Year-17 # Issue-48 # 21 February 2011

সাড়ে ৭ বছর পর ইউপি নির্বাচন
নিজস্ব প্রতিবেদক
স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে দীর্ঘ সাড়ে ৭ বছর পর ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্ততি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আসন্ন এই ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ইসি। চলতি মাসে তফসিল ঘোষনার পর আগামী মার্চ ও মে মাসে দেশের ইউপিগুলোতে কয়েক দফায় নির্বাচন অুষ্ঠিত হবে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশনে ঘুরে দেখা গেছে, তফসিল ঘোষণা, ভোটগ্রহণের সরঞ্জামাদির সংগ্রহ করা, ভোটার তালিকা পর্যালোচনা, ভোটগ্রহণের তদারকিসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে চিঠি চালাচালিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কমিশনের কর্মকর্তা কর্মচারিরা। ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে উপকূলবর্তী এলাকা দিয়ে শুরু হবে এবারের ইউপি নির্বাচন। এরপর শুরু হবে অপক্ষোকৃত শুষ্কপ্রবণ এলাকার ইউপিগুলোতে।
ঝড়, বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বিবেচনায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী এবার দেশের ৪ হাজার ২২৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসএসসি পরীক্ষার কারণে এপ্রিলে ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকলেও মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত কয়েক দফায় ইউপিগুলোর নির্বাচন ্অনুষ্ঠিত হবে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, এ মাসের শেষের দিকে প্রাথমিকভাবে উপকূলীয় ২৮-৩০টি উপজেলায় ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিলের পর পরই জেলা প্রশাসকদের কাছে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে চিঠি দেয়া হবে। এবারে নির্বাচন অন্য যে যে কোন ইউপি নির্বাচন থেকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 
ভ্যাট ছাড়াই নৌযানের রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর
এইচ আর সাগর
ভ্যাট ছাড়াই নৌযানের রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর। এছাড়া প্ল্যান, ডিজাইন, স্টাবিলিটি বুকলেট, ইনক্লাইনিং টেস্ট, সার্টিফিকেট অব কম্পায়েন্স, নির্মাণ তদারকি সনদ, কিল লেয়িং সনদ, ডক ইয়ার্ড সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া এবং যাত্রী সংখ্যা কম দেখিয়ে ত্রুটিপূর্ণ নৌযানের সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে। এমনকি ড্রেজারকে ডাম্পবার্জ হিসাবে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। এভাবে কারিগরি ও আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে নৌযানের রেজিস্ট্রেশন দেয়ায় প্রতিবছর বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট নৌযানের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অধিদফতরের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য অনিয়ম-দুর্নীতি ও সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়ায় সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে। ড্রেজারসহ নৌযানের রেজিস্ট্রেশনে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে আরো একটি তদন্ত চলছে। কিন্তু তদন্তে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকায় সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের নারায়নগঞ্জ অফিসে নৌযানের সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশনে অনিয়মের খবর প্রকাশিত হলে অধিদফতর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। চট্টগ্রামস্থ নৌবাণিজ্য অধিদফতরের ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এএফএম সিরাজুল ইসলামকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। গত ১০ জানুয়ারি অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিদফতরের নারায়নগঞ্জ ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এন্ড ইনল্যান্ড শিপ রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে ২০০৯ সালেরর অক্টোবর থেকে ২০১০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মালবাহী, যাত্রীবাহী, বালুবাহী ও ড্রেজারসহ ৪০৩টি নৌযানের শুধু রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। এসময়ে অধিদপতরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) একেএম ফখরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ও মাসুম খান ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এন্ড ইনল্যান্ড শিপ রেজিস্টারের দায়িত্ব পালন করেন। তবে এরমধ্যে মাসুম খান বর্তমানে কর্মরত নারায়নগঞ্জ কার্যালয়ে। ফখরুল ইসলাম নতুন মালবাহী/যাত্রীবাহী ৯৫টি এবং ড্রেজার/বালুবাহী ২৮২টি নৌযানের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছেন। শফিকুল ইসলাম কোনো রেজিস্ট্রেশন না দিলেও মাসুম খান দিয়েছেন ১টি মালবাহী ও ২৫টি বালাবাহী নৌযানের রেজিস্ট্রেশন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফখরুল ইসালামের প্রদান করা রেজিস্ট্রেশনের মধ্যে ২৩টি এবং মাসুম খানের ২টি নৌযান পরীক্ষা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমবি চরমোনাই-২ (এম নং ১১৩১২) যাত্রীবাহী নৌযানটি (পরিমাপ দৈর্ঘ্য ১৫.২৪ মিটার প্রস্থ ৩.৬৬ মিটার এবং গভীরতা ১.০৬ মিটার) নারায়নগঞ্জ অফিস থেকে গত বছরের ১৫ মার্চ ফখরুল ইসলাম রেজিস্ট্রেশন দেন। নৌযানটির মালিক ১৫জন যাত্রীর অনুকূলে রেজিস্ট্রেশনের আবেদন করলে ১৫জনেরই রেজিস্ট্রেশন সনদ জারি করা হয়। কিন্তু যাত্রী সংখ্যা নির্ধারণের নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। কারণ এ যাত্রী সংখ্যা অনুপাতে ভ্যাট ও আয়কর নির্ধারণ করা হয়। রেজিস্ট্রেশনের সময় যাত্রীপ্রতি ৪৫০ টাকা ভ্যাট এবং ৫০ টাকা আয়কর হিসাবে রাজস্ব পেয়ে থাকে সরকার। পরবর্তীতে প্রতিবছর ৫০ টাকা হারে আয়কর এবং যাত্রী কল্যাণ তহবিলে যাত্রীপ্রতি ১০ টাকা জমা দিতে হয়।  জিএ প্ল্যান ও অভ্যন্তরীণ জাহাজ (যাত্রী) বিধিমালা ২০০১ অনুচ্ছেদ ৭(খ)(অ) অনুযায়ী জাহাজটির যাত্রীসংখ্যা ৪৫জন হওয়ার কথা। ফলে কম দেখানো ৩০জন যাত্রী বাবদ সরকারী প্রাপ্য রাজস্ব ১৫ হাজার টাকা ফাঁকি দেয়া বা আত্মসাৎ করা হয়েছে। একটি জাহাজের আয়ুস্কাল ৪০ বছর ধরা হলেও যাত্রী সংখ্যা কম দেখানোর ফলে বর্তমান হারে অন্তত ৭৫ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। জাহাজ সংক্রান্ত নথিতে রক্ষিত একটি পৃষ্ঠায় ২৪ হাজার টাকা মালিক প্রদান করেছেন বলে উল্লেখ রয়েছে। এ টাকা যাত্রী সংখ্যা কম দেখানোসহ অন্যান্য অনিয়মের জন্য ঘুষ প্রদান করা হয়েছে সার্ভেয়ারকে।
লক্কর-ঝক্কর গাড়ি নিয়েই ডিউটি করছে পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মেয়াদোত্তীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী গাড়ি নিয়ে ডিউটি করতে গিয়ে পুলিশকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি ও দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়াও থানায় ডিউটি করার জন্য পর্যাপ্ত গাড়ি নেই। সেই সঙ্গে বেশি পুরনো ও ভাঙা গাড়ি দিয়ে টহল পুলিশকে ডিউটি করতে হয়। এ কারণে ডিউটির জন্য পুলিশকেই বেসরকারি পর্যায়ে গাড়ি রিক্যুইজিশন করতে হয়। স্বরাষ্ট্র সচিব আব্দুস সোবহান শিকদার বলেছেন, পুলিশের পরিবহন সমস্যা একদিনে দূর করা সম্ভব নয়। পরিবহন সংকট দূর না হওয়া পর্যন্ত রিক্যুইজিশন করা গাড়ি নিয়েই পুলিশকে কাজ চালাতে হবে। আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছেন, পুলিশের গাড়ি সংকট দীর্ঘদিনের। কোনো ঘটনা ঘটলে গাড়ির অভাবে পুলিশকে নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। তারপরও যানবাহন সংকট দূর করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এডিসি (পুল) তাপতুন নাসরীন বাংলাদেশ সময়কে বলেন, পুলের ১০ শতাংশ গাড়ি প্রায় সময়ই নষ্ট থাকে। কখনো এর পরিসংখ্যান বাড়ে আবার কখনো কমে। তিনি আরো বলেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রতিদিন গড়ে ৫০/৬০টি নষ্ট গাড়ি পাঠানো হয়। কাজের প্রকারভেদ বিবেচনা করে প্রতিদিন গড়ে ১০/১২টি গাড়ি মেরামত করা সম্ভব হয়। পুলিশ সদরদফতরের একাধিক সূত্র মতে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গাড়ি রয়েছে ১ হাজার ৪১২টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৯৫২টি। এর বাইরে পিকআপ ভ্যান ২৬০টি, জিপ ৯২টি, পেট্রোল জিপ ২১টি, মাইক্রোবাস ২৬টি, বাস ১৬টি, রায়ট কার ৮টি, অ্যাম্বুলেন্স ৫টি ও প্রিজনভ্যান ১৫টি। যানবাহনগুলোর শতকরা ৬০ ভাগই ব্যবহার অনুপযোগী।
পুলিশের পরিবহনপুল সূত্র মতে, প্রতিটি থানায় একটি করে প্রিজনভ্যান থাকার কথা থাকলেও এখনো তা নিশ্চিত করা যায়নি। পরিবহন সংকট থাকায় একটি পিকআপে কয়েকটি থানার আসামি গাদাগাদি করে আদালতে নিতে হচ্ছে।
রাজধানীর একাধিক থানার অফিসার ইনচার্জ জানিয়েছেন, রাজধানীতে পুলিশের যেসব গাড়ি চলছে তার বেশিরভাগই লক্কর-ঝক্কর হওয়ায় রাস্তার মাঝখানে অচল হয়ে  পড়ে। অনেক সময় পুলিশ সদস্যদেরই বিকল হয়ে যাওয়া গাড়ি ঠেলে গন্তব্যস্থলে যেতে হয়।  তারা বলেন, নষ্ট গাড়ি ঠিক করার জন্য নামমাত্র বরাদ্দ রয়েছে। আবার ওই অর্থ পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। চিহ্নিত সন্ত্রাসীর অবস্থানের তথ্য জানার পরও গাড়ির অভাবে সময় মতো অভিযান চালানো সম্ভব হয় না বলে দাবি করেছেন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের মতে, ডিএমপি কমিশনার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার পুলিশের যাতায়াত ও ডিউটির জন্য মাত্র সাড়ে ৫শ’ গাড়ি রয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেকই ২০ বছরের বেশি পুরানো।
দুর্নীতির মচ্ছব ডোবাচ্ছেআওয়ামী লীগকে সময় থাকতে লাগাম টেনে ধরুন
ড. মইনুল ইসলাম
বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমানের ওপর আওয়ামী লীগের নেতা-পাতিনেতা-কর্মী এবং মন্ত্রী-সান্ত্রীরা মহাখাপ্পা। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এদেশের জনগণের ঋৎরবহফ-ঢ়যরষড়ংড়ঢ়যবৎ-মঁরফব হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন এই মনীষী-বিচারপতি বিবেকের তাড়নায় কয়েক মাস আগে যখন জাতিকে সাবধানবাণী শুনিয়েছিলেন, ‘দেশ আজ বাজিকরদের দখলে’ তখন শাসকদল হিসেবে আওয়ামী লীগের আঁতে ঘা লাগাটাই ছিল স্বাভাবিক। আর এই সুযোগে দুর্নীতির মহাসাগরে পুরো জাতিকে হাবুডুবু খাওয়ানো, লুটপাটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিএনপি যখন তার কথার উদ্ধৃতি দিয়ে মহানন্দে বগল বাজানোর মওকা পেয়ে গিয়েছিল তখন শাসকদলের ‘গোস্বা’ তুঙ্গে ওঠাই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-সান্ত্রী-নেতা-পাতিনেতাদের প্রতি আমার আহ্বান, সময়োচিত এই কঠোর সমালোচনা বিচারপতি হাবিবুর রহমান আপনাদের একজন ‘পরম বন্ধু’ হিসেবেই করেছেন। এই সমালোচনার একটি শব্দ কিংবা বাক্যও মিথ্যা নয়। তাই তাকে অবিবেচকের মতো অহেতুক আক্রমণ করে নিজেদের সর্বনাশকে ত্বরান্বিত করবেন না। আÍজিজ্ঞাসা, আÍবিশেষণ এবং আÍসমালোচনাই এখন আপনাদের করণীয়Ñ ভুল সংশোধনের এই সুবর্ণ সুযোগ হারাবেন না, আলাহর ওয়াস্তে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করে তাই এ নিবন্ধটি লিখছি। আপনি ক্রোধ সংবরণ করে, দলের নেতাকর্মী এবং আপনার নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপদেষ্টাদের জিহ্বার লাগাম টেনে ধরুন। বিচারপতি হাবিবুর রহমান আপনাদের পরম সুহƒদ ও শুভানুধ্যায়ী। এই বিরল জ্ঞানী ব্যক্তিটিকে বর্তমান সময়ে ‘জাতির বিবেক’ বলা চলে। তাকে গালমন্দ করা আপনাদের জন্য বড়ই অশোভন। তার বক্তৃতাটির তাৎপর্য হƒদয় দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। তার অগাধ পাি ত্যের কারণে অনেকগুলো কথা তিনি কিছুটা আড়ালে রেখে বলেছেন। সেগুলো সরাসরি বললে চিত্রটা আরও বোধগম্য হতো বৈ কি!
হ্যাঁ, আপনার নেতৃত্বাধীন সরকারের গত ২৫ মাসের সাফল্যের পালাটা এখন তুলনামূলকভাবে ভারি। কিন্তু সাম্প্রতিক পৌর নির্বাচনগুলোয় বিএনপির অপ্রত্যাশিত সাফল্য এবং আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের বিপর্যয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে আমি চিহ্নিত করব দুর্নীতিকেই। বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-২০০৬ শাসনামলের লুটপাট ও দুর্নীতির পাবনকে গত চার বছরে মানুষ ভুলে গেছে অনেকখানি; আওয়ামী লীগের দু’বছরের শাসন জনগণের স্মৃতিতে অনেক বেশি ভাস্বর। আর দুর্নীতি দমনের অঙ্গীকার যেহেতু আওয়ামী লীগের ‘দিন বদলের সনদের’ অন্যতম প্রধান স্তম্ভ ছিল, তাই এক্ষেত্রে মানুষের যেভাবে আশাভঙ্গ ঘটেছে, সেটাই আওয়ামী লীগ থেকে ভোটারদের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যে জন্য ভবিষ্যতের ইতিহাস আপনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে সেটি হল সুপরিকল্পিতভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নখদন্তহীন করে আবারও পুরনো দুর্নীতি দমন ব্যুরোর আদলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আÍঘাতী পদক্ষেপ। এই সর্বনাশা পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে আপনাদের ‘দিন বদলের সনদ’ ইতিমধ্যেই কট্টর আওয়ামী লীগার ছাড়া জনগণের বৃহদাংশের কাছে উপহাসের নামান্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ মহলগুলোর কাছে ‘ভুল সিগন্যাল’ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. গোলাম রহমান বহুবার পত্রপত্রিকায়, সভা-সেমিনারে বক্তব্য রেখেছিলেন, কমিশন ক্রমশই ‘নখদন্তহীন ব্যাঘ্রে’ পরিণত হয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রিসভার সভায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের যে খসড়া সংশোধনী নীতিমালা নীতিগতভাবে গৃহীত হয়েছে সেগুলো সংসদে পাস হলে তার বহুল প্রচারিত ওই আশংকা পুরোপুরিই সত্য প্রমাণিত হবে নিঃসন্দেহে। সেজন্য সময় থাকতেই এই সর্বনাশা পথ থেকে সরে আসার মিনতি জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগের একজন শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে আমার আকুল আবেদন, আÍঘাতী এ পথ থেকে ফিরে আসুন। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরুন। দুর্নীতির মচ্ছব আওয়ামী লীগকে ডোবাচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের ‘লাইসেন্স’ প্রদানের বর্তমান অবস্থান পরিবর্তন করুন। এই আহ্বানটা কেন জানালাম, তা খোলাসা হবে নিচের আলোচনা-বিশেষণটা মনোযোগ সহকারে পড়লে।
বর্তমানে মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী তাদের সততা এবং কার্যক্রমের সফলতার জন্য জনমনে ছাপ ফেলেছেন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারের সফলতম মন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এবারও তার সততা ও কর্মদক্ষতার গুণে বর্তমান মন্ত্রিসভার সবচেয়ে জননন্দিত ও জনপ্রিয় মন্ত্রী নিঃসন্দেহে। কিন্তু এবার তিনি বেশ কয়েকজন সফল প্রতিযোগী পেয়ে গেছেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তার কার্যক্রমের মাধ্যমে মন জয় করে নিয়েছেন জনগণের। অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের সাফল্যের রেকর্ডও সাম্প্রতিক শেয়ারবাজারের বিপর্যয়ের আগে যথেষ্ট ভালো ছিল। তার মতো একজন মেধাবী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেনÑ এটা জাতির বিশাল একটা ভরসার স্থল বলা চলে। এদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনিও তার দায়িত্ব দ্রুত শিখে নিতে পেরেছেন, তারও সুনাম রয়েছে। শিল্পমন্ত্রী দীলিপ বড়-য়াও যথেষ্ট শ্রম সহকারে দায়িত্ব পালন করছেন বোঝা যায়। আইনমন্ত্রী এবং খাদ্যমন্ত্রীও যথেষ্ট ভালো করছেন। এই সাফল্যের উল্টো পিঠে ব্যর্থ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বোধগম্য কারণেই তাদের নাম উচ্চারণ করতে চাই না। তবে বর্তমান সরকারের গত দু’বছরের শাসনকালের ব্যর্থতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করলেই তাদের চেনা যাবে সহজে। বেশির ভাগ ব্যর্থতার দায়ভার বর্তমান সরকারের কাঁধে চেপেছে লুটেরা-দুর্নীতিবাজ বিএনপি-জামায়াত সরকারের ২০০১-২০০৬ মেয়াদের ‘লিগ্যাসি’ হিসেবেই। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু’বছর এবং বর্তমান সরকারের দু’বছরÑ এই চার বছরে এসব সমস্যার সুরাহা হয়ে যাওয়াটা খুবই সম্ভব ছিল, কিন্তু হয়নি। এজন্যই জনগণের রোষানল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাকে ধসিয়ে দিচ্ছে দিন দিন। ব্যর্থতার প্রধান ক্ষেত্রগুলো হল :
১। যোগাযোগ খাতের ব্যর্থতা সারাদেশের সড়ক ও রেল যোগাযোগকে ধসিয়ে দিয়েছে। ঢাকা নগরীর ট্রাফিক জ্যাম মিডিয়াতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেলেও সারাদেশের মহাসড়ক, শহর-নগরের রাস্তাঘাট, মফস্বল শহরের রাস্তাঘাট এবং গ্রামীণ জনপদের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা এবং খানা-খন্দকময় ভাঙাচোরা অবস্থা মানুষের জীবনকে প্রতিনিয়ত বিপর্যস্ত করে চলেছে। সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রাম ভ্রমণ এখন ১০ ঘণ্টায়ও সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। বিশেষত দেশের রেল যোগাযোগ প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কথা ছিল, রেল বিভাগকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক করে আলাদা একজন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে অগ্রাধিকার সহকারে তার আধুনিকায়ন করা হবে। এ কাজটা আটকে আছে কেন? পদ্মা সেতুর খরচ টা: ২০,৫০৭ কোটিতে টেনে তোলার মর্তবা কী? এটাতে কী মার্জিন-শিকারীদের দুর্নীতির মচ্ছব হতে যাচ্ছে? এরকম কিছু খায়েস কারও থাকলে ওই সর্বনাশা খেলা বন্ধ করা হোক। নয়তো পদ্মা সেতুই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ডোবাবে, আগেভাগেই বলে রাখছি। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির জননেতা তোফায়েল আহমেদ সংসদে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপর্যস্ত অবস্থা তুলে ধরার পর যেভাবে সংসদে তার পক্ষে সোচ্চার সমর্থনের হর্ষধ্বনি শুনলাম আমরা, তাতে এ মন্ত্রণালয় নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেই যে তোলপাড় চলছে সেটা বোঝা গেল। কিছু একটা করুন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! মেধাবী, দক্ষ ও নীতিবান নেতৃত্বের প্রয়োজন দেশের এই মহাগুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে।
২। মুদ্রাস্ফীতির দায়ভারটাও সরকারকেই নিতে হবে। বাংলাদেশের বাজার যেহেতু ক্রমবর্ধমানভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে, তাই এহেন মুদ্রাস্ফীতির প্রকোপের জন্য আমদানি-বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতিকেই অনেকখানি দায়ী করা চলে। কিন্তু বাজারের যোগসাজশমূলক অলিগোপলিস্ট খেলোয়াড়রাও ধুমসে মুনাফাবাজি করছে মজুতদারি, ডিও ব্যবসা, সহজলভ্য ব্যাংকঋণের সহায়তায় এবং আমদানি প্রবাহের ইচ্ছাকৃত হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটানোর মাধ্যমে। মুক্তবাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে সরকারের রেগুলেটরি ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার পথে আমদানিকারকদের শক্তিশালী লবিগুলোর নিরন্তর লবিয়িং দুর্লংঘ্য বাধার দেয়াল খাড়া করে রেখেছে। প্রস্তাবিত ‘ঋধরৎ ঈড়সঢ়বঃরঃরড়হ অপঃ’-এর খসড়া এক বছর আগেই প্রণীত হওয়া সত্ত্বেও তা সংসদে কিংবা মন্ত্রিসভায় আজও উপস্থাপন করা হয়নি। আমাদের রাঘব বোয়াল-মুনাফাবাজ ব্যবসায়ী নেতারা মিডিয়াতে সোচ্চার গলাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির এ যুগে বাজারে সরকারি হস্তক্ষেপের তেমন সুযোগ নেই। কিন্তু এসব লুটেরা পুঁজিবাদের ধ্বজাধারীরা ঠিকই জানেন, তাদের স্বপ্নরাজ্য খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই বাজারে এ ধরনের মুনাফাখোরি বহুদিন আগেই বেআইনি একচেটিয়া কার্যক্রম হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষিত হয়েছে। সেজন্যই প্রায় বছরখানেক আগে আমার এক নিবন্ধে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চারটি আইনের ধারা থেকে সরকারকে পথনির্দেশ গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আইনগুলো হল : (র) ঝযবৎসধহ অহঃর-ঞৎঁংঃ অপঃ, (রর) ঈষধুঃড়হ অপঃ, (ররর) ঈড়হংঁসবৎং’ জরমযঃং চৎড়ঃবপঃরড়হ অপঃ এবং (রা) ঋউঅ (ঋড়ড়ফ ধহফ উৎঁম অফসরহরংঃৎধঃরড়হ)-এর সর্বশেষ আইনি নীতিমালা।
গণতন্ত্রের পথে এখনও অনেক প্রতিবন্ধকতা
মিসরে প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের শাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে একটি অনবদ্য অধ্যায় রচিত হয়েছে সত্য, তবে দেশটি এখনও পরম আকাক্সিক্ষত গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সংস্কার থেকে দূরে। জনগণ এ পর্যন্ত যতটুকু অর্জন করেছে, মিসরের মতো স্বৈরশাসনের দেশে সেটা সন্দেহাতীতভাবে অভাবিত ও প্রশংসনীয়। ১৯৫২ সালে রাজতন্ত্র উচ্ছেদের পর জামাল আবদুল নাসের, আনোয়ার সাদাত এবং সর্বশেষ হোসনি মোবারকের দীর্ঘ শাসন ছিল মূলত গণতন্ত্রবহির্ভূত বিভিন্ন বেশে একনায়কতন্ত্র। এর মধ্যে মোবারকই অস্বাভাবিক দীর্ঘ সময় অর্থাৎ ত্রিশ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং গণবিক্ষোভ শুরু হওয়ার কিছুদিন আগেও তেমন কোন সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি যে, তার শাসনের সমাপ্তি ঘনিয়ে এসেছে। তীব্র গণআন্দোলনে শক্ত মানব মোবারকের বিদায় নিঃসন্দেহে সমকালীন মিসরের ইতিহাসে সংযোজিত করেছে একটি উজ্জ্বল প্রস্তর। যে দেশটিতে রাষ্ট্র শাসনের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা প্রায় নেই বললেই চলে, সেই মিসরের ঘটনাপ্রবাহ এবার ঘটেছে গণমানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য আকুল জনগণ কি সেই প্রত্যাশিত স্বপ্ন অর্জন করতে যাচ্ছে? তারা কি পারবে প্রাথমিক বিজয়ের পর সামনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে? এ প্রশ্নগুলোই বর্তমানে মোবারক-পরবর্তী সময়ে বেশি করে আলোচিত হচ্ছে এবং দেশটির আগামী দিনের রূপরেখা এ উপাদানগুলোর মাঝেই বেশি করে নির্ভর করছে।
মোবারকের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে সেনাবাহিনীর সুপ্রিম কাউন্সিল, যার নেতৃত্বে রয়েছেন দেশরক্ষা মন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ হোসেন তানতাভি। ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সোলায়মানের এই চালচিত্রে কোন ভূমিকা আছে কিনাÑ সেটা স্পষ্ট নয়। তবে ভূমিকা থাকলেও সেটা যে বড় নয়, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ কম। ওমর সোলায়মান, যিনি দীর্ঘদিন গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং মোবারকের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত, গণআন্দোলনের সময়ই প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োজিত হন এবং শেষ সময় পর্যন্ত মোবারককে সমর্থন ও সহায়তা করেন।
ধারণা করা হচ্ছে, নবনিযুক্ত ভাইস প্রেসিডেন্টই বৃহস্পতিবার হোসনি মোবারককে ক্ষমতা না ত্যাগ করতে প্রভাবিত করেন এবং সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বপদে থাকতে উৎসাহিত করেন। অথচ সেদিনই মোবারকের পদত্যাগের ঘোষণা করা হয়েছিল। হোসনি মোবারক সেটা করেননি। বরং সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে থেকে যেতে এবং তার ক্ষমতার একটি বড় অংশ ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে হস্তান্তরের ঘোষণা দেন। এতে সেনাবাহিনীর কতটুকু সমর্থন ছিল, তা স্পষ্ট নয়। ওমর সোলায়মানও মোবারকের মতোই রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং তাকে বেশ কঠোর মনে হয়েছে এই কারণে যে, তিনি বিক্ষোভকারীদের ‘ঘরে ফিরে যাবার’ উপদেশ এবং প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ঘোষিত রাজনৈতিক সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেন। মোবারক ও সোলায়মানের ঘোষণা ‘তাহরির স্কোয়ারে’ সমবেত জনতাকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ করে তোলে। পরের দিন শুক্রবারের জুমার নামাজের পর মহাসমাবেশে এক অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং বিক্ষোভকারীরা প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্টের প্যালেস ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের দিকে ধাবিত হয়। পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে, যখন গণবিক্ষোভের আকার ব্যাপক হয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে প্রসারিত হতে থাকে। এমনি পরিস্থিতিতেই মোবারকের পদত্যাগের ঘোষণা আসে এবং সেটা ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সোলায়মানই বিমর্ষ বদনে টেলিভিশনে বলেন।
ওমর সোলায়মান কি স্বপদে আছেন? প্রথমে ধারণা করা গিয়েছিল, সুপ্রিম কাউন্সিল ক্ষমতা গ্রহণ করার পর তিনি আর নেই। অনেকেই মনে করেছেন, ভাইস প্রেসিডেন্টের অবস্থান আর নেই। তবে পরবর্তী সময়ে মনে হয়েছে তিনি রয়েছেন। কিন্তু তার তেমন কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। ক্ষমতা স্পষ্টত সেনাবাহিনীরই কাছে। ক্ষমতার দ্বন্দ¡ও বিদ্যমান। সুপ্রিম কাউন্সিলের বিভিন্ন ঘোষণা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ এবং তা গভীরভাবে সর্বক্ষেত্রে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। একদিকে সেনাবাহিনী মোবারকের ধারা বিঘিœত করতে অনাগ্রহী বলে মনে হচ্ছে এবং অন্যদিকে জনগণের অনুভূতির সঙ্গে একাু হওয়ার চেষ্টা করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। একটি ঘোষণায় জনগণকে পুলিশের সাহায্য নিতে বলা হয়েছে। অথচ এই পুলিশ গণবিক্ষোভের সময় যে ভূমিকা রেখেছে সেজন্য প্রচ ভাবে সমালোচিত। আরেকটি ঘোষণায় মিসরের সঙ্গে সব আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি সম্মান দেখানোর কথা বলা হয়েছে। স্পষ্টত এটা ইসরাইলের কথা মনে রেখেই বলা হয়েছে এ জন্য যে, ১৯৭৯ সালের তেল আবিব-কায়রো শান্তিচুক্তি আগামীতে মিসর কতদূর মানবে, তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়। এ ঘোষণাগুলোতে এটাই অনুধাবন করা যায়, সেনাবাহিনী আগের অনেক কিছু বজায় রাখতে আগ্রহী। তবে তারা গত ত্রিশ বছরের জরুরি আইন প্রত্যাহার এবং আগামীতে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন।
কিন্তু সেনাবাহিনী মোবারকের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপের কথা রোববার পর্যন্ত বলেনি। অথচ সাবেক প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের যেসব সংবাদ এখন বেরিয়ে আসছে, সেটা ব্যাপকই নয়, কল্পনাতীত। রাজনৈতিক নির্যাতনের বিষয়টিও আছে। অবশ্য সুপ্রিম কাউন্সিল গণবিক্ষোভে নিহতদের প্রতি গভীর সম্মান প্রদর্শনের কথা বলেছে।
মিসরে জনগণের আন্দোলনে বিশাল অর্জন সাধিত হলেও ক্ষমতায় এসেছে সেনাবাহিনী। এই সেনাবাহিনী মোবারকের সময় সমৃদ্ধ হয়েছে। আমেরিকা থেকে বছরে ১.৫ বিলিয়ন ডলার সামরিক সাহায্য পেয়ে আসছে। তা সত্ত্বেও জনগণের অনুভূতির প্রতি গণজোয়ারের কারণে সেনাবাহিনী উদাসীন থাকতে পারেনি। তবে তাদের আগামী দিনের ‘এজেন্ডা’ মিসরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি বিশেষ করে ইসরাইলের স্বার্থ ও মিসরের বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের কৌশল ও স্বার্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিরোধী কণ্ঠস্বর আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার সাবেক প্রধান মোহাম্মদ এল বারাদির মতে, তার দেশ মিসরে গণতন্ত্র আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্র আসেনি। নীল নদের দেশ ও প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম পাদপীঠ মিসরের চলমান ঘটনাপ্রবাহ গৌরবোজ্জ্বল সন্দেহ নেই। এটা যেমন সত্যি, এটাও সত্য যে, সামনের পথটিও বেশ বন্ধুর এবং প্রতিবন্ধকতায় পরিপূর্ণ। প্রজ্ঞা ও আন্তরিকতা প্রদর্শন করেই জনগণ এবং শাসন ক্ষমতায় আসীনরা দেশটিকে প্রত্যাশিত গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সংস্কারের অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারে। তবে গতিপথ বেশ কঠিন, যদিও সেটা অতিক্রমযোগ্য। অফুরন্ত সম্ভাবনাকে কতদূর কার্যকরী করা যায় মিসরে, সেটা এখন দেখার ব্যাপার। সেনাবাহিনী আবারও বলেছে, তারা গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সেভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তবে কবে নাগাদ তা স্পষ্ট নয়। তথাপি এ লক্ষ্যেই মিসর ধাবিত হবে বলে মনে করা যেতে পারে।

ধর্ম ব্যবসা, মিলাদ শরীফ ও ওয়াজ মাহফিলের নামে মানুষকে অতিষ্ঠ করার নিন্দা
-মোঃ আবিদ মিয়া


খোঁজখবর প্রতিবেদন
মোঃ আবিদ মিয়া একজন সচেতন তরুন। মুসলমান সমাজে প্রচলিত অনেক ভন্ডামী তার পছন্দ নয়।  মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এবং ধর্ম ব্যবসা তথা সুন্নতে খাতনার অনুষ্ঠান,  মিলাদ মাহফিল ও ওয়াজের নামে পয়সা কামাই যাদের পেশা তাদের বিরুদ্ধে তিনি প্রকাশ্যে প্রতিবাদকারী। তিনি মনে করেন ওয়াজ মাহফিল ও মিলাদের নামে যারা এক রাতে একাধিক স্থানে দাওয়াত রেখে বয়ান ও দোয়া দুরুদে অংশ নিয়ে হাদিয়া গ্রহন করে এবং পকেট ভর্তি করে টাকা নিয়ে নিজের সম্পদ বাড়ায় তারা ইসলামের প্রকৃত সেবক নয়।  তাদের নিন্দা জানানো সবার উচিৎ।
প্রচলিত ওয়াজ মাহফিলের যারা আয়োজনকারী এবং যারা অংশ নিয়ে বয়ান করে টাকা কামায় তাদের উদ্দেশ্য সৎ নয় বলেও তিনি মনে করেন। তার মতে ওয়াজ মাহফিল উপলক্ষ্যে মাইকে এবং সংবাদ পত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারনা চালানো হয়। আমার বাড়ী হবিগঞ্জ শহরে। আমার বাড়ীর চারপাশে রয়েছে বেশ কটি মসজিদ ও মাদ্রাসা। প্রায় প্রতিটিতেই বছরের কোন কোন সময় ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। কোন সময় দেখা যায় এক সাথে একাধিক স্থানেও ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন হয়ে থাকে। স্থানীয় পত্র পত্রিকা এবং মাইকিং এর সাহায্যে ওয়াজ মাহফিলের প্রচারনা চালানো হয়। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনা এবং রোগীদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তার চেয়েও বড় সমস্যা হচ্ছে রাতভর ওয়াজ মাহফিল পরিচালনা। মাইকের আওয়াজ পুরো এলাকাবাসীর ঘুম হারাম করে দেয় ওরা। রোগী শিশু এবং ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে এরা ধর্ম ব্যবসা চালিয়ে যায়। কারন যারা ওয়াজ করে তারা পয়সা নেয়। আর এক রাতে একাধিক স্থানে মাহফিলে যোগ দিয়ে পকেট ভরে পরের টাকায়। এরা কিন্তু ধর্ম ব্যবসায়ী। এত প্রচারনার পর যে মাহফিল তারা করে ইচ্ছে করলে তা প্যান্ডেলের ভিতরে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে। কম ভলিউমের মাইক ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু তারা তা না করে অর্ধ-কিলোমিটার পর্যন্ত তার টেনে মাইক নিয়ে যায় এবং ৩-৪ কিলোমিটার পর্যন্ত সে মাইকের আওয়াজ পৌছানো হয়। যা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ী এবং মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। এরা মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদের ও সমর্থক। উদ্দেশ্য থাকে প্রচারনা দিয়ে টাকা কামানো, এগুলো বন্ধ করা উচিত।

লক্কর-ঝক্কর গাড়ি নিয়েই
ডিউটি করছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মেয়াদোত্তীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী গাড়ি নিয়ে ডিউটি করতে গিয়ে পুলিশকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি ও দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়াও থানায় ডিউটি করার জন্য পর্যাপ্ত গাড়ি নেই। সেই সঙ্গে বেশি পুরনো ও ভাঙা গাড়ি দিয়ে টহল পুলিশকে ডিউটি করতে হয়। এ কারণে ডিউটির জন্য পুলিশকেই বেসরকারি পর্যায়ে গাড়ি রিক্যুইজিশন করতে হয়। স্বরাষ্ট্র সচিব আব্দুস সোবহান শিকদার বলেছেন, পুলিশের পরিবহন সমস্যা একদিনে দূর করা সম্ভব নয়। পরিবহন সংকট দূর না হওয়া পর্যন্ত রিক্যুইজিশন করা গাড়ি নিয়েই পুলিশকে কাজ চালাতে হবে। আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছেন, পুলিশের গাড়ি সংকট দীর্ঘদিনের। কোনো ঘটনা ঘটলে গাড়ির অভাবে পুলিশকে নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। তারপরও যানবাহন সংকট দূর করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এডিসি (পুল) তাপতুন নাসরীন বাংলাদেশ সময়কে বলেন, পুলের ১০ শতাংশ গাড়ি প্রায় সময়ই নষ্ট থাকে। কখনো এর পরিসংখ্যান বাড়ে আবার কখনো কমে। তিনি আরো বলেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রতিদিন গড়ে ৫০/৬০টি নষ্ট গাড়ি পাঠানো হয়। কাজের প্রকারভেদ বিবেচনা করে প্রতিদিন গড়ে ১০/১২টি গাড়ি মেরামত করা সম্ভব হয়।
পুলিশ সদরদফতরের একাধিক সূত্র মতে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গাড়ি রয়েছে ১ হাজার ৪১২টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৯৫২টি। এর বাইরে পিকআপ ভ্যান ২৬০টি, জিপ ৯২টি, পেট্রোল জিপ ২১টি, মাইক্রোবাস ২৬টি, বাস ১৬টি, রায়ট কার ৮টি, অ্যাম্বুলেন্স ৫টি ও প্রিজনভ্যান ১৫টি। যানবাহনগুলোর শতকরা ৬০ ভাগই ব্যবহার অনুপযোগী।
পুলিশের পরিবহনপুল সূত্র মতে, প্রতিটি থানায় একটি করে প্রিজনভ্যান থাকার কথা থাকলেও এখনো তা নিশ্চিত করা যায়নি। পরিবহন সংকট থাকায় একটি পিকআপে কয়েকটি থানার আসামি গাদাগাদি করে আদালতে নিতে হচ্ছে।
রাজধানীর একাধিক থানার অফিসার ইনচার্জ জানিয়েছেন, রাজধানীতে পুলিশের যেসব গাড়ি চলছে তার বেশিরভাগই লক্কর-ঝক্কর হওয়ায় রাস্তার মাঝখানে অচল হয়ে  পড়ে। অনেক সময় পুলিশ সদস্যদেরই বিকল হয়ে যাওয়া গাড়ি ঠেলে গন্তব্যস্থলে যেতে হয়।  তারা বলেন, নষ্ট গাড়ি ঠিক করার জন্য নামমাত্র বরাদ্দ রয়েছে। আবার ওই অর্থ পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। চিহ্নিত সন্ত্রাসীর অবস্থানের তথ্য জানার পরও গাড়ির অভাবে সময় মতো অভিযান চালানো সম্ভব হয় না বলে দাবি করেছেন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের মতে, ডিএমপি কমিশনার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার পুলিশের যাতায়াত ও ডিউটির জন্য মাত্র সাড়ে ৫শ’ গাড়ি রয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেকই ২০ বছরের বেশি পুরানো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন