Year-19 # Issue-2 # 26 February 2012

পিলখানা হত্যাকাণ্ড ছিল সুদূর প্রসারী নীল নকশা: ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিডিআর ট্রাজেডি কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড বা জোয়ানদের বিদ্রোহ ছিলো না। এটা ছিলো একটি সুদূর প্রসারি নীল নকশা। এ জাতিকে সেবাদাস ও পরনির্ভশীল করতেই এই নীল নকশা করা হয়েছিলো।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে পিলখানা ট্রাজেডির তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শনিবার বিএনপি আয়োজিত এক স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধেও এতজন সেনা কর্মকর্তা নিহত হননি। এটা কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড বা জোয়ানদের বিদ্রোহ নয়। এটা ছিলো একটি সুদূর প্রসারি নীল নকশা। আর সে কারণে সরকার উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর জন্য নাসির উদ্দিন পিন্টুকে গ্রেফতার করেছে। যিনি কোনোভাবেই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। অথচ যারা সেসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছে তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। কারণ সরকার জনগণকে বোঝাতে চেয়েছে বিএনপি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু বিএনপি এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। এছাড়া এটা যদি নীল নকশাই না হবে তাহলে কেন আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলা হলো যে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে ৩৭ ভাগ জঙ্গী রয়েছে। এ থেকেই প্রমাণিত হয় এটা সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই না। বিএনপির এ নেতা বলেন, একদিকে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা ধ্বংস করা হয়েছে। অন্যদিকে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এক সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে সরকার। তিনি আরো বলেন, সরকারের ব্যর্থতার কারণে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কিন্তু দেশের আপামর জনসাধারণ এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। দেশের এখন যে দুঃসময় চলছে তা থেকে মুক্তি পেতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে।
সাবেক এই মন্ত্রী আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। কারণ এটা শুধু বিএনপি চায় না, ১৪ দলীয় মহাজোটের মধ্যেও একটা বড় অংশ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের পক্ষে রয়েছেন। এজন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার এখন শুধু বিএনপির দাবি নয় এটা গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য লে.জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, পিলখানা ট্রাজেডির যারা পরিকল্পনাকারী, যারা গডফাদার, যারা নায়ক, তাদেরকে আমরা দৃশ্যমান দেখতে চাই। তাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বি. জে. (অব.) আসম হান্নান শাহ, কল্যাণ পার্টির সভাপদি মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মে.জে.(অব.) ফজলে এলাহি আকবর, লে. কর্নেল (অব.) আবদুল লতিফ, মেজর (অব.) মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা বন্ধে ভারতের সঙ্গে বহু আলোচনা হলেও বর্তমান সরকার ব্যর্থ হয়েছে। নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্ত হত্যা নিয়ে যত বৈঠকই হোক, বাস্তবতা হচ্ছে সরকার সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ সময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সংসদ  সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর শরফত আলী সপু, ছাত্র দলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
‘যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কাউকে অবৈধভাবে আটক রাখা হয়নি’ 
নিজস্ব প্রতিবেদক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কাউকে অবৈধভাবে আটক রাখা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। ২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্র“প বাংলাদেশ সরকারের কাছে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক পাঠানো একটি চিঠির জবাবে তিনি এ কথা বলেন। জাতিসংঘের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের আইনগত সহযোগিতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এবং সাক্ষ্য গ্রহণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বিচারের পূর্বে আটকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের অবশ্যই আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা  মেনে চলতে হবে। ট্রাইব্যুনাল ৮ জন আসামির মধ্যে ৬ জনকে এক বছরের অধিককাল ধরে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন ছাড়াই আটক রেখেছে। এটা সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৯ অনুচ্ছেদ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদের ৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।
গতকাল শনিবার সোনারগাঁও হোটেলে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা জাতিসংঘের কাছ থেকে একটি চিঠি  পেয়েছি।  সে চিঠিতে বিনা কারণে আটক রাখার কথা উল্লেখ আছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং বিচার কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।  সুতরাং এটাকে বিনা বিচারে আটক বলা যাবে না।
তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ১০ বছরও আটক রাখার নজির আছে। যেমন, কম্বোডিয়ায় ছয় বছর আটক রেখেছে। আমাদের দেশে আটক সবাইকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। কোনো প্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে না। আদিবাসীদের ব্যাপারে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আইএলও কনভেনশনের ১৬৯ ধারায় বলা আছে, কোনো দেশকে দখলের পর অর্থাৎ কলোনি হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর যারা ওই দেশে বসবাস করে তারাই হচ্ছে আদিবাসী। কিন্তু আমাদের  দেশেতো এরকম কোনো পরিস্থিতি হয়নি। আমরা কেন তাদেরকে আদিবাসী বলবো। দেয়ার নট ইনডিজিনিয়াস,  দেয়ার ট্রাইব। সাংবিধানিকভাবে তাদের অধিকার রক্ষা করা হয়েছে। সংবিধানের ২৩ (এ) তাদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা হয়েছে। ডেথ পেনাল্টির ব্যাপারে তিনি বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক সংগঠন বলেছে এটা রহিত করার জন্য।ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দেয়ার জন্য। আমরা বলেছি আমাদের দেশে আর্থ সামাজিক এখনো ওই অবস্থায় যায়নি। সুতরাং ডেথ  পেনাল্টি রহিত করা যাবে না। তবে মৃত্যুদণ্ড অনেক কমেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, সরকার দুর্নীতি দমনে বদ্ধপরিকর। দুদককে শক্তিশালী করার জন্য আইনের সংশোধনী করা হচ্ছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচারবিভাগ স্বাধীন হয়েছে। এ কারণে নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচারের দায়িত্ব পালন করবে না। বিচারের দায়িত্ব পালন করবেন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা। ধর্ম পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক নাগরিক যার যার ধর্ম সঠিকভাবে পালন করছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসবে এ ধরনের  কোনো আইন সরকার করবে না। মানবাধিকার কমিশনের ব্যাপারে তিনি বলেন,  দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে মানবাধিকার কমিশন ওই বিষয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের  চেয়ারম্যান গ্রফেসর ড. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব  মোশাররফ  হোসেন ভূঁইয়া।সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
১ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি যানজট নিরসন সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্ত
সিদ্দিকুর রহমান
নির্ধারিত ১ মাস সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও রাজধানীর যানজট হ্রাস ও যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট স্থান উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এক মাসের মধ্যে পার্কিং এর নির্দিষ্ট স্থান উদ্ধার করা হবে মর্মে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল গত ১৮ জানুয়ারি যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে গঠিত সমন্বয় ও তদারক কমিটির সভায়। চলতি ফেব্র“য়ারি মাসের ১৮ তারিখ ১ মাস সময় শেষ হয়ে গেলেও পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট স্থান উদ্ধার করার জোরদার কোন কার্যক্রম শুরু হয়নি। সভায় আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করে যানযট সৃষ্টি করা যাবে না, গাবতলী হতে সদরঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধটি মার্চ মাসের মধ্যে যান চলাচলের উপযোগী করা হবে। এ লক্ষ্যে সড়কের উপরের প্রতিবন্ধকতাসমূহ এক মাসের মধ্যে অপসারণ করা হবে। এসব কার্যক্রম যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, ডিএমপি ও জেলা প্রশাসন। কিন্তু সিদ্ধান্ত ত্বরিৎ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিচালিত কার্যক্রম চলছে অত্যন্ত শ্লথ গতিতে। এতে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য অর্জিত হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রলম্বিত করার জন্য এরইমধ্যে প্রভাবশালী মহল তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে।  সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র থেকে আরো বলা হয়েছে, সড়ক ভবনে ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে গঠিত সমন্বয় ও তদারক কমিটির সভায় স্বরাষ্ট্র সচিব মনজুর হোসেন, সড়ক সচিব এমএএন সিদ্দিকসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, সংস্থা ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও কমিটির সদস্যগণও উপস্থিত ছিলেন। সেই সভায় নেয়া সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে আরো ছিল, আগামী এক মাসের মধ্যে রাজধানীর হাটখোলা রোড, ইত্তেফাক মোড় হতে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকাসহ পল্টন মোড় পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে অবস্থিত ভবনসমূহের পার্কিং এর নির্দিষ্ট অনুমোদিত স্থান উদ্ধার করা। এছাড়া নগরীর স্কুল ও কলেজসমূহের সামনে সৃষ্ট যানজট নিরসনের অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের প্রধান শাখায় শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহƒত গাড়ী বাধ্যতামূলকভাবে স্কুলের বেইজমেন্টে পার্কিং করার ব্যবস্থা করা। জিরো পয়েন্ট হতে প্রেসক্লাব-শাহবাগ-ফার্মগেট-মহাখালী হয়ে বনানী রেলক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার উপর নির্মিত ফুটওভারব্রিজসমূহ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু করা। এছাড়া এ রুটে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার সহজতর করতে রাস্তার পাশে নির্মিত ফেন্সিং এর ভাঙা ও ক্ষতিগ্রস্ত অংশ তিন মাসের মধ্যে মেরামত করা। 
জ্বালানী তেলের অপচয়ের কারণে সরকার আর্থিক ক্সতিগ্রস্ত হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
জ্বালানী তেলের অপচয়ের কারণে সরকার আর্থিক ক্সতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেই এ অপচয় বেশি হচ্ছে। অথচ মোটা অংকের ভর্তুকি দিয়ে সরকারকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে। প্রতি দিনই বাড়ছে দায়। কোনো কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেভাবে অতিরিক্ত জ্বালানী তেল ব্যবহার করা হচ্ছে অনেকেই সেটাকে অপব্যবহার হিসেবে চিহ্নিত করছেন। গত এক বছরে ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে প্রায় ১২০ কোটি টাকার বেশি জ্বালানি তেল ব্যবহার করেছে বলে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে। দেশের ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য বছরে প্রয়োজন প্রায় ২০ লাখ টন জ্বালানি তেল। কিন্তু কয়েক দফা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরও সরকারকে এখনো প্রতি লিটার ডিজেলে প্রায় ১২ টাকা এবং ফার্নেস অয়েলে ৯ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এসব জ্বালানি তেল সবটুকুই আমদানি করতে হয় বৈদেশিক মুদ্রায়। কিন্তু দেশে ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে যে পরিমাণ জ্বালানি তেলের অপচয় বা অপব্যবহার হিসাব পিডিবি দিচ্ছে, প্রকৃত হিসেবে এর পরিমাণ আরো অনেক বেশি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রিজার্ভ ট্যাংকে ঢোকানোর সময় কত তেল ঢোকানো হলো সে হিসাবের জন্য ডিজিটাল ফ্লো মিটার ব্যবহার করার কথা।
 কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা না করেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রিজার্ভ ট্যাংকে জ্বালানি তেল ভরা হচ্ছে। সূত্র জানায়, গত ১১ মাসে একটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রই চাহিদার চেয়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকার বেশি জ্বালানি তেল ব্যবহার করেছে। তাছাড়া অন্যান্য ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর প্রতিটিই ২ থেকে ৮ কোটি টাকার বেশি জ্বালানি তেল ব্যবহার করছে। তবে একটিমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৭১ হাজার টাকার বেশি জ্বালানি তেল ব্যবহার করেছে, যা মানানসই। এর কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যান্ত্রিক ও কারিগরি কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি তেলের ব্যবহার বাড়ছে। কারণ অনেক ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রই যন্ত্রপাতি কিনে ঠকেছেন। এসব যন্ত্রপাতি যেরকম সার্ভিস দেয়ার কথা বলা হয়েছিল কার্যক্ষেত্রে তা পাওয়া যাচ্ছে না।  দেশে এখনো বিদ্যুতের ঘাটতি বিদ্যমান। এ পরিস্থিতিতে প্রতি বছর অপচয় হওয়া জ্বালানি তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে তা দেশের অর্থনীতিতে আরো বেশি ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারতো। কিন্তু তা না হওয়ায় সরকার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে অপচয় হওয়া জ্বালানি তেলের দাম কেটে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তারপরও সরকারের লোকসান ঠেকানো যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত সরকার ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টাল মিলে মোট ২০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এর মধ্যে ২৬৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩টি ভাড়াভিত্তিক ও ১ হাজার ১৩৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৪টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। আর বাকি ৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এদিকে পিডিবি জ্বালানি তেল অপচয়কারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিল থেকে বাড়তি তেল ব্যবহারের বিপরীতে টাকা কাটতে শুরু করেছে। অন্যান্য কোম্পানির বিল থেকেও বাড়তি জ্বালানি তেলের টাকা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। কারণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হচ্ছে ভর্তুকি দামে। আর ওই তেল বেশি ব্যবহার বা অপব্যবহারে বিপরীতে যে টাকা কেটে নেয়া হবে তা জ্বালানি তেলের প্রকৃত দাম নাকি ভর্তুকি দাম তা খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ ইতিমধ্যে মোটা অংকের ভর্তুকি দিয়ে জ্বালানি তেল আমদানি করতে গিয়ে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের। এ প্রসঙ্গে পিডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, প্রতিটি ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত জ্বালানি তেলের জন্য চুক্তি করা হয়েছে। কিন্তু ওসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি জ্বালানি তেল ব্যবহার করছে। এ কারণে চুক্তি অনুযায়ী বাড়তি জ্বালানি তেলের দাম ওই কোম্পানির বিদ্যুৎ বিল থেকে কেটে নেয়া হবে।
সাগর-রুনি হত্যা: সাংবাদিকদের কর্মসূচি ঘোষণা
২৭ ফেব্র“য়ারি কর্মবিরতি: ১ মার্চ গণঅনশন
নিজস্ব প্রতিবেদক
সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে ২৭ ফেব্র“য়ারি এক ঘণ্টা কর্মবিরতি এবং ১ মার্চ অনশনের  ঘোষণা দিয়েছে সাংবাদিকরা। গত বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের সব সংগঠনের এক সমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজ) একাংশের সভাপতি ইকবাল  সোবহান চৌধুরী।
তিনি জানান, ২৭ ফেব্র“য়ারি দুপুর ১২টা  থেকে ১টা পর্যন্ত দেশের সব সংবাদপত্র,  টেলিভিশন, বার্তা সংস্থা, অনলাইন সংবাদপত্রসহ সব ধরনের সংবাদ মাধ্যমে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালিত হবে। সেই সঙ্গে কালো ব্যাজ ধারণ করবে সাংবাদিকরা। এছাড়া ১ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত জাতীয়  প্রেসক্লাবে প্রতীকী অনশন হবে। সারাদেশে সব  প্রেসক্লাবেও পালিত হবে একই কর্মসূচি। এর মধ্যে সাগর-রুনির হত্যাকারীরা গ্রেফতার না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দেন ইকবাল  সোবহান।
সাগর ও রুনি হত্যাকারীদের চিহ্নিত এবং গ্রেফতারের জন্য ২২ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ডেকেছিল সাংবাদিকদের চারটি সংগঠন বাংলাদেশ  ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), জাতীয়  প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। গত ১১ ফেব্র“য়ারি  ভোররাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন মাছরাঙা  টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি। ১১ দিনেও খুনিদের চিহ্নিত কিংবা গ্রেফতার না হওয়ায় বুধবারের সমাবেশ থেকে কর্মবিরতি ও অনশনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশে এদিন সাংবাদিকরা প্রতিবাদ সভা করে। জাতীয়  প্রেসক্লাবের সামনে বেলা ১১টায় সমাবেশ শুরু হয়। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সমাবেশ চলাকালে  প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে পল্টন পর্যন্ত সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। বিএফইউজে ও ডিইউজের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলপন্থী আলাদা কমিটি থাকলেও ১৯৯০ সালের পর এবারই প্রথম সবগুলো ধারার সাংবাদিক সংগঠন একজোট হয়ে কর্মসূচি পালন করছে। প্রবীণ সাংবাদিক ও রাজনীতিক নির্মল  সেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সমাবেশে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। এছাড়া রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক প্রবীণ সাংবাদিক এ বি এম মূসা টেলিফোনে এই কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। সমাবেশে ইকবাল সোবহান বলেন, এর মধ্যে (১ মার্চ) খুনিরা  গ্রেফতার না হলে আরো বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হব। আমরা আশা করব, পুলিশ প্রশাসন আর ধূম্রজাল সৃষ্টি না করে অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করবে। আমরা বলব, খুনি যদি নিজেদের মধ্যেও হয়ে থাকে, তাকেও ধরতে হবে। খুন করার পর ওই খুনি আর সাংবাদিক থাকে না। বিএনপি সমর্থিত বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, কোনো  চোরাবালি দিয়ে রুনি-সাগর হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেয়া যাবে না। এর রহস্য উদঘাটন করে দ্রুত খুনিদের গ্রেফতার করতে হবে। আমরা সাংবাদিকরা আজ ঐক্যবদ্ধ। এখন প্রতীকী কর্মসূচি দিচ্ছি। খুনিরা গ্রেফতার না হলে ভবিষ্যতে  ঘেরাও আন্দোলনে যেতে আমরা বাধ্য হব। সমাবেশ থেকে সারাদেশে এর আগে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারও দাবি করা হয়।
ইকবাল সোবহানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি ওমর ফারুক, অন্য অংশের সভাপতি আবদুস শহীদ, একাংশের সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ, অন্য অংশের সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা প্রমুখ। সমাবেশে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, শাহজাহান মিয়া, আলতাফ মাহমুদ, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, কার্তিক চ্যাটার্জি, শাহ আলমগীর, আবদুল জলিল ভূঁইয়া, সাইফুল ইসলাম তালুকদার, জাকারিয়া কাজল, এম এ আজিজ, সাইফুল আলম, এম আবদুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশের পর একটি বিক্ষোভ মিছিল জাতীয় প্রেসক্লাব  থেকে সার্ক ফোয়ারা হয়ে তোপখানা সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
 মুনাফেকরা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া ক্ষমতায় গেলে আর প্রতিহিংসার রাজনীতি করবেন না বলে জানিয়েছেন। এ কথা বলে তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতি করতেন। তবে শেষ মুহূর্তে হলেও তার  বোধোদয় হয়েছে, এজন্য সাধুবাদ জানাই। মহান একুশে ফেব্র“য়ারি উপলক্ষে গত বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি একদিকে বললেন- ক্ষমতায় গেলে প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না, আবার বললেন-সরকারকে লুলা-ল্যাংড়া করে দেবেন। তাহলে তার  কোনটি সত্য? তিনি কি সত্য কথা বলবেন না? মুনাফেকের মতো শুধু মিথ্যাই বলে যাবেন। এই মুনাফেকরা যেন আগামীতে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের ভোটে আমরা নির্বাচিত হয়ে এসেছি। জনগণ ভোট দিয়ে আমাদের ক্ষমতায় আসার সুযোগ করে দিয়েছে। আমাদের লুলা-ল্যাংড়া করা মানে যারা আমাদের ভোট দিয়েছে তাদেরকে, তথা সারাদেশকে লুলা-ল্যাংড়া করা। বিরোধী দলের নেতার কথা ও কাজের কোনো মিল নেই মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, সাত্তার সাহেবকে হটানোর জন্য তিনি এরশাদ সাহেবের সঙ্গে যোগ দেন। কিন্তু সাত্তারকে হটিয়ে এরশাদ সাহেব একাই ক্ষমতা দখল করলেন। ভাবী সাহেবকে (বেগম জিয়া) আর নেননি। আরেকবার  সেপাই-জনতার ডাক দিয়ে বায়তুল মোকাররম থেকে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু সেপাইও বেরিয়ে আসেনি, জনতাও জাগেনি। বাসা থেকে বেরিয়ে তিনিও উধাও হয়ে গেছেন। পরে এরশাদ সাহেব পূর্বার্ণী হোটেলের দরজা  ভেঙ্গে তাকে বের করে আনলেন। বিডিআর বিদ্রোহের সময়ও তিনি কালোগ্লাসের গাড়ি করে বের হয়ে গেলেন। কয়েকদিন তার খোঁজ ছিলো না। ওই ঘটনার সঙ্গে তার কি যোগসূত্র তা জানা দরকার। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া দুর্ঘটনা ঘটিয়ে আর লাশের ওপর পা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চান। আর যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে চান। উনি যুদ্ধাপরাধীদের অত্যাচার-নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের কথা ভুলে গেলেন কিভাবে? এই মাটির সন্তান হয়েও যারা হত্যা-লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করেছে। মানুষকে তুলে নিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছেন। তাদের দোসর হিসেবে যারা কাজ করেছে তারাই প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বা হানাদার বাহিনীর তারা ছিলো হুকুমের গোলাম। ওপর থেকে যে হুকুম  পেয়েছে সেটা করেছে। বিরোধী দলের নেতা এসব ভুলে গেলেন কি করে। তাদের বাঁচানোর জন্য তিনি কেন এত তৎপর। তার কিসের এত দরদ? বিরোধী দলের তোলা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের নেতা একবার বললেন- পাগল আর শিশু ছাড়া  কেউ নিরপেক্ষ নয়। আবার ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেন। এখন আবার হঠাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাচ্ছেন। তিনি যে তত্ত্বাবধায়ক তত্ত্বাবধায়ক করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে কি তাকে কোলে তুলে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে? নাকি উনি দৌড়ে গিয়ে ক্ষমতায় বসবেন? আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ প্রমুখ।
রাজধানীতে সফটওয়্যার মেলা শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের সফটওয়্যার শিল্পের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী বেসিস সফটএক্সপো-২০১২ শুরু হয়েছে। গত বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে  মেলার উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, কাওরান বাজারের জনতা টাওয়ারের শিগগিরই সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক চালু হবে। ভালো কর্মসংস্থানের জন্য সেবার মান উন্নয়নের প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেবা খাতে বেশ প্রবৃদ্ধি হয় তবে অনেক ক্ষেত্রেই সেবা খাত তেমন উন্নত নয়। আর উন্নত সেবা খাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে তথ্যপ্রযুক্তি। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের মেলা বেশ সহায়ক উল্লেখ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সফটওয়্যার রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা অনেক এগিয়েছি। আমাদের ভবিষ্যৎ তরুন প্রজš§ এ খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মাহবুব জামান বলেন, খুব শিগগিরই পেপ্যাল আমাদের দেশে কাজ শুরু করবে বলে পেপ্যাল কতৃপক্ষ আশ্বস্থ করেছে। এছাড়া গ্লোবাল আইটি আউটসোর্সিংয়ে আমরা ইতিমধ্যে বিশেষ জায়গায় আছি।এবারের সফটএক্সপোতে দেশি-বিদেশি প্রায় ১৪০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। রয়েছে ৮০টির বেশি সেমিনার, টেকনিক্যাল সেশন, ওপেন সেশন ও বিজনেস ম্যাচমেকিং প্রেজেন্টেশন।প্রদর্শনীস্থল বিজনেস সফটওয়্যার, আউটসোর্সিং, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, ক্লাউড এন্ড কমিউনিকেশন, আইটি এনাবেলড সার্ভিস, আইটি এডুকেশন ও ই-কমার্স জোন- এই ৭টি অংশে ভাগ করা হয়েছে।
প্রদর্শনীতে তরুণদের জন্য প্রতিযোগিতা ‘‘আবিস্কারের খোঁজে”, প্রোগ্রামারদের জন্য প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ‘কোড ওয়ারিয়রস চ্যালেঞ্জ’ এবং চাকরির মেলারও থাকছে।মেলায় ঢোকার টিকেটের দাম ৫০ টাকা। তবে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিনা টিকেটে ঢুকতে পারবে। ২৬ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা চলবে এ মেলা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সালে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ অবৈধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
গতকাল সোমবার হাইকোর্ট বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এ রায়ের আলোকে যাঁদের নিয়োগ বাতিল হয়েছে তাঁরা নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে দরখাস্ত করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের বয়সের শর্ত শিথিলযোগ্য হবে। পরবর্তী নিয়োগের জন্য ন্যূনতম পাঁচটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। পক্ষভুক্ত (চাকরিচ্যুত) হওয়া ব্যক্তিরা পুনরায় চাকরির জন্য দরখাস্ত করতে পারবেন। তাঁদের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। তবে চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা এত দিন ধরে যেসব বেতন-ভাতা পেয়ে আসছিলেন, তা ফেরত দিতে হবে না বলে আদালত অভিমত ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে রায় ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী জাফর আহমেদ রায়ের পর বলেন, ২০০৪ সালে পাঁচটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এর ফলে কতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিচ্যুত হলেন এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন এ সংখ্যা প্রায় এক হাজার ১০০ হতে পারে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বলেন, আদালত নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে আট দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ-সংক্রান্ত অর্গানোগ্রাম আইনগতভাবে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনের পর নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে বলা হয়েছে। আদালতে আ ক ম মোজাম্মেল হকের পক্ষে আইনজীবী কামাল হোসেন ফজলে রাব্বী মিয়ার পক্ষে আবদুর রব চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে জাফর আহমেদ শুনানি করেন। চাকরিচ্যুতদের পক্ষে আইনজীবী রফিকুল হক, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, খায়ের এজাজ মাসউদ ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় মামলা পরিচালনা করেন।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব কর্মকর্তা-কমচারী নিয়োগ পান। ওই সব নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য এমপি ফজলে রাব্বী মিয়া একটি রিট আবেদন করেন। ২০০৬ সালে হাইকোর্ট রিট আবেদন খারিজ করে দিয়ে নিয়োগকে বৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চে ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন ভূমি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে ওই সব জনবলকে কোনো রকম বিলম্ব ছাড়াই অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় এই রায়ের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুত ৮০৭ জন পৃথক তিনটি আপিল অনুমতির আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন। লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে গত ৪ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মূল রিটটি হাইকোর্টে নিস্পত্তি করতে আদেশ দেন। একই সঙ্গে বিষয়টি নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ ও চাকরিচ্যুতির বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতেও বলা হয়। পরবর্তীকালে হাইকোর্টে মূল রিটের ওপর শুনানি হয়। তিন সপ্তাহ শুনানি নিয়ে আদালত বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। এরপর আজ আদালত এ রায় দেন।
সাঈদীর বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিলেন সাইফ হাফিজুর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের ২৭তম সাক্ষী সাইফ হাফিজুর রহমান। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হলে সাইফ হাফিজুর রহমান জবানবন্দি দেন। পরে তাঁকে জেরা শুরু করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ৫ মে তাঁর ভাই পিরোজপুরের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফ মিজানুর রহমান, সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান আহমেদ (হুমায়ূন আহমেদের বাবা) ও আবদুর রাজ্জাককে পাকিস্তানি সেনারা ধরে নিয়ে গিয়ে বলেশ্বর নদীর পারে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরে তিনি (সাইফ হাফিজুর রহমান) পিরোজপুরে গিয়ে খান বাহাদুর মো. আফজাল এবং অন্যদের কাছ থেকে জানতে পারেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আবদুল মন্নাফসহ অন্য রাজাকাররা তাঁর ভাইসহ অন্যদের চিনিয়ে দিয়েছিল।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
একুশের চেতনা বিরোধীরা স্বাধীনতার শত্র“
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশের চেতনা সমুন্নত রাখতে সজাগ থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যারা ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের চার নীতি অস্বীকার করে তারা স্বাধীনতার শত্র“। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘একুশে পদক ২০১২’ প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে এ আহ্বান জানিয়ে আরো বলেন, অমর একুশ ও স্বাধীনতার শত্র“দের মোকাবেলা করতে নতুন প্রজšে§র মাঝে একুশের চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে। এজন্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ও স্তরে পৌঁছে দিতে হবে। শেখ হাসিনা একুশের চেতনাকে স্মরণ করে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মহান একুশে ফেব্র“য়ারির সেই রক্তস্নাত গৌরবের সুর আজ বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মানুষের প্রাণে অনুরণিত হয়। একুশে আজ বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষার অধিকার রক্ষার দিন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘একুশে পদক’ প্রবর্তন করা হয়। নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালের একুশে পদক প্রদানের জন্য সরকার ১৫ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া একুশে পদক প্রাপ্তগণের জীবনবৃত্তান্ত পড়েন এবং পদক প্রদান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তথ্য এবং সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন। মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যরা, বিদেশি কূটনীতিক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয়েও একুশের চেতনা শক্তি যুগিয়েছে। পঞ্চাশের দশক থেকেই ভাষা আন্দোলন স্বাধিকার আন্দোলনে রূপ নেয়। তিনি বলেন, তাঁর সরকার বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে এবং এলক্ষ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।  শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আইন প্রণয়ন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বলেন, চলতি মাস থেকে সকল ব্রান্ডের বেসিক মোবাইল হ্যান্ডসেটে পূর্ণাঙ্গ বাংলা কি-প্যাড সংযোজন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডটবিডি (নফ)-এর পাশাপাশি ২য় কান্ট্রি কোডেড টপ লেবেল ডোমেইন হিসেবে ডটবাংলা (.বাংলা) চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার উšে§ষ। এই চেতনাকে ধারণ করে জাতির পিতা ১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে অন্যতম মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৭৫-এর পর সামরিক সরকার সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে। একুশের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসিত করে। বর্তমান সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বাঙালির গৌরবগাথা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ প্রদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব অঙ্গনে বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য বঙ্গবন্ধু বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। জাতির পিতাকে অনুসরণ করে আমিও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ হচ্ছে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাঙালির আত্মত্যাগের বীরত্ব কাহিনী। একুশ বাঙালির সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকাচার ও জীবনবোধের স্বাতন্ত্র সংরক্ষণের প্রেরণা। একুশ বাঙালি জাতির চেতনা ও গৌরবের উৎস। তিনি বলেন, একুশ আমাদের অহংকার। আমাদের সামগ্রিক পরিচয়। শেখ হাসিনা ভাষা শহীদ বীর সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউর ও অন্যদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বারবার কারাবরণকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। প্রধানমন্ত্রী তদানিন্তন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি প্রথম উত্থাপনের জন্য ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত এবং ভাষা আন্দোলনে তমদ্দুন মজলিস, ছাত্রলীগ ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শেখ হাসিনা পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে শুভেচ্ছা জানান। এই পুরস্কার তাদের দীর্ঘদিনের সাধনা, মেধা ও পরিশ্রমের স্বীকৃতি এবং এতে তাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেলো এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশে আপনারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।  পদক পেলেন ১৫ জন: এবার শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য একুশে পদক পেয়েছেন অধ্যাপক এ কে নাজমুল করিম, শিল্পকলায় তারেক মাসুদ ও মোবিনুল আজিম, ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য মমতাজ বেগম, ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ এবং সাংবাদিকতায় এহতেশাম হায়দার চৌধুরী ও আশফাক মুনীর। এ সাতজনই মরণোত্তর এই পদক পেলেন। এছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে ড. মনসুরুল আলম খান ও অধ্যাপক অজয় কুমার রায়, শিল্পকলায় অধ্যাপক করুণাময় গোস্বামী, মামুনুর রশীদ ও ড. ইনামুল হক, সমাজ সেবায় শ্রীমৎ শুদ্ধানন্দ মহাথের, সাংবাদিকতায় হাবিবুর রহমান মিলন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক বরেণ চক্রবর্তী চলতি বছরের একুশে পদক পেলেন। সবাই একটি করে স্বর্ণপদক, এক লাখ টাকা, সম্মাননাপত্র পেয়েছেন। মর্যাদাপূর্ণ এ পদকের জন্য মনোনীতদের নাম গত ৯ ফেব্র“য়ারি প্রকাশ করে সরকার। 
 মধ্যরাতের অশ্বারোহী ফয়েজ আহমদের চিরপ্রস্থান
নিজস্ব প্রতিবেদক
সাংবাদিকতা, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক আন্দোলন আর সাম্যবাদের সংগ্রাম- জীবনের শাখায় শাখায় বলিষ্ঠ বিচরণ শেষে চিরবিশ্রামে গেলেন ফয়েজ আহমদ, যিনি মৃত্যুর আগে দান করে গেছেন নিজের চোখ ও দেহ। তার ব্যক্তিগত সহকারী আতিকুর রহমান সোহেল জানান, ৮৪ বছর বয়সী ফয়েজ আহমদ দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। অসুস্থ বোধ করায় গতকাল ভোরে তাকে বারডেম হাসপাতালে নেয়া হয়। ৫টার দিকে চিকিৎসকরা জানান, তিনি আর নেই। ১৯২৮ সালের ২ মে মুন্সীগঞ্জে জš§গ্রহণ করেন ফয়েজ আহমদ। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান সম্পাদক ফয়েজের হাত ধরেই পিকিং রেডিওতে (বর্তমান বেইজিং রেডিও) বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন তিনি। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছাড়াও পরবর্তীতে নব্বইয়ের  স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন ফয়েজ আহমদ।
খ্যাতিমান এই সাহিত্যিকের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক। তার চার খণ্ডের প্রবন্ধ সঙ্কলন ‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’ ব্যাপক পরিচিতি পায়। শিশুদের জন্যও লিখেছেন বিস্তর। সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমী ও শিশু একাডেমী পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য পেয়েছেন একুশে পদক। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন ফয়েজ আহমদ। ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সাংবাদিকতা-সাহিত্য-রাজনীতিসহ বহু ধারায় বিচরণকারী এই মানুষটির নিজের সংসার করা হয়নি। চার ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতায় পূর্ণ এই মানুষটি মৃত্যুর আগেই তার চোখ সন্ধানীতে এবং দেহ বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজকে দান করে গেছেন। আতিকুর রহমান সোহেল জানান, সকাল ৯টায় পর হাসপাতাল থেকে ফয়েজ আহমদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ধানমণ্ডির শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে। তিনি ছিলেন এই গ্যালারির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, আওয়ামী লীগ নেতা ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, গ্যালারি চিত্রকের পরিচালক মনিরুল ইসলাম ও বেঙ্গলের সুবীর চৌধুরী শেষবারের মতো ফয়েজ আহমদকে দেখতে শিল্পাঙ্গনে যান। কামাল লোহানী বলেন, “ফয়েজ ভাই সারাজীবন আদর্শিক রাজনীতির অনুসারী ছিলেন। তার লেখায় ও চলনে তার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি সারাজীবন যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দেখে যেতে পারলে তিনি হয়তো শান্তি পেতেন।’ রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি এবং দেশ গঠনে সব সময় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন ফয়েজ আহমদ।’ ফয়েজ আহমদের প্রথম জানাজা হয় দুপুর ১২টায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আফজাল আহমেদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় গণফ্রন্টের সভাপতি টিপু বিশ্বাস এবং বিভিন্ন সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা এ সময় তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। এরপর ফয়েজ আহমেদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে। সেখানে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এক মিনিট নিরবতা পালন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের পক্ষে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, বিএনপির পক্ষে ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষে আসাদুজ্জামান নূর, এফডিসির মহাপরিচালক ম হামিদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির, নাট্য ব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, আলী জাকের, চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, ভাস্কর শামীম শিকদার, অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বাহাউদ্দিন নাছিম এ সময় ফয়েজ আহমদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ফয়েজ আহমদ ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গণআদালত গঠনে তিনি ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা। আমরা তার দেখানো পথেই চলব।’ নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘দেশের সাংস্কৃতিক কর্মী ও রাজনৈতিক কর্মীদের একত্রিত করে ফয়েজ আহমদই আমাদের শিখিয়েছেন- কীভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয়।’
অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ঘোষণা দেয়া হয়, আগামী ২৫ ফেব্র“য়ারি বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফয়েজ আহমদ স্মরণে নাগরিক শোকসভার আয়োজন করা হবে। বেলা ২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ফয়েজ আহমদের কফিন নিয়ে যওয়া হয় পল্টনে কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয়ে। সেখানে বাম দলগুলোর পক্ষ থেকে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। সিপিবির সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাম্যবাদী দলের পক্ষে দিলীপ বড়–য়া, ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষে রাশেদ খান মেনন ছাড়াও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ড. মঈন খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী ও সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারও তাদের এই সাবেক সহকর্মীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান এ সময়। আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেন, আগামী যে কোনো সংগ্রামে ফয়েজ আহমদ এ জাতির জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। শ্রদ্ধা জানানো শেষে সিপিবি কার্যালয়ের সামনেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম হোসেনের উপস্থিতিতে গার্ড অব অনার দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয় ফয়েজ আহমদের প্রতি। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। সবশেষে ফয়েজ আহমদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশ মেডিকেলে, যেখানে দেহ দান করে যাওয়া ছিল তার শেষ ইচ্ছা।
প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
ফিদা হাসান রিসলু
কিছু কিছু দিন আসে, হারানো দিনের মতো হারিয়ে যায় না কখনো। কিছু কিছু স্মৃতি থাকে, ফেরারি সুখের মতো পালিয়ে যায় না কখনো। বায়ান্নর ২১  ফেব্র“য়ারির মহান ভাষা আন্দোলনের সেই দিনটি তার তাৎপর্যবহ ভূমিকার পথ বেয়ে-বেয়ে আমাদের স্বাধিকার, স্বাধীনতা সর্বোপরি সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবিনাশী স্মৃতি হয়ে আজো অম্লান-অক্ষয় হয়ে আছে। একুশের মহত্ত্ব এত বেশি প্রগাঢ় যে, দেশের গণ্ডি ছড়িয়ে বিশ্ব মাঝে তার ব্যাপ্তি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অভিধায় সমুজ্জ্বল।  দেশের এমন কোনো শহর-বন্দর-গ্রাম-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই, যেখানে পালিত হয় না শহীদ দিবস, অর্পিত হয় না শ্রদ্ধাঞ্জলি। এমনকি দেশের সীমানা পেরিয়ে যেখানেই রয়েছে বাঙালির সমাজ সেখানেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক। মূলত ভাষাভিত্তিক সেক্যুলার চেতনার উদ্গাতা হিসেবে আমাদের এই অবিস্মরণীয় কীর্তি আজ  বৈশ্বিক উদযাপনের সূর্যরাগে ঝলমল। বরকত, রফিক, সালাম, জব্বারদের রক্তস্নাত এই দিনটিকে সামনে রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো আমরা শ্রদ্ধার সরোবরে ভাসিয়েছি প্রাণের প্রণতি। নতুন করে উজ্জ্বীবিত হতে চেয়েছি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার প্রগাঢ় প্রতিজ্ঞায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এমন এক দীপ্তির আলোয় উদ্ভাসিত আমাদের প্রতিজ্ঞার পুষ্পাবলি দিনান্তের বহতায় হারিয়ে যায় দলিতের অস্ফুট ক্রন্দনে। অঙ্গীকারের এই অঙ্গচ্ছেদে আজো তাই সমাজের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের প্রচলন ঘটেনি। ইংরেজির প্রাতিষ্ঠানিক দাপটে কিংবা হিন্দি-উর্দুর মানস যাপনে বাংলার প্রকৃত প্রত্যয় আজ ম্রিয়মাণ। আইন প্রণয়ন হয় বাংলায় কিন্তু উচ্চ আদালতে তার কোনো প্রয়োগ নেই। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যবসা বাণিজ্যের বিবিধ কর্মে বাংলা ভাষার জায়গা নেই বললেই চলে। বেসরকারি সংস্থাসমূহেও একই অবস্থা বিদ্যমান। উচ্চবিত্তের আঙ্গিনা ছাপিয়ে মধ্যবিত্তের চিলেকোঠা পর্যন্ত শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি এখন সামাজিক মর্যাদার অংশ। উচ্চ শিক্ষার  ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার তেমন একটা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলা লিখতে না পারাটা অগৌরব বলে বিবেচিত নয়। একুশের বই মেলাকে কেন্দ্র করে আমাদের সংস্কৃতির যে বিস্তৃত প্রসারণ,  সেখানেও বাণিজ্যের বারোয়ারি আগ্রাসনে সৃজন আর মনন ক্রমশ সংকুচিত। জাতীয় অধ্যাপক, জ্ঞানসাধক আব্দুর রাজ্জাক বলতেন, যখন কোনো নতুন জায়গায় যাইবেন, দুটো বিষয় পয়লা জানার চেষ্টা করবেন। কাঁচাবাজারে যাইবেন, কি খায় এইডা  দেখনের লাইগ্যা আর বইয়ের দোকানে যাইবেন পড়াশোনা কী করে হেইডা জানোনের লাইগ্যা। বইয়ের দোকান পরখ করলেই বেবাক সমাজটা কোনো দিকে যাইতাছে, হেইডা টের পাওন যায়। প্রকট দারিদ্র্যের এই দেশে আমরা কী খাই আর কী খাই না, শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সকলেই তা অবগত। কিন্তু শিক্ষার অনগ্রসরতার কারণে পড়ালেখার বিষয়টিতে আমাদের অজ্ঞানতা রয়েছে। তুলনামূলকভাবে দারিদ্র্য জর্জর বইয়ের দোকানগুলো ছাপিয়ে সাড়ম্বরে উদযাপিত বইমেলার দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করলে দেখতে পাই,  দেশি-প্রবাসী অসংখ্য লেখকের লেখা শত শত বই প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাদের প্রকাশনা শিল্প অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু যেসব বই প্রকাশ পাচ্ছে আঙ্গিকের দিক দিয়ে  সেগুলোর সুশ্রী রূপ দেখা গেলেও বিষয় আর চিন্তার কৃপণতায় সেগুলি ব্যক্তি মানসের অভিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে পারছে না। অথচ ভাষা একটি জাতির নানাবিধ অভিজ্ঞতার ব্যবহারিক প্রকাশ। যে জাতির মানস এবং বস্তুগত অভিজ্ঞতা যত সমৃদ্ধ তার ভাষা ও বিষয় এবং চিন্তা ততটাই ধনবান। সেদিক থেকে জাতির জাগতিক উন্নতি-অবনতির সঙ্গে ভাষার সম্পর্ক নিবিড়। পৃথিবীর সকল সমৃদ্ধ ভাষা সমাজ জীবনের সমৃদ্ধায়নের ক্ষেত্রে হাতিয়ারের ভূমিকা পালন করেছে। রোমান সাম্রাজ্যের কাঠামো থেকে বের হয়ে এসে ইংল্যান্ড যখন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, সেই সময় দেশীয় ভক্ত খ্রীস্টানদের ধর্মতৃষ্ণা নিবারণ করার জন্য ল্যাটিন বাইবেলের ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন উইক্লি। আবার পাদ্রী-পুরোহিতের উৎপাতে মানুষের জীবনযাত্রা যখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল তারই প্রেক্ষিতে আধুনিক বস্তুবাদী দর্শনের পূর্বসূরি লর্ড বেকন তার অভিজ্ঞতাভিত্তিক দর্শনের সন্দর্ভগুলো রচনা করেন। ফরাসি এনসাইক্লোপিডিস্ট আন্দোলনের মনীষীদের কাজই ছিল জনগণকে জ্ঞান বিজ্ঞান-সৌন্দর্যের ব্যাপারে ধীমান এবং সচেতন করে তোলা। আধুনিক ফরাসি ভাষার সাবলীল প্রকাশ এবং সুষম অনুভূতির ধারক হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনে ফরাসি বিপ্লবের দার্শনিকদের অবদানকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখা হয়। এ  থেকে আমরা বলতে পারি, কোনো বিষয়ের জ্ঞান যতই প্রয়োজনীয় হোক না  কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সেটি সমাজের অধিকাংশ মানুষের চাহিদার বিষয় না হয়ে ওঠে, সমাজ সেটি ধারণ করতে পারে না। আমরা  জেনেছি, বৈজ্ঞানিক জগদীশ চন্দ্র বসু তার সমস্ত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফর্মুলা বাংলা ভাষায় লিপিবদ্ধ করবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সরে আসেন এ কারণে  যে, বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষাকে ধারণ করার মতো শিক্ষার্থী তখন ছিল না এবং সাধারণ মানুষের দুর্বোধ্য এই সব  বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পাঠক পাওয়া যেত না। এখানে দেখা যাচ্ছে, কোনো বিষয়ের ওপর ব্যাপক জ্ঞান থাকা কিংবা ভাষার মাধ্যমে প্রাঞ্জলভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতা থাকাটাই সর্বক্ষেত্রে ভাষার প্রসারকে প্রণোদিত করে না। কোনো জ্ঞান কিংবা বিদ্যা অনিবার্যভাবে সামাজিক চাহিদার পর্যায়ে না এলে সমাজে তার ব্যাপ্তি-বিকাশ ঘটে না।
সামাজিক চাহিদার সঙ্গে নিজস্ব চিন্তা চেতনার স্ফুরণ ঘটিয়ে রাজা রামমোহন রায় এবং ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যা সাগর আধুনিক বাংলা গদ্য সাহিত্যকে সুনির্দিষ্ট একটি ভিত্তি দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে তারা দু’জনই তাদের মতামত প্রকাশের হাতিয়ার হিসেবে বাংলা ভাষা কাজে লাগিয়েছেন। এক ঈশ্বরের আরাধনা, সহমরণ রদ, বিধবা বিবাহ প্রচলনের মতো সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে তাদের লেখনী দিয়েই বাংলা গদ্য সাহিত্য সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। এর বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা তাদের ছিল না। সেটি করতে গেলে পূর্ণাঙ্গ একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের সূচনা করতে হতো। ঐতিহাসিক কারণে তা ছিল সম্পূর্ণ অসম্ভব। পরবর্তীকালে বাংলাভাষা এবং সংস্কৃতির যতটুকু শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে, তাও হয়েছে সামাজিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের বাহন হওয়ার জন্য।  সেদিক থেকে ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সময়কাল ছিল বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য সংস্কৃতির বিকাশের সর্বোৎকৃষ্ট সময়। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইংরেজির মাধ্যমে হওয়ার কারণে পাশের হার দাঁড়াত প্রায় এক- তৃতীয়াংশ। ৫৫ সাল থেকে প্রশ্নপত্রে বাংলা মাধ্যম চালু হওয়ার কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার কমে আসতে থাকে। একইভাবে ’৫৭ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা মাধ্যম চালু হওয়ার পর ’৬৯ সালে এসে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা শুরু হয়। শিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা মাধ্যমের এই সমান্তরাল অগ্রগতি একদিকে যেমন শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে একইভাবে নিজস্ব অস্তিত্ব রক্ষার জাতীয়তাবাদী জাগরণে সেটি শাণিত হয়ে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির আঙ্গিনাতেও ফলাতে থাকে সোনালি ফসল। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, শওকত ওসমান, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আল-মাহমুদ, সত্যেন সেন, মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সারদের সঙ্গে সঙ্গে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আর মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে আগুনপাখি হয়ে বেরিয়ে আসেন হাসান আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হুমায়ুন আজাদ, আহমেদ ছফা, সেলিম আল দীন, আবুল হাসান, নির্মলেন্দু গুণদের মতো আরো অনেক প্রতিভাধর লেখক-সাহিত্যিক। রাজনৈতিক অঙ্গীকারে উদীপ্ত আন্দোলন কিংবা বিদ্রোহ-বিপ্লব মানুষের  চৈতন্যে কতটা শীষ দিয়ে যায়, তার দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন ইংরেজ কবি, গবেষক উইলিয়াম রাদিচে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সংবেদনশীল এই বিদেশিকে বাংলা ভাষার প্রতি এতটাই দরদী করে তোলে যে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় অনুবাদক হিসেবে তিনি বাংলা সাহিত্যের অংশ হয়ে আছেন। তাই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন একদিকে যেমন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রত্যয় একইভাবে বাংলা ভাষার উৎকর্ষ ও সৌকর্য বিকাশের ক্ষেত্রেও জমাট-বুনট নকশীকাঁথার প্রথম প্রণোদনা। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হলেও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন আজো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কেননা সমাজে যে জিনিসের চল নেই, তাকে চালু করতে হলে সমাজের কাঠামোর মধ্যে তাকে খাপ খাওয়ানোর জন্য নানা ভাঙচুর করে উপযুক্ত করে নিতে হয়। অর্থাৎ বিদ্যমান সমাজের বস্তুগত এবং মানসগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কোনো বিষয়কে গণমানুষের আত্মার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নিতে হয়। শুরু থেকেই এই জনপদের মানুষ ভাষা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে দুটি স্পষ্ট ধারায় বিভাজিত ছিল। একদল সব দিক দিয়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ও পাকিস্তানের নয়া ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের ধারাবাহিকতায় উৎপীড়িত আর অন্যদল সেই শোষণের ফায়দাটুকু লুট করার সুবিধা নিয়েছেন। যারা উৎপীড়িত হয়েছেন, তাদের ভাষা এখনো আদিম যুগের বাংলা ভাষাই রয়ে  গেছে। আর যারা সেই সব ক্ষমতাধরের সঙ্গে সহায়কের ভূমিকা পালন করেছেন তারা শিক্ষা-দীক্ষার সংস্পর্শে নিজেদের মুখের ভাষা আধুনিক ছাঁচে ঢালাই করে যাবতীয় সুবিধা নিয়েছেন। এভাবেই ঔপনিবেশিক শাসনের পক্ষপুটে বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সৃষ্টি। স্বাধীন দেশের সমাজ-রাষ্ট্রেও সেই শ্রেণীরই বিকৃত বিকাশ। লোভ-লালসা, কপটতা আর মিথ্যাচারিতা এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। সৃজনশীলতায় অক্ষম এরা অনুকরণপ্রিয়তায় পটু। এরাই সাম্রাজ্যবাদী-সম্প্রসারণবাদী শক্তির আনুকূল্যে একচেটিয়া লুটেরা পুঁজির প্রতিভূ হয়ে মনোজগতে উপনিবেশ গড়ে তুলেছেন। শিক্ষা-সংস্কৃতির অবয়বে দিয়েছেন ইংরেজি-উর্দু-হিন্দির প্রলেপ। অথচ এই প্রলেপগুলো বাংলা ভাষার শত্র“ নয়। ওই সকল ভাষা তখনই শত্র“র ভূমিকা পালন করে যখন তারা কোনো শোষক  শ্রেণীর সঙ্গে সচেতন অভিপ্রায়ে সম্পৃক্ত হয়। বিদেশি ভাষার প্রতি আমাদের সম্প্রসারিত আগ্রহের মধ্যে রয়েছে সেই অভিব্যক্তি। বাংলা নামে দেশ হয়ে ওঠা এই দুঃখিনী জনপদে বাংলা ভাষা তাই এখনো অবহেলিত-উপেক্ষিত। এমন এক সময়ে শরীরে-পোশাকে আখর সাজিয়ে কেনা ফুলের ডিজিটাল আলোয় ঝলমলে শহীদ মিনারের দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে যায় সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতাÑ ‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য/ এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা/ দুর্যোগে পথ হয় হোক দুর্বোধ্য/ চিনে নিবে  যৌবন-আত্মা’। 

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট


একুশ মানে মাথা নত না করা
আতাউর রহমান মিটন
ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে  ফেব্র“য়ারি,  কোনো ভাই-বোনই কখনো তা ভুলতে পারে না। কিন্তু মনে রাখার এই চেষ্টা যেন কেবল একুশে  ফেব্র“য়ারিকে ঘিরেই। মহান শহীদ দিবসকে ঘিরে আমাদের আনুষ্ঠানিকতা যত বাড়ছে ততটাই যেন কমছে মাতৃভাষার প্রতি আমাদের সম্মানবোধ, মাতৃভাষাকে বিকশিত করার, সর্বত্র সর্বোচ্চ মর্যাদায় ব্যবহারের আন্তরিক  চেষ্টার। হাল জামানার রাজনীতিতে সবাই ব্যস্ত আনুষ্ঠানিকতায়, বিবৃতি প্রদানে এবং ফুলে ফুলে শহীদ মিনারকে ভরিয়ে দিতে। এমনকি অনেক দলের সদস্যরাই চেষ্টা করে থাকেন শহীদ  বেদীতে নয়, নিজেদের ফুলের মালাটি মিনারের সর্বোচ্চ শিখরে সাজাতে। এতে করে শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট হলেও, শহীদদের প্রতি অমর্যাদা করা হলেও আনুষ্ঠানিকতার আবরণে মোড়া তথাকথিত রাজনৈতিক দলের সদস্যরা  সেদিকে  কোনো ভ্রƒক্ষেপ করতে রাজি নন। শহীদদের আত্মদানকে অন্তরে  গেঁথে নিয়ে তাদের প্রতি সত্যিকারের মর্যাদা প্রদর্শন করা দরকার, আনুষ্ঠানিকতার শ্রীবৃদ্ধি নয়। একুশে  ফেব্র“য়ারি  শেষ হলো। সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালুর দাবি এখন ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। কমতে থাকবে  নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতি। আবার আগামী বছরের  ফেব্র“য়ারি মাস এলে আমরা সবাই নড়েচড়ে বসব। আবার আলোচনা-সমালোচনা শুরু হবে। আমরা আবার কলম ধরব, হাপিত্যেশ করব সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু হলো না বলে। আমার ব্যক্তিগত সচেতনতার প্রায় আড়াই যুগ ধরে আমি এই সত্য দেখে আসছি। যে আন্দোলনটি হয়েছিল ষাট বছর আগে, যে আন্দোলন না হলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হতো না, যে আন্দোলনের  চেতনায় আমরা নব্বই এর গণঅভ্যুত্থান  পেলাম  সেই আন্দোলনের পাঁচ যুগ  পেরিয়ে  গেলেও সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালুর, জীবনের সর্বক্ষেত্রে মাতৃভাষাকে মর্যাদাদানের প্রচেষ্টায় অগ্রগতি অতি সামান্য। শহীদের আত্মদানের এমন অবমাননা আরো কতকাল দেখে  যেতে হবে কে জানে! দিন যত যাচ্ছে একটু সামর্থ্যবান সকল পরিবারের মধ্যেই তত ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষার  দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বাসায় ডিশ লাইন রয়েছে কিন্তু হিন্দি সিরিয়ালগুলোর প্রতি আকর্ষণ নেই এমনটি আজকাল আর দেখা যায় না। একইভাবে, সুযোগ থাকলে নিজের বাচ্চাটাকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে চায় না এমন মানুষের সংখ্যাও খুব  বেশি নয়। ইংরেজি ভাষা শেখা ও বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার মধ্যে কোনো বিরোধ  নেই। শিক্ষিত মানুষ মাত্রেরই একাধিক ভাষা  শেখা উচিত। আমাদের সন্তানরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ছে  সেটা নিয়ে বিতর্কের কারণ ইংরেজি ভাষা শেখার চেষ্টার জন্য নয়। বরং আমরা আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের মূল্যবোধ ও চেতনাকে যেভাবে ধীরে ধীরে ইংরেজি শেখার নামে দূরে ঠেলে দিচ্ছি সেটাই হলো সমালোচনার মূল কারণ। আমাদের বাংলা সাহিত্যের, বাঙালি জীবনের, বাঙালি সংস্কৃতির ধারক-বাহক মনীষীদের মধ্যে এমন কেউ নেই যিনি একাধিক ভাষা জানতেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, কবি শামসুর রাহমান, অধ্যাপক  মোস্তফা নূরউল ইসলাম, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রমুখ ব্যক্তিদের ইংরেজি ভাষাজ্ঞান প্রশ্নাতীত। খুব ভালোভাবে ইংরেজি বা অপর কোনো ভাষা শিখতে বাধা থাকতে পারে না। আপত্তি হলো নিজের সংস্কৃতি, চেতনা ও মূল্যবোধ ভুলে গিয়ে নিজেকে অন্যদের মধ্যে বিলীন করবার অপচেষ্টায়। বাংলা আমার মায়ের ভাষা, আমার মুখের ভাষা, আমার সন্তানের ভাষা। সেটা আমার অন্তরের ধন। সেই ধনের উৎকর্ষ যত হবে আমি তত ঐশ্বর্যমণ্ডিত হব। অন্য ভাষাও আমার জানা দরকার। সেটা জীবনের প্রয়োজনে নয়, জীবিকার প্রয়োজনে। আমি কুয়োর ব্যাঙ হয়ে বেঁচে থাকায় বিশ্বাসী নই। আমি নিজেকে বিশ্ব সংসারের একজন বলেই মনে করি। বাংলা আমার ভাষা, বাংলাদেশ আমার মা, আমি এই মাটির সন্তান। তবে দেশে দেশে আমার স্বজনেরা রয়েছে, সবার আমি আত্মীয়। আমি আমার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশান্তি লাভ করি আর আত্মীয়দের সঙ্গে মিলেমিশে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আত্মীয়তার এই বন্ধনটি কখনই গড়ে উঠবে না যদি আমাদের মধ্যে ভাষার বিনিময় না ঘটে। সুতরাং ন্যূনপক্ষে ইংরেজি বা অন্য একটি ভাষা শেখার জন্য যারা চেষ্টা করছেন তাদের সেই চেষ্টার মধ্যে আমি কোনো অন্যায় দেখি না। আপত্তিটুকু হলো বাংলাকে, মায়ের মুখের ভাষাকে অমর্যাদা করার অপচেষ্টার প্রতি। কোমলমতি ছেলেমেয়েরা মা-বাবাকে ‘মাম্মি-ড্যাডি’ বলবে এটা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত নই। কেননা, ‘মাম্মি-ড্যাডি’র সে ডাক আমার কানের  ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে বটে কিন্তু হƒদয় স্পর্শ করে না। সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু করার ক্ষেত্রে  কোনো বাধা থাকতে পারে না। পাকিস্তান আমলেও এদেশে বাংলা ভাষার প্রতি মানুষের যে শ্রদ্ধাবোধ ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে এসে সেই শ্রদ্ধার ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে মায়ের ভাষা বাংলার প্রতি শ্রদ্ধার ঘাটতি বাড়ছে। এর পিছে অর্থনৈতিক কারণ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে রাজনৈতিক উদাসীনতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে দৃঢ়তায় বলেছিলেন, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও বলব আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ, বঙ্গবন্ধুর সেই দৃঢ়তা, সেই দেশপ্রেম, দেশ ও ভাষার প্রতি সেই ভালোবাসার আজ যেন বড্ড অভাব! সুধী পাঠক বলতে পারেন, আমাদের মহান রাজনীতিবিদ, সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সন্তানেরা কি বাংলাদেশের নাগরিক? তাদের কি দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে? দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে এমন  কোনো ব্যক্তি কি বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় বা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন? আমাদের নির্বাচনী আইনে  দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে কি বলা হয়েছে? বিষয়গুলোর মনস্তাত্ত্বি¡ক বিশ্লেষণ এবং সরকারের নীতি-কাঠামো রচনায় তার প্রভাব বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে কারা আমাদের বাংলা ভাষার প্রতি অবমাননা করছেন? কারা মুখে সর্বস্তরে বাংলা চালুর কথা বলেন আর নিজেরা বিদেশি সাহেবদের কায়দায় দিনাতিপাত করেন? এই ভণ্ডামির রাহুগ্রাস থেকে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের ভবিষ্যত বাঁচাতে হলে নিজেদের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার ধারা ফিরিয়ে আনা দরকার। জোরদার করা দরকার খেলাঘর আসর, কচি-কাঁচার আসরের সংগঠন। আমাদের শিশুদের মনোজগতকে উপনিবেশবাদীদের থাবা থেকে রক্ষা করতে হবে। ইংরেজি শেখার নামে ওদের চেতনা ধ্বংস হয়ে গেলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত দুমড়ে মুচড়ে যাবে, কারণ ওরাই  যে জাতির ভবিষ্যত। মহান ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পূর্তি হলো। পৃথিবীতে এখন ৩৫ কোটিরও বেশি মানুষ রয়েছেন যাদের প্রাণের ভাষা বাংলা। বাংলা এখন জাতিসংঘের অন্যতম দাফতরিক ভাষা। মহান শহীদ দিবস এখন আর শুধু বাঙালিদের শোকের দিবস নয় বরং বিশ্বের সকল ভাষাভাষীদের মাতৃভাষার মর্যাদা সুরক্ষায় শক্তি সঞ্চারের দিবস। পৃথিবীতে একমাত্র বাঙালিরাই মায়ের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন আর কোনো জাতির এই গৌরব নেই। ১৯৯৯ সাল থেকে জাতিসংঘের  ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্বের সকল মানুষ আমাদের ২১ ফেব্র“য়ারিকে পালন করছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। আমাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে বিশ্বের দেশে দেশে প্রাণের মিনার হয়ে গড়ে উঠছে মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার মিনার, ভাষা শহীদদের প্রতি ভালোবাসার মিনার। আমাদের রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার এখন বিশ্বের সকল মানুষের চেতনার মিনার হয়ে উঠেছেন। তারা এখন সকল মানুষের  প্রেরণা। পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে নানা বিষয়ে বিভক্তি রয়েছে কিন্তু ভাষা আন্দোলনের প্রশ্নে, মায়ের মুখের ভাষা প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে কোনো বিরোধ নেই। একুশে  ফেব্র“য়ারি এমন এক দিন, যা সমগ্র বিশ্বকে অভিন্ন  চেতনায় সম্মিলিত করে। একজন বাঙালি সন্তান হিসেবে আমি গর্বিত যে আমার অগ্রজেরা মায়ের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় লড়াই করেছিল। আমি গর্বিত এই জন্য যে ভাষা আন্দোলনের চেতনার মধ্যে দিয়েই আমাদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সৃষ্টি হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনের চেতনার পথ ধরেই আমরা নব্বইয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিজয়ী হয়েছিলাম। আমি আশাবাদী ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই আমরা সোনার বাংলা গড়ে  তোলার স্বপ্ন সফল করে তুলতে পারব। আমাদের সাফল্যগুলো এই সাক্ষ্যই দিচ্ছে যে, বাঙালি শুরু করতে যেমন জানে, তেমনি তা এগিয়ে নিতেও পারে। বাঙালির এগিয়ে চলার পথ কন্টকাকীর্ণ, বন্ধুর। এ পথে পদে পদে বাধা আর ষড়যন্ত্রের মাইন পোতা। সাবধানে পা ফেলতে না পারলেই বিপদ। একুশের পথ বেয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করা সত্ত্বেও অবিশ্বাসের রাজনীতি দেশে ষড়যন্ত্রকারীদের হাতকে সবসময় শক্তিশালী করেছে। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো তৎপর। এরা মাফিয়া ডনদের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এরা বঙ্গবন্ধুর মতো বিশাল হƒদয়কে মুহূর্তেই ঝাঁঝরা করে দিতে কুণ্ঠিত  বোধ করে না। স্বার্থের ব্যাঘাত হলে এরা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মহানায়ক জিয়াউর রহমানকেও বুলেটে বিদ্ধ করে। এরা ধর্মের নামে মানুষের ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি করে, এরা ফ্যাসিস্টদের মতো করে নিরীহ মানুষদের হত্যা করে। এরাই ‘বাংলা ভাই’ সৃষ্টি করে। ধর্ম শিক্ষার নামে এরাই আমাদের কোমলমতি শিশুদের শেখায় ‘রবীন্দ্রনাথ হিন্দু, হিন্দুর লেখা জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া চলবে না।’ তরুণ বয়সে শিখেছিলাম, ‘একুশ মানে মাথা নত না করা’। ছাত্র রাজনীতি করার দিনগুলোতে অনেক সভা-সমাবেশে এই কথাটি বলেছি। মাথা নত না করতে শিখেছি কতটা তা ইতিহাসের বিচারের ওপর ছেড়ে দিলাম। আমার বিশ্বাস সাধারণ মানুষ মাথা নত করে না। মাথা নোয়ায় যারা সুবিধাবাদের গাড়িতে চড়ে বেড়ায়। এমপি-মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী যারা হতে চান তাদের মাথা নোয়াতেই হয়। রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, মতিউর, দীপালী সাহা, কাঞ্চন, নূর  হোসেনের মতো সাধারণ কর্মীরা কখনোই মাথা নোয়ায় না। এদেরই রক্ত বৃত্তের আদলে আঁকা রয়েছে বাংলাদেশের হƒদয়ে। এরা ব্যক্তিগত সুবিধা লাভের প্ররোচনায় ব্লেক সাহেবদের সঙ্গে হাত মেলায় না। ব্লেক সাহেবদের কথায় চলেন তারাই যারা ক্ষমতায় যেতে চান, অথবা যেন-তেনভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চান। রফিক থেকে শুরু করে নূর হোসেন, প্রকৃতপক্ষে এরাই বাংলাদেশ চালায়। বাংলাদেশ চলে এসব সাদামাটা, পা ফাটা দরিদ্র জনগণের কথায়। এরা সব সময়ই বুকে-পিঠে লিখে রাখে ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। যখনই প্রয়োজন হয়, বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করে এরা মায়ের ভাষার সম্মান বাঁচায়, মুক্তিযুদ্ধ করে এবং প্রয়োজনে গণতন্ত্র এগিয়ে  নেয়। আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে তাতে  কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের দুর্বল রাজনৈতিক কাঠামো জনগণের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী দেশকে এগিয়ে নিতে পারছে না বটে কিন্তু তাই বলে সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। নাগরিক সমাজ সোচ্চার হলে সরকার উদ্যোগী হবেই। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার কোনো বিকল্প নেই। তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে হবে। জাপান, জার্মান, চীনসহ বিশ্বের যে সকল দেশ তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে উন্নতির ঘোড়া দৌড়াচ্ছে তারা মাতৃভাষাতেই তথ্যপ্রযুক্তি শেখার এবং ব্যবহারের ব্যবস্থা করেছে। রাষ্ট্রকে এর জন্য যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া মাতৃভাষায় তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ অসম্ভব। সরকার শুধু ডিজিটাল বাতায়ন খুলে রাখলে জনগণ তাতে কোনো সুবিধা পাবে না। কিছু কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে একীভূত করা যায় কিনা ভেবে দেখতে হবে। যেভাবেই হোক এই দুইয়ের মধ্যে দূরত্ব কমাতে হবে। লাখো শহীদের  চেতনায়, তাদের ইচ্ছা পূরণে এগিয়ে চলবে বাংলাদেশ। অন্য কোনো মোড়লের কথায় এদেশ চলবে না।
লেখক: প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট


ভাষা আন্দোলনের  প্রেক্ষাপট
আর কে চৌধুরী
ভাষা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন, যা ছিল বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়, কিন্তু পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ব বাংলা হিসেবেও পরিচিত) ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে পার্থক্য ছিল প্রচুর। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, যা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী জনগণের মধ্যে তুমুল ক্ষোভের সৃষ্টি করে। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মানুষ (যারা সংখ্যার বিচারে সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল) এ সিদ্ধান্তকে মোটেই মেনে নিতে চায়নি। পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাভাষার সমমর্যাদার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন জানান যে পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্তই মেনে নেয়া হবে। এই ঘোষণার ফলে আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে ওঠে। পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে মিটিং-মিছিল ইত্যাদি বেআইনি ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুসংখ্যক ছাত্র ও কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ মিছিলের ওপর গুলি চালায়। গুলিতে নিহত হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরো অনেকে। এই ঘটনায় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ক্ষোভের আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার গণআন্দোলনের মুখে নতি স্বীকার করে এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে। ২০০০ সালে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন ও মানুষের ভাষা ও কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্র“য়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
ভাষা আন্দোলনের পটভূমি
বর্তমানের পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র দুটি পূর্বে ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত ভারতবষে অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে উর্দু ভাষাটি মুসলমান রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা যেমন স্যার খাজা সলিমুল্লাহ, স্যার সৈয়দ আহমদ খান, নওয়াব ভিকার-উল-মুলক এবং মৌলভী আবদুল হকের চেষ্টায় ভারতীয় মুসলমানদের ভাষায় উন্নীত হয়। উর্দু একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য, যা আবার ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। উর্দু ভাষাটি অপভ্রংশের (মধ্যযুগের ইন্দো-আর্য ভাষা পালি-প্রাকৃতের সর্বশেষ ভাষাতাত্ত্বিক অবস্থা) ওপর ফার্সি, আরবি এবং তুর্কির ঘনিষ্ঠভাবে প্রভাবে প্রভাবিত হয় দিল্লি সুলতানাত ও সাম্রাজ্যের সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বিকশিত হয়। এর পারসিক-আরবি লিপির কারণে উর্দুকে ভারতীয় মুসলমানদের ইসলামী সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হতো; যেখানে হিন্দি এবং দেবনাগরী লিপিকে হিন্দুধর্মের উপাদান বিবেচনা করা হতো। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের (পূর্ব বাংলা হিসেবেও পরিচিত) বাংলাভাষী ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ৬ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যা বিশিষ্ট নবগঠিত পাকিস্তানের নাগরিকে পরিণত হয়। কিন্তু পাকিস্তান সরকার, প্রশাসন এবং সামরিক বাহিনীতে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। 

১৯৪৭ সালেই করাচীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাপত্রে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহারের সুপারিশ করা হয় এবং প্রচারমাধ্যম ও স্কুলে কেবলমাত্র উর্দু ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। ঢাকার ছাত্রসমাজ আবুল কাসেমের নেতৃত্বে মিছিল করে, যিনি ছিলেন তমুদ্দন মজলিস নামক একটি বাঙালি ইসলামীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনের সম্পাদক। ওই সমাবেশে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের প্রবল দাবি উত্থাপন করা হয়। কিন্তু পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন বাংলাকে তাদের অনুমোদিত বিষয় তালিকা হতে বাদ দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে মুদ্রা ও স্ট্যাম্প হতেও বাংলা অক্ষর লুপ্ত হয়। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বানানোর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। পূর্ব পাকিস্তানে জনরোষের সৃষ্টি হয় এবং ১৯৪৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাঙালি ছাত্রদের একটি বিশাল সমাবেশে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের আনুষ্ঠানিক দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্ররা ঢাকায় মিছিল, মিটিং ও র‌্যালির আয়োজন করে।
২১  ফেব্র“য়ারির ঘটনা
সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হয়। তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে এবং পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্যদের ভাষা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মতকে বিবেচনা করার আহ্বান জানাতে থাকে। পুলিশ অস্ত্র হাতে সভাস্থলের চারদিকে প্রাচীর তৈরি করে। বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং উপাচার্য সে সময় উপস্থিত ছিলেন। বেলা সোয়া এগারটার দিকে ছাত্ররা গেটে জড়ো হয়ে প্রতিবন্ধকতা ভেঙে রাস্তায় নামতে চাইলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস বর্ষণ করে ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়। কিছু ছাত্র এই সময়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের দিকে দৌড়ে চলে গেলেও বাকিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পুলিশ দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং পুলিশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। উপাচার্য তখন পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ বন্ধ করতে এবং ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগ করতে বলে। কিন্তু ছাত্ররা ক্যাম্পাস ত্যাগ করার সময় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করা শুরু করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ছাত্রদের গ্রেফতার করে তেজগাঁও নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এই ঘটনায় ছাত্ররা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের কর্মকাণ্ড পুনরায় শুরু করে। এই সময় প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে কিছু মহিলা তাদের এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে।
 বেলা ২টার দিকে আইন পরিষদের সদস্যরা আইনসভায় যোগ দিতে এলে ছাত্ররা তাদের বাধা দেয় এবং সভায় তাদের দাবি উত্থাপনের দাবি জানায়। কিন্তু পরিস্থিতি নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে যখন কিছু ছাত্র সিদ্ধান্ত নেয় তারা আইন সভায় গিয়ে তাদের দাবি উত্থাপন করবেন। ছাত্ররা সেই উদ্দেশ্যে রওনা করলে বেলা ৩টার দিকে পুলিশ দৌড়ে এসে ছাত্রাবাসে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশের গুলিবর্ষণের কিছু ছাত্রকে ছাত্রাবাসের বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। আব্দুল জব্বার এবং রফিক উদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আবুল বরকত সে সময় আহত হন এবং রাত ৮টায় প্রয়াত হন। গুলিবর্ষণের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত ডাক্তার এবং নার্সরা পূর্বে আহত ছাত্রদের বের করে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের চিকিৎসা করতে থাকেন। ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগন ঘটনাস্থলে আসার উদ্যোগ নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সমস্ত অফিস, দোকানপাট ও পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রদের শুরু করা আন্দোলন সঙ্গে সঙ্গে জনমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। রেডিও শিল্পীরা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে শিল্পী ধর্মঘট আহ্বান করে এবং রেডিও স্টেশন পূর্বে ধারণকৃত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে থাকে।
পরবর্তী ঘটনা (১৯৫২)
২৩ ফেব্র“য়ারি সাড়া রাত ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রবৃন্দ শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরিতে কাজ করেন। যা ফেব্র“য়ারি ২৪ তারিখের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছিল। তাতে একটি হাতে লেখা কাগজ যুক্ত করা হয়েছিল যাতে লেখা ছিল শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। স্মৃতিস্তম্ভডটি উদ্বোধন করেন আন্দোলনে নিহত শফিউর রহমানের পিতা। স্মৃতিস্তম্ভটি পুলিশ ফেব্র“য়ারি ২৬ তারিখে ভেঙে দিয়েছিল। ফেব্র“য়ারি ২৫ তারিখে, কলকারখানার শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জ শহরে ধর্মঘটের ডাক দেয়। ফেব্র“য়ারি ২৯ তারিখে প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারীরা ব্যাপক পুলিশী হামলার শিকার হন। ২১ ও ২২ ফেব্র“য়ারির ঘটনার পর সরকার আন্দোলনের বিপক্ষে জোর প্রোপাগাণ্ডা চালাতে থাকে। তারা জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকে যে কমিউনিস্ট ও পাকিস্তানবিরোধীদের প্ররোচনায় ছাত্ররা পুলিশকে আক্রমণ করেছিল। তারা বিভিন্নভাবে তাদের এই প্রচার অব্যাহত রাখে। তারা সারা দেশে লিফলেট বিলি করে। সংবাদপত্রগুলোকে তাদের ইচ্ছানুসারে সংবাদ পরিবেশনে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। পাশাপাশি ব্যাপক হারে সাধারণ জনগণ ও ছাত্র গ্রেফতার অব্যাহত থাকে। ২৫ ফেব্র“য়ারি আবুল বরকতের ভাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করার চেষ্টা করলে, উপযুক্ত কাগজের অভাব দেখিয়ে সরকার মামলাটি গ্রহণ করেনি। রফিকউদ্দিন আহমদের পরিবার একই ধরনের একটি প্রচেষ্টা নিলে, একই কারণে তাও বাতিল হয়। ৮ এপ্রিল সরকার তদন্ত শুরু করে। কিন্তু এর রিপোর্টে মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদের ওপর গুলি করার কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ দেখাতে পারেনি। সরকারের প্রতিশ্র“ত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ প্রত্যাখ্যান করে। ১৪ এপ্রিল গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হলে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্ন সামনে চলে আসে। এই সমস্যা নিরসনের পক্ষে অনেক সদস্য মত প্রকাশ করলেও মুসলিম লীগের সদস্যরা এ ব্যাপারে নীরব থাকেন। এই বিষয়ের বিপক্ষে তারা ভোট দিলে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। এর মাধ্যমে তারা ২১ ও ২২ ফেব্র“য়ারির ঘটনার পর গণপরিষদে বাংলা ভাষার পক্ষে কথা বলার প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ করেন। ২৭ এপ্রিল বার সেমিনার হলে কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় কর্মপরিষদ একটি সেমিনার আহ্বান করে এবং সরকারের কাছে ২১ দফা দাবি উত্থাপন করে। ১৬ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুললে সেদিন ছাত্ররা সমাবেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় লীগ কমিটির প্রধান নেতা আবদুল মতিন গ্রেফতার হলে কমিটি আবার পুনর্গঠিত হয়।
শহীদ মিনার
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ২৩ ফেব্র“য়ারির রাত শেষে শহীদ মিনার তৈরির কাজ শুরু করে। কাজ শেষ হয় ২৪ ফেব্র“য়ারির ভোরে। শহীদ মিনারের খবর কাগজে পাঠানো হয় ওই দিনই। শহীদ বীরের স্মৃতিতে- এই শিরোনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ছাপা হয় শহিদ মিনারের খবর।
মিনারটি তৈরি হয় মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) বার নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে। কোনাকুনিভাবে হোস্টেলের মধ্যবর্তী রাস্তার গা-ঘেঁষে। উদ্দেশ্য যাতে বাইরের রাস্তা থেকে সহজেই চোখে পড়ে এবং যে কোনো শেড থেক বেরিয়ে এসে ভেতরের লম্বা টানা রাস্তাতে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে। শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উচ্চ ও ৬ ফুট চওড়া। মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন জিএস শরফুদ্দিন (ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন নামে পরিচিত), ডিজাইন করেছিলেন বদরুল আলম। সঙ্গে ছিলেন সাঈদ হায়দার। তাদের সহযোগিতা করেন দু’জন রাজমিস্ত্রি। মেডিকেল কলেজের সম্প্রসারণের জন্য জমিয়ে রাখা ইট-বালি এবং পুরান ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে সিমেন্ট আনা হয়। ভোর হবার পর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় মিনারটি। ওই দিনই অর্থাৎ ২৪ ফেব্র“য়ারি সকালে, ২২ ফেব্র“য়ারির শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। ২৬ ফেব্র“য়ারি সকালে দশটার দিকে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন  উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ ২৬ ফেব্র“য়ারি পুলিশ ও সেনাবাহিনী মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং প্রথম শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে । এরপর ঢাকা কলেজেও একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়, এটিও একসময় সরকারের নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা হয়। অবশেষে, বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয়ার পরে ১৯৫৭ সালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয়। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ  

 ভাষা আন্দোলনের সাহসী নারী সৈনিক
মোমিন মেহেদী 
বিশ্বের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে পুরুষের পাশাপাশি ছিল নারীর অংশগ্রহণ। বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নারী ছিল সদা জাগ্রত। নারী একদিকে জায়া, অন্যদিকে জননী। হƒদয়ের সবটুকু ভালোবাসা  ঢেলে নারী এগিয়েছে পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ছিল নারী, আবার ভাষা আন্দোলনেও ছিল নারী; আমাদের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধেও ছিল নারী। ভাষা আন্দোলনের অনন্য মানুষ ভাষা সৈনিক রওশন আরা বাচ্চু এবং মমতাজ বেগম কথা বলব আজ। ভাষার জন্য আন্দোলনমুখর বাংলাদেশের সেই বাহান্নতে এই নারীদ্বয়ের ছিল বিশেষ অবদান। আমাদের ইতিহাসের আয়নায় তাদের দুজনের কথা.......
রওশন আরা বাচ্চু
সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে ২০ ফেব্র“য়ারি হরতাল আহ্বান করা হলে সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে এবং পরিস্থিতি  মোকাবিলার জন্য  সেদিন ১৪৪ ধারা জারি করে। এ সময়  যেসব ছাত্রছাত্রী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করাই আন্দোলনের জন্য প্রয়োজন বলে মনে করেন, রওশন আরা বাচ্চু তাঁদের মধ্যে একজন। ২১ ফেব্র“য়ারির দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় আহূত ছাত্রজনতার সমাবেশে ছাত্রীদের সংগঠিত করে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যারা কাজ করেছেন রওশন আরা বাচ্চু ছিলেন তাদের মধ্যেও। তিনি ইডেন কলেজ ও বাংলাবাজার বালিকা বিদ্যালয় থেকে ছাত্রীদের সংগঠিত করে আমতলার সমাবেশস্থলে নিয়ে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবেশস্থলটির বাইরে পুলিশ লাঠি দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছিল। অনেকে লাঠির ওপর দিয়ে লাফিয়ে এবং নিচ দিয়ে বের হয়ে  গেলেও রওশনা আরা বাচ্চু তা করেননি। তিনি কয়েকজন ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশের লাঠির ব্যারিকেডটি ভেঙ্গে ফেলেন এবং দলের অন্যদের সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। এদিকে পুলিশ ব্যারিকেড ভাঙ্গার দৃশ্য দেখা মাত্রই এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ শুরু করে। লাঠির আঘাতে তিনি আহত হন। এদিকে বর্তমান  কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পার্শ্ববর্তী এলাকায় পুলিশের মুহুর্মুহু গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। উপায়ন্তর না দেখে রওশন আরা বাচ্চু পার্শ্বে স্তূপিকৃত ভাঙ্গা রিকশার নিচে গিয়ে আশ্রয় নেন। তিনি এখানেও নিরাপদ মনে করলেন না। পরে হলের প্রভোস্ট ড. গনির পার্শ^বর্তী বাড়িটিতে আশ্রয়  নেন। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সংগঠিত করা ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হলের ছাত্রীদের ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সুসংগঠিত করেন।  ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু ১৯৩২ সালের ১৭ ডিসেম্বর সিলেটের কুলাউড়ার উছলাপাড়ায় জš§গ্রহণ করেন। বাবা এ এম আরেফ আলী, মা মনিরুন্নেসা খাতুন। ১৯৪৭ সালে রওশন আরা বাচ্চু শিলং লেডী কীন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৪৯ সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও  ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দশর্নে অনার্স পাস করেন। ১৯৬৫ সালে বিএড এবং ১৯৭৪ সালে ইতিহাসে এমএ পাস করেন। রওশন আরা বাচ্চু ‘গণতান্ত্রিক  প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্ট’ এ যোগ দিয়ে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং উইম্যান স্টুুডেন্টস রেসিডেন্সের সদস্য নির্বাচিত হন।  ১৯৫২ সালের ফেব্র“য়ারি ও মার্চ মাসে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে অনুষ্ঠিত অন্যান্য সভা ও সমাবেশে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন।  কোনো ভয়ভীতি তাকে ভাষাচেতনার আদর্শ  থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। তিনি যে সময়  ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন, সে সময় মেয়েদের জন্য অনুকূল পরিবেশ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকটরের অনুমতি ছাড়া  ছেলেদের সঙ্গে কথা বললে সে সময় ১০ টাকা জরিমানা করা হতো  মেয়েদের। আন্দোলনে  গেলে পড়াশুনা বন্ধ করে  দেয়ার পারিবাািরক হুমকিও ছিল তার। সকল বাধা উপেক্ষা করেই তিনি মাতৃভাষা চেতনায় উজ্জীবিত হয়েছেন এবং সকল কিছু অগ্রাহ্য করে সামনের দিকে এগিয়ে  গেছেন।
মমতাজ বেগম
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে সবচেয়ে নির্যাতিত, ত্যাগী ও নিগৃহীত নারী ভাষাসৈনিকের নাম মমতাজ বেগম। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রামে তিনি তিলে তিলে নিজকে উৎসর্গ করেছেন। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে স্বামী সংসার হারিয়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন, গ্রেফতার বরণ করেছেন, নানারকম কুৎসা ও গঞ্জনা সহ্য করেছেন।  নিজের জীবন, সংসার বিপন্ন করেছেন কিন্তু ভাষা আন্দোলনের প্রশ্নে কখনো আপোস করেননি।
ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামী, সাহসী ও ত্যাগী নারী মমতাজ  বেগম ১৯২৩ সালে ভারতের ভূপাল রাজ্যে জš§গ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম কল্যাণী রায়  চৌধুরী, ডাক নাম মিনু। তিনি প্রমথনাথ বিশির বোনের মেয়ে। তার পূর্বপুরুষ ছিল রাজশাহীর জমিদার। ্বাবা রায় বাহাদুর মহিম চন্দ্র রায়  চৌধুরী ছিলেন জেলা জজ। পরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। মাতা মাখন মতি দেবী ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা এবং শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত অথচ রক্ষণশীল পরিবারে জš§ নেয়া প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার ধারক। কল্যাণী রায় চৌধুরী রক্ষণশীলতার শৃঙ্খলা ভেঙ্গে ভালোবেসে বিয়ে করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর আব্দুল মান্নাফকে। ধর্মান্তরিত হয়ে কল্যাণী রায় চৌধুরী নাম ধারণ করেন মমতাজ বেগম। ১৯৪৩ সালে কলকাতা থেকে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪২ সালে কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএড এবং ১৯৬৪ সালে এমএড ডিগ্রি লাভ করেন। রক্ষণশীল পরিবারে জš§ নেয়া একমাত্র সন্তান কল্যাণী রায়ের শিক্ষা জীবনও স্বাভাবিক ছিল না। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় এই মহিয়সী নারী নারায়ণগঞ্জ মর্গান হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একুশে ফেব্র“য়ারি ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে রহমত উল্লাহ মুসলিম ইনস্টিটিউট ময়দানে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ময়দানের কাছেই মর্গান স্কুল। জনসভা থেকেই নারায়ণগঞ্জবাসী জানতে পারেন যে, ঢাকায় ছাত্রদের ওপর গুলি হয়েছে। মুহূর্তেই বিশাল জনসভা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সভা থেকে যে বিরাট মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে, তাতে মমতাজ বেগম যোগ দেন। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে পর্দা ঘেরা ঘোড়াগাড়ি ও রিকশায় মহিলারা চলাফেরা করতেন। এই রক্ষণশীলতার মধ্যেও মমতাজ বেগম শহরের মহিলাদের বিশেষ করে ছাত্রীদের আন্দোলনে শরিক করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এতে নারায়ণগঞ্জ মহকুমা প্রশাসন তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে এক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। তখন মহকুমার পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) ছিলেন দেলোয়ার সাহেব। ২৯  ফেব্র“য়ারি সকাল নয়টা কি সাড়ে নয়টার মমতাজ বেগমকে রাস্তায়  গ্রেফতার করা হয় এবং নারায়ণগঞ্জ কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। কোর্টে তার জামিনের আাবেদন নামঞ্জুর হয়। এদিকে তার  গ্রেফতারের খবরে উত্তেজিত জনতা কোর্ট ভবন ঘেরাও করে। সেখান থেকে তাকে ভ্যানে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় কিন্তু চাষাঢ়ায় এক জনসমুদ্র গতিরোধ করে দাঁড়ায়। পুলিশ জনতার ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস প্রয়োগ করেও ব্যর্থ হয়। ঢাকা থেকে আসে আরো পুলিশ এবং ইপিআর। জনতার প্রতিরোধে এসে যোগ দেন ঢাকা-নারাণগঞ্জ সড়কের দু’পাশের গ্রামবাসীরাও। তারা চাষাঢ়া থেকে পাগলা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের ১৬০টি বটগাছ কেটে ব্যারিকেডের সৃষ্টি করেন। সেদিন পুলিশ নারায়ণগঞ্জে জুলুমের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য খান সাহেব ওসমান আলীর বাসভবনও তছনছ হয়। শত শত ব্যক্তি আহত হয় গ্রেফতার হয় শতাধিক। রাত আটটা পর্যন্ত জনতা-পুলিশ তীব্র সংঘর্ষ চলে। রাত এগারটায় জনতার প্রতিরোধ দুর্বল হয়ে পড়লে পুলিশ মমতাজ বেগমকে একটি ট্রাকে করে ঢাকায় নিয়ে আসে। ওই ট্রাকে  গ্রেফতারকৃত শফি হোসেন খানও ছিলেন এবং মর্গান স্কুলের কয়েকজন ছাত্রীও ছিলেন। তৎকালীন সরকার অবশ্য মমতাজ বেগমকে কারাগার থেকে বন্ড সইয়ের শর্তে মুক্তি দিতে চেয়েছিল। এই তেজস্বিনী নারী সে প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও মুচলেকা দিয়ে মুক্তি ক্রয়ের বিরুদ্ধে অবিচল থেকে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এই অস্বীকৃতির জন্য মমতাজ বেগমকে তার সরকারি চাকরি হারাতে হয়েছে। স্বামী তাকে তালাক দেন। প্রায় দেড় বছর পর কারাগার থেকে মমতাজ বেগম মুক্তি পান। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে মমতাজ বেগম নারী জাগরণের একটি নব অধ্যায়ের সূচনা করেন। মমতাজ বেগমের সংগ্রামের মাধ্যমে এই এলাকার নারীর অবরুদ্ধ সমাজের বাইরে প্রগতির পথে বেরিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ১৯৫২ সালের পর তিনি আবারো শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত হন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রামে নিবেদিত প্রাণ, অকুতোভয়, আপোসহীন এই ত্যাগী নারী আন্দোলনের মাঠ থেকে এক বিন্দু সরে দাঁড়াননি, নিজকে বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। ভাষা আন্দোলনের কিংবদন্তি মমতাজ  বেগম ১৯৬৭ সালের ৩০ মার্চ মৃতুবরণ করেন।  

বরিশাল বিভাগের ইতিহাস
সিরাজউদ্দীন আহমেদ
বরিশাল বিভাগের প্রাচীন নাম চন্দ্রদ্বীপ। রূপসী বাংলার মুখ, বাংলার শস্যভাণ্ডার বাংলার পুণ্যভূমি বরিশালের ইতিহাস সমৃদ্ধশালী ও গৌরবময়। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশে বরিশালের রয়েছে আবহমানকালের অবদান। বরিশাল বাঙালি জাতির পরিচয় করে দিয়েছে। তাই বরিশালের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস। ঐতিহাসিক এ জনপদ জš§গ্রহণ করেছেন বাংলার আদি কবি মীননাথ, কবি বিজয়গুপ্ত, বার ভূঁইয়ার অন্যতম রাজা রামচন্দ্র বসু, মহাÍা অশ্বিনী কুমার দত্ত, চারণ কবি মুকুন্দ দাশ, খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দীন, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, খান তোফাজ্জেম হোসেন, বীর শ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল প্রমুখ। ভূ-গঠন, নদ-নদী, বঙ্গোপসাগর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বরিশালের ইতিহাসকে প্রভাবিত করেছে এবং সে কারণে বরিশালের সমাজ ব্যবস্থা, ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলা অন্যান্য জনপদ থেকে স্বতন্ত্রভাবে গড়ে উঠেছে। এ স্বাতন্ত্র্যরোধ মানুষকে করেছে দুঃসাহসী ও সংগ্রামী। তাই বিদেশে শাসন, প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে সংগ্রাম করে তারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
বরিশালের ভূ-গঠন:
১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি, বাংলা ১৩৯৯, ১৮ পৌষ বরিশাল স্বাধীন বাংলাদেশের পঞ্চম প্রশাসনিক বিভাগ হিসেবে আÍপ্রকাশ করছে। বৃহত্তর বাকেরগঞ্জ-পটুয়াখালী ৬টি জেলা- বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলা সমন্বয় বরিশাল বিভাগ গঠিত। বরিশাল বিভাগের আয়তন ৪৪৬৭ বর্গমাইল/১৩০০০ কিলোমিটার। বিভাগের মোট লোক সংখ্যা প্রায় ৮৫ লাখ। বরিশাল বিভাগের উত্তরের মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে বাগরেহাট জেলা ও সুন্দরবন পূর্বে মেঘনা নদী, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর। প্রাগৈতিহাসিক যুগে গঙ্গা নদীর তিনটি শাখ নদী-পাবনী ও নলিনী চন্দ্রদ্বীপের নিকট একত্রিত হয়ে সাগরে মিলিত হয়। গঙ্গার পূর্বগামী এ তিন ধারার মোহনার নাম ছিল সুগন্ধা। কথিত আছে কালী বা তারা দেবীর একান্ন খণ্ডের নাসিকা খণ্ড তিন নদীর মোহনায় পতিত হয়। এ জন্য ত্রিধারার মোহনার নাম সুগন্ধ। নাসিকা দিয়ে সুঘ্রাণ নেয়া হয়-তাই সুগন্ধ নাম। নাসিকা যে স্থানে পড়েছিল তার উত্তর পারে শিকারপুর তারা মন্দির ও দক্ষিণ পারে পোনাবালিয়ায় শিব মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। কালক্রমে সুগন্ধা নদীতে দ্বীপের পর দ্বীপ সৃষ্টি হয়ে চন্দ্রদ্বীপের ভূ-গঠন হয়েছে। প্রায় ৫ হাজার বছর পূর্বে চন্দ্রদ্বীপের ভূ-গঠন শুরু হয়েছে।
বরিশালের অধিবাসী
সর্ব প্রথম চন্দ্রদ্বীপে কখন মানুষের বসতি শুরু হয় তা জানা যায়নি। তবে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে মহাভারত ও আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় জনবসতির প্রমাণ পাওয়া যায়। খৃঃ পৃঃ ৩২৭ অব্দে আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় গঙ্গায় মেহানায় গঙ্গারিডি রাষ্ট্র অবস্থিত ছিল। সম্ভবত গঙ্গারিডি রাজ্যের রাজধানী ছিল কোটালীপাড়ায়। কোটালীপাড়া প্রাচীনকাল থেকে ১৮৭৩ সাল পর্যন্ত বরিশালের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রাগৈতিহাসিককালে বাংলাদেশে অস্ট্রিক, মঙ্গোলীয় ও আলপাইন জনগোষ্ঠী বিভিন্ন গোত্র বা কোমের বাসস্থান ছিল। আমরা আজকের যে বাংলাকে জানি তা প্রাচীনকালে বিভিন্ন গোত্রের নামানুসারে বিভক্ত ছিল। প্রাচীন বাঙলা তখন বঙ্গ, গৌড়, রাঢ়, পুণ্ডু, সুষ্ম প্রভৃতি জনপদে বিভক্ত ছিল।
বাঙালি জাতির আদি বাসস্থান ছিল চন্দ্রদ্বীপ। প্রাচীন কালে বাঙ জনগোষ্ঠী ইন্দোচীন থেকে চন্দ্রদ্বীপ বসতি স্থাপন করে। বাঙ শব্দের অথ জলাভূমি। যারা জলাভূমিতে বাস করত তাদের বাঙ বলা হতো। লবণাক্ততা ও প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাঙ জাতির জমিতে আল বা বাধ নির্মাণ করত। এ জন্য তাদের (বাঙ যোগ আল) বাঙালা বলা হতো। বৃহত্তর বরিশালের ৬টি জেলা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাটের একাশং নিয়ে বাঙ গঠিত ছিল। বাঙ জাতি আবাদ করেছে তাই এ অঞ্চলকে বাঙলাবাদ বলা হতো। কালের প্রবাহে বাঙালা নামটি পরিবর্তিত হয়ে বাকলা নামে রূপান্তরিত হয়েছে। বাঙাল হতেই বাকলা। প্রাচীন বাঙ জাতি আপন মহিমায় রাঢ়, পুণ্ড, গৌড় ও সমতট অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং বাঙালদের পরিচয় সকল জনপদগুলো ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিতে রূপান্তরিত হয়। শতাব্দীর দ্বন্দ্ব মিলনে বাঙালি জাতির সৃষ্টি এবং বাঙালা নামটি চন্দ্রদ্বীপেরই অবদান। বাঙালি জাতি গঠনে ঊষালগ্নে চন্দ্রীদ্বীপের অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসের আকাশে নক্ষত্রের মতো চিরদিন জ্বল জ্বল করবে।
প্রাচীন যুগ
খৃঃ পৃঃ ৩২৪ হতে ১৮৭ সাল পর্যন্ত চন্দ্রদ্বীপ মৌর্য রাজাদের শাসনধীনে ছিল। চতুর্থ শতকে রাজা চন্দ্র চন্দ্রদ্বীপ জয় করে কোটালীপাড়ায় একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। কোটালীপাড়া চন্দ্রদ্বীপের ভূ-ভাগ ছিল। ৩২০ হতে ৪৬৯ সাল পর্যন্ত চন্দ্রদ্বীপ গুপ্ত রাজা বা তাদের প্রতিনিধিদের অধীন ছিল। ৫ম শতকের বিখ্যাত সংস্কৃত নৈয়ায়িক চন্দ্র গোমিন (৪৬৫-৫৪৪ খৃঃ) চন্দ্রদ্বীপের অধিবাসী ছিলেন এবং তিনি ভারত বিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন।
গুপ্ত রাজ বংশের পতনের পর দক্ষিণ বঙ্গে একটি স্বাধীন রাজ্যে গড়ে ওঠে। চন্দ্রদ্বীপ এ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজা গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য ও সমাচার দেব ৫২৪ সাল থেকে ৬০০ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। সমাচার  দেবের (৫৬১-৫৫৭) ঘাঘর কাঠি তাম্র শাসন বরিশালের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের দ্বার উšে§াচন করেছে। ঘাঘর কাঠি গ্রাম গৌরনদীর সীমান্তে অবস্থিত। ৭৫০ সাল থেকে ১১২৫ সাল পর্যন্ত পাল রাজবংশ বাংলাদেশ শাসন করে। পাল আমলে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির গোড়াপত্তন হয়েছে।  পাল আমলেই বাংলা ভাষা প্রসার লাভ করে। পাল রাজত্বকালে বরিশাল বৌদ্ধ সভ্যতা ও বাংলা ভাষার চর্চার কেন্দ্র ছিল। রাজা রাম পালের (১০৭৭-১১২০) রাজত্বকালে বাংলা সাহিত্যের প্রথম কবি ও নাথ ধর্মের প্রবর্তক মীননাথ চন্দ্রদ্বীপ জš§গ্রহণ করেন। চন্দ্রদ্বীপে বসেই মীননাথ রচনা করলেন বাংলা ভাষার প্রথম কবিতা ও গান:
কহন্তি গুরু পরমার্থে বাট
কর্ম কুরঙ্গ সমাধিক পাট ॥
কমল বিকসিল কহিহন জমরা।
কমল মধু পিবিবি ধোকন ভমরা ॥
বিখ্যাত রোগ বিন্যাস শাস্ত্র বা নিদান প্রণেতা বৈদ্যকুল ভূষণ মাধব করের জš§ গৌরনদীর নলচিড়া গ্রামে। তিনি নয়া পালে (১০৪৩-১০৪৮) সমসাময়িক ছিলেন। পাল রাজত্বকাল পূর্ব বঙ্গে চন্দ্র রাজবংশ ৯০০ থেকে ১০৪৫ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করে। ত্রৈলৈক্য চন্দ্র ও তার পুত্র শ্রীচন্দ্র চন্দ্রদ্বীপ শাসন করেন। শ্রীচন্দ্রের (৯৩০-৯৭৫) শাসনকালে বিক্রমপুর ও রামপালের তাম্র শাসন চন্দ্রদ্বীপ ও বাঙালা নাম প্রথম পাওয়া যায়। দশম শতকে চন্দ্রদ্বীপ পাল ও চন্দ্র রাজাদের একটি বিখ্যাত জনপদ ছিল। শিকারপুরে প্রাপ্ত ১০১৫ সালের একখানা তালপাতার পুঁথির চন্দ্রদ্বীপ নাম ও শিকারপুরের তারামুর্তি অংকিত দেখা যায়। পাল রাজাদের পর সেন বংশ এগার শতকের শেষভাগ হতে ১২২৫ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করে। সেন বংশের রাজা বিশ্বরূপ সেন ও কেশব সেন ১২২৫ সাল পর্যন্ত চন্দ্রদ্বীপ শাসন করেন। বিশ্বরূপ সেনের তাম্রলিপিতে চন্দ্রদ্বীপ ও গৌর নদীর রামসিদ্ধি ও বাংলাবাদ এর উল্লেখ আছে। সেন রাজত্বকালে চন্দ্রদ্বীপের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন শুরু হয় এবং বাংলা ভাষার পরিবর্তে রাজভাষা সংস্কৃত চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলে। চন্দ্রদ্বীপের জনগণ সংস্কৃত ভাষা গ্রহণ না করে বাংলা ভাষা টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম অব্যাহত রাখে।
চন্দ্রদ্বীপ নামকরণ
চন্দ্রদ্বীপ নামকরণ সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। কথিত আছে চতুর্থ শতকে রাজা চন্দ্র বর্মা বাকলার দ্বীপগুলো জয় করে নিজ নামে চন্দ্রদ্বীপ নাম রাখেন। কিন্তু এ দাবির কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। দশম শতকে চন্দ্ররাজ বংশ চন্দ্রদ্বীপ শাসন করে এবং তাদের তাম্র শাসনের চন্দ্রদ্বীপের উল্লেখ প্রথম দেখা যায়। কিন্তু তারা যে এ অঞ্চলের নামকরণ করেছেন তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আবার অনেকে বলেণ সুগন্ধা নদীতে ভেসে ওঠা দ্বীপগলো চাঁদের আকৃতি ছিল, তাই চন্দ্রদ্বীপ নাম হয়েছে। কিন্তু এ যুক্তিও ঐতিহাসিকগণ গ্রহণ করেননি।
চন্দ্রদ্বীপ নামের সঙ্গে দুটি কাহিনী প্রচলিত আছে। বিক্রমপুরে চন্দ্রশেখর নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তার ইষ্ট দেবী ছিলেন ভূবনেশ্বরী দেবী। বিয়ের রাতে চন্দ্রশেখর জানতে পারলেন তার স্ত্রীর নাম ভূবনেশ্বরী দেবী চন্দ্রশেখর ভাবলেন পূর্বজšে§ তিনি পাপ করেছেন। তা না হলে যে দেবীকে তিনি পূজা করেন, সে নামে তার স্ত্রীর নাম হবে কেন। তিনি আÍহত্যা করার উদ্দেশ্যে গভীর রাতে নৌকাযোগে বিক্রমপুর ত্যাগ করেন এব তিন দিন পর সাগরে এসে পৌঁছেন। তিনি আÍহত্যার জন্য ঝাঁপ  দেবেন এমন সময় এক ধীবর কন্যা তাকে বাধা দিলেন। আÍহত্যার কারণ জানতে পেরে ধীবর কন্যা বলেন যে, প্রত্যেক নারীর মধ্যে “ভূবনেশ্বরী বা ভগবতী দেবী” বিরাজমান। কাজেই তার উচিত হবে স্ত্রীকে গ্রহণ করা। ধীবর কন্যা ছিলেন স্বয়ং ভগবতী দেবী। তিনি চন্দ্রশেখরকে আশীর্বাদ করলেন যে, সাগর মোহনা সুগন্ধায় শিগগিরই এক স্থলভাগ সৃষ্টি হবে এবং তিনি হবেন এ দ্বীপের রাজা। কিছুদিন পর দ্বীপ সৃষ্টি হলো এবং চন্দ্র শেখর নিজ নামে নাম রাখেন চন্দ্রদ্বীপ।
চন্দ্রদ্বীপ নামকরণ সম্পর্কে দ্বিতীয় কাহিনী বেশি প্রচলিত। চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রামনাথ দনুজ মর্দন দেব তার গুরু চন্দ্রশেখর চক্রবর্তীর সঙ্গে সুগন্ধা নদীতে তীর্থ ভ্রমণে আসেন। চন্দ্র শেখর রাতে স্বপ্নে দেখেন কালীদেবী তাকে বলছেন, তাদের নৌকার অনতিদূরে সুগন্ধা নদীতে পাষাণময়ী মূর্তি নিমজ্জিত আছে। তার শিষ্য দনুজ মর্দন যেন মূর্তিগুলোকে তোলেন। দনুজ মর্দন ডুব দিয়ে কাত্যায়িনী ও মদন গোপালের পাষাণ মূর্তি তোলেন। তারা নিকটের দ্বীপে বর্তমান বাউফল থানার কচুয়া গ্রামে মূর্তি স্থাপন করেন। দনুজ মর্দন বিক্রমপুর থেকে লোক এনে এ দ্বীপে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং গুরুর নামে রাজ্যের নামকরণ করেন চন্দ্রদ্বীপ। আলোচ্য কাহিনী দুটো বিশ্বাসযোগ্য নয়। দনুজ মর্দন দেব চতুদশ শতকে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু চন্দ্রদ্বীপ নাম আরো প্রাচীন। রাজা শ্রীচন্দ্রের দশম শতকের বিক্রমপুর তাম্রশাসনের চন্দ্রদ্বীপ নামের উল্লেখ আছে। সুতরাং চন্দ্রদ্বীপের নামকরণ দনুজ মর্দানের সময় হয়নি। ১৮৩৭ সালে চন্দ্রদ্বীপের ইদিলপুরে (বর্তমান মুলাদী) কেশব সেনের তের শতকের একখানা তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়েছে। ইদিলপুর তাম্রশাসনে উল্লেখ আছে যে এ অঞ্চলে চন্দ্রভণ্ড জনগোষ্ঠীর বাস ছিল। ঐতিহাসিক প্রতাপ চন্দ্র ঘোষ বলেন যে ইদিলপুর চন্দ্রভণ্ড নামে একটি জনগোষ্ঠী বাস করত এবং তাদের চন্দ্রভণ্ড বলা হত। অনেকেই একমত যে চন্দ্রভণ্ড গোত্রের নামে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে চন্দ্রদ্বীপ। খ্রিস্টীয় দশম শতকের পূর্বে চন্দ্রদ্বীপ ভারতের একটি সমৃদ্ধশালী জনপথ হিসেবে খ্যাত ছিল।
চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য
লক্ষণ সেনের বংশধর রামনাথ দনুজ মর্দন দেব চতুর্দশ শতকে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী ছিল বাকলা। বাকলা শহর বাউফল উপজেলার কচুয়ার নিকটে অবস্থিত ছিল। তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন ও ঘূর্ণিঝড়ে বাকলা শহর ধ্বংস হয়েছে। চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য উত্তর ফরিদপুর, পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে বাগেরহাট ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃতি ছিল। বরিশাল বিভাগে ৬টি জেলা, বাগেরহাটের কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, জেলার কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া ও গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরের কালকিনি, মাদারীপুর ও ঘোষের হাট চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যভুক্ত ছিল। চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশের রাজা রামবল্লভ কৃষ্ণবল্লভ, হরিবল্লভ, জয়দেব, রানী কমলা বলভদ্র বসু, পরমানন্দ বসু, জগদানন্দ বসু চতুর্দশ হতে ১৫৮৪ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। ১৫৮৪ সালে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বাকলার রাজা জগদানন্দ বসুসহ দু’লাখ লোক নিহত হয়। কদর্প নারায়ণ ঘূর্ণিঝড় ও মগ পর্তুগীজদের ভয়ে রাজধানী বাকলা থেকে মাধবপাশায় স্থানান্তরিত করেন।
কদর্প নারায়ণ বারভুঁইয়াদের অন্যতম ভূঁইয়া ছিলেন। তারপুত্র রাজা রামচন্দ্র ১৬০২ সালে যশোরের রাজা প্রত্যপাদিত্যের কন্যা বিমলাকে বিয়ে করেন।
সুলতানী ও মোগল আমল
সুলতানী ও মোগল আমলে চন্দ্রদ্বীপ রাজারা প্রায় স্বাধীনভাবে রাজত্ব করছেন। ১৪ ও ১৫ শতকে মুসলমানগণ চন্দ্রদ্বীপে আগমন করেন। হজরত সৈয়দুল আরেফিন তৈমুর লংগের ভারত আক্রমণের সময় (১৩৯৮) রাজধানী বাকলায় আগমন করেন। তান রোকনউদ্দীন বরবক শাহের রাজত্বকালে পটুয়াখালী জেলার মৃজাগঞ্জে ১৪৬৫ সালে মসজিদবাড়ি গ্রামে মসজিদ নির্মিত হয়। সৈয়দ আলাউদ্দিন হুসেন শাহের রাজত্বকালে (১৪৯৩-১৫১৯) গৈলা ফুল্লেশ্রীর কবি বিজয় গুপ্ত ‘মনসা মঙ্গল’ কাব্য রচনা করেন। বাংলার জনগোষ্ঠী যখন অতি মাত্রায় ধর্মাশ্রিত ও ভাগ্য নির্ভর হয়ে প্রতিবাদী শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল তখন বিজয়গুপ্ত মানুষের জয়গান গেয়েছেন। মানুষ যে ধর্মীয় বন্ধনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করতে পারে তা আমরা চাঁদ সদাগরের চরিত্রে দেখতে পাই। রাজা রামচন্দ্র বসু (১৫৯৮-১৬৬৮) বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সুবাদার ইসলাম খাঁন ১৬১১ সালে ডিসেম্বর মাসে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য দখল করেন। মোগল সম্রাট চন্দ্রদ্বীপকে কয়েকটি পরগায় বিভক্ত করেন। রাজা রাম চন্দ্রকে একমাত্র চন্দ্রদ্বীপ পরগণা গ্রহণ করে সন্ধি করতে হয়েছিল। মোগল ফৈজদার চন্দ্রদ্বীপ শাসন শুরু করে। ফৈজদার ছবিখান একজন জনদরদী শাসক ছিলেন। বরিশালে বিভিন্ন স্থানে তাঁর কীর্তি ছড়িয়ে আছে। সম্রাট শাহজাহান ও আওরঙ্গজেবের সময় বাকলা চন্দ্রদ্বীপ মগের মুল্লুকে পরিণত হয়। আরকানের মগ ও পর্তুগীজ জলদস্যুরা দেশীয় দালালদের সহযোগিতায় চন্দ্রদ্বীপে হত্যা, লুণ্ঠন, নারী নির্যাতন চালায় এবং যুবক-যুবতীদের ধরে নিয়ে দাস হিসেবে বিক্রি করত। তাদের অত্যাচারে চন্দ্রদ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ জন শূন্য হয়ে যায় এবং সুন্দরবনে পরিণত হয়। পায়রা নদী থেকে প্রবাহিত একটি খাল দিয়ে প্রায়ই পর্তুগীজ জলদস্যুগণ সম্পদ লুণ্ঠন করত। জনগণ এ খালের নাম দেয় পাটুয়ার খাল। 

পাটুয়ারখাল থেকে পটুয়াখালী নাম করণ হয়েছে। সুবাদার শাহসুজা (১৬৩৯-১৬৫৯) চন্দ্রদ্বীপ থেকে জলদস্যুদের দমন করার জন্য সুজাবাদে কেল্লা বা দুর্গ নির্মাণ করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৬৫ সালে হিজলার গোবিন্দপুরে বৃহত্তম সংগ্রাম কেল্লা নির্মাণ করান। সংগ্রাম কেল্লাকে কেন্দ্র করে সুবাদার শায়েস্তা খান মগ পর্তুগীজদের চন্দ্রদ্বীপ বাকলা থেকে বিতাড়িত করেন। সায়েস্তাবাদ গ্রাম তার স্মৃতি বহন করে। নবাব আলীবদী খানের সময় আগাবাকের (১৭৪১-৫৪) চন্দ্রদ্বীপের বুজুর্গ উমেদপুর পরগণার জমিদারী লাভ করেন। তিনি চন্দ্রদ্বীপ পরগানার একাংশ দখল করে নেন। ১৭৫৪ সালে আগাবাকের ঢাকায় নিহত হওয়ার পর রাজা রাজধল্লভ তাঁর জমিদারী দখল করে নেয়। আগাবাকের ১৭৪১ সালে নিজ নামে বাকেরগঞ্জ বন্দর প্রতিষ্ঠা করেন। তার নাম ইংরেজগণ চন্দ্রদ্বীপ নামের স্থলে জেলার নাম করেন বাকেরগঞ্জ।
চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের পতন
১৬১১ সালে রাজা রামচন্দ্রের পরাজয়ের পর চন্দ্রদ্বীপের গৌরব হ্রাস পেতে থাকে। রাজা রামচন্দ্রের পর কীর্তিনারায়ণ (১৬৬৮-৮৮), প্রতাপ নারায়ণ (১৬৮৮-১৭২৩), রাজা উদয় নারায়ণ মিত্র (১৭৭৮-১৮১৩), শিবনারায়ণ (১৭৬৯-১৭৭৭), রাজা জয় নারায়ণ (১৭৭৮-১৮১৩) সাল পর্যন্ত রাজ্য পরিচালনা করেন। রাজা শিবনারায়ণের স্ত্রী রাণী দুর্গাবতী ১৭৮০ সালে মাধব পাশায় ৬১ কানি ভূমির ওপর ৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৬ মাসে ‘দুর্গা সাগর’ দীঘি খনন করেন। রাজার মুদি রাম মাণিক্য ষড়যন্ত্র করে ১৭৯৯ সালে নিলামে চন্দ্রদ্বীপ পরগণা ক্রয় করে। মুদি প্রতারণা করে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য গ্রাস করায় একটি স্থানীয় প্রবাদ সৃষ্টি হয়েছেÑ
‘চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য গেল, মুদির মাথায় ছাতি’
রাজা জয় নারায়ণের পুত্র নৃসিংহ নারায়ণ অপুত্রক ছিলেন। তাঁর দত্তক পুত্রের বংশধরগণ মাধবপাশা রাজবাড়িতে চরম দারিদ্রের মধ্যে দাস করছেন। এমনিভাবে চারশ বছরের চন্দ্রদ্বীপের প্রাচীন রাজ পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত্ব আইনে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ হলে চন্দ্রদ্বীপ পরগণা নামটিও সরকারি নথিপত্র থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। চন্দ্রদ্বীপ নামটি আজ ইতিহাস হয়ে আছে। এ নামে বর্তমানে বৃহত্তর বরিশালে কোন স্থানের নাম নেই।
বরিশাল নামকরণ
প্রাচীন কাল হতে চন্দ্রদ্বীপ লবণ উৎপাদন ও মৎস্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। ১৭৫৭ সালে পলাশীর পরাজয়ের পর ইংরেজগণ চন্দ্রদ্বীপ বাকলার ব্যবসা বিশেষ করে লবণ ব্যবসা দখল করে নেয়। বরিশাল শহরের পূর্ব নাম গিরদে বন্দর। নবাবদের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় লবণ গোলা ও সবচেয়ে বড় লবণ চৌকি ছিল গিরদের বন্দর। ইংরেজ পর্তুগীজ বণিকগণ বড় লবণ চৌকিকে বরিসল্ট বলতো। ‘বরিসল্ট’ হতে বরিশাল নামকরণ হয়েছে। ১৯৬২ সালে ২৬ শে ডিসেম্বর তারিখে নবাব মীর কাশিম বরিশাল বন্দরে ইংরেজ বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার প্রতিবাদ জানিয়ে ইংরেজ গভর্নর ভেনসিটারট এর নিকট যে পত্র লিখেছিলেন সে পত্রে প্রথম বরিশাল
লিখেছিলেন
শিগগিরই মা হতে চান লেডি গাগা
প্রীতি ওয়ারেছা

পপ সুপারস্টার লেডি গাগা যার পুরো নাম স্টেফানি জারমানোটা। ‘বর্ন দিস ওয়ে’ অ্যালবামের মাধ্যমে বিশ্ব কাঁপানো লেডি গাগা উদ্ভট সব ফ্যাশনের জন্য সারাবিশ্বে তুমুল আলোচিত। নিত্যনতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড  আর পাগলাটে আচরণ দিয়ে লেডি গাগা সব সময়ই থাকছেন লাইমলাইটে। ২৫ বছর বয়সী পপক্রেজ লেডি গাগা এবার সন্তানের মা হওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আগামী এক বছরের মধ্যে  নিজেকে মা হিসেবে দেখতে চান। বয়ফ্রেন্ড ভ্যাম্পায়ার ডায়েরিস খ্যাত অভিনেতা টেলর কিনি’র কাছেই লেডিগাগা চান সেই প্রত্যাশিত সন্তান। শুধু তাই নয়, টেলর কিনির সঙ্গে প্রেম, বিয়ে ও পারিবারিক সম্পর্কে তিনি জড়াতে চান। তবে সবার আগে নিজের গর্ভজাত সন্তানের মুখ দেখতে উন্মুখ গাগা। এরই মধ্যে এই পপসম্রাজ্ঞী সন্তানের নাম বাছাই করা শুরু করে দিয়েছেন। তার অনাগত সন্তানটি দেখতে অসম্ভব সুন্দর হবে বলে তিনি মনে করেন। কারণ তার মতে টেলর দেখতে ভীষনরকম হ্যান্ডসাম একজন পুরুষ। সম্প্রতি ইউকে থেকে প্রকাশিত ডেইলি স্টার পত্রিকা এই খবরটি প্রকাশ করেছে। গাগার ঘনিষ্ঠজনেরা মনে করছেন, সন্তান প্রসঙ্গটি গাগার একেবারে সত্যিকারের মনের চাওয়া। কারণ গাগার সাবেক বয়ফ্রেন্ড লুইস কার্লের সাথে সম্পর্ক থাকাকালীন সময়ে তিনি কখনো এ ধরণের চাহিদার কথা মুখেও আনেননি। ৩০ বছর বয়সী টেলর কিনির সঙ্গে গাগার পরিচয় গত শীত মৌসুমে। তারপর থেকেই ভালোলাগা ভালোবাসা। সম্পর্কের পূর্ণতার জন্য গাগার সন্তান কামনা টেলরের মধ্যেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এখন তারা দুজনই মনস্থির করে ফেলেছেন সন্তান লাভের বিষয়টি। সম্প্রতি টেলরের বাড়ি ল্যাঙ্কাস্টার পেনসিলভেনিয়া থেকে ঘুরে এসে এই প্রেমিকজুটি তাদের ইচ্ছার কথা প্রেসের কাছে প্রকাশ করেছেন। টেলর-গাগার এই সফরটি ছিল আসলে পরিবারের সদস্যের সাথে মধুর একটি সম্পর্ক স্থাপন এবং নিজেদের বর্তমান অবস্থান জানানোর একটি সুন্দর প্রচেষ্টা। বলা যায়, এ ব্যাপারে শতভাগ সফল হয়েছেন পপস্টার গাগা। টেলরের পরিবারের সদস্যরা লেডিগাগাকে ভীষন আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। গাগাকে তারা সুন্দর মনের একজন রুচিবান মানুষ বলে উল্লেখ করেছেন।  লেডি গাগা সম্পর্কে টেলরের এক আন্টির মন্তব্য, ‘গাগা খুব ভালোবাসে টেলরকে। তারা একে অন্যের জন্য একেবারে পারফেক্ট’।
ছায়া-ছবি’র শুভ-পূর্ণিমা
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢালিউডে নায়িকা পূর্ণিমা কাজ করছেন এক যুগ পেরিয়ে গেছে, আর আরেফিন শুভর এবারই চলচ্চিত্রে অভিষেক। শুভ-পূর্ণিমা জুটি বেঁধেছেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের চলচ্চিত্র ‘ছায়া-ছবি’তে। সাগরকন্যা চট্টগ্রামে বর্তমানে ছবিটির শুটিং চলছে। ‘মন যা বলুক, আমি তোমারই হব’ শীর্ষক একটি গান দিয়ে চট্টগ্রামের ফয়েজ লেকে শুরু হয়েছিল‘ছায়া-ছবি’র শুটিং। এতে অংশ নেন পূর্ণিমা ও শুভ। মজার ব্যাপার হলো, এ গানটির কথা লিখেছেন নায়িকা মৌসুমী। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতের অভিজিৎ ও আকৃতি কাক্কর। এটি ছাড়াও চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপিজেডসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক লোকেশনে এবং কক্সবাজারে শেষ হয়েছে কবির বকুলের লেখা ও ভারতের শানের গাওয়া ‘তোমার ছায়া তোমার ছবি’ শীর্ষক গানটির শুটিং।chaya
পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ জানালেন, ১২ মার্চ পর্যন্ত ‘ছায়া-ছবি’ ইউনিট নিয়ে তিনি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অবস্থান করবেন। শুটিংয়ের প্রথম লটে কয়েকটি গানের কাজ তিনি শেষ করতে চান। ইউনিট নিয়ে ঢাকায় ফেরার পর এক দিন বিশ্রাম নিয়ে আবারও শুটিংয়ে নেমে পড়বেন। পুরো এপ্রিল মাস জুড়েই চলবে ছবিটির শুটিং। ‘ছায়া-ছবি’ প্রসঙ্গে পূর্ণিমা বলেন, ‘অনেকদিন ধরে যে ধরনের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম এতে তেমনই একটি চরিত্র পেয়েছি। চেষ্টা করছি পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে চরিত্রটিতে অভিনয় করতে। আরেফিন শুভর মধ্যে আছে একজন হিরো হওয়ার সব বৈশিষ্ট্য’। শুভ বলেন, ‘ছবির শুটিং শুরুর প্রথম দিকে ভয় ছিল, পূর্ণিমার মতো নায়িকার বিপরীতে আমি অভিনয় করছি। চলচ্চিত্রে যিনি আমার ১০ বছরেরও বেশি সিনিয়র। কাজ করতে গিয়ে দেখলাম অন্য পূর্ণিমাকে। তিনি যে এতটা সহযোগিতাপরায়ণ তা ছায়া-ছবির শুটিং না করলে বুঝতেই পারতাম না।’ পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ বলেন, ‘আবহাওয়াটা মেঘলা হওয়ায় শুটিং মাঝেমধ্যে সমস্যা হচ্ছে। পরিকল্পনা মতো কাজ এগিয়ে নিতে পারছি না। তবে যতোটুকু শুটিং করছি, তাতেই আমি সন্তুষ্ট। পূর্ণিমা আর শুভ, দুজনের পারফরম্যান্স আমাকে মুগ্ধ করেছে। প্রত্যাশার চেয়েও ভালো অভিনয় করেছে তারা। চ্যানেল নাইন প্রযোজিত ‘ছায়া-ছবি’ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন গান নিয়ে এবারের পয়লা বৈশাখে বাজারে আসছে অডিও অ্যালবাম। এই অ্যালবামে দেশ-বিদেশের বেশ কয়েকজন কণ্ঠশিল্পীর গান থাকছে। এদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের শান, অভিজিত, আকৃতি কাক্কর, রাঘব চ্যাটার্জি, অন্বেষা ও বাংলাদেশের আরফিন রুমী, নিশিতা, পড়শী প্রমুখ। ‘ছায়া-ছবি’ চলচ্চিত্রের গানগুলো লিখেছেন কবির বকুল, মারজুক রাসেল, চিত্র নায়িকা মৌসুমী, রবিউল ইসলাম জীবন ও মাহমুদ মানজুর। অ্যালবামের সবগুলো গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন আরফিন রুমী।
নারীদের জন্য আর্ট লিভিংয়ের কর্মশালা
ডেস্ক রিপোর্ট

ঢাকা : শুধুমাত্র নারীদের জন্য আগামী ১১ মার্চ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে আর্ট অব লিভিংয়ের ‘হিলিং ব্রেথ ওয়ার্কশপ’। পাঁচ দিনব্যাপী এই কর্মশালা চলবে ১৫ মার্চ পর্যন্ত। আয়োজক সূত্রে জানা যায়, দৈনন্দিন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করা, যোগ ব্যায়াম, সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাসসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কর্মশালা পরিচালনা করা হবে।
এছাড়া এখানে শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল শেখানো হবে। কারণ সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাস দৈনন্দিন কাজের চাপ কমিয়ে দেয়, সহনশীলতা বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এমনকি উচ্চ রক্ত চাপ এবং ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
হোটেল সেন্ট্রাল পয়েন্টে (বাড়ি ২এ, রোড ৯৫, গুলশান-২) কর্মশালা চলবে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত।
রেজিস্ট্রেশনের জন্য আজই যোগাযোগ করুন উপরোক্ত ঠিকানায় অথবা ০১৭১৩০৮৩৬৩৯/০১৯১৭৭০৭০৭০ এসব নম্বরে।
চোখের যত্নে
তানিয়া আফরিন
 চোখ মানবদেহের কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং আবেগময় একটি অঙ্গ তা আমরা সবাই জানি। চোখ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এটা সবারই জানা। কিন্তু আবেগময় বলাতে একটু খটকা লাগছে তো! সত্যি বলতে কি চোখটা একটু বন্ধ করে ভাবুন তো এই পৃথিবী আর দেখতে পারবেন না। আপনার চারপাশের প্রকৃতির এত রূপ, এত রঙের বিচিত্র খেলা কিংবা আপনার প্রিয় মানুষগুলোর সুন্দর মুখ দেখতে পারবেন না। ভাবুন তো একবার। দেখবেন দু’চোখ বেয়ে টপ টপ করে বারি ঝরছে।
তাই চোখ সার্বিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এজন্য ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টাতে একটু সাবধান থেকে চোখের যত্নে সময় ব্যয় করুন।
চোখের সুস্বাস্থ্যে এবং এর সংক্রমণ রোধে প্রতিদিন চোখের যত্ন নিন। প্রতিদিন আমরা বাইরে কাজে বের হই কিংবা ঘরে থাকলেও ধুলোবালি, সূর্যের আলো এবং পরিবেশের অন্যান্য বিষয়গুলো চোখের মধ্যে প্রবেশ করে। ফলে এগুলো দীর্ঘ সময় ধরে চোখের মধ্যে প্রবেশ করে আমাদের দৃষ্টিকে প্রভাবিত করে।
এছাড়াও আমরা যারা অফিসিয়াল কাজে দীর্ঘক্ষণ বা কম সময়ের জন্যও কম্পিউটারের সামনে বসে থাকি তাদেরও প্রয়োজন নিয়মিত চোখের যত্ন।
চোখের যত্নে কিছু মৌলিক নির্দেশনাবলী নিম্নে দেওয়া হলো:
সুষম খাদ্য গ্রহণ : চোখের যত্নে সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। এজন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রচুর সবজি এবং ফলমূল রাখুন। সাধারণত ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ এবং ‘ই’ জাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। গাজর, ব্রোকলি, মিষ্টি কুমড়া এবং এ ধরণের আরও সবজি খেতে পারেন। কারণ এই সবজিগুলোর মধ্যে অনেক বেশি ভিটামিন থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে : চোখের যত্নে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এজন্য আপনার প্রতিকূল অভ্যাস যেমন ধুমপান এবং মদের প্রতি আসক্তি কমান। কেননা ধুমপান আপনার চোখের রক্ত সঞ্চালনের উপর বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘন ঘন ধুমপানে আপনার চোখের ছানি পড়ার মাত্রা বেড়ে যায় এবং ছানি থাকলে তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এছাড়া চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (macular degeneration) হলে অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে এবং চোখের নার্ভেও বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যায়। অন্যদিকে মদ্যপ হলে আপনার চোখের মণিতে সমস্যা দেখা দেবে। এছাড়াও আপনার দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাবে, আপনি কোন জিনিস ডাবল দেখতে পাবেন এবং আপনার বিভিন্ন রঙ বোঝার ক্ষমতা কমে যাবে।
নিয়মিত চোখের পরীক্ষা : উপরোক্ত বিষয়গুলি মানলেও আপনাকে নিয়মিত চোখের ডাক্তারের কাছে চোখ ভালো আছে কিনা তা পরীক্ষা করাতে হবে। মনে রাখবেন অনেক সময় বিষন্ন লাগা কিংবা ঘন ঘন মাথা ব্যথা করা অথবা কাজে মনোযোগ না বসা এগুলো চোখের সমস্যার কারণে হতে পারে।
আবার ডায়াবেটিস রোগীদের চোখের সমস্যা কিংবা বয়স বাড়ার ফলে চোখের যেসব রোগ হয় তা বেশিরভাগ সময় বাইরে থেকে বোঝা যায় না। তাই প্রয়োজন নিয়মিত চোখের ডাক্তারের সরনাপন্ন হয়ে চোখে পরীক্ষা করা।
চোখের ব্যায়াম : শুধু শারীরিক ব্যায়াম নয় নিয়মিত চোখের ব্যায়াম আপনাকে চোখের পেশি এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে। চোখের ব্যায়ামটা বিশেষত তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যারা দীর্ঘক্ষণ কম্পউটারের সামনে বসে থাকেন।
এজন্য কম্পউটারের সামনে বসে কাজের সময় নিজে থেকেই একটু ব্যায়াম করে নিন। এক্ষেত্রে চোখ বন্ধ করে আস্তে আস্তে খুলে দৃষ্টির চারপাশ ঘোরাতে থাকুন। এভাবে কয়েকবার চোখের ব্যায়াম করুন।
এছাড়াও মাথা সোজা রেখে চোখের মণি ঘুরিয়ে ডানে এবং উপরে করুন। এভাবে কয়েকবার করে চোখ বন্ধ করুন। এবার একবার বামে এবং নিচে চোখ ঘুরিয়ে আবার বন্ধ করুন। পরে চোখ মেলে এবার ঠিক উল্টোভাবে কয়েকবার ডানে ও নিচে এবং বামে ও উপরে করুন। এভাবে কম্পিউটারে কাজের ফাঁকে ফাঁকে চোখের ব্যায়াম করে নিন।
পরিবারের অন্যদের চোখের ইতিহাস জানুন : পরিবারের কিংবা বংশগতভাবে কিছু চোখের সমস্যা আপনার থাকতে পারে। কিংবা আপনি পরবর্তীতে বংশগত কারণে চোখের সমস্যায় পড়তে পারেন। এজন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে যে, পরিবারের কারও কোন চোখের সমস্যা ছিল কিনা তা জেনে নিন এবং আগে থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলুন।
চোখের প্রতিরক্ষায় চশমা ব্যবহার : চোখের প্রতিরক্ষায় আপনি চশমা, গগলস কিংবা সানগ্লাস ব্যবহার করতে পারেন। ফলে চোখের ভেতরে কম ধুলোবালি প্রবেশ করতে পারে এবং সূর্যের ক্ষতিকারক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্নি ক্ষতি করতে পারবে না। এজন্য চোখের সুরক্ষায় আপনি এ ধরণের গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম : চোখ ভালো রাখতে প্রয়োজন চোখের পর্যাপ্ত বিশ্রাম। শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রতঙ্গের মতো চোখেরও বিশ্রাম প্রযোজন। তাহলে চোখের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং চোখের প্রেসার ও ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তাই টিভি কিংবা কম্পিউটারের সামনে বসে অযথা সময় নষ্ট না করে চোখের বিশ্রাম দিন। মনে রাখবেন চোখের নিয়মিত যত্ন আপনাকে দীর্ঘদিন দেখার দৃষ্টিশক্তি দেবে। যারা এখনও চোখের প্রতি যত্নশীল নন তারা আজ থেকেই নিয়মিত চর্চা করুন এবং যারা চোখের প্রতি যত্নশীল ছিলেন তারা আরও একটু সতর্ক হোন।
৩ মিনিটের ব্যায়ামই যথেষ্ট
স্বাস্থ্য ডেস্ক
যারা অলস বা নিয়মিত ব্যায়াম করার সময় পায় না তারা এই খবর পড়ে আক্ষরিক অর্থে আনন্দে লাফ দিয়ে উঠবেন।  গবেষকরা বলছেন, শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিমগুলোতে সময় কাটানোর প্রয়োজন নেই। বরং সপ্তাহে নিয়মিত মাত্র তিন মিনিটের ব্যায়ামই আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। এখানে গোপন বিষয়টি হলো, অল্প সময়ের জন্য ভারি ব্যায়াম আপনাকে প্রতিদিনের ব্যায়ামের চাইতে ভালো ফলাফল দিতে পারে। বার্মিংহাম এবং নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীর বক্তব্য অনুযায়ী, নিত্যদিনের ব্যায়ামের চাইতে সপ্তাহে একবার তিন মিনিটের ব্যায়াম অনাকাঙ্খিত চর্বি ঝরাতে অধিক কার্যকর।  তার বলছেন, ভারি ধরণের ব্যায়াম চর্বি ঝরাতে সক্ষম এমন হরমোন নির্গমনে সাহায্য করে। এই হরমোনগুলো গ্লুকোজকে রক্ত থেকে পেশীতে স্থানান্তরিত করে। যার ফলে অতিরিক্ত চর্বিগুলো জমে থাকে না। আর অতিরিক্ত চর্বি থাকলেও তা ঝরে যায়। এই গবেষণায় আরও বেরিয়ে এসেছে যে, বেশি সময়ের ব্যায়াম আপনার ক্ষুধা বাড়ায় অপরদিকে অল্প সময়ের জন্য ভারি ব্যায়াম আপনার ক্ষুধার প্রবণতা হ্রাস করে। তাই প্রতিদিন জিমে না গিয়ে সপ্তাহে একবার অল্প সময়ের জন্য ভারি ব্যায়াম করুন তাহলে ওজন কমার পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকর্ষণও কমবে। ভারি ব্যায়ামের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা দৌঁড় কিংবা সাইক্লিং এর পরামর্শ দিয়েছেন। বার্মিংহাম এর একজন গবেষক অধ্যাপক জেমস টিমন্স বলেন, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে গ্লুকোজকে রক্ত থেকে পেশী তে সঞ্চালনে ভারি ব্যায়াম খুব উপকারী তা প্রমাণিত হয়েছে। এ ধরণের ব্যায়াম আপনার রক্তে মেদ কমাতে বা পোড়াতে সক্ষম এমন হরমোন এর মাত্রা বাড়ায় যার ফলে আপনি অতিরিক্ত মেদ কমাতে পারেন। আমরা শীঘ্রই এ ব্যাপারে আরও ব্যাপকভাবে গবেষণা শুরু করবো।
সরে যাক হতাশা
সুমন মজুমদার
 বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষ সামাজিক ও পারিপার্শিক চাপে ক্রমেই যেন হয়ে যাচ্ছে এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ভেঙে যাচ্ছে যৌথ পরিবার, গড়ে উঠছে একক জগৎ।
বিশেষ করে শহরায়নের চাপে এখন মানুষ পাল্টে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে তার স্বাভাবিক জীবন প্রক্রিয়া। যা তাকে বানিয়ে দিচ্ছে এক রকম যন্ত্র। আর এই যান্ত্রিক জীবনের অন্যতম লক্ষ্যই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিযোগিতা। সব দিক থেকেই যেন নিজেকে সেরা দেখতে চাওয়াই এখন মূল লক্ষ্য। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে এই প্রতিযোগিতা আমাদের মাঝে তৈরি করে দিচ্ছে একধরণের হতাশা এবং একাকিত্ব। যাতে এখন আক্রান্ত সারা পৃথিবীর প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ। হতাশা ও একাকিত্বের রঙ : বিশ্বায়ন ও শহরায়নের কঠিন জীবনে কেউ হচ্ছে জয়ী আর কাউকে হতে হচ্ছে পরাজিত। জয়ীরা ওই জীবনে মানিয়ে নিলেও পরাজিতরা ভেঙে পড়েন চরম হতাশায়। অকারণে নিজেকে ছোট ভাবতে শুরু করেন। ফলে একসময় চরম হীনমন্যতায় ভুগে আত্মবিশ্বাস এসে দাঁড়ায় শূন্যের কোটায়।
আবার শধু কাজের ব্যস্ততাই নয়। আধুনিক জীবনে আনন্দ বিনোদনের অভাব, পারিবারিক ভাঙন, অর্থনৈতিক দৈন্যতা, বেকারত্ব, প্রেমহীনতা মানুষের মাঝে তৈরি করে দিচ্ছে একাকিত্বতা। ফলে দিনদিন জীবনের স্বাভাবিক উজ্বল্যতা হারানো এইসব মানুষ হয়ে পড়ছেন রোগগ্রস্থ আবার অনেকে মাদকাসক্ত। কিন্তু এ বিষয়টি সম্পূর্ণ মানসিক হওয়ায় আক্রান্তরা অনেক সময় এর সম্পর্কে ঠিক মতো বুঝেও উঠতে পারেন না।  হতাশার পরিনাম : হতাশার পরিণতি সবসময়ই নেতিবাচক।  হতাশা মানুষের জীবনে শুধু কষ্টই ডেকে আনে, কোনো সাফল্য নয়। কিন্তু কিভাবে এই রোগ ধিরে ধিরে দখল করে নিতে থাকে মানুষের শরীর! গবেষণায় দেখা যায়, মানুষের মস্তিষ্কই তার সকল চিন্তা-ভাবনা আর আবেগের স্থান। মস্তিষ্কই নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের যাবতীয় মানসিক বিষয়। এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য শিরা-উপশিরা আর স্নায়ু। মন খারাপ বা অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তায় থাকলে এই স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে অন্য অঙ্গগুলোর উপর যেমন, শরীর তার স্বাভাবিক কাজের গতি হারায়, ত্বক রুক্ষ হয়ে উঠে এবং বলিরেখা দেখা দেয়। এমনকি চুল পড়াও শুরু হয়। এতো গেলো শরীরের বাহ্যিক প্রভাবের কথা। কিন্তু মানসিক হতাশা ও দুঃশ্চিন্তা শরীরের ভেতরে প্রভাব ফেলে আরও গভীর ভাবে। দেখা গেছে, দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় ফলে এতে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। যার অনিবার্য পরিনাম হার্টের অসুখ। এমনকি এ কারণে হার্ট অ্যাটাকও হয়।
আনন্দে থাকুন : বিশ্ব বিখ্যাত আমেরিকান মোটিভেটর ও লেখক ডেল কার্নেগি বলেছেন, ‘মানুষের জীবন একটাই। তাই আমাদের উচিত এটিকে সর্বোচ্চভাবে উপভোগ করা।’  কিন্তু সময়ের ক্রমবর্ধমান চাপ ও বিশ্বায়নের এই যাতাকল থেকে বাঁচা সত্যিই সহজ নয়। তবে এর জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি আপনি অবলম্বন করতে পারেন। মনোবিজ্ঞানীরা যেটিকে বলেন সেলফ মোটিভেসন। প্রতিদিন নিয়ম করে ঘুম, কাজ, চিত্ত বিনোদন ও প্রিয়জনের সান্নিধ্যে থেকে এই হতাশা ও দুঃশ্চিন্তা থেকে বেশ খানিকটা দূরে থাকতে পারেন।মোট কথা জীবনকে নতুন করে ভাবতে শুরু করুন। বিপদে মনোবল না হারিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে কাজের শপথ নিন। কখনোই নিজেকে ছোট ভাববেন না। মনে রাখবেন যে ব্যাক্তি যত উৎফুল্ল, তার কাজ করার ক্ষমতা তত বেশি। আর চলার পথে মানুষের জীবনে দুঃখ কষ্ট আসবেই। সেগুলোকে অতিক্রম করার সাহস রাখুন।
সুখের পরিধি : মানুষ যে কখন কিসে সুখী হয় তা বলা মুশকিল। তবে যিনি সর্বদা নিজেকে সুখী ভাবেন আসলে সেই সবচেয়ে সুখী মানুষ। এর জন্য মনোবীদরা একটি অন্যন্য উপায়ও বের করেছেন। তারা সকলকে পরামর্শ দিয়েছেন সবসময় প্রাণ খুলে হাসার। কারণ হাসলে মানুষের মন ভালো হয়। আর বিষন্নতা পালায় হাজার মাইল দূরে। এজন্য মনোবিজ্ঞানীরা সকলকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট প্রাণ খুলে হাসার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়াও আরও কিছু উপায়ে হয়তো আপনি আনন্দে থাকতে পারেন। যেমন- শত ব্যাস্ততার মাঝেও অন্তত সপ্তাহের একটি দিন বা একটি ঘণ্টা প্রিয়জনের সঙ্গে কাটান। তাদের নিয়ে বেড়াতে যান কোনো পছন্দের জায়গায়। এছাড়া অবসরের সময়গুলোতে পরিবারের সকলকে নিয়ে টিভিতে পছন্দের কোনো অনুষ্ঠানও দেখতে পারেন। রাতে ভালো কোনো গল্পের বইও পড়তে পারেন। সিনেমা হলে গিয়ে স্বপরিবারে বা বন্ধুদের নিয়ে দেখে আসতে পারেন ভালো কোনো চলচ্চিত্র। অবসরে বাড়ির বারান্দায় বা আঙ্গীনায় বাগানও করা যেতে পারে। অনেকেই আর্থিক বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। তারা বিপদে কাজে লাগাতে প্রতিদিন অল্প অল্প করে সঞ্চয়ের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। সর্বোপরি হতাশা আর দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে মনে রাখতে হবে আপনি যেমনই হন না কেন আপনার মত পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কেউ কোথাও নেই। পৃথিবীকে দেবার মতন আপনার কাছে এখনও অনেক কিছুই বাকি। তাই নিজেকে অহেতুক অন্যের চেয়ে ছোট না ভেবে নিজের মত করে বাঁচুন এবং আনন্দে থাকুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন