Year-19 # Issue-26 # 12 August 2012



পরমাণু বিদু্যত্কেন্দ্র নির্মাণ
রুশ অর্থায়নের চুক্তি চূড়ান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
পাবনার রূপপুরে পরমাণু বিদু্যত্কেন্দ্রে অর্থায়ন নিয়ে মস্কো ঢাকার চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় বিদু্যত্কেন্দ্রের কারিগরি গবেষণার জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে কমপক্ষে চার শতাংশ সুদে ৫০ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। বিদু্যত্কেন্দ্র নির্মাণে কত খরচ হবে, তা নির্ধারণে কারিগরি গবেষণার জন্য আগামী দুই বছর এই ৫০ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। রূপপুরে হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদু্যত্কেন্দ্র নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যয়ও দেবে রাশিয়া। এই পরমাণু বিদু্যত্ প্রকল্পের অর্থায়নের চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রাশিয়ার ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য গত আগস্ট অর্থনৈতিক উপদষ্টোর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মস্কো সফরে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদষ্টো মশিউর রহমান গতকাল শনিবার মস্কো থেকে ঢাকায় ফিরে বলেছেন, মশিউরের সঙ্গে ছিলেন বিজ্ঞান প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস সামাদ এবং অর্থ, পররাষ্ট্র আইণ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিরা। এই বিদু্যত্কেন্দ্র স্থাপনে কী পরিমাণ অর্থ লাগতে পারে- জানতে চাইলে মশিউর বলেন, সাধারণ হিসাবে গতানুগতিক বিদু্যত্কেন্দ্রের ক্ষেত্রে এক মেগাওয়াট বিদু্যত্কেন্দ্রের জন্য মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। তবে পরমাণু বিদু্যত্কেন্দ্র নির্মাণের এই খরচ আরো বেশি হবে। নিরাপত্তা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, অবকাঠামো মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য এই ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যায় বলে জানান তিনি। অর্থায়নের এই চুক্তি কবে সই হবে বা কারিগরি গবেষণা কবে শুরু হবে, সে বিষয়ে উপদষ্টো স্পষ্ট কিছু বলেননি। মন্ত্রণালয় তা ঠিক করবে। চুক্তি অন্য কোনো প্রকল্পের জন্য নয়, এটা প্রকল্পের জন্যই এবং তা অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ে করা হবে। কারিগরি গবেষণা শেষ হওয়ার পঁাচ বছর পর এই বিদু্যত্কেন্দ্রের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপদষ্টো বলেন, সুদের হার এখনো ঠিক হয়নি, এটা বাজারের ওপর নির্ভর করবে। বাজার-সংশি্লষ্ট সুদের হার কত- তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে রাশিয়ার ধার করার ব্যয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। তবে তিনি বলেন, ৯০ এর দশকে বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে চার শতাংশ সুদে ঋণ নিয়েছিল। বিদু্যত্কেন্দ্র প্রকল্পের সুদের হারের বিষয়ে বাংলাদেশ দেনদরবার করবে। ৫০ কোটি ডলারের এই ঋণ পঁাচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ (এই সময়ে ঋণের কিসি্ত সুদ পরিশোধ করতে হবে না) ১২ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে এবং চূড়ান্ত নির্মাণের ব্যয় ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৮ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। মশিউর বলেন, যে কোনো অর্থায়নের চুক্তির ক্ষেত্রে সুদের হার নির্ধারণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পুরো একদিন ধরে নিয়ে আলোচনা করতে হয়েছে। পঁাচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত রাশিয়া থেকে সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তির দিয়ে সরকার রূপপুরে দু'টি বিদু্যত্কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে, যার প্রতিটি উত্পাদন করবে হাজার মেগাওয়াট বিদু্যত্। নিরাপত্তা প্রযুক্তির মানের ওপর নির্ভর করে প্রতিটি বিদু্যত্কেন্দ্র নির্মাণে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি ডলার ব্যয় হতে পারে। তবে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করে বিদু্যত্ উত্পাদনে খরচ কম পড়ে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এর আগে বলেছিলেন, এই কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদু্যতের উত্পাদন খরচ দুই টাকার বেশি হবে না। কারণ এক গ্রাম ইউরেনিয়াম থেকে যে পরিমাণ বিদু্যত্ পাওয়া যায়, তা উত্পাদন করতে তিন টন কয়লা বা আড়াই টন জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াতে হয়। পরমাণু বিদু্যত্ কেন্দ্রের নির্মাণ খরচ বেশি হলেও চালু হওয়ার ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে সেই খরচ তুলে আনা সম্ভব বলেও জানান তিনি। মশিউর বলেন, পরমাণু বিদু্যত্কেন্দ্র নির্মাণে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োজন এবং সরকারের উচিত হবে পর্যায়ক্রমে দু'টি কেন্দ্র নির্মাণ করা। আগের ব্যাপক আকারের অভিজ্ঞতা ছাড়া আপনি উচ্চ কারিগরি সূক্ষ্ম কার্যক্রমে যেতে পারেন না। পরমাণু বিদু্যত্কেন্দ্র নির্মাণ করতে যে কোনো দেশকে ৬২টি গবেষণা সম্পন্ন করতে হয় এবং বাংলাদেশ এর মধ্যেই কতগুলো গবেষণার কাজ শেষ করেছে বলে মশিউর জানান। রূপপুর পরমাণু বিদু্যত্কেন্দ্র নির্মাণে গত নভেম্বরে পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা রোসাটমের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করে বাংলাদেশ। ওই চুক্তি অনুযায়ী, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিদু্যত্কেন্দ্র নির্মাণে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে রুশ সরকার এবং কেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ করবে এবং ব্যবহূত জ্বালানিও ফেরত নেবে তারা। বিদু্যত্কেন্দ্রের মেয়াদ হবে ৬০ বছর। পরে তা আরো ২০ বছর তা বাড়ানো যাবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন। পরমাণু বিদু্যত্ কেন্দ্রের ঝুঁকি প্রশমনের দিকে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে জানিয়ে ইয়াফেস ওসমান বলেন, আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এগুচ্ছি। এটি এমনভাবে নির্মাণ করা হবে, যাতে শক্তিশালী ভূমিকম্প সুনামি এক সঙ্গে আঘাত করলেও তা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। রূপপুরে পরমাণু বিদু্যত্কেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পরিকল্পনা হয় ১৯৬১ সালে। সে জন্য ২৬০ একর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রকল্পটি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার এই প্রকল্প গতি পায়।


বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল শাফায়াত জামিল আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শাফায়াত জামিল আর নেই। গতকাল শনিবার ভোররাতে ঢাকার উত্তরায় নিজ বাড়িতে মৃতু্য হয়েছে তার।  শাফায়াত জামিলের ভাগ্নে অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ আতিকুল হাফিজ জানান, হার্টএটাকে রাত আড়াইটার দিকে ওনার মৃতু্য হয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বীর বিক্রম খেতাব পাওয়া শাফায়াত জামিলের বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী তিন ছেলে রেখে গেছেন।
গতকাল শনিবার জোহরের নামাজের পর ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে শাফায়াত জামিলের জানাজা হয়। জানাজায় সামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বি এম তাজুল ইসলাম এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন শরিক ছিলেন। জানাজার পর সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তাকে সামরিক কায়দায় সম্মান জানানো হয়। রাষ্ট্রীয় সম্মানও পান এই মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালের নভেম্বর পাল্টা অভু্যত্থানে খালেদ মোশাররফের সঙ্গী শাফায়াত জামিলকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে। শাফায়াত জামিলকে সমাহিত করা হয়েছে বনানীর সেনাবাহিনী কবরস্থানে। সেখানে দাফনের পর সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক নানক আহমদ হোসেন শ্রদ্ধা জানান। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। এরপর প্রথা অনুযায়ী জাতীয় পতাকা সেনাবাহিনীর পতাকা প্রয়াতের ছেলে শাহরিয়ারের হাতে তুলে দেন সেনাপ্রধান।  জানাজা দাফনের সময় দেশের প্রথম সেনাপ্রধানকে এম সফিউল্লাহ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক খানও ছিলেন। সেনাবাহিনীতে শাফায়াত জামিলের সহকর্মীরাও ছিলেন সেখানে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর টালমাটাল পরিস্থিতিতে ১৯৭৫ সালের নভেম্বর পাল্টা অভু্যত্থানে খালেদ মোশাররফের সঙ্গী ছিলেন শাফায়েত জামিল। তখন খালেদ মোশাররফ নিহত হন এবং আটক হন শাফায়েত জামিল। ১৯৮০ সালের ২৬ মার্চ শাফায়েত জামিল সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান। শাফায়াত জামিলের জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার খড়গমারা গ্রামে। তার বাবা এইচ এম করিমুল­াহ পূর্ব পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। ঢাকা কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পর কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ১৯৬৪ সালে কমিশন পান শাফায়াত জামিল। পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ তার কোর্সমেট ছিলেন।  মুক্তিযুদ্ধের আগে শাফায়েত জামিল চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। কুমিল্লা সেনানিবাসে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল। 
১৯৭১ সালের মার্চ সম্ভাব্য ভারতীয় আক্রমণের কথা বলে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা এই রেজিমেন্টের দু'টি কোম্পানিকে ব্রাক্ষণবাড়িয়া পাঠায়। এর একটি কোম্পানির দায়িত্বে ছিলেন শাফায়াত জামিল। ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের খবর পেয়ে শাফায়াত জামিল অনুগত সৈন্যদের নিয়ে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। দুই নম্বর সেক্টরের অধীন আশুগঞ্জ-ব্রাক্ষণবাড়িয়া আখাউড়া-গঙ্গাসাগর এলাকায় যুদ্ধ করেন শাফায়াত জামিল। পরে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক করা হয় তাকে। শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধের মধ্যে সিলেটের ছাতক যুদ্ধ উলে্লখযোগ্য। ১৯৭১ সালের ১১ অক্টোবর পরিচালিত এই যুদ্ধে তার নেতৃত্বাধীন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ৩৬৪ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করে।
এরপর রাধানগর অপারেশনের ভেতর দিয়ে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান দখল করে নেন, যা এর আগে যা ভারতের বিখ্যাত গুর্খা রেজিমেন্টও দখল করতে ব্যর্থ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর মেজর শাফায়েত পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হন। ১৯৭৪ সালে কর্নেল পদমর্যাদা নিয়ে সেনাবাহিনীর ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডারের দায়িত্ব পান তিনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি এই দায়িত্বেই ছিলেন।
নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি: মওদুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর ওপর ভিত্তি করে নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি, যা পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাতিল হয়ে গেছে। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বলেছেন, আগামী নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনেই। এজন্য আমরা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর ওপর ভিত্তি করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরির চিন্তাভাবনা করছি।  তিনি বলেন, প্রণীত রূপরেখাটি দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হবে।
গত জুলাই খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্দলীয় সরকারের রূপরেখার খসড়া প্রণয়নের সদ্ধিান্ত হয়। এই বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নানা ধরনের সংবাদ প্রকাশ হলেও মওদুদের মাধ্যমেই প্রথম বক্তব্য এল। বিএনপি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তবে এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব দিয়েছেন, নির্বাচনকালীন সরকারে চাইলে বিরোধী দলও যোগ দিতে পারে। মওদুদ বলেন, বর্তমান সরকারের আচরণের কারণে তাদের ওপর আমরাসহ সবার অবিশ্বাস শতগুণ বেড়ে গেছে। তারা প্রশাসনকে এমনভাবে দলীয়করণ করেছে যে নির্বাচনের সময়ে এই প্রশাসনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। আর এজন্যই আমরা নির্দলীয় সরকারের দাবি তুলেছি। তিনি বলেন, কেবল নির্দলীয় সরকার গঠন হলেই হবে না। তাদের বর্তমান প্রশাসনকে বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে দলীয় নিয়োগপ্রাপ্ত ডিসি-এসপি-ইউএনও-ওসি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করে সেখানে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে।  সরকারে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে মওদুদ বলেন, ১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর জেনারেল স্যার নিনিয়ান স্টিফেন রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দুই দল থেকে জন করে সদস্য নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখন কেন শেখ হাসিনা তা প্রত্যাখ্যান করলেন। তিনি বলেন, এই দলটির ('লীগ) কোনো নীতি নেই। তারা '৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছে। ১৭৩ দিন হরতাল করছে। এখন তারাই আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান সংযোজন করেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হলেও নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না বলে দাবি করেন মওদুদ। জন্য নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় ঈদের পর বিএনপি কঠোর আন্দোলনে নামবে বলে জানান তিনি।
Èআগামীর বাংলাদেশ' নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে Èসঙ্কটের আবর্তে বাংলাদেশ : উত্তরণের উপায়' শীর্ষক এই আলোচনা সভায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম। সংগঠনের সভাপতি মো. শাহ আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা ওসমান ফারুক, আসাদুজ্জামান রিপন, রফিক শিকদার বক্তব্য রাখেন।
দীর্ঘ ছুটির ফঁাদে বাংলাদেশ
হাসান মাহমুদ রিপন
ঈদে দীর্ঘ ছুটির ফঁাদে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর ছুটিতে ব্যস্ত আর কর্মচঞ্চলতায় মুখর রাজধানী ঢাকা হয়ে যাচ্ছে ৬০' দশকের ফঁাকা এক নীরবতার নগরীতে। আসছে জাতির পিতার মৃতু্য বার্ষিকী, শবে ক্বদর এবং পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এখন যতটা ব্যস্ত ঢাকা শহর, ঠিক ততটাই নীরব হয়ে পড়বে দীর্ঘ ছুটিতে।
ঐচ্ছিক ছুটি পেলেই সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা চলতি মাসে লম্বা ছুটি ভোগ করতে পারবেন। ঈদ ছাড়াও সাপ্তাহিক অন্যান্য ছুটি মিলিয়ে মাসে সরকারি ছুটিই থাকছে ১৫ দিন। দীর্ঘ এই ছুটি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আশীর্বাদ হলেও, ভাবিয়ে তুলেছে আমদানি-রফতানিকারকসহ ব্যবসায়ীদের। দফায় দফায় ছুটির কারণে চলতি মাসে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে স্থবিরতার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী অর্থনীতিবিদরা। আর আমদানি-রফতানি বাধাগ্রস্ত হলে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক . এম তাসলীম জানান, দীর্ঘ ছুটিতে অর্থনীতির ক্ষতি হওয়াটা স্বাভাবিক। আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিভিন্ন দিবসে এতো বেশি ছুটি থাকা উচিত্ নয়। মন্ত্রণালয়সহ অফিসগুলোতে অতিরিক্ত কাজ জমে থাকায় দেশের অর্থনীতিতে চাপসহ ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়।
এবছর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস থেকে শুরু করে শবে ক্বদর ঈদুল ফিতর মিলিয়ে সরকারি ছুটি গিয়ে ঠেকবে ২১ আগস্ট পর্যন্ত। আর ২২ ২৩ আগস্ট বুধ, বৃহস্পতিরবারের পর ২৪, ২৫ আবার শুক্র, শনি। আর তাই অনেকেই চাইবেন টানা ১২ দিন ছুটি কাটিয়ে একেবারে রোববার অফিস ধরতে। অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি যাই হোক, আমোদ-প্রবণ বাঙালি সবাই মিলে ঈদের ছুটি উপভোগ করবেন এটাই বাংলাদেশের সংস্কৃতি। ক্রিসমাসের সময় ঠিক একইভাবে দীর্ঘদিন ছুটি কাটিয়েও নিজেদের ব্যাবসা-বাণিজ্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখেন পাশ্চাত্যবাসিরা। সেই উদাহরণকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশেও কর্মক্ষেত্রের দায়িত্বশীলতা ঠিক রেখে উত্সব উদযাপন সম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
শিল্পের বিকাশ না হওয়ায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত
মো. রেজাউর রহিম
স্বাধীনতা অর্জনের চার দশকেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় দেশে শিল্পের বিকাশ ঘটছে না।  স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে দেশে গার্মেন্ট খাত ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ ঘটলেও ভারী শিল্পের বিকাশ নেই বললেই চলে। একসময়ের পাট বস্ত্র খাতের অনেক ভারী শিল্প-কারখানাও যথায়থভাবে পরিচালনা করতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্পের যথাযথ বিকাশ না হওয়ায় ক্রমান্বয়ে আমদানী নির্ভর অর্থনীতির আবর্তে আটকে গেছে দেশ। 
অর্থনীতিবিদদের মতে, উন্নত বিশ্বের জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ হলেও আমাদের দেশে সে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।  দশক আগে বাংলাদেশের জাতীয় উত্পাদনের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ অবদানই ছিল কৃষি খাতের। বর্তমানে চিত্র কিছুটা বদলালেও শিল্পখাতের অবদান এখনও মুখ্য হয়ে উঠতে পারেনি। জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ছিল ২৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। মূলত পুঁজি, উদ্যোগ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এবং শিল্প নিয়ে যথাযথ কোন নীতিমালা না থাকায় বাংলাদেশে শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না। অথচ বিভিন্ন রকম কঁাচামালের সহজলভ্যতা সস্তা শ্রমিকের সংখ্যাধিক্যের ফলে শিল্পখাতে বাংলাদেশের আরো এগিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। অন্যদিকে, ভোক্তার বিশাল সংখ্যাধিক্যের কারণে এবং বাংলাদেশের বাজার ইউরোপের কয়েকটি দেশের সম্মিলিত বাজারের চেয়ে সমৃদ্ধ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ বর্তমানে আমাদের বাজারে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সম্পৃক্ততার মূল উদ্দেশ্য- তাদের দেশে উত্পাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ। তবে এজন্য এদেশে বিনিয়েগের দিকেও আগ্রহী তারা। কারণ সস্তা শ্রমিক উত্পাদন খরচের স্বল্পতা।  জানা গেছে, বাংলাদেশে শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগে নিবন্ধিত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ৬১ শতাংশই আলোর মুখ দেখে না। তারা নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে চলে যান, মাত্র ৩৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে থাকে।  ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ১১২ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ দেশে আসলেও সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে সেই বিনিয়োগ অঙ্কুরেই বিনষ্টি হয়ে গেছে। অর্থ বিশে্লষকদের মতে, বাংলাদেশে যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা সম্ভব হলে শিল্পায়নের মাধ্যমে স্বর্নিভর হওয়া সম্ভব। এজন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। পাশাপাশি শিল্পায়নে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদষ্টো অর্থনীতিবিদ . আকবর আলি বলেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে দেশে শিল্পের বিকাশ জরুরি। আমদানী নির্ভরতা হ্রাস এবং স্বনির্ভর অর্থনীতির জন্য শিল্প-কারখানা স্থাপনে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের ওপর জোর দেন তিনি। তিনি বলেন, শিল্পের বিকাশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। অর্থনীতিবিদ . আবুল বারকাত বলেন, স্থানীয় শিল্পের বিকাশে সরকারি পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমদানী নির্ভরতা থেকে দেশের অর্থনীতিকে বের করতে স্থানীয় শিল্প সম্প্রসারণের বিকল্প নেই উলে্লখ করে তিনি বলেন, এক্ষত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এদিকে, আমদাানি রফতানিতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে রফতানি বাড়তে হলে স্থানীয় শিল্পের সম্প্রসারণ  জরুরি।
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের সূত্র জানায়, শিল্পায়নে পুঁজি সংগ্রহ অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা। চাহিদানুযায়ী ব্যাংক ঋণ পেতেও নানা বাধার মুখে পরতে হয় উদ্যোক্তাদের। একটি শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে  দেশে কমপক্ষে ৩২টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ধর্ণা দিতে হয় বিভিন্ন সার্টিফিকেট প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের জন্য। এজন্য দেশে শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে তা উত্তরণের পথ বের করতে সরকারের বিশেষ পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তাদের মতে, গার্মেন্ট ইন্ডাষ্ট্রির পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে উত্পাদিত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। শিল্প স্থাপন তা চালু রাখার ক্ষেত্রে পুঁজি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিরাজ করছে উলে্লখ করে তারা সরকারি সময়োপোযোগী নীতিমালার পাশাপাশি স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য করা জরুরি বলে মনে করেন। তাদের মতে, বর্তমানে উন্নত দেশগুলো তাদের দেশে উত্পাদন খরচ বেশি হওয়ায় বর্তমানে নিজ দেশে অনেক পণ্য উত্পাদনে আগ্রহী নয়। সুযোগ নিতে পারে বাংলাদেশ। সুযোগ নিয়ে চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো শিল্পে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একেএম গোলাম হোসেন বলেন, একজন উদ্যোক্তা একটি শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যাংক ঋণ পেতে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হন। শিল্প বিকাশে অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন