Year-18 # Issue-37 # 30 October 2011



এম এ সামাদ : বীমা শিল্পের প্রাণপুরুষ
সালাম মাহমুদ
বীমা শিল্প যে পৃথিবী ব্যাপী এক সম্মানজনক ব্যবসা, তা পরিস্কারভাবে বুঝিয়ে দিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ভাষা সৈনিক বীমা শিল্পের প্রবাদ পুরুষ তথা বীমা গবেষক এম এ সামাদ। তিনি বৃহত্তর সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবনে একজন তুখোড় মেধাবী ছাত্র ছিলেন এম এ সামাদ। ১৯৪৫ সালে তিনি এই উপমহাদেশের সবচেয়ে অভিজাত শ্রেণীর বিদ্যাপীঠ কলকাতার বিখ্যাত প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে সম্মানসহ বি এ ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ইতিহাসে সর্বোচ্চ নাম্বারসহ এম এ পাশ করেন। ফলে তিনি স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। তাঁর সর্বোচ্চ নাম্বারের রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারে নি। এরপর অল ইন্ডিয়া রেডিওর নয়াদিল্লীতে সংবাদ ঘোষক এবং অনুবাদকের দায়িত্বে নিযুক্ত হলেন। তখন উর্দু ঘেষা বাংলা সংবাদ প্রচারের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদী হওয়ায়, রেডিও পাকিস্তানের কর্র্মকর্তা জেড, এ, বোখারীর সাথে তাঁর মতবিরোধ দেখা দেয়। ফলে মাতৃভাষার মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার্থে তিনি রেডিওর চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৫১ সালে এম এ সামাদ স্বাধীন ব্যবসা বীমা শিল্পকে পেশা হিসেবে বেছে নিলেন। ভাবলেন, পেশা নির্বাচনে কোনো ভুল করলেন কিনা। কিন্তু বীমা জগতের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তিনি যে সফলতা এবং অবদানের স্বাক্ষর রাখলেন, তাতে প্রমাণ হলো, তিনি কোনো ভুল পথে পা দেন নি, বরং সঠিক এবং উপযুক্ত সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। এদেশের বীমা শিল্পকে যখন রাষ্ট্রয়ত্ব করা হলো, তখন প্রথমেই তাকে সুরমা জীবন বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হলো। পরবর্তীতে তিনি অভিজ্ঞতা এবং কর্মদক্ষতা দিয়ে জীবন বীমা কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের পদ অর্জন করলেন। বাংলাদেশে বীমা প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত জ্ঞানদানের ক্ষেত্রে এম এ সামাদের নাম সর্বাগ্রে স্মরণযোগ্য এবং তার নাম যুগ যুগ স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বীমা পেশাজীবিদের হৃদয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। কারণ বীমা শিল্পের গবেষণা, ডিগ্রী, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ দানের জন্য তিনি সুদূর প্রসারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। ফলে ১৯৭৩ সালে তৎকালীণ বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব কামরুজ্জামান-এর সহায়তায় এদেশের প্রথম এবং একমাত্র রাষ্ট্রীয় বীমা প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমী’ প্রতিষ্ঠা করলেন। তিনিই হলেন একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ডাইরেক্টর। এম এ সামাদ তার ‘সাধারণ বীমার অ আ ক খ’ গ্রন্থে একাডেমী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার ইচ্ছার কথা এভাবে প্রকাশ করেছেন- ‘এক মহান আদর্শ ও স্বপ্নকে সামনে রেখে একদিন এ একাডেমী প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছিলাম। আমার স্বপ্ন ছিলো আধুনিক বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের ইন্স্যুরেন্স একাডেমী ও একদিন পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের জন্য বীমা শিক্ষার একটি আদর্শ প্রাণ কেন্দ্ররূপে গ্রড় উঠবে’ এম এ সামাদ যেভাবে বুকে স্বপ্ন এঁকেছিলেন, সেভাবে তা বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের ইন্স্যুরেন্স একাডেমীর পরবর্তীতে গভর্নিং বোর্ডের একজন অন্যতম আজীবন সম্মানিত সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৮৪ সালে এম এ সামাদ জীবন বীমা কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের পদ হতে অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি যে কর্মবীর সৈনিক, তার পক্ষে অবসর খুবই অসহনিয় হয়ে দাঁড়ালো। কাজের মধ্যে ডুবে থাকাই ছিলো তার প্রধান স্বভাব। অবসর শব্দটি তার নিকট খুবই যন্ত্রণাদায়ক মনে হলো। এমন সময় প্রেসিডেন্ট এরশাদ ১৯৮৪ সালের ১১ আগস্ট আমন্ত্রণ জানালেন, বীমা ব্যবসায় ইচ্ছুক ব্যক্তিদের বেসরকারী খাতে বীমা কোম্পানী গঠনে এগিয়ে আসার জন্য। এ সুযোগে তিনি সাধারণ বীমা জগতে প্রবেশ করেন। এ যেনো তার জীবনে এক অন্যরকম চ্যালেঞ্জ। সিদ্ধান্ত নিলেন, একটি সাধারণ বীমা কোম্পানী গঠন করবেন। আবার পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করলেন এবং সফলও হলেন। ফলে ১৯৮৫ সালের ২৯ জুলাই তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী সাধারণ বীমা কোম্পানী  ‘বাংলাদেশ জেনারেল ইনসিওরেন্স কোম্পানী (বিজিাআইসি) লিমিটেড’। তিনিই হলেন কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এবং পরবর্তীতে চেয়ারম্যান। কোম্পানীর অব্যাহত অগ্রগতি, দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতির জন্য বিজিআইসি শ্রেষ্ঠ বীমা কোম্পানী হিসেবে ‘এফ এন এস বিজনেস এওয়ার্ড সহ অসংখ্য এওয়ার্ড অর্জন করেছে। বিজিআইসি বীমা ব্যবসার ক্ষেত্রে অগ্রপথিক এবং পথ প্রদর্শকের ন্যায় ভূমিকা পালন করছে।
এম এ সামাদ একজন তরুণ সংগঠকের মতো হৃদয়ের সতেজতা বুকে ধারণ করে কোম্পানীকে আত্মপ্রত্যয়ের মাধ্যমে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দিয়েছেন। সমস্ত জীবনের অভিজ্ঞতাকে প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে তিনি প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে একজন আদর্শ এবং নন্দিত প্রাণপুরুষ হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার মতোও মনোমুগ্ধকর একজন যাদুশিল্পী ছিলেন। ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা আত্মপ্রত্যয়ী। কর্মধারায় অভিনব কৌশল তৈরীতে তিনি সর্বদা সজাগ থাকতেন, ফলে খুব সহজেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হতেন। সততা, আন্তরিকতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সেবাপরায়নতা, ধৈর্য এবং সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় তিনি ছিলেন আত্মবিশ্বাসী।
এম এ সামাদ বীমা শিল্পের জগতে আলোর মশাল হাতে নিয়ে প্রবেশ করেছিলেন। ফলে তার আলোয় আজ বিজিআইসি পরিবারসহ বলতে গেলে সমস্ত বীমা জগতই আলোকিত। তিনি ছিলেন সদা হাস্যজ্জ্বল এক মানুষ। তিনি বিজিআইসিতে দক্ষ জণগোষ্ঠি তৈরীতে অসমান্য অবদান রেখেছেন। এজন্য তারা আজ বিজিআইসিকে দিন দিন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক কাজে মগ্ন থাকেন। তার হাতে গড়া বীমা সৈনিকগণ বর্তমানে বিজিআইসি সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে সাফল্যের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন।
এম এ সামাদ তার কর্মের দক্ষতার পরিচয় ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানের গুরু দায়িত্ব হাতে নেন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমী কর্তৃক শ্রেষ্ঠ বীমা ব্যক্তিত্বের সম্মাণনায় ভূষিত হন। এম এ সামাদ শুধু বীমা গবেষকই ছিলেন না, একজন সুলেখকও ছিলেন। ‘শনিবারের ছুটি’ তার লেখা বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য পাঠক নন্দিত বাস্তব রেখাচিত্রের একখানা গ্রন্থ। তাঁর সহধর্মিনী বেগম ফওজিয়া সামাদের সম্পাদনায় ১৯৪৯ সালে যে শিশু-কিশোরদের নির্ভিক সাহিত্য পত্রিকা ‘মিনার’ প্রকাশিত হয়েছিলো, সে সময় তিনি ছিলেন তার অন্যতম প্রেরণাদাতা, পৃষ্ঠপোষকও বটে।
বাংলাদেশে বীমা শিল্পের ওপর এম এ সামাদ সর্বাধিক গ্রন্থ লিখেছেন। তার লেখা বীমা সাহিত্যের প্রথম পাঠ্যবই ‘ যে ব্যবসা সম্মানের যে ব্যবসায় মূল ধন লাগেনা’। তারপর লিখলেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় পাঠ্যবই যথাক্রমে ‘খরভব রহংঁৎধহপব ংবষষরহম রহ ধপঃরড়হ’ এবং দঝঁপপবংংভঁষ ধমবহপু নঁরষফরহম’  সাধারণ বীমার ওপর বাংলা ভাষায় একটি মহামূল্যবান পাঠ্য গ্রন্থ রচনা করলেন ‘সাধারণ বীমার অ আ ক খ’। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বীমাবিদদের নিকট গ্রন্থগুলো বহু প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হলো এবং তার জীবনে আন্তর্জাতিকভাবে বয়ে আনলো অনেক সম্মান। ‘ইউনাইটেড নেশন্স’-এর ‘অ্যাঙ্কটাডের’ বীমাশিল্পে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নামের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হলো। তার প্রত্যেকটি বই আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত হলো।  গ্রন্থগুলো বীমা শিল্পের মহৌষধ হিসেবে কাজ দিলো, বীমা পেশায় নিয়োজিত প্রত্যেকের ক্ষেত্রে। ফলে তিনি বীমা জগতে এক অসাধারণ কীর্তিমান পুরুষ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিতি এবং খ্যাতি অর্জনে সক্ষম হলেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য সেমিনার এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করে দেশ ও জাতির জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন। ইউ এন ডি পি ফেলোশীপে এম এ সামাদ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ বীমা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার সাথে পরিদর্শন করেছেন।
এম এ সামাদ ছিলেন অত্যন্ত পরোপকারী। সকলের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং সুখ-দুঃখের অংশীদার হতেন। খুবই খুশি হতেন মানুষের সেবা করার সুযোগ পেলে । ছোট বড় সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন, ফলে প্রত্যেক মানুষ তাকে প্রাণভরে ভালোবাসতো। বীমা শিল্পে সকলের ভালোবাসা অর্জন এক বিশাল গুণ। তিনি জীবনযুদ্ধে এক সফল সৈনিক এবং বীমা শিল্পের এক নান্দনিক কারিগর। বর্ণাঢ্য জীবন ছিলো তার শান্তির ছায়ায় ঘেরা। বিজিআইসি’র চেয়ারম্যান থাকাকালীণ এম এ সামাদ তার সহধর্মিনী বেগম ফওজিয়া সামাদ এবং  এক পুত্র ও তিন কন্যা, নাতি-নাতনি, পতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে ১৭ অক্টোবর ২০০৫ সালে গতায়ূ হয়েছেন, কিন্তু তার সৃজনশীল কর্মধারায় এবং স্মৃতির রাজত্বে ব্যাপক বীমাকর্মী ও শুভাকাঙ্খির হৃদয় জুড়ে তিনি আজও অমর হয়ে আছেন এবং থাকবেন।
লেখক : এক্সিকিউটিভ অফিসার, জনসংযোগ বিভাগ, বিজিআইসি লিঃ

 আবারো মসলার দাম বৃদ্ধি
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মসলা বাজারের অসাধু সিন্ডিকেট   
হাসান মাহমুদ রিপন
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশের গরম মসলার বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে এরইমধ্যে অসাধু সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। প্রায় সকল ধরনের মসলার দামই আর এক দফা বেড়েছে। কোরবানির এখনো অনেকদিন বাকি থাকলেও মশলার দাম বাড়ার প্রবণতা থেকেই এ চক্রের সক্রিয়তা টের পাওয়া যায়।
সরেজমিনে জানা যায়, কোরবানির ঈদ মানেই গোশতের ছড়াছড়ি। আর গোশত রান্নার অন্যতম অনুসঙ্গ হলো মশলা। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়ে গেছে। এবারও একই ফাঁদ আঁটছে সিন্ডিকেট। ফাঁদের অংশ হিসেবে এরইমধ্যে তারা মশলা মজুদের পরিমাণ বাড়াচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে উৎপাদন ও আমদানি কম বলে প্রচার করা হচ্ছে। তাই এবার মশলার দাম আকাশ ছোঁয়া বলেও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। রাজধানীর কাওরানবাজার, ইসলামপুর, পুরান ঢাকা, রায়সাহেব বাজার, সদরঘাট, যাত্রাবাড়ি, মীরপুর, বাড্ডা ও মোহাম্মদপুরের গরম মসলার পাইকারি দোকান ও আড়ত ঘুরে এ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। রমজানের চিনির বাজারের মতোই এবার মশলার বাজার থেকেও হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য এ সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কোরবানির আগেই কোনো কারণ ছাড়া এভাবে মশলার দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ স্পাইসি ইমপোর্টার এসোসিয়েশনের (বিএসআইএ) সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক মিজান বলেন, এবার অতিবৃষ্টির কারণে দেশে মশলার উৎপাদন কম হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারেও দাম বেশি। তাছাড়া আমদানিতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে মশলার দাম অনেকাংশে বেড়ে যায়। অপরদিকে কাওরানবাজার মশলা ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন মসলার আমদানি বেশি হচ্ছে। মশলা ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আজিজুল হক খান বলেন, বিভিন্ন কারণে মশলার দাম বাড়লেও ক্রেতারা সব সময় ব্যবসায়ীদেরই দায়ী করেন। অথচ দাম বাড়ার ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা কিছুই জানেন না। দাম বাড়ার বিষয়টি রাজনৈতিক। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের (ক্র্যাব) নেতা জালাল আহমেদ বলেন, সিন্ডিকেটের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিত উপায়ে দাম বাড়ানো হয়। রমজানের চিনির বাজারের মতোই কোরবানিতে মশলার বাজার থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য সিন্ডিকেট আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারের কঠোর পদেক্ষেপ ছাড়া এদের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব নয়। রাজধানীর গরম মসলার পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়- মরিচ প্রতি কেজি ২’শ থেকে ২৪০ টাকা, হলুদ ২৮০ থেকে ৩১০, আদা ৯০ থেকে ১১০, গোল মরিচ ৭৫০ থেকে ১০৩০, জিরা ৫২০ থেকে ৫৫০, তেজপাতা ২’শ থেকে ২২০, দারুচিনি ২৪০ থেকে ২৯০, পেয়াজ ৩৮ থেকে ৪৫, রসুন ৭০ থেকে ৯০, ধনিয়া ৮০ থেকে ১১০ ও এলাচ কেজি প্রতি ১৮ শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। অথচ রমজানে মরিচ প্রতি কেজি  ১’শ থেকে ১৮০, হলুদ ২’শ থেকে  ২৮০, আদা ৭০ থেকে ৯০, গোল মরিচ ৬’শ থেকে ৬৫০, জিরা ৪৫০ থেকে ৫’শ, তেজপাতা ১৫০ থেকে ২’শ, দারুচিনি ২’শ থেকে ২২০, পেয়াজ ২৮ থেকে ৩২, রসুন ৫৫ থেকে ৬০, ধনিয়া ৭০ থেকে ৮০ ও এলাচ কেজি প্রতি ১৫শ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে। দুই সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মশলার ক্ষেত্রে কেজি প্রতি ২০ থেকে ৫’শ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। কাওরানবাজারের মশলা ব্যবসায়ী ভাইভাই স্পাইসিসের মালিক কেরামতউল্লাহ বলেন, কোরবানির আগে এ দাম আরো কয়েক দফা বাড়বে। আগের বছরগুলোতেও এভাবে দাম বেড়েছে। নিউমার্কেটে মশলা কিনতে আসা আজিমপুরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী রেহানা আক্তার মশলার দাম বাড়া সম্পর্কে বলেন, পুরো দেশটিই আসলে একটি সিন্ডিকেটের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। গুটিকয়েক ক্ষমতাশালী লোক এর নিয়ন্ত্রক। সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে ক্রেতা ও সরকার। কোরবানির আগে গত বছরও একইভাবে মসলার বাজারের নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেটের হাতে চলে যায়। গুজব ছড়িয়ে ও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে গত বছর মশলার বাজার থেকে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় সিন্ডিকেট।

১০ বছরে নির্যাতনে ৪শ’ জনের মৃত্যু
উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে গৃহকর্মী হত্যা-নির্যাতন
ইকবাল হাসান ফরিদ
রাজধানীসহ দেশে গৃহকর্মী হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানি উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। হত্যাকে আÍহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা, ছাদ থেকে ফেলে দেয়া, গরম খুন্তি দিয়ে ছেঁকা দেয়া, গরম তেল শরীরে ঢেলে দেয়াসহ নানানভাবে চলছে গৃহকর্মী নির্যাতন। 
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মনিটরিং রিপোর্টে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে নির্যাতনে ৩০ জন গৃহকর্মী নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ৩১ জন। ২০১০ সালে নির্যাতনে আহত হয়েছে ৩২ জন ও নিহত হয়েছে ৪৫ জন গৃহকর্মী। ২০০৯ সালে নির্যাতনে আহত হয়েছে ১৭ জন গৃহকর্মী এবং নিহত হয়েছে ৬ জন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)- এর তথ্য মতে, গত ১০ বছরে দেশে নির্যাতনে ৩৯৮ জন গৃহকর্মী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ২৯৯ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, গত ১০ বছরে রাজধানীতে কোনো শিশু গৃহকর্মী হত্যার বিচার হয়নি।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফের এক জরিপে দেখা গেছে, শিশু গৃহশ্রমিকরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। দেশে ৬ থেকে ১৭ বছর বয়সের শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় চার লাখ ২০ হাজার। রাজধানী ঢাকায় শিশু গৃহশ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জাতীয় শিশুশ্রম জরিপের ২০১০ সালের তথ্য অনুযায়ী দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী মোট শিশু শ্রমিক ১ লাখ ২৫ হাজার। এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই মেয়ে শিশু। আর মেয়ে শিশুদেরকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গৃহশ্রমিকের কাজে নিয়োজিত করা হয়। যদিও ১২ বছরের নিচে গৃহকর্মী নিয়োগ নিষিদ্ধ করেছে উচ্চ আদালত। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে গৃহকর্মে অল্পবয়সী শিশু নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ আচরণবিধি- ২০১০’এ তাদের কর্মঘণ্টা, মজুরি নির্ধারণ, ছুটির দিন নির্ধারণ, কাজের জন্য চুক্তি, মাতৃত্বকালীন ছুটি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫ (গ) অনুচ্ছেদে যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে, ৩৪ (১) অনুচ্ছেদে সকল প্রকার জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ২৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে-কেবল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী-পুরুষ বা জš§স্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। কিন্তু এতকিছু থাকার পরও গৃহশ্রমিকরা প্রতিনিয়তই নির্যাতিত ও বঞ্চিত হচ্ছে।
মানবাধিকার নেত্রী এডভোকেট এলিনা খান বলেন, গৃহশ্রমিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও কঠোর হতে হবে। হত্যা ঘটনাকে আÍহত্যা কিংবা অন্য কোনোভাবে কেউ ধামাচাপা দিতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। তিনি বলেন, গৃহশ্রমিকরাও মানুষ। এদেরকে নিজেদের পরিবারের সদস্যদের মতো ভাবতে হবে। তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

অনুমতি ছাড়া মহাসড়ক ও পাবলিক প্লেসের গাছ কাটা যাবে না
এফএনএস
সড়ক ও মহাসড়কের পাশের গাছ কাটা যাবে না। এ সড়ক সরকারি কিংবা বেসরকারি যাই হোক না কেন। রাস্তার পাশের গাছ কাটতে হলে সরকারের অনুমতি লাগবে। এর পাশাপাশি পাবলিক প্লেসের গাছও কাটা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কেউ এর ব্যত্যয় ঘটালে তাকে জেল-জরিমানা গুনতে হবে। এজন্য সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বৃ সংরণ আইন-২০১১ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এ খসড়া আইনে অনুমতি ছাড়া সরকারি গাছ কাটলে ৩ মাসের জেল ও জরিমানা শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার বনভূমি, সরকারি ভূমি বা পাবলিক প্লেসের যে কোনো গাছকে সংরণযোগ্য বৃ হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। তবে ুদ্র নৃগোষ্ঠি অধ্যুষিত বন ও পাহাড়ি এলাকার কোন বৃ সংরণযোগ্য করা হবে তা নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রথাগত নেতৃত্বের (হেডম্যান, কারবারি ইত্যাদি) মতামত গ্রহণ করবে সরকার। এর ফলে সরকারি বনভূমি বা বনভূমির বাইরে কোনো সংরণযোগ্য গাছ কাটতেই সরকারের অনুমতি নিতে হবে। তবে প্রয়োজনে সংরণযোগ্য কোনো গাছ কাটতে হলে অবশ্যই শর্তানুযায়ী ৩টি নতুন গাছের চারা লাগাতে হবে। তাছাড়া কোনো পাবলিক প্লেসের গাছ শুকিয়ে গেলে বা মারা গেলেও তা কাটা যাবে না। মূলত জীববৈচিত্র্য রার স্বার্থে বন্যপ্রাণী বা পাখির আবাসস্থল হিসেবে ওসব গাছ সংরণ করতে হবে। তবে গাছ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হলে সরকারের অনুমতি নিয়ে তা কাটা বা সরানো যাবে। সূত্র জানায়, খসড়া বৃ আইনে অবশ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তিগ্রস্ত বা পতিত গাছ কাটার েেত্র সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এেেত্র বন বিভাগ বা স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে জনস্বার্থে গাছ কাটা ও সরানো যাবে। কেউ বৃ আইন লঙ্ঘন করলে বা আইন লঙ্ঘনের সহায়তা করলে তাকে ৩ মাসের জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা পর্যস্ত জরিমানার শাস্তি ভোগ করতে হবে। প্রয়োজনে একসঙ্গে জেল ও জরিমানা উভয় দণ্ডও হতে পারে। পাশাপাশি বৃ সংরণ আইনের অধীনে মতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা এ আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করে কারোর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করলে ওই কর্মকর্তাকেও শাস্তি পেতে হবে। শাস্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ২ মাস জেল বা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। তাছাড়া বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা অথচা তার কাছ থেকে মতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি বা ডেপুটি কমিশনার বা তার কাছ থেকে মতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত এ আইনের অধীনে সংঘটিত কোনো অপরাধ বিচারের জন্য গ্রহণ করবে না। সূত্র আরো জানায়, মূলত দেশের বনজসম্পদ রার স্বার্থেই সরকার জাতীয় বননীতি ঘোষণা করেছে। ওই নীতিতে বনভূমি বনায়ন ছাড়া ভিন্ন কাজে ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এমনকি দেশের জীববৈচিত্র্য রার্থে ১৯৮৯ সাল থেকে প্রাকৃতিক বনের গাছ আহরণও বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু বৃ সংরণের জন্য কোনো আইন না থাকায় অবাধেই চলছে গাছ কাটা। এ প্রেেিত সরকার বৃ সংরণ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বৃ সংরণ আইন-২০১১ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করে। মন্ত্রিপরিষদের সভায় খসড়া আইনটির কতিপয় সংশোধন, সংযোজনসহ নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়। বর্তমানে বৃ সংরনের খসড়া আইনটি মন্ত্রিপরিষদের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপোয় আছে। খুব শিগগিরই মন্ত্রিপরিষদ এ খসড়া আইনের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে বলেই সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
টাকার অভাবে মডেল হাই স্কুল কার্যক্রম স্থগিত
এফএনএস

টাকার অভাবে স্থগিত হয়ে গেছে তিন শতাধিক মডেল হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠার কাজ। সরকার টাকা দিতে না পারার কারণে শিা খাতের এ প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা হয়েছে। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়বিহীন ৩০৬টি উপজেলায় এসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে অর্থাভাবে শিা খাতের এ প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা হলেও নতুন করে টাকা পাওয়ার আশ্বাস পেলে প্রকল্পটি চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, উপজেলা পর্যায়ে একটি করে পুরাতন বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলকে মডেল স্কুলে রূপান্তরিত করতে গত ২০১০ সালের আগস্ট মাসে শিা মন্ত্রণালয় প্রায় ৪৬৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়। গত এক বছরে ওই প্রকল্পের অধীনে ১শ’টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে মডেল বিদ্যালয়ে রূপান্তরের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ইতিমধ্যে ওসব স্কুলের কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিতে না পারার কারণে এখন ওসব স্কুলের ভবন ও অন্যান্য কাজ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই ১শ’টি স্কুলকে মডেল বিদ্যালয়ে রূপান্তরের যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন সরকার তা দিতে পারেনি। এ প্রেেিত বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে মডেল স্কুল রূপান্তর প্রকল্পের কাজ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ রাখা হয়েছে নতুন করে দরপত্র আহ্বানও। তবে টাকা পাওয়া গেলে নতুন দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হবে বলেই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, সরকারি বিদ্যালয়বিহীন ৩০৬টি নির্বাচিত উপজেলায় বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে মডেল বিদ্যালয়ে রূপান্তর প্রকল্পটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ পরিস্থিতিতে যাচাই না করে নতুন করে কোনো দরপত্র আহ্বান না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় মডেল বিদ্যালয় নির্বাচনের বিরুদ্ধে ৩টি বিদ্যালয়ের রিট ও মামলা চলমান এবং এ বিষয়ে সাময়িক স্থগিতাদেশও বিদ্যমান। এ অবস্থায় প্রকল্প সংশোধন না করে নতুন করে বিদ্যালয় নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান বা অন্য কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ এখনো অব্যাহত আছে। কিন্তু শিা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রকল্পের কিছু কাজ পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, প্রতিটি মডেল হাই স্কুলে ৫ লাখ টাকার আসবাবপত্র দেয়ার কথা ছিল। বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৯ লাখ টাকা করা হয়েছে। একই সাথে দেশের ৯টি শিা অঞ্চলে ৯টি পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ রিসোর্স সেন্টারও গড়ে তোলা হবে। এজন্য প্রকল্পের প্রথমপর্যায়ের কাজ স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক একেএম রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়বিহীন ৩০৬টি উপজেলার মাধ্যমিক স্কুল উন্নয়ন প্রকল্পটি বাতিল হচ্ছে না, রিভিউ হচ্ছে। তাতে স্কুলের সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে। আগে যেখানে ৩০৬টি উপজেলায় মডেল হাই স্কুল গড়ার পরিকল্পনা ছিল এখন নতুন আরো ৩টি উপজেলা তাতে যুক্ত হয়েছে। তাছাড়া প্রকল্প গ্রহণের সময় বাদ পড়া ২টি উপজেলাকেও চলমান প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত না করায় এগুলোকেও সম্পৃক্ত করা হবে। একই সাথে বর্তমানে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত একটি উপজেলা বাদ পড়বে। সেটি হচ্ছে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলা। এ উপজেলাটি বাদ পড়ার কারণ হচ্ছে সেখানে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
সন্ত্রাসের রাজনীতির দিন শেষ!
মুস্তাফিজুর রহমান
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সন্ত্রাস-দুর্নীতি-পেশিশক্তি আর মাফিয়া-গডফাদার ভিত্তিক রাজনীতির দিন শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বহুল প্রতিতি ও আলোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নসিক) নির্বাচন বিশ্লেষন করে তারা এমন মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, জনগণ এ নির্বাচনের মাধ্যমে কিন ইমেজের ভাল মানুষের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। মানুষ এখন আর সন্ত্রাসী কিংবা নেতিবাচক ভাবমূর্তি সম্পন্ন নেতাদের পছন্দ করেন না। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৎ-যোগ্য ও কিন ইমেজের নেতাদের মনোনয়ন না দিলে ভরাডুবি হবেÑ এমন বার্তাই দিয়েছেন ভোটাররা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের মানুষ সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবে, শুধু দলীয় মার্কা থাকলেই এখন আর নির্বাচনে জয়লাভ করা যাবে না। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে এটাই হল প্রধান শিা। বড় দুই দলের জন্য নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন এক ধরনের সতর্কবার্তা বলে উল্লেখ করে কেউ কেউ জানান, জনগণ এবার আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছে। সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে লাল কার্ড দেখাতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানাতে চাওয়া হলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক বলেন, নসিক নির্বাচন দুই বড় দলের জন্য নতুন একটা বার্তা দিয়ে গেছে। একই সাথে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিজয় প্রমাণ করেছে কোন দলকে ভোট দেয়নি জনগণ। তারা ভোট দিয়েছে সৎ, যোগ্য এবং জনগণকে সেবা দিতে পারে এমন ব্যক্তিকেই। আগামীতে বড় দুই দলের মার্কা থাকলেই কেউ নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবে না। বিজয়ী হতে হলে প্রার্থীর সত্যিকার ইমেজ থাকতে হবে। তিনি বলেন, সত্যিকারভাবে সৎ ইমেজ থাকলে কোন দলের প্রার্থী না হলেও নির্বাচনে জনগণের রায় পান, এখানে সেটাই প্রমাণ হলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার দাবি করে তিনি আরো বলেন, একটা নির্বাচন ভালো করা যায়। কিন্তু জাতীয় সংসদের তিনশ’ আসনের নির্বাচন ভালো করা নির্বাচন কমিশনের পে সম্ভব নয়। এর জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন।
এদিকে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনে হয়, একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি যিনি জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন তিনিই নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধারা ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনগুলোতে চলতে থাকলে রাজনীতিতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আমরা এখনও জানি না, যারা ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তারা কেমন। তাদের অনেকের শিাগত যোগ্যতা কম, অনেকের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা আছে এবং অনেকের কাজের অভিজ্ঞতাও কম। এই বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শুধু মেয়র একা সব চালাতে পারবেন না। এখানে কাউন্সিলরদেরও ভূমিকা আছে। মেয়র সফল হতে হলে কাউন্সিলরদের জনসেবামূলক থাকতে হবে। তা না হলে সমস্যা হবে। তিনি আরো বলেন, এছাড়া এবাবের নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা কারা কত টাকা খরচ করেছেন, তাদের টাকার উৎস কি ছিল সেটাও জানা দরকার আছে। সুষ্ঠু রাজনীতি ও নির্বাচন চাইলে কালো টাকা ও সন্ত্রাসকে রাজনীতি থেকে পরিহার করতে হবে। এসব বিষয়ে সার্বিক বিশ্লেষণ হওয়া দরকার।
দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের মাধ্যমে দুটি মেসেজ পাওয়া যায়। তা হল, নির্বাচন কমিশন চাইলে মানুষ নির্বিঘেœ ভোট দিতে যেতে পারে। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ন্যায়ের বিপে সন্ত্রাসবাদ টিকতে পারে না। অর্থাৎ এই নির্বাচনে জনতার জয় হয়েছে। আর সন্ত্রাসবাদকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ ভোট দিতে গেছে। দল-মত বিবেচনা না করে জনগণ যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনের কারণেই সেটা সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে। তিনি আরও বলেন, জনগণ সব সময়ই সন্ত্রাসবাদের বিপ।ে কিন্তু নির্বাচন সঠিক না হলে জনরায়ের প্রতিফলন মানুষের সামনে আসে না। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তেমনটি ঘটেনি।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, নেতারা ভুল করলেও জনগণ কখনও ভুল করে না। জনগণ সঠিক রায়ই দেয়। নসিক নির্বাচনে আবারো সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে নিরপে নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃংখলা রাকারী বাহিনীর দায়িত্ব অনেক বেশি। পাশাপাশি সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হলে নির্বাচন সুষ্ঠু করা অনেকটা সহজ হয়। উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তাই হয়। কিন্তু আমাদের মতো নব্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শামীম ওসমান ও তাহেরের মতো লোকদের মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সে রকম সিস্টেম নেই। তাই সৎ ও যোগ্য লোকেরা মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন। নারায়ণগঞ্জের মতো একটি ছোট নির্বাচনে জনগণ তাদের সঠিক রায় দিয়ে প্রমাণ করেছে, তারা সৎ ও যোগ্য প্রার্থীর পে রয়েছে। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়টি ভাবতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
পান্তরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের মতে, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন দেশের বড় দুটি দলকে একটি নতুন বার্তা দিয়েছে, তা হল বড় দুটি দল ভুল করলেও জনগণ তাদের ছেড়ে দেবে না। তার মতে, তিনটি বিষয় এ নির্বাচন থেকে শিণীয়। প্রথমত, একদলীয় প্রার্থীদের নিয়ে সোভিয়েত স্টাইলের নির্বাচন কখনোই গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক নয় এবং তা বর্তমান সরকার অথবা নির্বাচন কমিশন কারও জন্যই সফলতা বয়ে আনবে না। দ্বিতীয়ত, যত ওপর থেকেই অন্যায় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হোক না কেন, গণতন্ত্রকামী জনগণ অন্যায় কোন সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। তৃতীয়ত, এই নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে বিএনপি আওয়ামী লীগকে এই সতর্কবাণী দিয়েছে যে, আগামীতে কোন দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।
এছাড়াও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় পরিচয় না দেখে সততা ও যোগ্যতাকে বেশি মূল্যায়ন করেছে ভোটাররা। বড় দলগুলো যদি ভবিষ্যৎ নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেয়, তাহলে তাদের ভরাডুবি হবে। এখন জনগণও দলীয় মার্কার লোককে ভোট দেবে নাÑ এটা প্রমাণ হয়ে গেছে। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহর মতে, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনী ফলাফল পর্যালোচনা করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশের বড় দুটি দলের প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়ন দেয়া উচিত। তিনি বলেন, জনমনে অপরিচ্ছন্ন, দুর্নীতিবাজ বা সন্ত্রাসী হিসেবে ইমেজ রয়েছে এমন নেতাদের মনোনয়ন দেয়া তাদের জন্য ঠিক হবে না। যতদূর সম্ভব পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতাদের নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে হবে। এ নির্বাচন আগামী জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলেরও ইঙ্গিত বহন করে। তাই সরকারি দলের জন্য এই ফলাফল একটি বিশেষ বার্তা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ঈদে এবারও অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে লঞ্চযাত্রীদের
মুস্তাফিজুর রহমান
পবিত্র ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষদের এবারও বরাবরের মতোই অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে লঞ্চ যাত্রীদের। সম্প্রতি এক বৈঠকে লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়ার এবং যাত্রীদের কাছ থেকে তুলনামূলক কম ভাড়া আদায়ের অঙ্গীকার করেছিলেন মালিক সমিতির কর্মকর্তারা। এর পরও সেই অঙ্গিকারের সুফল পাচ্ছে না ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা; বরং বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগই পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে কয়েকটি লঞ্চ ঘুরে দণিাঞ্চলের কয়েকজন যাত্রীর সাথে আলাপ করে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রসঙ্গত পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও লঞ্চ মালিক সমিতির বৈঠকে মালিকেরা অঙ্গীকার করেছিলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হবে না; বরং ডেকের যাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকা করে কম ভাড়া নেয়া হবে। এছাড়া ছাদে যাত্রী না নেয়ার কর্তৃপরে নির্দেশ মানা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঈদুল ফিতরের আগে হাইকোর্ট এ বিষয়ে নির্দেশ দিলেও ওই সময়ও ছাদে যাত্রী বহন করা হয়েছিল। আবার চলাচলের অযোগ্য কিছু লঞ্চকে ঘরমুখী যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে ডেকের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০ টাকা কম তো নয়ই বরং নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেয়ার অভিযোগ করেন পটুয়াখালীগামী এমভি সৈকতের যাত্রী রহিমা বেগম। গতকাল তিনি অভিযোগ করে বলেন, আগে ডেকের সর্বোচ্চ ভাড়া ১৫০ টাকা নেয়া হলেও এখন নেয়া হয়েছে ২০০ টাকা। মডার্ন সানের যাত্রী কুদ্দুস মিয়া বলেন, গত সপ্তাহে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসার সময় ডেকের ভাড়া নিয়েছিল ১৫০ টাকা। কিন্তু এখন এ লঞ্চের কর্মচারীরা তার কাছে ২১০ টাকা ভাড়া দাবি করেছেন। তবে ওই দুটি লঞ্চ কর্তৃপ যাত্রীদের অভিযোগ সঠিক নয় বলেও জানান। কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন, বরিশালগামী এম ভি সাগরের ডেকে বসার আগেই যাত্রীদের কাছে ২১০ টাকা ভাড়া চাওয়া হয়, যা আগের চেয়ে ৬০ টাকা বেশি এবং এর বিপরীতে কোনো টিকিটও দেয়া হচ্ছে না।
পান্তরে সদরঘাট টার্মিনালে বিআইডব্লিউটিএর পর্যবেণ সেল সূত্রে জানা যায়, সাধারণ সময়ে বৃহস্পতি ও শুক্রবার সদরঘাট থেকে ১১০টি লঞ্চে ৭০-৭৫ হাজার যাত্রী নিয়মিত চলাচল করে। কিন্তু ঈদ উপলে বিভিন্ন লঞ্চের চলাচল বা ট্রিপ বাড়ানো হয়। ঈদের আগের কয়েক দিনে সদরঘাট থেকে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লাখ যাত্রী চলাচল করে। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, অনেক যাত্রীর প্রবণতা হচ্ছে, যেভাবেই হোক গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে। তাই ঈদের দুই-তিন দিন আগে অতিরিক্ত যাত্রী ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে ঈদকে সামনে রেখে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে নিয়মিত লঞ্চগুলোর সঙ্গে যোগ হয়েছে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চও। এসব লঞ্চে ঝালাই ও রং করা হয়েছিল ঈদুল ফিতরের আগে। নিয়মিত চলাচলকারী বেশির ভাগ লঞ্চেও প্রয়োজনীয়সংখ্যক জীবনরাকারী সরঞ্জাম ও আগুন নেভানোরও ব্যবস্থা নেই। যোগাযোগ করা হলে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, চলাচলের অযোগ্য বা ডি ক্যাটাগরির লঞ্চগুলোর ৭০ শতাংশই এখন আর নেই। অবশ্য কিছু শর্ত পূরণ করে বাকি ৩০ শতাংশ চলাচল করছে বলেও তিনি স্বীকার করেন।
জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে হুহু করে
অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতার আশংকা বিশেষজ্ঞদের
মো. রেজাউর রহিম
বিভিন্নমুখী চাপে দেশের অর্থনীতির বেহাল অবস্থা চলছে। এছাড়া মারাÍক ঝুঁকির মুখেও রয়েছে অর্থনীতি। ফলে দিন দিন সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। এ সংকট কোনোভাবেই সামাল দিতে পারছে না সরকার। ভর্তূকির চাপ সামলাতে জ্বালানি তেল গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে কৃষি ও শিল্প- সব ধরনের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। পণ্যমূল্যের ক্রম উর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস। সাধারণ মানুষের আয় না বাড়লেও জীবনযাত্রার ব্যায় বাড়ছে হু হু করে। মূল্যস্ফীতির যাতাকলে পিষ্ঠ হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। গত সেপ্টেম্বর মাস শেষে মুদাস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৯। এদিকে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। আর অন্যদিকে ৩০ লাখ বিনিয়োগকারীর হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগকৃত পুঁজিবাজারে গত বছরের নভেম্বর শুরু হওয়া অস্থিরতা এখনও অব্যাহত রয়েছে ।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র থেকে জানা গেছে, অর্থের অভাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ যথাসময়ে পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থনীতির নানা সংকটের সঙ্গে যোগ হয়েছে পদ্মা সেতুর অর্থায়নের সংকট। যা অর্থনীতির অন্য সমস্যাগুলোকে জটিল করে তুলছে। কেননা পদ্মা সেতুর কাজে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় দাতা সংস্থাগুলো শুধু এ প্রকল্প থেকেই মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। অন্য যেসব উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা দেওয়ার কথা তাও অনেকক্ষেত্রে স্থগিত রেখেছে। উল্লেখ্য, দাতা সংস্থাগুলোর প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট সহায়তা দেওয়ার কথা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ নিয়েও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। দাতারা এখন প্রতিশ্র“ত অর্থ ছাড় করছে না। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পসহ বাজেট বাস্তবায়নে সরকারকে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যাংক ঋণ নিয়েছে সরকার। যা মূল্যস্ফীতি আরো বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) কাঁটছাট ও অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আনতে পারে। জ্বালানির দামবৃদ্ধির ফলে জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতির চাপ দীর্ঘায়িত হওয়ারও আশঙ্কা করছেন তারা। অর্থনীতির এ সংকট দূর করতে  দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প উদ্ভাবনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
 জীবনযাত্রা ব্যয় বাড়ছে: পণ্যমূল্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধিতে মানুষের জীবনযাত্রর ব্যয় বাড়ছে প্রতিদিন বাড়ছে। একটি বেসরকারি সংগঠনের জরিপের তথ্যমতে, বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম যতটা বেড়েছে, বাংলাদেশে বেড়েছে তার চেয়ে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি। নিম্ন আয়ের মানুষের উপার্জনের ৭০ ভাগই এখন চলে যাচ্ছে খাদ্য ক্রয়ে। গত ১ বছরে দেশে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৪২ শতাংশ আর পাম তেলের ৩৩ শতাংশ। অথচ অন্তর্জাতিক বাজারে এগুলোর দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৩৩ ও ২০ শতাংশ। ইউরোপ ও আমেরিকায় চিনির দাম বেড়েছে ১৪ ও ৮ শতাংশ আর বাংলাদেশে বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। ফলে বাংলদেশের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে অনেক গুণ। বাড়ছে ব্যাংক ঋণ: নগদ টাকার চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন ১০৫ কোটি টাকারও বেশি ব্যাংকঋণ নিচ্ছে সরকার। বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যাচ্ছে। এতে পণ্যের দাম লাগানহীনভাবে বাড়ছে। ফলে মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারের এমন বেপরোয়া ব্যাংকঋণ গ্রহণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে অর্থমন্ত্রণালয়ের ক্যাশ এ্যান্ড ডেবট ম্যানেজমেন্ট টেকনিক্যাল কমিটি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ৬৭ দিনে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৭ হাজার ১০১ কোটি ৪২ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৩ হাজার ৭০৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর বড় অংশ নতুন নোট ছেপে সরবরাহ করা হয়েছে। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে নিয়েছে ৩ হাজার ২২২ কোটি ২১ লাখ টাকা।  সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ হাজার ৬৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যা ৩০ জুনের তুলনায় ৬ হাজার ৯৩১ কোটি ৯ লাখ টাকা বেশি। ২০১১ সালের জুন শেষে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। মূল্যস্ফীতি: উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে নিু ও নিুবিত্তের আর্থিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের। দিশেহারা হয়ে এখন সঞ্চয় ভেঙ্গে জীবন ধারণের আপ্রাণ চেষ্টা করছে মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির সর্বশেষ হিসাবে সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগের মাস জুলাইয়ে ছিল ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অন্যদিকে আগস্ট শেষে বার্ষিক গড় হিসেবে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ যা জুলাইতে ছিল ৯ দশমিক ১১ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভুত পণ্য ও সেবার দামও অনেক বেড়ে গেছে, যা সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে সহায়তা করেছে। এছাড়া আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা মনে করছে ব্যাংক থেকে সরকারের বড় অঙ্কের ঋণ গ্রহণও মূল্যস্ফীতি বাড়চ্ছে  ।
অর্থসংকটে এডিপি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত: অর্থসংকটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বৈদেশিক সহায়তা ও দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিশ্র“ত ঋণের অর্থ না পাওয়ায় অর্থের যোগান মেটাতে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের এডিপি বাস্তবায়ন দশমিক ৯০ শতাংশের উপরে বলে দাবি করছে পরিকল্পনা কমিশন।
লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা: ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমে যাওয়ার আমদানি ব্যয় বাড়ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ বাড়ছে। অন্যদিকে রেমিটেন্স প্রবাহেও নিুগতি শুরু হয়েছে। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৬৯ টাকা ৪৯ পয়সা। বর্তমানে তা ৭৫ টাকা ৫৫ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। ফলে বৈদেশিক লেনদেনেও বিরাজ করছে ভারসাম্যহীনতা ।
অর্থনীতির নেতিবাচক এ অবস্থা প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বাংলাদেশ সময়’কে বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্য প্রায় সারা বছরই বেড়েছে। এ অবস্থায় ব্যয় সংকোচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারের উচিত অতিরিক্ত ঋণ না নিয়ে ব্যয় সংকোচন করা। অন্যথায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমদ বলেন, ব্যাংক থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নেওয়া ভালো নয়। এতে সমষ্টিক অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ঝুঁকি থাকলেও সার্বিকভাবে অর্থনীতির অবস্থা ভালো। গত বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
রাজধানীতে তীব্র পানি সংকট
নিজস্ব প্রতিবেদক
ওয়াসার পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের অভাবে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে রাজধানীবাসী। দৈনিক স্বল্প সময়ের জন্য পানি দেয়া হলেও তা পর্যাপ্তভাবে ব্যবহার করা যায় না। অথচ রাজধানীজুড়ে রয়েছে অবৈধ সংযোগের ছড়াছড়ি। বকেয়া আদায়ে মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও অবৈধ সংযোগ বন্ধে ওয়াসা একেবারে নির্বিকার। স্বয়ং ওয়াসার কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধ সংযোগ দিয়ে পকেট ভারী করছেন। বিভিন্ন কারখানা ও বস্তিগুলোই এ ব্যবসার মূল কেন্দ্রবিন্দু। এর ফলে নগরীর পানি সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করছে। অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ।
জানা যায়, রাজধানীর লালবাগের ইসলামবাগ ও বিভিন্ন বস্তিতে রয়েছে অসংখ্য অবৈধ সংযোগ। শুধুমাত্র ইসলামবাগের প্লাস্টিক কারখানায় রয়েছে শতাধিক পানির অবৈধ সংযোগ। এসব কারখানার অধিকাংশেরই নেই কোনো হোল্ডিং নম্বর বা সাইনবোর্ড। একই বাসার বিভিন্ন তলায় গড়ে উঠেছে একাধিক কারখানা। মাস শেষে ওই বাড়ির মিটারের হিসেবে এক-দেড় হাজার টাকা বিল দেখানো হয়। অথচ জানা গেছে, কোনো বিলের রশিদ ছাড়াই কারখানা ভেদে নেওয়া হচ্ছে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা। লালবাগের কতিপয় ব্যক্তি জানান, বৈধভাবে পানি নিলে মাসে অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিল দিতে হয়। তাই ওয়াসার লোকদের ম্যানেজ করে অবৈধ সংযোগ দিয়ে কারখানাগুলো চলছে। এতে এলাকায় পানি সংকট লেগেই থাকে। পানি সংকটের অজুহাতে কারখানাগুলোতে ওয়াসা বৈধ সংযোগ দিতে চায় না। তাই বাধ্য হয়ে অবৈধ সংযোগ দিয়ে চালাতে হয়। অপরদিকে রাজধানীর বস্তিগুলোতেও চলছে অবৈধ পানির রমরমা ব্যবসা। গুলশানের সাততলা ও কড়াইল বস্তিতে কোনো বৈধ সংযোগ না থাকলেও পানি পাওয়া যায় ২৪ ঘণ্টাই। গুলশান লেকের মধ্যে সাপের মতো আঁকাবাঁকা প্রায় অর্ধশতাধিক প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে এ সংযোগ। কিছু পাইপ ইট বেঁধে লেকের পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ পাইপগুলোর সংযোগ স্থলের পাশেই রয়েছে পুলিশ বক্স। পুলিশ বলছে, বিষয়টি ওয়াসার। ওয়াসা বলছে, মানবিক কারণে বস্তিগুলোর সংযোগ কাটা হচ্ছে না। তাদের কাছ থেকে কোনো বিলও নেওয়া হয় না। কিন্তু বস্তিবাসী জানান, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য আলাদা টাকা দিতে হয়। পানির জন্য আগে মাসে ১২০ টাকা দিলেও এখন দিতে হয় ১৫০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি গ্যাসের চুলার জন্য ৫০০ ও বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ১২০ টাকা দিতে হয়। এই টাকা কয়েকজন যুবক বস্তি থেকে সংগ্রহ করে। পরে স্থানীয় নেতার হাত হয়ে ওয়াসা, তিতাস ও ডেসকোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে যায়।
কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে ডিসিসি’র আগাম ব্যবস্থা
৮ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল
সিদ্দিকুর রহমান
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আয্হায় যাতে ঢাকা মহানগরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা তথা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম কোনোভাবে বিঘিœত না হয় এবং পরিবেশ সম্মতভাবে যাতে বর্জ্য অপসারণ করা যায় সে লক্ষ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর জন্য ১৩৭টি খোলা ট্রাক, কোরবানির হাটের জন্য ৬টি পে-লোডার, ৪টি টায়ার ডোজার, ২০টি ডাম্পার, ৫টি ট্রেইলর, ২টি প্রাইম মোভার ও ৮টি পানির গাড়ি নিয়োজিত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যবস্থাপনা ঈদ পরবর্তী তৃতীয় দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রটি থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসা ও ফায়ার সার্ভিস পানিবাহী গাড়ি প্রদান করে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কাজে সহায়তা করবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজে যাতে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হয় তার জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৮ হাজার ক্লিনারসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঈদুল আযহার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঈদুল আয্হায় জবাইকৃত পশুর বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে অপসারণের লক্ষ্যে কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসচেতনতার জন্য মাইকিংসহ জনসচেতনতামূলক স্টিকার ও লিফলেট বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রমে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ও সহযোগিতা করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি সবক’টি প্রাইভেট চ্যানেলে যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তথ্যসম্বলিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও স্পেশাল বুলেটিন প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তার জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সকল বেসরকারি চ্যানেলসমূহকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কোরবানিকৃত পশুর উচ্ছ্বিষ্টাংশ সুষ্ঠুভাবে অপসারণের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্য সকল সরকারি বেসরকারি সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি  পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এ এন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এরই মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 
সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে কোরবানিকৃত পশুর উচ্ছ্বিষ্টাংশ পরিবেশবান্ধব উপায়ে অপসারণ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সারা দেশে জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে এ লিফলেট বিতরণ করা হবে। এ বিষয়ে প্রত্যেক জেলায় জেলা প্রশাসকগণ জেলা তথ্য অফিসার, উপ-পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও জনপ্রতিনিধিসহ অন্যান্য দপ্তরের সমন্বয়ে সভা আয়োজন করবেন। জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে মাইকিং ও ডকুমেন্টারী প্রদর্শনের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করা হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে প্রত্যেক মসজিদের ইমাম পবিত্র ঈদ-উল্-আযহার পূর্বের জুম্মায় এবং ঈদ-উল্-আযহার খুৎবাতে বর্জ্য পরিবেশসম্মত উপায়ে অপসারণ বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করবেন। পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত লিফলেট সকল ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সরবরাহকৃত ফিচার তথ্য অধিদপ্তর সকল প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, দেড় কোটির বেশি লোক অধ্যুষিত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ১২ লাখের বেশি গবাদিপশু পবিত্র ঈদুল আযহায় কোরবানি দেয়া হবে বলে ধারণা করছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে কোরবানি দেয়া হবে ১০ লাখের মতো গরু। প্রায় একই সময় এত বিপুলসংখ্যক পশু কোরবানি হওয়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। কোরবানির পর ২ দিনের মতো সময় রাজধানীর বেশিরভাগ স্থানের পরিবেশ অনেকটা পুঁতিগন্ধযুক্ত হয়ে ওঠে। এ পরিবেশ যাতে সৃষ্টি না হয় তার জন্য এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
৬ লাখ প্রি-পেইড মিটার বসাবে তিতাস  
নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্যাসের অপচয় এবং বিল কারসাজি রোধে ছয় লাখের বেশি প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)। এর মধ্যে তিন লাখ তিতাস এবং বাকি তিন লাখ মিটার বসাতে অর্থ সহযোগিতা দেবে এডিবি। তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আজিজ খান বলেন, প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপনে নেওয়া একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। আশা করছি, প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হবে। এ প্রকল্পের সফলতা বিচেনায় অপর একটি প্রকল্পের আওতায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে আগামী বছরের মধ্যে আরো ৮ হাজার ৬০০ মিটার রাজধানীর গুলশান ও বনানীতে বসানো হবে। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের মধ্যে কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়নে আরো তিন লাখ মিটার বসানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে যা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আগামী মাসে (নভেম্বরে) বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে আরো তিন লাখ মিটার স্থাপনের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীসহ নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর ও কিশোরগঞ্জ এলাকায় টিজিটিডিসিএল গ্যাস সরবরাহ করে। বর্তমানে তিতাসের মোট গ্রাহক ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ২৯৭ জন। আজিজ খান বলেন, ইতোমধ্যে পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রি-প্রেইড মিটারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজধানীর লালামাটিয়া এবং মোহাম্মদপুরে পরীক্ষামূলকভাবে নেওয়া এই প্রকল্পের আওতায় চার হাজার ৫০০ মিটার স্থাপন করা হবে। ২০০৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ছয় কোটি ৭০ লাখ ৫১ হাজার ৬শ টাকা।
প্রি- প্রেইড মিটার প্রকল্পের ব্যবস্থাপক বাসুদেব সাহা বলেন, ২০০৯ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও চলতি বছরের মে মাসে প্রাথমিকভাবে মিটারের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের জন্য লালমাটিয়ায় ৫২ জন এবং মোহাম্মদপুরে ৫৪ জন মোট ১০৬ জন গ্রাহকের বাসায় পরীক্ষামূলকভাবে মিটার স্থাপন করা হয়। এরপর ২৭ জুন থেকে পুরোদমে উভয় এলাকায় কাজ মিটার বসানোর কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার মিটার স্থাপন করা হয়েছে এবং বাকি এক হাজার মিটার নভেম্বর মাসের মধ্যে বসানো হবে- এমন আশা করছেন তিনি। পরীক্ষমূলকভাবে এসব মিটার বসানো হওয়ায় মিটার বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো অর্থ নেওয়া হয়নি। প্রকল্পে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগ। এই বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক এম এম লুৎফুল কবীর বলেন, এটি একটি উন্নত ও ডিজিটাল পদ্ধতি। গ্যাস প্রাকৃতিক সম্পদ, তবে অফুরন্ত নয়- এই বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের গ্যাসের ব্যবহার করতে হবে। এ মিটার ব্যবহারের ফলে গ্যাসের অপচয় রোধের পাশাপশি বিল কারচুপি বন্ধ হবে। গ্যাসের অপচয় রোধ, বকেয়া বিলের জটিলতা নেই, প্রকৃত গ্যাস ব্যবহারের ভিত্তিতে গ্রাহকের বিল নির্ধারণ করা হবে। মিটার চালুর পর অগ্রিম ২০০ টাকা রিচার্জ অবস্থায় থাকবে, যাতে গ্রাহকের সংযোগ অবিচ্ছিন্ন থাকে। পরবর্তীতে কার্ড রিচার্জের সময় এ অর্থ কেটে নিয়ে সমন্বয় করা হবে। গ্রাহকের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে গ্যাস সরবরাহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এবং কার্ডে অর্থ রিচার্জের মাধ্যমে পুনরায় গ্যাস ব্যবহার শুরু করা যাবে। তবে অর্থ শেষ হওয়ার আগে ১০ ঘনমিটার গ্যাসের সমপরিমাণ টাকা (বর্তমান রেট ৫১.৬০ টাকা) থাকা অবস্থায় মিটার অ্যালার্ম দিবে এবং অর্থ শেষ হয়ে গেলে গ্যাস সরবরাহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে গ্রাহকহয়রানি এড়ানোর জন্য চার্জকৃত অর্থ শেষ হওয়ার পরও ২০ ঘনমিটার সমপরিমাণ অর্থ নেগেটিভ ব্যালেন্স হিসাবে মিটারে দেওয়া হবে। ব্যালেন্স শেষ হলে মিটারের পুশবাটন চাপ দিলে এ নেগেটিভ ব্যালেন্স ব্যবহƒত হতে থাকবে। তবে পরবর্তী রিচার্জের সময় তা সমন্বয় করে নেওয়া হবে। প্রি-পেইড মিটার রিচার্জ করার জন্য একটি স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে গ্রাহককে। এ কার্ডের মাধ্যমে সর্বনিš§ ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করা যাবে। শনিবার এবং ঈদসহ অন্যান্য ছুটিরদিনে জরুরি হিসেবে গ্রাহকরা কোম্পানির লালমাটিয়ার দপ্তর থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করতে পারবেন। এ ছাড়া মিটার ভাড়া হিসেবে প্রতি মাসে ৫০ টাকা দিতে হবে গ্রাহককে। 

ঈদে অতিরিক্ত লঞ্চ, ডাবল ট্রিপ ডেক শ্রেনীতে ১০ ভাগ কম ভাড়া
নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন ঈদ-উল-আযহার সময় অধিক যাত্রী যাতায়াতের সুবিধার্থে লঞ্চ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত লঞ্চের ব্যবস্থা করে বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদন সাপেক্ষে লঞ্চ পরিচালনা, লঞ্চে ডাবল ট্রিপের ব্যবস্থা করা হবে। নির্ধারিত  ভাড়ার অতিরিক নেয়া হবে না বরং দূরপাল্লার লঞ্চের (১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের) ডেক শ্রেনীর যাত্রীদের জন্য ১০ ভাগ ভাড়া কম নেয়া হবে। যাত্রী ও গাড়ি পারাপার দ্রুত করতে বিআইডব্লিউটিসি সকল ফেরি প্রস্তুত রাখবে।
গতকাল নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আসন্ন ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে লঞ্চ ও ফেরি সুষ্ঠুভাবে চলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত সভায় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । নৌপরিবহণ মন্ত্রী শাজাহান খান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সদরঘাট নৌ-টার্মিনালের ওপর চাপ কমাতে পোস্তগোলার নিকট শ্মশানঘাট এলাকায় আরো একটি নৌ-টার্মিনাল স্থাপন করা হবে। মাওয়াঘাটে লঞ্চযাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মাওয়া চৌরাস্তার কাছে লঞ্চঘাট সরিয়ে আনা হবে। কাওড়াকান্দিতে যানজট নিরসনে আরো একটি পার্কিং ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে।  যানজট এড়াতে ঈদের সময় ধলেশ্বরী সেতুর টোল আদায় দ্রুততর করতে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ ও লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় যাতে কোরবানীর গরুর হাট না বসে সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসকগণকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জনগণ ও যানবহনের চলাচলের সুবিধার্থে ঢাকার নয়াবাজারে গরুর হাট না বসানোর জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে অনুরোধ করা হবে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠনের মাধ্যমে সার্বিক বিষয়াদি নিবিড়ভাবে মনিটর করা হবে। এছাড়া পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, পাটুরিয়া-কাজিরহাট, মাওয়া-চরজানাজাত, মাওয়া-মঙ্গলমাঝি, চাঁদপুর-শরিয়তপুর, ভোলা-লক্ষ্মীপুর এবং লাহারহাট-ভেদুরিয়া রুটে সুষ্ঠু ও নির্বিঘœ নৌ-চলাচল নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফেরি সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে হবে। কোন ফেরি অচল হয়ে গেলে সার্ভিস অব্যাহত রাখার জন্য অতিরিক্ত ফেরি রির্জাভ রাখতে হবে। ফেরি ও নৌ-পথ সমূহের নাব্য সংরক্ষণসহ সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ফেরিঘাটসমূহে যাত্রী ও যানবহনের নিরাপদ ওঠা-নামার ব্যবস্থা করতে হবে। বিআইডব্লিউটিসি সকল ফেরি ও স্টীমার মেরামত করে চলাচল উপযোগী রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।  কোরবানীর পশু পারাপারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া  হবে।
পাশাপাশি মাওয়া-চরজানাজাত ফেরি রুটের দু’প্রান্তে বিআইডব্লিউটিসি’র দুটি রেকার এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের দু’প্রান্তে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দুটি রেকার সার্বক্ষণিক থাকবে। লঞ্চের অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো এবং ওভার লোডিং সম্পূর্ণরুপে বন্ধ রাখতে হবে। লঞ্চে পর্যাপ্ত সংখ্যক জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম, সচল অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতি ও উপকরণ রাখতে হবে। যাত্রীদের নিরাপদ উঠা নামার ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে লঞ্চসমূহে চওড়া সিঁড়ির ব্যবস্থা করতে হবে এবং সিঁড়িতে রেলিং এর ব্যবস্থা রাখতে হবে। সভায় আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সকল লঞ্চ পল্টুনে বার্দিং করতে হবে। নৌকায় করে যাত্রী উঠা-নামা করতে পারবে না। সদরঘাটসহ বিভিন্ন নদী বন্দরের বিশ্রামগার, টয়লেট ও টার্মিনাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। টার্মিনাল/ফেরিঘাটে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ ও ফেরি রুটের নাব্য সংকট নিরসনের জন্য বিআইডব্লিউটিএ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চ চাঁদপুর না থামিয়ে সরাসরি যাতায়াত এবং চাঁদপুর থেকে আলাদা লঞ্চ সরাসরি দক্ষিণাঞ্চলে চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যানজট এড়ানোর লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা ও পুলিশ প্রশাসন ফেরিঘাট থেকে অন্তত ২ কিলোমিটার দূরে ট্রাকসমূহকে অপেক্ষামান রাখার ব্যবস্থা নিবে। রাত্রে বালুবাহী কার্গো চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। কালোবাজারে টিকিট বিক্রয় বন্ধ করার লক্ষ্যে ভিজিল্যান্স টীমকে তৎপর থাকতে হবে। ঢাকা নদী বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ লঞ্চ ও বাস টার্মিনাল মোবাইল কোর্ট স্থাপন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগণ ও ডিজি শিপিং এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন। নিরাপদ, সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ ও আইনানুগ নৌযান চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভ্রাম্যমান আদালতসহ সকল নদী বন্দরে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের সক্রিয় এবং তৎপর থাকতে হবে। ফেরি টার্মিনাল ও নদী বন্দর টার্মিনালের আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স নিয়োগ করতে হবে। সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ ও আরিচা অভিমুখী রাস্তাগুলো যথাসম্ভব যানজট মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, পকেটমারদের তৎপরতা বন্ধের লক্ষ্যে টার্মিনাল সংযোগ সড়ক এবং টার্মিনালে সাদা পোষাকধারী পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। নদী সমূহের মূল নৌপথে মাছের জাল ফেলা বন্ধ করতে হবে। সকল জাল তুলে ফেলে নৌ-পথ সুগম করতে হবে। ঈদের পূর্ব থেকেই নৌ-সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি এবং বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তি পত্র পত্রিকা, রেডিওসহ সরকারি ও বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সদরঘাট ও ফতুল্লা লঞ্চঘাট সংলগ্ন নদীতে অয়েল ট্যাংকারসহ যে কোন নৌ-যান যেন এলোপাথাড়ি নোঙ্গর করতে না পারে সে জন্য পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় বিআইডব্লিউটিএ কার্যকর ব্যবস্থা নিবে। গরুর গাড়ির ওপর চাঁদাবাজি বন্ধের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিবে। দমকল বাহিনী ও বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী ইউনিটকে সতর্কাবস্থায় রাখতে হবে। ঢাকার বাইরের নদী বন্দর ও ফেরি টার্মিনালসমূহের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ঈদের আগে ও পরে নৌপথে ডাকাতি বন্ধ করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট থানাসহ কোষ্টগার্ড কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী নৌ-পথের লঞ্চের কেবিন বুকিং এর জন্য ১৪, পুরানা পল্টনে (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল  সংস্থার অস্থায়ী কার্যালয়ে) অফিস খুলেছে।  লঞ্চ মালিকগণ লঞ্চে ওঠার সিঁড়িতে প্রটেকশন স্থাপন করেছে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মান্নান হাওলাদার, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর ও কোস্টগার্ডের প্রধান, লঞ্চ মালিক সমিতি  এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারগণ উপস্থিত ছিলেন।
আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহত
বীজ বর্ধন খামার হচ্ছে দশমিনায়
এইচআর সাগর
একসময়ের শস্যভাণ্ডার উপকূলীয় বরিশালকে আবারো ফসলে সমৃদ্ধ করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এলক্ষ্যে দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে (বরিশাল ও পটুয়াখালী) বীজ বর্ধন খামার স্থাপন প্রকল্পের আওতায় দুইটি বৃহৎ বীজ বর্ধন (উৎপাদন) খামার গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার এ প্রকল্পে প্রথম দফায় পটুয়াখালীর দশমিনার চরাঞ্চলে ৪ হাজার একর জমিতে একটি খামার স্থাপন করা হবে। যেটি হবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বৃহৎ খামার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের অধিক ফলনশীল ও ভাল মানের বীজ সরবরাহ করা সম্ভব হবে কৃষকদের মাঝে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
একসময় শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত ছিল বরিশাল। কিন্তু বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা বৃদ্ধিসহ প্রাকৃতিক কারণে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন এ অঞ্চলটি চরম খাদ্য ঘাটতি এলাকায় পরিণত হয়েছে। ফসল চাষও অলাভজনক হয়ে পড়েছে। কৃষক কৃষি কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত জাতের ফসল চাষের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলকে সমৃদ্ধশালী করে শস্যভাণ্ডার হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করা হবে। এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলে বোরোর চাষ হয় বেশি। দক্ষিণাঞ্চলে তেমন বোরো চাষ হয় না। ফলে উত্তরাঞ্চল থেকে বোরো চাষ কমিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে স্থানান্তর করার জন্য সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষত্রে বীজ বর্ধন খামারটি কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে (বরিশাল ও পটুয়াখালী) বীজ বর্ধন খামার স্থাপন প্রকল্পটি গত ৩১ অক্টোবর প্রি-একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত ৩ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের অর্থ যোগান দেয়া হবে সরকারের তহবিল থেকে। একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হলেই প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএডিসির বীজ ও উদ্যান বিভাগের সদস্য পরিচালক মো. নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, সরকারের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন করতে সংস্থাটি ১০ বছর মেয়াদী মানসম্মত বীজ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসাবে দশমিনায় দেশের বৃহৎ বীজ উৎপাদন খামার স্থাপন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পটি বাস্তায়িত হলে উন্নত মানের বিভিন্ন ফসলের বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশে উন্নতমানের বীজ ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, ভাল বীজ উৎপাদন ও ব্যবহার করার কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে কৃষির একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। উচ্চ ফলনশীল ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু জাতের ভাল বীজ ও আধুনিক ফসল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করা সম্ভব।
বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, চরবাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চরবাঁশবাড়ীয়া, চর বোথাম, চর হায়দার, চর ফাতেমা, চর আজমাইন, চর হাদী, চর শাহজালাল, চর বোরহান এলাকায় মোট জমির পরিমাণ ৪ হাজার ২৭৮ একর। বন বিভাগ ও সিকস্তির জমি এ হিসাবের বাইরে। এরমধ্যে রেকর্ডিয় ও বন্দোবস্ত দেয়া জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৭১৯ একর। খাস জমির পরিমাণ ৫৫৯ একর। এ ৪ হাজার একর জমির ওপর গড়ে তোলা হবে বিএডিসির বীজ বর্ধন খামার। এরমধ্যে চারটি চরে (চর বোথাম, চর হায়দার, চর ফাতেমা, চর আজমাইন) ১ হাজার ৩৭৭ একর জমিতে প্রথম পর্যায়ে কাজ শুরু করা হবে। প্রাথমিকভাবে ১২শ’ ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করার করা হবে। তবে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ১১শ’ ৪৪ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তেঁতুলিয়া নদী ঘেরা চর এলাকাটি সমুদ্র উপকূল থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১ দশমিক ৫ মিটার উঁচু। ফলে বর্ষা মৌসুমে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ করে পরবর্তী মৌসুমে সারফেস ওয়াটার ইরিগেশন হিসেবে ফসল উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা যাবে।
সূত্রমতে, প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার মেট্টিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩ হাজার বর্গমিটার প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ২ হাজার মেট্টিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ২ হাজার বর্গ মিটার হিমাগার এবং দেড় হাজার বর্গ মিটার করে ২টি অফিস বিল্ডিং ও ৮শ’ বর্গমিটারের সানিং ফ্লোর নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় ৬শ’ কৃষক এবং দেড়শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাবিত খামারে রবি ও খরিপ মৌসুমে বোরো, আমন, হাইব্রিড ধান, আলু, গম, ভূট্টা, পাট, তিল, মুগ, মসুর, ছোলা, মাসকলাই, মটর, ফেলন, সরিষা, সয়াবিন, চিনাবাদাম ও সূর্যমুখী ফসলের সাড়ে ১১ হাজার মেট্টিক টন ভিত্তি বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। 
সূত্র জানায়, বিএডিসির উদ্যোগে ওই এলাকার মাটির গুণাগুণ (পুষ্টিমান) পরীক্ষা করেছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। এতে খামার স্থাপনের জন্য উপযোগী সব গুণাগুণ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। খামারীদের জন্য বসবাস উপযোগী আবাসন গড়ে তোলা হবে। এছাড়া খামার এলাকায় স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, সাইক্লোন সেল্টার ও মেডিকেল কেয়ার সেন্টারসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। চর বেষ্টিত এ খামার সংরক্ষণে এলাকায় বেড়িবাঁধ দেয়া হবে। এ চরে কোনো বিদ্যুৎ নেই। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে না। এর বিকল্প এখানে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে। এ খামার প্রকল্পটি বাস্তায়িত হলে স্থানীয় ৫-৬ হাজার কর্মী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। এদিকে এ বীজ বর্ধন খামার এলাকায় দরিদ্রদের জন্য একটি ব্যারাক হাউজ নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। খামারবাড়ি সংলগ্ন সুবিধাজনক স্থানে ব্যারাক হাউজ নির্মাণ করা হলে ছিন্নমূল ও ভূমিহীন পরিবারদের পুনর্বাসন করা যাবে। অন্যদিকে তাদের শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা যাবে।
উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএডিসির ৫ হাজার ৫৫৪ দশমিক ৫৪ একর আয়তনের ২৩টি বীজ উৎপাদন খামার রয়েছে। এসব খামারে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৪ হাজার ৪৫০ দশমিক ৪১ একর। খামারে ব্রিডার (মৌল) বীজ দিয়ে ভিত্তি বীজ উৎপাদন করা হয়ে থাকে। এ ভিত্তি বীজ দিয়ে পরবর্তীতে বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ চাষি, বেসরকারি পর্যায়ে উৎপাদক বা উৎপাদনকারী সংস্থার মাধ্যমে প্রত্যায়িত মানসম্মত বীজ উৎপাদন করে তা সাধারণ কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করা হয়। কিন্তু জাতীয় চাহিদার আলোকে এ বীজ উৎপাদন যথেষ্ট নয়। বিএডিসির বীজের চাহিদা বাড়লেও খামার কিংবা জমির পরিমাণ বাড়াতে বিগত দিনে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিএডিসি বর্তমানে ১২ শতাংশ বীজ সরবরাহ করছে। মহাপরিকল্পনায় ২০২১ সালে ২০ শতাংশ বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্য রয়েছে সংস্থাটির।
এ প্রসঙ্গে গলাচিপা-দশমিনা এলাকার সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেন, পশ্চাৎপদ জনপদ দশমিনায় বিএডসির বীজ বর্ধন খামার স্থাপন দক্ষিণাঞ্চলের বিশেষ করে বাংলাদেশের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে একসময়ের শস্যভাণ্ডার বরিশাল আবার কৃষিতে সমৃদ্ধ হবে।

উত্তরাঞ্চলের দরিদ্র ও দুস্থ নারীদের উন্নয়ন
বিশ্বব্যাংকের ২৯ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বিশেষ রেয়াতি সুদে ২৯ মিলিয়ন ডলারের (২১৭ কোটি টাকা)  ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গার কারণে আগত হত-দরিদ্র ও দুস্থ মহিলাদের কর্মসংস্থানের জন্য যারা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) অবস্থিত তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত, তাদের কর্মসংস্থান লাভে সহায়তা প্রদানে এ বিশেষ ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। এর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের  ১৮ হাজার মহিলা উপকৃত হবেন।  গতকাল শনিবার বিশ্বব্যাংক এ তথ্য জানায়।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ১০ বছর রেয়াতী সুবিধাসহ ৪০ বছরে পরিশোধের শর্তে এই ঋণ অনুমোদন করেছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্য দূরীকরণ  প্রকল্পের (নারী) অধীনে ৩টি ইপিজেড এলাকায় জীবন জীবিকা উন্নয়নে দক্ষতা প্রশিক্ষণ, অন্তর্বর্তীকালীন গৃহায়ন, কাউন্সিলিং এবং চাকরি বদলের সুযোগসহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের দরিদ্র  নারীরা বিভিন্ন সুবিধা পাবেন। রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী এবং লালমনিরহাট জেলার নারীরা এই সুবিধা পাবেন। এটি বিশ্ব ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে গৃহীত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম কর্মসূচি। বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি গোল্ডস্টেইন বলেছেন, বিকাশমান তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত ৩ মিলিয়ন (৩০ লাখ) শ্রমিকের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি নারী। এরা অধিকাংশ সময় অসহায়, অল্প বয়সী, দরিদ্র ও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অশিক্ষিত এবং অবিবাহিত। তিনি বলেন, নারী প্রকল্প অভ্যন্তরীণ অভিবাসন প্রক্রিয়াকে সহজ করবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র অঞ্চলের দুস্থ নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হবে। এদিকে, এ প্রকল্পের অধীনে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বিশেষ সচেতনা কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে এবং আগ্রহী প্রার্থী বাছাই করা হবে। বাছাইকৃত প্রার্থীদের ঢাকা, ঈশ্বরদী এবং কর্ণফুলী ইপিজেড এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়া হবে। এর সঙ্গে তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে ইপিজেড এলাকায় ডরমিটরি এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে এক সঙ্গে ৩০০ নারীর প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকবে। আর ডরমিটরিতে ৬০০ নারীর থাকার ব্যবস্থা হবে। তারা সেখানে ৬ মাস অবস্থান করতে পারবেন। এরপর আরো ৩ মাস গৃহায়ন খুঁজে পাওয়ার জন্য বাড়তি সময় পাবেন এসব দুস্থ মহিলারা।

ডিএমপি’কে জালটাকা সনাক্তকরণ মেশিন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-কে জাল টাকা সনাক্তকরণ মেশিন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডিএমপি এসব মেশিন ঢাকার ১৫টি বড় পশুর হাটে জাল টাকা সনাক্ত করতে ব্যবহার করবে। এছাড়া ঢাকার বাইরে সারা দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখা অফিসগুলোকে আরও ৬৫টি মেশিন দেয়া হবে।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক দাশগুপ্ত অসীম কুমার আনুষ্ঠানিকভাবে মেশিনগুলো ডিএমপি’র গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মশিউর রহমানের কাছে হস্তান্তর করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখার মহা-ব্যবস্থাপক আব্দুর রহিম, কারেন্সি বিভাগের মহা-ব্যবস্থাপক (কারেন্সি অফিসার) সাইফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দাশগুপ্ত অসীম কুমার বলেন, সম্প্রতি ঈদ এবং নতুন টাকা সরবরাহকে কেন্দ্র করে জাল টাকা তৈরি এবং তার সঙ্গে জড়িত চক্র বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, এ চক্রকে প্রতিহত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো তৎপর রয়েছে। এর অংশ হিসেবে আমরা ডিএমপিকে সহযোগিতা করতে ১৫টি মেশিন দিচ্ছি, যা পশুর হাটগুলোতে ব্যবহার করা হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সবগুলো ব্যাংককে জাল টাকার বিষয়ে সতর্ক থাকতে এবং সাধারণকে সহযোগিতা করতে নির্দেশনা দিয়েছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ হচ্ছে- মুদ্রা সরবরাহের পাশাপাশি যাতে মানুষের আস্থা থাকে তা নিশ্চিত করা। মুদ্রার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হলে তা  দেশের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ ক্ষতি হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাই জাল টাকার বাজারকে নষ্ট করে দিতে হবে। ডিএমপি’র গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মশিউর রহমান জানান, ডিএমপি’র গোয়েন্দা শাখা সবসময় জাল টাকার ব্যাপারে সতর্ক। গত কয়েকদিনে ৭টি জাল টাকার কারখানা সনাক্ত করে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে সাধারণভাবে জাল টাকা সনাক্ত করা সময়সাপেক্ষ। তাই এ ধরনের মেশিন সরবরাহের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। শিগগির এসব মেশিন নিয়ে পশুর হাটে কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুট জোয়ার ভাটার উপর নির্ভরশীল
ইসমাইল হোসেন নেগাবান
বরিশালে লঞ্চঘাটের নাব্যতা সংকট দূর হলেও বামনির চড়ে এখনো রয়েছে মাত্র ৭ ফুট গভীর পানি। যার ফলে ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ ও জাহাজ চলাচল এখনো জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করছে। আর এজন্য যাত্রীদের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গতকাল শনিবার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চসহ অন্যান্য মালবাহী কার্গো যাতায়াতের ব্যাপক বিঘœ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে এই সমস্যা আরো প্রকট হয়ে দেখা দেয়। শুধু তাই নয় নাব্যতা সংকটের কারণে কির্তনখোলা নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় বরিশাল লঞ্চঘাট পর্যন্ত লঞ্চ ভিড়তে পাড়ে না। যার ফলে চলতি মাসের প্রথম দিকে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চগুলো নির্ধারিত সময়ে ঘাটে ভিড়তে ও ঘাট ছাড়তে পারেনি। জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে চলতে হয়েছে এসব লঞ্চগুলোকে। এর প্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর থেকে লঞ্চঘাট এলাকায় নদী খননের কাজ শুরু হয়। কিন্তু কাজ শুরুর পরপরই কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। একদিকে অভিযোগ ওঠে সঠিকভাবে মাটিকাটা হচ্ছে না অপরদিকে ড্রেজিং করা মাটি নদীতেই ফেলার কারণে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। তবে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান দাবি করেন যেখানে নদীর গভীরতা বেশি সেখানে ওই মাটি ফেলা হয়েছে। যার ফলে এতে ড্রেজিংকৃত এলাকায় কোন প্রভাব পরবে না। এদিকে গত ২৩ অক্টোবর নদী বন্দর এলাকায় প্রথম কিস্তির খনন কাজ শেষ হয়েছে। মোট ৮৭ হাজার ঘনমিটার মাটি কাটার কথা থাকলেও প্রথম পর্যায়ে ৪৯ হাজার ঘনমিটার মাটি কাটা হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তিতে অবশিষ্ট মাটি কাটা হবে। বিআইডব্লি¬উটিএ’র বন্দর কর্মকর্তা কাজী ওয়াকিল নেওয়াজ জানান, ড্রেজিং’র পূর্বে লঞ্চঘাট এলাকায় গভীরতা ছিলো মাত্র ৩ফুট। ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চগুলো চলাচলের জন্য ৮ফুট গভীর পানির প্রয়োজন। তবে ঈদের সময় লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় আরো একফুট অর্থাৎ ৯ফুট গভীর পানির প্রয়োজন হয়। বর্তমানে সেখানে ড্রেজিং’র মাধ্যমে ১৭ ফুট গভীরতা করা হয়েছে। আপাতত বরিশাল লঞ্চঘাট এলাকায় নাব্যতা ফিরে এসেছে। ফলে ওই এলাকায় পূর্বের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় লঞ্চ চলাচল করছে। তবে ঈদের পরে আবারো লঞ্চঘাট এলাকায় ড্রেজিং কার্যক্রম চালানো হবে। এদিকে মেহেন্দিগঞ্জের ভাষানচরের বামনিরচর পয়েন্টে গভীরতা মাত্র ৭ ফুটে চলে আসায় ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ, মালবাহী কার্গো ও তেলের ট্যাংকার যাতায়াতে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
লঞ্চ ও কার্গো চালকরা জানান, মালবাহী জাহাজ চলাচলে কমপক্ষে ১১ফুট গভীরতার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সেখানে সময় সময় ৭ফুট গভীরতায় নেমে আসলে জাহাজগুলো নদীর তলদেশের মাটিতে বেধে যায়। বর্তমানে বামনিরচর পয়েন্টে জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে জাহাজ চালাতে হচ্ছে। যার ফলে প্রায় সময়ই ওই পয়েন্টে ঘন্টার পর ঘন্টা জাহাজ নোঙর করে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

মংলায় জাহাজের এনওসি দেন এমএমডির কেরানী!

নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্তমান সরকারের প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী মংলা সমুদ্র বন্দরের গুরুত্ব বেড়েছে। কিন্তু বন্দরে আসা জাহাজের অনাপত্তি সনদপত্র (এনওসি) দিচ্ছেন একজন অফিস সহকারী। কারণ, দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থা নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের (এমএমডি) খুলনা অফিসের কর্মকর্তা মাসের পর মাস ঢাকায় অবস্থান করায় তার অফিসের কেরাণীই পালন করছেন এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি। এভাবে গত তিন মাসে ৪২টি জাহাজের বিপরীতে ৮৪টি এনওসি দিয়েছেন তিনি। তবে, সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রে ওই কর্মকর্তারই স্বাক্ষর থাকছে। এর ফলে বন্দরের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক নৌ চলাচল নিয়ম বা মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিন্যান্স (এমএসও) অনুযায়ী, কোনো জাহাজ বন্দর সীমায় প্রবেশের আগে সেটি চলাচলের যোগ্য ও পরিবেশসম্মত কিনা সেজন্য এমএমডির এনওসি নিতে হয়। একইভাবে বন্দর ত্যাগের আগেও নিতে হয় এনওসি। আর এ দায়িত্বটি পালন করেন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের অঙ্গ সংস্থা এমএমডির একজন কারিগরী কর্মকর্তা; যার পদবী ‘প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক’। 
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত তিন মাসে ৪২টি সমুদ্রগামী জাহাজ মংলা বন্দরে ভিড়েছে। আর এসব জাহাজের বিপরীতে ৮৪টি এনওসি দিয়েছেন অফিস সহকারী আবুল খায়ের। কারণ, এমএমডি’র খুলনা অফিসের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মো. শফিকুল ইসলাম তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাকে সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবসের অন্তত চারদিন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের (ডিপার্টমেন্ট অফ শিপিং-ডস) মতিঝিল প্রধান কার্যালয়ে দেখা যায়। কোনো কোনো সপ্তাহে তাকে পাঁচদিনও ঢাকায় দেখা যায়। এই কর্মকর্তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও থাকেন রাজধানীর লালমাটিয়ায় নিজস্ব ফ্ল্যাটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ তিন মাসে সাপ্তাহিক ছুটির মাঝে অথবা ২-১টি কর্মদিবসে শফিকুল ইসলাম খুলনায় গিয়ে এনওসি ফরমে আগাম স্বাক্ষর করে আসেন। জাহাজ ভিড়লে কিংবা বন্দর ত্যাগের আগে তার অফিস সহকারী আবুল খায়ের জাহাজের নাম লিপিবদ্ধসহ শূন্য ফরম পূরণ করে এনওসি প্রদানের গুরুদায়িত্বটি সম্পন্ন করেন। এ ক্ষেত্রে জাহাজপ্রতি অন্তত ৫০০ ডলার (প্রায় ৩৭ হাজার টাকা) অবৈধ লেনদেন হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
ডস সূত্রে জানা গেছে, প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম অধিদপ্তরের প্রধান পরীক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়ে দীর্ঘ সময় ঢাকায় অবস্থান করছেন। যদিও সংস্থার জনবল কাঠামোতে (অর্গানোগ্রাম) এই নামে কোনো পদ নেই। তবে ওপর মহলের বিশেষ আশির্বাদে এবং সমপদমর্যাদার একজন সহকর্মীর বিশেষ তদবিরের মাধ্যমে তিনি এই ‘পদহীন’ (প্রধান পরীক্ষক) পদে নিয়োগ পেয়েছেন। ডস এর অপর একটি সূত্র জানায়, বর্তমান মহাপরিচালক জোবায়ের আহমেদ জাহাজী কর্মকর্তাদের পরীক্ষা গ্রহণে ইতিপূর্বে ওঠা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বদনাম ঘোচাতে শফিকুল ইসলামকে অনেকটা বিধি বহির্ভুতভাবে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু কার্যত গত তিন মাসে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাত্রা বহুগুণ বেড়ে গেছে এবং জাহাজী কর্মকর্তাদের পরীক্ষায় পাস ও গ্রেডেশেনের নামে লাখ লাখ টাকা অবৈধ লেনদেন হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের চেয়ে অধস্তনদের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেকে স্বচ্ছ রাখতে চান তিনি।  প্রধান পরীক্ষক হিসাবে শফিকুল ইসলাম প্রশ্নপত্র করা ছাড়া আর কিছুই করেন না। বাকী যাবতীয়  কার্যক্রম অন্য পরীক্ষক দ্বারা সম্পন্ন  হয় এবং সেখানে চলে দুর্নীতি। এব্যাপারে শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি।

চলতি অর্থবছরের ৩ মাসে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ
দাতাদের শর্তের কারণে এডিবিতে বৈদেশিক ঋণ ব্যবহার বাড়ছে না

সিদ্দিকুর রহমান
দাতাদের আরোপিত নানা শর্ত এবং অনাকাক্সিক্ষত খবরদারির কারণে বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি একদিকে পিছিয়ে যাচ্ছে এবং অপরদিকে দেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বৈদেশিক ঋণের মাত্র ৪ শতাংশ ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রটি থেকে বলা হয়েছে, দাতাদের নানা শর্ত ও খবরদারির কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য এখন সরকারকে নিজস্ব তহবিল থেকে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহ ৪ হাজার ৮শ’ ৩৫ কোটি টাকার এডিবি বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হয়েছে ৪ হাজার ১১ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণ সহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। সরকার চাচ্ছে, দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কাজে দাতাদের অর্থ ছাড় প্রক্রিয়া যাতে সহজ করা হয়। সেইসাথে তাদের অযৌক্তিক শর্ত ও অনাকাঙ্খিত খবরদারি যাতে পরিহার করা হয়।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক অনাকাঙ্খিত খবরদারি করে চলছে। অন্যান্য দাতা সংস্থাও যে কোন উন্নয়ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করাসহ নানা শর্ত চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বৈদেশিক নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব উৎস থেকে অর্থের সংস্থান ও নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
সূত্রটি থেকে আরো বলা হয়েছে, দাতারা যদি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানে অযৌক্তিক নানা শর্ত চাপিয়ে না দিতো তাহলে দেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রক্রিয়া অনেক ত্বরান্বিত হতো। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিও আরো গতি পেতো। উল্লেখ্য চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার হচ্ছে মাত্র ১১ শতাংশ।
বানারীপাড়ায় ব্রিজ-কালভার্ট ও ৩৮ কিঃমিঃ সড়কের বেহাল অবস্থা
কেএম শফিকুল আলম জুয়েল,বানারীপাড়া(বরিশাল) সংবাদদাতা
বরিশালের বানারীপাড়ায় একাধিক ব্রিজ-কালভার্ট ও ৩৮ কিলোমিটার সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। ওই সড়ক গুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না করা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যানবাহন ও জন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেই। পৌরসভা সহ উপজেলার ৮ ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর একাধিক ব্রিজ-কালভার্ট দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ না করায় জন ও যান চলাচলে বিঘœ ঘটে। জীবনের ঝুকি নিয়ে ওইসব সড়কে যান ও মানুষ চলাচল করছে।  টিএন্ডটি-রায়েরহাট সড়কের বিভিন্ন অংশে গভীর খাদ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে স্বরুপকাঠী ও বানরীপাড়া থেকে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে। ২০০৫ সালে পৌর শহরের উপর দিয়ে বানারীপাড়া-বরিশাল-ঢাকা সড়কের রায়েরহাট ব্রিজটির পূর্বপাড় দিয়ে রেলিং ভেঙে একটি যাত্রীবাহী বাস খালে পড়ে ৪জন নিহত ও  অর্ধশত যাত্রী আহত হয়। এ ঘটনার পর সড়ক ও জনপথ বিভাগ ওই ব্রিজটি পুনঃনির্মাণ কিংবা সংস্কার করেনি। গত ৬বছর পর্যন্ত ব্রিজের সেই রেলিংটি ভাংগা অবস্থায় রয়েছে। গত ৫জুলাই ওই ব্রিজটির পশ্চিম পাশে একটি মালবাহী ট্রাকের চাকা দেবে যায়। কর্তৃপক্ষ এসে দীর্ঘ ৩ঘণ্টা চেষ্টার পর তা সরিয়ে নেয়। পরে বরিশাল সড়ক ও জনপথের লোকজন এসে ব্রিজটির ভাঙ্গা স্থানে দুটি স্টীলের পাত দিয়ে কোন রকম মেরামত করে যায়। এ অবস্থায় ওই ঝুঁকপূর্ন ব্রিজ থেকে প্রতিনিয়ত মালবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস সহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে আসছে। যে কোন সময় ব্রিজটি ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
একই ভাবে বানারীপাড়া-বরিশাল ও নেছারাবাদ সড়কের মাছরং ভ্যালী ব্রিজটিও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ওই ব্রীজের বেশির ভাগ স্টীলের পাত ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ওই ব্রীজের স্টীলের পাত ফাকা হয়ে হানিফ পরিবহনের চাকা দেবে যায়। তাতে ২ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ বাসটি উদ্ধার করে আবারও সেই পাতে ঝালাই দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়। একই সড়কের জম্বদ্বীপ ভ্যালী ব্রিজটির মধ্যাংশের পিলারের উপরি ভাগে ফাটল দেখা যায়। ব্রিজের নিচ থেকে বেশ কিছু নাটবল্টু চুরি হয়ে গেছে। এ ব্রীজটিও ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। ওই সড়কের ব্রাহ্মনকাঠী ও কাজলাহার আইউব আলী মহরীর বাড়ি সংলগ্ন দুটি পুরাতন কালভার্ট ভেঙে পড়ায় সড়ক ও জনপদ বিভাগ সেখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে স্টীলের ভ্যালী ব্রিজ নির্মাণ করে কোন রকম যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। কাজলাহার ব্রিজটিরও একই অবস্থা। একই ভাবে বাইশারী-নাজিরপুর সড়কের নান্দুহার ব্রিজটি গত ৫বছর পূর্বে নির্মাণকাজ শুরু করলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে আজ পর্যন্ত সমাপ্ত করতে পারেনি। এ কারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বানারীপাড়ার সাথে নাজিরপুর ও পিরোজপুর’র যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে পারছেনা। সংস্কার কিংবা পুনঃনির্মানের কোন উদ্যোগ নিচ্ছেনা।  ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা ১০১টি ব্রিজ-কালভার্ট সহ প্রস্তাবিত এই সড়কটি কবে নাগাদ নির্মাণ করা হবে নিশ্চিত করে তা কেউ বলতে পারছেনা। এছাড়াও বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০কিলোমিটার পাকা সড়কের পুনঃনির্মাণ ও রিপেয়ারিং কাজ না করার কারণে এ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুপযোগী হয়ে দাড়িয়েছে । উপজেলা এলজিইডি থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ভেঙে পড়া ক্ষতিগ্রস্থ সড়কগুলো হলো, ঝিরাকাঠি-ভাওয়ালিয়া ভায়া ছোনবাড়িয়া সড়কের ৩কিলোমিটার, বাইশারী কলেজ থেকে আউয়ারহাট পর্যন্ত সাড়ে ৩কিলোমিটার, বাইশারী থেকে কচুয়া মাদ্রাসা সড়কের আড়াই কিলোমিটার,শিমূলতলা-খলিশাকোঠা সড়কের ৮’শ মিটার, চাখার বাজার থেকে কালির বাজার হয়ে গোতারের বাড়ি পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার, খলিশাকোঠা প্রভাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে খলিশাকোঠা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার, মাদারকাঠী থেকে সলিয়াবাকপুর আড়াই কিলোমিটার, মিরেরহাট-বানারীপাড়া হেড কোয়ার্টার পর্যন্ত ৭কিলোমিটার, মহিষাপোতা খোদা বখসা সড়কের ৩ কিলোমিটার, বাংলাবাজার-জিরাকাঠি সড়কের ১কিলোমিটার, হক সাহেবের হাট-খলিষাকোঠা ভায়া লস্করপুর সড়কের সাড়ে ৩কিলোমিটার, মাছরং দেবুর মোড় থেকে রায়েরহাট সড়কের ২কিলোমিটার, কালির বাজার থেকে চাখার সড়কের দেড় কিলোমিটার, শিয়ালকাঠী থেকে ইলুহার পর্যন্ত ২কিলোমিটার ও লস্করপুর থেকে মিরেরহাট সড়কের ১কিলোমিটার পর্যন্ত পাকা সড়ক বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এদিকে রায়েরহাট-গাভা-ঝালকাঠী ও উদয়কাঠীর একটি সড়ক সহ বেশ কয়েকটি সড়কের নির্মান কাজ ধীর গতিতে চলায় জনগন ও যান চালকরা অসহায় পড়েছে। এছাড়া পৌর শহরের প্রধান সড়কটি একাধিক খানাখন্দে পরিণত। পৌর শহরের ৫নং ওয়ার্ডের সরদার বাড়ি সংলগ্ন ২’শ ফুট সড়ক খালের মধ্যে ভেঙে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পৌরসভার একাধিক সড়ক গভীর খাদ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে  সড়ক গুলো সংস্কারের পর আর সংস্কার না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আবুল হোসেন খান জানান জরুরি ভিত্তিতে ওই সড়কগুলো নির্মাণ ও রিপেয়ারিং করা না হলে এ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা জানান বেহাল সড়ক গুলো সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার দেয়া হয়েছে ঠিকাদাররা কাজ শুরু করে দিয়েছে। এলাকাবাসী অবিলম্বে সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্ট পুনঃনির্মান সংস্কারের দাবি জানিয়েছে।

নাজুক নিরাপত্তা ব্যবস্থা!
পুলিশ পাহারায়  কুমিল্লায় নিজামীর গোপন বৈঠক ও রাজসিক ভূরিভোজ
 মাহবুবুল আলম
২৫ অক্টোবর ২০১১ দৈনিক জনকণ্ঠে ‘কুমিল্লায় পুলিশ পাহারায় নিজামীর গোপন বৈঠক’ এবং ২৬ অক্টোবর ‘হোটেল বয় সেজে নিজামীকে নেতাকর্মীদের আপ্যায়ন’ শিরোনামে প্রকাশিত দু’টি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশব্যাপী সরকারের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আবার তোলপাড় শুরু হয়েছে। এমন ধরনের খবরে দেশের সচেতন মানুষ যুগপৎ স্তম্ভিত ও বিস্ময়ে হতবাক। যুদ্ধাপরাধ ও দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার মতো এমন দু’টি স্পর্শকাতর মামলার আসামি চট্টগামে মামলায় হাজিরা দিতে যাওয়ার পথে নামাজ পড়ার উছিলায় কি করে চৌদ্দগ্রামের ‘হাইওয়ে ইন’ হোটেলে নিজামী জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী গোপন বৈঠকের পর রাজসিক আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে পারে তা ভাবতেই বিস্ময়ে হতবাক না হয়ে পারা যায় না। এর মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলো সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা নাজুক। সরকারের প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা একটা গোষ্ঠী যে দীর্ঘদিন থেকে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এমন কথা আমার বিভিন্ন কলাম ও দেশের বিভিন্ন কলামিস্টের লেখায় উঠে এলেও সরকার সে সব লেখায় থোড়াই কর্ণপাত করেছে বলে মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়ের পাঠকদের জন্য  দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত দু’টি খবরের সারসংক্ষেপ এখানে তুলে ধরছি। ২৪ অক্টোবর দুপুর ২টা ২৯ মিনিটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিয়া বাজার এলাকায় অবস্থিত হোটেল হাইওয়ে ইন-এ জোহরের নামাজের অজুহাতে নিজামীকে নামানো হয়। কিন্তু তাকে ওই হোটেলে নামানোর পূর্বেই কুমিল্লা জেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ ও জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা সেই হোটেলটিতে এসে অবস্থান নেয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা নিজামীর জন্য বিভিন্ন পদের রাজকীয় খানাদানার আয়োজন করে এবং নিজামীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনের সামনেই সে সব রাজকীয় খাবার খাওয়ানো হয়। খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষে ওই হোটেলেই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে নিজামী নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক নির্দেশ প্রদান করেন। ওই সময় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা  জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুস সাত্তার, জামায়াত নেতা সানাউল্লাহ, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আমির শাহাব উদ্দিন, জামায়াতের ক্যাডার মিজানুর রহমান ওরফে বোমা মিজান ও ভিপি জাহাঙ্গীরসহ জামায়াত-শিবিরের অর্ধশত নেতাকর্মী তার সঙ্গে দেখা করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
২৬ অক্টোর ২০১১ দৈনিক জনকণ্ঠ ‘হোটেল বয় সেজে নিজামীকে নেতাকর্মীদের আপ্যায়ন’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়Ñ ওই হোটেলে পৌঁছার পর জামায়াতের অর্ধশত নেতাকর্মী কৌশলে নিজামীকে হোটেলের দ্বিতীয় তলায় একমাত্র ভিআইপি লাউঞ্জে নিয়ে যায়। সেখানে গোপন বৈঠকের পর নিজামীর জন্য রাজসিক খানাপিনার আয়োজন করে। খাবারের মেনুর মধ্যে ছিল দেশীয় কয়েক রকমের মাছ, দেশি মুরগির মাংস, গরু ও খাসির গোশ্তসহ বিভিন্ন পদের খাবার। ওই প্রতিবেদনে আারো বলা হয় জামায়াত-শিবিরের কয়েক-নেতাকর্মী হোটেল বয় সেজে নিজামীকে খাবার পরিবেশন করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সেই ভূরিভোজে অংশ নিয়ে আয়েশ করে সে সব খাবার খায়। এমন দু’টি খবর পড়ে কে না শিহরিতো হয়। দেশের একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী ও বিভিন্ন মৌলবাদী দল যখন সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধের ঘোষণা দিচ্ছে ঠিক এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নিজামীর সঙ্গে তার দলের নেতাকর্মীদের গোপন বৈঠক এবং বৈঠক শেষে হোটেল বয় সেজে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত আসামি জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর রাজসিক ভূরিভোজের বিষয়টিকে মোটেই হালকাভাবে দেখার সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি না। এই প্রতিবেদনে আরো জানা গেছে যে শুধু এটাই প্রথম নয়Ñ এ পর্যন্ত  নিজামীকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা নেয়া আনার পথে প্রতিবারই এ হোটেলেই নামাজ পড়ার উছিলায় যাত্রা বিরতি করে গোপন বৈঠক ও ভূরিভোজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশবাসীর অবগতির জন্য একটি কথা বলে রাখা ভালো যে, হাইওয়ে ইন নামে যে কয়টি হোটেল আছে তার সব ক’টির মালিকানাই বিএনপি-জামায়াতে নিজস্ব ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত। প্রিয় পাঠক আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করে থাকবেন, ১০ অক্টোবর সিলেট অভিমুখে লংমার্চে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াসহ জামায়াতের নেতারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হবিগঞ্জের মাধবপুরে অবস্থিত ‘হাইওয়ে ইন’ হোটেলে যাত্রা বিরতি করে লংমার্চে অংশগ্রহণকারী সবাই ভূরিভোজের মাধ্যমে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সরকারের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করেছিল। লংমার্চের পর সিলেট বিএনপির ক্ষমতাধর ইলিয়াস আলীর লংমার্চের টাকা আত্মসাৎ নিয়ে এক বিএনপি নেতার সাংবাদিক সম্মেলনে হাইওয়ে ইনে ভূরিভোজের প্রসঙ্গও উঠে এসেছিল। বিএনপি-জামায়াতের বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন হোটেলে বারবার নিজামীর গোপন বৈঠকের পরও সরকারের কর্তাব্যক্তিদের হুঁশ না হওয়ার বিষয়টিকে গোয়েন্দা ব্যর্থতার আরো একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আমাদের মতো অনেক লেখক আছেন যারা পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করে সরকারকে এমন ধরনের প্রশাসনিক ষড়যন্ত্রের কথা বলে এলেও সরকার কোনো লেখালেখিকেই পাত্তা দেয়নি। বরং সরকার ওয়ান টাইমার আওয়ামী লিগারদের দ্বারা এতটাই মেসম্যানেজড হয়ে পড়েছেন যে তারা ভাববার অবকাশ পান না। ’৭৫-এর পর দীর্ঘ ছাব্বিশ বছরে এসব আমলা বিএনপি-জামায়াতের আনুকূল্যে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে সেই আমলারাই বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর রাতারাতি ‘বিএনপি জিন্দাবাদ’ স্লোগান পাল্টিয়ে ‘জয়বাংলার’ অনুসারী হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের টপ টু বটম এসব ওয়ানটাইমারদের দাপটে দুর্দিনের ত্যাগী আমলারা শুধু কোণঠাসাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে ওএসডি হয়ে অভিমান ও ক্ষোভে দূরে সরে যাচ্ছে। আমার এ বক্তব্যের সপক্ষে একটি উদাহরণই যথেষ্ট যে সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ৪০ দিনের মাথায়ই পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মধ্যে অবিশ্বাস সৃষ্টি করে সরকারকে হটানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতের সেসব অনুগ্রহভাগী সামরিক-বেসামরিক আমলারা সরকারের মেয়াদ তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই তাদের পছন্দের দলকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য বর্তমান সরকারকে সব দিক থেকে ব্যর্থ করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। একজন সাধারণ মানুষের চোখে এ বিষয়টি ধরা পড়লেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের চোখে পড়ছেন না। তারা ক্ষমতার মোহে এতটাই অন্ধ যে, সরকার ও দলের পক্ষে কলম ধরে যারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে এসব দেখিয়ে দিতে চাইছেন তারা সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিরাগভাজন হয়ে উঠছেন। বরং তাদেরই আওয়ামী লীগ বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে কোথাও  কোথাও অলিখিতভাবে ব্লাক লিস্টেড করতেও দ্বিধাবোধ করছে না। সরকার বদল হলে তাদের টিকিটি হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার বিএনপি-জামায়াতের বিভীষিকাময় অত্যাচার- নির্যাতন সহ্য করতে হবে ত্যাগী সমর্থকদেরই। তাই সরকারের কর্তাব্যক্তিদের আবারো সেই পুরনো কথাটিই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ‘অন্ধ হরেই প্রলয় বন্ধ হবে না। সকলেরই মনে রাখা উচিৎ বিএনপি-জামায়াত যদি আবার ক্ষমতায় আসে তা হলে কেবল নেতাকর্মীরাই নয়, দলের প্রধান শেখ হাসিনার জীবনও বিপন্ন হতে পারে। আগামীতে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় যাচ্ছে এমনটা মনে করেই রোড মার্চের সভায় জামায়াত নেতারা আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর হুমকিও দিচ্ছেন। সে লক্ষ্যে নীল নকশা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় নিজামীরা গোপন বৈঠক করার সাহস পাচ্ছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার খবর ও প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে একইভাবে কারাগারে আটক জঙ্গিরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় মোবাইল ফোনে বাইরের জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে সারাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রয়াস চালাচ্ছে। কিছুদিন আগে পিলখানা মেসাকার মামলায় আটক বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুর এমনই একটি ঘটনা ধরা পড়ার কাহিনী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
পরিশেষে এ কথা বলেই শেষ করব সরকারের নীতিনির্ধারকরা এসব ষড়যন্ত্রের ঘটনার কথা জেনেশুনেও যদি মনে করেন সব কিছুই ঠিকঠাক মতো চলছে তা হলে আমাদের মতো নিরীহ নাগরিকদের আর কিই বা করার থাকে।                     লেখক: কবি-কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প রুখে দিতে হবে
নাহিদা সুলতানা চৈতী
চট্টগ্রামের পাথরঘাটার জলিলগঞ্জ এলাকায় দু’দল কিশোরের কলহের জের ধরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০টা অবধি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা করে একটি গোষ্ঠী। এ ঘটনায় সারাদেশের বিশিষ্টজনরা উদ্বিগ্ন। যদিও কুচক্রীরা ব্যর্থ হয়েছে। এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষজন শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছেন যে, এটি কোনো একটি চক্রের কারসাজি। তাইতো সর্ববিধ অপচেষ্টা করেও কুচক্রীরা সফল হতে পারেনি। আমরা এলাকার মানুষদের ধন্যবাদ জানাই তারা কুচক্রীদের ব্যর্থ করে দিতে পেরেছেন বলে। পাশাপাশি শুধু সংশ্লিষ্ট এলাকারই নয় সারাদেশের মানুষের কাছে আহ্বান জানাই, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প সমূলে উপড়ে ফেলার জন্য। ওই দিনের ঘটনায় জানা গেছে, দু’দল কিশোরের কলহের জের ধরে একটি কুচক্রীমহল এলাকার হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মাঝে দ্বন্দ¡ বাধিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করেছিল। তবে মঙ্গলবার রাতের এ সংঘর্ষের ঘটনার পর বুধবার ওই এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে সংহতি ও শান্তি সমাবেশ। এতে বক্তব্য রেখেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন, সিসিসির মেয়র এম মনজুর আলম, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনসহ বিভিন্ন দল ও মতের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। একবাক্যে সকলেই বলেছেন, যা ঘটেছে তা অনাকাক্সিক্ষত এবং একইসঙ্গে লজ্জার। এর নেপথ্যে যদি কারো ইন্ধন থাকে তা তদন্তর মাধ্যমে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা শুরু হওয়ার পর শহরজুড়ে এমনকি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় সাম্প্রদায়িক নানা ঘটনার মিথ্যা তথ্য। মসজিদ মন্দিরে সশস্ত্র আক্রমণ থেকে শুরু করে নারী ধর্ষণ, লুটপাট, এমনকি খুনখারাবির কথাও চাউর করা হয়েছে। ফলে সন্ধ্যার পর থেকে ওই এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ব্যাপকভাবে ফাটলের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে মাইকিং পর্যন্ত করার ঘটনা ঘটে। ফলে তা দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবার অবস্থা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে, প্রচুরসংখ্যক র‌্যাব ও দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েনের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় রাত ১২টায়। কারো কারো অভিযোগ, এলাকার বিএনপি সমর্থিত এক ওয়ার্ড কমিশনার এতে ইন্ধন জুগিয়েছেন। আবার কারো কারো মতে, সরকারবিরোধী কয়েকটি গ্র“প পৃথক পৃথকভাবে বিভক্ত হয়ে ঘটনার পর এলাকাজুড়ে তাণ্ডব সৃষ্টি করে, মারপিট ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেয়। আবার অনেকের মতে, গত সোমবার বিরোধীদলীয় নেতা রোডমার্চের বিভিন্ন পয়েন্টে সাম্প্রদায়িক যেসব কথাবার্তা বলেছেন তার জের হিসেবে স্বার্থান্বেষী একটি চক্র এ এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভঙ্গের মাধ্যমে কায়েমি স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষের কারণে।
জানা গেছে, নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন হিন্দু অধ্যুষিত পাথরঘাটার জলিলগঞ্জ গঙ্গাবাড়ী এলাকায় দুদল কিশোরের মধ্যে সৃষ্ট কলহ একপর্যায়ে সংক্রমিত হয় বড়দের মাঝে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় তা জেলেপাড়ার বাসিন্দা এবং পার্শ্ববর্তী পাড়ার অধিবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় চলে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং লাঠালাঠিও। আচমকা একটি ঢিল এসে পড়ে স্থানীয় মসজিদের জানালায়। যদিও কোনো ধর্মীয় স্থাপনার দিকে ইচ্ছাকৃত ঢিল নিক্ষেপের ঘটনা নয়, তারপরও উগ্র একটি গ্র“প এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি। অভিযোগ রয়েছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মসজিদের মাইক থেকে প্রচার করা হয়েছে মসজিদ আক্রান্ত হবার খবর। আর বিষয়টি যাচাই না করেই আশপাশ থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে ছুটে আসে শত শত মানুষ। তারা গঙ্গাবাড়ী কালীমন্দিরের ওপর হামলে পড়ে। অগ্নিসংযোগ করে মন্দির এবং জেলেপাড়ার ৫টি বাড়িতে। সংঘর্ষে আহত হন প্রায় ৪০ জন। ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রথমে পুলিশও যেন হতভম্ব। তাই শুরুতেই কোনো একশন দেখা যায়নি। এক পর্যায়ে পুলিশ ও র‌্যাব এবং স্থানীয় অসাম্প্রদায়িক জনসাধারণ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই বলেছেন, ঘটনার পরপর কিছু বহিরাগত এসে ব্যাপকভাবে হামলায় অংশ নিয়েছে। এলাকার লোকজনের চেয়ে ওই বহিরাগতদেরই বেশি তৎপর দেখা গেছে এ সময়। রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি আয়ত্তে এলেও বুধবারও সেখানে বজায় রয়েছে থমথমে পরিস্থিতি। আরো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও র‌্যাবের বিপুলসংখ্যক সদস্য। চট্টগ্রামের পাথরঘাটার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। আমাদের কথা হলো, উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষী কোনো মহল  যেন চট্টগ্রাম তথা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য নষ্ট না করতে পারে। এজন্য ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এ মুহূর্তে অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে হবে। চট্টগ্রামের এ ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা মাত্র নয়। এর পেছনে যে কুচক্রীমহল সক্রিয় তাদের খুঁজে বের করতে হবে। আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করতে হবে। তাদের সমূলে উচ্ছেদ করতে হবে। অন্যথায় তারা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পুরো দেশ অশান্ত করে তুলবে।              লেখক: কলামিস্ট
পারিবারিক নির্যাতন: গল্প ও সত্য বয়ান
লতিফা নিলুফার পাপড়ি
এক.
সবেমাত্র এসএসসি পাস করেছে পুষ্পিতা। পারিবারিক কুসংস্কার অন্যদিকে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন- এই দুয়ের মাঝে পড়ে পুষ্পিতার পক্ষে বেশি লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। অল্প বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে  হলো। স্বামী তার থেকে ১৫ বছরের বড়। বিয়ের ছয় মাস পরেই স্বামী চাকরির পাশাপাশি জমি কেনা-বেচার ব্যবসায় যুক্ত হলো। কিছুদিনের মধ্যেই আরিফ নিম্ম মধ্যবিত্ত থেকে বিত্তশালী ব্যক্তি হয়ে ওঠে। পরিবর্তন আসে জীবনাচরণে। আরিফের রাতের জগৎ এক সময় পর নারী ও মদে পরিণত হয়। নিত্য এ সব না হলে নাকি তার স্ট্যাটাস থাকে না। পুষ্পিতা এখন আরিফের কাছে ‘আনকালচার্ড’ নারী হিসেবে চিহ্নিত। ইতোমধ্যেই পুষ্পিতার দু’সন্তানের জš§ হয়েছে। পুষ্পিতা সব ঘটনা আড়াল করে রাখে। এমনকি নিকটতম আত্মীয়কেও জানায় না।
দুই.
অনেক বদলে গেছে দীপা। সংসারের কাজে আগের মতো আর মন বসে না। আয়নায় বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখে। কেমন উদাস উড়– উড়– ভাব। ঘরে শাশুড়ি-জায়ের খোঁচা এখন আগের মতো গায়ে মাখে না। মাঝে মাঝে নিজের কাছেই খারাপ লাগে নিজের এই বেখেয়ালিপনা। শুধরে নিতে চায়, পারে না। সেই বছর আটেক আগে স্বামী কালাম পেটে বাচ্চা দিয়ে জীবিকা অর্জনে সৌদি আরব চলে গিয়েছিল। কালামের সঙ্গে সংসার করেছে মাত্র মাস তিনেক। স্বামীকে ভালো করে চেনার আগেই স্বামী চলে যায়। প্রথম প্রথম চিঠিপত্র ফোন ঘন ঘন আসত। এখনো প্রতি মাসে টাকা পাঠায়। তবুও কিসের যেন অভাব। মেয়েটাও দেখতে  দেখতে বড় হয়ে যাচ্ছে। দীপার শ্বশুরবাড়িতে কালামের বন্ধু ইমরানের অবাধ আসা যাওয়া। ইমরান সব সময় দীপাকে বোঝাত কালাম দেশে আর আসবে না। ওখানে তার বউ আছে। প্রথম প্রথম বিশ্বাস করত না; তবে মানুষের মনতো, ইমরানের পীড়াপীড়িতে কখনো যে তাদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে দীপা বুঝতেই পারেনি। ব্যাপারটা চাপা থাকার নয়। পাড়া-পড়শীরা নানা কথা কয়, দীপাকে দেখলে মুখ টিপে হাসে। ইমরানের এ অবাধ আসা-যাওয়া সৌদি প্রবাসী স্বামীর কানে পৌঁছতে সময় লাগল না। স্বামী কালাম অসতী স্ত্রী রাখবে না। তা সে তার বাড়ির লোকদের জানিয়ে দিয়েছে। কিছুদিনের মাধ্যে গ্রাম্য সালিশে ফতোয়া দেয়া হয় যে দীপাকে যেন ১০০ বার বেত্রাঘাত করা হয়। যেই রায় সেই শাস্তি শুরু হলো। অপমান সহ্য করতে না পেরে দীপা বিষপানে আত্মহত্যা করল। একদিন কালাম দেশে আসে। আরেকটা বিয়ে করে আবার বিদেশ পাড়ি জমায়। দীপার কথা কেউ আর মনে রাখেনি।
তিন.
শৈশব থেকেই ঝরনা লক্ষ্য করত, শিক্ষিত মহিলারা স্বাধীন ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। সেও পড়ালেখা জানা শিক্ষিত। শিক্ষকতার চাকরি নিয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর তার সব আশায় গুড়েবালি হয়ে যায়। ঝরনার স্বামীর কাছে তার চাওয়া-পাওয়ার কোনো মূল্য ছিল না। একের পর এক ঘটে যায় জীবনের উত্থান পতনের নানা ঘটনা। ঝরনার ননদ বাবার বাড়িতে থাকে। স্বামী পরিত্যক্তা ননদের কষ্টগুলো ঝরনা বুঝত। আর বুঝত বলেই ওই  ঝরনাকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করেছে। তিলে তিলে নিংড়ে নিয়েছে তার প্রাণশক্তি। ওই ননদ ঝরনাকে সংসার করতে দিল না। কারণ একটাই; আর তা হলো সে নিজে স্বামীর সংসার করতে পারেনি। ঝরনার স্বামীও প্রতিটা মুহূর্তে বোনের নির্যাতন, বেপরোয়া আচরণ সমর্থন করেছে।
পাঠক, ওপরে তিনটি ঘটনাই একেবারে বাস্তব। এরকম আরো শত শত হাজার হাজার নির্যাতনের শিকার আমাদের দেশের মেয়েরা। এই নির্যাতন শিক্ষিত-অশিক্ষিত পুরুষ-নারী নির্বিশেষে সবাই করে থাকে।
“মাতা-ভগিনী-কন্যেরা- আর ঘুমিও না, উঠো”---- প্রায় শত বছর আগে বেগম রোকেয়ার এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের নারীরাও জেগে উঠেছিল। আজকের দিনে ঘরের কোণ থেকে বেরিয়ে এসে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করছে। অন্যের ভাগ্যোন্নয়নে সহায়তা করছে। কূপণ্ডূকতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করে সমাজকে এগিয়ে নেয়ার কাজে অবদান রাখছে। বিরূপ পরিস্থিতির নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বে¡ও নারীরা সামনে এগিয়ে চলছে। সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করা হচ্ছে। নারীরা এখন বুঝতে পারে- শ্রম, সাধনা আর আত্মবিশ্বাসের জোরেই জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া সম্ভব। নারীরা ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে, স্বাধীন ও স্বকীয়তা নিয়ে এগিয়ে যাবে এটাইতো আশা।
কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে আমাদের দেশ ও বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে। নারীরা ঘরে বাইরে সকলখানে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হতাশার বিষয় হলো দেশের বিভিন্ন এলাকার নারী নির্যাতন সংস্থাগুলো পারিবারিক নির্যাতন বন্ধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে না। আর তাই শ্বশুর বাড়ির লোকদের নির্যাতন সহ্য করতে না  পেরে আমার  বোনরা, মেয়েরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার বউরা নির্যাতন করে শ্বশুর-শাশুড়িকে বৃদ্ধ নিবাসে পাঠিয়ে দিচ্ছে, গৃহকর্মীরাও প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি গৃহকর্তার বিকৃত যৌন লালসার শিকার হচ্ছে। এসব নানা পরিস্থিতি মেয়েদের চলার পথে এখনো বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নারীরা তাদের ইচ্ছার জোরেই জীবন সংগ্রামে জয়ী হবে, ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে, স্বাধীন ও স্বকীয়তা নিয়ে এগিয়ে যাবে এটাই তো আশা করি। আমি সব সময় মনে করি ‘একজন নারী যদি আরেকজনকে সহায়তা করে, সম্মান দেয় তাহলে তাদের এগিয়ে চলাটা সহজ হয়।’ নারীরাই পারে হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে ধৈর্যশীলতার মাধ্যমে সকল প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে দিতে।
নানা অত্যাচার আর অনিয়মের কিছু অলিখিত নিয়ম নারী কেন সইবে ? আমিতো মনে করি নারীর ব্যক্তি অধিকার নিশ্চিতকরণ, নারীর প্রতি সহিংসতা ও সকল প্রকার বৈষম্যরোধ করা তখনই সম্ভব হবে, যখন প্রতিটা মানুষ মানুষকে সম্মান করতে শিখবে, ভালোবাসতে শিখবে।
সমাজে প্রতিটি নারীর প্রয়োজন; নিজের ভিতরের চেতনাকে জাগ্রত করা। আর তা হলেই সে শক্তি পাবে, পাবে সাহস। নিজেই হতে পারবে নিজের অবলম্বন। পথ চলতে তখন আর হোঁচট খাবে না। সকল প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে সম্মুখে এগিয়ে যেতে পারবে। তখন নারীও পাবে মানুষের মর্যাদা। এভাবে যদি নারীরা এগোতে পারেন, তবেই পুরুষের সমকক্ষ হয়ে আমাদের দেশের নারীরাও তখন সমান তালে সকল ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা দেখাতে পারবে। সৃষ্টি করতে পারবে সমাজে তাদের স্বতন্ত্র অবস্থান। ওপরের সত্য তিনটি গল্পের মতো আর কোনো নারীকেই ওই রূপ ভাগ্যবরণ করতে হবে না।
সেই সুদিন কি বেশি দূরে?                লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট 
জ্বালানি সংকটে মুখে বিকল্প জ্বালানি
কয়লা সম্পদের বর্তমান ও ভবিষ্য
মোঃ রজব আলী
বর্তমানে সারা বিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশেও দেখা দিয়েছে জ্বালানি সংকট । কত কয়েক বছর আগে আমাদের দেশের সরকার প্রধানেরা বিপুল পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে ঢাক ঢোল পিটিয়ে প্রচার করলেও কয়েক বছরের মাথায় বলছে গ্যাস সংকট। জ্বালানি সংকটের কারণে আমাদের দেশের বিনিয়োগের পথ বন্ধ হতে বসেছে। বিকল্প জ্বালানি হিসাবে একমাত্র কয়লা। কয়লা জ্বালানির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। পক্ষান্তরে কয়লা আহরণ বৃদ্ধি পায়নি। তাই দেশীয় কয়লার যোগান না পেয়ে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানী করতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আমাদের সরকার প্রতি বছরে জ্বালানি খাতে মোটা অঙ্কের ভুর্তকি দিয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের দেশীয় কয়লার মজুদ থাকলেও তা আহরণের কোন পরিকল্পনা সরকারের দেখা যাচ্ছে না বা কয়লা আহরণের জন্য খনি স্থাপনের বিষয়ে সরকার ও জনগণের একটি বড় রকমের দুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়। আমরা সাধারণত নিশ্চিত হয়েছি যে, সরকারের সঙ্গে জনগণের সমন্বয়হীনতা দীর্ঘদিনের। শুধু কয়লা খনি বাস্তবায়ন নয়, জনগণের সঙ্গে সরকারের সমন্বয়ের অভাবে সরকারি অনেক কাজেই নানা বিড়ম্বনা সৃষ্টি হচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ফুলবাড়ী কয়লা খনি ও আড়িয়াল বিলের বিমান বন্দর স্থাপন করতে এসে জনগণের বাধার মুখে সরকারে পড়তে হয়েছে। তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ করর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) ভূ-তত্ত্ব জরিপ অনুযায়ী দেশের উত্তরাঞ্চলে অনেক কয়লা খনি দৃশ্যমান। সেখানে মজুদের পরিমাণও অনেক। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়েছে শুধু মাত্র বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি। সেখানেও মোট মজুদ কয়লার মাত্র ২৫ ভাগ উত্তোলন করা সম্ভব হয়। তাতেও বড়পুকুরিয়া কোল মাইন কোম্পানি লিমিটেড সরকারের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। বাকী কয়লা খনিগুলো খাতাপত্রে ফাইল বন্দী হয়ে রয়েছে। বাস্তবায়নের কোন পদক্ষেপ নেই।
খনি বাস্তবায়ন করতে যেয়ে বার বার এলাকার জনসাধারণের বাধার মুখে সরকারকে পড়তে হচ্ছে। এ রকমই ২০০৬ সালের ফুলবাড়ী খনি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এলাকাবাসীর প্রবল বাধার সম্মুখিন হয় এবং এলাকাবাসীর আন্দোলন এর কথা সকলের জানা। আন্দোলন করতে যেয়ে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট তৎকালীন সময়ের স্থানীয় প্রশাসনের  হটোকারিতায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারায় ৩ জন যুবক, আহত হয় শতাধিক । এ ঘটনায় ফুলবাড়ীর সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরকারের দুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। ফুলবাড়ীর এ খবর গণমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে সরকারের প্রতি গোটা জাতির একটি বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এতে করে শুধু ফুলবাড়ী নয় অন্যান্য জায়গার খনি বাস্তবায়নের পথ রোধ হয়ে যায়। সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাসের অবস্থানটি নানা কারণে দিন দিন ক্ষিন হতে চলেছে। এর পরেই বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ভূ-গর্ভস্থল থেকে কয়লা আহরণের কারণে  ঐ এলাকায় ভূমি অবনম ঘটে। ভুমি অবনমের কারণে সেখানকার ঘর বাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খতিগ্রস্থ হলে এলাকাবাসী ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তাদের আন্দোলন ও অসুবিধার কথা সারা দেশে গণমাধ্যমে প্রচার ঘটে। এতে সরকার তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য একটি বিশেষ প্যাকেজ ঘোষনা করে। প্যাকেজ ঘোষনার সঙ্গে সঙ্গে এই এলাকার সংবাদকর্মীসহ সচেতন মানুষের প্রত্যাশা ছিল সরকার ক্ষতিপূরণের প্যাকেজটি এমনভাবে প্রদান করবে যাতে করে অন্যান্য খনি এলাকার সাধারণ জনগণের মধ্যে খনি বাস্তবায়নের জন্য ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বর্তমানে ভূমি প্রতিমন্ত্রী এরকম একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য ব্যাপক পরিশ্রমও করেছেন। সেভাবেই প্যাকেজ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান শুরু হয়েছিল। কিন্তু আমলা তন্ত্র জটিলতায় সে আশা আতুর ঘরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। ক্ষতিপূরণের ১৯০ কোটি টাকার মধ্যে ২ দফায় মাত্র ৩০ কোটি টাকা প্রদান করে বড়পুকুরিয়া স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৭ ধারা শুনানী স্থানান্তর করে এখন দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সাধারণ মানুষকে নানা ভাবে হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এখানে যে বিষয়টি আমি বলতে চাই সরকারের ভাল কাজগুলি বাস্তবায়ন করতে এসে আমলাতন্ত্র জটিলতায় পড়ে তার উদ্দেশ্যটি ম্লান হয়ে যায়। তাহলে কি আমাদের দেশের যারা প্রশাসনের বড় কর্তা তারা কি চান না এদেশের ভাগ্যের উন্নয়ন হোক। আমাদের দেশ ২শ বছর ধরে শাসন করেছে ব্রিটিশরা। তারা নিজ হাতে জনগণকে নাজেহাল করেনি, নাজেহাল করেছে তাদের উপ-শাসক জমিদারেরা। তারা কিন্তু এদেশেরই লোক ছিল। তেমনি ২৪ বছর ধরে শাসন করেছে পাকিস্তানীরা। তারাও কিন্তু এদেশের নিয়োগকৃত এজেন্টদের দ্বারাই শোষন করেছে নির্যাতন করেছে। এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় খান সেনাদের সহযোগিতা করেছে এদেশেরই স্থায়ী বাসিন্দা রাজাকার আলবদর। অর্থাৎ যুগে যুগে একটি বিষয় নিশ্চিত করে বলা যায় দেশের এই কিছু নিজস্বার্থপর লোকজন দেশের সাধারণ জনগণের ক্ষতিসাধন করে থাকে। এখানে আমার পলাশী যুদ্ধের মীর জাফরের ভূমিকার কথা বলার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেই ইতিহাস সকলের জানা। বর্তমানে আমাদের দেশে এ রকম কিছু সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন যারা সব সময় নিজস্বার্থ চরিত্রার্থ করার জন্য জনগণকে নাজেহাল করতে থাকে। এতে করে সাধারণ জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। উপরন্তু রয়েছে রাজনৈতিক শিষ্টারের অভাব। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলি বিরোধীতার খাতিরে সব সময় বিরোধীতা করে আসে। জাতীয় ঐক্যে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন না। বরং সরকারকে দুর্বল করার জন্য জনগণের মধ্যে সস্তা জনপ্রিয়তা লাভের জন্য জনগণ উষ্কে দেয়া হয়। এতে করে শুধু সরকারেই দুর্বল হয় না। দুর্বল হয় গোটা রাষ্ট্র  ও জাতি এটি নিশ্চয় সুখকর নয়। জাতির প্রত্যাশা যে, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় স্বার্থে একমত পোষন করে খনি এলাকার জনগণের সঙ্গে ঐক্যমতের ভিত্তিতে কয়লা খনিগুলো বাস্তবায়ন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদেরও সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। এতে করে দেশীয় উন্নয়নের পাশাপাশি এলাকাবাসীরও উন্নয়নের দার খুলে যাবে। খনি আন্দোলন করতে যেয়ে খনি বিষয়ে ফুলবাড়ীর অনেক জানাশুনা হয়েছে যে, রয়্যালেটি কি ? এবং কয়লার ব্যবহার কি হওয়া উচিত এ বিষয়গুলো ফুলবাড়ীবাসীর পাশাপাশি সারা বাংলাদেশের মানুষেই জেনে ফেলেছে। তাই আর লুকোবার কিছু নেই । বিষয়গুলি এলাকাবাসীর সঙ্গে সমন্বয় করে খনি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এতে সরকার ও জনগণ উভয় লাভবান হবেন। 
সূর্যই পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে
মোঃ রবিউল ইসলাম রনি
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ‘পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে প্রধানত: দিবা-রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি ও ঋতু পরিবর্তন ঘটে। উপবৃত্তাকার পথে সূর্যকে পরিভ্রমনকালে পৃথিবী নিজ কতলের সঙ্গে ৬৬.৫ ডিগ্রী কোণে হেলে সর্বদা স্থান পরিবর্তন করছে।’ বিজ্ঞানের এ তথ্য সঠিক নয়। কেননা পানি সব সময় নিম্নগামী। সে জন্য হেলে থাকা পৃথিবীর উপরদিকে অর্থাৎ উত্তর গোলোর্ধ খাল-নদী-সাগর বিহীন অর্থাৎ পানি শূন্য থাকবে। ২২ ডিসেম্বর থেকে ২১ জুন পর্যন্ত পৃথিবী হেলে যাওয়ার সাথে সাথে উত্তর গোলার্ধের দিকে একটানা জোয়ার হবে। আবার ২১ জুনের পর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত একই ভাবে পৃথিবী হেলে যাওয়ার সাথে সাথে উত্তর গোলার্ধে একটানা ভাঁটা হয়ে পানি দনি গোলার্ধে নেমে যাবে। অর্থাৎ পৃথিবীতে ৬ ঘন্টা পর পর জোয়ার ভাঁটা না হয়ে  একটানা ৬ মাস জোয়ার এবং ৬ মাস ভাঁটা হবে। অপরদিকে পৃথিবী হেলে যাওয়ার কারণে সূর্যকে গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ ২১শে জুন উত্তর দিকে দেখা যায় এবং শীতকালে অর্থাৎ ২২শে ডিসেম্বর দণিদিকে দেখা যায়। অথচ শুক্র, বুধ, মঙ্গলগ্রহ সহ আকাশে কোন গ্রহ বা নত্রকে পৃথিবী হেলে যাওয়ার কারণে ২১শে জুন অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে যেখানে দেখা যায় ২২শে ডিসেম্বর অর্থাৎ শীতকালে তার চেয়ে দণিদিকে দেখা যায় না। শুধুমাত্র সূর্য ব্যতিত আকাশের প্রত্যেকটি গ্রহ-নত্র শীত-গ্রীষ্মে একই বরাবর থাকে। এমনকি গ্রীষ্মকালে চন্দ্রকে দণি দিকে দেখা যায়। পৃথিবী হেলে যাওয়ার কারণে শীতকালে সূর্যকে যেমন দণি দিকে দেখা যায় তেমন চন্দ্রকেও আরও দণি দিকে দেখা যাওয়ার কথা। কিন্তু শীতকালে চন্দ্রকে আরও অধিক উত্তর দিকে দেখা যায়। অর্থাৎ পৃথিবী হেলে যাওয়ার জন্য যাবতীয় গ্রহ, নত্র ও চন্দ্র ছাড়া শুধুমাত্র সূর্যকে শীত গ্রীষ্মে উত্তর-দেিণ দেখা যাওয়া আমাদের সঙ্গে ধোকাবাজি করা। প্রকৃতপে গ্রীষ্মকালে উত্তর দিক এবং শীতকালে দণি দিক পর্যন্ত সূর্যের কপথ বা মঞ্জিল, পৃথিবী হেলে যাওয়া নয়।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ‘ভ্রমনকালে সূর্য হতে পৃথিবীর দুরত্ব সর্বদা সমান থাকে না। ৪ঠা জুলাই সূর্য হতে পৃথিবীর দুরত্ব ১৫ কোটি ২০ ল কিলোমিটার। এবং ৩রা জানুয়ারী ১৪ কোটি ৭০ ল কি.মি. থাকে। দুরত্ব বাড়লে আপাত: দৃষ্টিতে আয়তন কমে। সে কারণে জুলাই মাসে অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে সূর্যকে একটু ছোট এবং ডিসেম্বর মাসে অর্থাৎ শীতকালে একটু বড় দেখায়।’ মাত্র ৫০ ল কিমি (১৫কোটি ২০ল - ১৪ কোটি ৭০ ল) কাছে বা দূরে থাকার কারণে পৃথিবী থেকে সূর্যের আকার ছোট-বড় দেখা যায়। অথচ পৃথিবী বার্ষিক গতির কারনে প্রত্যেকটি গ্রহ-নত্র থেকে প্রতি মুহুর্তে ভিন্ন ভিন্ন দুরত্বে অবস্থান করছে। কিন্তু সারা বছর কোন গ্রহ বা নত্রের বিন্দুমাত্র আকার পরিবর্তন দেখা যায় না। প্রায় প্রত্যেকটি গ্রহ নত্র পৃথিবী বার্ষিক গতির সময় কখনো প্রায় ৩০ কোটি কি.মি. দূরে আবার কখনো ৩০ কোটি কি.মি. নিকটে অবস্থান করে থাকে। যেমন মঙ্গলগ্রহ সূর্য থেকে ২২.৮ কোটি কি.মি দূরে এবং পৃথিবী সূর্য থেকে ১৫.০ কোটি কি.মি দূরে অবস্থিত। মঙ্গল গ্রহ ৬৮৭ দিনে এবং পৃথিবী ৩৬৫.২৫ দিনে সূর্যকে একবার প্রদণি করে। তা হলে পরিভ্রমনের সময় পৃথিবী কখনো মঙ্গল গ্রহের (২২.৮-১৫.০)=৭.৮ কোটি কি.মি দূরে আবার কখনো (২২.৮+১৫.০) =৩৭.৮ কোটি কি.মি দূরে অবস্থান করে থাকে। মাত্র অর্ধ কোটি কি.মি দূরের জন্য সূর্যের আকার ছোট বা বড় দেখা যায় কিন্তু ৩০কোটি কি.মি দূরে বা কাছের মঙ্গল গ্রহের আকার বিন্দু মাত্র ছোট বড় দেখা যায় না। প্রকৃতপে পৃথিবী যদি উপবৃত্তাকারে অর্থাৎ কখনো দূরে বা কখনো নিকটে এক কথায় দুলতে দুলতে সূর্যের চারিদিকে ঘোরে তবে রাতের বেলায় আকাশে ভুতুড়ে কান্ড পরিলতি হবে। কেননা পৃথিবী যখন যে গ্রহ বা নত্রের কাছের দিকে আসবে সে গ্রহ বা নত্র ক্রমশ: বড় দেখা যাবে এবং যে গ্রহ বা নত্র থেকে পৃথিবী যত দূরে সরতে থাকবে সে গ্রহ বা নত্রকে ক্রমশ: তত ছোট দেখা যাবে। যেহেতু সারা বছরই কোন গ্রহ বা নত্রের আকার বিন্দু মাত্র পরিবর্তন পরিলতি হয় না সেহেতু প্রত্যেকটি গ্রহ-নত্র সহ সূর্যই পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে। 
বিজ্ঞানের ধারনায় ‘সমস্ত নত্রই গতিশীল। সূর্যও একটি নত্র এবং এটি ঘন্টায় প্রায় ৬৯,১৮৭ কিমি বেগে মহাশূন্যে পরিভ্রমন করছে।’ প্রকৃতপে নত্র ও সূর্যের এ পরিভ্রমন আজানার উদ্দেশ্যে নয়, বরং পৃথিবীকে কেন্দ্র করে পরিভ্রমন করছে।
অনেক সময় রাতে আকাশে কখনো উত্তর দিক থেকে দনি দিকে আবার কখনো দণি দিক থেকে উত্তর দিকে, আবার কখনো বা পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে নত্র চলতে দেখা যায়। তাকে কচ্যুত নত্র বলা হয়। মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিেিটর ভিতর এসব নত্র এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত অতিক্রম করে। সূর্যের চেয়ে কোটি কোটি গুন বড় এবং সূর্যের চেয়ে কোটি কোটি কি.মি দূরে কচ্যুত নত্র মাত্র ১০মিনিটের ভিতর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত পরিভ্রমন করা সহজ ও স্বাভাবিক হলে চব্বিশ ঘন্টায় চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ ও নত্র সমূহ পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে আসাও স্বাভাবিক ও সহজ।
বিজ্ঞানের ভাষায় ‘নিজ মেরুদন্ডের বা অরে চারিদিকে একবার ঘুরতে বা আবর্তন করতে পৃথিবীর প্রায় ২৪ ঘন্টা সময় লাগে। এ কারনে পৃথিবীর আবর্তনকে আহ্নিক গতি বলে। নির রেখায় পৃথিবীর আহ্নিক গতির বেগ প্রতি ঘন্টায় ১৭০০ কি.মি এর অধিক।’ অথচ পৃথিবী থেকে চন্দ্রের কপথে স্বাভাবিক যে কোন গতিতে প্রবেশ করা যায় না। স্বাভাবিক গতিতে চন্দ্রের ক পথে প্রবেশ করা যায় না বিধায় প্রথম ১০বার চন্দ্রের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। চন্দ্রের কপথে প্রবেশ করতে অতিক্রান্ত গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ২.৪কি.মি প্রয়োজন। দূর্ঘটনা ঘটুক বা যা হোক না কেন পৃথিবীর ক গতিশীল হলে স্বাভাবিক যে কোন গতিতে চন্দ্রের ক পথে প্রবেশ করা যাবে। স্বাভাবিক গতিতে চন্দ্রের কপথে প্রবেশ করা যায় না বিধায় পৃথিবী নয় চন্দ্রের কপথ গতিশীল।
বিজ্ঞান চন্দ্রকে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ বলে বর্ণনা করেছেন এবং চন্দ্র ২৭.৩৩ দিনে একবার পৃথিবীকে প্রদণি করে। পৃথিবীর কাছাকাছি থাকার জন্য চাঁদকে বড় দেখায়। এর নিজস্ব আলো নেই, সূর্যের আলোকে এটি আলোকিত হয়। বিজ্ঞানের এ তথ্য সঠিক হলে পূর্ণিমার পূর্বে সন্ধ্যা রাতে পূর্ব আকাশে এবং পূর্ণিমার পরে ভোর রাতে পশ্চিম আকাশে চন্দ্রের অন্ধকার অংশ উপরের দিকে পরিলতি হওয়ার কথা কিন্তু বাস্তব েেত্র ঐ সময় চন্দ্রের অন্ধকার অংশ নীচের দিকে পরিলতি হয়। কারণ চন্দ্র প্রায় ২৫ ঘন্টায় পৃথিবীকে একবার প্রদণি করছে এবং তার বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় প্রায় ২৯ দিনে আপন অরে উপর একবার ঘুরছে।
বিজ্ঞানের মতে প্রত্যেকটি গ্রহ যেমনি দুরত্বের কারণে ধারাবাহিকতার সঙ্গে সূর্যকে প্রদণি করছে তেমনি প্রত্যেকটি গ্রহকেও দুরত্বের ব্যবধানে ধারাবাহিকতার সঙ্গে আপন অরে উপর ঘোরা স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তব েেত্র তা ঘুরছে না। যেমন পৃথিবী ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিটে আপন অরে উপর ঘুরছে কিন্তু বুধ গ্রহ সূর্যের একেবারে নিকট থেকেও ৫৯দিনে আপন অরে উপর একবার ঘুরছে। আবার বৃহস্পতি গ্রহ সূর্য থেকে বহুদূরে অবস্থান করেও মাত্র ৯ঘন্টা ৫৫ মিনিটে আপন অরে উপর একবার ঘুরছে।
বিজ্ঞান চন্দ্রকে ২৭.৩৩ দিনে পৃথিবীকে একবার প্রদণি করার কথা উল্লেখ করেছে কিন্তু তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া উল্লেখ করেনি। সূর্যকে নিজ অরে উপর প্রায় ২৫দিনে একবার আবর্তিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছে কিন্তু তার নিজস্ব বিপরীত প্রতিক্রিয়া উল্লেখ করেনি। তাছাড়া প্রত্যেকটি গ্রহ উজ্জ্বল আলোকময়। পৃথিবীও গ্রহ হলে উজ্জ্বল আলোকময় হওয়ার কথা। কিন্তু পৃথিবী আলোকহীন- অন্ধকার। অর্থাৎ পৃথিবী সকল গ্রহ নত্র থেকে সম্পর্ণ ভিন্ন। পৃথিবী প্রতি সেকেন্ডে ২৯.৭৬ কি.মি বা প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১ ল ৭ হাজার ১৫২কি.মি গতিতে নিজস্ব কপথ ধরে সূর্যকে একবার সম্পর্ণ রূপে পরিভ্রমন করতে সময় লাগে ৩৫৬দিন ৬ঘন্টা অর্থাৎ পৃথিবীর বার্ষিক গতি এবং সূর্যকে সম্মুখে রেখে পৃথিবীর নিজ মেরুদন্ডের উপর দাঁড়িয়ে ২৪ ঘন্টায় একবার পশ্চিম হতে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে অর্থাৎ আহ্নিক গতি সম্পর্ণ ভূল। বরং সূর্যই প্রায় ২৪ ঘন্টায় পৃথিবীর চারিদিকে একবার ঘুরছে এবং তার বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় সূর্য আপন অরে উপর প্রায় ২৫দিনে একবার অবর্তিত হচ্ছে।
রাজনীতিকদের ইতিহাস থেকে শিা নেয়া উচিত
এমএম নিজামউদ্দীন
ইতিহাসের শিা হলো- ‘ইতিহাস থেকে কেউ শিা নিতে চায় না’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা, বিশেষ করে বাংলাদেশের নেতারা (সবাই নয়) তো মোটেও সে শিা নেন না। যদি বাংলাদেশের নেতারা শিা নিতেনই তো আজ দেশের প্রধান দুটি দলের এমন পরস্পর বিপরীতমুখী দৌড়ের দাপটে দেশবাসীকে দিশেহারা হতে হতো না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দুটি দলের রেষারেষিতে দেশের মানুষ আজ জীবন-জীবিকা নিয়ে তট’ হয়ে পড়েছেন। কেমন একটি পরি’িতিতে বাংলাদেশে ১/১১-এর উদ্ভব হয়েছিল তা আমাদের দেশের নেতারা বেমালুম ভুলে গেলেন। ভুলে গেলেন রাজনৈতিক নেতাদের উপর কী রকমভাবে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করেছিল তৎকালীন সামরিক উর্দিপরা শাসকরা। হায় নিয়তি! তারা ইতিহাসের সেই নির্মম নিষ্ঠুরতার শিকার হলেন যে ঝগড়া-বিবাদ থেকে আবারো তারই পুনরাবৃত্তি করছেন। দুটি দলের ঝগড়া-টানাটানিতে দেশের মানুষের আজ মরার অব’া আর কী! মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হ”েছ এই ভেবে যে, দু’দলের কর্মকাণ্ড এভাবে চলতে থাকলে কখন যেন আরেকটি ১/১১ সৃষ্টি হয় দেশে। তাই বলছিলাম, আমাদের দেশের নেতারা ইতিহাস থেকে শিা নেন না। কি‘ ইতিহাস বলে, ইতিহাস থেকেই শিা নেওয়া উচিত।
আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলের নেতারা সমর্থক-কর্মীদের মতামতের মূল্য আছে বলে মনেই করেন না। তারা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। তা ভালোই হোক আর মন্দই হোক। তার উৎকৃষ্ট নজির হলো- নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মনোনয়ন দিলেন সন্ত্রাসী-খ্যাত শামীম ওসমানকে। আর ’ানীয় নেতা-কর্মীদের অধিকাংশ বললেন, সত্যবাদী-সৎ ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোনয়ন দেয়া উচিত। কি‘ তা মানলেন না দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। শামীমই রইল তাদের প্রার্থী হিসেবে বহাল। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন না আইভীও। ’ানীয় নেতা-কর্মীদের সমর্থনই শেষ পর্যন্ত সার্থক হলো। বিপুল ভোটে শামীম ওসমানকে হারিয়ে জিতে গেলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীই। বিশ্লেষকরা বলছেন, সন্ত্রাসের বির“দ্ধে রায় দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জবাসী। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে প্রকৃত অর্থে দুটি প ছিল- একটি শান্তি এবং অন্যটি সন্ত্রাস। ’ানীয় সরকার নির্বাচন সত্ত্বেও সারাদেশে ঝড় তোলা নাসিক নির্বাচনে সন্ত্রাসের বির“দ্ধে শান্তির বিজয় এসেছে বলে মনে করেন তারা। নারায়ণগঞ্জের দু’দশকের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রোপটে এ নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হ”েছ। অর্থাৎ, এেেত্রও ইতিহাসের শিা, একজন সত্যবাদী কখনো এজন নীতিহীন সন্ত্রাসীর কাছে পরাজিত  হতে পারেন না- সে শিা নিলেন না নেতারা, এর ফলে পস্তালেনও তারা, লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হয়ে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো- নারায়ণগঞ্জের সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নারায়ণগঞ্জবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। কারণ, তারা তাদের ভোটের অধিকার যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন, নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে পেরে। জনগণের শক্তিই যে সবার ওপরে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন এই গণতান্ত্রিক চেতনা আরও জোরালো করেছে। ‘অরাজনৈতিক’ ’ানীয় সরকারের নির্বাচন হলেও এই নির্বাচনের রাজনৈতিক গুর“ত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ও ফলাফলের শিণীয় অনেক দিক রয়েছে, যা আমাদের জাতীয় রাজনীতির জন্য খুবই গুর“ত্বপূর্ণ। এটা আমাদের জাতীয় ইতিহাস হয়ে থাকবে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনসহ সংসদের কয়েকটি আসনে উপনির্বাচন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সিটি ও পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ এবং সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। সামান্য ত্র“টি-বিচ্যুতি ছাড়া এই সবগুলো নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। নির্বাচন কমিশন অধিকাংশ েেত্রই দায়িত্বশীলতা ও বিচণতার সঙ্গে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছে বলেই এটি সম্ভব হয়েছে। তবে শেষ পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতার েেত্র সরকার যে আচরণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য। নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে চাওয়ার পরও সরকার এ ব্যাপারে সহযোগিতা না করে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, সরকারের এই আচরণ দেশবাসী ভালোভাবে নেয়নি এটা সরকারকে মানতে হবে। আর এটা মানার শিাই দেয় ইতিহাস। আমরা আশা করব, সরকার এই নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে শিা নেবে।
গণতন্ত্রে জনগণই যে মূল কথাÑনারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়েছে। অরাজনৈতিক নির্বাচন হলেও প্রার্থীদের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন ছিল। জনগণ কোন ধরনের প্রার্থী পছন্দ করে, সে বিষয়টি সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিবেচনায় নিতে হবে। প্রথমত, জনগণ কী চায় সেটা যেমন বিবেচনায় নিতে হবে, তেমনি এ েেত্র ’ানীয় জনগণ বা তৃণমূলের মতামতকেই গুর“ত্ব দেওয়া উচিত। চাপিয়ে দেওয়া কিছু জনগণ মেনে নেয় না। সামনে জাতীয় নির্বাচনসহ যেকোনো নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার েেত্র রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি বিবেচনায় নেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ নাসিক নির্বাচনের ফল সম্পর্কে বলেছেন, এ নির্বাচন থেকে শিা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত, যাদের বির“দ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ আছে তাদের মনোনয়ন না দিয়ে সমাজসেবকদের-ভালো মানুষদের মনোনয়ন দেওয়া। তাহলে জনগণ তা সাদরে গ্রহণ করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, দল যাকে বলবে তাকেই মেনে নেবে- এ ধারণা ভেঙে দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জবাসী। নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানীশংকর রায় বলেছেন, এবারের নাসিক নির্বাচন হ”েছ অশুভ এবং সন্ত্রাসের বির“দ্ধে শান্তি ও শুভবুদ্ধির জয়। এটা শুধু নারায়ণগঞ্জের জন্য নয়, সারাদেশের জন্যই একটা মডেল হয়ে থাকবে।
’ানীয় সরকারের এই নির্বাচনই বেশ কিছুদিন ধরে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। গণমাধ্যমেরও পুরো মনোযোগ ছিল এই নির্বাচনের দিকে। সবকিছু মিলিয়েই নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। আমরা যদি ভবিষ্যতের জাতীয় নির্বাচনের কথা বিবেচনায় নিই, এটা আমাদের মানতেই হবে যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে সমঝোতার বিকল্প নেই। সামনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতেও এর বিকল্প নেই। আশা করি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এই সত্য স্বীকার করে সে অনুযায়ী কাজ করবে। মোটকথা, সংেেপ বলা যায়, ইতিহাসের শিা নিতে হবে সবাইকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন