Year-19 # Issue-6 # 25 March 2012

একান্ত সাক্ষাকারে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান 
একাত্তরের স্বপ্ন থেকে দূরে সরে গেছে দেশবিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন প্রত্যক্ষভাবে। যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। মুজিবনগরে তাজউদ্দীনের বিচক্ষণ কর্মকাণ্ড কাছ থেকে দেখেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেও ছিল তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্র উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলন, রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী আন্দোলন এবং ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধে তার অংশগ্রহণ, মুজিবনগর সরকারে কাজের অভিজ্ঞতা, ৪০ বছর পরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, শিক্ষা ব্যবস্থা, বাংলা ভাষা ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন।
আপনি সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। একাত্তরের অভিজ্ঞতা শুনতে চাই আপনার কাছ থেকে।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান : যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো তখন আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। চট্টগ্রামের প্রাথমিক প্রতিরোধে কিছুটা জড়িয়ে পড়েছিলাম আমি। সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বাঙালি ইপিআর সৈন্যরা এসে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় জড়ো হয়েছিল। তাদের থাকা-খাওয়া, গাড়ি ইত্যাদির ব্যবস্থা করি আমরা। তারা দু-তিন দিন চট্টগ্রাম সেনানিবাস ঘিরে রেখেছিলেন, যাতে সৈন্যরা বেরিয়ে যেতে না পারে। কিন্তু পরে এই প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। শহরেও ভেঙে পড়ে, আমাদের ক্যাম্পাসেও ভেঙে পড়ে। কারণ, এদের সংখ্যা ছিল কম, অস্ত্রবলও ছিল আরো কম। তখন আমরা স্থির করি, ক্যাম্পাসের আবাসিক এলাকার অধিবাসী যারা আছেন তাদেরকে দ্রুত ক্যাম্পাস থেকে বের করে নিয়ে যেতে হবে। একটি দল যাবে নাজিরহাটের দিকে, অন্যটি রাউজানের দিকে। এই কাজটা আমরা করি ৩০ মার্চ। ৩১ মার্চ ভাইস চ্যান্সেলর, রেজিস্ট্রার এবং আমি ক্যাম্পাসে থেকে যাই। সঙ্গে আমার পরিবারও ছিল। ৩১ মার্চ আমার পরিবার কুণ্ডেশ্বরী চলে যায়, সেখানকার বালিকা বিদ্যালয়ের হোস্টেলে গিয়ে থাকেন। আরো অনেক পরিবার সেখানে আশ্রয় নেয়। আমরা ১ তারিখে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাই, আশ্রয় নিই কুণ্ডেশ্বরীতে। ২ তারিখে আমি ওখান থেকে কাজিরহাট নামে একটা গ্রামে চলে যাই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি একটা হলের প্রভোস্ট ছিলাম, সেই হলের প্রহরী আবুল খায়ের আমাকে সেই গ্রামে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। ২ তারিখ থেকে আমি ওখানে থাকা আরম্ভ করি। তারপর আমার এক বন্ধুর ভাই, এজেডএম আবদুল আউয়াল, তিনি ছিলেন রামগড় চা বাগানের ম্যানেজার। তিনি তার ভাইয়ের খোঁজে আমার ওখানে আসেন। আমরা শহরে যাবার চেষ্টা করি, কিন্তু ব্যর্থ হই। তিনি বললেন, তুমি আমার সঙ্গে চল। আমি ওর সঙ্গে রামগড়ে চলে যাই এপ্রিলের ১২ তারিখে।রামগড়ে থাকি কিছুদিন। যখন দেখি অবস্থা আমাদের প্রতিকূলে তখন খাল পেরিয়ে ভারতের সাবরুমে চলে গেলাম। সেখানকার একটা প্রাথমিক স্কুলের খেলার ঘরে আমাদের ছয় পরিবারের আশ্রয় হলো। আমরা দিনে রামগড়ে থাকতাম, রাতে সাবরুমে চলে যেতাম। পরিবার দিন-রাতই সাবরুমে থাকতেন। কারণ আমরা হিসাব করলাম যে, অতর্কিত আক্রমণ হলে এই মহিলা-শিশুদের পক্ষে পালানো কঠিন হবে।
তখন তো মেজর জিয়াউর রহমান ওই এলাকার নেতৃত্বে ছিলেন?
আনিসুজ্জামান : হ্যাঁ, তখন তিনি রামগড়েই ছিলেন। শহীদ লেফটেন্যান্ট আফতাব কাদেরও তখন সেখানে ছিলেন। তিনি আর্টিলারির ক্যাপ্টেন। তাকে অফিস ওয়ার্ক করতে দেয়া হয়েছিল। তার অফিসে বসে গল্প করতাম। যখন তাকে বলি, আমি ভারতে চলে যাব, তখন তিনি আমাকে বললেন, আপনারা চলে গেলে তো আমাদের মনোবল ভেঙে যাবে, আমরা কিভাবে যুদ্ধ করব? আমি বললাম, দেখুন, শিশু আর মহিলাদের নিয়ে তো থাকাটা অসুবিধা হয়ে যাবে। তিনি বলেন ঠিক আছে, আমি আজ রেকি করতে যাব, কাল ফিরে আসব। যদি সঙ্কটাপন্ন অবস্থা হয় তাহলে কাল এসে আপনাকে জানাব। কিন্তু আফতাব কাদের আর ফিরে আসেননি। আমরা রামগড় ছেড়ে যাবার পরে তার গুলিবিদ্ধ লাশ ফিরে এসেছিল। আমরা ২৬ এপ্রিল সাবরুম থেকে আগরতলা চলে যাই। সঙ্গে ছিলেন আমার পরিবার। আর ছিল আমার শ্যালক। সে ঢাকা থেকে এসেছিল একটা কাজে। সঙ্গে তার পরিবারও ছিল। আমরা দুই গাড়িতে দুই পরিবার আগরতলায় গিয়ে পৌঁছাই।
আগরতলায় কতদিন ছিলেন?
আনিসুজ্জামান : সেখানে ছিলাম মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত, তারপরে কলকাতায় চলে যাই। আগরতলায় তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কিছু প্রচার অভিযান হচ্ছে। ওখানে মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরভুক্ত করা হচ্ছে। তা নিয়েও মনোমালিন্য ছিল। আমরা যখন ছিলাম তখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের বাইরে কাউকে নেয়ার চিন্তা হচ্ছিল না। আমরা বললাম যে,এটা ঠিক হচ্ছে না।কিন্তু তখন কাজ হয়নি। পরে অবশ্য খালেদ মোশারফ সাহেবের কথায় সবাইকে নেয়ার ব্যবস্থা হয় এবং মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী গড়ে ওঠে।
কলকাতা গিয়ে প্রথমে কী করেছিলেন?
আনিসুজ্জামান : আমি কলকাতায় চলে আসি মে মাসের শেষের দিকে। আমরা প্রথমে যেটা করি, বাংলাদেশের শরণার্থী সব ধরনের শিক্ষককে সংগঠিত করার জন্য ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি’ গঠন করি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর এ. আর মল্লিক ছিলেন এর সভাপতি, আর আমি সাধারণ সম্পাদক। আমি অল্পদিনই কাজ করেছিলাম। আমরা সাধারণত উত্তর ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশের হয়ে প্রচারাভিযান করি। দিল্লিতে যখন যাই তখন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়।
আপনি তো মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা বিভাগেও কাজ করেছেন। তখনকার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আনিসুজ্জামান : হ্যাঁ, সে কথাই বলছি। আমি দিল্লি থেকে ফিরে আসার পর বাংলাদেশ সরকার পরিকল্পনা সেল গঠন করল। আমি সেখানে যোগ দেই। তাজউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে আমার পরিচয় ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে বা তার ঠিক আগের সময় থেকে। ১৯৫১ সালের ডিসেম্বর থেকে। তখন পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ নামে একটি সংগঠন ছিল। দেশের একমাত্র অসাম্প্রদায়িক সংগঠন। আমরা বলতাম অরাজনৈতিক সংগঠন, কিন্তু এর একটা রাজনৈতিক ভূমিকা ছিল। ভাষা আন্দোলনে যুবলীগ খুব বড় ভূমিকা পালন করেছিল। তাজউদ্দীন আহমেদ যুবলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমি আগরতলা পৌঁছে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি তাহের উদ্দিন ঠাকুরের মাধ্যমে। কিন্তু আমি তার কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে একটু দুঃখিতই হই। কিন্তু পরে বুঝতে পারি, তাহের উদ্দিন ঠাকুর যে কারণেই হোক আমার আগরতলা পৌঁছানোর খবর কিংবা আমি যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাই সেটা তাকে জানাননি তার সুবিধা থাকা সত্ত্বেও। কলকাতায় যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার দেখা হলো তখন তিনি আমাকে বললেন আমি যেন সরকারে যোগ দিই। মানে সচিবালয়ে যোগ দিই। কিন্তু তখন আমি শিক্ষক সমিতির কাজ করব বলে মনস্থির করে ফেলেছি, কথা দিয়ে ফেলেছি। সুতরাং তাঁর অনুরোধ আমি রক্ষা করতে পারিনি। এটা আমার এখনো মনে হয়, সিদ্ধান্তটা বোধহয় ঠিক ছিল না। পরে যখন তিনি পরিকল্পনা সেল গঠন করেন তখন তিনি আমাকে তার একজন সদস্য করেন। পরে এই পরিকল্পনা সেল পরিকল্পনা কমিশনে উন্নীত হয়। তখন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী ঢাকা থেকে কলকাতায় গিয়ে পৌঁছান। তাকে সভাপতি করা হয়, আমি তো আগে থেকেই সদস্য ছিলাম।
আর কারা কারা ছিলেন আপনার সঙ্গে?
আনিসুজ্জামান : আমার সঙ্গে ছিলেন অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ, অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, ড. স্বদেশ বোস- আমরা এই চারজন ছিলাম সদস্য। এই কাজেই আমি বিজয় লাভ পর্যন্ত নিজেকে নিয়োজিত রাখলাম। আমরা তখন তাজউদ্দীন সাহেবের ইচ্ছায় একটা কাজ করেছিলাম। সেটা হচ্ছে অধ্যাপক সারওয়ার মুরশিদ এবং আমি তাজউদ্দীন সাহেবের ভাষণগুলো লেখার দায়িত্ব পেয়েছিলাম। তিনি বলতেন কী তিনি বলতে চান। তারপর সারওয়ার মুরশিদ সাহেব ইংরেজিতে ড্রাফট করতেন, আমি বাংলায় করতাম। অথবা আমি বাংলায় ড্রাফট করতাম আর তিনি ইংরেজিতে অনুবাদ করতেন। তাজউদ্দীন আহমেদের ভাষাজ্ঞান খুব ভালো ছিল। তিনি নিজেই দুটো দেখে দিতেন। শব্দ ব্যবহার নিয়ে তার মতামত জানাতেন। এই কাজটা করতে গিয়ে তৃপ্তি পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, প্রথমে তিনি যে অনুরোধ করেছিলেন তার সঙ্গে ব্যাক্তিগতভাবে কাজ করার, সেটা এভাবেই সম্ভব হয়েছিল। তবে আমাকে প্লানিং সেল-এর সদস্য করায় মন্ত্রিসভার মধ্য থেকে, প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি আওয়ামী লীগের যারা ছিলেন তাদের মধ্য থেকে কিছু আপত্তি উঠেছিল।
আপত্তি কেন উঠেছিল?
আনিসুজ্জামান : কারণ সবাই আমাকে জানত একটু বামঘেঁষা বলে। আমি কখনো ছাত্রলীগের কাজ করিনি, আওয়ামী লীগেও কখনো কাজ করিনি। যদিও তাজউদ্দীন আহমেদ আওয়ামী লীগের সম্পাদক, তার কথামতো কিছু ড্রাফট করেছি। কিন্তু ধরে নেয়া হয়েছিল যে আমি বামপন্থী। অতএব আমাকে কেন নেয়া হলো এই একটা প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু তাজউদ্দীন সাহেব এই প্রশ্নের জবাব তার মতো করে দিয়েছিলেন। পরে আপত্তিটা আর টেকেনি।
পরিকল্পনা কমিশনে কী ধরনের কাজ করতেন? কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আনিসুজ্জামান : আমি প্লানিং কমিশনে যেটা করেছিলাম, সরকার থেকে বলা হয়েছিল আমাদের তিনটা পরিকল্পনা করতে। একটা হচ্ছে তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা, একটা মধ্যবর্তী পরিকল্পনা এবং একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। আমি প্রথম থেকেই বলেছিলাম যে, আমাদের পক্ষে তাৎক্ষণিক পরিকল্পনার বাইরে কিছু করা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের হাতে তখন কোনো উপাত্ত ছিল না। মানে যে ভিত্তিতে পরিকল্পনা করা যায় সেরকম তথ্য ছিল না। প্রতিদিন যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে দেশের স্থাপনাগুলো ভেঙে যাচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধারা কালভার্ট উড়িয়ে দিচ্ছে, এখানে-ওখানে আক্রমণ চলছে, পাকিস্তান সেনারা আক্রমণ করছে, প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষয়ক্ষতির পুরো বিবরণ আমরা পাচ্ছিলাম না। আমরা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে যখন বলি, আমাদের বিবরণ দেয়া হোক। কিন্তু তারা খুব একটা সহযোগিতা করেন নি। তারা বললেন, এমনিই আমাদের লোকবল কম। যারা যুদ্ধ করছেন তাদের একটি রিপোর্ট পাঠাতে হয়, আবার আপনাদের জন্য আরেকটা রিপোর্ট করতে গেলে তাদের আর যুদ্ধ করা হবে না। সুতরাং তখন আমরা তাৎক্ষণিত পরিকল্পনা করেছিলাম। যেমন আমি শিক্ষার দিকটা দেখতাম। দু-একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন। আমার প্রস্তাব ছিল, ’৭২ সালের পয়লা মার্চে আবার সব স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হোক এবং ’৭১-এর পয়লা মার্চে যে যে ক্লাসে পড়ত তাকে আবার সেই ক্লাসেই ভর্তি করা হোক। এক বছর তার যে ক্ষতি, সেটা পুষিয়ে দেয়ার জন্য চাকরিতে ভর্তির বয়স এক বছর বাড়িয়ে দেয়া হোক। এই ক্ষতিটা আমাদের সবাইকে স্বীকার করে নিতে হবে। কিন্তু দেখা গেল আমাদের এই প্রস্তাব ক্যাবিনেটে বিবেচিত হওয়ার আগেই অধ্যাপক ইউসুফ আলী সাহেব, যিনি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন ১০ এপ্রিল, তিনি এক জনসভায় বললেন, সবাইকে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করে দেয়া হলো। এটা ঠিক হয়নি। আমি এখনো মনে করি, এতে আমাদের শিক্ষার ভিত্তিটা প্রথমেই দুর্বল করে দেয়া হয়েছিল। তার ফলে পরে দেখা গেল অর্ধেক সিলেবাসে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা চালু করতে হয় দু বছর ধরে। এটা খুব ক্ষতি হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, যারা বিদেশে পাকিস্তান সরকারের বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করছে তাদের বলা হোক, যদ্দিন তারা পারে ওই বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করুক। সেই বৃত্তি বন্ধ হয়ে গেলে তারা বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করুক। তারপর স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশের যে তহবিল সংগ্রহ করা হয়েছিল সেই তহবিল থেকে তাদের একটা বৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক। সারওয়ার মুরশিদ সাহেব বলেছিলেন পুনর্বাসনের কাজ, বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা তরুণদের পুনর্বাসনের বিষয়ে পরিকল্পনার কথা। এগুলোর কিছু কিছু ক্যাবিনেটে বিবেচিত হয়েছিল, কিছু কিছু বিবেচনার সময় হয়নি। কারণ আমরা নানারকম প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে কাজ করেছিলাম। একটা প্লানিং কমিশন থাকবে সেটা তখন অনেকের পছন্দই হয়নি, এবং নানা কারণে আমাদের দিক থেকেও কিছু আপত্তি ছিল। ক্যাবিনেটের মধ্যে যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল সে কারণেও কিছু কিছু বিষয় বিবেচনায় আসেনি। ফলে আমরা কাজ অল্পস্বল্প করেছি বটে, কিন্তু সেই কাজ যে খুব তাৎপর্যপূর্ণ হতে পেরেছে তা নয়। কিন্তু একটা সান্ত্বনা, আমরা দেশের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের কথা ভেবে কিছু করতে পেরেছি। যেমন, একটি প্রস্তাব আমার ছিল, যে সমস্ত শিক্ষক চলে এসেছেন ভারতে, ফিরে গিয়ে তারা যখন আবার যোগ দেবেন, তখন তাদেরকে তিন মাসের বেতন দেয়া হোক, বাকিটা প্রতিশ্রুতি দেয়া হোক এবং পরে ভেঙে ভেঙে টাকাটা দেয়া হোক, যাতে আমাদের উপর আর্থিক চাপটা না পড়ে।যাই হোক, একাত্তরের সময়টা ছিল ভয়াবহ সময়। সে সময় দেশের জন্য কিছু করা সম্ভব হয়েছে, সেটাই আমার আনন্দ।
যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন ৪০ বছর পর সেই স্বপ্নের কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে বলে মনে করেন? আপনার তৃপ্তি-অতৃপ্তি সম্পর্কে যদি বলেন...।
আনিসুজ্জামান : একটা হচ্ছে যে, ধরুন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা দেশের যেসব আদর্শ স্থির করেছিলাম, যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতিগুলো, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিগুলো তৈরি করা হয়, সেগুলো তো ’৭৫ সালের পর থেকেই নষ্ট করা শুরু হলো। ফলে একাত্তরে যে দেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, একাত্তরের স্বপ্ন থেকে বেশ খানিকটা দূরে সরে গেছে বাংলাদেশ। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বার বার সামরিক বাহিনী শাসনক্ষমতায় এলো। এটা তো আমাদের গণতান্ত্রিক ধারণার সম্পূর্ণ বিরোধী। এই যে এখনো রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রচলিত রয়েছে। এটা আমাদের গণতান্ত্রিক চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী। আমরা যে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ চেয়েছিলাম তার সঙ্গে এটা মেলে না।
বর্তমান সরকারও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখল। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে এটা হয়ত আপনার প্রত্যাশা ছিল না...।
আনিসুজ্জামান : আমরা ভেবেছিলাম আওয়ামী লীগ যদি কখনো সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে তাহলে হয়ত রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম উঠিয়ে দেবে। কেননা এটি আওয়ামী লীগের ধ্যান-ধারণার সঙ্গে যায় না। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক বা কৌশলগত কারণেই হোক তারা এটা রাখলেন।আবার দেখা যাচ্ছে যে, স্বাধীনতার পর আমরা কিছু কিছু নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলাম। যেমন একাত্তরে আমরা কখনোই বাংলাদেশের অবাঙালি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলো নিয়ে ভাবিনি। এটা একটা নতুন বাস্তবতা আমাদের সামনে এলো। তাদের জাতিসত্তা এবং সংস্কৃতি বিকাশের জন্য যে আমাদের কিছু করতে হবে, এই চেতনাটা থাকতে হবে। এই সমস্ত নতুন পরিস্থিতি এলো। যার ফলে একাত্তরের চিন্তার সঙ্গে কিছু নতুন বিষয় যোগ করারও অবশ্যকতা দেখা দিল। এগুলো যে সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে তা নয়, তবে এ কাজগুলো আমাদের করতে হবে।
৪০ বছরে আমাদের কিছু ব্যর্থতার কথা বললনে, কিন্তু আমাদের অর্জনও তো আছে?
