Year-19 # Issue-10 # 22 April 2012


শত বাধার পরও এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস-এর অনলাইন সংস্করণের গ্লোবাল বিজনেস বিভাগে “In an Unlikely Corner of Asia, Strong Promise of Growth” শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ হয় গত ২৩ এপ্রিল। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিবাচক অগ্রগতির প্রশংসা করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হয়ে উঠছে বলে মন্তব্য করা হয়। পরদিন ২৪ এপ্রিল পত্রিকাটির নিউইয়র্ক সংস্করণেও (প্রিন্ট) নিবন্ধটি প্রকাশ হয় “In Bangladesh, a Quick Evolution From Backwater to Growth Center”  শিরোনামে।
বাংলাদেশ এশিয়ার নতুন দিগন্ত যেখানে সমুদ্র সৈকত ঘেঁষা বিলাসবহুল হোটেল ও রিসোর্টের বিস্তার সহজেই চোখে পড়ে। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের শহর কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে গড়ে উঠছে এ রকম অসংখ্য হোটেল ও রিসোর্ট। অনুকূল আবহাওয়ায় কক্সবাজার হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষের ছুটি কাটানোর সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত স্থান। শীতের সময় মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকায় ছুটির দিনগুলোতে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত মুখরিত হয়ে ওঠে ইতস্তত ছুটে বেড়ানো শিশু আর তাদের অভিভাবকদের পদভারে। বঙ্গোপসাগর উপকূলে অবস্থিত এই ছোট্ট শহরে ৫ বছর আগেও বিলাসবহুল হোটেলের সংখ্যা হাতে গোনা যেত। কিন্তু সেখানে এখন গড়ে উঠেছে অসংখ্য হোটেল, মোটেল আর গেস্টহাউজ। একটি প্রত্যন্ত সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা থেকে কক্সবাজারের সৈকত নগরীতে পরিণত হওয়া আসলে ১৬ কোটি মানুষের দেশটিতে গত কয়েক বছরে হওয়া উন্নয়নকেই নির্দেশ করছে। এ ব্যাপারে ঢাকাস্থ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, কক্সবাজারের এই উন্নয়ন বাংলাদেশের অন্যান্য খাতেও অর্জিত উন্নয়নকেই নির্দেশ করে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা এখানে দিন দিন বাড়ছে এবং ক্রমান্বয়ে এটিই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই উন্নয়ন সত্ত্বেও অন্যান্য উন্নয়নশীল এশীয় রাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশেও ধনী ও গরীবের মধ্যে বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক অস্থিরতা। আর এই বৈষম্য আর অস্থিরতা মাঝে মাঝেই সহিংস প্রতিবাদে রূপ নিচ্ছে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, বাংলাদেশের প্রখ্যাত শ্রমিক-অধিকারকর্মী আমিনুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনাকে। তিনি মূলত শ্রমিকদের নিম্ন বেতন ও কাজের খারাপ পরিবেশের বিরুদ্ধে সচেতনা বৃদ্ধি ও শ্রমিকদের জন্য পরামর্শমূলক কাজ করতেন। বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতই ছিলো মূলত তার প্রধান কর্মক্ষেত্র। কিছুদিন আগে তাকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তাকে নির্যাতন করা হয় বলে জানা গেছে ময়নাতদন্তে। ধারণা করা হচ্ছে, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের সচেতন ও সংগঠিত করার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যা করে একটি পক্ষ। এছাড়া বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করে দেশের ৭০ শতাংশ জনগণ। কৃষির ওপর নির্ভরশীল এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে। প্রতিবছরই দেশটির নিম্নভূমি প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয় মৌসুমি সামুদ্রিক ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে। বাংলাদেশে  বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বছরে মাত্র ১০০ কোটি ডলার। যা আলবেনিয়া ও বেলারুশের থেকেও অনেক কম। বিদেশি বিনিয়োগের এই পরিমাণ নিকটবর্তী থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ায় হওয়া বিদেশি বিনিয়োগের এক দশমাংশ মাত্র।
অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ এবং নড়বড়ে পরিবহন ব্যবস্থা , দুর্বল অবকাঠামো, রাজনৈতিক সংঘাত, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতির পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তির অভাব এদেশের বিনিয়োগের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করছে।  তবে এতসব বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশে গত এক দশক ধরে প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশ।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টর্ড ব্যাংকের অর্থনীতিবিদদের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি খুব শগগিরই ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এই হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার প্রতি দশকে দ্বিগুণ হবে বলেও ধারণা করছেন তারা। এইচএসবিসি ব্যাংকের হিসেবে বাংলাদেশ ২৬টি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির দেশের অন্তর্ভুক্ত। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত ও চীনের মত রাষ্ট্র। এই অর্থনৈতিক গতিশীলতা আগামী বছরগুলোতেও পৃথিবীর অনেক অংশের তুলনায় মোটামুটি স্থিতিশীল থাকবে বলেও আশা করা হচ্ছে। বৈশ্বিক উৎপাদন উন্নত বিশ্ব থেকে ক্রমাগত কম শ্রমব্যয়ের দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হওয়া এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। এই ধারাই এশিয়ার অন্যান্য অংশ যেমন চীনকে ৮০ এর দশকের পর থেকে বৈশ্বিক উৎপাদনের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত করেছিলো। আর এই ধারাটিই এখন বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হওয়া শুরু করেছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধান উৎপাদন খাত মূলত তৈরি পোশাককেন্দ্রিক। বর্তমানে এর রপ্তানি দাঁড়িয়েছে হাজার কোটি ডলারেরও বেশিতে। এতে ৩৬ লাখ শ্রমিক সরাসরি জড়িত। দেশটির অর্থনীতির ৭৮ শতাংশ স্থান দখল করে আছে তৈরি পোশাক খাত। এ ব্যাপারে পরামর্শক সংস্থা ম্যাককিনসে তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, বহু বছর ধরে বিশ্বের পাইকারি ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে চীন ছিলো সব সমস্যার সমাধান। কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমা পাইকারি ক্রেতারা বিশেষ করে গার্মেন্টস খাতের সঙ্গে জড়িতরা  চীনের বিকল্পের খোঁজ করছে। নিঃসন্দেহে তাদের জন্য বাংলাদেশ হতে যাচ্ছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।
অপ্রদর্শিত অর্থের কর ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব 
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
অপ্রদর্শিত অর্থ দেশের অর্থনীতির মূলধারায় আনার লক্ষ্যে অর্থাৎ এসব অর্থ সাদা করার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব করেছে দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন। শনিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্যালয়ে প্রাক-বাজেট আলোচনায় দেশের বিভিন্ন চেম্বারের পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য করা হয়। বৈঠকে খুলনা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (কেএমসিসিআই) সভাপতি মইনুল হুদা বলেন, “দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে। উৎস খোঁজা ও উচ্চ করারোপের কারণে তা দেশের মূল অর্থনীতির বাইরে থেকে যাচ্ছে। এ অর্থ দেশের অর্থনীতিতে আনা হোক তা দেশের বাইরের একটি মহল চায় না। তাই বাজেটের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ না দিয়ে এসআরও’র মাধ্যমে করা হলে তা দেশের অর্থনীতিতে মঙ্গল বলে আনবে।” সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) পরিচালক এমএস সেকিল চৌধুরী ‘শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের রাজস্ব আদায়ের মূল লক্ষ্য নির্ধারণ না করে আইনজীবী ও ডাক্তারদের মত যারা অনেক বেশি অর্থ আয় করে তাদের ওপর উচ্চহারে করারোপ’ করার প্রস্তাব করেন। একই সঙ্গে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের ওপর একটি নির্দিষ্ট হারে প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করে তিনি বলেন, ‘এতে বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানো বন্ধ হবে। পাশাপাশি বৈধপথে অর্থাৎ ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবণতা বাড়বে। কারণ দেশের অর্থনীতির অপ্রদর্শিত অর্থের মোট ৪৮ শতাংশ বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থ। এভাবে অর্থের প্রবেশ করে বিধিসম্মতভাবে তা আনার ব্যবস্থা করা হলে আগামী অর্থবছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিন্টেন্স যোগ হবে।’ এছাড়া সরকারি কমকর্তাদের বাড়িভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করে তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া বাড়ানো হলে অফিসে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া কমবে, রাস্তায় বস্তা বস্তা টাকা পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরাও অফিস আদালতে তাদের কাজ করায় সুবিধা পাবে।’ যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেসিসিআই) সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘আইপিওতে সামান্য ভুলের কারণে বেনাপোল বন্দরে পুরনো গাড়ি আমদানি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতি বছর সরকার একশ’ থেকে দেড়শ’ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।’ এছাড়া ব্যবসায়ী সংগঠনের ওপর থেকে কর পুরোপুরি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তিনি। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি হায়দার আলী বলেন, “গার্মেন্টস’র মাধ্যমে ভালোই আয় হচ্ছে। কিন্তু এরপরেও আমদানি-রফতানির মধ্যে বড় ব্যবধান রয়েছে। যা প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের মাধ্যমে সমন্বয় করতে হচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে রফতানি বাড়াতে ব্যবসায়ীদের সহায়তা দিতে হবে। কারণ ব্যবসায়ীরা কল-কারখানায় উৎপাদিত পণ্য রফতানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা না করতে পারলে প্রবাসীদের অর্থের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে না।” মানুষের মধ্য থেকে কর বিষয়ক ভীতি কমানোর জন্য করণীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানান হায়দার আলী। অপরদিকে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মোট ১৪টি সুপারিশ আলোচনায় তুলে ধরেন মন্ত্রণালয়ের ডিএস তপন কুমার নাথ। তিনি বলেন, ‘দেশে উৎপাদন হয় ওইসব পণ্যের ওপর সম্পূর্ণ শুল্ক আরোপের মাধ্যমে দেশীয় পণ্য ও আমদানি পণ্যের মধ্যে নূন্যতম ২০ শতাংশ পার্থক্য সৃষ্টি করা প্রয়োজন।’ এছাড়া কারখানার ভাড়ার ওপর প্রদত্ত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন তিনি। সবশেষে এনবিআর চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ম্যানুয়াল সিস্টেমে বেশিদূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই আমরা এনবিআরকে পুরোপুরি অটোমেশনের কাজে হাত দিয়েছি। আর আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এক্ষেত্রে একটি ব্রেকথ্রু দেওয়া সম্ভব হবে।’ এছাড়া ই-পেমেন্টের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চলতি মাসেই ই-পেমেন্ট চালু করার কথা থাকলেও তা আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে চালু করা সম্ভব হবে। দেশের মোট ২৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সর্বোপরি এনবিআরের মনিটরিং টিমকে শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
ইলিয়াসকে ছেড়ে দেওয়াই একমাত্র সমাধান: ফখরুল
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা এখনো আশাবাদী ইলিয়াস আলীকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে দেবে সরকার। এখনো বিকাল পর্যন্ত সময় আছে। এই সময়ের মধ্যেই ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়াই একমাত্রহচ্ছে সমাধান। তা না হলে সরকার নিজেই নিজের ক্ষতি করবে । শনিবার সকাল এগারোটায় জিয়ার মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
গত ২৩ এপ্রিল হরতালের দ্বিতীয় দিনে পুলিশ বিএনপি’র ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানসহ বিরোধী দলের ১৫ জন নেত্রীকে আটক করে। জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর শনিবার সকালে তারা জিয়ার মাজার জিয়ারত করতে যান। এসময় তাদের সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন। মাজার জিয়ারত শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ``এই সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বাস্তবে গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। এটি তারা আবারও প্রমাণ করলেন। কারণ সরকার বিএনপি’র একজন সিনিয়র নেত্রী সেলিমা রহমানকে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়ে যে কাজটি করেছে তাতে মনে হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রতি তাদের একটুও শ্রদ্ধাবোধ নেই।`` জেল থেকে মুক্ত হওয়া নেত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ``আমরা নতুন করে শপথ নিচ্ছি। ইলিয়াস আলীকে ফেরত না পেলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।`` শনিবার বিকেলে আবারও হরতাল ঘোষণা করা হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের বেঁধে দেওয়া সময় এখনো বাকি আছে। আমরা সরকারকে সময় দিয়েছি, দেখি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সরকার কি করে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ইলিয়াসকে ছেড়ে না দিলে বিকাল ৫টায় নতুন কর্মসচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।  সরকারের একজন মন্ত্রী ব্যারিস্টার রফিকুল হকের বক্তব্যকে শিশুসুলভ বলে মন্তব্য করেছেন। এ সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ``সরকারের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে কেউ এ ধরনের বক্তব্য আশা করে না। কিন্তু, দুর্ভাগ্য তারা এ ধরনের বক্তব্য অব্যাহত রেখেছেন।`` তিনি বলেন, সরকার ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনায় সান্ত্বনা তো দেয়ই না, বরং নানা ধরনের বিদ্রুপ করে কথা বলছে। এ সরকারের সময় ১২৭ জন মানুষ গুম হয়েছেন। দেশে একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। তিনি বলেন, ``যে ভাবে মানুষ গুম হচ্ছে তাতে দেশের প্রতিটি মানুষই আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। সরকার এই গুমের বিষয় নিয়ে নানা কথা বলছে। তারা বলছেন, ইলিয়াস আলী জীবিত ফিরে আসবেন। তাদের এই কথায় প্রতীয়মান হয় এ ঘটনায় সরকারের লোকেরা জড়িত।`` ইলিয়াস আলীর মতো একজন জনপ্রিয় নেতা গুম হওয়ার কারণে রাজনীতিকদের জীবন নিরাপত্তাহীন  হয়ে পড়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মাজার জিয়ারতের সময় বিএনপি’র ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সভানেত্রী নূরে আরা সাফা, সাধারন সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী বাজেটে ভর্তুকি কমানো হবে : অর্থমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
‘আগামী বাজেটে সার্বিকভাবে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে’ বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘ভর্তুকি সুবিধা ধনী-গরীব সমানভাবে পায়’। শুক্রবার বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত কৃষি বাজেট সংক্রান্ত এক প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। মতবিনিময় সভায় চ্যানেল আই-এর কৃষি কার্যক্রম ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে কৃষি ও কৃষকের জন্য করণীয় ৫৫ দফা সুপারিশমালা অর্থমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয়। চ্যানেল আই’র বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ এসব সুপারিশমালা তুলে ধরেন। উপস্থাপিত সুপারিশমালার মধ্যে কৃষি খাত সম্পর্কিত ১৮ দফা, পোল্ট্রি খাত সম্পর্কিত ১৪ দফা, মৎস্য খাত সম্পর্কিত ১২ দফা ও দুগ্ধ খাত সম্পর্কিত ১১ দফা সুপারিশ রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি বাজেটের পুরোটাই ভর্তুকি। দু’দিকে এ ভর্তুকি দিতে হয়। একটা হচ্ছে কৃষিতে, আর অন্যটি খাদ্যে।’ চলতি অর্থবছরে কৃষিখাতে যে পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে এটাকে ‘অসাধারণ’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে কৃষি খাতে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি রাখা হয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে এর আকার অনেক বেড়ে গেছে। এবারের মত ভর্তুকি আগামী বাজেটে দেওয়া সম্ভব হবে না।’ তবে আগামী বাজেটে পোল্ট্রি শিল্পকে সহায়তার জন্য একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানান তিনি। অন্যান্যের মধ্যে ভুট্টা উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী। সারে ভর্তুকি প্রদানের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়াসহ অন্যান্য সারের মূল্য বাড়লেও সরকার ভর্তুকি বাড়িয়েছে, কিন্তু দাম বাড়ায়নি। জ্বালানির মূল্যের সঙ্গে সারের মূল্যের সম্পর্ক রয়েছে। এবার কতটা ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হবে, সেটা বলা যাচ্ছে না। তবে সারে ভর্তুকি প্রদানের বিষয়ে এবার একটা কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। বিদ্যুৎ ও ডিজেলে ভর্তুকি সরাসরি কৃষকের হাতে পৌঁছে। কারণ এখানে কার্ড সিস্টেম চালু রয়েছে।
সারের ক্ষেত্রে এটা নেই।’ কৃষকের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি পণ্যের বিক্রয় মূল্য অবশ্যই উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে বেশি হতে হবে। তবে আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে।’ শাইখ সিরাজ বলেন, ‘কৃষি খাতে ভর্তুকি এটা কিন্তু কৃষকের জন্য করুণা করা নয়। তিনি বলেন, এ ভর্তুকিটুকু না দিলে সরকারকে অধিক দাম দিয়ে বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে।’  অন্যান্য প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিদ্যুতের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের জন্য নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটা কবে কার্যকর করা সম্ভব হবে জানি না।’ জেলা বাজেট ও একীভূত বাজেট পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘এতে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ে।’ দেশের শিল্পখাতের জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন যেসব প্রস্তাব দেয় সেটাকে ‘এলিট শ্রেণীর বাজেট’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। 
রুশ সমরাস্ত্র কিনতে চুক্তি ‘শিগগিরই’
শেখ শাহরিয়ার জামান
ঢাকা, এপ্রিল ২৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- রাশিয়া থেকে একশ কোটি ডলারের সমরাস্ত্র কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এবং এর চুক্তি শিগগিরই হবে বলে জানিয়েছেন মস্কোয় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এস এম সাইফুল হক। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়াত্ত তেল-গ্যাস সংস্থা গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তির পরপরই সমরাস্ত্র কেনার এই চুক্তি হচ্ছে। রাষ্ট্রদূত সাইফুল হক শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক থেকে দুই মাসের মধ্যে চুক্তি হবে বলে আমরা আশা করছি।” রাশিয়ার সঙ্গে কী পরিমাণ অর্থের চুক্তি হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হবে।” এর আগে একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মস্কোর কাছ থেকে ৮৫ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনবে ঢাকা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৭ হাজার ১৪০ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরের বাজেটের ৪ শতাংশের বেশি।
রাশিয়ার কাছ থেকে পাওয়া ঋণে এই সমরাস্ত্র কেনা হবে বলে রাষ্ট্রদূত জানান। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, দীর্ঘমেয়াদি ঋণের আওতায় রাশিয়ার কাছ থেকে এক স্কোয়াড্রন এমআরসিএ জেট ট্রেইনার বিমান এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রাডার কিনবে বাংলাদেশ। গ্যাজপ্রমের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন সাইফুল হক। শুক্রবারই তিনি মস্কো রওনা হন। রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমাদের বিশ্বস্ত মিত্রদের মধ্যে রাশিয়া অন্যতম। দেশটির সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে।” আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি ও পারমাণবিক সহযোগিতার ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে। দেশটির সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে পরিসর আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সহযোগিতার সম্পর্ক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিজয় যখন সন্নিকটে, তখন যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে পর পর তিন বার ভেটো দিয়েছিল সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে মাইনমুক্ত করে ব্যবহার উপযোগী করে তুলেছিল সোভিয়েত নৌবাহিনী।
কী দোষ ছিলো কৃষ্ণচূড়ার!

ঢাকা: কী দোষ ছিলো কৃষ্ণচূড়া গাছ দুটির। ঝড়ে সামান্য কাত হয়েছিলো। দু’একটি ডাল হয়তো ভেঙ্গে পড়েছিলো কোনো বাসভবনের ছাদে। কিন্তু তাতেই কতল হতে হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজের ড. ফজলে রাব্বী আবাসিক হলের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে বেড়ে ওঠা দুটি কৃষ্ণচূড়া গাছকে। শনিবার হলটির একাধিক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে ফোন করে জানালেন তাদের কষ্টের কথা। গাছ দুটিতে লাল ফুলের যেনো আগুন লেগেছিলো। গোটা এলাকা সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছিলো কৃষ্ণচূড়া ফুল। কিন্তু এখন সেখানটি বিরান খা-খা। একটি গাছ কেটে মাটিতে ফেলা হয়েছে। অপরটির ডালপালা কেটে ফেলা হয়েছে। বৈশাখের শুরুতে কৃষ্ণচূড়ার ডাল নয় কাটতে হয় ফুলকেই। এ কাজে একটুও মনখারাপ হয়নি কর্তৃপক্ষের। হলের আবাসিক ছাত্রদের অভিযোগের আঙুল সহকারী প্রভোস্ট ড. হাসানের দিকেই। দু’একজনতো অভিযোগ করেই বসলো অকারণেই গাছ দুটি নগর ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে কর্তৃপক্ষ। অবশ্য এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে ড. ফজলে রাব্বী হলের অ্যাসিসট্যান্ট প্রভোস্ট ড. হাসানকে পাওয়া যায়নি। তবে হলের নিরাপত্তারক্ষীদের দাবি গাছ দুটি কাত হয়ে পড়ায় না কেটে উপায় ছিলো না।
ওয়াই-ফাই সুবিধা পাচ্ছে মোবাইল গ্রাহকেরা
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল অপারেটরদেরকে ওয়াই-ফাই সার্ভিস সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইন্টারনেট সুবিধা মানুষের কাছে সহজলভ্য করতেই বিটিআরসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিটিআরসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ওয়াই-ফাই সার্ভিস সুবিধা চালু করতে বিটিআরসি এ সংক্রান্ত একটি গাইডলাইনের খসড়া তৈরি করেছে। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত হবে।প্রসঙ্গত,  যেকোনো সার্ভিস চালু করতে হলে বিটিআরসিকে প্রথমে একটি গাইডলাইন তৈরি করতে হয়। ওই গাইডলাইনের ওপর ভিত্তি করেই বিটিআরসি সুনির্দিষ্ট সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বিটিআরসি’র এক কর্মকর্তা জানান, ওয়াই-ফাই’র মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সত্যিকারভাবে ওয়ারলেস ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাদ পাবেন। ওয়াই-ফাই অপারেটরেদেরকে স্পেকটার্ম ব্যবহারের জন্য বিটিআরসিকে কোনো অর্থ দিতে হবে না। তবে এজন্য অপারেটরদেরকে ৫০০ টাকা দিয়ে একটি ফর্ম কিনতে হবে এবং প্রসেসিং ফি হিসেবে ৫০০০ টাকা নেওয়া হবে। এই সুবিধা চালু হলে মোবাইল ফোনের গ্রাহক যে কোনো ব্যক্তি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা সংস্থা তা ব্যবহার করতে পারবে। ওয়াই-ফাই সার্ভিসে অপারেটরের অপারেশন যন্ত্রাংশ থেকে ২০০ মিটার পর্যন্ত এ সুবিধা পাওয়া যাবে। গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বিটিআরসির ৮৩.ট মেগাহার্টজ এবং ১৫০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডইউথে অয়ারলেস সার্ভিস চালুর সুযোগ রাখা হয়েছে। এজন্য অপারেটরদেরকে ভাগাভাগির ভিত্তিতে স্পেকটার্ম ব্যবহার করতে হবে। কোনো মোবাইল অপারেটরকে বিশেষ স্পেকটার্ম বরাদ্দ দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা কাজী মনিরুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, এটি ভালো খবর। সরকার যদি এই সুবিধা চালুর সুযোগ দেয় তবে তা মোবাইল গ্রাহকদের জন্য ইন্টারনেট সুবিধা সহজলভ্য করবে।
রাজশাহীতে ভুট্টার আবাদ বেড়েছে
শরীফ সুমন
রাজশাহী: ক্রমবর্ধমান চাহিদা সামনে রেখে রাজশাহীতে ভুট্টার আবাদ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। চাষিরা বলছেন, এ মৌসুমে ভুট্টাচাষে কম খরচে বেশি লাভ হবে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার মথুরা গ্রামের ভুট্টা চাষি নূরুল আমিন বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে পোল্ট্রি, ডেইরি ও ফিসারি খাতে দিন দিন বাড়ছে ভুট্টার চাহিদা। আর এ চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ ভুট্টা আমদানি করতে হয়। ব্যাপক চাহিদা এবং ভালো লাভের কারণে দেশেও বাড়ছে ভুট্টার আবাদ। রাজশাহীতে ভুট্টার আবাদ বেশি হয় চলতি খরিপ-১ মৌসুমে। তিনি জানান, রবি মৌসুমের আলু ওঠানোর পর দেরি না করে ওই জমিতে এখানকার চাষিরা ভুট্টার আবাদ করে থাকেন। আলুর জমিতে আবাদ করার কারণে জমিতে বাড়তি সার দিতে হয় না। এছাড়া এ মৌসুমে একটু বৃষ্টিপাত হওয়ায় জমিতে তেমন সেচও দিতে হয় না। তাই রাজশাহীর চাষিরা এই মৌসুমে ভুট্টার আবাদ করে থাকেন। এ সময় ভুট্টা আবাদে খরচও কম হয়। নূরুল আমিন বলেন, বিঘাপ্রতি ভুট্টাচাসে খরচ হয় দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা। বিঘায় ফলন পাওয়া যায় ১৫ থেকে ২০ মণ। গত বছর এ সময় প্রতিমণ ভুট্টা বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। ফলে গত বছর এ সময় ভুট্টা আবাদ করে চাষিরা ভালো লাভ পেয়েছেন। একই উপজেলার বড়গাছী গ্রামের চাষি হোসেন আলী বাংলানিউজকে জানান, তার এলাকার চাষিরা এবার আলুর জমিতে ব্যাপকভাবে ভুট্টা আবাদ করেছেন। তিনিও ২ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছেন। গত সপ্তাহে কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে ভুট্টা খেতে তেমন সেচ দিতে হচ্ছে না। হোসেন আলী বলেন, রাজশাহীতে এবার আবহাওয়া এখনও পর্যন্ত ভুট্টা চাষের অনুকূলে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া এমন থাকলে এবার ভুট্টা আবাদে খরচ আরও কম পড়বে। এছাড়া অঞ্চলে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে। এতে কৃষকরা গতবারের চেয়ে বেশি মুনাফা পাবেন।  রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরুল আমিন বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৪২ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। গত বছর হয়েছিল ৪ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে।
ভোগান্তির আরেক নাম বথুয়াবাড়ী ব্রিজ! 

 প্রয়োজন অনুযায়ী ও সঠিক সময়ে অর্থ প্রাপ্তিতে জটিলতাসহ নানা কারণে কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে চলা বগুড়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বথুয়াবাড়ী ব্রিজের আরেক নাম এখন ‘ভোগান্তি’। দীর্ঘ ২০ বছর পর পাকাকরণের কাজ শুরু হলেও বগুড়াসহ সংশ্লিষ্ট সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার ৭ উপজেলার মানুষ ১ বছরের ভোগান্তি যেন মেনে নিতে পারছেননা। গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে থাকে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ বগুড়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার শেরপুর ও ধুনট উপজেলার সীমান্তবর্তী বথুয়াবাড়ীতে ১৯৯২ সালে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪০ মিটার দীর্ঘ বেইলি ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। এরপর প্রায় ১৫/২০ দফা মেরামত ও পুনর্মেরামতের পর অবশেষে ২০০৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কর্তৃপক্ষ স্থায়ীভাবে ব্রিজটি যান চলাচলের অনুপযোগী ঘোষণা করলে শুরু হয় যাত্রী ভোগান্তি। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারির অভাবে ব্রিজের উভয় পাশের যানবাহন চালকরাও গ্রহণ করেন বাড়তি ও অবৈধ সুযোগ।  এদিকে, দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরেই দেশের প্রধান দুই দলের নেতাদের মুখরোচক বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক পুলিশ সুপার মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাবিবর রহমানের ব্যক্তিগত চেষ্টায় ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে পরিকল্পনা কমিশনের সভায় বথুয়াবাড়ী ব্রিজটি পাকাকরণের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এরপর নানারকম দেনদরবার শেষে পুরাতন খুঁটির ওপরেই ৩ কোটি ৯০ লক্ষ টাকায় ২০১১ সালের ৫ মার্চ মেসার্স শামসুল হক নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ব্রিজটি নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেয় সড়ক ও জনপথ।  অন্যদিকে, কচ্ছপ গতিতে নির্মাণ কাজ চলায় এবং দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজটির ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে নদীর উভয় পাড়ের সঙ্গে সংযোগ আটকে ফেরি বন্ধ রেখে অস্থায়ী রাস্তা করে দেওয়া হয়। এতে করে যাত্রী ভোগান্তি কিছুটা কমলেও বাড়তি ভাড়া ও গাড়ি শ্রমিকদের হয়রানির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেননা কেউ। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বগুড়া অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান মনিরের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হন নি। তবে একই অফিসের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এস.ডি.ই.) মো. হামিদুল হক নির্মাণ কাজের গতির কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে জানান, বর্তমান সময়ে টাকার সমস্যা অকেটাই দূর হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বথুয়াবাড়ী ব্রিজের। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে।  নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট ম্যানেজার মো. সুমন বাংলানিউজকে জানান, ২০১১ সালের ৫ মার্চ ১৪৮.১০ মিটার দীর্ঘ এই ব্রিজের কাজ শুরু হয়েছে, যা অক্টোবর মাসের মধ্যেই শেষ করা হবে। তবে সঠিকভাবে অর্থ সরবরাহ না থাকায় এর কাজ কচ্ছপ গতিতে চলছে।
গ্রাফটিংয়ে সাফল্য এবার কাঁঠালে
আশরাফুল ইসলাম

দ্রুত সময়ে ভালমানের ফল পেতে গ্রাফটিং বা কলম পদ্ধতিতে এবার সাফল্য এসেছে কাঁঠাল গাছে। স্বাভাবিক নিয়মে কাঁঠাল গাছে ৬-৮ বছরে ফল ধরলেও গ্রাফটিং পদ্ধতিতে মাত্র তিন বছরেই সেটা সম্ভব হয়েছে।

বাণিজ্যিকভাবে আবাদ, বিদেশে রফতানি, বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদনে জাতীয় ফল কাঁঠালকে নিয়ে যখন এসব সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে, তখন এ ধরণের সাফল্য খুবই ইতিবাচক বলে মনে করছেন ফল গবেষক ও চাষিরা। দেশে জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপের ফলে খাদ্য ও পুষ্টি ঘাটতি মেটাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ফল এবং ফসলের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের প্রতি। একই সঙ্গে জোর দেওয়া হচ্ছে স্বল্প সময়ে ভালো ফলন পাওয়ার প্রতিও। আর এসব গবেষণার ফসল হচ্ছে গ্রাফটিং পদ্ধতি। যা কম সময়ে দ্রুত ভালমানের ফলন পেতে ইতোমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। আম ও লিচুর ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। কাঁঠাল গাছে এ গ্রাফটিং বা কলম পদ্ধতি খুব পরিচিত না হলেও সাম্প্রতিক গবেষণায় তা সাফল্য পেয়েছে। এ পদ্ধতির অন্যতম দিক হচ্ছে, স্বল্প সময়েই সমগুণ সম্পন্ন ফল পাওয়া যাবে।
কাঁঠাল গাছে গ্রাফটিং পদ্ধতির গবেষক ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফল বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বাংলানিউজের কাছে এই গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। জিল্লুর রহমান জানান, কাঁঠাল জাতীয় ফল হওয়া সত্ত্বেও অতীতে এটি বেশি গুরত্ব পায়নি। দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া কাঁঠালের স্বাদ ও আকৃতির ভিন্নতা রয়েছে। রোপনের ৭-৮ বছর পর ফল ধরে, তাই কাঁঠাল গবেষণায় সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। এমন বাস্তবতায় এ ফল গবেষণায় বেশি আগ্রহী হন না বিজ্ঞানীরাও। তিনি জানান, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে কাঁঠালের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিদেশে রফতানি ও বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠালনির্ভর শিল্প গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় এনে ২০০৮ সালের জুলাই মাসে বারি’র উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফল গবেষণা মাঠে কাঁঠালের গ্রাফটিং করা চারা রোপন করা হয়। পাঁচ ক্যাটগরিতে বিভক্ত ২০টি চারার ওপর এ গবেষণা চালানো হয়। গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে জিল্লুর রহমান জানান, ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে পৃথক পরিচর্যা করে রোপণের তিন বছরের মাথায় এ মৌসুমে ২টি ক্যাটাগরির গাছে কাঁঠাল ধরে। তবে এ গবেষণা একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই ভালো সাফল্য পেতে এ বিষয়ে অধিকতর গবেষণা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
মুক্তাগাছার জমিদারদের অনন্য স্থাপত্যকীর্তি
এম. আবদুল্লাহ আল মামুন খান
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদারদের স্থাপত্যসমৃদ্ধ স্থাপনা এখনো পর্যটকদের দারুণ কৌতূহল জাগায়। মুক্তাগাছার জমিদাররা শুধু খাজনা আদায় আর ভোগ-বিলাসেই মত্ত থাকেননি তারা অনন্য সুন্দর স্থাপনা নির্মাণ করে তাদের রুচির পরিচয় রেখে গিয়েছেন। কর্মের মাধ্যমেই ত‍ারা অমর হয়ে রয়েছেন। তাদের স্থাপত্যকীর্তির মধ্যে অন্যতম হলোÑ শশী লজ (বর্তমানে মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ), আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল (বর্তমানে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ), সূর্যকান্ত হাসপাতাল (বর্তমানে এসকে হাসপাতাল), রাজ রাজেশ্বরী ওয়াটার ট্যাঙ্ক, শিব মন্দির, মহাকালী স্কুল, বিদ্যাময়ী স্কুল, ময়মনসিংহ টাউন হল, পণ্ডিতপাড়া ক্লাব অন্যতম। এরমধ্যে আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল লোহার কুঠি বলে পরিচিত। বাড়িটি তৈরি করতে লোহার পরিমাণ বেশি লেগেছিল বলেই এর এ নামকরণ হয়েছে। বহু বিখ্যাত ব্যক্তি এ বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন। অন্যতম হলেন- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।  রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত এ ক্যাসেলের দামি শ্বেত পাথর একে একে খোয়া গেছে। স্মৃতির সঙ্গে এ উদাসীনতা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে রীতিমতো ব্যথিত করে। এ ব্যথা পেরিয়ে সামনে কিছু দূর এগুলেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সামনের বিরাট প্রাচীর ঘেরা ফটক। ফটক পেরুলেই ফোয়ারা। ফোয়ারার মাঝে নার্সিসাস ভঙ্গিতে নারী মূর্তি। এটিই শশী লজ। আজ এ লজে নেই বিস্ময়কর সেই মিউজিক্যাল সিঁড়ি। যা বেয়ে উঠতে গেলেই বেজে উঠতো মোহনীয় সঙ্গীত। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে এ বাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয় মিউজিক্যাল সিঁড়ি। এটি যথাস্থানে ফিরিয়ে আনতে শশীকান্ত ব্যয় করেছিলেন ওই সময়ে ৩ লাখ টাকা। মুক্তাগাছার জমিদারদের বিভিন্ন স্মৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় যা পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। পূর্ব বাংলার প্রথম ঘূর্ণায়মান নাট্য মঞ্চটি ভূপেন্দ্র কিশোর মুক্তাগাছার আটানী বাড়িতে স্থাপন করেন। আজো তার গোলাকৃতি চিহ্ন সেই বাড়ির পরিত্যক্ত স্থানে স্পষ্ট হয়ে আছে। মুক্তাগাছায় রাজ রাজেশ্বরী মন্দির, শিব মন্দির, বিষ্ণু সাগর (বিশাল আকারের দীঘি), বিভিন্ন পরিখা পর্যটকদের ইতিহাসের ঢঙ্কা বাজায়। বীরেন্দ্র কিশোর শশীকান্ত নামে পরিচিত ছিলেন। তার নির্মিত শশী লজ এখনো অনেকের মনে বিস্ময় জাগায়। তিনি রাজা থেকে মহারাজা পর্যন্ত উপাধি পেয়েছিলেন। ১৯২০ সালে বাংলার গভর্নর রোনাল্ড তাকে মহারাজা উপাধি দেন। তিনি ছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। এ বংশের জমিদারদের জন্যই ময়মনসিংহ শহর ‘জমিদারদের শহর’ বলে পরিচিত। দৃষ্টিনন্দন শশী লজ, আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল, এঁদেরই কীর্তি। ময়মনসিংহে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন মহারাজ শশী কান্তের আমন্ত্রণে। ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কবি ময়মনসিংহে আসেন । বেশ কয়েকদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবস্থান করেছিলেন। কবিগুরু অবস্থান করেছিলেন সূর্যকান্তের বাগানবাড়ি আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে । কবিগুরুর ময়মনসিংহে আগমন ময়মনসিংহবাসীর জন্য পরম গৌরবের। 
ওরা রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে
ফিরোজ আমিন সরকার
ফাকা মাঠের মধ্যে বাঁশের খুঁটির ওপর একটি খড়ের চালা। চারদিকে কোনো বেড়া নেই। এক পাশ থেকে তাকালে অন্য পাশের দৃশ্যপট অনায়াসে দেখা যায়। ঘরের পাশে উড়ছে একটি পতাকা। স্কুলের চিহ্ন বলতে ওই পতাকাটি। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সর্বমঙ্গলা রেজিস্টার্র্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সর্বমঙ্গলা গ্রামের কয়েকজন উদ্যোমী তরুণ সর্বমঙ্গলা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। ২০১০ সালে বিদ্যালয়টি নিবন্ধন হয়। বর্তমানে পাঁচটি শ্রেণীতে দেড়শ’ শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করছে। শিক্ষক আছেন চারজন। বাঁশের বেড়ার তৈরি ঘরটির দৈর্ঘ্য ৩২ ফুট, আর উচ্চতা ৭ ফুট। চারপাশের অবস্থা জরাজীর্ণ। রোদের তীব্রতা থেকে রক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের মাথার ওপরে খড়ের তৈরি আচ্ছাদনটিও অর্ধেক খসে পড়েছে। সেই ঘরেই তিনটি  শ্রেণিকক্ষ। মাঝখানে নেই কোনো বিভাজন।
তিনটি শ্রেণিকক্ষের মাঝে ঝুলছে একটি মাত্র ব্লাকবোর্র্ড। স্কুলটিতে বেঞ্চ আছে ১৮ জোড়া। তারও অর্ধেক ভাঙা। মূল্যবান কাগজ ও খাতা সংরক্ষণের জন্য কোনো কোনো আলমারি নেই। ফলে জরুরি কাগজপত্র প্রধান শিক্ষক তার বাড়িতে নিয়ে যান। স্কুলটিতে নেই কোনো শৌচাগার। প্রকৃতির ডাকে শিক্ষার্থীরা চলে যায় আশপাশের মাঠে। আর পিপাসা পেলে স্কুলের পাশের বাড়ির নলকূপই তাদের একমাত্র ভরসা। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী নাসিমা আক্তার বলে, সামান্য বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় ক্লাসরুম। প্রখর রোদেও হয় ভীষণ কষ্ট। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আল আমিন জানায়, তৃষ্ণা পেলে বাড়িতে গিয়ে পানি খেয়ে আসতে হয়। ফলে পড়ালেখার সময় নষ্ট হয়। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র মোসাদ্দেক আলী জানায়, প্রচ- রোদের সময় ক্লাসরুমে বসে থাকা যায় না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকেজ বলেন, ‘এ স্কুলের দুই কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনো স্কুল নেই। এই স্কুলটিই এলাকার একমাত্র ভরসা। সমস্যাগুলো অনেকবার কর্র্তৃপক্ষকে জানানো হলেও সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা এ স্কুলে পড়ালেখা করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবকাঠামো না থাকলেও গত বছরে এ স্কুল থেকে ২২ শিক্ষার্থী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২১ জন কৃতকার্য হয়’। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাজেদুর রহমান জানান, প্রতি বছর নিজ উদ্যোগে স্কুলঘরের বেড়া মেরামত করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পর সেগুলো আবারও নষ্ট হয়ে যায়। স্কুলের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।  বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রত্যুষ চ্যাটার্জী জানান, বিদ্যালয়টির অবকাঠামো নির্মাণের জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে।
মাছ ও দেশি মুরগীর দাম নিয়ে নৈরাজ্য
মহিউদ্দিন মাহমুদ
মাছ-মুরগী ও সবজির বাজারে দাম নিয়ে চরম নৈরাজ্য চলছে। বিক্রেতারা নিয়মকানুনের বালাই না করেই একেক জনের কাছে একেক রকম দাম আদায় করছেন।
এক্ষেত্রে রাজধানীর বাজারগুলোতে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মূল্য তালিকা ঝোলানোর কথা থাকলেও বাজার কমিটিগুলো বিষয়টিকে পাত্তা দিচ্ছে না। এ অনিয়ম দূর করার কাজে নিয়োজিত ট্রেড্রিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মোবাইল টিম ঝিমিয়ে পড়েছে অনেক আগেই। ফলে দাম নিয়ে বাজারগুলোতে নৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করেছে। শনিবার মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট ও কৃষি মার্কেটসহ কয়েকটি কাঁচা বাজার ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে। দেখা যায় একই মাছ একজন ক্রেতার কাছে যত টাকা বিক্রি করা হচ্ছে তা অন্য আরেকজন ক্রেতা কিনছেন তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা দিয়ে। কখনো দেড় থেকে দুই গুণ বেশি দামও আদায় করা হচ্ছে কারো কারো কাছ থেকে। মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে এক বিক্রেতা মাঝারি আকারের (২-২.৫ কেজি) কাতল মাছের কেজি বিক্রি করছেন ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা। অন্য দিকে সেই একই বিক্রেতা কিংবা অন্য আরেকজন বিক্রেতা একই আকারের মাছের দাম হাকছেন প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। এ রকম ঘটনা ঘটছে সবজির বাজার ও মুরগীর বাজারেও। মুরগী’র বাজারে দেশি ও পাকিস্তানি মুরগীর মধ্যে গোলমাল পাকানো খুব স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিকা হিসেবে আধা কেজি ওজনের একটি দেশি মুরগী কারো কাছে ৩০০ টাকা, ৩৫০ টাকা, ৪০০ টাকা যার কাছে যা ইচ্ছে দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। সবজির বাজারেও বিক্রেতার বদলের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত পার্থক্য হয়ে যায়। এর বাইরে আবার মাছ কেজি হিসেবে বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও ইলিশ মাছসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ ঠিকা নিয়মে বিক্রি হচ্ছে। এমনিতেই নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে ক্রেতারা দুর্ভোগে রয়েছেন। তার উপর দাম নিয়ে এত অনিয়ম তাদের ভোগান্তিকে বাড়িয়ে দিয়েছে আরো কয়েকগুণ। এ বিষয়ে একজন সাধারণ ক্রেতা বনি আমিন সাগর বাংলানিউজকে বলেন, ‘এরকম অবস্থার মধ্যে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়তে হয়। আমরা বুঝতে পারি না কোন একটা জিনিসের প্রকৃত মূল্য। যার ফলে প্রায়ই প্রতারিত হচ্ছি। এ রকম অনিয়মের অবসান হোক এটাই চাই।’ অন্যদিকে মাছ বিক্রেতা কাউসার আহমেদ বলেন, ‘আমরা যে দামে জিনিস কিনি আনি সেই অনুযায়ীই বিক্রি করতে হয়। মাছের কোয়ালিটির, সাইজের উপর অনেক সময় দাম সামান্য কম বেশি হয়ে থাকে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও ট্রেড্রিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর চেয়ারম্যান বিগ্রেডিয়ার সারওয়ার জাহান তালুকদারকে পাওয়া যায়নি।

৮৫৭ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বৃত্তি দিলো ডাচ বাংলা ব্যাংক
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
‘হোক দীপ্তিময় জীবনের স্বপ্ন পূরণের সেতু বন্ধন’ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে আবারও অসহায় ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালো বেসরকারি খাতের ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকের সামাজিক কল্যাণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ৮৫৭ জন শিক্ষার্থীকে প্রদান করা হলো শিক্ষা বৃত্তি। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ২০১১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন। শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আনুষ্ঠানিকভাবে মেধাবীদের হাতে এ শিক্ষাবৃত্তি তুলে দেন। ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান সায়েম আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএস তাবারেজ।
বিদায় গার্দিওলা
স্পোর্টস ডেস্ক

২০০৮ সালে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার দায়িত্ব নেন পেপ গার্দিওলা। তার অধীনেই ভিন গ্রহের ফুটবল খেলার খ্যাতি অর্জন করে বার্সা। ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সান্দ্রো রোসেল তাকে ঘোষণা করেছেন বার্সেলোনার ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা কোচ। চার মৌসুমে বার্সাকে এনে দিয়েছেন ১৩টি শিরোপা। এত অর্জনও মায়ার বাঁধনে বাঁধতে পারেনি সফল এই কোচকে। মেসি, জাভি, ইনিয়েস্তা ও ভিয়াদের মতো তারকা ফুটবলারদের গুরু সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের বিষয়ে বলেন, ‘কারণ খুবই সাধারণ। চার বছর যথেষ্ঠ। আমি ক্লান্ত এবং আমার নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। এখানে প্রত্যাশা অনেক উঁচুতে থাকে এবং একজন ম্যানেজারকে খুবই শক্ত হতে হয়।’ গত ডিসেম্বরেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বার্সার হয়ে আর থাকছেন না গার্দিওলা। তবে মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই সবকিছু পরিস্কার করে দেওয়ার জন্য লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা হাত ছাড়া হওয়ার বিষয়টি রয়েছে। গার্দিওলা বলেন, ‘আমরা এখন দুটি বড় প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়েছি। তাই ঘোষণা দেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।’ স্পেনের সাবেক এই মিডফিল্ডার বলেন  ‘আমি প্রত্যেক খেলোয়াড়কে ধন্যবাদ জানাই। তাদের মতো গ্রেট খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেওয়া ছিলো আমার সবচেয়ে বড় পাওনা। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সবকিছুকেই সম্ভবে পরিণত করেছিলো তারা। তাই আমি ছুটিতে যাচ্ছি।’ চার বছর বার্সার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন গার্দিওলা। এই সময়ের মধ্যে ১৩ টি শিরোপা জিতেছে বার্সা। এর  মধ্যে রয়েছে ৩টি লা লিগা শিরোপা, ২টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ও দুইবার ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি।
গুরুর বিদায়ে আবেগাপ্লুত মেসি
স্পোর্টস ডেস্ক

মাদ্রিদ: ফিফা ব্যালন ডি’ওরের পুরস্কার, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বা লা লিগার শিরোপা সবই জিতেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। যার তত্ত্বাবধানে আলো ছড়িয়েছেন মাঠে এবং উড়েছেন মুক্ত বিহঙ্গের মতো তার বিদায়ের খবরে বিমর্ষ ছিলেন বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড। তাই গুরু পেপ গার্দিওলার পদত্যাগ ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হননি ২৪ বছর বয়সী এই ফুটবলার। গার্দিওলার সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর নিজের ফেসবুকে মেসি লিখেছেন, ‘ক্যারিয়ারে তিনি আমাকে সব কিছু দিয়েছেন। এমনকি ব্যক্তিগত অনেক ব্যাপারেও তার কাছে থেকে সহায়তা পেয়েছি। এসবের জন্য তাকে ধন্যবাদ দিতে চাই আমি।’ গার্দিওলা মেসির ওপর যথেষ্ঠ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তাই আবেগাপ্লুত মেসি বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম, পেপের (বার্সা কোচ) সংবাদ সম্পেলনে উপস্থিত হবো না। কারণ আমি জানি, তার (গার্দিওলা) দৃষ্টি কষ্টের পাথরের মতো পড়বে খেলোয়াড়দের ওপর। এজন্য সম্মেলনে নিজেকে প্রদর্শন না করার সিদ্ধান্ত নেই আমি।’ মেসি ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে গার্দিওলার পদত্যাগের বিষয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বার্সার অধিনায়ক কার্লেস পুয়োল, সেস ফ্যাব্রিগাস, গেরার্ড পিকে, দানি আলভেস ও আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। ফ্রাব্রিগাস বলেন, ‘যদিও আমি এক বছর খেলেছি গার্দিওলার অধীনে। তারপরও আমার কাছে মনে হয়েছে এটা দীর্ঘ সময়। কারণ গার্দিওলা ছিলেন আমার শৈশবের নায়ক।’ আলভেস টুইটারে লিখেন, ‘আমার কাছে এটি দুঃখের দিন। কারণ তিনি আমাদের সন্তানের মতো স্নেহ করতেন।’ ২০০৮ সালে বার্সার কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন পেপ গার্দিওলা। চার বছর তার অধীনে দারুণ খেলার পরও চুক্তি নবায়ন না করে এই মৌসুমের শেষ দিকে ক্লাব থেকে সরে দাঁড়নোর ঘোষণা দিয়েছেন স্পেনের সাবেক এই মিডফিল্ডার। তার বদলে পরবর্তীতে বার্সার প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেবেন তিতো ভিলানোভা। 
গর্ভবতী মায়ের যত্ন 
মো. আবদুর রহমান
কথায় বলে ‘শিশুর হাসিতে মায়ের খুশি’। আর এই হাসি দেখতে হলে মাকে গর্ভকাল থেকেই থাকতে হবে হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তামুক্ত। গর্ভবতী মাকে নিয়মিত ঘুম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। সর্বোপরি সুস্থ শিশুলাভের জন্য গর্ভবতী মায়ের পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রয়োজন। পরিবারের সবারই গর্ভবতী মাকে এ ব্যাপারে সাহায্য ও সহযোগিতা করা উচিত। গর্ভবতী মায়ের নিজের প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশুর জন্য বাড়তি খাদ্যের প্রয়োজন হয়। তাই গর্ভবতী মা ও তার অনাগত শিশুর সুস্থ জীবনের জন্য গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও দারিদ্র্যের কারণে আমাদের দেশের অনেক গর্ভবতী মা প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করেন না। মায়ের অপুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ শুধু তার জন্যই ক্ষতিকর নয়, ভ্রুণ এবং নবজাত শিশুর জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর। গর্ভাবস্থায় মা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ না করার কারণে শিশু ও গর্ভবতী মা উভয়ই অপুষ্টিতে ভোগেন। আর মা যদি গর্ভাবস্থায় অপুষ্টিতে ভোগেন তাহলে যে শিশু জন্মগ্রহণ করবে তার জন্ম-ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হবে, শিশু জন্মগতভাবেই অপুষ্টি নিয়ে জন্মগ্রহণ করবে। এ ধরনের শিশুর মৃত্যুঝুঁকিও বেশি থাকে। পক্ষান্তরে গর্ভকালীন সময়ে মা যদি পুষ্টিকর খাদ্য না খান, তাহলে মায়ের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়বে। এ ধরনের মায়েদের গর্ভপাত, অপরিণত ও মৃতশিশু প্রসব এবং প্রসবকালীন মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি থাকে। গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন ভাত, মাছ (মলা, ঢেলা ইত্যাদি ছোট মাছ), সম্ভব হলে মাংস, ডিম, দুধ এবং ঘন ডাল, সিমের বিচি প্রভৃতি খেতে হবে। এছাড়া গাঢ় সবুজ ও হলুদ রঙের শাকসবজি ও তাজা ফলমূল, বিশেষত পাকা আম, পেঁপে, কাঁঠাল, পেয়ারা, আনারস, কচুশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, লালশাক, গাজর, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া এসব ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত। কারণ ভিটামিন ‘এ’ শরীরে আয়রন (লৌহ) ব্যবহারে সাহায্য করে। আমলকি, পেয়ারা, বাতাবিলেবু, কামরাঙা, পাতি লেবু, কাগজী লেবু, কুল ইত্যাদি খেলে সহজেই ভিটামিন ‘সি’-র অভাব পূরণ হবে। শরীরে আয়রন (লৌহ) শোষিত হওয়ার জন্য ভিটামিন ‘সি’ অত্যন্ত জরুরি। গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্যালসিয়ামও গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়ামের অভাবে উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-একলাম্পশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দুধ, ঘি, মাখন, ডিমের কুসুম, ছোট মাছ (কাঁটাসহ) কলিজা, ডাল, মাংস এবং সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল ইত্যাদিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। কোনও কারণে সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার জোগাড় করা সম্ভব না হলেও বাড়িতে তৈরি স্বাভাবিক খাবার যেমন- একটু বেশি ভাত, বেশি পরিমাণ ঘন ডাল, তরকারি এবং পর্যাপ্ত ফলমূল খেলে এই প্রয়োজন মিটবে। গর্ভাবস্থায় মাকে লৌহসমৃদ্ধ খাবার (যেমন- মাংস, ডিম, কলিজা, ডাল, কাঁচাকলা, কচুশাক, লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক) এবং অন্যান্য সবুজ শাকসবজি ও টাটকা ফলমূল প্রতিদিন বেশি করে খেতে হবে। গর্ভবতী মায়ের খাদ্যে আয়োডিনযুক্ত লবণ এবং সামুদ্রিক মাছ ও সামুদ্রিক মাছের তেল থাকা উচিত। প্রচুর শাকসবজি ও তাজা ফলমূল খেলেও আয়োডিনের অভাব পূরণ করা যায়। গর্ভকালীন সময়ে দৈনিক ১৫-২০ গ্লাস বিশুদ্ধ ও আর্সেনিক মুক্ত নিরাপদ পানি পান করা উচিত। এ সময় মায়েদের বারে বারে খেতে হয়। সন্তান প্রসবের সময় মায়ের শরীরের ওপর অনেক চাপ পড়ে এবং তার দেহের অনেক ক্ষয় হয়। দেহের এ ক্ষয়পূরণ, পুষ্টি সাধন এবং দেহকে সুস্থ-সবল ও নিরোগ রাখার জন্য গর্ভবতী মায়ের মতো প্রসূতি মাকেও বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এছাড়া শিশুর জন্মের পরই তার খাবার অর্থাৎ মায়ের দুধ তৈরি হওয়ার জন্য মায়ের অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন হয়। জন্মের পর থেকে পাঁচ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ খেতে দিতে হবে। শিশুর জন্য মায়ের শাল দুধ ও বুকের দুধ পৃথিবীর সেরা পুষ্টিকর খাবার। মায়ের দেহ থেকে বুকের দুধের উপাদান তৈরি হয়। সুতরাং প্রসূতি মায়ের নিজের স্বাস্থ্য রা ও বুকের দুধ তৈরি করার জন্য মাকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি সমৃদ্ধ সব ধরনের খাবার খেতে হবে। প্রসূতি মহিলাদের নিজের দেহের ক্ষয়পূরণ ও বুকে দুধ উৎপাদনের জন্য প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। এজন্য প্রসূতি মাকে প্রতিদিন প্রোটিন জাতীয় খাবার যথা-মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে। সাধারণত প্রসূতি মায়ের বুকে দৈনিক ২০-৩০ আউন্স দুধ তৈরি হয়। ২ গ্রাম খাদ্য প্রোটিন থেকে ১ গ্রাম দুধের প্রোটিন তৈরি হয়। এটি তখনই সম্ভব মায়েরা যদি দৈনিক ১০০ গ্রাম প্রোটিনের মধ্যে কমপে অর্ধেক বা দু-তৃতীয়াংশ প্রাণিজ প্রোটিন যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি গ্রহণ করেন। প্রাণিজ প্রোটিন মায়ের দুধের উৎকৃষ্ট উপাদান। শিশুর শরীর বৃদ্ধি শিশুকালই সবেচেয়ে বেশি হয়। এজন্য প্রচুর প্রোটিন প্রয়োজন। আর এ প্রোটিন শিশু মায়ের বুকের দুধ থেকেই পেয়ে থাকে। ক্যালসিয়াম ও লৌহজাতীয় খাবারও প্রসূতি মাকে বেশি করে খেতে হবে, যাতে দুধের মাধ্যমে এ দুটি উপাদান শিশুর দেহের চাহিদা পূরণ করতে পারে। ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য প্রসূতি মাকে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। আর লৌহের চাহিদা পূরনের জন্য মার লৌহসমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত। স্তন দানকালে মায়ের প্রথম ছয় মাস অতিরিক্ত ক্যালরি প্রয়োজন। এ ক্যালরি দুধ তৈরি ও নিঃসৃত করার কাজে ব্যয় হয়। সেজন্য বেশি করে ভাত, রুটি ইত্যাদি খাওয়া উচিত। তাছাড়া ভিটামিন ‘এ’, ‘বি-১’ (থায়ামিন), বি-২ (রাইবোফেবিন) এবং ভিটামিন ‘সি’র চাহিদা পূরণের জন্য প্রসূতি মাকে প্রতিদিন চাহিদার অতিরক্তি শাক-সবজি ও মৌসুমী ফলমূল খেতে হবে। প্রসূতি মা যখন শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, তখন তার শরীর থেকে প্রতিদিন অনেক পানি বের হয়ে যায়। এ ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য তাকে প্রচুর পানি পান করতে হবে, তাহলে দুধের প্রবাহ সহজ হয়। এছাড়া রসালো ফলমূল এবং বেশি করে ঝোল দিয়ে রান্না করা মাছের তরকারিও বেশ উপকারী। বাচ্চা প্রতিদিন যে পরিমাণে মায়ের দুধ খায় অন্তত সেই পরিমাণ পানি জাতীয় খাবার প্রসূতি মায়ের শরীরে ফিরিয়ে দেয়া উচিত। শিশু জন্মের পর কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ প্রসূতি মাকে ভারী কোনও কাজ করতে দেওয়া যাবে না। এ সময় মা যাতে পরিপূর্ণ বিশ্রাম পান সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। প্রসূতি মায়ের পরিমিত বিশ্রাম যেমন মায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, তেমনি শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাহায্য করে।


ঢালিউডের নায়িকা নিপুণ
ঢালিউডের নায়িকা নিপুণ। অভিনয় প্রতিভার প্রমাণ রাখছেন একের পর এক চলচ্চিত্রে। মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি জীবন ঘনিষ্ঠ বিকল্প ধারার ছবিতেও সমানে অভিনয় করছেন। সমসাময়িক অন্য চলচ্চিত্র নায়িকাদের মতো মুখ ফিরিয়ে রাখেননি ছোটপর্দা থেকেও। বড়পর্দার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে টিভিনাটকেও অভিনয় করছেন। মডেলিংয়েও নিপুণ দেখিয়েছেন নৈপুণ্য। তার করা একাধিক বিজ্ঞাপন পেয়েছে জনপ্রিয়তা। সবমিলিয়ে সময়টা এখন নিপুণের ভালোই কাটছে ।
nipunমৌসুমী আর পূর্ণিমার পর সম্ভাবনার দ্যুতি হয়ে এসেছিলেন নিপুণ। ক্যারিয়ারের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই পেয়ে যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে সবাইকে চমকে দেন এই নায়িকা। চলতি বছর নিপুণ প্রথমবার দর্শকদের সামনে আসছেন, আগামী ৪ মে । মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘বাজারের কুলি’ ছবিতে ডিপজলের বিপরীতে তাকে দেখা যাবে। যদিও নিপুণ অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘পিতার আসন’-এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ডিপজল। ছবিতে নিপুণের নায়ক ছিলেন শাকিব খান। এবার সরাসরি ডিপজলের নায়িকা হিসেবে দর্শকদের সামনে আসছেন তিনি।
‘বাজারের কুলি’ ছবিতে ডিপজলের বিপরীতে অভিনয় প্রসঙ্গে নিপুণ বললেন, নিজের যোগ্যতা দিয়েই ডিপজল ভাই আজকে নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। দর্শকরাও নায়ক হিসেবে ডিপজলকে পছন্দ করছে, তার মুক্তিপাওয়া ছবিগুলোর বাণিজ্যিক সাফল্য তারই প্রমাণ। খুব ভাল লেগেছিল যখন আমি এই ছবিতে ডিপজল ভাইয়ের নায়িকা হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হই। কাজ করতে গিয়ে আরও ভাল লেগেছে। রোমান্টিক গানও রয়েছে আমাদের। আমার বিশ্বাস আমাদের এই নতুন জুটিকে দর্শক বেশ  ভালোভাবেই গ্রহণ করবে।
নিপুণ অভিনীত সর্বশেষ ছবি শাহাদাত হোসেন লিটন পরিচালিত ‘আদরের জামাই’ মুক্তি পেয়েছিল গত বছর ৩০ ডিসেম্বর। এতে নিপুণের সঙ্গে আরো ছিলেন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। ছবিটি ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছিল। ‘বাজারের কুলি’ ছবিটি দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পেলে ‘লাকি নায়িকা’ হিসেবে খ্যাত নিপুনের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। বর্তমানে নিপুণ আরটিভি প্রযোজিত ছবি ‘এইতো ভালোবাসা’ ছবির শুটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। এটি পরিচালনা করছেন শাহীন কবির টুটুল। বর্তমানে উত্তরায় চলছে ছবিটির শুটিং। এতে নিপুণের বিপরীতে অভিনয় করছেন নতুন প্রজন্মের দুই নায়ক ইমন ও নীরব। এ ছবিতে অভিনয় প্রসঙ্গে নিপুণ বলেন, ‘এইতো ভালোবাসা’ ছবিটির শুটিং অনেক দিন আটকে ছিল । গতবছর ছবিটির মহরতের পর শুটিংয়ের প্রস্তুতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা পিছিয়ে যায়। গতবছর ঈদে ছবিটির গানের  অ্যালবাম রিলিজ পায়।  জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় গানগুলো। তারপর থেকেই অপেক্ষায় ছিলাম কাজ শুরু করার। কিন্তু অন্যদের সঙ্গে শিডিউল মেলাতে সমস্যা হওয়ায় শুটিং শুরুর তারিখ কেবলই পিছিয়ে যাচ্ছিল। শেষপর্যন্ত ছবিটির শুটিং শুরু হওয়ায় খুব ভালো লাগছে। বাণিজ্যিক ছবির পাশাপাশি বিকল্পধারার ছবিতেও সমানতালে কাজ করছেন। অয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ড পরিচালিত ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। গত সপ্তাহে ছবিটি বিনা কর্তনে সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছে।।এবারের এইচএসসি পরীক্ষার পরপরই ‘অন্তর্ধান’ মুক্তি পাবে। নায়ক ফেরদৌসের বিপরীতে এ ছবিতে নিপুণকে দেখা যাবে  পদ্মাচরের একজন সাধারণ গৃহিণীর চরিত্রে। সর্বনাশা পদ্মার গ্রাসে চরাঞ্চলের সর্বহারা মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে এ ছবিটি নির্মিত হচ্ছে। নদীর ভাঙনে সবকিছু হারানো পরও একজন অসহায় নারীর ভালোবাসা জিইয়ে রাখার চিত্ররূপ এটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মাচরে ছবিটির শুটিং হয়েছে। এ ছবিতে অভিনয় প্রসঙ্গে নিপুণ বললেন, ডায়মন্ড ভাইয়ের ‘গঙ্গাযাত্রা’ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তিনি আমাকে তার নতুন ছবি ‘অন্তর্ধান’-এ অসাধারণ একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছেন বলে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। প্রচন্ড গরমের মধ্যে পদ্মার পারে কাজ করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল, রোদে পুড়ে যাচ্ছি। এ ধরণের পরিবেশে কাজ করা তো দূরে থাক, আমার আগে কখনো যাওয়াই হয় নি। ভালো কাজের জন্য তো একটু কষ্ট করতেই হবে। এই কষ্টের মধ্যেও আছে স্বার্থকতা।
nipinবতর্মানে নিপুণ অভিনীত নির্মাণাধীন ছবির মধ্যে রয়েছে এম এ আউয়ালের ‘কাছের শত্রু’, শাহীন কবির টুটুলের ‘এইতো ভালোবাসা’, মানিক মানবিকের ‘শোভনের স্বাধীনতা’, শাহনাজ কাকলী`র ‘জল রঙ’, শফিউদ্দিন শফির ‘ঢাকার কিং`’ইত্যাদি। এছাড়াও নিপুণ অভিনীত মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবির মধ্যে রয়েছে- রকিবুল আল রাকিবের ‘জান তুমি প্রাণ তুমি’, অনন্য মামুনের ‘কাছে এসে ভালোবাস’, আশরাফুর রহমানের ‘তুমি আসবে বলে’ এবং শাহজাহান চৌধুরীর ‘আত্মদান’ ‌‌‌।
সবশেষে নিপুণ বাংলানিউজের মাধ্যমে দর্শকদের উদ্দেশ্যে বললেন, আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান ছবি দেখতে সিনেমা হলে আসুন। এখনো ভালো ছবি তৈরি হয়। আপনারা সিনেমা হলে এলে ভালো ছবির নির্মাতারা উৎসাহিত হবেন। ভালো ছবি নির্মাণের সংখ্যা বাড়বে।

টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে প্রভাবশালী তালিকায় পপক্রেজ অ্যাডেল
প্রীতি ওয়ারেছা

টাইম ম্যাগাজিনের জরিপে বছরের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের তালিকা জায়গা করে নিয়েছেন ব্রিটিশ পপক্রেজ অ্যাডেল। ২৩ বছর বয়সী এই সঙ্গীত তারকার টাইমে এই তালিকায় উঠে আসা ওয়ার্ল্ড শোবিজে তৈরি করেছে আলোচনা। পপক্রেজ অ্যাডেল ছাড়াও প্রভাবশালী ব্যাক্তির তালিকার জায়গা করে নিয়েছেন লাগামহীন ক্ষিপ্রতা সম্পন্ন দৌড়বিদ উসাইন বোল্ট এবং ব্রিটিশ রাজ পরিবারের আত্মীয় পিপ্পা মিডলটন । সারা পৃথিবীর অনুসরণীয় ব্যক্তিদের নিয়ে টাইম ম্যাগাজিন প্রতি বছর সেরা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব নির্বাচন করে থাকে। ১৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার টাইম ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছে এ বছরের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকা। এ বছর টাইম ম্যাগাজিন মিশ্র ক্যাটাগরির ধনাঢ্য, ক্ষমতাশালী, প্রবক্তা, আইকন এবং নেত্রীস্থানীয় বিখ্যাত সব মানুষদের নিয়ে এই আয়োজনটি করে। অনলাইন জরিপে বিপুল সংখ্যক পাঠকদের অংশগ্রহণে বাছাই পর্ব সম্পন্ন হয়। তালিকায় যেমন আছেন ধনী ব্যক্তিত্ব ওয়ারেন বাফেট, তেমনি আছেন ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান বেন বার্নেক আবার আছেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী এবং পারফর্মার অ্যাডেলে এবং বিয়োন্সে। এ বছর টাইম ম্যাগাজিনের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বাছাইয়ের এই আয়োজনে টপ ১০০ ফাইনালিস্টের মধ্যে ছিল ৩৮ জন মহিলা। যেটা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। তালিকাটা ছিল অনেকটাই ইউএস কেন্দ্রিক। ইউএস কেন্দ্রিক তালিকায় স্থান পেয়েছেন জনপ্রিয় এশিয়ান-আমেরিকান বাস্কেটবল খেলোয়ার জেরেমি লিন এবং নিউ জার্সি গর্ভণর ক্রিস ক্রিস্টির মত রাজনীতিবিদ। প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের তালিকা পপতারকা অ্যাডেল উঠে আসার ব্যাপারটি এবার সর্বাধিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আতংকিত সাব্বির-চুমকি
অনন্যা আশরাফ

এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা মীর সাব্বির ও তার স্ত্রী অভিনেত্রী ফারজানা চুমকি বেশ কিছুদিন ধরেই একটি নতুন বাসার সন্ধান করছিলেন। কম ভাড়ায় ভালো একটি বাড়ি খুঁজছিলেন তারা। অনেক খোঁজাখুজির পর শেষপর্যন্ত পুরনো একটি বাড়ি খুঁজে পান তুলনামূলক কম ভাড়ায়। বাড়িটি ভাড়া নেওয়ার সময় সাব্বিরকে সেখানকার এক ব্যক্তি সচেতন করে দেন যে, এ বাড়িটি রহস্যে ঘেরা। এখানে প্রায়ই ঘটে রহস্যময় ঘটনা। কিন্তু সাব্বির কোনো কথায় কান না দিয়েই ভাড়া চুড়ান্ত করে ফেলেন। সাব্বির-চুমকি ঐ বাড়িতে উঠার পরপরই ঘটতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা। আতংক ভর করে সাব্বির ও চুমকির মাঝে। বাড়ি নিয়ে এ সুখী দম্পতির পড়তে হয় একের পর এক বিপদে। বাস্তবে নয়, নাটকে বাড়ি নিয়ে সংকটে পরতে দেখা যাবে এ দম্পতিকে। ফজলুল করিমের রচনা ও হাবিব-ই আলম চৌধুরীর পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক ‘ছায়াসঙ্গী’তে এভাবেই বাড়ি নিয়ে নানা ঝামেলা পোহাতে দেখা যাবে সাব্বির ও চুমকিকে। এ নাটকের মাধ্যমে প্রায় ৬ বছর পর তারা একসঙ্গে আবারও ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছেন। এ প্রসঙ্গে মীর সাব্বির বলেন, ‘ছায়াসঙ্গী’ নাটকের মধ্য দিয়ে ছয় বছর পর আমরা একসঙ্গে জুটি হয়ে অভিনয় করেছি। সংসারের নানা ব্যস্ততার কারণে চুমকি নাটকে সময় দিয়ে পারে না। নাটকের গল্পটিও ভালো লেগেছে। তাই ব্যস্ততার মধ্যে সময় বের করে নাটকটি আমরা একসঙ্গে করার চেষ্টা করেছি। ধারাবাহিক নাটকটি ৫২ পর্বে আরও অভিনয় করেছেন মীর সাব্বির, ফারজানা চুমকি, সিদ্দিক, মুক্তা হাসান, প্রাণ রায়, শামিম, সোহাগ কাজী, তন্দ্রা, মৌসুমী সরকার প্রমুখ।
সজলকে নিয়ে রুমানা ও নওশীনের মধ্যে টানাপোড়েন
অনন্যা আশরাফ

ছোটপর্দার রোমান্টিক অভিনেতা হিসেবে সজল পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। এবার সজলকে নিয়ে দুই অভিনেত্রী নওশীন ও রুমানার মধ্যে তৈরি হয়েছে টানাপেড়েন। একসময় তারা দুজন আবিষ্কার করেন, সজল আসলে একজন মানসিক রোগী। এরকমই এক ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে নাটক ‘মনের আকাশে নীল মেঘ`। অজেয় চৌধুরীর রচনায় ও জিয়াউদ্দিন আলমের পরিচালনায় ‘মনের আকাশে নীল মেঘ’ নাটকটির শুটিং হয়েছে চলতি মাসের ১০, ১১ ও ১৬ এপ্রিল। ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা সজল , অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা নওশীন এবং চলচ্চিত্রাভিনেত্রী রুমানা এর আগে একটি মাত্র নাটকে অভিনয় করেছিলেন। তাদের অভিনয়ে সেই নাটকটি প্রচার হয়েছিল গতবছর রোজার ঈদে।
‘মনের আকাশে নীল মেঘ’ নাটকে অভিনয় প্রসঙ্গে সজল বলেন, এ নাটকে আমি চমৎকার একটি চরিত্রে অভিনয় করছি। নিজের ভেতরের দ্বৈত সত্ত্বা ফুটিয়ে তোলার এই চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করে আমি বেশ তৃপ্তি পেয়েছি।  নাটকটিতে অভিনয় প্রসঙ্গে নওশীন বলেন, সজল আর রুমানা সঙ্গে আমার অনেকদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। নাটকটির শুটিংয়ে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি আমরা একসঙ্গে চমৎকার সময় কাটিয়েছি। রুমানা বলেন, চলচ্চিত্রে কাজ করার পাশাপাশি ভালো গল্পের নাটক হলেই আমি কেবল অভিনয়ে সম্মত হই। ‘মনের আকাশে নীল মেঘ’ নাটকটির গল্প আমার খুব পছন্দ হয়েছি। আশা করি দর্শকরাও নাটকটি উপভোগ করবেন। সজল, রুমানা ও নওশীন ছাড়াও নাটকটিতে আরো অভিনয় করেছেন হাবিবুর রহমান হাবীব ও মাহিন।
বিয়ের জন্য কোনো শিডিউল খালি নেই : কণা
প্রীতি ওয়ারেছা
‘প্রিয় যাই যাই বলো না/ আর করো না ছলনা না না না/ প্রিয় যাই যাই বলো না’ -- নিজের কণ্ঠে গাওয়া নজরুলের এই বিখ্যাত গানটি সঙ্গীতশিল্পী কণার মোবাইলের রিংটোন। আজকের প্রজন্মের জনপ্রিয় গায়িকা কণার গান শেখায় হাতেখড়ি হয়েছিল নজরুল সঙ্গীতেই। নজরুল একাডেমীতে গান শিখেছেন প্রায় ৯ বছর।এখনও নজরুল সঙ্গীত চর্চাটা ধরে রেখেছেন। এ পর্যন্ত কণার ৩টা একক অ্যালবাম বেরিয়েছে ৩টি, গান গেয়েছেন অসংখ্য মিশ্র অ্যালবামে আর প্রায় ৬০০ জিঙ্গেলে কন্ঠ দিয়েছেন। কণার পুরো নাম দিলশাদ নাহার কণা। নিজের শ্বাস- প্রশ্বাসের মতোই কণা ভালোবাসেন গানকে। খুব ছোটবেলায় বয়স যখন মাত্র ৫ কী ৬! সেই বয়সেই হারমোনিয়াম আর তবলার যে ভুবনে এই মিষ্টি মেয়েটির যাত্রা শুরু হয়েছিল সেটা আজ ১৬ কী ১৭ বছর পরে এসেও চলছে দারুণ গতিতে। আজকের কনা সেদিন ভাবতেও পারেননি- একদিন তার গান সারাদেশের তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ভালোবেসে গ্রহণ করবে। সম্প্রতি কণার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলানিউজ। কণা বলেছেন তার সাম্প্রতিক সময়ের কর্মকান্ড, গান নিয়ে ভাবনা ও ব্যক্তিজীবনের পরিকল্পনা সম্পর্কে। কণার সঙ্গে বাংলানিউজের একান্ত আলাপচারিতার নির্বাচিত অংশে আসুন চোখ রাখি।
বাংলানিউজ : সাম্প্রতিক সময়ে কী কী কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন?
কণা : ইদানিং স্টেজ শো নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের বাইরে অনেক শো’ করছি। এই তো কদিন আগে অস্ট্রেলিয়া আর ব্রুনাইতে শো’ করে ফিরলাম। দেশেও প্রচুর স্টেজ শো’ করছি। এবারের বৈশাখে বের হওয়া ‘কানামাছি মৌমাছি’, ‘মনের ঠিকানা’ ও ‘নারী’ এই তিনটি মিক্সড অ্যালবামে গান করেছি। আমার শেষ একক অ্যালবাম ‘সিম্পলি কণা’ আর মিক্সড অ্যালবাম থেকে বাছাই করা কয়েকটি গান নিয়ে এখন মিউজিক ভিডিও তৈরির কাজ করছি। সেখানে প্রচুর সময় দিতে হচ্ছে।
বাংলানিউজ : প্লে-ব্যাকে কী কী কাজ করছেন ?
কণা : প্রচুর প্লে-ব্যাক করছি। সত্যি বলতে কী, আমার কাজের প্রধান জায়গা এখন প্লে-ব্যাকে হয়ে যাচ্ছে। ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’, ‘ভালবাসার রঙ’, ‘ভালবাসার রংধনু’, ‘ফিরিয়ে দাও আমার প্রেম’, ‘এক কাপ চা’, ‘চোরাবালি’সহ আরো বেশ কিছু ছবিতে প্লে-ব্যাক করছি। সম্প্রতি ‘লালটিপ’ ছবির গান নিয়ে একটা অ্যালবাম বের হল। সেখানে আমার ২টা গান আছে। শ্রোতারা ব্যাপকভাবে আমাকে গ্রহণ করেছেন। সবমিলিয়ে প্রচুর সাড়া পাচ্ছি প্লে-ব্যাক করে।
বাংলানিউজ : প্রজন্মের প্রতিভাবান সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদার,  হাবিব,  ফুয়াদ, আরফিন রুমীসহ প্রায় সবার সাথেই কাজ করছেন। কার সঙ্গে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
কণা : আসলে প্রত্যেকেরই কাজের আলাদা আলাদা ধরণ আছে। আলাদা আলাদা স্টাইল আছে। যে যার জায়গাতে ফিট। বাপ্পা মজুমদারের প্রতি আমার পক্ষপাতটা একটু বেশি।  ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় থেকেই আমি তার সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় কাজ করার সুযোগ পাই। বাপ্পা ভাইয়ের সঙ্গে আমার খুব শ্রদ্ধা এবং স্নেহের সম্পর্ক । হাবিব ওয়াহিদ অসম্ভব মেধাবী একজন মিউজিশিয়ন। তিনি সঙ্গীতে একটা নতুন ধারা তৈরি করেছেন। কাজে সবসময় তিনি নতুনত্ব যোগ করতে চান। একটা ছড়া তার সামনে দিলে সেটাকে তিনি অবলীলায় গান হিসেবে উপস্থাপন করার ক্ষমতা রাখেন। হাবিব ভাই একাই অডিও জগতকে একটা সম্মানজনক জায়গায় দাঁড় করাতে পেরেছেন। ওয়েস্টার্ন মিউজিকের সব ধারাতেই ফুয়াদ ভাইয়ের আছে অদ্ভুত দখল। সেই ধারার সঙ্গে সংমিশ্রণ করে সঙ্গীতায়োজন করতে তিনি পারদর্শী। আরফিন রুমীও চান গানে নতুন মাত্রা যোগ করতে। আসলে এখনকার অনেক মোস্ট জুনিয়র মিউজিশিয়নদের সঙ্গেও আমি কাজ করেছি। সবারই আলাদা ধরণ কাজ করার এবং নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে সুন্দর কাজ করার চেষ্টা আছে। আমি নিজেকে একজন ভার্সেটাইল সিঙ্গার মনে করি। সবার সঙ্গে এবং সব ধরণের গান গান গাইতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
বাংলানিউজ : কোন ট্র্যাকটিকে নিজের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে মনে করেন?
কণা: ‘বর্ষা’ ট্র্যাকটি ছিল আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। শাহান কবন্ধের লেখা, ফুয়াদ নাসের বাবুর সুরে এবং ফুয়াদ আল মুক্তাদীর এর সঙ্গীতায়োজনে বর্ষার গানটি আমাকে আলাদা শিল্পী ইমেজ দিয়েছে। স্টেজ শো’ করতে গেলে দর্শকশ্রোতাদের কাছ থেকে গান গাওয়ার প্রচুর অনুরোধ আসে তার মধ্যে বর্ষা গানটি শ্রোতাদের টপ ফেভারিট।
বাংলানিউজ : পরবর্তী একক অ্যালবামের পরিকল্পনা সম্মন্ধে জানতে চাই?
কণা : আমার শেষ একক অ্যালবাম ‘সিম্পলি কণা’তে আমি পরীক্ষামূলকভাবে একটি নজরুল সঙ্গীত ‘প্রিয় যাই যাই বলো না’ গেয়েছিলাম। বাপ্পা মজুমদার খুব যতœ নিয়ে এর সঙ্গীতায়োজন করেছিলেন। সবার কাছ থেকে এত প্রশংসা পেয়েছি নজরুলের এই গানটার জন্যে যে আমি অভিভূত। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার পরের একক অ্যালবামটি নজরুল সঙ্গীতের ওপর করব। নজরুল সঙ্গীতেই আমার হাতে খড়ি, নজরুল সঙ্গীত গাইতেও আমি খুব পছন্দ করি। নজরুল সঙ্গীতের একটি একক অ্যালবাম বের করার জন্য আমি এখন মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বাংলানিউজ : নিজেকে সঙ্গীত জগতের কোন জায়গায় দেখতে চান?
কণা : দেশের বাইরের অনেক মানুষদের কাছে আমাদের দেশটি অপরিচিত একটা দেশ। যারা সঙ্গীত ভালবাসেন তারা জানেন বাংলাদেশ হল রুনা লায়লার দেশ। আমিও আমার দেশের এমন গৌরবাজ্জ্বল প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। নিজেকে সেই জায়গায় দেখার স্বপ্ন মনে লালন করি।
বাংলানিউজ : সঙ্গীতে আপনার আইডল কী রুনা লায়লা?
কণা : ঠিক ধরেছেন। রুনা লায়লা আমার আইডল। তার গান আমার সবচেয়ে প্রিয়। । রুনা লায়লার যে কোনো গান শুনলেই আমার ভেতর একধরণের ভালোবাসা তৈরি হয়। আমি তার অন্ধ ভক্ত। এর বাইরে সামিনা চৌধুরী, ফাহমিদা নবী, হাবিব ছাড়াও ভারতের সুনীধি চৌহান আর আঁশা ভোসলে আমার প্রিয় শিল্পী।
বাংলানিউজ : সঙ্গীত জগতে কাজ করতে গিয়ে কোনো অতৃপ্তির মুখোমুখি হয়েছেন কী?
কণা : অতৃ্প্তি আছে অডিও অ্যালবাম নিয়ে। আমাদের অডিও বাজার বলতে এখন আর কিছু নেই বললেই চলে। তাই অডিও অ্যালবামের সাফল্য  থেকে আমরা পুরোপুরি বঞ্চিত। আমরা যে অ্যালবামগুলো করি সেগুলো থেকে আমরা আর্থিকভাবে উপকৃত হই না। নিজের উদ্যোগে আর অর্থায়নে অডিও অ্যালবাম করি এবং সেগুলো নিয়ে মিউজিক ভিডিও করি। কিন্তু অডিও বাজারে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলো পাইরেসির কবলে পড়ে। বিনা পয়সায় যে গান ডাউনলোড করা যায়, পয়সা দিয়ে শ্রোতার তা কেন কিনবে! আমাদের দেশের অডিও বাজারের কোনো প্রটেকশন নেই, নেই কোনো পৃষ্ঠপোষকতা। শ্রোতাদের কাছাকাছি নিজের গান নিয়ে যেতে হলে নিজেরই দায়িত্ব নিতে হয়।  অথচ বাইরের দেশ গুলোকে পৃষ্ঠপোষকতার কোন অভাব নেই। যুগের পরিবর্তন হয়েছে। নিজেকে উপস্থাপনের জন্য মানসম্মত অ্যালবাম ও মিউজিক ভিডিও এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বায়নের সাথে তাল মেলাতে নিজেকেও আপডেট রাখতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশের অডিও ইন্ড্রাষ্ট্রি পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে না। যা সত্যিই কষ্টদায়ক।
বাংলানিউজ: এ বছরই নাকি আপনি বিয়ে করছেন ?
কণা : কী যে বলেন! যার বিয়ে তার খবর নাই। এ বছর বিয়ের জন্য কোনো শিডিউল খালি নেই । কারণ সামনের মাস থেকে দেশের বাইরে একটানা কয়েকটা ট্যুর আছে। অনেকদিন থাকতে হবে দেশের বাইরে। ফিরে এসে জমে থাকা কাজগুলো শেষ করতে রাতদিন সময় দিতে হবে। নজরুল সঙ্গীতে অ্যালবামটার কাজ শুরুর ইচ্ছে আছে এবছরই। বিয়ে করব কখন!
বাংলানিউজ : নিজের সম্পর্কে শোনা বিরক্তিকর কোন গুজব নিয়ে বলুন।
কণা : আসলে আমাকে নিয়ে কোনো গুজব নেই। নিজের সম্মানের প্রতি দৃষ্টি রাখলে ইচ্ছে করলেই গুজব-গুঞ্জনের উর্দ্ধে থাকা সম্ভব। তবে মজার একটা ঘটনা আছে। আমার একটি আড়াই বছর বয়সী ভাগ্নি আছে। নাম সোবহানা। সে আমার জান প্রাণ। আমার বাইরে যাওয়া দেখলেই জামা টেনে ধরে। মাঝে মাঝেই ওকে কোলে নিয়ে বাইরে যাই। এভাবেই অনেক সময় ক্যামেরার সামনে পড়ে গেছি। অনেকেরই ধারণা, এটা আমার বাচ্চা। আমি নিজেও অনেকের মুখে শুনেছি- ‘আপনার বাচ্চাটা তো অনেক কিউট’!

স্বপ্নের ঠিকানায় হাসিন

টপ মডেল খেতাব নিয়ে শোবিজে অভিষেক হয়েছিল হাসিনের। বেশ কয়েকটি একক ও ধারাবাহিকে অভিনয় করলেও মডেল হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান নি অনেকদিন। অবশেষে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌছাতে পেরেছেন হাসিন। সম্প্রতি দুটি বিজ্ঞাপনে কাজ করলেন তিনি। বর্তমানে চ্যানেলে চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে নিহার হেয়ার অয়েল ও মেরিল রিভাইভ ট্যালকম পাউডার-এর নতুন বিজ্ঞাপনচিত্র। এই বিজ্ঞাপনচিত্র দুটিতে মডেল হিসেবে পারফর্ম করেছেন ভিট চ্যানেল আই টপ মডেল হাসিন রওশন জাহান। পদ্মাপাড়ের শহর রাজশাহীতে বড় হয়ে উঠেছে হাসিন রওশন জাহান। শৈশব-কৈশোরে স্বপ্ন দেখেছেন, একদিন সারা দেশের মানুষ তাকে চিনবে। রাজশাহীতে কলেজের পাঠ চুকিয়ে মেধাবী ছাত্রী হাসিন ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। পড়াশোনার পাশাপাশি খুঁজতে থাকেন স্বপ্ন পূরণের সিঁড়ি। বড় বোনের উৎসাহে ভিট-চ্যানেল আইয়ের অডিশন নাম লেখান। নিজের মেধা ও পারফর্মেন্স দিয়ে জিতে নেন টপমডেলের মুকুটটি। শিরোপা জেতা প্রসঙ্গে হাসিন বলেন, ‘অডিশন দেওয়ার সময় আমি মোটেও ভাবিনি যে, সেরা হবো। কিন্তু সেরা দশে আসার পর আমার মনোবোল অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সেই প্রত্যয় নিয়েই নিজেকে প্রেজেন্ট করি গ্রান্ড ফাইনালে। আত্মবিশ্বাস আর একাগ্রতায় আমাকে টপ মডেল খেতাব এনে দেয়’। গত বছরের জুলাই মাসে ‘ভিট-চ্যানেল আই টপ মডেল’-এর মুকুট জিতেছিলেন হাসিন রওশন। কিন্ত নিজের  ‘টপ মডেল’ খেতাবের যথার্থতা প্রমাণ করার সুযোগ পান নি অনেকটিদন। সেরা মডেল নির্বাচিত হওয়ার পর স্বাক্ষর রাখতে পারেননি মডেলিংয়ের কোনো শাখায়। যদিও শোবিজে পা রাখার পর পরই তিনি নিজের গন্তব্যের কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘মডেলিংয়েই আমার আগ্রহটাও সবচেয়ে বেশি। নিজেকে মডেল হিসেবেই পরিচিত করে তুলতে চাই’।
মডেলিংয়ে চমক দেখাবার সুযোগ পাওয়ার আগেই একের পর টিভিনাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব তার পিছু নেয়। রিয়েলিটি শো থেকে বেরিয়ে আসা অন্যসব সুন্দরীর তুলনায় হাসিন অল্প সময়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন অভিনয় নিয়ে। টিভিনাটকে গ্ল্যামার যোগ করতে অনেক নির্মাতাই আগ্রহী হয়ে উঠেন হাসিনের প্রতি। প্রথম নাটকেই হাসিন নজর কাড়েন দর্শকদের। মডেল আইকন নোবেলের বিপরীতে প্রথম এক ঘণ্টার নাটক ‘আমাদের ছোট নদী’তে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। এরপর দ্বিতীয় নাটক ‘সখা হে’ -তে অভিনয় করেন ছোটপর্দার বড় তারকা মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে জুটি বেঁধে। নাটক দুটো প্রচার হওয়ার পর হাসিনের অভিনয় আর গ্ল্যামারের দ্যুতি নজর কাড়ে নির্মাতাদের। অল্প সময়ের মধ্যেই পর পর তিনটি ধারাবাহিক নাটকের অভিনয় করেন ।
‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’, ‘পুতুল মানুষ’ আর ‘ব্যাচেলর দ্য ফ্যামিলি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেও অতৃপ্তিতে ভুগছিলেন তিনি। কারণ আর কিছু নয়, মডেলিংয়ের কাজ করতে না পারা। শোবিজে অভিষেকের দীর্ঘ নয় মাস পর অবশেষে গন্তব্যের দেখা পান তিনি। হাতে ধরা দেয় মডেলিং নামের সেই সোনার হরিন। নিহার হেয়ার অয়েল ও মেরিল রিভাইভ ট্যালকম পাউডার-এর বিজ্ঞাপনচিত্রের মাধ্যমে টপ মডেল খেতাবধারী হাসিন পৌছে যান স্বপ্নের ঠিকানায়। দুটি বিজ্ঞাপনচিত্রে ঝলমলে পারফর্মেন্স দিয়ে প্রমাণ করেছেন, নিজের যোগ্যতা। খ্যাতিমান নির্মাতা অমিতাভ রেজা নির্মিত সুপরিচিত ব্র্যান্ড প্যারাসুটের নতুন বিজ্ঞাপনেও তাকে শিগগিরই দেখা যাবে।
বিজ্ঞাপনে কাজ করলেও হাসিন রওশন সমানে চালিয়ে যাচ্ছেন অভিনয়। সম্প্রতি রায়হান খানের পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক ‘দ্য লাস্ট কটেজ’ শুটিংয়ে তিনি অংশ নিয়েছে। থাইল্যান্ডে চিত্রায়িত এই ধারাবাহিকে হাসিন সারা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই নাটকে নিজের চরিত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই চরিত্রে কাজ করার জন্য আমাকে সামনের চুলগুলো কেটে ফেলতে হয়েছে। সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতা হয়েছে এই চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে। আমার চরিত্রটিও অনেক মজার। এই নাটকে অভিনয় করে আমি সিনিয়র আর্টিস্টদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।’
পারফর্মিং আর্টের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম চলচ্চিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছে থাকে সব শিল্পীরই। তেমনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের স্বপ্ন আছে ভিট সুন্দরী হাসিনের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্রের প্রতি আমার বেশ আগ্রহ আছে। সুযোগ পেলে অবশ্যই চলচ্চিত্রে অভিনয় করবো। তবে চলচ্চিত্রটিকে হতে হবে অবশ্যই মান সম্পন্ন।ভালো গল্প, ভালো চরিত্র ও ভালো পরিচালক হলে ছবিতে কাজ করতে আমার কোনো সমস্যা নেই।’
ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে হাসিন বলেন, ‘মডেলিংয়ের পাশাপাশি অভিনয় করে যাবো। আমি অভিনয় দিয়ে দর্শকের মনে চিরকাল বেঁচে থাকতে চাই।’ গত ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে হাসিনের মাস্টার্স পরীক্ষা। চলবে মে মাসের মাঝামাঝি নাগাদ। পরীক্ষার জন্য আপাতাত মিডিয়া থেকে দূরে আছেন। পরীক্ষা শেষে আবারও জোরেশোরে তিনি শোবিজ কাজ করবেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।
ভাঙলো সুচরিতার ২৩ বছরের সংসার
বিপুল হাসান
ঢালিউডের সত্তর ও আশির দশকের জনপ্রিয় নায়িকা সুচরিতার সংসার ভেঙে গেছে। স্বামী চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী কেএমআর মঞ্জুরের সঙ্গে তার ডিভোর্স সম্পন্ন হয়েছে । সেই সঙ্গে ভেঙে গেছে, তাদের দীর্ঘ ২৩ বছরের সংসার। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার সুচরিতার সংসার ভাঙলো। আশির দশকের প্রথম দিকে ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় প্রেমের বিয়ে হয়েছিল তার প্রয়াত নায়ক জসিমের সঙ্গে। ভালোবাসার সেই সংসারের আয়ু হয়েছিল বছর-তিনেক। ঢালিউডের চলচ্চিত্রের সোনালী সময়ে   ‘ড্রিমগার্ল’ খ্যাত সুচরিতা দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ১৯৮৯ সালে। চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী ও ঢাকার কয়েকটি সিনেমা হলের মালিক কেএমআর মঞ্জুর সঙ্গে সুচরিতার এই বিয়েটিও ছিল প্রেমের। তাদের সংসারে পর পর আসে ৩টি সন্তান। সন্তান আর সংসারের ব্যস্ততায় সুচরিতা একসময় ঢালিউড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। সম্প্রতি অবশ্য আবারও চলচ্চিত্র অভিনয় শুরু করেছেন তিনি।suchorita
বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কেএমআর মঞ্জুর ও সুচরিতা আলাদা বসবাস করছিলেন। গতবছর শেষের দিকে কেএমআর মঞ্জুর ডিভোর্স নোটিশ পাঠান সুচরিতাকে। এ বিষয়ে শুনানীর জন্য বিধি অনুযায়ী সুচরিতাকে সিটি কর্পোরেশনের সালিশি পরিষদ একাধিকবার স্বশরীরে হাজির হওয়ার জন্য তলব করে। কিন্তু সুচরিতা এতে সাড়া দেন নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পারিবারিক আইন অনুযায়ী নোটিশের তৃতীয় মাসে তাদের ডিভোর্স কাযর্কর হয়েছে। বাংলানিউজ এ বিষয়ে ফোনে কথা বলে সুচরিতার সঙ্গে। তিনি বলেন, কেএমআর মঞ্জুরের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। সম্পর্কটা কেবল টিকে ছিল কাগজে কলমেই। কেবল কাগজের কোনো সম্পর্কের মূল্য আমার কাছে নেই। এবার কাগজে-কলমে ডিভোর্স হয়ে গেল। এ নিয়ে আমার বলার মতো কিছু নেই। সবই আমি মেনে নিয়েছি। নামে মাত্র সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেয়ে না-থাকাই ভালো।
এ প্রসঙ্গে জানার জন্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী চলচ্চিত্র প্রদর্শক কেএমআর মঞ্জুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ১৪ বছর ধরে আমরা আলাদা আছি। তার সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও কোনো বনিবনা হয়নি। আগামীতে বনিবনা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কেবল কাগজে-কলমে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা অর্থহীন । তাই এবার সবকিছুর ইতি টেনে তাকে মুক্তি দিলাম আর আমি নিজেও মুক্ত হলাম।
kmr-monjurকেএমআর মঞ্জুর ও সুচরিতা দাম্পত্যজীবনে তিন সন্তানের জনক-জননী। তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, তিনজনই বর্তমানে মালয়েশিয়া পড়াশোনা করছেন। তাদের পড়াশোনাসহ সব খরচই বহন করছেন কেএমআর মঞ্জুর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বাবা হিসেবে সন্তানের জন্য যা কিছু দরকার সবই আমি করছি এবং করবো। তাদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য যা কিছু করার দরকার আমি করে যাবো। একজন শিশু শিল্পী হিসেবে সুচরিতা চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন ১৯৬৯ সালে, যখন তার নাম ছিল বেবী হেলেন। নায়িকা হিসেবে সুচরিতা প্রথম অভিনয় করেন ১৯৭২ সালে আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘স্বীকৃতি’ ছবিতে। ১৯৭৭ সালে আবদুল লতিফ বাচ্চু পরিচালিত ‘যাদুর বাঁশি’ ছবির মাধ্যমে তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা পান। মায়াময় ফটোজেনিক চেহারা আর আকর্ষণীয় দেহবল্লরী তাকে শক্ত ভীত গড়ে দেয় ঢালিউডে। আশির দশক পর্যন্ত তিনি ছিলেন  দেশের প্রথম সারির নায়িকা।
সুচরিতা অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে- ‘দি ফাদার’, ‘বদলা’, ‘জীবন নৌকা’, ‘আসামী’, ‘নদের চাঁদ’ ‘কথা দিলাম’, ‘গাদ্দার’, ‘জনি’, ‘নাগরদোলা’, ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ প্রভৃতি। প্রায় দুই দশক বিরতির পর সম্প্রতি ফিরে এসে বেশ কয়েকটি ছবিতে কাজ করেছেন। ইদানিং সময়ের চলচ্চিত্রে নায়ক-নায়িকার মা-খালার গুরত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করতে বেশি দেখা যায়।

ডিটেকটি ভ মিমো
চলচ্চিত্রে কাজ করার উদ্দেশ্যে ‘সুপার হিরো সুপার হিরোইন’ ইভেন্টে মধ্য দিয়ে মিডিয়ায় পা রেখেছিলেন মিমো। সুপার হিরোইন খেতাব জয় করার পর কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করলেও টিভিনাটক নিয়ে এখন তিনি বেশি ব্যস্ত। সম্প্রতি তিনি অভিনয় করেছেন এটিএন বাংলার জন্য নির্মিত প্রতিদিনের ধারাবাহিক নাটক ‘ডিবি’-তে। এতে মিমোকে দেখা যাবে একজন ডিটেকটিভ অফিসারের চরিত্রে। ড. মাহফুজুর রহমানের পরিকল্পনায় জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা শহীদুজ্জামান সেলিমের পরিচালনায় ব্যয়বহুল বাজেটের ডেইলি সোপ ‘ডিবি’। নাটকটির গল্প লিখছেন নাট্যকার লিটু সাখাওয়াত, মাহবুবা শাহরীন ও জামাল রেজা। এক একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে  ধারা বাহিকটি পাঁচ থেকে সাতটি পর্ব নির্মাণ করা হবে। মোট একহাজার পর্ব শেষ হবে এটি। এই নাটকটিতে পর্যায়ক্রমে দেশের প্রায় সব তারকাকেই অভিনয় করতে দেখা যাবে বলে জানা গেছে। ডেইলি সোপ ‘ডিবি’ প্রথম দিকের পর্বগুলোতে অভিনয় করছেন ডিএ তায়েব, মিমো, শাহরিয়ার শুভ, বিপাশা, বাবু, অপু, মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, ড. গনি, শম্পা রেজা প্রমুখকে। এতে ডিটেকটিভ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করা প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে মিমো বললেন, কিছুদিন আগে শহীদুজ্জামান সেলিম ভাইয়ের সঙ্গে একটি একপর্বের নাটকে অভিনয় করছিলাম। তিনি জানান একটি ডিটেকটিভ ডেইলি সোপ নির্মাণ করতে যাচ্ছেন। সেলিম ভাই আমাকে বললেন,  তুই তো বেশ লম্বা তোকে ডিটেকটিভ অফিসার চরিত্রে খুব মানাবে। কাজটি করতে গিয়ে বেশ এক্সাইটেড আমি। 

ক্ল্যাসিক না চেও দক্ষ বলিউডের ফারহা খান

অনন্যা আশরাফ

বলিউডের এসময়ের খ্যাতিমান নৃত্যপরিচালক ও কোরিওগ্রাফার ফারহা খান। নৃতাপরিচালনা ও কোরিওগ্রাফির পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালনার কাজটিও করেছেন। তবে নৃত্যপরিচালক হিসেবেই তার বেশি পরিচিতি। এ পর্যন্ত প্রায় বলিউডের ৮০টি ছবিতে ১০০টিরও বেশি গানে কোরিওগ্রাফি করেছেন তিনি। শুধু মর্ডান ড্যান্স নয়, ক্ল্যাসিক নাচেও তিনি বেশ পারদর্শী। ভারতীয় ধ্রুপদী নাচের সঙ্গে ওয়েস্টার্ণ ড্যান্সের সমন্বয়ে দেখিয়ে চলেছেন একের পর এক অদ্ভুত কারিশমা। বিশ্ব নৃত্য দিবসে বলিউডের এই সফল নৃত্যশিল্পী, নৃত্যপরিচালক ও কোরিওগ্রাফারের জীবন এবং কর্মের প্রতি আলোকপাত করা হলো। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সফল নৃত্যপরিচালক ফারহা খান ১৯৬৫ সালে ৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কামরান খান ছিলেন ছবির পরিচালক এবং মা মেনকা একসময় বলিউডের অভিনেত্রী ছিলেন। তার একমাত্র ভাই বলিউডের কমেডিয়ান, অভিনেতা ও পরিচালক খ্যাত সাজিদ খান। এছাড়াও বলিউড ফিল্মডোমে খ্যাতিমান দুজন ব্যক্তিত্ব  ফারহান আকতার ও জয়া আকত্ার হচ্ছেন তার কাজিন। ছোটবেলা থেকেই ফারহা খান শিখেছেন ক্ল্যাসিক। মুম্বাইয়ের এসটি এক্সাভিয়ারস কলেজে সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রী থাকার সময় বন্ধুদের সঙ্গে দেখেন মাইকেল জ্যাকসনের ‘থ্রিলার’ গানের সঙ্গে নাচ। ওয়েস্টার্ণ নাচের প্রতি ঝোঁক উঠে সে সময়ই। ওয়েস্টার্ণ ড্যান্স শেখা শুরু করেন কোমড় বেঁধে। নাচে দক্ষতা এলে কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন একটি নাচের গ্রুপ। ধ্রুপদী ভারতীয় আবহের সঙ্গে ওয়েস্টার্ণ মিউজিক মিলিয়ে নতুন ধারার অনবদ্য পারফর্মেন্সের কারণে তার নাচের দলটি অল্প সময়েই পরিচিতি পেয়ে যায়। একটা শোতে ফারহার পারফর্মেন্স দেখে বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার সরোজ খান তাকে বলিউডে কাজ করার পরামর্শ দেয়। সারোজ খানের ছবি ‘জো জিতা ওহি সিকান্দার’-তে ব্রেক পেয়ে যান ফারহা। সেখান থেকেই নৃত্যপরিচালক ও কোরিয়োগ্রাফার হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘ। ১৯৯৩ সালের ‘ কাভি হা কাভি না‘ ছবির সেটে প্রথম পরিচয় হয় শাহরুখের সঙ্গে। খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায় তাদের। এরপর তারা একসঙ্গে কয়েকটি ছবিতে কাজ করেছেন।
‘ম্যায় হু না’ ছবির সহকর্মী সিরিশ কুন্দারকে ফারহা ২০০৪ সালে ৯ ডিসেম্বর জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেন। বিয়ের ৮ বছরের মাথায় ২০০৮ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি সিজার নামে একটি ছেলে এবং দিভা ও আনিয়া নামে দুইটি মেয়ে মোট ৩টি জমজ সন্তানের মা হন ফারহা খান।
১৯৯২ সালে ‘জো জিতা ওহি সিকান্দার’ ছবিতে কোরিওগ্রাফার হয়ে আত্মপ্রকাশ করা ফারহা খান এ পর্যন্ত প্রতি বছরই অনেকগুলো ছবিতে কোরিওগ্রাফি করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - ‘কাভি হা কাভি না’, ‘ওয়াক্ত হামারা হে’, ‘পেহেলা নাশা’ ‘ইংলিশ বাবু দেশি মেম’ ‘ভিরাসাত’, ‘বর্ডার’, ‘দিল তো পাগল হে’, ‘কাহো না..পেয়ার হে’, ‘কাভি খুশি কাভি গাম’, ‘হাম তোমহারে হে সানাম’, কোয়ি মিল গ্যায়া’, ‘কাল হো না হো’, ‘কৃষ’, ‘কাভি আলভিদা না কেহনা’, ‘ওম শান্তি ওম’, ‘ওয়েলকাম’, ‘দাবাঙ’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘টিস মার খান’ সহ আরও অনেক ছবি।
কোরিওগ্রাফার ফারহা খান যে কেবল বলিউড হিরো হিরোইনকে নাচিয়েছেন তা নয়, কলোম্বিয়ান ড্যান্স কুইন শাকিরাকেও তিনি তার ইশারায় নাচিয়েছেন। ২০০৬ সালে ৩১ আগষ্ট এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে শাকিরার হিট গান ’হিপস ডোনট লাই’ গানে শাকিরাকে কোরিওগ্রাফ করেছেন ফারহা। এছাড়াও ‘ব্লু’ ছবিতে ‘চিগি উগি’ গানে ক্যালি মিনোগকেও কোরিওগ্রাফ করেছেন তিনি।
ফারহা আর্ন্তজাতিকভাবে খ্যাতি পান ‘মনসুন ওয়েডিং,বোম্বে ড্রিমস‘ ও ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’ ছবিতে কোরিওগ্রাফিংয়ে। ২০০৪ সালে তিনি এ ছবির জন্যে টনি অ্যাওয়ার্ডে সেরা কোরিওগ্রাফারের জন্যে প্রথম নমিনেশন পান। নাচের মাধ্যমে বলিউডে আসা এ নৃত্যপরিচালক ভক্তদের কাছে তার আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন ছবি পরিচালনার মাধ্যমে । বন্ধু শাহরুখকে নিয়েই তৈরি করেন তার প্রথম ছবি ‘ম্যায় হু না’। রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্টের প্রযোজনায় এ ছবি বক্স অফিসে বিশাল সাফল্য পায়। এরপর তার পরিচালনার দ্বিতীয় ছবি ‘ওম শান্তি ওম’ মুক্তি পেয়ে সে সময় ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রির সর্বোচ্চ ব্যবসা সফল ছবির খেতাব জিতে। এ পর্যন্ত তার শেষ ছবি নাম ‘তিস মার খান’। যেখানে তার কোরিওগ্রাফ করা ‘শীলা কি জাওয়ানি’ গানটি তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। উপস্থাপক হিসেবে ফারহা খান নিজের জাদু দেখিয়েছেন সেলিব্রেটি চ্যাট শো ‘তেরে মেরে বিচমে’তে। এছাড়াও বিচারক হিসেবে অংশ নিয়েছেন জনপ্রিয় টিভি শো ‘ইন্ডিয়ান আইডল’ সিজন-০১ ও সিজন-০২তে, ‘জো জিতা ওহি সুপারস্টার’, ‘এন্টারটেইনমেন্টকে লিয়ে কুচভি কারেগা’, ‘ড্যান্স ইন্ডিয়া ড্যান্স লিটল মাস্টার’ এবং ‘জাস্ট ড্যান্স’ এ। ফারহা খান ও তার স্বামী শিরিশ কুন্দার একসঙ্গে সম্প্রতি ‘থ্রি‘স কোম্পানি’ নামে একটি প্রডাকশন কোম্পানি শুরু করেছেন। যা তাদের ৩টি জমজ সন্তানের নামানুসারে করা হয়েছে।
এক নজরে ফারহার পাওয়া পুরস্কার
ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড
সেরা কোরিওগ্রাফার হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে প্রথম স্থান দখলকারী সারোজ খানের পর ফারহা খান দ্বিতীয় স্থান দখলে আছেন। তিনি ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০১, ২০০২, ২০০৪ এবং ২০১১ মোট ৬বার ফিল্মফেয়ার সেরা কোরিওগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন।
ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড
২০০৪ সালের ‘কোয়ি মিল গ্যায়া’ ছবির ‘ইধার চালা ম্যায় উধার চালা’ গানের জন্যে ফারহা খান ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে সেরা কোরিওগ্রাফারের পুরস্কার পান।
ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম একাডেমি
২০০১ ও ২০০২ সালে সেরা টেশনিক্যাল এক্সিলেন্টস, ২০০৫ সালে সেরা নবাগত পরিচালক এবং ২০০৯ ও ২০১১ সালে সেরা কোরিওগ্রাফার হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম একাডেমি পুরস্কার জিতেছেন ফারহা খান।
স্টার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড
২০০১,২০০২ ও ২০০৪ সালে সেরা কোরিওগ্রাফারের অ্যাওয়ার্ড এবং ২০০৫ সালে সেরা নবাগত পরিচালকের জন্যে স্টার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
জি সিনে অ্যাওয়ার্ড
২০০৫ সালে সেরা নবাগত পরিচালক ও ২০১১ সালে ‘শিলা কি জাওয়ানি’ থেকে জি সিনে অ্যাওয়ার্ডে সেরা কোরিওগ্রাফারের পুরস্কার জিতেন।
গান আমার ছবির হাতিয়ার : মোস্তফা কামাল রাজ
অনন্যা আশরাফ
ছোটপর্দায় দীর্ঘদিন কাজ করে হাত পাকানো তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। প্রথম ছবি ‘প্রজাপতি’ নির্মাণেই পরিচয় দিয়েছেন মুন্সিয়ানার। তার দ্বিতীয় প্রজেক্ট ‘ছায়া-ছবি’ তৈরির কাজও এগিয়েছে অনেকদূর। সম্প্রতি বাংলানিউজ এই তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল চলচ্চিত্রকারের মুখোমুখি হয়।
বাংলানিউজ : কেমন চলছে আপনার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘ছায়া-ছবি’র কাজ?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : ভালোভাবেই ছবিটির কাজ এগিয়ে চলছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্রুততার সঙ্গেই কাজ করার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ীই সবকিছু চলছে।
বাংলানিউজ : কোথায় কোথায় ছবির শুটিং করলেন?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : ছবিটির শুটিং শুরু করি চট্টগ্রাম থেকে। প্রথম দিকে কয়েকটি গানের শুটিং করি চট্টগ্রাম আর কক্সবাজারের বিভিন্ন লোকেশনে। তারপর ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনে ছবিটির শুটিং হয়েছে। দেশের মধ্যেই শেষ করবো ছবিটির শুটিং।
বাংলানিউজ : কতখানি শেষ হয়েছে ছবির কাজ?
মোস্তফা কামাল রাজ : ছবির শুটিং এখনো চলছে। মনে হচ্ছে ‘ছায়া-ছবি’-নিয়ে অর্ধেক পথ হাঁটা শেষ। সামনে আরো অর্ধেক পথ যেতে হবে। মাঝেমধ্যে একটু থামতে হচ্ছে  দম নেওয়ার জন্য। বাকি অংশের শুটিং শুরু করবো ২৮ এপ্রিল।
বাংলানিউজ : সম্প্রতি ‘ছায়া-ছবি’-এর গানের অ্যালবাম রিলিজ দেওয়া হয়েছে, ছবি মুক্তির অনেক আগেই এবার অ্যালবাম মুক্তি দেওয়ার কারণটা জানতে চাই?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : একটি ছবির প্রমোশনের পেছনে গানের ভূমিকা থাকে অনেক। গানের মাধ্যমেই দর্শকদের কাছে ছবিটিকে খুব সহজেই পরিচিত করা যায়। তাই আমি আগের ছবির মতো এবারও গানকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। সবার আগে গানগুলোর শুটিং শেষ করি। দর্শকরা গান শুনে আগে মুগ্ধ হবেন, তারপর আমার ছবির দেখতে হলে আসবেন। এসব বিষয় মাথায় রেখেই একটু আগেভাগেই আমার অ্যালবামটি মুুক্তির কাজ শেষ করেছি।
বাংলানিউজ : ছবিটির গানগুলোতে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি। ছবিতে গানের কম্পোজিশনের দায়িত্ব ছিল আরেফিন রুমীর উপর। অসম্ভব ভালো কাজ করেছে সে। ছবির গল্প মাথায় রেখে গানগুলোর কথা লিখেছেন কবির বকুল, মারজুক রাসেল,মৌসুমী, মাহমুদ মানজুর,রবিউল ইসলাম জীবন ও আরেফিন রুমী নিজে। ছবির বিভিন্ন গানে কন্ঠ দিয়েছেন শান, অভিজিৎ, আকৃতি কাকর, জুনে ব্যানার্জি, রাঘব চ্যাটার্জি এবং অন্বেষার মত ভারতের নামী শিল্পীরা। আর বাংলাদেশী শিল্পীদের মধ্যে জনপ্রিয় আরেফিন রুমী, নিশিতা বড়–য়া ও পড়শি কন্ঠের জাদুও আছে গানগুলোতে। সবমিলিয়ে অ্যালবামের কাজটা কেমন হয়েছে তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। গানগুলো আমার ছবির সফলতার বড় একটি হাতিয়ার।
বাংলানিউজ : ছবির অভিনয় শিল্পীরা কেমন করছেন?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : ছবির নায়ক চরিত্রে আরেফিন শুভ আমার প্রত্যাশার চেয়েও ভালো অভিনয় করছেন। পূর্ণিমাও তার জায়গায় পারফেক্ট। রোমান্টিক ছবির জুটি হিসেবে আরেফিন শুভ ও পূণিমাকে দর্শক গ্রহণ করবে বলে আমার বিশ্বাস। অন্যরাও প্রত্যেকে সাধ্যমতো ভালো করার চেষ্টা করছেন।
বাংলানিউজ : কোন ধরণের দর্শকদের জন্য ছবিটি তৈরি করছেন?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : ‘ছায়া-ছবি’ সবধরনের জন্যই তৈরি। সবশ্রেণীর দর্শকরা এ ছবিতে কিছু না কিছু ভালো লাগার উপদান খুজে পাবেন। এটি একটি লাভস্টোরি। তাই একটু বেশি খুশি হব সিনেমা হলে তরুণ প্রজন্মের দর্শকদের দেখতে পেলে।
বাংলানিউজ : আপনার আগের ছবি ‘প্রজাপতি’ কতটুকু প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে।
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : অবশ্যই প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে। সিনেমা হলে দর্শকরা এসেছেন ছবিটি দেখতে। একজন নবীন চলচ্চিত্র নির্মাতার ছবিকে দর্শক মনে হয় ভালোভাবেই নিয়েছেন। আমি সবসময় গানকে চলচ্চিত্রে বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। ‘প্রজাপতি’ ছবির গানগুলো দর্শক-শ্রোতারা পছন্দ করেছেন। এটি আমার জন্য খুব আনন্দের একটি বিষয়।
বাংলানিউজ : আপনার নেক্সট প্রজেক্ট কী?
মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ : আমি রানিং প্রজেক্টের মধ্যে ডুবে আছি। নেক্সট প্রজেক্টের জন্য এখনও খাতা-কলম নিয়ে বসতে পারি নি। ‘ছায়া-ছবি’ কে ঘিরেই আমার এখন পূর্ণ মনোযোগ। আগে এই প্রজেক্টের কাজ শেষ হোক, তারপর নেক্সট প্রজেক্টের কথা ভাবতে চাই।
 এবার রবীন্দ্র নায়িকা পাওলি
বিনোদন ডেস্ক

কলকাতার বাঙালি নায়িকা পাওলি দাম এ মুহূর্তে বলিউডের সবচেয়ে আলোচিত নাম। সম্প্রতি বলিউডে মুক্তি পেয়েছে তার প্রথম ছবি ‘হেট স্টোরি’। এ ছবিতে পাওলির খোলামেলা অভিনয় তুমুল হৈ চৈ তৈরি করেছে। এই বাঙালি অভিনেত্রী প্রায় বিবস্ত্র হয়ে অন্তরঙ্গ ভঙ্গিমায় ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। এ কারণেই বলিউডের অনেক নির্মাতা তার প্রতি হয়ে উঠেছেন আগ্রহী।
‘ছত্রাক’ আর ‘হেট স্টোরি’-এর এই নগ্ননায়িকাকে এবার দেখা যাবে রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসের নায়িকা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস ‘চার অধ্যায়’ অবলম্বনে কলকাতায় নির্মিত হচ্ছে ছবি। এতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করছেন পাওলি দাম। ছবিটি পরিচালনা করছেন বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সর্বশেষ উপন্যাস ‘চার অধ্যায়’। তিন দশকের স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র ধারার পটভূমিকায় গড়ে ওঠা প্রেমকাহিনী এটি। ১৯৩৪ সালে উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোচনার ঝড় ওঠে। এটি প্রেমের গল্প হলেও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সহিংস ধারার দোষত্রুটির কঠোর সমালোচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ তার এই উপন্যাসে। আর সেটাই আকৃষ্ট করেছে ছবির পরিচালক বাপ্পাদিত্যকে। পাওলি দাম ছাড়াও ছবিটিতে অভিনয় করছেন রুদ্রনীল ঘোষ, বরুণ চন্দ্র এবং আরো অনেকে। রবীন্দ্র-নায়িকা হওয়ার সুযোগ পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত পাওলি। এ প্রসঙ্গে নিজের অনুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, একজন বাঙালি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্ট চরিত্রে অভিনয় করতে পারাটা আমার জন্য দারুণ গৌরবের এক বিষয়। সিনেমাটিতে আমাকে ভারতের স্বাধীনতার আগের এক চরিত্রে দেখা যাবে। আমি সাধ্য মতো পর্দায় চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবো।
মোস্ট বিউটিফুল ওমেন বিয়োন্সে নোয়েল
প্রীতি ওয়ারেছা

‘মোস্ট বিউটিফুল ওমেন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’, এটি কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতার খেতাব নয়। বিশ্বখ্যাত পিপল ম্যাগাজিন প্রতি বছর পাঠকের জরিপে হলিউড-সুন্দরীদের মধ্যে একজনকে এই উপাধি দিয়ে থাকে। চলতি বছর সেরা সুন্দরীর  এই উপাধি জিতে নিয়েছেন নিউ-মাম পপস্টার বিয়োন্স নোয়েল। পিপল ম্যাগাজিনের প্রতি বছর বেশ কিছু জরিপ পরিচালনা করে থাকে। যার মধ্যে অন্যতম হলো ‘মোস্ট বিউটিফুল ওমেন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’। পাঠকদের ভোটেই নির্বাচিত হন বর্ষ সেরা সুন্দরী।
চলতি বছর শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর মর্যাদা জয়ী বিয়োন্সে নোয়েল ব্যক্তি জীবনে র‌্যাপার জে-জেডের স্ত্রী। ব্লু আইভি নামে এই দম্পতির একটি কন্যা সন্তান আছে। ৩০ বছর বয়সী বিয়োন্সে পাঠক জরিপে বিশ্বব্রম্মা-ের সুন্দরীতমা উপাধি পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ‘এটি আমার জন্য একটি দামি উপহার। খুব খুশি আমি পাঠকদের রায় পেয়ে। সন্তানের মা হওয়ার পর আমার সৌন্দর্য বেড়ে গেছে বলে মনে করি। মাতৃত্ব সত্যিই সবসময় সুন্দর। এই মর্যাদা পাওয়ার পুরো কৃতিত্বই আমি আমার মেয়ে ব্লু আইভিকে দিতে চাই’। গত বছর পিপল ম্যাগাজিনের পাঠক জরিপে ‘মোস্ট বিউটিফুল ওমেন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ উপাধি জয় করেছিলেন গায়িকা ও অভিনেত্রী জেনিফার লোপেজ। পিপলের এবারের জরিপে প্রতিদন্দ্বীদের চুড়ান্ত তালিকায় ছিলে তিন অসি সুপারস্টার নিকোল কিডম্যান, রোজ বায়ার্ন এবং এলি ম্যাকফারসন । তাদের মধ্যে ৪৪ বছর বয়সী নিকোল কিডম্যান ২০০২ সালে পিপল পাঠকদের রায়ে সেরা সুন্দরী হয়েছিলেন। এবছরের পাঠক পছন্দের তালিকায় আরো ছিলেন কেট মিডলটন, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, চার্লিস থেরন, অ্যাডেল, সোফিয়া ভারগারা এবং মেগান ফক্স।
সেলিব্রিটি সংঘাত : কারিনা বনাম ক্যাটরিনা
বিনোদন ডেস্ক
বলিউডে শীর্ষতারকাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ঠোকাঠুকি লেগেছে বলিউডের দুই শীর্ষ নায়িকা কারিনা আর ক্যাটরিনার মধ্যে। তবে অন্যকিছু নয়, তাদের এই দ্বন্দ্বটা পুরোপুরিই পেশাগত। দুই গ্লামার গার্লের মধ্যে নাম্বার ওয়ান পজিশন নিয়েই শুরু হয়েছে রেষারেষি। এই সময়ের টপ হিরোইন কে, কারিনা কাপুর নাকি ক্যাটরিনা কাইফ ? বলিউডে আছে মতভেদ। একদল মনে করছেন কারিনা কাপুরই নাম্বার ওয়ান। অসাধারণ অভিনয়, তুমুল জনপ্রিয়তা, মোটা অংকের পারিশ্রমিক আর নির্মাতাদের কাছে চাহিদার দৌঁড়ে কারিনাকেই এগিয়ে রাখছেন তারা। অন্যদল মনে করছেন, ক্যাটরিনা এরই মধ্যে কারিনাকে পিছু ফেলে একধাপ এগিয়ে গেছেন। নজরকাড়া সৌন্দর্য, হৃদয়ছোঁয়া অভিব্যক্তি আর পোশাকে-আশাকে তরুণপ্রজন্মের স্টাইল আইকনে পরিণত হয়েছেন ক্যাটরিনা। এবার কারিনা ও কাটরিনার দ্বন্দ্বটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ভারতীয় মিডিয়ায়। কিছুদিন আগে একটি মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানীর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হতে বলিউড অভিনেত্রীদের মধ্যে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নিয়েছেন ক্যাটরিনা কাইফ। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাটরিনাকে পেতে সেই প্রতিষ্ঠানটিকে গুনতে হয়েছে সাড়ে তিন কোটি রুপি। এর আগে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক তিন কোটি রুপি নিয়েছিলেন কারিনা কাপুর। ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার পারিশ্রমিক নিয়ে এখন কাটরিনা আর কারিনার মধ্যে ইদুঁর-দৌড় প্রতিযোগিতা  শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ভারতের একটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান কারিনাকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করতে চাইলে তিনি দর হাঁকান চার কোটি রুপি। পারিশ্রমিকে কোনো ছাড় দিতে তিনি রাজি হন নি। শেষপর্যন্ত ঐ চার কোটি রুপি দিয়েই প্রতিষ্ঠানটি কারিনাকে চুক্তিবদ্ধ করেছে। কারিনার চার কোটি রুপি পারিশ্রমিক নেওয়াটা বোধহয় মেনে নিতে পারেন নি ক্যাটরিনা। ঘনিষ্ঠজনদের কাছে জানিয়েছেন, শিগগিরই তিনি পাঁচ কোটি রুপি পারিশ্রমিকে আরকটি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার চুক্তিপত্রে সই করবেন। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরের পারিশ্রমিক নিয়ে একে অন্যেকে টেক্কা দেওয়ার বাইরেও তাদের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আরো কয়েকটি ঘটনায় । সম্প্রতি যশরাজ ফিল্মস এই দুই শীর্ষনায়িকাকে নিয়ে বিগবাজেটের ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু কারিনা আর ক্যাটরিনা কেউই একসঙ্গে অভিনয়ে সম্মতি দেন নি। দুজনই শিডিউলের খালি না থাকার অজুহাতে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এছাড়াও সম্প্রতি একটি বড় অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে এই দুই নায়িকাকে একসঙ্গে পারফর্ম করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া দেন নি তারা। এদিকা কারিনার প্রেমিক ও হবু স্বামী সাইফের সঙ্গে ক্যাটরিনাকে জুটি করেও একাধিক ছবি নির্মাণের প্রস্তাব আসলেও সেগুলো বাস্তব রূপ পায় নি। কারিনার আপত্তি তুলতে পারে, এই ভেবেই সাইফ ক্যাটরিনার বিপরীতে অভিনয় করা থেকে বিরত থাকছেন বলে জানা গেছে। কারিনা আর ক্যাটরিনার দ্বন্দ্ব এখন এমন অবস্থায় গেছে যে, বলিউডের কোন পার্টিতেও একজন গেলে আরেকজন অনুপস্থিত থাকছেন ইচ্ছে করেই। সরাসরি একে-অন্যের বিপরীতে এখন পর্যন্ত কেউ মুখ না খুললেও তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, কারিনা আর ক্যাটরিনা দুজনই পরস্পরকে সহ্য করতে পারেন না। বলিউডের এই দুই সুপার হিরোইনের দ্বন্দ্বে কারণ আর কিছু নয়, নাম্বার ওয়ান পজিশন।
 

একদিন হারিয়ে যাওয়া শৈশবে

কাজল কেয়া
এখনও অনেক জায়গায় ঘুরিনি আমি। এর মধ্যে একটি ছিল আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম। বন্ধু-বান্ধবীদের মুখে অনেক শুনেছি এর এক্সাইটিং সব রাইডের কথা। এরপর থেকেই খুব লোভ হচ্ছিল সেখানে যাওয়ার। কিন্তু এতোদূরে যাওয়ার মত সঙ্গী, সময় বা সুযোগ হয়ে ওঠেছিল না। হঠাৎ একদিন বাংলানিউজের লাইফস্টাইলে চোখ বুলিয়ে দেখি ভালোবাসার গল্প লেখার আহ্বান। প্রকাশের যোগ্য হবে কিনা বা কতটুকু ভালো হবে এসব না ভেবেই লিখে ফেললাম একটি ভালোবাসার গল্প। খুব ভালো লাগলো যথন লাইফস্টাইল বিভাগে অন্যান্যদের গল্পের পাশে আমার গল্পটি দেখলাম। আরও ভালো লাগলো যখন পুরস্কার হিসেবে সব রাইডসহ ফ্যান্টাসি কিংডমের টিকিট হাতে পেলাম। টিকিটের মেয়াদ ছিল ১২ মার্চ পর্যন্ত। কবে যাবো সে প্রহরই গুণছিলাম। প্রায় ১০/১২ দিন পর অবশেষে ঠিক করলাম ২ মার্চ শনিবার যাবো। সঙ্গী আমার বর মেরাজ। সারারাত জেগে অফিস করায় বাসায় এসে সকাল সাড়ে ১০টায় ঘুম দিয়েছিলেন আমার সাহেব। তার ঘুম ভাঙলো দুপুর ২টায়। বাসার সবাই বলছিল আজ যেহেতু দেরি হয়ে গেছে তাই আগামী সপ্তাহে যেন যাই। কিন্তু মন কি আর মানে। আমি বললাম আজই যাব। ব্যস তারাতারি তৈরি হয়ে দুপুরে কিছু না খেয়েই রওনা হলাম। বাসা থেকে যখন বের হই তখন বাজে দুপুর পৌনে ৩টা। আমাদের বাহন হচ্ছে মটোরসাইকেল। বেরিবাঁধ হয়ে ছুটলো আমাদের বাইক। খুব ভালো লাগছিল সেই পথ চলা। দুপাশে সবুজ আর শান্ত। বেরিবাঁধের শেষ মাথা থেকে বায়ে মোড় নিলে আশুলিয়ার রাস্তা। রাস্তাটা যেন শেষ হচ্ছে না, মনে হচ্ছে কখন যাব সেই স্বপ্নের দেশে।
৪৫ মিনিট পর আমরা পৌঁছালাম ফ্যন্টাসি কিংডমের গেটের কাছে। পার্কিংয়ে বাইক রেখে আমরা ভিতরে গেলাম। প্রথমেই ঢুকলাম হেরিটেজ পার্কে। আগেই খাওয়ার দাওয়ার পর্বটা সেরে নিলাম। হেরিটেজ পার্কে রয়েছে আহসান মঞ্জিল, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, সংসদ ভবন, সাতগম্বুজ মসজিদসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার ছোট ছোট প্রতিকৃতি। মনে হলো হারিয়ে গেছি সেই যুগে। শুরু হলো আমাদের দুজনার ফটোসেশন। সময় কম বলে হেরিটেজের কোনো রাইডেই চড়তে পারিনি আমরা। হেরিটেজ থেকে বের হয়ে ঢুকলাম ঈগলু হাউজে। অন্ধাকার ঘরটাতে ঢোকার পর একজন এসে হিন্দি একটি গান ছেড়ে দিলেন ফুল ভলিউমে। মাঝখানে রাখা আছে বরফ। আবার ওপর থেকে শিশিরের মতো পড়ছে পানি। এরপর ঢুকলাম ফ্যান্টাসি কিংডমের ভেতরে। ঢুকেই আবার ছবি তোলা। হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়লো রোলার কোস্টার নামে এক্সাইটিং একটি রাইডের দিকে। দু’জনার টিকিট দেখিয়ে মাত্র তিনজন উঠলাম সে রাইডটিতে। আমি আর  মেরাজ বসেছিলাম একেবারে সামনে। রাইডটি যখনি চলতে শুরু করলো আমি ভয়ে প্রাণপণে চিৎকার শুরু করলাম। মনে হচ্ছিল এখনই ছিটকে পড়ে যাবো নিচে। তবে ভয়ের চেয়ে মজাই পেয়েছিলাম বেশি। আর মেরাজ এতোই মজা পেয়েছিল যে আরেকবার ওই রাইডে চড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল। পরে অবশ্য সময়ের জন্য চড়া হয়নি। ভয়ংকর ওই রাইড থেকে নামার পর সঙ্গীসহ কয়েকজনের সঙ্গে ঢুকলাম অন্ধকার একটি ঘরের মধ্যে। ঘরটির মধ্যে ঢুকে মনে হলো আমি সৌর জগতে আছি। লোহার গ্রিল বিছানো সরু একটি পথ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হলো আমি ঘুরছি। এই বুঝি উল্টে পরে গেলাম। আবারও চিৎকার করতে লাগলাম ভয়ে। সবাই আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলো ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমি ঘুরছি না ঘুরছে দেয়াল আলো করে ডিজিটাল ছবি। এরপর আন্ডারগ্রাউন্ডের মতো একটা পথ সোজা ওয়াটার কিংডমের ভেতরে। যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল আমি পানির নিচের জগতে আছি। ভেতরে ঢুকে শুনলাম পানির কৃত্রিম ঢেউ দিতে এখনও ৩০ মিনেটের মতো বাকি।  টায়ার নিয়ে পানির রাইডগুলোতে চড়া শুরু করলাম। খুব মজা পাচ্ছিলাম দুজনই। বার বার টায়ারে নিয়ে ৩/৪ তলার মতো ওপরে ওঠে বড় পাইপের মত জায়গা দিয়ে নিচে নামা। দারুণ লাগছিল। মনে হচ্ছিল একদিনের জন্য একেবারেই হারিয়ে গেছি। যেন ফিরে গেছি পেছনে ফেলে আসা দূরন্ত শৈশবে। পানিতে কৃত্রিম ঢেউ দেওয়ার ৫ মিনিট আগে সবাইকে জানানো হলো, নেমে গেলাম পানিতে। ঢেউ এসে আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেন সত্যি সত্যি সাগরের ঢেউ। ওয়াটার কিংডম থেকে বের হয়ে দেখি হিন্দি গানের তালে তালে নাচছে একদল ছেলে মেয়ে। সন্ধ্যার নাস্তা খেতে খেতে দেখছিলাম সে নাচ। এরপর চড়লাম আরেকটা রাউডে। নামটা ঠিক মনে করতে পারছিনা। রেইলাইনের মতো একটা খোলা ছোট বগি আস্তে আস্তে উঠছে ওপরে, এরপর হঠাৎ দ্রুত গতিতে নিচে নেমে যাচ্ছে। পর পর তিনবার। বিদ্যুৎ না থাকায় সান্তা মারিয়া আর ম্যাজিক কার্পেটে উঠতে পারিনি। তবে তা পুষিয়ে নিয়েছি অন্য রাইডগুলোর সঙ্গে রিপ্লেস করে। বাম্পার কারে উঠেছি দুবার। গাড়ি কন্ট্রোল করা শিখতে শিখতে রাউডের সময় শেষ। এরপর জুজু ট্রেনে চড়ে দেখে নিলাম পুরো ফ্যান্টাসি কিংডম। সব শেষে ইজিডিজি। সময় একেবারে শেষ পর্যায়ে থাকায় আমরা দু’জনই চড়েছিলাম ওই রাইডে। এরপর আস্তে আস্তে বাড়ির পথে। ফ্যান্টাসি কিংডমে যতক্ষণ ছিলাম মনে হচ্ছিল প্রতিদিনের দায়িত্ব, হাজারো কাজ, সবকিছু ভুলে আমরা দু’জন শৈশব ফিরে পাওয়া মুক্ত মানুষ।
লাক্স ব্রাইডল শো
লাইফস্টাইল ডেস্ক
বিয়ে নিয়ে সাধারনত আমাদের দেশীয় টিভি চ্যানেলে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন অনুষ্ঠান হয়না। জনগণের চাহিদা এবং প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে আরটিভি আয়োজন করেছে বিয়ের যাবতীয় খুটিনাটি বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠান ‘ব্রাইডল শো’। বর কনে দেখা থেকে শুরু করে বিয়ের আগের প্রিপারেশন, বিয়ের আংটি (এনগেজমেন্ট), বিয়ের কেনাকাটা,কোথায় কি কি পাওয়া যায়, হলুদ সন্ধ্যার আয়োজন, হলুদের কেনাকাটা, বিয়ের সাজ, পোষাক, গহনা, মেকআপ, বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিও ধারন, বিয়ের আমন্ত্রনপত্র তৈরি ও বিতরন, বিয়ের দেনমোহর, স্বাক্ষী, উকিল, রেজিষ্ট্রেশন, বিয়ের অনুষ্ঠান কোথায় কোথায় হতে পরে: যোগাযোগ ও খরচ, বিয়ের গাড়ি, বাসর ঘর সাজানো। এছাড়াও দেশীয় বিয়ের বিভিন্ন রীতিনীতি (একটি প্যাকেজ), তারকাদের বিয়ে (একটি প্যাকেজ), সনাতন বিয়ের রীতিনীতি (মুসলিম বিয়ে, হিন্দু বিয়ে ও অন্যান্ন বিয়ের নিয়মকানুন),বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিয়ের আয়োজন (একটি প্যাকেজ) কনেকে ঘরে নেওয়ার যাবতীয় বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তলে ধরা হয়। শাহরিয়ার ইসলামের প্রযোজনায় ও শারমিন লাকির সাবলীল উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি সপ্তাহের প্রতি সোমবার আরটিভিতে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে প্রচার হয়।
কাপড় আয়রন করার পদ্ধতি
লাইফস্টাইল ডেস্ক 
আপনি সঠিক উপায়ে কাপড় আয়রন করছেন তো? আসুন জেনে নিই সঠিকভাবে কাপড় আয়রন করার কয়েকটি টিপস: 
টিপসগুলো দিয়েছেন বিখ্যাত ‘রোয়েন্টা আইরন্স’ এর পণ্য ব্যবস্থাপক ডোনা ওয়েলস। ১. তাপমাত্রা অনুযায়ী পোশাকের তালিকা তৈরি করুন। সিল্ক এবং সিনথেটিক কাপড় নিম্ন ও মাঝারি তাপমাত্রায় (প্রায় ৩৫০ ফারেনহাইট)। পশমি কাপড় মাঝারি থেকে উচ্চ তাপমাত্রায় । এবং সুতি কাপড় উচ্চ তাপমাত্রা ৪০০ থেকে ৪২৫ ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ইস্ত্রি করুন। যেহেতু সঠিক তাপমাত্রা ঠিক করা কঠিন কাজ। তাই তাপমাত্রা পরিবর্তন করার পর কয়েক মিনিটের জন্য আয়রন মেশিনটি রেখে দিন। ২. আয়রন করার পর পরই কাপড় ভাঁজ করে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখুন। ৩. গোল করে কখনোই আয়রন করবেন না। এতে কাপড়ের মধ্যে টান লাগতে পারে। আর লম্বালম্বিভাবে আয়রন করলে কাপড়ের ভাঁজ দূর করে। ৪. অনেক বড় বা লম্বা কোন কাপড় যেমন: পর্দা বা টেবিলকভার আয়রন করার সময় পাশে ২টি চেয়ার বসিয়ে নিন, যাতে কাপড়গুলোতে আপনার আয়রন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভাঁজ না পরে। টেবিলে তোয়ালে বিছিয়ে নিন যাতে ইস্ত্রির গরমে আয়রন করার টেবিলটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ৫. আয়রন সংবেদনশীল কাপড়ের উপরে পরিষ্কার ছোট সুতির কাপড়, রুমাল বা গামছা দিয়ে আয়রন করুন। আয়রন সব সময় কাপড়ের উল্টো পাশে করুন যাতে কাপড় ঝলসে না যায়। ৬ . আপনার লোহার আয়রনের সঙ্গে একটা মাল্টিপ্লাগ ব্যবহার করা জরুরি। এছাড়া ১২ মাত্রার বিদ্যুত্প্রবাহের বৈদ্যুতিক তার হলে ভাল হয়। কম ওজনের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার না করাই ভাল। এতে আয়রন খুব গরম হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। নিশ্চিত হোন যে আপনি সঠিক মাপের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করছেন। ৭. কাপড়ের শুরু থেকে শেষ, বাইরে থেকে ভেতরে এভাবে আয়রন কহতে দিন।

Year-19 # Issue-9 # 15 April 2012


মঙ্গল শোভাযাত্রায় সমুদ্র জয়
রহমান মাসুদ, ইমতিয়াজ মোমিন ও মাহমুদুল হাসান
এসো সত্য, এসো সুন্দর, এসো মুক্তি- স্লোগান নিয়ে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা-১৪১৯ এ হাজারো মানুষের ঢল নামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের উদ্যোগে সকাল ৯টা ২৪ মিনিটে অনুষদের সামনে থেকে এই শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ থেকে হোটেল রুপসী বাংলার মোড় এবং সেখান থেকে টিএসসি হয়ে চারুকলার সামনে শেষ হয়। শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিকী। এছাড়াও শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে মিলন মেলায় পরিণত হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ধরণের মুখোশ, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন বহন করে। তারা ঢাক-ঢোল বাজিয়ে নেচে-গেয়ে প্রাণের উৎসবে মিলিত হয়। গায়ে বর্ণিল পোশাক আর মুখে বাঁশির সুর মোহিত করে তোলে শোভাযাত্রাকে। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া মানুষের মধ্যে ছিল অমলিন আনন্দ। সবকিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র জয়ের বিষয়টি প্রাধান্য পায় শোভাযাত্রায়। পুরান ঢাকা থেকে আগত গৃহকর্মী মেহজাবিন বাংলানিউজকে বলেন, এটা বাঙালির অনুষ্ঠান। এটা শুধুই আমাদের। তাই এতে অংশ নিয়ে সরাবিশ্বের সামনে আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চাই। তিনি বলেন, সরকারের উচিত সারাবিশ্বে বাঙালি সংস্কৃতি তুলে ধরা। বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশিরাও বাঙালি পোশাক ও ঢঙে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক নাতাল স্মিথ বলেন, ‘বাঙালির এই মিলন মেলা দেখে আমি অভিভূত। সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে এই গরমের মধ্যেও তাদের নিজস্ব পোশাকে অংশ নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। আর এমন উৎসবে যোগ দিতে পেরে ভালো লাগছে। এদিকে শোভাযাত্রা উপলক্ষে ৠাব, পুলিশ, সোয়াত বাহিনীর উদ্যোগে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। শোভাযাত্রাকে ঘিরে ক্যাম্পাস এলাকায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। বাঁশি ও ঢাক-ঢোলের শব্দে পুরো ক্যাম্পাস এলাকা মুখরিত। এদিকে ক্যাম্পাসের রাস্তার পাশে দেশীয় বিভিন্ন খাবার ও পণ্যের দোকান বসিয়েছেন বিক্রেতারা। এছাড়াও বিভিন্ন স্পটে আলপনা আ‍ঁকিয়েরাও ছিলেন ব্যস্ত।
চারুকলার শোভাযাত্রা : রাজধানীর বৈশাখী ঐতিহ্য
ফাহিম ফয়সাল
পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ; শুরু হচ্ছে বঙ্গাব্দ ১৪১৯। সবাই গলা ছেড়ে গাইবো কবিগুরুর সেই বিখ্যাত গান ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো...’। পহেলা বৈশাখ ছাড়া বাঙালীর এতবড় সার্বজনীন উৎসব আর নেই। বিদায়ী বছরের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, হতাশা-ক্লান্তি, বেদনা-হাহাকারের পালা সাঙ্গ করে নতুন উদ্দীপনায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার গান নিয়ে নতুন বছরকে বরণ করছে বাঙালী জাতি। বাংলা নববর্ষ বাঙালীর প্রাণের উৎসব। এদিনটিতে সারা বিশ্বের বাঙালীরা পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করতে উৎসবে মেতে উঠে। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে এই উৎসবের ধরণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। একেক অঞ্চলে একেক রকম আয়োজনে উদযাপিত হয় বৈশাখী মেলা, হালখাতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, চৈত্র সংক্রান্তী ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। তবে রাজধানী ঢাকায় প্রতি বছর নববর্ষের দিনের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে থাকে ‘মঙ্গল শোভা যাত্রা’। রাজধানীতে নববর্ষের অন্যতম বিশেষ আয়োজন হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রতিবারই  বাংলা নববর্ষকে বর্ণিল আয়োজনে বরণ করে নিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয় চারুকলায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি। এবছর মাস্টার্স এগারোতম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নের্তৃত্বে চারুকলার সব শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়েছে। সার্বিক তত্বাবধানে রয়েছে একটি কমিটি। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন চারুকলার শিক্ষক শিশির ভট্টাচার্য, নেসার হোসেন, আবুল বারক আলভি প্রমুখ। পহেলা বৈশাখে সকাল নয়টার দিকে চারুকলা থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয়ে হোটেল রূপসী বাংলার (সাবেক শেরাটন হোটেল) সামনে দিয়ে ঘুরে সোজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে যাবে। সেখান থেকে আবার শোভা যাত্রাটি চারুকলার সামনে এসে শেষ হবে। জানা যায়, নরসিংদীর ওয়ারীর বটেশ্বর প্রমাণ করে বাঙালীর সভ্যতা আড়াই থেকে তিন হাজার বছরেরও প্রাচীন। আর এ ইতিহাসের রয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। সে বিবেচনায় এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বাংলার ইতিহাসের নেগেটিভ ও পজিটিভ দিক’। এর মধ্যে রয়েছে সাশান (বাংলাদেশের সামুদ্রিক সিমানা জয়), অপশক্তির বিরদ্ধাচারন, হাতী, ঘোড়া ও পাখী। এই থিমকে ধরেই শোভাযাত্রার প্রতীক তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রথম শোভাযাত্রা চালু হওয়ার বিষয়ে জানা যায়, ১৯৮৮ সালের যশোরের চারুপীঠ নামক একটি প্রতিষ্ঠান সর্বপ্রথম এরকম একটি শোভা যাত্রার আয়োজন করে। তৎকালীন স্বৈরশাসকের সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তার প্রতিবাদে সেই শোভা যাত্রাটির আয়োজন করা হয়। সে সময় শোভা যাত্রাটির মূল উদ্যেক্তা ছিলেন মাহবুব জামিল শমিম, হিরন্ময় চন্দ, মোখলেসুর রহমান। এর  পরের বছর ১৯৮৯ সাল থেকে খুব অল্প পরিসরে চারুকলার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিজস্ব অর্থায়নে প্রতি বছরই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ উৎসবটি করে থাকে। চারুকলার আয়োজনে প্রথম শোভাযাত্রার উদ্যোক্তা উপদেষ্টা ছিলেন- শিল্পী ইমদাদ হোসেন, রফিকুননবী (রনবী), আবুল বারাকাত আলভী, ওয়াহিদুল হক, ফয়েজ আহমেদ, নাসিরদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। তৎকালীন শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন- নেসার হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য, এম মনিরুজ্জামান, সাখাওয়াত, কামাল পাশা চৌধুরী, বিপুল শাহ। তবে আগে অল্প পরিসরে হলেও ২০০০ সালের দিকে এসে এর পরিসর বাড়তে থাকে। পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার উৎসবটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে মোটা অংকের বাজেটও লাগে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শোভাযাত্রার জন্য চারুকলা কখনোই স্পন্সর নেয়নি। অর্থ সংগ্রহের জন্য শিক্ষার্থীরা বাঙালী সংস্কৃতির নানা বিষয় রং-তুলির আঁচড়ে তুলে ধরেন মাটির সরায়, ক্যানভাসে ও মুখোশে। শিক্ষকদের কাছেও রংতুলি ও পেপার পাঠানো হয়। শিক্ষকরা ছবি এঁেক পাঠিয়ে দেন। তাঁদের আঁকা ছবি বিক্রি করেও অর্থ সংগ্রহ করা হয় উৎসবের জন্য। শিক্ষকদের চিত্রকর্ম সর্বনিম্ন আড়াই হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়ে থাকে।
তবে আরও বেশি দামের চিত্রকর্মও রয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি এক হাজার ও পাঁচ’শ টাকা করে বিক্রি করা হয়। এছাড়া লোকজ মোটিভ সম্বলিত সরার মধ্যে ছোট সরা ৩শ‘ ও বড় সরা পাঁচ’শ টাকা করে এবং মুখোশ ৬’শ টাকা করে বিক্রি করা হয়। শোভাযাত্রার অর্থায়নের জন্য চারুকলায় আরো  বিক্রি করা হয় - মুখোশ, জল রং, সরা পেইটিং, টি শার্ট, তুলার পাখি ইত্যাদি। পঞ্চাশ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে এসব জিনিস ক্রেতা সাধারন কিনতে পারেন। তবে শিক্ষকদের কাজ এবং আরও বিশেষ কিছু কাজ নিলামের মাধ্যমে প্রতি বছর বিক্রি হয় বলে জানান, এগারোতম ব্যাচের ছাত্র মিথুন দত্ত। তিনি বলেন, বাঙালী সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী আপাদমস্তক বাঙালীরা বাংলা নববর্ষের এই উৎসবকে স্বার্থক করে তুলতে তাদের আঁকা সরা, ছবি, মুখোশ এবং তাদের শিক্ষকদের আঁকা ছবি ক্রয়ের মাধ্যমে ফান্ড তৈরিতে সহায়তা করে। শোভাযাত্রার প্রতীক তৈরিতে এবার ফোক মোটিভ হিসাবে তিন পাখির একটি কম্পোজিশন তৈরির কাজ হয়েছে।

পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী হালখাতা
মফিজুল সাদিক
স্টাফ করেসপন্ডেন্টনিজ নিজ ধর্মীয় রীতি অনুসারে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা হালখাতা উদযাপন করছেন। গনেশ পুজার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী ও দোয়া-মোনাজাতের মধ্য দিয়ে মুসলিম ব্যবসায়ীরা এক বছরের বাকি উঠানোর জন্য তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান পালন করছেন।পহেলা বৈশাখে হালখাতা শব্দটি আমাদের সামনে এলেই রাজধানীর তাঁতী বাজার, শাঁখারি বাজার এবং ইসলামপুরের কথা মনে পড়ে যায়। এখানে ধর্ম বর্ণ ভুলে হালখাতার মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে চলছে লেনদেনের হিসাব ও কুশল বিনিময়। সতাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় রীতি অনুসারে গনেশ পুজার মধ্য দিয়েই শুরু করেছেন হালখাতা। সে উপলক্ষ্যে পুরান ঢাকার অলি-গলিতে চলছে গনেশ পুজার উৎসব। আর পুজারিরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন, দোকানে দোকানে দিচ্ছেন পুজা। শ্রী শ্রী দুর্গা মায়ের মন্দিরের পুজারি নন্দ দুলাল ব্রহ্মচারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘হালখাতা উপলক্ষে দোকানে দোকানে গনেশ পুজা দেব এবং ভগবানের কাছে আগামী বছর ব্যবসার সমৃদ্ধি কামনা করবো।  হালখাতা মানেই পুরাতনের নিস্পত্তি এবং নতুনের হিসেব শুরু।’ নতুন বছর উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের টালি খাতা মন্দিরে মায়ের চরণ স্পর্শ করাচ্ছেন। খাতায় পুজারির হাত দিয়ে গনেশ ঠাকুরের নামও লেখাচ্ছেন তারা। শাঁখারি বাজারের সুর বিতানের মালিক দেবনাথ সুর বলেন, ‘আমরা মন্দিরে এসেছি মায়ের চরণে খাতা স্পর্শ করাতে। এরপর ক্রেতা-বিক্রেতা সকলে মিলে হালখাতা উদযাপন করব।
সাধ্যমত ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করাবো।’ তিনি বলেন, ‘আজকের এই দিনে ধর্মের কোনো ভেদাভেদ নেই। পুরাতন বছরের সব কিছু ভুলে গিয়ে আমরা একে অপরে হালখাতা উদযাপন করছি। হালখাতায় ধর্মীয় উ‍ৎসবের মতো আনন্দ পাচ্ছি। গনেশ  পুজা এই বৈশাখ থেকে আগামী বৈশাখ পর্যন্ত বহাল থাকবে।’  এদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও হালখাতা উদযাপনে কোনো কমতি নেই। মুসলিম সম্প্রদায়ের দোকানে দোকানে চলছে কোরানখানি, তেলাওয়াত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। ইসলামপুর বাজারের ফরহাদ বস্ত্র বিতানের মালিক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আজকে মূলত একে অপরের খোঁজ খবর নেব। যারা আসছে সাধ্যমত আপ্যায়ন করছি। আর যারা বাকি পরিশোধ করতে না পেরে দোকানে আসতে লজ্জা পাচ্ছেন, কর্মচারীর মাধ্যমে তাদের বাসায় মিষ্টি পাঠানো হচ্ছে।’ পহেলা বৈশাখে পুরান ঢাকায় শুধু হালখাতাই নয়, ধনী-গরীব-দুঃস্থ অসহায় সকলে মিলিত হয়ে উদযাপন করছে পহেলা বৈশাখ। অনেকে দুঃস্থদের মধ্যে মিষ্টি ও শাড়ি বিতরণ করছেন।
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে 
সুকুমার সরকার

নববর্ষের  এদিনে পুরো ঢাকা শহর জুড়েই বসেছিল উৎসবের মেলা। যেদিকে চোখ যায় শুধুই প্রাণখোলা মানুষের হাট। নগর জীবনের শত দুঃখের মধ্যেও কারো মনের মধ্যে ছিল না কোন দুঃখ-ব্যথা-বেদনা। সবাই নগরীর রাস্তায় হাজির উৎসবের মাতোয়ারা হতে। শনিবার রাজধানীর প্রতিটি পয়েন্ট জুড়ে ছিল উৎসবের জটলা। মোড়ে মোড়ে বৈশাখী আবাহনের গান-বাদ্যি-বাজনা। সেখানে মেতে উঠেছেন বৃদ্ধ-শিশু-কিশোর-তরুণ-তরুণী কেউ বাদ নেই। প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে গান বাজনা আর পণ্যের মেলা। এ যেন অন্য রকমের মেলার পসরা। গ্রাম-বাংলার কুটিরশিল্পের পাশাপাশি ছিল নগরকেন্দ্রীক হরেক রকমের পণ্য সামগ্রী। মাটির সামগ্রী থেকে প্লাস্টিক পণ্য। সারা ঢাকা শহর জুড়েই বসেছিল এই পণ্য মেলা। বাদ ছিল না গরমের তেষ্টা মেটাতে আইসক্রিম, তরমুজ, বাঙ্গি, লেবু ও বেলের শরবত। গত কয়েকদিনের টানা বৈরি আবহাওয়ার পর শনিবার সূর্যিমামাও বাঙালির প্রাণের উৎসবের সঙ্গে সামিল। সকালের দিকে রাজধানীবাসী উপভোগ করেছেন বসন্ত বিদায় আর গ্রীষ্মের প্রারম্ভের মিষ্টি এক পরিবেশ। কিন্তু এ পরিবেশ স্থায়ী ছিল মাত্র কয়েকধণ্টা। বেলা সাড়ে ১০টার পর তেতে উঠতে থাকে রৌদ্রের খরতাপে। তখন মানুষ ক্ষণিকের জন্য অস্বস্তি বোঁধ করলেও ঘুরে বেড়ানোর উৎসবে ভাটা পড়েনি। প্রখর খরতাপ উপেক্ষা করে রাজধানীর মানুষ ঢাকার এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্ত ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রবল উৎসাহে। বাড়ির কর্তার কাঁধে সন্তান। রোদ থেকে বাঁচতে মাথায় রুমাল বা তোয়ালে আর গিন্নি শাড়ির আঁচল মাথায় দিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এভাবেই রাজধানীবাসী পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছেন। সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা জানিয়েছেন সারা বছরটা এমন আনন্দেই কেটে যায়- স্পর্শ করতে না পারে কোন দুঃখ-কষ্ট।
সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্যতম নজির সুরঞ্জিতের পদত্যাগ 
শামীম খান
  প্রবীণ রাজনীতিবিদ দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের রেলমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি সাহসী পদক্ষেপ বলে মনে করছেন দেশের প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। তারা একে সংসদীয় গণতন্ত্রের এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে তকমা দিয়েছেন। ইতিবাচক রাজনীতি চর্চার একটি নতুন ধারার শুভ সূচনা খুঁজে পেয়েছেন এর মধ্য দিয়ে।

বলেছেন, পদত্যাগ করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আপাদমস্তক এবং আজীবন রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রয়োজন বাংলাদেশের রাজনীতিতে রয়েছে সবসময়ই থাকবে বলেও মত দিয়েছেন তারা। কেউ কেউ সুরঞ্জিতের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ প্রতিহিংসা বা বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র কিনা সে প্রশ্ন তুলে বলেছেন একমাত্র সুষ্ঠু তদন্তের মধ্য দিয়েই তার প্রমাণ পাওয়া সম্ভব। একজন রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ ওঠার ঘটনাকে স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করছেন কেউ কেউ। তবে এই ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্্ঘাটন প্রকৃত রহস্য জনসম্মুখে তুলে ধরার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রত্যেকেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের দেশে এই প্রথম সংসদীয় গণতন্ত্রের সংস্কৃতির দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত বিএনপির দুর্নীতির অনেক ঘটনা ধরা পড়েছে কিন্তু তারা কেউ পদত্যাগ করেনি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ একটা সাহসী কাজ।”  “তবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পেছনে কি কারণ আছে তার সুক্ষ্ম ও গভীর তদন্ত দরকার। হতে পারে প্রতিহিংসা, হতে পারে সঠিক সাবলিল ঘটনা,” বলেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।  বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বলেন, “আমাদের দেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, পদত্যাগের দাবি উঠে। কিন্তু কেউ কখনো পদত্যাগ করেনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্রে পদত্যাগের রেওয়াজ আছে। আমাদের দেশে এটাই প্রথম দৃষ্টান্ত। কিন্তু ঘটনা ধামাচাপা যেনো পড়ে না যায়। কারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো তা মানুষ জানতে চায়।” তিনি বলেন, “আমাদের দেশে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে কিন্তু সামরিক-বেসামরিক আমলাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠে না। তারা ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যায়। নানা কারণেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে পারে। বিরাজনীতিকরণের জন্যও অভিযোগ উঠতে পারে। তবে সরকার যেনো এর সুষ্ঠু তদন্ত করে।”  জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বাংলানিউজকে বলেন, “সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এই পদত্যাগ বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বলিষ্ঠ ও সাহসী সিদ্ধান্ত। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক নতুন ধারার সুচনা হলো। তার এই সিদ্ধান্ত দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সঠিক চিত্র খুঁজে বের করতে ও দোষীদের সাজা দিতে সহায়তা করবে।” ইনু বলেন, “আমি তার বিরুদ্ধে দুনীতির অভিযোগ দেখছি না। তার মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। সম্পৃক্ততা আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন বাবলু বাংলানিউজকে বলেন, “সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য শুভ দিক। তবে তার মতো একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠাটা দঃখজনক। যদিও রাজনীতিবিদদের উত্থান-পতন, অনুকুল-প্রতিকুল সব পরিবেশের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। সে দিক থেকে তার এটি স্বাভাবিক ঘটনা।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, “সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না। দলের ভেতরে ও বাইরে উভয় জায়গা থেকেই তিনি সমর্থন হারিয়ে ফেলেছিলেন। পার্টির ভেতরে আগে থেকেই তার প্রতি সমর্থন ভালো ছিলো না। বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী প্রেক্ষাপটে। এ কারণে পার্টির ভেতর থেকে পরিস্থিতি সমলানোর ক্ষমতাও তার ছিলো না।” “তবে যতক্ষণ তদন্ত না হবে ততক্ষণ বলা মুশকিল সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কতটুকু দোষী,” বলেন ড. ইমতিয়াজ। সাবেক সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বাংলানিউজকে বলেন, “সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগের সিদ্ধান্তটি ভাল। তার পদত্যাগের ফলে তদন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তবে এটা প্রথম পদক্ষেপ। শেষ পদক্ষেপ হবে- কি ঘটনা ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে তা বের করা। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তদন্ত শেষ হওয়ার আগে সেটা নিয়ে মন্তব্য করা কাদা ছোঁড়াছুঁড়িরই নামান্তর।” আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহ্্দীন মালিক বলেন, “দুর্নীতির এই ধরণের অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়া এবং মন্ত্রীর পদত্যাগ করার প্যাকট্রিস দেশের জন্য নিসন্দেহে মঙ্গলজনক।” তিনি বলেন, “সেনগুপ্তের এই পদত্যাগের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে ইতিবাচক হয়ে থাকবে।” সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. এম জহির বলেন, “রেলমন্ত্রী হিসেবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রথমেই পদত্যাগ করা উচিত ছিলো। তবে পদত্যাগই শেষ কথা নয়। এ ঘটনার সঠিক তদন্ত হতে হবে। সুরঞ্জিতের জন্য এ ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে ড. জহির বলেন, “তিনি সারা জীবন রাজনীতি করেছেন এ ঘটনাটি হয়তো তার জন্য ব্যাড লাক।”
সুরঞ্জিত দফতরহীন মন্ত্রী

এপিএসের অর্থ কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করেছে সরকার।
মঙ্গলবার রাতে এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ‘১৯৯৬ সালের কার্যপ্রণালী বিধির ৩(৪) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’ গত ৯ এপ্রিল সোমবার রাতে মন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িতে অর্থ পাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই সময় গাড়িতে রেলের পূর্বাঞ্চলের জিএম ইউসুফ মৃধাও ছিলেন। রেলওয়েতে নিয়োগ বাবদ পাওয়া ঘুষের ৭০ লাখ টাকাসহ তারা পিলখানা বিজিবি সদর দফতরের প্রধান ফটকে আটক হন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার দায় স্বীকার করে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
সোহেল তাজের চিঠি পেয়েছে সরকার
মন্ত্রিত্ব ছাড়ার ৩৩ মাস পরও বেতন কেন?
মান্নান মারুফ
মন্ত্রিত্ব ছাড়ার ৩৩ মাস পরও বেতন-ভাতা যাচ্ছে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজীম আহমেদ সোহেল তাজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত গাজীপুর-৪ আসনের এ সাংসদ ১৬ ও ১৭ এপ্রিল ইস্যু করা পৃথক দুই চিঠিও দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে সোহেল তাজের ব্যক্তিগত সহকারী আবু কাওসার চিঠি দু’টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র। সূত্রমতে, ওই দুই চিঠির একটিতে প্রতিমন্ত্রীর বেতন-ভাতা বন্ধ না হওয়ায় বিস্ময় ও উষ্মা প্রকাশ করেছেন সোহেল তাজ। অপরটিতে পদত্যাগপত্র কেন কার্যকর করা হয়নি তা জানতে চেয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদতনয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে দেওয়া ১৬ এপ্রিলের চিঠিতে সোহেল তাজ বলেন, ``২০০৯ সালের ৩১ মে বাংলাদেশ সংবিধানের ৫৮(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর হাতে আমার পদত্যাগপত্র দেই। ১ জুন আবারো সেই পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠাই।  এরপর থেকে অদ্যাবধি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমি কোথাও কোনো কিছুতে স্বাক্ষর করিনি। যা এরই মধ্যে চিঠি দিয়ে আপনাকে অবহিত করা হয়েছে।`` ওই চিঠিতে আরো বলা হয়, ``এরপর ২০০৯ এর আগস্ট থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আমার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে এক সঙ্গে পাঠানো প্রতিমন্ত্রীর মাসিক পারিতোষিক ও ভাতাদি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য বা কাম্য হতে পারে না। কারণ, প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে আমার নামে মাসিক বেতন ভাতার চেক আমি নিজ স্বাক্ষরে গ্রহণ করেছি। যা আপনার জানা আছে।`` চিঠিতে সোহেল তাজ আরো বলেন, ``যেহেতু আমি পদত্যাগ করেছি, সেজন্য উল্লেখিত সময়ে আমার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পাঠানো সব অর্থ ফেরত নেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।`` পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করা প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে দেওয়া দেওয়া অপর চিঠিতে সোহেল তাজ বলেন, ``২০০৯ সালের ৩১ মে পদত্যাগ করার পরও এখন পর্যন্ত তা গেজেট নোটিফিকেশন করা হয়নি।
যা সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও আমার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা ছাড়াও এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।`` তিনি বলেন, ``আমার পাঠানো পদত্যাগপত্র গেজেট নোটিফিকেশন না করে উল্টো আমার অজান্তে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ২০০৯ এর আগস্ট থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত  প্রতিমন্ত্রীর মাসিক বেতন ভাতার চেক জমা দেওয়া হয়েছে। অথচ ২০০৯ সালের জুন মাস থেকে কোনো কিছুতেই প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমার স্বাক্ষর নেই।`` বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোরও অনুরোধ জানিয়েছেন সোহেল তাজ। উল্লেখ্য, সোহেল তাজ বর্তমানে ওয়াশিংটনের উপকণ্ঠে ম্যারিল্যান্ডে অবস্থান করছেন। রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের গাড়িতে ৭০ লাখ টাকা পাওয়ার ঘটনা এবং এর জের ধরে মন্ত্রীর পদত্যাগের পটভূমিতে সোহেল তাজের এই চিঠি পাঠানোকে তাৎপর্যময় মনে করা হচ্ছে।
চিঠি পেয়েছে সরকার
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজের চিঠিটি মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার হাতে পৌঁছায়। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরেই এ ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
১৮ এপ্রিল সম্প্রসারিত জোট ঘোষণা খালেদার
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৬ দলের সম্প্রসারিত জোট ঘোষণার আলো শেষ পর্যন্ত জ্বলবে এমন আশ্বাস পেয়েছে বিএনপির সমমনা দলগুলো। আগামী ১৮ এপ্রিল চারদলীয় জোটের  সঙ্গে নামসর্বস্ব আরো ১২ দল নিয়ে নতুন জোটের ঘোষণা দেওয়া হবে বলে বিএনপির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। জোটের নাম হবে সম্মিলিত গণতান্ত্রিক জোট।
সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনির্য়াস মিলনায়তনে ১৮ এপ্রিল নবগঠিত জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া। এ উপলক্ষে ওই দিন বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। আপাতত ১৬ দল নিয়ে সম্প্রসারিত জোট গঠন করা হলেও এ জোট আরো বড় হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে ভাগ্য বিপর্যয় ঘটছে সমমনা দলগুলোর ব্যানারে এতোদিন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে আসা দল জমিয়তে ওলামা ইসলামের। জোটে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েও এ দলটিকে নতুন জোটে রাখা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে অন্য একটি সূত্র। এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সম্প্রসারিত হচ্ছে, এ খবরে আনন্দে আছে সমমনা দলগুলো। এক দল এক নেতা, নেই অফিস, নেই ঠিকানা এমন দলগুলোর অবস্থান হবে এখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাশে। শরিক দলগুলোকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। জোট সম্প্রসারণ নিয়ে গত বছর থেকেই আলোচনা হচ্ছিল। সমমনা ও চারদলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এ নিয়ে একাধিক বার বৈঠকও হয়েছে। ১২ মার্চ মহাসমাবেশে জোট সম্প্রসারণের ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত দেয়নি বিএনপি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাংলানিউজকে বলেন, ‘জোট গঠন নিয়ে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছিলাম। এর আগেও একবার জোট ঘোষণা দেওয়ার চিন্তা ছিল। তবে তা বিভিন্ন কারণে হয়ে উঠেনি। তবে এখন মোটামুটি চূড়ান্ত, আগামী ১৮ এপ্রিল জোট ঘোষণা হচ্ছে। এ ঘোষণা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেবেন বলেও তিনি জানান। জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান নতুন জোট ঘোষণার কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সমমনা দলগুলো খুশি, খালেদা জিয়া নিজেই জোট ঘোষণা দেবেন শুনে।’ এনডিপির সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নীলু জোট ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগামী ১৮ এপ্রিল জোট ঘোষণার বিষয় জানিয়ে আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ জোট ঘোষণার বিষয়টি জানিয়ে বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তাফা ভঁূইয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিনের দাবি ছিল আমাদের জোটে নেওয়ার বিষয়টি। শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া ১৮ এপ্রিল ১৬টি দল নিয়ে জোট ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন।’ ১৬টি দল হচ্ছে, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, জাগপা, এনপিপি, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি. মুসলিম লীগ, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, এনডিপি ও ডিএল। সূত্র বলছে, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে জোটে নিচ্ছে না বিএনপি।
ফের স্বপ্ন খানখান করেছে আ.লীগ: ফখরুল
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

‘আওয়ামী লীগ ১৯৭২-’৭৫ পর্যন্ত এ দেশের মানুষের স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছিলো’ অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নতুন করে গত তিন বছরে তারা আবার মানুষের স্বপ্ন খানখান করে দিয়েছে।’ শনিবার পহেলা বৈশাখের বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পূববর্তী আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ সরকার অর্থনীতির ভিত ধ্বংস করে দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে পথে বসিয়েছে। শিল্প কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া কৃষিক্ষেত্রেও পড়ছে। মানুষ এ থেকে মুক্তি চায়। নতুন বছরে পেছনের গ্লানি মুছে আমরা সব বাধা-বিপত্তি যেন কাটিয়ে উঠতে পারি।’ ‘যখনই দেশ দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে তখনই নানা নীলনকশায় স্বপ্ন কুক্ষিগত করার চেষ্টা করা হয়েছে’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এ দেশের ৯০ জন মানুষের সাংস্কৃতিক যে দৃষ্টিভঙ্গী তা বিসর্জন দেওয়া যাবে না। বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমাদের শপথ নিতে হবে। আগামীতে নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষায় পেছনের গ্লানি মুছে ফেলে নতুন করে খালেদা জিয়ার নৃতৃত্বে দেশ গড়ার শপথ নিতে হবে।’ জাসাসকে বাংলা সংষ্কৃতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি জাতির মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে নিজেদের সংস্কৃতি ও সাহিত্য ধরে রাখতে হবে। নতুন করে শপথ নিতে হবে গণতন্ত্র, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায়। মানুষকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে হবে।’ জাসাসা সভাপতি আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্বণির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, জাসাস নেতা গাজী মাযহারুল আনোয়ার, বাবুল আহমেদ প্রমুখ।
দক্ষিণের মনোনয়নপত্র নিলেন কাজী ফিরোজ রশিদ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে স্থাপিত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে রোববার দুপুরে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর কাজী ফিরোজ রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকাবাসিকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর যানজট এবং নগর ভবনের দুর্নীতি নিরসন করতে চাই।’ নারায়ণগঞ্জের মতো নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী পোস্টার অন্য প্রার্থীর থাকলেও নির্বাচন কমিশন শুধু আমাকেই এ ব্যপারে চিঠি দিয়েছে। সরকারদলীয় সাংসদদের দিয়েও নির্বাচনে প্রভাব আসতে পারে বলে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন। তবে ঢাকাবাসি সঙ্গে থাকলে জয় নিশ্চিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। উল্লেখ্য, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে ১৩ এপ্রিল কাজী ফিরোজ রশিদকে শোকজ নোটিশ দেয় ইসি। নোটিশে বলা হয়, বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকায় আয়োজিত জাতীয় পার্টির জনসভায় দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ফিরোজ রশিদকে ডিসিসি দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। এছাড়া প্রকাশ্য জনসভায় তার পক্ষে ভোট চান এরশাদ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর এ ধরণের ঘটনা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে জানায় ইসি।এদিকে ১৪ এপ্রিল কাজী ফিরোজ রশিদ সেই চিঠির জবাব দিলে সন্তুষ্ট হয়নি ইসি।
সংস্কৃতিতে বাংলা নববর্ষ
আরিফুল ইসলাম আরমান
পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন, বাংলা নববর্ষ। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়।
ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নেয়। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন উৎসব। বিশ্বের সকল প্রান্তের সকল বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়, ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে অতীত বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা একে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেয়। নববর্ষের উৎসব বাংলার গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, ফলে সাধারণ মানুষের কাছে দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সাধারণত নববর্ষের দিনে সবাই বাড়িঘর পরিষ্কার রাখে, ব্যবহার্য সামগ্রী ধোয়ামোছা করে এবং বছরের প্রথম দিনে ভোরে গোসল সেরে পাক পবিত্র হয়। এ দিনে ভালো খাওয়া, ভালো থাকা ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলজনক বলে মনে করা হয়। নববর্ষে ঘরে ঘরে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং প্রতিবেশীদের আগমন ঘটে। মিষ্টি, পিঠা, পায়েসসহ নানারকম  লোকজ খাবার তৈরির ধুম পরে যায়। একে অপরের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় চলে। প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার মাধ্যমেও নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় হয় যা শহরাঞ্চলে এখন বহুল প্রচলিত। নববর্ষকে উৎসবমুখর করে তোলে বৈশাখী মেলা। এটি মূলত সর্বজনীন লোকজ মেলা। এ মেলা অত্যন্ত আনন্দঘন হয়ে থাকে। স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য, কারুপণ্য, লোকশিল্পজাত পণ্য, কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, সকল প্রকার হস্তশিল্পজাত ও মৃৎশিল্পজাত সামগ্রী এই মেলায় পাওয়া যায়। এছাড়া শিশু কিশোরদের খেলনা, মহিলাদের সাজ সজ্জার সামগ্রী এবং বিভিন্ন  লোকজ খাদ্যদ্রব্য যেমন: চিড়া, মুড়ি, খৈ, বাতাসা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি প্রভৃতির বৈচিত্রময় সমারোহ থাকে মেলায়।  মেলায় বিনোদনেরও ব্যবস্থা থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগায়ক ও লোকনর্তকদের উপস্থি’তি থাকে। তাঁরা যাত্রা, পালাগান, কবিগান, জারিগান, গম্ভীরা গান, গাজীর গান সহ বিভিন্ন ধরনের লোকসঙ্গীত, বাউল , মারফতি, মুর্শিদি, ভাটিয়ালি ইত্যাদি আঞ্চলিক গান ও লাইলী-মজনু, ইউসুফ-জুলেখা, রাধা-কৃষ্ণ প্রভৃতি পরিবেশন করেন। এছাড়া শিশু কিশোরদের আকর্ষণের জন্য বায়োস্কোপ, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের যেসব স্থানে বৈশাখী মেলা বসে সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সাভার, রংপুরের পায়রাবন্দ, দিনাজপুরের ফুলছড়িঘাট এলাকা, মহাস্থানগড়, কুমিল্লার লাঙ্গলকোট, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, মহেশপুর, খুলনার সাতগাছি, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল অঞ্চল, সিলেটের জাফলং, মণিপুর, বরিশালের ব্যাসকাঠি-বাটনাতলা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, টুঙ্গিপাড়া, মুজিবনগর এলাকা ইত্যাদি। দিনাজপুরের ফুলতলী, রাণীশংকৈল, রাজশাহীর শিবতলীর বৈশাখী  মেলাও বর্তমানে বড় উৎসবে রূপ নিয়েছে। কালের বিবর্তনে নববর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক পুরনো উৎসবের বিলুপ্তি ঘটেছে। আবার সংযোগ ঘটেছে অনেক নতুন উৎসবের। ঢাকার ঘুড়ি ওড়ানো এবং মুন্সিগঞ্জের গরুর দৌড় প্রতিযোগিতা এক সময় অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন আঞ্চলিক অনুষ্ঠানের মধ্যে চট্টগ্রামের বলীখেলা এবং রাজশাহীর গম্ভীরা প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনায় অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে নগরজীবনে নগর সংস্কৃতির আদলে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে নববর্ষ উদযাপিত হয়। এদিন সাধারনত সকল শ্রেণীর এবং সকল বয়সের মানুষ ঐতিহ্যবাহী বাঙ্গালি পোষাক পরিধান করে। নববর্ষকে স্বাগত জানাতে তরুণীরা লালপেড়ে সাদা শাড়ি, হাতে চুড়ি, খোপায় ফুল, গলায় ফুলের মালা এবং কপালে টিপ দেয়। আর ছেলেরা পাজামা ও পাঞ্জাবি পরে, কেউ কেউ ধুতি পাঞ্জাবিও পরে। এদিন সকালে পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ ভাজা ও নানারকম ভর্তা খাওয়া একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। বর্ষবরণের চমকপ্রদ ও জমজমাট আয়োজন ঘটে রাজধানী ঢাকায়। রমনার বটমুলে  বৈশাখী উৎসবের অনুষ্ঠানমালা এক মিলনমেলার সৃষ্টি করে। ছায়ানটের উদ্যোগে জনাকীর্ণ রমনার বটমূলে রবীন্দ্রনাথের আগমনী গান এসো হে বৈশাখ এসো এসো-এর মাধ্যমে নতুন বর্ষকে বরণ করা হয়।
নববর্ষ যে ভাবে এলো
খাজনা আদায়ের সুষ্ঠুতা দানের লক্ষে মুঘল সর্মাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জতে সংস্কার আনার লক্ষে আদেশ দেন। সর্মাটের আদেশে বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজির ওপর আরপিত হয় আদেশ। তিনি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। মুঘল সর্মাট ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রজাদের ওপর আরোপিত কর আরবী সন হিজরী অনুসারে নেওয়ার প্রথার সাথে সমকালীন বাংলার আবহাওয়ার মিল না থাকায় প্রজাদের ফসল আরবি মাসের সাথে মিলত না এবং প্রজারা তাদের খাজনা বা কর পরিষোধ করতে পারতনা। প্রজাদের অসুবিধার কথা লক্ষ করে মুঘল সর্মাট আকবর বাংলার আবহাওয়ার সাথে কৃষকের ফলমান ফসলের মিল রেখে তৈরি করা হয় ‘ফসলি সন’। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে ফসলি সন গণনা শুরু হয়। এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় ৫ নভেম্বর, ১৫৫৬ সাল থেকে। পরবর্তীতে এটি প্রকাশ পায় বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ হিসেবে। ঐতিহাসিকেরা অনেকেই মনে করেন, বাংলা সন বহু আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। আসাম, বঙ্গ, কেরল, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়– এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হতো। এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় এটি ছিল আর্তব তথা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হত। তখন এর মূল বিষয় ফুঠে উঠত কৃষিকাজ। কৃষকদের ঋতুর ওপরই নির্ভর করতে হতো প্রণিত এই বংলা সনের ওপর। যুগের বিবর্তন ধারায় নতুন বর্ষ শুরু এবং হিসেবের জটিলতা দূর করতে হালখাতা হয়ে উঠে ব্যবসায়ীদের ও ক্রেতাদের মিটমাটের দিন।


বাঙালিয়ানা
দিদার খান 
চৈত্রের দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে চিরায়ত কাল থেকে বাঙালি স্বাগত জানিয়ে বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ার পরশ পেতে চায়। কতো রঙ আর রূপে রাঙানো সেই আগমনি বার্তা। কতো না গানে গুঞ্জনে মেতে ওঠে সেই আনন্দঘন মুহূর্তটি। সকল প্রতীক্ষা আর আয়োজন সেই শুভ লগ্নটির জন্য। সবকিছুই প্রস্তুত, অপেক্ষা কখন সূর্যের কিরণ বঙ্গজননীকে নবরূপে উদ্ভাসিত করবে। বাঙালির আর যেন তর সইছে না, সবাই কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে সেই নবজাগরণের গানে চারিদিক মাতিয়ে তুলবে। সব জীর্ণ-পুরাতন, দু:খ-বেদনা ভুলে গিয়ে আবার স্বপ্ন দেখবে নতুন দিনের। সব শত্রুতা ভুলে গিয়ে, কাধে কাধ মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে বৈশাখ শত শত বছর ধরে বাঙালির জীবনে বয়ে আনে নতুনের বার্তা। আসলে বৈশাখ কিংবা বৈশাখী ঝড় বাঙালি জাতির জীবনে এক অন্যরকম অনুপ্রেরণা। যুগে যুগে সকল সংকট মুহূর্তে বাঙালি জাতি বৈশাখকে মনে প্রাণে কামনা করে। বৈশাখী ঝড় যেমন পূর্বের সব জীর্ণতা দূর করে প্রকৃতিকে নতুন রূপে সজ্জিত করে, বাঙালি জীবনও ঠিক সেই ঝড়ের মতো সব কপটতা, অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার গ্লানি মুছে ফেলে নতুন করে বাঁচতে শেখে। আমরা  নতুনের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে সহজেই পুরাতন দু:স্বপ্নগুলো মুছে ফেলতে পারি বলেই হয়তো জাতি হিসাবে আমরা সুখি। শত বেদনা, শত শোষণ নিপিড়ন ভুলে গিয়ে মুখে হাসি ফোটাই বৈশাখী ঝড়ের আগমনী বার্তায়। সময়ের বিবর্তনে হয়তো অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। পাল্টে গেছে আমাদের সমাজ, মূল্যবোধ আরো অনেক কিছুই। বিদেশি অপসংস্কৃতির কালো ছায়ায় আমাদের ভাষা, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, আমাদের চেতনা ইত্যাদি অনেক কিছুই আজ হুমকির মুখে। শত চেষ্টা করেও কিছুতেই এই ধারার পথরোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। সবাই যখন হাল ছেড়ে দিচ্ছেন, আমরা তখন আশাবাদী হয়ে উঠি যখন বৈশাখ বাঙালির জীবনকে রঙে রূপে ভরিয়ে দেয়। অন্তত এই একটি দিনের জন্য হলেও বাঙালি তার আসল বাঙালিয়ানায় ফিরে আসে, নিজেকে নতুনরূপে চিনতে পারে, নিজের সংস্কৃতি ঐতিহ্য আর গৌরবের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। মাঠে-ঘাটে, শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই বৈশাখের নতুনের বার্তা বইতে থাকে। সবার কণ্ঠ গুন গুন করে গেয়ে ওঠে বৈশাখের আগমনী গান। অনেকে হয়তো বলতে পারেন যতো সব আদিক্ষেতা, এক দিনের সখের বাঙালি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। কিন্তু একদিনের জন্য হলেও পহেলা বৈশাখের এই দিনটির জন্যই বাঙালি তার অতীত ঐতিহ্যকে কাছ থেকে জানার ও দেখার সুযোগ পায়। তাঁতের শাড়ি, পান্তা, ইলিশ, বাহারী মেলা, নগরদোলা, সাপের খেলা, বাউল গান, রমনার বটমূল; একটি দিনের জন্য হলেও ক্ষতি কি? হোক না। বৈশাখ আছে বলেই তো হাজার বছর পরও আমরা গর্ব ভরে বলতে পারি – আমি বাঙালি। আমাদের জীবনে এটি এমন একটি দিন যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে একই সুতোয় গেথে রেখেছে। বৈশাখ আছে বলেই আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি অসাম্প্রদায়িক এক শস্য-শ্যামল বাংলাদেশের। বৈশাখের আগমনী বার্তায় নিহিত থাকে আমাদের নবজাগরণের বাণী। আমাদের মূল্যবোধকে পূণরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা একমাত্র বৈশাখেরই আছে। আমরা তাই প্রতি বছর পহেলা বৈশাখের এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করি অধীর আগ্রহে, এবার বুঝি মুক্তি পাবো সকল অসাঢ়তার জঞ্জাল থেকে।
বৈশাখ বাঙালির ঐতিহ্য

শামীম হোসেন
আমরা এখন দিবস কেন্দ্রীক বাঙালি হয়ে গেছি। এটা শুনতে হয়তো আমাদের কারো কারো খারাপ লাগতে পারে। বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখকে যেন এ মাসেই মনে পড়ে। সারা দেশের মানুষ প্রতি বছরই এ দিনে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মেতে ওঠেন পরম আনন্দে। এ দিনে আমরা জাত-কুল-বর্ণ-ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে যাই। সবাই শামিল হন এক কাতারে। একদিনের জন্য হলেও পহেলা বৈশাখ সবাই মনে-প্রাণে হয়ে উঠেন বাঙালি। এই বৈশাখী উৎসব দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে অব¯’ানরত বাঙালিরা এখন বেশ ধুমধাম করে উদযাপন করে থাকেন। অনেকরকম আশঙ্কার মধ্যেও পহেলা বৈশাখ নিয়ে সবারই অবস্থান ভেদে পৃথক পৃথক ভবনা থাকে। অনেকেই হয়ত ভাবেন দিনটাতে মেঘমুক্ত শুস্ক আবহাওয়া থাকবে আবার কেউ কেউ ভয়ে থাকেন কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানবে কিনা? ব্যবসায়ীদের ভাবনাটাও কিš‘ এই বৈশাখ কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। কারণ তারা নতুন বাংলা বছরে হালখাতা করে তাদের বকেয়া আদায় করেন। আবার কেউ কেউ নতুন বছর থেকে নতুন ব্যবসা শুরু করেন। অবস্থান ভেদে সবার ভাবনাগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়। আর শিশু-কিশোরদের ভাবনার বিষয়ে বলা যায়, ঈদের পরেই সবচেয়ে আকর্ষণীয় উৎসব হল বৈশাখী মেলা। এই মেলা থেকে শিশুরা তাদের শখের খেলনাসহ নানা রকম জিনিস সংগ্রহ করে। যার ভাবনা যে রকমই হোক আমাদের সবার লক্ষ্ একটাই তাহলো বাঙালির সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখকে আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করার। বাঙালির প্রায় ৮০০ বছরের পুরোনো সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখ উৎসব। রাজস্ব অর্থাৎ খাজনা আদায়ের জন্য চালু হয়েছিল এ সংস্কৃতি। পহেলা বৈশাখই আমাদের দেশের একমাত্র বড় উৎসব যে উৎসবে আমরা সবাই ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষ এক কাতারে শামিল হই। পহেলা বৈশাখে এখন সরকারিভাবে রাজস্ব আদায় হয়না ঠিকই তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীদের মধ্যে হাল খাতার রীতি এখনো চালু রয়েছে। এ দিনে পুরাতন বছরের হিসাবের খাতা বাদ দিয়ে নতুন বছরের খাতা খোলা হয়। আর এজন্য ব্যবসায়ীরা হালকা মিষ্টি খাবারের আয়োজনও করে থাকেন।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে গ্রাম-বাংলার নানান জায়গায় বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। গ্রাম-বাংলার মেলার রীতি এখন শহরে এসেও যুক্ত হয়েছে। রেওয়াজ চালু হয়েছে মাটির পাত্রে পান্তা ইলিশ খাওয়ার। যদিও নিম্ম-মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষরা এই রেওয়াজকে বাঙালিয়ানা মনে করে না। কারণ রেওয়াজ ছিল ১ বৈশাখের সকালে দই-চিড়া খাওয়ার। কিš‘ শহুরেদের মধ্যে পান্তা ইলিশের এই চল পাকাপাকিভাবেই যুক্ত হয়ে গেছে বৈশাখী উৎসবে। ঢাকার জীবনেও বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে পহেলা বৈশাখ। এদিন ঢাকার মানুষজন ইট-কাঠের বন্দীদশা থেকে বের হয়ে একটু আনন্দ করে পরিবারের সাবাই মিলে। কেউবা আবার বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে ঘুরতে বের হয়। ঢাকার বৈশাখী ঐতিহ্যের সঙ্গে ছায়ানট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। রমনার বটমূলে ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের বৈশাখি গানের অনুষ্ঠান শুরু হয়। আর চারুকলা আয়োজন করে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। শোভাযাত্রায় বাঙালির সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা হয়ে ওঠে উৎসবের নগরী। রমনা, টিএসসি চত্বরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় মেলার। রাজধানীতে পহেলা বৈশাখকে ঘিরে লাখো মানুষের ঢল নামে। শাহবাগ মোড় থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত মানুষের মিলনমেলা বসে। বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা,চন্দ্রিমা উদ্যান, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর ও লেকসহ সর্বত্রই থাকে লোকে-লোকারণ্য। বড় ঢল নামে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও টিএসসিকে ঘিরে। নতুন বাংলাবছর ১৪১৯ শুরু হোক সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী। আমাদের সবার অবস্থান থেকে আমরা সবাই ভালো থাকি, বিকাশ ঘটাই দেশীয় সংস্কৃতির এবং নতুন বাংলাবছর ১৪১৯ সবার জীবনে শান্তির সুবাতাস বয়ে যাক।

পহেলা বৈশাখ ও আমার ভাবনা
সাদিয়া ফাতেমা কবীর
‘বার মাসে তের পার্বণ’ খ্যাত বাঙালিদের অনেক প্রিয় উৎসবের একটি হল পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা বর্ষবরণ। একজন উৎসবপ্রিয় বাঙ্গালী হিসেবে আমার ও এই নববর্ষ বরণ নিয়ে উৎসাহের অন্ত নেই। আনন্দঘন, উৎসবমুখর এই দিনটি নিয়ে ভাবতে গেলেই কিছু ভাবনা আপনা-আপনি চলে আসে। পহেলা বৈশাখ মানেই আমার কাছে মঙ্গল শোভাযাত্রা, রঙ্গিন আল্পনা, গরদ তথা লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, মাটির গয়না, হাত খোঁপায় জড়িয়ে, রাখা চুলে ফুলের ছোঁয়া, মেহেদী-আলতার রঙ্গে হাত রাঙ্গানো,বৈশাখী মেলায় ঘুরতে ঘুরতে মুড়িমুড়কি, মন্ডা-মিঠাই এর স্বাদ নেওয়া, নাগরদোলা, পুতুল নাচ... জল আনা স্বাদ-এর এক অভূতপূর্ব সমন্বয় এই দিনটি। নিজেকে এবং নিজের শেকড় কে নতুনরূপে ফিরে পেতে এই দিনটি বরাবরই আমার কাছে অনন্য। প্রতি বছরের মত ১৪১৯ কেও একই ভাবে বরণ করার আশা রাখছি। তবে আমার একটা স্বপ্ন আছে যেটা প্রতিবারই দেখি, চেষ্টা করি যতটা সম্ভব স্বপ্নটাকে সত্যতা দেওয়ার। এবারও ব্যাতিক্রম হবেনা জানি। আমি স্বপ্ন দেখি আমাদের সমাজটা একদিন এমন হবে যেদিন বর্ষবরণের দিনে কোন পথশিশু ভাত খাবার জন্য দুটো পয়সা চেয়ে কাঁদবেনা, ফেলে দেওয়া তরমুজের খোসা, পান্তার বাসন খুঁটে খাবার খুঁজে ফিরবেনা। সমাজের উঁচু তলার মানুষগুলোর বদ্ধ গাড়ির কাঁচের সামনে ফুল হাতে কাকুতি-মিনতি করবেনা কোন শিশু। আমাদের সমাজে সামর্থ্যবান মানুষের অভাব নেই। খুঁজলে এমন অনেক পাওয়া যাবে যারা নতুন বছরকে বরণ করতে হাজার হাজার টাকা শপিং সেন্টারে বিলিয়ে দিচ্ছেন অনায়াসেই। আমি বলিনা যে মানুষ শখ পুরন করবেনা। মানুষ অবশ্যই তার শখ পূরণ করবে কিন্তু একবার ভেবে দেখা বোধহয় উচিত যে আমার শখের জন্য বরাদ্দ হাজার টাকার সামান্য কিছুটা দিয়ে আমি আরও একজনের শখ না বরং প্রয়োজন মেটাতে পারি। লিখছি বলেই না, আমার মন এভাবেই আমাকে বলে। আমি জানি হয়ত আমি একা না, আমার মত এরকম ভাবে আরও অনেকেই ভাবেন। সেটাই আশার কথা। আমরা জাতিগত ভাবে আশাবাদী আর তাই আশা করি এমন একদিন অবশ্যই আসবে যেদিন আমার এই ভাবনাগুলো সত্য হবে, মানুষ বুঝতে শিখবে জাতির ঐতিহ্য। রক্ষায় সব থেকে আগে দরকার মানুষগুলোকে রক্ষা করা আর সেদিনের বর্ষবরণ খুঁজে পাবে প্রকৃত সার্থকতা। পঞ্চমবর্ষ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল
হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ
বিনোদন প্রতিবেদক
সুরের ধারা ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসভ হাজার কণ্ঠশিল্পীর গানের মধ্য দিয়ে বরণ করা হল ‘বাংলা নববর্ষ ১৪১৯’। রবীন্দ্র, নজরুল ও লালনের সাতটি সমবেত সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে স্বাগত জানানো হলো বাংলা নতুন বছরকে। ১৪ এপ্রিল শনিবার ভোর ৫টা থেকে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়  বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি। ‘স্বপনো বিনা তব বাঁজে...’গানটির মধ্য দিয়ে শুরু হয় সুরের ধারা ও চ্যানেল আই যৌথ উদ্যোগে হাজারও কণ্ঠে কোটি বাঙালির বর্ষবরণ ১৪১৯ অনুষ্ঠানের। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার সঙ্গে প্রায় এক হাজার শিল্পীর সমবেত কণ্ঠে মুখর হয়ে উঠে পুরো আয়োজনটি। বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এবং পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, ইমপ্রেস গ্রুপের পরিচালনা পরিষদ সদস্য জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন, সব্যসাচি লেখক সৈয়দ শামসুল হক, অভিনেতা-নির্মাতা আফজাল হোসেন, চলচ্চিত্র পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন, নারী উদ্যোক্তা কনা রেজা প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ দেশী-বিদেশী আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। প্রতিবছরই বর্ষবরণ অsabinaনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে চ্যানেল আই। এ বছর চ্যানেল আইয়ের এ আয়োজন উপলক্ষে ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সম্প্রচারের প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয় চ্যানেল আই থেকেই। রমনার বটমূল থেকে ছায়ানটের অনুষ্ঠান প্রথম সরাসরি সম্প্রচার করা শুরু করে চ্যানেল আই । এছাড়াও আমরা বর্ষবরণের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছি। একটি টিভি চ্যানেলের দায়বদ্ধতা থেকে এবং দর্শকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আমরা এবার ব্যাপক পরিসরে অনুষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই হাজার হাজার দর্শকের মিলনমেলায় পরিণত হয়  অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ। অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল জনপ্রিয় শিল্পী রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, ফরিদা পারভীন, আবিদা সুলতানা, সৈয়দ আব্দুল হাদী, কনকচাঁপা, লীনা তাপসী, লিলি ইসলামের কন্ঠে গাওয়া গানগুলো। রুনা লায়লা এ আয়োজনে মুগ্ধ হয়ে তার অনুভূতি কথা জানিয়ে বলেন, চ্যানেল আইকে আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এতো সুন্দর একটি আয়োজন করার জন্য। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আরও সঙ্গীত পরিবেশন করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত শিল্পীবৃন্দ এবং চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ও ক্ষুদে গানরাজের শিল্পীরা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শিমুল মুস্তফা প্রমুখ। বাঙালীর প্রাণের এই বৈশাখী উৎসবে ছিল নগরদোলাসহ আরও হস্ত ও কুঠিরশিল্প এবং নববর্ষের খাদ্যসামগ্রীর বিভিন্ন স্টল। আমীরুল ইসলাম ও শহীদুল আলম সাচ্চুর পরিচালনায় এ অনুষ্ঠানটি ভোর থেকে বেলা ১টা ৪৫মিনিট পর্যন্ত চ্যানেল আইয়ের পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।

রিনিঝিনি কাচের চুড়ি
পহেলা বৈশাখে নারীর সাজের গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ কাচের রেশমি চুড়ি। রিনিঝিনি শব্দে এক আলাদা আবহ তৈরি করে কাচের চুড়ি। তাই বৈশাখে হাতভর্তি রেশমি চুড়ি না হলে যেন নারীর সাজ পূর্ণ হয় না। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে চুড়ি কিনেছেন তো। এখনো না কিনে থাকলে জেনে নিন কোথায় পাবেন মনের মতো কাচের চুড়ি।  ইডেন কলেজ, হোম ইকোনমিকস কলেজের পাশে গড়ে উঠেছে চুড়ির এক বড় বাজার। টিএসসির মোড়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ভবনের পাশে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং ছবির হাট ও চারুকলার সামনে গড়ে উঠেছে কাচের চুড়ির সম্ভারও কম নয়। এ ছাড়া নিউ মার্কেট, গাউসিয়া, বসুন্ধরা সিটি, মৌচাক মাকের্টসহ সব শপিং সেন্টারেই কাচের চুড়ি পাওয়া যায়। মাত্র ২০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ২০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন পছন্দের এক ডজন কাচের চুড়ি। ইডেনের সামনে প্রায় ১০ বছর ধরে চুড়ি বিক্রি করেন, সখিনা বেগম চুড়ি বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। সখিনা বলেন, সারা বছরই ছাত্রীরা চুড়ি কেনে তবে পহেলা বৈশাখের আগে তার বিক্রি কয়েকগুন বেড়ে যায়। বৈশাখে লাল শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে সেখানে চুড়ি কিনছিলেন বাংলায় অনার্সে পড়া ছাত্রী শায়লা। শায়লা লাল চুড়ি নিচ্ছেন। সে জানালো, বড় মার্কেটগুলোতে একই ধরণের পন্য পাওয়া গেলেও দাম অনেক বেশি। খালার কাছে একটু দেখে কিনলে কম দামেই পছন্দের চুড়ি কেনা যায়।
চলো আকাশ ছুঁয়ে আসি

হেজলুল ইসলাম
বাস্তবে যদি পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচ্চতায় যাওয়ার সুযোগ থাকে তবে তা কে না নিতে চায়? সেরকম একটি কাজ দূর্গম হিমালয় পর্বতমালার ভেতর পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু সড়ক পথে সাইক্লিং করা। শুরুটা ছিল হঠাৎ করেই, একদিন ইন্টারনেটে দূর্গম হিমালয় পর্বতমালার ভেতর পৃথিবীর সব চেয়ে উঁচু সড়ক পথে সাইক্লিং করার একটি অদ্ভুত তথ্য নজরে আসে। এই সড়কটি ভারতের মানালি থেকে ভারত নিয়ত্রিত কাশ্মিমের লাদাক অঞ্চল, অত:পর লাদাক থেকে খারদুং লা। সংক্ষেপে আফগানিস্তান ও তিব্বতের দক্ষিণ-পশ্চিমে হিমালয়ের মাঝে। এখানে সাইক্লিং করার সুযোগটি আসালেই উত্তেজনাপূর্ণ।
পরবর্তী দিন, ব্যক্তিগত খরচে, আমার এই সাইক্লিং করার সিদ্ধান্তটির ঘোষণাটি, অফিস সহকর্মী ও বন্ধুমহলে অত্যন্ত হাসির একটি কারণ হয়ে দাড়ায়। এক অর্থে তারা ভুল কিছুই করেনি, এটা কোন ছেলে খেলা নয়। ৬০০কি:মি: পথের সাথে ৩০০কি:মি: সমান উঁচু পাহাড়ি পথে সাইক্লিং করার জন্য শারিরীক ভাবে যথেষ্ট সামর্থ থাকতে হবে অবশ্যই। শুধু তাই নয়, বৈরি আবহাওয়ার সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭০০০ ফিটেরও অধিক উচ্চতায় অক্সিজেনও কম থাকে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রস্বাসের জন্য। অত:পর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন যে বিষয়টি শেখার ছিল তা হল, মানসিক ভাবে এ কাজের প্রস্তুতি নেয়া, যেখানে হিমালয় এক জনবসতিহীন স্থান, আর রয়েছে খাবার ও খাবার পানির অপ্রতুলতা।
Md_Hazlul_Islam

সব কঠিন কাজের প্রথম যে কাজটি করতে হয় তা হল একটি দামি ও উন্নতমানের পাহাড়ে চালনোর উপযোগী সাইকেল যোগাড় করা ও পর্যাপ্ত অর্থ। এখন আমার আছে একটি ভাল সাইকেল ও একটি স্বপ্ন, উঁচু নিচু হিমালয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু সড়ক  পথে সাইক্লিং করা।
মানসিক এবং আর্থিক প্রস্তুতির পর আমি পথের একটি প্রাথমিক পরিকল্পনা করে নেই। তা ছিল এমন:
দিন ০১: মানালি থেকে মাড়ি
দিন ০২: মাড়ি থেকে শিশু
দিন ০৩: শিশু থেকে পাতসিও
দিন ০৪: পাতসিও থেকে সারচু
দিন ০৫: সরচু থেকে পাং
দিন ০৬: পাং থেকে লাতো
দিন ০৭: লাতো থেকে লেহ্
দিন ০৮: লেহ থেকে খারদুং লা।

Md_Hazlul_Islam
অফিস সহকর্মী ও বন্ধুমহল থেকে শুনতে হয় আমি পাগল এবং একাজটি সম্পূর্ণ করা আমার পক্ষে অসম্ভব। আবার কেউ কেউ বলে এটি আত্মহত্যা ছাড়া কিছুই নয়। একটি মজার প্রশ্ন ছিল যেখানে বিমানে যাওয়া সম্ভব সেখানে কেন সাইকেল? সত্যি, যদি তা আমার জানা থাকত, কেন.... শুধু জানা ছিল পরবর্তী ১০টি দিন খুবই কষ্টকর যাবে, যা সাধারন জীবনযাত্রা থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। যেহেতু দীর্ঘদিন সন্ধান চালোনোর পর দ্বিতীয় একজন সামর্থবান সাইকিলিস্ট পাওয়া যায়নি, অগত্যা একাই যাত্রা শুরুর করতে হয় পৃথিবীর সেই অজানা পথে।  আনুসঙ্গিক পোশাক, মেরামত করার যন্ত্রপাতি ও সাইকেল নিয়ে ২০১১ সালের আগষ্ট মাসের ২০ তারিখ যাত্রা করি প্রথমে বিমানে করে দিল্লি। পরবর্তীতে দিল্লি থেকে বাসে করে ১২ ঘন্টার যাত্রা শেষে মানালি। মানালি, যেখান থেকে যাত্রা শুরু এই উত্তেজনাপূর্ণ অভিযান।
Md_Hazlul_Islam
দিন ০১: মানালি থেকে মাড়ি
প্রথম দিন হিসেবে দিনটি ছিল যথেষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ, দেশ থেকে বহু দূরে একা আমি হিমালয় এর মত জনশূণ্য পাহাড়ে সাইক্লিং করছি। একটি স্বপ্ন পূরণের আশায় এগিয়ে যাই সামনের দিকে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, সকালবেলা মানালি পৌঁছানো মাত্র চলতে শুরু করি বহুল প্রতিক্ষিত মানালি-লাদাক সড়ক পথে। জায়গাটি হিমালয়ে হওয়াতে শুরু থেকেই উচ্চতার দিকে সাইক্লিং শুরু করতে হয়। যতই উঁচুতে যাচ্ছি ততই ঠান্ডা বাড়ছিল।
শুরুতেই যে পাহাড়টিতে  সাইক্লিং শুরু করি তার নাম হল রোথাং। ধীরে ধীরে পলচান নামক জায়গা পার হয়ে রোথাং এর সোলান উপত্যকার মাঝদিয়ে গুলাবা নামক স্থানে পৌঁছি যা মানালি থেকে ২৫কি:মি দূরে। এখানে হালকা খাবার খেয়ে আবার যাত্রা শুরু হয় মাড়ির দিকে।  রোথাং নামের সবুজ পাহাড়টি পযর্টকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। রোথাং এর গায়ে আছড়ে পরা মেঘ ভেদ করে, ঠান্ডা আবহাওয়ার ভেতর দিয়ে চলে যাই মাড়ি। এ জায়গায় কোন বসতি চোখে পড়বে না কিছু তাবু ছাড়া। তাবুগুলো মূলত পর্যটকদের থাকার জন্য ব্যাবহৃত হয়। মাড়ি পৌঁছাতে প্রায় সন্ধে হয়ে যায়, তাই সিদ্ধান্ত নেই এখানেই আমার প্রথম দিনের যাত্রাবিরতি এবং রাতের খাবার জলদি শেষ করেই ঢুকে যাই নিজের তাবুতে। যেহেতু পাহাড়ে খুব দ্রুত রাত নামে এবং প্রথম দিনে যথেষ্ট পরিশ্রমের পর, নির্জন পাহাড়ে তাবুই ছিল আমার সোনার প্রাসাদ রাত কাটানোর জন্য। এভাবেই তাবুতেই রাত কাটতে হবে প্রতি রাতে, যার আর কোন বিকল্প নেই পরবর্তী দিনগুলোতে।
Md_Hazlul_Islam
দিন ০২: মাড়ি থেকে শিশু
দ্বিতীয় দিনটি শুরু হয় ৭0সে: তাপমাত্রার ঠান্ডায় সাইক্লিং করে। একটি তাবুর দোকানে নুডলস দিয়ে সকালের নাস্তা শেষে চা পান করে শরীর গরম করে আবার শুরু হয় সাইক্লিং রোথাং এর চুড়ার দিকে। প্রথমে বেশ খানিকটা পথ ভালই ছিল কিন্তু কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় ভাংগা পথ। মাটি ও পাথরের টুকরার ওপর দিয়ে যেতে হয় প্রায় ১৮কি:মি: ওপরের দিকে। সম্পূর্ণ যাত্রার মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে খারাপ পথ কারণ বৃষ্টির জন্য ভূমি ধ্বসের কারণে কোথাও কোথাও রাস্তার বিন্দুমাত্র চিহ্নও ছিল না। অবশেষে ১৩১০০ ফিট উচ্চতায় রোথাং পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে পারি। ১৬ কি:মি: পথ পাড়ি দিয়ে মাত্র ২২০০ফিট উচ্চতা অতিক্রম করতে সক্ষম হই। যায়গাটি ভ্রমন পিয়াসীদের জন্য একটি অনন্য স্থান। চুড়ায় পৌঁছানোর পর আবার শুরু হয় নিচের দিকে নামা। রাস্তার এতটাই বাজে অবস্থা যে বলে বোঝাবার মত নয়। একটু পিছলে  গেলেই হাজার ফিট নিচে পড়ে যাবার আশংকা। ধীরে ধীরে নামতে নামতে হয় খোকসার নামক স্থানে। এখানে একটি বাধ্যতামূলক বিরতি নিতে হয় কারন প্রথম বারের মত একটি পুলিশ ফাঁড়ি দেখতে পাই। এখানে সবাইকে পাসপোর্ট বা পরিচয় পত্র লিপিবদ্ধ করতে হয়।
বলে রাখা ভাল, অভিযানের এই পথটি সাধারন পর্যটকদের জন্য গত ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল। এ পথটি মূলত ইন্ডিয়ান সামরিক বাহিনীর প্রযোজনে ব্যবহৃত হয়। যার জন্য মাঝে মাঝে পুলিশ বা সামরিক বাহিনির চেক পোষ্টে লিপিবদ্ধ করে সামনে যেতে হয় এখনও।
একজন পুলিশ অফিসার প্রথম বাংলাদেশী সাইকেল পর্যটক বলে আমাকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রন জানায়। তার সাথে দুপুরের খাবার শেষে আবার বেড়িয়ে পড়ি পাহাড়ি পথে। এখান থেকে রাস্তাটি যথেষ্ট ভাল বিধায় কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই বয়ে চলা বাঘা নাদীর পাশ দিয়ে চলে যাই শিশু।
শিশুতে এক পাহাড়ির বাড়ির সামনে একটু ভাল যায়গা দেখে তার অনুমতি নিয়ে আমার তাবু ফেলি। যখন আমি আমার তাবু ফেলতে ব্যস্ত, তখন হঠাৎ সেই পাহাড়ি তার বাড়ির ভেতর থাকার আমন্ত্রন জানায়। শুধু এখানেই শেষ নয়, সে তার বাড়িতে গরম পানি, দুধ এমনকি গরম বিছানারও ব্যবস্থা করে। রাতের খাবারও তাদের সঙ্গে শেষ করে, কিছুক্ষণ আমার ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে তাদের সঙ্গে গল্প করি। গল্প শেষে তাদের কাছ থেকে অগ্রিম বিদায় নিয়ে বিছানায় চলে যাই যেহেতু খুব ভোরে তাদের ঘুম ভাঙ্গার আগেই আমি বেড়িয়ে পড়ব লাদাকের পথে।
Md_Hazlul_Islam
দিন ০৩: শিশু থেকে পাতসিও:
যাত্রার তৃতীয় দিনে খুব ভোরবেলা ৫টা বাজতেই বেরিয়ে যাই সাইকেল নিয়ে।  জিনজিনবার পর্যন্ত রাস্তা কিছুটা উঁচু হলেও গনডালা পর্যন্ত রাস্তা ছিল খুবই উঁচু। এখান থেকে হিমালয়ের এক অদ্ভূত সৌন্দর্য চোখে পড়ে। সূর্যের আলো যখন দূর পাহাড়ের চূড়ায় পড়ে, তখন মনে হয় যেন কেউ পাহাড়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে কিংবা স্বর্ণ দিয়ে পাহাড়কে মুড়িয়ে রেখেছে, আর খুবই নিচে দিয়ে বয়ে চলা সেই বাঘা নদী, সে এক অপূর্ব দৃশ্য। এভাবে চলতে চলতে পৌঁছে যাই তানডি, যেখানে দেখা মেলে বিপরীত দিক থেকে আসা আরো দুই সাইকেল আরোহীর সঙ্গে। তাদের একজন জার্মান ও অপর জন স্পেনিশ। তাদের মতে এ পথে একা যাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু কি আর করা? তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বিদায় নিয়ে চলতে থাকি কেলং এর পথে। পথে বরফ গলা পানির ঝরনা থেকে পানির তেষ্টা মেটাই। এই ঝরনা গুলোই ছিল আমার জীবন রক্ষার একমাত্র পানির উৎস। কেলং থেকে ইসতিংরি পর্যন্ত কিছুটা নিচু পথ হলেও ইসতিংরি থেকে জিপসা ছিল ৮০০ফিট উঁচু পাথুরে পথ, মাঝে ৪০০ ফিটের কিছুটা ঢালু পথও ছিল। এই পথটি ছিল কিছুটা বিপদজনক কারন একটু অন্যমনষ্ক বা নিয়ন্ত্রন হারালে মুহূর্তের মাঝেই পড়ে যেতে হবে ১০০০ফিটেরও বেশি নিচু খাদে। এভাবেই উঁচু পথ ধরে পৌছে যাই বারালাছা লা পাহাড়ের পাদদেশে এবং সেখান থেকে মাত্র ১০ কি:মি: দূরে দারচা পুলিশ ফাঁড়িতে। দারচা পুলিশ ফাড়িতে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আবারও শুরু করি বারালাছা লা পাহাড়ে ওঠা। প্রায় ১০ কি:মি: ওঠার পরই সন্ধে হয়ে আসতে শুরু করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই রাত। পাহাড়ে খুব অল্প সময়েই রাত হয়ে যায় কারন সূর্য পাহাড়ের আড়াল হলেই অন্ধকার। সুতরাং পাতসিও নামক এই স্থানেই তাবু ফেলতে হয় এই দিনের জন্য। অপ্রত্যাশিত ভাবে কিছুটা দূরে আরো দুটি তাবু নজরে আসে, কিন্তু  রাত  হওয়াতে জানা সম্ভব হয়নি কারা ছিল সেই তাবুতে। সঙ্গে থাকা শুকনো রুটি আর ঝরনার পানি খেয়ে ঢুকে পড়ি স্লিপিং ব্যাগ এর ভিতর সে দিনের জন্য। আগের তিনদিনের রোমাঞ্চকর যাত্রার সঙ্গে যারা ছিলেন, চলুন এবার আপনাদের নিয়ে ভ্রমণের শেষ পর্যন্ত জানি।
দিন ০৪: পাতসিও থেকে সারচু
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই আগের মত শুকনো রুটি খেয়েই রওনা হবার সময় পরিচিত হই সেই তাবুবাসীদের সঙ্গে। একটি তাবুতে ছিল কারলো (ইতালি) ও অপর তাবুতে ছিল যাদক দম্পতি (ইসরায়েল)।  এত দিন পর তিন জন সাইকেল সঙ্গী পেয়ে একটু সাহস বেড়ে যায়। কিন্তু বেশিক্ষণ তাদের সঙ্গে সাইকেল চালানো যায়নি, তারা আমাকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যায়। এর কারন তাদের ছিল ট্যুর গাইড যারা তাদের মালামাল বহন কাছিল।  আর আমি আমার ভারি মালপত্র একাই বহন করে ধীরে ধীরে এগুতে থাকি। পাতসিও থেকে দৃশ্যপট হঠাৎ ই বদলে যায় শুকনো ও ধুসর হিমালয় অঞ্চলে। এ জায়গাটি মূলত সামরিক ঘাঁটি। তাই যথেষ্ট নিরাপদ বোধ করি একা একা যাত্রার এই অংশটুকুতে। এখান থেকে ২ কি:মি: দূরেই বারালাছা লা পাহাড়ের বেস ক্যাম্প। এই বেস ক্যাম্প থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে উঠতে থাকি যার উচ্চতা প্রায় ১৬৫০০ফিটেরও বেশি। ধীরে ধীরে যখন চূড়ায় পৌঁছি সেখানে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেই। উচ্চতা, অক্সিজেন স্বল্পতা ও ক্লান্তি সব মিলিয়ে  ঘুম যেন অনিবার্য হয়ে পড়ে। এখান থেকে সারচু মাত্র ২৫কি:মি:। সারচু এ যেন এক যাদুর এলাকা, ভৌগালিক অবস্থান এমনই যে এখানে কোন রকম চেষ্টা ছাড়া সাইকেল আপনা থেকেই প্রায় ২০কি:মি: বেগে চলতে থাকে। কারও মতে এখানে একরকম চৌম্বকীয় ক্ষেত্র আছে যা লোহাযাতীয় যেকোন কিছুকেই টানতে থাকে। জায়গাটি আসলে ঢাল বলেই মূলত এমনটি হয়ে থাকে যা দৃশ্যত সমতল মনে হয়। প্রায় সন্ধে বেলা সারচু গিয়ে প্রথমেই একটি সামরিক ঘাটি চোখে পড়ে। এই যায়গায় এসে সেই তিনজন সাইক্লিস্টের সঙ্গে দেখা হয় আবার। তারা আমার তিন ঘন্টা আগেই এখানে চলে আসে । সিদ্ধান্ত নেই আমরা এখানেই রাত কাটিয়ে পরদিন এই ঘাটি পার হব।
দিন ০৫: সারচু থেকে পাং
আগের রাতগুলো এতটা ঠান্ডা ছিলনা যেমনটা আজ অনুভূত হচ্ছে । স্বল্প সময়ে সামরিক ঘাঁটিতে কার্যাদি সম্পন্ন করে বেরিয়ে পড়ি নকিলা পাহাড়ের দিকে। পাহাড়টির উচ্চতা প্রায় ১৬,২৩০ফিট। আজকের দিনটা খুবই স্বরণীয় ৩ টি ঘটনার জন্য। প্রথমত, নকিলা পাহাড়ে ওঠার জন্য ২১টি লুপ যা গাতা লুপ নামে পরিচিত, সহজভাবে বললে ২১টি  বিপরীত মূখী রাস্তা যা মাসসিক ও শারিরীক উভয় দক্ষতার জন্য অগ্নিপরীক্ষা। দ্বিতীয়ত, আকষ্মিক ও ভয়াবহ আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং তৃতীয়ত, সাইকেলের বা পার্শের প্যাডেল নষ্ট হওয়া। প্রথমে বা পার্শের প্যাডেলটি সঙ্গে থাকা যন্ত্রপাতির সাহায্যে তার দিয়ে বেধে চালানো শুরু করি। শুরু থেকে ১০কি:মি: এর মধ্যে ১৫০০ফিট উচ্চতায় ওঠার জন্য সেই ২১টি বিপরীত মূখী রাস্তা যে কি ভয়ঙ্কর কষ্টকর তা বলে বোঝাবার মত নয়। একটি শেষ করতে না করতে আরেকটি শুরু হয়ে যায়। এ যেন আর শেষ হয় না....। এরই মধ্যে খাবার পানিও শেষ। রাস্তার পাশে ঝরনার পানি পান করে কোনরকম শেষ হয় গাতা লূপ। এই কষ্টকর লুপ শেষ করে দুপুরের খাবারের বিরতি নেই। সারচু থেকে তৈরি করা খাবার দিয়েই দুপুরের খাবার শেষ করে আবারও শুরু হয় যাত্রা। ধীরে ধীরে আরও ওপরে উঠতে উঠতে প্রায় দুপুর ২টা বেজে যায় নকিলা পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছোতে। সেখানে কিছুক্ষণ ছবি তুলে আবার পাহাড়ের অন্য পাশ ধরে নিচে নামতে শুরু করি।  নিচে নামাটা সব সময়ই  আনন্দদায়ক। কারন, নকিলা পাহাড়ের নিচে নামতে মাত্র ১ঘন্টারও কম সময় লাগে। এভাবেই বেলা ৩টার মধ্যে পৌঁছে যাই হুইস্কি নুল্লাহ। হুইস্কি নুল্লাহ থেকে পাং মাত্র ৩২ কি:মি: এবং এর মাঝে আছে আরও একটি ১৬৮০০ফিট উচ্চতার লাচুং চূড়া।
ঘণ্টা খানিকের মধ্যেই ভয়ঙ্কর ভাবে বদলাতে শুরু করে আবহাওয়া। হিমালয়ের পাহাড়ে যে কখন কি হয় বলা খুবই মুশকিল। হঠাৎ করেই বরফ পড়তে শুরু করে ১৫মি: এলাকা জুড়ে। চারদিক সাদা হয়ে উঠে। ভয় শুধু যদি রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায়, তাহলে চালানো তো দূরের কথা পালাব কোথায়? ওপরওয়ালার বিশেষ রহমতে ১৫মি: পর বরফ ছাড়া ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করে। এরই মাঝে পানি শেষ হয়ে যাওয়াতে বরফ চুষেই পানির তৃষ্ণা মেটাতে হয়। আনুমানিক ৫টার দিকে এভাবেই প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে সব শেষে লাচুং চূড়ায় পৌঁছে যাই। এখানে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান ছিল ৫১% প্রায়। এখান থেকে শুধু নিচের দিকেই নামা আর নিচে নামলেই পাং নামক স্থানে রয়েছে আরও একটি সামরিক ঘাঁটি। সব মিলিয়ে শরীর এতটাই ক্লাস্ত ছিল যে বিশ্রাম নেবার সময় কখন যে ঘুমিয়ে যাই বলতে পারি না। এতদিনের জীবনে এত মজার ঘুম কখনোই ঘুমাইনি যতদূর মনে পড়ে। যখন ঘুম ভাঙ্গে, নিজেকে আবিষ্কার করি সেই সামরিক ঘাঁটির হাসপাতালে এবং সন্ধে হয়ে গেছে ততক্ষণে। প্রথমে বেশ কিছুক্ষণ কিছুই মেলাতে পারিনি, কোথায় আমি? আর হাসপাতালেই বা কেন? পরে ডাক্তারের কাছ থেকে জানতে পারলাম, দুই ইউরোপীয়ান ভ্রমণকারী আমাকে ঘুমস্ত অবস্থায় পায় লাচুং চূড়ায় এবং তারা আমাকে ডাকলে তাদের ডাকে সাড়া না দেয়ায় ওরা ধরে নেয় আমার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আর তাই তাদের গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। ডাক্তার পরীক্ষা করে আমাকে ছেড়ে দেয় আর বলে দেয়, এমন অবস্থায় না ঘুমানোর জন্য। পাহাড়ে এমন জায়গায়  ঘুম পেলে সাইক্লিং বাদ দিয়ে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করতে। কারন, যেখানে অক্সিজেন কম থাকে, তখন রক্তে ও মাস্তিষ্কেও অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে যা ঘুম থেকে মুত্যুর দিকে গড়িয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে বিদায় নিয়ে হাসপাতালের কাছেই তাবুতে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ি।
দিন ০৬: পাং থেকে লাতো
পরের দিন ঠিক ডক্তারের কথা মাথায় রেখেই সকাল ৭টায় আবার সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি। প্রথম ১০ কি:মি: সাইক্লিং করে ১৫৬০০ফিট উ”চতার মরি প্লেইন নামক স্থানে পৌঁছি। জায়গাটি দৈর্ঘ্যে ৪০কি:মি ও প্রস্থ্’ ৫০কি:মি: এর মত পাহাড়ে ঘেড়া সমতল ভূমি। প্রায় ৪০কি:মি: সাইক্লিং করে আবার ৬০০ফিট নিচে নেমে আসি। এখানে একটি ঝরনার পাশে পানি আর বিস্কুট খাবার সময় একটি খালি সামরিক গাড়ি এসে থামে। ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমেই তার চুলা, চাল, ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না শুরু করে দেয়। সে আমাকে শুধু বিস্কুট খেতে দেখে তার খাবার খাওয়ার আমস্ত্রন জানায়। যেহেতু একা চলছি, তাই সেরকম ভারি খাবার বয়ে বেড়ানো একেবারেই অসম্ভব ছিল আমার জন্য। তার এক প্রস্তাবেই সাড়া দিয়ে দেই। মনে হচ্ছিল কত যুগ পরে একটু ভাল খাবার পেলাম। তারপর এখান থেকে আবার শুরু হয় ১৭৫৮০ফিট উচ্চতার তাংলাং চূড়ায় ওঠা। মাত্র ২১ কি:মি: পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছে যাব সেই চূড়ায় পৃথিবীর দ্বিতীয় উচু সড়ক পথ। পাহাড়ি নদী, মেঘ, মেঘের ছায়া, বরফ ঢাকা পাহাড় এসব দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে অবশেষে আমি তাংলাং চূড়ায়। এখান থেকে শুধুই নিচের দিকে নেমে যাওয়া লাতো পর্যন্ত। যতই নিচে নামছিলাম ততই মানুষের সভ্যতার চিহ্ন চোখে পড়ছিল। রুমপটসে, গয়া ও অন্যান্য ছোট ছোট গ্রাম এর পাশ দিয়ে পৌঁছে যাই লাতো। জায়গাটি এতই সুন্দর যে মনে হচ্ছিল সম্পূর্ন যাত্রায় এই জায়গাটিই সবচেয়ে সুন্দর। চারদিকে সবুজ গাছপালা ঘেরা ও পাহাড়ি নদীর পাশে এমনই একটি জায়গা তাবু করে থাকার জন্য উপযুক্ত স্থান। এরই সাথে মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিল একটাই চিন্তা আর মাত্র ১ দিন আর তার পরই সেই স্বপ্ন পূর্ণ হবে।
দিন ০৭: লাতো থেকে লেহ
৭০কি:মি: মাত্র লেহ ও আমার মাঝে দূরত্ব। ১৫ কি:মি: পর্যন্ত নিচু পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া উপসি পর্যন্ত। তারপর ৫০কি:মি: এ মত উচু নিচু পথ ধরে সাইক্লিং করে থিকসে নামক জায়গার দিকে এগুতে থাকি। পথে কারু নামক স্থানে ছোট একটি যাত্রা বিরতি নেই। কারু হচ্ছে সেই যায়গা যেখান থেকে পৃথিবীর তৃতীয় উচু সড়ক পথ চ্যাং লা যাওয়া যায় এবং একই রাস্তা ধরে যাওয়া যায় প্যানগং লেক যা কিনা ১৫০০০ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। থিকসে পৌঁছে যাই স্বল্প সময়ের মধ্যেই। তারপর যে শহরটি আছে তা হচ্ছে চংলামসার যা লেহ থেকে মাত্র ৬কি:মি দূরে। ধীরে ধীরে সরকারি ভবন, স্কুল, মন্দির ইত্যাদি চোখে পড়তে থাকে। অবশেষে দুপুর ২টায় লেহ শহরে পৌঁছে যাই। শহরে পা রেখেই দুপুরের খাবার সেরে হোটেল খুজে বের করি এত দিন পর একটু আরাম করে এক রাত থাকার জন্য। বিকেল বেলা বের হই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি অনুমতি পত্র নেয়ার জন্য। অত্যন্ত হৃদয় বিদারক একটি খবর আমার মনকে একেবারেই ভেঙ্গে দেয়। তা হল বাংলাদেশীরা খারদুং লা যেতে পারবে না। মনে হল, আমরা আমাদের দেশের ভাবমূর্তি এতটাই নিচে নামিয়েছি যে আমরা যেতে পারব না। অবশেষে পরদিন ঠিকই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি খারদুং লার পথে। যাই হোক অবশেষে খারদুং লা পৌঁছি। কিন্তু খারদুং লার চূড়ায় যাওয়ার পথেই একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে ফিরে আসতে হয়। সান্তনা এতটুকুই যে, সেই চুড়াতে পৌঁছাতে না পারলেও সেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ পথে তো গিয়েছি! শুধু মানালি থেকে লেহ পর্যন্ত শুধু সাইক্লিং করে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সড়ক পথে ওঠা নয়। বরং তার চাইতেও বেশি কিছু। এটা সেই সকল মানুষের পুরস্কার, যারা জীবন বাজি রেখে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ব্যতিক্রম কিছু করার ক্ষমতা রাখে। আর বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেয় আমরা বাংলাদেশীরাও পারি সুযোগ পেলে ভাল, ব্যাতিক্রম কিছু করার। দেশে ফিরে বন্ধু আর সহকর্মীদের যখন গল্প করছিলাম, তখন বুঝতে পেরেছি আমাদের ছোট্ট এই জীবনে আসলে কী অর্জন করেছি। নিজের চোখে পৃথিবীর অপরূপ রূপ দেখার অভিজ্ঞতার কাছে ১০ দিনেই কষ্ট এখন আর কিছুই মনে হয় না।
বৈশাখের পোশাক
শারমীনা ইসলাম
নববর্ষ আমাদের জীবনে আনন্দের বারতা নিয়ে আসে। ঐতিহ্যবাহী এই দিনটিকে ঘিরে বাঙালির আগ্রহের কমতি নেই। ফ্যাশন হাউজগুলো ক্রেতাদের আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনা করে বৈশাখ বরণের জন্য তৈরি করেছে আবহাওয়া উপযোগী আরামদায়ক সুতি পোশাক। ফ্যাশন পাঠশালার কর্ণধার বরেন্য ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষ বরণে নতুন দেশি পোশাক আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। সারা বছর বাঙালি অপেক্ষা করে পহেলা বৈশাখের জন্য। তিনি আরও বলেন, বৈশাখ রূপ নেয় মিলন মেলায়। শুধু নতুন পোশাকে নয় এই দিনটিতে আমরা গ্রামীণ মেলা, দেশি খাবারে ফিরে যাই হারানো সেই ছোট বেলায়।পহেলা বৈশাখে যেহেতু গরম থাকবে তাই সুতি পোশাকে হালকা সাজে বাইরে যাওয়ার পরামর্শ দেন এমদাদ হক।  এবারের বৈশাখে ফ্যাশন হাউজগুলোর আয়োজন: 
গ্রামীণ মেলা: বৈশাখে ফ্যাশন হাউজ গ্রামীণ মেলায় এসেছে শাড়ি, থ্রি-পিস শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া ও শিশুদের পোশাক। দেশীয় কাপড়ে বৈশাখী আমেজের রঙে ও নকশায় এসব পোশাক তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন প্রিন্ট ও হাতের কাজের মাধ্যমে। ফোন : ৯০১১৩৪৪, ৯৩৩৪০৬১ 
রাংতা: বৈশাখ উপলক্ষে ফ্যাশন হাউজ রাংতায় এসেছে রকমারি নকশার পোশাক। এসব পোশাকের মধ্যে আছে শাড়ি, থ্রি-পিস, ফতুয়া, শার্ট এবং পাঞ্জাবি। দেশি তাঁতের কাপড়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও হাতের কাজের মাধ্যমে শাহানাজ খান এসব পোশাকের নকশা করেছেন। মোবাইল: ০১১৯৯৮৭৩৫৬০ 
গো-কার্ট: আসছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে গো-কার্ট এনেছে বৈশাখী শর্ট পাঞ্জাবি। প্রতিটি পাঞ্জাবি গায়ে জড়ানো যাবে বৈশাখের দিন। বৈশাখের বিভিন্ন বিষয়কে উপজীব্য করে তৈরি করা হয়েছে প্রতিটি শর্ট পাঞ্জাবি। সময় উপযোগী করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে আরাম দায়ক ফেব্রিকস। এ ছাড়াও এনেছে নতুন ডিজাইনের মেয়েদের বৈশাখি টপস। ফোন: ০১৭১৯৫৯০২৬৪। 
তাজুশীর: ফ্যাশন হাউজ তাজুশীর ও বৈশাখে এনেছে শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া ও নান্দনিক গহনা। দেশীয় তাঁতের কাপড়ে তৈরি তাজুশীর এসব পোশাকের রঙে ও নকশায় রয়েছে বৈশাখের ভিন্ন আমেজ। যোগাযোগ : ০১৭৬৪ ২৭৭৬৭৩ 
মুসলিম কালেকশন: স্বনামধন্য শার্ট প্র¯‘তকারক প্রতিষ্ঠান মুসলিম কালেকশন বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এনেছে ভিন্ন ধরণের শার্ট। নতুন এ শার্টে ফুটে উঠেছে বৈশাখী আবহ। শত ভাগ সুতি কাপড়ে তৈরি এসব শার্টে ব্যবহার করা হয়েছে গরম উপযোগী কাপড়। ফোন : ০২-৭৭৬২৬৩৬। 
জেন্টাল পার্ক: বাঙালির বর্ষ শুরুর উৎসব কদিন বাদেই। উৎসবের রঙে নিজেকে সাজাতে ট্রেন্ডি পাঞ্জাবি এনেছে জেন্টাল পার্ক। নকশাকারদের ডিজাইনকৃত মোটিভকে গ্রাফিক্স দিয়ে অলংকারিক করে পোশাকে আনা হয়েছে ভিন্নতা। আটসাট ক্যাটিং বৈশিষ্ট্যের শর্ট পাঞ্জাবি আর লং পাঞ্জাবিতে থাকছে এম্রডারি, প্রিন্ট বা এপ্লিকের কাজ। ফেব্রিক ভেরিয়েশনের কারণে গরমেও পাওয়া যাবে বিশেষ আরাম।  ঢাকা, সিলেট, বগুড়া, চট্টগ্রাম এর সকল শোরুমে থাকছে বৈশাখের যাবতীয় নতুন ফ্যাশন আউটলাইন নতুন বছরের আনন্দ শুধুমাত্র নতুন পোশাকে সীমাবদ্ধ নয়। যাদের সামর্থ কম, পোশাক কিনতে পারছি না, তারা আগের বছরের পোশাক পরিস্কার করেও এবার পরতে পারি। এতে আমাদের বর্ষ বরণের আনন্দ একটুও কমবে না।

বৈশাখেও নগরদোলা বেছে নিয়েছে বিশ্বনন্দিত ইন্দোনেশিয়ান বাটিক
লাইফস্টাইল ডেস্ক
নগরদোলার অন্যতম বৈশিষ্ট হলো সংস্কৃতির শিল্পসম্মৃদ্ধ বিষয়ের অণুপ্রেরনায় পোশাকে অলংকরনের সুনিপুণ ব্যবহার। প্রতিবারের মত এই বৈশাখেও নগরদোলা বেছে নিয়েছে বিশ্বনন্দিত ইন্দোনেশিয়ান বাটিক এর উল্লেখযোগ্য কিছু ডিজাইন। এই ডিজাইনগুলি থেকে মোটিফ নিয়ে সেগুলো সংযোজন বিয়োজন করে আরও অলংকরনের মাধ্যমে এবারের বৈশাখের বিভিন্ন পোশাকের মধ্যে চমৎকারভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। পোশাকে এসেছে নতুনত্ব ও ভিন্ন মাত্রা। এছাড়াও কাটিং প্যাটার্নে নিয়ে আসা হয়েছে এ সময়ের ট্রেন্ডি ও প্রচলিত ভাবধারা। বেশ কিছু পোশাকে, এবারের ট্রেন্ড লং কামিজ তৈরি করা হয়েছে। বৈশাখের উৎসব গরমের মধ্যে হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে নগরদোলা সব সময় হালকা সুতি কাপড়ের প্রাধান্য দিয়ে থাকে। নগরদোলায় এবার বৈশাখের পোশাকে পাওয়া যাবে নানা ধরনের আরামদায়ক কাপড়ের সমাহার সুতি, তাঁত, ভয়েল, নিপ, স্লাব, মসলিন, এন্ডি ইত্যাদি। রঙ নির্বাচনেও নগরদোলা সবসময় ঋতু, প্রথা ও ট্রেন্ডকে  গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ জন্য প্রচলিত লাল সাদা রঙ এর পাশাপাশি অন্যান্য রঙ এসেছে এসব পোশাকে, যাতে বৈশাখ ছাড়াও অন্য সময়ে ক্রেতা সাধারণ তার পছন্দের পোশাকটি ব্যবহার করতে পারেন। নগরদোলার বৈশাখ উৎসবে  আগামী সোমবার (২ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া পোশাক প্রদশর্নীতে পাওয়া যাবে, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, পাঞ্জাবি, ছেলেদের ফতুয়া, মেয়েদের ফতুয়া, স্কার্ট, টপস, শর্ট পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়াসহ সব ধরণের আইটেম। প্রচলিত ধারার পাশাপাশি অন্যান্য স্টাইলও এসেছে যেমন ঘটি হাতার পাশাপাশি স্লীভলেস, ইন্দো ওয়েস্টার্ন প্যাটার্ন ও নেকলাইনেও পরিবর্তন। সালোয়ারেও পরিবর্তন আনা হয়েছে সময় উপযোগীভাবে। এ সমস্ত পোশাকের কাজের টেকনিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট, টাইডাই, এম্ব্রয়ডারি, কারচুপি, হাতের কাজ, কর্ডিং, লেইস, প্যাঁচ পট্টি ইত্যাদি। পোশাকের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ক্রেতাসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার কথা চিন্তা করে।
সালোয়ার কামিজ- ১১৯০ টাকা থেকে ৪১৯০ টাকা, ফতুয়া (ছেলে)- ৪৯০ টাকা থেকে ৯৯০ টাকা, ফতুয়া (মেয়ে)- ৪৯০ টাকা থেকে ১০৯০ টাকা
শাড়ি- ১২৯০ টাকা থেকে ৪১৯০ টাকা, পাঞ্জাবি- ৬৯০ টাকা থেকে ১৮৯০ টাকা, স্কার্ট- ৯৯০ টাকা থেকে ১২৯০ টাকা,

নববর্ষে গাঁও গেরাম
লাইফস্টাইল ডেস্ক
 বছর ঘুরে আবার এলো বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখ। এটি সার্বজনীন লোক উৎসব। এই দিন আনন্দঘন পরিবেশে বরন করে নেয়া হয় নতুন বছরকে। পোশাকে বর্ণালী হয়ে উঠতে চাই সব বাঙালি। আর এ জন্য গাঁও গেরাম ক্রেতাদের জন্য প্রতি বছরের মত এবারও করেছে বিশেষ আয়োজন। গাঁও গেরাম তার বর্ণিল পোশাকে ব্যবহার করেছে লোকজ নকশা। কুমিল্লা, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জের তাঁতে উৎপাদিত কাপড়ে তৈরি হয় মেয়েদের থ্রি পিস, টপস, ছেলেদের ফতুয়া ও পাঞ্জাবি। টাই- ডাই- এর বর্ণিল সংগ্রহ গাঁও গেরামের আরেকটি বিশেষত্ব। গাঁও গেরাম তার পোশাকে সবসময় বাংলাদেশের আবহাওয়াকে প্রাধান্য দেয়। টাঙ্গাইলের সুতি শাড়ি, হাফ সিল্ক শাড়ি, সুতি শাড়িতে এন্ডি সুতার ব্যবহার,  ব্লক ও বাটিকের ব্যবহার বাঙালির পোশাকে ও মনে এনে দেবে বৈচিত্র্য। সাজপূর্ণতা পায় গহনায়, গাঁওগেরামে আপনি পাবেন রেশমি চুড়ি, পুতির মালা ও দুল। যেকোন উৎসব ও আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু ছোট্ট সোনামণিরা। তাদের অংশ গ্রহণে উৎসব পূর্ণতা পায়। তাই ছোট্ট সোনামণিদের জন্য গাঁও গেরামে সবসময় থাকে বিশেষ আয়োজন। এবারও গাঁও গেরাম ছোট্ট সোনামণিদের জন্য তৈরি করেছে থ্রি-পিস, ফ্রক, স্কার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, পায়জামা, শাড়ি ইত্যাদি। থ্রি পিস- ১০০০ টাকা থেকে ৩৫০০পর্যন্ত,  টপস- ৩৫০ থেকে ১১০০পর্যন্ত, ছেলেদের ফতুয়া- ৩০০টাকা থেকে৫০০পর্যন্ত, পাঞ্জাবী- ৪০০ টাকা থেকে১২০০পর্যন্ত। ছোটদের ফতুয়া- ১৫০ টাকা থেকে৩০০পর্যন্ত, থ্রী পিস-৭০০ থেকে ৯০০পর্যন্ত, শাড়ি- ২৫০ টাকা থেকে৬০০টাকা পর্যন্ত। গহনা ৫০টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। গাঁও গেরাম থেকে আপনি আপনার পরিবারের সকলের জন্য পোশাক কিনতে পারবেন।

ওজি’র পোষাকে একুশ
ফ্যাশন হাউস ওজি এবার তাদের একুশের আয়োজনে এনেছে শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ছেলে-মেয়েদের ফতুয়া এবং ছেলেদের পাঞ্জাবি। ছেলেদের বেশিরভাগ পাঞ্জাবি করা হয়েছে সাদা আর কালোয়। সুতি কাপড়ের অন্যান্য পোষাকগুলোতে করা হয়েছে ব্লক, স্ক্রিন ও এমব্রয়ডারির কাজ। ওজি’র পোশাকের দামও রয়েছে নাগালের মধ্যেই। শাড়ি পাওয়া যাবে ৭৯৫-১৭৯৫ টাকায়, ফতুয়া ৪৯৫-৮৯৫টাকায়, সালোয়ার কামিজ ১৫৯৫-২২৯৫ টাকায় এবং ছেলেদের পাঞ্জাবি ৮৯৫-১২৯৫ টাকায়। পোশাকগুলো মিলবে সোবহানবাগ, সীমান্ত স্কয়ার ও মালিবাগে ওজি’র নিজস্ব আউটলেটে। 
মেঘে একুশের পোশাক : ফ্যাশন হাউজ মেঘ অমর একুশে উপলক্ষে বিভিন্ন নকশার পোশাক এনেছে। প্রিন্ট ও হাতের কাজের মাধ্যমে নকশা করা এসব পোশাকের মধ্যে আছে মেয়েদের থ্রি-পিস, ফতুয়া, ছেলেদের শর্ট পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট ও টি-শার্ট। সুতি, সিল্ক, খাদি, এন্ডিসহ বিভিন্ন দেশিয় তাঁতের কাপড়ে তৈরি হয়েছে এসব পোশাক।
শিশুদের একুশের পোশাক: বড়দের পাশাপাশি মেঘ শিশুদের জন্যও একুশের পোশাক এনেছে। দেশিয় তাঁতের কাপড়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও হাতের কাজের নকশায় এসব পোশাকের মধ্যে আছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, ফ্রক ও টি-শার্ট। মেঘের ঠিকানা: আজিজ সুপার মার্কেট (দোকান নং-৬২ ও ১১৪), শাহবাগ;
আমার প্রতিটি কাজেই নতুন কিছু দেবার চেষ্টা থাকে : অমিতাভ রেজা
শ্যামল চন্দ্র নাথবিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির ছাত্র ছিলেন অমিতাভ রেজা। কিন্তু ফিল্ম আর ইমেজ নিয়ে চর্চা ছাত্রজীবন থেকেই। প্রথমে টেলিভিশনে দু‘একটা নাটকে কাজ করার পর বিজ্ঞাপন নির্মাণকেই  পেশা হিসেবে বেছে নেন। অমিতাভ রেজা দেশের বিজ্ঞাপনকে নিয়ে গেছেন শিল্পের পর্যায়ে। প্রতিষ্ঠা করেছেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘হাফ স্টেপ ডাউন’। বিজ্ঞাপন নির্মাণের পাশাপাশি ছোটপর্দায় উপহার দিয়েছেন দারুণ কিছু নাটক। বর্তমানে তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন চলচ্চিত্র নির্মাণের। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এই মেধাবী নির্মাতার সাফল্যে বাঁধা হতে পারেনি। নিত্য-নতুন আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। সম্প্রতি অমিতাভ রেজার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলানিউজ। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন তার সৃজনশীল কর্মকান্ড, চিন্তা-ভাবনা আর আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা। অমিতাভ রেজার সঙ্গে বাংলানিউজের আলাপচারিতার নির্বাচিত অংশে আসুন চোখ রাখি।
বাংলানিউজ : বিজ্ঞাপন নির্মাণে আগ্রহী হলেন কী করে?

অমিতাভ রেজা : ছোটবেলা থেকেই ছবি তোলার প্রতি আমার ঝোঁক ছিল। শাহিন স্কুলের ছাত্র থাকার সময় ছবি তোলা ছিল আমার হবি। ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম দূর দূরান্তে নানা জায়গায়। বিএফ শাহিন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে আমি ভারতের পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। বিষয় ছিল অর্থনীতি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস আমার ভালো লাগতো না। পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করতাম। পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ছাত্র-শিক্ষক তাদের সঙ্গে গড়ে উঠে আমার সখ্য। তাদের সঙ্গে থেকেই ফিল্মের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। পুনে ইনস্টিটিউটের ছাত্র না হলেও ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। এসময় ভারতীয় চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপননির্মাতা অমিত সেনের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে। তার সঙ্গে দু’একটি কাজ করার পর তিনিই আমাকে বিজ্ঞাপন নির্মাণে উৎসাহিত করেন। আমারও মনে হলো, খুবই সীমিত সময় পরিসরের মধ্যে একটি বক্তব্য ফুটিয়ে তোলার এই কাজটি বেশ চ্যালেঞ্জিং। দেশে ফিরে প্রথমে অবশ্য নাটক নির্মাণের সঙ্গেই জড়িত হই। সেই সময়ের একুশে টিভির জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘বন্ধন’-এ কাজ করি আফসানা মিমির সঙ্গে। এর মধ্যেই হাতে আসে বিজ্ঞাপনের কাজ। তারপর আর কী, বিজ্ঞাপন নির্মাণই হয়ে ওঠে আমার প্রধান অবলম্বন।
বাংলানিউজ : বিজ্ঞাপন নির্মাণকে  পেশা হিসেবে বেছে নিলেন কেন?

অমিতাভ রেজা : আগেই বলেছি আমার আগ্রহের জায়গাটা ছিল ভিন্ন। ফিল্ম মেকিংটা আমার আবেগের অংশ। ফিল্ম মেকিং ব্যাপারটাকে আমি উপভোগ করি।  ফিল্ম মেকিং বলতে বোঝাচ্ছি ফিচার ফিল্ম, পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি, ডকুমেন্টারি ফিল্ম, সোস্যাল অ্যাওয়ার্নেস ফিল্ম, অ্যাডভার্টাইজিং ফিল্ম এবং টিভি ফিকশন-- অর্থাৎ সবকিছু। এক সময় আমি দেখলাম ৩৫ এমএম ফিল্ম ফরম্যাটে কাজ করে, বড় ক্যানভাসে কাজ করে অনেক আনন্দ। কিন্তু টেলিভিশন, টাকা-পয়সা এগুলো আমাকে সেই আনন্দটা দিতে পারছে না। আমি চিন্তা করলাম যে, বড় ক্যানভাসে কাজ করব। বড় ক্যানভাস বলতে অনেক মানুষ অনেক আয়োজন। যেখানে আমার চিন্তাকে সম্পূর্ণ কাজে লাগাতে পারবো। এ কারণেই আমি অ্যাডভার্টাইজিং ফিল্ম মেকিং শুরু করেছি এবং উপভোগ করছি।। চিন্তা-ভাবনা করেই আমি এই প্রফেশনে এসেছি। কারণ এটা নিলে ফিল্মও হবে, ৩৫ মিলিমিটারেও কাজ করতে পারবো, দেশ-বিদেশে ফিল্মের পোস্ট প্রোডাকশনও করতে যেতে পারবো। তাছাড়া ভালো গাড়িতে চড়তে পারবো, ভালো খাবার  খেতে পারবো, ভালো লাইফস্টাইল মেইনটেইন করতে পারবো। আমার কাছে এগুলোকেও বড় মনে হয়েছে। তবে আসল কথা হলো, অ্যাডভার্টাইজিং ফিল্ম করতে গেলে অনেক কিছু করার সুযোগ থাকে। এগুলোতে অনেক দক্ষতা আসে, অনেক কিছু প্র্যাকটিস করার আনন্দ থাকে। সে আনন্দ থেকেই আমি অ্যাডভার্টাইজিং ফিল্ম করি এবং এ আনন্দ পাই। এই সূত্র ধরেই ফিচার ফিল্ম করতে চাই। এই দক্ষতা, এই শক্তি কাজে লাগিয়ে একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি করতে চাই। ব্যাপারটা আমার কাছে এ রকমই।
বাংলানিউজ : অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, আপনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে কতদূর এগিয়েছেন?

অমিতাভ রেজা : ফিচার ফিল্ম তৈরির পরিকল্পনা এখনো বাক্সবন্দি অবস্থায় আছে। খুব বেশি দূর অগ্রসর হতে পারিনি। আসলে বিজ্ঞাপনের কাজ নিয়ে আমি এখন অনেক ব্যস্ত। কাজের চাপ আমার পিছু ছাড়ছে না। বর্তমানে নির্মাণ করছি রবি, এবি ব্যাংক আর সেভেন আপের বিজ্ঞাপন। হাতে আছে আরো প্রায় ডজনখানেক বিজ্ঞাপন নির্মাণের কাজ। আমার প্রতিটি কাজেই নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা থাকে। তবে সব কাজের মধ্যেই আমি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবির জন্য একটা ভালো গল্প খুঁজছি। দু-একটা গল্প ভালো লাগলেও এখনো মনের মতো গল্প খুঁজে পাইনি। আশা করি ভাল গল্প পেলে নিশ্চয়ই কাজ শুরু করবো। দীর্ঘদিনের কাজের দক্ষতা নিয়েই আমি ফিচার ফিল্মে ফুটিয়ে তুলতে চাই। আমি ভাল কিছু দিতে চাই। নতুন চিন্তা চেতনার সমাবেশ ঘটাতে চাই।
বাংলানিউজ : ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণে কারিগরি বিষয়টাও যথেষ্ট জরুরী। আপনি কী মনে করেন, ভালো মানের ছবি তৈরির মতো কারিগরি সুবিধা এদেশে আছে?

অমিতাভ রেজা : আমি আসলে কারিগরি দিকটা অতটা জরুরী বিষয় বলে কখনোই মনে করি না। বিষয় হচ্ছে, নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা। আমার কাজে নিজের চিন্তা-ভাবনা কতোটা ফুটিয়ে তুলতে পারলাম, কতোটা ভালোভাবে কাজটা করতে পারলাম। নিজের মনের ভেতরের ছবিগুলো নিয়ে কতোটা ভালো নির্মাণ করতে পারলাম। ফিল্মের প্রথম যুগে তো কারিগরি সুবিধা ছিল না, তাই বলে কী তখন মান সম্পন্ন ছবি তৈরি হয়নি! এখন যে এতো কারিগরি সুবিধা, এতো সুবিধার পরও কেন তাহলে মানহীন ছবি তৈরি হবে? যতো কারিগরি সুবিধাই থাকুক, আগে কারিগরি বিষয়গুলো কাজে লাগানোর জ্ঞান অর্জন করা জরুরি।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা এখন কেমন?

অমিতাভ রেজা : আমার ধারণা বাংলাদেশে কোটি কোটি টাকার চলচ্চিত্রের বাজার রয়েছে। বাংলাদেশে ছবির সম্ভাবনা অনেক বেশি এটা আমি দেখতে পাই। আমরা অনেক ভালো ছবি বানাবো এটা জানি। আমাদের দেশে যারা টেলিভিশনের জন্য কাহিনিচিত্র নির্মাণ করে, বিশেষ করে অনিমেষ, সুমন, আতিক ভাই তারা অসাধারণ কাহিনিচিত্র নির্মাণ করতে পারেন। তারা যখন ছবি বানাবেন তখন অসাধারণ ছবি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। অনেক গল্প এ দেশের মানুষের। এ দেশের মানুষ সংগ্রামী, এদেশের মানুষের বিশাল রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। পৃথিবীর খুব কম জাতিরই এ রকম ইতিহাস আছে। এ দেশের মানুষের সাহিত্যের কথা যদি বলি সেটাও খুব উন্নত। অনেক বেশি রসদ আমাদের আছে। ভালো কাহিনিচিত্র নির্মাণ করার সম্ভাবনাও তাই অনেক ।
বাংলানিউজ : এক্ষেত্রে আমাদের চলচ্চিত্রে এখন এই দৈন্যদশা কেন?

অমিতাভ রেজা :  আমরা সবাই বলছি দৈন্যদশা। প্রতিটা মানুষ মনে করছে যে, চলচ্চিত্রের অবস্থা খারাপ। এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, ভালো কাজ হচ্ছে। আমাদের চলচ্চিত্র সম্ভাবনাময়, এভাবেই একদিন পরিবর্তন আসবে।
বাংলানিউজ : আমাদের টিভিনাটকের অবস্থা এখন কেমন?

অমিতাভ রেজা : আমাদের দেশে টিভি চ্যানেল অনেক, অথচ পৃষ্ঠপোষক কম। এতে টিভি-ফিকশনের নির্মাণ বাজেট অনেক কমে গেছে। প্রচুর মানুষ ফিকশন (নাটক) করে এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই সব ফিকশন ভালো হয় না। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যে দেশ টেলিভিশনের জন্য ছোট ছোট ফিকশন করে। এক ঘণ্টার ফিকশন করে। এমনটা খুব কম দেশেই হয়। আর এই ছোট ছোট ফিকশন যত বেশি হবে সৃজনশীল কাজ তত বেশি হবে। কারণ সিরিয়াল বা ধারাবাহিক নাটক অত ভালো করা যায় না সাধারণত। এই এক ঘণ্টার নাটকে আমরা অনেক ভালো করে যাচ্ছি বলে আমার কাছে মনে হয়। তাছাড়া আমাদের একটা ফিকশন বানাতে খরচ ব্যয় হয় মাত্র দুই লাখ টাকা আর বাইরের দেশে দুই লাখ ডলার। এতো কম বাজেটে  এখানে ফিকশন তৈরি হচ্ছে, এটা আর কোথাও সম্ভব না।
বাংলানিউজ : আমাদের দেশে এখনকার বিজ্ঞাপনের মান কেমন? amitav

অমিতাভ রেজা : আমাদের দেশে এখন  বিজ্ঞাপন অনেক  উন্নত মানের হচ্ছে । এই বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। বিজ্ঞাপন নির্মাণটা নির্ভর করে যে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞাপন করছি তার উপর। প্রতিষ্ঠান যদি তার প্রোডাক্ট মার্কেটিংয়ের জন্য বিজ্ঞাপনকে বেশি গুরুত্ব দেয়, তাহলে বিজ্ঞাপনের জন্য বাজেট বরাদ্দ বেশি থাকে। বাজেট বেশি থাকলে বিজ্ঞাপনের মান ভালো করা যায়।
বাংলানিউজ : প্রত্যেক নির্মাতা কোনো না কোনোভাবে কবি, সাহিত্যিক  বা দার্শনিক। আপনার দর্শন বা জীবনবোধ জানতে চাই?

অমিতাভ রেজা : আমি আসলে বস্তুবাদী দর্শনে বিশ্বাস করি।  ভাববাদী দর্শনে বিশ্বাস করি না। আমি বাস্তবতার নিরিখে বিচার করি। আবার বলছি বাস্তবতা মধ্য দিয়েই এ জীবন অতিবাহিত করছি। এটাই সত্য এবং ধ্রুব সত্য। বর্তমান আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি শুধু বস্তুবাদী দর্শনেই বিশ্বাসী।
বাংলানিউজ : কাজকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

অমিতাভ রেজা : কাজ না থাকলে প্রত্যেকটা মানুষের জীবন স্থবির হয়ে যায়। আমি কাজকে সীমাহীন শ্রদ্ধার সাথে আলিঙ্গন করি। কাজ ছাড়া আমি কখনোই থাকি না। এমন কি অবসরেও কাজের ভাবনাটা আমাকে সারাক্ষণ নাড়া দেয়। প্রতিনিয়ত ভাবি। এই ভাবনায় আমাকে প্রতিদিন বিনির্মাণ করে চলেছে।
বাংলানিউজ : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?

অমিতাভ রেজা : খুব বেশি কিছু না। নিজে ভালো থাকা। ভালো কিছু দেওয়া। ভালোভাবে আনন্দের সঙ্গে জীবনটা উপভোগ করা।
পাসপোর্ট বিড়ম্বনায় ইমন
অনন্যা আশরাফ


আজকের প্রজন্মের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নায়ক ইমন। দিন দিন বাড়ছে তার কাজের ব্যস্ততা। অবশ্য কাজের মধ্যেই ব্যস্ত থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। সম্প্রতি একটি ছবির শুটিংয়ের কাজে ইমন ব্যাংকক গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি হারিয়ে ফেলেন পাসপোর্ট। তবে সৌভাগ্য ইমনের, নাটকীয়ভাবেই তিনি ফিরে পান হারানো পাসপোর্টটি। ব্যাংককে নেমে এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি ট্যাক্সি ক্যাব ভাড়া করেন ইমন। লাগেজ আর হ্যান্ডব্যাগসহ ক্যাবে চড়ে বসেন ইমন। হোটেলে পৌঁছে ক্যাব থেকে লাগেজ নামিয়ে ভাড়া পরিশোধ করা মাত্রই ড্রাইভার দ্রুত ট্যাক্সি টান দিয়ে চলে যায়। ট্যাক্সিতে রয়ে যায় ইমনের হ্যান্ডব্যাগ, যাতে ছিল পাসপোর্টসহ জরুরী কাগজপত্র। বাংলানিউজকে ইমন জানালেন, হ্যান্ডব্যাগটির জন্য ট্যাক্সির পিছু নিলেও তা ধরতে পারেননি। পাসপোর্ট হারানোয় বিপদে পড়ে যান তিনি। হোটেলের একজন কর্মকর্তার পরামর্শ ও সহযোগিতায় স্থানীয় থানায় একটি জিডি করেন ইমন। এই ঘটনার পর হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে ঘন্টাখানেক পর টুকিটাকি কেনাকাটার জন্য বের হন ইমন। হঠাৎ তিনি দেখেন, ঐ ট্যাক্সি ক্যাবটি একটি শপিং সেন্টারের সামনে দাঁড়ানো। দেখা মাত্রই চালককে চিনতে পারেন তিনি।  ইমন জানান, তাৎক্ষণিকভাবে ক্যাবের চালককে পাকড়াও করলেও প্রথমে সে ব্যাগ পাওয়ার কথা অস্বীকার করে। পরে জিডির কাগজ দেখিয়ে ভয় দেখালে ব্যাগটি ফিরিয়ে দেয় ক্যাব চালক।

নিজের হ্যান্ডব্যাগ খুলে ইমন দেখতে পান তার পাসপোর্টটি ঠিক আছে। কিন্তু তার ব্যাগের ভেতরে রাখা মোবাইল ফোনটি নেই। আরেকবার পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোবাইলের ব্যাপারে জেরা করলে ক্যাব চালক লুকিয়ে রাখা মোবাইলটি বের করে দেয়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন ইমন। মোবাইল আর পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়ায় ইমন ক্যাব চালকের বিরুদ্ধে জিডি তুলে নেন। ব্যাংককে পাসপোর্ট হারানোর পর ৩ ঘন্টার মধ্যেই নাটকীয়ভাবে পাসপোর্টটি ফিরে পাওয়ায় ইমন নিজেই ভীষণ অবাক হয়েছেন। দেশে ফিরে এই ঘটনটি তিনি এখন কাছের মানুষদের কাছে বলে বেড়াচ্ছেন।
সালমার ফেরা
বিনোদন প্রতিবেদক
ক্লোজআপ ওয়ান খ্যাত জনপ্রিয় লোক-সঙ্গীতশিল্পী সালমা। হুট করে বিয়ে আর কন্যা সন্তানের মা হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন গান থেকে দূরে ছিলেন তিনি। প্রায় দুই বছর বিরতির পর সালমা আবার গানে ফিরছেন। ক্লোজআপ ওয়ান ইভেন্ট বিজয়ী সঙ্গীতশিল্পী সালমা। ইভেন্টের শিরোপা বিজয়ের পর লালনগীতি আর লোকসঙ্গীত গেয়ে পান তুমুল জনপ্রিয়তা। গতবছরের শুরুতে হুট করেই তিনি দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র শিবলীর সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। চলতি বছরের প্রথম দিন এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের মা হন। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে অবস্থানকালে বিয়ে আর মা হওয়ার কারণে প্রায় দুবছর গানের ভুবনে সালমা ছিলেন অনুপস্থিত। এই লম্বা বিরতির পর আবারও তিনি ক্যারিয়ারের প্রতি মনোযোগ দিয়েছেন। আগামী রোজার ঈদকে সামনে রেখে সালমা তার নতুন একটি একক অ্যালবামের কাজ শুরু করেছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।
অ্যালবামটির সবগুলো গানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় থাকছেন খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ক্লোজআপ ওয়ান ইভেন্টের বিচারক থাকার সময় থেকেই সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের স্নেহধন্য সালমা। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল সালমাকে  ‘মা’ বলে সম্বোধন করেন। দুই বছর বিরতির পর পিতৃতুল্য এই সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হাত ধরেই সালমা ফিরছেন গানে। পাশাপাশি শুরু করছেন নিয়মিত স্টেজ শো আর টিভি প্রোগ্রাম।
রয়াগ ফিল্ম সিটির উদ্বোধনে শাহরুখ খান, বাসুদেব বাগচী ও অভীক বাগচী।
বিশ্বের বৃহত্তম প্রয়াগ ফিল্ম সিটির আত্মপ্রকাশ শাহরুখের হাতে
রক্তিম দাশ, কলকাতা

প্
 বিশ্বের বৃহত্তম প্রয়াগ ফিল্ম সিটির আত্মপ্রকাশ হলো বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের হাতে। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলের চন্দ্রকোনা এলাকায় আরাবাড়ী সংরক্ষিত বনে প্রকৃতির কোলে বিশাল এলাকাজুড়ে এই ফিল্ম সিটির অবস্থান। এই ফিল্ম সিটির প্রথম ধাপ উদ্বোধনের নামে চলচ্চিত্র নির্মাণের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল ভারত। সিনেমা, নাটক এবং চলচ্চিত্রশিল্পের সব বিষয় একই স্থানে নিয়ে যাত্রা শুরু হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম ‘প্রয়াগ ফিল্ম সিটি’র। রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় এই ফিল্ম সিটির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার শাহরুখ খান কলকাতা থেকে প্রয়াগের নিজস্ব হেলিকপ্টারে আসেন। এরপর দেশি-বিদেশি ৩০০ সাংবাদিক ও প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সামনে এই ফিল্ম সিটির সঙ্গে তার একাত্মতা ঘোষণা করেন। শাহরুখের হাতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে এই সিটি যাত্রা শুরু হলো। এই সময় তার সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রয়াগ গ্রুপের পরিচালক বাসুদেব বাগচী এবং কার্যনির্বাহী পরিচালক অভীক বাগচি। এদিন শাহরুখ বলেন, ‘বাংলার সঙ্গে আমার সর্ম্পক দীর্ঘদিনের। এই সর্ম্পক আরও দৃঢ় হচ্ছে। প্রয়াগ ফিল্ম সিটির অ্যাম্বাসাডার হয়ে আমি খুবই আনন্দিত। এটি বিশ্বে নতুন রেকর্ড গড়ার পথে এগোচ্ছে। এই সিটি শুধু ফিল্ম আর পর্যটনের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে না, এটি বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠবে।’ তিনি বলেন, ‘এই সিটি ফিল্মের দুনিয়াকে মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসবে। শিশুদের জন্য এখানে তৈরি হচ্ছে মজার জগৎ। দারুণভাবে শুরু করার জন্য আমি প্রয়াগ গ্রুপকে অভিনন্দন জানাই। বাংলার মানুষের জন্য রইল আমার নতুন বছরের শুভেচ্ছ।’ বাসুদেব বাগচী বলেন, ‘বাংলা ও আমাদের দেশের প্রতি ভালোবাসার কারণে আমরা একটি গন্তব্য তৈরি করলাম। আশা করি, এটা নিয়ে সবাই গর্ব করতে পারবে। আমাদের স্বপ্নের প্রকল্প আজ বাস্তব রূপ পেয়েছে। এই সিটি বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্রে আমাদের রাজ্যকে স্থান করে দেবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রথম পর্বে লাহোর, মুম্বাই, কলকাতার সড়ক। পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যান যেমন এলিফ্যান্ট গার্ডেন, জাপানিজ গার্ডেন, রয়াল, রেনবো, ঘাজিবো গার্ডনের কাজ শেষ হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘৫০টি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এখন দেখা যাবে। থাকছে বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্ট। আমরা পূর্ব ভারতের পর্যটনের একটা ল্যান্ড মার্ক তৈরি করতে চেয়েছিলাম। তাছাড়া এই সিটির সুবিধা পাবে পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহার, উড়িশা, আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো। আর অবশ্যই আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশ।’ এদিন এই উপলক্ষে শুধু কিং খানই নন, বলিউড থেকে এসেছেন গোবিন্দ, কারিশমা কাপুর, রাবিনা ট্যান্ডন, মনিষা কৈরালা, উর্মিলা মার্তন্ডকর, ইয়ানা গুপ্তা, কুনাল গাঞ্জাওয়ালা, জুবিন গর্গ, জনি লিভার, জিনাত আমান, মহিমা চৌধুরী, তনুশ্রী দত্ত, গুলশান গ্রোভার, আসরানিসহ এক ঝাঁক সুপারস্টার। এসেছেন টলিউডের দেব, সোহম, হিরণ, শুভশ্রী, রচনা, কাঞ্চন, বিশ্বনাথ, শ্রাবন্তীরাও। পাশের রাজ্য উড়িশার ওড়িয়া সিনেমার নায়ক, নায়িকাসহ চলচ্চিত্র জগতের মানুষেরা। কলকাতায় জার্মান কনসাল জেনারেল, রাশিয়ার কনসাল জেনারেলসহ বাংলাদেশের নবনিযুক্ত উপ-হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। প্রায় দুই হাজার ৭০০ একর জমিতে প্রয়াগ ফিল্ম সিটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিল্ম সিটি। সেট বা স্টুডিও থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রশিল্পের সবকিছুই থাকছে সমন্বিত এই ফিল্ম সিটিতে। কলকাতা থেকে মাত্র তিন ঘণ্টার দূরত্বে ১৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে চন্দ্রকোনা সড়কে এর অবস্থান। দর্শনার্থীদের জন্যও প্রয়াগ ফিল্ম সিটি হবে ঘুরে বেড়ানোর মতো একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। যেখানে দর্শকরা সিনেমা তৈরি দেখা থেকে শুরু করে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারণা পাবেন। প্রয়াগ ফিল্ম সিটির স্থাপত্য, নকশা ও পরিকল্পনা করেছেন বলিউডের প্রখ্যাত আর্ট ডিরেক্টর নীতিশ রায়। নীতিশ অবশ্য দক্ষিণ ভারতের হায়দারাবাদের রামোজি রাও ফিল্ম সিটির নকশাও করেছেন। তিনি রামোজি রাও ফিল্ম সিটির চেয়ে বড় পরিসরে প্রয়াগ ফিল্ম সিটির নকশা করেছেন। প্রয়াগ ফিল্ম সিটিতে বন, সাগর, পাহাড়, মরুভূমি, বরফের মতো প্রাকৃতিক বিষয়গুলো ছাড়া আইফেল টাওয়ার, পিরামিড, আধুনিক শহরের সুউচ্চ ভবন ও বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যসহ ১১০টি আইটেমের প্রতিরূপ তৈরি করা হয়েছে। চলচ্চিত্রায়নের মাধ্যমে এ স্থাপনাগুলোকে একেবারেই আসল বলে মনে হবে। এছাড়া এখানে রয়েছে নিজেদের ট্রেন লাইন, রেলস্টেশন, ট্রেন, হেলিকপ্টারসহ হ্যালিপ্যাড ও গলফ কোর্স। নিজস্ব হেলিকপ্টার এরই মধ্যে ফিল্ম সিটিতে এসে পৌঁছেছে। প্রয়াগ ফিল্ম সিটিতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ৫০টি স্টুডিও-ফ্লোর থাকছে। আনুপাতিকহারে থাকছে সাউন্ড স্টুডিও। ১৬ মিমি থেকে ৩৫ মিমিসহ ডিজিটাল ও সিনেমাস্কোপ শ্যুটিংসহ এর ল্যাবরেটরিতে থাকছে সব ধরনের আধুনিক প্রসেসিং সুবিধা। এসবের সুবাদে দক্ষিণ ভারতের চেয়েও উন্নত আউটপুট পাওয়া সম্ভব। প্রয়াগ ফিল্ম সিটিতে একসঙ্গে অন্তত ৬০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণকাজ শুরু করে শেষ করা যাবে। এমনভাবেই এর নকশা ও পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রয়াগ ফিল্ম সিটির পুরো নির্মাণকাজ শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে এরই মধ্যে এর প্রথম পর্বের কাজ শেষে হয়েছে। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে। এরই মধ্যে এই ফিল্ম সিটিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়েছে। মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ‘জলে জঙ্গলে’ সিনেমার শুটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। সায়েন্টিফিক থ্রিলারধর্মী এই ছবিতে ৬০ ফুট দীর্ঘ একটি ডিজিটাল কুমির দেখানো হয়েছে, যা প্রয়াগ ফিল্ম সিটির কর্মীরাই তৈরি করেছেন। দর্শনার্থী ও অভিনেতাসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের রাতযাপনের জন্য প্রয়াগ ফিল্ম সিটিতে তৈরি করা হচ্ছে দুটি পাঁচ তারকা হোটেল। একটি পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট, দুইটি তিন তারকা মানের হোটেলসহ মাঝারি মানের আবাসিক হোটেল। এছাড়া উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা তো থাকছেই। ফিল্ম সিটির প্রাঙ্গণে থাকছে শিশুদের জন্য বিনোদনকেন্দ্র, যেখানে অত্যাধুনিক ২৫০টিরও বেশি রাইড থাকছে। এছাড়াও থাকছে জঙ্গল, সাফারি ও অ্যাডভেঞ্চার কোর্স। প্রয়াগ ফিল্ম সিটির দ্বিতীয় ধাপে একটি চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট ও হসপিটালিটি ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হবে বলে জানান অভীক বাগচী।
কোয়ালিটির প্রতি নজর দেওয়ার সময় এসেছে : শাকিব খান
বিপুল হাসান
shakib ফুরফুরে মেজাজে আছেন ঢালিউডের শীর্ষনায়ক শাকিব খান। নির্মাতাদের কাছে বর্তমান সময়ের একমাত্র নির্ভরযোগ্য নায়ক তিনি। সাফল্য তার মুঠোবন্দী হয়েছে কয়েক বছর আগেই। বাকি ছিল একটা অপ্রাপ্তি। সেটি হলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সম্প্রতি ‘ভালোবাসলে ঘর-বাঁধা যায় না’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ২০১০ সালের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে প্রাপ্তি ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে তার। সম্প্রতি ‘মাই নেম ইজ খান’ ছবির শুটিং চলাকালে এফডিসিতে শাকিব খানের সঙ্গে বাংলানিউজের কথা হলো। শুরুতেই প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তির অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বললেন,  পুরস্কার পেতে সবারই ভালো লাগে। বিশেষ করে একজন শিল্পীর জন্য পুরস্কার হলো অনুপ্রেরণার উৎস। ক্যারিয়ারে অনেক পুরস্কারই এ পর্যন্ত পেয়েছি। তবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মর্যাদা আলাদা। এটা হলো রাষ্ট্রিয় পর্যায়ের স্বীকৃতি। এই পুরস্কার আরো ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। শাকিব খান চলচ্চিত্র শিল্পীদের সম্মিলিত প্লাটফর্ম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই সংগঠনের বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার সময় বলেছিলাম, চলচ্চিত্রের কোনো শিল্পীকে অসুস্থ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে দেব না। দুঃস্থ শিল্পীদের সহায়তার জন্য ৫০ লাখ টাকার একটি তহবিল ঘটনের জন্য বর্তমানে আমরা কাজ করছি। এ ক্ষেত্রে অনেকের আশ্বাস ও সহায়তা পেয়েছি। আগামী দুই বছর নাকি আপনার কোনো শিডিউল খালি নেই ? এ প্রশ্নের উত্তরে শাকিব খান বললেন, কথাটা খানিকটা সত্য। তবে নির্ধারিত শিডিউলের বাইরেও আমি অনেক সময় কাজ করে থাকি। কাজটি যদি ভালো আর মন মতো হয়, তাহলে নিজের ব্যক্তিগত সময় থেকে বাড়তি সময় বের করে কাজটি করার চেষ্টা করি। তবে বেশিরভাগ সময়ই তো এখন আমার ডাবল শিফটে কাজ করতে হচ্ছে। শাকিব খান জানালেন, একটা সময় কোনো বাদ-বিচার না করে একের পর এক ছবিতে অভিনয় করলেও এখন তিনি বেছে বেছে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, হাতের কাজগুলো শেষ করার পর বছরে ১০টির বেশি ছবিতে আর অভিনয় করবোনা। এ বছর অবশ্য ১৫টি ছবিতে অভিনয় করছি। তবে আগামী বছর থেকে এটি মেনে চলার চেষ্টা করবো। আসলে কাজের চাপ বেশি নিলে কাজের মান ভালো হয় না। এখন আমার কোয়ালিটির প্রতি নজর দেওয়ার সময় এসেছে। শাকিব খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য তিনি নানারকম পলিটিক্সের আশ্রয় নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বললেন, এটা পুরোপুরি ভিত্তিহীন একটি অভিযোগ। যারা অভিযোগ তুলেছেন তারা অনেকেই আমাকে তাদের ছবিতে অভিনয়ের জন্য বলেন। কিন্তু গল্প ও চরিত্র পছন্দ না হওয়া বা শিডিউলের কারণে যখন তাদের না করে দেই তখনই তারা আমাকে নিয়ে এসব কথা বলেন। পলিটিক্স করে কেউ চলচ্চিত্রের সেরা নায়ক হতে পারে না। নায়ক হওয়ার জন্য সাধনা দরকার। সাধনার মধ্য দিয়েই আজকে আমি এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি।
অ্যাকশন লেডি ক্যাটরিনা
অনন্যা আশরাফ


বলিউডের আবেদনময়ী অভিনেত্রী ক্যাটরিনার ভক্তরা এবার তাকে অ্যাকশন চরিত্রে দেখতে পাবেন। ইয়াশ রাজের নতুন ছবি ‘ধুম থ্রি’তে ক্যাটরিনা অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করছেন। সম্প্রতি ইয়াশ চোপড়ার নাম ঠিক না করা ছবির শুটিং শেষ করেছেন ক্যাটরিনা। শুটিং শেষ করে লন্ডন থেকে এ মাসেই মুম্বাই ফিরেছেন। ফিরেই আর দেরি নয়। প্রস্তুতি নিচ্ছেন ’ধুম থ্রি’ ছবিতে নিজেকে তৈরির জন্যে। আমির খানের বিপরীতে এ ছবিতে অভিনয় করছেন তিনি। আমির খান এ ছবিতে একজন চোরের ভূমিকায় অভিনয় করবেন। আর অন্যদিকে তার গালফ্রেন্ড ক্যাটরিনা থাকবেন ব্যালে ড্যান্সার। এর পাশাপাশি কয়েকটি অ্যাকশন দৃশ্যেও অংশ নিতে হবে তাকে। ক্যারিয়ারে এই প্রথমবার অ্যাকশন লেডির ভূমিকায় অভিনয় করবেন ক্যাটরিনা। প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিদিন চার ঘন্টা করে রিহার্সেল করছেন। ইয়াশরাজের স্টুডিওতে তার অনুশীলনের জন্যে স্পেশাল স্টুডিও রাখা হয়েছে। আমির খানের বিপরীতে প্রথমবারের মত অভিনয় করছেন ক্যাটরিনা। আর সে কথা চিন্তা করে ক্যাটরিনা এখনি অনেকটা ঘাবড়ে যাচ্ছেন। তবে ছবির চরিত্রটিকে বেশ উপভোগ করছেন তিনি। এ চরিত্রটি তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্টের কাজ করবে বলে তিনি আশা করেন।
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও ব্র্যাড পিটের বাগদান
অনন্যা আশরাফ
বিয়ে করছেন হলিউডের গ্ল্যামারাস জুটি ব্র্যাড পিট ও অ্যাঞ্জলিনা জোলি। প্রায় সাত বছরের  প্রেমকে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও ব্র্যাড পিট সম্পন্ন করেছেন বাগদান। ব্র্যাড পিটের ম্যানেজার সিনথিয়া পিট ড্যানটে ১৩ এপ্রিল শুক্রবার বিশ্ব গণমাধ্যমকে ইমেল বার্তার মাধ্যমে এই বাগদানের খবরটি নিশ্চিত করেছেন। ব্র্যাড পিটের ম্যনেজার সিনথিয়া পিট ড্যানটে আরও জানান, বাগদানের মাধ্যমে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও ব্রেড পিট ভবিষ্যতেও একে অন্যের সঙ্গী থাকার অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। হীরের আংটি বদলের মাধ্যমে তাদের বাগদান সম্পন্ন হয়। তাদের বিয়ের তারিখ অবশ্য এখনো ঠিক হয়নি। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা অবশ্যই জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি জানান।  বেভারলি হিলস ডিজাইনার রবার্ট প্রকোপ জানিয়েছেন, ‘জোলি ও পিটের বাগদানের হীরের আংটির ডিজাইন ও তৈরির জন্য প্রায় এক বছর সময় লেগেছে । অ্যাঞ্জেলিনা জোলির জন্যে কাক্সিক্ষত একটি হিরের আংটি তৈরিতে ব্রেড পিট নিজে ডিজাইন পছন্দ করার জন্য আলাদা সময় দিয়েছেন। তার সহযোগিতাতেই আংটিটি নিখুঁতভাবে করা সম্ভব হয়েছে। তিনজন দত্তকসহ মোট ছয় সন্তানের বাবা-মা অ্যাঞ্জেলিনা ও ব্রেড পিট। মূলত সন্তানদের খুশির জন্যেই তারা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ব্রেড পিট। এছাড়াও দুজনের সমঝোতা আর বোঝাপড়া এখন এমন এক জায়গায় পৌছেছে যে, একে অন্যের উপর এখন অনেকটাই নির্ভর হয়ে পড়েছেন তারা। তাই দেরিতে হলেও বিয়ের মাধ্যমে নিজেদের স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ জুটি। ৪৮ বছর বয়সী ব্রেড পিট এবং ৩৬ বছর বয়সী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ২০০৫ সালের ‘মিস্টার এন্ড মিসেস স্মিথ’ ছবিতে কাজ করতে গিয়ে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। সেই থেকে সাত বছর একসঙ্গে আছেন তারা। এর আগে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি বিয়ে করেছিলেন ব্রিটিশ অভিনেতা জনি লি মিলারকে। কিন্তু ১৯৯৯ সালে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর জোলি আবারও বিয়ে করেন বিলি বোব থর্নটোনকে। ২০০৩ সালে তার সঙ্গেও ডিভোর্স হয়ে যায় অ্যাঞ্জেলিনা জোলির। অন্যদিকে ব্রেড পিটও এদিক দিয়ে পিছিয়ে নন। জেনিফার অ্যানিস্টেনের সঙ্গে ব্রেড পিট ৫ বছরের সংসারের বিচ্ছেদ ঘটান ২০০৫ সালে।
আত্মার প্রশান্তির জন্য সুফি গান বেছে নিয়েছি 
তাহসানফাহিম ফয়সাল
শোবিজের নানা শাখা-প্রশাখায় চলাচল থাকলেও তাহসানের আসল পরিচয়-- তিনি একজন সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। ব্যান্ডসঙ্গীতের সঙ্গে তার যোগাযোগটা দীর্ঘদিনের। যুক্ত ছিলেন জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক’-এর সঙ্গে। বছর তিনেক আগে ব্ল্যাক ছাড়েন। এরপর দেশের বাইরে পড়াশোনার পাশাপাশি এককভাবেই গানের চর্চাটাও চালিয়ে যান। গুণী এই শিল্পী শ্রোতাদের অনেক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। সম্প্রতি তাহসান নতুন ব্যান্ড গঠন করেছেন। ব্যান্ডের নাম ‘তাহসান এন্ড সুফিজ’।
পেশাগত জীবনে ইউনির্ভাসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর শিক্ষক তাহসানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলানিউজ। নতুন ব্যান্ড গঠন, শোবিজ নিয়ে ভাবনা আর আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন তাহসান। অভিনেতা, মডেল আর উপস্থাপক হিসেবে তাহসান মুন্সিয়ানা দেখালেও গানই তার চলার পথের অবলম্বন। সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে ব্যান্ডের মাধ্যমেই যেহেতু তার শুরু, গানের ভুবনে তাই একাকী পথ চলতে  খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য পান নি। দলীয়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে তাহসান গঠন করেছেন নতুন ব্যান্ড ‘তাহসান এন্ড দ্য সুফিজ’। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে এক জমকালো কনসার্টের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ব্যান্ডটি।
তাহসানের কাছে বাংলানিউজে শুরুতেই জানতে চায়, ‘ব্ল্যাক’ ব্যান্ড ছেড়ে দীর্ঘদিন এককভাবে কাজ করার পর কেন আবার নতুন একটি ব্যান্ড গড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? উত্তরে তাহসান বললেন, ‘আসলে আমি যে ঘরানা গান করি, সেটি ব্যান্ড সঙ্গীত। ব্যান্ডের মাধ্যমেই আমার মিউজিশিয়ন হয়ে উঠা। দীর্ঘদিন এককভাবে গান গাওয়ার পর মনে হলো, সত্যিকার অর্থে আমি ব্যান্ড সঙ্গীতটাকে মিস করছি। তাছাড়া ভিন্ন ধারার গান করবো বলেই মূলত তাহসান এন্ড দ্য সুফিজ গঠন করি। তাছাড়া যেহেতু আমি শিক্ষকতা করি, তার পাশাপাশি যে সময়টুকু পাই সে সময়ে আমি সঙ্গীত চর্চা করি। তাই সমমনা বন্ধুদের নিয়ে আমার মতো করে গান নিয়ে এগিয়ে চলতেই নতুন ব্যান্ড গঠন।’ ‘তাহসান এন্ড দ্য সুফিজ’ ব্যান্ড সম্পর্কে কিছু বলুন? তাহসান বললেন, ‘ব্যতিক্রমধর্মী একটি ব্যান্ড গঠনের দীর্ঘদিনের একটা ইচ্ছা মনের ভেতর ছিলো। মানুষের মানসিক প্রশান্তি হয় এ ধরনের কিছু গান ও মিউজিক করতে চাই। সেটা করতে হলে অবশ্যই সুফি ধাঁচের কিছু একটা করতে হবে। যা মানুষকে উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জীবন সম্পর্কে ভাবাতে ও মানসিক প্রশান্তি দিতে সক্ষম হবে। বর্তমানে আমাদের দেশে খুব অস্থির একটা সময় যাচ্ছে। লোভের কারণে মানুষের মানবিক গুনাবলী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষ হিসেবে আমাদের জন্য এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক একটি বিষয়।’ ব্যান্ডে ঠিক কি ধরনের গান করবেন?-- ‘সুফি রক গান। সুফি রক হচ্ছে কথা প্রধান গান, রাগ ভিত্তিক গান। সুরের পাশাপাশি থাকবে তালের খেলা। টোটাল মিউজিকে একটা সামঞ্জস্য থাকবে। এক একটি গান হবে একেক রকমের । এছাড়াও থাকবে ইন্সট্রুমেন্টাল। আসলে আমাদের গানে আমরা সমাজের সমস্যার কথা অবলীলায় বলতে চাই। সমাজের চিত্র ও মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে চাই।’ তাহলে কি আমরা ধরে নিতে পারি যে, বাংলাদেশে আপনারা সুফি রক গানের ধারক ও বাহক?-- ‘আসলে আমরা ধারক ও বাহক কিছুই না। সুফিজম হচ্ছে এমন একটি বিষয় বা দর্শন যা ধর্ম, গোত্র, জাতি, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবার আত্ম-উন্নয়নে কাজে লাগে। মানুষের আত্মার প্রশান্তির জন্য কাজে লাগে। আমরা চেষ্টা করছি, এরকম কিছু গান করে এর প্রসারটা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে। পাশাপাশি আরেকটা কথা বলি, আমাদের গান সবাই নাও শুনতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, যে অল্প সংখ্যক মানুষ আমাগানগুলো শুনবে, এরপর তার মাঝে একটি পজিটিভ পরিবর্তন আসবে।‘ সুফি গান প্রসঙ্গে তাহসান আরো বললেন, ‘সুফি গানের প্রতি আমার আগ্রহ সব সময়ই ছিল। গান লেখা এবং সুর করার ক্ষেত্রে সুফি ঘরানা আমার কাছে প্রাধান্য পেয়েছে। ব্ল্যাক ব্যান্ড থেকে বেরিয়ে আসার পর আলাদা করে সুিফ গান নিয়ে আমার মধ্যে আগ্রহটা নতুন করে তৈরি হয়। তাছাড়া দেশের শ্রোতাদের নতুন কিছু উপহার দেওয়ার জন্যই সুফি গান নিয়ে ব্যান্ড গঠন করা।’
‘তাহসান এন্ড দ্য সুফিজ’ ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম শ্রোতারা কবে নাগাদ পাচ্ছে? তাহসানের উত্তর, ‘আমরা আপাতত ৫টি গান নিয়ে কাজ করছি। অ্যালবামের কাজ কবে শেষ করতে পারবো তা বলতে পারছি না। তবে যতদিন না গানগুলো মনের মতো হচ্ছে ততদিন পর্যন্তকাজ করে যাবো।’ আপনি যখন ‘ব্ল্যাক’ ছেড়ে চলে আসেন তখনতো ব্যান্ডটির জনপ্রিয়তা অনেক ছিলো। ব্ল্যাক ছাড়ার কারণ কি? এ প্রশ্নের উত্তরে তাহসান বললেন, ‘ব্ল্যাক ব্যান্ডের সবাই এখনো আমার ভালো বন্ধু। আসলে ওরা অল্টারনেটিভ রক ধাঁচের গান করতে চেয়েছে। আর আমি সেøা ব্যালে ধাঁচের গান করি। তাই আমি ওদের ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়েছি। ওদের কথাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। নিজের ইচ্ছেকে জোর করে অন্যদের উপর চাপিয়ে দিতে চাইনি।‘ ‘কোন ঘরে বসত করি/ তাতে কি আসে যায়/ কোন পাতে আহার করি/তাতে কি নষ্ট হয় তায়...’ এ ধরণের ব্যতিক্রমী কথা ও সুরের গান নিয়েই যাত্রা শুরু করেছে ‘তাহসান এন্ড সুফিজ’ ব্যান্ডটিভ
Tahsan-the-Sufisব্যান্ডে লাইনআপ হচ্ছে:
কি-বোর্ড, পিয়ানো ও ভোকাল- তাহসান
লিড গিটার- জিয়া
বেস গিটার- শিমুল
ড্রামস- রুবেল।
ব্যান্ডের সদস্যদের সম্পর্কে  তাহসানের মূল্যায়ন হলো, ‘জিয়া খুব ভালো গিটার বাজায়। তার গিটার প্লেয়িং আমার কাছে ভালো লাগে। দশ বছর আগে থেকেই জিয়ার সাথে আমার পরিচয়। সেই সুবাধে একসাথে কাজ শুরু করা। আমাদের বেস গিটারিস্ট শিমুলও খুব ভালো  বাজায়। তার মধ্যে ব্যতিক্রমী কাজ করার চেষ্টা থাকে। রুবেল খুব ভালো ড্রামস প্লে করে। আসলে সুফি রক গান করতে গেলে যে ধরনের ড্রামস পেলয়িং দরকার তা সে খুব ভালো বুঝে। আমি ভোকাল আর কি-বোর্ড বাজাই। নিজের সম্পর্কে কিছু নাইবা বললাম। আমাদের ব্যান্ডের গানের কথা ও সুর করি আমি আর জিয়া।
১৯৯৮ সালে তাহসান ও আরো কয়েক বন্ধু মিলে গঠন করেন ব্যান্ডদল ব্ল্যাক, পরবর্তীতে তিনি ব্যান্ড ছেড়ে একক ক্যারিয়ার গঠনের প্রতি মনোযোগ দেন। বেশ কয়েকটি একক অ্যালবাম বেরিয়েছে তাহসানের। এসব অ্যালবামে স্ত্রী মিথিলার সঙ্গে তাহসান গেয়েছেন বেশ কিছু গান। তাহসানের একক অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে- ‘কথোপকথন’, ‘কৃত্যদাসের নির্বাণ’, ‘ইচ্ছে’, ‘নেই’, ‘প্রত্যাবর্তন’ ‘প্রত্যাবর্তন-২’। ব্ল্যাক ব্যান্ডে কাজ করার সময় বের করেন- ‘আমার পৃথিবী’ও ‘উৎসবের পর’। এছাড়া তাহসান বেশ কিছু মিশ্র অ্যালবামে গান গেয়েছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘প্রতিজ্ঞা : বোকা মানুষটা’, ‘রোদেলা দুপুর : দ্য হিট অ্যালবাম’, ‘ফিরে এসো অনন্তকালের পথযাত্রী’, ‘জুয়েল উইথ দ্য স্টার, ‘দখিনের জানালায় বন্ধুতা’ প্রভৃতি। পাশাপাশি তাহসান নিজের সঙ্গীতায়োজনে বের করেন ‘ডানপিটে’ ও ‘আড়ি’ অ্যালবাম। তাহসান যে শুধু গানই করেন না, তা জানেন সবাই। অনিয়মিতভাবে হলেও তাকে যায় নাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয় করতে। কাজ করেছেন একাধিক বিজ্ঞাপনচিত্রেও। এক্সক্লুসিভ স্টেজ শোতে তাকে উপস্থাপনাও করতে দেখা যায়।
তাহসান অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘কাছের মানুষ’ (ধারাবাহিক), ‘অফবিট’, ‘মধুরেণ সমাপয়েতে, ‘অন্তর্গতা’, ‘হিট উইকেট’, ‘আমাদের গল্প’ (টেলিফিল্ম) প্রভৃতি। সম্প্রতি ‘টু বি কন্টিনিউড’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। উপস্থাপনা করেছেন ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৫’, ‘ইউ গট দ্য লুক’, ‘ঈদ আনন্দে সুরের ছন্দে’, ‘চ্যানেল নাইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান’ প্রভৃতি। এছাড়াও মডেল হিসেবে তাকে দেখা গেছে ‘পন্ডস’, ‘বাংলালিংক আমার টিউন’, ‘জুঁই নারিকেল তেল’, ‘আফতাব গুড়া মসলা’, ‘ক্লোজ আপ টুথপেস্ট’ ইত্যাদির বিজ্ঞাপনে। তাহসানের সঙ্গে কথোপকথনের শেষ পর্যায়ে তিনি বললেন, ‘আমরা সবাই সুখী হতে চাই, কিন্তু কিভাবে সুখী হতে হয় তা আমরা জানিনা। কিভাবে আত্মার সুখ লাভ করা যায়, সুফিজমে সে রকম কিছু কথা বল হয়। প্রশান্তির পাশাপাশি মানসিক স্থীরতা ও দৃঢ়তা বাড়ে সুফিধর্মী গান শুনলে’। সবশেষে তাহসান জানালেন তার স্বপ্নের কথা। তিনি স্বপ্ন দেখেন-- পরিবার, দেশ, রাজনীতি সর্বত্র শান্তির। যেখানে ধনী-গরীবের ভেদাভেদ থাকবে না। সমাজে চলবে ন্যায্য বন্টন। লোভ থেকে দূরে থাকবে পৃথিবীর সব মানুষ।
এক নজরে তাহসান:
পরিচয় : দেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, গিটার বাদক, কি-বোর্ড বাদক এবং শিক্ষক।
পুরো নাম : তাহসান রহমান খান।
জন্ম : ১৮ অক্টোবর, ১৯৭৯ সাল।
পৈতৃক নিবাস : মুন্সিগঞ্জ।
শিক্ষা : এ জি চার্চ স্কুল (ঢাকা), নটর ডেম কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনিস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে বিবিএ(মার্কেটিং) ও এমবিএ (ফাইন্যান্স) এবং স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্টের উপর মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।
সঙ্গীতে হাতেখড়ি : ছায়ানট থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীতের উপর কোর্স করেন। চর্চা করেছেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উপরও।
মঞ্চে গাওয়া প্রথম গান : পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল।
প্রথম ব্যান্ড : ব্ল্যাক।
বর্তমান ব্যান্ড : তাহসান এন্ড দ্য সুফিজ।
বিয়ে : ২০০৬ সালের ৩ অগাস্ট বিয়ে করেন মডেল ও অভিনেত্রী মিথিলাকে।
পেশা : শিক্ষকতা। ইউনির্ভাসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বা ইউল্যাব।