Year-19 # Issue-8 # 08 April 2012



মেয়র হয়ে জন্মভূমি ঢাকার জন্য কিছু করে যেতে চাই: হাজী সেলিম
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিম আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে চান। ঢাকা-৮ এর সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ঢাকার রাজনীতিতে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। পুরান ঢাকার ছেলে হাজী সেলিম ওয়ার্ড কমিশনার পর্যায় থেকে আজকের এই অবস্থানে এসেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে সফল ব্যবসায়ী হাজী সেলিম রাজনীতিতেও দলের প্রতি অগাধ আনুগত্য তাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। ১০ মে ১৯৫৮ সালে ঐতহ্যিবাহী পুরাতন ঢাকার লালবাগ এলাকার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জš§গ্রহণ করেন হাজী সেলিম। বাবা মরহুম চাঁন মিয়া সরদার, মা বেগম সালেহা খাতুন। বাবা ছিলেন পুরানো ঢাকার একজন নামকরা ব্যবসায়ী। ঐতিহ্যবাহী পুরানো ঢাকার অন্যতম বিদ্যাপীঠ নবকুমার হাই স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু। তিনি অকপটে স্বীকার করেন, “আমার শিক্ষা জীবনরে ব্যাপ্তি বেশি একটা বড় নয়। স্কুলজীবন পার করতে না করতেই পিতার মৃত্যুর কারণে খুব অল্প বয়স থেকেই পৈত্রিক ব্যবসায় নিজেকে নিয়োজিত করি। পিতার মৃত্যুর পর আমার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ছিল, পিতার অর্জিত সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে হবে। সে কারণে পড়াশোনার প্রতি আর জোর দেয়া হয়নি।” ১৯৮৭ সালে হাজী মো. আরজু মিয়ার কন্যা গুলশান আরাকে বিয়ে করেন। বড় ছেলে সোলায়মান সেলিম বৃটেনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করছেন। মোজো ছেলে ইরফান সেলিম কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ অধ্যয়নরত। ছোট ছেলে আশিক বাংলাদেশের আইএসডিতে ‘ও’ লেভেলে পড়ছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে তার নির্বাচনী এলকার উন্নয়ন ভাবনা এবং পরিকল্পনার কথা জানালেন তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে। সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডের আরজু মদিনা টাওয়ারের বাসায় বসে হাজী মো. সেলিমের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সাপ্তাহিক খোঁজখবরের বার্তা সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন।খোঁজখবর: ঢাকার মেয়র নির্বাচিত হলে আপনি এই মেগাসিটির জন্য কি কি করবেন?
হাজী সেলিম: যদি আমি মেয়র হই তাহলে আমি ঢাকা দক্ষিণকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে আবদ্ধ করবো। প্রতিটা গলিতে গলিতে সিসি ক্যামেরা বসাবো। কন্ট্রোল রুম থাকবে সিটি কর্পোরেশনে। এই সিটিতে চুরি ডাকাতি ছিনতাই রাহাজানি হলে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে সিডি দেখে শনাক্ত করবে। আর সিসি ক্যামেরা মাথার ওপর থাকলে আমার মনে হয় চুরি ডাকাতি ছিনতাই করতে সাহস পাবে না কেউ।
খোঁজখবর: ঢাকার মতো এতো অগোছালো শহরে সিসি ক্যামেরা বসাবেন কিভাবে?
হাজী সেলিম: প্রথম পর্যায়ে আমি ২৫০০ থেকে ৩০০০ ক্যামেরা বসাবো। তারপর আরো বাড়াবো। ক্যাবল অপারেটর যদি তার দিয়ে ডিস দিতে পারে তাহলে আমি প্রশাসন হয়ে, মেয়র হয়ে সিসি ক্যামেরা দিতে পারবো না কেন?
খোঁজখবর: পুরান ঢাকার ছেলে হিসেবে পুরান ঢাকাবাসীর জন্য কী করবেন?
হাজী সেলিম: আমি মেয়র হলে ঢাকা শহরে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবো। পুরান ঢাকায় আগে বেশ কিছু গলি নিয়ে পঞ্চায়েত ছিল। পঞ্চায়েত চালু করার পর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মিলে প্রথমেই যেকোনো সমস্যা সমাধান করবেন। সালিশের মাধ্যমে তারা সমাধান করবেন। পঞ্চায়েত যদি ইচ্ছে করে তাহলে পুলিশের কাছে পাঠাবে। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েত ওই এলাকার ময়লা, আবর্জনা পরিষ্কারের দায়িত্বও নেবে। কাউন্সিলরের পক্ষে একা এই শহর চালানো সম্ভব না। পঞ্চায়েতের ওপর নির্ভর করতে হবে। আগে ২১-২২ টা মহল্লা নিয়ে সর্দার হতো। এখন ২২ মহল্লায় ২২টা পঞ্চায়েত থাকবে। পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে ঝগড়া লাগলে তারা একে অপরের মধ্যে সমস্যার সমাধান করবেন। পঞ্চায়েতের মধ্যে থাকবেন ব্যাবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, মসজিদের ইমাম ও তরুণ প্রতিনিধি।
খোঁজখবর: এলাকার সমস্যা সমাধানের জন্য এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য কী করবেন?
হাজী সেলিম: জনগণের ভোট নিয়ে মেয়র হওয়ার পর কেউ আর এলাকার খোঁজখবর নেন না। কোনো কিছুর তদারকি করেন না। আমি এর সম্পূর্ণ বিরোধী। এলাকার সকলের খোঁজখবর নেব, কোন এলকায় কি ধরণের সমস্যা বিরাজ করছে তা ফাইন্ডআউট করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। আর রমজানের ২৫ দিন ৫৬টা ওয়ার্ড ভাগ করে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, সব রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ইফতার করাবো। এরপর মনে করেন দুটো ঈদ আছে, হিন্দুদের পূজা আছে, খৃস্টানদের বড়দিন আছে-আমি এইসব ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে জানবো কি কি সমস্যা রয়েছে এবং কিভাবে এর সমাধান করা যায়। আলোচনা করে দ্রুততার সাথে এগুলোর সমাধান করবো।
খোঁজখবর: ঢাকার যানজট নিরসনে কী পদক্ষেপ নেবেন?
হাজী সেলিম: ডিসি ট্রাফিকদের নিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে যানজট কমানোর চেষ্টা করবো। আমি রাস্তায় নতুন একটা পদ্ধতি করে দেব। যদি উল্টা গাড়ি চলে তাহলে তার টায়ার টিউব নষ্ট হয়ে যাবে।
খোঁজখবর: সেটা কিভাবে?
হাজী সেলিম: আমি সিস্টেম জানি। প্রতিটা রাস্তার মোড়ে একটা একটা স্টিলের প্লেট থাকবে। এই প্লেটের ওপর দিয়ে চাকা গেলে গাড়ি চলবে। আর উল্টা চললে গাড়ির টায়ার-টিউব ব্লাস্ট হয়ে যাবে। বাইরের কয়েকটা দেশে দেখে এসেছি এই ব্যবস্থাটা। সবচেয়ে বড়ো কথা পঞ্চায়েতের মুরব্বি নিয়ে একটা আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একটা রোডে দুইটা ট্রাফিক করবে টা কী? তখন ওই মুরব্বীরাই ব্যবস্থা নেবেন।
খোঁজখবর: ঢাকা শহরের তো মশার ভয়াবহ উপদ্রব। এ ব্যাপারে আপনা কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
হাজী সেলিম: সিটি কর্পোরেশন মশার ওষুধ যদি ভালোটা কেনে আর টেন্ডারের মাধ্যমে যদি ভালো ওষুধ নিয়ে আসা হয়-তাহলে মশা মরবে না কেন? ভালো ওষুধ আনলে মশা মারা যাবে। আর আমি সেটাই করবো।
খোঁজখবর: ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কি করবেন?
হাজী সেলিম: আমি ঢাকার রাস্তার কথা বলছি। মনে করেন, রাস্তার বুক তিনবার করে চিড়ে। একবার ওয়াসা, একবার টিএন্ডটি আরেকবার, বিদ্যুৎ। যদি এই তিনটা সিটি কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়া হয় তাহলে সমন্বয় করে মেয়ররা কাজ করতে পারবেন।
খোঁজখবর: ঢাকাবাসীর প্রতি কোনো বার্তা পৌঁছে দিতে চান?
হাজী সেলিম: আমি তিলোত্তমা ঢাকা শহর বানাবো। আমি জনগণকে শুধু বলবো, আপনারা ঋণ দিন, আমাকে বিশ্বাস করুন। বহুগুণ আমি আপনাদের দেবো।
খোঁজখবর: আপনার বাড়ির ছাদ থেকে নগরভবন দেখা যায়। ভবন দেখতে দেখতে মেয়র হওয়ার আগ্রহ জাগলো নাকি?
হাজী সেলিম: আমি আট বছর আগে কমিশনার ছিলাম, এটা তো ছোটবেলা থেকেই দেখছি। রাতে কিংবা সন্ধ্যায় ছাদে হাঁটতে হাঁটতে যখন নগরভবন দেখি তখন কিছু আকাঙ্খা তো জাগেই। চাঁদ দেখলে যেমন আকাঙ্খা লাগে, সূর্য দেখলে যেমন তেমনি আর কি...।

খোঁজখবর: রাস্তার মোড়ে মোড়ে অনেক বিলবোর্ড লাগিয়েছেন দেখলাম।
হাজী সেলিম: বিলবোর্ডগুলোর পক্ষে আমি না। আমার প্রতিদ্বন্ধীরা ব্যবহার করছেন বলে আমিও করছি। ঢাকা শহরের এই বিলবোর্ডগুলো খুবই ব্যয়বহুল। আমি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী নানক সাহেবকে বলেছি, এই বিলবোর্ডগুলো বন্ধ করার জন্য। যদি এই বিলবোর্ড, পোস্টার বন্ধ করে তাহলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো।
খোঁজখবর: ঢাকা সিটি কর্পোরশন দক্ষিণের অন্য প্রার্থীদের চেয়ে আপনি কোন দিকে দিয়ে এগিয়ে আছেন মনে করেন?
হাজী সেলিম: ঢাকার মেয়র যারা আগে ছিলেন তারা সবাই তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে উঠে এসেছেন। মির্জা আব্বাস, মোহাম্মদ হানিফ, সাদেক হোসেন খোকা সবাই রাজনীতি করে অভিজ্ঞতা দিয়ে মেয়র হয়েছেন। আমার সঙ্গে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাচ্ছেন তারা আগে কমিশনার হোক। তারপর মেয়র নির্বাচনে আসুক।
খোঁজখবর: আপনার নামে তো বেশ কিছু মামলা ছিল। মামলাগুলো কোন পর্যায়ে এখন?
হাজী সেলিম: ১৩৭টা মামলা। কতো মামলার কথা বলবো। পাঁচটা হত্যা মামলা, পাঁচটা দ্রুত বিচার আইনে মামলা। মামলার জন্য কতো কিছু হারিয়েছি। মামলা সব শেষ হয়ে গেছে। আর এতগুলি মামলার মধ্যে কিছু না কিছু তো থাকবেই। আর এগুলোতো মূলত রাজনীতির কারণেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য রাজনৈতিক বিরোধীরাই মূলত এই মামলাগুলো করেছিল। আর এগুলো রাজনৈতিকভাবেই শেষ হয়ে গেছে।
খোঁজখবর: দল থেকে সমর্থন পাওয়ার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
হাজী সেলিম: দল আমাকে দেবে না? আমি দলের জন্য যেভাবে কাজ করেছি, আমার সঙ্গে যারা প্রার্থী হতে চাচ্ছেন তারা তো কাজ করেন নাই। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার সব কর্মসূচি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি এবং এখনও করছি আগামীতেও করব। আমি শেখ হাসিনাকে নিজের বোনের মতো জানি। দল করতে যেয়ে বিরোধী দলের কত নির্যাতন সহ্য করেছি। কতো কষ্ট করেছি। নিজের বাড়ি ছেড়ে কত রাত কত লোকের বাড়িতে ঘুমিয়েছি। এতো কষ্টের পরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মনোনয়ন না দেন তাহলে তো করার কিছু নাই। উনার ঘর উনার সংসার উনি কাকে রাখবেন, কাকে ছাড়বেন কাকে দেবেন সেটা তিনিই জানেন। তবে আমি ভীষণ আত্মবিশ্বাসী- নিশ্চয় আমাকে মনোনয়ন দেবেন। আমাকে নিরাশ করবেন না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
খোঁজখবর: দল থেকে সমর্থন যদি না পান সেক্ষেত্রে কি করবেন?
হাজী সেলিম: শুধু জনগণের সঙ্গে থাকার জন্য কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি নির্বাচন করছি। কারণ আমি একটা বড়ো কোম্পানির এমডি। আমাকে ওটা ছেড়ে এসে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। আমার কোম্পানিটা আরেকজনের কাছে বর্গা দিয়ে আসতে হবে। আমি চাই মারা যাবার পর মানুষ যেন আমাকে মনে রাখে, সেই লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাবো।
খোঁজখবর: নির্বাচনের এখনো অনেক সময় বাকি। তারপরও সবকিছু ঠিক থাকলে, জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
হাজী সেলিম: জনগণ যাকে ভালো মনে করবে তাকে ভোট দেবে। ঢাকা শহর সুন্দর কাকে দিয়ে হবে এটা জনগণ বোঝে। সময়ে জনগণ জবাব দিয়ে দেবে। আর আমার বিশ্বাস জনগণ আমার উদ্দেশ্যটা বুঝবে আর সেট হলে তো আমাকেই ভোট দেবে।
খোঁজখবর: আপনার শত ব্যস্ততার মাঝেও এতক্ষণ সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
হাজী সেলিম: আপনাকেও ধন্যবাদ আমার কথাগুলো মানুশের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য।

কঠোর আন্দোলনের দাবি উঠছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সভায়
মান্নান মারুফ
খালেদা জিয়ার আহবানে সাড়া দিয়ে সরকার পতনের জন্য কঠোর, প্রয়োজনে এক দফা আন্দোলন শুরুর দাবি উঠছে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সভায়। রোববার সকালে রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে শুরু হওয়া এ সভায় সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বক্তব্য দেওয়া ৭৪ জন কেন্দ্রীয় নেতার প্রায় সকলেই নিজ নিজ বক্তৃতায় কঠোর আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেন। এর আগে সভার উদ্বোধনী বক্তৃতায় সরকার পতনের এক দফা নিয়ে আলোচনার আহবান জানান বিএনপি প্রধ‍ান। সন্ধ্যায় সভা কক্ষ থেকে বেরিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা এহছানুল হক মিলন ও আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, আন্দোলন বেগবান করার প্রয়োজনে দেশের জেলা-থানা-ওয়ার্ডে বিদ্যমান দলীয় কোন্দল মেটানো জরুরি বলে অভিমত উঠে আসে সাংগঠনিক জেলা নেতাদের বক্তব্যে। এছাড়া মির্জা ফখরুলকে পূর্ণ মহাসচিবের দায়িত্ব দান, ঢাকা মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি পুনর্গঠন ইত্যাদি দাবিও ওঠে সভায়। অধিকাংশ বক্তাই অবস্থান নেন ডিসিসি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষে। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করা তৈমুর আলম খন্দকার ডিসিসি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে বক্তব্য দেন।সক্রিয় নেতাদের দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক কমিটির দায়িত্বশীল পদে বসানোর আবেদনের পাশাপাশি নিষ্ক্রিয়দের সক্রিয় করারও তাগিদ ওঠে বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলার নেতাদের বক্তব্যে। এছাড়া ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মাঠে থাকা নেতাদের মূল্যায়নের দাবিও তোলেন বিভিন্ন জেলার নেতারা। হরতালের সময়ে মাঠে না থেকে সংবাদ সম্মেলনে চেহারা দেখাতে আগ্রহী নেতাদের সমালোচনাও উঠে আসে তাদের বক্তব্যে। সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী বলেন, ‘আওয়ামী লীগে কিছু হাইব্রিড নেতা আছেন যারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এদের শায়েস্তা করার জন্য এখনই তালিকা তৈরি করা হোক। এদিকে সভা কক্ষ থেকে বেরিয়ে টিভি চ্যানেলে কথা বলায় কয়েকজন নেতাকে ডেকে নিয়ে সতর্ক করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি সাফ জানিয়ে দেন- বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে কথা বলবেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, অন্য কেউ নয়।
সরকার অর্থনীতিকে আরো ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে: খালেদা
‘অযোগ্য সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে থেকে জাতীয় অর্থনীতিকে আরো ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলেন নেতা খালেদা জিয়া।
রোববার সকালে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে দলটির নির্বাহী কমিটির সভার শুরুতে দেওয়া উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি এ অভিযোগ করেন। তার ২ হাজার ২শ’ ৯৯ শব্দের বক্তৃতার প্রায় পুরোটা জুড়েই নেতা-কর্মীদের করণীয় ও দল নিয়ে সাংগঠনিক নির্দেশনা থাকলেও বর্তমান সরকারের গত সাড়ে তিন বছরের ব্যর্থতার বিভিন্ন পরিসংখ্যানও উঠে আসে। ‘একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোন নির্বাচন নয়’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রয়োজনে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যাওয়া যায় কি না তা নিয়ে আলোচনার জন্য সভায় উপস্থিত দলীয় নেতাদের আহবান জানান তিনি।
‘বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে’ মন্তব্য করে বিরোধী দলের নেতা বলেন, ‘ অর্থমন্ত্রী নিজেও সে কথা স্বীকার করেছেন। এরপরও অর্থমন্ত্রী বহাল আছেন। অযোগ্য সরকারও ক্ষমতা আঁকড়ে থেকে জাতীয় অর্থনীতিকে আরো ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের নাগালের বাইরে। ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তো আজ তারা অস্বীকারই করছে। বিনিয়োগের অভাবে নতুন কোন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। নানা সংকটে মিল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকারত্ব আরো বাড়ছে। সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতায় বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরাও চাকরি হারাচ্ছে। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে। বিশ্বে জনশক্তির বাজার ক্রমাগত বড় হলেও বাংলাদেশের জন্য প্রায় সব দেশের দরজাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনশক্তি রপ্তানি খাতে গত তিন দশকের মধ্যে এমন বিপর্যয় আর কখনো হয়নি। বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেওয়া নিয়ে জনগণের হয়রানির শেষ নেই। অথচ বিদ্যুতের দাম গত এক বছরে চারবার বাড়ানো হয়েছে। জালানি তেলের দামও কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। আবার নাকি বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে।’ তিনি বলেন, ‘বিনা টেন্ডারে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র দিয়ে লুটপাট করা হলেও বিদ্যুৎ সংকট গুরুতর আকার ধারণ করেছে। পিডিবি বলছে- তারা ১৬ শতাংশ লোডশেডিং করছে কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে প্রকৃতপক্ষে লোডশেডিং এর পরিমাণ ৩৫ শতাংশেরও বেশিী। জ্বালানি খাতে আওয়ামী লুটপাটের শিকার হয়ে আজ রাষ্ট্রীয় সংস্থা পিডিবি হয়ে পড়েছে দেউলিয়া। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বসানো যে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান নয়, সে কথা আমরা গোড়া থেকেই বারবার বলে আসছি। সরকার লুটপাটের উদ্দেশ্যে আমাদের কথায় কান দেয়নি। এরইমধ্যে গরীব দেশের মানুষের প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। অথচ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, তিনি নাকি নতুন সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছেন। সেই বিদ্যুৎ কোথায় যাচ্ছে দেশের মানুষ আজ তা জানতে চায়। আসলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই হিসাবের মধ্যে রয়েছে বিরাট শুভঙ্করের ফাঁকি। জনগণকে বিদ্যুত দেয়ো নয়, লুঠপাট করাই যার একমাত্র উদ্দেশ্য।’
‘শেয়ারবাজার নিয়ে ন্যক্কারজনক কেলেঙ্কারি ও লুটপাটের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করে দিয়েছে ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদপুষ্ট লুটেরাগোষ্ঠী’ বলেও অভিযোগ করেন খালেদা। তিনি বলেন, ‘এখান থেকে লুট হয়ে গেছে প্রায় লক্ষ কোটি টাকা। পথে বসেছে প্রায় ৩৩ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। তাদের পরিবার পরিজনরা আজ অসহায়। অনেকে বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। এই লুটপাটের কোনো বিচার হয়নি। বরং প্রতিবাদ করলে নেমে এসেছে জুলুম-নির্যাতন। ব্যাঙ্কিং খাতেও চলছে নৈরাজ্য ও হাহাকার। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ করে সরকার চালানোর কারণে ব্যাংকগুলো আজ চরম তারল্য সঙ্কটে ভুগছে। ফলে সব ধরণের প্রকল্প ঋণ প্রদান প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এলসি খুলতে অপারগতা প্রকাশ করছে অধিকাংশ ব্যাংক। দিশেহারা ব্যাংকগুলো উচ্চ হারে সুদ আদায় করতে বাধ্য হচ্ছে তাদের গ্রাহকের কাছ থেকে।’ তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার বাজারও টালমাটাল। সারা দুনিয়ায় ডলারের দাম কমছে অথচ শুধু বাড়ছে বাংলাদেশে। ৬৯ টাকার ডলারের বিনিময় হার এখন ৮৬ টাকার উপরে। সরকারি দলের লুটপাটের টাকা পাচারের কারণেই ডলারের দাম এতোটা বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। মুদ্রাস্ফীতির হার নজিরবিহীনভাবে সাড়ে এগারো শতাংশে উঠেছে।’
ফখরুলকে পূর্ণ মহাসচিব করার দাবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত থেকে পূর্ণ মহাসচিব করার দাবি ও ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের দাবিই ঘুরেফিরে আসছে বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলা থেকে আসা নেতাদের বক্তৃতায়। রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে রোববার সকালে শুরু হওয়া বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় নির্বাহী সভায় প্রায় সব বক্তাই এ দুই বিষয়ে জোর দাবি জানাচ্ছেন। এছাড়া ছাত্রদল ও যুবদল পুনর্গঠনের দাবিসহ আরো কিছু সাংগঠনিক দাবিও উঠছে তাদের বক্তব্যে। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর দুপুর পৌনে তিনটায় শুরু হয় নেতাদের অভিমত পর্ব। বিকেল পাঁচটার শধ্যেই জনা পঞ্চাশেক নেতার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা সারা হয়ে যায়।  সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলুর বক্তৃতা দিয়ে এ অধিবেশন শুরুর পর একে একে বক্তৃতা দেন মোজাহার আলী প্রধান এমপি, সংরক্ষিত আসনের এমপি আশিফা আশরাফী পাপিয়া ও রেহেনা আক্তার রানু, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, কাজী নুরুজ্জামান বাবুল, মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, কবীর মুরাদ প্রমুখ। আশিফা আশরাফী পাপিয়া বলেন, ‘বিএনপিতে হাইব্রিড নেতাদের আগমন ঘটেছে। তাদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিৎ। তাদের জন্য সাংগঠনিক সমস্যা হচ্ছে।’ কোন অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব কোন ব্যবসায়ীকে না দেওয়ারও আহবান জানান পাপিয়া। রেহেনা আক্তার রানু বলেন, ‘আন্দোলন আরো শক্তিশালী করতে হলে ঢাকা মহানগর বিএনপি পুনর্গঠন করে আরো শক্তিশালী করতে হবে। এছাড়া ছাত্রদল ও যুবদলও পুনর্গঠন করা দরকার।’ এছাড়া জিয়াউর রহমানের ওপর গবেষণার জন্য লাইব্রেরি করারও দাবি জানান রানু। কিশোরগঞ্জের ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগ করতাম। শেখ হাসিনাকে আমি চিনি। কঠির ও দুর্বার আন্দোলন ছাড়া তার ভীত নড়ানো যাবে না। আওয়ামী লীগের পতন ঘটানো যাবে না।’
ওয়েব-ক্যামে বিএনপির সভা দেখছেন তারেক
লন্ডনে বসেই নির্বাহী কমিটির সভা পর্যবেক্ষণ করছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে স্থাপিত ওয়েব ক্যামের মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য লন্ডনপ্রবাসী তারেক পুরো সভায়ই পর্যবেক্ষণ করছেন। এর আগে একই প্রযুক্তিতে গত ১২ মার্চ নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলের মহাসমাবেশও পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।
ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কারাগারে নির্যাতনের শিকার তারেক রহমান দীর্ঘ দিন ধরেই লন্ডনে চিকিৎসাধীন আছেন। বর্তমানে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তার নামে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
সংসদে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পরামর্শক নিয়োগের চুক্তি
পার্লামেন্ট করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: তিনটি সংসদীয় কমিটি শক্তিশালী করতে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পরামর্শক নিয়োগের চুক্তি হয়েছে। স্ট্রেংথেনিং পার্লামেন্টারি ওভারসাইট প্রকল্পের (এসপিও) আওতায় বিশ্বব্যাংকের মাল্টি ডোনার ট্রাস্ট ফান্ড এ পরামর্শক নিয়োগের যাবতীয় খরচ দেবে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড পলিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড (ওপিএম) পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদ সচিবের কার্যালয়ে সংসদ সচিবালয় ও ওপিএম এর মধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। সংসদ সচিবালয়ের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মাহ্ফুজুর রহমান ও ওপিএম এর পক্ষে কান্ট্রি ডিরেক্টর আশেকুর রহমান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের পর সংসদ সচিব বাংলানিউজকে জানান,  চুক্তির আওতায় বিশ্বব্যাংকের নেতৃত্বে গঠিত মাল্টি ডোনার ট্রাস্ট ফান্ডের (যুক্তরাজ্যের ডিএফআইডি, ইউরোপীয় কমিশন, কানাডার সিডা, ডেনমার্কের ডেনিডা) এসপিও প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি কাজ করবে। তিনি আরো জানান, সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত সরকারি হিসাব সস্মর্কিত স্থায়ী কমিটি, সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ও অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিকে শক্তিশালী করতে কাজ করবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। তিনি জানান, এছাড়া চুক্তির আওতায় জাতীয় সংসদের আর্থিক পর্যবেক্ষণ কাজে সক্ষমতা উন্নয়ন, সংসদীয় আর্থিক পর্যবেক্ষণ কমিটিগুলোর কার্যক্রম বিষয়ে জনগণের তথ্য জানার সুযোগ বৃদ্ধি, কমিটির কার্যপদ্ধতি ও কার্যবিবরণী লিপিবদ্ধ ব্যবস্থা ডিজিটালাইজ ও রেকর্ড ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করবে। সংসদ সচিব জানান, চার বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।  এদিকে এসপিও প্রকল্পের পরিচালক ও জাতীয় সংসদের যুগ্ম-সচিব (সিএস) এএসএম মাহবুবুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘যদিও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে, তারপরও সংসদ সচিবালয় একটি স্থায়ী কমিটি কক্ষ আধুনিকায়ন ও ভিডিও কনফারেন্সের সিস্টেম বসানোর কাজ এ প্রকল্পের মধ্যে সংযুক্ত করেছে।’ উল্লেখ্য, গত ২৫ মার্চ সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়ে অনুমোদন দেয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, পরামর্শক নিয়োগের খরচ ১০ কোটি টাকার উপরে গেলে ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদন নিতে হয়।
সংসদ সচিব জানান, ২০১০ সালের ২৫ নভেম্বর এ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংসদ সচিবালয়ের মূল্যায়ণ কমিটি ওপিএম এর প্রস্তাব কারিগরি ও আর্থিকভাবে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করে। এদিকে সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম গোলাম মোস্তফা, সংসদ সদস্য এস কে আবু বাকের, সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ আহমেদ, প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম-সচিব এ এস এম মাহবুবুল আলম চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

যুবকের মতোই ডেসটিনির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা : অর্থমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক


যুবকের মতোই ডেসটিনির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ‘‌যুবকের বিরুদ্ধে গঠন করা একটি কমিশনের মতোই ডেসটিনির গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণে একটি কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।’শনিবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে একটি সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানের পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় বিষয়টি নিয়ে এতো লেখালেখি হয়েছে যে, এ অবস্থায় সরকার তো কোনো অ্যাকশন না নিয়ে থাকতে পারে না।’ ডেসটিনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‌মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের মতো প্রতিষ্ঠান যেন সম্পদ ট্রান্সফার করতে না পারে, সেজন্য যুবকের মতো একটি কমিশন করা হবে।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা প্রসঙ্গে এদিন অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গত কয়েকদিনে পত্রপত্রিকায় ডেসটিনি নিয়ে এতো লেখালেখি হয়েছে যে এখন একটা ইমার্জেন্সি পরিস্থিতির মতো সৃষ্টি হয়েছে।’ যুবকের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যুবকের সম্পদ জব্দ করায় তারা সব সম্পদ পাচার করতে পারেনি। সেই অর্থ থেকে গ্রাহকদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে দেওয়া যাবে। এভাবে ডেসটিনির ক্ষেত্রেও একটি কমিশন করা হবে।’ বিষয়টি পর্যালোচনায় এরইমধ্যে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালণয়সহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিশন গঠনের আলোচনা শুরু হয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের সূত্র ধরে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন সংবাদপত্রে ডেসটিনি গ্রুপের ‘অবৈধ ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এমএলএম কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে অনুরোধ জানায়। এরপর নিজস্ব একটি অনুসন্ধান করে বাংলাদশ ব্যাংক অনুমোদনবিহীন কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন না করতে একটি নির্দেশনা জারি করে। ১ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা ওই নির্দেশনায় বলা হয়, অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক উচ্চ হারে সুদ ও আকর্ষণীয় মুনাফার লোভ দেখিয়ে জনসাধারণ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে।

আওয়ামী লীগের  সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে  জটিলতা
মিজানুর রহমান সুমন
নানা জটিলতায় হাবুডুবু খাচ্ছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তগুলো। আগামী  নির্বাচনকে শক্তভাবে  মোকাবেলা ও দলকে সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী করতে আওয়ামী লীগের নেয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে ধীরগতি দলের হাইকমান্ডকে ভাবিয়ে তুলেছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা এ নিয়ে পরস্পরকে দুষছেন। একজন আঙুল তুলছেন আরেকজনের দিকে। এছাড়া অপেক্ষাকৃত সিনিয়র নেতাদের সঠিক দায়িত্বে না দেয়ায় দলের অবস্থাগত পরিবর্তন হচ্ছে না বলেও মনে করছেন অনেকে। এ অবস্থায় সাংগঠনিক কার্যক্রমকে পুরোপুরি বাস্তবায়নে নীতিনির্ধারণী নেতাদের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকেই। বিরোধী দল বিভিন্ন দাবিতে এখন রাজপথে। সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগও রাজপথে তাদের মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করার মতো সাংগঠনিক ভিত আগের মতো শক্ত নয়। এছাড়া ১/১১ সরকারের অনেক ভুক্তভোগী নেতা চেয়েছিলেন তাদের অপকর্মের বিচার বর্তমান সরকার করবে। কিন্তু গত তিন বছরে সরকারের তরফ থেকে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়ায় সেসব নেতা হতাশা প্রকাশ করেছেন। সেই সরকারের নির্যাতনের শিকার দলের সিনিয়র নেতা ও এমপি মহিউদ্দিন খান আলমগীর, শেখ সেলিম প্রমুখ বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে বিচার চেয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে মহাসমাবেশ করল ১৪ দল। সে মহাসমাবেশ সফল হলেও চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সকল সারির নেতাকে এক কাতারে কাজ করতে দেখা যায়নি। সেখানকার সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকে আর গুছিয়ে উঠতে পারেনি দলটি। বর্তমানে বিরোধী দলকে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার দিক  থেকে পেছনে ফেলতেই আওয়ামী লীগ দফায় দফায় নিত্যনতুন কর্মসূচি ঘোষণা করছে। কিন্তু এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে খুব একটা আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন অজুহাতে কর্মসূচির দিনক্ষণ বদল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। পরে নির্ধারিত কর্মসূচি নিয়ে  কোনো খোঁজ থাকে না  নেতাদের। আওয়ামী লীগের প্রবীণ কয়েকজন নেতা  জানান, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নতুন করে কমিটি করার বিষয়ে নেতাদের খেয়াল নেই। এরই মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন চলে আসায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড অনেকটাই নির্বাচনকেন্দ্রিক হয়ে গেছে।  বছরের শুরুর দিকে বেশ কিছু পাবলিক জরিপে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে দেখানো হলেও মূলত প্রবীণ নেতাদের অনেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। দলের মন্ত্রীদের পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়ে অতি আশাবাদী হওয়াটাকে অনেক নবীন-প্রবীণ নেতা  ক্ষতিকর বলে মনে করছেন। বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা ও কমিটির বৈঠকে  নেয়া সিদ্ধান্তের বেশিরভাগই কাগজে-কলমে থেকে যায়। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পর প্রথম বৈঠকেই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ওপর জোর দেয়া হয়। কিন্তু আদতে হয়নি  কোনোকিছুই। ২০১০ সালের ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সিদ্ধান্ত হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জনমত গড়তে  হবে,কিন্তু এ পর্যন্ত কিছু বক্তৃতা বিবৃতি ছাড়া তেমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই। এর আগে ২০০৯ সালের ৩ অক্টোবর বর্তমান  কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রথম  বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দলের মিডিয়া  সেন্টার পুনর্গঠন ও সক্রিয় করা,নিয়মিত দলীয় বুলেটিন প্রকাশ,দলের পৌর, উপজেলা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও  জেলা সম্মেলন শেষ করা, দলের প্রতিটি বিভাগের  জেলা ও উপজেলা পর্যায়সহ সব স্তরে নিজস্ব অর্থায়নে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যালয় স্থাপন এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য পদ নবায়ন কার্যক্রম শুরু। এ পর্যন্ত এসব সিদ্ধান্তের  বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে, সরকারের শরিক ও ১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির  নেতাদের  বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তা বাস্তবায়ন হয় না বলে  জোটের শরিকরা অভিযোগ করে আসছে। ১৪ দলের একাধিক সমন্বয় বৈঠকে ১৪ দলকে জেলা পর্যায়ে বিস্তৃত করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে জাতীয় কনভেনশনসহ জোটগতভাবে বিভাগীয় মহাসমাবেশ, আইন-শৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন সরকারি কমিটিতে  জোটের শরিকদের প্রতিনিধি রাখা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয় নিয়ে আলোচনা, প্রতি মাসের শেষ সপ্তাহে ১৪ দলের সভা করা। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে অনিয়মিতভাবে ১৪ দলের দু-একটি  বৈঠক হলেও  অন্যান্য আলোচ্য বিষয়গুলোতে সরকারকে পরামর্শ দেয়ার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বিভিন্ন সরকারি দায়িত্বে থাকায় দলের সাংগঠনিক কাজে মনোযোগী হতে পারছেন না অনেকে। সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবলীগের  নেতারা অভিযোগ করেন, সবাই আখের  গোছাতে ব্যস্ত, তাই দলের সাংগঠনিক কাজে সময় দিতে পারছেন না। দলের ক্রেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দলের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, দলের অনেক  নেতা সরকারি দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত। তারা দলের কাজে সময় দিতে পারেন না। এ কারণে সিদ্ধান্ত  নেয়া হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
বেতন ভাতা ঠিক রাখতে বিরোধীদলীয় নেতা সংসদে এসেছিলেন -প্রধানমন্ত্রী
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট


সংসদের বেতন ভাতা ও আসন রক্ষা করার জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রী ও তাদের দল সংসদে এসেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সংসদের আসন ও বেতন-ভাতা রক্ষা করার জন্যই বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সংসদে এসে দীর্ঘ ২ ঘণ্টা বক্তব্য দিয়ে চলে গেলেন।শুক্রবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি পরিহার করার আহবান জানিয়ে বলেন, ধ্বংসাত্মক কর্মকা- বরদাশত করা হবেনা। গত ১৮ ডিসেম্বর ভোর বেলায় তারা বোমাবাজিতে নেমেছিল। এরপরও আমরা তাদেরকে কর্মসূচি পালনে সুযোগ দিয়েছি। ১৮ ডিসেম্বরের পর তাদেরকে মাঠে নামতে দেওয়া ঠিক হয়নি। তারপরও আমরা তাদের বাধা দেইনি। সভার শুরুতেই সমুদ্রসীমা অধিকার অর্জনে প্রধানমন্ত্রীকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়। বিরোধী দলের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশৃঙ্খলার পথ ছেড়ে গণতন্ত্রের পথে আসুন। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে চাইলে করুণ কিন্তু কর্মসূচির নামে বিশৃঙ্খলা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাইলে বরদাশত করা হবে না। দলের কার্যনিবাহী সংসদের বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে আগামী নির্বাচনে ভোট প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে সমুদ্রসীমা নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাগজপত্র তৈরি করে অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে আন্তর্জাতিক আদালতে যাই। আমাদের পক্ষে রায় আসায় সমুদ্রসীমায় অতিরিক্ত ১ লাখ ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আশা করি জনগণ আমাদের ভোট দেবে। আবার ক্ষমতায় আসতে পারলে ভারতের সঙ্গে যে মামলা রয়েছে সেটাতেও আমরা বিজয়ী হতে পারব। মায়ানমারের সঙ্গে মামলায় বিজয়কে দেশের সব মানুষের অর্জন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ গত নির্বাচনে আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে বলেই আমরা সমুদ্রসীমায় আগামী প্রজন্মের জন্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। এটাই বড় কথা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সমুদ্র সীমা নির্ধারনে আইন প্রনয়ন করেন। এরপর যে সরকারগুলো এসেছে এটা নিয়ে কোন উদ্যোগই নেয়নি।  আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেই। তখন ১১ বছরের মধ্যে কাগজপত্র জমা দেয়ার সময় ছিলো। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে বিষয়টি নিয়ে কোন কাজই করেনি। মামলার রায় প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এই রায়ে সকলেরই (বাংলাদেশ ও মায়ানমার) বিজয় হয়েছে। কারোই পরাজয় হয়নি। দুই দলেরই উইন উইন পজিশন। আমরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বিজয় আনতে পেরেছি। শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেন, সমুদ্র বিজয়ের জন্য বিরোধী দলীয় নেত্রী সংসদে গিয়ে সরকারকে ধন্যবাদ দিলেন। আবার বাইরে উনার দলের নেতারা এটা নিয়ে নানান উল্টাপাল্টা কথা বলছেন।
আর বলবেনই না কেন! যে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে তাদের ওঠাবসা, ঘর-সংসার সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। দুর্নীতি, এতিমের টাকা মেরে খাওয়া, ১০ ট্রাক অস্ত্র আমদানীর বিচার হচ্ছে। এগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তারা নানা অপতৎপরতা শুরু করেবে এটাই স্বাভাবিক। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফজরের নামাজের ওয়াক্তে মানুষ যখন নামাজে যাবে তখনই তারা (বিএনপি) বোমাবাজি শুরু করেছে। ১২ মার্চ তারা কর্মসূচির নামে ঢাকা অবরোধ করতে চেয়েছিল। আমরা তাদের কর্মসহৃচিতে বাধা দেয়নি। তারা মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দিয়েছে। আমরা শুধু আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক করি যাতে অস্ত্র আর বিষ্ফোরক নিয়ে আসতে না পারে। তারা ওইদিন কর্মসূচির নামে বোমাবাজি শুরু করলে তখন মানুষ কী বলত। সরকার হিসেবে তার দায়িত্ব আমাদের ওপর পড়ত। কারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের রয়েছে। তিনি বলেন, ১৮ মার্চ তারা যা করেছিলেন তারপর তাদের মাঠে নামতে দেওয়া ঠিক হয়নি। তারপরও আমরা তাদের মাঠে নামতে দিয়েছি। তারা রোড মার্চ করেছেন। চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশ করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রদল শিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডব করলো। আমরা সেটা কীভাবে মেনে নিতে পারি। ছাত্রদের জীবন নষ্ট করবে, শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করবে আমরা তা মেনে নিতে পারি না। আমাদের দলের কেউ হলেও আমরা তা মেনে নেইনি। আমরা স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে- দলের হোক আর যেই হোক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং তা নেয়াও হয়েছে। আর সেখানে শিবির-ছাত্রদল এ ধরনের ঘটনা ঘটালে আমরা বরদাশত করবো কীভাবে? বিরোধী দল সদস্য পদ আর বেতন ভাতা রক্ষা করতে সংসদে গিয়েছিলেন অভিযোগ করে সংসদ নেতা বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা সংসদে গেলেন, আর বাইরে এসে বললেন কথা বলতে দেওয়া হয় না। বিরোধী দলীয় নেতা সংসদে প্রায় দুই ঘন্টা বক্তব্য দিলেন। অথচ আমাকে স্পিকার তত সময় দেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার দলের (বিএনপি) এমপিরা সংসদে অশ্লীল ভাষায় কথা বললেন, আমাদের এমপিদের ওপর চড়াও হলেন। স্পিকারের এখতিয়ার রয়েছে, তিনি চাইলে সার্জন এট আর্মস ডেকে তাদের বের করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি হয়তো চেয়েছিলেন বিরোধী দল সংসদে থাকুক।’
পাবানায় চলছে ইছামতি নদী দখলের প্রতিযোগিতা
জহিরুল ইসলাম
পাবনা, ৬ এপ্রিল: উত্তর বঙ্গের ঐতিহ্যবাহী প্রবহমান ইছামতি নদী এখন প্রায় মৃত। দখলদাররা পাবনা শহরসহ প্রত্যন্ত গ্রামেও নদী দখল করে চাষাবাদ, বাগান, বাড়ি ঘর বানাচ্ছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার আটঘরিয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে কিছু লোক ইছামতি নদী ভরাট করে চাষাবাদ, বাগান ও বাড়ি ঘর বানাচ্ছে। লক্ষ্মীপুর গ্রামের মোহা সরদারের ছেলে আব্দুল মালেক  সরদার গ্রামের মধ্যপাড়া বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমজাদ সাহেবের বাড়ির সামনে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কাঠা নদী মাটি ফেলে ভরাট করে বাড়ি বানাচ্ছে। এই বাড়ি বানানোর কারণে নদীর প্রবাহ থাকবে না। লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা আসনের মেম্বার রুবিয়া খাতুন জানান, “তিনি প্রথম দিনই মালেকের অবৈধভাবে নদী ভরাট করতে বাধা দেন। কিন্তু তিনি তার কথা না মেনে স্থানীয় কিছু মাতুববরের পরামর্শে ভরাট চালিয়ে যাচ্ছেন।” নদী ভরাট নিয়ে কথা বলতেই লক্ষ্মীপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন, আব্দুস সামাদ, সিদ্দিক হোসেন, আব্দুল আলিম, তোফাজ্জল সরদার, ওসমান গনি, হাবিবর শেখ, আবুল কাশেম জানান, সামনেই আতাইকুলা বাজার এলাকার এই ইছামতিতে পানি থৈ থৈ করছে। অথচ দখলদারদের মাটি ভরাট বাণিজ্যের কারণে এ এলাকার ইছামতি নদী প্রায় মৃত। অনেকে ব্যঙ্গ করে বলেন, “শুধু দাফন বাকি আছে। ” লক্ষ্মীপুর গ্রামের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “ওই গ্রামেরই মোসলেম সরদার নামের এক মাতুববরের যোগ সাজোশে মালেক গঙ্গরা নদী ভরাটে মেতে উঠেছেন। চোখের সামনে অবৈধ ভরাট বাণিজ্য দেখলেও কেউ ওই মাতুববরের ভয়ে মুখ খুলছে না। কেউ দখলবাজ মালেককে নিষেধ করলে সে বলে তোদের কথায় নয়, মোসলেম সরদার বললেই মালেকের মাটি ফেলা বন্ধ হবে। গ্রামবাসীদের দাবি মাত্র কয়েকশ গজ দূরেই রয়েছে পুলিশের একটি অস্থায়ী ক্যাম্প। প্রশাসনের সামনেই এসব ব্যক্তিরা সরকারি জায়গা দখল করছে। তারা আরো জানান, মালেকের মতো অনেকেই এখন স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নদীর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বাড়ি-ঘর বানাচ্ছে। লক্ষ্মীপুর গ্রামের অনেকেই সাংবাদিকদের বলেন, প্রশাসন দ্রুত এসব দখলবাজদের প্রতিহত না করলে এ সপ্তাহের মধ্যেই লক্ষ্মীপুর থেকে শিবপুর হয়ে একদন্ত বাজার পর্যন্ত অনেক স্থানেই ইছামতি নদীর মাঝে পানির বদলে দেখা যাবে শুধু ঘর বাড়ি। দখলবাজ আব্দুল মালেকের সঙ্গে কথা বলতে তার বাড়িতে গেলে কথা বলতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর ফাঁড়ির পুলিশ জানায়, মাটি ভরাট করা আমরা দেখেছি কিন্তু আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। তাই কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। অবাধে চলছে পাবনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইছামতি নদী দখলের প্রতিযোগিতা। এছাড়াও নদী লিজ, নদী খনন, নদী পুণরুদ্ধার নিয়ে চলে প্রশাসনের অর্থ আয়ের বিভিন্ন প্রক্রিয়া। এলাকাবাসীর দাবি স্থানীয় এমপি ও জেলা প্রশাসন এসব দখলবাজদের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে নদীর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনুক।
মাশরুম চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামে
এম মাঈন উদ্দিন
পুষ্টি ও ঔষুধি গুণে ভরা হারবাল সবজি হিসেবে খ্যাত মাশরুমের চাষ স্বল্প সময়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঘরে ঘরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে বেকার যুব শ্রেণীর আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে বহুগুণে। ইতিমধ্যে অনেকে মাশরুম চাষে সাফল্য লাভের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বিদেশে ও রফতানি শুরু করেছেন। কম সময়ে স্বল্প পুঁজিতে মাশরুম চাষে সফলতা এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে পাচ্ছে। অনেকে সখ করেও বাড়িতে মাশরুম চাষ করে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর আর্থিকভাবে ও সচ্ছলতার মুখ দেখছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে দক্ষিন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, দোহাজারী, পটিয়াসহ আশপাশ এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ মাশরুম চাষ। উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে বেকার যুব শ্রেণীর জন্য প্রশিক্ষণ ও স্বল্প পুঁজির ব্যবস্থা করা গেলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ও অর্জন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মাশরুম এক প্রকার উদ্ভিদ, ঠিক যেন ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে। পুষ্টিবিশেষজ্ঞদের মতে, মাশরুম নিয়মিত খেলে ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ব্রংকাইটিস, এজমা, জন্ডিস, রক্তশুন্যতা, যৌন অক্ষমতা, কিডনি, আলসার, পাইলস, বন্ধ্যাত্ব, ডেংগু জ্বর প্রভৃতি জটিল জটিল রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। তাছাড়া মাশরুম টনিকের মতো মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শরীরে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। চীন ও জাপানসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে দীর্ঘ জীবন লাভের উপযোগী খাবার হিসেবে মাশরুমের কদর বেড়েছে। এ ছাড়া ও মাশরুম স্যুপ, মাছ, ফ্রাই, ডিম, সবজি, নুডুলস, ও মলেটসহ বিভিন্ন খাদ্যের সঙ্গে খাওয়া যায়। আমাদের দেশে নামি-দামি ফাস্টফুডের দোকানে মাশরুমের খাদ্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ অঞ্চলের লোহাগাড়ার চুনতিতে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠা ‘এরোমা’ মাশরুম জোনের স্বত্বাধিকারী সাদত আলী  জানান, ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ‘মাশরুম বাংলাদেশ ট্রেনিং সেন্টার’ এ প্রশিক্ষণ নিয়ে পাঁচ হাজার টাকার বিনিয়োগ করে মাশরুম চাষ শুরু করেন। বর্তমানে মাশরুম চাষ থেকে সে প্রতি মাসে ৪০/৫০ হাজার টাকা আয় করেন বলে জানা যায়। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নে কোনো না কোনো বাড়িতে মাশরুমের চাষ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মহিলারা বেশ মনোযোগ দিচ্ছেন মাশরুম চাষে। তাছাড়া এলাকার বেশ কিছু যুবক প্রশিক্ষণ নিয়ে যৌথভাবে এ ব্যবসা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। মাশরুমের তৈরি খাদ্যসামগ্রী, রূপচর্চার উপাদান ও বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে। এর মধ্যে মাশরুম আচার, জেলি, সস, হালিম মিক্সড ও রূপচর্চার জন্য উপটান অন্যতম। মাশরুম ব্যবসায়ী আমির হোসেন জানান, সরকারিভাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাত উপজেলায় কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই। তা ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বিদেশে মাশরুম রফতানি করার ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। ফলে তাদের ঢাকায় গিয়ে বিদেশে মাশরুম রফতানির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক  সরকারের উপদেষ্টা  সি এস করিম এ ব্যাপারে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও সহযোগিতা দেয়ার কথা বলছিলেন, কিন্তু তা আজো বাস্তবায়িত হয়নি।
মিরসরাইয়ের দুঃখের নাম ফেনী নদী
এম মাঈন উদ্দিন
বর্তমান সময়ের আলোচিত ফেনী নদী বছরের পর বছর গিলে খাচ্ছে বাড়িঘর ফসলী জমি। গত এক দশকে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অনেক বাড়িঘর  ফসলী জমি। বাড়িঘর হারিয়ে অনেক এখন নিঃস্ব। চোর ডাকাত হানা দিলে কিছু না কিছু থাকে, আগুনে পুড়লেও ভিটেমাটি রক্ষা পায়; কিন্তু সবকিছু কেড়ে নেয় নদী ভাঙন। ভাঙনের কবলে নদীগর্ভে বিলীন হয় সবই। প্রকৃতির এই নির্মম সত্যের প্রতিফলন ঘটছে মিরসরাইয়ে। ফেনী নদী ভাঙছে। বছরের পর বছর এ ভাঙনে নদীর পেটে হারিয়েছে অসংখ্য বসতভিটা এবং কৃষিজমি। বিলীন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বহু স্মৃতিবিজড়িত আমলীঘাট বাজার। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া ব্লক টিকছে না বেশিদিন। ভাঙন কবলিত মানুষের পুনর্বাসন এবং শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সরকারের কোনো উদ্যোগও নেই। চলতি বর্ষায় স্রোতের তোড়ে ভাঙনের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবল বর্ষণের পাশাপাশি ভাঙনের অন্যতম কারণ অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন। এখানেও সরকারের কোনো নজরদারি না থাকার খবর পাওয়া গেছে। কৃষিজমির পাশাপাশি বসতভিটা হারিয়ে গৃহহারা হচ্ছেন অনেকেই। তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় না বলে অতি কষ্টে কাটছে তাদের পরবর্তী জীবন। সরেজমিন অনুসন্ধানে ভাঙনের নানা দৃশ্য ও এর কারণ জানা গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফেনী নদীর ভাঙনের সবচে বেশি শিকার মিরসরাইয়ের চার নম্বর ধুম ইউনিয়নের মোবারকঘোনা ও শুক্কুরবারইয়াহাট গ্রাম। ভাঙন কবলিত এ দুই গ্রামের হাজারো মানুষ বিক্ষিপ্তভাবে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। কেউ রাস্তার পাশে ঝুঁপড়িতে, কেউবা বস্তিতে। রোদ-বৃষ্টি এদের জীবনে সমানে সমান। উদ্বাস্তু শিবিরের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকির মধ্যে। কেবল এ দুই গ্রাম নয়, ফেনী নদীর পেটে মিলে গেছে করেরহাট ইউনিয়নের অলিনগর, আমলীঘাট, পশ্চিম জোয়ার; হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর গ্রামের অসংখ্য বাড়িঘর। করেরহাটের অলিনগর ও আমলীঘাট এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাইপের মাধ্যমে অবিরাম চলছে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কাজ। আমলীঘাট এলাকায় কয়েকটি স্থানে বসানো ব্লক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আর অলিনগরে কোনো ব্লক না থাকায় ভাঙনের গতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিমূহুর্তেই ভেঙে নদীর পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি। সব স্থানেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে পাইপের মাধ্যমে। নদীর তলদেশ থেকে সংগ্রহ করে ওপরে স্তুপ করে রাখা পর্যন্ত নানা প্রক্রিয়ায় কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। নদীর মধ্যবর্তী স্থানের ন্যায় ধারের বালু উত্তোলন করার ফলে ভাঙনের সূত্রপাত ঘটে। বালু উত্তোলন শ্রমিক আমজাদ হোসেন বলেন, “নদীর ধার থেকেও বালু উত্তোলন করা হয়। এখানে কখনো সরকারের কোনো তদারকি কর্মকর্তাও আসেন না।” আমলীঘাট এলাকায় নদীর ধারেই বসতঘর রাবেয়ার। তিনি বলেন, “প্রতিদিন চেয়ে চেয়ে দেখি আর দিন গুণি। এবারের বর্ষায় যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, মনে হচ্ছে আর বেশিদিন রেহাই পাব না।” নদীগর্ভে বসতভিটা বিলিয়ে যাওয়ার পর কোথায় আশ্রয় হবে এমন কথা শুনতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, “ওপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানে না।” অলিনগর গ্রামের বাসিন্দা মো. আহসান উল্লাহ (৭০) বলেন, “ওই যে বইয়ে আছে না, নদীর একূল ভাঙে, ওকূল গড়ে। ঠিক তেমনই হচ্ছে ফেনী নদীতে।” অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহামায়া সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প এলাকার পাহাড়গুলোতে বসবাসকারী বাসিন্দাদের ৯০ শতাংশ ভাঙন কবলিত। অলিনগর, গুচ্ছগ্রাম, মোবারকঘোনাসহ বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পগুলোতে তাদের ঠাঁই হয়নি।
সেখানে আশ্রয় পেতেছে প্রভাবশালী চক্র। পূর্ব দুর্গাপুর এলাকায় পাহাড়ে বসবাসরত বাসিন্দা আবুল হোসেন ও নুরুল ইসলাম বলেন, “ভাঙনে যখন বসতভিটা হারিয়ে পথে বসে যাই, তখন অনেক চেষ্টা করেও আবাসন প্রকল্পে বসবাসের সুযোগ পাইনি। পরবর্তী বিভিন্ন সময় পথের ধারে অস্থায়ী তাঁবু টানিয়ে রাত কাটিয়েছি। গত আট বছর ধরে বাস করছি পাহাড়ের পাদদেশে।” ফেনী নদীর ভাঙন রোধে গত বছর উদ্যোগ নিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ওই বছরের ২৫ জুলাই  ৩৬ লাখ টাকার ড্যাম্পিং কাজের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের প্রাথমিক পদক্ষেপ নেয়া হয়। কিন্তু কাজে নিম্নমান ও ব্লক মানসম্মত না হওয়ায় সেই প্রতিরোধক ব্যবস্থাও ভেস্তে যায়। ফলে ভাঙন চলতে থাকে আগের ন্যায়। বর্তমানে ভাঙন প্রতিরোধে সরকারের নতুন কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানালেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদ্বয়। কৃষিজমি ও বসতভিটা নদীর পেটে চলে যাচ্ছে স্বীকার করে তারা জানিয়েছেন, সরকারের উচিৎ এখনই শক্ত প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেয়া। ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, “প্রায় ছয় মাস পূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙনের চিত্র সরেজমিন প্রত্যক্ষ করে গেছেন। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেও এখনো এর কোনো বাস্তব চিত্র চোখে পড়েনি।” ধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক ইসমত জামসেদী বলেন, স্রোতের সাথে পাল্লা দিয়ে ভাঙছে নদী। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তা এখনো আসেননি।
মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
মূল্যস্ফীতির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। নিত্যপণ্যের মতো মূল্যস্ফীতির হার ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। খাদ্য বাদে অন্য খাতে মূল্যস্ফীতির নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি হিসাবে মার্চে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ১ শতাংশ। গত বছরের মার্চে যে পণ্যের দাম ছিল ১০০ টাকা এখন এ বছরের মার্চে গড়ে ওই পণ্যের দাম ১১০ টাকা ১০ পয়সা। এক বছরের গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ এ তথ্য প্রকাশ করেছে। সংস্থার হিসাবে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে ধরা হয়েছিল। আর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়কালে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ভোক্তা ঋণ কমানো এবং বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। কিন্তু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। চলতি (২০১১-২০১২) অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ মাসে অর্থাৎ প্রথম নয় মাসে মূল্যস্ফীতির গড় দাঁড়িয়েছে ৮.১৭ শতাংশ  যা ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে এ সময়ে ছিলো ৬.৮৯ শতাংশ। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে মূল্যস্ফীতির বার্ষিক গড় মূল্যের হার ছিলো ৭.৩১ শতাংশ। জানা গেছে, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ২০১১ সালের মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিলো ১০.৪৯ শতাংশ। যা ২০১০ সালের মার্চ মাসে ছিলো ৮.৭৮ শতাংশ।  এ সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০.৮০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৩.৮৭ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। পক্ষান্তরে খাদ্য বহির্ভূতমূল্যস্ফীতির হার ৫.৬০ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ৪.৩২ শতাংশে দাঁড়ায় । তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, বাজেটে যে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, বাচ্চবে তা সম্ভব নয়। অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে থাকবে। তিনি বলেন, মুদ্রানীতি নিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তার মতে, ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমানো হলে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না। কারণ টাকার দাম কমানো হলে আমদানিনির্ভর পণ্যের খরচ বেড়ে যায়। ২০১০ সালে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূতমূল্যস্ফীতি উলে¬খযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। জালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি  অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা  মুদ্রাস্ফীতির চাপকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে অনেকাংশ উর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্যকরা গেছে । হিসাব অনুসারে  ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে সরকারের নির্ধারিত  লক্ষ্যমাত্রা হতে দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি হয়েছে মুল্যস্ফীতি। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ছয় শতাংশ থাকলেও পুরো অর্থবছরজুড়েই গড়ে ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ মুল্যস্ফীতি ঘটেছে। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির পরিমান ছিল ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। বিএসএস এর প্রতিবেদনে দেখা যায় গতবছর খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতির তুলনামূলক বেশি বৃদ্ধি পেলেও কমেছে সাধারণ মূল্যস্ফীতির পরিমাণ। গত অর্থবছরে খাদ্যদ্রব্যে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ এর আগের বছর অর্থাৎ ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে এ হার ছিলো ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অন্যদিকে, সাধারণ মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ থাকলেও ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে তা হ্রাস পেয়ে দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমে আসে। এদিকে কয়েক বছরের মূল্যস্ফীতি পর্যালোচনায় দেখা যায় ২০০৭-২০০৮অর্থ বছরে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ । এর পর হতেই মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করে। তবে ২০০৯ এর জুলাই মাস থেকে দুই এক মাস ছাড়া প্রায় প্রতি মাসেই মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকে। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতেও মূল্যস্ফীতির হার দুই অংকের ঘর ছাড়িয়েছিল। তবে আমাদের দেশে খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন আশানুরূপ হওয়ায় এখনও মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে সংশিহ্ম¬ষ্টরা মনে করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত অর্থবছরে দেশে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। তাছাড়া কৃষি ঋণ ছাড় করা হয়েছে ১১শ’ কোটি টাকার ও বেশি। বেসরকারি ঋণ ও প্রায় ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ সবকিছুরই প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন সংশি¬ষ্টরা। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করারয় চলতি বছর মূল্যস্ফীতি আরো কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোর রিজার্ভের পরিমাণ বৃদ্ধি, রেপো ও রিভার্স রোপোর সুদের হার বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
নেই ট্রেড ইউনিয়ন, রেশনিং ব্যবস্থা, ৪০ শতাংশ কারখানায় নেই মজুরি কাঠামোয় বেতন
বঞ্চনার কারণে উত্তপ্ত গার্মেন্ট সেক্টর
সিদ্দিকুর রহমান
দেশের গার্মেন্ট পরিস্থিতি এখন মোটেই ভালো যাচ্ছে না। ২০১০ সালে ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার টাকা দিয়ে শ্রমিকদের জীবন জীবিকা চলছে না। ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ঘোষণার সময় অঙ্গীকার সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশের বেশি গার্মেন্ট শ্রমিক রেশনিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। সকল শ্রমিকদের রেশনিং সুবিধার আওতায় আনার বিষয়ে মালিক পক্ষ বার বার অঙ্গীকার করার পরও তারা আর সে অঙ্গীকার রাখছেন না। অপরদিকে প্রায় ৪০ শতাংশ গার্মেন্টসে ২০১০ সালের মজুরি কাঠামো অনুযায়ী মজুরিও প্রদান করা হচ্ছে না। প্রায় সকল গার্মেন্টসে অবদমন করে রাখা হয়েছে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার। বস্তুত গার্মেন্ট শ্রমিকরা নিপীড়নমূলক শ্রম পরিস্থিতিতে শ্রম দিয়ে চলেছেন। বঞ্চনার মনোভাব সর্বত্র গার্মেন্ট শ্রমিকদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। সম্প্রতি এ ক্ষোভের প্রচণ্ড বহিপ্রকাশ ঘটেছে ঈশ্বরদী ইপিজেড-এ। চাপা ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে সাভার, অদমজী ইপিজেডসহ বিভিন্ন স্থানের গার্মেন্ট শ্রমিকরা। দ্রুত গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নেয়া না হলে ঈশ্বরদী ইপিজেড এর মতো বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির আশংকা রয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্প রক্ষা জাতীয় মঞ্চ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্প রক্ষা জাতীয় মঞ্চ এর অন্যতম নেতা লাভলী ইয়সমীন বলেন, দেশে ৬ হাজারের বেশি গার্মেন্ট কারখানায় ৩৫ লাখের বেশি শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ হচ্ছেন নারী শ্রমিক। এসব শ্রমিকদের হাড়ভাঙ্গা শ্রম-ঘামের উপর এ শিল্প দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতি। অথচ এই শ্রমিকদের জীবনে সুখ নেই, শান্তি নেই, নেই জীবনের নিরাপত্তা। মালিক শ্রেণীর শোষণ আর দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতের কারণে তাদের জীবন দিশেহারা। নিপীড়নমূলক শ্রম পরিস্থিতিতে বছরের পর বছর কাজ করতে গিয়ে শ্রকিরা ‘শ্রমদাস’-এ পরিণত হয়েছেন। এ শিল্পের বিদ্যমান শ্রম পরিবেশ উন্নয়নে মালিক পক্ষ ও সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। কিন্তু বাস্তবে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। সরকার ও মালিক পক্ষ শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে গার্মেন্ট সেক্টরে ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়ার আশংকা রয়েছে। টেক্সটাইল গার্মেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী কোনো গামেন্ট কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নেই। এর ফলে গার্মেন্ট শ্রমিকরা ন্যায্য বেতনের দাবিতে যথাযথ নিয়মতান্ত্রিক পথে মালিক পক্ষের সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারছেন না। আবার যেসব গার্মেন্ট নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করেছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ গার্মেন্ট গ্রেড পরিবর্তন করে মজুরি দিচ্ছে। একদিকে মজুরি কাঠামোর যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া এবং অপরদিকে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রদান না করায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের মধ্যে প্রচণ্ড চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার না থাকলে কি ঘটনা ঘটে তার জ্বলন্ত উদাহারণ হচ্ছে ইপিজেডগুলো। তবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, তাদের তালিকাভুক্ত সকল গার্মেন্টসে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ দাবির বিষয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠনসমূহ বলছে, ঘোষিত নিুতম মজুরি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেছে দেশের প্রায় ৬ হাজার গার্মেন্টসের মধ্যে ৩০-৩৫টি গার্মেন্ট মাত্র। বাকি গার্মেন্টগুলো শ্রমিকদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করছে এবং নানাভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। অনেক গার্মেন্ট আংশিক মজুরি কাঠামোও বাস্তবায়ন করছে না, ইচ্ছামাফিক বেতন দিচ্ছে। সরকারের কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অফিস সূত্র বলছে, ঘোষিত মজুরি কাঠামোতে ফাঁক রয়েছে। পুরনো শ্রমিকরা ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। মজুরি কাঠামোর যথাযথ বাস্তবায়নে মালিকপক্ষের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। সার্বিকভাবে মজুরি কাঠামো এবং এর বাস্তবায়নের ত্র“টি নিয়ে গার্মেন্ট সেক্টরে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। উল্লেখ্য, নতুন মজুরি কাঠামো ২০১০ সালের নভেম্বর থেকে কার্যকর করার জন্য সরকারিভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এদিকে বিজিএমইএ’র সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বিশ্ব মন্দার সময় এখন দেশের গার্মেন্ট সেক্টর নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের রপ্তানি কমেছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ কম। পোশাকের মূল্য কমে যাওয়ায় মুনাফা কমে গেছে। পাশাপাশি জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, মজুরি বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিতে ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে গার্মেন্টসের কাপড় ও অন্যান্য উপকরণ আমদানির ব্যয় বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে রয়েছে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট ও ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার। এ অবস্থায় এই শিল্পের শ্রমিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে সত্যি। তবে বিজিএমইএ নানা সমস্যার মধ্যেও শ্রমিকদের কল্যাণে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অনেক কারখানায় শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা  হয়েছে। সব করখানায় পর্যায়ক্রমে রেশনিং ব্যবস্থা চালু হবে। কর্ম পরিবেশ উন্নয়নেও বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের নেতা শফিকুল ইসলাম সবুজ বলেন, এখন পর্যন্ত যে হিসাব রয়েছে তাতে দেখা যায় এ পর্যন্ত আংশিক মজুরি কাঠামোসহ মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করেছ ৬০ শতাংশের মতো গার্মেন্ট। প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়ন চালু হয়নি এক শতাংশ গার্মেন্টসেও। দেশের সকল শ্রমিক সংগঠন এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি) বলছে, তৈরি পোশাক খাতে ট্রেড ইউনিয়ন চালু থাকলে শ্রমিকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ এখনকার মতো এভাবে থাকতো না। মালিকপক্ষের চাপের কারণে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না।  গার্মেন্টসের যারা মালিক তাদের সবাই কার্যকর ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে দিতে রাজি নন। এ বিষয়ে তাদের টালবাহানার অন্ত নেই। ট্রেড ইউনিয়ন চালুর বিষয়ে বিজেএমইএ’র প্রবল আপত্তির কারণে সরকারও এ বিষয়টি থেকে সরে গেছে। যথাযথভাবে ট্রেড ইউনিয়ন না হওয়ায় শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার শ্রমিকরা বিভিন্ন কারণে বাস্তবায়িত করতে পারছেন না। প্রথমত একদিক দিয়ে মালিকরা দিচ্ছেন না। দ্বিতীয়ত আইনের অপ্রতুলতা অর্থাৎ আইনের কোনো রকম ইমপ্লিমেন্টেশন নেই। তৃতীয়ত লোকাল মাস্তানদের ব্যবহার। যেখানে ইউনিয়ন নেই সেখানে শ্রমিকদের কথা শোনাই হয় না। আর যেখানে ইউনিয়ন আছে সেখানে ইউনিয়নের দাবি উত্থাপনের পর মালিকপক্ষ মানতে চায় না। কোথাও ইউনিয়ন থাকলেও মালিকপক্ষ ইউনিয়নের সঙ্গে বসতে চায় না। আবার কোথাও মালিক পক্ষ ইউনিয়নকে ক্রয় করতে চায়। বস্তুত তারা নিজস্ব ইউনিয়ন বানিয়ে নিতে চায়। গার্মেন্ট মালিকগণ কর্তৃক গ্রেড পরিবর্তন করে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদান না করার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা মঈন উদ্দীন মণ্ডল বলেন, বেশিরভাগ গার্মেন্ট-এ ৩ নং গ্রেডের শ্রমিকদের ৪ নং গ্রেডে ঢুকিয়ে মজুরি দেয়া হচ্ছে। শ্রমিকরা প্রকৃত বাড়তি মজুরি পাচ্ছেন না। মালিকপক্ষ তাদের ইচ্ছামাফিক গ্রেড পরিবর্তন করছেন। তিনি বলেন, ইনক্রিমেন্ট ছাড়া এবং গ্রেড পরিবর্তন করে মজুরি দিচ্ছে ৭০ শতাংশ গার্মেন্ট।
ভূতের ভয়ে ভিটেছাড়া পাঁচ পরিবার
ফিরোজ আমিন সরকার
  সন্ত্রাসী বা পুলিশের ভয়ে নয়; স্রেফ ভূত-পেত্নীর ভয়ে দেড়শ বছরের পৈত্রিক ভিটেমাটি ছেড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের ৫টি পরিবার। জেলা শহর থেকে উত্তরে ৯ কিলোমিটার দূরে সালন্দর ইউনিয়নের ইয়াকুরপুর গ্রামের পণ্ডিতপাড়ায় চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে। নানা রোগব্যাধী, গরু-ছাগলের মৃত্যু আর গণকের ওপর অন্ধ বিশ্বাসে একদিনেই পাঁচটি পরিবারের অন্তত ২০ ঘর ভেঙ্গে অন্যত্র চলে গেছে।
সনাতন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবারের বসবাস পণ্ডিতপাড়া গ্রামে। প্রয়াত দারকানাথ পণ্ডিত নামের স্কুল শিক্ষকের উত্তরসূরী কালিপদ বর্মণ, নারায়ণ রায়, শনিরাম বর্মণ, খগেশ্বর, ধনেশ্বর, শিবুরামসহ ১০টি পরিবার। দেড় বিঘা জমির এক অংশে ৫টি, অন্য অংশেও ৫ পরিবারের ঘরবাড়ি। নারায়ণ রায়সহ ৫টি পরিবার যে অংশে থাকে সেই অংশে দুই বছর ধরে চলছে ভূত আতঙ্ক। নারায়ণ রায় বাংলানিউজকে জানান, দুই বছর ধরে তিনি ও তার স্ত্রী সুরবালা তাদের উঠানে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা রাতে কালো বর্ণের বামন আকৃতির ছায়া দেখে আসছেন। এমনকি তারা কান্নাও শুনতে পান। এর পর থেকে নারায়ণের পরিবারে নেমে আসে নানা দুর্ভোগ। প্রথমে সুরবালা চোখের সমস্যায় পড়েন। দিনাজপুরে নিয়ে তার চিকিৎসা করানো হয় । কিন্তু ওই রোগ না সারতেই পেটের পীড়া দেখা দেয় তার। স্ত্রীকে সুস্থ করে তুলতে নারায়ণ ঠাকুরগাঁও শহরের একটি ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করেন।পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সুরবালার অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়ে। অস্ত্রোপচারের পর তিনি সুস্থ হন। এ বিপদ দূর হতে না হতেই তাদের একজোড়া হালের বলদ মারা যায়। এর কয়েকদিনের মাথায় মারা যায় দুই জোড়া ছাগল। দিশেহারা নারায়ণ গ্রামের চৌকিদার কোকিল চন্দ্র রায়কে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পাশের আনন্দ রায় নামের গণকের কাছে ছুটে যান। এভাবে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামের নয়জন গণকের শরণাপণ্ন হন তিনি। সব গণকের একই সুর ‘নারায়নের বাড়িতে ভূত-পেত্নী বাসা বেঁধেছে’। গণকদের মন্তব্য, বসতবাড়ি হিসেবে ওই জায়গাটির মেয়াদ শেষ। তাই সেখানে বসবাস নিরাপদ নয়। পশুর পর মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কাও রয়েছে। এ ভয়ে এক সঙ্গে বাস করা কালিপদ বর্মণ, নারায়ণ রায়, শনিরাম বর্মণ, খগেশ্বর ও ধনেশ্বর গত ১ মার্চ একসঙ্গে তাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে ফেলেন। পৈত্রিক ভিটে থেকে ৭০০ গজ দূরে নতুন ঘরবাড়ি তৈরি করছেন তারা। নারায়নের চাচাতো ভাই কালিপদ জানান ‘সব রাখার জায়গা আছে বাবু, ভয় রাখার জায়গা নাই। জীবন বাঁচলে ধন পাওয়া যাবে। তাই প্রাণের ভয়ে ৫টি পাকাঘর ভেঙ্গে সরে এসেছি। এখানে আমরা ভালো আছি’। এদিকে ছেড়ে দেওয়া জায়গাটি বিরান পড়ে থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে কালিপদ বলেন, ওই জমিতে শষ্যের আবাদ করা হবে। এলাকার স্কুল শিক্ষক ভবেশ চন্দ্র সেন বলেন, ওই পরিবারগুলোকে বুঝিয়েও ভয় ভাঙ্গানো যায়নি। হঠাৎ একদিনের মধ্যে তারা ঘরগুলো ভেঙ্গে ফেলেছে। তবে ওই জমির প্রতি অন্য কারও  লোভ নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিসিসি: মুখে বনায়ন
কর্ম গাছ নিধন

বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশাল মহানগরজুড়ে চলছে গাছ কাটার মহোৎসব। কখনো রাস্তা প্রশস্ত, কখানো ড্রেন নির্মাণ আবার কখনো নগরীর সৌন্দর্য্য বাড়ানোর অজুহাতে গাছ নিধন চলছেই। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্দেশেই এ গাছ নিধনযজ্ঞ চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন গাছ কাটার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। অথচ নগরীর গাছ রক্ষা এবং নগরীতে আরও বেশি বেশি গাছ লাগানোর জন্য বিসিসিতেই রয়েছে একটি বনায়ন কমিটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর উন্নয়নে দীর্ঘ দিন যাবত রাস্তাঘাট সংস্কার ও প্রশস্ত করা এবং নতুন নতুন ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। এর ফলে ভেঙে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ভবন ও বাড়ির সীমানা প্রাচীর। স্থাপনা ভাঙার পর এবার বিসিসির চোখ পড়েছে নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনকারী গাছগুলোর দিকে। এর ফলে উন্নয়নের নামে গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে নগরীতে নির্বিচারে চলছে গাছ কাটা। কয়েক দিন আগে লাইটপোস্ট স্থাপনের নাম করে নগরীর ভিআইপি এলাকা হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু উদ্যানসংলগ্ন রাজা বাহাদুর সড়কে থাকা দু’শ বছরের বেশি বয়সী একটি রেইনট্রি গাছের বেশির ভাগ ডালপালা কেটে ফেলা হয়। একই এলাকায় বঙ্গবন্ধু উদ্যানের সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে কেটে ফেলা হয়েছে এর আশপাশে থাকা শতাধিক রেইনট্রি ও মেহগনিসহ বিভিন্ন জাতের গাছ। এর কিছুদিন পর ফুটপাতের সৌন্দর্য্য রক্ষার কথা বলে কেটে ফেলা হয় গণপূর্ত অধিদপ্তরের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে চাম্বল, নারিকেল, সুপারি, সেগুন, রেইনট্রি ও মেহিগনি জাতের প্রায় ৪০টি গাছ। গত ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর বরিশাল সফরের সময় বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জনসভায় ভাষণ দেওয়া উপলক্ষে তার নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে বান্দরোড এলাকার ঐতিহ্যবাহী ৭টি রয়েল পাম গাছ কাটে বিসিসি। সর্ব শেষ নগরীর হাসপাতাল রোড প্রশস্ত করার অজুহাতে বৃহস্পতিবার রাতে কেটে ফেলা হয়েছে জেনারেল হাসপাতালের সামনে থাকা ৪টি আম গাছ।
এছাড়া কাটার তালিকায় রয়েছে ব্রিটিশ আমল থেকে বরিশাল নগরীর শোভাবর্ধন করে এলাকায় কালের সাক্ষী হয়ে থাকা পাম গাছসহ প্রায় অর্ধশত গাছ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জানায়, ‘গাছ কাটার বিষয়ে কিছুই জানে না তারা।’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, ‘সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়েই গাছ কাটছে তারাঅ।’ বিসিসির দাবি, ‘এ বিষয়ে তারাও কিছুই জানে না।’ বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, জনগণের দান করা জমির ওপর ১৯১২ সালে বরিশাল সদর হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। প্রায় দেড় বছর আগে রাস্তা প্রশস্ত করার কথা বলে হাসপাতালের পূর্ব পাশের দেয়াল ভেঙে কয়েক ফুট জমি দখল করে সিটি কর্পোরেশন। এরপর সম্প্রতি হাসপাতালের সামনের সড়ক প্রশস্ত করার জন্য দক্ষিণ পাশের দেয়াল ভেঙে ৮ ফুট জমি দখলে নিচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। ফলে কাটা পরবে দেড়শ’ বছরের ঐতিহ্য ধারণকারী পাম গাছসহ নানা জাতের প্রায় অর্ধশত গাছ। অথচ হাসপাতালের জমিতে বিসিসির কোনো অধিকার নেই। বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. শামসুদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য হাসপাতালের জমি নেওয়ার ব্যাপারে তাকে কেউ কিছু জানায়নি। এর কারণ হিসেবে আরএমও বলেন, ‘হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সিটি মেয়র নিজেই। তাই এ ব্যাপারে আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি বিসিসি কর্তৃপক্ষ।’
গাছ কাটার ব্যাপারে কিছুই জানেন না দাবি করে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিছুর রহমান বলেন, বতর্মানে সড়কটি ৩০ ফুট প্রশস্ত। তা বাড়িয়ে ৩৮ ফুট করা হবে। তাই গাছ কাটা নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে সঙ্গে কয়েক দিন আগে কথা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি। তিনি জানান, তাদের অগোচরে গাছগুলো কাটা হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের ভর্ৎসনা করা হয়েছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী আনিছুর রহমান। কাজের তদারককারী মো. সুমন জানান, গাছগুলো কাটার জন্য একমাস আগে বিসিসির কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। তাদের নির্দেশেই গাছ কাটা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহফুজ এন্টারপ্রাইজের ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল আলম জানান, বিসিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাছ কাটা হচ্ছে। এর আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে গাছগুলো কাটতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা গাছ কাটতে রাজি হয়নি। গাছগুলো কেটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল আলম। বিসিসির বনায়ন কমিটির সদস্য সচিব তাপস রায় বলেন, গাছগুলো না কেটে রাস্তা প্রশস্ত করতে বলা হয়েছিল। এরপর কী হয়েছে তার কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন তিনি। নির্বিচারে গাছ কাটার ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে পরিবেশবিদ দ্বিজেন শর্মা বলেন, শত বছর বয়সী গাছগুলো কেটে ফেলায় ঐতিহ্য হারাচ্ছে বরিশাল। অন্যদিকে পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। এজন্য গাছ রক্ষা করে নগরীর উন্নয়ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন পরিবেশবিদ দ্বিজেন শর্মা।
এইচএসসি’র আগেই বরিশালে ঝরে পড়েছে ৮ হাজার শিক্ষার্থী
বরিশাল প্রতিনিধি 
সারা দেশের সঙ্গে একযোগে বরিশালেও ১ এপ্রিল শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। কিন্তু এবছর বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা শুরুর আগেই ঝরে পড়েছে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষা বোর্ডে সূত্রে জানানো হয়েছে, এবছর পরীক্ষা শুরুর আগে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। ঝরে পড়াদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যাই বেশি। এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ৪১ হাজার ৪৩৯ জন নিয়মিত পরীক্ষার্থী নিবন্ধন করলেও ফরম পূরণ করেছে ৩৩ হাজার ৭৮৯ জন। ৭ হাজার ৬৫০ জন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেনি। এদের মধ্যে ২০ হাজার ৪০১ জন ছাত্র নিবন্ধন করলেও ফরম পূরণ করে ১৭ হাজার ৭৬ জন। এতে ঝরে পড়েছে ৩ হাজার ৩২৫ ছাত্র। অন্যদিকে নিবন্ধনকারী ২১ হাজার ৩৮ জন ছাত্রীর মধ্যে ফরম পূরণ করেছে ১৬ হাজার ৭১৩ জন। ঝরে পড়েছে ৪ হাজার ৩২৫ জন। ঝরে পড়ার কারণ হিসেবে নির্বাচনী পরীক্ষায় পাশ না করা, শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, কলেজগুলোর শতভাগ পাশের প্রতিযোগিতা, পারিবারিক অসচেতনতা, বাল্যবিয়ে এবং নিরাপত্তার অভাবকে দায়ী করেছেন বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. বিমল কৃষ্ণ মজুমদার। বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্য মতে, এবছর এই শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৪২ হাজার ৬৮০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২১ হাজার ৭১৮ জন ও ছাত্রী ২০ হাজার ৯৬২জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৫ হাজার ৪৩৯ জন, বাণিজ্য বিভাগ থেকে ১৪ হাজার ৬২ জন এবং মানবিক বিভাগ থেকে ২৩ হাজার ১৭৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৩ হাজার ৭৮৯ জন। অনিয়মিত ৮ হাজার ৬৫৮ জন। মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪৮ জন। এছাড়া প্রাইভেট পরীক্ষার্থী রয়েছে ৮৫ জন। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বিভাগের ৬ জেলার মধ্যে বরিশালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ হাজার ২১৪ জন। পটুয়াখালীতে পরীক্ষার্থী রয়েছে ৭ হাজার ৭৮৩ জন। বরগুনায় ৪ হাজার ৬১৩ জন। পিরোজপুরে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৬ হাজার ৩৫ জন। ঝালকাঠীতে ৩ হাজার ৪৩৩ জন। ভোলায় পরীক্ষার্থী রয়েছে ৫ হাজার ৬০২ জন।
বিভাগের ২৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসব শিক্ষার্থী ৮১ টি কেন্দ্রে ১ এপ্রিলের পরীক্ষায় অংশ নেবে।

পাহাড় চাপা লাশ নয়
ঝড়বাদলের আগেই ব্যবস্থা নিন
মীর আব্দুল আলীম
আসছে ঝড়বাদলের দিন। মনে হচ্ছে এবারো মানুষ মরবে থরে থরে। ফি বছর ধরে তাই হচ্ছে। এবার না হলোই ভালো। প্রতিবছর আমরা চাপা লাশ দেখে আহ! উহ! করছি তো করছিই। সেই ইস্-ফিস্ আর কান্নার আওয়াজ যেন কিছুতেই ঢুকছে না দায়িত্বশীলদের কর্ণকুহরে। প্রতিরোধযোগ্য হলেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ জন্য অশিক্ষিত অসচেতন মানুষ যতনা দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তাই উপহার হিসেবে লাশের পর লাশ পাচ্ছি আমরা। স্থান সেই পার্বত্য জেলা। প্রতি বছর এ মৌসুমটাতে যা ঘটবার তাই ঘটে। হয়ত ঘটবে এবারো। এ অঞ্চলে পাহাড় চাপা পড়ে প্রাণ হরানোর ঘটনা বেশ পুরনো। যারা লেখালেখি করেন তারা মৌসুম শুরুর আগেই সতর্ক করে থাকেন। হরদম হচ্ছে লেখালেখি। গুরুত্বের সঙ্গে তা ছাপছেও জাতীয় এবং আঞ্চলিক পত্রিকাগুলো। কে শোনে কার কথা? তাই যা হবার তাই হয়। সৃষ্টিকর্তা খোদ দৃষ্টি দিলে হয়ত এবার পাহাড় চাপা পড়ে আর মানুষের প্রাণ হারাবে না। অঘটন না ঘটলেই ভালো। পাহাড়ের মানুষগুলো জানে বেঁচে যাবে। গত কয়েক বছরে পার্বত্য জেলাগুলোতে পাহাড়ের নিচে দখল আর বসতি এত বেড়েছে যে এ নিয়ে আর শঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই। পাহাড়ের নিচের অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের উচ্ছদ করা হচ্ছে না। তারা এখনো আছে বেশ বহাল তবিয়তে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবারো উদাসীন। কানে তুলো দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমে বিভোর। তাই যা হবার তাই হয়ত হবে। দেশবাসীকে পাহাড় চাপা পড়া লাশ দেখতে হবে আবারো। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও তা ঠেকানো যাচ্ছে না। আসলে ঠেকানো যায় কিন্ত ঠেকানো হয় না কেন?
বিগত বছরের পাহাড়ি ভূমিধসের পর সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সুশীল সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের নানা বক্তব্য ও উদ্যোগ অবশ্যই লক্ষণীয়। বিশেষ করে সরকারের নানা উদ্যোগের পর সংশ্লিষ্ট অনেকেই আশ্বস্ত হয় এই ভেবে ভবিষ্যতে এমন করুণ পরিণতি আর হবে না। এ সকল উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম ছিল একটিম টেকনিক্যাল-বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে পাহাড় ধসের কারণ ও প্রতিকারের বিষয়ে মতামত গ্রহণ করা। সেই সঙ্গে অনিরাপদবসতি সরিয়ে ফেলা। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ওই বিষয়টি নিয়ে আমারও কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। আমরা  লেখনীতে সুস্পষ্ট মতামত দিয়েছিলাম। অন্যদিকে সরকার গঠিত এক কমিটি পাহাড়ী ভূমিধসের সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখসহ সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা পেশও করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য এর অধিকাংশই মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি জরিপের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে চিহ্নিত করার সুপারিশ ছিল। যা আজ অবধি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তেমনিভাবে বাস্তবায়িত হয়নি পাহাড়ের পাদদেশে বিপদসঙ্কুল বাসস্থান বস্তিবাসীকে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসনের কর্মসূচি। বাস্তবায়িত হয়নি পাহাড় কাটার আশঙ্কা কিংবা বন উজাড়ের ঘটনা। পাহাড় হন্তারকদের পাহাড় কাটা থেকে বিরত করা যায়নি। অন্যদিকে প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশনের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারীর লোভাতুর হস্ত গুটিয়ে না নেয়ায় অশিক্ষিত এ জনগোষ্ঠী টুপাইস দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশেই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস অব্যাহত রাখে। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত এক দৈনিকের প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, নগরীর ৬৫টি স্থানের প্রায় অর্ধলাখ বস্তিবাসী পাহাড়ের ঢালে মারাÍক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করছে। এর মধ্যে লালখান বাজারের মতিঝর্ণা, বাঘঘোনা এবং ফয়’স  লেকের কনকর্ড ও দক্ষিণ খুলশী এলাকার মানুষগুলো সর্বাধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কয়েক বছর ধরে নগরীর এ সকল এলাকায় পাহাড়ধস ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। লালখান বাজার এলাকার পাহাড় চাপার ট্র্যাজেডিসহ গত জুলাইয়ে বন্দরনগরীর টাইগারপাসের বাটালিহীল এলাকায় পাহাড়ের একাংশ ধসে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এত পাহাড়ের কোলে অপরিকল্পিত ও বিপদজনকভাবে বসবাসরত বস্তিও বাসিন্দাদের শোচনীয় প্রাণহানি ঘটেছে। অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে মৃত্যুর আশঙ্কাটাই নির্মম বাস্তবতায় পরিণত হয়। প্রায়শই গরিব বস্তিবাসীর মাথার ওপর বিশাল পাহাড় ভেঙ্গে একে এক লাশ হয় বৃদ্ধ, যুবক, নর-নারী, শিশু-কিশোর। প্রতিটি ঘটনাই মর্মান্তিক। ইচ্ছা করলেই তা প্রতিরোধ করতে পারে দায়িত্বশীল বিভাগ। কিন্তু কেন করে না তা বোধগম্য নয় কারো। নিশ্চিত মৃত্যু উপত্যকায় বসবাসকারী মানুষগুলোর তরতাজা চাপা লাশ যে কোনো পাষণ্ডেরও মন গলবে।
আর বিলম্ব নয় ঝড়বাদলার দিন শুরুর আগেই যেন সংশ্লিষ্টদের কর্ণকুহরে পানি ঢোকে। এখনই পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ঝূঁকিপূর্ণ বসতিদের উচ্ছেদ  করা না হলে পাহাড়ের দুর্ঘটনা অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পত্রিকান্তরে পড়েছি চট্টগ্রাম নগরীর মতিঝর্ণার জিলাপির পাহাড়, টাঙ্কির পাহাড়, গণপূর্ত অধিদফতরের পাহাড়, বাটালি পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বস্তি। উত্তর দিকে টাঙ্কির পাহাড়, একে খানের পাহাড় হয়ে দক্ষিণ দিকে জিলাপির পাহাড়, বাটালি পাহাড় হয়ে সোজা পশ্চিম দিকে টাইগার পাস রেলওয়ে কলোনি পর্যন্ত প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বস্তিটি ছড়িয়ে আছে। মতিঝর্ণার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বাঘঘোনা এলাকার মুছার পাহাড়। প্রায় ৯০ ফুট উঁচু পাহাড়টির পাদদেশে বসতি গড়ে উঠেছে। মুছার পাহাড় ছাড়াও ফয়’স লেকে কনকর্ড পুনর্বাসনের নামে গড়ে তুলছে মৃত্যু উপত্যকা। পাহাড়গুলোর মধ্যখানে মৃত্যুও ঝুঁকি নিয়ে পায় দশ হাজার লোক বাস করছে। অতিবর্ষণে যে কোনো সময় এ ধরনের পাহাড় ধসে মানুষের জীবন্ত কবর হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও সিটি কর্পোরেশন বা সিডিএ বস্তিগুলো উচ্ছেদে তৎপর নয়। ফয়’স লেক ছাড়াও কুসুমবাগ আবাসিক এলাকা, দক্ষিণ পাহাড়তলীর সেকান্দরপাড়া, কাইচ্যাঘোনা, লেবুবাগান প্রভৃতি এলাকায় আরো প্রায় হাজারো মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে। ধারণা করা হচ্ছে, নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ এ স্থানগুলোতে প্রায় অর্ধলাখ লোক বাস করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের গবেষণায় দেখা যায়, মহানগরীর ৬৫টি স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসতি রয়েছে। এ সকল স্থানে প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ধস ছাড়াও ভূমিকম্পের ধসে পড়তে পারে। পাহাড় কাটার ফলেই প্রতিবছর পাহাড়ধসে মানুষ মারা যাচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও কতিপয় মাস্তান সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় পাহাড়ের পাদদেশের জায়গা দখল করে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করায় পাহাড়ধসে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও নিম্নআয়ের মানুষজন বসবাস করায় মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে পাহাড়ধসে মৃত্যু ঠেকাতে ১৬ দফা সুপারিশ দেয়া হয়েছিল। এ সকল সুপারিশ অনুসরণ করা হলে জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি কমানো যেত। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বরাবরই পাহাড়ের পাদদেশ থেকে পর্যায়ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নেয়া হবে বলে হম্বিতম্বি করে। কিন্তু বাস্তবে এ চিত্র ভিন্ন। সিটি কর্পোরেশনের লোকজন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে নীরব থাকছে বলে এ নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে। ১৬ দফা সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ পাহাড়ের মালিক (রেলওয়ে, ওয়াসা, গণপূর্ত) লিজ দেয়ার বিভিন্ন শর্ত খতিয়ে দেখবে এবং শর্ত না মানা হলে তা বাস্তবায়ন করবে। রেলওয়ে, গণপূর্ত ও ওয়াসাসহ বিভিন্ন সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সকল এলাকায় বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। রেড মার্কিং জোন করার উপদেষ্টার ঘোষণা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বাস্তবায়ন করবে এবং সীমানা দেয়াল বা কাঁটাতারের বেড়াও তারা নিশ্চিত করবে। এ ছাড়া উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে এবং অবৈধভাবে বসতি নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বাস্তবে আমরা কি দেখছি। এর আদৌ বাস্তবায়ন হয়েছে কি? ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো চিহ্নিত করে রেড জোন ঘোষণার কথা থাকলেও সে ঘোষণা বাস্তবায়ন হয়নি। অপরদিকে রেলওয়ে, গণপূর্ত ও ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে নিজ উদ্যোগে পাহাড়ের পাদদেশের নিজ নিজ জায়গার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখলে নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে ইতোপূর্বে। অন্যথায় পাহাড়ধসে সকল ক্ষয়-ক্ষতির দায়িত্ব তাদের নিতে হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করে দেয়া হলেও তা এখনো হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনো সে নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি।
একের পর এক পাহড় চাপা পড়ে জানমালের ক্ষয় ক্ষতির ঘটনায় পাহাড় ব্যবস্থাপনায় আমাদের অক্ষমতাকেই প্রকাশ করছে। বিগত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজারসহ অন্যান্য পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসে প্রায় সহস্রাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর আমরা পত্রিকা মারফত জেনেছি। ফি বছর ধরে ভয়াবহ নিশ্চিত দুর্ঘটনায় এমন করুণ মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া যায় না। এর আগে একটি শক্তিশালী টিম গঠন করা হয়েছিল। এ টিম মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পাহাড়ি ভূমিধসের আশঙ্কার ওপর সর্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কিন্তু সে টিমের হদিছ আছে কি? তবে এই সকল সুপারিশের অধিকাংশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ব্যর্থ হলেও পাহাড়ি ভূমিধসে চাপা পড়া লাশ উদ্ধার কিংবা লাশের মিছিলে ছুটে গিয়ে সরকারি দায়িত্বশীলদের অতিমাত্রায় লম্ফঝম্ফ ও প্রতিশ্র“তির কোনো অন্ত থাকে না। বিষয়টি এখন অনেকটা হাস্যকর পর্যায়ে  পৌঁছেছে। তাই এখন সময় এসেছে প্রতিশ্র“তি ও লম্ফঝম্ফ বন্ধ করে কিছু কাজ করে দেখানোর। দয়া করে নিরাপদে পাহাড়ি বস্তিবাসীদের জীবন রক্ষা করুন। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করুন; এ ধরনের দায়িত্বহীনতার কারণে মৃত্যু দায়দায়িত্ব আপনাদের ওপরেই বর্তায়। আপনারা এসব জানমাল রক্ষায় আর দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেবেন না। পাহাড়ে বসবাসকারী অসচেতন অশিক্ষিত মানুষগুলোকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে আপনারাই রক্ষা করতে পারেন। আর তা করবেন এটাই প্রত্যাশা।  লেখক:  সাংবাদিক ও কলামিস্ট
একা একা আর কতোদিন সুমাইয়া শিমু !
বিনোদন প্রতিবেদক
নন্দিত অভিনেত্রী সুমাইয়া শিমু। দীর্ঘ দিনের ক্যারিয়ারের জনপ্রিয় শব্দটি মুঠোবন্দী করেছেন অনেক আগেই। এখন চলছে তার নিজের সঙ্গেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। অভিনয়ের পাশাপাশি একাডেমিক শিক্ষাতেও রেখেছেন মেধার স্বাক্ষর। সাফল্যের পথে হাঁটতে হাঁটতেই বোধ হয় ভুলে গেছেন ঘর বাঁধার কথা। আসুন শোনা যাক, সুমাইয়া শিমুর গল্প। কত বছর হলো অভিনয়ে? এক যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, জানালেন সুমাইয়া শিমু। শুরুতে ছোট ছোট চরিত্র। অভিনয়টা ছিল শুধুই শখ। এরপর ধীরে ধীরে অভিনয়ের প্রতি অনুরাগ তৈরি। একটু একটু করে নির্মাতাদের আস্থা অর্জন। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ। শখ থেকে নেশা, তারপর পেশা হিসেবে অভিনয়টা গ্রহণ। এখন তো সুমাইয়া শিমুকে নাটকের প্রধান চরিত্রেই কেবল অভিনয় করতে দেখা যায়। সুমাইয়া শিমুর অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ধারাবাহিক নাটক ‘স্বপ্নচূড়া’। এ নাটকে অনবদ্য অভিনয় তাকে নিয়ে যায় আলাদা উচ্চতায়। পাশাপাশি একুশে টিভির ‘ললিতা’ নাটকের নাম ভূমিকায় অভিনয় করে সুমাইয়া শিমু প্রমাণ করেছেন তার সহজাত অভিনয়-মেধা। টিভি নাটকের নির্মাতাদের কাছে এখন সুমাইয়া শিমু মানে হলো নির্ভরতা। চোখ বুঁজে যার উপর ভরসা রাখা যায় যে কোনো চরিত্রে। দিন দিন বাড়ছে টিভি চ্যানেলের সংখ্যা। আর সব চ্যানেলেরই অনুষ্ঠানমালার প্রধান আকর্ষণ হলো নাটক। এতো চ্যানেল, এতো নাটক; কিন্তু নির্ভর করার মতো এতো শিল্পী কই! সুমাইয়া শিমুর মতো হাতেগোনা কজন শিল্পীর উপর চাপটা তাই একটু বেশি। ধারাবাহিক, টেলিফিল্ম আর একক নাটকের কাজ নিয়ে শিমুকে মাসের প্রায় প্রতিটি দিনই ব্যস্ত থাকতে হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মাসের প্রায় প্রতিটি দিনই শুটিং নিয়ে থাকতে হচ্ছে। অভিনয় আমার পেশা তাই পেশাগত কারণেই প্রচুর নাটকে অভিনয় করছি। অনেক সময় নির্মাতাদের চাপে সপ্তাহের ছুটির দিনটিতেও কাজ করি। তবুও সময়ের অভাবে আজকাল অনেকের নাটকই ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’
মিডিয়ায় কাজের পরিধি বাড়লেও নির্ভর করার মতো অভিনেতা-অভিনেত্রী বাড়ছে না। এর কারণ সম্পর্কে সুমাইয়া শিমু অভিমত জানতে চাইলে  তিনি বললেন, ‘ইদানিং মিডিয়াতে বহু নতুন ছেলেমেয়ে আসছে। কিন্তু কাজের প্রতি মনোযোগের চেয়ে তাদের মধ্যে মনে হয় অতি দ্রুত তারকা হওয়ার ইচ্ছেটা বেশি কাজ করে। আসলে অধ্যবসায় ও ধৈর্য্য এই দুটি বিষয় নতুনদের মাঝে তুলনামূলক কম। আমরা যখন মিডিয়াতে অভিনয় করা শুরু করি, তখন এটা ছিল আমাদের নেশা কিংবা ভালোলাগা। যা পরবর্তীতে পেশায় পরিণত হয়েছে। এখন কিন্তু নতুনরা শুরুতেই অর্থ যেমন পাচ্ছেন, তেমনি প্রচারের কারণে পরিচিতিটাও নেহাত কম পাচ্ছেন না। এটাকে বড় করে দেখার কারণে আসল কাজটার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে না অনেকেই। অধ্যবসায়, পরিশ্রম ও ধৈর্য্য নিয়ে কাজ করতে হবে আর অগ্রজদের প্রতি থাকতে হবে শ্রদ্ধা ও বিনয়, তবেই আজকের প্রতিভাবান নতুন একজন আগামীতে জনপ্রিয় তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রীতে পরিণত হবে। ‘স্বপ্নচূড়া’, ‘হাসউফুল’, ‘এফএনএফ’, ‘ললিতা’ প্রভৃতি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে সুমাইয়া শিমু জনপ্রিয়তা পেলেও একক নাটকেই তার কাজ করতে ভালোলাগে বলে বাংলানিউজকে জানান। কারণ জানতে চাইলে বললেন, ‘গল্পের পরিপূর্ণতা থাকে আসলে একক নাটকেই। ধারাবাহিক নাটক একটি লম্বা প্রক্রিয়া। দীর্ঘসূত্রতা কারণে ধারাবাহিক নাটক থেকে অনেক সময় মূল গল্প হারিয়ে যাই। তাই আমি এক পর্বের নাটকেই কাজ করে বেশি তৃপ্তি পাই’।shimuনিজের অভিনয় সম্পর্কে শিমুর মূল্যায়ন, অভিনয় আসলে চর্চার বিষয়। আমি এখনো চর্চার মধ্যেই আছি। নিজের অভিনয় নিয়ে আমি পুরোপুরি তৃপ্ত হতে পারিনি কখনো। মনে হয়েছে, আরো ভালো করা যেতো বা আরো ভালো করা উচিত ছিল। ইদানিং আমি ভিন্ন ধারায় কাজকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। কারণ আমার মনে হয়, এখন আমার স্ক্রিনে গতানুগতিক কাজ নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হওয়ার কিছু নেই। এ কথা সত্যি যে, নিয়মিত ভিন্নধর্মী কাজ করা কঠিন। তারপরও আমার চেষ্টা থাকে নতুন নতুন চরিত্রে বহুরূপী হয়ে উঠতে ।আজকাল ছোটপর্দার অনেকেই বড়পর্দায় কাজ করছেন। সুমাইয়া শিমুর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বললেন, চলচ্চিত্র অনেক বড় একটি মাধ্যম। খুব ভালো আর ব্যতিক্রমী চরিত্রে যদি অভিনয়ের সুযোগ পাই তাহলে হয়তো কাজ করবো। বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব এলেও চরিত্র পছন্দ না হওয়ায় এখন পর্যন্ত বড় পর্দায় কাজ করা হয় নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকার ও রাজনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করার পর সুমাইয় শিমু বর্তমানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে ‘অভিনয়ে নারীর শৈল্পিক ও আর্থ সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত’ বিষয়ে পিএইচডি করছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘অভিনয় আমার পেশা। এই পেশাতে আমি নিজে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি, তারপরেও যদি কখনো অন্যকোনো পেশার সাথে সম্পৃক্ত হতে চাই তার জন্যই পিএইচডি করা। তা ছাড়া পড়াশোনা করতে আমার বরাবরই ভালো লাগে’। ধাপের পর ধাপ ডিঙিয়ে অভিনয়ে কাঙ্খিত অবস্থানে পৌঁছে যাওয়া, উচ্চশিক্ষার একদম শেষ স্তরে পা রাখা; এতকিছুর পর কিছু যেন বাকি রয়ে যায়। হ্যাঁ, তার সমসাময়িক সব অভিনেত্রীই বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়েছেন। জুনিয়রদের অনেকেই সংসার সাজিয়েছেন। এ অবস্থায় কতদিন আর একা একা থাকবেন সুমাইয়া শিমু? এ প্রশ্নের উত্তরে সুমাইয়া শিমু বল লেন, আমাদের পরিবারের আমি হলাম সবার ছোট। বছর দেড়েক আগে আমার এক বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। এখন সিরিয়ালে চলে এসেছি আমি। বিয়ে তো সারাজীবনের ব্যাপার, তাই এককভাবে সিদ্ধান্তটি নিতে চাই না। পরিবারের উপর নির্ভর করতে চাই। খুব শিগগিরই বিয়ে না করলেও এটুকু বলতে পারি, সবাইকে জানিয়েই সম্পূর্ণ পারিবারিক সম্মতি নিয়েই আমি বিয়ে করব।
orsha_intarডানপিটে মেয়ে অর্ষা
বিনোদন প্রতিবেদক
দুরন্ত-চঞ্চল মেয়ে অর্ষা। সারাদিন কাটায় সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে হৈ হুল্লোড় করে। পড়াশোনার প্রতি তার নেই মোটেও নজর। পড়তে বসলেই ঘুম পায় অর্ষার। দু-তিনবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, প্রতিবারই ফেল। ডানপিটে এই মেয়েকে নিয়ে তার পরিবার খুব চিন্তিত। অর্ষার পড়াশোনা দেখানোর জন্য একের পর এক বেশ কজন গৃহ-শিক্ষক রাখা হয়। কিন্তু তাদের কেউই একমাসের বেশি টেকসই হয় নি। অর্ষাকে পড়াতে এসে অজানা কারণে সব শিক্ষকই কয়েকদিন পরই পালিয়ে যায়। অর্ষাকে পড়াশোনা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য নতুন শিক্ষক হিসেবে আসে চঞ্চল চৌধুরী। কিন্তু কোনোভাবেই পড়াশোনার প্রতি অর্ষার মন ফেরাতে পারে না চঞ্চল। পড়াশোনার চেয়ে ফিল্মের গল্প করতেই অর্ষার বেশি পছন্দ। পড়াশোনার জন্য অর্ষাকে চাপ দিলে চঞ্চলকে নানাভাবে হেনস্তা করতে থাকে সে। চঞ্চল চৌধুরীও নাছোড়বান্দা, যে করেই হোক পড়াশোনার প্রতি অর্ষার মনোযোগ ফেরানোর পণ করে সে। ঘটতে থাকে মজার মজার ঘটনা। এভাবেই ডানপিটে অর্ষাকে দেখা যাবে সাগর জাহানের রচনা ও শেখ আমানুরের পরিচালনায় একক নাটক ‘ফিরে ফিরে আসা’-তে। নাটকটি বর্তমানে একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারের অপেক্ষায় আছে। নাটকটিতে অভিনয় প্রসঙ্গে অর্ষা বললেন, খুব মজা পেয়েছি এ নাটকে কাজ করে। আমিও একটু দুরন্ত প্রকৃতির। হৈ হুল্লোড় করে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে আমিও পছন্দ করি। আশা করি, দর্শকদের কাছেও নাটকটি ভালো লাগবে। লাক্স সুন্দরী অর্ষা অভিনীত বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটক বর্তমানে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো দেশ নাটকে প্রচার হওয়া ধারাবাহিক নাটক ‘সাতকাহন’। ধারাবাহিকটির অন্যতম প্রধান চরিত্র দীপাবলির ভূমিকায় অভিনয় করছেন অর্ষা। ধারাবাহিকটিতে অভিনয় প্রসঙ্গে অর্ষাবললেন, ‘ভাগ্যবিড়ম্বিত নারী দীপাবলিকে ঘিরে ধারাবাহিকের গল্প। অসাধারণ এক চরিত্র দীপাবলি। ভাগ্যের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে তার এগিয়ে চলা। কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার দীপাবলি চরিত্রকে প্রতিবাদী নারী রূপে চিত্রায়ন করেছেন। চরিত্রটি থেকে উপমহাদেশীয় অবহেলিত নারীদের অনেক কিছুই শেখার আছে। এরকম একটি চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে অভিনেত্রী হিসেবে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।’ এছাড়াও অর্ষা সম্প্রতি অভিনয় করেছেন শাহ আলম কিরণ পরিচালিত একটি টেলিফিল্মে। এই টেলিফিল্মটিতে অভিনয় প্রসঙ্গে  তিনি বলেন, চলচ্চিত্র পরিচালক কিরণ ভাই পরিচালিত এই টেলিফিল্মটির নাম ‘স্বদেশ’। ঢাকা, আশুলিয়া ও টঙ্গীর বিভিন্ন লোকেশনে এর শুটিং হয়েছে। তার নির্মিত ছবিগুলোও দেখেছি। তার সাথে কাজ করতে গিয়ে শুরুতে কিছুটা ভয় লাগছিল। তবে শেষ পর্যন্ত দেখলাম, তিনি অনেক সাবলীল। চরিত্রটির কাছে কি চান, তা দারুণভাবে তিনি বোঝাতে পারেন। একক, ধারাবাহিক ও টেলিফিল্ম; সবমিলিয়ে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার অর্ষা এখন দারুণ ব্যস্ত। এই ব্যস্ততা অর্ষ নিজেও বেশ উপভোগ করছেন বলে বাংলানিউজকে জানান।
গুলশান এভিনিউ থেকে নিসার বদলে যাওয়া
ফাহিম ফয়সাল
সাবরিনা শফি নিসা, এই সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেত্রী। ডেইলি সোপ ‘গুলশান এভিনিউ’-তে অভিনয় করে পেয়েছেন সুপরিচিতি। ছোটপর্দায় অভিনয় নিয়ে এখন নিসা হয়ে উঠেছেন ব্যস্ত। তার আরেক পরিচয় হলো নৃত্যশিল্পী। পাশাপাশি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনেরও মডেল হয়েছেন। ছোটবেলায় মা অনেকটা জোর করেই নিয়ে যেতেন নাচের ক্লাসে। কিন্তু চার বছরের ছোট্ট মেয়েটির নাচ শিখতে একদম ভালো লাগতো না। তবুও যে নাচের ক্লাসে যেতে হয়। না গেলে মা যে রাগ করবেন। এভাবেই নৃত্যের সাথে জড়িয়ে যান বর্তমান সময়ের অন্যতম ব্যস্ত নৃত্যশিল্পী, মডেল ও অভিনেত্রী নিসা। ১৯৯০ সাল থেকে বাফাতে নাচ শিখেছেন নিসা। বাফাতে নাচের কোর্স শেষ করে বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে নাচের উপর ৩ বছরের কোর্স শেষ করেন। এরপর ১৯৯৮ সালে স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী আনিসুল ইসলাম হিরুর কাছে নাচের তালিম নিতে থাকেন।
১৯৯৭ সালে নাটকের মাধ্যমে নিসার মিডিয়াতে পথ চলা শুরু হয়। চ্যানেল আইতে প্রচারিত প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ‘সবুজ সাথী’ নাটকে  শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। কয়েক বছর বিরতির পর আবার নিসাকে টিভি নাটকে দেখা যায় ২০০৩ সালে। এনটিভিতে প্রচারিত শহিদুজ্জামান সেলিমের ‘স্পর্শের বাইরে’ নাটকের মাধ্যমে আবার অভিনয়ে নিয়মিত হন। ২০০৫ সালে বিনোদন বিচিত্রা ‘বিউটি কনটেস্ট’-এ নিসা সেরা সুন্দরীর খেতাবটি জিতে নেন। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কাজের প্রতি ভালোবাসা ও অধ্যাবসায় দিয়ে এখন শুধুই সামনের দিকে পথচলা।
এ পর্যন্ত নিসা নাচের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। জাতীয় পর্যায়ে জিতে নেন পাঁচটি গোল্ড মেডেল। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিনয়ী নিসা বলেন, ‘কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার পেতে সবারই ভালো লাগে। আসলে অনেকে আমার নাচের তারিফ করলেও আমার মনে হয়, আমি এখনও কিছুই শিখি নাই। আমার এখনও অনেক কিছুই শেখার বাকি আছে। এ জন্য সুযোগ পেলেই স্যারের (আনিসুল ইসলাম হিরু) কাছে ছুটে যাই।’ আপনি দেখছি স্যারের অনেক ভক্ত, এটা কেন? ‘কারণ স্যার আমাকে যা শিখিয়েছেন, যে সুযোগগুলো দিয়েছেন, তা বর্তমানে অন্য কেউ দেয় কিনা তা আমার জানা নেই। স্যারের কাছেই আমি ভারত নট্যম শিখি।’ প্রতিদিনের ধারাবাহিক নাটক ‘গুলশান এভিনিউ’কে  নিসা মিডিয়াতে তার টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখেন। এ নাটকে অভিনয় করেই নিসা দর্শকদের খুব কাছে পৌছে যান। ‘গুলশান এভিনিউ’ থেকে তার বদলে যাওয়া শুরু। এখান থেকেই নিসা অভিনয়কে পেশা হিসেবে দেখতে শুরু করেন। এ প্রসঙ্গে নিসা বললেন, ‘এ নাটকে কাজ করে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। যা হয়ত ‘গুলশান এভিনিউ’তে কাজ না করলে আমি কখনোই শিখতে পারতাম না।’  অভিনেত্রী নিসা এখন দর্শকদের কাছে বেশ পরিচিত। নিসা অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে - তাহের শিপনের ‘ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন’ ও ‘দিবা রাত্রি খোলা থাকে’, সৈয়দ আওলাদ হোসেনের ‘নন্দিনী’, সাদেক সিদ্দিকীর নাটক ‘রঙের সংসার’ ও টেলিফিল্ম ‘মুন্সিবাড়ী’, এস এ হক অলিকের ‘গননা নির্ভূল’, কায়সার আহমেদের ‘অহংকার’, সাইফ চন্দনের ‘ফোর্থ ক্লাস সোসাইটি’ ইত্যাদি। নিসার অভিনয়ে কিছুদিনের মধ্যেই প্রচার শুরু হবে এনটিভিতে সৈয়দ জামিমের ‘সাত কন্যা’ ও এটিএন বাংলায় ড. মাহফুজুর রহমানের গল্প অবলম্বনে সাদেক সিদ্দিকীর পরিচালনায় প্রতিদিনের ধারাবাহিক ‘তিন ভুবন’। এছাড়াও পহেলা বৈশাখে এটিএন বাংলায় প্রচারের অপেক্ষায় থাকা বিশেষ নাটক ‘পাঁচ ফোড়ন’-এ চমৎকার একটি চরিত্রে নিসাকে দেখা যাবে। বড়পর্দার কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ছবিতে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। বড় পর্দা থেকে অভিনয়ের অফার এসেছে বেশ কয়েকটি, তবে বড় পর্দায় কাজের প্রতি আমার আগ্রহ কম। নিসা মডেল হয়েছেন বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলালিংকের ‘লেডিস ফাস্টর্‘, লাক্সের ‘রুপসী তোমার খোঁজে’,     ‘জবা হেয়ার অয়েল’ প্রভৃতি। অভিনেতা হিসেবে নিসার সবচেয়ে ভালো লাগে তারিক আনাম খান, দিতি ও আসাদুজ্জামান নূরকে। নাচ, মডেলিং ও অভিনয়ের পাশাপাশি মাঝে মধ্যে টুকটাক উপস্থাপনাও করেন নিসা। এর আগে তিনি চ্যানেল ওয়ানে ‘সিনেটিউন’ নামে সিনেমার গান, অভিনয় এবং নির্মাণশৈলী নিয়ে একটি সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। বাংলাভিশনে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর একটি অনুষ্ঠানেও উপস্থাপনা করেন। গত ঈদে মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত শামিম আরা নীপা, শিবলী মোহাম্মদ, আনিসুল ইসলাম হিরু ও সোহেলের অংশগ্রহনে ‘ঈদ আনন্দ আড্ডা’ নামে একটি নাচের অনুষ্ঠানেরও উপস্থাপনা করেন নিসা। এছাড়াও গাজী টিভিতে তানয়িা আহমেদের উপস্থাপনায় প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে গেম শো ‘অনন্যা’। নিসার নাচের সহশিল্পী হিসেবে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে, আনিসুল ইসলাম হিরু ও সোহাগ। আর পরিচালকদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো লাগে তাহের শিপনকে। তার ভাষ্য মতে, তাহের শিপন অনেক বন্ধুবৎসল একজন মানুষ। তিনি অনেক ভালো কাজ করেন। তার চেয়ে বড় কথা তিনি অনেক ভালো একজন মানুষ। সিদ্ধেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যের উপর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন নিসা। সবচেয়ে বেশি উৎসাহ, প্রশংসা ও সমালোচনা পান তার মা ও শিক্ষকের কাছ থেকে। অবসর কাটান নিজের কাজগুলো দেখে। নিজেই নিজের কাজ দেখে ভুলগুলো শুধরে নিতে চেষ্টা করেন। দেশের বাইরের অনুষ্ঠান সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের বাইরের অনুষ্ঠানগুলোতে খুব মজা হয়। সেখানেতো আমরা মূলত দেশের প্রতিনিধি হিসেবে যাই। সে কারনে সেখানে যারা আছেন তারা আমাদেরকে অনেক সম্মান করেন। এ পর্যন্ত নাচ সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি কানাডা, স্পেন, দুবাই, গ্রীস, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, তুরস্ক, চীন, শ্রীলঙ্কা, ভারত, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড যান। সম্প্রতি ব্র“নাই বাঙালী কমিউনিটির আমন্ত্রণে ২৬ মার্চে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান করে দেশে ফেরেন গত ৬ এপ্রিল। ভবিষ্যতের পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘অনেক বড় কিছু হওয়ার ইচ্ছে আমার নাই। তবে যতদিন কাজ করবো ভালো কিছু কাজ সবাইকে উপহার দিতে চাই।’ লালন এলো ‘পাগল’ নিয়ে
বিনোদন প্রতিবেদক
দেশীয় ব্যান্ডসঙ্গীতে ব্যতিক্রমী আমেজ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করা ব্যান্ড লালন। এবারের পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে অডিও বাজারে এসেছে এ ব্যান্ডের নতুন অ্যালবাম ‘পাগল’। ২০০৭ সালে ‘বিপ্রতীপ’ আর ২০০৯ সালে ‘ক্ষ্যাপা’র পর এটি তাদের তৃতীয় অ্যালবাম। লালন ব্যান্ডের তৃতীয় অ্যালবাম ‘পাগল’-এ রয়েছে মোট আটটি গান। এর মধ্যে লালন সাঁইয়ের গান আছে পাঁচটি, শাহ আবদুল করিমের গান রয়ে দুটি আর নাম না জানা এক বাউলের গান আছে একটি। অ্যালবামটি সম্পর্কে লালন ব্যান্ডের ভোকাল সুমী জানিয়েছেন, ‘আমরা সাঁইজির গান গেয়ে আসছি শুরু থেকেই। নতুন অ্যালবামটিতেও রয়েছে লালনের ছয়টি গান। আমাদের গুরু সফি ম-ল সাঁইজির কিছু গানের সুর পুনরুদ্ধার ও কিছু গানে নতুন সুর আরোপ করে ব্যান্ড লালনকে গাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।’ পাগল অ্যালবামে লালন ব্যান্ডের সঙ্গে সফি মন্ডলও একটি গান করেছেন। ‘পাগল‘ অ্যালবামটি বের হয়েছে সাউন্ড মেশিনের ব্যানারে।
লালন ব্যান্ডের বর্তমান লাইনআপ হচ্ছে- সুমী (ভোকাল), বাপ্পী (গিটার), সালেকিন (গিটার), তুর্য (বেস) ও তিতি (ড্রামস)।
টেলিহোমের নববর্ষ উদযাপন প্রস্তুতি
বিনোদন প্রতিবেদক
গত বেশ কয়েক বছর ধরে টেলিভিশন মিডিয়ার অভিনেতা-অভিনেত্রী, নির্মাতা-প্রযোজক ও কলাকুশলীদের নিয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেলিহোম উদযাপন করছে বাংলা নববর্ষ। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও টেলিহোম প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলা নববর্ষ বরণের জন্য। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রতিবারের মত এবারও টেলিহোম-এর কর্ণধার আলী বশির আয়োজন করতে যাচ্ছেন দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠান ‘পহেলা বৈশাখ’। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে মিডিয়ার মানুষদের নিয়ে এই আয়োজনটি করে আসছে টেলিহোম।
বৈশাখের প্রথমদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫ পর্যন্ত চলা এই অনুষ্ঠানে টেলিভিশন, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র অঙ্গনের সব তারকারাই হাজির  হয়ে থাকেন। এখানে বৈশাখের আমেজ নিয়ে সারাদিন  হৈ- হুল্লোড় করে দিন কাটান সবাই । অনুষ্ঠানে থাকে গান, নাচ ও খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন। সবকিছুতেই থাকে বৈশাখী ও বাঙালিয়ানার আমেজ। বিনিময় হয় সবার অনুভূতির। এবারের আয়োজনে থাকছে খানিকটা ভিন্নতা, জানালেন আলী বশির। তিনি বলেন, ‘আমাদের  প্রতিবারের আয়োজনের মতো এবারও থাকবে গান-নাচ আর মজার মজার খাওয়া। তবে এবারের ব্যতিক্রম হলো, আমাদের বৈশাখ বরণ অনুষ্ঠানে এবার  রঙ-এর সৌজন্যে নারী তারকাদের একটা করে শাড়ি দেয়া হচ্ছে। সেই শাড়ি পরে অনুষ্ঠানে হাজির হবে সবাই। গান পরিবেশন করবেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কণা। আর খাওয়ার আইটেম  এবার আমরা পান্তা ইলিশের পাশাপাশি গরম ভাতেরও আয়োজন করছি । এছাড়া বিভিন্ন রকমের পিঠা, মিষ্টি,খই,দইসহ আরো নানা রকমের খাবার থাকবে।’ টেলিহোম আয়োজিত বর্ষবরণের এই অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র  মিডিয়া সংশ্লিষ্ট লোকজনই অংশ নিতে পারেন।
সালমা হায়েকের নিত্যনতুন পোশাক পরার রহস্য !
বিনোদন ডেস্ক
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
হলিউড সুপারস্টার সালমা হায়েককে কখনো একই পোশাক পরে কোনো পার্টিতে বা জনসম্মুখে আসতে দেখা যায় নি। ৪৫ বছর বয়সী মেক্সিকান বংশোদ্ভূত এই অভিনেত্রীকে নিত্য-নতুন পোশাকে সব সময় দেখা যায়। সম্প্রতি সালমা প্রকাশ করেছেন, তার নিত্যনতুন পোশাক পরার রহস্য। সালমা হায়েক নিত্যনতুন পোশাক পরতে কেন পছন্দ করেন? এরকম এক প্রশ্নের উত্তরে মিডিয়াকে জানিয়েছেন, আমার স্বামী মনোযোগ যেন সবসময় আমাকে ঘিরেই থাকে এবং তার দৃষ্টি যেন অন্য নারীর দিকে না যায় এজন্যই আমি নিত্যনতুন পোশাক পরে থাকি। রসিকতা করে সালমা বলেন, আমি লক্ষ করেছি নতুন পোশাক পরলে আমার স্বামী অন্য নারীদের দিকে ফিরেও তাকান না। এটি আমি দারুণ উপভোগ করি। সালমা হায়েক আরো বললেন, ভালোবাসার মানুষটিকে সবাই নিজের দখলে রাখতে চায়। আমি আমার স্বামী পিনোকে নিজের দখলে রাখতে চাই। যদি আমি বাইরে না গিয়ে ঘরেও থাকি, তবুও পিনোর কাছে নিজেকে সুন্দর দেখাতে ভালবাসি। সেও আমাকে এ ব্যাপারে উৎসাহ দেয়। অনেক মেয়েই আছেন যারা মনে করেন, তারা কি পরছেন সে ব্যাপারে পুরুষদের মাথাব্যথা নেই। আমি মোটেও তাদের দলের নই। যখন আমি একটি ভাল পোশাক পরি, পিনো আমাকে উৎসাহ দেয়। হলিউড সুপারস্টার সালমা হায়েক ২০০৯ সালে বিয়ে করেন ফরাসি বিলিয়নিয়ার অঁরি পিনোকে।স্বামী ও চার বছরের মেয়ে ভ্যালেন্টিনাকে নিয়ে তিনি বর্তমানে প্যারিসে বসবাস করছেন।
রক সঙ্গীতসন্ধ্যায় মাইলস
ফাহিম ফয়সাল 

ইন্দিরা গান্ধি কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ৭ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এক রক সঙ্গীত সন্ধ্যা। এতে পারফর্ম করবে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যন্ডদল মাইলস।  এই কনসার্টে মাইলস তাদের জনপ্রিয় বাংলা গানের পাশাপাশি ইংরেজি গানও পরিবেশন করবে। বাংলাদেশের পুরোনো ও জনপ্রিয় ব্যান্ড দল মাইলস-এর যত্রা শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। মাইলস তাদের প্রথম অ্যালবাম ‘মাইলস’ বের করে ১৯৮২ সালে। এরপর বের করে দ্বিতীয় ইংরেজি গানের অ্যালবাম ‘এ স্টেপ ফারদার’ (১৯৮৬)। ১৯৯১ সালে ১২ টি বাংলা গান নিয়ে বের করে তাদের প্রথম বাংলা অ্যালবাম ‘প্রতিশ্র“তি’। এ অ্যালবামে ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘প্রথম প্রেমের মত’, ‘দরদিয়া’ গানগুলো বেশ জনপ্রিয় হওয়ার পর তারা ১৯৯৩ সালে বের করে ‘প্রত্যাশা’ অ্যালবামটি। এ অ্যালবামের ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘ধিকি ধিকি’, ‘কি যাদু’ ‘পাহাড়ী মেয়ে’, ‘নীলা’, ‘হৃদয়হীনা’, ‘কতকাল খুঁজবো তোমায়’ ইত্যাদী গানগুলোও বেশ জনপ্রিয় হয়। এরপর মাইলস একে এক বের করে ‘প্রত্যয়’ (১৯৯৬), ‘প্রয়াস’ (১৯৯৭), ‘বেস্ট অব মাইলস’ (১৯৯৮), ‘প্রবাহ’ (২০০০) ও ‘প্রতিধ্বনি’ (২০০৬)  অ্যালবামগুলো। মাইলস দেশে ও দেশের বাইরে অনুষ্ঠিত অনেক কনসার্টে সফলতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করে। গত ফেব্র“য়ারি ২০১২ তে মাইলস কোলকাতার নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী কনসার্টে আমন্ত্রণ পেয়ে অংশগ্রহণ করে। মাইলসের বর্তমান লাইন আপ হচ্ছে- হামিন আহমেদ (ভোকাল ও গীটার), শাফিন আহমেদ (ভোকাল ও বেস গীটার), মানাম আহমেদ (কি-বোর্ড ও ভোকাল), সাইয়্যেদ জিয়াউর রহমান তুর্য (ড্রামস) ও ইকবাল আসিফ জুয়েল (গীটার ও ভোকাল)। কনসার্টটি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। স্থান: ইন্দিরা গান্ধি কালচারাল সেন্টার। রোড নং-২, বাড়ি নং-২৪, ধানমন্ডি, ঢাকা।
আবার একসঙ্গে জন-বিপাশা
বিনোদন ডেস্ক
বলিউডের একসময়ের লাভ বার্ড জন আব্রাহাম ও বিপাশা বসু। এই জুটির প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে গেছে বছর দুয়েক আগেই। এরপর তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, একে অন্যের সঙ্গে আর অভিনয় করবেন না। সম্প্রতি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন তারা। পুরনো দিনের কথা ভুলে আবারও একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন আলোচিত এই জুটি। বলিউড তারকা জুটিদের মধ্যকার প্রেমের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পর সাধারণ একে অন্যের বিপরীতে অভিনয় করা থেকে বিরত থাকেন। এই ধারণা অবশ্য হালে পরিবর্তন করেছেন সালমান-কাটরিনা। অতীতের ব্যক্তিগত সম্পর্কেও কথা ভুলে আবারও তারা একসঙ্গে কাজ করছেন। সালমান-কাটরিনার পর জন-বিপাশাকেও  দেখা গেল এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে। গতানুগতিক চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে আবারও একসঙ্গে কাজ করছেন এই প্রেমিক জুটি। সঞ্জয় গুপ্তার নতুন ছবি ‘শুটআউট অ্যাট ওয়াডালা’-এর একটি আইটেমে পুরানো লাভ বার্ড জন-বিপাশাকে দেখা যাবে নতুন করে। এ ছবিতে জন গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করলেও বিপাশাকে দেখা যাবে শুধু একটি গানে পারফর্ম করতে। জন এবং বিপাশার সঙ্গে ওই গানে তুষার কাপুরকেও দেখা যাবে। এই আইটেম গানের জন্য অনেক দিন আগেই চুক্তিবদ্ধ করা হয় বিপাশাকে। এদিকে কিছুদিন ধরে জন ও বিপাশাকে নিয়ে নতুন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে বলিউডে। জন আব্রাহাম এরই মধ্যে জড়িয়েছেন বান্ধবী প্রিয়া রাঞ্চালের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে। অভিনেতা রানার সঙ্গে বিপাশার রোমান্সের খবরটিও ছড়িয়েছে বলিউডের আকাশে-বাতাসে।
পৌষ ফাগুনের পালায় বিজরী
বিনোদন প্রতিবেদক
এটিএন বাংলার জনপ্রিয় দীর্ঘ ধারাবাহিক নাটক ‘পৌষ ফাগুনের পালা’-তে যুক্ত নতুন নতুন চরিত্র আর নতুন অভিনয়শিল্পী। এই ধারাবাহিকের ১৭৬ তম পর্ব থেকে যুক্ত হচ্ছেন অভিনেত্রী বিজরী বরকতউল্লাহ। তাকে দেখা যাবে এ নাটকের ‘রতন’ চরিত্রে। ‘পৌষ ফাগুনের পালা’ ধারাবাহিকটিতে ৩৩ বছর বয়স রতন এক নিঃস্বঙ্গ দুঃখী একজন নারী। সে অভয়ের মামাতো বোন। রতন তার লোভী এবং স্বার্থপর বাবার কূটচালে এক বাবুর রক্ষিতা হিসেবে থাকে অনেক কম বয়স থেকে। তার উপার্যনের উপর সংসার নির্ভরশীল। কিন্তু এ সংসারে ব্যতিক্রম রতনের মা। যিনি এই অনাচার কখনই মেনে নেননি এবং নিজের গচ্ছিত অর্থ থেকে খরচ করে বেঁচে থাকেন। সংসারের কিছুই গ্রহন করেন না। বংশের সবাই এই পরিবারকে এড়িয়ে চলে।  এক সময় রতনের সাথে বয়সে অনেক ছোট কান্তির সাথে এক অসম সম্পর্কের অস্তিত্ব দেখা দেয়। যা গল্পে নতুন মাত্রা যোগ করে। ব্যতিক্রমী এই চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে বিজরী বরকতুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘পৌষ ফাগুনের পালা’ ধারাবাহিকটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এরকম একটি নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। এ নাটকে আমার চরিত্রটিও চমৎকার। খুব ভালো লাগছে এ নাটকে কাজ করে।
গজেন্দ্রকুমার মিত্রের ত্রয়ী উপন্যাস কলকাতার কাছেই, উপকণ্ঠে ও পৌষ ফাগুনের পালা অবলম্বনে নির্মিত “পৌষ ফাগুনের পালা” ধারাবাহিক নাটকটি নাট্যরূপ দিয়েছেন তানভীর হোসেন প্রবাল। নাটকটি পরিচালনা করছেন আফসানা মিমি এবং রাকেশ বসু। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন হাসান ইমাম, লায়লা হাসান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, আফরোজা বানু, বিজরী বরকতউল্লাহ, ইন্তেখাব দিনার, শামিমা নাজনীন, সোহানা সাবা, ঝুমু মজুমদার, মোহাম্মদ রফিক ও আরো অনেকে। কৃষ্ণচূড়া প্রডাকশন প্রযোজিত ধারাবাহিক নাটক ‘পৌষ ফাগুনের পালা’ প্রচারিত হচ্ছে প্রতি মঙ্গল ও বুধবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে এটিএন বাংলায়। গত বছর ১৫ জুন থেকে এটির প্রচার চলছে।  এরই মধ্যেই ধারাবাহিকটির ১৭৫ পর্ব  প্রচারিত হয়েছে।
আসছে হুইটনি হিউস্টনের শেষ ছবি ‘স্পার্কল’
প্রীতি ওয়ারেছা
হলিউড ডিভা হুইটনি হিউস্টন অভিনীত শেষ ছবি ‘স্পার্কল’ অবশেষে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। আগামী ১৭ আগস্ট ছবিটি আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পাবে। তবে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ছবিটির ট্রেলর রিলিজ করেছে এবং তা ভালো সাড়া পেয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট সবাই ধারণা করছেন, ছবিটি আশাতীত সাফল্য পাবে। হুইটনি হিউস্টনের মৃত্যুর পর ‘স্পার্কল’ ছবিটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অবিশ্বাস্য রকমের জল্পনা কল্পনা। সবাই তাদের প্রিয় অভিনেত্রীর শেষ ছবিটি দেখার আকাঙ্খায় উন্মুখ হয়ে আছেন। বহুল প্রতীক্ষিত এই ছবিটি ১৯৭৬ সালে তৈরি ‘স্পার্কল’-এর রিমিক। ছবিটিতে হুইটনি হিউস্টন একজন মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন,  যার আছে তিনটি মেয়ে । হুইটনি সেখানে একটি গানের দলে পারফর্ম করেন। খ্যাতির জন্য যাকে অবিরাম সংগ্রাম করে যেতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত মাদকাসক্ত তিনি হয়ে পড়েন। ছবিটিতে হুইটনির এক মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমেরিকান আইডল বিজেতা জর্ডিন স্পার্কস্। ছবিটির প্রযোজক ডেবরা মার্টিন চেজ ‘স্পার্কল’-এর ট্রেলর রিলিজ হওয়াতে ভীষণ উৎফুল্ল এবং একই সঙ্গে বিষন্ন। তিনি বলেন, ‘স্পার্কল’ ছবিটি হুইটনি হিউস্টনের শেষ ছবি এই ভাবনাটা অনেক অনেক কষ্টদায়ক। হুইটনি এই ছবিটির অন্যতম একজন নির্বাহী প্রযোজক হিসেবেও কাজ করেছেন। অসময়ে তার এই করুণ মৃত্যু হলিউডকে শোকসন্তপ্ত করে তুলেছে।
হলিউডে তার শুভাকাঙ্খীরা এখনো ভাবতে পারছেন না হুইটনি হিউস্টন আর গান গাইবেন না, আর কখনো অভিনয় করবেন না। হুইটনি শিল্প মাধ্যমের একাধিক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। জীবনকালে তিনি তার করে যাওয়া কাজের মাধ্যমে চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন বলে  মনে করেন হইটনি হিউস্টনের ভক্তরা। ১১ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৪৮ বছর বয়সে হলিউড এই সুপারস্টার বেভারলি হিলস্ হোটেলে নিজ কক্ষে বাথটাবের পানিতে ডুবে মারা যান। গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান শেষে মধ্যরাতে তিনি তার নির্ধারিত কক্ষে বিশ্রাম নিতে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। অতিরিক্ত কোকেন সেবনের বিষক্রিয়ায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার করুণ মৃত্যু হয়েছে বলে তদন্তে প্রকাশিত হয়েছে। জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর শেষ ছবি স্পারকল তাই দর্শকদের ভেতর অন্যরকম এক বেদনার অনুভূতি জাগিয়েছে। হলিউড থেকে শুরু করে সারাবিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে ‘স্পার্কল’-এর দিকে।
ডায়েটিং ও সাম্প্রতিক গবেষণা
ডা. মালিহা শিফা
ডায়েটিং শব্দটা আজ আর কারও অপরিচিত নয়। হরহামেশাই শব্দটা শুনে থাকবেন সবাই। একটা সময় ধারণা ছিল আহার কম করে বা উপোস করেই ওজন এবং ক্যালরি কমানো যায়। কিন্তু যুগ পাল্টেছে। গবেষণার ধরণগুলোও যেন ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। উত্তরোত্তর গবেষণা পাল্টে দিচ্ছে পুরানো ধারণা। তাই এখন চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে আহার ও ব্যায়াম দু`টোর সমন্বিত ফল হলো ডায়েটিং।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা দুপুরে আহার না করে রাতে করেন তাদের ওজন প্রায়ই বেড়ে যায়। ফল হয় হিতে বিপরীত। অনিয়মিত খাওয়ার চেয়ে সমপরিমাণ খাবার দিনে তিন বা চারবারে খান। খাবার খেতে হবে ধীরে ধীরে। কেননা খাদ্য গ্রহণের ২০ মিনিটের মাথায় পাকস্থলী পূর্ণ হওয়ার খবর মস্তিষ্কে পৌঁছে। তাই তাড়াহুড়া করা ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে যে, প্রোটিনজাতীয় নয় বরং ক্যালোরিসমৃদ্ধ খাবারই শরীরের ওজন বেশি বাড়ায়। ড. জেমস লেভাইন মিনেসোটার মায়ো ক্লিনিক রচেস্টারে স্থূলতা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি জানান, প্রোটিন কখনোই শরীরকে মোটা করে না, ওজন বাড়ায় না। এই কাজগুলো করে ক্যালোরি। অথচ এর আগে বেশ কিছু গবেষণায় জানানো হয়েছিল, যে যত বেশি খাবে সে তত মোটা হবে। তবে তা অনেক ক্ষেত্রে মানুষের দেহের ক্যালোরি ক্ষয় হওয়ার ওপর নির্ভর করে। একেকজনের শরীর একেক রকম। একই ডায়েটে কার শরীরে কতটুকু ফ্যাট জমা হয় তা নির্ধারণ করা কঠিন। ওজন কমাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ আমিষ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করেছেন। আমিষ বিষয়ে পিএলএস ওয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ১০ শতাংশ আমিষ রাখলে মাত্র চার দিনেই শরীরের কর্মক্ষমতা ১২ শতাংশ বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে ক্ষুধা বোধ কমিয়ে দেয়। ফলে বাড়তি খাওয়ায় শরীরে যে অতিরিক্ত মেদ জমে তা ধীরে ধীরে কমে আসে। ক্যালসিয়াম এমন একটি মিনারেল যা শরীরের চর্বি কমিয়ে ওজনও কমাতে সাহায্য করে। সম্প্রতি কিছু নারীদের ওপর এ পরীক্ষাটি চালিয়েছেন গবেষকরা। তারা তাদেরকে বেশি বেশি করে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাইয়েছেন। আরেক দল নারীকে গবেষকরা অল্প ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাইয়েছেন। দেখা গেছে, যারা বেশি করে ক্যালসিয়াম খেয়েছেন তাদের ওজন কমেছে বাকিদের তুলনায় বেশি। বিজ্ঞানীদের ভাষ্যমতে, রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেশি থাকলে ফ্যাট ভাঙতে শুরু করে আর ফ্যাটের স্টোরও কমে যায়। ফলে ওজনও কমে যায়।
ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। জানা গেছে, ভিটামিন `সি` ওজন কমানোর এক নতুন কৌশল হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন `সি` শরীরের অতিরিক্ত মেদ পুড়িয়ে ফেলতে সাহায্য করে। রক্তে ভিটামিন `সি`-এর পরিমাণ কম থাকলে ফ্যাট বার্নিং কম হয়। ফলে ওজন কমে না। যাদের রক্তে প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন `সি` আছে তাদের ফ্যাট বার্নিং হয় শতকরা ২৫ ভাগ। ভিটামিন `সি` বেশি পাওয়া যায় ফলের মধ্যে। যেমন- আমলকী, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, লেবু, মাল্টা, স্ট্রবেরি। সবজির মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচামরিচ, টমেটো, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি।
তাই প্রতিদিন প্লেট ভর্তি করে ভিটামিন `সি` খেয়ে বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলুন।
লেখক: ডা. মালিহা শিফা, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স কর্মকর্তা, মেরি স্টোপস
গুগলের ই-চশমা!
সাব্বিন হাসান
 গুগল মানেই চমকে দেওয়া সব উদ্ভাবনের জনক। এবার তাই বাস্তবতাকে চোখের সামনেই এনে হাজির করছে গুগল। আর তা করবে একটি হালকা অবয়বের ফ্যাশনেবল চশমা। সংবাদমাধ্যম সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এ চশমা পুরোটাই নিয়ন্ত্রিত হবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে ১৪ ধরনের তাৎক্ষণিক এবং প্রাত্যহিক সেবা পাওয়া যাবে। তবে আপাতত আবহাওয়া, পথের অবস্থান, ইমেইল, ভয়েস কল, গুগল টক, ভিডিও কনফারেন্স এমনটি বিনোদনে গান ও ভিডিও চিত্রও দেখা সম্ভব। আর এ সেবাগুলোর সবটাই মিলবে চলতি পথেই। একে বিশেষজ্ঞেরা ‘স্ট্রিট গাইড’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন। একজন অবিচ্ছেদ্য সঙ্গীর মতো এ চশমা হয়ে উঠবে প্রকৃত বন্ধু। মনে করিয়ে দেবে কখন, কোথায় কার সঙ্গে মিটিং আছে। আর এ মুহূর্তে আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাসও জানিয়ে দেবে। তাই আবহাওয়া খারাপ হতে পারে এমন অবস্থায় না বেড়িয়ে কখন মিটিং করলে সুবিধা হবে তাও জানিয়ে দেবে ‘গুগল গ্লাস’।
এ মুহূর্তে গুগলের গবেষণা কেন্দ্র ‘এক্স ল্যাবে’ এ পণ্যের পরীক্ষামূলক মডেল তৈরি করা হয়েছে। এখন ভোক্তাদের মতামত আর সুবিধা-অসুবিধাগুলোকে সমন্বয়ের জন্য এ সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হচ্ছে। গুগল+ এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গেই তা হইচই ফেলে দেয়। অনেকেই জানতে চেয়েছেন কবে নাগাদ এ গ্লাস পাওয়া যাবে। আর দামই বা কতো হবে। এ সব প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য এখন পাওয়া কঠিন। তবে সংশ্লিষ্টদের অনেকেই বলছেন এ বছরের শেষভাগেই এ গ্লাসের বাণিজ্যিক বিপণন শুরু হবে। আর প্রকারভেদে এর দাম ২৫০ থেকে ৬০০ ডলারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এ জাদুকরী তথ্য চশমার মূল অবয়ব স্টাইলিস সিলভার ফ্রেম। গুগল ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে এ থেকে তাৎক্ষণিক পথপ্রদর্শনী বার্তা পাওয়া সম্ভব। এ চশমা কোনোভাবেই ব্যবহারকারীকে বিপথে নিয়ে যাবে না। এ চশমার আরও গুণগত মানোন্নয়নে এ প্রকল্পের দলটি গুগল+ এর পৃষ্ঠায় দিকনিদের্শনামূলক মতামত চেয়েছেন। আর তাতে এরই মধ্যে সাড়াও মিলেছে। গুগল প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন এ গবেষণা এবং উন্নয়নের তথ্য স্বীকার করেছেন। আর এ মুহূর্তে ‘এক্স’ ল্যাব গুগল গ্লাসের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করছে তা প্রায় সুস্পষ্ট। নিত্যসঙ্গীর এ চশমায় থাকছে একটি বিশেষ মাইক্রোফোন। আর তা নিয়ে ইন্টারনেটনির্ভর গুগল গ্লাস অনায়াশেই ভ্রমণ সঙ্গীকে অতিপ্রয়োজনীয় সব বার্তাই পৌঁছে দেবে। এ চশমার ভক্তদের জন্য অপেক্ষা তাই কঠিন পরীক্ষা হয়ে উঠছে।
ব্ল্যাকবেরির দাম কমছে!
সাব্বিন হাসান
এক সময়ের মোবাইল ক্রেজ ব্ল্যাকবেরি। তবে আজ অনেকটাই বিলুপ্ত প্রায় হয়ে যাচ্ছে এ ব্র্যান্ডটি। স্মার্টফোন বিমুখ আর অতিরিক্ত দামের কারণেই এ ব্ল্যাকবেরির এ রাজত্ব পতন। তবে সর্বোচ্চ ৩০ ভাগ পর্যন্ত দাম কমিয়ে আনার কথা ভাবছে ব্ল্যাকবেরি। সংবাদমাধ্যম সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। অ্যানড্রইডনির্ভর স্মার্টফোন আর আইফোনের দাপটে ব্ল্যাকবেরি আজ অনেকটাই গুটিয়ে গেছে। কানাডায় অবস্থিত ওয়াটারলুভিত্তিক এ নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান এখন তাই ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনায় মত্ত। তবে ৩০ ভাগ দাম কমানোর পরিকল্পনায় এখন নতুন স্বপ্ন বুনছে ব্ল্যাকবেরি নির্মাতা রিসার্চ ইন মোশন (রিম)। এ মুহূর্তে ভারতের বাজারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাজারে ফিরে আসার আভাস দিচ্ছে ব্ল্যাকবেরি। এ সমীকরণেই দাম আর স্মার্টফোন অবয়বকেই কারণ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। রিম ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুনিল দত্ত এ প্রসঙ্গে জানান, ব্র্যান্ড মূল্য বাড়াতে রিম এখন দামের তুলনায় পণ্য বিক্রিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ হিসাবে মুনাফা কমিয়ে পণ্য বিক্রির পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে রিম চূড়ান্ত পরিকল্পনা নিয়েছে।
ভারতে স্মার্টফোনের আধিপত্য এখন স্যামসাং আর নকিয়ার কাছে। এক্ষেত্রে দাম আর স্মার্টফোন থেকে পিছিয়ে পড়াকেই প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ব্ল্যাকবেরি নির্মাতা রিম। আর পণ্যের গুণগত দক্ষতা থেকেও ব্ল্যাকবেরি খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে বলেও সুনিল দত্ত জানান। শুধু ব্যক্তি পর্যায়ের গ্রাহক নয়, ব্যবসায়ীদের জন্যও দামের সঙ্গে আধুনিকতা পাল্লা দিয়ে চলে। তাই এ জায়গায় ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে আমলে নিয়ে এশিয়ার বাজারে ঘুরে দাঁড়াতে মহাপরিকল্পনা নিচ্ছে রিম। এখনও ভারতের মোবাইল ফোনের প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে ব্ল্যাকবেরির দাম অনেক বেশি। আর আধুনিকতায় নেই স্মার্টফোনের বৈশিষ্ট্য। এ সব সুনির্দিষ্ট কারণেই ব্ল্যাববেরি এ বাজারে পিছিয়ে গেছে। আর তাই নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে মূল্য আর স্মার্টফোন অবয়ব এ দুটি বিষয়ে ব্ল্যাববেরি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। অচিরেই তাই ব্ল্যাকবেরি ফোনের দাম কমে আসবে। এমনটাই ভারতীয় রিম সূত্র জানিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন