Year-17 # Issue-49 # 6 March 2011

দু’নেত্রীই পারেন সংসদকে কার্যকর করতে
আলমগীর হোসেন   
ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের শেখ হাসিনা তার দৃঢ় মনোবল ও কূটকৌশল দিয়ে পরাস্ত করে ফিরে এসে দলকে আবার ক্ষমতায় এনেছেন। এখন সামনে তার অনেক কাজ। সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি গভীর আগ্রহ-আন্তরিকতা তার আছে। কিন্তু বিরোধী দল ছাড়া কি সংসদ কার্যকর হয়! পার্লামেন্টারিয়ান ছাড়া কি সংসদ প্রাণবন্ত হয়? হয় না। বিরোধী দলকেও তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মাননীয় বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়া সংসদীয় শাসনে দেশকে ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রেখেছেন। তাই সংসদ কার্যকর করতেও দুই নেত্রীকেই ভূমিকা রাখতে হবে। খালেদা জিয়াকেই নিয়ত ঠিক করতে হবে সংসদে যাওয়ার। সংসদে ভূমিকা ঠিকমতো রাখার পর রাজপথে নামার। দু’নেত্রীই রাজনীতির নিয়ন্ত্রক। যদি প্রশ্ন করা হয় এই সংসদে পার্লামেন্টারিয়ান ক’জনের নাম বলুন, উত্তর আসবে তোফায়েল আহমেদ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও রাশেদ খান মেনন! রাজনীতির অবক্ষয়, অসুস্থ প্রতিযোগিতার ধারায় অসংখ্য মুখ সংসদে আনা হয়েছেÑ যা মানুষকে, সমাজকে হতাশই করে! ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পি ত জওহরলাল নেহেরু এত বড় দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও কাজ না থাকলেও সংসদে পড়ে থাকতেন। তাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে বলতেন, গণতন্ত্রের    নবযাত্রায় আমাকে খেয়াল রাখতেই হয় সংসদ ঠিকমতো কাজ করছে কিনা।’ আমৃত্যু তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাই সংসদকে কার্যকর করতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব বেশি হলেও বিরোধী দলের নেত্রীর হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। শেখ হাসিনা রাজনীতির অবক্ষয় রোধে এগিয়ে এলে খালেদা জিয়া বসে থাকবেন, সে সুযোগও নেই। খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল না। ছিলেন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী। তারপর সেনাশাসক ও রাষ্ট্রপতির পতœী। স্বামীর মৃত্যুর পর বিএনপির হাল ধরে তিনিও রাজপথে উর্মিমুখর সংগ্রাম করে উঠে আসেন। জনগণ ভালোবেসে তাকেও তিন’বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে। শুধু সরকার নয়, কান পাতলে গণঅসন্তোষের ভাষা বিরোধী দলের প্রতিও শোনা যায়। দ্রব্যমূল্য, শেয়ারবাজার নিয়ে মানুষের বুকভরা কান্না শুনেও বিরোধী দল সংসদে গিয়ে সরকারকে তুলোধুনো করে না, তা কি হয়? দু’নেত্রীই পারেন সংসদ কার্যকর করতে। প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে। দুনিয়ার সব দেশে সরকার ও বিরোধী দল বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখে। এখানে ব্যবসায়ীদের হয়রান করা হয়। বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দু’নেত্রীকে বসতে হবে, জানতে হবে তাদের পরিকল্পনার কথা। দলকানা, তোষামোদকারী ব্যবসায়ী দিয়ে বদনাম কুড়ানো যায়, জাতীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়া যায় না।  


সাবেক-বর্তমান মেয়রের বিরোধের নিরসন চান খালেদা
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার বিরোধের নিরসনে দলটির চেয়ারপারসন উদ্যোগী হয়েছেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি খালেদা জিয়া দুই নেতাকেই গুলশান কার্যালয়ে ডেকে পাঠিয়ে আলাদাভাবে কথা বলেন।
দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কয়েকজন সিনিয়র নেতা খালেদা জিয়াকে বলেছেন, রাজধানীতে আন্দোলন জোরদার কিংবা ঢাকা সিটি করপোরশেন নির্বাচনে প্রতিপক্ষ সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃত্ব খোকাকেই দেওয়া উচিত। তবে মির্জা আব্বাসের পক্ষেও দলের সিনিয়র নেতাদের একটি গ্রুপ চেয়ারপারসনের কাছে যুক্তি তুলে ধরেন। এ নিয়ে দলে স্পষ্ট দুটি ধারাও তৈরি হয়েছে। সূত্র মতে, সিনিয়র নেতাদের অভিমতের পর সম্প্রতি খালেদা জিয়া এ দুই নেতাকে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। গভীর রাত পর্যন্ত দুজনের সঙ্গে আলাদা কথা বলেন তিনি। খালেদা জিয়া সরকারবিরোধী আন্দোলন ঢাকা থেকে জোরদার করতে খোকাকে মহানগর কমিটি গঠনের ব্যাপারে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন। তাঁর এই নির্দেশের পর খোকা কমিটি গঠনের ব্যাপারে তৎপরও হন। মির্জা আব্বাস এর বিপরীতে তাঁর অনুসারী দলের নেতা ও ওয়ার্ড কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে খোকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের বড় একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি। বড় দলে সবসময় প্রতিযোগিতা থাকে। ঢাকা মহানগর কমিটি গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, কমিটি গঠন শিগগিরই হবে। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সব সদস্য নির্বাচন করবেন চেয়ারপারসন। 

কারাগার থেকে কামারুজ্জামানের চিঠি
যুদ্ধাপরাধ-এ অভিযুক্তরা নেতৃত্ব ছাড়লে একটা নিউ জেনারেশন জামায়াত হবে
হাসান মাহমুদ রিপন
জামায়াতে ইসলামীর  যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হচ্ছে, তারা জামায়াতের  নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াব এবং সম্পূর্ণ নতুন নেতৃত্বের হাতে জামায়াতকে  ছেড়ে দেব। অর্থাৎ একটা নিউ জেনারেশন জামায়াত হবে এটি। কারাগার থেকে লেখা এক চিঠিতে দলীয় নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর এ পরামর্শ দিয়েছেন জামায়াতের জ্যেষ্ঠ সহকারী  সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত বছরের ১৩ জুলাই কামারুজ্জামানকে  গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি কারাগারে আটক আছেন। ঢাকা  কেন্দ্রীয় কারাগারের ৭ নম্বর সেল (বকুল) থেকে কামারুজ্জামানের লেখা চিঠি গত ২৬ ডিসেম্বর পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে চিঠিটি দলের ভারপ্রাপ্ত নেতাদের হাতে  পৌঁছানো হয় বলে জানা গেছে। প্রায় ছয় হাজার শব্দের এই চিঠিতে কামারুজ্জামান বর্তমান পরিস্থিতিকে খুব নাজুক এবং জামায়াতের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন। চিঠিতে কারাগারে আটক নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে কামারুজ্জামান বলেন, নির্মোহ ও নিরপেক্ষভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে। নিজেকে সম্পৃক্ত করে চিন্তা করলে সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি আরো লিখেছেন, আমাদের অনেকের তো বয়সও হয়েছে। সরাসরি আন্দোলনে থাকলেই বা আমরা আর কতটা অবদান রাখতে পারব? সুতরাং সবাই মিলে দ্বিতীয় যে বিকল্পটির কথা উল্লেখ করেছি, তা সামনে রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই হবে কাঙ্ক্ষিত এবং যুক্তিযুক্ত। তিনি উল্লেখ করেন, এ ধরনের একটি অবস্থান গ্রহণ করলে সাময়িকভাবে আমাদের জন্য ব্যক্তিগতভাবে অবমাননাকর মনে হলেও শেষ পর্যন্ত মহত্ত্বের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস।
সূত্র মতে, কামারুজ্জামানের এই চিঠির খবর শুনে কারাগারে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ। বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয়, সে জন্য তাঁরা লোক মারফত সতর্ক থাকতে বলেছেন দলীয় নেতাদের। জানা  গেছে, চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে দলের ভেতরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম প্রথমে কিছু বলতে রাজি না হলেও পরে তিনি এ ধরনের একটি চিঠির কথা শুনেছেন বলে জানান। একপর্যায়ে চিঠির বিষয়বস্তু প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত বড় চিঠি কারাগার থেকে আসল কী করে ? তিনি চিঠির কপিটি দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আজহারুল ইসলাম বলেন, কারাগারে যাঁরা আছেন, তাঁরা দল পরিচালনার জন্য বাইরের  নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। কেউ যদি এমন কিছু করার চেষ্টা করেন তা হবে দল ভাঙার ষড়যন্ত্র।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত আমির ও সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ জানান, এ ধরনের চিঠির কথা তিনি শুনেছেন। তিনি বলেন, বাইরে থাকতে তিনি (কামারুজ্জামান) দলের জন্য ভাবতেন, এখন জেলে থেকেও ভাবছেন, এতে দোষের কি? আমরা তাঁর মতামতকে অশ্রদ্ধা করি না। তবে   জেলের পরস্থিতি আর বাইরের পরিস্থিতি  তো এক নয়। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন কর্মকৌশল গ্রহণ সময়ে দাবি শিরোনামে  লেখা ওই চিঠিতে কামারুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীর ৬০ বছরের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের বিশ্লেষণ করে দলের জন্য বেশকিছু নতুন কৌশল ও কর্মপন্থা প্রস্তাব করেন। জামায়াতের বর্তমান পরিস্থিতিকে খুব নাজুক এবং কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে তিনি তা মোকাবিলায় চিঠিতে তিনটি বিকল্প পথ বাতলে  দেন। এগুলো নিম্নরূপ :
এক. যা হবার হবে। আমরা যেমন আছি  তেমনি থাকব। (বর্তমানে এই কৌশলই অবলম্বন করা হয়েছে।)
দুই. পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত সিদ্ধান্ত নিয়ে  পেছনে  থেকে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তুলবে। এই সংগঠন প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তার সঙ্গে ধর্মহীন শক্তির মোকাবিলা করবে। তিন. আমাদের যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে, তারা জামায়াতের  নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াব এবং সম্পূর্ণ নতুন লোকদের হাতে জামায়াতকে  ছেড়ে দেব। অর্থাৎ একটা নিউ জেনারেশন জামায়াত হবে এটি। কামারুজ্জামান লিখেছেন, আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় উপরোক্ত তিন অবস্থার প্রথমটা হচ্ছে  নেতৃত্ব আঁকড়ে থাকা, হতবুদ্ধিতা এবং হতাশাবাদিতা। একটি গতিশীল আন্দোলন এ ধরনের পশ্চাৎমুখী অবস্থান গ্রহণ করতে পারে না। কামারুজ্জামান তার লেখা চিঠিতে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগে আটককৃতদের মৃত্যুদে র আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন সরকারের আরো তিন বছর সময় আছে আর এই সময়ের মধ্যেই যেকোনোভাবে প্রহসনের বিচার করে জামায়াতের  নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে পারে। জামায়াতর কর্মী এবং শুভাকাঙ্খীদের ঘাবড়ে  দেওয়ার জন্য মৃত্যুদ ও দিতে পারে এবং অনেককে যাবজ্জীবন কারাদ ও দিতে পারে। আবার সম্ভাবনাময় জামায়াত নেতাদের নির্বাচনে দাঁড়ানোর অযোগ্য  ঘোষণা করতে পারে এবং তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারে।
বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে রোগী মৃত্যুর হার বেড়েই চলছে
মজিবুর রহমান
দেশের সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে রোগী মৃত্যুর হার প্রতি বছরই বাড়ছে। গত দু’বছরে ৬টি বিশেষায়িত হাসপাতালে এ হার বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। জরুরি চিকিৎসার অপ্রতুলতা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও চিকিৎসা সামগ্রির সঙ্কট, চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।  হেলথ বুলেটিন ২০১০ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে দেশের ৭টি বিশেষায়িত হাসপাতালের ৬ টিতে রোগী ভর্তি হয়েছে ৮২ হাজার ২৪ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ১শ ৩ জনের। যার হার ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০০৮ সালে এসব হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রোগী ভর্তি হয়েছিল ৭২ হাজার ৭শ ৫৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ৩ হাজার ৬শ ৯৬ জন। যার হার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৮ সালের তুলনায় ২০০৯ সালে রোগী মৃত্যুর হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সময়মতো জরুরি সেবা না পাওয়ার কারণে এমনটি ঘটছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ।  পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৯ সালে দেশের বিশেষায়িত ৬টি হাসপাতালের মধ্যে, জাতীয় হƒদরোগ ইনস্টিটিউটে (এনআইসিভিডি) ২ হাজার ৬শ ৮০ জন, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইডিসিএইচ) ৯শ ৫২ জন, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (এনআইটিওআর) ১শ ৭০ জন, জাতীয় কিডনী হাসপাতালে (এনআইকেডিইউ) ২শ ৬ জন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (এনআইএমএইচআর) ২৪ জন এবং জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতাল ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (এনআইসিআরএইচ) মারা গেছে ৭১ জন।