আনিসুজ্জামান : নিশ্চয়ই অর্জন আছে। অর্জন তো অনেকরকম। আমরা বাংলায় সংবিধান করেছি, দেশে স্কুল-কলেজের সংখ্যা বেড়েছে, ছাত্র সংখ্যা বেড়েছে, সাক্ষরতার হার বেড়েছে। সাধারণ মানুষকে পাকিস্তান আমলে যেমন দেখেছি তার চাইতে তারা ভালো আছে বলে আমার বিশ্বাস। তখন খালি গায়ে খালি পায়ে যত লোককে দেখতাম এখন সেটা দেখি না। গ্রামাঞ্চলেও দেখি না। গ্রামে ভোগ্যপণ্য কিছু পৌঁছেছে, যেগুলো শহর এবং গ্রামের পার্থক্যটা কমিয়ে এনেছে। তাদের মধ্যেও আধুনিকতার চেতনা জাগছে, তথ্যপ্রযুক্তির কারণে তারাও অনেক কিছু জানতে পারছে, অনেক কিছুর মুখোমুখি হচ্ছে। এসব কিছু আমাদের ইতিবাচক অর্জন। মানুষের মধ্যে নতুন চেতনা এসেছে যে, জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হবে, শিক্ষা নিতে হবে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এত মানুষ চাকরি করতে যাচ্ছে এটা তো পাকিস্তান আমলে ছিল না। আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প অর্থনীতিতে একটা বড় শক্তি জোগাচ্ছে। এগুলো আমাদের অর্জন বৈকি।
মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে থাকাকালীন আপনি শিক্ষা নিয়ে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে বর্তমানে শিক্ষার বহুমুখী ধারা, শিক্ষার ধারাটা আসলে কেমন হওয়া উচিত? আপনার কী মনে হয়?
আনিসুজ্জামান : কুদরত-ই খোদার নেতৃত্বে যে শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল আমি তার সদস্য ছিলাম। ’৭৪ সালে তার রিপোর্টটা জমা দেয়া হয়। সেই রিপোর্টে যে রূপরেখা দেয়া হয়েছিল, আমি মনে করি সেটাই বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত ছিল। সেখানে একই মাধ্যমের একই ধারার শিক্ষার কথা বলা হয়েছিল। ধর্ম শিক্ষাও তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু এখন যে সরকারি মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসা, বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এতগুলো আলাদা আলাদা ধারা চলছে, এটা শিক্ষার ক্ষেত্রে অনৈক্যের সৃষ্টি করেছে। নানা রকম শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে নানা রকম পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। এই সমস্যা যে সহজে মিটবে, এটা আমার মনে হয় না। এই সমস্যাগুলো আছে, এগুলো সমাধান করা দরকার। এই সরকার যে শিক্ষা কমিটি গড়েছিল, তাদের সুপারিশে কিছুটা চেষ্টা করা হয়েছে, সবটা নয়। তারা স্কুল এবং মাদ্রাসা দুটো ধারা রেখেছেন। কওমি মাদ্রাসার ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত ঠিকমতো কোনো নীতি গৃহীত হয়নি। এবং যারা কওমি মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত তারা রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক কিছু বলছেন, সরকারকে নানা রকম হুমকি দিচ্ছেন। এগুলো কীভাবে সমাধান হবে আমি জানি না। তবে মনে হয়, এ সম্পর্কে সরকারের সচেতনতা আছে এবং তারা সমাধান খুঁজছেন, সমাধানের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।
ফখরুলকে পূর্ণ মহাসচিব করার দাবি উঠছে নির্বাহী কমিটিতে
মান্নান মারুফ
 মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পূর্ণ মহাসচিব করার দাবি জোরালো হচ্ছে দলীয় পরিমণ্ডলে। আগামী ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সভায় এ বিষয়ে জোরালে দাবি তোলার প্রস্তুতিও নিয়েছেন কয়েক ডজন নেতা। তাদের জোরালো দাবির মুখে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর থেকে মহাসচিবের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করে আসা ফখরুলকে পূর্ণ মহাসচিব ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার মনোভাবও এ ব্যাপারে ইতিবাচক বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। তবে অপর এক সূত্র বলছে, দাবি যতোই উঠুক নির্বাহী কমিটির বৈঠকে ফখরুলকে পূর্ণ মহাসচিব ঘোষণা করা হবে না। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি অনুমোদন হবে। যদিও নির্বাহী কমিটির বৈঠকে তৃণমূল নেতাদের দাবি মির্জা ফখরুলের পূর্ণ মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে অনেকটাই। আবার পূর্ণ মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার জন্য মির্জা ফখরুলকে আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় দলের পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে বলেও আভাস দেন স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী এক সদস্য। তবে সব কিছুই খালেদা জিয়ার মর্জির ওপর নির্ভর করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ফখরুল সমর্থকরা মনে করছেন, ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিধ্বস্ত বিএনপিকে গোছাতে গত এক বছর রাত-দিন পরিশ্রম করেছেন ফখরুল। নানামুখী ভয়, হুমকি আর প্রলোভন উপেক্ষা করে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতেও তার অবদান যথেষ্ট। তার ইতিবাচক রাজনৈতিক তৎপরতায় খোদ খালেদা জিয়াও খুশি। তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হওয়ার পর রাজধানীতে একটি মহাসমাবেশ, বিভাগীয় ও জেলা শহরে ৫টি সমাবেশ এবং মোট ৫টি রোড মার্চ করে দলের নেতাকর্মীদের অনেকটাই উজ্জীবিত করেছেন। সর্বশেষ গত ১২ মার্চ ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার মুখেও ঢাকায় মহাসমাবেশ সফল হওয়ায় মির্জা ফখরুলের ওপর খালেদা জিয়া খুশি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছক দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, ‘মির্জা ফখরুল দলের সর্বস্তরের নেতার কাছে পরীক্ষায় পাস করেছেন। স্বয়ং দলের নেত্রীর বিবেচনায়ও তিনি উত্তীর্ণ। আর এসব কারণে আগামী নির্বাহী কমিটির বৈঠকে বা বৈঠকের পর তাকে পূর্ণ মহাসচিব ঘোষণা করা হতে পারে। এদিকে নির্বাহী কমিটির ৪৫ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদের অন্তত ৩৭ জন আগামী ৮ এপ্রিল নির্বাহী কমিটির বৈঠকে মির্জা ফখরুলকে পূর্ণ মহাসচিব করার জোরালো দাবি তুলবেন। আর এতে সায় থাকবে অপর আটজনেরও। এরা হলেন- ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, শামসুজ্জামান দুদু, মজিবুর রহমান সরোয়ার, মো. তৈমুর রহমান, আসাদুল হাবিব দুলু, মোজাহার আলী প্রধান, এম সালাম, মাহবুবুল আলম, মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, মোতাহার হোসেন তালুকদার, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, অধ্যপক ডা. রফিক, আনিসুজ্জামান বাবু, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান, এবিএম মোশাররফ হোসেন, প্রফেসর কাজী গোলাম মোর্শেদ, এম আকবার আলী, মেজর (অব.) হানিফ, গৌতম চক্রবর্তী, সাইদ সোহরাব, নিলোফার চৌধুরী মনি, ব্যারিস্টার কায়সার রহমান, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, আবদুস সালাম, সরাফত আলী সপু, শাম্মী আক্তার, লুৎফর রহমান মিন্টু, মো. আমজাদ হোসেন, শামসুজ্জোহা খান, নবী উল্লাহ নবী, শিরিন সুলতানা, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, মেজর (অব.) মেহবুব, আবু নাসের মো. রহমত উল্লাহ, মাওলানা নেছারুল হক, মাওলানা আবদুল মালেক, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নূরে আরা সাফা, মনির খান প্রমুখ। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৬ মার্চ তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ারের মৃত্যুর পর ২০ মার্চ চিকিৎসার জন্য সৌদি আরব চলে যাওয়ার প্রাক্কালে মির্জা ফখরুলকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া। এ নিয়ে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে তৈরি হয় অসন্তোষ। খালেদা জিয়া ২৯ মার্চ সৌদি আরব থেকে ফিরে ৬ এপ্রিল স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকেন। ওই বৈঠকেই ফখরুলকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপে এ নিয়ে সৃষ্ট সব অসন্তোষেরও অবসান ঘটে। সম্প্রতি তার পূর্ণ মহাসচিব হওয়ার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। পাশাপাশি কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত অগাধ আস্থা তৈরি হয়েছে ফখরুলের পক্ষে।
অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম
অনিয়ন্ত্রিত ব্যাংক সুদে দিশেহারা ব্যবসায়ীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্যাংক ঋণের অনিয়ন্ত্রিত সুদ এবং  সেবার নামে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। অনেকের ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান অনিয়ন্ত্রিত সুদের কারণে বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে অনিয়ন্ত্রিত সুদের হার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উচ্চ সুদের ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় সুদের হার নির্ধারণে প্রয়োজন একটি মাস্টার প্লান। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশ অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবসায়িক ঋণের সুদ ১২ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ১৮ দশমিক ৫ ভাগ করা হয়েছে। মাত্র ১০০ জন ৪০ হাজার  কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে বলে ব্যাংকের তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে।  সুদ বাড়ানো হয়েছে আর ব্যবসায়ীরাও ঋণ পাচ্ছেন না। সূত্র আরো জানায়, শিল্পসহ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের  ক্ষেত্রে বিদ্যমান ঊর্ধ্বমুখী সুদের হার নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) গত ৭ ফেব্র“য়ারি এক সভায় স্থায়ী আমানতের উপর সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদের হার নির্ধারণ করে। গত ৮ ফেব্র“য়ারি থেকে তা কার্যকরের সিদ্ধান্ত হলেও ব্যাংকগুলো তা মানছে না। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন,  বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সুদের জন্য  কোনো নীতিমালা না থাকায় প্রত্যেকটি ব্যাংক ইচ্ছা মতো সুদ নিচ্ছে। এছাড়া মাঝে মধ্যেই তা বাড়ানো হচ্ছে। ফলে ব্যবসা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি  মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন জানান, তিনি একটি ব্যাংক থেকে আড়াই  কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে। তবে এই সুদের হার যেকোনো সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাড়াতে পারে বলে ঋণপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী  সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম জানান, প্রায় দু’ মাস আগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১৫ দশমিক ৫ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ১৮ দশমিক ৫ ভাগ করার জন্য চিঠি দিয়েছে। তিনি বলেন, নতুন নতুন ব্যাংক হচ্ছে, এরপরেও সুদের হার নিয়ন্ত্রণ না হলে ব্যবসা টিকবে না। আর ব্যবসা করতে গেলে দ্রব্যের দাম বাড়বে। প্রভাব পড়বে জনসাধারণের ওপর। উদ্যোক্তারা বলছেন, সুদের উচ্চ হারে সবচেয়ে  বেশি প্রভাব পড়বে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে। বাংলাদেশ স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলি জামান বলেন, দেশের শিল্প-বাণিজ্যের শতকরা ৮০ ভাগ এসএমই খাতের অন্তর্ভুক্ত। তাই এসএমই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে অবিলম্বে ব্যাংক সুদের উচ্চ হার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এফবিসিসিআই-এর  সভাপতি একে আজাদ ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি জানান, চলতি ঋণ ছাড়াও পূর্বের ঋণের উপরও অতিরিক্ত সুদ  নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় উদ্যোক্তারা সমস্যায় পড়ছেন। এদিকে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের কারণে জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)- এর সভাপতি কাজী ফারুক। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো সিন্ডিকেট করে উচ্চ সুদের জন্য যে চাপ সৃষ্টি করছে তা থেকে মুক্ত হতে না পারলে শিল্প-কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুদের হার বাড়ালে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা প্রয়োজন মতো ঋণ নিতে পারবেন না। এতে শিল্পখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের সুদের উচ্চ হারের প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (এসএমই বিভাগ) সুকমল সিং চৌধুরী জানান, সুদের উচ্চ হার সমর্থন করা হবে না। হার নমনীয় রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ব্যাংক এবং উদ্যোক্তাদের মধ্যে পারফেক্ট প্রতিযোগিতা হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, উদ্যোক্তারা সচেতন হলে  ভোগান্তি কিছুটা কমবে। এসএমই খাতের বিকাশ না হলে অর্থনীতির বিকাশ হবে না। গত বছর ৩ লাখ ১৯ হাজার উদ্যোক্তাকে ঋণ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ব্যাংকের উচ্চ সুদের কারণে যেন কোনো শিল্পের ক্ষতি না হয়  সেদিকে ব্যাংকগুলোকে  খেয়াল রাখা উচিত। সুদ সিঙ্গেল ডিজিট (১০-এর নিচে) হলে প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিট হবে। শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ব্যাংক-বীমাসহ অন্যান্য অবকাঠামো সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে একটি সমন্বিত নীতি  তৈরি করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত
চার অপারেটরকে থ্রিজি লাইসেন্স দেয়ার প্রস্তাব
নিজস্ব প্রতিবেদক
মোবাইল ফোন সেবায় থ্রিজি লাইসেন্স  দেয়ার খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি, যাতে নতুন একটি অপারেটরসহ চারটি অপারেটরকে লাইসেন্স দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে তৃতীয় প্রজšে§র (থ্রিজি) এই লাইসেন্স দেয়ার সময় পরবর্তী চতুর্থ প্রজš§ (ফোরজি) এবং লং টার্ম ইভাল্যুয়েশন (এলটিই) প্রযুক্তিও এর অন্তর্ভুক্ত করা করেছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর  জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ বলেন, থ্রিজির খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই তা ডাক ও  টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় এতে সম্মতি দিলে সব আনুষ্ঠানিকতা  শেষে আগামী জুন অথবা জুলাইয়ের মধ্যে লাইসেন্স দেয়ার কাজ  শেষ হতে পারে বলে জিয়া আহমেদ জানান। সেলুলার মোবাইল ফোন সার্ভিস (থ্রিজি/ফোরজি/এলটিই)  রেগুলেটরি লাইসেন্স গাইড লাইন ২০১২ নামে এ খসড়া নীতিমালায় চারটি অপারেটরকে লাইসেন্স দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি পাঁচ  মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হবে। একটি  দেয়া হবে নতুন এক অপারেটরকে। এছাড়া রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে  টেলিটক লাইসেন্স পাবে। খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিটিআরসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কোনো অপারেটর থ্রিজি লাইসেন্স নেয়ার পর বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে তাদের নেটওয়ার্ক  ফোরজি বা এলটিইতে উন্নীত করতে পারবে। এতে অতিরিক্ত  কোনো অর্থ না  নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়া নীতিমালায় সব ধরনের তরঙ্গের প্রতি  মেগাহার্টজের ফি ধরা হয়েছে ১৫০  কোটি টাকা। থ্রিজি লাইসেন্স নিলামে প্রতিটি লাইসেন্সের জন্য ‘ফ্লোর প্রাইস’ থাকবে দেড় হাজার কোটি টাকা। তৃতীয় প্রজšে§র মোবাইল সার্ভিস (থ্রি-জি) লাইসেন্স থেকে আনুমানিক ৮ হাজার  কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন বিটিআরসি  চেয়ারম্যান। রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটক ও  বেসরকারি অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেল এবং সিটিসেল বর্তমানে দ্বিতীয় প্রজšে§র (টুজি) সেবা দিচ্ছে। থ্রি-জি প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চগতিতে তথ্য পরিবহন সম্ভব হওয়ায় মোবাইল ফোনেই টিভি দেখা, জিপিএসের মাধ্যমে পথ নির্দেশনা পাওয়া, উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহারসহ ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেয়া সম্ভব হবে। থ্রিজির পরের ধাপের প্রযুক্তি হচ্ছে  ফোরজি। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য  ফোরজিকেই লং টার্ম ইভল্যুশন (এলটিই) বলছেন। এলটিই প্রযুক্তিতে থ্রিজির চেয়েও বেশি গতিতে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
ডিজিটাল হওয়ার অপেক্ষায় সংসদ অধিবেশন কক্ষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন পেলেই সংসদ অধিবেশন কক্ষকে ‘ডিজিটাল প্লেনারি চেম্বার’-এ রূপান্তরের প্রকল্প শুরু হবে। আগামী বাজেট অধিবেশন থেকে নতুন পদ্ধতিতে সংসদ কক্ষ সাজাতে পারবে বলে আশা করছে সংসদ সচিবালয়। সংসদকে ই-পার্লামেন্টে রূপান্তরের লক্ষ্যেই পৌনে ২৫ কোটি টাকার এ প্রকল্প হাতে  নেয়া হয়েছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে প্রথমবার প্রকল্প প্রস্তাব করার সময় এর বাজেট রাখা হয় ২৭ কোটি টাকা। বিধি অনুযায়ী, ২৫ কোটি টাকার ওপরে গেলেই প্রকল্প পাসের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠাতে হয়। তবে প্রকল্প খুব দ্রুত কার্যকর করার জন্য একেনেকে পাঠানোর যেন প্রয়োজন না হয় সে লক্ষ্যে প্রকল্প বাজেট দু’বার সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪  কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় অর্থ ২  কোটি ৯৩ লাখ টাকা। বাকিটা কোরিয়ান সংস্থা  কোইকা অনুদান হিসেবে দেবে। এ প্রকল্পের আওতায় সংসদ সচিবালয়ের প্রশাসনিক ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মকর্তারা শিক্ষা সফরে কোরিয়া যেতে পারবেন। আর  কোরিয়ান বিশেষজ্ঞরা প্রকল্পের কারিগরি দিক বাস্তবায়নে পরামর্শ দেয়ার জন্য নিযুক্ত হতে পারবেন। এ বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব  মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, পরিকল্পনা কমিশন থেকে অনুমোদন দিলেই আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করতে পারবো। আশা করি খুব দ্রুত এ প্রকল্পের অনুমোদন পেয়ে যাবো। আগামী বাজেট অধিবেশন থেকেই নতুন পদ্ধতি চালু করার বিষয়েও আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে আমরা পরিকল্পনা কমিশনে খোঁজ  নেবো। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি দ্রুততম সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অধিবেশন কক্ষকে পুরোপুরি ডিজিটাল করার প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক সংসদ সদস্যের আসনে ল্যাপটপ বসানো হবে। চালু করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ই-বিল পদ্ধতি। সব সংসদীয় বিতর্ক ডাটা-বেজে সংরক্ষণ এবং প্রশ্নোত্তর, নোটিশসহ দিনের কার্যসূচি সব কিছুই থাকবে ল্যাপটপে। জনসংযোগসহ একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রত্যেক সংসদ সদস্যের জন্য সংসদ ওয়েবসাইটে আলাদা ব্লগ  তৈরি করা হবে। এছাড়া সংসদীয় কমিটির  বৈঠকে হাজির হতে সংসদ সদস্যদের নোটিশ এসএমএস আকারে পাঠানোর জন্য সফটওয়্যার স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, সংরক্ষিত আসনের ৫০ জনসহ মোট ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের  টেবিলেই বসানো হবে ল্যাপটপ। এজন্য  টেবিলের কাঠামোয় পরিবর্তন আনা হবে। টেবিলে ল্যাপটপটি এমনভাবে স্থাপন করা হবে যাতে অন্যসময় তা  টেবিলের ভেতরে একটি ছক কাটা বাক্সে থাকতে পারে। সংসদ সদস্যরা সুইচ অন করা মাত্র ল্যাপটপটি উপরে উঠে আসবে। কক্ষে ওয়াই-ফাই সংযোগ থাকবে। ফলে সংসদ সদস্যরা অধিবেশন চলাকালে পুরো সময়টায় ইন্টারনেটে থাকতে পারবেন। এদিকে প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল কক্ষ বা ডিজিটাল  প্লেনারি চেম্বার করার জন্য ইলেকট্রনিক  ভোটিং ও ই-বিল পদ্ধতি চালু করা হবে। সংসদের বিগত দিনের সমস্ত বিতর্ক একটি শক্তিশালী ডাটা-বেজে সংরক্ষণ করা হবে। যাতে কোনো সংসদ সদস্য  যেকোনো সময় অধিবেশন কক্ষে বসেই পুরানো বিতর্কগুলো দেখে নিতে পারেন।
এছাড়া সংসদ সদস্যদের নোটিশ  দেয়াসহ অধিবেশনের প্রত্যেক বৈঠকের দিনের কার্যসূচি ডিজিটালি দেয়া থাকবে। থাকবে সংসদ সদস্যদের জন্য আলাদা ব্লগ। এ ব্লগের মাধ্যমে পারস্পরিক  যোগাযোগ বজায় রাখতে পারবেন সংসদ সদস্যরা। এছাড়া প্রত্যেক সংসদ সদস্যের আসনের নামে এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ ই-মেইল আইডি তৈরি করেছে। প্রতিনিয়ত ওই ই-মেইলেই পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন নোটিশ। ই-মেইল আইডি জাতীয় সংসদ থেকে করে  দেয়া হলেও সংসদ সদস্যরা ইচ্ছেমতো পাসওয়ার্ড দিতে পারবেন।
ডিসেম্বরেই কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ শুরু: পর্যটনমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অবকাঠামোগত কাজ শুরু হবে এবং দ্রুতগতিতে এর কাজ সম্পন্ন করা হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পর্যটনমন্ত্রী একথা বলেন। মন্ত্রী জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দরের জন্য  ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। এর জন্য ৮০০ একর ভূমি প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ৭০০ একর খাস জমি এবং প্রায় ১০০ একর ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ভূমি। এটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে। বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী বলেন, পর্যটনের জন্য যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন একটি বড় শর্ত। এ উপলব্ধি থেকে সরকার কুয়াকাটা যাওয়ার সড়কে ইতোমধ্যে নতুন ৩টি সেতু নির্মাণ করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি সেতুগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। কক্সবাজারের পর্যটন সুবিধার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সরকার ইতোমধ্যে পরিকল্পিত এলাকার উন্নয়নের জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ঘেঁষে মেরিন ড্রাইভের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, টেকনাফে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন নির্মিত হলে বিদেশি পর্যটকরা আরো নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবে। মন্ত্রী জানান, বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য ‘অন এরাইভাল ভিসা’ প্রদান করা দেশের তালিকায় আরো নতুন দেশ অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফারুক খান বলেন, সরকার ‘ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড’ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিমান ও পর্যটন সচিব মো. আতাহারুল ইসলাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলংকার রাষ্ট্রদূত, পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার, ইন্ডাস্ট্রি স্কিল কাউন্সিল অব ট্যুরিজম-এর চেয়ারম্যান এ কে এম বারী ও আইএলও বাংলাদেশের পরিচালক আন্দ্রে বুগি। বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও অংশগ্রহণকারীদের চিন্তাধারা ও মতামতের মাধ্যমে এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের সমন্বয়ে বাংলাদেশে পর্যটন ও হসপিটালিটি খাতের উন্নয়নে একটি সুপরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত কার্যকরি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্যে সম্মেলনটি আহ্বান করা হয়। মানব সম্পদ উন্নয়নে দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, সার্ক অঞ্চলে পর্যটন ও হসপিটালিটি খাতের উন্নয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবিলা, এ খাতে সরকারি, বেসরকারি ও দাতা সংস্থাদের ভূমিকা এবং বাংলাদেশে পর্যটন ব্রান্ডিং-এর উপর ৪টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ প্রতি বিদেশি পর্যটক থেকে গড়পড়তা মাত্র ১৪৭ মার্কিন ডলার আয় করছে যা অন্যান্য দেশের তুলানায় খুবই অপ্রতুল। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬ দেশের মধ্যে ১২৯তম। এটাকে তারা হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, বিশ্বমন্দার কারণে দূরবর্তী দেশের পর্যটকের সংখ্যা কমে আসছে। তার পরিবর্তে আঞ্চলিক পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ভারত ও চীনের পর্যটকদের প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়ার উপর তারা গুরুত্বারোপ করেন। এ ক্ষেত্রে ইকো ট্যুরিজম ও রুরাল ট্যুরিজমের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণের কথা বক্তারা তুলে ধরেন।
বীমা আইনের দুই প্রবিধান চূড়ান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
বীমা খাতের নিয়ন্ত্রণ আনতে আইনের দু’টি প্রবিধানে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এছাড়া আরো ৬টি প্রবিধান চূড়ান্ত করার জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত অনুমোদন দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আইনের সীমাবদ্ধতা দূর করতে এ পর্যন্ত বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) মোট ১৪টি প্রবিধান অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এর মধ্য হতে অনুমোদন পাওয়া প্রবিধানগুলো আইডিআরএ চেয়ারম্যানের অনুমোদনের পরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
চূড়ান্ত হওয়া প্রবিধান ২টি হলো- তহবিল ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রবিধান (বাংলা) ও উপদেষ্টা পরিষদ (বাংলা)। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয় থেকে ৬টি প্রবিধান চূড়ান্ত করার জন্য আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রবিধানগুলো হলো- বীমাকারীর কার্যালয় ও শাখা-কার্যালয়ের লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (উদ্বৃত্ত বণ্টন) প্রবিধানমালা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (গ্রামীণ ও সামাজিক খাতে বীমাকারীর দায়বদ্ধতা), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিরোধ মীমাংসা কমিটি) প্রবিধানমালা, কেন্দ্রীয় রেটিং কমিটি প্রবিধানমালা, বীমা পলিসিতে ক্ষুদ্র দাবির বিরোধ, বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (গ্রামীণ ও সামাজিক খাতে বীমাকারীর দায়বদ্ধতা) এবং কেন্দ্রীয় রেটিং কমিটি প্রবিধানমালা। গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সহকারী সচিব মোস্তাক উদ্দীন আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রবিধানসমূহে অর্থমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন। চিঠিতে, আইডিআরএ চেয়ারম্যানকে প্রবিধান ৬টিতে চিঠি পাওয়ার ২ দিনের মধ্যে স্বাক্ষর করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। তবে বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, রেটিং কমিটি সংক্রান্ত প্রবিধানে বীমা খাতে মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের (বিআইএ) অংশীদারিত্ব রাখায় আইডিআরএ চেয়ারম্যান তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন। যে কারণে তিনি এখনো প্রবিধানটিতে স্বাক্ষর করেননি। জানা গেছে, আইডিআরএ গঠন করার পর গত বছরের ফেব্র“য়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থমন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য মোট ১৪টি খসড়া প্রবিধান পাঠানো হয়। এর মধ্যে গত ডিসেম্বরে পাঠানো ৯টি প্রবিধানের মধ্যে এ ছয়টি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদন না পাওয়া বাকি তিনটি প্রবিধান হলো বীমাকারীর শাখা ও কার্যালয় স্থাপনের লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন, নিবন্ধনের নিমিত্ত ফি প্রবিধানমালা ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য ব্যক্তির যোগ্য ও উপযুক্ত পরীক্ষা প্রবিধানমালা।
 এছাড়া অর্থমন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো প্রবিধানগুলো হচ্ছে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (তহবিল ব্যবস্থাপনা) প্রবিধানমালা, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (নিবন্ধনের নিমিত্ত ফি) বিধিমালা, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বীমা কোম্পানির নিবন্ধন) প্রবিধানমালা,  বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (নন-লাইফ বীমা এজেন্টগণকে লাইসেন্স প্রদান) প্রবিধানমালা, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বীমা কোম্পানির নিবন্ধন) প্রবিধানমালা, বীমাকারীর কার্যালয় ও শাখা-কার্যালয়ের লাইসেন্স প্রদানের ফি, বীমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ও অংশীদারিত্ব বিধিমালা, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (জীবন বীমা এজেন্টদেরকে লাইসেন্স প্রদান) প্রবিধানমালা, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (উপদেষ্টা পরিষদ) প্রবিধানমালা এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (তহবিল ব্যবস্থাপনা) প্রবিধানমালা ২০১১।
একটি ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা সম্ভব নয় : নাসিরউদ্দীন ইউসুফ
পাভেল রহমান
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় একজন প্রবাদপ্রতীম পুরুষ।  তিনি একাধারে নাট্য-সংগঠক, নাট্য-নির্দেশক। নাট্যকার সেলিম আল দীন আর নির্দেশক নাসিরউদ্দীন ইউসুফ জুটি বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের নাট্য চর্চার গতিধারা। এই জুটিই আমাদেরকে জানিয়েছে বাংলা নাটকের শিকড়ের খোঁজ। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আরো একাধিক শাখাতেও রয়েছে নাসিরউদ্দীন ইউসুফের স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ। এই কৃতি-ব্যক্তিত্ব সম্প্রতি দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচিত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’ নির্মাণের মাধ্যমে। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি সেরা চলচ্চিত্রের মর্যাদা অর্জন করে। দেশীয় নাট্য আঙ্গিক নির্মাণে বিভোর স্বপ্ন যুগল নাসিরউদ্দীন ইউসুফ ও সেলিম আল দীন নাটককে গণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি করেছিলেন গ্রাম থিয়েটার। যার প্রায় আড়াইশ শাখা সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে দেশের প্রান্তিক মানুষের নাট্যচর্চায় ভূমিকা রাখছে। তবে নাসিরউদ্দীন ইউসুফের আজকের সব পরিচয়কে ছাপিয়ে যাওয়ার মতো বড় কাজ  তিনি করেন সদ্য কৈশোর-উত্তীর্ণ তারুণ্যের শুরুতেই। বাঙালী জাতীর হাজার বছরের স্বপ্ন পূরণের সংগ্রামে নাসিরউদ্দীন ইউসুফ ছিলেন একজন লড়াকু যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় অবরুদ্ধ ঢাকায় তার নের্তৃত্বে সংগঠিত হয় বহু দুঃসাহসিক গেরিলা অভিযান। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা উত্তরের সেকশন কমান্ডার হিসেবে। পৃথিবীর খুব কম মানুষই আছে যারা বর্ণময় জীবন যাপন করেন। নাসিরউদ্দীন ইউসুফ সে রকমই একজন সফল মানুষ যিনি যুদ্ধের ময়দানে যেমন সফল হয়েছেন তেমনি নাটকের মঞ্চেও সফল হয়েছেন। আবার সাফল্য দেখিয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মানে। জীবনের রুপকে দেখেছেন নানাভাবে। সম্পৃতি আরো একটি সাফল্যের পালক এসে যুক্ত হয়েছে তার বর্ণাঢ্য জীবনে। এ বছর লন্ডনের গ্লোব থিয়েটারে যাচ্ছে তার দল ঢাকা থিয়েটার। সেখানে বাংলা ভাষায় মঞ্চস্থ হবে বাচ্চুর নির্দেশনায় শেক্্রসপীয়ারের নাটক ‘টেম্পেস্ট’। নাসির উদ্দীন ইউসুফের হাত ধরে জন্ম হয়েছে হুমায়ুন ফরিদী, সুবর্ণা মুস্তফা, আফজাল হোসেন, রায়সুল ইসলাম আসাদ প্রমূখের মতো অভিনয়শিল্পী। বর্নাঢ্য কর্মময় জীবনে নাসিরউদ্দীন ইউসুফ পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক (২০১০)। এ যাবৎকালে সব অর্জনের চেয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়াটাকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন।
uddinসম্প্রতি এই কীর্তিমান পুরুষ তাঁর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণায় মুখোমুখি হয়েছিলেন বাংলানিউজের সঙ্গে। সেখানে তিনি বাংলা নিউজের পাঠকদের জন্য বলেছেন যুদ্ধ জয়ের গল্প।
বাংলানিউজ : আপনার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাই?

নাসিরউদ্দীন ইউসুফ : এটা তো অল্প কথায় বলে শেষ করার মতো নয়। আমি মূলত ১৯৬৮ সাল থেকেই একটা ধারাবাহিক আন্দোলনের সাথে সরাসরি জড়িয়ে পড়ি। তখন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মী ছিলাম। আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল. আমরা যেন একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নিজ নিজ এলাকাতে জনসম্পৃক্ততা তৈরি করি। তাই বলা চলে যে একটা ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমি মুক্তিযুদ্ধে সক্্িরয় হয়। সেই ধারাবহিক আন্দোলনই পরবর্তি কালে ৬৯ এর গণ অভ্যুথান ৭০ এর নির্বাচন এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে আমাকে সম্পৃক্ত করেছে। স্বাধীনতার জন্য একটা প্রস্তুতি এই ধারবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এক প্রকার নেয়া হয়েছিল। ফলে ২৫ মার্চের রাতে পাক বাহিনীর অতর্কিত হামলার আগে থেকেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। আমাদের সাধারন জনগণ স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিল।  তবে ২৫ মার্চের রাতে এভাবে সাধারণ মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, এটা ভাবতে পারি নি। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষনের পরই মনে হচ্ছিল একটা হামলা হবে, আর সেটা আওয়ামী লীগ এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের উপর দিয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষের উপর হামলা হবে আর এরকম ভয়াবহ গণহত্যা হবে তা ভাবতে পারিনি। আমার মনে করি, ২৫ মার্চের হামলা মানুষের মনে স্বাধীনতার আকাংখাকে প্রজ্বলিত করে। তবে ২৫ মার্চেও দেশের অনেক জায়গায় প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়েছে। ইপিআরের বাঙ্গালী সদস্যরা এবং সাধারণ মানুষের প্রতিরোধে কোন কোন জায়গা বাঙালীদের দখলে ছিল।  দেশের অনেক জায়গা বাঙালীদের দখলে থাকলেও কার্যত ২৬ মার্চ রাজধানী ঢাকা পুরোপুরি পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে চলে যায়। আমারা তখন ২৭ এপ্রিল কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরায় ছাত্রদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প তৈরি করি এবং সেখানে আমরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।  ইপিআরের পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে আমরা কিছু অস্ত্র পেয়েছিলাম। সেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আমাদের প্রায় দুই হাজার ছাত্র স্বশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে। কিন্তু ২ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী হামলা করে সেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পটা ধ্বংস করে দেয়। ফলে ২ এপ্রিল থেকে ঢাকা পুরোপুরি আমাদের হাত ছাড়া হয়ে যায়। আমি এরপর ভারতের ত্রিপুরাতে চলে যায়। সেখানে গিয়ে মেজর খালেদ মোশারফ ও ক্যাপ্টেন হায়দারের সাথে পরিচয় হয়। আমি এরপর দুই নম্বর সেক্টরের মেজর খালেদ মোশারফের অধীনে মেলাঘর মুতিনগর, আগরতলা প্রভৃতি জায়গায় বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ভারতীয় সেনা বাহিনীর তত্বাবধানে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করি। তারপর আমাদের একটা বিশেষ দলকে পাঠানো হয় পশ্চিম দিনাজপুরে বিশেষ এক্সপে¬াসিভ ট্রেনিংরে জন্য। এই স্পেশাল গেরিলা ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল কারন ঢাকার কিছু বিশেষ জায়গায় আমাদেরকে অপারেশন চালাতে হবে। আমাদেরকে প্রায় দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষনের পর অপারেশনে পাঠানো হয়। অবশ্য প্রশিক্ষন চলাকালীন সময়ে বর্ডারের কাছে কিছ কিছুু অপরেশনে আমাদেরকে পাঠানো হত। এর মাঝে দু-একবার এপ্রিল মাসের শেষের দিকে এবং মে মাসের  শেষের দিকে আমাকে বর্ডারের অনেকটা ভিতরে স্বশস্ত্র যুদ্ধের জন্য পাঠনো হয়। প্রশিক্ষন শেষ করে আগস্ট মাস থেকে নিয়মিত যুদ্ধে অংশগ্রহণ শুরু করি।
বাংলানিউজ : আমরা জানি, মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনি অবরুদ্ধ ঢাকার একটি বড় অংশের সেকশন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আপনার কাছে সে সময়ের কিছু দুঃসাহসিক অভিযানের কথা শুনতে চাই।
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ : আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয় সাভার, ধামরায়, মিরপুর,  লালবাগ, কেরানীগঞ্জের অংশ বিশেষ, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, রমনা প্রভৃতি এলাকায় যুদ্ধ করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়। শহীদ মনিক ছিলেন আমাদের দলের কমান্ডার এবং আমি ছিলাম সহ কমান্ডার। আমাদের এই দলটি ঢাকায় বেশকিছু সফল অপরেশন পরিচালনা করেছি। কখনো আমরা পাকিস্তানি বাহিনীকে পর্যদস্ত করেছি, আবার কখনো নিজেরা কৌশলগত কারণে পিছু হটেছি। তবে আমরা তখন বেশ কিছু সফল অপারেশন করতে সমর্থ হয় এর মধ্যে ছিল বায়তুল মোকাররম অপারেশন, কাকরাইল পেট্রোলপাম্প অপারেশন, মালিবাগ রেললাইন অপারেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অপারেশন উল্লেখযোগ্য ছিল। আমাদের নিয়মিত অপারেশনগুলোর মধ্যে ছিল ঢাকার বিভিন্ন স্কুল কলেজগুলোতে পাকিস্তান বাহিনীর ক্যাম্পগুলোতে গেরিলা আক্রমণ করা।
আমাদের সফল অপরেশনের একটা ছিল সাভার এফকাপ ক্যাম্প আক্রমণ। ঢাকার এখন যেখানে ক্যান্টনমেন্ট আছে সেখানে এফকাপের ক্যাম্প ছিল পাকিস্তানি এবং কিছু বেসামরিক বাঙালীদের নিয়ে  এই এফকাপ বাহিনী গঠন করা হয়। এটা ছিল পাকিস্তানিদের সিভিল আর্মড ফোর্স। বাঙালীদরে মধ্যে মূলত জামাতে ইসলামী এবং কিছু উগ্রধর্মপন্থি দলের লোকদের নিয়ে এই বাহিনী গঠন করা হয়। সাভারে এফকাপ ক্যাম্পের পাশেই ছিল পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর ক্যাম্প। তার পাশেই ছিল রেডিও অফিস। আর আমাদের ক্যাম্প ছিল এর থেকে চার কিলোমিটার দূরে জিরাবো নদীর তীরে। ডেয়ারি ফার্মের পেছনে।
এফকাপের ক্যাম্প যেহেতু ছিল পাকিস্তানি আর্মিদের ক্যাম্পের পাশে, এটা তাদের জন্য অনেকটাই সুরক্ষিত ছিল। এই এফকাপের ক্যাম্পে যেমন এফকাপের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হত, তেমনি পাকিস্তানি আর্মিরা নিজেরাও প্রশিক্ষণ নিত। তাই এই ক্যাম্পটাকে উড়িয়ে দেওয়াটা ছিল আমদের টার্গেট। পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য এটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনে সফল হয়েছিলাম এবং এই অপরেশনে অনেক পাকিস্তানি সেনা-সদস্য নিহত হয়েছিল। তবে আমাদের দলের কয়েকজন আহত হলেও কেউ নিহত হননি। এফকাপ ক্যাম্প আক্রমণ ছিল আমাদের একটা অন্যতম সফল আক্রমণ।
বাংলানিউজ : বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় মুক্তিযুদ্ধ কতটা উঠে এসেছে?
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ : মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই নাটক করতে হবে আমি এমনটা মনে করি না। নাটকে মানুষের জীবন সংগ্রামের কথা আসবে, জীবন বোধের কথা আসবে। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাপনের সুখ দুখের কথা আসবে। তবে আমাদের দেশের মানুষের জীবন সংগ্রামের একটা বড় ইতিহাস হচ্ছে ,আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। তাই আমাদের নাট্যচর্চায় মুক্তিযুদ্ধ আসা উচিত। তবে আমি বলব যে, আমাদের নাট্যচর্চায় মুক্তিযুদ্ধ মোটামুটিভবে উপস্থাপিত হচ্ছে। আমাদের দেশেতো মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশের নাট্যচর্চা যাদের হাত ধরে বিকশিত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি প্রজন্মের যারা নাট্যচর্চায় যুক্ত আছেন তাদেরও সিংহভাগ মুক্তিযুদ্ধের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। ফলে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ উত্তর নাট্যচর্চায় বেশ কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নাটক হতে দেখেছি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘যুদ্ধ এবং যুদ্ধ’, ‘সময়ের প্রয়োজনে’, ‘কথা ৭১’ প্রভৃতি । 
nasir-uddinবাংলানিউজ : মুক্তিযুদ্ধের ইতিহসি বিকৃতির বিষয়টা কিভাবে দেখেন ?
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ : বিশাল একটা গণযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তো কোন একজন ইতিহাস গবেষকের পক্ষে উদঘাটন করা সম্ভব হবে না। তবে হাসান হাফিজুর রহমান যে গবেষনার কাজটি করেন, তা ১৬ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে, এটা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গবেষকদের জন্য একটা সিঁড়ি হিসাবে কাজ করবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি,  বিশেষ করে চ্যানেল আইতে ‘মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানটি করতে গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে মনে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে সাধারন মানুষের যে ভুমিকা ছিল সেটা আমাদের ইতিহাসে খুব একটা উঠে আসে নি। এরপর পচাঁত্তর পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটা বদলে দেয়া হয়েছে। এতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। আমরা দেখেছি যে, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম; আজকে সেই ধর্মীয় রাজনীতির রাষ্ট্রীয় বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সাথে, এদেশের মানুষের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করা হয়েছে। তবে আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধ বাঙ্গালীর জীবনের একটা মহাকাব্য, ফলে এই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নিরূপন করা আসলে সম্ভব হবে না। কারণ এই মহাকাব্যের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে হাজারো গল্প। যার অনেক গল্পই কালের গহ্বরে হারিয়ে যাবে। তবে এখনই সময় মুক্তিযুদ্ধের গল্প সংরক্ষণ করার উদ্যোগ। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে আরো বড় পরিসরে ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ উত্তর প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস রেখে যেতে হবে আমাদের জাতীয় প্রয়োজনে।
বাংলানিউজ : আপনার তৈরি ‘গেরিলা’ ছবিতে কী মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস উঠে এসেছে?
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ : বিশাল একটা গণযুদ্ধের ইতিহাস কোনোভাবেই মাত্র একটা ছবিতে তুলে ধরা অসম্ভব। ‘গেরিলা’ ছবিটির অনেককিছুই আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে নিয়েছি। এতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের প্রতিফলণ আছে, এটা বলতে পারি।
বাংলানিউজ : মুক্তিযুদ্ধের পর কোন কাজটির জন্য নিজেকে অনেক বেশী সফল মানুষ মনে হয়েছে?
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ : মুক্তিযুদ্ধের পর আমি নাট্যচর্চায় সক্রিয় হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে সেলিম আল দীনের স্বপেরœ বাংলার নিজস্ব নাট্য আঙ্গিক নির্মাণের জন্য কাজ করছি। এরপর ঢাকা থিয়েটরের এবং গ্রাম থিয়েটারের মাধ্যমে আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের প্রায় সকল নাট্য প্রযোজনা দেশীয় নাট্য আঙ্গিকে নির্মাণের চেষ্টা করেছি। আমাদের এই দীর্ঘদিনের নাট্যযাত্রার একটা ফসল বলব, এ বছর গ্লোব থিয়েটারের আমন্ত্রণে ইন্টারন্যাশনাল শেক্সপিয়ার উৎসবে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া। বিশ্ব অলিম্পিক উপলক্ষে লন্ডনে শুরু হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল শেক্সপিয়ার উৎসব। সেখানে ৩৭টি ভাষায় শেক্সপিয়ারের নাটক প্রদর্শিত হবে। বাংলা ভাষায় আমরা শেক্সপিয়ারের নাটক প্রদর্শণ করব। সেখানে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক  ঐতিহ্য নিয়ে আমাদের ভাষায় নাটক প্রদর্শন করব। এই বিষয়টার জন্য নিজেকে মুক্তিযুদ্ধ উত্তরকালের একজন সফল মানুষ মনে হয়। আমার মনে এটা সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বিজয়। আমরা এই নাটকটি নির্মাণের ক্ষেত্রেও আমাদের নিজস্ব নাট্য আঙ্গিককে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের মনিপুর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে নাটকটি নির্মাণের চেষ্টা করছি। আগামী ৬ ও ৭ মে লন্ডনের গ্লোব থিয়েটারে নাটকটির প্রদর্শনী করব এবং এই প্রদর্শনীর জন্য এখনই টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে।
হিরোইন কারিনার ‘হালকাট জাওয়ানি’
অনন্যা আশরাফমাধুর ভান্ডারকারের বিতর্কিত ছবি ‘হিরোইন’-এর একটি আইটেম গানে এবার দেখা যাবে কারিনার জাওয়ানি। এ ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয়ের পাশাপাশি  ‘হালকাট জাওয়ানি’ টাইটেলের নতুন একটি আইটেম গানে নেচেছেন কারিনা। নতুন রূপে নতুন বেশে আইটেম গান নিয়ে হিরোইন কারিনা আবারও বলিউডে ঝড় তুলবেন বলে মনে করছেন অনেকে। বলিউড ফিল্মডোম এখন আইটেম গানের রাজত্ব। ছবিতে একটি হট আইটেম গানই ছবিকে করে তুলছে সুপারহিট। এটি স্বীকার করে নিয়েছেন বলিউডের নির্মাতা-নায়ক-নায়িকা সবাই। তাই ছবির বানিজ্যিক সাফল্যের কথা ভেবে পরিচালকরা তাদের ছবিতে একটি ধুমধারক্কা মার্কা আইটেম গান জুড়ে দিতে ভুল করেন না।আইটেম গানের এই ধারার ব্যতিক্রম করছেন না পরিচালক মাধুর ভান্ডারকার। তার নতুন ’হিরোইন’ ছবি হিট করার পেছনে চেষ্টার কমতিও রাখছেন না। কিছুদিন আগে তিনি ঘোষনা দিয়েছিলেন , এ ছবিতে দুইটি আইটেম গান রাখছেন। আর এ গান দুটি পরিকল্পনা করা হয়েছে হিরোইন কারিনাকে ঘিরেই। বাইরে থেকে একটা-দুইটা  গানের জন্য আইটেম গার্ল ভাড়া করতে রাজি নন তিনি।
আইটেমের মাধ্যমে খুব দ্রুত পৌছে যাওয়া যায় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, এটি খুব ভালো করেই জানেন কারিনা কাপুর। তাই আইটেম গানে পারফর্ম করার প্রতি তারও ছিল বেশ আগ্রহ। তাই যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই আইটেম গার্ল হয়ে নাচতে নেমেছেন তিনি। আইএনএএস-এর এক রিপোর্টে ভান্ডারকার জানান, কারিনার করা নতুন আইটেম গানটির নাম ‘হালকাট জাওয়ানি’। আইটেম গানটির ৪০ ভাগ কাজ এর মধ্যেই শেষ করেছেন। ২০১২ সালের টপ লিস্টের শীর্ষে থাকবে এ আইটেম নাম্বারটি। ১০ এপ্রিল থেকে ছবিটির টানা শুটিং করা হবে। এ বছর সেপ্টেম্বরে ছবিটি মুক্তি দেয়ার আশা করছেন তারা।  সাইফ আলী খানের হোম প্রডাকশনের ছবি ‘এজেন্ট বিনোদ’। এ ছবিতে কারিনা কাপুর প্রথমবার আইটেম গার্ল হয়ে ‘দিল মেরা মুফট কা’ গানটিতে অংশ নিয়ে সম্প্রতি আলোচনায় উঠে আসেন। এরপরই হিরোইন ছবিতে আরেকটি আইটেম গানের শুটিংয়ে অংশ নেন। তবে আগের ঘোষনা অনুযায়ী ‘হিরোইন’ ছবিতে দুটি আইটেম গানে নাচবেন কারিনা। ছবির নতুন আইটেমে ‘হালকাট জাওয়ানি’-তে দুর্দান্ত ভঙ্গিতেই নিজেকে উপস্থাপন করছেন।‘হিরোইন’ ছবি নানা কারণেই বলিউডে তৈরি করছে তর্ক-বিতর্ক। প্রথমে ছবিটি সমালোচনায় উঠে আসে ঐশ্বরিয়াকে বাদ দিয়ে কারিনাকে কাস্ট করার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকে আলোচনা-সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছে না ছবিটির। কিছুদিন আগে ‘হিরোইন’ নিয়ে আরেক বির্তকে জড়িয়ে পড়েন নির্মাতা মাধুর ভান্ডারকার । অনেকেই ধারণ করেন যে, বলিউড অভিনেত্রী  মনীষা কৈরালার জীবনীকে উপজীব্য করে নির্মাণ করা হচ্ছে ‘হিরোইন’ ছবিটি। এ বিষয়ে মাধুর ভান্ডারকার স্পষ্টভ বলেন, এ গুজব মোটেও সত্যি নয়। মনীষা কৈরালার জীবনীর সঙ্গে এ ছবির কাহিনীর কোন মিল নেই। এ ছবিতে হিরোইনের চরিত্র সাজানো হয়েছে এ সময়ের এক কাল্পনিক নায়িকার চরিত্রকে মাথায় রেখে। যার নাম দেয়া হয়েছে মাহি আরোরা। তার ক্যারিয়ারের উত্থান পতনের সাক্ষী হবে ‘হিরোইন’ ছবিটি। উটিভি ও ভান্ডারকার এন্টারটেইনমেন্টের যৌথ প্রযোজনায় এবং মাধুর ভান্ডাকারের পরিচালনায় নতুন ছবি ‘হিরোইন’। নাম ভূমিকায় কারিনা কাপুর ছাড়াও এ ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করবেন জন আব্রাহাম, অর্জন রামপাল, রানদ¦ীপ হুদা, রাকেশ ভাপাত, দিব্বা দত্ত এবং সুহানা গোস্বামি।
চলচ্চিত্রে আসছেন মোনালিসা
বিনোদন প্রতিবেদক
 মোনালিসা, আমাদের শোবিজের ঝলমলে তারকা। সাম্প্রতিক সময়ে মডেলিংয়ের চেয়ে অভিনয়ের প্রতি বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। এতোদিন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রতি উৎসাহ না থাকলেও ইদানিং চলচ্চিত্র নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবছেন তিনি। ভারতের দিল্লি ও অন্যান্য লোকেশনে একটি কোমল পানীয়র বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে অংশ নিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন মোনালিসা। এ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, দিল্লিসহ ভারতের বেশ কয়েকটি লোকেশনে বিজ্ঞাপনটির শুটিং হয়েছে। দিল্লির কাছাকাছি একটা জায়গা আছে অনেকটা মরুভূমির মতো। সেখানে কাজ করতে একটু কষ্ট হলেও একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। কারণ মরুভূমিতে এবারই আমি কোনো কাজ করলাম। অনেক সুন্দর হয়েছে। এপ্রিল থেকে বিজ্ঞাপনটির অনইয়ার শুরুর কথা।মডেলিংয়ে সাদিয়া ইসলাম মৌয়ের পর মোনালিসার মধ্যেই নির্মাতার খুঁজে পান গ্ল্যামারের দ্যুতি। কিন্তু সেই জায়গা থেকে একটু যেন দূরে সরে এসেছেন মোনালিসা। নতুন প্রজন্মের শখ-সারিকা এসে সেই জায়গাটি দখল করে নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মোনালিসার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মোনালিসা বলেন, আমি মনে করি কেউ কারো জায়গা দখল করে নিতে পারেন না। মৌ আপু যেমন উনার জায়গায় আছেন, আমিও আমার জায়গায় আছি। আমার জায়গা কারো দখলে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। শখ-সারিকা মিডিয়ায় জায়গা করে নিয়েছেন তাদের যোগ্যতা দিয়েই। নতুনরা তো আসবেই, সময়ের সাথে সাথে প্রতিনিয়তই নতুনদের আগমন থাকবে। এর মধ্যে যারা ভালো করবে তারাই তো টিকে থাকতে পারবে।ভিনয়ের প্রতি ইদানিং বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রসঙ্গে মোনালিসা বলেন, শোবিজে আসার প্রথম দিকে বিজ্ঞাপন নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলাম। অনেক বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছি। প্রতিদিনই দর্শকরা আমাকে বিজ্ঞাপনে বহুবার দেখতেন। একপর্যায়ে মনে হলো, এক মুখ অতিমাত্রায় দেখলে দর্শকদের মাঝে ওই শিল্পীর প্রতি একটা বিরক্তি ভাব চলে আসে। তাই বিজ্ঞাপনের কাজ কমিয়ে দিয়ে অভিনয়ের প্রতি বেশি মনোযোগ দিয়েছি। তবে এখন অনেক কাজ করলেও সেটা মোটেও অতিরিক্ত নয়। ভালো গল্প দেখে ও কাজের মান ঠিক রেখেই কাজ করার চেষ্টা করছি। যেন দর্শকদের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতার ঠিক থাকে। ছোট পর্দার অনেক শিল্পীই চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, এ ক্ষেত্রে একাধিকবার চলচ্চিত্রের নায়িকা হওয়ার প্রস্তাব পেলেও তাতে সাড়া দেন নি মোনালিসা। তবে ইদানিং চলচ্চিত্র নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন মোনালিসা।  এপ্রসঙ্গে তিনি বললেন, আসলে চলচ্চিত্রের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। চলচ্চিত্র সবচেয়ে বড় মাধ্যম, এই মাধ্যমে কাজের ইচ্ছা বলতে গেলে সব শিল্পীরই থাকে। কিন্তু চলচ্চিত্রের নাজুক অবস্থা দেখে আর এই পথে পা বাড়াতে ইচ্ছে করে নি। তাই একাধিক বানিজ্যিক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব আমি বিভিন্ন সময় ফিরিয়ে দিয়েছি। তবে আমাদের চলচ্চিত্রের সুদিন খুব তাড়াতাড়িই ফিরবে বলে মনে হচ্ছে। অবস্থা ভালো হলে চলচ্চিত্রে কাজ করব। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ছবির গল্প এবং চরিত্র আমার পছন্দ মতো হলেই তা সম্ভব। মোনালিসা এ মুহূর্তে কাজ করছেন বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ‘জয়নাল জাদুকর’, ‘উইল পাওয়ার’  ‘পা রেখেছি যৌবনে’ প্রভৃতি। প্রচারের অপেক্ষায় আছে মোনালিসা অভিনী বেশ কয়েকটি একক নাটক। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো‘মায়া’, ‘টি শার্ট’, ‘শঙ্খচিল ফিরবে না ঘরে’, ‘সমুদ্রে আজ ভিন্ন বাতাস’, ‘চোখ গেল পাখিরে’ প্রভৃতি।
 মডেল-অভিনেতা অলির আত্মহত্যা নিয়ে বিভ্রান্তি
বিনোদন প্রতিবেদক
‘লাইফবয়’ খ্যাত মডেল ও অভিনেতা মইনুল হক অলির আত্মহত্যা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। আত্মহত্যার সময় জলন্ত সিগারেটের আগুন থেকে তার পরিহিত পোশাকে আগুন লাগে। কাপড় পোড়ার গন্ধ বাসায় ছড়িয়ে গেলে পরিবারের সদস্যরা অলির রুম গিয়ে তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। অন্যদিকে ময়না তদন্তে আগুনে দগ্ধ হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তবে তার পায়ে একটা পোড়া দাগ আছে। এটি অনেক আগের পোড়া দাগ। মডেল ও অভিনেতা মইনুল হক অলি গত ২৭ মার্চ মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানীর রমনা থানার পশ্চিম মালিবাগের ৬০ নম্বর বাসার নিচতলায় নিজকক্ষে ফ্যানের সঙ্গে কাপড় দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। বুধবার সকাল ১০টায় রমনা থানার এসআই নাজমুল ইসলাম ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে  ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে মরদেহের ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করেন। এদিকে অলির আত্মহত্যা ঘিরে বিভিন্ন বিভ্রান্তি ও রহস্য দেখা দিয়েছে। কারণ, তার পরিবারের সদস্যদের একেকজন অলির আত্মহত্যা নিয়ে একেকরকম কথা বলছেন। অলির বড় ভাই মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ পোড়া গন্ধে অলির মা-বাবা তার ঘরে ছুটে যান। সেখানেই তারা অলির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর ভোরে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। পারিবারিক আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, অলির মৃতদেহ আগুনে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ময়না তদন্তে আগুনে দগ্ধ হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। ময়নাতদন্তে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে। ময়নাতদন্তের পর ২৮ মার্চ বুধবার দুপুরে মইনুল হক অলির মরদেহ মালিবাগের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে  সিদ্ধেশ্বরী জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রথম জানাজা। সেখান থেকে অলির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। সেখানে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে গভীর রাতে তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নাম না প্রকাশের অলির এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলানিউজকে জানান, তিন ভাই-বোনের মধ্যে অলি ছিলেন সবার ছোট। বড় ভাই পেশায় চিকিত্সক। আর একমাত্র বোন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। তিনি আরো জানান, শোবিজে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করলেও আলাদা অবস্থান গড়ে তুলতে না পারায় অলি ছিলেন হতাশাগ্রস্থ। ভালো একাডেমিক ফলাফল করার পর মিডিয়ায় কাজ করার জন্য অলি চাকরি বা অন্য কোনো পেশায় মনোযোগ দেন নি। একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিলেও কোনোখানে তা স্থায়ীত্ব পায় নি। এই নিয়ে তার পরিবারে দীর্ঘদিন ধরে অশান্তি চলছিল বলে জানা গেছে। ক্যারিয়ারের পাশাপাশি পারিবারিক জীবন নিয়ে হতাশা থেকেই অলি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবী করেছেন অলির এই বন্ধু। তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সালে ৯ সেপ্টেম্বর অলি পারিবারিক পছন্দ বিয়ে করেন। স্ত্রী অনন্যার সংগে তার দাম্পত্যজীবন মোটেও সুখের হয় নি। অলি মিডিয়ায় কাজ করায় অনন্যা অকারণেই তাকে সন্দেহ করতো। এই নিয়ে তাদের সংসারে বিরোধ তৈরি হয়। কিছুদিন আগে একটি নাটকের শুটিং শেষে দেরি করে বাসায় ফেরায় অনন্যা রাগ করে বাবার বাড়িতে চলে যায়। অলি তাকে ফিরিয়ে আনতে গেলে তিনি আসেন নি। উল্টো অনন্যা জানিয়ে দেন, অলির সংগে তিনি সংসার করবেন না। শিগগিরই ডিভোর্সের কাগজ পাঠিয়ে দেবেন। এই ঘটনার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন অলি। অলির স্ত্রী ফাতেমাতুজ্জোহরা অনন্যার বাবার বন্ধু মইনুদ্দিন জানান, অনন্যার সঙ্গে অলির ৩ বছরে আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়েতে তিনি ছিলেন একজন মধ্যস্থতাকারী। বিয়ের সময় অলি বিবিডিএলে চাকরি করতেন বলে জানতেন তিনি । তিনি আরও জানান, মইনুলের বাবা হাজী মো: শামসুল হক। তাদের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জে। ঢাকার মালিবাগের বাসায় তারা ভাড়া থাকতেন। স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির সংগে তার অলির একাধিকবার মনোমালিন্যের কথাও বিভিন্ন সময় তার কানে এসেছে বলে তিনি জানান। মইনুল হক অলি ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী। তিনি ছিলেন অভিনেতা ও মডেল। অলি অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে আছে ‘একটু রোদের ছোঁয়া’, ‘হিজাব’, ‘ঊনমানুষ’, ‘নীরব পথের যাত্রী’, ‘নীল রক্ত’, ‘আকাশ ছোঁয়া’ প্রভৃতি । মডেল হিসেবে অলি কাজ করেছেন লাইফবয় সাবান, ক্লোজ আপ টুথপেস্ট, লিজান হারবাল প্রভৃতি প্রডাক্টের বিজ্ঞাপনচিত্রে। মঞ্চে অলি কাজ করতেন লোকনাট্য দলের হয়ে।
গ্ল্যাম ডিভা খেতাব পেলেন প্রিয়াঙ্কা
বিনোদন ডেস্ক
বলিউডে এই সময়ের সেরা নায়িকার মুকুট দখলের ইঁদুর-দৌড় প্রতিযোগিতায় একধাপ এগিয়ে গেলেন  সাবেক বিশ্ব-সুন্দরী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। গত কয়েকমাস ধরে পুরো ভারত জুড়ে বিগ সিবিএস নামের একটি সংস্থার পরিচালিত জরিপে সর্বাধিক ভোটে শোবিজের সবচেয়ে সফল নারী হিসেবে তিনি ‘ইন্ডিয়ান গ্ল্যাম ডিভা’ খেতাব অর্জন করেছেন। ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল নারীদের তালিকা তৈরির জন্য সম্প্রতি বিগ সিবিএস বিশাল ক্যানভাসের এক জরিপ কার্যক্রমের আয়োজন করেছিল। ভারতের প্রতিটি প্রদেশ ছিল এই জরিপের আওতাভুক্ত। এই জরিপের একটি ক্যাটাগরি ছিল শোবিজের সবচেয়ে সফল নারী। এতে ঐশ্বরিয়া রাই, কারিনা কাপুর, বিদ্যা বালান, কাটরিনা কাইফ, দীপিকা পাডুকোন, বিপাশা বসুর মতো তারকাদের পেছনে ফেলে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার ঝুলিতে যায় সর্বাধিক ভোট। সাধারণ দর্শকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সেরা তারকা হিসেবে ‘ইন্ডিয়ান গ্ল্যাম ডিভা’ খেতাবটি জিতে নেন প্রিয়াঙ্কা। এই মর্যাদা অর্জনের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলেন, এটি আমার জন্য ভীষণ আনন্দের বিষয়। কারণ, এতে সরাসরি ভোট দিয়েছেন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষেরা। আমি অভিনয়ের মাধ্যমে তাদের মনে দাগ কাটতে পেরেছি বলে মনে হচ্ছে। আমি এ মুহূর্তে ভীষণ অনুপ্রাণিত বোধ করছি। মনে হচ্ছে, আমি বোধহয় আবার মিস ওয়ার্ল্ড জয় করলাম।
চ্যানেলে চ্যানেলে স্বাধীনতা দিবস
বিনোদন প্রতিবেদক
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৬ মার্চ প্রতিটি টিভি চ্যানেলে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ সব অনুষ্ঠানের। এ অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি টিভি প্রোগ্রামের উপর আলোকপাত করা হল-
স্বাধীনতা দিবসে এনটিভি’র আয়োজন
মহান স্বাধীনতা দিবসে এনটিভিতে সকাল ৬ টা ১৫ মিনিটে প্রচার হবে ফাত্তাহ তানভীরের রচনা ও পরিচালনায় বিশেষ নাটক ‘চেনা-অচেনা’। এ নাটকে অভিনয় করেছেন ইন্তেখাব দিনার, আবুল হায়াত, সাবেরী আলম প্রমূখ। সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিটে প্রচার হবে মমতাজ আলী’র পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বাংলা ছায়ছবি ‘রক্তাক্ত বাংলা’। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন বিশ্বজিৎ, কবরী, গোলাম মুস্তাফা, সাদেক বাচ্চু প্রমূখ। সকাল ৯ টা ৩০ মিনিটে বিটিভি’র মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচাতির হবে স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ কুজকাওয়াজ। দুপুর ১২ টা ১০ মিনিটে প্রচার হবে হাসান ইউসুফ খানের প্রযোজনায় বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘জন্মভূমির গান’। এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করবেন মাইলস, এলআরবি, ব্রিগেড ৭১, সোলস ও শিরোনামহীন। দুপুর ১২ টা ৩৫ মিনিটে প্রচার হবে আলফ্রেড খোকনের প্রযোজনায় বিশেষ অনুষ্ঠান ‘উত্থান পর্ব’। এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করবেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আনু মুহাম্মদ, আহমেদ কামাল, কাজী নুরুজ্জামান প্রমুখ। দুপুর ১টায় প্রচার হবে মুহাম্মদ মুজাক্কেরের প্রযোজনা ও সৈয়দ আব্দুল হাদী’র উপস্থাপনায় সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘কিছু কথা কিছু গান’ এর বিশেষ পর্ব। দুপুর ২ টা ৩৫ মিনিটে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে জাহাঙ্গীর চৌধুরী’র প্রযোজনা ও ফারহানা মিঠু’র উপস্থাপনায় বিশেষ অনুষ্ঠান ‘স্বপ্ন ও স্বাধীনতা’। এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করবেন শিমূল মুস্তাফা ও সায়ান প্রমূখ। বিকেল ৪ টা ১০ মিনিটে ওয়াহিদুল ইসলাম শুভ্র ও কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা যৌথ প্রজোযনায় সরাসরি সম্প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘ক্লেমন বীচ কনসার্ট’। এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করবেন জেমস, প্রমিথিউস, মাইলস, মিলা ও ইনসাইড ইউ। রাত ৯টায় প্রচার হবে রিয়াজ মাহমুদ জুয়েলের গল্প অবলম্বনে নাটকটির চিত্রনাট্য রচনা ও তুহিন অবন্ত পরিচালনায় বিশেষ নাটক ‘ক্যাকটাস’। এতে অভিনয় করেছেনস আলী যাকের, ড. ইনামূল হক, ঈশিতা, হিল্লোল, কাজী রাজু প্রমুখ।

স্বাধীনতা দিবসে চ্যানেল আই
মহান স্বাধীনতা দিবসে চ্যানেল আইয়ে বেলা ১১ টা ০৫ মিনিটে প্রচারিত হবে আনোয়ার শাহাদাতের কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ, চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা ও পরিচালনায় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ’কারিগর‘ (ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার)। এতে অভিনয় করেছেন  রোকেয়া প্রাচী, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, সুষমা সরকার, রাণী সরকার, হিমা মৃধা, গোলাম মোস্তফা, মাসুদ আলম বাবু, শামীম খান প্রমুখ। দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে প্রচার হবে আমীরুল ইসলাম ও শহিদুল আলম সাচ্চুর প্রযোজনায় এবং  আফজাল হোসেন উপস্থাপনা সরাসরি অনুষ্ঠান ‘রং তুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’। সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে রাবেয়া খাতুনের গল্প ীঅবলম্বনে ফজলুল করিমের নাট্যরূপ ও আবুল হায়াতের পরিচালনায় বিশেষ নাটক ‘ভোর কখন’। রাত ১১ টা ৩০ মিনিটে  প্রচার হবে মৌসুমী বড়–য়া পরিচালনা ও উপস্থাপনায় বিশেষ অনুষ্ঠান ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’।
স্বাধীনতা দিবসে এটিএনবাংলা
মহান স্বাধীনতা দিবসে এটিএনবাংলায় সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে প্রচার হবে প্রভাতী অনুষ্ঠান ‘পজিটিভ বাংলাদেশ’ এর বিশেষ পর্ব। দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে প্রচার হবে সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘প্রিয় স্বাধীনতা’। দুপুর ৩টা ১০ মিনিটে প্রচার হবে ড. মাহফুজুর রহমান পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’। বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে প্রচার হবে মোস্তাফিজুর রহমান প্রযোজিত সুমন প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘অজানা গল্প’। সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে প্রচার হবে নাহিদ রহমানের পরিচালনায় বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান ‘স্বাধীনতার ছন্দে’। রাত ৮টায় প্রচার হবে সানজিদা হানিফ পরিচালিত সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘সূর্যোদয়ের গান’। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে প্রচার হবে রুম্মান রশীদ খানের রচনায় ও চয়নিকা চৌধুরী পরিচালনায় নাটক ‘তোমার পরে ঠেকায় মাথা’। রাত ১১টায় প্রচার হবে খন্দকার ইসমাইলের উপস্থাপনা ও পরিচালনায় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘লাল সবুজের দেশে’ ।
স্বাধীনতা দিবসে একুশে টেলিভিশন
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একুশে টেলিভিশনে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে প্রচার হবে সাখাওয়াৎ লিটনের প্রযোজনায় বিশেষ অনুষ্ঠান ’ইতিহাসের পথ ধরে‘। সকাল ১০টা ০২ মিনিটে প্রচারিত হবে তাহের শিপনের পরিচালনায় বিশেষ নাটক ”কক্ষ পথের যুদ্ধ”। এতে অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরিদী,দীপা খন্দকার,মাজনুন মিজান সহ অনেকে। সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে প্রচারিত হবে মোহসীনা রহমান প্রযোজনা ও উপস্থাপনায় বিশেষ অনুষ্ঠান ’আমি বিরাঙ্গনা বলছি’। রাত ১০:১০ মিনিটে প্রচারিত হবে ইফতেখার আহমেদ ফাহমি রচনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় বিশেষ নাটক। এ নাটকে অভিনয় করেছেন তানিয়া আহমেদ, সুমাইয়া শিমু, অর্ষা, লাবন্য, আনিকা ও আরো অনেকে।
বাংলাভিশনে স্বাধীনতার বিশেষ আয়োজন

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাভিশনে বেলা ১ টা ০৫ মিনিটে প্রচার হবে বাংলা ছায়াছবি ‘ওরা ১১ জন’। এতে অভিনয় করেছেন রাজ্জাক, শাবানা, নতুন, খসরু প্রমুখ। সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটে প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘মাকে লেখা চিঠি’। এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন তৌকির আহমেদ, মাজনুন মিজান, আহসান হাবিব নাসিম। রাত ৯ টা ০৫ মিনিটে প্রচারিত হবে রুমানা বৈশাখী’র গল্প অবলম্বনে দেওয়ান শামসুর রকিবের চিত্রনাট্য এবং কাওনাইন সৌরভের পরিচালনায় বিশেষ নাটক ‘একজন রাজাকার মারা গেছে’। এ নাটকে অভিনয় করেছেন সুজাতা, আরমান পারভেজ মুরাদ, মৌসুমী, তাজিন আহমেদ, সাবেরী আলম, মুকিত, রাজ্য প্রমূখ। রাত ১১ টা ২৫ মিনিটে প্রচারিত হবে নকীব খান, সুজয় সেন, তিমির নন্দী ও লিজা’র অংশগ্রহণে বিশেষ সরাসরি গানের অনুষ্ঠান ‘প্রতিরোধের গান’।
স্বাধীনতা দিবসে বৈশাখী টেলিভিশন
র্মহান স্বাধীনতা দিবসে বৈশাখী টেলিভিশনে সকাল ৯ টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম থেকে শিশু কিশোর কুজকাওয়াজ বিটিভি’র সৌজন্যে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। সকাল ১১ টা ১০ মিনিটে প্রচার হবে বাংলা ছায়াছবি ‘রক্তাক্ত বাংলা’। বিকেল ৫ টা ৩০ মিনিটে প্রচারিত হবে ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলমের আলোচনায় বিশষে অনুষ্ঠান স্বাধীনতার সূর্যোদয়। সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র’। রাত ৮ টায় প্রচারিত হবে স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান ‘নৃত্যে আনন্দে’। রাত ৮ টা ৪০ মিনিটে রশীদ হায়দারের গল্প অবলম্বনে আবুল হায়াতের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত নাটক ‘জানালায়’। এতে অভিনয় করবেন শাহেদ, নাদিয়া, আবুল হায়াত প্রমুখ। রাত ১১ টায় থাকবে স্টুডিও লাইভ অনুষ্ঠান ’সময় কাটুক গানে গানে’।
স্বাধীনতা দিবসে আরটিভির আয়োজন
মহান স্বাধীনতা দিবসে আরটিভিতে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে প্রচারিত হবে শিশুতোষ বিশেষ অনুষ্ঠান ‘স্বাধীনতার গল্প’। দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে প্রচারিত হবে বিশেষ পূর্ণ দৈর্ঘ বাংলা ছায়াছবি ‘অরুনোদয়ের অগ্নিস্বাক্ষী’।।  সন্ধ্যা ৬টায় প্রচারিত হবে আব্দুল জব্বার, সুবীর নন্দী ও সাহিন সামাদের পরিবেশনায় বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘পূর্ব দিগন্তে’।
স্বাধীনতা দিবসে চ্যানেল নাইন
মহান স্বাধীনতা দিবসে চ্যানেল-নাইনে বিকাল ৪.৩০ এ প্রচারিত হবে রুহুল তাপশের  প্রযোজনায় কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘লাল সবুজের পংক্তিমালা’। এ অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করবেন আবৃত্তি শিল্পী শিমুল মুস্তাফা, মাহিদুল ইসলাম, আহকাম উল্লাহ্, ঝর্না সরকার, তামান্না ডেইজি ও  লীমা। সন্ধ্যা ৭ টায় প্রচারিত হবে শারমিন লাকীর উপস্থাপনায় বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘মুক্তি আমার গানে গানে’।  এ অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শাহীন সামাদ,  সুবীর নন্দী, আবিদা সুলতানা,  তপন মাহমুদ,  মাহমুদ সেলিম, সামিনা চৌধুরী।
ভিটামিন আয়ু কমিয়ে দেয়
হেলথ ডেস্ক
ঢাকা : শরীরে ভিটামিনের অভাবের কারণে নানান সমস্যা সৃষ্টি হয় তা সবার জানা। এজন্য ভিটামিনের অভাব পূরণে আমরা অনেকেই নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ওষুধ খেয়ে থাকি। কিংবা শরীরের দুর্বলতা কাটাতে ভিটামিন োষুধের বিকল্প কিছুই আমাদের মাথায় আসে না। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত ভিটামিন ওষুধ গ্রহণ এবং ভিটামিনের সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ মানুষের আয়ু কমিয়ে দেয়।
এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের ওষুধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এমন ঘটনাও দেখা যায়, যে সব রোগীকে ডাক্তার একবার পরামর্শ দিয়েছেন ভিটামিন খেতে। তারপর থেকে সেই রোগী নিজেই নিজের ডাক্তার হয়ে যান। কোনো কিছু হলেই তিনি দুর্বলতা বা অন্য কিছু মনে করে ওই ভিটামিন নিয়মিত খেতে থাকেন। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর এই গবেষণাটি করা হয় ফিনল্যান্ড শহরে। ৬২ থেকে ৭৪ বছর বয়স্ক ১ হাজার ৮শ’ মানুষের উপর এ গবেষণা পরিচালনা করেন গবেষকরা। ওই গবেষণায় ফলাফলে দেখা গেছে যে, যারা অধিক পুষ্টির জন্য ভিটামিন বা সম্পূরক খাবার গ্রহণ করেন তাদের আয়ু কমে যায়। এক্ষেত্রে যারা ভিটামিন ও সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করেন না তারা স্বাভাবিক আয়ু পেয়ে থাকেন। গত ১০ বছরে ২২১ জন মানুষের মধ্যে যারা নিয়মিত ভিটামিন বা সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করতেন তাদের মধ্যে ৫৯ জনই তাড়াতাড়ি মৃত্যু বরণ করেছেন। অন্যদিকে যারা এসব ধরনের ভিটামিন ও সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ না করতো সেই ১ হাজার ৫শ ৫৩ জনের মধ্যে মারা গেছে মাত্র ২৮১ জন। ইস্টার্ন ফিনল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. টমি পেক্কা টমিনেন জানান, গবেষণায় দেখা যায় যে বয়স, লিঙ্গভেদে ও ধূমপানজনিত কারণে মানুষের যেমন মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ে। তেমনিই ভিটামিন বা সম্পূরক খাদ্য গ্রহণে ৫০ থেকে ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে দ্রুত মৃত্যু ঘটায়। উল্লেখ করার মতো বিষয় হল, ফিনল্যান্ডের এই গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে সম্প্রতি মিনিসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাটির ফলাফল মিলে গেছে। মিনিসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রায় ৩৮ হাজার নারীর ওপর এক গবেষণা চালান। যাদের বয়স ছিল ৬২ বছর। ১৯ বছর ধরে চালানো এই গবেষণায় দেখা যায়, যে সব নারী নিয়মিত মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করেন তাদের মৃত্যুর হার ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে যারা এগুলো গ্রহণ থেকে বিরত ছিলেন তাদের মৃত্যুর হার ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ।
এছাড়া আরো দেখা যায়, এসব ভিটামিন গ্রহণের ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় যা পরবর্তীতে আয়ু কমিয়ে দেয়।
স্পার্ম ব্যাংক : প্রজননে আশার আলো
মাজেদুল নয়ন

বিয়ের প্রথম বছরেই চাকরি পেয়ে স্ত্রী রিনাকে (ছদ্মনাম) নিয়ে কানাডায় প্রবাসী হন শফিক (ছদ্মনাম)। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর নতুন চাকরিতে আর ভালো লাগছিল না। এদিকে বিয়ের পর বেশ কয়েকটি বছর কেটে গেলেও বাচ্চা হচ্ছিল না শফিক দম্পতির। কানাডায় বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের পরামর্শও নিলেন। সমস্যা হচ্ছে, শফিকের শুক্রাণুতে (স্পার্মে)। এক সময় চিকিৎসকরা দাতার (ডোনারের) স্পার্ম নেওয়ার পরামর্শ দিলেন। ভাঙ্গামন নিয়ে দেশে ফিরলেন এই দম্পতি। কিছুদিন পর দেশে নতুন চাকরি হলো শফিকের। এরপর দেশেই এক ডাক্তারের শরণাপন্ন হলেন। ধানমণ্ডির হারভেস্ট ইনফার্টিলিটি কেয়ার লিমিটেডের এমব্রায়োওলজিস্ট ও সায়েন্টিফিক ডিরেক্টর ডা. মুসতাক আহমেদ সবকিছু শুনে দু’ ঘন্টার মতো পরামর্শ দিলেন এই দম্পতিকে। হারভেস্ট ইনফার্টিলিটি কেয়ার লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে এই দম্পতির একটি মেয়েশিশুর জন্ম হয়। এ প্রসঙ্গে ডা. মুসতাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘কানাডার ভিন্ন পরিবেশ এবং যোগাযোগে ভাষার সীমাবদ্ধতা তাদের সন্তান প্রজননের অন্তরায় ছিল। সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে মনকে স্থির এবং প্রফুল্ল রাখতে হয়। এছাড়াও অনেকেই বিদেশে গিয়ে তাদের নিজেদের চাকরি বা ব্যবসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। আমি শফিককে বলেছিলাম, আপনি চিন্তামুক্ত হয়ে কয়েকটি দিন কাটান।’ ২০০২ সালে বাংলাদেশে প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম হয়। টেস্টটিউব বেবির বিভিন্ন দিক নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন বাংলাদেশে টেস্টটিউব বেবির অন্যতম বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মুসতাক আহমেদ। কিভাবে হারভেস্ট ইনফার্টিলিটি নিয়ে কাজ শুরু করলেন জানতে চাইলে বলেন, ‘মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির একটি হচ্ছে সন্তান। আসলে যারা নিঃসন্তান তাদের হাহাকার কোনো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যার দু’টি হাত নেই, নিজের খাওয়ার পয়সাও নেই, সেও একটি বয়সে এসে নিজের সন্তানের জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। ’ তিনি বলেন, ১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে বোঝা যাচ্ছিল বিশ্বে তিন ধরনের রোগীদের ভাল চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। এগুলো হচ্ছে- কিডনি রোগ, ক্যান্সার এবং ইনফার্টিলিটি (উর্বরতাহীনতা বা সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা) । কিডনি এবং ক্যান্সারের রোগীদের সাহায্যে সরকার এগিয়ে এলেও জন্মদানে অক্ষমতার  (ইনফার্টিলিটির) শিকারদের সরকারের পক্ষে সাহায্য করা সম্ভব হবে না। প্রসঙ্গে ডা. মুসতাক আহমেদ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে নিঃসন্তানদের জন্যে সরকারের অর্থব্যয় খুব সহজ কাজ হবে না। তাদেরকে মোটামুটি একটি প্রাকৃতিক ভারসাম্য (ন্যাচারাল ব্যালান্স) হিসেবেই ধরা হয়। এছাড়াও (উর্বরতাহীনতা) ইনফার্টিলিটির চিকিৎসাকে এখনো আমাদের  দেশে মৌলিক স্বাস্থ্যের অংশ হিসেবে দেখা হয় না।’ নি বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে ১৮ বছর পরেও আমাদের ধারণাই সত্যি হয়েছে। তবুও এখন পর্যন্ত সরকার কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি।’ বাংলাদেশে টেস্টটিউব বেবির ইতিহাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেখানে ১৯৭৯ সালে বিশ্বে প্রথম টেস্টটিউব বেবি হয়ে গেল, সেটি আমরা চিন্তা করেছি ১৯৯৪ সালে। প্রায় ১৫ বছর পার করে।’ ১৯৯৫ সালে ইনফার্টিলিটির উপর পড়াশোনা করতে সুইজারল্যান্ড যান ডা. মুসতাক। এরপর ইংল্যান্ডে প্রজনন প্রযুক্তি (রিপ্রোডাকশন টেকনোলজি) নিয়ে মাস্টার্স করেন। প্রজনন প্রযুক্তি হল প্রজননে সহায়তা করা বা প্রজননে অক্ষমদের প্রজনন-সক্ষম করে তোলার প্রযুক্তি। অর্থাৎ যাদের প্রজনন (রিপ্রোডাকশন) সাধারণ প্রাকৃতিক নিয়মে হচ্ছে না এই প্রযুক্তি দিয়ে তাদের প্রজননে  সহায়তা করা। মুসতাক আহমেদ বলেন, ‘একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা (গাইনোকোলজিস্ট) এবং ভ্রূণ বিশেষজ্ঞ (এমব্রায়োলজিস্ট) নিয়ে ২০০২ সালে আমরা প্রথম প্রজনন (হার্ভেস্ট) করলাম। এরপর ২০০৩ সালে প্রথম বেবি হয়। ৯৭ থেকে ২০০২ সালের এ সময়টা ব্যয় হয়েছে বিনিয়োগ ও যন্ত্রপাতি জোগাড় করতে। এরই মধ্যে আমরা প্রায় দেড়শোর মতো টেস্টটিউব বেবি সফলভাবে জন্ম দিতে পেরেছি। শততম টেস্টটিউব বেবির জন্মদিন হয়ে গেল ২০০৯ সালে।’ সন্তান উৎপাদনের ব্যাপারে মুসতাক আহমেদ বলেন, ‘সাধারণত ১টি মেয়ের ১৪-১৫ দিনে একটি পরিপক্ক ডিম্বানু (ওবাম) বের হয়। এটি জরায়ু থেকে ডিম্বনালীতে প্রবেশ করলে পুরুষের সঙ্গে মিলিত হলে যদি ফার্টিলাইজেশন (নিষেক) হয়, এর সঙ্গে শুক্রাণু (স্পার্ম) মিলতে পারলে গর্ভধারণ হয়। প্রাকৃতিকভাবে একটি ডিম্বাণু পরিপক্ব হওয়ার সময় ৮-১০টি এগ (ডিম্বাণু) নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আমরা সুপারোবোলিশন প্রক্রিয়ায় ইঞ্জেকশন দিয়ে সেগুলোর বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করি।’ অনেকগুলো এগ ফার্টিলাইজেশন হলে অনেকগুলো ভ্রূণ তৈরি হয়। এগুলোকে শরীরের বাইরে ৩ থেকে ৫ দিন নার্চার করা হয়। এর মধ্যে বৃদ্ধি ভাল এমন ১ বা ২টি ভ্রূণকে স্ত্রীর শরীরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এটাই সাধারণ প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় ভ্রূণটি জরায়ুতে নিজেকে সংযুক্ত করে। সারাবিশ্বে এভাবে টেস্টটিউব বেবি জন্ম দিতে ২৫ শতাংশের বেশি গর্ভধারণ হচ্ছে। সংরক্ষণের (প্রিজারভেশন) ব্যাপারে মুসতাক আহমেদ জানান, সাসপেন্ড এনিমেশন প্রক্রিয়ায় ভ্রূণ ও এমব্রায়ো স্টক করা হয়। মাইনাস ১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় রাখলে এগুলো জীবিত থাকে। অর্গানিলগুলো (শরীরের ক্ষুদ্র অংশ) চুপচাপ বসে থাকে সেগুলোর শক্তি শেষ হয় না। এ অবস্থা থেকে যদি কারো গর্ভধারণ হয়, তবে ভাল। কিন্তু না হলে বা আবার যদি গর্ভধারণ করতে চায়, সেক্ষেত্রে ওই ডিমগুলো ও এমব্রায়োগুলো আবার ব্যবহার করা হয়।
মুসতাক আহমেদ বলেন, ‘২০০৩ সাল থেকে শতাধিক ভ্রূণ ও এমব্রায়ো সংরক্ষণ করেছি। এগুলো এখন জমে গেছে। ভ্রূণ ও স্পার্ম সংরক্ষণের জন্যে আমরা একটা বাৎসরিক চার্জ রাখি। কারণ, আমাদের নিয়মিত লিকুইড নাইট্রোজেন (জীবন্ত রাখার কৌশল) টপ আপ করতে হয়। এটা একটি স্পেশাল ডিভাইস।’ ‘যারা অর্গানিলগুলো জমা রেখেছিলেন তাদের অনেকের বাচ্চা হয়েছে। একাধিক বাচ্চা নিতে এখন আর আগ্রহ নেই। জমে যাওয়ার কারণে আমরা ওইসব দম্পতির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা আর এসবের ব্যাপারে দায়িত্ব নিচ্ছেন না। পরে ১৮ মার্চ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে আবার যোগাযোগ করতে বলি।’ পুরুষদের শুক্রাণু সংরক্ষণের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ সক্ষম শুক্রানু সংরক্ষণ করে রাখলে সেটি পরেও কাজে লাগানো যায়।’ ‘আবার কেউ যদি বিদেশে যাওয়ার আগে শুক্রাণু সংরক্ষণ করে রেখে যেতে চান, সেটাও করা হয়। এর ফলে স্বামী বিদেশে থাকলেও দু’জনের ইচ্ছা হলে স্ত্রী দেশে থেকেই গর্ভধারণ করতে পারেন। এছাড়াও ক্যান্সারের থেরাপির কারণে পুরুষদের শুক্রাণু নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। এক্ষেত্রে ক্যান্সারের থেরাপি নেয়ার আগেই সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এছাড়াও কম বয়সে অনেকের মামস থাকলে অণ্ডকোষও ফুলে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে তার শুক্রাণু ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে কারণ ছাড়াই শুক্রাণু দিন দিন কমে যাচ্ছে, কিন্তু কারণ জানা যায় না পরীক্ষা- নিরীক্ষা করেও। তখন সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিই’, বলেন ডা. মুশতাক। এ পর্যন্ত চারশোর উপর রোগীর চিকিৎসা দিয়েছেন এই চিকিৎসক। এর মধ্যে প্রায় দেড়শ নিঃসন্তান দম্পতির সন্তান হয়েছে।
উন্নত দেশগুলোতে ডোনার অর্গানিল প্রদান চালু রয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে এটা এখনো গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান ডা. মুসতাক। তবে সরকারের এ ব্যাপারে কোনো আইন নেই। বেসরকারি প্রচেষ্টাগুলোকে নীরব উৎসাহ দেয় সরকার। মুসতাক জানান, তিনি নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী লোকগুলোর একজন মনে করেন যখন কোন নিঃসন্তান দম্পতি এসে বাচ্চা নিয়ে ফিরে যায়। তিনি বলেন, ‘এটা শুধু আমার পেশার সাফল্য নয়, একটা মানসিক তৃপ্তিও।’ তবে যাদের কোনো অবস্থাতেই বাচ্চা হয় না তাদেরও তেমন অভিযোগ থাকে না বলে জানান তিনি। ‘কারণ এখানে আসার পর আমরা ঘণ্টাখানেক আলোচনা করি। সব কিছু জানার পর তারা অগ্রসর হয়। আমরা প্রথমেই পরামর্শ দিই’, বলেন ওই চিকিৎসক। চিকিৎসা পদ্ধতির খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘টেস্টটিউব বেবি নিতে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা।’ তবে এ চিকিৎসায় যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয় সরকার যদি সেগুলো শুল্কমুক্ত আমদানির অনুমোদন দেয়, এ চিকিৎসার খরচ কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান তিনি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি ইনফারটিলিটি সেন্টার স্থাপন করতে কোটি টাকার উপর খরচ হয়। সরকারি উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের একটি সেন্টার স্থাপন করা সম্ভব হলে, গরীব রোগীরা কম খরচে চিকিৎসা পাবেন বলে আশা করেন তিনি। কথা প্রসঙ্গে আরো জানা গেল, কিছুসংখ্যক দম্পতি আমেরিকা, কানাডা, থাইল্যান্ড ও ভারতে চেষ্টা করেও সন্তান লাভ করতে পারেনি। ডাক্তারের পরামর্শে দেশে চেষ্টা করায় সফল হয়েছেন। মুসতাক আহমেদ জানান, ‘আগের চেয়ে বর্তমান সময়ে মানুষের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা বা প্রোডাক্টিভিটি কমে গেছে। মানুষ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আবেগের উপস্থিতিও কমেছে। যেমন, ক্রমাগত দুশ্চিন্তায় থাকলে প্রেসার হতে পারে। পুরুষের শরীরের শুক্রাণুগুলোও প্রচুর ছোটাছুটি করে। শরীরে প্রতি ৩ দিন পরপর ২০ থেকে ২০০ মিলিয়ন শুক্রাণু সার্কুলেশন হয়। এগুলোর শক্তি রয়েছে যা শরীর থেকে নেয়। যদি ব্যস্ততা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি বাড়ে তবে শুক্রাণু শক্তি পায় না। আবার আগে বিয়ের পর মেয়েদের গর্ভধারণের বয়সসীমা (ডিউরেশন) ছিল ১৫ থেকে ৪০, প্রায় ২৫ বছর। সেখানে এখন ২৫ থেকে ৪০, প্রায় ১০ বছর কমে গেছে। এছাড়াও পুরুষদের অনেকেরই বিভিন্ন বাজে অভ্যাসের কারণে প্রজননের অঙ্গগুলোতে রোগজীবাণু হয় (জার্ম) হয়। এগুলো থেকে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে এ ধরনের প্রজনন চিকিৎসার প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে ডা. মুসতাক বলেন, এখানে শিক্ষার হার কম। তাই এখনো অনেকেই এ চিকিৎসা সম্পর্কে জানেনই না। এ ধরনের সন্তান প্রজননে কোনো ধরনের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নেই বলে জানান তিনি।  কি ধরনের কাউন্সেলিং তারা করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বিশেষ সেশনের মাধ্যমে মানসিক আশ্বস্ততা ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধির জন্যে আমরা কাউন্সেলিং করি।’ ডা. মুসতাক জানান, কাউন্সেলিংয়েও যদি কাজ না হয় তবে যে সকল মহিলার বাধাহীন ডিম্বনালী রয়েছে ও ডিম্বস্ফোটন সন্তোষজনক তাদের জন্যে রয়েছে ওভারিয়ান স্টিমুলেশন। আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে ফলিকলের বৃদ্ধি মেপে উপযুক্ত সময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয়। স্বামীর বীর্য থেকে সচল সক্ষম শুক্রাণুগুলোকে ল্যাবে যন্ত্রের সাহায্যে আলাদা করে সঠিক সময়ে সূক্ষ্ম ক্যাথেটারের সাহায্যে স্ত্রীর জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয় ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন পদ্ধতিতে। এরপরেই আসে টেস্টটিউব বেবির প্রক্রিয়া। ডিম্বনালী বন্ধ হলে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। ডিম্বাশয় থেকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ডিম্বাণু সংগ্রহ করে স্বামীর শুক্রাণুর সঙ্গে রেখে দেয়া হয়। জন্ম নেয়া ভ্রূণকে পরে স্ত্রীর জরায়ুতে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু শুক্রাণুর সংখ্যা, চেহারা বা গতিশীলতা ভাল না হলে ইন্ট্রা-সাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। তারপর বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে ডিম্বাণুর মধ্যে শুক্রাণু ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এরপর জন্ম নেয়া ভ্রূণকে স্ত্রীর জরায়ুর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। ইন্ট্রা-সাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন প্রক্রিয়ার মতোই স্পার্মাটিড মাইক্রো ইনজেকশন ব্যবহার করে অপূর্ণ শুক্রাণু থেকে ভ্রূণ পাওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু যাদের বীর্যে কখনো শুক্রাণু পাওয়া যায় আবার কখনো পাওয়া যায় না অথবা যারা অনেকদিন দেশের বাইরে থাকেন, অতি হিম তাপমাত্রায় তাদের শুক্রাণু সংরক্ষণ করা যায়। তেমনি জন্ম নেয়া ভ্রূণকেও পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্যে সংরক্ষণ করা যায়। এছাড়াও অ্যাসিসটেড হ্যাচিং পদ্ধতিতে নিষিক্ত ভ্রূণের খোলস চেঁছে দেওয়া হয়। এছাড়াও ব্লাস্টোচিস্ট ট্রান্সফার পদ্ধতিতে অধিক পরিপক্ক অবস্থায় ভ্রূণ দেয়া হয়। বীর্য পরীক্ষার জন্যে সিমেন এনালাইসিস করা হয়। এছাড়াও ২৪ ঘন্টা সার্ভাইবিলিটি টেস্টের সুবিধা দেওয় হয়। এছাড়াও টেস্টিকুলার বায়োপসি এবং টিভিএস করা হয়  এখানে। হাসপাতালের মূল্যবোধে বলা হয়েছে, তথ্যাদির গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় এবং ধর্মীয় ব্যাপারগুলো মাথায় রেখেই চিকিৎসা দেয়া হয়।
ওজন কমাতে লেবু-মধু পানীয়
ডা. মালিহা শিফা
ওজন কমাতে আমরা যেন অনেকে একটু বেশিই সচেতন। তবে ওজন বাড়ানোর সময় এ বিষয়টি খুব কম লোকেরই খেয়াল থাকে। তাই মনে রাখা ভালো ওজন কমানোর চেয়ে ওজন না বাড়ানোই ভালো। ওজন কমাতে আমরা চা, ওজন কমানোর ওষুধ কিংবা ব্যায়ামও করে থাকি। তবে চা এবং ওজন কমানোর ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।
তবে ওজন কমাতে প্রাকৃতিক উপাদান মধু ও লেবু কার্যকরী। তা পরীক্ষিত এবং সারা বিশ্বে সমাদৃত ও স্বীকৃত। ওজন কমাতে দু’টি প্রাকৃতিক উপাদান লেবু ও মধুর পানীয় সম্পর্কে অনেকেই জানেন। ওজন কমানো ছাড়াও লেবু ও মধুর অনেক গুণাগুণ আছে।
মধু কীভাবে ওজন কমায় :
মধুতে যদিও চিনি থাকে, কিন্তু এতে ভিটামিন ও মিনারেল থাকার কারণে এটি সাধারণ চিনির মতো ওজন না বাড়িয়ে বরং কমায়। কারণ সাধারণ চিনি হজম করতে আমাদের শরীর নিজের থেকে ভিটামিন ও মিনারেল খরচ করে, ফলে এসব পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়। এসব উপাদান ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কমাতে বা ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে যখন আমরা বেশি চিনি খাই, তখন অধিক ক্যালরি শরীরে জমা ছাড়াও এসব পুষ্টি উপাদানের চিনি হজম করতে অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়। তাই ওজন বাড়াতে পারে। কিন্তু মধুতে এসব উপাদান থাকার ফলে এগুলো হজমে সহায়ক এবং ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কমায়। তাই এই পানীয় ওজন কমায়।
তাছাড়া সকালে উঠেই শরীর যদি পানি জাতীয় কিছু পায়, তবে তা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে একই রকম শারীরিক পরিশ্রম করেও আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধির কারণে ওজন কমতে পারে।
লেবু-মধু পানীয় বানানোর প্রণালি :
এক গ্লাস হালকা বা কুসুম গরম পানি, আধা চা চামচ লেবুর রস, এক চা চামচ মধু। গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করুন লেবু-মধু পানীয়। আপনি চাইলে এর সঙ্গে সবুজ চা মেশাতে পারেন।
যা লক্ষ্য রাখবেন :
-আগে পানি হালকা গরম করে তারপর লেবু ও মধু মেশাবেন। মধু কখনও গরম করতে যাবেন না।
-যদি ঠাণ্ডা পানিতে এটি পান করেন, তবে বিপরীত ফল হবে। মানে আপনার ওজন বাড়বে।
লেবু-মধু পানীয়ের উপকারিতা :
-এই পানীয় শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। শরীরের ভেতরের নালিগুলোর সব ময়লা বের করে দেয়।
-মেটাবলিজম বা হজম শক্তি বাড়ায়, ফলে ওজন কমে।
-ঠাণ্ডা লাগলে এই পানীয় কফ বের করতে সাহায্য করে এবং ঠাণ্ডা লাগলে গলাব্যথা করলেও এটি উপকারী।
-এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
-শরীরে শক্তি বাড়ায়, অলসতা কমায়।
-কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
কখন খাবেন :
সাধারণত সকালে উঠেই প্রথম পানীয় হিসেবে খালি পেটে এটি খাওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরে সকালের নাস্তায় খেতে পারেন।
মধুর উপকারিতা :
•    মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ আলাদাভাবে থাকে, কিন্তু চিনিতে তা একসঙ্গে থাকে। ফ্রুকটোজ তাড়াতাড়ি গ্লুকোজের মতো শরীরে ক্যালরি হিসেবে জমা হয় না। তাই চিনির মতো মধু সহজে ক্যালরি জমা করে না। ফলে অল্প মধু খেলেও ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম।
-মধু শরীরকে রিলাক্স করে, মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে এবং সহজে ঘুমিয়ে পড়া যায়।
•    মধু প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসেবে পরিচিত। যা শরীরের সব ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে ইনফেকশন দূর করে। ফলে শরীরের কাজ করার প্রণালিগুলো উন্নত হয় এবং মানুষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়।
•    মধু হজমে সহায়ক। তাই বেশি খাবার খাওয়ার পরে অল্প মধু খেতে পারেন।
•    মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন কমে।
•    মধু প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি। তাই মধু সহজে হজম হয়।
•    চোখের জন্য ভালো।
•    গলার স্বর সুন্দর করে।
•    শরীরের ক্ষত দ্রুত সারায়।
•    আলসার সারাতে সাহায্য করে।
•    নালীগুলো পরিষ্কার করে।
•    ঠাণ্ডা লাগলে জ্বর, গলাব্যথায় ভালো ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
•    মধু এন্টি অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।
•    বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
•    শরীরের সামগ্রিক শক্তি বাড়ায় ও তারুণ্য বাড়ায়।
লেবুর উপকারিতা :
•    লেবুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা এন্টিসেপটিক ও ঠাণ্ডা লাগা প্রতিরোধ করে।
•    লেবুর এই উপাদানগুলো টনসিল প্রতিরোধ করে।
•    এছাড়া লেবুর ভিটামিন সি ক্যান্সারের সেল গঠন প্রতিরোধ করে।
•    লেবু বুক জ্বালা প্রতিরোধ করতে ও আলসার সারাতে সাহায্য করে।
•    লেবু আর্থাইটিস রোগীদের জন্য ভালো।
•    লেবু শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করে।
•    লেবু এন্টিঅক্সিডেন্ট। তাই ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বক পরিষ্কার রাখে। ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।
•    কালোদাগ ও ত্বকের ভাঁজ পড়া কমায়।
•    লেবু ওজন কমাতে সাহায্য করে।
•    লেবু হজমে সহায়ক ও হজমের সমস্যা দূর করে।
•    কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
•    শরীরের ভেতরের টক্সিন দূর করে, অন্ত্রনালী, লিভার ও পুরো শরীরকে পরিষ্কার রাখে।
•    পেট ফোলাজনিত সমস্যা কমায়।
•    রক্ত পরিশোধন করে।
•    ঠাণ্ডা লাগলে জ্বর, গলাব্যথায় ভালো ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
•    শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি হলে ভালো কাজ করে।
•    শ্বাসনালীর ও গলার ইনফেকশন সারাতে সাহায্য করে।
সাবধানতা :
যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা অবশ্যই এটি খালি পেটে খাবেন না। কারণ লেবু এসিটিক। তাই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে এটি খাবেন। তাছাড়া লেবুর এসিড দাঁতের এনামেলের জন্য ক্ষতিকর, তাই এই পানীয় খাবার সঙ্গে সঙ্গে কুলি করবেন অথবা পানি খাবেন। একটা কথা মনে রাখবেন, ওজন কমানোর জন্য এই পানীয় শুধুই সহায়কমাত্র। সম্পূর্ণ ওজন কমানোর প্রক্রিয়াতে অবশ্যই থাকতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত শরীর চর্চা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা।
লেখক : ডা. মালিহা শিফা, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স কর্মকর্তা, মেরি স্টোপস
কোমল পানীয় থেকে বিরত থাকুন
হেলথ ডেস্ক
ঢাকা : প্রতিদিন চিনির পরিমাণ বেশিযুক্ত কোমল পানীয় পান করলে হৃদরোগের ঝুঁকি নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায় বলে একটি গবেষণায় দেখা গেছে। প্রায় ৪০ হাজার মানুষের ওপর ওই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন চিনির পরিমাণ বেশি এমন ধরণের কোমল পানীয় পান করেন তাদের হার্ট এটাকের সম্ভাবনা স্বাভাবিকের তুলনায় ২০ গুণ বেড়ে যায়। গবেষক লরেন্স ডি কোনিং বলেন, কোমল পানীয় বেশি পান করলে মানুষের শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি চর্বি জমে। কেননা কোমল পানীয়তে চিনির আধিক্য থাকায় শরীর তা বেশি বেশি গ্রহণ করে। আর অতিরিক্ত চিনি হার্টের জন্য ক্ষতিকর তা আমাদের সবারই জানা। এই পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, সাধারণত চিনিযুক্ত পানীয় (দুধ, চা, চিনি, মদ, অন্যান্য কোমল পানীয়) অধিকহারে গ্রহণের প্রবণতা যাদের থাকে তাদের রক্তে চর্বি ও প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়। যা হৃদরোগের জন্য অন্যতম দায়ী।
‘সার্কুলেশন’ জার্নালে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে জানা যায়, যারা প্রতিদিন এসব পানীয় পান করেন তাদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, সেখানে কোলেস্ট্রলের মাত্রা বেশি। এছাড়া এর আগেও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, শর্করা যুক্ত কোমল পানীয় ডায়াবেটিস এবং ওজন বাড়ানোর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত।
৭৭ জন দরিদ্র রোগী ফিরে পেল দৃষ্টি
হেলথ ডেস্ক
দেশের ১১৭ জন দরিদ্র রোগীর বিনামূল্যে গ্লুকোমা ও ছানি (ফ্যাকো) অপারেশন করলেন লন্ডনের কিংস্টন হাসপাতালের বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক ও সার্জন ডা. হোমান শেরাফাত। এমন মহৎ উদ্যোগই দরিদ্র মানুষগুলোর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে এনেছে। পৃথিবীর রং, রূপ এবং সৌন্দর্য যারা হারাতে বসেছিল তারাই পেল এই চিকিৎসা সেবা। বাংলাদেশ আই কেয়ার সোসাইটির ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় ঢাকার বনানীস্থ এমএমআর আই ফাউন্ডেশন ও রিসার্চ সেন্টারে ২৫শে ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত বিনামূল্যে গরীব রোগীদের সর্বাধুনিক ফ্যাকো মেসিনের মাধ্যমে গ্লুকোমা ও ছানি অপারেশন করা হয়। লন্ডনের গ্লোবাল এইড ট্রাস্ট এর আর্থিক সহযেগিতায় এই চক্ষু চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে মোট ১১৭ জন দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে গ্লুকোমা ও ছানি (ফ্যাকো) অপারেশন করা হয়। এছাড়াও ঢাকার বাইরে থেকে আগত রোগীদের বিনামূল্যে থাকা-খাবার ব্যবস্থা ও ওষুধ দেয়া হয়েছে। এই অপারেশন দলে ছিলেন, লন্ডনের কিংস্টন হাসপাতালের বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক ও সার্জন ডা. হোমান শেরাফাত, গ্লুকোমা রিসার্চ এন্ড আই হসপিটালের ডাইরেক্টর ও চিফ কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, কিংস্টন হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসক ও সার্জন ডা. জিয়াউল হক, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাবনীন রহমান, গ্লুকোমা রিসার্চ এন্ড আই হসপিটালের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট ডা. সাহেদারা বেগম এবং অন্যান্য সহকারীবৃন্দ। গ্লুকোমা রিসার্চ এন্ড চক্ষু হাসপিটালের ডাইরেক্টর ও চিফ কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, গ্লুকোমা চোখের এমন একটি মারাত্মক রোগ যা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অন্ধত্বের দ্বিতীয় প্রধান কারণ। বাংলাদেশ আই কেয়ার সোসাইটির দেশব্যাপী একটি জরিপে দেখা গেছে ৩৫ বৎসর বয়স ও তার উর্ধ্বে শতকরা ৩.১ ভাগ মানুষ গ্লুকোমা রোগে ভুগছে। শতকরা ১০ ভাগ লোক গ্লুকোমা রোগ আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। শতকরা ৯৬ ভাগ মানুষ গ্লুকোমা রোগের নামই শুনেননি। যাদের গ্লুকোমা রোগ আছে তাদের মধ্যে শতকরা মাত্র ছয় জন লোকের গ্লুকোমা রোগটি আছে বলে সনাক্ত করা হয়েছে এবং চিকিৎসা পাচ্ছে। বাকি শতকরা ৯৪ জন জানেই না যে তারা এই রোগে ভুগছে। তাদের স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে সনাক্ত করে ‍চিকিৎসা না করলে অন্ধত্ব অনিবার্য। বিশেষ করে গ্লুকোমা পরীক্ষার জন্য ৩৫ বছর বয়সের পর থেকে বৎসরে একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে চোখ পরীক্ষা করা উচিৎ।
তিনি আরো জানান, আমাদের দেশে বহু লোক গ্লুকোমা রোগে ভুগে নিজের অজান্তেই সারা জীবনের জন্য অন্ধ হয়ে যান। অথচ এটি কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি নয়। একবার গ্লুকোমা রোগ নির্ণয় হলে নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করলে অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। নীরব অন্ধত্বের কারণ চোখের উচ্চচাপ। এ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
গ্লুকোমা রোগী তার রোগ ও চিকিৎসার অভিজ্ঞতা আশপাশের লোকজনকে জানালে অন্যরাও অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। গ্লুকোমা রোগ থেকে চোখের যে দৃষ্টিশক্তি হারায় তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। গ্লুকোমা রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতাই পারবে অন্ধত্বের হাত থেকে বাঁচাতে। চোখের ছানি রোগ সম্পর্কে অধ্যাপক রহমান জানান যে, বাংলাদেশের পূর্ণ বয়স্কদের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ অন্ধত্বের প্রধান কারণ হল চোখের ছানি। সাধারণ মানুষ ছানিকে চোখে পর্দা পড়া বলে থাকে। ছানি হলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যাবে, ছানি পরিপক্ক হলে চোখ দিয়ে দেখা যাবে না এবং চোখের মনির রং কালোর পরিবর্তে ধূসর বা সাদা দেখা যাবে। ছানির একমাত্র চিকিৎসা হল অপারেশন। সময়মত অপারেশ না করে দেরি করলে বিভিন্ন ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং পরবর্তীতে চোখ সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। বর্তমানে ছানি অপারেশনের পর একটি কৃত্রিম লেন্স ভিতরে লাগিয়ে দেওয়া হয় যাতে রোগী চশমা ছাড়াই পূর্বের মত দেখতে পায়। উল্লেখ্য, গ্লুকোমা রিসার্চ এন্ড আই হসপিটাল বাংলাদেশ আই কেয়ার সোসাইটি একটি অলাভজনক স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রকল্প। এখানে রোগীদের অত্যন্ত কম খরচে চোখের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অপারেশন করা হয় এবং গরীব রোগীদের বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। নর্থ আমেরিকান বাংলাদেশি ইসলামিক কমিউনিটি (নাবিক) এর আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবিত হাসপাতালের ৯তলা ভবনের প্রথম দফার (ব্যাজম্যান্ট, গ্রাউন্ড ও ফার্ষ্ট ফ্লোর) কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে যা আগামী ২০১২ সালের জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এবং অন্যান্য দাতা প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা পেলে হাসপাতালের ৯তলা ভবনের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে এবং এতে সমগ্র বাংলাদেশের জনগণ সুলভমূল্যে গ্লুকোমাসহ চোখের যাবতীয় রোগের চিকিৎসাসেবা পাবে বলে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।
কর্মজীবী নারী আপনি সচেতন তো?
মৌসুমী মণ্ডল
আধুনিক নারীদের একটু বেশিই কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। দিনের বেলা কর্মক্ষেত্রে খাটুনি। আর বাসায় ফিরে সন্তান, সংসার ও পরিবারের লোকজনকে দেখভাল করতে হয়।
আমাদের দেশের কর্মজীবী পুরুষদের এখনও পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অর্থ উপার্জনটাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। তাই তাদের এ মানসিকতার পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত নারীকেই অনেক দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। আপনারা মনে করুন যুগসন্ধিক্ষণের নারী। যে সময়টা আপনারা পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছেন। যার কারণে আপনার উত্তরসূরিরা পাবে সুন্দর একটি পরিবেশ। যেখানে নারীর পাশাপাশি পুরুষও একই রকম কাজ করবে। তাই এমন সময়ে নিজেকে ফিট রাখতে প্রয়োজন সচেতনতা। তাই পরিবারের সদস্যদের প্রতি যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি নিজের যত্নে একটু সচেতন হোন। পরিবারের কর্ত্রী হিসেবে নারীকেই পরিবারের সদস্যদের ভাল-মন্দ দেখতে হয়। আবার কর্মক্ষেত্রেও নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হয়। সারাদিন ঘরে-বাইরে কর্মময় জীবনের পরে শরীর ও মনের উপরে যে চাপ পড়ে তা কাটানোর জন্য নিয়মিত ঘুম ও খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু কয়জনই বা পারে সবকিছু ঠিক রেখে নিজের প্রতি যত্নশীল হতে । বেশিরভাগ সময়েই কর্মজীবী নারীরা সময়ের অভাবে নিজেদের খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে পারে না যা তাদের পরবর্তী স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ । কাজের চাপ ও অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়ার কারণে অনেক নারীই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সুস্থ জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজন সঠিক পুষ্টি উপাদান । নারীদের বিভিন্ন বয়সে পুষ্টি চাহিদা বিভিন্ন হয়। তাই প্রতিটি কর্মজীবী নারীকে প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে হবে। সঠিক পুষ্টি উপাদান যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, অ্যালার্জি, আর মাথাব্যথার মতো রোগকে দূরে ঠেলে দেয় তেমনি সুন্দর চুল, ত্বক ও স্বাস্থ্য উপহার দেয়। একটু সচেতন হলেই কিন্তু যে কোনো কর্মজীবী নারী শত ব্যস্ততার মধ্যেও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারেন ।
নিচে এ সম্পর্কে কিছু টিপস দেয়া হল:
    সারাদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে । পানির মাধ্যমেই অক্সিজেন ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সম্পূর্ণ শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং দূষিত বর্জ্য পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যায়।
    সারাদিনে অতিরিক্ত ক্যাফেইন যুক্ত খাবার যেমন চা, কফি, চকোলেট খাওয়া উচিৎ নয়।
    সকালের নাশতা কখনও বাদ দেয়া উচিৎ নয়।
    সকালের নাশতা খুব বেশি ভারি হওয়াও উচিৎ নয়। এতে হজমের জন্য শরীরে প্রচুর শক্তির অপচয় হয়। ফলে ঝিমুনি ও দুর্বল বোধ হয়।
    সকালের নাশতায় যে কোনো একটি ফল খাওয়া যেতে পারে। ফল হজমশক্তি বাড়িয়ে মস্তিষ্কে গ্লুকোজ সরবরাহ করে যা সারাদিন মানুষকে কর্মক্ষম রাখে।
    খাবারের তালিকায় শর্করা জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটির পরিমাণ কম রেখে শাকসবজি ও সালাদের পরিমাণ বেশি রাখতে হবে।
    প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় আমিষ জাতীয় খাবার থাকতে হবে। আমিষের সবচেয়ে ভালো উৎস হচ্ছে ডাল, ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম। যারা নিরামিষভোজী তারা আমিষের ঘাটতি পূরণের জন্য কয়েক প্রকারের ডাল একসঙ্গে মিশিয়ে রান্না করে খেতে পারেন।
    প্রতিদিন আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদরোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। আঁশযুক্ত খাবার হচ্ছে তাজা ফলমূল, শাকসবজি, লাল চাল ও লাল আটা।
    খুব বেশি প্রক্রিয়াজাত ও ভাজা পোড়া খাওয়া উচিৎ নয়।
    ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের খুব ভালো উৎস হল দুধ, শাকসবজি ইত্যাদি।
    রাতের খাবার খুব হালকা হওয়া উচিৎ।
    রাতে ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে দু’ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করা উচিৎ।
    সারাদিনে অন্তত ৩০ মিনিট যে কোনো হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা করার অভ্যাস করতে হবে । শারীরিক ব্যায়াম যেমন শরীরকে সুস্থ রাখে তেমনি মনে প্রশান্তি আনে।
লেখক : ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট, লেজার মেডিক্যাল সেন্টার
ক্যান্সার প্রতিরোধ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাবে রঙিন আলু!
এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান
গোল আলু-১, গোল আলু-২, গোল আলু-৩ ও গোল আলু-৪। সাদা আলুর তুলনায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) গবেষকদের উদ্ভাবিত এ ৪ প্রজাতির রঙিন আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন ও ফেনোলিক কম্পাউন্ড। আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতা। এ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মানবদেহে মরণব্যাধি ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। ভাতের বিকল্প হিসেবে নিয়মিত এসব প্রজাতির আলু খেলে প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা যেমনি পূরণ হবে তেমনি হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, বয়ঃবৃদ্ধিজনিত বুদ্ধি হ্রাস রোধ এবং মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করবে, এমনটাই জানিয়েছেন গবেষকরা। গবেষক সূত্র জানায়, ‘এ রঙিন আলুতে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। তবেত নেই কোনো ফ্যাট।’ গবেষক দলের প্রধান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ রহিম বাংলানিউজকে জানান, ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন্স-মেডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শ্যালি জ্যাংক্স ও অধ্যাপক ড. ফিল সাইমনের কাছ থেকে ২৮টি রঙিন গোল আলুর বীজ এ দেশে নিয়ে আসেন তিনি। এরপর বাকৃবি জার্মপ্ল¬াজম সেন্টারের মাঠ গবেষণাগারে ওই আলু নিয়ে বিস্তর গবেষণা শুরু করেন। প্রায় ৪ বছর গবেষণা শেষে অধিক ফলন ও রোগবালাইমুক্ত ৪ প্রজাতির আলুর নতুন লাইন উদ্ভাবন করেন। এ কাজে তাকে সাহায্য করেন মাস্টার্স (এম.এস.) অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী ও পিএইচডি ফেলোরা। উদ্ভাবিত এসব আলু নিয়ে আরও গবেষণার জন্য বর্তমানে একজন কৃষকের জমি ও বাকৃবি জার্মপ্ল¬াজম সেন্টারে গবেষণা চলছে বলে জানান তিনি। রঙিন প্রজাতির এ আলুগুলো কেমন? জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘গোল আলু-১ প্রজাতিটি দেখতে কালো ও ডিম্বাকৃতির। এর ভেতরের অংশ গাঢ় কালচে থেকে গোলাপি রঙের মাংসলযুক্ত। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ২০ থেকে ২৫ টন। গোল আলু-২ প্রজাতিটি দেখতে লালচে হলুদ ও লম্বাটে। এর ভেতরের অংশের কেন্দ্র হলুদ রঙের এবং চারদিকে লাল রঙের রিংয়ের মতো আস্তরণ থাকে। উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টন। গোল আলু-৩ প্রজাতিটি দেখতে হলুদ ডিম্বাকার। এর ভেতরের অংশ গাঢ় হলুদ বর্ণের। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ টন। গোল আলু-৪ প্রজাতিটি দেখতে কালো ও লম্বাটে। এর ভেতরের অংশ গোলাপি ও লালচে রঙের। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ১৮ থেকে ২২ টন। বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই এসব আলুর চাষ সম্ভব উল্লেখ করে ড. রহিম আরও জানান, প্রতিটি প্রজাতির বীজ নভেম্বর মাসে রোপন করলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে আলু সংগ্রহ করা যায়। এসব ফসলের জন্য উর্বর বেলে-দোআঁশ মাটি উত্তম। তবে এসব প্রজাতি জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। কিন্তু মাঝেমধ্যে সেচ দিতে হয়। রঙিন আলুর পুষ্টিগুণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘রঙিন আলুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন ও ফেনোলিক কম্পাউন্ড থাকে, যার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া হলুদ রঙের আলুতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিনয়েড, বিটা ক্যারোটিন ও লুটেইন এবং বেগুনি রঙের আলুতে প্রচুর পরিমাণে ফ্লেভোনয়েড থাকে। এটিরও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতা রয়েছে। এ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মানবদেহে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।’ ড. রহিম জানান, এ উপাদানটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, বয়ঃবৃদ্ধিজনিত বুদ্ধি হ্রাস রোধ এবং মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। গবেষক দল সূত্র জানায়, আলুর রঙ যত বেশি গাঢ় হয়, সেই আলুতে তত বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এছাড়া রঙিন আলুর মাংসল অংশের তুলনায় চামড়া বা খোসায় প্রায় ১০ গুণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বেশি থাকে। এর ফলে খোসাসহ রঙিন আলু খাওয়ার ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা উচিত।
গবেষক দল প্রধান ড. রহিম বলেন, ‘উদ্ভাবিত এ রঙিন আলুতে ড্রাই ম্যাটার বা শুষ্ক পদার্থ বেশি থাকায় সহজেই কৃষক নিজ ঘরে অনেক দিন এটি সংরক্ষণ করতে পারবেন।’ বাকৃবি’র হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ রহিম আরও বলেন, ‘এখনো উদ্ভাবিত নতুন আলুর ৪টি জাতের রেজিস্ট্রেশন সরকারিভাবে পাওয়া হয়নি। রেজিস্ট্রেশন মিললে খুব শিগগিরই মাঠ পর্যায়ের প্রান্তিক কৃষকরা সহজেই এ আলুর চারা রোপণ করতে পারবেন।’
ক্যালরি কম, তাই গরমে চাই তরমুজ
মৌসুমী মণ্ডল
ঢাকা : সারাদিনের গরমে যখন সবাই ক্লান্ত তখন এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানিই এনে দেয় সতেজতা । ক্লান্তি এড়াতে আমরা ঠাণ্ডা শরবত বা বাণিজ্যিক জুস খেয়ে থাকি । কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তাতে আবার ওজন বেড়ে না যায় । তাই এই গরমে ক্লান্তি এড়াতে আমরা তরমুজ খেতে পারি যা আমাদের সবার হাতের নাগালের মধ্যেই রয়েছে ।
 •    তরমুজে পানির পরিমাণ শতকরা ৯২ ভাগ । এতে ক্যালরির পরিমাণও অনেক কম। এছাড়াও এতে রয়েছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান । ভিটামিন সি, থায়ামিন ও ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি আছে তরমুজে। এতে কোনো কোলেস্টেরল নেই এবং কোনো সম্পৃক্ত চর্বিও নেই ।
•    গবেষণায় দেখা গেছে যে, তরমুজে মাত্র ৩০ ভাগ ক্যালরি থাকে । এত কম ক্যালরি থাকার কারণে তরমুজকে ওজন কমানোর একটি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা যায় ।
•    ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে । প্রতিদিনের খাবারের ক্যালরি এমন হওয়া উচিত যা শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালরি থেকে কম হবে ।
•    তরমুজে চিনির পরিমাণ খুবই কম। মাত্র ৬ ভাগ চিনি এর মধ্যে বিদ্যমান। রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীর থেকে বেশি বেশি ইনসুলিন নিঃসরিত হয় যার কারণে শরীরে চর্বি জমতে থাকে । তরমুজে যেহেতু চিনি কম তাই এটি বেশি পরিমাণে খেলেও চর্বি জমার কোনো সম্ভাবনা নেই ।
•    তরমুজের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশি কিন্তু গ্লাইসেমিক লোড অনেক কম। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হল, খাবারে শর্করার পরিমাণ যা সরাসরি রক্তে চলে যায় এবং প্রভাব ফেলে। গ্লাইসেমিক লোড হল খাবারের কত গ্রাম শর্করা রক্তে যায় তার পরিমাণ। তরমুজের যেহেতু গ্লাইসেমিক লোড অনেক কম তাই বেশি পরিমাণে খেলেও রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়বে না ।
•    তাই এই গরমে ওজন কমাতে প্রচুর পরিমাণে তরমুজ খেতে পারেন। তবে যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে ।
•    তরমুজে আঁশ এর পরিমাণ অনেক বেশি । আঁশযুক্ত খাবার শরীরে বিপাকক্রিয়ায় হজম হতে অনেক সময় নেয় । আর তরমুজে যেহেতু পানির পরিমাণও বেশি থাকে তাই খাওয়ার পর অনেকক্ষণ ক্ষুধা বোধ হয় না । এ কারণে যাদের ঘন ঘন খাওয়ার অভ্যাস তারা এই গরমে বেশি পরিমাণে তরমুজ খেতে পারেন । তাতে আপনার ওজন বাড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না ।
•    তরমুজ খুব ভাল পানি নিঃসরণকারী হিসেবে কাজ করে । এতে উপকারী মিনারেল সোডিয়াম ও পটাসিয়াম থাকে যা শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি দূর করে ।
•    আমরা সাধারণত তরমুজের লাল অংশটাই খেয়ে থাকি । কিন্তু এর সাদা অংশটাও বেশ উপকারী। এর সাদা অংশে ‘সাইট্রুলিন’ নামে একটি অ্যামাইনো এসিড থাকে যা খেলোয়াড়দের জন্য খুবই উপকারী।
•    খেলোয়াড় বা যারা ব্যায়াম করে তাদের মাংসপেশীতে খুব দ্রুত শর্করার পরিমাণ কমে যায় । তাই তারা খুব সহজেই অবসাদ বোধ করে ।
•    তরমুজের ‘সাইট্রুলিন’ মাংসপেশীর এই অবসাদকে দূর করে যা একটানা অনেকক্ষণ ব্যায়াম করতে সহায়তা করে। তাই তরমুজ কাটার সময় সাদা অংশটা কিছুটা গাঢ় করে কাটা উচিত।
•    এছাড়া তরমুজের পটাসিয়াম শরীরের অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্যতা রক্ষা করে যা শরীরে শক্তি যোগায় । তাই এই গরমে খেলাধুলা বা বায়ামের পরে ক্যালরিযুক্ত বাণিজ্যিক জুস না খেয়ে তরমুজের জুস খাওয়া যেতে পারে।
•    তরমুজে ‘লাইকোপিন’ থাকে যা এর লাল রং এর জন্য দায়ী। লাইকোপিন একটি অক্সিজেন যা শরীরকে ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করে। লাইকোপিনের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
•    এছাড়াও তরমুজ ত্বক পরিষ্কার রাখে। ত্বককে করে তোলে আরো সতেজ ও প্রাণবন্ত । তাই এই গরমে ওজন কমানোর পাশাপাশি হয়ে উঠুন আরো সুন্দর ।
লেখক : ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট, লেজার মেডিক্যাল সেন্টার
আকুপ্রেসার : ওষুধের বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি
ইসমাইল হোসেন
 শরীরের অঙ্গগুলোকে সচল রাখতে পারলেই সুস্থ থাকবে মানবদেহ। আর এর জন্য প্রয়োজন খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখা এবং নিয়মিত কিছু শারীরিক অনুশীলন। এক্ষেত্রে আকুথেরাপি হয়ে উঠতে পারে ওষুধের বিকল্প উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি।
আকুথেরাপিস্টদের মতে, কেবল এ পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে মানবদেহের শতকরা ৮০ ভাগ রোগ নিরাময় সম্ভব। অর্থ খরচ কমানোর পাশাপাশি অনেক জটিল রোগের হাত থেকেও মুক্তি মিলতে পারে। দেশের বিশিষ্ট আকুথেরাপিস্টরা এসব তথ্য জানান। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স কক্ষে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। `আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে` শীর্ষক এ কর্মশালায় দেশের আকুথেরাপিস্ট আলাউদ্দিন বিশ্বাস, রুহুল আমীন, সিরাজুল মুনীর, আলমগীর আলম ও ফারুক হোসেন উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালার প্রথম পর্বে ওষুধের বিকল্প এ চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
আকুথেরাপিস্টরা বলেন, মানবদেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ আরেকটি অঙ্গের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই অঙ্গগুলো ঠিকমতো সচল রাখতে পারলে শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ থাকবে।
তারা বলেন, আকুথেরাপি হল শরীরের ব্যবহারিক বিষয়। মানবদেহের রোগ নির্ণয়, রোগ নিরাময় এবং রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন আকুথেরাপি। শরীরে সুচের মতো চাপ প্রয়োগ করে আকুথেরাপি দেওয়া হয়। আকুথেরাপিস্টদের মতে, মানবদেহ হল সুপার কম্পিউটার। কম্পিউটার যেমন কমান্ড ছাড়া কাজ করে না। ঠিক তেমনি দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ কমান্ডের মাধ্যমে কাজ করে। আর মানবদেহের হাত ও পায়ের তালুর সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সম্পর্ক বিদ্যমান। এক্ষেত্রে হাত এবং পায়ের তালুতে সামান্য চাপ প্রয়োগ করে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, কোমর ব্যথা, মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথাসহ বিভিন্ন হাইপার টেনশনজনিত রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। এমনকি ক্যান্সার থেকেও মুক্তি দিতে পারে আকুথেরাপি। তবে এই অনুশীলন নিয়মিত ও ঠিকমতো করতে হবে। 
আকুথেরাপিস্টরা বলেন, খাদ্যগ্রহণ এবং লাইফ স্টাইল ঠিক রাখার মধ্য দিয়ে শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ রাখা যায়। খাদ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে শরীরে জৈব শক্তি অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এই জৈব শক্তি শরীরে শক্তি জোগায়। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, যে কোনো কঠিন খাদ্য একটু চিবিয়ে খেলে তাতে মুখের লালা মিশ্রিত হয়। এতে খাদ্য দ্রুত হজম হবে। এছাড়া সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন হলে শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকবে। তাতে রোগ বালাই থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। এর জন্য প্রয়োজন লাইফ স্টাইল ঠিক রাখা। হাত-পায়ের ছোটখাট কিছু ব্যায়াম হতে পারে শরীরে ভারসাম্য রক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, আকুথেরাপি বর্তমানে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের মতো ওষুধের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। তারা এখন আকুথেরাপির দিকেই মনোনিবেশ করছেন।
কর্মশালায় উপস্থিত আকুথেরাপিস্টরা জানান, বাংলাদেশে ২০০৩ সাল থেকে আকুথেরাপির বিষয়ে কাজ করছেন তারা। তাদের প্রচেষ্টায় ‘সুচিকিৎসা জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠনও গড়ে উঠেছে। ফাইন্ডেশনের সভাপতি রুহুল আমীন বলেন, ‘জীবন ধারার সঙ্গে শরীর কিভাবে সুস্থ রাখা যায় আকুথেরাপি তারই একটা পদ্ধতি মাত্র। আকুথেরাপি মানবদেহের রোগ নিরাময়ে শরীরকে সাহায্য করে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও অনালগ্রন্থি যথাযথ সক্রিয় রাখে। যার ফলে আমরা নিখুঁত স্বাস্থ্যের অধিকারী হই।’
তিনি বলেন, লাইফ স্টাইল এবং খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতি ঠিক থাকলে শরীর শতভাগ সুস্থ রাখা সম্ভব। ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘আজীবন শরীর সুস্থ রাখতে হলে আকুপ্রেসার দরকার। এর মাধ্যমে শরীরের ৮০ ভাগ রোগ নিরাময় সম্ভব।’ বর্তমানে এই চিকিৎসা পদ্ধতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি এটাকে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে বলে মন্তব্য করেন।  কর্মশালায় অংশ গ্রহণকারীদের শারীরিক বিভিন্ন কসরতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক কিছু সমস্যারও সমাধান পাওয়া যায়। পরে বাংলানিউজের পাঠকদের পাঠানো নানা প্রশ্নের উত্তর প্রদান পর্ব পরিচালনা করা হয়। কর্মশালায় বাংলানিউজের হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন খান, কান্ট্রি এডিটর সাইফুল ইসলাম, হেলথ এডিটর তানিয়া আফরিন, কালচারাল এডিটর রবাব রসাঁ, লাইফ স্টাইল এডিটর শারমীনা ইসলাম ছাড়াও সংবাদ মাধ্যমটির বিভিন্ন সেকশনের কর্মীরা অংশ নেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন