Year-18 # Issue-46 # 1 January 2012

ঘটনাবহুল ২০১১ সালের হালচাল
অরুণ ব্যানার্জী
সময়ের ঘর্ঘরিত রথযাত্রায় শেষ হতে চলেছে ২০১১ সাল। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা অতিবাহিত হওয়ার পর শুরু হবে ২০১২ সালের দিনপঞ্জি। চলতি বছর আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে অনেক ঘটনার সমাহারে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিছু কিছু ঘটনা নিউজের শিরোনাম হয়েছে। দাগ কেটেছে জনমনে। এ নিয়ে পাঠক মনে চলবে অনেক বাদানুবাদ। চলতি বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী গবেষকদের কাছে ইতিহাসের উপাদান হয়ে থাকবে। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের কাছে ২০১১ সৃষ্টি করবে নতুনতর ব্যঞ্জনা। আশা-নিরাশার দোলাচলে হিসেব নিকেশ করবে অনুসন্ধানী মানুষ। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যে খুঁজবে আগামী দিনে এগিয়ে চলার  প্রেরণা।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে চলতি বছর সরগরম রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোজাহিদ, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী ও বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমের বিচার চলছে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। চলছে ‘অঘটন ঘটন পটীয়সী’ গোলাম আযম, মীর কাসেম আলীসহ আরো কিছু যুদ্ধাপরাধীর গ্রেফতারের প্রক্রিয়া। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের শ্লথ গতি মেনে নিতে পারছেন না সচেতন মানুষ। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার জন্য রোডমার্চের নামে পালন করেছেন জামায়াতের আমিরের ভূমিকা। মহাজোট সরকার চাচ্ছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে স্বাধীনতার চেতনাকে সমুন্নত রাখতে। পান্তরে, ৪ দলীয় জোট যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এভাবে তারা দেশটাকে ‘মিনি পাকিস্তান’ বানাতে চায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে চলতি বছরের উল্লেখযোগ্য সময় আলোড়িত হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গন। একটি রিটের প্রেেিত বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট রায় দিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অরাজনৈতিক পদ্ধতি। তবে আগামী ‘দুই টার্ম’ পর্যন্ত এ ব্যবস্থা চালু রাখা যেতে পারে। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আন্তঃ সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানান। রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য মতাসীন ও বিরোধী দলসমূহকে আলোচনায় বসতে আহ্বান জানান। প্রথমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে স্বাগত জানান। পরে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি সম্মতি না দিলে বিএনপি রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে সাড়া দেবে না। সর্বশেষ তিনি রাষ্ট্রপতির এ উদ্যোগ সংবিধানের এখতিয়ারবহির্ভূত বলে দাবি করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সরকারের ভূমিকা যেমন বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আদেশের পরিপন্থী; অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভূমিকাও তেমনি পরস্পরবিরোধী। জনগণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচনের জন্য চায় উৎকৃষ্ট পদ্ধতি। আদালত কর্তৃক গত বছর ৫ম ও ৭ম সংশোধনী অবৈধ ও অকার্যকর ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু তার পরেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ বহাল রেখেছে সংবিধানে। এতে দেশের প্রগতিশীল, গণতন্ত্রমনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষকে হতাশ করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নির্বাচনী ইস্তেহার দিয়ে দেশের সচেতন মানুষ ও তরুণ প্রজš§কে আকৃষ্ট করেছিল মহাজোট সরকার। ইতোমধ্যে শিা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকিং সেক্টর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,  এনজিও, সরকারি অফিস ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে কম্পিউটারসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। দেশের সব ক’টি ইউনিয়নে শুরু হয়েছে ‘ইসেফ’-এর ব্যবহারিক কর্মকাণ্ড। তবে মানুষ কম্পিউটারের ব্যবহার আরো সুগম ও সহজলভ্য হোক এটা চায়। গত ২১ ডিসেম্বর খুলনায় দেশের প্রথম আইটি ভিলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে। এটা সরকারের ইতিবাচক দিক। কৃষি ও শিা খাতে সরকারের ঈর্ষণীয় সফলতা রয়েছে। কিন্তু সারের কিঞ্চিত মূল্যবৃদ্ধি ও পাঠ্যসূচিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে দায়সারা গোছের ভাব সরকারের ভূমিকাকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। স্বাস্থ্যসেবার মান বেড়েছে। শেয়ারবাজারে ধস ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মধ্যবিত্ত এবং নির্ধারিত আয়ের মানুষকে হতাশাগ্রস্ত করেছে। সরকার শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতা ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারায় চলতি বছরে জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলে বরাদ্দ বন্ধ করায় দেশের সুনাম দারুণভাবে ুণœ করেছে। সরকার যোগাযোগমন্ত্রীর দফতর বদল করলেও তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি না দেয়ায় জনমনে প্রশ্নের শেষ নেই। চলতি বছর ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে রবীন্দ্র জš§ সার্ধশত বর্ষ উদ্যাপিত হয়েছে ঢাকায় ও দিল্লিতে। ঢাকার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারী। দিল্লির অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বিমান বাহিনীপ্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খোন্দকার। উভয় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভারতের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থেকে সমৃদ্ধ করেছেন অনুষ্ঠানের দিনগুলোকে। ঢাকায় তিন দিনব্যাপী কবিতা উৎসবের উদ্বোধন হয় ১ ফেব্র“য়ারি। এবার এসেছেন নেপাল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ত্রিপুরার কবি রাতুল দেব বর্মণ। আসামের কবি সুকুমার বাগচী, মেঘালয়ের কবি নাংকিনরিসহ এসেছিলেন ২২ জন কবি। বৃহৎ এ আয়োজনে প্রতিদিনই স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, একুশের গান, কবিতা, সেমিনার ও বিভিন্ন প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ‘অন্য ভাষার কবিতা’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ অধিবেশন। ২০১১ সালে এসব ঘটনা সংস্কৃতি প্রিয়দের দারুণভাবে উজ্জীবিত করে। ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় শেখ হাসিনা ও ড. মনমোহন সিংয়ের শীর্ষ বৈঠক। এতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক-সাংস্কৃতিক সমঝোতা স্মারক স্বারিত হয়। এতে দ্বিপাকি সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়। কিন্তু তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ মুহূর্তে ঢাকায় না আসায় স্বারিত হয়নি তিস্তার পানি চুক্তি। স্বার হয়নি ট্রানজিট চুক্তি। এতে বাংলাদেশের কূটনীতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি চুক্তি ও ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তি করা সম্ভব হবে বলে রাজনৈতিক মহল আশা করে।
বাংলাদেশের এভারেস্ট বিজয়ী পর্বতারোহী মুসা ইব্রাহীম চলতি বছর জয় করলেন আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট কিলিমানজারো। নর্থ আলপাইন কাব বাংলাদেশের (এনএসিবি) এই অভিযানে মুসার সঙ্গে পর্বতচূড়া জয় করেন নিয়াজ মোর্শেদ পাটোয়ারী ও ওয়াসফিকা নাজরিন। তারা কিলিমানজারো বিজয়ের মাধ্যমে সেভেন সামিট এর দ্বিতীয় ধাপ অতিক্রম করেন। বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা ১০ম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজন ও ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ১৭ ফেব্র“য়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক তার সফল উদ্বোধন। নারায়ণগঞ্জে প্রথমবারের মতো সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী শাসক দল আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়েও বিপুল ভোটাধিক্যে বিজয়ী হওয়াও চলতি বছরের আলোচিত ঘটনা। চলতি বছর নারী নির্যাতন, যৌতুক, এসিড সন্ত্রাসের মাত্রা কমেনি। চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক রুমানা মনজুরের ওপর তার পাষণ্ড স্বামী কর্তৃক পৈশাচিক নির্যাতনে সামাজিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ২০১১ সালে নারী নীতি অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু আইন আকারে পাস হয়নি। তবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশুদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে জাতীয় শিানীতি ২০১১ সংসদে আইন আকারে পাস হয়েছে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে সরকারি চাকরির মেয়াদ বাড়ল দুই বছর। ৬১ জেলায় নিয়োগ করা হয়েছে জেলা পরিষদের প্রশাসক।
চলতি বছর বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে দেশ ও জাতি হারিয়েছে জাতীয় অধ্যাপক বরেণ্য বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক কবীর চৌধুরী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সফল সেক্রেটারি জননেতা আব্দুর রাজ্জাককে। যুদ্ধাপরাধী বিরোধী আন্দোলনে তাদের ভূমিকা পূরণ হওয়ার নয়। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্যে প্রভাব ফেলেছে। কনকনে ঠাণ্ডায় জবুথবু দেশ। বাড়ছে প্রচণ্ড শীতে মৃত্যুর সংখ্যা। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দুই ভাগে বিভক্তি ও প্রশাসক হিসেবে সরকারি নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজে। চলতি বছরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঘটেছে অনেক ঘটনা। যা স্বল্প পরিসরে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তš§ধ্যে ২০১১ সালের মধ্যপ্রাচ্য আফ্রিকার দেশ মিসর, তিউনেসিয়া, লিবিয়ায় সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন ও মতাচ্যুতি বছরের আলোচিত ঘটনা। সুদান নামক দেশটি বিভক্ত হয়ে দণি সুদান নামে আÍপ্রকাশ করেছে ২০১১ সালে। মার্কিন কোম্পানিগুলো তেল সম্পদ লুণ্ঠনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে উপরোক্ত দেশগুলোতে। ইসরাইলের সহযোগিতায় আমেরিকা ইরান ও সিরিয়াকে জব্দ করার প্রয়াসে শুরু করেছে নানারকম তৎপরতা। যার বহির্প্রকাশ হয়ত ঘটবে ২০১২ সালে। পাকিস্তানের এ্যাবটোবাদ ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় শীর্ষ আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন বাহিনী কর্তৃক নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফীকে। গত ২৬ নভেম্বর আফগান সীমান্ত এলাকায় মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হয় ২৪ পাকিস্তানি। যুক্তরাষ্ট্র তদন্ত প্রতিবেদনে বিয়োগান্তক প্রাণহানির জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ ও নিহতদের পরিবারকে তিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু উক্ত প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। চলতি বছরে পাক-মার্কিন সম্পর্কে চলছে টানাপোড়েন। চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্র জনসংখ্যা বৃদ্ধি ৬৫ বছরের মধ্যে সর্বনিু। এ বছর আমেরিকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৭ শতাংশ। ১৯৪৫ সালে ছিল ০.৩ শতাংশ। গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছেন মাত্র ৭  লাখ ৩ হাজার মানুষ। সংখ্যার দিক দিয়ে ১৯৯১ সালের পর এ অভিবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে কম। উল্লেখ্য, ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিশ বছরে প্রতি বছরই ১০ লাখের বেশি অভিবাসন ভিসায় যুক্তরাষ্ট্র এসেছে। ইরাক ধ্বংস করে সৈন্য অপসারণ করল আমেরিকা। ২০০৩ সালে মার্চ মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  সে দেশে মানবতা বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে এই অজুহাতে হামলা চালায়। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে ১ লাখ ২৬ হাজার ইরাকী বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। প্রাণ হারিয়েছে ২০ হাজার ইরাকী সৈন্য ও পুলিশ সদস্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪ হাজার ৪৭৪ জন সেনা সদস্য ও ১৭৯ জন ব্রিটেনের সেনা সদস্য প্রাণ হারিয়েছে। এর বাইরে আহত হয়েছে ৩২ হাজার মার্কিন সৈন্য। জাতিসংঘের হিসেবে ১৭ লাখ ইরাকী এই যুদ্ধে হয়েছে বাস্তুচ্যুত। চলতি বছর সার্ক সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিবেশী দেশ চীনকে সদস্যভুক্ত করার আবেদন জানায়। ভারত এ ব্যাপারে ছিল নীরব। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ভারতের এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সে দেশের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো উন্নয়ন। তা দিতে সম চীন। বাংলাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে চীন। চট্টগ্রাম-কুনসিং সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবটি নিয়ে এখনো সরকারি পর্যায়ে চলছে পরীা নিরীা। এ ছাড়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে চীন। ২০১১ সালে চীনের সঙ্গে কৌশলগত কারণে সম্পর্ক উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। সীমান্ত বিরোধ অনেকটা প্রশমিত হয়ে চলতি বছরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সরাসরি কথা বলার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘হট লাইন’। চলতি বছর পাকিস্তানের সাথে দ্বিপাকি সম্পর্ক বিশেষ করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত। ইরান, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ত্রিদেশীয় পাইপ লাইন প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে চলতি বছর এগিয়ে চলেছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা। ভারত সার্কভুক্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বাণিজ্য সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে এগিয়ে এসেছে এক ধাপ। বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান ও আফগানিস্থানের ২৫টি বাদে (মদ, পানীয় ও তামাক জাতীয়) সব পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে ভারত। আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে বাংলাদেশ সরকার ভারত, নেপাল, ভুটান ও মায়ানমারকে নিয়ে ৫ দেশীয় বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা এডিবির সহায়তা নিতে যাচ্ছে। পূর্ব এশিয়ার ৪টি দেশ লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্পুচিয়ার আদলে এ বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এটি ২০১১ সালে যোগাযোগের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। তুরস্কে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) ২৯ সাংবাদিককে গ্রেফতারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। ২০ ডিসেম্বর তুরস্ক পুলিশ কুর্দি বিদ্রোহীদের সাথে যোগাযোগ রয়েছে এমন অভিযোগে ৪০ সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে ১১ জনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। নিউইয়র্কভিত্তিক সাংবাদিক পর্যবেণ সংস্থা এ গ্রেফতার সাংবাদিকদের পেশাগত জীবনের ওপর অব্যাহত দমননীতির বহিপ্রকাশ বলে অভিযোগ করেন। হাঙ্গেরীর রাজধানী বুদাপেস্টে ২৩ ডিসেম্বর উšে§াচন করা হয়েছে প্রযুক্তিবিদ ও এ্যাপল ইনকর্পোরেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের একটি ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য। গত ৫ অক্টোবর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি পরলোকগমন করেন। উত্তর কোরীয় নেতা ৬৯ বছর বয়সী কিম জং ইল,  ভারতের প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার মনসুর আলী খান পতৌদি, ব্রিটেনের পিটার রোবাক, দণি আফ্রিকার বেসিল ডি অলিভিয়েরায় জীবন দ্বীপ নিভে গেছে ২০১১ সালে। দণি আফ্রিকার বিপে সেঞ্চুরিয়ানে ৫০তম টেস্ট সেঞ্চুরির মাইলফলক পূরণ করেন ভারতীয় ব্যাটিং বিস্ময় শচীন টেন্ডুলকার। বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগে আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে ইংল্যান্ড ফুটবল দলের অধিনায়ক জন টেরিকে। চলতি মাসেই ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন লিভারপুলের ফুটবলার লুইস সুয়ারেজকে একই কারণে ৮ ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। একই সঙ্গে তাকে করা হয় ৬২ হাজার ডলার জরিমানা।
চলতি বছর শান্তির জন্য নোবেল শান্তি বিজয়ী লিউ শিয়াও তো চীনে গণতান্ত্রিক সংস্কার আন্দোলনের দাবিতে কারাদণ্ড ভোগ করছেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেয়ার জন্য প্যারোলে মুক্তিও পাননি। অথচ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ব্যাপারে গ্রহণ করেনি যথাযথ ভূমিকা। ব্যবসায়িক গোপন তথ্য চুরির অপরাধে চীনা বিজ্ঞানী হুয়াং কেজুইকে ৭ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। অক্টোবর মাসে আদালতে উক্ত বৈজ্ঞানিক স্বীকার করেন যে, দুটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন উদ্ভাবিত কীটনাশক ও খাদ্যপণ্যের গোপন তথ্য চুরি করে চীন ও জার্মানিতে পাচার করেছেন তিনি।

দু’নেত্রীর কাছে জিজ্ঞাসা
আমাদের ১৬ কোটি মানুষকে আর কত বোকা বানাবেন?
- মোঃ নূরুল আমিন, চেয়ারম্যান, গ্রীন ডেল্টা হাউজিং
হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ, আমাদের প্রিয় দুই নেত্রীর আলোচনার বন্ধ। দেশের উন্নয়ক বন্ধ, জনগণের চোখ অন্ধ। এই ছন্দময় কথা দিয়ে দেশের বিস্মিত ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত ঝরা ও শুকনো কণ্ঠে সাপ্তাহিক চলতি ধারা সাথে সংপ্তি সাাতে গ্রীন ডেল্টা হাউজিং এর চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও আবাসন গবেষক মো: নুরুল আমিন বলেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের হৃদয় বিদারক ভালবাসায় সিক্ত হতে পারবেন কি বিশ্ব বরেণ্য আমাদের দুই নেত্রী?
তিনি অত্যন্ত সম্মানের সহিত বলেন, আমাদের দু’নেত্রী বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শুধু এদেশের নয়, তাঁরা বিশ্ব বরেণ্য অবিসংবাদিত নেত্রী। তাঁরা দু’জন শুধু নেত্রী নন তারা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের বিচণ শাসকও। বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে বার বার দেশ শাসনের এতো সুবর্ণ সুযোগ তাদের ভাগ্যে জুটছে যাহা অন্য দেশের নেতাদের েেত্র তা হয়নি। তাঁরা দু’নেত্রী সত্যিই বিচণ শাসক হলেও আমরা জনগণ তাদের মত বিচণ না হওয়ায় আজ আমাদের ভাগ্যকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা বারবার দেখা দিচ্ছে। চিন্তাবিদ আমিন বলেন, যত দোষ নন্দ ঘোষের। আমরা জনগণ হলাম নন্দঘোষ। দেশের মাটিতে একটু শান্তির নি:শ্বাস নিতে, চারটা মোটা ভাত, একটু ডাল তরকারী আর দুটো মোটা কাপড় পড়তে দু’নেত্রীকে আমরা জনগণ বার বার ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বানাই কিন্তু আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। আমরা অনেক স্বপ্ন বুকে ধারণ করে তাদের ভোট দেই। কিন্তু দুর্ভাগ্য একজন মতায় থেকে এবং অপরজন মতার বাহিরে থেকে যেভাবে হিংসাত্মক রাজনৈতিক প্রতিশোধ নিতে থাকেন তখন আমরা আতংকে অস্থির হয়ে উঠি। কখন আমাদের বাংলাদেশ অপশক্তির কবলে পড়ে তছনছ হয়ে যায়। গবেষক আমিন সাপ্তহিক চলতিধারাকে আরও বলেন, বাংলাদেশের মত এমন একটি সুন্দর দেশ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। যে দেশের মাটিতে সোনা ফলে, যে দেশের পানিতে সোনা ফলে। অথচ আমরা আমাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এই সুন্দর এবং দৃষ্টিনন্দন দেশটিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি? সামান্য মতার জন্য লড়াই করতে গিয়ে দেশটাকে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছি। চিন্তাবিদ আমিন আপে করে বলেন, আমরা কি কখনো গভীরভাবে ভেবে দেখেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে গড়া সোনার বাংলায় আজ মতার জন্য কি হচ্ছে? শেরে বাংলা এ,কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী এবং রাষ্ট্রপতি জিয়ার বাংলা দু’দলের মতার লড়াইয়ে ধংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোতে তোষামদকারী আর চাটুকার বেড়ে গেছে। তোষামদকারী আর চাটুকারদের গোলক ধাঁধাঁর মরিচিকায় আবিষ্ট হয়ে দেশ রসাতলের দিকে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা আর আমাদের বিশ্ব বরেণ্য দু’নেত্রীর নমুনায় আজ ১৬ কোটি মানুষ মহাটেনশনে অস্থির হয়ে উঠেছে। মতার মসনদে যাওয়ার জন্য আমাদের দু’নেত্রী একে অপরের প্রতি যেভাবে হিং¯্র ও বিদ্বেষীমূলক রাজনৈতিক আচরণ করছেন এতে আমরা মারাত্মকভাবে শংকিত কখন আবার বঙ্গবন্ধুর লাল সবুজের বাংলায় তৃতীয় শক্তির কালো হাত পড়তে পারে। আর তৃতীয় শক্তির হস্তেেপ শুধু দুই দল, দু’নেত্রী যেমন চরমভাবে তিগ্রস্ত হবে, তেমনি দেশের অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। তিনি রাজনৈতিক দলের সকল নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সকল দল থেকে ধোঁকাবাজ, ধান্দাবাজ এবং চাটুকারদের চিরুনি অভিযানে আস্তাকুড়ে ফেলে দিতে হবে। সকল দলের মধ্যে নতুন রূপে নতুন শ্লোগানের চর্চা চালু করতে হবে যে, রাজনীতি করবো দেশ মাটি ও মানুষের জন্য মতা ও দলের জন্য নয়। মতার জন্য রাজনীতি করা ঠিক হবে না। এই নীতিবাক্য সকলকে মানাতে বাধ্য করতে হবে। চিন্তাবিদ নুরুল আমিন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে এটাও চর্চা করতে হবে রাজনীতির মঞ্চে যা বলবো মতায় গিয়েও তা করবো। মঞ্চে সুন্দর সুন্দর কথা বলে জনগণ থেকে ভোট নিব আর মতার মসনদে বসে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো না এই নীতি থেকে সম্পন্নরূপে সরে আসতে হবে। গবেষক আমিন আরও বলেন, আমাদের বিশ্ব বরেণ্য নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া এবং দু’দলের হিংসাত্মকমূলক রাজনীতির কারণে আজ আমরা জনগণ নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। আমাদের উৎপাদন নাই, আমারেদ কর্মসংস্থান নাই, আমাদের শৃংখল জীবনের নিরাপত্তা নাই। আমরা দিন দিন কর্মহীন হয়ে দেশের বোঝা হয়ে যাচ্ছি। আমাদের বিশ্ব বরেণ্য নেতৃদ্বয় যদি সহনশীল রাজনীতিতে বিশ্বাসী হতেন তাহলে আমরা আজ উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতাম। চিন্তাবিদ আমিন জনগণের প থেকে দু’দল ও দু’নেত্রীকে প্রশ্ন করে বলেন, আপনারা মতার মসনদে যেতে রাজনীতির মঞ্চে আপোষ হচ্ছেন না ভাল কথা। কিন্তু জনগণ এবং দেশের উন্নয়নে আপনারা আপোষ হচ্ছেন না কেন? আপনাদের দু’দলের আপোষহীনতার কারণে বার বার দেশের উন্নয়ন চরমভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে আমাদের ১৬ কোটি মানুষের উপর। বর্তমানে দেশের বেকার সমস্যা ভয়াবহ, উৎপাদন সেক্টরে স্থবির, শিল্পায়ন স্থবির, জাতির শিা সেক্টরে নানা সমস্যা ও দুর্নীতি, সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় হাহাকার বিরাজ করছে। আপনাদের দু’দল ও দু’নেত্রীর অনৈক্যের কারণেই পুরো জাতি আজ নানা সমস্যার আবর্তে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। চিন্তাবিদ আমিন বলেন, মাননীয় দু’নেত্রী আপনারা যদি শুধু মতার জন্য সারা বছর ঝগড়া, ঝাটি, হানাহানি, মারামারি এবং শোধ-প্রতিশোধ ও বাদ প্রতিবাদে লিপ্ত থাকেন তাহলে আমরা কাকে নিয়ে দেশ গড়বো? আপনারা দু’নেত্রী হলেন দেশ গড়ার কারিগর আর দু’দল হলো দেশ রার প্রতিষ্ঠান, তাহলে আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে সারাণ দাঙ্গা হাঙ্গামা আর ঝগড়া বিবাদ লাগিয়ে রাখেন আমরা জনগণ কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব এবং দেশ কোথায় যাবে? জনাব আমিন আরও বলেন, বাঙালী জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি ২ বার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুভাগ্য আপনার হয়েছে। তাহলে আপনি কি পারবেন এ জাতির উন্নয়নে কি কি অবদান রেখেছেন তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে, পারবেন কি? আর বিরোধী দলের নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিকটও আমার জিজ্ঞাসা- রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পর এ জাতির ভাগ্য পরিবর্তনে আপনি কি কি অবদান রেখেছেন তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে? আপনিও ৩ বার এদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুভাগ্য আপনার হয়েছে। আমরা ভবিষ্যতে আপনাদের মাঝে আর অমিল দেখতে চাইনা। আমরা জনগণ আপনাদের নেতৃত্বে দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই। গবেষক আমিন বলেন, আমরা জনগণ আপনাদের দু’দলের হিংসাত্মক কর্মকান্ডে আজ অস্থির এবং দুচিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। আপনাদের কি আমাদের জনগণের জন্য একটুও মায়া হয়না? আপনারা দু’জন অত্যন্ত দায়িত্বশীল নেত্রী বলে আমরা মনে করি। কিন্তু আপনারা নিজেরাই বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখুন এদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য কতোটুকু দায়িত্ব বোধের পরিচয় দিচ্ছেন? আপনাদের দু’নেত্রীর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে আজকে দেশে খাদ্য সংকট, খাদ্যের চড়া মূল্য, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, আবাসন সংকট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা চরম পর্যায়ে পৌছেছে। হায়রে আধুনিক মালয়েশিয়া এখন কোথায় আর আমরা সোনার বাংলা এখন কোথায়? চিন্তাবিদ আমিন দু’নেত্রীকে প্রশ্ন করে বলেন মাননীয় নেত্রীদ্বয় আপনারা কার স্বার্থে, কার ইন্দনে এবং দেশের স্বার্থে না বিদেশের স্বার্থে এই জেদাজেদীর রাজনীতি করছেন, দয়া করে জাতিকে খোলাসে করুন। যদি আপনারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন তাহলে আমাদের জনগণকে খোলশা করুন এবং জনগণের মঞ্চে এসে বলুন, আমরা আর আপনাদের উপর আস্থা রাখতে পারছিনা। আপনারা দয়া করে আমাদের এই সোনালী দেশটাকে ধংসের মুখে ঠেলে দিবেন না। টিভির পর্দায় আপনারা জাতির উদ্দেশ্যে বলুন, এ দেশ আমার এ মাটি আমার। এ দেশকে রা করতে আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত। আপনাদের মারমুখী রাজনীতির কারণে আমরা জনগণ তুষের আগুনের মত জ্বলছি। প্লিজ আমি একজন স্বাধীন নাগরিক হয়ে আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি আমাদের দেশটাকে বাঁচান, আমাদেরকে বাঁচান। বিগত দিনে আমরা জনগণ আপনাদের দু’দলের মাধ্যমে অনেক ঠকেছি। আপনারা ভোট আসলে দু’নেত্রী এবং দলের নেতা কর্মীরা কান্নাকাটি করে জনগণ থেকে ভোট নেবেন, ভোটের সময় জনগণকে আকাশে উঠাবেন, রাজা মহারাজা বানাবেন আর ভোট পেয়ে মতায় বসে ১৬ কোটি মানুষের উপর কারণে অকারণে ছড়ি ঘুরাবেন তাহতে দেয়া যায়না। জনাব আমিন আরো বলেন, জাতির নিকট আমার প্রশ্ন আমরা আর কত কাল ঠকবো? দু’নেত্রীকে আমার প্রশ্ন দেশের উন্নয়নে, জনতার ভাগ্যের পরিবর্তনে আপনারা কি এক মঞ্চে বসতে পারেন না? আপনারা বিশাল জনসভায় বলে থাকেন জনগণ আপনাদের শক্তি, জনগণ মতার উৎস অথচ মতায় বসার পর আপনাদের সুর পাল্টে যায়। তখন আপনারা হয়ে উঠেন মুর্তিমান শাসক। ভোটের পূর্বে আপনারা অসহায় আবার ভোটের পর আমরা জনগণ অসহায়। মতায় বসে আমাদের উপর শুরু হয়ে যায় আপনাদের চোখ রাঙানি, শুরু হয়ে যায় আপনাদের ধমক আর খবরদারি। মাননীয় জননেত্রী শেখ হাসিনা ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপনারা ভেবে দেখেছেন কি দেশ বিদেশে গিয়ে আপনারা একে অপরকে দুর্নীতিবাজ, চোর, লুটেরা আর খুনি বলে আখ্যায়িত করছেন এতে বিদেশীদের নিকট আমরা জাতি হিসেবে কত ছোট হয়ে যাচ্ছি? আপনাদের দু’জনের এই কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়িতে বিদেশীরা আমাদেরকে কি ভাবছেন বলে আপনাদের মনে হয়? আমরা কি নীচু জাতি হিসেবে তাদের নিকট প্রমাণিত হচ্ছিনা? চিন্তাবিদ আমিন দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ও আমার জাতি ভাই এবং বোনেরা আমরা কি বলার অধিকার রাখিনা তারাও মানুষ আমরাও মানুষ? আমরা কি বলতে পারিনা দু’দলের নেতা নেত্রীদের মতায় বসতে যেমনি প্রচন্ড ইচ্ছে হয় তেমনি আমাদের ও ইচ্ছে হয় একটু শান্তিতে বসবাস করতে। জনাব আমিন বলেন, আপনাদের হানাহানির কারণে আজকে জাতির কাংখিত সেই পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিদেশী বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়নের চাকা দিন দিন জ্যাম হয়ে যাচ্ছে। আমরা গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হয়ে কি বলতে পারিনা আপনারা দু’দল মতায় গিয়ে রাষ্ট্র চালাতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন?

এসএসসিতে শতকরা ১০০ ভাগ ছাত্র-ছাত্রী পাস করলেও ভর্তির সমস্যা হবে না : প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাধ্যমিক পরীায় শতকরা ১০০ ভাগ ছাত্র-ছ্ত্রাী পাস করলেও উচ্চতর শ্রেণীতে ভর্তির েেত্র কোন সমস্যা হবে না।তিনি শনিবার এখানে গোপালগঞ্জের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন, এসএসসি পরীায় শতকরা  ১০০ ভাগ পাস করলেও সরকার সকল ছাত্র-ছাত্রীর জন্য উচ্চতর শেণীতে ভর্তির ব্যবস্থা করতে সম হবেন। ঢাকাস্থ গোপালগঞ্জ সমিতি বঙ্গবন্ধু মাজার কমপ্লেক্সে ২০১১ সালের এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদানের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬শ’ ২০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে এ সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান করা হয়। তাদের প্রত্যেককে একটি করে সদনপত্র, পদক ও নগদ ৩ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীও বেশ কয়েকজন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর হাতে ল্যাপটপ তুলে দেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, মহিউদ্দিন খান আলমগীর এমপি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এডভোকেট মোল্লা আবু কায়সার ও ঢাকাস্থ গোপালগঞ্জ জেলা সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বক্তৃতা করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। শিার মান উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, সুশিা হচ্ছে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে টিকে থাকার প্রধান থাকার। তিনি বলেন, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা মেধাবী। দেশে এবং বিদেশে এই মেধার বিকাশ ঘটারতে তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা আমাদের দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শিাখাতের উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদেেপ কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম যাতে পূর্ণাঙ্গ শিা অর্জন করতে পারে সে ল্েয নতুন শিানীতিতে ধর্মীয় শিাসহ বৃত্তিমূলক শিার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। নতুন শিানীতির আলোকে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রাথমিক সমপনী পরীা ও জুনিয়র সমপনী পরীায় অংশ নিচ্ছে। এতে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীা সম্পর্কে তাদের ভীতি কাটছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক ও জুনিয়র সমাপনী পরীার ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তিও দেয়া হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন বছরের (২০১২) প্রথম দিনে বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যবই পাবে এবং ১ জানুয়ারি সারাদেশে ‘বই উৎসব’ উদযাপিত হবে। তিনি বলেন, পাবলিক পরীার ফলাফল ২ মাসের মধ্যে প্রকাশ করার ব্যবস্থাও নেয়া  হয়েছে। একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের রজত জয়ন্তী এবং সাবেক ছাত্র-ছাত্রীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন।
বাংলা একাডেমীর ফেলোশিপ পেলেন শেখ হাসিনা ও অমর্ত্য সেন
 যুদ্ধাপরাধীরা যেখানেই থাক বিচার হবেই: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং সন্দেভাজন যুদ্ধাপরাধী পাওয়া গেলে তাদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে। তারা যেখানেই থাকুক বাংলার মাটিতে তাদের বিচার হবেই। গতকাল শুক্রবার বাংলা একাডেমীর ৩৪তম সাধারণ সভা ও ফেলোশিপ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে বাংলা একাডেমী আজ সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত বাঙালির  গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতির সব আন্দোলন সংগ্রামে বাংলা একাডেমীর অনুপ্রেরণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি, যারা রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি এবং স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তিনি বলেন, জাতির জনক ও বাংলার লাখো মানুষ যে স্বপ্ন দেখেছিল,  সে স্বপ্ন পূরণের একমাত্র লক্ষ্য অর্জনে আমি কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনের জন্য যার যার অবস্থান  থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য  সেনের সঙ্গে তাকে  ফেলোশিপ  দেয়ায় বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি মনে করি, আমি একজন সাধারণ বাঙালি নারী, যে কখনো এতবড়ো সম্মান পাওয়ার চিন্তাও করেনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক এএফ সালাউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানসহ অনেকে।
১০ দিনের মধ্যে ঘোষণা
জ্বালানি তেলের পর এবার বাড়ছে সিএনজির দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
নতুন বছরের শুরুতে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দামও বাড়ানো হবে। গত বৃহস্পতিবার এ বছরে চতুর্থ বারের মতো সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটারে আরো পাঁচ টাকা বাড়ানোর পর গতকাল শুক্রবার এ ইঙ্গিত দিয়েছেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে সিএনজির দাম আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাড়ানো হতে পারে। তবে দাম কত শতাংশ বাড়বে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। চলতি বছর ১২  মে ও ১৯  সেপ্টেম্বর দুই দফায় প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম  মোট ১৩ টাকা বাড়ানো হয়। বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার সিএনজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। সিএনজির পাশাপাশি সব ধরনের জ্বালানি তেলের দামও চার দফায় লিটারে ১৭ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে এ বছর। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে প্রতি লিটার ডিজেল ৬১ টাকা,  কেরোসিন ৬১ টাকা, পেট্রোল ৯১ টাকা, অকটেন ৯৪ টাকা ও ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকা দরে বিক্রির নির্দেশনা দেয় সরকার। এর আগে নভেম্বরে সরকার সিএনজির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভারশন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ চারটি সংগঠন সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, গণশুনানি ছাড়া দাম বাড়ানো হলে তারা ধর্মঘটে যাবে। এ কারণে তখন সিএনজির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত  থেকে সরে আসে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টায় ভাড়াভিত্তিক  কেন্দ্রে কম দামে তেল সরবরাহ করতে গিয়ে যে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, তা পোষাতে সরকারকে চলতি বছর চার দফায় লিটারে ১৭ টাকা বাড়াতে হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। গ্যাস সংকটের কারণে সিএনজির দামও  বেড়েছে দুই দফায় ১৩ টাকা। ২০০৯ সালের জুলাই মাস থেকে নুতন গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ হওয়ার পর আবাসন শিল্পের উদ্যোক্তার বারবার সংযোগ দেয়া দাবি জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু সংকটের কারণে সরকার তা দিতে পারেনি। গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে এ বছর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বহুজাতিক  কোম্পানির সঙ্গে উৎপাদন-বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) করেও সরকার সমালোচনার মুখে পড়েছে। ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনতে গত ১২ মাসে সরকার মোট চার বার জ্বালানি  তেলের দাম বাড়িয়েছে। এক বছরে প্রতি লিটার ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম বেড়েছে ১৭ টাকা করে। নতুন মূল্যহার অনুযায়ী প্রতি লিটার ডিজেল ৬১ টাকা, কেরোসিন ৬১ টাকা,  পেট্রোল ৯১ টাকা, অকটেন ৯৪ টাকা ও ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এখন। গত বছরও প্রতি লিটার ডিজেল ৪৪ টাকা, কেরোসিন ৪৪ টাকা,  পেট্রোল ৭৪ টাকা, অকটেন ৭৭ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকারের ব্যাখ্যায় বলা হয়, গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি  তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে  বেড়েছে। এর পাশাপাশি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য চলতি অর্থবছরে অতিরিক্ত প্রায় ২০ লাখ টন জ্বালানি  তেল আমদানি করতে হচ্ছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমানও কমেছে এই সময়ে। ফলে এই অর্থবছরে জ্বালানি  তেল  কেনায় সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ ও লোকসান অনেক বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থায় জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রাখতে হলে এখাতে সরকারকে প্রচুর পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে, যা সরকারের বর্তমান আয় থেকে সঙ্কুলান করা কষ্টসাধ্য। এর আগে একই কারণে ৫  মে, ১৮ সেপ্টেম্বর ও ১০ নভেম্বর তিন দফা বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের দাম। এছাড়া ১২ মে ও ১৯ সেপ্টেম্বর দুই দফায় রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দামও ১৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার সিএনজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ১৭ টাকা।  তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে স্বাভাবিকভাবেই গণপরিবহনের ভাড়া ও বাজার দরে প্রভাব পড়েছে বার বার। এর প্রতিবাদে গত ২২ সেপ্টেম্বর সকাল সন্ধ্যা হরতাল পালন করে বিএনপিসহ চার দল। পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত অক্টোবরে প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া বাড়ানো হয় ৫ পয়সা। অটো রিকশার ভাড়া বাড়ানো হয় কিলোমিটারে ১৪ পয়সা হারে। আর দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ১৫ পয়সার পরিবর্তে ১ টাকা ২০ পয়সা করা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বড় বাসের নতুন ভাড়া ধরা হয় প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৬০ পয়সা, যা আগে ১ টাকা ৫৫ পয়সা ছিল। মহানগরীর মিনিবাসের ভাড়া ১ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে ১ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। সিএনজি অটো রিকশার প্রথম দুই কিলোমিটারের নির্ধারিত ভাড়া ২৫ টাকা ঠিক রাখা হলেও এরপর প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৭ টাকা ৫০ পয়সার পরিবর্তে ৭ টাকা ৬৪ পয়সা করা হয়। বিরতির জন্য প্রতি মিনিটের ভাড়া ১ টাকা ৩০ পয়সার বদলে ১ টাকা ৪০ পয়সা ঠিক করা হয়। দাম বাড়ানোর  ঘোষণা দিয়ে সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর পাশাপাশি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য চলতি অর্থবছরে অতিরিক্ত প্রায় ২০ লাখ টন জ্বালানি  তেল আমদানি করতে হচ্ছে। এছাড়া মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমানও কমেছে। ফলে এই অর্থবছরে জ্বালানি তেল  কেনায় সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ ও  লোকসান অনেক বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থায় জ্বালানি  তেল আমদানি অব্যাহত রাখতে হলে এখাতে সরকারকে প্রচুর পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে, যা সরকারের বর্তমান আয় থেকে সঙ্কুলান করা কষ্টসাধ্য, বলছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ডিজেলের উদাহরণ দিয়ে সরকার বলছে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৫১ দশমিক ৫২ মার্কিন ডলার, গত ২৮ ডিসেম্বর তা ১২০ দশমিক ২৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। 

একই ভাবে অন্যান্য জ্বালানিরও দাম বাড়ার কথা তুলে ধরেছে সরকার। সরকার বলেছে, সর্বশেষ দাম বাড়ানোর পরও ডিজেল, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০১০-১১) জ্বালানি  তেল আমদানিতে বাংলাদেশ  পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের লোকসান হয়েছে ৮ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা।  তেলের দাম লিটার প্রতি ৫ টাকা হারে বাড়ানোর পরও চলতি অর্থবছরে এই খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।

বাংলাদেশকে এখন অনেকে আদর্শ মনে করে: অমর্ত্য  সেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন বলেছেন, বাংলাদেশকে যারা এক সময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলত, তারা আজ বাংলাদেশকে আদর্শ (আইডেল) হিসেবে মানে। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। পৃথিবীতে বাংলাদেশের সম্মান অনেক বেড়েছে। তবে সামগ্রিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নারীর অংশগ্রহণ আরো বাড়াতে হবে। আর জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলাতে বাংলাদেশকে  নেতৃত্ব দিতে হবে। বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত  দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। গত শুক্রবার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর- একাত্তরের ভাবকল্প ও চার দশকের যাত্রা’ শীর্ষক স্মারক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে  বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান  সেন্টার ফর পলিসি ডায়াগল (সিপিডি), আইন ও সালিশ  কেন্দ্র, দ্য  ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো। সিপিডির ট্রাস্ট্রি  বোর্ডের সদস্য ও আইন সালিশ  কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ  কে খন্দকার। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান  সোবহান। বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক  মোস্তাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মাহফুজ আনাম এবং মতিউর রহমান। অমর্ত্য সেন বলেন, বাংলাদেশ নারী উন্নয়নে অনেক এগিয়েছে। তবে তাদের আরো এগিয়ে নিতে হবে। সমাজে তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব সব ধর্মকে সমান গুরুত্ব দেয়া। কোনো ধর্মকে প্রাধান্য বা বিশেষ গুরুত্ব দেয়া যাবে না। এতে করে বিভেদ বাড়ে। তিনি বলেন, ইউরোপ, আমেরিকাতে অসাম্প্রদায়িকতার ধরন ভিন্ন বলে তাদের ওখানে ঝগড়া-বিবাদ হয়। কিন্তু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার এর ধরন আবার ভিন্নতর। ফলে এ অঞ্চলে ঝগড়া হয় না। এ কে খন্দকার বলেন, স্বাধীনতার ৪০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। অর্জন-ব্যর্থতার খতিয়ানে অর্জন অনেক। তবে সময় এসেছে মূল্যায়ন করে  দেখার আরো কি পেতে পারতাম।
অধ্যাপক রেহমান সোবহান তার বক্তব্যে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং চার দশকে অর্জন এবং সামনে এগিয়ে চলার বিষয়ে বলেন, গত ৪০ বছরে আমাদের অর্জন আছে। গণতন্ত্র, জাতীয়তা, অসাম্প্রদয়িকতা এবং সমাজতন্ত্র এসব  ক্ষেত্রে এগিয়ে। তবে সমস্যাও রয়েছে অনেক। আগামীতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। মূল বক্তব্য এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশে আইনশৃংখলা এখনো ঝামেলা পূর্ণ যতনা নিরাপত্তা দেয়। তারা  দেখে  কে সেবা চাইছে। তাই ধনীদের জন্য এক আইন। আর গরিবের জন্য আরেক। তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য সম্পদ সবার মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে। সবাইকে সম্পদের মালিকানা দিতে হবে। গরিবকে করপোরেট কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।    

 দেশে পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে তিন বছরে একাত্তর হাজার পাঁচশ’ অভিযোগ
ইকবাল হাসান ফরিদ
দেশে নারী নির্যাতন বেড়েছে। গত তিন বছরে দেশের ৬টি বিভাগে মহিলা অধিদপ্তরের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুক, শারীরিক নির্যাতন, স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহ ও বিয়ে বিচ্ছেদের ৭১,৫৫১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এরমধ্যে ২৮ হাজার ৫৫৩টি অভিযোগের নিস্পত্তি হয়েছে। মহিলা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুক, শারীরিক নির্যাতন স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদসহ বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনায় নারীর প্রতি আইনী সহায়তা দিতে ১৯৯০ সাল থেকে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল স্থাপন করা হয়। এসব সেলে নারীরা অভিযোগ করলে তা বাদী-বিবাদী দু’পকে তলব করে মিমাংসা করা হয়। এছাড়াও নির্যাতিতাকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়। দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা নতুন নতুন কৌশলে সংঘটিত হচ্ছে। সম্প্রতি নরসিংদিতে লেখাপড়া করার অপরাধে এক নারীকে হাতের আঙ্গুল কেটে দিয়েছে পাষণ্ড স্বামী। শুধু তাই নয়, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, শ্বাসরোধে হত্যা, রগ কেটে, পানিতে চুবিয়ে হত্যা, নির্যাতন সইতে না পেরে আÍহত্যার ঘটনা দেশে নারী নির্যাতনের ভয়াবহতার চিত্র ফুটিয়ে তোলে। দেশে শতকরা ৪২ থেকে ৫৮ ভাগ নারী বিভিন্ন প্রকার নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে গঠিত মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের এক জরীপ থেকে জানা গেছে, দেশে নারীরা ৭৪ ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে ২১ ধরনের দৈহিক নির্যাতন, ১৪ ধরনের যৌন নির্যাতন, ৭ ধরনের বার্ন ও ৩২ ধরনের মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশের ৬ বিভাগে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগ জমা পড়েছে ৪২ হাজার ৫৩৫টি। এরমধ্যে নিস্পত্তি হয়েছে ২৬ হাজার, ৫৭০টি। যৌতুকের অভিযোগ জমা পড়েছে ১৮ হাজার ২২২টি। অভিযোগের নিস্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৩২টি। শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ জমা পড়েছে ৫ হাজার ১৪৭টি। এরমধ্যে নিস্পত্তি হয়েছে ৫৫৩টি। স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহের অভিযোগ জমা পড়েছে ১ হাজার ৬৫৩টি। এরমধ্যে নিস্পত্তি হয়েছে ২৭১টি। বিয়ে বিচ্ছেদের অভিযোগ জমা পড়েছে ৩ হাজার ৯৯৪টি। এরমধ্যে নিস্পত্তি হয়েছে ১৫৭টি। আইসিডিডিআরবি’র একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে প্রতি ৪ জন নারীর ৩ জনই কোন না কোনভাবে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে স্বামীর হাতেই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হতে হয় নারীকে। শুধু শহরেই ৪০ ভাগ নারী শারীরিক এবং ৩৭ ভাগ নারী স্বামীর যৌন নির্যাতনের শিকার হন। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির এক জরীপে দেখা গেছে, শহরে ৬০ ভাগ নারী এবং গ্রামের ৬১ ভাগ নারী পরিবারের কাছের মানুষের দ্বারা শারীরিক, মানসিক এমনকি যৌন নির্যাতনের শিকার হন। বিবাহিত নারীদের মধ্যে শহরে ৪০ ভাগ এবং গ্রামের ৪২ ভাগ নারী স্বামীর দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। শহরের ৩৭ ভাগ এবং গ্রামের ৫০ ভাগ নারী স্বামীর যৌন নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতনে মারাÍক আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। শহরের ২৭ ভাগ এবং গ্রামের ২৫ ভাগ নারী নির্যাতনের কারণে আহত হন। তবে নির্যাতনের তুলনায় প্রতিকার চাওয়ার হার খুবই কম। বেশিরভাগই এ ধরনের নির্যাতনকে লজ্জাজনক চিন্তা করে তা গোপন রাখেন। কেউ কেউ বিষয়টিকে একান্তই ব্যক্তিগত এবং অন্যের হস্তপে করা উচিৎ নয় বলে মনে করেন। ফলে অগোচরে থেকে যায় নারী নির্যাতনের নানা কাহিনী। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের আইনজীবী পারভীন আক্তার খান বলেন, এখানে সমাজের সব শ্রেনীর নারীরা অভিযোগ নিয়ে আসেন। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের অভিযোগ বেশি আসে। দু’পকে হাজির করে আমরা বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করি। মীমাংসা করা না গেলে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেই ও সহযোগিতা করি। বেসরকারি সংস্থা নিজেরা করির পরিচালক খুশি কবির বলেন, যখন মূল্যবোধের অবয় হয় তখন নারী নির্যাতনের মতো অপরাধ বেড়ে যায়। অপরাধের জন্য আইন ও শাস্তি আছে। কেউ যদি মনে করে সে অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে তখন অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। এ কারণে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে যেসব আইন আছে সেগুলোর কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন।

বানারীপাড়ায় ১০১ ভূমিহীন বন্দোবস্ত পাওয়ার দেড় বছরেও ভূমি বুঝে পায়নি !
রাহাদ সুমন
বানারীপাড়ায় ২০ শতাংশ করে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার দেড় বছর পরেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে ১০১ জন অসহায় দরিদ্র ভূমিহীনকে মালিকানা হস্তান্তর করা হচ্ছে না। ভূমিহীনরা জানান, ২০১০ সালের ১০ জুন উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপজেল কৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সভায় বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বাছাইকৃত ভুমিহীনদের ২৫৮২ টি আবেদন উপস্থাপন করা হয়। এসময় ওই সভায় আবেদনগুলোর মধ্য থেকে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন থেকে ১০১ জন দরিদ্র ভূমিহীনের মাঝে ২০ শতাংশ করে কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নে ২৯ জন, চাখার ইউনিয়নে ১২ জন, সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নে ১৭ জন, বাইশারী ইউনিয়নে ১৭ জন, সৈয়দকাঠী ইউনিয়নে ১১ জন, উদয়কাঠী ইউনিয়নে ৬ জন, বিশারকান্দি ইউনিয়নে ৫ জন ও ইলুহার ইউনিয়নে ৪ জন ভূমিহীনকে তালিকা ভুক্ত করা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ আলহাজ্ব মনিরুল ইসলাম মনির, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম ফারুক, ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মাওলাদ হোসেন সানা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুন্নেছা, সহকারী কমিশনার ভূমি পঙ্কজ ঘোষ, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল প্রমূখ। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলার ১০১ জন ভুমিহীনকে ৯৯ বছরের জন্য ২০ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী তালিকাভুক্ত ভুমিহীনরা প্রতিদিন উপজেলা ভুমি অফিসে ধরনা দিচ্ছেন। অপো করতে করতে তারা হতাশার সাগরে হাবডুবু খাচ্ছেন। সমাজপতি ও কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে তারা হাফিয়ে উঠেছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা ভুমি অফিস সূত্রে জানা গেছে ১০১ জন ভুমিহীনের মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ৩৭ জনের নামে খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার দলিল এসেছে। এরা হলেন চন্দ্রবান বেগম, মোঃ নূর হোসেন বেপারী, হারুন বেপারী, মোঃ মাছুম বিল্লাহ, মোঃ জাকির হাওলাদার, স্বপন রায়, মো জাহাঙ্গীর, মোঃ সোহরাব হোসেন বেপারী, আঃ মন্নান সিকদার, আঃ বারেক সরদার, নাসির ডাকুয়া, মোঃ বাবুল, মোঃ সোহাগ মৃধা, নোটন চন্দ্র দাস, নেপাল চন্দ্র দাস, দিলিপ চন্দ্র বাড়ৈ, আঃ জলিল হাওলাদার, মোঃ হায়দার আলী, মোসাঃ সাথী, মোঃ জাকির, মোঃগিয়াস উদ্দিন সরদার, আরতি ঘরামী, প্রেম লাল রায়, রীনা রানী মুচি, মোঃ আক্টেকল আলী সরদার, মোসাঃ সুমি আক্তার, সুধীর কর্মকার, মোসাঃ ছাহেরা বেগম, মোঃ সরোয়ার বেপারী, সন্ধা রানী কাহার, আকুলী রানী, হারুন বেপারী, মোঃ নুরুল হক, মোঃ কালাম ভুইয়া ও  মোঃ রেজাউল করিম। দলিল প্রাপ্ত ওই ভুমিহীনরাও আজ পর্যন্ত খাস জমি বুঝে পায়নি বলে জান্ াগেছে। এছাড়া  ৬৪ জন ভুমিহীন চুড়ান্ত তালিকায় থেকেও দলিল না পেয়ে হতাশায় ভুগছে। তারা উপজেলা ভুমি অফিসে গিয়ে অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০ শতাংশ করে সরকারি খাস জমি বন্ধোবস্ত পাওয়ার তালিকায় থেকেও দলিল না পাওয়া ভুমিহীনরা হলেন- মনির হোসেন, ইয়ার হোসেন, শাহানা বেগম, মোঃ আমির হোসেন, মোঃ জয়নাল খাঁ, মোঃ আঃ লতিফ ঘরামি, আঃ রব হাওলাদার, অমল মিস্ত্রী, মোঃ আবুল বাসার পলাশ, মোঃ কামাল হোসেন, রাজেন নাটুয়া, মুর্শিদা, কালিপদ বিশ্বাস, জগন্নাথ, মোঃ গোলাম মোস্তফা, আয়াশা বেগম, মোসাঃ হামিদা খাতুন, মোঃ শাহজাহান হাওলাদার, স্বপন কুমার মিস্ত্রী, সৈয়দ সাইদুর রহমান, এ মান্নান বাহাদুর। মোঃ কামাল হোসেন, আলেয়া বেগম, মোঃ সোলায়মান, রুবি, মোঃছালাম ঢালী, মোঃ হেমায়েত বেপারী, মোঃ জাহিদুল ইসলাম, আনোয়ারা খাতুন, মোঃ শহিদুল ইসলাম, মোঃ কাওছার, ফিরোজ হাওলাদার, মোঃ জামাল বেপারী, সোনালী রানী দে, সানু বেগম, মোঃ শাহীন  মিয়া, রিজিয়া বেগম, মাহিনুর বেগম, রনজিৎ হাওলাদার,আঃ মালেক হাওলাদার, গনেশ মালি, মিনা রানী, শ্যামল সিকদার, মোঃ কামাল হোসেন মোল্লা, শারমিন, মোঃ আবুল বাশার আকন, আঃ হাই বেপারী, আনোয়ার  হোসেন চোকদার, অরুনা শীল, আবুবক্কর, সহিদ হাওলাদার, আঃ রব মিয়া, মোঃ মোতালেব আলী সরদার, সুখরঞ্জন বৈদ্য, জাহিদ হোসেন,মোঃ বাচ্চু বেপারী, গীতা রানী হাওলাদার, মোঃ দেলোয়ার মাঝি,জজে আলী মিয়া, মোসাঃ নুরুননাহার, আঃ করিম হাওলাদার, আঃ খালেক হাওলাদার, আঃ মান্নান, মোঃহুমায়ুন কবির, এ প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম ফারুক বলেন ভূমি হীনদের পুনর্বাসনের জন্য বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। তিনি তালিকা ভুক্ত ভুমিহীনদের ভূমি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুল আলিম খান ওয়ারেশী জানান দলিল প্রাপ্তদের শিগ্রই জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বাকীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ৯ জানুয়ারী ভূমি সংক্রান্ত সভা আহবান করা হয়েছে। ওই সভায় স্থানীয় সাংসদ মনিরুল ইসলাম মনি ও উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক সহ সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।


নিখোঁজ বানারীপাড়ার ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ারের ৫ বছরেও সন্ধান মেলেনি !
রাহাদ সুমন
নিঁখোজ বানারীপাড়ার চাখার সরকারী ফজলুল হক কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সন্ধান  গত ৫ বছরেও মেলেনি। ধারণা করা হচ্ছে জনপ্রিয় এ ছাত্র নেতা গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছেন।  ওই সময় দেশের যে প্রান্তেই অজ্ঞাত পরিচয় লাশ পাওয়ার খবর পেয়েছেন তার লাশ ভেবে সেখানেই তার পরিবার ছুঁটে গেছেন । কিন্তু কোথাও আনোয়ারকে খুজেঁ পাওয়া যায়নি। আজও তার বৃদ্ধ মা জমিলা খাতুন বাড়ির সামনের রাস্তায় বসে বিলাপ করে নাড়ী ছেড়া ধন ছেলে ফিরবে এ প্রত্যাশায় তার আগমনী পথের দিকে অশ্র“সজল নয়নে তাকিয়ে থাকেন । কিন্তু প্রিয় খোকা আর ফিরে আসেনা ! কারন সে যে অসীম পথের যাত্রী হয়েছে। ২০০৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে সলিয়াবাকপুর গ্রামের বাড়ি থেকে বানারীপাড়া বাজারে আসার পথে ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হন। তৎকালীন মতাসীন দলের চাপে পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে গড়িমসি করলে এলাকাবাসীর আন্দোলনের মুখে পরে মামলা নিতে বাধ্য হয়। ৭ অক্টোবর তার ভাই আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন তার ভাই ঢাকার টপ টেরর মাইনুদ্দিন ও হুমায়ুন, সোহেল, জাকির খন্দকার,আনোয়ার মৃধা, নজরুল ও জসিমকে আসামী করে  আনোয়ার হোসেনকে অপহরন ও গুমের অভিযোগ এনে বানারীপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয় ওই দিন বিকেলে বানারীপাড়া বাজারে আসার পথে মহিষাপোতা এলাকায় আসামী সোহেলের বাড়ির সামনে থেকে আসামীরা তাকে  মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করে । ২০০৬ সালের ১৮ আগষ্ট ঢাকায় র‌্যাবের হাতে ফেন্সিডিল সহ মাইনউদ্দিন ওরফে রাজু গ্রেফতার হয় । ওই গ্রেফতারের পিছনে ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ারের হাত রয়েছে এ ধারনা থেকে ীপ্ত হয়ে মাইনউদ্দিনের নেতৃত্বে আসামীরা তাকে অপহরন ও গুম করেছে বলে বাদীর পরিবারের অভিযোগ । মামলা দায়ের করায় ীপ্ত হয়ে আসামীরা  ওই বছরের ২৪ নভেম্বর বাদীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে । এ ব্যাপারে আসামীদের বিরুদ্ধে তখন আরও একটি মামলা দায়ের করা হয় ।  বিএনপি নেতা  হেমায়েত উদ্দিন ও মাইনউদ্দিন তখন কয়েক মাস হাজতবাস করলেও আসামীরা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন । আসামীদের মধ্যে সোহেল প্রবাসে ও জাকির খন্দকার সম্প্রতি মৃত্যুবরন করেছেন।  অপহরন ও গুম মামলাটি বর্তমানে জজ কোর্টে স্বাী পর্যায়ে রয়েছে । বাদীর অভিযোগ আসামীরা স্বাীদের স্ব্যা না দেওয়ার জন্য নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। আনোয়ারের পরিবার  এ ব্যাপারে আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

দলীয়দের জেলা প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে সরকার গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেকটি ঢোকাল
মো. আলী আশরাফ খান
আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি, সরকার এ অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-জনগণের অধিকারকে মাটিচাপা দিয়ে তাদের আয়েত্বে নেয়ার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে। আসলে আমার মাথায়-ই ধরেনি, সরকারের এমন হঠকারীতামূলক সিদ্ধান্তের ব্যাপারটি। যেখানে রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রের মূলভিত্তি জনগণের মতায়ন নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করণে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই, সেখানে সরকারের এমন আচরণ গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করা নয় কি? সরকার তো বরাবরই সংবিধান লঙ্ঘন করে দেখিয়ে দিল, যে করে হোক তারাই আবার মতায় আসছে। আগামী নির্বাচনে বিজয়কে নিশ্চিত করতেই হয়তো এখন থেকে তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন শুরু করেছে তারা। বলে রাখা ভাল, আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। ভ্রান্তধারার রাজনীতিকে বরাবরই ঘৃণা করি এবং এর বিরুদ্ধে যতটা সম্ভব লেখালেখিও করে আসছি দীর্ঘদিন যাবৎ। কেউ যদি মনে করেন, কোনো দলপ্রীতির ঘোরে আমার এ লেখা, তাহলে চরম ভুল করবেন। বিষয়টি আমাকে বেশ ভাবিত করেছে বলেই দু’ চার লাইন লিখে মনের ভাবটা প্রকাশ করার অভিপ্রায় মাত্র। স্থানীয় সরকার যে কতটা গুরুত্ব বহন করে একটি দেশ ও জাতির জন্য এবং মতায় টিকে থাকা কিংবা মতায় আসার জন্য, এটা বিগত অন্যান্য সরকারের চেয়ে বর্তমান সরকার যে বহুগুণে বেশি বোঝে এটাই প্রমাণ করলেন তারা। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত স্থানীয় সরকারগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে দেশের বিশিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তি, সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও কিছু কিছু রাজনৈতিক দলও। দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং সাংবিধানিক অবস্থার উন্নতিকল্পে উপজেলা পরিষদ কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের মতো জেলা পরিষদেরও নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকা বাঞ্জনীয়। আর এ ধারাবাহিকতাই তৈরি করে পরিপক্ক ও দ রাজনৈতিক। কিন্তু সরকার এ গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাকে গলাটিপে হত্যা করে লাশের উপর দাঁড়িয়ে নৃত্য প্রদর্শন করে দেখিয়ে দিলেন যে, তারা এমন কোনো কাজ নেই যা করতে পারেন না।
     বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার দলীয় নেতাদের স্থানীয় মতাকে অপব্যবহার করার মন্ত্রে দীা দিয়ে আবার মতায় আসার অপকৌশল হিসেবেই নির্বাচনকে ব্যতিরেকে যে জেলা পরিষদ প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন, এটা আর বলার অপো রাখে না। দিনের আলোর মতই এখন স্পষ্ট তাদের এ সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশের তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া ৬১ টি জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি। যদিও আমরা ল্য করছি, কোনো কোনো জেলায় স্বয়ং সরকারী দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে হট্টগোল শুরু হয়েছে। তারা হয়ত বোঝে ফেলেছে সরকারের এ দুর্ভিসন্ধিমূলক আচরণ জনগণের উপর খড়গ উঠবে এবং তা তাদের একটি অংশের উপরেও প্রভাব ফেলবে। অথচ সরকার বলছে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার জন্যই নাকি তাদের প্রতিশ্র“ত এ নিয়োগের অংশ এটি! আমরা দেখেছি, বর্তমান মহাজোট সরকারের সময় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারায় সরকার প্রশংসাও পেয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর জেলা পরিষদকে কার্যকর ভূমিকায় নিয়ে আসতে সরকার প্রয়োজনীয় পদপে নিতে পারেনি। এটা সরকারের ব্যর্থতাই প্রমাণ করে।  তাদের বোঝা উচিৎ ছিল, জেলা পরিষদের ইতিহাস দুইশ’ বছরের পুরনো। ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের আমলে জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু বিগত ২২ বছরেও জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এমন অবস্থায় নির্বাচিত জেলা পরিষদ নিঃসন্দেহে বড়ধরনের ভূমিকা রাখতে সম হতো। নির্বাচিত ব্যক্তিরা জেলার উন্নয়ন কাজে প্রত্যভাবে যুক্ত হয়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি উপস্থাপন অতঃপর প্রয়োজন মেটাতে পারতো। এ েেত্র জেলা পরিষদ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান-এটা কি সরকার অস্বীকার করতে পারবে? একটি জেলার ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ যদি নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হয়, আমলাতন্ত্র ও দলতন্ত্র থেকে যদি মুক্ত থাকতে পারে. তাহলে সেই জেলার উন্নয়নসহ প্রতিটি েেত্রর অগ্রগতি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। যদিও সরকারের প থেকে এখন বলা হচ্ছে, যথাশিগগির জেলা পরিষদে নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হবে। এ েেত্র জেলা পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধি দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত বর্তমান নিয়োগপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকরাই দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, যেখানে সরকারই সংবিধান লঙ্গন করে এ অনৈতিক পহ্নায় তাদের নিয়োগ দিলেন, সেখানে এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীনরা কি তাদের নিজেদের ও দলের জন্য অনৈতিকতার পথ পরিহার করতে পারবেন? আমরা তো মনে করি, সরকার এ ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেকটি ঢোকাল। পরিশেষে আমরা আশা করছি, গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা বজায় রাখতে সরকার দ্রুত জেলা পরিষদের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষরদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে। এবং সকল দল ও মতের প্রার্থীদের অংশগ্রহণের পথকে সুগম করতে সব রকমের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর তবেই বোঝা যাবে যে, সরকার জনগণের কতা কল্যাণ বয়ে আনতে কাজ করছে। 


বানারীপাড়ায় ১০১ ভূমিহীন বন্দোবস্ত পাওয়ার দেড় বছরেও ভূমি বুঝে পায়নি !
রাহাদ সুমন
বানারীপাড়ায় ২০ শতাংশ করে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার দেড় বছর পরেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে ১০১ জন অসহায় দরিদ্র ভূমিহীনকে মালিকানা হস্তান্তর করা হচ্ছে না। ভূমিহীনরা জানান, ২০১০ সালের ১০ জুন উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপজেল কৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সভায় বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বাছাইকৃত ভুমিহীনদের ২৫৮২ টি আবেদন উপস্থাপন করা হয়। এসময় ওই সভায় আবেদনগুলোর মধ্য থেকে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন থেকে ১০১ জন দরিদ্র ভূমিহীনের মাঝে ২০ শতাংশ করে কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নে ২৯ জন, চাখার ইউনিয়নে ১২ জন, সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নে ১৭ জন, বাইশারী ইউনিয়নে ১৭ জন, সৈয়দকাঠী ইউনিয়নে ১১ জন, উদয়কাঠী ইউনিয়নে ৬ জন, বিশারকান্দি ইউনিয়নে ৫ জন ও ইলুহার ইউনিয়নে ৪ জন ভূমিহীনকে তালিকা ভুক্ত করা হয়। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ আলহাজ্ব মনিরুল ইসলাম মনির, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম ফারুক, ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মাওলাদ হোসেন সানা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুন্নেছা, সহকারী কমিশনার ভূমি পঙ্কজ ঘোষ, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল প্রমূখ। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলার ১০১ জন ভুমিহীনকে ৯৯ বছরের জন্য ২০ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী তালিকাভুক্ত ভুমিহীনরা প্রতিদিন উপজেলা ভুমি অফিসে ধরনা দিচ্ছেন। অপো করতে করতে তারা হতাশার সাগরে হাবডুবু খাচ্ছেন। সমাজপতি ও কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে তারা হাফিয়ে উঠেছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা ভুমি অফিস সূত্রে জানা গেছে ১০১ জন ভুমিহীনের মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ৩৭ জনের নামে খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার দলিল এসেছে। এরা হলেন চন্দ্রবান বেগম, মোঃ নূর হোসেন বেপারী, হারুন বেপারী, মোঃ মাছুম বিল্লাহ, মোঃ জাকির হাওলাদার, স্বপন রায়, মো জাহাঙ্গীর, মোঃ সোহরাব হোসেন বেপারী, আঃ মন্নান সিকদার, আঃ বারেক সরদার, নাসির ডাকুয়া, মোঃ বাবুল, মোঃ সোহাগ মৃধা, নোটন চন্দ্র দাস, নেপাল চন্দ্র দাস, দিলিপ চন্দ্র বাড়ৈ, আঃ জলিল হাওলাদার, মোঃ হায়দার আলী, মোসাঃ সাথী, মোঃ জাকির, মোঃগিয়াস উদ্দিন সরদার, আরতি ঘরামী, প্রেম লাল রায়, রীনা রানী মুচি, মোঃ আক্টেকল আলী সরদার, মোসাঃ সুমি আক্তার, সুধীর কর্মকার, মোসাঃ ছাহেরা বেগম, মোঃ সরোয়ার বেপারী, সন্ধা রানী কাহার, আকুলী রানী, হারুন বেপারী, মোঃ নুরুল হক, মোঃ কালাম ভুইয়া ও  মোঃ রেজাউল করিম। দলিল প্রাপ্ত ওই ভুমিহীনরাও আজ পর্যন্ত খাস জমি বুঝে পায়নি বলে জান্ াগেছে। এছাড়া  ৬৪ জন ভুমিহীন চুড়ান্ত তালিকায় থেকেও দলিল না পেয়ে হতাশায় ভুগছে। তারা উপজেলা ভুমি অফিসে গিয়ে অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০ শতাংশ করে সরকারি খাস জমি বন্ধোবস্ত পাওয়ার তালিকায় থেকেও দলিল না পাওয়া ভুমিহীনরা হলেন- মনির হোসেন, ইয়ার হোসেন, শাহানা বেগম, মোঃ আমির হোসেন, মোঃ জয়নাল খাঁ, মোঃ আঃ লতিফ ঘরামি, আঃ রব হাওলাদার, অমল মিস্ত্রী, মোঃ আবুল বাসার পলাশ, মোঃ কামাল হোসেন, রাজেন নাটুয়া, মুর্শিদা, কালিপদ বিশ্বাস, জগন্নাথ, মোঃ গোলাম মোস্তফা, আয়াশা বেগম, মোসাঃ হামিদা খাতুন, মোঃ শাহজাহান হাওলাদার, স্বপন কুমার মিস্ত্রী, সৈয়দ সাইদুর রহমান, এ মান্নান বাহাদুর। মোঃ কামাল হোসেন, আলেয়া বেগম, মোঃ সোলায়মান, রুবি, মোঃছালাম ঢালী, মোঃ হেমায়েত বেপারী, মোঃ জাহিদুল ইসলাম, আনোয়ারা খাতুন, মোঃ শহিদুল ইসলাম, মোঃ কাওছার, ফিরোজ হাওলাদার, মোঃ জামাল বেপারী, সোনালী রানী দে, সানু বেগম, মোঃ শাহীন  মিয়া, রিজিয়া বেগম, মাহিনুর বেগম, রনজিৎ হাওলাদার,আঃ মালেক হাওলাদার, গনেশ মালি, মিনা রানী, শ্যামল সিকদার, মোঃ কামাল হোসেন মোল্লা, শারমিন, মোঃ আবুল বাশার আকন, আঃ হাই বেপারী, আনোয়ার  হোসেন চোকদার, অরুনা শীল, আবুবক্কর, সহিদ হাওলাদার, আঃ রব মিয়া, মোঃ মোতালেব আলী সরদার, সুখরঞ্জন বৈদ্য, জাহিদ হোসেন,মোঃ বাচ্চু বেপারী, গীতা রানী হাওলাদার, মোঃ দেলোয়ার মাঝি,জজে আলী মিয়া, মোসাঃ নুরুননাহার, আঃ করিম হাওলাদার, আঃ খালেক হাওলাদার, আঃ মান্নান, মোঃহুমায়ুন কবির, এ প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম ফারুক বলেন ভূমি হীনদের পুনর্বাসনের জন্য বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। তিনি তালিকা ভুক্ত ভুমিহীনদের ভূমি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুল আলিম খান ওয়ারেশী জানান দলিল প্রাপ্তদের শিগ্রই জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বাকীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ৯ জানুয়ারী ভূমি সংক্রান্ত সভা আহবান করা হয়েছে। ওই সভায় স্থানীয় সাংসদ মনিরুল ইসলাম মনি ও উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক সহ সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।

 নবরূপে ক্রসফায়ার
আইন ও মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত
দেশে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে অপহরণ ও গুপ্তহত্যা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণের পর একে একে হত্যা করা হচ্ছে অনেক নিরীহ ব্যক্তিকে। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে ছাত্র-শিক্ষক ও ব্যবসায়ী কেউই আর নিরাপদে নেই। সকলের মধ্যে এক ধরনের গুম আতঙ্ক বিরাজ করছে। গুপ্তহত্যা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনসহ সচেতন মহল। গুপ্তহত্যা যখন মহামারি আকার ধারণ করেছে ঠিক তখনই সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা নেতাদের দাবি, দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত আছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যার যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত না করে বিরোধী দল দেশ অস্থির করতে এ ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে দায় এড়ালেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সুরে সুর মেলালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুনসহ আরো অনেকে। দেশ অশান্ত করতে যদি বিরোধী দল পরিকল্পিতভাবে এ গুপ্তহত্যা করে থাকে তাহলে দোষীদের সনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা না করে দায় এড়ানো অযৌক্তিক। এতে হত্যাকারীরা আরো বেশি উৎসাহী হবে। তাতে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা বাড়বে ছাড়া কমবে না।
বিগত বিএনপি সরকারের আমলে গঠিত র‌্যাব বাহিনীর হাতে ক্রসফায়ারে একের পর এক বিভিন্ন মামলার আসামিরা নিহত হতে থাকে। প্রথম থেকেই মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিচারবহির্ভূত এ ক্রসফায়ারের বিরোধিতা করলেও সাধারণ জনগণ মনে মনে খুশি হয়। ধীরে ধীরে ক্রসফায়ারে অনেক নিরাপরাধ ব্যক্তিকেও জীবন দিতে হলো। দেশব্যাপী ক্রসফায়ার আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। র‌্যাবের এ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের  ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে বিশ্ব মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারপর থেকে আজো বন্ধ হয়নি বিচারবহির্ভূত এ হত্যাকাণ্ড। গত ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ক্রসফায়ারের পাশাপাশি মানুষ হত্যার নতুন কৌশল আবিষ্কার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুরু হয় অপহরণ ও গুপ্তহত্যা। দেশের আইনজ্ঞ ও বিশিষ্টজনদের ধারণা, কথিত ক্রসফায়ারের দায় এড়াতে গুপ্তহত্যার কৌশল নিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে অনেক রাজনীতিবিদ। র‌্যাবের হাতে কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হলেও একটা সান্ত্বনা পেত নিহতের পরিবার। ক্রসফায়ারে নিহত হলে তো প্রিয়জনের লাশটা অন্তত পাওয়া যায়।
বর্তমানে অপহরণের পর যে সব গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটছে এর বেশিরভাগ লাশেরই সন্ধান মিলছে না। নিখোঁজ হওয়ার পর প্রিয়জন জীবিত আছে না মারা গেছে তাও জানে না অনেক পরিবার। দিনের পর দিন মা আশায় বুক বেঁধে আছেন কখন ফিরবে খোকা। এমনি করে মাস পেরিয়ে বছর  গেলেও প্রিয়তম স্বামীর খোঁজ পাচ্ছে না হতভাগ্য স্ত্রী। একটা স্বাধীন দেশে এ ভাবে জীবন চলতে পারে না। প্রিয়জন নিখোঁজ হয়েছে এ কথাটা প্রকাশ্যে বলার যো নেই। কিছুদিন বাদে দেখা যাচ্ছে অভিযোগকারীই গুপ্তহত্যার স্বীকার হচ্ছেন। মানবাধিকার সংগঠনের হিসাব মতে, গত বছরে মোট হত্যার শিকার হয়েছে ২২৫ জন ব্যক্তি। এর মধ্যে ২২ জনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে গুপ্তহত্যা করা হয়। এদের অনেকের লাশ আজো মেলেনি। পুলিশ হেফাজতে কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হয় ২৪ জন। কথিত ক্রসফায়ার ও হেফাজতে মৃত্যুর বাইরে নিহত হয়েছে ৩৫ জন। গত বছরে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ১২০ জন। নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগ- বিএনপি নেতাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রয়েছে। আইনজ্ঞদের মতে, গুম বা গুপ্তহত্যাকে পৃথিবীর কোনো আইনে বৈধতা দেয়া হয়নি। একমাত্র আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপরাধীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারার বৈধতা দেয়া হয়েছে। এর বাইরে পৃথিবীতে আর কোনো আইন নেই যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির জীবন নেয়া যায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নামে দেশে এখন যেভাবে পাখির মতো মানুষ হত্যা করা হচ্ছে তার বৈধতা পৃথিবীর কোনো আইনে নেই। মানুষের জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম ও সম্পত্তির হানি ঘটে এমন কোনো কাজ আইন ব্যতীত করা যাবে না বলে বাংলাদেশের সংবিধানেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। কাউকে ফাঁসিতে ঝুলাতে হলে তা অবশ্যই ফেয়ার ট্রায়ালের মাধ্যমে হতে হবে। অপরাধীকে গ্রেফতারের ব্যাপারেও সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছে। কাউকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটস্থ আদালতে হাজির করতে হবে। সংবিধানে সব কিছু উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত তা লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
সন্ত্রাস দমনে রাষ্ট্র যদি সন্ত্রাসী রূপ ধারণ করে তাহলে আইন ও মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়। এতে করে আইনের প্রতি মানুষ আস্থাহীন হয়ে পড়ে। দেশবাসী চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে সুযোগে অনেক অপরাধী গুম ও হত্যাকাণ্ড ঘটালেও সব দায় পড়ে তাদের ঘাড়ে। বিচারবহির্ভূত এ গুপ্তহত্যা বা ক্রসফায়ার বন্ধে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো। মানবাধিকার কমিশনের দাবি, গুম বা গুপ্তহত্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপিয়ে সরকারের দায় এড়ানো উচিত নয়। এ হত্যার রহস্য উšে§াচন করা সরকারের দায়িত্ব। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না থাকে তা হলে যারা জড়িত তাদেরকে কেন সনাক্ত করা হচ্ছে না। গুপ্তহত্যার শিকার অনেক পরিবার সরাসরি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী করলেও এ ব্যাপারে মুখ খুলছে না তারা। প্রশাসনের এ নীরবতা কি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণ করে না? তারা যদি এ কাজে জড়িত নাই থাকে তাহলে কেন র‌্যাব-পুলিশপ্রধান যৌথ বিবৃতি দেন না। কেন তারা রেডিও-টিভি ও পত্রিকায় জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালান না, যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাদা পোশাকে কাউকে আটক করবে না। যারা সাদা পোষাকে মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতিরোধ করুন। গুপ্তহত্যা করে যারা আইন ও মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করছে তারা প্রশাসনের লোক হলেও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দু’একজন দুষ্টু সদস্যের কারণে পুরো বাহিনী প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে না। প্রমাণ সাপেক্ষে অপরাধী সদস্যদের উপযুক্ত শাস্তি না দিলে দেশবাসী আইনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে।  দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে বিনা অপরাধেও মানুষের ওপর নির্যাতন করেছে তারও যথেষ্ট উদাহরণ দেশবাসীর জানা। গত বছর ২৩ মার্চ ঝালকাটির রাজাপুরে কলেজছাত্র লিমনকে বিনা অপরাধে গুলি করে র‌্যাব। র‌্যাবের গুলিতে আহত লিমনের পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। এখানেই শেষ নয়, নিজেদের দায় এড়াতে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করে তাকে অপরাধী সাজানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় র‌্যাব। পঙ্গু অবস্থায় এখনো নিয়মিত তাকে কোর্টে হাজিরা দিতে হয়। গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ণ ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আবদুল কাদেরকে আটক করে অমানবিক নির্যাতন করে খিলগাঁও থানা পুলিশ। তাকেও বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে সন্ত্রাসী সাজানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় পুলিশ। অবশেষে সে আদালতে নির্দোষী প্রমাণিত হয়। ১৭ জুলাই পবিত্র শবে বরাতের রাতে ঢাকার আমিনবাজারের বরদেশী গ্রামে ৬ ছাত্রকে ডাকাত সন্দেহে হত্যার কাহিনী দেশবাসীর জানা। এখানে নিরব ভুমিকা পালন করে পুলিশ। দেশবাসী জানে, ২৭ জুলাই কিভাবে নোয়াখালীতে ডাকাত সন্দেহে ৬ জনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে মিলন নামে একজনকে কোম্পানিগঞ্জের টেকেরহাট মোড়ে পুলিশ তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে জনতার হাতে ছেড়ে দেয়। পুলিশের উপস্থিতিতেই নির্মমভাবে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয় কিশোর মিলনকে। এ দৃশ্য দেশবাসীর দেখা। এছাড়া দেশে প্রতিনিয়ত যে সব গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটছে তাদের অধিকাংশ পরিবারের দাবি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে আটক করার পর খুঁজে পাওয়া যায়নি প্রিয়জনকে। ক’দিন বাদে নদী-নালা, খালে-বিলে বা অন্যত্র প্রিয়জনের লাশ মিলছে। আবার মাস পেরিয়ে বছর বাদেও প্রিয়জনের অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন অনেকে। আদৌ ফিরবে কি না তাও জানে না তারা। এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও অজানা কারণে তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাচ্ছে না ভুক্তভোগীদের পরিবার। রক্ষক হয়ে প্রশাসন যদি ভক্ষক হয়, তাহলে কোথায় যাবে দেশবাসী। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গৌরবোজ্জল ইতিহাস রয়েছে। দেশমাতৃকার সম্মান রক্ষার্থে সদা তৎপর ছিল তারা। কারো রাজনৈতিক বা ব্যক্তিস্বার্থ প্রতিষ্ঠায় কাউকে গুপ্তহত্যা করছে প্রশাসন এটা দেশবাসীর কাম্য নয়। রাষ্ট্রতো সব নাগরিকের আশ্রয়স্থল। এখানে ভালো-মন্দ সব ধরনের লোক থাকবে। কেউ অপরাধী হলে আইনের মাধ্যমে তার যথাযথ শাস্তি প্রদান করা উচিত। আইন অমান্য করে রাষ্ট্র যদি বিনা বিচারে মানুষ হত্যাকে বৈধতা দেয় তাহলে দেশে কখনোই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। রাষ্ট্রকে অবশ্যই এ পথ পরিহার করতে হবে।  দিন পেরিয়ে এসেছে নতুন বছর। বছরের প্রথমদিন থেকেই আর কারো অস্বাভাবিক মৃত্যু নয়, কেবল স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চায় দেশবাসী। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা নয়; একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে কেবল স্বাভাবিক মৃত্যুর দাবি অযৌক্তিক নয়। নতুন বছরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে আর কাউকে হত্যা করা হবে না এ অঙ্গীকার অবশ্যই সরকারকে করতে হবে। রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানকে মনে রাখতে হবে,  রাষ্ট্রের জন্য জীবন নয়; জীবনের জন্য রাষ্ট্র। অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা উচিত। আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এভাবে শিয়াল-কুকুরের মতো রাস্তাঘাটে, মস্তকহীন দেহ দেখার জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি।
 লেখক: সাংবাদিক


সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে আর লিখব না!
মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ
ভাবছিলাম সড়ক দুর্ঘটনা বা এর প্রতিকার নিয়ে আর লিখব না। কেননা এ বিষয়টি নিয়ে এত বেশি  লেখালেখি, আলোচনা হয়েছে যে আর লিখতে ভালো লাগে না। আর যে লেখায় কোনো ফল দেয় না তা লিখেই বা লাভ কি! নিকট অতীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদ নিহত হওয়ার পর দেশব্যাপী তোলপাড় দেখে ভেবেছিলাম এবার হয়ত সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কিছু কাজ হবে। কিন্তু প্রতিদিনের দৈনিকের পাতা খুলে যা দেখছি তাতে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন অন্তত আমার চোখে পড়েনি। ২৯ তারিখের দৈনিক খুলে বাস চাপা পড়ে আহত নিখিল ভদ্রের ছবি দেখে এ নিয়ে লেখার প্রয়োজন অনুভব করলাম। গত ২৮ ডিসেম্বর  রাজধানী  শহরের কেন্দ্রে খোদ প্রেসক্লাবের সামনে বাসের চাপায় পা হারালেন দৈনিক কালের কণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল ভদ্র। প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তা পারাপারের সময় বিআরটিসির একটি বাস তাকে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তায় পড়ে যান।এর পরও বাসচালক  না থামিয়ে তার পায়ের ওপর দিয়ে যাত্রী ভর্তি বাসটি চালিয়ে চলে যায়। গুরুতর আহত নিখিলের প্রাণ বাঁচাতে তার ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। এমনি  সব অস্বাভাবিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঢাকার কেন্দ্রে প্রাণও হারিয়েছেন অনেকে। নাট্যকর্মী ঝুমুর নিহত হয়েছেন বাসের তলায় পিষ্ট হয়ে।
শুধু মহাসড়কেই নয় দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট সড়কে অহরহ এই দুর্ঘটনা ঘটছে। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘাতক বাসের তলায় পিষ্ট হয়ে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। যে শহরে যানজটের কারণে যানবাহনই চলা দায় সেখানে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন অনেকে। এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক কিংবা মহাসড়কে  প্রতিদিন অকালে ঝরে পড়ছে কতগুলো মূল্যবান জীবন। কত আশা-আকাক্সক্ষার সমাধি ঘটে চলেছে মুহূর্তের মধ্যে! দেশের বিভিন্ন অংশে সড়ক দুর্ঘটনায়  প্রতিদিন  কত লোক প্রাণ হারায়, কতজন আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে তার সঠিক  হিসাব নেই কারোর কাছে। দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাদের  সাধ্যমতো প্রতিদিনের সড়ক দুর্ঘটনার যে সব চিত্র তুলে ধরে তা রীতিমতো ভয়াবহ, উদ্বেগজনক। সড়ক দুর্ঘটনার বর্তমান পরিস্থিতি দেখে সড়কপথে যাতায়াতে মানুষের উৎকণ্ঠা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘর থেকে বেরিয়ে পৈতৃক প্রাণ নিয়ে ঘরে ফেরার ব্যাপারে সন্দিহান আমরা অনেকেই। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ নিয়ে কত সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, কলাম লেখা হয়। চলচ্চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন থেকে বারবার মিনতি জানানো হয়। পথে নামেন কত  মানুষ। কিন্তু কাজের কিছুই হয় না। দেশের অসংখ্য যাত্রী সড়ক দুর্ঘটনার কাছে রয়ে যায় একেবারে অসহায়। এক  পরিসংখ্যানে জানা যায়   যে, বিগত  তিন দশকে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন বেশ কয়েক হাজার। এর ফলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার বেশি। এসব ভাবা যায়!
বাংলাদেশে অপ্রতিরোধ্য সড়ক দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখলে নিম্নমানের সড়ক কাঠমো,  ত্র“টিপূর্ণ যানবাহন, অনিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক ব্যবস্থা  এবং অদক্ষ চালকের বেপরোয়া  যানবাহন চালানোকে চিহ্নিত করা যায়। এর মধ্যে অদক্ষ চালকের কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটে বলে প্রতীয়মান হয়। এ কথা অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশের সড়ক ও মহাসড়কের নির্মাণের প্রযুক্তিগত মান উন্নত ও আধুনিক নয়। অনেক সড়ক-মহাসড়কের নির্মাণকৌশল  খুব নিম্নমানের এবং কাঠামোগত ত্র“টিবিচ্যুতিরও শেষ নেই। আমাদের দেশের মহাসড়কগুলো যানবাহনের ঘনত্বের তুলনায় প্রশস্ত অপেক্ষাকৃত কম। মহাসড়কের পাশে পর্যাপ্ত শোল্ডার, প্রশস্ত উš§ুক্ত স্থান, উপযুক্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। বরং যান চলাচলের জন্য বরাদ্দকৃত ক্যারেজ-ওয়ের পাশেই থাকে বিশাল খাদ, জলাশয় বা সারি সারি গাছপালা। ফলে চালকের সামান্য অসতর্কতার কারণে বা একটি যানবাহন অন্যটিকে পাশ কাটাতে গিয়ে একটু বিচ্যুতি ঘটলেই খাদে পড়ে যায় অথবা পার্শ^বর্তী গাছে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এ যেন ডেকে বিপদ ডেকে আনা।  রাস্তার পাশে ড্রেনে সুষ্ঠু জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং ক্রস্-ড্রেনেজ সিস্টেমের অভাবে বর্ষাকালে পিচ্ছিল বা জলমগ্ন রাস্তায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা আরো  বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া সড়ক-মহাসড়কের পাশে নির্মাণ সামগ্রী রাখা, মহাসড়কের ওপর ধান শুকানো, গরু-ছাগল বাধা এমনকি পথচারীর অসতর্ক রাস্তা পারাপার দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। সড়ক-মহাসড়কে পর্যাপ্ত আধুনিক  ট্রাফিক আইন ও সিগনাল না থাকায়   নিরাপদে যানবাহন চালানো চালকের পক্ষে কষ্টকর  হয়ে পড়ে, যা পক্ষান্তরে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেশজুড়ে ফিটনেসবিহীন ত্র“টিপূর্ণ যানবাহনের অবাধ চলাচল এবং অবৈধ, ভুয়া লাইসেন্সধারী ড্রাইভারের দৌরাত্ম্য সড়ক দুর্ঘটনাকে যেন অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে। কোনো পরীক্ষা ছাড়াই অনভিজ্ঞ লোকের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে ড্রাইভিং লাইসেন্স! মানুষ মারার সনদ!! সড়ক-মহাসড়কে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বোঝাই করে গতি সীমার বাইরে যানবাহন চালানো সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হলেও তা দেখার কোনো লোক নেই। অদক্ষ চালকের অনিয়মবহির্ভূত ওভারটেকিং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ডেকে আনে জেনেও এর নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ!
বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন ১৭ হাজার কিলোমিটারের অধিক সড়ক-মহাসড়ক, কয়েক শ’ ব্রিজ, বেইলি ব্রিজ ও কালভার্টের অনেকটাই নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সড়ক নির্মাণকারী সংস্থাগুলোকে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ, মেরামত ও সংরক্ষণের ব্যাপারে সক্রিয়  হতে হবে। এ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণকারী কর্মকর্তা, প্রকৌশলী এবং নির্মাণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। যানবাহনের ফিটনেস সনদ এবং ড্রাইভারের লাইসেন্স প্রদানের ব্যাপারে অনেক অভিযোগ রয়েছে। অতি সম্প্র্রতি টিআইবির এক রিপোর্টে নতুন করে এ ধরনের অভিযোগ উঠে এসেছে।  বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কোনো রকম শৈথিল্য এবং দুর্নীতি প্রমাণিত হলে  কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। উন্নত বিশ্বের মতো ড্রাইভারের গাড়ি চালানোর যোগ্যতা অনুসারে প্রথমে লার্নার, তারপর প্রবেশনালি এবং সর্বশেষে চূড়ান্ত ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা চালু করা হলে তা চালকের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। যানবাহনে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বা মালপত্র বহনের ক্ষেত্রে গাড়ির মালিক এবং ড্রাইভারের  বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। বাংলাদেশে বর্তমানে সড়কপথ বিস্তৃত হয়েছে। সড়ক পরিবহন ক্ষেত্রে বিনিয়োগও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশজুড়ে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে বেড়েছে সড়কপথের গুরুত্ব। কিন্তু সড়কপথে যাত্রী নিরাপত্তা এবং সেবামান আদৌ উন্নত হয়নি। বরং সড়কপথে যাত্রীর জীবনঝুঁকি এবং যাত্রী হতাহতের হার দিনদিন বেড়েই চলেছে। অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী বা পঙ্গু হয়ে যাওয়া যাত্রীর পরিবারের কোনো আর্থিক সাহায্য পাওয়ার ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো যাত্রী বীমার বিধান। এমনকি দুর্ঘটনায় আহত যাত্রীকে চিকিৎসাসেবা প্রদানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে রাজি নয় কেউ। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে এর প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। সুষ্ঠু  তদন্তের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার   জন্য দায়ী ব্যক্তি বা সংস্থাকে শনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের কোনো উদ্যোগ অদ্যাবধি লক্ষ্য করা যায়নি। 
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি মানসম্পন্ন   সড়ক কাঠামো নির্মাণ , উন্নত  ট্রাফিক আইন ও সিগন্যাল ব্যবহারের নিশ্চয়তাবিধান করতে হবে। ফিটনেসবিহীন,ত্র“টিপূর্ণ যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা ছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব নয়। যানবাহনের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহনকারী গাড়ির চালক ও মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। ভুয়া লাইসেন্সধারী, অদক্ষ এবং ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারী যানবাহন চালককে যথাযথ শাস্তি প্রদান অত্যাবশ্যক। হাইওয়ে পুলিশকে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আধুনিক সাজসরঞ্জাম দিয়ে  সড়কে নিয়মিত টহল জোরদার করা হলে তা সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস করতে সক্ষম হবে। গাড়ি চালক, যাত্রী এবং সব ধরনের সড়ক ব্যবহারকারীর সচেতনতা বৃদ্ধি সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। এ লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এ ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। সড়ক যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী কার্যভার গ্রহণ করেছেন। বর্তমান সড়ক অবকাঠামোর বেহাল দশা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি উদ্যোগও নিয়েছেন। 

যানবাহন চালকের অদক্ষতার কারণে যে সড়ক দুর্ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলছে তা স্বীকার করেছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল মহল। কাজেই সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধেও মাননীয় মন্ত্রী বিশেষ দৃষ্টি দেবেন বলে জনগণ আশা করে। এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের অন্যতম চাবিকাঠি। উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর যাতায়াত, পণ্য সরবরাহ, শিক্ষার প্রসার এমনকি সাংস্কৃতিক বিনিময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করে একটি আধুনিক মানসম্পন্ন সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা  গেলে তা দেশের সামগ্রিক  উন্নয়নকে গতিশীল করবে। তাই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলের প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সকল আলোচনা, এভাবে বারবার লেখা যেন একেবারে অর্থহীন না হয়। 
বছর জুড়ে চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি
প্রয়োজন যথার্থ নজরদারী ও সমন্বয়ের
রাস্তার নির্মাণ কাজ, ভাঙা রাস্তার সংস্কার এবং পানির, গ্যাসের কিংবা বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির মধ্য দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে রাজধানী ঢাকা। এটা শহরের সম্বাৎসরিক ছবি। এসব কাজে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সমস্যা হয় নাগরিক জীবনে। বর্ষাকাল এলে সমস্যা আরো বাড়ে। বর্ষায় ধুয়ে যায় সারা বছরের কাজ। নিুমানের রাবিশ ও বিটুমিন দিয়ে করা কাজের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ে এ সময়। আবার শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ি। আবার নির্মাণকাজ। নষ্ট হওয়া এবং মেরামত, রাস্তা সংস্কারের এই চক্র পুনরাবৃত্ত  হতে থাকে বারবার, ক্রমাগত। পত্রিকাসূত্র থেকে জানা যায়, প্রতিবছর শুধু জলাবদ্ধতা আর অতিবৃষ্টির কারণে রাস্তা ও ড্রেনেজ লাইন মেরামতে সরকারের বহুকোটি টাকা গচ্চা যায়। নানাকারণে মেরামতির কাজ মানসম্মত না হওয়ায় পরবর্তী বছরের জলাবদ্ধতার সময় বা অতিবৃষ্টিতে এসব রাস্তা আবার নষ্ট হয়ে জনগণের ভোগান্তির কারণে হয়ে দাঁড়ায়। সারা বছরের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি যেমন জনগণের জন্য অন্তহীন দুর্ভোগের কারণ, তেমনি নিুমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সড়ক সংস্কারও পরবর্তী বর্ষাতে ভেঙে গিয়ে পথ চলতি মানুষের সংকটকে আরো ঘনীভূত করে তোলে। রাস্তা মেরামতের জন্য সিটি কর্পোরেশন বছরে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করে। এ টাকায় নষ্ট হয়ে যাওয়া রাস্তা ভালোভাবে মেরামত করার কথা থাকলেও চাঁদাবাজি, কমিশন বাণিজ্য ও অতিলোভের কারণে মূল টাকার এক-চতুর্থাংশও রাস্তার পিছে খরচ করে না ঠিকাদার। সামান্য ইট আর ইটের গুড়ার ওপর দিয়ে বালির প্রলেপ দিয়ে সংস্কার কাজ করা হলে তার যতটা স্থায়িত্ব হতে পারে তাই হয়। অর্থাৎ পরের বর্ষার আবার সে পুরানো চেহারায় ফিরে যায়। কমিশন নেয়ার কারণে এসব কাজের কোনা মনিটরিং থাকে না। ফলে পাঁচভূতের পকেটে যাওয়া ছাড়া এ টাকায় কোনো কাজের কাজ হয় না। বিদেশে রাস্তার জল গড়িয়ে দু’পাশের ড্রেনের মারফত বেরিয়ে যায়। আমাদের রাস্তাগুলো হয় ভিন্নরকম। দু’পাশ থাকে উঁচু, মধ্যটা নিচু। এছাড়া ড্রেন কোথাও অগভীর, কোথাও ড্রেনের মুখ থাকে বন্ধ। ফলে রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। জলাবদ্ধতার কারণে নষ্ট হয়ে যায় রাস্তা। নানারকম সরকারি কাজে বিশেষত গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির পাইপ বসানোর জন্য সংস্কার করা রাস্তাই ছ’মাসের মাথায় খুঁড়ে ফেলা হয়। এসব কাজের সমম্বয় করার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় এ দুর্ভোগও জনগণের ঘাড়ে এসে চাপে। ঢাকায় এখনো খোঁড়াখুড়ি চলছে। বাড়ছে জনগণের সংকট। আমরা মনে করি এ  ব্যাপারে সরকারের জরুরি সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। নির্মাণ কাজগুলোর সমন্বয়ক থাকা দরকার। দরকার মান তদারককারী কর্তৃপক্ষ। আর জনদুর্ভোগের কথা মনে রেখে কাজটাও হওয়া দরকার দ্রুতগতিতে। দক্ষ জনশক্তির সাহায্য নিলে নির্ধারিত বাজেটেই তা করা সম্ভব বলে আমাদের বিশ্বাস।

শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে হবে
ফারুক হোসেন
একটি লোমহর্ষক ঘটনা। ঘটনাটি বেশ পুরোনো হয়েছে। জাতীয় দৈনিকগুলো ফলাও করে ঘটনাটি সংবাদ হিসেবে পরিবেশন করেছে এবং ফলোআপও করেছে। রাজধানীর  মগবাজার দিলু রোডের এক বাসায় ওই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে ছিল। ১০ বছরের গৃহপরিচারিকা সোহাগী। জীবন বাঁচাতে নিত্যদিন তাকে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়। দৈনিক প্রয়োজনীয় ঘুমটুকুও তার হতো না।
এক গবেষণায় জানা যায়, বাংলাদেশে গৃহকর্মী ও শিশুরা দৈনিক ৯-১৮ ঘণ্টা কাজ করে। তারা গড়ে মাত্র ৫ ঘণ্টা ঘুমায়। গৃহকর্মী লিমা রহমান। সে সত্যিকার মা হয়ে উঠতে পারেনি। সোহাগী তার দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সোহাগীর গলায়, ঘাড়ে, হাতে পায়ে কাটা দাগ, আগুনের ছ্যাঁকা আর শরীরে শুকিয়ে থাকা রক্ত সেদিন প্রমাণ করেছে তার নির্যাতনভোগের। অত্যাচারে সে হাঁটা-চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। জানা গেছে তাকে ঠিকমতো খেতে দেয়া হতো না, গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়া হতো, শরীরে গরম পানি ঢেলে দেয়া হতো, কাঁচের চুড়ি ভেঙে তা দিয়ে হাত কেটে দেয়া হতো, শরীরে হারপিক ঢেলে দেয়া হতে ইত্যাদি। সে কি নির্মমতা। র‌্যাব নির্যাতনভোগী সোহাগীকে উদ্ধার করে এবং গৃহকর্মী ও তার স্বামী মশিউর রহমানকে গ্রেফতার করে। প্রশ্ন আসেÑ এই নির্মমতা আর অমানবিকতা শুধু গ্রেফতার আর সাজা  দিয়ে কি থামানো যাবে? সোহাগীর পর আরো কিছু গৃহকর্মী শিশু নির্যাতনের কথা পত্রিকায় উঠে এসেছে। সংবাদ মাধ্যমে আসা ছাড়াও নীরবে নিভৃতে আরো কত শিশু নির্যাতন ভোগ করছে তা কেইবা জানে? এখানে উত্থাপিত প্রশ্নটির উত্তর হচ্ছে ‘না’। কেনো কারণ, রাষ্ট্র-ব্যবস্থায় যদি গলদ থাকে তবে গ্রেফতার আর জেল-জরিমানা করে অপরাধ বন্ধ করা যায় না। রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হচ্ছে রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন। আমরা শিশু নির্যাতন ও শিশুশ্রম বন্ধে হৈ চৈ করি। রাষ্ট্রীয়ভাবে শিশু সপ্তাহ পালন করি। আসল জায়গায় হাত দিই না। তাই সবই হয় নিরর্থক। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা সনদ (১৮২) অনুযায়ী শিশুশ্রমের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো শিশুদের দাস হিসেবে ব্যবহার। বাংলাদেশ জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে বহুকাল আগেই স্বাক্ষর করেছে। এদেশে শিশু ও শিশু গৃহকর্মীদের বেলায় অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বারবার।
বাংলাদেশে ২০০৯ সালে জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালা প্রণীত হয়। সেই নীতিমালা গৃহকর্মীকে অনানুষ্ঠানিক খাতের চাকরি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। শ্রম আইন ২০০৬-এ শিশু গৃহকর্মীদের ব্যাপারে কিছুই উল্লেখ নেই। ফলে শিশু অধিকারের প্রশ্নে এই দুটি আইনের মারাÍক রকমের দুর্বলতা দেখা যায় এবং এই দুর্বলতাই বাংলাদেশে গৃহকর্মী শিশু নির্যাতন বৃদ্ধির একটি বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালা মূলত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা সনদ (১৮২)কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে শিশুকে দাস বানানোর সহায়ক শক্তি হিসেবেই ভূমিকা পালন করছে। গৃহকর্মী নিবন্ধন অধ্যাদেশ ১৯৬১তে গৃহকর্মীদের নিজ উদ্যোগে থানায় গিয়ে নাম নিবন্ধনের কথা বলা হয়েছে। অথচ এই অধ্যাদেশে গৃহকর্মীদের অধিকার সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। নিয়োগকর্তার কর্তব্য সম্পর্কের কিছু উল্লেখ নেই। এই অসম্পূর্ণ অধ্যাদেশ গৃহকর্মী ও শিশু গৃহকর্মীদের অধিকারকে ক্ষুণœœ করে এবং নির্যাতিত হওয়ার উপাদান হিসেবে কাজ করে। সরকার গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা ২০১০-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে। তাতেও শিশুদের গৃহকর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। শিশু গৃহকর্মীর অনুকূলে কতিপয় ধারা যুক্ত হয়েছে বা গৃহে শিশুশ্রমকে স্বীকৃতি দেয়ারই নামান্তর। একদিকে শিশুশ্রম বন্ধের কথা বলা আর অন্যদিকে শিশুকে শ্রমে যুক্ত রাখার সহায়ক আইন প্রণয়ন করা স্ববিরোধী হাস্যকর কাজ নয় কি? আইনি দুর্বলতায় শিশুকে শ্রম থেকে বাইরে রাখা যাচ্ছে না এবং এমনকি তারা দাসে পরিণত হয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অবশ্য শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হলে শিশু দণ্ডবিধি এবং শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর আওতায় বিচার চাইতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে নির্যাতিন শিশুদের পরিবার সব দিক দিয়েই দুর্বল থাকে। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা আইনের কাছে বিচার চাইতে আসে না। বরং নির্যাতন মেনে নিয়ে তারা আপোস-মীমাংসায় যায় এবং শিশু অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে শিশু বিষয়ক আইনসমূহের দুর্বল ধারাবাহিকতা শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতন বন্ধে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে। এ কারণে জরুরি হয়ে উঠেছে এ সকল আইনের কার্যকর সংস্করণের। গোড়াটাকেই উপটাতে হবে, আগা কেটে ফায়দা হবে না মোটেই।
লেখক: প্রভাষক, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ সদস্য টিআইবি সুজন