Year-19 # Issue-15 # 27 May 2012

জিয়া হত্যাকাণ্ড: যেসব প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি
রাহাত মিনহাজ

১৯৮১ সালের ৩০ মে বিপথগামী কিছু সেনা কর্মকর্তার হাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। শুধু তাই নয়, হত্যাকারীরা তার মৃতদেহ গোপনে দাফন করে চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ মাইল দূরের এক নির্জন জায়গায়। দেশের ইতিহাসের আলোচিত এ ঘটনার রেশ ধরে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। যা জন্ম দেয় নানা বিতর্কের। তৈরি হয় অনেক প্রশ্ন। যেগুলোর সঠিক উত্তর আজো জানা সম্ভব হয়নি। হয়তো জানা হবে না কোন দিনই। জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ড নিয়ে এমনই কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে এ নিবন্ধে।   
মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়াউর রহমানকে হত্যার খবর ভোর সাড়ে চারটার দিকে পেয়েছিলেন মেজর জেনারেল মঞ্জুর। তিনি তখন চট্টগ্রামের জিওসি। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও চট্টগ্রামের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে মঞ্জুর পুরো ঘটনার দায়ভার নিজের কাঁধে নেন। তবে এ কথা প্রতিষ্ঠিত যে, তিনি এ বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন। প্রেসিডেন্টকে হত্যার পর মঞ্জুর সারাদেশে মার্শাল ল’ জারিসহ চার দফা দাবি পেশ করেন। ঢাকার সঙ্গে চলে দরকষাকষি। তবে সেনা প্রধান এরশাদ কঠোর অবস্থান নিলে মঞ্জুর পিছু হটতে বাধ্য হন। ১ জুন মঞ্জুর তার স্ত্রী ও দুই সনত্মানকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে যান। তার দলে বিদ্রোহী কয়েক জন অফিসার ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। এক পর্যায়ে মঞ্জুর ফটিকছড়ির পাইন্দং গ্রামের এক চা বাগানে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে হাটহাজারী থানার ইনসপেক্টর মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস তাকে গ্রেফতার করেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মঞ্জুরকে থানায় আনা হয়। এরপর থানা থেকে এক সেনা কর্মকর্তা  (সম্ভবত ক্যাপ্টেন এমদাদ) মঞ্জুরকে সেনানিবাসে নিয়ে যান। যদিও মঞ্জুর চেয়েছিলেন পুলিশের হেফাজতে থাকতে। তিনি হয়তো তার বিপদ আঁচ করতে পেরেছিলেন। এরপর ২ জুন রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে মঞ্জুরের মৃত্যুর খবর প্রচার করা হয়। বলা হয়, চট্টগ্রাম সেনানিবাসে একদল ক্ষুব্ধ সেনা সদস্যের হাতে মঞ্জুর নিহত হয়েছেন। তবে সামরিক বিশেস্নষকরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের এই তথ্য ছিলো জঘণ্য অপপ্রচার। মেজর জেনারেল ( অব.) আমীন আহম্মদ চৌধুরী বীরবিক্রম জানান, মঞ্জুরকে খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এ রকম তথ্যই পাওয়া গিয়েছিলো। এছাড়া ঢাকা থেকে একজন অফিসার চট্টগ্রামে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মঞ্জুরকে হত্যা করেছিলো, এটা সবারই জানা। ওই অফিসার কার নির্দেশে কি উদ্দেশ্যে এই কাজ করেছিলেন, সে রহস্য উন্মোচিত হয়নি। তবে জিয়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদনত্ম কমিশনেরর প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এ বিষয়ে বিসত্মারিত জানা যেত। কিন্তু আমাদের সে সুযোগ হয়নি। জাতি আজো জানতে পারেনি কে ছিলো এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা। এছাড়া মঞ্জুরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যেতো বলে মনে করেন আমীন আহম্মদ চৌধুরী।
মঞ্জুরের লাশ দাফন
মঞ্জুরের মৃতদেহ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টেই ছিলো। কেউ লাশ দাবি না করায় সম্ভবত দুই-তিন পর মঞ্জুরের মৃতদেহ একটি অজ্ঞাত কবরে দাফন করা হয়। সেই সময়ের সাপ্তাহিক উত্তেহাদ পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, সে সময় বেগম মঞ্জুর ঢাকায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি খালেদা জিয়াকে এটা বুঝাতে সক্ষম হন যে, জিয়াকে মঞ্জুর হত্যা করেনি। সে সময় খালেদা জিয়া মঞ্জুরের মরদেহ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাফনের জন্য সেনাবাহিনীর কাছে আবেদন করেন। পরে কবর থেকে মৃতদেহ তুলে আবার তার মৃতদেহ দাফন করা হয়। তবে এসব তথ্য শুধু সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হলেছিলো। মঞ্জুরের লাশ দাফন নিয়ে সরকারি কোন ভাষ্য পাওয়া যায়নি।
মঞ্জুর কি আসলেই হঠকারি ছিলেন?
মেজর জেনারেল মঞ্জুর জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। যদিও শেষ দিকে তাদের এ বন্ধুত্বে বন্ধন ততটা মজবুত ছিলো না। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে মঞ্জুর ভারতে ছিলেন। জিয়া সেনা প্রধান হিসেবে সর্বময় ড়্গমতা গ্রহণের পরই মঞ্জুরকে দেশে ফিরে আনেন। তখন জিয়া ও মঞ্জুর এক সঙ্গে অনেক কাজ করেছেন।
তবে রাজনৈতিক দর্শন আর স্বাধীনতা বিরোধীদের কাছে টানা নিয়ে জিয়ার সঙ্গে মঞ্জুরের দূরত্ব বাড়তে থাকে। জিয়া রাজনীতি করতে গিয়ে শাহ আজিজসহ অনেক বিতর্কিত নেতা-কর্মীদের কাছে টেনেছিলেন। যা মঞ্জুর সহজে মেনে নিতে পারেনি। এছাড়া সেনাবাহিনীতে পাকিসস্তান ফেরত অফিসারদের প্রধান্য নিয়ে মঞ্জুর নাখোশ ছিলেন। একই সঙ্গে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সেনাপ্রধান করা নিয়েও মঞ্জুরের ক্ষোভ ছিলো।
অনেকেই বলেন- মঞ্জুর সেনা প্রধান হতে চেয়েছিলেন।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, মঞ্জুর সেনা প্রধান হওয়ার যোগ্যও ছিলেন। তবে জিয়া তাকে সেনা প্রধান করতে পারেননি। কারণ মেজর জেনারেল মীর শওকত আলী তার সিনিয়র ছিলেন। জিয়া চেয়েছিলেন আগে শওকতকে সেনা প্রধান করে পরে মঞ্জুরকে সেই পদে বসাবেন। তবে শওকত ও মঞ্জুরের দ্বন্দ্ব আর বিরূপ মনোভাবের কারণেই জিয়া এরশাদকে সেনাপ্রধান করতে বাধ্য হয়েছিলেন। যা তার জন্য কাল হয়েছিলে বলেই অনেকে মনে করেন। এছাড়া শওকতকে জিয়া ঢাকায় রেখে মঞ্জুরকে চট্টগ্রামে বদলি করলে সেটা তিনি তখন ভালোভাবে নেননি। তিক্ততা আর চাওয়া- না পাওয়ার হিসেব যাই হোক না মঞ্জুর কি আসলেই জিয়াকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন? এ নিয়েও বিতর্ক আছে। কারণ, মঞ্জুরের মতো প্রতিভাবান অফিসার নিশ্চয় জানতেন, চট্টগ্রাম থেকে সেনা অভ্যূত্থান করা সহজ নয়। এছাড়া প্রেসিডেন্টকে হত্যা করলে তার পরিণতি কি হবে নিশ্চয় সেটাও তার জানা ছিলো। তাহলে কেন, মঞ্জুর এ কাজ করতে গেলেন? তিনি কি সুস্থ চিনত্মা থেকে এটা করেছিলেন, নাকি কারও ইন্ধন বা সবুজ সংকেত পেয়েছিলেন? বলা হয়, পাকিসস্তান ফেরত সেনা কর্মকর্তা হিসেবে মঞ্জুর এরশাদকে সহ্য করতে পারেন না। তবে ৩০ মের আগে হঠাৎ করেই মঞ্জুরের সঙ্গে এরশাদের একটা সাক্ষাৎ হওয়ার কথা শুনতে পাওয়া যায়। কি উদ্দেশ্য ছিলো সেই সাক্ষাৎ বা যোগাযোগের? সেই রহস্য কি আর কোনভাবেই উন্মোচিত হবে?
বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন
জিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকেই বলেন- হত্যাকাণ্ডের বিচার নয়, করা হয়েছে বিদ্রোহের বিচার। আর এ বিচারে বেশ কিছু নিরাপরাধ ব্যাক্তিকে সাজা দেওয়ার অভিযোগ আছে। আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কেন এই বিচার প্রক্রিয়ায় মঞ্জুরকে অন্তর্ভুক্ত করা হলো না? মঞ্জুরকে কোন প্রেক্ষাপটে দ্রুত হত্যা করা হলো? মঞ্জুর বেঁচে থাকলে কি থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতো? যাই হোক, কোর্ট মার্শালের সেই বিচারের আগেই জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি রম্নহুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক বিচার বিভাগীয় তদনত্ম কমিশন গঠন করা হয়। যার অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি এটিএম আফজাল ও খুলনা জেলা জজ সৈয়দ সিরাজ উদ্দীন আহমদ। এ কমিটি অনেক নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে সেপ্টেম্বর মাসে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তদন্ত প্রতিবেদনের কিছু কপি বিভিন্ন সংবাদপত্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে কোন এক অদৃশ্য চাপে এক ঘণ্টার মধ্যে সেই নির্দেশ বাতিল করা হয়। কোন কপি আর সংবাদপত্র অফিসে যায়নি। আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন। তবে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত না হলেও হত্যাকাণ্ডের অল্প সময়ের মধ্যে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ হয়। যা তখনকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো। তবে বলা বাহুল্য, এই শ্বেতপত্রের তথ্য ছিলো একমুখী। যেখানে বিদ্রোহীদের পরিকল্পনা ও বিভিন্ন অভিযানের কথা বলা হলেও এর পেছনের পরিকল্পনা ও বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের ব্যাখা ছিলো না। ছিলো না মঞ্জুরের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য।
লে. কর্নেল মতিউর রহমানের ভূমিকা
জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আলোচিত চরিত্র লে. কর্নেল মতিউর রহমান। মতিউর রহমানই জিয়াউর রহমানকে গুলি করেছিলেন (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ: এ লিগাসি অব ব্লাড, এ্যাস্থনি মাসকারেনহাস)। বলা হয়, ৩০ মে এর আগে কোন এক সময় মতি সেনাপ্রধান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। আর এ দেখা করার মধ্যেই অনেকে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান।
তবে মেজর জেনারেল ( অব.) আমীন আহম্মদ চৌধুরী বীরবিক্রম জানান, সে সময়ে এ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা থাকলেও বিষয়টি স্বাভাবাকিও হতে পারে। কারণ আমি (আমীন আহম্মদ চৌধুরী) যত দূর জানি, মতির কোন একটা কোর্সের ট্রেনিং নিতে সে সময় দেশের বাইরে যাওয়া কথা ছিলো। সে সূত্র ধরে সেনা প্রধান তার সঙ্গে কথা বলতেই পারেন। তবে সবচেয়ে ভালো হতো মতির কোন বক্তব্য পাওয়া গেলে। কিন্তু মতি ১ জুন নিহত হয়। মতি মঞ্জুর সঙ্গে পালিয়ে সীমানেত্মর দিকে যাচ্ছিলেন। পথে সম্ভবত ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের এক দলের সঙ্গে গুলিবিনিময়ে মতি নিহত হন ( তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ: এ লিগাসি অব ব্লাড, এ্যান্থনি মাসকারেনহাস)।
যারা নিহত হয়েছিলেন
১. রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান
২. লে.কর্নেল আহসান (রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা কর্মকর্তা)
৪. ক্যাপ্টেন আশরাফুল হাফিজ
৫. সিপাহী শাহ আলম
৬. সিপাহী আবুল কাশেম
৭. সিপাহী আব্দুর রব

জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা

  1. ব্রিগেডিয়ার মোহসিন উদ্দিন
  2. কর্নেল নওয়াজেশ উদ্দিন
  3. কর্নেল আব্দুর রশিদ
  4. কর্নেল ফজলে হোসেন
  5. লে.কর্নেল মাহফুজুর রহমান (জিয়াউর রহমানের একান্ত সচিব)
  6. লে. কর্নেল দেলোয়ার হোসেন
  7. মেজর গিয়াস উদ্দীন আহমেদ
  8. মেজর ইয়াজদানী ভূঁইয়া
  9. মেজর মুজিবুর রহমান








১০.ক্যাপ্টেন আব্দুস সাত্তার
১১.মেজর মুমিনুল হক
১২.ক্যাপ্টেন জামিল হক
১৩. লেফটেনেন্ট রফিকুল হাসান
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ: এ লিগাসি অব ব্লাড

অন্যাদের ভাগ্যে যা ঘটেছিলো
মেজর জেনারেল এম. এ. মঞ্জুর পলানোর সময় ধরা পড়েন। পরে সেনানিবাসে রহস্যজনকভাবে গুলিতে নিহত
লে. কর্নেল মতিউর রহমান (জিয়াউর রহমানকে গুলিবর্ষণকারী) পহেলা জুন মঞ্জুর সঙ্গে পালানোর সময় মানিকছড়িতে ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের গুলিতে নিহত
লে. কর্নেল মাহবুব পহেলা জুন মঞ্জুর সাথে পালানোর সময় মানিকছড়িতে ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের গুলিতে নিহত
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ: এ লিগাসি অব ব্লাড

ভয়ানক বিপজ্জনক পুলিশ!
মানিক মুনতাসির

গল্পটা অনেক দিনের পুরনো। আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। দিন তারিখ ঠিক মনে নেই। তবে এমন খরতাপের দিনই হবে। ঠাকুরগাঁও শহরের চৌরাস্তা এলাকায় আমার এক বন্ধুসহ বাইসাইকেলে করে যাচ্ছি। চৌরাস্তার মোড়ে দেখলাম একটি বড় বাস থেমে আছে। মানুষের জটলা। কাছে গিয়ে দেখি কেউ কেউ কান্নাকাটি করছেন। একজন মানুষ চোখে পড়লো। তার ডান হাতটি ঝুলছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি খুলে পড়লো। বাম হাতে ধরে আছে লোকটি নিজেই। সে অবস্থায় তিনি রিক্সায় উঠে হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বাসটির পেছনে একটি ট্রাক। এইবার বুঝলাম ট্রাকটি যাত্রীবাহী বাসটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে। আমরা দুইজন ঘটনাস্থল ত্যাগ করার আগে ট্রাকের পেছন সাইডে গেলাম। ট্রাকের পেছনে একটা লেখা চোখে পড়ল “১০০ গজ দূরে থাকুন” আর বাসের পেছনে দেখলাম লেখা আছে “নিরাপদ দূরত্বে থাকুন” লেখাটা ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছিল না। কেননা ট্রাকের ধাক্কায় বাসের পেছনটা দুমড়ে মুচড়ে পড়েছে। সেদিন ঐ লোকটি বেঁচেছিল কি-না জানি না তবে সে দুর্ঘটনায় তিনজন মানুষ মারা গিয়েছিল ঘটনাস্থলেই। কিন্তু ট্রাকটি নিরাপদেই ছিল।পরদিন পত্রিকা পড়ে জানতে পারি ট্রাকের চালকও নিরাপদে পালিয়ে বাঁচে। পুলিশ বা জনতা কেউই তাকে ধরতে পারেনি। ধরলেই বা-কি হয়তো পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে জামিন পেয়ে যেত। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যেসব ট্রাক চোখে পড়ে প্রত্যেকটির পেছনে লেখা থাকে “১০০ গজ দূরে থাকুন” অথবা লেখা থাকে “নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন”। অর্থাৎ মানুষকে বোঝানো হয় যে, কাছে গেলে বিপদ হওয়ার আশংকা রয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে দুটি গাড়ি পরস্পর থেকে যেন প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রাখে সেজন্য এটা লেখা হতেই পারে। সিএনজি অটোরিক্সার গায়ে লেখা থাকে “আমি ছোট আমাকে মারবেন না” বা “পেছনে ইঞ্জিন ধাক্কা দেবেন না”। এরপরও অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। অসংখ্য মানুষ পঙ্গু হচ্ছে। অসহায় দিন যাপন করছেন দুর্ঘটনা কবলিত মানুষ। ঘাতক চালকেরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে অনায়াসেই---আইনের দুর্বলতা ও অপর্যাপ্ততার সুযোগ নিয়ে। পাবেই তো! স্বয়ং নৌমন্ত্রী যেখানে চালকের মুক্তির জন্য তদবির করেন তখন কী আর করা। তদবির তো করবেন-ই তিনি তো আর জনগণের মন্ত্রী নন, তিনি হলেন পরিবহণ শ্রমিকদের মন্ত্রী। তিনি হয়তো ঠিক কাজটেই করছেন!
বিদ্যুতের খাম্বায় যেখানে ট্রান্সফরমার থাকে সেখানে একটি কঙ্কালের ছবির সঙ্গে লেখা থাকে “বিপদজনক”। অর্থাৎ এটা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার আবহান জানানো হয়েছে। এরপরও মানুষ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। এ ব্যাপারে অবশ্য কারো কোনো অভিযোগ থাকে না। কেননা এখানে বিদ্যুৎ মানুষের কাছে যায় না। মানুষই বিদ্যুতের কাছে যায়। সড়ক দুঘটনায় নিহত সাংবাদিক বিভাস, দীনেশ দাস, শহীদুজ্জামান আর পা হারানো নিখিল ভদ্র এরা সবাই নিরাপদ দূরত্বে ছিলেন। কিন্তু ঘাতক বাস এসে তাদের পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন,আহত হয়েছেন দুর্ঘটনাকবলিতরা। চালকরা কিন্তু নিরাপদে পালিয়েছে ঠিক-ই। তাদের বাসের গায়েও লেখা ছিল “নিরাপদ দূরত্বে থাকুন”। অথচ বাসগুলোই চালকের সহায়তায় তাদের ধাক্কা দিয়েছে। এখানে কিন্তু দুর্ঘটনাকবলিতরা কোনো বাসকে ধাক্কা দেন নি। তাহলে নিরাপদ দূরত্বে থাকার ফল কি দাঁড়িয়েছে সেটা সবারই জানা। দায়ী চালকদের কারোরই কিছু হয়নি। জেলহাজতও তাদের আটকাতে পারেনি। নিখিল ভদ্র বাকি জীবন পঙ্গুতের অভিশাপ নিয়ে কাটিয়ে দেবেন। আর সেই ঘাতক চালক বুক ফুলিয়ে রাজপথে গাড়ি চালাবেন এটা যেন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীনেশ দাসের অবুঝ মেয়েটি একদিন জানবে তার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। একদিন হয়তো সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে এর কোনো প্রতিবাদ করা যাবে না। এটাকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে গণ্য করতে হবে।  সাংবাদিক সাগর-রুনি দুনিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল নিজেদের বেডরুমে ঘুমিয়েছিলেন। সেখানেও তাদের হত্যা করা হয়েছে। অবশ্য তাদের ভবনে হয়তো লেখা ছিল না “নিরাপদ দূরত্বে থাকুন”। থাকেলই বা-কি ঘাতকের চোখ তো আর তা দেখে না। ভয় ও পায় না। ঘাতকরা তো পালিয়েছেই। সঙ্গে অবুঝ শিশু মেঘের ভাগ্যটাকেও সাগরে ভাসিয়ে গেছে। তবে এই ঘাতকরা হয়তো ঘাতক চালকের চেয়ে একটু ভালো। কেননা তারা অবুঝ শিশুটির গায়ে একটি আঁচড়ও কাটেনি। এই নিরাপদ বেডরুমে বর্বরোচিত হ্যতাকান্ডের ব্যাখ্যা মেঘ জানতে চাইলে কেউ কি তা দিতে পারবে ? কারও কি সময় আছে এসব নিয়ে ভাবার! সর্বশেষ গত রোববার আগারগাঁও এলাকায় একটি দৈনিক পত্রিকার তিন সাংবাদিক নিরাপদ দূরত্বে থেকেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। অথচ পুলিশ তাদের নির্বিচারে পিটিয়েছে। লাথি মেরেছে। বন্দুকের বাট দিয়ে মেরেছে। রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে। সেদিন কিন্তু সাংবাদিকরা পুলিশের সঙ্গে ঝগড়া বাধায় নি। সেদিন কেন, কোনোদিনই সাংবাদিকরা এমন কাজ করেনি। করবেও না। তবুও কেন এমন ঘটনা ঘটে এটার কি জবাব আছে কারো কাছে ? আদালত চত্বরে পুলিশ কর্তৃক যুবতীর শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করায় সাংবাদিকদের পেটানো হয়েছে। এতে কি আদালতকে অপমান করা হয়নি? এদিকে রাতে মহাখালীতে বিডিনিউজের অফিসে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ছুরি মেরে পিটিয়ে তিন সাংবাদিককে গুরুতরভাবে জখম করে। সেদিনও কিন্তু সাংবাদিকরা নিরাপদ আশ্রয় নিজ কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেখানেও তাদের পেটানো-কোপানো হলো। বিচার কি হবে কে জানে!  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পুলিশ আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। হ্যাঁ ভালোই তো। সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে পুলিশ এখন অনেক তৎপর। পুলিশ জনগণের বন্ধু না হয়ে সরকার ও সরকারি দলের বন্ধু হয়ে গেছে। এটা হয়তো প্রশাসন দলীয়করণের ফল। যেখানে মেধাবী নয়, দলীয় পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। এজন্য জনগণের কল্যাণে নয় পুলিশ এখন কাজ করছে রাজনৈতিক সরকারের কল্যাণে।আর সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব সৃষ্টি করতে সহায়তা করছে সরকার। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেছেন, সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিকদের নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে। তিনি এক ধরনের আহবানই জানিয়েছেন। এবার কে কি জবাব দেবেন জানি না। তবে এ কথা বলা যায় যে, পুলিশ হয়তো দিন দিন হিংস্র, ভয়ানক আর বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। আগে রাস্তায় যে কোনো ধরনের বিপদ হলে মানুষ পুলিশের শরণাপন্ন হতেন। পুলিশও সহায়তা দিতো। এখন হয়তো মানুষ সেটা চায় না। বরং পুলিশ থেকে দূরে থাকতে চায় হেঁটে গেলে, বাইকে গেলে, প্রাইভেট গাড়িতে বা রিক্সায় গেলেও মানুষ কামনা করে যেন পুলিশ না আটকায় । অর্থাৎ মানুষ এখন মনে মনে ধরেই রাখে পুলিশ ধরলেই হয়রনি। অযথা ঝামেলা-দুর্ভোগ। পুলিশ অবশ্য এর প্রমাণও দিয়েছেণ বহুবার। শুধু সাধারণ মানষই নয়, এবার পুলিশ থেকে দূরে থাকতে হবে সাংবাদিকদেরও। অবশ্য পুলিশ তার প্রয়োজনের সময় বলে থাকে  ‘’সাংবাদিক-পুলিশ ভাই ভাই’’ কেননা পুলিশ ও সাংবাদিক একই সঙ্গে রাজপথে দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু গত ক’দিনে পুলিশ ভাইদের যে চেহারা চেহারা দেখা গেছে তাতে তাদের কাছে যাওয়াই তো বিপজ্জনক!
কচিকাঁচা মন্ত্রীদের কোচিং হয়নি!
ফজলুল বারী

একের পর এক সাংবাদিক খুন, নির্যাতন! ঢাকার রাজপথে তিন ফটো সাংবাদিককে পিটিয়ে মাটিতে শুইয়ে দেবার প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলার সময়েই আবার কোর্টপাড়ায় সাংবাদিক-আইনজীবীদের পিটিয়েছে পুলিশ! সব মিলিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে সরকারের এক রকম মুখোমুখি অবস্থা! আওয়ামী ফোরামের সাংবাদিক যারা আছেন দেশে তারাও আছেন চরম বেকায়দায়! মনের মধ্যে আওয়ামী লীগ, কিন্তু মুখ ফুটে প্রকাশ্যে বলার অবস্থা নেই! বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকররা এতটাই তেতে আছেন যে, তেমন প্রকাশ্যে বলতে গেলেই যেন মার খাবেন! একটা কথা বিভিন্ন সময়ে লিখেছি যে, মিডিয়ার এত সাপোর্ট নিয়ে এর আগে কোনো সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেনি! এখনও এ সরকারের পিছনে যে মিডিয়ার সাপোর্ট আছে তা ১৯৭৪-৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের পিছনেও ছিলো না। এরপরও সরকারের সঙ্গে মিডিয়ার সম্পর্ক আজ এমন কেন? কী বলবেন মন্ত্রী? এসব বিরোধীদলের চক্রান্ত? সরকারের এই পড়ন্ত বেলায় দেশের মানুষ আর তা শুনবে কেন? সাংবাদিক নির্যাতনকারী পুলিশের এসব সদস্য কী বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট?  এসব বলেও এখন আর পার পাওয়া যাবে না। তাহলে গত সাড়ে তিন বছর তারা করেছেনটা কী? ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যাপক বিজয়ের পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে একদল শিক্ষানবীশ কচিকাঁচাকে (!) নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশিষ্ট সাংবাদিক এবিএম মুসা ভাই তখন লিখেছিলেন, শিক্ষানবীশ দিয়ে দল চালানো যেতে পারে, সরকার চালানো যায় না। দেশের বাস্তবতা প্রমাণ করে প্রবীণ সাংবাদিক মুসা ভাই’র সে ভবিষ্যতদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি এক লেখায় দেশবরেণ্য শিক্ষক ড. জাফর ইকবাল লিখেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেওয়ায় বিএনপি দেশ শাসনের অধিকার হারিয়েছে। কিন্তু শেয়ারবাজার, ড. ইউনুস, আবুল হোসেন, শাহজাহান খান, ছাত্রলীগসহ কি কি কারণে আওয়ামী লীগ তার ভোটব্যাংক আর বিদেশি বন্ধুদের সমর্থন হারিয়েছে, তাও সাদাসিধা লিখেছেন জাফর ইকবাল স্যার। কিন্তু কে শোনে কার কথা? কেউ যদি মনে করে সে কম জানে, তখনইতো আরেকজনের কথা শোনে বা শোনার চেষ্টা করে! কিন্তু কেউ যদি মনে করে সে সব জানে অথবা সবচেয়ে ভালো জানে, তাকে তো কিছু জানানোর চেষ্টা করাও বোকামি। কিন্তু এভাবে বেশি জানতে জানতে তো পদ্মা সেতুর এ অবস্থা! এ সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি দৌড়ানোর কথা বলে গত নির্বাচনে আওয়ামী দেশের মানুষের ভোট নিয়েছে। কিন্তু এ আমলে সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন নিয়েই সরকারের গলদগর্ম অবস্থা! ঢাকার মাথার ওপর দিয়ে কি কারণে মনোরেল চলতে পারলো না, কি অসুবিধার কারণে শেয়ারবাজার লুটেরাদের ধরা-বিচার করা হলোনা, কি কারণে আবুল হোসেন-সুরঞ্জিত সেনগুপ্তদের মন্ত্রিসভার ছায়া দিয়ে রাখা হলো, এসবের জবাব তো আগামী নির্বাচনে ভোট চাইতে গেলে পাবলিককে দিতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি! প্রশ্নের মুখে রাগ করে অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে চলে এসেছেন! অনেকটা ‘কুকুর হইতে সাবধান’ ঢং’এ সাংবাদিকদের পুলিশ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু ! কচিকাঁচা মন্ত্রীদের মুখে এসব কী কথাবার্তা? এর আগে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান দেশের মানুষকে কম খেতে বলেছিলেন! এর সবই কিন্তু আগামী নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের নির্বাচনী প্রচারণার হাতিয়ার হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকতে চাইলে সাহারা খাতুনকে সাফ সাফ জবাব দিতেই হবে। সাগর-রুনি’র খুনিদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ধরার প্রতিশ্রুতি কেন তিনি রাখেননি, কেন তার পুলিশ বিনা উস্কানিতে সাংবাদিক পেটাচ্ছে--- এ জবাব তাকে দিতেই হবে। রাগ করে অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে গেলে পার পাওয়া যাবে না। রাগ থাকলে মন্ত্রিসভা থেকে চলে গেলেই বরং দেশ বাঁচবে। এ ধরনের ব্যর্থ মন্ত্রী পোষার সামর্থ্য গরিব বাংলাদেশের নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খুব শিগগির অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণে আসছেন। ভ্রমণ বললাম এ কারণে যে পাসপোর্টের যে ছোটখাটো বিষয় উদ্বোধনের জন্য তিনি আসছেন, তার জন্য মন্ত্রীর আসা লাগে না। ঢাকা থেকেই অনলাইনে তা করা যায়। ডিজিটাল সরকারের মন্ত্রীর তা-ই করা উচিত। এখন দেশের একশ সমস্যা বাদ দিয়ে সরকারি টাকা খরচ করে অস্ট্রেলিয়া দেখার তার যদি এতই সখ জাগে, আখেরে কিন্তু এসবের লেনাদেনা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই!
অতঃপর পুলিশকে খুবই খারাপ কিছু হিসাবে স্বীকৃতি দিলেন দেশের ডেপুটি পুলিশ মন্ত্রী! এরপর তিনি নিজে পুলিশের ওখানে থাকেন কি করে? বা পুলিশইবা কি করে তাকে সালাম দেবে? এরপর সাংবাদিকরাই বা তাদের নিরাপত্তার জন্য কার কাছে যাবেন? এমন ভূমিধস-বিজয়ের এত বিপুল প্রত্যাশার একটি সরকারের এমন করুণ অবস্থা হবে তা কি কেউ ভাবতে পেরেছে? কচিকাঁচাদের মন্ত্রিসভা গঠনের পর অনেকে বলেছিলেন, এদের কোচিং দেয়া হবে। কোচিং যে ঠিকমতো হয়নি, তাতো এর মাঝে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। মার্কিন স্টাইলে উপদেষ্টাদের নিয়ে সরকার পরিচালনার পরীক্ষা-নিরীক্ষাটিও চরম ব্যর্থ হয়েছে। আগামী নির্বাচনে এসব নিয়ে কিন্তু  সাহারা-টুকু-কামরুলদের কেউ ধরবে না, জিজ্ঞেস করবে না। ধরবে-জিজ্ঞেস করবে শেখ হাসিনাকে। কিন্তু শেখ হাসিনা এসব নিয়ে যে ভাবিত, দেশের মানুষের কাছে এমন কোনো বার্তা নেই। বার্তা একটাই আছে তাহলো, সম্ভাব্য এসব পরিস্থিতির আশংকাতেই তিনি তত্ত্বাবধয়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইছেন না। আর আমার ধারণা বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ছাড়াও নির্বাচনে যাবে। নির্বাচন মিস করবে না। 
প্রেসক্লাবেই সাংবাদিক নির্মূলের উস্কানিমূলক ব্যানার!
ফজলুল বারী

পুলিশের হাতে একের পর এক সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় দেশের গোটা সাংবাদিক সমাজ যখন প্রতিবাদে সোচ্চার, তখন খোদ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগানো হয়েছে সাংবাদিক নির্মূলের উস্কানিমূলক ব্যানার!
যেখানে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এসব ঘটনাকে আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের তলব করেছেন, খোদ পুলিশ হেডকোয়ার্টারে বৈঠক করে সাংবাদিক-মিডিয়ার সঙ্গে সংঘাতে না যেতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ঠিক তখনই এ ধরনের উস্কানিমূলক ব্যানার কারা লাগাচ্ছে, তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব কিন্তু পুলিশের, সরকারের। কিন্তু তারা তা পালন করছে কী? এ ধরনের আত্মঘাতী উস্কানি মিডিয়া-পুলিশ তথা সরকারের সম্পর্ককে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা কী সংশ্লিষ্টরা একবারও ভেবে দেখেছেন? বারাক ওবামা, জুলিয়া গিলার্ড থেকে শুরু করে সারা দুনিয়াতে রাজনৈতিক নেতৃ্ত্ব ও সরকার মিডিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলে। প্রায় প্রতিদিনই মিডিয়া ব্রিফিং হয় হোয়াইট হাউসে। মিডিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ককে কেন্দ্র করে যে কোন সরকারের কাজও অনেক সহজ হয়ে যায়। আর বাংলাদেশে যেন উল্টো, আজব এক পরিস্থিতি! মিডিয়া সাপোর্ট যেন এ সরকারের আর দরকার নেই! ‘আমাদের বিটিভি-বিটিভি ওয়ার্ল্ড-বিএসএস আছে, এগুলোই এনাফ! আর কোনো মিডিয়া সাপোর্ট দরকার নেই!, এমন যদি মনে করা হয়, তাহলে সেটাওতো ঘোষণা দিয়ে বলা যায়। আমরা এসব নিয়ে কান্নাকাটি বা কারও হাতেপায়ে ধরার চেষ্টা করতে যাবো না। ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সারাদিন-রাত নানা সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনে ভরা থাকে! তাদের সাপোর্ট ছাড়া অথবা অগোচরে এমন ব্যানার লেগেছে, তা-ও কী বিশ্বাস করতে বলা হবে? ঢাকার রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার অদ্ভুত একটি পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু! এসব আস্কারা পুলিশ কোথা থেকে পায় তা কী তলিয়ে দেখার চেষ্টা হয়েছে? মণিপুর স্কুলে যখন এমপি কামাল আহমেদ মজুমদারের নেতৃ্ত্বে একজন নারী সাংবাদিকের গায়ে হাত তোলা হয়, সে ঘটনার কী কোনো আইনানুগ প্রতিকার করা হয়েছিল? সর্বশেষ আগারগাঁও’র মহিলা পলিটেকনিকের সামনে বিনা উস্কানিতে তিনজন ফটো সাংবাদিককে গরু-ছাগলের মতো পিটিয়ে মাটিতে শুইয়ে দেওয়া হলো, কোর্ট পুলিশের হাতে এক তরুণীর শ্লীলতাহানির চেষ্টার ঘটনার খোঁজ নিতে গিয়ে মার খেলেন আইনজীবীদের সঙ্গে তিনজন কোর্ট রিপোর্টার, তখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বললেন, এসব পরিস্থিতিতে পুলিশ থেকে দূরে থাকতে? সারা জীবন দেখলাম-জানলাম ঘটনার সময় পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনির কাছাকাছি থেকে সাংবাদিক-ফটো সাংবাদিকরা তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করেন। বিদেশে সাংবাদিকরা এর জন্যে এসব পরিস্থিতিতে ‘প্রেস’ লেখা সবুজ অথবা কমলা রঙের সেফটি ভেস্টও ব্যবহার করেন। আর আমাদের ডেপুটি পুলিশ মন্ত্রী বলছেন, পুলিশ থেকে দূরে থাকতে! এ নিয়ে দেশের সাংবাদিক সমাজ ভীতসন্ত্রস্ত প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন উল্টো মিডিয়াকে দোষ দিয়ে বলেছেন, প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে মিডিয়া ‘টুইস্ট’ করেছে তথা ‘বিকৃত’ করে ছেপেছে ও প্রচার করেছে! জীবনে এই প্রথম এমপি কাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে গেছেন আমাদের এই সাহারা বু’! দীর্ঘদিন তিনি রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন, আগামীতেও হয়তো সেখানে ফিরে যাবেন। কিন্তু এসব পরিস্থিতিতে একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কীভাবে কথা বলেন অথবা তাকে কীভাবে কথা বলতে হয়, তা কী তিনি কখনো তার পূর্বসূরী আওয়ামী লীগ সম্পাদক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছেও তালিম নিতে পারতেন না? মিডিয়ার সঙ্গে কী চমৎকার সম্পর্ক ছিল মোহাম্মদ নাসিমের বা এখনও আছে, তা দেখেশুনে চললে তার নিজের আর সরকারের ভালো হতো না? উল্টো তিনি যে একবারের ফুল মন্ত্রিত্ব পেয়েই কখনো ব্যারিস্টার রফিকের মতো দেশের অন্যতম শীর্ষ আইনজীবী, কখনো মিডিয়াকে তালিম দিয়ে চলেছেন, এসবের পরিণতি তাকে আর সরকারকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা কী ভেবে দেখার চেষ্টা করেছেন কখনো? এর আগে একবার বিগত তত্ত্বাবধায়ক আমলে শেখ হাসিনার কারাবাসের সময়কার প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হককে কিছুদিন আগে আইন দেখে কথা বলতে বলেছিলেন সাহারা খাতুন! আর ব্যারিস্টার রফিক রসিক জবাবে বলেছিলেন, সাহারা খাতুন সারাজীবন আইন দেখাদেখি নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলেন যে, নিজে বিয়ে করারও সময় পাননি। দেশের আইন আদালতে ব্যারিস্টার রফিক আর অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের অবস্থান সবাই জানেন। সাহারা খাতুনেরও তাই আর সে বক্তব্যের জবাব দেবার পথ ছিলনা। এখন বক্তব্য পক্ষে না গেলে রাজনীতিকদের অভ্যাস, ‘আমি এভাবে বলিনি বা মিডিয়া বিকৃত করেছে’, এভাবে নসিহত করলে কিন্তু ভবিষ্যতে সাংবাদিক নেতাদের তার চায়ের দাওয়াত রক্ষা করতে যাওয়াও আর সম্ভব হবে না! এমনিতে সাগর-রুনি ইস্যুতে একবার মন্ত্রীর বাসার চা খেয়ে আন্দোলনে ঢিলা দিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন সাংবাদিক নেতারা! সাগর-রুনি খুনের রহস্য উদঘাটনে তার ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমার ২৮ হাজার ঘণ্টার বেশি পেরিয়ে গেলেও কোনো কিছুরই কূলকিনারা করতে পারেন নি! এসব নিয়ে তার বিন্দুমাত্র লজ্জাও হয় না? স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য বুধবার সংসদে এনেছিলেন স্বতন্ত্র সদস্য ফয়জুল আজিম। ‘স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে রসিকতা করে কথাটি বলেছেন’ আর স্বতন্ত্র সদস্যের পয়েন্ট অর্ডার বিধিসম্মত হয়নি বলে তাকে থামিয়েছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম! ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অবঃ) শওকত আলীও তার মাইক বন্ধ করে দিয়েছেন! আমাদের নেতারা  প্রায় সময় সংসদকে সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু করতে বলেন, আর ইস্যুটি নিজেদের পছন্দের না হলে তেমন আলোচনা থামিয়েও  দেন! শেখ ফজলুল করিম সেলিম এক সময় দৈনিক বাংলার বাণী, সাপ্তাহিক সিনেমা নামের দুটি পত্রিকা চালাতেন। মিডিয়ার সাবেক একজন মানুষ হিসাবে কতিপয় উচ্ছৃংখল পুলিশের আচরণকে কেন্দ্র করে সরকার আর মিডিয়ার সম্পর্ক যে মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, তা তিনি কী বিধিসম্মত কোন নোটিশের মাধ্যমে সংসদে  নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে পারতেন না? না এসব বিষয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলে প্রলয় বন্ধ হবে বা থাকবে? নাকি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাংবাদিকদের শ্যালক-দুলাভাই’র রসিকতার সম্পর্ক? প্রেসক্লাবের সামনে লাগানো ব্যানারে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও যে সব অভিযোগ করা হয়েছে, সে সব নিয়ে আমি নিজেও বিভিন্ন সময়ে লিখেছি, আগামীতেও লিখবো। কিন্তু এখন পুলিশের পোশাকে থাকা কতিপয় দুর্বৃত্তকে শায়েস্তা করার কাজটা এড়িয়ে উল্টো সাংবাদিক নির্মূলের আওয়াজ তোলার মানে কী? মিডিয়া-পুলিশ-সরকারের মুখোমুখি এ অবস্থার অবসানের উদ্যোগতো সরকারেরই নেওয়ার কথা। এখনও কী সে চেষ্টা কোথাও কেউ দেখেছে? পার্লামেন্টে সুযোগ পেয়ে সে উদ্যোগটিও নিলেন না শেখ সেলিম! তার ছেলে শেখ ফাহিম দায়িত্ব পেয়েছেন সাহারা মাতৃভূমি গ্রুপের বাংলাদেশের পরিচালকের । শুধু সরকারের জন্যে নয়, শেখ সেলিমের ছেলের এই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনেও কিন্তু দেশের মিডিয়ার সাপোর্ট লাগবে, এ বিষয়টিও যেন তিনি বা তারা ভুলে না যান।
রাজনীতিতে এখন নো প্রশ্ন অ্যালাউড!!!
মাসুদা ভাট্টি

 একটি টক-শো‘তে অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছিল দিন দুয়েক আগে। বিষয় তত্ত্বাবধায়ক বনাম নির্দলীয় সরকার। বিএনপি চেয়ারপার্সনের এক উপদেষ্টা বলছিলেন তাদের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে। আমি বলতে গেলে বেশ বিপদেই পড়েছিলাম কারণ যে পক্ষ নিয়েই বলি না কেন, উল্টো পক্ষ বলবেন, আমি পক্ষপাতদুষ্ট। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ স্বাভাবিকভাবেই তাদের দলীয় চেতনার বাইরের যে কাউকেই মনে করেন বিরোধী পক্ষ। স্বাভাবিকভাবেই, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টাও তাই-ই আমাকে ঠাওরালেন। কিন্তু আমার কথা ছিল স্পষ্ট; তাহলো, তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় যে ব্যবস্থাই হোক না কেন, আমাদের সদিচ্ছা বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা না হলে কোনোটিরই কোনো মূল্য নেই। এর কারণ একটু বিস্তারিত বলা প্রয়োজন। কালকের আলোচনায় উপদেষ্টা মহোদয় বেশ খানিকটা জোরেশোরেই ইতিহাস থেকে দূরে সরে গেলেন এবং অবলীলায় বললেন যে, তার নেতা খালেদা জিয়া অনায়াসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিয়েছিলেন। এবং এই প্রক্রিয়া নাকি শুরু হয়েছিল ৮৭ সালে। যাহোক, সত্য তো তা নয়। খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম আমলে মাগুরা উপনির্বাচনে যখন ভয়াবহ কারচুপি হলো তখন বিরোধী দল দাবি তুলেছিল দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। এবং সে কারণেই ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং বিএনপি এককভাবে বিজয় লাভ করে সরকারও গঠন করে। মজার ব্যাপার হলো, গণদাবির মুখে সেই সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সাংবিধানকি স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। একটি একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার যাদেরকে কেউই মানেনি, আবার তাদেরই বৈধতা দেয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলটি মেনে নিয়ে নির্বাচনে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে। রাজনীতিতে এরকম ঘটনা কিন্তু আকছার ঘটছে এবং ঘটবে বলেও মনে হচ্ছে। যাহোক, ইতিহাস বিকৃতির কবলে আমরা কেবল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়েই পড়িনি, আরো বহু ভাবে ইতিহাস বিকৃতির শিকার আমরা। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিগত ইতিহাস কি খুব একটা সুখকর? ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বঙ্গভবন থেকে বেরুতে না বেরুতেই জানা গেলো, নানা কারসাজি শুরু হয়েছে। স্বভাবতঃই শেখ হাসিনা ও তার দলের পক্ষে সেসব কারসাজি মেনে নেয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও তারা নির্বাচনে গিয়েছেন, কারণ আওয়ামী লীগের ইতিহাস নির্বাচনমুখি। এমনিতেই যে কোনো সরকারই পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর জনপ্রিয়তা হারায় এবং বাংলাদেশের মতো “অভ’ক্ত আর অতৃপ্তির” দেশে মানুষ বিকল্প রাজনৈতিক দলকেই ভোট দেয়। সে হিসেবে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ হয়তো এমনিতেই পরাজিত হতো। বিচারপতি লতিফুর রহমানের অতো কারসাজি করার প্রয়োজন পড়তো না। কিন্তু তিনি কারসাজি করলেন এবং নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করলেন ভোটারদের প্রভাবিত করার কাজে। এবং নির্বাচনী ফলাফল আওয়ামী লীগ মেনে নেয়নি, সংসদে যাবো কি যাবো না করে কাটিয়েছে কিছুদিন, তারপর সংসদে গিয়েছে, যায়নি এবং রাজপথ উত্তপ্ত রেখেছে পাঁচটি বছর ধরে। বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত শাসনকাল বাংলাদেশে কেমন ছিল- এই প্রশ্নের উত্তর দিতে অন্তরাত্মা কাঁপে। তিন তিনবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কাল এটি, বাংলা ভাইয়ের উত্থানের কাল এটি, দেশব্যাপী একযোগে কয়েকশ বোমা বিস্ফোরণ ঘটার কাল এটি, আহসান উল্ল্যা মাস্টার, শাহ্ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার কাল এটি, ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার কাল এটি, ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচারের কাল এটি- এরকম অসংখ্য অপ ঘটনার  উদাহরণ দেয়া যাবে। কিন্তু তখনও সংসদে না গিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলের চেঁচানোর কালও এটি। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে যখন বিচারপতি কে এম হাসানের বয়স বাড়ানো/কমানো সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে তখনকার বিরোধী দল মাঠে নেমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছিল তখন তারাও কিন্তু আজকের মতো জনগণেরই দোহাই দিয়েছিল। আমার আশ্চর্য লাগে রাজনৈতিক দলগুলো বার বারই জনগণের কথা বলে দাবি আদায় করে থাকে কিন্তু জনগণ আদৌ সেই দাবির প্রতি সহমত কি না তা আমরা কেউই যাচাই করার প্রয়োজন বোধ করি না। এ এক দারুণ ‘মাইনক্যা চিপা’!!! সন্দেহ নেই। আমরা দেখলাম বিচারপতি কে এম হাসান বাদ গেলেন, বিতর্ক শুরু হলো বিচারপতি আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা নিয়ে। বিরোধী দলের দাবির সত্যতা দেখতে পেলাম পরবর্তী সময়ে বিচারপতি আজিজের নানা অপকান্ডে। তখন দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তাতে যে কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকই দেশে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা করেছিলেন, এও সত্য। দেশ ও জাতির এরকম সংকট মুহূর্তেই বিদেশি দাতা-বন্ধু (?) এবং সেনাবাহিনীর তৎপরতায় ইয়াজ উদ্দিন সাহেবকে দিয়ে প্রায় জোর করেই নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আনা হলো। প্রধান হলেন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি ফখরুদ্দীন। আমরা স্মরণ করতে পারি, বিশ্বখ্যাত ইকনোমিস্ট পত্রিকায় বাংলাদেশকে “দুই বেগমের যুদ্ধ” থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব সেনাবাহিনী, বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউএনডিপি’র মিলিত ফর্মুলার সরকারকেই দিয়েছিল নির্দ্বিধায়, যেমন তারা আজকে দিচ্ছে ভারতকে। প্রশ্ন হলো, এই বিদেশি পত্রিকাটি কেন বার বার বাংলাদেশের দায়িত্ব ‘“বারো জন’কে দিতে আগ্রহী? গরীবের বউ সুন্দরী হলে তার দায়িত্ব কোনো ধনীকে নিতে হবে এই থিওরি পশ্চিম এখনও লালন করে এবং পশ্চিমা মিডিয়া যে তার প্রচারক হিসেবে দায়িত্ব নেয়, ইকনোমিস্ট আসলে তা-ই প্রমাণ করছে বার বার। শেখ হাসিনা ও তার দল নিজেদের বিজয়ী মনে করলেন ফখরুদ্দীন-মঈনউদ্দীনের সরকারের আমলে। কিন্তু জেলেও গেলেন। খালেদা জিয়া সপুত্র ও স-সতীর্থ (একই রাজনৈতিক ঘরানার ব্যক্তিদের নিয়ে) কারান্তরালে গেলেন। ধুয়া উঠলো ‘মাইনাস টু থিওরি’র। বাংলাদেশের মানুষ এরকম অন্তরীণ পরিস্থিতিতে খুব একটা খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে নির্বাচন দিতে বাধ্য হলো উদ্দীনদের সরকার। ভোটার তালিকা হলো, কয়েক কোটি ভ’য়া আজিজীয়-ভোটার বাদ পড়লো এবং নির্বাচন হলো। সবাই সুষ্ঠুতার সার্টিফিকেট দিলো। আবারও বলি, বিএনপি-জামায়াত জোট দেশের যে হাল করেছিল তাতে তাদের নির্বাচনে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী ছিল। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মেই তারা নির্বাচনকে মানেনি, বলেছে উদ্দীন-সরকার আওয়ামী লীগকে জিতিয়ে দিয়েছে। আমার প্রশ্ন ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে এতো তিক্ততার, এতো কাহিনীর পরও যে আরেকটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে পরাজিত পক্ষ সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে মেনে নেবে তারই বা কী নিশ্চয়তা আছে? টক শো অনুষ্ঠানে আমার কথা ছিল, বিশ্বের যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই যখন নির্বাচন হয় তখন বাংলাদেশে কেন হাঁস-জারু’র মতো “তত্ত্বাবধায়ক-গণতন্ত্র” থাকবে? হয়তো পুরোপুরি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে নয়তো  অন্য যে কোনো পন্থা। আওয়ামী লীগ কেমন নির্বাচন করবে তা আমরা জানি না। বর্তমান সরকারের অধীনে এরই মধ্যে যে সমস্ত নির্বাচন হয়েছে তাতে বিএনপি-জামায়াত জোট প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে, এমন নজির ঢের  আছে। এখন জাতীয় নির্বাচনে তার প্রতিফলন না দেখলে জনগণ আওয়ামী লীগকে ছাড় দেবে সে আশা দুরাশা মাত্র। সেজন্য তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া একটি স্বাভাবিক নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়াটা খুবই জরুরি এদেশে। সেকথা বলতে গিয়েই আমি সভ্য, আধুনিক, গণতান্ত্রিক দেশের উদাহরণ টেনেছি। যা ভালো লাগেনি উপদেষ্টা মহোদয়ের। ‘আমরা এগোইনি, আমরা সভ্য হইনি- তাই আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রয়োজন’’--- হাস্যকর যুক্তি; কিন্তু কী আর করা, প্রশ্ন তুললেই বিরোধী পক্ষ এবং রোষের শিকার হতে হবে। হয়তো কাল সরকার পক্ষের কেউ ওখানে থাকলেও যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে কথা বলতাম, তাহলে ‘বিরোধী দলের দালাল’ আখ্যা পেতাম। যেমনটি কাল উপদেষ্টা সাহেব আমাকে বলে ফেললেন, আমি নাকি বাকশালী!!কে জানে, তারা ক্ষমতায় গেলে হয়তো সোজা কারাগার!!! বাংলাদেশের রাজনীতিও ক্রমশঃ ধর্মের মতো হয়ে যাচ্ছে। যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না, যা নিয়ে বিতর্ক করা যাবে না, ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করলে মুরতাদ আর মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আর রাজনীতিবিদদের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সেরকমটাই। এ কোন্ দেশে এসে পড়লাম???
জাতি কাঁদে সাহারায় 
অজয় দাশগুপ্ত

স্বাধীনতার পর থেকে এ যাবত দেশের কোন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই নির্বিঘ্নে সুখে শান্তিতে সময পার করতে পারেননি। প্রয়াত মনসুর আলী থেকে সাহারা খাতুন পর্যন্ত বিস্তৃত এই তালিকায় এমন কিছু ফানি নাম ও ঘটনা আছে যা পৃথিবীর সভ্য দেশে বা ভদ্র সমাজে আগে কখনো দেখা যায় নি। একেকজনের একেক রেকর্ড। কারো আমলে পুলিশের বেপরোয়া ভাব, কারো নির্দেশে লাঠি চালানোর ভেলকিবাজী, কারো সময় প্রতিপক্ষকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটানোর ইতিহাসে আমাদের এই মন্ত্রণালয়টি সব সময় খবরের তুঙ্গে। মানতেই হবে গরীব দেশে  অপরাধপ্রবণ সমাজে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজটিই সবচেয়ে দুরূহ। ঢাকার জনসংখ্যা, দরিদ্রতা, ভাসমান-আশ্রয়হীন মানুষ, ফুটপাতে-বস্তিতে থাকা মানুষ; আর অপরাধ করার যাবতীয় সুলভতা পরিস্থিতি আরো খারাপও করে তুলতে পারতো। খুন, জখম, রাহাজানি, ধর্ষণের মধ্যে পাওয়া না পাওয়ার হিসেবে পিছিয়ে পরা মানুষ তথা দরিদ্র শ্রেণীর প্রতিশোধস্পৃহায় লোমহর্ষক নগরীও হয়ে উঠতে পারতো ঢাকা। যেমন দেখছি ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা বা পৃথিবীর নানা দেশের ছোট বড় শহরগুলোয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এই দেশের গরীব মানুষরাই শান্তি বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রাসাদ বা আকাশছোঁয়া শপিংমল অথবা ফ্ল্যাটবাড়ির তলায় স্যাঁতস্যাঁতে বস্তিতে বাস করেও সুখি তারা। জীবনে আনন্দ সুখ সচ্ছলতা এমনকি ন্যায্য প্রাপ্যবঞ্চিত হবার পরও এরাই শান্তিপ্রিয়। পরকাল বা মৃত্যুপরবর্তী জীবনের আশা ও আশ্বাসে এরা শান্ত।
অন্যদিকে অঢেল প্রাচুর্য্ ও কথিত সুখের আগ-পাশ-তলা ভোগ করা মানুষগুলোই শান্তি বিনষ্ট করছে। পেতে পেতে, খেতে খেতে গলা অব্দি ভরে যাওয়ার পরও এরা অশান্ত। বাড়ি-গাড়ি-নারী আর ক্ষমতার লোভে ওরা উন্মাদ। সবচেয় বেশি বেপরোয়া হয়ে আছে ক্ষমতার জায়গাটি। যে যখন ক্ষমতায় তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়টি তখন হয়ে ওঠে দিশেহারা। রাজপথে পুলিশের সাম্প্রতিক অপকর্ম দেখে মনে হয় আওয়ামী লীগের মূল প্রতিপক্ষ জনগণ ও সংবাদকর্মীরা। প্রায় প্রতিদিনই রাজপথ রঞ্জিত হচ্ছে, মানুষের টুঁটি চেপে ধরেছে পুলিশ। শিক্ষক লাশ হয়ে উঠছেন কাঁধে, এত বর্বরতা আর জাতির প্রতি এতো ক্রোধ আগে দেখা যায়নি। কেনো এমন বর্বরতা ও অসভ্য আচরণ? হঠাৎ এই ক্ষেপে ওঠার মূল রহস্যই কোথায়?  অতীতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের চেয়ে আদলে ও লিঙ্গে যেমন, কথায়ও তেমনি আলাদা সাহারা খাতুন। রহস্য ভেদ করার জন্য চব্বিশ ঘণ্টা-আটচল্লিশ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়ার পর বেলুনের মতো চুপসে যান। সকালে যা বলেন বিকেলে বলেন তার ঠিক উল্টো কথা। ‘বেডরুমের দায়িত্ব নেবো না’-- সরকারের শীর্ষ ব্যক্তির এই মন্তব্যের অতি হালকা ভার্সন আমাদের এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যে কোনো অবুঝ বা বেকুবও বোঝে তিনি আসলেই ক্ষমতাহীন, সুতোর টানে নাচেন। মুশকিল হচ্ছে, এমন সুতোর টানে নাচা অনেক মন্ত্রীকেই দেখেছি আমরা। চুলে জেল লাগিয়ে যুবক সাজা তরতাজা বাবর এখন কোথায়? পুলিশ লেলিয়ে বিরোধী দল ও জনগণ দমনে পটু ‘সম্রাট বাবর’ এখন হাজতের অসহায় কয়েদি। প্রতাপশালী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিমের কথাও ভুলে যাইনি আমরা। তাঁর পুলিশই মেরে তক্তা বানিয়ে দিয়েছিলো তাকে। হাড্ডির ভাঙ্গার পরও মন্ত্রীরা অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গান্। পুলিশ কেন বেপোরোয়া বা উগ্র, কেনই বা তার এই অস্থির আচরণ?  যে রাজনীতি তার উদ্গাতা, যে রাজনীতি সাংবাদিক ও জাতির বিবেক বা নিরীহ জনতাকে পিটিয়ে ক্ষমতা পোক্ত করতে ভালোবাসে, সেই বলতে পারে: এই পুলিশ জনবান্ধব। কতটা অকাট হলে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে খবর সংগ্রহের পরামর্শ দিতে পারেন কোনো মন্ত্রী? যে যাই বলুক, সাহারা খাতুন উদ্ভট ও আজগুবি কথায় চ্যাম্পিয়ন। চ্যাম্পিয়ন তিনি ভাঁড়ামি ও দায় অস্বীকারে। এমন ক্লাউন চরিত্র (যা কেবল ছবি বা চলচ্চিত্রে মানায়) জাতির জন্য ভয়ংকর ও হাস্যকরও বটে। দুর্ভাগ্য বাঙালির পুলিশমন্ত্রীর আচরণ ও কথাবার্তাও অবোধ্য।
আমি কি সাংবাদিকতা ছেড়ে দেব?
জাকিয়া আহমেদ

গত ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনি মারা যাবার পর বেশ ক’টা রাত আমার যেমন লেগেছিল গত রাতে ঠিক সেই রকম অনুভূতি হচ্ছিল। একই সঙ্গে শীত লাগছিল, গরম লাগছিল, অস্থির লাগছিল, ইচ্ছে করছিল ভেঙ্গে ফেলি সবকিছু, ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে কাঁদি, ইচ্ছে করছিল যতো গালি জানি জোরে জোরে সেগুলো বলে রাগটা কিছুটা হলেও কমাই। কিন্তু কাঁদতে পারি নি, গালি দিতেও পারি নি, কিছুই করতে পারি নি আমি। শুধু সারাটা রাত একটুও ঘুমাতে পারি নি। জানি না, কতো রাত আমার আবার এমন র্নিঘুম কাটবে। সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড, প্রথম আলোর তিন ফটো সাংবাদিককে পেটানো, বিডি নিউজে হামলা করে সাংবাদিক সহ অফিস কর্মীদের কোপানো, আবার মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত সংলগ্ন এলাকায় পুলিশ ক্লাবের ভেতর বিচারপ্রার্থী এক নারীর শ্লীলতাহানি, এ ভয়ংকর ঘটনার প্রতিবাদ কর‍ায় তিন সাংবাদিক ও দুই আইনজীবীকে পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটা--- এসবকিছু কেড়ে নিয়েছে ঘুম। আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশি নির্যাতনে আহত তিন সাংবাদিক হলেন, কালের কন্ঠের আদালত প্রতিবেদক এম এ জলিল উজ্জ্বল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের আদালত প্রতিবেদক তুহিন হাওলাদার ও প্রথম আলোর আদালত প্রতিবেদক প্রশান্ত কর্মকার। কোতোয়ালী থানার ওসি সালাহউদ্দীন খান ও এসি রাজিব আল মাসুদের নির্দেশেই পুলিশ তাদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে বলে জানিয়েছেন নির্যাতিতরা। কী হচ্ছে, কী হচ্ছেটা কী দেশে? আমরা কোন দেশে বসবাস করছি? সাংবাদিকদের বলা হয় সমাজের তৃতীয় চোখ। চোখের ওপর এভাবে হামলা হলে দেশ তো অন্ধ হয়ে যাবে! একটি অন্ধকার দেশে কী কোন সভ্য সমাজ বাস করতে পারে? সাগর-রুনি নিহত হবার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ ঘণ্টা এখনো শেষ হয় নি, বিডি নিউজে হামলার পর তিনি এবার সর্তকতা অবলম্বন করেছেন, বলেছেন শিগগিরই গ্রেপ্তার হবে। আল্লাহ মালুম..তার ‘শিগগিরই’ কতো দিনে হয়!!!!
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেডরুম পাহারা দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এবার বেডরুম নয়, যতো গুলো ঘটনার কথা উপরে বলা হয়েছে প্রতিটি ঘটেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাজপথে, আর দেশের প্রথম সারির বার্তা সংস্থার বিডিনিউজের ঘটনাটি ঘটেছে এর মুল অফিসে। তাহলে কী আপনি দয়া করে বলবেন, আপনি যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, যে সংবিধানে ছুঁয়ে শপথ নেবার সময় আপনি বলেছিলেণ, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের জান মালের নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব আপনার, কোথায় সেই দায়িত্ব পালন হচ্ছে, দয়া করে বলবেন কী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! নিরাপত্তারক্ষাকারী বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা এসি শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের নিজে পিটিয়েছেন একই সঙ্গে তার অধিনে পরিচালিত পেটোয়া বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন এই বলে যে, পেটা, সাংবাদিক পেটালে কিচ্ছু হয় না, সেই দেশের নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের কী নিরাপত্তা দেবে? রক্ষক যখন ভক্ষকের ভ‍ূমিকায় অবতীর্ণ হয় সেই দেশে মধ্যযুগ অবতীর্ণ হতে কী খুব বেশি সময়ের দরকার হয়? এদিকে আমাদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এক অমর বাণী নিয়ে আর্বিভুত হয়েছেন আমাদের ত্রাণকর্তা রূপে। সাংবাদিকতার দিক্ষা দিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। সাংবাদিকদের ব্যাপারে তার নতুন ফর্মুলা হলো, পুলিশের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে। এ বিষয়ে মিল্টন আনোয়ার নামের একজন সাংবাদিক ফেসবুকে বলেছেন, ‘আগের দিনে বাড়িতে লেখা থাকতো কুকুর হইতে সাবধান...স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কি পুলিশকে এরকম কিছুর সঙ্গে তুলনা করলেন?’ অপরদিকে দেশজুড়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিৎ কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেছেন। তবে তার আগে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তিনি কেবল যে অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, সে অনুষ্ঠান সম্পর্কিত প্রশ্নেরই উত্তর দেবেন, অন্য কোনো প্রশ্নের নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ঘোষণার কারণ হলো, তিনি জানতেন, তার কাছে সাংবাদিকরা সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইবেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সে ঘোষণায় কর্ণপাত না করে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। আমার ভীষণ ভয় করছে। কী করবো এখন? একজন সাংবাদিকতার নতুন সিলেবাস দেবেন, আরেকজন কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চলে যাবেন। তাহলে আমরা যাবো কোথায়? কার কাছে যাবো? নাকি সাংবাদিকতা ছেড়ে দেব?
হুমকির মুখে গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম
সুদীপ্ত সালাম

২৬ মে একদল পুলিশ তিন ফটোসাংবাদিককে পিটিয়েছে। মারের ধরণ দেখে মনে হয়েছে, ওই পুলিশ সদস্যদের কাছে পকেটমার ও সাংবাদিকের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এই ইস্যুটি নিয়েই লিখতে বসেছিলাম। এমন সময় খবর এলো, অনলাইন বার্তা সংস্থা বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম অফিসে ঢুকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কসাইযের মতো সাংবাদিকদের কুপিয়েছে। কয়েকজন সাংবাদিকের অবস্থা গুরুতর। স্ত্রী বলেই ফেললোÑ সাংবাদিকতা ছেড়ে দাও। আমি উত্তর দিতে পারিনি। আসলেই তো আমরা নিরাপদ নই। কেউ নিরাপদ নই। আমি এখন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত। সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যন্ত সবাই যেন সাংবাদিকদের পেয়ে বসেছে। সাংবাদিকদের প্রাণের যেন দু’পয়সাও মূল্য নেই।
এই শোচনীয় পরিস্থিতি কি একদিনে তৈরি হয়েছে? না। রাষ্ট্রীয় সিংহাসনে যারাই আরোহন করেন তারাই গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ হিসেবে ধরে নেন। আমাদের দেশে এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য। ফলে গণমাধ্যমের ওপর চলে সরকারি রোলার। বর্তমান সরকারের আমলেও বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম ঘটেনি। যৌক্তিক হোক বা না হোকÑ মহাজোট সরকারও গণমাধ্যমকে বারবার পদদলিত করেছে। সরকারি পর্যায় থেকে যখন সাংবাদিকতাকে অপমান করা হয়, পদদলিত করা হয়, দলীয়করণ করা হয় তখন নিচের পর্যায়ের ব্যক্তি ও সংস্থাও সাংবাদিকতাকে ঠুন্কো পেশা হিসেবে ধরে নেয়। এটাই স্বাভাবিক। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি নিজ বাসায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। খুনিদের ধরতে রাষ্ট্র কিছুই করতে পারেনি। এ হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  ‘বেডরুমে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়’। এই মন্তেব্যের পর পুলিশ যদি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তাহলে দোষ দেয়া যাবে? এই সরকার ক্ষমতায় এসেই চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দিলো। চ্যানেলটিতে কর্মরত কর্মীবাহিনীর কথা একবারও ভাবা হলো না। যমুনা টিভিকে আসতে দেয়া হলো না। টেলিভিশনটি শুরু হওয়ার আগেই বেকার হয়ে পড়লো বহু সংবাদকর্মী। দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কারাদণ্ড ভোগ করলেন। পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টাও চললো। কোনো মতে টিকে গেলো পত্রিকাটি। ভাগ্য ভালো হলো না অনলাইন বার্তা সংস্থা শীর্ষনিউজডটকমের। সম্পাদককে নেয়া হলো রিমান্ডে। বন্ধ হয়ে গেলো সংবাদ সংস্থাটি। বেকার সাংবাদিকের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে লাগলো। র‌্যাব সদস্যরা ২০০৯ সালে ডেইলি নিউ এজ-এর সাংবাদিক মাসুমকে বেধড়ক পেটালো এবং ২০১১ সালে বাংলাভিশন চ্যানেল ভবনে ঢুকে একাধিক সংবাদ কর্মীকে আহত করেলো। পুলিশ-র‌্যাব সম্পৃক্ত এমন বহু ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে। আইন-প্রণেতারাও পিছিয়ে নেই। আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী, সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার, সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ সাংবাদিক নির্যাতন ও লাঞ্ছনা করার ক্ষেত্রে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। কোনো ঘটনারই কি সুষ্ঠু তদন্ত হয়েছে? হয়নি, হচ্ছে না। সাংবাদিক নির্যাতিত হলে কিছুই হয় না, এমনকি সাংবাদিক মেরে ফেললেও বিচার হয় নাÑ এই ধরনের বার্তা যখন সমাজে ছড়িয়ে পড়ে তখন সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়তে বাধ্য। এই সরকারের আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সীমিত করার ষড়যন্ত্রও কি কম হয়েছে? সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা সংসদে দাঁড়িয়ে সংবাদপত্রের সাংবাদিক-সম্পাদকদের গালাগাল করেছেন, তথ্য মন্ত্রণালয় একটি বিতর্কিত নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে; বিরোধী দলের জনসভা টিভিতে প্রচার করতে দেয়া হয়নি। এমন অসংখ্য ঘটনার উল্লেখ করা যাবে। এই দমনের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমগুলো যখন সোচ্চার হয়েছেÑ তখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মুখ খুলেছেন---- সংবাদমাধ্যমগুলো নাকি যা ইচ্ছে তাই বলছে। ইতিহাস বলে, সরকার যখন অনুভব করে পায়ের নিচে মাটি নেই, জনসমর্থন ভঙ্গুর তখনই দেউলিয়ার মতো আচরণ করা শুরু করে। মারমুখি আচরণ সে সরকারের প্রধান লক্ষণ। সংবাদমাধ্যম তখন সে দেউলিয়া সরকারের প্রধান শত্রু হিসেবে চি‎হ্নিত হয়। এই পরিস্থিতির সুযোগ সন্ত্রাসীরা নেবে, সরকার সমর্থিত বাহিনীগুলো নেবে এটাই সাধারণ রীতি। বর্তমান অবস্থা বলছেÑ সংবাদমাধ্যম সরকারের টার্গেট।
সেই পুলিশ এই পুলিশ
ইলিয়াস সরকার
 জনগণের সেবক পুলিশ মাঝেমধ্যেই মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে হাজির হচ্ছে জনগণের সামনে। সর্বশেষ গত শনিবার রাজধানীর আগারাঁওয়ে তিন ফটো সাংবাদিক পিটিয়ে আরো একবার জনবিরোধী কর্মকাণ্ডের ন্যক্কারজনক নজির গড়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) শহীদুল ইসলাম। অপরদিকে দায়িত্ব পালনে একনিষ্ঠ থেকে জীবন দেওয়ার অবিস্মরণীয় নজিরও গড়েছেন তারই কোনো কোনো পূর্বসুরি। ১৫ আগস্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষায় জীবন দেন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সিদ্দিকুর রহমান। টঙ্গি-কালিগঞ্জ মহাসড়কে ব্যারিকেড আগলে থাকা কনস্টেবল মো. মামুনুর রশিদ পিষ্ট হন ডাকাতের গাড়ির চাকায়। চট্টগ্রামে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডাকাত ধরে অনন্য নজির গড়েন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. বাবুল আক্তার। তবে আত্মত্যাগের এসব অনন্য উদাহরণের চেয়ে শহিদুলের সহকর্মীরা আইন অপব্যবহারে ধিক্কারজনক কাণ্ডই ঘটাচ্ছেন হরহামেশা। অতীত ঘাঁটলে এমন ঘটনার নজির মিলবে ভুরি ভুরি।
চাপাতি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র কুপিয়ে পুলিশের সুনাম নষ্ট করেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন। বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকসহ এমিপদের পিটিয়ে ন্যক্কারজনক নজির গড়েন এডিসি হারুন অর রশিদ ও এসি বিপ্লব কুমার। খেলার মাঠে সাংবাদিক পেটান ডিসি আলী আকবর, পুলিশ সার্জেন্ট আনোয়ার ও এনামুল হক। চার দলীয় জোট সরকারের আমলে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠেন এসপি কোহিনুর মিয়া। পুলিশের এই মারমুখী আচরণকে ফৌজদারি অপরাধ মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। রাষ্ট্রীয় সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথেচ্ছ আচরণকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে পুলিশকে ব্যবহারের কারণে মানুষ সংবিধানের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা এও মনে করছেন, সাময়িক বরখাস্ত, বদলি, আর কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহারের মতো বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা এসব সমস্যার সমাধান নয় মোটেও। এজন্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হওয়া প্রয়োজন।
বঙ্গবন্ধুকে রক্ষায় জীবন দেন এএসআই সিদ্দিকুর
তখনো ভোরের আলো উঁকি দেয়নি। ইতিহাসের বর্ববরতম হত্যাকাণ্ডের নির্মম পরিসমাপ্তি হলো বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে। সেদিনের সেই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র শেখ রাসেল। নৃশংস আক্রমণে বাদ যাননি রাজনীতির বাইরে থাকা একেবারে অন্তপুরের নারীরাও। ইতিহাসের মহানায়ককে রক্ষা করতে ১৫ আগস্টের সেই কালরাতে এগিয়ে এসেছিলেন মাত্র তিনজন বীরপুরুষ। তাদের মধ্যে একজন হলেন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সিদ্দিকুর রহমান। নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে সে রাতে এএসআই সিদ্দিকুর তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ডাকাতের গাড়িতে পিষ্ট কনস্টেবল মামুন
রাত আনুমানিক আড়াইটা। গোপন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, একদল ডাকাত অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ সময় পুলিশ তাদের ধরতে গেলে উপস্থিতি টের পেয়ে টঙ্গীর দিকে পালানোর চেষ্টা চালান তারা। তাদের আটক করার লক্ষ্যে টঙ্গী-কালিগঞ্জ মহাসড়কে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। কিন্তু ডাকাতরা ব্যারিকেডের ওপর গাড়ি চালিয়ে দিয়ে কনস্টেবল মো. মামুনুর রশিদকে হত্যা করে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডাকাত ধরেন এএসপি বাবুল
২০১১ সালের এক রাতে হাটহাজারীর ধলই গ্রামে অবস্থান নেওয়া ডাকাত দলকে ঘিরে ফেলে পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতরা গুলি ছোঁড়ে। তৎক্ষণাৎ ওই সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. বাবুল আক্তার তার পিস্তল থেকে ছয় রাউন্ড ও তার নির্দেশে অন্য অফিসাররা ৪১ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১১ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। অসম সাহসী এ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে ২০১২ সালের পুলিশ সপ্তাহে বাংলাদেশ পুলিশ পদকে ভূষিত করা হয়।
ছাত্র কোপানো ওসি হেলাল
অপরদিকে ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রকে থানার ভেতরে রামদা দিয়ে কুপিয়ে আহত করেন খিলগাঁও থানার সাবেক ওসি হেলাল উদ্দিন। কিছুদিন পর কাদেরকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে উচ্চ আদালতের নির্দেশে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় হেলাল উদ্দিনকে।
পুলিশের ‘নির্যাতনের শিকার’ কাদের গত ২৩ জানুয়ারি ওসি হেলালের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। ‘মিথ্যা’ অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এরপর ২ এপ্রিল নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরের করা মামলায় খিলগাঁও থানার সাবেক ওসি হেলাল উদ্দিনকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত। জামিন নাকচের আদেশে বিচারক বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে কাদেরের মামলা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। আইন রক্ষকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ গুরুতর। মামলায় অজামিনযোগ্য ধারা রয়েছে। এ পর্যায়ে তাই তার জামিন আবেদন নাকচ করা হল।’
এমপি পেটানো এডিসি হারুণ, এসি বিপ্লব
৬ জুলাই বিরোধী দলের ডাকা হরতাল চলাকালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে সংসদ ভবনের সামনের রাস্তায় বের হওয়া বিএনপির এমপিদের মিছিলে ঝাঁপিয়ে পড়েন এডিসি হারুন অর রশিদ ও এসি বিপ্লব কুমার। শরীরের পোশাক খুলে ফারুককে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন তারা।
এমনকি দৌড়ে সংসদ সদস্য ভবনে (ন্যাম ভবনে) গিয়েও নিস্তার পাননি ফারুক। সেখান থেকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তায় এন ফের তাকে পেটায় হারুন-বিপ্লব বাহিনী। এক পর্যায়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। গালিগালাজ করা হয় অকথ্য ভাষায়।
খেলার মাঠে সাংবাদিক পেটানো পুলিশ
২০০৬ সালের ১৬ এপ্রিল। চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ চলাকালে বিনা উস্কানিতে সাংবাদিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। তৎকালীন ডিসি (পোর্ট) আলী আকবর কিলঘুষি মেরে ষাটোর্ধ ফটো সাংবাদিক জহিরুল হককে আহত করেন। ভেঙে যায় তার ক্যামেরাও। আকবরের নির্দেশে পুলিশ সার্জেন্ট আনোয়ার ও এনামুল হকও সাংবাদিকদের নির্যাতন করেন। সার্জেন্ট আনোয়ারের রাইফেলের বাঁটের আঘাতে মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পান ফটো সাংবাদিক অনুরূপ টিটু। পুলিশের নির্বিচার লাঠিপেটায় আরো আহত হন সাংবাদিক শামসুল হক টেংকু, রুহুল আমীন রানা, সাইদুর রহমান শামীম, অভিজিৎ ও আরিফুর রহমান বাবুসহ ২০ জন।
জোট আমলের এসপি কোহিনুর
২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল পৌরসভার নির্বাচনে তৎকালীন ময়মনসিংহের এসপি কোহিনুর মিয়ার বেপরোয়া গুলিবর্ষণে প্রাণ হারান সুজন ও তাহের নামে দু`ব্যক্তি। এছাড়াও ২০০৬ সালে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ধানমণ্ডি-২৭ নম্বরে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে এসপি কোহিনুর মিয়ার নির্দেশে পুলিশ শান্তা মাসি নামে আওয়ামী লীগের এক নারী কর্মীর ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়।
অসিম সাহসিকতার জন্য এএসআই সিদ্দিকুর, কনস্টেবল মামুনুর ও এএসপি বাবুল পুলিশ পদক পেলেও বিচার হয়নি সেই সব নির্যাতনকারী পুলিশ কর্মকর্তার, যারা সংবিধান ও উচ্চ আদালতের তোয়াক্কা না করে জনগণের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। আর বেশিরভাগ সময়ে তাদের রোষাণলে পড়ছেন সাংবাদিকরা। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিকের ছাত্রীদের বিক্ষোভের ছবি তুলতে গিয়ে পুলিশের নির্মমতার শিকার হন তিন আলোকচিত্র সাংবাদিক। তাঁরা হলেন- খালেদ সরকার, জাহিদুল করিম ও সাজিদ হোসেন। পরে অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে ৯ পুলিশকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত ও এসিকে প্রত্যাহার করা হয়।
 পুলিশের নির্যাতনের বিষয়ে আইন কি বলে
‘সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইনের আশ্রয় লাভ এবং বিশেষত আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।’ ৩২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হইতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।’ এ ব্যাপারে ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুলিশ এ ধরণের অপরাধ করার পর তাদের সাময়িক বরখাস্ত ও বদলি করার মানে হচ্ছে জনগণকে ধোঁকা দেওয়া। আমরা অতীতেও দেখেছি, আবার বর্তমানেও দেখছি- এ ধরণের পুলিশ কর্মকর্তাদের ক’দিন পরে আরো সম্মানজনক স্থানে পদোন্নতি দেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরণের অতি উৎসাহী যারা আইনের অপব্যবহার করছেন তাদের অবশ্যই আদালতের কাঠগড়ায় একদিন না একদিন দাঁড়াতে হবে। এটাই সর্বকালের ও সব দেশের ইতিহাস।’ সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয়টি কি ধরণের অপরাধ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্বপালনকালে সাংবাদিকদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। এটা এক ধরণের ফৌজদারি অপরাধ। এজন্য প্রশাসন চাইলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থা নিলে হবে না। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ আমলে নিতে হবে। আর এর জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়ার দরকার।’ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার কারণে পুলিশের আচরণ এ রকম হয়েছে। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। রাজনীতির উর্ধ্বে রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণত আমাদের দেশে প্রশাসন বিরোধীদের দমনের জন্য পুলিশকে ব্যবহার করে থাকে। এটা একটা উপনিবেশিক আইনের অধীনে চলছে। এ জন্য পুলিশে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে।’
ভাই আমারে বাঁচা....!
মাহবুব মিঠু

“Everybody is a book of blood; wherever we`re opened, we`re red.”
― Clive Barker, Books of Blood.
দিনটা ছিল অন্য দিনগুলোর মতোই। কোনো ব্যতিক্রম ছিল না যদি না ঘটনাটা ঘটত। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসের কোনো এক সকালবেলা। শীত কেবল আসি আসি করছে।শীতকালে এখানে বৃষ্টি হয়। সেদিনও বৃষ্টি পড়ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি। রমিজ কয়েক মাস আগে অভিবাসী হয়েছে। টেলিফোনের মতো জরুরি অনেক কিছুই তার ঘরে নেই। দেশে ফোন করতে রাস্তার পাবলিক টেলিফোনই একমাত্র ভরসা। ফোনটা কেবলই যাচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো শুনতে পাবে প্রিয় মায়ের কন্ঠ।তার আগেই দুর্ঘটনাটা ঘটে গেল। যুবক বয়েসী সাদা চামড়ার এক মদ্যপ যুবক দৌড়ে এসেই কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিল ঘুসি মারতে থাকে। সাথে বর্ণবাদী খিস্তি খেউড়। নতুন দেশে, নতুন পরিবেশে প্রতিরোধের ভাষা তার জানা নেই। দৌড়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। হঠাৎ করেই সে ছিটকে পড়ে যায়। দেহের অর্ধেকটা ফুটপাতে এবং বাকীটা রাস্তার উপরে। অ্যাডিলেইডের অন্যতম একটা ব্যস্ত সড়ক। বিশেষত: কাজের দিনগুলোতে সকালে হাজার হাজার গাড়ি চলে। রমিজ স্পষ্ট টের পাচ্ছে, ঠিক পায়ের পাশ দিয়েই সাঁই সাঁই করে ঝাঁকে ঝাঁকে গাড়ি চলে যাচ্ছে। হাত-পায়ে প্রচন্ড ব্যথা। সে চেষ্টা করে উঠে দাঁড়াতে। কিন্তু পারছে না। হঠাৎ সন্তানের কচি মুখটা ভেসে উঠে। না, দাঁড়াতেই হবে। কিসের একটা শক্তি টের পায় দেহমনে।এখনো সে স্থায়ী বাসিন্দা হয়নি।একটা কিছু হয়ে গেলে সর্বনাশ! হেঁচকা টানে দাঁড়িয়ে যায়। আপনজনহীন বিদেশ বিভুঁই।এই প্রথম টের পেল অসহায়ত্ব।পকেটে হাত দিতেই ওমা! মোবাইলটা নেই।এরই মধ্যে মধ্য বয়স্ক এক মহিলা এগিয়ে আসে সাহায্যের জন্য।বলল, ভয় নেই। আমি সব দেখেছি। রমিজকে সে পাশের দোকানে ধরে নিয়ে বসাল।
‘পুলিশকে ফোন দিয়েছি। চলে আসবে।‘
ক্ষীণকন্ঠে রমিজ বলে, ‘মোবাইলটা পাচ্ছি না’।
‘দুর্বৃত্তটা নিয়ে গেছে।আমি দেখেছি’।
কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ চলে আসে। সেই মহিলা, পুলিশকে সব খুলে বলে। নিজে থেকেই স্বাক্ষী হয়।অভয় দেয় রমিজকে।বলে, তোমাকে কোর্টে যেতে হবে না।পয়সাও লাগবে না। তুমি ভিকটিম।সরকার সব ব্যবস্থা করবে।পুলিশ কিছুক্ষণের মধ্যেই আসামি ধরে রমিজের সামনে নিয়ে আসে।ওকে বলা হলো মাথা নীচু করে থাকতে।যাতে ভিকটিমকে চিনে ভবিষ্যতে প্রতিশোধ নিতে না পারে। এরপরে সেই মহিলা রমিজকে তার গাড়িতে করে কাছের একটা ক্লিনিকে নিয়ে যায়।কর্মস্থলে ফোন করে ঘটনা জানাল।কারণ ক’দিন বোধহয় কাজে যাওয়া হবে না।অফিসের বড় কর্তা বাসায় এলো অভয় দিতে। রমিজ আমাকে জানায়, ঘটনার ঠিক আগের রাতে ফোনে তার ভাইকে বলছিল, ‘এখানে চলে আয়।অনেক নিরাপদ।এই দ্যাখ এখন রাত ১২টা বাজে।আমি একা রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছি’। ঠিক পরের দিনের ঘটনাই তার সব বিশ্বাসকে এক নিমিষে গুঁড়িয়ে দিল। দিনের পরে তাকে প্রায় দেড় বছর সাইকোলজিস্টের কাছে যেতে হয়েছিল ভয় কাটানোর জন্য। রাষ্ট্রই সব ব্যবস্থা করে।এখানকার সরকার তার যে কোনো নাগরিকের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে তার আওতার মধ্যে সব কিছুই করার চেষ্টা করে। কারণ সরকার মানে মালিক নয়, জনগণের সেবক।সেই সাইকোলজিস্ট একদিন কথা প্রসংগে জানতে চায় রমিজের দেশের অবস্থা কি রকম। রমিজ জবাব দেয়, সোজাসাপ্টা বললে এখানকার চেয়ে অনেক খারাপ। কিন্তু……..
সুন্দর একটা উদাহরণ দিয়েছিল রমিজ। যে নদীতে সব সময় কুমীর থাকে, সেখানে মানুষ সাবধানী হয়।কিন্তু যেখানে কুমীর মাঝে মাঝে আসে, সেখানে মানুষের অসাবধানতার সুযোগে ঘটে যেতে পারে বিপর্যয়।তাছাড়া, একজন ব্যক্তি একটা স্বপ্নের খোঁ কিংবা প্রতিকূলতা এড়াতে নিজভূমের সব কিছু, এমনকি প্র্রিয়জনদের ফেলে তোমাদের মতো দেশে আজীবনের জন্য চলে আসে।একটু জীবনের নিরপত্তা, কিছুটা নিশ্চয়তা পাবার জন্য। সেখানেও যদি একই ঘটনা ঘটে, তবে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা বড় ভয়ংকর। আরেকটা মারাত্মক মনস্তাত্ত্বিক বিষয় জড়িয়ে আছে। রমিজের দেশে মানুষ সন্ত্রাসের শিকার হয় সাধারণত: ভিন্ন কারণে।বর্ণের ভিত্তিতে আত্মপরিচয়ের জন্য নয়। কিন্তু এখানে ‘ব্ল্যাক ডগ’ বা এই ধরনের হীন শব্দের দ্বারা আঘাত একজন মানুষকে নতজানু করে ফেলে। অন্তর্গত মর্যাদাবোধকে ধূলায় মিশিয়ে দেয়।
অনেকেই বলে,অস্ট্রেলিয়াতে ইউরোপের চেয়ে রেসিজমটা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।কারণ ইউরোপের সাদারা সেখানকার নেটিভ। কিন্তু এখানে সাদারাও অন্য এশিয়ানদের মতোই বহিরাগত। মূলত: ইংল্যান্ড থেকে আসা। তাছাড়া, নিউজিল্যান্ড বাদে আশেপাশে হলিডেতে ঘুরতে যাওয়া মানেই হলো, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিংগাপুর কিংবা ফিজি।ইউরোপে ঘুরতে যাবার ভাগ্য সবার হয় না। কেউ কেউ বলে, কিছুটা অনুশোচনাও হয়তো কাজ করে।ব্রিটীশ সেটেলাররা যখন প্রথম আসে, তারপর থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে ওদের হাতে অনেক আদিবাসী মারা পড়ে, নিগৃহীত হয় তার চেয়েও বেশি।সেই অনুশোচনা থেকেই হয়তো সহনশীলতা বেড়েছে।
সংজ্ঞামতে, রেসিজম হলো, এক ধরনের বিশ্বাস যা কিনা যুক্তি ছাড়া এক প্রকার ধারণা সৃষ্টি করে যে, নির্দিষ্ট কোনো নরগোষ্ঠী অন্য আরেকটি নরগোষ্ঠীর তুলনায় মর্যাদায় বা অন্য কোনো উপায়ে উঁচু বা নীচু। সংক্ষেপে এটা এক ধরনের মনোভাব যা কিনা বৈষম্যপূর্ণ ব্যবহার সৃষ্টি করে এক নরগোষ্ঠীর সংগে অন্য নরগোষ্ঠীর।
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এখানকার ৮৭% মানুষ মনে করে অস্ট্রেলিয়াতে রেসিজম আছে।৪২% মনে করে এখানে যারা ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত তারা বেশি সুযোগ ভোগ করে থাকে। ২৬% অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীবিরোধী মনোভাব পোষন করে। ৪২% মনে করে, বিভিন্ন এথনিক লোকদের আগমনের ফলে অস্ট্রেলিয়া দুর্বল হয়ে পড়ছে। ১১% মনে করে না যে পৃথিবীর সকল মানুষ আসলেই সমান মর্যাদার। তবে আশার কথা হলো, ৮৬% অস্ট্রেলিয়ান মনে করে যে, রেসিজম বন্ধে কিছু একটা করা দরকার। রেসিজম প্রত্যয়টি প্রত্যাহার করে আমরা যদি এর ফলাফল বা প্রভাব অর্থাৎ বৈষম্যের কথা ভাবি তাহলে সেটার অস্তিত্ব নেই এমন কোনো দেশ খুজেঁ পাওয়া যাবে না।এমনকি গৃহের মধ্যেও বৈষম্য।আমাদের দেশটা নরগোষ্ঠীর উৎপত্তিগত দিক দিয়ে মোটামুটি একই গোত্রের বিধায় রেসিয়াল বৈষম্যটা তেমন দৃষ্টিগোচর হয় না।কিন্তু তার বদলে অন্যান্য কারণে বিভাজনটা পুরোমাত্রায় বিদ্যমান। রেসিজমের দিক থেকে দেখলেও পাহাড়িদের সংগে আমাদের দৃষ্টিভংগীটা মেলালে বোঝা যাবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মনোভাব কি প্রকার। তাছাড়া, ধনীর সংগে গরীবের বৈষম্য, শুধু অর্থনৈতিকভাবেই নয়, ব্যবহারগত দিক দিয়েও, কিংবা খেটে খাওয়া লোকদের সংগে আমাদের ব্যবহার মিলিয়ে দেখলেই টের পাওয়া যায় মনস্তাত্ত্বিক গঠনে আমাদের ভিতরগত উৎকট বৈষম্যপূর্ণ চেহারাটা। যদিও সংজ্ঞাগত দিক দিয়ে এগুলো রেসিজমের মধ্যে পড়ে না। তবে উভয়ের আউটকাম একই।অর্থাৎ শ্রেষ্ঠতা প্রমাণের চেষ্টা। অন্যকে পরিচয়ের (ধর্ম, অর্থনীতি, সামাজিক শিক্ষাগত অবস্থান এবং অন্যান্য) সূত্রে খাটো করে দেখা। কিংবা যে কোনো প্রকারে বৈষম্য সৃষ্টি করা। প্রতিকারের বেলায় আমাদের দেশের সংগে রেসিজমের ব্যাপকতা সম্পন্ন দেশগুলোর পার্থক্য আকাশ জমিন। এখানে কোনোভাবে আইনের আওতায় আনতে পারলে বিচার পাবার সম্ভাবনা থাকে। ব্যক্তি পর্যায়ে রেসিজমকে রাষ্ট্র সাধারণত: প্রশ্রয় দেয় না। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠতা রক্ষা, সেটা আবার ভিন্ন বিষয়। পরে আলোচনা করা যাবে। পক্ষান্তরে, আমাদের দেশে ন্যায়বিচার কয়জনের ভাগ্যে জোটে? শক্তিশালীর কাছে শক্তিহীন কিংবা টাকাওয়ালার কাছে গরীবের পরাজয়ের ঘটনা তো নিত্য নৈমত্তিক। কেউ ভয়ে স্বাক্ষী দিতেও যায় না।মার খেয়েও মামলা করতে চায় না।ভোগান্তি আর টাকার অপচয়ের জন্য। মার খেয়ে মার হজম করাই হচ্ছে দুর্বলের টিকে থাকার একমাত্র কৌশল। ফিরে আসি রমিজ প্রসংগে। রমিজকে যে আঘাত করেছিল সেই অপরাধীর জেল হয়েছিল।রমিজকে একদিনও কোর্টে হাজিরা দিতে হয়নি। পুলিশ বাসায় এসে স্বাক্ষ্য নিয়ে গেছে।উকিলের খরচও টানতে হয়নি।বরং কোর্টের রায়ে অপরাধীর জেলসহ বাংলাদেশি টাকায় বেশ মোটা অংকের জরিমানা গুণতে হয়েছিল।সমস্ত চিকিৎসার খরচ, মোবাইলের দাম, যে কয়দিন কাজে অনুপস্থিত ছিল তার মজুরিসহ মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতিপূরণের জন্য রমিজকে এই টাকাগুলো ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়া হয়। তারও বেশ কিছুদিন পরে রমিজ জানতে পারে, তার ছোট ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।কি কারণে সেটা ভিন্ন বিষয়।বাংলাদেশে কাদেরের মতো ঘটনা সংখ্যায় কম না।সেটার বর্ণনায় গেলে আরেকটা দীর্ঘ লেখা হয়ে যাবে।রিমান্ডের হাত থেকে বাঁচাতে অনেক টাকার দাবী করে বসে।সময় মতো টাকা দিতে না পারায় পরিবারের অন্য সদস্যরাও হয়রানির মুখে পড়েছিল।তাদেরকেও ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। পুরো পরিবার অন্যায় না করেও প্রায় এক মাস পালিয়েছিল।রাষ্ট্রেরই একটা প্রতিষ্ঠান যাদের কিনা জনমনে স্বস্তি নিশ্চিত করা দায়িত্ব, তারাই পুরো পরিবারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
শেষমেষ টাকার অভাবে রিমান্ড ঠেকানো সম্ভব হয়নি।সাত দিন রিমান্ডের প্রতিটা রাত রমিজ ঘুমাতে পারেনি। বালিশে মাথা রাখলেই শুনতে পেত ছোট ভাই যেন চিৎকার করে বলছে, ‘ভাই আমারে বাঁচা’। বাংলাদেশে অপরাধ করে জেল থেকে ছাড়া পেলে কদর বাড়ে। কিন্তু অপরাধ না করে একবার পুলিশের সংগে সাক্ষাৎ হয়ে গেলে সবখানে ছি: ছি: পড়ে যায়।অপরাধীর শক্তি থাকে।তাকে জপে বিপদমুক্ত থাকা যায় কিংবা শত্রুকে তাকে দিয়ে বিপদে ফেলানো যায়।যার অপরাধ প্রমাণ হয়নি, তাকে কিসের ধার ধারা! বরং এই সুযোগে তাকে নীচে নামিয়ে নিজেকে উপরে ভাবা গেল। অদ্ভুত এক মানসিকতা! অন্যকে ছোট করে পার্থিব কোন লাভ না থাকলেও অসুরের সুখ! তাতেই শান্তি! ঠিক একই কারণে রমিজের ছোট ভাইর চাকরি চলে যায়।কারণ দোষ না করলেও সে ‘পুলিশ-ফেরত’। এখনো সে বেকার। রমিজের মনে পড়ে, সে যখন অন্যের দেশে বিপদে পড়েছিল তখন সবাই এগিয়ে এসেছিল সাহায্যের জন্য।অথচ নিজ দেশে থেকেও আরেক ভাই কতো অসহায়! মানুষ নাকি ঠেকে শেখে।এই প্রথম রমিজ টের পেল ব্যক্তির জীবনে রাষ্ট্রের ভূমিকা কতো বড়!
রেসিজমের শিকার রমিজেরএকটা সময় তীব্র ক্ষোভ ছিল এই দেশটার প্রতি।ভাইয়ের ঘটনা তাকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়। সে তো অন্যায়ের প্রতিকার পেয়েছে। কিন্তু রিমান্ডের নামে তার ছোট ভাই যে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হলো তার বিচার কে করবে! তার চাকরি ফিরিয়ে দেবে কে?
রমিজ শুনেছিল, নির্যাতনের সময় তার ভাইয়ের চশমাটা ভেঙ্গে যায়। এখনো রমিজ মাঝে মাঝে আঁৎকে ওঠে। কল্পনায় দৃশ্যটা ভাবার চেষ্টা করে। পুরু গ্লাসের চশমা ছাড়া ওর ভাই কিছুই দেখতে পায় না। ভাইটা কি চশমার খোঁজে হাতড়ে বেড়িয়েছিল? চশমাটা কোথায়? মেঝেটা ভেজা কেন?
রক্ত!
রমিজ কি আবার ডাকবে তার ভাইকে?
‘ভাই, তুই এখানে চলে আয়’।
বাংলা জাতিসংঘের ভাষা হলে বছরে ৪৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে
পার্লামেন্ট করেসপন্ডেন্ট

 বাংলা জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে চালু হলে প্রতিবছর বাংলাদেশের ৪৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। নাছিমুল আলম চৌধুরীর এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন যে কোনো ভাষা জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা ঘোষণার সঙ্গে বিশাল আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। জাতিসংঘের যে কোনো বাংলা অনুবাদে প্রতি পৃষ্ঠায় প্রায় ২৫০০ মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করলে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ডলার বা ৪৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। অন্য কোনো রাষ্ট্র এ ব্যয়ভার বহনে অংশীদার না হতে চাইলে বাংলাদেশকে পুরো ব্যয়ভার বহন করতে হবে।’ মন্ত্রী জানান, বর্তমানে প্রচলিত ভাষার বাইরে নতুন কোনো ভাষাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে অধিষ্ঠিত করতে হলে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দর কষাকষি করে সাধারণ পরিষদে নতুন ম্যান্ডেন্ট গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ‘২০১০ সালের ২১ এপ্রিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমি সকল সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের চিঠি দিয়ে বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে অধিষ্ঠিত করার জন্য প্রস্তাবিত রেজুলেশন সমর্থন করার অনুরোধ জানাই। কতিপয় বন্ধুপ্রতীম দেশছাড়া প্রায় সব দেশই আর্থিক দায়িত্বের বিষয়টি কে নেবে তা জানতে চায়। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে সমর্থন করলে তাদের কি লাভ হবে সে সম্পর্কেও প্রশ্ন করে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এখন বোধ হয় সময় এসেছে বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সঙ্গে আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ করার বিষয়ে সুদূর প্রসারী চিন্তা-ভাবনা করার। এ বিষয়ে আমি জাতীয় সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’ ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসে কর্মরতরা কোনো অভিযোগ আনলে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে আনা কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি, বা সমাধানের চেষ্টা হয়নি, এমন নজির বিরল। তারপরও বলতে হবে, আমাদের প্রবাসীর সংখ্যা ৮০ লাখ। তার বিপরীতে ৪৯টি দেশের ৬১টি মিশনে কর্মকর্তার সংখ্যা ১৫৯ জন। এই সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অল্প। আর্থিক সীমাবদ্ধতাও আছে।’  তিনি বলেন, ‘সৌদি সরকার ২০০২ সালে নিয়ম করে যে, তাদের দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ২০ শতাংশ শ্রমিক স্থানীয়দের মধ্যে থেকে নিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এই সিদ্ধান্ত বাস্তায়ন করতে পেরেছে তারা সবুজ শ্রেণীভূক্তি এবং যারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা লাল শ্রেণীভূক্ত। সবুজ শ্রেণীভূক্ত প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশি শ্রমিকদের আকামা পরিবর্তনের কোনো সমস্যা নেই। তারা নিজেদের ইচ্ছে মতো কর্মস্থল পরিবর্তন করতে পারেন। কিন্তু লাল শ্রেণীভূক্ত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের আকামা বা কর্মস্থল পরিবর্তনের সমস্যা হচ্ছে।’ জয়নাল আবদিনের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে যাদের বৈধভাবে কাজ করার কাগজপত্র নেই বা যারা অসাধু জন্যশক্তি রফতানিকারকদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তারা প্রবাসে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন। পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে প্রবাসী নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করছে। কেউ হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হলে তাকে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। তবে নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধে অবৈধ অভিভাসন বন্ধের কোনো বিকল্প নেই।’ সামশুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মিয়ানমার জানিয়েছে, সে দেশের জলবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। দেশটি তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত গ্যাস বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে।’ এদিকে শহীদউদ্দিন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘পার্বত্য এলাকায় শান্তিচুক্তি পাহাড়ীদের সংঘাত বন্ধ করেছে। সরকার শান্তিচুক্তির বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। এরই মধ্যে শান্তিচুক্তির বিভিন্ন ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। অবাস্তবায়িত ধারা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। সন্তু লারমাসহ অন্যান্য স্বাক্ষরকারীরা তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে যে দাবি করেছেন, তা সত্য নয়।’
দুর্নীতি প্রমাণ হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে পদ্মা অয়েলের এমডি
সেরাজুল ইসলাম সিরাজ
ঘুষ দুর্নীতির কারণে চাকরিজীবনে অসংখ্যবার তিনি চিহ্নিত হয়েছেন। বিভাগীয় শাস্তি প্রদানের জন্য সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, সে যাত্রায়ও বেঁচে গেছেন। সচিব, প্রতিমন্ত্রী তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, তবুও তার দুর্নীতি থামানো যায়নি। বিতর্কিত এই ব্যক্তি হচ্ছেন রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম আবুল খায়ের। গত দশ বছরে এই ক্ষমতাধর কর্মকর্তা রাষ্ট্রায়ত্ব তেল কোম্পানি যমুনা, মেঘনা ও পদ্মা নিংড়ে শেষ করে এখন আবার পদ্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এর গদিতে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। বেপরোয়া দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ফোনে এম আবুল খায়ের বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলবো না।’ এরপর আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন। তার কোম্পানি থেকে রাষ্ট্রীয় ভর্ত‍ুকির তেল পাচারের সময় হাত নাতে ধরে ফেলে র‌্যাব। তারপরও তার কিছু হয় না। তার শক্তির উৎস অজ্ঞাত। পদ্মার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আবুল খায়ের যেভাবে লুটপাট করেন, তা সমান তালে বিলিয়ে দেন। এটাই তার ক্রমাগত দুর্নীতির সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি। চট্টগ্রাম-৮ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এমপি নূরুল ইসলাম বিএসসি ২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটিডের এমডি এম আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য জ্বালানি সচিবকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন ওই বছরের ২৭ অক্টোবর। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় একজন যুগ্ম সচিবকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে এরপর দীর্ঘদিন তদন্ত থেমে থাকে রহস্যজনক কারণে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পঞ্চমবারের মতো তদন্তের অগ্রগতি জানতে চিঠি দেওয়া হলে প্রায় এক বছর পর তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এমডি আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে নুরুল ইসলাম বিএসসির আনা অভিযোগের বেশিরভাগই পুরাতন। দু’টি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে। অভিযোগ দু’টি নথিভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নৈতিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট বিবেচনায় এম আবুল খায়ের একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। ২০০২ সালে পদ্মা অয়েল কোম্পানির রংপুর ডিপো নির্মাণ কাজে অনিয়মের সঙ্গে আবুল খায়েরের সংশ্লিষ্টতা থাকায় তাকে সকল আর্থিক ও নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কাজ থেকে বিরত রাখা হয়। ‘২০০৫ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানির রংপুর ডিপোর সাড়ে চার লাখ টাকার অনিয়ম ও পতেঙ্গা ডিপোর তেল ওভার ফ্লোর ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল বিধায় তাকে সতর্ক করা হয় এবং শাস্তি হিসেবে বিপিসিতে সংযুক্ত করা হয়।’
এরকম ইমেজ সংকটধারী একজন ব্যক্তিকে বিপিসি থেকে পদ্মা অয়েল কোম্পানির এমডি পদে নিয়োগের ফলে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তবে রহস্যজনক কারণে কমিটি লঘু শাস্তি দেওয়ার প্রস্তাব করে। প্রস্তাবে আবুল খায়েরকে বিপিসির প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করার জন্য চেয়ারম্যান বিপিসিকে অনুরোধ করা যেতে পারে বলে মতামত দেওয়া হয়। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৮ অক্টেবার ২০১০ সালে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর আগেই আবুল খায়েরকে অন্য আরেকটি অপরাধের শাস্তি হিসেবে বিপিসিতে সংযুক্ত করা হয়। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের মে মাসে নৌযান ধর্মঘটের কারণে এভিয়েশন জ্বালানি খালাস ও সরবরাহের ক্ষেত্রে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার পেছনে আবুল খায়েরের হাত থাকায় এমডি পদ থেকে তাকে আগেই সরিয়ে দিয়ে বিপিসিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, আবুল খায়েরকে ২০১০ সালের ১৩ মে’ তারিখে ওএসডি করে আনা হয় বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশনে (বিপিসি)। ওএসডি হওয়ার পর থেকেই তিনি বিপিসির তিন অয়েল কোম্পানির (পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা) যে কোন একটির এমডি পদে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে ২০১০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি মেঘনার এমডি পদ বাগিয়ে নেন। এরপর গত মার্চ মাসের ১ তারিখে আবার ফেরেন পদ্মা অয়েল কোম্পানির এমডি পদে। বিপিসির চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘বেশিরভাগ অভিযোগ আমি যোগদান করার আগের। সে কারণে তদন্ত ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বলতে পারব না।’ হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে জানান, ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি নিয়মিত মামলা করেছেন। এখন অব্যাহত রয়েছে। দুদকের তদন্ত চলছে এরকম একজন অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে কেন আবার পদ্মার এমডি করলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো পুরনো।’ তবে তিনি এ থেকে কোনো অনৈতিক সুবিধা নেননি বলে দাবি করেন। উল্লেখ্য, রাষ্ট্রয়াত্ব এই চার তেল কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বিপিসি। আবুল খায়ের মেঘনার এমডি থাকার সময় ওই কোম্পানির এক শেয়ারহোল্ডার হাইকার্টে রিট দায়ের করেন তার এমডি পদ অবৈধ ঘোষণার দাবি জানিয়ে। রিট দায়েরের পর বিচারপতি এ.এইচ.এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ গত ১২ মার্চ আবুল খায়েরের পদকে আগামী ছয় মাসের জন্য অবৈধ ঘোষণা করেন। আবুল খায়ের হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। হাইকোর্টের এপিলিয়েড ডিভিশনের বিচারপতি এসএম হোসেইন গত ২১ মার্চ হাইকোর্টের দেওয়া আদেশটি ৪২ দিনের জন্য স্থগিত করেন। সেই ৪২ দিনও পার হয়ে গেছে। তবে পদ ছাড়েননি আবুল খায়ের। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা সুস্পষ্টভাবে উচ্চ আদালতের অবমাননা। অভিযুক্ত আবুল খায়ের আবারও পদ্মার এমডি হওয়ার বিষয়ে নুরুল ইসলাম বিএসসি এমপির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, আমার জানা নেই সর্বশেষ তথ্য। তবে এরকম একজন দুর্নীতিবাজের স্বপদে ফিরে আশা দুঃখজনক। এ ছাড়া তিনি আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, পরে আর বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়নি।
তেল পাচার:
গত ২০ মে চট্টগ্রামে র‌্যাব-৭ ভারতে পাচার হতে যাওয়া আড়াই লাখ লিটার ফার্নেস অয়েলের আটটি ট্রাক আটক করে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, এসব তেল ভারতে পাচার করা হচ্ছিলো। এই বিপুল পরিমান তেল পদ্মা অয়েল কোম্পানি থেকে পাচারকারীরা ভুয়া ডিও লেটারের মাধ্যমে উত্তোলন করেছিলো জনৈক স‍ুমনের নামে। এর সঙ্গের পদ্মার এমডি জড়িত থাকতে পারেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য আমি তৈরি: পাইবাস
স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট

অভিজ্ঞতা এবং পরিপক্ক হওয়ার জন্য ক্লাব অনেক বড় ক্ষেত্র। জাতীয় দলের নতুন কোচ রিচার্ড পাইবাসও ক্লাব কোচিংকে এগিয়ে রাখছেন। তিনি মনে করেন পাকিস্তান দলের কোচিংয়ের চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফ্রেঞ্চাইজিদের নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে বেশি কাজে লাগাতে পারবেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ডার এন্ড ফ্রেঞ্চাইজিস, টাইটান্স ও কোবরাস এই তিনটি দলের কোচ ছিলেন পাইবাস। দুইটি দলের হয়ে আটটি শিরোপাও জিতেছেন। বলছিলেন,‘আফ্রিকার কাজে অনেক কিছু বুঝতে হয়েছে। এখানে অনেক সংস্কৃতির মিশ্রন ছিলো। ফ্রেঞ্চাজিদের সঙ্গে কাজ করলে কিভাবে জিততে হয়, একটা জয়ী দল গড়ে তোলা এবং জয়ের মানসিকতা গড়ে তুলতে হয়। আমি দুটি ফ্রেঞ্চাইজিতে কাজ করেছি যেখানে অনেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার খেলেছে এবং আমরা খুব ভালো করেছি। পাকিস্তানে থাকার সময় সংস্কৃতি বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।’ ২০০৩ সালের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না পাইবাস। তারপরেও তাকে বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। টেস্ট ও ওয়ানডে র‌্যাংকের তলানীতে থাকা বাংলাদেশের কোচিংকে আকর্ষণীয় এবং ইউনিক কাজ মনে করেন পাইবাস। তিনি বলেন,‘বাংলাদেশর বেশির ভাগ ক্রিকেটার তরুণ। তাদের মধ্যে জয়ের মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আমি জেতার জন্য খেলবো। মালটি ফর্মেটের ক্রিকেটার তৈরি করবো। প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ক্রিকেটে যাতে সিরিজ জিততে পারে সে ভাবে তাদেরকে তৈরি করার ইচ্ছে আমার।’ পাইবাস জয়ের সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ। বাংলাদেশে কাজের জন্য সবার আগে তাকে মানসিক বাঁধা দূর করতে হবে। তার মতে,‘ ক্রিকেটাররা তাদের সামর্থ্য সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছে। এশিয়া কাপের দিকে তাকালে তা বোঝা যায়। ’ দায়িত্ব নেওয়ার পর পাইবাসের প্রথম এসাইনমেন্ট হবে জিম্বাবুয়েতে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকাও খেলবে। এই টুর্নামেন্ট থেকে খেলোয়াড়দের বোঝার একটি সুযোগ পাবেন বলে মনে করেন ৪৭ বছর বয়সী কোচ। কাকাতালীয় হলেও সত্যি স্টুয়ার্ট ল’ও জিম্বাবুয়ে সফর দিয়ে বাংলাদেশের কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। তার উত্তরসুরি পাইবাসও জিম্বাবুয়ে সফর দিয়ে কাজে নামছেন।
জুনে পাক-ভারত সিরিজের ঘোষণা আসতে পারে: আশরাফ
স্পোর্টস ডেস্ক

পাকিস্তান ও ভারতের ক্রিকেটীয় সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। সম্পর্ক উন্নয়নে জুনে কুয়ালামপুরে অনুষ্ঠেয় আইসিসির বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষ্যে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে দেশ দুটি। এমনকি পাক-ভারত দ্বিপক্ষীয় সিরিজের ঘোষণা আসার বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন পিসিবি প্রধান জাকা আশরাফ। বিসিসিআই’র অতিথি হিসেবে চেন্নাইয়ে আইপিএলের ফাইনাল উপভোগ করে দিল্লিতেই রয়েছেন আশরাফ। সেখানে ইএসপিএনক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটীয় সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের বিষয়ে পিসিবি চেয়ারম্যান বলেন,‘সম্ভবত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কুয়ালালামপুরেই আইসিসির পরিচালনা পর্ষদের সভায় নেওয়া হতে পারে। সেখানে শ্রীনিভাসনের সঙ্গে (বিসিসিআই সভাপতি) আমার আলোচনা হবে। সম্ভবত পুনরায় সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আমরা কোনো পরিকল্পনা এবং কোনো কিছুর ঘোষণা দিতে সক্ষম হবো।’
তবে আসন্ন শীতে ইংল্যান্ডের ভারত সফরের মাঝপথে ক্রিসমাসের বিরতিতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজনের বিষয়ে এরই মধ্যে বিসিসিআইয়ের সঙ্গে গোপন সমঝোতা বা আলোচনার গুঞ্জনকে নাকচ করে আশরাফ বলেন,‘এ বিষয়ে বিসিসিআই আমাদের কিছু জানায় নি। আমরা ক্যালেন্ডারে যেটা দেখতে পেয়েছি, সেটা হচ্ছে ইংল্যান্ড দল টানা ম্যাচ খেলে যাবে। কিন্তু বিরতিকালীন সময়ে তারা দ্বিপক্ষীয় সিরিজ আয়োজনের সুযোগ নেবে কিনা সেটা বিসিআইয়ের বিষয। আমরা কি ধরনের ফর্মেটের ম্যাচ খেলতে পারি সে ব্যাপারে তাদেরই পদক্ষেপ নিতে হতে এবং আমাদের জানাতে হবে।’ পিসিবি প্রধান হিসেবে প্রথমবারের মতো ভারত সফরে এসে দিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনার সালমান বশির এবং সরকার ও বিরোধী দলীয় বিভিন্ন নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আশরাফ। তবে কাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর থেকে নিজেদের মধ্যে কোনো সিরিজ খেলেনি প্রতিবেশী দেশ দুটি। যদিও সর্বশেষ পাকিস্তান ভারত সফর করায় এখন ভারতের পাকিস্তান সফরের পালা। কিন্তু ২০০৮ সালের মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর দেশ দুটির ক্রিকেট সম্পর্ক স্থবির হয়ে আছে। পরে ২০০৯ সালের মার্চে লাহোরে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের বাসে হামলার পর দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনে সক্ষম হয়নি পাকিস্তান। কিন্তু ২০১১ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ম্যাচ খেলতে ভারতে গিয়েছিলো পাকিস্তান। মোহালির ওই  ম্যাচটি একসঙ্গে বসে উপভোগ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান আসিফ আলী জারদারি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের সিয়ালকোট স্ট্যালিওন্সের অংশগ্রহনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আশরাফ। বিশ্ব ক্রিকেটে ক্লাব পর্যায়ের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতাটিতে পাকিস্তানের কোনো ক্লাবকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি প্রথমবারের মতো টুইটারে প্রকাশ করেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-২০ প্রতিযোগিতার টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সুন্দর রমন। যদিও সেটার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। আশরাফ জানান, সিয়ালকোট স্ট্যালিওন্সকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টিকে,‘সংবাদ মাধ্যম, সাধারণ জনগণ ও বোর্ডের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়। কমপক্ষে বরফতো গলতে শুরু করেছে এবং সঠিক লক্ষ্যপথের দিকেই বিষয়টি যাচ্ছে।’ পিসিবি প্রধান জানান, ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে এটা নির্দেশনা ছিল দুই দেশের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক শুরু করতে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই। ‘আমি যেটা অনুধাবণ করতে পেরেছি যে, পাকিস্তানের সম্মানীত প্রধানমন্ত্রী ভারতের সম্মানীত প্রধানমন্ত্রীকে কিছু একটা করতে বলেছিলেন যাতে করে উভয় দেশের সম্পর্ক পুনস্থাপন করা যায়। তিনি (ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী) ও বলেছিলেন,‘আমি এটার পক্ষে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই এবং সেটা আমরা বোর্ডকে জানিয়ে দেব। বোর্ড অন্যান্য বিষয়াদি যেমন কখন ও কোথায় খেলা তারা খেলতে পারবে সেটা ঠিক করবে। কারণ এই বিষযের সঙ্গে অনেক খুটিনাটি বিষয় জড়িত।’ আশরাফ জানান, আইপিএলের ফাইনালের পর শ্রীনিভাষনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য অতিরিক্ত একটা দিন হাতে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু বর্ধিত আলোচনা আর হতে পারেনি শ্রীনিভাষন আইপিএল ফাইনাল চলাকালে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায়। এ বিষয়ে কৌতুক করে আশরাফ বলেন,‘তাকে কখনও হাসতে দেখা যায়নি। কিন্তু আমি হাসপাতালে যাওয়ার পর তিনি হেসেছিলেন। আমি দেখতে যাওয়াতে তিনি অনেক খুশি হয়েছিলেন। সেটা প্রমাণ করে যে, দুই বোর্ডের ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে।’
বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি ঘোষনার ১০ দিনের “ডেট লাইন” শেষ॥
পদপ্রত্যাশী ও নেতা-কর্মীদের মাঝে সন্দেহ-সংশয়!
রাহাদ সুমন
বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি ঘোষনার জন্য বেধে দেয়া ১০ দিনের “সময়সীমা” গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে যাওয়ায় পদ প্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের মাঝে আবারও হতাশা, সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ২২ বছর পর বহু কাঙিখত সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মী, পদপ্রত্যাশী  ও  সমর্থকদের মাঝে যে উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছিল তা আবার মিইয়ে যেতে শুরু করেছে।১৪ মে সম্মেলনের দিন আকস্মিকভাবে সিন্ধান্ত নেয়া হয় ১০ দিনের মধ্যে সাবেক চীফ হুইপ ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ কমিটি ঘোষনা করবেন। ওই সময় পদ প্রত্যাশী,কাউন্সিলর ও নেতা-কর্মীরা কিছুটা হতাশ হলেও ১০ দিনের মধ্যে কমিটি ঘোষনা করা হচ্ছে বলে আশান্বিত হন। পরে নেতাকর্মীরা কমিটি ঘোষনার আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করলেও বসে থাকেননি পদপ্রত্যাশীরা। তারা কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের সঙ্গে লবিং-তদবির অব্যহত রাখেন। কেউ কেউ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিমের ঢাকা ও আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর আগৈলঝাড়ার সেরালের বাসায় ধর্নাও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।  বেধে দেয়া ১০ দিনের “ডেট লাইন” গতকাল শেষ হয়ে যাওয়ায় নেতা-কর্মীদের মাঝে নতুন করে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে । তাদের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কমিটির জন্য আবার দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে না তো ?। হতাশার পাশাপাশি পদ প্রত্যাশীরা ভূগছেন স্নায়ু চাপে।এদিকে ১৪ মে’ সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় পর থেকে “কমিটিবিহীন” বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ। ফলে দলে সাংগঠনিক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। যদিও কমিটি ঘোষনা না হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাংসদ ্্এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুসকে বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এদিকে পদ না থাকায় অনেকটা বিব্রত সাবেক নেতারা। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করতে হয়েছে পৌর আওয়ামীলীগের ব্যানারে।সেই অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামীলীগের বিলুপ্ত  কমিটির  নেতাদের সম্মোধন করা হয়েছে সাবেক নেতা হিসেবে। এদিকে সম্মেলনে বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মনিরুল ইসলাম মনি, পৌর মেয়র মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার তরুণ ঘোষ এবং সম্পাদক পদে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা  আলহাজ্ব গোলাম ফারুক,ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মাওলাদ হোসেন সানা,আওয়ামীলীগ নেতা একে এম ইউসুফ আলী,খিজির সরদার ও এ্যাডভোকেট মাহামুদ হোসেন মাখন প্রার্থী হয়েছিলেন। এদের মধ্যে হ্যাট্রিক বিজয়ী পৌর মেয়র মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা নেতা-কর্মীদের প্রবল চাপ ও দাবির প্রেক্ষিতে প্রার্থী হন।এখন পর্যন্ত ওই প্রার্থীরাই লবিং -তদবির অব্যহত রেখেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দুটি পদেই অকল্পনীয় ও নাটকীয় কিছু ঘটতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এদিকে  জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাংসদ এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস দিনক্ষন চূড়ান্ত করে না বললেও,  অচিরেই  জেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ কমিটি ঘোষনা করবেন বলে জানান।অপরদিকে নেতাকর্মীরা অবিলম্ভে কমিটি ঘোষনার দাবি জানিয়েছে।
চুড়ান্ত পর্বে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০১২
বিপুল হাসান 
 ‘লিভ বিউটিফুল বা সৌন্দর্যে বাঁচো’- এ শ্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করা চলতি বছরের লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা এখন পৌঁছে গেছে চুড়ান্ত পর্বে। ধাঁপের পর ধাঁপ ডিঙিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ২০ সুন্দরীর মধ্যে চলছে এখন লড়াই। আগামী শুক্রবার থেকে চ্যানেল আইতে প্রচার শুরু হচ্ছে চুড়ান্ত পর্বের। টিভি সম্প্রচার শুরুর আগে এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হলো এ ধরনের প্রিমিয়ার শো। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে ৩০ মে বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত ‘লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০১২’-এর প্রিমিয়ার শো রূপান্তরিত হয়েছিল সুন্দরীদের হাটে। আগের বছরগুলোতে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণকারীরা ছাড়াও এতে উপস্থিত ছিলেন শোবিজের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তারকা। প্রাথমিক অডিশন ও ন্যাশনাল সিলেকশন রাউন্ড শেষে আগামী শুক্রবার থেকে চ্যানেল আইতে প্রচার শুরু হচ্ছে এই রিয়েলিটি শোর চুড়ান্ত পর্ব। চুড়ান্ত পর্বের প্রচার শুরুর আগে ২০১২ সালের লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার এ পর্যন্ত ধারণকৃত অংশ প্রদর্শণ করা হয় প্রিমিয়ার প্রদর্শনীতে। এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রতিযোগিতার সঙ্গে সম্পৃক্ত গুণীজনেরা। মুনমুনের উপস্থাপনায় শুরুতেই প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপট ও ধারাবাহিকতা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন নাট্যব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, নব্বই দশকে একটি পাক্ষিক পত্রিকার সঙ্গে লাক্স যৌথভাবে প্রথম এ প্রতিযোগিতা শুরু করে। সে সময় প্রতিযোগীদের ছবির ভিত্তিতে লাক্স সুন্দরী নির্বাচন করা হতে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২০০৫ সালে আধুনিক রিয়েলিটি শোর আঙ্গিকে লাক্সের সাথে এ প্রতিযোগিতায় যুক্ত হয় চ্যানেল। দিন দিন এ আয়োজনের ব্যাপকতা বাড়ছে। আমাদের শোবিজ এরই মাঝে এই ইভেন্ট থেকে পেয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পারফর্মার, আগামী দিনেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
আয়োজক ইউনিলিভারের পক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন লাক্সের ব্রান্ড ম্যানেজার বুশরা ফয়েজ ও চ্যানেল আইয়ের পক্ষে মার্কেটিং ম্যানেজার ঈশিতা। তারা দুজনই এবারের আয়োজন আকর্ষণীয় করে তুলতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০১২-এর চুড়ান্ত পর্বে বিচারকের দায়িত্বে রয়েছেন খ্যাতিমান ম্যাজিশিয়ন জুয়েল আইচ, নির্মাতা ও অভিনেতা তৌকীর আহমেদ, নির্মাতা ও অভিনেত্রী আফসানা মিমি এবং অভিনেত্রী তারিন। ম্যাজিশিয়ন জুয়েল আইচ শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, আমার চেয়ে বড় ম্যাজিশিয়ন হলো এই প্রতিযোগিতার চুড়ান্ত পর্বে অংশ নেওয়া ২০ প্রতিযোগী। কারণ তাদের প্রত্যেককে ৩০ সেকেন্ড করে সময় দেওয়া হয়েছিল নিজেদের সম্পর্কে  বলার জন্য। তারা এতো অল্প সময়ে নিজেদের সম্পর্কে এতো চমৎকার ধারণা দিয়েছেন যে, এটি আমার ম্যাজিকের মতো মনে হয়েছে।
তৌকীর আহমেদ বলেন, আমাদের টিভিমিডিয়ার পরিধি দিন দিন বাড়ছে। নতুন নতুন চ্যানেল আসছে। প্রয়োজন পড়ছে অনেক অনুষ্ঠানের, অনেক নাটকের। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ইভেন্ট প্রতি বছর নতুন নতুন মেধাবী মুখ আমাদের মিডিয়ায় যুক্ত করে শিল্পী সংকট কাটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। অভিনেত্রী তারিন বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা। রূপের পাশাপাশি গুণও এখন সমান গুরুত্বপূর্ণ। রূপে ও গুণে নিজেদের প্রমাণ করেই এবারের লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার চুড়ান্ত পর্বে উঠে এসেছে ২০ প্রতিযোগী। এদের মধ্য থেকে সেরা নির্বাচন করার কাজটি সত্যিই কঠিন। Lux_intarপ্রতিযোগিতার অপর বিচারক আফসানা মিমি তার পেশাগত ব্যস্ততার কারণে প্রিমিয়ার প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকতে পারেন নি। এবারের লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টারের চুড়ান্ত পর্বের অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তরুণ নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। প্রিমিয়ার প্রদর্শনীতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি বলেন, এ ধরণের রিয়েলিটি শোতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার এই প্রথম। নাটক নির্মাণের অভিজ্ঞতা থেকেই আমি এখানে এসেছি। চেষ্টা করছি ফিকশনের আমেজ ছাড়িয়ে দর্শকদের নতুন কিছু উপহার দেওয়ার। এবার অনুষ্ঠান ধারণ করা হচ্ছে এইচডি ফরম্যাটে। আমার জানামতে, বাংলাদেশে এতো বিশাল আয়োতনের একটি রিয়েলিটি শো এই প্রথম এইচডিতে ধারণ করা হচ্ছে। দর্শকদের ভালো লাগলেই আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হবে। উল্লেখ্য, লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ইভেন্টের ২০০৫ সালের  প্রথম আয়োজন বিজয়ীর হন শানারৈ দেবী শানু। ২০০৬ সালের সুপারস্টার খেতাব বিজয়ী হন জাকিয়া বারী মম। ২০০৭ সালে সুপারস্টার খেতাব জিতেন বিদ্যা সিনহা মিম। ২০০৮ সালে বিজয়ী হন চৈতি। ২০০৯ সালে মেহজাবিন ও ২০১০ সালের শিরোপা জিতে নেন রাখি। ৭ম বারের মত  এবারের আয়োজনেও বেরিয়ে আসবে ২০১২ সালের লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারের সেরা সুন্দরী। খেতাব বিজয়ীর পাশাপাশি এ ইভেন্ট থেকে বেরিয়ে আসা অনেক প্রতিযোগীই মিডিয়াতে নিজেদের স্থান করে নিয়েছেন। যাদের মধ্যে ঝলমলে ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন বিন্দু, বাঁধন, মুনমুন, রাহা, আলভী, ফারিয়া, সূচনা, আমব্রিন, জয়া, উর্মি, রাহি, ইশানা, অর্ষাসহ আরও অনেকে। প্রতিবারের মতো এবারও লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার বিজয়ী পাবেন একটি ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি। প্রথম রানার আপ পাবেন নগদ ৫ লাখ টাকা। দ্বিতীয় রানার আপ পাবেন ৩ লাখ টাকা। চতুর্থ থেকে ১০ম বিজয়ীদের দেয়া হবে নগদ ১ লাখ টাকা। এ ছাড়া থাকছে অভিনয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষাবৃত্তি ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী। প্রিমিয়ার শোতে এবারের ধারণকৃত কয়েকটি পর্বের পাশাপাশি আগের আয়োজনগুলোর কিছু ফুটেজ প্রদর্শন করা হয়। চ্যানেল আইতে এই রিয়েলিটি শো দেখানো হবে প্রতি শুক্র ও সোম রাত সাড়ে আটটায়।
বিগ বাজেটের ছবি ‘দ্যা স্পীড’-এর প্রত্যাশিত সাফল্য
ফাহিম ফয়সাল

সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ও এমএ জলিল অনন্ত প্রযোজিত বিগ বাজেটের ছবি ‘দ্যা স্পীড’। চলতি মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ছবিতে এই অ্যাকশনধর্মী ছবিটি ঢাকাসহ সারাদেশের ২৪টি সিনেমা হলে ও মালয়েশিয়ার ৭টি সিনেমা হলে আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পায়। । টানা তিন সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন সিনেমা হলে ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে। অ্যাকশনধর্মী ও ওয়েস্টার্ন ধাঁচে নির্মিত হওয়ায় ছবিটি তরুণপ্রজন্মের দর্শকদের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বিভিন্ন সিনেমা হল সূত্রে জানা গেছে, তরুণরাই ছবি দেখতে হলে ভিড় করছেন। সরেজমিনে বিভিন্ন সিনেমা হলে গিয়ে দেখা গেছে ছবিটি দেখার পর অনেকেই বলছেন, অনেকদিন পর একটি ভালো ছবি দেখলাম। মনে হয়েছে বিদেশী কোন ছবি দেখলাম। বাংলাদেশেই যে এরকম একটি ভালো ছবি নির্মিত হয়ে তার জেনে আরো ভালো লাগছে। কেউ কেউ আবার সমালোচনা করে বলছেন, ছবির কিছু কিছু জায়গায় আরেকটু যত্ন নিলে এর মান আরো ভালো হতো। ‘দ্যা স্পীড’ মুক্তির পর ছবির মূল্যায়ন জানতে চাইলে প্রযোজক এম এ জলিল অনন্ত বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রযোজক হিসেবে বলবো ছবিটি নিঃসন্দেহে অনেক ভালো হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে এই প্রথম আমি কোন ছবি থেকে লাভের মুখ দেখছি। ছবির মাঝে ব্যবহৃত ব্যতিক্রমধর্মী লোকেশন, গান, চিত্রগ্রহণ, শব্দ গ্রহণ থেকে শুরু করে সব কিছুর কারণে দর্শক ছবিটি ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন। এ জন্য আমি দর্শকদের ধন্যবাদ দিচ্ছি।’ ছবির নায়ক হিসেবে নিজেকে মূল্যায়ন করে অনন্ত বলেন, আগের ছবিগুলো থেকে নিজেকে এ ছবিতে আমার অনেক প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। শুরুর দিন থেকে এখন পর্যন্ত ছবিটি দেখতে যে পরিমান দর্শক প্রতিদিন হলে যাচ্ছেন তা দেখে আমি সত্যি অভিভূত। ছবিটি করে অনেক সাড়া পেয়েছি। আমার আগামী ছবিটিও আশা করি দর্শকের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বলে ।’ দেশীয় চলচ্চিত্রের বৈরী এ সময়ে বিগ বাজেটের ছবি নির্মাণ থেকে যখন প্রযোজকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, ঠিক এ সময় কোটি টাকা বাজেট নিয়ে নতুন ভাবে বাংলা সিনেমা তৈরি করতে এগিয়ে আসেন অনন্ত। বাংলাদেশের ছবিকে চাঙ্গা করতে একের পর এক বিগ বাজেটের সব ছবি প্রযোজনা করে চলেছেন। নিজের প্রযোজিত প্রতিটি ছবিতেই তিনি নায়ক হিসেবে অভিনয় করছেন। নায়ক অনন্ত প্রথম চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন অ্যাকশনধর্মী ছবি ‘খোঁজ-দ্যা সার্চ’ । এরপর তার প্রযোজনায় মুক্তি পায় অ্যাকশনধর্মী ও রোমান্টিক ঘরানার ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ’ ছবিটি। বর্তমানে দেশের ১৮টি সিনেমা হলে প্রদর্শন হচ্ছে তার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘দ্যা স্পীড’। এ মুহূর্তে নতুন ছবি এমএ জলিল অনন্তের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মনসুন ফিল্মসের ব্যানারে চলছে  ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ ছবির শুটিং। এ ছবিতে তার সাথে নায়িকা হিসেবে আছেন বর্ষা। ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ ছবিটি পরিচালনা করছেন তরুণ পরিচালক অনন্য মামুন।
এক নজরে ‘দ্যা স্পীড’
ছবির নাম : ‘দ্যা স্পীড’
প্রযোজক : এম.এ. জলিল অনন্ত
পরিচালক : সোহানুর রহমান সোহান
কাহিনী ও সংলাপ : অনন্য মামুন
সম্পাদনা : একরামুল হক
ক্যামেরা : আসাদুজ্জামান মজনু ও আকাশ (চেন্নাই)
ফাইট : আরমান, চুন্নু ও উইলিয়াম (মালয়েশিয়া)
সংগীত : হাবিব, হৃদয় খান, ফুয়াদ ও শওকত আলী ইমন
সংগীত শিল্পী : হাবিব, ন্যান্সি, কণা, হৃদয় খান
অভিনয় শিল্পী : অনন্ত (নায়ক), পারভিন (নায়িকা-মালেয়শিয়া), নানা (রাশিয়ান), মাইক বোস (আফ্রিকা), আটন (মালেয়শিয়া) দীঘি,  আলমগীর এবং অনেকে।
পরিবেশনায় : মনসুন ফিল্মস্
অনেকদিন পর পাশাপাশি নিরব ও সারিকা
বিনোদন প্রতিবেদক

আমাদের মিডিয়ার এই সময়ের আলোচিত জুটি নিরব-সারিকা। এখানে-সেখানে এবং মিডিয়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের একসঙ্গে দেখা গেলেও দীর্ঘদিন তাদের জুটি বেঁধে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে না। অনেকদিন পর নিরব ও সারিকা পাশাপাশি অভিনয় করেছেন ‘তোমাকে’ নামের একটি একক নাটকে। আনিসুল হকের রচিত ও পার্থ সরকার পরিচালিত ‘তোমাকে’ নাটকে নিরব ও সারিকাকে দেখা যাবে প্রেমিক-প্রেমিকার চরিত্রে। রোমান্টিক গল্প নিয়ে নির্মিত এ নাটকে দেখা যাবে নিরব আর সারিকা ভালোবাসে একে অন্যেকে। কিন্তু ভালোবাসার কথা তাদের কেউ কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারে না। শেষপর্যন্ত নিরব সিদ্ধান্ত নেয়, যে করেই হোক সারিকাকে ভালোবাসার কথা বলতেই হবে। কদিন পরেই আসছে সারিকার জন্মদিন। নিরব পরিকল্পনা করে, একেবারেই অন্যভাবে সারিকাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে সে তাক লাগিয়ে দেবে। সেই দিনই জানাব, ভালোবাসি। কিন্তু সফল হয় না নিরবের ভাবনা। ঘটনা নাটকীয়ভাবে মোড় নেয় অন্য দিকে। নাটকটির নির্মাতা পার্থ সরকার বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে নাটকটির শুটিং শেষ হয়ে গেছে। রোমান্টিক জুটি হিসেবে এতে নিরব-সারিকা দারুণ অভিনয় করেছেন। বর্তমানে এটি আছে সম্পাদনার টেবিলে। আগামী রোজার ঈদে প্রচারের নাটকটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে আরো অভিনয় করেছেন সুমন পাটওয়ারী, নূপুর, ফারুক, এবং অনেকে। অনেকদিন পর সারিকার সঙ্গে পাশাপাশি অভিনয় করা প্রসঙ্গে নিরব বললেন, আসলে আমি এ মুহূর্তে চলচ্চিত্র আর বিজ্ঞাপনের কাজ নিয়েই আছি। টিভিনাটকে অনেকদিন ধরে অভিনয় করছি না। ‘তোমাকে’ নাটকটির গল্প আমার চমৎকার লাগায়, এতে অভিনয়ে আগ্রহী হই। সারিকা আর আমি বেশ কিছু বিজ্ঞাপন একসঙ্গে করলেও এর আগে আমরা শুধু একটি নাটকে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলাম। ঐ নাটকটিতে একটি মাত্র দৃশ্যে আমাদের পাশাপাশি দেখা গিয়েছিল। এবার আমরা পাশাপাশি থাকছি পুরো নাটক জুড়েই। সত্যি বলতে কী, সারিকার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে থেকেই আমি এ নাটকে কাজ করতে রাজি হই। ‘তোমাকে’ নাটকে অভিনয় প্রসঙ্গে সারিকা বলেন, নিরব একজন ভালো অভিনেতা। চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার নিয়ে বেশি ব্যস্ত বলে টিভিনাটকে তাকে অনেকদিন হলো দেখা যায় না। আমার বিপরীতে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নিরব টিভি নাটকের অভিনয়ে ফিরলেন। আশা করি এ নাটকটি দর্শকদের ভালো লাগবে।
শাহরুখ-প্রিয়াঙ্কা একসঙ্গে আর না
অনন্যা আশরাফ
‘ডন-২’খ্যাত জুটি শাহরুখ-প্রিয়াংকাকে আর একসঙ্গে নতুন কোন ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে না। ভক্তরা নিরাশ হলেও এটিই সত্য। শাহরুখ ব প্রিয়াঙ্কা দুজনের কেউ এই সিদ্ধান্ত নেন নি। সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলিউড বাদশা শাহরুখের স্ত্রী গৌরি খান। প্রিয়াঙ্কা ও শাহরুখের রোমান্সকে এখানেই থামিয়ে দেওয়ার জন্য কঠোর হাতকড়া পড়িয়ে দিয়েছেন গৌরি। শাহরুখ-প্রিয়াঙ্কার ঘনিষ্ঠতাকে কেন্দ্র করে বলিউডে রটেছে একের পর এক গসিপ। গৌরি এ বিষয়ে মুখ ফুটে কিছু প্রকাশ না করলেও নজর রেখেছেন দুজনের উপর। পার্টিতে প্রিয়াঙ্কাকে অবহেলা, এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে তাকে অপমান করার সুযোগটাও হাতছাড়া করেননি গৌরি। পাশাপাশি শাহরুখের সঙ্গে চারদেয়ালের মধ্যে বেড়েছে তার দূরত্ব। তবুও বোধহয় স্বস্তি পাচ্ছেন না গৌরি। শেষপর্যন্ত কিংখানের উপর তিনি জারি করলেন আইন। প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে নতুন কোনো ছবিতে স্বামী শাহরুখকে অভিনয় করা থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হস্তক্ষেপ করেছেন শাহরুখের ক্যারিয়ারে। সম্প্রতি পরিচালক করণ যোহরের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। ফারহা আকতারের অনুরোধে করণ যোহর তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে প্রিয়াঙ্কাকে আমন্ত্রণ জানান। তবে এর আগে ঘনিষ্ঠ বন্ধু গৌরিকে ফোন করে প্রিয়াঙ্কাকে আমন্ত্রন জানানোর বিষয়ে অনুমতি চেয়ে নেন করন যোহর। ফোনে গৌরি খান বলেছেন, শাহরুখ ও প্রিয়াঙ্কার মধ্যে দেখা-সাক্ষাত হতেই পারে। কিন্তু তাদের আর কখনো ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ দিতে তিনি রাজি নন। ভবিষ্যতে একসঙ্গে কোনো ছবিতে তাদের অভিনয়ের ব্যাপারে নিজের আপত্তির কথাও জানান গৌরি।
গৌরির এ কথায় পরিস্কার হয়ে উঠে যে, ‘ডন’ ও ‘ডন টু’ ছবির আলেচিত জুটি শাহরুখ ও প্রিয়াঙ্কাকে আর কখনও অভিনয়ে একসঙ্গে দেখা যাবে না। যদিও এ বিষয়ে শাহরুখ বা প্রিয়াঙ্কা কেউই এখনও মুখ খোলেননি। এবারই প্রথম নয়, এর আগেও ঐশ্বরিয়া ও রানী মূখার্জির সঙ্গে শাহরুখের অভিনয়ের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন গৌরি খান। এই আপত্তির মুখেই পরে শাহরুখকে ঐশ্বরিয়া ও রানীর সঙ্গে আর অভিনয়ে দেখা যায়নি। ঘর ঠিক রাখতে শাহরুখকে হয়তো এবার প্রিয়াংকাকেও বিসর্জন দিতে হবে।
পুরোনো প্রেমে শহীদ-প্রিয়াঙ্কা
অনন্যা আশরাফ

প্রেমের গুঞ্জনে বলিউডে বেশ কয়েকবার আলোচনায় উঠে এসেছেন শহীদ কাপুর ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। যদিও সম্পর্কটাকে তারা বন্ধুত্ব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। প্রায় বছর খানেক পর আবারও আলোচনা উঠে এসেছেন বলিউডের এ জুটি। বর্তমানে তাদের পরস্পরের প্রতি অতিরিক্ত যতœশীলতা মিডিয়ার নজর কেড়েছে। অনেকেই ধারণা করছেন, একসঙ্গে কাজ করে পুরোনো প্রেম আবারও জেগে উঠেছে শহীদ ও প্রিয়াঙ্কার। ‘কামিনী’ ছবির পর নতুন ছবি ‘তেরি মেরি কাহানি’ ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শহীদ ও প্রিয়াঙ্কা। শুটিংয়ে তাদের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝিটাও সেরে নিয়েছেন। তাইতো ছবির প্রমোশনে তাদের ঘনিষ্ঠতা সহজেই চোখে পড়ে মিডিয়ার। সম্প্রতি নতুন ছবির প্রমোশনের জন্য ‘ড্যান্স ইন্ডিয়া ড্যান্স লিটল চ্যাম্প’ অনুষ্ঠানে অংশ নেন শহীদ ও প্রিয়াঙ্কা। সেখানে স্টেজে উঠতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যাবার সময় প্রিয়াঙ্কাকে ধরে সামাল দেন শহীদ কাপুর। ‘কামিনী’ ছবির শুটিংয়ের সময় প্রেমের ঘনিষ্ঠতায় জড়িয়ে পড়েন এ জুটি। এমনকি ২০১০ সালে গুজব উঠেছিল ভারতের চন্ড্রিগড়ে তাদের বাগদান সম্পন্ন হয়েছে।
কিন্তু শহীদের অতিরিক্ত যতœশীলতা প্রিয়াঙ্কার মোটেও ভালো লাগেনি। তাই নিজেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে নেন। এরপর ‘ডন টু’ ছবিতে শাহরুখের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। শেষ হয়ে যায় শহীদ-প্রিয়াঙ্কার প্রেম। তবে প্রেমের অধ্যায় বন্ধ করে দিলেও প্রফেশনের সম্পর্কটাকে ঠিক রেখেছেন তারা। তাই কুণাল কোহলির নতুন ছবি ‘তেরি মেরি কাহানি’তে অভিনয়ে রাজী হয়ে যান এ জুটি।
চঞ্চল এবার মাইক ব্যবসায়ী
বিনোদন প্রতিবেদক
বৈচিত্রময় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করেছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি অভিনয় করেছেন একজন মাইক ব্যবসায়ীর ভূমিকায়।
এভারেষ্ট বিল্ডার্স লিঃ নিবেদিত, আলী ইমরানের রচনা ও সাজাদ হাসান বাবলু পরিচালিত নাটক ‘মাইক মিন্টু’। এ  নাটকে মাইক মিন্টু চরিত্রে অভিনয় করেছন চঞ্চল। নাটকের এ চরিত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘ অনেক পরিশ্রম করে নাটকটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা সবাই খুব আনন্দ থেকে কাজটি শেষ করেছি। আমার মনে হয় ‘মাইক মিন্টু’ ভালো লাগবে সবার।’
এ নাটকের নির্মাতা সাজাদ হাসান বাবলু বলেন, নাটকের গল্পটি চমৎকার। এমন একটি গল্প নিয়ে আমি কাজ করার সুযোগ পেয়ে সত্যিই আনন্দিত। আনন্দ-বেদনা এবং মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয়ে ভালো লাগার মতো গল্প ‘মাইক মিন্ট’ু। শিল্পীরা সবাই নিজেদের সেরা কাজটুকু করবার প্রয়াস চালিয়েছেন। আশা করছি দর্শকদেরও বিনোদনের খোরাক মিটাবে এ নাটকটি।
চঞ্চল ছাড়াও এখানে আরও অভিনয় করেছেন লাক্স সুন্দরী মৌসুমী, ডলি জহুর, শিল্পী, ইয়াছিন, হারুন, জেসমিন আহসানুল হক মিনু, নাজমুল হুদা বাচ্চু প্রমুখ। নাটকটি আগামী রোজার ঈদে যেকোন টিভি চ্যানেলে প্রচারের অপেক্ষায় আছে। নাটকের গল্পে দেখা যায়, অলংকারপুর গ্রামের ছেলে মিন্টু সম্মানের সাথে ধরে রেখেছে তার ঐতিহ্যবাহী পৈতৃক পেশা। গ্রামের কোন অনুষ্ঠান মানেই মিন্টু হাজির তার মাইক নিয়ে। মাইক বাজিয়ে সংসার চলে। আর এ কারণেই তাকে এলাকার লোকজন মাইক মিন্টু নামেই ডাকে। হঠাৎ চুমকির বিয়েতে ডাক পায় না মিন্টু। এতে সে আহত ও অবাক হয়। বাধ্য হয়েই নিমন্ত্রণ ছাড়াই বিয়ে বাড়িতে হাজির হয় মিন্টু। এলাকা ফাটিয়ে বাজতে থাকে তার মাইক। কিন্তু চুমকির বাবা মিন্টুকে মাইক নিয়ে চলে যেতে বলেন। কিন্তু মিন্টু কিছুতেই বুঝতে পারে না চুমকিকে গোপনে বিয়ে দেয়ার কারণ কি? অবশেষে বরযাত্রী এলে বিষয়টি উপলব্দি করে সে। সুন্দরী যুবতী চুমকিকে বিয়ে দেয়া হচ্ছে ৬০ বছরের বৃদ্ধের কাছে। এতে ক্ষিপ্ত  হয়ে গ্রামের যুবকদের সাহায্য নিয়ে বিয়েটা ভেঙ্গে দেয় মিন্টু। বৃদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করার আনন্দে সবাই হাসলেও চুমকির বাবার কান্না নাটকে অন্য মোড় এন দেয়। জানা যায় সুন্দরী হলেও চুমকি বাক প্রতিবন্ধী। তাই কেউ তাকে বিয়ে করতে চায়না। এ ঘটনায় বিব্রত হয় মিন্টু। চুমকির বাবার এক প্রশ্নে দ্বন্দে পড়ে যায় সে। হাস্যরসে ভরপুর নাটকটি শেষ মুহুর্তে এসে চরম মানবিক মূল্যবোধের মুখোমুখি হয়, যা দর্শকদের হৃদয়কে সহজেই নাড়া দিতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন