Year-19 # Issue-4 # 11 March 2012


আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই
রাজধানীতে নানান অজুহাতে প্রতি বছর বাড়ছে বাড়িভাড়া
হাসান মাহমুদ রিপন
রাজধানীতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মানুষের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে ভাড়াটিয়ার সংখ্যাও। ভাড়াটিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে বাড়িওয়ালাদের রুঢ় আচরণও। বিশেষ করে ফি বছর নানান অজুহাতে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে তারা অসাধু ব্যবসায়ী কিংবা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদেরও হার মানিয়েছেন। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে একটি আইন আছে কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। বাড়িভাড়া আইনে বিস্তারিত সব কিছু থাকলেও বাস্তবে এসবের কোনটিরই প্রয়োগ নেই। অধিকাংশ ভাড়াটিয়ারই জানা নেই তাদের স্বার্থ সংরণের জন্য এরকম একটি আইন আছে। আবার অনেক বাড়িওয়ালাও জানেন না এ আইনটির বিষয়ে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে বচসা ও সংঘাত নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ প্রায়ই ক্যাব অফিসে আসে বলে জানান ক্যাবের জেনারেল সেক্রেটারি কাজী ফারুক। এ সেক্টরটির উপর গুরত্বারোপের জন্য আইনী কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, দেশে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে বিরোধ নিরসনসহ বাড়িভাড়া সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের জন্য ‘বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১’ বলে একটি আইন আছে। কিন্তু আইনটির বাস্তবে কোনো প্রয়োগ নেই। এমনকি আইন আছে কিনা তাও জানেন না অধিকাংশ বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া। আইন অনুযায়ী জোড়পূর্বক ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ নিষিদ্ধ। কিন্তু কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’র এক জরীপ প্রতিবেদনে দেখা যায় ভাড়া দিতে বিলম্ব হলে ২৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ১২ শতাংশ বাড়িওয়ালা পেশিশক্তি ব্যবহার করে ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করেন। রাজধানীর বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের উপর পরিচালিত ক্যাব’র এক জরিপ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৯৫ ভাগ ভাড়াটিয়া ও ৭০ ভাগ বাড়ির মালিক বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ সম্পর্কে জানেন না। বাড়িওয়ালাদের অযৌক্তিকভাবে এভাবে বাড়িভাড়া বৃদ্ধিতে চোখে সর্ষে ফুল দেখছে ভাড়াটিয়ারা। ভুক্তভূগী তেমন একজন ভাড়াটিয়া হলেন ধানমন্ডি ৬/এ বাড়ির ভাড়াটিয়া বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরীজিবী মোঃ আজিজুর রহমান লিয়ন। তিনি বলেন গত ফেব্র“য়ারী মাসে বাড়িওয়ালা ৭শ’ টাকা বাড়িভাড়া বাড়ালেও ডিসেম্বর মাসে আবরও ১৫শ’ টাকা বাড়িভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দিয়েছেন। এমনিভাবে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে বচসা ও সংঘাত নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। জানা যায়, ঢাকাকে পাঁচটি জোনে বিভক্ত করে ৫ জন সহকারী জজকে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঢাকার সাব জজ রেন্ট কন্ট্রোলার হিসেবে সহকারী জজদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। আইন ও অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার জন্য বাড়ি ভাড়া আদালত নামে পৃথক একটি আদালতও আছে। সাধারণত যে কোনো বিরোধ নিষ্পত্তিতে আদালতে দীর্ঘসূত্রিতা থাকলেও বাড়িভাড়া সংক্রান্ত বিরোধ ৭২ ঘণ্টা থেকে ৩ মাসের মধ্যে মীমাংসার জন্য আইনে উল্লেখ আছে। বাড়ির মালিকরা চান অধিক ভাড়ার তার বাড়িটি ভাড়া দিতে। এজন্য কিছুদিন পর পর পুরনো ভাড়াটিয়া তুলে দিয়ে নতুন ভাড়াটিয়া বসান। কিংবা বছর বছর এমনকি এক বছরে একাধিকবারও ভাড়া বৃদ্ধি করেন। আবার ভাড়াটিয়ারা চান একই ভাড়ায় দীর্ঘ সময় একই বাড়িতে থাকতে। এসব বিষয় নিয়ে উভয় পরে মধ্যে বচসা ও ঝগড়া বিবাদের ঘটনা ঘটে আসছে। জানা যায়, এসব বিষয়কে মাথায় রেখেই ১৯৫১, ১৯৬৩ ও ১৯৮৬ সালে তিন দফা বাড়িভাড়া অধ্যাদেশ করা হয়। ১৯৬৩ সালে অধ্যাদেশটি ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর রাখা হয়। ১৯৮৬ সালে ৩ বছরের জন্য বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ করা হয়। এটির মেয়াদ ১৯৮৯ সালে শেষ হওয়ায় ১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি বর্তমান আইনটি জারি করা হয় এবং ২ জানুয়ারি সরকারি গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় তা প্রকাশ করা হয়। তবে এ আইনটির অধীনে কোনো বিধিমালা প্রণীত না হওয়ায় ১৯৬৪ সালের বিধিমালাই এখন পর্যন্ত বহাল আছে বলে সাবেক সহকারী জজ বাসুদেব গাঙ্গুলী তার ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১’ বইতে উল্লেখ করেছেন। বাড়িভাড়ার আইন সংক্রান্ত বিষয়ে এ্যাডভোকেট আহসানুর রহমান বলেন, বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১-এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা যে কোন ব্যক্তিকে যে কোন এলাকার জন্য নিয়ন্ত্রক, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রক বা উপ-নিয়ন্ত্রক নিয়োগ নিযুক্ত করতে পারবে। একজন সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজ যথাক্রমে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক ও উপ-নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৫(১) ধারা অনুযায়ী ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ বাড়ির বাজার মূল্যের শতকরা ১৫ ভাগের বেশি হবে না। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১০ ধারায় বলা আছে এক মাসের অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া যাবে না। এর অতিরিক্ত ভাড়া নিলে অতিরিক্ত ভাড়ার দ্বিগুণ জরিমানা করা হবে। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রকের লিখিত অনুমতি সাপেে একাধিক মাসের ভাড়া অগ্রিম নেয়া যাবে (ধারা-২৩)। তিনি বলেন, অধিকাংশ বাড়িওয়ালা ভাড়া দিয়ে ভাড়াটিয়াকে কোনো প্রকার রসিদ দেয়না । যা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী। আইনে আরো বলা আছে বাড়ি ভাড়ার রসিদ হতে হবে বিধিমালা ১৯৬৪’র ধারা-১৩ অনুযায়ী। অপরাধের পুনরাবৃত্তির জন্য প্রত্যেকবার ৩ গুণ জরিমানা করা হবে (ধারা-২৩) বলে আইনে উল্লেখ আছে। আইনসম্মত ভাড়া আদায় করলে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না বলে আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে এবং বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক বাড়িওয়ালার সপে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদের জন্য কোনো ডিক্রিও জারি করতে পারবেন না। জানা যায়, ঢাকাকে পাঁচটি জোনে বিভক্ত করে ৫ জন সহকারী জজকে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঢাকার সাব জজ রেন্ট কন্ট্রোলার হিসেবে সহকারী জজদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। আইন ও অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার জন্য বাড়ি ভাড়া আদালত নামে পৃথক একটি আদালতও আছে। সাধারণত যে কোনো বিরোধ নিষ্পত্তিতে আদালতে দীর্ঘসূত্রিতা থাকলেও বাড়িভাড়া সংক্রান্ত বিরোধ ৭২ ঘণ্টা থেকে ৩ মাসের মধ্যে মীমাংসার জন্য আইনে উল্লেখ আছে। বাড়িওয়ালারা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, সিটি কর্পোরেশনের কর, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ পরিসেবা খাতের বিল বৃদ্ধির অজুহাতে বাড়িভাড়া বাড়িয়ে থাকে বলে জানা যায়। তবে পরিসেবা কর যতটুকু বাড়ে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশী বাড়িভাড়া বৃদ্ধি করে। এ ব্যাপারে ভাড়াটিয়ারা বলেন, গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিলের অযুহাতে বাড়িভাড়া বাড়ালেও অধিকাংশ ভাড়াটিয়ারাই এসব বিল নিজেরাই পরিশোধ করে থাকেন। এছাড়া রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির সময় প্রায় বাড়িওয়ালাই হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন। জানা গেছে, গত ২৯ জুন ডিসিসি’র ২০০৯-১০ বাজেট উপস্থাপনকালে মেয়র সাদেক হোসেন খোকা স্পষ্টভাবে বলেছিলেন ভবিষ্যতে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা ডিসিসি’র নেই। ঢাকা সিটি কর্পেরেশন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান এ ব্যাপারে বলেন, গত ১৯ বছরে বাড়ি ভাড়া ৩০৬.৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও এ সময়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) কোনো হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করেনি। অথচ প্রতি বছর বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির সময় বাড়িওয়ালারা যে কয়টি যুক্তি উপস্থাপন করে থাকেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির বিষয়টি। এদিকে নতুন কোনো বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করতে গেলে বাড়ির মালিকরা নানাপ্রকার ছলচাতুরি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকেন বলে জানান ডিসিসি’র রাজস্ব বিভাগের এ কর্মকর্তা। সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে রাজধানীতে হোল্ডিং ট্যাক্স রি-এসেস করা হয়েছিল।
ঐ এসেসমেন্ট অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয় ১২ শতাংশ। এর মধ্যে ৭ ভাগ হোল্ডিং ট্যাক্স, ৩ ভাগ পরিচ্ছন্নতা কর এবং ২ ভাগ কর বিদ্যুৎ এর জন্য। অথচ ফি বছর রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির সময় প্রায়ই বাড়িওয়ালাই হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন। সূত্রে মতে, বর্তমানে রাজধানীতে বাড়িওয়ালা অর্থাৎ হোল্ডিং ট্যাক্স দাতার সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার। উল্লেখ্য, ২০০৯-১০ অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ ডিসিসি কর্তৃক আদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ ছিল ২৮০ কোটি টাকা। তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে সঠিকভাবে বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হলে এ খাতে রাজস্বের পরিমাণ কয়েকগুন বৃদ্ধি পেত। নতুন বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের সময় বাড়ির মালিকরা ভাড়াটিয়াদেরকে আÍীয় পরিচয় দিয়ে ভাড়ার অংক কমিয়ে ট্যাক্স ধার্য্য করে থাকেন। তবে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের েেত্র শুধু বাড়ির মালিকরাই নয় ডিসিসি’র রাজস্ব বিভাগের এক শ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাও জড়িত বলে জানা যায়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের মডেলকে কাজে লাগাবে শ্রীলঙ্কা
সিদ্দিকুর রহমান
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বের একটি সফল দেশ হওয়ার কারণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের মডেলকে কাজে লাগাবে শ্রীলংকা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রীলংকাকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে। এরইমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সরেজমিনে দেখে গেছেন শ্রীলংকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী আমারারিয়া মহিন্দ-এর নেতৃত্বে আসা ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল। শ্রীলংকা বাংলাদেশের আদলে তার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রস্তুতি কার্যক্রম ঢেলে সাজাবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি থেকে বলা হয়েছে, শ্রীলংকা বাংলাদেশের আদলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন করবে। গড়ে তুলবে বাংলাদেশের মতো দুর্যোগকালীন স্বেচ্ছাসেবী দল। শ্রীলংকা মনে করে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের মতো প্রস্তুতি ব্যবস্থা গড়ে তুললে শ্রীলংকায় বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সুনামিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, শ্রীলংকা একটি দ্বীপদেশ। এদেশটি বাংলাদেশের মতোই প্রকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ। ২০০৮ সালে সুনামীতে এদেশের উপকুলবর্তী প্রায় ১ লাখ মানুষ ভেসে গিয়েছিল। ধ্বংস হয়েছিল বিপুল সম্পদ। অথচ ২০০৭ সালে বাংলাদেশে প্রলয়ংকরী সিডরে সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হলেও জীবনহানির ঘটনা ঘটেছিল খুবই কম। সিডরে উপকূলীয় অঞ্চল ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হলেও বাংলাদেশ সরকার সশস্ত্র বাহিনী, উদ্ধারকারী প্রশিক্ষিত বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী দলসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত প্রচেষ্টায় দ্রুত স্বভাবিক জীবনযাত্রার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু শ্রীলংকা সুনামির ধ্বংসযজ্ঞ মুছে সংশ্লিষ্ট উপকুলীয় অঞ্চলে এখনো পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারেনি। শ্রীলংকা কেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে মডেল হিসেবে মনে করছে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য কি সে বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। বর্তমান সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন করেছে। মন্ত্রিসভা নীতগতভাবে এ আইন অনুমোদন দিয়েছে। জাতীয় সংসদে আইনটি উপস্থাপন করা হবে। সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকিহ্রাস কর্মসূচির প্রতি অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এর মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ লোক মারা গিয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলায় মৃতের সংখ্যা ১৮০ জনে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৪৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। এসব বিষয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সক্ষমতাকে শ্রীলংকা গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে। শ্রীলংকার প্রতিনিধি দল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিভিন্ন দিক দেখে গেছেন এবং বাংলাদেশের প্রস্তুতি কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন। মন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। এ জন্য ভূমিকম্প পরবর্তী অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজের জন্যও স্বেচ্ছাসেবক গড়ে তোলা হচ্ছে। মন্ত্রী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সার্ক ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট সেন্টারকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। সফরকালে শ্রীলংকার প্রতিনিধি দল সিডিএমপি, কক্সবাজারে কমিউনিটি পর্যায়ে ঝুঁকিহ্রাস কর্মসূচি, ভূমি ধস ও সিপিপি কার্যক্রমের বিষয়ে মহড়া, মাল্টিপারপাস কমিউনিটি সাইক্লোন সেল্টার পরিদর্শন করেন। এ ছাড়াও ঢাকায় ভূমিকম্প পরবর্তী অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজের স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম দেখতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, হাউস বিল্ডিং রিসার্স ইনস্টিটিউটের কার্যক্রমসহ দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস বিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে গত ১ মার্চ প্রতিনিধি দল শ্রীলংকা ফিরে গেছেন।
 আ’লীগকেই তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল করতে হবে : ফখরুল
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
আওয়ামী লীগকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে বলে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ফখরুলের এ বক্তব্য মূলত আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের দেওয়া ‘এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই’ শীর্ষক বক্তব্যের জবাব। ফখরুল বলেন, ‘উনি (শফিক আহমেদ) যাই বলুন না কেন, আওয়ামী লীগকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং সে সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে।’ শফিক আহমেদের বক্তব্য খণ্ডন করে ফখরুল বলেন, ‘তিনি একজন আইনজ্ঞ হয়ে কিভাবে এ কথা বলেন। কেননা হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে আরো তিনবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘৯০ দিন সময় দিয়ে বিএনপি গণতন্ত্রের প্রতি সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের জন্য কিছু সময় দরকার, বিএনপি সে সময় দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়কের দাবি এখন শুধু বিএনপির নয়, দেশবাসীর।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১২ মার্চ বিএনপির মহাসমাবেশে আসতে দেশব্যাপী নেতা-কর্মীদের বাধা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে এবং আওয়ামী লীগই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নাশকতার চেষ্টা করেছে। তারা মহাসমাবেশ বানচাল করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করেছে। এতে আওয়ামী লীগের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে।’ মির্জা আলমগীর সংসদে যাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সংসদে যাবো কিভাবে? গতকাল (মঙ্গলবার) ও বিরোধীদলের ৮৬টি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছে। আমরা কি সংসদে খিস্তি খেউর শোনার জন্য যাবো? গত তিন বছরে ৩ হাজার সিদ্ধান্ত প্রস্তাব বাতিল করেছে তারা।’ ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১২ মার্চের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দিয়ে বিএনপি নেতা কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে ও গ্রেফতার করে স্বৈরাচারের ভূমিকা পালন করেছে, তাই তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এটা মানুষ বিশ্বাস করে না।’ তিনি বলেন, ‘৯০ দিনের মধ্যে যদি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল না করা হয়, জনগণের দাবির উপেক্ষা করা হয়, তাহলে দেশে যে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী থাকবে।’ খালেদা জিয়া আর আট কার্যদিবস সংসদে না গেলে সদস্য পদ বাতিল হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসুক না আট দিন তারপর দেখা যাবে।’ এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, এমকে আনোয়ার, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, আর্ন্তজাতিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল ও এবি এম মোশররফ হোসেন প্রমুখ। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা আশঙ্কা করেছিলেন আমাদের মহাসমাবেশে নাশকতা হবে। কিন্তু নাশকতাতো দূরে থাক, অত্যান্ত নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।’ এ জন্য তিনি দলীয় নেতাকর্মী, ঢাকাবাসী, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিকসহ সকল সাধারণ নাগরিকদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষথেকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘সরকার রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে দেশের জনগণকে তিন দিন অবরুদ্ধ করে রেখেছিলো। বর্ডার গার্ড, পুলিশ, র‌্যাব, ছাত্রলীগ, যুবলীগ যেভাবে সমাবেশে আগত জনতার ওপর আক্রমন ও নির্যাতন ও গ্রেফতার করেছে  রাজনৈতিক ইতিহাসে এরকম আর কোনো দিন দেখা যায়নি।’ মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশ থেকে ৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে তিনি তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। এ সময় আহতদের সুচিকিৎসারও দাবি জানান ফখরুল। মির্জা আলমগীর বলেন, ‘কখন একটি সরকার নিজেই নিজ দেশের রাজধানীর গলাটিপে ধরে, মন্ত্রীরা মিথ্যা বক্তব্য দেয়? যখন তারা জনগণকে ভয় পায় ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নিজেদের দুর্বল ভাবে।’ শত বাধা ও নির্যাতনের পরও মহাসমাবেশ সফল হওয়ার মাধ্যমে সরকারের নৈতিক পরাজয় হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। তাই আশা করবো, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বেঁধে দেওয়া ৯০ দিনের মধ্যেই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাশ ও সরকার পদত্যাগ করবে। দেশ-দেশের অর্থনীতি, রাজনৈতিক স্থীতিশীলতা ও শান্তি  ফিরিয়ে আনার জন্য এটাই একমাত্র পথ।’ এক দেশে দুই রকমের আইন চলছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘১২ মার্চের মহাসমাবেশে যাতে মানুষ না আসতে পারে সেজন্য সরকার দেশকে অচল করে দিয়েছিলো। লঞ্চ, বাস, ট্রেন, ফেরী, খেয়া, হোটেল রেস্তোরাঁ সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছিলো। পুলিশ নির্ধারিত সীমনার বাইরে মাইক লাগাতে দেয়নি। অথচ দু’দিন পরে আজই আর একটা মহাসমাবেশে মানুষ আসার জন্য সরকার সব কিছু খুলে দিয়েছে। ট্রেন-বাসে বিনা পয়সায় মানুষ নিয়ে আসছে। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। পুরো সচিবালয় এলাকায় মাইক লাগানো হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশের সরকারের দ্বারা এভাবে দুই ধরণের আচরণ সম্ভব নয়।’ বিএনপি তাহরির স্কোয়ার করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমদের এই বক্তব্যের জবাবে মির্জা আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে অন্যদেশের তুলনা করা যাবে না। এদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনই এখানে বিফলে যায়নি।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা আলমগীর বলেন, ‘আগেও বলেছি আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে নয়। আমরা ক্ষমতায় গেলে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীরও বিচার করবো।’ একটি সফল গণতান্ত্রিক সমাবেশের পরে হরতালে গেলেন কেনো, সুশীল সমাজের এই বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারের অত্যাচার নির্যাতনের প্রতিবাদ করতেই হরতাল দিয়েছি। তবে আওয়ামী লীগের হরতাল আর আমাদের হরতাল এক নয়। আমাদের আমলে আওয়ামী লীগ ১৭৭ দিন হরতাল দিয়েছিলো।’ আলোকচিত্রী শওকত জামিলের মৃত্যু ও শরীয়তপুরে লঞ্চ ডুবিতে নিহতদের কথা স্মরণ করে শোক প্রকাশ করেন ফখরুল। লঞ্চডুবিতে নিখোঁজদের অবিলম্বে উদ্ধারে সরকারের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সরকারের সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাতের ঢাকায় বিদ্যুতের শ্রাদ্ধ
সেরাজুল ইসলাম সিরাজ
দেশে যখন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা বলা হচ্ছে, ঠিক সে সময়েই খোদ রাজধানীতে বিদ্যুতের শ্রাদ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাতের বেলা অকারণেই জ্বলছে হাজার হাজার বৈদ্যুতিক বাতি। ‘আমরা বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী’ বাণী ঝুলিয়ে রাখলেও খোদ বিদ্যুৎ ভবনে রাতের বেলা অকারণে জ্বালিয়ে রাখা হচ্ছে অসংখ্য লাইট। ওয়াপদা ভবনের প্রবেশ দ্বারেও আলোর অকারণ ঝলকানি। রোববার গভীর রাতে রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ অপচয়ের মহোৎসব। আর বিদ্যুৎ অপচয়ের দিক থেকে সব চেয়ে এগিয়ে আছে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো।
ব্যাংকগুলোর একেকটি শাখায় ৩ থেকে ৪টি করে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে, যার একেকটিতে ৫০ থেকে ১০০টির অধিক টিউব লাইট লাগানো রয়েছে। রাত ২টায় অফিস বন্ধ, তবুও ৯৯ মতিঝিল করিম চেম্বারের পাট অধিদপ্তরে সিঁড়ি এবং অফিসে জ্বলতে দেখা গেছে অসংখ্য লাইট। পাট অধিদপ্তরের গাড়ির গ্যারেজেও বেশকিছু লাইট জ্বলতে দেখা গেছে। পাট অধিদপ্তরের গার্ড নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, অফিসে রাতে লোক থাকে তো তাই আলো জ্বালানো রয়েছে। রাত ২টায় অফিসে কি কাজ করছে না ঘুমিয়ে পড়েছে। এ প্রশ্নের জবাবে নজরুল বলেন, ‘এখনতো ঘুমানোই স্বাভাবিক।’ ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। এই ৯৯ মতিঝিলে করিম চেম্বারে অবস্থিত ব্যাংকটির মতিঝিল এবং প্রধান কার্যালয়ের বিশাল আকারে ৩টি এবং এটিএম বুথের জন্য একটি বিশাল আকার সাইনবোড টানানো হয়েছে।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শুধু এখানেই নয়, এই শাখার উল্টোদিকে ৫৩ মতিঝিলে বিশাল আকারের ৩টি সাইনবোর্ড গুলশান শাখাও ৫টি সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। যেগুলোতে কয়েক শ লাইট জ্বলতে দেখা গেছে। এই বিশাল আকারের সাইনবোর্ডগুলোর একেকটিতে প্রায় ৫০ এর অধিক ৪০ ওয়ার্টের টিউব লাইট লাগানো আছে। রাতের বেলা রাস্তায় লোকজন নেই, ব্যাংকিং কার্যক্রমও বন্ধ। তবুও রাতভর বিদ্যুতের শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে। ওই এলাকায় মজিবর রহমান নামের এক পুলিশ কনস্টেবল মন্তব্য করেন, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকওয়ালারা না কথায় কথায় ধর্মের দোহাই দেয়। তাহলে তারা নিজেরা মানে না কেন। ইসলাম ধর্মেতো স্পষ্ট করেই বলা আছে, যারা অপচয় করে, তারা শয়তানের ভাই। তিনি বলেন, ‘একইভাবে আরো বলা আছে, নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না।’ তিনি দাবি করেন, ব্যাংকটির একেকটি সাইনেবোর্ডে ঘণ্টায় প্রায় ২০০০ হাজার কিলোভোল্ট অপচয় হচ্ছে। অথচ তারা ইচ্ছা করলেই এসব লাইট বন্ধ রাখতে পারে। তাতে তাদের কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরের অবস্থানেই আছে এবি ব্যাংক। মতিঝিলের বিসিআইসি ভবনে অবস্থিত এবি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসে বিশাল আকারের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। যাতে প্রায় ১০০টির অধিক টিউব লাইট লাগানো আছে। ইসলাম ধর্মমতে পরিচালিত এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশেও বিদ্যুতের ব্যাপক অপচয় করতে দেখা গেছে। ৭৫ গুলশান এভিনিউয়ে ব্যাংকটির গুলশান শাখায় ৫টি সাইনবোর্ডে অসংখ্য লাইট জ্বলতে দেখা গেছে। শুধু এই বিশাল সাইনবোর্ড লাগিয়েই তারা খান্ত হননি। ৫শ ওয়াটের ৩টি সার্চ লাইট, ১৪টি ১শ ওয়াটের লাইট, এটিএম বুথের জন্য দুটি সাইনবোর্ড বসিয়েছে। এবি ব্যাংকের নাইট গার্ড সাইফুল বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, আরো লাইট এবং আরো একটি সাইনবোর্ড শিগগিরই টানানোর জন্য কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছে। মহাখালীতে একটি ভবনে সাইনবোর্ড টানানোর রীতিমতো প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে। দেখে মনে হয়েছে কে কার চেয়ে বড় সাইনবোর্ড টানাতে পারে। ভবনটিতে ঢাকা ব্যাংক, সোসাল ইসলামী ব্যাংক এবং বাটার ফ্লাই যে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে সেগুলির দৈঘ্য কমপক্ষে ১৫০ ফুটের কম নয়। বাটারফ্লাই সাথে আরো একটি ঝুলিয়েছে। সাথে সমানতালে রয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। ৯০ মহাখালীতে ফখরুল ইসলাম সিকিউরিটিজ লি. এর অফিসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি লাইট জ্বালানো ছিলো অফিস বন্ধ থাকলেও। বেরসরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি আমাদের সরকারি ব্যাংক জনতা, পুবালী এবং রূপালিও পিছিয়ে নেই। সোনারগাঁও রোডে একটি ভবনে জনতা ব্যাংকের সোনারগাঁও শাখায় ৪টি বিশাল আকারের আলো ঝলমলে সাইনবোর্ড দেখা গেছে। এর মধ্যে ২টি সোনারাগাঁও রোড শাখার, ২টি বিভাগীয় কার্যালয়ের। স্থানীয়রা মন্তব্য করেছেন, একটি শাখার জন্য একটি সাইনবোর্ড থাকলেই যথেষ্ট। কিন্তু দুটি করে সাইনবোর্ড টানানো অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। তবে আশার কথাও রয়েছে। ব্যাবসায়ীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন এফবিসিসিআই এর মূল ভবনে বিদ্যুতের সাশ্রয় করতে দেখা গেছে। ফেডারেশন ভবনে মাত্র ১টি লাইট জ্বালানো ছিলো। এর পার্শ্বেই ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই সার্ভিস সেন্টারের বিশাল সাইনবোর্ড থাকলেও তাতে মাত্র ১টি লাইট জ্বালাতে দেখা গেছে। ব্র্যাক ব্যাংকের এই সাইনবোর্ড দৃষ্টান্ত হতে পারে। কারণ ব্র্যাকের এই সাইনবোর্ডটিতে যেমন লেখা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। তেমনিভাবে রাস্তাকেও আলোকিত করেছে। রাতে ঠিক যখন এই অবস্থা তখন বাংলাদেশ ন্যাশনাল লোড ডিসপার্স সেন্টার বাংলানিউজে জানিয়েছে, রোববার রাতে ঢাকা শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ১৩০০ মেগাওয়াট। গরমের সময়ে এই চাহিদা থাকে ২ হাজারের ওপরে। দেশের শীত নেমে আসায় রোববার রাতে দেশে ৩ হাজারের মেগাওয়ার্টের নিচে বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো বলে তিনি জানান। চাহিদা কম থাকার কারণে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয় রোববার রাতে। তিনি মন্তব্য করেন, সারা দেশের যে চাহিদা, তার প্রায় অর্ধেক ঢাকা সিটির। সাইনবোর্ড এবং বিলবোর্ডগুলোর কারণে চাহিদা বেশি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পাওয়ার সেলের পরিচালক আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, আমরা মিতব্যায়ী হলে চরম লোড শেডিং থাকার কথা নয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকার যেহেতু ভর্তুকি দিচ্ছে, সে কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহারে গাইড লাইন থাকা উচিত। যাতে কেউ অপচয় করতে না পারে।
শীতেও লোডশেডিং ঠেকাতে পারছে না পিডিবি
সেরাজুল ইসলাম সিরাজ

শীতের আগমনী বার্তায় বিদ্যুতের চাহিদা কমে গেলেও লোডশেডিং ঠেকাতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। জ্বালানি সংকটের দোহাই দিয়ে গা বাঁচানো হলেও সমস্য অনেক জটিল বলে  খোদ পিডিবি সূত্রই জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার পিক আওয়ার (সন্ধ্যা ৭টায়) ৫ হাজার ১০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৭ শ’ ৭৭ মেগাওয়াট। পিডিবি’র হিসেব মতে, বৃহস্পতিবার দেশে ৫ শতাংশ লোডশেডিং ছিলো। যদিও তাদের এ হিসেবের সঙ্গে একমত নন গ্রাহক এবং বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো। পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ  কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৮ হাজার ২০৩  মেগাওয়াট। আর প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে ৭ হাজার ৬২৩ মেগাওয়াট। ‘কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার ২ শ’ মেগাওয়াটে আটকে আছে।’ বিভিন্ন ত্রুটির কারণে প্রতিদিন দুই হাজার ৭শ’  মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোনও না  কোনও কারণে উৎপাদন করতে পারছে না। পিডিবি বরাবরই জ্বালানি সংকটের কথা বললেও কার্যত মাত্র ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জ্বালানি সংকটের কারণে কম উৎপাদন হচেছ। আর বাকি বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। পিডিবি’র জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, বৃহস্পতিবার গ্যাসের চাপ কম থাকায় ১ হাজার ২ শ’ ২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয়েছে। ‘সে হিসেবে হিসেব করলেও যান্ত্রিক সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয়েছে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট।’ ক্যাব’র জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘নানা সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো রহস্যজনক কারণে অবহেলার শিকার।’ ‘সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ না করে  বেসরকারি কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এক শ্রেণীর লোক এ গুলোকে বিকল রাখতেই আগ্রহী বেশি’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি দাবি করেছেন, সরকার বেসরকারিকরণের চেয়ে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর দিকে মনযোগী হলে সমস্যা এতো প্রকট হতো না। জ্বালানী সংকটের পাশাপাশি যান্ত্রিক ত্রুটি, জ্বালানি তেল সরবরাহ পাইপ লাইনে লিকেজ, জেনারেটর’র ত্রুটিসহ নানা সমস্যা রয়েছে।’ পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রর পাশাপাশি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও দীর্ঘদিন ধরে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কম উৎপাদন করছে। তারা চুক্তি অনুযায়ী পিডিবিকে পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় বিদ্যুৎ দিতে পারছে না। পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, সারা দেশে এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ৭০টি। এর মধ্যে ঘোড়াশাল (ইউনিট ৬) ও আশুগঞ্জ (ইউনিট ১) ২০১০ সালের যথাক্রমে ১৮ জুলাই ও ৯ নভেম্বর থেকে বন্ধ ও বিকল পড়ে আছে।
রাউজান (ইউনিট ২) চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে, ভোলা আরপিপি ১৮ জুলাই থেকে, সিদ্ধিরগঞ্জ এসটি ১ আগস্ট থেকে, শিকলবাহা ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে, শাহাবাজপুর (ইউনিট ৫ ও ৬) ২১ জুলাই থেকে ও ১০ সেপ্টেম্বর থেকে খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, উল্লেখিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ২৬টি  কেন্দ্র যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কম উৎপাদন করছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কেন্দ্রে নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে মোট ৪৭টি চুক্তি করছে। এ পর্যন্ত ৪৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলছে । যার মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে মোট ২৬টি, যার ১৩টিতেই সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে আটটিতেই রয়েছে ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’। ২টিতে ট্রান্সফরমারের সমস্যা। ১টিতে জেনারেটরের সমস্যা, অন্য দুটি দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে আছে। পিডিবি’র এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সরকারকে বললেও অনেক ক্ষেত্রে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না।’ ‘চলতে থাকা অবস্থায় সামান্য ক্রটি দেখা দিলে সারানো হলে বড় সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না। যে কারণে জোড়াতালি থেরাপি বড় ধরণের সমস্যা ডেকে আনছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় ১ মাসের মধ্যে পিডিবিকে পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যাসহ  প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকার ক্ষমতায় এসে দ্রুত বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় ভাড়া ভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে তিন থেকে পাঁচ বছর  মেয়াদের জন্য চুক্তি করে। পরিকল্পনা ছিলো, বড় বড় প্রকল্প উৎপাদনে এলে এসব কেন্দ্রের প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো  উৎপাদনে না আসায় জোড়াতালি থেরাপি থেকে সহসাই মুক্তি পাচ্ছে না জনগণ। পিডিবি চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির ক্ষমতানুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, পুরোনো অনেক কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলো মেরামত করা অনেক জরুরি।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে একে একে পুরোনো কেন্দ্রগুলো সংস্কার করা হবে বলেও তিনি জানান। এক সঙ্গে পুরোনো কেন্দ্র সার্ভিসিংয়ে গেলে লোডশেডিং অসহনীয় হতে পারে, এ কারণে এক এক করে সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কর্মসংস্থান, দারিদ্র্যবিমোচন ও মূল্যস্ফীতি প্রধান চ্যালেঞ্জ
আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে চাপের মুখে সরকার
মো. রেজাউর রহিম
আগামী ২০১২-১৩ অর্থবছরের নতুন জাতীয় বাজেট প্রণয়ন, ঘোষণা এবং বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে চাপের মুখে রয়েছে সরকার। এদিকে, চলতি ২০১১-১২ অর্থবছর শেষ হওয়ার আর মাত্র ৩ মাস বাকি থাকলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ই সফলতা দেখাতে পারেনি। এডিপি বাস্তবায়নে কোনো কোনো মন্ত্রণালয় ৪০ শতাংশও পূরণ করতে পারেনি। ফলে মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্যবিমোচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। বরং চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিট অতিক্রমসহ, মধ্যপ্রাচ্য ও লিবিয়া সংকটের কারণে কর্মসংস্থান-বিশেষ করে বিদেশে জনশক্তি রফতানি ও রেমিটেন্স প্রবাহে নেতিবাচক ধারার আশংকা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি দেশে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাজেট ঘোষণার আগেই খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিটি বাজেটের আগেই দেশে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে একটি চক্র মূল্য বাড়ানোর পাঁয়তারা করে। চলতি বছরে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে এ প্রবণতা আরও বেড়েছে। ইতোমধ্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশ, জনসন এন্ড জনসন, পেপসি এবং কোকাকোলাসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ে নতুন আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বাজেট আসলেই দ্রব্যমূল্য বাড়ে এ কথা মানতে নারাজ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, এটি ঠিক নয়, বরং বাজেটের পর দ্রব্যমূল্য কমে। তিনি বলেন, সরকার আগামী অর্থবছরের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েই বাজেট তৈরির কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। তবে বাজার ঘুরে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। নতুন বাজেট আসতে আরো প্রায় ৩ মাস বাকি থাকলেও ইতোমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে সবধরনের  নিত্যপণ্যের দাম। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। সরকারি দল ও বিরোধীদলের পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে পরিবহন সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের দাম। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে দেশের সাধারণ ও নিু আয়ের মানুষের দুর্ভোগ আরো বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে। 
এদিকে, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় দেশে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা, কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পর্যাপ্ত গবেষণা না থাকা এবং ফসল সংগ্রহ ও মজুদ ব্যবস্থাপনায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা যায়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ সময়’কে বলেন, আসন্ন বাজেটে অবকাঠামো খাতে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ এবং গ্যাস ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে বেশি জরুরি। বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের বিদ্যমান সংকটের সুরাহা করা সম্ভব হলে উৎপাদন বাড়বে এবং উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলে একদিকে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে অন্যদিকে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। জানা গেছে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত। এর মধ্যে আবার ২০ শতাংশ একেবারে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সম্প্রসারণের পাশাপাশি দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশেষ নজর দিতে হবে বলে মনে করেন তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন
মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ জ্বালানি তেলের দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
জ্বালানি তেলের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধিকেই মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, প্রধানত আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রসার মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির মূল কারণ বলে প্রতীয়মান হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ১২ মাসের গড় ধরে গত জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ। আর আগের বছরের জানুয়ারির তুলনায় (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে) এই হার ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত অর্থবছরের জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির গড় হার ছিল ৮ দশমিক ১৪ এবং পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৯ দশমিক ০৪ শতাংশ। অবশ্য মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। গত ৪ মার্চ জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ‘বাজেট ২০১১-১২: প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির (৭ দশমিক ৬ শতাংশ) চেয়ে চলতি অর্থবছরের এ সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি (১১ দশমিক ৪১ শতাংশ) অনেকটা ঊর্ধ্বমুখী। মূলত খাদ্য মূল্যস্ফীতির জন্য এটা ঘটেছে। চলতি অর্থবছরে খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও সাধারণ মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ ঘটাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন মুহিত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১২ সালের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমে প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারে নেমে আসতে পারে। পাশাপাশি দেশে বোরো ধানের ভালো ফলন ও কৃষি খাতে সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এটা সুখের খবর যে, আমাদের চাল আমদানি করতে হচ্ছে না। যে মজুদ আছে, তাতে আগামী বেশ কিছুদিন আমদানি করতে হবে বলে মনে না। এখন মূল্যস্ফীতি বাড়ছে মূলত জ্বালানি তেলের কারণে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে বেশ কয়েক দফা তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কারণে তেলের চাহিদাও অনেক বেড়েছে। তেলের দাম এমন এক বিষয়, যার প্রভাব পরিবহন ব্যয়সহ প্রায় সব পণ্যের ওপর পরে। আমাদের এখানে সেটাই ঘটেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) জ্বালানি তেল ছাড়া অন্য সব পণ্যের আমদানি কমেছে। এই সময়ে চাল আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমেছে ৭৩ শতাংশ। মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ৩৩ দশমিক ২২ শতাংশ। আর শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি কমেছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে জ্বালানি তেল আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ ৯৩ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়েছে। রেমিটেন্স ও বিদেশিক মুদ্রার মজুদ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বিশ্বমন্দার বিলম্বিত প্রভাব কাটিয়ে অর্থবছরের শেষভাগে রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক গতি এসেছে। গত অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্র“য়ারি) রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর জুলাই-ফেব্র“য়ারি সময়ে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশের বেশি। গত ০৬ মার্চ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩ কোটি ৯৪ লাখ (১০ দশমিক ০৩ বিলিয়ন) ডলার। গত বছরের একই সময়ে ১০ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার ছিল রিজার্ভে। আমদানি পরিস্থিতি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, গত অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ৪১ দশমিক ৮ বাড়লেও চলতি অর্থবছরে তা সহনীয় হয়ে এসেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। এই সময়ে ভোগ্যপণ্য, মূলধনী যন্ত্রাংশ এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ব্যয় আগের অর্থবছরের তুলনায় যথাক্রমে ৭৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, ৩৩ দশমিক ২২ শতাংশ এবং ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ৯৩ দশমিক ২৬ শতাংশ।
বিদ্যুত বিড়ম্বনায় অতিষ্ঠ মিরসরাইবাসী
মিরসরাই প্রতিনিধি
  চরম বিদ্যুৎ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে মিরসরাইয়ের সাড়ে চার লাখ মানুষ। যখন খুব বেশি প্রয়োজন তখনই বিদ্যুৎ থাকছে না মিরসরাইয়ে। শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১১টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ না-থাকাটা অঘোষিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এছাড়া সকাল ও দুপুরে নিয়মিত লোডশেডিঙের কবলে পড়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে মিরসরাইয়ে অধিক লোডশেডিঙের কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ গ্রিড লাইনের যান্ত্রিক ত্রুটি ও স্বল্প উৎপাদনকে দায়ী করলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ, চট্টগ্রামের বাবড়কুন্ড গ্রিডের আওতায় পাশ্ববর্তী সীতাকুন্ড উপজেলায় লোডশেডিঙের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও মিরসরাইবাসীকে অন্ধকারের নিমজ্জিত থাকতে হচ্ছে বেশির ভাগ সময়। স্থানীয়রা জানায়, সন্ধ্যা, মধ্যরাত, সকাল-দুপুরে উপজেলায় নিয়মিত লোড়শেডিং চললেও একই সময়ে সময় সীতাকুন্ডে বিদ্যুৎ থাকে। এ জন্য কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি ও রহস্যময় ভূমিকাকে দায়ী করেন তারা। এদিকে, মাত্রারিক্ত লোডশেডিঙের কারণে পড়াশুনায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের। বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর আগ মুহূর্তে বিদ্যুতের চরম সঙ্কটে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। উপজেলায় বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা। চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে কলেজ ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বর্ষ সমাপনী পরিক্ষা অনুুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গত নভেম্বর মাসে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষার ফরম পূরণের পর পড়ালেখার চাপ বাড়লেও লোড়শেডিঙের কবলে পড়ে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে তাদের। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি চরম অসোন্তোষ দেখা দিয়েছে চাকরিজীবী-ব্যবসায়ীসহ উপজেলার সব শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে। তবে মিরসরাই বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের দাবি, গ্রিড লাইনের বেশ কয়েকটি খুঁটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর পড়েছে। মহাসড়কে ফোর লেন সম্প্রসারণের কাজে বিভিন্ন সময় দিনের বেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। অপরদিকে, শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় বাড়বকুন্ড গ্রিড লাইনসহ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় লাইনের সংস্কারকাজ করায় লোডশেড়িং দিতে বলে কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, এসব লোডশেডিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিডিউল লোডশেড়িং ও ভিআইপিদের কারণে সৃষ্ট লোডশেডিং। সব মিলিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তবে কবে নাগাদ এসব সমস্যার সমাধান হবে তা জানাতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউই। মিরসরাই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম উৎপল দে’র কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এর সঠিক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। উপরন্তু ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মিরসরাইয়ে বিদ্যুতের মোট চাহিদা ১৩ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে অতীতে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হতো বর্তমানে সেখানে ৮-৯ মেগাওয়ায় সরবরাহ করা হচ্ছে। তার দাবি, উপজেলায় শুধুমাত্র সিডিউল লোডশেড়িং দেওয়া হচ্ছে। তবে সিডিউল অনুযায়ী ইউনিয়নভিত্তিক লোডশেড়িঙের সময় ও ব্যাপ্তিকাল জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে সঠিক জবাব দিতে পারেননি। প্রসঙ্গত, গত বছর একই সময়ে বিদ্যুতের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করে ও বিদ্যুৎ কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় স্থানীয়। পরে চাপের মুখে পড়ে সীতাকুন্ডের সঙ্গে মিরসরাইয়ের বিদ্যুৎ বৈষম্য দূর করতে বাবড়কুন্ডে স্থাপিত আন্ডার ফিকোয়েন্সি রিলে তুলে নেয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। তবে চলতি বছর ওই রিলে না থাকার কথা জানালেও বিদ্যুতের এমন সমস্যার কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মঙ্গলকে আবার কাছ থেকে দেখার অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 
খালিচোখে পৃথিবীর প্রতিবেশী গ্রহ মঙ্গলকে দেখা যায়। তবে একটু ভালোমত দেখতে হলে টেলিস্কোপের দ্বারস্থ হতে হয়। তবে এবার আবার সুযোগ এসেছে এই লাল গ্রহটিকে খালি চোখে দেখার। কারণ, চলতি সপ্তাহ শেষে গ্রহটি পৃথিবীর বেশ কাছে চলে আসছে। ওই সময়টায় গত দুই বছরের মধ্যে মঙ্গল আর পৃথিবী পরষ্পর সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন জ্যোতির্বিদরা। সৌরজগতের নিয়ম মোতাবেক প্রতি ২৬ মাস পরপর পৃথিবী এবং মঙ্গল সূর্য বরাবর একই সরল রেখায় চলে আসে। এ ঘটনাকে স্বাভাবিক মনে হলেও বিষয়টি কিন্তু মোটেও হেলাফেলা করার নয়। মহাজাগতিক ক্ষেত্রে ঘটনাটি সত্যিই বিস্ময়কর ব্যাপার। কারণ লাল এই গ্রহটির অবস্থান পৃথিবীর ঠিক বিপরীত দিকে। তাই মঙ্গলের এই কাছে চলে আসার ঘটনাকে বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেন বিপরীতার্থক হিসেবে। এই অভূতপূর্ব ঘটনাটি ঘটবে আগামী সোমবার। তখন পৃথিবী আর মঙ্গলের মঝে দূরত্ব দাঁড়াবে মাত্র ৬ কোটি ২০ লাখ মাইল বা ১০ কোটি কিলোমিটার। 
অবশ্য সুখবর হলো শনিবার থেকেই নাকি আকাশে এই লাল গ্রহটির উজ্জ্বল উপস্থিতি টেলিস্কোপ ছাড়াই লক্ষ্য করা যাবে। তবে সোমবারই তা সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। জ্যোতির্বিদ বা সাধারণ যে কেউ এই সময়টিতে টেলিস্কোপ দিয়ে লোহিত গ্রহটির বরফাচ্ছাদিত ভূমিরূপ মোটামুটি পরিষ্কারভাবে দেখতে পারবেন। উল্লেখ্য, সূর্যকে প্রদক্ষিণের ফলে মঙ্গলের সঙ্গে পৃথিবীর দূরত্ব নানা সময় নানা অংকের দাঁড়ালেও ২০০৩ সালে গ্রহটি একবার পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে এসেছিল। তখন পৃথিবীর সঙ্গে এর দূরত্ব ছিল মাত্র ৩ কোটি ৮০ লাখ মাইল। যা ছিল দুই প্রতিবেশী গ্রহের গত ৬০ হাজার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭ শতাধিক সৈন্যের শেষ ঠিকানা
গোলাম কিবরিয়া, অতিথি লেখক কমনওয়েলথ সমাধি ক্ষেত্র অথবা ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি। স্থানীয় লোকদের কাছে এটা ইংরেজদের কবরস্থান হিসেবে পরিচিত। এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭৩৭ সৈন্য। এরমধ্যে ২৪ জন জাপানি যুদ্ধ বন্দি এবং ১ জন বেসামরিক ব্যক্তি। স্থানীয়দের ভাষায় একে ইংরেজ কবরস্থান বলা হলেও আসলে এখানে সারিবদ্ধভাবে শায়িত রয়েছেন মুসলিম, খৃষ্টান, ইহুদী, হিন্দু এবং বৌদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত এবং যুদ্ধে আহত হয়ে পরে মারা যাওয়া সাধারণ সৈনিক থেকে ব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদার এখানে সমাহিত করা হয়েছে। কুমিল্লা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের টিপরা বাজার। টিপরা বাজার ও ময়নামতি সাহেবের বাজারের মাঝামাঝি কুমিল্লা-সিলেট সড়কের বাম পাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাড়ে চার একর পাহাড়ি ভূমি জুড়ে বাংলাদেশে অবস্থিত দ্বিতীয় এ কমনওয়েলথ সমাধি ক্ষেত্র। দেশে অপর কমনওয়েলথ সৈন্যদের সমাধি রয়েছে চট্টগ্রাম শহরের বাদশা মিয়া চৌধুরী রোডে। সেখানে ৭৫৫  সৈনিকের সমাধি আছে। কুমিল্লা কমনওয়েলথ সমাধির পাহাড়ের প্রথম ধাপে রয়েছে ইউরোপিয়ানদের কবর। উপরের ধাপে রয়েছে এ উপমহাদেশের যোদ্ধাদের কবর। সমাধিগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে। ১৪টি  বাদে প্রত্যেক সমাধিতে লেখা আছে নিহত সৈনিকের নাম, বয়স, পদবী, নিহত হবার তারিখ ও ঠিকানা। সমাধিক্ষেত্রের আগে সেখানে ছিল বৌদ্ধ বিহার মন্দির। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে শ্বেত পাথরের একটি ক্রশ। বর্গাকার  এ সমাধি ক্ষেত্রের প্রত্যেকটির দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াইশ ফুট। সমাধি ক্ষেত্রের মোট আয়তন সাড়ে ৪ একর। সমাধি ক্ষেত্রের চারদিক বাউন্ডারি দেওয়া। পুরো সমাধিক্ষেত্রে হরেক রকম ফুল এবং অন্যান্য গাছ দিয়ে পরিকল্পিত ও সুবিন্যস্তভাবে সাজানো। গাছ-গাছালির অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্য ঘিরে রেখেছে এ সমাধিক্ষেত্রটি। এ সমাধি ক্ষেত্রটিতে গেলে ফুলের সৌরভ, গাছের পাতায় বাতাস আর রোদের খেলা, পাখীর ডাকে বিমোহিত পরিবেশ সৃষ্টি করে মনে অন্যরকম এক অনুভূতি জাগায়। তখন মনে হয় মানব জাতির জন্য যুদ্ধ কি খুব প্রয়োজনীয়? এখানে সমাধির সংখ্যা ছিল ৭৩৮টি। ১৯৬২ সালে এ সমাধিস্থল থেকে একজন সৈনিকের আত্মীয়স্বজন তার দেহাবশেষ যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান। বর্তমানে এ সমাধি সংখ্যা ৭৩৭টি। এরমধ্যে ১৪জন সৈনিকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এখানে যাদের সমাহিত করা হয়েছে তাদের লাশ আনা হয়েছে ঢাকা, ফরিদপুর, সৈয়দপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে। আর্মি গ্যারিসন ইঞ্জিনিয়ারগণ এ সমাধি ক্ষেত্রটি তৈরী করেন। এ সমাধি ক্ষেত্রে রয়েছে- বৃটেনের ৩৫০ জন, কানাডার ১২ জন, অস্ট্রেলিয়ার ১২ জন, নিউজিল্যান্ডের ৪ জন, দক্ষিণ আফ্রিকার ১ জন, ভারতের ১৭২ জন, পূর্ব আাফ্রিকার ৫৬ জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬ জন, বার্মার ১ জন, দক্ষিণ রোডেশিয়ার ৩ জন, বেলজিয়ামের ১ জন, পোলান্ডের ১ জন এবং জাপানের ২৪ জনের কবর। এ ছাড়াও ১জন বেসামরিক ব্যক্তিকেও এখানে সমাহিত করা হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে লাশ এনে এখানে সমাহিত করা হয়। কুমিল্লার ময়নামতি এবং চট্টগ্রামের সমাধিক্ষেত্র  দু’টির সার্বিক তদারকি করছে কমনওয়েলথ গ্রেভস কমিশন। এর প্রধান কার্যালয় লন্ডনে। কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহের অনুদানে চলে এ সংস্থাটি। এ কমিশন বাংলাদেশের এ দু’টি সমাধিক্ষেত্র ছাড়াও ভারতের ১০টি, বার্মার ৩টি,  পাকিস্তানের ২টি, থাইল্যান্ডের ২টি, সিঙ্গাপুরের ১টি, মালয়েশিয়ার ১টি, এবং জাপানের ১টি সমাধিক্ষেত্র রক্ষণাবেক্ষণ করছে। কুমিলল্লার ময়নামতি সমাধিক্ষেত্রটিতে গ্রেভস কমিশনের নিয়োগকৃত ১জন কেয়ারটেকার ও ৫ জন গার্ডেনার রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত। ঈদের দু’দিন ছাড়া বছরের প্রতিদিনই সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা এবং দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ সমাধিস্থল সর্ব সাধারণের জন্য উম্মুক্ত। এ সমাধিক্ষেত্রে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের শত শত দর্শনার্থী আসেন। দেখে অনুভব করেন- যুদ্ধ শুধু জ্বালায়-পোড়ায় না, যুদ্ধ অকালে নিভিয়ে দেয় অনেক জীবন প্রদীপও।
হুমকির মুখে বিনিয়োগ
দীর্ঘ সময়েও দেশে প্রসার লাভ করেনি পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ ॥ সরঞ্জামাদির চড়ামূল্য
হাসান মাহমুদ রিপন
দীর্ঘ সময়েও দেশে প্রসার লাভ করেনি পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তি। দফায় দফায় লোডশেডিংয়ের মধ্যেও নগরবাসী তেমন উৎসাহিত হচ্ছে না এ প্রযুক্তিতে। আর ক্রমেই হুমকীর মুখে পড়ছে এ খাতের বিনিয়োগ। এ প্রযুক্তিতে উৎসাহিত না হবার অন্যতম কারণ হচ্ছে সরঞ্জামাদির উচ্চ মূল্য। ব্যাটারি, এলইডি বাতি, যন্ত্রাংশ, ইনভার্টার, চার্জ কন্ট্রোলার ইত্যাদির উপর থেকে কর ও ভ্যাট মওকুফ করা হলে সৌরশক্তির ব্যবহার দ্রুত বাড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গেছে, ৫০ ওয়াটের একটি সোলার সিস্টেমের দাম ২৭ হাজার টাকা। এটা দিয়ে চারটি বাতি ও একটি সাদা-কালো টেলিভিশন চালানো সম্ভব। তবে এই মূল্য গ্রামের যে কোন পরিবারের জন্য খুবই বেশি। দামের কারণেই শহর অঞ্চলে নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তির তেমন প্রসার ঘটেনি। অব্যাহত বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় সৌরশক্তি ব্যবহার করে লোডশেডিং মুক্ত থাকা সম্ভব। সৌরশক্তির ব্যয়বহুল বলে একশ্রেণীর মানুষ অপপ্রচার চালাচ্ছে। অথচ ব্যাটরিসহ সরঞ্জামাদির দাম কমানো ও সংযোগকারি প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে বর্তমান বাংলাদেশের জন্য সৌর শক্তি হচ্ছে আদর্শ। এ দেশের আবহাওয়াও সৌর শক্তি ব্যবহারের শতভাগ উপযোগী। বিদ্যুতের নতুন সংযোগের বেলায় সরকার যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, তাতে স্পষ্ট ভাবেই উল্লেখ রয়েছে যে, দুই কিলোওয়াটের উপরে চাহিদা রয়েছে এমন নতুন সংযোগ পেতে হলে ব্যবহƒত বিদ্যুতের ৩ থেকে ৫ শতাংশ সৌরশক্তি দিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এ শর্তে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার বিধান রেখেই গত বছর ১ নভেম্বর থেকে নতুন সংযোগের বিষয়টি উš§ুক্ত করে বিদ্যুৎ বিভাগ। বাংলাদেশে ১৯৮১ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নবায়নযোগ্য সৌরশক্তি কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দিয়ে আসছে। শুধু তাই নয় সৌরশক্তি নির্ভর প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করছে। দুই কিলোওয়াটের প্যানেলের দাম জেনারেটর বা আইপিএসের কাছাকাছি। এ অবস্থায় বিকল্প জ্বালানির সবচেয়ে সহজলভ্য এ খাতের প্রসারে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন উদ্যোক্তারা। বিদ্যুৎ বিতরণী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেক্ট্রিক ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডেসকো), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এলাকায় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন জমা পড়ে আছে। এর মধ্যে অর্ধেক গ্রাহক দুই বছরের অধিক সময় ধরে ডিমান্ড নোটের টাকাও জমা দিয়ে অপোর প্রহর গুণছেন। কিন্তু সৌরশক্তি ব্যবহার না করায় সংযোগ মিলছে না। তবে, ওজিপাডিকো ও আরইবি দুই কিলো ওয়াটের নিচে চাহিদার কিছু সংযোগ প্রদান করেছে। ডিপিডিসি মাত্র অল্প সংখ্যক সংযোগ দিতে পেরেছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নতুন সংযোগ না পেয়ে সম্ভাবনাময় আবাসন শিল্প আজ হুমকির মুখে। বিনিয়োগকারিরা বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগের অভাবে ফ্যাট বুঝিয়ে দিতে পারছেন না। এতে ঋণ করে যারা ফ্যাট কিনেছেন, তাদের প্রতি মাসে সুদ ও ঘর ভাড়া দুই গুণতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নবায়নযোগ্য সৌরশক্তি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ও সৌরশক্তি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাইফুল হক বলেন, শহর অঞ্চলে সৌরশক্তি প্রযুক্তির ব্যবহার কম হচ্ছে। এ বিষয়ে অনেক ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। আসলে বিষয়টি ব্যয়বহুল নয়। একটি এসি কেনা হলে তাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়ে থাকে। আর সৌরশক্তি প্যানেল বসানো হলে সেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। লোডশেডিং মোকাবিলায় নগর ও শহরের প্রায় ঘরেই এখন আইপিএস ব্যবহার করা হচ্ছে। তা রিচার্জে যে বিদ্যুৎ প্রয়োজন তা সৌরশক্তি প্যানেল বসালেই চলবে। এতে বিদ্যুতের কোন প্রয়োজন হবে না। ড. সাইফুল হক বলেন, কর্পোরেট হাউজ, অফিস-আদালতে গ্রিডভিত্তিক সৌরশক্তি বসানো হলে লোডশেডিংয়ের সময় ব্যবহারের পর জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। এর জন্য বাড়তি ব্যয়ের প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন, ব্যাটরি, ভ্যাট ও অন্যান্য সরঞ্জামাদির উপর থেকে কর প্রত্যাহার করা হলে এর খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। তখন সবাই সৌরশক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত হবে। এখন নগরবাসী অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করার ফলে গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। প্রয়োজন মেটাতে তারা অতিরিক্ত ব্যয়ে সৌরশক্তি প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। এক শেণীর উদ্যোক্তা কিস্তিতে ঋণ দিয়ে প্যানেল বিক্রি করছে। শহরের এক একটি বাড়িতে একাধিক গাড়ি রয়েছে। অথচ তারা বাড়িতে সৌরশক্তি ব্যবহার করবে না। সৌরশক্তির ব্যাটারি ৫ বছর পর পর পরিবর্তন করতে হয়। তা অনেক ব্যয়বহুল হয়। বর্তমান কতিপয় ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ১১ হাজার টাকার ব্যাটারি ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করছে।

আসছে উড়ন্ত গাড়ি!
জনি সাহাম্যাসাচুসেট্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টেরাফুজিয়া এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নিউইর্য়ক আন্তর্জাতিক অটো শোতে প্রথমবারের মত দর্শকদের জন্য আনতে যাচ্ছে উড়ন্ত গাড়ি।
প্রকৌশলগত পরিভাষায় একে বলা হচ্ছে ট্রানজিশন রোডেবল এয়ারক্রাফ্ট (Transition Roadable Aircraft)। রাস্তায় চলা অবস্থায় এর পাখা ভাজ করা যাবে। মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডে একে তৈরি করা যাবে একটি উড়ন্ত যানে। এক ট্যাংক ভর্তি জ্বালানিতে পাড়ি দেওয়া যাবে ৪৬০ মাইল। ঘণ্টায় এর গতিবেগ হবে ১১০ মাইল। টেরাফুজিয়া থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছরের শেষে এটি বাজারে পাওয়া যাবে। ধারণা করা হচ্ছে এর প্রাথমিক বিক্রয়মূল্য হবে ২ লাখ ৭৯ হাজার মার্কিন ডলার। জানা গেছে, ইতোমধ্যে ১০০ টি গাড়ির জন্য অগ্রিম ফরমায়েশ পেয়ে গেছে কোম্পানিটি। এ বিষয়ে টেরাফুজিয়ার সিওও আন্না মাসেক ডিট্রিচ বলেন, আমরা এমন একটি জায়গায় এটি প্রর্দশন করতে যাতে করে পরবর্তীতে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো আমাদের জন্য খুব সহজ হবে। আর নিউইর্য়ক হলো এর জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা। ১৫তম নিউইর্য়ক ইন্টান্যাশনাল অটো শো শুরু হবে ‍আগামী এপ্রিলের ৬ তারিখ থেকে। আশা করা যাচ্ছে, মেলায় উড়ন্ত গাড়ির মডেলটি দেখা যাবে। এছাড়া নির্মাতারা এ গাড়ি নিয়ে তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও জানাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দর্শনার্থীরা খুব কাছাকাছি থেকে গাড়িটির সকল সুযোগ সুবিধা দেখতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, টেরাফুজিয়া একটি বিমান সংস্থা। ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির পাইলট এবং কলাকৌশলিরোই এর প্রতিষ্ঠাতা।
জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবাধিকার প্রসঙ্গ
মাহফুজুর রহমান
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গত দুই দশকে আমাদের দেশে অনেক আলোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। এসব আলোচনা ও বিতর্কের সবচেয়ে বড় অর্জন যেটি হয়েছে তা হলো আপামর জনসাধারণের মাঝে পরিবেশ নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর সব রাষ্ট্রই কম-বেশি তির সম্মুখিন হচ্ছে এবং এ তির পরিমাণ ও মাত্রা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বৈ কমবে না। সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত হবে অনুন্নত বা স্বল্পোন্নত দেশগুলো। কারণ, অনুন্নত বা স্বল্পোন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য যে সম্পদ ও অবকাঠামো থাকা প্রয়োজন তা তাদের নেই। পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তি উন্নয়ন ও ব্যবহারের েেত্রও তারা পিছিয়ে। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঝুকিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত। খড়া, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও সাইকোনসহ প্রতিবছরই নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়ছে দেশটি। বলা হচ্ছে, দেশের প্রায় ১৭ ভাগ এলাকা সমুদ্রে বিলিন হবে। সাগরে তলিয়ে যাবে দেশের দণিাঞ্চলের একটি বড় অংশ। অভ্যন্তরিণ উদ্বাস্তু সমস্যা বৃৃদ্ধি পাবে। কর্ম ও বাসস্থানের জন্য মানুষ বাধ্য হবে তার সব কিছু ছেড়ে যেতে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোও বাংলাদেশের এই তির দিকটি অনুধাবন করতে পেরেছে। ফলে, বাংলাদেশ বিশ্ব পরিবেশ ফোরামে নেতৃত্বদানকারী দেশের ভূমিকা পালন করছে। কপ-১৭ তে বাংলাদেশ পরিবেশ ঝুঁকি প্রবণ রাষ্ট্রগুলোর অধিকার আদায়ে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করেছে। যদিও শেষ পর্যন্ত উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সাথে দরকষাকষিতে পেরে ওঠেনি এই রাষ্ট্রগুলো। কপ (ঈড়হভবৎবহপব ড়ভ ঃযব চধৎঃরবং) সম্মেলন আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রসমুহের পরিবেশ স্বার্থ রার একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম। কিন্তু বাস্তবে, গত কয়েক বছর ধরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ করার ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক পদপে ল্য করা যায়নি। বরং এেেত্র আবির্ভূত হচ্ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। বিদ্যমান বিশ্ব পরিবেশ সঙ্কটের সাথে যোগ হচ্ছে আরও নতুন নতুন সামাজিক ও রাজনৈতিক সঙ্কট। বিভিন্ন দেশে নতুন করে দেখা দিচ্ছে অর্থনৈতিক সঙ্কট। পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক সঙ্কট আরও ঘনিভূত হচ্ছে। প্রকট আকার ধারণ করছে আর্থ-সামাজিক সমস্যা। বর্তমান প্রোপট বিবেচনায়, অনেক রাজনৈতিক ও জলবায়ু গবেষকতো মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশের রাজনৈতিক সমস্যার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনকে পরোভাবে দায়ি করছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব খাদ্য সঙ্কট ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য পৃথিবীর কয়েকশ’ মিলিয়ন মানুষ মারাত্মক তির মুখোমুখি হবে, মৃত্যু বরণ করবে অসংখ্য মানুষ। কৃষিপণ্যের উৎপাদন মারাত্মক তির মুখোমুখি হবে, ফলে অনিবার্যভাবে আবির্ভূত হবে খাদ্য সঙ্কট । খাদ্য সঙ্কটের পাশাপাশি দেখা দেবে উদ্বাস্তু সমস্যা। পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত যতগুলো উদ্বাস্তু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তার একটি বিরাট অংশ হয়েছে যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে। কিন্তু আগামী দিনের যে উদ্বাস্তু সমস্যা, তার মূল কারণ হবে জলবায়ু পরিবর্তন, জলবায়ু বিপর্যয়। এ সমস্যা কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। কোপেনহেগেন সম্মেলনে উদ্বাস্তু সমস্যাটির ওপর আলোকপাত করা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারেও কাক্সিত অগ্রগতি হয়নি। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়। কিন্তু এ ব্যাপারেও বিশ্ব পরিবেশ ফোরাম থেকে কোনো নির্দেশনা এখনও পাওয়া যায়নি। কার্বন নি:সরণের মাত্রা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে এ সমস্যা সমাধানের চ্যালেঞ্জ। উন্নত রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি উদীয়মান উন্নত রাষ্ট্রগুলোও পরিবেশ সম্মেলনগুলোতে দর কষাকষিতে তাদের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। কার্বন নি:সরণের মাত্রাকে চ্যালেঞ্জ করে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে আরও কিছু নতুন রাষ্ট্র। ভারত ও চীন তাদের মধ্যে অন্যতম। ফলে অনুন্নত রাষ্ট্রগুলোকে আরও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ভারত ও চীনের মতো রাষ্ট্রগুলো তাদের যুক্তি তুলে ধরছে এবং তারাও নি:সরণের পরিমাণ হ্রাস করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। তাই আগামী কপ সম্মেলন বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত। একটি স্থায়ী চুক্তি এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে খোদ আমেরিকাও তাদের অবস্থান বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন করেছে। কার্বন নি:সরণের মাত্রার ব্যাপারে তারা কখনোই একমত হতে পারেনি। অতীতে, বুশ প্রশাসন কিয়োটো চুক্তি থেকে তাদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে কিয়োটো চুক্তি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে। পৃথিবীব্যাপী কার্বন নি:সরণের হার ও পরিমাণ কমানোর ব্যাপারে সবাই একমত হলেও উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের দায়িত্ব নিতে নারাজ। আমেরিকাও এর ব্যতিক্রম নয়।
বন্ধ হচ্ছে না কৃষিজমিতে চিংড়িচাষ
আশরাফুল ইসলাম ও শেখ হেদায়েতুল্লাহ
উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষিজমি ও বনভূমিতে জোরপূর্বক নোনা পানি ঢুকিয়ে চিংড়িচাষ নিষিদ্ধ হলেও তা মানছেন না রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, দোষীদের বিরুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ড মামলা করলেও পুলিশ আসামিদের না ধরায় নতুন করে মামলা দায়েরের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে অনেকটা নির্বিঘ্নেই চলছে এ অপতৎপরতা। ‍ খুলনার দাকোপ উপজেলার কামারখোলা গ্রামের বাসিন্দা দেবাশীষ রায় বাংলানিউজকে জানান, কয়েক বছর আগে  প্রভাবশালীরা স্থানীয় পোল্ডার এলাকায় বাঁধ কেটে লোনা পানি প্রবেশ করিয়ে চিংড়িচাষ করায় ধানসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু আইলার পর প্রতিনিয়ত বিলে পানি প্রবেশ করায় চিংড়িচাষ বন্ধ ছিল। ইতোমধ্যে ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণ শেষ হয়েছে। একশ্রেণীর চিংড়িচাষিরা বাঁধের মধ্যে আবারও লোনা পানি প্রবেশ করিয়ে চিংড়িচাষের চেষ্টা করছেন। এতে বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।  দেবাশীষের মতো এখানকার অসংখ্য কৃষকের অভিযোগ, তারা ফসলি জমি চিংড়িচাষের জন্য লিজ দিতে অস্বীকৃতি জানালেও জোর করেই তাদের জমিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় লবণাক্ত পানি। থানা পুলিশে জানালেও কোনো কাজ হয় না। রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় সামাজিকভাবেও কোনো বিচার পান না ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আ. আজিজ এ ধরনের অপতৎপরতার কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, ঘুর্ণিঝড় সিডর-আইলার পর এ অঞ্চলে লবণাক্ত পানি ঢুকে কৃষি আবাদ দারুণভাবে বিপর্যস্ত হয়। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টির পানিতে লবণাক্ততা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে বর্তমানে জমিগুলো আবাদের উপযোগী হয়েছে। অনেক জমিতে ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে। কিন্তু নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করছেন একশ্রেণীর প্রভাবশালী চিংড়িচাষিরা। তারা জোর করে কৃষকের জমিতে লবণাক্ত পানি ঢোকাচ্ছেন। ফলে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে কোনো ফসল হচ্ছে না। এমনকি আশপাশের গাছপালা ও প্রাণিবৈচিত্র্যও মারা যাচ্ছে। তিনি জানান, প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করিয়ে চিংড়িচাষ করায় বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে কোনো আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। একাধিক সরকারি সভায় এ বিষয়টি তুলে ধরে সমস্যা সমাধানের দাবি জানানো হলেও অপরাধীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কিছু করা সম্ভব হচ্ছে বলেও জানান তিনি।  পাউবো’র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, লোনা পানিতে চিংড়ি চাষকারী ঘের মালিকেরা হাইকোর্টের নির্দেশও মানতে চান না। হাইকোর্ট ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী বেড়িবাঁধ কেটে পোল্ডার এলাকায় লোনা পানি প্রবেশ না করানোব জন্যে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। সে নোটিশ অনেকেই অগ্রাহ্য করেছেন। যারা নিষেধাজ্ঞা মানেননি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় যারা বেআইনিভাবে বেড়িবাঁধ কেটে পাইপ বসিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মামলার সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। অথচ বেআইনিভাবে বাঁধ কাটা চিংড়ি ঘের মালিকরা ওই মামলাকে হয়রানিমূলক মামলা বলে দাবি করেন। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ‘নিজেরা করি’ দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে জোর করে লোনা পানি তুলে চিংড়িচাষ বন্ধে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। ওই দিন হাইকোর্ট রুল জারি করেন। ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি লোনা পানি তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বুধবার আদালত ‘উপকূলীয় কৃষিজমি-বনভূমিতে লোনা পানি তুলে চিংড়ি চাষ অবৈধ’ রায় দেন।’
কৃষির ‍বর্তমান অবস্থা
ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চিংড়িচাষ শুরুর আগে খুলনার গ্রামীণ জনপদ কৃষিনির্ভর ছিল। বর্তমানে ঘের কিংবা ঘেরের বাইরের বহু এলাকায় ধানচাষে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষকরা, কিন্তু কিছু প্রভাবশালী ঘের মালিকরা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন ফসল আবাদে। চলতি মৌসুমে খুলনায় বোরো আবাদ করা হচ্ছে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৪৯ হাজার হেক্টর (প্রায়) জমিতে। শোভনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার আব্দুল গণি দাবি করেন, শোভনা ইউনিয়ন এক সময় সবজির জন্য বিখ্যাত ছিল। গত কয়েক বছর আগে বেশিরভাগ জমিতে নোনা পানি আটকে থাকতো। কিন্তু ৫/৭ বছর আগের সেই নোনার অবস্থা অনেকটা কমেছে। ফলে কৃষকরা আবারও চাষাবাদে মনযোগী হচ্ছেন।  ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা জানান, উপজেলার মধ্যে শোভনা, আটলিয়া, খনির্য়ায় বেশি সবজির আবাদ হয়। চলতি রবি মৌসুমে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। তিনি জানান, চাষিরা এবার ভালো ফলন পাবেন। খুলনা জেলার প্রায় ৬০ শতাংশ সবজি উৎপন্ন হয় শুধু ডুমুরিয়াতেই। উপজেলায় প্রায় আড়াই শত কোটি টাকার সবজির আবাদ হয়।
চিংড়িচাষের মূল সঙ্কট
বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চিংড়িচাষ ও রফতানি শুরু হয় আশির দশকে। এর পর থেকে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লোনা পানিতে বাগদা চিংড়ি এবং মিষ্টি পানিতে গলদা  চিংড়ির চাষ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়। গড়ে ওঠে বহু হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান। এখানকার উৎপাদিত চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ করে তা হিমায়িত খাদ্য পণ্য হিসেবে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি শুরু হয়। খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে চিংড়িচাষ। কিন্তু শুরু থেকেই বিজ্ঞান ভিত্তিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ না করায় অচিরেই হোচট খায় চিংড়িচাষের অগ্রযাত্রা। ওয়ার্ল্ড ফিস সেন্টার বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. কুদরুত ই কবির বাংলানিউজকে জানান, দেশে বর্তমানে বাগদা পোনা উৎপাদনের জন্য ৬০টি হ্যাচারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে যে পরিমাণ পোনা উৎপাদিত হয় তা আমাদের দেশের মোট চিংড়ি ঘেরের পোনার চাহিদার তিনগুণ। চাষিরা না বুঝে ঘেরের আয়তন অনুপাতে বেশি পোনা মজুদ করেন। ফলে চিংড়ি রোগাক্রান্ত হয় ও ভালো ফলন হয় না। তিনি জানান, প্রতি ১ হেক্টর আয়তনের জলাভূমিতে ১০ হাজার পোনা দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু চাষিরা এর দ্বিগুণ পোনা দেন। এ কারণে ভাইরাসসহ অন্যান্য রোগে চিংড়ি মারা যায়। পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে চিংড়িচাষের বিষয়ে বর্তমানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। খুলনা মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে,  রফতানি বাণিজ্যে চিংড়ি গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত হলেও ঘেরে ভাইরাসের সংক্রমণসহ নানা কারণে বার বার চিংড়িচাষ ও উৎপাদন ব্যাহত হয়। ওজন বৃদ্ধি করার জন্য চিংড়ির দেহে অপদ্রব্য পুশ করাসহ বিভিন্ন কারণে চিংড়ি খাত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে,  খুলনা জেলায় বাগদা চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ২৩ হাজার ৭২০টি ও আয়তন ৩৬ হাজার ৪২৭ দশমিক ৫২ হেক্টর। ২০১১ সালে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৪৫৬ দশমিক ৭৭ মেট্রিক টন। গলদা চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৬৮০টি, যার আয়তন ১৪ হাজার ১২১ দশমিক ৩৮ হেক্টর। ২০১১ সালে গলদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ৬৪৮ দশমিক ৮১ মেট্রিক টন। ‘চিংড়ি চাষ ও ফসল আবাদ দু’টিই আমাদের অর্থনৈতিক সম্বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। একটির জন্য অন্যটি বন্ধ করে দেওয়া সমাধান নয়। তাই এর জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। চিংড়ি চাষ ও ধান বা অন্য কৃষি আবাদের জন্য পৃথক জোন তৈরিও জরুরি।’ বিশেষজ্ঞরা চলমান এ সঙ্কট উত্তরণে জানিয়েছেন এসব সুপারিশের কথা । বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট’র খুলনার পাইকগাছা লোনাপানি কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) ড. শ্যামলেন্দু বিকাশ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ‘চিংড়িচাষে চলমান সঙ্কট লাঘবে আমাদের ইনস্টিটিউট বেশকিছু প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এসব প্রযুক্তি চাষিদের মাঝে সম্প্রসারিত করা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।’ তিনি আরো বলেন, চিংড়ি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ পদ্ধতি। যারা এটি বুঝে করছেন, তারা ভালো ফলন পাচ্ছেন। যারা না বুঝে করছেন, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ড. সাহা মনে করেন, চিংড়ি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। গত বছরেও এ শিল্পের মাধ্যমে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। কৃষির সঙ্গে একে সাংঘর্ষিক না করে চিংড়িচাষ ও কৃষি আবাদের জন্য পৃথক এলাকা নির্দিষ্ট করা জরুরি।
 হুমকির মুখে চা রপ্তানি
চা চাষের জন্য জমি ইজারা নিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য কাজে
হাসান মাহমুদ রিপন
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, রপ্তানি কমে যাওয়া, উৎপাদন কমে যাওয়া, চা বাগানগুলোর বয়স বৃদ্ধির কারনে হুমকির মুখে পড়ছে দেশের চা শিল্প। চায়ের জন্য জমি ইজারা নিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য কাজে। চায়ের পুরনো জাতের ব্যবহার, দলীয়করণ, আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া না লাগা সহ প্রভৃতি কারণে দেশে চায়ের উৎপাদন বাড়ছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গুণগতমানের কারণে চা আমদানিকারক অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি চায়ের স্থান ছিল অনেক উপরে। ফলে এ খাত থেকে বছরে গড়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। কিন্তু দেশের চাহিদা বৃদ্ধি ও বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে চায়ের উৎপাদন হার বাড়েনি। চা বোর্ডের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরে নানা কারণে চা উৎপাদনের ল্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। এর মধ্যে অন্যতম হলো, চা চাষের ব্যাপক ভূমি অনাবাদি থাকা। তা ছাড়া সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিবছর শতকরা আড়াই ভাগ চা চাষাবাদের ভূমি বৃদ্ধি না করায় ধীরে ধীরে চায়ের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ দিনের পর দিন চায়ের চাহিদা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেলেও উৎপাদন কমছে। বর্তমানে দেশে এক বছরে উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৬ কোটি কেজি। এর মধ্যে স্থানীয় ভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে ৬০ শতাংশ। বাকি ৪০ শতাংশ আমদানি করতে হচ্ছে। জানা গেছে, প্রতি বছর দেশের প্রতি হেক্টর জমির চা বাগান থেকে গড়ে এক হাজার ৪শ’ কেজি হারে চা উৎপাদিত হচ্ছে। গত ২০ বছরে বাংলাদেশে চায়ের উৎপাদন প্রতিবছর বেড়েছে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ হারে। দেশের সব চা বাগান মিলিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি হচ্ছে বছরে দেড় কোটি কেজি। বিশ্বের চা উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও চীন প্রতি হেক্টর জমি হতে বছরে গড়ে চা উৎপাদন করে সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ’ কেজি পর্যন্ত। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে এক হাজার ২শ’ কেজি চা উৎপাদন করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় প্রতি হেক্টর জমিতে ২ হাজার কেজি চা কম উৎপাদন হচ্ছে। একইভাবে আমাদের চা চাষে প্রবৃদ্ধির হারও বাড়ছে না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এহেন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্যে চায়ের চাষ বৃদ্ধি, উন্নত জাতের চারা উদ্ভাবন, চা চাষে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ানো এবং রফতানিকারকদের উৎসাহিত করতে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন। চা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, দেশে চা চাষযোগ্য এক লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ৫৫ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। চা চাষের জন্য সরকারিভাবে লিজ দেয়া হলেও চাষযোগ্য জমিতে রাবার বাগান, বনায়ন, অন্য ফসল চাষাবাদের অভিযোগ উঠেছে। চা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ৪ জেলায় ৮ হাজার ১৪৯ হেক্টর জমিতে রাবার বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। বাঁশ চাষের জন্য ৩ হাজার ৫৪৪ হেক্টর, বনায়নের জন্য ২ হাজার ৫৪২ হেক্টর জমিসহ চা বহির্ভূত খাতে চা চাষের নামে ইজারা নিয়ে প্রায় ৪২ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চা বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, মতাশীন দলের লোকেরা অন্যায়মূলক কাজগুলো করে যাচ্ছে। এদের হাত খুব লম্বা। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে মোট চা আবাদী জমি রয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৮৮৬.৬৬ হেক্টর। যা একরে দাঁড়ায় দুই লাখ ৮৯ হাজার ৭১৬.৬৫। তা থেকে চাষাবাদ হচ্ছে মাত্র ৫৪ হাজার ৮০৪.৫৮ হেক্টর বা এক লাখ ৩৭ হাজার ১১.৪৫ একর জমিতে। এর ফলে অনাবাদী থেকে যাচ্ছে এক লাখ ৫২ হাজার ৭০৫.২ একর জমি। ২০০০ সালের পর থেকে নানা কারণে বিদেশে চা রপ্তানি কমেছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৯ কোটি ৬৮ লাখ ৫ হাজার কেজি চা রপ্তানি করা হয়েছে।
খন্দকার টি এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. রেজাউল করিম এ ব্যাপারে বলেন, উৎপাদন কমে যাওয়া এবং স্থানীয় ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কারণে আগামি পাঁচ বছরের মধ্যে চা আমদানিকারক দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ এ খাত গত কয়েক বছর আগেও রফতানি বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান খাত ছিলো। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে চা উৎপাদন হার কম হবার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো সরকারিভাবে চা শিল্পের জন্য কোনো অর্থ সহায়তা নেই। এডিপিতে এ খাতের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। চা রপ্তানির বিপরীতে সরকার প্রতিবছর গড়ে বৈদেশিক মুদ্রা ৮৪১ কোটি টাকা আয় করেছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চায়ের চাহিদা বেড়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারও বেড়েছে সমান তালে। যে কারণে উৎপাদিত চা দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানোর পর বিদেশে রপ্তানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর এ কারণে বিদেশে চা রপ্তানি কমেছে। বাংলাদেশ থেকে ২০০০ সালে ৩ কোটি ৮৭ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা রপ্তানি করা হয়েছিল। আর ২০১০ সালে রপ্তানি করা হয়েছে মাত্র ৩১ লাখ কেজি চা। গত দশ বছরে বিদেশে চা রপ্তানি প্রতিবছর পূর্বের বছরের তুলনায় কমেছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। দেশীয় বাজারে চায়ের চাহিদা বৃদ্ধি, দেশের চায়ের মান নিম্নমুখী হওয়ার কারণে রপ্তানি কমছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চায়ের চাহিদা বছরে প্রায় ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধির বিপরীতে উৎপাদন ২ দশমিক ১৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধির কারণে রপ্তানিযোগ্য চায়ের পরিমাণ কমছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চা বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, সরকার সবসময়ই বলে চা শিল্পকে রা করার জন্য পদপে নেবে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া পুরনো চা বাগানে নতুন করে চারা লাগানো সম্ভব নয়। অভ্যন্তরীণ চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উৎপাদন বাড়াতে না পারলে ২০১৫ সালের পর বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম হাসান বলেন, আমি স্বীকার করছি অভ্যন্তরীণ চাহিদা যে ভাবে বেড়ে গেছে, উৎপাদন সেভাবে হচ্ছে না। উৎপাদন বৃদ্ধিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে ঘাটতি মূল্যে চারা বিতরণ, টি প্লান্টারদের ঋণ সহাতা প্রদানসহ পরিচালিত হচ্ছে নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড। চা শিল্পের জন্য বরাদ্দকৃত আট হাজার হেক্টর অনাবাদি জমিকে শিগগিরই চাষের আওতায় আনতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরো ২০ হাজার হেক্টর জমির পুরনো চা গাছ তুলে সেখানে উন্নত ও হাইব্রিড জাতের গাছ লাগাতে হবে। এ ল্েয চা বোর্ড কাজ করে যাচ্ছে।
(সূত্র : বাংলাদেশ চা বোর্ড ) দশ বছরে চা উৎপাদন ও রপ্তানি
সাল দেশীয় চাহিদা উৎপাদন (কেজি) রপ্তানি (কেজি) রপ্তানি আয়
২০০০ ৩,৮০,৭৯,০০০ ৫,৩১,৫০,০০০ ১,৮০,১০,০০০ ১,২০৫.২০
২০০১ ৩,৬০,৯৫,০০০ ৫,৩০,৪৭,০০০ ১,২০,৯২,০০০ ৮৯৪.৯৯
২০০২ ৪,১০,৫০,০০০ ৫,৩৬,০২,০০০ ১,০৩,৬৫,০০০ ৯৩৯.৯৩
২০০৩ ৩,৭০,৪৪,০০০ ৫,৮৩,০০,০০০ ১,০২,১৮,০০০ ৯১৫.০৭
২০০৪ ৪,৩০,৩২,০০০ ৫,৬০,০০,০০০ ১,০৩,১১,০০০ ৯৩৪.০৪
২০০৫ ৪,৩০,৩০,০০০ ৬,০১,৪০,০০০ ৯০,০৯,০০০ ৭৪২.৬২
২০০৬ ৪,০০,৫১,০০০ ৫,৩৪,১০,০০০ ৪০,৭৯,০০০ ৪৬৯.৫৯
২০০৭ ৪,৬০,২৭,০০০ ৫,৮১,৯০,০০০ ১,৫৬,০০,০০০ ৮৯৯.০১
২০০৮ ৫,২০,১২,০০০ ৫,৮৬,৬০,০০০ ৮০,৩৯,০০০ ৯৭৬.৯৫
২০০৯ ৫,৩০,৭৪,০০০ ৬,০০,০০০ ৩১,০৫,০০০ ৪৩৩.৫০
২০১০ ৫,৬৮,০০,০০০ ৫,৯১,৭০,০০০ ৩১,০০,০০০ ৪৩০.৫০
গোয়ের্নিকা’র ডিজিটাল চেক-আপ!
সিজারাজ জাহান মিমি পাবলো পিকাসোর ভুবনবিখ্যাত  চিত্রকর্ম ‘গোয়ের্নিকার’ ( স্প্যানিশ উচ্চারণ `গের্নিকা`)সাথে পরচিয় নেই কিংবা এটি সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা নেই এমন শিল্পরসিক বা শিল্প অনুরাগী খুঁজে পাওয়া ভার। বৃহদাকার দেওয়ালজোড়া ক্যানভাসে সাদা কালো ও ধুসর রঙ আর তেলের মিশ্রণে আঁকা চিত্রকর্মটির উচ্চতা ১১ ফুট, প্রস্থ ২৫.৬ ফুট। শিল্পী কেবল তার এই কর্মকে ছবির মধ্যেই আবদ্ধ করে রাখেননি এটা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক সবল প্রতিবাদ। বিস্ময়কর এক ঘটনার জন্ম দিল গোয়ের্নিকা নামের ছবিটির ৭৫ বছর পূর্তি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে এর পুরো স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়েছে। একটি বিশালাকায় রোবটের মাধ্যমে এই ছবির হাজার হাজার আণুবীক্ষণিক শট নেওয়া হয়। এই প্রথম ছবিটির সব ক’টি অংশের প্রকৃত অবস্থা সর্ম্পকে জানতে বিশেষজ্ঞরা সক্ষম হয়েছেন; এমনা আগে কখনোই সম্ভব হয়নি। গোয়ের্নিকার বর্তমান আবাসস্থল মাদ্রিদের রেইনা সোফিয়া যাদুঘর। এ মিউজিয়াম এবং স্প্যানিশ টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান টেলিফোনিকার প্রচেষ্টায় প্রযুক্তিটি তৈরি। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইনফ্রারেড এবং আল্ট্রাভায়োলেট ফটোগ্রাফি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবির অভ্যন্তরীণ অনেক তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব। এ ধরনের একটি রোবোটিক যন্ত্র বানানোর উদ্দেশ্য ছিল একটাই-- যেন গোয়ের্নিকাকে স্থানান্তর করা ছাড়াই প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নীরিক্ষা করা সম্ভব হয়। তাছাড়া যন্ত্রটি তৈরি না হলে ছবিটিকে পরীক্ষা করার জন্য পরীক্ষাগারে নিতে হত, যা ছবিটির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারত বলে মনে করছেন বিষেশজ্ঞরা।
যাদুঘর সংরক্ষণকারীর প্রধান হোর্হে গার্থিয়া গোমেস বলেন, ছবিটির অবস্থা নাজুক। কেননা এর জীবদ্দশায় বহুবার স্থানান্তর এবং বহু জায়গাতে ভ্রমণ করতে হয়েছে। তাই বর্তমান অবস্থা জানার জন্য বড় ধরনের মেডিক্যাল চেক-আপ দরকার যাতে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এবং পুরো ছবির দেখভাল করা যায়।
তবে সুখবর হচ্ছে, অবশেষে সুক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণকৃত ১.৫ টন ওজনের পুরো ছবির ফটোগ্রাফিক ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে।
কাব্য অনুরাগ
রিকশাচালক থেকে রাজসভার অতিথি
ফিচার ডেস্ক
প্রজ্ঞা আর নিরন্তর সাধনায় সাধারণও অনেক সময় অনন্যসাধারণ হয়ে ওঠেন। ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত এ সত্যটি নতুন করে আবারও প্রমাণ করলেন রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা কবি বলভদ্র দাস। তিনি প্রমাণ করলেন, কাজ যত সামান্যই হোক, সততা আর নিষ্ঠা নিয়ে বাঁচার চেষ্টা কখনোই ম্লান করে না মানুষকে। আর সত্য ও সুন্দরের সাধনা মলিন মানবকেও ধীরে ধীরে সন্তে পরিণত করে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য আসামের ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় নৈসর্গিক রাজধানী গুয়াহাটি শহরে সংসার চালাতে টানা ২০ বছর রিকশা চালাচ্ছেন বলভদ্র। সেই সঙ্গে নীরবে-নিভৃতেই চলছিল তার কবিতা আর সংগীত চর্চা। জীবনের কঠিন-কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েও ধরে রেখেছেন শিল্প-সাহিত্যচর্চা। এ যেন ‘পাঁকে ডুবলেও পঙ্কজকে না ভোলা’। জীবনের রূঢ় বাস্তবতাকেই রূপায়িত করেছেন তার অপরূপ সুন্দর কাব্য প্রচেষ্টায়।
না, জীবনের অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেও বলভদ্রের এ কাব্য অনুরাগ তাকে একেবারে জলে ফেলেনি। সামান্য রিকশাওয়ালা হয়েও আগরতলা বইমেলার সাংস্কৃতিক সভায় রাজ্যের মন্ত্রী, পদস্থ সরকারি আমলা, প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক আর সমাজের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে এক আসনে বসতে পারার পর, স্বভাবতই এই অনুভূতি জাগ্রত হয়ে ওঠে তার মধ্যে-‘জীবন একেবারে ব্যর্থ হয়ে যায়নি’। কলকাতার জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার প্রকাশ করেছে কবি বলভদ্রের ‘কবি’ স্বীকৃতি লাভের ইতিবৃত্ত। দরিদ্র ঘরের সন্তান বলভদ্র অষ্টম শ্রেণীর পর আর পড়ালেখার সুযোগ পায়নি। সংসারের হাল ধরতে প্রায় ২০ বছর আগে গ্রামের বাড়ি বরপেটা থেকে গুয়াহাটি শহরে পাড়ি জমান তিনি। সম্মানজনক কোনো কাজ যোগাড় করতে না পেরে বাধ্য হয়েই রিকশা চালানোর কাজ বেছে নেন। কিন্তু দারিদ্র্য দমাতে পারেনি তার শিল্পচর্চা। জীবিকার সংস্থানে রিকশা চালনা, কাব্যচর্চা আর ভূপেন হাজারিকার মানবতাবাদী সংগীত চর্চা সমান তালে চলতে থাকে। নিজ জীবনের হতাশা, দুঃখ আর চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সমাজের নানা ঘটনা উপজীব্য হয়ে ওঠে বলভদ্রের কবিতায়। রিকশা চালকের বাইরে বলভদ্রের অন্য পরিচয় অন্তরালেই থেকে যেত। রেডিও আকাশবাণীর গীতিকার-অভিনেতা দিলীপ ফুকন একদিন বলভদ্রের রিকশায় চড়েন। এরপরই ঘুরে যায় প্রেক্ষাপট। বলভদ্রের গানে, আবৃত্তিতে মন্ত্রমুগ্ধ দিলীপ ফুকন তাকে নিয়ে যান হেঙরাবাড়ির নিজ বাড়িতে । সেখানেই সাহিত্যসভার উপ-সভাপতি পদুমী গগৈ ও অভিনেত্রী চেতনা দাসের উৎসাহে বলভদ্র বই বের করার সুযোগ লাভ করেন। লেখক-প্রকাশক সৌমেন ভারতীয়া প্রকাশ করেন বলভদ্রের ৫০টি কবিতার সঙ্কলন ‘সরু পথিক, দুখর পথিক’ (তুচ্ছ পথিক, দুঃখের পথিক)। গত ডিসেম্বরে রিকশাওয়ালা কবির বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন, সাহিত্যিক হোমেন বরগোহাঞি ও ত্রিপুরার শিক্ষামন্ত্রী অনিল সরকার। বলভদ্রের কবিতার প্রতি অনুরাগ ও তার কণ্ঠে ভূপেন হাজারিকার গান শুনে মন্ত্রী অনিল সরকার তার বক্তব্যে আগরতলা বইমেলায় কবি বলভদ্রকে সংবর্ধিত করার ঘোষণা দেন। রিপুরা সরকার বলভদ্রের জন্য পাঠান বিমানের টিকিট । ২৯ ফেব্রুয়ারি ৩০তম আগরতলা বইমেলায় বিশেষ সরকারি অতিথি হয়ে অনুষ্ঠানে হাজির হন কবি বলভদ্র । তার কাছে এ যেন স্বপ্নের মতোই। মন্ত্রী, আমলা, বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের সঙ্গে এক মঞ্চে বসতে পারার বিরল সম্মানে অভিভূত কবি তার বক্তব্যে আবেগ তাড়িত ভাষায় বলেন, এই স্বীকৃতি, এত সম্মান পাব, সত্যিই ভাবিনি। একই সঙ্গে ঘোষণা করলেন, শত প্রতিকূলতাতেও কবিতা লেখা যেমন ছাড়িনি, তেমনই ছাড়ব না রিকশার হাতলও। কারণ পরিচিতি, সম্মান, প্রথম বিমানে চড়া-সবই তো এই রিকশার বদৌলতেই!
একটি ঢ্যামনা সাপের গল্প
রিংকু সারথি
পুরুষদের মধ্যে অনেকেই পরিণত বয়েসে কেউটে হয়। তবে সবাই-ই আঠারো বছর পর্যন্ত ঢ্যামনা থাকে। ঢ্যামনাদের মধ্যে কারও কারও আঠারোর পর হতে দাঁতের গোড়ায় বিষ জমতে শুরু করে। এরপর হতে নিয়মিত বিষ উগরাতে না পারলে ওদের জীবন-যাপন কষ্টকর হয়ে ওঠে। আমাদের গল্পের নায়ক নান্টু মিত্তির তেমনই একটা ঢ্যামনা, ঢ্যামনা সাপ। ওর শরীরে বিষ উৎপন্ন হয়েছে বছর দু’য়েক আগে। কিন্তু সে বিষ এখনও ওর দাঁতের গোড়ায় এসে জমা হয়নি। তাই বিষের যন্ত্রণায় ও এখনও পাগল হয়নি। তারপরও এক আষাঢ়ের রাতে হঠাৎ করেই মতিভ্রম হলো নান্টুর। হলো একটি নারীকে দেখে। নারীটির বয়স কত, ছিরি-ছাত কেমন, তা পাঠক গল্পের গভীরে প্রবেশ করলেই বুঝতে পারবেন। সেদিনের কথা। বিকেল হতেই আকাশে ঢাক গুড় গুড় বাজছিল। গলাচিপা বন্দরের হাট ভাঙতেই পরিবেশ-প্রকৃতি সব ছেয়ে গেল অগণিত বিটুমিন রঙা সন্ধ্যায়। ভেজা ব্লটিং পেপারের মতো আকাশ চুঁইয়ে ঝরতে থাকলো প্যান-প্যানে বৃষ্টি। আর বৃষ্টি চিরে মাঝে মাঝে ফণা তুলতে থাকলো দণি থেকে ধেয়ে আসা ডাকিনী বাতাস। সারা দিনের ভিখমাঙা বিভিন্ন বর্ণের সের খানেক চাল আর দু’চারটে আগা মাথা ভাঙা সবজির টুকরো আঁচলে বেঁধে, কালীদাসী বাড়িমুখো হয় সাব-রেজিস্ট্রি আপিসের রাস্তা ধরে। উপজেলা সরকারের সাধ্য হয়নি এ রাস্তায় বালু সিমেন্ট ঢালতে-বিগত পাঁচ বছরেও। বৃষ্টি-বাদলার জলে শ্যাওলা জমে জমে তাই রাস্তার শেয়ালরঙা ইটগুলো কালচে-সবুজ হয়ে গেছে। সেই পিচ্ছিল ইট দু’পায়ের নখে আঁকড়ে ধরে ধরে এগিয়ে চলে কালীদাসী। রাস্তার দু’পাশে পিঠা পাকুড় আর বন্য অশ্বত্থের ঘন সারি। তাদের ডালপালা ধরে দোল খায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঝে-মাঝে খ্যাপাটে বাতাস বয়-আর সেই বাতাসের ঝাঁপটায় অন্ধকার নড়ে উঠে ডাকিনী হাসিতে ঝুর ঝুর করে ভেঙে পড়ে। আবার মুহূর্তেই নিরেট হয়ে যায় অন্ধকার। বাতাস আর আঁধারের দাপটে আঁইঢাই করে কালীদাসীর প্রাণ। যত পারে দ্রুত পা চালায় সে। দাওয়ায় বসে অপো করছে ওর দু’বছরের নাতি, উদোম গা আর নাঙ্গা পাছায়। সারাদিনের না খাওয়া নাতির শুকনো মুখখানা মনে পড়তেই বুক ধরে আসে কালীদাসীর। আরও জোড়ে পা চালায়। কিন্তু উত্তর পঞ্চাশীয়া গোড়ালী ওর, খুব একটা বেগ তুলতে পারে না। ..কালী দিদি....ও কালী দিদি...। পেছন থেকে পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে ধরে প্রাণ ফিরে আসে কালীদাসীর। দু’দণ্ড দাঁড়ায়।  দেখে মিত্তির বাড়ির ছোট ছেলে নান্টু মিত্তির। কাছে এসে নান্টু বলে, এই ঘুট-ঘুইট্যা রাইতে কোম্মে গোণে আইলা গো কালী দিদি? কালী বলে ‘হারাদিন হাডে ভিা করছি। হাড ভাঙতে ভাঙতে রাইত অইয়া গ্যালো। এই পতে সঙ্গী-সাতী কেউ নাইক্যা, হের ফান্যে একলাই বাড়ি ফিরতাছি।’
-ভালা করছো, লও  এক লগে বাড়ি যাই।
-চল।
মিনিট দু’য়েক পথ চলার পর নান্টু বলে, ও দিদি দাদায় য্যান মারা গ্যালো কোন বছর?
কালী বলে, মন্বন্তরের আগের বছর।
-তয় তুমি আবার বিয়া করলা না ক্যান?
-পাগলে কয় কি দ্যাহ! হেকালে মোর বয়স অইছিল দুই কুড়ি এগার। ছোড পোলা নিমাইরে বিয়া করাইলাম না হেই বছর?
-কী যে কও দিদি! তোমারে তো এহনও একবার বিয়া দেওন যায়।
-কস্ কী লো হজমোক্কার পো...! বলে  কিট কিট করে হাসে কালী চলার গতি আরও দ্রুত করে।
চলতে চলতে নান্টু কালীর বাম হাতখানা ধরে বলে, সত্যি কইছি দিদি- তুমি এহনও ম্যালা টাইট-ফিট আছো। চেহারাডা এহনও বাতিল হইয়া যায় নাই।
এবার দাঁড়িয়ে পড়ে কালী। নিজের হাত ধরা নান্টুর হাতখানা দেখার চেষ্টা করে। নিরেট অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না। তবুও হাতের শেষে কাঁধ আর কাঁধের ওপরে নান্টুর মুখের দিকে অনুমান করে তাকায় সে। কৃষ্ণ সবুজ অন্ধকারে নান্টুর চোখ দু’টো চোখ কুপিবাতির ফলার মত ঝিলিক ছুড়ে চলছে। একষট্টি বছরের নারীর প্রতি উনিশ বছরের কিশোরের কামক্রোধ-ভেবে ঘৃণায় বিবমিষা হয় কালীদাসীর। ঝাটি মেরে হাত ছুটিয়ে নিয়ে বাজখাই কণ্ঠে বলে- ঢ্যামনার পো ঢ্যামনা! তোর ঠাম্মার হমান বয়স মোর। কী করতে আছোস হুশ আছে!!!
হাত ছুটে গেলে কালীদাসীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে নাণ্টু। বলে- খালি বয়স অইলেই হগল মানুষ বুড়া অয় না। লও রাস্তার পাশে হোগলা বাদারে লও। হারাদিন ভিক্কা কইরা যা পাইছো, হের চিক্কা চাইর ডবল বেশি দিমুআনে।
নান্টু কালীকে হোগলা বাদারের দিকে টানে-আর ভাবে, পুরুষ মানুষের বিষের এমনই যন্ত্রণা। ্যাণে-ব্যাাণে খালি শূলানি ওডে। বিষটা একবার নামাইতে পারলেই অয়। ছুড়ি না বুড়ি হেয়া কেডা দেকতে যাইবো এই আন্দাইরা রাইতে!
কালীদাসী নন্টুর বলের সাথে না পেরে উঠে মিনতি করে বলে- তুই আমার বাপ নান্টু। এমন অধম্মো করিস না। তুই যা করতে চাইতাছোস, তা করলে আকাশ ভাইঙ্গা পড়বে এই পৃত্থিমীতে। ...আমি তোর ঠাম্মার চাইক্যাও বয়সে বড়।
নান্টু কালীকে হোগলা বাদারের দিকে টানতে টানতে বলে- ঐ হানে চলো। দেখপা আনে ছুডু-বড় ব্যাবাক এক হমান হইয়া যাবে আনে।
কালী মিনতি করে বলে, এমুন কাম আমি এহন পারিনারে বাপ!! নিমাইর বাপে মইরা যাওনের ম্যালা আগে থাইক্যাই পারিনারে বাপ। আমারে তুই মাপ কর বাপ। কালী দাসী যতই কাকুতি মিনতি করে, নান্টু ততই ওকে জোড় করে হোগলা বাদারের দিকে নিয়ে যেতে থাকে।
ছ্যাছড়ানি খেতে খেতে এবার চিৎকার করে ওঠে কালী বলে, শয়তানের রক্তে, ডাইনের প্যাডে তোর জরমো। ষাইট বছরের বুড়ির লগে আকাম করতে চাস!!!হায় ভগোবান, অর পুষ্যাদণ্ড ভাইঙ্গা দেও-ঠাডা ফালাইয়া  অরে ভষ্ম কইরা দেও...।
বলতে বলতে ঝট্কা মেরে কোনো রকমে নিজেকে ছুটিয়ে ফেলে কালী দাসী নান্টুর কবল থেকে। তারপর পড়ি-মরি করে ছোটে সামনের দিকে। ততণে বৃষ্টি মুষলধারে হয়েছে। আঁচলে বাঁধা চাল-সবজি ভিজে ওজনে তিনগুণ হয়েছে। সেই বোঝা নিয়ে দৌড়ানো দায় হয় ওর। চলতে গিয়ে বার বার হোচট খায় কালীদাসী। নান্টু ছুটে আসে ওকে ধরতে। কালীদাসী কোনরকমে উঠে আবার ছোটে।
হঠাৎ ও খেয়াল করে, রাস্তার ডানপাশে শান্তি ব্যাপারীর মুদি দোকানের ভেতর টিম টিম করে কুপি জ্বলছে। নিজকে ঝড়ের বেগে ছুটিয়ে নিয়ে মুদিখানার আধা ভেজানো ঝাঁপের ওপর ফেলে কালীদাসী। তারপর গগণবিদারী কন্ঠে চিৎকার করে ওঠে... ও শান্তি ঝাঁপ খোল..ঝাঁপ খোলরে ও শান্তি...ও বাপ ঝাঁপ খোল। দ্যাখ ঢ্যামনার পো ঢ্যামনায় আমার ভাঙা খোলায় খই ভাজতে চায়রে..আমার ভাঙা খোলায় খই ভাজতে চায়..!!!!
এবার ক্যাটরিনার সুপারিশে সালমান
অনন্যা আশরাফ
বলিউডে ক্যাটরিনার ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে সালমানের অবদানের কথা জানেন সবাই। সালমানের সুপারিশেই ক্যারিয়ারের শুরুতে ক্যাটরিনা বহু ছবিতেই অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু  ক্যাটরিনার সুপারিশে সালমান কোনো ছবি পেয়েছেন তাও কি বিশ্বাসযোগ্য!
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি ক্যাটরিনার সুপারিশে সালমানকে নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘এক থা টাইগার’ ছবির পরিচালক কবীর খান। সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে এটি ভক্তদের কাছে স্বীকার করলেন সালমান ।
ইয়াশ রাজের ছবিতে প্রথমবার সালমান অভিনয় করছেন এ খবরে ভক্তরা ছিল ভীষন খুশি। ‘এক থা টাইগার’ ছবির মূল চরিত্রে পরিচালক কবীর খানের প্রথম পছন্দ হচ্ছেন সালমান খান। নায়ক চরিত্রে সালমানকে নেয়া হলে নায়িকা চরিত্রে ক্যাটরিনাকে নেয়ার সুপারিশটা সালমান নিজেই করেছিলেন। আগে প্রকাশিত খবরগুলোতে ভক্তরা তাই জানতেন। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের একটি পত্রিকার সঙ্গে আলাপনে সালমান ভক্তদের জানান ভিন্ন কথা। তিনি জানান, ক্যাটরিনার সুপারিশ তাকে এ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। আলাপনে সালমান বলেন, পরিচালক কবীর খান প্রথমে ক্যাটরিনাকে এ ছবির জন্যে চুক্তিবদ্ধ করেন। তখনও পরিচালক নায়ক চরিত্রে চূড়ান্ত করেননি কাউকে। এরপর ক্যাটরিনা পরিচালককে পরামর্শ দেন, ছবির নায়কের ভূমিকায় অভিনয়ে আমাকে প্রস্তাব করতে।  ক্যাটরিনার পরামর্শ অনুযায়ীই পরিচালক ছবির প্রস্তাব নিয়ে আমার কাছে আসেন। এ ছবিতে সালমান খানের অভিনয়ের পেছনে এটাই অবশ্য মূল কারণ ছিলনা । এ বিষয়ে সালমান যুক্তি দেখিয়ে বলেন,  সোহেল খানের প্রডাকশনে অপূর্ব নামে একজন কাজ করেন। অপূর্ব আর কবীর খান খুব ভালো বন্ধু। এ ছবির প্রস্তাব নিয়ে তারা একসঙ্গে আমার কাছে আসেন। একটি ডিভিডিতে কবীর খান তার কাজের কিছু ভিডিও চিত্র আমাকে দেখান। কাজগুলো খুব ভালো লাগে। তাছাড়া এর আগে ২০০৬ সালে তার পরিচালিত  ‘কাবুল এক্সপেস’ ছবিটি আমি দেখেছি। সেখানেও তিনি ভালো কাজ করেছেন। তাই নতুন এ ছবিতেও ভালো কাজ হবে তাতে আর সন্দেহ থাকল না। প্রস্তাবে তখনই রাজি হয়ে গেলাম। ‘এক থা টাইগার’ ছবি বক্স অফিসে হিট করলে সালমান কি ক্যাটরিনার কাছে ঋণী হয়ে যাবেন? না তাহলে সে হিসেবে সালমানের সুপারিশে ক্যাটরিনা তার এ ক্যারিয়ারের জন্যে সালমানের কাছে আরো বেশি ঋণী হবেন। যাই হোক ছবি হিট হলে একটা ধন্যবাদ তো সালমান ক্যাটরিনা কে দিতেই পারেন।  
সাতচল্লিশে আমির খান
অনন্যা আশরাফ
চলতি বছর ১৪ মার্চ বুধবার সাতচল্লিশে পা রাখন আমির খান। ১৯৬৫ সালে  এই দিনে ভারতের মুম্বাইয়ের বান্দ্রাতে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। বলিউড পারফেক্টশনিস্ট দিনটি প্রতি বছরই নিজ পরিবারের সঙ্গে একান্তে কাটান । বাসায় মা-বোন ও সন্তানদের সঙ্গেই আমির জন্মদিনটি সেলিব্রেট করেন।। কিন্তু এ বছরই হচ্ছে তার ব্যতিক্রম। এবারই প্রথম পরিবারের বাইরে তিনি  দিনটি সেলিব্রেট করছেন।
পরিবারের সবাই জানেন, আমির খান কাজকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। সম্প্রতি নিজস্ব প্রোডাকশনের টেলিভিশন শোর শুটিং ও রেকর্ডিং নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। একবার কাজের মধ্যে ডুব দিলে সেটি শেষ না করা পর্যন্ত স্বস্তি পান না আমির খান। এই প্রথম টিভি শোতে অংশগ্রহণ তাকে করে তুলেছে আরো সচেতন। পরিবারের সবাই তাই আগেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন, বছরের এই বিশেষ দিনে তারা আমির খানকে পাচ্ছেন না। সত্যিই তাই, এবারের জন্মদিনের তারিখটাতেও শুটিং রেখেছেন আমির। টিভি শোর শুটিং করেই পুরো দিনটি কাটাচ্ছেন তিনি।
কাজের ক্ষেত্রে আমিরের এ সচেতনতা তার সফলতার মূল কারণ। আর তাই আজ তিনি একজন সফল অভিনেতা, সফল পরিচালক এমনকি সফল প্রযোজকও বটে। বলিউড ফিল্মডোম তার নাম দিয়েছে মি. পারফেক্টশনিস্ট। বলিউডের এ পারফেক্টশনিস্টের পুরো নাম আমির হুসেইন খান।
অভিনয় শুরু করেন ৮ বছর বয়সেই। ১৯৭৩ সালে শিশু শিল্পী হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ চাচা নাছির হুসেইনের ‘ইয়াদো কি বারাত’ ছবিতে। এরপর প্রায় ১১ বছরের বিরতি নিয়ে ১৯৮৪ সালে ‘হলি’ ছবিতে আবারো অভিনয় করেন। কিন্তু সফলতা পান ১৯৮৮ সালের কর্মাশিয়াল ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত তাক’ ছবিতে। এ ছবির জন্যে তাকে স্পেশাল জুড়ি বোর্ড থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেয়া হয়। এরপর সফল ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু। একের পর এক হিট ছবি উপহার দিতে থাকে বলিউড ফিল্মডোমকে। ১৯৯৬ সালে ’রাজা হিন্দুস্তানি’ ছবিতে ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেন। এ ক্যাটাগরিতে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে আবারো পুরস্কৃত হন ২০০১ সালের নিজের প্রযোজনায় প্রথম ছবি ‘লগন’-এ অসাধারণ পারফরমেন্সের জন্যে। এ বছরই নবাগত পরিচালক ফারহান আকতারের ‘দিল চাহাতা হে’ ছবিতে আমির  খান তরুনদের বেশ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়।
৪ বছর বিরতি দিয়ে ২০০৫ সালে ‘মঙ্গল পান্ডে : দ্য রাইজিং’ ছবিতে অভিনয়ে আবারো ফিরেন। ২০০৬ সালে ‘ রাঙ দে বাসান্তি‘ ছবিতে তার অভিনয় তাকে এন দেয় ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডের সমালোচকদের বিচারে সেরা অভিনেতার পুরস্কারটি। এরপর তার পরিচালনার প্রথম ছবি ‘তারে জামিন পার’। এ ছবির জন্যে ফিল্মফেয়াওে সেরা পরিচালকের পুরস্কার পান তিনি। ২০০৮ সালে ‘ গাজিনি’ এবং ২০০৯ সালে ‘ থ্রি ইডিয়েট’ তাকে এনে দেয় আকাশচুম্বী সফলতা। ছবি দু`টি বলিউডে বক্স অফিসে তুমুল ব্যবসা করতে সক্ষম হয়।
জনপ্রিয়তা ও সফলতায় বার বার নমিনেটেড হওয়া সত্ত্বেও স্বীকৃতি নিতে কোনো অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি আমিরকে। কারণ একটাই অ্যাওয়ার্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার অভিমান। ক্যারিয়ারে যেমন পারফেক্ট তেমনি নিজের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখতেও বেশ হিসেব করে চলেন বলিউডের এ পারফেক্টশনিস্ট।
সফল এ সেলিব্রেটিকে ভারতের সরকার ২০০৩ সালে পদ্মশ্রী’ এবং ২০১০ সালে পদ্ম ভূষন’ উপাধিতে সন্মানিত করেন। এছাড়া ২০১০ সালে টরেন্টোর আর্ন্তজাতিক ফিল্ম ফ্যাষ্টিভালে তাকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়। ২০১১ সালে ৩০ নভেম্বর ইউসেফের শিশু পুষ্টিসাধন বিভাগের ব্র্যান্ড অ্যাম্বসেডর হন তিনি। ২০০৭ সালে লন্ডনের বিখ্যাত মাদাম ত্যুসোর জাদুঘরে তার মোমের মূর্তি বানানোর প্রস্তাব পেলেও তাতে অসম্মতি জানান তিনি।
ক্যারিয়ারের শুরুতেই ১৯৮৬ সালে ১৮ এপ্রিল বিয়ে করেন রীনা দত্তকে। জুনায়েদ ও ইরা নামে দুইটি সন্তানের জন্ম দেন তারা। কিন্তু ১৫ বছরের সংসার ভেঙ্গে যায় ২০০২ সালে ডিসেম্বরে। এরপর আমির ২০০৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর আবারো বিয়ে করেন লগন‘ ছবির সহকারী পরিচালক কিরন রাওকে। এরপর ২০১১ সালে ৫ ডিসেম্বর তারা একটি টেস্ট টিউব বেবির জন্ম দেন। নতুন ছেলেটির নাম রাখেন আজাদ রাও খান। ব্যক্তিজীবনে সম্পর্কে এতটা টানাপোড়ন থাকলেও অনস্ক্রিনে নায়িকাদের সঙ্গে ছিল আমির খানের হট সিজলিং ক্যামিষ্ট্রি। দুই দশকে বিভিন্ন নায়িকার সঙ্গে রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ পারয়েক্টশনিস্ট। মাধুরী দীক্ষিত, জুহি চাওলা, মনীষা কৈরালা থেকে শুরু করে বর্তমানের কারিনা কাপুর পর্যন্ত অনেক নায়িকার সঙ্গে তার রোমান্টিক ক্যামিস্ট্রির কথা এখনো মনে রেখেছেন ভক্তরা। চলুন দেখে আসি সেরা নায়িকার সঙ্গে আমিরের রোমান্টিক ক্যামিস্ট্রির কিছু কথা।
কারিনা : Aamir_Khan
প্রাণবন্ত কারিনা আর কলেজ ছাত্র আমিরের অভিনয় ‘থ্রি ইডিয়েট’ ছবিতে সেরা জুটির পরিচয় দেয়। এ ছবিতে ‘জুবি ডুবি’ গানে বৃষ্টির দৃশ্যে তাদের ক্যামিষ্ট্রি দর্শকরা ভীষনভাবে উপভোগ করে।
আসিন :
দক্ষিনী নায়িকা আসিন থোট্টুমকাল বলিউডে পা রাখেন আমিরের বিপরীতে ২০০৮ সালে ব্লকব্লাস্টার হিট ছবি ‘গজিনী’তে। আসিনের সরলতা আর আমিরের সুপারস্টার ব্যক্তিত্ব এ ছবিতে তাদের জুটিকে আরো জীবন্ত করে তোলে। রোমান্টিক এ জুটির ক্যামিস্ট্রি দেখা যায় এ ছবির ‘তু মেরি আধুরি’ গানটিতে।
কাজল :
দর্শকরা জানে রোমান্টিক জুটি হিসেবে শাহরুখ ও কাজলের বিকল্প নেই। তবুও ২০০৬ সালের ‘ফানা’ ছবিতে আমির ও কাজলের জুটি দর্শকদের সে ধারনাকে কিছুটা হলেও নড়িয়ে দিয়েছে। ইয়াশরাজের এ ছবিতে প্রথমবার জুটি হয়ে অভিনয় করেছেন তারা। কয়েকটি রোমান্টিক দৃশ্য আর একটি রোমান্টিক  গানে তাদের ঘনিষ্ঠতায় প্রমাণ পায় তাদের ক্যামিস্ট্রি।
প্রীতি জিনতা :
গালে টোল পরা সুন্দরী প্রীতি জিনতার সঙ্গে ২০০১ সালের ‘দিল চাহাতা হে’ ছবিতে আমিরের ক্যামিস্ট্রি ফুটে উঠে। সমকালীন সময়ের শহরের তরুণ তরুণীদের ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি হয়ে আমির ও প্রীতির রোমান্টিক জুটি হিসেবে এ ছবিতে দৃশ্যমান হন।
গ্রেসি সিং :
২০০১ সালে লগন’ ছবিতে আমিরের বিপরীতে প্রথমবারের মত অভিনয়ে পা রেখেছেন টিভি অভিনেত্রী গ্রেসি সিং। সরল গ্রাম্য মেয়ের ভূমিকায় গ্রেসি বলিউডে ততটা সাড়া জাগাতে না পারলেও আমিরের সঙ্গে তার রোমান্টিক ক্যামিস্ট্রি ভক্তদের মন মাতিয়েছে।
সোনালি বেন্দ্রে :
১৯৯৮ সালের ‘সারফারোশ’ জুটি সোনালি বেন্দ্রে ও আমির খান। সিরিয়াস ধর্মী এ ছবিতে ‘যো হাল দিলকা‘ গানে সোনালি ও আমিরের রোমান্টিক ক্যামিস্ট্রি তখন ঝড় তোলে ভক্তদের মনে।
রানী মূখার্জি :
১৯৯৮ সালে ’গোলাম’ ছবিতে রানী প্রথম অভিনয় করেন আমিরের বিপরীতে। এ ছবিতে রানী দর্শকের নজরে পরে। এ ছবির ‘ এ কেয়া বলতি তু’ গানে রানী ও আমিরের ক্যামিস্ট্রি ভক্তরা এখনো মনে রেখেছে।
কারিশমা কাপুর :
১৯৯৬ সালের ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ ছবিতে কারিশমা ও আমিরের জুটি সে সময় বলিউডের অন্য সব জুটিকে পেছনে ফেলে দেয়।
উর্মিলা মাটোন্ডকার :
১৯৯৫ সালের ‘রঙ্গিলা’ ছবিতে টাপুরে ছেলে আমিরের বিপরীতে অভিনয় করে উচ্চাভিলাষী উর্মিলা। দুই  ভালো বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেও তাদের জুটি বলিউডে দর্শকদের নজর কেড়েছে।
এক নজরে আমির খান
জন্ম : ১৯৬৫ সালে ১৪ মার্চ

জন্মস্থান : মুম্বাইয়ের বান্দ্রা
পুরো নাম: আমির হুসেইন খান
উচ্চতা: ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি
পেশা: অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক এবং লেখক।
ক্যারিয়ার : ১৯৭৩-১৯৭৪, ১৯৮৪, ১৯৮৮-২০০১, ২০০৫ বর্তমান পর্যন্ত
নিজের অভিনয়ের প্রথম ছবি : ইয়াদো কি বারাত (১৯৭৩)
নিজের লেখায় প্রথম ছবি : কেয়ামত সে কেয়ামত তাক (১৯৮৮)
নিজের প্রযোজনায় প্রথম ছবি : লগন (২০০১)
নিজের পরিচালনায় প্রথম ছবি : তারে জামিন পার (২০০৭)
বৈবাহিক সম্পর্ক : রীনা দত্ত (১৯৮৬-২০০২), কিরন রাও (২০০৫- বর্তমান)
সন্তান: একটি মেয়ে ইরা এবং দুইটি ছেলে জুনায়েদ ও আজাদ রাও খান (৩ টি)
প্রাপ্ত পুরস্কার :
১৯৮৮ সালের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত তক’ ও ‘রাখ’ ছবির জন্যে জাতীয় চলচ্চিত্রের বিশেষ জুরি বোর্ডের বিচারে নবাগত সেরা অভিনেতা পুরস্কার
১৯৯৬ সালে ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ ছবির জন্যে ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার
২০০১ সালের ‘লগন’ ছবির জন্যে ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতা পুরস্কার
২০০৬ সালের ‘রাঙ দে বাসান্তি’ ছবির জন্যে ফিল্মফেয়ার সমালোচক সেরা অভিনেতার পুরস্কার
২০০৭ সালের ‘তারে জামিন পার’ ছবির জন্যে ফিল্মফেয়ার সেরা পরিচালক পুরস্কার
শতরূপে শতবার মিমো
বিপুল হাসান
‘সুপার হিরোইন’ ক্রাউন বিজয়ী লামিয়া সিদ্দিকী মিমো। শোবিজে অভিষেকের পর দু’বছরে মুক্তি পেয়েছে মিমো অভিনীত দু`টি চলচ্চিত্র। অভিনয় করছেন আরো দুই চলচ্চিত্র। বড়পর্দায় ক্যারিয়ার গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে টিভিনাটকের অভিনয় নিয়েই তার বেশি ব্যস্ততা। সম্প্রতি বাংলানিউজ অফিসে এসেছিলেন মিমো। একান্তে কথা বলেছেন সাম্প্রতিক সময়ের পথচলাসহ নানা প্রসঙ্গে। সম্প্রতি মিমো সুপার হিরোইন খ্যাত ‘শতরূপে শতবার’ নামের একটি নতুন ছবিতে কাজ শুরু করেছেন। ছবিটি পরিচালনা করছেন মিনহাজ কিবরিয়া।  রাজধানীর মেডিনোভা ক্লিনিকে ছবিটির কিছু দৃশ্যের শুটিং করা হয়। এ ছবিতে মিমো প্রথমবারের মতো একজন মনো-চিকিৎসকের ভূমিকায় অভিনয় করছেন। প্রেম-ভালোবাসা-বিয়ে, অতঃপর ছোটখাট ভুল বোঝাবুঝি থেকে ক্রমশ দূরত্ব। দুই ভুবনে ছিটকে যাওয়া দু`টি মন। বিরহ ব্যথায় কাতর হৃদয় একসময় হারিয়ে ফেলে মানসিক ভারসাম্য। ঘটনাচক্রে আবারও ভালোবাসার বন্ধনে জড়ায় তারা। এভাবেই এগুতে থাকে মিমো অভিনীত ‘শতরূপে শতবার’ ছবিটির গল্প। এতে মিমোর বিপরীতে অভিনয় করছেন নবীন নায়ক আমান। ‘শতরূপে শতবার’ ছবিতে অভিনয় করা প্রসঙ্গে মিমো বলেন, এ চলচ্চিত্রটিতে কাজ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। কারণ গল্পে নতুনত্ব আছে। আগে দু`টি বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলাম। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল ভিন্নধরণের গল্পের ছবিতে ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্রে কাজ করার। এই ছবিটির মাধ্যমে আমার সেই ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে। আশা করছি, ছবিটি সবার ভালো লাগবে। সুপারহিরোইন বিজয়ী হওয়ার পর লামিয়া মিমো অভিনীত দু`টি ছবি ‘এক জবান’ ও ‘কিং খান’ মুক্তি পায় দুই ঈদে। দু`টি ছবির ব্যবসায়িক সাফল্য ছিল উল্লেখ করার মতোই। দুই ছবিতেই মিমোর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। নতুন ছবি ‘শতরূপে শতবার’ ছাড়াও মিমো কাজ করছেন মামুন খান পরিচালিত ‘নীলাঞ্জনা’ নামের আরো একটি ছবিতে। এতে তার বিপরীতে সুপার হিরো খ্যাত নিলয়। চলচ্চিত্রের কাজ নিয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে মিমো বাংলানিউজকে বললেন, দুই বছর আগে আমার চলচ্চিত্রে অভিষেক। দুই বছরে মুক্তি পেয়েছে আমার দু`টি ছবি। এই ছবি দু`টো ব্যবসা সফল। নতুন আরো দু`টি ছবিতে আমি অভিনয় করছি। সবমিলিয়ে চলচ্চিত্রের কাজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। আমি নিজে এখনও শেখার মধ্যে আছি। শেখার পাশাপাশি অভিনয় করছি। একজন শিক্ষানবীশ অভিনেত্রী হিসেবে যতটুকু কাজ করছি চলচ্চিত্রে, তা আমার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করি। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রত্যয় নিয়েই মিমোর শোবিজে আসেন। কিন্তু এ মুহূর্তে ছোটপর্দার নাটকে অভিনয় নিয়েই তার বেশি ব্যস্ততা। বর্তমানে এনটিভিতে প্রচার চলতি ‘বন্ধু আমার‘ ধারাবাহিকে তাকে দেখা যাচ্ছে নিলয়ের বিপরীতে। প্রচারের অপেক্ষায় থাকা আরো ৪টি নতুন ধারাবাহিকে তিনি অভিনয় করছেন। যার মধ্যে রয়েছে ‘ঘরের কথা পরের কথা’, ‘বাকি চাহিয়া লজ্জা দেবেন না’, ‘রাজধানী’ ও ‘ভুল সবই ভুল’। একপর্বের নাটকের মধ্যে সম্প্রতি মিমো সিনিয়র অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমের বিপরতে ‘কয়েকটি দুর্ঘটনা ও একটি নীল টেক্সিক্যাব’-এ অভিনয় করেছেন। এছাড়াও একপর্বের নাটকের মধ্যে ‘পরাণপাখি মোবাইল সেন্টার‘-এ মিমো অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরীর বিপরীতে এবং ‘ভালোবাসার ভুল’ নাটকে তাকে দেখা যাবে নিলয়ের বিপরীতে। মিমো জানালেন, আগামী ১৫ মার্চ তিনি রায়হান খান পরিচালিত এনটিভির একটি নাটকের শুটিংয়ে অংশ নিতে ব্যাংকক যাচ্ছেন। বড় পর্দায় কাজ করতে এসে ছোটপর্দায় ব্যস্ত হয়ে উঠা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিমো বললেন, চলচ্চিত্রে কাজ করার জন্যই আমি শোবিজে আসি। এটা ঠিক আছে। কিন্তু চলচ্চিত্র একটি বিরাট মাধ্যম। এই জায়গায় কাজ করার জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতির প্রয়োজন। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই আমি টিভি নাটকে অভিনয় করা শুরু করি। আমার অভিনয় দর্শকরা পছন্দ করছেন বলেই একের পর এক নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব পাচ্ছি। অভিনয় শেখার জন্যই মূলত আমি টিভি নাটকে অভিনয় করছি। টিভিনাটকে কাজ করলে চলচ্চিত্র তারকাদের ‘ফিল্ম-ভ্যালু’ কমে যায়। এ বিষয়ে মিমোও একমত। তিনি বলেন, বড় পর্দায় দর্শক টিকিট কেটে প্রস্তুতি নিয়ে ছবি দেখতে যান। কিন্তু ঘরোয়া মাধ্যম টিভিতে নানাকাজের ফাঁকে নাটক দেখেন। স্বাভাবিকভাবেই দুই জায়গায় দর্শকদের প্রত্যাশা দু`রকম। যে তারকাকে প্রতিদিনই দর্শক ঘরে বসে বিনে পয়সায় দেখতে পাচ্ছেন, সেই তারকাকেই পয়সা খরচ করে সিনেমা হলে দেখতে অনেক দর্শকই আগ্রহ হারান। আমি এখনও শেখার মধ্যে আছি। তাই চলচ্চিত্রের পাশাপাশি টিভিনাটকে অভিনয় করছি। এটাকে আমার কমার্শিয়াল ফিল্মে পুরোপুরি মনোনিবেশের প্রস্তুতি বলতে পারেন। চলচ্চিত্রে পুরোপুরি অভিনয় শুরু করলে হয়তো আমাকে টিভিনাটকে আর নাও দেখা যেতে পারে। মিমোর ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে একটু ভেবে নিলেন তিনি। বললেন, আমরা এই প্রজন্মে যারা চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেছি তাদের কাছে আইডল হলেন কবরী-ববিতা বা শাবানা ম্যাডাম। আমি আমার কাজ দিয়ে নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম আমাকে আইডল মনে করে।
এক দশক পেরিয়ে কুসুম সিকদার
বিনোদন প্রতিবেদক
শুটিং চলছিল ফ্রান্সের প্যারিসে। ইমোশনাল সিকোয়েন্স । নায়িকার করুণ অভিব্যক্তি। চোখের কোন থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরবে জল। কিন্তু কই! চোখ ছলছল হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কই চোখের পানি বের হচ্ছে না। একবার, দুবার, তিনবার ক্যামেরা অন করা হল। এক ফোঁটা পানিও তো চোখ থেকে বের হয় না। হঠাৎ পরিচালক হো হো করে হেসে উঠলেন। ঘটনা কী! প্যারিসে তখন তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি। চোখের কোনায় পানি জমে যাচ্ছে। হাসির রোল উঠল ইউনিটে। ছবির নাম ‘লাল টিপ’। নায়িকা কুসম সিকদার। স্বপন আহমেদ পরিচালিত ‘লাল টিপ’ ছবিটির শুটিংয়ে ঘটেছে এমনই অনেক রোমাঞ্চকর ঘটনা। ছবিটিকে ভালো করে তুলতে কুশীলব আর কলাকুশলীদের ছিল আন্তরিক প্রচেষ্টা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের ২৬টি প্রেক্ষাগৃহে একযোগে মুক্তি পাওয়া ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এই ছবিটির ব্যবসায়িক ফলাফল একেবারে মন্দ নয়। আগামী ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন ‘লাল টিপ’ মুক্তি দেওয়া হবে ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে। বাংলানিউজকে সম্প্রতি কুসুম সিকদার জানিয়েছেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক সিনেমা হলে তিনি ‘লাল টিপ’ ছবিটি দর্শকদের সঙ্গে দেখেছেন কারণ দর্শকদের সরাসরি রেসপন্স পাওয়ার আনন্দই অন্য রকম।  দর্শকদের প্রতিক্রিয়ায় কুসুম মুগ্ধ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজটা আমরা সবাই খুব মনোযোগের সঙ্গে করেছি। তাই প্রত্যাশা ছিল দর্শক ছবিটি ভালোভাবেই নেবেন। মুক্তি পাওয়ার পর দর্শকদের সাড়া আমাকে অভিভূত করেছে। আমার প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে ‘লাল টিপ’। ‘লাল টিপ’-এর পর্দায় নিজের উপস্থিতি সম্পর্কে কুসুম বললেন, আমি সবসময় মেকআপ ছাড়াই অভিনয় করার চেষ্টা করি। আমার মনে হয় মেকআপ না নিলেই স্ক্রিনে আমাকে বেশি ভালো লাগে। এ ছবিতেও শুধু চোখে কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছি। প্যারিসে শুটিংয়ের সময় আমাদের পরনের পোশাকগুলোর ডিজাইন করেছিলেন ফরাসি ডিজাইনার হিলারি এন্ডুজার। আর বাংলাদেশে শুটিং ও গানের দৃশ্যের শুটিংয়ের পোশাকগুলোর ডিজাইন করেছি আমি নিজেই। নায়ক ইমনের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে কুসুম সিকদার বললেন, ইমনের সঙ্গে চলচ্চিত্রে এটি আমার দ্বিতীয় কাজ। এর আগে ওর সঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয় করেছি। কাজেই আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল আগে থেকেই। যখন শুনেছিলাম, এই ছবিতে ইমন কাজ করছে, তখন বেশ স্বস্তি পেয়েছিলাম। কারণ অস্বস্তি নিয়ে ভালো কাজ করা যায় না। ইমনের সেরা গুণ হল তার ধৈর্য্য। সহশিল্পীর সুবিধা-অসুবিধার প্রতিও তার বেশ নজর। খালিদ মাহমুদ মিঠু পরিচালিত ‘গহীনে শব্দ’ ছবিটি ছিল কুসুম সিকদার অভিনীত প্রথম ছবি। সম্প্রতি এ ছবিটি ২০১০ সালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। খালিদ মাহমুদ মিঠুও নির্বাচিত হয়েছেন শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে। ছবিটির এই সাফল্যে দারুণ আনন্দিত কুসুম সিকদার। কুসুম সিকদার মনে করেন, ছবিটির এই সাফল্যে তিনিও ভাগিদার। তার অভিনয়জীবনে ‘গহীনে শব্দ’ দান করেছে ভিন্নমাত্রা । যাঁরা এই চলচ্চিত্র দেখেছেন, সবাই কুসুম সিকদারের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। আগামীতে চলচ্চিত্রে নিয়মিত দেখা যাবে কিনা জানতে চাইলে কুসুম বললেন, বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে আর কাজ করব কি না, এই প্রশ্ন অনেকেরই। উত্তরে আমি বলি, কাজের পরিবেশ স্বস্তিদায়ক হলে অবশ্যই চলচ্চিত্রে কাজ করব। তবে সবার আগে ছবির গল্পটা আর চরিত্রটি আমার পছন্দ হতে হবে।
কুসুমকে সবাই অভিনেত্রী হিসেবে চিনলেও মিডিয়ায় এসেছিলেন গায়িকা হিসেবে। কয়েকটি স্টেজপ্রোগ্রামে গান গাওয়ার পর পত্রিকায় তার ইন্টারভিউ বের হয়। পত্রিকায় ছাপা হওয়া কুসুমের ছবি দেখে বন্ধুরা তো মুগ্ধ। তাদের উৎসাহেই ২০০২ সালের লাক্স-আনন্দধারা মিস ফটোজেনিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সবাইকে ডিঙিয়ে এতে প্রথম হওয়ায় চমকে যান নিজেই। সেখান থেকেই শুরু হয় তার নতুনভাবে পথচলা। অবশ্য অভিনয়ে নিয়মিত হন ২০০৬ সাল থেকে। এ প্রসঙ্গে কুসুম সিকদার বলেন, মিস ফটোজেনিক খেতাব জয়ের সময় আমি ছিলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ’র ছাত্রী। সে সময় পড়ালেখার প্রতিই আমার বেশি মনোযোগ দিতে হয়েছে। কারণ পরিবার থেকে বলেছিল, সবার আগে লেখাপড়া। তারপর অন্য কিছু। আমি নিজেও লেখাপড়াকে প্রাধান্য দিতে চেয়েছি। তখন অনেক ভালো কাজের প্রস্তাব পেয়েছি। চলচ্চিত্রে অভিনয়েরও প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু করতে পারিনি। বিবিএ শেষ করে নিয়মিতভাবে কাজ শুরু করি।
বর্তমানে কুসুম সিকদার তৃতীয় ছবিতে অভিনয়ের জন্য অপেক্ষায় আছেন। তবে বসে নেই তিনি মোটেও। ব্যস্ত সময় পার করছেন টিভিনাটকে অভিনয় নিয়ে। যার মধ্যে রয়েছে ধারাবাহিক নাটক ‘দেয়াল’ ও ‘বোয়িং ৭০৭’। মিডিয়ায় পথচলার এক দশক পূর্ণ করে এগিয়ে চলেছেন কুসুম সিকদার। এ লম্বা সময় কাজ করে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সবসময় পারিবারিক সহযোগিতাকে বড় বলে মনে করেন। এ প্রসঙ্গে কুসুম বললেন, এই দীর্ঘ পথচলা সম্ভব হয়েছে আমার স্বামী ও শাশুড়ির জন্য। নানাভাবে তারা আমাকে সমর্থন ও অনুপ্রাণিত করেছেন। বিয়ের আগে যা পেয়েছিলাম মা-বাবার কাছ থেকে। 
একনজরে কুসুম
kusum_পুরো নাম : কুসুম সিকদার
উচ্চতা : ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি
ওজন : ৪৮ কেজি
জন্ম তারিখ : ১২ এপ্রিল
রাশি : মেষ
প্রথম মডেলিং : সিমেন্স
টার্নিং পয়েন্ট : লাক্স-আনন্দধারা মিস ফটোজেনিক প্রতিযোগিতা ২০০২
প্রথম চলচ্চিত্র : গহীনে শব্দ
পছন্দের কাজ : লাল টিপ
প্রিয় ব্যক্তিত্ব : মা
প্রিয় রঙ : সাদা-কালো
প্রিয় খাবার : নুডুলস ও পিৎজা
প্রিয় অভিনেতা : অনেক
প্রিয় অভিনেত্রী : কেট উইন্সলেট
উড়ছেন পড়শী
বিনোদন প্রতিবেদক
আমাদের গানের ভুবনে এই সময়ের ক্রেজ পড়শী। এবারের ভালোবাসা দিবসে পড়শীর দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘পড়শী-২’ বের হয়েছিল। অ্যালবামটি এবারও ব্যবসায়িক সাফল্যের মুখ দেখেছে। স্টেজ প্রোগ্রামেও বেড়ে গেছে তার চাহিদা। প্লে-ব্যাকে তিনি সমান ব্যস্ত। সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে পড়শী উড়ছেন। ক্ষুদে গানরাজ ইভেন্ট থেকে বেরিয়ে আসা টিনেজার শিল্পী পড়শীর প্রথম অ্যালবাম ‘পড়শী’ বের হয়েছিল ২০১০ সালে। ওই বছরের সবচেয়ে ব্যবসা সফল অ্যালবাম ছিল এটি। প্রথম অ্যালবামের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় পর পর কয়েকটি মিক্সড অ্যালবামেও পড়শীর গান  লুফে নেয় শ্রোতারা। সিনেমাতেও একের পর এক প্লে­ব্যাকের ডাক পেতে থাকেন পড়শী। এরই মধ্যে প্রায় ২০টি ছবির প্লেব্যাকে কণ্ঠ দিয়ে নিজের সাফল্যের ধারা বজায় রেখেছেন এই শিল্পী। স্টেজ প্রোগ্রামেও এখন গড়ে উঠেছে পড়শীর আলাদা চাহিদা। গত দু বছর স্টেজ প্রোগ্রাম ঘিরেই ছিল পড়শীর বেশি ব্যস্ততা। দুবছর বিরতির পর চলতি বছরের ভালোবাসা দিবসে বের হয় পড়শীর দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘পড়শী-২’। তার এই অ্যালবামে রয়েছে মোট ১০টি আধুনিক বাংলা গান। এ অ্যালবামের গানগুলোর সুর সঙ্গীতায়োজন করেছেন আরফিন রুমী, সন্ধি, জুয়েল মোর্শেদ, ইবরার টিপু, সাজিদ ও বাপ্পা মজুমদার। গানের কথা লিখেছেন  জুয়েল মোর্শেদ,সাজিদ, ইবরার টিপু, সুন্ধি, জীবন, জাহিদ আকবর, রাশেদ ওনীল এবং মিথীলা ইবরার। অ্যালবামটির দুটি গানে পড়শীর সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন জুয়েল মোর্শেদ ও আরফিন রুমী।  অগ্নিবীণার ব্যানারে বের হওয়া ‘পড়শী-২’ অ্যালবামটির বাজার কাটতি উল্লেখ করার মতোই। পড়শী এবার গান নিয়ে সরাসরি হাজির হচ্ছেন দর্শকদের সামনে। আরটিভির সাপ্তাহিক ফনোমিউজিক্যাল অনুষ্ঠান ‘ঘরে ঘরে উৎসব’-এ গান পরিবেশন করবেন তিনি। দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের পাশাপাশি তাদের শোনাবেন অনুরোধের গান। এই লাইভ অনুষ্ঠান সম্পর্কে পড়শী বাংলানিউজকে বলেন,লাইভ অনুষ্ঠানে আমি বরাবরই আনন্দ পাই। কারন লাইভে দর্শকদের বেশি সাড়া পাওয়া যায়। অনুষ্ঠানে আমি আমার জনপ্রিয় গানগুলো গাইবো। গানের পাশাপাশি কথা বলবো আমার সঙ্গীত জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, জানা অজানা তথ্য ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে। নিজের দ্বিতীয় অ্যালবামের সাফল্য প্রসঙ্গে পড়শীর মন্তব্য হলো, আমি সত্যিই অভিভূত দর্শক-শ্রোতারা আমার দ্বিতীয় অ্যালবামটিও সাদরে গ্রহণ করায়। তাদের ভালোবাসাই হলো আমার জন্য ভালো গান করার অনুপ্রেরণা। আরটিভির ফনোমিউজিক্যাল অনুষ্ঠান ‘ঘরে ঘরে উৎসব’-এ গান ও কথা নিয়ে পড়শী উপস্থিত হবেন আগামী ১৪ মার্চ রাত রাত ১২টা ০৫ মিনিটে। অনুষ্ঠানটি সরাসরি  সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।
১০ বছর পর ‘অজানায়’ গায়িকা ঝুমু খান
প্রীতি ওয়ারেছা
আমাদের সংগীতাঙ্গনের প্রতিভাময় গায়িকা ঝুমু খান। একটা সময় নিয়মিত তাকে অডিও-স্টেজ ও প্লেব্যাকে খুঁজে পাওয়া গেলেও দীর্ঘদিন অজানায় ছিলেন এই গায়িকা। প্রায় ১০ বছর পর আবার তিনি হাজির হয়েছেন নতুন একক অ্যালবাম নিয়ে। ঝুমু খানের নতুন এই অ্যালবামের নাম ‘অজানায়’।
গানটা ঝুমু খানের কাছে সবসময়ই ছিল ভীষণ শখের একটা জায়গা। শখের গানই একসময় তাকে শ্রোতাদের কাছে করে তোলে সুপরিচিত। কিন্তু পেশাগত ও পারিবারিক ব্যস্ততার কারণে প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছিল তার এই সঙ্গীত-সত্ত্বা। সংগীত থেকে দীর্ঘদিন অজানায় থাকার পর যে অ্যালবামটি নিয়ে ঝুমু খান আবার ফিরে এলেন তার নাম ‘অজানায়’। ‘অজানায়’ শিরোনামের এই অ্যালবামটিতে রয়েছে মোট ৯টা গান। গানের কথা লিখেছেন আহমেদ সাদ্ রিজভী আর সংগীতায়োজন করেছেন পৃত্থিরাজ। কয়েকটা গানে শিল্পীর সঙ্গে কন্ঠও দিয়েছেন রিজভী ও পৃত্থিরাজ। অ্যালবামটি ক্লাসিক্যাল এবং মডার্ন এই দুই ধারার গানের মিশ্রনে সাজানো হয়েছে। অ্যালবামটির সফট মেলোডিয়াস এবং বাণীপ্রধান গানগুলো শ্রোতাদের ভেতর আলাদা আবেদন তৈরি করতে পারবে বলে মনে করেন ঝুমু খান। ঝুমু খানের সঙ্গে সম্প্রতি বাংলানিউজের কথা হয় বিভিন্ন প্রসঙ্গে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কারো পেশাগত ধারাবাহিকতা খেয়াল করলে আমরা সহজেই একটি বিষয় অনুধাবন করতে পারি সেটি হল পারিবারিক ঐতিহ্যকে চাইলেই এড়িয়ে যেতে পারে না কেউ। প্রসঙ্গ টেনে জিজ্ঞাসা করলাম তার কাছে জানতে চাওয়া হল, আপনার বাবা একেএম জাহাঙ্গীর খান একজন চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং নিজে যথেষ্ট গ্যামারাস হওয়ার পরেও চলচ্চিত্রকে কেন প্রফেশন হিসেবে নিলেন না? মনে হল, এই প্রথম শুনলেন এ ধরণের কথা। উত্তর না দিয়ে উল্টো বরং তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ওমা কেন? অর্থাৎ তিনি ঘুনাক্ষরেও নিজেকে নিয়ে এই অসম্ভব কল্পনা করেননি। শিল্পী ঝুমু খান এখন পুরোদস্তুর একজন চিকিৎসক এবং একজন সফল উদ্যোক্তা। লেজারের মত অ্যাডভান্স টেকনোলজি তিনি দেশে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। প্রফেশনাল পর্যায়ে নিজেকে উচ্চতর অবস্থানে নিয়ে যেতে পেরেছেন। এ পর্যন্ত ঝুমু খানের ৫টি সোলো ও ১৬টা মিক্স অ্যালবাম বেরিয়েছে। ১০ বছর পর শ্রোতাদের নতুন অ্যালবাম উপহার দেওয়ার মাধ্যমে ঝুমু খানের ফিরে আসাকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের সঙ্গীতপ্রেমীরা।
আবার আইটেমে সালমান-মালাইকা
অনন্যা আশরাফ
বলিউড ফিল্ম ভক্তদের জন্যে সুখবর। বলিউড বডিগার্ড সালমান খানের ‘দাবাঙ-২‘ ছবিতে ভক্তদের জন্যে থাকছে ডাবল মজা। এ ছবিতে বেভো কারিনা কাপুর একটি আইটেম গানে নাচবেন, এতো জানা সবারই। কিন্তু ‘দাবাঙ’ ছবিতে ‘মুন্নি’ জুটি মালাইকা ও সালমানের নাচের স্বাদটা কারিনার আইটেম গানে মিটতো না। তাই এ ছবিতে আরেকটি আইটেম গানে একসঙ্গে নাচবেন বলিউডের দেবর ভাবী জুটি মালাইকা ও সালমান। সালমান তার ‘দাবাঙ ২‘ ছবির সফলতায় কোন কমতি রাখতে চান না। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ‘পান্ডে জি মারে সেটি’ টাইটেলের আইটেম গানে নাচার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সালমান ও মালাইকা। এ আইটেম গানটি ‘মুন্নি বাদনাম’ গানের চেয়ে আরো বেশি মজাদার করে বানানো হচ্ছে। সালমান খানের ‘দাবাঙ’ ছবিটি বক্স অফিসে তুমুল ব্যবসা করে রেকর্ড করতে সক্ষম হয়।  এরপর ভক্তরা অপেক্ষায় থাকে ’দাবাঙ’ ছবির সিকুয়েল ‘দাবাঙ ২’ এর জন্যে। দর্শকদের প্রত্যাশা পূরনে সালমান ‘দাবাঙ ২’ ছবিতে দর্শক মনোরঞ্জনের কোন বিষয়ে ঘাটতি না রাখতে বেশি মনোযোগী হয়েছেন। তাই ভক্তদের প্রিয় ‘মুন্নি’ মালাইকাকে নিয়ে একটি আইটেম গান আর কারিনাকে নিয়ে আরেকটি আইটেম গানের ডাবল মজা ভক্তদের উপহার দিচ্ছেন সালমান খান।
ক্যাটরিনা ১ কোটি রুপি নিচ্ছেন না
অনন্যা আশরাফ
ভারতের কোচিন-এ ২৫ মার্চ একটি ফ্যাশন শোর র‌্যাম্পে ১০ মিনিটে হাঁটার বিনিময়ে বলিউড অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ ১ কোটি রুপি দাবি করেন বলে গেল সপ্তাহে এক খবর শোনা যায়। ।  বিষয়টি প্রকাশের পর সমালোচকদের নানা মন্তব্যের মুখে অবশেষে সত্যতা জানালেন ক্যাটরিনার এক ঘনিষ্ঠ সূত্র।
ভারতের ডিএনএ পত্রিকার রিপোর্টে ক্যাটরিনার এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, প্রকাশিত খবরটি মোটেও সত্যি নয়। শাহরুখের সঙ্গে নতুন ‘লন্ডন ইশক’ ছবির শুটিংয়ে এখন লন্ডনে আছেন ক্যাটরিনা। শুটিংয়ের কাজে ভীষণ ব্যস্ত তিনি। ব্যস্ত সিডিউল পাল্টে একদিনের জন্যে সময় বের করারও কোনো সুযোগ নেই ক্যাটরিনার। তিনি আরো জানিয়েছেন, ব্যস্ত ক্যাটরিনা কোচিনে ফ্যাশন শোর র‌্যাম্পে অংশ গ্রহণের জন্যে বিষয়টি চূড়ান্ত করেননি। তাই যে গুজব রটেছে- তা পুরোটাই ভিত্তিহীন। এমন কিছু হলে অবশ্যই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে জানাতেন। ক্যাটরিনা সব সময়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পান। সেখানে পারফর্ম করার জন্যে মোটা অঙ্কের অর্থ প্রস্তাবও করা হয় তাকে। কিন্তু ক্যাটরিনা নিজের অবস্থান কখনোই ভুলে যান না। নিজের সম্মান ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারনেই তিনি সব সময় এসব থেকে দূরে থেকেছেন। শুটিংয়ের ফাঁকে যখনই সময় পান তখনই লন্ডনে তার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি। লন্ডনে তার ‘লন্ডন ইশক’ ছবির কাজ শেষ করে চুক্তিবদ্ধ হওয়া নতুন ছবিগুলোর জন্যে নিজেকে  প্রস্তুত করতেই তিনি এখন বেশি মনোযোগী । তাই ক্যাটরিনা নিজেও খুব বিব্রত হয়েছেন এমন একটি খবরে। তবে কি এমন খবর রটিয়ে ফ্যাশন হাউজগুলো বাড়তি কোনো সুবিধার ফাঁক খুঁজছেন ? তাই সে প্রশ্ন তো থেকে যায় সমালোচকদের মনে।
মে’র শেষে মা হবেন শিল্পা
অনন্যা আশরাফ
বলিউড সেলিব্রেটিদের সন্তান জন্মের ধুমে এবার লাইনে আছেন বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেঠী। গর্ভধারণের সাত মাস পেরিয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ করার আর কয়েকটা দিন বাকি। ব্যবসায়ী স্বামী রাজ কুন্দ্রার সঙ্গে বিয়ের পর এবারই প্রথম সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন শিল্পা। চলহি বছর মে মাসের শেষ দিকে তাদের সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে বলে জানিয়েছেন স্বামী রাজ কুন্দ্রা। সম্প্রতি মিডিয়ার কাছে  শিল্পার স্বামী রাজ কুন্দ্রা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শিল্পা এখন সাত মাসের গর্ভবতী। সে এখন অনেকটা সুস্থ। গর্ভধারণের সাত মাসে তার সৌন্দর্য যেন আরো বেড়ে গেছে। মে মাসের শেষে সন্তানের মুখ দেখতে পাবো আশা করছি।’ এছাড়াও শিল্পা কিছুদিন আগে জানিয়েছেন, প্রথম সন্তান জন্ম দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু একটি সন্তানেই মন ভরছে না তার। এ সন্তান পৃথিবীর আলো দেখতেই দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের প্রস্তুতি নিবেন তারা। বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা ও ব্যবসায়ী রাজ কুন্দ্রা ২০০৯ সালে ২২ নভেম্বর বিয়ে করেন। শিল্পার গর্ভবতী হওয়ার খবরটি নিশ্চিত করেন ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। প্রথম সন্তান জন্মের অপেক্ষায় ভীষণ খুশি তারা। সাত মাস গর্ভবতী শিল্পা এখন সব পার্টিতেই উপস্থিত থাকেন। এমনকি শোনা গেছে, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে নিজ দল ‘রাজস্থান রয়ালস’কে অনুপ্রেরণা দিতে খেলার মাঠেও তিনি উপস্থিত হবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন