Year-19 # Issue-40 # 18 November 2012



আন্ডারওয়াল্ড কোণঠাসা
স্বসি্ততে নেই কেউ
ইকবাল হাসান ফরিদ
আন্ডারওয়াল্ডের দুর্ধর্ষ সদস্যরা বড় কষ্টে আছে। একের পর এক কয়েকজনের মৃতু্য, গ্রেফতার দেশ ছেড়ে পালানোর পর বাকিরাও স্বসি্ততে নেই। গোয়েন্দাদের দাবি, আন্ডারওয়াল্ড এখন কোণঠাসা হয়ে গেছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বেশ 'জন গ্রেফতার এড়াতে পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ঠঁাই নিলেও শানি্ততে নেই। আবার এসব দেশেও এরা নানান অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। আর একারণে গ্রেফতারও হচ্ছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ ওইসব দেশেও রীতিমতো বাহিনী গড়ে  তুলেছে। বাসা-বাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকে ভারতের শেয়ারবাজারে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলেও খবর আছে গোয়েন্দাদের কাছে।
ঢাকার ভয়ঙ্কর শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত হোসেন পাকড়াও হয়েছে কলকাতায়। শুক্রবার রাতে গ্রেফতার হওয়া শাহাদাতের কাছ থেকে ১টি একে ৪৭ রাইফেল উদ্ধার করেছে কলকাতা পুলিশ। কলকাতার দমদম এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। দীর্ঘদিন যাবত ভারতে আত্মগোপনে ছিল সে। শাহাদাত কলকাতায় থেকে তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের দিয়ে ঢাকায় খুন-খারাবি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা নিয়ন্ত্রণ করত। এর আগে শাহাদাতের তিন শীর্ষ শিষ্য মোহাম্মদ আলী, ডিকন হালিমকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন দীর্ঘদিন যাবত ভারতে পলাতক ছিলো। ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের দুই কর্মকর্তা সুব্রত বাইনকে পিছু ধাওয়া করে নেপাল সীমানে্তর কাকরভিটা শহরে ঢুকে পড়লে সেখানকার পুলিশের হাতে সুব্রত বাইন আটক হয়। সমপ্রতি  নেপালের কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে সুব্রত বাইন। বর্তমানে সে কোথায় আছে তার কোন হদিস নেই। বছরই পুরান ঢাকার আতঙ্ক ডাকাত শহীদ ভারত থেকে দেশে আসলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালায় র্যাব। এসময় র্যাবের ক্রসফায়ারে মারা যায় ডাকাত শহীদ।   
২০০১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর জোট সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি করে তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ারে মারা যায়। গণপিটুনিতে মারা যায় আরেক সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন। পুরস্কার ঘোষণার সময়ই পিচ্চি হেলাল কারাগারে ছিল। এদের ১২ জন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। গ্রপ্তোর হওয়া আটজন হলো- খোরশেদ আলম রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু, নাঈম আহমেদ টিটন, ফ্রিডম সোহেল, কিলার আব্বাস, লিয়াকত হোসেন, আরমান, কামাল পাশা, মশিউর রহমান কচি। তবে সাবেক যুবলীগ নেতা লিয়াকত জামিনে বের হয়ে আসলে আবার র্যাব তাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে দাবি করছেন তার স্বজনরা। পলাতক ১২ জন হলো- আমিন রসুল সাগর ওরফে টোকাই সাগর, জাফর আহমেদ মানিক, কামরুল ইসলাম হান্নান ওরফে জুনিয়র হান্নান, সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, জব্বার মুন্না, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, ইমাম হোসেন, হারিস আহমেদ ওরফে হারেস, খন্দকার তানভিরুল ইসলাম জয়, আগা শামীম কালা জাহাঙ্গীর। কালা জাহাঙ্গীর মারা গেছে বলে বিভিন্ন মহল প্রচার চালালেও সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সূত্র তা নিশ্চিত করতে পারেনি। বিদেশে পলাতক এসব সন্ত্রাসীর দেশে ফিরিয়ে আনার কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীরা ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করে। তানভিরুল ইসলাম জয়কে গ্রেফতার করেছিল ভারতীয় পুলিশ। পরে জামিনে বের হয়ে সে ভারত থেকে পালিয়ে অন্য দেশে চলে যায়। সুব্রত বাইন ভারত দুবাই যাতায়াত করে। ভারতের জলপাইগুড়িতে মোল্লা মাসুদ অবস্থান করছে। সেখানে সে বিয়ে করেছে। জাফর আহমেদ মানিক ভারতের আগরতলায় থাকে। আমিনুর রসুল সাগর ওরফে টোকাই সাগর দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে। কিছুদিন আগেও প্রকাশ কুমার বিশ্বাস ভারতে ছিল, তবে বর্তমানে স্থান পরিবর্তন করেছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্ধর্ষ কালা জাহাঙ্গীর। গত ১০ বছর ধরে সে মারা গেছে নাকি বঁেচে আছে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারছে না। বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে যুবদল নেতা আমিন রসুল সাগরকে জোট সরকারের আমলে পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়। আমেরিকায় তার বর্তমান অবস্থান। কানাডায় অবস্থান করছে ইমাম হোসেন। হারিস আহেমদ অবস্থান করছে পাকিস্তানে। তানভিরুল ইসলাম জয় অবস্থান করছে কলকাতায়। জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ কোথায় অবস্থান করছে সে ব্যাপারে কারও কাছে কোন তথ্য নেই। পুরস্কার ঘোষিত বিদেশে পলাতক এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামে খুন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে দিনের পর দিন। দেশের কারাগারে আটক যারা তারাও আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের বাইরে পলাতক কারাগারে থাকা এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীর সহযোগীরা গড়ে তুলেছে অনেক উপদল। এসব দলই মাঠপর্যায়ে চাঁদাবাজি করছে। তবে পুলিশ র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড এখন কোণঠাসা।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন