Year-19 # Issue-13 # 13 May 2012

মন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতির হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না
সাজিদুল হক

সংসদের ফ্লোরে মন্ত্রীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির হিসাব চেয়েও পাচ্ছে না সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ বিভাগকে (আইএমইডি) এসব তথ্য দেওয়ার জন্য বলা হলেও তা যথাযথভাবে দিতে পারেনি তারা। আর এ জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাউন্সিল কর্মকর্তাদের সংসদ অধিবেশনে অনুপস্থিতিকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে কাউন্সিল কর্মকর্তাদের এক ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচিতেও এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৯তম বৈঠকে আইএমইডি’র কাছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সংসদের ফ্লোরে দেওয়া প্রতিশ্রুতির হিসাব চাওয়া হয়। আইএমইডি গত এপ্রিল মাসে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন কমিটির কাছে জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে ৫০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিশ্রুতির একটি সারণি তুলে ধরে আইএমইডি। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কোনো প্রতিশ্রুতির হিসাব নেই। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো- রেলপথ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, খাদ্য বিভাগ, পরিসংখ্যান বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ।  পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে এমন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মোট ৩৮০টি প্রতিশ্রুতির হিসাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৬টি প্রতিশ্রুতির। বাস্তবায়নাধীন বা আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে ২৫৯টি প্রতিশ্রুতির। ৬৫টি প্রতিশ্রুতির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আইএমইডি সূত্র জানায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির হিসাব চাওয়া হলেও তা দিতে পারেনি তারা। অনেক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ সংক্রান্ত কোনো হিসাবই নেই তাদের কাছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইএমইডি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই কর্মকর্তা বলেন, “কাউন্সিল অফিসাররা নিয়মিত সংসদে যান না। অনেকে জানেনই না তাদের কী কাজ।” সচিবালয় নির্দেশিকার ২১৫ ধারাতে বলা আছে, প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ একজন করে কাউন্সিল অফিসার ও কাউন্সিল সহকারী নিয়োগ দেবে। এমপিদের প্রশ্নের জবাব তৈরি করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করে তা সংসদে পাঠানোর দায়িত্ব কাউন্সিল অফিসারের। ২১৮ ধারায় বলা আছে, প্রশ্নের জবাব দেওয়া এবং মন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি সংরক্ষণের জন্য একটি নিবন্ধন বই মন্ত্রণালয় সংরক্ষণ করবে। মন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি কার্যকর হচ্ছে কিনা তা একজন উপসচিব প্রতিমাসে পরীক্ষা করে দেখবেন। সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সংসদ সচিবালয় থেকে একাধিকবার মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাউন্সিল কর্মকর্তাদের অধিবেশনে হাজির হওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কেউই যত্নবান হননি। এদিকে সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, গত ১৪ থেকে ১৭ মে সংসদ ভবনের কাউন্সিল অফিসারদের ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচিতে সংসদের অধিবেশনে হাজির থাকার জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয়। সংসদের প্রশ্ন শাখা, আইন শাখা ও নোটিশ শাখা থেকে এ বিষয়ে কাউন্সিল কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়। সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার মো. আলী আশরাফ বাংলানিউজকে বলেন, “সরকারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা মন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে। মন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতি লিপিবদ্ধ করার কাজ মন্ত্রণালয়ের। কেউ যদি সে কাজ করতে ব্যর্থ হয়, তবে বুঝতে হবে ওই মন্ত্রণালয়েল কাজের জবাবদিহিতা নেই।”
সরকারের ব্যাংক ঋণ ফের বাড়ছে
সাইদ আরমান

চলতি অর্থবছরের শেষ পাদে এসে সরকারের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ আবারও বাড়ছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মতে, সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দুই হাজার ৮২১ কোটি টাকা। আর অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ১৩ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। যা গত ৩ মার্চ ছিল ১৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। অবশ্য এপ্রিলের শুরুতে এর পরিমাণ ছিল আরও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের শুরুতে সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ১৮ হাজার ১৩ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যনুযায়ী, ২০১২ সালের প্রথম চারমাসে (এপ্রিল পর্যন্ত) সরকারের ঋণ প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গড়ে ৪২ শতাংশ বেশি। অথচ মুদ্রানীতিতে তা ৩১ শতাংশে সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। তবে এসময়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের শুরুতে সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ১৮ হাজার ১৩ কোটি টাকা। যা গত ৩ মার্চে ছিল ১৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের বাজেটে সরকার ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। তবে গত মার্চে সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সঙ্গে এক বৈঠকে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ৪৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হওয়ায়। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ২৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ করবে। ফলে অর্থ বছরের বাকি এই সময়টাতে সরকারের ব্যাংক ঋণ আবার বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক আল্লাহ মালিক কাজমি বাংলানিউজকে জানান, সরকার ধার চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক দিতে বাধ্য। সরকারের প্রয়োজনে অর্থ লাগলে তার যোগান দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। এখানে না বলার কোনো বিধান নেই। তিনি আরও বলেন, অর্থ বছরের প্রায় শেষ। সরকারের ঋণ যে পরিমাণ অপরিশোধিত থাকবে তা পরের বছরের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। এটা মোট ঋণ হিসেবে ধরা হবে। তাছাড়া সব ঋণ এক সঙ্গে পরিশোধযোগ্য হয় না। তবে সরকারকে ঋণের বিপরীতে নিয়মিত হারে সুদ পরিশোধ করে যেতে হয়। প্রতি ছয় মাসে সরকার সুদ দিয়ে থাকে। মূল বাজেট অনুযায়ী, চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে অর্থাৎ এপ্রিল-জুন সময়ে ব্যাংকিং খাত থেকে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বর্তমানে এ লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে অতিরিক্ত ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা তুলে নেবে।
এদিকে বিশ্লেষকদের ধারণা, সরকারের এ ধরনের পরিমাণ বাড়লে ব্যাংকিং খাতে চলমান তারল্য সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠবে। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে দেশের বিনিয়োগ বাধার মুখে পড়বে। এমনিতেই ব্যবসায়ীরা অর্থ বছরের পুরো সময়টা বলে আসছিলেন, ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ বাড়ায় তারা ঋণ পাচ্ছে না। এতে করে তারা নতুন বিনিয়োগে যেতে পারছে না। ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক তারল্য সংকট চলছে। গত ৪ ডিসেম্বরে তা ২১ হাজার ৩২১ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ডিসেম্বরের পর থেকে ধীরে ধীরে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ কমতে থাকলেও এখন আবার তা বাড়তে শুরু করেছে।
একইসঙ্গে দেশের মূল্যস্ফীতির গতিও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, গত এক বছরে (এপ্রিল পর্যন্ত) মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। যদিও মাসওয়ারি মূল্যস্ফীতি এপ্রিলে এক অংকে নেমেছে। এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৩ ভাগ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের অভিমত, শেষ সময়ে এসে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ ৪৭ শতাংশ বাড়ানোর ফলে অর্থ বছরের শেষ ছয় মাসের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়নে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ঘোষিত মুদ্রানীতি আওতায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ প্রবৃদ্ধি ৩১ শতাংশ ও বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশে রাখার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৩১ শতাংশের মধ্যে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে।
চলতি অর্থ বছরের শেষ দিকে এসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের বর্ধিত ঋণ সুবিধার আওতায় প্রায় ১০০ কোটি ডলার ঋণের অনুমোদন দিলেও পদ্ধাসেতুসহ আরও বেশ কিছু প্রকল্পে সরকার বিদেশি ঋণ ও অনুদান ছাড় করাতে পারেনি। ইতিমধ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি কমানোর জন্য সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে দুই দফায় কাটছাঁট করে। প্রথমে কাটছাঁট করে ৪৬ হাজার কোটি টাকা এডিপির জন্য বরাদ্দ হলেও পরে তা ৪০ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় কমিয়ে আনা হয়।

বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য ফান্ড গঠন করতে হবে : আসিফ ইব্রাহীম
তাহজিব হাসান
বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের জন্য ফান্ড গঠনের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কামার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম। সোমবার মতিঝিলের ডিসিসিআই কার্যালয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এ দাবি জানান। এ সময় বাজেটে বিনিয়োগ খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া, শিল্প অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন তিনি।
বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ বলে মনে করে আসিফ ইব্রাহীম বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশের শিল্প অবকাঠামো উন্নত করতে হবে। আমাদের বিনিয়োগের চমৎকার সুযোগ রয়েছে। তৈরি পোশাক খাতে চীন ১৩৯ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে থাকে। আর আমাদের রফতানি হচ্ছে ১৮ বিলিয়ন ডলার।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে চীনের তৈরি পোশাক উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তাই চীন থেকে যারা তৈরি পোশাক ক্রয় করতেন তারা এখন বিকল্প জায়গা খোঁজ করছেন। এই বিকল্পের সবচেয়ে চমৎকার স্থান হতে পারে বাংলাদেশ।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই খাতের বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে। তাই এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে।’ এই ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানির ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দরের উন্নয়নসহ জাহাজে পণ্য ওঠানামা করার প্রক্রিয়া সহজ ও আধুনিকায়ন করতে হবে। ঢাকা-চট্টগ্রামের হাইওয়ের আট লেন তৈরির কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।’  আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ‘এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশে বেকারত্ব সমস্যার সমাধান হবে।’বিনিয়োগের নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সঞ্চয় ২৪ শতাংশ, জাতীয় বিনিয়োগ ২০ শতাংশ। বিশ্বের খুব কম দেশই আছে যেখানে সঞ্চয়ের চেয়ে বিনিয়োগ কম। এই অবস্থাটাকে অর্থনীতির ভাষায় প্যারাডক্স অব থ্রিফট বলা হয়। আমরা প্যারাডক্স অব থ্রিফটের মধ্যে আছি। আমাদের কাছে সঞ্চিত অর্থ আছে। তবে আমরা বিনিয়োগ করছি না।’ এই প্যারাডক্স অব থ্রিফট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্যারাডক্স অব থ্রিফট থেকে বের হয়ে আসার জন্য সবার প্রথমে ব্যাংকে সঞ্চিত টাকার ওপর সুদের হার কমাতে হবে। কারণ কেউ যদি বাসায় ব্যাংকে স্থায়ী সঞ্চয়পত্র খুলে ১২/১৪ শতাংশ সুদ পায়। তাহলে কেন ওই ব্যক্তি বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে যাবে।’ দেশীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজেটে একটা ফান্ড বরাদ্দের দাবি জানিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘যারা বিভিন্ন শিল্প খাতে নিয়মিত উৎপাদন করছে। যাদের পূর্ববর্তী রেকর্ড ভালো অর্থাৎ ব্যাংক ঋণ নিয়ে সময়মতো পরিশোধ করছে, ঋণ খেলাপি হচ্ছে না। তাদের প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে। একই সাথে এক হাজার থেকে দুই হাজার কোটি টাকার একটা ফান্ড তৈরি করতে হবে। এই ফান্ড থেকে প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। মোট কথা হচ্ছে আমাদের অবশ্যই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ না বাড়ালে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এসব ব্যবস্থা না নিলে বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে না।’  বাজেটে কর ব্যবস্থা কেমন হলে তা বিনিয়োগবন্ধব হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কর বৃদ্ধি করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। বরং রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য করের আওতা বাড়ানো উচিৎ। প্রত্যেক টিন নম্বরধারীর জন্য একটা সর্বনিম্ন আয়কর নির্ধারণ করা উচিৎ। এটা পাঁচ হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে হতে পারে। যদি দশ হাজার টাকা হয় তাহলে টিন নম্বরধারীদের কাছ থেকেই তিন হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে। নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়ে টিন নম্বরধারীর সংখ্যাও বাড়ানো যেতে পারে।’ বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি আসছে বাজেটে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়া হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভর্তুকি দেওয়ার পর, পরবর্তীতে সেই ভর্তুকি বাদ দিয়ে দেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট দ্রব্যে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তাই উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায়। একই সঙ্গে দ্রব্যটি মূল্যও বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ ভর্তুকি কমিয়ে দিলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।’  দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে দেশের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আর আসবে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশ অন্ধকার পরিস্থির দিকে চলে যাবে। এতে দেশ দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই ক্ষতি পোষাতে অনেক সময় লেগে যাবে। অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ এই অস্থিরতা থেকে মুক্তির জন্য আপনার পরামর্শ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘সংলাপ ছাড়া আর কোনও সমাধান নেই। সংলাপে বসতে হবে। আলোচনা করতে হবে। প্রধান দুই নেত্রীকে একত্রে বসতে হবে।’ এর আগেও বড় দুই দলের শীর্ষস্থানীয় নেতার মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তারপরও এর কোনও গ্রহণযোগ্য সমাধান হয়নি। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই সময়ের অবস্থা আর বর্তমান অবস্থা আলাদা। ওই সংলাপ থেকে আমাদের একটা শিক্ষা নিতে হবে। আর এই শিক্ষা নিয়েই আমাদের সংলাপে বসতে হবে। দেশের স্বার্থে সমস্যার বাস্তব সমাধান করতে হবে।’ বাজেট নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা সর্ম্পকে তিনি বলেন, ‘এমন একটা বাজেট হওয়া উচিৎ। যে বাজেট ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি রোধ করতে পারবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্নরকম প্রণোদনা দেওয়া, ট্যাক্স হলিডের মেয়াদ বৃদ্ধি ইত্যাদি বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
কক্সবাজারে পর্যটকের আকাল 
সুকুমার সরকার
তাপদাহ চলছে বাংলাদেশ জুড়ে। মাঝে-মধ্যে দু’-এক ফোটা বৃষ্টি হলেও খরতাপ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ। একই সঙ্গে চলছে বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিং।
তাপদাহ আর লোডশেডিংয়ের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারেও। কক্সবাজারে পর্যটকের দেখা মিলছে না তেমন। স্থানীয়রা বলছেন, কক্সবাজারে পর্যটকের আকাল চলছে। আবাসিক হোটেল মালিক থেকে শুরু করে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। অবশ্য প্রতিবছরই এসময়টায় পর্যটকের আকাল চলে। কারণ, সমুদ্রের লোনা বাতাসে তাপদাহের হলকাটা বেশি থাকে। ফলে পর্যটকরা এসময়টায় এখানে এসে স্বস্তি পান না। তবে কিছুটা হলেও এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা যেত- যদি লোডশেডিং না থাকতো। পর্যটকরা সমুদ্রে গোসল বা সমুদ্র তীরে শুয়ে বসে সময় কাটান। এরপর রুমে ফিরে আহার করেন বা বিশ্রাম নেন। সেসময় যদি পাখা না চলে, তাহলে গরমের হাত থেকে কীভাবে রেহাই পাবেন। তাই ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতাও পর্যটনের কিছুটা হলেও ক্ষতি করেছে। যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল না করলে পর্যটকরা এখানে কীভাবে আসবেন। কীভাবেই বা তারা নিজ গন্তব্যে ফিরে যাবেন। এসব কারণে এখানে পর্যটকের দেখা মিলছে না। পর্যটক না আসায় বিলাসবহুল চেয়ারকোচ থেকে সাধারণ যাত্রীবাহী বাস--সবারই একই অবস্থা বিরাজ করছে।  এছাড়া কক্সবাজারে এখন যে তাপমাত্রা তা পর্যটকদের জন্য অসহনীয়। একারণে কেউ আর কক্সবাজারমুখি হতে চাইছেন না। তবে লোডশেডিং না থাকলে পর্যটকদের ভিড় দেখা যেত। সবাই চান অবসর সময় বসে থাকলেও যাতে গরমের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস বাংলানিউজকে জানিয়েছে, কক্সবাজারে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার তাপদাহের তীব্রতা বেড়েছে। গত ১৯ মে থেকে তাপদাহ শুরু হয়েছে। এখন গড়ে সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে সর্বনিম্ন ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্র চলছে। আর এ তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিংও বেড়েছে। কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, তাপদাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের ঘাটতিও বেড়েছে। চাহিদার পরিমাণ আরও এক মেগাওয়াট বাড়লেও জাতীয় গ্রিড থেকে এক ইউনিট বিদ্যুৎও বেশি পাওয়া যায়নি। তাই বিদ্যুৎ সংকট আরো ঘনিভূত হয়েছে। পিক আওয়ারে জেলাব্যাপী ৩৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকে। ৫৯ মেগাওয়াট চাহিদার মধ্যে সর্বোচ্চ পাওয়া যায় ২২ মেগাওয়াট ও সর্বনিম্ন অফপিক আওয়ারে মাত্র ১৫ মেগাওয়াট। এরমধ্যে পল্লী বিদ্যুৎকে পিক আওয়ারে ১০ মেগাওয়াট ও অফপিক আওয়ারে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কক্সবাজারের বিশিষ্ট হোটেল ব্যবসায়ী ডায়মন্ড প্যালেস গেস্ট হাউসের মালিক ও হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বাংলানিউজকে জানান, অন্যান্য বছর কক্সবাজারে পর্যটক আগমনের ক্ষেত্রে সিজন বা অফ সিজন বলে তেমন কোনো ফারাক ছিল না। স্বাভাবিকভাবে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটকের আগমন বেশি হলেও পুরো বছর জুড়েই পর্যটক থাকতো কমবেশি। ২০১১ সালের মে মাসের পরিসংখ্যান মতে এখন ৮৫ শতাংশ পর্যটক কম আসছেন। এর পেছনে চারটি কারণ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। আবুল কাসেম সিকদার জানান, তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি অপর ২টি কারণও পর্যটক বিমুখ হওয়ার অন্যতম কারণ। দেশে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। কখনও হরতাল, কখনও অবরোধ নিয়ে মানুষ স্বস্তিতে নেই। একই সঙ্গে কক্সবাজার শহরের ভেতর যাত্রীবাহী চেয়ারকোচ প্রবেশ করতে না দেওয়ায় পর্যটকদের ব্যয় ও ভোগান্তি বেড়েছে। তিনি জানান, বাস টার্মিনালে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এসময় বাস টার্মিনাল কেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের লোকজন যাত্রীদের নিয়ে টানাটানি শুরু করে। পর্যটকদের প্রলোভন দেখিয়ে নানাভাবে হয়রানি করছে তারা। যানবাহন কেন্দ্রিক ভোগান্তির কারণেও পর্যটকরা কক্সবাজার আসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন। হোটেল মালিক সমিতির নেতা আবুল কাসেম সিকদার বাংলানিউজকে জানান, পর্যটকের খরা চলার কারণে এখন দেড় হাজার টাকার একটি কক্ষ ৩০০ টাকায় প্রতিরাত হিসেবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল সী কুইনের জিএম স্বপন ভট্টাচার্য্য বাংলানিউজকে জানান, তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে পর্যটক এখন নেই বললেই চলে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এখন পর্যটক ৯০ শতাংশ কম। ১০ শতাংশ পর্যটক কক্সবাজার এলেও তারা স্বস্তি পাচ্ছে না। তিনি জানান, এখন কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলের কক্ষ ভাড়াও ৫০ শতাংশ কম। অপর একটি আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার করিম উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন শূন্যের কোঠায় নেমেছে বললেই চলে। এ পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা দুর্দিনে আছেন। কক্সবাজারে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ রাখাইন তরুণীদের ব্যবস্থাপনায় শহরের টেকপাড়ার বার্মিজ মার্কেট। বার্মিজ মাকের্টের ব্যবসায়ী রাখাইন তরুণী মিন মং বাংলানিউজকে জানান, বার্মিজ মাকের্টের ব্যবসা হলো পর্যটককেন্দ্রিক। পর্যটক না আসায় তাদের ব্যবসায় মন্দা চলছে। পর্যটক না আসার কারণে বিলাস বহুল চেয়ারকোচ থেকে সাধারণ যাত্রীবাহী বাস সমূহের কক্সবাজারে যাতায়াত কমেছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন শ্যামলী পরিবহনের ইনচার্জ খোরশেদ আলম শামীম। তিনি জানান, অন্য সময় প্রতিদিন এখানে ৫টি করে বাস আসতো। এখন তা নেমেছে ২টিতে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোন এলাকার রোদেলা রেস্তোরাঁর মালিক আবদুল কাদের বাংলানিউজকে জানান, পর্যটক না আসার কারণে তাদের খাবার বেচা-বিক্রি একেবারেই কম।
কক্সবাজারে প্রতিদিন ১২টি দৈনিক পত্রিকা বের হয়। কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইনানীর নির্বাহী সম্পাদক সাঈদ মু. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পর্যটক না আসায় পত্রিকা ব্যবসায়ও ধ্বস নেমেছে। পর্যটক আগমন বাড়লে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের আকর্ষণ বাড়াতে ও পণ্যের বিক্রি বাড়াতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। একই সঙ্গে পর্যটকরা কক্সবাজারে এসে জাতীয় পত্রিকার সঙ্গে স্থানীয় পত্রিকাও পড়েন।
“কবুতরের লাইগা জান লইবার পারুম”
মাজেদুল নয়ন 
“এইটা অইলো গিয়া আপনের ৯৫ (১৯৯৫) সালের কাহিনী। আমার কবুতর এক হালায় চুরি কইরা লইয়া গেছিল। পাখনা কাইটা দিছিল। আমি মাগার বুইঝা গেছিলাম। বাট ওয় পল্টি খায় (অস্বীকার করে)। কয় কবুতর অর। পরে ঝগড়া করতে করতে গ্যাঞ্জাম বাইধা যায়। আমার পায়ে স্টেপ (ছুরিকাঘাত) মারে। কাইট্যা ব্লাড বাইর অইয়্যা আহে (রক্ত বের হয়ে আসে)। পরে আমিও আমার ইয়ার-দোস্তগো লইয়া হামলা করছি। অর জান লইয়া ফালাইতাম। ভাই এইছব কবুতর আমার সখের জিনিছ, আমি ওগো লাইগা যে কারো জান লইয়া ফালাইবার পারুম।”
পুরান ঢাকার হাজারীবাগের খলিল সরদার কমিউনিটি সেন্টার প্রাঙ্গণে নিজের শখের কবুতরগুলো দেখিয়ে কবুতরপ্রেমিক রাশেদ মাহমুদ জুয়েল এভাবেই বর্ণনা করলেন পোষা পাকীগুলোর জন্য তার জান-কবুল করা ভালোবাসার কথা। ৪৫ বছর বয়সী জুয়েলের শখ কবুতর পোষা। প্রায় ২০ প্রজাতির কবুতর রয়েছে তার কাছে। কথা বলার সময় একটু সময়ের জন্যেও সানগ্লাস খুলছিলেন না চোখ থেকে। ‘লাল ছিলা’ কবুতর নিয়ে তিনি দাঁড়া‍ন ক্যামেরার সামনে। একে একে পরিচয় করিয়ে দেন অন্যদের সঙ্গেও। হুমা, চুইঠাল, চুইনা, বাঘা, সবুজগোলা, লালগোলা, খাকি চুইঠাল, কাজকড়া, লালগররাসহ নানান বংম-গোত্রের নামাজাদা হরেক পদের কবুতর। এর মধ্যে একটি কালো-সবুজ মিশ্রণের সবুজগলাধারী কবুতর দেখিয়ে বললেন, “ওয় সবচাইতে বুড়া। ১৬ বচ্ছর হইয়্যা গেছে, আমার মতো বুইড়া হইয়্যা গেছে।” আরেকটি বিশেষ কবুতর দেখালেন জুয়েল, এর নাম মাকডাবাগা। লাল সাদা মিশ্রণের অনন্য সুন্দর কবুতর। নয়াবাজারের আকবর শেঠ মারা যাওয়ার পর সেখান থেকে তিনি কবুতরটি নিয়ে আসেন। আকবর শেঠও কবুতর পুষতেন। বললেন, “পাঙ্খা কবুতর ভাই। আকবর শেঠতো শেঠ আছিল, বুঝেন নাই? গুণ্ডা আছিল, মাগার শখ আছিল বেটার (লোকটার)।” সাদা শুভ্র হুমা কবুতর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উড়ানোর জন্যে ভাড়া দেন জুয়েল। “উইড়া আবার আমার কাছে চইল্যা আসে। ৫০ মাইল দূর থেইক্যা বাসা চিনে আর কাছে ধারের থেইক্যাতো আইবই। আইজ সকালেও তিনদিন পর একটা ফিরা আইছে।”
এসব কবুতর দেশের বিভিন্ স্থান থেকে ঘুরে ঘুরে জোগাড় করেছেন তিনি। সাভার, গাজীপুর, সিলেট, রংপুরসহ আরো অনেক জেলায় গিয়েছেন কবুতরের খোঁজে। প্রতিটি কবুতরের নাম আর চেহারা মুখস্থ জুয়েলের। বলেন, “পাঁচ সো (৫০০) কবুতরের মধ্যে একখান থাকলেও বুইঝ্যা ফালামু ওইটা আমার। কবুতর খুব ভালো, বুঝলেন ভাই, কোনো গিরিঙ্গি নাই।”আট-নয় বছর বয়স থেকেই কবুতরের নেশা পেয়ে বসে জুয়েলকে। বলেন, “ডেঞ্জারাস নেসা ভাই। ছাড়ে না।”
জানালেন, কবুতর পোষার কারণে বাবা-মা বকাবকি করতেন। পড়াশোনা করতে তার ভালো লাগতো না। নিজের পোষা কবুতরের দিকে তাকিয়ে থাকতেই তার ভালো লাগতো। “চাইয়্যা থাকতাম ভাই, আসমানে উড়লে দেকতে ভালো লাগতো। ওইরহম মজা কোনো জায়গায় নাই।” ‘পড়াশুনা করতাম না, বাপে খালি বকত, মারতো, ১৪ বছর বয়স থাকতে বাপে একবার আমার শখের একটা কবুতর জবাই কইরা দিছিল। আমারতো মাতা নষ্ট। ডেঞ্জার (কীটনাশক) খাইলাম শোকে। পরেতো অবস্থা খারাপ, মেডিকেলে লইয়া গেল। কল্লার (মাথা অর্থাৎ মুখ) মইধ্যে পাইপ দিয়া ওয়াস করাইলো। এরপর থেইক্যা কান ধরছি আর বিষ খামু না।”
৯৬ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত মাঝখানে ১১ বছর সৌদি আরব ছিলেন জুয়েল। সেখানেও কবুতর পালেন (পোষেন) তিনি। “ভাই সৌদির যে জায়গায় গেছি, ওই খানেই পালছি। ওই জিনিছ আমার নেসা অইয়া গেছে।” গত শনিবার হাজারীবাগে ঢাকাবাসী সংঠ আয়োজিত একদিনের উৎসবে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৪০টি কবুতর নিয়ে আসেন জুয়েল। তার বাসায় নানা প্রজাতির আরো একশো কবুতর রয়েছে বলে জানান তিনি। হাজারীবাগের মনেশ্বর এলাকার নিজ ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে শুধু কবুতরের জন্যে বাসা বানিয়েছেন জুয়েল। “ওই রুমের মাঝখানে বইস্যা টাইম কাটাই। অরা চাইরদিকে ঘুরে। ওগরে খাওয়াই। ভালো লাগে।”
বর্তমানে চামড়ার ব্যবসা করছেন জুয়েল। কবুতর বিক্রি করেও মোটামুটি আয় হচ্ছে। উৎসবে দু’টি ময়ুরপঙ্খী কবুতর নিয়ে এসেছেন রাব্বি। কবুতর দু’টি দেখিয়ে জুয়েল বললেন, “ওর কাছে এগুলা আমি বেচছি। জোড়া একলাখ টাকা। এগুলান শখের কবুতর। ওড়ে না, পাখনা মেইল্যা রাখে।” এছাড়া বাজি ধরেও টাকা আয় করেন মাঝে মাঝে। সৌদি যাওয়ার আগে ১ লাখ টাকার বাজি জিতেছিলেন তিনি। বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূরে জুয়েল ও তার প্রতিপক্ষ তাদের বিশটি করে কবুতর রেখে আসেন দুপুরে। নিজেদের কবুতরের গায়ে বিশেষ চিহ্ন দেওয়া হয়। বাজি জেতার শর্ত হচ্ছে মাগরিবের আগেই কার বেশি সংখ্যক কবুতর বাড়ি ফিরে আসে। জুয়েল এবং প্রতিবেশী প্রতিযোগী গোফরান পাশাপাশি নিজনিজ ছাদে বিকেল থেকে অপেক্ষা করতে থাকেন। পাড়ার সব মানুষ আসে দেখতে। “বিকাল শেষ হইয়্যা যাইবার লাগছে। আমারতো মাথা নষ্ট, আমার আইছে মাত্র ৮টা আর গোফরানের ১৪টা। আমি বাবছি (ভাবছি) এই ঠেলায় বুজি ১ লাক ট্যাকা গেলোগা। আল্লার রহমত! সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে ঝাক ধইরা আমার ১০ খান কবুতর উইড়্যা ছাদে নামে। গোফরানের আর একটাও আসে নাই। আমারগুলান রেসের কবুতর, বুঝছেন ভাই।” শনিবার বিকালে ‘ঢাকাবাসী সংগঠনের উদ্যেগে হাজারীবাগে আয়োজন করা হয় কবুতর উৎসবের। উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। উৎসবে যারা কবুতর নিয়ে এসেছিলেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্রময় ছিল জুয়েলের কবুতরগুলো। ১ ছেলে ও ১ মেয়ের বাবা জুয়েল। ১০ম শ্রেণিতে পড়ে মেয়ে লাবণ্য আর ২য় শ্রেণিতে ছেলে লিমন। তবে ছেলেমেয়েদের কারো এ শখ থাকুক তা চান না তিনি। “খুব খারাপ নেছা ভাই, জিন্দিগি বরবাদ কইরা দেয়। কবুতরের লাইগ্যা আমি ইন্টারমিডিয়েট পাছ করতেই পারি নাইক্যা। আর এডি করে পোংটা (বাজে) পোলাপাইনে। আমি ভি সয়তান আছিলাম। আমার পোলাপাইনের মধ্যে অক্ষন আর তেমন সখ দেখি না এগুলান নিয়া। তয় পোলাডারে সাবধানে রাখবার লাগব।”
ওয়ান ইলেভেনের শঙ্কা ওবায়দুল কাদেরের!
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  
বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে আরেকটি ওয়ান ইলেভেনের শঙ্কা করছেন যোগাযোগ ও রেলমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে পাক্ষিক তথ্যপত্রের ২০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে বিদেশিরা নাক গলানোর সুযোগ পাবে। আর বিদেশিরা নাক গলানোর সুযোগ পেলে দেশের রাজনীতিতে ওয়ান ইলেভেনের মতো দুর্যোগও আসবে।’ বিরোধী দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থীতিশীল করে বিদেশিদের নাক গলানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। বিদেশিরা এ দেশের ভেতরের বিষয়ে নাক গলালে পরিস্থিতি ওয়ান ইলেভেনের চেয়েও ভয়াবহ হবে।’ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ভোটের অন্তত ৬ মাস আগে থেকেই সরকার, বিরোধীদল ও নির্বাচন কমিশনের আলোচনায় বসা উচিত বলেও মনে করেন ওবায়দুল কাদের। সাংবাদিকদের জন্য অষ্টম ওয়েজ বোর্ড গঠনের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি নিজেও এক সময় সাংবাদিকতা করেছি। আমি সাংবাদিকদের কষ্ট বুঝি। সাংবাদিকরা যে কষ্ট করেন, তাতে তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী এবং তথ্যমন্ত্রী যখন কথা দিয়েছেন, তখন দাবি অবশ্যই পূরণ হবে।’ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আহ্বায়ক রেজাউল রশিদ খান, পাক্ষিক তথ্যপত্রের সম্পাদকীয় উপদেষ্টা এম আব্দুল হাই মিলন, সম্পাদক রফিকুল আনোয়ার ও দৈনিক নোয়াখালী প্রতিদিনের উপদেষ্টা নাসির উদ্দিন প্রমুখ।
বিএনপির ঘরের শত্রু বিভীষণ! 
মান্নান মারুফ
এক প্রভাবশালী নেতার কূটকৌশল আর ষড়যন্ত্রের খপ্পরে পড়ে খাবি খাচ্ছে বিএনপি। ওই নেতার কারণেই দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাসভবন ছাড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। সম্প্রতি সিনিয়র নেতাদের কারান্তরীণ হওয়ার পেছনেও নাকি যথেষ্ট কলকাঠি নেড়েছেন তিনি।  আগামী ১১ জুনের আগে কারান্তরীণ নেতারা যাতে কিছুতেই মুক্তি না পান সে ব্যবস্থাও তিনি করছেন বলে শোনা যাচ্ছে।  অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ ওই নেতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সুসর্ম্পক রয়েছে। সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নেই বিএনপির ওই আইনজীবী নেতা কাজ করছেন বলে মনে করছেন সাধারণ নেতা-কর্মীদের অধিকাংশ। দলীয় সূত্রের দাবি, মহাসচিব হতে না পারায় অসন্তুষ্ট এ নেতার বুদ্ধিতেই আত্মগোপনে গিয়েছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাকে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করতেই আত্মগোপনের পরামর্শ দেন এ আইনজীবী নেতা। ‘তার ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে পড়েই দলটি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে’ বলেও মনে করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। পল্টন ও গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে নিত্য দিন আসা নেতা-কর্মীদের অনেককেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতে শোনা গেছে, খালেদা জিয়া যার কারণে বাড়ি হারিয়েছেন, ঠিক একই ব্যক্তির কূটকৌশলে সিনিয়র নেতাদের জেলে যেতে হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, একই মামলার আসামি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জামিন পেলেও অন্য আসামিদের জামিন না হওয়ার রহস্য কি? তারা মনে করেন- ওই আইনজীবী বিএনপি নেতার ষড়যন্ত্রের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি নিজের লোক খোকনকে জেলে যাওয়া থেকে রক্ষা করলেও অন্য নেতাদের জেলে নিতেই আঁতাত করেছেন। সূত্র জানায়, সরকারের নানামুখি বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও গত ১২ মার্চ বিএনপির মহাসমাবেশ সফল হওয়ায় নতুন করে দলটির বিরুদ্ধে এ ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আর বিএনপিতে থেকেই এই ষড়যন্ত্রে  সরকারকে সহযোগিতা করছেন বিএনপির এই প্রভাবশালী আইনজীবী নেতা। তার খায়েস, তিনি হয় বিএনপির মহাসচিব হবেন, নয়তো আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে সরিয়ে রেখে বেশ কিছু নেতাকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন। তিনি হবেন আওয়ামী লীগের বি টিম। ওই আইনজীবী নেতার ঘনিষ্ঠ একজন (যিনি এক-এগারোর পর সংস্কারের পক্ষ নেওয়ায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আইনজীবী এ নেতার সঙ্গে আমার সর্স্পক। এখনও সুসর্ম্পক আছে।’’ ওই আইনজীবী নেতার পক্ষ নিয়ে বহিষ্কৃত এ  নেতা বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া এত বড় একজন বিজ্ঞ আইনজীবীকে অবজ্ঞা করছেন। ফখরুলের মতো এক শিশুকে বানিয়েছেন মহাসচিব। সব অনুষ্ঠানে সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য দিতে হবে শিশু মহাসচিবের পরে। এরকম একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন খালেদা। আর এ কারণে আরো ক্ষুব্ধ হয়েছেন সিনিয়র নেতারা। এর ফল এখন হাড়ে হাড়ে টের পেতে হবে খালেদাকে।’’ তাদের মিশনে কারা আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপির ওই স্থায়ী কমিটির সদস্যের সঙ্গে প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন নেতা আছেন। এদের মধ্যে বিএনপির এক সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব, সাবেক তিন সেনাকর্মকর্তা, একজন বাম নেতা ও বিএনপির সাবেক কয়েকজন এমপি, একজন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী সাবেক মন্ত্রী ও দুই জন ভাইস চেয়ারম্যানও  আছেন। তারা খালেদা জিয়ার আমলে মন্ত্রী ছিলেন। এছাড়া ৮৬/৮৭ সালের এরশাদের জাতীয় পার্টির নেতা দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা কয়েকজন সাবেক এমপিও এ দলে আছেন।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘বিএনপির ভেতরে কি হচ্ছে সব কিছুই দলের প্রধান খালেদা জিয়া জানেন। তার হাত-পা বাঁধা বলেই তিনি মুখ খুলছেন না। প্রথমত, একদিকে তার দুই সন্তান অসুস্থ অবস্থায় বিদেশে অবস্থান করছেন, দ্বিতীয়ত, সরকারি দলের রোষানলের কারণে পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা নির্যাতনের শিকার। তৃতীয়ত, সিনিয়র নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় খালেদ জিয়া বেকায়দায় আছেন।’’  এছাড়া মাঠ পর্যায়ের নেতকর্মীদের মধ্যে পদ-পদবী পাওয়া না পাওয়া নিয়ে রয়েছে চরম অসন্তোষ। দলের বিশ্বস্ত নেতার অভাব খালেদা জিয়াকে তাড়া করে ফিরছে। তিনি বলেন, ‘‘ কোনো কোনো নেতা বিএনপিকে জেলা সমিতি বানিয়ে ফেলেছে। খালেদা জিয়া তাদের খপ্পরে ড়েছেন। ঢাকার আন্দোলন নষ্ট করতে জিয়াউর রহমানের সময়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য ঢ‍াকা জেলার প্রভাবশালী নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দলের মূল স্রোত থেকে। আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার কাছে আছে পর্বত সমান অভিযোগ। আর দলকে ধ্বংস করতে এসব অভিযোগ করছে এ চক্র। যাতে আমান আগামীতে দলের বড় কোনো দায়িত্ব না পান।
সে কারণে আমানকে আগের মতো আর রাজপথে দেখা যায় না।’’ বিএনপির ১১ জুনের মহাসমাবেশের আগে সিনিয়র নেতারা জেল থেকে ছাড়‍া পাবেন না মন্তব্য করে বিএনপির আর এক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘এ সুযোগ শুধু ওই আইনজীবী নেতাই দেননি, এ জন্য দায়ী দলের শীর্ষ নেতারা। কারণ দলের মধ্যে যে গ্রুপিং আছে, সে সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা না করে নিরীহ-নিরাপরাধদেরই দল থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ আর এ কারণেই দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে নিচের পর্যায় পর্যন্ত রয়েছে চরম অভ্যন্তরীণ কোন্দল। জেলা, থানা এমনকি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে টাকার বিনিময়ে পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে দলের নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। নাটের গুরু এই ব্যক্তি শুধ‍ু বিএনপি নয়, অনেক দল ঘুরে আবার বিএনপির ঘাড়েই চেপেছেন। তিনি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম পোস্টমাস্টার জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দলে গিয়ে প্রথমে উপদেষ্টা ও পরে প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। দু’বছর পর এরশাদ ক্ষমতায় এলে ক্ষমতার লোভে বিএনপি থেকে ডিগবাজি দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। কূটকৌশলে ১৯৭৯ সালে উপ-প্রধানমন্ত্রিত্ব বাগিয়ে নেন। এরপর ১৯৮৫ সালে যোগাযোগ মন্ত্রী, ১৯৮৬ সালে পুনরায় উপ-প্রধানমন্ত্রী, ১৯৮৮ সালে প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৯ সালে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে শিল্প, পরিকল্পনা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক, পানি সম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ, ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। অষ্টম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনয়নে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়ে ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর স্থায়ী কমিটির সদস্য।
অসতদের জন্য সাংবাদিকতা নয়: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমানউল্লাহ
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বাংলাদেশের অন্যতম জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমানউল্লাহ বলেছেন, ‘যারা সৎ থাকতে পারবেন না, তাদের সাংবাদিকতা ছেড়ে দেওয়া উচিত। অসৎদের জন্য সাংবাদিকতা নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘সাংবাদিকরা যখন রাজনীতিতে আসেন, তখন আর কেউ সাংবাদিক থাকেন না।’ শনিবার বিকেলে বাংলানিউজ পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত আমানউল্লাহ বলেন, ‘সাংবাদিকদের শুধু পেশাগত দায়িত্বে সততা থাকলেই হবে না, ব্যক্তিজীবনেও সৎ থাকতে হবে।’
আমানউল্লাহ ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে ইংরেজি দৈনিক মর্নিং নিউজের মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তী কয়েক দশক তিনি অ্যাসোসিয়েট প্রেস পাকিস্তান, ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল, লন্ডনের দ্য টেলিগ্রাফ, ভয়েস অব আমেরিকা, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় সাংবাদিকতা করেন। সাংবাদিকতায় বিশেষ করে রিপোর্টিংয়েই তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে।  রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’ (বিএসএস) এর প্রধান সম্পাদক পদেও দু’দফা দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়া এক সময় প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)’র মহাপরিচালকের দায়িত্বেও ছিলেন। বাংলানিউজের অপেক্ষাকৃত তরুণ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এদিন তিনি জীবনের নানা ঘটনা ও অভিজ্ঞতার শ্রুতিমধুর বর্ণনা দেন। তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে এ পেশায় ‘সততা’র কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কেউ যদি অসাধু হয়, তবে অন্য পেশায় চলে যাওয়া ভালো।’ ‘মানুষকে বা সমাজকে তথ্য সরবরাহ করার পবিত্র দায়িত্ব সাংবাদিকদের’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো ইস্যুতে ব্যক্তিস্বার্থ থাকতে পারে, তবে তা হতে হবে ন্যয়সঙ্গতভাবে।’ সময়ের পরিক্রমায় সাংবাদিকতা পেশা হিসেবে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে আম‍ানউল্লাহ বলেন, ‘ষাট ও সত্তুরের দশকে এমনকি আশির দশক অবধি সাংবাদিকতা ও প্রযুক্তির মধ্যে সাংবাদিকতা এগিয়ে ছিল, এখন প্রযুক্তি ও সাংবাদিকতা তাল মিলিয়ে চলছে।’ তিনি বলেন, ‘অনলাইন সাংবাদিকতাতো রীতিমতো বিস্ময়কর ব্যাপার।’ দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে একটি ‘স্মৃতিকথা’ লেখার কাজে তিনি হাত দিয়েছেন বলেও এদিন জানান। সাংবাদিকতার নেতিবাচক দিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ সংবাদপত্র অফিসে কোনো দায়িত্ব পেলে মনে করে এটা ক্ষমতা। কিন্তু তা ঠিক না, ওই পদের কাজ করতে যতটুকু প্রয়োজন হয়, ততটুকু করতেই তাকে সেই পরিমাণ ক্ষমতা দেওয়া হয়। এর অপব্যবহার করা ঠিক নয়।’ এছাড়া সংবাদিকদের তিনি ‘কৃপণ’ হিসেবেও অভিহিত করে বলেন, ‘এই পেশায় সিনিয়ররা সাধারণত জুনিয়রদের শেখাতে চান না।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে আমানউল্লাহ বলেন, ‘রিপোর্টার ও ফটো সাংবাদিক মিলে একসঙ্গে কাজ করলে অনেক সময়ই ভালো সংবাদ তৈরি করা যায়।’ সাংবাদিকদের সাম্প্রতিক ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আমানউল্লাহ বলেন, ‘সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য আসছে, এটা এখনো আমার মনে হয়নি। কেউ কেউ হয়তো চেষ্টা করছেন।’ আমানউল্লাহর সঙ্গে আলাপচারিতায় বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনসহ প্রতিবেদক ও ফটো সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
bashundhara group
 মেঘ ও ৩ পরিবারকে চেক দিল বসুন্ধরা গ্রুপ
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট 
একমাত্র সন্তান মেঘকে ঘিরেই সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির ছিল ছোট্ট সংসার। ওকে নিয়েই সুন্দর আগামীর স্বপ্ন বুনেছিলেন তারা। কিন্তু নিষ্ঠুর ঘাতক কেড়ে নিয়েছে তাদের প্রাণ। মেঘ এখন একা। মা-বাবা হারানোর ৯৯তম দিন পার করছে সে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির বিয়োগান্তক ঘটনা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের মনে নাড়া দিয়েছে প্রবলভাবে। মেঘের নিষ্পাপ মুখটি তাকে আবেগে আপ্লুত করেছে বারবার। তাই তার প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়েছেন তিনি। শনিবার দুপুরে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে মেঘের জন্য দেওয়া হয়েছে ১৫ লাখ টাকার চেক।
বারিধারার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া হাউসের দোতলার কনফারেন্স রুমে এক অনুষ্ঠানে এ চেক দেওয়া হয়।
শুধু মেঘ নয়, সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই সাংবাদিক বিভাস চন্দ্র সাহা ও শহিদুজ্জামান টিটুর পরিবারের হাতে দুই লাখ করে টাকার চেক এবং দুই কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া জাতীয় প্রেসক্লাব কর্মচারী সোহেলের হাতে এক লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। গত সোমবার এক বৈঠকে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান অসহায় ছয়টি পরিবারের জন্য বিভিন্ন অংকের অনুদান ঘোষণা করেন। অন্য দুটি পরিবার হলো— ছিনতাইকারীদের কবল থেকে দুই নারীকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হযরত আলীর পরিবার ও খিলগাঁওয়ে বাসের মধ্যে ঘুমন্ত অবস্থায় দুর্বৃত্তদের হামলায় পুড়ে মারা যাওয়া বাসচালক বদর আলীর পরিবার। তাদের হাতে শিগগিরই সহায়তার অর্থ তুলে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। শনিবার দুপুরে চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান একে আজাদ চৌধুরী, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের এডিটর-ইন-চিফ আলমগীর হোসেন, দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, দ্য ডেইলি সানের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জামিলুর রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মোহ‍াম্মদ আবু তৈয়ব, সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জুবায়ের, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশাহ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব আব্দুল জলিল ভুইয়া, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান প্রমুখ। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষে চেক তুলে দেন প্রধান অতিথি একে আজাদ চৌধুরী ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে একে আজাদ চৌধুরী বলেন, ``এটি অনুদান নয়, এটি বসুন্ধরা গ্রুপের সামাজিক দায়বদ্ধতা। আমাদের সমাজে বিত্তের অভাব নেই, অভাব শুধু চিত্তের। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের চিত্ত অনেক বড়। আর তাই তিনি দায়িত্ব মনে করে স্বত:প্রণোদিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিক পরিবারসহ আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছেন।`` তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের এমন মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং এ ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। এছাড়া বিপন্ন মানুষের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের হাত সব সময় প্রসারিত থাকবে বলেও তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন বলেন, ``আজকের এই অনুষ্ঠানে সবাইকে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে উপস্থিত হতে হয়েছে। আমি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করছি। যারা তাদের স্বজনদের হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমি সমবেদনা জানাই।`` ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ``আপনাদের ব্যথ‍া আমরা কিঞ্চিৎ অনুধাবনের চেষ্টা করে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এটা বসুন্ধরা গ্রুপের অনেক ভালো উদ্যোগের একটি।``
তিনি বলেন, ``সাংবাদিকরা যাতে ঠিক মতো তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে উদ্যোগ নেবে বসুন্ধরা গ্রুপ। এছাড়া সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও ট্রাস্ট ফান্ড গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে।``
বিপন্ন মানুষের পাশে বসুন্ধরা
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সাংবাদিক দীনেশ দাস। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে দীনেশ দাসের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। এছাড়া গত ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিআরটিসি বাসের চাপায় কালের কণ্ঠের সাংবাদিক নিখিল ভদ্র গুরুতর আহত হন। পরে তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়। এ অবস্থায় বিদেশে নিখিলের চিকিৎসার সব ব্যয়ভার নেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা গ্রুপের কল্যাণে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন সাংবাদিক নিখিল। গত বছরের ২৭ মার্চ বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সাংবাদিক পথিক সাহার স্ত্রী শিল্পী সাহা মনিকার হাতে ১০ লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।
‘ট্যারিফ সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত হবে স্বপ্ন’
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট


উতপাদন খরচের সঙ্গে ট্যারিফ সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সাশ্রয়ী হতে না পারলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত স্বপ্নই থেকে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)’র চেয়ারম্যান এসএম আলমগীর কবির। শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। অনলাইনে বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির উদ্বোধন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে আমরা যখন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছিলাম, তখন তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ২৬ টাকা। এখন বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। দু’বছরে তেলের দাম বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ।’ তিনি বলেন, ‘গ্যাস সঙ্কটের কথা বিবেচনা করে আমরা তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্ত এখন দেখা যাচ্ছে, তেলের দামই আমাদের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবে খরচ বেড়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন পর্যাপ্ত বিদ্যুত উতপাদনের জন্য ট্যারিফ বাড়াতে হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ট্যারিফ বাড়ালেই হইচই শুরু হয়ে যায়। এছাড়া আমাদের অবশ্যই বিদ্যুত সাশ্রয়ী হতে হবে। না হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত আমাদের কাছে স্বপ্ন হয়েই থাকবে।’ তিন বছরে তিন হাজার ৩’শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার কথা উল্লেখ করে পিডিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘তিন বছরে ২২ লাখ গ্রাহককে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সোয়া কোটি জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।’ পরিবেশবাদীদের মৃদু সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘পরিবেশ নিয়ে যারা কাজ করেন তারা অনেক সময় বিভিন্ন সমালোচনা করেন। কিন্তু তাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা পরিবেশের সব গাইডলাইন মেনেই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছি। কিন্তু যারা এসব নিয়ে কথা বলেন তারাও কিন্তু তাদের গাড়িতে, বাসায় এসি ব্যবহার করেন।’ এর আগে পিডিবি চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির ল্যাপটপে সুইচ টিপে অনলাইনে বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন গ্রহণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)’ দক্ষিণাঞ্চলের অধীন নগরীর পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ এলাকার আব্দুল হামিদ নামের এক গ্রাহকের আবেদন গ্রহণের মধ্য দিয়ে শনিবার থেকে শুরু হয় এ কার্যক্রম। কার্যক্রম উদ্বোধন করে পিডিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে গ্রাহকদের দীর্ঘসূত্রিতা এবং ডেস্কে ডেস্কে ঘুরে হয়রানির অভিযোগ ছিল। অনলাইনে আবেদন গ্রহণের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহক এ হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে। মানুষ সাইবার ক্যাফে কিংবা যে কোনো কম্পিউটারে বসে সহজেই সংযোগের জন্য আবেদন করতে পারবেন।’ অনলাইনে আবেদনের পর ২০ কার্যদিবসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলেও জানান পিডিবি চেয়ারম্যান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পিডিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন।
হাসিনা ও খালেদা নিজ নিজ চেয়ারে বসলে মানুষ থাকেন না : কাদের সিদ্দিকী
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট


কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম বলেছেন, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া নিজ নিজ চেয়ারে বসলে আর মানুষ থাকেন না। হয়তো পরিবারের সঙ্গে থাকলে তারা মানুষ থাকেন, তারপর আবার আগের মতো হন। তা না হলে নিজেদের খুশিমতো চলে এই দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন করতেন না। তিনি বলেন, একজন ভাবেন, আমি প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আমার পৈত্রিক সম্পত্তি। তাই যা খুশি তাই করবো। অার অপরজন বড় নেত্রী, তাই খুব ভাব। তিনি কারো প্রয়োজন মনে করেন না। অন্যকে সম্মান দিতে জানেন না। আর এরশাদ মহাজোটে থেকে বলেন, খুন-গুম চলছে। এভাবেই দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। শুক্রবার সন্ধ্যায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটউট মিলনায়তনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। কাদের সিদ্দিকী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে বলেন, ‘আমার এই বোন নিজের ইচ্ছেমতো সবকিছু করতে চান। তিনি বিরোধীদলের ওপর যে নিরযাতন করছেন, তা এদেশে আর ঘটেনি। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত রাষ্ট্রনায়ক তিনি।’ নির্বাচন হলে হাসিনা এখন ৩০ সিটও পাবেন না। শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বোরখা পরে বাসে উঠুন। শুনুন, বর্তমানে ৫০ জনের মধ্যে ৪৮ জন আপনাকে গালি দেন। বার বার হজ করেছেন। কিন্ত সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা মুছে ফেলেছেন। মুসলমানদের এই দেশে ধর্মের বিরুদ্ধে লাগবেন না।’ আন্তঃধর্ম বিবাহ আইন সম্পর্কে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার ভাগিনা জয় ইহুদিকে বিয়ে করেছেন। তার বিয়ের বৈধতা দিতে এ আইন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ এতো বোকা নয় যে, এই সহজ কথাটি বুঝবেন না।’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, ফরোয়ার্ড পার্টির সভাপতি মোস্তফা আমিন প্রমুখ। 
মাতৃস্নেহবঞ্চিত দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীদের সন্তানেরা
শাহেদ আলী ইরশাদ


 ‘আমি একজন মা। অনেক ইচ্ছা করে আমার সন্তানকে আমার কাছেই রাখতে, কিন্তু পারি না। জীবিকার প্রয়োজনে ওকে বাইরে রাখতে হয়।’ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ২৫/২৬ বছরের এক যৌনকর্মী। যৌনকর্মীদের সন্তানেরা তাদের মায়েদের সঙ্গেই থাকে কিনা জানতে চাইলে সৃষ্টি হয় এমনই মর্মস্পর্শী দৃশ্যের। দেশের বৃহৎ যৌনপল্লী দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায়। এখানে কিশোরী থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার যৌনকর্মী বাস করেন। এর মধ্যে হাজার খানেক যৌনকর্মীর পিতৃ পরিচয়হীন একাধিক সন্তান রয়েছে। জন্মের পরপরই যৌনকর্মীদের অনেকে সামর্থ্য অনুযায়ী সন্তানদের পাঠিয়ে দেন স্থানীয় এনজিওর তত্ত্বাবধানে, আবার অনেকে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান বা আত্মীয়স্বজনের কাছে রেখে আসেন তাদের প্রিয় সন্তানকে। একজন মায়ের পক্ষে তার নাড়িছেঁড়া আদরের ধনকে নিজের কাছ থেকে দূরে রাখা খুবই কঠিন। তারপরও পরিবেশের কারণে শত কষ্ট হলেও সন্তানদের বাইরে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হন এসব অসহায় মা। মায়ের আদর যত্নবঞ্চিত এসব শিশু অন্যের কাছে এতিমের মতো বেড়ে উঠছে। চাইলেও পাচ্ছে না মায়ের স্নেহ। শনিবার বিকেলে দৌলতদিয়া যৌনপল্লী ঘুরে দেখা যায়, কয়েক হাজার যৌনকর্মীর মধ্যে মাত্র হাতে গোনা দুÕএকজনের কাছে রয়েছে এক বছর থেকে ছয় মাস বয়সী সন্তান। বাইরে সন্তান লালন-পালন করাচ্ছেন এমন মায়েদের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা জানান, ‌Ôআমরা খারাপ জায়গায় থাকি। আমাদের সন্তানরা এখানে থাকলে আমাদের মতো এ পেশায়ই আসবে। তাই শত কষ্ট হলেও ওদের বাইরে রেখেছি।Õ যৌনকর্মীদের মানবাধিকার রক্ষা ও শিশুদের লালন-পালনে কাজ করছে উন্নয়ন সংস্থা পায়াক্ট বাংলাদেশ। তারা অসহায় যৌনকর্মীদের সন্তানের থাকা-খাওয়া ও পড়াশুনার ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও রয়েছে স্থানীয় এনজিও কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা। তাদের তত্ত্বাবধানে দাতা সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায় লেখাপড়া শিখে বড় হচ্ছে অর্ধশত কিশোরী। মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্ব মা দিবস। আর দশজন মায়ের মতো যৌনকর্মী মায়েদের জন্যও দিনটি বিশেষ। সন্তানের প্রতি তাদেরও রয়েছে অন্য মায়েদের মতোই স্নেহ-মমতা। আবার অন্য শিশুদের মতো যৌনকর্মীদের সন্তানের জন্যও দরকার মায়ের স্নেহ-ভালোবাসা। যা থেকে তারা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে বর্তমানে যৌনকর্মীদের কয়েকশ’ শিশু মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হয়ে বড় হচ্ছে। তারা জেনেও জানে না মা দিবস কি?
বকের অভয়আশ্রমে কিছুটা সময় 
রিপোর্ট: জেসমিন পাঁপড়ি, ছবি: নাজমুল হাসান
‘ঘর ভাঙা কি কষ্ট তা আমরা জানি। তাই কেউ উগো (ওদের) ঘর ভাঙতে আসলি আমরা তাগো (তাদের) তাড়িয়ে দেই।’ রেশমা বলছিল তাদের বাড়ির সামনের বনে আশ্রয় নেয়া ঝাঁক-ঝাঁক বকের কথা। শ্যামনগরের গ্রামে গ্রামে ঘুরছি। সঙ্গে বাংলানিউজের স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট নাজমুল হাসান।
সুন্দরবন ঘেঁষা এই জনপদে মোটর সাইকেল একটি প্রধান বাহন। চালকের পেছনে চড়ে যাত্রীরা পথ পাড়ি দেন। আমরা একটি মোটর সাইকেলই ভাড়া করে নিয়েছি। নাজমুল ভাই দক্ষ চালক। আমি তার পেছনে একমাত্র যাত্রী। এখানে সেখানে হাত তুলে অনেকেই থামাতে চান যাত্রী হওয়ার আশায়। একজনমাত্র যাত্রী নিয়ে মোটর সাইকেল এখানে চলে কম। বিষয়টিতে বেশ মজা পেয়েছেন নাজমুল ভাই। আমিও উপভোগ করছি। কিন্তু পাঠকের কাছে মোটর সাইকেলের গল্প নয় পাখিদের গল্প জানাতেই এ রিপোর্ট। Birdপদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালি গ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ আটকে যায় নদীর পাড়ের কিছু গাছের দিকে। সাদা রঙের কিসব যেন আটকে আছে গাছে গাছে। খেয়াল করতেই বুঝলাম আর কিছু নয়, বকদের অভয়াশ্রম এটি। থেমে যায় নাজমুল ভাইয়ের মোটর সাইকেল। মোটর সাইকেল চলার সময় নাজমুল ভাইয়ের ক্যামেরাটির বাহক আমি। দ্রুত ক্যামেরা এগিয়ে দিলাম। বলার আগেই বের করলাম প্রয়োজনীয় লেন্স। ( কয়েকদিন তার সঙ্গে কাজ করে বুঝে গেছি কোন ছবিতে কোন লেন্সের প্রয়োজন)। এগিয়ে দেওয়া লেন্সটি নিয়ে দ্রুত লাগিয়ে নিয়ে ছবি তুলতে শুরু করেন। আর রাস্তার পাশে মুগ্ধ চোখে বসে পড়ি আমি। দেখতে থাকি পাখিগুলোর গতিবিধি। কোনটি মগডালে বসে আছে, কোনটি উড়ছে। কোনোটি উড়ে গিয়ে নামছে  চরে। ছোটাছুটি করছে সেখানে, কোনোটি খাবার খুঁজছে। গাছের ডালে বসেও চলছে ঝগড়া, খেলা আর ওড়াউড়ি। ঐ এলাকা মুখরিত তাদের কলতানে। এ যেন বকেদের রাজ্য। এমন সময় রাস্তার পাশের বাড়িটি থেকে বেরিয়ে আসে রেশমা। Birdশিকারির বেশে নাজমুল ভাইকে দেখে বোধ হয় ভুল বুঝেছে। দ্রুত আমার দিকে এসে সরাসরি কথার আক্রমণ-``আপনারা কি পাখি মারতি এসছেন? আমরা কিন্তু পাখি মারতি দেইনে। চলে যান আপনারা।`` আমাদের পরিচয় দিয়ে দ্রুত তাকে আশ্বস্ত করলাম, ``পাখি মারব না ছবি তুলবো।`` আমাদের নিরাপদ ভেবে রেশমা এবার রাস্তার পাশেই আমার বসার ব্যবস্থা করল। তার দেওয়া মাদুরে বসেই লিখছি এই প্রতিবেদন। নাজমুল ভাই তখনও ব্যস্ত গাছে থাকা পাখিদের মমতা, প্রেম-ভালবাসা, আর দুষ্টুমি ক্যামেরাবন্দি করতে। রেশমা জানালো আইলার পর ঘরবাড়ি হারিয়ে বাবা মায়ের সঙ্গে একটি এনজিও তরফ থেকে দেওয়া ঘরটিতে আশ্রয় নেয় তারা। আর তখন থেকেই দেখছে এই পাখিগুলোকে। রেশমার বক্তব্য, “আমরা সব হারিয়ে ইকিনে (এখানে) আইছি। ওরাও আমাগো মত। তখন থেকেই আমাগো বাড়ির সবার উগো ওপর মায়া পড়ে গ্যেছে।”
সন্ধ্যার পর বকের কলকাকলি আরো জমজমাট হয় জানিয়ে রেশমা বলে, “এখন তো কম, সুন্ধের (সন্ধ্যা) পর হাজার হাজার পাখি এখানে আসে। উগো কথার জন্যি আমরা নিজেগো মধ্যি কথাবার্তা শুনতে পাইনে।” জীবনের প্রয়োজনে রেশমার পরিবারের সবাইকে বাড়ির বাইরে যেতে হলেও কেউ না কেউ বাড়িতে থেকে যায় তারা। যাতে কোন শিকারীর কবলে না পড়ে পাখিগুলো। রেশমার ১১ বছরের ভাই আনোয়ারুল; স্কুল ছাড়া অন্য কোথাও যায় না সে। রেশমা জানায়, ঝড়, শিলা বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে এদের সংখ্যা আরো কয়েকগুণ বাড়তো।ঝড়ে গাছ ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে এরা হারায় জীবন। হারায় নিজেদের বাচ্চা ও বাচ্চা ফুটানোর আশায় থাকা ডিমগুলো। গাছের ফাঁকে বসে থাকা সাদা বকগুলোকে দেখিয়ে রেশমা জানায় এরা ডিমে তা দিচ্ছে। অন্য সঙ্গী না ফেরা পর্যন্তÍ বসে থাকবে। সঙ্গী ফিরলে তাকে সেখানে বসিয়ে খাবারের সন্ধানে যাবে। যেসব বকের বাসায় ছোট বাচ্চা আছে সেগুলো সন্ধ্যার আগে নিজের মুখে করে আনা খাবার  তুলে দেয় বাচ্চার মুখে। রেশমার কাছে এসব কথা মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম এমন সময়ই আমার ফোনে সংবাদ আসে কৈখালী সীমান্তের একজন লোক বাঘের আক্রমনে প্রাণ হারিয়েছে। তার লাশ গ্রামে আনা হচ্ছে। সিদ্ধান্ত নিলাম যেতে হবে সেখানে। প্রাণচঞ্চল পাখিদের রেখে ছুটলাম কৈখালির উদ্দেশে।
এবার ‘ইত্যাদি’র দৃশ্যধারণ ময়মনসিংহে
জেলা প্রতিনিধি

বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির দৃশ্য ধারণ করা হবে এবার ময়মনসিংহে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে এ অনুষ্ঠানের কয়েকটি পর্ব ও দর্শক উপস্থিতি ধারণ করা হবে। জানা গেছে, ময়মনসিংহ শহরের মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে মুক্তাগাছার জমিদার বীরেন্দ্র কিশোর ওরফে শশীকান্ত’র স্মৃতি জাগানিয়া শশীলজে ক’দিন যাবত অবস্থান করছে ইত্যাদির টিম। এ শশীলজেই ধারণ করা হবে ইত্যাদির পরবর্তী অনুষ্ঠান। ময়মনসিংহের সাংবাদিকদের জন্য ইত্যাদির কর্তৃপক্ষের দেওয়া আমন্ত্রণপত্রে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, এ অনুষ্ঠানে প্রায় ২ হাজার অতিথি উপস্থিত থাকবেন। তবে ১৮ বছরের নিচে কেউ অনুষ্ঠানে ঢুকতে পারবে না। ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) লোকমান হোসেন মিয়া জানান, ‘ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে এ অনুষ্ঠানটি সফলভাবে ধারণ করতে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।’
আবার আমি জ্বলে উঠবো : তিন্নি
বিনোদন প্রতিবেদক
শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি, আমাদের শোবিজের এক হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্র। গত প্রায় দুই বছর ধরে এই গ্ল্যামারগার্ল মিডিয়ায় অনুপস্থিত। ক্যারিয়ারের প্রতি অমনোযোগ, কাজ নিয়ে খামখেয়ালীপনা, শিডিউল ঘাপলা ইত্যাদি কারণে ধ্বস নামে তিন্নির ক্যারিয়ারে। ব্যক্তিজীবনে একটার পর একটা স্ক্যান্ডেল জন্ম দিয়ে তিনি চলে যান পর্দার আড়ালে। জাহিদ হাসান পরিচালিত ‘টোটো কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড’ ধারাবাহিক নাটকে কাজ করার পর তিন্নিকে আর মিডিয়াতে খুঁজে পাওয়া যায় নি। নির্মাতা-প্রযোজক-সাংবাদিক কারো সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখেন নি। একেবারে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। এদিকে আগামী ঈদে তিন্নি অভিনীত প্রথম ছবি ‘সে আমার মন কেড়েছে’ মুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ছবিতে তিন্নি অভিনয় করেছেন শীর্ষনায়ক শাকিব খানের বিপরীতে । তিন্নিকে নিয়ে এ ছবিটি নির্মাণে অনেক ঝুটঝামেলাও পোহাতে হয়েছে পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানকে। শুটিং চলাকালে তিন্নি বহুবার শিডিউল ফাসিয়েছেন। চুক্তির অতিরিক্ত অর্থ দাবী করে শুটিং থেকে বিরত থেকেছেন। এ নিয়ে অনেক দেন দরবারও হয়েছে। ছবিটি শেষ করতে পরিচালকের লেগে গেছে প্রায় তিন বছর। সন্ধানী কথাচিত্রের ব্যানারে নির্মিত এ ছবির নির্মাণ ব্যয় নির্ধারিত বাজেট ছাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণের মতো লেগে গেছে। তবুও শেষপর্যন্ত ছবিটির নির্মাণ শেষ করতে পারায় পরিচালক আর প্রযোজক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। অবশ্য নির্মাতা-প্রযোজক থেকে শুরু করে ছবির নায়ক শাকিব খান পর্যন্ত স্বীকার করেছেন যে, ‘সে আমার মন কেড়েছে’ ছবির পর্দায় তিন্নিকে দেখা যাবে সপ্রতিভ ও ঝলমলে ভঙ্গিতেই। কেবল কমিটমেন্ট নিয়ে যদি তিন্নি কাজ করতেন, তাহলে পাল্টে দিতে পারতেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের চালচিত্র।অনেক খোজাখুজির পর পাওয়া গেছে তিন্নির সন্ধান। তিন্নি এখন অবস্থান করছেন তার মায়ের সঙ্গে রাজধানীর ইস্কাটনের একটি এপার্টমেন্টে। তার সঙ্গে আছে একমাত্র মেয়ে ওয়ারিশা। তিন্নির এক ঘনিষ্ঠ সূত্রের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুরুতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। শেষপর্যন্ত ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না, এই শর্তে কথা বলতে রাজি হন। শুরুতেই তিন্নির কাছে মিডিয়া থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, আমার মধ্যে ছোটবেলা থেকেই অভিমানটা অনেক বেশি। মিডিয়ায় আমাকে অনেক অপপ্রচার হয়েছে। এসব অপপ্রচারের কারণে আমি ভীষণ বিব্রত বোধ করেছি। এ কারণে নিজের ওপর একধরনের অভিমান করেই কিছুদিন স্বেচ্ছা নির্বাসনে আছি। তবে একবারেই যে, সব ছেড়ে নিখোঁজ ছিলাম তা কিন্তু বলা যাবে না। আমার প্রথম ছবি ‘সে আমার মন কেড়েছে’-এর অল্প কিছু ডাবিংয়ের কাজ বাকি ছিল, সেটা শেষ করেছি। ছবিটি আসছে ঈদে মুক্তি পেতে পারে। ‘সে আমার মন কেড়েছে’ ছবিটিতে কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিন্নি বাংলানিউজকে বলেন, খুব সুন্দর একটা গল্প আছে ছবিটিতে। এটি আমার প্রথম ছবি। আশা করছি ছবিটি সবার ভালোই লাগবে। আমি এখন ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায় আছি। এ ছবির মাধ্যমে আমি আবার মিডিয়ায় ফিরছি। আসলে আমি নিজেও এভাবে আর আড়ালে থাকতে চাই না।
আপনাকে নিয়ে এতো অপপ্রচারের কারণ কী ? উত্তরে তিন্নি বলেন, আমি নিজেও এ প্রশ্নের উত্তর জানি না। আমার পেছনে লেগে কি মজা পায় সেটা বুঝতে পারি না। আমি তো আমার নিজের মতো করেই জীবন চালাচ্ছি। আমি যা বলি, তা সরাসরি আর স্টেটকাট। আমার এই স্বভাবটা বোধহয় অনেকে মেনে নিতে নিতে পারেন না। তবে মানুষের জীবন তো একটাই। জীবন নিয়ে থেমে থাকা যায় না। তাই শিগগিরই আমি আবার কাজ শুরু করছি। আমার ভেতর মনোবল আছে। আমি বিশ্বাস করি, আবার আগের মতোই জ্বলে উঠতে পারবো।  বলতে পারেন নতুন করে জ্বলে ওঠার জন্য এখন প্রস্তুতির মধ্যে আছি।  শারীরিক গড়নেও আগের চেয়ে অনেক হালকা হয়েছি। অবশ্যই আমি আমার ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবো। মিডিয়া থেকে দূরে থাকার সময়টাতে তিন্নি সঙ্গীতচর্চার প্রতি ঝুকেছিলেন। কয়েকটি গানও রেকর্ডিং করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিন্নি বলেন, মিডিয়ায় পা রাখার আগে থেকেই তো আমি গান করি। ছোটবেলা থেকেই ওস্তাদজীর কাছে গান শিখেছি। গান নিয়েই এগিয়ে যেতে চেয়েছিলাম একসময়। মডেলিং আর অভিনয়ে ব্যস্ততার কারণে সঙ্গীতচর্চায় মনোযোগ দিতে পারি নি। এই ফাকে তাই গানটা ঝালাই করে নিলাম। ইচ্ছে আছে আস্তে ধীরে একক অ্যালবাম বের করার। তিন্নি এর আগে একাধিক মিক্সড গানের অ্যালবামে কণ্ঠ দিয়েছেন। যার মধ্যে ‘যাবি যদি চল`’ মিক্সড অ্যালবামে তার কণ্ঠে গাওয়া  ‘স্বপ্নগুলো সত্যি হয়ে কেন মনেতে উঁকি দেয়’ গানটি বেশ আলোচিত হয়েছিল।
এবার প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন তিশা
বিনোদন প্রতিবেদক

নন্দিত অভিনেত্রী নুশরাত ইমরোজ তিশা এবার প্রতারণার ফাঁদ ফেলে সহজ-সরল যুবকদের পকেট হাতিয়ে নেওয়ার কাজে নেমেছেন। এবারই প্রথম তিনি এক প্রতারক নারীর চরিত্রে অভিনয় করছেন। তিশা তার অভিনয় ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত হরেক রকম চরিত্রে অভিনয় করেছেন। রোমান্টিক ষোড়শী থেকে শুরু সত্তর বছরের বৃদ্ধা হয়ে দর্শকদের সামনে এসেছেন।  অভিনয় ক্যারিয়ারে তাকে করতে হয়েছে আবেগী প্রেমিকা, উচ্ছন্নে যাওয়া কিশোরী,  ঈর্ষান্বিত তরুণী, লক্ষী গৃহবধূ, স্নেহময়ী বোন, মমতাময়ী মা, চলচ্চিত্রের নায়িকা, গৃহপরিচারিকা, চ্ছিন্নমূল যৌনকর্মী, নির্যাতিত নারীসহ নানারকম চরিত্র। অভিনয় নৈপুণ্য দিয়ে সব চরিত্রকেই জীবন্ত করে তোলার দুর্লভ ক্ষমতা আছে তার। আরটিভির নতুন ধারাবাহিক নাটক ‘পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া’ নাটকে তিশা প্রথমবার নেগেটিভ চরিত্র এক প্রতারক নারীর চরিত্রে অভিনয় করছেন। নাটকে তিশার চরিত্রটির নাম আলেয়া।  তাকে দেখা যায় কৌশলে শেফালি নামের ভদ্রমহিলার বাসায় আশ্রয় নিতে। আশ্রয় পেয়েই সে ছড়িয়ে দেয় প্রতারণার জাল। অল্পসময়েই বাড়ির আসল মালিককে হটিয়ে নিজেই দখল করে নেন বাড়িটি। এরপর প্রেমের নামে ফাঁদ পেতে সহজ-সরল যুবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতে শুরু করেন টাকা । এভাবেই নানা প্রতারণা আর ছলনার মধ্য দিয়ে তার চরিত্রটি এগিয়ে যায়।
আলেয়া নামের প্রতারক নারী চরিত্রটি নিয়ে তিশা বেশ উচ্ছ্বসিত। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আলেয়া চরিত্রের মধ্য দিয়ে দর্শক নতুন ডাইমেনশনে আমাকে দেখতে পাবেন। এ ধরণের নেতিবাচক চরিত্রে আগে কখনো অভিনয় করা হয় নি আমার। আমাদের আশেপাশেই এমন কিছু মেয়ে আছে যারা প্রেমের ভান করে আবেগপ্রবণ তরুণদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা আর নানা সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিয়ে একপর্যায়ে কেটে পড়ে। ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’ ধারবাহিকটিতে আমার চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে এসব বিষয়ই স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ধারাবাহিকটির মজার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিশা আরো বললেন, ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’ নাটকটি নানাদিক থেকেই ব্যতিক্রমী। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ধারাবাহিকটির প্রধান সব চরিত্রই নেতিবাচক। এত আমাদের চারপাশে দিন দিন বাড়তে থাকা অপরাধপ্রবণতা প্রতি দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সমাজের এসব নেতিবাচক দিক সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে নাটকটি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। তিন নবীন নির্মাতা ইমরাউল রাফাত, মাবরুর রশীদ বান্নাহ ও তানিম পারভেজের পরিচালনায় ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’ নাটকে আরো অভিনয় করেছেন মোশারফ করিম, শামীম জামান, শতাব্দী ওয়াদুদ, আ খ ম হাসান,অর্চিতা স্পর্শিয়া, জয়রাজ, অপর্না, মনিরা মিঠু, হাসান আজাদ প্রমূখ । তিশা জানালেন, বর্তমানে তিনি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আলভী আহমেদের ‘নাগরিক’সহ বেশ কিছু ধারাবাহিকের শুটিং নিয়ে। সম্প্রতি অভিনয় করেছেন ‘রচি মম ফাল্গুনী’ নামের একটি টেলিফিল্মে। এতে তিনি একাই করেছেন পাঁচটি চরিত্রে অভিনয়। চরিত্রগুলো হলো সাধারণ নারী, নন্দিনী, সুরবালা, লাবণ্য ও কৃষ্ণকলি। কিছুদিন আগে তিশা শেষ করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ছবি ‘টেলিভিশন’-এর শুটিং। বর্তমানে এডিটিংয়ের টেবিলে থাকা এ ছবিটি চলতি বছরের শেষ নাগাদ মুক্তি পেতে পারে।
বিয়ের পর অহনার ব্যস্ততা
বিনোদন প্রতিবেদক
 আমাদের শোবিজে মিষ্টি মেয়ে অহনার হাতেখড়ি হয়েছিল মডেলিংয়ে। জুই নারিকেল তেলের বিজ্ঞাপন তাকে সুপরিচিত করে তোলে। এরপর পেপসোডেন্ট, ডিজুস, কসমস বিস্কুট, নেসক্যাফে প্রভৃতি বিজ্ঞাপনে মডেল হয়ে পান জনপ্রিয়তা। মডেলিং থেকে আসেন অভিনয়ে। ছোটপর্দার নাটকের পাশাপাশি বড়পর্দাতেও তার অভিষেক হয়েছে। এরই মধ্যে এই গ্ল্যামার গার্ল অনেকটা গোপনে সেরে ফেলেছেন বিয়ের কাজটিও। বিয়ে তার কাজের গতি কমাতে পারে নি। বরং বিয়ের পর অভিনয়ে বেড়ে গেছে তার ব্যস্ততা। প্রায় সাত মাস আগে বিয়ে করলেও অহনার বিয়ের বিষয়টি ফাঁস হয়েছে সম্প্রতি। বর রাহিদ মান্নান লেলিন একজন ব্যবসায়ী। রাজধানীর গুলশানে একজিট নামে তার একটি রেস্টুরেন্ট আছে। লেনিনের বাবা আবদুল মান্নান তালুকদার সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। বছর খানেক আগে লেনিনের সঙ্গে অহনা পরিচয়। অল্পদিনেই গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে প্রেম। ৯ মাস মন দেওয়া-নেওয়ার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে তাদের বিয়ের কাজটি।/ahonaবিয়ের প্রায় আট মাস পরও ঘটনাটি গোপন রাখার কারণ জানতে চাইলে অহনা বললেন, আসলে দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় এখন কেবল আকদ হয়েছে আমাদের। এটা অনেকটা হুট করে হয়ে গেছে। আমার এমবিএ ফাইনালের পর চলতি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহোত্তর সংবধনার আয়োজন করা হবে। তখনই সবাইকে বিয়ের ব্যাপারটি সবাইকে জানাবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু কিছু ঘনিষ্ঠ মানুষ বিয়ের ঘটনাটি ফাঁস করে দিয়েছেন। বিয়ে আমার ক্যারিয়ারকে মোটেও প্রভাবিত করে নি। বরং বিয়ের পর স্বামীর অনুপ্রেরণার কাজের গতি বেড়ে গেছে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। এ মুহূর্তে অহনা অভিনয়টাকেই জোর দিচ্ছেন বেশি। ছোটপর্দার নাটকের শুটিং নিয়ে সপ্তাহ জুড়েই এখন তার ব্যস্ততা। সম্প্রতি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন উপলক্ষে তার লেখা গল্প অবলম্বনে ‘চানভানু’ নামের একটি বিশেষ নাটকের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অহনা। ফেরদৌস হাসানের  চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় নাটকটির অন্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন কে এইচ ফিরোজ, সাজ্জাদ মাহমুদ, ডলি জহুর, আহসানুল হক মিনু, মনিরা মিঠু, আফজাল কবির, কালো সিরাজ, রওনক , জুয়েল , বাহার প্রমুখ। বিশেষ নাটক ‘চানভানু’ আগামী ২৫ মে রাত সাড়ে ৮টায় চ্যানেল নাইনে প্রচারিত হবে। ‘চানভানু’ নাটকটি সম্পর্কে অহনা জানান,  এতে দেখা যাবে একটি দুষ্ট ছেলের দলনেতা আল্লারেখা। সারাদিন বাদরামো করা যাদের প্রধান কাজ। আজ এর গাছের আম চুরি করে তো কাল আরেক জনের ছাগল চুরি করে। পুরো গ্রাম তাদের দুষ্টুমিতে অতিষ্ঠ। সেই দলনেতা একসময় গ্রামের সাধারণ একটি মেয়ের প্রেমে পরে। কিন্তু মেয়ের বাবা তার অন্যত্র বিয়ে ঠিক করে। এভাবে নাটকের গল্প এগিয়ে যায়।
ইদানিং অহনা অবশ্য বেশি ব্যস্ত ধারাবাহিক নাটকের অভিনয় নিয়েই। তবে সুযোগ পেলেই একক নাটকে অভিনয় করেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, একক নাটক আর ধারবাহিক নাটকে অভিনয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছেন বলে আমার মনে হয়। একক নাটকে কোনো একটি ঘটনার সমাপ্তিটা দ্রুত চলে আসে। তাই যথেষ্ট চিন্তাÑভাবনা করে কাজ করতে হয়। অনেক সিরিয়াস থাকতে হয়। অন্যদিকে ধারাবাহিকে দীর্ঘ একটি ঘটনা থাকে, যার সমাপ্তি নিয়ে তেমন চিন্তা করলেও চলে। চরিত্রটার ধরণ ঠিক রেখে কাজ করলেই হলো। একক নাটকে কাজ করার মজা একরকম, আবার ধারাবাহিক নাটকের কাজের মজা অন্যরকম।
ahona_intar‘চানভানু’ ছাড়াও সম্প্রতি অহনা নতুন তিনটি একক নাটকে অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে ‘ভক্সওয়াগান’, ‘দূরের বলাকা’ ও ‘ভালোবাসার এক্সফ্যাক্টর’। অহনা অভিনীত বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটক বর্তমানে প্রচার হচ্ছে ফেরদৌস হাসানের ‘ও বন্ধু আমার’, দিল মোহাম্মদ দিলুর ‘কৈন্যা রূপবতী’, সাফায়েত মনসুর রানার ‘নট আউট’সহ বেশ কিছু ধারাবাহিক নাটক। প্রচারের অপেক্ষায় থাকা ধারাবাহিকের মধ্যে আছে ‘টো টো কোম্পানি’, ‘চোরকাব্য’, ‘হৃদয় বিমা কর্পোরেশন’, ‘বকুলপুরের যাত্রী’, ‘পা রেখেছি যৌবনে’ প্রভৃতি।
চলচ্চিত্রের সঙ্গে অহনার যোগাযোগ দু বছর আগে। আমিন খানের বিপরীতে তাকে ‘চাকরের প্রেম’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায়। কিন্তু ছবিটি ব্যবসা সফল না হওয়ায় তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়ে খানিকটা হতাশ হয়েছিলেন। সেই হতাশা অনেকটাই কেটে গেছে এফআই মানিক পরিচালিত ‘দুই পৃথিবী’ ছবিতে কাজ করে। এতে বিপরীতে রয়েছেন শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। ছবিটির সিংহভাগ অংশের শুটিং এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছ। বড় পর্দার কাজ করার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে অহনা বললেন, চলচ্চিত্র বড় মাধ্যম। এখানে শেখার অনেক বিষয় আছে। খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়। প্রথম ছবিতে আমি ছিলাম একেবারেই নবাগত। চলচ্চিত্রের ভাষা বুঝে অভিনয় করতে তাই কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। নতুন ছবিতে ‘দুই পৃথিবী’তে এই সমস্যায় পড়তে হয়নি। ছবিতে আমার কো-আর্টিস্ট শাকিব খান। তিনি এই মুহূর্তে কমার্শিয়াল ফিল্মের টপহিরো। তবে কাজের ক্ষেত্রে আমি তার সহযোগিতা পেয়েছি। খুব ফ্রেন্ডলি ব্যবহার পেয়েছি তার কাছ থেকে। ছবির অল্প কিছু অংশের শুটিং এখনো বাকি আছে। আশা করছি, তাড়াতাড়ি দর্শকেরা দেখতে পাবেন। অভিনয় আর মডেলিং ছাড়াও অহনার উপস্থাপনায় প্রতি শনিবার আরটিভিতে প্রচার হচ্ছে ‘সিনেবাংলা’ নামের একটি অনুষ্ঠান।
এক সপ্তাহে দুই শাবনূর
বিনোদন প্রতিবেদক

ঢালিউডে দীর্ঘ প্রায় এক দশক শীর্ষ নায়িকার জায়গাটি ছিল শাবনূরের দখলে। কয়েক বছর আগেই অবশ্য সেই জায়গাটি তার হাতছাড়া হয়ে গেছে। গত একবছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে, শাবনূরের নতুন কোনো ছবি মুক্তি পায় নি। দীর্ঘদিন পর শাবনূর অভিনীত নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে আগামী ২৬ মে শুক্রবার। তাও একই সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে তার দুটি ছবি, শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘ভালবাসা সেন্টমার্টিনে’ এবং এমএম সরকার পরিচালিত ‘আত্মগোপন’। গত কয়েক বছর ধরেই চলচ্চিত্রে অনিয়মিত শাবনূর। হঠাৎ অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়া, সিডিউল ফাঁসিয়ে দেয়া, কারো সঙ্গে যোগাযোগ না রাখাসহ বিরুদ্ধে একগাদা অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। কিন্তু এখনকার চিত্রটা একদমই ভিন্ন। নিজেকে অনেকটাই বদলে ফেলেছেন শাবনূর। চলচ্চিত্রের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই এখন উপস্থিত থাকছেন। তারকাদের বাসায় আমন্ত্রণ পেলেই ছুটে যাচ্ছেন। তার এ আচরণে অনেকের মন্তব্য, এতদিনে শাবনূরের বোধোদয় হয়েছে।
বোধদয়ের এই সময়েই শাবনূর অভিনীত দু’টি ছবি একই সপ্তাহে মুক্তি পাবে। ২৫ মে মুক্তির আপেক্ষায় থাকা ‘ভালোবাসা সেন্টমার্টিন’ ও ‘আত্মগোপন’-এর মাধ্যমে নতুন করে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছেন শাবনূর। শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘ভালবাসা সেন্টমার্টিনে’ ছবিতে শাবনূরের নায়ক নবাগত রাশেদ মোর্শেদ। এই নায়কের আরও একটি পরিচয় রয়েছে, সেটি গায়কের। ‘ভালবাসা সেন্টমার্টিনে’ নামে তার একটি গানের অ্যালবামও বের রয়েছে। অপর ছবি এমএম সরকার পরিচালিত ‘আত্মগোপন’-এ শাবনূরের বিপরীতে অভিনয় করেছেন আরেক নবীন নায়ক জায়েদ খান। শাবনূর অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি হলো ‘মা আমার চোখের মনি’। ছবিটি ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে মুক্তি পেয়েছিল। চাহিদা ও জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ব্যস্ততাও কমে গেছে এই সু-অভিনেত্রীর। তবে এই জায়গাটি উদ্ধারের জন্য ইদানিং বেশ আন্তরিক হয়ে উঠেছেন শাবনূর। এ প্রসঙ্গে নিজের উপলব্ধির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মাঝে আমার কিছু সমস্যা ছিল। তাই বেশ কিছুদিন দেশের বাইরে থাকতে হয়েছে। চলচ্চিত্রে তেমন সময় দিতে পারিনি। তবে এ বছর থেকে নিজেকে আবারো চলচ্চিত্রে ব্যস্ত রেখেছি। চলচ্চিত্রের জন্যই আজ আমি শাবনূর। তাই সারাজীবন চলচ্চিত্রের সঙ্গেই থাকতে চাই। শাবনূরের হাতে বর্তমানে আছে আরো ৫টি ছবি। এগুলো হচ্ছে ‘শিরি ফরহাদ’, ‘অবুঝ ভালবাসা’, ‘স্বপ্নের বিদেশ’, ‘এমনওতো প্রেম হয়’ ও ‘পাগল মানুষ’। নিজের অভিনীত চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে শাবনূর বলেন, মুক্তি প্রতীক্ষিত সব ছবির গল্পই আমাকে নিয়ে। আমার অভিনয় ক্যারিয়ারের দেড় যুগ পেরিয়ে গেছে। তাই চাইলেও এখন আর বস্তাপচা ছবিতে অভিনয় করতে পারি না। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা আমার সব ছবির গল্পই বেশ চমৎকার। শিগগিরই  ফেরদৌস, আমিন খান ও শাকিব খানের বিপরীতে নতুন ছবিতে আমি কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। এছাড়াও নতুন প্রজন্মের কজন নায়কের বিপরীতেও অভিনয়ের কথা চলছে।
এফডিসিতে কিছুক্ষণ
অনন্যা আশরাফ

দেশীয় চলচ্চিত্রের সূতিকাগার এফডিসি। লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন...কাট!  পরিচালকের ব্যস্ততা, নায়ক-নায়িকার প্রস্তুতি, এসিসস্টেন্টদের ছোটাছুটি Ñ এই তো এফডিসির স্বাভাবিক দৃশ্য। কিন্তু সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় এফডিসিতে গিয়ে হতাশ হতে হলো। এফডিসির ৮টি ফ্লোরের কোনোটিতে চলচ্চিত্রের কাজ হতে দেখা যায় নি। দেখা গেল তিনটি ফ্লোরে চলছে বিজ্ঞাপন আর রিয়েলিটি শোর শুটিং। সম্প্রতি বৃষ্টিমুখর এক সন্ধ্যায় এফডিসিতে ঢুকে দেখা গেল, সেরকম কর্ম চাঞ্চল্য নেই। চারদিক ফাঁকা ফাঁকা। কয়েকজন এদিক-সেদিক হাটাহাটি করছে।  কিছু লোক দল বেঁধে গল্প করছে। এফডিসির বিভিন্ন শুটিং ফ্লোরে ঢু দিয়ে দেখা গেল, তিনটি ফ্লোরে কাজ হচ্ছে। অন্যগুলো খালি পড়ে আছে। তিনটি ফ্লোরের একটিতে দেখা গেল, উপস্থাপিকা মুনমুন সেটে দাঁড়ানো। পেছনে টানানো ব্যানার, লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার। কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হবে শুটিং। এখন চলছে সেই প্রস্তুতি। এফডিসি ৮নং ফ্লোরে দেখা গেলো আলোর ঝলকানি। দূর থেকে মনে হলো, নিশ্চয়ই কোনো ছবির গানের শুটিং হচ্ছে। কিন্তু ভেতরে গিয়ে আবারও হতাশ হতে হলো। এখানে চলছে একটি বিজ্ঞাপনের শুটিং। ৩নং ফ্লোরের সামনে জটলা দেখে এগিয়ে গেলাম। হ্যাঁ, ভেতরে শুটিং চলছে। কোন ছবির শুটিং হচ্ছে, নাহ কোনো ছবি নয়। এখন চলছে রিয়েলিটি শো ‘সেরা নাচিয়ে’ এর শটিং। ভেতরে গিয়ে দেখলাম সেরা নাচিয়ের শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনুষ্ঠানের পরিচালক ইজাজ খান স্বপন। তার সঙ্গে কিছুক্ষন কথা বলে খবর নিলাম, অনুষ্ঠানের বিচারকের দায়িত্বে থাকা চলচ্চিত্র শিল্পী ফেরদৌস,পূর্নিমা ও নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ কোথায় আছেন। তিনি জানালেন সবাই ম্যাকআপ রুমে তৈরি হচ্ছেন। দেরী না করে চলে গেলাম এফডিসির দোতালার ম্যাকআপ রুমগুলোতে। সিড়ি দিয়ে উঠতেই দেখলাম সেরা নাচিয়ের প্রতিযোগীরা রং বেরংয়ের সাজে দাড়িয়ে আছে।  অপেক্ষায় আছে প্রতিযোগীতার মঞ্চে উঠার। দোতালায় ম্যাকআপ রুমগুলোতে ঘুরে খুজতে থাকলাম বিচারকদের। প্রথম রুমেই দেখা হয়ে গেল নৃত্যশিল্পী লিখন ও ---এর সঙ্গে। হাসিমুখে কিছুক্ষন কথা বলার পর সে রুম থেকে আবারও বেরিয়ে গেলাম। পরপর দুই তিনটি রুম খোজার পর দেখা পেলাম অনুষ্ঠানের মূল বিচারকদের। ফেরদৌস একটি সোফায় বসে আছেন, আর পূর্ণিমা ও মুনমুন আহমেদ ম্যাকআপ নিচ্ছেন। এফডিসির ম্যাকআপ রুমে চলচ্চিত্র শিল্পীরা কোন ছবির জন্যে নয় বরং কোন অনুষ্ঠানে অংশ নেবার জন্যে ম্যাকআপ নিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে কিছুক্ষন কথা বলে নিচে নেমে এলাম। স্টুডিও থেকে বেরিয়ে দাড়িয়ে থাকা আশেপাশে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম ছবির শুটিং এফডিসির কোথায় হচ্ছে। তারা জানালেন কোন ছবির শুটিং চলছেনা। ঢালিউড চলচ্চিত্রের প্রাণ এফডিসি একসময় মুখর ছিল নতুন ছবির শুটিংয়ে। যা  এখন শুটিং শূণ্য। বিশাল এফডিসির কোথাও কোন ছবির শুটিং দেখার সৌভাগ্য আর হলনা। কি এর কারণ! বছরে প্রায় অনেক ছবিই তো বের হয়। তবে ছবির শুটিংয়ে খালি কেন এ প্রাঙ্গন! নাকি পরিচালকরা ছবির শুটিংয়ে এখন এফডিসির বাইরে আউটডোরে শুটিংকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন ,না আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পে এফডিসির গুরুত্ব কমে গেছে এফডিসির ক্যান্টিনে বসে চা খেতে খেতে এমনি অনেক প্রশ্নের ঘুরপাক খেতে থাকলো নিজের মনে। অগোছালো প্রশ্নকে মনে নিয়েই বেরিয়ে আসি এফডিসির থেকে।
মাস্তান থেকে লাভগুরু তুষার মাহমুদ
অনন্যা আশরাফ
আজকের প্রজন্মের সুপরিচিত অভিনেতা তুষার মাহমুদ। বিনোদন সাংবাদিকতা থেকেই তার অভিনয়ে আসা। অভিনয়টা প্রথমে তার ছিল শখ। পর পর কয়েকটা নাটকে অভিনয় করার পর বন্ধু আর কাছের মানুষদের প্রশংসা তাকে অনুপ্রাণিত করে। এরপর সাংবাদিকতার পাশাপাশি অভিনয়কেও গ্রহণ করেন পেশা হিসেবে। দিন দিন অভিনয় নিয়ে বাড়ছে তার ব্যস্ততা। বর্তমানে তুষার মাহমুদ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এনটিভির ব্যয়বহুল দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘মায়া নিগম’-এর শুটিং নিয়ে। গোলাম মোস্তফা শিমুল পরিচালিত দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘মায়া নিগম’-এক ‘মিজান’ নামে একটি মাস্তানের চরিত্রে অভিনয় করছেন তুষার মাহমুদ। এতে নিজের চরিত্র সম্পর্কে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, নাটকে আমাকে শুরুতে দেখা যায় এলাকার ছোটখাট এক মাস্তান হিসেবে। একের পর এক অপরাধে আমি জড়িয়ে পড়ি এবং এক সময় আন্ডার ওয়ার্ল্ডে গডফাদারে রূপান্তরিত হই। মাস্তানি করে বেড়ালেও আমার হৃদয়ে থাকে ভালোবাসা। সম্ভ্রান্ত পরিবারের ’স্বর্ণা’ নামে একটি মেয়ের সঙ্গে আমার ভালোবাসা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।  তার অগোচরেই আমি একের পর এক অপরাধ করতে থাকি। নাটকটি সম্পর্কে  বিস্তারিত জানিয়ে তুষার মাহমুদ আরো বলেন,  , রেড লাইট ক্যামেরা ব্যবহার করে ডিজিটাল ফরম্যাটে তৈরি হচ্ছে এ নাটকটি। ঢাকা ও নায়ারনগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে নাটকটির শুটিং চলছে। জুন মাসের প্রথমেই নাটকটি দর্শকরা এনটিভিতে দেখতে পাবেন। এ মুহূর্তে তুষার মাহমুদ আরো অভিনয় করছেন পরিচালক আদিত্য নজরুলের ’কেন এমন হয়’ নামে একটি ধারাবহিক নাটকে। এতে মজার চরিত্র লাভগুরুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাটকে আমার চরিত্রটি খুব মজার। প্রেমিক বন্ধুদের কাছে সুপরিচিত একটি নাম ‘লাভগুরু’। এ নাটকে আমি এমনই একটি চরিত্রে অভিনয় করছি। নাটকে ভালোবাসার বিষয়ে পরামর্শদাতা হয়ে অভিনয় করেছি। অনেক মজার মজার ঘটনা আছে নাটকটিতে। এছাড়াও তুষার মাহমুদ বর্তমানে আরো বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছেন। যার মধ্যে রয়েছে মাসুম মহিউদ্দিন ‘ভুতের বাড়ি’, তপু চৌধুরির ‘লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন’, এম সাখাওয়াত হোসেনের ‘শেষ রাতের তারা’, কামাল খানের ‘নিশিগন্ধা’, আলী রেজার ‘মানের মানুষ দেশে’, আপেল মাহমুদের ‘চক্কর’, প্রভাত আহমেদের ‘জলপ্রদ’, এসএম হুসেইনের বাবলার ‘লুকোচুরি’ প্রভৃতি। তুষার অভিনীত প্রচারের অপেক্ষায় থাকা একক নাটকের মধ্যে রয়েছে শাহীন হোসেইনের ‘পাঞ্জা লড়াই’, সুজন বড়ুয়ার ‘অদৃশ্য দেয়াল’, শাহীন নাসিরের ‘ক্ষেপা’, শেহেজুল হোসেইনের ‘ফাঁদ’ ও প্রভাত আহমেদের ‘নাবিক’ প্রভৃতি। বিভিন্ন চ্যানেলে বর্তমানে অন-এয়ার হওয়া তুষার মাহমুদ অভিনীত নাটকের মধ্যে আছে চ্যানেল নাইনে আলভী আহমেদের ‘সমীকরন’, বৈশাখী টেলিভিশনে সুষ্ময় সুমনের ‘আউট অফ কন্ট্রোল’, এটিএন বাংলায় ‘দলছুট পাখিরা’ এবং দিগন্ত টেলিভিশনে ‘ছায়া ঘাতক’নাটক।শুধু ছোটপর্দাতেই নয়, এরই মধ্যে তুষার মাহমুদের চলচ্চিত্রেও অভিষেক হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিনেতার পূর্ণ প্রকাশ তো বড় পর্দার মাধ্যমেই হয়। তাই ওই জায়গাটায় যাওয়ার ইচ্ছেটা ছিল অনেকদিন থেকেই। সুযোগটাও পেয়ে গেলাম। ‘মায়া নিগম’ নাটকের পরিচালক গোলাম মোস্তফা শিমুলেরই ডিরেকশনে একটি ছবিতে অভিনয় করছি। ছবির নাম ‘অনুক্রোশ’। তিনি আরও বলেন, এটি মুক্তযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত একটি বাণিজ্যিক ছবি। আমি এখানে একজন মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছি। তবে এতে মজার বিষয় হলো, বানিজ্যিক ভিত্তিক ছবি হলেও পুরো ছবিটা হচ্ছে শুধুমাত্র পুরুষ কেন্দ্রিক। এতে কোন মেয়ের চরিত্র নেই। জুলাইয়ের শেষ দিকে ছবিটি মুক্তি পাবে।
নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছি অভিনয়কেই। তাই ভালো অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছেটা আছে সবসময়ই। সেই সঙ্গে ভালো কিছু চরিত্রে অভিনয় করতে চাই, যা দর্শক মনে রাখবে দীর্ঘদিন। 
 মেয়েকে বলিউডে আনতে চান না শ্রীদেবী
অনন্যা আশরাফ

আশি ও নব্বুই দশকের বলিউড ড্যান্স ডিভা ও রূপের রানী শ্রীদেবী। নাচে, অভিনয়ে যার জুড়ি নেই, সেই কিনা চাননা তার মেয়ে তার পথ ধরে বলিউডে পা রাখুক! সম্প্রতি ভারতের একটি পত্রিকার সাক্ষাতকারে স্পষ্টভাবে তিনি একথা জানিয়ে দিয়েছেন। মেয়ে জানভীকে অভিনয়ে নয়, বরং বিয়ে করে সংসারী দেখতে চান তিনি। কাপুর পরিবারের দুই বংশধর অনীল কাপুরের মেয়ে সোনাম কাপুর ও বনি কাপুরের ছেলে  অর্জুন কাপুর এরইমধ্যে বলিউডে পা রেখেছেন। নতুন অবস্থাতেই সুনামের ভাগীদারও  তারা কম হননি। সে ধারাবাহিকতায় মিডিয়ার চোখ চলে যায় শ্রীদেবীর মেয়ে জানভী কাপুরের দিকে। কিন্তু মা শ্রীদেবী এক্ষেত্রে একটু বেশিই কঠিন। মেয়েকে অভিনেত্রী হিসেবে দেখতে নারাজ তিনি। বরং ১৫ বছরে পা দেয়া মেয়ে জানভী এখন লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলেই তিনি বেশি খুশি হবেন। এমনি কিছু কথা শ্রীদেবী একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমি লেখাপড়ায় অনেক ভালো ছিলাম। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ে জড়িয়ে যাই। ব্যস্ততায় আর লেখাপড়া শেষ করতে পারিনি। আমি চাইনা আমার মেয়ের ক্ষেত্রেও তাই  ঘটবে। জানভি ও খুশি দুজনই খুব ছোট। তারা লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলেই আমার ভালো লাগবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্য কিছুতেই মনযোগী হোক তা আমি চাইনা।  লেখাপড়া শেষে জানভী কাপুর কি অভিনয়ে আসছে এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রীদেবী আরও স্পষ্ট করে বলেন, আমি চাইনা আমার মেয়ে অভিনেত্রী হবে। সম্ভব হলে আমি খুব শিগগিই তাকে বিয়ে দিয়ে দিতে চাই। মেয়ের অভিনয়ে আপত্তি থাকলেও শ্রীদেবী নিজে আবার বলিউডে অভিনয়ে ফিরছেন। শোনা গেছে, ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবিতে বিগ বি অমিতাভের বিপরীতে তিনি অভিনয় করছেন।
ইয়াশ রাজের ছবিতে নিকোল কিডম্যান
বিনোদন ডেস্ক

বলিউড ছেড়ে এবার হলিউড ফিল্ম প্রডাকশনে নেমেছে বলিউডের নামকরা প্রডাকশন হাউজ ইয়াশ রাজ ফিল্ম এন্টারটেইনমেন্ট। এ  প্রডাকশন হাউজের ব্যানার নির্মিত হওয়া নতুন হলিউড ছবিতে অভিনয় করছেন হলিউডের অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান। ইয়াশ রাজ ফিল্ম এন্টারটেইনমেন্টের সিইও উদয় চোপড়া সম্প্রতি এ খবরের আনুষ্ঠানিক  ঘোষনা দিয়েছেন। হলিউড প্রযোজক পিয়ার এঞ্জ লি পোগাম ও ইয়াস রাজ ফিল্ম এন্টারটেইনমেন্ট যৌথভাবে ‘গ্রেস অফ মোনাকো’ ছবিটি প্রযোজনা করবে। ছবিটির পরিচালনায় থাকছে ’লা ভি এন রোজ’ খ্যাত পরিচালক অলিভার দাহান।  কাহিনী লিখেছেন আরাশ আমেল। ছবিটি ফ্রাান্সের মোনাকোর প্রিন্সেস গ্রেসের কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছে। যার নাম ভূমিকায় অভিনয় করবেন নিকোল কিডম্যান। ইয়াস রাজ ফিল্ম ইন্টারটেইনমেন্টের পক্ষ থেকে ছবির প্রযোজনায় থাকছেন প্রডাকশন হাউজের ডেভেলপমেন্ট হেড জোনাথান রেইমান। এর আগেও ইয়াশ রাজ ফিল্ম এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে ইংরেজি ভাষার ছবি ‘বেভারলি হিলস’। এ ছবিটি  যুক্তরাষ্ট্রে ও গ্লোবাল মার্কেটে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এরপরই উদয় চোপড়া ও পিয়ার-এঞ্জ লি পোগাম ‘গ্রেস অফ মোনাকো’ ছবিটি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহী হয়ে উঠে। এ বিষয়ে উদয় চোপড়া বলেন, মেধা ও ইন্দ্রিয়ের গ্রাহ্যতার অসম্ভব সুন্দর  সমন্বয় ঘটেছে ‘গ্রেস অফ মোনাকো’ ছবিতে। ইয়াস রাজ ফিল্ম এন্টারটেইনমেন্ট এর একটি অংশ হতে পেরে গর্ববোধ করছে। অন্যদিকে লি পোগামও এ ছবির বিষয়ে বলেন, ছবির স্ক্রিপ্টটি পড়েই খুব ভালো লেগেছে। ঠিক করলাম কাহিনী নিয়ে ভালো একটি ছবি বানানো যায়। কাহিনীকে আরও প্রানবন্ত করে উপস্থাপনের জন্যে পরিচালক অলিভার দাহানের বিকল্প কাউকে মাথায় এলো না। এরপর অলিভার ও আমি নিকোল কিডম্যানের সঙ্গে দেখা করি। প্রথম দেখাতেই মনে হয়েছে গ্রেস প্রিন্সেসের চরিত্রে পারফেক্ট মুখ নিকোল কিডম্যান। এরপর উদয় চোপড়ার সঙ্গে কথা বলে একসঙ্গে প্রযোজনার বিষযে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। ছবির সবকিছু ঠিক করে ফেলি। ইয়াস রাজ ফিল্মের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা ভালোই হবে আশা করি। এটাই প্রথম নয়, ইয়াশ রাজের এ প্রডাকশন হাউজটি পিটার গ্ল্যানজের উপর নির্মিত নতুন কমেডিয়ান ছবি ‘দ্য লঙ্গেস্ট উইক’-এর পোস্ট প্রডাকশনের কাজও করছে। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন জ্যাসন বেটমেন ও অলিভিয়া ওয়াইল্ড।
বিয়ে করলেন চলচ্চিত্রাভিনেত্রী নাসরিন
বিনোদন প্রতিবেদক

ঢালিউডে ছোটখাট সাইড ক্যারেকটারে অভিনয় দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন নাসরিন। এরপর ধীরে ধীরে বড় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। একটা সময় বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের আইটেম গানে নৃত্যশিল্পী হিসেবে নাসরিনের উপস্থিতি ছিল একচেটিয়া। সময়ের সাথে সাথে চলচ্চিত্রে নাসরিনের ব্যস্ততা কমে আসে। সম্প্রতি তিনি তার একাকী জীবনের ইতি টেনেছেন। একেবারেই ঘরোয়া আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিয়ের কাজটি সেরেছেন নাসরিন। নাসরীনের মগবাজারের বাসায় গত ১৮ মে শুক্রবার রাতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। নাসরীনের বর রিয়েল খান পেশায় ব্যবসায়ী। ব্যবসার পাশাপাশি মডেলিংয়ের সঙ্গেও জড়িত তিনি। নাসরিনের সাথে তার পরিচয় অনেকদিনের । তবে দুজনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে প্রায় ছয়মাস আগে। নাসরিনের গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে হলেও তার বেড়ে উঠা পুরনো ঢাকায়। নাসরিনের রয়েছে আরও চার বোন এক ভাই। বোনদের মধ্যে নাসরিনই সবার ছোট।  তার মা বাবা গত হয়েছেন অনেক আগেই। তাই অন্যান্য বোনদের বিয়ে দিতে গিয়েই নিজের বিয়ের দিকে সেভাবে মনোযোগ দিতে পারেননি। অনেক পরে হলেও পরিবারের সবার আগ্রহেই নাসরিন এই বিয়েতে মত দেন। নাসরিনকে চলচ্চিত্রের দর্শক একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবেই বেশি চিনেন। বিশেষত চলচ্চিত্রের কৌতুক সম্রাট দিলদার বেঁচে থাকাকালীন সময়ে তার সঙ্গে নাসরিনে একটি জুটি গড়ে উঠে। কিন্তু দিলদারের মৃত্যুর পর নাসরিন আর সেভাবে ব্যস্ত হতে পারেননি। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরেই চলচ্চিত্রে নাসরিনের অভিষেক ১৯৯২ সালে। তার প্রথম ছবি ‘লাভ’। এরপর এই পর্যন্ত তিনি প্রায় পাঁচ শ‘র মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন। নাসরিন অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আছে। ‘অগ্নিপথ’, ‘মরন কামড়’, ‘ফুলের মতো বউ’, ‘বর্তমান’, ‘কাজের মেয়ে’, ‘বিচার হবে’, ‘শেষ ঠিকানা’ ইত্যাদি। তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি সোহানুর রহমান সোহানের ‘এক মন এক প্রাণ’। বর্তমানে তিনি শাহীন সুমনের ‘খোদার পরে মা’ ছবির কাজ করছেন। বিয়ে করা প্রসঙ্গে নাসরিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিয়ের কাজটি করার জন্য একটু বেশি সময় আমাকে নিতে হয়েছে। একেবারেই ঘরোয়া আয়োজনের মধ্যদিয়েই বিয়ে করেছি। তাই অনেককেই বলা হয়ে উঠেনি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যেন সুখী হতে পারি। নাসরিনকে আশীর্বাদ জানাতে বিয়েতে উপস্থিত হয়েছিলেন সোহানুর রহমান সোহান, চিত্রনায়িকা অঞ্জনা, একাসহ আরও অনেকেই।

ট্রিবিউট টু মেরিলিন মনরো
অনন্যা আশরাফ
বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, পদার্থ বিজ্ঞানের মতো কাঠখোট্টা বিষয় নিয়ে তার কাজ। শারীরিক প্রতিবন্ধী এই মেধাবী বিজ্ঞানীর বসার ঘরের দেয়াল জুড়ে রয়েছে এক নারীর বিশাল প্রতিকৃতি। ছবিটি মেরিলিন মনরোর। শুধু হকিংই নয়, সারাবিশ্বের লাখো কোটি মানুষ তার অপার সৌন্দর্যে মোহাবিষ্ট, মুগ্ধ তার কণ্ঠের জাদুতে, মুগ্ধ তার চাহনিতে। বিশ্বের সর্বকালের সেরা যৌনাবেদনময়ী সেলিব্রিটির তালিকার শীর্ষে মেরিলিন মনরোর অবস্থান। রহস্যময়ী এই অভিনেত্রীর মৃত্যুর ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে এ বছর। ঐতিহ্যবাহী কান চলচ্চিত্র উৎসবের এবারের আয়োজনে মেরিলিন মনরোর প্রতি জানানো হচ্ছে বিশেষ সম্মান। ৬৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে মেরিলিন মনরো যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছেন। এবারের উৎসবের সর্বত্রই তার উপস্থিতি। প্রবেশপথ থেকে শুরু করে হলের বিভিন্ন স্থানে টানানো আছে তার অতিকায় সব ছবি। পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন সবখানেই রয়েছেন তিনি। উৎসবের অফিশিয়াল পোস্টারও করা হয়েছে রহস্যময়ী অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোকে নিয়ে। মৃত্যুর ৫০ বছর পর আজও এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী যেন উৎসবে আসা দর্শনার্থীদের সঙ্গেই আছেন।
মেরিলিন মনরোর আসল নাম নরমা জেইন। জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৬ সালের ১জুন  লস এঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়াতে। তার আসল বাবার পরিচয় পাওয়া যায় নি। কারণ মেরিলিন জন্মের আগে থেকেই তার মা গ্ল্যাডিস পার্ল বেকার ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। মনরোর শৈশব কেটেছে বড় কষ্টে কষ্টে। অনাথ আশ্রম ফষ্টার চাইল্ড হোমের কঠোর অনুশাসনের মধ্য মেরিলিন মনরো বেড়ে উঠেন। ১২ বছর বয়সে পালক পিতা-মাতার আশ্রয় পান তিনি। এখানে পুর্ণ স্বাধীন জীবনযাপনের সুযোগ পায় মনরো। কারণ পালক মা ছিলেল তার পাগল মায়ের বান্ধবি। মেরিলিন মনরোর বয়স যখন পনের, সেসময় তার পালক বাবা-মা মারাত্মক অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তারা মনরোকে আবার এতিমখানায় পাঠানোর উদ্যোগ নেন। এতিমখানার কঠোর অনুশাসনের অবস্থা চিন্তা করে শিউরে উঠেন মনরো। প্রতিবেশি এয়ারক্রাফট প্ল্যান্টের চাকরিজীবি জিমের হাত ধরে বেরিয়ে পড়েন মনরো, যাতে তাকে আর এতিমখানায় যেতে না হয়। ১৯৪২ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তাকে বিয়ে করেন মনরো। এই বিয়ে টিকেছিল চার বছর। ১৯৪৫ সালে জিমের সহয়তায় এরোপ্লেন পার্টস কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন মনরো। অসাধারণ গ্ল্যামার আর শারীরিক অভিব্যক্তির কারণে অল্প সময়েই ঐ প্রতিষ্ঠানটির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে যান। ঐ কোম্পানীর শো-গার্ল হিসেবে প্রথম তিনি মডেলিং করেন। এরপর পরই পাল্টে যেতে থাকে তার জীবন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগে সেনাবাহিনীর ফটোগ্রাফার ডেভিড কনোভার একটি পত্রিকার জন্য মনরোর একটি ছবি তোলেন। সে ছবি প্রশংসিত হয় বিভিন্ন মহলে। এরপরই মনরোর ডাক আসে মডেলিং দুনিয়ার বড় বড় এজেন্সি থেকে। ফটোজেনিক মেরিলিন মনরোর ছবি বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হতে থাকে। এদিকে তার স্বামী জিম সাফ জানিয়ে দেন, ঘর করতে হলে মডেলিং ছাড়তে হবে। কিন্তু মডেলিং পেশায় ভবিষ্যতের সম্ভাবনার কথা ভেবে মেরিলিন জিমের সঙ্গে ডিভোর্সের পথেই হাঁটেন। মডেলিংয়ের মাধ্যমেই টোয়েন্টিন্থ সেঞ্চুরি ফক্সের এক কর্তাব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মনরো। তার সহায়তায়  ১৯৪৬ সালে চলচ্চিত্রে পা রাখেন তিনি।  এখানেই তার নাম নোরমা জেন থেকে মেরিলিন মনরো হয়। অভিনয়ে অভিষেকের ৪ বছরের মাথায় তিনি অভিনেত্রী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে থাকেন। ১৯৫০ সালে তার অভিনীত ‘অ্যাসফল্ট জঙ্গল’ এবং ‘অল এবাউট ইভ’ ছবি দুটি ব্যাপক ব্যবসাসফল হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ১৯৫২ সালে আজকের বিখ্যাত প্লে­বয় ম্যাগাজিনের প্রথম সংখ্যার কাভারে সম্পূর্ণ উন্মুক্তভাবে নিজেকে মেলে ধরেন মেরিলিন মনরো গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে হৈ চৈ ফেলে দেন। নগ্নতাকে প্রতিষ্ঠিত করেন শিল্পে। তার ছবি কভারে ছাপার মাধ্যমেই সেক্স-ম্যাগাজিন হিসেবে প্লে-বয় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৫৩ সালে ‘নায়াগ্রা’ ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর একে একে ‘জেন্টেলম্যান প্রেফার ব্লোন্ডেজ’, ‘হাও টু ম্যারি এ মিলিনিয়াম’ ও ‘দি সেভেন ইয়ার ইচ’ ছবির মাধ্যমে তার পরিচিতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। হলিউডের অ্যাকটিং স্টুডিও থেকে মনরো অভিনয়ের উপর একটা স্পেশাল ডিগ্রি নেন। ১৯৫৬ সালের ‘বাস স্টপ’ ছবিতে তার অভিনয় তাকে ‘গোল্ডেন গ্লোব’ পুরস্কারের নমিনেশনে নিয়ে আসে। এরপর তিনি ছবি প্রডাকশনে কাজে নাম লেখান। তার প্রডাকশন হাউজটির নাম রাখেন ‘মার্লিন মনরো প্রডাকশন’। প্রডাকশন হাউজের ব্যানারে প্রথম নির্মিত ছবি মুক্তি পায় ১৯৫৭ সালে  ‘দ্য প্রিন্স এন্ড দ্য শোগার্ল’। এ ছবির জন্যে তিনি বাফটা অ্যাওয়ার্ডে নমিনেশন পান এবং ’ডেভিড ডি ডোনাটেলো‘ পুরস্কার জিতে নেন। ১৯৫৯ সালে ‘সাম লাইক ইট হট’ ছবিতে অভিনয়ের জন্যে তিনি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন। তার শেষ ছবি ছিল ‘দ্য মিসফিট’।
নিজের অভিনীত অনেক ছবিতেই খোলামেলা এবং ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করেছেন মনরো। আর এর মধ্য দিয়ে জীবদ্দশাতেই তিনি সেরা যৌনাবেদনময়ী তারকায় পরিণত হন। মোহময়ী হাসি, চুলের ঝলমলে দ্যুতি আর ঠোঁটে মায়াবী জাদুর ছোঁয়ায় সহজেই অগণিত দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেন তিনি। সৌন্দর্য আর রহস্যময় হাসির অধিকারী মনরো আরও একটি গুণের জন্য পরিচিত সবার কাছেই। সেটি হলো তার সঙ্গীত প্রতিভা। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির জন্মদিনে গাওয়া ‘হ্যাপি বার্থডে মি. প্রেসিডেন্ট’ গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। এ ছাড়া তার গাওয়া ‘মাই হার্ট বিলংস টু ড্যাডি, ‘আই ওননা বি লাভড বাই ইউ’ এবং ‘ডায়মন্ডস আর এ গার্লস বেস্ট ফ্রেন্ডস’ গানগুলোও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী জীবনে মোট ৩ বার গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন। তবে ব্যক্তিগত জীবনে কখনোই সুখী ছিলেন না। ৩৬ বছর বয়সের মধ্যেই ৩ বার ডিভোর্সের পথে হাঁটতে হয়  তাকে। পরবর্তীতে একাকীই নিজের বাড়িতে থাকতেন তিনি। ১৯৬২ সালের কোল্ড ওয়ারে কিউবায় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সময় জন এফ কেনেডির একজন ঘনিষ্ঠ জন হিসেবে কাজ করেন মনরো। কেনেডি আর তাকে নিয়ে বাজারে সেসময় অনেক কেচ্ছা-কাহিনীও প্রচার হয়েছিল। ১৯৬২ সালে ৫ আগস্ট মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ভুবন ভুলানো হাসির জন্য সুপরিচিত মনরোর হাসি চিরতরে থেমে যায়, লস এ্যাঞ্জেলেসের ব্রেন্টউডে নিজের বাড়িতে তাকে মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত মনরোর মৃত্যু তার হাসির মতোই এক রহস্য হয়ে আছে মানুষের কাছে। সবার কাছে আত্মহত্যা হলেও কেউ কেউ মনে করেন, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যা। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে তার মৃত্যুরহস্য চাপা পড়ে যায়। মেরিলিন মনরো যে সময়টায় মৃত্যুবরণ করেন তখন তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। বিশ্ব চলচ্চিত্রকে হয়ত অনেক কিছুই দেওয়ার ছিল তার। কিন্তু অজানা কোন এক কারণে তাকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয়। যার জন্য সেসময় কেঁদেছেন তার অসংখ্য ভক্ত। এখনও বিশ্ব চলচ্চিত্রের সেরা অভিনয় পর্যালোচনা করতে গেলে বারবার উঠে আসে এই কিংবদন্তির নাম। ১৯৯৯ সালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে মনরোকে ষষ্ঠতম ‘গ্রেটেস্ট ফিম্যাল স্টার অফ অল টাইম’ খেতাব দেয়া হয়। এই অমর অভিনেত্রীর মৃত্যুর ৫০ বছর পার হওয়ায় এবছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে তার প্রতি বিশেষ সম্মান জানানো হচ্ছে।
এক নজরে মেরিলিন মনরো
আসল নাম : নরমা জেন মর্টেনসন বেকার
জন্ম : ১ জুন, ১৯২৬
জন্মস্থান : ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলস্
মৃত্যু : ৫ আগস্ট ১৯৬২
স্থান : ব্রেন্টউড, লস এঞ্জেলস
শিক্ষাগ্রহণ : ফস্টার চাইল্ড হোম
পেশা : অভিনেত্রী, মডেল, গায়িকা ও প্রযোজক
ক্যারিয়ার সময় : ১৯৪৭ - ১৯৬২
বিয়ে: জেমস ডোর্টি (১৯৪২-১৯৪৬), জো ডিম্যাগি (১৯৫৪-১৯৫৪), আর্থার মিলার ( ১৯৫৬-১৯৬১)
মেরিলিন সম্পর্কে জানা-অজানা তথ্য
১. কোনো ছবিতে চশমা পড়তে দেখা না গেলেও মেরিলিন এমনিতে চশমা পরতেন।
২. মেরিলিনের ছবি দিয়েই প্লেবয় ম্যাগাজিনের প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ করা হয়েছিল।
৩. প্রথমবার মেরিলিন হিসেবে অটোগ্রাফ দিতে গিয়ে নিজের নামের বানান জানতে চেয়েছিলেন, বুঝতে পারছিলেন না কোথায় ‘আই’বসাবেন।
৪. শুটিং না থাকলে মেরিলিন সবসময় শুধু বাথরোব পরে থাকতেন।
৫. মারা যাওয়ার সময় তার হাতে ধরা ছিল টেলিফোন।
৬. সব সময় একটি বই মনরোর হাতে থাকত, ‘বায়োগ্রাফি অব আব্রাহাম লিংকন’।
৭. প্রায় সব ছবির শুটিংয়েই মনরো অসুস্থ হয়ে পড়তেন।
৮. মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে মেরিলিন একটা সময় রাজনৈতিক পরামর্শ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতেন।
৯. মেরিলিন মনরোর মৃতদেহের কোনো ছবি আজ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় নি।
১০. মেরিলিন মনরো তার সমসাময়িক অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলরকে মোটেও সহ্য করতে পারতেন না।
মেরিলিন মনরোকে নিয়ে প্রচলিত একটি জোঁকস
সুন্দরী অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোর একটি ছোকরা চীনা কাজের লোক ছিল।
তিনি দেখতে খুবই সুন্দরী ছিলেন। তার রূপের প্রশংশা করতেন না এমন লোক ছিল হাতে গোনা।
ছোকরা কাজের ছেলের একটা বদভ্যাস ছিল, সে যখন তখন মিস মনরোর বেডরুমে ঢুকে পড়তো। এমনকি ঢোকার আগে দরোজায় নকও করতো না !
একদিন মনরো তাকে বললেন, যখন ঘরে ঢুকবে তখন আগে দরজোয় নক করবে। কারণ আমি সে সময় তো জামা-কাপড় বদলাতেও পারি!
কিছুক্ষণ পর ঐ ছেলেটি দরজায় টোকা না দিয়েই মেরিলিন মনরোর শয়নকক্ষে ঢুকে পড়ল।
রেগে গিয়ে মনরো তাকে বললেন, একটু আগে তোমাকে বললাম না দরজায় টোকা দিয়ে তবে ঘরে ঢুকবে। তুমি কী করে জানলে আমি জামা ছাড়ছি না?
কাজের লোকটি উত্তরে বললো, ম্যাডাম এটা খুবই সহজ ব্যাপার। দরজাতে চাবির যে ফুটো আছে সেটা দিয়ে দেখে নিয়েছি আপনি কী করছেন।
গোল্ডেন পাম জিতবে এবার কোন ছবি?
বিনোদন ডেস্ক
ঐতিহ্যবাহী কান চলচ্চিত্র উৎসবের সবচেয়ে সম্মানজনক অ্যাওয়ার্ড হলো ‘গোল্ডেন পাম’ বা ‘পাম দর’। ফান্সের কান শহরে ৬৫তম উৎসবের মূল পর্বে এ অ্যাওয়ার্ডের জন্য প্রদর্শিত হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্তের বাছাইকৃত সেরা ছবি। এবার মূল প্রতিযোগিতায় প্রদর্শনের জন্যে এশিয়া, ইউরোপ, অ্যামেরিকা ও আফ্রিকার প্রায় এক হাজার সাতশ ছবি জমা পড়েছিল। এই ছবিগুলো থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রতিযোগিতায় প্রদর্শনের জন্য মোট ৫৪টি ছবি বাছাই করা হয়। এসব ছবি থেকেই ‘গোল্ডেন পাম’ জিতবে জুরিদের রায়ে সেরা ছবিটি। গত ১৬ মে থেকে শুরু হওয়া ৬৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসব শেষ হবে আগামী ২৭ মে। যতোই উৎসবের সমাপনী দিন এগিয়ে আসছে ততোই তর্ক-বিতর্ক আর উত্তেজনা বাড়ছে উৎসবে যোগ দেওয়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের চলচ্চিত্র প্রেমীদের মাঝে। সবার কৌতুহল একটাই - গোল্ডেন পাম জিতবে এবার কোন ছবি? উৎসবের চলচ্চিত্র বোদ্ধারা একেকজন জোর একেকটি ছবির প্রতি। নানা মুনির নানামতের মাঝেই মোটামুটি ১০টি ছবিকে গোল্ডেন পামের লড়াইয়ে এগিয়ে রাখা হয়েছে। উৎসবের সমাপনী দিনে ঘোষণা না দেওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কোনোভাবেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে কোন চলচ্চিত্র হাতে উঠবে সেরা ছবি নির্মাণের সম্মান। ৬৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির দৌড়ে এগিয়ে থাকা ১০টি আলোচিত ছবির উপর চোখ রাখা যাক। ‘কসমোপোলিস’ এ বছরের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘পাম দর’ অ্যাওয়ার্ডের প্রতিযোগিতার সেরা ছবির দৌড়ে অন্যতম শক্ত প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হয়েছে কানাডীয় পরিচালক ডেভিড ক্রোনেনব্যার্গের ‘কসমোপোলিস’ছবিটি। ডন ডিলিলোর ‘কসমোপোলিশ’ উপন্যাসের উপর ভিত্তি করেই ছবিটি নির্মান করা হয়েছে। একটি ধনকুবের বেপোয়ারা প্লেবয় চরিত্রে এ ছবিতে অভিনয় করেছেন রবার্ট পেটিনসন। ছবিতে আরও আছেন পল গিমাট্টি, সামান্থা মর্টন, সারা গ্যাডন, ম্যাথিউ অমলরি ও জুলিয়েট বিনোক।
‘অন দ্য রোড’
জ্যাক ক্যারকের উপন্যাস ‘অন দ্য রোড’-এর কাহিনী নিয়েই পরিচালক আল্টার সেলস নির্মান করেছেন ‘অন দ্য রোড’ ছবিটি। এ ছবিতে ‘সাল প্যারাডাইস’র নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন স্যাম রিলে, ‘ডিন মোরিয়ারটি’র নাম ভূমিকায় আছেন গ্যারেট হেডলান্ড। এছাড়াও আছেন ক্রিস্টেন ডানস্ট, ভিগো মর্টেনসেন এবং টেরেন্স হাওয়ার্ড। কানাডার মন্ট্রিলে ছবিটির শুটিং শুরু হয় ২০১০ সালের ৪ আগষ্ট। প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলার বাজেটের ছবি এ ছবিটি কান উৎসবে ’পাম দর’  অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতার লড়াইয়ে নামছে ২৩ মে।
‘মুনরাইজ কিংডম’
কান চলচ্চিত্র উৎসবের শুরতেই প্রদর্শিত হয় মার্কিন নির্মাতা ওয়েস অ্যান্ডারসন পরিচালিত ‘মুনরাইজ কিংডম’ ছবিটি। এবছর উৎসবের মূল খেতাব ‘পাম দর’ জয়ের দৌঁড়ে ‘মুনরাইজ কিংডম’ছবিটির প্রথম প্রদর্শনেই সমালোচকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়।  বিল মুরে ও ব্রুস উইলিসের অভিনয় হয়ে উঠে সমালোচকদের সুনামের ভাগীদার ৷ এ ছবিতে অভিনয়ে দেখা যায় নতুন কিছু মুখ। এদের মধ্যে আছেন ফ্রান্সেস ম্যাকডরমান্ড, এডওয়ার্ড নর্থন, টিলডা সুইটন। ছবিটি ২০১১ সালে ২৯ জুন থেকে শুটিং শুরু করেছে। এটি প্রযোজনায় ছিল ফোকাস ফিচার।
‘দ্য পেপার বয়’
এ বছর ‘পাম দও’ অ্যাওয়ার্ডের দৌড়ে মনোনিত হওয়া নিকোল কিডম্যানের দুইটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। এর মধ্যে বিশেষ একটি হলো লি ডেনিয়েলের ছবি ‘ দ্য পেপারবয়’। ১৯৯৫ সালের আমেরিকার লেখক পিট ডেক্সটারের ‘দ্য পেপারবয়’ উপন্যাসের কাহিনী অবলম্বনে নির্মান হয়েছে ছবিটি। একজন রিপোটার্স গল্প নিয়ে তৈরি এ ছবির মূল ভূমিকায় আছেন নিকোল কিডম্যান। আরও অভিনয় করেছেন জ্যাক ইফ্রোন, ম্যাথিউ ম্যাককোনাগে, জন কুসাক ও স্কট গ্লেন। ১০১ মিনিটের এ ছবিটি নির্মানে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার।
‘লাইক সামওয়ান ইন লাভ’
২০১০ সালে ইরানিয়ান পরিচালক আব্বাস কিরোস্তামি ‘সার্টিফিকেট কপি’ ছবিটির জন্যে কান উৎসবে পুরস্কার জিতে নেন। এ বছর গোল্ডেন পাম লড়াইয়ে ‘লাইক সামওয়ান ইন লাভ’ ছবিটি নিয়ে আবারও এসেছেন তিনি। একজন পুরুষ ও একজন নারীর সমঝোতার কাহিনী নিয়ে ছবিটি তৈরি হয়েছে। ছবিতে অভিনয় করেছেন রিন টাকানাসি, টাডাসি অকুনো ও রায়ো কেসে। ছবিটি নির্মানে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪.৮ মিলিয়ন ডলার।
‘কিলিং দেম সফটলি’
এ বছর শিরোপা জয়ের দৌড়ে সম্ভাবনাময় হিসেবে রয়েছে পরিচালক অ্যান্ড্রু ডোমিনিক এর ছবি ‘কিলিং দেম সফটলি। এতে মূল অভিনেতা জনপ্রিয় তারকা ব্র্যাড পিট। একজন প্রফেশনাল ইনফোরসারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ব্র্যাড পিট। জর্জ ভি. হিগিনসের ’কিলিং দেম সফটলি’ উপন্যাসের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে এ ছবি। এতে আরও অভিনয় করেছেন রায়ে লিওট্টা ও রিচার্ড জ্যাকিনস।
‘রিয়্যালিটি’
২০০৮ সালে ‘গোমোরাহ’ ছবির জন্যে গ্র্যান্ড জুড়ি পুরস্কার জিতে নেয়ার পর এ বছর  গোল্ডেন পাম দৌড়ে আবারও অংশ নিচ্ছে পরিচালক ম্যাটিও গ্যারোনের ‘রিয়্যালিটি’ ছবিটি। রিয়্যালিটি টেলিভিশনের চিত্র ফুটে উঠেছে এ ছবিতে।
‘আমুর (লাভ)’
এ বছরের ‘গোল্ডেন পাম’র জন্য দৌড়ে আরও রয়েছে অস্ট্রীয় পরিচালক মিশায়েল হানেকে`র প্রেমের ছবি ‘আমুর’ বা ভালোবাসা। ২০০৯ সালে ‘দ্য হোয়াইট রিবন’ ছবির জন্যে ‘পাম দর’ জয়ের পর এ বছর আবারও এসেছেন প্রতিযোগীতার লড়াইয়ে। পুরস্কারটি জিতে নেবার তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে আছে এ ছবিটি। ৮০ বছরের দম্পতি জজ ও এ্যানির ভালোবাসার গল্প নিয়ে নির্মান হয়েছে ছবিটি। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন জিন লুইস ট্রিনটিগনেন্ট, ইমানুয়েল রিভা ও ইসাবেলা হাপার্ট।
‘ল’লেস’
‘দ্য প্রপোজিশন’ ও ‘দ্য রোড’ ছবি খ্যাত পরিচালক জন হিলকোটের নতুন ছবি ‘ ল’লেস’ নিয়ে এ বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবের লড়াইয়ে থিয়েটারে নেমেছে ২১মে। পরিচালক সহ অভিনয় শিল্পীরা টম হার্ডি, জেসিকা চাসটেইন ও সিয়া লাবুফ ছবির প্রিমিয়ারে উপস্থিত ছিলেন।  অপরাধ নির্ভর এ ছবি প্রদর্শনের পর সমালোচকদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে। ছবিটির গোল্ডেন পাম অ্যাওয়ার্ড জেতার সম্ভবনা রয়েছে বলে ধারনাও করেছেন সমালোচকরা।
‘রাস্ট অ্যান্ড বোন’
ম্যারিয়ন কটিলার্ড অভিনীত ‘রাস্ট অ্যান্ড বোন’ ছবিটি এরই মধ্যে কান চলচ্চিত্র উৎসবে  সমালোচক ও দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ছবিটির প্রদর্শনী দেখে মুগ্ধ হয়েছেন উপস্থিত সবাই। শেষ হতেই দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ অভিবাদন জানান ছবির সংশ্লিষ্টদের। প্রশংসা পেয়েছে  ম্যারিয়নের অভিনয়। সবার ধারনা এ ছবির মূল শক্তিই হলো ম্যারিয়নের অভিনয়। জ্যাক অদিয়ার্দ পরিচালিত ছবিটিতে তিমি-শিকারি প্রশিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ম্যারিয়ন। এক দুর্ঘটনায় দুই পা হারান মেয়েটি। কানাডিয়ান লেখক ক্রেগ ডেভিডসনের ছোটগল্প অবলম্বনে এ ছবি নির্মান হয়েছে। গোল্ডেন পাম জেতার সম্ভবনাও এ ছবির অনেক বেশি বলে ধারনা করছেন সমালোচকরা। পরিচালক জ্যাক অদিয়ার্দ এর আগেও ২০০৯ সালে ‘এ প্রফেট’ ছবির জন্যে গ্র্যান্ড জুড়ি পুরস্কার পেয়েছেন। রিবন্ডিং চুল
লাইফস্টাইল ডেস্ক

নারীর সৌন্দর্য প্রকাশের অন্যতম উপাদান সুন্দর চুল। আজকাল ফ্যাশন সচেতন তরুণীরা চুল রিবন্ডিং করছেন। তবে অনেকেই অভিযোগ করেন রিবন্ডিং করার পর চুল ঙেভে যাচ্ছে, রুক্ষ হয়ে পড়ে যাচ্ছে। আসলে এটা হচ্ছে সঠিক যত্ন না নেওয়ায় জন্য। সবারই চুলের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। তবে রিবন্ডিং করা চুলের চাই বাড়তি যত্ন। যারা চুল রিবন্ডিং করে বিভিন্ন সমস্যায় রয়েছেন জেনে নিন কীভাবে চুলের যত্ন নেবেন:
  • সপ্তাহে ২ দিন রাতে নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল হালকা গরম করে চুলে ম্যাসাজ করুন
  • কিছুক্ষণ চুল আঁচড়ে নিন, এতে রক্ত সাঞ্চালন বাড়বে
  • শ্যাম্পু করার আগে ১ টি ডিম, ১ চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল, ১ চা চামচ লেবুর রস এবং সমপরিমাণ মধু দিয়ে প্যাক তৈরি করে মাথার তালুতে লাগান। একঘণ্টা পর শ্যাম্পু করুন
  • গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে আধা ঘণ্টা চুল পেঁচিয়ে রেখে শ্যাম্পু করুন। চুলের রুক্ষভাব কমবে
  • রিবন্ডিং করা চুল খুলে রাখা হয় বলে দ্রুত ময়লা জমে। সপ্তাহে অন্তত তিনবার শ্যাম্পু করুন
  • সাধারন শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হলে মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন
  • শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে
  • চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে শ্যাম্পু করার পর এক মগ পানিতে কয়েক ফোঁটা ভিনেগার মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত যত্ন নিলে চুল হবে আরও সিল্কি এবং কাংঙ্খিত সুন্দর।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন