Year-18 # Issue-34 # 9 Octobaer 2011

প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সঙ্গী করে বেঁচে আছে দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ
মিজান রহমান
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ প্রকৃতিক দুর্যোগকে সঙ্গী করে বেঁচে আছে। গত কয়েক বছরে আইলা, সিডো ও নানা ধরণের প্রকৃতিক দুর্যোগ তাদের নি:স্ব করে দিয়ে গেছে। এ দুর্যোগের হুমকির মুখে উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ আজ বসবাস করছে। এসব মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ অঞ্চলে দুর্যোগ মোকাবেলা করার মতো সরকারের উদাসীনতাই অনেকাংশে দায়ি বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আশ্রয় নেয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই, নেই খাবারসহ প্রাথমিক মোকাবেলার কোন উপকরণ। বিশেষ করে ভোলা, বরগুনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, খুলনা, বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলাগুলোতে সাইক্লোন শেল্টারের স্বল্পতার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে চরম বিপদের সময় তাদেরকে আল্লাহর ওপর ভরসা করেই বেঁচে থাকতে হয়।
সূত্র জানায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৪৭টি উপজেলার সাড়ে ১৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা উপকূলীয় হিসেবে চিহ্নিত। এখানে বসবাস করে প্রায় ২ কোটি মানুষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের গতিপ্রকৃতি অনুসারে উপকূলীয় এলাকাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে ‘হাই রিক্স সাইক্লোন এরিয়া’ বা এইচআরসিপি। মারাÍক ঝুঁকিপূর্ণ এ তালিকায় স্থান পেয়েছে ১৩ জেলার ৩১টি উপজেলা। বাকি ৬ জেলা তালিকাভুক্ত হয়েছে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়র এলাকা হিসেবে। উপকূলীয় এলাকায় সাড়ে ২২ হাজার সাইক্লোন শেল্টারের প্রয়োজন হলেও আছে মাত্র ২৭শ’র কিছু বেশি। এসব শেল্টারে প্রতিটিতে গড়ে ৮শ’ থেকে ১ হাজার নারী-পুরুষ আশ্রয় নিতে পারে। ফলে উপকূলীয় এলাকার প্রায় দেড় কোটি লোকই সাইক্লোন শেল্টারে স্থান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কাগজে-কলমে উপকূলীয় এলাকায় ২৭শ’ সাইক্লোন শেল্টার থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবে-এর মধে বিশাল শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। উপকূলীয় ১৩ জেলায় থাকা ১ হাজার ৮৪১টি সাইক্লোন শেল্টারের মধ্যে ২৫৬টি নির্মিত হয়েছে ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে। এর বেশিরভাগই এখন জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী। বিশেষ করে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, পটুয়াখালী ও ভোলার বহু সাইক্লোন শেল্টার আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাছাড়া ’৭৯ সালের পর ওসব এলাকায় যেসব সাইক্লোন শেল্টার নির্মিত হয়েছে সেগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। সরকারি বরাদ্দের অপ্রতুলতার কারণে কখনোই এসব সাইক্লোন শেল্টারের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। অবাক হলেও সত্য যে, উপকূলীয় এলাকার জনগণের জন্য প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি খাতে সরকারের বার্ষিক বরাদ্দ মাথাপিছু ২ টাকারও কম। আবার এর বেশিরভাগই খরচ হয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও ঘূর্ণিঝড়কালীন সময়ে ব্যবহƒত ভিএইচএফ ওয়ারলেস সেটগুলোর নিয়মিত পরিচর্যাতে। যদিও বর্তমান এ পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে।
সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে সুপার সাইক্লোন সিডরের পর সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৩শ’ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। তাছাড়া ২০০৫ সালে এইচআরসিপি চিহ্নিত ১৩ উপকূলীয় জেলায় ১ হাজার ৮৪১টি সাইক্লোন শেল্টার ছিল। এর মধ্যে কক্সবাজারে ৪০১টি, বরগুনায় ৪২, পটুয়াখালীতে ১৬১টি, বরিশালে ৬২টি, পিরোজপুরে ৩১টি, নোয়াখালীতে ১৯৮টি, ঝালকাঠিতে ২৬টি, ফেনীতে ১০৬টি, বাগেরহাটে ৭টি, সাতক্ষীরায় ২৮টি, ভোলায় ১৫২টি, চট্টগ্রামে ৪৯৭টি এবং খুলনায় ৩৪টি শেল্টার ছিল। তবে এসব সাইক্লোন শেল্টারে কখনোই দুর্যোগের সময় চাহিদা পূরণ হয়নি।
সূত্র আরো জানায়, মূলত বিগত সরকারগুলোর উদাসীনতার কারণেই প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। ১৯৮৬ সালে উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ২শ’ কোটি টাকার এ প্রকল্পের প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে অদৃশ্য কারণে থেমে যায়। পরবর্তীতে ’৯১-এর জলোচ্ছ্বাসে প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যুর পর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে বুয়েটের সাবেক ভিসি ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়। কমিটি দীর্ঘ ও ব্যাপক অনুসন্ধান শেষে দেশে আরো অন্তত সাড়ে ৩ হাজার সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সে প্রস্তাবও আলোর মুখ দেখেনি। এরপর ২০০৭ সালে সিডরের পর দেশী-বিদেশী উদ্যোগে প্রায় ৩শ’ নতুন সাইক্লোন শেল্টার নির্মিত হওয়া ছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জানমাল রক্ষায় আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারী মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি আগাগোড়াই অবহেলিত রয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বাংলাদেশ সময়কে জানান, অতিঝুঁকিপূর্ণ সাইক্লোন এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই। যা ছিল তার অনেকগুলোই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার বেশিরভাগ চরেই সাইক্লোন শেল্টার তো দূরের কথা, বেড়িবাঁধই নেই। দুর্গম এলাকা হওয়ায় ঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসের সময় এসব এলাকার মানুষ মূল ভূখণ্ডে এসেও আশ্রয় নিতে পারে না। ফলে এসব অঞ্চলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়।
নিয়ম-শৃঙ্খলার বালাই নেই
শিক্ষার বাজার দখল করে আছে কোচিং সেন্টার আর শিক্ষক নামধারী ব্যবাসায়ীরা
হাসান মাহমুদ রিপন
শিক্ষার বাজার আজ দখল করে আছে কোচিং সেন্টার আর শিক্ষক নামধারী ব্যবাসায়ীরা। যেখানে নিয়ম-শৃঙ্খলার বালাই নেই। তার খোঁজ নেয়ারও কেউ নেই। অনিয়ম আর নানামুখী দুর্ববলতার পরেও সরকারী কোন বিধানের ধার ধারেন না এসব স্কুল কর্তৃপক্ষ। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে গেলে শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের আজ নতুন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
রাজধানীর বনশ্রীর ব্লক সি’র তিন নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িতে আকর্ষণীয় সাইনবোর্ডে লেখা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নাম ‘নলেজ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।’ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হিসেবে এখানে অক্সফোর্ড কিংবা ক্যামব্রিজের শিক্ষাক্রম অনুসারে ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এমনটাই জানেন সকলে। কিন্তু উদ্বেগজনক হলেও সত্য, এটি কোন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নয়। ভাড়া করা কক্ষে নজরকাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সাইনবোর্ড থাকলেও এখানে রীতিমতো চলছে কোচিংয়ের আদলে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষা। তেজগাঁওয়ের বিজয় সরণির পাশে সেন্ট লরেন্স একাডেমীর সাইনবোর্ডে শিক্ষার এমন এক মাধ্যমের কথা বলে মানুষকে আকৃষ্ট করা হয়েছে যার অস্তিত্ব নেই দুনিয়াতেই। সাইনবোর্ডে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্পষ্ট করে লেখা হয়েছে ‘সেমি ইংলিশ! এর পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলোতেই ছাত্রীদের বেশী যৌন হয়রানীর শিকার হতে হয়।
ব্যানবেইসের প্রধান পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শামসুল আলম বললেন, এদের নিয়ে কাজ করা খুব কঠিন। কাজ করতে গিয়ে আমাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। ভেতরে কোচিং সেন্টার আর বাইরে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সাইনবোর্ডের প্রমাণ পেয়েছি আমরা। শিক্ষার এই লুকোচুরির কারণ হিসেবে আপনাদের কি মনে হয়? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে বললেন, বাংলার খবর নেই, কি হয়? কি পড়ানো হয়? পড়ালেখার খরচ কেমন? শিক্ষক কারা? তাদের বেতন কত? এসব জানতে চাওয়াই লুকোচুরির কারণ।
গ্রামের স্কুল গুলোর দিকে তাকান তা হলে দেখবেন গ্রামাঞ্চলে শিক্ষাথীদের জন্য যে বই বরাদ্দ দেয়া হয় তা তারা চোখেও দেখে না। কারণ নৈতিকতার মুর্ত প্রতীক শিক্ষক সহজেই এই অনৈতিক কাজ গুলো করছেন। আর গাইডবই কোম্পানির কাছ থেকে পার্সেন্টেজ খেয়ে ছাত্রদের জন্য প্রেসকাইব করছেন আজেবাজে প্রকাশনীর নিু মানের পাঠ্য পুস্তক। এইখানের দুলক্ষ টাকা খরচ করলেই একটা চাকুরি পাওয়া যায় বলে ধারনা করছে অনেকে। যার গোড়াতেই গলদ তার পরবর্তী কাজ আর কতটুকুই বা উন্নত মানের হবে তা সহজেই অনুমেয়। আর এই সব সাইনবোর্ড বিহীন টিউশনি গুলোকে ১০০% ট্যাক্সের আওতায় নিতে পারলে হয়তো এই শিক্ষকদের দৌরাত্ত কিছুটা কমতে পারে।
শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় কোচিং সেন্টারের বিষয় বলেন, কোচিং সেন্টারগুলোতে ছাত্রীদের বেশি হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হবে।
মোহাম্মদপুর ইকবাল রোডের ১২/১৫ নম্বর বাড়িতে ‘রেডল্যান্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’-এর নামে চলছে রীতিমতো কোচিংয়ের আদলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষা। বিষয়টি ধরা পড়েছে সরকারী তদন্তেও। বিষয়টি সম্পর্কে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দু‘দিন চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ভাই নিয়ম মেনে তো কেউই কাজ করে না। খালি এই প্রতিষ্ঠানকে দোষ দিলে হবে না।
সরকারের উচিৎ শিক্ষাক্ষেত্রে একটু নজর দেয়া আর আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য অনুসারে সকল ইনিস্টিটিউশনে ড্রেসকোড নির্ধারিত করে দেয়া। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে গেলে আমাদের আজ নতুন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে উন্নত শিক্ষা প্রদানের নামে অসংখ্য তথাকথিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার নামে চলা বহুমুখী প্রতারণার চিত্র। অনুসন্ধানে ভেতরে কোচিং সেন্টার আর বাইরে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সাইনবোর্ডেরও অসংখ্য প্রমাণ পেয়েছে সরকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। জানা গেছে, দেশে আসলে কতটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে তার সঠিক সংখ্যা নেই সরকার ও বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠানের কাছেই। তবে এগুলো এতই নিয়ন্ত্রণহীন যে দেশজুড়ে অন্তত ১৮ হাজার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অস্তিত্ব আছে বলে ধারণা করা হলেও সরকারের রেজিস্ট্রেশন আছে মাত্র ৯১টির। আর ব্যানবেইস বলছে, ইংলিশ মিডিয়ামের নামে যত হাজার প্রতিষ্ঠানই থাকুক না কেন ইংলিশ মিডিয়াম হিসেবে বিবেচনা করা যায় এমন প্রতিষ্ঠান হবে সর্বোচ্চ ২০০টি। বাকিরা ইংলিশের নামধারী ভূঁইফোড় কিন্ডারগার্টেন না হয় কোচিং সেন্টার। উন্নত শিক্ষার নামে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সেজে শিক্ষার নামে রীতিমতো প্রতারণা চলছে দেশজুড়ে। যেখানে নিয়ম-শৃঙ্খলার বালাই নেই। বাংলা ভাষা, বাঙালী সংস্কৃতি রীতিমতো নিষিদ্ধ। কি হয়? কি পড়ানো হয়? পড়ালেখার খরচ কেমন? তার খোঁজ নেয়ারও কেউ নেই। খোদ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই আক্ষেপ করে বলছেন, আসলে আল্লাহর নামে চলছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রেজিস্ট্রেশন অব প্রাইভেট স্কুলস অর্ডিন্যান্স-১৯৬২-এর অধীনে ২০০৭ সাল থেকে একটি নীতিমালায় বেসরকারী (ইংরেজী মাধ্যম) বিদ্যালয়ের সাময়িক নিবন্ধন প্রদান শুরু হয়। কিন্তু নিবন্ধনের জন্য শিক্ষা বোর্ডের দ্বারস্থ হন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। কর্মকান্ডে চরম অস্বচ্ছতা, অনিয়ম আর নানামুখী দুর্ববলতার পরেও সরকারী কোন বিধানের ধার ধারেন না এর কর্তৃপক্ষ। নীতিমালা অনুযায়ী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলকে প্রথমে সাময়িক অনুমোদন দেয়া হয় দু‘বছরের জন্য। এরপর প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও মান যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনানুসারে আরও দু‘বছর কিংবা পাঁচ বছরের জন্য সাময়িক অনুমোদন দেয়া হয়। স্থায়ীভাবে এসব প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেয়া হয় না। পাঁচ বছর পর পর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কার্যক্রমের ওপর তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়। নীতিমালায় ভাড়া বাড়িতে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্রতিষ্ঠার নিয়ম নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো ভাড়া বাড়িতেই চলছে এদের কার্যক্রম। বিধান মেনে নিজস্ব ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এমন ৫টি প্রতিষ্ঠানও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বর্তমানে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সাময়িক নিবন্ধনপ্রাপ্ত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে মাত্র ৭৯টি। এসব প্রতিষ্ঠান যথাযথ বিদেশী সিলেবাস অনুসরণ ‘ও’ (মাধ্যমিক) কিংবা ‘এ’ (উচ্চ মাধ্যমিক) লেভেলের পড়ালেখা চলছে বলে দাবি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের। নিবন্ধনহীন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের তালিকা শিক্ষা বোর্ডের কাছে নেই। দু-একটি ছাড়া সাময়িক নিবন্ধনপ্রাপ্ত কোন স্কুলই সাময়িক অনুমোদনের শর্তকে কেয়ার করে না। উন্নত শিক্ষা বিস্তারের নামে এসব প্রতিষ্ঠান কেবল শিক্ষা বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি সম্পর্কে কোন নীতিমালা না থাকায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো টিউশন ফি আদায় করছে। কর্তৃপক্ষের ইচ্ছামতো বেতন, ফি বাড়বে। অভিভাবকরা মানতে বাধ্য। অন্য প্রতিষ্ঠান হলে তাও শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা শিক্ষা বোর্ড, অধিদফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ নিয়ে যেতে পারেন, কিন্তু এখানে যেন অভিযোগ জানানোর জায়গাও নেই। শিক্ষার্থীদের কাছে ভাল মানের বলে চিহ্নিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ভর্তি ফি এখন এক লাখ টাকারও বেশি আছে। ৬০ হাজার টাকার নিচে সন্তানকে কোন ভাল মানের দাবিদার প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আশাও করতে পারছেন না অভিভাবকরা।
জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক শেখ একরামুল কবীরের কাছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কথা বলতেই হতাশার সুরে বললেন, নিয়ন্ত্রণহীন শিক্ষার অশুভ ফল আজকের এই চিত্র।
তেজগাঁওয়ের বিজয় সরণির পাশে সেন্ট লরেন্স একাডেমী শিক্ষার এমন এক মাধ্যমের কথা বলে মানুষকে আকৃষ্ট করা হয়েছে যার অস্তিত্ব নেই দুনিয়াতেই। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্পষ্ট করে লেখা হয়েছে ‘সেমি ইংলিশ’! অদ্ভুত এই ‘কলা’ লিখে সকলকে আকৃষ্ট করলেও এর মানে কি এই ব্যাখ্যায় যেতে রাজি হন এর মালিকপক্ষ। এ বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলতে রাজি নন। সন্তানকে নিয়ে স্কুলে এসেছেন এক মা সেলিনা আক্তার সোমা। নিজের পরিচয় দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সেমি ইংলিশ বলতে কর্তৃপক্ষ আপনাদের কি বুঝিয়েছে? তিনি স্পষ্টই বললেন, এত কিছু জানি না ভাই। তবে তাঁরা বলেন, এখানে সাধারণ বাংলা মাধ্যমের স্কুলের চেয়েও একটু বেশি ইংরেজীর চর্চা হয়, আবার ইংরেজী মাধ্যমের মতো সব ইংরেজী নয়। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কেবল এই একটিই নয়, কেবল মানুষকে আকৃষ্ট করতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রতি গড়ে উঠেছে অদ্ভুত এই মাধ্যমের স্কুল। মিরপুর, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, মহাখালী, শান্তিনগরসহ বেশকিছু এলাকায় কোনমতে কিন্ডারগার্টেন বা কোচিং সেন্টার নিয়ে ব্যাবসা চললেও আকর্ষণীয় সাইনবোর্ডে লিখে রাখা হয়েছে ‘সেমি ইংলিশ’। শিক্ষা নিয়ে এ ধরনের ব্যবসায় হতবাক শিক্ষাবিদরাও।
বেড়েছে পরিবহন ব্যয় ও পণ্য মূল্য: দুর্ভোগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের
নিজস্ব প্রতিবেদক
জ্বালানি তেল ও সিএনজি’র দাম বাড়ার কারণে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে সর্বক্ষেত্রে। এরই মধ্যে দেশব্যাপী পরিবহণ ভাড়া বেড়েছে। আর এর ফলে বেড়েছে পণ্য মূল্য। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের। জ্বালানি তেল ও সিএনজি’র দাম বাড়ার কারণে আন্তজেলার প্রতিটি ট্রাকে পণ্য পরিবহন ভাড়া ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বেড়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহনের জন্য আগে ট্রাক ভাড়া ছিল ১৭/১৮ হাজার টাকা। এখন সে ভাড়া বেড়ে হয়েছে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা। দিনাজপুর থেকে ঢাকায় চাল-ডালসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনের জন্য আগে ট্রাক ভাড়া ছিল ১৬/১৭ হাজার টাকা। এখন সেই ট্রাক ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ থেকে ২০ হাজার টাকা। এমনিভাবে সব জেলা থেকে ট্রাকে ঢাকায় পণ্য আনা এবং ঢাকা থেকে পণ্য নেয়ার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে পরিবহন ভাড়া অনেক বেড়ে গেছে। পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় গত দু’সপ্তাহে দেশব্যাপী নিত্য প্রয়োজনীয়সহ সকল পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়ে গেছে। পণ্যমূল্য বাড়ার এ হার  অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকার কর্তৃক গত ১৮ সেপ্টেম্বর ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম প্রতি লিটারে ৫ টাকা বাড়ানো হয়। এর পরদিন বিইআরসি সিএনজি’র দাম ২০ শতাংশ বাড়ানোর আদেশ জারি করে। জ্বালানির দাম বাড়ার পর ১৯ সেপ্টেম্বর সরকার গণপরিবহনের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু গণপরিবহনের মালিকরা সরকার কর্তৃক পুনঃনির্ধারিত ভাড়ার হার মানছে না। তারা ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করে চলেছে।
বর্তমান সরকার কয়েক দফায় জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করেছে। চলতি বছরেই জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে দু’দফায়। এতে বাসসহ সকল ধরণের পরিবহন ভাড়াও বেড়েছে দু’দফায়। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং সেই সাথে পরিবহন ও যাতায়াত ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও দফায় দফায় বেড়ে চলছে। দেশে সুবিধাভোগী এক শ্রেণীর মানুষের আয় বাড়লেও সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি; বরং বেড়ে চলছে ব্যয়। এখন বাজারে দ্রব্যসামগ্রীর অগ্নিমূল্য। এতে সাধারণ মানুষ একদিকে হতাশ এবং অপরদিকে ক্ষুব্ধ।
গতকাল শুক্রবার খিলগাও, ফকিরেরপুল ও কাওরান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে কাঁচামাল থেকে শুরু করে কোন পণ্যেরই কোন ঘাটতি নেই। কিন্তু মূল্য খুবই চড়া। কওরান বাজারের কাঁচামালের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং সেইসাথে ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে শাক-সবজী-মাছসহ মফস্বল থেকে সরবরাহকৃত সব পণ্যের ওপর। জ্বালানির  মূল্য যদি আর এক দফা বাড়ানো না হতো এবং ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি যদি বন্ধ হতো তাহলে শাক-সবজি’র মূল্য এখনকার চেয়ে কেজি প্রতি কম করে হলেও ১০ থেকে ১৫ টাকা কম হতো। মাছের মূল্য কম হতো কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং চাল-ডাল-পেঁয়াজ-রসুনের মূল্য কম হতো কেজি প্রতি ৫/৬ টাকা। গতকাল ফকিরেরপুল বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ৪০ টাকা কেজি দরের করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। ২৫ টাকা কেজি দরের শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। ২৫ টাকা কেজি দরের বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এমনিভাবে ১৫ টাকা দরের পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। ২০ টাকা দরের কচুরলতি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। ২৩/২৪ টাকার ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। বাজারে আটার দামও বেড়ে গেছে। এখন  খোলাআটার কেজি ৩০ টাকা। বেড়ে গেছে চিনির দাম। গতকাল চিনি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৭ টাকা থেকে ৭০ টাকায়।
সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, দেশে খাদ্য দ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কোন ঘাটতি নেই। তারপরও কারণে অকারণে দাম বেড়ে চলেছে। একবার কোন পণ্যের দাম, পরিবহন ভাড়া বা সার্ভিস ফি বেড়ে গেলে তা আর কোনদিন কমে না। বাজারে পণ্যের যতই সরবরাহ থাক তারপরও পণ্য অযৌক্তিকভাবে বেশি দামে বিক্রি হতে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সাথে ঘন ঘন বৈঠকের সুফল পায়নি ক্রেতা। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
তেল-গ্যাস-জ্বালানি ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তেল-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ও বাজারে এর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে বলেন, ‘সরকার এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে হয় পাশ কাটিয়ে, নয়তো প্রভাবিত করে তেল-গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম উপর্যুপরি বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। বারবার দাম বৃদ্ধির ফলাফল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে সরাসরি আঘাত করার শামিল। দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্য পরিবহন ও জনপরিবহনে ব্যয় বেড়েছে। কৃষি ও শিল্পোৎপাদনে ব্যয় বেড়েছে, ব্যয় আরো বাড়তে যাচ্ছে। সব পণ্যের মূল্য উর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এসবের কারণে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠি খুবই লাভবান হয়েছে এবং হচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সব চাপ পড়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ওপর। লাখ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র সীমার নিচে পতিত হচ্ছেন। সীমিত ও নিু আয়ের মানুষের খাদ্য বাজেট কমাতে হচ্ছে, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে ব্যয় কাটছাট করতে হচ্ছে। নারী ও শিশুর চিকিৎসা আরো সংকুচিত হচ্ছে। ঋণ বাড়ছে । জীবন দুর্বিসহ হচ্ছে।
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এ প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংক। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সোমবার এ তথ্য জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার এ দুর্নীতি তদন্ত করবে। দেশের সর্ববৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতু তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ১২০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি হয় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। সংস্থাটির অভিযোগ, শুরুতেই এ প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে নদী শাসন, পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রাক যোগ্যতা যাচাই নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করেছে। তারা আপাতত অর্থায়ন স্থগিত করেছে।
তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে সরকার তদন্ত করবে। ইতোমধ্যে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) কাজ শুরু করেছ। পদ্মা সেতু প্রকল্প তদারকির জন্য প্রাক নির্বাচনী তালিকায় থাকা কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের দুর্নীতির তদন্তে বিশ্বব্যাংক কানাডা পুলিশকে অনুরোধ করলে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্য হয়। এ নিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দিকে অভিযোগের আঙুল থাকলেও ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন দুর্নীতির অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯০ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংক ছাড়া এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা এ সেতু নির্মাণের জন্য।
এর আগে গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা হয় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে শূন্য পরিমাণও দুর্নীতি হবে না। এ প্রকল্পে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হবে। সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলছে। মূল সেতু নির্মাণের কাজ অক্টোবরের মধ্যে শুরু হবে এবং বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যেই  এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নগোজি ওকোনজো তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অংশ নিতে পেরে বিশ্বব্যাংক খুবই খুশী। এ সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাংকের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প। এ কারণে বিশ্বব্যাংক এ সেতু নির্মাণে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করছে। এ সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্তির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিশ্বব্যাংকের জন্য একটি বৃহৎ প্রকল্প আর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প। 
এসময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, দরপত্র ও কারিগরি কাজ যাতে সঠিকভাবে হয় তার জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ৪০ বছরের। এখন বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক গোপন নয়, কোনো দলিলপত্র গোপন নয়। এখন সবকিছু প্রকাশ্য।  
যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেছিলেন, পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যেই শেষ করা হবে। এ নিয়ে কোনো সংশয়ের অবকাশ নেই। রেললাইনের ব্যবস্থাসহ সেতু নির্মিত হবে। জাজিরা থেকে টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ঢাকা থেকে সেতু পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে কিছু বিলম্ব হবে। এ সেতু চালুর পর ঢাকা থেকে সেতু পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হবে। তখন মংলা থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত রেল চলাচল করতে পারবে।
বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) পদ্মা সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়া পয়েন্টে পদ্মাসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রকল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ১৩ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদনের প্রেক্ষিতে নিয়োজিত ডিজাইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেতু ও নদীশাসনসহ প্রকল্পের ডিজাইন চূড়ান্ত করে। চূড়ান্ত ডিজাইন অনুযায়ী প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 
চলে গেলেন গজলশিল্পী জগজিৎ সিং
ডেস্ক রির্পোট
উপমহাদেশের জনপ্রিয় গজলশিল্পী জগজিৎ সিং আর নেই। গতকাল সোমবার সকালে জীবনাবসান হয় এই বিশ্ববিশ্র–ত সঙ্গীত   প্রতিভার। এর আগে তাকে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। তার মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা ছিল। হাসপাতালে ভর্তির পরই জরুরিভিত্তিতে তার একটি অস্ত্রোপচার করা হয়।
জগজিৎ সিং প্রায়ই হƒদরোগের চিকিৎসা নিতেন। ৭০ বছর বয়সী শিল্পীর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও ছিল।
কয়েক দিন আগে ভারতের মুম্বাইয়ে আরেক গজলশিল্পী গুলাম আলীর সঙ্গে জগজিৎ সিংয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
৭০ বছর বয়সী গজল সম্রাট দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ভারতের আরেক জনপ্রিয় গজলশিল্পী পঙ্কজ উদাস বলেন, জগজিৎ সিংয়ের মৃত্যু সঙ্গীত জগতের এক বিশাল ক্ষতি।
ভারত সরকারের পদ্মভূষণ খেতাব পাওয়া জগজিৎ সিং গত কয়েক দশক ধরে একাধারে হিন্দি, বাংলা, পাঞ্জাবি, উর্দু, গুজরাটিসহ নানা ভাষায় গান গেয়েছেন। তার স্ত্রী চিত্রা সিংও একজন বিখ্যাত শিল্পী।
বাংলাদেশে এসেও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন জগজিৎ সিং। বাংলা ভাষায় তার গাওয়া ‘বেদনা মধুর হয়ে যায়’, ‘বেশি কিছু আশা করা ভুল’,  ‘তোমার চুল বাঁধা দেখতে দেখতে’ গানগুলো শ্রোতাদের মনে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
১৯৪১ সালের ৮ ফেব্র–য়ারি রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগরে জš§গ্রহণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাধারণ শ্রোতা থেকে সমস্ত সঙ্গীত মহলে। পাঞ্জাবি, হিন্দি, উর্দু, বাংলা, গুজরাতি, সিন্ধি, নেপালি প্রভৃতি ভাষায় তিনি গান গেয়েছেন। ২০০৩ সালে পেয়েছেন পদ্মভূষণ। প্রেমগীত, অর্থ, সাথ সাথ, সরফারোশ প্রভৃতি চলচ্চিত্র সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর গানে। কাজ করেছেন মির্জা গালিবের মতো দূরদর্শন ধারাবাহিকেও।
‘হোসওয়ালো কো খবর ক্যায়া বেখুদি ক্যায়া চিজ হ্যায়...’ হিন্দি ফিল্মের এই সমস্ত ‘হিট’ গানও তাঁর গলায় পেয়েছে অসম্ভব জনপ্রিয়তা। বিখ্যাত গানগুলির মধ্যে রয়েছে আদমি আদমি কো, আপ কো দেখ কর, আয়ে হ্যায় সমঝানে লোগ, যব কভি তেরা নাম, ফির আজ মুঝে, ইউ জিন্দেগি কি রাহা, মেরে দিল মে তু হি তু হ্যায়, জখম যো আপকি ইনায়ত... ইত্যাদি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির কবিতায় সুর দিয়ে নিজেই গেয়েছন সেই গান। ‘নয়ি দিশা’ ও ‘সমবেদনা’ নামের সেই অ্যালবাম দু’টিও পেয়েছিল শ্রোতাদের ভালবাসা।
‘চিঠি না কোয়ি সন্দেশ, জানে উও কওন সা দেশ, যাহা তুম চলে গয়ে...’ তাঁর গাওয়া এই গানই এখন একমাত্র আশ্রয় শ্রোতাদের।
এডিস মশা নিধনে সরকারি উদ্যোগের অভাবে রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে
হাসান মাহমুদ রিপন
রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে চলছে। প্রতি বছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ থাকে। যথাযথ সরকারি উদ্যোগের অভাবে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর। এ কারণে নগরীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে এ রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত রাজধানীতে ৪০৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেলেও প্রকৃত সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ হাসপাতাল-ক্লিনিক ছাড়াও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ৯ বছরের সন্তান রাতুলের অসুস্থতা পরীক্ষা করাতে এসেছেন ডেমরার বাসিন্দা বেল্লাল হোসেন। পরীক্ষায় রাতুলের ডেঙ্গু জীবাণু ধরা পড়ে।
রাতুলের বাবা জানান, প্রথম দিকে মাথায় ব্যথা অনুভব করতো। স্বাভাবিক জ্বর মনে করে প্যারাসিটামল খাওয়ানো হয়। কিন্তু ২ দিন পার হলেও রাতুলের ব্যথা সারেনি। বরং শরীরের অন্যান্য স্থানে ব্যথা অনুভব করে সে। পরে হাসপাতালে পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু জীবাণু ধরা পড়ে। এ রকম প্রতিদিন সব বয়সের মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বিএসএমএমইউ-এর মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞ ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আমার চেম্বারে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ জন ডেঙ্গু রোগী আসছে। এরা নগরীর ধানমন্ডি, গ্রীন রোড, হাতিরপুল, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ ও সিদ্ধেশ্বরী এলাকার বাসিন্দা।
তিনি আরও বলেন, এ বছর হিমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের আক্রান্তদের নাক ও দাঁত দিয়ে এবং কাশির সঙ্গে রক্ত ক্ষরণ হয় এবং পিঠ, ঘাড়, মাথা ও চোখের পেছনে ব্যথা অনুভুত হয়। ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে জ্বর না কমলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে এবং চিকিৎকের নির্দেশ ছাড়া জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল বাদে কোন ওষুধ না খেতে পরামর্শ দেন তিনি।
এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, রোগিকে বেশি মাত্রায় পানি, বিশেষ করে শরবত খাওয়ানো যেতে পারে। দিনের বেলায় ঘুমানোর সময়ও মশারি ব্যবহার করা উচিত। বাসায় খোলা পাত্রে পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। এতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। বাসা সর্বত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের  মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ গাইড লাইনের অন্যতম প্রণেতা অধ্যাপক কাজী তরিকুল ইসলাম বলেন, গতবারের তুলনায় এবার ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি। তিনি আরও বলেন, এ বছর প্রাথমিক সংক্রমণের শিকার হওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। আক্রান্তরা সাধারণত শরীর, পিঠ, চোখ ও মাথা ব্যথা অনুভব করেন। কিন্তু এবার ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শরীরের চামড়ায় ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি (রক্তস্ফোত) দেখা যাচ্ছে। ৩ দিনের জ্বরেই রোগী অধিক মাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর রক্তস্ফোতে চুলকানি অনুভূত হওয়ার কথা বলছে রোগী, যা আগে ঘটেনি। তবে ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। ২০০৯ সালে সরকারিভাবে তৈরি ডেঙ্গু প্রতিরোধ গাইডলাইন অনুসরণ করার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জাতীয় গাইডলাইনের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে। গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০০০ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব তীব্র আকার ধারণ করে। ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশের ২৩ হাজার ৪২৬ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু ঘটেছে ২৩৩ জনের। ২০০৯ সালে সারাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৭শ’ ছাড়িয়ে যায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (এম এন্ড পিডিসি) এবং প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ডেঙ্গু) ডা. মো. আবদুর রশিদ মৃধা বলেন, প্রতিবছর এ সময় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে। তবে দেশে ডেঙ্গু  রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা দিতে পারলে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে না বলে তিনি জানান।
প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ  
 সেলিনা আইভী দোয়াত কলম  শামীম ওসমান দেয়াল ঘড়ি
তৈমূর আলম আনারস

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে  মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী দোয়াত কলম প্রতীক ও অপর মেয়র প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান দেয়াল ঘড়ি প্রতীক পেয়েছেন। বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার পেয়েছেন আনারস প্রতীক । তিন প্রার্থী আলাদা প্রতীক চাওয়ায় বিনা বাধায় তাদের প্রতীক বরাদ্দ দেয় নির্বাচন কমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ জিয়া হল মিলনায়তনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
অন্য তিন মেয়র প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আতিকুর রহমান নাননু মুন্সী, স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ মোহাম্মদ ও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম জীবন তিনজনই গরুর গাড়ি চাওয়ায় লটারির মাধ্যমে তাদের প্রতীক দেয়া হয়। লটারিতে আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সী পেয়েছেন গরুর গাড়ি প্রতীক, আতিকুল ইসলাম জীবন তালা ও শরীফ মোহাম্মদ পেয়েছেন হাঁস প্রতীক। স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ মোহাম্মদ ও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম জীবন তিনজনই গরুর গাড়ি চেয়েছিলেন। এ কারণে লটারির মাধ্যমে তাদের প্রতীক দেয়া হয়। তবে প্রতীক বরাদ্দকালে আলোচিত তিন প্রার্থীর মধ্যে দুই প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ও বিএনপির তৈমূর আলম খন্দকার আসলেও শামীম ওসমান আসেননি। তার পক্ষে প্রতীক বরাদ্দ নেন শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন।
সকাল সাড়ে ৯টায় শহরের চাষাঢ়ায় শহীদ জিয়া হল মিলনায়তনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রথমে শুরু হয় মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ।  মেয়র পদে ৬ প্রার্থী ও সাধারণ কাউন্সিলার পদে ২৩৮ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলার পদে ৫৬জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার সময়ে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান, সহকারি রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হবে। প্রথমে মেয়র, পরে নারী কাউন্সিলার ও সবশেষ কাউন্সিলারদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। আগামী ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে  দেশের সপ্তম নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ।
রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান জানান, মেয়র পদে ৬ প্রার্থী ও কাউন্সিলার প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামীকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় ইভিএম মেশিনে ভোট দান সম্পর্কে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ দেবেন এবং প্রার্থী ও  নাগরিকদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেবেন। নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য হিসাব মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রার্থীদের হিসাব ১৪, ২২ ও ২৯ অক্টোবর জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে। এগুলো যাছাই বাছাই করবেন তারা। নির্বাচনী কেন্দ্রে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে ওই প্রার্থীর সমযোগ্যতা থাকতে হবে। প্রার্থীও সমর্থকদের নজরদারির জন্য ২৭টি ওয়ার্ডে ক্যামেরা থাকবে। প্রতীক বরাদ্দ  পেয়ে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আনারস হচ্ছে সাধারণ মানুষের প্রতীক। আমি আশাবাদী নারায়ণগঞ্জে আগামী ৩০ অক্টোবর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভাটাররা আনারস প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে জয়ী করবেন।  নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ প্রসঙ্গে তৈমুর বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ বিএনপি তথা চার দলীয় জোটের পক্ষে রায় দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। সুতরাং তাদের বঞ্চিত করা যাবে না। এজন্য আমি ইভিএম পদ্ধতিতে অংশ নিব। তবে ইভিএম পদ্ধতিতে ত্র“টি রয়েছে বলেও আবারো দাবি করেন তৈমুর। তিনি বলেন, এ মেশিনে কারচুপির বিষয়টি আমি প্রমাণ করবো।
দোয়াত কলম প্রতীক পেয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রত্যাশী মেয়র প্রার্থী ও সদ্য বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেছেন, দোয়াত কলম প্রতীক পেয়ে আমি খুশি। এটা শিক্ষার প্রতীক। নারায়ণগঞ্জবাসী আমার সঙ্গে আছেন। আমি গত তিন দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্বাচন করার জন্য দোয়া নিয়েছি। ইভিএম মেশিন ব্যবহারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,  নতুন হলেও ইভিএম  ব্যবহারে আমার আপত্তি নেই। কারণ আমাদেরকে প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আইভী নির্বাচনে ভোটের কারচুপির আশঙ্কা করে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সেনা মোতায়েন প্রয়োজন। কারণ অতীতে অনেক নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখলসহ অনেক ঘটনা ঘটেছে। তবে অপর হেভিওয়েট প্রার্থী শামীম ওসমান প্রতীক বরাদ্দের সময়ে স্বশরীরে উপস্থিত না হওয়ায় তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
প্রার্থীদের হলফনামায় দেয়া তথ্য প্রকাশ
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন গতকাল বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশে¬ষণ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। ভোটারদেরকে ক্ষমতায়িত করা, যাতে তারা জেনে শুনে বুঝে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। প্রার্থীর বিষয়ে সাধারণ ভোটারদের তথ্য দিয়ে সচেতন করতে সুজন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের হলফনামা থেকে ৭ টি বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন।
সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ তথ্য প্রকাশ করেন। এ সময় সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সারারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ও সুজনের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির আহ্বায়ক এডভোকেট আহসানুল করিম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
প্রার্থীর বিষয়ে সাধারণ ভোটারদের তথ্য দিয়ে সচেতন করতে সুজন প্রার্থীদের হলফনামায় দেয়া ৭টি বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন। এর মধ্যে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা / জীবিকা, অতীতে ও বর্তমানে ফৌজদারী মামলা আছে কিনা, প্রার্থী এবং প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদের বিবরণ, প্রার্থীর ঋণ সংক্রান্ত তথ্য, কর প্রদানের তথ্য আয় ব্যয়সহ অন্যান্য তথ্য তুলে ধরেন এবং প্রার্থীদের দেয়া তথ্যে সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন মেয়র প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১টি হত্যা মামলাসহ ৫টি মামলা ও অতীতে ৩টি হত্যা মামলাসহ ১২টি মামলা ছিল। অপর মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী’র বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। অপরদিকে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে ১টি হত্যা মামলাসহ ১১টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও ২৩৮ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। যার মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে। সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমানে ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
৬ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতায় তিন জন এসএসসি’র নিচে তিনজন স্নাতক ডিগ্রির অধিকারী। কাউন্সিলর পদে ২৭৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৮৯ জন প্রার্থী এসএসসি’র নিচে। ৩৪ জন প্রার্থী এসএসসি পাস, ২৩ জন এইচ এস সি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর যথক্রমে ২২ ও ৪ জন। সংরিক্ষত মহিলা কাউন্সিলরদের ৩৯ জন প্রার্থী এস এস সি’র নিচে। ৪জন প্রার্থী স্নাতক ও ২ জন স্নাতকোত্তর।
প্রতিদ্বন্দ্বী ৬ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে শামীম ওসমান, শারীফ মোহাম্মদ, ও আতিকুল ইসলাম জীবন পেশা হিসেবে ব্যবসা উল্লে¬খ করেছেন। ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী চিকিৎসা ও তৈমূর আলম খন্দকার আইন ব্যবসাকে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সী পেশার কথা উল্লেখ করেননি।
পেশাগত দিক থেকে তুলনামূলক বিচারে কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের ২১০ জনই ব্যবসায়ী। অর্থাৎ জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য নির্বাচনের ন্যায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের আধিক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে শামীম ওসমান, তৈমূর আলম খন্দকার, আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সী কোটিপতি। লাখপতি ২ জন একজন সম্পদের মূল্য উল্লে¬খ করেনি। সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকেই সম্পদের মূল্য উল্লেখ করেননি। তবে ২৪৩ প্রার্থীর সম্পদ ৫ লাখ টাকার নিচে। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫২ জনই ৫ লাখ টাকার নিচে।
দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে হিলারী ক্লিনটন
মানবতাবিরোধী অপরাধের স্বচ্ছ বিচার সারাবিশ্বের জন্যে একটি মডেল হবে
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে এনা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্্েরর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন বলেছেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত হলে তা হবে সারাবিশ্বের জন্যে একটি মডেল। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার সঙ্গে বিচার হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্যে ইতোমধ্যেই আমরা দু’দফা লোক পাঠিয়েছি ঢাকায়। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
১২ অক্টোবর বুধবার স্থানীয় সময় অপরাহ্ন ৩টা থেকে প্রায় আধ ঘণ্টা স্থায়ী এ বৈঠক শেষে দীপু মনি বলেছেন, অত্যন্ত হƒদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং দ্বি-পাক্ষিক অনেক বিষয়ে কথা হয়েছে। বাংলাদেশের সার্বিক কল্যাণে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় পাশে থাকবে বলেও হিলারী তাকে জানিয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গে হিলারী তার পুরনো উদ্বেগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আশা পোষণ করেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে গ্রামীণের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। দীপু মনি বলেন, সামনের বছর হিলারী ক্লিনটন বাংলাদেশ সফর করবেন। প্রেসিডেন্ট ওবামাকেও ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। হিলারীর সফরের পরই হয়তো হোয়াইট হাউজ ওবামার সফরের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে।
হিলারীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের। রাষ্ট্রদূত কাদের বলেন, দু’পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকটি ছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে পরিপূর্ণ। বৈঠক শেষে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফিং রুমে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় পতাকা দু’পাশে রেখে হিলারী ক্লিনটন এবং ডা. দীপু মনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। সে সময় হিলারী ক্লিনটন বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান বহুমুখী কার্যক্রমের আলোকে সুশীল সমাজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ওয়াশিংটনে এসেছেন, আমি তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। হিলারী বলেন, ঐ অঞ্চলের শান্তি, উন্নয়নে বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আমরা নিবিড় সম্পর্ক রেখে কাজ করতে চাই। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশের কার্যক্রমকে আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি। সন্ত্রাস নির্মূলে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সহায়তার প্রশংসা আমরা সব সময় করে আসছি এবং আমাদের দুটি দেশের জন্যে এ ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বপর্ণ। হিলারী উল্লেখ করেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই। তবে অনেক সময় কিছু সমস্যা দেখা দেয় যার ফলে অবাধ বাণিজ্যের বিষয়টি বাধাপ্রাপ্ত হয়। একে অতিক্রম করতে হবে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে, তাহলেই এ অঞ্চলের মানুষ এগিয়ে চলার পথ খুঁজে পাবে।
হিলারী উল্লে¬খ করেন, এটি আমরা সকলেই জানি যে, সরকারের একার পক্ষে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হয় না, সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হয়, একযোগে কাজ করতে হয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান রাখতে চাই যে, মিডিয়াগুলোকে মুক্ত স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এনজিওগুলোকেও বাংলাদেশের সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে অবাধে কাজের সুযোগ দিতে হবে। হিলারী আরো বলেন, অবশ্যই আমরা সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশে আমাদের উদ্বেগের কথা জানাতে চাই এবং আশা করতে চাই যে, সারাবিশ্বে সুপরিচিত, বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানের জন্যে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক তার কার্যক্রম যথাযথভাবে অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে। হিলারী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আরো ফলপ্রসূ একটি বৈঠকের অপেক্ষায় রইলাম।
 বিটিআরসি-গ্রামীণফোন মুখোমুখি
নিজস্ব প্রতিবেদক
আর্থিক লেনদেনে অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এবং শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি মোবইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। আলোচনায় বসার শর্ত হিসেবে পাওনা চেয়ে বিটিআরসির পাঠানো চিঠি প্রত্যাহারের শর্ত দিয়েছে গ্রামীণফোন। আর বিটিআরসি বলেছে, এখন তারা আইনি পথে এগোবে। গতকাল সোমবার এ নিয়ে গ্রামীণফোন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের আলোচনার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। এ জন্য গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছে বিটিআরসি।
জানা যায়, একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে গত ৩ অক্টোবর বিটিআরসি ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা পাওনা চেয়ে গ্রামীণফোনকে চিঠি দেয়। এরপর গ্রামীণফোন ওই নিরীক্ষার ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন তোলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি গতকাল সোমবার এক বৈঠকের আয়োজন করে। গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টরে জনসনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল গতকাল দুপুরে বিটিআরসিতে যায়। বিটিআরসি থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আলোচনায় বসার আগে বিটিআরসির চিঠি (পাওনা চেয়ে) স্থগিত রাখার কথা বলে এসেছি। অন্যদিকে বিটিআরসির চেয়ারম্যান জিয়া আহমেদ বলেন, তারা আলোচনা এড়িয়ে গেছে। এখন আমরা আলোচনা করে কী আইনি পদক্ষেপ নেয়া যায়, তা-ই দেখবো।
প্রসঙ্গত নিরীক্ষা প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বিটিআরসি বলছে, ২০১১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত গ্রামীণফোন ৩৮ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা আয় করেছে। এ হিসাবে এর ২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা বিটিআরসির পাওয়ার কথা। তবে প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। সুদসহ আরো পাওনা রয়েছে ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানোর পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণফোন দাবি করে, যে নিরীক্ষার ভিত্তিতে গ্রামীণফোনকে সরকার ৩ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলেছে তা ‘ভুল ধারণার ভিত্তিতে’ করা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের নিরীক্ষা হয়নি বলেও দাবি করা হয়। এরপর ৫ অক্টোবর নিরীক্ষার বিষয়ে আলোচনা করতে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষকে দেখা করতে বলে বিটিআরসি। নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে গ্রামীণফোনের আপত্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও নিয়ে আসতে বলা হয়। কিন্তু গতকাল কোন সুরাহা ছাড়াই বৈঠকটি শেষ হয় বলে জান গেছে।

রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশংকা
শিল্পোদ্যোক্তারা বিদেশমুখী পাচার হচ্ছে বিপুল অর্থ
নিজস্ব প্রতিবেদক
তত্ত্বাবধায়ক বা কেয়ারটেকার সরকার ইস্যুতে জাতীয় রাজনীতিতে গভীর আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। দলীয় সরকারের অধীনেই আ’লীগ আগামী সংসদ নির্বাচনে অনড়। আর এর সম্পুর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে বিরোধীদল বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এ ইস্যুতে ইতোমধ্যে রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করছে তারা। ফলে আগামী নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জাতীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে পরস্পর বিরোধী কর্মসূচি। তবে এই ঝড় শুধু রাজনৈতিক ময়দানেই সীমাবদ্ধ নেই। এর ঝাপটা লেগেছে দেশের অর্থনীতিতেও। ওয়ান ইলেভেনের তিক্ত অভিজ্ঞতা দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এখনও ভোলেনি। সে ক্ষত না শুকাতেই আবারও রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখে বাংলাদেশ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিল্পোদ্যোক্তারা এবার আগে-ভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ।
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের একটি সূত্রে জানা গেছে, ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কোনভাবেই আস্থায় নিতে পারছেন না দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। তাদের আশঙ্কা, দেশে আবারও ওয়ান ইলেভেনের মতো কোন সরকারের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে। আর ঐ অবস্থায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা। উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ইতোমধ্যেই বিদেশমুখী হয়েছেন। কেউ কেউ পাড়ি জমিয়েছেন আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া এবং চীনে। কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০টি কোম্পানি ইতোমধ্যে বহির্বিশ্বে অফিস খুলেছে। বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের প্রস্তুতিও রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর। তবে বিদেশে বিনিয়োগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের এই সুযোগে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হওয়ারও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ ইতোমধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রকাশ্য সমাবেশেই তিনি কেয়ারটেকার সরকারের তীব্র সমালোচনাও করছেন। বলেছেন, যারা ৩ মাসের জন্য ক্ষমতায় এসে দু’বছর দেশের শাসনভার নিয়ন্ত্রণ করে তাদের হাতে ক্ষমতা অর্পণের আগে অবশ্যই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মতামত নিতে হবে। তিনি দাবি করেন, ট্যাক্স এবং ভ্যাট প্রদান করে দেশের উন্নয়নে দেশের ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। কিন্তু সেই ব্যবসায়ীদের যখন বিনাবিচারে জেলে পোড়া হয়, মারপিট এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়, ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করা হয়, তখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আশা করা যায় না। জানা গেছে, আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েই ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। জানা গেছে, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহাবুদ্দিন ইতোমধ্যেই কানাডায় বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছেন। অনেকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এব্যাপারে এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বাংলাদেশ সময়’কে বলেন, রাজনৈতিক আস্থার সঙ্কট দূর না হওয়ায় উদ্যোক্তারা বিদেশমুখী হচ্ছেন। অনেকেই বিদেশে অফিস নিয়েছেন। এছাড়া দেশের বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংকটের উন্নতি না হওয়ায় অনেকে বিদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন,  নতুন কর্মসংস্থান এবং উন্নয়নের জন্য অবশ্যই বিনিয়োগে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া সবচেয়ে জরুরি। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব জনতা ব্যাংকের পরিচালক মো. নজিবর রহমান বলেন, উদ্যোক্তারা যদি বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ নেয় তবে দেশের অর্থনীতিতে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। বর্তমান ব্যাংকে নগদ টাকার যে সঙ্কট চলছে তার মধ্যে এটিও একটি কারণ। তিনি বলেন, বিদেশে বিনিয়োগের নামে ইতোমধ্যেই দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এটা কোনভাবেই দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হতে পারে না। 
সূত্র জানায়, গ্যাস-বিদ্যুতের অপ্রতুলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংক সুদের উচ্চ হার, চাঁদাবাজি এবং শ্রমিক অসন্তোষের মুখে স্থানীয় বিনিয়োগ নিবন্ধনও আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। শুধু রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে গত অর্থবছরের তুলনায় বিনিয়োগ কমেছে ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। এছাড়া রসায়ন, প্রকৌশল এবং কৃষিভিত্তিক খাতেও অগ্রগতি নেই। দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ আকর্ষণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান  বলেন, এজন্য দেশের অবকাঠামো খাতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু গ্যাস-বিদ্যুতের উন্নয়ন করলেই বিনিয়োগ বাড়বে না, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও বজায় রাখতে হবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে সরকার এবং বিরোধী দলের ঐকমত্য এক্ষত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনিয়োগের উপর ভর করেই দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যায়। কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা এবং দারিদ্র্যবিমোচনে অবশ্যই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট, বিশ্ব অর্থমন্দা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দাতা সংস্থাগুলোও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। আইএমএফ এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগের উপদেষ্টা মাসাতো মিয়াজাকি সম্প্রতি বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে যাওয়ার আশঙ্কা করে বলেছেন, বিশ্ব অর্থমন্দার কারণে এবার বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ১ শতাংশ কমতে পারে। প্রবৃদ্ধি কমার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থমন্দার কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ শিল্প খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য পণ্যের আমদানি কমেছে, কমেছে রফতানি আয়। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহও কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে জনশক্তি রফতানি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতি বিরুপ পরিস্থিতিতে পড়তে পারে। যা কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলেও মনে করেন তারা।
নাসিক নির্বাচন
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। গড়ে প্রায় প্রতি ৮০ জন ভোটারের বিপরীতে এক জন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকছে। নির্বাচনের আগে পরে মিলে মোট পাঁচ দিন তারা দায়িত্ব পালন করবেন।  গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে  বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ৩০ অক্টোবর ভোটগ্রহণের আগে দুই দিন এবং ভোটগ্রহণের পরে দুই দিনসহ মোট পাঁচ দিন আইন-শৃঙ্খলা বহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে। বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) নিজস্ব সমস্যা থাকায় এ নির্বাচনে তাদেরকে মোতায়েন করা হচ্ছে না। তবে বিজিবির পরিবর্তে অতিরিক্তি ৬শ’ র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হবে।
তিনি বলেন, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও কোস্ট গার্ড মিলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত চার হাজার সদস্য মোতায়েন করা হবে। এসব অতিরিক্ত ফোর্স নির্বাচনের আগে পরে মিলে মোট পাঁচ দিন দায়িত্ব পালন করবে। নিয়মিত এক হাজার ফোর্স ছাড়াও ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৯ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষক দল মোতায়েন থাকছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য ৯ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসারের পরিবর্তে প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে মোট ২৭ জন সহকারী রিটার্নি অফিসার নিয়োজিত থাকছে। নির্বাচন মনিটরিং করার জন্য ২৭টি ওয়ার্ডে নতুন করে ২৭টি ভিডিও ক্যামেরা দেয়া হচ্ছে। কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রমাণসহ কমিশনে তাৎক্ষণিক রিপোর্ট করবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নারায়ণগঞ্জে সেনা মোতায়েন করা হবে কি না- জানতে চাওয়া হলে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এতো কিছুর পরেও যদি সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন পড়ে তাহলে আমরা বিষয়টি দেখব। কমিশনের সব ধরনের অপশন খোলা আছে।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদার সভাপতিত্বে আইন-শৃঙ্খলা সভায় ইসি সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক, এনসিসি রিটার্নিং কর্মকর্তা বিশ্বাস লুৎফুর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ব্যাটালিয়ন, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
যেসব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোট ৯টি ওয়ার্ডে ৫৮টি কেন্দ্রের ৪৫০টি  ভোট কক্ষে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে যে ৯টি ওয়ার্ডে তা হলো- ৭, ৮, ৯, ১৬, ১৭, ১৮, ২২, ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড।
নাসিম ওসমানকে আবার সতর্ক করল ইসি
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য এ কে এম নাসিম ওসমানকে আবারো সতর্ক করলো নির্বাচন কমিশন।  বিকেলে রিটার্নিং কর্মকর্তা বিশ্বাস লুৎফর রহমান অচরণবিধি ভঙ্গের কারণে নাসিম ওসমানকে সতর্ক করে চিঠি পাঠায়।
এ বিষয়ে নির্বাচন সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সংসদ সদস্য হয়ে ভাইয়ের এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিশ্র“তি দেয়ায় মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাসিমকে এর আগেও সতর্ক করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বারের মতো এবার সতর্ক করা হচ্ছে। এরপর অচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই, দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আমাদের কাজে বিড়ম্বনা সৃষ্টি করবেন না। কমিশনকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে সহযোগিতা করবেন।
ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রতি কেন্দ্রে ২৪ জন সদস্য
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ২৪ জন করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার বিশ্বাস লুৎফর রহমান।
তিনি বলেন, কেন্দ্রে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও সার্বক্ষণিক টহল দেবে র‌্যাব, কোস্টগার্ডসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স।
বহিরাগতদের অবস্থান নিষিদ্ধ
ভোটের দুই দিন আগে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো বহিরাগত ( বাসিন্দা বা ভোটার নন) অবস্থান করতে পারবে না। নির্বাচনের দিন প্রভাবশালীরা ভোটে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য  বৈঠকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনী এলাকায় দাগী অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে লাইসেন্সধারীরাও যাতে অস্ত্রসহ চলাচল না করে সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা  দেয়া হবে। উল্লেখ্য, নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটির মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩ হাজার ৭০৬ জন।

শীর্ষে জ্বালানী ও  বিদ্যু খাত এক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত 
প্রতিষ্ঠানের  লোকসান ৭ হাজার কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারী হিসেব অনুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছরে সবগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সংশোধিত গড় লোকসান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। এটা এক দশকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লোকসান। গত দশ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সব থেকে বেশি লোকসান দিয়েছিল বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে। সে বছর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট লোকসান হয়েছিল ৯ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। লোকসান কমানোর জন্য সাম্প্রতিক সময়ে সরকারকে বেপরোয়া ভাবে জ্বালানী তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়াতে হয়েছে। বিদ্যুতের দামও সহসাই বাড়ানো হবে এমনটাই বলা হচ্ছে।
সরকারী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক লোকসান দীর্ঘ দিন জাতীয় অর্থনীতির জন্য বড় মাথাব্যাথার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতো। নব্বই দশকের শুরু থেকে দাতাদের চাপে নানা ধরণের সংস্কারমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। এক সময় বিশ্বব্যাংক বলেছিল, সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এক বছরের লোকসান দিয়ে প্রতি বছর একটি করে যমুনা সেতু নির্মাণ করা যায়। পরবর্তী সময়ে বিরাষ্ট্রীয়করণ প্রক্রিয়ায় অনেক অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। অনেকগুলোকে বন্ধ করে দেয়া সহ নানা ধরণের পদক্ষেপ নিয়ে এগুলোর লোকসান ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে সর্বনিম্ন ৪৬২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। পরবর্তি বছরগুলোতে তা আবার ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। গত বছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান লাভ করলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের বড় লোকসানের কারনে গড় লোকসান ৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
২০০৭- ০৮ অর্থবছরে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সাথে বিশ্ব জুড়ে জ্বালানী তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৩০ ডলার থেকে বেড়ে এক লাফে ১৪০ ডলার অতিক্রম করেছিল। সে সময় শুধুমাত্র বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর লোকসানই ছিল সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাবার পর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশীয় বাজারে জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়ে এই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করেছিল ।
বিগত ২০১০-১১ অর্থ বছরে জ্বালানী তেলের দাম খুব একটা বাড়েনি। কিন্তু এর বিপরীতে সরকার দেশীয় বাজারে জ্বালানী তেলের দাম বর্তমান ২০১১-১২ অর্থবছরের শুরুতেই দুই দফা বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু লোকসান কমেনি। অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেলের সংশোধিত হিসেব অনুযায়ী ২০১০-১১ অর্থবছরে শুধু মাত্র বিপিসির লোকসানের পরিমান বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। বিপিসির এই লোকসানও গত এক দশকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে শুধুমাত্র ২০০৭-০৮ অর্থবছরে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছিল। আর অন্য বছরগুলোতে লোকসান ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। দেশে বর্তমান সময়ে বেসরকারি খাতে বেশ কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছে। ফলে বিদ্যুৎ খাতে লোকসান আরো বাড়বে। ২০১১ এর সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত সাতটি খাতে মোট লোকসান হয়েছে ৬ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। এই খাতগুলো হচ্ছে শিল্প, ইউটিলিটি, পরিবহন, যোগাযোগ, বাণিজ্যি, কৃষি ও মৎস্য, নির্মাণ এবং সার্ভিসেস।
শিল্প: গত ২০১০-১১ অর্থবছরে শিল্পখাতের মোট ৬টি সংস্থার মধ্যে চারটিই বড় আকারের লোকসান দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিটিএমসির লোকসান ২২ কোটি ৯৪ লাখ, বিএসএফআইসি ১৯৮ কোটি, বিজেএমসি ১৬ কোটি ৯২ লাখ এবং বিসিআইসির ৩৭৮ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। লাভ করতে পেরেছে মাত্র দুইটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান  দুটি হচ্ছে বিএসইসি ৪৪ কোটি ৮৬ লাখ এবং বিএফআইডিসি ৪১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, সবগুলো লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের পরিমান বাড়লেও, কমছে লাভজনকগুলোর ।
সেবাখাত: এই খাতের মোট ৬টি সংস্থার মধ্যে ৫টিই মুনাফা করেছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) লোকসান দিয়েছে। এই লোকসান সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪৭১৬ কোটি টাকা। অপরদিকে বিওজিএমসির মুনাফা ২০২৪ কোটি টাকা, ডেসার মুনাফা ৯ কোটি ৪৫ লাখ, চট্টগ্রাম ওয়াসার মুনাফা করেছে ৯ কোটি ১২৩ লাখ ও ঢাকা ওয়াসা ১০৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
পরিবহন ও যোগাযোগ: সরকার নিয়ন্ত্রিত পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের মোট ১১টি সংস্থার মধ্যে ৩টি মাত্র লোকসান দিয়েছে। মুনাফা করেছে ৮টি সংস্থা। লোকসানি ৩টি সংস্থা হচ্ছে বিআরটিসি। এর লোকসান ৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এমপিএর লোকসান ২০ কোটি ১০ লাখ, এমডিব্লিউএমবির লোকসান ২ কোটি এবং বিটিআরসির লোকসান হচ্ছে ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। লাভজনক সংস্থাগুলো হচ্ছে বিএসসি, বিআইডব্লিউটিসি, এমডিডব্লিউএমবি এবং জেএমবিসিএ।
বাণিজ্যিক: সরকার পরিচালিত তিনটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি বড় আকারের লোকসান দিয়েছে। বাকি দুটো সামান্য মুনাফা করেছে। লোকসানি প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। বিপিসির মোট লোকসান ৭২০৮ কোটি টাকা। লাভজনক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিজেসি ও টিসিবি। টিঁসিবির লাভ ৭ কোটি ৩০ লাখএবং বিজেসির মাত্র ১৮ লাখ টাকা।
কৃষি ও মৎস্য: কৃষি ও মৎস্য খাতের দুটো প্রতিষ্ঠানের একটি লাভ করেছে অপরটি  লোকসান দিয়েছে। এ দুটো প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিএডিসি ও বিএফডিসি। বিএডিসির লোকসান হচ্ছে ৪ কোটি ৭২ লাখ। বিএফডিসির (মৎস্য)  লাভ ১ কোটি ৬৪ লাখ
টাকা।
নির্মাণ: বরাবরের মতো নির্মাণ খাতের ৫টি সংস্থার সব কটিই মুনাফা করেছে। এগুলোর মধ্যে রাজউক ১০৮ কোটি ৯ লাখ। সিডিএ ২০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, কেডিএ ৯ কোটি ৭৩ লাখ এবং আরডিএ ১ লাখ টাকা।
সার্ভিস ও অন্যান্য: সার্ভিস ও অন্যান্য খাতের মোট ১৫টি সংস্থার মধ্যে ৩টি সংস্থা বড় আকারের লোকসান দিয়েছে। লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বিএফএফডব্লিউটি। এর লোকসান ২কোটি ২০ লাখ। বিআইডব্লিউটিএর লোকসান ৮ কোটি ৯২ লাখ। বিএফডিসি (ফিল্ম) লোকসান দিয়েছে ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিএসটিআই লোকসান দিয়েছে ২৭ লাখ টাকা। বিডব্লিউডিবির লোকসান ১৭১ কোটি টাকা ও বিএইচবি ১ কোটি টাকা। অপরদিকে এই খাতের লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে বিএফডিসির মুনাফা ২৫ লাখ, বিপিআরসির ২০ লাখ, সিএএর ১৬ কোটি ৪৩ লাখ, বিসিক-এর ১ কোটি ৫৭ লাখ, বেপজার ১০৩ কোটি, আরইবির ২৫২ কোটি, বিটিবি ২ কোটি ৯৯ লাখ ও ইপিবির ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। 
সীসাযুক্ত রঙের ব্যবহার বেড়েই চলেছে
দেশের ৮৮ ভাগ মানুষ সীসা দূষণের শিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে উৎপাদিত ও আমদানী করা সব ধরনের রঙেই ব্যবহার হচ্ছে পরিবেশ ও জীব সম্পদায়ের অন্যতম বিনষ্টকারী সীসা। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৮ ভাগ মানুষই বিভিন্ন ভাবে সীসা দূষণের শিকার। দেশের বিভিন্ন নগরীতে বসবাস রত প্রায় ৯৩.৭ ভাগ মানুষ সীসা দূষণের কবলে পরছে। ঘন বসতিপূর্ণ এলাকার বসবাসরত প্রায় ৯৭.৭ ভাগ মানুষ সীসা দূষণের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। বাংলাদেশে শোভাবর্ধনসহ ব্যবহƒত সবধরনের রঙেই ক্ষতীকারক সীসা রয়েছে। অধিকাংশ কোম্পানির রঙে সীসার পরিমান সহনীয় মাত্রার থেকে অনেক বেশি গুণে দেয় থাকে। যা দেশের জীব সম্প্রদায় ও পরিবেশের উপর অশুনি সংকেত। সীসাযুক্ত রঙ ব্যবহারের ফলে ১০ বছর পর শিশু বিকলঙ্গের হার বাড়বে ৩৫ শতাংশ। শিশুর স্বাভাবি জš§ ব্যবহত হবে। পশু-পাখি এবং অনুজীব ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রকৃতির উপর ব্যাপক প্রভাব পরবে।
ছোট ছোট শিশু থেকে শুরু করে মানুষের নিত্য ব্যবহার্য প্রায় প্রতিটি জিনিসেই এই ক্ষতিকার উপাদান অধিকমাত্রায় মিশ্রীত রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ পরীক্ষিত এই গবেষণাটিতে দেখা গেছে, দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৭৭ ভাগ সীসাযুক্ত রঙের দুষণজনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে সীসার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে চিকিৎসক সূত্রে জানা যায়, এই বিষ নারী-পুরুষ উভয়ের প্রজননক্ষমতা কমায়, অনেকক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যায়, উচ্চরক্তচাপ, কিডনী সমস্যা, পেশী-হাড়ের সংযোগে ব্যথা, মানসিক এবং স্নায়ুচাপে আক্রান্ত হন, স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ ও ঘুম কমে যায়, পগুত্ব বা অকাল মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়। রঙের মাধ্যমে নির্গত সীসা শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকি নয়, পরিবেশের জন্য মারাতœক হুমকির কারন হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সীসাযুক্ত রঙ তরল ও কঠিন অবস্থায় মাটি, পানি ও বায়ুদুষণ করছে। দেশের বাজারে ৩১টি স্থানীয় কোম্পানি এবং ৬টি বিদেশী কোম্পানির রঙ সরবরাহ করা হচ্ছে। এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোসাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) এর এক পরীক্ষায় দেখাগেছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত এবং আমদানীকৃত সকল ধরনের রঙেই অধিক পরিমান সীসা রয়েছে। ইউএস কোড অব ফেডারেল রেগুলেশনের তথ্য অনুযায়ী, রঙের মধ্যে সীসার গ্রহণ যোগ্য মাত্রা ৬’শ পিপিএম (০.০৬%) এর কম থাকবে। কিন্তু আমাদের দেশে রঙ প্রস্তুত এর ক্ষেত্রে পিপিএম এর চিত্র একদম ভিন্ন। আমাদের বাজারে যেসকল রঙ ব্যবহƒত হয় এরগুলোর মধ্যে সীসার মাত্রা সর্ব নিু ১০ হাজার ৮’শ পিপিএম। যা প্রায় ১০ হজিরি ২’শ পিপিএম বেশি। রঙে সীসা ব্যবহারের মূল কারন হলো, সীসা সহজলভ্য বলে উৎপাদন খরচ বহুলাংশে কমে যায়। ফলে উৎপাদনকারীদের লাভের হার বেশী থাকে। এছাড়া সীসা দ্রুত রঙ শুকাতে সাহায্য করে, রঙের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে, রঙের চকচকে ভাব ও নতুনত্ব বজায় রাখে এবং আদ্রতারোধের মাধ্যমে ক্ষয়রোধ করে। তাই দেশের সবগুলো রঙ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানই কমবেশী ক্ষতিকর সীসা ব্যবহার করছে।
পরিবেশ বিদ ড. হোসেন শাহরিয়ার ভোরের ডাককে জানান, আমাদের দেশে উৎপাদিত এবং আমদানি করা সকল ধরণের রঙে সীসার ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত। এর ফলে দেশের পরিবেশ ও জীব সম্প্রদায় ব্যাপক ভাবে হুমকির সম্মুখিন। ১০ বছর পর সুস্থ্য ও স্বাভাবিক শিশুর জš§ মারাতœক ভাবে হ্রাস পাবে। বর্তমান সময়ে সীসার ব্যবহার রোধ করতে না পারলে ভবিষ্যতের এর মাশুল দেয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। তিনি আরো বলেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলো পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র রক্ষার্থে অনেকপূর্বেই সীসার ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে। আমাদের দেশেও এর ব্যবহারের প্রতি সরকারের দ্রুত নিষেধাঞ্জা আরোপ করা প্রয়োজন। অনেকগুলো মালটি ন্যাশনাল কোম্পানি দেশের বাজারে সীসাযুক্ত রঙ সরবরাহ করে বিপুল পরিমান অর্থ মুনাফা করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ধাতব পদার্থের সাথে সীসা বাতাসের মাধ্যমে বিক্রিয়া করে বাতাসে ছড়িয়ে পরে। যা আমাদের পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। বায়ুতে সীসা ছড়িয়ে পড়ার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় শিশুরা। ৯ বছর বয়সের কম শিশুদের ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। সীসা দূষণের ফলে শিশুদের মস্তিষ্ক ও ¯œায়ু তন্ত্রের ক্ষতি সাধিত হয়। শিশুর শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। শ্রবণ সমস্যা এবং মাথা ব্যাথা লেগেই থাকে। এছাড়াও প্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্যও সীসার ব্যাপক ক্ষতিকারক প্রভাব রয়েছে। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেতেই প্রজননের সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত মানুসক ও ¯œায়ু চাপ দেখা দেয়। স্মৃতি শক্তি ও মনোসংযোগ ব্যাপক ভাবে কমে যায়। এছাড়াও দীর্ঘ সময় সীসা দূষণের শিকার হলে হঠাৎ করেই খাদ্যাভাস কমে যায়। তবে রঙ সম্বলিত কাজের সাথে জড়িত ব্যাক্তিদের আয়ুষ্কাল অনেক কমে যায়। পঙ্গুত্ব বা অকাল মৃত্যুর সমূহ সম্ভবনা দেখা দেয়।
 এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোসাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) সূত্রে আরো জানা যায়, যে সমস্ত শ্রমীকরা সরাসরি ¯েপ্র মেশিনের সাহায্যে রঙের কাজ করে। তাদের আয়ু তুলনামূল ভাবে অতিদ্রুত কমে যায়। তারা দ্রুত সীসার দ্বারা আক্রান্ত হয়। এধরনের কাজ করতে অত্যন্ত সচেতন হতে হয়। প্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিস ব্যবহার করাই এর প্রতিকারের সাময়ীক ব্যবস্থা। তবে রঙ সংযুক্ত কোনো ধরনের কাজ করলেই তাকে সীসার দ্বারা আক্রান্ত হতে হবে। একটি গবেষণা সূত্রে জানা যায়, শিশুদের বিভিন্ন লোভনীয় খেলনাতে বিভিন্ন রঙ্গের ছড়া ছড়ি থাকে। এই সমস্ত রং অধিক সীসাযুক্ত। যা শিশুর ক্ষতি সাধন করে। তবে শুধুর শিশু কিংবা প্রাপ্ত বয়ষ্ক নয় বরং পরিবেশের উপরেও সীসার ক্ষতীকারক প্রভাব রয়েছে।
একটি গবেষণায় জানাগেছে, কলকার খানা থেকে নির্গত সীসা মাটি ও পানিতে প্রায় ২ হাজার বছর মিলিত অবস্থায় থাকে। কৃষি কাজে ব্যবহƒত জিনিসে সীসা থাকার ফলে জমির উৎপাদন এবং শক্তি অনেকটাই হ্রাস পায় এবং ফসলেও সীসা দূষণের সমূহ সম্ভবনা থাকে। মাটির উবর্বরতা নষ্টের জন্য সীসা অনেকাংশেই দায়ী। সীসা উদ্ভিদের স্বাভাবিক গঠন ব্যবহ করে। এটি পানিতে মিশে জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বসবাসের অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে। সীসা দূষণের ফলে বিশ্ব মন্ডলের প্রাকৃতিক বৈচিত্র বিলান হয়ে যেতে পারে। অতি সাম্প্রতি একটি গবেষণাতে দেখা গেছে, সীসা দূষণ জনিত কারণে উদ্ভিদ ওপ্রাণীর জীন গঠনে বাধাগ্রস্ত হয়।
দেশি ল্যাপটপের আগমন
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পূর্ব সংকেত
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্লোগান নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তা পূরণে বদ্ধপরিকর মহাজোট সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো দেশি ল্যাপটপের বাজারে আগমন এক অভাবনীয় সফলতার পূর্ব সংকেত। ২ বছর প্রতীক্ষার পর হলেও দেশি ল্যাপটপ বাজারে এসেছে। এটা বাংলাদেশে প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। প্রথম দিকে বাজারে সীমিত পরিসরে ল্যাপটপ পাওয়া গেলেও ধীরে ধীরে এর সহজলভ্যতা বাড়বে। দেশি ব্রান্ডের ল্যাপটপ বাজারে আসায় স্বল্প আয়ের লোকেরাও তাদের সাধ্যমত ক্রয় করতে পারবে। প্রযুক্তির পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চড়ে দুর্বার গতিতে অপার সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদশ।
প্রাথমিকভাবে চার ধরনের ল্যাপটপ বাজার এনেছে সরকারি টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস)। সর্বনিু ১০ হাজার থেকে শুরু করে ২৬ হাজার ৫শ টাকার মধ্যে এ দেশি ল্যাপটপ বাজারে পাওয়া যাবে। এর মধ্যে ১৩ হাজার টাকার ল্যাপটপে ২ হাজার টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। ভর্তুকি দিয়ে হলেও সরকার প্রযুক্তির কথা চিন্তা করে দেশি ল্যাপটপ বাজারে এনেছে এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। টেশিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে আরো ২৫ হাজার ল্যাপটপ বাজারে আসবে। তিনটি বহুজাতিক ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির সহায়তায় টঙ্গীতে টেশিসের কারখানায় এসব ল্যাপটপ ও নেটবুক প্রস্তুত হয়েছে। চীন, তাইওয়ান, কোরিয়াসহ বিশ্বের ১০টি দেশ থেকে ১৫০ থেকে ১৭৫ ধরনের ল্যাপটপ ও নেটবুকের যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়েছে। কিছু যন্ত্রাংশ বাংলাদেশেও তৈরি হয়েছে। বাজারে দেশি ব্রান্ডের ল্যাপটপ আসার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ব্রান্ডের ল্যাপটপের দামও কমবে। এতে করে ব্যবহারকারীরা আরো কমে ল্যাপটপ ক্রয় করতে পারবে। বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে দেশীয় পণ্যের মান বৃদ্ধির দিকে আরো বেশি নজর দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া দেশীয় পণ্য ব্যবহারে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশীয় পণ্য বেশি করে বিক্রয় হলে দেশের আর্থিক বুনিয়াদ আরো দৃঢ় হবে।
সর্বপ্রথম দেশি ল্যাপটপ বাজারে আসায় প্রযুক্তিতে পরনির্ভরশীলতা অনেকাংশে কমবে বলে আমরা মনে করি। এ সফলতা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মান বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে। সফলতার এ ধারা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার যেন পিছু পা না হয় এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও রাষ্ট্রীয় খাত
মোর্শেদ আলী
ইদানীং সংবাদপত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও দেশের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে বেশ লেখালেখি হচ্ছে। সরকারের হাত বদল হলেই রাষ্ট্রের প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালক পরিবর্তন ঘটে থাকে। এবারো আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের পরিবর্তন করে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। প্রথমেই  এরা সব চমক দেখানো কথাবার্তা বলেন। তবে পরে যতই দিন গড়াতে থাকে অবস্থা বেহাল হতে থাকে। সঙ্গে বড় বড় কথাও কমে আসে। অনেকে মনে করেন ব্যক্তির পরিবর্তন ঘটলেই সমস্যা কেটে যাবে। মোটেও তা নয়। ব্যবস্থা যদি একই থাকে তাহলে ব্যক্তির কিছু করার থাকে না। পূর্বের দুরবস্থা নতুনভাবে পরিবর্তিত চেহারায় সামনে এসে নতুন নতুন সঙ্কটের সৃষ্টি করতে থাকে। সেটাই ঘটে চলেছে শেয়ার বাজারে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে।
দেশ স্বাধীন হওয়ায় পর ব্যাংক বীমা যখন জাতীয়করণ করা হলো তখন থেকেই অতীতের সব দায় দেনাসহ পূর্বের ব্যবস্থাপনায় চলতে থাকল। তার সঙ্গে স্বাধীনতার পর যুক্ত হলো শ্রমিক-কর্মচারী-ইউনিয়নগুলোর দাপট (ব্যাংকগুলোতে ) ও রাজনৈতিক প্রভাব। সেই অবস্থা এখনো চলছে এবং ’৭৫-এর পরবর্তীতে অব্যবস্থা দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অব্যাহতভাবে চলেছে। যদিও ’৭৫ পূর্বাবস্থায় বলা হয়েছিল যে জাতীয়করণ করে আর্থিক দুরবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু এখনতো জাতীয়করণ প্রধান খাত নয়। ব্যক্তিখাত এখন প্রধান খাত। এখন দেশের অর্থনীতি ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’-র পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। এখন মোটা অঙ্কের টাকা বেতন দিয়ে বিদেশি অর্থনৈতিক পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দুরবস্থা দূর করার পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। সর্বোপরি বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে ’৭৫-এর পরবর্তী সরকারগুলো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এ সত্ত্বেও সমস্যা দূর হচ্ছে না বরং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা বেড়েই চলেছে। এখন বিশ্বব্যাংক এডিবি আইএমএফ নানা কথা বলছে এবং দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ তুলে প্রস্তাবিত ঋণদান বাধাগ্রস্ত করছে। বিগত ৪০ বছর বাংলাদেশে যে সব আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি চলেছে তা যেন উনারা জানতেন না বা দেখতে পাননি। তাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় খাতকে ধ্বংস করে দিয়ে (অথচ নিজেদের দেশে অনেক বড় বড় রাষ্ট্রীয় খাত আছে এবং কৃষিতে প্রচুর ভর্তুকি চালু রেখেছে) ব্যক্তি খাত ও মুক্ত বাজার অর্থনীতি চালু করার। সে কাজ করতে তো লুটপাট-দুর্নীতি প্রয়োজন হয় (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ওই কাজ তাদের সম্পন্ন হয়েছে। দেশে এখন বাজার অর্থনীতি দাপটের সঙ্গে ক্রিয়াশীল। কোনো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সর্ব ক্ষেত্রেই মাফিয়াচক্র সিন্ডিকেট সক্রিয় । দৈনন্দিন বাজার দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি থেকে মুদ্রা বাজার ও পুঁজি বাজারে যে অস্থিরতা সেটা চলমান গৃহীত নীতি ও ব্যবস্থার ফলশ্র“তি।
আসা যাক রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক প্রসঙ্গে। কিছু কথা পূর্বে উল্লেখ করেছি। এই ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক হচ্ছে সরকার। এ ব্যাংকগুলোতে যে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা চলছে সেটা সরকারের অজানা নয়। বর্তমান ও বিগত দিনের অর্থমন্ত্রীদের তা জানা আছে বা ছিল। এ সব ব্যাংকে তথ্য নিলে দেখা যাবে যত বড় বড় ঋণ খোলাপি তারা হচ্ছে মন্ত্রী বাহাদুরদের আÍীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব। প্রায় ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রভাবে এ ঋণ দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো সরকার ঋণ খেলাপিদের কেশ পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারেনি। বরং মন্ত্রীরা বা সরকার তাদের নিজেদের গদি রক্ষার জন্য তাদের তোয়াজ করতে ব্যস্ত। ঋণ খেলাপিরা বর্তমান সরকার ব্যবস্থায় ভীষণ ক্ষমতার অধিকারী। মাঝে মধ্যে ঋণ খেলাপির বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ে পরামর্শ হয় এবং খেলাপি ঋণের ক্যাটাগরি তৈরি করে কোনটা ‘ব্যাড লোন’ ইত্যাদি ঠিক করা হয় এবং কিছু ঋণ মওকুফ করার সিদ্ধান্ত হয়। সে সব ক্ষেত্রে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপিরা উপহার পেয়ে যায়। তবে দু’দিন পূর্বে আবার পত্রিকায় দেখা গেল এক কৃষক দশ হাজার টাকার ঋণ পরিশোধ না করতে পারায় পুলিশ হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে  বোঝা গেল দেশে আইন আছে, সেটা প্রয়োগ হয় গরিব কৃষক বা ক্ষুদে উৎপাদনকারীদের ওপর। শত বা হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপিদের ওপর নয়। তাছাড়া এ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক থেকে সরকার এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রচুর ঋণ নেয়। সেগুলো বছরের পর বছর পরিশোধ হয় না। সুদে আসলে বাড়তেই থাকে। এ ধরনের অবস্থা চললে এ ব্যাংকগুলো সুস্থ ও লাভজনকভাবে চলবে কি করে?
প্রসঙ্গ উঠেছে প্রাইভেট ব্যাংকসমূহের। সোনালী ব্যাংকের সারাদেশে যত শাখা আছে সব প্রাইভেট ব্যাংকের শাখা যোগ দিলে তার সমান হবে কি না সন্দেহ। তবে ওই সমস্ত ব্যাংকের অনেক মালিকই ঋণ নিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে। আমি এ সব বিষয়ে পণ্ডিত নই। কিন্তু খোঁজ খবর রাখি এবং এক কালে ট্রেড ইউনিয়ন নেতা থাকার সুবাদে অনেক হাঁড়ির খবরই জানি বা জানা সম্ভব। জোট সরকারের আমলে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সাহেবের ছেলে সোনালী ব্যাংকে প্রায় পাঁচ শত কোটি টাকার এক প্রজেক্ট সাবমিট করেছিল। এটা যে অফিসারের পাস করানোর দায়িত্ব ছিল সে আক্ষেপ করে বলল, এ ধরনের ঋণগুলো তো ঋণ খেলাপি হয়। ফলে এ প্রক্রিয়া সরকারিভাবে কঠোর হস্তে না ঠেকাতে পারলে, কঠোর হস্তে খেলাপি ঋণ আদায় না করতে পারলে কি ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো লাভজনকভাবে চলবে? একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা দূর করতে হবে। সেবা দেয়ার ক্ষেত্র আরো দ্রুত এবং দক্ষ হতে হবে। এই ব্যাংকগুলোর সব শাখা এখনো কম্পিউটারাইজ (ঈড়সঢ়ঁঃধৎরংব) হয়নি। অফিসার ও কর্মচারীদের দক্ষতা আরো বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের মটিভেট করতে হবে যে ব্যাংক রক্ষা করতে পারলে তোমাদের চাকরি রক্ষা পাবে। না হয় পথে বসতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকের অফিসার-কর্মচারীদেরও উদ্যোগ প্রয়োজন। আর এ ব্যাংকগুলোর পরিচালনার জন্য দক্ষ, অভিজ্ঞ ও সৎ ব্যক্তিদের নিয়োগ খুব জরুরি। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরাই যথেষ্ট নয়। সাংবাদিক ভাইদের উচিত সেটার অতীত তথ্য বের করা, কেন ব্যাংকগুলো এ অবস্থা এলো। আর এই সমস্ত অব্যবস্থা ও দুর্নীতির জন্য কে বা কারা দায়ী। এ চিত্র জনসম্মুখে তুলে ধরলে সত্যি দেশের ও আর্থিক সেক্টরের উপকারে আসবে।  লেখক: রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট
মর্টগেজ ভাড়াটিয়া
মযহারুল ইসলাম বাবলা
মর্টগেজ ভাড়াটিয়া বা বন্ধকী ভাড়াটিয়া নামক শব্দের সঙ্গে আমাদের পূর্ব পরিচয় নেই। তাই শোনামাত্র চমকে উঠেছিলাম। এ আবার কেমনতরো ভাড়াটিয়া! যার নামের পূর্বে মর্টগেজ বা বন্ধকী শব্দটি জুড়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের  সনাতনী অভিজ্ঞতাটি হচ্ছে মাসিক ভাড়া প্রদান সাপেক্ষে মানুষ বাড়ি-ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে থাকে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা জামানত বাবদ অগ্রিম অর্থ বাড়ির মালিকদের প্রদানেরও বিধান আছে। অগ্রিম অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে  হের-ফের হয়ে থাকে। কারো ক্ষেত্রে তিন মাসের ভাড়ার অগ্রিম, কারো ক্ষেত্রে দুই-এক মাসের। ঢাকা শহরের বাড়ির বা ফ্ল্যাটের মালিকদের  চেয়ে ভাড়াটিয়ার সংখ্যাই অধিক। এ বিষয়ে কোনো দ্বিমতের সুযোগ নেই। আমাদের বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়াদের সনাতনী ব্যবস্থায় মর্টগেজ ভাড়াটিয়া নতুন সংযোজন।  না জানা অবধি আমিও অবাক বিস্ময়ে বিষয়টি বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হয়ে মর্টগেজ ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালা উভয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। জেনেছি চমকপ্রদ অভিনব ব্যবস্থাটি।
ব্যবস্থাটি বিগত তিন-চার বছর যাবৎ পুরান ঢাকায় চালু হয়েছে এবং ক্রমেই এর দ্রুত বিস্তার ঘটেছে। পুঁজির শক্তি এবং পুঁজির ক্ষমতা এতে প্রকটভাবেই ফুটে উঠেছে। বাড়িওয়ালাদের অর্থের প্রয়োজন মেটাতেই মর্টগেজ ভাড়াটিয়া ব্যবস্থাটি চালু হয়েছে। বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকদের তিন বা পাঁচ লাখ টাকা একত্রে প্রদান করে মর্টগেজ ভাড়াটিয়া বাড়ি বা ফ্ল্যাটে ওঠে। ব্যবহƒত গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানির বিলই তারা  কেবল পরিশোধ করে। মাসিক কোনো ভাড়া তাদের দিতে হয় না। এক সঙ্গে নগদ তিন-পাঁচ লাখ টাকা প্রদানের কারণেই বিনে ভাড়ায় বসবাসের এমন ব্যবস্থা। রীতিমতো দলিল-দস্তাবেজ করেই পরস্পর চুক্তিবদ্ধ হয়। তিন বা পাঁচ বছর মেয়াদে সাধারণত চুক্তি হয়ে থাকে। চুক্তির সময়সীমা অতিক্রমের পর বাড়িওয়ালাকে শুরুতে দেয়া তিন বা পাঁচ লাখ টাকা মর্টগেজ ভাড়াটিয়াকে একত্রে ফেরৎ দিতে হয়। অর্থাৎ চুক্তির মেয়াদকাল পর্যন্ত মর্টগেজ ভাড়াটিয়া বিনে ভাড়ায় থাকবে। কেবল গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানির বিল পরিশোধ করবে। চুক্তির মেয়াদ শেষে লগ্নির পুরো টাকা একত্রে ফেরৎ নেবে। কোনো কারণে বাড়িওয়ালা অর্থ ফেরৎ দিতে অক্ষম হলে তাদের মধ্যে পুনরায় নতুন করে চুক্তিপত্র সম্পাদন করে আগের নিয়মেই ফ্ল্যাটে বা বাড়িতে বিনে ভাড়ায় বসবাস করতে পারবে।
ব্যবস্থাটি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মূল কারণটিও  জেনেছি। নগদ অর্থের তাগিদেই নিরুপায় বাড়ির মালিকদের এমন চুক্তি করতে হয়। পুরান ঢাকার জায়গা বাড়েনি। কিন্তু বেড়েছে পরিবার। পৈতৃক সম্পত্তিতে অংশীদারদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারায় কারো মালিকানার জায়গার পরিমাণ আধা কাঠা থেকে সোয়া কাঠার ঊর্ধ্বে নয়। খুব কম সংখ্যক আছে যাদের জমির পরিমাণ তিন-চার কাঠা। সংখ্যাগরিষ্ঠ পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের জায়গার পরিমাণ আধা কাঠা থেকে সোয়া কাঠা হবার কারণেই এ স্বল্প জায়গায় রাজউকের অনুমোদন পাওয়া সম্ভব হয় না। এছাড়া আছে সরু রাস্তার জন্য রাজউকের অনুমোদন না দেবার পাকা ব্যবস্থা। রাজউকের অনুমোদন লাভের ক্ষেত্রে আরেক অন্তরায় বাড়ি নির্মাণে চারদিকে জায়গা ছেড়ে বাড়ি নির্মাণের শর্তারোপ। যা পুরান ঢাকার জমির মালিকদের ক্ষেত্রে পালন অসম্ভব। আধা কাঠা থেকে সোয়া কাঠা জায়গার চারদিকে জায়গা ছাড়লে তো বাড়ি নির্মাণের ন্যূনতম জায়গাও থাকে না। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বল্প জায়গার মালিকরা রাজউকের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে স্বউদ্যোগে জীবনের সকল সঞ্চয় বিনিয়োগ করে বাড়ি নির্মাণে হাত দেয়। রাজউকের অনুমোদন না থাকায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় বা বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহ নির্মাণ ঋণ পাওয়াও সম্ভব হয় না। নির্র্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে  অগত্যা তাদের মর্টগেজ ভাড়াটিয়াদের শরণাপন্ন হতে হয়। তিন-পাঁচ লাখ নগদ টাকা গ্রহণ করে মর্টগেজ ভাড়াটিয়াদের ঘর-ফ্ল্যাট বিনে ভাড়ায় দিতে হয়। পুরান ঢাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বল্প জমির মালিকদের একই দশার কারণে মর্টগেজ ভাড়াটিয়া ব্যবস্থাটি দ্রুত বিস্তার লাভ করে চলেছে। খুব কম সংখ্যকই ব্যক্তিগত এবং পরিবারিক অর্থের প্রয়োজন মেটাতে মর্টগেজ ভাড়া দিয়ে থাকে। একজন জানিয়েছে মেয়ের বিয়ের পণের অর্থ প্রদানের জন্য বাধ্য হয়ে নিজেদের দুই রুম মর্টগেজ ভাড়া দিয়ে ছাদে টিন শেডের ঘর তুলে নিজেরা বসবাস করছে। মর্টগেজ ভাড়াটিয়ারাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যে বাড়ির মালিকদের নগদ অর্থের প্রয়োজন মেটানোর সুযোগটি তারা কাজে লাগিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। মানি মেকস্ মানি অর্থাৎ টাকাই টাকা তৈরি করে। ব্যাংকের সুদও এত অধিক নয়। ব্যবসায় বিনিয়োগে নানা ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি নেই। নিরাপদ লাভজনক বিনিয়োগই তারা মনে করে।
সাধারণত ভাড়াটিয়াদের ওপর বাড়িওয়ালাদের স্বেচ্ছাচারিতার নানা অভিযোগ আছে। তবে মর্টগেজ ভাড়াটিয়াদের তেমন কোনো অভিযোগ নেই বরং তারা অধিক সমীহ ও মর্যাদা বাড়িওয়ালাদের থেকে পেয়ে থাকে। বাড়িওয়ালাদের আর্থিক দুরবস্থার এই সুযোগ নেয়া নৈতিক কিনা! জানতে চাইলে বলে, “একজন নিরুপায় বাড়ির মালিককে অর্থ দিয়ে উপকার করেছি। বিনিময়ে নিজেরাও লাভবান হচ্ছি। এখানে অনৈতিক কিছু নেই। বরং আমরা অর্থ না দিলে তাদের পক্ষে বাড়ি নির্মাণের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা সম্ভবপর ছিল না। আর তারা মাথা কুটলেও রাজউকের অনুমোদন না থাকার কারণে আর্থিক কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে একটি টাকাও ঋণ পাবে না। নিজেরা লাভবান হচ্ছি সত্য তাই বলে বাড়ির মালিকও যে লাভবান হচ্ছে না তাও অসত্য নয়।”
দেশজুড়ে সর্বত্র চলছে পুঁজির অসীম দৌরাত্ম্য। পুঁজির নীরব শোষণও। পুঁজির শাসন ও শোষণের ক্ষেত্র ক্রমেই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিস্তার করে চলেছে। বর্তমান ব্যবস্থায় এর  থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই। বিকল্প ব্যবস্থা না আসা পর্যন্ত হরেক ক্ষেত্রে পুঁজির দৌরাত্ম্য আমাদের দেখতে হবে এবং ভুগতেও হবে।
জাল সনদের রমরমা ব্যবসা
সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিরোধ চাই
অরুণ ব্যানার্জী
ঢাকায় নীলক্ষেতে জাল সনদের রমরমা ব্যবসা নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সনদ জাল হচ্ছে। নজরদারি না থাকায় এ জাল সনদ ব্যবসা রাজধানী থেকে এখন দূর-দূরান্তের গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। জাল সনদের বিস্তৃতি এতটাই যে চাইলেই হাতের নাগালে পাওয়া যায়। চিকিৎসা ও প্রকৌশল, নামকরা সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স, মাস্টার্স ও ডিপ্লোমা, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক সনদ অহরহ জাল হচ্ছে। আবার এ জাল সনদ নিয়ে অনেকেই দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চাকরি করছেন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের অনেককে ইতোমধ্যে শনাক্ত করলেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন জাল সনদ হাতের নাগালে পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখন আর পড়ালেখায় মনোযোগী নয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও টাকার বিনিময়ে জাল চক্রের সদস্যদের কাছে সব সনদই মেলে। আসল সনদের আদলেই তৈরি করা হয় জাল সনদ। সংশ্লিষ্ট বোর্ড কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাচাই ছাড়া সাধারণ চোখে জাল সনদ ধরা অসম্ভব। এক শ্রেণীর মানুষ এসব জাল সনদ নিয়ে চিকিৎসা পেশা থেকে শুরু করে অনেক পেশাতেই চাকরি করছেন। দেশের স্বনামধন্য এ্যাপোলো হাসপাতালেও সম্প্রতি জাল সনদধারী ভুয়া ডাক্তার ধরা পড়েছে। ২০০৭ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফয়েজির সনদও জাল ধরা পড়ে। জাল সনদ তৈরির রেজিস্ট্রার ভবন নামে খ্যাত নীলক্ষেতে থেমে নেই জাল সনদ তৈরির কার্যক্রম। এক হিসেবে কেবল নীলক্ষেত থেকে বছরে প্রায় ৩৬ হাজার জাল সনদ তৈরি হচ্ছে। এ  থেকে বেরিয়ে আসছে আমাদের দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজের একটি চালচিত্র। অর্থ নামক পরমার্থ দিয়ে হচ্ছে অনেক কিছু।
মানুষ সমাজের ওপর নির্ভরশীল। সামাজিক অবয়ব শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম ইত্যাদির সমন্বিত ফল। যে ছাত্রবন্ধুটি শিক্ষাঙ্গনে সমাজপ্রগতির কথা বলেন তিনি যখন বিনা টিকেটে দলবল নিয়ে ট্রেনে চলাফেরা করেন তখন তার সমাজপ্রগতি একাকার হয়ে যায় ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাচার আর দুর্নীতির কাছে। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা চাকরিতে ঢোকেন দেশ, সরকার ও জনগণের সেবা করার অঙ্গীকার নিয়ে। কিন্তু নগণ্যসংখ্যক কর্মকর্তা এ মানসিকতা লালন ও বাস্তবায়ন করেন। ডাক্তাররা আর্তমানবতার সেবা করার মনোভাব নিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হন। পাস করে চাকরিতে ঢোকেন বা প্রাইভেট প্রাকটিস করেন। কিন্তু পরবর্তীতে এরা অনেকেই হয়ে ওঠেন টাকা ইনকামের যন্ত্র। ‘পুলিশ জনগণের সেবক’ একথা বলা হলেও বাস্তবে তারা জনগণের রক্ষক নয়, ভক্ষক। যে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা বা কর্মচারী নানারকম ছলাকলায় দৈনন্দিন জীবনে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ায়, তিনি বা তারা যখন ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট নিয়ে কথা বলেন তখন বড্ড বেমানান ঠেকে। রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে দলের মধ্যে উপদল। জনসভায় বক্তব্যের সঙ্গে কাজের কত না বৈপরীত্য। দল ক্ষমতায় থাকলে টেন্ডারবাজি আর পেশিশক্তির মহড়া। আর মায়াকান্না। জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে জলগণের জন্য ‘জান কোরবান’ করার অঙ্গীকারই এখন রাজনীতি নামক নীতিহীন বাণিজ্যের গোপন কথা। প্রাইমারী স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত শিক্ষকদের মাঝে চলছে চটকদারী কথার আড়ালে প্রাইভেট পড়ানোর প্রতিযোগিতা। অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারক কমকর্তাদের কল্যাণে চলছে সীমিতসংখ্যক কিছু প্রশ্নের সাজেশন দিয়ে পরীক্ষা নেয়ার কলাকৌশল। বিসিএস পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। পরীক্ষা অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী শুধু বহিষ্কার হয় না; অনেক সময় বহিষ্কৃত হন পরিদর্শক শিক্ষকও। পরীক্ষার খাতা টেম্পারিংয়ের অভিযোগে পরীক্ষক গ্রেফতার হন। এসব নিয়ে তৈরি হয় মুখরোচক গল্প। সমাজের সর্বত্র চলছে এরকম অনিয়ম আর দুর্নীতির বলগাহীন স্রোত। এ গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে কিছু ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আর পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে দ্রুত অর্থের অবৈধ মালিক হওয়ার নেশায় মেতে উঠবে, তাতে আর বৈচিত্র্য  কোথায়?
জাল সনদ সংগ্রহকারীদের কাছে দেশের রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে নীলক্ষেত। এক সময় জাল কাপড়, সূঁচ, তৈজসপত্রসহ  বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির আখড়া হিসেবে বিবেচিত হতো ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর অপরপারের জিনজিরা। এখন দেশের সব স্কুল, কলেজ, মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংস হিসেবে পরিণত হয়েছে নীলক্ষেত। এই নীলক্ষেত এলাকায় কম্পিউটারের অনেকগুলো দোকান অসাধ্য সাধনে সিদ্ধহস্ত। এর জন্য বৃথা ক্লাস করতে হয় না। রাত জেগে পড়তে হয় না। মাথা ঘামাতে হয় না টিউটোরিয়াল নিয়ে। বার্ষিক পরীক্ষা বা টার্ম ফাইনাল নিয়ে ভুগতে হয় না টেনশনে। কিছু ‘নগদ নারায়ণ’ হলে কম্পিউটারের দোকানে তৈরি জাল সনদ সংগ্রহ করা সম্ভব। এসব সনদ এমনভাবে তৈরি করা হয় যে আসল নকল ধরার কোনো উপায় নেই। পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাকের ডগায় জাল সনদ সরবরাহকারীদের এ তৎপরতা দিনের দিনে বেড়েই চলেছে। পুলিশ অবশ্য কয়েকবার হানা দিয়ে গ্রেফতার করেছে জাল সনদ ব্যবসায়ীদের। কিন্তু তাতেও কমেনি তাদের অপতৎপরতা। বিশেষ করে জাল  সনদ প্রস্তুতকারকদের নেপথ্য নায়করা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ‘যুগান্তরে’ প্রকাশিত অনুসন্ধিৎসু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বর্তমানে নীলক্ষেতে জাল সনদ প্রস্তুতকারীদের তৎপরতা সীমাবদ্ধ নেই। এর আশপাশের এলাকা আজিমপুর সরকারি কলোনী, লালবাগ এলাকায় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে এ জাল সনদ ব্যবসা চলছে। এছাড়া রাজধানীর ফার্মগেট, সদরঘাট, মিরপুর ১০ নম্বরের বেশ কিছু কম্পিউটারের দোকানেও তৈরি হচ্ছে জাল সনদ। নীলক্ষেত মার্কেটে ৫ শতাধিক কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ১শ টিরও বেশি দোকানে তৈরি হচ্ছে জাল সনদ। সে হিসেবে বছরে ৩৬ হাজার জাল সনদ তৈরি হচ্ছে দোকান থেকে। এসব জাল সনদ নিয়ে অনেকেই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে দাপটের সঙ্গে চাকরি করছেন। ভুয়া ডাক্তারি সনদ নিয়ে অনেকেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেজে চাকরি করছেন বিভিন্ন নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে। ভুয়া ডাক্তার কাজী তানভীর জামান দেশের বিশেষায়িত এ্যাপোলো হাসপাতালে চার বছর নিয়োজিত ছিলেন ডাক্তারি পেশায়। হাইকোর্টের বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজির ভুয়া এলএলবি সার্টিফিকেট নিয়ে আলোড়ন উঠেছিল সামাজিক অঙ্গনে। সচেতন মানুষ প্রশ্ন তুলেছিলেন একজন মহামান্য বিচারপতির আইনের ডিগ্রি নিয়ে যেখানে এই বেহাল অবস্থা সেখানে মানুষ আইনের শাসন পাবে কোথায়? সম্প্রতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলরের শিক্ষাগত সনদপত্রের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার বিষয়টার সত্যাসত্যের যদিও এখনো নিষ্পত্তি হয়নি, তবু কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। একজন শিক্ষিত মানুষের প্রশ্নবিদ্ধ সনদ নিয়ে কোন্ খুঁটির জোরে তিনি ভিসি পর্যন্ত হবার সুরম্য সিঁড়িতে পৌঁছাতে পারলেন?
আমরা বিশ্বাস করি জাল সনদের দৌরাÍ্যে সমাজে মুখোশধারী ভদ্রলোকের সংখ্যা বাড়ছে। হারিয়ে যেতে বসেছে মেধাবী মানুষের মেধার গুরুত্ব। আর্থিক কৌলিন্য আর জাল সার্টিফিকেটের কারণে মেধার জগতে বিরাজ করছে নীরব পঙ্গুত্ব। এ অবস্থা সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও দেশের জন্য আদৌ শুভ নয়। নয় বাঞ্ছনীয়। এ অবস্থা চলতে দেয়া উচিত নয়। আমরা মনে করি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া দরকার। আইন সংশোধন করে জাল সনদ প্রস্তুতকারী ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ও নেপথ্য নায়কদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক  শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া দরকার। উল্লেখিত মন্ত্রণালয়গুলো তৎপর হলে সমাজের মুখোশধারী ভদ্রলোকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। তাদের অপকর্ম খবরের কাগজ ও প্রিন্টিং মিডিয়ায় ছবিসহ প্রকাশ হতে থাকলে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে এদের মুখোশ খসে পড়বে। আমরা তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর ইতিবাচক তৎপরতা আশা করি।   লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

ঢাবিতে ভর্তিচ্ছু দুই শিক্ষার্থীর হতাশালাপ/সংলাপ
এম.রেজাউল করিম
স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন এলাকার একটি ছায়া সুশীতল বৃক্ষের তলদেশ। অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর পদচারণায় সকালেই মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রীদের আগমনে কর্ম-চাঞ্চল্য স্বাভাবিকভাবেই বেশি। অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক তাদের সন্তান-সন্তুতিদের সঙ্গে ভর্তির ব্যাপারে সঙ্গে এসেছেন। নতুন একটি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে প্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপাঠ বলে খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সবাই আগ্রহী। তাই শিক্ষার্থীদের মনে অন্যরকম আমেজ। ভর্তির আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর একই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা দুই ছাত্রছাত্রী তাদের ভর্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠিত। শিক্ষার্থীদ্বয়ের অনতিদূরে পিছন ফিরে বসে থাকা এই লেখকের কানে তাদের আলাপচারিতা ভেসে এলোঃ
ছাত্রীঃ দীপ্ত ভাইয়া, কি মনে হচ্ছে? আমরা ভর্তি হতে পারব  তো?
ছাত্র ঃ ব্যাপার না। নিশ্চয়ই আমরা ভর্তি পরীক্ষায় কোয়ালিফাই করব।
ছাত্রীঃ তুমি তো ‘ট্যালেন্টড’ ছাত্র। তোমার জন্য পরীক্ষায় ভালো করাটা ‘ব্যাপার’ না হলেও আমার জন্য বেশ ‘টাফ’ হবে।
ছাত্রঃ হতাশ হও কেন? যুদ্ধে যখন নেমে পড়েছে তখন মরণপণ লড়াই কর- জয় অবধারিত।
ছাত্রীঃ তুমি তো খুব আশাবাদী। কিন্তু, আমার ভয় করছে...
ছাত্রঃ ভয়ের কিছু নেই। ঢাবিতে না হলেও বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, রাবি, চবি, খুবি, জাবি,  আরো কত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে না?
ছাত্রীঃ তুমি ছেলে মানুষ। যেখানে-সেখানে গিয়ে পড়তে পার। আমার পক্ষে তো ঢাকার বাইরে গিয়ে পড়া সম্ভব নয় ভাই...।
ছাত্রঃ হতাশা বাদ দাও, দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।  তুমিও তো খারাপ ছাত্রী নও...।
ছাত্রীঃ তুমি বলছ তাহলে? আমারও হয়ে যাবে? ‘ফুল চন্দন’ পড়–ক তোমার মুখে...।
ছাত্রঃ এসো নিজেদের তুমি না ভেবে অন্যদেরটাও একটু ভাব।
ছাত্রীঃ তুমি মহৎ মানুষ,  তুমি না ভাবলে  আর কে ভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা?
ছাত্রঃ মহৎ টহতের কথা বাদ দাও...। তুমি জানো রাবিতে ছাত্রছাত্রীরা বর্ধিত বেতন-ফ্রির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে?
ছাত্রীঃ শুনেছি। সেখানকার ভিসি নাকি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে অনাকাক্সিক্ষত মন্তব্য করেছেন? পুলিশ ডেকেছেন...।
ছাত্রঃ হ্যাঁ,  তিনি বলেছেন, উচ্চশিক্ষা নাকি শুধু সিলেকটেড পারসনদের জন্য।’
ছাত্রীঃ সিলেকটেড বলতে কাদের বুঝিয়েছেন তিনি? দলীয় লোক, আÍীয়স্বজন না বড়  লোকদের?
ছাত্রঃ এতে তিনি কাদের ‘মীন’ করেছেন তা জানি না। তবে একথা তার বলা উচিত হয়নি....।
ছাত্রীঃ ঠিক বলেছ, একজন ভিসির মুখো এমন কথা শোভা পায় না।
ছাত্রঃ  বলো তো দেখি তোমার মতামত?
ছাত্রীঃ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা নেবে। সেক্ষেত্রে তারা যদি দরিদ্র হয় তাহলে টিউশন ফিসহ হাজারো রকমের টাকা পরিশোধ করে কি তাদের লেখাপাড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব?
ছাত্রঃ ঠিক  বলেছ তুমি। কিন্তু, এই সাধারণ কথাটা একজন ভিসি বুঝতে পারলেন না।
ছাত্রীঃ এজন্য তার পদ ছেড়ে দেয়া উচিত নয় কি?
ছাত্রঃ অবশ্যই। ওই পদে থাকা তার আর সাজে না।
ছাত্রীঃ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইদানীং ভর্তির জন্য অযৌক্তিক সব ‘ফি’ ধার্য  করেছে এবং ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করলেই নৈতিকতাবিরোধী মন্তব্য করা হচ্ছে।
ছাত্রঃ ঠিক বলেছ তুমি। জানো কি ‘এ লেভেল’ পাস ছাত্রছাত্রীদের ভার্সিটিতে ভর্তির সময় এক বিচিত্র সমস্যার  পড়তে হয়?
ছাত্রীঃ নাতো, কি সে সমস্যা?
ছাত্রঃ ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার কারণে মার্কস শীটের’ ‘ইকুইভিলেন্ট সার্টিফিকেট’ জমা দিতে হয়।
ছাত্রীঃ তাতো তো দিতেই হবেÑএতে বিচিত্র সমস্যার কি দেখলে?
ছাত্রঃ ‘বিচিত্র’ এ কারণে যে, ভার্সিটিতে ভার্সিটিতে গিয়ে টাকা গুনে দিয়ে তা সংগ্রহ করতে হয়।
ছাত্রীঃ কেন, সরকারিভাবে ‘স্ট্যান্ডার্ড মার্কস কত হবে তা নির্ধারণ করে দেয় না কেন?
ছাত্রঃ তাহলে মানুষকে হয়রানি করবে কিভাবে?
ছাত্রীঃ বুঝলাম না...।
ছাত্রঃ কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইকুইভিলেন্ট সার্টিফিকেটের’ জন্য টাকা নেয় আবার কেউ নেয় না।
ছাত্রীঃ তুমি বলতে চাচ্ছ সার্টিফিকেটেরে জন্য ‘ফি’ ধার্য করে তারা ব্যবসায় ফোঁদে বসেছে?
ছাত্রঃ নয়তো কি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রত্যেক ইউনিটে পরীক্ষা দেয়ার জন্য আলাদা আলাদা ইকুইভিলেন্ট সার্টিফিকেট জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা চালু করেছে।
ছাত্রীঃ অর্থাৎ একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক ইউনিটে আবেদন করতে একাধিক ইকুইভিলেন্ট সার্টিফিকেট’ কিনতে হবে, তাই না?
ছাত্রঃ যথার্থ বলেছ...।
ছাত্রীঃ এ ব্যাপারে বুয়েটের অবস্থানটা কি বলতে পারে?
ছাত্রঃ আলবৎ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো তারাও কোনো ফি ধার্য করেনি।
ছাত্রীঃ তাহলো ঢাকা ভার্সিটিকেই আমরা বেশি বাণিজ্যমুখী বলতে পারে।
ছাত্রঃ তাই তো দেখছি...।
ছাত্রীঃ সেজন্যই বোধ হয় বিশ্বমানের র‌্যাংকিংয়ে ক্রমাগত নিচে নামতে নামতে এক শ’র নিচে নেমে গেছে ঢাবি।
ছাত্রঃ বিষয়টা বেশ লজ্জার কি বল?
ছাত্রীঃ তাতো বটেই। মাঝে মধ্যেই ঢাবিতে যেসব ঘটনা ঘটছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম দারুণভাবে ক্ষুণœœ হচ্ছে।
ছাত্রঃ নতুন করে আবার কি ঘটলো?
ছাত্রীঃ ঢাবির স্টোর থেকে হিসাব বহির্ভূত ৬ হাজার ৭০৮ টি শূন্য সনদপত্র এবং ২ হাজার ৭শ’ ১২টি শূন্য নম্বরপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
ছাত্রঃ তার মানে এক শ্রেণীর কর্মচারী চুটিয়ে সনদ ও নাম্বারপত্রের জালিয়াতি করে যাচ্ছিল এতদিন?
ছাত্রীঃ মজার ব্যাপার হলো দু’মাস আগে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা উঘাটন হলেও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন কিংবা শাস্তিদানের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ছাত্রঃ এ নীরবতার কারণ কি বলে মনে হয় তোমার?
ছাত্রীঃ যে কর্মকর্তার বাড়তি সনদপত্র ও নম্বরপত্রের তথ্য উঘাটন করেছেন তাতে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে। হয়তো একই কারণে কর্মকর্তারাও উদ্যোগ নিতে ভয় পাচ্ছেন।
ছাত্রঃ জালিয়াতি চক্রটি এতই শক্তিশালী?
ছাত্রীঃ শুধু শক্তিশালী হলে কথা ছিল। ওরা ভয়ঙ্কর শক্তিশালী।ৎ
ছাত্রঃ তাই নাকি?
ছাত্রীঃ তাহলে আর বলছি কি? ওদের হুমকিতে তো তথ্য উদঘাটনকারী কর্মকর্তা চাকরিই ছেড়ে দিয়েছেন।
ছাত্রঃ সর্বনাশ! বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও তাহলে সন্ত্রাসী-গডফাদার আছে?
ছাত্রীঃ শোননি, ঐসব গডফাদারের মিথ্যা কাগজপত্র তৈরি করে চোরাপথে ডজনে ডজনে ছাত্রছাত্রী ভর্তির ঘটনা ধরা পড়ায় ওই শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে?
ছাত্রঃ অথচ যারা অনিয়ম করলো, লাখ লাখ টাকা দুর্নীতি করে বাড়ি গাড়ি কিনল তাদের কিছুই হলো না...।
ছাত্রীঃ ওই যে বললাম, সন্ত্রাসী গডফাদার... যুগে যুগে ওরাই তো টিকে থাকবে-সহজ সরল-নিলীহ মানুষেরা নিঃশেষ হয়ে যাবে।
ছাত্রঃ এবার ভর্তির সময়ও অনিয়ম দলীয় তদবির জালিয়াতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না, কি বল?
ছাত্রীঃ তেমন হলে তো আমাদের ভর্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যাবে নি:সন্দেহ নেই।
ছাত্রঃ এসো তাহলে আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে ঢাবিসহ সকল ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে সকল প্রতিবন্ধকতা অবসানের জন্য প্রার্থনা জানাই....।
ছাত্রীঃ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সমাজ- তথা রাষ্ট্র যদি মেধাবীদের উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সৃষ্টিকর্তার অনুকম্পা চাওয়া ছাড়া আর বিকল্প কিছু  নেুই...।
ছাত্রঃ ঠিক আছে, দু’মিনিট নীরব প্রার্থনা জানাই এসো....
শিক্ষার্থী দু’জন ঢাবি চত্বরের শিশির ভেজা ঘাসে ওপর দু’হাত বিচ্ছিয়ে দিয়ে মৌন প্রার্থনায় মনোনিবেশ করল। ঠিক ওই মুহূর্তে বাতাসে ঝাপটায় মাথার ওপরে দণ্ডায়মান গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের এক চিলতে আলোকরশ্মি যেন আছড়ে পড়ল ওদের প্রসারিত হাতের ওপর। লেখক খেয়াল করলেন দু’টো ছোট্ট পাখি কিচির মিচির   করতে করতে গাছের ডাল থেকে দিয়ে নীল আকাশের বুকে পাখা মেলে দিয়েছে।
সিংড়ায় পৌর মেয়রের অনুপস্থিতিতে ২ প্যানেল মেয়র কর্মরত!
প্যানেল মেয়রের স্বাক্ষর নিয়ে পৌরবাসী বিপাকে
নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের সিংড়া পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র শামিম আল রাজীর এক মাসের জন্য বিদেশে অবস্থানের কারণে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে বর্তমানে দুইজন কাউন্সিলর নিজেদের প্যানেল মেয়র ঘোষণা দিয়ে পৌরসভার যাবতীয় কাজ করছেন। এতে পৌর নাগরিকদের মধ্যে কাজের স্থায়ীত্ব নিয়ে উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পৌরসভার একটি সূত্র দাবী করেন, গত ১২ জানুয়ারী সিংড়া পৌর সভার নির্বাচনের পর বিএনপি সমর্থিত ও নির্বাচিত মেয়র শামিম আল রাজীকে পরবর্তি ৩০ দিনের মধ্যে প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করার জন্য সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দায়িত্ব দেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেয়র শামিম আল রাজী ১ নং প্যানেল মেয়র হিসেবে ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: রফিকুল ইসলাম, ২নং প্যানেল মেয়র হিসেবে ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: সায়েদ আলী এবং ৩নং প্যানেল মেয়র হিসেবে ১,২ ও ৩ নং সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর আঞ্জুয়ারা বেগমকে নির্বাচিত করেন যা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়।
ওয়ার্ল্ড লার্নিং ভিজিটর এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে এর আমন্ত্রণে নির্বাচিত মেয়র শামিম আল রাজী ওয়াশিংটন ডিসিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য লেগি¯েস্লটিভ ফেলোজ প্রোগ্রাম ফর সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়ায় যোগদান করেন। এর আগে মেয়র শামিম আল রাজী ২২ সেপ্টেম্বর অফিস আদেশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যতিত অন্যান্য সকল স্বাভাবিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য ১নং প্যানেল মেয়র ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: রফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব অর্পণ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর জানান, মেয়র শামিম আল রাজী গত ২৩ সেপ্টেম্বর সিংড়া থেকে আমেরিকার উদ্যোশ্যে  রওনা দেওয়ার পর ২৫ সেপ্টেম্বর ১১টার দিকে মেয়রের কার্য্যালয়ে পৌরসভার ১৫জন কাউন্সিলর এক বিশেষ সভায় মিলিত হন। নিয়মানুযায়ী মেয়রের অনুপস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলামই সভার সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৫ কাউন্সিলর ক্ষমতার জোর ও ভয়ভিতি দেখিয়ে ২নং প্যানেল মেযর আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সায়েদ আলীকে দিয়ে সভাপতিত্ব করান। সভায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলরগণ ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আদনান মাহমুদকে প্যানেল মেয়র করা প্রস্তাব দিলে বিএনপি সমর্থিত অপর দশজন কাউন্সিলর তা প্রত্যাক্ষাণ করেন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ০৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম কে প্যানেল মেয়র বলবৎ রাখার দাবী জানান। কিন্তু বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলরদের দাবী অগ্রাহ্য করে জোর করে ও সকলকে ভয়ভিতি দেখিয়ে তাদের ক্রয়কৃত নোটিশ বই এবং রেজুলেশন বইতে সকলের উপস্থিতি স্বাক্ষর নেয়। এরপর তারা গত ২৭ সেপ্টেম্বর পৌর সচিবকে সাথে নিয়ে মেয়রের ব্যবহারকৃত গাড়িসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত নির্বাচিত এমপি জুনাইদ আহমেদ পলকের সহায়তায় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারীভাবে প্যানেল মেয়র হিসেবে আদনান মাহমুদকে নিয়োগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
এঘটনায় পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের দশ কাউন্সিলর সম্প্রতি সরকার সমর্থিত কাউন্সিলর আদনান মাহমুদের এই কাজে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পৌরসভার জন্ম সনদে স্বাক্ষর, পরিচয় পত্র ও ব্যবসায়ী লাইসেন্স প্রদান সহ বিভিন্ন কাগজ পত্রে রফিকুল ইসলাম রফিক ও আদনান মাহমুদ দুই জনই প্যানেল মেয়র হিসেবে স্বাক্ষর প্রদান ও অফিস দেখাশোনার কাজ করছেন। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ ওয়ার্ডবাসী মেয়রের অনুপস্থিতিতে নিজেদের প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রে কোন প্যানেল মেয়রের স্বাক্ষর কাজে আসবে অথবা পরে বাতিল হয়ে যাবে কিনা এ নিয়ে পরেছেন উদ্বিগ্নতায়। বিএনপি সমর্থিত ১০কাউন্সিলর ও আ’লীগ সমর্থিত ৬কাউন্সিলরদের মধ্যে প্যানেল মেয়র গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব, মেয়রের বিদেশ যাত্রা এবং দুই কর্মচারীর অনুপস্থিতিতে অচল হয়ে পড়েছে সিংড়া পৌরসভা। গত সাত দিন ধরে এই অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রয়োজনী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী। কর্মকতা-কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ আর হতাশ। কাউন্সিলরা আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই গ্র“পে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কাজ কর্মে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। অনেক প্রকল্পের মুখ আবার থুবড়ে পড়েছে। নেই কোন উন্নয়ন কাজ।
পৌরসভা সূত্র জানায়, গত ৭দিন ধরে পৌর সচিব আব্দুল মতিন ছুটি না নিয়ে বাড়ি চলে যান। এর আগে ক্যাশিয়ার আল মামুন সচিবের কাছে ছুটি নিয়ে চল্লি¬শ দিনের তাবলীগে গেছেন। এখন পৌরসভা দেখভালের জন্য কেউ নেয়। ফলে পৌর প্রশাসনের সকল কাজ কর্মে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে রফিকুল ইসলাম জানান, বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র (অফিস আদেশ অনুয়ায়ী) রফিকুল ইসলাম রফিক দাবি করে বলেন, আমেরিকা যাওয়ার আগে নির্বাচিত মেয়র শামিম আল রাজী এক অফিস আদেশের মাধ্যমে তাকেই প্যানেল মেয়র হিসেবে অফিস পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করেছেন যার প্রমাণপত্র তাঁর কাছেসহ অন্যান্যদের কাছেও রয়েছে। ০২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আদনান মাহমুদ ক্ষমতার জোরে নিজেকে অবৈধভাবে প্যানেল মেয়র হিসেবে পরিচয় দিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন কাজ করছেন যা আইন সঙ্গত নয়। অফিস আদেশ অনুয়ায়ী কাগজে কলমে আমি প্যানেল মেয়র হিসাবে মেয়র আমাকে নির্বাচিত করেছেন। বর্তমানে পৌরসভার জন্ম সনদ, পরিচয় পত্র ও ব্যবসায়ী লাইসেন্স প্রদান সহ বিভিন্ন কাগজ পত্রে প্যানেল মেয়র হিসেবে স্বাক্ষর প্রদান ও অফিস দেখাশোনার কাজ করছি। তবে তিনি পৌরসভা অচলের কথা স্বীকার করে বলেন, সচিব ছুটি নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। মেয়র দেশে ফিরলেই সব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আ.লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর (প্যানেল মেয়র হিসাবে দাবি) আদনান মাহমুদ বলেন, গত ২৫ সেপ্টম্বর সকল কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে আমাকে প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করা হয়েছে।। যদি মেয়র কাউকে প্যানেল মেয়রের দায়িত্ব দেয়, তাহলে চুরি করে দেয়া হয়েছে। এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে আমার প্যানেল মেয়রের কাগজ জমা দেওয়ার আগে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আনিসুল ইসলাম সিংড়া পৌরসভার সচিব আব্দুল মতিনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে নির্বাচিত মেয়র বিদেশ যাওয়ার আগে কাউকে প্যানেল মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেছেন কিনা। উত্তরে তিনি না বলায় উপসচিব মহোদয় তাঁর কাগজপত্র জমা নেন।
পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ নাগরিকরা মনে করেন, নির্বাচিত মেয়রের অনুপস্থিতিতে প্যানেল মেয়র নিয়ে যে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা সকল পৌরবাসীর জন্যই উদ্বিগ্নের কারণ। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নির্বাচিত মেয়র শামিম আল রাজি দেশের বাহিরে থাকায় এবিষয়ে জানা সম্ভব হয়নি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন