Year-20 # Issue-20 # 30 June 2013

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যে জিএসপি স্থগিত করলনিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কারখানার কর্ম পরিবেশের উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করেছে। গত কয়েক মাসের শুনানির পর গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ফ্রোম্যান এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। ফ্রোম্যান বলেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা স্থগিত করা হলো। প্রেসিডেন্ট ওবামার আদেশে বলা হয়, ‘আমি নিশ্চিত, বাংলাদেশের পাওয়া জিএসপি সুবিধা এখন স্থগিত করাই শ্রেয়ৃ কারণ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকারগুলো বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ বাংলাদেশ নেয়নি। পোশাক কারখানায় বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় শত শত শ্রমিকের মুত্যুর পর কারখানার পরিবেশ উন্নত করা, শ্রমিকের বেতন বাড়ানোসহ সরকারের নানা উদ্যোগের মধ্যেই ওবামার এই ঘোষণা এলো। জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেসের (জিএসপি) আওতায় বাংলাদেশ পাঁচ হাজার ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করতে পারত, যদিও এর মধ্যে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক নেই।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা গতবছর জিএসপির আওতায় তিন কোটি ৪৭ লাখ ডলারের তামাক, ক্রীড়া সরঞ্জাম, চিনামাটির তৈজসপত্র ও প্লাস্টিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করেছেন, যাতে তারা শুল্ক ছাড় পেয়েছেন ২০ লাখ ডলারের মতো। আর ৪৯০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে শুল্ক বাবদে দিয়েছেন ৭৩ কোটি ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি বাতিলের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ২০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক খাত সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা হয়তো নেই, কিন্তু এই সিদ্ধন্তে প্রভাবিত হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নও যদি একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি দামের পোশাক কেনে, যা বাংলাদেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ। ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্তি সুবিধা হারালে বিপুল অংকের ডলার বাংলাদেশকে গুণতে হবে কর বাবদে।
গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংগঠন ‘আমেরিকান অর্গানাইজেশন অব লেবার-কংগ্রেস ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও) বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিলের আবেদন করে। তাদের অভিযোগ ছিল, পোশাক ও চিংড়ি খাত এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) শ্রম অধিকার সংরক্ষিত হচ্ছে না এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়।
এর ঠিক পরের মাসেই আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন লেগে ১১০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়, যাতে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে নিরাপদ কর্মপরিবেশের অভাব এবং শ্রমিক অধিকারের বিষয়গুলো নতুন করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনায় আসে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত জানুয়ারিতে জিএসপি সুবিধার বিষয়টি পর্যালোচনার উদ্যোগ নেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটিতে এ বিষয়ে শুনানির মধ্যেই গত ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩০ জনের মৃত্যু হয়, যাদের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিক। এ ঘটনায় নতুন করে সংশয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশের জিএসপি-ভাগ্য। ঘটনার পরদিন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেছিলেন, এ ঘটনা জিএসপির ভাগ্যনির্ধারণীতে প্রভাব ফেলবে। তাজরীন ফ্যাশনস ও রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে ১২ শ’র বেশি শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ফ্রোম্যান বলেন, “জিএসপি সুবিধা স্থগিতের এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নতুন করে কাজ শুরু করা, যাতে শ্রমিক অধিকারের বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে তারা যথাযথ পদক্ষেপ নেয়।
বাংলাদেশ তাদের পণ্যে আবার শুল্কমুক্ত সুবিধা ফিরে পাক- তা আমরা চাই। কিন্তু সেজন্য আমরা কর্মক্ষেত্রের নিরাপদ ও যথাযথ পরিবেশও দেখতে চাই। তবে বাংলাদেশি পণ্য আমদানি বন্ধের কোনো পরিকল্পনা এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের নেই বলেও জানান ফ্রোমান। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংগঠন এএফএল-সিআইওর সভাপতি রিচার্ড ট্রুমকা বলেন, “যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্তি সুবিধা পাচ্ছে, তাদের সবার জন্যই এ সিদ্ধান্ত একটি স্পষ্ট সংকেত। যারা কর্মক্ষেত্রের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করে না এবং শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার মতো ন্যূনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তারা যে কোনো সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাজার সুবিধা হারাতে পারে। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে, ২০১১-১২ অর্থবছরের বাংলাদেশ মোট রপ্তানি করেছে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে মোট রপ্তানির ২১ শতাংশ (৫০০ কোটি ডলার)। ২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার পর এর আগেও দুবার এ সুবিধা বাতিলের আবেদন ওঠে। অবশ্য শুনানি শেষে রায়ে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বহাল থাকে।

জিএসপি পুনর্বহালে আমার ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই: ইউনূস
নিজস্ব প্রতিবেদক : গতকাল শনিবার ড.মুহাম্মদ ইউনূস জিএসপি সুবিধা স্থগিতের জন্য কার্যতঃ সরকারকেই দায়ী করেছেন। তবে নোবেলজয়ী এই বাংলাদেশি এই সুবিধা পুনর্বহালে নিজের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকারগুলো বাস্তবায়ন না করায় গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। রাজধানীতে এক সম্মেলনে ইউনূস বলেন, আমরা যেহেতু ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে পারিনি, তাই তারা জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছে।
শ্রম অধিকারগুলো বাস্তবায়ন না করা জিএসপি স্থগিতের ‘অন্যতম’ কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করলেও এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারিনি। জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালে ভূমিকা রাখবেন কি না- যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও সাবেক পরারাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ঘনিষ্ঠ ইউনূসের কাছে এই প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। আমি সরকারের কেউ না, আমার এখানে ভূমিকা রাখার কিছু নেই, উত্তর দেন তিনি।
পোশাক কারখানায় বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় সহস্রাধিক শ্রমিকের মুত্যুর পর কারখানার পরিবেশ উন্নত করা, শ্রমিকের বেতন বাড়ানোসহ সরকারসহ নানা পক্ষীয় বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যেই জিএসপি স্থগিতের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সরকারের অভিযোগ, এর পেছনে দেশের ভেতরের ও বাইরের কারো কারো হাত ছিল।
সকালে ধানমি র বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মিলনায়তনে ‘সোশাল বিজনেস ইয়ুথ কনভেনশনে’ প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূস।
গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে পদক্ষেপে নোবেলজয়ী একমাত্র বাংলাদেশির সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। এর বিপরীতে বিরোধী দলের সমর্থন পাচ্ছেন তিনি।
কয়েকদিন আগে ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়ে ইউনূসের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করেন। এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ইউনূস বলেন, গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে যে কেউ সমর্থন করতে পারে। সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সবুর খান উপস্থিত ছিলেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের পাশে আছে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক :  বিএনপি গত বৃহস্পতিবার গ্রামীণ ব্যাংক ‘বিভক্তিকরণের’ প্রস্তাবকে ‘চক্রান্ত’ অভিহিত করে তা থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ পরিস্থিতিতে বিএনপি গ্রামীণ ব্যাংকের পাশে রয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা সরকারের এহেন কর্মকাে  উদ্বেগ ও নিন্দা জানাচ্ছি। সরকারকে বলব, দাম্ভিকতা পরিহার করে বাস্তবতা বুঝে চক্রান্তের পথ থেকে সরে আসুন। গ্রামীণ ব্যাংককে তার মতো করে চলতে দিন। সকালে মীরপুরের গ্রামীণ ভবনের ইউনূস সেন্টারে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ইনকোয়ারি কমিশন এই প্রতিষ্ঠানটিকে ১৯ টুকরো করার প্রস্তাব করেছে। এটা একটি ষড়যন্ত্রমূলক চক্রান্ত বলে আমরা মনে করি। বৈঠকের পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের কাছে বিষয়বস্তু তুলে ধরে বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘কংগ্রেশনাল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছেন তাকে অভিনন্দন জানাতে আমি গ্রামীণ সেন্টারে গিয়েছিলাম। আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। বিএনপি গ্রামীণ ব্যাংকের পাশে আছে, থাকবে- এই সমর্থনও জানিয়েছি। এক ঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে ইউনূসের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংক কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান ফখরুল। বৈঠকে দলের চেয়ারপারসনের সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ পাসের মধ্য দিয়ে সরকারের ৬০ শতাংশ ও গ্রামীণ ব্যাংক গ্রাহকদের ৪০ শতাংশ মালিকানা নিয়ে ব্যাংক হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। ২০০২ সালে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ পরিবর্তন করে ৭৫ ভাগ শেয়ার নারী গ্রাহকদের এবং সরকারের শেয়ার ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে আইনটি এরকমই রয়েছে। এই আইন পরিবর্তনের কোন সরকারের ইচ্ছা নেই। অর্থমন্ত্রী আরো জানান, গ্রামীণ ব্যাংক আইন অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের বয়সসীমা ৬০ বছর পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যকাল শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ১৯৯১ সালে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে নিয়মানুযায়ী এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারকে জানানো হয়নি। ২০০৯ সালে গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়ে গঠিত রিভিউ কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, ড. ইউনূস বেআইনিভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে রয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টেও একই কথা বলা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে তখন ড. ইউনূসকে পদত্যাগ করতে বলা হলেও তিনি পদত্যাগ না করে আদালতে যান। পরে আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি পদত্যাগ করেন।
তিনি বলেন, ড. ইউনূস-পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তিনি থাকাকালীন সময় ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের আকার ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপের ফলে এর কাঠামো এবং সার্বিক কার্যক্রমে ব্যাপক গতিশীলতা এসেছে। তবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেভাবে গড়ে তুলেছিলেন সেটা সেভাবেই রয়েছে। সরকার এর কাঠামোর কোন পরিবর্তন করেনি।
আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ড. ইউনূস সামাজিক বিনিয়োগ বিষয়ে ৫৪টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থায়নে পরে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্যারান্টি নিয়ে বিদেশী ঋণে তিনি এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এর মধ্যে গ্রামীণফোন অন্যতম। এ থেকে ড. ইউনূস এ পর্যন্ত কয়েক হাজার কোটি টাকা ‘ডিভিডেন্ট’ পেয়েছেন। অথচ এ টাকা গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রাহকদের পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এক টাকাও তারা পায়নি। অর্থমন্ত্রী ব্যাংকের একজন পরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, এই লভ্যাংশ যদি গ্রাহকদের দেয়া হতো তাহলে বাংলাদেশে দারিদ্র্যতা থাকতো না। তিনি বলেন, এ বিষয়গুলো তদন্ত চলছে। অর্থমন্ত্রী গ্রামীণ কমিশনের রিপোর্ট এবং এর সুপারিশ সম্পর্কে আলোচনার জন্য ঢাকা সেমিনারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যোগদান না করার বিষয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সেমিনারে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ না নিয়ে তার সংবাদ সম্মেলন করা ঠিক হয়নি। এর আগে অধিবেশনের শুরুতে বিএনপি’র ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে গ্রামীণ ব্যাংককে ১৯ ভাগে বিভক্ত না করা, ৫১ শতাংশ শেয়ার সরকারের নামে না নেয়া সর্বোপরি এ ব্যাংকের ৮৪ লাখ নারী গ্রহীতার স্বার্থসংরক্ষণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ ব্যাংকের কাঠামো পরিবর্তন, শেয়ার পরিবর্তন করলে এর অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। তিনি বলেন, তার দল যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে গ্রামীণ ব্যাংক-কে আগের অবস্থায় নিয়ে আসা হবে।

ব্রিটেন বাংলাদেশী মানি এক্সচেঞ্জ কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগে রেমিট্রে প্রবাহে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক :
যুক্তরাজ্য সেদেশে অবস্থিত প্রায় আড়াইশ’ বাংলাদেশী মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১শ’ কোটি টাকা ডলারের রেমিট্রে দেশে আসে। ব্রিটেন বাংলাদেশী মানি এক্সচেঞ্জগুলো বন্ধ করে দিলে এদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে মারাÍক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মূলত যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের উপার্জিত আয়ের প্রায় ১শ’ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে পাঠায়। এ পরিস্থিতিতে ব্রিটেন বাংলাদেশ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বন্ধ না করে সেজন্য জোর লবিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাথে সভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশাপাশি লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস নিজেও এ ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, যুক্তরাজ্য থেকে প্রতি বছরই রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়ছে। এ কারণে সেদেশে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এক্সচেঞ্জ হাউস খুলেছে। বর্তমানে সেখানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় আড়াইশ’ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সার্ভিস চার্জ কম হওয়ায় এবং কোনো ধরনের ঝামেলা না থাকায় যুক্তরাজ্য থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রবাসীরা দ্রুত দেশে টাকা পাঠাতে পারছেন। কিন্তু সম্প্রতি ব্রিটেনের বার্কলেস ব্যাংকের সিদ্ধান্তের কারণে প্রায় আড়াইশ’ বাংলাদেশী মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়। এক্ষেত্রে ব্যাংকটির এক বিবৃতে বলা হয়, প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশে গেলেও ওই সমপরিমাণ রাজস্ব দেশটি পাচ্ছে না। এসব মাধ্যমে অভিযোগ করা হয়েছে অর্থ পাচারের ঝুঁকি রয়েছে। ব্যাংকটির অভিমত, এসব মানি এক্সচেঞ্জ বন্ধ করা হলে আর্থিক অপরাধ অনেকাংশেই কমে আসবে। কারণ দেশটির কোনো ব্যাংক আর বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকও হিসেব রাখতে চাইছে না। এজন্য আগামী ১০ জুলাই থেকে বাংলাদেশী আড়াইশ’ মানি এক্সচেঞ্জ বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা বার্কলেস ব্যাংকটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিট্রেনে অবস্থিত বাংলাদেশী মানি এক্সচেঞ্জগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশী মানি ট্রান্সফার ব্যবসায় বড় ধরনের সঙ্কটে পড়বে। কারণ বার্কলেস ব্যাংকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের ১৮টি ব্যাংক এক্সচেঞ্জসহ প্রায় আড়াইশ’ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ব্রিটেনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের বছরে প্রয় ১শ’ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্রে পাঠানোর বৈধ পথও বন্ধ হয়ে আসবে। তখন হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানো ছাড়া বিকল্প থাকবে তা। এতে দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন এবং অর্থ পাচার বাড়ার আশঙ্কা থাকে। উদ্ভুত এ পরিস্থিতির একটি সন্তোষজনক সুরাহা পেতে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ব্রিটেন যাচ্ছেন। তিনি সেদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাথে সভা করবেন। সর্বশেষ ব্যাংকার্স সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ইতোমধ্যে বার্কলেস ব্যাংকের পক্ষ থেকে যেসব বাংলাদেশী ব্যাংকগুলোর হিসাব রক্ষা করে এক্সচেঞ্জ হাউজ পরিচালিত হতো তাদের সঙ্গে আর হিসাব রাখবে না বলে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে। অথচ বর্তমানে সোনালী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংকসহ ১৮টি ব্যাংক ছাড়াও আড়াই শতাধিক মানি এক্সচেঞ্জন ব্রিটেনে ব্যবসা পরিচালনা করছে। আর ব্রিটেন এসব বাংলাদেশী মানি এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে রেমিট্রে প্রবাহে মারাÍক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমন সিদ্ধান্তে এদেশের ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন।
এদিকে ব্রিটেনে বাংলাদেশী মানি এক্সচেঞ্জ বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে খুব বেশি করার নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সেদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরাসরি অনুরোধ জানাতে পারে। তাছাড়া ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাথে এদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে তাতে খুব বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ তেমন নেই। আর থাকলেও ১৮ ব্যাংকের কার্যক্রম হয়তো রাখা যাবে না। তবে কমিয়ে কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা হয়তো টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতে পারে। তাছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। কারণ সেটি ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এবং সরকারের যথাযথ অনুমোদন নিয়েই পুরোপুরিবাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন