Year-19 # Issue-12 # 6 May 2012

 রাজনৈতিক সংলাপের আহবান হিলারির
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা, ৫ মে: বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থে এদেশের সরকারসহ সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসার আহবান জানিয়েছেন আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন।
শনিবার বিকেলে ঢাকায় এসে সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সন্ধ্যা ৫টা ৫৫ থেকে ৭টা ২০ মিনিট পর্যমত্ম বৈঠক করে দুই পÿ। এ বৈঠকে বাংলাদেশ ও আমেরিকা পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট সই করার সিদ্ধান্ত হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হিলারিকে নিয়ে উপস্থিত হন দীপু মনি। শুরুতে দীপু মনি শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখার পর হিলারি বক্তব্য রাখেন। এরপর উপস্থিত দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের চারটি প্রশ্নের জবাব দেন হিলারি। এমনই একটি প্রশ্নের জবাবে হিলারি বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নসহ সব ধরনের মৌলিক ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসার আহবান জানাচ্ছি।” তিনি বলেন, “আমি সব রাজনৈতিক দলগুলোকে মতের ভিন্নতা সত্ত্বেও এক সঙ্গে বসার আহবান জানাচ্ছি, কারণ আপনাদের সবার গন্তব্য একই। এছাড়া আগামী নির্বাচনকেও ২০০৮ সালের নির্বাচনের মতো সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতেও সবাইকে সংলাপে বসতে হবে।” বাংলাদেশের কাছে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এবারের সফরের প্রত্যাশা সম্পর্কে তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই, যে দেশটি টেকসই উন্নয়ন এবং সবদলের মতৈক্যের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে। এদেশের জনগণের আশাও একই।”  পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে সব বিষয়ই আলোচনায় আসবে বলে তিনি জানান। ভারত ও বাংলাদেশ আমেরিকার জন্য দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দেশ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তার মতে, চতুর্থ মুসলিম দেশ যেখানে নারীরা খুবই দৃঢ় অবস্থানে আছে। এদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, নিরাপত্তা বাহিনী, সাংবাদিকতাসহ সবক্ষেত্রেই নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
তিনি বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশ হবে একটি সুসংহত গণতন্ত্রের দেশ হবে, যেভাবে মৌলিক ইস্যুগুলোতে সবার ঐকমত্য থাকবে।” হিলারি বলেন, “সন্ত্রাসবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যত খুবই ইতিবাচক। তবে সমুদ্রে দস্যুতা ও সম্পদ আহরণে বিনিয়োগ সুরক্ষায় বাংলাদেশের স্বার্থেই বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এটা বাংলাদেশের সমুদ্র। একে রক্ষা করতে শান্তিপূর্ণভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।” বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিরোধী দলের প্রতি নিপীড়নমূলক আচরণ প্রসঙ্গে হিলারি বলেন, “সাম্প্রতিক লেবার অর্গানাইজেশনের আমিনুল ইসলাম হত্যা ও বিরোধী দলের ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি। স্বাধীন তদন্তের ব্যাপারেও আহবান জানিয়েছি।  এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আইনের শাসনের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে আমাকে দীপু মনি জানিয়েছেন।” এ পর্যায়ে হিলারি দেশের উন্নতির স্বার্থে মতবিরোধের উর্ধ্বে উঠে সকল রাজনৈতক দলগুলোর প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ।” এই সম্ভাবনার সুফল পেতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে এমন ইঙ্গিত করে হিলারি বলেন, “সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছুতে প্রত্যেককে একই নৌকায় আরোহণ করতে হবে।” তিনি আরো বলেন, “এদেশের গণতন্ত্রের ভিত যে মজবুত সেটি ২০০৮ সালের সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।  ২০০৮ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনের পর এই ধরনের গুম-হত্যাসহ বিভিন্ন সহিংসতা এবং সুশীল সমাজের  ওপর কোনো চাপ আশা করা যায় না।” যে কোনো সমস্যার সমাধানে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি গঠনমূলক সংলাপের আহবান জানিয়ে তিনি স্পষ্টই বলেন, “এদেশের জনগণের ওপরই নির্ভর করবে সরকার কি ধরনের কার্যক্রম (একশন) চালিয়ে যাবে। হিলারি আরো বলেন, “এটি মনে রাখতে হবে, এদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।” তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশকে ১৭ বছর ধরে চিনি। আমি বাংলাদেশের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। অনেক বছর পর আবার এদেশে আসতে পেরে আমি খুবই খুশি। আমি শুধু সরকারই নয়, সবার প্রতিই আহবান জানাচ্ছি। সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে এদেশের আগামী নির্বাচনও সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য দেখতে চাই।” এ প্রসঙ্গে তিনি নিউ ইয়র্কের সিনেটরের দায়িত্ব পালনকালে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশীদের সঙ্গে তার সুসম্পর্কের কথা জানিয়ে বলেন, “নিউ ইয়র্কে অনেক বাংলাদেশি কাজ করছেন। আমি বাংলাদেশিদের সুখী দেখতে চাই।” তিনি এদেশের সুশীল সমাজের সমালোচনার প্রশংসা করে বলেন, “বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি একটি মডেল, মানুষের অনুপ্রেরণার জন্য। এদেশের সিভিল সোসাইটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য মডেল।”  “ গ্রামীণ অর্থনীতি ও নারীদের অর্থণৈতিক সÿমতা বৃদ্ধিতে গ্রামীণ ব্যাংক ভূমিকা রাখছে।” এই ব্যাংকটিতে দ্রুত একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয়া হবে বলেও হিলারি আশা করেন। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন উৎসবের উল্লেখ করে বলেন, তিনি পহেলা বৈশাখ আমি মিস করেছেন। উন্নতি ও অগ্রগতিতে বাংলাদেশে সঙ্গে মআমেরিকা একই মানসিকতা পোষণ করে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ আমেরিকার ওবামা প্রশাসনের সহায়তা পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে একটি বড় দেশ। তিনি বলেন, “মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল বাস্তবায়নে মাতৃশিশু মৃত্যুহার কমানো, দারিদ্র বিমোচনে খুবই ভালো ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। বিশেষ করে হাইতিতে কলেরা প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমেও বাংলাদেশ প্রশংসিত হয়েছে। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ এশিয়া ও প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বড় সংযোগের ভূমিকায় আছে।”
মেঘের চিঠি, আকাশের ঠিকানায় 
ফারজানা খান গোধূলি

সোনামানিক, গুটলা পুটলা, বাবু সোনা, জান পাখি, গুটুবাচ্ছা উঠে পড়ো, সকাল হয়ে গেছে, স্কুলে যেতে হবে, ওঠো ওঠো  বাবাআমার! প্রতিদিন সকালে কপালে হামি দিয়ে তুমি বা বাবা আমার ঘুম ঘুম চোখে পানি দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাও। তুমি আমাকে স্কুলের ড্রেস পরিয়ে দাও। আমি চোখ খুলতে না চাইলেও বাবা বা তুমি আমাকে কোলে করে স্কুলে নিয়ে যাও। এবার আমি চোখ খুলে তোমাকে জড়িয়ে ধরে বলি মিম্মি আমাকে একটা বড় চকলেট দাও, তুমি আমাকে বল, ওকে গুড বেবি হয়ে ক্লাস কর, আমি অফিস থেকে ফেরার সময় বড় চকলেট নিয়ে আসবো। প্রতিদিন আমি রাতে ঘুমাই। ভাবি চোখ খুললেই তোমাকে দেখবো। তোমার কথা শুনে চোখ খুলতে চাই। মিম্মি হঠাৎ করে কেন তুমি আর বাবা এক সকালে নেই হয়ে গেলে, কোথায় চলে গেলে, আমাকে ছেড়ে আল্লাহ’র কাছে কি তোমাদের ভালো লাগে। আমার একটুও ভালো লাগে না। সবাই আমাকে খুব আদর করে, যা চাই তাই এনে দেয়। স্কুলে না গেলেও কেউ কিছু বলে না। সারাদিন খেলতে দেয়। কিন্তু মা আমার এখন সারাদিন খেলতে ভালো লাগে না। কেউ খুব জোর করে স্কুলে নিয়ে যায় না তোমার মতো করে। সবাই কেমন করে তাকায় আমার দিকে। ভালো লাগে না। মিম্মি, জানো যেখানেই যাই সবখানে পুলিশ যায়, জানো না আমি এখন অনেক কিছু বুঝি, বড়রা জানে না। আমিও বলি না।
মিম্মি, তুমি আগে বকা দিলে, মনটা খারাপ করে কান্না করতাম, রাগ করতাম, ভাবতাম তোমার সাথে কথাই বলব না। ভাতও খাবো না। মিম্মি, এখন মনে হয় তুমি এসে বকলেও আমি কান্না করবো না। তোমাকে জড়িয়ে তোমার গালে হামি দেব, তোমার কোলে শুয়ে থাকবো। মিম্মি আমি আর চকলেট চাইবো না। গুড বয় হয়ে থাকবো। সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুলেও যাবো। তুমি আর বাবা শুধু ফিরে আসো। আমি কোন টয় চা’বো না, লক্ষী ছেলে হয়ে থাকবো, মিম্মি প্লিজ আমি আর দুষ্টুমি করবো না। আমি আর কিছু চাই না, শুধু তোমাদের দুজন কে চাই। সেদিন বড়রা চুপিচুপি কথা বলছিলো, তোমাদের কে নাকি কেউ আবার ডেকেছে, টেলিভিশনে দেখলাম তাঙ্কা আজিমপুর গিয়েছে। আমাকে নেয়নি। সবাই মনে করেছে আমি কিছু বুঝিনি। কিন্তু আমি একটু একটু শুনলাম বাবা আর তুমি নাকি হাসপাতালে যাচ্ছ, পুলিশরা তোমাদের নিয়ে যাচ্ছে। আমি সেইদিন থেকে অপেক্ষা করছি বাবা আর তুমি চলে আসবে, সেই আগের মতো আমরা তিনজন আবারো একসাথে থাকবো। দরজাতে নক হলেই আমি বারবার দৌড়ে যাই। তুমি আর বাবা এসেছো। কিন্তু কেন আসো না। হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে এসো। আমার একদম ভালো লাগে না। আমার কিছু না শুধু বাবা-মা চাই। স্কুলে সবাই মা বাবার সাথে আসে। ছুটি হলে বন্ধুদের কেউ কেউ বাবা বা মার কোলে চড়ে বাসায় যায়। মিম্মি, আমি তোমার আর বাবার কোলে কতদিন উঠিনি। আমাকে একটু কোলে নাও না। মিম্মি তুমিতো আমাকে ছেড়ে থাকতেই পারো না, এখন তাহলে কেন ছেড়ে গেলে আমাকে, একা কিছু ভালো লাগেনা। মিম্মি গো, আমি তোমার কাছে যাবো। মিম্মি, আমাকে তুমি ভাত খাইয়ে দাও। আমি তোমার হাতে খাবো। তোমার হাতে খেতে আমার সব থেকে বেশি ভালো লাগে। মিম্মি জানো সেদিন তাঙ্কা পাজল গেম কিনে দিয়েছে। আমি খুব তাড়াতাড়ি পাজল মিলিয়ে ফেলেছি। আমি কম্পিউটারে ভিডিও গেম খেলি অনেক সময় ধরে খেলি কেউ কিছু বলে না। আগে তুমি আর বাবা অল্প সময় খেলতে বলতে। বাবা আর তুমি চলে এলে আমি আর বেশি বেশি গেমস খেলবো না। সবাই বলে, তোমরা খুব ভালো তাই আল্লাহ তোমাদের নিয়ে গেছে, আল্লাহ ভালোদের নিয়ে যায়, মিম্মি আমি কি ভালো বেবি না? সবাই তো আমাকে বলে আমি গুড বেবি তাহলে ওরা কেন শুধু তোমাদের আল্লাহ্‌র কাছে পাঠিয়ে দিলো? আমাকে কেন পাঠালো না? আমি কি পচা বেবি? আমার কিছু ভালো লাগে না, আস না মা জলদি করে। জানো, আমি দাদু, নানুর সাথে হাসিনা আন্টির বাসায় গিয়েছিলাম। তোমাকে আর বাবাকে কারা আল্লার কাছে পাঠিয়ে খুঁজে দেবার জন্য, হাসিনা আন্টি আমাকে অনেক আদ্র করল, দাদু-নানুকে প্রমিস করল। কিন্তু আজো কিছুই জানালো না।আমি আমার সব টয় উনাকে দিয়ে দেব, সব চকলেটও দিয়ে দেব, তাহলে হাসিনা আন্টি নিশ্চয় খারাপ লোকদের খুঁজে বের করবে। তুমি আর বাবা যখন ছিলে তখন তোমাদের অনেক বন্ধু আমাকে আদর করত। বাসায় আসত। এখন কেউ আসে না। শুধু কিরণ আন্টি আর পুতুল আন্টি আসে। ওরা আমাকে বেড়াতে নিয়ে যায়। বাবা আর তুমি ছাড়া কারো সাথে বেড়াতে এখন ভালো লাগে না। এবার তোমরা ফিরে এলে আমরা আবার অনেক দূরে দেশে চলে যাবো। তাহলে পচা লোকগুলো আর তোমাদের মেরে ফেলতে পারবে না, আল্লাহ্‌র কাছে পাঠাতে পারবে না। মা, তুমি আর বাবা আল্লাহ্‌র কাছে গুড বেবি না হয়ে একটু বেশি দুষ্টুমি করো। আল্লাহ তো ব্যাডদের পছন্দ করে না। তোমরা বেশি দুষ্টুমি করলে আল্লাহ তোমাদেরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবে। আমি তাহলে আর রাতে ভয় পাবো না। জানো মিম্মি, আমি আর একা ঘুমাতে পারি না। খুব ভয় করে । খালি মনে হয় চোর এসেছে, মামা আর নানুকেও মেরে ফেলবে। মিম্মি জানো, নানু না লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করে, আমি দেখে ফেললে বলে কই না তো কান্না করছি না তো! সবাই আস্তে আস্তে কথা বলে আমাকে দেখলে থেমে যায়, মনে করে আমি ছোটো কিছু বুঝি না। মা, স্কুলে সবাই বারে বারে বলে তোমার বাবা-মা কে খুন করেছে, দেখেছো তাদের? তোমরা নাকি আর ফিরে আসবে না? সত্যি কি আসবে না। আমি প্রমিস করছি মিম্মি, একদম গুড বেবি হয়ে থাকবো। সকালে ঘুম থেকে উঠবো, স্কুলে যাবো। ঠিক মত দুধ খাবো। ঘুমাবো। বেশি গেমস খেলব না। তুমি আর বাবা যা বলবে আমি তাই শুনব। তুমি বলেছিলে, তোমার একটা ছবি আঁকতে। বাবার যেমন এঁকেছিলাম। জানো মিম্মি এখন ছবি আঁকতে গেলে শুধু তুমি, বাবা আর অনেক রক্ত পড়ে আছে দেখি। কিন্তু মা তুমি চলে এলে আমি তোমাকে মা-দিবসে সত্যি সত্যি একটা ছবি এঁকে দেবো। তুমি বলেছিলে মা দিবসে তোমাকে একটা ছবি এঁকে দিতে। আমার সব বন্ধুর বাবা-মা আছে ওদের কাছে। আমার বাবা-মা নেই কেন? সবাই মা দিবসে মজা করবে, আম্মুরা সব বেবিদের নিয়ে অনেক মজা করবে। মা, আমাকে নিয়ে কে মজা করবে। আমি কাকে মা বলে ডাকবো? আমি আমার বাবা মার আদর চাই। আল্লাহকে তোমরা বল আমি কিছু চাই না শুধু বাবা-মা চাই। আমার সব কথা তোমাকে লিখলাম। ঘুড়িতে বেঁধে আকাশে পাঠাচ্ছি চিঠিটা, মিম্মি তুমি পড়ে চলে এসো কিন্তু! বাবা কে বল। এক সকালে যেমন হঠাৎ করে চলে গিয়েছ ঠিক তেমনি আর এক সকালে ফিরে আসবে, নইলে কিন্তু আর চিঠি লিখবো না। মিস করো না মা। আমি তোমার একটা ছবি এঁকে তোমার জন্য ওয়েট করবো।
বাবা আর তোমার ছোট্ট মেঘ
ছোট্ট মেঘ আকাশের ঠিকানাতে লেখা চিঠি সাগর রুনি কি পড়ছে আর কি অভিসম্পাত করছে নিজেদের দেশাত্ববোধের জন্য, যে দেশপ্রেম ওদের সাত বছরের বাচ্চাটাকে এতিম করে দিলো অকালে তার জন্য। তিন মাস হয়ে গেল। নিষ্ঠুর খুনের কোনো কিনারা আজো হল না। বন্ধুরাও নেই আর পাশে। নেই ছেলেটার পাশে না ওদের বয়স্কা অসহায় মায়েদের পাশে। সবাই ব্যস্ত যার যার কাজে। ছেলেটাকে কেউ কি নেই বাবা-মার মতো আদর দেবার। বন্ধুদের দেখে কি আরও কষ্ট পাচ্ছে? ও বাবা-মা কি চিঠি পড়ছে? ওরা কি মেঘের পাশে শুভ্র মেঘ হয়ে ফিরে ফিরে আসছে। নাকি মেঘের মতো অশ্রুর মেঘ বুকে চেপে করুন চোখে তাকিয়ে আছে দূর থেকে। দূর থেকে চাইছে মেঘকে গভীর মমতায় বুকে টেনে নিতে।
ড. ইউনূস : আপনি ভেঙে পড়বেন না 
মনিরুল ইসলাম মনির, অতিথি লেখক


এই প্রথম ইচ্ছা করছে, কারো জন্যে রাজপথে নামি। এই প্রথম ইচ্ছা করছে, গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলি, ‘তোরা থামা এই বিধ্বংসী খেলা’---। পরের কথাটি কি বলবো তা আর মাথায় আসে না। যেমন করে মাথায় আসে না, যে মানুষটি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য এতো কিছু করলেন, এতো সম্মান বয়ে আনলেন। আর আজ তাকে এইভাবে প্রতিনিয়ত অপমানে বিদ্ধ করা হচ্ছে! গত বছরের ৯ মার্চের পত্রিকার পাতায় আগের দিন ড. ইউনূসের শুনানি শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে আসার ছবিটা দেখেছিলাম। দেখে বুকের ভেতর কেমন জানি করে উঠেছিল, হয়ত চোখের কোণে পানিও চলে এসেছিল। নোবেল বিজয়ীকে কি একটু বয়স্ক লাগছিল না, তার হাসিটা কি একটু মলিন হয়ে যায়নি? সেই ৯ মার্চের সকল পত্রিকার শিরোনামে ছিল অব্যাহতির আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিট আবেদনের রায়ের খবর। ওই দিনের রায় কোনো মঙ্গলবার্তা বয়ে আনেনি।উচ্চ আদালতের রায় এটাই হবে তা অনেকেরই জানা ছিল।
তবুও আশায় ছিলাম, সরকারের তথা সংশ্লিষ্টদের যদি শুভ কিছু করার ইচ্ছা থেকে রায়টা ড. ইউনূসের পক্ষে যায়! কিন্তু তা আজ পর্যন্ত হয়নি। আর কখনো হবে বলেও মনে হয় না। যে মানুষটা বলেছিলেন ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্যকে একদিন মিউজিয়ামে পাঠাবেন’। অথচ, আজ তাকেই মিউজিয়ামে পাঠানোর সব ব্যবস্থা আমরা করছি! ৮ মার্চের শুনানিতে অংশ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, ‘নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর মানুষ নির্মোহ হন। কিন্তু তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে থাকতে চান।’ তিনি কিভাবে জানবেন, এ মোহ কিসের?। এ মোহ দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ভালোবাসার মোহ। এ মোহ নিজ হাতে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানের প্রতি।
প্রধানমন্ত্রী ইউনূসকে ‘গরিবদের রক্তচোষা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। আর প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তার লেখা খোলা চিঠিতে  ড. ইউনূসকে বলেছিলেন ‘প্রতারক এবং চোর’। আর আজ সরকারের প্রথম সারির মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদ তার নোবেল পাওয়া নিয়েই প্রশ্ন তুললেন! শুধু প্রশ্নই তুললেন না, এ পর্যন্ত যারা যারা নোবেল পেয়েছেন, তাদের যোগ্যতা নিয়েই সন্দিহান হলেন! তার মতে, এক হাতে ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে মিল দিলেই নাকি নোবেল পাওয়া যায়! ড. মোহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কখন ও কি কারণে এই টানাপড়েন, তা আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাছে পরিস্কার না হলেও এটা প্রকাশিত হয়, যখন নোবেলজয়ী ঘোষণা দেন তিনি রাজনীতিতে আসছেন। এটা আরও জটিল হয় ২০০৭ সালে প্রফেসর ইউনূস যখন ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতি টাকা বানানোর উপায় ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা বাংলাদেশের সকল সাধারণ মানুষের মনের কথা হলেও রাজনীতিবিদরা ভালোভাবে নেননি। সে সময় বর্তমান বিরোধী দলীয়  অনেক রাজনীতিবিদ তাকে ভীষণভাবে আক্রমণ করে কথা বলেছিলেন। আজও বিরোধী দলের মৌন সমর্থন রয়েছে তার বিপক্ষে বলে আমার মনে হয়। তবে বর্তমান বিরোধী দল যদি আবার ক্ষমতায় যায়, তবে রাজনৈতিক ভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে হলেও তারা ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের পদ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আমার মনে হয়। সেদিক থেকে বাইরের দেশের কিছুটা চাপও থাকবে। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা প্রফেসর ইউনূসকে বড় শত্রু মনে করেন। যার কারণ, ব্যক্তিগত ঈর্ষা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা। আর কি কি কারণ থাকতে পারে, তা রাজনীতিবিদরাই ভালো বলতে পারবেন।  তবে ইউনূস সাহেবের আবার সময় এসেছে, নতুন করে রাজনীতি নিয়ে ভাবার। তিনি হয়তো কিছু করতে পারবেন না। কিন্তু তার দেখিয়ে দেওয়া পথ ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসতেও পারে। আমার লেখার উদ্দেশ্য এসব তথ্য-উপাত্ত নয়। আমি ভীষণ ভয়ে আছি, এসব ঝামেলায় পড়ে ড. ইউনূস আবার না মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। তাই আমার প্রার্থনা, তিনি যেন শারীরিক এবং মানসিকভাবে শক্ত থেকে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেন। কাকতালীয় ভাবে যারা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান, তারা মনে হয় শান্তিতে থাকতে পারেন না। ২০১০ সালের শান্তিতে নোবেল বিজয়ী লিউ ঝিয়াওবো গৃহবন্দি, ২০০৩ সালের পুরস্কারপ্রাপ্ত শিরিন এবাদির নোবেল শান্তি পুরস্কার বাজেয়াপ্ত ছাড়াও তার হিসাবও (অ্যাকাউন্ট) জব্দ করেছিল সে দেশের সরকার। ২০০১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল নেলসন ম্যান্ডেলাকে। আমরা সবাই জানি, তিনি বহু বছর জেলে থেকেছেন। ১৯৯১ সালে অং সান সূচি নোবেল শান্তি পুরস্কার পান৷ তার ছেলে আলেকজান্ডার এবং কিম তার হয়ে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন৷ ১৯৯৯ সালে অং সান সূচির স্বামী মাইকেল এরিস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান৷ মারা যাবার আগে তিনি চেষ্টা করেছিলেন, মিয়ানমারে এসে সূচির সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু মিয়ানমারের সামরিক সরকার তাকে দেশে প্রবেশাধিকার দেননি৷ অং সান সূচি তার ছেলেদের কাছ থেকে এখনো বিচ্ছিন্ন৷ ২২ বছর ধরে গৃহবন্দী ছিলেন অং সান সূচি৷ কিন্তু দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশের মানুষ এবং নিজ দলের প্রতি তার দায়িত্ব তিনি ভুলে যাননি৷ আমরাও চাই, এই কঠিন সময়ে মনোবল ঠিক রেখে ড. ইউনূস- আপনি দেশের কথা মানুষের কথা ভাববেন।কবির সুমনের তোমাকে চাই গানটির শেষের ক’টি লাইন কেন যেন আপনাকে বলতে ইচ্ছা করছে- ‘দিন বদলের খিদা ভরা চেতনায়, দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দিন ঘোচার স্বপ্নে, ভীষণ অসম্ভবে,.. এই বিভ্রান্তিতে- তোমাকে চাই।’ আমরা দেখতে চাই, পরনে সেই খদ্দরের কোর্তা অথবা গ্রামীণ কাপড়ের পোশাক গায়ে দিয়ে, মুখে সেই মিষ্টি হাসি নিয়ে মাইক্রোক্রেডিট, সামাজিক ব্যবসার মতো নতুন নতুন মানুষের জীবন উন্নয়নের ধারণা নিয়ে সারা বিশ্ব দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন ড. ইউনূস।
একটা নোবেল পুরস্কার জোগাড় করে দেন না!
ফজলুল বারী
বাংলাদেশের সরকার, রাষ্ট্রীয় কাঠামোটি বুর্জোয়া চিন্তার। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুটি দলও বুর্জোয়া চিন্তা-চেতনার। মতিয়া চৌধুরী, নূরুল ইসলাম নাহিদ, ব্যারিস্টার শফিক আহমদের মতো সাবেক সমাজতন্ত্রী যারা বর্তমান মন্ত্রিসভায় আছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও আড়ালে আবডালে তাদেরকে বামপন্থী-সমাজতন্ত্রী গালি দেন। আমেরিকা-ভারত-বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ জাতীয় যে সব দেশ-সংস্থার সঙ্গে সরকার সুসম্পর্ক রক্ষার চেষ্টায় জেরবার, সে সবও মুক্তবাজার অর্থনীতির হালের নাম-সাকিনের বুর্জোয়া দেশ-সংস্থা। কাজেই এ সরকারের লোকজন কথাবার্তার সময়ও তাদের এসব অবস্থান-কেবলার বিষয়ে সংযত-সতর্ক থাকবেন, এমনটিই আশা করাটা বাস্তবসঙ্গত। এর বাইরেও কিন্তু পথ আছে। যেমন চীন-ইরান-উত্তর কোরিয়া। সরকার চাইলে সাহস-সামর্থ থাকলে তার চলতি ফর্মেটের বাইরে গিয়ে এসব রাষ্ট্রের পথেও হাঁটা দিতে পারে। কিন্তু নিজে বুর্জোয়া চিন্তা-কাঠামোর কাঁচের ঘরের মধ্যে বসে থেকে  অন্যকে ঢিল ছুঁড়বেন, এটা সংশ্লিষ্টদের জন্য কত বিপদজ্জনক, তা তাদের জানার কথা। হিলারি ক্লিনটনের সফরের পর থেকেই সরকারি লোকজনের কথাবার্তায় স্পষ্ট, তারা মানসিকভাবে ফুরফুরে-ভালো নেই, স্বস্তিতে নেই! এমনিতে শুরুতে হিলারির সফর নিয়ে সরকার তথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির আহলাদের শেষ ছিলোনা। ড ইউনুসের সঙ্গে সরকারি কাইজ্যা,  অহি নকুল সম্পর্ক সত্ত্বেও হিলারি বাংলাদেশ সফরে আসছেন, এটিকে সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য হিসাবে দেখানোর-বলার চেষ্টা হচ্ছিল! এমনও বলার চেষ্টা হয়েছে যে হিলারির সফরকে সামনে রেখে ড ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্র সফর, কানপড়া এসব কোন কাজে দেয়নি! মার্কিনিরা বরাবর একটা ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষে থাকে। আনুগত্যে বড় সমস্যা দেখা না দিলে সাধারণত বিপক্ষনেয়না। এর কারণে সরকারের দাবিটি তখন সত্য মানতে ইচ্ছেও করেছে।  কিন্তু হিলারি ঢাকা নেমেই তার উল্টো বার্তা দেওয়া শুরু করলেন! ঢাকা ল্যান্ড করেও বিমান থেকে নামেননি প্রায় এক ঘন্টা! এদিকে ফুল হাতে বিমান বন্দরে অধীর দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি! হিলারিকে অভ্যর্থনা জানাবেন, তার সঙ্গে একটা গ্রুপ ছবির সৃষ্টি হবে! কিন্তু হিলারি নামেন না! ওই অবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মনে কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছিল, আয়াতুল কুরসি তিনি পড়ছিলেন কীনা, তা তিনিই বলতে পারবেন! কোন দেশে কোন অতিথি গিয়ে হোস্ট কান্ট্রির সঙ্গে এমন আর কখনো কেউ করেছেন কীনা, তা আমার জানা নেই। সবাই দেখলেন হিলারির বিমানে গিয়ে উঠলেন ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনা। যিনি সারাদেশ ঘুরে রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন! সম্ভবত তার কাছ থেকেই বাংলাদেশের সর্বশেষ নানাকিছুর ব্রিফিং পেয়েছেন হিলারি। ড ইউনূসতো আগে থেকে যা যা করার তা করেছেন! অতএব এরপর থেকে ঢাকায় যতক্ষণ ছিলেন, সরকারকে নানাভাবে শাসানি ছাড়া কিছু দিয়ে যাননি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর থেকে আমরা এসবের প্রতিক্রিয়া প্রথম দেখি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বক্তব্যে। তার পরে পুরা বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের ক্ষোভক্রোধ-হতাশা আরও উদগীরণ করে ঢেলে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম!
গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে ড ইউনূসের দাবিকে রাবিশ বলে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। ড ইউনূস বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক সরকার দখল করে নিয়েছে। আর অর্থমন্ত্রী বলেছেন গ্রামীণ ব্যাংক আর দশটি সরকারি ব্যাংকের মতোই একটি। সরকারি নীতিমালা অনুসারেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হিলারি ঢাকায় বলেছেন গ্রামীণ ব্যাংক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার খুশি না। তিনি নিজে বিষয়টি ওয়াশিংটনে বসে মনিটর করছেন ইত্যাদি! একটা স্বাধীন দেশের জন্য এসব কী বিপদজ্জনক কথাবার্তা। মনমোহন সিং যদি বলতেন দিল্লিতে বসে তিনি ঢাকার সরকার বা কোন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম মনিটর করছেন, তাহলে কী প্রতিক্রিয়া হতো? স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ বলে কী এর বিরুদ্ধে ধেই ধেই প্রতিবাদের শোরগোল শুরু হয়ে যেতোনা? কিন্তু হিলারির এসব বক্তব্যের পর তা হয়নি। কারণ হিলারিকে যিনি দাওয়াত করে এনেছেন সেই ড ইউনূস যতটা না বাংলাদেশি, এর চেয়ে তার মার্কিন প্রভুদের প্রতি আনুগত্য বেশি। বিএনপিও এর বিরুদ্ধে বলেনি বা বলার নয়। সঙ্গত কারণে উল্টো দলটি এতে পুলক অনুভব করেছে! আওয়ামী লীগ বিরোধীদলে থাকলে এমনই করতো। সবার যে কেবলা এক! নিজের স্বার্থের বাইরে জীবনে ড ইউনূস কোথাও একটি কথাও বলেননি বা বলেননা! নিজের স্বার্থে যে কাউকে দেশের বিরুদ্ধে লাগাতেও তার জুড়ি  নেই!  গ্রামীণ ফোনের ইনকামিং কলচার্জের বিরুদ্ধে শুরুতে সরকার ব্যবস্থা নিতে গেলে ড ইউনুস তখন তার বন্ধু অথবা প্রভু মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের দিয়ে সরকারকে যে শাসিয়েছিলেন, তা কী আমরা ভুলে গেছি? আর মার্কিন বার্তাটি পেয়ে তখন এই আওয়ামী লীগ সরকারই এ ব্যাপারে চুপ মেরে গিয়েছিল। এরপরও সত্য যে ড ইউনূসের নেতৃ্ত্বের কারণেই গ্রামীণ ব্যাংকের আজকের বিকাশ হয়েছে। অর্থমন্ত্রী গ্রামীণ ব্যাংককে আর দশটি সরকারি ব্যাংকের মতো দাবি করলেও কার্যত তা নয়। সোনালী-রূপালী ব্যাংকেরা গ্রামের কাদামাটির পথ দিয়ে কখনো হেঁটে যায়নি। আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দুনিয়ার কোথাও টেকসই উন্নতি হয়নি, সেটিও সত্য। কিন্তু এগুলো দিয়ে যে দেশের গ্রামীণ জনপদে টিকে থাকার নতুন একটি চেষ্টা শুরু হয়েছে এবং এনজিওদের টাকা বিদেশ থেকে সরকারি অনুমোদনের মাধ্যমে দেশে আসে সে বিষয়টিও সত্য। যে টাকা বা প্রক্রিয়া দিয়ে দেশের উন্নতি হয়না, সে টাকা কেন ঢুকতে দেওয়া হয় বা প্রক্রিয়াগুলোর কেন অনুমোদন দেয়া হয়, সে দায়দায়িত্বও সরকারের নয় কী? বা বিদেশি অনুদান সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল সরকারের সঙ্গে এনজিওগুলোর পার্থক্য কী? ড ইউনূসের ব্যাপারেও নানামত সত্ত্বেও তার নোবেল প্রাপ্তিতে আমরা খুশি হয়েছি। কারণ আমরা  যে একটি বুর্জোয়া রাষ্ট্র কাঠামোরই বাসিন্দা। বিদেশি সার্টিফিকেট পক্ষে গেলে আমাদের ভালো-মোলায়েম লাগে। আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত-বুর্জোয়া রাষ্ট্রে আমরা যাই-থাকি। কারন আমাদের সরকার, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের দেশে নিরাপদ থাকার স্বপ্ন দেখাতে পারেনা। এবার ড ইউনূস শুধু একা না, ব্রাকের চেয়ারপার্সন ফজলে হাসান আবেদকে সঙ্গে নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসার বৈঠক শেষে মিডিয়াকে এসে বলেছেন, তারাও চান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। খুব স্বাভাবিক বিএনপি তাদের এই বক্তব্যে আরও খুশি-আশ্বস্ত আর আওয়ামী লীগ ক্ষুদ্ধ হয়েছে! যা প্রকাশ পেয়েছে সৈয়দ আশরাফুলের সর্বশেষ বক্তব্যে। এ নিয়ে নিজেদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে উল্টো নোবেল পুরস্কারের নাড়ি ধরেও টান দিয়েছেন সৈয়দ আশরাফ! প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, কোথায় গিয়ে চিপস আর ওয়াইন খেলে নোবেল পুরস্কার পাওয়া যায়, তা তিনি জানেন! অর্থনীতিবিদ ড ইউনূসকে শান্তির জন্য কেন নোবেল দেওয়া হলো, সে প্রশ্নও তুলেছেন! ড ইউনুসকে কেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তা তখন একটি বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে নোবেল কমিটি। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধের প্যাটার্নকে পছন্দ করেছে বুর্জোয়া চিন্তা-কাঠামোর নোবেল কমিটি। তাই তারা তাকে তা  দিয়েছে। কিন্তু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে থেকে এ নিয়ে যে ভাষায় কাঁচের ঘরে বসে শাসকদল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ঢিল ছোঁড়ার মতো গোটা নোবেল কর্তৃপক্ষ তথা সুইডিশ একাডেমির ইন্টিগ্রিটিকে কটাক্ষ করেছেন, এর কিন্তু একটা খবর হবে। এমনিতে পদ্মা সেতুসহ নানান সমস্যায় ভুগছে সরকার। মনোরেলও আর ঢাকার মাথার ওপর দিয়ে চলছেনা। জাপানসহ যেখানে যার কাছে হাত পাততে হয়, তারাও কিন্তু সবাই সে সব বুর্জোয়া চিন্তা-কাঠামোর বাসিন্দা। চলতি হাজার সমস্যার সমাধান যেখানে সরকার করতে পারছেনা, ইউনুসকে আক্রমন করতে গিয়ে নোবেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গায়ে পড়ে যে বাড়তি ঝামেলা টেনে আনা হলো তা তারা কীভাবে সামাল দেবে তা কেউ জানেনা। সৈয়দ আশরাফুলের বক্তব্যকে বেসুরো অথবা পুরনো মনোঃকষ্টের বহিঃপ্রকাশ হিসাবেও দেখা হতে পারে। কারণ এই নোবেলের জন্য কারা কোথায় কী পরিমান কাঠখড় পুড়িয়েছেন, তা অনেকে জানেন! ড ইউনুসের নোবেলের পর সরকারি কেউ কেউ এমনও বলার চেষ্টা করেছেন যে, নোবেল কমিটি ভুল করে তা ইউনুসকে দিয়ে ফেলেছে! বাংলাদেশে শান্তির জন্য নোবেলের উপযুক্ত ছিলেন শেখ হাসিনা এবং সন্তু লারমা। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির জন্য তারা এর পাওনাদার ছিলেন, ইত্যাদি। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি আওয়ামী লীগ সরকারের অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। চুক্তিটি যদি ঠিকমতো কার্যকর করা হতো তাহলে এরজন্যে সংশ্লিষ্টরা ভবিষ্যতেও নোবেল পুরষ্কারের জন্য বিবেচিত হতে পারতেন। কিন্তু সর্বশেষ কী অবস্থা সেই শান্তি চুক্তির? চুক্তিটি বাস্তবায়ন নিয়ে যে  গড়িমসি, প্রতারণা হয়েছে এবং এখনও চলছে, এতেতো ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিটি ‘না ঘরকা না ঘাটকা’  অবস্থায় উল্টো অশান্তির দলিল হিসাবে চিহ্নিত হয়ে গেছে! এরপর আবার ‘বিশ্ব শান্তির জন্য শেখ হাসিনার রূপরেখা’ উপস্থাপনের নামে গত তিন বছর কারা কারা সরকারি পয়সায় দেশে দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জায়গামতো পৌঁছতে-ভিড়তে না পেরে এক রকম প্রমোদ ভ্রমনের নামে করেছেন সরকারি অর্থের মচ্ছব,  তাতো কেউ না জানলেও জানার কথা শেখ হাসিনা আর সৈয়দ আশরাফুলের! কাজেই এসব না করে তিনি কী চিপস আর হোয়াইট ওয়াইন খেতে সংশ্লিষ্টদের তার চেনা জানা সেই রেস্টুরেন্টে পাঠাতে পারতেন না? এমনভাবে যদি সম্ভব হয় তাহলে একটি নোবেল পুরস্কারের ব্যবস্থা করে দেন না সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম! এমনিতে আপনি মাসের পর মাস অফিসে না গিয়েও মন্ত্রীত্ব রক্ষার রেকর্ডধারী! সীমান্তে হত্যাকাণ্ডেও আপনি বিব্রত হন না! তেমন একটি নোবেলের ব্যবস্থা করা গেলে কিন্তু আপনার বুড়ি আর কারও ছোঁবার সুযোগ থাকবে না। ট্রাইটা শুরু করবেন? প্লিজ!
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় রাহুগ্রাস
জাকারিয়া পলাশ, অতিথি লেখক
দিন দিন গণমাধ্যম যতবেশি জনপ্রিয় হচ্ছে সাংবাদিকদের প্রতি জাতির প্রত্যাশাও ততই বেড়ে যাচ্ছে। সক্রিয় গণমাধ্যমই আজ মানবাধিকারের উচ্চকণ্ঠ। গণমাধ্যম যেখানে চুপ করে থাকে, বিচারের বাণী সেখানে নিভৃতে কাঁদে। এই অবস্থায় সংবাদকর্মীর কাছে আপোসহীন ভূমিকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। অর্থাৎ সংবাদকর্মী হবে সংবাদের উপাসক। সংবাদই তার ধ্যান-জ্ঞান সব। একটি সংবাদ কার পক্ষের আর কার বিপক্ষের সেটি বিবেচ্য নয়। সংবাদটি মজলুমের ন্যায্য অধিকারের কথা বলছে কিনা সেটিই আসল বিষয় হওয়া উচিৎ। আর সংবাদ সত্য হলেই তা মজলুমের পক্ষে চলে যায়। এটিই সংবাদের শৈল্পিক চরিত্র। জনগণের আশাও তাই। সমকালীন বাস্তবতা সেই প্রত্যাশা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ছে---এমন আশঙ্কা থেকেই এই নিবন্ধ লেখা।দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্রিকা অফিসের নিযুক্ত সংবাদদাতা বা প্রতিনিধিরা সাংবাদিকতার বাজারে একেবারেই নবাগত। আমি মনে করি, সাংবাদিকতার এই অধ্যায় হলো কেবলই হাতেখড়ির। ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার মাধ্যমেই হাতে কলমে প্রশিক্ষণ পায় এসব রিপোর্টার। আমি নিজেও তেমনি একজন শিক্ষানবিশ। সাংবাদিকতার এ প্রথমিক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে, প্রতিজন শিক্ষানবিশই তার সংবাদের মাধ্যমে মজলুমের ন্যায় সংগত অধিকারের পক্ষ নেবে এমনটাই প্রত্যাশিত। নগদ অর্থ আর প্রতিপত্তির আকর্ষণ ফেলে বস্তনিষ্ঠ সংবাদের প্রতি পেশাদার হবে এটাই আশা করে সবাই। কিন্তু বাস্তবে তার ব্যতিক্রম দেখা যায় বেশ। আমার চার বছরের ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা হল, সংবাদকর্মীদের মাঝে সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সাথে সখ্যের সুযোগ নিয়ে উপরি আয়ের প্রবণতা। প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে শিক্ষকরাজনীতির ক্রীড়নকের ভূমিকা পালন- ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে কলুষিত ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। এসবের মাঝে শিক্ষার্থীদের অধিকারের কথা বেমালুম ভুলে যাওয়া দেখে হতবাক হয় সবাই। বিবেক বিসর্জন দিয়ে আর আত্ম বিক্রয় করে শেষ হয় এসব সংবাদকর্মীর শিক্ষানবিশি কাল। এদের সংখ্যাটি কিন্তু বেশি নয়। তবে একটি মন্দ অনেক সুন্দরের সুনামকে কালিমায় ঢেকে দেয়। এটাই দুঃখের বিষয়। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আন্দোলন হল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের প্রশ্রয়ে কিছু সন্ত্রাসী ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসের গ্রাম বানিয়েছিল। তাদের হাতে নিহত হয়েছে জুবায়েরের মতো প্রাণ। চার তলা থেকে নিচে ছুড়ে ফেলে এমিলসহ অনেককে স্থায়ীভাবে বিকলাঙ্গ করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি কলি মাহমুদ, নাট্যকর্মী কার্তিক, সুদীপায়ন, অর্ণবসহ অনেকেই রক্তাক্ত হয়েছে। হাত-পা ভেঙেছে। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে সাংস্কৃতিককর্মীরা। ক্ষমতাসীনদের নির্যাতনের কালো হাত যখন সাংস্কৃতিক কর্মীদের গলাটিপে নিঃশব্দ করে দিচ্ছে তখন মজলুমের পক্ষ নেয়াই ছিল বিবেকের দাবি। কিন্তু সংবাদকর্মীদের কেউ কেউ উল্টো পথ ধরলেন। সাংস্কৃতিক কর্মীদের ঢাক, ঢোল, গান, কবিতা, তর্কচর্চা আর নাটকের মুক্ত চর্চাকে সাম্প্রদায়িকতার পোশাক পরানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলেন। জামায়াত-শিবিরের লেবেল লাগাতে চাইলেন। যারা চাইলেন, তাদের সাথে প্রশাসনের সুসম্পর্ক আছে। কারণ প্রশাসন তাদের পুনর্বাসন করেছে। পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ নেয়া তাদের জন্য হিতকর ছিল। তাই তারা পক্ষ নিলেন। এটা কি ন্যায়ের পক্ষ ছিল? সাংস্কৃতিককর্মীরা চেয়েছিল টিএসসিতে কোন সংগঠনের জন্য কক্ষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা বিচার করা হোক। দশটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সম্মিলিক জোট ‘জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট’ কিংবা শতাধিক সদস্যের সংগঠন ‘জাহাঙ্গীরনগর ডিবেট অর্গানাইজেশন’সহ বিভিন্ন সংগঠনকে আগে কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হোক। তারা এ দাবি করে আসছে ৫ বছর আগে থেকেই। সেই দাবি না মেনে মাত্র চারজন রিপোর্টারকে নিয়ে ভিসির পক্ষে কাজ করার জন্য গড়ে তোলা একটি নতুন সংগঠনকে কক্ষ দিয়ে দিল প্রশাসন। এটি ন্যায্য হতে পারে না। এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই ছিল সাংস্কৃতিক কর্মীদের অপরাধ! পরীক্ষার খাতা মূল্যয়ন পদ্ধতির সংস্কার আর শিক্ষকদের যোগ্যতা যাচাই’র ব্যবস্থা চালুর দাবি করেছিল তারা। মুক্তমঞ্চ, অডিটোরিয়াম সংস্কারের দাবি করেছিল তারা। এসব কি অন্যায় দাবি ছিল? পাঠকই বলবেন। আমি সে বিচার করবো না। আলোচনায় চলে এসেছে সাংবাদিকদের সংগঠনের কথা। সংবাদকর্মীর কাজ ন্যায্য দাবির পক্ষে থাকা। এ কাজ করতে গেলে সাংবাদিককে শত্রু মনে করেন ক্ষমতাসীনরা। সাংবাদিক ভাল মানুষের শত্রু নয়। চোর, ডাকাত, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর আর জুলুমবাজদের কুকীর্তি তুলে ধরাই তার কাজ। তাই দুর্বৃত্তদের আঘাতে জীবন যায় অনেক সাংবাদিকের। ক্যাম্পাসেও সাংবাদিককে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে নানা সময় নানাভাবে। এর প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন সাংবাদিকদের ঐক্য। সংহতি। ইউনিয়ন বা সংগঠন। সে চিন্তা থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠেছে সাংবাদিক সমিতি। ভিন্ন ভিন্ন নামে। নাম যাই হোক কাজ সবার একই। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ রাখা। সত্য সংবাদের পেছনে কাজ করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রশ্নে আপসহীন থাকা। কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সংগঠনের ইতিহাস তেমন ভাল নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা ঐক্যের প্রশ্নে এক থাকতে পারে নি। সেখানে তিনটি সাংবাদিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। আরো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। সবাই বলে আদর্শের ভিন্নতা এ বিভাজনের মূল। আমাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই। আদর্শের প্রশ্নে না কি ক্ষমতা বা আধিপত্যের প্রশ্নে এ বিভাজন? যাই হোক এ বিভাজন ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার জন্য নিরাপদ নয়। এটা ক্ষমতাসীনদের জন্য মওকা (সুযোগ)। বিভাজনের নীতি ((divide and rule)) সর্বদাই ক্ষমতাল অপচর্চার পথ বাতলে দেয় শক্তিমানকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের জন্য ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা পায় ‘সাংবাদিক সমিতি’। ৪০ বছরের পুরনো এ সংগঠন এতদিন বিভাজিত হয়নি। এবার তাতে ভাঙনের সুর বাজল। প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে তার কারণ বর্ণনা করতে চাই। কোনো বৃহত্তর সার্থে এ বিভাজন হয় নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বৈরাচারী ভিসি তার নিজের প্রয়োজনে সাংবাদিকদের মাঝে বিভাজন চেয়েছিলেন। দু’জন সংবাদকর্মীর পদলোভী ও অগণতান্ত্রিক মানসিকতাই তাকে সে সুযোগ এনে দিল। ২০১০ সালে সাংবাদিক সমিতির নির্বাচন হয়। সেখানে কেউ বিজয়ী কেউ পরাজিত হবে এটাই নিয়ম। কিন্তু পরাজিতরা নির্বাচন মেনে নিতে পারেন নি। তাই পরাজয়ের পর জাতীয় রাজনীতির মতো কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হল। সত্যনিষ্ঠ থেকে সংবাদ অনুসন্ধানের পথ বন্ধ হল। কোরাম রক্ষায় প্রশাসনের আস্থা অর্জনের প্রতিযোগিতা শুরু হল। কোন সংবাদটি প্রশাসনের পক্ষের আর কোনটা বিপক্ষের তা দিয়ে যাচাই হতে লাগল সাংবাদিকদের আদর্শ। প্রশাসনের বিপক্ষে সংবাদ ছাপালেই সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের নামের পাশে  ‘’জামায়াত-শিবির’’ তকমা এঁটে দেওয়া শুরু হলো। নির্বাচনে পরাজিতরা ভিসির প্রশংসা তুলে ধরল সংবাদে। সহানুভূতি পেল। বছর পেরিয়ে আবার নতুন বছরে নতুন নির্বাচনের সময় হল। এবার তারা (আগের পরাজিতরা) নির্বাচনে আসবেন না। কারণ পরাজয়ের ভয়। আলোচনার মাধ্যমে কমিটি করার প্রস্তাব এলো। মানে, ব্যাপারটা এমন যেন ‘‘গণতন্ত্র চাই না পদ চাই।‘’ ভিসিও বাধা দিলেন নির্বাচনে। নির্বাচন কমিশনারকে চাপ প্রয়োগ করলেন। বন্ধ হল নির্বাচন। ৫০ জন সাংবাদিকের সংগঠনে সবার দাবি গণতান্ত্রিক নির্বাচন। তাই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হল। দুটি প্যানেল হলো। নির্বাচনের দিন নির্ধারণও করা হল। ভিসিপন্থীরা (!) নির্বাচনে এলেন না। নির্বাচনের আগের দিন তারা ঘোষণা দিলেন নতুন সংগঠনের। পৃষ্ঠপোষকতা করলেন ভিসি। টিএসসিতে তাদের পুনর্বাসন করলেন। কক্ষ বরাদ্দ দিলেন। এভাবে গণতন্ত্রের মুখে চুনকালি দিয়ে, পদ আর স্বার্থের লোভে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার পেশাদারিত্ব বিসর্জন দিলেন কজন। সাধারণের প্রত্যাশা এক রকম আর তাদের সংবাদ অন্য রকম। এভাবেই কেউ কেউ পার করছেন সাংবাদিকতার শিক্ষানবিশির কাল। নোংরামির এ রাহুগ্রাস থেকে আমরা মুক্তি চাই। এমনটি কেন হয় তাও কিছুটা তুলে ধরা যাক। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সঙ্গে আমার দেখা। তিনি আমাকে সংবাদকর্মী হিসাবে জানেন। আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন- ‘’ভাই আপনি তো সাংবাদিক। ভিসি স্যার তো আপনার কথা শোনেন। আপনি এই সুযোগে দুই-একটা দান মাইরা নিতে পারেন না?’’ আমি বললাম, ‘’কি দান মারতে বলেন আপনি? বললেন,  ‘এই দুই-একটা নিয়োগ দিয়া দেন না! টাকা পয়সা যা লাগে দিমুনে। আপনারও কিছু হইল আর আমারও কিছু থাকল।’ এমনভাবে নগদ টাকার প্রলোভন আসতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী এটা কখনও ভাবতে পারে কি? নিশ্চয়ই না। আমরা যারা আজ সংবাদকর্মী, তারাও তো সাধারণ শিক্ষার্থী হিসাবেই ভর্তি হই বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে আগ্রহ কিংবা যোগ্যতার কারণে কোনো একটি পত্রিকার সংবাদদাতা হয়ে এমনই অসাধারণ হয়ে যাই! সাধারণ থেকে এই যে অসাধারণ হওয়া তা অনেকেরই সহ্য হয় না। তাই নীতির কাছে আপস করে বসে। আরেকটি ঘটনা বলি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগে শিক্ষকদের বিবদমান দুটি গ্রুপ আছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে এসব বিবাদ। একদিন একপক্ষের এক শিক্ষক আমাকে ডাকলেন। রুমে বসে চা-নাস্তা খাওয়ালেন। তারপর বের করলেন নানা রকমের নথিপত্র।
তাতে জানা গেল ওই শিক্ষকের সহকর্মী (যার সাথে তার বিবাদ) পিএইচডি ডিগ্রি না করেই ডিপ্লোমা কোর্সকে পিএইচডি দেখিয়ে পদোন্নতি নিয়েছেন। শিক্ষক হিসাবে যোগদানের পর প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। বিভাগের সিনিয়র শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছেন ইত্যাদি নানা অভিযোগ। এসব অভিযোগের জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের ঘটনাসহ কাগজপত্র পাওয়া গেল। শিক্ষক বললেন, এসব অভিযোগ নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ হলে শিক্ষার্থীদের কল্যাণ হবে। অপরদিকে অভিযুক্ত ওই শিক্ষক আরেকদিন ডাকলেন। তিনিও নথি বের করলেন। সেখানে দেখালেন তার সাথে বিবদমান অপর এক শিক্ষকের গবেষণাগারের হিসাব নিয়ে নানা গরমিল। বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা দানসহ নানা অভিযোগ। উভয় পক্ষ নথিপত্র সমেত নানা প্রমাণ দাখিল করে বোঝাতে চাইলেন:  ‘অপরাধী আমি নই উনি।’ সংবাদকর্মী হলেও আমি তো তাদেরই ছাত্র। ছাত্রের কাছে একজন শিক্ষক তারই সহকর্মীর গোমর ফাঁস করলেন। কার্যত তিনি নিজেই নিজের ত্রুটি উন্মুক্ত করে দিলেন। শিক্ষাগুরুর অপকর্মের খবর শিষ্যের হাতে। শিষ্যকে পেশাদারিত্বের কারণে তা প্রচার করতে হবে জাতির কাছে। আসলে যে শিক্ষক অপকর্মের কাজী। তিনি তখন শিক্ষক নন বরং অপরাধী। ওই শিষ্য তখন আর শিষ্য নয় বরং বিবেকের আদালতে একজন বিচারক। আমাদের ভাষায় সংবাদকর্মী। অনেক ক্যাম্পাস রিপোর্টারই এই খবরের ভার বহন করতে অপারগ। তাই তারা বিক্রি করে ফেলেন নিজেকে যে কোনো একজনের কাছে।
সোহেল তাজকে খোলাচিঠি
যুদ্ধের ময়দান থেকে পালানো সৈনিককে ইতিহাস মনে রাখে না
মাসুদা ভাট্টি, অতিথি লেখক

প্রিয় সোহেল তাজ, শেষ পর্যন্ত আপনি সংসদ সদস্যপদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন। প্রতিমন্ত্রিত্ব থেকে যখন পদত্যাগ করেছিলেন তখন সদ্য নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার এক বিষম বিপদকাল অতিক্রম করছে। পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় সরকার যখন পর্যুদস্ত ঠিক তখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আপনি আপনার দায়িত্ব পালন না করে চলে গেলেন আমেরিকায়। একজন ব্যক্তি সোহেল তাজ যদি দেশের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে না হতেন তাহলে, যদি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য না হতেন তাহলে আপনি আমেরিকায় গেলেন না চাঁদে গেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকতো না। কিন্তু আপনি তো তাজউদ্দিন আহমদ ও জহুরা তাজউদ্দিনের সন্তান, যারা দেশের ও দলের দুঃসময়ে পাশে থেকেছেন। তাদের মনে কি কোনও দুঃখ, কষ্ট বা বঞ্চনা ছিল না? কিন্তু সকল ব্যক্তিগত ক্ষোভের উর্ধ্বে উঠে তারা দাঁড়িয়েছিলেন এই দেশের মানুষের পাশে, এই দেশের পাশে। পিলখানা পরিস্থিতি যদি সঠিক ভাবে সামলানো না যেতো তাহলে এই দেশের অস্তিত্ব যে কতো বড় হুমকির মুখোমুখি হতো তা উপলব্ধির জন্য বড় কোনো গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না, সাধারণ জ্ঞান দিয়েই বোঝা যায়। সেই দুঃসময়ে আপনি যে কারণেই আমেরিকায় চলে গিয়ে থাকুন না কেন, তার মূল্য সমগ্রের সামনে সামান্য মাত্র। আপনি একটি পত্রিকায় খোলা চিঠি লিখেছেন, আপনার পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করে। যদিও এতে স্পষ্ট করে কিছুই বলা নেই। আপনি “কথার পেছনে অনেক কথা খুলে বলতে চাননি এবং অনেক ‘লুক্কায়িত সত্য’ জনসমক্ষে প্রকাশ করতে চাননি। আপনাকে হয়তো এজন্য অনেকেই বাহাবা দেবেন, দুঃখিত আমি এতে কোনো কৃতিত্ব দেখছিনে। আপনাকে পলায়মান একজন হেরে যাওয়া মানুষ মনে হচ্ছে আমার কাছে। এই উপলব্ধি আমার একার নয়, আপনার ও আমার প্রজন্মের অনেকের সঙ্গেই আলাপ করে জেনেছি তারাও আপনাকে এরকমটাই মনে করেন। হয়তো আমাদের এই মনে করায় আপনার কিছুই এসে যায় না, যেমনটি আপনি মনে করেননি যে, এই সময়ে বাংলাদেশের মানুষের পাশে আপনার থাকাটা জরুরি ছিল। কেন ছিল সেসব বিষয়ে যাওয়ার আগে আপনার খোলা চিঠি সম্পর্কে আরো দু‘চারটে কথা বলার আছে। আপনি লিখেছেন, আপনি  ‘সংগত’ কারণে মন্ত্রিসভা ও সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এবং এই  ‘সংগত’ শব্দটিকে আপনি নিজেই বাক্য থেকে আলাদা করেছেন কমা-বন্ধনী নিয়ে। আমরা ধরেই নিচ্ছি যে, এই সংগত কারণ যথার্থই সংগত। কিন্তু আপনিই চিঠিতে মন্ত্রিত্ব পেয়ে যা কিছু করতে চেয়েছেন এবং যা কিছু শুরু করেছিলেন (যেমন যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া) বলে উল্লেখ করেছেন সেগুলো এরকম মাঝপথে রেখেই চলে গেলেন? আপনি পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত, যে শিক্ষা অর্জন করতে আপনি “কিশোরকাল থেকে “দিন-রাত কাজ করেছেন, সেই শিক্ষা কী বলে? কোনও কিছুকে মাঝপথে ছেড়ে যাওয়াটা, তা যে অজুহাতেই হোক না কেন, ম্যানেজার হিসেবে চাকুরি পেতে  ‘জব ডান’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আশাকরি বিষয়টি আপনার জানা। সে বিচারে আপনি কাজ শুরুর আগেই একবার সরে গেলেন, সময় শেষ হওয়ার আগেই আরেকবার। মাঝের সময়টুকু আপনি থাকলেন কি থাকলেন না তা নিয়ে দেশের মানুষ, আপনাকে যারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে তারা ঠিক বুঝতে পারেনি। এক আলো-আঁধারির খেলা শেষে আপনি আবার এক দুঃসময়ে এসে সদস্যপদ ত্যাগ করলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের আগে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র্রকারীরা যেমন চতুর্দিক থেকে ব্যুহ বেঁধে এই দেশকে রক্তাক্ত করার কারবার শুরু করেছিল, দেশ বর্তমানে ঠিক সেই অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পিত খুন-খারাবি, রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে গতিশীল অর্থনীতিকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা, গুপ্ত-হত্যা বা গুমের ঘটনা তৈরি ইত্যাদি সব আলামতই ‘৭৫-এর ১৫ই আগস্টের আগের সময়টার সঙ্গে সাযুজ্যময়। আপনার বাবা সে সময় সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুঝেছিলেন এবং তিনি মৃত্যুতে মৃত্যুঞ্জয়ী হয়েছেন, পালাননি। দেশের মানুষ তার অবদানকে তাই কখনওই খাটো করে দেখেনি, দেখবে না। কিন্তু আপনি কি করলেন? আপনি লিখেছেন,  ‘সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি’, কখন করলেন? দায়িত্ব নিয়েই তো আপনি উধাও। তারপরও আপনার কথা মানছি,  ‘দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত সোচ্চার ছিলাম’। প্রশ্ন হলো, শেষটা নির্ধারণ করলেন আপনি নিজেই। একটু জনগণের দিকে তাকালে ভালো করতেন, আপনাকে দু’দু’বার ভোট দিয়ে তারা সংসদে পাঠিয়েছেন, তাদের প্রতি আপনার তো একটা দায়িত্ববোধ থাকা উচিত ছিল। আপনি তো সাধারণ রাজনীতি করবেন না বলেই অসাধারণ হতে পদত্যাগ করেছেন, একবারও কি ভাবেননি, জনগণের পাশে  ‘শেষ পর্যন্ত’ থেকেও অসাধারণ হওয়া যেতো?  ‘যখন মনে করেছি, আমার সীমিত ক্ষমতায় জনগণের প্রতি দেওয়া কমিটমেন্ট আর রক্ষা করা সম্ভব নয়, তখন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি’-- দেখুন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে মানুষ পেটের দায়ে সন্তান বিক্রি করে দেয়, যেখানে ভোট বিক্রি হয় এক-দেড় কেজি চালে, যেখানে বিদেশি ফর্মুলায় সরকারের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, নোবেল পুরস্কার দিয়ে যেখানে রাষ্ট্র শাসনের যোগ্য করে তোলার আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা হয় সেখানে আমাদের সবারই ক্ষমতা যে  ‘সীমিত’ তা আপনি এতোদিন পরে এসে বুঝতে পারলেন দেখে অবাক হলাম। শুধু বাংলাদেশে কেন, পশ্চিমা বিশ্বের যে আধুনিকতম  ‘গণতন্ত্রে’র দেশে আপনি গেলেন সেদেশের প্রেসিডেন্টকেও ফিলিস্তিনের মানবতাকে জিম্মি রাখতে হয় শক্তিশালী ইসরায়েলি লবির কাছে। তিনি এই ‘অক্ষমতায়’ পদত্যাগ করলে আসলে সামান্য মানবতাবোধ নিয়েও কারো পক্ষে সেদেশের প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব হবে না। তাই তারা পরিকল্পনা করেন কি করে সব পক্ষকে ম্যানেজ করে একটি মধ্যবর্তী পথে সকলকে সঙ্গে নিয়ে পৃথিবীকে, সভ্যতাকে এগিয়ে নেওয়া যায়, গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখা যায়, তার। ধরুন, একাত্তরে নিজের  ‘সীমিত ক্ষমতার’ দোহাই দিয়ে তাজউদ্দিন আহমদ যদি আপনার মতো মার্কিন মুলুকে চলে যেতেন তাহলে অবস্থাটা কী হতো, একবার ভাবুন তো? নাহ্, আপনাকে সে উচ্চতায় আমি স্থান দিচ্ছি না, বা সেই মহান ব্যক্তিকেও আপনার পর্যায়ে নামিয়ে আনছি না। প্রশ্নটা মাথায় এমনিতেই এলো। আপনার  ‘অর্থসম্পদ বা ক্ষমতার বিন্দুমাত্র মোহ ‘ নেই, আমরা আশ্বস্ত হলাম, আপনার সন্ন্যাস-জীবন সার্থক হোক, দেশের ভেতর আপনি  ‘সীমিত ক্ষমতা’  দিয়েও এলাকার উন্নয়নে ভ’মিকা রাখতে পারতেন, পারতেন হয়তো দশজন মানুষের মনে আশা জাগাতে, বিদেশে আপনি কেবল নিজের আয়ে নিজের পরিবারই চালাবেন- আপনার কেন্দ্র আপনি নিজেই, এতে এতোদিন ধরে কেন যে এতোগুলো মানুষকে আটকে রেখেছিলেন, সে প্রশ্ন এখন তোলাটা কি অযৌক্তিক হবে?
‘কাপাসিয়ার মানুষের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার্থে আমার সামনে এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না’- হবেও বা, কারণ কাপাসিয়ার মানুষ তাদের বিচারবোধ ও বিশ্বাসকে আপনার কাছে গচ্ছিত রেখেছিল। তাদের সে আমানতের খেয়ানত করে আপনি পড়ে থাকলেন বাইরে, দায়িত্ব নিয়ে যদি দায়িত্ব ছাড়তেই হয়, তাহলে দায়িত্ব নেয়ার আগে ভাবাটা জরুরি ছিল। দায়িত্ব ছাড়ার ফলে যদি কোনো বৃহৎ অর্জন সম্ভব হতো তাও না হয় মানা যেতো কিন্তু আপনি তো সেরকম কোনো ইশারা কাপাসিয়াবাসীকে দেখিয়ে যাননি, তাই না? আপনি কাপাসিয়াবাসীকে পরামর্শ দিলেন,  ‘ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক রাজনীতি পরিহার করতে হবে’, প্রশ্ন তুলি, আপনি কোন্ সামষ্টিক স্বার্থ দেখলেন, একটু বুঝিয়ে বলবেন কি? আপনি নীতি-আদর্শের রাজনীতির কথা শোনালেন, নিজেকে সরিয়ে নিয়ে, সমস্যা থেকে পালিয়ে সমস্যার সমাধানের কথা বললেন, আমরা শুনলাম, কিন্তু মানতে পারলাম না ঠিক।
আপনি আশাবাদী হয়ে খোলা চিঠির শেষে বলেছেন,  ‘হয়তো একদিন সুস্থ একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ হবে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধিশালী একটি দেশ’ - যথার্থ বলেছেন, আপনার আশা পূরণ হবে, আমরা তার আলামত দেখতে পাচ্ছি চারদিকে। অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান গবেষক ও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানই বলছে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কথা। হ্যাঁ, নানা ক্ষেত্রে এখনও ব্যত্যয় ঘটছে, এরপরেও ঘটবে, মাত্র চল্লিশ বছর বয়স যে রাষ্ট্রের, হাজারো টানাপড়েন তাতে থাকবেই। কিন্তু সব কাটিয়ে উঠে এই দেশ যখন আপনার আশাবাদের জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে, তখন আপনার মতো একজন সোহেল তাজ সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে যাবেন, কারণ, পলাতকদের কেউ মনে রাখে না, ইতিহাসের ফুটনোটেও তাদের জায়গা হয় না। খুব রূঢ় শোনালেও, এই-ই বাস্তব। দেশ ও দশের প্রতি আপনার প্রেম নেই, আপনি নিজেকে ভালোবাসেন, নিজের অহং-কে ভালোবাসেন, আপনি তবে তাই নিয়েই থাকুন।
তোমাদের জন্য শুভ কামনা
রফিকুজ্জামান রুমান, অতিথি লেখক
প্রাণঢালা অভিনন্দন, লাল গোলাপ শুভেচ্ছা, হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা সব কিছুই তোমাদের জন্য। শিক্ষাজীবনের প্রথম ধাপটি তোমরা অতিক্রম করতে পেরেছ অত্যন্ত সার্থকতার সঙ্গে। তেমরা স্বপ্ন দেখেছিলে, দক্ষ কারিগর হয়ে সে স্বপ্নের সর্বাঙ্গীন সুন্দর কাঠামো তোমরা নির্মাণ করতে পেরেছ। মেধা তোমাদের মূল হাতিয়ার; অদম্য ইচ্ছা, কঠোর অধ্যবসায়, জয় করার সিদ্ধান্ত সে হাতিয়ারকে করেছে শাণিত। তোমরা পেরেছ কারণ তোমরা পারতে চেয়েছিলে। তোমাদের জন্য আরো একবার শুভ কামনা! এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রিয় শিক্ষার্থীরা, তোমাদের কৃতিত্বকে আমরা স্বীকার করে নিই। তোমাদের সাফল্যকে আমরা গৌরবের স্মারক বলে মনে করি। মনে করি বলেই মনে করিয়ে দিতে চাই- এই তোমাদের শুরু; শেষটা অনেক দূর। শুরুর সাফল্য তোমাদেরকে আনন্দিত করেছে, সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই আনন্দের ঢেউ যেন শেষের উদ্দিষ্টকে প্লাবিত করে না ফেলে। শেষটা কোথায়? যেখানে দাঁড়িয়ে ক্ষুধামুক্ত আত্মনির্ভরশীল অপ্রতিরোধ্য এক বাংলাদেশ! পরিসংখ্যানের দৃষ্টিকোণ থেকে এবার তোমাদের সাফল্য অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে তোমরা সত্যিই সৃজনশীল হয়ে উঠছ। ‘চির ভয়ের’ জায়গা ইংরেজি ও গণিতে পাসের হার বেড়েছে। সম্মিলিতভাবে এ বছর এসএসসি’র গড় পাসের হার ৮৬.৩৭ শতাংশ। মাদ্রাসা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষায় পাসের হার ৮৮.৪৭ শতাংশ। পরীক্ষার সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ পেয়েছ ৮২ হাজার ২ শত ১২ জন। সার্বিক ফলাফলে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ সবই খুশির খবর। তবে দুশ্চিন্তার বিষয়ও আছে। এবারের পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারে নি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৪টি। জিপিএ-৫ পেয়েও পছন্দ মতো কলেজে ভর্তি হতে পারবে না হাজার হাজার শিক্ষার্থী। প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, পরিসংখ্যানের আলায় তোমরা উদ্ভাসিত। ২০০১ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর প্রথম বছরে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭৬। সেটি আজ ২০১২ এ প্রায় ৮২ হাজার! পাসের হারও বেড়ে চলেছে ক্রমাগত। এসব পরিসংখ্যান তোমাদের চেষ্টা, আন্তরিকতা আর অধ্যবসায়েরই স্বীকৃতি দেয়। মনে পড়ে চট্টগ্রামের রাব্বীর কথা। দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী এই কিশোরকে তো কোনো স্কুলই ভর্তি করতে রাজি হয় নি। অবশেষে দামপাড়া পুলিশ লাইন স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল এই মেধাবী। ২০১০ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে সে দেখিয়েছে-- মেধা চোখে থাকে না, থাকে মগজে। ছেলে আসাদ আলী জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাবা রিকশাচালক তোফাজ্জল হয়ত জানেনও না জিপিএ-৫ কী। ভাল ফলাফল করেছে শুনে সে আত্মহারা। কুড়িগ্রামের এই ছেলে দেখিয়েছে-- বাবার প্রতি ফোঁটা ঘামের মূল্য কীভাবে দিতে হয়। রাজশাহীর রোজিনা খাতুনকে অষ্টম শ্রেণীতে থাকতেই বাবা মা বিয়ে দিয়ে দিলেন। কারণ দারিদ্র্য। শ্বশুরবাড়ির যৌতুকের টাকা পুরোটা আদায় করতে ব্যার্থ হয় ভ্যানচালক বাবা। তালাকপ্রাপ্তা হয়ে রোজিনা ফিরে আসে নিজের বাড়ি। আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করে। এসএসসি’র ফরম ফিল আপ করার পুরো টাকাটাও বাবার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় নি। এই দারিদ্র্যকে জয় করেছে রোজিনা। দেখিয়েছে- জীবন সংগ্রামে কীভাবে জয়ী হতে হয়। ২০১০ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। এমন আরো অনেককে খুঁজে পাওয়া যাবে যারা শুধু ফলাফল অর্জন করে নি; অর্জন করেছে জীবনকে জয় করার মহামূল্যবান দীক্ষাও। এবারের পরীক্ষায়ও নিশ্চয়ই এমন অনেকেই আছ। তোমরা যারা এমন উদাহরণ সৃষ্টি করতে পার, সেই তোমাদেরকে নিয়েই স্বপ্ন দেখা যায়। কিন্তু তোমরা কি জানো তোমাদেরকে নিয়ে আমাদের স্বপ্নটা কী? দু’টি স্বপ্ন। প্রথমটি তোমরা অনেক বড় হবে। দ্বিতীয়টি তোমাদের এই ‘বড়ত্ব’ দিয়ে বাংলাদেশকে বড় করে তুলবে। দেশকে নিয়ে স্বপ্ন না দেখলে, দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভাল না বাসলে আর যা-ই হও, বড় হতে পারবে না। আমাদের স্বাধীনতার বয়স ৪১ বছর। আমরা স্বাধীন হয়েছি কিন্তু ‘মুক্তি’ পাই নি। তোমাদেরকে নিয়ে সেই মুক্তির স্বপ্ন আমরা দেখতেই পারি। একথাগুলো তোমাদেরকে বলছি, কারণ তোমরা যারা পাস করেছ এবং যারা পাস করতে পার নি, তোমাদের মধ্যেই হয়ত লুকিয়ে আছে আগামীর বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক। যে ছেলেটি বা মেয়েটি এ বছর পরীক্ষায় পাস করতে পারে নি, কে জানে, সে-ই হয়ত ২০৩৫ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবে! তোমরা ব্রাজিলের নাম শুনেছ। বিশ্বকাপ ফুটবলে সবচেয়ে বেশি বার জয়ী দেশ। পেলের দেশ। সেই ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করতে পেরেছিলেন। তোমাদের মতো লুলার বয়স যখন ১৪, তখন সে রাস্তার মোড়ে বসে থাকত রং পলিস নিয়ে। করত মুচির কাজ! এরপর জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত সয়ে সয়ে লুলা উদ্বুদ্ধ হলেন জীবনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে। হার মানেন নি। হলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। প্রথমবার ২০০২ সালে। ২০০৬ এ দ্বিতীয়বার। হলেন ‘’টাইম’’ সাময়িকীর বিবেচনায় ২০১০ সালের সেরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব! এই হলো থেমে না থাকার গল্প। মনে রাখবে- জীবনের কোনো ঘটনাই জীবনের চেয়ে বড় নয়। অনেকে ফেল করে আত্মহত্যা করে। ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহননের পথও বেছে নেয় কেউ কেউ। এগুলো পরাজয়। তোমরা দা সিলভার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পার কীভাবে জয়ী হতে হয়। এই ফলাফলে তোমরা তোমাদের মেধার স্বীকৃতি পেয়েছ। অবশ্যই গর্বের বিষয়। তবে ফলাফলই কিন্তু শেষ কথা নয়। ফলাফল তোমাকে অনুপ্রাণিত করে। উৎসাহিত করে। তোমাকে একটি জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেয়। এরপর তোমার কাজই হয়ে ওঠে তোমার পরিচয়। ভাল শিক্ষার্থী হওয়া যত সহজ, ভাল মানুষ হওয়া তত সহজ নয়। তার জন্যে মনুষ্যত্ববোধ, নৈতিকতার অনুশীলন, অন্যের জন্য কাজ করা এবং দেশপ্রেম-- এসবকেই আঁকড়ে ধরতে হবে। দেশপ্রেম শুধু বক্তৃতা-বিবৃতিতে নয়, থাকতে হবে চেতনায় ও কাজে। যেমনটা ছিল `Milkman of India` বলে পরিচিত ড. ভার্গেস কুরিয়েন এর। ড. ভার্গেস `An Unfinished Dream`  নামে একটি বই লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, “আমি দুধের ব্যবসায় নেমেছি একজন ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞের সমালোচনার প্রেক্ষাপটে। ঐ ব্রিটিশ সমালোচক বলেছিলেন, ‘বোম্বের দুধের চেয়ে লন্ডনের নর্দমার পানিও অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যসম্মত’। এই সমালোচনাকে ভার্গেস চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। সেই চ্যালেঞ্জের ফল- আজকের ভারতের পৃথিবীতে দুগ্ধ উৎপাদনে প্রথম সারিতে অবস্থান। অনমনীয় দেশপ্রেম আর উদ্দ্যেশ্য’র প্রতি অবিচলতাই এমন সাফল্য এনে দিতে পারে। মহাঋষী পতঞ্জলী বলেছিলেন, ‘ যখন মহৎ কোনো কিছু করার জন্য তুমি অনুপ্রাণিত হও, তখন তোমার চিন্তার সীমাবদ্ধতা ভেঙ্গে যায়, প্রতিটি ক্ষেত্রে তোমার সচেতনতা তীব্র হয়ে ওঠে এবং তুমি একটি নতুন চমৎকার জগৎ খুঁজে পাও। তোমার অন্তর্নিহিত শক্তি, উদ্যম আর বিচক্ষণতা নতুন করে জীবন্ত হয়ে ওঠে। এবং এসবের মধ্য দিয়ে তুমি এমন জায়গায় যেতে পার যা তুমি আগে হযত কল্পনাও করো নি’। তোমরা ছোট নও। বিশ্বায়নের এই যুগে তোমরা কোনো কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন নও। নিজেদের জানতে হবে। সেই সাথে দেশকে এবং দেশের মানুষকেও। অমিত সম্ভাবনার আমাদের এই বাংলাদেশ। আজো পর্যন্ত সেই সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে পারি নি। সম্পদ আমাদের পর্যাপ্ত হোক বা অপর্যাপ্ত, সেটি মূল সমস্যা নয়; মূল সমস্যা হল সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার। এ দেশটিকে সত্যিকারের সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত করার জন্য আমাদের সম্মিলিত কোনো উদ্যোগ নেই। ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবদুল কালাম তাঁর ‘Ignited Minds’  বইয়ে বলেছেন- Three factors are invariably found in a strong nation: a collective pride in its achievements, unity, and the ability for combined action’ এ তিনটির কোনটিই আমাদের নেই। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতাকে আমরা সবার অর্জন মনে করতে পারছি না। আমরা এখনো ঐক্যবদ্ধ না এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার কোনো কাজেও আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ বা প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় না। পত্রিকার পাতায় যেদিন তোমাদের ফলাফল প্রকাশিত হল, সেদিনের একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পত্রিকার একদিকে ছিল তোমাদের হাসিমাখা মুখ, তোমাদের গৌরবের স্থিরচিত্র। অন্যদিকে ছিল আরেকটি ছবি। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি কলেজের হোস্টেল থেকে ১৫টি চাপাতি ও ২০ টি রামদাসহ বিপুল অস্ত্র উদ্ধার। এগুলো ব্যবহৃত হতো প্রতিপক্ষের ছাত্রদের আক্রমণ করার জন্য। ছাত্রদের হাতে হকিস্টিক, রামদা। এরাও হয়ত তোমাদের মতো আমাদের মতো ভাল ফলাফল করে ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিল। এদের হাতেও কলম ছিল। সেই কলম আজ পরিণত হয়েছে রামদা’য়। কেন? এর জবাব তোমাদের খুঁজে পেতেই হবে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সম্ভাবনাময় একটি দেশকে ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না। এবং শুধুমাত্র উদাহরণ সৃষ্টিকারী দেশপ্রেমিক কোনো নেতৃত্বই পারে অধিকাংশ ভাল মানুষের এ দেশটিকে সমৃদ্ধির বাংলাদেশে পরিণত করতে। সেই নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণে তোমদের দিকে তাকিয়ে পুরো বাংলাদেশ।
মহাত্মা গান্ধীর নাম তোমরা জানো। ভারতের জাতির জনক। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হল। পরের দিনের পত্রিকায় পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রকাশিত হল ব্যানার হেডলাইনে। এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে সবাই উদযাপন করছে। যাঁর অবদানে এই ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম, তাঁর একটি খবর পাওয়া গেল পত্রিকার একই পাতার নিচের দিকে। সবাই যখন আনন্দে উদ্বেলিত, জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী তখন নোয়াখালীতে। খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে তিনি সেবা করছেন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আহত জনগণের! এই হল নেতৃত্ব। এপিজে আবদুল কালামের একটি ঘটনা দিয়েই শেষ করছি। আহমেদাবাদের স্বামী মহারাজের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন জনাব কালাম। তিনি স্বামীজিকে বললেন, ‘আমরা উন্নয়নশীল ভারতকে উন্নত ভারতে পরিণত করার জন্য পাঁচটি ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করেছি। এগুলো হল- শিক্ষা  ও স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, তথ্য ও যোগাযোগ, অবকাঠামো, এবং প্রযুক্তি। এগুলোর মাধ্যমে আমরা কীভাবে সফল হতে পারি? আপনার পরামর্শ চাই’। স্বামীজি বললেন, ‘এ পাঁচটি বিষয়ের সাথে আরো একটি বিষয় অপরিহার্য়। তা হল- স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস এবং মানুষের নৈতিকতার উন্নয়ন’। প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, একথা অপরিহার্য সত্য যে, মেধার সাথে যদি নীতিবোধ না থাকে তাহলে সে-ই হয়ে ওঠে সবচেয়ে ভয়ংকর। আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় আমরা মানুষ। মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছে জ্ঞান। কিন্তু তাকে সত্যিকার অর্থেই ‘মানুষ’ করে তুলতে পারে নৈতিক মূল্যবোধ। একটি সুনির্দিষ্ট নৈতিক মূল্যবোধ আর তার যথার্থ অনুশীলন ছাড়া শুধু জ্ঞান ফলদায়ক নয়। তোমাদের জন্য অন্তহীন শুভকামনা! তোমরাই নির্মাণ করবে আগামীর বাংলাদেশ!
হতাশ মানুষ কাউকেই বিশ্বাস করে না
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, অতিথি লেখক

একদিকে সরকার, অন্যদিকে বিরোধীদল। আমরা দেখছি কেবলই বৈরিতা। বাংলাদেশের মতো সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে কেমন হওয়া উচিৎ এদের পারস্পরিক সম্পর্ক? ১৯৯০-এর গণঅভ্যূত্থানের পর থেকে সংসদীয় ধারায় দেশ ফিরলেও সরকার-আর বিরোধী দলের মধ্যকার সংঘাতময় রাজনীতি এখন জনগণের দিন-রাতের উদ্বেগ। গণতন্ত্র এই দেশে সফল হবে কিনা এমন প্রশ্ন উঠছে। এই প্রশ্নের উত্তর শুধু সরকারের কাছে চাইলেই হবে না। বিরোধীদলকেও দিতে হবে। সংসদীয় ধারায় সরকার আর বিরোধী দলের সম্পর্কটা যেমন হওয়া দরকার তা হয়নি, হচ্ছে না। ফলে গণতন্ত্রও সেভাবে দানা বাঁধেনি। অপ্রীতিকর কিছু ঘটলেই (শুধু ইলিয়াস আলী নিঁখোজ হওয়ার মতো বড় ঘটনা নয়) সরকার তার দায়িত্ব এড়াতে তৎপর হয়ে ওঠে। বিরোধীরাও ঝাঁপিয়ে পড়ে দ্রুত। এরপর শুরু হয় কথার খেলা, শুরু হয় রাস্তায় সাধারণ মানুষের সম্পদের ওপর হামলে পড়া, দেশকে অস্থিতিশীল করা। কি ভয়ংকর অবিশ্বাস সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে। কতটা দানবীয় তার প্রকাশ। কোনো ঘটনায় সরকার দায়িত্ব এড়াতে চাইলে বিরোধী পক্ষ ঝাঁপিয়ে পড়বেই। সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু তা কি অর্থে স্বাভাবিক? সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চরিত্র কি হবে তা ভেবে দেখা দরকার। সংসদীয় গণতন্ত্র যেখান থেকে এসেছে সেই গ্রেট ব্রিটেনে বিরোধী দলকে বলা হয় হার ম্যাজেস্টিজ রয়্যাল অপজিশন। তার মানে সেখানে বিরোধী দলও সরকারেরই অংশ। বিরোধী পক্ষেও একটি আনুগত্য থাকে, সরকারের প্রতি নয়, দেশের  প্রতি, জনগণের প্রতি। বাংলাদেশে সেই ১৯৯১ সাল থেকে যে সংসদীয় স্বৈরতন্ত্র চালু হয়েছে তাতে দেশের প্রতি, জনগণের প্রতি এই আনুগত্যের দেখা মেলা ভার- তা বিরোধী দল হোক বা সরকারি দল হোক। এখানে নির্বাচনে যারা জেতে তারা দেশের মালিক বনে যায়। আর সেই মানসিকতা থেকে জন্ম নেয় গ্রাম্য দলাদলি, পরিবারতন্ত্র, গোষ্ঠীবাজি আর লুট-পাটের এক রাজত্ব।  সরকারি দল আর বিরোধী দল-এর পারস্পরিক আস্থা খুব জরুরি জাতীয় উন্নয়নের জন্য। আর এই আস্থা আসে  গণতন্ত্রের ওপর আস্থা থেকে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখার মধ্য দিয়ে। কিন্তু এখানে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। একটাই চেষ্টা কে কাকে ঘায়েল করতে পারে। প্রকারান্তরে এটি গণতন্ত্রের ওপরই অনাস্থা। গণতন্ত্রে কোনো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেই। আজ যারা ক্ষমতায়, তারা যদি তা ভাবেন, বুঝতে হবে গণতন্ত্রেই তারা বিশ্বাস করেন না।  জনগণই যেখানে বিধাতা সেখানে জনগণের আশা আকাঙ্খার বাইরে গিয়ে চিন্তাভাবনা করা গণতন্ত্রবিরোধী মানসিকতা। তেমনিভাবে বিরোধী দলের ভাবনা যদি এই হয় যে দেশকে নিয়ে শুধু তারাই ভাবেন, শুধু তাদেরই দেশপ্রেম আছে, আর কারো নেই, তা হলে বুঝতে হবে তাদের ভাবনাচিন্তাও গোলমেলে। এটা বাংলাদেশের গণতন্তের একটা ব্যাধি, এর চিকিৎসা কি কেউ বলতে পারে না। দলগুলোর ভাবনা-চিন্তা অনেক আত্মঘাতি। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে অবৈধ প্রতিপন্ন করা, অদেশপ্রেমিক বলার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নষ্ট করা হয়। আর এর ফাঁকা দিয়েই চলে আসে ১/১১-এর মতো রাজনীতি বিরোধী শক্তি।
রাজনীতিবিদদের ভাবা দরকার গণতন্ত্রের চর্চাটা কোথায় হবে? রাজপথ দখল নাকি সংসদ?
দেশে মানুষ এখন সারাক্ষণ সরকারকে গালমন্দ করে।  তার অর্থ কি এই যে তারা বিরোধী পক্ষকে বিশ্বাস করে? বাংলাদেশে গত ২১ বছরে দুটি দল বা জোট (যাই বলি না কেন) কে দেখে এতোটাই হতাশ যে মানুষ এখন কাউকেই বিশ্বাস করে না, এদেরও না,  ওদেরও না। ফলে একটা ফাঁকা তৈরি হয়। এখানেই গণতন্ত্রের সংকট। যদি মানুষ দুটি বড় রাজনৈতিক দলের ওপর আস্থা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে, তাহলে পরিণতিটা কি একবারও কি ভাবছেন নেতা-নেত্রীরা?
হিলারি-প্রণব: দু’জনের সফরের পজিটিভ-নেগেটিভ
ফজলুল বারী

কাকতালীয়ভাবে দু’জন প্রভাবশালী ব্যক্তির ঢাকা সফর প্রায় একসঙ্গে, পাশাপাশি হয়ে গেল! এরা হলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন আর ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। বাংলাদেশের নানা নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও এদুটি দেশকে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখা হয়। প্রথমে হিলারির সফর প্রসঙ্গে বলি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সময়ে যে ঢাকা এসেছেন, এটিই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে পজিটিভ দিক। হিলারির স্বামী বিল ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফর নানা কারণে প্রায় ভন্ডুল হতে বসেছিল! জঙ্গী হামলার আতংকে সাভারে তার জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাওয়া সহ নানা কর্মসূচি বাতিল করা হয়। এমনকি নয়াদিল্লি থেকে রওয়ানা হওয়ার পরও মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের গোয়েন্দারা ‘গো ব্যাক, গো ব্যাক’ বলে তাকে ফেরত পাঠাতে চেয়েছিল! সে পরিস্থিতিতে এয়ারফোর্স ওয়ান এড়িয়ে ছোট একটি বিমানে ঢাকা এসে বাংলাদেশের মুখরক্ষা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন! এমনকি তার সফরসঙ্গী মেয়ে চেলসি’কেও ঢাকা  আনেননি। হিলারি’র সফর নিয়ে সে রকম কিছু ঘটেনি। কিন্তু পুরো সফর পরিকল্পনা যে মার্কিনিদের সাজানো তা ঢের বোঝা গেছে। ক্লিনটনের মতোই এ সফরেও জাতীয় স্মৃতিসৌধ বা বঙ্গবন্ধু জাদুঘর’কে অন্তর্ভূক্ত রাখা হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধে নেয়াই যাচ্ছে না! হিলারি এত কথা বললেন, কিন্তু বাংলাদেশ জঙ্গি কলঙ্কমুক্ত—সরকারের এ দাবির সমর্থনে একটাও শব্দ বললেন না! সরকারের জন্যে শুধু এই একটিমাত্র না, আরও অনেকগুলো ধাক্কা এই সফরে এসেছে। যেমন সরকারের জন্য খুব বাজে একটি সময়ে হিলারি এসেছেন। ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ঘটনায় সরকার নাজুক অবস্থায় আছে। ঢাকা পৌঁছে একঘন্টা বিমানে বসে থেকে সম্ভবত তিনি হালের বাংলাদেশ সম্পর্কিত ব্রিফিংটি নেন। সে কারণে ইলিয়াসের মেয়েকে তিনি বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। আর ইলিয়াসের মেয়ের নামে মানবিক একটি পত্র লিখিয়ে গেমটি ভালোই খেলেছে বিএনপি! ইদানিং নানা কিছুতে তাদের পেপারওয়ার্কও খুব ভালো হচ্ছে। সরকারের লোকজন এত বেশি পণ্ডিত অথবা পণ্ডিতন্মন্য অথবা নিজেদের কাজে নিজেরা এত বেশি সন্তুষ্ট যে, এসব নিয়ে আজকাল খুব একটা ভাবেন বলেও মনে হয় না! অসন্তুষ্ট মানুষ নতুন কিছু করার জন্য ভাবে। কেউ নিজে নিজে সন্তুষ্ট হয়ে ঘুমিয়ে থাকলে তাদের জাগানো কঠিন। হিলারির সফরে সরকারের জন্য নেগেটিভ অনেক কিছুই উঠে এসেছে। সব দলকে নিয়ে নির্বাচনের জন্য সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন হিলারি। বিএনপির সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে সংলাপ চায় না সরকারিদল। তারা তাদের বলেছে সংসদে প্রস্তাব নিয়ে যেতে। বিএনপি সংসদে নিজেদের অবস্থা কী সেটা ভালো করেই জানে। সেখানে কোনো প্রস্তাব নিয়ে গেলেই তা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে খারিজ করে দেবে আওয়ামী লীগ। অতএব বিএনপি সে পথে যাবে না। হিলারির সংলাপ প্রস্তাবেরও তাই দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
ইলিয়াসের পাশাপাশি গার্মেন্ট শ্রমিকনেতা আমিনুলের প্রসঙ্গ নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছেন হিলারি। সাভারের পোশাকশ্রমিকদের এই নেতা নিখোঁজ হবার পর তার লাশ বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করা হয়। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশের স্বপ্ন দেখা হচ্ছিল, সেখানে হিলারি বলেছেন আমিনুল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত না হলে বিদেশের বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমন একটি বক্তব্য আসার পর তার কাছে কী আর শুল্কমুক্ত আবদার রাখার পরিবেশ থাকে? গার্মেন্ট শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করাতে মোশরেফা মিশু সহ অনেকে গ্রেফতার, নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। খুন হয়ে গেছেন আমিনুল। সুশাসন যেখানে নির্বাসনে সেখানে হিলারির সঙ্গে শেখ হাসিনা-দীপু মনির খুশি খুশি ভাব নিয়ে তোলা ছবি ছাড়া আর কী পেয়েছে বাংলাদেশ? ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় ফজলে হাসান আবেদ, ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর আবার সরকারকে এক হাত নিয়েছেন হিলারি! সরকারকে  সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গ্রামীণব্যাংকে যেন হাত দেয়া না হয়! গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে তার সফরের কোথাও একটি শব্দও উল্লেখ করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত দেবার কথাও নেই! এত নেই এর মধ্যে তাহলে সরকার আর সরকারিদল হিলারির সফর থেকে কী পেয়েছে? অন্যদিকে হিলারি-প্রণব এদুজনের সফরে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পেয়েছে বিএনপির! খালেদা জিয়া বক্তৃতায় একটা কথা প্রায়ই বলেন, ‘‘বিদেশে আমাদের প্রভু নেই বন্ধু আছে!’’ তা এই দুই সফর নিয়ে কী করেছে বিএনপি? বিদেশে যখন গিয়ে কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়, তখন তারা দেশের বিরুদ্ধে হেন খারাপ কথা নেই, যা বলে না। হিলারি-প্রণবকে এমন দেশ সম্পর্কে চূড়ান্ত খারাপ যা যা বলা সম্ভব সব বলেছে বিএনপি! এমনকি তত্ত্বাবধায়কের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রণব বাবু তথা ভারতের সহায়তা চেয়েছেন! ভোট হবে বাংলাদেশে, ভোট দেবে দেশের মানুষ, আর তা সুষ্ঠু করে দেবেন হিলারি-প্রণব? এগুলাকে বন্ধুত্ব না গোলামি বলে? বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও নেতাদের এসব দেউলিয়াপনার খবর বিদেশিরা বিলকুল জানে।এসবের একটু বেশি জানেন পাশের দেশের প্রণব মুখার্জি। সরেজমিন সব দেখে-জেনে গেলেন হিলারি ক্লিনটন! তিস্তা চুক্তি-টিপাই মুখ বাঁধ নিয়ে প্রণবের মন্তব্য বাংলাদেশের জন্য হতাশাব্যঞ্জক! এসব কারণে এই সফর থেকে বাংলাদেশের জন্য পজিটিভের চেয়ে নেগেটিভের পাল্লাই ভারী।
ভিসেরা: তিন মাস মুখ বন্ধ
ফজলুল বারী

সাগর-রুনি’কে কে খুন করেছে, তা আজ পর্যন্ত কেউ জানে না! এ ঘটনার তদন্ত তদারকির দায়িত্ব নিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। আর পুলিশ কোর্টে গিয়ে বললো, তারা ব্যর্থ! জোড়া খুনের ঘটনা শনাক্ত হবার পর তাদের মৃতদেহের পোস্টমর্টেম করা হয়। কিন্তু এতদিন পরে এসে বিজ্ঞ গোয়েন্দাদের মনে পড়লো, ভিসেরা রিপোর্ট দরকার ছিল! অতএব এতদিনে পচাগলা লাশ দুটি আবার টেনে তোলো! আবার কাঁটা-ছেঁড়া করো! সাধারণভাবে একটি ভিসেরা পরীক্ষা প্রক্রিয়াজাত, শেষ করতে, রিপোর্ট পেতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। অতএব এমন কিছু করলে অন্তত তিন মাস তো এ ইস্যুতে দেশের মানুষের মুখ বন্ধ রাখা যাবে! সাংবাদিক নেতাদেরও আর কষ্ট করে আগামী তিন মাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চায়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতে হবে না! বিদেশের নিরাপদ জীবন ছেড়ে বড় আশা করে দেশের জীবনে ফিরে গিয়েছিলেন আমাদের প্রিয় মেধাবী সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। দুর্ভাগ্য তারা বেডরুমে খুন হয়েছেন বলে  রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব নিলো না! অভাগা এতিম শিশু মেঘের আর কী বাবা-মা’র প্রিয় দেশে নিরাপদ-সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে?
সৌদি কূটনীতিক খুন হলেন তুলনামূলক সংরক্ষিত এলাকা কূটনৈতিক পাড়ায়। সরকারি লোকজন প্রথম বলার চেষ্টা করেন, ইনি কূটনীতিক না। অ্যাম্বেসিতে বসে বাংলাদেশে অবস্থানরত সৌদি নাগরিকদের স্বার্থ দেখতেন। যেন তাই এভাবে তিনি মরতেই পারেন আর কী! কিন্তু এ নিয়ে আরব জাহানে প্রতিক্রিয়া খারাপের দিকে যাচ্ছে দেখে কথাটি আর দ্বিতীয়বার বলার চেষ্টা করা হয়নি। এরপর যখন সৌদি প্রতিনিধিদল এলো, তখন বলা হলো, এরা কোনো তদন্ত দল না। তদন্ত করতেও আসেনি। খুনের জায়গাটি পরিদর্শনে এসেছে। বাংলাদেশের তদন্তের ওপর তাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে, ইত্যাদি! তা সেই আস্থার শেষ খবর কী এখন? কে খুন করলো সৌদি কূটনীতিককে? কোন জবাব নেই। মাঝে কোন কোন মহল থেকে বলার চেষ্টা হয়েছে, কূটনীতিক খুনের পিছনে কোন পেশাদার বিদেশি কিলার থাকতে পারে। কারণ যেখানে যেভাবে তাকে গুলি করা হয়েছে, তা কোনো সাধারন গড় উচ্চতার বাংলাদেশি কিলারের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু সরকার থেকে, বাংলাদেশের সব বাঘা বাঘা গোয়েন্দার তরফে আজ পর্যন্ত তদন্তের বিষয়টি নিয়ে কোনো অগ্রগতির খবর দেয়া গেল না! এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জনশক্তির বাজার সৌদি আরবের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কেউ জানে না।  বাংলাদেশে এখন টাকা ছাড়া চাকরি হয় না এটা সবাই জানেন। চট্টগ্রামে রেলওয়েতে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেয়া হচ্ছিল, এটিও  ওপেন সিক্রেট ছিল সেখানে। অতঃপর একদিন মাঝরাতে বিজেবি’র পিলখানার সংরক্ষিত সীমার মধ্যে রেলমন্ত্রীর এপিএস’এর গাড়িতে সত্তুর লাখ টাকার কেলেংকারি ধরা পড়ল! গাড়িতে আবার ছিলেন রেলের একজন জিএম আর নিরাপত্তা কর্মকর্তা! তারা বললেন মন্ত্রীর বাড়ি যাচ্ছিলেন। সারারাত তাদের বসিয়ে রাখা হলো সেখানে। সকালে নাস্তা খাইয়ে আবার সসম্মানে ছেড়েও দেয়া হলো! মন্ত্রী প্রেসকনফারেন্স করে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করলেন। বললেন এগুলো তার পাঁচ মাস মন্ত্রিত্বের বয়সী এপিএস’র টাকা! তারা তার বাড়ি যাচ্ছিল না। এপিএস’এর বাড়ি যাচ্ছিল! এপিএস সত্তুর লাখ টাকার বস্তা নিয়ে বাড়ি যেতে সঙ্গে আবার রেলওয়ের একজন জিএম আর নিরাপত্তা কর্মকর্তা থাকা লাগে? তাও আবার মধ্যরাতে! এমন একের পর এক মিথ্যা ভাষণেও নিজেকে বাঁচতে না পেরে সব দায় নিয়ে তাকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়। এরপর আবার বেরোয় পাঁচ কোটি টাকা জমা দিয়ে মন্ত্রীপুত্রের সরকারি একটি লাইসেন্স নেবার নিশ্চিত সূত্রের খবর! এসব নিয়ে দুদকের তদন্তের আওতায় পদত্যাগী রেলমন্ত্রীও পড়বেন খবর বেরুলে প্রধানমন্ত্রী সাহায্যের হাত বাড়ান! তাকে দফতর ছাড়াই মন্ত্রিসভায় রেখে দেন! পরিস্থিতি টের পেয়ে দুদকও সুর পালটে বলে, নাহ! সাবেক রেলমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা তারা বলেনি। প্রচারিত খবর ভিত্তিহীন!
কারণ দুদকও জানে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন মন্ত্রীর দুর্নীতির তদন্ত করা যায় না। পিলখানা কেলেংকারির নেট রেজাল্ট, কবি এখন নীরব! বাংলাদেশের অন্যতম বাগ্মী নেতা, সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আর কথা বলেন না! যিনি প্রতিদিন গড়ে এক-দু’খানা রাজনৈতিক বক্তৃতা দিতেন, তিনি আর তা দেন না। বা তার সে বড় মুখ আর নেই! তার বক্তৃতার অন্যতম বিখ্যাত চরিত্র ‘গোলাপী’কেও কথা বলতে বলেন না! বিএনপির এক সময়কার ক্যাডার, সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ইস্যু দেশের এখন গরম ইস্যু। সরকার শুরু থেকে বলে আসছে কারা কাজটি করেছে তা তারা জানে না। জানার চেষ্টা করছে। মানুষ তাদের কথা বিশ্বাস করেনি। কারণ দেশে এটিই প্রথম গুমের ঘটনা না। এখন পর্যন্ত যত গুমের ঘটনা ঘটেছে, এর একটিরও বিশ্বাসযোগ্য জবাব দিতে পারেনি সরকার। বিএনপির সৃষ্টি করা ক্রসফায়ারে বিচার বর্হিভূত মানুষ হত্যা এ আমলেও অব্যাহত আছে। আগে এ নিয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে মিথ্যা বলতো বিএনপি। এখন বলছে আওয়ামী লীগ! মানুষ শুধু বেডরুমে খুন হচ্ছে না, পথ থেকেও নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে! বেডরুমে খুন হলেও লাশ পাওয়া যায়। কিন্তু বেশিরভাগ গুম হওয়ার ঘটনায় কোনো লাশও পাওয়া যায়নি। ইলিয়াস গুমের ঘটনায় এ নিয়ে পাঁচজন মানুষ খুন হয়েছেন। ঢাকা-সাভারে দু’জন শ্রমজীবী গাড়িচালককে পুড়িয়ে, মাথায় ইট মেরে হত্যা করেছে বিএনপি। সিলেটের বিশ্বনাথে তিন জন মরেছেন পুলিশের গুলিতে। এ নিয়ে বিএনপি তিনদিন হরতালও করে ফেলেছে। আরও হরতাল করবে বলেছে। এইচএসসি সহ অনেক পরীক্ষা পেছাতে হয়েছে। পুলিশ-র্যাব, দলীয় কর্মী মাঠে নামিয়েও দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারেনি সরকার। এর মাঝে আবার গুম নিয়ে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এরপর বলবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অ্যামনেস্টি সহ অন্যান্য সংস্থা! ইলিয়াস ইস্যু বিশেষ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে পাঁচ লক্ষাধিক সিলেটি বাংলাদেশি প্রভাবিত বিলাতে। আগামী নির্বাচনে এটি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ভোটের ফ্যাক্টর হবে। আপাত মনে হচ্ছে, এ ইস্যুতে সরকার ও বিরোধীদল পরস্পরকে দোষারোপ করে যাবে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ভোগাবে সরকারকেই। কারণ সরকার ক্ষমতায় আছে। সোহেল তাজের পদত্যাগ দেশের রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। শিক্ষিত মেধাবী তরুণদের রাজনীতিতে বেশি বেশি আসার আহবান দেশের সুশীল সমাজের(দু:খিত, ‘সুশীল সমাজ’, ‘সংস্কার’ এসব কিন্তু এখন দেশে গালি হিসাবে চিহ্নিত)। কিন্তু বাস্তব অবস্থা তরুণ যারা এসেছেন তাদের বেশিরভাগ নির্ভেজাল নিষ্কলুষ নন।ব্যতিক্রম যারা আছেন-ছিলেন সোহেল তাজ তাদেরই একজন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের সন্তান বড় আশা নিয়ে রাজনীতিতে এসে বিএনপি-জামায়াতের অনেক নির্যাতন সহ্য করে টিকে থাকলেও নিজের দলের ক্ষমতার সময় কেন টিকতে পারলেন না, সে সত্য কেউ বললো না। সোহেল তাজ না, আওয়ামী লীগের সভানেত্রীও না! আত্মসম্মান বজায় রাখার কথা বলে তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে প্রবাসজীবনে ফিরে যান। প্রধানমন্ত্রী তার পদত্যাগ গ্রহণ না করে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসাবে তাকে কেবিনেটে একতরফা ধরে রাখেন। তার বেতন-ভাতা তার অ্যাকাউন্টে জমা করতে থাকেন। কিন্তু এটি তার নৈতিকতায় বাধে। পদত্যাগের পরও কেন বেতন ভাতা তার অ্যাকাউন্টে আসছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের তরফে এর কোনো জবাব দেয়া হয়নি। এরপর তার নির্বাচনী এলাকার জনগণের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখে সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সোহেল তাজ। সেখানে বলেছেন আর তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরবেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগই তার শেষ ঠিকানা। অর্থাৎ অন্য দলেও যাবেন না তাজউদ্দিনপুত্র সোহেল তাজ। শেখ হাসিনা তাকে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন। কেন তিনি রাজনীতিতে থাকলেন না বা থাকতে পারলেন না তা শেখ হাসিনা বা সোহেল তাজ কেউ বললেন না!  তাজউদ্দিনসহ জেলহত্যার শিকার জাতীয় চার নেতার স্বজন, পরিবারের সদস্য প্রতিনিধিদের রাজনীতিতে মর্যাদার আসনে রাখার শেখ হাসিনার চেষ্টাটি প্রকাশিত। সে জন্যে হয়তো পদত্যাগের পরও দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসাবে তাকে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন হয়তো তিনি আবার ফিরে আসবেন! অথবা ভেবেছিলেন অ্যাকাউন্টে বেতন-ভাতার টাকা জমা হতে থাকলে হয়ত সে মায়াতেও এক পর্যায়ে ফিরে আসবেন সোহেল তাজ! বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যা হয়! কিন্তু সোহেল তাজ প্রমাণ করে দিলেন, তাকে যারা গড়পড়তা আর সবার মতো মনে করেছিল, তারা ভুল। কিন্তু সোহেল তাজের প্রতিবাদের কারণটি সুরাহার চেষ্টা শেখ হাসিনা কখনো করেছেন কীনা, তাও কেউ জানেনি। কেন শেষ পর্যন্ত তাকে সংসদ সদস্যপদ, সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতেও হলো, তাও জানলো না কেউ! অবাক ব্যাপার এমন একজন ব্যতিক্রমী সৎ মানুষ সোহেল তাজ পদত্যাগের পর কিছু অতি উৎসাহী আওয়ামী অনুরাগী ইন্টারনেটে, সোস্যাল নেটওয়ার্কগুলোতে তার চরিত্রহনন শুরু করেছেন! নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের সময় এই জঘন্য অপতৎপরতা চালানো হয়েছিল সেলিনা হায়াত আইভী’র বিরুদ্ধে! এসব মানুষজনের জন্যেই কী সোহেল তাজের মতো নিপাট ভদ্রলোকদের আওয়ামী লীগে সক্রিয় থাকা দিনে দিনে শুধু অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে?
সোহেল তাজের পদত্যাগ নিয়ে নতুন এক ফাঁকফোঁকর খুজে পেয়েছে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়! কারণ সংবিধানের বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণে আছে পদত্যাগপত্র হবে সহস্ত লিখিত। কিন্তু সোহেল তাজের পদত্যাগপত্র কম্পিউটারে কম্পোজকৃত, নিচে তার স্বাক্ষরকৃত ছিল। তাই পুরো পদত্যাগপত্রটি স্বহস্ত লিখিত না হওয়ায় তারা এক্ষেত্রে আইনি প্রশ্ন তুলেছে! স্পিকারও বিষয়টিকে আমলে নিয়েছেন! এতে এদের সবাই সরকারি দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশিত হয়েছে তা ‌‘সইত্য’! সংবিধানটি যখন লিখা হয় তখন আমাদের হাতে কম্পিউটার ছিল না। তখন যারা এটি লিখেছেন তারাও তা হাতে লিখেছেন, তাও ‘সইত্য’। আজকের মতো ডিজিটাল প্রযুক্তি না থাকায় প্রথম সংবিধান মুদ্রিত হয় লেটার কম্পোজে। এরপর সুরঞ্জিতের কমিটি সংশোধনের সময়ও ভাষাগত বিষয়টিও পরখ-পর্যালোচনা করে দেখতে পারতো। অথবা মগজ এ রকম হলে উল্লেখ করে বলতে পারতো সংবিধানে যেহেতু হাতে লেখার উল্লেখ আছে, সেহেতু এটির কোনো কিছু মুদ্রিত আকারে বলা বা উল্লেখ করা অবৈধ! একটা মানুষ কোথাও কাউকে কোনো অভিযোগ না দিয়ে শুধুমাত্র নিজের আত্মসম্মান রক্ষার আকুতি জানিয়ে মন্ত্রিত্ব, সংসদ সদস্যপদ, বেতন-ভাতা সবকিছুর লোভ লালসা মাড়িয়ে নিজের ব্যক্তিগত ভুবনে চলে গেছেন, নিউজ ওয়ার্ল্ড নামের একটি বার্তা সংস্থার মাধ্যমে তার কথাগুলো প্রকাশ করেছেন সর্বত্র, কোথাও কিছু লুকাননি, তার কথাগুলো দেশের সব মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু একদল দলকানা লোক নিজেরা যা খুশি চেটেচুটে চলতে অভ্যস্ত-সন্তুষ্ট, তারা তা থাকুক, অন্যকেও তা শুনতে মানতে বাধ্য করবে কেন? এখানে একদল লোভী মানুষ সংসদে না গিয়েই নানান বাহানায় বেতন-ভাতা নেয়। আরেকদল গুরুত্বপূর্ণ পদের সুযোগে নানাকিছুতে চুরি-ডাকাতি করে, ধরা পড়লেও স্বীকার করে না! সোহেল তাজ তা নন। এসবের সঙ্গে থাকতে চাননি। কিন্তু তাকে তার মতো করে থাকার সুযোগও এরা দেবে না? ‘কম্পিউটার’ বিষয়টি সংযুক্ত হওয়াতে সাম্প্রতিক বহুল আলোচিত এনালগ-ডিজিটাল বিষয়গুলো আরও সামনে চলে আসবে। সাগর-রুনি’র লাশ কবর থেকে তুলে পুনঃ ময়না তদন্তের মতো সোহেল তাজকেও আবার হয়তো ‘স্বহস্ত লিখিত সংবিধান সম্মত’ পদত্যাগ করে দলকানাদের নিয়ত অনুসারে সরকারি দলকে মিডিয়ায় আরও একদফা নাকানি চোবানি খাওয়ানো হবৈ বৈকি! আসলে এর সব মিলিয়ে দেশের অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি এর মাঝে ডাউন প্লে ঘটে গেছে মিডিয়ায়! ইলিয়াস আন্দোলনে হঠাৎ করে জামায়াতও-হিযবুত তাহরীরও মাঠে নেই! ১৩ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে জটিল করা হচ্ছে লোডশেডিং পরিস্থিতি! যেখানে বিএনপির বেশির ভাগ নেতা মাঠে নেই সেখানে একদল মারদাঙ্গা কর্মী হঠাৎ করে নেমে গেছে ময়দানে! রেল লাইনে নেমে তার ট্রেনেও এখন ঢিলাচ্ছে! কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্নারাও এখন ইলিয়াস ইস্যুতে মাঠে নেমেছেন, ইলিয়াস পরিবারের কাছে যাচ্ছেন, কিন্তু এ ঘটনায় নিহত পাঁচজন নিয়ে এদের বা কারোরই কোনো জোরালো অবস্থান নেই! এমনকি সরকারেরও না! তাদের বাড়িও কেউ খোঁজখবর নিতে যাচ্ছেন না! এসব পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন যারা কথা বলছেন, লিখছেন তাদের তথাকথিত সুশীল বলে গালি দেয়া হচ্ছে! কিন্তু আওয়ামী লীগের ঘর ভর্তি যে এত সুশীল লোকজন, তারা কেন নীরব, গণভবনের সেই ঝালমুড়ির আড্ডায় হঠাৎ একদিন ঢুঁ’ দেবার পর তারা আবার কোথাও আত্মগোপনে চলে গেলেন, তাও কেউ বলছে না!
TALK ফ্রেন্ডলি, কিন্তু ‘টক’ এলার্জিক!
মাহবুব মিঠু

ব্যবসায়ের ধর্মই এমন, যেখানে মুনাফা বা লাভের সুযোগ আছে সেখানেই নাকটা সেঁধিয়ে দিয়ে, হৃদয়কাড়া একটা স্লোগান বানিয়ে, নয়নকাড়া উপস্থাপনার মাধ্যমে টাকা কামানোতে ঝাঁপিয়ে পড়া। যেমন একটা নাটকে দেখলাম বাজারে মাছ তরকারি কেনার সাথে সাথে নাকি সেগুলো কুটে এবং ধুয়ে দিয়ে একদম চুলোয় বসানোর উপযোগী করে দেয়া হচ্ছে। আজকাল কাজের লোকের যে অভাব। যে সংসারে স্বামী স্ত্রী দুজনই কাজ করে তাদের জন্য এরচেয়ে ভালো বিকল্প আর কি হতে পারে। ব্যবসায়ীরাও নতুন চাহিদাকে সাড়া দিয়ে টু পাইস কামালো, ওদিকে ভোক্তারও কিছুটা কষ্টের লাঘব হলো। সেই চিন্তা থেকে নতুন একটা ব্যবসা ফাঁদার ফন্দি ফিকির করা যায়। ইদানিং লক্ষ্য করা যাচেছ যে, অনেকেই টকশোতে অংশ নিয়ে বা আয়োজন করে হরহামেশা বিপদে পড়ে যাচ্ছেন। এতে তিনি নিজে যেমন রিমান্ডের যাতনা ভোগ করছেন, ঠিক তেমনি পরিবার পরিজনকে ফেলে দিচ্ছেন বিশাল দুশ্চিন্তায়। যারা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে TALKশো করে বেড়াচ্ছেন তাদের জন্য TALK এবং টকের (এক  প্রকার স্বাদ বিশেষ) পার্থক্য বোঝাতে বিশেষ কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে। যাতে TALK করতে গিয়ে অতিমাত্রায় টকের ব্যবহারে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনতে না হয়। ইদানিং টকের বিশেষ একটা মাহাত্ম প্রকাশ হয়ে পড়েছে। অতি মাত্রায় টক ব্যবহারের ফলে রতনের মতো মানুষেরা দ্বি-সত্ত্বা লাভ করেছেন। কারণ পুলিশ বলেছে রতনকে রাত নয়টায় ভাংচুরের সময় গ্রেফতার করা হয়। অথচ উনি রাত বারটার সময়ে একটা বেসরকারি টিভি চ্যানেলের TALKশোতে অংশ নেন বলে প্রচারিত আছে। পুলিশের কব্জা থেকে কিভাবে তিনি ঐ সময়টুকুতে বের হয়ে টিভি চ্যানেলটিতে গিয়েছিলেন সেটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হবে শিগগিরই। হয়তোবা পুলিশের ভেতরেই বিরোধী দলের এজেন্ট লুকিয়ে থাকতে পারে। এটা নিশ্চয়ই তার বা তাদের কাজ। এরাই সব সময় দেশের উন্নয়ন এবং স্বাধীনতার চেতনাকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে। অতএব, সাবধান!!
যতো পারো TALK করো, টক দেয়া যাবে না
বকবক করো যতো, টকশোতে যাবে না।।
বাক স্বাধীনতা আহা! কি দারুণ সৃষ্টি
টকঝাল বাদ রেখে, ঢালো শুধু মিষ্টি।
অনেকেই বলেন, আমাদের মতো দেশগুলোতে সরকার TALK ফ্রেন্ডলি হলেও টক এলার্জিক। কথা বলা যাবে কিন্তু টকশোতে টক কথা অর্থাৎ সরকারের সমালোচনা করা যাবে না। যতো খুশি মিষ্টি TALK করো তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই টক স্বাদযুক্ত TALK করা যাবে না। রতন, বেচারা ১২ বছর রাজনীতির বাইরে থেকে এই সাধারণ জ্ঞানটুকুও হারিয়ে ফেলেছিল। নচেৎ দুই টকের পার্থক্য না বুঝেই তেঁতুলের ব্যবহারটা বোধহয় একটু বেশিই করে ফেলেন। অধম রতনের কি দোষ। বাংলাদেশে আপেল থেকে মাছে সব কিছুতেই ভেজাল, ফরমালিন থাকে। বাক স্বাধীনতার মতো চটকদার শব্দগুলোতেও যে অদৃশ্য ফরমালিন মিশিয়ে ভেজাল করে দেয়া হয়েছে তা কি রতন জানতো! ফরমালিন দেয়া পচা (মিথ্যা) বাক স্বাধীনতার মোহে পড়ে রতনের বারোটা বাজলো। এই বাক স্বাধীনতায় এখন যে মজেছে, সেই পুড়েছে। আসিফ নজরুল এবং ইটিভির সঞ্চালকের পরিণতি থেকেও শিক্ষা নেয়নি। এবার রিমান্ডে গিয়ে বোঝ ঠ্যালা!
আমি অবশ্য রতনের কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি না। ক্ষমতা হারালে ওদের কি হবে সেই ভেবে আতঙ্কিত। যে পথ ওরা দেখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, প্রতিহিংসার পরিমাণটা শুরুর চেয়ে একটু বেশিই হয়। এতোগুলো গুম মানুষের স্বজনদের ক্রোধ যে ওদের কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে কে জানে!
এই দুষ্ট চক্র থেকে কে প্রথম বের হয়ে এসে আমাদেরকে রক্ষা করবে জানি না!
অধিক কথা বলতে গিয়ে কোর্সের নামটাও বলা হয়নি। কোর্সের নামেও মুন্সিয়ানা থাকবে। এই যেমন হতে পারে, ‘TALK করো, টক নয়” কিংবা ‘টক ছাড়া TALK’. নামটা চূড়ান্ত না হলেও এতে কি শিক্ষা দেয়া হবে সেটা প্রায় চূড়ান্ত। অনেকটা সিনেমার গল্প বানানোর আগেই কাটতি বাড়াতে গানগুলোর ভিডিও এ্যালবাম বাজারে ছেড়ে দেবার মতো। প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু ঠিক করার আগে আমাদের গবেষণা কর্মীরা অনেক মেধার অপচয় করে আমাদের রাজনীতিবিদদের ভালো লাগা মন্দ লাগাগুলো কি কি সেগুলোর একটা তালিকা তৈরি করেছেন। যেমন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছেন, TALK শোতে নাকি বেশি টক এবং ঝালের ব্যবহার হচ্ছে। তিনি অনুরোধ জানান টকঝালের সাথে সাথে কিছু মিষ্টি দেবার জন্য। কিন্তু বাজারে আবার চিনির আকাল, দাম অতি চড়া। মিষ্টি স্বাদ বলে কথা! সেটা কমদামী মিছরি দিয়ে হলেও চলবে। মিছরির প্রসংগ আসতেই সেই বহুল প্রচলিত বাকধারা ‘মিছরির ছুরি’র কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের রাজনীতিবিদরা যে কথা প্রকাশ্যে বলেন, সেগুলো আসলে তারা বলার জন্যই বলেন। ওভাবে চলতে গেলে বিপদ আছে। এই যেমন বাক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ইত্যাদি। আসলে বুঝতে হবে ওনাদের না বলা কথাগুলো কি ছিল। সেটাই হলো ওনাদের মনের কথা। এই বিষয়াবলী গবেষণা করে প্রশিক্ষণে চূড়ান্তভাবে বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে। এই যেমন TALK  এবং টকের মধ্যে পার্থক্য। মিষ্টির উপকারিতা এবং টকঝালের ক্ষতিকারক দিকসমূহ। কিভাবে নিরপেক্ষতার নামে ভারসাম্যপূর্ণ কথা বলে গুবলেট করে ফেলা যায়। তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিজ সমর্থনকারী দলকে রক্ষা এবং জেনারেলাইজেশনের মাধ্যমে বর্তমানের নিন্দনীয় খবরটিকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়। মূলত: সবই করা হয়েছে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে। ট্রেনিং এ হাতে কলমে শিক্ষা দেবার ব্যবস্থা থাকবে। যেমন একটি উদাহরণ
খবর: গত ৩০শে এপ্রিল বাংলানিউজে প্রকাশিত একটি সংবাদ “রেহানার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন”। এটার একটা নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ এরূপ হতে পারে যেখানে বর্তমানের অপরাধকে মুখ্য করে দেখিয়ে সেটাকে বন্ধের আবেদন আছে। “আদালতের দায় কি শুধু নির্যাতিতা কিছুদিনের জন্য শুধু নির্যাতনকে রক্ষা করে আবারো রিমান্ডের নামে অসুস্থ করার জন্য পাঠানো। নাকি রিমান্ডে নিয়ে কাউকে যেন নির্যাতনের শিকার হতে না হয় তারও ব্যবস্থা করা? আদালত কি জানে না রিমান্ডের নামে সেখানে কি হয়? তাছাড়া রেহানার সারা শরীরে নির্যাতনের দাগ কোথা থেকে এলো আদলতের কাছ থেকে সেটা জানতে চাওয়ার সেই মানবিকতা কি একজন নাগরিক আশা করে না! তাজউদ্দিনের নাতিকে পেটানোর জন্য আদালত কেঁপে ওঠে। কিন্তু রেহানার সারা শরীরের নির্যাতনের দাগ আদালতের মনে একটুও আঁচড় কাটলো না। আমাদের দেশে বড় মানুষের আত্মীয় হয়ে জন্ম না নেওয়াটাও একটা অপরাধ।“
এভাবে বলতে গেলেই বিপদ। আবার মুখ বন্ধ রাখলেও সমস্যা। সাধারণ মানুষের ছিঃ ছিঃ শুনতে হবে। এই পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষতার ভাব ধরে খবরটিকে ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়ে ফেলেন। যেমন, “রেহানার শরীরে যত্রতত্র আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলেও কে করেছে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া একজন নারী হয়ে কি করে রেহানা রাজপথে বেগানা পুরুষদের সামনে হাত উঁচিয়ে, আঙুল নাড়িয়ে স্লোগান দেয়! নাউজুবিল্লাহ! তবে যারাই রেহানার গায়ে হাত তুলেছে তাদের সেটা উচিত হয়নি। সরি বলা উচিত। আর রেহানারও এভাবে রাজনীতির নামে ঘরের রান্না বাদ রেখে রাস্তায় নামা ঠিক হয়নি। রেহানার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা না খেয়ে কষ্ট পেতে পারে। এটা নিজ সন্তানকে অবহেলার শামিল যেটা জাতিসংঘের ‘চাইন্ড প্রোটেকশনের’ সাথে সাংঘর্ষিক।“
কিংবা হতে পারে বিশ্লেষণটা তুলনামূলক। যেমন- “আজকে রেহানার শরীরে যতোগুলো আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে গত সরকারের আমলে মতিয়া সাজেদাদের পিঠেও এর চেয়ে কম আঘাত দেখা যায়নি। বড় নেতা হবার কারণে তারা রিমান্ডের হাত থেকে বেঁচে গেলেও আজকে রেহানার অবস্থা তারই ধারাবাহিকতার ফল। “ এভাবে বললে দলের অপরাধকে খাটো করে দেখানো গেলো, নেতারাও খুশি হলেন, আর বিরোধী দলকেও বেশি চটানো হলো না। আর চটলেই বা কি! এখনকার মতো তো আর কোনো বিপদ নেই। সংবাদটির বিশ্লেষণে জেনারাইলেশন বা সাধারণীকরণ কিভাবে হতে পারে! নিচে দেখুন, “এই ধরনের ঘটনা আর নতুন কি! সবই ক্ষমতাসীনদের খেলা।“ ছোট্ট কথা। ধরি মাছ না ছুঁই পানি। সুন্দর ছোট্ট এক কথার মোচড়ে পাবলিকের চিন্তাটা বর্তমান থেকে সরিয়ে অতীতের সাথে যুক্ত করে দিয়ে জেনারালাইজ করে ফেলা গেলো। এভাবেই উভয়ের মধ্যে দোষ বণ্টন করে দেয়া হলো। আবার কাউকেই দোষারোপ করা হলো না। শব্দের কতো যাদু! তাই না!
 নেতারা আত্মগোপনে: বিএনপি’র লাভক্ষতি
মহসিন হোসেন
ঢাকা, ৫ মে: ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধানের পরে সরকারবিরোধী আন্দোলন যতটা চাঙ্গা হয়েছিল মামলার ভয়ে সিনিয়র নেতাদের অন্তরালে থাকার সিদ্ধান্তে তা অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিএনপি’র তৃণমূল নেতৃত্ব। এজন্য তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করছেন গত কয়েকদিন ধরে। তারা বলছেন এতে দলের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৯-৩০ এপ্রিলের হরতালে গাড়ি পোড়ানো আর সচিবালয়ে বোমা হামলার মামলায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ প্রথম সারির শতাধিক নেতাকর্মির নামে মামলা দেয় সরকার। যাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে তারা ৩০ এপ্রিল সকাল থেকেই গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। কিন্তু কেনো এই গা-ঢাকা। প্রশ্ন ছুঁড়ছেন তৃণমূল কর্মিরা। বিএনপি’র মতো বড় একটি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আর মহাসচিবের মতো পদের ব্যক্তিরা যদি গ্রেফতারের ভয়ে আত্মগোপনে চলে যান তাহলে দলের রাজনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এমনটাই তাদের ধারণা । তাদের মতে সরকার যখন সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে এক যোগে মামলা দিয়েছে তখন তাদের উচিত ছিল এক যোগে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়া। তাহলে দেশের ভেতরে ও বাইরে বড় ধরনের একটা সহানুভূতি পেত দলটি। একই সঙ্গে বিদেশিরাও জানতে পারতো সরকারের মামলা হামলা আর গ্রেফতার কোন পর্যায়ে রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগের ফাঁদে পা দিয়ে দু’দিক থেকে ধরা খেয়েছে বিএনপি। একদিকে মামলার ভয়ে নেতারা পালিয়ে থেকে নিজেদের দোষী প্রমাণ করছেন। অন্যদিকে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি আর জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রী কাৎসুইয়া ওকাদার মতো ব্যক্তিদের সফল সফর করতে সক্ষম হচ্ছে সরকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, “অর্ধশতাধিক নেতা একই সঙ্গে জেলে গেলে দেশ বিদেশে ইমেজ সংকটে পড়তো সরকার। ফলে দ্রম্নত জামিন দিতে বাধ্য হতো তারা। তা না করে নেতারা আত্ম গোপনে গিয়ে দলের মুখে চুন কালি দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। দলকে আন্দোলন থেকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। এই আন্দোলন চাঙ্গা করতে আবার অনেক সময় লাগবে। অন্য এক নেতা বলেন, দলের চেয়ারপারসন কার বুদ্ধিতে এ ধরণের সিদ্ধামত্ম নিয়েছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। তৃণমুলের কোনো নেতার পরামর্শে দল চলে না বলেও তিনি অভিযোগ করেন। কতিপয় আমলার কথা মতো দল চালালে ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারে বিএনপি এমন মন্তব্য করেন তিনি। গত ১৭ এপ্রিল হোটেল রূপসী বাংলা থেকে বাসায় ফেরার পথে বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন। রাত বারোটার দিকে কে বা কারা তাকে ধরে নিয়ে যায়। দীর্ঘ ১৮দিনেও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনায় প্রথম দিন থেকেই বিএনপি দায়ী করে আসছে সরকারের এজেন্সিকে। তারা বলছে সরকারের নির্দেশেই ইলিয়াসকে গুম করেছে সরকারের লোকেরা। এই অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তারা ইলিয়াস আলীকে ফেরত পাওয়ার জন্য আন্দোলন কর্মসূচি দিতে শুরু করে। সরকারবিরোধী ঝিমিয়ে পড়া আন্দোলন কর্মসূচি ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের ঘটনায় বেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ইলিয়াস ইস্যুতে পর পর তিন দিন হরতাল পালন করে সফলও হয় তারা। ফলে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে বিএনপি’র মধ্যে। সিনিয়র নেতারা মাঠে না নামলেও তৃণমূলের নেতারা পুলিশের বাধার মুখে মাঠে নামা শুরু করেন। অনেকটা তৃণমূলের ওপর ভরসা করে পুনরায় দু’দিনের হরতাল কর্মসূচি দেয়া হয়। বিএনপি’র আন্দোলন দমিয়ে দেয়ার জন্য কৌশলী পদক্ষেপ নিতে থাকে সরকার। একদিকে মাঠে পুলিশ নামিয়ে দমনের প্রচেষ্টা অন্যদিকে সিনিয়র নেতাদের নামে মামলা দিয়ে আন্দোলন দমনের কৌশল নেয় সরকার। সে কৌশলে আপাতত সফলতার পথে রয়েছে সরকার। অন্যদিকে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভারতের অর্থমন্ত্রী আর জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে আন্দোলন কর্মসূচি অনেকটা সিথিল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। তার আগেই মামলায় পড়েন দলের সিনিয়র নেতারা। এ অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠে পুনরায় আন্দোলন কতখানি চাঙ্গা করতে পারবে তা দেখার জন্য আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। তৃণমূলের অভিযোগ ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল আলম হানিফের ‘এক মামলায় আন্দোলন শেষ’ এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর নজরুল ইসলাম খান বলছেন, আত্মগোপনে নয় পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতেই কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বিএনপি নেতারা। তারা মনে করছে শিগগির এ অবস্থার অবসান হবে। সিনিয়র নেতারা জামিন পেয়ে আন্দোলনে শামিল হবেন। অন্যদিকে তারা বলছেন, বিদেশি মেহমানদের সম্মানে একটি সপ্তাহ আন্দোলনের কঠিন কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি। আগামী সপ্তাহ থেকে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। আর সোমবার নাগাদ দলের নেতারা মামলায় জামিন পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন ব্যারিস্টার মওদুদ। অন্যদিকে যারা আত্মগোপনে আছেন তাদের মধ্যে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও এমকে আনোয়ার দাবি করেছেন পুলিশের ভয়ে তারা কোথাও পালিয়ে যাননি। তারা নিজেদের বাসায়ই অবস্থান করছেন। শনিবার বিকেলে টেলিফোনে এমকে আনোয়ার বার্তা২৪ ডটনেটকে জানান, মির্জা আলমগীর কোথাও পালিয়ে যাননি। তার নামে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তিনি এই মিথ্যা মামলায় ইচ্ছা করে পুলিশের হাতে ধরা দিতে পারেন না। মির্জা আলমগীর কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, “কোর্টে যাওয়ার পরিবেশ থাকলে আমরা জামিনের জন্য অবশ্যই কোর্টে যাব।” সিনিয়র নেতাদের আত্মগোপনের ঘটনায় তৃণমূল নেতাকর্মিরা ক্ষুব্ধ এমন বক্তব্য মানতেও নারাজ এমকে আনোয়ার। তিনি বলেন, “আমার কাছে এ ধরনের তথ্য নেই। দলের কোনো নেতাকর্মি আমাকে এমন অভিযোগও করেনি।”
দুনিয়ার আর্থিক সঙ্কটের অন্ধকার কাটাতে আলো দেখাতে পারে এশিয়াই
ম্যানিলা
ইউরোপসহ উন্নত দুনিয়ার আর্থিক সঙ্কটের অন্ধকার কাটাতে আলো দেখাতে পারে এশিয়াই। হয়ে উঠতে পারে দিক্ হারানো বিশ্ব অর্থনীতির বাতিঘর। শুক্রবার এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কের (এডিবি) বার্ষিক সভায় যোগ দিতে এসে এমনই বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তার আশ্বাস, টাকার দাম দ্রুত পড়তে থাকা কিংবা আর্থিক বৃদ্ধির হার থমকে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলি মিটিয়ে অদূর ভবিষ্যতেই ছন্দে ফিরবে ভারতীয় অর্থনীতি।  দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাইসিনা হিলসের পরবর্তী বাসিন্দা তিনিই হবেন কিনা, এ নিয়ে জল্পনার মধ্যে এ দিনই ফিলিপাইনের এই দ্বীপ শহরে পা রেখেছেন প্রণব মুখার্জি। সেখানে তিনি স্পষ্ট জানান, “বিশ্ব অর্থনীতিকে ফের চাঙ্গা করতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের ক্ষমতা ধরে এশিয়া। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে এশিয়াই চালকের আসনে থাকবে।”
এক দিকে, ইউরোপীয় দেশগুলিতে ক্রমশ ঘোরালো হওয়া আর্থিক সঙ্কট। অন্যদিকে, বিশ্ব বাজারে তেলের চড়া দাম। এই দু’য়ের জাঁতাকলে নাভিশ্বাস বিশ্ব অর্থনীতির। এই পরিস্থিতিতে উন্নত দুনিয়াকে ‘উদ্ধারের’ প্রশ্নে এশিয়ার দেশগুলিকে আরও নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে এগিয়ে আসার আবেদন করেছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। তার দাবি, সাম্প্রতিক অতীতে আমেরিকা, ইউরোপসহ পশ্চিমী দুনিয়া অর্থনীতি যখন প্রায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে, তখন বাতিঘরের ভূমিকায় থাকতে পেরেছে এশিয়া, এ বারও তার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। কিন্তু তা করতে যে সবার আগে দেশের অর্থনীতির ভিত পোক্ত থাকা জরুরি, তা বিলক্ষণ জানেন প্রণব মুখার্জি। সেই কারণেই এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন চীন, জাপানের মতো কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। ভারতের অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে খবর, খুব শীঘ্রই এডিবি-র সহায়তায় ভারতে তৈরি হতে চলেছে একটি নতুন ফান্ড। যার মূল উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে বাজারে বন্ড ছেড়ে টাকা তোলার ক্ষেত্রে আর্থিক নিরাপত্তা দেয়া। অর্থাৎ, কোনো কারণে বন্ড ছাড়ার পর সংস্থা ক্ষতির সামনে পড়লে, তার পাশে দাঁড়াবে কেন্দ্র। ফলে বন্ড কেনার ক্ষেত্রে অনেকটাই নিশ্চিন্ত বোধ করতে পারবেন ক্রেতারাও। ফান্ড তৈরির সব খুঁটিনাটি এখনও ঠিক না-হলেও, এডিবি-র শীর্ষ কর্তারা বিষয়টিতে নীতিগত ভাবে রাজি হয়েছেন বলেই সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। পশ্চিমী দুনিয়ায় চাহিদায় ঘাটতির কারণে ভারতের রফতানি যে মার খাচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। জানিয়েছেন, ইউরোপীয় অর্থনীতির সঙ্কটের ছায়া পড়ছে ভারতের উপরেও। কিন্তু একই সঙ্গে এ দিনের বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস, “বিশ্ব অর্থনীতির এমন টালমাটাল দশা এবং যাবতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০১১-’১২ অর্থবর্ষে ৭ শতাংশ বৃদ্ধির হার ধরে রেখেছে ভারত। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লাগাতার লড়াই করেও অগ্রাধিকার দেয়া সম্ভব হয়েছে সকলের জন্য উন্নয়নের (ইনক্লুসিভ গ্রোথ) বিষয়টিতে।” ভারতের জাতীয় আয়ের বড় অংশই ঘরোয়া বাজারের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে বলেও মনে করছেন তিনি। তার দাবি, আগামী আর্থিক বছরেই ৮-১০ শতাংশ বৃদ্ধির সড়কে পৌঁছে যাবে দেশীয় অর্থনীতি। তবে আজকের বিশ্বায়িত অর্থনীতির দুনিয়ায় একা ঘুরে দাঁড়ানো যে কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়, তা অবশ্য মেনে নিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। আর সেই কারণেই তিনি মনে করেন, ইউরোপের আর্থিক সঙ্কট মিটলে আখেরে লাভবান হবে উন্নয়নশীল দুনিয়াও।আজ শনিবারই এডিবি-র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবেন প্রণব মুখার্জি। আগামী বছর এই ব্যাঙ্কের বার্ষিক বৈঠকও হবে নয়া দিল্লিতে। তার আগে সকলে সম্মিলিত ভাবে কী করে বিশ্ব অর্থনীতির লেখচিত্রকে ঊর্ধ্বগামী ও সুস্থির করা যায়, তা ভেবে দেখতে আজ প্রতিটি দেশকেই অনুরোধ করেছে ভারত। এ নিয়ে চীনের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছেন প্রণব মুখার্জি। পরে জানিয়েছেন, “চীনের ঘরে বিপুল পুঁজি মজুত রয়েছে।” ইঙ্গিত দিয়েছেন, ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির উন্নয়নের পাশাপাশি আর্থিক সঙ্কটে জেরবার উন্নত দুনিয়াকে পুঁজি জুগিয়ে সহায়তা দানের ক্ষেত্রেও আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত বেজিংয়ের। তবে এ বিষয়ে আগের মতোই চীনের তরফ থেকে এ দিনও তেমন সাড়া মেলেনি। বৃদ্ধির গতি ত্বরান্বতি করতে অন্যান্য এশীয় দেশগুলিকে সকলের জন্য উন্নয়ন বা শিক্ষার মতো সামাজিক বিষয়গুলিতে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। জোর দিতে বলেছেন দক্ষ কর্মীর জোগান বাড়ানো এবং উন্নততর পরিকাঠামো নির্মাণের উপর। তাঁর মতে, অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য শুধু পশ্চিমী দুনিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার দিন শেষ। এখন সময় বরং ঘরোয়া অর্থনীতির ভিত আর কাঠামো পোক্ত করায় মন দেয়ার।
জোর করে দায়িত্বে রাখা সংবিধান বিরোধী: সোহেল তাজ 
মান্নান মারুফ

মন্ত্রিত্ব ও সংসদ থেকে পদত্যাগের পরও তাকে নিয়ে টানা-হেঁচড়ার কোন কারণ নেই জানিয়ে তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ বলেছেন, ‘দায়িত্ব পালনে অপারগতার জন্য রাজনীতি থেকে বেরিয়ে গেছি। এখন জোর করে দায়িত্ব চাপিয়ে রাখার প্রয়াসকে আমি সংবিধান ও মানবাধিকার বিরোধী বলে মনে করি।’
সংসদ ও মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের পরও তা গৃহীত না হওয়া বিষয়ক প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদ তনয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশিদের মাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক মিডিয়াকে এসব কথা বলেন। দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে সোহেল তাজ বলেন, ‘আমাকে যতই চাপ দেওয়া হোক, তাতে কাজ হবে না। আমি বেতন ভাতা নেবো না। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। লিখিত ও মৌখিকভাবে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানোর পরও এই আচরণের হেতু বুঝতে আমি অপারগ।’ এছাড়া প্রতিক্রিয়ায় স্পিকার আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেটের সমালোচনার পাশাপাশি পদত্যাগের বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সোহেল তাজ। তিনি বলেন,  ‘একজন সাংসদ ও মন্ত্রী হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব পালনে অপারগতার জন্য বাধ্য হয়ে আমি মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেছি। সংসদ থেকে পদত্যাগের আগে আমি নিজে দু’বার স্পিকারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি নিজে জানেন আমি পদত্যাগপত্র দিয়েছি। মনে করেছিলাম- নিরপেক্ষ সার্বজনীন ব্যক্তি হিসেবে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু তার বক্তব্য আমাকে বিস্মিত ও স্তম্ভিত করেছে।’ ‘দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা আমার স্বাধীনতার বিষয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘স্বেচ্ছায় সিদ্ধান্ত নেওয়া একজন মানুষের মৌলিক অধিকার। এখন আমাকে যে অবস্থায় ফেলা হয়েছে তা মৌলিক মানবাধিকার পরিপন্থি। আমি অনুরোধ করবো- আমার অধিকার নিয়ে যেন খেলা করা না হয়। এটা কারো জন্যই কল্যাণকর হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতি থেকে বেরিয়ে গেছি। এখন আমার পদত্যাগকে ঝুলিয়ে রেখে হয়রানি করার কোন অর্থ হয় না। আমার দৃষ্টিতে এটা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান বিরোধী। কারণ, দায়িত্ব পালনে আমি অপারগ। বেতন ভাতা আমি নেবো না। এরপরও কেন আমাকে বেতন ভাতা দেওয়া হবে? এটা তো কারো ব্যক্তিগত অর্থ নয়, যে চাইলেই যে কাউকে দিয়ে দিতে পারেন।’ সোহেল তাজ বলেন, ‘২০০৯ সালের ৩১ জুলাই আমি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করি। ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আমার বেতন ভাতা বন্ধ ছিল। এরপর হঠাৎ করে আমার একাউন্টে বকেয়াসহ সব অর্থ জমা দেওয়া হয়। বিষয়টি জানার পর আমি নিজে বিস্মিত হয়েছি। কারণ, দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের পর কেন আমি জনজণের অর্থ নেবো। নৈতিকতার কোন সংজ্ঞায় এটাকে ফেলা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘তিন বছর হলো মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছি। বিদেশে থেকে কাজ করি। আমাকে জোর করে দায়িত্বে রাখা হবে। এটা কি ছেলে খেলা? জোর করে কারো মন্ত্রিত্ব বা সংসদ সদস্যপদ টিকিয়ে রাখা সংবিধান বিরোধী। আমি নিজে বলছি দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। তারপরও আমাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।’ সোহেল তাজ বলেন, ‘আমার মা অসুস্থ্। কিন্তু আমাকে সাধারণ পাসপোর্ট না দেওয়ার কারণে তাকে দেখতে দেশে যেতে পারছি না। পদত্যাগ করার পর আমি সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করি। কিন্তু সেটাও গ্রাহ্য করা হচ্ছে না। পদত্যাগ করার পর কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যাবহারের নৈতিক অধিকার আমার নেই। সেটাও সরকারকে বলেছি। কিন্তু কেউ তাতে কর্ণপাত করছে না। যার ফলে অনেকটা আটকা পড়া অবস্থায় আছি। ১৪ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি। চাইলে যেকোন সময় আমেরিকান পাসপোর্ট নিতে পারতাম। কিন্তু দেশের জন্য কাজ করার অভিপ্রায়ে সেটা নেইনি।’ সোহেল তাজ বলেন,  ‘একদিকে জোর করে মন্ত্রিত্ব চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে কিছুদিন আগে বিনা কারণে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হয়েছে আমার ভাগ্নে । কার নির্দেশে, কোন উদ্দেশ্যে এসব হচ্ছে এটা জানতে চাই আমরা। এমন কি অপরাধ করেছি যাতে আমার আত্মীয়-স্বজনরা পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হলো?’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনায় বসুন : খন্দকার মোশাররফ
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে সরকারকে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয়  প্রেস ক্লাবের সামনে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে ফেরত ও রিজভী-রতনের মুক্তি ও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আগে সংসদে সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল উপস্থাপন করতে হবে। তারপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। আর এ আলোচনার মাধ্যমেই রূপরেখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দু’টি মামলার মধ্যে বৃহস্পতিবার একটি মামলার চার্জশিট দিয়েছে ‍পুলিশ। তিনি এ চার্জশিটের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে জনগণের আন্দোলনকে নস্যাৎ করা যাবে না। তিনি আরো বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে দেশি-বিদেশিদের যে সমর্থন রয়েছে সরকার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন পুণর্বহাল করা উচিত। আর এ জন্যই আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে আলোচনায় বসা দর‍কার। তিনি আরো বলেন, ইলিয়াস আলী সরকারের কাছে রয়েছেন। তারা তাদের দুর্নীতি ঢাকার জন্যই ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে।
পদ্মা সেতু: মালয়েশিয়ার সঙ্গে এ মাসেই চূড়ান্ত চুক্তি: যোগাযোগমন্ত্রী
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

 পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে এ মাসের শেষ নাগাদ মালোয়েশিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হবে বলে জানিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সমঝোতা স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ``জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে পদ্মা সেতু হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিরোধে যেতে চাই না।``  বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রী নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এর আগে ঢাকাস্থ ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত (ডেপুটি) হাইকমিশনার সঞ্জয় ভট্টচার্য যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে আখাউড়া-আগরতলা রেল লাইন নির্মাণ সংক্রান্ত্র বিষয়ে আলোচনা করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ``বিশ্বব্যাংকের অপেক্ষায় নষ্ট করার মতো সময় নেই সরকারের হাতে। প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংক দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করবে।`` পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনিয়মের প্রমাণ বিশ্বব্যাংক সরকারকে দিয়েছে বলে তার দুষ্টি আকর্ষণ করা হলে জবাবে মন্ত্রী আরো বলেন, ``অভিযোগ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বিশ্বব্যাংক আরো তদন্ত করতে পারে।`` সরকার বিশ্বব্যাংকের তদন্তের সব ধরণের সুযোগ করে দিয়েছে উল্লেখ করে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ``দুদক তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পায়নি। দুদকের তদন্ত ছাড়াও ইচ্ছে করলে তারা তদন্ত করতে পারে।`` যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিলো তারা কেউ এ প্রকল্পের সঙ্গে এখন নেই উল্লেখ করে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ``আগের যোগযোগমন্ত্রীকে সরকার সরিয়ে দিয়েছে, প্রকল্প পরিচালক, সেক্রেটারি কেউ এখানে নেই।`` বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ``লাভালিন হচ্ছে পাঁচটি শর্ট লিস্টের একটি। আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছে তাদের প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ওই দেশেও (নিজ দেশে) অভিযোগ রয়েছে। আমরা পাঁচিটি পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করেছি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক বিশ্বব্যাংক।`` বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি প্রতিরোধ সংক্রান্ত সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির প্রতিবেদন দেন। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। গত ১৭ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যালেন গোল্ডস্টেইন পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির পুনঃতদন্ত করতে অনুরোধ জানান বাংলাদেশকে। উল্লেখ্য, ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ২৯০ কোটি ডলার, এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার কথা। বাকি অর্থের যোগান দেবে সরকার। তবে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থায়ন স্থগিত করে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিতের পর সরকার বিকল্প খুঁজতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় মালোয়েশিয়া অর্থায়ানের আগ্রহ দেখায়। সরকার তাদের মেয়াদকালের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণে লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।
আগরতলা-আখাউড়া রেল যোগাযোগ শিগগিরই
ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত (ডেপুটি) হাই কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ``শিগগিরই আগরতলা-আখাউড়া রেল যোগাযোগ শুরু হচ্ছে। রেললাইন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে সমঝোতা সই হবে।``
লোকোমোটিভ আনা হবে ২৬টি  
যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ``ব্রডগেজ লাইনের জন্য ভারত থেকে প্রতিমাসে দুটো করে পাঁচ মাসে ১০টি লোকোমোটিভ আনা হবে। পর্যায়ক্রমে আরো ১৬টি আনা হবে। আগামী মাস থেকেই লোকমোটিভ আনা শুরু হবে।``  
ডুয়েল গেজ ট্র্যাক ও দ্বিতল বাস
ভারত থেকে ডুয়েল গেজ ট্র্যাক আনা হবে বলে জানান মন্ত্রী। এছাড়া ৩৩টি দ্বিতল বাস আনা হয়েছে। এগুলো প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ``আরো একশটি এসি বাস আনা হবে। আর আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আর্টিকুলেট বাস আনা হবে।`` ট্র্যাক আনার বিষয়ে ভারত আগ্রহ দেখিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ``বাংলাদেশ তাদের আগ্রহে সাড়া দিয়েছে।’
জিডিপিতে শিল্পের অবদান ১৮ শতাংশে উন্নীত
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
দেশজ মোট উৎপাদন বা জিডিপিতে শিল্পের অবদান ১৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এক সময় জিডিপিতে শিল্পের অবদান ছিলো ১০ শতাংশের নিচে। দেশ প্রতিনিয়ত শিল্পের উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত ‘উৎপাদন শিল্প জরিপ (এসএমআই) ২০১২’ শীর্ষক কর্মশালায় এই তথ্য জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যাণ ব্যুরোর উপ-পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হক এ তথ্য জানান। উৎপাদন শিল্প জরিপ (এসএমআই) শীর্ষক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনা করেন পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকল্প পরিচালক কবির উদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক শাহজাহান আলী মোল্লার সভাপতিত্বে রাজধানীর শের-ই- বাংলা নগরে বিবিএস সম্মেলন কক্ষে এই কর্মশালায় পরিসংখ্যানবিদ ও বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। কবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে পরিসংখ্যান তৈরি করতে গেলে নানা সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে হয়। কারণ শিল্পপতিরা অনেক সময় তথ্য দিতে চান না। ভুল বা অসম্পুর্ণ তথ্য সরবরাহ করেন। অনেকে কোন ধরণের সহযোগিতা করেন না। তারপরও বিবিএস বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষাকে ভিত্তি ধরে উৎপাদন শিল্প জরিপ হালনাগাদ করেছে। তিনি বলেন, নির্ভুল তথ্য পাওয়া না গেলে সরকারের পক্ষেও শিল্পসহায়ক সঠিক নীতি প্রণয়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্য অর্জনে শিল্পখাত বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। এ খাতের আরো বিকাশের জন্য সময়োপযোগী ও নির্ভুল তথ্য খুবই প্রয়োজন। ১০ বছর আগের তথ্য দিয়ে এখন শিল্পখাতের বিকাশ হবে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক শাহজাহান আলী মোল্লা বলেন, সবার স্বার্থে বিবিএসকে সময়োপযোগী ও নির্ভুল তথ্য সরবরাহ করতে হবে। বিবিএস সবাইকে তথ্য সরবরাহ করার জন্য কাজ করছে। কারণ সঠিক পরিসংখ্যান ছাড়া সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হয়।তিনি জানান, পরিকল্পনামন্ত্রী একে খোন্দকার ও শিল্পমন্ত্রী দিলিপ বড়–য়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও একনেকের সভার কারণে আসতে পারেননি।কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাবেক মহা-পরিচালক অলিউল ইসলাম, বিএসটিআই’র  মহাপরিচালক একে ফজলুল আহাদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের  সিনিয়র গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ, বিসিকের পরিচালক পতিতপবন বৈদ্য, বিশ্ব ব্যাংকের উপদেষষ্টা ফয়েজউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে আরও ৫ শতাংশ করারোপের সুপারিশ
পার্লামেন্ট করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে আরও ৫ শতাংশ কর আরোপের সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এছাড়া আরো কয়েকটি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে করপোরেট ট্যাক্স আরও কমানো, বাস্তবায়নযোগ্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপি প্রণয়ন এবং করযোগ্য আয়সীমা দুই লাখ টাকা করা। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আহম মুস্তফা কামাল লোটাস কামাল সংসদের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
কমিটির সভাপতি বলেন, `অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে বর্তমানে ১০ শতাংশ কর দেওয়ার বিধান রয়েছে। কমিটি তা আরো ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে।` করপোরেট ট্যাক্স বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, `বাংলাদেশে ইংল্যান্ডের চেয়ে বেশি করপোরেট ট্যাক্স আরোপ করা রয়েছে। রাজস্ব বোর্ডকে এই কর আরো যৌক্তিক করার সুপারিশ করেছে কমিটি।`কমিটি বাস্তবায়নযোগ্য এডিপি প্রণয়নের সুপারিশ করেছে জানিয়ে লোটাস কামাল বলেন, ``বাজেট প্রণয়নের সময় বিশাল অংকের এডিপি দিলাম- আর সেটা বাস্তবায়ন ঠিক মতো হলো না। তা হলে তা কী অর্থ হয়? এমনটা করার প্রয়োজন নেই।`` উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে মূল এডিপিতে ৪৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে অর্থসঙ্কট, আশানুরূপ বৈদেশিক সহায়তা না পাওয়া এবং বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এডিপি কাটছাঁট করে ৪১ হাজার কোটি টাকা করা হয়। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে মাত্র ২০ হাজার ৪১৬ কোটি ৭৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে সংশোধিত এডিপির ৫০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছিল। আয়কর রির্টানে সম্পত্তির হিসাব সঠিকভাবে না দিলে সেটিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে ৫০ শতাংশ জরিমানা করার সুপারিশ করেছে কমিটি।  এ প্রসঙ্গে কমিটির সভাপতি বলেন, `যদি দেখা যায় কেউ সম্পত্তির হিসাব সঠিকভাবে দেয়নি এবং যদি তার অপ্রদর্শিত সম্পত্তি ৫০ লাখ টাকার ওপরে যায় সেক্ষেত্রে তার উপর যেন  বাড়তি ২৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয় সে সুপারিশ করেছে কমিটি।` এছাড়া কমিটি আয়কর কাঠামোর স্তর তিন ভাগ করার সুপারিশ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, `দুই লাখের পরে প্রথম পাঁচ লাখের জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী পাঁচ লাখের জন্য ২০ শতাংশ এবং এর চেয়ে বেশি অংকের জন্য ২৫ শতাংশ আয়কর নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।` দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার নিরিখে অর্থমন্ত্রীর নেওয়া পদক্ষেপ সঠিক কিনা জানতে চাইলে সভাপতি বলেন, `অর্থমন্ত্রী অনেক ভালো করছেন। যে কোন সময়ের চেয়ে অন্যসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো রয়েছে।` কমিটি সরকারকে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর ও বিলাসদ্রব্যের ওপর কর বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বলেও জানান তিনি। লোটাস কামাল আরো বলেন, `বৈঠকে অনেকে বলেছেন- সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংকের অনুমতি দিয়েছে। আমি বলেছি এটি কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। গত ১১ মাসে ব্যাংকগুলো ১৯ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এ খাতটি বর্ধনশীল।` কমিটির বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতসহ কমিটির সদস্যরা অংশ নেন। এছাড়া বৈঠকে কমিটির বিশেষ আমন্ত্রণে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান অংশ নেন।
ওটিসি মার্কেটের গতি ফেরাতে আইন পরিবর্তন জরুরি
এসএমএ কালাম
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের গতি ফেরাতে আইন পরিবর্তন জরুরি বলে মনে করছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ।
বুধবার এসইসি’র সঙ্গে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ওটিসি মার্কেট উন্নয়ন সম্পর্কিত এক বৈঠক শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সাজিদ হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। বিশেষ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি নজরে রেখে এ আইন পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হবে বলে তিনি জানান। এ লক্ষ্যে রেগুলেশন পরিবর্তনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা তৈরি করে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেকে জমা দিতে কমিশন নির্দেশ দিয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, “ওটিসি মার্কেটকে গতিশীল করতে হলে ওটিসি রেগুলেশনে পরিবর্তন করতেই হবে। ওটিসি মার্কেটের জন্য যে আইন করা হয়েছে সেগুলোর জন্যই  প্রধান বাধাগুলো আসছে। আর এ কারণে আইন পরিবর্তনে আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা তৈরি করতে বলা হয়েছে।” সাজিদ হোসেন বলেন, “আমরা শিগগিরই এ বিষয়ে সুপারিশমালা তৈরি করে বোর্ডের অনুমোদনক্রমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) জমা দেবো।” ওটিসি মার্কেট সেলার ড্রিভেন ফলে কিছু সঙ্কট তৈরি হয় এমন বিষয় আলোচনায় এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একজন বিক্রয়কারী যে পরিমান শেয়ার বিক্রি করতে চায়, শেয়ার ক্রয়কারীকেই সেই পরিমান শেয়ার ক্রয় করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ক্রয়কারীর কোন স্বাধীনতা থাকে না। যার ফলে ওটিসি মার্কেটে ক্রয়-বিক্রয় খুবই কম হয়। তাই সুপারিশ মালার ক্রেতার শেয়ার ক্রয় এর ক্ষেত্রে স্বাধীনতা থাকার সুপারিশ করা হবে।” সাজিদ হোসেন জানান, বৈঠকে যে সব কোম্পানির অস্তিত্ব নেই সেগুলোর বিষয়ে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কি কি করনীয় রয়েছে তারও সুপারিশ করা হবে বলে জানান তিনি। সাজিদ বলেন, “পাশাপাশি সাধারন কোম্পানির মতো ওটিসি’র কোম্পানিগুলোকে যে মাসিক বা ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিাবদন কমিশনে দাখিলের বিধান রয়েছে তা শিথিল করার বিষয়েও সুপারিশ থাকবে।” এর ্আগে, গত ১৯ এপ্রিল ওটিসি মার্কেটের বিদ্যমান কোম্পানি সমূহের বিষয়ে করণীয় কার্যাবলীর জন্য ৪ সদসস্যের একটি কমিটি গঠন করে এসইসি। কমিটির সদস্যরা হলেন, এসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ (আহবায়ক), নির্বাহী পরিচালক এটিএম তারিক্কুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম এবং পরিচালক মাহাবুবুল আলম (সদস্য সচিব)। এই কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে কমিশন বরাবর একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। তাদের জমা দেওয়া প্রতিবেদনের আলোকেই বুধবারের বৈঠক বসে। বৈঠকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন সিএফও শুভ্রকান্তি চৌধুরী ও  চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন মো. সৈয়দ সাজিদ হোসেন।
 ইউরোপা লিগের শিরোপা অ্যাথলেতিকো মাদ্রিদের
স্পোর্টস ডেস্ক
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমরাদামেল ফ্যালকাওয়ের জোড়া গোলে ইউরোপা লিগের শিরোপা জিতেছে স্পেনের অ্যাথলেতিকো মাদ্রিদ। তারা ৩-০ গোলে হারিয়েছে স্বদেশি ক্লাব অ্যাথলেতিক বিলবাওকে। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ব্যর্থ হয়েছে স্পেনের দুই বড় জায়ান্ট বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। স্প্যানিশদের সেই ব্যর্থতার দুঃখ কিছুটা হলেও লাঘব করতে পেরেছে অ্যাথলেতিকো মাদ্রিদ। রোমানিয়ার ন্যাশনাল অ্যারেনা স্টেডিয়ামে ৭ মিনিটে রামাদেল ফ্যালকাওয়ের গোলে এগিয়ে যায় অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ। এই বলিভিয়ান ফরোয়ার্ড বল নিয়ে ঢুকে পড়েন বিলবাওয়ের রক্ষণভাগে। বাঁ পায়ের দুর্দান্ত শটে পরাস্ত করেন গোলরক্ষক ইরাইজজকে (১-০)। বিরতিতে যাওয়ার আগে আরেকটি গোল করেন ফ্যালকাও। দ্বিতীয়ার্ধেও খুঁজে পাওয়া যায়নি বিলবাওকে। দুই গোল হজমের পর চুপসে যায় মার্সেলো বিয়েলসার শিষ্যরা। ৮৫ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল পান দিয়েগো রিবাস। দুইজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বল পাঠিয়ে দেন জায়গা মতো। খেলার অন্তিম মুহূর্তে (৯০+১মি:) বিলবাওয়ের বদলি ফরোয়ার্ড ইবাইয়ের দুর্দান্ত শট ফিরে আসে ক্রসবারে লেগে। ভাগ্যের সহায়তা না পাওয়ায় একটি গোলও শোধ করতে পারেনি বিয়েলসার দল। ২০১০ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপা লিগের শিরোপা জিতেছে ফ্যালকাও এবং আদ্রিয়ানরা।
ডামি নয়, আমিই পাঁচতলা থেকে মাটিতে ঝাঁপ দিলাম : অনন্ত
ফাহিম ফয়সাল
 আমাদের মূলধারার চলচ্চিত্রের চলতি ভগ্নদশার কথা নতুন করে বলার আর কিছু নেই। সিনেমা হল থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণের সংখ্যা এখন তলানীর পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ঢালিউডের এই মুমূর্ষ অবস্থার মধ্যেও হঠাৱ কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ জ্বালিয়ে রাখে আশার বাতি।
ঢালিউডের এই সংকটকালে একসময়ের ডাকসাইটে প্রযোজকরা যখন বিগবাজেটের ছবি নির্মাণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, ঠিক তখন কোটি টাকা বাজেট নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে এসেছেন প্রযোজক ও নায়ক এমএ জলিল অনন্ত। ২০১০ সালেরspeed এপ্রিলে  ‘খোঁজ-দ্যা সার্চ’ ছবিটির মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনার খাতা খুলেন। গতবছর মুক্তি পায় তার প্রযোজনা ও অভিনয়ে রোমান্টিক-অ্যাকশন ছবি ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ’।  অনন্তের তৃতীয় ছবি ‘দ্যা স্পীড’ এবার মুক্তি পাচ্ছে আগামী ১১ মে শুক্রবার একযোগে বাংলাদেশের ২৪টি সিনেমা হল ও মালয়েশিয়ার ৭টি সিনেমা হলে। বিগ বাজেটের ছবি ‘দ্যা স্পিড’ পরিচালনায় রয়েছেন সোহানুর রহমান খান। প্রযোজক ও নায়ক অনন্ত’র অ্যাকশন ছবি ‘দ্যা স্পীড’ মুক্তির পূর্ব মুহূর্তে বাংলানিউজ তার মুখোমুখি হয়। সেই আলাপচারিতার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য।
বাংলানিউজ : আপনার প্রথম ছবির নাম ছিলো ‘খোঁজ-দ্যা সার্চ’, এবার এ ছবিটির নাম ‘দ্যা স্পীড’। এর কি বিশেষ কোন কারণ আছে?
অনন্ত : আসলে আমার প্রতিটি ছবিতে আমি চেষ্টা করি, কিছু না কিছু ম্যাসেজ দেওয়ার। আমাদের সমাজে ভাল আর খারাপ দুইটি দিক আছে। আমি খারাপকে প্রতিরোধের জন্য দর্শকদের ম্যাসেজ দিতে চাই। ভালো কথা বলতে চাই। আমি এটাও বিশ্বাস করি, যে কোন খারাপ বিষয়ে বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে গেলে অ্যাকশন ছাড়া তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। যেহেতু আমি বিনোদন ও অ্যাকশনের মাধ্যমে দেশে কারা সন্ত্রাস করে তা দর্শকদের জানাতে চাই, সেহেতু আমার ছবিতে এ নামগুলো দেয়া হয়। আমার অভিনীত ‘দ্যা স্পীড’ ছবিটি পরিচালনা করেছেন সোহানুর রহমান সোহান।
বাংলানিউজ : আমরা কী তাহলে ধরে নিতে পারি যে, আপনি সবসময় অ্যাকশন মুভি করবেন?
অনন্ত : আমার সব ছবি অ্যাকশনধর্মী নয়। গল্পের কারণেই অ্যাকশন মুভি হয়েছে। আর আমি সবসময় অ্যাকশন মুভি করিও না। আমার দ্বিতীয় ছবি ছিলো ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ’। এ ছবিতে একই সঙ্গে রোমান্টিক ও অ্যাকশন ভিত্তিক গল্প ছিল। দেশীয় চলচ্চিত্রের বিকাশে বছরে একটা হলেও সুস্থধারার ছবি বানাতে চাই। দর্শকদেও নতুন কিছু উপহার দিতে চাই।
বাংলানিউজ : পেশাগত জীবনে আপনি একজন ব্যবসায়ী। হঠাৱ চলচ্চিত্রে আসার কারণ কি?
অনন্ত : আসলে আমি শখ করে চলচ্চিত্রে আসি নাই। এর একটা বিশেষ কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য অনেক প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তারা ঠিক মতো ছবি নির্মাণ করতে পারছেন না। তাছাড়া মানুষ সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পুরোনো ফরমেটের ছবি দেখে আসছে। নতুনত্ব ও বৈচিত্র্যের অভাবে মানুষ এখন দেশীয় ছবি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সিনেমা হলে যেতে ভুলে গেছে। এর ফলে হিন্দি  সিরিয়ালগুলো এ স্থানটি অনেকটাই দখল করে নিচ্ছে। আমাদের প্রযোজকরা ছবি বিনিয়োগ ফেরত না পাওয়ায় হতাশ হয়ে যাচ্ছেন। উন্নতমানের ছবি প্রদর্শনের জন্য যেখানে ডিজিটাল ফরমেটের সিনেমা হল বাড়ানো দরকার , বরং তা না হয়ে দিনের পর দিন সিনেমাহলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা তো সবাই জানেন। আমাদের চলচ্চিত্রে নতুন কিছু উপহার দেওয়া আর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যই আমি রূপালীপর্দায় ঝুকি।speed
বাংলানিউজ : এখানে প্রশ্ন আসে যে,  আপনি তো শুধু চলচ্চিত্রের পৃষ্ঠপোষকতা করলেই পারতেন, অভিনয়ে ঝুঁকলেন কেন?
অনন্ত : আমি যেভাবে একটি ছবি নির্মাণ করি বা করতে চাই, সেভাবে এখনও বাংলাদেশে কেউ ছবি নির্মাণ করেননি। আমার দৃষ্টিতে এ ধরনের ছবিতে অভিনয় করার মত কোন অভিনেতা এখনও আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। যেমন, আমার ছবিগুলোতে আমি কোন ডামি ব্যবহার করি না। ছবিতে একদম বাস্তব বিষয়টি আমরা দর্শকের সামনে তুলে ধরি। এর একটা উদাহরণ হচ্ছে বর্তমানে অনন্য মামুন পরিচালিত ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ ছবিটির শুটিং চলছে। সেই ছবিতে আমি নিজে একবার ডামি ছাড়াই ১১ তলা একটি বিল্ডিংয়ের  পাঁচতালা থেকে মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তখন আমার কাঁধে শত্র“পক্ষের একজন ছিলো। একবার চিন্তা করে দেখুন কতটা কঠিন ও ঝুঁকি ছিলো আমার সেই কাজটি। আমাদের দেশে ডামি ছাড়া অভিনয় করার মত সাহস এখনও কেউ করেনি। তাই আমি নিজেই এগিয়ে এসেছি। যাতে করে অন্যরাও এ ব্যাপারে সাহস সঞ্চার করতে পারে।
বাংলানিউজ : ডামি ছাড়া অভিনয় করলেতো যে কোন সময় মারাত্মক রকমের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে, এ ব্যাপারে আপনার মত কি?
অনন্ত : দেখুন হলিউডের ছবিগুলোর নায়করা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডামি ব্যবহার করেন না। এতে দর্শক রিয়েল অভিনয়টা দেখার সুযোগ পান। যার ফলে আন্তর্জাতিকমানের সব পুরষ্কার তাদের ঘরে যায়। তারা যদি পারে, চেষ্টা করলে আর ইচ্ছা থাকলে আমরা কেন পারবোনা?
বাংলানিউজ : নতুনদের নিয়ে ছবি বানাবার আপনার কি কোন পরিকল্পনা আছে?
অনন্ত : অবশ্যই। আমি চাই নতুনরা ব্যতিক্রমধর্মী ও সাহসী অভিনয় করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে বিশ্বমানে পৌঁছে দেবে। নতুনদের মধ্যে আমি ইমন ও নীরবের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলেছি।
বাংলানিউজ : দেশীয় চলচ্চিত্রের বিকাশে আপনি এপর্যন্ত কি কি উদ্যোগ নিয়েছেন?
অনন্ত : আমার প্রযোজনায় প্রতিটি ছবি মুক্তির আগে আমি একাধিক মতবিনিময় আয়োজন করি। আগের দুটি ছবির মতোই এ ছবি নির্মাণের সময়ই সরকার থেকে শুরু করে মিডিয়া সংশ্লিষ্ট অনেকের সাথেই বসেছি। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, চিত্রনায়ক ইলয়াস কাঞ্চন, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, সঙ্গীতশিল্পী মমতাজ প্রমুখ।
বাংলানিউজ : আপনি যে  উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছেন, তার মধ্যে কতভাগ সফলতার মুখ দেখেছে বলে মনে করেন?
অনন্ত :  আমি তো মনে করি, আমার টার্গেট অনুযায়ী আমার উদ্যোগ ১০০% সফলতার মুখ দেখেছে। কারণ আমার প্রথম ছবি ‘খোঁজ-দ্যা সার্চ’ এর প্রায় পুরো বিনিয়োগ উঠে এসেছে। ছবির কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য, সঙ্গীত, লোকেশন, চিত্রগ্রহণ, শব্দগ্রহণ থেকে শুরু করে কোন বিষয়ে আমি আপোস করি না। দেশ সেরা সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালকদের নিয়ে আমি কাজ করেছি। তাছাড়া বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্স, বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড, মধুমিতা, সারা দেশের সিনেমা হলসহ বিদেশেও আমার আগের ছবি দুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমাদেও প্রডাকশনের ছবিগুলো বাংলাদেশের সিনেমা হলের পাশাপাশি বিদেশের সিনেমা হলগুলোতেও মুক্তি দিচ্ছি।
বাংলানিউজ : আপনার অভিনীত ছবি ‘মোস্ট ওয়েলকাম’-এর এখন শুটিং চলছে। এ ছবির নায়িকা আপনার চলচ্চিত্র জুটি ও স্ত্রী বর্ষা। বর্ষাকে বিয়ে করার সময় আপনি হেলিকপ্টারে চড়ে তাদের বাড়ি গিয়েছিলেন। এটা কি লোক দেখানো, নাকি অন্য কোন কারণ ছিলো?
অনন্ত : বর্ষার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় ২০০৮ সালে এপ্রিলে আমার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। এরপর তার সাথে পরিচয়, ভালোলাগা, প্রেম ও পরবর্তীতে বিয়ে। বর্ষাকে আমি বিয়ে করেছি প্রায় আট মাস হলো। বিয়ের অনেক আগেই আমার ‘খোঁজ-দ্যা সার্চ’ মুক্তি পায়। বিয়ের সময় আসলে শখের বশেই আমি হেলিকপ্টারে চড়ে তাদের বাড়ি গিয়েছি। অন্য কোন কারণ বা উদ্দেশ্য ছিলো না।
বাংলানিউজ : বর্ষা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন  জানতে চাই?
অনন্ত : একজন স্ত্রী ও গার্লফ্রেন্ড হিসেবে বর্ষা আমাকে খুবই ভালোবাসে। সে সবসময় আমার খোঁজখবর রাখে। কোন গুজবে কান দেয় না। এমনকি আমার ব্যস্ততাকেও সে সবসময় মেনে নেয়। ব্যস্ততার বিষয়টি সে বুঝে। তার প্লাসপয়েন্ট হলো সে খুব ভালো রান্না করতে পারে। সত্যি বলতে কী; একজন সন্তানকে তার মা যেভাবে যতœ করে, ঠিক সেভাবেই বর্ষা আমার যতœ নেওয়ার চেষ্টা করে। কো-আর্টিস্ট হিসেবে তাকে আমি দশে দশ দেব।
বাংলানিউজ : অনন্ত-বর্ষার ঘরে নতুন অতিথি কবে আসছে?
অনন্ত : না, আপাতত এ ধরনের কোন সংবাদ নেই। এটা নিয়ে এখন আমরা ভাবছি না। যদি এমন কিছু হয় অবশ্যই মিডিয়ার সবাই জানবেন।
SPEEDবাংলানিউজ : ‘দ্যা  স্পিড’ ছবিটি সম্পর্কে আপনার মূলায়ন কি?
অনন্ত : প্রযোজক হিসেবে বলবো ছবিটি নিঃসন্দেহে অনেক ভালো হয়েছে। ছবির লোকেশন ভালো, গানগুলো ভালো, ক্যামেরা, শব্দ গ্রহণ থেকে শুরু করে সব কিছুই অনেক উন্নতমানের। তাছাড়া দর্শক ব্যাতিক্রমী কিছু বিষয় এ ছবিতে পাবে। ছবিতে ভিলেনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় নায়ক আলমগীর। তাছাড়া এ ছবিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট খুব ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। আর নায়ক হিসেবে বলবো, আমি চেষ্টা করেছি আমার সবটুকু উজাড় করে ছবিতে অভিনয় করতে। আসমান যমিনের মাঝে আমার সবটুকু চাওয়া পাওয়া শুধুই দর্শকের কাছে। দর্শক আমাকে উৎসাহ ও ভালোবাসা দিলে আগামীতে আরও ভালো ছবি নির্মাণ করতে পারবো।
বাংলানিউজ : ব্যবসা আর চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়া আর কি কি করছেন?
অনন্ত : সেই ছোট বেলায় আমার মা মারা যান। তাই পিতা-মাতাহীন বাচ্চাদের কষ্ট আমাকে খুব নাড়া দেয়।  তাই এ পর্যন্ত আমি ৩টি এতিমখানা করেছি। সেগুলো হচ্ছে মিরপুর ১০ নং এ একটি, বাইতুল আমান হাউজিংয়ে একটি ও সাভার মধুমতি মডেল টাউনের পিছনে একটি। এ ছাড়াও সাভারের হেমায়েতপুরের ধল্লা গ্রামে সাড়ে ২৮ বিঘার উপর একটি বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণের কাজ শুরু করেছি।
বাংলানিউজ : চলচ্চিত্রে আসার পর এ পর্যন্ত আপনার প্রাপ্তি কতটা?
অনন্ত : অনেক প্রাপ্তি আছে। তার মধ্যে আমার টার্গেটের বিষয়টিও আছে। আমার প্রতিটি ছবি দেশের বাইরেও মুক্তি দেয়ার ফলে সে দেশের মানুষ আমাকে ও বাংলাদেশের সিনেমা সম্পর্কে জানতে পারছে। তাছাড়া ‘খোঁজ-দ্যা সার্চ’ মুভিটি বাংলাদেশের নিযুক্ত বিদেশী সব দূতাবাসের কর্মকর্তারা দেখেছেন।
বাংলানিউজ : বিশ্ব চলচ্চিত্রের ধারে কাছে বাংলাদেশের ছবি পৌঁছাতে পারেনি। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের সঙ্গে আমাদের চলচ্চিত্রে প্রধান দূরত্ব কোন জায়গায়?
অনন্ত : বিশ্বেও প্রায় সবদেশের ছবিই এখন স্থানীয়ভাবে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও মুক্তি দেয়া হয়। এজন্য তাদের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বিদেশীরা ভালোভাবেই চেনে। কিন্তু বাংলাদেশে এটা হয়না। এ জন্য আমাদের দেশে অনেক গুনী অভিনেতা-অভিনেত্রী থাকা সত্ত্বেও বিদেশীরা তাদেরকে চেনে না। এটা খুবই দু:খজনক। এ কারণেই আমার প্রত্যেকটি ছবি দেশের পাশাপাশি বিদেশেও মুক্তি দিয়ে থাকি।
বাংলানিউজ : বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার  আগামী পরিকল্পনা কি?
অনন্ত : দেশীয় চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার জন্য আমার নিজেরও আছে অনেক কাজের পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে বর্তমানে আমি কাকরাইলে চলচ্চিত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরির কাজ শুরু করেছি।
এক নজরে ‘দ্যা স্পীড’
ছবির নাম: ‘দ্যা স্পীড’।
প্রযোজক: এম.এ. জলিল অনন্ত।
পরিচালক: সোহানুর রহমান সোহান।
কাহিনী ও সংলাপ: অনন্য মামুন।
সম্পাদনা: একরামুল হক।
ক্যামেরা: আসাদুজ্জামান মজনু ও আকাশ ( চেন্নাই)।
ফাইট: আরমান, চুন্নু ও উইলিয়াম ( মালেয়শিয়া)।
সংগীত: হাবিব, হৃদয় খান, ফুয়াদ ও শওকত আলী ইমন।
সংগীত শিল্পী: হাবিব, ন্যান্সি, কণা, হৃদয় খান।
অভিনয় শিল্পী: অনন্ত (নায়ক), পারভিন (নায়িকা-মালেয়শিয়া), নানা (রাশিয়ান), মাইক বোস (আফ্রিকা), আটন (মালেয়শিয়া) দীঘি ও নায়ক আলমগীর।
পরিবেশনায়: মনসুন ফিল্মস্
ছবিটির পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ করা হয়েছে চেন্নাইয়ের প্রাসাদ ল্যাবে।
কারিনার গায়ে দেড় কোটি টাকার পোশাক
বিনোদন ডেস্ক

বলিউডে চলতি বছরের সবচেয়ে আলোচিত ছবি মাধুর ভান্ডারকর পরিচালিত ও ইউটিভি প্রযোজিত ছবি ‘হিরোইন’। এ ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন কারিনা কাপুর। ছবিতে কারিনাকে দেখা যাবে ১৫০টি ঝলমলে পোশাকে। এই পোশাকের বাজেট ধরা হয়েছে দেড় কোটি টাকা।
‘হিরোইন’ ছবিতে কারিনার পোশাক ব্যয় বলিউডে এ যাবৎকালের সবচেয়ে দামি পোশাক বাজেট বলে জানা গেছে। দেড় কোটি টাকার পোশাক খরচকে খুব একটা পাত্তা দিতে চাইছেন না কারিনা। তার মতে, ছবির প্রয়োজনে এ ধরনের খরচ করে যদি চরিত্রকে মানানসই ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়, তবে অবশ্যই তা করা উচিত। এই ব্যাপারটিতে পরিচালক ও প্রডাকশন জোর দিয়েছে বলে আমার ভালো লাগছে। বিলাসবহুল দামী পোশাক পরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো, এবারই কারিনার প্রথম নয়। বছর খানেক আগে ‘কমবখত ইশক’ নামের একটি ছবিতে সাড়ে লাখ টাকা মূল্যের একটি পোশাক পরে কারিনা আলোড়ন তুলেছিলেন। সঞ্জয়লীলা বানসালী ‘দেবদাস’ ছবিতে চন্দ্রমুখি চরিত্রে মাধুরী দীক্ষিত ১৫ লাখ টাক দামের একটি মেরুন লেহেঙ্গা পরে ক্যামেররা সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। দামি পোশাক পরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ইদুঁর-দৌড়ে একলাফে বহুদূর এগিয়ে গেলেন কারিনা কাপুর।
কবিতার পঙ্ক্তিমালায় রুমানা
বিনোদন প্রতিবেদক

চলচ্চিত্র নায়িকা রুমানার ভালো লাগে কবিতা। একটু সময় পেলেই ডুব দেন কবিতার পঙক্তিমালায়। তার প্রিয় কবির তালিকাটাও বেশ লম্বা। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, জসীমউদদীন, সুকান্ত, শামসুর রাহমান সবার কবিতাই তার ভীষণ পছন্দ। প্রিয় কবিদের কাব্যসমগ্র সংগ্রহ ও কবিতা আবৃত্তি তার হবি।
এভাবেই কাব্যপ্রেমী রুমানাকে দেখা যাবে ‘আত্মজ’ নামের একটি নাটকে। শামসুজ্জোহার রচনায় নাটকটি পরিচালনা করছেন রিদম খান শাহীন। এতে প্রধান তিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, জিতু আহসান ও রুমানা।
‘আত্মজ’ নাটকে দেখা যাবে, রুমানা ভালোবাসে জিতু আহসানকে। জিতু আহসানের বাবা মামুনুর রশীদ পুরনো রীতিনীতি মেনে চলেন। তিনি কখনোই মেনে নেবেন না যে, ছেলে নিজের পছন্দে বিয়ে করবে। বিশ্বস্ত লোকের মাধ্যমে একসময় মামুনুর রশীদের কাছে খবর পৌছে যায়, ছেলে প্রায়ই একটি মেয়ের সঙ্গে এখানে সেখানে ঘুরতে দেখা যায়। জিতুর বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। ছেলের সব কর্মকান্ডের বিরোধী হয়ে উঠেন। এদিকে ঘটনা চক্রে রুমানার কবিতা আবৃত্তি মুগ্ধ করে মামুনুর রশীদকে। রুমানা দায়িত্ব নেন তাকে বশ করার। তিনি খলিল জিবরানের `ওয়ান চিলড্রেন` কবিতাটি পড়ে শোনান। এরপরই রুমানা সম্পর্কে মামুনুর রশিদের সব ভুল ভেঙ্গে যায়। ‘আত্মজ’ নাটকটিতে অভিনয় প্রসঙ্গে রুমানা বাংলানিউজকে বলেন, নাটকটির গল্প আমাকে মুগ্ধ করে। এখানে সংস্কারপন্থী একজন বাবার চালচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের দেশের ঘরে ঘরে এরকম অনেক বাবা আছে, যারা নিজেদের বিশ্বাস জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ধরে রাখেন। নাটকে রুমানাকে দেখা যাবে, কবিতার পঙক্তিমালায় প্রায়ই ডুব দিতে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কবিতা পছন্দ করেন কিনা জানতে চাইলে রুমানা বললেন, কবিতা কার না ভালো লাগে। কবিতার মাঝে নিজের আবেগ অনুভূতি প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে কাজ নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকি যে কবিতা পড়ার মতো সময় পাই খুব কম।
অপেক্ষায় ইশানা
বিনোদন প্রতিবেদক
‘ইশ্ক ইশ্ক’.. । না, এই ‘ইশ্ক’ মোটেও পেয়ার-মহব্বত না। লাক্স সুন্দরী ইশানাকে বন্ধুরা এ নামেই ডাকে। ২০০৯ সালের লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ইভেন্টের ফার্স্ট রানার আপ এই সুন্দরী অল্প সময়েই পেয়েছেন সুপরিচিতি। বেশ কিছু নাটক আর বিজ্ঞাপনে কাজ করে দিয়েছেন সম্ভাবনার ইঙ্গিত। ইশানা এখন বড়পর্দায় অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন।ইশানার পুরো নাম মৌনিতা খান ইশানা। জন্ম ১৯৮৭ সালে কুমিল্লা। বেড়ে উঠেছেন কুমিল্লা শহরেই। ইশানার পরিবারের সবাই সংস্কৃতিমনা। বাবা মাহবুব আলম খান পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলেও এক সময় যুক্ত ছিলেন মঞ্চনাটকের সঙ্গে। মা নীলিমা ইসলাম তার ছাত্র-জীবনে ছিলেন ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাংস্কৃতিক সম্পাদক। কাজেই মিডিয়ায় কাজ করার ক্ষেত্রে পারিবারিক সমর্থন আর অনুপ্রেরণা সবসময়ই তার সঙ্গে আছে।
বাংলানিউজের কাছে নিজের পরিবার সম্পর্কে ইশানা বললেন, আমার বাবা-মা ভীষন সংস্কৃতিমনা। আমার সব কাজেই আছে তাদের সমর্থন ও উৎসাহ। মিডিয়ায় আসা আর কাজ করা, সবই তাদের উৎসাহে। বাবা-মায়ের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে আমি নিজেও মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে যাই। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি এমন একটি পরিবারে জন্ম নেওয়ায়। ইশানা সব সময়ই ক্লাসের শেষ বেঞ্চের ছাত্রী । সামনের সারিতে বসার আত্মবিশ্বাস তার ছিল না। মিডিয়ায় হাতেখড়ি হলেও কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নিজেকে মাপার কথা কখনো ভাবেননি কখনো। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  ‘২০০৮ সালে আমাদের কুমিল্লার মেয়ে বিদ্যা সিনহা মিম সুপারস্টারের খেতাব জিতলেন। মিম সবার সেরা হওয়ায় আমি ভাবতে থাকি, কেন আমি লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার নই? নিজেকে তৈরি করতে শুরু করলাম। একটু একটু করে আত্মবিশ্বাস তৈরি হলো। পরের বছর অংশ নিলাম ইভেন্টে। সেরা ১০-এ পৌছে যাবার পর মনের ভিতর কেমন যেন টেনশন বোধ করি। এ সময় পরিবার এসে আমার পাশে দাঁড়ায়। পরিবার থেকে বলা হয়, তোমাকে জিততেই হবে, এমন কোনো চাপ নেই। ইউ গিভ ইউর বেস্ট। পরিবারের এই আশ্বাসই আমাকে এগিয়ে দেয় অনেক দূর। ইশানার এই সময়ের ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাইলে বললেন, ঈদের নাটক নিয়ে এরই মধ্যে অনেক নির্মাতাই কাজ শুরু করেছেন। আমার কাছে এসেছে বেশ কিছু নাটকে অভিনয়ের অফার। শুরুর দিকে কোনো বাদ-বিচার না করে অভিনয় করলেও এখন একটু বুঝেশুনে পথ চলতে চাই। নাটকের গল্প, চরিত্র আর নির্মাতা পছন্দ হলেই কেবল অভিনয়ের সম্মতি দিচ্ছি আমি।
ইশানার কাছে তার অভিনীত কিছু পছন্দের কাজের কথা জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমার পছন্দের কাজের তালিকাটা বেশ বড়। এ মুহূর্তে মনে পড়ছে চয়নিকা চৌধুরীর ‘আকাশের নিচে মানুষ’,  সকাল আহমেদের ‘সীমানা পেরিয়ে’, আনু আশরাফের ‘তাল বেতাল’ তন্ময় তানসেনের ‘ফিরিয়া দিলাম পৃথিবী’, সাহাজাদা মামুনের `ওয়ানটেস্ট` প্রভৃতি নাটকের নাম। বিজ্ঞাপন চিত্রের মডেল হিসেবেও ইশানাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে চাহিদা। ইশানা সম্প্রতি মডেল হয়েছেন রেডডটের ব্যানারে সানসিল্ক শ্যাম্পু এবং একটি এনার্জি ড্রিংকসের। তার করা উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞাপনের মধ্যে রয়েছে ফেয়ার এ্যান্ড লাভলি, ম্যানস একটিভ, পেনাসনিক, বাংলা লায়ন, মাম স্ন্যাক টি প্রভৃতি। ইশানা জানালেন, একটি বড় বিউটি প্রডাক্টের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে তার কাজ করার কথাবার্তা চলছে। চলচ্চিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইশানা বললেন, গতবছরই তন্ময় তানসেনের পরিচালনায় আমার প্রথম ছবি ‘তোমায় দিলাম পৃথিবী’ নামের ছবির শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। নানাকারণে তা পিছিয়ে গেছে। তবে সম্প্রতি প্রডাকশন থেকে জানানো হয়েছে, আগামী মাসে ছবিটির শুটিং শুরু হচ্ছে। এখানে আমার বিপরীতে কাজ করবেন প্রকাশ। এরই মধ্যে কলকাতার একটি বাংলা চলচ্চিত্রে কাজ করে বেশ আলোচিত হয়েছে। এই চলচ্চিত্রে দেখা যাবে যে, আমি বড় লোকের আদরের একমাত্র মেয়ে। সব ছেলেই আমাকে পটানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আমি কাউকেই পাত্তা দেই না। প্রকাশ সে অনেক গরিব। সেও আমাকে ভালবাসে। তার ভালবাসার কোন মূল্যায়ন আমি করি না। এক পর্যায়ে প্রকাশকেই সত্যিকারে ভালবাসতে শুরু করি। এ রকমই একটি নিটল প্রেমের কাহিনী নিয়েই ‘তোমায় দিলাম পৃথিবী’ চলচ্চিত্রটির গল্প। চলচ্চিত্রে নিয়মিত হবেন কিনা জানতে চাইলে ইশানা বললেন, অপেক্ষায় আছি বড়পর্দায় অভিষেকের। আগে একটা ছবিতে কাজ করে দেখতে চাই, দর্শকেরা আমাকে কীভাবে নেন। এরপর চলচ্চিত্রে নিয়মিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেব।
সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক ভিটা কটিয়াদীতে বৈশাখী মেলা
বিনোদন প্রতিবেদক

  বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক ভিটা কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে বুধবার  থেকে ১০ দিনব্যাপী বৈশাখী  মেলা শুরু হয়েছে।  সত্যজিৎ রায় সাংস্কৃতিক ফোরাম কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব সারোয়ার হোসেন শাহীন জানান, সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরি কিশোর রায়  চৌধুরী প্রায় দু’শ বছর আগে শ্রীশ্রী কালভৈরব পূজা উপলক্ষে এ  মেলার প্রচলন করেন। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের  শেষ বুধবার এ  মেলা অনুষ্ঠিত  হয়ে আসছে। এ বাড়ির প্রায় ৪ একর ভূমিসহ পার্শ্ববর্তী বিশাল এলাকা জুড়ে  মেলা বসে। বহু দূর-দূরান্ত  থেকে হাজারো মানুষ আসছেন ঐতিহ্যবাহী  মেলায় অংশ নিতে। তিনি আরো জানান, এ বাড়িতে ১৮৬০ সালে জন্ম গ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায়  চৌধুরী। ১৮৮৭ সালে জন্ম গ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়ের পিতা ছড়াকার সুকুমার রায়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির আগেই উপেন্দ্র কিশোর রায়  চৌধুরী সপরিবারে কলকাতা চলে যান। বর্তমানে বিশাল বাড়িটি সরকারের রাজস্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন বাড়িটিতে একটি পর্যটন স্পট নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করেছে। এতে ৫৯ লাখ টাকা বরাদ্দ  দেয়া হয়েছে। একটি  রেষ্ট হাউজ সীমানা প্রাচীরসহ বাড়িটি সংরক্ষণের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। প্রতি বছর  মেলায়  দেশের বিভিন্নস্থান  থেকে কবি সাহিত্যিকসহ দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে। কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম আনছারুজ্জামান বলেন, আপাতত ৩ দিনের জন্য  মেলার অনুমতি  দেয়া হয়েছে। সত্যজিৎ রায় সাংস্কৃতিক ফোরাম, ঢাকার প্রধান উপদেষ্টা সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. এমএ মান্নান বলেন, এই বাড়িটি কটিয়াদীবাসীর গর্ব। এই বাড়িটিকে ঘিে প্রতি বছর এখানে পর্যটকদের মিলন মেলার হাট বসে। দেশের দূর-দূরান্ত ছাড়াও  পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও পর্যটকরা এ মেলা উপভোগ করতে আসেন। উপজেলা  চেয়ারম্যান লায়ন  মো: আলী আকবর বলেন,  মেলা সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপসহ নিরাপত্তা মূলকব্যবস্থা  নেয়া হয়েছে। মেলায় রকমারি পণ্যের শত শত স্টল বসেছে। কাঠের আবাসপত্র, গৃহস্থালী সামগ্রী,  খেলনা, মিষ্টি, প্রসাধনীসহ রয়েছে নানা ধরনের স্টল। এছাড়া রয়েছে চিত্ত বিনোদনের নানা আয়োজন। বাউল গানসহ কবিতা পাঠের আসরও রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন