয়ম রোধে কঠোর অবস্থানে আইডিআরএ
এইচ এম মুর্তুজা
জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর অনিয়ম রোধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। বীমা কোম্পানিগুলোর অনিয়ম রোধে নানা কর্মসূচির হাতে নিয়েছে আইডিআরএ। এ লক্ষ্যে চলতি বছরের জুনের মধ্যে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন আরো তিনটি বিধি কার্যকর করা হচ্ছে। এগুলো হলো : কমিশন সমন্বয়, একাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন ও একচ্যুয়ারি নিয়োগ। জানা গেছে, প্রিমিয়ামের সঙ্গে কোনো ধরনের খরচ, পাওনা, দাবি অথবা কমিশন ইত্যাদি সমন্বয় করতে পারবে না জীবন বীমা কোম্পানিগুলো। আইডিআরএ’র এ বিধানটি আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করা হবে। এছাড়া চলতি বছরের ১ জুন থেকে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর বেতন, ভাতা, কমিশন, রিলিজ ও অন্যান্য প্রণোদনা কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি বা প্রতিনিধির নিয়োগকারী ব্যক্তিকে একাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে প্রত্যেক জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানে একচ্যুয়ারিয়াল বিভাগ করাও বাধ্যতামূলক করেছে বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। যাদেরকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে তাদের যোগ্যতার বিষয়ে আইডিআরএ’র নির্দেশনায় বলা হয়, একচ্যুয়ারি বিজ্ঞানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম একটি অংশে উত্তীর্ণ এবং একচ্যুয়ারির কাজে ধারণা সম্পন্নদের এ দায়িত্বে নিয়োগ দিতে হবে। পাশাপাশি একচ্যুয়ারি কাজে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের একচ্যুয়ারিয়াল বিষয়ে অধ্যয়নের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ছয় মাস পর পর তাদের পরীক্ষা পাসের অগ্রগতির রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের অফিসে প্রদান করতে হবে। প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বীমা আইন ১৯৩৮ পরিবর্তন করে বীমা আইন ২০১০ এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ প্রণয়ন করে। নবগঠিত আইডিআরএ জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল কাঠামো নির্ধারণ করে দেয়। যা চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়। এ বিষয়ে আইডিআরএ মনে করে, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং আইনের নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে। ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে এলে লাইফ ফান্ড বৃদ্ধি পাবে।
সন্ত্রাসবিরোধী সক্ষমতা বাড়ানোর নামে কী হচ্ছে
মুহম্মদ আলতাফ হোসেন
মার্কিন সেনাবাহিনীর সাত সদস্যের একটি দল বাংলাদেশে আছে বলে জানা গেছে। তারা সন্ত্রাস দমনের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেবে। সিলেটে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ স্কুলে এ প্রশিক্ষণ হবে। চার সপ্তাহের এ প্রশিক্ষণ গত শনিবার থেকে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে মার্কিন বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র বলেন, এ ব্যাপারে তিনি বক্তব্য দিয়েছে কংগ্রেসের শুনানিতে। ওই শুনানিতে তিনি যা বলেছেন, সে সম্পর্কে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়, পেন্টাগনের ওই কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের শুনানিতে বলেছেন, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের সক্ষমতা বাড়াতে, বিশেষ করে সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা জোরদারে সহযোগিতা করতে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর দলগুলো মোতায়েন করা হয়েছে। মার্কিন বাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ড তাদের নিয়োগ করেছে। মার্কিন সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক কমান্ড ও গ্লোবাল পিস অপারেশনস প্রোগ্রামের (জিপিওআই) আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে ‘শান্তিদূত-৩’ নামে এক যৌথ মহড়ায় অংশ নিতে গত বুধবার ঢাকায় আসে জে. উইয়ারসিনস্কি। এর আগে গতবছর ডিসেম্বরেও একবার ঢাকায় এসেছিল এ মার্কিন সেনা কর্মকর্তা। তিনি জানান, এখানে এসেই আমি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারছি। তিনি আরো জানান, গত গ্রীষ্মে সিঙ্গাপুরে জেনারেল মুবিনের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। সে সময় দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়। জেনারেল মুবিন (বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান) বাংলাদেশের জঙ্গলে এই যৌথ মহড়া আয়োজনের প্রস্তাব দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য এ ধরনের জঙ্গল নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণত পানামায় মার্কিন সেনাদের এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফ্রান্সিস জে. ওয়ারসিনস্কি আরো বলেছে, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দ্রুত সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। এই লক্ষ্যে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় তা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকার মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ডাকলে দ্রুততার সঙ্গে সাড়া দেয়ার জন্য আগেভাগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে বোঝার ব্যাপারও রয়েছে। দুই দেশের সামরিক বাহিনীর সহযোগিতার মাধ্যমে পরস্পরে কীভাবে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে তা জানা দরকার। এ লক্ষ্যে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক ও অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার কাজ করতে সহজ হবে। ওদিকে খোদ ওয়াশিংটন পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যেও একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় বলেও জানিয়েছেন সফররত মার্কিন সেনা কর্মকর্তা। জেনারেল ফ্রান্সিস জে উইয়ারসিনস্কি বলেন, আমাদের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ়। তবে আমরা এই সম্পর্ককে এমন অংশীদারিত্বের জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যেন প্রয়োজন হলেই টেলিফোন করে আমি জেনারেল মুবিনের (বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল মুবিন) সঙ্গে কথা বলতে পারি। আমার ধারণা, জেনারেল মুবিনও তেমনই চান। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর মধ্যকার যৌথ মহড়া ‘‘কো-অর্ডিনেটেড এফ্লোট রেডিনেস এন্ড ট্রেনিং’’- ক্যারাট-২০১১, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ওরিগন রাজ্যের ন্যাশনাল গার্ডের মিলিটারি ডিপার্টমেন্ট এবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ বিমান মহড়ার প্রস্তাব দিয়েছে। চলতি মাসেই ওরিগন ন্যাশনাল গার্ডের একটি প্রতিনিধিদল এ প্রস্তাব নিয়ে ঢাকা সফরে আসছে। প্রসঙ্গত আমরা মনে করি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর এ অতি আগ্রহ কোনোক্রমেই উদ্দেশ্যহীন নয়। মূলত এ শুধু উদ্দেশ্যমূলকই নয় বরং গভীর দুরভিসন্ধিমূলকও। কারণ ‘সুঁচ হয়ে ঢোকা এবং ফাল হয়ে বের হওয়া’ সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনিদের জš§গত বৈশিষ্ট্য। মার্কিনিরা বাংলাদেশের সঙ্গে মুসলিম ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ আফগানিস্তান এবং ইরাকে হামলার পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছে যে সেখানে তারা মুসলমানদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। মূলত দুষ্ট লোকের মিষ্ট কথার অভাব হয় না। তারা যে লাদেন এবং সাদ্দামের কথা বলে যুদ্ধ শুরু করেছে সে লাদেন এবং সাদ্দাম তাদেরই এজেন্ট। তাছাড়া যুদ্ধের বাইরে অসংখ্য বেসামরিক লোককে হত্যা করা, লাখো মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করা। এগুলো কী মুসলমানদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করার প্রমাণ? মূলত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার পেছনে এতদঞ্চলে মার্কিনি প্রভাব বিস্তার করাই ওদের মূল উদ্দেশ্য। বিশেষ করে এতদঞ্চলে ওদের চির-শত্র“ চীনের প্রভাব ঠেকানো এবং পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে ঘাঁটি স্থাপন করে করদ রাজ্য বানানোই ওদের আসল হীন উদ্দেশ্য। প্রসঙ্গত মার্কিন সেনাবাহিনী যেভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছে তা সংবিধানের ২৫ নং অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট খেলাফ। আমরা ভেবে পাই না কীভাবে ক্ষমতাসীন দল সংবিধানের অধীনে শপথ গ্রহণ করে ক্ষমতার আসনে বসে প্রকাশ্যে সংবিধান লংঘন করে? কিভাবে সংবিধান বিরোধী কাজ করে? শপথ গ্রহণ করে ক্ষমতায় থেকে প্রকাশ্যে সংবিধান বিরোধী কাজ করা কী রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়? এ কী মুনাফেকী নয়? সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনিসহ তাদের সহযোগী মুনাফিকদের এ জাতি, এ দেশবাসী কখনো গ্রহণ করেনি। ক্ষমা করেনি। ৭১’-এও মার্কিনিদের এ জাতি গ্রহণ করেনি এবং তাদের সহযোগী পাকিস্তানি ও যুদ্ধাপরাধীদের আজো ক্ষমা করেনি। মহান আল্লাহ পাকও মুনাফিকদের ক্ষমা করেন না। বরং তারা থাকবে জাহান্নামের অতল গহবরে। সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থানে। কাজেই সচেতন মহল বিষয়টি ভাববেন বলেই আমরা মনে করি।
এএনএস’র প্রধান সম্পাদক।
কর্পোরেট-সিন্ডিকেট পুরো দেশ দখল নিতে প্রস্তুত
মনজুরুল হক
কর্পোরেশন আগ্রাসনের চাপে বিএনপি যেমন ‘কাৎ’ হয়েছিল ঠিক সেই মাপে বা আরো খানিকটা বেড়ে ‘কাৎ’ হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। ইতোমধ্যেই এই জোটের আচরণ রাজনীতির ‘লিমিটেড কোম্পানি’র মতো হয়ে গেছে। ওখানে এখন নীতি, আদর্শ, দফা, স্বপ্ন ইত্যাকার ছেঁদো শব্দগুলোর কোনো মানে নেই। মাখো তেল, ফ্যালো কড়ি, হাঁকাও গাড়ি, আলিশান বাড়ি, আর ডলার কাড়ি কাড়ি। এই পথে এবং হাঁটতে যাচ্ছে মহাজোটে শামিল তথাকথিত বামপন্থী দলগুলোও, কারণ কর্পোরেট বেনিয়াদের অফুরন্ত পুঁজি কেবল বিএনপিতে মেখেছে তা নয়, মেখেছে আওয়ামী লীগেও। এমনকি যারা একদা ঝোলা কাঁধে চটি পায়ে ভ্যালুজ ট্যালুজ একটু আধটু বয়ে বেড়াত সেই বামদেরও একই দশা। কর্পোরেট দরবারে ধর্ণা দিতেই হচ্ছে। এই যে কর্পোরেট বাণিজ্য এটা একবিংশ নয়, বিংশ শতকের শেষ দিক থেকেই শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ওআইসি ইত্যাকার প্রতিষ্ঠান এবং ব্রেনগুলো সেই ক্লিওপেট্রা আর সিরাজের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া নব্য ব্যাপারী। এদের স্লোগানÑ মাখো তেল, নাও টাকা, মারো টাকা, দাও সুদ এবং কর তা-ই, যা আমরা বলব। এটা মানেনি কেবল অল্প শিক্ষিত বাঙালি। যারা এলিট তারা মেনেছেন কেবল নয়। আকণ্ঠ ডুবে আছেন কর্পোরেট সুইমিংপুলে। দেশটাকে কয়েকটা ফ্রেমে ভাগ করে এক একটা ফ্রেম আঁকড়ে আছে এক একটা নব্য বেনিয়া বা নব্য এলিট, তথা কর্পোরেশন। আজকাল বুয়া-মাতারিদের দু’-এক কেজি লতাপাতা শাককচুও কর্পোরেট সিন্ডিকেটের আওতায়। এই ভাগ করা ফ্রেমের প্রথমটা সরকারের দখলে। তার হাতে আইন, বিচার, পুলিশ, র্যাব, সরকারি আমলা মাস্তান, অবসরপ্রাপ্ত সেনা-সিভিল ব্যুরোক্র্যাট। এদের নমিনেশনের প্রায় ৭০ ভাগ দখল করছে এরা। দ্বিতীয় ফ্রেমটা আওয়ামী লীগের দখলে। ১৪ দলের ব্যানারে কিছু রাজনীতির চর্চা হলেও এদের ৭০ ভাগ নমিনেশন পায় ওই কয়েকটা শ্রেণী, মানে কর্পোরেট ব্যাপারীরা। কাপড় সেলাই করে সামন্তবাদী এঁদো হঠাৎ ডলার-পাউন্ড কামিয়ে ওই কর্পোরেশনের পার্টনার। গরিব মানুষের জায়গা দখল করে, সরকারি জায়গা তুড়ি মেরে হাতিয়ে যারা হাইরাইজ ঢাকা বানাচ্ছে তারাও কর্পোরেশনের নব্য পার্টনার। শুধু পার্টনার বললে কম বলা হবে। বলতে হবে প্রধান চালিকাশক্তি বা ওই কর্পোরেট বডির হার্টলাইন। কেউ কি একটা মোটাতাজা ঘেটু দেখাতে পারেন যার একটা গার্মেন্টস নেই, হাউজিং নেই, ঢেউটিনের কারখানা নেই, সয়াবিন, লবণ গুঁড়োদুধের ব্যাপার নেই! পারবেন না। এসব এখন প্রধান নির্বাচনী প্রাক-যোগ্যতা। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে নয়া আমদানিকৃত আইটি বাণিজ্য। বাঙালির চিরায়ত এনালগ জীবনকে এক লহমায় নেটওয়ার্কেও বেড়া দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে আইটি কমিউনিকেশন। এখানে এখন শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য। আর সেই বাণিজ্য চলছে সামান্য গুটিকয় সায়েব-সুবোদের ইশারায়। বলা হচ্ছে আগামী শতকটা নাকি তাদের! অর্থাৎ আইটি লেঠেলদের। তবে এই নব্য নষ্ট বেজš§া ক্লাসগুলোর ভেতর সবচেয়ে নিচ এবং ভয়ঙ্কর হচ্ছে মাটির ব্যাপারীরা। মাটি কেনে দালান বেচে। সিম্পল ব্যবসা। কিন্তু এর সঙ্গে মিশে আছে হাজারো মানুষের রক্ত, ঘাম, প্রাণ আর কঙ্কাল। এই ঢাকা শহরটা আগামী ২০-২৫ বছর পর পরিত্যক্ত ওয়েস্টার্ন র্যাঞ্চ হয়ে যাবে। ক’দিন ধরে দেখা যাচ্ছে এক ডেভেলপার কাম ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট কাম সংবাদপত্র মালিকের ফাঁসি দেয়া ছবি ছেপে ‘ফাঁসি চাই’ বলা পোস্টার। এ রকম প্রায় সবারই আছে বড় বড় ডেভেলপাররা তাদের চরদখলের পাপ ঢাকতে এবার লাইন দিচ্ছে হাওয়া ভবন আর সুধা সদনের বাইরে। এই ডাকাতগুলোর টাকা হয়েছে ডলার হয়েছে, ক্লাব হয়েছে। কেবল ঠাণ্ডা ঘরে স্পিকারের সামনে বসে ঘুমোনোর সুযোগ হয়নি। এবার এরা তাই চায়। এর আগে জনকণ্ঠ-যুগান্তর যে কনফ্রন্টেশন সেটাও ওই মাটি কেনা-দালান বেচা। অল আর্কিটেক্ট বলে পরিচিত এক ডেভেলপার জোচ্চুরি হতে দেয়নি বলে ফ্ল্যাট ক্রেতাদের মেরে এখন কর্পোরেট পার্টনারশিপ দিয়ে সংবাদপত্র কিনতে চাচ্ছে। খবর ছাপতে বাদ সাধছে। তাদের ধারণা টাকায় কি-না হয়। সারা ঢাকার আশপাশের সব জলাভূমি কয়েকজনে দখলে নিল, কই কী হলো? সেই বলে বলীয়ান হয়ে এই নব্য বেনিয়ারা কেবল জমি-জলা দখল নেয়া নয়, লাখ লাখ টাকায় ফ্ল্যাট বেচে এমন কাজ শুরু করেছে যেন ভদ্রলোকরা টাকার মায়া ভুলে প্রাণ হাতে ফ্ল্যাট ছাড়ে! এরা আবার ওই পুরানোদের চেয়ে এক কাঠি সরেস। কেননা মগজে আইটি বিদ্যা রয়েছে। তো আমাদের এই সকল দেশের ‘অর্থনীতির জারজ পিতা’ (এরা নাকি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখে! এই ডাহা মিথ্যাটা যে অর্থনীতিবিদেরা পরিসংখকেরা বলে তারা হয় আবাল নয়ত কর্পোরেটে পেইডআপ)। এবার লাইন দিচ্ছে ওই পানিঘেরা গুমটি ঘরটাতে যাওয়ার জন্য। একজন প্রাক্তন বিচারপতি যিনি এক মাহেন্দ্রক্ষণে প্রধান হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এমন ধরাবাধা ধারণাটিকে এবার মহাজোট সরকার কেলো করে দিলেও এক পক্ষ এখনো আশা করে আছে কোনো না কোনো সময়ে অবশ্যই সরকারকে সেই ‘পাহারাদার’ সরকারের ফর্মুলায় আসতেই হবে। এখানে একজন প্রাক্তন বিচারপতি যিনি এক ধরনের ড্রইংরুম কনফারেন্স-মার্কা নির্বাচন করার জন্য সোলড। তাদের নিয়ে চারদলীয় জোট বা বিএনপির পত্রখেলা, মিছিলখেলা, আন্দোলনখেলা, অবরোধখেলা করছে এবং করবে। এদিকে সময় সমাগত হলে কর্পোরেট ব্যাপারীরা বসে থাকবে না। এদের ময়দানে খেলতে নামিয়ে তারা খুচরো এবং পাইকারি বেচাকেনা শুরু করে দেবে। মূল রাজনীতির কর্মী-নেতারা যখন ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, অবসন্ন। তাদেরও টিকেট কনফার্ম তবে সেটা প্রার্থী হিসেবে নয়, হয় পরপারে নয় পথের ওপারে। রাজনীতি এখন সম্পূর্ণরূপে কর্পোরেট বেশ্যাদের দখলে। কর্পোরেট বেশ্যাবৃত্তি আমরা দেখেছি ইন্দোনেশিয়ায়, আফগানিস্তানে, নাইজেরিয়ায়, ইথিওপিয়ায় এবং সিঙ্গাপুরে আর কম্পুচিয়ায়। আমরা এখনো জানি না এ নিয়ে ঠিক কী হতে যাচ্ছে। তবে এটা জানি, প্রধান দলগুলোর প্রধান অংশ যদি কর্পোরেট দালালদের দখলে চলে যায় (চলে যায় বলছি কেন? বলা যেতে পারে অলরেডি চলে গেছে), যেমন একটা ছোট্ট উদাহরণ দেখা যাক: বলা হয় কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রোদে পুড়ে, জলে ভিজে প্রাণান্ত পরিশ্রম করে যে সোনার ফসল ফলায় সে তার ন্যায্য দাম পায় না। তাকে পানির দামে তার ফসল বেচে দিতে হয় পাইকারের কাছে। কেননা গুদামে মজুদ করার ক্ষমতা নেই। এ অবস্থায় দেখা গেল কৃষকের বাম্পার ফলন হলো পেঁয়াজে। হয়ত মাত্র দশ টাকা দরে বেচলেও তার লোকসান নেই, যেই তার হাতে থেকে দশ টাকা দরে বিক্রি হয়ে মহাজন, ফড়ে ব্যাপারী, মধ্যস্বত্বভোগীর হাতে পিঁয়াজ চলে গেল অমনি কোনো না কোনো একটি চোঙা সাংবাদিক বা সেই চোঙা সাংবাদিকতার কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের চোঙাধারীরা চোঙাসমেত অকুস্থলে গিয়ে হাজির। তারা ওই কর্পোরেট ব্যাপারীর বা সিন্ডিকেটের হয়ে ফেনিয়ে প্রচার করে দিল যে ‘পিঁয়াজ চাষ করে কৃষকের মাথায় হাত!’ সঙ্গে সঙ্গে কর্পোরেট ডাটা বেইজ ধরে কর্পোরেট ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে সেই খবর ছড়িয়ে গেল বাকি চ্যানেলগুলোতে। ফলাফল: পরদিনই পিঁয়াজের বাজারে আগুন! এক লাফে পিঁয়াজ দশ টাকা থেকে কুড়ি টাকা! তবুও আগে কর্পোরেট ধান্ধাবাজরা বিকিকিনি নিয়েই মুনাফা তুলে নেয়ার মচ্ছবে ব্রতী ছিল। এখন আর তাতে পোষাচ্ছে না। এখন তারা থাবা বসিয়েছে শিল্প-সংস্কৃতিতে। সেখানে তো বিক্রি হওয়ার জন্য বারবনিতাদের মতো সেজেগুজে বসে আছে শিল্প-সংস্কৃতির তালেবররা। প্রতিযোগিতা চলছে কে কার আগে বাজারে উঠবে, কে কার আগে বিক্রি হবে! পলিটিক্স-সোল্ড। ইকোনমিকস-সোল্ড। আর্ট এন্ড কালচার-সোল্ড। এখন বাকি কেবল স্টেট পাওয়ার, কেননা স্টেট ম্যাকানিজম আরো আগেই সোল্ড। সেই বাকিটুকু কবে সোল্ড হবে সেই আশায়ই যেন কর্পোরেট দানবকে তাজামোটা করা হচ্ছে, দুধ-কলা দিয়ে পোষা হচ্ছে। এর পরও যখন কেউ কেতা করে বলেনÑ ‘সকল সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হবে’, তখন সেই বক্তা বা স্পোকসম্যানের জন্য করুণা ছাড়া আর কী হতে পারে!
লেখক : কলামিস্ট
সাংবাদিক হত্যার বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের অমার্জনীয় ব্যর্থতা
মীর আব্দুল আলীম
গত দেড় যুগে ৩৯ সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বাংলাদেশে। সর্বশেষ সাংবাদিক দম্পতি ‘সাগর-রুনী’ হত্যার ঘটনার পর সংবাদপত্র থেকে পাওয়া তথ্য হলো ৩৯ সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। প্রতিবছরই একাধিক সাংবাদিকের অপঘাতে মৃত্যু হচ্ছে, কিন্তু সারা জীবন সত্যের পেছনে ছুটে বেড়ানো এসব সাংবাদিকের হত্যারহস্য হিমশীতল বরফের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। কেবল বিচারই নয় একটির হত্যাকাণ্ডেরও রহস্য প্রকাশিত হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাপন করছেন স্বাভাবিক জীবন। কেউ কেউ রয়েছেন জামিনে। কেউ আবার মিডিয়াতেই কর্মময় জীবনযাপন করছেন। অনেক হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য এমনকি তদন্ত কাজ, চার্জশিট ঝুলে আছে। কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে বছরের পর বছর সময় নিয়েও তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। দলীয় সন্ত্রাসী ক্যাডার, মাস্তান, ভাড়াটে কিলার, ঠিকাদার, কালোবাজারী, অসাধু ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজদের রক্ষা, সুবিধাভোগী পুলিশ বাহিনীর দুর্বল তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা এর অন্যতম কারণ। কিছু মামলায় বছরের পর বছর কালক্ষেপণ করে দীর্ঘ সময় নিয়েও তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি পুলিশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা, মূল অপরাধীদের পাশ কাটিয়ে চার্জশিট প্রদান, দুর্বল অভিযোগ উত্থাপন এবং চার্জশিটভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার না করার অভিযোগ আছে। এমনকি পুলিশের বিরুদ্ধে প্রভাবশালী খুনিদের পক্ষ নিয়ে নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি প্রদর্শনেরও অভিযোগ আছে। নিম্ন আদালতের দীর্ঘসূত্রতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে প্রায় সাংবাদিক হত্যার পেছনে রাঘববোয়ালদের হাত থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি জড়িত প্রভাবশালীরা। যার কারণে বিচারকার্য প্রভাবিত হয়। এ অবস্থা একটি রাষ্ট্রের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এতে খুনিরা দিন দিন উৎসাহিত হচ্ছে। সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বাড়ছে। ভাবা কি যায় কেবল ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের শাসনামলে ৩ বছর ১ মাসে ১৪ সাংবাদিক খুন হয়েছেন। এসব খুন দেশের সন্ত্রাসী খুনিদের উসকে দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে সাংবাদিক হত্যার বিচার না হলে সাধারণ মানুষের কি হবে। যেহেতু গত দেড় যুগে ৩৯ সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের একটিরও বিচার হয়নি, প্রভাবিত হয়েছে সব মামলা, আমরা মনে করছি সাগর-রুনীর মামলাটিও প্রভাবিত হচ্ছে। তাই প্রয়োজনে বিশেষ বিবেচনায় এনে সরকার এসব মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে পারে। দরকার হলে এক্ষেত্রে বিশেষ আদালত গঠনের মাধ্যমে ঝুলে থাকা মামলাগুলোর বিচারকার্য শুরু করা যেতে পারে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে হলে সাংবাদিকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমাদের দেশে আজ পর্যন্ত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তো দূরে থাক কোনো সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে হরদম। সরকারকে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারে অবশ্যই আন্তরিক ও কঠোর হতে হবে। সম্প্র্রতি মাছরাঙা টেলিভিশন ও এটিএন বাংলার সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি আবারো আলোচনায় চলে এসেছে। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা অপরাধীদের আরো বেপরোয়া করে তুলছে। ফলে তারা সাংবাদিকদের বাসগৃহে প্রবেশ করে নৃশংসভাবে হত্যা করার মতো স্পর্ধা দেখাতেও পিছপা হচ্ছে না। সাগর ও রুনীর ঘটনা সাংবাদিকরা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ জীবনে বসবাস করেন তা সবার সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো, এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ঊর্ধ্বতনদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে। আমরা চাই, দেশে সংগঠিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্ন হোক। এটি একটি দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি। আতঙ্কের কথা হলো, এখন সাংবাদিকরা খুন হচ্ছেন নিজের ঘরেই। খোদ ঢাকায় ১ বছরের ব্যবধানে নিজে গৃহে সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ দম্পতি ও সাগর-রুনী দম্পতি খুন হয়েছেন। দিনের পর দিন এই হত্যাকাণ্ড বেড়েই চলছে। গত দেড় যুগে খুন হওয়া ৩৯ সাংবাদিকের মধ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের শাসনামলে ৩ বছর ১ মাসে ১৪ সাংবাদিক খুন হয়েছেন। এদের মধ্যে ঢাকাতেই খুন হয়েছেন ১০ সাংবাদিক। বিগত ‘বিএনপি-জামায়াত’ জোট সরকারের আমলে খুন হয়েছে ১০ সাংবাদিক। এসব সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের মামলাগুলো বলা যায় প্রায় সব ক’টিই হিমাগারে আছে। মামলাগুলোর হালহকিকত এমনÑ গৌতম দাস হত্যা মামলা ২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হলেও এখন পর্যন্ত বিচার শেষ করা যায়নি। ১১ বছর আগে মারা যান শামছুর রহমান কেবল। গত পাঁচ বছর ধরে মামলার বিচার কাজ স্থগিত। তার স্বজনরা সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা আশাহত। আর কোনো দিন এ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার হবে কিনা সন্দেহ। ১৩ বছরেও শেষ হয়নি সাইফুল আলম মুকুল হত্যা মামলা। গত আট বছরেও মানিক সাহা হত্যা মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় মানিক সাহা নিহত হওয়ার পর খুলনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রণজিৎ দাস বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী আতাউর রহমান ও পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ২০০৪ সালের ২০ জুন অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে মামলাটি খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামলার অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়ে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঠান। মুখ্য মহানগর হাকিম ১৯ এপ্রিল মামলাটির নথিপত্র সদর থানায় পাঠান। ২০০৬ সালের ১২ নভেম্বর মামলাটি খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় পাঠানো হয়। এ মামলার আসামিরা হলেন জনযুদ্ধের আঞ্চলিক নেতা সুমন ওরফে নুরুজ্জামান, আকতার হোসেন, আলি আকবর, ডিসকো সাত্তার, ওমর ফারুক প্রমুখ এ যাবত ৩৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক ঠিকানার মাধ্যমে ৪০’র দশকে সাংবাদিকতা শুরু করে ২০০০ সালের ১৬ জুলাই যশোরে নিজ অফিসে খুন হন সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল। এরপর তিনি দৈনিক বাংলা ও জনকণ্ঠে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। তার মৃত্যুর পরদিন ১৭ জুলাই তৎকালীন স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী মোহম্মদ নাসিম যশোর টাউন হলে এক সমাবেশে বলেন, ‘আমি জানি, কারা সাংবাদিক শামছুর রহমানকে হত্যা করেছে। যারা আত্মসমর্পণকে মেনে নিতে পারেনি। যারা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শান্তি চায়নি। তারাই শামছুর রহমানকে হত্যা করেছে। সাত হাত মাটির নিচ থেকে বের করে তাদের বিচার করব।’ কিন্তু মন্ত্রী কথা রাখতে পারেননি। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজন সাংবাদিককে আসামি করা হয়। তাদের নামে চার্জশিটও দাখিল করা হয়। দু’জন দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। বর্তমানে তারা জামিনে। ২০০৬ সাল থেকে এ মামলার বিচার কাজ স্থগিত রয়েছে। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক বলে বিবেচিত। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব সহকারে সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা অনিয়ম, অসঙ্গতি কলমের ডগায় তুলে আনেন তারা। বস্তুনিষ্ঠতা ও সততার সঙ্গে পৌঁছে দেন সাধারণ মানুষের কাছে। বর্তমান বিশ্ব ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নখদর্পণে। তাই মুহূর্তের মধ্যে সংবাদ চলে আসে জনসাধারণের দোরগোড়ায়। আর এসব সংবাদ পৌঁছে দিতে প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা তাদের সর্বোচ্চ মেধা, শ্রম, দায়িত্ব ও আন্তরিক সেবা বিনিয়োগ করেন। এসব তথ্য ও অসঙ্গতি তুলে ধরে যেমন দেশের নাগরিকদের তাদের ন্যায্য অধিকার সম্বন্ধে সচেতন করে তোলেন তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদেরও বাধ্য করেন সঠিক পথ অনুসরণ করে সঠিক কাজটি করতে। এর ফলে অনেক সাংবাদিকই হয়ে ওঠেন অশুভচক্রের চক্ষুশূল। সংবাদ সংগ্রহ ও উপস্থাপনকারীর জীবন হয়ে ওঠে বিপন্ন। তবু প্রাণের ঝুঁকি জেনেও কখনো তারা থেমে থাকেন না দায়িত্ব পালনে। যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করে সত্যের সন্ধানে ছুটে চলেন দেশ-বিদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত। যুদ্ধ, অগ্নিকাণ্ড, যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক, ঝড়-তুফান কিংবা ভয়াবহ বিপদকে মাথায় নিয়ে ঢুকে পড়েন মাদক বা সন্ত্রাসীদের আড্ডাখানায়। বিশ্বকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন অন্তরালের অনেক অজানা তথ্য। তীক্ষè দৃষ্টিতে উদ্ঘাটন করে নিয়ে আসেন ঘটনার নেপথ্যে লুকিয়ে থাকা গূঢ় রহস্য। এর কোনোটাই একেবারে সহজসাধ্য কোনো কাজ নয়। এসব কাজে যেমন আছে সম্মান তেমনি আছে মারাত্মক ঝুঁকিও। তাই আমরা বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের নানাভাবে প্রতিপক্ষের জিঘাংসার শিকার হতে দেখি। নির্যাতিত ও নিপীড়িত হতে হয় তাদের। হত্যাকাণ্ডের শিকারও হয়। দেশে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে অথচ এর বিচার হয় না এটা ভাবা যায় না। অতীতের অভিজ্ঞতায় সর্বশেষ সাংবাদিক দম্পতি ‘সাগর-রুনী’ হত্যার বিচার হবে কিনা, তা নিয়ে সাংবাদিক মহলই নয়, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে সংশয় দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের দেশের সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। জাতির বিবেক সাংবাদিক হত্যা রহস্যই যদি ঢাকা থাকে আঁধারে, তবে আর সাধারণ মানুষ কিভাবে বিচার পাবে? গত দেড় দশকে একজন সাংবাদিক হত্যারও বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের অমার্জনীয় ব্যর্থতা। কোনো সরকারই এ ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না। আমরা সাংবাদিক হত্যার সব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চাই।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মালদ্বীপে রাজনৈতিক সংকট
মনির তালুকদার
অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি অনিন্দ সুন্দর দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। ভারত মহাসাগরে ১৯২টি ক্ষুদ্র দ্বীপের সমন্বয়ে ওই মনোরম দেশটির অবস্থান। মালদ্বীপ ১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই ব্রিটিশ কমনওয়েলথ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। দেশটিতে দীর্ঘদিন কোনো গণতন্ত্র ছিল না। ১৯৬৮ সালে গণভোটের মাধ্যমে মালদ্বীপের সুলতানকে সরিয়ে ইব্রাহিম নাসির প্রেসিডেন্ট হন এবং এরপর প্রজাতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৮ সালে ইব্রাহিম বিদায় নিলে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মামুন আবদুল গাইয়ুম। টানা ৩০ বছর তিনি দেশ শাসন করেন। তিনি ছিলেন স্বৈরশাসক। এরপর ২০০৮ সালে মালদ্বীপে প্রথম বহুদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রভাবশালী স্বৈরশাসক মামুন আবদুল গাইয়ুমকে পরাজিত করে মোহাম্মদ নাশিদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর তার হাত ধরেই মালদ্বীপ গণতন্ত্র জেগে উঠেছিল। মাত্র তিন বছরের মধ্যে দেশটির রাজনীতির অঙ্গনে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। মালদ্বীপের গণতন্ত্রের মানসপুত্র হঠাৎ করে খলনায়কে পরিণত হলেন। ২০০৮ সালের বহুদলীয় নির্বাচনে মোহাম্মদ নাশিদ ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছিলেন। ৪ লাখ জনসংখ্যার আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীকে পরিণত হন ওই তরুণ এবং ক্যারিশমেটিক নেতা। জলবায়ু পরিবর্তন ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই, বিশ্বের প্রথম পানির নিচে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠান, দেশের পর্যটন শিল্পের আয় দিয়ে একটি নতুন দেশ ক্রয় করার পরিকল্পনা ইত্যাদি নানা কারণে তিনি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি কেড়েছিলেন। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকে মালদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি) মালদ্বীপকে নতুন করে গড়ে তোলার সংগ্রাম শুরু করে। কিন্তু তাদের ওই প্রচেষ্টায় তথা সংস্কার সাধনে বিশেষভাবে বিচার বিভাগ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ এবং কিছু পুলিশ কর্মকর্তার বিদ্রোহের কারণে মালদ্বীপের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ গত ৭ ফেব্র“য়ারি পদত্যাগ করেন বা করতে বাধ্য হন। টেলিভিশনে পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার সময় নাশিদ দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, “দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার ঘরে যাওয়াই ভালো। তাই আমি পদত্যাগ করছি।” মোহাম্মদ নাশিদ পরে বলেন, তিনি বন্দুকের নলের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এক রাত গৃহবন্দি থাকার পর তিনি পরদিন রাস্তায় নেমে আসেন এবং তার দল মালদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি)-এর র্যালিতে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীকালে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলেও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদ হাসান প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। নাশিদের সমর্থকেরা নতুন প্রেসিডেন্টকে সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুমের হাতের পুতুল বলে দাবি করেছেন। মালদ্বীপের ফৌজদারি আদালতের প্রধান বিচারপতির গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে মূলত দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণেই প্রেসিডেন্ট নাশিদ প্রধান বিচারপতি আবদুল্লাহ মোহাম্মদকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই বিচারক বিচারের সময় অবৈধভাবে বিরোধীদলীয় সমর্থকদের সুবিধা দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ আনে কর্তৃপক্ষ। এরপর আবদুল্লাহ মোহাম্মদকে সামরিক হেফাজতে আটক রাখা হয়। সরকারের ওই আচরণের দেশটির সরকারবিরোধীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও বিচারপতিকে গ্রেফতারের নিন্দা জানায়। বিচারপতিকে মুক্তি দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট নাশিদের প্রতি ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট, মানবাধিকার সংস্থা, বিচার বিভাগ ও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা আহ্বান জানায়। সর্বশেষ দেশের পুলিশ বাহিনীও নাশিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। পরিশেষে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। দেশের প্রতিষ্ঠিত সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ দেওয়ানি মামলা করলে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান বিচারপতির মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। ২০০৮ সালের সংবিধানে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনকে বিচারকদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু কমিশনের সদস্যদের বক্তব্য হচ্ছে, সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আবদুল্লাহ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে গেল বছরগুলোতে তারা তদন্ত করতে পারেনি। কমিশনের অন্যতম সদস্য আইশাখ ভেলিজিনি গত মার্চে পার্লামেন্টের কাছে এক খোলা চিঠিতে বলেন, বিরোধী দলের প্রভাব বিস্তার ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত বিচারকদের বাধার মুখে বিচারপতি মোহাম্মদের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। জানা যায় পার্লামেন্টের স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেতা ২০১০ সালে আইনের ফাঁক গলিয়ে এমন ব্যবস্থা পাস করিয়ে নেন যে, ২০২৬ সাল পর্যন্ত ফৌজদারি আদালত থেকে আবদুল্লাহ মোহাম্মদকে সরানো যাবে না। ফলে ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও তাকে সরানো যাচ্ছিল না। এই প্রেক্ষাপটে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আবদুল্লাহ মোহাম্মদকে আটকের জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়। আগের প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুম ও বিরোধী দলকে সুবিধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠলেও প্রেসিডেন্ট নাশিদ অধৈর্য ও তড়িঘড়ি করার কারণে বিপদে পড়ে যান। এক্ষেত্রে তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এক্ষেত্রে তার রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা, অদূরদর্শিতা এবং সাবেক ক্ষমতাসীনদের শক্তির ব্যাখ্যার ধারণা না থাকাটাও ভুল পদক্ষেপের কারণ বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। তাছাড়া মালদ্বীপের জনসংখ্যা ১০০ শতাংশ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তার কিছু কিছু সিদ্ধান্তে মুসলমানেরা আঘাত পান বলেও জানা যায়। ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, সার্ক সম্মেলনের সময় মালেতে ভাস্কর্য তৈরি, ২০১০ সালের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ জাকের নায়েককে মালদ্বীপে যাওয়ার অনুমতি দিতে গড়িমসির কারণেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানেরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। মোহাম্মদ নাশিদ নতুন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওয়াহিদের পদত্যাগ এবং দুই মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন দাবি করেছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন। নতুন প্রেসিডেন্ট ২০১৩ সালের নভেম্বরে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন। তিনি চারটি রাজনৈতিক দল থেকে ছয়জনকে নিয়ে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করেছেন। ইতোমধ্যে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্ল্যাক এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দূত মালদ্বীপ সফর করার পর নতুন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওয়াহিদ ঘোষণা করেছেন নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। তা নির্ধারিত সময়ের আগে হবে কিনা, সেটা আগামী দিনের ঘটনাপ্রবাহই বলে দেবে।
বিনোদন প্রতিবেদক
এখনও ঢালিউডে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন নায়িকা মৌসুমী। তবে কমে গেছে তার অভিনীত ছবির সংখ্যা। কারণ আর কিছু নয়, জুটি সংকট। মৌসুমীর বিপরীতে অভিনয়ের জন্য মানানসই নায়ক ঢালিউডে তেমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই সময়ের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের বিপরীতে মৌসুমীকে একেবারেই মানায় না। এটি মৌসুমী আর শাকিব খান দুজনই জানেন বলেই একসঙ্গে তারা অভিনয় করতে আগ্রহী নন। রিয়াজ তো চলচ্চিত্র থেকে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে চলে গেছেন। মৌসুমী অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিতে নায়ক ফেরদৌসের বিপরীতে তাকে দেখা গেছে। বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের প্রতি উদাসিনতার কারণে ফেরদৌসের চাহিদা এখন নির্মাতাদের কাছে নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় মৌসুমী পড়ে গেছেন বেকায়দায়। তাকে এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে ডিপজলের মতো নায়কের বিপরীতে অভিনয় করতে হচ্ছে। নায়ক মান্নার মৃত্যুর পর থেকেই আসলে মৌসুমী জুটি সংকটে পড়েন। মৌসুমী-মান্নার রসায়ন দারুণভাবে গ্রহণ করেছিল দর্শকরা। নায়ক মান্নার সঙ্গে গড়ে তোলা জুটি প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, মান্নার সঙ্গে অভিনয় করা আমার প্রথম ছবি ‘লুটতরাজ’। এটি মান্নাভাইয়ের প্রথম প্রযোজিত ছবি। তারই আগ্রহে ছবিটিতে কাজ করি। অনেকেই তখন বলেছিলেন তার সঙ্গে আমাকে মানাবে না। তিনি অ্যাকশন হিরো। আমি রোমান্টিক ছবি বেশি করেছি। অথচ দর্শক আমাদের জুটিকে দারুণভাবে পছন্দ করে ফেলল। তারপর কত ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছি তার ইয়ত্তা নেই। মৌসুমী আরো বলেন, মান্নাভাইয়ের মৃত্যুর কয়েকদিন আগে চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। অনেকটা একঘেয়েমি থেকেই সিদ্ধান্তটা নিতে বাধ্য হই। এসময় পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম তার ‘দুই পুরুষ’ ছবির প্রস্তাব নিয়ে আমার কাছে আসেন । আমি তাকে সবিনয়ে ফিরিয়ে দেই। মান্নাভাই জানতে পারেন ঘটনাটা। ফ্যামিলি নিয়ে চলে আসেন আমার বাসায়। অবসর পেলে এটা তিনি প্রায়ই করতেন। আমাদের দুই পরিবারের মধ্যেও বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল। মান্নাভাই বাসায় এসে আমাকে বোঝাতে শুরু করলেন। তার জোড়াজুড়িতে চাষী ভাইয়ের ছবিতে কাজ করতে রাজি হই। তারই কয়েকদিন পর ওপারের ডাকে চলে গেলেন মান্নাভাই। অভিনয়টা এখনও করছি, ছাড়িনি। যার জন্য থেকে যাওয়া, তিনিই চলে গেলেন। আমি যে দুজন নায়কের সঙ্গে অভিনয় করে সবচেয়ে সাফল্য পেয়েছি, তারা হলেন সালমান শাহ ও মান্না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা দুজনই অকালে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। মৌসুমী অভিনীত মুক্তি প্রতিক্ষীত ছবি আছে ২টি। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘দেবদাস’। এতে চন্দ্রমুখীর চরিত্র রূপায়ণ করেছেন তিনি। অন্যটি হল নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল পরিচালিত ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস প্রযোজিত ‘এক কাপ চা’। দু`টি ছবির মুক্তি এখনো অনিশ্চিত। সেন্সর বোর্ড আটকে দিয়েছে ‘দেবদাস’। পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম সেন্সর বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী ছবিটি সম্পাদনা করতে রাজি নন। নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের ‘এক কাপ চা’ ছবিটি যৌথ প্রযোজনায় হলেও কবে মুক্তি পাবে তা চূড়ান্ত নয়। ছবির কিছু টেকনিক্যাল কাজ এখনো বাকি পড়ে আছে। এছাড়াও ডিপজলের প্রযোজনায় তার বিপরীতে নতুন চারটি ছবিতে মৌসুমীর অভিনয়ের কথা আছে। তাই বলে মৌসুমীর কাছে চলচ্চিত্রের প্রস্তাব যে আসছে না, তা নয়। যেসব প্রস্তাব আসছে তাতে সাড়া দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ অধিকাংশ নির্মাতাই মৌসুমীকে নবাগতদের মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছেন। কিন্তু বড় পর্দায় এখনই মায়ের চরিত্রে তিনি অভিনয় করতে রাজি নন। এ প্রসঙ্গে মৌসুমীর মন্তব্য, আমার আগের প্রজন্মের অভিনেত্রী ববিতা-শাবানা-কবরীকে অনেক বয়স পর্যন্ত আমি নায়িকা হিসেবে অভিনয় করতে দেখেছি। আমার মনে হয়, এখনো আমি এতটা বুড়িয়ে যায় নি যে, মায়ের চরিত্রে আমাকে অভিনয় করতে হবে। খুব বেশি হলে নায়কের ভাইয়ের স্ত্রী, অর্থাৎ ভাবী চরিত্রে অভিনয় করা যেতে পারে। মা-খালা-চাচীর ভূমিকায় আমি অভিনয় করতে মোটেও রাজি নই।
বিনোদন প্রতিবেদক বাংলালিংক খ্যাত মিডিয়া জুটি শখ-নিলয়। এই সময়ের গ্ল্যামার মডেল ও অভিনেত্রী শখ এবং সুপার হিরো খ্যাত অভিনেতা নিলয়কে নিয়ে বছর খানেক ধরে চলছিল নানা গুঞ্জন। তবে নিজেদের মধ্যকার হৃদয়ঘটিত সম্পর্কের কথা বরাবরই দুজন অস্বীকার করে আসছিলেন। এ প্রসঙ্গে দুজনেরই ছিল এক আওয়াজ, আমরা একে-অন্যের খুব ভালো বন্ধু। অবশেষে গুঞ্জনকে সত্য করে দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হয়েছে শখ ও নিলয়ের বাগদান। বছর দুয়েক আগে শখ ও নিলয় জুটি বেঁধে প্রথম পর্দায় আসেন বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনে। এরপর এই জুটিকে দেখা গেছে একাধিক টিভি নাটকে অভিনয় করতে। এই জুটিকে নিয়ে সর্বশেষ শুরু হয়েছে ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’ নামের একটি চলচ্চিত্র। এর আগে তারা দুজনেরই একটি করে ছবি মুক্তি পেয়েছে। শখের ‘বলো না তুমি আমার’ আর নিলয়ের ‘বেইলি রোড’। পরিচালক সানিয়াত হোসেন শখ-নিলয় জুটিকে নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু করেন ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’ ছবির শুটিং। রোমান্টিক এই ছবিটির শুটিং শেষ হওয়ার আগেই আংটি বদলের মাধ্যমে জীবন-জুটি হওয়ার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছেন শখ ও নিলয়। দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় অভিভাবকদের উপস্থিতিতে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বনের মাধ্যমে ২৯ ফেব্রুয়ারি শখদের গেন্ডারিয়ার বাসায় অনুষ্ঠিত হয়েছে তাদের বাগদান। দুই পরিবারের পক্ষ থেকেই বিষয়টি আপাতত গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে শখ ও নিলয়ের ঘনিষ্ঠরাই বিষয়টি ফাঁস করে দিয়েছেন। বছরের শেষের দিকে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে শখ ও নিলয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দুজনই সম্পর্কের কথাটি স্বীকার করে নেন। শখ বলেন, শুরুতে আমরা ছিলাম খুব ভালো বন্ধু। একসঙ্গে কাজ করতে করতে আমাদের মধ্যে রিলেশন তৈরি হয়। আপাতত এটুকুই বলবো। এর বেশি বলতে মুরব্বিদের নিষেধ আছে। এ প্রসঙ্গে নিলয়ও বলেন প্রায় অভিন্ন কথা। সেই সঙ্গে যোগ করেন, সময় হলে সবাইকে জানাবো সবকিছু। শখ ও নিলয়ের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, শুরুতে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব থাকলেও বছর খানেক আগে একসঙ্গে কাজ করতে করতেই তাদের মধ্যে হয়ে যায় হৃদয়ের লেনদেন। গত ফেব্রুয়ারিতে রোমান্টিক প্রেমের ছবি ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’-এর শুটিং চলার সময়ই তারা একসঙ্গে জীবন সাজানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং উভয়েই নিজ নিজ পরিবারকে সিদ্ধান্তের কথা জানান। সেলিব্রেটি সন্তানের সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়ে পারিবারিক মধ্যস্থতায় আংটি বদলের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে শখ-নিলয়ের বাগদান। এ বিষয়ে শখের বাবার সঙ্গে বাংলানিউজ যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। পুরোটাই ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। আমার কাছে কয়েকজন সাংবাদিক গত কয়েকদিন ধরে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন দিচ্ছেন। আমি বুঝতে পারিনা, কেন এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়। সেই বাংলালিংকের বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে ‘অল্প অল্প প্রেম’ ছবি পর্যন্ত শখ-নিলয় জুটি বেঁধে কাজ করছে। একসঙ্গে কাজ করলে ছেলে মেয়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক হতেই পারে। তার মানে এই নয় যে, তাদের মধ্যে প্রেম, বিয়ে কিংবা বাগদানের মত ঘটনা ঘটেছে।
প্রীতি ওয়ারেছা
‘বন্ধু আমার বুকের মাঝে বিসর্জনের ব্যথা/ বন্ধু তুমি ওমন করে যেও না আর একা...’ । যেমন আকুল করা গানের কথা তেমনি ব্যাকুল করা গানের সুর আর গায়কীও হৃদয়ছোঁয়া। একটু অন্যরকম গান যাদের পছন্দ, তাদের প্রিয় শিল্পী কৃষ্ণকলি। ভরাট কণ্ঠের সূক্ষ্ম কারুকাজ আর স্বতন্ত্র গায়কী ভঙ্গিমা দিয়ে শিল্পী কাজী কৃষ্ণকলি ইসলাম অল্প সময়েই পৌঁছে গেছেন অসংখ্য শ্রোতার অন্তরে। বাংলা গানের দিন বদলের অন্যতম যোদ্ধা কৃষ্ণকলি। মাত্র তিন বছর বয়স থেকে মায়ের উৎসাহে গান করে আসছেন খুলনার এই মিষ্টি মেয়েটি। এদেশে গ্ল্যামার যখন হয়ে উঠে গায়িকাদের প্রধান অবলম্বন, সেই সময়ই কালো মেয়ে কৃষ্ণকলি ভিন্ন গায়কী নিয়ে উঠে আসেন পাদপ্রদীপের আলোয়। বাইরের গ্ল্যামার নয়, কন্ঠের গ্ল্যামার দিয়েই তিনি সুপরিচিত হয়ে উঠেন। প্রথম অ্যালবামেই করেন বাজিমাত। এরপর তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয় নি। কেবল গানেই তিনি নিজেকে সীমিত রাখেন নি। নিজের কর্মযজ্ঞ ছড়িয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক-মানবিক আন্দোলনে। সম্প্রতি জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কৃষ্ণকলির সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ। এই কথোপকথনের নির্বাচিত পাঠকের জন্য।
বাংলানিউজ : শুরুতেই আপনার সাম্প্রতিক সময়ের কাজ সম্পর্কে জানতে চাই?
কৃষ্ণকলি : এ মুহূর্তে আমি আমার তৃতীয় একক অ্যালবামের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। আমার এই অ্যালবামটি সাঁওতালি এবং ঝুমুর গান দিয়ে সাজানো হচ্ছে। এটি পুরোটাই গবেষণাধর্মী একটি কাজ। গানগুলো সংগৃহীত। আমি অনেক ঘুরে ঘুরে বাংলা ভাষায় প্রচলিত সাঁওতালি গানগুলো সংগ্রহ করেছি। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়কার গণজাগরণী দু`টি গান এই অ্যালবামটিতে থাকছে। সাঁওতালি ভাষা থেকে আমার অনুবাদ করা একটা গানও এখানে গেয়েছি আমি। এর আগে আমার দু`টি অ্যালবাম ছিল নিজের কথা এবং সুরের। এই প্রথম নিজের লেখা ও সুরের বাইরে আমার তৃতীয় অ্যালবামটি করছি।
বাংলানিউজ : নিজের সম্পর্কে আপনার ধারণা কী ? মানুষ হিসেবে নিজেকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
কৃষ্ণকলি : ভীষণরকম কুৎসিত মেজাজের অধিকারী একজন মানুষ আমি। আমার নীতি-বিরুদ্ধ কোনো কাজের সঙ্গে আমি আপোষ করি না। অন্যায়ের সঙ্গে সমঝোতা করে এগিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব । এজন্য বিপদেও পড়তে হয় অনেক। ছোট খাটো না অনেক হাই ভোল্টেজ বিপদেও আমাকে পড়তে হয়েছে। আরেকটা বিষয় হল, এ পর্যন্ত আমি এমন কাউকে দেখিনি যিনি আমার সম্পর্কে ভালো বলেছেন। আমাকে কেউ পছন্দ করে না । আমি হয়তো ভালো মানুষ নই, তাই অনেকেরই আমি অসহ্যের কারণ হয়ে উঠি। আমার স্বভাব-প্রকৃতিতে খুব বাজে একটা দিক আছে। রেগে গেলে খুব চিৎকার করি ,এজন্য গলায় প্রেসার পড়ে। ঝামেলাতেও পড়তে হয় মাঝেমধ্যেই।
বাংলানিউজ : আপনাকে কথায় কথায় বলতে প্রায়ই শুনি ‘আমি আমার মায়ের মেয়ে’। কেন?
কৃষ্ণকলি : আমার মা প্রচন্ড ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন বামপন্থী নকশালবাড়ী আন্দোলনের সাথে জড়িত। পেশাগত জীবনে ছিলেন সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক। আমরা তার ভেতরে কখনো ব্যক্তিস্বার্থ বলে কিছু টের পাইনি। আমরা দুই ভাইবোন কখনো দামি কাপড় পড়েছি বলে মনে পড়ে না। আমাদের ভেতর সৌখিনতা ছিল কিন্তু কোনো বিলাসিতা ছিল না। দিনের পর দিন চলে গেছে আমরা মাছ মাংস খেতে পারিনি তারপরেও আমার মাকে দেখেছি গরীব ছাত্রদের পরিবারকে সাহায্য করতে। যে কর্তব্য রাষ্ট্রের ছিল, সেটা রাষ্ট্র করতে যদি ব্যর্থ হয় তবে অবশ্যই সাধারণ মানুষকে হাল ধরতে হবে। আমার মা ছিলেন অন্যের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে পারদর্শী একজন অকুতোভয় মানুষ। নিজের সেই কাজ নিয়ে তিনি কখনো অহংকার প্রকাশ করতেন না। আমার নিজের ভেতরটা পুরো মায়ের ধাঁচে গড়া। আমার মা এখন আকাশের বাসিন্দা। তার কাজ এবং তার আচরণের প্রতিটা দিক আমি হৃদয়ে ধারণ করি। এখন দ্বিতীয় মা আমার একমাত্র মেয়ে অমৃতাঞ্জলি শ্রেষ্ঠেশ্বরিকে নিয়ে আমার ছোট্ট সংসার। ওর বয়স এখন ১১ বছর।
বাংলানিউজ : গানের জগতে আপনার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা কখন টের পেলেন?
কৃষ্ণকলি : ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিতে আমার আপত্তি আছে। গ্রহণযোগ্যতা আসবে কি আসবে না, এটা নিয়ে ভাবিনি কখনো। যৌনাবেদনময় সংস্কৃতির বিরুদ্ধেই আমার সাংস্কৃতিক যুদ্ধ, আমি সেই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। অন্ধকারাচ্ছন্ন এই সাংস্কৃতিক পরিবেশ থেকে বেড়িয়ে এসে যদি শ্রোতাদের ন্যূনতম ভাললাগা তৈরি করতে পারি, তবে সেটাই আমার ভাল লাগা। শ্রোতাদের অনুভূতি-বিবেক-বোধে যদি নাড়া দিতে পারি সেটাই আমার স্বার্থকতা।
বাংলানিউজ : গানের পাশাপাশি আপনি পেশাগত জীবনে কি করছেন ?
কৃষ্ণকলি : গানই এখন রুজি রোজগারের অবলম্বন হয়ে গেছে। তারপরেও ‘গানের বাজার’ এই শব্দটা আমার কাছে খুবই অপমানজনক লাগে। গানের পাশাপাশি আমি সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে পরিচালিত একটা স্কুলের সংগঠক হিসাবে কাজ করছি। মিরপুর সাড়ে এগারোতে অবস্থিত স্কুলটির নাম ‘আমাদের পাঠশালা’। আমাদের স্কুলের শিশুরা বঞ্চিত, নিপীড়িত। বইয়ের ভাষায় এদের অনেক কিছুই শেখাতে হয়না। ওদের বেশিরভাগ শিক্ষায় জীবন থেকে নেওয়া। আমি এটা দৃঢ়ভাবে বলব যে,আমাদের সুশিক্ষিত মানুষজনের পাশাপাশি এই বঞ্চিত শিশুরাও অনেক বেশি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ধারণ করে বাঁচতে পারে, বেড়ে উঠতে পারে। তাদের সমস্ত প্রতিভাই আছে, শুধু সুযোগটা নাই বিকাশের।
বাংলানিউজ : কন্ঠশিল্পী না হলে কী হতেন? শিল্প-সাহিত্যের অন্যকোনো শাখায় কাজ করছেন?
কৃষ্ণকলি : কন্ঠশিল্পী না হলে কি হতাম তা বলতে পারছি না। ছোটবেলায় ছবি আঁকার প্রতি ঝোঁক ছিল। আমি খুলনা আর্ট কলেজে ভর্তিও হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভর্তি না হয়েও সেখানে গিয়ে মাস্তানি করে বেড়াতাম আমি। মা বলেছিলেন, এইচএসসিটা দিয়ে ঢাকায় চারুকলায় ভর্তি হয়ে যেতে। কিন্তু ততোদিনে আমি পুরো বোহেমিয়ান, লাইনচ্যুত ট্রেন। তাই আর হয়ে ওঠেনি।
বাংলানিউজ : সঙ্গীতচর্চা ছাড়া আর কী কী কাজ করছেন?
কৃষ্ণকলি : গানের পাশাপাশি জাতীয় তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির হয়ে কাজ করছি। জাতীয় সম্পদ রক্ষায় সাংস্কৃতিক মঞ্চ নামে একটি দলের হয়েও কাজ করছি আমি। এছাড়াও লেখালেখি করি নিয়মিত। লেখালেখি আমার পুরনো অভ্যাস। গান লিখি, নাটক লিখি। বেশ কয়েকটা স্ক্রিপ্টের কাজ শেষ করেছি। পছন্দের নির্মাতা পেলে তার হাতে তুলে দিব, নয়তো পড়েই থাকবে।
বাংলানিউজ : সামাজিক-মানবিক ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমে আপনাকে প্রায়ই অংশ নিতে দেখা যায়। কোন বোধ থেকে আপনি নিজেকে এধরণের কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করেছেন?
কৃষ্ণকলি : সামাজিক-মানবিক আন্দোলনে আমি অংশ নেই, তবে এসব কার্যক্রমে আমি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে যাই না। আমি নিজে সচেতন এবং সমাজের যেকোন অসংলগ্নতা ও বাড়াবাড়ি আমার গায়ে এসে লাগে, তাই এটা নিয়ে কথা বলি। কারো যদি মনে হয় এই বিষয়গুলো তাদের গায়েও লাগার কথা ছিল, তবে তারাও সেই কার্যক্রমে অংশ নেবে বলে আমি মনে করি। আমার কাছের বন্ধুরা অভিযোগ করে বলে, সাদা চামড়াদের দেখলে আমি নাকি নাক উঁচু করি। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের নানারকম কল্যাণের নামে সাদা চামড়াওয়ালাদের উদ্দেশ্য থাকে একটাই, আমাদের শোষণ করা। এছাড়াও আমাদের সাথে আশেপাশের দেশগুলোর শিল্পী লেনদেনের যে বানিজ্য চলছে সেই অনর্থক হঠকারী কাজের তাপমাত্রাও আমার গায়ে এসে লাগছে। শিল্পী লেনদেনের এই নোংরা বানিজ্যে আমার প্রবল আপত্তি।
বাংলানিউজ : ভবিষ্যতে কি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে আসার ইচ্ছে আছে?
কৃষ্ণকলি : আসলে সমাজের সবকিছুই কিন্তু রাজনীতির অন্তর্ভুক্ত। সেক্ষেত্রে আমি রাজনীতির বাইরের কেউ নই। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড রাজনৈতিক কর্মকান্ডেরই একটা অংশ। তবে স্বীকার করি, রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিদের হাতে কলমে কাজ করার বিশাল ক্ষমতা থাকে। মানুষের প্রয়োজন থেকেই নেতার জন্ম হয়। কখনো সেই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে অবশ্যই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে বিষয়টা ভেবে দেখব।
বাংলানিউজ: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানতে চাই ?
কৃষ্ণকলি : আমি চাই, পণ্যময় জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে। কর্মময় একটি জীবন চাই. যেখানে ধর্ম ও শ্রেণী নির্বিশেষে সবাই আত্মসম্মানজনক একটি অবস্থান গড়তে পারবে। প্রয়োজন হলে এজন্য কাজ করে যেতে চাই।
৫ বছর পর একসঙ্গে শাহরুখ-ফারহা
অনন্যা আশরাফ