এর মধ্যে জাতীয় হƒদরোগ হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। জানা গেছে, এসব হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে চিকিৎসা কার্যক্রম চরম অনিয়মের বেড়াজালে  ছেয়ে গেছে। ফলে হাসপাতাল জুড়ে চলছে চরম অস্থিরতা।  রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন সঠিক চিকিৎসা থেকে।
আর ২০০৮ সালে এনআইসিভিডিতে মৃত্যু হয় ২ হাজার ৪শ ১২, এনআইডিসিএইচতে ৮শ ৫০, এনআইটিওআরে ২শ ২৪, এনআইকেডিইউতে ২শ ১০ জন। তবে, এ বছর আইএমএইচআরে কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশেষায়িত এসব হাসপাতালে রোগীর মধ্যে নারীদের তুলনায় পুরুষের হার বেশি। ২০০৯ সালে যেখানে পুরুষ রোগী ভর্তি হয়েছে ৬৬ হাজার ৩শ ৯০, সেখানে নারী রোগীর সংখ্যা মাত্র ২৪ হাজার ৩২ জন।
সরকারি দপ্তরগুলোতে সোলার প্যানেল স্থাপনে অগ্রগতি নেই
রফিকুল ইসলাম
দেশের সরকারি অফিসগুলোতে সোলার প্যানেল স্থাপনে তেমন অগ্রগতি নেই। অধিকাংশ মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে তেমন সচেতনও নয়। দেশের সকল সরকারি দপ্তরে সোলার প্যানেল স্থাপনের বিষয়ে ২০০৯ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি নির্দেশনা প্রদান করে। তিন বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের আদেশ ও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখাযাচ্ছেনা। বিষয়টি তত্ত্বাবধান ও তদারকির দায়িত্বে আছে বিদ্যুৎ বিভাগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছু বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা  বলেন , মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলোর পক্ষ  থেকে এ বিষয়ে তেমন কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি দপ্তরগুলোতে সোলার প্যানেল স্থাপনের অগ্রগতি নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় ৫০টি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অনেকেই  ছিল অনপস্থিত। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনুপস্থিতদের নিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি আরো একটি সভা আহ্বান করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এদিনেও মাত্র ৪টি মন্ত্রণালয় উপস্থিত হন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়গুলোর পক্ষ থেকে অর্থের অভাব, কারিগরি সীমাবদ্ধতার কথা বলা হলেও ব্যাপারগুলো মানতে রাজি নয় বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল জানান, আমরা ইতিমধ্যে একটি গাইড লাইন তৈরি করে সকল মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি। গাইড লাইনে সোলার প্যানেলের কারিগরি এবং আর্থিক বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। গাইড লাইনে ব্যাটারি, চার্জ কন্ট্রোলারসহ ৫০০ ওয়াট প্যানেল স্থাপনের জন্য ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়গুলো যাতে সোলার প্যানেল স্থাপনের বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পায় তাই এ গাইড লাইন দেয়া। এখন সরকারি দপ্তরগুলো তাদের চাহিদা অনুসারে প্রয়োজনীয় ওয়াটের প্যানেল স্থাপন করবে। তিনি আরো বলেন, কোনো দপ্তর চাইলে ব্যাটারির পরিবর্তে ইনভার্টার লাগাতে পারবে। ফলে উৎপাদিত  সৌর বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। তিনি বলেন, সোলার প্যানেল স্থাপনে আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

স্বপ্নের বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী মুজিব নগর
শফিকুল আলম জুয়েল
বানারীপাড়া নতুনমুখ সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে বার্ষিক বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছিল ঐতিহাসিক স্থান বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী মেহেরপুরের মুজিব নগরে। অনেক দিন পর্যন্ত স্বপ্ন ছিল এই দর্শনীয় স্থান দেখার। যখন শুনলাম ঐ ঐতিহাসিক স্থানে যাওয়া হবে তখন চিন্তা করলাম আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। ঠিক রাত ১২টার সময় বানারীপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫৫ জন সফর সঙ্গী নিয়ে মুজিব নগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমাদের সফর সঙ্গীর মধ্যে ছোট ছোট বাচ্চারা ছিল তাদের যে কি কৌতুহল তা না দেখলে বোঝানো যাবে না। এক টানা ৫ ঘন্টা গাড়ি চলার পরে আমরা মেহেরপুরে গিয়ে আমরা যাত্রা বিরতি করলাম। সেখানে আমাদের বিশ্রাম নেয়ার জন্য আগে থেকেই হোটেল বুকিং করা ছিল। সেখানে আমরা গোছল ও বিশ্রাম ছেড়ে সবাই একত্রে নাস্তা করলাম। সবাই ছিলাম ক্লান্ত। ক্লান্ত হলেও অজানাকে জানার জন্য গন্তব্যের উদ্দেশ্যে আবার রওয়ানা হলাম। যতই গন্তব্যের কাছে আসতে লাগলাম ততই আমি পুলকিত হতে লাগলাম। দেখার আকাঙ্খা আরও বেড়ে গেল। প্রায় ১ ঘন্টা পরে আমরা নির্ধারিত স্থান মুজিব নগরে পৌছালাম। বাস থেকেই নেমেই আমরা দেখলাম অসংখ্য চালক সহ ভ্যান আমাদের গাড়ির সামনে এসে বলতে লাগল বর্ডারে যাবে বর্ডারে। তখন আমি আন্দোলিত হতে লাগলাম সেখানে কি আছে? তখন আমরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে আমি আমার সহধর্মীনি সাংবাদিক এস.মিজানুল ইসলাম, মোস্তফা সরদার, মোয়াজ্জেম হোসেন মানিক, হরেকৃষ্ণ সার সহ একটি ভ্যানে বর্ডারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। বর্ডারের কাছে এসে জানতে পারলাম এটা ভোমড়া সীমান্ত। ভ্যান থেকে নেমে দেখলাম একজন বিডিআর(বর্তমান- বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ) দাড়িয়ে আছে। তাকে আমরা ভারত বাংলাদেশ কোন জায়গা থেকে ভাগ হয়েছে তা জানতে চাইলাম। তিনি আন্তরিকতার সহিত আমাদের সব কিছু দেখালেন। আমরা সীমান্তের বিভিন্ন পিলার দেখলাম যা দুই দেশের মধ্যে সীমানা নির্ধারন করেছে। তখন আমাদের সাথে দাড়ানো বিডিআর কে আমরা অনুরোধ করলাম ভারতের সীমান্ত দেখানোর জন্য। যখন তিনি শুনলেন আমরা বরিশাল  থেকে এসেছি তখন তিনি আমাদের কথা উপেক্ষা করতে পারলেন না। আমাদের কয়েকজনকে নিয়ে তিনি ভিতরে প্রবেশ করে সবকিছু দেখালেন। তার সাথে বিভিন্ন ধরনের ছবি তোললাম। পরে তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঐতিহাসিক বৈদ্যনাথ তলায় মুজিব নগরে আসলাম যা দেখলাম তা আজও স্মৃতিতে আম্লান। চমৎকার সব ভাস্কর্য যেমন- বাংলাদেশের মানচিত্রের নকশা, যুদ্ধকালীন সময়ের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দৃশ্য, যুদ্ধকালীন সময় বিভিন্ন আর্মি অফিসারদের বৈঠকের দৃশ্য এছাড়া আরও অনেক দৃশ্য দেখলাম যা দেখলে মনে হয় যেন সবকিছুই জীবন্ত। বিভিন্ন গাছের সমারহ দেখলাম। তার পরে স্মৃতি সৌধে গেলাম। একটু পরেই দুপুরের আহার শেষ করে আমড়া ঝুড়িতে গেলাম সেখানে গিয়ে ইংরেজ ও মিরজাফর নবাব সিরাজউদদৌলার বিরুদ্ধে যে জায়গার গোপন বৈঠক করেছিলেন সেই নীলকুঠিতে গেলাম। সেখানে এই দুই কুচক্রী মহল যে স্থানে বসে এই সন্ধি চুক্তি করেছিলেন সে স্থান দেখলাম। সেখান থেকে ৫টার সময় আমরা বানারীপাড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। ফরিদপুরের কাছাকাছি আসার পরই দুটো গাড়ি ক্রস করার সময় আমরা দুঘটনায় পতিত হচ্ছিলাম। কিন্তু আল্লাহর অসীম কৃপা সে যাত্রায় আমরা বেচে গেলাম। কিছুক্ষন গাড়ি চালানোর পরে আমাদের গাড়ির সাথে উল্টো দিক থেকে আসা ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ হয় । সংঘর্ষে আমাদের গাড়ির সামনের কাচ পুরা ভেংগে যায়। তখন ছিল রাত তিন টা। সবাই ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে সবার ঘুম ভেংগে গেল। সবাই ভয়ে কাতর হয়ে পড়লাম। এ যাত্রাও আমরা দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলাম। পরে ওই গাড়িতেই চালক পরিবর্তন করে অন্য চালক নিয়ে ঠিক রাত ৪টায় বানারীপাড়া এসে পৌছলাম। অনেক ঘটনা অঘনের মধ্যে দিয়ে আমাদের যাত্রা শেষ করলাম। আজও হƒদয়ে বেজে ওঠে সেই মুজিব নগরে দৃশ্য। যদি কখনও আবার সময় হয় তা হলেও আমি আবার আমার স্বপ্নের সেই মুজিব নগরে যাব।
গাদ্দাফি আর কতোদিন ক্ষমতায়?
জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী
লিবিয়ার একচল্লিশ বছরের শাসক মোয়াম্মের গাদ্দাফির পৃথিবী প্রতিদিনই ছোট হয়ে আসছে। তেল-সমৃদ্ধ বড় দেশটির পূর্বাঞ্চল পুরোপুরি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং সেখানে তার বিরোধীরা অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে। পশ্চিমের অধিকাংশ এলাকায় গাদ্দাফির কর্তৃত্ব এখনো বজায় রয়েছে এবং এর মধ্যে আছে রাজধানী ত্রিপলি। বলাবাহুল্য, যে ধরনের সংকটে এখন লিবিয়া বিচরণ করছে এমনই পরিস্থিতিতে যে কোনো দেশের রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে, মোয়াম্মের গাদ্দাফি এখনো তার দেশের কর্তৃত্বে আছেন। তবে একথাও অনস্বীকার্যভাবে সত্য যে, নিজের দেশের জনগণের বিরুদ্ধে নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার প্রয়াসে লিপ্ত এই সবচেয়ে দীর্ঘদিনের আরব শাসক অত্যন্ত কঠিন সময় অতিক্রান্ত করছেন। তিউনিসিয়া ও মিসরের পর এখন বিশ্ববাসী অপেক্ষা করছে লিবিয়ার এই শক্তিধর ব্যক্তি কবে দৃশ্যপট থেকে তিরোহিত হন।তিউনিসিয়ার জয়নুল আবেদীন বেন-আলী এবং মিসরের হোসনি মোবারক যথাক্রমে ২৩ ও ৩০ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় ছিলেন গণতন্ত্র বহির্ভূত রাজনৈতিক পরিবেশে। গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবিতে জনগণের আন্দোলনের ফলশ্র“তিতে তারা দুজনেই পদত্যাগে বাধ্য হয়ে প্রথমজন দেশ ও দ্বিতীয় ব্যক্তি রাজধানী ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আরো বেশ কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশে এই উত্তাল জনরোষ ছড়িয়ে পড়ছেÑ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তীব্রতর হচ্ছে এই আন্দোলন। তবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে লিবিয়া ও এর নেতা গাদ্দাফি। এখন সর্বক্ষেত্রেই প্রশ্নÑ তিনি আর কতোদিন?
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন মোয়াম্মের গাদ্দাফিকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবার প্রকাশ্য আহ্বান জানিয়েছেন। পৃথিবীর একমাত্র পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, ‘হি মাস্ট কুইট নাউ’Ñ অর্থাৎ তার এখন চলে যেতে হবে। দুটি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দরা লিবিয়া এবং গাদ্দাফি ও তার ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। উদ্দেশ্য, তার সরকার ও কর্তৃত্বকে চাপে এনে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা। গত কয়েকদিনে দেশে উত্তাল পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে গাদ্দাফি মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন বলেই বিশ্ব নেতৃবৃন্দের অধিকাংশ মনে করেন। পূর্বাঞ্চলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বেনগাজিসহ অন্যান্য স্থানে বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে তিনি সেনাবাহিনী এবং এমনকি বিমানবাহিনী ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের অনেক শহরেও বিদ্রোহ চলছে এবং গাদ্দাফি ও তার পুত্র সাইফ-আল-ইসলাম গাদ্দাফি কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। সংবাদে প্রকাশ তারা স্বীয় সমর্থকদের অস্ত্র প্রদান করছেন যাতে করে বিরোধীদের সামাল দেয়া সম্ভব হয়। বিভিন্ন সূত্রের মতে লিবিয়ায় এ পর্যন্ত অন্তত দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং অনেকেই আহত হয়েছে। বিরাটসংখ্যক বিদেশী জনশক্তি দেশটি ত্যাগের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। বাংলাদেশেরও ৫০ হাজারের বেশি মানুষ দেশটিতে রয়েছে। তারাও প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন ফিরে আসার জন্য। এর মধ্যে একশর বেশি বাংলাদেশী কোনোভাবে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতি ঘণ্টায় তিউনিসিয়া ও মিসরের সীমান্ত দিয়ে অন্তত এক হাজার বিদেশী লিবিয়া ত্যাগ করছেন। তাদের দুঃখ-দুর্দশা অবর্ণনীয়। এই পরিস্থিতির শেষ কোথায়Ñ কে জানে?
অথচ লিবিয়া কয়েকদিন পূর্ব পর্যন্ত বেশ স্থিতিশীল দেশ ছিল। যদিও দেশটিতে গণতন্ত্রের কোনো বালাই ছিল না এবং মোয়াম্মের গাদ্দাফি সরবে পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়েই দৃশ্যপটে পদচারণা করেছেন। তথাপি এখানে সহসা গণবিক্ষোভ হবে এটা অনেকেই ভাবেননি। গাদ্দাফি বিপ্লবের মধ্য দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন এবং একটি সামাজিক ন্যায়বিচারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি দেশ শাসনে ব্রতী হন। সে কারণে বিভিন্ন দেশে তার অনেক অনুরাগীও রয়েছেন। অনেক আরব নেতাদের চেয়ে তিনি অনস্বীকার্যভাবেই কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমী ছিলেন। তা সত্ত্বেও দীর্ঘদিনের অগণতন্ত্রিক শাসন ও স্বীয় পুত্রকে উত্তরাধিকার করার চেষ্টাই তার বিরুদ্ধে গণরোষের উপাদান হয়ে কাজ করছে। তদুপরি, অনেক শাসক থেকে স্বচ্ছ হলেও তিনিও দুর্নীতির ঊর্ধ্বে নন বলে মনে করা হচ্ছে। গাদ্দাফি বর্তমান উত্তাল পরিস্থিতির জন্য ‘বহিঃশক্তি’ ও ‘সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করছেন। কিন্তু তার এই দোষারোপ গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। পশ্চিমা কিছু দেশ গাদ্দাফি বিরোধী হিসেবে পরিচিত। লিবিয়ার তেল সম্পদও কোনো কোনো ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের কারণ হতে পারে। তা সত্ত্বেও এটা বলা যায় যে, বর্তমানে আরব বিশ্বে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবিতে যে গণজাগরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে, সেটা মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং অন্যান্য কারণ থেকেই উৎসারিত। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য ‘জুজুর’ উপস্থিতি অনেকাংশেই অগ্রহণযোগ্য হবে এবং বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কহীনই মনে হওয়াটা স্বাভাবিক। সে কারণে গাদ্দাফির পূর্বের ‘ইমেজ’ এখন আর নেই এবং স্বীয় জনগণের রক্তে রঞ্জিত তার হাত! এ জন্যই প্রশ্ন উঠছেÑ তিনি দৃশ্যপটে আর কতোদিন?
এটা সত্য যে, লিবিয়ার পরিস্থিতি অনেকভাবেই তিউনিসিয়া এবং মিসর থেকে ভিন্ন এবং সে কারণে দেশটির এবং এর সংকটের আবর্তে বিদ্যমান নেতার ভবিষ্যৎও সেভাবে মূল্যায়ন নাও হতে পারে। গাদ্দাফি নিজেকে সব সময়ই একজন বিপ্লবী হিসেবে আখ্যায়িত করে এসেছেন। ভেনিজুয়েলার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট হুগো স্যাভেজ এবং কিউবার কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো তার সমর্থক। তথাপি গণআন্দোলনকে স্তিমিত করার লক্ষ্যে দমননীতির প্রয়োগ তার জন্য ক্রমবর্ধমানে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কারণে তিনি কতোদূর এই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারবেন তা নিয়ে গভীর সংশয় বিরাজ করছে। স্পষ্টত ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করছেন এবং সেই লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রয়াসে শক্তি ব্যবহার করছেন।
লিবিয়ায় বিকল্প সরকার গঠিত হয়েছে। দেশটির জনগণকে রক্ষার জন্য অনেক দেশই অনেক পদক্ষেপ চিন্তা করছে। ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতি কোন দিকে ধাবিত হয় বলা কঠিন। তাছাড়া মোয়াম্মের গাদ্দাফি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ এবং খামখেয়ালি হিসেবে পরিচিত। তাই কখন তিনি কী করেন তা নিয়েও সংশয় আছে। কোনো একনায়কই সহজে ক্ষমতা ছাড়েন না। আরব বিশ্বেও সেটা হচ্ছে না। তবু গাদ্দাফি কি পারবেন স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ত্যাগ করে কিছুটা ভিন্নধর্মী ‘ইমেজ’ বজায় রাখতে? নাকি তিনিও একান্ত বাধ্য না হলে দৃশ্যপট ত্যাগ করবেন না? তার বিরুদ্ধে নিজ জনগণকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। গাদ্দাফির বেশিদিন ক্ষমতায় থাকার কথা নয়। 
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদির বিশ্লেষক



মিলাদ শরীফ ও ওয়াজ মাহফিলের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন
মোঃ আবিদ মিয়ার ফাঁসি দাবী
নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ২৫ ফেব্র“য়ারী সংখ্যা সাপ্তাহিক খোঁজখবর পত্রিকায় মোঃ আবিদ মিয়া নামক জনৈক তরুনের সাথে কথোপকথোন এর ভিত্তিতে তৈরী করা “ধর্ম ব্যবসা, মিলাদ শরীফ ও ওয়াজ মাহফিলের নামে মানুষকে অতিষ্ঠ” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মিলাদ শরীফ ও ওয়াজ মাহফিলের বিরোধীতাকারী মোঃ আবিদ মিয়ার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিবাদ মিছিলের খবর আসতে থাকে। বিভিন্ন মাদ্রাসা ও খানকা কেন্দ্রিক এসব প্রতিবাদকারীরা তাকে মুরতাদ এবং আমেরিকা ও রাশিয়ার দালাল হিসেবে অভিহিত করে তার বিচার দাবী করে।
কুলাউড়া
কুলাউড়া থেকে আমাদের সংবাদ দাতা হাবিবুর রহমান ফজলু জানান, গত ২৪ ফেব্র“য়ারী বক্তব্য প্রদানকারী মোঃ আবিদ মিয়া এবং পত্রিকা সম্পাদকের বিরুদ্ধে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ বক্তারা মোঃ আবিদ মিয়াকে আমেরিকা ও রাশিয়ার দালাল হিসেবে অভিহিত করে তার বিচার ও ফাঁসি দাবী করেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উত্তর বাজার জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ নজরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন মৌলানা সোয়াইব আহমেদ, মৌলানা গিয়াস উদ্দিন, মোহাদ্দিস আবদুস সালঅম, ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারী শামীম আহমেদ প্রমুখ।
হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জ থেকে আমাদের সংবাদ দাতা মাসুক আহমেদ জানান, হবিগঞ্জ বড় মসজিদ চত্বরে গত ২৫ ফেব্র“য়ারী সংখ্যা সাপ্তাহিত খোঁজখবরে প্রকাশিত মিলাদ ও ওয়াজ মাহফিলের বিরুদ্ধে মোঃ আবিদ মিয়ার বক্তব্যের প্রতিবাদ এক সমাবেশ  অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মোঃ আবিদ মিয়ার ফাঁসি দাবী করা হয়। বক্তারা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি না করলে তৌহিদি জনতা এর সমুচিত জবাব দেবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারন করা হয়। বক্তব্য রাখেন মৌলানা আবদুস শহীদ নাসিম, মৌলানা মোবারক হোসেন ও বাজার সমিতির সভাপতি আনিস আহমেদ, সেক্রেটারী মাসুদুর রহমান প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন খলিলুর রহমান আজাদী।
খুলনা বিভাগ
খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের সংবাদদাতা মুনসুর আহমেদ, খলিলুর রহমান ও শাহবাজ খান জানান, মোঃ আবিদ মিয়ার বিচারের দাবীতে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। অংশগ্রহনকারী বক্তারা মোঃ আবিদ মিয়া ও সংশ্লিষ্ঠ পত্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করে বক্তব্য রাখে এবং তাদের আমেরিকা ও রাশিয়ার দালাল হিসেবে অভিহিত করে বক্তব্য দেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজসেবক নাসিমুল গনি। বক্তব্য রাখেন মৌলানা ইমতিয়াজ উদ্দিন, সাদেকুর রহমান, মজিদ বক্স, আব্দুল গনি, আব্দুল মজিদ, হাবিবুর রহমান, হামিদ খান ও নূর মোহাম্মদ।   

1 টি মন্তব্য: